সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা যে কতো গুরুত্বপূর্ণ তা করোনাকালে এবং সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্যের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির সময়ে কঠিন ভাবে আমরা উপলব্ধি করছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও রেশন ব্যবস্থা অব্যাহত ছিলো। সীমিত, দুর্বল ও অগোছালো ব্যবস্থা হলেও ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষকালে এই রেশন ব্যবস্থাই শুধু গরীব নয় মধ্যবিত্ত পর্যন্ত অনেককে রক্ষা করেছে। বিশ্বব্যাংক ও ইউএসআইডির যৌথ প্রকল্পে দুর্নীতি, অপচয় ইত্যাদি অজুহাত তুলে ৭০ দশকের শেষ থেকে এই ব্যবস্থারই উচ্ছেদ কর্মসূচি শুরু হয়। অন্যদিকে ভারতে একইরকম সমস্যা থাকলেও তার সমাধানে সফলভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। তার মধ্য দিয়ে কীভাবে ভারতে একটি শক্তিশালী স্বচ্ছ রেশন ব্যবস্থা কাজ করছে বর্তমান প্রবন্ধে সেটাই বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা শুধু কয়েকটি পেশার জন্য নয়, সর্বজনের অধিকারের অংশ হিসেবে সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা বাংলাদেশে অবশ্যই চালু করতে হবে।
ভূমিকা
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের বাজারদরের তালিকা ও ২০২২-এর ফেব্রুয়ারির দামের তালিকা ধরে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোটা চালের দাম ১৫, মোটা দানার মসুর ডাল ৭৭, খোলা সয়াবিন তেল ৫৪, চিনি ৪৯ ও আটার দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে।১ দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি কী ধরনের সংকট তৈরি করেছে, তার একটা আভাস মেলে টিসিবির ট্রাক থেকে তুলনামূলক সস্তা দরে পেঁয়াজ, ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল কেনার জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি ও সেখানে নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদেরও দাঁড়ানোর ঘটনা থেকে। টিসিবির ট্রাকের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করা মানুষের লম্বা লাইন, ট্রাক দেখে হুড়োহুড়ি, কোনো রকমে ডাল-তেল-চিনি-পেঁয়াজের একটা প্যাকেজ পাওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টার ছবির আলোকচিত্র ও ভিডিও সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিতই চোখে পড়ছে।২