সংবাদপত্রের পাতা থেকে( ২৭ জানুয়ারি- ২৬ এপ্রিল ২০২৫)

সংবাদপত্রের পাতা থেকে(২৭ জানুয়ারি- ২৬ এপ্রিল ২০২৫)

অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনীতি ও সংস্কার

একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা বলবে না ইসলামী আন্দোলন ও বিএনপি

২৭ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ইসলামী আন্দোলনের আমিরের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের বৈঠকে তাঁরা ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিগুলো পরস্পর আঘাত করে কথা না বলা’সহ ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছেন। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম যৌথ সিদ্ধান্তগুলো পড়ে শোনান।

বৈঠকে সিদ্ধান্তগুলো হলো; আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত স্বাধীন-সার্বভৌম টেকসই গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, ভোটাধিকারসহ মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা, ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা।

এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব ও ইসলামী আন্দোলনের আমির ঐকমত্যে পৌঁছে ঘোষণা দেন যে, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব শক্তিকে নিয়ে দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব, ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা বলব না; আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকব; ইসলামী শরিয়াহ্ বিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নেব না এবং ইসলাম বিরোধী কোনো কথা কেউ বলব না।’

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজ আটকে যাচ্ছে ‘আমলাতন্ত্রে’

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল

জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাসহ সব খাতের খোলনলচে বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এই  সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে পাঁচ মাস পরও সরকারি অনেক কাজ যেন চলছে ‘কচ্ছপের পিঠে চেপে’। ডিসির পদায়ন, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ, মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনাকাটা, পদোন্নতিবঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিরসনের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক গ্যাঁড়াকলে। খোদ সরকারের উপদেষ্টারাই বলছেন, সরকারের যে গতিতে কাজ করার কথা, সেভাবে করতে পারছে না আমলাদের অসহযোগিতার কারণে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পর আরও কৌশলী আমলারা। অনেকে এই সরকারের আমলে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে চাইছেন না। কারণ নির্বাচিত সরকার এলে বিপদে পড়ার ভয়ে আছেন তারা। এ ছাড়া যেসব সচিবের খুব বেশিদিন চাকরি নেই, তারাও নিচ্ছেন না ঝুঁকি। আর যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন, তারা কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছেন না। এতে ছোট কাজেও হচ্ছে ভুল।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাতের ভোটের কারিগর ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা এখনও বড় বড় পদে বহাল। এ ছাড়া প্রশাসনের অনেক যোগ্য লোক আওয়ামী লীগ আমলে ছিলেন বঞ্চিত, এখনও তাদের ভাগ্য ফেরেনি। তারা কৌশলে প্রশাসনকে গতিহীন করে রেখেছেন। উপদেষ্টা ও আমলাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকার বিষয়টিও পরিষ্কার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, সরকার গত সাড়ে পাঁচ মাসে আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতায় প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ করতে পারেনি। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কয়েকটি সাপ্তাহিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপদেষ্টারা। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি দীর্ঘদিন নিষ্পত্তি না হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার ওপর ক্ষোভও ঝাড়েন কেউ কেউ।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে সরকারের অবস্থান জানালেন প্রেস সচিব

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ যত দিন না ক্ষমা চাচ্ছে, যত দিন না তাদের নেতৃত্বকে বিচারের মধ্যে আনা হচ্ছে এবং যত দিন না জবাবদিহির মধ্যে আসছে, তত দিন তাদের কোনো প্রোটেস্ট (প্রতিবাদ কর্মসূচি) করতে দেওয়া হবে না।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগ নিয়ে সরকারের এ অবস্থানের কথা জানান শফিকুল আলম। এর আগে আজ সকালে নিজের ফেসবুকে এক পোস্টেও এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আওয়ামী লীগ গতকাল মঙ্গলবার তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছে যে ১ ফেব্রুয়ারি শুরু করে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হরতাল, অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি আছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী বা সরকার কী ভাবছে?

জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সরকারের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বসহ অনেকেই পুরো জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গতকাল হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে যে শেখ হাসিনা নিজেই গুম ও হত্যার সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। এত বড় একটি হত্যাকাণ্ড হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে, চোখের সামনে বাচ্চা বাচ্চা ছেলে–মেয়েদের খুন করা হলো, শত শত ছেলে অন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। তাতে তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং তারা আরও মিথ্যা কথা বলছে যে তিন হাজার পুলিশ মারা গেছে। কত বড় মিথ্যাচার!

উন্নত চিকিৎসার সুযোগ হাতছাড়া দীপঙ্করের!

৩০ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল

মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন কলেজছাত্র দীপঙ্কর বালা (২৬)। পরদিন থেকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে কয়েকবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন।

সে অনুযায়ী তুরস্কে যাওয়ার সব ব্যবস্থাও হয়েছে। তবে তিনি দেশটিতে যেতে পারছেন না। গত সোমবার ফ্লাইট থাকলেও তাঁকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। বুধবার ঢামেকের বার্ন ইউনিটের ৬১৭ নম্বর ওয়ার্ডে দীপঙ্করের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তিন মাস ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নানাভাবে আশ্বাসের পর ২৭ জানুয়ারি তুরস্কে যাওয়ার জন্য তাঁকে বিমানের টিকিট দেওয়া হয়। তা ছিল ইকোনমি ক্লাসের টিকিট। তাঁকে বসানো অবস্থায় দীর্ঘ ফ্লাইটে নেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। আবার কবে টিকিটের ব্যবস্থা হবে, কবে বিদেশে যেতে পারবেন, সে আশায় হাসপাতালে দিন কাটছে এই কলেজছাত্রের। এদিকে যত দিন যাচ্ছে, তাঁর পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। গোড়ালির দিকে ছোট ছিদ্র দিয়ে অনবরত পুঁজ পড়ছে। পা নাড়াতে পারছেন না সহজে।

অন্তর্বর্তী সরকার কর্মসংস্থান বাড়াতে পারেনি: সিপিডি

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দুর্বল ছিল। গত ছয় মাসে অর্থনীতিতে তেমন চাঞ্চল্য ফেরেনি। অন্তর্বর্তী সরকার কর্মসংস্থান বাড়াতে পারেনি।

সিপিডি বলেছে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা।

আজ বুধবার রাজধানী ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫, সংকটময় সময় প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জুলাই আন্দোলনের মূল কারণ ছিল কর্মসংস্থানের অভাব। বিগত সরকারের বৈষম্যমূলক নীতি বেকারত্ব পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছিল। সমাজে বৈষম্য বেড়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে কর্মসংস্থান বাড়াতে পারেনি।

এ সময় অন্যদের মধ্যে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা ফেলো মুনতাসির কামাল, সৈয়দ ইউসুফ সাদাতসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংস্থাটি বলছে, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো সরকার বেশি দিন থাকতে পারে না। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় তারা।

অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে পরের বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছে। আমরা চাই, সরকার ঘোষিত রোডম্যাপের মধ্যেই নির্বাচন হোক। যত দ্রুত সম্ভব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ এ প্রসঙ্গে আলোচনা হয়।

এ প্রসঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার এমন সময়ে ভ্যাট বাড়াচ্ছে, যে সময়ে সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট। মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণ। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সুযোগ এসেছিল, প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো। কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটেনি। তারা পরোক্ষ করের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে।

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, জনগণ যে কর দেয়, সরকার পুরোপুরি পায় না। সরকারের সুযোগ ছিল এসব জায়গায় হাত দেওয়ার, কিন্তু দেয়নি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলেনি ভ্যাট বাড়াতে। তারা বলেছে যে কোনো উপায়ে রাজস্ব বাড়াতে। কিন্তু সরকার প্রত্যক্ষ কর না বাড়িয়ে পরোক্ষ কর বাড়াচ্ছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক সাত শতাংশ। গত বছর একই সময় তা ছিল ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এতে দেখা যাচ্ছে, রাজস্ব আহরণে উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে।

রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি কর্মসংস্থান, বেসরকারি বিনিয়োগে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি নেই। অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তবে সফলতা এখনো দেখা যায়নি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, এ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, জনসম্মুখে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি প্রকাশ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব চুক্তি উমুক্ত করা হয়নি।

বিগত সরকারের সময়ের ২৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নথি চেয়ে সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছিল সিপিডি। তবে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে এই যুক্তি তুলে ধরে ২৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্য অন্তর্বর্তী সরকার দেয়নি বলে অভিযোগ করেন ফাহমিদা খাতুন।

পেশাদার কূটনীতিকের অপেশাদারিত্ব, উপদেষ্টার ‘তদবির’!

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ঢাকা পোস্ট

২০২৪-এর অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। চলমান উদ্যোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিশনে, মিশন থেকে মিশনে এবং মিশন থেকে ঢাকার সদরদপ্তরে পেশাদার কূটনীতিকদের পদায়ন করা হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, মিশন থেকে মিশনে পদায়নের ক্ষেত্রে কয়েকজন পেশাদার কূটনীতিক অপেশাদার আচরণ করছেন। গত বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগ থেকে অফিস আদেশ জারির পরও কয়েকজন তাদের স্টেশন (মিশন) ছেড়ে পরবর্তী স্টেশনে যোগ দেননি। তাদের মধ্যে এক নারী কূটনীতিক রয়েছেন, যার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল এক উপদেষ্টা তদবিরও করেছেন। ওই উপদেষ্টার তদবির সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।

স্থানীয় কূটনীতিকরা জানান, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে কয়টি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বেশকিছু মিশনে নতুন রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার নিয়োগ। ইতোমধ্যে অনেক মিশনে রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কিছু মিশনে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান।

গণতান্ত্রিক উত্তরণে উভয় সংকটে বাংলাদেশ

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল

গণতান্ত্রিক উত্তরণে উভয় সংকটে বাংলাদেশ। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় যত এগোচ্ছে, প্রতিশ্রুত সংস্কার শেষ করতে তত চাপে পড়ছে অন্তর্বর্তী সরকার। রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সঙ্গে পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক চাপও। সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে লাইনচ্যুত করতে বিরোধীদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আবার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল, তাও ম্লান হতে শুরু করেছে বলে মনে করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)।

গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থাটি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ : গণতান্ত্রিক উত্তরণে উভয় সংকট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে ক্রাইসিস গ্রুপ প্রকাশিত ‘ওয়াচ লিস্ট-২০২৫’ এ উত্তরণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও এর সদস্য দেশগুলোর পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

প্রতি বছর ক্রাইসিস গ্রুপ ইইউ ও এর সদস্য দেশগুলো কোথায় শান্তির সম্ভাবনা বাড়তে পারে, তা চিহ্নিত করে ‘ইইউ পর্যবেক্ষণ তালিকা’ প্রকাশ করে। এ বছরের তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও ইউক্রেন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল, ইরানসহ কয়েকটি দেশের নাম রয়েছে।

ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট থমাস কিয়ান বলেন, ‘বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের মধুচন্দ্রিমার সময় শেষ। রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ সংস্কার নিয়ে দর কষাকষি করায় এবং নির্বাচনী সুবিধার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠায় চলতি বছর বাড়তে পারে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।’

তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধিতে চাপে রয়েছে সরকার, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যবস্থাপনার উত্তরাধিকার হিসেবে তারা পেয়েছে। ফলে অর্থনীতিকে আবারও সঠিক পথে ফেরত আনার চলমান প্রচেষ্টার সুফল পেতে আরও সময় লাগবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন রয়ে গেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।’ এর পরও আগামী বছর বাংলাদেশের সামনে রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন, এটিকে আরও অন্তর্ভুক্তি ও জবাবদিহিমূলক করার বিরল সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন থমাস কিয়ান। তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনগুলো কয়েকশ প্রস্তাব-সংবলিত প্রতিবেদন জমা দিতে শুরু করেছে।’

সংস্কারটা কোথায় হচ্ছে, জনজীবনে তার কোনো প্রতিফলন নেই

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কোথায় করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘সংস্কারটা কোথায় হচ্ছে, এটাই তো আমরা বুঝতে পারছি না। সংস্কার হতে গেলে তার তো একটা প্রতিফলন জনগণের জীবনের মধ্যে থাকবে। জনগণের জীবনে তার কোনো প্রতিফলন নেই।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, জিনিসপত্রের দামের মধ্যে সংস্কারের প্রতিফলন নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে এর প্রতিফলন নেই। বিভিন্ন জায়গায় যে দমন–পীড়ন ও অনিশ্চয়তা, সেটার মধ্যে সংস্কারের কোনো প্রতিফলন নেই। সংস্কারের প্রতিফলন আনতে হলে সাম্রাজ্যবাদের ওপর নির্ভরশীলতার জায়গা থেকে বের হতে হবে।

‘বন্ধ কারখানা চালু, বকেয়া মজুরি পরিশোধ, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং মিথ্যা মামলায় শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে’ ওই সমাবেশের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আইএমএফের সঙ্গে চুক্তির কারণে কিছুদিন আগে সরকার জনগণের ওপর ভ্যাট বসিয়েছে। এতে জিনিসের দাম বেড়েছে। সরকারের লোকজন বলছেন, তাঁদের টাকাপয়সার অভাব। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ না নিলে হচ্ছে না।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য থাকে একটি দেশের যত সম্পদ, তা কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে ছেড়ে দেওয়া। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের আমলে যে লুটেরা ধনিকশ্রেণির উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছিল, তার পেছনে এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো প্রবলভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর পরিবর্তন হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনো ধরনের পার্থক্য নেই।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত দর্শক–শ্রোতাদের একাংশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত দর্শক–শ্রোতাদের একাংশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনেছবি: তানভীর আহাম্মেদ

বকেয়া মজুরির জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে এই সরকারের সময়ও গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিক মারা গেছেন উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, বিষয়টি অবিশ্বাস্য। শ্রমিকদের রাজনৈতিক শক্তি তৈরি না হলে অন্তর্বর্তী সরকার মুখে যতই বড় বড় কথা বলুক, শ্রমিকদের পক্ষে কোনো ধরনের পদক্ষেপ তারা নেবে না। এ সময় শিল্প পুলিশ বাতিলের দাবিও জানান তিনি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান মানুষের টাকা লুট করে যেসব কারখানা করেছেন, সেগুলোর ওপর বাংলাদেশের মানুষের সম্পূর্ণ অধিকার আছে বলে মনে করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এসব কারখানা চালু রাখা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু সরকার বিবেচনাহীন সিদ্ধান্ত নিয়ে কারখানা বন্ধ করায় প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছেন।

শহীদদের স্বজনের কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের স্বজন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

শহীদ পরিবারের শতাধিক সদস্য শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, হত্যায় জড়িত ব্যক্তির গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শহীদদের এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অনেকের পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের পুনর্বাসনে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। দ্রুততম সময়ে এসব দাবি পূরণ না হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সোমবারের মধ্যে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সরকার বৈঠক না করলে রাজপথে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায়ের সুপারিশ

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

আয় ও সম্পদবৈষম্য কমাতে ধনীদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায়ের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। তারা দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রগতিশীল করব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়েছে, যে ব্যবস্থায় ধনীদের ওপর বেশি কর আরোপ করা হয়।

বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত ১১ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি থেকে সুফল ধনীরা বেশি পেয়েছেন উল্লেখ করে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন আয় ও দরিদ্র মানুষেরা জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

প্রতিবেদনে টাস্কফোর্স বলেছে, ব্যক্তির নিজস্ব ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদের ওপর সম্পদ কর আরোপে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর উদ্দেশ্য হবে কিছু লোকের হাতে বেশি সম্পদ চলে যাওয়া ঠেকানো, অর্থাৎ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হতে দেওয়া যাবে না। ধনীদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায় ও ফাঁকি রোধ করতে সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।

টাস্কফোর্স এমন একটা সময়ে ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর কথা বলল, যখন দেশে আয়বৈষম্য বিপজ্জনক পর্যায় ছুঁই ছুঁই করছে। আয়বৈষম্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মোট জাতীয় আয়ে ধনীদের হিস্যা বাড়ছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি থেকে সুফল ধনীরা বেশি পেয়েছেন উল্লেখ করে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন আয় ও দরিদ্র মানুষেরা জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

বৈষম্য কমাতে প্রগতিশীল করব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়। জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের প্রধান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন ধরেই প্রগতিশীল করব্যবস্থা চালুর কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু সাফল্য আসেনি। মানুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে প্রগতিশীল করব্যবস্থা চালুর বিষয়টি জোরালো করা দরকার। তবে এ করব্যবস্থা স্বল্প মেয়াদে চালু করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, সাধারণত মানুষ করজালে আসতে চায় না। তাই সহজে কর আদায় করা যায়, এমন খাতে সরকার কর বসিয়ে দেয়। ভ্যাটের মতো কর ধনী-গরিব সবাইকে সমান হারে দিতে হয়। তাই বৈষম্যহীন করব্যবস্থা চালু করা কঠিন হয়ে যায়।

বৈষম্য: তখন, এখন

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে আয় ও সম্পদবৈষম্য বেড়েছে। আরও বেড়েছে সুযোগের বৈষম্য। ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সূচনাও হয় সরকারি চাকরিতে কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে।

সাধারণত গিনি (কেউ কেউ জিনি বলেন) সহগ দিয়ে একটি দেশে আয়বৈষম্য কেমন, তা বিশ্লেষণ করা হয়। ১৯১২ সালে ইতালির সংখ্যাতত্ত্ববিদ কোরাদো গিনি বা জিনির উদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুযায়ী, দেশে সবার আয় সমান হলে গিনি সূচক হবে শূন্য। আর সব আয় একজনের হাতে গেলে সূচকটি হবে ১। ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে গিনি সহগ সূচকের মান ছিল শূন্য দশমিক ৩৫৮, যা ২০২২ সালে দাঁড়ায় দশমিক ৪৯৯। এটা শূন্য দশমিক ৫০০ হলেই কোনো দেশকে বিপজ্জনক আয়বৈষম্যের দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানার আয় ও ব্যয় জরিপ-২০২২ অনুসারে, দেশের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের হাতে দেশের মোট আয়ের ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের আয় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরের ধনীদের হিস্যা এখনকার চেয়ে কম ছিল, গরিবের বেশি ছিল। তখন সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের হাতে ছিল মোট আয়ের ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আর সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশের আয় ছিল দেশের মোট আয়ের ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

সাধারণত মানুষ করজালে আসতে চায় না। তাই সহজে কর আদায় করা যায়, এমন খাতে সরকার কর বসিয়ে দেয়। ভ্যাটের মতো কর ধনী-গরিব সবাইকে সমান হারে দিতে হয়। তাই বৈষম্যহীন করব্যবস্থা চালু করা কঠিন হয়ে যায়।

টাস্কফোর্সের প্রধান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ

জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ সাড়ে ১৫ বছরে বৈষম্য বাড়তে বাড়তে বিপজ্জনক পর্যায়ের কাছাকাছি চলে গেছে। তখনকার সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হতো, দেশের উন্নতির প্রথম পর্যায়ে বৈষম্য বাড়ে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার জাপান ও কোরিয়ার উদাহরণকে এড়িয়ে যেত। এই দুই দেশে বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে রেখে উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বৈষম্য কমাতে তেমন কোনো পদক্ষেপও ছিল না।

ফলে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের বৈষম্য কমানোর প্রতিশ্রুতি (কমিটমেন্ট টু রিডিউসিং ইনইকুয়ালিটি-সিআরআই) সূচকে (২০২৪) ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৪তম স্থান পায়, যা ২০২২ সালে ছিল ১০৭তম।

আয় ও সম্পদবৈষম্য বৃদ্ধির বড় কারণ

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি থেকে শিল্প ও সেবা খাতে রূপান্তর ঘটছে। এতে সম্পদ শহরে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। গ্রাম বঞ্চিত থাকছে। পোশাক খাতে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হলেও দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের মজুরিবৈষম্য বেশি। মানসম্মত শিক্ষায় সুযোগ সীমিত। শিক্ষার মানে বৈষম্য আয়বৈষম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ, যাঁরা মানসম্মত শিক্ষা পান, তাঁরা আয় বেশি করেন।

টাস্কফোর্স আয়বৈষম্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট), আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, আবগারি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কের মতো পরোক্ষ কর থেকে বেশি রাজস্ব আদায় এবং অপ্রতুল সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিকে দায়ী করেছে। তারা বলেছে, তেল, সাবান, শ্যাম্পুর মতো নিত্যব্যবহার্য পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বসানো হলে তা ধনী-গরিব সবাইকে সমান হারে দিতে হয়। কিন্তু গরিব মানুষের ওপর বেশি চাপ পড়ে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের করের ওপর সরকার বেশি নির্ভরশীল। তাই তা সমাজের দরিদ্র শ্রেণির ওপর বেশি আঘাত করে।

আয়কর আদায়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে এখন ১ কোটি ১১ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে ৪০ লাখের মতো করদাতা বছর শেষে রিটার্ন জমা দেন। সেই হিসাবে, দেশের মাত্র ২ শতাংশ মানুষ নিয়মিত আয়কর জালে আছেন।

সম্পদের ওপর সারচার্জ আরোপের ব্যবস্থা আছে। ব্যক্তির নিট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে আয়ের ওপর ১০ শতাংশ বেশি আয়কর দিতে হয়। সম্পদ আরও বেশি হলে কর বেশি। তবে আদায় কম। কারণ, ধনীরা সম্পদের মূল্য কম দেখান অথবা ফাঁকি দেন। যুগ যুগ আগে যে দামে জমি বা বাড়ি কেনা হয়েছে, সেই দাম দেখিয়ে কর নথি জমা দেওয়া হয়। এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, তাদের আওতাভুক্ত ৭০০ জন ধনী ব্যক্তির মধ্যে সম্পদ কর আদায় হয় মাত্র ১৮২ জনের কাছ থেকে।

আরও বৈষম্য

অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স শুধু আয়বৈষম্যের কথা বলেনি। সমাজে কাঠামোগত বৈষম্যের কথাও বলেছে। অন্যায্য নিয়মকানুনের কারণে আবাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানে বৈষম্য বেড়েছে বলে মনে করে ওই টাস্কফোর্স। তারা আরও বলছে, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে অসমতা থাকায় বিভিন্ন শ্রেণিগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে।

আয়বৈষম্য ও সম্পদের অসমতা দূর করতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। প্রগতিশীল করব্যবস্থা ও সম্পদের পুনর্বণ্টন ছাড়া বাকি সুপারিশগুলো হলো মানসম্পন্ন শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়ন; আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সম্প্রসারণ; সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানো; শ্রমবাজারের সংস্কার; আঞ্চলিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার; সুশাসন নিশ্চিত করা; লিঙ্গবৈষম্য দূর করা; প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে জোর দেওয়া; জনসচেতনতা বৃদ্ধি।

শহীদ পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ নিচ্ছে না সরকার

২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে না, এমন অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারগুলোর একদল সদস্য। তাঁরা বলছেন, অনেকের পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের পুনর্বাসনে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এমনকি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শহীদদের এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ে এসব দাবি পূরণ না হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া শহীদ পরিবারের সদস্যরা এ কথাগুলো বলেছেন। সেখানে বলা হয়, দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে সরকার বৈঠক না করলে রাজপথে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি এই ঘোষণা আসবে। সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম ছিল, ‘প্রতিটি হত্যার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এর আগে শহীদ পরিবারের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকারপ্রধানের দিক থেকে সাড়া না পেয়ে তাঁরা দাবি আদায়ে রাজপথ বেছে নিয়েছেন। ‘শহীদ পরিবার কেন্দ্রীয় গ্রুপ’-এর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্তত ২০টি শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন। সেখানে শহীদ ব্যক্তিদের কারও মা, কারও বাবা, কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও স্ত্রী বক্তব্য দেন। তাঁদের একজন বীথি খাতুন। তাঁর স্বামী হাফিজুর রহমান ৫ আগস্ট আগারগাঁও এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১৬ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। বীথি খাতুন সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘শহীদদের পরিবারের দাবি যদি মেনে না নেওয়া হয়, তবে আমাদেরও মেরে ফেলুন। আমাদের এখন বাঁচার কোনো দরকার নাই।’

নিজেদের অসহায়তা তুলে ধরে বীথি খাতুন বলেন, ‘আমার বাচ্চা তো আমাকেই বলে, মা আমি ভাত খাব। মা আমাকে এটা দাও। বাড়িওয়ালা তো আমাদের বলে না এক মাসের ভাড়া দিয়ো না। সরকার যদি আমাদের দাবি না মেনে নেয়, তবে সকল শহীদ পরিবারকেই একেবারে শহীদ করে দিক। আমাদের মেরে ফেলা হোক, আমার বাচ্চাদেরও..তাহলে আমরা সবাই শহীদ হয়ে যাব। কেউ তাদের কাছে দাবি জানাইতে পারবে না। রাস্তায় এসে বসে থাকবে না।’

পরে বীথি খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী হাফিজুর রহমান পেশায় একজন গাড়িচালক ছিলেন। তাঁদের দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স ৮ বছর, অন্যজনের ৩ বছর। বড় মেয়ে আগে একটি স্কুলে পড়ত। তবে স্বামী (হাফিজুর) মারা যাওয়ার পর আর্থিক সংকটে পড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন। এখন তাঁর পরিবারকে দেখার কেউ নেই।

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত ইমাম হাসানের (তাইম) ভাই রবিউল আউয়াল। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভাই হত্যার বিচার চেয়ে ছয় মাস ধরে তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস পরও শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

গুলি ছোড়ায় কড়াকড়ি, বলপ্রয়োগ বিষয়ে ৫ সুপারিশ পুলিশ সংস্কার কমিশনের

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নির্বিচার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের পর বিক্ষোভ দমনে গুলির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি করার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগে পাঁচটি ধাপ অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতিমালা এবং পুলিশ প্রবিধান, ১৯৪৩ অনুযায়ী বলপ্রয়োগের এই ধাপগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয় গত ১৫ জানুয়ারি। সুপারিশে পুলিশ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিশনের তিনজন সদস্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, প্রতিবেদনে কমিশন গঠনের বিষয়ে মতামত দেওয়া হলেও এর কাঠামো নিয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে ১১ সদস্যের কমিশন এবং এর কাঠামোর বিষয়ে সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতিমালা অনুযায়ী বলপ্রয়োগের ধাপগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।

গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতন (৫ আগস্ট) পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছেন। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, নাম-ঠিকানা জানা গেছে এমন আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৫১। এখন পর্যন্ত ৮২৬ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির এক হিসাব অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ মৃত্যুই হয়েছে গুলিতে। আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত তিন শ্রেণির প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ অবস্থায় পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপেও বলপ্রয়োগের বিষয়টিকে সবার শুরুতে রাখা হয়েছে। ওই সারসংক্ষেপের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত পুলিশ প্রবিধান অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ঠিক রেখে ‘ইউজ অব ফোর্সের’ পাঁচটি ধাপ ঠিক করেছে পুলিশ। সংস্কার কমিশন এগুলো তাদের সুপারিশে রেখেছে। ধাপগুলো হলো শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়া অবৈধ জনতাকে বাধা প্রদান, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে অবৈধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা, স্বল্প বা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এবং দলগত অস্ত্রের ব্যবহার।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, সংঘবদ্ধ জনতা মিছিল, সমাবেশ বা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করার প্রবণতা দেখালে পুলিশ সদস্যরা নিরাপদে দৃশ্যমানভাবে নিয়োজিত হবেন। পুলিশ সংঘবদ্ধ জনতাকে অবৈধ ঘোষণা করলে ছত্রভঙ্গ না হয়ে অধিক শক্তি সঞ্চয় করতে থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থায় যেতে পারবে। যদি জনতা মারমুখী আচরণ করে, ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় এবং পুলিশ ও সাধারণ জনগণকে আঘাত করে আহত করে, তখন ধীরে ধীরে গ্যাস স্প্রে, সাউন্ড হ্যান্ড গ্রেনেড, জলকামান, গ্যাস বা স্মোক ক্যানিস্টার ও লঞ্চার, হ্যান্ড স্টান ক্যানিস্টার, সফট কাইনেটিক প্রজেক্টাইল লঞ্চার, পেপার স্প্রে, শটগান, ইলেকট্রিক পিস্তল প্রভৃতি ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া শুধু পুলিশ সদস্যদের বা ব্যক্তির আত্মরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষার অধিকার প্রয়োগের জন্য জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করা যাবে। তবে সেই অধিকারও সীমাবদ্ধ থাকবে।

এ বিষয়ে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলপ্রয়োগের ঘটনায় এবার অসংখ্য মানুষ শহীদ হয়েছেন। এ কারণে এ বিষয়টিকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি পুলিশ কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে।’

সংস্পর্শ ছাড়া বলপ্রয়োগের প্রথম ধাপ

সুপারিশে বলা হয়, মিছিল, সমাবেশে অংশগ্রহণকারী জনতাকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে ও ছত্রভঙ্গ হওয়ার আহ্বান জানালে, পুলিশ সদস্যরা এমনভাবে নিয়োজিত হবেন, যাতে বিক্ষোভকারীরা সহজতম পথে সেই স্থান ত্যাগ করতে পারেন। এই স্তরে এমনভাবে পুলিশ কাজ করবে, যাতে জনতার ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হয়। এ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মিছিল, সমাবেশে অংশগ্রহণকারী জনতার কোনো শারীরিক সংস্পর্শ থাকবে না। আরও অধিক শক্তি সঞ্চয় করলে ‘ক্রাউড কন্টোলের’ জন্য স্টিল হেলমেট, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, লেগ গার্ড, আর্মস গার্ড, থাই গার্ড ও গ্যাস মাস্ক পরে জনতার গতিবিধিতে নজর রাখবেন।

বলপ্রয়োগের দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে পুলিশের প্রস্তুত করা সুপারিশে বলা হয়, এটি হলো জনতাকে পুলিশ বেআইনি ঘোষণা করার পরও ছত্রভঙ্গ না হয়ে জড়ো হওয়ার প্রবণতা। যদি জনতা পুলিশ সদস্যদের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে, তাহলে রোড ব্লক, ক্লিয়ারিং ওয়েভ ও অফেনসিভ জাম্প কৌশল প্রয়োগ করে জনতার সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব সৃষ্টি করবে। এভাবে পুলিশ শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনবে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা অবৈধ জনতার দখলমুক্ত করে নিজেদের আওতায় নিয়ে আসবে।

অবৈধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা

বারবার সমঝোতার চেষ্টা ও সতর্কবাণী উচ্চারণ করার পরও বেআইনি সমাবেশের জনতা সংঘবদ্ধ থাকলে এবং ছত্রভঙ্গ হওয়ার প্রবণতা না দেখালে বলপ্রয়োগের তৃতীয় ধাপ অবলম্বন করা হবে। এ ধাপে বলপ্রয়োগের জন্য যেসব পরিস্থিতির উদ্ভব হতে হবে সেগুলো হলো যদি মিছিল, সমাবেশ করে অনুমোদনহীন এলাকা অতিক্রম করা হয়, যাতে মানুষের জানমাল ও সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ছত্রভঙ্গ হওয়ার আহ্বান জানানোর পরও জনতা না সরলে এবং জনতার দ্বারা কোনো অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধ বা নিবারণের জন্য। কোনো এলাকার নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতরে জনতা জোরপূর্বক অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করলে অথবা গ্রেপ্তারকৃত বা আটক অপরাধীদের পালানো প্রতিরোধ বা তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য উচ্ছৃঙ্খল জনতা আক্রমণ করলে এই ধাপে বলপ্রয়োগ করা যাবে।

এ অবস্থায় ব্যাটন, গ্যাস স্প্রে, সাউন্ড হ্যান্ড গ্রেনেড, জলকামান, গ্যাস, স্মোক ক্যানিস্টার ও লঞ্চার, হ্যান্ড স্টান ক্যানিস্টার, সফট কাইনেটিক প্রজেক্টাইল লঞ্চার, পেপার স্প্রে, শটগান, ইলেকট্রিক পিস্তল প্রভৃতি ব্যবহার করে অবৈধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ বা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ পর্যায়ে অবৈধ জনতাকে সক্রিয়ভাবে বাধা দিতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে দলনেতা ও গোলযোগে অন্যান্য উসকানিদাতা অবৈধ জনতাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

স্বল্প প্রাণঘাতী বা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার

বিভিন্ন কৌশলে শক্তি প্রয়োগ করেও অবৈধ জনতা ছত্রভঙ্গ না হলে বরং আরও সংগঠিত হওয়ার প্রবণতা দেখিয়ে মারমুখী আচরণ করলে, ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটালে এবং পুলিশ ও সাধারণ জনগণকে আঘাত করে আহত করলে কমান্ডার তাঁর সদস্যদেরসহ অবস্থান নেবেন। জলকামান, আর্মার্ড পার্সোন্যাল ক্যারিয়ার (এপিসি) ইত্যাদি ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। প্রয়োজনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে শটগান, এক্সপ্লোসিভ গ্রেনেড ও ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করবেন। পুলিশ সদস্যদের এ পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। জনতার ওপর গুলিবর্ষণের নির্দেশকে একটি চরম ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করতে হবে।

দলগত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, দেহের বা সম্পত্তি-সম্পর্কিত ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ন হলে সর্বশেষ ধাপে দলগত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যাবে। বেআইনি জনসমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে বিভিন্ন কৌশল ব্যর্থ হলে চরম ব্যবস্থা হিসেবে এই ধাপ কার্যকর হবে। সে ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে দক্ষ শুটার দিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দলগত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আক্রমণকারীকে প্রতিহত করার জন্য গুরুতর আঘাত এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যেতে পারে। দেহ বা সম্পত্তি-সম্পর্কিত ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে এই ধাপে বলপ্রয়োগ করা যাবে। তবে যতক্ষণ আতঙ্ক থাকবে, ততক্ষণ আত্মরক্ষার অধিকার থাকবে। তবে কখনোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই সশস্ত্র শক্তি প্রয়োগ করা যাবে না। আক্রমণকারীদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার প্রবণতা দেখলেই শক্তি প্রয়োগের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। এ পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে প্যারা মিলিটারি ও অন্যান্য ফোর্সের সাহায্য নেওয়া যাবে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. জারিফ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ যেন মানবাধিকার সমুন্নত রেখে সত্যিকারার্থে জনগণের জন্য কাজ করতে পারে—সুপারিশে সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পুলিশের দেওয়া কিছু প্রস্তাব সুপারিশ আকারে তুলে ধরা হয়েছে। আবার কিছু প্রস্তাব সংযুক্তি হিসেবে প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে।

যেমন কমিশন দেখতে চায় পুলিশ

পুলিশ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ‘পুলিশ কমিশন’ কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে সংস্কার কমিশনের কাছে বাহিনীটির পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে আছে এই কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ কমিশন হিসেবে বিবেচিত হবে। কমিশনের সদস্য হবেন ১১ জন। আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অথবা একজন অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। পুলিশ কমিশনের সদস্যরা স্থায়ী ও খণ্ডকালীন হিসেবে মনোনীত, নির্বাচিত বা নিযুক্ত হবেন।

জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে পরামর্শক্রমে চারজন সংসদ সদস্য কমিশনের সদস্য মনোনীত হবেন। চারজনের মধ্যে দুজন সরকারি দলের ও একজন প্রধান বিরোধী দলের এবং একজন অন্য দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে মনোনীত হবেন। রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক উভয় শ্রেণির সদস্যদের মেয়াদ হবে চার বছর। দ্বিতীয় মেয়াদে কেউ সদস্য হতে পারবেন না।

বাছাই কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে বিভিন্ন পেশা থেকে বাকি চারজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি পুলিশ কমিশনের সদস্য হবেন। এর মধ্যে একজন আইনজ্ঞ, একজন অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, সমাজবিজ্ঞান বা পুলিশিং বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একাডেমিশিয়ান ও একজন মানবাধিকারকর্মী থাকবেন। তবে চার ব্যক্তির মধ্যে অন্তত একজন নারী থাকতে হবে। বাকি দুই সদস্য হবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আইজিপি। আইজিপি কমিশনের সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

স্বাধীন পুলিশ কমিশন জরুরি

সংস্কার কমিশনের কাছে পুলিশের দেওয়া প্রস্তাবে সদস্যদের যোগ্যতা ও অপসারণের বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান ও অরাজনৈতিক সদস্যরা নিয়োগের আগে দুই বছরের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য, প্রতিনিধি বা জনসেবক হতে পারবে না। দেউলিয়া, ঋণখেলাপি বা কর ফাঁকিদাতা সদস্য হতে পারবেন না। বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং চাকরিতে লাভজনক পদে থাকবেন না, সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক অংশ বা স্বার্থ আছে এমন কোনো সংস্থায় চাকরিরত হবেন না। পাশাপাশি দুর্নীতি বা অন্য কোনো অসদাচরণের কারণে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারিত বা বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত হলে কিংবা ফৌজদারি অপরাধে কারাদণ্ড ভোগ করলে সদস্য হতে পারবেন না।

এসব প্রস্তাবের বিষয়ে বাহিনীটির সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ নিয়ে যত বিতর্ক, তার মূলে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব। পুলিশ পরিচালনায় ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, তারা আগামীর পুলিশ কেমন দেখতে চায়।

ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ হবে প্যানেল থেকে

সংস্কার কমিশনের কাছে পুলিশ যেসব প্রস্তাব দিয়েছে তার মধ্যে আরও আছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নিয়োগ হবে তিন সদস্যের প্যানেল থেকে। রাষ্ট্রপতির কাছে এই প্যানেল সুপারিশ করবে পুলিশ কমিশন। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি আইজিপি নিয়োগ দেবেন। কর্মকর্তার চাকরির বয়স যত দিনই থাকুক, আইজিপি পদে তিনি সর্বনিম্ন দুই বছর এবং সর্বোচ্চ তিন বছর থাকতে পারবেন। তা ছাড়া বিশেষায়িত ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং রেঞ্জ ডিআইজি নিয়োগও হবে প্যানেল থেকে।

আইজিপিকে চার কারণে অপসারণ করতে পারবে কমিশন। সেগুলো হলো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হলে, নৈতিক স্খলন, শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা এবং দেউলিয়া বা ঋণখেলাপি বা কর ফাঁকি দিলে।

পুলিশ কমিশনের কার্যাবলি কেমন হবে, পুলিশের প্রস্তাবে তা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, কমিশন জাতীয় জননিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন করবে। পুলিশসংক্রান্ত আইন, বিধিমালা ও প্রবিধি প্রস্তুত, সংশোধন বা বিয়োজনের প্রয়োজন হলে তার খসড়া তৈরি করে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। পুলিশের আইনগত বলপ্রয়োগের পরিধি ও কার্যক্রম নির্ধারণ করবে। পুলিশের নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রমিতকরণের কাজ করবে কমিশন।

কমিশনের তিন সদস্যের একটি অভিযোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকবে। এই কমিটি মূলত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বর্তমানে প্রচলিত যে অভিযোগ ব্যবস্থাপনা রয়েছে, তার আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আর চাই না

৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মানবজমিন

কারাগারে বন্দি সাবেক বেসামরিক ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খানের ফেসবুক আইডি থেকে দেয়া একটি পোস্ট নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। কারাগারে অবস্থান করে কীভাবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে।

ফারুক খান তার পোস্টে লিখেছেন, ‘অনেক চেষ্টা করে অনলাইনে এসেছি। জেলের চার দেয়াল আমাদের নিজ সত্তার সামনে দাঁড়া করায়। অনেক কিছু বলতে চাই, কিন্তু এখন সবই বলতে পারছি না। এতটুকুই বলবো, শেখ হাসিনাকে নেত্রী মেনেছিলাম, কিন্তু আজকে তার হঠকারীতার জন্যই আমাদের দলের এই পরিণতি। দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন এবং সর্বস্তরে শুদ্ধি অভিযান ব্যতীত কোনও ধরনের রাজনীতিতে ফেরা উচিত হবে না। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আর চাই না। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ফেরত চাই। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’

ফারুক খানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের এই স্ট্যাটাস নিয়ে নানামুখি আলোচনা চলছে। যদিও ফেসবুক পেজটি আবারও ডিজেবল করে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্ট্যাটাসের পর অ্যাকাউন্টটি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে টাস্কফোর্সের অন্তত ১টি সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে টাস্কফোর্সের সুপারিশমালা থেকে অন্তত একটি করে সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কোন সুপারিশটি বাস্তবায়ন করা হবে তা উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী বৈঠকে জানাতে হবে।

আজ সোমবার বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা। সেখানে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব তথ্য জানান।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন টাস্কফোর্সের প্রধান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে অর্থনীতি, ব্যাংক, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সামাজিক সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্লেষণ করে সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে রাশ টানার সুপারিশ

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

রাজধানীর ওপর চাপ কমাতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে রাশ টানার পরামর্শ দিয়েছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত সরকারি টাস্কফোর্স। এ জন্য সড়ক ব্যবহারে মাশুল ধার্যের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সহজ শর্তে গাড়ি কেনার ঋণ দেওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত বছরে ১০ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৩০ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদকে টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান করে ১২ সদস্যের এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের ‘অবকাঠামো ও সংযোগ: অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক অংশটি করেন পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক।

প্রতিবেদনের এই অংশে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার সুপারিশ করা হয়। এ জন্য রাজধানীতে কত গাড়ি চলতে পারবে, সেই সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলা হয়। গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য যেমন টাকা ব্যয় করতে হয়, তেমনি সড়ক ব্যবহারে গাড়ির জন্য মাশুল ধার্য করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে গাড়ি কেনার ঋণ কমিয়ে আনা এবং গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়।

প্রকল্পের অধীন যাতে বিলাসবহুল গাড়ি কেনা না হয়, সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জোর দেওয়া হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, লেগুনা, দুরন্তর মতো যানের চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়ে বড় ও দ্বিতল বাস বাড়ানোর কথা বলেছে টাস্কফোর্স কমিটি।

প্রতিবেদনে ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এখনই উড়ালসড়ক নির্মাণ বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। বাস, ট্রেনসহ গণপরিবহনে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অবশ্য চাষযোগ্য জমি বাঁচাতে শহরের বাইরে উড়ালসড়ক ও উড়াল রেলপথ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।

রাজধানীতে কত গাড়ি চলতে পারবে, সেই সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলা হয়। গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য যেমন টাকা ব্যয় করতে হয়, তেমনি সড়ক ব্যবহারে গাড়ির জন্য মাশুল ধার্য করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে গাড়ি কেনার ঋণ কমিয়ে আনা এবং গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়।

চার মন্ত্রণালয়কে এক করার প্রস্তাব

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে সড়ক, রেল, নৌ ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়কে এক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজেদের মতো করে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়। এতে সমন্বয়ের অভাব দেখা যায়।

বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণ কিংবা জমি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বড় জটিলতা সৃষ্টি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, রেল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল করতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জমি দিতে রাজি হয়নি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ের সঙ্গে জমি–সংক্রান্ত জটিলতায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে মাল্টিমোডাল হাব করা যাচ্ছে না। একই কারণে কমলাপুর রেলস্টেশনকেও মাল্টিমোডাল হাব করা যাচ্ছে না। রেলের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ঘিরেও।

রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জোর দেওয়া হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, লেগুনা, দুরন্তর মতো যানের চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়ে বড় ও দ্বিতল বাস বাড়ানোর কথা বলেছে টাস্কফোর্স কমিটি।

রাজধানী স্থানান্তরের সুপারিশ

প্রতিবেদনে বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা সূচক, বায়ুদূষণ সূচক, যানবাহনের গতির সূচকসহ আটটি বৈশ্বিক গবেষণা ও সমীক্ষার উদাহরণ টেনে বলা হয়, এর সব কটিতেই ঢাকার অবস্থান সবার নিচে কিংবা নিচের দিকে। এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছে টাস্কফোর্স কমিটি।

ঢাকার ৮৫ শতাংশ অবকাঠামো অননুমোদিত এবং তা অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে এটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। আর ১৯৯৭ সালে ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিবেগ যেখানে ঘণ্টায় ছিল ২৫ কিলোমিটার, তা ২০১৫ সালে ৬ দশমিক ৭ কিলোমিটারে এসে ঠেকে। এখন তা আরও কমেছে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে সড়ক, রেল, নৌ ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়কে এক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজেদের মতো করে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়। এতে সমন্বয়ের অভাব দেখা যায়।

নগরে একটি সমন্বিত গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয় টাস্কফোর্স কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ, ট্রাম, বিআরটি (বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট), এলআরটি (লাইট রেল ট্রানজিট), মনোরেল, সাব আরবান কমিউটার রেল, মেট্রোরেল ও রাইড শেয়ারিংয়ের মতো সব ধরনের পরিবহনব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

জানতে চাইলে অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে বা হচ্ছে, তা ‘জট লাগানো’ উন্নয়ন। এ জন্য লাখো কোটি টাকা খরচ করেও সুফল মিলছে না। তারা যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন, তা হচ্ছে জট ছোটানোর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এগুলো বাস্তবায়ন করে উপকৃত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো খাতে যে সংস্কারগুলো তারা প্রস্তাব করেছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে শক্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। আর যদি আমলাতন্ত্রের চাপে সংস্কার না করা হয়, ভবিষ্যতে কোনো উন্নয়নই সেভাবে কাজে লাগবে না।

অভ্যুত্থানের শহীদদের জীবনীগ্রন্থ তৈরি করেছে জামায়াত

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,সমকাল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শহীদদের জীবনী স্মারক গ্রন্থ তৈরি করেছে জামায়াতে ইসলামী। ১০ খণ্ডের এই স্মারকগ্রন্থের আড়াই হাজার পৃষ্ঠায় রয়েছে ৭৭০ শহীদদের নাম-পরিচয়, ছবি, জীবনের বর্ণনা। কীভাবে কোথায় তাঁরা শহীদ হয়েছেন, তা তুলে ধরা হয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীর জবানীতে।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহীদদের জীবনী স্মারকগ্রন্থ উন্মোচন করেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। এতে দেশের ১০টি অঞ্চল থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যরা যোগ দেন। রংপুর থেকে শহীদ আবু সাইদের বাবা গাজিউর রহমান রংপুর থেকে সংযুক্ত হয়ে বলেন, শেখ হাসিনা গুম খুন করেছে। ‘আয়নাঘর’ তৈরি করেছে। এর বিচার হতে হবে।

চার বিভাগকে প্রদেশ করার প্রস্তাব

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

পুরোনো চার বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে ভাগ করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। ক্ষমতার প্রত্যর্পণ বিবেচনায় দেশে বিশাল জনসংখ্যার পরিষেবা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে এ প্রস্তাব করেছে তারা। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরের জনসংখ্যা ও পরিষেবার ব্যাপ্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে নয়াদিল্লির মতো ফেডারেল সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ অর্থাৎ ‘রাজধানী মহানগর সরকার’ গঠনের সুপারিশও করেছে কমিশন।

গতকাল বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সুপারিশসহ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তুলে দেন কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। একই দিন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও হস্তান্তর করা হয়। পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে দুই কমিশনের কিছু কিছু সুপারিশ নিয়ে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। এর পর প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপও সাংবাদিকদের দেওয়া হয়।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং সরকারের কার্যপরিধি সুবিস্তৃত হওয়ার ফলে বর্তমান প্রশাসনিক ও স্থানীয় সরকার কাঠামো যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান নয়। অন্যদিকে, এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় মন্ত্রণালয় পর্যায়ে খুঁটিনাটি বহু কাজ করা হয়। প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা গেলে এককেন্দ্রিক সরকারের পক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ কমবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা নগরের ওপরও কমবে চাপ।

‘রাজধানী মহানগর সরকার’ গঠনের ব্যাপারে কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, অন্যান্য প্রদেশের মতোই এখানে নির্বাচিত আইনসভা ও স্থানীয় সরকার থাকবে। কমিশন বলেছে, ঢাকা মহানগরী, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে রাজধানী মহানগর সরকারের আয়তন নির্ধারণ করা যেতে পারে।

জেলা পরিষদ বাতিল

কমিশন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, স্থানীয় সরকারের একটি ধাপ হিসেবে জেলা পরিষদ বহাল থাকবে কিনা সে বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা রয়েছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কখনই নাগরিকের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হননি। কিছু জেলা পরিষদ বাদে অধিকাংশেরই নিজস্ব রাজস্বের শক্তিশালী উৎস নেই। ফলে অধিকাংশ জেলা পরিষদ আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তাই জেলা পরিষদ বাতিল করা যেতে পারে। জেলা পরিষদের সহায়-সম্পদ প্রস্তাবিত সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক সরকারের কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে।

পৌরসভা শক্তিশালীকরণ

পৌরসভার গুরুত্ব বিবেচনায় স্থানীয় সরকার হিসেবে একে অধিকতর শক্তিশালী করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের মতে, পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন ওয়ার্ড মেম্বারের ভোটে। কারণ, চেয়ারম্যান একবার নির্বাচিত হলে মেম্বারদের আর গুরুত্ব দেন না।

উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করা

স্থানীয় সরকার হিসেবে উপজেলা পরিষদকে আরও শক্তিশালী করার  সুপারিশ করা হয়েছে। তবে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বাতিল করা যেতে পারে। উপজেলা পরিষদকে আরও জনপ্রতিনিধিত্বশীল করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশকে আবর্তন পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্য হওয়ার বিধান করার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত না রেখে তাঁকে শুধু সংরক্ষিত ও বিধিবদ্ধ বিষয়– যেমন আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ইত্যাদি দেখাশোনার ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য তাঁকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখা। একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।

ইউনিয়ন পরিষদ

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন মেম্বারের ভোটে। এ ছাড়া প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে নারী মেম্বার করার ব্যাপারেও সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সংখ্যা জনসংখ্যা অনুপাতে ৯ থেকে ১১ করা যেতে পারে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দু’জন সদস্য নির্বাচিত হবেন, যাদের মধ্যে একজন অবশ্যই নারী হতে হবে বলে বিধান করার সুপারিশ করা হয়। ফলে একদিকে নারীদের ৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব এবং তাদের কর্ম এলাকা সুনিশ্চিত হবে।

ইউনিয়ন পরিষদকে অধিকতর দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়, উপানুষ্ঠানিক ও মসজিদভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদকে দেওয়া যেতে পারে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কৃষি ও পানিবিষয়ক কমিটি গঠন করা যেতে পারে। একইভাবে পরিষেবা-সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য কমিটি গঠন করা যেতে পারে।  ইউনিয়ন পরিষদে বর্তমানে যে গ্রাম আদালত বা সালিশি ব্যবস্থা রয়েছে তা আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করা হলে গ্রাম পর্যায়ে মামলা-বিরোধ ইত্যাদি কমে আসবে।

কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ গঠনের প্রস্তাব

কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। ‘জনমুখী প্রশাসনের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত পুনর্গঠন’ শিরোনামে এই নতুন দুটি বিভাগ গঠনের সুপারিশ করা হয়। কমিশন তাদের প্রস্তাবে বলেছে, বর্তমানে দেশে ৮টি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে। ভৌগোলিক ও যাতায়াতের সুবিধা বিবেচনায় কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ গঠনের দাবি অনেক দিনের। এ ছাড়া জনসংখ্যা ও যোগাযোগ বিবেচনায় ১০টি বিভাগকে পুনর্বিন্যাস করার প্রস্তাবের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে কমিশন।

ডিগ্রি কলেজ এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি

ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজকে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ২২০০টির বেশি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান চালু আছে। ঢাকা শহরের  সাতটি কলেজই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বাকি কলেজের শিক্ষা প্রশাসন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মতো স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ফলে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব হারিয়ে ফেলেছে।

বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের ১১টি অনুষদের আওতায় ৪৫টি বিভাগে অধ্যয়নরত প্রায় ৩৪ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে দুরূহ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজকে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির  সুপারিশ করছে কমিশন।

নাগরিক সেবায় পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল চায় কমিশন

সরকারি চাকরি ছাড়াও পাসপোর্ট, দ্বৈত নাগরিকত্ব, সমাজসেবা সংস্থা বা এনজিওর বোর্ড গঠনের মতো নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল করার জন্যও সুপারিশ করেছে কমিশন। এসব বিষয়ে বলা হয়, একজন নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র থাকলে তার বিষয় নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।

পুলিশের বদলে ইমিগ্রেশন অফিসার নিয়োগ

বর্তমানে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে পুলিশ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বের বহু দেশে পুলিশের বদলে আলাদা ইমিগ্রেশন অফিসার নিয়োগ করা হয়। বাংলাদেশেও যোগ্যতার ভিত্তিতে আলাদা ইমিগ্রেশন অফিসার নিয়োগ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ থেকে ২০ শতাংশ ডেপুটেশনে রাখা যেতে পারে। ইমিগ্রেশন অফিসারদের দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা যেতে পারে।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস বর্তমানে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছে। অন্যদিকে ভূমি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বিভিন্ন অফিস ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও হস্তান্তর-সংক্রান্ত দুটি আলাদা অফিস থাকায় জনদুর্ভোগ ও জটিলতা বাড়ে। এমন দ্বৈত ব্যবস্থাপনা বাতিল করে ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিসকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার পদ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কর্মরত কানুনগোদের পিএসসির পদোন্নতি পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অধীনে পদোন্নতি ও পদায়নের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে।

উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট স্থাপন

দেশের উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট পুনঃস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এ বিষয়ে কমিশন বলেছে, এটি করা হলে সাধারণ নাগরিকরা অনেক বেশি উপকৃত হবে। এ বিষয়েও সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছে তারা।

কমিশন ‘উপজেলা জননিরাপত্তা কর্মকর্তা’ পদের সুপারিশ করেছে। কমিশন বলেছে, থানার ‘অফিসার ইনচার্জ’ এর কাজ ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার তদারকির জন্য উপজেলা পর্যায়ে একজন সহকারী পুলিশ সুপারকে ‘উপজেলা জননিরাপত্তা কর্মকর্তা’ হিসেবে পদায়ন করা যেতে পারে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় লাগবে বোর্ডের সুপারিশ

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

দণ্ডিত অপরাধীকে ক্ষমার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতা কমানোর সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকার এ বিষয়ে একটি বোর্ড করবে। বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি দণ্ডিত ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পারবেন।

গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাইম মোমিনুর রহমান।

সংস্কার প্রস্তাব তৈরিতে বিরাজমান সমস্যা, সংবিধানে বিচার বিভাগ-সংক্রান্ত বিধান, সংশ্লিষ্ট আইন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, জনবল, আর্থিক এবং ভৌত ও লজিস্টিক বিষয়াদির দিকে নজর দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিশন পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য বিচারক নিয়োগে কমিশন, সব প্রশাসনিক বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ, জেলা পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত, উপজেলায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব করেছে।

বিচারপতি নিয়োগ ও শৃঙ্খলা

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ও প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে ৯ সদস্যের বিচারপতি নিয়োগ কমিশন গঠনে আইন করার সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত প্রাধান্য দিয়ে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।

প্রস্তাবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক, সাবেক বিচারক ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য পদ্ধতি ছাড়া অপসারণযোগ্য নন– এমন পদধারীদের জন্য আচরণবিধি করার সুপারিশ রয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুরোধ ছাড়াও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পরিচালনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করার ক্ষমতা জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়

সংবিধান সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুর নির্বাহী বিভাগের কাছ থেকে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। বাজেটে বিচার-কর্মবিভাগের বিচারক ও কর্মচারীদের পারিশ্রমিকের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে।

বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের বাজেট নির্ধারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটি কমিটি থাকবে এবং সে কমিটিতে নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধিরা সদস্য থাকবেন। বিচারপতিদের পারিতোষিক, বিশেষাধিকার ও অন্যান্য ভাতা নির্ধারণ, পরিবর্তন ও সংশোধন-সংক্রান্ত সুপারিশের জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠনের সুপারিশও রয়েছে প্রতিবেদেন।

স্থায়ী অ্যাটর্নি ও স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস

সুপ্রিম কোর্ট এবং অধস্তন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা পরিচালনার জন্য একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের পাশাপাশি স্থায়ী পেনশনযোগ্য সরকারি চাকরি হিসেবে প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত সার্ভিসের সুপ্রিম কোর্ট অ্যাটর্নি সার্ভিস এবং জেলা অ্যাটর্নি সার্ভিস হিসেবে দুটি শাখা প্রস্তাব করা হয়েছে।

সুপারিশে নতুন আইনের মাধ্যমে বিদ্যমান বিভিন্ন তদন্ত ইউনিটে নিয়োজিত জনবলের সমন্বয়ে একটি পৃথক তদন্ত সার্ভিস গঠনের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধিসহ অন্যান্য আইন সংশোধন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ও ১৯৪৩ সালের পুলিশ প্রবিধান সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সার্ভিস পুলিশ বাহিনী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকবে। নিয়োগ, চাকরির শর্তাবলি, নিয়ন্ত্রণ, বাজেট, অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোভুক্ত হবে। দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতা ব্যবহারে সার্ভিস স্বাধীন থাকবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে তদন্ত সার্ভিস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও উচ্চতর কমিশনের অনুমতি ছাড়া কাউকে চাকরিচ্যুত করতে পারবে না।

আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ

সংবিধান সংশোধন করে বিভাগীয় সদরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে কমিশন। তবে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখায় বিভাজিত করা যাবে না। অথবা রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ্ন করা যাবে না। দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সিনিয়র সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। অধস্তন আদালতের সাংগঠনিক কাঠামোর বিষয়ে প্রস্তাবে বলা হয়, মামলা ও জনসংখ্যার আলোকে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো এবং পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিচার কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি

বিচার কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়ন, দেওয়ানি আদালতে ই-ফাইলিং কার্যক্রম শুরু, ই-ফাইলিংয়ের মামলাগুলোকে কোর্ট ফি হ্রাস/ছাড় ও ফাস্ট ট্রাকের মাধ্যমে দ্রুত শুনানি করে নিষ্পত্তিতে অগ্রাধিকারের মাধ্যমে ই-ফাইলিংকে উৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। সব আদালতে বর্তমান ব্যবস্থার পাশাপাশি ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ই-ফাইলিংসহ সব কোর্ট ফি, খরচ, জরিমানাসহ অন্যান্য ফি পরিশোধের ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে।

২৩ জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণ কার্যক্রম, ৩৪ উপজেলার ৫১ চৌকি আদালতের জন্য পৃথক ভবন নির্মাণ, আদালত প্রাঙ্গণে সাক্ষীদের অপেক্ষার জায়গা নির্ধারণ, এজলাসে বসার ব্যবস্থা, আদালতের হাজতে (নারী-পুরুষ) হাজতিদের বসার ব্যবস্থা, প্রতিটি আদালত প্রাঙ্গণে নারী-শিশুদের উপযোগী শৌচাগার ও অপেক্ষাগার স্থাপন, এজলাসে আসামিদের জন্য লোহার খাঁচা থাকলে অপসারণ ও বিচারপ্রার্থীদের সুবিধার্থে আদালত ভবনের নিচতলায় ‘তথ্য ডেস্ক’ স্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন।

প্রকাশ্য আদালতে রায় ও আদেশ ঘোষণা এবং প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ওয়েবসাইটে রায় বা আদেশের কপি আপলোড করা, শতভাগ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের সাক্ষ্য সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন অনুসারে অনলাইনে গ্রহণ, সমন জারি কার্যকর করার জন্য পোস্টাল অ্যাক্টের সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে।

বিচার বিভাগের দুর্নীতি প্রতিরোধ

সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন পর্যায়ে বিচারকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য দুর্নীতিবিরোধী সুস্পষ্ট বিধান-সংবলিত আচরণ বিধিমালার পাশাপাশি তিন বছর পরপর সব পর্যায়ের বিচারকদের সম্পত্তির বিবরণ সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে প্রকাশের প্রস্তাব করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ লিখিতভাবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে পৌঁছানোর জন্য অভিযোগ বাক্স করতে বলা হয়েছে।

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন ও কমিটিকে প্রতি তিন মাস পরপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

আইনজীবীদের দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য বার কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রতি জেলায় পৃথক অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য তদন্ত কমিটি, বিচারাঙ্গনে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য একটি অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা চালুর প্রস্তাব রয়েছে।

মামলাজট নিরসন ও মোবাইল কোর্ট

বিচারাধীন ফৌজদারি আপিল, ফৌজদারি রিভিশন, দেওয়ানি আপিল ও দেওয়ানি রিভিশন মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন জেলার অবসরপ্রাপ্ত সৎ, দক্ষ এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জেলা জজদের ২-৩ বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের (মোবাইল কোর্ট) দণ্ড প্রদানের ক্ষমতা সংশোধন করে শুধু জরিমানার বিধান এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে।

মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধে একটি আইন প্রণয়নে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের সুপারিশ করা হয়েছে।

বিচারাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী বা অন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধে আইন প্রণয়ন এবং বিচারাঙ্গনে আইনজীবীদের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নিরুৎসাহিত ছাড়াও বার সমিতি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ বিলোপের প্রস্তাব রয়েছে।

আইন পেশা সংস্কার

আইনজীবীদের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ঢাকায় স্থায়ীভাবে পাঁচ এবং ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলায় একটি করে ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন। আইনজীবীর ফি নির্ধারণে লিখিত চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবার পরিশোধের পর মক্কেলকে একটি রসিদ দেওয়ার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত রাখতে ভারতকে অনুরোধ বাংলাদেশের

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

দিল্লিতে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য ও বিবৃতি দেওয়ায় ভারতের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনাকে বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত রাখতে ভারতকে অনুরোধও জানানো হয়েছে। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে তার হাতে একটি প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

ভারত সরকারকে অবিলম্বে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার চেতনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) ভারতে থাকাকালীন অবস্থায় তাঁকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এই ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট এবং উসকানিমূলক বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত রাখতে ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

ইউনূস সরকারের ৬ মাসে কতটা বদলাল বাংলাদেশ

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

রাষ্ট্র দর্শন ও রাজনীতির গতিপথে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। কিন্তু গরিব মানুষের প্রধান মাথাব্যথা যে সংসার চালানোর দায়, সেখানে কোনো তফাত দেখছেন না মধ্যবয়সী আফতাবুর রহমান।

ঢাকার তেজগাঁওয়ের একটি কলেজের কর্মচারী আফতাব যে বেতন পান, তাতে প্রতিটা পয়সা হিসাব করে তার মাস চলতে হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ছয় মাসে বাংলাদেশের কী পরিবর্তন দেখছেন জানতে চাইলে শুরুতেই তিনি বললেন বাজার দরের কথা।

“গতকাল সাত দোকান খুঁজে এক লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল কিনেছি। দাম নিয়েছে ১৯০ টাকা। সরকার পাল্টাইছে, বাজারে কিছু পাল্টায় নাই।”

সরকার গত ডিসেম্বরে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করেছে ১৭৫ টাকা। কিন্তু দোকানিরা ‘সঙ্কটের’ কথা বলে দাম বেশি রাখছে বলে জানালেন আফতাব।

নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বললেন, “নির্দিষ্ট দামের কথা বললে দোকানদার বলে, ‘সরকার থেকে গিয়ে কেনেন’।”

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার বিপরীতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে উত্তাপের মধ্যে ছয় মাস পূর্ণ করল নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এ সরকারের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। সেই সংস্কারের উদ্যোগ এখনও কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সরকারের তরফে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং রোডম্যাপ তৈরির কথা বলা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক না হওয়ায় জনমনে স্বস্তি না ফেরার কথা বলছেন বিশ্লেষক আর নাগরিকরা; এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে নানা অপরাধের বিচারের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার।

অর্থনীতিকে ‘সঠিক পথে’ ফেরানোর আশ্বাস দিয়ে সরকার নানান উদ্যোগের কথা বললেও সামষ্টিক অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক আশাদায়ক কোনো ফল দেখাচ্ছে না বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত; এর মধ্যে নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে কষ্টের কথাই বলছেন নিম্ন আর মধ্যবিত্তরা।

যে প্রেক্ষাপট ও জনসমর্থন নিয়ে ৮ অগাস্ট অধ্যাপক ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল, তার বিপরীতে এখনও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না দেখার কথা বলছেন রাজনীতির ধারাভাষ্যকাররা।

বিগত সরকারের আমলের মতোই চলছে জনপ্রশাসন

৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা ও সংকট জনপ্রশাসনে পুঞ্জীভূত হয়েছে। এসব সংকট নিরসনে সময় প্রয়োজন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এগুলো নিরসন হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসেও গতি আসেনি জনপ্রশাসনে। পতিত বিগত সরকারের সময়কার মতোই এখনো মাথাভারী প্রশাসন (যেখানে শীর্ষ পর্যায়ে অতিরিক্ত জনবল আর নিচের দিকের পদগুলোয় লোকবল ঘাটতি), পুরনো আমলাদের ওপর নির্ভরতা, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আধিক্য ও সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ নানা সংকটকে সঙ্গে নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে জনপ্রশাসন। এ জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সম্প্রতি তাদের চূড়ান্ত সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যদিও এসব সুপারিশের কতটা আসলে বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা ও সংকট জনপ্রশাসনে পুঞ্জীভূত হয়েছে। এসব সংকট নিরসনে সময় প্রয়োজন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এগুলো নিরসন হতে পারে। পাশাপাশি আমলাতন্ত্রের সংস্কৃতি, চর্চা ও সংশ্লিষ্টদের মানসিকতায় পরিবর্তনেরও জোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

সরকারের মন্ত্রণালয় আছে ৪৩টি। আর বিভাগ ৬১টি। বিগত সরকারের পথ অনুসরণ করে এখনো এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ চলছে মাথাভারী প্রশাসন দিয়ে। বর্তমানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোয় ৯০টি গ্রেড-১ পদ রয়েছে। এ পদের আওতায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, সিনিয়র সচিব, সচিব এবং বিভিন্ন অধিদপ্তর, বোর্ড, করপোরেশন, ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালকরা কর্মরত রয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত হালনাগাদকৃত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গ্রেড-১ পদে ৯৩ কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোয় ১২৭টি গ্রেড-২ পদ রয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও সমমর্যাদার কর্মকর্তারা এ পদের আওতাভুক্ত। ১২৭টি পদের বিপরীতে ৪২২ জন কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। গ্রেড-৩ বা যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার ৩৭৬টি পদের বিপরীতে নিয়োজিত রয়েছেন ৮২১ জন কর্মকর্তা।

বিগত সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরও এ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে প্রশাসনে সচিব পদে কর্মরত আছেন ৭৬ জন। তাদের মধ্যে ১৫ জন কর্মরত আছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ভিত্তিতে। বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদ, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর শীর্ষ পদগুলোয় চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

এরদোগানের একে পার্টিসহ তিন দেশের চার দলের আদলে নতুন দল করতে চান ছাত্ররা

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের এক দফার পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তারই অংশ হিসেবে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতারা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন। আর এ নতুন দল পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরুণ নেতারা। তবে দলের কাঠামো ও আদর্শিক ভিত্তি কী হবে তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। নতুন দলের কাছে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রত্যাশা কী এবং নতুন বাংলাদেশ কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে একটি জরিপ চালানোর কথাও বলা হয়েছে এরই মধ্যে।

দল গঠনের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা জানান, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এবং দেশের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে তারা নতুন দল নিয়ে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে একক কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের আদর্শে নয়; বরং বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বিভিন্ন দেশের সফল রাজনৈতিক দলগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান। আপাতত তিন দেশের চারটি জনপ্রিয় দলকে নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সেগুলো হলো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টি ও দেশটির অনেক পুরনো দল জাস্টিস পার্টি, পাকিস্তানের দল ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম-আদমি পার্টি। দলগুলোর গঠন ইতিহাস, আদর্শ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, মোটো বা স্লোগানসহ বিভিন্ন বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ৮১ নেতাকর্মী আটক

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানে গাজীপুর জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ৮১ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি জানান, গাজীপুরের ৫ থানায় আটক করা হয়েছে ৪০ জনকে। অপরদিকে মহানগরের ৮ থানা থেকে আটক করা হয়েছে ৪১ জনকে।

শনিবার রাতে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে মহানগর ও জেলার ৬৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার রাতে আটক হয় ১৬ জন।

গাজীপুর জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাতভর অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে। অভিযানে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।

যে দেশে বিপ্লব হয়েছে, সে দেশে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখে না: সচিব নাসিমুল

“অতটা অমানবিক হতে পারেনি সরকার। আমরা কিছুটা রিফর্ম করেছি। কিছুটা রিয়ালাইজ করেছি যে কিছু লোক ভয়ে (গত সরকারের কর্মকাণ্ড সমর্থন) করেছে, প্রেশারে করেছে, বিভিন্ন কারণে করেছে।”

যে দেশে বিপ্লব হয়েছে, সে দেশে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখে না: সচিব নাসিমুল

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, বিপ্লব যে দেশে হয়, সেদেশে ‘পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখে না’।

তবে বাংলাদেশে সরকার ‘অতটা অমানবিক’ হতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, দেশকে যারা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধেই ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালিত হচ্ছে।

“আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছি, তার অনেকগুলো চলমান রয়েছে। আগামীতে তার কিছুটা আমরা রিভিউ করতে যাচ্ছি। তার একটা যেটা কালকে হয়েছে ডেভিল হান্ট অপারেশন।

“যেখানে যৌথভাবে সকলে ফোকাসড ওয়েতে কিছু কাজ করবে। যেসব কাজের মধ্যে দেশের স্টেবল অবস্থাকে আনস্টেবল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটাকে আমরা নিউট্রালাইজ করব। এর জন্য আইনানুগ পন্থায় যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটা নেব।”

পদোন্নতি পেলেন ১১৯ সচিবসহ প্রশাসনের ৭৬৪ জন সাবেক কর্মকর্তা

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় ১৬ বছরে জনপ্রশাসন থেকে অবসরে যাওয়া সাবেক ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত এই পদোন্নতি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ১১৯ জন সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

আজ রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সচিব ছাড়াও গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড) পদে ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন ও উপসচিব পদে চারজনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়। সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর সুপারিশ

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটি।

একই সঙ্গে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদ বিলুপ্ত করে প্রবেশন পর্যায়ে ‘শিক্ষক’ পদে দ্বাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে দেওয়া এবং পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন কমিটির আহ্বায়ক মনজুর আহমেদ।

বর্তমানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ত্রয়োদশ গ্রেডে ও প্রধান শিক্ষকরা একাদশ গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন।

এদিন বিকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মনজুর আহমেদ বলেন, “শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের শিক্ষাকর্মীদের পেশাগত মর্যাদা, পদোন্নতি ও পেশাগত অগ্রগতির ব্যাপারে নির্দিষ্ট ও দ্রুত পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদবি বিলুপ্ত হবে, ‘শিক্ষক’ হিসেবে কর্মজীবনের সূচনার পর ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হিসেবে পরবর্তী পদোন্নতি হবে। সেইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক শিক্ষকসহ বিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে।”

প্রচলিত কাঠামো তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে পদায়নের দাবি উচ্চ আদালতে সমর্থন পেয়েছে, কিন্তু সরকার এ নিয়ে রিভিউ আবেদন করেছে। সমগ্র পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কমিটির অর্ন্তবর্তী সুপারিশ হল, শিক্ষক পদে প্রবেশ দ্বাদশ গ্রেডে, দুই বছর পর স্থায়ীকরণ, আরো দুই বছর পর ১১তম গ্রেডে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি।

“প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে সুপারিশ হল, সরকারের রিভিউ আবেদন প্রত্যাহার ও প্রধান শিক্ষকের জন্য দশম গ্রেড নির্ধারণ এবং সকল প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ।”

সুপারিশের বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটি।

সেখানে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ বৃদ্ধি এবং সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য থেকে দায়িত্বভাতাসহ পদায়নের সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে সুপারিশে শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক নিয়মানুসারে উচ্চতর স্কেল পাওয়ার যোগ্য বলে মত দেওয়া হয়।

এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পদোন্নতিযোগ্য পদসমূহ ও শূন্যপদ পূরণ, সমন্বিত গ্রেডেশন, পারস্পরিক বদলি, আঞ্চলিক অফিস স্থাপন এবং প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে সংস্কারের জন্য গঠিত এ পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে।

গত বছরের অক্টোবরে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কারে পরামর্শক কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিটিতে একজন সদস্য সচিব এবং ৭ জন সদস্য ছিলেন।

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন অংশীগোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিনিময় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের ১১টি জেলার ১২টি উপজেলায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে সুপারিশমালা তৈরি করেছে সংস্কার কমিটি।

সেখানে থেকে পাওয়া প্রস্তাব থেকে প্রতিবেদনে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংক্রান্ত আটটি বিষয়ে শতাধিক প্রধান ও আনুসাঙ্গিক সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

পাশাপাশি এসব প্রস্তাব ও আনুসাঙ্গিক সুপারিশ বাস্তবায়নে ‘আশু, মধ্যমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে করণীয়’ চিহ্নিত করেছে কমিটি। তাদের পক্ষ থেকে পর্যালোচনায় ও সুপারিশ তৈরিতে দুটি বিষয় বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ছাড়াও আরও বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন অধ্যাপক মনজুর।

তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হিসেবে শিশুদের বাংলা ও গণিতের ভিত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

“বাংলা শুধু একটি বিষয় নয়, এটি অন্য সব বিষয়ে প্রবেশের চাবিকাঠি। গণিতে মৌলিক দক্ষতা অর্জিত না হলে শিক্ষার্থীরা শিখনে ক্রমাগত পিছিয়ে থাকবে। এ জন্য প্রতিদিন এ-দুটি বিষয়ে ৬০ থেকে ৭৫ মিনিট করে শিক্ষণ-শিখন সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

“শিখন সময় বৃদ্ধির জন্য সব বিদ্যালয়কে স্বল্প সময়ের মধ্যে এক শিফটের স্কুলে পরিণত করা প্রয়োজন। পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রমে (পিইডিপিএস) অন্তত ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ে এবং দশ বছরের মধ্যে সকল বিদ্যালয়ে এক শিফট চালু করা যেতে পারে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত অনূর্ধ্ব ১:৩০ নিশ্চিত করা দরকার।”

পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য শ্রেণির ভেতরে ও বাইরে ‘নিরাময়মূলক সহায়তা’ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, সেজন্য স্কুল স্থানীয়ভাবে প্যারা-টিচার (শিক্ষা-সহায়ক) নিয়োগ দিতে পারে।

সমাপনীর পরিবর্তে ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট

দেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের মূল্যায়নের বিষয়টিও সংস্কার প্রস্তাবে এসেছে। এ নিয়ে কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়, ধারাবাহিক ও বার্ষিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রত্যেক শিশুর শিখন-অগ্রগতি যাচাই করতে হবে।

কমিটির সুপারিশ, প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা এ ধরনের পরীক্ষার পরিবর্তে ‘ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্টে’র (এনএসএ) আদলে মৌলিক দক্ষতা জরিপের মাধ্যমে (তবে সহজে বাস্তবায়নযোগ্য) প্রতিটি বিদ্যালয়কে মান অনুযায়ী সবুজ, হলুদ, লাল রঙে চিহ্নিত করা হবে। সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হবে প্রতি বিদ্যালয়কে সবুজে রূপান্তরিত করা।

দরিদ্র পরিবারের ব্যয় লাঘবের সুপারিশ

দেশের প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে দরিদ্র পরিবারের ব্যয় লাঘবে নানা সুপারিশ তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এর মধ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে মিড-ডে-মিল প্রবর্তন, খাতা-কলম-ব্যাগ ইত্যাদি সামগ্রী বিতরণ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্ধারিত অতি দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য বর্ধিত হারে অর্থ সাহায্য দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।

প্রাথমিকের কাঠামোগত সংস্কারে জোর দেওয়া হয়েছে ‘প্রতিরোধ এবং প্রতিকারমূলক’ বিষয়েও। সেজন্য সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি, অসদাচরণ ও কর্তব্যে অবহেলা নিয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য দেশব্যাপী হটলাইন চালু এবং সব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা, সেসব তথ্য নিয়মিত জনসম্মুখে প্রকাশের সুপারিশ করেছে কমিটি।

এছাড়া শিক্ষা শাসন ও ব্যবস্থাপনার প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণের উদ্দেশ্যে দেশের দশ জেলার ২০টি উপজেলায় পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় পাইলট প্রকল্প শুরুর সুপারিশ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মনজুর বলেন, “চলমান ৫ বছর বা তার বেশি বয়সের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার যথাযথ মানোন্নয়ন এবং ৪ বা তার বেশি বয়সী শিশুদের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি অন্যান্য বিদ্যালয়েও অভিভাবকদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এর বিস্তার প্রয়োজন।”

ঝরে পড়া ঠেকাতে ‘বিশেষ সুপারিশ’

বিদ্যালয়-বহির্ভূত ও ঝরে পড়া শিশুদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর নেতৃত্বে ‘প্রতিষ্ঠিত ও দক্ষ’ এনজিওদের সহযোগিতায় কার্যকর মডেল তৈরির বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে পরামর্শক কমিটির সুপারিশে । সেখানে সুযোগবঞ্চিতদের জন্য ‘বিশেষ উদ্যোগের’ কথা বলা হয়েছে।

এর মধ্যে বিভিন্নভাবে সুযোগবঞ্চিত শ্রমজীবী, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের এবং জেন্ডার ন্যায্যতা ও জলবায়ু অভিঘাত বিষয়ে ও দুর্গম এলাকার শিশু ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বলেছে কমিটি।

শিক্ষা কমিশন গঠন

বিদ্যালয়ে শিক্ষার সামগ্রিক পরিকল্পনা ও স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশের পাশাপাশি কমিটির পক্ষ থেকে সর্বজনীন প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মানসম্মত বিদ্যালয় শিক্ষার খাত পরিকল্পনা এবং স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষকদের ‘প্রি-সার্ভিস শিক্ষা’ ও যোগ্যতা অর্জন এবং শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিরন্তর পেশাগত উন্নয়নের বিষয়েও সুপারিশ রেখেছে কমিটি।

শিক্ষা পরামর্শক পরিষদ

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে কমিটির সুপারিশে। সমগ্র শিক্ষা খাতের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি ‘শিক্ষা পরামর্শক পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা পরে এটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশনে রূপান্তরিত হতে পারে বলে কমিটি মনে করে।

কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, “শিক্ষা সংস্কারের জন্য কোনো সহজ জাদু-সমাধান নেই। প্রদত্ত সুপারিশ সম্পর্কে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সময়াবদ্ধ সমন্বিত বাস্তবায়ন কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম ও সরকারের বার্ষিক বাজেট হবে সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রধান বাহন।”

অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন, সমালোচনা

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

জনপ্রশাসনে ৭৬৪ কর্মকর্তার ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যে এর সমালোচনা করছেন। বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

জনপ্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ (অতিরিক্ত সচিব) থেকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের বঞ্চিত দেখানো সঠিক কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, সবাই তো আর সচিব হবেন না। পাশাপাশি একটি ব্যাচের অনেক বেশি কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অর্থসংকটে থাকা সরকার কেন এত তড়িঘড়ি করে অবসরপ্রাপ্তদের সুবিধা দিতে অগ্রাধিকার দিল, সেটা নিয়েও কথা বলছেন কেউ কেউ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরে অবসরে যাওয়া ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে গতকাল রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাঁরা এখন পদোন্নতি পাওয়া পদ অনুযায়ী মর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা পাবেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গত ২৪ ডিসেম্বর জানিয়েছিল বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির জন্য বকেয়া বেতন ও ভাতাদি বাবদ সরকারের ৪২ কোটি টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া তাঁদের পেনশন বাবদ বছরে অতিরিক্ত ৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘পদোন্নতি বঞ্চিত কমিটি থেকে প্রথমে আমাদের সবাইকে বলা হয়েছিল, অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হবে না। কারণ, অতিরিক্ত সচিব প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদোন্নতি প্রাপ্ত পদ। আমরা অতিরিক্ত সচিবেরা তা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ১১৯ জনের মধ্যে ৫১ জন অতিরিক্ত সচিবকে সচিব করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫ জনই একই ব্যাচের। এর মধ্যে অনেকেই কোনো প্রকার বঞ্চনার স্বীকার হননি।’

হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ও সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল। স্বৈরাচারী সরকার নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার মারণাস্ত্র দিয়ে গুলি, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, চিকিৎসা পেতে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে সরকার। মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকতে আন্দোলনকারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ১২৭ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ওই সময়ের নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিগত সরকার ও শাসক দল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ওএইচসিএইচআরের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনটি আজ বুধবার জেনেভা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রতিবেদনের খসড়া দিয়েছিল। কোনো মতামত থাকলে তাতে যুক্ত করার জন্য সময়সীমা দিয়ে ওএইচসিএইচআর প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে।

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দল প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেট ও গাজীপুর—এই আট শহরে অনুসন্ধান চালায়। মূলত যে শহরগুলোতে বেশি মাত্রায় বিক্ষোভ হয়েছিল, সেসব স্থানে গিয়ে সরেজমিনে কাজ করে জাতিসংঘের দলটি। প্রতিবেদন তৈরিতে অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী ব্যক্তিদের নিয়ে ২৩০টির বেশি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আরও ৩৬টি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এই ৩৬ জনের মধ্যে সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারাও আছেন, যাঁরা ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে সরাসরি অবগত ছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারী ও বিরোধী মত দমনের কৌশল হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত দিকনির্দেশনায় মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনের সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেল (এনটিএমসি), পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের মতো সংস্থাগুলো আন্দোলনকারীদের সহিংসভাবে দমনের মাধ্যমে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।

মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নানা পদক্ষেপ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কোর কমিটিকে নিয়ে বৈঠকে নিয়মিতভাবে সভাপতিত্ব করতেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কোর কমিটির বৈঠকে সামগ্রিক পদক্ষেপের কৌশলগত নির্দেশনার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে বাহিনী মোতায়েন ও সুনির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অভিযান নিয়ে আলোচনা হতো। এর পাশাপাশি সমন্বিতভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমন্বয় প্রক্রিয়ার সম্পূরক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও এই প্রক্রিয়ার সরাসরি যুক্ত ছিল। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এসবি, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের প্রধানদের কাছে থেকে নিয়মিতভাবে সরাসরি প্রতিবেদন পেতেন। এ ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের মধ্যে ২১ জুলাইয়ের একটি প্রতিবেদনে আন্দোলনকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়ে শেখ হাসিনাকে সতর্ক করা হয়েছিল। একই ধরনের উদ্বেগ আগস্টের শুরুতেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়। ২৯ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আন্দোলন-সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন। আর আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারা সরাসরি ও টেলিফোনে নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের আদেশ দিতেন ও সার্বিক অপারেশন পর্যবেক্ষণ করতেন।

যাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জাতিসংঘের কাছে দাবি করেছেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনের মধ্যে থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাহিনীগুলো নিজে থেকে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে। তবে এসব তথ্যের যথাযথ সত্যতা খুঁজে পায়নি জাতিসংঘ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ঢাকা শহরসহ সারা দেশে একই ধরনের সমন্বিত বল প্রয়োগ করেছে। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক প্রতিবেদন মাঠ থেকে পেয়েছেন। তবে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে শেখ হাসিনাসহ অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তা গোপন করতে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি আন্দোলনকারী ও বিরোধী দলগুলোর ওপর দোষ চাপাতে মনোযোগী ছিলেন।

সাবেক ও বর্তমান কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে, শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগে সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৮ জুলাই কোর কমিটির বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) আন্দোলনকারীদের ওপর আরও মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন স্বাধীনভাবে পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা ও তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী পূর্ববর্তী সরকার, আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হাজারো আন্দোলনকারীকে গুরুতরভাবে আহত করে। নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক রাখতে স্বেচ্ছাচারিতা, নির্যাতন এবং নানাভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা। ওই সময় তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমান্তরালভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুজনই নিয়মিত বিভিন্ন উৎস থেকে মাঠের চিত্র নিয়ে প্রতিবেদন পেতেন। মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে ২১ জুলাই ও আগস্টের শুরুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। এরপরও রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিজিবি, র‌্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ, ডিবিকে বলপ্রয়োগের সরাসরি আদেশ ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সদস্য, যাঁরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত বা জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সরকারের কোনো সত্যিকারের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

কোটায় সীমিত ছিল না আন্দোলন

প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পেছনে কোটা একমাত্র কারণ নয়। এ জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সুশাসন নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, কলুষিত রাজনৈতিক চর্চা, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চনার ক্ষোভের কথা বলা হয়েছে। ফলে ধর্ম ও পেশাজীবী মর্যাদানির্বিশেষে সত্যিকারের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে এ আন্দোলনে লাখো বাংলাদেশির মধ্যে নারী ও শিশুও অংশগ্রহণ করে।

হতাহতের সংখ্যা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি হিসাবের পাশাপাশি অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারেন। তাঁদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত মারণাস্ত্র ও শটগানের গুলিতে নিহত হয়েছেন। হাজারো মানুষ গুরুতর ও চিরতরে আহত হয়েছেন। ১১ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব ও পুলিশ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু। পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ‘টার্গেট কিলিং’, ইচ্ছাকৃতভাবে পঙ্গু করা, নির্বিচার গ্রেপ্তার, অমানুষিক নির্যাতন ও নানাভাবে বল প্রয়োগ করেছে। আন্দোলনের শুরুতে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সদস্যরা নারীদের ওপর হামলা করেছেন। এগুলো যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ছিল। এগুলোকে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বলেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। সারা বিশ্বে আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা আবু সাঈদের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে নানা বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পুলিশ গুলি করার সময় আবু সাঈদ যে নিরস্ত্র ছিলেন, প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

সুপারিশে যা আছে

জাতিসংঘের অনুসন্ধান দলটি জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং সমস্যার মূল উৎস খুঁজে বের করতে ৫০টির মতো সুপারিশ করেছে। বলা হয়েছে, নিরপেক্ষভাবে কার্যকর, পক্ষপাতহীনতার সঙ্গে সব বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনার তদন্ত করতে হবে। র‍্যাব ও এনটিএমসিকে বিলুপ্তির সুপারিশও করা হয়েছে। এনটিএমসিকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংস্থাটি নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব করেছে।

অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাহিনীর কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলে নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো; বিজিবি, ডিজিএফআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার আইনি ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরা; আনসার, বিজিবিকে সামরিক বাহিনী থেকে মুক্ত রাখা; অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সামরিক বাহিনী অভ্যন্তরীণ যেকোনো পরিস্থিতিতে কতটা সময় কাজ করবে এবং মাঠে থাকবে, তা নিশ্চিত করা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে, এমন সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তদন্ত করা।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হলে সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরার পথ রুদ্ধ হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক ভোটারকে ভোটাধিকার চর্চা থেকে বঞ্চিত করা হবে।

প্রতিবেদনে অবাধ ও সত্যিকারের নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভোটের আগে সব রাজনৈতিক দল যেন সমান প্রচারণার সুযোগ পায়। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রতিষ্ঠাগুলো যেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ও নিশ্চিত করতে হবে।

নিরাপত্তা ও বিচার বিভাগের সংস্কার

ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জরুরিভিত্তিতে নিরাপত্তা ও বিচার বিভাগের সংস্কার করতে বলেছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশের আইনি কাঠামোর সংস্কারের পাশাপাশি স্বাধীন ও পক্ষপাতহীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ দণ্ড হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জুলাই-আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন আরও স্বাধীন ও পক্ষপাতহীন তদন্তের পরামর্শ দিয়েছে। কিছু ঘটনা লোকমুখে শোনা বা পুরোপুরি তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহে ঘাটতি থাকায় তথ্যানুসন্ধান দল আবার ওই সব ঘটনার তদন্তের পরামর্শ দিয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন থামেনি

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ এখনো আগের মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছে। এখনো গণহারে করা মামলায় ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হচ্ছে এবং ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত থাকায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবু প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এখনো দায়মুক্তি ভোগ করছেন।

জুলাই–আগস্টের ঘটনাপ্রবাহের মামলায় কয়েক হাজার মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ১৮১টি ঘটনার তদন্ত চলমান। এতে অভিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৯৮ হাজার ১৩৭। তাঁদের মধ্যে ২৫ হাজার ৩৩ জনের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষকে মামলায় আসামি করায় হয় তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে অথবা গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যদিও অনেকেরই এসব অপরাধের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততাই নেই। জাতিসংঘ বেশ কিছু মামলা পর্যালোচনা করে দেখেছে যে চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে জনগণের চাপের মুখে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের উদ্বেগের বিষয়গুলো অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিয়ে সম্প্রতি কিছু সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সব উদ্বেগ আমলে নেওয়া হয়নি। এ আইনে মৃত্যুদণ্ড, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের মতো বিষয়গুলোতে উদ্বেগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড বজায় রেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে কি না, তা নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জুলাই ও আগস্টের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে চিঠি লেখেন। এরপর টুর্ক একটি তথ্যানুসন্ধান দল গঠন করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রুরি ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল গত বছরের ২২ থেকে ২৯ আগস্ট ঢাকা সফর করে। এরপর তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের মূল দল তথা তথ্যানুসন্ধান দল এক মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে অবস্থান করে গত জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ১৪ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন

র‍্যাব-এনটিএমসি বিলুপ্ত ও বিজিবি-ডিজিএফআইয়ের কর্মকাণ্ড সীমিত করার সুপারিশ

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই)-এর কর্মকাণ্ড সীমিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আজ বুধবার জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন সংক্রান্ত ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

এর মধ্যে রয়েছে আনসার-ভিডিপির বেসামরিকীকরণের সুপারিশও।

এছাড়া জনগণের ওপর বেআইনি নজরদারি বন্ধ এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্ত করার এবং স্পষ্টভাবে নজরদারি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়াও ব্যক্তিক্রমি পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সময় তা বেসামরিক প্রশাসনের অধীনে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

পুলিশি নির্যাতন তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের সংস্থাটি। সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবির জন্য অনুরূপ স্বাধীন জবাবদিহি ও বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

পাঁচ স্টেশন ও এক সেতুর নাম ছাড়া কিছুই বদলায়নি রেলে

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

সময় মেনে ট্রেন চলবে, ভ্রমণকালে সেগুলো থাকবে পরিচ্ছন্ন আর বন্ধ হবে টিকিট কালোবাজারি। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে মোটা দাগে এ তিন মানদণ্ডে রেলের উন্নতি প্রত্যাশা করেছিলেন সাধারণ যাত্রীরা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গড়ে ওঠা অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পার হলেও রেলওয়ের পরিষেবায় অবশ্য দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রায়ই গড়বড় হচ্ছে ট্রেনের সময়সূচি। ট্রেনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও টিকিট কালোবাজারি নিয়ে এখনো বিস্তর অভিযোগ যাত্রীদের। ছয় মাসে দুই জোড়া কমিউটার ও দুটি নিয়মিত ট্রেন চালু, পাঁচটি স্টেশন আর একটি সেতুর নাম পরিবর্তন ছাড়া দৃশ্যমান কোনো উন্নতিই হয়নি রেলে।

অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সাবেক এ আমলা দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দুটি নিয়মিত ট্রেন চালু হয়েছে। যেসব রুটে যাত্রীর চাহিদা কম, সেগুলোয় কমিয়ে বেশি চাহিদার রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি কমিটি করে দিয়েছেন উপদেষ্টা। এখন পর্যন্ত তিনটি সভা হলেও ‘‌রুট যৌক্তিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি কোনো কাঠামোই পায়নি বলে জানিয়েছেন কমিটির এক সদস্য।

এর বাইরে উপদেষ্টার নির্দেশে ট্রেনের টিকিট বিক্রির ওয়েবসাইটে কতজন সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছেন, তা টিকিট প্রত্যাশীদের দেখানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে সহজডটকম। এ সময়ে জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ আপার স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার, ময়মনসিংহের সুতিয়াখালী স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে উমেদনগর, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে পঞ্চগড়, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ইব্রাহিমাবাদ ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে সয়দাবাদ করা হয়েছে। আর যমুনা নদীতে সদ্যনির্মিত ‘‌বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’র নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘যমুনা রেল সেতু’। মোটা দাগে এ ছাড়া রেল খাতে গত ছয় মাসে আর কোনো পরিবর্তন বা অগ্রগতি দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগের পতনের সাথে সাথে যেভাবে মালিকানায় পরিবর্তন হলো স্বদেশ প্রপার্টিজের

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

গত বছরের ৫ আগস্টে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার পতনের পর কয়েক হাজার কোটি টাকা মূল্যের আবাসন খাতের কোম্পানি স্বদেশ প্রপার্টিজের মালিকানা সাবেক আওয়ামী সংসদ সদস্য (এমপি) ওয়াকিল উদ্দিনের থেকে বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুমের কাছে হস্তান্তর হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে হয় এ হাতবদল। ওয়াকিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার দায়ে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে, বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপত্তি হারালেও কোম্পানিতে এখনো তার বিপুল শেয়ার রয়ে গেছে, ফলে পালিয়ে থাকা অবস্থাতেও তিনি এর সুবিধাভোগী হচ্ছেন কিনা– এমন প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে।

এদিকে স্বদেশ প্রপার্টিজের বিরুদ্ধে সরকারি খাস জমি ও ফ্লাড ফ্লো জোনের জমি দখলের অভিযোগ আছে। কার্যক্রম বন্ধে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নোটিশ দেওয়ার পরেও, নতুন মালিকানার অধীনে তা চলমান রয়েছে।

স্বদেশ প্রপার্টিজের বর্তমান পরিচালক ও কাইয়ুমের ছেলে নাভিদ তানভিন অনন্ত দাবি করেন, কোম্পানির শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন তার বাবা। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জোর করে তাকে বের করে দেন ওয়াকিল উদ্দিন।  

তবে কোম্পানির নথিপত্রে এটি গঠনের সময় কাইয়ুমের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দল গড়ার আগেই বিভক্তি, শীর্ষ পদ নিয়ে বিরোধ

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

শেখ হাসিনার পতন ঘটানো অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব দল গঠন নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসবেন– এ নিয়েই বিরোধ। আহ্বায়ক হিসেবে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের প্রতি সবার সমর্থন থাকলেও তিনি পদত্যাগ করে দলের নেতৃত্ব নেবেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। সদস্য সচিব পদে সব পক্ষই ‘নিজের লোক’ চাওয়ায় বিরোধ প্রকাশ্য হয়েছে।

ছাত্র নেতৃত্বের দুই সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্রগুলো সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্রগুলোর ভাষ্য, ছাত্র নেতৃত্ব চারটি বলয়ে বিভক্ত। একটি বলয়ে রয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি থেকে আসা নেতারা। আরেকটিতে রয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির ও বিভিন্ন ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতারা। বাম ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে আসা নেতা এবং গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টি থেকে আসা নেতাকর্মীরা অপর দুই বলয়ে। এক বলয়ের সঙ্গে নানা ইস্যুতে আরেক বলয়ের দূরত্ব রয়েছে। রাজনৈতিক দলে চার বলয়ের নেতারাই শীর্ষ নেতৃত্বে থাকতে চান। শিবির-সংশ্লিষ্টতার কারণে সংগঠনটির সাবেক নেতাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে-এ অভিযোগে বিরোধও তৈরি হয়েছে।

অভ্যুত্থানে গুরুতর আহতরা মাসিক ভাতা পাবেন ২০ হাজার টাকা, অঙ্গহানি হয়েছে তাঁরা পাবেন ১৫ হাজার

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদেরকে তিনটি শ্রেণিতে (ক্যাটাগরি) ভাগ করে সরকারি সুবিধা দেওয়া হবে। প্রথম ক্যাটাগরিতে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের এককালীন ৫ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে এক অঙ্গহানি হয়েছে এমন অবস্থায় যাঁরা আছেন, তাঁদের এককালীন ৩ লাখ টাকা এবং মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। আর তৃতীয় ক্যাটাগরিতে সামান্য আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, ভালো হয়ে গেছেন—তাঁরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে চাকরি ও পুনর্বাসনে অগ্রাধিকার পাবেন। তাঁরা ভাতা পাবেন না।

চলতি বছরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন চায় বাম জোট

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

চলতি বছরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বাম গণতান্ত্রিক জোট। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়, তারা আগে জাতীয় নির্বাচন চায়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বাম জোট।

ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। জোটভুক্ত দলগুলোর সাত শীর্ষস্থানীয় নেতা নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে জোটের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

চট্টগ্রামে কমিটি ঘোষণার পর পদত্যাগ, অবরোধসহ দিনভর যা যা হলো

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণার পর এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছে কমিটিতে থাকা ছাত্রনেতাদের একাংশ। নতুন ঘোষিত তিনটি কমিটি বাতিলের দাবিতে দিনভর সড়ক অবরোধ করেন পদত্যাগ করা নেতা ও তাঁদের সমর্থকেরা। তাঁদের অবরোধের মধ্যেই আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণপদযাত্রা করেছে কমিটিতে থাকা আরেক অংশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর এবং চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেলের সই করা ওই তিনটি কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয় আগামী ছয় মাসের জন্য। সংগঠনটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া ওই তিনটি কমিটিতে মোট ৭৫৪ জনের নাম রয়েছে।

শিক্ষক নেটওয়ার্কের সংবাদ সম্মেলন

নতুন ধরনের স্বৈরতন্ত্রের আশঙ্কা রাষ্ট্রের ওপর চেপে বসেছে

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চলা দুঃশাসনের পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। কিন্তু বিভেদমূলক রাজনীতিকে ব্যবহার করে সারা দেশে সহিংসতা, বল প্রয়োগ, মব-সন্ত্রাস, তথ্য গোপন, কণ্ঠরোধ ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে নেওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে নতুন ধরনের স্বৈরতন্ত্রের আশঙ্কা রাষ্ট্রের ওপর চেপে বসেছে।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এসব কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস: কেমন আছে দেশ ও শিক্ষাঙ্গন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর যা হচ্ছে, সেটা বিশেষ উদ্বেগের জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সৃজনশীলতাবিরোধী শক্তিগুলোর লম্ফঝম্ফ দেখতে পাচ্ছি। তাদের দাপট দেখতে পাচ্ছি। তাদের বিভিন্ন অজুহাতে সেটা লালনের গান হোক, নাটকের উৎসব হোক, প্রদর্শনী হোক, শিল্পকর্ম হোক, ভাস্কর্য হোক, সেই সমস্তের ওপর আক্রমণ। মনে হচ্ছে যে শিল্পবিরোধী, সৃজনশীলতাবিরোধী মানুষের প্রাণ প্রকাশের যে সমস্ত মাধ্যম আছে, সকল কিছুর ওপরে আক্রমণ আসছে।’ তিনি বলেন, এসব ঠেকানো অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলেও সেটা করা হচ্ছে না।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলির বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, গায়ের জোর খাটানো, দমন করা, অত্যাচার করা, জোর-জুলুম করা, জবরদস্তি করা—এসব শেখ হাসিনার আমলের বৈশিষ্ট্য ছিল। এর পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই প্রত্যাশা ছিল না। এই সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার কথায় মনে হচ্ছে, তাঁরা এগুলোকেই একটা যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ৩৩ ডিসি ওএসডি

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে কর্মরত যুগ্ম সচিব ও সমপর্যায়ের পদে থাকা প্রশাসনের ৩৩ জন কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করেছে সরকার। তারা ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে রির্টানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আজ বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পৃথক ছয়টি প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর মধ্যে পাঁচটি প্রজ্ঞাপনে প্রতিটিতে ছয়জন করে এবং আরেকটিতে তিনজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করার কথা জানানো হয়েছে।

ভূমিসেবায় ভোগান্তি চরমে

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, কালের কন্ঠ

ভূমিসেবায় ভোগান্তি এখন চরমে। গত বছরের নভেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে ভূমিসেবায় নাকাল সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন ভূমি অফিসে দৌড়ঝাঁপ করেও মিলছে না নামজারি। পরিশোধ করা যাচ্ছে না খাজনা।

পাওয়া যাচ্ছে না খতিয়ান, ডিসিআর। সব ক্ষেত্রে সার্ভার ত্রুটিকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে জমি নিবন্ধন কার্যক্রমও। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ ভূমিসেবায় হঠাৎ এমন স্থবিরতার জন্য সরকারকে দায়ী করলেও কারো কারো মতে, এর মাধ্যমে সরকারের ইমেজ সংকট তৈরি করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে একটা শ্রেণি তৎপর রয়েছে।

তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। তবে ভূমিসেবায় ভোগান্তি নিয়ে মাঝেমধ্যে দুঃখ প্রকাশ করে দায় সারছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ভূমি অফিসের কর্মকর্তারাও সার্ভার জটিলতায় ভূমিসেবা বিঘ্নের দায় স্বীকার করছেন। সরকার বাজেট ঘাটতির জন্য শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়েছে, অথচ সরকারের পাওনা ভূমিকর সরকারকে দিতে পারছে না জনগণ।

সিনিয়র সচিব পদায়নে আওয়ামী লীগের পথেই হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব হিসেবে গত বছরের ১৩ আগস্ট নিয়োগ পান বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের সাবেক ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম। সে সময় সরকারের সচিব পদমর্যাদায় তাকে এ নিয়োগ দেয়া হয়। এর ছয় মাসের মাথায় গত মঙ্গলবার তাকে পদোন্নতি দিয়ে সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা দেয়া হয়েছে। চলতি মাসেই (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) পদে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন সাংবাদিক মনির হায়দার। সব মিলিয়ে এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ১৬-তে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব পদ দুটিকে এ হিসাবে ধরা হয়নি।

সরকারের সিনিয়র সচিব পদ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। অভিযোগ আছে, অনুগত আমলাদের পুরস্কৃত করতে এ পদ সৃষ্টি করেছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে পদটি বিলোপের সুপারিশ করা হয়। যদিও এ পদে পদায়ন থেমে নেই। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সিনিয়র সচিব পদে দেয়া হচ্ছে একের পর এক পদোন্নতি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই সিনিয়র সচিব পদে নিয়োজিতের সংখ্যা বিগত সরকারের আমলকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।

তিন সচিবসহ ২২ কর্মকর্তার বাধ্যতামূলক অবসর

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

বিতর্কিত শেষ তিন সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ২২ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এসব নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন পর্যায়ক্রমে তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা সে সময়ের ৩৩ জেলা প্রশাসককে গত বুধবার বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার পরদিনই এই সিদ্ধান্ত এলো। এর আগেও কয়েকজনকে ওএসডি করা হয়েছিল।

প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া ২২ জনের মধ্যে চারজন ২০১৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তাদের মধ্যে তিনজন সচিব, ১৭ জন অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্ম সচিব ও একজন উপসচিবের দায়িত্বে ছিলেন। জনস্বার্থে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

কোনো কাজেই গতি নেই, নাগরিক সেবা লাটে

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

স্থানীয় সরকার বিভাগে কোনো কাজেই গতি আসছে না। সরকার পতনের পর অনেক জনপ্রতিনিধি পালিয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করায় স্থবির হয়ে পড়ে স্থানীয় সরকারগুলোর কার্যক্রম। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে আরেকটি বড় ধাক্কা লাগে মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাজ চলছে দুটি ভিন্ন স্থান থেকে। এ কারণে রুটিন কাজও সঠিকভাবে চালানো যাচ্ছে না। দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সংস্কার, স্যানিটেশন, পানি সরবরাহ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সনদ প্রদানসহ সেবামূলক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাড়ছে জনঅসন্তোষ।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিন মাস পরপর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হতো। গত ২৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে সম্মেলন কক্ষটি পুড়ে যায়। এখন মন্ত্রণালয়ের বৈঠক করার মতো সভাকক্ষ নেই। গত ছয় মাসে একটিও আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সম্মেলন কক্ষে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠক হয় মাঝেমধ্যে। অগ্নিকাণ্ডের পর পুরো এক মাস কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বসার জায়গাই ছিল না। তড়িঘড়ি করে ডিএসসিসি নগর ভবনের ১৩ থেকে ১৫ তলার ৭৫টি কক্ষ খালি করা হয়। সেখানে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর কিছু কর্মকর্তা পুড়ে যাওয়া ভবনের দ্বিতীয় তলায় অফিস করছেন। দুটি স্থান থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করায় কাজের গতি কমে গেছে। এ ছাড়া আগুন লেগে অনেক ফাইল পুড়ে যাওয়ায় দ্রুত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। মন্ত্রণালয় থেকে ৪০ বস্তা ফাইলপত্র নেওয়া হয়েছে নগর ভবনে। সেগুলোর মধ্যে মাত্র ছয়-সাতটি বস্তা এখন পর্যন্ত খোলা হয়েছে।

কৃষি খাত সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হলো না কেন, প্রশ্ন আলোচকদের

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

দেশের ৫৬ শতাংশ কৃষক ভূমিহীন হলেও অন্তর্বর্তী সরকার তাঁদের কথা ভাবছে না। অথচ এই গণ-অভ্যুত্থানে কৃষকের ছেলেমেয়েরা প্রাণ দিয়েছেন। তাঁরা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাহলে কৃষকেরা প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছেন না কেন? কৃষি খাত সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হলো না কেন? এমন প্রশ্ন উঠেছে ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের কৃষক সম্মেলনে।

আজ রোববার রংপুর টাউন হলের সামনে ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আলোচকেরা অভিযোগ করেন, আলুর দাম না পাওয়ায় কৃষকদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। খরচ বেশি হওয়ার জন্য হিমাগারে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সরকারের অবহেলা ও একধরনের নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে হচ্ছে।

কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, সার, বীজ, কীটনাশকসহ সব কৃষি উপকরণ রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎপাদন, বিপণন, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, বন্ধ শিল্প চালুসহ কৃষি খাত সংস্কারের দাবিতে দিনব্যাপী এই কৃষক সম্মেলনে ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট, বগুড়া, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের কয়েক শ নারী-পুরুষ অংশ নেন।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢাকায় যেসব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কৃষকের কথা শোনার মতো কেউ নেই। একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে টেকসই উন্নয়নসংক্রান্ত। সেই টাস্কফোর্সে প্রতিবেদন ইংরেজি ভাষায় দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এই প্রতিবেদন কি কৃষকেরা পড়তে পারবেন? এর মানে হলো শহরকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীরা কৃষকদের থেকে অনেক দূরে বাস করেন। কৃষকের যে যন্ত্রণা, তাঁর কষ্ট, বঞ্চনা—এগুলো এসব রিপোর্টে আসে না।’

ভোটার ধরতে বিশেষ কৌশল জামায়াতের

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি বলা হয় চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনকে। এখানে আওয়ামী লীগ আমলেও নির্বাচন করে দলটির বেশ কয়েকজন এমপি হয়েছেন। এ দুটিসহ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে জেলায় অন্তত আটটি আসন টার্গেট করেছে জামায়াত। এখানে ভোটার তালিকা হালনাগাদে দলটির নেতাকর্মীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। জামায়াতের পরিকল্পনায় থাকা আসনে নতুন ভোটারের আবেদনের হারকে ‘অস্বাভাবিক’ বলা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মী-সমর্থকদের ভোটার করতে জামায়াত তিন কৌশল নিয়েছে। লোহাগাড়ার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ক্যাম্প করেছে। ৯ সদস্যের যুব কমিটি এসব ক্যাম্পে ল্যাপটপ ও প্রিন্টার নিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। আবার ক্যাম্প না করলেও কোনো কোনো উপজেলায় দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতারা তথ্য সংগ্রহকারীকে নজরদারিতে রাখেন। তারা অন্যান্য দলের সমর্থকদের তুলনায় ভোটার তালিকায় নিজেদের লোককে বেশি করে রাখার বিষয় নিশ্চিত করেন। আরেক গ্রুপ ঠিকানা পরিবর্তন করছে।

এতদিন অন্য এলাকার ভোটার থাকলেও এখন নিজ এলাকায় ভোট দিতে চাচ্ছেন তারা। এ প্রবণতা বেশি বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত আট উপজেলায়।

তবে কিছু এলাকায় নতুন ভোটারের বেশি আবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটির নেতাদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই জামায়াত তাদের কর্মী-সমর্থকদের ভোটার করতে চাচ্ছে। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ কর্মকর্তাকেও চাপ দিয়েছে। পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন ‘নতুন ভোটার যাচাই-বাছাই বিশেষ কমিটি’ করেছে। কমিটির প্রধান স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিষয়টি দেখে ইসিতে প্রতিবেদন দেবেন।

নতুন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আত্মপ্রকাশ, অনুষ্ঠানে ৩ সেনাপ্রধানসহ রাজনীতিবিদেরা

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, আজকের পত্রিকা

দেশে নতুন একটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ‘ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ নামে নতুন এ প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রে সুশাসন, জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং পলিসি কর্মকৌশল নির্ধারণপ্রক্রিয়ায় ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে গবেষণাকাজ করবে জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর।

রোববার রাতে রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের বলরুমে প্রতিষ্ঠানটির আত্মপ্রকাশের এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর।

প্রতিষ্ঠানের আত্মপ্রকাশের এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খান ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল এম নুরুউদ্দিন খানসহ অবসরপ্রাপ্ত বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তারা।

জোনায়েদ ও রাফের চীন সফর নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে প্রশ্ন

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপিসহ ৮টি রাজনৈতিক দলের ২২ জন নেতা গতকাল সোমবার চীন সফরে গেছেন। এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ, যুগ্ম সদস্যসচিব রাফে সালমান রিফাতসহ সংগঠনটির চারজন। এ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

গতকাল মধ্যরাতে গণমাধ্যমে পাঠানো জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, জাতীয় নাগরিক কমিটি এ বিষয়ে অবগত নয় এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পায়নি। একই সঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষে কেউ এই প্রতিনিধিদলে অংশগ্রহণ করছেন না বা প্রতিনিধিত্ব করছেন না।

নিজেরা কাদা–ছোড়াছুড়ি করলে দেশ ও জাতি বিপন্ন হবে: সেনাপ্রধান

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

নিজেরা কাদা–ছোড়াছুড়ি, মারামারি ও কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে বলে সতর্ক করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এই দেশ আমাদের সবার উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবাই সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি।’

২০০৯ সালে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত নির্মম হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে আজ মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন। রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) ক্লাবের আয়োজনে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের হেলমেট হলে এ অনুষ্ঠান হয়।

দেশ–জাতি যেন একসঙ্গে থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতের বিরোধ থাকতে পারে, চিন্তাচেতনার বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু দিন শেষে দেশ ও জাতির দিকে খেয়াল করে আমরা সবাই যেন এক থাকতে পারি। তাহলেই এই দেশটা উন্নত হবে, এই দেশটা সঠিক পথে পরিচালিত হবে। না হলে আমরা আরও সমস্যার মধ্যে পড়তে যাব। বিশ্বাস করেন, ডোন্ট ওয়ান্ট টু হেড, ওই দিকে আমরা যেতে চাই না।’

ছাত্রদের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ, ঘোষণা ঘিরে বিক্ষোভ–হাতাহাতি

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গঠিত নতুন ছাত্রসংগঠনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’। নতুন এই ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হয়েছেন আবু বাকের মজুমদার। আর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন জাহিদ আহসান।

আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে এই সংগঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণা ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগান ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

বেলা তিনটায় মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা ছিল। এ উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কেরা সেখানে এসে জড়ো হন। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজেদের পর্যাপ্তসংখ্যক পদ দাবি করে বিক্ষোভ করেন।

পানি সংকট: বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের আহ্বানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমেছে বোরো আবাদ

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

উঁচু-রুক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলের চিহ্নিত পানিসংকট পূর্ণ এলাকায় এবার চাষিদের বোরো আবাদে নিরুৎসাহিত করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তাতে সাড়া দিয়ে এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমেছে বোরো চাষাবাদ।

ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব এলাকায় কৃষকদেরকে স্বল্প সেচের অন্যান্য ফসল উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ফলে এবার এ অঞ্চলে রবিশস্যের আবাদ বেড়েছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, “আমাদের এ অনুরোধে কৃষকরা ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছেন। এ বছর ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ১৫ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে।”

কৃষি খাদ্যপণ্যের বাজার প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের, আমদানির প্রয়োজন পড়ে ৫ বিলিয়নের

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা হলেও আমদানিনির্ভরতা এখনো প্রকট। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজারের আকার প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। তবে খাদ্য চাহিদা মেটাতে আমদানি করা হয় আরো প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য। সে হিসাবে দেশে মোট কৃষিপণ্যের বাজারের আকার ১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। ফলে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা কতটুকু যুক্তিসংগত, সে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা। আমদানির বিকল্প হিসেবে কৃষিপণ্য উৎপাদনে আরো জোর দেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা।

কৃষি খাতের বড় উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের চাহিদা মেটাতে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়। সে হিসেবে খাদ্যের একটি বড় অংশই আনতে হয় বিদেশ থেকে। এর পরও দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলাটা অযৌক্তিক বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। মূলত এ নিয়ে একটি মিথ্যা বয়ান তৈরি করা হয়েছে, যা প্রায়ই সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে শোনা যায়।

জার্মানিভিত্তিক বৈশ্বিক বাজার ও অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তসংক্রান্ত ডাটাবেজ স্ট্যাটিস্টার হিসাবে, এ বছর বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজারের আকার ১০ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে। প্রতি বছরই ২ শতাংশ হারে এ বাজারের আকার বাড়ছে। সে হিসাবে ২০২৯ সালে দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজার ১১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে কৃষিপণ্য আমদানি বছরে প্রায় শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। দেশের চাহিদা মেটাতে এ বছর বিদেশ থেকে আনতে হবে প্রায় ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য।

বৈষম্য নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামো অলিগোপলির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখানে কয়েকটি বৃহৎ কোম্পানি সব খাত নিয়ন্ত্রণ করছে আর কৃষকরা অস্তিত্ব সংকটে রয়েছেন। সরকারের উদ্যোগের অভাবে দুর্নীতি এবং সম্পদের কেন্দ্রীভূতকরণ ঘটছে। ফলে বেড়েছে লুটপাট ও দখল বাণিজ্য। অন্তর্বর্তী সরকার প্রকৃত পরিবর্তন ও বৈষম্য দূর করার জন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের প্রতি জনগণের আশা ক্রমেই কমছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে আতঙ্ক এবং ভয়ও বিরাজ করছে। কৃষি, শিক্ষা ও জ্বালানি খাতে বৈষম্য প্রকট। সরকার শুধু কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। প্রকৃত বৈষম্য দূরীকরণে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

গতকাল বণিক বার্তা আয়োজিত ‘‌‌জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও বৈষম্যহীন রূপান্তরের পথ অনুসন্ধান’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। বণিক বার্তার সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

লোকসানি সরকারি কোম্পানি একীভূত করার, বিলুপ্তির ক্ষমতা পাবে অর্থ মন্ত্রণালয়

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

সরকারি মালিকানাধীন যেকোন প্রতিষ্ঠান বেসরকারিখাতে ছেড়ে দিতে পারবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া, সরকারি মালিকানাধীন একাধিক প্রতিষ্ঠান একত্রীকরণ বা বিলুপ্ত করার ক্ষমতাও পেতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করছে বলে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকায়, রাষ্ট্রীয় কিছু কোম্পানি সরকারের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে। সরকারি অর্থের এভাবে অপচয় ঠেকানোর অসংখ্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও— সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। এই সমস্যার সমাধানেই বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় নতুন একটি আইন প্রণয়ন করছে সরকার।

ইতোমধ্যেই ”সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ (ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়) আইন, ২০২৫” শিরোনামে আইন বা অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যার একটি কপি টিবিএসের হাতেও এসেছে।

কর্মকর্তারা জানান, প্রথম খসড়া তৈরির পর তার ওপর একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল। তাতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেই ওয়ার্কশপের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রথম খসড়া সংশোধন করে দ্বিতীয় খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে সরকারি মালিকানাধীন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে— যেকোনো সময় এক বা একাধিক নিরপেক্ষ পরিচালক বা অন্য কোন উপযুক্ত পদনামে কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবে।

খসড়া আইনে দুর্নীতি ও ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগ বিচারাধীন বা তদন্তনাধীন থাকলে, তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারি মালিকানাধীন কোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বলা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আইনটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সব ব্যাংক, তেল-গ্যাস কোম্পানিসহ সরকার মালিকানাধীন সব আর্থিক, অ-আর্থিক, বাণিজ্যিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এই আইনের আওতাভূক্ত হবে না।

জাতীয় নাগরিক পার্টি

প্রাথমিক লক্ষ্য গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন

০১ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ (দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র) প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা এই দলের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। তাঁরা বলেছেন, সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলা ও গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে তাঁদের রাজনীতির অগ্রাধিকার।

শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে তারুণ্যনির্ভর নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র-তরুণেরাই আছেন এই দলের নেতৃত্বে। দলটির আহ্বায়ক হয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ নাহিদ ইসলাম। সদস্যসচিব হয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

নতুন দলের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে শুক্রবার দুপুর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আসতে থাকেন ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। তাঁদের বড় অংশ তরুণ ও শিক্ষার্থী। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা বরাবর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে করা হয়েছিল পূর্বমুখী মঞ্চ। সেখান থেকে পূর্ব দিকে খামারবাড়ি মোড় পর্যন্ত (এক পাশে) জমায়েত ছিল। দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।

বিকেল সোয়া চারটার দিকে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীত এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নীরবতা পালনের পর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।

মূল অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে একটি এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও নতুন দলের আত্মপ্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আরেকটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। বিকেল পাঁচটার পরপর মঞ্চে আসেন নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সামান্তা শারমিন ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের বক্তব্যের পর নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বীর বোন মিম আক্তার। তিনি নতুন দলের নাম এবং আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব হিসেবে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। এরপর আখতার হোসেন দলের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।

পরে দলের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই নতুন বাংলাদেশ গড়ায় আমরা সবাই প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে শপথ করি। ঐক্যবদ্ধ হই এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাই।’

ডান বাম শিবির কওমি সবাইকে নিয়েই কমিটি

০১ মার্চ ২০২৫, সমকাল

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ১৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে ১০ জন এ দলের শীর্ষ পদে আছেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আখতার হোসেন এ কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মধ্য, ডান, বাম, শিবির, কওমিপন্থি এবং আদিবাসী ও ১৫ নারী স্থান পেয়েছেন।

শীর্ষ ১০ পদে রয়েছেন– আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা ও নাহিদা সারওয়ার নিভা, প্রধান সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।

এ ছাড়া কমিটিতে ১৬ যুগ্ম আহ্বায়ক, ৩২ যুগ্ম সদস্য সচিব, ১২ যুগ্ম মুখ্য সংগঠক, ৪৪ সংগঠক, ১৪ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক এবং ৪৩ সদস্য রয়েছেন।

দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ইসমাঈল হোসেন রাব্বির বোন মীম আক্তার।

গত কয়েক দিন ধরে শীর্ষ পদগুলো নিয়ে বিরোধ চলছিল। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বাংলামটরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভায় পদ বাড়িয়ে এর সমাধান করা হয়।

সমকালের বিশ্লেষণে কমিটিতে সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অনিক রায় যুগ্ম আহ্বায়ক, কওমি মাদ্রাসা থেকে আসা আশরাফ উদ্দিন মাহাদী যুগ্ম আহ্বায়ক এবং রফিকুল ইসলাম আইনী উত্তরাঞ্চলের সংগঠক, আদিবাসী অলিক মৃ যুগ্ম মুখ্য সংগঠক, দলিত সম্প্রদায়ের কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস ও ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হয়েছেন।

এ ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির সেক্রেটারি, একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর স্থান পেয়েছেন। কার্যনির্বাহী পদে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ, দুলাল খান, আব্দুল্লাহ শাফিল, শহীদ জাবির বাবা কবির হোসেন ও শহীদ আহনাফের মা জারতাজ পারভিন পদ পেয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পদ ছেড়ে অন্তত দু’জন এনসিপির কমিটিতে ঢুকেছেন। ছাত্র সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশীদ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সংগঠক শ্যামলী সুলতানা জেদনীকে সদস্য করা হয়েছে।

বাহিনীর যেসব সদস্য গুমে জড়িত তা তাঁদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়: কমিশনপ্রধান

০৪ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে গুমের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত বা প্যানিক স্ট্রিকেন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাঁদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার গুলশানের গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কমিশনপ্রধান। তিনি বলেন, গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুম করার অভিযোগ আছে, তাঁদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনুসন্ধান করছে।

শ্রমিকপক্ষের আপত্তি সত্ত্বেও শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত

০৪ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

শ্রমিকপক্ষের অনেক আপত্তি আমলে না নিয়েই শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় আজ মঙ্গলবার এ খসড়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখাবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০-২০ মার্চ অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকেও উপস্থাপন করা হবে খসড়াটি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকদের ভবিষ্য তহবিল ও গ্র্যাচুইটি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না। রাখা হচ্ছে না স্বাধীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারও। ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে আইএলওর বিধানও মানতে পারছে না সরকার। মাতৃত্বকালীন ছুটি, চাকরির নিশ্চয়তা, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতকালে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের দায় নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে শ্রমিকপক্ষের মতামত আমলে নেওয়া হয়নি।

অর্থনীতি সংস্কারে আগ্রহ কম, কমিটিতে হতাশা

০৫ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

অর্থনীতি নিয়ে সংস্কারের দুটি প্রতিবেদন জমা পড়ে আছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সুপারিশ বাস্তবায়নে জোরালো কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে অর্থনীতিতে কাঠামোগত সংস্কারের প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অর্থনীতিতে দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলাদা দুটি প্রতিবেদন তৈরি করিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। একটি হলো বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন কমিটির তৈরি শ্বেতপত্র। অন্যটি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদের নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্বেতপত্র জমা দেওয়া হয় গত ১ ডিসেম্বর। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন জমা পড়ে গত ৩০ জানুয়ারি। এর মধ্যে দুই প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় কমিটির সদস্যদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

জানতে চাইলে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শ্বেতপত্র প্রতিবেদনটি গ্রহণ (ওউন) করেছেন। কিন্তু তাঁর উপদেষ্টা পরিষদে যাঁরা প্রাসঙ্গিক, তাঁরা গ্রহণ করেননি। হয়তো প্রতিবেদন অনুসারে সংস্কারের সক্ষমতার ঘাটতি আছে, কিংবা অন্তর্বর্তী সরকার যে পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা সংস্কারের অনুকূলে নয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় খামখেয়ালিপনা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কারের সুপারিশ পেতে কমিশন, কমিটি ও টাস্কফোর্স করেছে। ১১টি কমিশনের ৬টি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। একটি সারসংক্ষেপ দিয়েছে।

ছয় কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা ও তা বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন এক দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। দলগুলোর মতামত নিতে শিগগিরই আলাদাভাবে আলোচনা শুরু হবে। কিন্তু শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন নিয়ে নির্দিষ্ট কার্যক্রম নিতে দেখা যায়নি।

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

০৬ মার্চ ২০২৫, আজকের পত্রিকা

গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যালয় ও নির্বাচনী তহবিলের জন্য ধনীরা অর্থসহায়তা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এই লক্ষ্যে ক্রাউডফান্ডিং অর্থাৎ অনলাইনে গণচাঁদা সংগ্রহ করা হবে বলেও তিনি জানান।

দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো রয়টার্সে দেওয়া সাক্ষাৎকার এসব কথা বলেন ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ নেতা।

এই সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম নিজেদের দলের নতুন কার্যালয়, ফান্ডিং, আসন্ন নির্বাচনের জন্য তহবিল গঠন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, নির্বাচন ও সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিলাম, ফলশ্রুতিতে পরিবর্তন দেখলাম

০৭ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বাংলাদেশে জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে দমন–পীড়নে অংশ না নিতে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করার পর সরকার পরিবর্তন হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হার্ডটক অনুষ্ঠানে ফলকার টুর্ক এ কথা বলেছেন। বিবিসির ওয়েবসাইটে বুধবার হার্ডটক অনুষ্ঠানের এই পর্ব প্রকাশ করা হয়। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই অনুষ্ঠানে ফলকার টুর্কের সঙ্গে কথা বলেন বিবিসির উপস্থাপক স্টিফেন সাকার।

টিক চিহ্নে নয়, বিস্তারিত মতামত দেবে দলগুলো

১৪ মার্চ ২০২৫, সমকাল

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে নির্ধারিত সময়ে মতামত জানিয়েছে সাতটি দল। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১৬ দল সময় চেয়েছে। বাকি ১১ দল মতামত দেয়নি, সময়েরও অনুরোধ করেনি। এরই মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিছু সংস্কারে রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজন। নির্বাহী ক্ষমতায় মন্ত্রণালয়গুলো তা বাস্তবায়ন করবে।

পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে মতামত জানাতে ৬ মার্চ ৩৪টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেয় ঐকমত্য কমিশন। ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়। বিএনপি আগামী রোববার বা সোমবার মতামত জানাবে বলে কমিশনকে মৌখিকভাবে জানিয়েছে। তবে কমিশনের নির্ধারিত ছকে নয়, বিস্তারিত মতামত জানাবে। পাঁচ দিন সময় চাওয়া জামায়াতের অবস্থানও একই। তারাও টিক চিহ্নে নয়, দলীয় বিশেষজ্ঞদের পূর্ণাঙ্গ মত জানাবে। শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) মতামত দিতে সময় চেয়েছে।

সুপারিশ নিয়ে পুলিশে ক্ষোভ, বলবেন প্রধান উপদেষ্টাকে

১৬ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা নিয়ে এবং কিছু দরকারি সুপারিশ না করায় পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়টি অন্যতম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে পেশাদারত্বের সঙ্গে পরিচালনার জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা ছিল, কিন্তু সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে কোনো রূপরেখা দেয়নি। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত এবং ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা’ ও ‘বিচার-বিশ্লেষণ’ করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন।

এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের অপরাধ তদন্তে স্বতন্ত্র অভিযোগ কমিশন গঠনে সুপারিশ না থাকা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি না রাখাসহ কিছু বিষয় নিয়ে বাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ আছে।

ওদের হাতের কোনো সংস্কার আমরা সহজে মেনে নেব না: মির্জা আব্বাস

১৬ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

‘ওদের হাতের, ওদের কলমের কোনো সংস্কার আমরা সহজে মেনে নেব না। সংস্কার যদি করেন, আমরা কারেকশন (সংশোধন) করব। বিএনপি সেই কারেকশন অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলেমিশে ঠিক করে তা জাতির কাছে তুলে ধরবে। ওই সমস্ত তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, যারা এ দেশের নাগরিক পর্যন্ত নয়, তাদের দিয়ে আপনারা সংস্কার করবেন, এটা আমরা মেনে নেব না।’ গতকাল বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শাখা আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এ কথাগুলো বলেন।

বিশেষ কিছু দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য সংস্কার চলছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার, ততটুকু করে নির্বাচন দিন। নিবার্চনের পর যে–ই ক্ষমতায় আসুক, তাকে আমরা সালাম দিয়ে মেনে নেব। কোনো অনির্বাচিত সরকারের, ব্যক্তির কোনো কথা আমরা মেনে নেব না।’

ডিসি হতে কর্মকর্তাদের আগ্রহ হঠাৎ কমেছে, কারণ কী

১৭ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হওয়ার আগ্রহে হঠাৎ ভাটা দেখা দিয়েছে। আগে যেখানে এ পদে নিয়োগ পেতে ব্যাপক আগ্রহ থাকত, তদবিরও হতো; সেখানে এখন ডাক পেয়েও সাক্ষাৎকার দিতে যাচ্ছেন না প্রায় অর্ধেক সংখ্যক কর্মকর্তা।

কেন হঠাৎ আগ্রহ কমে গেল, তা জানতে সাক্ষাৎকারে ডাক পাওয়া অন্তত ১০ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা মোটাদাগে পাঁচটি কারণ তুলে ধরেছেন। প্রথমত, বিগত তিনটি বিতর্কিত, একতরফা ও পাতানো নির্বাচনের সময়ে ডিসি পদে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা এখন জবাবদিহির মুখে পড়ছেন। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেকেরই সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এখন ডিসি হলে আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে। কোনো না কোনো সময় তাঁদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রশাসনের ৪৩ কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁরা রাতের ভোট নামে পরিচিতি ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ডিসি হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ছাড়া ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় ডিসি পদে দায়িত্ব পালনকারী (চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়েছে) ২২ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে চিঠি দিল ইসি

১৭ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে।

আজ সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বরাবর এ–সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

ইসি সচিব বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ৯-১০টি সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে একটি স্বতন্ত্র কমিশন করার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, এটির প্রয়োজন নেই।

এ ছাড়া সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের যে ফর্মুলার কথা বলা হয়েছে, সেটি হলে শহর অঞ্চলে আসন বেড়ে যাবে। ইসি মনে করে ভোটারসংখ্যা, জনসংখ্যা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিবেচনা করে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা উচিত।

ইসি সচিব আরও বলেন, সংস্কার কমিশন নির্বাচনের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সার্টিফাই করার বিষয়ে একটি সুপারিশ করেছে। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এটির প্রয়োজন নেই। কারণ, ফলাফলের যে গেজেট প্রকাশিত হয়, সেটি সার্টিফিকেশন।

নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ও নির্বাচন কমিশনারদের শাস্তির বিষয়ে সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তাতেও ভিন্নমত জানিয়েছে ইসি। ইসি সচিব বলেন, ‘এ জন্য একটি ব্যবস্থা এখনই রয়েছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আছে।’

সংলাপের আগেই ১১১ প্রস্তাব বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত

২০ মার্চ ২০২৫, সমকাল

সংলাপ শুরুর আগেই ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে ১১১ দফা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংস্কার প্রস্তাবের অন্য সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ সমকালকে বলেন, যে কাজগুলো রাজনৈতিক দলের মতামত ছাড়াই অল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের প্রস্তুতির জন্য পাঠানো হয়েছে।

এর মধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ২৮ দফা, দুদক সংস্কারের ৪৩ দফা, জনপ্রশাসন সংস্কারের ১৮ দফা, পুলিশ সংস্কারের ১৩ দফা এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ৯ দফা সুপারিশ রয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ১১ সংস্কার কমিশনের মধ্যে ছয়টির সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১১১ সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সুপারিশমালা বাস্তবায়নের কৌশল ও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো তা ফের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেবে।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের নেই: প্রধান উপদেষ্টা

২০ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকারের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেছেন তিনি।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন ওই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোনো দাবির কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: ত্রিমুখী বিরোধে বরিশালে অবরুদ্ধ নাহিদ, বের হলেন পুলিশি সহায়তায়

২০ মার্চ ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে এই ঘটনা ঘটে।

এ সময় সংগঠনের বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের সহায়তায় মিলনায়তন থেকে বের হন নাহিদ ইসলাম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইফতারের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ ও জেলা কমিটির সদস্য সচিব এস এম ওয়াহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন সাধারণ কর্মীরা।

একপর্যায়ে মতবিনিময় সভা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা নাহিদ ইসলামের সামনেই মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন।

‘ক্যান্টনমেন্ট থেকে’ আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের পরিকল্পনা চলছে, অভিযোগ হাসনাত আব্দুল্লাহ’র

২১ মার্চ ২০২৫, বিবিসি বাংলা

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেছেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে।

বিষয়টিকে তিনি “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” নামে “নতুন একটি ষড়যন্ত্র” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

গত পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই দলটিকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি উঠে আসছে। তাদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গেও হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতা ও অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাসহ বিভিন্ন পক্ষ।

আন্দোলনকারী ছাত্রদের চাপের মুখে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে গত অক্টোবরে নিষিদ্ধও করা হয়।

তবে গত কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ইস্যুতে নতুন করে সরব হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও ফেরানো ইস্যুতে একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কোনো স্ট্যাটাসেই তিনি এই দাবির কোনো প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেননি।

যেমন, গত নয়ই মার্চ তিনি লিখেছিলেন, “২০২৫-এ এসে ২০১৩ ফেরানোর চেষ্টা করবেন না। “সাবধান! ” পরের স্ট্যাটাস আসে গত ১২ই মার্চ।

হাসনাত আব্দুল্লাহ স্ট্যাটাসে লিখেছেন, তিনিসহ আরও দুই জনের কাছে গত ১১ই মার্চ দুপুর আড়াইটায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ওই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় এবং তাদেরকে বলা হয়, তারা যেন আসন সমঝোতার বিনিময়ে ওই প্রস্তাব মেনে নেয়।

“আমাদেরকে বলা হয়– ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।”

তিনি দাবি করেছেন, “আমাদেরকে আরো বলা হয়– রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।”

এই প্রস্তাব পাওয়ার পর তারা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করেন বলে লেখেন মি. আব্দুল্লাহ।

বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণ

২০ মার্চ ২০২৫, সমকাল

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণ করা হয়েছে। বুধবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সচিব শেখ আবু তাহেরের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ‍্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর দফা (৬) অনুযায়ী বিচারপতি খিজির হায়াতকে গতকাল মঙ্গলবার অপসারণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সংবিধানের ৯৬(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কাউন্সিল তদন্ত শেষে যদি রাষ্ট্রপতিকে রিপোর্ট দেয় যে বিচারক তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে অক্ষম হয়ে পড়েছেন বা গুরুতর অসদাচরণ করেছেন, তাহলে রাষ্ট্রপতি আদেশ দিয়ে সেই বিচারককে পদ থেকে অপসারণ করবেন। সংবিধানের এই ধারা মেনেই খিজির হায়াতকে সরাসরি অপসারণ করলেন রাষ্ট্রপতি।

হাসনাতের বক্তব্য “অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার”: সেনাসদর

২৩ মার্চ ২০২৫, নেত্র নিউজ

আওয়ামী লীগের ‘সংশোধিত’ একটি পক্ষের রাজনৈতিক পুনর্বাসনে রাজি হতে সেনানিবাস থেকে চাপ পাওয়ার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ যে দাবি করেছেন, তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সেনাবাহিনী সদর দপ্তর।

শনিবার নেত্র নিউজকে দেয়া সেনা সদরের এক বিবৃতিতে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে সেনানিবাসে খোদ সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেই ১১ মার্চ বৈঠকটি হয়েছিল। তবে হাসনাত আব্দুল্লাহকে “ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগে”র অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বরং হাসনাত আব্দুল্লাহ ও তার দলের আরেক মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের আগ্রহেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নতুন রূপে পুনর্বাসনের বিষয়ে সেনানিবাসের কাছ থেকে “ভারতের পরিকল্পনা” উপস্থাপন করা হয়েছে — শুক্রবার হাসনাত আব্দুল্লাহর এমন ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এরই প্রেক্ষিতে নেত্র নিউজ যোগাযোগ করলে একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে বক্তব্য দেয় সেনা সদর। হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টকে “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়” বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সেনা সদরের বিবৃতিতে। এছাড়া ২৭ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে “অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার” হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশে আগস্টে যেই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, তার সূচনা ঘটেছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হলে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রীসভায় ওই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত তিন জন ছাত্রনেতা দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরই একজন নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে একটি নতুন দলের আহবায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই দলে দুই আঞ্চলিক মুখ্য সমন্বয়কের পদ পান হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।

শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন ও ঢাকার মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে “‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে।”

সুনির্দিষ্টভাবে তিনি বলেন, সেনানিবাস থেকে ১১ই মার্চ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে এক বৈঠকে তাদেরকে এই নয়া আওয়ামী লীগকে মেনে নিতে সমঝোতা ও সংসদের আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়া হয়।

অপরদিকে নেত্র নিউজকে পাঠানো বিবৃতিতে সেনাসদর নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে সেনাপ্রধানের সঙ্গেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল; তবে ওই বৈঠক ছাত্র নেতাদের আগ্রহেই হয়েছিল বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। পরবর্তীতে সারজিস আলম ১১ই মার্চ ২০২৫ তারিখে সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারকে ফোন দিয়ে সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাতের জন্য সময় চান। এর প্রেক্ষিতে মিলিটারি এডভাইজার তাদেরকে সেনাসদরে আসার জন্য বলেন।”

“অতঃপর ১১ই মার্চ দুপুরে সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ সেনাসদরে না এসে সরাসরি সেনাভবনে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান অফিস কার্যক্রম শেষ করে সেনা ভবনে এসে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।”

সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, তা নেত্র নিউজ স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিটের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পৃথকভাবে নেত্র নিউজকে বলেছেন যে, ছাত্রনেতাদের আগ্রহ ও উদ্যোগেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল।

সেক্ষেত্রে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের এই বৈঠক তাদের ব্যক্তিগত কারণে নাকি জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে পুর্বানোমোদিত ছিল, তা স্পষ্ট নয়।

হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যে ‘কিছুটা দ্বিমত’ জানিয়ে সারজিসের পোস্ট

২৩ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ সম্প্রতি ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন, তাতে ‘কিছুটা দ্বিমত’ প্রকাশ করে আবার পোস্ট দিয়েছে এনসিপির আরেক সংগঠক সারজিস আলম। তিনি আজ রোববার এ পোস্ট দেন। তাতে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘সেদিন (১১ মার্চ) সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি।’

সারজিস এ–ও লিখেছেন, ‘যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি বরং এর ফলে পরবর্তীতে যেকোনো স্টেকহোল্ডারের সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে।’

‘পরিশুদ্ধ’ আওয়ামী লীগ নিয়ে বাইরে শোরগোল, তবে দলে আগ্রহ নেই

২৪ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

‘রিফাইন্ড’ বা ‘পরিশুদ্ধ’ আওয়ামী লীগের ধারণা নিয়ে দলটির ভেতরে কোনো আলোচনা নেই। নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার বিষয়েও কোনো চিন্তাভাবনার কথা জানা যায়নি। এ বিষয়ে দলটির পলাতক প্রধান নেতৃত্বের কোনো সায় আছে—এমন আভাসও পাওয়া যায়নি। ফলে আওয়ামী লীগের পরিশুদ্ধ অংশকে রাজনীতিতে ফেরানোর সম্ভাবনা নিয়ে যে আলোচনা বা শোরগোল চলছে, তা কতটা বাস্তবসম্মত, সেই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তাঁর মতো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন দলের অনেক নেতা। এরপর অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ ভুল স্বীকার করবে কি না, এমন একটা আলোচনা তৈরি হয়। কিন্তু উল্টো পথে হাঁটেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। নিজেদের ভুল স্বীকার কিংবা অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা দেখাতে মোটেও প্রস্তুত নন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব; বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ও জুলাই আন্দোলনের নেতাদের সমালোচনায় যুক্ত হন তাঁরা। আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্বের মনোভাবে এখনো কোনো পরিবর্তন নেই বলে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

গণপরিষদ নয়, সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি

২৪ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

সংবিধান সংস্কারে গণপরিষদ গঠন করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করে বিএনপি। দলটি বলেছে, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা উচিত। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে সংসদে সব আলোচনা হবে।

গতকাল রোববার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে লিখিতভাবে দলীয় মতামত জমা দেয় বিএনপি। পরে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের দলীয় এ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।

সংবিধানের প্রস্তাব পরিবর্তনে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিরোধিতাও করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, সুপারিশে ১৯৭১ ও ২০২৪ সালকে এককাতারে আনা হয়েছে। এটি তারা সমুচিত বলে মনে করে না। রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করে না দলটি। বিএনপি বলেছে, যেভাবে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তেমন একটা ভূমিকা থাকবে না। এ ছাড়া নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে।

সংবিধান সংশোধনে গণপরিষদের প্রয়োজন আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, একটি নতুন রাষ্ট্র গঠিত হলে, সেখানে সংবিধান প্রণয়ন করার জন্য গণপরিষদ প্রয়োজন হয়। সেই সংবিধানের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচন হয়।

‘এখানে আমাদের কি রাষ্ট্র নতুন হয়েছে?’—এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ ৫৩-৫৪ বছরের পুরোনো রাষ্ট্র। একটা সংবিধান আছে। হয়তো সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্র নষ্ট হয়েছে। যে কারণে কাঠামোগুলো নতুন করে বিনির্মাণ করা দরকার। তিনি বলেন, যারা গণপরিষদ দাবি করছে, তারাও ৬৯টা দাবি দিয়েছে। বিএনপি আরও কম দাবি দিয়েছে। এগুলো আলোচনা করে একটা বৃহত্তর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসে ব্যাপক সংশোধিত সংবিধান পাওয়া যাবে। সে সংবিধানকে কেউ নতুন সংবিধান বলতে পারে, এখানে বিএনপির আপত্তি নেই।

সালাহ উদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশে একমত। তবে উচ্চকক্ষের সদস্য কীভাবে মনোনীত হবে, তা পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে নির্ধারণ করা যাবে। নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০–তে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। তবে নারী আসনে সরাসরি ভোট নয় বিদ্যমান পদ্ধতিতে মনোনয়নের কথা বলেছে তারা।

প্রস্তাবনা সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা ‘স্প্রেডশিটে’ উল্লেখ করা হয়নি। এটি রাখা উচিত ছিল। সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের প্রস্তাবনা পুরোপুরি পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রস্তাব করেছে। এটা অনেকটা পুনর্লিখনের মতো। সেখানে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে এককাতারে আনা হয়েছে। এটা সমুচিত বলে বিএনপি মনে করে না। এটাকে অন্য জায়গায় রাখা বা সংবিধানের তফসিল অংশে রাখার বিভিন্ন রকম সুযোগ আছে। সেটা আলোচনা করে করা যাবে। পঞ্চদশ সংশোধনের আগের অবস্থায় যে প্রস্তাবনা ছিল, সেটির পক্ষে বিএনপি।

রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের বিষয়ে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিসের (চর্চা) মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাম মেনে নিয়েছে। এটা নিয়ে কতটুকু কী অর্জন হবে, তা প্রশ্নের দাবি রাখে। এ বিষয়ে বিএনপি একমত নয়।

নির্বাহী, আইন ও বিচার—এই তিন বিভাগের বিষয়ে এবং কিছু কমিশন বিশেষ করে সাংবিধানিক কাউন্সিল করে কিছু অনির্বাচিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের যেসব এখতিয়ার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাতে রাষ্ট্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তেমন একটা ভূমিকা থাকবে না। রাষ্ট্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হবে, এটা হচ্ছে সংবিধানের মূল চেতনা। সাংবিধানিক কাউন্সিল করা হলে, সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সালাহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করে বিএনপি। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতা, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা ইসির হাতে থাকা উচিত বলে মনে করে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করার জন্য সংসদীয় কমিটির হাতে ক্ষমতা দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, বিএনপি সেটির সঙ্গেও একমত নয়। এ ক্ষেত্রে তাঁদের মত হলো, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আছে, তারাই দায়বদ্ধ করতে পারে।

গণপরিষদ নির্বাচন চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি

২৪ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা বলেছে, যে সুপারিশগুলো সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, সেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আর সংবিধান–সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন দরকার।

রোববার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কার নিয়ে নিজেদের লিখিত মতামত জমা দেয় এনসিপি। পরে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার সাংবাদিকদের এ কথাগুলো জানান।

এর আগে ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত দেওয়ার পর বিএনপি বলেছে, গণপরিষদ গঠনের কোনো প্রয়োজন নেই। নতুন রাষ্ট্র হলে তখন গণপরিষদ গঠন করা হয় নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সারোয়ার তুষার সাংবাদিকদের বলেন, নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ প্রয়োজন—এ ধারণা সঠিক নয়। অনেক দেশে সংবিধানের বড় পরির্তনের জন্য এ রকম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি থাইল্যান্ড, ভেনেজুয়েলা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের উদাহরণ দেন।

নির্বাচনের আগে ‘গণভোটে সংবিধান সংস্কার চায়’ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ১৫১টি প্রস্তাবে একমত, ১০টি আংশিকভাবে একমত এবং ৫টিতে একমত নয় বলে জানিয়েছেন কাইয়ুম।

নির্বাচনের আগে ‘গণভোটে সংবিধান সংস্কার চায়’ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

২৩ মার্চ ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের’ প্রস্তাব দিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

এছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৫১টিতে তারা একমত বলেও জানিয়েছেন দলটির প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম।

রোববার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় তুলে ধরছিলেন তিনি।

সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি চলে বেলা প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাত সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেন।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী কাইয়ুম বলেন, ”সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে গণভোটের মাধ্যমে গ্রহণ করতে রাজি আছি।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ১৫১টি প্রস্তাবে একমত, ১০টি আংশিকভাবে একমত এবং ৫টিতে একমত নয় বলে জানিয়েছেন কাইয়ুম। একই সঙ্গে দলটি অতিরিক্ত ২টি মতামত দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন।

উড়োজাহাজ থেকে নেমে শতাধিক গাড়িসহ ‘শোডাউন’ দিয়ে নিজ এলাকায় সারজিস আলম

২৪ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

ঢাকা থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত গিয়েছেন উড়োজাহাজে চড়ে। বাকি ১০০ কিলোমিটার পথের মধ্যে অর্ধেকটা পাড়ি দিয়েছেন শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে ব্যাপক ‘শোডাউন’ দিয়েছেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর ছেলে সারজিস আলম। গত মাসে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হয়েছেন তিনি।

সারজিস আলম রাজনৈতিক দল গঠনের পর প্রথমবারের মতো নিজ জেলা পঞ্চগড়ে এসেছেন আজ সোমবার। শতাধিক গাড়ির (কার-মাইক্রোবাস) বহর নিয়ে পঞ্চগড়ের পাঁচটি উপজেলা সফর করেছেন তিনি।

সারজিস আলম ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছান বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। সেখানে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা অপেক্ষা করছিলেন। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। দুপুরে তিনি দেবীগঞ্জ সদরের ফার্মগেট এলাকায় পৌঁছান। সেখানে জেলার পাঁচ উপজেলা থেকে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে আসা এনসিপির নেতা-কর্মীরা তাঁকে স্বাগত জানান। ব্যান্ড দলের সদস্যদের সরব উপস্থিতিও সেখানে ছিল। পরে সেখান থেকে তিনি ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরের বিজয় চত্বরে যান। সেখানে একটি পথসভায় বক্তব্য দেন সারজিস।

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত

২৭ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত।

ইশরাক হোসেনের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রার্থী ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা করা হয়, ইভিএম মেশিনে ভোট জালিয়াতি করা হয়, নির্বাচনে ভোটারদের ভোটগ্রহণে বাধা দেওয়া হয়, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করা হয়। এতসব জালিয়াতির পরেও নির্বাচন কমিশন শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ৩ মার্চ ইশরাক হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। আদালত পূর্ণাঙ্গ শুনানি নিয়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর পক্ষে নয় বিএনপি

২৮ মার্চ ২০২৫, সমকাল

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর পক্ষে নয় বিএনপি। পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দেওয়া বিএনপির মতামত পর্যালোচনায় এমনটি উঠে এসেছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছিল– নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। বিএনপি এতে একমত হয়নি।

সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের পক্ষে নয় দলটি। আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, কর্ম কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ চায়। এতে কার্যত প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে নিয়োগের ক্ষমতা।

সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে– কেউ জীবনে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। বিএনপি এ সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়নি। দলটি মতামত দিয়েছে, কেউ টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না। তবে বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদের মেয়াদ চার বছর নির্ধারণের সুপারিশেও একমত হয়নি বিএনপি। সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর বহাল রাখতে চায় তারা।

সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে– নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন থাকলেও সংবিধান সংশোধনে গণভোট লাগবে। বিএনপি সংবিধান সংশোধনে গণভোট চায় না।

গত ৫ মার্চ সংস্কার-বিষয়ক পাঁচটি কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ বিষয়ে মতামত জানাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘স্প্রেডশিট’ পাঠায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন। গত রোববার বিএনপি এ বিষয়ে মতামত জানিয়েছে।

সংবিধান সংস্কারের ৭০টি সুপারিশের মধ্যে ১১টিতে একমত ও তিনটিতে নীতিগতভাবে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে তারা। ছয়টি সুপারিশের সঙ্গে আংশিক একমত হয়েছে দলটি। বিএনপি যে ২০ প্রস্তাবের সঙ্গে আংশিক বা পুরো একমত, সেগুলো তারা আগামী সংসদে বাস্তবায়ন চায়।

কমিশন জানতে চেয়েছিল– অধ্যাদেশ, নির্বাচনের আগে গণভোট, নির্বাচনের সময় গণভোট, গণপরিষদ নির্বাচন, নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কার নাকি গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে? সেখানে দলটি সংসদকে প্রাধান্য দেয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলায় অভিযুক্তদের নির্বাচনে অযোগ্য করার সুপারিশ করেছিল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ ৩১ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে অভিযুক্তরা নির্বাচন করতে পারবেন না। অন্য আদালতের মতো দণ্ডিত হতে হবে না।

বিএনপি এ সুপারিশের সঙ্গে একমত নয়। দলটির মতে, এই মুহূর্তে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ অনাবশ্যক।

কাউকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে সংবিধান সংশোধন করার প্রয়োজন হবে।

সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব নয়

বিএনপি মতামতে বলেছে, সংবিধানের ৫৫(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। প্রধানমন্ত্রী কী প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন, তা সংবিধানের ৫৫(৬) অধীনে রুলস অব বিজনেসে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।

বিদ্যমান সংবিধানের ৪৮(৩) অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বাদে বাকি সব কাজ রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে বাধ্য। এর মাধ্যমে বিচারপতি, সাংবিধানিকসহ স্বতন্ত্র আইনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, উচ্চ ও নিম্নকক্ষের স্পিকার, বিরোধী দল থেকে উচ্চ ও নিম্নকক্ষে নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এবং তৃতীয় একটি (সরকারি ও বিরোধী নেতার বাইরে) দল থেকে একজন সংসদ সদস্য থাকবেন। একই সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

সুপারিশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন, কর্ম কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেলের মতো দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, স্থানীয় সরকার কমিশনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হবে। এনসিসির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতে এসব প্রতিষ্ঠানে এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ করা হবে। বিএনপি এসব সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিতে হবে। বিএনপি মনে করে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছ নিয়োগের জন্য আইন করা যেতে পারে। আইনে বলা থাকবে, কীভাবে নিয়োগ হবে। সব বিষয় সংবিধানে থাকার প্রয়োজন নেই।

কমিশনের সুপারিশ ছিল, যিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন, তিনি দলীয় প্রধান কিংবা সংসদ নেতার পদে থাকতে পারবেন না। এ দুই সুপারিশেও একমত নয় দলটি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংসদ নেতা এবং দলীয় প্রধান কে হবেন– তা দলের নিজস্ব বিষয়; সংবিধানের বিষয় নয়।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যে আইন চায় বিএনপি

কমিশন সুপারিশ করেছে, শুধু সংসদ নয়; ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’-এ নির্বাচিত হবেন রাষ্ট্রপতি। প্রস্তাবিত ৬৪ ‘জেলা সমন্বয় কাউন্সিল’ এবং ১২ ‘সিটি করপোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল’-এর একটি করে ভোট থাকবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। এসব সুপারিশ সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মতামতে জানিয়েছে বিএনপি। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে বিনা বাধায় দলীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঠেকাতে এ সুপারিশ করা হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ চালুর মতো সময় এখনও হয়নি।

২০২৩ সালে রাষ্ট্র সংস্কারে ঘোষিত বিএনপির ৩১ দফায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলা হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতিকে কী কী ক্ষমতা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের পর একটি উপ-অনুচ্ছেদ যোগ করা যেতে পারে। যেসব ক্ষমতা দেওয়া হবে, তা রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়াই করতে পারবেন।

এনসিসি চায় না

এনসিসি গঠনে নারাজি জানিয়ে বিএনপি বলেছে, সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এরূপ কাউন্সিলের কার্যকারিতা যথেষ্ট প্রমাণিত নয়। বিদ্যমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় যে কোনো অপ্রমাণিত পদ্ধতির পরীক্ষা হিতে বিপরীত হতে পারে।

বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে বলেন, অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত এনসিসি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, এমনকি দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। সাংবিধানিক নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে না।

জাতীয় সাংবিধানিক কমিশনের (এনসিসি) সিদ্ধান্তক্রমে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন– এ সুপারিশে একমত নয় বিএনপি। দলটি মতামতে বলেছে, জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা সরকার ও সংসদের বাইরে থাকা সংগত নয়।

জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকদের অধিকার রদ বা স্থগিত না করার সুপারিশেও একমত নয় বিএনপি। দলটির মতে, নাগরিকদের কোনো অধিকার রদ বা স্থগিত না করে জরুরি অবস্থা জারির কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে– বোধগম্য নয়।

সংবিধানে জিয়ার আমলের মূলনীতি চায় বিএনপি

সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ বাদ দিয়ে বহুত্ববাদ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। বিএনপি এতে একমত হয়নি। দলটি সংবিধানের মূলনীতি ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে বলেছে। জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ এবং ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ যুক্ত করেছিলেন।

তবে বিএনপি রাষ্ট্রভাষা বাংলাসহ দেশে প্রচলিত সব ভাষাকে স্বীকৃতি, নাগরিকদের বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিতি, ৭(ক) অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশে একমত হয়েছে।

৭০ অনুচ্ছেদ শিথিল

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল, অর্থবিল ব্যতীত নিম্নকক্ষের সদস্যরা স্বেচ্ছায় ভোট দিতে পারবেন। বিএনপি এতে দ্বিমত জানিয়ে প্রস্তাব করেছে, আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী বিল ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রশ্ন জড়িত নয়– এমন বিল ছাড়া সব বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন সদস্যরা।

বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার চায়

এনসিসির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান সুপারিশ করেছে কমিশন। বিএনপি বলেছে, এতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। বিএনপি বলেছে, এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

তবে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং ৯০ দিনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সুপারিশে একমত বিএনপি। তবে তা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী; এনসিসির মাধ্যমে নয়। বিলুপ্ত ত্রয়োদশ সংশোধনী, উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচকালীন সরকারের প্রস্তাব করেছে দলটি। তবে তা করতে হবে আগামী সংসদে আলোচনার মাধ্যমে।

উচ্চকক্ষে নীতিগতভাবে একমত, গণভোটে নয়

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশে নীতিগতভাবে একমত বিএনপি। দলটির ৩১ দফাতে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা রয়েছে। সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছে, উচ্চকক্ষের ১০০ সদস্য নির্বাচিত হবেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। পাঁচজন মনোনীত হবেন রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে। বিএনপি এতে একমত নয়।

সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে যেভাবে নারী আসন বণ্টন হয়, সেভাবে উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন হতে হবে।

বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী, নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপট ঠেকানোর জন্য কী ব্যবস্থা থাকবে– এমন প্রশ্নে­ সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আনুপাতিক পদ্ধতি দুই কক্ষের বিরোধ সৃষ্টি করবে। এ কারণে অনেক দেশ উচ্চকক্ষ বিলোপ করছে। অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি নির্বাচন ব্যবস্থার কারণে সংসদে আসতে পারেন না। তাদের আনতে বিএনপি উচ্চকক্ষ চায়।

কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধনের বিল উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনুমোদন পেলে গণভোটে যাবে। বিএনপি বলছে, সংবিধানের সব সংশোধনীর জন্য গণভোট বাস্তবসম্মত নয়। ১৪২ অনুচ্ছেদই পঞ্চদশ সংশোধনীপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। নিম্নকক্ষে পাস হওয়া বিল উচ্চকক্ষ সুপারিশসহ কিংবা সুপারিশ ব্যতিরেকে পুনর্বিবেচনার জন্য নিম্নকক্ষে ফেরত পাঠাতে পারবে– এমন বিধান করা যেতে পারে।

আরও যা আছে

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স ২১ বছর চায় না বিএনপি। তবে সংসদের দু’জন ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত করার সঙ্গে একমত দলটি।

সুপারিশ করা হয়েছে, নিম্নকক্ষের কোনো সদস্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রপতি আইনসভার উভয় কক্ষ ভেঙে দেবেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানে এখনও উভয় কক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যখন এটা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে, তখন একই আইনে উভয় কক্ষ ভেঙে দেওয়া যাবে।

কমিশন সব বিভাগে হাইকোর্ট বিভাগের সমান এখতিয়ারসম্পন্ন হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রবর্তনের সুপারিশ করেছে। বিএনপি ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের প্রস্তাব করেছে। ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ বিবেচনায় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ তিন বিচারপতির মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রস্তাব করেছে।

স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা সুপারিশেও একমত নয় বিএনপি। স্থায়ী প্রসিকিউশন সার্ভিস আইনের মাধ্যমে ও পর্যায়ক্রমে হওয়া সমীচীন বলে মনে করে দলটি।

রাষ্ট্রের নাম বদলে আপত্তি এনসিপির, মূলনীতি পরিবর্তনে একমত

২৮ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের যে সুপারিশ করেছে, তাতে আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে দলটি। এর পাশাপাশি বহুত্ববাদের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করার ওপর জোর দিয়েছে তারা।

সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ পাঁচটি কমিশনের সুপারিশের ওপর এনসিপির দলীয় মতামত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টিতে একমত ও ২৯টিতে আংশিক একমত হয়েছে তরুণদের দলটি।

একই দিনে বিএনপিও ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত জমা দিয়েছে। বিএনপির মতামতের সঙ্গে এনসিপির মতামতের বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য দেখা গেছে। যেমন বিএনপি সংবিধানের মূলনীতির বদল চায় না কিন্তু এনসিপি চায়। বিএনপি সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর বহাল রাখার পক্ষে আর এনসিপি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী চার বছর করার পক্ষে। এ ছাড়া একই ব্যক্তির রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা না হওয়ার সুপারিশে বিএনপি ভিন্নমত জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে এনসিপির মত আলাদা।

সব সূত্রই নির্ভরযোগ্য নয়: বাংলাদেশ নিয়ে ‘ঘোস্ট রাইটারদের’ প্রশ্নবিদ্ধ বয়ান

২৭ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। সুদহার চড়েছে ১২ শতাংশের ওপর। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে থাকা বাংলাদেশিরা সামনে একটা কঠিন প্রশ্ন তুলতে পারে—কীভাবে টানাপোড়েনে থাকা একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের মেয়ে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। অর্থনীতির এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর কীভাবে ‘ফার্ম হাউসে’ নিশ্চিন্তে থাকেন?

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন ম্যাগাজিন ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টে (আইপিডি) গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি লেখার শুরু হয়েছে এভাবে। যার লেখকের নাম টিম লারকিন। কিন্তু এই টিম লারকিন বাস্তবে আছেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব এক প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করেছে।

গতকাল বুধবার প্রকাশিত ডিসমিসল্যাবের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আইপিডির ওয়েবসাইটে বাংলাদেশবিষয়ক যেসব লেখা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত ১০টি নিবন্ধ এমন লেখকদের নামে প্রকাশ করা হয়েছে, যাঁদের কোনো সত্যিকার পরিচয় পাওয়া যায় না। ঘোস্ট রাইটার বা ছায়া লেখকদের নামে প্রকাশিত এসব নিবন্ধে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের নানা সমালোচনা করা হয়েছে।

অর্থাভাবে হয়নি সুচিকিৎসা, মাথায় গুলি নিয়েই চলে গেলেন জুলাই আন্দোলনে আহত হৃদয়

০৫ এপ্রিল ২০২৫, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর অনলাইন

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত মো. আশিকুর রহমান হৃদয় (১৭) মারা গেছেন। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিকেল তিনটার দিকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত হৃদয় উপজেলার পশ্চিম যৌতা গ্রামের রিকশাচালক আনসার হাওলাদারের ছেলে।

হৃদয়ের পরিবার সূত্রে জানা যায়, হৃদয় ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করতেন। জুলাই আন্দোলনে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। এ সময় তার মাথায় তিনটি গুলি লাগে। ওই সময় তিনি লুকিয়ে চিকিৎসা নেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। চিকিৎসকরা তার মাথা থেকে ২টি গুলি বের করতে পারলেও আশঙ্কাজনক হওয়ায় একটি গুলি বের করতে পারেননি। এতে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি হৃদয়। মাঝে মাঝে প্রচণ্ড জ্বর উঠত তার শরীরে। এক পর্যায়ে গত বুধবার অসুস্থ হয়ে পড়েন হৃদয়। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে বিকেল ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

হৃদয়ের বাবা আনসার হাওলাদার বলেন, অর্থাভাবে ছেলের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। একমাত্র সম্বল রিকশা ও একটা গরু বিক্রির টাকা দিয়ে যতটুকু করার চেষ্টা করেছি। মাথার তিনটি গুলির দুটি বের করেছেন ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা। আরেকটি গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। বিদেশ চিকিৎসার করা হলে আমার ছেলেটা বেঁচে থাকতো। টাকা নেই তাই ছেলেটা মারা গেছে। আমার ছেলেটার জীবন গেছে। নতুন সরকার আসছে, কেউ তার খোঁজ নিল না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কলকাতা, লন্ডন ও নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিলাসী জীবন

১২ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা আর প্রচণ্ড দাপট হারালেও বিদেশে বসে বিলাসী জীবন যাপন করছেন আওয়ামী লীগের পলাতক সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এসব নেতার জৌলুশময় জীবনযাপনের খবর পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের থাকছেন কলকাতার অভিজাত রাজারহাট নিউটাউন এলাকায়। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও কলকাতা নিউটাউন এলাকায় আয়েশি জীবন যাপন করছেন। আর সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলকাতার অভিজাত এলাকা টাটা হাউজিং অ্যাভিনিডাতে বড় আকারের দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকছেন।

কলকাতা থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামি এসব পলাতক নেতা বিদেশে আয়েশিভাবে থাকছেন। কোনো কিছুরই অভাব নেই সেখানে। গাড়ি–বাড়ি, ব্যক্তিগত কর্মী, ব্যক্তিগত চিকিৎসক থেকে শুরু করে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে থাকছেন তাঁরা। কেউ কেউ ভারতে তাঁদের সন্তানদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। তাঁদের অনেকেরই ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য আর সম্পদ আছে। তাই ফেরারি থেকেও অর্থসম্পদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক একাধিক নেতা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী কলকাতায় পালিয়ে আছেন। সাবেক কিছু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, গণভোটের পক্ষে জামায়াত

১৪ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশে একমত জামায়াতে ইসলামী। প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের পরিবর্তে এনসিসির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের সুপারিশের পক্ষেও মত দিয়েছে দলটি। তবে তারা প্রস্তাবিত এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে চান না। দলটি চায় কেউ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না; তবে সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরই থাকুক।

ঐকমত্য কমিশনে জামায়াত এসব মতামত দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো এবং নির্বাচন পদ্ধতিসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের অবস্থান বিএনপির বিপরীত।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সমকালকে বলেন, জামায়াত তার অবস্থান জানিয়েছে। অন্য দল কী চায়, তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০, দুদক সংস্কার কমিশনের ২০, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২৬, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ২৩ এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ২৭ সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন।

মোট ১৬৬ সুপারিশের ৭৭টিতে জামায়াত একমত। আংশিক একমত ৩৬ সুপারিশে। একমত নয় বলে জানিয়েছে ৫৩ সুপারিশে। সংবিধান সংস্কারে ৩১ সুপারিশে একমত, ১৬ সুপারিশে আংশিক একমত এবং ২৩ সুপারিশে একমত নয় বলে জানিয়েছে তারা।

আউটসোর্সিং নীতিমালা জারি: ঈদ-বৈশাখে প্রণোদনা, মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন নারীরা

১৫ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

আউটসোর্সিং সেবা কর্মীদের জন্য ‘সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০২৫’ জারি করা হয়েছে। সরকারের জারি করা নীতিমালায় বছরে দুটি উৎসবে (ঈদ) এক মাসের সেবামূল্যের অর্ধেক হারে উৎসব প্রণোদনা পাবেন কর্মীরা। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখী প্রণোদনা পাবেন মাসিক সেবামূল্যের এক-পঞ্চমাংশ হারে। বছরে ১৫ দিনের ছুটি পাবেন কর্মীরা। নারী কর্মীদের জন্য ৪৫ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং নারীবান্ধব কাজে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা আছে নীতিমালায়। আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) নববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধান ‍উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এই নীতিমালা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ।

এনসিপির সাধারণ সভা

নানা প্রশ্ন ও অভিযোগের জবাব দিলেন নেতারা

২০ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন টক শোতেও অনেকে এনসিপির আলোচিত কয়েকজন নেতার সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সভায় এ নিয়ে কথা হয়, কেউ কেউ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাঁরা অভিযোগ খণ্ডন করে সভায় জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন।

শুক্রবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় ৯ ঘণ্টা বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা হয়। এটি দলের তৃতীয় সাধারণ সভা। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সঞ্চালক ছিলেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন। সভায় দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ২১৬ সদস্যের মধ্যে ১৮০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন।

নারীর জন্য ৩০০ সংরক্ষিত আসন, বিয়ে-তালাক, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার দেওয়ার সুপারিশ

১৯ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করার সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। অন্তত আইনটি তৈরিতে এখনই উদ্যোগ নিতে সব সম্প্রদায়ের জন্য ঐচ্ছিকভাবে তা প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে সংসদীয় আসন বাড়িয়ে ৬০০ করে সেই আসন থেকে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রেখে সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে।

আজ শনিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নারী অধিকার রক্ষায় বিশদ সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন নারী সংস্কার কমিশনের প্রধান ও অন্য সদস্যরা।

‘সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি এবং নারী–পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণ’ শিরোনামে প্রতিবেদনে নারী বিষয়ক কমিশন প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা, বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, ধর্ষণের শিকার হওয়া অন্য লিঙ্গের মানুষের বিচার ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে আইনে ধর্ষণ ধারায় সংস্কার আনা, যেকোনো উপস্থাপনায় অহেতুক নারীর প্রসঙ্গ টেনে নারীবিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা, নারীর প্রতি সম্মানজনক, মর্যাদাপূর্ণ ও যথাযথ সংবেদনশীল আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক কর্মসূচি নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত করা, যৌনপেশাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডো) দুটি ধারার ওপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ১৮৯ ও ১৯০ অনুচ্ছেদ অনুস্বাক্ষর করার সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।

একই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ৬ মাস ছুটি দেওয়া এবং পূর্ণ বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনসহ ৪৩৩টি সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১০ সদস্যের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। নারীপক্ষ–এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভিন হককে প্রধান করে গঠিত কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জ্যেষ্ঠ ফেলো মাহীন সুলতান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আখতার, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, নারীপক্ষের পরিচালক কামরুন নাহার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ফেরদৌসী সুলতানা ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা।

বিদেশে অবস্থান করার কারণে ফৌজিয়া করিম ফিরোজ ছাড়া বাকি সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রয়াত কয়েকজন নারী নেত্রী ও জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিশনের সদস্যরা মোট ৪৩টি বৈঠক করেন। নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠন, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ৩৯টি পরামর্শ সভা করা হয়। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ৯টি সভা করা হয়। পরামর্শ সভাগুলো চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে হয়েছে। সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে তিন ধাপে— অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে করণীয়, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় এবং দীর্ঘ নারী আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের ভিত্তিতে।

৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব

সংসদের মোট আসন সংখ্যা ৬০০ করা ও এর মধ্যে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা ও অভিন্ন পারিবারিক আইন তৈরি, স্বতন্ত্র স্থায়ী নারী বিষয়ক কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য। নারী আসন বিষয়ে বলা হয়েছে, সংসদে পুরুষের সমান সংখ্যক নারী প্রতিনিধি সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে আসবেন। সংসদীয় আসন সংখ্যা ৬০০-তে বাড়িয়ে যেখানে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একটি সাধারণ আসন এবং নারীদের জন্য একটি সরাসরি নির্বাচিত সংরক্ষিত আসন থাকবে। উভয় আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। উচ্চ কক্ষে ৫০ শতাংশ আসনে আনুপাতিক হারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে, তা পুরুষ–নারী পর্যায়ক্রমে জিপার পদ্ধতিতে দিতে হবে, যাতে প্রতিটি দল থেকে সমান সংখ্যক নারী ও পুরুষ মনোনীত হন। জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষে ৫০ শতাংশ আসনে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব গৃহীত হলে নারী কমিশনের সম্পূরক প্রস্তাব হলো– নারী সংগঠনের প্রতিনিধিত্বের জন্য কমপক্ষে ৫টি আসন বরাদ্দ করা। জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রতি অনাস্থা প্রকাশে ব্যালটে ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে জাতীয় সংসদে ৩০০ আসন পর্যাপ্ত নয়। ৬০০ আসন এই জনসংখ্যার তুলনায় খুব বেশি নয়। এটা নিয়ে অনেকে অনেক মন্তব্য করলেও আমাদের কাছে ৬০০ আসন “উদ্ভট” কিছু মনে হচ্ছে ন। আমরা চাই, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হোক, বিতর্ক হোক। আসন বাড়ানোর বিরুদ্ধে কী কী যুক্তি আছে, তা উঠে আসুক। আমরা যদি সত্যিই চাই, নারীর সংসদে বসুক, তাহলে এই সুপারিশ মেনে নিতে হবে। এটা ভালো রাজনীতির জন্য ভালো প্রক্রিয়া তৈরি করবে।’

সদস্য মাহীন সুলতান বলেন, ‘সংরক্ষিত আসন বাড়ানোর বিষয়ে আমরা মানুষকে ভাবাতে চাইছি। যে নারীরা রাজনীতিতে যাবেন, সেটা তাঁদের জন্য পেশা। তাঁদের জন্য স্থায়ী একটা ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারণ তাঁরা নির্বাচন করবেন। আসন বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সবার আলোচনা করতে হবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ পদে নারীদের রাখার যে বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) রয়েছে, তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এক নেতা দলীয় কোনো পদে দুইবারের বেশি থাকতে পারবেন না— আরপিওতে এই বাধ্যবাধকতা আরোপের মাধ্যমে দলে নেতৃত্বের বিকাশ নিশ্চিত করার পথ তৈরি করতে হবে।

অভিন্ন পারিবারিক আইন অন্তত শুরু হোক

অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করার সুপারিশের পাশাপাশি সব সম্প্রদায়ের জন্য আইনটিকে ঐচ্ছিক রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আইন প্রয়োগের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে কি না, জানতে চাইলে কমিশনের সদস্য কামরুন নাহার বলেন, ‘অভিন্ন পারিবারিক আইন নিয়ে আমরা অনেকের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। আমরা চাইছি, এটা অন্তত শুরু হোক। ঐচ্ছিক রাখার মাধ্যমে হলেও যেন শুরু করা হয়।’

এ প্রসঙ্গে কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক যোগ করে বলেন, ‘অভিন্ন পারিবারিক আইনের বিষয়ে একটা সিভিল অপশন থাকা দরকার। আমরা রাতারাতি প্রচলিত পারিবারিক আইন বাদ দিতে পারব না।’

শিরীন পারভিন হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য অনেক কিছু করতে চায় না। এই সরকারের স্বার্থ নেই। এই সরকারই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, বৈষম্য দূর করার জন্য গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে। বৈষম্য দূর করা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়া লক্ষ্য হতে হবে।

সংবিধান ও আইনগত কাঠামো বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সুপারিশের মধ্যে আরও বলা রয়েছে—পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, ২০১০ এবং বিবাহবিচ্ছেদ আইনটির কার্যকর বাস্তবায়ন এবং শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, বিবাহবিচ্ছেদের মামলাগুলোর নিষ্পত্তি ৩ বছরের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ সংশোধন করে সন্তানের ওপর নারীর জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ২০০৯ সালে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে এবং বিভ্রান্তি এড়াতে একটি সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১ সংশোধন করে বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে বিবাহিত বাংলাদেশি নারীদের বিদেশি স্বামীকে নাগরিকত্ব প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করা। সাক্ষী ও ভুক্তভোগী নারীদের পরিচয় গোপন রাখা এবং তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ কার্যকর করে নারীদের সমান সুযোগ ও সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকারের জন্য বিভিন্ন ধর্মের পারিবারিক আইন সংশোধন করা এবং মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে নারীদের সম্পত্তিতে ৫০–৫০ ভাগ নিশ্চিত করা, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে ধারা ১৭ (১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের বিয়ের সুযোগ রাখা) বাতিল করা, সাক্ষ্য আইনে বৈষম্য দূর করা ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়েছে। বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের অবহেলা ও অপমান অবসানে সম্মানসূচক পদক্ষেপ নেওয়া, পাহাড়ি এলাকা ও শরণার্থীশিবিরে যৌন সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার নিশ্চিত করাসহ সব ক্ষেত্রে নারীর পক্ষে সুপারিশ করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের সুপারিশ

কমিশনের প্রতিবেদনে গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখা ও স্তরে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ অনুসরণ করে সব ধরনের গণমাধ্যমে নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। গণমাধ্যমে অংশগ্রহণের জন্য নারীকে যৌনবস্তু হিসেবে ব্যবহার না করা, অহেতুক নারীর প্রসঙ্গ টেনে নারীবিদ্বেষী বয়ান বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়েশিশুর জন্য সহিংসতামুক্ত সমাজ, জনপ্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বাড়ানো, সব বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, শ্রমে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা নারীদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়েছে।

নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি হেফাজতের, প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান জামায়াতের

২০ এপ্রিল ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

দেশের ইসলামপন্থীদের অন্যতম প্ল্যাটফরম ‘হেফাজতে ইসলামে’র নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি তোলার পর জামায়াতে ইসলামও কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারী সংস্কার কমিশন গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার পর ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

ইসলামি উত্তরাধিকার আইন ও ইসলামি পারিবারিক আইন নিয়ে যে পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ কমিশন দিয়েছে, হেফাজতের আপত্তি মূলত সেই জায়গায়।

এই কমিশন বাতিলসহ কয়েকটি দাবিতে সরকারকে ৩ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এই সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না হলে ৩ মের মহাসমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলছে তারা।

জামায়াতে ইসলামী কোন সুপারিশ নিয়ে তাদের আপত্তি তা স্পষ্ট করে না বললেও কিছু সুপারিশকে ‘গর্হিত’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এসব বিষয় সমাজকে ‘চরম অস্থিতিশীলতার’ দিকে ঠেলে দেবে।

রোববার রাতে জামায়াতে ইসলামের ফেইসবুক পেইজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, দলটির আমির শফিকুর রহমান ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গতকাল (শনিবার) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। তাদের সুপারিশকৃত রিপোর্ট দেখে বিস্মিত!”

“দেশে যখন নৈতিকতার অভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং পারিবারিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে ওই সুপারিশমালায় এমন কিছু গর্হিত বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে তা সমাজকে অনিশ্চয়তা ও চরম অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে।

“কতিপয় সুপারিশ কোরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি সকল ধর্মের মূল্যবোধকে তছনছ করে দেবে। বাংলাদেশের জনগণ এক বাক্যে তা প্রত্যাখ্যান করবে।”

ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের দাবি সিপিবি ও বাসদের

২০ এপ্রিল ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

সংস্কারের নামে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্ব করার সঠিক হবে না। এতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নেবে। সংস্কার ও নির্বাচনকে প্রতিপক্ষ ভাবার সুযোগ নেই। এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের আয়োজন করা দরকার। যা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর বা তার আগেই করা সম্ভব বলে মনে করেন বিভিন্ন বাম দলের নেতারা।

রবিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর বনানীতে হোটেল সারিনায় বিএনপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিপিবি ও বাসদের সিনিয়র নেতারা।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালের বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম বলেন, ১৫ বছরের ক্ষোভ ৫ আগস্টে মানুষ প্রকাশ করেছে। সেখানে মানুষের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল ভোট দিতে পারে নাই— ১৪, ১৮ এবং ২৪ সালে। মানুষ চায় গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার। এখন যারা সংস্কারের নামে নির্বাচন দেরি করিয়ে গণপরিষদ নির্বাচন বা অন্য যেগুলো আনছে, তারা অ্যান্টি ডেমোক্রেটিক ফোর্স। হাসিনাও অ্যান্টি ডেমোক্রেটিক ফোর্স, এরাও সেই জায়গাটাতে গিয়ে দেশটাকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। এটা দেশের জন্য মঙ্গল হবে না। এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মঙ্গল হবে না। এটা চলতে থাকলে যারা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নেবে।

সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাজনীতিতে আমরা একটা নতুন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই। রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হওয়া, অনেকদিন ধরেই বন্ধ ছিল। সেটা ভেঙে ফেলা দরকার। একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক ধারায় কীভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেই কাজটি করা দরকার।

তিনি বলেন, আমরা জোটগতভাবে অনেক আগে থেকেই বলে এসেছি, বাংলাদেশে জরুরিভাবে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। কারণ অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি ডিসেম্বর কেন? ডিসেম্বরের অনেক আগেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য অবাধ নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, সেটা করে নির্বাচন করা সম্ভব। আমাদের দলগুলো এবং বামপন্থিরা এটা অনেকদিন ধরেই বলে আসছে। বিএনপি সাধারণভাবে বলেছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। বরঞ্চ আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের আগেই বাংলাদেশের নির্বাচন হওয়া সম্ভব। সেটা করার জন্য জরুরিভাবে আগানো দরকার। আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে যাওয়াটা দরকার বলে মনে করি।

শ্রমিকের মজুরি ৩ বছর পরপর পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ

২২ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বছর পরপর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মজুরি না দিলে শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপৎকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন করার শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস, স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছে কমিশন।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বাধীন শ্রম সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে ‘তুই-তুমি’ সম্বোধন চর্চা বন্ধ করতে বলেছে কমিশন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গতকাল রোববার বেলা ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয় ১৮ সদস্যের শ্রম সংস্কার কমিশন। শ্রম জগতের রূপান্তর-রূপরেখা: শ্রমিক অধিকার, সু-সমন্বিত শিল্প সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন শীর্ষক প্রতিবেদনে মোটা দাগে ২৫টি সুপারিশ রয়েছে।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানায়। পরে বিকেলে শ্রম ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত জানান কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদসহ অন্য সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে শ্রম সংস্কার কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। যাতে করে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। কারণ, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা রয়েছে।

সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ক্ষেত্রে প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র বা প্রমাণপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পেনশন স্কিমের অধীনে শ্রমিকবান্ধব পেনশন স্কিম চালু করার পাশাপাশি শিল্পাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকায় শ্রমিকদের জন্য কার্ডভিত্তিক রেশন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের মর্যাদাকর জীবনযাপন নিশ্চিত করতে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়োজিত সব শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ ন্যূনতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো খাতের মজুরি কাঠামো নির্ধারণে পরিবারে একক উপার্জনকারী হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এমন পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে, যাতে শ্রমিক তাঁর পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে পারেন।

তৈরি পোশাক, ট্যানারিসহ ৪২ খাতের মজুরি কাঠামো এখন পাঁচ বছর পরপর নির্ধারণ হয়। এটি তিন বছর পরপর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট গড় মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করার কথাও বলেছে কমিশন। এখন বছরে ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি হয়। যদিও উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে চলতি বছর তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি হয় ৯ শতাংশ।

প্রায়ই দেখা যায়, মজুরি ও ক্ষতিপূরণ না পেয়ে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকেরা। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের মতো ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধ করতে একাধিক সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। বলা হয়েছে, মজুরি পরিশোধ-সংক্রান্ত তথ্য প্রতি মাসে অনলাইনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে (ডিআইএফই) জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে মজুরি না দিলে দশমিক ৫ শতাংশ হারে শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরকারকে একটি আপত্কালীন তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। সেই তহবিলে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের দুই মাসের সমপরিমাণ মজুরি জমা রাখবে। তহবিলটি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিল্পের মালিকদের সংগঠনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে।

সরকারি দপ্তর ও সংস্থাগুলোতে স্থায়ী কাজের জন্য ‘আউটসোর্সিং’ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে বলেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাঁরা ইতিমধ্যে স্থায়ী ধরনের কাজে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিযুক্ত আছেন, তাঁদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নিয়োগের পদক্ষেপ নিতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এটি অপ্রতুল উল্লেখ করে কমিশন ক্ষতিপূরণের হার বৃদ্ধি করে সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। কমিশন বলেছে, একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন ১২১ ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া সব খাতের শ্রমিকের জন্য দুর্ঘটনা বিমা বাধ্যতামূলক করা এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার করতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদকে প্রধান করে গত নভেম্বরে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্যরা হলেন সাবেক সচিব মাহফুজুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক জাকির হোসেন, শ্রমিকনেতা তপন দত্ত, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ম. কামরান টি রহমান, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার প্রমুখ।

ট্রেড ইউনিয়নের শর্ত শিথিল

শিল্প খাতে ট্রেড ইউনিয়ন করার বিধিনিষেধ শিথিল করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি চাপ রয়েছে। বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে কোনো কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ৩ হাজারের কম হলে ২০ শতাংশের সই লাগে। ৩ হাজারের বেশি হলে ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সই লাগে। এই বিধিনিষেধ ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে সবচেয়ে বড় বাধা মনে করে সংস্কার কমিশন।

ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রমিকের অনুপাতের শর্তের পরিবর্তে ন্যূনতম শ্রমিক সংখ্যা বিবেচনা করার ওপর জোর দিয়েছে কমিশন। এ জন্য সুপারিশ প্রণয়নে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেড নিবন্ধনে স্বচ্ছতা আনতে কমিশন বলেছে, শ্রম অধিদপ্তরকে ৫৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে শ্রম অধিদপ্তরকেও জবাবদিহি করতে হবে।

মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস

নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১১২ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারকে সহায়তা দিতে হবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য বিশেষ স্কিম নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ছুটি নির্ধারণ করার কথাও বলেছে কমিশন।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানিসহ সব ধরনের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। হাইকোর্টের ২০০৯ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতাবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে অভিযোগ সেল ও নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করা জরুরি।

মর্যাদাপূর্ণ শ্রমপরিবেশের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য লিঙ্গ, বর্ণ, জাতি ভেদে অবমানকর ও অমর্যাদাকর ভাষার ব্যবহার রোধ করার কথা বলেছে কমিশন। এ ছাড়া শ্রম আইনে মহিলা শব্দের পরিবর্তে নারী ব্যবহার, কর্মপরিবেশে তুই-তুমি সম্বোধন চর্চা বন্ধ, শ্রম আদালতের সব স্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনে জোর দেওয়া হয়েছে।

শ্রম প্রশাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহি নিশ্চিত করতে স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। তার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি জাতীয় সামাজিক সংলাপ ফোরাম গঠনের উদ্যোগ দরকার। এ ছাড়া জাতীয় নিম্নতম মজুরি কমিশন ও স্থায়ী জাতীয় মজুরি কমিশন গঠনের পাশাপাশি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে নতুন দুটি অধিদপ্তর সৃষ্টির সুপারিশ করেছে কমিশন।

একজন জামায়াতপন্থী ব্যবসায়ী গাড়িটি আমাকে দিয়েছেন: হান্নান মাসউদ

২২ এপ্রিল ২০২৫, ইত্তেফাক

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ এবার কার দেয়া গাড়িতে চড়েন সে বিষয়ে মুখ খুললেন।

সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হান্নান মাসউদ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।

এসময় তিনি বলেন, আমি নিজে একটা গাড়ি নিয়েছি। এ গাড়ির ব্যাপারে আমি অনেকবার বলেছি। এটা নিয়ে সাংবাদিকরাও বিভিন্ন নিউজ করেছেন। গাড়িটা কার সেটা বের করেছেন। এটা একজন ব্যবসায়ীর গাড়ি। যিনি মূলত একজন জামায়াতপন্থী ব্যবসায়ী। ওনার গাড়ি। উনি এটা আমাকে দেন। ভালো জেনেই দেন।

হান্নান মাসউদ আরও বলেন, উনি আমার হাতিয়ার মানুষ। উনি চান যে হাতিয়াতে আমি যেনো রাজনীতিটা করি। এখন আমার বাড়িতে বাইকে যাওয়া তো রিস্কি। এখন তো আর আগের মতো যাতায়াত করা সম্ভব নয়। সেই ক্ষেত্রে এই সকল বিষয় নিয়ে বারবার বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

রাজনীতির সেই পুরনো পথেই কি হাঁটছে জাতীয় নাগরিক পার্টি?

২২ এপ্রিল ২০২৫, বিবিসি বাংলা

রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর শুরু থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এমন অবস্থায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে এরই মধ্যে দলের একজন যুগ্ম সদস্য সচিবকে দল থেকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছে।

গত বছর পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে দুর্নীতি-অনিয়ম এবং জেলা প্রশাসক নিয়োগে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপের অভিযোগে সোমবার রাতে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়।

গত মার্চে দলটির শীর্ষ নেতা সারজিস আলম নিজ এলাকায় বিশাল গাড়িবহর নিয়ে শোডাউন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা তৈরি হয়।

চলতি মাসেই হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম দুদক চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা যায়।

এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের আসছে।

এ নিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপাদান আমাদের ভেতরও আসার চেষ্টা করছে। আমরা সেটাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনছি”।

এমন পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিলাসী জীবনযাপন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কিংবা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলীয় নেতারা।

সেখানে সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন নেতাদের নাম উল্লেখ না করলেও তাদের অভিযোগগুলো নিয়ে কথা বলেন কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ কেউ।

সংস্কারের বেশ কিছু মৌলিক সুপারিশের বিষয়ে একমত হয়নি বিএনপি

২৩ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

সংস্কারের যেসব সুপারিশে বিএনপির আংশিক একমত বা ভিন্নমত ছিল, সেগুলোর বিষয়ে ঐকমত্যে আসার লক্ষ্যে দলটির সঙ্গে আলোচনা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তিন দিন আলোচনা হলেও সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মৌলিক পরিবর্তনের বেশ কিছু সুপারিশের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কমিশনের ঐকমত্য হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষ হয়। আলোচনা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রায় ৬৯৪টি প্রস্তাবের মধ্যে বেশির ভাগের সঙ্গে বিএনপি একমত হয়েছে। আপাতত আলোচনা শেষ হয়েছে। প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক আরও আলোচনা হতে পারে।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে তিন দিন আলোচনা হয়েছে। গতকাল বিএনপির সঙ্গে কমিশনের আলোচনা শেষ হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে প্রথম আলোচনা হয় গত বৃহস্পতিবার, এরপর গত রোববার।

গতকাল নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের যে ২৮টি সুপারিশ নিয়ে নির্বাচন কমিশন আপত্তি জানিয়েছিল, বিএনপিও কমবেশি সেগুলো নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় আপত্তি জানিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করার জন্য একটি প্রস্তাব করেছিল সংস্কার কমিশন। সেটি হলো মেয়াদ-পরবর্তী সময়ে ইসির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করার জন্য সংসদীয় কমিটিকে ক্ষমতা দেওয়া। এই প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত হয়নি। তারা মনে করে, এটি বাস্তবায়িত হলে ইসির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে।

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে আলাদা একটি কমিশন করার প্রস্তাবেও বিএনপি একমত হয়নি। এক ব্যক্তি একাধিক আসনে প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করতে বলেছিল কমিশন। এর সঙ্গেও একমত নয় বিএনপি।

আলোচনা শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় কমিটির কাছে এ ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সত্তায় আঘাত আসতে পারে। নির্বাচন কমিশনের মেয়াদকালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে এবং মেয়াদ-পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আর সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ইসির সাংবিধানিক এখতিয়ার। এখানে আরেকটা বডি করা হলে একসঙ্গে দুটি সত্তা হয়ে যাবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কেউ অভিযুক্ত হলেই তাঁকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণার প্রস্তাব করেছিল নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এর সঙ্গেও একমত হয়নি বিএনপি। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কেউ অভিযুক্ত হলেই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে বলা যায় না। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে অযোগ্য করা যুক্তিসংগত নয়। কেউ আদালতের রায়ে প্রাথমিকভাবে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করা যায়।

গতকাল ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে তাঁরা ১৪১টিতে একমত হয়েছেন। আংশিক একমত হন ১৪টিতে, মন্তব্যসহ ভিন্নমত দিয়েছেন ৬৪টিতে। আর একমত নন ২৪টিতে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৮৭টিতে তাঁরা একমত হয়েছেন। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ৮৯টি সুপারিশকে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে ৬২টিতে তাঁরা একমত হয়েছেন। দুদক সংস্কার কমিশনের ২০টি সুপারিশের মধ্যে ১টিতে তাঁদের আপত্তি আছে। সংবিধান সংস্কারের ১৩১টি সুপারিশের বেশির ভাগের সঙ্গে তাঁরা একমত হয়েছেন।

ঐকমত্যে আটকে আছে জনপ্রশাসন সংস্কার কার্যক্রম

২৩ এপ্রিল ২০২৫, বণিক বার্তা

আমলাতন্ত্রকে অতিমাত্রায় দলীয়করণের মধ্য দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে গড়ে তোলা হয় পক্ষপাতদুষ্ট জনপ্রশাসন। তার ওপর ভর করেই দীর্ঘায়িত হয় তাদের শাসনকাল। তাই এ প্রথা থেকে বের হয়ে আসতে গঠন করা হয় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। নানা বিচার-বিশ্লেষণ শেষে চার মাস পর তাদের প্রতিবেদন জমা পড়ে। সরকারকে জনমুখী করতে জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একগুচ্ছ সুপারিশ দিয়েছে কমিশন। তবে এখনো বৃহৎ পরিসরে সেগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সরকার। এমনকি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা অবশ্য বলছেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছে, সেগুলো ঐকমত্য কমিশনে যাচাই-বাছাই চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গেও চলছে এ নিয়ে আলোচনা। তাদের মতামত নেয়ার পর একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। সে আলোকেই মূলত সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

সরকার ৭০০ হাসপাতালে ফার্মেসি করবে, কী সুবিধা পাবে মানুষ

২৩ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

ওষুধ সহজে পাওয়ার লক্ষ্যে সারা দেশে ‘ফার্মেসি নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে সারা দেশে সরকারি ৭০০ হাসপাতালে এই ফার্মেসি করা হবে। পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বেশি পরিমাণে উৎপাদনে জোর দিচ্ছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দুটি পদক্ষেপ নিলে চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের ৪২৯টি উপজেলা হাসপাতাল, ৫৯টি জেলা বা সদর হাসপাতাল, ৩৫টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ২১টির মতো বিশেষায়িত হাসপাতালে এসব ফার্মেসি হবে।

এ ছাড়া সরকারের অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ও বড় বড় শহরে ভাড়া বাড়িতে ফার্মেসি হবে। এসব ফার্মেসি সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। পাশাপাশি বেসরকারি ফার্মেসিগুলো চলবে আগের মতোই। এতে ওষুধের প্রাপ্যতা আরও বাড়বে।

‘মব ভায়োলেন্স’ এখনো বিভিন্ন মাত্রায় জারি আছে: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি

২৬ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আট মাস পরও দেশে ‘মব ভায়োলেন্স’ বা দলবদ্ধ সহিংসতা বিভিন্ন মাত্রায় জারি আছে। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও দমন-পীড়নের ঘটনা ঘটছে। কৃষক-শ্রমিকের সঙ্গেও অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণ বৈরী। জানা-অজানা বিভিন্ন ধরনের গোষ্ঠীর প্রভাব এখনো আদালত অঙ্গনে দেখা যাচ্ছে। গত রমজানে খাদ্যদ্রব্যের দাম কম থাকলেও বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাসের বিভিন্ন কার্যক্রমকে এভাবেই মূল্যায়ন করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গত ২২ আগস্ট এই কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ সমাজের নানা পেশার মানুষের সমন্বয়ে শতাধিক ব্যক্তি এই কমিটিতে রয়েছেন।

এই কমিটির উদ্যোগে আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস: ভূমিকা ও সংস্কার প্রস্তাব’ শিরোনামে পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সভায় জননিরাপত্তা, সংবিধান, শিক্ষা, দ্রব্যমূল্য, জ্বালানি, শ্রমিক, কৃষকের সংকটসহ ১৩টি বিষয়ে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির অন্য সদস্যরা।

সংস্কার বিষয়ে সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের কিছু কিছু কাজ আছে, যেগুলো বর্তমান সরকারই করে ফেলতে পারে। কিন্তু সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে—এই অপ্রয়োজনীয় একটা বিতর্কের কথা শোনা যাচ্ছে। কিছু কিছু সংস্কার এই অন্তর্বর্তী সরকারই করতে পারে, আবার কিছু কিছু সংস্কার আছে, যেগুলো করার জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার। অন্তর্বর্তী সরকারই যেগুলো করতে পারে, সেগুলো করতে বাধা কোথায়, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সম্পর্কের’ বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বসুন্ধরা গোষ্ঠীর সঙ্গে খাতির করে তো কোনো পরিবর্তন আসবে না। একদিকে পাইকারি মামলা হচ্ছে, বহু নিরপরাধ ও নিরীহ লোক হামলা-মামলায় আতঙ্কিত আর অন্যদিকে বসুন্ধরার মতো প্রভাবশালী লোকেরা আপনাদের সঙ্গে বৈঠক করে, তাদের নানা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে—এই বৈপরীত্য চলবে না। এগুলোর অবসান এবং পরিবর্তন আমাদের দাবি করতে হবে।’

মূলত ‘দীর্ঘকালীন স্থায়ী সরকারের’ কথা বলতে গিয়ে আনু মুহাম্মদ বসুন্ধরা গ্রুপের প্রসঙ্গ টানেন। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি বা বহুজাতিক কোম্পানি—এই তিন গোষ্ঠীকে স্থায়ী সরকারের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরা যদি একই রকম ক্ষমতাবান থাকে, একই রকম সক্রিয় থাকে এবং একইভাবে তাদের নীতিমালায় যদি দেশ চলতে থাকে, তাহলে কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, বিগত সরকারের সময় বোঝা যেত আদালতের রায় কী হবে। এখনো বোঝা যায় যে রায় কী হবে। তাহলে পরিবর্তনটা কী হলো? কে জামিন পাবে, কে খালাস পাবে, কে আটক থাকবে, কার জামিন হবে না, এগুলো তো পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাইরের জানা-অজানা বিভিন্ন ধরনের গোষ্ঠীর প্রভাবে যদি আদালত চলে, তাহলে এই সরকার যে সংস্কার বা পরিবর্তন করতে আগ্রহী, তার প্রকাশটা কোথায়?

ফ্যাসিবাদ যেভাবে কায়েম হয়েছিল

ধর্মনিরপেক্ষতা ফ্যাসিবাদী শাসনের ভিত্তি কায়েম করেছে-এ ধরনের বিপজ্জনক কথা কী করে সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে আসতে পারে, তা বুঝতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, সত্যটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ শাসনামলে যে ফ্যাসিবাদ হয়েছে, সেটা ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে হয়নি, ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে প্রতারণা করার কারণে হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রতারণা করে, ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে, ধর্মীয় নিপীড়নকে নানাভাবে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করে, মুক্তিযুদ্ধকে অপব্যবহার করে এবং জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ।

সংবিধানের মূলনীতি থেকে সমাজতন্ত্র বাদ দেওয়া-সংক্রান্ত প্রস্তাবেরও সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন যেভাবে বলছে সমাজতন্ত্র হচ্ছে গণতন্ত্রবিরোধী ব্যবস্থা, তারা তো নিশ্চয়ই জানে যে পুঁজিবাদের যেমন অনেক রকম মডেল আছে, সমাজতন্ত্রেরও বিভিন্ন ধরন আছে।…তার চেয়ে পরিষ্কার করে বলুক সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে পুঁজিবাদ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আপনারা সংবিধানের সংস্কার করার কথা বলে এই মাধ্যম যদি আপনারা গ্রহণ করেন, তাহলে বৈষম্যহীনতার দিকে যাওয়ার পরিবর্তে বৈষম্য বৃদ্ধির দিকে যাওয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তিটা তৈরি করছেন। সেটা তাহলে কোথায় সংস্কার, কোথায় পরিবর্তন?’

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, উত্তরাধিকার প্রশ্ন কিংবা নারীর অধিকার প্রশ্ন এলেই বাংলাদেশের বৈষম্যবাদী রাজনীতি বা মতাদর্শ যারা ধারণ করে, ধর্মের নামে হোক জাতির নামে হোক, তাদের মধ্যে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। কারণ, ধর্ম পালন করুক বা না করুক, নারী প্রশ্ন এলেই ধর্মের অজুহাত দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। আবার সেটা নিয়ে একটা উন্মাদনা ও সহিংসতা তৈরি করার চেষ্টা চলে। কিছু লোক ধর্মের নাম করে হত্যার কথা বলছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেই।

সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশের কঠোর সমালোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিলে বহুত্ববাদ কী করে হয়? কারণ, ধর্মনিরপেক্ষতা মানেই হচ্ছে যে রাষ্ট্র সব ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকবে। কোনো ধর্মের ব্যাপারে পক্ষপাত থাকলে বহুত্ববাদ কী করে হবে?’

বিচারব্যবস্থা

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এই সভায় সংবিধান ও বিচার বিভাগ নিয়ে কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও উচ্চ আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে রাখা হয়েছে। নিম্ন আদালতের কথা বললে অনেকে আঁতকে উঠবে। প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বিচারকদের যখন-তখন ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে। উচ্চ আদালতে জামিন হওয়ার পরও কেউ কেউ মুক্তি পাচ্ছেন না। বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনো আগের মতোই চলছে। সংবিধান ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে এখন পর্যন্ত খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই।

এই আইনজীবী বলেন, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় থাকলে বহুত্ববাদের ধারণাটা বজায় থাকবে। সংবিধানের মূলনীতি থেকে সমাজতন্ত্রকে বাদ দেওয়ার যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের ধারণার বিরোধী।

শিক্ষা

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সভায় বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তাঁর প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, সংবিধানে শিক্ষাকে শর্তহীনভাবে মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করা, উচ্চশিক্ষাকে দরিদ্র মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা, উপাচার্য নিয়োগে আচার্যের ক্ষমতা হ্রাস, সিন্ডিকেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সর্বময় ক্ষমতার ভারসাম্য আনা।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় মব ভায়োলেন্স, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের দুরবস্থা, কৃষক-শ্রমিকের সংকট এবং বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রভাব অব্যাহত রয়েছে; সংস্কারের বাস্তব অগ্রগতি নেই।

এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করার ধারাগুলো বাদ দেওয়া, সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া, শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকের সর্বোচ্চ বেতনকাঠামো নির্ধারণ, আধিপত্যমুক্ত গণতান্ত্রিক শিক্ষা প্রশাসন গঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নীতি পুলিশি ও মব–সন্ত্রাস বন্ধ করার কথা বলেন সামিনা লুৎফা।

সভায় শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক। তিনি বলেন, গত আট মাসে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের একচেটিয়া দখলদারত্বের অবসান হলেও মব সহিংসতাসহ পরিচয়বাদী বিভাজন দেখা যাচ্ছে।

কৃষকের সংকট

‘কৃষি ও কৃষকের সংকট’ বিষয়ে বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা। তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে কৃষকের বিপর্যয় অব্যাহত আছে। কৃষকের স্বার্থে কাজ করতে কোনো ধরনের কনসার্ন (চিন্তা) সরকারের আছে বলে মনে হয় না। এই সরকার যে কৃষক-শ্রমিকের সরকার নয়, সেটা অনেকটা পরিষ্কার। কৃষক-শ্রমিকের সঙ্গে সরকারের আচরণ খুবই বৈরী।

বক্তব্যে কিছু সুপারিশও তুলে ধরেন মাহা মির্জা। এর মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজের মৌসুমে আমদানি না করে মৌসুম শেষ হলে (সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে) আমদানি করা, পাইকারি বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অধিক লোকবল নিয়োগ দেওয়া ও সামাজিক কমিটি গঠন এবং ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমানো।

স্বাস্থ্য খাত

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ে বক্তব্য দেন চিকিৎসক মো. হারুন-অর-রশিদ। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের টানাপোড়েনের কারণে চীনের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই সুযোগে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো যেত। এতে আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হতো।’

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ, স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকে জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা, কারখানায় স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন হারুন-অর-রশিদ। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘মবের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।’ 

দ্রব্যমূল্য 

রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যের দাম কমলেও এখন বাজারে আবারও অস্থিরতা শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা। তিনি বলেন, বাজারকাঠামোর মৌলিক কোনো পরিবর্তন এই সরকার করেনি। ধনীদের কর ফাঁকি দেওয়ার পথ বন্ধ করার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিরও সংস্কার দাবি করেন তিনি।

জননিরাপত্তা

জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন সাবেক ছাত্রনেতা বাকি বিল্লাহ। গত আট মাসে মাজার ভাঙা, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নির্যাতন, ধর্ষণ-নারী নিপীড়নের ঘটনা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মব–সন্ত্রাসের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মব ভায়োলেন্স এখনো বিভিন্ন মাত্রায় জারি আছে।’

ভয় ও আতঙ্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাসের বিভিন্ন কার্যক্রমের মূল্যায়ন নিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত এই সভার সঞ্চালক ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি দিলীপ রায়।

সভায় হরিজন জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে সভায় বক্তব্য দেন নারী নেত্রী সীমা দত্ত। জুলাই আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিয়ে বক্তব্য দেন স্থপতি আরিফুল হক। সমবায়ের প্রতারণার চিত্র নিয়ে বক্তব্য দেন গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ।

গত আট মাসে ‘মব’–এর কারণে নারীরা সবচেয়ে বেশি হেনস্তার শিকার হয়েছেন—এমন মন্তব্য করেন মানবাধিকারকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী। ‘নারী ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী’ বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ নিয়ে মাঠ গরম করা হচ্ছে। এই কমিশনের সুপারিশ কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

পাহাড় ও সমতলের জাতিগোষ্ঠী নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হেমা চাকমা। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরও দেশ বৈষম্যমুক্ত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাধীন চলাচলে বিধিনিষেধ, কোথাও কোথাও পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী প্রশ্ন রাখেন, দ্বিতীয় মুক্তি বা দ্বিতীয় স্বাধীনতা শুধু সমতলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না।

শিল্প ও শ্রমিকের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকেরা ন্যায্য দাবিদাওয়া তুলে ধরলে ছাঁটাই করা হচ্ছে। এই ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে এখন একধরনের ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে।

শ্রমজীবি মানুষের কথা

সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

২৮ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল সোমবার মধ্যরাতের পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

সকালে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় অনেক যাত্রীকে বসে থাকতে দেখা গেছে। তাঁদের অনেকেই ট্রেন চলাচল বন্ধের খবর জানতেন না। সকাল সোয়া ৯টার দিকে স্টেশনে অনেক যাত্রীকেই ট্রেনের খবর জানতে আসতে দেখা যায়। ট্রেন চলবে না জেনে অনেকেই স্টেশন ছেড়ে চলে যান। তবে বয়স্ক ও নারীদের স্টেশনেই অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় যাত্রীদের বসে থাকার খবর জানা গেছে। অনেকে বিকল্প পথে যাত্রা শুরু করেছেন।

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

আজ বুধবারের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের বাসায় বৈঠক শেষে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ধর্মঘট তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।

এর আগে রেলপথ উপদেষ্টার সঙ্গে শ্রমিকনেতা ও ছাত্র প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রানিং স্টাফদের দাবিদাওয়া ও কর্মবিরতি নিয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠক হয়।

সাভারে ট্যানারিশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ট্যানারিশিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা। আজ বুধবার সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় চামড়াশিল্প নগরের প্রধান ফটকসংলগ্ন সড়কে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন ট্যানারির শ্রমিকেরা।

বিক্ষোভকারী শ্রমিকেরা জানান, আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর প্রধান ফটকসংলগ্ন সড়কে বিভিন্ন ট্যানারির শতাধিক শ্রমিক অবস্থান নেন। পরে তাঁরা সেখানে কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। দুই ঘণ্টা কর্মসূচি পালন শেষে দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা চলে যান।

ছাঁটাই নিয়ে টেলিকম খাতে অস্থিরতা

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, আজকের পত্রিকা

দেশের টেলিকম খাতের কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, ছাঁটাই ও চাকরিচ্যুতির ঘটনায় খাতজুড়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। চাকরি স্থায়ী ও বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন দেশের বৃহৎ তিন টেলিকম প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের সঙ্গে যুক্ত কয়েক শ আউটসোর্সিং-কর্মী। কর্মী ছাঁটাই বন্ধ এবং চাকরি স্থায়ী না করলে দেশের মোবাইল ফোনসেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তাঁরা। এতে যেকোনো সময় টেলিযোগাযোগ সেবায় বিপর্যয় নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্দোলনরত কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সংকট সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, মূলত তৃতীয় পক্ষ বা থার্ড পার্টির হয়ে টেলিকম খাতের কাজে নিযুক্ত কর্মীরাই এসব দাবিতে এক হয়েছেন। বছরের পর বছর অস্থায়ী চুক্তিতে কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ এনে এর সমাধানের জন্য আন্দোলন করছেন তাঁরা।

দেশের প্রতিটি মোবাইল ফোন কোম্পানি তাদের টাওয়ার ও সাইট রক্ষণাবেক্ষণ এবং দেখভালের জন্য তৃতীয় পক্ষ বা থার্ড পার্টি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে বা ইজারা দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ দিয়ে সেবা পরিচালনা করে। তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে ও চুক্তিতে প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেয়। এই প্রক্রিয়ায় শত শত কর্মী চুক্তিতে কাজ করে মোবাইল ফোনসেবা অব্যাহত রাখেন। তবে থার্ড পার্টি এসব কর্মীর সঙ্গে মজুরি পাওনা ও ভাতা নিয়ে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করে বলে অভিযোগ তাঁদের।

গাজীপুরে ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের ৮৩ বার মহাসড়ক অবরোধ

১৭ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

শিল্পনগরী গাজীপুরে বকেয়া পাওনাসহ নানা দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন থামছেই না। প্রায় প্রতিদিন জেলার কোথাও না কোথাও আন্দোলন লেগে আছে। গত ৫ আগস্টের পর গাজীপুরে অন্তত ৮৩ বার মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকেরা। কয়েক দিন পরপর ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করায় অসহনীয় দুর্ভোগে পড়ছেন এসব পথে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।

দাবি আদায়ে মহাসড়ক অবরোধের কারণ জানতে চাইলে কারখানার শ্রমিক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমাগো দেশে যদি ভদ্রভাবে কোনো কথা কন, তাইলে কেউ হুনবো না। কথা হোনার মানুষও পাইবেন না। স্যারে গো বারবার কইতাছি, আমাগো সমস্যার সমাধান করেন। ঈদ বোনাস বাড়াইয়া দেন; কিন্তু তাঁরা কইতাছে দিব না। যার কারণে সড়ক বন্ধ কইরা আন্দোলন করতাছি। এহন সরকারের লোকজন আইবো, তখন ঠিকই আমাগো সমস্যার সমাধান হইয়া যাইব।’

কারখানা বন্ধ: চাকরি হারানো শ্রমিকদের ঈদ আনন্দ বলতে কিছু নেই

মার্চ ২২, ২০২৫, ডেইলিস্টার বাংলা

গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে কারখানা বন্ধ এবং ছাঁটাইয়ের কারণে চাকরি হারিয়েছেন এমন হাজারো শ্রমিকের ঈদ আনন্দ এবার ম্লান হয়ে গেছে।

ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মতে, আর্থিক সংকটের কারণে কারখানার মালিকরা উৎপাদন ইউনিট বন্ধ অথবা ছাঁটাই ঘোষণা দেওয়ার কারণে গত সাড়ে সাত মাসে প্রায় ১ লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের।

দেশের চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তারা নতুন ইউনিটে বিনিয়োগ বা বিদ্যমান কার্যক্রম সম্প্রসারণ থেকে বিরত থাকায় নিয়োগে গতি কমে গেছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকার শঙ্কা আছে।

অনেক শ্রমিক কাজের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছেন, আবার অনেকে রাজধানীতে বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ কুলাতে না পেরে গ্রামে ফিরে গেছেন।

কোনো স্থায়ী আয় না থাকায়, চাকরি হারানোর কারণে ঈদে পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু কেনা তো দূরের কথা পরিবারের ভরণপোষণ এবং সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খরচ মেটানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

লবণ চাষির চোখেও পানি

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

এক কেজি লবণের উৎপাদন খরচ ৮ দশমিক ৭৫ টাকা। চাষি বেচছেন ৬ টাকায়। মধ্যস্বত্বভোগীর কাছ থেকে মিলার কিনছেন ৮ দশমিক ৫০ টাকায়। প্রক্রিয়ার পর উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ২৪-২৫ টাকা। বাজারে খুচরা বেচা হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। অথচ গত বছর চাষি লবণ বেচেছেন ১০ টাকা কেজিতে। এ বছর দাম কমার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

উৎপাদন বেশি, তবু আমদানি

প্রতিবছর ডিসেম্বরে শুরু হয় লবণ আহরণ। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে তা চলে এপ্রিল পর্যন্ত। এবার মৌসুমের শুরু থেকে দাম কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন চাষিরা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের পরিদর্শক ইদ্রিস আলী জানান, দেশে পরিশোধিত লবণের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টন। এ বছর অপরিশোধিত লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৬ লাখ ১০ হাজার টন।

এদিকে চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হলেও মাঝেমধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় লবণ। গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দেয়। অথচ গত বছর উৎপাদিত চার লাখ টন লবণ গুদামজাত করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

৫০ টাকায় ২৫ কেজি, খেত থেকে টমেটো তোলাই বন্ধ করেছেন কৃষক

২৪ মার্চ ২০২৫, আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনা, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ বছর টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হতাশার ছাপ। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার পাশাপাশি বাজারজাতকরণের ব্যয় বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক খেত থেকেই টমেটো তুলতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে খেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টমেটো, যা কৃষকের জন্য চরম হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হলেও বাজারদর এতটাই কম যে উৎপাদন খরচও ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। চকলেঙ্গুরা গ্রামের কৃষক ফজলুল হক এক একর জমিতে ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে টমেটো চাষ করেছিলেন।

শেষ সময়ে সেচের জন্য আরও ৩০ হাজার টাকা খরচ করেন। ভালো ফলন হলেও বাজারে দাম না থাকায় তিনি এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পেরেছেন। পাইকারি ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, যার ফলে খেতেই পচে যাচ্ছে টমেটো।

শ্রম ভবনের সামনে বেতনের দাবিতে আন্দোলন, অসুস্থ হয়ে একজনের মৃত্যু

২৩ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

রাজধানীর শ্রম ভবনের সামনে বেতন–ভাতার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে অসুস্থ হয়ে রাম প্রসাদ সিং (৪০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।

রাম প্রসাদ সিং গাজীপুরের স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড ও ইয়াং ওয়ান্স (বিডি) লিমিটেডের সহকারী প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর সহকর্মী মোস্তফা ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বকেয়া বেতন ও আইনানুগ পাওনার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন ওই কারখানার শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আন্দোলন চলাকালে আজ হঠাৎ রাম প্রসাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীর মৃত্যুতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ক্ষোভ

২৪ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বকেয়া মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টস কর্মচারীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। পাশাপাশি এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এই বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বকেয়া মজুরির দাবি করতে গিয়ে কর্মচারীর মৃত্যুর দায় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও হয়রানি ঠেকানোর পাশাপাশি দেশের সব খাতের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও বোনাস পরিশোধ এবং কৃষকের পণ্যের ন্যায্যদাম নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, রাজধানীর শ্রম ভবনের সামনে বেতন–ভাতার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে অসুস্থ হয়ে রাম প্রসাদ সিং (৪০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। রাম প্রসাদ গাজীপুরের স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড ও ইয়াং ওয়ান্স (বিডি) লিমিটেডের সহকারী প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বিজিএমইএ ভবন অবরুদ্ধ

২৪ মার্চ ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

বকেয়া বেতন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবন অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ভালুকার রোর ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকেরা। এতে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

সোমবার (২৪ মার্চ) সকাল থেকে বিজিএমইএ ভবনের প্রধান ফটক অবরোধ করে শ্রমিকরা কর্মকর্তাদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেন। ফলে অনেক কর্মকর্তা অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত এই অচলাবস্থা চলে।

এভাবে না মেরে একবারে মেরে ফেলেন: চা শ্রমিক জ্যোৎস্না

সিলেটের বুরজান চা-কোম্পানির তিনটি বাগানের শ্রমিকদের ১৪ সপ্তাহের বকেয়া ও রেশন বাকি পড়েছে।

এভাবে না মেরে একবারে মেরে ফেলেন: চা শ্রমিক জ্যোৎস্না

২৪ মার্চ ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সিলেটের বুরজান চা বাগানে দৈনিক ছয় টাকা মজুরিতে কাজ শুরু করেছিলেন জ্যোৎসা বেগম। চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি কাজ করছেন। এই সময়ে বেতন বেড়েছে, রেশন বেড়েছে। কিন্তু ষাট বছরের জীবনে কোনোদিন টানা ১৪ সপ্তাহের বেতন বন্ধ থাকেনি জ্যোৎস্নার।

কর্মজীবনের শেষ দিকে এসে এখন ঈদের আগে বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করতে হচ্ছে জ্যোৎসা বেগমকে। তার ভাষ্য, “রোজার সময় বেতন বন্ধ থাকায় ঠিকমত ইফতারি খেতে পারি না। কচু শাক খেয়ে দিন পার করছি, বর্তমানে কচু শাকও পাচ্ছি না আগের মত।

“সামনে ঈদ। বেতন না পেলে বাচ্চাদের কাপড় কিনে দিতে পারব না। ঈদের পরে বেতন-বোনস দিয়ে কী হবে? ঈদে আমরা কাপড় পারতাম না। বাচ্চাদের মুখের দিকে চাওয়া যায় না।”

কথা বলতে বলতে তিনি ক্ষেপে যাচ্ছিলেন। বলছিলেন, “আজ বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি। আমাদের এভাবে না মেরে একবারে মেরে ফেলেন। না খেয়ে থাকতে আর পারছি না। পানি খেয়ে আর কত থাকব। আমাদের কষ্টের দিন যাচ্ছে।”

সিলেটের বুরজান চা-কোম্পানির অধীন তিনটি চা বাগান বুরজান, ছড়াগাঙ, কালাগুল ও বুরজান কারখানার শ্রমিকদের ১৪ সপ্তাহের বকেয়া এবং রেশনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শ্রমিকেরা।

৮ মাস ধরে বেতন পান না কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীরা, মার্চে হওয়ার সম্ভাবনা

০৩ মার্চ ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

“নিয়মিত অফিস করি, কিন্তু বেতন পাইনা—এর থেকে অপমানের আর কী আছে? আপনজনেরাও এখন টাকা ধার দিতে ভয় পান, কারণ আমাদের বেতন হয়না,” আক্ষেপ করে কথাগুলো দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলছিলেন মোর্শেদ হোসেন চৌধুরী। তিনি দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কালীর বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)।

মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে দেশজুড়ে কাজ করছেন কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় ১৪,০০০ সিএইচসিপি। এই সবার অবস্থাই এখন মোর্শেদের মতো। মাসে মাত্র ১৬,৭০০ টাকা বেতনের এই চাকরিতে যোগ দিয়েও মাসের পর মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তারা।

আবার অনেক ক্লিনিকে ওষুধের সংকটও দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবা নেওয়ার হারও কমতে শুরু করেছে।

গাজীপুরে বকেয়া বেতন না দিয়ে হঠাৎ কারখানা বন্ধ, শ্রমিকদের বিক্ষোভ

২৫ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদের বোনাসের দাবিতে আজ মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কামরাঙ্গীচালা এলাকায় একটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এ সময়ে শ্রমিকেরা সকাল সাড়ে সাতটা থেকে এক ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে তাঁরা সড়ক থেকে সরে যান।

উপজেলার কামরাঙ্গীচালা এলাকায় ‘হ্যাগ নীট ওয়্যার’ নামের কারখানার অবস্থান। এতে তিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শ্রমিকেরা কয়েক দিন ধরে বকেয়া বেতন ও ঈদের বোনাসের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করছে না। আজ সকাল ৭টার দিকে শ্রমিকেরা কাজে গিয়ে দেখেন, কারখানার ফটকে তালা ঝুলছে। কারখানা বন্ধ দেখতে পেয়ে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

পুলিশ আগের মতোই শ্রমিকদের দমনকারী হিসেবে রয়ে গেছে: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি

২৬ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বকেয়া মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিক ও ছাত্রনেতাদের ওপর পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, পুলিশ সংস্কারের কথা উঠলেও পুলিশ সেই আগের মতোই শ্রমিক ও জনতাকে দমনকারী হিসেবেই রয়ে গেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ের সামনে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলার পর রাতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্যদের পক্ষে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড. হারুন উর রশীদ, মাহা মির্জা, বীথি ঘোষ, মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, আকরাম খান ও মারজিয়া প্রভা এই বিবৃতি পাঠান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রমিকের প্রসঙ্গকে আমল না নেওয়া এবং এসব সংকটে ভুক্তভোগী শ্রমিকদের সঙ্গে সংলাপ না করে, সমাধান, নিরসনের পথে না গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নামিয়ে ন্যায্য দাবি আদায়কে বাধা দেওয়ার অপচেষ্টা আমাদের ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলের চেনা চিত্র। কিন্তু হাজার হাজার ছাত্র–জনতার রক্তক্ষয়ী জীবনদানের মাধ্যমে সংঘটিত গণ–অভ্যুত্থানের পর আবারও এই চিত্রের অবতারণা প্রশ্ন তৈরি করছে যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদৌ গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করার ন্যূনতম চেষ্টা করছে কি না! নইলে মন্ত্রণালয়ে শ্রমিক যেতে চাইলে পুরোনো কায়দায় কেন বাধা দেওয়া হবে?’

শ্রম মন্ত্রণালয়ের সামনে পালন করা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় শ্রমিক আমিনুল, হাফিজুর আসরিনসহ ১৮ শ্রমিক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আরাফ ও নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত আহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, দিলীপ রায় শেখ হাসিনার আমলেও গণতান্ত্রিক অধিকারের আন্দোলন করার কারণে নির্যাতিত হয়েছিলেন।

অর্ধেক বেতন পরিশোধেও পিছিয়ে অনেক পোশাক কারখানা

২৭ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্পের সব কারখানা শ্রমিকের ঈদ বোনাস দেয়নি। চলতি মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধেও পিছিয়ে আছে অনেক কারখানা। এর বাইরে বন্ধ থাকা কয়েকটি কারখানার বেতন-ভাতা ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধ নিয়ে আগে থেকেই সমস্যা চলছে।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং শিল্প পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

ঈদের আগে শ্রম পরিস্থিতির পাশাপাশি শিল্প খাতের শ্রমিকদের বেতন–বোনাস ও ছুটি–সংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনার জন্য ১২ মার্চ সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের এই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বোনাসসহ সব পাওনা ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। মালিকপক্ষকে চলতি মার্চ মাসের অন্তত ১৫ দিনের বেতনও দিতে হবে। এর পাশাপাশি রপ্তানি প্রণোদনার দুই হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি জেলার অন্তত ৪৩টি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের বেতন ও ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি কারখানার সংকট পুরোনো। এই কারখানাগুলোর শ্রমিকেরা দাবি আদায়ে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ঈদের ছুটি ও বোনাস বাড়ানোর জন্যও আন্দোলনে নেমেছেন কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা।

ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) ডিজিটাল মানচিত্র অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা আছে ৩ হাজার ৫৫৫টি। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য সচল কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১০৭। গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ৯৪৪টি (৯২ শতাংশ) কারখানা শ্রমিকের ঈদ বোনাস দিয়েছে। আর মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছে ৭৬১টি (৩৬ শতাংশ) কারখানা। এখন পর্যন্ত ১৬টি কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দেয়নি।

অন্যদিকে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সচল সদস্য কারখানা ৬১৩টি। তার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কারখানা ঈদ বোনাস দিয়েছে। চলতি মাসের অর্ধেক বেতন প্রায় ৫০ শতাংশ কারখানা দিয়েছে। এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দেয়নি দুটি কারখানা।

ফেব্রুয়ারির বেতন দেয়নি ১২২টি পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানা, ঈদের বোনাস বাকি ৭২৩টির

২৭ মার্চ ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের অধীনে থাকা ১২২টি কারখানা এখনও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ। এছাড়া ঈদের বোনাস দেয়নি ৭২৩টি কারখানা।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও বেপজার অধীন মোট ২ হাজার ৮৯০টি চালু কারখানার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ২ হাজার ৭৬৮টি প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারির বেতন পরিশোধ করেছে।

এছাড়া, জানুয়ারি বা তার আগের সময়ের বেতন বকেয়া রয়েছে আরও ৩০টি কারখানায়। আর মার্চ মাসের জন্য ৪২২টি কারখানা শ্রমিকদের অর্ধেক বেতন অগ্রিম পরিশোধ করেছে।

শ্রমিকেরা শখ করে রাস্তায় নামেননি, তাঁরা প্রতারিত: আনু মুহাম্মদ

২৭ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলনে নামা তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ওপর আগের সরকারের মতো আক্রমণ করা হচ্ছে। তাঁরা শখ করে আন্দোলনে নামেননি। তাঁদের এখন ঘরে থাকার কথা ছিল। মালিকেরা প্রতারণা ও জালিয়াতি করেছেন বলে শ্রমিকেরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর বিজয়নগরে এক সমাবেশে এ কথাগুলো বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে ‘মাছ, মাংস, চাল, মজুরির স্বাধীনতা চাই’ শীর্ষক ওই সমাবেশের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। সমাবেশের সভাপতি ছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা, শ্রম অধিকারকর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক, গবেষক ও ছাত্রসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

অনেক কারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতা এখনো বাকি

২৮ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

সরকার নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও তৈরি পোশাকশিল্পের অনেক কারখানা এখনো শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি। তবে আন্দোলনে থাকা ছয় কারখানার শ্রমিকের পাওনার একটা অংশ পরিশোধের ব্যবস্থা হয়েছে, এমনটা জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টার দপ্তর।

শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। শিল্প পুলিশ বলেছে, গতকাল পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ১৯ শতাংশ কারখানা ঈদের বোনাস এবং ৭৯ শতাংশ কারখানা মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়নি। যদিও তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, তাদের সচল প্রায় ৯৫ শতাংশ কারখানার বোনাস দেওয়া শেষ। আর নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ বলছে, ৮০ শতাংশ কারখানা বোনাস দিয়েছে। উভয় সংগঠনের দাবি, আজ শুক্র ও আগামীকাল শনিবার সব কারখানা বেতন-বোনাস দেবে।

‘বেতন দাও’ স্লোগানে শ্রম ভবনের সামনে শ্রমিকদের ভুখা মিছিল

মার্চ ২৮, ২০২৫, ডেইলিস্টার বাংলা

শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে বাসন হাতে ভুখা মিছিল করেছেন পোশাকশ্রমিকরা।

আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় এই মিছিলটি করেন শ্রম ভবনের সামনে অবস্থানরত পোশাকশ্রমিকরা। মিছিলের সময় তাদের হাতে ‘বেতন দাও’ লিখা বাসন দেখা যায়।

মিছিলটি শ্রম ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ‍পল্টন হয়ে জিপিও মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক ঘুরে পুনরায় শ্রম ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

নির্ধারিত সময়ে বেতন–ভাতা দেয়নি অনেক পোশাক কারখানা

২৯ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাওনা বুঝে না পাওয়ায় রাজধানীর শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের পোশাকশ্রমিকেরা।

শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধে গতকাল শুক্রবার গ্রুপের পরিচালক শরীফুল ইসলামকে থানা–পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। তিনি পরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে কারখানার যন্ত্রপাতি, আসবাব ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে আজ শনিবার পাওনা পরিশোধ করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিকে ঈদের বাকি আর এক–দুই দিন। বেতন-ভাতা পরিশোধে সরকার নির্ধারিত সময়সীমা ইতিমধ্যে পার হয়েছে। তবে এখনো অনেক কারখানা উৎসব ভাতা বা বোনাস ও মার্চের অর্ধেক বেতন দেয়নি। যদিও বেতন-ভাতা পরিশোধের সুবিধার্থে শিল্পাঞ্চলে ব্যাংকের শাখা বিশেষ ব্যবস্থায় আজ খোলা থাকবে। লেনদেন চলবে তিন ঘণ্টা, ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।

শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে গতকালও দুই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। শিল্প পুলিশ বলেছে, গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ২ হাজার ৮৮৬ কারখানার মধ্যে ১০ শতাংশ ঈদের বোনাস ও ৫৯ শতাংশ মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়নি। এসব কারখানার মধ্যে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য নয়, এমন কারখানা রয়েছে। অবশ্য তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, তাদের সচল ৯৭ শতাংশ কারখানা বোনাস ও ৯৩ শতাংশ বেতন দিয়েছে। আর নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ বলছে, দুটি কারখানা ছাড়া অন্যগুলোয় বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

শুধু সচিবালয়ে রেশন সুবিধার সুপারিশ, ক্ষুব্ধ দপ্তর-সংস্থার কর্মচারী

মার্চ ২৯, ২০২৫ম ডেইলিস্টার বাংলা

সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেশন সুবিধা সংক্রান্ত দাবির বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে এ সংক্রান্ত সুপারিশ করা হলে সচিবালয়ের বাইরে থাকা দপ্তর-সংস্থার কর্মচারীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

অর্থসচিব বরাবর ২৫ মার্চ পাঠানো খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুনের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ কর্তৃক সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় রেশন সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অনুকূল বিবেচনা জন্য সুপারিশসহ নির্দেশক্রমে প্রেরণ করা হলো।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এতে খাদ্য উপদেষ্টার অনুমোদন রয়েছে।’

দীর্ঘদিন যাবত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো বাংলাদেশ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্যমূল্যে রেশন সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর এ বিষয়ে আবেদন জানিয়েছে তারা।

পরিষদ তাদের আবেদনে বলেছে, ‘বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সরকারি দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে ছুটির দিনসহ অফিস সময়ের পরেও অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এ জন্য সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা অর্থাৎ রেশন কিংবা সচিবালয় ভাতা দেওয়া হয় না। পক্ষান্তরে, বিভিন্ন দপ্তর/অধিদপ্তর/সংস্থার প্রায় ৮ লক্ষ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রেশনের পাশাপাশি বিশেষ ঝুঁকিভাতাও পাচ্ছেন।’

টিএনজেড গ্রুপ: সচিবের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত শ্রমিকদের

৩০ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা শনিবার পর্যন্ত তাঁদের বকেয়া বেতন ও পাওনা পাননি। কারখানার শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আপাতত তিন কোটি টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। শ্রমিকেরা শুরুতে তা প্রত্যাখ্যান করলেও পরে মেনে নিয়ে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন।

এদিকে শিল্প পুলিশ ও পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন জানিয়েছে, কিছু কারখানা ছাড়া বাকিগুলোর শ্রমিকেরা মার্চের অর্ধেক বেতন ও বোনাস পেয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত বেশির ভাগ কারখানায় ছুটি হয়েছে। অবশ্য বেতন-ভাতার দাবিতে টিএনজেডের শ্রমিকেরা শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন , যা শুরু হয়েছিল ২৩ মার্চ।

টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রুপটির তিনটি কারখানা বন্ধ। এসব কারখানার ৩ হাজার ১৬৬ জন শ্রমিকের পাওনা প্রায় ১৭ কোটি টাকা। গত বৃহস্পতিবার একটি কারখানার শ্রমিকদের পাওনার একটি অংশ দেওয়া হয়।

গাজীপুরে ঈদের আগে ছাঁটাই, শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

২৯ মার্চ ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ি থানাধীন বাইমাইল এলাকায় একটি কারখানার শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে চাকরিচ্যুতরা।

শনিবার সকালে স্ট্যান্ডার্ড ইস্টিস ওভেন কারখানা শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন বলে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ি থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলেন, ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ওই কারখানার শ্রমিকরা শনিবার সকালে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।

এ সময় প্রায় আধাঘন্টা ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ি থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ওই কারখানার শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাই করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা।

শ্রম ভবনের সামনে শ্রমিকদের আন্দোলন

৩০ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

ঈদের আগে প্রায় শতভাগ পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে শিল্প পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় শিল্প পুলিশের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৯৭ দশমিক ১৬ শতাংশ কারখানায়। বকেয়া রয়েছে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশের। মার্চের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৮৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ কারখানায়। বকেয়া রয়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশের। ঈদুল ফিতরের বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে ৯৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কারখানায়। আর বকেয়া রয়েছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশের।

শ্রম সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানও প্রায় শতভাগ কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধের কথা জানিয়েছেন। তিনি গতকাল শ্রম ভবনে এক বৈঠক শেষে বলেন, ‘এবার সরকার ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের বেতন বকেয়া পরিশোধ করেছে, যেটি নজিরবিহীন।’

ঈদের আগে বেতন, ভাতা ও বোনাসের দাবিতে শ্রম ভবনের সামনে সাতদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন টিএনজেড গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। গতকালও তাদের কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। আন্দোলনরত শ্রমিকদের জন্য আপাতত ২ কোটি টাকা ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন তারা। তাদের দাবি, শ্রমিকদের প্রাপ্য সব বকেয়া ঈদের আগে পরিশোধ করতে হবে। দাবি মানা না হলে ঈদের দিনও শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল এলাকায় একটি কারখানার শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি কারখানার শ্রমিকরা।

গতকাল শ্রম ভবনে আন্দোলনরত শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, ২৭ মার্চ টিএনজেড গ্রুপের গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়া হয়েছে, এমন মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে পড়লেও এখনো কোনো শ্রমিককে বেতন দেয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন এবং ঈদের বোনাস পাওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা দেয়া হয়নি।

আন্দোলন চলার সময় গতকাল দুপুরে শ্রম ভবনে বৈঠক করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান। সেখানে বিজিএমইএ প্রতিনিধি, শ্রমিক আন্দোলনের নেতা, টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক শরীফুল ইসলাম শাহীনসহ তিন প্রতিনিধি, অ্যাপারেলস প্লাস ইকো লিমিটেডের শ্রমিক নেতা শহিদুল, রেখা আক্তার তিন্নি, শিউলিসহ ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে টিএনজেড গ্রুপের মেশিন বিক্রি করে আপাতত ২ কোটি টাকা ব্যবস্থায় শ্রমিকদের বেতন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন সচিব ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। এছাড়া ঈদের পর ৮ এপ্রিল টিএনজেড কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে মে দিবসের আগেই সব বিষয় সমাধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে পর্যন্ত টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক শাহীনসহ তিন কর্মকর্তা শ্রম অধিদপ্তরের হেফাজতে থাকবেন। তবে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা।

বৈঠক শেষে শ্রম সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‌এ মাসের শুরুতেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য আমরা সব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বলে দিয়েছি। ২৭ মার্চ শেষ কর্মদিবসেও যারা বেতন-ভাতা দিতে পারেননি তারা বিদেশে যেতে পারবেন না এবং তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। ২৭ মার্চের মধ্যে প্রায় সবগুলোর সমাধান করেছি। অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টিএনজেডের সমস্যার আংশিক সমাধান করেছি। ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ২৭ তারিখে ব্যাংক পেমেন্ট দিয়েছে। সমস্যা শুনে তাদের আমরা ১৬ কোটি টাকা দিয়েছি। এখন শুনছি আরো ১৭ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এভাবে তো চলতে পারে না। নিচে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। আপাতত আমরা সমাধানে এসেছি, শ্রমিকরা যাতে বাড়ি যেতে পারে সেজন্য ২ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ঈদের পর মে দিবসের আগে সবটা সমাধান করব। এ সময়ে পরিচালকসহ তিনজন আমাদের হেফাজতে থাকবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌এবার সরকার ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের বেতন বকেয়া পরিশোধ করেছে, যেটি নজিরবিহীন। বাকি দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে টিএনজেড আছে। দুই-একটি জায়গায় যে সমাধান হয়নি সেটার জন্য আজকের এ ব্যবস্থা। আশা করছি শ্রমিকরা এটি মেনে নেবেন।’

তবে সচিবের এমন ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিক প্রতিনিধিরা। শহিদুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক নেতা বলেন, ‘‌আজকের ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকরা পাবে ৬ হাজার টাকা করে। এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। আমাদের পাওনা যতদিন পরিশোধ করা না হবে ততদিন শ্রম ভবনের সামনে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। ঈদের দিনও এটি চলবে। আমরা আজকের কঠোর কর্মসূচিতে যাব। প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন বরাবর পদযাত্রা করব।’

শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকদের ঈদের বোনাস, মার্চের বেতন বিজিএমইএসহ অন্যান্য সংগঠনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রায় সবাই পরিশোধ করেছে। শিল্পাঞ্চল পুলিশের সহযোগিতা ও আন্তরিক নিষ্ঠা ও নিবিড় তদারকিতে এবারের ঈদের বোনাস ও মার্চের বেতন পরিশোধে শিল্প সেক্টরে শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। টিএনজেডসহ কিছু ফ্যাক্টরি বোনাসসহ বেতন পরিশোধ করতে পারেনি।

এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল এলাকায় একটি কারখানার শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। গতকাল সকালে স্ট্যান্ডার্ড ইস্টিস ওভেন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন বলে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলেন, ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ওই কারখানার শ্রমিকরা শনিবার সকালে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টা ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন আর আর স্পিনিং অ্যান্ড কটন মিল কারখানার শ্রমিকরা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে সেনাবাহিনীর আশ্বাসে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ভূঁইয়াগাতী এলাকায় ওই কারখানার সামনে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিকরা।

বগুড়া সেনানিবাসের ১১ পদাতিক ডিভিশনের লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুনায়েদ বিন কবির বলেন, ‘মহাসড়কে নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনে কাজ করছে সেনাবাহিনী। ঈদে ঘরমুখো মানুষ যেন দুর্ভোগে না পড়ে, এজন্য সব চেষ্টা করে যাচ্ছে।’

উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রি অর্ধেকে, ঋণগ্রস্ত হয়ে পেশা পাল্টাচ্ছেন লবণ চাষীরা

৮ এপ্রিল ২০২৫, বণিক বার্তা

কক্সবাজারের মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের আলী আহমদ তার দুই ছেলেকে নিয়ে প্রায় ২০ বছর ধরে লবণ চাষ করে আসছিলেন। দুই হাজার শতক (২০ একর) লবণ মাঠ ইজারা নিয়ে লবণ চাষ করলেও গত দুই বছর আগে এ পেশা ছেড়ে স্থানীয় বাজারে মুদির দোকান দিয়েছেন তিনি। আর দুই ছেলে এখন অটোরিকশা চালান। লবণের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, খরচের তুলনায় দাম অর্ধেকে নেমে যাওয়া, ন্যায্য পারিশ্রমিক না পাওয়ায় লবণ চাষ ছেড়েছেন তারা। স্থানীয় বাজারে বসে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আলী আহমদের। তিনি জানান, এ এলাকার বেশির ভাগ লবণ মাঠের মালিক মহাজনরা। তাদের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে চাষ করেন চাষীরা। আর নগদ অর্থের জোগান দেয় আরেকটি পক্ষ। লবণের মাঠ ইজারা নেয়ার সময় কিছু টাকা পরিশোধ করতে হয়। এ টাকার জন্য কৃষকরা স্থানীয় বিত্তশালীদের কাছ থেকে ঋণ নেন। কিন্তু মৌসুম শেষে সে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে এ পেশায় কে থাকবে! আলী আহমদ বলেন, ‘আমি যখন লবণ চাষ শুরু করি তখন পুঁজি লাগত কম কিন্তু উৎপাদন বেশি হতো, বিক্রি করে লাভ হতো। সেই সময় মণপ্রতি ৩০-৪০ টাকা লাভ হতো। মৌসুম শেষে ৫০ হাজার টাকার ওপরে লাভ থাকত। কিন্তু এখন উল্টা লাখ টাকা লোকসান হয়।’

চকরিয়া উপজেলার লবণ চাষী জয়নাল। করোনার পরে তিনি আর লবণ চাষে ফেরেননি। এখন তিনি দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের চাহিদা অনুযায়ী লবণ উৎপাদিত হলেও চাষী ন্যায্যমূল্য পান না। এ লবণ শহরে বিক্রি হয় কেজি ৪০ টাকায় অথচ আমরা ৪ টাকাও পাই না। আবার লোন নিতে গেলে ব্যাংক লোন দেয় না। আবার লবণ বিক্রির সময় মধ্যস্বত্বভোগী দালালদের প্রতি মণের অর্ধেক টাকা দিতে হয়। এ পরিস্থিতির কারণে এখানকার চাষীদের অধিকাংশই ঋণগ্রস্ত।’

বিসিকের তথ্যমতে, দেশের মোট লবণ উৎপাদনের ৮৭ শতাংশ হয় কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলায়। বাকিটা আসে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে। দেশে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে লবণের উৎপাদন বাড়লেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি চাষীদের। এবার মৌসুমের শুরুতে মাঠের লবণ মণপ্রতি ৩০০ টাকার ওপরে বিক্রি হলেও বর্তমানে মৌসুমের মূল সময়ে দাম কমে এসেছে উৎপাদন খরচের অর্ধেকে। এভাবে প্রতি বছর লোকসান দিয়ে ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক চাষী। ঋণমুক্ত হতে তারা বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা।

কৃষকের ঘরে ঘরে আলুর স্তূপ, দাম না পাওয়ায় খাওয়ানো হচ্ছে গরুকে

০৮ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

‘দেড় দোন (৩৬ শতক) নমলা আলু নাগাছুনু। আলু ভালোই হইছে, কিন্তু বেচাইলে খরচের অর্ধেকও দাম ওঠে না। হিমাগারোত জায়গা না পায়া সউগ আলু ঘরোত থুচুন। এ্যালাও দাম নাই। ওই জন্যে আলু কাটি গরুক খাওয়াছি, তা ছাড়া আলু যে পচি যাওছে।’

আবাদের আলু বিক্রি না করে গবাদিপশুকে খাওয়ানোর কারণ জানতে চাইলে এভাবেই বলছিলেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার মেনানগর গ্রামের কৃষক আজারুল ইসলাম। তাঁর দাবি, ১০০ টাকা কেজিতে বীজ কিনে আলু লাগিয়েছিলেন। এবার ফলন ভালো হলেও বাজারে আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামও পাওয়া যাচ্ছে না।

একই গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান হিমাগারে জায়গা না পেয়ে প্লাস্টিকের ৩০০টি জালি বস্তায় আলু ভরে বাড়িতেই সংরক্ষণ করেছেন। সেই আলু নিয়ে এখন তাঁর দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। জিয়াউর রহমান বলেন, চাষ থেকে তোলা পর্যন্ত প্রতি কেজি আলুতে খরচ ২২ টাকা। এক কেজি আলু বাজারে এখন ১২ টাকা। সুতরাং কেজিতে ১০ টাকাই তাঁর লোকসান। আশঙ্কা প্রকাশ করে জিয়াউর বলেন, ‘সবারে ঘরে ঘরে এবার আলু, আল্লাহ জানে এইবার আলুর কি হইবে।’

শুধু আজাহারুল ও জিয়াউরই নয়, তাঁদের মতো শত শত কৃষক ঘরে, উঠানে, মাচানে আলু রেখে বিপাকে পড়েছেন। বছরজুড়ে সবটুকু শ্রম ঢেলে আলু ফলিয়ে এখন পড়েছেন বিপাকে। ক্রেতার প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে গরমে আলুতে পচন ধরছে। চালের খুদের চেয়ে আলুর দাম তিন গুন কম হওয়ায় চাষিরা এখন গরুকে আলু খাওয়াচ্ছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

০৯ এপ্রিল ২০২৫, জাগো নিউজ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রবিনটেক্স নামে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় বিনা কারণে শ্রমিক ছাঁটাই, বোনাস ও বকেয়া বেতনের দাবিতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গেলে শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

বুধবার (৯ এপ্রিল) উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের রবিনটেক্স গার্মেন্টসের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রূপগঞ্জ উপজেলার আউখাবো এলাকায় রবিনটেক্স নামে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় ৮-১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়। গত ২৮ মার্চ বিনা নোটিশে ছাঁটাই করা হয় ৬৫ জন শ্রমিককে। এছাড়া কারখানা বন্ধ দেওয়ার আগে শ্রমিকদের ৬৫ শতাংশ বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় ৫০ শতাংশ। এক মাসের বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও ২০ দিনের বেতন দিয়েই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ভোক্তার স্বস্তির বড় মূল্য দিতে হচ্ছে কৃষককে

১৬ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা এস এম শহীদুল কবির লিপু। ২৫ বিঘা জমিতে তাঁর সমন্বিত খামার। সেখানে নানা ধরনের সবজি ফলান তিনি। এবার ফলন আগের চেয়ে ভালো হয়েছে জানালেও কণ্ঠে ছিল হতাশার সুর।

হতাশার কারণও জানালেন লিপু। বললেন, ‘এবার রোজার সময় তোলা আমার একটা ফুলকপির উৎপাদন খরচ ছিল ১০ টাকা। ক্ষেতে বিক্রি করেছি দুই টাকা দরে। অথচ শহরে গিয়ে তা বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়। তাহলে আমি কী পেলাম? আমি কীভাবে টিকে থাকব?’ তিনি বলেন, রোজায় ভালো দাম পেতে সব কৃষক একসঙ্গে ক্ষেত থেকে সবজি তুলেছেন। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে সবাইকে।

এবার শীতকালে এবং রমজানের সময়ে সবজি, বিশেষ করে টমেটো, ফুলকপি, বেগুন, লাউ ইত্যাদির দাম অন্য বছরের চেয়ে কম ছিল। এতে ভোক্তারা স্বস্তি পেয়েছেন। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সম্প্রতি সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। কৃষকরা বলছেন, তাতেও শীত ও রোজার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।

নেটিজেনরা ‘ধুয়ে দিচ্ছে’ পরিবারকে, বাস্তবতা ভিন্ন

১৬ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

স্টেশনে দুই রেললাইনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন পেঁয়াজচাষি মীর রুহুল আমিন (৭০) নামের এক ব্যক্তি। ট্রেন আসামাত্রই তিনি লাইনে শুয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। গত সোমবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।

মীর রুহুল আমিনের আত্মহত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। আত্মহত্যা নিয়ে নেটিজেনরা ধুয়ে দিচ্ছেন তাঁর পরিবারকে। তাঁরা লিখছেন, পরিবারের অবহেলার শিকার হয়েছে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন ঘটনা।

মীর রুহুল আমিনের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঝপাড়া বাউসা গ্রামে। আড়ানী রেলস্টেশনে ঢাকাফেরত ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে শুয়ে পড়ে তাঁর আত্মহত্যার সময় কয়েকজন তরুণ টিকটক করছিলেন। তাঁদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে তাঁর আত্মহত্যার দৃশ্য। এতে দেখা যায়, স্টেশনে একটি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটি ট্রেন স্টেশনে ঢুকছে। ট্রেন কাছে আসামাত্রই মীর রুহুল আমিন লাইনের ওপরে শুয়ে পড়েন। ট্রেনের চাকা তাঁর দেহকে দুই ভাগ করে দিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় তিনটি বেসরকারি সংস্থা থেকে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৬৪ হাজার ও ৮০ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন মীর রুহুল আমিন। প্রতি সপ্তাহে তাঁকে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা কিস্তি দিতে হতো। এখনো ৯৯ হাজার ২৯০ টাকা ঋণ অবশিষ্ট রয়েছে।

মীর রুহুল আমিনের ভাতিজা মীর মোফাক্কর হোসেন বলেন, জমি বর্গা নিয়ে ১ বিঘা ৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন তাঁর চাচা। এ জন্য ঋণ করেছিলেন। ওই ঋণের কিস্তি চালানোর জন্য স্থানীয় আড়তদার ও মহাজনের কাছ থেকেও হয়তো ঋণ করেছিলেন। পেঁয়াজের দাম কম। তাই ঋণ শোধ করার দুশ্চিন্তায় তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে তাঁর ধারণা।

চাষিদের হাতের পেঁয়াজ শেষ, এরপরই দাম বেড়ে দ্বিগুণ

১৭ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোলাই গ্রামের পেঁয়াজচাষি মজিবুল ইসলাম ১০ এপ্রিল রাজশাহীর পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য এনেছিলেন ৮ মণ পেঁয়াজ। ১৮ টাকা কেজির বেশি কোনো ব্যবসায়ী দাম বলেননি। রাগ করে পেঁয়াজের বস্তা আড়তে ফেলে তিনি বাড়ি চলে যান।

আড়তদার পরে ২০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করে টাকা ওই চাষির বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।

গতকাল বুধবার ওই ৮ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করলে মজিবুল আরও ২৫ হাজার টাকা বেশি পেতেন। চাষিরা বলছেন, তাঁদের হাতের পেঁয়াজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

যৌথ বাহিনীর হাতে আটক গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা সেলিম মাহমুদ কারাগারে

১৬ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বাসা থেকে আটক গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন আদালত। তাঁকে দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১২ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার রেলস্টেশন এলাকার বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনী সেলিম মাহমুদকে আটক করে রূপগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে। আজ বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাসুমের আদালতে তাঁকে হাজির করা হয়। তাঁকে দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানালে বিচারক আগামীকাল বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেলিম মাহমুদ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য ও গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা কমিটির সভাপতি।

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কারখানাতেই শ্রমিকের ‘আত্মহত্যা’

১৮ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

গাজীপুরে একটি কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়ে কারখানাতেই এক শ্রমিক বিষাক্ত কেমিক্যাল পানে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় রাতের পালার কাজ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া মো. ইদ্রিস আলী (২৩) উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সপরিবার ভাড়া বাসায় থেকে মনট্রিমস্‌ লিমিটেড কারখানার কার্টন সেকশনে কাজ করতেন।

শ্রমিকরা জানান, এক বছর হয়ে গেলেও ইদ্রিস আলীর চাকরি এখনো স্থায়ী করা হয়নি। স্থায়ী করার বিষয়ে তিনি যখনই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন, তখনই তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এ ছাড়া তিনি নানা বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হতাশার মধ্যে ছিলেন। গতকাল রাতের পালার কাজ চলাকালে কোনো এক সময় ইদ্রিস আলী কারখানার কেমিক্যাল পান করেন। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইদ্রিস আলী মৃত্যুর আগে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, এক বছর ধরে তিনি চাকরি করছেন। কিছু মানুষ আসার তিন মাস, ছয় মাসের মধ্যে স্থায়ী হচ্ছেন, কিন্তু তার চাকরি স্থায়ী করা হচ্ছে না। কারখানার দুজন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে তিনি আরও লেখেন, ‘ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা মনে করে, ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির তৈরি। আমি আজকে সুইসাইড করব।’

কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধার ঘাটতিতে কমছে শিক্ষার্থী, ফাঁকা থাকছে ৬০ শতাংশ আসন

১৯ এপ্রিল ২০২৫, বণিক বার্তা

রবিউল ইসলাম, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছেন ২০২০ সালে। এরপর তিনটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। প্রথমটিতে বেতন ছিল মাত্র সাড়ে ৮ হাজার টাকা। তাও আবার চাকরির তিন মাসের মাথায় কোনো ধরনের নোটিস ছাড়াই ছাঁটাই হন। এরপর আরো একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ১২ হাজার টাকায়। সেখানে আবার বেতনের তুলনায় কাজের চাপ ছিল অনেক বেশি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা তারই সহকর্মীরা একই পদে পেতেন প্রায় তিন গুণ বেতন। সেই কষ্টে চাকরি ছেড়ে দিয়ে রবিউল এখন ব্যবসা শুরু করেছেন।

সরকারি একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ২০২২ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করেন শাহরিয়ার আহমেদ। এরপর মোট তিনটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন সেখানে বেতন পান কেবল ১৫ হাজার টাকা। শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাকরি পাচ্ছি না, বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু যে কাজ পাচ্ছি তা মানসম্মত নয়। আমার অনেক সহপাঠী চাকরি না করে গ্রামের বাড়িতে বসে আছে, কারণ যে বেতনে তারা চাকরি পাচ্ছে তা দিয়ে ঢাকায় থাকাই সম্ভব নয়। আমার পরিবার গ্রামে থাকে। ঢাকায় নিজের খরচ চালিয়ে তাদের তেমন সহযোগিতা করতে পারি না।’

শাহরিয়ার আহমেদ আরো বলেন, ‘আমাদের যদি ভালো অবস্থানে যেতে হয় তবে ডিপ্লোমা শেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার চার বছরের বিএসসি করতে হয়। কিন্তু এটি অনেক ব্যয়বহুল। এসব কারণে এখন অনেকেই আর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তে আগ্রহী হয় না।’

এদিকে কয়েক বছর ধরেই দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার। ফলে সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিষ্ঠান বাড়লেও সেগুলোয় শিক্ষক সংকট, উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশের অভাব এবং শিক্ষাজীবন শেষে চাকরিক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনেও এ তথ্যটি উঠে এসেছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোয় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট আসন ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০টি। এর বিপরীতে ভর্তি হয় ৬৮ হাজার ৭৮২ শিক্ষার্থী, যা বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থাৎ ইনস্টিটিউটগুলোয় প্রায় ৬০ শতাংশ আসনই ওই শিক্ষা বছরে ফাঁকা ছিল।

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় চামড়াশিল্পের শ্রমিকদের বিক্ষোভ

১৯ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

প্রায় পাঁচ মাস হলেও চামড়াশিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা। সমাবেশ শেষে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হলে আগামীকাল রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মূল কাজের অতিরিক্ত সময়ে (ওভারটাইম) কাজ না করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে পরে শ্রমিকদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।

সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় অবস্থিত চামড়াশিল্প নগরে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

রানা প্লাজা ধসের এক যুগ: এক হাজারের বেশি শ্রমিক হত্যার বিচার শেষ হয়নি

২৪ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজারের বেশি শ্রমিক নিহতের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৯৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে কেটে গেছে ১২টি বছর। আজ বৃহস্পতিবার রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্ণ হলো। কবে নাগাদ বিচারকাজ শেষ হতে পারে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেননি ঢাকার জেলা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. ইকবাল হোসেন।

এক যুগেও বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রানা প্লাজা ধসের ভুক্তভোগী মাসুদা খাতুন। গত মঙ্গলবার রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচার পাওয়ার আশায় আমাদের এক যুগ কেটে গেল। কিন্তু বিচার পেলাম না। যাঁদের কারণে এত শ্রমিক খুন হলেন, তাঁদের কারও শাস্তি হলো না।’

পিপি ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ সব সময় তৎপর। হতাহতের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মামলার অভিযোগ প্রমাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা হবে।

‘কৃষক আত্মহত্যা করলে মানুষের মুখে খাবার তুইলা দিব কারা’

২৪ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

‘আমার আব্বা এনজিও এবং সারের দোকান থেকে ঋণ নিয়া পেঁয়াজ চাষ করছিল। দুই বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হইছে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু বিক্রি করে পাইছে মাত্র ৫৮ হাজার টাকা। ঋণ শোধের চিন্তায় আব্বা পেঁয়াজ ক্ষেতেই বিষপানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো। আব্বা পেঁয়াজ বিক্রি করছিল ৬০০ টাকা মণ। অথচ এহন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি অয় ২ হাজার টাকায়। কারণ এহন কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ নাই। আমার আব্বার মতো কৃষকরা যদি এভাবে ঠইকা আত্মহত্যা করে, তাইলে দেশের মানুষের মুখে খাবার তুইলা দিব কারা?’

ঘাম ঝরানো কষ্টের ফসলের দাম না পেয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরে কৃষক সাইফুল শেখ অত্মহত্যা করেন। তাঁর করুণ পরিণতির কথা কাঁদতে কাঁদতে তুলে ধরলেন মেয়ে রোজেফা খাতুন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ক্ষুদ্র কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য বঞ্চনা’ তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোজেফা কৃষক বাঁচানোর আকুতি জানালেন করুণ স্বরে।

খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি) আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষক সাইফুল শেখের আত্মহত্যার ঘটনা সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বক্তারা বলেন, কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকের আত্মহত্যা শুধু ট্র্যাজেডি নয়, লজ্জাজনক। কাঠামোগত শোষণের শিকার হয়ে প্রান্তিক কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ শোষণ থেকে কৃষককে বাঁচাতে কৃষিমূল্য কমিশন গঠন, ন্যায্য বাজার ব্যবস্থাপনা তৈরি, ঋণ ব্যবস্থাপনা সহজীকরণ ও আমদানি নীতির সংস্কার প্রয়োজন।

অর্থনীতি

ব্যাংকের পাচার হওয়া টাকার সন্ধানে নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

২৭ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশের ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বের বৃহৎ তিনটি হিসাবরক্ষণ ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। যেসব ফার্মকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো ইওয়াই, ডেলয়েট ও কেপিএমজি।

বাড়তি ভ্যাটের কারণে দাম বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

রাজধানীর উত্তরার ব্র্যান্ডের একটি পোশাক বিক্রয়কেন্দ্র থেকে গত শুক্রবার কিছু পোশাক কেনেন জাওয়াদ তাজওয়ার। দাম আসে ১ হাজার ৫৭৭ টাকা, কিন্তু তাঁকে পরিশোধ করতে হয়েছে ১ হাজার ৭৩৪ টাকা। বাড়তি ১৫৭ টাকা তাঁকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) হিসেবে দিতে হয়েছে।

সরকার ৯ জানুয়ারি ব্র্যান্ড ও নন–ব্র্যান্ডের পোশাকের ওপর ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করে। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা কমিয়ে ব্র্যান্ডের পোশাকে ১০ শতাংশ ও নন-ব্র্যান্ড পোশাকে আগের মতো সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়। ফলে ব্র্যান্ডের পোশাকে আগের চেয়ে বাড়তি ভ্যাট আরোপ হয় আড়াই শতাংশ। এতে পোশাক কিনতে গিয়ে জাওয়াদ তাজওয়ারকে বাড়তি দিতে হয়েছে ৩৯ টাকা।

পোশাকের দেশি ব্র্যান্ডের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ফ্যাশন উদ্যোগের সাবেক সহসভাপতি সৌমিক দাস প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ভ্যাট হার কার্যকর করা শুরু হয়েছে। এতে বেচাকেনা আরও কমেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ এমনিতেই পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছিলেন।

সরকার নতুন করে ভ্যাট আরোপের কারণে পোশাকের পাশাপাশি আমদানি করা ফল, টিস্যু, রান্নার গ্যাস, মিষ্টি, বিস্কুট, ফলের জুস, ড্রিংক, টমেটো কেচাপ, রং, সিনেমার টিকিট, চশমার ফ্রেমসহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাতে বাড়তি ভ্যাট আদায় শুরু হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নতুন চালানের পণ্য বাজারে এখনো আসেনি। নতুন পণ্য এলে দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা আশা করছেন, বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে।

বোরো মৌসুমে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক

জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

কয়েকটি জেলায় কৃষকরা সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের জন্য এটি বড় ধাক্কা। এই মৌসুমেই দেশে সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয়।

ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশসহ প্রতি কেজি রাসায়নিক সার সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় চাষিদের কাছ থেকে তিন থেকে চার টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

বাগেরহাটের বাধাল ইউনিয়নের কৃষক অজয় দাস ও লিটন দাসের কথাই ধরা যাক।

তারা প্রায় তিন সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ইউরিয়া ৩০ টাকা ও প্রতি কেজি টিএসপি ৩৫ টাকায় কেনেন। সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় তা বেশি। উভয় পণ্যের দাম প্রতি কেজি ২৭ টাকা।

এছাড়া, প্রতি কেজি ডিএপি ২১ টাকা ও এমওপি ২০ টাকায় পাওয়ার কথা।

মালিকদের শেয়ারের মূল্য সাড়ে চার হাজার কোটি, ব্যাংক ঋণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

বেক্সিমকো গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি করে গ্রুপটির ব্যাংক ঋণের অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আবার বেক্সিমকোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বকেয়া বেতনভাতাও এ অর্থ থেকে পরিশোধের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে পুঁজিবাজারের সর্বশেষ দর বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রুপটির তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে থাকা শেয়ারের মূল্য সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। আর সরকার গঠিত এক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি জানিয়েছে, বেক্সিমকোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে নেয়া ব্যাংক ঋণের এখন পর্যন্ত নিশ্চিতকৃত পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। আবার এ উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি নিয়েও রয়েছে নানা ধরনের আইনি জটিলতা।

বেরিয়ে এলো দেশে বৈষম্যের প্রকট চিত্র

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল

দেশের ভেতর উন্নয়ন বঞ্চনা ও বৈষম্য নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। সমালোচনা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বিশেষ করে অঞ্চলভেদে বৈষম্য যে কতটা প্রকট, তা বেরিয়ে এলো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দারিদ্র্যের স্থানিক মানচিত্র (পোভার্টি ম্যাপ) প্রতিবেদনে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলেন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এতে দেখা যায়, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় সবচেয়ে বেশি, ৬৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বাস। অন্যদিকে রাজধানীর পল্টন থানায় এ হার ১ শতাংশ। তুলনামূলক এ অনুপাত বলে দেয় বৈষম্য কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের জেলা হিসেবে মাদারীপুরের নাম দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ, ২০১৬ সালে প্রকাশিত দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী মাদারীপুর ছিল সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের জেলার মধ্যে তৃতীয়। ওই প্রতিবেদনে জেলাটিতে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ছয় বছরের ব্যবধানে এ রকম উল্টো চিত্র মুদ্রণজনিত ত্রুটি কিনা– জানতে চাইলে বিবিএসের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে প্রকাশিত চিত্র সঠিক। তবে গত প্রতিবেদনে কিছু ত্রুটি থেকে থাকতে পারে। এ দুর্বল ভিত্তির কারণে তথ্যের নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’

বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর গুলশানের চেয়ে ধানমন্ডিতে দারিদ্র্যের হার কম। ধানমন্ডিতে দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গুলশানে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আবার রাজধানীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ৯ শতাংশ দারিদ্র্যের বাস মিরপুরে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য এলাকার মধ্যে আদাবরে  ৯ দশমিক ৮, বাড্ডায় ৭, বনানীতে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বাস করে। ঢাকা জেলার সামগ্রিক দরিদ্রের হার ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, আর জাতীয় দরিদ্রের হার ১৯.২ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় দরিদ্রের হার ২০ দশমিক ৩ শতাংশ, যেখানে শহরাঞ্চলে এ হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দারিদ্র্যের আঞ্চলিক ম্যাপিংয়ে দেখা যায়, বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস বরিশালে, ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে এ হার সবচেয়ে কম, ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম নোয়াখালীতে, ৬ দশমিক ১ শতাংশ। মাদারীপুরে সবচেয়ে বেশি, ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। উপজেলা হিসেবে ডাসারে (মাদারীপুর) সবচেয়ে বেশি, ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ।

জিডিপির আকার ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিরঞ্জিত হতে পারে

১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, দেশের জিডিপির আকার ৪৫৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন নথিতে পাওয়া তথ্য এবং অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের জিডিপির প্রকৃত আকার ৩০০ থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে। এলডিসি থেকে উত্তরণ ও উন্নয়নকে অতিরঞ্জিত করে দেখাতে গিয়ে বিগত সরকার দেশের জিডিপি পরিসংখ্যানকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছে। সরকারিভাবে এ তথ্যকে প্রকৃত পরিমাণের চেয়ে অন্তত ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে, যাতে করে সরকার বিদেশ থেকে বেশি ঋণ নিতে পারে এবং জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত অনেক নিচে থাকে।

‘কান্ট্রি ইকোনমিক মেমোরেন্ডাম: চেঞ্জ অব ফ্যাব্রিক’ শিরোনামে ২০২২ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এতে ১৩০টি দেশের ৩০ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ বলা হলেও এর প্রকৃত হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারি হিসাবে ১০ বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট।

সেবা খাতের তুলনায় পিছিয়ে যাচ্ছে উৎপাদন খাত: শুমারির তথ্য

৩০ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত এক দশকে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির পেছনে বড় অবদান রেখেছে সেবা খাত। তবে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে উৎপাদন তথা শিল্প খাত, অর্থাৎ দেশে যে হারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়া প্রয়োজন ছিল, সেটি হয়নি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। যদিও চূড়ান্ত ফলাফল আরও তিন মাস পর প্রকাশ করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে টাস্কফোর্সের সভাপতি কে এ এস মুরশিদ। অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক শুমারি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানান সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালক এস এম শাকিল আখতার।

দেশে এ নিয়ে চারটি অর্থনৈতিক শুমারি হয়েছে। এর আগে দেশের শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, মালিকানার কাঠামো, জনবল, উৎপাদিত পণ্য ও সেবার ধরন প্রভৃতি তথ্য উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে। অর্থনৈতিক শুমারিতে কৃষি খাতকে ধরা হয় না।

সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামে রয়েছে ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান, বাকিটা শহর এলাকায় অবস্থিত। অর্থাৎ শহরে শ্রমঘন ও বড় প্রতিষ্ঠানের প্রাধান্য থাকলেও সংখ্যার দিক থেকে বেশি প্রতিষ্ঠান গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত। অন্যদিকে এসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি সাড়ে ৭ লাখের বেশি মানুষ কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে শহরের কর্মসংস্থান ৪৩ শতাংশ, বাকিটা গ্রামে।

পিছিয়ে উৎপাদন খাত

শুমারিতে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিল্প উৎপাদন ও সেবা—এই দুই খাতে ভাগ করা হয়েছে। দেখা গেছে, ২০১৩ সালে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উৎপাদন খাতের হিস্যা ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত ১১ বছরের ব্যবধানে উৎপাদন খাতের এ অবদান কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশে। বিবিএসের হিসাবে বর্তমানে দেশে ১০ লাখ ৪১ হাজারের বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এদিকে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি কমলেও বেড়েছে সেবা খাতে। বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ৯১ শতাংশের বেশি হচ্ছে সেবা খাতের, যা ২০১৩ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মুদিদোকান থেকে শুরু করে অনলাইনের বেচাকেনা—সবই সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত। তবে সাধারণত শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি হয়। অর্থনীতির আকার বাড়াতেও এই খাতের ভূমিকা বেশি।

অর্থনৈতিক শুমারিতে খানাভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চিত্রও উঠে এসেছে, যা মূলত ইনফরমাল বা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হিসেবে পরিচিত। বাসাবাড়িতে কুটির শিল্পের মতো বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান প্রভৃতি এ খাতে ধরা হয়েছে। শুমারিতে দেখা যায়, গত ১১ বছরে এ খাতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। বিবিএসের হিসাবে বর্তমানে দেশে ৫০ লাখের বেশি ইনফরমাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া দেশে ই–কমার্সসহ অনলাইন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৭৮।

লিবিয়ায় উপকূলে ভেসে এলো ২০ মরদেহ, বাংলাদেশি বলে ধারণা

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী একটি এলাকা থেকে ২০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি নাগরিক। তবে পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়, ‘লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের ব্রেগা তীর থেকে গত দুদিনে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দূতাবাস বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে। স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর এসব মরদেহ ব্রেগা তীরে ভেসে এসেছে।’

১০০ টাকার ফল আমদানিতে শুল্ককর ১৩৬.২০ টাকা

২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শেয়ার বিজ

আপেল, কমলা, আঙুর, নাশপাতি ও আনারের ওপর ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট শুল্ককর ছিল ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছর দ্বিতীয় দফায় আবার বাড়ানোর ফলে মোট শুল্ককর হয়েছে ১৩৬ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থাৎ গত তিন বছরের ব্যবধানে প্রতিকেজি ফলে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে ৪৬ টাকা ৮৮ পয়সা। ফলে একজন আমদানিকারকের প্রতি ১০০ টাকার ফল আমদানিতে সরকারকে রাজস্ব দিতে হবে ১৩৬ টাকা ২০ পয়সা। আর একজন ভোক্তার প্রতি কেজিতে দাম ৫০ থেকে ৯০ টাকা বেড়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশে আপেল, আনার ও আঙুরের বাগান বা ফলন হয় না। তাই দেশের মানুষের সুস্থতার জন্য এসব ফল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চলতি অর্থবছর বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সঙ্গে আমদানি করা ফলের দামে দ্বিতীয় দফায় সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। এর প্রভাবে পাঁচটি ফলে প্রতি কেজিতে দাম ৫০ থেকে ৯০ টাকা বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ফল কিনে খাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গতকাল চট্টগ্রামের বড় ফলের আড়ত ফলমণ্ডীসহ বেশ কয়েকটি ফল বাজারের ঘুরে দেখা যায়, কালো আঙুর ৪০০ থেকে বেড়ে ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সাদা আঙুর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। আফ্রিকার আপেল মানভেদে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি। আগে ছিল ২৬০ থেকে ২৯০ টাকা কেজি। সবুজ আপেল ছিল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, এখন ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা। কমলা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, আগে ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। নাশপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজি, আগে ছিল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। ছোট আনার ৩৫০ টাকা কেজি, মাঝারিটা ৪৫০ টাকা।

সবচেয়ে বড় আনার ৬০০ টাকা কেজি। অর্থাৎ চলতি অর্থবছর বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সঙ্গে আমদানি করা ফলের দামে দ্বিতীয় দফায় সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। এ কারণে প্রতি কেজি কালো আঙুরের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ টাকা। একইভাবে মানভেদে আপেলের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ৪০ থেকে ৯০ টাকা। কমলার দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, নাশপাতি ও আনারের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

চকবাজার এলাকার ফল বিক্রেতা আবদুল হক বলেন, ‘দাম শুনলেই ক্রেতা চলে যায়। বিক্রি অনেক কমে গেছে। কেউ কেউ দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন। ক্রেতা না থাকলে কী করা যাবে? লাভ হয় না বলে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়েছে। একই বাজারে ফল কিনতে আসেন পশ্চিম বাকলিয়া এলাকার দিলসাদ খানম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কি আঙুর কিংবা আনার বাগান আছে? আর মানুষ কি শখে আপেল, আঙুর কিংবা আনার খায়? সুস্থতার জন্য মানুষ এসব ফল খায়। ফলের ওপর যে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, এতে আমরা বেশ চাপে আছি। আগের মতো আর কিনতে পারছি না ফল। এসব ভুল সিদ্ধান্ত থেকে সরকার থেকে সরে আসতে হবে।

ধান আবাদের সুসময়ে চাষির দুঃসময়

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

চাল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মৌসুমে বোরো আবাদে মাঠে নেমেছেন কৃষক। বোরো থেকে আসে দেশের ৬০ শতাংশ চালের জোগান। এ ধান চাষে নেমেই কৃষক মেলাতে পারছেন না উৎপাদন খরচের হিসাব। সার-সেচসহ কৃষির সব উপকরণে টানতে হচ্ছে বাড়তি খরচের বোঝা। এ কারণে মৌসুমের শুরুতেই দুশ্চিন্তা দানা বাঁধছে কৃষকের ঘরে ঘরে। উৎপাদিত ধান বেচে খরচ তুলতে না পারার ঘোরে আছেন তারা। রাজনৈতিক ডামাডোলে কৃষকের কষ্টের রোদন সরকারের কানে পৌঁছে না। দুঃসময়ে দেশের মানুষকে যারা ফসলের জোগান দিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন, সেই কৃষকের কথা ভাবছে না কেউ। ফলে ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচের চোটে ধান আবাদ টিকিয়ে রাখা দরিদ্র কৃষকের কাছে দুঃসাধ্য ঠেকছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বোরো মৌসুমে কৃষিতে বাড়তি মনোযোগ না দিলে কৃষি অর্থনীতিতে দেখা দিতে পারে দুই ধরনের সংকট। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে এক ধরনের চাপ তৈরি হতে পারে। আবার বাজারে চালের দাম বাড়লে দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের খরচ বাড়বে। কারণ, ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের আয়ের বড় অংশ খরচ হয় চালের পেছনে, যা মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেবে।

বোরো ধান চাষে যে পরিমাণ সার প্রয়োজন হয়, এর প্রায় ৬০ শতাংশ প্রয়োগ হয় ডিসেম্বর থেকে মার্চে। সারের এই বাড়তি চাহিদাকে মওকা হিসেবে নেয় কিছু অসৎ ডিলার। কৃষকরা বলছেন, ডিলাররা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। অন্যদিকে ডিলারদের দাবি, সারের সরবরাহ আগের চেয়ে কম থাকায় তারা বিক্রি করছেন বেশি দামে।

এ ছাড়া বোরো আবাদ পুরোটাই সেচনির্ভর। বছরজুড়ে ধান উৎপাদনে যে সেচের প্রয়োজন হয়, এর ৯৩ শতাংশই লাগে বোরো মৌসুমে। সেচ প্রকল্পের অব্যবস্থাপনা ও খাল-বিল এখন পানিশূন্য থাকায় সময়মতো চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষক।

কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহাসড়কে আলু ফেলে কৃষকদের প্রতিবাদ

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

কোল্ড স্টোরেজে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহাসড়কে আলু ফেলে প্রতিবাদ করেছেন রাজশাহী জেলার আলু চাষীরা। এসময় দাম কমিয়ে পূর্বের মূল্য রাখার জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে কৃষকরা।

কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার সাড়ে ১২টার দিকে মোহনপুর উপজেলার সামনের মহাসড়কে আলু ফেলে তারা প্রতিবাদ করেন। এসময় অনেক কৃষককে আহাজারি করতেও দেখা গেছে।

এর আগে কৃষকরা বেলা ১১ টা থেকে মোহনপুর উপজেলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে শুরু করেন।

কৃষকরা জানান, এবছর আলু চাষ করতে গিয়ে কয়েকগুণ  উৎপাদন খরচ পড়েছে। বীজ, সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপাদানের দাম গতবছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এখন আবার কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখার ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে।

কৃষকরা জানান, গতবছর কোল্ড স্টোরেজে ৭০ কেজির আলুর বস্তা রাখার ভাড়া বাবদ ২৮০ টাকা খরচ করতে হয়েছে কৃষকদের। এ বছর তাদের একই পরিমাণ আলু রাখার জন্য খরচ দিতে হবে ৫৬০ টাকা। অর্থাৎ গতবছর প্রতি কেজিতে ভাড়া ছিলো কেজিপ্রতি ৪ টাকা। এবার তা বাড়িয়ে কেজিপ্রতি ভাড়া করা হয়েছে ৮টাকা।

মোহনপুর মৌগাছি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলু চাষী ইউনুস আলী বলেন, ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভাড়া কমিয়ে পূর্বের ভাড়া নির্ধারণ করা না হলে আমরা আবার আমাদের কর্মসূচি পালন করবো।

খুঁড়িয়ে চলছে জিকে সেচ প্রকল্প, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,  সমকাল

দিন দিন কমে আসছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের আওতা। এক সময় ৪ জেলার ১৩টি উপজেলার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হলেও এখন তার আওতা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে নির্মিত দেশের বৃহত্তম এ সেচ প্রকল্প নিয়ে নানা সমস্যা হচ্ছে। এক বছর ধরে দুটি সেচ পাম্প বিকল, খালগুলো ভরাট ও বেদখল, সংস্কার না হওয়া ও লোকবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে কার্যক্রম।

সম্প্রতি জিকে প্রকল্পের আধুনিকায়নে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হলেও সেটি আলোর মুখে দেখেনি। প্রকল্পটি পাস হয়ে বাস্তবায়ন হলে জিকের সেচ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি ফসল উৎপাদন বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খরাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় কুষ্টিয়া অঞ্চলে ষাটের দশকে ভেড়ামারার মসলেমপুরে পদ্মা নদীতীরবর্তী এলাকায় পাম্প স্টেশন গড়ে তোলা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩টি উপজেলা দিয়ে প্রধান খাল খনন করা হয়। ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খালের পাশাপাশি ৪৬৭ কিলোমিটার সেকেন্ডারি খাল আছে। এ ছাড়া টারশিয়ারি খাল আছে ৯৯৫ কিলোমিটার। তবে এসব খালের বড় অংশ বেদখল হয়ে গেছে। অনেক খাল ভরে গেছে ঝোপ-ঝাড়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মরফলজি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ‘মূলত পদ্মার পানি ব্যবহার করে সেচ প্রকল্পটি সচল রাখা হয়। দুটি মৌসুমে পানি সরবরাহ করা হয়। রবি মৌসুমে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ হয়। খরিপ-২ মৌসুমে আমন ধানসহ ফসল উৎপাদনের জন্য পানি দেওয়া হয়।

ভেড়ামারায় জিকের প্রধান পাম্প স্টেশন। তিনটি বড় পাম্প আছে এই স্টেশনে। তবে দুটি পাম্প এক বছর ধরে নষ্ট। একটি পাম্প সচল থাকলেও সেটি চালানোর জন্য পদ্মায় পানির লেভেল কমপক্ষে ৪.২ মিটার প্রয়োজন। ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে পদ্মার পানির স্তর দ্রুত নামছে। মরফলজি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৪.২৫ মিটার। ১১ জানুয়ারি পানির লেভেল ছিল ৪.৭২ মিটার; আগের দিন ৪.৭৭ মিটার, ৯ জানুয়ারি ৪.৮৩ মিটার ও ৮ জানুয়ারি ছিল ৪.৯৮ মিটার।

মরফলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন বলেন, পাম্প চালাতে হলে পানির উচ্চতা ৪.২ মিটারের ওপর থাকতে হবে। এর কম হলে পাম্প স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তাদের প্রস্তুতি আছে সেচ দেওয়ার। তবে সেটি পানির ওপর নির্ভর করবে। তিনি বলেন, গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত যৌথ সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা ভারত থেকে পানি পেয়ে থাকি। চুক্তি অনুযায়ী পানি পেলেও যে পরিমান পানি পদ্মায় থাকে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে গরিবের সুরক্ষায় ভাটা

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য বিতরণ বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলেও অর্থের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণ, সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে। সামগ্রিক আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় ঘাটতি রয়েছে। ঋণ পরিশোধে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। এ জন্যই খাদ্য মন্ত্রণালয় এই খাতে ভর্তুকি বাবদ বাড়তি অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় বেশি। এসব ক্ষেত্রে বাড়তি অর্থের তেমন সংস্থান করা যাচ্ছে না। খাদ্য সহায়তার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ কারণে বেশ কিছুদিন বন্ধ বা আংশিক চালু থাকার পর সামাজিক সুরক্ষার আওতায় কয়েকটি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীর তালিকা হালনাগাদ করে ফের চালু করা হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব অনুসারে, গত জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে সংস্থাটির মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৫৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় কম হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত আড়াই বছরের বেশি সময় দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। গত ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল। অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন, গরিব মানুষের জন্য মূল্যস্ফীতির হার আরও বেশি। কেননা, তারা কিছু মৌলিক খাদ্যপণ্যের পেছনে তাদের আয়ের বেশির ভাগই ব্যয় করতে বাধ্য হন।

সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ সমকালকে বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে গরিব মানুষকে স্বস্তি দিতে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো উচিত। অনিয়ম রোধে তালিকা হালনাগাদ করার জন্য যেসব কর্মসূচি বন্ধ বা আংশিক চালু রয়েছে, সেগুলো দ্রুত পুরোপুরি চালু করা প্রয়োজন। সরকারের রাজস্ব বাড়াতে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

বাড়তি টাকা চায় খাদ্য মন্ত্রণালয়

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) থেকে চাল ও আটা কেনার প্রবণতা বেড়েছে। এতে সরকারের খাদ্য ভর্তুকি মূল বাজেট বরাদ্দের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বাড়বে বলে প্রাক্কলন করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ কারণে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অতিরিক্ত ৪ হাজার ১৫০ কোটি টাকা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মূল বাজেটে খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির ভর্তুকি বাবদ ২ হাজার ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু চাহিদা বেশি থাকায় সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ওএমএসের প্রতি কেজি চালে ২০ টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হয়। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে মূল বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বরাদ্দ বাড়িয়ে ৩ হাজার ২৯০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ৬ হাজার ২৭০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়কে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে অর্থ বিভাগে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান সমকালকে বলেন, নিয়মিত ওএমএস কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কিছু বাড়তি কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। এ জন্যই চালের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সরকারের এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অতিরিক্ত বরাদ্দ অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।

টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধ

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য গত অক্টোবরে ট্রাকে করে তেল, ডাল ও চাল বিক্রির কর্মসূচি হাতে নেয় সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। ফলে টিসিবির পরিবার কার্ড না থাকলেও প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার ৭০টি স্থানে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার মানুষ ভর্তুকি মূল্যে এসব পণ্য কেনার সুযোগ পেতেন। দুই মাস সাত দিন চলার পর গত ৩১ ডিসেম্বর এ কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে সংস্থাটি।

ট্রাক সেল আবার চালু করতে গত ২ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিতে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই প্রস্তাব অনেক দিন উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে উপস্থাপনই করা হয়নি। অবশেষে গত ২৮ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উঠলেও তা অনুমোদন পায়নি। প্রস্তাবটি অধিকতর যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সারাদেশে এক কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দেওয়া হতো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনিয়মের অভিযোগে ৪৩ লাখ পরিবারের কার্ড বাতিল করেছে। বাদপড়ার বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার কার্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৫৭ লাখ ১৫ হাজার পরিবারের মধ্যে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যতদিন বাতিল হওয়া ৪৩ লাখ পরিবারের বিপরীতে নতুন করে কার্ড দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, এর বিপরীতে বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে ট্রাক সেলে পণ্য বিক্রি করার বিষয়ে জোর দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে গত অক্টোবরে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রির কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এটিও সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সরকারের ৬ মাস: অর্থনীতি

পতন থেমেছে, স্বস্তি ফেরেনি

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অর্থনীতি গভীর খাদে পড়ে যাচ্ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে সেই পতন ঠেকানো গেছে। কিছু ক্ষেত্রে উন্নতিও আছে। তবে অর্থনীতিতে পুরো স্বস্তি এখনো ফেরেনি। বিনিয়োগ পরিবেশ ও কর্মসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়, এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি।

ছয় মাসেও নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যায়নি। বেড়েছে প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম। ফলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ রয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার শতাধিক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ানোয় এ চাপ কিছুটা বেড়েছে।

সরকারের আয় ও ব্যয়েও সংকটজনক অবস্থা। বাজেটের চাহিদা অনুসারে সরকার আয় করতে পারছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয়ে ঘাটতি বেড়েছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়ে লাগাম টানতে হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন–ভাতা, দেশি–বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধসহ বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়েই চলছে। তাই সংশোধিত বাজেটে বড় কাটছাঁটের পথেই হাঁটতে হচ্ছে সরকারকে।

অর্থনীতি খারাপ হতে শুরু করেছিল মূলত ২০১৯ সাল থেকে। মাঝখানে দেখা দেয় কোভিড–১৯ মহামারি। এরপর ২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি বিপদে পড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। তবে দেশে সংকট বেশি প্রকট হয়েছে আগের সরকারের একের পর এক ভুল ও খামখেয়ালি নীতির কারণে। অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই তখন নিম্নমুখী ছিল। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই অর্থনীতিতে সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে এর সুফল এখনো পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশায়ও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

অভ্যুত্থান নয় আইএমএফ নির্ধারণ করছে অর্থনীতির নীতি পদক্ষেপ

৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। এ ছয় মাসের পুরো সময়ে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল দুই অংকের ঘরে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশনে নেয়া সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবসা, বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তা কোনোভাবেই কাজে আসেনি। সংস্থাটির প্রেসক্রিপশনে রাজস্ব বাড়াতে জরুরি বেশকিছু খাতে আরোপ করা হয়েছে ভ্যাট। তাতে রাজস্ব না বাড়লেও মূল্যস্ফীতির নাভিশ্বাস আরো চেপে বসেছে। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বিগত ছয় মাসে গণমুখী কোনো সংস্কার ঘটেনি। বিগত সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ নীতিপদক্ষেপগুলো আইএমএফের প্রেসক্রিপশননির্ভর রয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো বা এতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার প্রয়াস কখনো অতীতে সফল হতে দেখা যায়নি। বরং সরকার আইএমএফের কাছ থেকে আরো বাড়তি তহবিল চাওয়ায় সামনে নতুন করে আরো কিছু শর্ত বাস্তবায়নের চাপ তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের অর্থনীতির মূল দর্শনকে এখনো এ প্রেসক্রিপশনের বাইরে আনা যায়নি। যদিও গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের অর্থনীতি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনকল্যাণমূলক হয়ে উঠবে বলে বড় ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল।

গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় এখন মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, জানুয়ারিতে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দীর্ঘদিন ধরেই দুই অংকের ঘরে। জানুয়ারিতে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের মাস অর্থাৎ ডিসেম্বরে এ হার ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় এ খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমলেও তা এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আসন্ন রমজানে তা কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সেটি নিয়েও রয়েছে সংশয়। ভরা আমন মৌসুমে চালের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। বন্যার প্রভাবে আমনের ফলন কম হওয়ায় এমনটা হয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সার ও সেচের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকায় বোরোর উৎপাদন নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত ছয় মাসে সরকার আর্থিক খাতের সুষ্ঠু কোনো উন্নতি করতে পারেনি। এ সময় গৃহীত নীতিপদক্ষেপগুলো খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি। সরকার জনগণের চেয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত ছয় মাসে অর্থনীতিতে সামগ্রিক কোনো উন্নতি হয়নি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে আমরা বের হতে পারিনি। প্রবৃদ্ধিতে স্থবিরতা। নতুন বিনিয়োগ নেই। কৃষি ও শিল্প উৎপাদন ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ব্যাংক খাত, বাজার ব্যবস্থাপনায় আমরা শক্ত কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। বরং আইএমএফ ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে তাদের পরামর্শগুলোকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এখানে উচ্চমূল্যের বাজারে জনগণের কষ্টকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। তবে যেসব খাত শক্তিশালী বা যারা আন্দোলনের হুমকি দিতে পারছে, তাদেরকে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে রাজস্ব খাতের দুর্বলতা দূর না করে শুধু করহার বাড়িয়ে বা ভ্যাট আরোপ করে রাজস্ব বাড়ানো যায় না। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা তা-ই বলে।’

বন্যায় আমনের উৎপাদন কম হওয়ায় সরকারি মজুদ প্রত্যাশিতভাবে বাড়েনি। বোরোর ফলন নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। কঠিন সময়ে টিসিবি ও খাদ্য কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়েনি। কিছু ক্ষেত্রে কার্ড জটিলতায় ট্রাকসেল কমেছে, জোরদার করা হয়নি ওএমএসের কার্যক্রমও।

কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষি উৎপাদন মৌসুমে দাম কিছুটা কমলেও মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী দুই-তিন মাসে তা কমার সম্ভাবনাও কম। এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকার নীতিসুদহার বাড়ালেও কৃষি উৎপাদন না বাড়ায় এর প্রভাব বাজারে পড়েনি। গত বছর বন্যায় আমন ও আউশের ফলন ভালো হয়নি। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছে। আসন্ন বোরো মৌসুমেও উপকরণ সরবরাহ ভালো না। সার সংকট রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে সেচ কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আবার কৃষিপণ্যের বা সবজির দাম উৎপাদন খরচের নিচে নেমে গেলেও সরকার ছিল নির্লিপ্ত। ওএমএসের কার্যক্রম অর্ধেকে নেমেছে। সরকারের চালের মজুদও কম। তাই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগও কমে এসেছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ছয় মাসে সরকারের আর্থিক নীতিগুলোর কোনোটাই সফলতার মুখ দেখেনি। স্থবির প্রবৃদ্ধি, নতুন বিনিয়োগ নেই। কৃষি ও অকৃষি খাতে উৎপাদন এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিদেশী অর্থায়নের গতিও এখন কমে এসেছে। রিজার্ভ পতন সাময়িকভাবে থামানো গেছে। সরকার সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে ওএমএসের কার্যক্রম বাড়ায়নি। বরং আইএমএফের পরামর্শে ভ্যাট আরোপ করায় মানুষের কষ্ট বেড়েছে। এর মধ্যেই আইএমএফের শর্তের আলোকে রাজস্ব বাড়াতে বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট আরোপ করায় জনঅসন্তোষ বেড়েছে। যদিও অর্থনীতির নীতিপদক্ষেপগুলোয় জনঅসন্তোষের চেয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্ধ অনুসরণই গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি।

পাটকলের বেসরকারি লিজে শর্ত শিথিল ও অন্য কারখানা স্থাপনের সুযোগ থাকবে: পাট উপদেষ্টা

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে লিজ প্রদানের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে পাটভিত্তিক শিল্পের পাশাপাশি অন্য শিল্প কারখানা স্থাপনের সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

আজ সোমবার দুপুরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের খুলনা দৌলতপুর জুট মিলের উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফকালে তিনি এ কথা জানান।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকল চালুর ক্ষেত্রে কেবল হাজার কোটি টাকা লোকসান ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ কিছুই হয়নি। তাই সরকারের মালিকানায় থাকা জুট ও টেক্সটাইল মিলগুলো ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশে বিদ্যমান সব পাটকল চালু রাখতে বছরে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন পাটের প্রয়োজন। কিন্তু দেশে পাটের উৎপাদন কেবল ১২ লাখ মেট্রিক টন। উপরন্তু সারাবিশ্বে পাটের বার্ষিক উৎপাদন মাত্র ২৫ লাখ মেট্রিক টন। সেক্ষেত্রে কেবল পাট দিয়ে এতগুলো প্রতিষ্ঠান চালু রাখা বাস্তবসম্মত নয়। তাই পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে লিজ প্রদানের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে পাটভিত্তিক শিল্পের পাশাপাশি অন্য শিল্প কারখানা স্থাপনের সুযোগ রাখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, খুলনার দৌলতপুর জুট মিলটি বেসরকারি উদ্যোগে চালু হওয়ায় প্রায় ৭০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে এখানে আরও তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ধরনের সফল উদ্যোগ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পথ খুলে যাবে। মিলটিতে বেসরকারি উদ্যোগে পাটপণ্য এবং জুতোর উৎপাদন একসঙ্গে চালু রেখে ইতিবাচক ও লাভজনক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগ সরকারিভাবে বাস্তবায়ন ততটা ফলপ্রসূ হয় না।

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আরও বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কারসাজির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে শক্তিশালী নয়। দেশে বিভিন্ন পণ্যের মজুদ ও সরবরাহের ওপর সরকারের নজরদারি রয়েছে। এই মুহূর্তে ভোজ্যতেলের বাজারে যে সাময়িক সংকট রয়েছে, তা অল্প কয়েকদিনের মধ্যে কেটে যাবে।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহে কুড়িগ্রামে অবস্থিত বন্ধ থাকা সরকারি টেক্সটাইল মিল বেসরকারি খাতে লিজের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। লিজগ্রহীতা হিসেবে ব্যবসায়ীরা সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এ সপ্তাহে আরও তিনটি মিল লিজ প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়।

পাটকল পরিদর্শনকালে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও দৌলতপুর জুট মিলের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০২০ সালের ১ জুলাই সরকার আর্থিক ক্ষতি ও উৎপাদন ব্যয়ের কারণ দেখিয়ে খুলনা অঞ্চলের নয়টিসহ মোট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল একসঙ্গে বন্ধ করে। এরপর বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) এসব বন্ধ পাটকল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) পুনরায় চালুর পরিকল্পনা করে। তবে, ব্যবসায়ীরা পিপিপি মডেলে পাটকল পরিচালনায় আগ্রহ দেখাননি এবং দীর্ঘমেয়াদি ইজারার দাবি জানান।

পাটকলগুলো পুনরায় চালু করার উপায় খুঁজতে ১৩ সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়, যা স্বল্পমেয়াদে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করে।

জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব

সরকার অতিরঞ্জিত বললেও খুঁজে পাচ্ছে না বিবিএস

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশের সরকারি পরিসংখ্যান দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপির তথ্যে নেই বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন। সম্প্রতি ক্ষমতার পালাবদলের পর এ প্রশ্ন আরো জোরালো হয়েছে। দেশী-বিদেশী বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও জিডিপির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বলা হয়েছে, উন্নয়নের বয়ান তৈরির জন্য জিডিপির আকার ও প্রবৃদ্ধিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছিল বিগত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাস পর গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত অর্থবছরের জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেছে। তাতে অবশ্য বিগত সময়ের তথ্যের সঙ্গে খুব বেশি ফারাক নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গলদ রয়েছে বিবিএসের জিডিপির হিসাব পদ্ধতির মধ্যেই। অনুমাননির্ভর এবং অনেক পুরনো তথ্যের ভিত্তিতে এ হিসাব করে সরকারের সংস্থাটি। ফলে অনেক সময় বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এবারো পদ্ধতিগত কোনো পরিবর্তন না করার কারণেই জিডিপির হিসাবে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা। তাই বিবিএসের সামগ্রিক পরিবর্তনে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

টিসিবির ট্রাকে পণ্যের চেয়ে গ্রাহক বেশি

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

টানা ১ মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আজ থেকে আবারও ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। আজ ঢাকা শহরের ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করেছে সংস্থাটি।

আজ সকাল থেকে রাজধানীর কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। চারটি স্থানেই ট্রাকের পেছনে মানুষের লম্বা সারি ছিল। বিশেষ করে লম্বা বিরতি দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করায় নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষেরা বেশি ভিড় করেছেন।

যেমন আজ কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে বেলা সাড়ে ১১টায় টিসিবির ট্রাক আসে। মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে ট্রাকটির পেছনে তিন শতাধিক মানুষের সারি তৈরি হয়। টিসিবির একটি ট্রাকে ২৫০ মানুষের জন্য পণ্য থাকে, অর্থাৎ সেখানে উপস্থিত অনেকে শেষ পর্যন্ত পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন না। একই চিত্র দেখা গেছে অন্যান্য স্থানেও।

উল্লেখ্য, নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করেছিল টিসিবি। তবে ৩১ ডিসেম্বরের পর এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আজ থেকে আবার এ কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি।

টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে অজ্ঞান তিন নারী

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অজ্ঞান হয়ে গেছেন তিনজন নারী। গতকাল বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

অজ্ঞান হয়ে পড়া নারীদের একজন ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা। তিনি স্বল্প মূল্যে চিনি, ছোলা ও সয়াবিন তেল কিনতে সকাল আটটায় সেখানে গিয়েছিলেন; কিন্তু দীর্ঘ সময় না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ও ঠেলাঠেলির কারণে বেলা আড়াইটার দিকে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

উপস্থিত লোকজন তাঁর মাথায় পানি দেন ও ধরাধরি করে রাস্তার পাশে বসান। এরপর বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করেন ওই নারী। তখন উপস্থিত লোকজনের অনুরোধে টিসিবির ট্রাক থেকে তাঁর কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়। এরপর তিনি পরিচিত একজনের সঙ্গে বাসায় ফিরে যান।

উল্লিখিত নারী জানান, তাঁর স্বামী পেশায় ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। স্বামীর নামে টিসিবির একটি পরিবার কার্ড ছিল। তবে টিসিবি এখন নতুন স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দিচ্ছে; যেটি তাঁরা এখনো পাননি। এ কারণে দুই মাস ধরে টিসিবির পণ্য কিনতে পারছেন না। ফলে গতকাল বাধ্য হয়ে টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

প্রথম আলোকে ওই নারী আরও বলেন, ‘আমার পাঁচজনের সংসার। এর মধ্যে দুই মেয়ে স্কুলে পড়ে। স্বামীর একজনের সীমিত আয়ে সংসার চলে না। এ জন্য বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি।’

এর আগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতেই টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়ানো আরও দুই নারী অজ্ঞান হয়েছেন। সেখানে উপস্থিত লোকজন জানান, তাঁরাও দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে সড়কে পড়ে যান।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও আধা কেজি খেজুর ৭৮ টাকায় বিক্রি করে সংস্থাটি।

টিসিবির ট্রাক থেকে এসব পণ্য কিনলে একজন ভোক্তার প্রায় ৪০০ টাকার মতো সাশ্রয় হয়। এ কারণে ট্রাকের পেছনে প্রতিদিনই মানুষের ভিড় বাড়ছে। তবে ভিড়ের সঙ্গে বাড়ছে বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি ও হয়রানির ঘটনা।

টিসিবির পণ্য কিনতে গিয়ে ক্রেতাদের পাঁচ অভিযোগ

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। মাঝখানে কিছুটা বিরতির পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় এ কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি। গত সপ্তাহের সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা শহরের আটটি স্থানে টিসিবির ‘ট্রাক সেল’ কার্যক্রম ঘুরে দেখেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। এ সময় ক্রেতারা টিসিবির পণ্য বিক্রি নিয়ে অন্তত পাঁচটি অভিযোগের কথা জানান। অভিযোগগুলো এখানে তুলে ধরা হলো—

ক্রেতার তুলনায় পণ্য কম

টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা ৫৮৮ টাকা খরচ করে ২ লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), ২ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি চিনি, ২ কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের পণ্য থাকে। অথচ প্রায় প্রতিটি ট্রাকের পেছনেই ৩০০-৪০০ মানুষের সারি দেখা যায়। জনবহুল আবাসিক এলাকায় মানুষের সংখ্যা আরও বেশি থাকে।

স্থান ও সময় জানেন না ক্রেতারা

টিসিবির নিবন্ধিত ডিলার বা সরবরাহকারীরা ট্রাকে করে প্রতিদিন ঢাকা শহরের ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রি করেন। তবে প্রতিদিন একই জায়গায় পণ্য বিক্রি হয় না; একই ওয়ার্ডের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ট্রাক যায়। ফলে সীমিত আয়ের অনেক ক্রেতা ঠিক কোথায় পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তা জানেন না। আবার লম্বা সময় নিয়ে ট্রাক খোঁজাও তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না।

টোকেন ছাড়া পণ্য বিক্রি

টিসিবির ট্রাকের পেছনে নারী ও পুরুষেরা সাধারণত দুটি সারিতে দাঁড়ান। অনেক পরিবেশক ট্রাক নিয়ে আসার পর উপস্থিত মানুষের মধ্যে টোকেন বিতরণ করেন। তখন টোকেনের সিরিয়াল অনুসারে ক্রেতারা পণ্য কেনেন। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক পরিবেশক টোকেন ছাড়াই পণ্য বিক্রি করেন। টোকেন না থাকলে অনেক ক্রেতা আগে পণ্য নেওয়ার জন্য লাইন ভেঙে সামনে চলে যান। তাতেই শুরু হয় হট্টগোল।

বিশৃঙ্খলা, মারামারি

টিসিবির ট্রাকের পেছনে আরেকটি নিয়মিত চিত্র হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি ও মারামারির ঘটনা। গত সপ্তাহের চার দিনে রাজধানীর আটটি স্থান ঘুরে দেখেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। প্রতিটি স্থানেই পণ্য বিক্রিতে চরম বিশৃঙ্খলা ও ক্রেতাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা দেখা গেছে। এই চিত্র সবচেয়ে প্রকট নারীদের সারিতে।

করা হয় খারাপ ব্যবহার

টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। তাঁদের অভিযোগ, ট্রাকের বিক্রেতারা (পরিবেশক, চালক ও সহকারী) সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এর মধ্যে গালাগাল যেন নিয়মিত ঘটনা। কখনো কখনো পানি ছুড়ে মারেন এবং সজোরে ধাক্কা দেন।

স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিট প্রায় ৬৩ লাখ, ভ্যাট নিবন্ধন কেবল সাড়ে ৫ লাখের

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশে এখন সর্বমোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা ইউনিট রয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখের বেশি। এর মধ্যে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিটের সংখ্যা ৬২ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৫ লাখ ৫৭ হাজার। সে হিসাবে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক ইউনিটের বড় অংশই এখনো করজালের বাইরে।

বিষয়টিকে রাজস্ব ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতার উদাহরণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, মূলত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণেই কর আহরণ বাড়ানো যাচ্ছে না। এখনো দেশের অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর মধ্যে বৃহদংশই সরকারের করজালের বাইরে। আবার অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির আকারও ক্রমেই বাড়ছে। এর ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যতম নিম্ন কর-জিডিপি আহরণের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ব্যক্তি পর্যায়ে আয়কর ছাড়াও সেলফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে কেনাকাটা, হোটেলে খাওয়া, সিনেমা দেখাসহ দৈনন্দিন লেনদেনে ভোক্তা ও গ্রাহকরা কোনো না কোনোভাবে করজালের আওতায় রয়েছেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দেশের অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর ৯০ শতাংশেরও বেশি এখনো করজালের বাইরে। কর-জিডিপি অনুপাতে গোটা বিশ্বে বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল ও পাকিস্তানের মতো দেশও এ অনুপাতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। বাংলাদেশে এ অনুপাতকে ৭-৮ শতাংশের ওপরে ওঠানো যাচ্ছে না। জিডিপির অতিরঞ্জিত তথ্য এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি কমাতে এক মাস বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সুপারিশ

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশে এক মাসের জন্য বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জানিয়েছে। সেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার এই সুপারিশ করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টাকে অর্থ মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিতে চাহিদা কমানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি রোধের চেষ্টা করা হলেও সরবরাহব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। সে জন্য সরবরাহব্যবস্থার কাঠামোগত ত্রুটি নিরসনে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। এ জন্য সাময়িকভাবে চারটি পদক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সুপারিশগুলো হচ্ছে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে আগামী এক মাস বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা; চাল–তেল, আলু–পেঁয়াজ ইত্যাদি নিত্যপণ্যের গুদাম নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ; পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সার ও বীজ সরবরাহের পাশাপাশি পরামর্শ সেবা নিশ্চিত করা।

রমজানের আগে দাম বাড়াতে সেই পুরোনো কৌশল

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

‘দেখেন ভাই, বোতলে লেখা ৮৫২; কিনলাম ৮৮০ টাকায়। এই পাঁচ লিটারে যে আমার ২৮ টাকা বেশি দিতে হইল, তাইলে দ্যাশে পরিবর্তনটা হইছে কী?’ গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে বেশি দরে তেল কেনার পর বারুদকণ্ঠে কথাগুলো বলেছিলেন শাহরিয়ার আলম। আঙুলের ইশারায় তাঁর দেখিয়ে দেওয়া সেই দোকানে দাম যাচাইয়ে যায় সমকাল। দাম বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দোকানি বলেন, ‘বোতলে লেখা দরেই ডিলার থেকে তেল কিনতে হইছে। সাড়ে আটশ টাকা পুঁজি খাটায়া ২৮ টাকা লাভ করতে না পারলে ব্যবসা করব কেমনে?’ 

ভোজ্যতেল নিয়ে এমন ক্ষোভের দহন এখন সবখানেই। ক্রেতারা যেমন ফুঁসছেন, ছোট ব্যবসায়ীরাও ত্যক্ত-বিরক্ত। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, হাতিরপুলসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল পুরোপুরি উধাও। কয়েকটি দোকানে মিললেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এ কারণে খোলা তেলের দামও আকাশ ছুঁয়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল কেনাবেচা হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮২ টাকায়। অথচ সরকারের নির্ধারিত দর ১৫৭ টাকা। সে হিসাবে প্রতি লিটারে ভোক্তাকে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ২৩ থেকে ২৫ টাকা।

সরকারের বিদেশী ঋণ পরিশোধ খরচ বছরে ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৬০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বিদেশী ঋণ পরিশোধ করেছে (সুদ ও আসল মিলিয়ে)। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধ করা হয়েছিল ৪৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

সে অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে সরকারের বিদেশী ঋণ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বেড়েছে ২৭ শতাংশের বেশি। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট বিদেশী ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৮ দশমিক ১৮ বিলিয়ন (৭ হাজার ৮১৮ কোটি) ডলারে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) শেষে এ বিদেশী ঋণের পরিমাণ ৮০ বিলিয়ন (৮ হাজার কোটি) ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকার নতুন বিদেশী ঋণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ২০০ কোটি ডলারের বেশি। এ সময় বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের অর্থ ছাড় হয়েছে ৩ দশমিক ২৬ বিলিয়ন (৩২৬ কোটি) ডলারের কিছু বেশি। এ ছয় মাসে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে প্রায় ১৯৮ কোটি ১৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে আসল পরিশোধ হয়েছে ১২৩ কোটি ৪২ লাখ ডলারের বেশি। বাকি প্রায় ৭৫ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে সুদ বাবদ।

লবণ চাষে উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা, চাষিরা পাচ্ছে সাড়ে ৫ টাকা

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫ টাকা হলেও মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক চাষিরা লবণ বিক্রি করছে প্রতি কেজি ৫ টাকা ৫০ পয়সা দরে, যা খুবই বেদনাদায়ক। এই চক্রান্তের শিকার হয়ে লবণ চাষ থেকে প্রকৃত লবণ চাষিরা নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এসময় দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষার আহ্ববান জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্টের (শিল্প লবণ) নামে লবণ আমদানী বন্ধ করে দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষার নিমিত্তে মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

২০-৩০% মানুষ এখনো ১৪৫% সুদে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেয়

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

গ্রামীণ ঋণগ্রহীতাদের ৫০ শতাংশ বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিলেও এখনো ২০-৩০ শতাংশ মহাজনের ওপর নির্ভর করেন। মহাজনের কাছ থেকে নেয়া সুদের গড় হার বিস্ময়করভাবে ১৪৫ শতাংশ। তবু ক্রেডিট কার্ড ও শহুরে জনগোষ্ঠীর মতো অন্যান্য আনুষ্ঠানিক আর্থিক পরিষেবার সুবিধা না থাকায় গ্রামীণ মানুষের জরুরি প্রয়োজনে শেষ ভরসা মহাজনরাই।

‘মহাজনের উপস্থিতিতে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিযোগিতা: তত্ত্ব এবং প্রমাণ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। অস্ট্রেলিয়া সাউথ এশিয়া রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক শ্যামল চৌধুরী গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) কার্যালয়ে এক সেমিনারে এ ফলাফল প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের চারটি জেলার ১৫০টি গ্রামের জরিপের ওপর ভিত্তি করে এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।

খেলাপি ঋণের হার ৩০% ছাড়িয়েছে

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশের ব্যাংকগুলো থেকে গত দেড় দশকে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই এখন আর ফেরত আসছে না। এর প্রভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকেরই খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। গত ডিসেম্বরেই ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হিসেবে স্বীকৃত খাতটির ৩০ শতাংশেরও বেশি ঋণ এরই মধ্যে খেলাপির খাতায় উঠে গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পরই দেশের ব্যাংক খাতের ক্ষত ফুটে উঠতে শুরু করে। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের হার দেখানো হয়েছে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। জুনে সেটি ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের হার ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশে ঠেকে। আর ডিসেম্বরে এসে খেলাপি ঋণের এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণের আশপাশে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দেশের ব্যাংকগুলোয় এখন ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরীক্ষা দলও ব্যাংকগুলো পরিদর্শন করছে। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো থেকে খেলাপি ঋণের যে তথ্য পাওয়া গেছে, সেটি ৫ লাখ কোটি টাকারও বেশি। তবে বেসরকারি খাতের যে ১২টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে, সেগুলোয় এখন আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়েও অডিট করা হচ্ছে। সেসব অডিট শেষ হলে খেলাপি ঋণের হার ৩৫ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সারা দেশে মিনি কোল্ড স্টোরেজ করছে সরকার

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সারা দেশে মিনি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করছে সরকার। আর এটা কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করেন কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সাভারের রাজালাখ এলাকায় হর্টিকালচার সেন্টারে গতকাল কৃষকের মিনি কোল্ড স্টোরেজ কার্যক্রম ও ‘খামারি’ অ্যাপসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ফসলের মৌসুমে কৃষিপণ্যের দাম পড়ে যায়। তা সংরক্ষণ করতে না পারায় কৃষকের লোকসান হয়। এবার ফুলকপির দাম নেমে গিয়েছিল ৫ টাকার নিচে। তাই কৃষক যাতে ফসল সংরক্ষণ করতে পারেন সেজন্য সরকার সবজিপ্রবণ এলাকায় প্রাথমিকভাবে ১০০ মিনি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করবে। আর এটা খুবই কম মূল্যে নির্মাণ করা যাবে।

সরকারের এ উদ্যোগ তুলে ধরে কম কৃষিজমিতে অধিক ফলন ও পচনশীল কৃষিপণ্য সংরক্ষণের বিষয়ে আলোকপাত করেন উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদ ব্যবস্থাপনা কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে খামারি অ্যাপ চালু হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত শাকসবজি, ফলমূল সংরক্ষণের জন্য মিনি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করা হয়েছে। সারা দেশে ১০০ মিনি কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করা হবে। এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া হবে কৃষকদের মাঝেও।’

বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা পুনর্বাসনে কমিটি, দেওয়া হচ্ছে বকেয়া

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প গ্রুপ বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে লেঅফ ঘোষণা করা ১৪টি কারখানার ‘পুনর্বাসনে’ একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে সরকার।

এসব কারখানার ৩১ হাজার ৬৬৯ জন শ্রমিক এবং এক হাজার ৫৬৫ জন কর্মকর্তার পাওনা ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা পরিশোধেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বুধবারের সভার সিদ্ধান্তগুলো জানাতে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন উপদেষ্টা।

কর্ণফুলী কাগজকল: চলছে খুঁড়িয়ে, আশা নতুন প্রকল্পে

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএমএল) একসময় দক্ষিণ এশিয়ার বিখ্যাত ছিল। দেশে সরকারি চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ কাগজ সরবরাহ করত এটি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি জৌলুশ হারিয়েছে। ৭২ বছরে পেরিয়ে এটি যেন এখন বার্ধক্যের নানা রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে চলছে অনেকটা খুঁড়িয়ে।

স্থানীয় বাজারে কাঁচামাল আহরণে বেসরকারি মিলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা, কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া, পুরোনো যন্ত্র দিয়ে উৎপাদন করা এবং দক্ষ লোকবলের অভাবে প্রতি টন কাগজ উৎপাদনে কেপিএমএলকে এখন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

পিএমএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শহীদ উল্লাহ জানান, কাঁচামাল ও লোকবল-সংকটে মাসের অধিকাংশ সময় উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ২ হাজার ৩৮৬ শ্রমিক কর্মচারীর জনবলকাঠামোর কারখানায় বর্তমানে ১৮৮ জন স্থায়ী শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা আছেন। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও মিলটির উৎপাদন এখনো চালু রাখা হয়েছে।

বিস্কুট, তেল, আটা-ময়দা, লবণ, এলপি গ্যাসসহ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

০৩ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

হঠাৎ বেশ কিছু পণ্যের ভ্যাট অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ তালিকায় থাকা পণ্যগুলোর মধ্যে আছে বিস্কুট, লবণ, শর্ষে তেল, আটা, ময়দা, এলপি গ্যাস ইত্যাদি। কিছু পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে এবং কিছু পণ্যে ব্যবসায়ী পর্যায়ে এ ছাড় দেওয়া হয়।

আজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুসারে, রেপসিড অয়েল, কোলজা সিড অয়েল, কেনোলা অয়েল উৎপাদন পর্যায়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি থাকবে। শর্ষে তেলের উৎপাদন পর্যায়েও ভ্যাট অব্যাহতি থাকবে, যার কোনো সময়সীমা নেই।

এ ছাড়া দেশে উৎপাদিত যেসব পণ্যের ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো বিস্কুট, লবণ, আটা, ময়দা, সুজি, গুঁড়া মরিচ, ধনে, হলুদ, আদা, চালের কুঁড়ার তেল, সূর্যমুখী তেল, রেপসিড অয়েল, কোলজা সিড অয়েল, কেনোলা অয়েল, ডাল বা ডাল–জাতীয় খাদ্যশস্য।

নগদ জমা সংরক্ষণের হার কমাল বাংলাদেশ ব্যাংক

৪ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) হার দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে করে এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে দৈনিক ৩ শতাংশ হারে সিআরআর রাখতে হবে।

তিন শিল্প এলাকায় সাত মাসে বন্ধ ৯৫ কারখানা

০৫ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বিগত সাত মাসে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ৯৫টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এর বাইরে কয়েকটি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৬২ হাজার-কর্মচারী শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অধিকাংশ শ্রমিক এখনো তাঁদের বকেয়া মজুরি এবং সার্ভিস বেনিফিট (চাকরির অবসায়নের পর প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধা) বুঝে পাননি।

কারখানা বন্ধের কারণ মোটাদাগে তিনটি। প্রথমত, বেশির ভাগ মালিক আর্থিক সংকট ও ক্রয়াদেশ না থাকায় কারখানা বন্ধ করেছেন। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মালিকদের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। সেগুলো বন্ধ হয়েছে। তৃতীয়ত, ক্ষমতাচ্যুত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী আত্মগোপনে থাকায় তাঁদের কারখানা রুগ্‌ণ হয়ে পড়েছে।

শিল্প পুলিশ জানায়, বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে গাজীপুরে রয়েছে ৫৪টি, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদীতে ২৩টি ও সাভার-আশুলিয়ায় ১৮টি। এসব কারখানায় ৬১ হাজার ৮৮১ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। বেকার শ্রমিকেরা প্রায়ই কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া পাওনার দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন।

ঘুরছে কম কলকারখানার চাকা, উৎপাদনে ধাক্কা

০৫ মার্চ ২০২৫, সমকাল

গ্যাসের ঘাটতি দিনে প্রায় ১৩৫ কোটি ঘনফুট। গ্যাস-স্বল্পতায় সবচেয়ে বেশি ধুঁকছে শিল্প খাত। এখন চাহিদার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম গ্যাস পাচ্ছে শিল্পকারখানা। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, নরসিংদীসহ দেশের শিল্পাঞ্চলে এই সংকট দিন দিন বাড়ছেই। এতে ছেদ পড়ছে উৎপাদনে। বন্ধ হয়েছে শতাধিক কারখানা। অনেকটি বন্ধের পথে। বাধ্য হয়ে চলছে শ্রমিক ছাঁটাই। বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকরা নানা দাবিতে প্রায় দিনই সড়ক অবরোধ, ভাঙচুরসহ বিক্ষোভ করছেন। উৎপাদনে ধাক্কা লাগায় কমছে পণ্য রপ্তানি, বিদেশ থেকে বাড়ছে কাঁচামাল আমদানি।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভোগান্তি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে, কারখানা চালু রাখার চেয়ে বন্ধ রাখলেই লাভ। বারবার শিপমেন্ট বাতিল করতে হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন কারখানার গ্যাসের দর দ্বিগুণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়লে নতুন বিনিয়োগ আসবে না।

দরিদ্র মানুষ ও দুস্থ নারীদের চাল-গমের সহায়তা কমেছে

০৬ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বাজারে চালের দাম চড়া। ভালো মানের এক কেজি মোটা চাল কিনতে লাগছে ৫৫ টাকা। সরু চালের দাম অনেক বেশি। এ চড়া দামের মধ্যেই সরকারিভাবে চাল বিতরণ কমেছে। কমেছে গমের বিতরণও।

বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা ও গরিব মানুষকে সহায়তার ক্ষেত্রে সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারিভাবে চাল ও গম বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ২০ শতাংশ কম।

পরিমাণের দিক দিয়ে চাল ও গমের বিতরণ কমেছে প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার টন। চালের বিতরণ কমেছে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন। অন্যদিকে গম ও আটার বিতরণ কমেছে প্রায় ৩৮ হাজার টন।

বেড়েছে পরিচালন ব্যয়, আরো অদক্ষ হয়ে উঠছে রেল

১০ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

সরকারের শীর্ষস্থানীয় লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বাংলাদেশ রেলওয়ে। পরিচালন অদক্ষতায় দিন দিন ভারী হচ্ছে লোকসানের পাল্লা। প্রতি ১ টাকা আয় করতে গিয়ে সংস্থাটি ব্যয় করে ২ টাকা ৯০ পয়সা (২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাবে)। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসেও রেলের পরিচালন ব্যয় বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অথচ সে অনুযায়ী বাড়েনি সেবার মান। উন্নতি বলতে পুরনো ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে চালু করা গেছে চারটি নতুন ট্রেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) একই সময়ে রেল মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় হয়েছিল ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পরিচালন ব্যয় ৫৪০ কোটি টাকা বেড়েছে সংস্থাটির।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয়ের প্রায় পুরোটাই যায় বাংলাদেশ রেলওয়ের পেছনে। সাধারণ প্রশাসনিক খাত, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, রানিং স্টাফদের বেতন-ভাতা, জ্বালানি তেল, অন্যান্য পরিচালন ব্যয় ও বিবিধ—মোটাদাগে এসব খাতে ব্যয় করে সংস্থাটি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ব্যয় বাবদ ৩ হাজার ২২৩ কোটি টাকা খরচ করে রেলওয়ে। তবে ওই অর্থবছরের পরিচালন আয়ের হিসাব রেলওয়ে এখনো প্রকাশ না করায় লাভ বা লোকসানের তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। তার বিপরীতে ব্যয় হয় ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়।

রেলওয়ের ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সংস্থাটি সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে সাধারণ প্রশাসনিক ব্যয় খাতে। ২০২১-২২ অর্থবছরে (রেলওয়ের সর্বশেষ প্রকাশিত বিস্তারিত আয়-ব্যয়ের তথ্য) প্রায় ৫৩ শতাংশই এ খাতে ব্যয় করে সংস্থাটি। এর বাইরে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত বাবদ ১৬ শতাংশ, রানিং স্টাফদের বেতন-ভাতা বাবদ ১২, জ্বালানি তেল বাবদ ৫ ও অন্যান্য খাতে প্রায় ১৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে রেল।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাড়তে থাকা রেলের লোকসান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার কমিয়ে আনবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সাধারণ মানুষের। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিচালন ব্যয় যে হারে বেড়েছে, তাতে অর্থবছর শেষে লোকসানের পাল্লা আরো ভারী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এবারের রোজায় শাকসবজির দাম কম কেন

১০ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

চলতি বছর পবিত্র রমজান মাসে অধিকাংশ প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে সবজির বাজার যেন স্বস্তি দিয়েছে ভোক্তাদের। অর্থাৎ রমজান এলেই বাজারে মূল্যবৃদ্ধির যে প্রবণতা তৈরি হয়, এবার তা আগের মতো দেখা যায়নি।

ব্যতিক্রম শুধু লেবু, শসা, বেগুন ও সয়াবিন তেল। রোজার শুরুতে এসব পণ্যের দাম কিছুটা বেড়ে গেলেও কয়েক দিনের ব্যবধানে তা কমে এসেছে।

কৃষক, ব্যবসায়ী, পাইকার ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর শীত মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই রোজা শুরু হয়েছে। ফলে বাজারে পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, শসা প্রভৃতি সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এ কারণে দাম বাড়েনি। আবার মুরগি ও গরুর মাংস বা ডিমের দামও কম রয়েছে। অন্যদিকে, চিনি, খেজুরসহ কিছু আমদানি পণ্যে সরকার শুল্ক ছাড়ের সুবিধা দেওয়ায় এসব পণ্যের দামও স্থিতিশীল বা কমতির দিকে ছিল।

হিমাগার ব্যবসায়ীদের দখলে, আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক

১১ মার্চ ২০২৫, আজকের পত্রিকা

দিনরাত আলু নিয়ে হিমাগারে অপেক্ষা। তারপরও সেখানে রাখা যাচ্ছে না। বুকিং কার্ড থাকলেও আলু নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে কৃষককে। হিমাগারের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় দালাল ও ফড়িয়াদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসায়ীরা অগ্রিম আলু সংরক্ষণের কার্ড হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কৃষকেরা হিমাগারে আলু রাখতে পারছেন না।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র বলেছে, গাইবান্ধায় এবার ১২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল; কিন্তু আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৪৯৭ হেক্টরে। এর মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাতেই আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ১০৪ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৩১৮ হেক্টরে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ না হওয়ায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।

এদিকে উৎপাদিত আলু সংরক্ষণের জন্য গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বকচর হিমাদ্রি কোল্ডস্টোরেজ-১, গোবিন্দগঞ্জ কোল্ডস্টোরেজ-২ ও উপজেলার সূর্যগাড়ি এলাকায় ১টি এবং সাপমারা এলাকায় অ্যাপেক্স অ্যাগ্রিসায়েন্স লিমিটেড নামে ৪টি হিমাগার রয়েছে। এ ছাড়া সাদুল্যাপুর উপজেলায় আরবি কোল্ডস্টোরেজ ও সুন্দরগঞ্জে আশরাফ আলী কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এই ছয়টি হিমাগারে ৫২ হাজার ৭৬০ টন আলু সংরক্ষণ করার সুযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে হিমাগারগুলো প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে কৃষকেরা সংরক্ষণের সুযোগ না পেয়ে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে দাম কমে গিয়ে কৃষকেরা লোকসানে পড়েছেন।

কক্সবাজার-মাতারবাড়ী: সড়কটি যেন ‘সোনা দিয়ে মোড়ানো’ হবে

১৩ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। ফলে সড়কটির প্রতি কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৭৬ কোটি টাকা।

দেশে এটাই হতে যাচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক। এর আগে কোনো সড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি এত ব্যয় হয়নি।

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরকে মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সড়কটি ২৬ কিলোমিটার দুই লেন নির্মাণ করা হচ্ছে। বন্দরের কাছাকাছি বাকি অংশটুকু হবে চার লেন। সঙ্গে ছোট-বড় কয়েকটি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। করতে হবে জমি অধিগ্রহণ।

তারপরও সড়কটি নির্মাণে বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এক সেমিনারে সড়ক পরিবহন, রেলপথ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি বিদেশি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প তাঁকে অনুমোদন করতে হয়েছে। এর প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ৪৩৭ কোটি টাকা। এই সড়ক সোনা নাকি হীরা দিয়ে বাঁধানো হবে—এ প্রশ্ন রাখেন উপদেষ্টা। পাশাপাশি এ বিষয়ে তিনি প্রকৌশলীদের আত্মোপলব্ধির অনুরোধ জানান।

টাকা ছাপিয়ে ফের ঋণ দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

১৪ মার্চ ২০২৫, সমকাল

সমালোচনা উপেক্ষা করে টাকা ছাপিয়ে আবারও ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে আরও আড়াই হাজার কোটি টাকা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এ নিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হলো। যদিও ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলেন, টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংককে ধার দেওয়া হবে না।

নদীবন্দরে ৫৬ জাহাজে ভাসছে ৯০ হাজার টন সয়াবিন

১৪ মার্চ ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন নৌঘাটে সয়াবিন সিড বোঝাই ৫৬টি ব্যক্তিমালিকানাধীন লাইটার জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এখানে এমনও জাহাজ রয়েছে, যেগুলো থেকে প্রায় এক মাসেও পণ্য খালাস করেনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। ফলে চলতি রমজানে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের (বিডব্লিউটিসিসি) তথ্য অনুযায়ী, এসব লাইটার জাহাজে প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন সিড রয়েছে। জাহাজগুলো দেশের বিভিন্ন নদীবন্দরে নোঙর করেছে।

এক বছরে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৭ টাকা

১৫ মার্চ ২০২৫, সমকাল

গত বছর রমজানে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে সরু চালের কেজি ছিল ৬২ থেকে ৬৪ টাকা। সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮১ টাকা। কেজিতে বেড়েছে অন্তত ১৭ টাকা। একইভাবে বেড়েছে মাঝারি ও মোটা চালের দাম।

এই রমজানেও দফায় দফায় চালের দাম বাড়ছে। ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। বোরো ধান বাজারে না আসা পর্যন্ত এটা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দামের লাগাম টানতে আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মিল মালিক, ব্যবসায়ী আর ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে দাম বাড়ার এ চিত্র পাওয়া গেছে।

হিমাগারের আকস্মিক ভাড়া বৃদ্ধিতেই দাম পড়েছে কৃষিপণ্যের

১৬ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

কৃষক পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি টমেটো উৎপাদনে তাদের ব্যয় হয় ১২-১৩ টাকা। আর পণ্যটি রাজধানীর বাইরে বিক্রি হচ্ছে স্থান ও মানভেদে প্রতি কেজি ৮ থেকে ১৮ টাকায়। পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয় কেজিতে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। কোনো কোনো স্থানে তা ৩৫ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

এসব কৃষিপণ্যের দাম উৎপাদন ব্যয়ের নিচে নেমে আসার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন আকস্মিকভাবে হিমাগারের ভাড়া বেড়ে যাওয়াকে। তাদের ভাষ্যমতে, গত মৌসুমে আলুর ভালো দাম পাওয়ায় এবার দেশে আলুর আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি জমিতে। উৎপাদনও ১ কোটি ২০ লাখ টন ছাড়ানোর আশা করা হচ্ছে। যদিও কৃষক পর্যায়ে আলুর উৎপাদন খরচও উঠছে না এখন। কৃষি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত হিমাগার ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়ায় আলু সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। তাই ছয় মাস বাড়তি ভাড়া দিয়ে আলু সংরক্ষণের ঝুঁকি না নিয়ে মাঠেই কম দামে আলু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে ভরা মৌসুমে আলুর দাম খুচরা বাজারে কেজিতে ২০ টাকার নিচে নেমে এলেও মৌসুম শেষে বাজার চড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার অভাবে একই অবস্থা পেঁয়াজ ও টমেটোর বাজারেও।

সরকারি হস্তক্ষেপে ৭৫ শতাংশ কমেছে এয়ারলাইনের টিকিটের দাম: আটাব

১৯ মার্চ ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

সরকারের হস্তক্ষেপ ও কঠোর নিয়মকানুন বাস্তবায়নের ফলে বিশেষ করে সৌদি আরবের বিভিন্ন গন্তব্যে উড়োজাহাজের টিকিট ভাড়া ৭৫ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আটাব জানিয়েছে, গত ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে যাত্রীদের ঢাকা থেকে সৌদি আরবের প্রধান শহরগুলোতে যেতে টিকেটে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। গ্রুপ বুকিং স্কিমের অধীনে টিকিটের দাম ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। তবে সরকারের নজরদারি প্রচেষ্টায় টিকিটের দাম নাটকীয়ভাবে কমেছে।

এখন ভাড়া ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এমনকি কিছু বিমান সংস্থা (এয়ারলাইন্স) ঢাকা থেকে দাম্মাম ও রিয়াদের মতো রুটে টিকিট ভাড়া কমিয়ে ৩৫ হাজার টাকায় দিচ্ছে।

এবার রোজায় নতুন করে সক্রিয় ৩১৭ প্রতিষ্ঠান, বেড়েছে আমদানি

২৪ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

গত আগস্টে সরকার বদলের পর এবার রোজার পণ্য আমদানিতে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে ৩১৭টি নতুন ও পুরোনো প্রতিষ্ঠান। এ তালিকায় রয়েছে ফল আমদানিকারক থেকে শুরু করে প্রাণিখাদ্য তৈরির প্রতিষ্ঠানসহ নানা শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। গত ১ জানুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত ৭০ দিনের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে রোজার পণ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ছোলা, মটর ডাল, মসুর ডাল, খেজুর, চিনি, গম, সয়াবিন ও পাম তেল।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উল্লিখিত রোজার আটটি পণ্য আমদানি করেছে ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৩১৭টি প্রতিষ্ঠান গত বছর রোজার আগে কোনো পণ্য আমদানি করেনি, অর্থাৎ এবার আমদানির মাধ্যমে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে এই ৩১৭ প্রতিষ্ঠান। অবশ্য গত বছর রোজার সময় আমদানি করেছে এমন ১৮১টি প্রতিষ্ঠান এবার কোনো পণ্য আমদানি করেনি। এসব প্রতিষ্ঠান আমদানি না করলেও পণ্য আমদানি কমেনি। কারণ, গতবারের চেয়ে এবার বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান নিত্যপণ্যের ব্যবসায় সক্রিয় ছিল। এতে পণ্য আমদানি গতবারের তুলনায় ৯ লাখ টন বেড়ে সাড়ে ৩৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।

পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রোজার চাহিদার চেয়ে বাড়তি পণ্য আমদানি হয়েছে এবার। এতে রোজার পণ্যের কোনোটির দাম কমেছে, কোনোটি স্থিতিশীল রয়েছে। অবশ্য ফেব্রুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে সয়াবিন আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে তেলের সংকট দেখা দেয়। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে আমদানি বাড়তে থাকায় বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ বেড়েছে।

চালকলমালিকদের সুবিধা দিতেই ধান সংগ্রহের পরিমাণ কমাচ্ছে সরকার

১২ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

খাদ্য মন্ত্রণালয় এবারের বোরো মৌসুমে সাড়ে তিন লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা গত বছর ছিল ছয় লাখ টন। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪৩ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলছেন, কৃষককে বঞ্চিত করে মিলারদের সুবিধা দিতে সরকার ধান সংগ্রহের পরিমাণ কমিয়েছে।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক মাহা মীর্জা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন প্রমুখ।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শুধু ধান ও চাল ছাড়া অন্য কোনো শস্য সরকারিভাবে কেনা হয় না। আবার কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহের সময় দাম নির্ধারণে অস্বচ্ছ ও অদক্ষ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। ফলে কৃষক বছরের পর বছর প্রতারণার শিকার হন।

নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ল ৩৩ শতাংশ, পুরোনো শিল্পে বাড়তি ব্যবহারে নতুন দাম

১৩ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের তীব্র আপত্তির পরও বাড়ল গ্যাসের দাম। নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৩ শতাংশ। প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে তাদের। পুরোনো শিল্পকারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম। প্রতিশ্রুত শিল্প গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে।

আজ সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, দেশের গ্যাস কমার সঙ্গে সঙ্গে এলএনজি আমদানি বাড়তে থাকে। এলএনজির বাড়তি দাম দিতে গিয়ে চাপে পড়ে পেট্রোবাংলা। তারা ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল। তবে গণশুনানিতে বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী দাম বাড়ানো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।

সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল লিটারে ১৪ টাকা

১৩ এপ্রিল ২০২৫, আজকের পত্রিকা

এক সপ্তাহ দর-কষাকষি ও সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর অবশেষে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা বাড়িয়েছেন ভোজ্যতেল মিলমালিকেরা। এর ফলে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন ১৮৯ টাকা, যা আগে ১৭৫ টাকা ছিল।

আজ রোববার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। নতুন দাম ঘোষণার পর আজ থেকেই তা কার্যকর হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

নতুন ঘোষণা অনুসারে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২২ টাকা, যা ছিল ৮৫২ টাকা। বোতলজাত তেলের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা, যা ছিল ১৫৭ টাকা।

এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৫ টাকা।

১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করলো সরকার

১৩ এপ্রিল ২০২৫, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

দেশের ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাতিল হওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো মধ্যে ৫টি সরকারি ও ৫টি বেসরকারি। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্ধারিত ছিল।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এই তথ্য জানান।

সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হলো: সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক (কক্সবাজার), সুন্দরবন ট্যুরিজম পার্ক (বাগেরহাট), গজারিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (মুন্সীগঞ্জ), শ্রীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল (গাজীপুর), ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ময়মনসিংহ)।

বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হলো: গার্মেন্টস শিল্প পার্ক বিজিএমইএ (মুন্সিগঞ্জ), ছাতক ইকোনমিক জোন (সুনামগঞ্জ), ফমকম ইকোনমিক জোন (বাগেরহাট), সিটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন (ঢাকা) ও সোনারগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল (নারায়ণগঞ্জ)।

ঋণবঞ্চিত সিএমএসএমই খাতের ক্লাস্টার, থমকে আছে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ

১৪ এপ্রিল ২০২৫, বণিক বার্তা

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় মোল্লারহাট ও সুবিদপুর ইউনিয়নে শীতলপাটি তৈরি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৭০টি পরিবার। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় তারা ব্যাংক ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করেও পাননি।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় মোল্লারহাট ও সুবিদপুর ইউনিয়নে শীতলপাটি তৈরি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৭০টি পরিবার। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় তারা ব্যাংক ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করেও পাননি। এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ঋণসহায়তার আশ্বাস দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত মেলেনি। ফলে ব্যবসার পরিধি তারা বাড়াতে পারেননি। জীবনমান ও আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হয়নি গুচ্ছভুক্ত (ক্লাস্টার) এ সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের।

গুচ্ছভুক্ত আরেকটি সিএমএসএমই খাত বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার তাঁত শিল্প। উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের শাঁওইল বাজারকে কেন্দ্র করে প্রায় চার দশক আগে গড়ে ওঠে এ শিল্প। ঝুট কাপড় থেকে সুতা তৈরি করে সেই সুতা দিয়ে সোয়েটার, মাফলার, চাদর, তোশকের কভারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন এ শিল্পসংশ্লিষ্টরা। তবে ঋণ না পাওয়ায় শিল্পের অনেকেই এখন ভিন্ন পেশায় রুটি-রুজি খুঁজছেন।

শুধু ঝালকাঠির শীতলপাটি কিংবা বগুড়ার তাঁত শিল্পই নয়। ঋণ না পাওয়ায় সিএমএসএমই খাতের গুচ্ছভিত্তিক অনেক প্রতিষ্ঠানই দাঁড়াতে পারছে না। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সিএমএসএমই খাতের মোট ঋণের অন্তত ১০ শতাংশ গুচ্ছভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিতে হবে। প্রতি বছর অন্তত ১ শতাংশ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের মধ্যে এ ঋণের আকার ১২ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএমএসএমই খাতের মাত্র ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ ঋণ গুচ্ছভুক্ত প্রতিষ্ঠানে দিয়েছে। ক্লাস্টারভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ঋণবঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যও দিন দিন কমছে। যদিও সরকার রফতানি পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ খাতের ওপরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

পনেরো মাসে ১২৮ নতুন তৈরি পোশাক কারখানা

২০ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

দেশে অর্থনৈতিক সংকট, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ নানা উত্থান-পতনের মধ্যেও রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসছে। এতে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। অন্যদিকে কারখানা বন্ধের ঘটনাও ঘটছে।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে তাদের নতুন সদস্য হয়েছে ১২৮টি কারখানা। সব কটি কারখানা পুরোপুরি উৎপাদনে এলে মোট ৭৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এর বাইরে পুরোনো কিছু কারখানাও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগ করেছেন উদ্যোক্তারা।

অন্যদিকে গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে বিজিএমইএর সদস্য এমন ১১৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে কাজ হারিয়েছেন ৯৬ হাজার ১০৪ জন। এসব কারখানার মধ্যে বেশির ভাগই বন্ধ হয়েছে গত আগস্টের পর, যা সংখ্যায় ৬৯। তাতে কাজ হারিয়েছেন ৭৬ হাজার ৫০৪ জন।

বে-টার্মিনালসহ ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

২১ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং দেশের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেতে তাদের চাপিয়ে দেওয়া পরামর্শকের জন্য ব্যয়ের বোঝা টানতে হয়। বড় আকারের ঋণ পেতে এ ছাড়া কিছু করার থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজের ধরন অনুযায়ী দেশীয় পরামর্শকও পাওয়া যায় না। আবার অতীতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের কাজে সহায়তা করতে চাইলেও তাদের সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ তাদের অনেকেই বিদেশে বড় কাজে পরামর্শক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

গতকাল রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সামাজিক সুরক্ষা খাতের লক্ষ্যভুক্ত সুবিধাভোগী নির্বাচন-সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের পরামর্শক খাতে বড় অঙ্কের ব্যয়ের বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নেওয়া  প্রকল্পটিতে শুধু পরামর্শক ব্যয় ধরা হয় ১৯৪ কোটি টাকা। ৯০৪ কোটি টাকার প্রকল্পে ৯০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেওয়া এ প্রকল্প আগামী জুলাই মাসে শুরু হবে। শেষ হবে ২০৩০ সালের জুন মাসে।

জধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে ১৬ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এ অর্থের মধ্যে ১৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ। সরকার জোগান দেবে ৩ হাজার ১ কোটি টাকা। বাকি ৪ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা জোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। উপদেষ্টা পরিষদের সব সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণকাজ এ মাসেই শুরু

বৈঠকে  চট্টগ্রাম বন্দরের গতি বাড়াতে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর নির্মাণকাজ  চলতি এপ্রিলেই শুরু হচ্ছে। বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) নামের প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব মডেলে নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয় ১৩  হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। এখানেও ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে সংস্থাটি। প্রকল্পে বাকি ৪ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা দেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০৩১ সালে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা।

প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে লাভ ১২ টাকা?

২৩ এপ্রিল ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

তিন বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। অথচ দেশের বাজারে এই সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক উচ্চ দামে। নানা অজুহাতে সয়াবিন তেল পরিশোধনকারী মিল মালিকেরা প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ব্যবসা করছেন ১২ টাকা, যা অস্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং যথাসময়ে ব্যাংকের সহায়তা না পাওয়ায় বিশ্ববাজারে দর কমার সুফল পাচ্ছেন না দেশের ভোক্তারা।

কাস্টমসের শুল্কায়ন মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৬ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে অপরিশোধিত যে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে, তার শুল্কায়ন মূল্য ছিল প্রতি কেজি গড়ে ১৩৬ টাকা। প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিনের পরিবহন ও পরিশোধন ব্যয় সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ টাকা। শুল্ক, কর ও ভ্যাট বাবদ আরও ২১ টাকা যুক্ত করলে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ১৭৭ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সরকার প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৮৯ টাকা। এই হিসাবে প্রতি লিটারে অন্তত ১২ টাকা লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা। এটি খুবই অস্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও ৩০ লাখ মানুষ ‘অতিদরিদ্র’ হতে পারে

২৫ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

বাংলাদেশে এ বছর আরও ৩০ লাখ মানুষ ‘অতিদরিদ্র’ হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। অতিদারিদ্র্যের হার বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হবে। ২০২৪ সালে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ।

অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে গত বুধবার রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, মূলত তিন কারণে আরও ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রমাগত প্রকৃত আয় কমে যাওয়া; দুর্বল শ্রমবাজার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মন্থরগতি।

বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে শ্রমবাজারের দুর্বল অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের প্রকৃত আয় কমতে পারে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের শ্লথগতির কারণে ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র মানুষের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে। এতে বৈষম্য আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করে।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে

২৬ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্র ‘গ্যান্ট্রি ক্রেন’। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বা এনসিটিতে এই ক্রেন দরকার ১২টি। আছে ১৪টি। আবার জাহাজ থেকে নামানোর পর কনটেইনার স্থানান্তরের যত যন্ত্র দরকার, তারও সবই আছে টার্মিনালটিতে।

টার্মিনালটিতে জাহাজ থেকে বার্ষিক ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো-নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। দেশীয় অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ করেছে। এভাবে টানা ১৭ বছর ধরে দেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে চালানো হচ্ছে টার্মিনালটি।

প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে এবং ভালোভাবে চলতে থাকা এই টার্মিনাল আওয়ামী লীগ আমলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আমলের সেই ধারাবাহিকতা এগিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার ভার দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরে সরব বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরা। আন্দোলন-বিক্ষোভও করছেন তাঁরা।

আন্দোলনে থাকা নেতাদের একজন হুমায়ুন কবির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেশের টাকায় জেটি নির্মিত হলো। যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে দেশের টাকায়। বন্দর ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান মিলে টার্মিনালটি ভালোভাবে পরিচালনা করছে। বন্দরের সবচেয়ে বেশি আয় হচ্ছে এই টার্মিনাল থেকে। ১৭ বছর পর এই টার্মিনাল কেন এখন বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে হবে? তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা যদি বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে বে টার্মিনালে আসুক, যেখানে আমরা কোনো কিছুই করিনি। এখানে নয়।’

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে চারটি কনটেইনার টার্মিনাল চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫০ মিটার লম্বা নিউমুরিং টার্মিনাল সবচেয়ে বড়। গত বছর বন্দরের মোট কনটেইনারের ৪৪ শতাংশ ওঠানো-নামানো হয়েছে এই টার্মিনালে। একসঙ্গে চারটি সমুদ্রগামী কনটেইনার জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলরত একটি ছোট জাহাজ ভিড়ানো যায় তাতে।

এই টার্মিনালের চেয়ে ছোট আরও তিনটি টার্মিনাল চালু রয়েছে। এর মধ্যে নিউমুরিং টার্মিনালের পাশে চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) গত বছর ১৯ শতাংশ এবং জেনারেল কার্গো বার্থ বা জিসিবিতে ৩৭ শতাংশ কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়। এর বাইরে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের হাতে ছেড়ে দেওয়া পতেঙ্গা টার্মিনাল গত বছরের জুনে চালু হয়। তারা এখন যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। তবে পুরোদমে এখনো চালু হয়নি।

যে কারণে উদ্বেগ

বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া জোরালো হওয়ার পর আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাঁদের উদ্বেগ, বন্দরের এই টার্মিনাল সবচেয়ে বড়। এতে শ্রমিক-কর্মচারী মিলে এক হাজারের মতো কর্মরত রয়েছেন। বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে চাকরি হারাতে হবে শ্রমিকদের। আবার বন্দরের আয় কমে যাবে। যদিও নৌ উপদেষ্টা আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে আসছেন, কারও চাকরি যাবে না।

২০০৭ সাল থেকে আংশিক এবং ২০১৫ সাল থেকে পুরোদমে এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ দরপত্রের মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে টার্মিনাল পরিচালনা কাজের ভার দিয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত শ্রমিকেরা ছাড়াও টার্মিনালটিতে কাজ করছেন বন্দরের কর্মচারীরাও।

বন্দরের হিসাবে, টার্মিনালটিতে ২২-২৩ অর্থবছরে মোট আয় হয়েছে ১ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। এ সময়ে বন্দর টার্মিনাল পরিচালনার জন্য যে প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছে, তারা কনটেইনারপ্রতি বিল পেয়েছে ৬৯৪ টাকা বা প্রায় সাড়ে ৬ ডলার। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রকৃত আয় হয়েছে ৫৭৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে কনটেইনারপ্রতি বন্দরের প্রকৃত আয় দাঁড়ায় প্রায় ৪৭ ডলার।

এখন বন্দর টার্মিনালটি বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দিলে বন্দরের আয় নির্ভর করবে দর-কষাকষির ওপর। বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া পতেঙ্গা টার্মিনালে বন্দর পাচ্ছে কনটেইনারপ্রতি ১৮ ডলার করে। সেখানে বন্দরের শুধু জেটি নির্মাণে বিনিয়োগ রয়েছে। নিউমুরিং টার্মিনালে কনটেইনারপ্রতি এই আয় বাড়বে। তবে এখন যা আয় করছে, তার চেয়ে অনেক কম হওয়ার শঙ্কাই বেশি।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মানবাধিকার

ডিবির অভিযানে দিনমজুরের মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা

২৬ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল

শরীয়তপুরের জাজিরায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযান চলাকালে মিলন বেপারী (৫৫) নামে এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের কালু বেপারী কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পরিবারের দাবি, ডিবির মারধরে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, আতঙ্কিত হয়ে মাটিতে পড়ে অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়।

গোয়েন্দা পুলিশ, স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে জাজিরা পদ্মা সেতু এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালান জেলার গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক নওশের আলীসহ আট সদস্য। অভিযান চলাকালে মোজাম্মেল নামে এক ব্যক্তিকে গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কালু বেপারী কান্দি এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জামাল বেপারীর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় জামালের প্রতিবেশী ও মামা মিলন বেপারী আতঙ্কিত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয় বলে দাবি করে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে পরিবারের অভিযোগ, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাঁকে ঘর থেকে বের করে মারধর করা হলে তিনি অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরবর্তী সময়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

নিহতের স্ত্রী রেনু বেগম অভিযোগ করে বলেন, ডিবি পরিচয়ে রাতে বাড়ি তল্লাশি করার পর আমার স্বামীকে মারধর করা হয়েছে। মারধর করায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। স্বামী হত্যার বিচার চাই।

নিহতের ছেলে আল-আমিন বলেন, আমাদের সামনে বাবাকে ডিবির লোকজন মারধর করেছে। মারধরের ফলে তাঁর মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে মারা গেছেন। ডিবির লোকজন আমার বাবাকে মেরেছে।

 

শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে উত্তাল রাত, আহত ৬

২৭ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাত ১১টার দিকে নীলক্ষেত মোড়-সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে এ ঘটনা শুরু হয়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকা। মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপে মধ্যরাতে কেঁপে ওঠে আশপাশ। রাত আড়াইটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। থেমে থেমে চলছিল ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিক তাদের নাম জানা যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ ও চার প্ল্যাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাবিতে আজ সোমবার সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করেছে প্রশাসন।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, লাঠিসোটা ও রড হাতে নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান করছেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হয়ে আছেন। সড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মধ্যরাতে ইডেন কলেজের কয়েকশ ছাত্রী সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

রাতে আটক যুবদল নেতার সকালে মৃত্যু, শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

কুমিল্লায় গভীর রাতে বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। অমানবিক নির্যাতনের কারণে মো. তৌহিদুল ইসলাম (৪০) নামের ওই যুবদল নেতা মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। নিহতের শরীরে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন থাকার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বজনেরা।

তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। তিনি একই ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। গত রোববার তাঁর বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবরে তিনি বাড়ি আসেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। আজ শুক্রবার তাঁর বাবার কুলখানি হওয়ার কথা ছিল। তৌহিদুলের মা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। সংসারে তাঁর স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান রয়েছে।

কারা ফটকে বিক্ষোভের পর মুক্তি পেলেন জামাতুল আনসারের ‘নায়েবে আমির’ মহিবুল্লাহ

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

গাজীপুরে বিক্ষোভ-সমাবেশের পর মুক্তি পেয়েছেন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার ‘নায়েবে আমির’ মো. মহিবুল্লাহ (৪৮)। মঙ্গলবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে তাকে ‍মুক্তি দেওয়া হয়। এর আগে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কারা ফটকে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন মহিবুল্লাহর অনুসারীরা।

মহিবুল্লাহর অনুসারীরা জানিয়েছেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও ভোলার মাদ্রাসাশিক্ষক মাওলানা মহিবুল্লাহকে মুক্তি না দিয়ে কারাগারে আটকে রাখায় ‘বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন’ ব্যানারে কাশিমপুর কারাগারের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে। এ সময় জেল সুপার ও জেলারের বিরুদ্ধে আদালতের রায় অবমাননার অভিযোগ করেন তারা। সেইসঙ্গে তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ৩২ নম্বরের বাড়ি

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন। একপর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

রাত ১১টার দিকে একটি ক্রেন ও একটি এক্সকাভেটর এনে বাড়ি ভাঙা শুরু হয়। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বাড়িটির একটি পাশ ভাঙা শেষ হয়। রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভাঙা চলছিল। সেখানে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, মুজিববাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।

৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা ছাড়াও বুধবার রাতে ধানমন্ডির ৫ এ-তে অবস্থিত শেখ হাসিনার বাড়ি সুধা সদনে আগুন দেওয়া হয়। রাত ১টা পর্যন্ত খবর অনুযায়ী সেখানে আগুন জ্বলছিল। সাড়ে ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা আগুনের খবর পেয়েছেন।

শেখ হাসিনার সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়ায় ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুর

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে অন্তবর্তী সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, গতকাল রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে  যার দুটো অংশ আছে। একটি হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন শেখ হাসিনা তাদেরকে অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহীদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধামকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

গাজীপুর, বরিশালসহ ৩৫ জেলায় হামলা, ভাঙচুর ও আগুন

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের পর গত বুধবার রাতে খুলনায় ‘শেখ বাড়ি’ ভাঙচুর করা হয়। এরপর কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হানিফের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। গত দুদিনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কমপক্ষে ১৩টি বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ পরিবারের সদস্যদের অর্ধশত ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাতটি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়েছে। গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত সারা দেশ থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

ঢাকার বাইরে অন্তত ৩৫টি স্থানে হামলা, ভাঙচুর, আগুন লাগানোর ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। ভোলায় তোফায়েল আহমেদ, নোয়াখালীতে ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহ ও আমুর বাড়ি ভাঙচুর–আগুন, কুমিল্লায় এমপি বাহাউদ্দিনের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগের নেতাদের এসব বাড়িঘরে গত ৪ ও ৫ আগস্টেও হামলা, লুটতরাজ হয়েছিল। এরপর থেকে এসব বাড়িঘর পরিত্যক্তই ছিল।

গাজীপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক ডেকে মারধরে আহত ১৫

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাঁদের কয়েকজনকে আটক করে মারধর করেন। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা গাজীপুর মহানগরের ধীরাশ্রমের দক্ষিণখানে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালান। তাঁরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করেন। এ সময় মসজিদের মাইকে মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। মাইকিং শুনে আশপাশের লোকজন বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। তাঁরা ভাঙচুরকারী কয়েকজনকে মারধর করেন।

মব জাস্টিসের আতঙ্কে পুলিশ ও জনগণ, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ সব মহলের

৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাসেও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ কাটেনি। যদিও গণ-অভ্যুত্থানের পর কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের কাজে ফিরিয়ে এনে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে বেশকিছু উদ্যোগ।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাসেও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ কাটেনি। যদিও গণ-অভ্যুত্থানের পর কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের কাজে ফিরিয়ে এনে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে বেশকিছু উদ্যোগ। দুই দফায় পরিবর্তন আনা হয়েছে বাহিনীটির শীর্ষ পদে। ঢেলে সাজানো হয়েছে থানা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও। তবে এতসব উদ্যোগের পরও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমান নয়। বিশেষ করে একের পর এক মব জাস্টিসের ঘটনা ঘটায় আতঙ্কিত পুলিশসহ সাধারণ জনগণ। আবার হেফাজতে মৃত্যু, অপহরণ, ছিনতাই ও পুলিশ আক্রান্তের ঘটনাও বেড়ে চলেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে খুন, অপহরণ, চুরি, ছিনতাই ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে সর্বমোট ৫ হাজার ৮৬২টি। এর মধ্যে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের হামলার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১৯২টি। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৩২৯টি। খুনের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৫৪৫টি। সেই সঙ্গে ছিনতাই ও চুরির মতো অপরাধও বেড়েছে এ সময়ে। এ সময়ের মধ্যে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ৩ হাজার ১৫৩ ও ৬২৩টি।

ডেভিল হান্টে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ১৩০৮ জন

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা করে প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মহানগর এলাকায় ২৭৪ জন এবং রেঞ্জে ১ হাজার ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুরেই গ্রেপ্তার ৮১ জন। পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব জানা গেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রয়েছেন। এদিকে হাতিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন।

আট দিনে সারা দেশে ৪৪০১ জন গ্রেপ্তার

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ নতুন করে আরও ৪৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত আট দিনে সারা দেশে এই অভিযানে মোট ৪ হাজার ৪০১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী। গত ২৪ ঘণ্টায় (গত শুক্রবার বিকেল থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত) এই অভিযানের সময় ৪৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়াও বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০টি গুলি ও কয়েকটি দেশি অস্ত্র।

 

মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানকালে ‘গুলিবিনিময়ে’ নিহত ২: পুলিশ

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানকালে ‘গুলিবিনিময়ে’ দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান এই তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ বলছে, গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন জুম্মন ও মিরাজ। পুলিশ তাঁদের সন্ত্রাসী বলছে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।

 

আদিবাসীদের ওপর হামলা: নারায়ণগঞ্জ থেকে ‘অন্যতম আসামি’ গ্রেপ্তার

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ের সামনে আদিবাসীদের ওপর হামলার ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তার নাম সাঈদ ফজলুল করিম স্বপন (৪২)। এই হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি তিনি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, মতিঝিল থানা পুলিশের একটি দল আজ শনিবার ভোররাত আড়াইটার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

ডেভিল হান্টেও থামেনি ডাকাতি চুরি ছিনতাই

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

বাবার মৃত্যুর পর হাল ধরেন আরমান হোসেন। তিন দশক ধরে মিরপুর ১০ নম্বরে পরিবারটি চালাচ্ছে ‘মা মণি জেনারেল স্টোর’। বৃহস্পতিবার ভোরে প্রাইভেটকারে এসে শাটার ভেঙে এটিসহ আশপাশের কয়েকটি দোকানের মালপত্র ও টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। দুর্ধর্ষ এ ঘটনার পর আরমানের ভাষ্য, পাশে বেনারসিপল্লি; গভীর রাত পর্যন্ত লোকে গমগম। এখানে এমন ঘটনা কল্পনাও করিনি। একই সময়ে তারা কয়েকটি বাসায় হানা দেয়। ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নই। মুদি দোকানের ওপর তিনটি পরিবার নির্ভরশীল। লুণ্ঠিত মালপত্র, টাকা হয়তো পাব না। তবে এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি চাই না। মূলত পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এসব হচ্ছে।

শুধু মিরপুর নয়, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধীদের বহুমাত্রিক তৎপরতার খবর মিলছে। জড়িতরা এতটা বেপরোয়া যে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করছে। কিছুই তোয়াক্কা করছে না। আবার দিনদুপুরে বাসে উঠে যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, টাকা কেড়ে নিচ্ছে। চলন্ত বাসে অস্ত্র দেখিয়ে করছে নারীর শ্লীলতাহানিও।

রাতভর রাজধানীতে যা ঘটলো

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

ঢাকায় গতকালের রাত অনেকটা আতঙ্কে কেটেছে রাজধানীবাসীর। রোববার রাত ৮টার দিকে ধানমন্ডির শংকরে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়া সেখানে আতঙ্ক তৈরি হয়। পরে বনশ্রী এলাকায় ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনতাই করে অস্ত্রধারীরা।

গোড়ানে একজনকে কুপিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। রাত ১টার দিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনা নিয়ে রাত ৩টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে হামলা, গুলি, তরুণের মৃত্যু

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

কক্সবাজার বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকবার গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শিহাব কবির নাহিদ (৩০) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বিমানবাহিনীর ঘাঁটির পাশে সমিতিপাড়ার প্রবীণ শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিনের ছেলে। আজ সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমিতিপাড়ার পার্শ্ববর্তী কুতুবদিয়া পাড়ার জাহেদ হোসেন নামের এক তরুণের সঙ্গে বিমানবাহিনীর একটি তল্লাশিচৌকিতে হেলমেট পরা নিয়ে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এরপর জাহেদের আত্মীয়স্বজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটি ও সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। থেমে থেমে আধা ঘণ্টা ধরে চলা ওই পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকবার গুলির শব্দ শোনা যায়।

মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন শিহাব কবির নাহিদ। স্থানীয় লোকজন শিহাবকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের দাবি শিহাব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

শিহাবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিমানবাহিনীর ঘাঁটির দিকে আসতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে লোকজনকে সরিয়ে দেন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক, বিচ্ছিন্ন ঘটনা আগেও ঘটেছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, কালের কন্ঠ অনলাইন

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এ রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা আগেও ঘটেছে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমার মনে হয় কোনো মিডিয়ায় এমন লেখেনি, এ বছর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো।

এ রকম কিন্তু কোনো সংবাদ মনে হয় কোনো সাংবাদিক…যেহেতু আমি নিজেও এক সময় সাংবাদিকতা করেছি, আমি মর্নিং নিউজে ছিলাম—আমরাও কোনো দিন করিনি। কিন্তু এখনো যে পরিস্থিতি, আগের মতোই অবস্থা। আমি বলব, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্যাটিসফ্যাকটরি (সন্তোষজনক)। কিন্তু এটার উন্নতি করার অবকাশ রয়ে গেছে।

বেপরোয়া ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা, ছয় মাসে মামলা বেড়েছে ৫০%

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

দেশে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীরা। তারা মানুষকে জিম্মি করে, অস্ত্র ঠেকিয়ে, গুলি করে অথবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাহীনতাবোধ ও আতঙ্ক।

সর্বশেষ গত রোববার রাতে রাজধানীর বনশ্রীতে বাসায় ফেরার সময় এক সোনা ব্যবসায়ীকে গুলি ও কুপিয়ে জখম করে স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়।

শুধু বনশ্রীর ঘটনা নয়, বিগত কয়েক মাসে একের পর এক অপরাধের ঘটনা সামনে এসেছে। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক কালে ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনায় মামলা বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে দেশে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪২টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৯টি বেশি (৬৯ শতাংশ)। ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে মামলা হয়েছে ২৩০টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৫টি (৭০ শতাংশ) বেশি।

সব মিলিয়ে গত আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৪৫টি, যা ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের তুলনায় ৩৮২টি বেশি (৫০ শতাংশ)।

মেয়ে নিয়ে কোচিং থেকে ফেরার পথে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেলো মায়ের

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সীমা বেগম (৪০) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ সময় তার কাছ থেকে ছিনতাইকারীরা ২ হাজার টাকা ও কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে মেয়েকে কোচিং থেকে নিয়ে ফেরার সময় ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার হন সীমা বেগম। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসেন। রাত ৮টার দিকে ঢামেকের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গণপিটুনিতে ছয় মাসে ১২১ জন নিহত, আইন কী বলে

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের (২০২৪) আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছেন।

আরেক মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে দেশে গণপিটুনিতে সর্বোচ্চ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে গত বছর। ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত হন ১৪৬ জন, যা আগের বছরের প্রায় তিন গুণ। ২০২৩ সালে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন।

মানবাধিকারকর্মীদের মতে, গত ৫ আগস্টের পর ‘মব ভায়োলেন্স’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতার পরিমাণ বেড়ে গেছে। সরকার তা বন্ধ করতে তেমন পদক্ষেপ নেয়নি। কখনো কখনো কাউকে জোর করে কোনো পদ থেকে নামিয়ে দেওয়াসহ নানাভাবে ‘মবের’ সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই বেড়েছে এসব মবকেন্দ্রিক সহিংসতা বা গণপিটুনি।

 

চুরির অভিযোগে উপড়ে নেওয়া হলো দুই চোখ, কাটা হলো আঙুল

০৩ মার্চ ২০২৫, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

ভোলার চরফ্যাশনে চুরির অভিযোগে শাহাজাহান মিন্টিজ (৪০) নামের এক ব্যক্তির হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে দেওয়ার পাশাপাশি হাত-পা ভেঙে দুই চোখ উপড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।

রবিবার (২ মার্চ) সকালে দক্ষিণ আইচা থানার নজরুল নগর ইউনিয়নের চর আরকলমী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মিন্টিজ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা।

 

সাতকানিয়ায় গণপিটুনি: নিহত দুজনকে নিজেদের কর্মী দাবি জামায়াতের

০৪ মার্চ ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাত সন্দেহে ‘গণপিটুনিতে’ নিহত দুজনকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে জামায়াতে ইসলামী।

সংগঠনটির অভিযোগ, তাদেরকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ হত্যা করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন- মো. নেজাম উদ্দিন ও আবু সালেক। তারা কাঞ্চনা ইউনিয়নের বাসিন্দা।

সোমবার রাতে কাঞ্চনার পাশের এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা চূড়ামনি গ্রামে ‘ডাকাত সন্দেহে’ দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করার কথা জানিয়েছিল পুলিশ।

সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম বলেছিলেন, নিহতরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছনখোলা চূড়ামনি গ্রামে গেলে মাইকে ডাকাত ঘোষণা দেওয়া হয়। এলাকাবাসী তাদের ঘিরে গণপিটুনি দিলে দুজনের মৃত্যু হয়।

নিহতদের একজনের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ছয়টি ব্যবহৃত গুলির খোসা পাওয়া গেছে বলেও জানান ওসি।

 

দেশে গণপিটুনির ঘটনা বাড়ছে, ৭ মাসে নিহত ১১৯ জন

০৫ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে দেশে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন। আর গত ১০ বছরে গণপিটুনিতে মারা গেছেন কমপক্ষে ৭৯২ জন। আহত হয়েছেন ৭৬৫ জন। আজ বুধবার মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এসব তথ্য জানিয়েছে।

এইচআরএসএস বলছে, সম্প্রতি গণপিটুনির মাধ্যমে মানুষ হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। ডাকাত, চোর, ছিনতাইকারী সন্দেহেও গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসবের বাইরে ধর্মীয় অবমাননা এবং ছেলেধরার অভিযোগেও গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। গণপিটুনির ঘটনায় থানায় মামলা হলেও সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের ঘটনা খুবই কম। এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা আইনের আওতায় না আসায় এ ধরনের ঘটনা থামছে না।

 

ভারতে এসপি র‍্যাংকের কর্মকর্তাদের গাড়ির বাজেট ৩০ থেকে ৩৫ লাখ বাংলাদেশে কোটি টাকা

৭ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

ভারতে পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন স্থানীয় কোম্পানি মাহিন্দ্রা নির্মিত গাড়ি। ভারতের বাজারে এসব গাড়ির দাম ২০ থেকে ২৫ লাখ রুপির (প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকার সমান) মধ্যে।

ভারতে পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন স্থানীয় কোম্পানি মাহিন্দ্রা নির্মিত গাড়ি। ভারতের বাজারে এসব গাড়ির দাম ২০ থেকে ২৫ লাখ রুপির (প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকার সমান) মধ্যে। টহল কার্যক্রমের জন্যও ভারতের পুলিশ ব্যবহার করে মাহিন্দ্রা ও টাটার বিভিন্ন মডেলের ডাবল কেবিল পিকআপ।

অন্যদিকে বাংলাদেশের পুলিশ ব্যবহার করে নিশান, টয়োটা, মিৎসুবিশিসহ বিভিন্ন কোম্পানির অভিজাত মডেলের স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল (এসইউভি)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের এসপি থেকে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন পাজেরো স্পোর্টস মডেলের কালো ও সাদা রঙের এসইউভি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এ মডেলের গাড়িগুলো কিনতে সরকারের খরচ হয়েছে একেকটির জন্য ৭৫ লাখ টাকা করে।

৬ মাসে পুলিশের ওপর ২২৫ হামলা, ‘মব’ নিয়ে উদ্বেগ

০৭ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

গত ছয় মাসে পুলিশের ওপর এ ধরনের ২২৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও হামলা করে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। বেশির ভাগ ঘটনা ঘটানো হয়েছে উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণে বা ‘মব’ তৈরি করে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার ২২৫টি ঘটনার মধ্যে ৭০টি বড় ধরনের আলোচনা তৈরি করে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ২৪টি, অক্টোবরে ৩৪, নভেম্বরে ৪৯, ডিসেম্বরে ৪৩, জানুয়ারিতে ৩৮ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩৭টি হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের এই পরিসংখ্যানের বাইরেও সড়কে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বিরূপ আচরণের বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মব তৈরি করে হামলাগুলো করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পেশাদার অপরাধী ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও মব তৈরিতে ভূমিকা রাখছেন। এই মব তৈরি করে শুধু পুলিশের ওপরেই হামলা হচ্ছে তা নয়, বরং কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষের ওপরও হামলা বা গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে দেশে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনায় ১১৯ জন নিহত ও ৭৪ জন আহত হয়েছেন। এ তথ্য মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির।

৫ বছরে ১২ হাজার নারী-কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা, ৬ হাজারের বেশি ধর্ষণ

মার্চ ৮, ২০২৫, ডেইলিস্টার বাংলা

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নের বিশ্বব্যাপী উদযাপন হলেও, বাংলাদেশে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক এবং কঠিন বাস্তবতাকেই তুলে ধরে।

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য অনুসারে, ২০২০-২০২৪ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে, বাংলাদেশে কমপক্ষে ১১ হাজার ৭৫৮ জন নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৬ হাজার ৩০৫ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, যাদের ধর্ষণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৭১ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে, যা মোট ঘটনার ৫৫ শতাংশেরও বেশি।

এর মধ্যে ১ হাজার ৮৯ জন নারী ও কন্যাশিশুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০৭ জনকে যৌন সহিংসতার পর হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১৮ জনই শিশু।

এছাড়া, অন্তত ৫০ জন ভয়াবহ সহিংসতার ট্রমা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।

বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীরা হচ্ছেন অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্স, পাচ্ছেন গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

০৮ মার্চ ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

রমজান ও ঈদ উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্স নিয়োগ দিয়েছে ডিএমপি।

আজ শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

রমজান ও ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর মার্কেট ও শপিংমলগুলো অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, আবাসিক এলাকা, বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মলে নিয়োজিত বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীরা অক্সিলিয়ারি পুলিশ ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন।

এই ফোর্সের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনবলে এসব লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

 

ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা

১০ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দেশের নাগরিক সমাজ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। অব্যাহতভাবে চলতে থাকা নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, নারীদের দলবদ্ধভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাতে–দিনে প্রতিবাদ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সড়কে। প্রতিবাদ চলার সময়েও নারী–শিশু ধর্ষণের পরপর কয়েকটি ঘটনা উদ্বেগ–উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে একটি আলোচিত শিশু ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির জামিনে বেরিয়ে আসার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ বছরের ফেব্রুয়ারির ২৮ দিনে ধর্ষণের অভিযোগে দিনে গড়ে ১২টি মামলা হয়েছে। আগের বছরের ফেব্রুয়ারির ২৯ দিনে এই সংখ্যা একই ছিল। গত বছর সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা হয়েছে। এই আইনে এ বছরের জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি। গত বছরের জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩।

জামালপুরে ধর্ষণের আসামির পক্ষে জামিন আবেদন, ৩ আইনজীবীকে পিটুনি

১০ মার্চ ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

জামালপুরে ধর্ষণ মামলার আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করায় তিন আইনজীবীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি আইনজীবীদের। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সংগঠনটি।

সোমবার দুপুরে জামালপুর জেলা জজ আদালতের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ফজলুল হক জানান।

 

‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’র পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিপেটা

১১ মার্চ ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে একটি গণপদযাত্রা ঠেকিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’র ব্যানারে পদযাত্রাটি মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শাহবাগ মোড় হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পৌঁছায়।

সেখান থেকে যমুনার দিকে যেতে ডানে মোড় নিতেই ব্যারিকেড দিয়ে তাদেরকে আটকে দেয় পুলিশ।

একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেডে ধাক্কাধাক্কি করলে পুলিশ কয়েকদফা লাঠিপেটা করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।

 বেসরকারি হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি, সন্ধ্যায় মৃত্যু

১৬ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় মোহাম্মদপুরে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার এজাজ আহমেদ (৩২) নামের এক আসামি মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ শনিবার সন্ধ্যার সময় তিনি মারা যান। এজাজ আহমেদের মরদেহ রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঈদের পর এজাজ আহমেদের বার এট ল করার জন্য লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল।

এজাজ আহমেদের বাবা শাহ আলমের অভিযোগ, গত ১০ মার্চ যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে তাঁর ছেলেকে হাজারীবাগ থেকে আটক করে নেওয়া হয়। এরপর তাঁকে মোহাম্মদপুর থানার একটি ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ সময় তাঁকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। তখন এজাজ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরদিন তিনি জামিনে ছাড়া পেলে তাঁকে ধানমন্ডির জাপান–ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পুলিশ গতকাল শুক্রবার ভোরে তাঁকে আবার ধরে নিয়ে যায়। আজ শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এজাজের মৃত্যু হয়।

‘ধর্ষণ’ শব্দের বদলে ‘নারী নির্যাতন’ ব্যবহারের অনুরোধ ডিএমপি কমিশনারের

১৫ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএম‌পি) ক‌মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এর বদলে তিনি ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নারী নিপীড়ন’ শব্দ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছেন।

আজ শনিবার ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে ডেইলি স্টার ভবনে গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘হেল্প’ অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

 

বরিশালে শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে পিটুনিতে তরুণের মৃত্যু, পরিবারের দাবি ‘পরিকল্পিত হত্যা’

১৫ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বরিশাল নগরে ৪ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মো. সুজন (২৫) নামের এক তরুণকে বেধড়ক পিটুনির পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় নগরের ধান গবেষণা রোডে স্থানীয় লোকজন তাঁকে আটক করে পিটুনি দেন। এরপর রাত আটটার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সুজনের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ মিথ্যা; এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ে সুজনকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

তনু হত্যার ৯ বছর: বিচার না পাওয়ার শঙ্কা মা–বাবার

২০ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান ওরফে তনু হত্যা মামলায় তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ এ হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ২০ মার্চ। দীর্ঘ এ সময়ে ছয়বার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু এসব কর্মকর্তা কারা, কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করে বের করতে পারেননি। এ কারণে ক্ষুব্ধ তনুর মা–বাবা, তাঁর পরিবারের সদস্য, সহপাঠীসহ কুমিল্লার সচেতন নাগরিক সমাজ।

তনুর পরিবারের সদস্যরা বলেন, ৯ বছরে চারটি তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন আর ছয়বার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া তদন্তে কোনো ধরনের অগ্রগতি দেখতে পাননি তাঁরা।

গতকাল বুধবার দুপুরে ক্ষোভের সঙ্গে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘তনুডা যহন আছিল, তহন আমরার জীবনডা আছিল চান্দের মতো। আর অহন আমরার জীবনডা পুরা আন্ধার (অন্ধকার)। আইজ ৯ বছর হইল আমার আদরের মাইয়াডা কবরে। খুনিরার চেহারা অহনো সামনে আইল না। বিচার কিতা পাইয়াম হেইডা বুইজ্জালাইসি। এই ৯ বছর খালি আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) পাল্টান ছাড়া আর কোনো কামই হইছে না। আমি সরকারের কাছে আইওদের বিচার আগে চাই। তাঁরার (তাঁদের) কারণে আমারা মাইয়ার খুনের বিচার হইতাছে না।’

তনুর ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রায় সাত মাস হলো তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ওই কর্মকর্তা একবারও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আমরাই তদন্ত কর্মকতা পরিবর্তনের তথ্য পেয়ে তাঁকে কল করেছি। প্রথমে কল রিসিভ করলেও বর্তমানে তিনি আমাদের কলও রিসিভ করেন না। আমার অসুস্থ মা ও বাবা তনুর জন্য কান্না করছে, কিন্তু আমরা আজ পর্যন্ত তদন্তের কোনো অগগ্রতি দেখছি না।’

 

বেড়েছে ছিনতাই–অপহরণ, কমেছে ৩ ধরনের অপরাধ

২২ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

দেশে সামগ্রিক অপরাধ ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতা, অপহরণের মতো ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। খুনও বেড়েছে কিছুটা। তবে ধর্ষণ, চুরি ও সিঁধেল চুরির মতো অপরাধ কমেছে। গত সাত মাসে উল্লেখিত সাত ধরনের অপরাধের ঘটনায় সারা দেশের মামলার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই সাত ধরনের ১৩ হাজার ৪৯৬টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালের একই সময়ে এই সাত ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ১২ হাজার ৭১৪টি। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অপরাধ ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশি ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। এরপর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি ব্যাপকভাবে সামনে আসতে থাকে। এর মধ্যে ছিনতাই বা ডাকাতি, দস্যুতা, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, চুরি ও সিঁধেল চুরি—এই সাত ধরনের অপরাধের ঘটনা নিয়ে বেশি উদ্বেগ দেখা গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাস পরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। এ অবস্থায় ডাকাতি ও দস্যুতা মামলার পাশাপাশি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনেও মামলা হচ্ছে। তবে ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা বাড়লেও দ্রুত বিচার আইনের এ মামলা কমেছে।

 

লম্বা ছুটিতেও নিরাপত্তা শঙ্কায় ঢাকা ছাড়ছেন না অনেকেই

২৯ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গতকাল ২৮ মার্চ থেকে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা নয়দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। স্বজনদের সঙ্গে ঈদের লম্বা ছুটি উপভোগ করতে এবার অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি মানুষ রাজধানী ছেড়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে প্রকৃত চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এবার নিরাপত্তার শঙ্কায় ঢাকা ছাড়ছেন না অনেকেই। যদিও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাষ্য হলো ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েক স্তরের বলয় তৈরি করা হচ্ছে।

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির এক হিসাব অনুযায়ী, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আনুমানিক পৌনে দুই কোটি মানুষ বৃহত্তর ঢাকা (রাজধানী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরসহ আশপাশের এলাকা) ছাড়বে। এ বিপুলসংখ্যক মানুষের ৬০ শতাংশ যাবে সড়কপথে। বাকি ৪০ শতাংশ যাবে নৌ ও রেলপথে। সে হিসাবে, এবার সড়কপথে ঈদযাত্রীর সংখ্যা হতে পারে ১ কোটি ৪ লাখের কাছাকাছি।

তবে বাস্তব চিত্র পুরোপুরি বিপরীত। রাজধানীর অধিকাংশ বাস টার্মিনালে যাত্রীচাপ এবার অন্যান্যবারের চেয়ে কম দেখা যাচ্ছে। বাসের ভেতরে বা ছাদে টিকিটের বাইরে যাত্রী পরিবহনের ঘটনাও এবার তেমন চোখে পড়ছে না। তবে বাসে যাত্রীর চাপ তেমন না থাকলেও কমলাপুরে রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

 

এক মাসের ব্যবধানে ধর্ষণ–গণপিটুনি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি: এমএসএফ

৩১ মার্চ ২০২৫, আজকের পত্রিকা

দেশে গণপিটুনি, ধর্ষণ ও অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।

সংগঠনটি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনির ঘটনা ছিল ১৮টি। মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯টিতে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৫৭টি। মার্চে এ ঘটনা ঘটে ১৩২টি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ধর্ষণ ও গণপিটুনি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

 

সাভারে দিনেদুপুরে চলন্ত বাসে ছিনতাই, যাত্রীদের মালামাল লুট

০৫ এপ্রিল ২০২৫, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

ঢাকার সাভারে দিনেদুপুরে যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ঘটনার পর স্থানীয়রা বাসটিকে আটক করে বাসের চালক ও হেলপারসহ সাভার মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিকেলের দিকে উপজেলার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ব্যাংক টাউন ব্রিজ এলাকায় ইতিহাস পরিবহনের একটি বাসে এ ঘটনা ঘটে।

যাত্রীরা জানান, শুক্রবার দুপুরের দিকে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসটি চন্দ্রা থেকে ছেড়ে আসে। বাসটি সাভারের ব্যাংক টাউন ব্রিজের কাছে এলে তিনজন ব্যক্তি বাসে ওঠেন। তারা ধারালো ছুরির মুখে যাত্রীদের জিম্মি করেন। এ সময় যাত্রীদের কাছে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ফুলবাড়িয়া এলাকায় বাস থেকে নেমে যান। ঘটনার পর স্থানীয়রা বাসটিকে আটক করে বাসের চালক ও হেলপারসহ সাভার মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

 

আওয়ামী লীগ সমর্থক ৮৪ আইনজীবী কারাগারে, ৯ জনের জামিন

০৬ এপ্রিল ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক ৮৪ জন আইনজীবীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই আদালত আরও নয় আইনজীবীর জামিন মঞ্জুর করেছেন। 

আজ রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

জামিন পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু সাইদ সাগর ছাড়া বাকি সবাই নারী। এদিন সকালে একই আদালতে আত্মসমর্পণের আগে জামিন চান আওয়ামী সমর্থক ৯৩ জন আইনজীবী।

 

‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ দেখা দিলে কী হবে, প্রশ্ন শুনানিতে

০৮ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার শুনানিতে আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে অংশ নেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার। এ মামলার শুনানির শুরুতেই ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন তোলেন, ডিফেন্সের লইয়ারকে (আসামিপক্ষের আইনজীবী) প্রসিকিউশনে (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে) নিয়ে নিচ্ছেন। যদি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট (স্বার্থের সংঘাত) দেখা দেয়, তখন কী হবে?

ট্রাইব্যুনালের এই প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, কোনো একটি মামলায় একজন আইনজীবী একটি পক্ষ নিয়েছেন। যদি সেই আইনজীবী পরে সেই মামলায় বিপরীত পক্ষ নেন, তখন সেটা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ হবে। কিন্তু একজন আইনজীবী একটি মামলায় আসামিপক্ষ, আরেকটি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের হলে তা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ হবে না।

 

আট পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে প্রথম প্রতিবেদন

২২ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আটজনকে অভিযুক্ত করে প্রসিকিউশনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন। ১৯৫ দিন তদন্ত শেষে রোববার ৯০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে এ পর্যন্ত ২২টি মামলা (বিবিধ মামলা) হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ৫৪ জন গ্রেপ্তার হলেও বাকি ৮৭ জন পলাতক। মামলার বিচার শুরু নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের দাবি সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পাশাপাশি জুলাই গণহত্যার বিচার করে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

 

বরিশালে র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা, গুলিতে তরুণ নিহত

২১ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় র‌্যাবের অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় গুলিতে সিয়াম মোল্লা (২২) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার বিকেলে উপজেলার জোড়া ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সিয়াম বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বাহেরঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. রিপন মোল্লার ছেলে। এ ঘটনায় সিয়ামের ফুফাতো ভাই রাকিব মোল্লা (২৭) নামে আরও এক যুবক আহত হয়েছেন। তাকে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাকিব মোল্লা একই এলাকার খালেক মোল্লার ছেলে। পুলিশের স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, নিহত ও আহত দুজনই এলাকার পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী।

 

জন্মনিবন্ধনের তথ্য বলছে, বরিশালে র‍্যাবের অভিযানের গুলিতে নিহত ও আহত দুজনের বয়স ১৭

২৩ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সাদা পোশাকে র‍্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় গুলিতে হতাহত দুজনই জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী শিশু-কিশোর।

যদিও নিহত কলেজছাত্র সিয়াম মোল্লার বয়স ২২ ও আহত এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিব মোল্লার বয়স ২১ বছর বলে উল্লেখ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও র‍্যাবের পক্ষ থেকে করা মামলায় তাদের ওই বয়স উল্লেখ করা হয়।

দুই শিক্ষার্থীর বয়স বাড়িয়ে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকাসক্ত ছিল না বলে দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে উজিরপুরের সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

 

অপরাধের সব সূচক বাড়ছে

২৬ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

দেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এমন উদ্বেগের কথা শোনা যায়। পুলিশের গত তিন মাসের অপরাধবিষয়ক পরিসংখ্যান তাদের উদ্বেগকে জোরালোভাবে সমর্থন করছে। এই পরিসংখ্যান অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাকেও তুলে ধরছে।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সংঘটিত অপরাধের ঘটনায় করা মামলার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়– খুন, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাইসহ ছয় ধরনের অপরাধ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে গেছে। যদিও গত বছরের এই সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান সময়ের বড় ধরনের পার্থক্য আছে। ফারাক আছে পুলিশের সামর্থ্যের জায়গায়ও।

সারাদেশের সব ধরনের অপরাধের তথ্য নথিভুক্ত করে পুলিশ সদরদপ্তর। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুধু হত্যার ঘটনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে মামলা হয়েছে ২৯৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০টি এবং মার্চে ৩১৬টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চে সারাদেশে হত্যা মামলা নথিভুক্ত হয়েছে যথাক্রমে ২৩১, ২৪০ ও ২৩৯টি। গত বছরের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চে হত্যা মামলা বেশি হয়েছে ৭৭টি। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বেশি হয়েছে যথাক্রমে ৬৩ ও ৬০টি।

যদিও পুলিশের ভাষ্য, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা মামলা করতে পারেননি, এমন বেশ কিছু ঘটনার মামলা নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ কারণে সংখ্যা বেড়েছে। পুলিশে দেওয়া হিসাবমতে, জানুয়ারিতে এ ধরনের পুরোনো ঘটনার মামলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৫৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ৪৮টি এবং মার্চে আগের ঘটনার ৭৭টি মামলা যুক্ত হয়েছে।

ধর্ম, সংস্কৃতি এবং সংখ্যালঘু-প্রান্তিক জনগোষ্ঠি

জয়পুরহাটে নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করতে খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর

২৮ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দেওয়া টিনের বেড়া ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই মাঠে আগামীকাল বুধবার নারীদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। এই খেলা বন্ধ করতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে এলাকার ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা’ জড়ো হয়ে এই ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় টি স্টার ক্লাবের উদ্যোগে তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রায় দেড় মাস আগে আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচে মাটিতে বসে খেলা দেখার জন্য ৩০ টাকা ও চেয়ার বসে খেলা দেখার জন্য ৭০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়। টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে পার্বতীপুর ও জয়পুরহাট ফুটবল দল। ফাইনাল ম্যাচের আগে জয়পুরহাট ও রংপুর নারী ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণা দেয় আয়োজকেরা। টি স্টার ক্লাবের সভাপতি উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান (ইমন)।

স্থানীয়রা জানান, টিনের বেড়া দিয়ে টিকিট কেটে খেলার আয়োজন নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। সম্প্রতি স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই খেলার মাঠের টিনের বেড়া খুলতে গিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা সুলতানা দর্শক ও আয়োজকদের রোষানলে পড়েছিলেন। এ ঘটনায় তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদের একজন গ্রাম পুলিশ আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

অপু বিশ্বাসকে কামরাঙ্গীরচরে রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনে বাধা

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের কথা ছিল চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের। সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর সেই রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে প্রচারণা চালায়। রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনে যাচ্ছেন অপু বিশ্বাস, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানকার স্থানীয় কিছু মানুষ ফেসবুকে লেখালেখি করেন। প্রতিবাদ জানান। বিষয়টি রেস্টুরেন্ট স্বত্বাধিকারীদের হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানা পর্যন্ত গড়ায়। এরপর চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে দিয়ে উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন রেস্টুরেন্ট–সংশ্লিষ্টরা। প্রথম আলোকে আজ বুধবার সন্ধ্যায় খবরটি নিশ্চিত করেন কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমীরুল ইসলাম।

বাধার মুখে টাঙ্গাইলের অনুষ্ঠানে যাননি পরীমনি

২৫ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

কয়েক দিন ধরে টাঙ্গাইলে একটি পণ্যের শোরুম উদ্বোধনের খবর ফেসবুকে প্রচার করছিলেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। জানিয়েছিলেন, তিনি এদিন নিজে উপস্থিত থেকে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের টিন মার্কেট শোরুমের উদ্বোধন করবেন। সবই ঠিকঠাক ছিল; কিন্তু জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের টাঙ্গাইল এবং কালিহাতী শাখার আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে যাননি পরীমনি। যদিও এর আগে এই প্রতিষ্ঠানের হয়ে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি শোরুমের উদ্বোধন করেছিলেন পরীমনি।

খেলাধুলা-অনুষ্ঠান করতে নারীদের বাধা, জড়িতরা নিয়ন্ত্রণহীন

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল

বাধা ও হুমকির মুখে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে নারীকেন্দ্রিক আয়োজন। এরই মধ্যে একাধিক অভিনেত্রী উপস্থিত হতে পারেননি তাদের পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানে। এমনকি দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে হাঙ্গামা বাধে স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’ ও আয়োজকদের মধ্যে। খেলা বন্ধ করতে হামলা-ভাঙচুর করা হয় মাঠে। নারীর প্রতি এমন বিদ্বেষপূর্ণ কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বয়ে যাচ্ছে প্রতিবাদের ঘূর্ণি।

এদিকে ঢাকায় কওমি উদ্যোক্তাদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক নারী সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহে অনুষ্ঠানস্থলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ‘কওমি উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২৫’ নামে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এদিকে, দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে হামলায় পণ্ড নারীদের ফুটবল ম্যাচ ফের আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। নারীদের খেলায় বাধা দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল সরকারপ্রধানের কার্যালয় জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার যে কোনো গোষ্ঠীর নাগরিকের প্রতি বৈষম্য বা নিপীড়নের চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলছে, নারীরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং পুরুষের মতোই সমানভাবে মানবিক ও নাগরিক অধিকার ভোগ করেন। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশি নাগরিকের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে ‘রাজনৈতিক ট্যাগ’ দিয়ে অস্বীকার করা হচ্ছে

৩০ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে ‘রাজনৈতিক ট্যাগ’ দিয়ে অস্বীকারের প্রবণতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। বিষয়টিকে দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছে তারা। ঐক্য পরিষদ বলেছে, এই অস্বীকার করা এবং প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না আনার কারণে সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তরা দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সংখ্যালঘুরা আরও হুমকির মুখে পড়েছে, পড়ছে।

‘বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের লিখিত বক্তব্য ও প্রশ্নোত্তরে এসব কথা উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গত ৪ মাস ১১ দিনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে ঐক্য পরিষদ। তাতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট থেকে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, আজকের পত্রিকা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধে মাঠে টিনের বেড়া ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতরা ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁরা আর ‘নারীদের খেলাধুলার বিষয়ে নাক গলাবেন না’ বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এদিকে এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), ইউএনও ও থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ডিসির কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আজ শুক্রবার মাঠে অবস্থানকালে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাচ্চা হাজি কওমি মাদ্রাসার নায়েবে মোহতামিমের পক্ষে কথা বলেন মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষক মোস্তাকিম হোসাইন। তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার তিলকপুরে নারী ফুটবল খেলা নিয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাদের মধ্য সামান্য ভুল–বোঝাবুঝির কারণে যা হয়েছে, তাতে আমরা দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে লজ্জিত। আমরা ভবিষ্যতে এমন কোনো কাজ করব না। যেখানে সরকার খেলাকে বৈধতা দিয়েছে, সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে আর কখনো যাব না। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আমরা। যা করেছি, এখান থেকে আমরা লজ্জিত। ভবিষ্যতে জয়পুরহাট জেলাতে আর কখনো এই ধরনের কাজ হবে না। আমরা নারীদের খেলার বিষয়ে আর নাক গলাব না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো ‘হিজাব র‍্যালি’

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো ‘হিজাব র‍্যালি’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে র‍্যালিটি শুরু হয়ে টিএসসি হয়ে রাসেল টাওয়ার ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস উপলক্ষে র‍্যালির আয়োজন করে ‘প্রোটেস্ট এগেইনস্ট হিজাবোফোবিয়া ইন ডিইউ’ নামের একটি সংগঠন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রে পোশাকের স্বাধীনতার কথা বলে থাকি, কিন্তু যখন হিজাবের কথা আসে, তখন স্বাধীনতার সম্মানটা কেউ করে না। তাঁরা বলেন, হিজাব আমাদের অধিকার। আমাদেরকে আমাদের কাজ দিয়ে বিবেচনা করুন, পোশাক দিয়ে নয়।’

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে ভেঙে ফেলা হয়েছে কৃষকের ভাস্কর্য

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

তিন রাস্তার মোড়ে একজন কৃষক হাতে কাস্তে ও কাঁধে লাঙল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কৃষাণ চত্বর’। গ্রামবাংলার কৃষি ও কৃষকের ঐতিহ্য তুলে ধরতেই সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে নির্মাণ করা হয়েছিল ভাস্কর্যটি। চলতি পথে মানুষ সেখানে বিশ্রাম নিতেন, সেই ভাস্কর্য দেখতেন। কিন্তু রাতের অন্ধকারে এই ভাস্কর্যও ভেঙে ফেলা হয়েছে।

২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এই ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হয়। সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের পাশে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন্দ পয়েন্টে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের সামনে ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। শুক্রবার রাতে একদল লোক কৃষাণ চত্বরের থাকা কৃষকের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই ভাস্কর্য ভাঙার একটি ভিডিও দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন লোক হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙছেন। এ সময় পেছন থেকে স্লোগান দিতে বলা হয়। এরপর ‘শেখ হাসিনার আস্তানা, বাংলাদেশে হবে না’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, বাংলাদেশে হবে না’, ‘শাহজালালের তলোয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেন সেখানে থাকা লোকজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন শিক্ষক বলেন, ‘এই ভাস্কর্য কী দোষ করল বা এটার সঙ্গে রাজনীতির কী সম্পর্ক, বুঝতে পারছি না। বিষয়টি আসলে খুবই দুঃখজনক।’

সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, যাদুকাটা নদ, শিমুলবাগান, শহীদ সিরাজ লেকসহ হাওর এলাকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যেতে ‘কৃষাণ চত্বর’-এর ভাস্কর্যটি চোখে পড়ত। এর সামনে কয়েক কিলোমিটার এগোলেই পলাশ বাজারে রয়েছে ‘হাওর বৃত্ত’। এরপর বিশ্বম্ভরপর কারেন্টের বাজার মোড়ে রয়েছে হাওরের বিশাল বোয়াল মাছের আদলে একটি ভাস্কর্য, এই স্থানের নাম দেওয়া হয় ‘বোয়াল চত্বর’। সব কটিই উপজেলা প্রশাসন নির্মাণ করেছে।

তসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা–হট্টগোল, একটি স্টল বন্ধ

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

তসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে অমর একুশে বইমেলার একটি স্টলে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকা ‘সব্যসাচী’ নামের স্টলটি ঘিরে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই স্টল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। স্টলে থাকা ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নেওয়া হয়েছে।

এই স্টলের বিরুদ্ধে নাস্তিকতা প্রচারের অভিযোগ তুলে সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল রোববার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপর আজ সন্ধ্যায় সেখানে এই ঘটনা ঘটল।

টাঙ্গাইলে হেফাজতের আপত্তিতে লালন স্মরণোৎসব বন্ধ

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

হেফাজতে ইসলামের আপত্তির মুখে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় বন্ধ হয়ে গেছে লালন স্মরণোৎসব।

আজ বুধবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে মধুপুর উপজেলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লালন স্মরণোৎসব-২০২৫ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

ফকির লালন সাঁইজির ১৩৪তম তিরোধান বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে মধুপুর লালন সংঘ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জুবায়ের হোসেনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল।

এ ব্যাপারে জানতে উৎসব আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সবুজ মিয়াকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তিনি ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

বাধার মুখে বাতিল উত্তরার বসন্ত উৎসব

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

ঢাকার উত্তরায় জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বসন্ত উৎসব’ হয়নি। আজ শুক্রবার পয়লা ফাল্গুনে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে এই উৎসব হওয়ার কথা ছিল। আয়োজকরা বলছেন, ওখানকার কিছু মানুষের বাধার মুখে তারা এই উৎসব করতে পারেননি।

আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত ‘বসন্ত উৎসব’-এর সমাপনী বক্তব্যে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী এ কথা জানান।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ হলের নাম পরিবর্তন

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ কয়েকটি হলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত শনিবার সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবন ও হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর মধ্যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে প্রথম উপাচার্য গোলাম রহমানের নামে করা করেছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন এই ভবনটি ছিল রেডিও সেন্টার।

বুধবার সকালে প্রথম উপাচার্য ‘প্রফেসর ড. গোলাম রহমান প্রশাসনিক ভবন’ এর নামফলক উন্মোচন করা হয়।

এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম বিজয় ২৪ হল, সত্যেন্দ্র নাথ বসু অ্যাকাডেমিক ভবনের নাম অ্যাকাডেমিক ভবন ১, জগদীশ চন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবনের নাম অ্যাকাডেমিক ভবন ২, কবি জীবনানন্দ দাস অ্যাকাডেমিক ভবনের নাম অ্যাকাডেমিক ভবন নাম ৩, জয় বাংলা ভবনের নাম অ্যাকাডেমিক ভবন ৪ করা হয়েছে।

শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ প্রশাসনিক ভবনের নাম প্রশাসনিক, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী চিকিৎসা কেন্দ্রের নাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার, সুলতানা কামাল জিমনেসিয়ামের নাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়াম, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের নাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গবেষণাগার করা হয়েছে।

সাতক্ষীরায় উদীচীর স্টলের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অগ্নিসংযোগ

কীভাবে জেলা প্রশাসক তাদের স্টল বরাদ্দ দেয় এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আরাফাত।

সাতক্ষীরায় উদীচীর স্টলের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অগ্নিসংযোগ

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সাতক্ষীরায় তারুণ্য মেলায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর স্টলের ব্যানার পুড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা।

এসময় উদীচীর জেলা কমিটির সভাপতির ওপর চড়াও হওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্য মেলায় উদীচীর ৪১ নম্বর স্টলে এসব ঘটনা ঘটে।

এর আগে বিকালে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মেলায় স্থান পাওয়ায় ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানিয়ে স্টলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

অবশেষে অনুমতি পেলো স্থগিত হওয়া লালন স্মরণোৎসব

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

হেফাজতে ইসলাম ও কওমি ওলামা পরিষদের নেতাকর্মীদের আপত্তির মুখে স্থগিত হওয়া টাঙ্গাইলের মধুপুরে লালন স্মরণোৎসবের তারিখ অবশেষে সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) মধুপুর অডিটরিয়ামে রাত সাড়ে ৮টায় হবে।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে লালন স্মরণোৎসব হওয়ার কথা ছিল। হেফাজতে ইসলাম ও কওমি ওলামা পরিষদের আপত্তির মুখে অনুষ্ঠানটি স্থগিত ঘোষণা করে আয়োজক কমিটি।

অনুষ্ঠানটির আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সবুজ মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বৈঠকে বসা হয়েছিল। সেখানে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি দলের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সমঝোতার মাধ্যমে আগামী রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠানটির আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে হেফাজতে ইসলাম প্রতিশ্রুতি দেয় অনুষ্ঠান আয়োজনে তারা কোনও বাধার সৃষ্টি করবে না। মধুপুর লালন সংঘ থেকে বিতর্কিত বক্তব্য, তথ্য ও সঙ্গীত উপস্থাপিত হবে না মর্মেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

হুমকির মুখে স্থগিত ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরও ‘একদল ব্যক্তির হুমকির মুখে’ স্থগিত হলো ‘ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব’।

নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে উৎসব স্থগিতে বাধ্য হওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদের আহ্বায়ক ঠান্ডু রায়হান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে, সকলের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভালোবাসায় আয়োজন করা প্রাণের নাট্যোৎসব আপাতত স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি।”

শনিবার বিকাল ৫টায় ঢাকার নাটক সরণির মহিলা সমিতি মিলনায়তনে এই উৎসব উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। উৎসবের তিনটি পর্যায়ে একটি করে নাটক মঞ্চস্থ করার কথা ছিল ৮৫টি নাট্যদলের।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় মহিলা সমিতিতে কিছু লোক এসে উৎসব নিয়ে আপত্তি তোলে। উৎসব হলে হামলা করারও হুমকি দেয় তারা।

টাঙ্গাইলে ফুলের দোকানে ‘তৌহিদি জনতা’র ভাঙচুরের পর আতঙ্কে ঘুড়ি উৎসব বন্ধ

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি করায় দোকান ভাঙচুরের পর পাশের উপজেলা গোপালপুরে বন্ধ হয়ে গেল ঘুড়ি উৎসব। আজ শনিবার বিকেলে গোপালপুর উপজেলার নলীন বাজারের পাশে এই উৎসব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল শুক্রবার উৎসববিরোধী একটি লিফলেট বিতরণ করা হয় ওই এলাকায়।

আয়োজকেরা জানান, ওই লিফলেট পাওয়ার পরও তাঁরা ঘুড়ি উৎসব বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ভূঞাপুরে ফুলের দোকানে হামলার ঘটনার পর উৎসব না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য তাঁরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

বইমেলায় ওই স্টল আর নেই, স্যানিটারি ন্যাপকিন দিচ্ছে বাংলা একাডেমি

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুটি স্টলে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি ও তা বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় উত্তপ্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গতকাল রোববার মেলায় দুটি স্টল একবার বন্ধ করে দিয়ে আবার পণ্য বিতরণ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কখনো মব আশঙ্কা, কখনো নীতিমালাপরিপন্থীভাবে এগুলো বিক্রি, আবার কখনো দুঃখপ্রকাশের ঘোষণা আসে।

সবশেষ রোববার রাতে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার বিক্রি–সংক্রান্ত একটা ইস্যু বহুজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও ফোনে বহুজন বাংলা একাডেমির কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পর্কে বিশদ জানানো জরুরি বলে মনে করছে বাংলা একাডেমি।

‘মবে’ প্রশাসন নমনীয়, ভুক্তভোগীরা ভয়ে

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

মবের (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) বিরুদ্ধে সরকারের ও বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি কোনো কাজে আসছে না। কখনও ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লি’, কখনও ‘তৌহিদি জনতা’ নামের মব একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছে। আর আক্রান্তরা ভয়ে কথা বলছে না। এই বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে না আসার পেছনে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা। সারাদেশে গত ছয় মাসে মবের হাতে নৈরাজ্যের ঘটনায় পুলিশের সক্রিয়তার অভাব দেখা গেছে।

সর্বশেষ গতকাল রোববার অমর একুশে বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির কারণে একটি স্টল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলা একাডেমি। হুমকির অভিযোগে শনিবার স্থগিত করা হয়েছে ১৪ দিনের ‘ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব’। একই দিন অনুমতি থাকলেও চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলায় বসন্তবরণ অনুষ্ঠান মাঝপথে বাতিল করে রেলওয়ে। এর আগে টাঙ্গাইলের মধুপুরে স্থগিত হয় লালন স্মরণোৎসব। গত শুক্রবার ভূঞাপুরে দোকান থেকে ছুড়ে ফেলা হয় ফুল। বন্ধ করা হয় ঘুড়ি উৎসব। গত ২৫ জানুয়ারি এলেঙ্গায় বাতিল হয় চিত্রনায়িকা পরীমণির কসমেটিক পণ্যের দোকান উদ্বোধন। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস একটি অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেননি। এর আগে ময়মনসিংহে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। গত ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৮০টি মাজার-দরবারে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

সব মিলিয়ে সাংস্কৃতিক ও নারীকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে তৈরি হয় শঙ্কা। তবে এসব অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে জড়ালেও কেউ পার পাচ্ছেন ‘ছোট ভুল’ বলে। আবার ব্যবস্থা নিচ্ছে না নমনীয় প্রশাসন। কোথাও কোথাও মবের ভয়ে মামলা করছেন না ভুক্তভোগীরা। আবার কোথাও কোথাও প্রশাসন বা পুলিশকে মবের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখা গেছে।

গ্রামে নিষিদ্ধ বাদ্যযন্ত্র, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ঢুকতে মানা

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ফলসী ইউনিয়নের একটি গ্রাম শড়াতলা। এক সপ্তাহ ধরে গ্রামের দেয়ালে দেয়ালে একটি নোটিশ দেখা যাচ্ছে। এতে লেখা, শড়াতলা গ্রামে সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র ও হকার নিষিদ্ধ। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও গ্রামটিতে ঢুকতে পারবেন না। এই নিয়ম অমান্য করলে গুনতে হবে জরিমানা। সমাজপতিদের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ জেলা-উপজেলার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। তারা বলছেন, এটা বেআইনি। তবে এটিকে ‘সামাজিক অবক্ষয় রোধে ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।

গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, শড়াতলা গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ফটোকপি সাঁটানো। স্ট্যাম্পের ওপর অংশে বড় করে লেখা, ‘সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র ও হকার নিষিদ্ধকরণের নোটিশ’। ভেতরে লেখা রয়েছে, ‘গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে জানানো যাচ্ছে, সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ করা হলো। যারা বাদ্যযন্ত্র বাজাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সাথে তাদেরকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হবে এবং তাদের পিতামাতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ হকার ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও গ্রামে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তৌহিদী জনতার বাধায় বাউল সম্রাট রশিদ বয়াতির বার্ষিক ওরস পণ্ড

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

মানিকগঞ্জ সিংগাইর উপজেলার আজিমনগরে বাউল সম্রাট আব্দুর রশিদ বয়াতির বাৎসরিক ওরস মাহফিল স্থানীয় তৌহিদী জনতার বাধার মুখে পণ্ড হয়ে গেছে। তবে রশিদ বয়াতির মাজারে কোনও হামলার কোন ঘটনা ঘটেনি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এদিকে ওরস মাহফিল কমিটির পক্ষ থেকে ওরসে বাধাদানকারীদের প্রতিহত করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে সিংগাইর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে সিংগাইর থানা পুলিশ প্রয়াত বাউল শিল্পী রশিদ বয়াতির পুত্রবধূসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়।

হেফাজতের ১৩ দফা মেনে নিতে হবে, নতুবা আরেকটা বিপ্লব: এনায়েতউল্লাহ আব্বাসী

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

২০১৩ সালে দেওয়া হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি মেনে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুফতি এনায়েতউল্লাহ আব্বাসী। তিনি বলেছেন, ‘সরকারকে বলছি, হেফাজতের ১৩ দফা মেনে নিতে হবে। নতুবা আরেকটা বিপ্লব হবে এবং সেটা হবে সশস্ত্র বিপ্লব।’

আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এক সমাবেশে এনায়েতউল্লাহ আব্বাসী এ কথা বলেন। এর আগে তিনি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটেও বক্তব্য দেন।

মাজারের মৌন আর্তনাদ

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আলিমুদ্দিন চিশতীর মাজার। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে মাজারটিতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল বিভিন্ন আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান, যেখানে শহরের ভেতর ও বাইরে থেকে অংশ নিতেন ভক্তরা। বাৎসরিক উৎসব ছাড়াও প্রতি বৃহস্পতি-শুক্রবার জমতো ভক্তদের মিলনমেলা। বৃহস্পতিবার রাতে সাপ্তাহিক মাহফিলে অংশ নিতেন বিশিষ্ট বাউল শিল্পীরা।

গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে ভুলতা বাজারের কাছে পোনাবো এলাকার মাজারটিতে সংঘবদ্ধভাবে হামলা করে একদল দুর্বৃত্ত। এরপর থেকে (২২ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত) মাজার কমপ্লেক্সটি তালাবদ্ধ এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ভেতরের মসজিদেও ভাঙচুরের ছাপ। প্রাক্তন খাদেম আব্দুল হকের সমাধির ওপর টিন-কাঠের নির্মিত কাঠামোটি বিধ্বস্ত, ভক্তনিবাসগুলো খালি পড়ে আছে। খাদেম (মাজার প্রধান), ইমাম ও ভক্তরা নিরুদ্দেশ।

গত ৮ অক্টোবর ও ১০ নভেম্বর এবং পরবর্তীতে এ বছরের ২২ জানুয়ারি তিন দফায় মাজারটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেও কথা বলার মতো তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের দ্বিতীয় পরিদর্শনের সময় নির্জন মাজারে প্রার্থনা করতে আসা বাহাউদ্দিন নকশবন্দি নামের এক তরুণ জানান, আবারও হামলার আশঙ্কায় খাদেম, ইমাম ও ভক্তরা মাজারে আসছেন না।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই দেশজুড়ে ভিন্ন এক ধরনের ‘মব’ হামলা শুরু হয়, যা এত বড় আকারে আগে কখনো দেখা যায়নি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মাজার, সুফি দরবার শরীফ, পাগল-ফকিরদের মাজার ও বাউল-ফকিরদের আখড়া-আস্তানায় একেরপর এক হামলা হতে থাকে। এর বেশিরভাগই হয়েছে প্রশাসনিক শূন্যতার প্রথম কয়েকদিনে এবং সেপ্টেম্বরজুড়ে শিথিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে। গত অক্টোবর ও ডিসেম্বরে কোনো হামলার খবর পাওয়া না গেলেও, গত নভেম্বর এবং এ বছরের জানুয়ারিতে বেশ কয়েকটি মাজারে হামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী ও মানিকগঞ্জে দুই মাজারে ওরসে হামলা হয়।

গত অক্টোবর-নভেম্বর এবং এ বছরের জানুয়ারিতে কমপক্ষে ২৫টি আক্রান্ত মাজার পরিদর্শন এবং ভক্ত, খাদেম ও পীরদের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার। আবারো হামলার আশঙ্কায় মাজারে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তাদের অনেকেই।

গত ৮ জানুয়ারি ময়মনসিংহে ২০০ বছরের পুরোনো একটি মাজারে বাৎসরিক ওরস ও কাওয়ালি গানের উৎসবে হামলা হয়।

এ ঘটনার তিনদিন পর সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাজার বা বাউল সংগীত, কাওয়ালি গানের আসরে কোথাও কোথাও হামলা হচ্ছে, সব জায়গায় না। একটি জায়গায় হলেও আমরা টলারেট করব না, আমাদের অবস্থানটা খুব পরিষ্কার, এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণু।’

পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৮ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং দেশে গত ৪ আগস্ট থেকে পরবর্তী সাড়ে পাঁচ মাসে ৪০টি মাজারে হামলার বিষয়ে নিশ্চিত করেছে। এসব ঘটনায় ১৫ মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিভিন্ন থানায় ২৯টি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্ত চলছে।

গত ২৩ জানুয়ারি বিশ্ব সুফি সংস্থা নামে এক সংগঠন জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানায় যে, আগস্ট থেকে অন্তত ৮০টি মাজারে হামলা হয়েছে।

দিনাজপুরে মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় একটি মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যার পর উপজেলার রানীগঞ্জ এলাকার বিরাহিমপুর গুচ্ছগ্রামের রহিম শাহ বাবা ভান্ডারী মাজারে ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

তবে রাত ৮টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ঘোড়াঘাট থানার ওসি নাজমুল হাসান।

মাজারটির খাদেম শহিদুল ইসলাম জিন্না জানিয়েছেন, শুক্রবার মাজারে ওরশের আয়োজন করা হয়েছিল। গত ২১ বছর ধরে তারা সেখানে নিয়মিত ওরশ করে আসছেন।

রোজায় দিনে হোটেল বন্ধ রাখতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জামায়াত আমিরের

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

রমজান মাসে দিনের বেলা হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধসহ সব ‘অশ্লীলতা’ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। একইসঙ্গে দেশবাসীর প্রতি মাহে রমজানের পবিত্রতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।

দিনে খাবারের দোকান বন্ধ রাখতে হুঁশিয়ারি, দুর্ভোগ

০৪ মার্চ ২০২৫, সমকাল

রমজানের ‘পবিত্রতা’ রক্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনে খাবারের দোকান খোলা রাখায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব জায়গায় দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা। ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বাজারে রমজানে দিনে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখলেই ৩ হাজার টাকা জরিমানার ঘোষণা দিয়ে নোটিশ দিয়েছে স্থানীয় বণিক সমিতি। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত  বাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ছেংগারচর পৌর সমবায় সমিতি। আদেশ অমান্যকারীদের জরিমানা করা হবে।

শাহ আজিজুরের নামে হলের নামকরণ, বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদ

০৫ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চারটি আবাসিক হল ও একটি একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শাহ আজিজুর রহমান হল’ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের আদেশ জারির পরপরই বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে শাহ আজিজুর রহমানের নামে হলের নামকরণ করায় সমালোচনা বেশি হচ্ছে। তাঁদের দাবি, শাহ আজিজুর রহমান একজন চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী।

পোশাক নিয়ে ঢাবি ছাত্রীকে হেনস্তা: জামিনে মুক্ত যুবককে ফুল দিয়ে বরণ

০৬ মার্চ ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সহকারী বুক বাইন্ডার মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে জামিন দিয়েছে আদালত।

ঢাকার মহানগর হাকিম মেহেরা মাহবুব বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে এক হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।

এরপর বিকেল ৩টায় ঢাকার আদালতের হাজতখানা থেকে মুক্ত হন অর্ণব। এসময় ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যনারে তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

পথে, মাঠে, ঘরে নারীর প্রতি বিদ্বেষ-সহিংসতা

০৮ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময়ের একটি ছবি সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়েছে। বোরকা আর টি–শার্ট-প্যান্ট পরা দুই নারী লাঠি হাতে পাশাপাশি দাঁড়ানো। আন্দোলনের সময়ে পোশাক নিয়ে প্রশ্ন না উঠলে এখন কেন? কেন এই যুগে এসে ‘ওড়না গায়ে থাকা না-থাকা নিয়ে’ একটি মেয়েকে হেনস্তার শিকার হতে হয়? কেন নিপীড়নকারীকে ‘বরণ’ করা হয় ফুলের মালা দিয়ে? এসব প্রশ্ন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এক তরুণীর সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়েছে এই সময়ে। তরুণীর প্রতি প্রশ্ন ছিল, ‘২৪ ঘণ্টার জন্য যদি পৃথিবী থেকে সমস্ত পুরুষ উধাও হয়ে যায়, আপনি কী করবেন?’—উত্তরে তরুণী বলেছিলেন, ‘রাতে একা হাঁটতাম। রাত তিনটা বাজে হেঁটে দেখব কেমন লাগে।’

এ দেশে একজন নারীর রাতে একা হাঁটতে চাওয়ার ইচ্ছা যে কত ‘বড় ইচ্ছা’, তা নারীমাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন। এখানে দিনের বেলাও নারীর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়। পথ, জনপরিসর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, খেলার মাঠ, ঘরে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন, নিপীড়ন ও হেনস্তার ঘটনাগুলোই নারীর ভয় বাড়িয়েছে।

অসহনশীল ও অনিরাপদ পরিবেশ নারী ও মেয়েদের স্বাভাবিক চলাচলকে ব্যাহত করছে।

গণ-অভ্যুত্থানের পরপরই আন্দোলনকারী নারীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে নিপীড়নমূলক অপপ্রচার থেকে শুরু করে সম্প্রতি জনপরিসরে নারী নিপীড়নের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা উন্নত করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো উদ্যোগ তো নেয়নি, বরং তাদের এই নীরবতা ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের প্রতি নতজানু সমর্থনকে প্রকাশ করছে।

অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা

১ মার্চ মোহাম্মদপুরে ‘পাবলিক প্লেসে’ (জনপরিসরে) ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে দুই নারীকে ‘মব’ (একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সৃষ্টি করে মেরে রক্তাক্ত করা হয়। ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে ‘ওড়না পরা’ নিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে মোস্তফা আসিফ অর্ণব নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ওই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সহকারী বাইন্ডার। মেয়েটি মামলা করায় গ্রেপ্তার করা হয় ওই ব্যক্তিকে। ঘটনা শুধু এখানেই শেষ নয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে এবং ওই মেয়ের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী তৎপর হয়ে ওঠে। পরদিন জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে ফুলের মালা দিয়ে, পাগড়ি পরিয়ে বরণ করে ওই গোষ্ঠী–সমর্থিত লোকজন।

এর আগে বাসে ডাকাতি করার সময় নারীদের যৌন নিপীড়ন, ঘরে-বাইরে নির্যাতন-ধর্ষণ এবং দেশের দুটি এলাকায় নারী ফুটবল খেলা আয়োজন বন্ধ করার ঘটনাও ঘটে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থেকে আন্দোলন করা নারীদের ওপর সাইবার আক্রমণ তো রয়েছেই। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত কয়েক মাসে এ ধরনের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে অধিকারকর্মীদের ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে গণপদযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল, মশালমিছিল, প্রতিবাদ-সমাবেশ অব্যাহত থাকার মধ্যেই নতুন নতুন ঘটনা ঘটে চলেছে।

‘ওরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও লালমাটিয়ায় হেনস্তার শিকার ভুক্তভোগী নারীদের সঙ্গে পরিচিতদের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ওই মেয়েরা জানিয়েছেন, তাঁরা মানসিকভাবে এতটা বিপর্যস্ত যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না। ওড়না নিয়ে ঘটনার ভুক্তভোগী মামলা করলেও তা এখন চালাতে চাইছেন না। আর ধূমপানকে কেন্দ্র করে দুই নারীকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়নি।

ওই দুটি ঘটনাতেই ভুক্তভোগীদের সঙ্গে থানায় উপস্থিত ছিলেন সীমা আক্তার। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য। ওড়না নিয়ে ঘটনায় সীমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী নারী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। নিরাপত্তার জন্য তিনি মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চাইছেন। তবে অভিযুক্ত মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার পর যেভাবে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হয়েছে তার ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সমাজে। নারীরা বাসা থেকে বের হতে ভয় পাবে। তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী নারীদের কোনো জায়গা দিতে চাইছে না। তারা নারীর বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রচণ্ড সক্রিয়। তারা গণ-অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।

ধূমপানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই নারীকে মব সৃষ্টি করে মারধরের ঘটনায় থানায় উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী। দুই নারীর একজন তাঁর ক্যাম্পাসের জুনিয়র। ঋদ্ধ ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখি বাইরে এক থেকে দেড় শ জনের মব। ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চাইছিল। আত্মরক্ষার জন্য একটি মেয়ে হামলাকারী ব্যক্তির দিকে কাপ ছুড়ে মেরেছিল। সেটাকেই ইস্যু করে ওই লোক পাল্টা মামলা করতে চাইছিল। পরে সমঝোতার মাধ্যমে দুই পক্ষের কেউ মামলা করেনি।

‘ভয়ে বাসায় চলে এসেছি’

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার মঙ্গলী বাগচীর কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। স্থানীয় ফুটবল খেলোয়াড়। দেড় বছর আগে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মেরে তার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ‘এত বড় মেয়ে হাফপ্যান্ট পরে কেন খেলে’ বলে বিদ্রূপ করা হয়েছিল। মারধরে আহত হয়েছিল আরও তিন কিশোরী খেলোয়াড়। এ নিয়ে স্থানীয় তিনজনের বিরুদ্ধে এখনো মামলা চলছে। তবে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, সেই মঙ্গলী এখন আবার নতুন করে চাপের মধ্যে। নারী ফুটবলের বিরুদ্ধে একটি চক্র নতুন করে সক্রিয় হওয়ায় আতঙ্কে মেস ছেড়ে তিনি বাসায় চলে গেছেন।

গত ২৯ জানুয়ারি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে টিনের বেড়া ভাঙচুরের পর নারীদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচটি বাতিল করা হয়। পরে ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রশাসন ঢাকা থেকে নারী দল এনে ওই মাঠে হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে খেলার আয়োজন করে। ৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় জয়পুরহাট নারী দল ও রাজশাহী নারী দলের খেলা বাতিল হয় বিক্ষোভের হুমকির মুখে।

নারী নির্যাতনের ঘটনা

নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ধারা কম-বেশি আগের মতোই রয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ: ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, জীবনসঙ্গী বা স্বামী কর্তৃক সহিংসতা (আইপিভি) বাংলাদেশে এতটাই প্রকট যে প্রায় ৭০ ভাগ নারী তাঁদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক এবং অর্থনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন। ৪১ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে গত ১২ মাসে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলার সংখ্যা কম। তবে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের বেশ কিছু ঘটনা জনমনে গভীর দাগ কেটেছে। বিশেষ করে বাসে ডাকাতির সময় নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতেরা ডাকাতির সময় নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৭১টি। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮৬৭টি মামলা হয়েছে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০২৩ সালে মামলা হয়েছিল ১৮ হাজার ৯৪১টি। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৪৪০টি মামলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও সরকারি পর্যায় থেকে আশাব্যঞ্জক সাড়া নেই। বিশেষ করে লালমাটিয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মন্তব্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি, তারা (দুই তরুণী) নাকি সিগারেট খাচ্ছিল, কিছু লোক সেখান দিয়ে নামাজ পড়তে যাচ্ছিল। তারা (লোকেরা) বাধা দেওয়ায় তাদের ওপর চা ছুড়ে মেরেছিল।’ তিনি বলেন, ‘পাবলিক প্লেসে ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অপরাধ। তাই সবাইকে অনুরোধ করব, কেউ যেন উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান না করে।’

দায়সারা এসব বক্তব্য না দিয়ে নারী নির্যাতনকারীদের কঠোরভাবে দমনে সরকারের দৃশ্যমান কিছু কাজ আশা করছে জনগণ। তা না হলে নির্যাতনের শিকার হয়ে মাগুরার যে শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, তার পরিবারও এ দেশকে নিজের বলে ভাবতে পারবে না।

দিনের বেলায় হোটেলে খাবার খাওয়ায় কান ধরে ওঠবস করালেন ব্যবসায়ী নেতারা

১২ মার্চ ২০২৫, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

লক্ষ্মীপুরে দিনের বেলায় হোটেলে খাবার খাওয়ায় কয়েকজনকে কান ধরে ওঠবস করিয়েছেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন “বণিক সমিতি”র নেতারা। একইসঙ্গে দিনের বেলায় হোটেলে খাবার খাওয়ালে ওই হোটেল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে পৌর শহরের চকবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বরগুনায় মাজারের ওরসে হামলা-অগ্নিসংযোগ, আহত ২০

১৭ মার্চ ২০২৫, ডেইলিস্টার বাংলা

বরগুনার আমতলীতে ইসমাইল শাহ মাজারে বার্ষিক ওরসে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে মাজারের ভিতরের সামিয়ানা ও দুটি বৈঠকখানা ভস্মীভূত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

হামলায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নাম এসেছে।

মাজারের খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, রোববার মধ্যরাতের পর মাজারে হামলার ঘটনাটি ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।

‘অনেকের আপত্তিতে’ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল

২৭ মার্চ ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) টিআইবি এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. মোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের কাজের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে।

২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চের দেয়ালে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে জেলা প্রশাসন। এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা প্রশাসন। দ্বিতীয়বারের মতো এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও  নিন্দা জানিয়েছে সংগঠন দুটি।

মসজিদ কমিটির বাধায় গাজীপুরে নাটক মঞ্চায়ন বন্ধ

৩ এপ্রিল ২০২৫, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় মসজিদ কমিটির বাধায় বন্ধ হয়ে গেছে স্থানীয় রানীগঞ্জ উদয়ন সংঘের একটি নাটকের মঞ্চায়ন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামের একটি মাঠে ‘আপন দুলাল’ নামে নাটক মঞ্চ নাটক পরিবেশনের কথা ছিল।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, গত ৫২ বছর ধরে ওই মাঠে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের আয়োজনে নাটক, গীতিনাট্য, পালা গানের মঞ্চায়ন হয়ে আসছে। ‘আপন দুলাল’ নাটকটি ছিল ৫২তম আসর।

হুমকিতে নাটকের প্রদর্শনী বাতিল, বিকেলে নাট্যকর্মীদের কর্মসূচি

১৩ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীর মহিলা সমিতি মিলনায়তনে টানা দুই দিন নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নাট্যকর্মীরা অপেক্ষায় ছিলেন মঞ্চে ওঠার। কিন্তু ‘তৌহিদি জনতার’ হুমকির চিঠি পেয়ে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী বাতিল করা হয়েছে। প্রদর্শনী বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহিলা সমিতি মিলনায়তন কর্তৃপক্ষ। নাটক বন্ধের প্রতিবাদে আজ রোববার মহিলা সমিতির সামনে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নাট্যকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

হুমকির ওই চিঠিতে বলা হয়, এ নাটকের প্রদর্শনীর সময় মহিলা সমিতিতে ভাঙচুর হলে এর দায় ‘তৌহিদি জনতা’ নেবে না। আর ওই চিঠি পেয়ে ‘নিরাপত্তার’ কথা বিবেচনায় প্রাঙ্গণেমোরকে দেওয়া মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ।

মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চ ভাঙচুর, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে না

১৩ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

চট্টগ্রামের ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে গিয়ে মঞ্চ এবং আশপাশের চেয়ার–টেবিল ভাঙচুর করে। এ সময় তারা শেখ হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেয়।

সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদের ব্যানারে এখানে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এবার অনুষ্ঠানটি ৪৭ বছরে পা রাখতে চলেছে। ভাঙচুরের পর ডিসি হিলে এবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিষদ। প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে পরিষদের অভিযোগ।

ভাঙচুরের আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে ২০টি সংগঠনের একটি তালিকা দেওয়া হয় আয়োজকদের। ফ্যাসিস্টের দোসর অভিযোগ এনে ওই সংগঠনগুলোকে মঞ্চে তুলতে নিষেধ করে দেয় প্রশাসন। এর আগে সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে সম্মিলিত বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন মঞ্চ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধন করে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনে প্রক্রিয়া মানা হয়নি: ইউনেসকো

১৮ এপ্রিল ২০২৫, আজকের পত্রিকা

অধরা সংস্কৃতির তালিকায় থাকা কোনো ঐতিহ্যের নাম পরিবর্তনে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া থাকলেও বাংলাদেশ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো।

বাংলা নববর্ষ বরণে পয়লা বৈশাখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে যে শোভাযাত্রা হয়, সেটির নাম এ বছর ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থেকে পাল্টে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে।

পাঠাগারে ‘নাস্তিকদের’ বই: ৪০০ বই ‘লুট’, পরে জমা ইউএনও কার্যালয়ে

২৬ এপ্রিল ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় ‘নাস্তিক’ লেখকদের বই রাখায় একটি পাঠাগার থেকে প্রায় ৪০০ পুস্তক ‘লুট’ করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খেলাফত মজলিসের এক নেতার বিরুদ্ধে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে উপজেলার বাঁশহাটি এলাকায় ‘অভয়ারণ্য পাঠাগারে’ এই লুটপাট চালানো হয়।

বই লুটপাটের ঘটনায় শুক্রবার প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে পাঠাগার কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে ধনবাড়ী থানার ওসি এস এম শহিদুল্লাহ বলেন, “হুজুররা পাঠাগারে থাকা হুমায়ুন আহম্মেদ, জাফর ইকবালের বই নিয়ে ইউএনও অফিসে রেখেছে। তাদের দাবি, ওই লেখকরা নাস্তিক। নাস্তিকদের বই রাখা হয়েছে সেখানে। কতগুলো বই নিয়েছে সেটা জানি না।”

রোববার ইউএনও কার্যালয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলেও জানান ওসি।

‘যৌক্তিক দ্বিমতকে স্বাগত’ স্লোগানে ২০১৫ সালে অভয়ারণ্য পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০২২ সালে একবার এই পাঠাগারটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এবার সেখান থেকে বই ‘লুটের’ ঘটনা ঘটল।

পাঠাগার কর্তৃপক্ষ অভিযোগে বলেছে, বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন ‘অভয়ারণ্য পাঠাগার’ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে একটি পোস্ট করেন।

সেখানে তিনি লেখেন, “ধনবাড়ীতে নাস্তিক্যবাদের কোন জায়গা হবে না। এটাই ফাইনাল বক্তব্য আমাদের। নাস্তিক বানানোর এক কারখানার সন্ধান পেয়েছি আমরা। অতিদ্রুত আপনাদের কারখানায় তালা লাগিয়ে ধনবাড়ী ছাড়ুন। অনেকদিন অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করে ভন্ডামি করেছেন আপনারা। আর এই সুযোগ পাচ্ছেন না। কথা ক্লিয়ার।”

ওইদিন রাত ৮টার দিকে খেলাফত মজলিসের যুব সংগঠনের ২০-২৫ নেতাকর্মী পাঠাগারে হামলা চালায়। এ সময় পাঠাগারটির সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ পাঠাগারে উপস্থিত ছিলেন। তারা পাঠাগারে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের চার শতাধিক বই রিকশায় করে নিয়ে যায়।

পাঠাগার থেকে বই নেওয়ার পর যুব খেলাফত মজলিসের নেতা ফেইসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন- “জয়বাংলা কর্মসূচী। বি:দ্র: যাদের বোঝা দরকার তারা বুঝতে পারছে।”

অভয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে ২০-২৫ জন হুজুর পাঠাগারে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। এ সময় তারা ভিতরে ঢুকেই বলে, ‘ওই, সব বই ব্যাগে তুল। এঁনে কোনো বই থাকব না। জাফর ইকবাল নাস্তিক, জাফর ইকবালের সব বই নে। এখান থেকে মানুষ নাস্তিকের বই পড়ে।’

“এ সময় মব সৃষ্টিকারী আরেকজন বলে, ‘তোদের এ পাঠাগার থাকবো না। তোদের এখানে জাফর ইকবালের বই থাকবো ক্যা, প্রথম আলোর বই থাকবো ক্যা। এটা উপর থেকে নির্দেশ আছে ভেঙে দেওয়ার, পুড়িয়ে দেওয়ার।’”

দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম

আড়ত দখলে বিএনপি ও ছাত্রদলের সংঘর্ষ, গুলি

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আড়ত দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং গোলাগুলি হয়েছে। এতে ছাত্রদলের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের সাওঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি জিপ ও ১০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসংলগ্ন সাওঘাট এলাকার ‘বিসমিল্লাহ আড়ত’ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী মজিবুর রহমানের সঙ্গে জাপান-বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ওরফে ডন সেলিমের দীর্ঘদিন বিরোধ চলছে। আওয়ামী লীগ আমলে মজিবুর সহায়তা পেতেন সাবেক এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত দুই মাস ধরে মজিবুর চলছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দীপুর পৃষ্ঠপোষকতায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আড়তের নিয়ন্ত্রণ নেন সেলিম প্রধান।

মঙ্গলবার দুপুরে দীপু ভূঁইয়ার অনুসারী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকশ নেতাকর্মী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আড়তের দখল নিতে যায়। এ সময় আড়তের পাশে সেলিম প্রধানের বাড়িতে তাঁর পক্ষে অবস্থান নেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমান ও তাঁর অনুসারীরা। দীপু ভূঁইয়ার লোকজন বাড়িতে হামলার এক পর্যায়ে সেলিম প্রধানের জিপ গাড়ি ও ছাত্রদল কর্মীদের ১০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এ সময় ছাত্রদল কর্মী রাফি আহমেদ স্বপন ও রাজু ভূঁইয়া গুলিবিদ্ধ হন।

পরে সংগঠিত হয়ে ছাত্রদল কর্মীরা পাল্টা হামলা চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলি হয়। এ সময় ডন সেলিমের  কয়েকজনকে পিস্তল হাতে গুলি করতে দেখা গেছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ রাফি ও স্বপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

সরকারি গাড়ি ব্যবহারে উপদেষ্টাদেরও অনিয়ম

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

মন্ত্রীদের সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহারের বদনাম বেশ পুরোনো। ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সরকারি গাড়ি নিয়ে মন্ত্রীদের ‘বাহাদুরি’ সে সময় কুড়িয়েছিল তিরস্কার। সবকিছু আমূল বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা এখন একই পথের পথিক। সরকারি গাড়ি ব্যবহারে তারাও নিয়ম-নীতির ধার ধারছেন না। বিধি অনুযায়ী, উপদেষ্টাদের একটি করে সরকারি গাড়ি পাওয়ার কথা।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো কোনো উপদেষ্টা নিজের ও দপ্তরের নামে তিন থেকে চারটি সরকারি গাড়ি দখলে রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা পরিবারের সদস্যরা সেই গাড়িতে সওয়ার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (পিএস), সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস), জনসংযোগ কর্মকর্তারাও (পিআরও) কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাড়ি হাঁকাচ্ছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, জনগণের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়মের চর্চা প্রতিষ্ঠা করবে– এটিই সবার প্রত্যাশা। উপদেষ্টারা যেভাবে গাড়ি দেদার ব্যবহার করছেন, তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সমকালের অনুসন্ধান বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ২২ উপদেষ্টার মধ্যে আটজন ছাড়া বাকি সবাই একাধিক সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। একমাত্র বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সরকারি কোনো গাড়িতেই চড়েন না। সরকারি কাজে তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরই সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর (পরিবহন পুল) থেকে একটি করে টয়োটা হাইব্রিড ক্যামরি গাড়ি বরাদ্দ পান সব উপদেষ্টা। দৈনিক ১৮ লিটার জ্বালানি তেলের সমপরিমাণ টাকাও পাচ্ছেন তারা।

তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েকজন উপদেষ্টার পরিবারের সদস্য ব্যবহার করছেন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রকল্পের দামি গাড়ি। এ জন্য বিভিন্ন দপ্তর থেকে জোগান দেওয়া হয়েছে একাধিক চালকও। এসব বাড়তি গাড়ির পেছনে চালক, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ গাড়িপ্রতি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রতি মাসে গচ্চা যাচ্ছে প্রায় লাখ টাকা।

১৯৭৩ সালের ‘দি মিনিস্টারস, মিনিস্টারস অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস)’ অ্যাক্টে স্পষ্ট বলা আছে, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা (বর্তমান উপদেষ্টারা মন্ত্রী মর্যাদার) সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য সরকারি একটি কার (গাড়ি) পাবেন। যার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ জোগাবে সরকার। পরে সংশোধিত আইনে বলা হয়, জরুরি দাপ্তরিক কাজের জন্য কিংবা ঢাকার বাইরে নির্ধারিত কোনো সফরে গেলে অতিরিক্ত একটি জিপগাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন।

এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দপ্তর কিংবা সংস্থাকে জিপগাড়ি সরবরাহ করতে হবে। অথচ উপদেষ্টারা একাধিক গাড়ি কবজায় নিয়ে ইচ্ছামতো জ্বালানিতে অপ্রয়োজনে বা ব্যক্তিগত কাজে ঘুরছেন। এ সুযোগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাড়িচালকরাও জ্বালানি কেনার পরিমাণ বেশি দেখিয়ে বাড়তি টাকা পকেটে পুরছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় এবং নিয়মের ব্যত্যয় যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা এই সরকারের জন্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার এমন কিছু নজির স্থাপন করবে, যেটি পরে যে কোনো রাজনৈতিক সরকারের জন্য দৃষ্টান্ত হবে। আর যদি সেটি না করে একই ধারা অব্যাহত রাখে, তাহলে সেটি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুঃখজনক হবে। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জনগণের স্বার্থে নিয়মের চর্চা প্রতিষ্ঠা করবে– এটাই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবার প্রত্যাশা। এ জন্য গাড়িসহ অন্য যে কোনো সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী যেটি প্রাপ্য, এর বাইরে যেন অপব্যবহার না হয়, সেটি নিশ্চিত করা এই সরকারের দায়িত্ব।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, অতীতের সংস্কৃতির মতো যদি এটা হয়ে থাকে, তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের প্রত্যাশা, তারা অতীত সংস্কৃতি বর্জন করে কৃচ্ছ্রসাধন করবেন। কেউ ভুল করলে সেটি থেকে সরে আসবেন।  

কার কত গাড়ি

সরকারি গাড়ি ব্যবহারের দিক থেকে এগিয়ে আছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। প্রভাব খাটিয়ে এই উপদেষ্টা দুটি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প থেকে নিয়েছেন একটি (ঢাকা মেট্রো-গ-১৪৫২৩৩), অন্যটি সরকারি পরিবহন পুল (ঢাকা মেটো-ভ-১১১৮৩৯) থেকে নেওয়া। পরিবহন পুলের গাড়িটি বেশির ভাগ সময় উপদেষ্টার পরিবারের কাজে ব্যবহার হয়। ওই গাড়ির চালক আলমগীর বলেন, উপদেষ্টা স্যারের চালক তিনজন। দু’জন স্যারের ডিউটি করি। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের চালক টিটু সবসময় স্যারের বাসায় ডিউটি করেন।

ফারুক-ই-আজমের দপ্তরের নামে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে আরও দুটি গাড়ি। সেগুলো তাঁর পিএস ও পিআরও ব্যবহার করছেন। এই মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী পিএস লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবদুল গাফফারের ব্যবহারের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে একটি পাজেরো স্পোর্ট জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৫৫৫৮) আনা হয়েছে। মন্ত্রীর তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এনায়েত হোসেনের জন্যও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে নেওয়া হয়েছে একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো গ-১৬৩২০৯)। পিএস ও পিআরওর চালকের বেতন থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ বহন করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে।

এ ব্যাপারে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জিপটাই বেশি ব্যবহার করি। জ্বালানি খরচও মন্ত্রণালয় দেয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেওয়া পরিবহন পুলের গাড়িটা বাসায় থাকে।  দুজন চালক আছে।’ নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের গাড়ি এভাবে ব্যবহার করা যায় কিনা– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ওইভাবে দেখিনি। মন্ত্রণালয়ের সচিব দিয়েছেন, তাই ব্যবহার করছি।’  মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গাড়ি পিএস-পিআরও ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে থেকে যেভাবে ব্যবহার হয়ে আসছিল, সেভাবেই ব্যবহার হচ্ছে।’

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ একাই ব্যবহার করছেন তিনটি গাড়ি। এর মধ্যে পাজেরো স্পোর্ট বড় জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ- ১৪৭৪০৪), প্রাডো (ঢাকা মেট্রো ঘ- ১৮৪৭৫৭) এবং পরিবহন পুল থেকে নেওয়া টয়োটা ক্যামরি। এসব গাড়ি উপদেষ্টা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মিলেমিশে ব্যবহার করছেন। অর্থ উপদেষ্টার পিএস ব্যবহার করেন জনতা ব্যাংকের একটি জিপ (ঢাকা মেট্রো গ-১৫৭২৮৭), সঙ্গে চালকও ফ্রি।

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৫৯১৫) ও পরিবহন পুলের ক্যামরি ব্যবহার করতেন। তাঁর পিএস ব্যবহার করতেন চালকসহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের গাড়ি। স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্ব পাওয়ার পর উপদেষ্টা সজীব (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৯১০০) ও তাঁর পিএস (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৫৩২৮), এপিএস (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৫৩২৬) ব্যবহার করছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের গাড়ি ও চালক। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এপিএসদের গাড়ি ব্যবহার বৈধও না, অবৈধও না। কারণ, পদবি অনুযায়ী গাড়ি ব্যবহার করা যায় না। তবে যখন উপদেষ্টার জরুরি কাজ করতে হয়, তখন এই গাড়ি ব্যবহার করি। আবার উপদেষ্টার সঙ্গে থাকলে তাঁর গাড়িতেই উঠি।’

উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ব্যবহার করছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮২২৮০) ও পরিবহন পুলের একটি টয়োটা ক্যামরি গাড়ি। তাঁর পিএস ব্যবহার করছেন আরেকটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-২১৯২০৯)। এ ছাড়া খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ব্যবহার করছেন খাদ্য অধিদপ্তরের প্রকল্পের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১২৯৯২১) ও পরিবহন পুলের ক্যামরি। আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমি একজন উপদেষ্টা, মানে মন্ত্রী। আমি খাদ্য অধিদপ্তরের একটা জিপ ব্যবহার করছি, আর পরিবহন পুলের গাড়িটা বাসায় থাকছে।’ এতে নিয়মের ব্যত্যয় হচ্ছে কিনা– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘকাল থেকে এটা হয়ে আসছে। সচিবরাও দুইটা করে গাড়ি ব্যবহার করছেন।’

উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ব্যবহার করছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫৯৪৯৬) এবং ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন চড়ছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো ঘ-২১০৪১১)। তাদের দু’জনের পুলের গাড়ি ব্যবহার করছেন পরিবারের সদস্যরা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ব্যবহার করছেন নম্বরহীন একটি জিপ গাড়ি। বাড়তি গাড়ির জন্য চালকের বেতন থেকে শুরু করে তেল খরচ সবই বহন করছেন উপদেষ্টা ও তাদের দপ্তরের কর্মকর্তারা।

এদিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম শুধু পুলের একটি  গাড়ি বরাদ্দ নিলেও চালক পেয়েছেন দু’জন। তারা হলেন হাবিবুর রহমান ও সুকান্ত কুমার উজ্জ্বল। চালক হাবিবুর বলেন, ‘আমরা দুইজনই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ডিউটি করি।’

চাঁদা দাবির অডিও ফাঁস, জামায়াত নেতা বহিষ্কার

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, কালের কন্ঠ

ফেনীতে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের কাছ থেকে চাঁদা দাবির অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জামায়াতে ইসলামীর নেতা জাকির হোসনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে জেলা জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আ.ন.ম. আব্দুর রহিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ফেনী আলিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আশ্বাসে জামায়াতের রুকন জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের শৃঙ্খলা ও নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় দলীয় গঠনতন্ত্রের ৬২ নম্বর ধারার ২ উপধারা অনুসারে জাকির হোসেন মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

খালাসের পরও ৭ বছর কারাগারের ফাঁসির সেলে বন্দী ছিলেন ইব্রাহিম

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

‘কনডেমড সেলে একরকম কষ্টে ছিলাম। বাইরে এসেও তো কষ্ট। মা-ভাই-বোনের মুখের দিকে তাকলে তো বোঝা যাচ্ছে সংসারের অবস্থা! এখন কিছু একটা করতি হবে। করতি তো হবে; আমার তো ক্যাপাসিটি নাই। কী করব, এইটাই তো বুঝে উঠতি পারতিছিনে। নানাবাড়ির খুব সামান্য একটু সম্পত্তি ছিল। সেই সম্পত্তি বেইচে মামলার পেছনে গেছে। কেউ কেউ এখন দেখতে আসতেছে। সবাই ডাকাডাকি করতেছে। এসবের মধ্যেও আমার মাথায় খালি চিন্তা কীভাবে কী হবে।’

কথাগুলো ইব্রাহিম আলী শেখের। ডাকনাম সাগর। ২১ বছর কারাভোগ শেষে গত শনিবার সন্ধ্যায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অবশ্য বছর সাতেক আগেই মুক্ত হতে পারতেন। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়েছিলেন ২০১৭ সালে। তবে খালাসের সেই আদেশ কারাগারে পৌঁছাতে লেগেছে এতটা বছর।

৪ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপারের কার্যালয় থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের কাছে ইব্রাহিম আলীর ছাড়পত্র পাঠানো হয়। সেখানে ইব্রাহিমের ঠিকানা লেখা আছে খুলনার বটিয়াঘাটার হাতিরাবাদ গ্রাম।

১৩ হাজার কোটি টাকা লুটেও বহাল তবিয়তে নাবিল গ্রুপ, নেপথ্যে জামায়াতের আশকারা?

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বাংলা আউটলুক

ফ্যাসিবাদের দোসর জসীমে ধূসর পররাষ্ট্রের কার্যক্রম, আওয়ামীপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় ও গুরুত্বপূর্ণ মিশন

ব্যাংক লুটেরা হিসেবে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের আশপাশে কেউ নেই। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রুপটির লুটপাটের ঘটনা ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন। তবে ইসলামী ব্যাংক লুটে এস আলমের সহযোগী ব্যবসায়ী গ্রুপও আছে দুয়েক/একটি। তেমন একটি গ্রুপ হলো রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ।

ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার, নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানসহ নানা ছলছাতুরির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রুপটি ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লুটে নিয়েছে। যদিও এস আলমের মতো নাবিল গ্রুপের এই লুটপাটের খবর কোনো এক অজানা কারণে সংবাদমাধ্যমের পাদপ্রদীপের আলোতে আসেনি।

অভিযোগ রয়েছে, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের আস্কারায় নিজেদের বহাল তবিয়েতে রেখেছে নাবিল গ্রুপ। তার প্রমাণও পাওয়া যায় নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ মো. আমিনুল ইসলাম স্বপনের রাজনৈতিক মঞ্চে উপস্থিতির মাধ্যমে। সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী অঞ্চলের কর্মী সম্মেলনের মঞ্চে নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান স্বপনকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লুট করেও নাবিল গ্রুপের এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর এই বাইরে থাকার নেপথ্যে কি জামায়াতের আশীর্বাদ?

ধীরগতির কাজে উদ্বেগ

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময় আছে আর ১০ দিন। কিন্তু এখনো অর্ধেক কাজ হয়নি। এতে কৃষকদের মধ্যে দুশ্চিতার পাশাপাশি ক্ষোভও বাড়ছে। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। হাওরে বাঁধ নির্মাণের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এবার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দাবি, গত সোমবার পর্যন্ত কাজের অগগ্রতি ৮২ শতাংশ। পাউবোর এই দাবির সঙ্গে দ্বিতম পোষণ করেছেন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, পাউবোর হিসাবের সঙ্গে মাঠের বাস্তবতার কোনো মিল নেই। মাঠের অবস্থা ভালো নয়।

গত সোমবার জেলার তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের কয়েকটি প্রকল্প ঘুরে বাঁধের কাজের ‘অবস্থা ভালো নয়’ কথার অনেকটাই মিল পাওয়া যায়। এসব প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়েছে নির্ধারিত সময়ে এক মাস বা তারও বেশি সময় পরে। কিছু প্রকল্পে মাটি ফেলে কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আবার কোনো কোনো প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে চার দিন আগে। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, হাওরে বাঁধ নির্মাণ পুরোনো বৃত্তেই আটকে আছে। শুরুতে দায়সারা আর শেষে তাড়াহুড়া করে কাজ চলছে।

নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামি খালাস

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মামলার অন্য আসামিরাও খালাস পেয়েছেন।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক রবিউল আলম আজ বুধবার এ রায় দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দম কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রেজাউল করিম।

খালাস পাওয়া অপর আসামিরা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহিদুল ইসলাম, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউসুফ হোসেন, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক ও নাইকো রিসোর্সেস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

চাঁদা না দেওয়ায় পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী নেতার বিরুদ্ধে

০১ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা শাখার সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান আলীর বিরুদ্ধে চাঁদা না দেওয়ায় এক তরুণকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছে। পরে ওই তরুণকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের এম এ রাজ্জাক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী তরুণের মা ফরিদা ইয়াসমিন এ অভিযোগ করেন। তবে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান আলী চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশও প্রভাবিত হয়ে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

বিতর্কের খাতা খুললেন উপদেষ্টা ফারুকী

০২ মার্চ ২০২৫, সমকাল

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কোনো রকম কাগজপত্র ছাড়াই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে টাকা চাইতেন ফারুকী। এ রকম অনৈতিক আবদার মেটাতে মোটেও রাজি ছিলেন না প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক। এ কারণেই সৈয়দ জামিল আহমেদ স্বেচ্ছায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়েন। এ পটভূমিতে উপদেষ্টা ফারুকী দাবি করেছেন, মহাপরিচালকের অভিযোগ সত্য নয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাসের মাথায় এই প্রথম কোনো উপদেষ্টার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠল।

গেল শুক্রবার সন্ধ্যায় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ জামিল আহমেদ আচকা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে উপস্থিত সবাইকে চমকে দেন। তিনি মঞ্চে থাকাকালে শিল্পকলার সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যে সরাসরি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘অযাচিত হস্তক্ষেপের’ অভিযোগও তোলেন। সৈয়দ জামিলের পদত্যাগের ঘটনায় গতকাল শনিবার নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, উপদেষ্টা কেন টাকা চাইলেন, তা তদন্ত করতে হবে।

চাঁদা দাবি করে বৈষম্যবিরোধীদের নেতা বললেন, ‘ইউএনও-ডিসিকে সামলাতে হচ্ছে’

০২ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

‘আপনি তো দেখছেন বিষয়টি কোথায় গেছে, ইউএনও-ডিসিকে সামলাতে হচ্ছে। যদি মনে হয় কিছু কমাবেন, তাহলে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। আমি চাই না আপনাদের কোনো সমস্যা হোক। জানেন তো, সংগঠন চালাতে হলে কী কী করতে হয়।’—এই কথোপথন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর।

ওই কথোপথনে এক ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের বিরুদ্ধে এই চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সংগঠন থেকে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন নাহিদ হাসান।

গতকাল শনিবার সকালে ওই ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপে নাহিদকে দেখা যায়। ভিডিওতে অপর পাশে থাকা ব্যক্তিকে দেখা যায়নি। তবে বালু উত্তোলন ও পার্ক নির্মাণের বিষয়ে ভিডিওতে কথা বলতে শোনা যায়।

ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান সাইফুলের বাসা থেকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জব্দ

০২ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক প্রধান অবসরপ্রাপ্ত লেফেটন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলমের  বাসা থেকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে এ টাকা উদ্ধার করা হয়।

আজ রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় দুদক কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন এই তথ্য জানান।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য কর্মকর্তা পদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘পৃষ্ঠপোষক’কে নিয়োগ

০৩ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে অনুসন্ধান কাম তথ্য কর্মকর্তা পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ রাজন।

সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘রাশেদুলকে কোনো কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’

সরকারি মাঠে খেলতে ৮ হাজার টাকা

০৬ মার্চ ২০২৫, আজকের পত্রিকা

কাজের ব্যস্ততায় একমাত্র ছেলেকে তেমন সময় দিতে পারেন না সরকারি চাকুরে সায়মা মুসলিমীন। তাই ছেলের বিনোদনের জন্য বেছে নিয়েছেন খেলার মাঠ। রাজধানীর গুলশান এলাকার বাসিন্দা সায়মা ‘গুলশান ইয়ুথ ক্লাব’-এর ব্যবস্থাপনায় থাকা সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মাঠে পাঠান সন্তানকে। কিন্তু এ জন্য ক্রমবর্ধমান ব্যয় তাঁর জন্য রীতিমতো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এককালের সর্বসাধারণের জন্য থাকা মাঠটিতে একপর্যায়ে ফি দিয়ে খেলার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। সম্প্রতি সেই ফি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাঠ ব্যবহারের ফির নামে অস্বাভাবিক হারে অর্থ আদায়ে সায়মাসহ এলাকার অনেক সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।

‘গুলশান ইয়ুথ ক্লাব’-এর ওয়েবসাইট ঘেঁটে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে ক্লাবের চুক্তির সময় মাঠ ব্যবহারের জন্য নামমাত্র একটি ফি নির্ধারিত হয়। এখন তা বাড়িয়ে অধিকাংশ মানুষের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বছরখানেক ধরে ক্রিকেট খেলার জন্য পরিশোধ করতে হয় দুপুরে ৩ হাজার টাকা আর বিকেলে ৪ হাজার টাকা। দেড় ঘণ্টা ফুটবল খেলার জন্য দুপুরে ৫ হাজার টাকা এবং বিকেলে ৮ হাজার টাকা লাগে। ৪৫ মিনিট টেনিস খেলার জন্য দুপুরে হলে ৮ হাজার টাকা আর বিকেলে হলে ১০ হাজার টাকা। সুইমিংপুল ব্যবহারের জন্য ভর্তি হতে লাগবে ৫ হাজার টাকা। প্রতি ঘণ্টা পুল ব্যবহারের জন্য গুনতে হবে ৭০০ টাকা।

নির্ধারিত ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বসুন্ধরা ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবে: গভর্নর

৭ মার্চ ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

নির্ধারিত পরিমাণে ডাউন পেমেন্ট পেলে বেসরকারি বসুন্ধরা গ্রুপকে তাদের খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে সম্মত হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

গভর্নর বলেছেন, বসুন্ধরা গ্রুপকে যথাযথ ডাউনপেমেন্ট জমাসহ সব ধরনের নিয়ম মেনে ঋণ পুনঃতফসিল করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নরের সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের বৈঠকে এমন আলোচানা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

চাঁদা দাবির ‘সত্যতা’ পাওয়ায় ছাত্রসংসদ নেতা অপুর পদ স্থগিত

০৮ মার্চ ২০২৫, সমকাল

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া অপুর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান সমকালকে বলেছেন, প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গোলাম কিবরিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের ছাত্র।

পুরনো আমলের মতোই নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

৮ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, সংস্থাটির পূর্বানুমোদন ছাড়া দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অ্যাডহক কিংবা দৈনিক মজুরিভিত্তিক জনবল নিয়োগের সুযোগ নেই। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হলেও ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড বা সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিতে হয়। এর পর ইউজিসির অনুমোদন সাপেক্ষে অন্তত দুটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়। তবে এসব নির্দেশনা অমান্য করেই সম্প্রতি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চাঁদাবাজিতে অসহায় খুলনার ব্যবসায়ীরা

০৯ মার্চ ২০২৫, সমকাল

তারাবির নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন খুলনা নগরীর বাগমারা এলাকার আলী আকবর। কিছুদূর যেতেই তাঁকে ঘিরে ধরে ১৫-২০ যুবক। নিজেদের ছাত্র পরিচয় দিয়ে নানাভাবে তাঁকে নাজেহাল করতে থাকে। যুবকরা তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে পরিবারের সদস্যদের গালাগাল, চিৎকার-চেঁচামেচি করে ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি করে।

গত মঙ্গলবারের এ ঘটনা প্রসঙ্গে আলী আকবরের ছেলে মাহফুজুর রহমান ববি বলেন, ‘পারিবারিকভাবে আমরা বিএনপি মতাদর্শের হলেও ২০১৮ সালের পর সম্পত্তি রক্ষায় বাবা আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এটাকে ইস্যু করে ছাত্র পরিচয়ে যুবকরা বাড়িতে মব তৈরি করে। আমার বাবা পালিয়ে রক্ষা পেয়েছেন।’ কোরিয়াপ্রবাসী ববি মোবাইল ফোনে আরও বলেন, দুই ছাত্র আমাকে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা চেয়েছে। আমি বলেছি, বেতন পেয়ে কিছু টাকা পাঠাব। তারা কোনোভাবেই শুনছে না। এ ঘটনায় সাজিদ ও রাব্বী নামে বৈষম্যবিরোধী দুই ছাত্রনেতা জড়িত।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর হাদিস পার্কের সামনে গফফার টাওয়ারে ঢুকে পড়ে একদল যুবক। ভবনটিতে নৌপরিবহন ব্যবসায় যুক্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান আছে। ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঢুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাসিয়ে যায় যুবকরা। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগরীর সহকারী মুখপাত্র হানযালা হোসেন সানি। গত ২ মার্চ ভবনটিতে আবার গিয়ে প্রতিষ্ঠানের খাতাপত্র নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করে আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখতে চান তারা।

এম এম শিপিংয়ের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন বলেন, ছাত্ররা অফিসে এসে শেখ পরিবারকে কারা টাকা দেয় তা জানতে চায়, হিসাবের খাতা, কাগজপত্র দেখতে চায়। আমরা বলেছি, এগুলো দেখাব কেন? পরে নেতাদের সঙ্গে দেখা করে দ্রুত বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে বলে চলে গেছে তারা।

শুধু এসব ঘটনাই নয়, খুলনায় ছাত্র পরিচয় দিয়ে বাড়ি, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রায়ই মব তৈরির ঘটনা ঘটছে। আওয়ামী লীগ নেতা, সমর্থক ও ব্যবসায়ীদের অফিসে যাচ্ছে ছাত্র পরিচয় দেওয়া যুবকরা। চাঁদা দেওয়ার পরই কেবল মুক্তি মিলছে। যারা চাঁদা দিচ্ছে না, তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এতে অন্যরাও ভয় পেয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি নগরীর শিববাড়ী মোড়ে মানববন্ধন করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নগর সদস্য সচিব জহুরুল তানভীরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে বহিষ্কার দাবি করেন কমিটির কয়েকজন নেতাকর্মী। অভিযোগ অস্বীকার করে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির পাল্টা অভিযোগ তোলেন তানভীর।

এদিকে নগরীতে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটলেও পুলিশ, রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনগুলো নীরব। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রতিবাদ না হওয়ায় দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, একটি সফল গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ায় ছাত্রদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেই শ্রদ্ধা সম্মানের জায়গা ব্যবহার করে তারা যা করছে, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মব কালচার বন্ধে সব শ্রেণির নাগরিকদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

বসুন্ধরাকে ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা না দেওয়ার দাবি

১৪ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বসুন্ধরা গ্রুপকে ঋণ পুনঃ তফসিলের সুবিধা না দেওয়ায় দাবিতে রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সামনে ঝটিকা প্রতিবাদ করেছে নারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘জাস্টিস ফর মুনিয়া’। এই কর্মসূচি থেকে মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার পুনঃ তদন্তের দাবিও জানানো হয়।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একাধিক নারী বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর কলেজশিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি। তা সত্ত্বেও পুলিশ ও পিবিআই তাঁকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেয়। এ–সংক্রান্ত মামলায় আনভীরের পিতা আহমেদ আকবর সোবহানও আসামি। তাঁকেও গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই ‘জাস্টিস ফর মুনিয়া’ নামে নারীদের প্ল্যাটফর্মটি মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার পুনঃ তদন্ত দাবি করছে।

পারফিউম ব্যবসার আড়ালে দেশের সবচেয়ে বড় হুন্ডি তৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে এনবিআর

২০ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশে পারফিউম ব্যবসার আড়ালে সবচেয়ে বড় হুন্ডি তৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) অনুসন্ধান চালিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পেয়েছে। হুন্ডি কারবারে অভিযুক্ত কোম্পানিটির নাম আল হারামাইন পারফিউমস। কোম্পানির মালিক সিলেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান নাসির। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এ ব্যবসায়ী এখন গোল্ডেন ভিসার আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বসবাস করছেন।

তদন্ত কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আল হারামাইন পারফিউমসের শোরুমগুলো মূলত হুন্ডির টাকা লেনদেনে ব্যবহৃত হয়। ঢাকার বসুন্ধরা সিটির শোরুমে কেউ টাকা জমা দিলে দুবাইয়ের সিটি সেন্টারে সে টাকা দিরহাম আকারে পরিশোধ করা হয়। ছোট কোনো অংকের অর্থ এসব শোরুমে লেনদেন হয় না। বরং বড় ব্যবসায়ী বা টাকা পাচারকারীদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকার অর্থ গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে শোরুমগুলোয় কেবল বিশেষ একটি খাতায় হিসাব রাখা হয়।.. .. ‘

৯৯ কিলোমিটারে চাঁদার ১২ ঘাট

২২ মার্চ ২০২৫, সমকাল

আওয়ামী লীগ আমলে প্রতি গাড়ির মাসিক টোকেন মূল্য ছিল ৭০০ টাকা। এখন তা বেড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে। ভাড়া নিয়ে এলে আগে স্ট্যান্ডপ্রতি নেওয়া হতো ১০ টাকা; এখন নিচ্ছে ২০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন চাঁদা দিতে হচ্ছে ১২ পয়েন্টে। এ ছাড়া চালক সমিতি ও মালিক সমিতির নামে নেওয়া হচ্ছে আরও ১০ টাকা করে। এর বাইরে চাঁদা দিতে হয় হাইওয়ে ও কমিউনিটি পুলিশকেও; বকশিশ তো আছেই। সারাদিন পরিশ্রম করলেও পথে পথে চাঁদা দিয়ে দিন শেষে ঘরে নিতে পারি না আয়ের অর্ধেক। অটোরিকশাচালক খায়রুল আমিন এভাবেই তাঁর অসহায়ত্বের কথা বলেন সমকালের কাছে।

তিনি গত ১০ বছর ধরে গাড়ি চালান চট্টগ্রামের অক্সিজেন-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়ক ও চান্দগাঁও-কাপ্তাই সড়কে। নগরীর সঙ্গে উত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকাকে সংযুক্ত করা এই দুটি সড়কের মোট দৈর্ঘ্য মাত্র ৯৯ কিলোমিটার। কিন্তু দুটি সড়কেই অন্তত ১২টি পয়েন্টে যানবাহন থেকে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে খবর পাওয়া গেছে।

হিমাগার মালিকদের স্লিপ কারসাজি প্রতারিত লাখো আলু চাষি

২২ মার্চ, ২০২৫, কালের কন্ঠ

সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় কৃষকের আলু রাখছেন না হিমাগার মালিকরা। কারসাজির মাধ্যমে নামে-বেনামে, আত্মীয়-স্বজন ও পরিজনদের নামে আগে থেকেই স্লিপ কেটে রেখেছেন মালিকরা। ফলে কৃষক আলু রাখতে গেলে তাঁদের বলা হচ্ছে হিমাগারে জায়গা নেই। হিমাগারে জায়গা না থাকায় গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ছাড়া কোনো ক্রেতা আলু কিনতেও পারছেন না।

এভাবেই সারা দেশে হিমাগার মালিকদের স্লিপ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন লাখো আলু চাষি। অবশ্য দিশাহারা কৃষকদের পাশে কৌশলে দাঁড়াচ্ছেন হিমাগারের কর্মকর্তারা। তাঁরা গোপনে বলে দিচ্ছেন, ‘অমুকের স্লিপ নেওয়া আছে, সেখানে আলু বিক্রি করতে পারবেন।’ আসলে অমুক ব্যক্তিটাই হলো হিমাগার মালিকের এজেন্ট।

বাধ্য হয়ে কৃষক তার কাছে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাজারে কৃষকের আলু কেনার কোনো ক্রেতা না মেলার কারণ এটাই।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র: আমদানি করা কয়লায় বিপুল পরিমাণ মাটি, ফিরিয়ে দেয়া হলো চালান

২৩ মার্চ ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার একটি চালানে বিপুল পরিমাণে মাটি পাওয়ার পর ৬৩ হাজার টন কয়লার চালানটি ফিরিয়ে দিয়েছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (সিপিজিসিএল)।

চালান প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্তের পর কয়লাবাহী জাহাজতিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সিপিজিসিএল সূত্রে জানা গেছে, টেন্ডারের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা সংগ্রহের দায়িত্ব পাওয়া একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এই চালান পাঠায়। কিন্তু চালানটির কয়লায় বিপুল পরিমাণে মাটি ছিল। ফলে এই কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহারোপযোগী নয়।

পরিশোধন ও উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক অলস পড়ে থাকছে

২৩ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈনিক সয়াবিন তেল উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টন। এর অর্ধেকই এখন অব্যবহৃত থাকছে। এজন্য গ্যাস সংকট ও এলসি জটিলতাকে দায়ী করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

দেশে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈনিক সয়াবিন তেল উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টন। এর অর্ধেকই এখন অব্যবহৃত থাকছে। এজন্য গ্যাস সংকট ও এলসি জটিলতাকে দায়ী করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। ভোজ্যতেলের বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

বর্তমানে সয়াবিন তেলসহ দেশে সার্বিক ভোজ্যতেলের বাজারে আধিপত্য করছে দেশের চারটি বৃহৎ ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বীজ ও অপরিশোধিত তেল আমদানির পর তা থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন ও পরিশোধন করে বিপণন করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠান হলো সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ। বাজার বিশ্লেষক ও এসব প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানিনির্ভর ভোজ্যতেলের বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য এলসি-সংক্রান্ত জটিলতার দ্রুত নিরসন জরুরি। একই সঙ্গে এ খাতে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করাও প্রয়োজন। আবার কোনো ধরনের কারসাজির মাধ্যমে ভোজ্যতেলের বাজারে যাতে কোনো অস্থিতিশীলতা তৈরি না হয়, সে বিষয়েও সরকারের কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।

জামালপুরে ৩৫ হাজার গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও ২৩ সমিতি, থানার সামনে গ্রাহকদের অবস্থান

০৬ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে জমা রাখা আমানতের টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকেরা। আজ রোববার দুপুরে তাঁরা লাঠি ও ঝাড়ুমিছিল করে থানা চত্বরে অবস্থান এবং জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। ‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’—ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

বেলা ১১টার দিকে শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কয়েক হাজার গ্রাহক জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে থানা গেটের সামনে এসে অবস্থান নেয়। পরে তাঁরা থানার সামনের সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে।

একই দাবিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও, ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি ও ২৩ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে কর্মসূচি পালন করেন।

আজকের কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসার পথে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ফাতেমা বেগম (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ভাংবাড়ী এলাকার হাসেম মিয়ার স্ত্রী। দুটি সমিতিতে তিনি ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। বাড়ি থেকে কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় মিলন বাজার এলাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে গৃহকর্মী, ভ্যানচালক, প্রবাসী, কৃষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছেন। তাঁরা জানান, লাভের আশায় তাঁরা ২৩টি সমবায় সমিতিতে কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা রাখতেন। এখন মূল টাকা ফেরত পাওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা প্রায় দুই বছর ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন।

ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে অংশীদার খুঁজছেন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা

৭ এপ্রিল ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশের শিল্প উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলোর একটি নারায়ণগঞ্জ। গত দেড় দশকে রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাটির রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে ওসমান পরিবারের হাতে। এ পরিবারের প্রভাবশালী দুই সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের রয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। গার্মেন্টস, শিপিং, পরিবহন, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে তাদের। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ওসমান পরিবারের প্রভাবশালীরা। এখন বিদেশে বসে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অংশীদার খুঁজছেন তারা।

আগে থেকেই শামীম ওসমানসহ এ পরিবারের সদস্যদের বেনামি অংশীদারত্ব ছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যবসায়ী গ্রুপে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিল্প গ্রুপটিতে ওসমান পরিবারের অংশীদারত্ব আরো বেড়েছে। আর নতুন করে ওসমান পরিবারের ব্যবসায়িক অংশীদার হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সদস্য। আবাসন ব্যবসায়ী ওই বিএনপি নেতার গুলশানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন শামীম ওসমান। এখন ওসমান পরিবারের বাড়ি, গাড়িসহ সম্পত্তির দেখভাল করছেন তিনি।

চাঁদা না পেয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ শিবিরকর্মীদের বিরুদ্ধে

০৭ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীতে ঈদের আগে চাঁদা (এয়ানত) না পেয়ে ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে সড়কে ফেলে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে মাধবদী পৌরসভার ইসলামী ব্যাংকের শাখাসংলগ্ন একটি গলিতে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তা ও তাঁর সহকর্মীদের দাবি, হামলাকারীরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্থানীয় কর্মী এবং স্থানীয় এক জামায়াত নেতার অনুসারী।

আহত ব্যাংক কর্মকর্তার নাম মো. সেলিম মিয়া (৪৩)। ১৬ বছর ধরে ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করছেন। মাধবদী পৌর শাখায় বিনিয়োগ বিভাগের (লোন সেকশন) প্রধান। শাখাটিতে তিনি পাঁচ মাস ধরে কর্মরত রয়েছেন। মারধরের শিকার হওয়ার পর সেলিম মিয়া বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

উদ্ধার করা জমি সমন্বয়কের দখলে

০৯ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে ২২টি স্টল নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছিলেন জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সাবেক মহাপরিচালক বর্তমানে কারান্তরীণ বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তাদের পরিবারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি এতিমখানার নামে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গায় স্টলগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সেগুলো অপসারণ করে সওজ। এখন সেখানে দখল করে স্টল নির্মাণ করছেন কয়েকজন ছাত্র। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

নগরীর রূপাতলী এলাকায় ওই ‌স্থানটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের উত্তর পাশে অনেক জমি‌ সওজের। এর পেছনে সমাজসেবা অধিদপ্তর ভবন। আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাবশালী সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ঝালকাঠির শেখেরহাটে তাঁর গ্রামের বাড়ির মাদ্রাসার নামে ওই জমি ইজারা নিয়েছিলেন। ২২টি স্টল করে প্রকারভেদে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি। গত ২২ নভেম্বর সওজ ওই ২২টি স্টলসহ টার্মিনাল রূপাতলী এলাকায় ৫ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে।

সাকিব–বুবলী–পিয়াসহ তারকাদের অনলাইন জুয়ার অবাধ প্রচারণা

০৮ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

দেশের অন্যতম শোবিজ তারকা ও মডেল পিয়া জান্নাতুল। তিনি আইন পেশায়ও আছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বেশ জনপ্রিয়। ফেসবুকে তাঁর অনুসারীসংখ্যা ১৭ লাখ। ইনস্টাগ্রামে ১১ লাখ।

পিয়া নিজের মডেলিং–জীবনের পাশাপাশি নানা সময় সামাজিক ও আইনি পরামর্শমূলক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন। তবে তাঁকে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চালাতেও দেখা গেছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ১২টি অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চালিয়েছেন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে।

শুধু পিয়া নন, চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী, অভিনয়শিল্পী সামিরা খান মাহিও অনলাইন জুয়ার প্রচারণা চালিয়েছেন। দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও আছেন এই তালিকায়।

টিএমএসএস-এর অবৈধ স্থাপনা ভেঙে নদীর জমি উদ্ধার করল বগুড়া জেলা প্রশাসন

১১ এপ্রিল ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

স্থানীয় এনজিও ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) অবৈধ দখলে থাকার অভিযোগ ওঠা করতোয়া নদীর তীরবর্তী প্রায় ১৭ একর জমি উদ্ধারের জন্য ধারাবাহিক উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে বগুড়া জেলা প্রশাসন।

প্রশাসন বলছে, টিএমএসএস অবৈধভাবে করতোয়া নদীর গতিপথ পরবির্তন, সরকারি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ এবং পরিবেশ দূষণ করেছে।

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন টিএমএসএসের কাছ থেকে অবৈধভাবে দখলে থাকা প্রায় ১০ একর জমি উদ্ধার হয়েছে।

শেখ পরিবারসহ ১১ শিল্পগোষ্ঠীর বিদেশে বিপুল সম্পদের খোঁজ

১৩ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর ব্যাংকঋণে অনিয়ম, কর ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে সরকার গঠিত ১১টি তদন্ত দল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও পাচার করা অর্থের খোঁজ মিলেছে এস আলম গ্রুপের। এসব ঘটনায় ইতিমধ্যে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির কাজ চলছে। অর্থ উদ্ধারে কোন ধরনের বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নির্ধারণের কাজ চলছে। এতে সহায়তা দিচ্ছেন বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত পাচার করা অর্থ উদ্ধার বিশেষজ্ঞরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এই বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এর পর থেকে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বয়ে যৌথ তদন্ত দল। সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশেষ নিরাপত্তাবিশিষ্ট কক্ষে চলছে তদন্তের নথিপত্র প্রস্তুতের কাজ।

শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠী নিয়ে তদন্ত চলছে, সেগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ। এসব গ্রুপের পাশাপাশি গ্রুপের প্রধান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।

পাচার করা অর্থ আপস রফায় ফেরত আনার বিধান হচ্ছে

১৬ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

বিদ্যমান আইনে মানি লন্ডারিং একটি অ-আপসযোগ্য অপরাধ। আপসের ভিত্তিতে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার কোনো বিধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে নেই। এখন আপসরফায় অর্থ ফেরত আনার বিধান হচ্ছে। এ ছাড়া আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত এবং রাষ্ট্রের অনুকূলে সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার যে বিধান রয়েছে, সেখানেও শিথিলতা আনা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত বিশেষ আইনের খসড়া তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের সভায় এসব অগ্রগতি জানানো হয়। সভাসূত্রে যা জানা গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার এবং ১০ শিল্প গ্রুপের অনিয়ম-জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত বিষয়ে আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা  রয়েছে। ওই বৈঠকে গতকালের সভার বিষয়বস্তু জানানো হবে। অর্থ উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার নীতিনির্ধারকদের বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

সমন্বয়ক পরিচয়ে অপহরণ করে ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি, গ্রেপ্তার ২

১৮ এপ্রিল ২০২৫, আজকের পত্রিকা

রাজধানীর উত্তরায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে ভাঙচুর-লুট ও অপহরণের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বায়োটেক করপোরেশন নামের একটি মেডিকেটেড কসমেটিকস প্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের পর ম্যানেজারকে অপহরণ করে ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে ম্যানেজার মো. রিয়াজুল ইসলামকে উদ্ধারসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যিক্তরা হলেন—বরিশালের বিমানবন্দর উপজেলার রামপটি গ্রামের কাজী সালামের ছেলে কাজী জোবায়ের এবং শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার চর নারায়ণপুর গ্রামের নান্নু মিয়া ছৈয়ালের ছেলে আবির হাসান। কাজী জোবায়ের উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর এবং আবির তুরাগের পাকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা।

সরিয়ে দেওয়া হলো দুই উপদেষ্টার দুই ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে

২১ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতির বিষয়টি এত দিন সবার মুখে মুখে থাকলেও আজ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলো। মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দক্ষিণপাড়া গ্রামে।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৪ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, আসিফ মাহমুদ যত দিন এ পদ অলংকৃত করবেন অথবা এপিএস পদে বহাল রাখার অভিপ্রায় পোষণ করবেন, তত দিন এ নিয়োগ আদেশ কার্যকর থাকবে।

এপিএস পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে।

এদিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীকেও তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি অফিস করছেন না। উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তাঁকে অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

২০২৩ সালে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি

২১ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, কর ফাঁকির কারণে ২০২৩ সালে আনুমানিক ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।

সিপিডির গবেষণা বলছে, এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ হারিয়েছে করপোরেট কর ফাঁকির কারণে। ২০২৩ সালে করপোরেট কর ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।

আজ সোমবার সিপিডির কার্যালয়ে বাংলাদেশের উত্তরণে করপোরেট আয়কর সংস্কার বিষয়ক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

সিপিডির গবেষণা বলছে, ২০১১ সাল থেকে কর ফাঁকির পরিমাণ বেড়েছে, ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে তা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

দুই উপদেষ্টার এপিএস ও পিও’র দুর্নীতি

তদবির বাণিজ্যে আয় শতকোটি টাকা

২৪ এপ্রিল ২০২৫, যুগান্তর

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (ছাত্র প্রতিনিধি) তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও। তারা ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসক-প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে পুনর্বাসনে সহায়তা করেছেন। এছাড়া স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদ, গণপূর্ত, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে ঘুরে ঘুরে তদবির করতেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন। এ ধরনের অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ার পর মোয়াজ্জেম হোসেন ও তুহিন ফারাবিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২১ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেন এবং তুহিন ফারাবিকে অব্যাহতি দিয়ে সরকারি আদেশ জারি হয়। ডা. মাহমুদুল হাসান রোগীর সঙ্গে বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। তিনি ফিরবেন কি না তা নিয়ে অনেক কর্মকর্তা সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাদের বিষয়ে এক সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের তদবিরের বিষয়ে অনেক কর্মকর্তাই জানেন।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য এবং ফ্যাসিবাদের দোসর প্রকৌশলীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়েছেন। মোয়াজ্জেম (বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে উপজেলা প্রকৌশলী পর্যন্ত প্রায় সব গ্রেডের কর্মকর্তার বদলি-পদায়নে তদবির বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ঘুরে ঘুরে তদবির করতেন। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র, পানিসম্পদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার তদবিরে নামেন।

প্রায় একই অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (ছাত্র প্রতিনিধি) তুহিন ফারাবি ও মো. মাহমুদের বিরুদ্ধে। তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ লাভের পর থেকে চিকিৎসক, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল, পরিচালক, উপপরিচালক, সিভিল সার্জন নিয়োগ-বদলির মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তারা সিনিয়র স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ, প্যাথলজি টেকনিশিয়ান, হজ টিমে নার্স ও ডাক্তারদের নাম ঢুকানোর তদবির করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধ স্বাস্থ্য সেক্টরের ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

বাবার ঠিকাদারির লাইসেন্স ছিল, জানিয়ে ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

২৪ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে ‘বাবার ভুলের জন্য’ ক্ষমা চেয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি আজ বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে ক্ষমা চান।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি জানিয়ে গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুকে পোস্ট দেন এক গণমাধ্যম কর্মী। তিনি বিষয়টির সত্যাসত্য জানতে চান আসিফ মাহমুদের কাছে। আসিফ মাহমুদ খোঁজ করে জানান যে, তাঁর বাবার লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি সঠিক। আর বিষয়টি তাঁকে জানান বলেও ওই গণমাধ্যম কর্মী তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন। এরপরই আজকে আসিফ মাহমুদ বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দিলেন।

গণতন্ত্র মতপ্রকাশের অধিকার

বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে ‘খারাপ’ আচরণ, ২১ ঘণ্টা পর মুক্তি পেলেন সেই কলেজছাত্র

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ’ করার অভিযোগে ২১ ঘণ্টা হাজতে থাকার পর আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়েছেন কলেজছাত্র হাসান আলী। আজ রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোতোয়ালি আমলি আদালতের বিচারক শোয়েবুর রহমান এ আদেশ দেন।

১৫ ঘণ্টা থানাহাজতে আটক রাখার পর আজ বেলা একটার দিকে তাঁকে ‘অধর্তব্য’ অপরাধের মামলায় আদালতে পাঠায় পুলিশ। এরপর আদালতের হাজতখানায় আরও ছয় ঘণ্টা থাকার পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

হাসান আলী রংপুর মডেল কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে তাঁকে নগরের শাপলা মোড়ের ভাড়া বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ’ করেছেন।

কুকুরের তাড়া খেয়ে ভ্যানচালককে কার্যালয়ে ডেকে পেটানোর অভিযোগ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে কুকুরের তাড়া খেয়ে মালিক হিসেবে এক ভ্যানচালককে পুলিশ দিয়ে কার্যালয়ে ডেকে এনে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজবাড়ী আদালত ভবনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী ভ্যানচালকের নাম মো. আফজাল খাঁ (৩০)। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অভিযুক্ত মো. সুমন হোসেন রাজবাড়ীর ১ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে করে তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটি কুকুর ধাওয়া করে অনেক দূর নিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় কয়েকজনের চেষ্টায় রক্ষা পান। পরে কুকুরের মালিক হিসেবে আফজাল খাঁকে কার্যালয়ে ডেকে এনে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চান। তখন আফজাল জানান, পাঁচ মাস আগে তাঁর কুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁকে সতর্ক করা হয়, কিন্তু কোনো নির্যাতন করা হয়নি। কার্যালয় থেকে সুস্থ অবস্থায় বের হলেও পরবর্তী সময়ে কী হলো, বিষয়টি তাঁর বোধগম্য নয়। কার্যালয় থেকে যাওয়ার পর কারও ইন্ধনে তিনি এমন অভিযোগ করছেন বলে দাবি করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেন।

‘হল না ছাড়লে ছাত্রলীগের মতো কইরা পিটামু’

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ডেইলি ক্যাম্পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের এক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সমন্বয়কসহ তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দেন এবং হল ছাড়তে বাধ্য করেন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ভুক্তভোগীর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) প্রক্টরিয়াল বডির কাছে জমা দেওয়া এক লিখিত অভিযোগপত্রেও এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. রাহিম, যিনি ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন, সমন্বয়ক এমরান হোসেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব এবং আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু।

অভিযোগপত্রে রাহিম উল্লেখ করেন, তিন মাস ধরে তিনি একদল শিক্ষার্থীর মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ১ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার পর একদল শিক্ষার্থী স্লোগান দিতে দিতে তার কক্ষের সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়ে। দরজা খোলার পর তারা কক্ষে ঢুকে বলেন ‘১০ মিনিটের মধ্যে রুম খালি কর, নইলে রুম তালা দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু না; আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব, সেটাই চূড়ান্ত।’

এক পর্যায়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘রুম না ছাড়লে ছাত্রলীগের মতো কইরা পিটামু, তোকে মারা ওয়ান-টু ব্যাপার।’

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চাকরিচ্যুতদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এসব সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত সমিতির ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিচ্যুত হয়েছেন। সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ২৫ জন। শাস্তিমূলক বদলি ও স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে কয়েক শ কর্মীকে।

এসব তথ্য জানিয়ে চাকরি পুনর্বহালের দাবি করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে তাঁদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান তাঁরা। এতে বলা হয়, আরইবির মাধ্যমে দমন–পীড়ন ও নির্যাতন বন্ধ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

তিন ছাত্রকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় হামলা চালাল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

রাজধানীর উত্তরায় তিন ছাত্র আটকের ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাওয়ের পর উত্তরা পশ্চিম থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ হামলা চালান বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় উত্তরা পশ্চিম থানায় কর্তব্যরত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মহাদেব আহত হয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেলে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম এভিনিউ সড়কে উত্তরা পশ্চিম থানা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বৈঠক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। সেখান থেকে আকাশ, রবিন ও বাপ্পি নামের তিন ছাত্রকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আমাদের তিন সহপাঠী আকাশ, রবিন ও বাপ্পিকে আটক করে উত্তরা পূর্ব থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পূর্ব থানায় আমরা গিয়ে জানতে পারি, তিন ছাত্রকে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ আটক করে উত্তরা পূর্ব থানা-পুলিশের হেফাজতে রেখেছে। এতে উত্তেজিত ছাত্ররা উত্তরা পশ্চিম থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। সেই সঙ্গে থানার গেটে হামলা চালিয়েছে।

চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক ওই তিন ছাত্রকে পরে পুলিশ ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছাত্রদের বৈঠক চলছে।

প্রাথমিকের নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ-জলকামান

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

হাইকোর্টের রায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশে লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশকে ঘটনাস্থলে আহত এক নারীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

এর আগে, সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে সমাবেশ করেন নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা। পরে তারা একটি মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে চলে আসেন। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

একপর্যায়ে তারা পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।  পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

গতকাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ছয় হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

অভিনেত্রী শাওন ও সাবা ডিবি হেফাজতে

৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও সোহানা সাবাকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এ তথ্য নিশ্চিত করে।

অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও সোহানা সাবাকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এ তথ্য নিশ্চিত করে। পাশাপাশি এদিন জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দি রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত শাওনের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের নতুন উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল রাতে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি। এখন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গ্রেফতার দেখানো হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত জানা যাবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে।’

এদিকে অভিনেত্রী সোহানা সাবাকে ডিবি হেফাজতে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

‘পুলিশ বলেছে, স্বামীর সংসার কর, এখানে আসছোস ক্যান’

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করা চাকরিপ্রত্যাশীদের আজ বৃহস্পতিবারও ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন কয়েকজন। একজন নারী আন্দোলনকারী বলেছেন, ‘পুলিশ বলেছে, “স্বামীর সংসার কর, এখানে আসছোস ক্যান?”’

আজ বেলা একটার দিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া কয়েক শ চাকরিপ্রত্যাশী শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় চারদিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাঁদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করে; কিন্তু তাঁরা কথা শোনেননি। একপর্যায়ে বেলা দুইটার দিকে পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছিটিয়ে ও ধাওয়া দিয়ে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।

কবি সোহেল হাসান গালিবকে আটকের খবর, মেলায় স্টল খোলেনি উজান

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কবি সোহেল হাসান গালিবকে পুলিশ আটক করেছে বলে স্বজনরা দাবি করলেও এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি।

নাম প্রকাশ না করে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাতে তাকে আটকের পর মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়। শুক্রবার বিকাল তাকে নেওয়া হয় আদালতে।

কবি গালিবের বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান, জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

গালিবের বড় ভাই নাজমুল হুদা সেতু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গালিবকে পুলিশ নিয়ে গেছে। শুনেছি আজ তাকে আদালতেও তুলেছে।”

টকশো তারকারা আন্দোলনে

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মানবজমিন

হালের জনপ্রিয় বিষয় হচ্ছে টেলিভিশন ও ইউটিউবে প্রচারিত টকশো। দিনের আলোচিত ঘটনার ফোকাস থাকে টকশোতে। প্রায় দু দশকের টেলিভিশন অনুষ্ঠানের টিআরপি লক্ষ্য করলে দেখা যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ঘুরেফিরে টকশো। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে টকশো তারকাদেরও মুখ বদলায়। তবে সব ছাপিয়ে বেশ কজন অতিথি আছেন যারা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সব সরকারের সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন।

৫ই আগস্টের অভূতপূর্ব পরিবর্তনের পর টকশোতেও লক্ষ্য করা গেছে অতিথি তালিকায় পরিবর্তন। তবে এ নিয়ে যতোটা আলোচনা তার চেয়ে এখন বেশি আলোচনা হচ্ছে অতিথিদের সম্মানী নিয়ে, সামনে আসছে তাদের আন্দোলনের বিষয়টিও। জনপ্রিয় টকশোর আলোচকদের অন্তত বিশজনের বেশি অতিথি তাদের সম্মানী বাড়ানোর দাবিতে টকশোতে অংশ নিচ্ছেন না।

টকশো’র অতিথিদের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে টকশো’র অতিথিদের সম্মানী বাড়েনি, একই জায়গায় আটকে আছে। অথচ এর মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েক গুণ বেড়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় সম্মানীর পরিমাণ বৃদ্ধি জরুরি হয়ে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে সমমনা কয়েকজন অতিথি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ৫ হাজার টাকার কম সম্মানীতে কোন টকশোতে তারা অংশ নেবেন না। আর তা কার্যকর শুরু হয়েছে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। 

ফেসবুকে কমেন্টের জেরে সিলেটে শিবিরের হামলার শিকার জুলাই বিপ্লবের কর্মী রিয়াদ

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ইনকিলাব

কুয়েটের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকাশিত একটি নিউজে কমেন্ট করেছিলেন সিলেট এমসি কলেজ ইংরেজী বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদ। সেই ঘটনায় তার উপর হামলা করেছে শিবির। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে। শিবিরের হামলায় গুরুতর আহত রিয়াদ ছিলেন জুলাই বিপ্লবের সক্রিয় কর্মী। এছাড়া আনজুমানে তালামীযে ইসলামীর একজন দায়িত্বশীল তিনি। আহত রিয়াদকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে। মাথা, পিঠ ও ডান পায়ে কয়েক স্থানে জখম করা হয়েছে তার। এমনকি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পায়ের রগ কাটারও চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান আহত রিয়াদ। একপর্যায়ে তাকে টেনে হিঁচড়ে রুমের বাইরে ফেলে রেখে চলে যায় হামলাকারী শিবিরের নেতাকর্মীরা। এসময় নিয়ে যায় আহত রিয়াদ ও তার রুমমেট জুনেদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে চলে যায় তারা।

কবি সোহেল হাসান গালিব ওএসডি

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ইত্তেফাক

ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার কবি সোহেল হাসান গালিবকে এবার বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রজ্ঞাপনে সোহেল হাসান গালিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। এতে সই করেছেন উপসচিব মো. মাহবুব আলম।

এমসি কলেজে মারধরের ঘটনায় দায় স্বীকার করে জামায়াতের দুঃখ প্রকাশ

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রাবাসে তালামীযে ইসলামিয়ার এক কর্মীকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের কিছু কর্মী জড়িত বলে জানিয়েছে জামায়াত ইসলামী।

রোববার সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর সোবাহানীঘাট এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের বোর্ড রুমে তালামীযে ইসলামিয়া ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন জামায়াতের সিলেট মহানগরের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “ফেইসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে সেখানে (এমসি কলেজে) যে বাড়াবাড়িটুকু হয়েছে, আমাদের দৃষ্টিতে সেখানে ছাত্রশিবিরের কিছুসংখ্যক কর্মী এটার সঙ্গে জড়িত এবং যেটা করেছে সেটা অন্যায়ভাবে করেছে এবং সেটা দুঃখজনক। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই। দুঃখপ্রকাশ করছি।”

রাখাল রাহার বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা, সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ

০৩ মার্চ ২০২৫, দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি অনলাইন

ডিজিটাল মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদুর রহমানের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক নূরে আলমের আদালতে মামলার আবেদন করেন সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি। আদালত তাঁর জবানবন্দী গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি, আ. লীগকর্মী গ্রেপ্তার

০৩ মার্চ, ২০২৫, কালের কন্ঠ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে মাসুদ রানা (৩০) নামের এক আওয়ামী লীগকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ময়মনসিংহে নারী নির্যাতন প্রতিরোধী মিছিলে হামলা

১২ মার্চ ২০২৫, আরটিভি নিউজ

ময়মনসিংহে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

বুধবার (১২ মার্চ) বিকেলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের বিচার, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের এ হামলার ঘটনা ঘটে।

কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বিকেলে নগরীর মালগুদাম থেকে মিছিল শুরু করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ময়মনসিংহ জেলার নেতাকর্মীরা। মিছিল গাঙ্গিনাপাড়ে ঢোকার পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটা মিছিল বাম জোটের মিছিলের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। ‘শাহবাগী গোসল কর’-সহ বিভিন্ন উস্কানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের একটা মিছিল। এরপর পরই তারা নতুন বাজার মফিজউদ্দিন প্লাজার সামনে বাম জোটের নেতাকর্মীদের ওপর যৌথভাবে হামলা করে।

পুলিশের ওপর বাম নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগে ঢাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ

১২ মার্চ ২০২৫, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বাম ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তার প্রতিবাদে এবং ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক লাকি আক্তারসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের গ্রেফতারের দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাত ১টায় এই বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়া থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে এসে শেষ হয়। এসময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লাকিকে গ্রেফতারের দাবি জানায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা

১২ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে করা এই মামলায় আসামি হিসেবে বামপন্থী কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের ১২ জন নেতা–কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আজ বুধবার পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় এ মামলা করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

যমুনা ও সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

১৩ মার্চ ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি।

বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনার কথা জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।

পেশাজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের চলমান আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে প্রায়ই সচিবালয় ঘেরাও বা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে মিছিলের মত কর্মসূচি থাকছে। আন্দোলনকারীদের থামাতে গিয়ে লাঠিপেটার পাশাপাশি জলকামান ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে পুলিশকে।

মানবাধিকার কমিশন ৪ মাস ধরে নিষ্ক্রিয়, কারণ কী

১৮ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

চার মাস ধরে অকার্যকর হয়ে আছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এর ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ভুক্তভোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ব্যাপকতা পেয়েছে। এ সময় মানবাধিকারের প্রশ্নগুলো জোরালোভাবে উত্থাপিত হওয়া দরকার। অথচ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে এখন নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই সরকারের সময়ে গঠিত কমিশন টিকে ছিল নভেম্বর মাস পর্যন্ত। ৭ নভেম্বর সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা কারওয়ান বাজারে কমিশনের কার্যালয়ে যান। তাঁরা দিনভর সেখানে থাকেন। সন্ধ্যার দিকে তৎকালীন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমদ, সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা এবং অন্য চার সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ, অধ্যাপক তানিয়া হক, আমিনুল ইসলাম ও কংজুরী চৌধুরী। আরেক সদস্য কাওসার আহমেদ এর আগেই পদত্যাগ করেছিলেন।

দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকারকর্মীদের সংগঠন সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের (সাহার) বাংলাদেশ ব্যুরো সদস্য সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, চার মাস চলে গেলেও নতুন কমিশন গঠিত না হওয়া হতাশাজনক। এতে করে এটি মনে হওয়া স্বাভাবিক যে অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার কমিশনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না।

তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মানবাধিকার কমিশনের আইনটা পরিবর্তন করে নিয়োগ দিতে চাচ্ছি। এখানে আবার বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব আছে। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে ভালোমতো একটা নিয়োগ দিতে চাচ্ছি। আশা করি, মাসখানেকের মধ্যে হয়ে যাবে।’

মাদারীপুরে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় স্কুলশিক্ষক কারাগারে

১৮ মার্চ ২০২৫, আজকের পত্রিকা

মাদারীপুরে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জসিম ব্যাপারীকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম।

গ্রেপ্তার জসিম ব্যাপারী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার ১১৫ নম্বর আলহাজ সৈয়দ আতাহার আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। একই উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের সোমেদ ব্যাপারীর ছেলে।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে জসিম ব্যাপারীর ব্যবহৃত মোবাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিকবার আপলোড করা হয়। সেখানে ভুয়া গেজেট তৈরি করে অপপ্রচারের পরিকল্পনা করেন। জননিরাপত্তা নষ্ট করার পাশাপাশি সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার পাঁয়তারা করেন অভিযুক্ত জসিম ব্যাপারী।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ, মডেল মেঘনা কারাগারে

১১ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন,  বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি ক্ষতিকর কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, সেক্ষেত্রে ক্ষতিকর কাজ থেকে তাঁকে নিবৃত্ত রাখার জন্য আটক করতে পারেন। মডেল মেঘনা আলম ক্ষতিকর কাজের সঙ্গে যুক্ত। যে কারণে তাঁকে গতকাল রাতে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী আদালত তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিন আটক রাখার আদেশ দেন।

চট্টগ্রামেও বিতর্কিত আইনে প্রতিরোধমূলক আটকাদেশ

১৬ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

এক মাস আগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিতর্কিত ধারার শিকার হয়েছেন চট্টগ্রামের এক ব্যক্তি। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত ১১ মার্চ ৩০ দিনের প্রতিরোধমূলক আটকাদেশ (প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন) দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় দস্তগীর আহমদ সুমনকে (৪৭)। এক সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় দফায় তাঁর আটকাদেশ আরও ৬০ দিন বাড়ানো হয়েছে।

সুমন চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগর বাদামতল মোড় এলাকার মৃত এম শাহ আলমের ছেলে। বসবাস করেন নগরের হালিশহর সবুজবাগে। সুমনকে ‘জয় বাংলা জুম ব্রিগেড’-এর সক্রিয় সদস্য দাবি করেছে পুলিশ।

সাংবাদিক নুরুজ্জামান লাবুকে হুমকি-হয়রানির ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ

১৮ এপ্রিল ২০২৫, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

জঙ্গিবাদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাংবাদিক নুরুজ্জামান লাবুকে হুমকি ও হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আয়ারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফ্রন্ট লাইন ডিফেন্ডার্স (এফএলডি)।

আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি লাবুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাকে হুমকি ও হয়রানির ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।

বিবৃতিতে সংস্থাটি আরও বলে, এই ঘটনায় জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে হবে, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ভয় ছাড়া স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন প্রকাশের অধিকার আছে।

এফএলডি তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করে, চরমপন্থীদের নিয়ে ১১ এপ্রিলের এক প্রতিবেদনে একটি ছবি প্রকাশের জন্য গত ১৩ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাকে ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি দিয়েছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সমর্থকদের কাছ থেকে এসেছে এসব হুমকি।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

দেশে প্রতি লাখে ক্যান্সার আক্রান্ত ১০৬ জন

১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

দেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০৬ জনের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে এক গবেষণায়।

এতে বলা হচ্ছে, বছরে প্রতি লাখে নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন ৫৩ জন, আর মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশের জন্য দায়ী এই রোগ।

শনিবার বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা: জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক এক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

চিকিৎসায় অবহেলার শিকার প্রতি তিনজনে একজন: বিবিএসের জরিপ

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

দেশের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন মানুষের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে অবহেলা, অযত্ন ও অপচিকিৎসার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। গ্রামের চেয়ে শহরে এই হার বেশি। দেশের ৯১ শতাংশ মানুষ চান, সরকার যেন সব মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে আইনগতভাবে বাধ্য থাকে।

দেশের মানুষের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে এই মন্তব্য বা মতামত উঠে এসেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক জনমত জরিপে। কমিশনের অনুরোধে জাতীয় এই জরিপ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিবিএসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের কাছে জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। মানুষ কোথায় চিকিৎসা নেন, চিকিৎসার জন্য কত মানুষ বিদেশ যান, ওষুধ নিয়ে ভাবনাসহ স্বাস্থ্য খাত–সংক্রান্ত নানা চিত্র জরিপে উঠে এসেছে।

৮ মাস ধরে বেতন বন্ধ, ঝিমিয়ে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন

কিশোরগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকের সার্বিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। গত আট মাস ধরে কর্মীদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন লোকজন।

কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামপর্যায়ে মা ও শিশুসহ সব বয়সী লোকজনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার কাজ করে আসছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এখান থেকে ২৭ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয় রোগীদের। অসুখ-বিসুখে ক্লিনিকগুলোর ওপর ভরসা করে গ্রামের দরিদ্র লোকজন। কিশোরগঞ্জ জেলায় এ ধরনের কমিউনিটি ক্লিনিক আছে ৩২৩টি। ক্লিনিকের মূল দায়িত্ব পালন করেন একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার বা সিএইচসিপি। তবে গত আট মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়েছে তাদের কাজে। ফলে ক্লিনিকগুলো অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।

নারীরই হয় এমন রোগ ১২টি, আক্রান্ত ৪ কোটি ৩৫ লাখ

০৮ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

কিছু রোগ আছে পুরুষের হয় না, নারীর হয়। শুধু নারীদের হয়, এমন ১২ ধরনের রোগে দেশে প্রায় ৪ কোটি ৩৫ লাখ নারী ভুগছেন। প্রতিবছর এর সঙ্গে আরও কয়েক লাখ নারী যুক্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন তাঁরা। নারীর চিকিৎসা ও সুরক্ষায় পৃথকভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগও জরুরি।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য–উপাত্ত ও যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক রোগতাত্ত্বিক পরিস্থিতি নজরদারি ও বিশ্লেষণ করছে আইএইচএমই।

শুধু নারীর হয় এমন রোগ বা সমস্যার তালিকায় আছে মাসিক–পূর্ব শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ, জরায়ুমুখ ক্যানসার, জরায়ু ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার, জননাঙ্গ বের হয়ে আসা, বন্ধ্যত্ব, জরায়ুস্তরের প্রদাহ (এন্ডোমেট্রিওসিস), ডিম্বাশয়ে গোটা, জরায়ুতে গোটা, টার্নান উপসর্গ (জিনজনিত সমস্যা), জরায়ু ও জরায়ুমুখে নির্বিরোধ ক্যানসার। এ ছাড়া আছে আরও কিছু স্ত্রীরোগ (যোনিপ্রদাহ, জরায়ুমুখের কোষের অস্বাভাবিকতা, শ্রোণি অঞ্চলে প্রদাহ)।

বন্ধ হয়ে গেছে এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি, জুনে বন্ধ হচ্ছে প্যাথলজি বিভাগ

২৯ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

চলতি মাসে অবসরে গেছেন ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. সেলিনা আক্তার। নতুন ডাক্তার নিয়োগ না হওয়ায় আপাতত হাসপাতালটির রেডিওলজি বিভাগের সেবা বন্ধ রয়েছে।

চলতি মাসে অবসরে গেছেন ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. সেলিনা আক্তার। নতুন ডাক্তার নিয়োগ না হওয়ায় আপাতত হাসপাতালটির রেডিওলজি বিভাগের সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে রোগীরা এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে পারছে না। অন্যদিকে আগামী জুনে কর্মজীবন শেষ হবে প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. আম্মাতে নূর ওয়াহিদা সুলতানার। তিনি অবসরে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে প্যাথলজি বিভাগও।

রেডিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ হওয়ার পর বিভাগ দুটির সঙ্গে সম্পৃক্ত গাইনি বিভাগের সব ধরনের কার্যক্রমও বন্ধ করে দিতে হবে হাসপাতালটিকে। এরই মধ্যে হাসপাতালটির সার্জারি বিভাগে চিকিৎসক না থাকার কারণে সিজারিয়ান ছাড়া আর কোনো অস্ত্রোপচার হচ্ছে না।

হাসপাতালটির ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য বেশ সুনাম রয়েছে। গত বছর দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভিড় লেগে যায় মানুষের। তবে এ বছর আর ডেঙ্গুর কোনো রোগী ভর্তি রাখা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে অর্ধলক্ষাধিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু

২২ এপ্রিল ২০২৫, বণিক বার্তা

সারা দেশের ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের প্রায় সবক’টিতেই সেবাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে ৫০ হাজারের অধিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বলে স্বাস্থ্যসেবা অধিপ্তরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার লক্ষ্যে গড়ে তোলা শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী ও কর্মীরা ১০ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তাদের চাকরি আছে কি নেই, সে বিষয়েও কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য জানানো হচ্ছে না। তাই চিকিৎসকসহ অনেকেই পদত্যাগ করেছেন। আবার যারা আছেন তাদের বেতন কবে হবে, সে নিশ্চয়তাও নেই। সে কারণেই শিশু বিকাশ কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবাদান কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষা

বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের ৪৪% পড়ছে নিজস্ব অর্থায়নে

২৬ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৯৭ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখের কাছাকাছি। বাকিরা পড়াশোনা করছে বেসরকারিভাবে স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবৈতনিকভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর প্রায় সবাই পড়াশোনা করছে নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পার হওয়ার পরও প্রাথমিক পর্যায়ে সর্বজনীন ও বিনা ব্যয়ে পড়াশোনার শতভাগ সুযোগ নিশ্চিত করতে না পারার বিষয়টিকে রাষ্ট্রের বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন শিক্ষাবিদরা। তাদের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭তম অনুচ্ছেদে আইন দিয়ে নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রের প্রতি নির্দেশনা দেয়ার কথা বলা রয়েছে। একই সঙ্গে এতে একই ধরনের গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতেরও কথা বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলককরণ) আইনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। এ আইন প্রণয়নের তিন দশকের পরও এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে একই ধরনের ও অবৈতনিক শিক্ষা কার্যকর করা যায়নি।

প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিসংখ্যান (এপিএসসি) ২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৫ জন। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে ১ কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৫ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ। বেসরকারি পর্যায়ের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে ৮৭ লাখ ২৭ হাজার ৮৭০ জন। সে অনুযায়ী নিজস্ব তথা পরিবারের অর্থায়নে পড়াশোনা করছে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি পড়াশোনা করছে কিন্ডারগার্টেনে, যার সংখ্যা ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার ৩৭৫। এর বাইরে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৮৮৮ জন, উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ লাখ ৪ হাজার ৩৫, ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় ৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৫, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৬১, উচ্চ মাদ্রাসার সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক শাখায় ৪ লাখ ৮১ হাজার ১৯৯, এনজিও শিক্ষা কেন্দ্রে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫০৪, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট বিদ্যালয়ে ৩০ হাজার ৩৪৬ ও অন্যান্য বিদ্যালয়ে ২ লাখ ৫ হাজার ৫০৭ জন প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। এ পরিসংখ্যানে ইংরেজি মাধ্যম ও কওমি মাদ্রাসার তথ্য উল্লেখ করা নেই। তবে মাদ্রাসা শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, কওমি মাদ্রাসায় ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ।

বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে কিন্ডারগার্টেনে। প্রাথমিক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৫ শতাংশ পড়াশোনা করছে কিন্ডারগার্টেনগুলোয়। দেশের বিভিন্ন স্থানের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকাভেদে এসব বিদ্যালয়ের ভর্তি ফি ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মাসিক বেতন হিসেবে দিতে হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বাড়তি কোচিং করাতে হয়।

শাহবাগে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ওপর পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিপেটা, আহত ৬

২৬ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান নেওয়া ইবতেদায়ি শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে। এতে এক নারীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে শাহবাগ থানার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিদের দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত ব্যক্তিরা হলেন আনোয়ার হোসেন (৩৫), ফরিদুল ইসলাম (৩০), আমিনুল (৩৫), মিজানুর রহমান (৩৫), বিন্দু ঘোষ ও মারুফা আক্তার (২৫)। তাঁরা সবাই ইবতেদায়ি শিক্ষক বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ হটিয়ে শিক্ষা প্রশাসন জামায়াতিকরণ

২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ইনকিলাব

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের শাসনামলের ১৫ বছর জুড়ে শিক্ষা প্রশাসনের সর্বস্তরেই চালু করেছিল আওয়ামীকরণ। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে সচিব পর্যন্ত পুলিশের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ডিএনএ টেস্ট করে নিয়োগ দেয়া হতো আওয়ামীপন্থীদের।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়নি শিক্ষা প্রশাসন। বহাল তবিয়তে আছে আওয়ামীপন্থী সেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর যেসব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে সেখানে নতুন করে দলীয়করণ চালু করেছে জামায়াত! মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, বোর্ড কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ৫ আগস্টের পর যেখানেই নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগই নিয়োগ পেয়েছে রাজনৈতিভাবে জামায়াত চেতনাধারীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। নেটিজেনদের অনেকেই এ নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। তাদের বক্তব্যÑ হাসিনার অলিগার্ক কর্মকর্তাদের সরিয়ে প্রশাসনে জামায়াতের অনুসারীদের নিয়োগ প্রশাসনের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে দলবাজি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

আওয়ামী আমলে তাদের বিরোধী মতাদর্শের মানুষকে যেমন নিয়োগ বঞ্চিত করা হতো, এখন সেই একই কায়দায় শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে জামায়াতবিরোধীরা। নেটিজেনদের অভিযোগ মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্রই ছেকে ছেকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে জাময়াতিদের। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ পাচ্ছেন না বিএনপিপন্থী কিংবা অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা উপদেষ্টা বিভিন্ন পদে নির্দলীয়, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করলেও সরকারে থাকা জামায়াতপন্থী এবং বেশ কয়েকজন সমন্বয়কের (শিবিরপন্থী) চাপে প্রতিবারই সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী প্রফেসর ড. এম আমিনুল ইসলাম জামায়াতপন্থীদের এই আধিপত্যের বিপরীতে মতামত দেয়ায় তাকে এক প্রকার কোণঠাসাই করে রেখেছেন সরকার ও সমন্বয়কদের মধ্যে থাকা জামায়াতপন্থীরা।

জানা যায়, ৫ আগস্টের পরপরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয় জামায়াতপন্থী এক কর্মকর্তাকে। তার মাধ্যমেই শিক্ষা প্রশাসনের কার্যত শুরু হয় জামায়াতিকরণ। তার হাত ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে একে একে নিয়োগ দেয়া হয় জামায়াতপন্থীদের। বাদ যায়নি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরসহ গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানে। আর যেসব পদে দলীয় নেতাকর্মীদের বসাতে পারেনি জামায়াত সেসব পদে বহাল তবিয়তে রাখা হয় আওয়ামীপন্থীদেরই। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা, শিক্ষক নেতারা ও নির্দলীয় শিক্ষক নেতারা সমালোচনা করলেও পরিবর্তন আসেনি কোনো কিছুতেই; বরং এখন আরো বেপারোয়াভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, অধিদফতর ও বোর্ডের বিভিন্ন কমিটিতে পুনর্বাসন করা হচ্ছে জামায়াতিদের।

সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যানদের মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান, সরকারি মাদরাসার প্রিন্সিপালের মধ্যে ঢাকা মাদরাসা-ই-আলিয়ার প্রিন্সিপাল, বেসরকারি মাদরাসার প্রিন্সিপালের মধ্যে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার (টঙ্গী) ড. মুহাম্মদ হেফাজুর রহমান, নরসিংদী জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসার মো. আব্দুস সামাদ আযাদ, বেসরকারি মাদরাসার তত্ত্বাবধায় বা সুপারিনটেডেন্ট হিসেবে হাফেজ আবদুর রাজ্জাক জামেয়া ইসলামিয়ার মুহাম্মদ নিজামুদ্দীন, মানিকদি এম আই দাখিল মাদরাসার ওয়ালিউল্লাহ হেলালী আল আফসারী ও মাদরাসা শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদ ক্যাগাটরিতে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল ড. মুফতি মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। নিয়োগ পাওয়া এসব প্রতিনিধির বেশির ভাগই জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত।

একইভাবে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গঠিত সিন্ডিকেটেও প্রাধান্য পেয়েছে জামায়াতপন্থীরা। আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্যরা হলেনÑ ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলম, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু জাফর খান, ট্রেজারার এএসএম মামুনুর রহমান খলিলী, ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শাযাআত উল্লাহ ফারুকী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার (ঢাকা) প্রিন্সিপাল ড. মুহাম্মদ আবু ইউছুফ খান, সিলেট শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ লুৎফর রহমান হুমাইদি, পাবনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব, অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ আমীর উদ্দিন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মিঞা মো. নূরুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর প্রফেসর ড. মো. নিজাম উদ্দিন, গোপালগঞ্জ ছালেহিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশ মাদরাসা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল প্রফেসর মাহমুদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ও মতিঝিল মিছবাহুল উলুম কামিল মাদরাসার মাওলানা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান।

সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণা

২৮ জানুয়ারি ২০২৫, আজকের পত্রিকা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধনভুক্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বৈঠক শেষে বিকেলে ৪টার দিকে শাহবাগে এ ঘোষণা দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের যুগ্ম সচিব (মাদ্রাসা অনুবিভাগ) এস এম মাসুদুল হক।

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ছয় মাস ধরে শিক্ষা খাতের বড় সিদ্ধান্তগুলো মবকে ঘিরে

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র-জনতার অন্যতম প্রত্যাশা ছিল শিক্ষা খাতে বড় সংস্কার। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাস পার হলেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমনকি রাষ্ট্রের অন্যান্য খাতে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ছয়টি কমিশন গঠন করা হলেও গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি অবহেলিতই রয়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনো ফেরেনি শিক্ষার পরিবেশ। এর পরও যেসব সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত এসেছে তার বেশির ভাগই নেয়া হয় মবের মুখে বাধ্য হয়ে। এর মধ্যে অনেকগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মব বা আন্দোলনের মুখে দাবি মেনে নেয়ার শুরুটা হয় গত আগস্টে। সবেমাত্র দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যেই ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের দাবি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে বাতিল করা হয় স্থগিত পরীক্ষাগুলো। সরকারের এ সিদ্ধান্তে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। এমনকি শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নিজেও হতাশা প্রকাশ করেন।

শিক্ষা গবেষকরা বলছেন, সম্পূর্ণ পরীক্ষা নেয়া ছাড়া এভাবে অটো পাস দেয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারেই দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার সর্বস্তরে এমনকি কর্মজীবনে প্রবেশেও তৈরি হবে জটিলতা। তাই বাতিল না করে বরং প্রয়োজনে পরীক্ষার্থীদের আরো সময় দিয়ে কিংবা সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেয়া যেত।

কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দফায় দফায় সংঘর্ষ

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া পাল্টাপাল্টি ধাওয়া বিকেল পর্যন্ত চলছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। ছাত্রদলের একাধিক নেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কুয়েটের অন্তত পাঁচটি সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ আছে। কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি যাতে আবার শুরু হতে পারে, সে জন্য ছাত্রদলের কর্মীরা গতকাল সোমবার ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটাই, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় ছাত্রদলের কর্মীরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়, যা কুয়েটের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। কুয়েট পকেট গেট থেকে বহিরাগতরা ছাত্রদলের পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে সাত কোটি বই এখনো ছাপা হয়নি

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

শিক্ষাবর্ষের ১ মাস ২১ দিন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু দেশের সব শিক্ষার্থী সব পাঠ্যবই এখনো হাতে পায়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য বলছে, প্রায় সাত কোটি বই ছাপা হওয়া বাকি, যার অধিকাংশই মাধ্যমিক পর্যায়ের।

শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে এবার শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকটা দেরি হয়ে যাচ্ছে। ছাপার যে পরিস্থিতি, তাতে এ মাসেও সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বই দিতে যত দেরি হচ্ছে, পড়াশোনাও তত ব্যাহত হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাবর্ষে চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৪০ কোটি ১৫ লাখ বই ছাপানোর আয়োজন করা হয়েছিল। তবে পরে এসে দেখা যায়, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চাহিদা জানানো হয়েছে। নতুন করে হিসাব করে দেখা যায়, মোট বই ছাপতে হবে আসলে ৩৯ কোটি ৬০ লাখের মতো। এর মধ্যে সাত কোটি ছাপা হওয়া বাকি।

জানুয়ারির বেতন এখনও পাননি পৌনে চার লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক

০৩ মার্চ ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

মার্চের প্রথম সপ্তাহে সাধারণ চাকরিজীবীরা যখন ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের অপেক্ষায় আছেন তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার টি আলী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক শান্ত আলী জানুয়ারি মাসের বেতন-ভাতার আশায় দিন গুনছেন।

শনিবার রাতে বাবা হয়েছেন এমপিওভুক্ত এ শিক্ষক। নিজের অবস্থার কথা তুলে ধরে শান্ত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই মাস বেতন পাচ্ছি না, বুঝেন অবস্থা। আমাদের বেতনতো আর আহামরি না।”

শুধু শান্ত নন, এমপিওভুক্ত ২০ হাজারের বেশি স্কুল-কলেজের পৌনে চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এখনও জানুয়ারি মাসের বেতনভাতা পাননি।

রোববার পর্যন্ত তাদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও ছাড় করতে পারেনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। যদিও অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, শিগগিরই এ অপেক্ষার অবসান হবে।

গ্রামীণ ট্রাস্টের অধীনে অনুমোদন পেল গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি

১৯ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ নামে দেশে নতুন আরো একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই প্রথম অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ট্রাস্টের অধীনে। এ নিয়ে দেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াল ১১৬টিতে।

সীতাকুণ্ডে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ

১৬ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর হাজী তোবারক আলী চৌধুরী (টিএসি) উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্যকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আজ বুধবার দুপুরে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন এই শিক্ষক। পরে একটি গাড়িতে করে তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং প্রক্তন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিদ্যালয়ে মিছিল নিয়ে এসে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে রাখেন। পরে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নেন বলে অভিযোগ।

সরকার না সরালে পদত্যাগ করব না: কুয়েট ভিসি

২৩ এপ্রিল ২০২৫, যুগান্তর

পদত্যাগের বিষয়টি তার নিজের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে না বলে জানিয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ। খবর বিবিসির।

মুহাম্মদ মাছুদ বিবিসি জানান, সরকার তাকে সরিয়ে না দিলে তিনি নিজ থেকে পদত্যাগ করবেন না।

তিনি বলেন, আমাকে সরকার নিয়োগ করেছে। এখন সরকার যদি মনে করে আমি এই পদের জন্য যোগ্য না, অবশ্যই আমি তো আর থাকতে পারব না। এটা সম্পূর্ণ সরকারের ওপর নির্ভর করছে। এটা এখন আমার ওপর নির্ভর করছে না।

কুয়েটের আন্দোলনকারী ও অনশনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করা শিক্ষার্থীদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ

বিপুল বকেয়া সিস্টেম লস চুরি আড়াল করে বারবার দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ

৩০ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশে গ্যাস খাতের কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ পাওনা অর্থ গ্রাহকের কাছে আটকে রয়েছে। পেট্রোবাংলার সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, এর পরিমাণ ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ বকেয়ার সঙ্গে কোম্পানিগুলোর আর্থিক চাপকে আরো বাড়িয়ে তুলছে গ্যাসের সিস্টেম লস ও চুরি। এর মধ্যেই রাজস্ব আয়ের বড় একটি অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে। আবার একই সঙ্গে বাড়ছে উচ্চমূল্যে আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভরতা। পতিত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রকট হয়ে ওঠা গ্যাস খাতের এ অদক্ষতা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও একই ধারায় রয়েছে। আর চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে এর খেসারত দিতে হচ্ছে ভোক্তাকে। কিন্তু উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত নানা পর্যায়ের এমন লোকসান-অসংগতি আর অপচয়কে এড়িয়ে আবারো গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে শিগগিরই কাটছে না ভারত-নির্ভরতা

৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রতিদিন বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে গড়ে ১ হাজার ৭৮০ মেগাওয়াট। দেশে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা পূরণে প্রতিবেশী দেশটি থেকে আনা বিদ্যুতের অবদান দাঁড়ায় ১৫ থেকে ১৭ শতাংশে। মূলত স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জ্বালানি সংকট ও বকেয়া দায়ের কারণে ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান ও আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আনা বিদ্যুতের ওপর জাতীয় গ্রিডের নির্ভরতা বেড়েছে। এর মধ্যে আবার জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় ভারত থেকে পাইপলাইনে আনা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভারত থেকে আমদানিনির্ভরতা শিগগিরই কাটিয়ে ওঠার কোনো সুযোগ দেখছেন না খাতসংশ্লিষ্টরা।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতের নয়াদিল্লিতে ১১-১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় এনার্জি উইক সম্মেলনে অংশ নিতে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সদস্য হিসেবে ভারত সফরে যাচ্ছেন তিনি। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ও বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছেন তিনি। ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি এ সম্মেলনে অংশ নিয়ে তা শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার।

গ্যাসের দাম বাড়াতে ‘অবাস্তব’ আশ্বাস

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

বাড়তি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন দফায় গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে গত আওয়ামী লীগ সরকার। তবে আমদানি হয়েছে কম, এতে বাড়তি দাম দিয়েও গ্যাস পাননি গ্রাহকেরা। এখন এক বছরে ইতিহাসের সর্বোচ্চ আমদানির কথা বলে শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম বাড়াতেই আমদানির অবাস্তব আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

দেশে দুটি উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে দেশি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন করে সরবরাহ করা হয় ৭৫ শতাংশ। আর ২৫ শতাংশ আসে আমদানি করা এলএনজি থেকে। দিনে সর্বোচ্চ ১১০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের অবকাঠামো আছে দেশে। যদিও কারিগরি কারণে পুরোটা ব্যবহার করা যায় না। এটি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ১০৫ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ করা সম্ভব।

দিনে গড়ে ৮৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করার কথা বলে ২০১৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে গ্যাস সরবরাহ করা হয় দিনে ৫৬ কোটি ঘনফুট করে। ২০২২ সালে আবারও একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর আবেদন করে পেট্রোবাংলা। এবার আপত্তি জানায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আগে ২৯ কোটি ঘনফুট কম সরবরাহ করে আড়াই হাজার কোটি টাকা বাড়তি নেওয়া হয়েছে বলে জানায় কমিশন। তাই ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য দিনে ৬৮ কোটি ঘনফুট আমদানি ধরে দাম বাড়ায় বিইআরসি। ওই অর্থবছরে এলএনজি আমদানি হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি ঘনফুট করে। এরপর নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্পে গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে। এখন আবার একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।

আর্থিক ও পরিচালন দক্ষতায় বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে

৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশের গ্যাস খাতে বিগত তিন অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে ভর্তুকি ছিল ৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ ভর্তুকির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এক বছরের ব্যবধানে গ্যাস খাতে ভর্তুকি এত বেড়ে যাওয়ার কারণ মূলত উচ্চ দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়ে দেয়া। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল ব্যয়সাশ্রয়ী জ্বালানি ব্যবহার করে এ খাতের ব্যয় কমিয়ে সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ। কিন্তু বর্তমান সরকারের ছয় মাস অতিবাহিত হতে গেলেও গ্যাসের আমদানি, সরবরাহ সংকট, বকেয়া, ভর্তুকি, ক্যাপাসিটি চার্জ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। বরং বিগত সরকারের দেখানো পথে হেঁটে এ খাতে আরো বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে বলে মনে করেন জ্বালানি খাত বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস অতিবাহিত হচ্ছে। অথচ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আর্থিক চাপ কমানো যায়নি। গ্রাহকের প্রত্যাশা ছিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে আর্থিক অনিয়ম, ক্ষতি ও পদ্ধতিগত সংস্কার করে এ খাতে ব্যয় সাশ্রয়ের পথ তৈরি করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টো। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত ছয় মাসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দৃশ্যমান কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম এ খাতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা তৈরি করা। সেই সঙ্গে অতীতে এ খাতে যেসব অসংগতি ও অনিয়ম হয়েছে সেগুলোর যথাযথ তদন্ত নিশ্চিতে কমিটি করা। যেগুলোর সুফল পাওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে চায় সরকার

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, কালবেলা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। এরই মধ্যে জার্মানির একটি কোম্পানি আগ্রহও দেখিয়েছে। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে, বহু বছর আগের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি না করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশবিদরা। তারা বলেন, অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার ফুলবাড়ীতে যদি উন্মুক্ত খনন করে, তাহলে তা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে জরুরি সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এ নিয়ে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে তা নির্বাচিত সরকার নেবে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার কালবেলাকে বলেন, দিন দিন আমাদের কয়লার চাহিদা বাড়ছে, আমদানি করতে হচ্ছে। কয়লার চাহিদা মেটাতে নিজেদের কয়লা ব্যবহার করতে পারলে সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কার্যক্রম বছরখানেকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তখন খনির কাছে অবস্থিত বড়পুকুরিয়ায় স্বল্পমূল্যের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে আমাদের অতিরিক্ত কয়লার প্রয়োজন হবে। ফুলবাড়ী থেকে বড়পুকুরিয়া অনেক কাছে।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে খনি থেকে কয়লা তোলার পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক চলছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা নিয়ে ২০০৬ সালে তৎকালীন এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন হয়। এতে তিনজন নিহত হন। ওই সময় তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছয় দফা চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তির মূল বিষয় ছিল ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না। একই সময় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত খনি হবে না। কৃষিজমির ক্ষতি করে কয়লা তোলা হবে না। তা সত্ত্বেও শুরু থেকেই ফুলবাড়ী নিয়ে তৎপর ছিল এশিয়া এনার্জি। পরে কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে জিসিএম রিসোর্সেস করা হয়। এই কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কয়লাখনি নিয়ে কোনো চুক্তি নেই। তবে বিভিন্ন সময়ে ফুলবাড়ী প্রকল্প নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে লন্ডন শেয়ারবাজারে মূল্য প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে।

আদানি থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়: কয়লার দামের সুরাহা হয়নি

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ভারতীয় কোম্পানি আদানির বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। বাংলাদেশ বিদ্যুতের দর হিসাব করার ক্ষেত্রে কয়লার দাম কমিয়ে ধরতে মৌখিকভাবে আদানিকে বলেছে। আদানি লিখিত প্রস্তাব জমা দিতে বলেছে। এরপর দুই পক্ষ আলোচনা করে দাম চূড়ান্ত করবে।

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে বিদ্যুৎ কেনা শুরু করে বাংলাদেশ। তবে সরবরাহ শুরুর আগেই আদানির ধরা কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়।

সরকারের উদাসীনতায় উল্টো চোখ রাঙাচ্ছে আদানি !

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শেয়ার বিজ.

আওয়ামী লীগের শাসনামলে লাইসেন্স দেয়া বড় সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনায় ৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি করা হয়। অবসারপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি সাড়ে পাঁচ মাসেরও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। আবার চুক্তিগুলোয় প্রাথমিকভাবে বেশকিছু অনিয়ম পাওয়ায় তাদের সহায়তার জন্য একটি লিগ্যাল ও তদন্তকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়ার সুপারিশ করেছিল কমিটি। তবে তিন মাস পেরুলেও বিদেশি এক্সপার্ট ফার্ম নিয়োগ হয়নি।

গত ২৬ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সুপারিশ করে বিদ্যুৎ খাতের চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি। এরপর প্রায় তিন মাস শেষ। তবে এখনও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ফার্ম নিয়োগ করা হয়নি। ফলে চুক্তির অনিয়ম বা সুপারিশ কার্যক্রম পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি। এ ছাড়া আদানির চুক্তি পর্যালোচনায় ১৯ নভেম্বর উচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিলেও তার অগ্রগতি নেই।

তথ্যমতে, আদানির চুক্তিকে অবৈধ ঘোষণার দাবিতে গত নভেম্বরে একাধিক রিট মামলা দায়ের করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ নভেম্বর আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেডের সঙ্গে সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই কমিটি নিয়োগ না হওয়ায় এটাকে আদালতের নির্দেশনার লঙ্ঘন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের তীব্র বিরোধিতা

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির দেয়া প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গণশুনানিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ব্যবসায়ী, ভোক্তা অধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে ভোক্তারা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নয়, বরং দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে আমলাদের দৌরাত্ম্য কমানোর পাশাপাশি বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব খারিজ করে দেয়ার আহ্বান জানান তারা।

গতকাল রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে গণশুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। সেখানে শিল্পমালিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ করেন। গণশুনানি চলাকালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিলের জন্য ভোক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের হট্টগোল শুরু হয়। তারা গণশুনানি বাতিলের দাবি তুলে স্লোগান দেন।

গ্যাসে দুই দফা ভ্যাট, পেট্রোবাংলার বকেয়া ১৮ হাজার কোটি টাকা

০৮ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

টাকার অভাবে গ্যাস সরবরাহের বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। অথচ একই গ্যাসে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে দুবার শুল্ক-কর নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে এনবিআরের কাছে বকেয়া বাড়ছে সংস্থাটির। লোকসান ঠেকাতে এখন আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও কর প্রত্যাহার চায় তারা।

আর্থিক ঘাটতি কমাতে শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। এটি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রস্তাব অনুসারে দাম বাড়ানো হলে তিন হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে পেট্রোবাংলার। অথচ আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট-কর প্রত্যাহার হলে ৭ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারে পেট্রোবাংলা। প্রতি ইউনিট গ্যাসের আমদানি মূল্য ১৪ ডলার এবং প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে বছরে ১০০ কার্গো (জাহাজ) আমদানির বিপরীতে এ পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হিসাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

পেট্রোবাংলা বলছে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সময় তাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হচ্ছে। এর বাইরে পেট্রোবাংলাকে এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হচ্ছে। এভাবে বাড়তি রাজস্ব আদায় করে পেট্রোবাংলাকে আবার ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। যদিও শুধু আমদানি পর্যায়ে ১৭ শতাংশ ভ্যাট ও কর প্রত্যাহার করা হলে ভর্তুকির তেমন প্রয়োজন হবে না পেট্রোবাংলার।

বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানকাজের ধারাবাহিকতা চায় রাশিয়া

১২ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনালের কাজের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সহযোগিতা চেয়েছে রাশিয়া। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ অনুরোধ জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন।

গ্যাজপ্রম ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে গ্যাসের মজুদ অনুসন্ধানে অংশীদার হিসেবে কাজ করেছে। ২০২৩ সালে গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনাল ভোলায় আরো অনুসন্ধানের জন্য পাঁচটি নতুন কূপ চিহ্নিত করে। প্রধান উপদেষ্টা ভোলায় পাঁচটি কূপ খননের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য গ্যাজপ্রমকে ধন্যবাদ জানান।

কারিগরি ক্ষতিতে বাড়ছে গ্যাস অপচয়

১২ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চড়া দামে আমদানি করেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। অথচ কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। অবৈধ সংযোগ, অনুমোদনের চেয়ে বেশি ব্যবহার ও পাইপলাইনে ছিদ্রের (লিকেজ) কারণে অপচয় হচ্ছে গ্যাস। এ জন্য গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ও অদক্ষতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কারিগরি ক্ষতির নামে গ্যাসের অপচয় হয়েছে ১৩৭ কোটি ঘনমিটার। প্রতি ইউনিট (ঘনমিটার) এলএনজি আমদানি ও সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ ৭৯ টাকা ৩৪ পয়সা। এ হিসাবে গ্যাস অপচয়ের কারণে ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।

বিদ্যুতে ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়ছে গত অর্থবছরের তুলনায় ৭৭%

১৩ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ ৬২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণাকালে বিগত সরকার এ বাবদ বরাদ্দ রেখেছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। আর বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সে অনুযায়ী সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ। আর বিগত অর্থবছরের চেয়ে বরাদ্দ বাড়ছে ৭৭ শতাংশ।

তিতাস গ্যাসে সিস্টেম লসের আড়ালে ‘চোর চক্রের সুরক্ষা’

১৮ মার্চ ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গ্যাস সংকটের এই সময়ে একটি বৈধ সংযোগ পেতে দুর্ভেদ্য আমলা চক্রের বাধার মুখে পড়তে হলেও অবৈধ সংযোগ দেওয়া থেমে নেই।

একদিকে লোক দেখানো অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযান চলে, অন্যদিকে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গতিতে চলে চক্রগুলোর অবৈধ সংযোগ দেওয়ার তৎপরতা।

বিপুল গ্যাস চুরিকেও সিস্টেম লস দেখিয়ে কার্যত এই চোর চক্রকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।

১৯৯৬ সালের একটি আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাসকে ২ শতাংশ সিস্টেম লস হিসাব করার সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু সিস্টেম লস বেড়েছে এর কয়েকগুণ, অর্থাৎ কমে আসার পরিবর্তে চুরির কারণে সিস্টেম লস বছর বছর বাড়ছে।

ভর্তুকি বাড়িয়ে চাপ সামলানোর চেষ্টা বাংলাদেশের

৬ এপ্রিল ২০২৫, বণিক বার্তা

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি, লুণ্ঠন বন্ধ এবং বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের দাবি ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দুর্নীতি ও আর্থিক চাপ কমাতে শুরুতেই এ খাতের বিশেষ আইন স্থগিত এবং পরে বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বিদ্যুতের ক্রয়চুক্তি পর্যালোচনা, ট্যারিফ সংশোধনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের আট মাস পেরিয়ে গেলেও এ উদ্যোগে বিদ্যুতের সামগ্রিক ব্যয় যেমন কমেনি, তেমনি ভোক্তার বিদ্যুৎ খরচও কমানো যায়নি। এমনকি বিদ্যুতের কোনো ক্রয়চুক্তিও বাতিল করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।

বিদ্যুৎ খাতে পাকিস্তান সরকারের মতো ভোক্তামুখী পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে এ খাতের ব্যয় কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা দাবি করেন, সরকারের বিদ্যুৎ খাতে নেয়া পদক্ষেপগুলো জনকল্যাণমুখী নয়। একই সঙ্গে তাদের সদিচ্ছারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। পুরনো ও আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া বিদ্যুৎ খাতের মডেল অব্যাহত থাকায় এ খাতের স্থিতিশীলতা আনতে ভর্তুকিকে সমাধান বিবেচনা করা হচ্ছে।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক চাপ ও ব্যয় না কমার অন্যতম কারণ বিগত সরকারের রেখে যাওয়া বিপুল পরিমাণ বকেয়া। একই সঙ্গে চুক্তি বাতিলের আইনগত জটিলতা।

বিদ্যুৎ খাত সংস্কারে নানামুখী উদ্যোগ নিলেও এখনো এ খাতের দৃশ্যমান কোনো আর্থিক সুফল পাওয়া যায়নি। বরং আওয়ামী লীগ সরকারের বাজেটে দেয়া ৪০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি চলমান সংশোধিত বাজেটে আরো ২২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ৬২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এলএনজি কিনতে সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছে ৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চায়

১১ এপ্রিল ২০২৫, বণিক বার্তা

নগদ অর্থের সংকট, বিশেষ করে ডলারের অভাবে সম্প্রতি জ্বালানির দাম সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সব বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।

নগদ অর্থের সংকট, বিশেষ করে ডলারের অভাবে সম্প্রতি জ্বালানির দাম সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সব বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে স্থানীয় উৎস থেকে পর্যাপ্ত গ্যাস উত্তোলন করতে না পারায় চাহিদা মেটাতে দিন দিন বাড়ছে এলএনজি-নির্ভরতা। এ অবস্থায় জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে বিশ্বব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে সরকার। দীর্ঘমেয়াদি ও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য ৭০ কোটি ডলারের ঋণ সুবিধা নিতে বহুজাতিক এ দাতা সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা চলছে। চলতি বছরে দ্বিতীয়ার্ধে এ ঋণ সুবিধার বিষয়ে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানা যায়।

এবার ঢাকা-ভোলা পাইপলাইন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ গ্যাজপ্রমের

২৬ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

ভোলার উদ্বৃত্ত গ্যাস পাইপলাইনে ঢাকা পর্যন্ত আনার প্রকল্প নিয়ে আগ্রহী রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাজপ্রম। এ ব্যাপারে তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্নীতিবাজ মহলের সহযোগিতায় বেশি দামে গ্যাসকূপ খননের কাজ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে গ্যাজপ্রমের বিরুদ্ধে।

গ্যাস সংকট মেটাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় উৎস ভোলা। এই দ্বীপে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত ৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুটের (টিসিএফ) বেশি। বর্তমানে দিনে ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা কম হওয়ায় এবং সরবরাহ সুবিধা না থাকায় এর মধ্যে ১২ কোটি ঘনফুট অব্যবহৃত থাকছে। সিএনজি আকারে সীমিত পরিসরে গ্যাস ঢাকায় আনা হচ্ছে। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই উদ্বৃত্ত গ্যাস পাইপলাইনে ঢাকা পর্যন্ত আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

পরিবেশ

মেঘনার মিঠাপানিতেও অক্সিজেনের ঘাটতি, টিকতে পারছে না মাছ ও জলজ প্রাণী

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ভাটার টানে নদীর তীরে ভেসে উঠেছে চেউয়া, চিংড়ি, পাঙাশ, আইর, কাচকি, বেলেসহ বিভিন্ন জাতের মরা মাছ। মাছ ছাড়া সেলেং, ব্যাঙ, কুঁচিয়া, সাপসহ নানা জলজ প্রাণীও মরে ভেসে উঠছে। দূষিত পানি ও মরা মাছের পচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে নদীতীর থেকে পাশের লোকালয়েও, চারদিকে উড়ছে মশা-মাছি।

গত সোমবার মেঘনা নদীর চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর, ষাটনল, বাবুরবাজার, দশানী, ছটাকী, মোহনপুর, ফরাজীকান্দি, শিকিরচরসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, পানিদূষণের ফলে কয়েক দিন ধরে মেঘনায় বিভিন্ন জাতের মাছ মরছে। গত কয়েক দিনের মতো গতকালও নদীর তীরে বিভিন্ন জাতের মরা মাছের স্তূপ হয়ে গেছে। মরা মাছের দুর্গন্ধে নাকাল হচ্ছে নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।

স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবং পিএইচ ও অক্সিজেনের হার কমে যাওয়ায় ব্যাপক হারে মাছ মরছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশে মেঘনার মিঠাপানিও দূষিত হয়ে উঠেছে।

পান্থকুঞ্জ নিয়ে সরকারের নড়াচড়া নেই

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় ৫০ দিন ধরে আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চললেও সরকারের কোনো নড়াচড়া নেই। আন্দোলনের শুরুর দিকে তিন উপদেষ্টা এসেছিলেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথাও জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এখনো সে বৈঠক হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না, থাকলে প্রকল্প পর্যালোচনার উদ্যোগ নিত।

আজ শুক্রবার দুপুরে পান্থকুঞ্জ পার্কে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন আয়োজিত ‘পান্থকুঞ্জে ৫০ দিন: নাগরিক ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ’–এ বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশের নির্মাণকাজ বাতিলের দাবিতে ৫০ দিন ধরে পান্থকুঞ্জ পার্কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে সংগঠনটি।

সমাবেশের শুরুতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, এই আন্দোলন শুরুর কিছুদিনের মধ্যে সরকারের তিন উপদেষ্টা এসে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ৪০ দিন পার হলেও সেই অর্থে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। সরকারের দিক থেকে কোনো নড়াচড়া নেই। পান্থকুঞ্জ অংশে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও হাতিরঝিল অংশের কাজ চলমান। এটা প্রমাণ করে যে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরের সরকার, যারা নিজেদের জনমানুষের সরকার বলে, বিগত সরকারের স্বার্থের প্রকল্প বাতিলের কথা ছিল তাদের; কিন্তু সে উদ্যোগের লক্ষণ নেই।

ঢাকায় বায়ুদূষণ কমার লক্ষণ নেই, জানুয়ারিতে ভয়াবহ

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

শুকনা মৌসুমে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ প্রতিবছর বেশি থাকে; কিন্তু এবারের শুকনা মৌসুমে বায়ুদূষণের রেকর্ড ভাঙছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস শুকনা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। নভেম্বরে ঢাকার বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করে। সর্বশেষ নভেম্বরে বায়ুদূষণ ছিল আগের আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডিসেম্বরও বায়ুদূষণ ছিল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর সদ্য শেষ হওয়া জানুয়ারি মাসে বায়ুদূষণ আগের আট বছরকে ছাড়িয়ে গেছে।

জানুয়ারি মাসের দূষণের এ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া গত ৯ বছরের (২০১৭ থেকে ২০২৫) বায়ুমান সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে ক্যাপস। প্রতিষ্ঠানটি গতকাল বৃহস্পতিবার এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে।

বিশ্বের অন্যতম দূষিত রাজধানীর পরিবেশে কোনো উন্নতি নেই

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ দায়িত্ব পাওয়ার আগে দেশব্যাপী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে সক্রিয়তার জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালের জুলাই থেকে গত আগস্টে সরকারে যোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও। পরিবেশের সুরক্ষায় সক্রিয়তার স্বীকৃতি হিসেবে টাইম ম্যাগাজিনের ‘হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট’ খেতাবসহ দেশী-বিদেশী অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বছর দুই আগেও তিনি ধানমন্ডির গাছ কাটা, ঢাকার পার্ক ও খাল-জলাশয় বেদখল, নদী দূষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনে সরব ছিলেন।

পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ড. আসিফ নজরুল এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন। এগুলো হলো আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা ও মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে পরিবেশগত সমস্যাসংক্রান্ত পরামর্শক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা। দেশেও তিনি বাপার নির্বাহী কমিটি, জাতীয় কমিটি ও লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত। পরিবেশ সুরক্ষায় আইন প্রণয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে তার। বিশেষ করে বাপার উদ্যোগে পরিবেশ রক্ষায় কী কী আইন কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে, নতুন আর কোনো আইনের প্রয়োজন আছে কিনা বা বিদ্যমান আইনগুলোর পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী কাজ রয়েছে তার।

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাপার সহসভাপতি এবং নির্বাহী সদস্য হিসেবে পরিবেশ আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। পরিবেশসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব ও অভিঘাত নিয়ে নিয়মিত বিশ্লেষণ করতেন তিনি। বিশেষ করে বাজেটে পরিবেশের জন্য বরাদ্দ বা এর কোন কোন জায়গা পরিবেশের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারত তা নিয়ে বেশ সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন তিনি। দেশে বিভিন্ন পরিবেশ আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি তৈরিতে বড় ভূমিকা রয়েছে তার। অন্তর্বর্তী সরকারের মোট পাঁচজন উপদেষ্টা জীবনের বিভিন্ন সময়ে পরিবেশকর্মী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তাদের অন্তর্ভুক্তি দেশের প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বেশ আশাবাদী করে তুলেছিল। পরিবেশ-প্রতিবেশের বিভিন্ন উপাদানের দূষণ কমানোর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর ও যথাযথ দিকনির্দেশনামূলক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গত ছয় মাসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও পরিবেশ সূচকের তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। এখনো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানীগুলোর অন্যতম ঢাকা, বিশেষ করে বায়ুদূষণের দিক থেকে। প্রায়ই বৈশ্বিক বায়ুদূষণ সূচক আইকিউএয়ারের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষস্থানে উঠে আসছে ঢাকা।

চরকে ফোরশোর দেখিয়ে ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

রাজধানী ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে উত্তর দিকে তাকালেই চোখে পড়ে চনপাড়া চর। লম্বায় ৯০০ মিটার ও প্রস্থে ২০০ মিটার। ছোট্ট সুন্দর ছিমছাম চরটির পশ্চিমে বালু আর পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদী। চরটি থেকে একটু দক্ষিণে বালু নদ এসে মিশেছে শীতলক্ষ্যায়। দুই নদ-নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরটিকে ফোরশোর (তীরভূমি) দেখিয়ে ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

অন্যদিকে চরের উত্তর দিকের শেষ মাথা থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত নাব্য সংকটে বন্ধ রয়েছে নৌ-চলাচল। অথচ একসময় বড় বড় নৌযানে জমজমাট থাকত বালু আর শীতলক্ষ্যা। এখন বাল্কহেড আর ট্রলারই বেশি চলে। তাই ইকোপার্ক নয়, বরং চরটি খনন করে নৌ-চলাচলের উপযোগী করে দিলে নদী রক্ষায় তা বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নয়তো কয়েক বছরের ব্যবধানে উত্তর দিকের মতো চরের আশপাশের পুরো জায়গাই বেদখল হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দুই নদীর গতিপ্রবাহও স্থায়ীভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, সম্প্রতি নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন শীতলক্ষ্যা পরিদর্শনে গেলে চনপাড়া চরটি তার নজরে আসে। চরটির ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বন্দর কর্মকর্তারা তাকে জানান, এখানে একটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে চরটি সংরক্ষিত থাকার পাশাপাশি জনপরিসরও তৈরি হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নৌ উপদেষ্টা চর সংরক্ষণের জন্য বিআইডব্লিউটিএকে উদ্যোগ নিতে বলেন।

ভবদহে জলাবদ্ধতায় আবাদ হয়নি ৮ হাজার হেক্টর জমি

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের কৃষক নিখিল বৈরাগীর বিলে জমি আছে আড়াই বিঘা। ওই জমির দুই বিঘা পড়েছে বিল বোকড়ে। ১০ কাঠা জমি পড়েছে বিল কেদারিয়ায়। ১০ বছর ধরে বিল দুটি জলাবদ্ধ। এ সময় বিলের তিন ফসলি ওই জমি থেকে তিনি কোনো ফসল পাননি।

গত বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় তিনি সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে দুই বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছিলেন। এবারও সেচে ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করতে পারবেন বলে নিখিলের মনে আশা জেগেছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে জমি থেকে পানি না নামায় এবার ধানের একটি চারাও লাগাতে পারেননি তিনি। নিখিল বৈরাগী বলেন, ‘জমিতে এখনো বুকসমান পানি। জমিতে বোরো চাষ করতে পারলাম না।’

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের বেশির ভাগ বিলে কোথাও কোমরসমান আবার কোথাও বুকসমান পানি। নিখিল বৈরাগীর মতো ভবদহ অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষক এবার বিলের জমিতে বোরো ধানের চাষ করতে পারেননি।

নিরাপদ পানি পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার, হাই কোর্টের রায়

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিরাপদ খাবার ও ব্যবহারযোগ্য পানিকে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করে হাই কোর্ট রায় দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের বেঞ্চ এই রায় দেয়।

হাই কোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের বেঞ্চ ২০২০ সালে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছিল। পরে আদালতকে সহায়তা করতে কয়েকজন আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

মনজিল মোরসেদ, মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং মানবাধিকার সংগঠন বেলার তরফে মিনহাজুল ইসলাম আইনজীবী হিসেবে এ সহায়তা দেন।

আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাবার ও ব্যবহারযোগ্য পানি নিশ্চিত করতে ২০২০ সালে সুয়েমটো রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট। সেখানে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ পানযোগ্য পানি সরবরাহ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব কি না, অথবা এই নিরাপদ পানি পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

“উক্ত রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আজ আদালত রায় ঘোষণা করেছেন।

রায় আদালত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ এবং বিশুদ্ধ পানযোগ্য পানি পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার এবং এই পানির অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”

নিরাপদ পানযোগ্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আদালত কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে বলেও জানান আইনজীবী পল্লব। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্থাৎ আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাসপাতাল, রেল স্টেশন, হাট- বাজার, এয়ারপোর্টসহ প্রত্যেক পাবলিক প্লেসে নিরাপদ পানযোগ্য পানি প্রত্যক নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিরাপদ এবং পানযোগ্য পানি সাশ্রয়ী মূল্যে নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২০২৬ সালের মধ্যে সব পাবলিক প্লেসে বিনামূল্যে নিরাপদ পানি সরবরাহে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে সরকারকে।

আইনজীবী পল্লব বলেন, “এই আদেশটি একটি চলমান আদেশ হিসেবে থাকবে। হাই কোর্ট কর্তৃক ঘোষিত তুরাগ নদীর রায়, সোনারগাঁয়ের রায় ও হাতিরঝিলের রায়ের নির্দেশনাগুলিও এই রায়ের নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত হবে।

“বাংলাদেশের যত পানির উৎস রয়েছে, এই পানির উৎস যাতে ক্ষয়িষ্ণু না হয় অর্থাৎ পানি শুকিয়ে না যায়, পানি অনিরাপদ না হয়, পানি দূষিত না হয়- সেগুলোকে সংরক্ষিত করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ, নগর হিসেবে তৃতীয় ঢাকা

১১ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ নগর ছিল ঢাকা। আগের বছর (২০২৩) এ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল আর নগর হিসেবে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। এবার বায়ুদুষণে শীর্ষ দেশটি হলো আফ্রিকার দেশ চাদ। আর নগর হিসেবে শীর্ষে আছে ভারতের রাজধানী দিল্লি।

আজ মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৪’–এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক আইকিউএয়ারের সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পুড়ছে মাতুয়াইলের ভাগাড়, বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছেন স্থানীয়রা

১২ মার্চ ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা

“বেশ কয়েকদিন যাবত সন্ধ্যার পরে যাত্রাবাড়ীতে আমার বাসায় ধোঁয়া দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এতদিন এর কারণ বুঝতে পারিনি। এখন জানতে পারলাম, এই ধোঁয়া মাতুয়াইলের ল্যান্ডফিল থেকে আসছে। ধোঁয়ায় চোখমুখ জ্বালাপোড়া করে। মাঝেমধ্যে তো সন্ধ্যার পরে শ্বাস নেওয়াও কষ্টকর হয়ে ওঠে,” দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন ভুক্তভোগী সিরাজুল।

সোমবার সকালে যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম রাস্তা পার হওয়ার সময় চোখে জ্বালাপোড়া অনুভব করেন। এ সময় বাতাস ছিল ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, যা মাতুয়াইলের দিকে এগোতেই আরও তীব্র হতে থাকে।

পরে তিনি জানতে পারেন, এ দূষণের উৎস মাতুয়াইলের ময়লার ভাগাড়। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বর্জ্য পুড়ছে সেখানে।

কেবল সিরাজুল একা নন। মাতুয়াইল, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, কাজলা, বিবি বাগিচা, দয়াগঞ্জ, গোলাপবাগ, ঢালপুর, সায়েদাবাদ, মানিকনগর এবং আশপাশের এলাকার বাসিন্দারাও এ বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

আর বিষাক্ত ধোঁয়ার উৎস মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের বিশাল অংশে লাগা আগুন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলের আয়তন প্রায় ১৮১ একর। এই ল্যান্ডফিলে প্রতিদিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকা থেকে প্রায় ৩,৫০০ টন বর্জ্য এনে সংরক্ষণ করা হয়।

সম্প্রতি মাতুয়াইলের এই ময়লার ভাগাড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইতোমধ্যে ল্যান্ডফিলের ২-৩টি বিশাল আকৃতির ময়লার স্তূপ অধিকাংশ পুড়ে কয়লায় পরিণত হয়েছে এবং সেগুলো থেকে ব্যাপক কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এছাড়া, বাকি স্তূপগুলোতেও অসংখ্য স্থানে থেমে থেমে আগুন জ্বলছে এবং চারিদিক কালো ধোঁয়ায় আবৃত।

বদলে যাওয়া কৃষিতে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

১৩ মার্চ ২০২৫, সমকাল

যতদূরে চোখের ব্যাপ্তি, ততদূর সবুজ। অনাবাদি নেই একচিলতে জমিও। একসময় আমন ধান কাটার পরই শুষ্ক মৌসুমে মাঠে মাঠে ধুম পড়ত রবি ফসল চাষে। তরমুজ, ডাল, বাদাম, মরিচ, শীতকালীন সবজি, সরিষা, কালিজিরা, সূর্যমুখীতে হাসত চরের মাটি।

তবে কয়েক বছরে বদলে গেছে নোয়াখালীর রবিশস্যের ভান্ডার উপকূলীয় জনপদ সুবর্ণচরের চাষাবাদ। রবিশস্য ছেড়ে বোরো (ইরি) ধান চাষ করছেন কৃষক। শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষই এখন সুবর্ণচরের জন্য অভিশাপ! খাল-বিল-ডোবায় ভরপুর মিঠাপানির রাজ্যে এখন পানীয় জলের হাহাকার।

ধান চাষে ভূগর্ভের পানি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে বাড়িঘরের গভীর নলকূপে এখন আর পানি ওঠে না। পুকুর-জলাশয়েও পানি থাকছে না। সুপেয় পানি কিনে খেতে হচ্ছে অনেককে। এতে গৃহস্থালির কাজে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। বিশুদ্ধ পানির অভাবে সুবর্ণচরের লাখ লাখ মানুষ দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন।

হাওরের বুক চিরে হচ্ছে সড়ক, কৃষক-ফসলি জমির সর্বনাশ

১৮ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

হাওরে এখন বোরো ধানের সমারোহ। শ্রমে-ঘামে ফলানো সোনার ধান বৈশাখে গোলায় তুলবেন কৃষক। লাখো মানুষের জীবন-জীবিকার এই হাওরের বুক চিরে সড়ক নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরে চার কিলোমিটার লম্বা সড়কের জন্য জমির ক্ষতিপূরণ দূরে থাক, ধান নষ্টের বিষয়েও কৃষকদের কেউ বলার প্রয়োজন মনে করছেন না।

কৃষক ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, হাওরের মাঝখান দিয়ে এভাবে সড়ক হওয়ায় প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। এতে বর্ষায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। উজানে দেখা দেবে জলাবদ্ধতা। হাওরের সর্বনাশা এই কাণ্ড ঘটছে প্রশাসনের চোখের সামনে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্পে সাংহাই হাওরে সড়কের কাজ হচ্ছে। সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। ঢাকার জেবি ইনোভেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করছে। গত বছর কাজ শুরুর পর পানি চলে আসায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কাজ। চলতি বছর কয়েক দিন ধরে কয়েকটি খননযন্ত্র দিয়ে ফসলি জমিতে মাটি কাটা শুরু হয়েছে।

সাগরে রানওয়ে সম্প্রসারণে মহেশখালী চ্যানেলে নাব্য সংকট

১৮ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৪ শতাংশ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সম্প্রসারিত রানওয়ে ও উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণে সহায়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে বাঁকখালী নদী ও সাগরের মোহনায় মহেশখালী চ্যানেলের মুখে। নদীর দিকে নদীপ্রস্থের প্রায় ৫৯ শতাংশজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে অবকাঠামো। অস্থায়ী জেটিসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে নদীর ফোরশোর বা তীরভূমিতে। এতে কাজ শেষ হওয়ার আগেই আশপাশের প্রতিবেশে প্রকল্পটির বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। নাব্য হারাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকাসংলগ্ন মহেশখালী চ্যানেলের আড়াই কিলোমিটার অংশ। বড় ধরনের পরিবেশগত ঝুঁকিতে পড়েছে চ্যানেলটি। এমনকি অদূরে সোনাদিয়া দ্বীপের জনজীবনও হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় চ্যানেলে পাইলিং করে নির্মিত রানওয়ের সহায়ক কাঠামো উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

পাঁচ জেলার ৪০% এলাকায় পানির তীব্র সংকট

২২ মার্চ ২০২৫, সমকাল

‘পানির মতো সহজ’ কথাটি বাংলাদেশে সুপেয় পানির ক্ষেত্রে খাটছে না। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলসহ অর্ধেক এলাকায় গত কয়েক বছর মিলছে না নিরাপদ পানি। বছর পাঁচেক আগেও যেসব এলাকায় পানি ছিল সহজলভ্য, এখন সেখানেই তীব্র সংকট।

শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলেরই এক-তৃতীয়াংশের বেশি এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট। বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনার মতো অসংখ্য নদনদীবেষ্টিত এলাকায়ও পানির সংকট তীব্র। রাজবাড়ীর মতো পদ্মা তীরের জেলায় শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যাচ্ছে পুকুর-খাল; পানি উঠছে না নলকূপে। হাওরেও একই সংকট।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ও বর্জ্য

হুমকির মুখে দক্ষিণের পাঁচ নদীর জীববৈচিত্র্য

২২ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে ২০১৭ সালে পটুয়াখালীতে নির্মাণ করা হয় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প-১। এর দুই বছর পর ২০১৯ সালে এর পাশেই নির্মাণ করা হয় আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের (আরএনপিএল) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত বছর চালু হয়েছে বরগুনার তালতলী পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প-২। কয়লাভিত্তিক এ তিন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা জ্বালানি নৌপথে খোলা জাহাজে পরিবহন ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। হুমকির মুখে পড়েছে পায়রা, আন্ধারমানিক, রাবনাবাদ, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর জীববৈচিত্র্য। নদীতে মাছ উৎপাদন কমেছে। অন্যদিকে নদীর পানির গুণগত মান পরীক্ষার জন্য বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরে থাকা একমাত্র ল্যাবটি বন্ধ প্রায় পাঁচ বছর। গুণগত মান পরীক্ষা ছাড়াই নদীর পানি ব্যবহার করছে এখানকার কোটি মানুষ।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও বরগুনার তালতলীতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি পরিবহন ও বর্জ্যের কারণে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণে জীববৈচিত্র্য, বনাঞ্চল ও মৎস্যসম্পদের ক্ষতি নিয়ে শঙ্কিত উপকূলের বাসিন্দারা। পরিবেশবিদরা বলছেন, কয়লা থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড, বিষাক্ত সালফার, সিসা ও ভারী ধাতু নিঃসরণের ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। হুমকির মুখে পড়েছে পটুয়াখালী জেলার উপকূলীয় আন্ধারমানিক, পায়রা, রাবনাবাদ ও বরগুনার বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর জীববৈচিত্র্য। এসব নদীতে এখন আর দেখা মিলছে না ইলিশসহ দেশী প্রজাতির কোনো মাছের। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে কয়েক হাজার মৎস্যজীবী পরিবার। বাধ্য হয়ে তারা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।

ওয়াসার পানিতে পোকা, বাসিন্দাদের ভোগান্তি

১২ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

‘গোসল করতে গেলেন, শাওয়ার ছাড়লেন। পানির সঙ্গে যদি পোকা এসে গায়ে পড়ে কেমন লাগবে? এটাই আমার সঙ্গে হয়েছে। এত নোংরা পানি, সঙ্গে কী সব কালো ছোট্ট পোকা, দেখলেই গা গুলিয়ে আসে। এভাবে কি পানি ব্যবহার করা সম্ভব!’

কথাগুলো রাজধানীর কল্যাণপুরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা কাকলী খানের। গত বুধবার ফেসবুকে ‘কল্যাণপুর’ নামের একটি গ্রুপে পানি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথাগুলো লেখেন তিনি।

পানিতে পোকার সমস্যা জানিয়ে কল্যাণপুরের বাসিন্দাদের ওই ফেসবুক গ্রুপে প্রতিদিনই লেখালেখি হচ্ছে। শুধু কল্যাণপুর নয়, রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় ওয়াসার পানিতে পোকা বা দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানির সমস্যার অভিযোগ উঠেছে। পোকা পাওয়া যাচ্ছে শুধু ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে। পোকার রং কোথাও লালচে, কোথাও কালো।

পোকা পাওয়া যাচ্ছে এমন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিষয়টি ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে পানি সংরক্ষণাগার ও বাসার ছাদের ট্যাংক পরিষ্কারের কথা বলা হয়। কিন্তু এসব করার পরও পানিতে পোকা আসছে। পরে এ কথা জানালে পানির কলের মুখে ছাঁকনি বা কাপড় বাঁধতে বলছেন ওয়াসার কর্মীরা। এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তাঁরা।

হারিয়ে যাওয়া খেলার মাঠ ও ইনডোরের রমরমা ব্যবসা

১৪ এপ্রিল ২০২৫, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

২০০০ সাল শুরুর আগে যারা বড় হয়েছেন তাদের কাছে খেলার মাঠ ছিল ‘সেকেন্ড হোম’। ফুটবল পায়ে নিয়ে দৌড়ানো শিশুদের চিৎকারে স্কুলের মাঠগুলো মুখরিত থাকতো। বাতাসে ভাসতো ক্রিকেট বল। গাছে রশি দিয়ে বাঁধা হতো ব্যাডমিন্টনের নেট।

সন্ধ্যা তখনই হত যখন সূর্য ডুবে চারপাশ অন্ধকার করে দিত। ঘামে ভেজা শরীরে ধুলাবালি নিয়ে দেরি করে ঘরে ফেরা শিশু-কিশোরদের শুনতে হতো বাবা-মায়ের বকাঝকা।

কিন্তু আজ সেসব মাঠে সুনসান নীরবতা।

নতুন শতাব্দীতে দেখা দেয় ভিন্ন ঘটনা। এখন শিশুদের তিরস্কার করা হয়—ঘরে থাকার জন্য, সারাক্ষণ স্ক্রিনে চোখ রাখার জন্য, স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য ইত্যাদি।

এর দায় শিশুদের দেওয়া ঠিক না। শপিং মল ও অ্যাপার্টমেন্ট মাঠগুলোকে খেয়ে ফেলেছে।

অবশিষ্ট যে কয়েকটি খোলা জায়গা আছে সেগুলো হয় তালাবদ্ধ না হয় জনাকীর্ণ।

রাজধানী ঢাকা এমনকি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে খোলার মাঠগুলো নগরায়নের ভারে চাপা পড়ে গেছে। আজকের তরুণদের অভিভাবকরা আক্ষেপ করেন খেলার জায়গার অভাব বলে।

তাই বলা যায়, আজকের শিশুদের ঘরে থাকার সমস্যা তাদের আলস্য নয়; বরং খেলার মাঠের অভাব।

ফুটসালের উত্থান: প্রয়োজনীয়তা থেকে জন্ম নেওয়া ব্যবসা

কিন্তু যেখানে শূন্যতা, সেখানেই উদ্যোক্তারা সুযোগ দেখতে পান।

২০০০ এর দশকে দেশের শহরাঞ্চলে এই নতুন ধারার উদ্ভব ঘটে। নাম ফুটসাল। ফুটবলের ছোট সংস্করণ। খেলা হয় কৃত্রিম মাঠে।

ঐতিহ্যবাহী ফুটবলের জন্য বিশাল খোলা মাঠের প্রয়োজন। ফুটসালের জন্য দরকার ছোট খোলা ছাদ বা সামান্য পরিমাণে খালি জায়গা। একটি বড় ঘরের মেঝেও ফুটসালের মাঠ হতে পারে।

একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন রেজাউল ইসলাম। বয়স ত্রিশের কোঠায়। কুমিল্লায় তার গ্রামে প্রতিদিন বিকেলে ফুটবল খেলার কথা মনে পড়ে। ফুটবল বা ক্রিকেট খেলা সাধারণ বিষয় ছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময়ও তিনি প্রতিদিন খেলতেন।

কিন্তু কাজের খোঁজে যখন ঢাকায় আসেন, তখন ভেবেছিলেন খেলার দিন শেষ। কিন্তু হঠাৎ তিনি একটি কৃত্রিম মাঠের কথা জানতে পারেন। আর ফিরে আসে শৈশবের স্মৃতি।

‘খেলা আমাকে প্রশান্তি দেয়। এমন প্রশান্তি কোথাও পাই না। যেহেতু খোলা জায়গা বা সবার জন্য খেলার মাঠ নেই, তাই কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে ব্যক্তিগত মাঠে ফুটসাল খেলি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সন্ধ্যায় খেলি, কারণ দিনে গরমে খেলা কষ্টকর।’

কৃত্রিম ঘাসের অর্থনীতি

ব্যবসার মডেলটি সহজ: অব্যবহৃত জায়গার খোঁজ নিন, টার্ফ-ফ্লাডলাইট বসান ও সময়ের উপর ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারণ করুন।

অপারেটররা মাঠের জায়গা, সুযোগ-সুবিধা ও বুকিংয়ের সময়ের ওপর নির্ভর করে প্রতি সেশনে সাধারণত দেড় হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন। ভাড়া দেওয়া হয় ৯০ মিনিটের জন্য।

বিকেল ৫টায় পিক আওয়ার শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। বাকিটা অফ-পিক হিসেবে বিবেচিত হয়।

সন্ধ্যায় চাহিদা বেশি থাকলে খরচ বেশি হয়। সে সময় বিদ্যুৎ বিলও খরচের সঙ্গে যোগ হয়।

মিরসরাই জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল

দৃশ্যমান বিনিয়োগ যৎসামান্য, বড় পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা

১৮ এপ্রিল ২০২৫, বণিক বার্তা

দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল মিরসরাই জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল, যার আয়তন প্রায় ৩৪ হাজার একর। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাস্তবায়নাধীন এ উন্নয়নের ধারায় উঠেছে অনেক অভিযোগ। বিনিয়োগ প্রকল্প সচল রাখতে মিলছে না চাহিদা অনুযায়ী পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা। সর্ববৃহৎ এ শিল্প কর্মযজ্ঞে তাই দৃশ্যমান বিনিয়োগ যৎসামান্য। এখনো গড়ে ওঠেনি উল্লেখযোগ্য শিল্প-কারখানা। তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি কর্মসংস্থানেও। অন্যদিকে উপকূলীয় বনাঞ্চল দখল করায় বিপন্ন হচ্ছে প্রাণিকুল। ফলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনা হয়েছে সামগ্রিক পরিবেশে।

মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয় ২০১২ সালে। চট্টগ্রামের সর্ব উত্তরের উপজেলা মিরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজীসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেল উপকূলবর্তী চরের ৩৩ হাজার ৮০৫ একর জমির মধ্যে নির্মাণ হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ এ শিল্পাঞ্চল। এর মধ্যে বনের জমি রয়েছে ২২ হাজার ৩৩৫ একর। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে সৃজিত ও প্রাকৃতিক বনসমৃদ্ধ বিপুল এ জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে হস্তান্তর করেছিল বনবিভাগ। অথচ এ বনে রয়েছে উপকূল রক্ষার বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ছাড়াও নানান প্রাণবৈচিত্র্য। অবকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে এরই মধ্যে এ বনের সাড়ে ১৩ লাখ গাছ কাটা হয়েছে। বিলুপ্ত কিংবা অন্যত্র সরে গেছে প্রাণিকুলও।

সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন নিষিদ্ধ

২১ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) এর মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। এ বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে জাতীয় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কমিটির নির্বাহী কমিটির ১৬তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

যাতায়াত ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনা

বেইলি রোড ট্র্যাজেডির এক বছর, সুপারিশের একটিরও বাস্তবায়ন নেই

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

রাজধানীর বেইলি রোডের কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত রাজউকের তদন্ত কমিটির ছয়টি সুপারিশের একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে রাজধানী ঢাকা কার্যত একটি অগ্নিকুণ্ডলীর মধ্যেই রয়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান সমকালকে বলেন, ‘কোজি কটেজ ট্র্যাজেডির পর গণমাধ্যমের চাপে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো কিছু হম্বিতম্বি করল। পরে আর সেটি থাকেনি। তারা (কর্তৃপক্ষ) বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে রাজউক ইমারত নির্মাণ বিধিমালার সংশোধন করছে। নকশা পাস করছে। কিন্তু ভবনটি সঠিকভাবে নির্মিত হচ্ছে কিনা, সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা, তা দেখছে না। অন্যদিকে অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও রাজউক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো ইন্সপেক্টর বা অথরাইজড অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। গত এক বছরেও তাদের চোখ-কান খোলেনি।’

ঈদের আগে রাস্তায় ছয় লাখের বেশি আনফিট গাড়ি

১৬ মার্চ ২০২৫, বণিক বার্তা

ফিটনেস সনদ থাকা বাধ্যতামূলক, দেশে এমন যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। এর মধ্যে ছয় লাখের বেশি অর্থাৎ নিবন্ধিত ৩৬ শতাংশের বেশিই আনফিট। আসন্ন ঈদুল ফিতরে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে এর বড় একটি অংশই থাকবে রাস্তায়। আর এসব বাহনের কারণে দুর্ঘটনা, যানজটের পাশাপাশি সড়কে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিআরটিএর হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০ হাজার ৮৬৮টি বাস, ১১ হাজার ১৮৫টি মিনিবাস, ৫৭ হাজার ৪১টি ট্রাক, ৭৩ হাজার সাতটি প্রাইভেট কার, ৩০ হাজার ৫৩৮টি মাইক্রোবাস, ৭২ হাজার ১৫৯টি পিকআপ ভ্যান, ৩৯ হাজার ৫৯১টি ট্রাক্টর, ১৪ হাজার ৩৮০টি হিউম্যান হলার, ৩ হাজার ৮১১টি অ্যাম্বুলেন্স, ২ লাখ ৫ হাজার ৬৪৭টি অটোরিকশার ফিটনেস বা হালনাগাদ ফিটনেস সনদ নেই।

সেই জাঙ্গালিয়ায় আবার সড়ক দুর্ঘটনা, নারী-শিশুসহ নিহত ৮

০২ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ আটজন নিহত হয়েছেন।

আজ বুধবার সকাল ৭টার দিকে চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথম আলোকে এই দুর্ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করেছেন দোহাজারী হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মতিন।

লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন নারী ও ৭ বছরের একটি মেয়েশিশু রয়েছে। এই দুর্ঘটনায় চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

হতাহত ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী রিলাক্স পরিবহনের দ্রুতগতির যাত্রীবাহী একটি বাস চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকার মহাসড়কের একটি বাঁকে আসে। তখন চালক ‘হার্ড ব্রেক’ করতে গেলে বাসটির সামনের অংশ ঘুরে যায়। এতে বাসটি মহাসড়কে আড়াআড়ি হয়ে যায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা কক্সবাজারগামী দ্রুতগতির একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়। মুহূর্তেই কক্সবাজারগামী দ্রুতগতির আরেকটি মাইক্রোবাস দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় গত সোম ও মঙ্গলবার পৃথক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

সোমবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ তরুণ নিহত হন। আহত হন নয়জন।

অন্যদিকে মঙ্গলবার ভোররাত ৪টার দিকে পর্যটকবাহী দুটি মাইক্রোবাস উল্টে ৯ আরোহী আহত হন।

পুলিশ বলছে, বিপজ্জনক বাঁকের কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

ঢাকায় ফিরতে দ্বিগুণ খরচা বাস-লঞ্চে জিম্মি যাত্রী

০৪ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা গোলাম রব্বানি। স্ত্রীসহ ঈদ করতে রংপুরে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। শনিবারই তাঁকে যোগ দিতে হবে কর্মস্থলে। ঢাকায় ফেরার জন্য গতকাল শুক্রবার বাসের টিকিট পাচ্ছিলেন না। এদিন সকাল থেকে রংপুর নগরীর কামারপাড়ার ঢাকা কোচস্ট্যান্ডের সবগুলো বাস কাউন্টার ঘুরেও পাননি টিকিট। বাধ্য হয়ে বিকেলে তিনি শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের দুটি টিকিট (রংপুর-ঢাকা) কালোবাজারে কিনেছেন ৩ হাজার ২০০ টাকায়। যদিও প্রতিটি টিকিটের দাম ৮৬০ টাকা।

গোলাম রব্বানি বলেন, কাউন্টার থেকে জানানো হচ্ছে, ৮ এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট শেষ। অথচ দ্বিগুণ দামে কালোবাজারে টিকিট মিলছে। ৮৬০ টাকার প্রতিটি টিকিট ১ হাজার ৬০০ টাকা করে কিনতে হয়েছে তাঁকে।

গোলাম রব্বানির মতো রংপুরে ঈদ করতে আসা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বাসের টিকিট না পেয়ে নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। রংপুর-ঢাকা রুটে টিকিটের দাম দ্বিগুণ করা হয়েছে। ঈদকে ঘিরে কোনো নিয়ম-নীতি না থাকায় যাত্রীরা বাস কাউন্টারগুলোর কর্মচারীদের কাছে একরকম জিম্মি। ঢাকায় ফিরতে সাধারণ বাসের অগ্রিম টিকিট বিআরটিএ কর্তৃক ৮৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সেই টিকিট কালোবাজারে অন্তত ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিলাসবহুল বাসের মালিকরাও ঈদ-পরবর্তী ১০ দিনের জন্য ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। কাউন্টারগুলোতে ঝুলানো টিকিটের মূল্য তালিকায় দেখা যায়, পুরোনো এসি বাসের টিকিট ১ হাজার ৬০০ টাকা (আগে ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা) এবং হুন্দাই বাসের টিকিট করা হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা (আগে ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা)। তবু ৮ এপ্রিল পর্যন্ত কোনো বাসের টিকিট কাউন্টারে মিলছে না। তালিকার দ্বিগুণ টাকায় কালোবাজারে টিকিট কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

সড়কে প্রাণহানি আগের চেয়ে বেশি

২৫ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। দুর্ঘটনার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর মার্চে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬১২ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৪৬ জন আহত হয়েছেন। গত বছরের একই মাসের তুলনায় প্রাণহানির সংখ্যা ৪৭টি বেশি। গত বছরের মার্চে ৫৫২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ৫৬৫ জন, আহত ১২২৮ জন। দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও বেড়েছে। গত বছর যেখানে ১৮১ দুর্ঘটনায় ২০৩ জন নিহত ও ১৬৬ জন আহত হয়েছিলেন, এবার সেখানে ২২৭টি দুর্ঘটনায় ২৫১ জন নিহত এবং ২০৮ জন আহত হয়েছেন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এসব তথ্য জানায়। জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্র থেকে তারা এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে। সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, মার্চে মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ২৭ শতাংশ ঘটেছে মোটরসাইকেলে, যা মোট নিহতের ৪১.০১ শতাংশ এবং আহতের ১৬.৬৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, ১৪৮টি। এসব দুর্ঘটনায় ১৫০ জন নিহত ও ৩৬৪ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে; ৩১টি। এসব দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত ও ৮৬ জন আহত হয়েছেন।

পররাষ্ট্র বিষয়ক

ভারতীয় কোম্পানি নুমালিগড় থেকে আনা হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

ভারতীয় কোম্পানি নুমালিগড় থেকে আনা হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল

ভারতীয় কোম্পানি নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল আমদানি করবে সরকার। চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে এ ডিজেল আমদানি করা হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪ মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার মতো।

হাসিনার বক্তব্যে ‘ভারতের দায় নেই’, বাংলাদেশের দূতকে পাল্টা তলব

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সমকাল

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রসমাজের উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের কিছু করার নেই। আজ শুক্রবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এমনটি জানিয়েছেন।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বিকেল ৫টায় বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো. নুরুল ইসলামকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব প্রসঙ্গে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক, গঠনমূলক ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক চায় ভারত। সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলোতেও এটি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বক্তব্যে ভারতকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ শাসন ব্যবস্থার জন্য ভারতকে দায়ী করা হচ্ছে। এসব মন্তব্যই মূলত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

রণধীর জয়সওয়াল আরও বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু মন্তব্য ব্যক্তিগত পর্যায়ের, যেখানে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই। এসব মন্তব্যের সঙ্গে ভারত সরকারের অবস্থানকে গুলিয়ে ফেলা সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে না।’

আদানির কাছ থেকে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ চেয়েছে বাংলাদেশ

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। খবর রয়টার্সের।

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি গোষ্ঠীর কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। নভেম্বর থেকে একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ। এখন আবার দুটি ইউনিট থেকেই উৎপাদিত সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম ছিল। এ ছাড়া বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ নিয়ে বিরোধের কারণে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছিল। সরবরাহ এখন আগের পর্যায়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

অবশেষে কুড়িগ্রামের বাঁশজানি সীমান্ত থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা সরাল বিএসএফ

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দক্ষিণ বাঁশজানি-ভারত সীমান্ত থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা সরিয়ে নিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার পর সীমান্ত এলাকার গাছের ওপর লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নেওয়া হয়।

কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান সিসিটিভি খুলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত সোমবার সকালে বিএসএফ আন্তর্জাতিক সীমানাপিলার ৯৭৮–এর ৯ এস সাবপিলারের পাশে ভারতের নো ম্যান্স ল্যান্ডে গাছের ওপর সিসিটিভি ক্যামেরাটি লাগায়। ওই ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয় এবং সোমবার দিনভর বিজিবি ও বিএসএফের ক্যাম্প এবং কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে কয়েক দফা পতাকা বৈঠক হলেও সুরাহা হয়নি। গতকাল দুপুরে দুই দেশের অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সীমান্ত এলাকা থেকে বিএসএফ সিসিটিভি ক্যামেরা সরিয়ে নিতে সম্মত হয়। রাত ১১টার পর ভারতীয় অংশের ওই গাছ থেকে বিএসএফ সিসিটিভি ক্যামেরা সরিয়ে নেয়।

অন্য দেশ বাতিল করলেও আদানির বিতর্কিত চুক্তি নিয়ে নত অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকার

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

ভারতীয় ধনকুবের আদানি গ্রুপের চেয়ারপারসন গৌতম আদানি ও তার কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে গত বছরের নভেম্বরে ঘুস ও প্রতারণার অভিযোগ তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল কৌঁসুলিরা। এর পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা চালাতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে যায় গ্রুপটি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বন্ড বিক্রির পরিকল্পনা বাতিলে বাধ্য হয় আদানি গ্রুপ। বিমানবন্দর ও বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের চুক্তি বাতিল হয় কেনিয়ায়। আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ট্যারিফ পুনর্মূল্যায়ন করা হয় শ্রীলংকায়। এদিক থেকে বিপরীত চিত্র শুধু বাংলাদেশেই। এখনো আদানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত বিতর্কিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাতিল বা সংশোধনের মতো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরং আদানিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছে সরকার। আদানির এ বিতর্কিত চুক্তির বিরুদ্ধে এখনো কঠোর কোনো অবস্থান নিতে না পারাকে সরকারের এক প্রকার নতজানু নীতির প্রয়োগ হিসেবে দেখছেন বিদ্যুৎ খাতের পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা।

খুব শিগগির সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রথম সদস্য হিসেবে ভারত সফরে গিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। দেশটিতে গতকাল শুরু হওয়া এনার্জি উইক সম্মেলনে অংশ নিতে এখন সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। সম্মেলনের গতকাল ও আজকের অধিবেশনে যোগ দিয়ে তা শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার। এ সফরে আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নেই বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং আদানি গ্রুপসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশের ঘটনাবলিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’–এর ভূমিকা নাকচ করে দিলেন ট্রাম্প

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

বাংলাদেশের ঘটনাবলিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’–এর কোনো ভূমিকা থাকার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্র সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ট্রাম্প। বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মোদি প্রতিবেশী বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে তাঁর উদ্বেগের কথা জানান।

যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডিপ স্টেট’ বলতে কেন্দ্রীয় সরকারের সদস্যদের, বিশেষ করে এফবিআই ও সিআইএর কর্মকর্তাদের গোপন নেটওয়ার্ককে বোঝানো হয়ে থাকে। গোপন এই নেটওয়ার্কে অনির্বাচিত সরকারি-বেসরকারি প্রভাবশালী লোকজন থাকেন। রাজনৈতিক সরকারের সমান্তরালে নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে স্বাধীনভাবে এই নেটওয়ার্ক কাজ করার চেষ্টা করে থাকে। স্বার্থে করা হচ্ছে’ বলে দাবি ওই কর্মকর্তার।

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের জন্য অনুদান বাতিল যুক্তরাষ্ট্রের

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের অনুদান বাতিল করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি (ডিওজিই) কয়েকটি অনুদান প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে সেগুলো বাতিলের ঘোষণার কথা জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে ডিওজিই বলে, ‘নিচের বিষয়গুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের অর্থ খরচ করার কথা ছিল, তবে এগুলো সব বাতিল করা হয়েছে।’ ১৫টি অনুদান প্রকল্পের এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের অনুদান।

২৯ মিলিয়ন ডলার: ধাপে ধাপে অর্থ ছাড় ডিআইয়ের প্রকল্পে

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই) জন্য সরকারি তহবিল থেকে ২৯ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) এবং যুক্তরাজ্যের অধুনালুপ্ত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ডিএফআইডি) অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর শক্তিশালীকরণের (স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ–এসপিএল) প্রকল্পে ধাপে ধাপে অর্থ ছাড় করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অনুদান ও সহায়তা পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হাইয়ারগভ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

হাইয়ারগভের ওই পরিসংখ্যানের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন সূত্র যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা (এনজিও) ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালকে অর্থ বরাদ্দ ও ছাড়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবকের মৃত্যু

০১ মার্চ ২০২৫, ইত্তেফাক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। শনিবার (১ মার্চ) সকালে কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত আল-আমিন(৩২) উপজেলার পুটিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে আলা-আমিন পুটিয়া সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে চোরা কারবারি সন্দেহে গুলি করে। এতে আল-আমীন গুরুতর আহত হন। পরে বিএসএফ তাকে উদ্ধার করে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়। তার মরদেহ এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।

ওয়ান-ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভূমিকায় বিরাট ভুল ছিল: সাবেক মার্কিন কূটনীতিক

০৯ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

বাংলাদেশে ২০০৭-০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জনগণের প্রত্যাশার চেয়ে জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের ভাবনাকে যুক্তরাষ্ট্র বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্ব ছিল নির্বাচনের সময়সীমার ওপর। ওই সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন এই নীতি বড় ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন ড্যানিলোভিচ।

গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনায় বাংলাদেশে ২০০৭-০৮ সালের রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে নিজের দেশের ভূমিকা নিয়ে এমন মন্তব্য করেন সাবেক এই মার্কিন কূটনীতিক। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিয়েছিল। ওই ঘটনা ওয়ান ইলেভেন বা এক-এগারো নামে পরিচিত। জন ড্যানিলোভিচ ওই সরকারের আমলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন।

‘নতুন ভোরের পথে ঢাকা: গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন গতিপথ’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

০৯ মার্চ ২০২৫, দেশ রূপান্তর

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ভিতরগড় সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম আল আমিন (৩৬)।

ভারতের ঋণে দুই সড়ক, বাংলাদেশের লাভ নিয়ে প্রশ্ন

১৫ মার্চ ২০২৫, সমকাল

ভারতীয় ঋণে (এলওসি) আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, কসবা, ধরখার হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ চলছে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ রাস্তা ভারতের ত্রিপুরার আগরতলাকে আশুগঞ্জ নৌবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করবে। এ ছাড়া ৭ হাজার ১৮৮ কোটি টাকায় কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ধরখার সড়কও চার লেনে উন্নীত করা হবে ভারতীয় ঋণে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করা পণ্য ত্রিপুরা ও আসামে পরিবহন সহজ হবে। ১২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকার এই দুই সড়কে ভারতের ফায়দা হলেও, বাংলাদেশের কী লাভ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কর্মকর্তারা বলেছেন, মহাসড়ক দুটি চার লেনে উন্নীত হলে আগরতলার বাণিজ্য বাড়বে। সিলেট ও চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজ হবে। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই লাভবান হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির সমকালকে বলেন, কেন এই মহাসড়ক প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছিল, বাংলাদেশের আদৌ লাভ আছে কিনা, খতিয়ে দেখা হবে। ময়নামতি-ধরখার মহাসড়ক প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে না হলে সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে না।

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী বেইজিং

২৯ মার্চ ২০২৫, প্রথম আলো

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনে রয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে বেইজিংয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে পরের ধাপে নিতে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।

গতকাল বেইজিংয়ে দুই শীর্ষ নেতার আলোচনা প্রসঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিও তাঁর এক্সে এমন মন্তব্য করেছেন। বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে দুই নেতার মধ্যে ঘণ্টাখানেক দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের জোরালো ভূমিকা কামনা করেছেন। অন্যদিকে সি চিন পিং বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ এবং চীনের উৎপাদন প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরে সে দেশের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।

দুই শীর্ষ নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সহযোগিতার নানা বিষয়ে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পাঁচটি ঘোষণা এসেছে।

বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, চীন থেকে ২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বাসসকে জানিয়েছেন, চীনের প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ করতে বেসরকারি খাতের প্রতি আহ্বান জানানোর পর এ অঙ্গীকার এসেছে।

চীন মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০ কোটি ডলারের ঋণ, চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫ কোটি ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরও ১৫ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বাকি অর্থ অনুদান ও অন্যান্য ঋণসহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে পণ্য রপ্তানিতে বড় ধাক্কার শঙ্কা

০৪ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এত দিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকেরা। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সূচকের পতন ঘটেছে বিশ্বের প্রায় সব শেয়ারবাজারে। সোনার দামেও নতুন রেকর্ড হয়েছে। কমেছে জ্বালানি তেলের দাম। মোদ্দাকথা, ট্রাম্পের এই পাল্টা শুল্ক বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। এতে বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যের গতি–প্রকৃতি অনেকটাই বদলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল ঢাকা, দিল্লি চুপ

০৫ এপ্রিল ২০২৫, সমকাল

ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়া, সেখানে থেকে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার, গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়ন, তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি এবং সীমান্তে হত্যা কমিয়ে আনার বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশ।

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে সাংরিলা হোটেলে গতকাল শুক্রবার দুপুরে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ড. ইউনূসের প্রথম বৈঠক। দু’দেশের সম্পর্কের অস্বস্তির বিষয়গুলো নিজ নিজ পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয় এই বৈঠকে।

বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে উদ্বেগ জানানো হয়। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চায়, যেখানে নির্বাচনের একটা ভূমিকা আছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানোর চিন্তা বাংলাদেশের

০৬ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অন্যদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশি পণ্যের ওপরও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের এ কথাগুলো জানান। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক ডাকেন প্রধান উপদেষ্টা।

বাণিজ্য উপদেষ্টার ব্রিফিংয়ের সময় প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিতের অনুরোধ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

০৭ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ বিনিয়োগ সম্মেলনের সংবাদ সম্মেলনে এ চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছেন। শিগগিরই তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছে যাবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত

০৯ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য যাওয়ার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করেছে ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) গতকাল বুধবার এ সুবিধা বাতিল করে আদেশ জারি করেছে। সিবিআইসির ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

২০২০ সালের ২৯ জুন এ–সংক্রান্ত এক আদেশে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের কলকাতা বন্দর, নবসেবা বন্দর ও কলকাতা বিমান কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছিল সিবিআইসি। এখন সে সুবিধা প্রত্যাহার করল ভারত।

রপ্তানির বিকল্প পথ কমল, বাড়বে চাপ

১১ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে এত দিন বিশ্বের ২৩টি দেশে রপ্তানি হয়ে আসছিল বাংলাদেশের পণ্য। বাংলাদেশকে একটানা প্রায় সাড়ে ছয় বছর দেওয়া এই সুবিধা গত বুধবার প্রত্যাহার করেছে ভারত। তাতে আকাশপথে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাড়তি চাপ তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ভারত এই সুবিধা দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশের ৬২৪টি প্রতিষ্ঠান সড়কপথে বেনাপোল থেকে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে সিংহভাগই পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সংখ্যায় ৬০৬। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রায় ৯৮ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, আকাশপথে পণ্য পরিবহনে ঢাকার চেয়ে কেজিতে ৫০ সেন্ট থেকে ১ ডলার খরচ কম হয় কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহারে। আবার ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে জটের কারণেও দ্রুত পণ্য পরিবহনে কলকাতা বিমানবন্দরের ব্যবহার বাড়ছিল। ভারত এই সুবিধা বাতিল করায় পোশাক রপ্তানিতে বিকল্প একটি পথ হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের। এতে বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে।

পাঁচ মাসে দেড় শ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

১৫ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে জেলেদের নতুন আতঙ্কের নাম আরাকান আর্মি। গত পাঁচ মাসে মাছ ধরতে যাওয়া দেড় শ জেলেকে অপহরণ করেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর তৎপরতার কারণে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন টেকনাফের তিন হাজার জেলে।

গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে মাছ ধরায় সরকার ঘোষিত ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। তবে তার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই টেকনাফের জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। এতে জেলে পরিবারগুলো সীমাহীন অর্থকষ্ট ও ভোগান্তিতে পড়েছে।

বাংলাদেশ–মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে নাফ নদীর জলসীমা পড়েছে ৮৪ কিলোমিটার। কিন্তু তিন মাস ধরে নাফ নদীর জলসীমায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) টহল তৎপরতা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে নাফ নদী থেকে জেলেদের ট্রলারসহ অপহরণের ঘটনাও বেড়েছে। জেলেরা এসব ঘটনার জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করেছেন।

তিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রাজস্ব ক্ষতি হবে ১৭ কোটি ডলার

১৮ এপ্রিল ২০২৫, প্রথম আলো

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি করে যে শুল্ক আদায় করে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যে তার চেয়ে ৭ গুণ বেশি শুল্ক আদায় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হিসাব গত বছরের। শুধু তা–ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানিতে গড় শুল্ক ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে গড় শুল্কহার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে আয়োজিত সংলাপে মূল প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ ২৯১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। তার মধ্যে ৭৫ কোটি ডলারের পণ্য শুল্কমুক্ত–সুবিধায় এসেছে। বাকি ২১৬ কোটি ডলারের বিপরীতে ১৮ কোটি ডলার শুল্ক আদায় হয়েছে। তার বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যে ১২৭ কোটি ডলারের শুল্ক আদায় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর দেশটিতে ৮৪৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে ৪০ কোটি ডলারের পণ্য শুল্কমুক্ত–সুবিধা পেয়েছে। বাকি ৮০৫ কোটি ডলারের পণ্যে শুল্ক দিতে হয়েছে।

২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। তাতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক দাঁড়ায় ৩৭ শতাংশ। তবে ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেন। যদিও ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক সব দেশের পণ্যের ওপর কার্যকর করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

পাল্টা শুল্ক আরোপের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে এক চিঠি পাঠিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশের শুল্ক তালিকায় বর্তমানে ১৯০টি পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক নেই। এর বাইরে আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি হওয়া তিন শ্রেণির পণ্য (স্ক্র্যাপ, এলপিজির উপাদান বিউটেনস ও প্রোপেন) থেকে গত বছর ৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার শুল্ক আদায় হয়েছে। এখন এসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্কমুক্ত–সুবিধা দিতে হলে অন্য দেশের জন্যও সেটি করতে হবে। তাতে বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ক্ষতি হবে, যা দেশীয় মুদ্রায় ২ হাজার ৫০ কোটি টাকার সমান।

ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে

১৮ এপ্রিল ২০২৫, বিবিসি বাংলা

পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা স্বাধীনতাপূর্ব অভিন্ন সম্পদের জন্য বকেয়া অর্থ দাবির’ মতো বিষয় ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের দিক থেকে যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, তাতে এই অমীমাংসিত বিষয়গুলোর কোনো উল্লেখ নেই।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় দুই দেশের সচিব পর্যায়ে ফরেন অফিস কনসালটেশন বা আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

দেড় দশক পর হওয়া এই বৈঠকে ইসলামাবাদের সাথে সম্পর্ক জোরদারের জন্য অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান চেয়েছে বলে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন।

 

 

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •