বিজেপির একদলীয় শাসন কি অস্তগামী?

ভারতের লোকসভা নির্বাচন ও রাজনীতি- ১

বিজেপির একদলীয় শাসন কি অস্তগামী?

মাহবুব ইরান

As Gush-Up concentrates wealth onto the tip of a shining pin on which our billionaires pirouette, tidal waves of money crash through the institutions of democracy—the courts, the parliament—as well as the media, seriously compromising their ability to function in the ways they are meant to. The noisier the carnival around elections, the less sure we are that democracy really exists.

Arundhati Roy[1]

I learned our government must be strong;
It’s always right and never wrong!
Our leaders are the finest men
And we elect them again and again
And that’s what I learned in school today
That’s what I learned in school

Tom Paxton, “What Did You Learn in School Today?”[2]

 

‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র’ হিসেবে প্রচারিত ভারতের ১৮তম লোকসভা[3] নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হলো গত ৪ জুন ২০২৪। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট মোট ২৯২ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে, নরেন্দ্র মোদি পরপর তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, যদিও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসন থেকে ৩২টি আসন কম, অর্থাৎ ২৪০টি আসন পেয়েছে বিজেপি। বিগত দুই নির্বাচনে জয়ী এই জোটের বাইরে অন্য কোনো দলের ১০ শতাংশ আসন না থাকার দরুন গত দশ বছর সংসদ ছিল স্বীকৃত বিরোধী দলহীন[4]। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (কংগ্রেস) ৯৯টি আসন পেয়ে এবার সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে। কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়ায় মনে হয়, এই স্বীকৃতির পাশাপাশি বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকে ঠেকিয়ে দেওয়াটাই এক বড় রকমের জয়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোট– ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) মোট ২৩৪টি আসন পেয়েছে।

বিজেপির মোদিকেন্দ্রিক প্রচারণায় ছিল ৪০০ পারের বিপুল হাঁকডাক। তাই হয়তো জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেও সাবেক ক্ষমতাসীন জোট এনডিএ যেন পরাজিত। অন্যদিকে ভীষণ অসম প্রেক্ষাপটে আর আশঙ্কা নিয়ে অংশগ্রহণ করা বিরোধীদের জন্য ফলাফল যেন-বা অনেকটা উচ্ছ্বাসের বা অন্তত স্বস্তির। কিন্তু ২০১৪ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর, গত দশ বছরে বিজেপির একদলীয় রাজনৈতিক আর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রভাবিত একগুচ্ছ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সামাজিক আধিপত্যে বিপুল বিক্রমে ভারত রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে ধসিয়ে দিয়ে, বিপর্যস্ত করে কুক্ষিগত করা হয়েছে, সামাজিক সম্পর্কগুলোকে যেভাবে পাল্টে ফেলা হচ্ছে, তা কি এই আপেক্ষিক ভারসাম্যের ফলে বন্ধ হবে? হিন্দু ভারতের যে ফ্যাসিবাদী প্রকল্প শতপায়ের সরীসৃপের মতো এগিয়ে চলা[5] আরএসএস গত নিরানব্বই বছর ধরে অব্যাহত রেখেছে, তাদের সংসদীয় রাজনীতির শাখা বিজেপিও প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে যে রাজনীতিকে বর্তমান একদলীয় শাসনের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, গৈরিক হিন্দুত্ববাদে ভারতের জনগণকে বশীভূত[6] করার সংগঠিত প্রয়াসের গতি কি এবার স্তব্ধ হবে? আপাতভাবে কিছুটা স্বস্তি বা আশঙ্কামুক্ত মনে করা গেলেও, নির্বাচনের ফলাফলকে একটু খতিয়ে দেখলেই এ বিশ্বাস দৃঢ় হওয়ার সুযোগ নেই। ভারতের সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচন কেন্দ্র করে ধারাবাহিক লেখার প্রথম পর্বে এই শঙ্কার পরিপ্রেক্ষিত আর নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তার বাস্তবতা সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে।

হিন্দু ভারতের যে ফ্যাসিবাদী প্রকল্প শতপায়ের সরীসৃপের মতো এগিয়ে চলা[ আরএসএস গত নিরানব্বই বছর ধরে অব্যাহত রেখেছে, তাদের সংসদীয় রাজনীতির শাখা বিজেপিও প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে যে রাজনীতিকে বর্তমান একদলীয় শাসনের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, গৈরিক হিন্দুত্ববাদে ভারতের জনগণকে বশীভূত করার সংগঠিত প্রয়াসের গতি কি এবার স্তব্ধ হবে?

নির্বাচনের আগে দিল্লির ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রীসহ দুজন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা, দুর্নীতিকে আইনি বৈধতা দেওয়া অসাংবিধানিক ইলেকটোরাল বন্ডকে খারিজ করে দেওয়ার জন্য ভারতের প্রধান বিচারপতিকে হেনস্তা করা, বিজেপিতে যোগদান সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই), এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের (ইডি)[7] তদন্ত বন্ধ করাসহ নানা কায়দায় নির্বাচনী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়মিত পিষে দেওয়ার তীব্র রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টাকে মোকাবিলা করে প্রতিপক্ষরা এই নির্বাচন করেছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্যতম বিজেপির[8] বিপক্ষে নির্বাচন আর্থিক বিচারে এমনিতেই অন্য দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং নয়। উপরন্তু, বিজেপির প্রধান নির্বাচনী প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ থাকাবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও ভোটার উপস্থিতির তথ্য প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনের অনিচ্ছা, কোনো সংবাদ সম্মেলন না করা, প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপির অন্য শীর্ষ নেতাদের দ্বারা আদর্শ আচরণবিধির বারবার স্পষ্ট লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া, ইভিএম মেশিন খোয়া যাওয়া এবং বাকি মেশিনগুলোকে আলাদা করে শনাক্তকরণের জন্য কোনো চিহ্ন না দেওয়া ইত্যাদি কারণে নির্বাচন কমিশনের ওপর পুরোপুরি আশ্বস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। বিশেষত নির্বাচন কমিশনারদের সিলেকশন কমিটিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতাকে রেখে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করার বিষয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ, চাকরির শর্ত ও কার্যকালের মেয়াদ) আইন, ২০২৩ প্রণয়নে অশুভ আশঙ্কা না হওয়াই অস্বাভাবিক।

৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরই ভারতের সাংবিধানিক ভিত্তি এবং জনগণের জীবনের, বিশেষত বিরোধী স্বর, মুসলমান, দলিত, আদিবাসীদের ওপর বিজেপির যে আগ্রাসী আক্রমণ শুরু হয়েছিল, ২০১৯ সালে এককভাবে ৩০৩ আসন আর মোট ভোটের ৩৭ শতাংশ নিশ্চিত করে এবং অধিকাংশ রাজ্যে শাসকদল হিসেবে সেটা লাগামছাড়া হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধসিয়ে দিয়ে, সমস্ত গণতান্ত্রিক পরিসরকে ভয়ংকর বিপর্যস্ত করে তুলে ভারতকে ইতোমধ্যে যে জায়গায় নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি পাকিয়ে তুলেছিল, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য বিজেপির এত শোরগোল সে ক্ষেত্রে এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি করেছিল। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে তারা কী করবেন, সেটা পরিষ্কার কর্মসূচি হিসেবে না বললেও তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু যে ভারতের সমাজকে মূল ভিত্তি যে সামাজিক চুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে, সংবিধানের সেই আকাঙ্ক্ষাকেই উপড়ে ফেলতে চায় বলে যে সঠিক আশঙ্কা জনমনে তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে নির্বাচনে বিজেপির অপেক্ষাকৃত দুর্বল ফলাফল, সাময়িকভাবে স্বস্তির। কিন্তু এতে আশঙ্কামুক্ত হওয়া যাবে কি না, তা কেবল আসন সংখ্যায় না; বরং বিজেপি কত শতাংশ ভোট পেয়েছে এবং নতুন কতগুলো রাজ্যে বিজেপি তার আসন জয় আর ভোটের খাতা খুলেছে, সে হিসাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করা দরকার।

রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধসিয়ে দিয়ে, সমস্ত গণতান্ত্রিক পরিসরকে ভয়ংকর বিপর্যস্ত করে তুলে ভারতকে ইতোমধ্যে যে জায়গায় নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি পাকিয়ে তুলেছিল, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য বিজেপির এত শোরগোল সে ক্ষেত্রে এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি করেছিল।

জনতুষ্টিবাদী নেতৃত্বের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হলো, অভিজাতদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে গণমানুষের স্বার্থের সাচ্চা প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা। কংগ্রেসকে একটা পারিবারিক এবং অভিজাত দল হিসেবে চিহ্নিত করে, রাহুল গান্ধীকে ‘শাহজাদা’ হিসেবে চিহ্নিত করে মোদি নিজেকে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর একজন হিসেবেই তুলে ধরেন। ১৩ বছর ধরে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাবস্থায় ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় মোদি নিজের অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত জাতপরিচয় আর বাবার চায়ের দোকানে এবং রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি করা ছেলে হিসেবে নিজের বিজ্ঞাপন করেন।

গত তিন নির্বাচন ধরে মোদির ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’[9] স্লোগান আসলে বিরোধীমুক্ত ভারত, শুধু বিরোধী দল না, যে কোনো বিরোধী স্বরহীন ভারতের ফ্যাসিস্ট বাসনা। রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক অপরিপক্বতাকে কটাক্ষ করে ‘পাপ্পু’ বলে, প্রধান নেতৃত্বকে সম্পূর্ণভাবে লঘু ও হাস্যস্পদ করার মধ্য দিয়ে বিরোধী দল কংগ্রেসকে অপ্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা তারই প্রকাশ। আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে বা সেই দলগুলোর নেতাদের দলত্যাগ করিয়ে বিজেপি তাদের দুর্বল করে, বিভিন্ন রাজ্যে সরকার গঠনের জন্য বিরোধী দলের বিধায়কদের কেনার চেষ্টার পাশাপাশি জাতীয়তাবাদের নামে বিরোধী দলগুলোকে দেশবিরোধী হিসেবে চিত্রিত করে। সর্বোপরি, তারা এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় যেখানে বিজেপির বিকল্প হিসেবে কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি থাকবে না।

গত তিন নির্বাচন ধরে মোদির ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ স্লোগান আসলে বিরোধীমুক্ত ভারত, শুধু বিরোধী দল না, যে কোনো বিরোধী স্বরহীন ভারতের ফ্যাসিস্ট বাসনা।

প্রবল কর্তৃত্ববাদী মোদি শাসনের দশ বছরে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো বিশেষত উত্তর প্রদেশ একটি লিঞ্চিং স্টেটে, সহ-নাগরিকদের পিটিয়ে মারার রাজ্যে পরিণত করেছে।[10] তাই ৪০০+ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে পরপর তৃতীয়বারের জন্য মোদি সরকারের হাঁকডাক তাই সৃষ্টি করেছিল সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা।

প্রবল কর্তৃত্ববাদী মোদি শাসনের দশ বছরে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো বিশেষত উত্তর প্রদেশ একটি লিঞ্চিং স্টেটে, সহ-নাগরিকদের পিটিয়ে মারার রাজ্যে পরিণত করেছে।

ভারত যে একটা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বা ফেডারেল রাষ্ট্র এই সত্যিটা বেশ জোর দিয়ে যেন কখনোই বলা হয় না। ফেডারেল রাষ্ট্র থেকে ভারতকে একটি একক রাষ্ট্রে রূপান্তর করা যে বিজেপির রাজনৈতিক মিশন– ৩৭০ অনুচ্ছেদের লোপ, এক দেশ এক নির্বাচন আর ইউনিফর্ম সিভিল কোডের বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির এজেন্ডাতেই স্পষ্ট। অথচ ভারতের সংবিধানের ভারতের সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদের:

ইন্ডিয়া, অর্থাৎ ভারত, রাজ্যসমূহের সংঘ হইবে।[11]

ইংরেজি সংবিধানে এই অংশটা:
1. Name and territory of the Union.—(1) India, that is Bharat, shall be a Union of States.

পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের আন্তর্জাতিক সীমান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী বা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) এখতিয়ার ১৫ কিমি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিমি করা হয়েছে। মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের সম্পূর্ণ এলাকায় বিএসএফের এখতিয়ার থাকবে।[12] রাজ্যের স্বতন্ত্রতার ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রাসন ২০১৯ সাল থেকে আরও জোরদার হয়েছে। ৪০০ আসন পেয়ে সংবিধান বদলানোর কি খুব দরকার আছে? অ্যান্টি-ন্যাশনাল বা টুকরা-টুকরা গ্যাং তকমা যাতে গায়ে না লাগে, সে জন্য সংবিধানে ভারত রাষ্ট্র নিজেকে যেভাবে হাজির করেছে, সেটা জোরের সঙ্গে কেউ উচ্চারণ করেন না। ২০১০ সালের একটি মামলায় অরুন্ধতী রায় এবং কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. শেখ শওকত হুসেনের বিরুদ্ধে ‘বে-আইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন’ (UAPA)-এর অধীন মামলা চালানোর জন্য দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর সম্প্রতি অনুমতি দিয়েছেন।[13]

বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এ বছর (২০২৪) পেয়েছে মোট ২৯২ আসন (বিজেপি ২৪০), ২০১৯-এ পেয়েছিল ৩৪৭ আসন (বিজেপি ৩০৩) আর ২০১৪-তে ৩২৪ আসন (বিজেপি ২৮২)। এই ফলাফল তাই অনেককেই আশ্বস্ত করেছে। মোদি বা বিজেপি বা আরএসএস এখনই সংবিধান পাল্টে ফেলছে না।

দল

২০২৪-এ প্রাপ্ত আসন

২০১৯

তফাত

২০১৪

তফাত

২০২৪ সালে মোট ভোটের অংশ

তফাত

২০১৯

তফাত

২০১৪

এনডিএ (জোট)

২৯২

-৫৫

-৩২

৪৩.৬৩%

-১.২২%

৫.৪৫%

ভারতীয় জনতা দল

২৪০

-৬৩

-৪২

৩৬.৫৬%

-০.৭৪%

৫.৫৬%

তেলেগু দেসাম পার্টি

১৬

১৩

১.৯৮%

-০.০৬%

-০.৫৭%

জনতা দল (ইউনাইটেড)

১২

-৪

১০

১.২৫%

-০.২০

০.১৭%

শিবসেনা

দলের বিভাজনে এই হিসাব সঠিক হবে না

১.১৫%

দলের বিভাজনে এই হিসাব সঠিক হবে না

আরও ১০ শরিক

১৭

১৩

১০

২.০৩%

-০.৫৮

১.০১%

ইন্ডিয়া (জোট)

২৩৪

ইউপিএ নামে জোট কিছুটা ভিন্ন ছিল

৩৭.০০%

ভিন্ন জোট ছিল

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস

৯৯

৪৭

৫৫

২১.১৯%

১.৭৩%

১.৮৮%

তৃণমূল কংগ্রেস

২৯

-৫

৪.৩৭%

০.৩১%

০.৫৩%

সমাজবাদী পার্টি

৩৭

৩২

৩২

৪.৫৮%

২.০৩%

১.২১%

দ্রাবিড় মুনেত্র কাজগম

২২

-২

২২

১.৮২%

-০.৫২%

০.০৮%

শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে)

দলের বিভাজনে এই হিসাব সঠিক হবে না

১.৪৮%

দলের বিভাজনে এই হিসাব সঠিক হবে না

ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (শরদ পওয়ার )

০.৯২%

-০.৪৬%

-০.৬৪%

কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট)

-৫

১.৭৬%

০.০১%

-১.৪৯%

রাষ্ট্রীয় জনতা দল

১.৫৭%

০.৪৯%

০.২৩%

সূত্র: নির্বাচন কমিশন ও দ্য হিন্দু পত্রিকার ওয়েবসাইটের তথ্যের ভিত্তিতে

২০১৯ সালে বিজেপির প্রাপ্ত আসন ৩০৩ থেকে এবার ৬৩টি আসন কমলেও, লক্ষণীয় হলো, বিজেপির ভোট কিন্তু কমেছে এক শতাংশেরও কম। ২০১৪ সালের তুলনায় বিজেপির আসন কমেছে ৩২টি, কিন্তু বিজেপির ভোট বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।

২০১৯ সালে বিজেপির প্রাপ্ত আসন ৩০৩ থেকে এবার ৬৩টি আসন কমলেও, লক্ষণীয় হলো, বিজেপির ভোট কিন্তু কমেছে এক শতাংশেরও কম। ২০১৪ সালের তুলনায় বিজেপির আসন কমেছে ৩২টি, কিন্তু বিজেপির ভোট বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।

ভোটের অংশ আর আসনের হিসাবে যে জটিলতা ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ (এফটিপি) পদ্ধতির কারণে ঘটে তার কিছুটা ধারণা এই ছক থেকেই পাওয়া যাবে। যেমন: তেলেগু দেসাম পার্টির (টিডিপি) ভোটের অংশ ০.০৬ শতাংশ কমলেও তার আসন বেড়েছে ১৩টি। আবার সামগ্রিকভাবে এনডিএর ২০১৯-এর তুলনায় ভোটের অংশ ১.২২ শতাংশ কমায় আসন কমেছে ৫৫টি অথচ বিজেপির ভোটের অংশ ০.৭৪ শতাংশ কমাতে আসন কমেছে ৬৩টি। ভোট শতাংশকে আসন সংখ্যায় পরিণত করার হিসাবের হেরফের জোটের অন্য সদস্যদের সঙ্গেই উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। এটি আরও তীব্রভাবে বোঝা যেতে পারে, কংগ্রেসের ভোট শতাংশ আসনসংখ্যায় কতটা রূপান্তরিত হয় তার হেরফেরের মধ্যে।

সেফলজি বা নির্বাচন বিদ্যার জটিল সমীকরণ দিয়ে ধন্দ সৃষ্টি করা এই তথ্য উপস্থাপনের উদ্দেশ্য নয়। বরং এই ছকটা বুঝে নেওয়া যে নির্বাচনে কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোটের যে ফলাফল, তা সবসময় তাদের শক্তি বা জনপ্রিয়তাকে সরাসরি এবং পুরোপুরি নির্দেশ না-ই করতে পারে। একইরকমভাবে, আসনের হিসাব করে বিজেপির প্রভাব দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এই সরল হিসাবও করা যাবে না।

বিজেপি কিন্তু তাদের ভোটার ভিত্তি ধরে রাখতে পেরেছে, কংগ্রেসের অপস্রিয়মাণতা কিন্তু বহাল আছে। তাকে শুধু আসলে যখন নির্বাচনটা বিজেপি বনাম ভারতের জনগণ বা আরএসএস বনাম ভারতের জনগণের লড়াই, তখন এই নির্বাচনের ফলাফল এনডিএ বনাম ইন্ডিয়া জোটের সংখ্যাতাত্ত্বিক খতিয়ান দিয়ে বোঝা যাবে না। একইসঙ্গে বিগত বছরের কৃষক আন্দোলন[14], যুব আন্দোলন, নাগরিক অধিকার আন্দোলনসহ ডিজিটাল প্রচারমাধ্যমে যে একদল মুক্তিকামী যোদ্ধার স্বতন্ত্র তৎপরতার সুফল যতটা ইন্ডিয়া জোট বিশেষত কংগ্রেস পেয়েছে, এই আন্দোলন-তৎপরতার সঙ্গে তাদের ততটা জীবন্ত সম্পর্ক না থাকলেও এই সংগ্রামগুলোর সর্বভারতীয় রাজনীতিতে গ্রন্থিত করতে পারার শর্ত ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসেরই আছে, তাই ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের অপসারণ আরএসএস/বিজেপির ফ্যাসিবাদকেই নিরঙ্কুশ করবে।

রাজ্য অনুযায়ী আসন, ভোট শতাংশ আর দলের অবস্থানের পরিসংখ্যানে দেখা যাবে আরেকটি চিত্র। লোকসভা হচ্ছে ভারত সংঘের আইনসভা। আর রাজ্যের বিধানমণ্ডল সভা হচ্ছে বিধানসভা। ২০২৪-এ বিজেপি কেরালা, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ নতুন কতগুলো রাজ্যে তাদের ভোটের খাতা খুলেছে। ৬৩টি আসন কমেছে মানে অবশ্যই বেশ কয়েকটি রাজ্যে যেখানে বিজেপির ভোট শতাংশ কমেছে অবস্থান দুর্বল হয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে, কেরালা, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ আর দাদরাতে বিজেপি আসন পেতে শুরু করেছে। আসন যেমন বেড়েছে মোট শতাংশ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই বছরে আছে তিনটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সেগুলোর ফল থেকেই আসলে ধারণা করা যাবে একক দল হিসেবে বিজেপির উত্থান কতটা ধাক্কা খেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গত ২০১১ সাল থেকে বিজেপির উত্থান, ২০২৬ সালের বিধানসভায় জয়ী হওয়ার আশঙ্কা কিন্তু মোটেই অমূলক নয়। পরিকল্পিত তৃতীয় কিস্তিতে এই বিষয়ে আরেকটু আলোকপাত করা যাবে বলে আশা করি।

এই যে, গত দশ বছরে জনগণের জীবনের জন্য মৌলিক কিছু না করে কেবল বড় বড় বাগাড়ম্বর করে, নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কী করা হয়েছে সে বিষয়ে মানুষের সামনে তুলে ধরার ব্যাপারে থোড়াই কেয়ার করেও যে ২৪০টি আসন, তার চেয়েও বড় ৩৬ শতাংশের ওপর ভোট ধরে রাখা গেল সেটাই কি শঙ্কার নয়?

বিপুল বৈচিত্র্য, ভিন্নতা এমনকি বৈপরীত্য নিয়ে ভারত আসলে একটি মহাদেশ। সে হিসেবে ভারতে রয়েছে অজস্র বিভাজন রেখা। এর সবই যে ‍সিম্বায়োটিক সম্পর্কে সংহত হয়েছে সেটা হয়নি। তাই রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে দাবি করার যে ঐকমত্যগুলো হয়েছিল সেগুলোও সবসময় সংহত হয়নি। রয়েছে গোঁজামিলও[15]। যখন কোনো প্রতাপশালী আওয়াজ থাকে না, বা তার তীব্রতা কমে যায় তখন এই গুঞ্জনগুলো স্পষ্ট হতে শুরু করে। এই নির্বাচনে যেহেতু ২০১৪ সালের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেসের প্রতি তীব্র অসন্তোষ, বা ২০১৯ সালে পুলওয়ামায়  সামরিক কনভয়ের হামলার মতো ‘জাতীয়’ সেনসেশনাল কিছু ছিল না। রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার ধামা দিয়ে আসলে সেই গুঞ্জনগুলো পুরোপুরি চাপা দেওয়া যায়নি। রামমন্দির যে অযোধ্যায় প্রতিষ্ঠিত করা হলো তার সংসদীয় আসন ফয়েজাবাদেই যেমন বিজেপি আসন জিততে পারেনি, এটা যেমন একটা কাব্যিক ন্যায়বিচার[16] হয়েছে, তেমনি বিজেপির রামমন্দিরের প্রচার কেবল রামভক্ত হিন্দু পূজারিদের উদ্দেশেই নয়; বরং অনেক ক্ষেত্রে বলা যায় রামমন্দিরের মূল লক্ষ্য তারাও যারা ৯০ দশকে শুরু নয়া উদারতাবাদী অর্থনৈতিক নীতির সুবিধাভোগী কসমোপলিটান মধ্যবিত্ত আর উচ্চবর্ণের জনগোষ্ঠী।

বিপুল বৈচিত্র্য, ভিন্নতা এমনকি বৈপরীত্য নিয়ে ভারত আসলে একটি মহাদেশ। সে হিসেবে ভারতে রয়েছে অজস্র বিভাজন রেখা। এর সবই যে ‍সিম্বায়োটিক সম্পর্কে সংহত হয়েছে সেটা হয়নি। তাই রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে দাবি করার যে ঐকমত্যগুলো হয়েছিল সেগুলোও সবসময় সংহত হয়নি। রয়েছে গোঁজামিলও।

মোদির দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক

ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রচারণার পেশাদারিত্বে নিজেদের অনন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া বিজেপির এবারের প্রচারণা ছিল দল হিসেবে তারা ৩৭০ আসন আর জোট হিসেবে ৪০০ আসনের বেশি পাবে। তা সে চারশ না হোক, তিনশ না হোক, এমনকি বিজেপি একা আড়াইশ আসন না পেলেও নরেন্দ্র মোদি কিন্তু পরপর তিনবার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এই রেকর্ড এর আগে কেবল ভারতের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আছে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রিত্ব হিসেবেও মোদির হ্যাটট্রিক রেকর্ড আছে।

এই নির্বাচনে কোনো জাতীয় ইস্যু ছিল না। পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য আর ক্রমাগত কর্তৃত্বমূলক শাসনের দিকে (হিন্দিতে ‘তানেশা’) দেশ ধাবিত হওয়ার আশঙ্কা মানুষের আলাপের মধ্যে উঠে এসেছে। ১৯৯০ দশকের থেকে শুরু হওয়া নব্য উদারতাবাদী অর্থনীতির ফলাফলের প্রকট প্রকাশ। এমনকি ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র অপসারিত হয়ে যে নব্য ফ্যাসিবাদী শাসনের বিস্তার হচ্ছে সেটা নব্য উদারতাবাদী অর্থনীতির সৃষ্ট সংকটেরই অনিবার্য রাজনৈতিক সমাধান।[17]

২০২৪ সালের নির্বাচনকে ২০১৪-এর নির্বাচনের মাধ্যমে বিজেপির একদলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সূচনা, আর বিজেপির এই উত্থানকেও ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের একদলীয় শাসনের অবসান আর একইসঙ্গে রাজ্যভিত্তিক দলগুলোর বিকাশ, সামাজিক ন্যায়বিচারের রাজনীতির এজেন্ডা জাজ্বল্যমান হতে থাকার সময় আগ্রাসী হিন্দুত্বের রাজনীতি কীভাবে ভারতের উচ্চবর্ণ, আর ১৯৯০ দশক থেকে চলে আসা ভারতে ‘নয়া উদারতাবাদী’ অর্থনৈতিক নীতির সুফলভোগী মধ্যবিত্তের সমর্থনে বিকশিত হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান দরকার। এই নির্বাচনকে বোঝার সঙ্গে সঙ্গে, তা কীভাবে ভারতের সর্বোপরি এবং আক্রমণাত্মক হিন্দুত্বের দুটি প্রবণতা একত্রিত হয়ে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদিকে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে, সেদিকেও আলোকপাত করা প্রয়োজন।

আগ্রাসী হিন্দুত্বের রাজনীতি কীভাবে ভারতের উচ্চবর্ণ, আর ১৯৯০ দশক থেকে চলে আসা ভারতে ‘নয়া উদারতাবাদী’ অর্থনৈতিক নীতির সুফলভোগী মধ্যবিত্তের সমর্থনে বিকশিত হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান দরকার।

এই নির্বাচনের ফলকে এককথায় বলতে হলে বোধহয় এভাবেই বলা যায়: ভারতের জনগণ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেনি, কিন্তু মোদি বা বিজেপি নিজেদের যে অবস্থানে দেখাতে চেয়েছে বা ভারতকে যেখানে নিতে চেয়েছে তা গ্রহণ করেনি। (চলবে)

মাহবুব ইরান: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি।

ইমেইল: mahbub.iran@bdgws.org

তথ্যসূত্র:

[1] Pp 11. Capitalism: A Ghost Story

[2] https://youtu.be/0iSisz9uLiI?si=NdMna7zABWxXcHZ2

[3] ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা বা সংসদের নিম্নকক্ষ হলো লোকসভা আর উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা। বর্তমানে লোকসভায় ৫৪৩টি আসনে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সাংসদ নির্বাচিত হন। সরকার গঠন করতে হলে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থাৎ ন্যূনতম ২৭২টি আসনে জিততে হবে।

[4] আঠারোটি লোকসভার মধ্যে সাতটিতেই কোনো স্বীকৃত বিরোধী দল ছিল না। ভারতে দল হিসেবে এর আগে কংগ্রেসের একদলীয় আধিপত্যের একটা প্রবণতাও এই তথ্য থেকে আঁচ করা যায়। ১৯৫২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত প্রথম পাঁচটি কংগ্রেস সরকারের ক্ষেত্রে কেবল চতুর্থ লোকসভায় বিরোধী দল ছিল। কংগ্রেস সরকারের সপ্তম লোকসভাও বিরোধী দলবিহীন ছিল। আগামী কিস্তিতে এক নজরে বিগত নির্বাচনগুলোর সার্বিক তথ্য থাকবে।

[5] পেন ওয়ার্ল্ড ভয়েসেস ফেস্টিভ্যালে অরুন্ধতী রায় ‘আর্থার মিলার ফ্রিডম টু রাইট’ বক্তৃতায় আরএসএস-কে এভাবে চিত্রায়িত করেছিলেন। পুরো বক্তৃতা: https://youtu.be/DvQZkMs-pa0?si=td77exmoQ3N-Kl48

[6] গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য, বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও শিক্ষক তাসলিমা আখ্ তার তার আলোচনা ও পাঠদান বক্তৃতায় ‘হেজেমনি’-কে বাংলায় ‘বশীকরণ’ হিসেবে ব্যবহার করেন।

[7] স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) ভারত সরকারের প্রধান কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। সিবিআই দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অপরাধ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মাত্রার অন্যান্য গুরুতর অপরাধের তদন্ত করে। ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজস্ব বিভাগের অন্তর্গত ইডি (ED) একটি অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা, যা আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে তদন্ত করে।

[8] ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা দলগুলোর বার্ষিক অডিট রিপোর্টের বিশ্লেষণ থেকে দ্য হিন্দুর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২২-২৩ সালে বিজেপির মোট আয় ২ হাজার ৩৬১ কোটি রুপি 54% of BJP’s total income came from electoral bonds – The Hindu। তাইওয়ানের কুওমিনটাং, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি আর ভারতের বিজেপি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী তিনটি রাজনৈতিক দল। (ট্রু স্কুপ নিউজ)

[9] নরেন্দ্র মোদির বক্তৃতায় এই স্লোগানের উদ্ভব নিয়ে গপ্পো আছে।

[10] অ-রাজনৈতিক বিরোধিতাকে নিষ্ঠুরভাবে দমন; সরকারের সমালোচক বুদ্ধিজীবী, অ্যাকটিভিস্ট, গায়ক, আইনজীবীদের ‘বুদ্ধিজীবী সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়ে জেলবন্দি করা; UAPA-এর মতো কঠোর আইন প্রয়োগ করে বিনা বিচারে বছরের পর বছর আটকে রাখা; সরকারবিরোধীদের ‘আরবান নকশাল’ বা ‘জিহাদি’ হিসেবে চিহ্নিত করে জনগণের সামনে তাদের টার্গেট বানানো; সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর; আবার এসব ঘটনায় মুসলিমদেরই গ্রেপ্তার করার পরিপ্রেক্ষিতে দেখুন সর্বজনকথায় প্রকাশিত অরুন্ধতী রায়ের বক্তৃতার অনুবাদ ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ, বিক্ষোভ এবং মিথ ও ইতিহাসের দ্বন্দ্ব

এ ছাড়াও ‍উত্তর প্রদেশের প্রেক্ষিতে সন্ত্রাস আর বিচারহীনতার অঙ্গনা চ্যাটার্জির (২০১৯) প্রবন্ধ উল্লেখযোগ্য।

[11] ‘ভারতের সংবিধান’, ২০২২ সালের বাংলা সংস্করণ- বিধি ও ন্যায় মন্ত্রণালয়, ভারত সরকার।

[12] ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর একটি গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিএসএফের অধিক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা হয়।

[13] খেয়াল করার বিষয় মামলাটি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের সময় করা হয়েছিল, সরকারের সিদ্ধান্তেই এই মামলা গ্রহণ করা হয়েছিল। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর এ বিষয়ে সাফাই গেয়ে মতামত কলাম লিখেছেন। যেখানে বিজেপির মূল সুর থেকে তার কোনো ছেদ নাই, কেবল অতটা চড়া নয় হয়তো। বাংলাদেশে প্রথম আলো এই কলাম অনুবাদ করেছে। https://www.prothomalo.com/opinion/column/ct3839rhyq

[14] মোদি সরকারের কৃষি সম্পর্কিত আইনের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি কৃষক অবরোধ ও আন্দোলন নিয়ে দেখুন: করপোরেট পুঁজির বিরুদ্ধে কৃষকদের দিল্লি ঘেরাও

[15] জাতীয়তাবাদী ধর্মনিরপেক্ষতা ও দক্ষিণ এশিয়ার জাতিরাষ্ট্রের সংকট বিষয়ে দেখতে পারেন দক্ষিণ এশিয়ার জাতিরাষ্ট্রের সংকট এবং বাংলার ‘অনাগত সমাজ’

[16] সমাজবিজ্ঞানী ও ভারতের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটির (সিএসডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলোর পদে ইস্তফা দিয়ে পেশা, আর নির্বাচন বিশ্লেষণ আর ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণীর কাজ থেকে প্রথমে আম আদমি পার্টিতে যুক্ত হয়ে, ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’ নামে রাজনৈতিক দল গড়ে তুলে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া যোগেন্দ্র যাদব এক সাক্ষাৎকারে ফয়েজাবাদ আসনের ফলকে এক ধরনের ‘পোয়েটিক জাস্টিস’ বলেছিলেন।

[17] প্রভাত পট্টনায়েকের ভারত: নব্য উদারবাদী প্রবৃদ্ধি ও নব্য ফ্যাসিবাদীকাল – সর্বজনকথা (sarbojonkotha.info).
আনু মুহাম্মদের ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বিশ্বব্যবস্থার বৈপরীত্য’ অনীক এপ্রিল ২০২৩।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •