মৌলবাদসমূহের সংঘর্ষ: ক্রুসেড, জিহাদ এবং আধুনিকতা-১
তারিক আলি
পাকিস্তানি- ব্রিটিশ লেখক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী এবং সক্রিয় আন্দোলনকর্মী তারিক আলী (জ. ১৯৪৩) ছাত্র জীবন থেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এখনও আছেন। ছাত্র জীবনে তিনি লাহোরে আইয়ুব সামরিক শাসন ও ভিয়েতনামে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। পরে তিনি লন্ডনে স্থায়ী হন। স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে দুই পাকিস্তানের মানুষের লড়াই নিয়ে লেখা বই থেকে শুরু করে বিশ্ব রাজনীতি, ইতিহাস, বিশ্বে আগ্রাসন প্রতিরোধ ও মুক্তির আন্দোলন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর প্রকাশিত বইগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তিনি New Left Review এর সম্পাদনা পরিষদের সদস্য, এছাড়া নিয়মিত লেখেন The Guardian, CounterPunch সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। অনলাইনেও তিনি সক্রিয়। ২০০২ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা অনেক বিস্তৃত এবং ইসলামী মৌলবাদ বিশ্বজুড়ে আলোচিত বিতর্কিত বিষয় তখন তাঁর বই The Clash of Fundamentalisms: Crusades, Jihads and Modernity প্রকাশিত হয়। তারিকের এই বই অনুসন্ধান করেছে ধর্মীয় বিভিন্ন মত পথ, বিভিন্ন ধরনের মৌলবাদী শক্তি, তার ইতিহাস ও রাজনীতি এবং সর্বোপরি তাঁর ভাষায় ‘সবচাইতে বড় মৌলবাদী শক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’-এর সাথে এর সম্পর্ক। সর্বজনকথার জন্য এই বই-এর ধারাবাহিক অনুবাদ করছেন লেখক অনুবাদক ফাতেমা বেগম।
ইসলামের জন্ম
বলা যেতে পারে বর্তমান সময়কার রাজনৈতিক আন্দোলনের আদলেই ইহুদি, খ্রিষ্ট ও ইসলাম ধর্মের সূচনা ঘটেছিল। সেই সময়কার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সাম্রাজ্যবাদী নিপীড়নের বিরোধিতা এবং মুক্তিকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা অথবা এই দুই কারণেই একটি আস্থাযোগ্য বিশ্বাসব্যবস্থার বিকাশ জরুরি হয়ে পড়েছিল । এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা যদি ইসলামের শুরুর দিকে নজরে দিই, তাহলে দেখব, এর ইতিহাস কিছুটা রহস্যঘেরা। নবী মুহাম্মদ যেভাবে তাঁর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করেছেন, তা তাঁকে একজন দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতা হিসেবেই পরিচিত করে তোলে বটে।
তাই দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলও একসময় ইসলামের বিজয়কে সফল বলশেভিক বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, ইসলাম এবং বলশেভিক বিপ্লব একদিকে যেমন বৈশিষ্ট্যগতভাবে বাস্তবিক, সামাজিক এবং অনাধ্যাত্মিক, তেমনি লক্ষ্যের দিক থেকেও বিশ্ব সাম্রাজ্যকেন্দ্রিক। তবে তিনি খ্রিষ্টধর্মকে দেখেছেন ঠিক উলটোভাবে। তিনি একে ‘ব্যক্তিগত’ এবং ‘ধ্যানকেন্দ্রিক’ ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করেছেন। কিন্তু বিতর্ক থেকে যায় এই ধর্মগুলোর সূচনা পর্যায়ের সাথে এই ব্যাখ্যাটি জুতসই কি না। কেননা, রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের কথা বিবেচনায় নিলে বোঝা যায় রাসেলের এই ব্যাখ্যাটি অসমর্থনযোগ্য। কনস্টানটাইন খ্রিষ্টধর্মকে শেষ পর্যন্ত রোম সাম্রাজ্যের ধর্মে পরিণত করেন এবং পরবর্তীকালে এই ধর্ম-বিস্তারের বিজয়ধারা একইরকমভাবে অব্যাহত ছিল। যেমন, চতুর্দশ শতকের শেষের দিকে বহু ধর্মানুসারী স্পেনীয় সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট শাসকের অধীনস্থ হলে ভিন্ন ধর্মের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়।
তারপরও বার্ট্রান্ড রাসেল উপলব্ধি করেছিলেন, ইসলাম তার সূচনার প্রথম দুই দশকে স্পষ্টভাবে অনেকটা ফরাসি বিপ্লবকালীন বাম রাজনীতিঘেঁষা জ্যাকোবিন ক্লাবের ভাবধারার মতোই ছিল। এই জ্যাকোবিন ক্লাব ফরাসি রাজার পতন ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল। বার্ট্রান্ড রাসেলের মতো আমারও একই উপলব্ধি। কোরআন শরিফের কিছু কিছু অংশ নতুন কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের বুনিয়াদি ইশতাহারের শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যদিও কখনো কখনো এগুলোতে ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বী ধর্ম যেমন ইহুদি এবং খ্রিষ্টধর্মের ব্যাপারে অতি-শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠার সুর পাওয়া যায়। ইসলামের এই বৈশিষ্ট্য তার দ্রুত বিকাশের ইতিহাসকে সত্যি সত্যি কৌতূহলোদ্দীপক করে তুলেছে।[1]
বার্ট্রান্ড রাসেল উপলব্ধি করেছিলেন, ইসলাম তার সূচনার প্রথম দুই দশকে স্পষ্টভাবে অনেকটা ফরাসি বিপ্লবকালীন বাম রাজনীতিঘেঁষা জ্যাকোবিন ক্লাবের ভাবধারার মতোই ছিল। এই জ্যাকোবিন ক্লাব ফরাসি রাজার পতন ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল। বার্ট্রান্ড রাসেলের মতো আমারও একই উপলব্ধি।
এখন প্রশ্ন হলো কোথা থেকে আসলে শুরু করব? এই আলোচনা শুরু করার অগুনতি সম্ভাব্য উপায় রয়েছে। ইসলামের উত্থানের ইতিহাসের প্রচলিত নানা ব্যাখ্যার পরিসীমা টেনে আমি মনোযোগ দিতে চাই ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে। শুরু করতে চাই ইসলামি বর্ষপঞ্জিকার অষ্টম বছর থেকে। যদিও এই বর্ষপঞ্জিকা কার্যকর হয়েছে আরও পরে। বিশজন সশস্ত্র অশ্বারোহী মক্কার একটি পবিত্র স্থানের দিকে অগ্রসর হওয়ার ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। সেখানে ছিল প্রাক-ইসলামি যুগের জনপ্রিয় দেবী মানাতের মূর্তি। সবাই বিশ্বাস করত মানাত সৌভাগ্যের দেবী। নবীর নির্দেশে ওই অশ্বারোহীরা দেবীর মূর্তিটি ধ্বংস করতে যাচ্ছিল। তবে মুহাম্মদ আট বছর ধরে প্যাগানদের পুরুষ-ঈশ্বর আল্লাহ এবং তার তিন কন্যা আল- আল-লাত, আল-উজ্জ্বা ও আল-মানাতের সাথে সহাবস্থানকে অস্বস্তির সঙ্গে সহ্য করছিলেন। আল-উজ্জ্বা সকালের তারা ভেনাস নামেও পরিচিত ছিল। ভেনাস দেবীই অধিকাংশ কুরাইশের কাছে পূজনীয় ছিলেন। মুহাম্মদ এই কুরাইশ গোত্রেরই একজন ছিলেন। অন্যদিকে আল-মানাত পুরো অঞ্চলে জনপ্রিয় ছিল। সেই সময় মক্কার কুরাইশসহ তিনটি গোত্র প্রধানত তার উপাসনা করত। অন্য দুটি গোত্র হলো কিনানাহ্ ও নাবাতু। মুহাম্মদের একান্ত চেষ্টা ছিল এই গোত্রগুলোকে নতুন ধর্মে দীক্ষিত করা। তবে স্থানীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিশ্চিত করেছিল আট বছরের এই যুদ্ধ বা সংঘাতবিরতি।
এই আট বছরে অবশ্য ইসলামানুসারীরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী পৌত্তলিক পূজারি এবং ইহুদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় লাভ করতে সমর্থ হয়। অল্প সৈন্যশক্তি নিয়েও বদরের যুদ্ধে মক্কার অন্য সম্প্রদায়গুলোর বিরুদ্ধে মুহাম্মদ জয়লাভ করেন। পরাজিত সম্প্রদায়গুলো নতুন ধর্মের পেশিশক্তিতে অভিভূত হয়। এতে অন্য কোনো মতাদর্শিক সমঝোতার আর প্রয়োজনীয়তা থাকে না। এই শক্তিতে বলীয়ান হয়েই কোনো এক গোধূলিকালে মরুভূমিতে ছায়া নেমে আসার মুহূর্তে, বিশজন অশ্বারোহীসহ মুহাম্মদের দূত একেশ্বরবাদ প্রচারের নতুন বার্তা নিয়ে উপস্থিত হন।
মানাত দেবীর মূর্তিটি সংরক্ষিত ছিল মক্কা এবং মদিনার মাঝামঝি অবস্থিত কুদাইদে। ঘোড়সওয়ারিদের এগিয়ে আসার আওয়াজ দেবীরক্ষক শুনতে পেয়েও নীরব রইলেন। আগতদের সঙ্গে তার কোনো অভিবাদন বিনিময় হলো না। ঘোড়সওয়ারিদের হাবভাবে বোঝা যাচ্ছিল যে তারা দেবী মানাতকে সম্মান জানাতে বা প্রতীকী কোনো উপঢৌকন দিতে আসেনি। দেবীরক্ষক তাদের কোনো বাধা দিলেন না। ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, যখন তাদের সেনাপতি যত্নের সঙ্গে বানানো মূর্তিটির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, ঠিক তখনই হঠাৎ করে একজন নগ্ন কৃষ্ণাঙ্গ নারী উপস্থিত হন। রক্ষক তখন ওই নারীকে ডেকে বলতে থাকেন: ‘ও মানাত, আসো, তোমার রাগ প্রকাশ করার ক্ষমতা দেখাও।’ মানাত হতাশ হয়ে তার চুল টেনে ছিঁড়তে লাগল এবং স্তনের ওপর আঘাত করতে থাকল। পুরোটা সময় সে তার নিপীড়কদের অভিশাপ দিচ্ছিল। সা’দ ইবনে জায়িদ আল আশালি তাকে পিটিয়ে হত্যা করলেন। অন্য সঙ্গীরা তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। তারা সবাই মিলে মানাতের মূর্তিটি সম্পূর্ণ বিনাশ করলেন। আল-লাত ও আল-উজ্জ্বা[2]র মূর্তিগুলোকেও একই দিনে একইভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল।[3] তাদের পিতৃ-দেবতা কি এতে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলেন? তিনি কি এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন? ইসলামের কিংবদন্তি তার পক্ষ থেকে এই ধ্বংসের ব্যাপারে কোনো ভিন্নমত বা বিরোধিতার কোনো কিছু নথিভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ ঘটনার কয়েক মাস আগে কোরআনের আয়াত[4] নাজিল হয় এবং নবী মুহাম্মদ তা পাঠ করেন:
তোমরা কী ভেবে দেখেছো লাত ও উজ্জ্বা সম্পর্কে?
এবং মানাত, তৃতীয় আরেকজন সম্পর্কে?
এরা হচ্ছে সেই উড়ন্ত সারস;
তাই এদের মধ্যস্থতা আশা করা যেতে পারে;
তাদের পছন্দ উপেক্ষা করা হয় না
তিন মূর্তি ধ্বংস হওয়ার পর শেষের তিন আয়াত মুছে ফেলা হয় এবং নতুন আয়াতগুলো স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[5]
তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উজ্জ্বা সম্পর্কে।
এবং মানাত, তৃতীয় আরেকজন সম্পর্কে?
পুত্রসন্তান কি তোমাদের জন্য এবং কন্যাসন্তান আল্লাহর জন্য?
এ রকম পার্থক্য করা তো সত্যিই খুব অসংগত!
এগুলো কতগুলো নাম বইকি অন্য কিছু নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছে।
এর সমর্থনে আল্লাহ কোনো দলিল নাজিল করেননি;
অবিশ্বাসীরা অনুমান এবং তাদের নিজেদের প্রবৃত্তিকেই অনুসরণ করে, অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অনেক আগেই নির্দেশনা এসেছে। (৫৩.১৯-২৩)[6]
জনপরিসরে এই পরিবর্তন নিয়ে একটা প্রচলিত ব্যাখ্যা ছিল। মনে করা হতো, শয়তান আগের আয়াতগুলোকে প্রবেশ করিয়েছিল এবং তাই আল্লাহ সেগুলো বাতিল করে দেন। এই ব্যাখ্যাটি সেই সময়ে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ‘শয়তানি আয়াত’-এর পর্বটি একইভাবে ধর্মতাত্ত্বিক এবং ইসলামিক ইতিহাসবিদদের এক জটিল ক্ষমা প্রার্থনার সম্মুখীন করেছিল। বাস্তবতা আরও স্পষ্ট ছিল। সপ্তম শতকের নবী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া সাম্প্রদায়িক গোত্রের সত্যিকারের আধ্যাত্মিক নেতা হননি। ঘোড়সওয়ার, তলোয়ার এবং সামরিক কৌশলের ব্যবহার ছাড়া কেবল আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে তিনি উপদ্বীপের নেতা হতে পারেননি। নবী রাজনীতিবিদ হিসেবে বহু-ঈশ্বরবাদের চর্চাকে চূড়ান্তভাবে বাতিল করার প্রয়োজনীয়তাকে বিলম্বিত করেছিলেন, তাঁর এবং তাঁর সঙ্গীদের সমাজ-বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন, কৌশলগত কারণে আগেভাগেই তিন দেবীর মূর্তিপূজা থেকে সেখানকার পূজারিদের সরিয়ে আনা ঠিক হবে না। নতুন এই ধর্মবিশ্বাসের প্রথম দশক ছিল দ্বিধা আর অস্পষ্টতাপূর্ণ।
তবে একবার একেশ্বরবাদের কঠোর ঘোষণা দেওয়ার পর আর কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। ৬০০ বছর আগে খ্রিষ্টান চার্চ তার পৌত্তলিক পূর্বপুরুষদের সঙ্গে একটি স্থায়ী আপস করতে বাধ্য হয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী তাদের পুরাণকে সংশোধন করেছিল। নতুন অনুসারীদের উপাসনার জন্য একজন নারীকে সামনে আনা হয়। তিনি যেনতেন নারী নন, তিনি হলেন ঈশ্বরের তরফ থেকে প্রদত্ত সন্তানের ধারক। যদিও এটি কুমারী মায়ের গর্ভে সন্তানের জন্মদান, এবং জিউসের দুঃসাহসিক যৌন অভিযান থেকে অনেক দূরের বিষয়, তবুও এর মাধ্যমে পৌত্তলিকতা চর্চা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্ভব হয়নি।
মুহাম্মদও নতুন ধর্ম বিস্তারের জন্য ‘আল্লাহর কন্যা’দের সবাইকে বা অন্তত একজনকে বেছে নিতে পারতেন। নতুন ধর্মকে অন্যদের জন্য আরও আবেদনময় করার জন্য এটি একটা সহজতর উপায় হতে পারত। কিন্তু এতে গোষ্ঠীগত বিভক্তি আরও বেড়ে যেতে পারে, এই বিবেচনায় মুহাম্মদ সংযত ছিলেন। একটি নতুন একেশ্বরবাদী ধর্মানুসারীদের তার প্রধান প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী থেকে জোরপূর্বক পৃথক করতে হয়েছিল। আবার একই সঙ্গে সেই সময় পৌত্তলিকতা চর্চা করলে উপঢৌকনের যে প্রলোভন ছিল, তা থেকেও একেশ্বরবাদী ধর্মানুসারীদের দূরে রাখতে হয়েছিল। শুধু খ্রিষ্টধর্মের দুর্বলতা প্রদর্শনের জন্য নয়, বরং আরব উপদ্বীপের প্রভাবশালী সাংস্কৃতিক অনুশীলনকে সুনির্দিষ্টভাবে ভেঙে ফেলার জন্য পিতৃতান্ত্রিক আল্লাহর একত্ববাদ সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল বহু ঈশ্বরবাদের সঙ্গে সব রকমের সম্পৃক্ততা এবং মাতৃতান্ত্রিক অতীতের সচেতন বিলুপ্তি ঘটানো। মুহাম্মদ নিজেই তাঁর প্রথম স্ত্রী খাদিজার তৃতীয় এবং কনিষ্ঠ স্বামী ছিলেন। সেই সময় বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপক প্রচলন ছিল এবং নারীদের স্বামীকে পরিত্যাগ করার অধিকার ছিল। তাই ধারণা করা হয়। খাদিজা একজন স্বামীকে তালাক দিয়েছিলেন এবং অন্য আরেকজনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে প্রমাণগুলো সবক্ষেত্রেই অকাট্য নয় এবং মুহাম্মদের বিজয়ের পর বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়নি। ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রচলনের তিন বছর আগে খাদিজা (রা.) মারা যান।
সেই প্রাথমিক সময়ের প্রথাগুলোর প্রভাবকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। মুহাম্মদকে অনুসরণ করে পরবর্তী ইসলামের ইতিহাসবিদরা যে সময়কে আইয়ামে জাহিলিয়া বা অজ্ঞতার যুগ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, তবে তা বিকাশমান একেশ্বরবাদকালের চেয়ে বেশি প্রাণোচ্ছল ছিল। কবিরা ইসলাম-পূর্ব যুগের বিভিন্ন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের অতীতকে সংরক্ষণ করেছেন, তাঁরা আংশিকভাবে ঐতিহাসিকদের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁরা সত্য এবং প্রচলিত কথার এক দক্ষ মিশেলে সম্প্রদায়গুলোকে গৌরবের উঁচু আসনে বসাতেন। ভবিষ্যৎ সেখানে অপ্রাসঙ্গিক ছিল। বর্তমানকেই গুরুত্ব দেওয়া হতো। তাদের কবিতা নির্দেশ করে, জাহিলিয়ার আরবরা প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিক এপিকিউরিয়াসের অনুসারীদের মতো আমুদে ইহলৌকিক জীবনযাপন করত যেমনটা তাদের কবিতায় পাওয়া যায়:
সেঁকা দিয়ে পোড়াই মাংসের কাবাব আর পান করি মদের আগুন
যেন উট-বহরের গতি যায় বেড়ে।
দেবীর কাছে তোমার আত্না আরও চাহিদার তালিকা জানায়,
যা দৈর্ঘ্য বা প্রস্থহীন এক ফাঁপা কাঠামো;
উট-বহরের এই পথ যেন শ্বেতাঙ্গ এক নারীর ভাস্কর্য
যা সোনালি সুতোর কারুকাজের মূল্যবান পোশাকে আবৃত।
অর্থ-সম্পদ নাও ইচ্ছেমতো, ভয় নেই
লুতের সুর প্রশ্নবিদ্ধ করার কেউ নেই
এইতো জীবনের আনন্দ।
তা নির্ধারিত মানুষের জন্য, মানুষ সময়ের শিকার। সময় মানে বদল।[7]
তবে কোরআন শরিফের আয়াত এই ভাবনার বিপরীত কথা বলে:
তারা বলে: ‘এ জীবন আছে, অন্য কোনো জীবন নেই। আমরা মরি আর বাঁচি; সময় ছাড়া আর কিছুই আমাদের ধ্বংস করে না।’ নিশ্চিত এ ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা নিছক অনুমান করছে। এবং যখন তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে পাঠ করা হয়, তখন তাদের যুক্তি একটাই: ‘তোমরা যা বলছ তা যদি সত্য হয়, তবে আমাদের পূর্বপুরুষদের আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনো।’ বলুন, ‘আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেন, তারপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটান…'(সুরাহ ৪৫: আয়াত ২৪৬[8])
প্রাক-ইসলামি যুগের গোত্রীয় মানবতাবাদে অনেক আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ছিল কিন্তু তা কোনো অনুশীলনের তত্ত্ব তৈরি বা উপজাতিদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সক্ষম ছিল না। এই মানবতাবাদকে অস্তিত্বের দর্শন হিসেবে বিশ্বস্তরে নিয়ে যাওয়া তো ছিল আরও অনেক অনেক দূরের পথ। কেননা, তাদের আত্মিক চর্চা প্রধানত ছিল বহুরকমের দেব-দেবীকে ঘিরে। এগুলো মানুষের অতিপ্রাকৃত সংস্করণ ছাড়া অন্যকিছু ছিল না। তবে তাদের দেব-দেবীর ওপর তাদের বিশ্বাস নিজেদের মধ্যে বিভাজন এবং বিরোধকে স্থায়ী করে তুলত। আবার কখনো কখনো বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাও এই বিভাজনকে উসকে দিত। সেই সময় বিশ্বের ব্যাবসা-বাণিজ্যের ওপর বণিক কাফেলাদের আধিপত্য ছিল। জনপরিসরে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল, একে অপরের সঙ্গে কোন কোন শর্তে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে। নাগরিক সংঘাত ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার।
মুহাম্মদ এই জগৎটিকে খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি কুরাইশ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কুরাইশরা নিজেদের ইসমাইলের বংশধর বলে দাবি করতেন এবং এই পরিচয়ে তাঁরা খুব গর্বিত ছিলেন। বিয়ের আগে মুহাম্মদ খাদিজার বাণিজ্য কাফেলার একজন বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি পুরো অঞ্চলেই সফর করেছেন। সেই সুবাদে তিনি আরব উপদ্বীপের সকল ধর্মানুসারী যেমন: খ্রিষ্টান, ইহুদি, পারস্যের অন্যতম প্রাচীন নবী জরথুস্ট্রের অনুসারী একেশ্বরবাদী অগ্নি-উপাসক(ম্যাজাই) এবং পৌত্তলিকদের সংস্পর্শে এসেছেন। আমরা কেবল অনুমান করতে পারি যে এসব সফর তাঁকে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে এবং তাঁর মনোজগৎকে যথেষ্ট প্রসারিত করেছে। যদিও মক্কা এই সময়ে বাণিজ্যপথের প্রধান কেন্দ্র ছিল কি না, তা নিয়ে বর্তমানে বিদ্যায়তনিক উত্তপ্ত বিতর্ক রয়েছে। তবে এটি যদি কেন্দ্র না-ও হয়, মক্কায় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা ছিল এবং তাদের বাইজাইন্টাইন সাম্রাজ্যের খ্রিষ্ট সম্প্রদায় এবং পারস্যের অগ্নি-উপাসকদের মতো দুটি বৃহৎ প্রতিবেশী শক্তির সঙ্গে লেনদেনও করতে হয়েছে অবশ্যম্ভাবীভাবে। উভয় প্রতিবেশী অঞ্চলে ব্যবসায় সফল হওয়ার অর্থ হলো, সেই ব্যবসায়ী এই দুই গোষ্ঠীর কোনোটিরই অন্তর্ভুক্ত না। তবে এটা ঠিক যে, এই অঞ্চলে আরও বেশকিছু ইহুদি গোষ্ঠীর বসবাস ছিল। কিন্তু তাদের ধর্মগত দাবি যে তারাই শুধু ঈশ্বর কর্তৃক নির্বাচিত এক বিশেষ সম্প্রদায়, সে কারণে জরুরি বিকল্প ধর্মের তালিকায় এটা আর থাকে না। উপরন্তু এই ধর্মে ধর্মান্তকরণের সুযোগ কখনোই ছিল না। ইহুদি ধর্মের এই রক্ষণশীল বৈশিষ্ট্যটির কারণে খ্রিষ্টধর্ম নতুন একটি সংস্কার আন্দোলন হিসেবে বিকশিত হতে শুরু করে। নতুন এই ধর্মের অনুসারী তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও পৌত্তলিক আরবদের আকৃষ্ট করা সম্ভব ছিল না।
“তবে এটি যদি কেন্দ্র না-ও হয়, মক্কায় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা ছিল এবং তাদের বাইজাইন্টাইন সাম্রাজ্যের খ্রিষ্ট সম্প্রদায় এবং পারস্যের অগ্নি-উপাসকদের মতো দুটি বৃহৎ প্রতিবেশী শক্তির সঙ্গে লেনদেনও করতে হয়েছে অবশ্যম্ভাবীভাবে।”
মুহাম্মদের আধ্যাত্মিকতার প্রচার আংশিকভাবে সেই সময়কার আর্থসামাজিক আবেগ, আরবদের বাণিজ্যিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার আকাঙ্ক্ষা এবং জীবনযাপনের একটি সর্বজনীন নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছিল।[9] তাঁর লক্ষ্য ছিল সব উপজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি অংশীদারত্বমূলক ব্যবস্থা চালু করা। আর এই ঐক্যবদ্ধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে কিছু সাধারণ লক্ষ্য এবং একটি একক ধর্মবিশ্বাসকে ঘিরে। অবশ্যই তা হবে সবার জন্য নতুন কোনোকিছু ও অবিসংবাদী। মুহাম্মদ ইসলামকে বন্ধন হিসেবে ব্যবহার করে সব আরব গোত্রকে একত্রিত করেছিলেন এবং শুরু থেকেই ইসলাম বাণিজ্যকে একমাত্র মহৎ পেশা হিসেবে বিবেচনা করেছিল।
নতুন ধর্মটি একই সঙ্গে যাযাবর এবং শহুরে মানসিকতাকে সমন্বিত করেছিল। সেই সময় জমিতে কাজ করা কৃষকদের দাস এবং নিকৃষ্ট প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হতো। একটি হাদিসে লাঙলের ফলা নিয়ে নবীর মন্তব্য পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্বস্তদের ঘরে প্রবেশ করে না যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাসীদের অধঃপতন না হয়।’[10] যদিও ততদিনে কৃষির প্রচলন ঘটেছে এবং তা ঐতিহ্য হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলেও হাদিসটিতে সেই সময়ের বাস্তবতাকে পাওয়া যায়।
নিঃসন্দেহে, গ্রামাঞ্চলে নতুন নতুন নিয়ম পালন করা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সামরিক শৃঙ্খলার বিকাশ ঘটাতে এবং সদ্য ইসলামানুসারীদের তাদের পুরানো নৈরাজ্যিক-যাযাবর প্রবৃত্তিকে দমন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এভাবে শহরগুলোতেও এ রকম বিশ্বাসীদের নিয়ে একটি নতুন সম্প্রদায় তৈরি করার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার বাধ্যতামূলক রীতি কার্যকর ছিল। নামাজের পর তারা মিলিত হতেন এবং পরস্পরের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করতেন, যা নিজেদের কাজে আসত। কোনো আধুনিক রাজনৈতিক আন্দোলন, এমনকি জ্যাকোবিন ও বলশেভিকরাও এ রকম প্রতিদিন ক্লাব বা সেল মিটিং করতে পারত না।
একটি নতুন সম্প্রদায় তৈরি করার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার বাধ্যতামূলক রীতি কার্যকর ছিল। নামাজের পর তারা মিলিত হতেন এবং পরস্পরের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করতেন, যা নিজেদের কাজে আসত। কোনো আধুনিক রাজনৈতিক আন্দোলন, এমনকি জ্যাকোবিন ও বলশেভিকরাও এ রকম প্রতিদিন ক্লাব বা সেল মিটিং করতে পারত না।
স্বাভাবিকভাবেই কৃষকদের জন্য নতুন ধর্মে নামাজ পড়ার কঠোরতার সঙ্গে তাদের নিজস্ব কাজের সময়কে খাপ খাওয়ানো সম্ভব ছিল না। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার দিক থেকে তারাই ছিল সমাজের সবচেয়ে পেছনের সারিতে। তাই গ্রামাঞ্চলের মুসলমানদের দ্বারাই ধর্মের অতি কড়াকড়ি নিয়মকানুনের যে শুরুতে বিচ্যুতির সূচনা ঘটে, তা পাকাপোক্ত হয়। (চলবে)
পরের পর্ব: মৌলবাদের সংঘর্ষ: ক্রুসেড, জিহাদ এবং আধুনিকতা-২
রেফারেন্স
[1] হিজাজ বা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও নতুন ধর্মটির জন্ম হয়েছে কি না, তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান একাডেমিক আলোচনা মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক আগ্রহের বিষয়। গত ত্রিশ বছরে জন ওয়ান্সব্রো ও প্যাট্রিসিয়া ক্রোনের গবেষণা ইসলামের ইতিহাসের অধ্যয়নকে বদলে দিয়েছে। তারা উভয়েই মুহাম্মদের প্রাথমিক জীবনীগুলোকে ‘ধার্মিক কল্পনার‘ কাজ হিসেবে প্রকাশ করেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে ইসলামিক পরিচয়, মক্কার কেন্দ্রীয়তা এবং কোরআন তার মৃত্যুর ‘অনেক বছর পর‘ আবির্ভূত হয়েছিল। বিশ্বাসী মুসলমানদের অনুভূতি নিঃসন্দেহে এই তথ্যে গভীরভাবে আহত হবে। কিন্তু এই গবেষণাগুলো ইসলামিক ইতিহাসের ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে শক্তিশালী করে। নিঃসন্দেহে, এই ধর্মের জন্ম হয়েছিল এবং এর বৃদ্ধি ছিল অভূতপূর্ব। এটি প্রতিটি মহাদেশে ভ্রমণ করেছিল। এটি তার আশপাশে দুটি বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিস্থাপন করেছিল এবং শিগগিরই আটলান্টিক উপকূলে পৌঁছেছিল। সফলতার চূড়ায় তিনটি মুসলিম সাম্রাজ্য পৃথিবীর বিশাল অংশে আধিপত্য বিস্তার করেছিল: অটোমানরা যার রাজধানী ছিল ইস্তাম্বুল, পারস্যের সাফাভিদ এবং ভারত শাসনকারী মুঘল রাজবংশ।
[2] খালিদ ইবনে ওয়ালিদের নেতৃত্বে ধ্বংস করা হয়।
[3] অনুবাদকের মতামত: মক্কা বিজয়ের সময় মূর্তি ভাঙার ঘটনাগুলো ঘটে।
[4] এই আয়াতগুলো নাজিল হয়েছিল সুরা আল-নাজাম-এ (৫৩: ১৯-২৩)। এটাকে কোরআন শরিফের নাজিলকৃত প্রথম সুরা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং তা নবীর মদিনা হিজরতের আগে, নবুয়ত প্রাপ্তির পঞ্চম বছরের রমজান মাসে নাজিল হয়েছিল। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ নবুয়ত প্রাপ্ত হন। যেহেতু মক্কা বিজয় হয় ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে, তাই ‘কয়েক মাস আগে’ তথ্যটির সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করছি।
[5] নতুন আয়াত প্রথম মক্কা জীবনেই স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল।
[6] বইয়ে ৭-১১। মুদ্রণ প্রমাদ।
[7] C.J. Lyall, Translations of Ancient Arabian Poetry, London 1930
[8] সংশোধিত: (সুরাহ আল-যাথিইয়া ৪৫: আয়াত ২৪-২৬। সম্ভবত ছাপায় ভুল হয়েছে বইয়ে।
[9] হে মুমিনগণ! তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের জন্য ঋণের আদান-প্রদান কর তখন তা লিখে রেখো (১); তোমাদের মধ্যে কোনো লেখক যেন ন্যায়ভাবে তা লিখে দেয়; কোনো লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না, যেমন আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং সে যেন লিখে (২); এবং যে ব্যক্তির ওপর হক রয়েছে (ঋণগ্রহীতা) সে যেন লেখার বিষয়বস্তু বলে দেয় (৩) এবং সে যেন তার রব আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে। আর তা থেকে কিছু যেন না কমায়…। আবার পরবর্তী সময়ে ‘নারী’ সুরাতে বলা হয় (৪: ১০-১২) পুরুষ দুই নারীর অংশের সমান পাবে, তবে সন্তান-সন্ততি যদি শুধু দুজন নারীর অধিক হয়, তাহলে তারা রেখে যাওয়া সম্পত্তির তিন ভাগের দুভাগ পাবে, আর কেবল একটি কন্যা থাকলে সে অর্ধেক পাবে এবং তার পিতা-মাতা উভয়ের প্রত্যেকে রেখে যাওয়া সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে যদি তার সন্তান থাকে, আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিশ মাতা-পিতাই হয়, সে অবস্থায় তার মাতার জন্য এক-তৃতীয়াংশ, কিন্তু তার ভাই-বোন থাকলে, তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ, (ওইসব বণ্টন হবে) তার কৃত ওসিয়ত অথবা ঋণ পরিশোধের পর…(বি.দ্র. সংশোধন- এটি সুরা নিসার ১১ নম্বর আয়াতের অংশ। ১০ থেকে ১২ নম্বর আয়াত নয়।)
[10] আবু উমামা বাহিলি কর্তৃক সহিহ আল বুখারিতে বর্ণিত, পুস্তক ৪১, হাদিস ২। (অনুবাদক কর্তৃক সংযুক্ত)