‘লেখক হওয়া’ ও শাসকদলের মাস্তানদের মারধর

নৈতিক স্মৃতিচারণ হিসেবে ইতিহাস। সিপি গ্যাং-এর ‘বেশ্যা’ ব্যানার-৬

‘লেখক হওয়া’ ও শাসকদলের মাস্তানদের মারধর

রেহনুমা আহমেদ

হাজেরা: ‘হয়ত আপনার মতোই লেখক হতাম’

‘হয়ত আপনার মতোই লেখক হতাম,’ হাজেরা বলেন বাংলাদেশে যৌনতা বিক্রি-র লেখক কুর্-রাতুল-আইন-তাহমিনা ও শিশির মোড়লকে।

আমি লিখতে ভালোবাসি, লেখাপড়ার সুযোগ চাই। নিজেকে বিকশিত করার, নিজের মনকে প্রকাশ করার সুযোগ পেতে আমার ইচ্ছে করে – এটাই আমার স্বপ্ন।

হাজেরার ছোট ভাই জন্মানোর সময় ওর মা মারা যায়, ওর বাবা আবার বিয়ে করেন। সৎ মা নিষ্ঠুর ছিলেন। হাজেরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়, বাসে উঠে গুলিস্তানে নামে (ঢাকার জিরো পয়েন্ট), “৮-৯-১০ বছর বয়সী” ছেলেমেয়েরা ওকে ওদের দলে নিয়ে নেয়।  অন্যদের সাথে ওকেও কয়েকবার জোর করে সরকারের ভবঘুরেকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়— নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল, ঢাকার মিরপুর ও গাজীপুরের কাশিমপুরে।

ভবঘুরে কেন্দ্রের ‘ম্যানেজার’ হাজেরাকে ধর্ষণ করে,  মিরপুর চিড়িয়াখানায় গণধর্ষনের শিকার হয়।  আমি যখন কাশিমপুরে ছিলাম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘ডিরেক্টর’ তার বাসায় কাজ করানোর জন্য আমাকে নিয়ে যান। তার বড় ছেলে আমাকে ডেকে হাত-পা টিপতে বলত। আমি বুঝতাম ও কি চায়, আমি তো অনেক কিছু দেখেছি কিন্তু আমি জানতাম বললে তারা বিশ্বাস করবে না, তাই পালিয়ে যাই। আমাকে তুলে নিয়ে সেই গোদনাইলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ‘ম্যানেজার’কে যখন হেড অফিসে ট্রান্সফার করা হয়, তিনি জোরাজুরি করে আমাকে সাথে নিয়ে যান। তার স্ত্রী নারায়নগঞ্জে চাকরি করতেন, বাসায় ফিরতেন দেরি করে, উনি তাড়াতাড়ি ফিরতেন। একদিন দুপুরের পর আগেভাগে ফিরল, আমায় ধর্ষণ করল, আমার মাসিক তখনও শুরু হয়নি। আমি ব্যথায় চিৎকার করলাম, এক প্রতিবেশী মহিলা কান্না শুনে আসলেন, তরকারিতে নুন কম হওয়াতে আমাকে থাপ্পড় মেরেছেন, এই বলাতে মহিলা চলে গেলেন।

আমি আবার পালালাম, সেই গুলিস্তানের বন্ধুদের কাছে ফিরে গেলাম। তিন-চার দিন পর, তখনো ব্যথা ছিল, ওরা সবাই ঠিক করল মিরপুর চিড়িয়াখানায় যাবে, আমি তখনো ঠিকমত হাঁটতে পারি না, তাই ওরা আমাকে হাতির খাঁচার কাছে বসিয়ে রেখে চলে গেল। চিড়িয়াখানার একজন গার্ড, সাথে সাতজন, মোট আটজন, ওরা এসে আমাকে বাইরের একটা খালি মাঠে নিয়ে গেল। আমি যেতে চাইনি কিন্তু ওরা বলল, তুই চোর, আমরা তোকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেব।

এত বছর হয়ে গেছে কিন্তু এখনও সেই আতঙ্ক এত কিছুর পরও একই রকম রয়ে গেছে। মনে করলেও কষ্ট লাগে। এভাবে কাউকে কখনো বলিনি।

দুজন হাত চেপে ধরল, দুজন পা। একের পর এক। আমি চিৎকার করে কেঁদেছি, কেউ আসেনি। যখন জ্ঞান ফিরল, দেখি আমি থানায়। একজন বুড়া মানুষ আমাকে তুলে থানায় নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ওরা রাখেনি, বাচ্চা মেয়ে, নামও বলতে পারবে না। মামলা করতে হলে নাম লাগে। বুড়া লোকটা আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেলেন, তিন দিন রাখলেন, তারপর হাতে বাস ভাড়া ধরিয়ে দিয়ে বাসে তুলে দিলেন। আমি গুলিস্তানে ফিরে যাই।

হঠাৎ এক দিন হাজেরা ‘শিশুদের জন্য আমরা’র তিন পিচ্চি’সহ বাসায় ঢুঁ মারেন। বাংলাদেশে যৌনতা বিক্রি বইয়ে লিখে দিতে অনুরোধ করি। আমার দৃষ্টিতে তিনিও বইয়ের একজন লেখক।

এক অল্পবয়ষ্ক ছেলে আমাকে বলল ওর বোন আমাকে কাজ খুঁজে দিতে পারবে, পরে দেখি উনি কান্দুপট্টির সর্দারনি। ছেলেটি আমাকে তার কাছে বিক্রি করে দিল।  পুলিশ এসে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি সত্যিই বেশ্যা হতে চাও? তুমি কি স্বেচ্ছায় হতে চাও?  আমি বললাম, না, আমাকে রক্ষা করো, কিন্তু সর্দারনি তাকে টাকা খাইয়ে আমার অ্যাফিডেভিট করিয়ে নিল। কিন্তু আমি কাজ করতে পারিনি, আমার যোনিতে কোনো একটা সমস্যা ছিল, চিড়িয়াখানায় যা ঘটেছিল তার কারণে, আর তাই আমি খদ্দের জোগাড় করতাম অন্য মেয়েদের জন্য। একদিন এক বিদেশী খদ্দের আমাকে নেশার কিছু খাওয়ায়, আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি, জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালে। যৌনাঙ্গের দু’পাশে ঘা হয়ে ফুলে গিয়েছিল। ডাক্তাররা গজ ঢুকিয়ে রাখত। বহু দিন হাসপাতালে ছিলাম। ডাক্তার বলল আমি কোনোদিনও বাচ্চা নিতে পারব না।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সর্দারনি আমাকে এক মাস তার বাসায় রাখল, যোনিমুখ বড় করার জন্য নানান কৌশল অবলম্বন করল।  ধীরে ধীরে সমস্যার সমাধান হলো। তখন আমার বয়স বারো, খুব জোর তেরো।

কান্দুপট্টি পতিতালয়ে আমি দুই বছর কাজ করি। শাঁখারি বাজারের রাস্তায়ও যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করি। তারপর একদিন পুরাণ ঢাকার টানবাজারে গিয়ে খাতায় নাম লেখালাম। এবার পুলিশকে বললাম, স্বেচ্ছায় এসেছি।  তিন বছর ও আরো কিছু ঘটনার পর, টানবাজার ছেড়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আশেপাশের রাস্তায় কাজ করা শুরু করলাম।

আমাকে আবার তুলে নেয়া হয়, গাজীপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে সাত বছর ছিলাম। সেখানে একটাই ভালো জিনিস হলো, কনসার্নের বয়ষ্কদের শিক্ষাদানের একটা ব্যবস্থা ছিল।

আমি এই প্রথম লিখতে-পড়তে শিখি।

যন্ত্রণা আর অপদস্ত হওয়ার কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করে কী লাভ? কারণ একমাত্র প্রতিটি নিপীড়ন-নির্যাতন-অপমান বর্ণনা করলে সেটিকে প্রতিরোধ করা যায়। ওয়াল্টার বেঞ্জামিন বলেন, আমাদের কাজ বিজয়ীর সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করা না। বরং “সাধারণ বোঝাপড়ার বিরুদ্ধে ইতিহাসকে” ঝালাই করা।১০

যন্ত্রণা আর অপদস্ত হওয়ার কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করে কী লাভ? কারণ একমাত্র প্রতিটি নিপীড়ন-নির্যাতন-অপমান বর্ণনা করলে সেটিকে প্রতিরোধ করা যায়। ওয়াল্টার বেঞ্জামিন বলেন, আমাদের কাজ বিজয়ীর সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করা না। বরং “সাধারণ বোঝাপড়ার বিরুদ্ধে ইতিহাসকে” ঝালাই করা।

সায়দিয়া গুলরুখ: “শাসক দলের মাস্তানদের মারধর আর চিৎকার- ‘বেশ্যা, বেশ্যা’”

প্রশ্ন: তুমি কেন ওখানে গিয়েছিলে?

উত্তর: অন্যান্য একাডেমিক, লেখক, অ্যাক্টিভিস্টদের মতো আমিও ওখানে যাই তুবা গার্মেন্টসের শ্রমিকদের সাথে সংহতি জানাতে, তারা আমরণ অনশন করছিল, তারা ব্রাজিলের বিশ্বকাপ খেলার জন্য জার্সি বানিয়েছেল কিন্তু ফ্যাক্টরি মালিক দেলোয়ার হোসেন ঠিকমতো বেতন দেয়নি, ৪ মাস বকেয়া ছিল।

দেলোয়ার হোসেন তাজরীন ফ্যাশন্স-এর মালিক যেখানে নভেম্বর ২০১৩ সালে আগুন  লাগে, ১১৯ জনেরও বেশি শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। তাজরীনের মামলা চলছিল (এখনো চলছে), দেলোয়ার জেলে কিন্তু মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএ’র১১  একটি অংশ তাকে বের করার চেষ্টা করছিল এই উছিলায় যে তিনি না বেরুলে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া যাবে না।

ডিসেম্বর ২০১৪-র শুরু, ঘনিষ্ঠ বন্ধু সায়দিয়া গুলরুখের সাথে কথা বলছিলাম, ক’দিন পরই ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবে ওর পিএইচডি থিসিস লেখার কাজে। যদিও মোটামুটিভাবে জানতাম সেদিন কি ঘটেছিল, আগামীতে এ নিয়ে লিখব বলে কাগজে-কলমে টুকে নিতে ওর সাথে বসলাম।১২

৬ আগস্ট ২০১৪ তারিখে অ্যাক্টিভিস্ট নৃবিজ্ঞনী গ্রুপের সদস্য সায়দিয়াকে সাংঘাতিক মারধর করে, প্রথমে পুলিশ, তারপর শাসক দলের মাস্তান নারী ও পুরুষরা, মধ্য বাড্ডার হল্যান্ড শপিং সেন্টার এর বাইরে, তুবার অনতিদূরে।

প্রশ্ন: তোমাকে যারা মারধর করল তারা যে শ্রমিক লীগ১৩  ও যুব লীগের১৪ তুমি ক্যামনে জানো?

উত্তর: দেলোয়ারের মামলার শুনানির সময় কয়েক’বার এ দুজন নারী মাস্তানকে কোর্ট প্রাঙ্গণে দেখেছিলাম, আর যেই সাংবাদিকরা কোর্টকাচারি কভার করেন তারা আমাকে বলেছিল ওরা কারা। আর আসল কথা কি, তুবার বাইরে ওদের দেখলেই বোঝা যায় ওরা কারা। নাহলে কেনই বা পুলিশ ওদেরকে আর মালিকের মাস্তানদেরকে প্রোটেকশান দেবে? শ্রমিকদের প্রোটেকশান দেবে না,  গার্মেন্টস অ্যাক্টিভিস্টদেরও না বা ধরো আমাদের মতো মানুষদের যারা ওখানে ঔষধপত্র নিয়ে গিয়েছিল। যে কেউ এক নজরে বুঝবে কে কোন পক্ষের।

প্রশ্ন: তারপর, কি ঘটল?

উত্তর: মাসুম ভাই, ১৫ মোহাম্মদ আলী হায়দার১৬,  শবনম হাফিজ১৭,  কামরুল হাসান১৮,  ফারুক ওয়াসিফ১৯  এবং আরো অনেকে ফ্যাক্টরির গেটের দিকে দাঁড়ানো ছিল, কল্যাপসিবেল গেটে তালা লাগানো ছিল। সামিনা লুৎফা নিত্রা২০  আর আমি পুলিশের কাছে অনুরোধ করছিলাম আমাদের যেন ভিতরে ঢুকতে দেয়, আমরা অনশনরত শ্রমিকদের জন্য ঔষধ ও পানির বোতল নিয়ে গিয়েছিলাম, ওদের অনেকে ততক্ষণে ডি-হাইড্রেশানের শিকার কিন্তু পুলিশ উল্টো আমাদের দিকে তেড়ে আসে। ওরা আমাদেরকে ফ্যাক্টরি গেট থেকে সরাতে চাচ্ছিল। চারপাশে এমনিতেই বিশৃঙ্খল অবস্থা কিন্তু পুলিশ যখন আমাদের আক্রমণ করল তখন একেবারে তুলকালাম অবস্থা, আমার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লাম। নিত্রা আর আমি উল্টো দিকের গলিতে দৌড়ে পালালাম, পুলিশ ছুটে এসে আমাদের ঘিরে ধরল। আমাদের আলাদা আলাদা ভাবে মারধর করল। আমাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরল, ধাক্কা দিল, একজন মহিলা পুলিশ সজোরে থাপ্পড় মারল (সেই অবস্থার মধ্যেও আমার চোখে পড়ল যে উনি একজন পাহাড়ি নারী), কে জানি ব্যাটন দিয়ে আমাকে মারল, আমি পড়ে গেলাম, ওঠার চেষ্টা করলাম, শুনতে পেলাম ফারুক ওয়াসিফ চিৎকার করে বলছে, “উনি একজন লেখক, গবেষক, ওনাকে ছেড়ে দিন, থামুন।” কিছু আলোকচিত্রী আর ফারুক মিলে আমাকে উদ্ধার করল, আমি বেরিয়ে এসে দেখি নিত্রা দাঁড়িয়ে, ওর চশমা ভাঙ্গা। আমরা টিভি সাংবাদিকদের সাথে কথা বললাম, পুলিশ তখনও আমাদের চারপাশে গিজগিজ করছে, আমাদের ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে, নানাভাবে উত্যক্ত করে চলেছে। তারা চাচ্ছিল আমরা চলে যাই।

এ সময় মাসুম ভাই দৌড়ে এসে আমাকে বললেন পুলিশ শবনম ও কামরুলকে গ্রেপ্তার করেছে। আমি সাথে সাথে ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করলাম বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্ট বন্ধুদের খবরটা দিতে। নিত্রা, হায়দার, বিন্দু২১,  ব্রাত্য আমিন২২  আর আমি দৌড়ে রাস্তা পার হলাম। কিন্তু পুরো জায়গাটা এতটাই উত্তপ্ত ছিল, মনে হচ্ছিল যে কোনো মুহূর্তে যা কিছু ঘটে যেতে পারে, উপর থেকে শ্রমিকরা প্রায়-হুমড়ি খেয়ে নিচের কোলাহল দেখছিল, মোটরসাইকেলে মাস্তান বাহিনী, রায়ট পুলিশ চারপাশে, ফোনে অপর পক্ষ কি বলছে আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। অন্যমনষ্কভাবে আমি একটা ছোট্ট গলির ভিতরে ঢুকি, কি যে বোকার মতো কাজ করলাম!

হঠাৎ আকস্মিকভাবে কোত্থকে জানি উদয় হলো লীগের পেটোয়া বাহিনী। তারা আমাকে ঘিরে ধরে সবাই মিলে বেদম মারতে থাকে, বহু হাত, কিল, থাপ্পড়, ঘুষি, যে যা পারছে, কখনো মাথায়, কখনো চোয়ালে, খুব ভয়াবহ অবস্থা। ওরা ভেবেছিল আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুরে-সুরে চিৎকার করতে থাকল, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ্যা মাগী, যা বাসায় যা।” খুব জোরে আমাকে মাথায় আঘাত করল আর তখনি শুনতে পেলাম চিৎকার-চ্যাঁচামেচির উর্ধ্বে, সেই দুজন নারী মাস্তানের কণ্ঠস্বর, “আরে না, কোর্টপাড়ার বেশ্যা, মাইরা বেশ্যাগিরি ছুটায়ে দে।”

হঠাৎ আকস্মিকভাবে কোত্থকে জানি উদয় হলো লীগের পেটোয়া বাহিনী। তারা আমাকে ঘিরে ধরে সবাই মিলে বেদম মারতে থাকে, বহু হাত, কিল, থাপ্পড়, ঘুষি, যে যা পারছে, কখনো মাথায়, কখনো চোয়ালে, খুব ভয়াবহ অবস্থা। ওরা ভেবেছিল আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুরে-সুরে চিৎকার করতে থাকল, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ্যা মাগী, যা বাসায় যা।”

সংহতির বহিঃপ্রকাশ অনুমোদিত না। যাদের বিবেক আছে তাদের আক্রমণ করতে হবে। তাদের মেরে ভাগিয়ে দিতে হবে।

সংহতির দীর্ঘমেয়াদি বন্ধন আরো শঙ্কার: সায়দিয়া, অ্যাক্টিভিস্ট নৃবিজ্ঞানী দলের একজন২৩,  তিনজনার এই দল দেলোয়ারের গ্রেপ্তারের জন্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছে যাতে তাজরীন অগ্নিকান্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে কারাদন্ড-যোগ্য অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।২৪

আরাম-আয়েশের জীবন যাপন না করতে চাওয়াটাই শাসনব্যবস্থার প্রতি হুমকি, আর তাই সামাজিক ন্যায্যতার জন্য একজন লড়াকু নারীর লড়াইকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। শাসকশ্রেণীর পেয়াদারা দৌড়ে এগিয়ে আসে; নারীকে অসম্মান করার জন্য পিতৃতন্ত্রের চিরাচরিত মতাদর্শিক অস্ত্রের চাইতে ভালো অস্ত্র আর কি হতে পারে?

‘বেশ্যা!’

কি শক্তিশালী রূপক! কখনোবা প্রয়োগ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শহীদ মিনারে, কখনোবা তুবার বাইরে বৈশ্বিক পুঁজির সেবায়। আরো কত স্থানে, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীদের দ্বারা, যখনই তাদের স্বার্থ-হাসিলে বিঘ্ন ঘটে।

তুবা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির অনশনরত শ্রমিকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে  গিয়ে নৃবিজ্ঞানী সায়দিয়া গুলরুখ ফ্যাক্টরির বাইরে মহিলা পুলিশ দ্বারা মারধরের শিকার হ’ন। পিছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামনিা লুৎফা নিত্রা। ঢাকা, ৬ আগস্ট ২০১৪। ছবি: news21bd.com

টীকা:

 ১। কুরাতুল-আইন-তাহমিনা ও শিশির মোড়ল, বাংলাদেশে যৌনতা বিক্রি। জীবনের দামে কেনা জীবিকা, ঢাকা: সেড (সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড হিউমান ডেভেলপমেন্ট), ২০০০, পৃ. ১০১।

 ২। উপরোক্ত, পৃ. ১০৪।

 ৩। উপরোক্ত, একই পৃষ্ঠা।

 ৪। উপরোক্ত, পৃ. ১০৪-১০৫।

 ৫। উপরোক্ত, পৃ. ১০৫।

 ৬। উপরোক্ত, পৃ. ১০৬।

 ৭।  উপরোক্ত, একই পৃষ্ঠা।

 ৮। উপরোক্ত, পৃ. ১০৭।

 ৯।  উপরোক্ত, পৃ. ১০৮-১০৯।

১০। Walter Benjamin, “On the Concept of History,” in Walter Benjamin. Selected Writings, Vol. 4, 1938-1940, transl., by Edmund Jephcott and others, edited by Howard Eiland and Michael W. Jennings, Cambridge, Mass., : Harvard University Press, 1999,পৃ. ৩৯২।

১১। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশান (বিজিএমইএ) পোশাক রপ্তানী খাতের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন বলে পরিচিত, অন্য কথায়, এটি মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান, by all means fair and foul।

১২।”Tuba garment workers on strike on Eid day,” bdnews24.com, October 29, 2014

১৩।  আওয়ামী লীগের শ্রমিক ফ্রন্ট।

১৪। আওয়ামী লীগের যুব ফ্রন্ট।

১৫। আবুল বাশার মো. মুনিরুজ্জামান মাসুম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের ঢাকা মহানগর শাখা কমিটির সদস্য।

১৬। মোহাম্মদ আলী হায়দার, বটতলা নাট্যদলের পরিচালক।

১৭।  শবনম হাফিজ, সভাপতি, গার্মেন্ট শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন।

১৮। কামরুল হাসান, অ্যাক্টিভিস্ট ও ফিনানশিয়াল অ্যানালিস্ট।

১৯। ফারুক ওয়াসিফ, লেখক ও কলামিস্ট।

২০। সামিনা লুৎফা নিত্রা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নাট্যকার ও অভিনেত্রী।

২১। নাফিস বিন্দু, অ্যাক্টিভিস্ট।

২২। ব্রাত্য আমিন, ডকিউমেন্টারি ছবি নির্মাতা।

২৩। অ্যাক্টিভিস্ট নৃবিজ্ঞানী দলের অন্য দুজন সদস্য হচ্ছে নাজনীন শিফা আর মাহমুদুল সুমন। শিফা জওহারলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন; মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।

২৪। “Bangladeshi factory owner, out of jail, accused of more worker abuse,” aljazeera.com, August 21, 2014|

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

1 thought on “‘লেখক হওয়া’ ও শাসকদলের মাস্তানদের মারধর

Leave a Reply to ফারুক কাদের Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *