জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও পাশের গ্রামবাসী: সংঘাত কাদের এবং কেন?

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে এবং তার পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থী ও পাশের গ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘাত হয়। এর পেছনে কী কারণ? কারা আসলে এর সাথে জড়িত? এটা কি আকস্মিক না দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব-বিরোধের ফলাফল? চাঁদাবাজি, মাদকসহ নানা ব্যবসার সাথে এর সম্পর্ক কী? সমাধান কোথায়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সরেজমিন অনুসন্ধান করে লিখেছেন মেহেদী হাসান

চাঁদাবাজি এবং মাদক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে গেরুয়াবাসী দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে।বিভিন্ন সময়ে ছোট-বড় লড়াই-সংঘাত  হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংঘাত বড় আকারের রূপ ধারণ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে মূল ইস্যু- চাঁদাবাজি এবং মাদক বাণিজ্য বন্ধ না হলে এই লড়াই চলতে থাকবে। কিন্তু, এখন লড়াইয়ের গতিমুখ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল  দাবী,’বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল খুলে দেওয়া’র পরিবর্তে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ ‘সীমানা’ দেওয়াল তৈরী করে দেওয়া’র দাবী জানাচ্ছে। এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকেও কেউ কেউ এই দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ঠিকাদারী ব্যবসার সাথে জড়িত। এলাকাবাসীর মধ্যে এই ইস্যুর প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চলছে। তবে স্থানীয় অধিকাংশ অধিবাসীদের কথা,“ছেলেপুলেরা চাইছে চান্দাবাজি আর ইয়াবা বন্ধ হউক। অথচ কেউ কেউ বলছে; দেওয়াল তোলা, রাস্তা বানানোর কথা। দেওয়াল তুলে দিলেই কী চান্দাবাজি বন্ধ হবে? আর আমাদের তো সাভার যাওয়ার অনেক রাস্তা আছে। নতুন করে বড় রাস্তা বানানোর দরকার কী? তার মানে কী? ঠিকাদারদের জন্য রাস্তা বানানোর দাবী কী আমরা করছি? নেতা-কর্মীদের ভাগ বাড়বে,আমাদের তাতে ফায়দা কী?”

(more…)
Social Share
  •  
  •  
  • 350
  •  
  •  
  •  
  •  

আখচাষ ও রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিশিল্প: সংকট কেনো?

পুন:প্রকাশ
মোশাহিদা সুলতানা ও কল্লোল মোস্তফা

যথেষ্ট সম্ভাবনাময় হলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠান ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আখচাষিদের জীবন-জীবিকা দীর্ঘদিন ধরেই গভীর সংকটে নিমজ্জিত। উৎপাদিত চিনি অবিক্রীত পড়ে থাকে গুদামে, চিনির উৎপাদন খরচ চিনির বাজারমূল্যের দ্বিগুণেরও বেশি। বেসরকারিভাবে আমদানীকৃত চিনির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না রাষ্ট্রায়াত্ব চিনিকলগুলো। চিনিকলের শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন পান না, দিনে দিনে কমে যাচ্ছে আখ চাষ। চিনিশিল্পের এই সংকটের কার্যকারণ ও তার সমাধানের উপায় অন্বেষণ করতে গিয়ে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এই প্রবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয় সর্বজনকথা, ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংখ্যায়। সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত এইসব সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ না নেয়ার কারণে সাম্প্রতিক কালে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্প ও আখ চাষের সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। আর এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর মতো রাষ্ট্রায়াত্ব চিনিকলগুলোও বন্ধ করার পায়তারা চলছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সর্বশেষ সংবাদ অনুসারে, সরকার দীর্ঘদিন ধরে অর্থসংকটে ভুগতে থাকা চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনকে অর্থ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে যার ফলে চলতি মৌসুমে নিবন্ধিত আখচাষিদের সার, কীটনাশক ও সেচের জন্য ঋণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসছে মৌসুমে আখ উৎপাদন আরো কমে যেতে পারে যার ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্পের লোকসান ও সংকটের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিশিল্প ও আখ চাষের সংকট ও তার সমাধানের উপায় নিয়ে সর্বজনকথা, ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত লেখাটি পুন:প্রকাশ করা হলো।

ঠাকুরগাঁও চিনিকলের একটি অংশের দৃশ্য, ছবি: উইকিপিডিয়া

১. ভূমিকা

দীর্ঘদিন ধরে গভীর সংকটে নিমজ্জিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠান ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আখচাষিদের জীবন-জীবিকা। রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলোর উৎপাদিত চিনি অবিক্রীত পড়ে আছে গুদামে। এসব কারখানায় চিনির উৎপাদন খরচ চিনির বাজারমূল্যের দ্বিগুণেরও বেশি। লোকসান দিয়ে বিক্রি করা হলেও বেসরকারিভাবে আমদানীকৃত চিনির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না এই চিনি। ফলে চিনিকলের শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন পান না, প্রায়ই বেতনের বদলে চিনি প্রদান করা হয় তাদের। আখচাষিরা আর চিনিকলগুলোতে আখ সরবরাহ করতে চান না, দিনে দিনে কমে যাচ্ছে আখ চাষ। চিনিকলের কাছে আখ বিক্রি করে পাওনা আদায়ের জন্য মাসের পর মাস ঘুরতে হয় তাদের। এদিকে পর্যাপ্ত আখ না পাওয়ায় চিনিকলের যন্ত্রপাতি ও শ্রমশক্তিবছরের বেশিরভাগ সময় অব্যবহৃত থাকে এবং আখ থেকে চিনি উৎপাদনের খরচ বাড়তে থাকে। চিনি খাতের এই সংকট নিরসনে ২০১৫ সালের শেষের দিকে এসে সরকার কিছু বাজার নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দুই দফায় নতুন করে আমদানির ওপর সংরক্ষণমূলক শুল্ক আরোপ এবং ভ্যাট আরোপ। যুক্তি হচ্ছে, শুল্ক আরোপ করে বেসরকারি আমদানি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও পিছিয়ে থাকা রাষ্ট্রীয় খাতকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। এই বাজার নিয়ন্ত্রণ নীতি আসলে এই চিনিশিল্পকে রক্ষা করে টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে কি না-এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে আমরা চিনিশিল্পের সংকটের কার্যকারণ ও তার সমাধানের উপায় অন্বেষণ শুরু করি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও মাঠপর্যায়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই প্রবন্ধে চিনিশিল্পের সংকট ও সমাধানের বিবিধ উপায় অন্বেষণ করা হয়েছে।

(more…)
Social Share
  •  
  •  
  • 350
  •  
  •  
  •  
  •  

ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা

আনু মুহাম্মদ

লেখাটি ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লিখিত, তখনও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন চলছিল, লেখাটি তা নিয়েই। এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সংস্কৃৃতিতে, সেই বছরের অক্টোবরে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা-র প্রকাশনা ইস্পাত এটি পুনর্মুদ্রণ করে ২০১১ সালের আগস্ট মাসে।  সম্প্রতি দেশজুড়ে যখন ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা বিরোধী আন্দোলন বিস্তৃত হচ্ছে তখন, ২২ বছর পর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনকে ‘চক্রান্ত’ বলে, ধর্ষক হিসেবে অভিযুক্ত প্রধান অপরাধীকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে যে প্রচারণা শুরু হয়েছে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। হয়তো কয়বছর পর এই সময়ের ধর্ষকদেরও পাক ছাফ বলে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।   ইতিহাসকে স্মরণে আনা, সেই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বোঝা এবং মিথ্যা প্রচারণার বিপরীতে সঠিক তথ্য উপস্থিত করার জন্য সেইসময়ের এই লেখাটা আগ্রহীদের জন্য প্রাসঙ্গিক হবে বলে আবারও প্রকাশ করা হচ্ছে। সেই সময়ের ঘটনাবলী বোঝার জন্য সহজ তথ্যসূত্র ১৯৯৯ সালে অশুচি প্রকাশিত ধর্ষণ বিরোধী ছাত্রী আন্দোলন, যা তৎকালীন সকল খবর, লেখা, বিতর্ক সংকলন করেছিলো।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন, ছবি: আবীর আব্দুল্লাহ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২০ আগষ্ট থেকে মাসাধিককাল ধরে ছাত্রী ধর্ষণ বিরোধী যে আন্দোলন চলছে তার প্রতি মনোযোগ প্রদান ও তার পর্যালোচনা কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণঃ

১. এই প্রথম দেশে কোন প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ বিরোধী একটানা এই রকম আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে। যে আন্দোলন ধর্ষণের মত ধামাচাপা দেওয়া অপরাধকে সবার সামনে উপস্থিত করছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন এবং যৌন নিপীড়ন বিরোধী অবস্থান গ্রহণের প্রশ্নটিও সামনে আসছে।

২. ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের বিশেষত ছাত্রীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ঘটেছে।

৩. এই আন্দোলন সরকারি ছাত্র সংগঠন ও সেই সূত্রে শাসক রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের সামগ্রিক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেই গড়ে উঠেছে যখন এর বিরুদ্ধে অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

(more…)
Social Share
  •  
  •  
  • 350
  •  
  •  
  •  
  •  

বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল: আক্রান্ত শ্রমিকদের কথা

রুহুল আমিন

সর্বজনকথা আগষ্ট-অক্টোবর ২০২০ সংখ্যা পূর্ণরূপে প্রকাশিত হবে আগামী ১ আগষ্ট। বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা এখন থেকে কোনো কোনো লেখা আগাম প্রকাশ করবো। সম্প্রতি সরকার যেভাবে এতোগুলি পাটকল বন্ধ করেছে তার কারণ, পরিণতি, করণীয়, লাভক্ষতি নানাদিক থেকে বিশ্লেষণ করা দরকার। সেই গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা এই লেখা আগাম প্রকাশ করছি।– সম্পাদক

ছবি: যুগান্তর

“২৫ টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ”- খুব ছোট্ট এ বাক্যের গভীরতা ও বিস্তৃতি যে কত ব্যাপক, তা সেদিন যারা ২ জুলাই মিলগেটে বা মিল এলাকায় ছিলেন তারা জানেন। রাত ৯টা থেকে ১০ টার মধ্যে যখন প্রতিটি মিলগেটে নোটিশ লাগিয়ে  গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখনকার শ্রমিকদের কান্নার দৃশ্য না দেখলে এর গভীরতা বোঝা দুষ্কর।

(more…)
Social Share
  •  
  •  
  • 350
  •  
  •  
  •  
  •