সর্বজনকথা ৯ম বর্ষ: ৪র্থ সংখ্যা (আগস্ট- অক্টোবর ২০২৩)
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট যে কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হতে পারে- মোঃ মনির ও আবিদ সাদমান
অনানুষ্ঠানিক খাত: দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অসমতা-এটিএম নুরুল আমিন
টমাস পিকেটি ও আইএমএফ- অসমতার বিতর্ক-চৌধুরী মুজাদ্দিদ আহমদ
তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প- মো. খালেকুজ্জামান
ডেঙ্গু জ্বর এবং করণীয়
ডা. মো. হারুন-অর-রশিদ
ঢাকা শহর সহ সারাদেশে ডেঙ্গুর আক্রমণ বাড়ছে। এবছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার আশংকাজনক। পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের যথাযথ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই রোগের উৎস, সতর্কতা ও করণীয় বিষয়ে এই লেখায় সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
১৯৬০ সালে প্রথম ঢাকা শহরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তখন একে ‘ঢাকা ফিবার’ নামে চিহ্নিত করা হয়, কারণ তখন সঠিক রোগ নির্ণয় করা যায়নি। তারপর বহু বছর তার আর লক্ষণ দেখা যায়নি। ২০০০ সালে আবার এর সংক্রমণ দেখা যায়, তখন ঢাকায় ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। ঐ সময় আমরা কিছুটা অপ্রস্তুত ছিলাম। ফলে বিনা চিকিৎসায় বা ভুল চিকিৎসায় বেশ কিছু মৃত্যু ঘটে। এর কতগুলো হয়েছিল আমাদের অজ্ঞতার জন্য। যেমন অনেকেই জ্বর কমাতে ডাইক্লোফেনাক বা এই জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করেছেন। এই ধরনের ঔষধ নিলে বেশি রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে। এখন জ্বর হলে এই জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা প্রায় হয়না বললেই চলে। ফলে অধিক রক্তপাতে মৃত্যুর সম্ভাবনা কমেছে।
তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প
মো. খালেকুজ্জামান
এই নিবন্ধে প্রস্তাবিত তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পটির (তিস্তা প্রকল্প) সারবত্তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিশ্লেষণের ভিত্তি হল তিস্তা অববাহিকার ভৌগলিক বিন্যাস, তিস্তা নদীর বিবর্তনের ইতিহাস, পরিবেশগত সম্ভাবতা, নদীকে জীবন্ত স্বত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া শীর্ষ আদালতের রায় এবং পানি-কূটনীতির আঙ্গিকসমূহ। এই লেখকের মত হল, প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পের নকশাটি পানিবিজ্ঞানের প্রক্রিয়াসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ফলে প্রকল্পটির দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া তিস্তা প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশ এই আন্তঃসীমান্ত নদীর প্রবাহের উপর তার আইনগত অধিকারটিকে আরও সীমিত করে ফেলবে। এই লেখক সুপারিশ করছেন যে, নদীভাঙন এবং বন্যার সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করতে হবে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং নদীর পাড়গুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে। সেই সাথে ভবিষ্যতের বিরোধ মীমাংসা এবং সালিশের জন্য বাংলাদেশের উচিত হবে জাতিসংঘের পানি প্রবাহ বিষয়ক ১৯৯৭ সালের কনভেনশনটিকে অনুমোদন করা, একই সাথে তার উজানের প্রতিবেশীদের সাথে পানি ভাগাভাগির আলোচনাকে আরও জোরালো করা যতক্ষণ পর্যন্ত একটি ন্যায়সঙ্গত, নায্য ও চলনসই হিস্যা না পাওয়া যায়। তিস্তা যে অববাহিকার অংশ সেই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার উজানের দেশগুলোর সাথে সকল প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিত পানি-কূটনীতিকে একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচনা করা। মূল লেখা “Teesta River Comprehensive Management and Restoration Project: A Preliminary Assessment”- এর অনুবাদ করেছেন মাহতাব উদ্দীন আহমেদ ।
ভূমিকা
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর মধ্যে চতুর্থ দীর্ঘতম নদী হল তিস্তা। তিস্তা হল ব্রহ্মপুত্র নদের সবচেয়ে বড় উপনদী। তিস্তা নদী অতীতে একসময় বছরপ্রতি ৬০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি এবং ৪৯ মিলিয়ন টন পলি বহন করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি নেমে এসেছে যথাক্রমে প্রায় ২৫.২ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি এবং ৩.৪ মিলিয়ন টন পলিতে (Azaz, 2020; BWDB, 2019; Shi, et al., 2019) । উজানে সিকিম রাজ্যে ভারত বেশ কতগুলো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশের দোনাই-দালিয়া ব্যারেজ থেকে ১০০ কিলোমিটার উজানে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় একটি ব্যারেজ বানানো হয়েছে যাতে তিস্তার পানিপ্রবাহের মুখ ঘুরিয়ে দিয়ে তিস্তা অববাহিকার বাইরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি জেলার জমিতে সেচ দেয়া যায়। তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ ও পলির পরিমাণ কমে যাওয়ার এটাই কারণ (Rudra, 200; Islam and Higano, 2001; Mullick et al., 2010; Rahaman and Mamun, 2020)। এই নদীর সামগ্রিক বারিপাত এলাকা হল ১২,৩৭০ বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে ২০০০ বর্গ কিলোমিটার (১৭%) এলাকা হল বাংলাদেশের। বাংলাদেশের ভেতরে নদীর প্রশস্ততা ০.৭ কিলোমিটার থেকে ৫.৫ কিলোমিটারের মধ্যে, গড়ে ৩ কিলোমিটার (BWDB, 2019)। এই নদীর বারিপাত অঞ্চলে বসবাসরত জনসংখ্যার ৫০% বাস করে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের উৎপাদিত শস্যের ১৪% আসে তিস্তা-নির্ভর এলাকা থেকে (Haq et al., 2017; Mondal and Islam, 2017)। প্রায় ২২ মিলিয়ন মানুষের জীবন ও জীবিকা এই নদীর পানি প্রবাহের উপর নির্ভরশীল যেটি একপাক্ষিকভাবে উজানের ভারত সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে।