সিপিডির নিম্নতম মজুরি প্রস্তাব কেন গ্রহণযোগ্য নয়

মাহতাব উদ্দীন আহমেদ

ছবি: দেবাশিষ চক্রবর্তী

[গত বেশ কিছুদিন ধরে গার্মেন্টস শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি নতুনভাবে নির্ধারণের জন্য আন্দোলন চলছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর চলমান আন্দোলনে অনেকগুলো সংগঠন থেকে নিম্নতম মজুরি হিসাবে দাবি উঠেছে ২৫ হাজার টাকা এবং আরও বেশি কিছু সংগঠন দাবি করেছে ২৩ হাজার টাকা। তাদের উভয়ের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য যুক্তিও দেয়া হয়েছে। মজুরি বোর্ডের কালক্ষেপনের মধ্যেও তাদের অনেকে নিজ নিজ ব্যাখ্যা জমাও দিয়েছে। এসব কর্মসূচী ও আলোচনার মধ্যে গত ৮ই অক্টোবর  গার্মেন্ট শ্রমিকের জন্য ১৭,৫৬৮ টাকা নিম্নতম মজুরির প্রস্তাব দিয়েছে দেশের খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। যেহেতু প্রস্তাবটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে, এবং দেশের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে যাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, তাই তাদের এহেন কম মজুরির প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করা জরুরী বলে আমরা মনে করি। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সিপিডির প্রস্তাব পর্যালোচনা করে এই লেখা।]

শুরুতেই বলে নেয়া ভাল যে, শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ নিয়ে কথা বলা কোন ইচ্ছাপূরণের গল্প বা উইশফুল থিংকিং এর বিষয় নয় যে মন চাইল আর একটা বলে দিলাম। এটা শ্রমিকের অস্তিত্বের প্রশ্ন। তার সুস্থ শরীরে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার প্রশ্ন এবং বাজার অর্থনীতিতে সেটা দীর্ঘমেয়াদে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতার প্রশ্নও বটে। এই প্রস্তাব বিজিএমইএ দিলে সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন প্রয়োজনই পড়ত না। কারণ বিজিএমইএ এমন কম মজুরি বা তার থেকেও কম মজুরির প্রস্তাব দিবে তেমনটাই তাদের শ্রেণীস্বার্থে স্বাভাবিক। কিন্তু একটি বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান এরকম প্রস্তাব দিলে তা গুরুতর বিষয়ই বটে।

সিপিডি নিম্নতম মজুরীর প্রস্তাব করতে গিয়ে তাদের নিজেদের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে (মূল রিপোর্ট তারা প্রকাশ করেনি এখনো) বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকের দুর্দশা অল্পবিস্তর তুলে ধরার পরেও, শেষমেষ যে পদ্ধতিতে ওই নিম্নতম মজুরি হিসাব করেছে তাতে শ্রমিকের প্রতি ভীষণ অসংবেদনশীলতা ও শ্রেণীগত অবহেলারই বহিপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সিপিডির করা সেই হিসাব নিয়ে পদ্ধতিগতভাবেই কতগুলো গুরুতর প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। কীভাবে সেটাই নীচে আলোচনা করা হচ্ছে।

(more…)
Social Share
  •  
  •  
  • 350
  •  
  •  
  •  
  •  

গাজার বিশ লাখ অধিবাসীকে বন্দি করে রাখার চরম খেসারত ইসরায়েল এড়াবে কী করে

ছবি: সংগৃহীত

[লেখাটি ইসরায়েলি সংবাদপত্র দ্য হারেৎজ-এ প্রকাশিত সাংবাদিক ও লেখক Gideon Levy-এর ‘Israel Can’t Imprison Two Million Gazans Without Paying a Cruel Price’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন কল্লোল মোস্তফা।]

এই সবকিছুর জন্য দায়ী ইসরায়েলি ঔদ্ধত্য;  এরকম একটা ধারণা যে আমরা যা খুশি তা করতে পারি, এ জন্য আমাদের কোনো মূল্য দিতে হবে না এবং কোনো শাস্তি পেতে হবে না। আমরা নির্বিঘ্নে এসব চালিয়ে যাব।

আমরা ফিলিস্তিনিদের গ্রেফতার করব, হত্যা করব, হয়রানি করব, উচ্ছেদ করব আর তাদের ওপর গণহত্যা কার্যক্রম চালানো সেটেলার বা দখলদারদের রক্ষা করব।

আমরা নিরপরাধ মানুষের ওপর গুলি চালাব, তাদের চোখ তুলে ফেলব, মুখ ভেঙে ফেলব, তাদের বহিষ্কার করব, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করব, তাদের বিছানা থেকে তুলে নিয়ে আসব এবং অবশ্যই গাজা উপত্যকায় অবিশ্বাস্য অবরোধ চালিয়ে যাব আর ধরে নেব সবকিছু ঠিকমতো চলবে।

(more…)
Social Share
  •  
  •  
  • 350
  •  
  •  
  •  
  •  

তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প

মো. খালেকুজ্জামান

এই নিবন্ধে প্রস্তাবিত তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পটির (তিস্তা প্রকল্প) সারবত্তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিশ্লেষণের ভিত্তি হল তিস্তা অববাহিকার ভৌগলিক বিন্যাস, তিস্তা নদীর বিবর্তনের ইতিহাস, পরিবেশগত সম্ভাবতা, নদীকে জীবন্ত স্বত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া শীর্ষ আদালতের রায় এবং পানি-কূটনীতির আঙ্গিকসমূহ। এই লেখকের মত হল, প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পের নকশাটি পানিবিজ্ঞানের প্রক্রিয়াসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ফলে প্রকল্পটির দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া তিস্তা প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশ এই আন্তঃসীমান্ত নদীর প্রবাহের উপর তার আইনগত অধিকারটিকে আরও সীমিত করে ফেলবে। এই লেখক সুপারিশ করছেন যে, নদীভাঙন এবং বন্যার সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করতে হবে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং নদীর পাড়গুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে। সেই সাথে ভবিষ্যতের বিরোধ মীমাংসা এবং সালিশের জন্য বাংলাদেশের উচিত হবে জাতিসংঘের পানি প্রবাহ বিষয়ক ১৯৯৭ সালের কনভেনশনটিকে অনুমোদন করা, একই সাথে তার উজানের প্রতিবেশীদের সাথে পানি ভাগাভাগির আলোচনাকে আরও জোরালো করা যতক্ষণ পর্যন্ত একটি ন্যায়সঙ্গত, নায্য ও চলনসই হিস্যা না পাওয়া যায়। তিস্তা যে অববাহিকার অংশ সেই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার উজানের দেশগুলোর সাথে সকল প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিত পানি-কূটনীতিকে একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচনা করা। মূল লেখা “Teesta River Comprehensive Management and Restoration Project: A Preliminary Assessment”- এর অনুবাদ করেছেন মাহতাব উদ্দীন আহমেদ

ভূমিকা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর মধ্যে চতুর্থ দীর্ঘতম নদী হল তিস্তা। তিস্তা হল ব্রহ্মপুত্র নদের সবচেয়ে বড় উপনদী। তিস্তা নদী অতীতে একসময় বছরপ্রতি ৬০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি এবং ৪৯ মিলিয়ন টন পলি বহন করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি নেমে এসেছে যথাক্রমে প্রায় ২৫.২ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি এবং ৩.৪ মিলিয়ন টন পলিতে (Azaz, 2020; BWDB, 2019; Shi, et al., 2019) । উজানে সিকিম রাজ্যে ভারত বেশ কতগুলো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশের দোনাই-দালিয়া ব্যারেজ থেকে ১০০ কিলোমিটার উজানে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় একটি ব্যারেজ বানানো হয়েছে যাতে তিস্তার পানিপ্রবাহের মুখ ঘুরিয়ে দিয়ে তিস্তা অববাহিকার বাইরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি জেলার জমিতে সেচ দেয়া যায়। তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ ও পলির পরিমাণ কমে যাওয়ার এটাই কারণ (Rudra, 200; Islam and Higano, 2001; Mullick et al., 2010; Rahaman and Mamun, 2020)। এই নদীর সামগ্রিক বারিপাত এলাকা হল ১২,৩৭০ বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে ২০০০ বর্গ কিলোমিটার (১৭%) এলাকা হল বাংলাদেশের। বাংলাদেশের ভেতরে নদীর প্রশস্ততা ০.৭ কিলোমিটার থেকে ৫.৫ কিলোমিটারের মধ্যে, গড়ে ৩ কিলোমিটার (BWDB, 2019)। এই নদীর বারিপাত অঞ্চলে বসবাসরত জনসংখ্যার ৫০% বাস করে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের উৎপাদিত শস্যের ১৪% আসে তিস্তা-নির্ভর এলাকা থেকে (Haq et al., 2017; Mondal and Islam, 2017)। প্রায় ২২ মিলিয়ন মানুষের জীবন ও জীবিকা এই নদীর পানি প্রবাহের উপর নির্ভরশীল যেটি একপাক্ষিকভাবে উজানের ভারত সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে।

(more…)
Social Share
  •  
  •  
  • 350
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, টিসিবির দীর্ঘ লাইন ও ভারতীয় রেশনব্যবস্থার দৃষ্টান্ত

কল্লোল মোস্তফা

সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা যে কতো গুরুত্বপূর্ণ তা করোনাকালে এবং সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্যের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির সময়ে কঠিন ভাবে আমরা উপলব্ধি করছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও রেশন ব্যবস্থা অব্যাহত ছিলো। সীমিত, দুর্বল ও অগোছালো ব্যবস্থা হলেও ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষকালে এই রেশন ব্যবস্থাই শুধু গরীব নয় মধ্যবিত্ত পর্যন্ত অনেককে রক্ষা করেছে। বিশ্বব্যাংক ও ইউএসআইডির যৌথ প্রকল্পে দুর্নীতি, অপচয় ইত্যাদি অজুহাত তুলে ৭০ দশকের শেষ থেকে এই ব্যবস্থারই উচ্ছেদ কর্মসূচি শুরু হয়। অন্যদিকে ভারতে একইরকম সমস্যা থাকলেও তার সমাধানে সফলভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। তার মধ্য দিয়ে কীভাবে ভারতে একটি শক্তিশালী স্বচ্ছ রেশন ব্যবস্থা কাজ করছে বর্তমান প্রবন্ধে সেটাই বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা শুধু কয়েকটি পেশার জন্য নয়, সর্বজনের অধিকারের অংশ হিসেবে সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা বাংলাদেশে অবশ্যই চালু করতে হবে।

ভূমিকা

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের বাজারদরের তালিকা ও ২০২২-এর ফেব্রুয়ারির দামের তালিকা ধরে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোটা চালের দাম ১৫, মোটা দানার মসুর ডাল ৭৭, খোলা সয়াবিন তেল ৫৪, চিনি ৪৯ ও আটার দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি কী ধরনের সংকট তৈরি করেছে, তার একটা আভাস মেলে টিসিবির ট্রাক থেকে তুলনামূলক সস্তা দরে পেঁয়াজ, ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল কেনার জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি ও সেখানে নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদেরও দাঁড়ানোর ঘটনা থেকে। টিসিবির ট্রাকের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করা মানুষের লম্বা লাইন, ট্রাক দেখে হুড়োহুড়ি, কোনো রকমে ডাল-তেল-চিনি-পেঁয়াজের একটা প্যাকেজ পাওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টার ছবির আলোকচিত্র ও ভিডিও সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিতই চোখে পড়ছে।

(more…)
Social Share
  •  
  •  
  • 350
  •  
  •  
  •  
  •