আখচাষ ও রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিশিল্প: সংকট কেনো?
পুন:প্রকাশ
মোশাহিদা সুলতানা ও কল্লোল মোস্তফা
যথেষ্ট সম্ভাবনাময় হলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠান ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আখচাষিদের জীবন-জীবিকা দীর্ঘদিন ধরেই গভীর সংকটে নিমজ্জিত। উৎপাদিত চিনি অবিক্রীত পড়ে থাকে গুদামে, চিনির উৎপাদন খরচ চিনির বাজারমূল্যের দ্বিগুণেরও বেশি। বেসরকারিভাবে আমদানীকৃত চিনির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না রাষ্ট্রায়াত্ব চিনিকলগুলো। চিনিকলের শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন পান না, দিনে দিনে কমে যাচ্ছে আখ চাষ। চিনিশিল্পের এই সংকটের কার্যকারণ ও তার সমাধানের উপায় অন্বেষণ করতে গিয়ে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এই প্রবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয় সর্বজনকথা, ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংখ্যায়। সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত এইসব সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ না নেয়ার কারণে সাম্প্রতিক কালে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্প ও আখ চাষের সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। আর এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর মতো রাষ্ট্রায়াত্ব চিনিকলগুলোও বন্ধ করার পায়তারা চলছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সর্বশেষ সংবাদ অনুসারে, সরকার দীর্ঘদিন ধরে অর্থসংকটে ভুগতে থাকা চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনকে অর্থ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে যার ফলে চলতি মৌসুমে নিবন্ধিত আখচাষিদের সার, কীটনাশক ও সেচের জন্য ঋণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসছে মৌসুমে আখ উৎপাদন আরো কমে যেতে পারে যার ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্পের লোকসান ও সংকটের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিশিল্প ও আখ চাষের সংকট ও তার সমাধানের উপায় নিয়ে সর্বজনকথা, ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত লেখাটি পুন:প্রকাশ করা হলো।

১. ভূমিকা
দীর্ঘদিন ধরে গভীর সংকটে নিমজ্জিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠান ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আখচাষিদের জীবন-জীবিকা। রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলোর উৎপাদিত চিনি অবিক্রীত পড়ে আছে গুদামে। এসব কারখানায় চিনির উৎপাদন খরচ চিনির বাজারমূল্যের দ্বিগুণেরও বেশি। লোকসান দিয়ে বিক্রি করা হলেও বেসরকারিভাবে আমদানীকৃত চিনির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না এই চিনি। ফলে চিনিকলের শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন পান না, প্রায়ই বেতনের বদলে চিনি প্রদান করা হয় তাদের। আখচাষিরা আর চিনিকলগুলোতে আখ সরবরাহ করতে চান না, দিনে দিনে কমে যাচ্ছে আখ চাষ। চিনিকলের কাছে আখ বিক্রি করে পাওনা আদায়ের জন্য মাসের পর মাস ঘুরতে হয় তাদের। এদিকে পর্যাপ্ত আখ না পাওয়ায় চিনিকলের যন্ত্রপাতি ও শ্রমশক্তিবছরের বেশিরভাগ সময় অব্যবহৃত থাকে এবং আখ থেকে চিনি উৎপাদনের খরচ বাড়তে থাকে। চিনি খাতের এই সংকট নিরসনে ২০১৫ সালের শেষের দিকে এসে সরকার কিছু বাজার নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দুই দফায় নতুন করে আমদানির ওপর সংরক্ষণমূলক শুল্ক আরোপ এবং ভ্যাট আরোপ। যুক্তি হচ্ছে, শুল্ক আরোপ করে বেসরকারি আমদানি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও পিছিয়ে থাকা রাষ্ট্রীয় খাতকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। এই বাজার নিয়ন্ত্রণ নীতি আসলে এই চিনিশিল্পকে রক্ষা করে টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে কি না-এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে আমরা চিনিশিল্পের সংকটের কার্যকারণ ও তার সমাধানের উপায় অন্বেষণ শুরু করি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও মাঠপর্যায়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই প্রবন্ধে চিনিশিল্পের সংকট ও সমাধানের বিবিধ উপায় অন্বেষণ করা হয়েছে।
405 - 405Shares
- 207Shares
207