হামীম গ্রুপের গুলিবিদ্ধ শ্রমিক কাঞ্চন মিয়ার কথা

গত ১০ মে হামীম গ্রুপের গার্মেন্টস কারখানা ক্রিয়েটিভ ওয়ানের শ্রমিকেরা ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবি নিয়ে জমায়েত হলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। গুরুতর আহত হন কাঞ্চন মিয়া (৫০)। চিকিৎসা, চিকিৎসা ব্যয়, ক্ষতিপূরণ নিয়ে যে অবহেলা, দায়িত্বহীনতা দেখা দেয় তার কারণে কাঞ্চন মিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এ বিষয়ে গত ৫ জুন ২০২১ সাংবাদিক সম্মেলনে কাঞ্চন মিয়া সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। মনে রাখা দরকার যে, বাংলাদেশে কারখানা, নির্মাণসহ নানা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাবে শ্রমিকদের নিহত ও জখম হবার ঘটনা নিয়মিতভাবে ঘটলেও সরকার বা মালিকেরা কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না। কাঞ্চন মিয়ার ক্ষেত্রে আন্দোলনের চাপে হামীম গ্রুপ কিছু দায়িত্ব নিলেও তা ছিল দায়সারা, প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কাঞ্চন মিয়ার বিস্তারিত বক্তব্য এই পরিস্থিতি বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে তা এখানে প্রকাশ করা হলো।      

পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হয়ে যাওয়া ঈদের ছুটির দাবিতে আন্দোলন করা হামীম গ্রুপের ক্রিয়েটিভ ওয়ান ফ্যাক্টরির শ্রমিক কাঞ্চন মিয়ার সংবাদ সম্মেলন

ন্যায়বিচার চাই! দোষীদের শাস্তি চাই!

শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির জন্য নায্য, সম্মানজনক ও দৃষ্টান্তমূলক ক্ষতিপূরণ চাই!

হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ খরচের পুরোটা সরকার ও মালিকপক্ষকে বহন করতে হবে!

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

আপনারা আমার কথা ও মনের ব্যাথাগুলো শোনার জন্য যারা এই সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন তাদের প্রতি শুরুতেই আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি হামীম গ্রুপের গার্মেন্টস কারখানা ক্রিয়েটিভ ওয়ানের শ্রমিক কাঞ্চন মিয়া (৫০)। আপনারা জানেন, গত ১০ মে, ২০২১ তারিখে ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবীতে আন্দোলন করতে গিয়ে আমি আমার অপরাপর শ্রমিকভাইদের মতো পুলিশের গুলিতে আহত হই। আমার আঘাত অত্যন্ত গুরুতর ছিল বিধায় গত ১০ মে তারিখে আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। গার্মেন্টস মালিকের কাছে ঈদের বর্ধিত ছুটির দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামলে (যেই বর্ধিত ছুটি আমরা গার্মেন্টস শ্রমিকেরা সচরাচর পেয়ে থাকি) পুলিশ ওইদিন বিনা উস্কানিতে বিনা কারণে আমাদের উপর ছররা গুলি চালায়। আমি প্রথম দফা গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে যাই। তখন আমি শত অনুনয় বিনয় করলেও, আমার বাচ্চাদের দোহাই দিয়ে বাঁচার আকুতি জানালেও, আমার কাছ থেকে আমার তলপেট বরাবর লক্ষ্য করে আবারো আমার উপর ছররা গুলি চালানো হয়। আমার তলপেটে শতাধিক ছররা বুলেট বিদ্ধ হয়। খুব কাছ থেকে গুলি করার কারণেই হয়তো কিছু ছররা গুলি আমার তলপেট ভেদ করে আমার অন্ত্রে গিয়ে পৌঁছায়। সেদিন আমার উপর এই নির্মম নিষ্ঠুরতা চালিয়েই তারা ক্ষান্ত হয় নাই। এরপর আমাকে ওই গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই কারখানার একটি টয়লেটে নিয়ে আটকে রাখা হয়। আমি প্রচন্ড কান্নাকাটি করি, শতবার অনুনয় বিনয় করে, আমার বাচ্চাদের দোহাই দিয়ে বলি যে আমাকে যেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আমার কথা শোনা হয় নাই। আমাকে তখন থেকে বলা হয়েছিল আমাকে ওই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তৎক্ষণাৎ শ্রমিকদের সামনে দিয়ে বের করলে নাকি ‘সমস্যা’ হবে। আমি ওভাবেই একটা কক্ষে আটক হয়ে পড়ে থাকি দুই ঘন্টার অধিক।

(more…)
Social Share
  •  
  •  
  • 350
  •  
  •  
  •  
  •  

৭ম বর্ষ: ৪র্থ সংখ্যা (আগস্ট- অক্টোবর ২০২১)

(more…)
Social Share
  •  
  •  

সর্বজনকথা ৭ম বর্ষ: ৩য় সংখ্যা (মে – জুলাই ২০২১)

(more…)
Social Share
  •  
  •  

বাঁশখালী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র: প্রতারণামূলক নিষ্ঠুর ‘উন্নয়ন’ প্রকল্পের দৃষ্টান্ত

কল্লোল মোস্তফা

‘অন্ধকার থেকে আলোর মিছিলে প্রিয় বাংলাদেশ’ এই বিজ্ঞাপনী প্রচার দিয়ে এই প্রকল্পের যাত্রা শুরু করেছিল এস আলম গ্রুপ। এই প্রকল্পে তার সহযোগী চীনা কোম্পানি আর পৃষ্ঠপোষক সরকার। প্রথম থেকেই এই প্রকল্পে পাওয়া যায় কোম্পানি-সরকারের যোগসাজসে প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম আর জোর জবরদস্তির নানা চিত্র। এর কারণে এই প্রকল্প এলাকার গরীব মানুষ আর প্রকল্পের শ্রমিকদের উপর জুলুমের অনেক ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ-সন্ত্রাসীদের গুলিতে মানুষ খুনজখম করা তার অংশ। এই প্রাণবিনাশী প্রকল্প  প্রথম থেকেই কীরকম অনিয়ম ও মিথ্যাচারের উপর দিয়ে চলছে তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র এই লেখায় উপস্থিত করা হয়েছে।  

যে প্রকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং তার প্রতিক্রিয়ায় গুলি করে হত্যার ঘটনা দু-দুবার ঘটতে পারে, তা যে কোনো সাধারণ প্রকল্প নয়, তা বলাই বাহুল্য। দেশীয় কোম্পানি এস আলম ও চীনা কোম্পানি সেপকো-৩ এবং এইচটিজির যৌথ মালিকানায় নির্মিতব্য বাঁশখালী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প এরকমই একটি অসাধারণ ‘উন্নয়ন’ প্রকল্প! অসাধারণ বলেই হয়তো ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘শুভ উদ্বোধন’ উপলক্ষ্যে সংবাদপত্রের পাতাজুড়ে দেওয়া এস আলম ও চীনা কোম্পানি সেপকো-৩-এর যৌথ বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ছিল: ‘অন্ধকার থেকে আলোর মিছিলে প্রিয় বাংলাদেশ’! এই বিশেষ ‘উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রথমবার মানুষ হত্যার ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল টেক্সটাইল মিলস ও ভেজিটেবল অয়েলের নামে জমি কিনে প্রতারণামূলকভাবে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠা বাঁশখালীর গণ্ডামারা গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালিয়ে। আর দ্বিতীয়বার মানুষ হত্যা করা হয় ওই ঘটনার পাঁচ বছর পর ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পর্যায়ে সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধ ও রোজার সময় কাজের সময়সূচি পরিবর্তনের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়ে।

(more…)
Social Share
  •  
  •