করোনা ভাইরাস উদ্ভূত সংকট মোকাবিলা ও নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য জরুরি করণীয়

করোনা ভাইরাস উদ্ভূত সংকট মোকাবিলা ও নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য জরুরি করণীয়

শিক্ষক, চিকিৎসক, গবেষক, লেখক, শিল্পী ও সংগঠকদের পক্ষ থেকে সুপারিশ মালা

অনলাইন সংবাদ সম্মেলন

২২ এপ্রিল ২০২০

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

শুভেচ্ছা নেবেন। আশা করি ভালো আছেন। করোনা বিপদকালে ঝুঁকি নিয়েও আপনারা যে দায়িত্ব পালন করছেন সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের কাজের কারণেই মানুষ জানতে পারছে তথ্য, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা দেশজুড়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। সেইসঙ্গে সারাদেশ জুড়ে যেসব সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ ক্ষুধার্ত মানুষকে অন্ন, অর্থ; অসুস্থ মানুষকে পরিচর্যা, আশ্রয়হীনকে আশ্রয় দিতে অবিরাম কাজ করছেন তাঁদের আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই । রাষ্ট্রের পর্বতপ্রমাণ দুর্বলতা ও অবহেলার মুখে এসব উদ্যোগের কারণেই অনেক মানুষ ভরসা পাচ্ছে। আরও কৃতজ্ঞতা জানাই যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই দুর্যোগের মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে নিজ পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন তাঁদের।

করোনা ভাইরাস কোভিট-১৯ এ সমগ্র বিশ্ব বিপর্যস্ত। বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। অন্যদিকে করোনা প্রতিরোধে গৃহীত নানা ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন। ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা, চিকিৎসাহীনতার ভয় ক্রমে বাড়ছে। সামনে আরও বিপদের ঘনঘটা।

আমরা লক্ষ্য করছি যে, যেসব দেশের সরকার এই ভাইরাস মোকাবিলায় ত্বড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, দেশের নাগরিকদের ন্যূনতম খাদ্য, আশ্রয়ের সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং যেসব দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দৃঢ় ভিত্তি আছে এই সংকট মোকাবিলায় তারাই সাফল্য দেখিয়েছে। এই তিনটি ক্ষেত্রেই দুর্বলতা, শৈথিল্য, অমনোযোগ ও যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকার অভাবে বাংলাদেশ অনেক বেশি হুমকির সম্মুখীন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা শিক্ষক,  চিকিৎসক,  গবেষক,  লেখক,  শিল্পী ও সংগঠকদের একটি দল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান,  মতবিনিময়,  দেশ-বিদেশের পরিস্থিতি  ও গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে,  সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে করণীয় বিষয়গুলো নির্ধারণ করে তা দেশের সর্বস্তরের মানুষ ও সরকারের কাছে উপস্থিত করছি।

করণীয় -১ কর্মহীন, স্বল্প আয়ের মানুষদের (মজুর, বেকার, ক্ষুদে ব্যবসায়ী) ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী, নগদ অর্থ ও ত্রাণ পৌঁছানো।

  • বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি পরিবার বর্তমানে ভয়াবহ খাদ্য সংকটে। এসব পরিবার প্রতি খাদ্য সামগ্রী (তিন মাস ধরে প্রতিমাসে ৫০০০ টাকার খাদ্যসামগ্রী) এবং নগদ অর্থ (প্রতিমাসে ৫০০০ টাকা ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ওষুধ কেনা বাবদ) সরবরাহ করতে হবে।
  • গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এদের তালিকা তৈরি করতে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের নির্দেশ দিতে হবে। অনিয়ম বা ভ্রান্তি রোধ করার জন্য তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
  • শহরে-উপশহরে আশ্রয়হীনদের বা ঘিঞ্জি অনিরাপদ স্থানে বাসরতদের প্রশস্ত আশ্রয়স্থল দিতে হবে। একাজে সরকারি ভবন, মিলনায়তন,  হোটেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তাদের নিয়মিত খাবারও সরবরাহ করতে হবে।
  • সারাদেশের প্রতি জেলা, উপজেলা,  ইউনিয়নে এবং ওয়ার্ডে কত তারিখের মধ্যে ত্রাণ দেয়া হবে সেটা এখন থেকেই জানিয়ে দিতে হবে। মাইকিং এবং মোবাইল বার্তাসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে।
  • ত্রাণ বা চিকিৎসা না পেয়ে কিংবা করোনা মোকাবেলায় কোন অনিয়ম দেখে কোন বিক্ষোভ সংগঠিত হলে বা অভুক্ত মানুষ ত্রাণ না পেয়ে কোন খাদ্যদ্রব্য কেড়ে নিলে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশী ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের অবস্থা সহানুভুতির সাথে বিবেচনা করতে হবে।
  • প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে একটি দল গঠন করে কারা ত্রাণ পাচ্ছেন না বলছেন তার তদারকি ও তালিকা তৈরি করতে দিতে হবে। প্রতিদিন সেই তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং যারা ত্রাণ পাচ্ছেন না তাদের তালিকা অনুযায়ী জেলা প্রশাসককে ১ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • পাহাড় ও সমতলের সংখ্যাগতভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, উর্দুভাষী, দলিত, চা শ্রমিক, বেদে, হরিজন, যৌনকর্মী, হিজড়া, প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য আলাদা করে সহায়তা স্কিম চালু করতে হবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ক্যাম্পগুলোতে আলাদা করে করোনার পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

করণীয় ২: সকল শিল্প ও প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারী,  পেশাজীবীদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে,  ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে,  ছুটিকালীন মজুরি দিতে হবে।

করণীয় ৩:  কোভিড-১৯ সহ সকল রোগের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্বতন্ত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে,  প্রতি জেলায় ল্যাব স্থাপন করে টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সকল ডাক্তার,  নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে,  পর্যাপ্ত ও মানসম্মত পিপিই প্রদান করতে হবে,  আবাসিক হোটেল,  গেস্ট হাউজগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। যে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • ইতোমধ্যেই এই মহামারী বাংলাদেশের ৪৪টি জেলায় ছড়িয়ে গেছে। সুতরাং মহামারী প্রতিরোধ এবং আক্রান্ত রোগীদের জরুরি চিকিৎসা উভয় ক্ষেত্রেই বিকেন্দ্রীকৃত পদ্ধতিতে যেতে হবে। অর্থাৎ শুধু বড় শহর বা কেন্দ্র নয় ছোট শহর, জেলা উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এই প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কার্যক্রম নিয়ে যেতে হবে। মাঠকর্মীদের যুক্ত করলে তাঁরা করোনা প্রতিরোধ এবং আক্রান্ত রোগীদের করণীয় সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে পারবেন। এছাড়া তাদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকা ও প্রান্তিক মানুষ পর্যন্ত রোগ বিস্তারের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হবে। তাদের এই কাজ সমন্বয় করতে হবে স্থানীয় স্বাস্থ্যবিভাগকে, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সহযোগিতায়। এ ব্যাপারে স্থানীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগণকে যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
  • করোনা সংক্রান্ত চিকিৎসাসেবা বিকেন্দ্রীকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল কমপক্ষে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত করোনা সনাক্তকরণের জন্য নমুনা সংগ্রহের বুথ রাখা এবং অবিরাম টেস্ট করতে জেলা পর্যায়ের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় করা। এতে দ্রুত আক্রান্তদের সনাক্ত করে আইসোলেশনে নিতে পারলে কার্যকরভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে। উপজেলা পর্যন্ত পর্যাপ্ত তদারকী ব্যবস্থা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে কমপক্ষে ৫০ বিছানার করোনা ওয়ার্ড করার ব্যবস্থা করতে হবে। এই ওয়ার্ডে গাইডলাইন অনুযায়ী পর্যাপ্ত ওষুধ ও অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হলে ওই এলাকার বেশিরভাগ করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে (যেসব রোগীদের ভেন্টিলেটর লাগবে বা অন্য জটিলতা রয়েছে তারা ছাড়া)। উপজেলা পর্যায়ের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকেও এই কার্যক্রমে যুক্ত করতে হবে। এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত দ্রুত সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারিক ও বাস্তবধর্মী প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
  • জেলা পর্যায়ে হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করার সামগ্রিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। এখানে কম পক্ষে ২০০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড এবং সকল অত্যাধুনিক সুবিধাসহ কমপক্ষে ১৫ শয্যার নিবিঢ় পরিচর্যা ইউনিট বা আইসিইউ স্থাপন করতে হবে। জেলা পর্যায়ের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকেও একইভাবে যুক্ত করতে হবে।
  • বিভাগীয় ও বড় শহরগুলোতে বিভিন্ন হাসপাতাল মিলিয়ে গড়ে সর্বমোট ৩০০০ শয্যার করোনা বিষয়ক হাসপাতাল এবং বিভিন্ন হাসপাতাল মিলিয়ে সকল অত্যাধুনিক সুবিধাসহ কমপক্ষে সর্বমোট ২০০ আইসিইউ শয্যা গড়ে তোলা দরকার। নিম্নপর্যায়ের হাসপাতাল থেকে উচ্চপর্যায়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা বা রেফারাল পদ্ধতি চালু করতে হবে।
  • বিকেন্দ্রীকৃত চিকিৎসা-পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো রাতারাতি গড়ে তোলার সমস্যা ভিন্নভাবে সমাধান করতে হবে। সরকারী অন্য বিভাগের অফিস বা ভবন, সাময়িকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনে জিমনেশিয়াম,  স্টেডিয়ামসহ বড় মাঠে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে। বিভিন্ন টারশিয়ারি হাসপাতালের চিকিৎসক,  নার্স,  টেকনিশিয়ান ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ডেপুটেশনে জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে পদায়ন করা যেতে পারে। এছাড়া যেখানে সম্ভব মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়েও এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। উচ্চতর পর্যায়ের মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদেরও একাজে যুক্ত করতে হবে।
  • শুধু চিকিৎসা ও প্রতিরোধ নয় আমাদের প্রয়োজন নিজস্ব গবেষণা। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে যে নির্দেশনা এসেছে তার বাইরে কিছু করার বা জানার চেষ্টা করা হয়নি। করোনা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান এবং যোগ্য বিজ্ঞানী আমাদের দেশে আছেন যাদের গবেষণার মাধ্যমে হয়ত এরোগের প্রতিকার ও প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হতে পারে। হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীদের উপর ক্লিনিক্যাল গবেষণা, ল্যাবরেটরিগুলোতে মাইক্রোবায়লজিক্যাল ও জনগোষ্ঠিতে এপিডেমিওলজিক্যাল গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল, পরিবেশও প্রণোদনা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের দিতে হবে।
  • সরকারি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিভাগ যথারীতি কঠোরভাবে আমলাতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখানে যে কোন উদ্যোগ ও বরাদ্দ আমলাতান্ত্রিক ও আইনগত জটিলতা এবং দুর্নীতির ফাঁদে পড়ে। জরুরি এরকম সময়ে এধরনের জটিলতা বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে। অতএব জরুরি ও সঙ্কটপূর্ণ রোগীর সেবার জন্য বরাদ্দ ও খরচের নিয়মগুলো যুদ্ধকালীন সময়ের মত করতে হবে যাতে কোন জরুরি ব্যয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়ে।
  • বর্তমানে এদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার একটি বড় অংশ প্রাইভেট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত পরীক্ষা এবং আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য এসব হাসপাতালের একাংশ সরকারের দায়িত্বে নিয়ে নিতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে হবে।
  • যথোপযুক্ত পিপিই সরবরাহের পর কোন হাসপাতাল কোন রোগীকে বিনা চিকিৎসায় যাতে না ফেরাতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। যেসব হাসপাতাল রোগীর সাথে এমন আচরণ করবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করার বিধান করতে হবে। চিকিৎসার জন্য করোনা রোগীর নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা প্রশাসনকে করতে হবে।
  • ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যথেষ্ট সংখ্যক এ্যাম্বুলেন্স সুলভ না থাকায় বহু রোগী হাসপাতালেই যেতে পারছেন না। এই সংকট সমাধানে বিভিন্ন বাহন অস্থায়ী এ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।
  • ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হচ্ছে। এর চিকিৎসা আলাদা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বচ্ছ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থাকতে হবে।
  • করোনা সংক্রমণের কারণে আমরা জানতে পারছি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাসাপাতালে ভেন্টিলেশন যন্ত্র অকার্যকর বা বিকল। অত্যন্ত নিম্নমানের সব যন্ত্রপাতি হাসপাতালকে গছিয়ে দিয়ে এইখাতে অবিশ্বাস্য পরিমাণ দুর্নীতি ও লুণ্ঠন করে স্বাস্থ্যখাতকে আজ বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এই সংকটের মধ্যেও ‘এন নাইন ফাইভ মাস্ক’ নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে, যা করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় যুক্ত চিকিৎসকদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবার সামিল। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির খতিয়ান নির্ণয়ে একটি পর্ষদ গঠন করতে হবে। এই খাতে যারা দুর্নীতির জন্য দায়ী, যাদের দুর্নীতি জনগণকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে,  তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য বিশেষ আদালত গড়ে তুলতে হবে।

করণীয় ৪ : সকল কৃষক ও খামারীর পণ্য বাজারজাতকরণ এবং যুক্তিসঙ্গত দামে বিক্রয় নিশ্চিত করতে হবে। সরাসরি কৃষক ও খামারি থেকে সরকারের খাদ্যপণ্য ক্রয়ের পরিধি বাড়াতে হবে। কৃষককে স্বল্পসুদে দেয় ঋণের পরিধি ও পরিমাণ বাড়াতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকার,  ব্যাংক ও এনজিও প্রদত্ত ঋণের সকল কিস্তি স্থগিত করতে হবে।

  • সরকার যে ২ কোটি পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী যোগান দেবে তা সরাসরি ক্রয় করতে হবে কৃষক ও খামারীদের (মাছ, মুরগী, গরু খামার) কাছ থেকে। এর মধ্যে চাল, ডাল, আলু, মাছ, দুধ, ডিম, সবজি থাকলে কৃষক ও খামারীদের বড় সংকটের সমাধান হবে।
  • কৃষিপণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে পাইকারি বাজারগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে  সীমিত সময়ের জন্য চালু রাখতে হবে। ক্ষেত থেকে সবজি বা অন্যান্য পচনশীল শস্য পাইকারি বাজার পর্যন্ত পরিবহন করার জন্য সময় ও সুযোগ দিতে হবে। প্রশাসনের কর্মীরা সরাসরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে নিবিড় তদারকি করবেন।
  • বাজারে অতিরিক্ত জনসমাগম ঠেকাতে এবং শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করতে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর ভিতরের খোলা মাঠগুলোকে বাজার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • প্রায় ৪৭-৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। হাওর অঞ্চলে বোরো মৌসুমে অন্য অঞ্চলের তুলনায় আগে ধান কাটতে হয়। এবারে এই সময়ে ২৫ দিনের জন্যে প্রায় ৬৬ হাজার শ্রমিকের ঘাটতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে এক অঞ্চলের শ্রমিক অন্য অঞ্চলে পরিবহনের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিবহণ (ট্রাক/বাস) ব্যবহার করতে হবে। ঠাসাঠাসি বা গাদাগাদি করে শ্রমিক পরিবহন করা যাবে না।
  • এবারে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা প্রায় ২কোটি টন। অথচ সরকার ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে ১৭ লাখ টন। সরকারি গুদামের ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় প্রশাসনিক তালিকা তৈরি করে বোরো মৌসুমের ধান কৃষকদের কাছেই রেখে দেয়া যেতে পারে। সরকার ধাপে ধাপে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকেই এই ধান-চাল কিনে নেবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব অডিটরিয়াম, কমিউনিটি সেন্টার এবং পতিত স্কুলঘর আছে সেগুলো স্বল্পকালের জন্য ধানের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রণোদনা আকারে টিন ও আনুষঙ্গিক উপকরণ বিনামূল্যে দিলে কৃষক নিজেই ছোট ছোট নতুন গুদামঘর তৈরি করে নিতে পারবে। প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে  পতিত জমিতে অস্থায়ী ধান গুদাম তৈরি করা সম্ভব।
  • দীর্ঘমেয়াদে সরকারি গুদামের সক্ষমতা ধাপে ধাপে বাড়াতে হবে। প্রতি জেলায় সরকারি গুদাম এবং সবধরনের পচনশীল সবজির জন্যে হিমাগারের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বোরো ওঠার পরপরই কৃষক পরবর্তী মৌসুমের ধান আবাদের প্রস্তুতি নিবে। সেই ক্ষেত্রে সরকারি সমর্থন বাড়াতে হবে। কমপক্ষে আগামী ১ বছর জমির লিজ মূল্য সরাসরি ভর্তুকি হিসাবে উৎপাদক কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। কৃষি উপকরণ ক্রয়ের জন্য সরাসরি উৎপাদক কৃষকের হাতে ভর্তুকি পৌঁছে দিতে হবে।
  • ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি কমপক্ষে আগামী ১ বছর বন্ধ রাখতে হবে।
  • সবগুলো বড় চালকল নিবিড় নজরদারির মধ্যে কাজে লাগাতে হবে। ছোট ছোট মিলগুলোকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সমর্থন দিয়ে সক্রিয় রাখতে হবে। এর মাধ্যমে স্থানীয় চালের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
  • সরকারি গুদামের চাল দুস্থদের মধ্যে বিতরণের পর সরকারি মজুদ কমে যাওয়ায় চাল ব্যবসায়ীরা যেন সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। বড় মিল মালিকদের সঙ্গে সরকারি দলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে, এই ধরণের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
  • দীর্ঘমেয়াদে কৃষির শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য ভূমি সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে।

করণীয় ৫: মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় অবাধ তথ্য প্রবাহ এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

  • করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তথ্যের অবাধ প্রবাহের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই তথ্যের অবাধ প্রবাহের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ বাতিল করতে হবে।
  • তথ্যের অবাধ প্রবাহ না থাকা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করাই গুজব সৃষ্টির পেছনে মূল জ্বালানি সরবরাহ করে। করোনা মোকাবেলায় তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের কার্যক্রমে সবরকম বাধা অপসারণ করতে হবে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। চাহিবামাত্র করোনা বিষয়ক যেকোন তথ্য দিতে সরকার বাধ্য এটা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করতে হবে।
  • দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে যেকোন মানুষের করোনা বিষয়ক যেকোন সমস্যা (ত্রাণ, চিকিৎসা না পাওয়া,  হয়রানি ইত্যাদি) নির্ভয়ে তুলে ধরার জন্য অবিলম্বে একটি উন্মুক্ত সরকারি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। উক্ত ওয়েবসাইটে জেলা,  উপজেলা,  ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মানুষের দেয়া করোনা বিষয়ক সমস্যা বিষয়ক তথ্যগুলো দেখা যাবে। সরকার এসব তথ্য যাচাই করে দ্রুত ব্যবস্থা নিবে।
  • করোনা পরিস্থিতির কারণে দুর্গত মানুষের ওপর হয়রানি/ নির্যাতন/ অসম্মানজনক আচরণ বন্ধ করতে হবে।
  • সকল প্রকার গুম, হেফাজতে নির্যাতন, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ করতে হবে।
  • করোনা মোকাবেলা বিষয়ক ইস্যু নিয়ে ফেসবুকে বা অনলাইনে প্রকাশিত সমালোচনার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না। বরং সমালোচনা করলে তা গুরুত্ব দিয়ে সেই তথ্যের অনুসন্ধান করে তা সমাধান করতে হবে। ইতিমধ্যে স্রেফ করোনা নিয়ে সরকারকে সমালোচনার জন্য যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
  • পাহাড়ে-সমতলে সকাল প্রকার জাতিগত, সম্প্রদায়গত নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
  • কোন এলাকায় ত্রাণ নিয়ে কোন বিক্ষোভ হলে/ ত্রাণ চুরির খবর পাওয়া গেলে ১ দিনের মধ্যে ওই এলাকার সংসদ সদস্যকে ফেসবুক লাইভে এসে জবাবদিহি করতে বাধ্য করার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • করোনার কারণে বা যে বা যারা ক্ষুধার কারণে আত্মহত্যা করেছেন তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। তাদের পরিবারের অন্তত একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। ডাক্তার, নার্স,  স্বাস্থ্যকর্মী,  পুলিশ,  র‌্যাব,  আনসার,  সেনাসদস্য,  ব্যাংকার,  সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি,  স্বেচ্ছাসেবী,  পরিবহণ শ্রমিক যে কেউ করোনা মোকাবিলায় দায়িত্বপালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে নিহত হলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
  • করোনার মধ্যেও যেসব নারী ও শিশু নির্যাতন ও গৃহ-অভ্যন্তরীণ সহিংসতার খবর আসছে সে বিষয়ে যথাযথ শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

করণীয় ৬ : দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে,  বাজারে খাদ্যদ্রব্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। মজুতদার,  চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে,  ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলতে হবে। সারাদেশের চালচোর,  ত্রাণচোরদের কঠোরহস্তে দমন করতে হবে। 

করণীয় ৭ : জাতীয় সক্ষমতা বিকাশে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও গবেষণা বাড়াতে হবে।

করোনার সংক্রমণের কালেই, বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণ এবং ভবিষ্যতের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষমতার জন্য দেশকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় জনসম্পদ (বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ) তৈরি করা,  যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য রসদের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং তহবিল বরাদ্দ করতে হবে। এই জন্য স্বায়ত্ত্বশাসিত একটি জাতীয় পর্ষদ গড়ে তোলা প্রয়োজন,  যারা আমলাতন্ত্রের প্রভাব মুক্ত থেকে সত্যিকারের একটি জনস্বাস্থ্যনীতি গ্রহণ ও গবেষণার প্রস্তুতির কাঠামো প্রণয়ন করতে পারবে।

অপ্রতুল প্রস্তুতির পাশাপাশি এমনকি যেটুকু দক্ষ জনশক্তি এইক্ষেত্রে তৈরি আছে,  সেটাকেও যোগ্য পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির অভাবে আদৌ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় টেস্ট কিট তৈরিতে তাদের সামর্থ্যের কথা জানিয়েছে। প্রবাসে অত্যন্ত খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করে বলেছেন,  বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজে বায়োটেকনোলজি,  মাইক্রোবায়োলজি,  জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির স্নাতকদের অধ্যাপনা ও গবেষণার সুযোগ দেয়া হয় না। এটা গবেষণা ও চিকিৎসার সমন্বয় ঘটাতে গুরুতর একটা বাধা;  একদিকে এটা সমাজে ইতিমধ্যে তৈরি হওয়া জ্ঞানকে চিকিৎসায় প্রয়োগ করাকে বিলম্বিত করে, অন্যদিকে মেডিকেল কলেজগুলোর ইতিমধ্যে তৈরি হওয়া বিপুল অবকাঠামোগুলোকে গবেষণায় ব্যবহার করে নতুন জ্ঞান নির্মাণকে রুদ্ধ করে। আথচ প্রতিবছর দেশে শত শত শিক্ষার্থী একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হচ্ছেন এই সব বিভাগ ও অনুষদ থেকে। আমরা তাই দাবি করছি,

  • গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত খাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য একটি পর্ষদ গঠন করতে হবে যার স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা থাকবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করতে হবে। তৈরি হওয়া জনসম্পদকে সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ কাজে লাগাবার বন্দোবস্ত করতে হবে।
  • গ্রামীণ ও দরিদ্রতর জনগোষ্ঠী প্রতিবছর যে সকল স্থানীয় সংক্রামক ব্যধিতে আক্রান্ত হন, সেগুলো বিষয়ে গবেষণা জোরদার করতে হবে।
  • সকল সুরক্ষা সরঞ্জাম ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি দেশে তৈরি করার বন্দোবস্ত করতে হবে।
  • দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালগুলোর সাথে গবেষণা ও জ্ঞানের লেনদেনের যোগসূত্র তৈরি করতে হবে। যাতে পারস্পরিক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের মাধ্যমে দুর্যোগকালীন সময়ে তারা নেতৃত্ব প্রদান করতে পারে।
  • শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

করণীয় ৮ : দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়ন দর্শনে মৌলিক পরিবর্তন আনা অপরিহার্য। জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মুনাফামুখী তৎপরতা,  জৌলুস, ভবন,  ব্যক্তিগত গাড়ি ও ভোগবিলাসকে উন্নয়ন হিসাবে দেখা যাবে না। জনগণের জীবন ও নিরাপত্তাকেই উন্নয়নের প্রধান শর্ত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে করণীয়:

  • সুন্দরবনসহ প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী সকল কয়লা প্রকল্প এবং পারমাণবিক প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করে জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত পরিবেশবান্ধব, সুলভ, স্বনির্ভর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর প্রকল্প বাতিল করে তার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ জরুরি ত্রাণ, চিকিৎসা ও জাতীয় সক্ষমতা বিকাশে ব্যয় করতে হবে।
  • দেশের সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে ব্যক্তি ব্যবসা মুনাফামুখী অন্ধত্ব থেকে মুক্ত করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এই খাতে জিডিপির কমপক্ষে ৬ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা এবং স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণাকে গুরুত্ব প্রদান। চিকিৎসক, নার্স,  স্বাস্থ্যকর্মী,  চিকিৎসা গবেষকদের জন্য বিশেষ বেতন স্কেল তৈরি করা যাতে তাদের আয়ের অন্য উৎস খুঁজতে না হয়।
  • পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী সকল তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় নদী দূষণ-দখল বন্ধ, ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। যেসব কারখানা ইটিপি ব্যবহারে শৈথিল্য বা প্রতারণা করে তাদের লাইসেন্স বাতিল। পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অদিধপ্তরে জনবল বাড়িয়ে স্বাধীন ও ক্ষমতাসম্পন্ন করা।
  • কৃষি ও পাটসহ কৃষিজ শিল্পের প্রতি প্রধান গুরুত্ব প্রদান।
  • সকল নাগরিকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় নিশ্চিত করা; সকল নাগরিকের বেঁচে থাকার ন্যূনতম সামগ্রী যোগান রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ।

ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছাসহ, 

আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ডা. মনিরুল ইসলাম, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও লেখক। মোহাম্মদ তানজীম উদ্দীন খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মোশাহিদা সুলতানা, একাউন্টিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মাহা মির্জা, গবেষক। ফিরোজ আহমদ, প্রাবন্ধিক, সংগঠক। মাহতাব উদ্দিন আহমদ, প্রাবন্ধিক, সংগঠক। মিজানুর রহমান, সর্বজন আন্দোলন সংগঠক। সামিনা লুৎফা নিত্রা,  সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সায়েমা খাতুন, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকৌশলী অনুপম সৈকত শান্ত, লেখক ও গবেষক। বীথি ঘোষ, শিল্পী ও লেখক। চৌধুরী মুফাদ আহমদ,  লেখক।

এই সুপারিশমালার প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়েছেন :

প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, লেখক,  গবেষক। খুশি কবির, সমাজ সংগঠক। স্বাগতম চাকমা, পাঠাগার সংগঠক, শরৎ স্মৃতি পাঠাগার, খাগড়াছড়ি সদর। অমল আকাশ, লেখক, শিল্পী ও সংগঠক। রেহনুমা আহমেদ, লেখক। অরূপ রাহী, সঙ্গীতশিল্পী, গবেষক। মেঘনা গুহঠাকুরতা, গবেষক। গীতি আরা নাসরীন, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নাসরিন খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। রোজীনা বেগম, গবেষক, দৃক। মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দীপক সুমন, নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা। মাইদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।  গোলাম মোর্তোজা, সাংবাদিক। ওমর তারেক চৌধুরী, লেখক-অনুবাদক। মাহমুদুল সুমন্, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তানভির মুরাদ, শিক্ষক, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট। আজফার হোসেন, অধ্যাপক, গ্রান্ডভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটি, মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র। ঋতু সাত্তার, আর্টিস্ট। কাজী শাহরিয়ার পারভেজ, ফ্রিল্যান্সার। সৌভিক রেজা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রুহি নাজ, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। সুস্মিতা পৃথা, সাংবাদিক ও গবেষক। খাদিজা মিতু, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। তানজিম ওয়াহাব, কিউরেটর। নাফিসা তানজিম, সহকারী অধ্যাপক, গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড উইমেন, জেন্ডার, সেক্সুয়ালিটি স্টাডিজ, লেযলি ইউনিভার্সিটি, যুক্ত্রারাষ্ট্র। শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এ এল আর ডি। সাদাফ নূর, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আতিয়া ফেরদৌসী, পিএইচডি শিক্ষার্থী, মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউএস। সায়দিয়া গুলরুখ, গবেষক ও সাংবাদিক।পারসা সানজানা সাজিদ, শিক্ষক, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি। শহীদুল আলম, আলোকচিত্রী, লেখক, মানবাধিকারকর্মী। মোঃ মেহেদী হাসান তুষার, ফ্রিল্যান্সার। নুসরাত চৌধুরী, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞানী। ফারহা তানজিম তিতিল, শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। রুশাদ ফরিদি,  শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ইফতেখারুজ্জামান, পরিচালক, টি আই বি। ইলোরা হালিম চৌধুরি, অধ্যাপক, উইমেন, জেন্ডার ও সেক্সুয়ালিটি স্টাডিজ বিভাগ, ইউনাভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস, বোস্টন, যুক্তরাষ্ট্র। জান্নাতুল মাওয়া, আলোকচিত্রী। হান্না শামস, গবেষক, অধিকারকর্মী। নাজনীন শিফা, গবেষক। কবিতা চাকমা, স্থপতি।

Social Share
  •  
  •  
  • 249
  •  
  •  
  •  
  •  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *