মহাপ্রয়াণের বয়ানঃ পরিবেশ বিষয়ক এক সিনেমা ত্রয়ীর পর্যালোচনা

চলচ্চিত্র পর্যালোচনা

মহাপ্রয়াণের বয়ানঃ পরিবেশ বিষয়ক এক সিনেমা ত্রয়ীর পর্যালোচনা

মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন

ডেইলি স্টার বাংলাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের কিছু তথ্য উল্লেখ করে শুরু করা যাক, আর বলে রাখা দরকার, এই মতামত প্রতিবেদনে যে সকল উৎস থেকে তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সংস্থা/ ব্যক্তিবর্গের প্রতি বা তাদের তথ্যের প্রতি নির্ভরতা বা তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা রয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে গবেষক এবং এর মাঝের অধিকাংশ মানুষের।    

১। বিশ্বের ট্রপিক্যাল বা চিরহরিৎ বন উজাড়ের হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এ তথ্য জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) । সায়েন্টিফিক আমেরিকার হিসাব, বিশ্বে প্রতিদিন ১৬০ একর বনভূমি উজাড় হয়। তার সঙ্গে প্রতিদিন বিলুপ্ত হয় ১৩৫ প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী ও পোকা-মাকড়।

২। ২০১৮ সালে আইপিসিসি’র বিশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২১০০ সাল নাগাদ ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ২০১০ এর তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য বা ভারসাম্য অবস্থায় যেতে হবে। এর জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি মানুষের হাতে আছে। দরকার শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

কিন্তু, উন্নত দেশগুলো কথিত অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে চাচ্ছে না। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী অস্তিত্ব সংকটে পড়লে এই অর্থনীতি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে, যা করোনাকালে (২০২০) প্রতিভাত হচ্ছে।

৩। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) তথ্য, গড়ে প্রতি চার মাসে একটি সংক্রামক রোগ মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এসব সংক্রামক রোগের ৭৫ শতাংশ আসে প্রাণী থেকে।

৪। ২০১৬ সালের আগস্টে সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলের ইয়ামাল পেনিনসুলাতে ১২ বছরের এক শিশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং কমপক্ষে ২০ আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হন। একই সঙ্গে ওই এলকায় দুই হাজারের মতো বল্গাহরিণও (Reindeer) আক্রান্ত হয়।

পেছনের গল্পটা হচ্ছে, প্রায় ৭৫ বছর আগে এখানে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে একটি বল্গাহরিণ মারা গিয়েছিল, যেটি মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। ২০১৬ সালের তাপপ্রবাহে বরফ গলে সেই মাটির স্তর বেরিয়ে আসে এবং অ্যানথ্রাক্স জীবাণু উন্মুক্ত হয়। বিজ্ঞান বলছে, অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মাটির নিচে কয়েক যুগ টিকে থাকতে পারে।

৫। ২০১১ সালে আলাস্কার তুন্দ্রা অঞ্চলে ১৯১৮ সালে ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ ভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের গণকবর থেকে আরএনএ’র অংশ আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। তাদের ধারণা বরফ গলে মাটির পারমাফ্রস্ট স্তর উন্মুক্ত হতে থাকলে স্প্যানিশ ফ্লু, স্মলপক্স বা প্লেগ ফিরে আসতে পারে।

৬। ২০০৫ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা আলস্কার বরফ স্তর থেকে ৩২ হাজার বছর আগের দুই ধরণের ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন। এর দুই বছর পর অ্যান্টার্কটিকার বিকন ও মুলিন উপত্যকার হিমবাহ থেকে ৮ কোটি বছরের পুরনো ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কৃত হয়।

৭। ২০১৪ সালে সাইবেরিয়ান পারমাফ্রস্ট স্তর থেকে দুটি ভাইরাস আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এসব ভাইরাস অবমুক্ত হওয়ার পর দ্রতই সংক্রামক হয়ে ওঠে।

৮। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ার সম্পর্কও দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

৯। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘এটা ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই যে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সংকট জলবায়ু পরিবর্তন। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পৃথিবী ও মানব সভ্যতার অস্তিত্বের প্রশ্ন। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মহাবিপর্যয় থেকে ফিরে আসার কোনো পথ থাকবে না।

  • জিএম মোস্তাফিজুল আলম, ডেপুটি ম্যানেজার, নলেজ ম্যানেজমেন্ট, জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, ব্র্যাক । এপ্রিল ২৭, ২০২০। ডেইলি স্টার বাংলা।

সাধারণভাবে এ প্রতিবেদনের তথ্যগুলো ভাবলেই বোঝা যায় আমাদের পৃথিবীর অবস্থা কীরূপ, আর সাথে যোগ করতে পারেন আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র ও বর্জ্যের বিপদ এবং বিরামহীন প্লাস্টিক দূষণ আর সামগ্রিকভাবে মানুষের পরিবেশ দূষণ সম্পর্কিত উদাসীনতা আর প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোগ এবং বাহুল্যময় জীবনযাপন। আমাদের উদাসিনতার ও বুদ্ধিহীনতার কিছু ঘটনা উল্লেখ করা যায়। ২০১৯ সালে ফ্রান্সের নতরদাম গির্জা আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার ফলে সারা পৃথিবী যেভাবে অনুদান, সহমর্মিতা ও সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসে কিন্তু একই বছরে আমাজন বনে আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিশাল অংশ কিন্তু সেরকম সহযগিতা বা সহমর্মিতা দেখা যায়নি, বরং ধারনা করা হচ্ছে এ আগুন লাগানোর জন্য দায়ী মানুষ এবং তার পিছনের কারণ বাণিজ্যিক কৃষি আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা মুনাফা। এবং অনেকেই ধারনা করছেন এভাবে আমাজন নিধন চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ, বিনাশ হয়ে যেতে পারে এ মহাবন, যেভাবে বিনাশ হয়ে গেছে আফ্রিকা মহাদেশের নিবিড় সব মহাবন বা যেভাবে বিনাশ করা হচ্ছে আমাদের সুন্দরবনকে। অথচ এই প্রাকৃতিক বন জঙ্গলের নানাবিধ উপকারের/ প্রভাবের উপরে টিকে আছে মানব সভ্যতাসহ সকল প্রাণীকুল। ভারতে নদনদীকে দেবতাজ্ঞান করা হয় কিন্তু যমুনা নদী হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান দূষিত নদী এবং এ দূষণের জন্য দায়ী মানুষ, কলকারখানা। ঢাকা শহরের মানুষেরা এতো ধর্মপ্রাণ যে এ শহরের প্রতিটি অলিগলিতে রয়েছে ধর্মস্থান বা মসজিদ কিন্তু এ শহর পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহর আর শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী বুড়িগঙ্গা অন্যতম দূষিত নদী, যে নদীর পানি কালো রঙয়ের আর পানির দুর্গন্ধে টেকা মুশকিল, সেদিকে ধার্মিকদের কোনো খেয়াল নেই। বার্মায়/ মিয়ানমারে ভারতের এবং চীনের একের পর এক পরিবেশ ধ্বংসী প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে আর এসবের ফলে আগে থেকেই রোহিঙ্গা বিরোধী সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে প্রায় ২০ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গাকে উৎখাত করে দেয়া হয়েছে, তাদের এখন শরণার্থীর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।  তাদের উপরে এখনো চলছে গণহত্যা কিন্তু এই গণহত্যা বা পরিবেশবিনাশী এসব প্রকল্পের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ ধর্মনেতাগণ প্রায় রোমান্টিক সিনেমার নায়িকার মতই চুপ আর হেয়ালিময়! আর বার্মার/ মিয়ানমারের আরেকদল বৌদ্ধ শ্রমণ নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই গণহত্যায় এবং পূর্ণসমর্থন দিচ্ছেন সব পরিবেশ বিনাশী প্রকল্পে! এগুলো মানুষের পরিবেশ সম্পর্কিত উদাসীনতার অতি নগণ্য কিছু ঘটনার উল্লেখমাত্র, বলা ভালো এগুলো হিমশৈলীর চূড়া মাত্র।  

যে সিনেমা ত্রয়ীর আলাপ করতে যেয়ে এসবের উল্লেখ করা হল, সে তিন সিনেমার নাম হচ্ছে “কারখানাজাত/ প্রক্রিয়াজাত ভূদৃশ্য” (Manufactured Landscapes) (২০০৬), “জলছাপ” (Watermark) (২০১৩) আর “মানবকেন্দ্রিক ভূপরিবর্তন অধ্যায়/পরিবেশ পরিবর্তন অধ্যায়ঃ মাবনকাল/মানবযুগ” (Anthropocene: The Human Epoch) (২০১৮) এ ত্রয়ীর রচনা এবং পরিচালনা করেছেন কানাডা নিবাসি চলচ্চিত্রকার জেনিফার বেইকওয়াল (Jennifer Baichwal) তার সাথে ২য় এবং ৩য় সিনেমাতে পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছেন প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি (Edward Burtynsky) এবং প্রযোজক, পরিচালক নিকোলাস ডি পেনসিয়ার (Nicholas de Pencier)। এ সিনেমা ত্রয়ীতে প্রথাগত কোনো ইঁদুর বিড়াল খেলা নেই, নেই তেমন সাক্ষাৎকারের অথবা তথ্যের ভার কিন্তু যে জিনিস রয়েছে সেটা হল, মানুষ দ্বারা পরিবর্তিত প্রাকৃতিক পরিবেশের চিত্রায়ন। এ ধরণের সিনেমার ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয় বিশেষ করে ১৯৯০ সালের পর থেকেই, কারণ ব্যাপক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বদলে যায় সিনেমা নির্মাণের উপকরণসমূহ, ক্যামেরা, শব্দগ্রাহক যন্ত্র, সম্পাদনা বা চিত্রিত দৃশ্য দেখা এসবই খুব হালকা বহনযোগ্য বস্তুতে পরিণত হয় আর দামও কমে, তুলনামূলক এবং গুণগত মানেও ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এসবের ফলে সিনেমাতেও একটা বিশাল পরিবর্তন আসে এ সময়ে, মূলত এ দশক থেকেই শুরু হয় মাঠের, ঘাটের, জঙ্গলের দৃশ্য সম্বলিত প্রচুর প্রামাণ্যচিত্র, এমনকি কাহিনিচিত্রেও প্রচুর প্রান্তিক ও দুর্গম এলাকা ও সেসব এলাকার গল্প উঠে আসতে থাকে। এসবই অনেক আগে থেকেই ছিল, আমি বলছি ব্যাপকতার কথা, কারণ ১৯২২ সালেই প্রামাণ্যচিত্র “উত্তরের নানুক” তৈরি হয়েছিল আর পলিনেসিয় প্রেক্ষপটে ১৯৩১ সালে তৈরি হয়েছিল কাহিনিচিত্র “টাবু” এবং এ সময়ের আগের ও পরের আরো কাহিনিচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রের উল্লেখ সহজেই করা যায়, যেসব সিনেমাতে এসব উপাদান বর্তমান। তো এই প্রযুক্তির কাঁধে ভর করে প্রচুর ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা ব্যবহার করে, প্রায় সারা পৃথিবী ঘুরে ঘুরে বানানো এই প্রামাণ্যচিত্র ত্রয়ী, যার কেন্দ্রীয় বিষয়, মানুষের প্রভাবে পরিবেশের বদল (পড়ুন ক্ষতি) এবং এসব প্রভাবের ফলে কী কী বদল ঘটছে (পড়ুন কী কী ক্ষতি হচ্ছে) পরিবেশে। এই সিনেমা ত্রয়ীর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে যখন চলচ্চিত্রকার  জেনিফার বেইকওয়াল ফটোগ্রাফার এডওয়ার্ড বার্টিনস্কির “কারখানাজাত/ প্রক্রিয়াজাত ভূদৃশ্য” ফটোসিরিজ দেখেন এবং সিদ্ধান্ত নেন এ বিষয়ক সিনেমা বানানোর এবং অনুসরণ করতে থাকেন বার্টিনস্কিকে, যার ফলাফল ২০০৬ সালের “কারখানাজাত/ প্রক্রিয়াজাত ভূদৃশ্য” এবং এ ত্রয়ীর ৩য় সিনেমা মুক্তি পায় ২০১৮ সালে, ২য় এবং ৩য় সিনেমাতে শুধু আর বার্টিনস্কির ছবিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি এ সিনেমার আলাপ, বিস্তারিত হয়েছে আরো অনেক বিষয়ে ও ব্যাক্তিবর্গে।  

পরিচালক জেনিফার বেইকওয়াল ও নিকোলাস ডি পেনসিয়ার মূলত প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা এবং তারা দুজনেই তাদের কাজের জন্য উত্তর আমেরিকান নানান উৎসবের সম্মানজনক সব পুরষ্কার ও আর্থিক অনুদান জিতেছেন এবং তাদের দুজনের কাজ পৃথিবীর নানান দেশের নানান উৎসবে প্রদর্শিত হয়ে আসছে। এডওয়ার্ড বার্টিনস্কিও কানাডা নিবাসী কিন্তু তিনি মূলত একজন ফটোগ্রাফার এবং তার ফটোগুলো অনেক বড় আকারের। তার কাজগুলো মূলত পরিবেশ ও তার পরিবর্তন বিষয়ক এবং মানুষ এখানে যে ভূমিকা পালন করছে সে ভূমিকা তিনি তুলে ধরেন, তিনিও অনেক পুরষ্কার ও আর্থিক অনুদান জিতেছেন এবং তার একাধিক প্রকাশিত ছবির বই রয়েছে আর পৃথিবীর নানান জায়গাতে তার ছবির প্রদর্শনী হয়ে আসছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙ্গা শিল্পকেন্দ্রের উপরে তিনি ২০০০-২০০১ সালে ছবি তোলেন এবং এ ফটোসিরিজ বেশ আলোচনার জন্ম দেয়।

নানান কারণে প্রচুর দর্শক ও সমালোচকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই চলচ্চিত্রত্রয় এবং বেশ আলোড়ন তৈরি করে অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ের মানুষের কাছে এবং এই প্রামাণ্যচিত্রের বিষয়ের/ বিষয়সমূহের উপর তোলা বার্টিনস্কির ফটোসিরিজও সমান আলোচিত ।    

ধ্বংস-উন্মুখ এক পৃথিবীর বিবরণ, জেনিফার বেইকওয়াল ও অন্যান্যদের পরিবেশ, প্রতিবেশ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র ত্রয়ী      

১।  

সিনেমা সম্পর্কিত তথ্য

নামঃ প্রক্রিয়াজাত/কারখানাজাত ভূদৃশ্যসমূহ । Manufactured Landscapes (২০০৬) ।

পরিচালনাঃ জেনিফার বেইকওয়াল।

প্রযোজনাঃ নিকোলাস ডি পেনসিয়ার, ড্যানিয়েল আয়রন, জেনিফার বেইকওয়াল।  

সংগীত ও শব্দঃ ড্যান ড্রিস্কল । কামেরা ও শব্দঃ পিটার মেটলার । সম্পাদনা ও শব্দঃ রোল্যান্ড শ্লিমমে।

দৈর্ঘ্যঃ ৯০ মিনিট । দেশঃ কানাডা । ভাষাঃ ইংরেজি, ক্যান্টনিজ ও মান্দারিন।

প্রক্রিয়াজাত ভূদৃশ্য এবং আমাদের মুনাফাকেন্দ্রিক জীবনযাপনের ফলাফলের ভুদৃশ্যমান বিবরণ

প্রক্রিয়াজাত ভূদৃশ্য সিনেমার শুরু চীনের এক ইস্ত্রি নির্মাণ কারখানার ভিতরের নিয়মিত কর্মের বিবরণ দেখানোর ভিতর দিয়ে, কারখানার ভিতরেই এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দেখা মেলা ভার, এতো বড় কারখানা যা প্রায় ১ কিলোমিটার লম্বা এবং এই কারখানায় কাজ করেন ২৩,০০০ হাজার কর্মী। কারখানার শ্রমিকদের কাজকর্ম এবং তাদের সামান্য কথার ভিতর দিয়ে বোঝা যায় কতটা নিয়ন্ত্রণের ভিতর দিয়ে যাওয়ার ফলে এতো বিশালমাপের উৎপাদন কোনোপ্রকার বিঘ্ন ছাড়াই দিনের পরে দিন, বছরের পরে বছর ধরে চলছে! বর্তমান মুনাফাকেন্দ্রিক উৎপাদন এবং যাপন কাঠামোতে এতো হাজার হাজার/ লক্ষ লক্ষ মানুষ শুধু তাদের জীবনধারণের জন্যই, শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্যই সমস্ত দিনের অধিকাংশ সময় এমন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন যে কাজগুলো এখনো যন্ত্র দিয়ে তাদের চেয়ে কম খরচে করানো সম্ভব নয় বলে তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে বা পরিস্থিতির চাপে করতে হচ্ছে। মূলত এডওয়ার্ড বার্টিনস্কির একই নামের এক ফটোসিরিজ কেন্দ্র করেই জেনিফার বেইকওয়ালের এই প্রামাণ্যচিত্রের যার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের নিত্যব্যাবহারের জিনিসপত্রের পিছনের গল্প তথা এর উৎপাদন ও শেষ গন্তব্য। আমাদের পাহাড়সম চাহিদার যোগান দিতে দিতে পৃথিবীর উপরিভাগের ভূদৃশ্য কতো গভীরভাবে বদলে গেছে, যেখানে আর প্রকৃতির কোনো চিহ্ন পর্যন্ত নেই এবং এটা এতো বিশাল এবং বড়মাত্রায় ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে যে একে আলাদা করে চিহ্নিত না করে আর উপায় নেই। মূলত জেনিফার বেইকওয়ালের এই সিনেমা এডওয়ার্ড বার্টিনস্কির চীন ও বাংলাদেশ ভ্রমণ নিয়ে রচিত এবং যে যে জায়গাগুলো তারা পরিভ্রমণ করেছেন তার আদি ও প্রাকৃতিক অবস্থা কেমন ছিল সেটা আর দেখে বোঝার উপায় নেই। একের পরে এক পাহাড়সম ময়লার স্তূপ যে ময়লাগুলো কোনো প্রাকৃতিক ময়লা নয়, কম্পিউটারের ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া মনিটর ও অন্যান্য জিনিসপত্র, নানান ধরনের টিনের কৌটা এবং এগুলো এতো এতো বেশি পরিমাণে এবং এতো বেশি এলাকা জুড়ে রয়েছে যে সেটা এলাকার উপরিভাগের ভূদৃশ্যের আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে, যাকে জেনিফার বেইকওয়াল ও এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি প্রক্রিয়াজাত/ কারখানাজাত ভূদৃশ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।    

আমরা পৃথিবীর উপরিভাগে শুধুমাত্র মানুষের কথা মাথায় রেখে হাজার হাজার কিলোমিটার পিচঢালা  রাস্তা, রেললাইন তৈরি করেছি, এবং এই রাস্তাগুলো এতো বেশি বেশি পরিমাণে এবং এতো এতো চওড়া যে সেটা যে কোনো জটিল গোলকধাঁধার চেয়েও বেশি জটিল। পৃথিবীতে প্রতি বছর এসব রাস্তায় মানুষ ছাড়াও হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী মারা যায় (এসবের ফলে কত প্রাণীর প্রাকৃতিক আবাস নষ্ট হয়েছে, তার হিসেব মানুষ কবে করতে শিখবে?), আর প্রতি মুহূর্তেই হাজার হাজার বিভিন্ন আকারের, লক্ষ লক্ষ যান্ত্রিকযান ছুটে চলেছে এসব রাস্তা দিয়ে। একইরকমভাবে সাগর-মহাসাগর, নদী-নালা দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার, হাজার লক্ষ লক্ষ যান্ত্রিক জলযান যার কোনো কোনোটার আকৃতি কয়েকটা ফুটবল মাঠের সমান এবং এসব জলযানের চলাচলের ফলে কতশত জলজ প্রাণী আমরা হত্যা করছি, আহত করছি সেটার হিসেব পর্যন্ত নেই। আমাদের যাপনের ফলে কতশত প্রাণী, কখনো কখনো পুরো প্রজাতি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে অথচ আমাদের মতো একইরকমভাবে পৃথিবীতে বাসের সমান অধিকার এসব প্রাণীরও ছিল। আমরা এরকম নির্দয়ের মতো ভূভাগ বদলাচ্ছি যা তৈরি হয়েছিল হাজার-লক্ষ বছর ধরে কিন্তু আমরা শুধুমাত্র আরো আরো বেশি মুনাফা লাভের আশায় কোনো প্রকার এর প্রাকৃতিক প্রভাব কী হতে পারে সেসব চিন্তা না করেই মাত্র কয়েক বছরের ভিতরেই বদলে ফেলছি পুরো ভূভাগ, ময়লা দিয়ে, দালান দিয়ে, রাস্তা দিয়ে, মাটি খুঁড়ে, তেজস্ক্রিয় আবর্জনায় ভরে ফেলে। এই যে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার রাস্তা এবং এসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে লক্ষ লক্ষ যান আর এসব যানের চলাচলে পোড়ানো হচ্ছে লক্ষ লক্ষ লিটার তেল, আমরা কি আসলে ভেবে দেখি এর আসল ফলাফল কি দাঁড়াচ্ছে? আর ভূভাগ কতটা বদলাচ্ছে, বদলের ফলে কি হচ্ছে? হাজার হাজার টন কয়লা উৎপাদন করে সে কয়লা দিয়ে ভরে ফেলছি মাইলের পর মাইল, বাতাস ভরে যাচ্ছে কয়লার ময়লায়, মাইলের পর মাইল কালো কালো ধোঁয়ার স্তূপ এই প্রক্রিয়াজাত ভূদৃশ্যের অন্তিম পরিণতি কোথায়? এর ফলাফল কী দাঁড়াবে, এসব আমরা কবে বুঝতে শুরু করবো?   

এডওয়ার্ড বার্টিনস্কির কাজের প্রতি আগ্রহ থেকে ২০০৪ সাল থেকেই জেনিফার বেইকওয়াল এই সিনেমার নির্মাণ শুরু করেন যদিও তারই আগেই এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি বাংলাদেশেও ছবি তুলে ছিলেন আর ছবি তোলার জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জাহাজ ভাঙ্গার জায়গা (যে জায়গার উপর চিত্রিত শাহিন দিল রিয়াজের লোহাখোর (২০০৭, ৮৫ মিনিট) (Ironeaters/Eisenfresser) এবং ইয়াসমিন কবিরের শেষকৃত্য (২০০৮, ১৭ মিনিট) (The Last Rites) সিনেমা দুটিও সমান আলোচনার দাবিদার।)। এই ধারণকৃত চিত্রে আমরা দেখি কীভাবে একসময়ের সুবজ শান্ত একটা সুমুদ্রবেলা থেকে পুরোপুরি ভিনগ্রহের একটা জায়গায় পরিণত বর্তমানের সীতাকুণ্ড। বার্টিনস্কির সীতাকুণ্ডে কোথাও কোনো সুবজ, সাদা বালি নেই আছে লোহার স্তূপ হয়ে যাওয়া জাহাজ, কিশোর, সদ্য-যুবক অপুষ্ট নানান শ্রমিক যারা কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করে চলেছেন এবং তাদের চেহারা, চাল-চলন দেখেই, বোঝা যায়, তারা কতো টাকা আয় করেন এবং তাদের পারিবারিক অবস্থা কেমন আর একইভাবে বোঝা সম্ভব এই জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের যারা মালিক তাদের অবস্থান, এই জাহাজগুলোর যারা মালিক ছিলেন তাদের অবস্থান আর এই জাহাজে যারা চড়তেন বা যেসব কোম্পানির মালামাল বহন করা হতো তাদের অবস্থান এবং এই জাহাজ তৈরির মালামাল কোথা থেকে এসেছে আর যে মালামাল বহন করা হতো সে উৎপাদন স্থলের ভূদৃশ্যের অবস্থা কেমন।     

প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যেকে প্রক্রিয়াজাত ভূদৃশ্যে পরিণত করতে আমরা শুধু স্থলভাগকেই ব্যবহার করেছি বা করছি এমন নয়, আমরা নদীকেও তার প্রাকৃতিক গতিপথ থেকে সরিয়ে আমাদের ইচ্ছেমত গতিপথে নিয়েছি, এমনকি আমরা সাগরকেও বাদ দেইনি দখল করতে, দূষণ করতে! জেনিফার বেইকওয়াল এরপরে এডওয়ার্ড বার্টিনস্কিকে অনুসরণ করে হাজির হন চীনে অবস্থিত এবং পৃথিবীর অন্যতম বড় বাঁধ থ্রি গর্জেস ড্যাম বা তিন গিরিসংকটের বাঁধে যে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা চলছিল সেই ১৯১৯ সাল থেকে, যদিও বর্তমান রূপে এর কাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। প্রথম পর্বের কাজ শেষ হয় ২০০৬ সালে এর পরে আরো নানান ধাপে ধাপে কাজ শেষ করে ২০১৯ সালে এ বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ হয়। এটা পৃথিবীর অন্যতম একটা বাঁধ বিদ্যুৎ প্রকল্প, এ বাঁধের কারণে চীনের বিশাল একটা অংশের ভূপ্রাকৃতিক দৃশ্যের বিশাল পরিবর্তন ঘটে। এ বাঁধের ফলে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে চিরদিনের জন্য তাদের আবাসবাড়ি ছেড়ে যেতে হয়েছে এবং ১৯৯৪ সালে নির্মাণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৩ টি বড় শহর, ১৪০ টি ছোট শহর এবং ১৩৫০ টি গ্রাম পানিতে ডুবেছে এবং প্রত্নত্তাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা পানির নিচে চিরদিনের জন্য ডুবে গিয়েছে আর এ বাঁধ বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে তৈরি করেছে নানান পরিবেশ বিষয়ক বিপর্যয়। আর পুনর্বাসন কতোটুকু হয়েছে সেটা চীনের ধনী এবং গরিবের মাঝের ব্যাবধান দেখলেই বোঝা যায় আর মানবিক সম্পর্কের বিপর্যয় ঘটেছে কী পরিমাণে সে খবর হয়তো কখনোই পুরোটা পাওয়া যাবেনা, তবে কিছুটা আন্দাজ করা যায় ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জিয়া ঝাংকে পরিচালিত এক চীনা কাহিনিচিত্র থেকে যার নাম “স্টিল লাইফ/ Still Life” (১০৮ মিনিট)। আমরা বার্টিনস্কির ছবিতে দেখি বিশাল বিশাল শহরের ধ্বংসাবশেষ, মানুষজন একের পর এক স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলছে এবং সরিয়ে নিচ্ছে, এর ভিতরেই বাচ্চারা খেলছে, মানুষজন চলাচল করছে। হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের স্মৃতি, অতীত, পরিজন এবং চেনা পরিবেশ, প্রতিবেশ।

এই বিশাল রূপান্তরের ফলে লাভবান হচ্ছে যারা এরপরে শুরু হয় এমন একজনের গল্প (যদিও এই লাভ নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি, এইভাবে পরিবেশ রূপান্তর এবং ধ্বংস করে যে মুনাফা তারা জড়ো করছেন, তাদের এই পরিবেশ ধ্বংসী মুনাফার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের ক্ষমা করবে কিনা এবং এই সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মুনাফা হয়তো তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে/করতে হবে)। চৈনিক এক অতি-ধনীর বাড়ি ভ্রমণ দিয়ে শুরু হয় সাংহাই শহর ভ্রমণ। আমরা দেখতে থাকি সাংহাই শহরের অতি ধনীদের ঘরবাড়ি আর এর পাশাপাশি অতি দরিদ্রের ঘর-পাড়া তাদের উচ্ছেদ (উচ্ছেদ যেন পৃথিবীর সকল গরিবদের জন্য এক অবধারিত জীবনের অংশ), এটা এই মুনাফাকেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থার এক অতি স্বাভাবিক উপাদান। পৃথিবীর সব শহরেই বস্তি, ঘিঞ্জি বাসস্থান আছে, “শহরের সকল সমস্যা তাদের জন্য হচ্ছে” এমন কি “অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য দায়ী তারা” “আইনি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার জন্য দায়ী তারা” এই সব খারাপের জন্য দায়ী মানুষেরাও আছে, আমরা তাদের পৃথিবীর অন্যসব দরিদ্রদের মতোই এক হেয় মানবেতর জীবনযাপন করতে দেখি। সাংহাই শহর অকল্পনীয় দ্রুত গতিতে তার ভূভাগ বদলেছে, বদলে গেছে এ জায়গার প্রতিবেশ, মানুষ এবং সংস্কৃতি (সাংহাই শহরের অতীত, বদলে যাওয়া, ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে বানানো জিয়া ঝাংকের প্রামাণ্যচিত্র “আমি যদি জানতাম/ I Wish I Knew” (২০১০,১১৬ মিনিট) সিনেমাতেও এ শহর নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ আলাপচারিতা রয়েছে।)। এডওয়ার্ড বার্টিনস্কির ছবি এবং বেইকওয়ালের এই সিনেমা আমাদের নগরায়নের ফলে অকল্পনীয় গতিতে চিরদিনের জন্য বদলে যাওয়া ভূদৃশ্যের মুখোমুখি করে দেয়।  

এডওয়ার্ড বার্টিনস্কির ছবি ধরেই এই সিনেমার যাত্রা এবং আলাপ আর ছবিগুলো এতো সুন্দর যে আপনি যেকোনো সময়ে এই পতনমুখী মানবযাত্রার চিহ্ন দেখে বলে ফেলতে পারেন, আহা! এতো সুন্দর। এবং তার ছবি আসলে যে কেউ শুধুমাত্র সুন্দর ছবি হিসেবেই দেয়ালে টানিয়ে রাখতে পারেন। যদিও এ বিষয়ে জেনিফার বেইকওয়াল এবং এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি দুজনেই সচেতন এবং বার্টিনস্কির এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেও জানান তিনি “প্রথাগত আন্দোলনকর্মী” নন। পুরো ছবিতে সংলাপ আছে হাতেগোনা কয়েক জায়গায় এবং কোনোপ্রকার প্রথাগত সাক্ষাৎকার বা ধারাবিবরণী নেই, যদিও বার্টিনস্কির মাঝে মাঝে বলা কথাগুলো কখনো কখনো না ব্যবহার করলেও চলতো কারণ ছবি, চলচ্চিত্রায়ন, সম্পাদনা আর শব্দের নকশা (চারপাশের যন্ত্রের শব্দ দিয়ে এতো সুষম শব্দের নকশা তৈরি করা হয়েছে এবং এতো সুবিন্যাসিত যে একে সহজেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেটালের এক যান্ত্রিকপিস ধরে নিতে পারেন) আপনাকে এক নরক পরিভ্রমণের অভিজ্ঞতা এনে দেবে। যে অভিজ্ঞতার ফলে আপনি/ আমি/ আমরা ভূপ্রকৃতি বদলে ফেলে যে মুনাফাকেন্দ্রিক সমাজ, দেশ, নরক তৈরি করেছি, এই মুনাফা এবং উন্নয়ন ভাবনা ও বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনার সামনে দাঁড় করাবে। প্রচলিত এই নরক এবং নারকীয় পরিবেশ তৈরি করেছি আমরা মানুষেরা, যদিও তার ভুক্তভোগী হচ্ছে সমগ্র প্রাণিকুল এবং প্রকৃতি (ভাবুন আমরা শুধুমাত্র মুনাফার জন্য বন-জঙ্গল ধ্বংস করে তৈরি করছি কলকারখানা, আবাস। মুনাফা এবং অহমের জন্য বানাচ্ছি পারমাণবিক চুল্লি, অস্ত্র! এসব করছি শুধুমাত্র আরো আরো বেশি টাকা আয় করার জন্য, আমাদের বুদ্ধিতে এটুকু নেই টাকা খাওয়া যায়না, টাকায় অক্সিজেন বা পানি তৈরি হয়না।) ।  

২।  

সিনেমা সম্পর্কিত তথ্য

নামঃ জলছাপ/ Watermark (২০১৩) ।

পরিচালকঃ জেনিফার বেইকওয়াল ও এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি

প্রযোজনাঃ নিকোলাস ডি পেনসিয়ার

রচনাঃ জেনিফার বেইকওয়াল। সংগীতঃ মার্টিন টিয়েলির ও রোল্যান্ড শ্লিমমে

চিত্রগ্রাহকঃ নিকোলাস ডি পেনসিয়ার। সম্পাদনাঃ রোল্যান্ড শ্লিমমে। দৈর্ঘ্যঃ ৯০ মিনিট

দেশঃ কানাডা। ভাষাঃ ইংরেজি, স্প্যানিশ, হিন্দি, ম্যান্ডারিন ও বাংলা। 

পানির সত্তর শতাংশ মানুষ ব্যবহার করে কৃষিকাজে, এবং আমরা যদি এমন একক ক্রিয়াকলাপের কথা মনে করি যা গ্রহের পৃষ্ঠকে পরিবর্তিত করেছে, তবে এটি কৃষিকাজ।

  • এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি, ফটোগ্রাফার এবং পরিচালক।  

“আপনি পানিতে না থাকলে বাঁচতে পারবেন না, কারণ কোনোও দুটি কোষ পানিতে না থাকলে বিভাজিত হতে পারেনা। আমরা প্রথম নয় মাস সমুদ্রের অভ্যন্তরে, আমাদের মায়ের গর্ভে কাটিয়েছি। এটি সমুদ্রের পুনর্গঠন, যেখানে সমস্ত জীবনচক্র ঘটে। এমনকি উদ্ভিদের অভ্যন্তরে, জল না থাকলে আপনি কোষ বিভাজিত করতে পারবেন না, তাই জল সর্বত্র। যদি সেই জলের সংযোগ কখনও ভেঙে যায় এবং কোনোও কোষ ফেটে যায় এবং শুকিয়ে যায়, জীবন শেষ হয়ে যায়। সুতরাং আমি মনে করি যে এটি একটি চিত্তাকর্ষক ধারণা আপনি এবং আমি কেবল বসে বসে এই কথোপকথনটি ভাবতে পারি কারণ আমরা দুজনই গত তিন বিলিয়ন বছরে সর্বদা জলে বিভক্ত কোষগুলির একটি অবিচ্ছিন্ন সংযোগকে উপস্থাপন করি।” 

  • জে.পি. স্টিফেনসেন, গ্রিনল্যান্ড থেকে।

“এই আলোচনাটিকে (পানি সম্পর্কিত) আমাদের গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে কারণ হল প্রথমবারের মতো, আমরা প্রকৃতি যা করে তার কেবল নিষ্ক্রিয় পর্যবেক্ষকই নই, আমরা দায়ী।” 

  • জে.পি. স্টিফেনসেন, গ্রিনল্যান্ড থেকে।

পানির অপর নাম জীবন

যে প্রচলিত কথারা প্রায়শ আমাদের চারপাশের বাতাসে ঘুরে বেড়ায় এমন একটি কথা হচ্ছে “পানির অপর নাম জীবন” কথাটা সম্ভবত যে কেউ মেনে নেবেন আর পানির সাথে আমাদের সম্পর্ক কীরূপ এবং আমাদের পানি ব্যবস্থাপনার যে চিত্র সে অবস্থা আলোচনা করেছে “জলছাপ” (২০১৩) সিনেমা। সারা পৃথিবীর মতই একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করে চলেছে চীন পরিবেশগত প্রভাব বিচার না করেই, যার ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী। আমরা জানি একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে শুধুমাত্র মুনাফার কথা বিবেচনায় রেখে কিন্তু মুনাফা দিয়ে কী করা হবে যেখানে আমাদের বসবাসের পৃথিবী টিকে থাকবে নাকি থাকবে না এরূপ হুমকির সামনে পড়ছে আমাদের এই বিবেচনাহীন মুনাফাকেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থার ফলে। এই পরিকল্পনাবিহীন বাঁধ নির্মাণের ফলে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার প্রাণী ও মানুষের আবাস আর চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষিজমি, বাঁধের একপাশে তৈরি হচ্ছে মানুষের নির্মিত জলাধার আর আরেকপাশে শুকিয়ে যাচ্ছে নদী এবং হঠাৎ পানি ছেড়ে দেয়ার ফলে তৈরি হচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আর পৃথিবীর স্থলভাগের অধিকাংশ জায়গা ভূমিকম্পপ্রপবণ ফলে লক্ষ লক্ষ টন সিমেন্ট, পাথর এবং লোহা দিয়ে গড়া এইসব কৃত্রিম পাহাড় যদি কোনো ভূমিকম্পে ধসে পড়ে তাহলে তার প্রভাব হবে ভয়াবহ প্রাকৃতিক ও মানবিক দুর্যোগ। এবং এসব বাঁধ নির্মাণের ফলে শুরু থেকেই শুরু হয় নানাবিধ বিপর্যয়, প্রথমত হাজার হাজার মানুষকে গৃহহারা হতে হয় সারা জীবনের জন্য এবং লক্ষ লক্ষ গাছ এবং হিসেবের বাইরের প্রাণীকুল প্রাণ হারায় এবং বাস্তুহারা হয়ে পড়ে যার অবধারিত ফলাফল প্রাণনাশ। আর বাঁধের ফলে কীভাবে বদলে যেতে পারে একটা দেশের প্রাকৃতিক এবং ভৌগলিক পরিবেশ সেটার ভুক্তভোগীর তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে, ফারাক্কা বাঁধের ফলে রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের বিশাল জায়গা পরিণত হচ্ছে/হয়েছে মরুভূমিতে এবং হঠাৎ বাঁধের পানি ছেড়ে দেয়ার ফলে তৈরি হয় বন্যা যার ফলে আবাদি ফসল থেকে শুরু করে নানান ধরনের সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়া ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ, তিস্তা নদীতে বাঁধসহ আরো নানাবিধ রকমের নদীশাসন প্রকল্পের ফলে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে এক ভয়াবহ বিপদের সামনে। আবার বাংলাদেশের ভিতরে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধের ফলে চাকমা রাজবাড়িসহ, তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি, মানুষের বসতি আর বনভূমি। 

বাঁধের ফলে পৃথিবীর অন্যতম ভয়ানক সুন্দর নদী কলোরাডো পরিণত হয়েছে আমেরিকার মুনাফার শিকার পোষা নদীতে, এ নদীর অধিকাংশ পানি তুলে নিতে নিতে এখন আর এ নদীটি সাগরে যেয়ে বিশ্রাম নিতে পারেনা তার আগেই আমেরিকার সীমান্তে, মেহিকোতে ঢোকার আগেই আমেরিকার বণিকেরা শুষে নেয় এর সমস্ত পানি, আর এই পানির ফলেই তৈরি হয়েছে আমেরিকার বিশাল কৃষি অঞ্চল (পড়ুন অতি প্রক্রিয়াজাত বাণিজ্যিক কৃষিঅঞ্চল) । এডওয়ার্ড বার্টিনস্কির ছবিতে আমরা দেখি এই বাণিজ্যিক কৃষি অঞ্চল এবং তার বিস্তার, যা বদলে দিয়েছে হাজার হাজার বছরের প্রাকৃতিক পরিবেশ কারণ এই বাঁধের ফলে মেহিকোতে তৈরি হয়েছে মরুভূমি, যেখান দিয়ে একসময় বয়ে যেত খরস্রোতা নদী যা ভরা ছিল নানারকম মাছ, প্রাণী এবং নানাবিধ জলজ উদ্ভিতে। সেখানকার এক বয়সি প্রবীণ মহিলা জানান এই নদীর অতীত, যেখানে তিনি দাঁড়িয়ে কথা বলছেন সে জায়গা একসময় ছিল নদী গর্ভ আর এখন শুধু বালুচর। তার চোখেমুখে শরীরে নদী হারানোর বেদনা যেন তিনি হারিয়ে যাওয়া নদীর সাথে সাথে হারিয়ে ফেলেছেন নিজের জীবনের খানিকটা অংশ। তিনি আমাদের আবারো যেন মনে করিয়ে দিতে চান নদী এবং পানি জীবনেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ তাই নদী ও প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ হারিয়ে গেলে ভালো থাকা যায়না, মানুষ ভালো থাকেনা, থাকতে পারেনা। দিন দিন এসব আমরা ভুলে যাচ্ছি শুধু মুনাফার জন্য, জেনিফার বেইকওয়াল ও এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি আমাদের জীবনযাপনের এই অন্য পৃষ্ঠার ছবি আমাদের দেখান।

প্রক্রিয়াজাত ভূদৃশ্য (২০০৬) প্রামাণ্যচিত্রের মত এ সিনেমাতেও রয়েছে বাংলাদেশের বিবরণ আগের সিনেমাতে ছিল চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙ্গা এলাকার ও অতি দরিদ্র শ্রমিকের বিবরণ আর এবার রয়েছে ঢাকার হাজারীবাগের চামড়া প্রক্রিয়াজাত কারখানার দৃশ্য (লেখকের নিজের দেখায়, বর্তমানে (২০২০) চামড়া প্রক্রিয়াজাত কারখানার কিছু অংশ সাভারে সরিয়ে নেয়া হয়েছে কিন্তু সেখানেও পরিবেশ দূষণরোধের কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বা প্রতিকার গ্রহণ করা হয়নি, সেখানেও চলছে সমানে পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে নদী দূষণ থামছেই না), সেই সারা পৃথিবীর মতো একই চরিত্র, গরিব শ্রমিক, বিপদজনক রাসায়নিক নিয়ে ততধিক বিপদজনক পরিবেশে কাজ করছেন, যেন এটাই স্বাভাবিক, নিয়তি! প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার পানি দরকার হয় এসব কারখানায় এবং চামড়া প্রক্রিয়াজাত হয়ে যাবার পরে এই রাসায়নিক মিশ্রিত চরম দূষিত পানি সরাসরি যেয়ে পড়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে, অন্যান্য কারণসহ এরকম নানান ধরণের হাজারো কারখানার দূষিত বর্জ্য ও রাসায়নিক মিশ্রিত পানি সরাসরি ফেলতে ফেলতে একসময়ের সুন্দর নদী বুড়িগঙ্গা এখন অন্যতম প্রধান দূষিত নদী। আর যথারীতি এসব ভোগ্যবস্তুর ক্রেতা ধনী ও অতি ধনীরা আর দূষণ ও শোষণ গরিবের কিন্তু প্রাকৃতিক দূষণ এই মুনাফাকেন্দ্রিক সংকীর্ণ দৃষ্টির ধার না ধেরেই পুরো পৃথিবীকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে হুমকির সামনে ফেলে দিয়েছে, যার ফলে মানবজাতিসহ ধ্বংস হয়ে যাবে/ যেতে পারে পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাণী এমনকি পুরো পৃথিবী ।   

ভারতের কুম্ভমেলার লক্ষ লক্ষ লোকের পূণ্যস্নান, যেখানে মানুষেরা মনে করে তাদের পাপ ধুয়ে তাদেরকে পবিত্র করে তুলবে জল, আবার পৃথিবীর অন্য প্রান্তে দুই কিলোমিটার গভীর থেকে তুলে আনা বরফ নিরীক্ষা আর এসবের মাঝে মাঝে রয়েছে অল্প কিছু কথোপকথন। কথা বলেছেন প্রান্তিক নারী থেকে পশ্চিমের বিদ্বানসহ মাঝের অনেক মানুষেরাই।

সিনেমার শেষে জেনিফার বেইকওয়াল ও এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি নিজেরাই লিখে জানিয়ে দেন এ সিনেমা কোনো প্রথাগত চিত্রনাট্য বা গল্প অনুসরণ করে বানানো হয়নি, অনেকটাই সম্পাদনার টেবিলে বসে বসে গল্প বানানো হয়েছে এবং প্রায় ছয় মাস সময় নিয়ে সম্পাদনা করা হয়েছে, ফলে কোথাও কোথাও গল্প অনুসরণ করতে অসুবিধা হলেও বিষয়ের কেন্দ্রিকতা সে অসুবিধা দ্রুতই কাটিয়ে তোলে এবং এ সিনেমাতেও শব্দ ও সঙ্গীতের সুষম ব্যবহার লক্ষণীয়, আর চিত্রায়ন চমৎকার।

৩।  

সিনেমা সম্পর্কিত তথ্য

নামঃ মানবকেন্দ্রিক ভূপরিবর্তন অধ্যায়/পরিবেশ পরিবর্তন অধ্যায়ঃ মাবনকাল/মানবযুগ বা Anthropocene: The Human Epoch (২০১৮) ।

পরিচালকঃ জেনিফার বেইকওয়াল, নিকোলাস ডি পেনসিয়ার ও এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি।

রচয়িতাঃ জেনিফার বেইকওয়াল। ধারাবিবরণ পাঠঃ অ্যালিসিয়া ভিকান্দার ।

চিত্রগ্রাহকঃ নিকোলাস ডি পেনসিয়ার । দৈর্ঘ্যঃ ৮৭ মিনিট । দেশঃ কানাডা।

ভাষাঃ ইংরেজি ও কিছু মান্দারিন।

১। হামবাক বনভূমি (জার্মানি) যখন প্রায় ১২০০০ বছর বয়স, তখন একটি বিদ্যুৎ সংস্থা এ ভূমির নীচে সমাহিত বাদামি কয়লা খনন করার জন্য কিনেছিল। প্রাচীন বনটির এখন এর মাত্র ১০ ভাগ বাকী আছে।     

–        উইকিপিডিয়া এবং অন্যান্য তথ্য মাধ্যম। 

২। এ প্রামাণ্যচিত্রে অ্যানথ্রোপসিন ওয়ার্কিং গ্রুপের গবেষণার সূত্র ধরে জানাচ্ছে, বিজ্ঞানীদের একটি দল যারা ২০১৬ সালে পৃথিবীর হোলোসিন যুগের সমাপ্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সুপারিশ করেছিলেন, যা প্রায় ১২,০০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। তাদের যুক্তি ছিল আমরা এখন একটি নতুন ভূতাত্ত্বিক পর্যায়ে আছি, অ্যানথ্রোপসিন যুগ – এমন এক সময় যখন মানুষ পৃথিবীর সমস্ত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলির তুলনায় পৃথিবীকে আরও বেশি পরিবর্তন করে।

৩। বরফমুক্ত ভূমির প্রায় ৭৫% ভাগ মানুষ ব্যবহার করে।

৪। প্রতিবছর মানুষ ৬০ থেকে ১০০ বিলিয়ন টন খনিজ ও অন্যান্য পদার্থ পৃথিবী থেকে বিযুক্ত করে, উত্তোলন করে।   

–        মানবকেন্দ্রিক ভূপরিবর্তন অধ্যায়/পরিবেশ পরিবর্তন অধ্যায়ঃ মাবনকাল/মানবযুগ (২০১৮) ।

পৃথিবীতে মানুষের চিহ্ন/ছাপ (পড়ুন দূষণ ছাড়া) ছাড়া কিছু নেই, কোনো জায়গা নেই

রাশিয়ার সবচেয়ে দূষিত শহরে (নোরিলস্ক) যার অবস্থান উত্তর মেরু থেকে মাত্র ২৫০(প্রায়) কিলোমিটার দূরে সেখানে চলছে উৎসব, যে কারখানাকে কেন্দ্র করে এ শহর সেই সেই কারখানাকে কেন্দ্র করেই এ উৎসব এবং এই কারখানা/ কারখানাগুলোই এই শহরের দূষণের কেন্দ্র! তবুও মানুষ খুব দ্বিধাহীন, চলছে উৎসব। উৎসব চলছে আফ্রিকা মহাদেশের নাইজেরিয়াতে, সেখানে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এক ছাউনির নিচে নেচে গেয়ে চলছে ঈশ্বর ও যিশুর বন্দনা আর এর পরিবেশ ও প্রতিবেশগত প্রভাব, সে ভাবনা মানুষের মনে নেই। (মনে পড়ছে “জলছাপ” (২০০৬) সিনেমাতে দেখানো এরকম লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ, ভারতের কুম্ভমেলায় জলে নেমে পাপ ধোয়ার উৎসবের কথা, এই লাখ লাখ মানুষের আচরণেরর ফলে কীভাবে বদলাচ্ছে পরিবেশ, কতটা দূষিত হচ্ছে পানি ও পরিবেশ? অথবা প্রতি বছর মুসলিমদের হজ্জ পালন সে ধর্মীয় উৎসবেও হাজির হন লক্ষ লক্ষ মানুষ কিন্তু এর ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর কী প্রভাব পড়ছে, সেটা কি মানুষের খেয়ালে থাকছে?)। নীরব নেই চিলির আতাকামা মরুভূমি, সেখানেও চলছে উৎপাদন এবং উৎপাদন এবং এই উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে রেহাই নেই রাশিয়ার মাটির গভীরে থাকা পটাসিয়ামের, সেখানে মাটির বুকের ভেতর থেকে খুঁড়ে খুঁড়ে বের করে আনা হচ্ছে খনিজ পদার্থ, মাটির এই স্তরের লাল রঙের বর্ণিত রেখাগুলো আপনাকে মনে করাবে যেন রক্তে রাঙ্গানো এক বিমূর্ত চিত্র যা আমরা বুঝেও না বোঝার ভান করছি, দোহাই দিচ্ছি মানব উন্নয়নের (কী এমন উন্নতি করেছে মানুষ যেখানে সে অন্য প্রজাতিকে ধ্বংস না করে নিজে থাকতে পারেনা, আর এই তথাকথিত উন্নয়নের ফল ভোগ করে প্রায় পৃথিবীর ১ ভাগ মানুষ আর ৯৯ ভাগ মানুষ নানান নামে এবং পদে থেকে মুলত তাদের সেবা করে যায়, নানান নামে অথবা করতে বাধ্য হয়, এই অসম পরিবেশধ্বংসী সভ্যতা চালিয়ে নিচ্ছি আমরা, হাজারো প্রজাতি ধ্বংস করে। এইতো আমাদের উন্নয়ন!)।   

জার্মানিতে প্রবল জন আপত্তি সত্ত্বেও হামবাক অরণ্যের ৯০ ভাগ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বাদামি কয়লা উত্তোলনের জন্য এবং এই উন্মুক্ত কয়লা উত্তোলনের ফলে প্রায় ৪ টি শহর উপড়ে ফেলা হয়েছে, কোনো প্রকার আবেদন, আন্দোলন শোনেনি প্রশাসন, সাধারণ মানুষের জানের, মতের কোনো দাম বা মূল্যায়ন নেই কোথাও সেটা দেশের নাম হতে পারে চীন, জার্মানি বা বাংলাদেশ, ভেবে দেখুন বাংলাদেশে একের পর এক প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ বিরোধী “উন্নয়ন” প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে কিন্তু এইসব প্রকল্পের ফলে লাভবান হচ্ছেন কতজন? বাংলাদেশের অবস্থা ভাবুন (২০২০) অতিধনী উৎপাদনে পৃথিবীতে তৃতীয়, আর এই অতি ধনীরা দুর্নীতি আর জনতার স্বার্থহীন, পরিবেশ বিরোধী  প্রকল্পসহ অন্যান্য অনৈতিক মাধ্যমে অতি দ্রুত ধন-সম্পদ লুটে নিচ্ছেন ফলে ফুলেফেঁপে উঠছে জিডিপি ও অন্যান্য সূচক আবার তাদের সম্পদের অধিকাংশই নামে-বেনামে পাচার করে দিচ্ছেন বিদেশে, যেন পরিবেশ ধ্বংসের ফলাফল সেখানে পৌঁছাবেনা, আর রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের মুখে চলছে “উন্নয়নের” মুখস্ত বুলি, আর বাস্তবতা হল করোনা ভাইরাসের (মার্চ- এপ্রিল, ২০২০) প্রভাবে ঢাকা শহরসহ সারা দেশে, মানুষ না খেয়ে না থাকতে পেরে দিনে- রাতে রাস্তাঘাটে ছুটে বেড়াচ্ছে শুধু সামান্য চাল- ডালের আশায়, এই হচ্ছে উন্নয়ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের বাস্তবতা, আর এসব ব্যাপার উন্নত দেশগুলো একটু রেখে ঢেকে রাখে কিন্তু সেখানেও রয়েছে নানাবিধ অসমতা। তাই সহজেই অনুমিত যে জার্মানিতেও এই পরিবেশ ধ্বংসী প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই। এবং এসব কোনোকিছুর ধার না ধেরে যে উন্নয়ন আমরা চালিয়ে যাচ্ছি তার ফলে ধেয়ে আসছে আরেকটা প্রাকৃতিক মহা-বিপর্যয় এবং আগের বিপর্যয়গুলো প্রাকৃতিক কারণে হলেও এবার এই বিপর্যয় ঘটতে চলেছে শুধুমাত্র মানুষের কারণে, আর যার ফলে ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণিকুল এবং ভাববেন না যে মানুষ বেঁচে থাকবে, ধনী-গরিবসহ সকল মানুষেরাও সমূলে নিশ্চিহ্ন হবে এবং এটা ঘটবে মানুষের পরিণামহীন আচরণের কারণেই। 

এ প্রামাণ্যচিত্রের শুরুতেই দেখি আমরা আগুন জলছে এবং জ্বলছেই। আরো পরে আমাদের কাছে পরিষ্কার হয় এই আগুন জ্বালানো হয়েছে ১০৫ টন হাতির দাঁতের স্তূপের উপরে এবং একজন পরিবেশরক্ষাকর্মী আমাদের জানান এখানে দশ হাজার হাতির দাঁত আছে, ভেবে দেখেছেন দশ হাজার হাতি! আর কত কত হাতির দাঁত পাচার হয়ে গেছে যা আমরা কখনো জানতে পারিনি এবং জানতে পারবোও না কিন্তু এর প্রভাব থেকে আজ হোক কাল হোক আমাদের কারো নিস্তার নেই। এতোবড় এবং সুন্দর একটা প্রাণী আমরা মারতে মারতে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছি শুধুমাত্র তার দাঁতের জন্য এবং কতটা নৃশংস হলে একটা জাতি অন্য একটা প্রজাতিকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারে তার দাঁতের জন্য এবং এই দাঁত দিয়ে নানান ধরণের শোপিস সাজিয়ে রাখতে পারে ঘরে আবার এই দাঁত দিয়ে বানানো হয় নানান ধরণের ধর্মীয় প্রতীক! ভাবুন আমাদের ধর্ম পালনের দশা। যদিও এ সিনেমাতে উল্লেখ নেই কিন্তু প্রাসাঙ্গিক তাই এখানে তিমি হত্যার কথাও উল্লেখ করা দরকার, জাপান, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, আইসল্যান্ড, কানাডা এসব দেশগুলোকে আমরা তথাকথিত শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে জানি তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছে তিমি হত্যায়, ফলে প্রকাশ হয়ে পড়ে এই শান্তি শান্তি ভাব আসলে তাদের যোগ্যতা নেই বলে, থাকলে তারাও আমেরিকা বা চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স বা সৌদিআরব বা ভারত, মিয়ানমারের মতন ঝাঁপিয়ে পড়তো দুর্বলের উপরে! মানুষ মারাতে নেতৃত্ব না দিতে পারার ক্ষোভ তারা হয়তো খানিকটা নিবৃত করে সম্ভবত এই বিশালাকারের দুগ্ধপায়ী প্রাণীটিকে হত্যা করে। একের পরে এক প্রজাতি চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাপনের ফলে এবং কিছু কিছু প্রাণী আর প্রাকৃতিকভাবে তাদের বাসস্থানে নেই, তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে এখন তারা টিকে আছে শুধুমাত্র চিড়িয়াখানা বা কোনো সংরক্ষণাগারে, যেন শোকেসে সাজিয়ে রাখা শোপিস যখন আর তার প্রতি কোনো আগ্রহ থাকবেনা তখন ফেলে দেওয়া হবে। প্রচুর প্রাণীরা শুধুমাত্র মানুষের এই “স্বাভাবিক” জীবনযাপনের ফলে চিরদিনের জন্য হারিয়েছে তাদের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক আবাস, ভাবুন এ সিনেমাতে দেখানো আফ্রিকা মহাদেশের এক বিশাল ময়লার ভাগাড়ের কথা, যেখানে একদল বক সদৃশ পাখি কিন্তু দেখতে আরো বড় তারা এই বিষাক্ত ময়লা এবং প্লাস্টিকের ভাগাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং খাবার খাচ্ছে বা বাধ্য হচ্ছে কারণ তার স্বাভাবিক আবাসস্থল মানুষ আগেই দখল করে বদলে দিয়েছে। আর মানুষের ব্যাবহার করা এই প্লাস্টিকের শেষ কোথায়, এটা এমন একটা উপাদান যার কোনো বিনাশ নেই, এমনকি এই প্লাস্টিকে ভরে যাচ্ছে মহাসাগর নদনদী, খালবিল, আগান- বাগান সব, তারপরেও মানুষের প্লাস্টিক ব্যবহার কমানোর কোনো লক্ষণ নেই, এটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো কিন্তু এসবই হালাল করা হচ্ছে তথাকথিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোহাই দিয়ে, কিন্তু এর ফলে যদি পৃথিবীর সমস্ত বন-জঙ্গল শেষ হয়ে যায়, যাক, যদি সকল প্রাণী চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়, যাক। এমনকি যদি মানুষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায় এই জীবনযাপন এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ফলে, সমূলে ধ্বংস হয়ে যায়, যাক।  কিন্তু এই জীবনযাপন চলবে, এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চলবে এই উন্নয়ন ব্যবস্থা বহাল থাকবে। সম্ভবত আমরা এমন একটা অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন ব্যবস্থার ভিতরে আটকে আছি যে ব্যবস্থার লক্ষ্য এই ব্যবস্থা বা কাঠামো নিজেই, এখানে কোনো প্রাণ বা প্রকৃতি নেই বা মানুষ এসব অন্যকিছুই নেই!

বলা যায় পরিবেশ বিষয়ক সিনেমা নির্মাণের এই ধরনে জেনিফার বেইকওয়ালের শুরু ছিল ২০০৬ সালের “প্রক্রিয়াজাত/কারখানাজাত ভূদৃশ্য/ভূমিদৃশ্য” সিনেমা তারপরে এই ধারাবাহিকতায় তিনি বানিয়েছেন “জলছাপ” (২০১৩) যেখানে পরিচালক হিসেবে তার সাথে যোগ দেন ফটোগ্রাফার এডওয়ার্ড বার্টিনস্কি আর তৃতীয় এ সিনেমাতে তাদের সাথে পরিচালক হিসেবে যোগ হয়েছেন এই ত্রয়ীর প্রযোজক নিকোলাস ডি পেনসিয়ার তিনি এ সিনেমাতে একাধারে কাজ করেছেন চিত্রগ্রাহক এবং প্রযোজক হিসেবেও এবং এই ত্রয়ীর তিনি অন্যতম প্রযোজক। অ্যালিসিয়া ভিকান্দারের ধারাবিবরণী পাঠ চমৎকার মনোযোগ ও বিষয় সম্পর্কিত আবেদন তৈরি করে। দৃশ্যায়ন, শব্দনকশা এবং সম্পাদনার বদৌলতে একটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি সিনেমার আবহ তৈরি করে এ প্রামাণ্যচিত্র, আসলে বাস্তবতা খোদ নিজেই এতো নৃশংস এবং সারা পৃথিবীজুড়ে চিরচেনা ভূপ্রকৃতি এতো বিশালাকারে এবং যন্ত্রের মাধ্যমে এতো গভীরভাবে বদলে ফেলা হয়েছে যে সেটাকে খালি চোখেও মনে হবে কোনো ভিনগ্রহের চিত্র। আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহ, মানুষের চিন্তাহীন জীবনযাপন, অর্থনৈতিক কাঠামো ও উন্নয়নের ফলে যে ধ্বংসের প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে এ প্রামাণ্যচিত্র সে যাপনের একরকম বিবরণ প্রতিবেদন।

আরেকটা সিনেমা ত্রয়ী ও অন্যান্য   

বিপুল ভ্রমণ, বিলাসী যন্ত্রপাতি ও সম-পরিমাণ খরচ করে এ সিনেমা ত্রয়ী বানানো হয়েছে। রয়েছে সুন্দর সুন্দর চলচ্ছবি (ইমেজ) আর এই পতনমুখী পৃথিবীর ধ্বংসের চলচ্ছবি দেখেও আপনার মনে হতে পারে, আহা! কী সুন্দর। তবে এতসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়ের গভীরতা না থাকাটা খুব বেদয়াদায়ক, এবং একটা বড় খামতি। ধরে নেয়া যাক হয়তো এডওয়ার্ড বার্টিনস্কির ফটোগ্রাফি প্রকল্প এবং এ সিনেমা প্রকল্প দুটো একসাথে করার ফলে যতটা খরচ মনে হচ্ছে ততটা খরচ আসলে এ সিনেমা ত্রয়ী বানানোতে হয়নি, তাহলেও এটা একটা অনেক টাকা ব্যয় করে বানানো সিনেমা ত্রয়ী। আর প্রথাগত মুনাফাকেন্দ্রিক জীবনযাপনের বিপরীত বয়ানের সিনেমা বানিয়ে যদি প্রথাগত অনুদান-প্রযোজক-উৎসব-পরিবেশক এ ধরাবাঁধা গণ্ডির ভিতর দিয়ে যেতে হয়/ যাওয়ার বাসনা থাকে/ যাবার পরে এ সিনেমার বক্তব্যের ধার কতটা থাকে? উৎসবের লালগালিচা যাদের নির্বাচনের মাধ্যমে (পড়ুন হুকুমে) রঙয়ে ঝলমল করে তাদের কোনো না কোনো অংশই এই বিপুল পরিবেশ বিনাশী প্রকল্প চালিয়ে নিচ্ছে। সবকিছু খালি চোখে খুব আলাদা আলাদা মনে হলেও আসলে আলাদা নয় (দূষণের মতো, পৃথিবীর যেখানেই দূষণ হোক, আজ বা কাল প্রভাব সবখানেই পড়বে), পুঁজি যতই বিকেন্দ্রিকতার কথা বলুক, পুঁজির নিজের ধর্ম কিন্তু কেন্দ্রিকতা। তাই বলা যায় ভূত তাড়ানোর সরিষাতেই গলদ থাকলে, সে সরিষাতে ভূতের ভালোই নামযশ হয়, যেমন “বাক-স্বাধীনতা” “শিল্প” ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ভূতের কাঁধে সওয়ার হয়েই চলছে এ পরিবেশ বিনাশী উন্নয়ন এবং আমাদের জীবনযাপন আর এ সিনেমা ত্রয়ী আমাদের দেখায় এসবের ফলাফল যদিও খানিকটা ঘুমপাড়ানি সুরে (যেমন, (আরো ইচ্ছে পূরণময়) টিভি সিরিজ “প্ল্যানেট আর্থ” (২০০৬, ২০১৬) ও ইয়ান আর্থুস-বার্ট্র্যান্ড পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র “হোম” (২০০৯)  বা গডফ্রে রেজিওর (আরো গীতল) “কাটসি” ত্রয়ী (Qatsi trilogy) ( Koyaanisqatsi: Life Out of Balance (১৯৮২), Powaqqatsi: Life in Transformation (১৯৮৮), Naqoyqatsi: Life as War (২০০২)) এবং দর্শনার্থীরা (Visitors) (২০১৩) বা Netflix এর সমকালীন পরিবেশবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র  ইত্যাদি, ইত্যাদি, কিন্তু এ সমালোচনার পরেও এরকম সিনেমার একটা প্রভাব থেকেই যায়, কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে সেই যথেষ্ট কিনা?)।    

মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন: চলচ্চিত্রকার

ইমেইল: raiparasadardi@gmail.com           

দোহাই

করোনায় পার পেলেও রেহাই নেই জলবায়ু পরিবর্তনে

https://en.wikipedia.org/wiki/Nuclear_and_radiation_accidents_and_incidents  

https://en.wikipedia.org/wiki/2019_Amazon_rainforest_wildfires#2019_Brazil_dry_season_fires  

https://en.wikipedia.org/wiki/Notre-Dame_de_Paris_fire

https://en.wikipedia.org/wiki/Tabu:_A_Story_of_the_South_Seas  

https://en.wikipedia.org/wiki/Nanook_of_the_North

https://en.wikipedia.org/wiki/Godfrey_Reggio   

https://en.wikipedia.org/wiki/Planet_Earth_(2006_TV_series)

https://en.wikipedia.org/wiki/Planet_Earth_II

https://en.wikipedia.org/wiki/Home_(2009_film)

Manufactured Landscape (2006)

https://en.wikipedia.org/wiki/Manufactured_Landscapes

https://en.wikipedia.org/wiki/Three_Gorges_Dam

https://en.wikipedia.org/wiki/Jennifer_Baichwal

https://en.wikipedia.org/wiki/Edward_Burtynsky

https://www.edwardburtynsky.com/

https://www.imdb.com/title/tt0832903/?ref_=ttloc_loc_tt

https://www.imdb.com/title/tt1042495/

https://www.imdb.com/title/tt5222596/?ref_=nm_knf_i2 

https://en.wikipedia.org/wiki/Still_Life_(2006_film)

https://en.wikipedia.org/wiki/I_Wish_I_Knew

https://www.imdb.com/title/tt1646103/

https://www.youtube.com/watch?v=U2Dd4k63-zM (TED Talk on Manufactured Landscape |2008)

https://www.youtube.com/watch?v=3EiuqDHDLXE (CBS Interview on Watermark and others|2013)

Watermark (2013)

https://en.wikipedia.org/wiki/Watermark_(film)

http://www.watchwatermarkmovie.com/

https://www.youtube.com/watch?v=15cX8Hm-JHM&feature=youtu.be (WATERMARK, the making of)

http://blog.machimach.com/watermark-2013 (It’s got few beautiful photos of Watermark (2013))

https://www.edwardburtynsky.com/projects/films/watermark 

http://burtynsky-water.com/bwwp/wp-content/uploads/2013/12/WATERMARK_Edu_Pkg_REV_FINAL.pdf (TEACHER’S GUIDE. This guide has been designed to help teachers and students enrich their experience of. WATERMARK)

Anthropocene: The Human Epoch (2018)

https://en.wikipedia.org/wiki/Anthropocene:_The_Human_Epoch

Film

https://nowtoronto.com/movies/reviews/anthropocene-the-human-epoch-burtynsky/

http://povmagazine.com/articles/view/tiff-review-anthropocene-the-human-epoch

https://en.wikipedia.org/wiki/Hambach_Forest

https://en.wikipedia.org/wiki/Anthropocene

https://en.wikipedia.org/wiki/Holocene

https://en.wikipedia.org/wiki/Whaling#Denmark

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

1 thought on “মহাপ্রয়াণের বয়ানঃ পরিবেশ বিষয়ক এক সিনেমা ত্রয়ীর পর্যালোচনা

  1. Your last questions answer is “no, its not enough”. Because, if the leaders wanted to learn from nature, the Corona period still is the biggest natural disaster to learn about nature. But, did you find anything like this? You won’t find. That’s the culture and tradition of the leaders. They don’t ever think that they must have to change and they also need to upgrade their thinking level to very practical way.
    And, as a people we also have some duty and responsibility to the nature. We also need to change to change the view of the world.
    And, the way you think, if the leaders learn to think, the world would be a better place for every species.

Comments are closed.