আমরা জবাব চাই

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: কাঠামোগত হত্যাকান্ড

আমরা জবাব চাই

শিক্ষক মেহরিন চৌধুরী প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচিয়েছেন। বাঁচাতে গিয়ে নিজে নিহত হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হতাহতদের বেশির ভাগই শিশু, যারা স্কুলে পড়তে গিয়েছিল। সর্বশেষ হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৩৫। এ ঘটনায় পুরো জাতির সাথে আমরাও ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ।

এ ঘটনায় প্রথম প্রশ্ন আসে যে এমন জনবহুল এলাকায় কেন যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়? আমরা এর জবাব চাই। জনবহুল এলাকায় যেকোনো কাজ করতে গেলে চিন্তা করা উচিত সম্ভাব্য পরিণতি কী কী হতে পারে। বিমান প্রশিক্ষণের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকেই।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছে কেন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে? নগর–পরিকল্পনাবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে কোন এলাকায় কী কী থাকবে, নগরের পরিকল্পনা কী হওয়া উচিৎ তা বলে আসছেন। সে অনুযায়ী কিছুই করা হয়নি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ওপর দিয়েই নিয়মিত বিমান ওঠানামা করে। তাই এটাকে শুধু দুর্ঘটনা বলা ঠিক হবে না, এটা পরিকল্পনাহীনতা ও দায়িত্বহীনতার ফল।

দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ও আহতের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। তার আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি, ভিডিও ও নানা তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষের মধ্যে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে মৃত্যুর সংখ্যা লুকানো হচ্ছে। অতীতে আমরা এ ধরনের ঘটনায় লুকোচুরি ও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা দেখেছি। তথ্য ও পরিসংখ্যান দ্রুত দেওয়া জরুরি।

আমরা আরও দেখলাম, রাত তিনটার দিকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা (মঙ্গলবারের) স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হলো। এর আগেও দেখা গেছে, সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সময় লাগে। আবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেটা পাল্টে যায়।

মাইলস্টোন স্কুলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, বিমান বিধ্বস্তে শিশুদের মৃত্যু একটা মর্মান্তিক ঘটনা। এমন ঘটনার পর মানুষ বিক্ষুব্ধ হবে, আতঙ্কিত হবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের প্রতি সংবেদনশীল থাকতে হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ সহায়তা দিতে চাইলে ব্যাংক হিসাব নম্বর উল্লেখ করে একটি ফেসবুক পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। পরে সেটা মুছে দেওয়া হয়। এটা একটা হাস্যকর ও দায়িত্বহীন পদক্ষেপ। এসবের অবসান হওয়া দরকার।

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। এর আগেও তিনি ছিলেন নিষ্ক্রিয়। স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তনের সূচনা বা অব্যবস্থাপনা ও অপচয় দূর করার কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। এরকম দুর্ঘটনার পর এসব দুর্বলতা আরও বেশি ধরা পড়ে।

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তদন্ত কমিটির অন্যতম একটি কাজ হওয়া উচিত, যে বিমানগুলো প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো এখনো উড়ানের উপযোগী কি না, তা খতিয়ে দেখা। কোথাও কোনো বাত্যয় হয়েছে কি না, কোনো গাফিলতি আছে কি না, তা–ও দেখতে হবে। থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আগেও আমরা দেখেছি, বিভিন্ন ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়। পরে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না। এটা বিগত সরকারের সময় হয়েছে, তার আগের সরকারের সময় হয়েছে। এই সরকারের সময়ও আমরা একই ঘটনা দেখেছি। এমন চর্চা বন্ধ হওয়া উচিত। দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেই একই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটে।

আমরা এসব প্রশ্নের জবাব চাই।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •