কোভিড-১৯ অতিমারি: বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা

কোভিড-১৯ অতিমারি: বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা

মোঃ সাদ্দাম হোসেন

করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি আকার ধারণ করে প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ করছে। বাড়ছে আতঙ্ক, ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা। করোনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কিছু দেশের সফলতা চমকপ্রদ। বিপরীতে যাদের করোনা মোকাবেলায় সবার থেকে এগিয়ে থাকার কথা ছিল তারা এই ভাইরাসে বিপর্যস্ত ও পরাজিত। অর্থনৈতিক ও পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েও কিছু দেশ এই মহামারি মোকাবিলা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কেন এরকম ঘটেছে সেই প্রশ্নের উত্তরই সন্ধান করা হয়েছে এই প্রবন্ধে, নির্বাচিত কয়েকটি দেশের করোনা অভিজ্ঞতা ও তাদের গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে।   

সূচনা: মহা আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে করোনা ভাইরাস । বারবার জিনের গঠন বদলে ডাক্তার-গবেষকদের বিভ্রান্ত করছে করোনা। তাই এর সঠিক চিকিৎসা ও কার্যকর ওষুধ খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।ঝড়ের বেগে ছড়াচ্ছে, যাকে বাগে পাচ্ছে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছে।(Hossain, 2020) ত্রাসের আরেক নাম করোনা কারণ মরার পর কেউ ছুঁতে পারছে না, দেখতে পারছে না। মরার বুকে আছড়ে পরে কাঁদতে পারছে না। জানাজায় লোক হচ্ছে না। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছে না। কোথাও কোথাও দাফন হচ্ছে না। হলেও গণকবর হচ্ছে। আবার কোথাও মৃতদেহ এত বেশি যে, সরাসরি পুড়িয়ে ফেলছে।

চীন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর অতিমারিতে রূপ নিয়েছে করোনা বা কোভিড-১৯ ভাইরাসটি। বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল, অনুন্নত – সবখানেই মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের কারণে বিশ্বের তাবৎ মানুষকে এখন এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, যার অভিজ্ঞতা বোধহয় বিগত কোনো সময়ে মানুষের সম্মুখে আসেনি। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ব্যস্ত শহরগুলো লকডাউন, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে মানুষ যেতে পারছে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরণের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। (Islam, 2020)

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ২১৩ টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬১ লক্ষ ৩৩ হাজর ৯৯৮ জন  এবং প্রাণ গেছে ১০ লক্ষ ৫৬ হাজার ২০০ জনের। আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষ ৫ দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া ও কলম্বিয়া। মৃতের সংখ্যায় শীর্ষ পাঁচ দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, মেক্সিকো ও যুক্তরাজ্য ।(worldometers, 2020) নিচে ছকের সাহায্যে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত শীর্ষ সংক্রমিত ও মৃত্যুর হারের সাথে কম সংক্রমিত পাঁচটি দেশের তথ্য উপস্থাপন করা হল।

আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষ ৫ দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া ও কলম্বিয়া। মৃতের সংখ্যায় শীর্ষ পাঁচ দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, মেক্সিকো ও যুক্তরাজ্য ।

সর্বোচ্চ ও কম সংক্রমিত পাঁচ দেশে করোনা পরিস্থিতি

সর্বোচ্চসংক্রমিতপাঁচদেশ

সর্বোচ্চমৃত্যুরসংখ্যায়প্রথমপাঁচদেশ

কমসংক্রমিতপাঁচদেশ (জনসংখ্যাকোটিরউপর)

দেশ

সংক্রমণসংখ্যা

দেশ

মৃত্যুরসংখ্যা

দেশ

সংক্রমণসংখ্যা

যুক্তরাষ্ট্র

৭৭,৩০,২৬৩

যুক্তরাষ্ট্র

২,১৬,০৪৪

ভিয়েতনাম

১,০৯৯

ভারত

৬৭,৬৪,৭১০

ব্রাজিল

১,৪৭,৫৭১

চাঁদ

১,২৩৮

ব্রাজিল

৪৯,৭০,৯৫৩

ভারত

১,০৪,৬৫১

নাইজার

১,২০০

রাশিয়া

১২,৪৮,৬১৯

মেক্সিকো

৮২,৩৪৮

ইয়েমেন

২,০১৯

কলম্বিয়া

৮,৬৯,৮০৮

যুক্তরাজ্য

৪১,৬৮৪

বেনিন

২,৩৫৭

(worldometers, 2020)

এশিয়া মহাদেশ

মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যায় পাশ্চাত্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম এশিয়া মহাদেশে। অবশ্য এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম করোনা টেস্টের ফলে এশিয়ার দেশগুলোতে আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না।

চীন: করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীনে।প্রাণঘাতী ভাইরাসটির আক্রমণে বিশ্বের জনবহুল দেশটি আক্রান্ত হবার পর এখন পর্যন্ত সফলভাবে করোনার কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলেও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। উহান থেকে যখন ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে তখন জানুয়ারির ২৪ তারিখেই চীনের সরকার সেই এলাকাকে লকডাউন করে দেয়। জনসমাগম, স্কুল, কলেজ এমনকি পরিবহন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ শুরু করে সেদিন থেকেই, যেন কেউ বাহিরে ও ভেতরে না যেতে পারে। পরদিন পুরো হুবেই রাজ্যের সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। খাদ্য এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবা বাদে অন্য প্রায় সব প্রতিষ্ঠান দ্রুত বন্ধ করে দেয়। একই সাথে যাদের মধ্যেই করোনা সংক্রমণের ন্যূনতম লক্ষণ দেখা দিয়েছে তাদেরকে পরিবার থেকে আলাদা করে নেওয়া হয়। এদেরকে জিমনেশিয়াম, স্টেডিয়াম, বড় হলকক্ষে আলাদা করে রাখা হয়। যারা কোনো কারণে রোগীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদেরকেও কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।(AlTakarli, 2020)

লকডাউন এলাকার বাইরে প্রতিটি শহরে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখে, জনসমাগম হতে পারে এমন স্থানে সার্বজনীন তাপমাত্রা নিরীক্ষণ ব্যবস্থা চালু করে। থার্মাল স্ক্যানারে কোনো ব্যক্তির দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলেই তাকে আলাদা করে নেওয়া হয়। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণ করে সামান্য লক্ষণ দেখা দিয়েছে এমন ব্যক্তিদেরও বাছাই করা হয়। মাস্ক পরিধান এবং হাত ধোয়ার ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর বিগ ডাটাকে কাজে লাগিয়ে একটি বড় জনসংখ্যা থেকে সহজেই রোগীদের আলাদা করে নেওয়া যায়। চীনের টেক কোম্পানিগুলো মানুষদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘হেলথ রেটিং’ দেওয়া শুরু করে যা দেখে নির্ধারণ করা যায় ঐ লোকের কি কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত নাকি ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত। এ ধরনের সেবা প্রথমে হংঝু শহরে চালু হয় এবং তা ক্রমান্বয়ে দুইশো শহরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। চীনের উচ্চমানের ফেসিয়াল রিকগনিশন পদ্ধতি ভীড় থেকে মাস্ক না পরা ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম, এবং তাকে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতে পারে। পাশাপাশি চীন তাদের মানুষের চলাচল ঠেকাতে নববর্ষের ছুটি বাড়িয়ে দেয়। (Graham-Harrison & Kuo, 2020), (Kupferschmidt et al., 2020)

চীনে নাগরিকদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে তাদের ভ্রমণ বিবরণী, স্বাস্থ্যের অবস্থা দিয়ে অনলাইন ফর্ম ফিলাপ বাধ্যতামূলক করা হয়। যেখানে তাদের সবাইকে তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে সবুজ, লাল আর হলুদ ‘কিউআর কোড’ দেওয়া হয়। লাল কিউআর কোড যাদের আসবে, তারা ডিং টক এপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোথায় যাচ্ছেন বলতে হবে, ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বের হলেই পুলিশ পাকড়াও করবে। হলুদ কিউআর যাদের তারাও থাকবেন সাত দিনের কোয়ারেন্টিনে। আর সবুজ যাদের তারা তাদের কিউআর কোড দেখিয়ে মাস্ক এবং অন্যান্য সতর্কতা নিয়ে চলাচল করতে পারবেন। ব্যস্ত শহরগুলোতে, শপিং মল, কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকানে প্রবেশের মুখে তাপমাত্রা পরীক্ষার পাশাপাশি মোবাইলে কিউআর কোড পরীক্ষা করে ঢুকানো হয় মানুষকে।(Cimpanu, 2020), (Abedin, 2020)

চীনে নাগরিকদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে তাদের ভ্রমণ বিবরণী, স্বাস্থ্যের অবস্থা দিয়ে অনলাইন ফর্ম ফিলাপ বাধ্যতামূলক করা হয়। যেখানে তাদের সবাইকে তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে সবুজ, লাল আর হলুদ ‘কিউআর কোড’ দেওয়া হয়।

এই মহামারি মোকাবেলায় চীনের ডাক্তারদের আছে বড় ভূমিকা, হাড়ভাঙ্গা খাটুনী, মানসিক যন্ত্রণা আর ত্যাগের মাঝে চেষ্টার কমতি ছিল না তাদের; ২০০৪ সালের সার্সের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই চীন ভাইরাল ফ্লু মোকাবেলায় গড়ে তুলেছিল বিশাল জনশক্তি, আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা, কোয়ারেন্টিন করার জাতীয় পরিকল্পনা চীনের মাথায় ছিল আগে থেকেই। আর তাই সেই আক্রমণের পর থেকেই চীনের সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যখাতের গবেষণায় বিনিয়োগ করেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ, গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছে ব্যাপকভাবে। ফলে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় এই ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স, টেস্ট কিট তৈরি, মোকাবেলা, দক্ষ ডাক্তারদের সম্মিলিত প্রয়াস পাওয়া গেছে। সারাদেশ থেকে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, পেশাদারদের একত্র করে তাদের বোর্ড গঠন করে এবং কিছুক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনের সহায়তা নিয়ে এই মহামারিকে মোকাবেলা সম্ভব হয়েছে। জ্যাক মা ফাউন্ডেশনের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ডাক্তারদের সাথে সরাসরি কাজ করেছে। এক হাসপাতালের রোগীকে সারিয়ে তোলার পর অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে অন্য হাসপাতালে, দ্রুত সময়ে তা পৌঁছে দিতে ডাক্তারদের নেটওয়ার্কিং, অভিজ্ঞতা বিনিময়ে কাজ করেছে প্রযুক্তি খাত। বাসায় থাকা রোগীদের কাছে পৌঁছে গেছে টেলিমেডিসিনের পরামর্শ। কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগীদের দেওয়া হয়েছে ভিডিও কনফারেন্স আর এপ্লিকেশনের মাধ্যমেই সেবা। এভাবে চীন সরকারের এই ব্যাপক নজরদারী এবং কার্যকর লকডাউন চীনকে বড় দুর্যোগকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। (AlTakarli, 2020), (Abedin, 2020)

এক হাসপাতালের রোগীকে সারিয়ে তোলার পর অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে অন্য হাসপাতালে, দ্রুত সময়ে তা পৌঁছে দিতে ডাক্তারদের নেটওয়ার্কিং, অভিজ্ঞতা বিনিময়ে কাজ করেছে প্রযুক্তি খাত। বাসায় থাকা রোগীদের কাছে পৌঁছে গেছে টেলিমেডিসিনের পরামর্শ। কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগীদের দেওয়া হয়েছে ভিডিও কনফারেন্স আর এপ্লিকেশনের মাধ্যমেই সেবা।

তবে চীন করোনা মোকাবিলার শুরুতে তথ্য গোপন করার ফল চীনসহ পুরো বিশ্বকে ভোগ করতে হচ্ছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, চীন যদি প্রথমেই বিষয়টি চাপা না দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিত, তাহলে পৃথিবীতে প্রতিদিন এত মৃত্যু মিছিল দেখতে হত না। চীন সরকারের তথ্য গোপন করার ফলেই এমন অবস্থা হয়েছে।

তাইওয়ান: করোনা নিয়ন্ত্রণে অনেক বড় বড় দেশ ব্যর্থ হলেও অনেক ছোট দেশই সফল হয়েছে। তাইওয়ানের আয়তন ৩৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার, বাংলাদেশের অর্ধেকের চেয়ে একটু বেশি আর লোকসংখ্যা আড়াই কোটির মতো। ফেব্রুয়ারির শুরুতেও রাজধানী তাইপে আর চীনের মধ্যে ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াত। সেই হিসেবে এত দিনে দেশটি করোনাভাইরাসে বিধ্বংসী হয়ে ওঠার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। ৭ অক্টোবর পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৩ জনে, সাথে মাত্র ৭টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাইওয়ানের এই সাফল্যের পেছনে আছে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যের দিকে নজর আর নিখুঁত পরিকল্পনা।

৭ অক্টোবর পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৩ জনে, সাথে মাত্র ৭টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

তাইওয়ানের প্রতিটি নাগরিককে দেওয়া হয় জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা কার্ড, যাতে অতি কম খরচে অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার সুবিধে পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, তাইপেই শহরের স্বাস্থ্য সূচক পৃথিবীতে এক নম্বর। তা সত্ত্বেও তাইওয়ান কিন্তু ঘরপোড়া গরু। ২০০৩ সালে সার্স কোভ (SARS-CoV, করোনার সমগোত্রীয়) রোগে ৭৩ জন মারা যায়, যাতে মৃত্যুহার ছিল ২১ শতাংশ। তা থেকেই শিক্ষা নিয়ে তাইওয়ান ঢেলে সাজিয়েছিল তার স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (সিডিসি)।

তাই উহানে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাইওয়ান সিডিসি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও -কে ৩১ ডিসেম্বর একটি চিঠি লিখে এই অজানা ভাইরাসের ব্যাপারে জানতে চায়। বিশেষ করে এটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় কি না, সে ব্যাপারে। ডব্লিউএইচও সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করলেও কোনও উত্তর দেয়নি, কারণ তাইওয়ান ডব্লিউএইচও -র সদস্য রাষ্ট্র নয় এবং চীন তাইওয়ানকে আলাদা রাষ্ট্র বলে মনে করে না।

জানুয়ারির প্রথমেই তাইওয়ানের সিডিসি আগের ১৪ দিনে উহান ভ্রমণকারী সমস্ত ব্যক্তি— যাদের জ্বর বা শ্বাসনালীর সংক্রমণের লক্ষণ ছিল এবং কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়ে, তাদের আলাদা করে রেখে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছিল। দ্রুততার সঙ্গে সিডিসি সক্রিয় করেছিল সেন্ট্রাল এপিডেমিক কমান্ড সেন্টার (সিইসিসি)। সরকারি সাহায্যে ব্যাপক ভাবে চালু করেছিল মাস্কের উৎপাদন, সামরিক কর্মীদের একত্রিত করে তাদের কাজে লাগাতে শুরু করেছিল। ফেব্রুয়ারির প্রথমেই সারা দেশব্যাপী মাস্কের রেশনিং শুরু করা হয়, যাতে কেউ তা মজুত না করতে পারে। জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা কার্ড, বা এলিয়েন রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট (বহিরাগত কর্মীদের যা দেওয়া হয়) দেখিয়ে সকলেই বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে এই মাস্ক কিনে ব্যবহার শুরু করেন। প্রতিটি ফার্মেসিকে জিপিএসের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয় এবং যে কেউ একটি মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে, কোথায় কত মাস্ক পাওয়া যাবে, জানতে পারছিলেন। এই সবই এমন সময়ে, যখন ডব্লিউএইচও কোভিডকে অতিমারি হিসাবে ঘোষণাই করেনি। তাইওয়ান এটা করেছিল অত্যন্ত সচেতন ভাবে, নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করে।

জানুয়ারির প্রথমেই তাইওয়ানের সিডিসি আগের ১৪ দিনে উহান ভ্রমণকারী সমস্ত ব্যক্তি— যাদের জ্বর বা শ্বাসনালীর সংক্রমণের লক্ষণ ছিল এবং কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়ে, তাদের আলাদা করে রেখে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছিল।

ফেব্রুয়ারি থেকেই তাইওয়ানের প্রতিটি জায়গায় শুরু হয়ে যায় থার্মাল স্ক্যানিং। ২৪ মার্চ থেকে সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমান উঠা-নামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিদেশ থেকে আগত প্রতিটি যাত্রীকে বাধ্যতামূলক স্ব-পৃথকীকরণ (সেলফ কোয়ারেন্টিন) করা হয় এবং তা করা হয় এক অভূতপূর্ব পদ্ধতিতে। সিইসিসি এবং সিডিসি ইমিগ্রেশন এবং শুল্ক বিভাগের ডাটাবেসকে জাতীয় স্বাস্থ্য ডাটাবেসের সঙ্গে সংযুক্ত করে ফেলে। বিমানবন্দরে অবতরণের পরেই যাত্রীর মোবাইল ফোনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় একটি সিম কার্ড। অ্যাপের মাধ্যমে সিইসিসি শুরু করে সক্রিয় যোগাযোগের সন্ধান, পৃথককরণ এবং পরীক্ষার। সরকার জরিমানার বিধান চালু করে- কোয়ারেন্টিন ভেঙে বাইরে বেরুলেই এক মিলিয়ন তাইওয়ানিজ় ডলার। তাইওয়ানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রতি দিন নিয়ম করে সাংবাদিকদের সামনে কোভিডের সমস্ত তথ্য দিয়ে গেছেন: প্রতিটি রোগীর তথ্য, তার উৎস, সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে। তাইওয়ান ’তথ্যের স্বচ্ছতাই কোভিডের বিরুদ্ধে লড়ার একমাত্র উপায়’ এই নীতি গ্রহণ করেছিল।

তাইওয়ানের অভিজ্ঞতা দেখায় যে, জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা হওয়া উচিত নিরন্তর আর তাতেই গড়ে ওঠে সরকারের ওপর নাগরিকের বিশ্বাস। তাইওয়ানে লকডাউন নেই। প্রতি দিনের জিনিসপত্র কেনার কোনও আতঙ্ক নেই, স্টোর এবং সুপারমার্কেটগুলোতে দৈনন্দিন জিনিসপত্র পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। সেখানে লকডাউন না থাকলে কি হবে, নিয়ম-কানুন অত্যন্ত কড়া। বাইরে মাস্ক পরে না বের হলেই ১৫ হাজার ডলার জরিমানা। করোনা প্রতিরোধে সম্ভাব্য যা কিছু করার তার সবই তাইওয়ানে হচ্ছে। কিন্তু সবই হচ্ছে খুব নীরবে, কোথাও নিজের প্রশংসা ও আত্মতুষ্টি নেই, নেই হাজার অনুযোগ (Sarkar, 2020)

ভারত: বিশ্বে শনাক্ত রোগীর দিক থেকে এখন ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশটিতে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৬৭ লাখ ৬৪ হাজার, ৭১০ জন। ভারতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৬০১ জনের, বিশ্বে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু দেশটিতে করোনাভাইরাসের পরিসংখ্যান নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে, কারণ ভারতে যথেষ্ট পরীক্ষা হচ্ছে না, এবং দেশটিতে অস্বাভাবিক কম মৃত্যু হারে বিজ্ঞানীরা বিভ্রান্ত। কঠোর লকডাউনের পর সবকিছু খুলে দেবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সনাক্তের উচ্চহার দেখা যায়। তবে বিশ্বের যেসব দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি সেসব দেশের তুলনায় ভারতে সুস্থ হয়ে ওঠার চিত্র অনেক ইতিবাচক। এটা ধারণা দেয় যে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের তুলনায় ভারতে কোভিড রোগীরা সুস্থ হচ্ছে সংখ্যায় বেশি এবং দ্রুত। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে এই হার ২৭%, ভারতের ক্ষেত্রে সেই হার ৬০%।(আল্লুরি & নাজমি, 2020)

ভারতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৬০১ জনের, বিশ্বে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু দেশটিতে করোনাভাইরাসের পরিসংখ্যান নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে, কারণ ভারতে যথেষ্ট পরীক্ষা হচ্ছে না, এবং দেশটিতে অস্বাভাবিক কম মৃত্যু হারে বিজ্ঞানীরা বিভ্রান্ত।

পশ্চিমে যেসব দেশ বেশিরকম আক্রান্ত, সেসব দেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে, এই এলাকার দেশগুলোতে এর থেকে কম শক্তির ভাইরাসে মানুষ আগে আক্রান্ত হয়েছে- ফলে তাদের হয়ত কিছুটা ইমিউনিটি থাকতেও পারে, এবং এসব দেশে জনসংখ্যার একটা বড় অংশ অপেক্ষাকৃত তরুণ। দেশটির সরকার যখন অর্থনীতি সচল করতে বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করেছে, তখন দেশটিতে সংক্রমণের হারও বাড়তে শুরু করেছে। গত মার্চ মাস থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ভারতে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।

জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ভারতের প্রথম করোনা-আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায় কেরালা রাজ্যে৷ ৭ অক্টোবর  পর্যন্ত কেরালার মোট ২ লক্ষ ৫৩ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ১,৬০,২৫৩ জন সুস্থ হয়েছেন৷ প্রাণ হারিয়েছেন ৯০৬ জন৷ ভারতের অন্যত্র যখন হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের, মৃতের সংখ্যা, অন্যদিকে কেরালা দেখাচ্ছে আশার পথ৷ চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘যে সমস্ত মডেল আমরা কার্যকরী হতে দেখছি সবকটিই কোনো না কোনো ভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলের সংস্করণ৷ কেরালাতেও তাই৷ গণহারে করোনা-পরীক্ষা বা ‘মাস টেস্টিং’ এবং আইসোলেশন এই দুটিই হচ্ছে এই মডেলের মূল পদক্ষেপ, লকডাউন নয়৷ কেরালায় শুধু বিশাল আকারে পরীক্ষাই হয়নি, পাশাপাশি অন্যান্য অনেক কিছু আনুষঙ্গিকতার দিকে নজর দিয়েছেন তারা৷ সমাজের দুর্বল অংশের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো একাধিক সামাজিক পদক্ষেপ নেওয়ায় জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা৷ ফলে মানুষ আরো বেশি করে এগিয়ে এসে নিজেদের পরীক্ষা করিয়েছেন৷” (Kurian, 2020)

কেরালায় শুধু বিশাল আকারে পরীক্ষাই হয়নি, পাশাপাশি অন্যান্য অনেক কিছু আনুষঙ্গিকতার দিকে নজর দিয়েছেন তারা৷ সমাজের দুর্বল অংশের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো একাধিক সামাজিক পদক্ষেপ নেওয়ায় জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা৷

কেরালার মডেল মূলত অর্থনৈতিক-স্বাস্থ্য-সামাজিক এই তিন নীতির মিলিত ফল৷ শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট ও কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোটের মধ্যে সমন্বয় ও বোঝাপড়া গোটা দেশের কাছে উদাহরণস্বরূপ৷ কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন থেকে যায় যে কেরালার দেখানো পথে কি ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলি চলতে সক্ষম? বা কেন্দ্রীয় স্তরেও কি নেওয়া যেতে পারে একই ধাঁচের নীতিমালা? মধ্যপ্রাচ্য কর্মরত শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স কেরালার জন্য একটা বড় আয়ের মাধ্যম৷ ফলে, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কেরালায় সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেশি৷ তাই অন্যান্য রাজ্যের বাসিন্দারা লকডাউনের পরিস্থিতিতে যত বেশি বাজার-হাটে বা কাজের জন্য বাইরে যেতে বাধ্য হন, কেরালায় তেমনটা না হওয়ায় মানুষকে অনেক আগে থেকেই ঘরে রাখা গেছে৷ পাশাপাশি, কেরালায় শিক্ষার হার অন্যান্য অনেক রাজ্যের তুলনায় বেশি, ফলে এই মহামারি সম্বন্ধে অবগত করার প্রক্রিয়াটা সেখানে অনেক সহজ৷

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সৈকত সিংহ রায় বলেন, ‘‘কেরালা মডেল দেশে বা অন্য রাজ্যের পক্ষে এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা কঠিন৷ এর কারণ দুটি- প্রথম, জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা থাকার ফলে সেখানে করোনায় মৃত্যুর হার অন্যদের তুলনায় কম৷ ১৯৯০ থেকে সেখানে একধারে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা গণস্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করে৷ দ্বিতীয়ত, কেরালায় দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ রয়েছে যা অন্য রাজ্যের নেই, কেন্দ্রেরও নেই৷ কিন্তু এই মুহূর্তে সেই পর্যায়ের কাছাকাছি যেতে গেলে জিডিপি’র অন্তত ৬ শতাংশ করোনা মোকাবিলায় অবিলম্বে বিনিয়োগ করতে হবে৷” (Welle (www.dw.com), 2020), (bhattasali, 2020), (Kurian, 2020)

কেরালা মডেল দেশে বা অন্য রাজ্যের পক্ষে এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা কঠিন৷ এর কারণ দুটি- প্রথম, জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা থাকার ফলে সেখানে করোনায় মৃত্যুর হার অন্যদের তুলনায় কম৷ ১৯৯০ থেকে সেখানে একধারে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা গণস্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করে৷

দক্ষিণ কোরিয়া: কোনও শহর লকডাউন করা হয়নি, বন্ধ হয়নি পরিবহন এমনকি আন্তর্জাতিক প্রবেশও ছিল উন্মুক্ত। এরপরও দক্ষিণ কোরিয়া যে শুধু করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পেরেছে সফলভাবে তা নয়, দেশটিতে মোট আক্রান্ত ২৪ হাজার ৩৫৩ জনের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৪২৫ জন।

দেশটি ১৯৮৯ সালে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করার পর ২০০০ দশকের গোড়ার দিকে স্বাস্থ্যসেবার সম্পূর্ণ খরচ জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা দ্বারা অর্থায়িত হয়। (Kwŏn et al., 2015) এমনকি অন্যান্য উচ্চ-আয়ের দেশগুলির তুলনায়, মাথাপিছু হাসপাতালের শয্যা হাজারে ১২.৩ অনেক বেশি, এটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা বা ওইসিডি দেশগুলির গড় দ্বিগুণ।(OECD data, 2020)

করোনার প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে লোকদের সনাক্ত করতে প্রায় ৬০০ টি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল, যার পরীক্ষার ক্ষমতা প্রতিদিন ১৫০০০ থেকে ২০০০০ পর্যন্ত।দেশজুড়ে সরকার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করেছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের (পিপিই) ঘাটতি সমাধান করেছে। (Exemplars in Global Health (EGH), 2020)

জাতিসংঘের দুর্যোগ প্রশমণ কার্যালয়ের (ইউএনডিআরআর) উদ্যোগে আয়োজিত এক বিশেষ ওয়েবিনারে মিয়ংজি হাসপাতালের সিইও ও কোরিয়ান হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ড. লি ওয়াং-জুন ভাইরাসের বিস্তার রোধে দক্ষিণ কোরিয়ার কৌশলের চারটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি তুলে ধরেন। ইউএনডিআরআর’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম নীতি হলো কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের মাধ্যমে নতুন আক্রান্তের তথ্য হালনাগাদ করতে সম্পূর্ণ উন্মুক্ততা ও স্বচ্ছতা। মিডিয়াসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে সব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কোথায়, কখন এবং কীভাবে সংক্রমণ শনাক্ত এবং তা যাচাই করা হলো তা তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় নীতি হলো সংবরণ ও প্রশমন। আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহভাজন ও নিশ্চিত আক্রান্তদের শনাক্ত করা। প্রশমনের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত ছিল সামাজিক দূরত্ব প্রচারণার। যা ফেব্রুয়ারির শেষ দিকেই দায়েগু এলাকায় বড় ধরনের সংক্রমণের পরই শুরু করা হয়েছিল। তৃতীয় নীতি হলো ২০১৫ সালের সার্স সংক্রমণ থেকে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো। এর ফলে জনগণের মধ্যে আক্রান্তের বিষয় নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। এছাড়া মহামারির সময় ভাইরাসের বিস্তার রোধে করণীয় সম্পর্কেও তারা অবহিত ছিল। চতুর্থ নীতি হলো গণহারে পরীক্ষা এবং দ্রুত সন্দেহভাজন আক্রান্তদের চিহ্নিত করা। পরীক্ষার সরঞ্জাম মজুত ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয় যাতে সপ্তাহে চার লাখ ৩০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা সম্ভব হয়। (Banglatribune, 2020), (Exemplars in Global Health (EGH), 2020)

প্রথম নীতি হলো কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের মাধ্যমে নতুন আক্রান্তের তথ্য হালনাগাদ করতে সম্পূর্ণ উন্মুক্ততা ও স্বচ্ছতা। মিডিয়াসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে সব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কোথায়, কখন এবং কীভাবে সংক্রমণ শনাক্ত এবং তা যাচাই করা হলো তা তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় নীতি হলো সংবরণ ও প্রশমন। আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহভাজন ও নিশ্চিত আক্রান্তদের শনাক্ত করা।

আফ্রিকা মহাদেশ

মহামারি কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার শুরুতে বিশেষজ্ঞরা ধরেই নিয়েছিলেন, বড় বিপদের সামনে আফ্রিকা মহাদেশ কেননা ঘনবসতিপূর্ণ শহরতলি, দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আর কমিউনিটির মধ্যে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা অসম্ভব আফ্রিকায়। তাছাড়া মহাদেশটির অনেক অঞ্চলে মানুষ এক ঘর ভাগাভাগি করে বসবাস করে আসছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা:  মোট শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্তের অর্ধেকই দক্ষিণ আফ্রিকার। বিশ্বে সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত দেশের তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান অষ্টম। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- ৭ অক্টোবর পর্যন্ত, দেশটিতে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ২৪২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৭ হাজার ১০৩ জনের। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আফ্রিকার বিগত ২০১৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত চলা ইবোলা মহামারি থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে। ঐ সময়ে পশ্চিম আফ্রিকার ১১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে আফ্রিকার সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ কীভাবে এই সঙ্কট মোকাবেলা করেছে তা সত্যিই আকর্ষণীয়। দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যা বর্তমানে ৫৯ মিলিয়ন। ২০১৫ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যার অল্প বয়স্ক, মধ্য বয়স্কদের গড় বয়স ছিল ২৬.৪ বছর। ইস্টার্ন কেপ, দেশের দরিদ্রতম প্রদেশ, এখানে ২১ বছর বয়সী যুবকেরা সংখ্যায় বেশি অন্যদিকে, গৌতেং এবং পশ্চিম কেপ প্রদেশগুলিতে মধ্যবয়স্ক জনগোষ্ঠীর  বয়স যথাক্রমে ২৯ এবং ২৮ বছর। (Plecher, 2020) বয়স অনুসারে মৃত্যু ঝুঁকি অনুমান করার জন্য গবেষকরা এন্টিবডি বৃদ্ধির সক্ষমতার উপর জুন ও জুলাইয়ে ১০৯,০০০ জন বাসিন্দার উপর একটি গবেষণা চালায় যেখানে ১৫-৪৪ বছর বয়সের ইনফেকশন ফার্টালি রেশিও (আইএফআর) প্রায় শুন্যর কাছাকাছি, ৬৫-৭৪ বয়সের আইএফআর বৃদ্ধি পেয়ে ৩.১% এবং তার বেশি আইএফআর ১১.৬%।  (Hirsch, 2020)

দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু নাটালে ৫ই মার্চ প্রথম পজিটিভ রোগী ধরা পড়ে। “প্যাশেন্ট জিরো”  হিসাবে বিবেচিত এই ব্যক্তি ১ মার্চ ইতালির মিলান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরে এসেছিলেন। এরপরের দিনগুলিতে রোগীর সংখ্যা  দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায়, দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার দ্রুততার সাথে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং ২৩ শে মার্চ থেকে তিন সপ্তাহের জন্য জনগণের উপর একটি কঠোর লকডাউন চাপিয়ে দেয়। এই পর্যায়ে, কোনও ধরনের মৃত্যুর আগেই সরকারি হিসেবে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫৪। পরবর্তীতে প্রশাসন লকডাউনটি ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রসারিত যা খুবই কঠোরভাবে আফ্রিকা মহাদেশে সীমাবদ্ধ ছিল। দোকান, রেস্তোঁরা এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ ছিল, জনসাধারণকে কেবল প্রয়োজনীয় মুদি কেনাকাটা এবং চিকিৎসার কারণে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল; কোনও সামাজিক মেলামেশা, বিদেশে কোনও ক্রিয়াকলাপ, খেলাধুলা বা কুকুর-হাঁটা অনুমোদিত ছিল না, এবং অ্যালকোহল এবং সিগারেটের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এই ছয় সপ্তাহের লকডাউন সংক্রমণের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল।  (Stiegler & Bouchard, 2020), (French, 2020)

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার কিউবা সরকারের নিকট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি টিমের জন্য আবেদন জানালে, ২৬ এপ্রিল ২০০ এর অধিক ডাক্তার এসে প্রশাসন ও নাগরিকদের সাহায্য করে। (voanews, 2020)

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার কিউবা সরকারের নিকট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি টিমের জন্য আবেদন জানালে, ২৬ এপ্রিল ২০০ এর অধিক ডাক্তার এসে প্রশাসন ও নাগরিকদের সাহায্য করে।

সেনেগাল: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল। হোটেলগুলিকে  পৃথক পৃথক কোয়ারান্টাইন  ইউনিটে রূপান্তরিত করা কিংবা খুব কম খরচে ভেন্টিলেটর চালানোর জন্য চেষ্টা  করা দেশটি সেনেগাল। এক ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, হাসপাতালে শয্যা সংকট এবং প্রতি ১00,000 লোকের জন্য প্রায় সাতজন ডাক্তার কিন্তু তারপরও ১৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার সেনেগাল  এখন পর্যন্ত কার্যকরভাবে করোনা মোকাবেলা করেছে। ৭ অক্টোবর  পর্যন্ত দেশটিতে  মাত্র ১৫,১৭৪ টি রোগী  শনাক্ত হয়েছে এবং তারমধ্যে মাত্র ৩১৩ জন মারা গিয়েছে। (Shesgreen, 2020), (worldbank data, 2020)

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক জড দেভারমন্টের মতে, সেনেগাল বৈজ্ঞানিকভাবে ও দ্রুততার সাথে এই মহামারির প্রতিক্রিয়া জানানোর মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে। সেনেগালের রাজধানী ডাকারে একদল গবেষক থ্রী-ডি প্রযুক্তির সাহায্যে একটি প্রোটোটাইপ ভেন্টিলেটর বিকাশের জন্য কাজ করে যা দশ হাজার ডলারের পরিবর্তে কেবলমাত্র ১৬০ ডলার খরচ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সেনেগালের নেতারা ভাইরাস সম্পর্কে স্পষ্ট, ধারাবাহিক, বিজ্ঞান-ভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করেছেন এবং খুবই দ্রুত মহামারি প্রতিরোধী  প্রতিক্রিয়া শুরু করেছেন। প্রশাসন সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ে স্বচ্ছ বক্তব্য দিয়েছেন। (Ababa et al., 2020)

সেনেগাল বৈজ্ঞানিকভাবে ও দ্রুততার সাথে এই মহামারির প্রতিক্রিয়া জানানোর মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে। সেনেগালের রাজধানী ডাকারে একদল গবেষক থ্রী-ডি প্রযুক্তির সাহায্যে একটি প্রোটোটাইপ ভেন্টিলেটর বিকাশের জন্য কাজ করে যা দশ হাজার ডলারের পরিবর্তে কেবলমাত্র ১৬০ ডলার খরচ করতে পারে।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞ অবশ্য বলছেন, জনবহুল ও দুর্বল সংযোগ ব্যবস্থার এই মহাদেশটিতে এখন সংক্রমণ মৃত্যু কম থাকলেও আগামী মাসগুলোতে যে তা বাড়বে না এমনটাও কেউ বলতে পারছে না

ইউরোপ

গোটা বিশ্বের করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর অর্ধেকই ইউরোপে ঘটছে কারণ হিসেবে দেখা গিয়েছে যেখানে যত বেশি পরীক্ষা হচ্ছে, সেখানেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা বেশি ধরা পড়ছে৷ সেই অর্থে ইউরোপে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি করে চোখে পড়ার মতো৷

১৯৮০ সালে ইতালিতে হাসপাতালের বেডের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ যা কমে ২০২০ সালে হয়েছে ২ লাখ। ১৯৮০ সালে সে দেশে ১ লক্ষ নাগরিক পিছু আইসিইউ বেডের সংখ্যা ছিল ৯২২, যা বর্তমানে হয়েছে মাত্র ২৭৫। ১৯৯৮ সালে সমস্ত দেশে হাসপাতালের সংখ্যা ছিল ১৩৮১ যা ২০১৯ সালে হয়েছে ১,০০০।

ইতালি: ইতালির ক্রমভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা, উদারবাদী অর্থনীতির আক্রমণে স্বাস্থ্য বাজেটের হ্রাস, প্রবীণ মানুষদের সংখ্যাধিক্য, মুনাফার লোভ, লকডাউন করার ক্ষেত্রে সরকারের গাফিলতি, পরিবেশ দূষণ — এই সবগুলোই ইতালিতে করোনা অতিমারির জন্য দায়ী। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী ৮ অক্টোবর  পর্যন্ত মোট সংক্রমিত সংখ্যা, ৩ লক্ষ ৩৩,৯৪০ জন, যার মধ্যে মারা গিয়েছে ৩৬,০৬১ জন। নব্বইয়ের দশকের সূচনালগ্ন থেকে ইতালি নয়া উদারবাদী অর্থনীতির নিয়ম মেনে সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ কমাতে থাকে যা চরম আকার ধারণ করে ২০০৮-এর বিশ্বজোড়া আর্থিক মন্দার সময়। এই হ্রাসের প্রভাব সরাসরি পড়ে ইতালির স্বাস্থ্যব্যবস্থায়। ১৯৮০ সালে ইতালিতে হাসপাতালের বেডের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ যা কমে ২০২০ সালে হয়েছে ২ লাখ। ১৯৮০ সালে সে দেশে ১ লক্ষ নাগরিক পিছু আইসিইউ বেডের সংখ্যা ছিল ৯২২, যা বর্তমানে হয়েছে মাত্র ২৭৫। ১৯৯৮ সালে সমস্ত দেশে হাসপাতালের সংখ্যা ছিল ১৩৮১ যা ২০১৯ সালে হয়েছে ১,০০০। এই খণ্ড পরিসংখ্যানগুলো জোড়া দিলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে চিত্রটি ফুটে ওঠে তা নিশ্চিতভাবে কোনও উন্নত দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র হতে পারে না। (statista, 2020), (molik, 2020) ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালে দেশের স্বাস্থ্যবরাদ্দ খাতে ৩৭ বিলিয়ন ইউরো কমানো হয়েছে ফলে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী — সবার সংখ্যা কমেছে (Armocida et al., 2020) সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী চিকিৎসক ও নার্স মিলিয়ে ৪৬,৫০০ পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। এই ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার আরেকটি বড় কারণ অবশ্যই স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্রমাগত বেসরকারিকরণ। ইতালিতে বেসরকারি হাসপাতালে নাগরিকদের চিকিৎসা হলে, পরে সেই খরচ রাষ্ট্র মিটিয়ে দেয়। ১৯৯৮ সালে ইতালির হাসপাতালগুলির ৬১.৩ শতাংশ ছিল সরকারি এবং ৩৮.৭ শতাংশ ছিল বেসরকারি। ২০১৯ সালে এসে দেখা যাচ্ছে সরকারি হাসপাতালের পরিমাণ কমে হয়েছে ৫১.৮০ শতাংশ, আর বেসরকারি পুঁজির মালিকানাধীন হাসপাতালের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৮.২০ শতাংশ।

১৯৯৮ সালে ইতালির হাসপাতালগুলির ৬১.৩ শতাংশ ছিল সরকারি এবং ৩৮.৭ শতাংশ ছিল বেসরকারি। ২০১৯ সালে এসে দেখা যাচ্ছে সরকারি হাসপাতালের পরিমাণ কমে হয়েছে ৫১.৮০ শতাংশ, আর বেসরকারি পুঁজির মালিকানাধীন হাসপাতালের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৮.২০ শতাংশ।

এবারে যে মৃত্যুমিছিল তার একটা বড় অংশ লম্বার্ডি অঞ্চলে। ইতালিতে বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের কাছে এই অঞ্চলটি ‘এল ডোরাডো’ নামে পরিচিত। এর কারণ ১৯৯৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এখানকার গভর্নর রবার্তো ফরগিনি (বর্তমানে দুর্নীতির দায়ে জেল খাটছেন) প্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা স্বাস্থ্য বণিকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। ইতালির বেসরকারি হাসপাতালগুলি এই অতিমারির সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ তারা নতুন পুঁজি বিনিয়োগ করতে রাজি নয়। মিলান শহরের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল সান রাফাল এই কঠিন সময়ে প্রস্তাব দিয়েছে যদি নাগরিকরা আর্থিক সাহায্য দেয় তবে হাসপাতালের মাল্টিজিমে আইসিইউ খোলা যেতে পারে। অথচ এই হাসপাতালের মালিক যে কোম্পানি তার মূল্য ১.৩৫ বিলিয়ন ইউরো। এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে সরকারিভাবে অধিগ্রহণের ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি। প্রকৃত অর্থে ইতালির বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। চিকিৎসক ও নার্সদের অপ্রতুলতা সামাল দিতে মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে ৬৫ জনের একটি দল পাঠিয়েছে কিউবা সরকার। পুঁজিপতিরা ইতালিতে সংক্রমণ শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও কারখানাগুলিতে উৎপাদন বন্ধ করেনি। একদিকে বয়োবৃদ্ধ শ্রমিক, অন্যদিকে দেরিতে এবং অকার্যকরী লকডাউন পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করেছে। বর্তমানে এই দেশটি দ্বিতীয় প্রবীণতম দেশ (প্রথম জাপান)। ইতালির জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে। ইতালির ক্ষেত্রে তাই দেখা যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত মানুষদের গড় বয়স ৭২.৫ এই মানুষরা এমনিতেই অনেকে শ্বাসকষ্ট, হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যাতে ভোগেন ফলে তারা করোনার সহজ শিকার হয়েছেন।(molik, 2020), (Armocida et al., 2020)

ইতালির বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। চিকিৎসক ও নার্সদের অপ্রতুলতা সামাল দিতে মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে ৬৫ জনের একটি দল পাঠিয়েছে কিউবা সরকার। পুঁজিপতিরা ইতালিতে সংক্রমণ শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও কারখানাগুলিতে উৎপাদন বন্ধ করেনি। একদিকে বয়োবৃদ্ধ শ্রমিক, অন্যদিকে দেরিতে এবং অকার্যকরী লকডাউন পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করেছে।

স্লোভেনিয়া:করোনার ছোবল থেকে নিষ্কৃতি পায়নি ইউরোপের ছোট ও সুন্দর স্লোভেনিয়া। তবে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ইতালি কিংবা ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন: স্পেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের তুলনায় স্লোভেনিয়াতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার বরাবরই কম। মহামারি করোনাভাইরাসে মোকাবেলায় দেশটি ইতোমধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের কাছে এক রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড মিটারস কর্তৃক আজ ৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত স্লোভেনিয়াতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন ৭,১২০ জন এবং এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫৯ জন এবং এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৪,৫৩৫ জন।

ইতালির প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে স্লোভেনিয়া সফলভাবে এ করোনাভাইরাসের মোকাবেলা করলো?কেনই বা ইউরোপ এমনকি পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় স্লোভেনিয়াতে সে অর্থে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি ঘটেনি?

প্রথমত সম্পূর্ণ স্লোভেনিয়া ডিসেন্ট্রালাইজড। পৃথিবীর অনেক দেশের ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়, দেশটির অভ্যন্তরে বসবাস করা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা একটি নির্দিষ্ট শহর কেন্দ্রিক। হতে পারে সেটি দেশটির রাজধানী শহর, আবার হতে পারে সেটি দেশটির বৃহত্তম কোনো একটি নগরী। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের প্রায় সতেরো কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষ বসবাস করে রাজধানী ঢাকায়। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে যাবতীয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কার্যকলাপ সব কিছুই ঢাকাকে ঘিরে।

যেহেতু স্লোভেনিয়াতে করোনাভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটে ইতালির মাধ্যমে এবং একই সঙ্গে ইতালিতে যখন করোনার ছোবল সবচেয়ে তীব্র পর্যায়ে ঠিক তখনই স্লোভেনিয়ার সরকার ইতালির সঙ্গে স্লোভেনিয়ার সীমান্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ইতালি থেকে যারা স্লোভেনিয়াতে প্রবেশ করেন সবাইকে মেডিকেল চেকআপের আওতায় আনা এবং তাদেরকে আইসোলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়াসহ অন্যান্য সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়

ট্যাক্সিচালকদের বলা হয়েছে প্রত্যেকবার যাত্রী বহনের শেষে তাদের ট্যাক্সিগুলোকে নিয়মিতভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে যাতে করোনাভাইরাসের বিস্তার অনেকটা রোধ করা যায় ছোট বাচ্চাদের করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি প্রবল থাকায় সবার প্রথমে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং পর্যায়ক্রমে ইউনিভার্সিটিসহ সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

সকল ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয় এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানানো হয় যে কোন পাবলিক প্লেসে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবাইকে মুখে মাস্ক ও হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করতে হবে। সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে পারস্পরিক ১.৫ এর দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কেউ যদি তাদের এ নির্দেশনা লঙ্ঘন করে তাহলে তাকে ন্যূনতম ৪০০ ইউরো জরিমানা করার কথা বলা হয় স্লোভেনিয়ার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। লুবলিয়ানা, মারিবোর, ক্রানিয়ে, ছেলইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে পুলিশ প্রশাসনকে যতটা সম্ভব কড়া অবস্থানে থাকতে দেখা গিয়েছে যাতে এ সকল শহরে বসবাসরত জনসাধারণ এ নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে পারে। স্লোভেনিয়ার সরকার তো বটেই এমনকি দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্যাংক, পোস্ট অফিস, সুপার শপ, খাবারের দোকান, পেট্রোল স্টেশন, হাসপাতাল, ফার্মেসি অর্থাৎ নিত্য প্রয়োজনীয় সেবামূলক যে সকল প্রতিষ্ঠান এ অবস্থার মধ্যেও কাজ করে গিয়েছে সকল প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে একজন কিংবা একই পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এছাড়াও স্লোভেনিয়ার সরকারের ঘোষিত আর্থিক বিভিন্ন পদক্ষেপ দেশটির সাধারণ মানুষের মাঝে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। কৃষক এবং স্লোভেনিয়াতে যারা পেনশনভোগী তাদের জন্য এ সময় স্লোভেনিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে মাসে ১৫০ ইউরো করে অনুদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং এ পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে যাদের কাজ নেই তাদেরকে বেতনের ৮০% করে দিতে বলা হয়েছে স্লোভেনিয়া সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। তবে একটি বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গিয়েছে আর সেটি হচ্ছে স্লোভেনিয়াতে যে সকল বিদেশি নাগরিক রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে স্লোভেনিয়া সরকারের ঘোষিত সুস্পষ্ট কোনো নীতিমালা এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।(Hasan, 2020)

শিক্ষার্থীদেরকে মাসে ১৫০ ইউরো করে অনুদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং এ পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে যাদের কাজ নেই তাদেরকে বেতনের ৮০% করে দিতে বলা হয়েছে স্লোভেনিয়া সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

রাশিয়া: করোনা ভাইরাস সংক্রমণে রাশিয়া ইউরোপের নতুন হট স্পট হিসাবে পরিণত হওয়ার পরও রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ৩০শে মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন শিথিল করেছিলেন। তার পর থেকে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে, জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সংক্রমণ সংখ্যা ১২,৪৮,৬১৯টি এবং তারমধ্যে ২১,৮৬৫ জন মারা গেছে তবে রাশিয়ার অস্বাভাবিকভাবে কম মৃত্যুর হার বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের ১১ই মে প্রকাশিত বিশ্লেষণ অনুসারে, সরকারি মৃত্যুর তুলনায় জাতীয় মৃত্যুর সংখ্যা ৭০% এর বেশি হতে পারে। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবায়ানিন মে মাসে স্বীকার করেছেন যে, রাজধানী শহরে সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে কমপক্ষে তিন গুণ বেশি ছিল। রাশিয়ার চিকিৎসক জোটের প্রধান আনাস্তাসিয়া ভাসিলিয়েভা দাবি করেছেন যে সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় ভাইরাসটি আরও অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে।(Roache, 2020)

উত্তর আমেরিকা

এই মহাদেশের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়৷ ওয়াল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য ৭ অক্টোবর পর্যন্ত এই মহাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৭,৩০,২৬৩ জন ও মৃত্যুর সংখ্যা ২,১৬,০৪৪ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র,মেক্সিকো ও কানাডা।  

যুক্তরাষ্ট্র: পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র নভেল করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে ভয়াবহ রকমের বিপর্যস্ত। পৃথিবীর অন্যতম সেরা চিকিৎসাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও দেশটি বর্তমানে সবচেয়ে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি পার করছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে দেশটি। সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই আজ এই দেশ প্রচণ্ড আক্রান্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষস্থানে। ট্রাম্প ও তার প্রশাসন মার্চের শেষ সপ্তাহের আগ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসকে প্রকৃত অর্থে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। তাদের হেঁয়ালি আচরণ ও খামখেয়ালি পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র আজ করোনা ভাইরাসের আক্রমণের প্রধান কেন্দ্রস্থল, সারা পৃথিবীতে প্রথম।

ট্রাম্প ও তার প্রশাসন মার্চের শেষ সপ্তাহের আগ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসকে প্রকৃত অর্থে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। তাদের হেঁয়ালি আচরণ ও খামখেয়ালি পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র আজ করোনা ভাইরাসের আক্রমণের প্রধান কেন্দ্রস্থল, সারা পৃথিবীতে প্রথম।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে সেদেশের সরকা সতকর্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সিডিসির পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হওয়ায় পরিস্থিতি ট্রাম্প প্রশাসনের নাগালের বাইরে চলে যায় এবং পুরো যুক্তরাষ্ট্রে রোগটি মহামারির রূপ ধারণ করে। (Nowroozpoor et al., 2020) পুরো যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সংকটের মধ্যে হাসপাতালগুলো অপ্রস্তুত অবস্থায় চিকিৎসা দেয়া শুরু করেছে। ভেন্টিলেটর, স্যানিটাইজার, গ্লাভস, মাস্ক, পিপিই কিটের প্রচণ্ড সঙ্কট দেখা দিয়েছে প্রথম থেকেই, মাস্ক ছিনতাই এর ঘটনা পর্যন্ত তারা ঘটিয়েছে।  

কিউবা: বিপ্লবের পর থেকেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিউবাকে অর্থনীতিসহ নানাভাবে পঙ্গু করে রাখার চেষ্টা করেছে মার্কিন সরকার। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অবরোধসহ বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে কিউবা। এই করোনা পরিস্থিতিতে যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে ভঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থার কঙ্কাল বেরিয়ে আসছে, অনেক জায়গাতেই ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা, হিমশিম খাচ্ছে তথাকথিত উন্নত রাষ্ট্রগুলো, সেখানে কিউবা শুধু নিজেদের নাগরিকদের চিকিৎসা সেবায়ই নিশ্চিত করেনি, দেশে দেশে পাঠাচ্ছে তাদের স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকদলকে। ৭ অক্টোবর  কিউবার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫,৮৯৮  জন তারমধ্যে ৫,৩২১ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন ও ১২৩ জন মারা গিয়েছে।  

যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে ভঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থার কঙ্কাল বেরিয়ে আসছে, অনেক জায়গাতেই ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা, হিমশিম খাচ্ছে তথাকথিত উন্নত রাষ্ট্রগুলো, সেখানে কিউবা শুধু নিজেদের নাগরিকদের চিকিৎসা সেবায়ই নিশ্চিত করেনি, দেশে দেশে পাঠাচ্ছে তাদের স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকদলকে।

জানুয়ারি মাসে কিউবা করোনা মোকাবিলায় ‘প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ’ নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনার ভেতর ছিলো চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, করোনা আক্রান্তদের কীভাবে চিকিৎসা দেয়া হবে কোথায় চিকিৎসা হবে সেসব ব্যবস্থা প্রস্তুত করা, কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা প্রস্তুত করা এবং পর্যটন কর্মীসহ জনগণের মাঝে করোনার লক্ষণ কী ও এই বিষয়ক সর্তকতা তৈরি করা। কিউবা রাষ্ট্র তার নাগরিকদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বাসস্থানের দায়িত্ব পালন করে নীতিগত অবস্থান থেকে। ফলে লকডাউন কিংবা অবাধ চলাচলে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও ক্ষুধায় কিংবা বিনা চিকিৎসায় কাউকে মরতে বা ভুগতে হচ্ছে না। কিংবা ত্রাণের অভাবে বিক্ষোভ, ক্ষুধার কারণে লকডাউন ভেঙে পথে নামতে বাধ্য হওয়ার মতো ঘটনা নেই।

কিউবা রাষ্ট্র তার নাগরিকদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বাসস্থানের দায়িত্ব পালন করে নীতিগত অবস্থান থেকে। ফলে লকডাউন কিংবা অবাধ চলাচলে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও ক্ষুধায় কিংবা বিনা চিকিৎসায় কাউকে মরতে বা ভুগতে হচ্ছে না। কিংবা ত্রাণের অভাবে বিক্ষোভ, ক্ষুধার কারণে লকডাউন ভেঙে পথে নামতে বাধ্য হওয়ার মতো ঘটনা নেই।

কিউবান সরকার গণপরিবহণ চলাচলের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করার সাথে সাথে অনেক ব্যক্তিগত গাড়ি এবং সরকারি গণপরিবহণ এবং তাদের চালকদের হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার কাজে নিয়োজিত করে। রেশনিং ব্যবস্থা ও জরুরি সেবার ব্যবস্থাগুলোকে বিশেষ নিরাপত্তার ভেতর নিয়ে আসে। (Ovi, 2020)

দক্ষিণ আমেরিকা

দক্ষিণ আমেরিকায় প্রাণঘাতী করোনায় সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে। এই অঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত কিছু দেশে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই মহাদেশে করোনা আক্রান্তের সাথে সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও অন্যান্য মহাদেশ থেকে বেশি। 

ব্রাজিল: ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে ব্রাজিলে করোনাভাইরাস সবচাইতে ভয়ংকর আকার নিয়েছে। ব্রাজিল যেভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে শুধু সেই দেশের প্রশাসনের অদূরদর্শিতাই প্রতীয়মান হয়। এর ফলাফলও ভোগ করতে হচ্ছে ব্রাজিলের জনগণকে। করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রাজিলের নাম উচ্চারিত হচ্ছে সর্বত্র। সাও পাওলোর কবরস্থানগুলোতে এখন আর কোনো জায়গা ফাঁকা নেই। আইসিইউ-এর অভাবে হাজারে হাজারে লোক মারা যাচ্ছে। মৃতের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে সাও পাওলো ও রিও ডি জেনেইরোর সব কবরস্থান ভরে উঠছে মানুষের লাশে।

ছবি: মৃতের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে সাও পাওলো ও রিও ডি জেনেইরোর সব কবরস্থান ভরে উঠছে মানুষের লাশে, সূত্র: roar.media

অথচ প্রেসিডেন্ট বলসোনারো করোনাভাইরাসকে আখ্যায়িত করেন ‘একটি সাধারণ মহামারি’ হিসেবে, যেসব বিষয়ে ব্রাজিল অভ্যস্ত। অথচ শুরুর দিকেই কঠোর পদক্ষেপ, যেমন- কার্যকর লক-ডাউন কিংবা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারলে পরবর্তীতে এত ভুগতে হতো না দেশটিকে। ব্রাজিলের স্বাস্থ্যখাতের ভগ্নদশা করোনা বিপর্যয়ের ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েকগুণ। নিও-লিবারেলিজম নীতি অনুসরণ করা বিভিন্ন সরকার ব্রাজিলের স্বাস্থ্যখাত বেশি বেশি ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়ার ফলে বিপর্যয় মোকাবিলা আরও কঠিন হয়েছে।

স্বাস্থ্যব্যবসায়ীরা এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে। জানুয়ারিতে যেখানে এক বাক্স মাস্কের দাম ছিল মাত্র সাড়ে চার ডলার, করোনা হানা দেয়ার পরে মার্চে সেই এক বাক্স মাস্কের দাম বেড়ে দাঁড়ায় একশো চল্লিশ ডলারে! রিও ডি জেনেইরো কিংবা সাও পাওলোর হাসপাতালগুলো চিকিৎসা সামগ্রীর অপ্রতুলতার কথা বার বার বলেছে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি। বলসোনারো সরকার এই মূল্যবৃদ্ধি মনিটরিং করা কিংবা চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহের কোনো উদ্যোগ তো নেয়ইনি, বরং বারবার অর্থনীতিকে সচল রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টার কথা প্রচার করেছে।

রিও ডি জেনেইরো কিংবা সাও পাওলোর হাসপাতালগুলো চিকিৎসা সামগ্রীর অপ্রতুলতার কথা বার বার বলেছে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি।

প্রেসিডেন্ট বলসোনারো ব্যবসা বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও তাতেই রাজি। ব্রাজিলের কর্তৃত্ববাদী ব্যবসাবান্ধব প্রেসিডেন্টের ভূমিকার বলি হতে হচ্ছে সেদেশের সাধারণ জনগণকে। একটি কার্যকর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিকল্পনা পারতো ব্রাজিলের করোনা বিপর্যয়কে রুখে দিতে, কিন্তু বলসোনারো প্রশাসন সেটি করার মতো দায়িত্বশীলতা দেখায়নি। (Sakib, 2020)

ওশেনিয়া মহাদেশ

ওশিয়ানিয়ায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলিয়া: ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এদেশে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৫০,৮৪৮ জন ও মৃত্যুর সংখ্যা ৮৩০ জন। করোনা সংক্রমণ শনাক্তকরণের পর পর অস্ট্রেলিয়া সতর্ক অবস্থানে চলে যায়, রোগ প্রতিরোধে রাষ্ট্রের প্রতিটি ইউনিটকে সক্রিয় করেছে। । সেখানে পর্যায়ক্রমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো বন্ধ করা হয়েছে। তারপর এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশের যাতায়াত বন্ধ করার পাশাপাশি একটি পর্যায়ে এসে জেলা পর্যায়ের যাতায়াতও বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি স্থানীয়ভাবে অধিবাসীরা তাদের ঘরের বাইরে গিয়ে চলাফেরা করতে গেলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে উপযুক্ত কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। সেখানে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ সফলতার পারদকে আরও উচ্চে নিয়ে গেছে। যেখানে অনেক দেশে রাজনৈতিক নেতারা বলে বেড়িয়েছেন ‘আমরা করোনার থেকে শক্তিশালী’ সেখানে অস্ট্রেলিয়া কথার চেয়ে কাজের দিকে মনোনিবেশ করেছে অনেক বেশি। (সালিম, 2020)

উপরোক্ত দেশগুলোর করোনা মোকাবিলার অভিজ্ঞতা ও তাদের গৃহীত পদক্ষেপ বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সামনে আসে:  

দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া: প্রথমত বিষয়টাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল যেসকল দেশ তারাই এই মহামারি ভাইরাসের সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে। প্রমাণিত হয়েছে যে, সংক্রমণ ব্যাপক ছড়ানোর আগেই যদি করোনা পরীক্ষার ব্যাপক প্রস্তুতি রাখা যায় এবং আক্রান্তদের দ্রুত আলাদা করে ফেলা যায় তাহলে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব।

পরীক্ষাগুলো সাশ্রয়ী করা: মাত্র কয়েকটি সংক্রমণের ঘটনা ঘটার পরই দক্ষিণ কোরিয়া কোভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। প্রতিদিন দেশটি বিনামূল্যে ১০ হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষা করেছে।

শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে পৃথক করা: শুধু পরীক্ষা করাই যথেষ্ট নয়, শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথক করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তি এতদিন কার কার সংস্পর্শ পেয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করে পরীক্ষার আওতায় আনা। শুরুর দিকে অনেক দেশই এই কাজটি ঠিকভাবে করতে পারেনি। সিঙ্গাপুরে যদি কাউকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় তাহলে তার হাতে ইলেক্ট্রনিক ব্রেসলেট পরিয়ে দেওয়া হয় তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য।

জনগনের পাশে থাকা: কর্মকৌশল বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে জনগণের নিবিড় সম্পর্ক থাকতে হয়। করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও একথা সত্য। সফল দেশগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সরকার জনগণকে আতঙ্কিত করার বদলে প্রতিনিয়ত তাদেরকে আশ্বস্ত করেছে। বিনিময়ে নাগরিকরাও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করেছে। পারস্পরিক এই বোঝাপড়ার কারণেই করোনা ওই দেশগুলোতে জেঁকে বসতে পারেনি। (করোনা মোকাবেলায় এশিয়ার ৪ দেশ যে কারণে সফল, 2020)

প্রযুক্তির ব্যবহার:  সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্য এবং অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রাকিং করে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা কারা এসেছে তাদের সনাক্ত করে পরীক্ষা করা হয় এবং তাদের আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় যতক্ষণ না পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হয়,ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার আক্রান্ত রোগীদের তথ্য পেতে সহজ করেছে।

আগে জীবন, তারপর ব্যবসা-বাণিজ্য: যে সকল দেশ সবচেয়ে সফলভাবে করোনা মোকাবেলা করেছে তাদের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এরা করোনার চরিত্র বুঝে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে – “আগে করোনা দমন, তারপর ব্যবসা-বাণিজ্য” – এমন নীতি গ্রহণ করেছে। তারা শুরুতেই বুঝেছিল যে করোনা দমন করতে না পারলে ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে না। যেসব দেশ জীবনের আগে ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রাধান্য দিয়েছে তারা সকলেই বিপদে পড়েছে। পুঁজিবাদী দুনিয়াতে এদের সংখ্যাই বেশি। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত একই পরিণতি বহন করছে। এপ্রিলের শেষ দিক থেকে লকডাউন তুলে নেয়া শুরু না করলে, গার্মেন্টস খোলার জন্য তাড়াহুড়া না করলে বাংলাদেশ আরও আগেই ভালো অবস্থায় যেতে পারতো। (Ahmed, 2020)

সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়া: চীনে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার অন্তত দেড় মাস পর সেটা ইউরোপে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অর্থাৎ করোনা প্রতিরোধ করতে বড় একটা সময় পেয়েছিল এই অঞ্চল। তবুও তারা এখন করোনায় ধুঁকছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে ইউরোপের বেশ কিছু দেশ।

উপসংহার: পরিশেষে বলতে পারি, যেসব দেশ করোনা মোকাবিলায় সাফল্য লাভ করেছে তারা বেসরকারি মুনাফামুখি চিকিৎসা ব্যবস্থার চেয়ে সর্বজনের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বেশি গুরুত্ব আরোপ, জীবন বাঁচলে ব্যবসা হবে নীতিতে বিশ্বাস, কঠোর লকডাউন ও প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার এই করোনা যুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

মোঃ সাদ্দাম হোসেন: স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 

ই-মেইল: saddameco43@gmail.com 

তথ্যসূত্রঃ

Ababa, A., Mutsaka, F., & Anna, C. (2020, May 11). African nations seek their own solutions in virus crisis. AP NEWS. https://apnews.com/66e8d6229ce8cfa535c3db2e821e7753

Abedin, S. MD. M. (2020, March 25). কোভিড-১৯ মোকাবেলায় চীনের সফলতা লুকিয়ে আছে কোথায়?https://roar.media/profile/minhaj/articles

AlTakarli, N. S. (2020). China’s Response to the COVID-19 Outbreak: A Model for Epidemic Preparedness and Management. Dubai Medical Journal, 3(2), 44–49. https://doi.org/10.1159/000508448

bhattasali, amitabh. (2020, April 15). কেরালা কীভাবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফল হল? BBC News বাংলা. https://www.bbc.com/bengali/news-52289700

Baldwin, R. E., & Weder, B. (2020). Mitigating the COVID economic crisis act fast and do whatever it takes. https://voxeu.org/system/files/epublication/COVIDEconomicCrisis.pdf

Bangladesh Protidin. (2020, April 29). করোনা মোকাবিলায় দৃষ্টান্ত নেপাল-ভুটান, এখন পর্যন্ত কোন মৃত্যু নেই | বাংলাদেশ প্রতিদিন. Bangladesh Pratidin. //www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/04/29/525397

Banglatribune. (2020, March 27). লকডাউন ছাড়াই দ. কোরিয়ার করোনা সাফল্যের নেপথ্যে | banglatribune.com. Bangla Tribune. https://www.banglatribune.com/foreign/news/615738/%E0%A6%BA7%87%E0%A6%AA%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87

Benziman, Y. (2020). “Winning” the “battle” and “beating” the COVID-19 “enemy”: Leaders’ use of war frames to define the pandemic. Peace and Conflict: Journal of Peace Psychology, 26(3), 247–256. https://doi.org/10.1037/pac0000494

Cohen, J., & Kupferschmidt, K. (2020). Countries test tactics in ‘war’ against COVID-19. Science, 367(6484), 1287–1288. https://doi.org/10.1126/science.367.6484.1287

Cimpanu, C. (n.d.). US, Israel, South Korea, and China look at intrusive surveillance solutions for tracking COVID-19. ZDNet. Retrieved September 17, 2020, from https://www.zdnet.com/article/us-israel-south-korea-and-china-look-at-intrusive-surveillance-solutions-for-tracking-covid-19/

COVID-19 National Emergency Response Center, Epidemiology & Case Management Team, Korea Centers for Disease Control & Prevention. (2020). Contact Transmission of COVID-19 in South Korea: Novel Investigation Techniques for Tracing Contacts. Osong Public Health and Research Perspectives, 11(1), 60–63. https://doi.org/10.24171/j.phrp.2020.11.1.09

Exemplars in Global Health (EGH). (2020, June 30). Emerging COVID-19 success story: South Korea learned the lessons of MERS. Our World in Data. https://ourworldindata.org/covid-exemplar-south-korea

Fan, L., Jiang, S., Yang, X., Wang, Z., & Yang, C. (2020). COVID-19 Drug Treatment in China. Current Pharmacology Reports, 6(4), 146–154. https://doi.org/10.1007/s40495-020-00218-5

French, H. W. (2020, May 20). Africa Is a Coronavirus Success Story So Far, If Only the World Would Notice. https://www.worldpoliticsreview.com/articles/28776/africa-is-a-coronavirus-success-story-so-far-if-only-the-world-would-notice

Graham-Harrison, E., & Kuo, L. (2020, March 19). China’s coronavirus lockdown strategy: Brutal but effective. The Guardian. https://www.theguardian.com/world/2020/mar/19/chinas-coronavirus-lockdown-strategy-brutal-but-effective

Hirsch, A. (2020, May 21). Why are Africa’s coronavirus successes being overlooked? | Afua Hirsch. The Guardian. https://www.theguardian.com/commentisfree/2020/may/21/africa-coronavirus-successes-innovation-europe-us

Kupferschmidt, K., CohenMar. 2, J., 2020, & Pm, 4:50. (2020, March 2). China’s aggressive measures have slowed the coronavirus. They may not work in other countries. Science | AAAS. https://www.sciencemag.org/news/2020/03/china-s-aggressive-measures-have-slowed-coronavirus-they-may-not-work-other-countries

Kurian, O. C. (2020, April 21). How the Indian state of Kerala flattened the coronavirus curve | Oommen C Kurian.The Guardian. https://www.theguardian.com/commentisfree/2020/apr/21/kerala-indian-state-flattened-coronavirus-curve

Kwŏn, S., Lee, T., Kim, C., World Health Organization, Regional Office for the Western Pacific, & Asia Pacific Observatory on Health Systems and Policies. (2015). Republic of Korea health system review.

OECD data. (2020). Health equipment—Hospital beds—OECD Data. TheOECD. http://data.oecd.org/healtheqt/hospital-beds.htm

Pathirana, S. S. (2020, July 5). “No dignity in death” for Sri Lanka’s Muslims. BBC News. https://www.bbc.com/news/world-asia-53295551

Plecher, H. (2020, July 13). South Africa—Average age of the population 2015. Statista. https://www.statista.com/statistics/578976/average-age-of-the-population-in-south-africa/

Shesgreen, D. (2020, 06). Senegal’s quiet COVID success: Test results in 24 hours, temperature checks at every store, no fights over masks | Center for Genetics and Society. https://www.geneticsandsociety.org/article/senegals-quiet-covid-success-test-results-24-hours-temperature-checks-every-store-no-fights

Stiegler, N., & Bouchard, J.-P. (2020). South Africa: Challenges and successes of the COVID-19 lockdown. Annales Médico-Psychologiques, Revue Psychiatrique, S0003448720301785. https://doi.org/10.1016/j.amp.2020.05.006

Subramanian, N. (2020, June 30). Dealing with Covid-19: Lessons from the experience of Sri Lanka. The Indian Express. https://indianexpress.com/article/explained/dealing-with-covid-lessons-from-the-experience-of-sri-lanka-6482114/

voanews. (2020, April 27). Cuban Doctors Arrive to Help South Africa Fight Coronavirus | Voice of America—English. https://www.voanews.com/covid-19-pandemic/cuban-doctors-arrive-help-south-africa-fight-coronavirus

Welle (www.dw.com), D. (2020a). How Sri Lanka successfully curtailed the coronavirus pandemic | DW | 18.05.2020. DW.COM. https://www.dw.com/en/how-sri-lanka-successfully-curtailed-the-coronavirus-pandemic/a-53484299

Welle (www.dw.com), D. (2020b). যেভাবে করোনাকে হার মানালো কেরালা | DW | 13.04.2020. DW.COM. https://www.dw.com/bn/

worldbank data. (2020.). Physicians (per 1,000 people)—Senegal | Data. Retrieved September 16, 2020, from https://data.worldbank.org/indicator/SH.MED.PHYS.ZS?locations=SN

worldometers. (2020). Coronavirus Update (Live): 30,101,014 Cases and 946,196 Deaths from COVID-19 Virus Pandemic—Worldometer. https://www.worldometers.info/coronavirus/

Ahmed, S. (2020, June 21). সাম্যবাদীরা করোনা মোকাবেলায় সবচেয়ে সফল. https://www.ekushey-tv.com/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%80% B2/103071

Hasan, R. (2020, May 5). ইতালির পাশের দেশ স্লোভেনিয়া যেভাবে করোনা মোকাবেলায় সফল. https://www.jugantor.com/international/304375/%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0% %B2

Hendry Nzally, J. (2020). COVID-19 Success stories from the African Continent | IES: The Institute for European Studies. Retrieved September 9, 2020, from https://www.ies.be/content/covid-19-success-stories-african-continent

Ovi, A. M. (2020, April 21). কিউবা থেকে কেরালা: করোনা মোকাবিলায় চমক দেখালো কমিউনিস্টরা. বাংলা. https://www.be.bangla.report/post/52134-cyc5Gtk78

Roache, M. (2020, May 15). How Russia’s Coronavirus Outbreak Became One of the World’s Worst. Time. https://time.com/5836890/russia-coronavirus/

Sakib, S. (2020, July 23). করোনাভাইরাসের আগ্রাসন: ব্রাজিলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতা. https://roar.media/bangla/main/world/failure-of-brazils-political-economic-sectors-due-to-coronavirus

Sarkar, C. (2020, April 18). করোনা নিয়ন্ত্রণে তাইওয়ানের অনুকরণীয় সাফল্য, আমাদের সীমাহীন ব্যর্থতা! চ্যানেল আই অনলাইন. https://www.channelionline.com/করোনা-নিয়ন্ত্রণে-তাইওয়ান/

Shakill, R. (2020, April 9). করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র. https://roar.media/bangla/main/world/terrible-effects-of-coronavirus-on-usa

Sharma, A. (2020, October 6). How Bhutan wrote its coronavirus success story | DW | 10.06.2020. DW.COM. https://www.dw.com/en/how-bhutan-wrote-its-coronavirus-success-story/a-53760136

Times, T. M. (2020, September 9). Coronavirus in Russia: The Latest News | Sept. 9. The Moscow Times. https://www.themoscowtimes.com/2020/09/09/coronavirus-in-russia-the-latest-news-sept-9-a69117

Wieler, L. (2020, June 30). Emerging COVID-19 success story: Germany’s strong enabling environment. Our World in Data. https://ourworldindata.org/covid-exemplar-germany

Zhai, Z. (2020). Facial mask: A necessity to beat COVID-19. Building and Environment, 175, 106827. https://doi.org/10.1016/j.buildenv.2020.106827

আল্লুরিঅপর্ণা, & নাজমিশাদাব. (2020, July 10). ভারত কি বিশ্ব মানচিত্রে পরবর্তী করোনাভাইরাস হটস্পট?BBC News বাংলা. https://www.bbc.com/bengali/news-53351221

করোনা মোকাবেলায় এশিয়ার ৪ দেশ যে কারণে সফল. (2020, March 22). করোনা মোকাবেলায় এশিয়ার ৪ দেশ যে কারণে সফল. https://www.bangla.24livenewspaper.com/world/58926-commendable-step-from-four-asian-country

Hirsch, A. (2020, May 21). Why are Africa’s coronavirus successes being overlooked? | Afua Hirsch. The Guardian. https://www.theguardian.com/commentisfree/2020/may/21/africa-coronavirus-successes-innovation-europe-us

করোনা যুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে দিল কিউবাপ্রতিবেদক. (2020, April 27). করোনা যুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে দিল কিউবা. Prothomalo. https://www.prothomalo.com/world/asia/করোনাযুদ্ধেও-যুক্তরাষ্ট্রকে-দেখিয়ে-দিল-কিউবা

সালিমড. মো. আদনান আরিফ. (2020, April 17). কোভিড ১৯ মোকাবেলায় অস্ট্রেলিয়ার সাফল্যের নেপথ্যে. কোভিড ১৯ মোকাবেলায় অস্ট্রেলিয়ার সাফল্যের নেপথ্যে. https://bonikbarta.net/home/news_description/227089/%E0%A6%95% 0%A7%87

https://www.worldometers.info/coronavirus/

Armocida, B., Formenti, B., Ussai, S., Palestra, F., & Missoni, E. (2020). The Italian health system and the COVID-19 challenge. The Lancet. Public Health, 5(5), e253. https://doi.org/10.1016/S2468-2667(20)30074-8

molik, sumon kollan. (2020, April 8). ইতালিরস্বাস্থ্যব্যবস্থাওকরোনা—মিথবনামবাস্তবতা. groundxero. https://www.groundxero.in/2020/04/08/health-infrastructure-in-italy-myth-vs-reality/

statista. (2020, Ocober). Italy: Number of ICUs pre- and post-COVID-19 2020. Statista. https://www.statista.com/statistics/1125022/number-of-icus-pre-and-post-covid-19-in-italy/

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *