বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, টিসিবির দীর্ঘ লাইন ও ভারতীয় রেশনব্যবস্থার দৃষ্টান্ত

আগাম প্রকাশ
কল্লোল মোস্তফা

সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা যে কতো গুরুত্বপূর্ণ তা করোনাকালে এবং সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্যের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির সময়ে কঠিন ভাবে আমরা উপলব্ধি করছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও রেশন ব্যবস্থা অব্যাহত ছিলো। সীমিত, দুর্বল ও অগোছালো ব্যবস্থা হলেও ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষকালে এই রেশন ব্যবস্থাই শুধু গরীব নয় মধ্যবিত্ত পর্যন্ত অনেককে রক্ষা করেছে। বিশ্বব্যাংক ও ইউএসআইডির যৌথ প্রকল্পে দুর্নীতি, অপচয় ইত্যাদি অজুহাত তুলে ৭০ দশকের শেষ থেকে এই ব্যবস্থারই উচ্ছেদ কর্মসূচি শুরু হয়। অন্যদিকে ভারতে একইরকম সমস্যা থাকলেও তার সমাধানে সফলভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। তার মধ্য দিয়ে কীভাবে ভারতে একটি শক্তিশালী স্বচ্ছ রেশন ব্যবস্থা কাজ করছে বর্তমান প্রবন্ধে সেটাই বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা শুধু কয়েকটি পেশার জন্য নয়, সর্বজনের অধিকারের অংশ হিসেবে সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা বাংলাদেশে অবশ্যই চালু করতে হবে।

ভূমিকা

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের বাজারদরের তালিকা ও ২০২২-এর ফেব্রুয়ারির দামের তালিকা ধরে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোটা চালের দাম ১৫, মোটা দানার মসুর ডাল ৭৭, খোলা সয়াবিন তেল ৫৪, চিনি ৪৯ ও আটার দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি কী ধরনের সংকট তৈরি করেছে, তার একটা আভাস মেলে টিসিবির ট্রাক থেকে তুলনামূলক সস্তা দরে পেঁয়াজ, ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল কেনার জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি ও সেখানে নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদেরও দাঁড়ানোর ঘটনা থেকে। টিসিবির ট্রাকের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করা মানুষের লম্বা লাইন, ট্রাক দেখে হুড়োহুড়ি, কোনো রকমে ডাল-তেল-চিনি-পেঁয়াজের একটা প্যাকেজ পাওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টার ছবির আলোকচিত্র ও ভিডিও সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিতই চোখে পড়ছে।


 

সকাল ৮টা থেকে অপেক্ষমাণ লোকগুলো টিসিবির ট্রাক দেখে সেদিকে দৌড় শুরু করেন। ছবি: প্রথম আলো অনলাইন, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে, টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকা এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারছেন। একজন ক্রেতা সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি ও দুই লিটার তেল কিনতে পারছেন। ক্রেতারা জানিয়েছেন, তারা মূলত তেল, ডাল ও চিনির জন্যই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বাজারে তেলের দাম ১৬৮ টাকা, মসুর ডাল ১০০ টাকা, চিনি ৭৬ টাকা। ফলে দুই লিটার তেল, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি ও পাঁচ কেজি পেঁয়াজের একটি প্যাকেজ পেলে ক্রেতার সাশ্রয় হয় প্রায় আড়াই শ টাকা। কিন্তু চাহিদার তুলনায় টিসিবির ট্রাকের সংখ্যা ও ট্রাকপ্রতি বিক্রীত পণ্যের পরিমাণ যথেষ্ট নয়। সারা দেশে মাত্র ৪৫০টি পয়েন্টে ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে, যার মধ্যে ১০১টি পয়েন্ট ঢাকা বিভাগে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে দিনে ৬০০ লিটার তেল, ৪০০ কেজি ডাল, ৫০০ কেজি চিনি ও ৫০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেককে পণ্য না-পেয়ে হতাশ হতে হয়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের এই মরিয়া পরিস্থিতি একদিকে যেমন সরকারের উন্নয়নের আখ্যানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, অন্যদিকে এ ধরনের সংকটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় মজবুত গণবণ্টনব্যবস্থার অনুপস্থিতির বিষয়টিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের এই মরিয়া পরিস্থিতি একদিকে যেমন সরকারের উন্নয়নের আখ্যানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, অন্যদিকে এ ধরনের সংকটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় মজবুত গণবণ্টনব্যবস্থার অনুপস্থিতির বিষয়টিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বর্তমান সরকার কর্তৃক ‘ডিজিটাল’ হিসেবে বিজ্ঞাপিত বাংলাদেশে আর্থিক, সামাজিক অবস্থাভেদে মানুষের কোনো তালিকা সরকারের কাছে নেই, যার ওপর ভিত্তি করে দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের কাছে সরাসরি কোনো সহযোগিতার পরিকল্পনা করা যেতে পারে। যে কারণে করোনায় বিপর্যস্তদের জন্য যে সামান্য নগদ অর্থসাহায্যের উদ্যোগ সরকার নিয়েছিল, সেটাও সব ক্ষতিগ্রস্তের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছানো যায়নি। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আড়াই হাজার টাকা করে অনুদানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে ১৪ লাখ ৩২ হাজার নাম বাদ দিয়ে বাকি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫৩ জনকে নিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। অথচ একটা মজবুত ও কার্যকর গণবণ্টনব্যবস্থা থাকলে একদিকে সারা বছর স্বল্পমূল্যে দরিদ্র ও অভাবী জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, অন্যদিকে করোনা মহামারির মতো সংকটময় পরিস্থিতিতে খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে খাদ্য ও অর্থসাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের গণবণ্টনব্যবস্থার দিকে তাকালে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।

মজবুত ও কার্যকর গণবণ্টনব্যবস্থা থাকলে একদিকে সারা বছর স্বল্পমূল্যে দরিদ্র ও অভাবী জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, অন্যদিকে করোনা মহামারির মতো সংকটময় পরিস্থিতিতে খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে খাদ্য ও অর্থসাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের গণবণ্টনব্যবস্থার দিকে তাকালে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।

ভারতের একটি রেশন দোকান। ছবি: ইন্টারনেট

ভারতের গণবণ্টনব্যবস্থা

ভারতে বহু বছর ধরেই গণবণ্টনব্যবস্থা (পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম) চালু থাকলেও National Food Security Act-2013 বা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন-২০১৩-এর মাধ্যমে গ্রামের ৭৫ শতাংশ এবং শহরের ৫০ শতাংশ নাগরিকের জন্য এটাকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক মৌলিক অধিকারে পরিণত করা হয়। ভারতের গণবণ্টনব্যবস্থা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে বাস্তবায়ন করে।  কেন্দ্রীয় সরকার ফুড করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার (FCI) মাধ্যমে খাদ্যশস্য ক্রয়, মজুত, পরিবহণ ও রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে বিতরণে কাজ করে। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের কাজ হলো, রেশন বিতরণের কাজ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করা অর্থাৎ রেশনের জন্য উপযুক্ত পরিবার শনাক্ত করা, রেশন কার্ড ইস্যু করা, ফেয়ার প্রাইস শপ বা রেশনের দোকানগুলোর তত্ত্বাবধান করা ইত্যাদি।

ছবি: ভারতীয় পাবলিক ডিস্ট্রিবিশন বা গণবণ্টনব্যবস্থার ফ্লো-চার্ট

ভারতীয় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন বা এনএফএসএ-র আওতায় দুই ধরনের রেশন কার্ড রয়েছে‒অতিদরিদ্রদের জন্য অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা (AAY) এবং অগ্রাধিকারভুক্তদের জন্য প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড (PHH) রেশন কার্ড। আইনানুসারে, এসব এনএফএসএ রেশন কার্ডের মাধ্যমে ফেয়ার প্রাইস শপ বা রেশনের দোকান থেকে AAY কার্ডধারী অতিদ্ররিদ্ররা প্রতি মাসে ৩৫ কেজি এবং PHH কার্ডধারীরা পরিবারের সদস্যপিছু পাঁচ কেজি করে চাল-আটা যথাক্রমে দুই ও তিন টাকা কেজি দরে ক্রয় করতে পারে। সবশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে এনএফএসএ কার্ডধারীর সংখ্যা প্রায় ২৩ কোটি ৭৫ লাখ, যার আওতায় সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮০ কোটি।

ভারতে বহু বছর ধরেই গণবণ্টনব্যবস্থা (পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম) চালু থাকলেও National Food Security Act-2013 বা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন-২০১৩-এর মাধ্যমে গ্রামের ৭৫ শতাংশ এবং শহরের ৫০ শতাংশ নাগরিকের জন্য এটাকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক মৌলিক অধিকারে পরিণত করা হয়। ভারতের গণবণ্টনব্যবস্থা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে বাস্তবায়ন করে।

গ্রাম ও শহরের ৭৫ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার অনুপাতকে জাতীয় পর্যায় থেকে রাজ্য পর্যায়ে ভাগাভাগি করে দেওয়ার ফলে দরিদ্রতর রাজ্যগুলোর ভাগে তুলনামূলক বেশি রেশন কার্ড পড়ে। দেখা যায়, অনেক রাজ্যে রেশন কার্ডের আওতা কমে গেছে। কারণ, রাজ্যগুলো কেন্দ্র-নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে ইতোমধ্যে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে রেশন প্রদান করছিল। ফলে এনএফএসএ-র আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দের বাইরে বিভিন্ন রাজ্য সরকার যেসব রেশন কার্ড ইস্যু করে, যেগুলোকে বলা হয় নন-এনএফএসএ রেশন কার্ড। বিভিন্ন রাজ্য সরকার নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী এসব নন-এনএফএসএ কার্ডধারীদের রেশন প্রদান করে থাকে। যেমন, মিজোরাম সরকার ১৫ রুপি দরে ৮ কেজি করে চাল সরবরাহ করে। মেঘালয় সরকার ১০-১২ টাকা কেজি দরে পরিবারপ্রতি ৮ কেজি করে চাল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭-৮ টাকা কেজি দরে ‌১-৫ কেজি আটা সরবরাহ করে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের খাদ্য সুরক্ষা যোজনা রেশন কার্ড-১-এর মাধ্যমে ২ টাকা কেজি দরে ২ কেজি চাল এবং ৩ কেজি গম পাওয়া যায়।১০

ভারতীয় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন বা এনএফএসএ-র আওতায় দুই ধরনের রেশন কার্ড রয়েছে‒অতিদরিদ্রদের জন্য অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা (AAY) এবং অগ্রাধিকারভুক্তদের জন্য প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড (PHH) রেশন কার্ড।

আবার অনেক ক্ষেত্রে রাজ্য নিজস্ব অর্থায়নে কেন্দ্র-ঘোষিত মূল্যের তুলনায় কম দামে রেশন বিক্রয় করে। তামিলনাড়ু রাজ্যে উভয় ধরনের এনএফএসএ রেশন কার্ডের আওতায় চাল কেজিপ্রতি ২ টাকার বদলে বিনা মূল্যে প্রদান করা হয়। একইভাবে ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশায় কেন্দ্রীয় সরকারের চেয়ে কম মূল্যে চাল বিক্রয় করা হয়।১১ এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের বিতরণ করা চাল, গম, চিনি ও কেরোসিনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য ডাল, ভোজ্য তেল, আয়োডিনযুক্ত লবণ, মসলা ইত্যাদিও স্বল্পমূল্যে রেশনের দোকানে বিক্রয় করে থাকে।১২ যেমন, বাজারে অড়হর ডালের দাম কেজিপ্রতি ১২০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় গুজরাট সরকার ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ ১৭ হাজার রেশনের দোকানে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রির ঘোষণা দেয়।১৩

 

ছবি: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি ন্যায্যমূল্যের রেশন দোকানে রেশন কার্ড-এর ধরন অনুযায়ী এবং খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের রেশন কার্ডধারী কত দামে কী কী পণ্য পেতে পারেন তার তালিকা।
ছবি: ভারতের ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি পোর্টালে রেশন কার্ডের পরিসংখ্যান, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

শুরুতে অতিদরিদ্র ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের রেশন কার্ড তৈরি হয় ২০১১ সালের আর্থসামাজিক ও জাতিভিত্তিক জনশুমারির পরিসংখ্যানের নিরিখে। ইন্টারনেটে প্রত্যেক গ্রাম ও রেশন ডিলারের জন্য এই তালিকা পাওয়া যায়, ফলে জালিয়াতি করে অনুপযুক্ত কাউকে কার্ড প্রদান করা হলে তা শনাক্ত করা যায়।১৪ আইনানুসারে সরকারের দায়িত্ব হলো, প্রতিবছর নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করে অনুপযুক্তদের বাদ দেওয়া এবং উপযুক্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। এই গণবণ্টনব্যবস্থা থাকার সুবিধা হলো, রেশনের দোকানের মাধ্যমে বণ্টন করার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য সরকারকে কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস) কিনতে হয়, ফলে একদিকে কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন, অন্যদিকে দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং সার্বিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ওপর সরকারের একধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকে।

অতিদরিদ্র ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের রেশন কার্ড তৈরি হয় ২০১১ সালের আর্থসামাজিক ও জাতিভিত্তিক জনশুমারির পরিসংখ্যানের নিরিখে। ইন্টারনেটে প্রত্যেক গ্রাম ও রেশন ডিলারের জন্য এই তালিকা পাওয়া যায়, ফলে জালিয়াতি করে অনুপযুক্ত কাউকে কার্ড প্রদান করা হলে তা শনাক্ত করা যায়।১৪ আইনানুসারে সরকারের দায়িত্ব হলো, প্রতিবছর নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করে অনুপযুক্তদের বাদ দেওয়া এবং উপযুক্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।

বাংলাদেশের বিলুপ্ত রেশনব্যবস্থা

বাংলাদেশে বর্তমানে সাধারণ নাগরিকদের জন্য কোনো রেশনব্যবস্থা চালু না-থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিক পর্যন্ত বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে রেশনব্যবস্থা চালু ছিল। অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯২ সালে রেশনব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হলেও রেশনের আওতা ও বরাদ্দ কমানোর তৎপরতা শুরু হয় সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে।১৫ সে সময় মোট ৮ ধরনের রেশন চালু ছিল: স্ট্যাটুটরি বা সংবিধিবব্ধ রেশন, মডিফায়েড বা পরিবর্তিত রেশন, রিলিফ বা ত্রাণ, প্রায়োরিটি বা অগ্রাধিকার, লার্জ এমপ্লয়ার বা বৃহৎ নিয়োগদাতা, সরকারি চাকরিজীবী, সরকারি ও বেসরকারি আটার মিল। এর মধ্যে সংবিধিবদ্ধ রেশন ছিল শহরের মানুষের জন্য, যার আওতায় ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রাঙামাটি শহরে বসবাসকারী নাগরিকরা। এই রেশন কার্ডের মাধ্যমে সরকার-নির্ধারিত বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল, গম, চিনি, ভোজ্য তেল এবং লবণ সপ্তাহে একবার কেনা যেত। মডিফায়েড বা পরিবর্তিত রেশন কার্ড ছিল গ্রামের মানুষের জন্য, যাদের কর এবং আয়ের ভিত্তিতে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’‒এই চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে রেশন প্রদান করা হতো। সবচেয়ে দরিদ্র গ্রামবাসী ছিলেন ‘এ’ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে দেওয়া এই রেশন কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে দুবার করে সংবিধিবদ্ধ রেশনের সমপরিমাণ রেশন ক্রয় করা যেত। যেহেতু এই রেশন মাসে দুবার উত্তোলন করা যেত, তাই এই রেশন কার্ডধারীরা শহরের মানুষের তুলনায় অর্ধেক রেশন পেত। তা ছাড়া, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেবল ‘এ’ ক্যাটাগরির এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘বি’ ক্যাটাগরির রেশন কার্ডধারীরা রেশন পেত। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে রিলিফ বা ত্রাণ হিসেবে বিনা মূল্যে চাল ও গম বিতরণ করা হতো। এ ছাড়া বাকি সব ধরনের রেশনই ছিল বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য। এর মধ্যে অগ্রাধিকার রেশন ছিল জেলখানা, হাসপাতাল, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ছাত্রাবাসের জন্য। সরকারি চাকরিজীবী ও অগ্রাধিকার রেশনের আওতায় সংবিধিবদ্ধ রেশনের সমপরিমাণ রেশন প্রদান করা হতো। ৫০ জনের বেশি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান পেত সংবিধিবদ্ধ রেশনের অর্ধেক। এ সময় রেশন হিসেবে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হতো, যার আওতায় ছিল প্রায় ২ কোটি মানুষ। ১৯৭৪-৭৫ সালে রেশনের মাধ্যমে বিতরণ করা মোট খাদ্যশস্যের ৩১ শতাংশ পরিবর্তিত রেশন, ২৭ শতাংশ সংবিধিবদ্ধ, সরকারি চাকরিজীবী ১৪ শতাংশ, রিলিফ ৯ শতাংশ, অগ্রাধিকার রেশন ৬ শতাংশ, বেসরকারি ও সরকারি আটার কলে যথাক্রমে ৬ ও ২ শতাংশ রেশন বিতরণ করা হয়।১৬

সমস্যার সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ না-নিয়ে ‘দাতা গোষ্ঠী’ নামে পরিচিত বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকেই রেশনের বদলে বিভিন্ন ধরনের শর্তযুক্ত খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হতে থাকে, যার দৃষ্টান্ত হলো কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (১৯৭৪) এবং ভিজিডি (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট-১৯৭৫)। বাংলাদেশের রেশনব্যবস্থা উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে এসব বিদেশি সংস্থার প্রভাবের দৃষ্টান্তস্বরূপ মার্কিন সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড) এবং বিশ্বব্যাংকের ভূমিকার কথা উল্লেখ করা যায়।

এই রেশনব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, রেশনের আওতায় বিতরণ করা ভর্তুকি মূল্যের খাদ্যশস্যের একটা বড় অংশ গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বদলে শহরের সচ্ছল নাগরিক, সরকারি কর্মজীবী ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ভাগে পড়ত, সেই সঙ্গে দুর্নীতি ও কালোবাজারির সমস্যা তো ছিলই। এসব সমস্যার সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ না-নিয়ে ‘দাতা গোষ্ঠী’ নামে পরিচিত বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকেই রেশনের বদলে বিভিন্ন ধরনের শর্তযুক্ত খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হতে থাকে, যার দৃষ্টান্ত হলো কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (১৯৭৪) এবং ভিজিডি (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট-১৯৭৫)। বাংলাদেশের রেশনব্যবস্থা উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে এসব বিদেশি সংস্থার প্রভাবের দৃষ্টান্তস্বরূপ মার্কিন সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড) এবং বিশ্বব্যাংকের ভূমিকার কথা উল্লেখ করা যায়। ইউএসএইড-এর ‘পিএল ৪৮০ টাইটেল ওয়ান অ্যান্ড থ্রি’ নামের খাদ্য ‘সহায়তা’ কর্মসূচির মূল্যায়ন প্রতিবেদন থেকেই দেখা যাক:

‘From the outset of the Food for Development program in 1978 a Mission objective has been the phasing down and ultimate elimination of major parts of the ration system. The World Bank also was active in getting the Bangladesh Government to reduce ration subsidies; cooperation between the World Bank and the Mission was an important aspect of this effort. The OMS system was considered to be more equitable and effective in delivering food grains than was the ration system and less of a financial burden on the Government. The phase down of the ration system was to be accomplished by (1) establishing the OMS system and (2) raising ration prices to bring them gradually closer to the free market rate.

The Government has taken various measures to rationalize its food grain distribution policy. Procurement and ration prices have been increased, and the ration quota has been reduced. By late FY 1981 and early FY 1982 the difference between prevailing market prices and ration prices was only 15 percent for rice, the narrowest margin in 10 years.’

অর্থাৎ, ‘১৯৭৮ সালের ফুড ফর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের শুরু থেকেই [ইউএসএইড] মিশনের একটি লক্ষ্য ছিল রেশনব্যবস্থাকে ছোট করে আনা এবং একপর্যায়ে এর একটা বড় অংশকে উচ্ছেদ করে দেওয়া। বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশ সরকারকে দিয়ে রেশনে ভর্তুকি কমানোর ব্যাপারে সক্রিয় ছিল; এই প্রচেষ্টার একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল [ইউএসএইড], মিশনের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা। রেশনব্যবস্থার তুলনায় ওএএমএস বা খোলা বাজারে চাল বিক্রির কর্মসূচিকে তুলনামূলক বেশি ন্যায্য ও কার্যকর এবং সরকারের জন্য তুলনামূলক কম অর্থনৈতিক বোঝা সৃষ্টিকারী বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। রেশনব্যবস্থাকে ছোট করে আনার উপায় হিসেবে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা সেগুলো হলো: ১) ওমএসএ ব্যবস্থা চালু করা এবং ২) রেশনের মূল্য বৃদ্ধি করতে করতে বাজারমূল্যের কাছাকাছি নিয়ে আসা।

সরকার খাদ্য বিতরণব্যবস্থার যৌক্তিকীকরণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। খাদ্যশস্যের ক্রয়মূল্য এবং রেশনের বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, এবং রেশনের কোটাও হ্রাস করা হয়েছে। ১৯৮১ অর্থবছরের শেষ এবং ১৯৮২ অর্থবছরের শুরুর দিকে এসে বাজারমূল্য এবং রেশনের মূল্যের মধ্যে পার্থক্য দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।’১৭

ইউএসএইডের পিএল ৪৮০ টাইটেল থ্রি কর্মসূচির আরেকটি মূল্যায়ন রিপোর্টে ১৯৮২ সালের চুক্তির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে:

‘…The ration system will be reduced by making It gradually less attractive by the end of the Second Five Year Plan period. Measures identified include: (a) the gradual upward adjustment of the ration price with the free market price; (b) reduction in the rice portion of the ration and the eventual withdrawal of rice from the ration system; (c) reduction in the ration quota for Individual cardholders. This Agreement requires the Implementation of these steps: first to reduce the subsidy element In the ration system, and second to eliminate major portions of the ration system Itself.’

অর্থাৎ, ‘… ক্রমাগত অনাকর্ষণীয় করে তোলার মাধ্যমে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ নাগাদ রেশনব্যবস্থাকে ছোট করে আনা হবে। এ লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সেগুলো হলো: ক) রেশনের মূল্যবৃদ্ধি করে তাকে ক্রমেই বাজারমূল্যের কাছাকাছি নিয়ে আসা; খ) রেশন থেকে ক্রমেই চালের অংশ হ্রাস করা এবং একপর্যায়ে রেশনব্যবস্থা থেকে চাল পুরোপুরি প্রত্যাহার করা; খ) রেশন কার্ডপ্রতি রেশন কোটার পরিমাণ কমিয়ে আনা। চুক্তিটি স্বাক্ষর করার ফলে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে: প্রথমত, রেশনব্যবস্থা থেকে ভর্তুকির পরিমাণ হ্রাস করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, খোদ রেশনব্যবস্থারই একটি বড় অংশ উচ্ছেদ করতে হবে।’

এর পরই মূল্যায়ন রিপোর্টে এসব পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করে বলা হয়:

‘The BDG has performed admirably in bringing ration prices closer to domestic free market prices. In March 1982, the ratios of ration shop to market prices were 88% for rice and 91% for wheat. These ratios moved In 1983/84 to 90% for rice and 96% for wheat. The latent figures for 1984/85 Indicate that the rice ration price remained at 90% of its market price, while rationed wheat prices moved lip to 97% of market.’

অর্থাৎ, ‘রেশনের মূল্যকে বাজারমূল্যের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। ১৯৮২ সালের মার্চে চালের ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের তুলনায় রেশনমূল্য ছিল ৮৮ শতাংশ এবং গমের ক্ষেত্রে ৯১ শতাংশ। ১৯৮৩-৮৪ সালে এই হার বেড়ে চালের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ এবং গমের বেলায় হয় ৯৬ শতাংশ। আর ১৯৮৪-৮৫ সালের তথ্য থেকে দেখা যায়, চালের রেশনমূল্য বাজারমূল্যের ৯০ শতাংশ থাকলেও গমের মূল্য বেড়ে ৯৭ শতাংশ হয়েছে।’১৮

এভাবে কথিত দাতা সংস্থার পরামর্শে বাংলাদেশের সরকারগুলো ধারাবাহিকভাবে রেশন বাবদ ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়া এবং রেশনের মূল্য বাড়িয়ে ক্রমেই বাজারমূল্যের কাছাকাছি নিয়ে রেশনকে ক্রমেই অনাকর্ষণীয় করতে থাকে। ১৯৮৯ সালে ‘মডিফায়েড রেশন’কে ‘গ্রামীণ রেশন’-এ রূপান্তরিত করা হয় এবং একপর্যায়ে ১৯৯২ সালে গ্রামীণ ও সংবিধিবদ্ধ উভয় ধরনের রেশনই বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এভাবে কথিত দাতা সংস্থার পরামর্শে বাংলাদেশের সরকারগুলো ধারাবাহিকভাবে রেশন বাবদ ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়া এবং রেশনের মূল্য বাড়িয়ে ক্রমেই বাজারমূল্যের কাছাকাছি নিয়ে রেশনকে ক্রমেই অনাকর্ষণীয় করতে থাকে। ১৯৮৯ সালে ‘মডিফায়েড রেশন’কে ‘গ্রামীণ রেশন’-এ রূপান্তরিত করা হয় এবং একপর্যায়ে ১৯৯২ সালে গ্রামীণ ও সংবিধিবদ্ধ উভয় ধরনের রেশনই বন্ধ করে দেওয়া হয়।১৯

বাংলাদেশের রেশনব্যবস্থা উচ্ছেদের পদক্ষেপসমূহের ক্রমধারা২০
সালনীতি পরিবর্তন
খাদ্যনীতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনসমূহ (Long waves in food policy reforms)
১৯৭২-৭৪ শহরাঞ্চলের রেশন চ্যানেলসমূহের ব্যাপক বিস্তার ঘটে
১৯৭৪‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির শুরু হয়
১৯৭৫‘ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং’ (VGD) কর্মসূচির শুরু হয়
১৯৭৮রেশন চ্যানেলের ভর্তুকি কমানোর জন্য পরিকল্পনা কমিশন সুপারিশ প্রদান করে
১৯৮১গণ আইন ৪৮০-এর মাধ্যমে রেশনমূল্যকে সংগ্রহমূল্যের সঙ্গে সংযুক্ত করার মাধ্যমে রেশন চ্যানেলের ভর্তুকি হ্রাসের প্রক্রিয়া শুরু হয়
১৯৮৩পল্লি রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি (Rural Maintenance Program) শুরু হয়
১৯৮৮গ্রামাঞ্চলে আটা চাকির বিতরণ শুরু হয়
১৯৮৯মডিফাইড রেশনিং চ্যানেলের পরিবর্তে পল্লি রেশনিং চ্যানেল শুরু হয়
১৯৮৯দেশের অভ্যন্তরে খাদ্যশস্যের চলাচলে স্থগিতাদেশ বাতিল করা হয়
১৯৯১ডিসেম্বর মাসে পল্লি রেশনিংব্যবস্থা স্থগিত করা হয়
খাদ্যনীতি ক্ষুদ্র পরিবর্তনসমূহ (Short bursts in food policy reforms)
১৯৯২মে মাসে পল্লি রেশনিং চ্যানেলটি বিলুপ্ত করা হয়
১৯৯২জুলাই মাসে প্রথম ব্যক্তিখাতে গম আমদানির অনুমতি প্রদান করা হয়
১৯৯২অক্টোবর মাসে খাদ্যশস্যে ঋণ প্রদানের স্থগিতাদেশ বাতিল করা হয়
১৯৯২নভেম্বর মাসে সরকারিভাবে ধান-চালের সংগ্রহ স্থগিত করা হয়
১৯৯২মিলগেট চুক্তি বাতিল করা হয়
১৯৯২খাদ্য অধিদপ্তরের জনবল কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়
১৯৯২সংবিধিবদ্ধ রেশনিং চ্যানেলের মাধ্যমে চালের বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়
১৯৯৩জুলাই মাসে প্রথম ব্যক্তিখাতে চাল আমদানির অনুমতি প্রদান করা হয়
১৯৯৩সংবিধিবদ্ধ রেশনিং চ্যানেলের মাধ্যমে গমের বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়
১৯৯৩শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি শুরু হয়
২০০২শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া হয়
২০০২সমন্বিত খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি শুরু হয়

 বাংলাদেশের বিভিন্ন খাদ্যসহায়তা কার্যক্রম

খাদ্য নিরাপত্তা ও উৎপাদন বৃদ্ধির নামে বিদেশি দাতা সংস্থার পরামর্শে বাংলাদেশ থেকে রেশনব্যবস্থা উচ্ছেদ করার ফলে বাংলাদেশে বর্তমানে সারা বছর ধরে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের কাছে নির্দিষ্ট দরে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের জন্য আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক কোনো গণবণ্টন কর্মসূচি নেই; বরং বিভিন্ন ধরনের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু রয়েছে। অবশ্য সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের রেশন দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে রয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কারারক্ষী ও ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা রেশন সুবিধা ভোগ করেন। প্রতি মাসে পুলিশের সব সদস্য প্রতি কেজি চাল ২ টাকা ১০ পয়সা এবং প্রতি কেজি গম ১ টাকা ৭৭ পয়সা দরে রেশন হিসেবে পান। আনসার, কারারক্ষী, ফায়ার সার্ভিস ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারীরাও একই দরে চাল ও গম উত্তোলন করেন। বিজিবির সদস্যরা প্রতি কেজি ২ টাকা ৫৫ পয়সা দরে চাল ও ২ টাকা ১৫ পয়সা দরে গম উত্তোলন করেন। পুলিশ সদস্যদের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী, এক সন্তানসহ কারও পরিবারের তিন সদস্য হলে মাসে ৩০ কেজি চাল, ২৫ কেজি আটা, ৭ কেজি ডাল, ৬ লিটার তেল ও ৪ কেজি চিনি পেয়ে থাকেন। কারও পরিবারের সদস্য স্বামী-স্ত্রীসহ চারজন হলে প্রতি মাসে ৩৫ কেজি চাল, ৩০ কেজি আটা, ৮ কেজি ডাল, ৮ লিটার তেল ও ৫ কেজি চিনি পেয়ে থাকেন। স্বামী-স্ত্রীসহ সর্বোচ্চ দুই সন্তানের জন্য রেশন সুবিধা দেওয়া হয়। জানুয়ারি ২০২০ থেকে পুলিশের চাকরিকালীন রেশন সুবিধা বাড়িয়ে আজীবন করা হয়েছে।২১

অবশ্য সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের রেশন দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে রয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কারারক্ষী ও ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা রেশন সুবিধা ভোগ করেন। প্রতি মাসে পুলিশের সব সদস্য প্রতি কেজি চাল ২ টাকা ১০ পয়সা এবং প্রতি কেজি গম ১ টাকা ৭৭ পয়সা দরে রেশন হিসেবে পান। আনসার, কারারক্ষী, ফায়ার সার্ভিস ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারীরাও একই দরে চাল ও গম উত্তোলন করেন। বিজিবির সদস্যরা প্রতি কেজি ২ টাকা ৫৫ পয়সা দরে চাল ও ২ টাকা ১৫ পয়সা দরে গম উত্তোলন করেন। পুলিশ সদস্যদের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী, এক সন্তানসহ কারও পরিবারের তিন সদস্য হলে মাসে ৩০ কেজি চাল, ২৫ কেজি আটা, ৭ কেজি ডাল, ৬ লিটার তেল ও ৪ কেজি চিনি পেয়ে থাকেন।

ছবি: বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি বাহিনীর সদস্যদের প্রাপ্ত রেশনের চাল ও আটার দর এবং পুলিশের দুই সদস্যের পরিবারের মাসিক রেশন, ইনফোগ্রাফিক্স: দেশ রূপান্তর, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

বর্তমানে বাংলাদেশে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যেসব খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো‒টিসিবির মাধ্যমে সময় সময় বাজারদরের চেয়ে কিছুটা কম মূল্যে তেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ ইত্যাদি বিক্রি, ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি, শহরাঞ্চলে ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএস-এর চাল বিক্রি, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা উৎসব উপলক্ষ্যে এককালীন সহায়তার ভিজিএফ কার্যক্রম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভিজিডি কার্যক্রম ইত্যাদি। বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা-২০১৭ অনুসারে ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত নিম্ন আয়ের ৫০ লাখ পরিবারকে পল্লি অঞ্চলে কর্মাভাবকালীন অর্থাৎ মার্চ থেকে এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর‒এই ৫ মাস ১০ টাকা কেজি দরে নির্দিষ্ট কার্ডের মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল সরবরাহ করা হয়।২২

বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি পেলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত ওএমএস বিক্রয় কেন্দ্র ও ট্রাকের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হয়।২৩

এ ছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা উৎসবসহ বিভিন্ন উপলক্ষ্যে দুস্থ, অতিদরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি/পরিবারকে এককালীন খাদ্য/অর্থসাহায্য দেওয়ার জন্য রয়েছে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং বা ভিজিএফ কর্মসূচি। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে প্রায় ১ কোটি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ইদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ১০ কেজি চালের সমপরিমাণ ৪৫০ টাকা২৪ এবং ইদুল আজহা উপলক্ষ্যে ১০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়।২৫

আর ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় প্রতি দুই বছর মেয়াদি ভিজিডি চক্রে দেশব্যাপী ১০ লাখ ৪০ হাজার অতিদরিদ্র নারীকে মাসিক ৩০ কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়।২৬

ভারতের গণবণ্টনব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন ও তার ফলাফল

রেশনব্যবস্থায় চুরি, দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু এসব সমস্যা যে সমাধান অযোগ্য কোনো বিষয় নয়, তার দৃষ্টান্ত হলো ভারতীয় রেশনব্যবস্থা। যেসব অভিযোগে বাংলাদেশের রেশনব্যবস্থা পুরোপুরি উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেসব অভিযোগ ভারতীয় রেশনব্যবস্থার বিরুদ্ধেও ছিল। ভারতীয় রেশনব্যবস্থায় কী ভয়াবহ মাত্রায় দুর্নীতি হতো, তা ভারতের বিখ্যাত গবেষক জঁ দ্রেজের লেখা থেকে দেখা যাক:

‘কারা রেশন পাবেন, তা স্থির করার কোনো ও যুক্তিগ্রাহ্য নিয়ম ছিল না। বিপিএল তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল না। কে কতটা রেশন পাবেন, তারও কোনো ঠিকঠিকানা ছিল না। রেশন দোকানের মালিকরা নিজেদের ইচ্ছায় চলতেন। অনেকেরই খাতারও হদিস পাওয়া যেত না, আর দোকানের বাইরে যে বিজ্ঞপ্তি-বোর্ড লাগানোর নিয়ম, তার কথা না-তোলাই ভালো। সব স্তরে স্বচ্ছতার অভাব ছিল এবং অসৎ রেশন ডিলার ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের যৌথ প্রচেষ্টায় গণবণ্টনব্যবস্থায় আসা চাল ও গমের সিংহভাগই খিড়কির দরজা দিয়ে পাচার হয়ে যেত। ২০০৪-০৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে রেশন দোকানে যত চাল-গম এসেছিল, জাতীয় নমুনা সমীক্ষার তথ্য বলছে, তার ৮১ শতাংশই চোরাবাজারে বিক্রি হয়েছিল। ২০১১-১২ সালে অনুপাতটি দাঁড়িয়েছিল ৬৫ শতাংশে।’২৭

রেশনব্যবস্থায় চুরি, দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু এসব সমস্যা যে সমাধান অযোগ্য কোনো বিষয় নয়, তার দৃষ্টান্ত হলো ভারতীয় রেশনব্যবস্থা। যেসব অভিযোগে বাংলাদেশের রেশনব্যবস্থা পুরোপুরি উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেসব অভিযোগ ভারতীয় রেশনব্যবস্থার বিরুদ্ধেও ছিল।

কিন্তু ভারতে রেশনব্যবস্থার এই দুর্নীতি ও অনিয়মকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে সেই রেশনব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করা হয়নি; বরং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আইনি অধিকারে পরিণত করা হয়েছে ও নানা ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ রকমই একটি পদক্ষেপ হলো, ভারতের পুরো রেশনব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন অর্থাৎ রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করা থেকে শুরু করে রেশন সংগ্রহ পর্যন্ত সবকিছুই ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা। ফলে সব রেশনের দোকান ডিজিটাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত। অনলাইন রেশন কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে রেশন কার্ড বাতিল, অন্তর্ভুক্ত করা ও পরিবর্তন করার কাজ করা হয়। রেশন কার্ডের আবেদন করার পর তা মোবাইল থেকেই অনলাইনে ট্র্যাক করা যায়। রেশন কার্ড এবং আধার কার্ডের মধ্যে সংযোগ ঘটানোর কারণে রেশন কার্ড নকল বা জালিয়াতি করা সম্ভব হবে না। বেশিরভাগ রাজ্যের গুদাম থেকে রেশনের দোকান পর্যন্ত সাপ্লাইন চেইন অটোমেশন করা হয়েছে। অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনের ফলে গুদাম থেকে চালান নিয়ে ট্রাক বের হওয়ার পর, ট্রাক নির্ধারিত গন্তব্যে যাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা সম্ভব। রেশন দোকানদার ও রেশনের সুবিধাভোগীদের কাছে এসএমএসের মাধ্যমে রেশন আসার খবর পৌঁছে যায়।

ভারতে রেশনব্যবস্থার এই দুর্নীতি ও অনিয়মকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে সেই রেশনব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করা হয়নি; বরং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আইনি অধিকারে পরিণত করা হয়েছে ও নানা ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ রকমই একটি পদক্ষেপ হলো, ভারতের পুরো রেশনব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন অর্থাৎ রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করা থেকে শুরু করে রেশন সংগ্রহ পর্যন্ত সবকিছুই ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা।

ছবি: অনলাইন সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে গুদাম থেকে খাদ্যশস্যের চালান ট্র্যাক করা যায়

 

ছবি: রেশন আসার এসএমএস

আগে ডিলারদের গুদাম থেকে রেশন সংগ্রহ করতে হতো, বর্তমানে সরকার নিজ দায়িত্বে রেশনের দোকানে রেশন পৌঁছে দেয়। রেশনের দোকানেও ডিজিটালাইজেশনের প্রভাব পড়েছে‒ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্রে দেখে নেওয়া যায় সঠিক ওজন দেওয়া হয়েছে কি না, বায়োমেট্রিক পরিচয় ব্যবহার করে রেশন প্রদান করার ফলে একজনের রেশন আরেকজনের পক্ষে জালিয়াতি করে তুলে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি ট্রানজেকশন অনলাইন পোর্টালে আপডেট হয়ে যায়। রেশন বিতরণের তথ্য অনলাইনে আপডেট করার ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের পক্ষে নজরদারি করা সম্ভব হয় সংশ্লিষ্ট দোকান থেকে কী পরিমাণ রেশন বিতরণ করা হয়েছে, কী পরিমাণ বাকি রয়েছে। রেশন বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে বিনা খরচে নির্দিষ্ট হটলাইনে ফোন করে বা অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে অভিযোগ জানানোরও ব্যবস্থা রয়েছে।২৮

ছবি: বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ দিয়ে রেশন প্রদান করা হচ্ছে
ছবি: ডিজিটাল ওজন মাপার মেশিনে মেপে রেশন দেওয়া হচ্ছে

ছবি: ডিজিটাল ওজন মাপার মেশিনে মেপে রেশন দেওয়া হচ্ছে

শুধু তাই নয়, স্থানীয় অধিবাসীদের সমন্বয়ে রেশনের দোকানের কার্যক্রমের ওপর তদারকির জন্য কমিটি থাকে, যে কমিটি প্রতিমাসে একবার রেশনের খাদ্যশস্যের গুণগতমান পরীক্ষা করে, রেশনের মান সন্তোষজনক কি না, সে বিষয়ে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া রেশন বিতরণে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে রাজ্য সরকার সোশ্যাল অডিট করে থাকে।২৯

ভারতীয় রেশনব্যবস্থার এই পরিবর্তন ও ডিজিটালাইজেশনের ফলে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ভারতীয় রেশনব্যবস্থার সংস্কারের পর ২০১৬ সালের জুন মাসে পরিচালিত এক মাঠ গবেষণার সূত্র ধরে জঁ দ্রেজ জানাচ্ছেন রেশনব্যবস্থার কী ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে:

‘ক্ষেত্র সমীক্ষায় আমরা দেখেছি, ৮৫ শতাংশ মানুষই জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় নতুন রেশন কার্ড পেয়ে গিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে বাদ পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে—গরিব পরিবার রেশন কার্ড পায়নি; কিন্তু বছর দুয়েক আগেও অবস্থা যতখানি ভয়ংকর ছিল, এই ভ্রান্তি সে তুলনায় কিছুই নয়। দু-বছর আগেও আমাদের সমীক্ষার পরিবারগুলোর অর্ধেকের রেশন কার্ড ছিল না, এবং বহু ক্ষেত্রেই অতিদরিদ্র পরিবারগুলো রেশন কার্ড থেকে বঞ্চিত থাকত। এখন অন্ত্যোদয় ও প্রায়োরিটি কার্ড তৈরি হয় ২০১১ সালের আর্থসামাজিক ও জাতিভিত্তিক জনশুমারির পরিসংখ্যানের নিরিখে, একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ইন্টারনেটে এই তালিকা পাওয়া যায়— প্রত্যেক গ্রামের জন্য, প্রত্যেক রেশন ডিলারের জন্য। কিছু কাল আগেও রাজ্যে বিপিএল তালিকা নিয়ে যে ভয়ংকর কাণ্ড হতো, তার তুলনায় এটি বিপুল উন্নতি।

কার জন্য কতখানি বরাদ্দ, সেই হিসাবও জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রবর্তিত হওয়ার পর নিতান্ত সহজ হয়ে গিয়েছে। মানুষ যখন নিজেদের প্রাপ্যবিষয়ে সম্পূর্ণ অবহিত থাকেন না, তখন তাদের ঠকানো সহজ হয়। এই সমীক্ষা চলাকালীন আমরা এক দিন জঙ্গলমহলে ছিলাম। সেখানে এখনো খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হয়নি। আমরা নিজের চোখে দেখে এলাম, প্রাপ্যের পরিমাণ বিষয়ে অস্বচ্ছতা থাকলে মানুষ কীভাবে ঠকেন। তাদের কতটা পাওনা, বোঝা কার্যত অসম্ভব। তারা বোঝেনও না। রেশন দোকান থেকে যা দেয়, তারা সেটুকু নিয়েই বাড়ি ফেরেন। খাদ্য সুরক্ষা আইনে প্রাপ্যের পরিমাণ একেবারে স্পষ্ট—অন্ত্যোদয় পরিবারের জন্য প্রতি মাসে ৩৫ কিলোগ্রাম, আর প্রায়োরিটি পরিবারের জন্য সদস্যপিছু মাসে পাঁচ কিলোগ্রাম চাল-আটা। দুই ক্ষেত্রেই, কিলোগ্রামপ্রতি দুই টাকা দরে।

স্বচ্ছতা বেড়েছে, প্রাপ্যের পরিমাণ বোঝা সহজ হয়েছে এবং অন্যান্য সংস্কারও হয়েছে। অনুমান করা চলে, এগুলোর ফলেই রেশনে চুরির পরিমাণ অত্যন্ত দ্রুত কমেছে। আমাদের সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছয় শ-টির কাছাকাছি পরিবার গত মে মাসে গড়ে তাদের প্রাপ্য রেশনের ৯৫ শতাংশ পেয়েছেন। আমরা জানতে চেয়েছিলাম, অন্য মাসে তারা কতটা রেশন পান। জানা গেল, তখনো প্রাপ্যের ৯৫ শতাংশ রেশন তারা পেয়ে থাকেন।’৩০

শুধু তাই নয়, যে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের রেশনব্যবস্থা উচ্ছেদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, সেই বিশ্বব্যাংকই ভারতের রেশনব্যবস্থা সংস্কারের প্রশংসা করে লিখেছে:

‘ভারতের গণবণ্টনব্যবস্থা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, এমনকি দরিদ্র রাষ্ট্রের অনিয়মে জর্জরিত কর্মসূচিতেও বড় ধরনের মোড় পরিবর্তন করা সম্ভব। আজ থেকে ১৩ বছর আগেও ভারতীয় গণবণ্টনব্যবস্থার যে আওতা ছিল এবং যে ধরনের অনিয়মের তথ্য পাওয়া যেত, তাতে কর্মসূচিটির বিপজ্জনক অদক্ষতাই ফুটে উঠত। ২০০৫ সালে ভারতের দরিদ্রতম ১০টি পরিবারের মধ্যে মাত্র ৩টি পরিবার রেশনের দোকান থেকে খাদ্যশস্য কিনত, অর্ধেকের বেশি খাদ্যশস্য সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছাত না। নীতিনির্ধারকেরা এই কর্মসূচিটি সম্পর্কে বেশ হতাশ ছিলেন, কোনো ধরনের সংস্কার অসম্ভব মনে হতো। আজ, নাগরিক সমাজ, প্রশাসক, রাজনীতিবিদ ও বিচার বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টার ফলে অনেক রাজ্যের গণবণ্টনব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। কর্মসূচিটি আগের চেয়ে আরও বেশিসংখ্যক দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে এবং খাদ্যশস্য বেহাত হওয়ার হার হ্রাস পেয়েছে।

রেশনব্যবস্থার এই উন্নতির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী খাদ্যের উচ্চমূল্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে এবং খরা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কালে দারিদ্র্যের কবলে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।… ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে নির্দিষ্ট কিছু নিম্ন আয়ের রাজ্যে পরিচালিত খুদে জরিপের ফলাফল অনুসারে, এসব রাজ্যের রেশন কার্ডধারী নাগরিকরা তাদের জন্য বরাদ্দ খাদ্যশস্যের প্রায় ৯০ শতাংশ বুঝে পেয়েছেন।

পরিসংখ্যান থেকেও বিষয়টা স্পষ্ট হয়। ২০০৪-০৫ সালে মাত্র ২২.৪ শতাংশ ভারতীয় পরিবার রেশনের দোকান থেকে খাদ্যশস্য কিনত। ২০১১-১২ সালে এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়, যা ১৯৯৭ সাল থেকে নির্দিষ্ট আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য গণবণ্টনব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি। ২০১৬ সালে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নের পর রেশনের আওতা আরও বেড়েছে, ফলে সরকারি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, দেশটির ৭৪ শতাংশ পরিবারের কাছে রেশন কার্ড রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, রেশনব্যবস্থার এই উন্নতির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী খাদ্যের উচ্চমূল্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে এবং খরা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কালে দারিদ্র্যের কবলে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।… ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে নির্দিষ্ট কিছু নিম্ন আয়ের রাজ্যে পরিচালিত খুদে জরিপের ফলাফল অনুসারে, এসব রাজ্যের রেশন কার্ডধারী নাগরিকরা তাদের জন্য বরাদ্দ খাদ্যশস্যের প্রায় ৯০ শতাংশ বুঝে পেয়েছেন।’৩১

উপসংহার

বাংলাদেশে চলমান বিভিন্ন খাদ্যসহায়তামূলক কর্মসূচির সমস্যা হলো, এগুলো সারা বছর ধরে চলে না, অনিয়মিত, অস্বচ্ছ, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং এসব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। দুর্নীতি ও অদক্ষতার অজুহাত দিয়ে বাধ্যতামূলক রেশনব্যবস্থা ভেঙে বিভিন্ন শর্তযুক্ত খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি চালু করা হলেও এসব কর্মসূচি কিন্তু দুর্নীতি ও অদক্ষতা থেকে মুক্ত নয়। বরং অনিয়মিত ও অনির্দিষ্ট হওয়ার কারণে কৃষককে মূল্যসহায়তা প্রদান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের খাদ্য নিরাপত্তার কোনোটাই নিশ্চিত করা যায় না এসব খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে। বিশেষ করে ওএমএস ও টিসিবির মাধ্যমে সময় সময় যেভাবে চাল, ডাল, তেল, চিনি ইত্যাদি বিক্রি করা হয়, তা অপ্রতুল, অনিয়মিত ও অমর্যাদাকর, যা দেশের কৃষক ও ভোক্তা কারও স্বার্থই রক্ষা করতে পারে না।

সরকারকে কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে খাদ্যশস্য সংগ্রহের ওপর জোর দিতে হবে। এতে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি এবং দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দুটোই নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে বাজারে এসব পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যসহায়তা কর্মসূচিগুলোকে রেশনব্যবস্থায় একীভূত করে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে চুরি, দুর্নীতি, অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। এ কারণেই বাংলাদেশে এখন প্রয়োজন একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক রেশনব্যবস্থা চালু করা, যেখানে আর্থিক সামর্থ্য অনুসারে রেশন কার্ডধারী নাগরিকরা মাসজুড়ে নির্দিষ্ট রেশনের দোকান থেকে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতে পারবেন।

ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা আইন-২০১৩-এর আওতায় যে অনুপাতে মানুষকে রেশনের আওতায় আনা হয়েছে, সে অনুপাতে (গ্রামের মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ এবং শহরের ৫০ শতাংশ) বাংলাদেশের নাগরিকদের রেশনের আওতায় আনতে হলে মোটামুটি তিন কোটি রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য রেশন সংগ্রহ করতে হলে সরকারকে কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে খাদ্যশস্য সংগ্রহের ওপর জোর দিতে হবে। এতে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি এবং দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দুটোই নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে বাজারে এসব পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যসহায়তা কর্মসূচিগুলোকে রেশনব্যবস্থায় একীভূত করে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে চুরি, দুর্নীতি, অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। এ কারণেই বাংলাদেশে এখন প্রয়োজন একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক রেশনব্যবস্থা চালু করা, যেখানে আর্থিক সামর্থ্য অনুসারে রেশন কার্ডধারী নাগরিকরা মাসজুড়ে নির্দিষ্ট রেশনের দোকান থেকে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতে পারবেন।

তথ্যসূত্র:

১। গরিব সংকটে, মধ্যবিত্ত দুর্দশায়, প্রথম আলো, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

২। টিসিবির পণ্যের জন্য হুড়োহুড়ি, প্রথম আলো, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

৩। পরিচিত কাউকে দেখলেই মুখ লুকাচ্ছেন মধ্যবিত্তরা, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বাংলাট্রিবিউন; দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না টিসিবি থেকে কাঙ্ক্ষিত পণ্য, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২; ‘সরকার কতো কোনা করি মাল দেয়, তাক টপাস করি শেষ হয়’, প্রথম আলো, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

৪। আড়াই হাজার টাকা করে পাবে ৩৫ লাখ পরিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১, ডেইলি স্টার অনলাইন বাংলা

৫। National Food Security Portal, Department of Food & Public Distribution, Government of India

৬। National Food Security Portal, Department of Food & Public Distribution, Government of India

৭। A review of the coverage of PDS, ideasforindia.in, ১৯ আগস্ট ২০২০

৮। মিজোরাম সরকারের ওয়েবসাইট 

৯। Meghalaya Ration Card, indiafilings.com

১০। খাদ্যসাথী কার্ডের নম্বর কেন গুরুত্বপূর্ণ? কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে, এই সময়, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

১১। A review of the coverage of PDS, ideasforindia.in, ১৯ আগস্ট ২০২০

১২। National Food Security Portal, Department of Food & Public Distribution, Government of India

১৩। National Food Security Act: Gujarat govt to provide toor dal at Rs 50 per kg, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

১৪। জঁ দ্রেজ, উন্নতি হয়েছে, তবে অনেক কিছুই বাকি, আনন্দবাজার, ৩ আগস্ট ২০১৬

১৫। Parastatals to Private Trade: Lessons from Asian agriculture (2008), ed. Shahidur Rashid, Ashok Gulati, and Ralph Cummings Jr. Chapter 5. Pp. 105-106, Johns Hopkins University Press.

১৬। Bangladesh Food policy Review, বিশ্বব্যাংক, ১২ ডিসেম্বর ১৯৭৭, পৃষ্ঠা: ১০-১২

১৭। Aid Project Impact Evaluation Working Paper No. 54, USAID, May 1986, পৃষ্ঠা: ২৫

১৮। FY-1985 Evaluation Of The Bangladesh Program, USAID, Oct 1985, পৃষ্ঠা: ৪

১৯। Parastatals to Private Trade: Lessons from Asian agriculture (2008), ed. Shahidur Rashid, Ashok Gulati, and Ralph Cummings Jr. Chapter 5. Pp. 105-106, Johns Hopkins University Press.

২০। খাদ্যনীতির রাজনৈতিক অর্থনীতি : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত, কাজী সাহাবউদ্দিন ও সীবান সাহান, বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষা, খণ্ড: ৩১ বার্ষিক সংখ্যা ১৪২০, পৃষ্ঠা: ৪১

২১। আমৃত্যু রেশন পাবে পুলিশ, ৩১ জানুয়ারি ২০২০, দেশ রূপান্তর; পুলিশ সদস্যরা অবসরে গেলেও রেশন পাবেন, ৩১ জানুয়ারি ২০২০, প্রথম আলো

২২। আর্টিক্যাল ৪, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা-২০১৭; খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে তালিকা মোতাবেক নতুন করে অতিদরিদ্র উপকারভোগী অন্তর্ভুক্ত করে সেপ্টেম্বর, ২০২১ থেকেই নতুন তালিকাভুক্তদের মাঝে চাল বিতরণসংক্রান্ত পৃষ্ঠাঙ্কন (স্মারক নং-৫৪৩; তাং: ২৩/৮/২১)

২৩। ঢাকা মহানগরসহ অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে ওএমএস কার্যক্রমে চাল বিক্রি (স্মারক নং: ৩৩৫; তাং: ১৯/১১/১৯)

২৪। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের স্মারক, ৩১ মার্চ ২০২১

২৫। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের স্মারক, ৪ জুলাই ২০২১

২৬। ভিজিডি কার্যক্রম, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, ১১ অক্টোবর ২০২১

২৭। জঁ দ্রেজ, উন্নতি হয়েছে, তবে অনেক কিছুই বাকি, আনন্দবাজার, ৩ আগস্ট ২০১৬ 

২৮। Short film on PDS reforms II (2019), Department of Food & Public Distribution, GoI, ২১ ডিসেম্বর ২০২০, ইউটিউব

২৯। Short Film Impact of PDS reform (2019),Department of Food & Public Distribution, GoI, ২১ ডিসেম্বর ২০২০, ইউটিউব

৩০। জঁ দ্রেজ, উন্নতি হয়েছে, তবে অনেক কিছুই বাকি, আনন্দবাজার, ৩ আগস্ট ২০১৬ 

৩১। Schemes To Systems | The Public Distribution System: Anatomy of India’s Food Subsidy Reforms, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বিশ্বব্যাংক

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *