সর্বজনকথা প্রসঙ্গে

অন্যান্য
আমাদের ইচ্ছা একটি ত্রৈমাসিক বাংলা পত্রিকা হিসাবে “সর্বজনকথা” প্রকাশ করা। আপাতত আমরা এটি প্রকাশ করছি অনিয়মিত সংকলন হিসেবে। এই পত্রিকায় সমসাময়িক ঘটনাবলীর পর্যালোচনা, বৈশ্বিক ও দেশীয় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক বিষয়ের বিশ্লেষণ ছাড়াও থাকবে মাঠপর্যায়ে গবেষণাভিত্তিক লেখা, সাহিত্য, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র পর্যালোচনা ও গুরত্বপূর্ণ অন্যভাষী লেখার অনুবাদ। মানুষ ও প্রকৃতি সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ই আমাদের মনোযোগের অন্তর্ভুক্ত। ‘সর্বজন’ শব্দটি বাংলাদেশে খুব প্রচলিত নয়। ২০১১ সালে বর্তমান ‘সর্বজনকথা’র সম্পাদক প্রচলিত ‘পাবলিক’ শব্দের বাংলা হিসেবে ‘সর্বজন’ ব্যবহারের প্রস্তাব করে বলেন, ‘এই পরিচয় পরিষ্কার করা শুধু শব্দের ব্যাপার নয়, নিজের সম্পদকে নিজে চিহ্নিত করে তার মালিকানা নিশ্চিত করায় সর্বজনের সক্রিয়তার জন্যই তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সর্বজনের বিশ্ববিদ্যালয়ই শুধু নয়, সর্বজনের চিকিৎসা, পানি, খনিজ সম্পদসহ সর্বজনের সবই এখন দখলদারদের থাবার নিচে। এই থাবা মোকাবিলা তাই আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।’
সর্বজনকথা এই অস্তিত্বের লড়াইএ শরীক হতে চায়। আমাদের অবস্থান মানুষ ও প্রাণ-প্রকৃতির পক্ষে, অতএব সবরকম নিপীড়ন, বৈষম্য ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে। আমরা এখন এক দানবীয় বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি। এই ব্যবস্থা টিকে আছে একদিকে সশস্ত্র বলপ্রয়োগের সম্প্রসারণশীল ব্যবস্থা এবং অন্যদিকে এর পক্ষে সমাজে সম্মতি সৃষ্টির জন্য সামগ্রিক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। মানুষের মনোজগতে পুঁজির সীমাহীন লোভী আগ্রাসনকে ‘উন্নয়ন’, দখল লুন্ঠনের উপযোগী ব্যবস্থাকে ‘গণতন্ত্র’, সাম্রাজ্যবাদী শৃঙ্খলকে ‘মুক্তি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়োজিত আছে বিশ্বের শক্তিশালী সব প্রচার মাধ্যম, বিশ্বব্যাংকসহ সর্বগ্রাসী ‘উন্নয়ন’ প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও গবেষণার বহু আয়োজন। বাংলাদেশ এই বিশ্বব্যবস্থারই অংশ। এসবের বিরুদ্ধে, শ্রেণীগত-লিঙ্গীয়-বর্ণগত-ধর্মীয় বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই কখনো থামে নি। এই লড়াই যেমন বলপ্রয়োগের ব্যবস্থার মুখোমুখি দাঁড়ায়, তেমনি দাঁড়াতে হয় বুদ্ধিবৃত্তিক মোকাবিলায়। দুইএর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সর্বজনকথা বিশ্বজুড়ে সবরকম বৈষম্য নিপীড়ন ও আধিপত্য বিরোধী এই বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইএর অংশ হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী। আমরা চাই বৈষম্য ও নিপীড়ন বিরোধী জ্ঞানচর্চাকে কেন্দ্রে রেখে প্রাসঙ্গিক গবেষণাধর্মী ও বিশ্লেষনধর্মী লেখা সর্বজনের কাছে পৌঁছে দিতে। বর্তমানকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ নানা প্রযুক্তির ব্যবহার তরুন পাঠক ও লেখকদের মধ্যে সাম্প্রতিক বিষয়গুলোকে নিয়ে নতুন মাত্রায় আগ্রহ তৈরী করেছে। কিন্তু তা স্বত্তেও আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও বিতরণে কর্পোরেট আধিপত্য চিন্তা ও তথ্যকাঠামোর ওপর এক কঠিন আবরণ দিয়ে রাখে । এই আধিপত্য থেকে চিন্তা ও জ্ঞানচর্চাকে মুক্ত করতে নতুন গবেষনা, পর্যালোচনা ও চিন্তার বিস্তার ঘটাতে হবে। সর্বজনকথা এই কাজে সর্বোচ্চ শ্রম প্রদান করবে। সর্বজনকথা কোন বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর করবে না। আমরা সর্বজনের সমর্থন নিয়েই অগ্রসর হবো। আমাদের আশা এই পত্রিকা ধারণ করতে পারবে সর্বজনের জীবন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও সমাজ রূপান্তরের লড়াই নিয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও চিন্তা। ঐতিহাসিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে পাঠকের সামনে নতুন চিন্তার দুয়ার উন্মুক্ত করতে সক্ষম, তেমন বিষয়ে লেখা প্রকাশে আমরা সবসময়ই আগ্রহী থাকবো। সেজন্য মতভেদ, বিতর্ক আমরা স্বাগত জানাই।
Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

2 thoughts on “সর্বজনকথা প্রসঙ্গে

  1. আপনাদের অফিস কোথায়। দেখা করা যাবে কি। সময় কখন।
    আমি শিল্প জগতে প্রায় ৩০ বছর বিচরন করেছি।
    তাই আগ্রহ প্রকাশ করছি।

    1. আমাদের কোন স্থায়ী অফিস নেই। সম্পাদকীয় যোগাযোগের ঠিকানা: কক্ষ নং ২০৫২, কলাভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মোবাইল: ০১৮৮২৪৩৪৬৬৮। ইমেইল: sarbojonkotha@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *