কোটা সংস্কার আন্দোলন, সরকারের নিপীড়ন ও নৃশংসতার টাইমলাইন

১০ম বর্ষ আগাম প্রকাশ
ছবি: এমরান হোসেন/ডেইলি স্টার

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে ২০১৮ সালে বাতিল করা কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের পরিপ্রেক্ষিতে। এ সময় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানাতে থাকেন। কিন্তু সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত করেনি, তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেয়নি; বরং আদালতের এখতিয়ার বলে পাশ কাটিয়ে গেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই মাসের শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ পর্যায়ে প্রবেশ করে। আন্দোলনকারীরা এ সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় মিছিল-সমাবেশ করেছেন এবং স্বল্প সময়ের জন্য সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। তখন পর্যন্ত আন্দোলনে সরকার কোনো বলপ্রয়োগ করেনি, ফলে আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ১৫ জুলাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার মধ্য দিয়ে। নিচে এ সময়কার ঘটনাবলির টাইমলাইন দেওয়া হলো:

রোববার (১৪ জুলাই ২০২৪): জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডের কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

– চীন সফর উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’আন্দোলনকারীরা এই মন্তব্যকে তাদের জন্য অবমাননাকর মনে করে রাতে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। সেসব মিছিলে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন: ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার/ কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ কিংবা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’। রাজাকারের নাতি-নাতনির সঙ্গে তুলনা করায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পরিহাস হিসেবে এই স্লোগানগুলো দিলেও সরকার সমর্থকরা এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ হিসেবে অভিহিত করেছে বলে প্রচার করতে থাকে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার যুক্তি তৈরি করে।

সোমবার (১৫ জুলাই ২০২৪): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার…’ স্লোগান দেওয়াকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও লাগে না।

– আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে। তিনি বলেন, আন্দোলন থেকে আত্মস্বীকৃত রাজাকার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতা বা আচরণের প্রকাশ ঘটেছে। এর জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত।

– কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান দিচ্ছেন তাদের শেষ দেখিয়ে ছাড়বেন বলে হুঁশিয়ারি প্রদান করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ দফায় দফায় হামলা চালায়। হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হয়। তাদের হাতে ছিল হকিস্টিক, লাঠি, রড, জিআই পাইপসহ দেশি অস্ত্র। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে পিস্তল নিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায় অন্তত ৫ অস্ত্রধারীকে। হামলায় শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চিকিৎসা নেন ২৯৭ জন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমনকি ঢাকা মেডিকেলেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ১৬ জুলাই বেলা ৩টায় সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ দফায় দফায় হামলা চালায়। হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হয়। তাদের হাতে ছিল হকিস্টিক, লাঠি, রড, জিআই পাইপসহ দেশি অস্ত্র। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে পিস্তল নিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায় অন্তত ৫ অস্ত্রধারীকে। 

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই ২০২৪): আগের দিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ফলে বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি নিক্ষেপ করে আর ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র এবং পিস্তল-বন্দুক নিয়ে হামলা করে। এতে ৬ তরুণ নিহত হন। যার মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুজন এবং রংপুরে একজন নিহত হন। সরকার বিকেলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করে। রাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি নিক্ষেপ করে আর ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র এবং পিস্তল-বন্দুক নিয়ে হামলা করে। এতে ৬ তরুণ নিহত হন।

শহীদ আবু সাঈদ: ১৬ জুলাই ২০২৪ তারিখ দুপুরে রংপুর শহর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রধান ফটকের সামনে সমবেত হন। দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ অবস্থান নেয়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা ছিলেন পার্ক মোড়ের দক্ষিণ ও পূর্বদিকে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২২) ছিলেন শিক্ষার্থীদের মিছিলের একেবারে সামনের দিকে। আবু সাঈদ এ সময় বুক চিতিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। এ সময় বিপরীত দিকে থাকা পুলিশ সদস্যদের ছুড়তে থাকা বুলেটের আঘাতে একপর্যায়ে বসে পড়েন আবু সাঈদ। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শহীদ ফারুক, ওয়াসিম, ফয়সাল: ১৬ জুলাই ২০২৪ তারিখ চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর স্টেশনে বিক্ষোভ কর্মসূচি করার কথা ছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। বেলা সাড়ে ৩টায় এই কর্মসূচি শুরুর আগেই স্টেশনে অবস্থান নেয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে আন্দোলনকারীরা খণ্ড খণ্ড জমায়েতে স্টেশনের দিকে আসতে থাকেন। ৩টার দিকে মুরাদপুর মোড়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও পাথর নিক্ষেপ। এ সময় অন্তত তিনজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গুলি ও ককটেলের আঘাতে নিহত হন ফারুক, ওয়াসিম ও ফয়সাল। এর মধ্যে মো. ফারুক (৩২) ছিলেন ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী, মো. ওয়াসিম (২২) চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ফয়সাল আহমেদ (২০) ছিলেন ওমর গণি এমইএস কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী।১০

মুরাদপুর মোড়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও পাথর নিক্ষেপ। এ সময় অন্তত তিনজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।

শহীদ শাহজাহান, সবুজ: ১৬ জুলাই ২০২৪ দুপুরে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে সায়েন্স ল্যাবের কাছে ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের হাতে দেখা যায় রামদা, রড, লোহার পাইপ, বাঁশ-কাঠের লাঠি। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় অবস্থান করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন। একপর্যায়ে সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় নিহত হন মো. শাহজাহান (২৪) ও সবুজ আলী (২৫)। এর মধ্যে শাহজাহান ছিলেন একজন হকার, তিনি বলাকা সিনেমা হলের সামনে হকারি করতেন। আর সবুজ আলী ছিলেন ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।১১

সায়েন্স ল্যাবের কাছে ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের হাতে দেখা যায় রামদা, রড, লোহার পাইপ, বাঁশ-কাঠের লাঠি।

– সরকার ১৬ জুলাই মধ্যরাত থেকে মোবাইল ইন্টারেনেট (ফোর-জি) এবং ১৭ জুলাই রাত থেকে ব্রডব্যান্ডসহ পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থাই বন্ধ করে দেয়।১২

 বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই ২০২৪): ‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ কমপ্লিট শাটডাউন বা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ অচল হয়ে পড়ে। ঢাকা ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা, গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় এক দিনে কমপক্ষে ৪১ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৩ এবং ঢাকার বাইরে ৮ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, রিকশাচালক, হকার, দোকানদার ও পথচারী। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীও রয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগের শরীরে গুলির অথবা মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।১৩

প্রথম আলো, ১৯ জুলাই, ২০২৪

উত্তরায় এক দিনে ১৯ জন নিহত: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরার সাইদগ্র্যান্ড সেন্টারের সামনে জড়ো হন স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করতে চাইলে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যারা বাধা দেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের পাশাপাশি রাবার বুলেট ও ছররা গুলি করা হয়। এতে প্রথমে ১১ জন নিহতের খবর পাওয়া গেলেও পরে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর জানা যায়।১৪

– এই বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির পর সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব রাখেন, কোটা বিষয়ে আদালতের শুনানি এগিয়ে আনার কথা বলেন এবং ছয়জন নিহতের ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান।১৫ অথচ তার আগপর্যন্ত সরকার ‘আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই’–এ রকম একটি অবস্থান নিয়ে বসে ছিল। সরকার আলোচনার প্রস্তাব দেয় এমন এক সময়ে যখন ইতোমধ্যেই বিপুল সংখ্যক তরুণ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। শুধু তাই নয়, আলোচনার প্রস্তাবটিও কতটা আন্তরিক ছিল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। কারণ, সরকার যখন আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছিল তখনও রাজপথে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও দলীয় ক্যাডার বাহিনী আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহিংসতা চালিয়ে সরকার আলোচনার কোনো পথ রাখেনি। তিনি বলেছেন, ‘যদি এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজপথ থেকে সরানো না হয়; যদি হল, ক্যাম্পাস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেওয়া হয়, যদি এখনো গুলি অব্যাহত থাকে, তাহলে সরকারকেই সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে।’ আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘শুরুতে আমরাই বারবার সংলাপ চাচ্ছিলাম। খুন করে সেই পথ অবরুদ্ধ করেছে সরকার। সব বাহিনীকে নিরস্ত্র করুন, খুনগুলোর জন্য দায়ী সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলকে শাস্তির আওতায় আনুন, ক্যাম্পাসগুলো আমাদের হাতে ফিরিয়ে দিন।’ আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম লিখেছেন, ‘একদিকে গুলি আর লাশ, অন্যদিকে সংলাপ! আমার ভাইয়ের রক্তের ওপর দিয়ে কীভাবে সংলাপ হতে পারে।’১৬

শহীদ ফারহান ফাইয়াজ (রাতুল): এদিন পুলিশের গুলিতে নিহত এক কিশোরের নাম ফারহান ফাইয়াজ (রাতুল)। সে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল, তার বয়স ১৮ বছরের কম। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ফারহান ধানমন্ডি এলাকায় অবরোধ করছিল। সেখানে পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু ঘটে। তার বুকে ও মুখে ছিল রাবার বুলেটের ক্ষতচিহ্ন। ফারহান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নিজের সম্পর্কে লিখেছিল, ‘একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তোমাকে মনে রাখে।’ ফারহানের মৃত্যুর পর তার আত্মীয় নাজিয়া খান হাসিমাখা একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘ দিস ইজ মাই ফারহান ফাইয়াজ। হি ইজ ডেড নাও। আই ওয়ান্ট জাস্টিস।’ (এই আমার ফারহান ফাইয়াজ। সে এখন মৃত। আমি ন্যায়বিচার চাই) কাশফিয়া আহমেদ নামের একজন লেখেন, ‘বাকরুদ্ধ! ভাষাহীন!… এটা কোনো কথা! খুব সহজেই যার সমাধান হয়ে যেত, তার জন্য এত রক্তপাত! তা-ও আবার এমন তরুণ রক্ত! আর নিতে পারছি না সত্যি। দম বন্ধ হয়ে আসছে।১৭

পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু ঘটে। তার বুকে ও মুখে ছিল রাবার বুলেটের ক্ষতচিহ্ন। ফারহান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নিজের সম্পর্কে লিখেছিল, ‘একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তোমাকে মনে রাখে।’

শহীদ সাইমন: সাইমন চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি মুদি দোকানে চাকরি করতেন। ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার সময় সাইমন গুলিবিদ্ধ হন। অজ্ঞাতপরিচয় লাশ হিসেবে তিন দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে পড়ে ছিল তার মরদেহ। পরে কয়েকজন আত্মীয় তাকে শনাক্ত করেন। সাইমনের গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপের হারামিয়া ইউনিয়নে। সেখানে জীর্ণশীর্ণ একটি ঘরে তার মায়ের বসবাস। সাইমনের বাবা নেই, তার দুই বছরের বড় এক ভাই আছেন যিনি প্রতিবন্ধী। সাইমন চট্টগ্রামে খালুর মুদি দোকানে কাজ করত। তার মা তাকে দেখতে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন এক সপ্তাহ আগে, সাইমনের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল মৃত্যুর চার দিন আগে। কথা ছিল বেতন পেয়ে আবার মায়ের কাছে যাবেন। কিন্তু তার আগেই তার গুলিতে মৃত্যু হয়।১৮

শহীদ আলী হায়দার: পান-সিগারেট বিক্রেতা। ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার একটি সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু ঘটে।১৯

শহীদ মেহেদি হাসান: অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদী হাসান (৩১) ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার ৩ বছর ও ৭ মাস বয়সী দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে।২০

শহীদ আবদুল কাইয়ুম: ১৭ বছর বয়সী আবদুল কাইয়ুম আহাদ কোনো রাজনীতি করত না; পড়ত না কোনো স্কুল কিংবা মাদ্রাসায়। জীবিকার তাগিদে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই গ্রাম ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমায় সে। যাত্রাবাড়ীতে সে রেফ্রিজারেটর ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) মেরামতের কাজ শিখত। কিন্তু তার কাজ শেখা আর শেষ হলো না। ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের পাশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে ঝাঁজরা হয় তার শরীর। আবদুল কাইয়ুমের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের নরোত্তমপুর গ্রামে। আবদুল কাইয়ুমের মা বিবি খোদেজার আক্ষেপ, ‘আমার ছেলের বুকে গুলি করা হয়েছে। মুখ, গলাসহ বুক গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে। ডান হাতের কনুই, বাঁ হাঁটু ও বুকের বাঁপাশে গুলি করা হয়েছে। গুলি করে ছেলেকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলা হয়েছে। কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের? কারা আমার বুকের মানিকে রে এভাবে মারল? আমি কী নিয়ে থাকব?’২১

প্রথম আলো, ১৯ জুলাই, ২০২৪

শুক্রবার (১৯ জুলাই ২০২৪): আগের দিন আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে বাস্তবে শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা জারি রাখার ফলে পরদিন ১৯ জুলাই আরও বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটে। এদিন অন্তত ৭৫ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়।২২ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলন দমনের নামে সরকার এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে, যা দেখে মনে হতে পারে সরকার দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি বিক্ষোভকারীদের ওপর মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি নিক্ষেপ করে। এমনকি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হেলিকপ্টার থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাও রয়েছে।২৩ পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে বহু মানুষ আহত হন, যাদের অনেকের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।২৪

প্রথম আলো, ২০ জুলাই, ২০২৪

– বিকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম শ-খানেক মোটরসাইকেল নিয়ে এসে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের পাল্টা হামলায় জাহাঙ্গীর আহত হন এবং জাহাঙ্গীরের এক সহযোগী জুয়েল নিহত হন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় টানা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দখলে রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। ১৭ জুলাই থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ।২৫

– রাত সাড়ে ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় ৯ দফা দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন চলমান থাকার কথা জানান। এই ৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধ উপায়ে ব্যবহার করে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে মন্ত্রিপরিষদ ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ঢাকাসহ যত জায়গায় ছাত্র শহীদ হয়েছেন, সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে। যেসব পুলিশ সদস্য শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করেছে এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ যেসব সন্ত্রাসী শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে এবং পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে, তাদের আটক এবং হত্যা মামলা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার দেখাতে হবে। দেশব্যাপী যেসব শিক্ষার্থী ও নাগরিক শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগসহ দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদকে কার্যকর করতে হবে। অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দিতে হবে। আর যেসব ছাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের কোনো ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

এই ৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধ উপায়ে ব্যবহার করে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে মন্ত্রিপরিষদ ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

– এই ৯ দফা দাবি জানিয়ে বলা হয়, দাবিগুলো মানার পর তারা ক্যাম্পাসে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সংলাপে বসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।২৬

– ২০ জুলাইয়ের সংবাদপত্রে এই ৯ দফা দাবির কথা প্রচারিত হলেও ২১ জুলাইয়ের সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সহসমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম ১৯ জুলাই শুক্রবার রাতে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের কাছে ৮ দফা দাবি পেশ করেন। এই ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নিহতদের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে গ্রেপ্তার ও বিচার এবং শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা, মাসিক ভাতা ও তাদের পিতামাতার মতামতের ভিত্তিতে একজন সদস্যকে চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান; সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করা এবং ছাত্র সংসদ চালু করা, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার, কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত সব শিক্ষার্থীকে সব ধরনের রাজনৈতিক, আইনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কর্তৃক একাডেমিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা; সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটাকে ৫ শতাংশ করে জাতীয় সংসদে আইন পাস ইত্যাদি।২৭

– ২১ জুলাই প্রকাশিত ৮ দফা দাবির সঙ্গে ২০ জুলাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ৯ দফা দাবির বেশ গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো পার্থক্য রয়েছে। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো: ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগ দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগসহ দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি ৯ দফায় থাকলেও ৮ দফা দাবিতে এসবের কোনো উল্লেখ নেই। ৮ দফা দাবিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বদলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিষিদ্ধের কথা আছে। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো খুদে বার্তায় বলেন, ‘আমাদের কয়েকজন সমন্বয়ককে সরকারি বাহিনী হেফাজতে নিয়ে তাদের দিয়ে মনগড়া বক্তব্য তৈরি করে তা প্রচার করছে। আমাদের পূর্বঘোষিত নয় দফা দাবি বাস্তবায়ন হওয়ার আগপর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন অব্যাহত থাকবে।’ অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন পত্রিকায় যে ৯ দফার খবর ছাপা হয়েছে, তা কোনো মহলের ছড়ানো গুজব।’২৮

– সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ব্যবহার করে ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে।২৯

শহীদ নাইম হোসেন: নাইম হোসেন (১৭) রওশানাআরা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেমে ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে যাত্রাবাড়ীর সানারপাড় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান।৩০

শহীদ আশিকুল ইসলাম আশিক: ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহতদের একজন হলো আশিকুল ইসলাম আশিক (১৫)। ঢাকার বনশ্রী এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বিকেল ৫টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় আশিক। ওই সময় মাথায় গুলি লেগে বাসার সামনে একটি খাবারের দোকানের সামনে লুটিয়ে পড়ে আশিক। আশিক বনশ্রীর একটি মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পাশাপাশি ফ্যাশন ডিজাইনে কাজ করত। তার স্বপ্ন ছিল সে বড় হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হবে, ইতালিতে গিয়ে বড় চাকরি করবে।৩১

শহীদ আসিফ, মুত্তাকিন, রাজু: মাগুড়ার এই তিন যুবক ১৯ জুলাই শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। মো. আসিফ ইকবাল (২৯) ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে স্নাতক শেষ করে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। মো. মুত্তাকিন বিল্লাহ (২৫) মিরপুর-১৪-তে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। কাজ শেষে ফেরার পথে মিরপুর-১০ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। মুত্তাকিনের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিচার করবে কে? কার কাছে বিচার চাইব? বিচার থাকলে কি আর রাস্তায় এভাবে গুলি করে মেরে ফেলত?’ রাজু মোল্লা মোহাম্মদপুরে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করতেন। শুক্রবার কর্মস্থলের পাশেই গুলিবদ্ধ হন। নিহত রাজুর সহকর্মী নাঈম হোসেন জানান, পুলিশ ধাওয়া দিলে হাত উঁচু করে ‘অফিসের স্টাফ’ বলে তারা চিৎকার করতে থাকেন। এর মধ্যে রাজু গুলিবিদ্ধ হন।৩২

শহীদ মো. সোহাগ: ভোলার চরফ্যাশনের চরফকিরা গ্রামের সোহাগ (১৬) মা-বাবার সঙ্গে ঢাকার রামপুরা নতুন বাজার এলাকায় বসবাস করত। তার বাবা সালাউদ্দিন স্বপন বিল্ডিং ভাঙার শ্রমিক। বাবার আয়ে সংসার চলে না দেখে বড় ছেলে সোহাগ এক ডিলারের অধীন খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করত। ১৯ জুলাই শুক্রবার খাদ্যপণ্য পৌঁছে দিতে সাইকেলে করে বেরিয়েছিল সোহাগ। ফোনে কথা বলা অবস্থায় রামপুরা নতুন বাজারে তার মাথার পেছনে গুলি লাগে। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মোবাইল ফোনে মাকে সে বলেছিল, বাসায় ফিরে ভাত খাবে। কিন্তু সেই ফেরা আর হয়নি।৩৩

শহীদ ওমর ফারুক: ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনের সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।৩৪

শহীদ নাইমা সুলতানা: ঢাকার উত্তরার ৫ নম্বর সড়কে এক ভাড়া বাসার চারতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় নাইমা সুলতানা (১৫)। নাইমা ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত।৩৫

শহীদ সাফকাত সামির: ১১ বছর বয়সী সাফকাত সামির একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। তার বাসা ঢাকার মিরপুরের কাফরুলে। ১৯ জুলাই শুক্রবার কাফরুল থানার সামনের সড়কে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দমনে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া ঢুকছিল শিশু সামিরের ঘরে। জানালা বন্ধ করতে গেলে বাইরে থেকে গুলি এসে বিদ্ধ করে শিশুটিকে। গুলিটি তার চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঘরে ছিলেন তার চাচা মশিউর রহমান (১৭)। তার কাঁধেও গুলি লাগে।৩৬

প্রথম আলো, ২৪ জুলাই, ২০২৪

শহীদ মো. ইমরান খলিফা: বেসরকারি চাকরিজীবী ইমরান (৩৩) ঢাকার শাহজাদপুরের খিলবাড়ির টেক এলাকায় বসবাস করতেন, চাকরি করতেন সেখানকারই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ১৯ জুলাই শুক্রবার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ইমরানের স্ত্রী শান্তার ভাষ্য অনুসারে, কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য পথঘাট শান্ত আছে কি না, দেখতে বেরিয়েছিলেন তিনি। গলির মুখে যাওয়ামাত্র পুলিশ তার কোমরে গুলি করে, ফলে তার মৃত্যু হয়।৩৭

শনিবার (২০ জুলাই ২০২৪): কারফিউ ঘোষণা করে সেনা মোতায়েনের পরও ২০ জুলাই ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, সাভার ও নরসিংদীতে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে ৩৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে ঢাকার রামপুরা-বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া, উত্তরা ও মিরপুরে নিহত ১৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ৫ জন, ময়মনসিংহ ও সাভারে ৪ জন করে, গাজীপুর এবং নরসিংদীতে ২ জন করে নিহত হন।৩৮

প্রথম আলো, ২১ জুলাই, ২০২৪

– এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে রয়েছে বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, লক্ষ্মপুর, ফেনী, বরিশাল, পঞ্চগড় ইত্যাদি।৩৯

– ১৯ জুলাই শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে তার পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে ২০ জুলাই ডিবি ও সিআইডি কার্যালয়ে গিয়ে নাহিদের খোঁজ মেলেনি। এদিকে নাহিদের খোঁজে ২০ জুলাই প্রথমে ডিবি কার্যালয় এবং পরে সিআইডি কার্যালয়ে যাওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সহসমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন নাহিদের বাবা বদরুল ইসলাম। বদরুল ইসলাম পরে সংবাদমাধ্যমকে জানান যে সারজিস পরে তাকে ফোন করে জানিয়েছেন তারা বাড়ি পৌঁছেছেন।৪০

শহীদ মোবারক: ১৯ জুলাই শুক্রবার রাজধানীর গ্রিন রোডে মাথায় গুলিবিদ্ধ মোবারক (১৩) মারা যায় ২০ জুলাই শনিবার। কিশোর মোবারক বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার পান্থপথ বক্স কালভার্ট বস্তিতে থাকত। তাদের চারটি গাভি আছে। দুধ বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। ঘটনার দিন মোবারক গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি দুধ পৌঁছে দিতে গিয়েছিল। এ সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়।৪১

শহীদ মিনহাজুল ইসলাম: ২০ জুলাই শনিবার গাজীপুরের বড়বাড়ি জয়বাংলা সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পোশাক শ্রমিক মিনহাজ (১৭)। নিহত মিনহাজ জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার উত্তর রামশালা গ্রামের বাসিন্দা। মিনহাজের বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসী আর মা মানসিক রোগী। তিনি ঢাকার গাজীপুরে বড়বাড়ি এলাকায় খালুর কাছে থাকতেন।৪২

শহীদ রবিউল ইসলাম: ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম (২৬) ২০ জুলাই শনিবার এক গ্রাহকের বাসায় ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি পৌঁছে দিতে গিয়ে শনির আখড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। রবিউল তার দোকানের কর্মচারীসহ একটি অটোরিকশায় শনির আখড়া মোড়ের রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় অটোরিকশায় থাকাবস্থায় রবিউলের বুকে একটি গুলি লাগে। এইচএসসি পাসের পর জীবিকার সন্ধানে আট বছর আগে ঢাকায় আসেন বরিশালের যুবক রবিউল। রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার এক ইলেকট্রিক দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে তিল তিল করে জমানো টাকায় তিন বছর আগে নিজেই ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতির ব্যবসা শুরু করেন। তার স্ত্রীর গর্ভে সাত মাসের সন্তান। সন্তানের মুখ দেখার আগেই রবিউলকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো।৪৩

শহীদ জামাল হোসেন সিকদার: প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরব যাবেন বলে বরিশাল গৌরনদী উপজেলার জামাল (৩৮) ১৯ জুলাই শুক্রবার শনির আখড়ায় এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। পরদিন ২০ জুলাই শনিবার কাপড় কিনতে বেরিয়ে ঢাকার চিটাগং রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সবেমাত্র একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় জামালের মেয়ে নুজহাত হোসেন জিতু। তার কলেজে ভর্তির মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় পিতার মৃত্যু তার জীবনের বাঁক পুরোপুরি বদলে দিল।৪৪

রোববার (২১ জুলাই ২০২৪): সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটার পরিবর্তে ৭ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে রায় প্রদান করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তবে সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।৪৫ লক্ষণীয় বিষয়, এই রায়ের ফলে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি, নারী ও জেলা কোটা থাকল না।

– সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের পর সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দোলনের সঙ্গে বিচার বিভাগের কোনো সম্পর্ক নেই। আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের হত্যাকারীদের বিচার দাবির পাশাপাশি আট দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া বলা হয়, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। এতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে কোটার পরিমাণ নিয়ে যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ আছে। এ জন্য জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে কোটা সংক্রান্ত আইন পাস করতে হবে।৪৬

– কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও মাহিন সরকার সরকারকে ৪ শর্ত পালনের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এগুলো হলো: ইন্টারনেট সংযোগ সচল করা, শিক্ষার্থীদের আসার ব্যবস্থা করে হল খুলে দেওয়া, সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারফিউ তুলে দেওয়া। এই সময়ের মধ্যে এই দাবিগুলো পূরণ না হলে তারা নতুন কর্মসূচি দেবেন বলে জানান। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে যাওয়াকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংলাপ, বৈঠক বলে সমন্বয়কদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। ওটা সংলাপ ছিল না। আমরা দাবি পেশ করতে গিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবারও অনুরোধ করছি, আমাদের বক্তব্য খণ্ডিত বা আংশিকভাবে প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। আপিল বিভাগের রায় নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য দিইনি। অথচ আমরা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছি বলে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।’৪৭

– কারফিউ ঘোষণা করে সেনা মোতায়েনের দ্বিতীয় দিনে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৭ জন আগে আহত হয়েছিলেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭৪। তবে মৃতের এই সংখ্যা কিছু হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া, যা পূর্ণাঙ্গ তথ্য নয়। এর মধ্যে ২১ জুলাই সন্ধ্যা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে গণমাধ্যমকে মৃতের তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।৪৮

প্রথম আলো, ২২ জুলাই, ২০২৪

– ১৭ থেকে ২১ জুলাই–এই ৫ দিনে ঢাকায় প্রায় ২০০ জনসহ সারা দেশে কমপক্ষে ৫৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।৪৯

– বিক্ষোভ দমনে র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস, এমনকি রাবার বুলেট ছোড়া হয়। র‌্যাবের তথ্যানুসারে ২১ জুলাই পর্যন্ত হেলিকপ্টার নিয়ে তারা ৯৮টি অভিযান পরিচালনা করে।৫০

বিক্ষোভ দমনে র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস, এমনকি রাবার বুলেট ছোড়া হয়। র‌্যাবের তথ্যানুসারে ২১ জুলাই পর্যন্ত হেলিকপ্টার নিয়ে তারা ৯৮টি অভিযান পরিচালনা করে।

– ১৯ জুলাই শুক্রবার দিবাগত রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া নাহিদের খোঁজ পাওয়া যায় ২১ জুলাই রোববার। নাহিদ জানান, শুক্রবার রাতে তুলে নিয়ে গিয়ে তাকে লোহার লাঠি দিয়ে পেটানো হয় ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে রোববার ভোরে তিনি নিজেকে পূর্বাচল জলসিঁড়ি প্রকল্প এলাকায় বড় রাস্তার পাশে আবিষ্কার করেন। বাঁ উরু, দুই বাহু আর কাঁধে জখম নিয়ে তিনি ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।৫১

– ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কারফিউ চলাকালে সরকারি জরুরি পরিষেবা ব্যতীত অন্যসব যানে জ্বালানি (সিএনজি, পেট্রল, ডিজেল, অকটেন) না দিতে ফিলিং স্টেশনগুলোকে নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন।৫২

শহীদ মো. আমিন: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ভরিপাশা গ্রামের কিশোর আমিন (১৬) ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করত। ২১ জুলাই রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার দনিয়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।৫৩

সোমবার (২২ জুলাই ২০২৪): সাধারণ ছুটি, কারফিউ ও ইন্টারনেট ব্লকেড চলমান।

… নতুন করে কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যু ঘটে। এ ছাড়া এর আগে মৃত আরও ৮ জনের খবর পাওয়া যায়, যার মধ্যে ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জে নিহত ৩ জন, ১৯ জুলাই মিটফোর্ড হাসপাতালে ৪ জনের মৃতদেহ নেওয়া এবং ২২ জুলাই ১ জন পুলিশের মৃত্যুর খবর রয়েছে। সব মিলিয়ে ১৬ থেকে ২২ জুলাই–এই ৬ দিনে ১৮৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১৬ জুলাই ৬ জন, ১৮ জুলাই ৪১, ১৯ জুলাই ৭৯, ২০ জুলাই ৩৬, ২১ জুলাই ২০ এবং ২২ জুলাই ৫ জনের মৃত্যুর খবর রয়েছে।৫৪

– কোটাবিরোধী আন্দোলন সামনে রেখে ‘নাশকতায়’ মদতদাতা, বাস্তবায়নকারী এবং অভিযানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে তিনটি তালিকা তৈরি করার সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে এই তালিকা ধরে চিরুনি অভিযান পরিচালনার কথা বলা হয়।৫৫

– সরকারঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিক্ষোভের মধ্যে সরকারি স্থাপনা ধ্বংস বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট করা হচ্ছে। যেমন: বাংলাদেশ প্রতিদিন ২২ জুলাই ‘মেগা প্রকল্প ধরে ধরে ধ্বংস’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে সুযোগসন্ধানীরা। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো অন্যতম স্বপ্নের মেগা প্রকল্প ধরে ধরে চালানো হয় ধ্বংসযজ্ঞ। বিশেষ করে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ধ্বংস দেখে আঁতকে উঠছেন সাধারণ মানুষ।’

বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২ জুলাই, ২০২৪

– একটানা ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বহু ধরনের জরুরি সেবা নিতে পারেনি মানুষ। বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করতে না পেরে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে মানুষকে দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়াতে হয়। মানুষ অনলাইনে কোনো ধরনের টাকা লেনদেন, মোবাইল রিচার্জ, ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, বিমানের টিকিট কেনা, অনলাইনভিত্তিক বিনোদনের মাধ্যম (ওটিটি, ইউটিউব) ব্যবহার, পড়াশোনা কোনো কিছুই করতে পারেনি। পণ্যের শুল্কায়ন করতে না পারায় বন্ধ থাকে আমদানি-রপ্তানি। এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়নি, পজ মেশিন কাজ করেনি।৫৬ মানুষের এই ভোগান্তির বিপরীতে সরকারঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয় ইন্টারনেট না থাকার ফলে ‘অন্যরকম পারিবারিক জীবন’ উপভোগের সংবাদ। সেখানে বলা হয়, ইন্টারনেট না থাকার ফলে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গল্পে আড্ডায় সময় কাটে, অনেকে প্রিয়জনের সঙ্গে লুডু ও ক্যারম খেলেন, শিশুরা মোবাইল রেখে খুনসুটিতে লিপ্ত হয়।৫৭

বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২ জুলাই, ২০২৪

মানুষের এই ভোগান্তির বিপরীতে সরকারঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয় ইন্টারনেট না থাকার ফলে ‘অন্যরকম পারিবারিক জীবন’ উপভোগের সংবাদ।

– বিকেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সরকারকে উৎখাত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। ব্যবসায়ী নেতারা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানান এবং তার পাশে থাকার আশ্বাস দেন।৫৮

অন্যদিকে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন জানালেও দলীয়ভাবে অংশগ্রহণের বিষয়ে শুরু থেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন তারা। সাংগঠনিকভাবে মাঠে নামবেন, নাকি আরও কয়েক দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন–তা নিয়ে মতপার্থক্য ছিল। এ নিয়ে দফায় দফায় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা হলেও সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি নেতারা। যদিও দলের হাইকমান্ডের এমন অবস্থানের মধ্যেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে ছিলেন দলটির তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী। বিশেষ করে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন স্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেন।৫৯

– ১৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে উসকানি দিয়ে সাধারণ জনগণকে খেপিয়ে তুলে দলীয় লোক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে সরকার। এখন এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে সরকার নির্বিচারে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করছে।৬০

– ১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সারা দেশে চিরুনি অভিযানে ২১ জুলাই রোববার রাত ১২টা থেকে ২২ জুলাই সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় রাজধানীতে গ্রেপ্তার করা হয় ৫১৬ জনকে। ২০ জুলাই শনিবার রাত ১২টা থেকে ২১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।৬১

– টানা পাঁচ দিন পর ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল-চিটাগং রোড এলাকা সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে। এই পাঁচ দিনে নিহত ৩০ জন, যার মধ্যে ২ জন পুলিশ।৬২

– চার সমন্বয়কের খোঁজ পেতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময়ের মধ্যে তাদের সন্ধান না পেলে অফিস ও বাসাবাড়ির সামনে কালো কাপড় বেঁধে মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়। এই চার সমন্বয়ক হলেন: আসিফ মাহমুদ, আবদুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার ও সহসমন্বয়ক রশিদুল ইসলাম রিফাত।৬৩

– কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে দুটি পক্ষ তৈরির আভাস পাওয়া যায়। তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা সমন্বয়কদের নিয়ে এক পক্ষ আর সাক্ষাৎ না করা সমন্বয়কদের আরেক পক্ষ। যেমন: ‘দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৬ সমন্বয়কের যৌথ বিবৃতি’ শিরোনামে একটি খুদে বার্তা ২২ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টায় গণমাধ্যমকর্মীদের মুঠোফোনে পাঠানো হয়। এই বিবৃতিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হলেও তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে যে কর্মসূচির কথা গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, সে রকম কোনো কর্মসূচি আমাদের নেই।’৬৪

– সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য কোটা বহাল রাখার দাবি জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন। যার মধ্যে রয়েছে দেশের ৬৬টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি; শিক্ষক, অধিকারকর্মী, নারী সংগঠনের ২৫ প্রতিনিধি, সিপিবির নারী সেল ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম।৬৫

– মোবাইল ফোনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছবি পেয়ে কারফিউর তৃতীয় দিন রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও রেলগেট এলাকা থেকে অন্তত পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। যাদের ফোনে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের ছবি ও ভিডিও পাওয়া যায়, তাদের প্রকাশ্যে লাঠিপেটা ও চড়-থাপ্পড় মারা হয়। রাজধানীর উত্তরা এলাকায়ও পথচারীর ফোন যাচাই ও ধরপাকড়ের খবর পাওয়া যায়।৬৬ 

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০২৪): সাধারণ ছুটি ও কারফিউ চলমান। রাতে শুধু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ঘণ্টা খানেকের জন্য পাওয়া গেলেও প্রচণ্ড ধীরগতির ছিল, ফলে কোনো কাজ করা যায়নি। সেইসঙ্গে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি অ্যাপও ব্যবহার করা যায়নি।

– সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে সব গ্রেডে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ এবং কোটার ভিত্তিতে ৭ শতাংশ নিয়োগের বিধান রেখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে পূরণের বিধান রাখা হয়।৬৭

– নতুন করে আর কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আগের দিনগুলোতে আহত দুজনের মৃত্যু এবং আগেই মারা যাওয়া ৮ জনের হিসাবসহ ২৩ জুলাই নাগাদ মৃতের সংখ্যায় দাঁড়ায় ১৯৭।৬৮

– ২২ জুলাই রাত থেকে ২৩ জুলাই বিকেল পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেপ্তার ১ হাজার ১০০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তার ৫১৭। সব মিলিয়ে ১৭ থেকে ২৩ জুলাই গ্রেপ্তার ৩ হাজারের বেশি।৬৯

– বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এক সংবাদ সম্মেলন করে ৪ দফা ‘জরুরি দাবি’ পূরণে সরকারকে আরও দুদিনের আলটিমেটাম দিয়ে জানান, এই ৪ দফা পূরণ না হলে ৮ দফা নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। চার দফা দাবি হলো: ইন্টারনেট সচল করা; কারফিউ প্রত্যাহার করা; বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সংবাদ সম্মেলনে ১৮ জুলাই থেকে ‘নিখোঁজ’ তিনজন সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের সন্ধান চাওয়া হয়। এই সমন্বয়কদের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক ২২ শিক্ষক।৭০

– কোটা সংস্কার সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন,

“যখন আপনি আক্রান্ত হবেন, তখন আপনাকে আত্মরক্ষার্থে ‘ফাইট ব্যাক’ করতে হবে। যখন আমরা ফাইট ব্যাক করেছি, তখন আক্রমণকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। সেই সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আমরা বলতে চাই, হতাহতের যে ঘটনা ঘটেছে সে জন্য আক্রমণকারীরাই দায়ী।”৭১

প্রতিমন্ত্রী আক্রমণকারী হিসেবে বিএনপি-জামায়াতকে চিহ্নিত করে এ কথা বলেন। তবে বাস্তবে কোটা সংস্কারকারীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে প্রথম আক্রমণ করে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আক্রান্ত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল জনসাধরণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কাজেই প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে, হতাহতের দায়দায়িত্ব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বারবার আক্রমণকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরই বর্তায়।

– সরকার এবং সরকার সমর্থক গণমাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক পরিকল্পনা করে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোতে হামলার অভিযোগ প্রচার করা হলেও ফায়ার সার্ভিসের বিশ্লেষণ অনুসারে সারা দেশে ১৬ থেকে ২২ জুলাই যে ১১৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, তার বেশিরভাগই ঘটে পুলিশের অবস্থান ও স্থাপনা ঘিরে। ফায়ার সার্ভিস এই ঘটনাগুলোকে ‘উত্তেজিত জনতা কর্তৃক অগ্নিসংযোগ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।৭২ এ থেকে ধারণা করা যায়, আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের সশস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে জনগণ কর্তৃক ক্ষুব্ধ হয়ে হামলাকারী পুলিশের অবস্থানের আশপাশে বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনাই বেশি ঘটেছে।

সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোতে হামলার অভিযোগ প্রচার করা হলেও ফায়ার সার্ভিসের বিশ্লেষণ অনুসারে সারা দেশে ১৬ থেকে ২২ জুলাই যে ১১৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, তার বেশিরভাগই ঘটে পুলিশের অবস্থান ও স্থাপনা ঘিরে।

– পাশাপাশি শ্রমিক লীগ নেতার পরিকল্পনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনাও উদ্ঘাটিত হয়েছে। যেমন: ২০ জুলাই শনিবার রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া এলাকায় বিআরটিসি ডিপোর ৪টি বাসে অগ্নিসংযোগ করে লেগুনাচালক সোহেল রানা। পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাকে গ্রেপ্তার করলে তিনি ২৩ জুলাই চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা শ্রমিক লীগ সভাপতি দিদারুল আলমের নির্দেশে তিনি বিআরটিসি বাসগুলোতে অগ্নিসংযোগ করেন। এ জন্য তাকে ৫০০ টাকা অগ্রিম এবং পরবর্তী সময়ে ৪ লাখ টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল।৭৩

সমকাল, ২৪ জুলাই, ২০২৪

অগ্নিসংযোগের এ রকম আরও অনেক ঘটনা যে সরকার সংশ্লিষ্টদের ইন্ধনে ঘটেনি, তার কী নিশ্চয়তা?

শহীদ শাহরিয়ার শুভ: কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভ। ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় মারা যান তিনি। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামে। হাসপাতাল থেকে দেওয়া মৃত্যুসনদে বন্দুকের গুলিতে আহত, গুলির আঘাতে মাথার খুলি চুরমার ও মস্তিষ্কে ক্ষতের বর্ণনা দেওয়া হয়। তিনি যশোরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে ডিপ্লোমা শেষে ঢাকায় লিফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা ও সাত মাস বয়সী ছেলেসন্তান মোহাম্মদ মুহিনকে নিয়ে ঢাকার মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ১৮ জুলাই শাহরিয়ার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহরিয়ার ছোট ভাই ও ছেলের জন্য খাবার কিনতে বাইরে বের হন। বাসা থেকে বের হয়ে কিডনি ফাউন্ডেশনের সামনে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে যান। এ সময় বসে আত্মরক্ষা করার সময় একটি গুলি এসে শাহরিয়ারের মাথায় আঘাত করে।৭৪

বুধবার (২৪ জুলাই ২০২৪): সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল এবং বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেওয়া হয়। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সীমিত আকারে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় খুলে দেওয়া হয়।৭৫

– ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চিকিৎসাধীন আরও চারজনের মৃত্যু হয়। ২৪ জুলাই বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন ও মঙ্গলবার সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সংঘাতে এ নিয়ে ২০১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। মৃত্যুর এই হিসাব কিছু হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া। সব হাসপাতালের চিত্র পাওয়া যায়নি। ২৪ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ১৬ জুলাই ৬ জন, ১৮ জুলাই ৪১, ১৯ জুলাই ৮৪, ২০ জুলাই ৩৮, ২১ জুলাই ২১, ২২ জুলাই ৫, ২৩ জুলাই ৩ ও ২৪ জুলাই ৩ জনের মৃত্যু হয়। ২২ থেকে ২৪ জুলাই মৃত্যু চিকিৎসাধীন অবস্থায় হয়।৭৬

প্রথম আলো, ২৫ জুলাই, ২০২৪

২৪ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ১৬ জুলাই ৬ জন, ১৮ জুলাই ৪১, ১৯ জুলাই ৮৪, ২০ জুলাই ৩৮, ২১ জুলাই ২১, ২২ জুলাই ৫, ২৩ জুলাই ৩ ও ২৪ জুলাই ৩ জনের মৃত্যু হয়। ২২ থেকে ২৪ জুলাই মৃত্যু চিকিৎসাধীন অবস্থায় হয়।

– নিখোঁজ থাকার পাঁচ দিন পর ২৪ জুলাই কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয় বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দুজনই জানান। আর রিফাত আত্মগোপনে ছিলেন।

আসিফ মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে লেখেন,

‘গত ১৯ জুলাই রাত ১১টায় আমাকে হাতিরঝিলের মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিতে চাপ দেওয়া হয়। না মানায় ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস (অচেতন) করে রাখা হয়। এই চার-পাঁচ দিনে যতবার জ্ঞান ফিরেছে, ততবার ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়। আজ বুধবার বেলা ১১টায় আবার একই জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়।’

ফেসবুক পোস্টে বাকের লেখেন,

‘আমাকে ১৯ জুলাই সন্ধ্যার পর ধানমন্ডি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং আন্দোলন বন্ধে স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিতে বলায় আমি অস্বীকৃতি জানালে একটা অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখে। যে এলাকা থেকে তুলে নেয়, তার পাশের এলাকায় আমাকে চোখ বেঁধে ফেলে যায়। আমি এখন আমার পরিবারের সঙ্গে নিরাপদে আছি। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আপনাদের সামনে সবিস্তারে সব বলব।’

রিফাত রশীদ ফেসবুকে লেখেন,

‘আমি বেঁচে আছি, মরি নাই। আমি গুম হতে হতে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম। সমন্বয়কদের সিদ্ধান্ত মেনেই আমি নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছিলাম। তারপর এই সাপ-লুডুর জীবন। আজ এর বাড়ি তো কাল ওর বাড়ি। এর মধ্যে যতবার ফোন কানেক্ট করার চেষ্টা করেছি, ততবারই ফোন ট্র্যাকিংয়ের শিকার হয়েছি। জানি না, কতক্ষণ নিরাপদে থাকব।’৭৭

– ২৩ জুলাই রাত থেকে ২৪ জুলাই দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেপ্তার ১ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তার ৬৪১। সব মিলিয়ে ১৭ থেকে ২৪ জুলাই গ্রেপ্তার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার।৭৮

– পেটে, বুকে, পায়ে, চোখে গুলি নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ; যাদের মধ্যে শিশু, কিশোর, শিক্ষার্থী, রিকশাচালক, দিনমজুর, চাকরিজীবী, গাড়িচালক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছেন। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ১৭ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সংঘর্ষে আহত ১ হাজার ২৬৯ জন চিকিৎসা নেন, যার মধ্যে ২৩১ জন গুলিবিদ্ধ। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ ও ২০ জুলাই ৪৭২ জন গুলিবিদ্ধ রোগী চিকিৎসা নেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলিতে আহত হয়ে ১৭ থেকে ২২ জুলাই চিকিৎসা নেন ৪২৪ জন, যার মধ্যে অস্ত্রোপচার করতে হয় ২৭৮ জনের। অস্ত্রোপচার করা বেশিরভাগ রোগীর চোখে ছররা গুলির আঘাত ছিল।৭৯

পেটে, বুকে, পায়ে, চোখে গুলি নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ; যাদের মধ্যে শিশু, কিশোর, শিক্ষার্থী, রিকশাচালক, দিনমজুর, চাকরিজীবী, গাড়িচালক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছেন।

শহীদ রিয়া গোপ: সাড়ে ছয় বছর বয়সী রিয়া গোপ মা-বাবার সঙ্গে থাকত নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকায়। চারতলা বাড়ির উপরের তলায় থাকত ওরা। ১৯ জুলাই শুক্রবার দুপুরে খাওয়ার পর ছাদে খেলতে গিয়েছিল মেয়েটি। খানিক পরেই রাস্তায় সংঘর্ষ বাধে। বাসার সামনে হইহল্লা শুনে বাবা ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি ঢলে পড়ে বাবার কোলে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুলাই সকালে তার মৃত্যু হয়।৮০

কল্লোল মোস্তফা: লেখক, গবেষক। ইমেইল: kallol_mustafa@yahoo.com

তথ্যসূত্র:

১। ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি, প্রথম আলো, ১৫ জুলাই ২০২৪

২। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থায় ভাবমূর্তি নষ্ট হয় না, প্রথম আলো, ১৫ জুলাই ২০২৪

৩। মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, প্রথম আলো, ১৫ জুলাই ২০২৪

৪। রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও করে না: প্রধানমন্ত্রী, প্রথম আলো, ১৬ জুলাই ২০২৪

৫। ক্যাম্পাসে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত, প্রথম আলো, ১৬ জুলাই ২০২৪

৬। যাঁরা আমি রাজাকার বলেন, তাদের শেষ দেখে ছাড়বে ছাত্রলীগ, প্রথম আলো, ১৬ জুলাই ২০২৪

৭। দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, গুলি, প্রথম আলো, ১৬ জুলাই ২০২৪; জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও হামলা, প্রথম আলো, ১৬ জুলাই ২০২৪; আহত ২৯৭ জন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন, প্রথম আলো, ১৬ জুলাই ২০২৪

৮। সারা দেশে বিক্ষোভ-সংঘাত, নিহত ৬, প্রথম আলো, ১৭ জুলাই ২০২৪

৯। সারা দেশে বিক্ষোভ-সংঘাত, নিহত ৬, প্রথম আলো, ১৭ জুলাই ২০২৪; শিক্ষার্থী নিহতের পর বন্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য, প্রথম আলো, ১৭ জুলাই ২০২৪

১০। চট্টগ্রামে তিন ঘণ্টার সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৫০, প্রথম আলো, ১৭ জুলাই ২০২৪

১১। 6 killed as violence spreads, দ্য ডেইলি স্টার, ১৭ জুলাই ২০২৪; হামলা-সংঘর্ষে নিভল ৬ প্রাণ, সমকাল, ১৭ জুলাই ২০২৪; ঢাকায় পথে পথে সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ২, প্রথম আলো, ১৭ জুলাই ২০২৪; রাজধানীতে নিহত আরেকজনের পরিচয় শনাক্ত, সমকাল, ১৭ জুলাই ২০২৪

১২। ইন্টারনেট বন্ধ, কখন চালু হবে, কেউ জানে না, প্রথম আলো, ২০ জুলাই ২০২৪

১৩। দেশজুড়ে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ২৭, প্রথম আলো, ১৯ জুলাই ২০২৪; সংঘর্ষে তিন দিনে নিহত ১০৩, প্রথম আলো, ২০ জুলাই ২০২৪

১৪। উত্তরার সংঘর্ষেই ১১ জনের মৃত্যু, আহত অনেকে, প্রথম আলো, ১৯ জুলাই ২০২৪; সংঘর্ষে তিন দিনে নিহত ১০৩, প্রথম আলো, ২০ জুলাই ২০২৪

১৫। আলোচনায় রাজি, এরপরও সহিংসতা হলে কঠোর হবে সরকার, প্রথম আলো, ১৯ জুলাই ২০২৪

১৬। খুন করে সংলাপের পথ বন্ধ করেছে সরকার, প্রথম আলো, ১৯ জুলাই ২০২৪

১৭। ‘এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ মনে রাখে’, প্রথম আলো, ১৯ জুলাই ২০২৪

১৮। ছেলে সাইমনের লাশ নিয়ে ফিরলেন মা, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

১৯। আন্দোলন থেকে চিরনিদ্রায়, সমকাল, ২৩ জুলাই ২০২৪

২০। ‘বুকের ধনটারে কে এমনে মারল’, প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০২৪

২১। ঢাকায় মেকানিকের কাজ শিখতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল কিশোর কাইয়ুম, প্রথম আলো অনলাইন, ২৪ জুলাই ২০২৪

২২। সংঘর্ষে শনিবারে নিহত ২৬ জন, চার দিনে ১৪৮, প্রথম আলো, ২১ জুলাই ২০২৪

২৩। হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, প্রথম আলো, ২০ জুলাই ২০২৪

২৪। চোখে ছররা গুলির আঘাত নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে, প্রথম আলো, ২০ জুলাই ২০২৪

২৫। ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, পরিস্থিতি থমথমে, প্রথম আলো, ২০ জুলাই ২০২৪

২৬। ৯ দাবি না মানা পর্যন্ত চলবে শাটডাউন, প্রথম আলো, ২০ জুলাই ২০২৪

২৭। তিন মন্ত্রীর কাছে আট দফা দাবি পেশ তিন সমন্বয়কের, প্রথম আলো, ২১ জুলাই ২০২৪; সব দাবি মেনে নিয়েছে সরকার, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২১ জুলাই ২০২৪

২৮। তিন মন্ত্রীর কাছে আট দফা দাবি পেশ তিন সমন্বয়কের, প্রথম আলো, ২১ জুলাই ২০২৪

২৯। সারা দেশে কারফিউ জারি, সেনাবাহিনী মোতায়েন, প্রথম আলো, ২০ জুলাই ২০২৪

৩০। নাইম আর ফিরবে না ঢাকায়, সমকাল, ২৩ জুলাই ২০২৪

৩১। ‘মা আমি মিছিল দেখে আসি’ বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল আশিক, প্রথম আলো, ২১ জুলাই ২০২৪

৩২। ‘কার কাছে বিচার চাইব’, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

৩৩। পোলায় কইছিল বাসায় আইয়া ভাত খাইব, সমকাল, ২৩ জুলাই ২০২৪

৩৪। আন্দোলন থেকে চিরনিদ্রায়, সমকাল, ২৩ জুলাই ২০২৪

৩৫। ‘বুকের ধনটারে কে এমনে মারল’, প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০২৪

৩৬। জানালায় দাঁড়াতেই গুলি এসে কেড়ে নিল শিশুটিকে, প্রথম আলো, ২৪ জুলাই ২০২৪

৩৭। ‘আমি কার কাছে বিচার চাইব’, সমকাল, ২৪ জুলাই ২০২৪

৩৮। সংঘর্ষে শনিবারে নিহত ২৬ জন, চার দিনে ১৪৮, প্রথম আলো, ২১ জুলাই ২০২৪; সংঘর্ষে পাঁচ দিনে মৃত্যু বেড়ে ১৭৪, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

৩৯। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, প্রথম আলো, ২১ জুলাই ২০২৪

৪০। নাহিদ ইসলামকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ, প্রথম আলো, ২১ জুলাই ২০২৪

৪১। কিশোর মোবারকের লাশ এল পরিবারে, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

৪২। ‘কার কাছে বিচার চাইব’, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

৪৩। সন্তানের মুখ দেখা হলো না রবিউলের, সমকাল, ২৩ জুলাই ২০২৪

৪৪। বাবাহীন জীবন কঠিন হয়ে গেল জিতুর, সমকাল, ২৩ জুলাই ২০২৪

৪৫। মেধায় নিয়োগ ৯৩ শতাংশ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২ জুলাই ২০২৪

৪৬। আন্দোলনকারীরা যা বললেন, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২ জুলাই ২০২৪

৪৭। সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতন, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

৪৮। সংঘর্ষে পাঁচ দিনে মৃত্যু বেড়ে ১৭৪, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

৪৯। পাঁচ দিনে সারা দেশে গ্রেফতার অন্তত ৫৫০, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

৫০। রাজধানীজুড়ে হেলিকপ্টার টহল র‌্যাবের, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২ জুলাই ২০২৪

৫১। সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতন, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

৫২। বেসরকারি যানে জ্বালানি দিতে প্রশাসনের মানা, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

৫৩। ‘বুকের ধনটারে কে এমনে মারল’, প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০২৪

৫৪। চিকিৎসাধীন আরও ৫ জনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ১৮৭, প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০২৪

৫৫। সেনা টহল, কারফিউ অব্যাহত, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২ জুলাই ২০২৪

৫৬। ইন্টারনেট বন্ধ, সেবা পেতে ভোগান্তি, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০২৪

৫৭। ইন্টারনেট ছাড়া অন্যরকম পারিবারিক জীবন, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২ জুলাই ২০২৪

৫৮। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত, কাউকে ছাড় নয়, প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০২৪

৫৯। নাশকতার মামলায় হাজার হাজার আসামি, সমকাল, ২৩ জুলাই ২০২৪

৬০। সংগঠকদের নির্যাতন ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা, প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০২৪

৬১। রাজধানীতে ‘চিরুনি অভিযান’, সারা দেশে গ্রেপ্তার ১২০০, প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০২৪

৬২। পাঁচ দিন পর যাত্রাবাড়ী এলাকা সেনাবাহিনী-পুলিশের নিয়ন্ত্রণে, প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০২৪

৬৩। চার সমন্বয়কের খোঁজ পেতে আলটিমেটাম, সমকাল, ২৩ জুলাই ২০২৪

৬৪। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন সমন্বয়করা, প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০২৪; চার সমন্বয়কের খোঁজ পেতে আলটিমেটাম, সমকাল, ২৩ জুলাই ২০২৪

৬৫। চাকরিতে নারীদের জন্য কোটা না থাকলে বৈষম্য আরও বাড়বে, প্রথম আলো, ২৩ জুলাই ২০২৪

৬৬। ফোনে আন্দোলনের ছবি, খিলগাঁওয়ে ৫ যুবক আটক, সমকাল, ২৩ জুলাই ২০২৪

৬৭। কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পেলে মেধায় নিয়োগ, প্রথম আলো, ২৪ জুলাই ২০২৪

৬৮। চিকিৎসাধীন চবি ছাত্রের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ১৯৭, প্রথম আলো, ২৪ জুলাই ২০২৪

৬৯। সারা দেশে আরও ১১০০ গ্রেপ্তার, প্রথম আলো, ২৪ জুলাই ২০২৪

৭০। ‘জরুরি’ ৪ দফা না মানলে কথা বলার সুযোগ নেই, সমকাল, ২৪ জুলাই ২০২৪; চার দফা না মানলে আট দফা নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই, প্রথম আলো, ২৪ জুলাই ২০২৪

৭১। হতাহতের ঘটনার জন্য আক্রমণকারীরাই দায়ী: তথ্য প্রতিমন্ত্রী, ইত্তেফাক, ২৪ জুলাই ২০২৪

৭২। পুলিশের স্থাপনা ঘিরেই বেশি হামলা, প্রথম আলো, ২৪ জুলাই ২০২৪

৭৩। আটক যুবকের স্বীকারোক্তি, শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার, প্রথম আলো, ২৪ জুলাই ২০২৪; শ্রমিক লীগ নেতার নির্দেশে বাস ডিপোতে আগুন, সমকাল, ২৪ জুলাই ২০২৪

৭৪। সন্তানের খাবার কিনতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন শাহরিয়ার, চুয়াডাঙ্গায় মাতম, প্রথম আলো অনলাইন, ২৪ জুলাই ২০২৪

৭৫। কারফিউ আরও শিথিল, অফিস খুলছে আজ, প্রথম আলো, ২৪ জুলাই ২০২৪

৭৬। চিকিৎসাধীন আরও চারজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ২০১, প্রথম আলো, ২৫ জুলাই ২০২৪

৭৭। ৩ সমন্বয়কের খোঁজ পাওয়া গেছে, প্রথম আলো অনলাইন, ২৪ জুলাই ২০২৪

৭৮। গ্রেপ্তার আরও ১৪০০, প্রথম আলো, ২৫ জুলাই ২০২৪

৭৯। পেটে গুলি, বুকে গুলি, পায়ে গুলি, কাতরাচ্ছেন তারা, প্রথম আলো, ২৫ জুলাই ২০২৪; চোখে অস্ত্রপচার ২৭৮ জনের, চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২৪ জন, প্রথম আলো, ২৫ জুলাই ২০২৪

৮০। বাসার ছাদে বাবার কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি, প্রথম আলো, ২৫ জুলাই ২০২৪

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *