মাত্রাতিরিক্ত বাড়িভাড়ায় বিপর্যস্ত শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষ

মাত্রাতিরিক্ত বাড়িভাড়ায় বিপর্যস্ত শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষ

শহীদুল ইসলাম সবুজ

অত্যধিক বাড়িভাড়া নিয়ে অভিযোগ ঢাকায় বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষসহ নিম্নবিত্ত মানুষের। অধিকাংশ শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষেরই আয়ের সিংহভাগ চলে যায় বাসাভাড়ায়। বাসাভাড়া পরিশোধের পর অধিকাংশ পরিবারেরই অন্যান্য মৌলিক চাহিদা, যেমন: অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার জোগান দিতে ধার-দেনা করতে হয় নতুবা ব্যয় সংকোচন করতে হয়। অধিকাংশই শিশুসন্তানের প্রয়োজনীয় শিশুখাদ্যের জোগান দিতে পারেন না। তাদের স্কুল গমনেচ্ছু সন্তানদের লেখাপড়া করানোর সামর্থ্য থেকেও বঞ্চিত থাকতে হয়। প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়ের চাহিদাও পূরণ হয় না অধিকাংশ শ্রমজীবী পরিবারের। তারপরও প্রতিবছর জানুয়ারিতে নতুন বছরে বা জুন মাসে বাজেট পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাসাভাড়া বেড়ে যায়। সম্প্রতি সর্বজনকথার পক্ষ থেকে রাজধানীর উপকণ্ঠের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী শ্রমজীবী ও নিম্নমধ্যবিত্ত ভাড়াটিয়া পরিবারগুলোর সঙ্গে আলাপ করে যা জানা গেছে তার বিস্তারিত নীচে বর্ণিত হলো।

লাকি আক্তার (গার্মেন্টকর্মী)

লাকি আক্তার থাকেন জুরাইন এলাকার একটি বাড়িতে। ১০ মিনিট টানা বৃষ্টি হলে তাদের বাসা পানিতে তলিয়ে যায়। আর বেশিক্ষণ বৃষ্টি হলে পুরো এলাকা পানির নিচে চলে যায়। ২/৩ দিনেও পানি আর নামে না। ছোট ২টি কক্ষ তাদের। একটি ১০ ফুট বাই ৮ ফুট, অপরটি ৭ ফুট বাই ৭ ফুট। বড় কক্ষটিতে একটি খাট ও একটি খানাডুলি রেখেছেন। অপরটিতে শুধু একটি সিঙ্গেল খাট ও আলনা রাখতে পেরেছেন। খাট, আলনা, খানাডুলি-সব কটির নিচেই তিনটি করে ইট দিয়ে উঁচু করে দেওয়া হয়েছে, যাতে পানিতে সবকিছু ভিজে নষ্ট হয়ে না যায়। যখন বৃষ্টি আসে তখন প্রতিটি দিনই তাদের পানিতে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। গ্যাসের চুলা থাকলেও তাতে গ্যাস থাকে খুব কম সময়ের জন্য। তাই লাকড়ি দিয়েই অনেক সময় রান্না করতে হয় বলে জানান লাকি আক্তার।

প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল বাদে ভাড়া দেন ৫৫০০ টাকা। বিদ্যুৎ বিল হয় প্রতিমাসে এক হাজার টাকার বেশি বা কম। মা, ছেলে, ছেলের বউ ও এক নাতি নিয়ে তাদের সংসার। ছোট্ট কক্ষটিতে থাকেন লাকির শ্বশুর-শাশুড়ি। বড় কক্ষটিতে খাটে ঘুমান লাকির ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি। খাটের পাশে, নিচে ফ্লোরে যতটুকু জায়গা, রাতের খাবার শেষে সেখানেই বিছানা হয় লাকি ও তার স্বামীর।

মা ও ছেলে দুজনেই চাকরি করেন। মা একটি লোকাল গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করেন। যেখানে নিয়মিত কাজ থাকে না। আর কাজ না থাকলে বেতনও পান না। গড়ে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকার একটু বেশি পান। ছেলে তুহিন একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বেতন পান সাড়ে নয় হাজার টাকা। মা-ছেলে দুজনের বেতন সাকুল্যে ১৫ হাজার টাকা। একটি শিশুসহ চারজনের পরিবারে ঘরভাড়া পরিশোধের পর যা থাকে, তাতে তাদের অর্ধমাসের ভরণপোষণও হয় না। বাধ্য হয়েই প্রতিমাসে ধারদেনা করে চলে তাদের সংসার।

শিশুখাদ্যের জোগান দেওয়া তাদের জন্য প্রায় দুঃস্বপ্ন। তাদের পরিবারে আরও একটি শিশু ছিল। ঘরের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে অসুস্থ হয়ে, বিনা চিকিৎসায় সেই শিশুটি গত মাসের (মে, ২০২১) ২৬ তারিখে মারা যায়। বাসা পরিবর্তন করে ভালো পরিবেশের বাসায় যাওয়া হয় না শুধু অর্থাভাবেই। লাকি বলেন, বাসাভাড়া যদি একটু কম হতো, তাহলে অন্তত বাচ্চা দুটিকে তারা বাঁচিয়ে রাখতে পারতেন।

শিশুখাদ্যের জোগান দেওয়া তাদের জন্য প্রায় দুঃস্বপ্ন। তাদের পরিবারে আরও একটি শিশু ছিল। ঘরের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে অসুস্থ হয়ে, বিনা চিকিৎসায় সেই শিশুটি গত মাসের (মে, ২০২১) ২৬ তারিখে মারা যায়। বাসা পরিবর্তন করে ভালো পরিবেশের বাসায় যাওয়া হয় না শুধু অর্থাভাবেই। লাকি বলেন, বাসাভাড়া যদি একটু কম হতো, তাহলে অন্তত বাচ্চা দুটিকে তারা বাঁচিয়ে রাখতে পারতেন।

কুলসুম (সাবেক গার্মেন্টকর্মী)

কুলসুম আকতার কাঁঠালবাগানের একটি বাড়িতে থাকেন ২০ বছর ধরে। তারা যে ঘরটিতে থাকেন, সেটির ভাড়া শুরুতে ছিল মাত্র ৯০০ টাকা। বর্তমানে সেই ঘরটির ভাড়াই পরিশোধ করতে হয় ৪০০০ টাকা। বাড়িটিতে ৮ ফুট বাই ৮ ফুট মাপের ১৬টি ঘরের প্রতিটিতে একটি করে পরিবার বসবাস করে। কোনো কোনো পরিবারে সদস্যসংখ্যা ৭/৮ জন। ১৬টি পরিবারের জন্য আছে ৬টি গ্যাসের চুলা, চারটি টয়লেট, তিনটি গোসলখানা।

তারা যে ঘরটিতে থাকেন, সেটির ভাড়া শুরুতে ছিল মাত্র ৯০০ টাকা। বর্তমানে সেই ঘরটির ভাড়াই পরিশোধ করতে হয় ৪০০০ টাকা। বাড়িটিতে ৮ ফুট বাই ৮ ফুট মাপের ১৬টি ঘরের প্রতিটিতে একটি করে পরিবার বসবাস করে। কোনো কোনো পরিবারে সদস্যসংখ্যা ৭/৮ জন। ১৬টি পরিবারের জন্য আছে ৬টি গ্যাসের চুলা, চারটি টয়লেট, তিনটি গোসলখানা।

কুলসুমদের ঘরটির তিন দিকে পাকা দেওয়াল, সামনের দিকে মুলির বেড়া। সামনের দিকের দেওয়ালটি ভাড়া বৃদ্ধির শর্তে পাকা করে দেবে বলেছেন বাড়িওয়ালা। ঘরে আসবাবপত্র বলতে সেমি ডাবল সাইজের একটি চৌকি (খাট), চৌকির অর্ধেকটাজুড়ে পুরোনো কাঁথা-বালিশ আর ত্রাণ হিসেবে পাওয়া দুটি পুরোনো কম্বল। চৌকির পরে খালি অংশের শেষ মাথায় একটা দরজা ভাঙা খানাডুলি ভেতরে কিছু হাঁড়ি-পাতিল। চৌকির নিচে কলসি, ভাতের হাঁড়ি এবং কাপড়ের গাঁট্টি দাঁত বের করে তাদের অবস্থানের জানান দিচ্ছে। মুলির সিলিংয়ে ঝোলানো ফ্যানের অংশটুকু বাদ দিয়ে চারদিকে পরিবারের ৬ সদস্যের কাপড় ঝোলানোর রশি। মুলির বেড়ার সঙ্গে ১২ ইঞ্চি বাই ১০ ইঞ্চি একটি আয়না। সঙ্গেই রশিতে ঝোলানো দুটি চিরুনি। তার পাশেই ঝোলানো ছোট্ট কাঠের তক্তার উপরে কুলসুমের দুই কন্যার রূপচর্চার সস্তাদামের নেইল পলিশ, লিপস্টিক, হাতের চুড়ি, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির শূন্য টিউব।

কুলসুম মা-বাবা ও বড় বোন-ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। বড় বোন বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে আলাদা বাসা নিয়ে চলে গেছেন। বড় ভাই বিয়ে করে এই ঘরেই বউ নিয়ে উঠেছিলেন। মা, বাবা, কুলসুমের স্বামীসহ দুই সন্তান এই ছোট্ট ঘরটিতে থাকেন। গার্মেন্টে চাকরি করতেন। কুলসুম প্রথম দিকে বেতন পেতেন মাত্র সাতশ টাকা। এখানেই পারিবারিক উদ্যোগে তার বিয়ে হয়। কিন্তু তার স্বামী ছিলেন বেকার। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় কুলসুম একটি কন্যাসন্তানের মা হন। কন্যার নাম রাখেন তামান্না। তখন তার গার্মেন্টের চাকরিটি চলে যায়।

কুলসুম প্রথম দিকে বেতন পেতেন মাত্র সাতশ টাকা। এখানেই পারিবারিক উদ্যোগে তার বিয়ে হয়। কিন্তু তার স্বামী ছিলেন বেকার। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় কুলসুম একটি কন্যাসন্তানের মা হন। কন্যার নাম রাখেন তামান্না। তখন তার গার্মেন্টের চাকরিটি চলে যায়।

সংসারে নতুন অতিথি, বউয়ের চাকরি নেই। বাধ্য হয়ে কুলসুমের স্বামী মিলন মিয়া রিকশা চালানো শুরু করেন। দুই বছরের মাথায় তাদের আরও একটি কন্যাসন্তান তানিয়ার জন্ম হয়। কুলসুমের আর গার্মেন্টের চাকরিতে ফেরত যাওয়া হয় না। দুই সন্তানকে লালনপালন করতেই তার ত্রাহি অবস্থা। দুই শিশুসন্তান নিয়ে রিকশাশ্রমিক মিলন মিয়ার একার আয়ে সংসারে প্রতিদিনই অভাব। শিশু দুটির জন্য শিশুখাদ্যের জোগান দিতে গিয়ে নিজেদের প্রতিদিনই ২/১ বেলা অনাহারে থাকতে হয়েছে বলে জানান কুলসুম। আবার নিজেরা খেতে গেলে শিশু দুটি থাকত অনাহারী।

একদিকে বড় হচ্ছে তামান্না-তানিয়া, অপরদিকে ঘরভাড়াও বাড়ছে প্রতিবছর তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তামান্না-তানিয়াকে স্কুলে পাঠানো হয়নি কোনোদিন। কোনো এক এনজিওর কর্মীরা তাদের বাড়িটিতে বসবাসরত পরিবারগুলোর শিশুদের বেশ কয়েক বছর লেখাপড়া শিখিয়েছিল। ওই পর্যন্তই তাদের শিক্ষা। কিছুদিন আগে কিশোরী তামান্না গার্মেন্টে চাকরি শুরু করেছে।

একদিকে বড় হচ্ছে তামান্না-তানিয়া, অপরদিকে ঘরভাড়াও বাড়ছে প্রতিবছর তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তামান্না-তানিয়াকে স্কুলে পাঠানো হয়নি কোনোদিন। … কিছুদিন আগে কিশোরী তামান্না গার্মেন্টে চাকরি শুরু করেছে।

রেবা (গার্মেন্টকর্মী)

রাজিয়া সুলতানা রেবা মিরপুরের একটি গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করেন। সকাল ৮টায় গার্মেন্টে ঢোকেন, বিকাল ৫টা পর্যন্ত সাধারণ ডিউটির পর কখনো কখনো রাত ৯/১০টা পর্যন্ত ওভারটাইম করে মাসশেষে বেতন পান ১৩ হাজার টাকার একটু কম বা বেশি। রেবা থাকেন মিরপুর-১ নম্বরের একটি বাড়িতে। বাসাভাড়া দেন তিন হাজার টাকা। বাড়িটির নয়টি ঘরে আরও নয়টি পরিবার বসবাস করে। প্রতিটি ঘরের আয়তন ৮ ফুট বাই ৮ ফুট। ৯টি পরিবারের রান্নার জন্য ৪টি গ্যাসের চুলা থাকলেও অধিকাংশ সময় চুলায় গ্যাস থাকে না। প্রতিটি ঘরেই বসবাস করেন শ্রমজীবী মানুষ। তাদের জন্য আছে তিনটা টয়লেট ও দুটি গোসলখানা।

রেবা থাকেন মিরপুর-১ নম্বরের একটি বাড়িতে। বাসাভাড়া দেন তিন হাজার টাকা। বাড়িটির নয়টি ঘরে আরও নয়টি পরিবার বসবাস করে। প্রতিটি ঘরের আয়তন ৮ ফুট বাই ৮ ফুট। ৯টি পরিবারের রান্নার জন্য ৪টি গ্যাসের চুলা থাকলেও অধিকাংশ সময় চুলায় গ্যাস থাকে না। প্রতিটি ঘরেই বসবাস করেন শ্রমজীবী মানুষ। তাদের জন্য আছে তিনটা টয়লেট ও দুটি গোসলখানা।

রেবার পরিবারে তিনজন সদস্য। তাদের বাজার খরচ পাঁচ হাজার টাকার বেশি। একটি শিশুসন্তান আছে। ঢাকায় শিশুটির দেখাশোনার কেউ নেই, তাই গ্রামের বাড়িতে মায়ের কাছে রেখেছেন। শিশুসন্তান ও মায়ের খরচের জন্য প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে হয়। এভাবে বেতনের টাকা খরচ হওয়ার পর তার নিজের প্রতিমাসের যাতায়াত, ওষুধের জন্য ধারকর্জ করে চলতে হয়। রেবা বলেন, ‘হাড়ভাঙা খাটুনির পরও একটি টাকাও হাতে থাকা তো দূরের কথা, দেনা আর পিছু ছাড়ে না।’

নুরুল ইসলাম (চাকরিজীবী)

একটি বেসরকারি সংস্থার চাকরিজীবী নুরুল ইসলাম ধোলাইর পাড়ের ভাড়া বাসায় ওঠেন ২০১০ সালে। শুরুতে দুই কক্ষের ওই বাসাটির ভাড়া ছিল ৩২০০ টাকা। এখনো তিনি একই বাসায় থাকেন; কিন্তু ভাড়া পরিশোধ করতে হয় ১০ হাজার টাকা। এই হিসাবে গত ১০ বছরে তার ভাড়া বেড়েছে ২০০ শতাংশ। তিনি সর্বজনকথাকে বলেন, চাকরি করে তিনি যা আয় করেন তার বেশিরভাগই চলে যায় বাসাভাড়ায়। আগে বাসাভাড়ার সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে প্রতিটি বিল আলাদা দিতে হয়। সেই হিসাবে দেখা যায়, গত ১০ বছরে বাসাভাড়া চার গুণ বেড়ে গেছে।

তিনি যা আয় করেন তার বেশিরভাগই চলে যায় বাসাভাড়ায়। আগে বাসাভাড়ার সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে প্রতিটি বিল আলাদা দিতে হয়। সেই হিসাবে দেখা যায়, গত ১০ বছরে বাসাভাড়া চার গুণ বেড়ে গেছে।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বহু বছর একই বাড়িতে আছি। বাড়িওয়ালা পরিচিত হয়ে গেছেন। বাসার আশপাশের লোকজনের সঙ্গে সম্পর্কও ভালো হয়ে গেছে। তাই বাসা এবং এলাকা কোনোটাই ছাড়া হয়নি। কিন্তু প্রতিবছরই জানুয়ারি বা জুন/জুলাই মাসে ভাড়া বাড়ে। করোনার কারণে শুধু এ বছরই ভাড়া বাড়েনি।’ শুধু ধোলাইর পাড়েই নয়, ঢাকা শহরজুড়েই গত কয়েক বছরে এভাবে বাড়িভাড়া বেড়েছে।

ভাড়াটিয়াদের শহর

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর একটি জরিপ অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আধাপাকা (টিন শেডের) বাসাভাড়া ৯৫ শতাংশ বেড়েছে, পাকা বাসার ভাড়া ১১৮ শতাংশ বেড়েছে, মেসবাড়ির ভাড়া ১০২ শতাংশ বেড়েছে, আর বস্তিতে যেখানে শ্রমজীবী মানুষ বসবাস করে, সেখানে ভাড়া বেড়েছে সবচেয়ে বেশি–১৭৪ শতাংশ।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর একটি জরিপ অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আধাপাকা (টিন শেডের) বাসাভাড়া ৯৫ শতাংশ বেড়েছে, পাকা বাসার ভাড়া ১১৮ শতাংশ বেড়েছে, মেসবাড়ির ভাড়া ১০২ শতাংশ বেড়েছে, আর বস্তিতে যেখানে শ্রমজীবী মানুষ বসবাস করে, সেখানে ভাড়া বেড়েছে সবচেয়ে বেশি–১৭৪ শতাংশ।

৩০৫.৪৭ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে দুই কোটির উপরে মানুষ বসবাস করে, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৬৫৪৭২ জন। পৃথিবীর খুব কম শহরই এমন ঘনবসতিপূর্ণ। এর মধ্যে কতসংখ্যক লোক ভাড়া বাসায় থাকেন এবং নিজস্ব বাসাতেই-বা থাকেন কতসংখ্যক, সে সংক্রান্ত কোনো পূর্ণাঙ্গ হিসাব বা জরিপ কারও কাছেই নেই। তবে বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে ধারণা করা যায়, ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন বা ভাড়াটিয়া। যাদের বাসাভাড়া পরিশোধের পর অতি প্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন করে জীবনধারণ করতে হয়।

সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনিস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ঢাকার নিম্নমধ্যবিত্তদের মধ্যে এক গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় বসবাসরত ভাড়াটিয়াদের খরচ বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে বাড়িভাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ছাড়াও আছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যয়।

ঢাকা মহানগরীর আবাসনবিষয়ক এই গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে বসবাসরত শতকরা ৮২ ভাগ ভাড়াটিয়াই তাদের মোট আয়ের ৩০ শতাংশ ব্যয় করেন বাড়িভাড়ায়। আর ৪৪ শতাংশ মানুষ তাদের আয়ের ৪৫ ভাগই বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি বিল ও পরিবহণ খাতে ব্যয় করেন, যা তাদের জন্য খুবই কষ্টকর। বাড়িভাড়ায় অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে জীবনযাত্রার মান নিয়ে তাদের ক্রমাগত আপস করতে হয় বলে মন্তব্য করা হয় গবেষণায়।

শহীদুল ইসলাম সবুজ: শ্রমিক সংগঠক। ইমেইল: sabuj.shahidul933@gmail.com

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •