মেক্সিকোর ঈশ্বরগণ এবং অসভ্য
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন

*আমাকে বিশ্বের যে কোনো এক স্বৈরশাসন দেখান যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা কোনো কোনো ইউরোপীয় সরকার দ্বারা সমর্থিত হয়নি। এমন উদাহরণ নেই। আমি মনে করি স্বৈরতন্ত্র/একনায়কতন্ত্র এবং আধিপত্য একই ঘটনার অংশ।
- মাহমুদ আহমাদিনেজাদ।
**মানবাধিকার লঙ্ঘন করা নব্য উদারনীতিবাদ এবং বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের প্রকল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
- অরুন্ধতী রায়।
***যুদ্ধ কখনোই পরার্থপরতার জন্য সংঘটিত হয় না। এগুলো সাধারণত আধিপত্য বিস্তারের জন্য, ব্যবসার জন্য সংঘটিত হয়। এবং অবশ্যই যুদ্ধ ব্যবসার ব্যাপারটাও আছে।
- অরুন্ধতী রায়।
****আধিপত্যের প্রশ্ন সর্বদা একটি নতুন সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার প্রশ্ন।
- স্টুয়ার্ট হল।
আভাষ
বর্তমান উদার পুঁজির শিক্ষা, শিল্পসাহিত্য, রাজনীতি, প্রযুক্তি, অর্থনীতিসহ সকল কিছুর কেন্দ্র ইউরোপ-আমেরিকা। আর “ইউরোপ-আমেরিকা” কোনো অখণ্ড বিষয় নয়, সেখানেও নানান অর্থনীতি-ক্ষমতা কেন্দ্র করে রয়েছে শ্রেণি বিভাজন, ক্ষমতাবান বড়লোকেরা এবং অধিকাংশ ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষ। আছে স্বাধীন ভাবুক, শিল্পী, আন্দোলনকর্মী, শিক্ষক, পরিবেশবাদী, বিশাল সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অধিকারী অভিবাসীগণ, স্থানীয় নানা আদিবাসী গোষ্ঠী, কিছু গণতান্ত্রিক সমতার মূল্যবোধচর্চাকারী স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।
“ইউরোপ-আমেরিকা” কোনো অখণ্ড বিষয় নয়, সেখানেও নানান অর্থনীতি-ক্ষমতা কেন্দ্র করে রয়েছে শ্রেণি বিভাজন, ক্ষমতাবান বড়লোকেরা এবং অধিকাংশ ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষ। আছে স্বাধীন ভাবুক, শিল্পী, আন্দোলনকর্মী, শিক্ষক, পরিবেশবাদী, বিশাল সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অধিকারী অভিবাসীগণ, স্থানীয় নানা আদিবাসী গোষ্ঠী, কিছু গণতান্ত্রিক সমতার মূল্যবোধচর্চাকারী স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।
তবে মূলত পশ্চিম/ইউরোপ-আমেরিকা (সহ সারা দুনিয়া) নিয়ন্ত্রণ করে মুষ্টিমেয় ক্ষমতাবান ধনী পুঁজিপতিগণ। তারাই নির্ধারণ করে শিল্পসাহিত্য, রাজনীতি, পরিবেশ, অর্থনীতির গতিবিধি, উত্থান-পতন এবং তৈরি করে নানান বিচারের মাপকাঠি, আইন-কানুন। যা চালু রাখে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, যুদ্ধ, গুপ্তহত্যা ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের মাধ্যমে (যেমন পুরষ্কার, অনুদান, তহবিল, স্বীকৃতি, অংশগ্রহণ, নিষেধাজ্ঞা, বাতিলকরণ, তকমা (Tagging) প্রদান ইত্যাদি ইত্যাদি) । তাদের ভাষ্য, “জীবনযাত্রা” / “Way of Life”, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, বিশ্বাস রপ্তানি করে যুদ্ধ, জাতিগত নিধন, নানা নামের সাহায্য-সহযোগীতা ও বাণিজ্যের ভিতর দিয়ে এবং “গণতন্ত্র”, “মানবাধিকার”, “স্বাধীনতা”, “সমতা”র মতো নানাবিধ গালভরা প্রকল্প নাযিল করে। যেকোনো সময় এসব চলমান প্রকল্প চরিত্র বদলে গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ায় কৌশলে বাধ্য হয়ে গ্রহণকারী দেশ-মানুষের জন্য (স্থানীয় মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী অংশগ্রহণকারী মীর জাফরদের মতো মানুষ ও প্রতিষ্ঠান বাদে। এসবের গোড়া অনেক আগে ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রচারের নামে বাণিজ্যের ভিতর দিয়ে কৌশলে উপনিবেশায়ন কায়েমের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল) এবং যার কুপ্রভাব থেকে রক্ষা পায় না প্রাণ-প্রকৃতিসহ কোনো কিছুই।
বর্তমান উত্তর-সত্য (Post-truth) ও বি-উপনিবেশায়নের (Decolonization) যুগে প্রান্তিক স্থানীয় প্রকৃত অবস্থা-বয়ান ভিত্তিক স্বাধীন ভাষ্য, বাহাস, মূল্যবোধ, আবেগ, রাজনীতি, শিল্পকর্ম, প্রতিরোধ, আন্দোলন খুব বিরল কিন্তু যেকোনো সময়ের মতোই মূল্যবান ও প্রয়োজনীয়। এমন কিছু শিল্পকর্ম হিসেবে বর্তমান রচনায় সিনেমা “মেক্সিকোর ঈশ্বরগণ” (Gods of Mexico), সবার জন্য উন্মুক্ত ইউটিউব চ্যানেল “অসভ্য”র দৃশ্য আধেয়র আলোচনা সমাপ্ত হয়েছে কবিতা চাকমার কবিতা উল্লেখের ভিতর দিয়ে। সমকালেও পাহাড়ের কবির রচনার ক্ষোভ, আবেগ, ভালবাসা, সততা, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, কান্না, বাস্তবতা, রাজনীতি, সংস্কৃতি বাংলার পাহাড়, সমতল, ফিলিস্তিনসহ সারা বিশ্বে নিষ্ঠুর সত্যের মতন বিরাজমান! তাহলে (সাধারণ অধিকাংশ) আমরা জ্বলে উঠবো না কেন?
সিনেমা সম্পর্কিত তথ্য
নাম : মেক্সিকোর ঈশ্বরগণ (Gods of Mexico)
পরিচালক : হেলমুট দোসান্টোস। চিত্রনাট্য : হেলমুট দোসান্টো
প্রযোজক : হেলমুট দোসান্টোস, পিলার গৌতাস, মার্তা নুনেজ পুয়ের্তো, জেরার্ডো গঞ্জালেজ ফার্নান্দেজ।
চিত্রগ্রহণ : আর্নেস্তো পার্দো, মার্টিন বোয়েগ, হেলমুট দোসান্টোস, ফ্রাঁসোয়া পেসান্ট, পিটার এলিয়ট বুন্টাইন, ফার্নান্দো মুনোজ, দিয়েগো রদ্রিগেজ গার্সিয়া, ক্যাকপার জুবাক।
সম্পাদনা করেছেন : ইবরান আসুয়াদ, হেলমুট দোসান্টোস।
সঙ্গীত : এনরিকো আসকোলি। শব্দ : এনরিকো আসকোলি, মার্টিন ডি টর্সি, এরিক রুইজ আরেলানো, আলডো নাভারো, বার্নাট ফোর্টিয়ানা, এরিয়েল বাকা, গ্যাব্রিয়েল ভিলেগাস।
দেশ : মেক্সিকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মুক্তির সাল ও দৈর্ঘ্য : ২০২২ সাল, ৯৭ মিনিট।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
সাদাকালো, রঙ্গিন এবং নামমাত্র সংলাপ, পরিমিত সঙ্গীতসহ কোনোপ্রকার ধারাবিবরণী ছাড়া নির্মাতা-প্রযোজক হেলমুট দোসান্টোসের পরিচালক হিসেবে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা, প্রামাণ্যচিত্র “মেক্সিকোর ঈশ্বরগণ”।
ভূমি এবং মানুষের মাধ্যমে এক জাতির প্রতিকৃতি
শব্দ, সঙ্গীত, গল্প, যাত্রা, ছবি, চলচ্ছবি, চিত্র, সাহিত্য, সিনেমা, রাজনীতি, অধ্যয়ন ইত্যাদি শব্দগুলো আলাদা আলাদা ধরণের ভাবের পরিচয়সূচক শব্দ। শব্দগুলো যেমন আলাদা আলাদা ভাবে অর্থের, স্বতন্ত্র ভাবের প্রকাশে সক্ষম তদ্রুপ একের সাথে অন্যের যোগ বিয়োগের মাধ্যমে নবভাব ও অর্থ প্রকাশে সক্ষম। উল্লিখিত শব্দগুলোকে সাধারণত দু ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়। যেমন ক. ভাষা কেন্দ্রিক। যথা- শব্দ, গল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, যাত্রা, রাজনীতি, অধ্যয়ন এবং খ. ছবি কেন্দ্রিক। যথা- ছবি (Photograph), চিত্র (Painting), চলচ্ছবি (Moving Image) এবং সিনেমা (Cinema/Movie/Film)।
ক- য়ে উল্লিখিত বিষয়গুলো মানুষের কথ্য ও লিখিত ভাষা নির্ভর কিন্তু খ- য়ে উল্লিখিত বিষয়গুলো মানুষের কথ্য বা লিখিত ভাষা নির্ভর নয়। চিত্রকলা, ছবি, চলচ্ছবি ইত্যাদি বিষয় মানুষ নানা বিষয়ের, বস্তুর, দৃশ্যের অঙ্কন, বয়ান এবং পরবর্তীতে ধারন, নির্মাণের মাধ্যমে মনের ভাবনা বা ভাব প্রকাশ করে থাকে। আবার উল্লিখিত সঙ্গীত যেমন, কথা-ভাষাসহ হতে পারে আবার না-কথা ভাষাসহও সঙ্গীত হতে পারে (মনে রাখা দরকার ছবি বা সঙ্গীত নিজেই একধরনের ভাষা)। বাউল আব্দুল করিমের গান আমরা ভাষায় শুনে ও পড়ে “দেখতে” পারি কিন্তু আমরা যদি আলাউদ্দিন খাঁয়ের সঙ্গীত শোনার সিদ্ধান্ত নেই তবে সে সঙ্গীতে তাল, লয় ক্ষেত্রবিশেষ কণ্ঠ থাকতে পারে বা নাও পারে কিন্তু চিত্রের ক্ষেত্রে, সুলতানের চিত্রকর্ম আমরা (প্রথাগত অর্থে) না পড়ে বা শুনে শুধুমাত্র দেখি বা দেখতে পারি ( উল্লেখ্য যে ভাস্কর্যকর্মও দৃশ্য মাধ্যমের শক্তিশালী মাধ্যম যা মূলত দেখি)। একেক মাধ্যমের একেক রকমের বৈশিষ্ট্য আবার নানান মাধ্যমের মিশ্রণে হতে পারে নতুন কোনো মাধ্যম বা কোনো বিরাজমান মাধ্যমের কোনো কর্মের প্রকাশভঙ্গীতে থাকতে পারে ভিন্ন বর্গের কোনো মাধ্যমের গাঢ় বৈশিষ্ট্য (আলোচিত সিনেমায় প্রগাঢ়ভাবে রয়েছে ছবি, চিত্র, দর্শন, কবিতা এবং দৃশ্যনৃতাত্ত্বিক কর্মের বৈশিষ্ট্য)। এভাবে ধীরে ধীরে ধারাবাহিক নানা প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে তৈরি হয়েছে মানুষের নানাবিধ ভাব, ভাবনা, ধর্ম, মাধ্যম, সৃজন, কাঠামো, ব্যাকরণ, পরিবার, সমাজ, চলচ্চিত্র, নৈতিকতা, রাজনীতি ও অর্থনীতি। এরূপ সহজাত সাংস্কৃতিক মতভেদের বৈচিত্র্যতার বয়ান নানাবিধ দৃশ্যের মাধ্যমে প্রদর্শন করে “মেক্সিকোর ঈশ্বরগণ”।
একেক মাধ্যমের একেক রকমের বৈশিষ্ট্য আবার নানান মাধ্যমের মিশ্রণে হতে পারে নতুন কোনো মাধ্যম বা কোনো বিরাজমান মাধ্যমের কোনো কর্মের প্রকাশভঙ্গীতে থাকতে পারে ভিন্ন বর্গের কোনো মাধ্যমের গাঢ় বৈশিষ্ট্য
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে বাসের ফলে একেক স্থানের মানুষের একেক রকম অভ্যাস, রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও ধর্ম তৈরি হয়েছে। ফলে, সকল মানুষের সমাজ, সংস্কৃতির ভিতর যেমন সাধারণ কিছু মিল রয়েছে তেমনি রয়েছে অনেক অমিলের ঐকতান! পৃথিবীর অনেক মানব গোষ্ঠীর যেমন রয়েছে সৃষ্টি সম্পর্কিত বয়ান, সৃষ্টিকর্তা আবার আমাজনে বাসরত “পিরাহা” (Pirahã) জনগোষ্ঠীর মতো হয়তো অনেকের “ঈশ্বর” “সৃষ্টিতত্ত্ব” “অতীত” “ভবিষ্যৎ” ইত্যাদি বয়ান, ধারনা, ভাব নেই। সমানভাবে মেক্সিকোর আজটেক সভ্যতায় প্রচলিত সৃষ্টিতত্ত্ব নির্মিত হয়েছে তাদের পরিবেশ, সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে যে পুরাণে পৃথিবীর শুরুতে নারী-পুরুষ এক দেহে বিরাজমান ছিল। পরবর্তীতে নানান বিবর্তনের মধ্য দিয়ে নারী, পুরুষ, গাছ, মাছ, পাহাড়, নদীনালা, ধর্ম, খারাপ, মূল্যবোধ, সমাজ, সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।
এই সভ্যতার বিভিন্ন ঈশ্বর, প্রতিনিধিগণের নামে, নামকরণ করা হয়েছে হেলমুট দোসান্টোসের দেড় ঘণ্টার সিনেমা “মেক্সিকোর ঈশ্বরগণে”র বিভিন্ন পর্বের। যেখানে কারখানাজাত ভাবনার বৈচিত্র্যহীনতা এড়িয়ে খানিক অপ্রচলিত, অজনপ্রিয় ধারায় কোনোপ্রকার ছাপোষা সিনেমাটিক “প্লট”, “গল্প” বা ধারাবিবরণী ছাড়া শুধুমাত্র দৃশ্য, পারিপার্শ্ব শব্দ ও ন্যূনতম সঙ্গীতের মাধ্যমে মেক্সিকোর নানান প্রান্তে বাসরত আদিবাসীদের উপস্থাপন করা হয়েছে (তথাকথিত পশ্চিমা এন.জি.ও মার্কা এজেন্ডা নির্ভর বয়ানের বাইরে দাঁড়িয়ে)। যে সিনেমায় পূর্বের ‘খ’ বর্গে উল্লিখিত “ছবিকেন্দ্রিক” ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে কবিতার আবহে। যেখানে খুব কম তথ্য পরিবেশিত হয়েছে কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশে চলমান প্রতিকৃতির (Video Portrait) মাধ্যমে দর্শকের জন্য দেখতে দেখতে তার গভীরে প্রবেশের গোপন ইশারাময় দ্বার খুলে রাখা হয়েছে। যথাযথ সম্পাদনা ও চিত্রায়নের মাধ্যমে “অপর”, “মসলাদার” না করে স্বতন্ত্র সংস্কৃতিকে “দেখা”র (Watch) গভীরতা নির্মিত হয়েছে, যা শুধু তাকিয়ে (Looking) বা অমনোযোগ ও নানাবিধকর্মের (Multitasking) ভিতর দিয়ে আস্বাদন করা সম্ভব নয়। (সিনেমায় প্রদর্শিত) বিষয়, ব্যক্তি, গোষ্ঠী, বস্তু নির্বাচনে রয়েছে মননশীল কল্পনা, গভীর ভাব-ভাবনার পথে যাত্রার হদিস ও প্রাক-প্রাথমিক শিল্পযুগের প্রযুক্তি নির্ভর মানুষ, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতির বয়ান। আলাদা যত্নের সাথে লিখিত হয়েছে সমাপ্ত শিরোনাম।
এই সভ্যতার বিভিন্ন ঈশ্বর, প্রতিনিধিগণের নামে, নামকরণ করা হয়েছে হেলমুট দোসান্টোসের দেড় ঘণ্টার সিনেমা “মেক্সিকোর ঈশ্বরগণে”র বিভিন্ন পর্বের। যেখানে কারখানাজাত ভাবনার বৈচিত্র্যহীনতা এড়িয়ে খানিক অপ্রচলিত, অজনপ্রিয় ধারায় কোনোপ্রকার ছাপোষা সিনেমাটিক “প্লট”, “গল্প” বা ধারাবিবরণী ছাড়া শুধুমাত্র দৃশ্য, পারিপার্শ্ব শব্দ ও ন্যূনতম সঙ্গীতের মাধ্যমে মেক্সিকোর নানান প্রান্তে বাসরত আদিবাসীদের উপস্থাপন করা হয়েছে
প্রায় দশকব্যাপী সময় নিয়ে নির্মিত হয়েছে “মেক্সিকোর ঈশ্বরগণ”, কাজ করেছে একাধিক চিত্রগ্রাহক এবং চিত্রায়িত হয়েছে মেক্সিকোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব মানুষজন ও পেশাকে কেন্দ্র করে (অতিরিক্ত শিল্পায়ন, যান্ত্রিকতা ও পশ্চিমা সভ্যতার নানারকমের মহাবয়ান এড়িয়ে)। প্রদর্শিত পেশা, সংস্কৃতি এবং আদিবাসী মানুষ সকল নানাবিধ পরিবেশ, প্রযুক্তি ও রাজনীতিগত হুমকির শিকার। পরিস্থিতিকে তাদের জন্য আরো নাজুক ও সঙ্কটাপন্ন করেছে নানা ধরণের প্রচলিত সাংস্কৃতিক আধিপত্য। বিশেষ করে ধর্মীয় আগ্রাসন এবং এক্ষেত্রে যীশুর প্রচলিত ধর্মের নানা ধরণের শাখার আগ্রাসন যা ধর্মান্তরিত করার মধ্য দিয়ে সমূলে তাদের শিকড় থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। যার শুরু হয়েছিল ইউরোপিয়ান উপনিবেশায়নের ভিতর দিয়ে, আজটেকদের ক্ষেত্রে স্প্যানিশদের মাধ্যমে। শাসকের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, নৈতিকতা আদিবাসী ও স্থানীয় জনগণের উপরে জোর করে চাপিয়ে দিয়ে শোষণ করার সুবিধার্থে ধীরে ধীরে তা পছন্দনীয় করে তোলা হয়েছে। ফলে, চীনা প্রবাদের মতো ছবি (এক্ষেত্রে দৃশ্য) হাজারগুণ ভালো কাজ করে থাকে ছদ্মবেশের আড়ালে (শ্লোগানের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে) উক্ত বিষয়ের উপস্থাপনে (যার মননশীল ব্যবহার আলোচিত সিনেমায় দারুণভাবে রয়েছে)। এখানে চিত্রিত মানুষদের পোশাক, ভঙ্গী, তাকানো, ভূদৃশ্যসকল বিদেশি ধর্মের আধিপত্যের ভিতর দিয়েও তাদের লৌকিক নিজস্বতার জানান দেয়। সাথে সাথে দোসান্টোস নিজেও বোধ করি উপর থেকে ক্ষমতাবানদের চাপিয়ে দেয়া এজেন্ডা নির্ভর বা মানুষ-মুনাফাকেন্দ্রিক ভালো-মন্দ, আস্তিক-নাস্তিক, সাদা-কালো, নারী-পুরুষ, পাপ-পুণ্য, হালাল-হারাম, ধর্ম-অধর্ম, সমকামী-বিপরিতকামী, লাভ-লোকসান ইত্যাদি কৃত্রিম বিরোধের মহাবয়ানের বাইরের মুক্ত পৃথিবী, প্রাণ ও প্রান্তিক খণ্ড বয়ান, সহজ-যাপন, স্বপ্ন, সম্ভাবনা, আন্দোলন এবং প্রতিরোধের প্রতি অনেক বেশি কৌতূহল ও আত্মীয়তা বোধ করেন। যার খানিক অনুমান করা যায় তার প্রদেয় উক্ত সিনেমা সম্পর্কিত সাক্ষাৎকার থেকে।
“(মেক্সিকোর ঈশ্বরগণ) পরিকল্পিত এবং জৈব উভয়ভাবে নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা সমস্ত সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি যাতে তারা বুঝতে পারে যে তারা কীভাবে বাকি বিশ্বের সামনে উপস্থাপিত হতে চায় এবং কীভাবে তাদের সারমর্ম পর্দায় প্রদর্শন করতে পারে। প্রতি শটের গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকতা সাবধানতার সাথে পরিকল্পনা করার জন্য আমরা ব্যাপক কথোপকথনে জড়িত ছিলাম। কখনও কখনও এই আলোচনাগুলি কয়েক মাস স্থায়ী হত, তবে সেগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বিশেষ করে যেহেতু আমরা এমন ব্যক্তিদের সাথে সহযোগিতা করছি যারা প্রজন্ম ধরে অবহেলা এবং প্রান্তিকতা সহ্য করেছে। এছাড়াও, একটা উত্তরাধিকার রেখে যাওয়ার ইচ্ছা থাকা, তুমি কে এবং তুমি কে ছিলে তা প্রকাশ করা, কারো ঐতিহ্যকে অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছা থাকা খুবই মানবিক।
(সিনেমা নির্মানকালীন) চিত্রগ্রহণের সময় আমি আমাদের পথ দেখানোর জন্য একটি খোলামেলা রূপরেখা বহন করতাম, কিন্তু মানুষের মতামতের উপর ভিত্তি করে আমরা ক্রমাগত সমন্বয় করতাম এবং সর্বদা তাদের জন্য ব্যক্তিগত বা আধ্যাত্মিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ স্থানগুলি (সিনেমার জন্য) বিবেচনা করতাম। আমি তাদের সরঞ্জাম, প্রাণী, গাছপালা এবং তাদের চারপাশের সামগ্রিক পরিবেশ সাবধানে পর্যবেক্ষণ করতাম এবং বিবেচনা করতাম। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে, নান্দনিক দিকটি বিবেচনা করা এবং নিশ্চিত করা যে এটি তাদের চিত্রায়নের পরিপূরক। আমি চেয়েছিলাম সমস্ত চরিত্র ক্যামেরার উপস্থিতি সম্পর্কে ভালভাবে সচেতন থাকুক, (ক্যামেরার মাধ্যমে) ‘আমাদের’ চোখে চোখ রেখে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করুক, যাতে তারা কে এবং তারা কীভাবে তাদের জায়গায় প্রথিত, তাদের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পরিচয় প্রতিফলিত হয়। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম যে তাদেরকে যেন আত্ম-মর্যাদার সাথে চিত্রায়িত করা হয়।”
(বন্ধনীর ভিতরের বাক্য নিজের এবং কিঞ্চিৎ বাক্য, শব্দ পরিবর্তিত ও গুগল অনুবাদ ব্যবহৃত হয়েছে।)
সূত্র : desistfilm | ২০২৩/০৭/০৩
কাব্যিক পর্যবেক্ষনমূলক প্রামাণ্যচিত্র
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, “মেক্সিকোর ঈশ্বরগণ” খুব পরিমিত সঙ্গীত, পরিপার্শ্ব শব্দ সহকারে নির্মিত এক প্রামাণ্যচিত্র যেখানে তথ্যের, বক্তব্যের থেকে অনুভূতিকে অবলম্বন করা হয়েছে। গল্প, প্লট এসব জনপ্রিয় উপাদানের ব্যবহার এড়িয়ে, সাধারণ ধারাবাহিকতার চেয়ে দৃশ্য নির্মাণে বেশি গুরুত্ব আরোপ করে “ভূমি এবং মানুষের মাধ্যমে এক জাতির প্রতিকৃতি” নির্মাণ করা হয়েছে এবং উক্ত বাক্যকে ব্যবহার করা হয়েছে সিনেমার উপ-শিরোনাম হিসেবে। এ ধরণের ভূদৃশ্য বা প্রতিকৃতি নির্ভর সিনেমা প্রসঙ্গে আলোচনায় প্রায়শ গডফ্রে রেজ্জিওর “কোয়াটসি ট্রিলজি” (Qatsi trilogy) (১৯৮২,১৯৮৮,২০০২) বা “দর্শনার্থীগণ” (Visitors) (২০১৩) সিনেমার উল্লেখ করা হয় যদিও সে সিনেমা এক্ষেত্রে খুব প্রাসঙ্গিক নয়। বরং সমসাময়িক চৌকস ধারায় নির্মিত শুরুর “সাদা” এবং শেষের “কালো” পর্ব বাদে মাঝখানের মানুষ ও ভূমির প্রতিকৃতি পর্বগুলোর নির্মাণে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে সের্গেই পারাজানভের “ডালিমের রং” (The Color of Pomegranates) (১৯৬৯) সিনেমার জীবন্ত ছবির (Tableau vivant) ধরণ। বলা যায় আলোচিত সিনেমার অন্তর্গত সহজাত মননশীল বয়ানধারা, দর্শন, প্রতিরোধ, সৃজনশীলতা পারাজানভের আর্মেনিয়ান স্বপ্নকল্পদর্শনের সমসাময়িক ন্যূনতমবাদী (Minimalistic) সংস্করণ হিসেবেও পাঠযোগ্য।
চিত্রসূত্র : https://en.wikipedia.org/wiki/Palestine#/media/File:Flag_of_Palestine.svg
পুনশ্চঃ “অসভ্য” “uncivilized” গালি নয় ইহা একটি ইউটিউব চ্যানেল।
Uncivilized = savage/barbarian/uncivilized/uncultured/bearish/brusque/ rude/abusive/misbehaved/low-bred/boorish/agricultural/barbarity/incondite/ discourteous/impious/dishonest/lowborn!
অসভ্য = অনার্য/সভ্যতার আলোকবঞ্চিত/অভদ্র/অসংস্কৃত/শিক্ষাদীক্ষা নেই এমন/অনার্যোচিত, খ্যাত!
সভ্য পশ্চিমের (!?) বাইরের সাধারণ সকল মানুষ, দেশ তাদের নিকট অসভ্য এবং পশ্চিমারা সদা-সর্বদা সভ্যতার আলো বিতরণে ব্যস্ত! এমনতর মহাবয়ান ইউরোপ-আমেরিকার অধিকাংশ সরকারের কর্মে সদা প্রতিফলিত। যার সহজতর উদাহরণ হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে পণ্য, মানুষজন, আইন-কানুন যত সহজে পৃথিবীর অন্যত্র পরিভ্রমণ করতে পারে বাকি দুনিয়ার মানুষ, পণ্য, মতামত, সংস্কৃতি তা পারেনা (এখানে মার্ক্স কথিত “শ্রেণি” বিষয়কে ভাবনায় রাখা জরুরি)। এমনতর পৃথিবীতে ইউটিউবের চ্যানেল “অসভ্য” আমাদের রচনামূলক স্বল্পদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে ইসরায়েল-ইউরোপ-আমেরিকার স্বরূপ উন্মোচন করে দেখাতে ও বোঝাতে চায়, কে অসভ্য। এবং কীভাবে “ইসরায়েল” ঔপনিবেশিক প্রকল্প হিসেবে ইহুদি ধর্ম ব্যবহার করে মুষ্টিমেয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিপতিদের সেবায় নিয়োজিত থেকে ফিলিস্তিনিদের উপর শতবর্ষব্যাপী জাতিগত নিধন চলমান রেখেছে। তাদের শুরুর পাতায় লিখিত বার্তার উল্লেখ এবং তাদের আধেয়, মতামত সম্পর্কিত পর্যালচনা রইলো পর্যায়ক্রমে।
“শিক্ষার উপর ভিত্তি করে বিনোদন।
আমরা একটি ডিজিটাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক এবং প্রযোজনা সংস্থা যা বিশ্বজুড়ে এমন মানুষ এবং স্থানের গল্প ভাগ করে নেয় যা অবহেলিত, নীরব বা মুছে ফেলা হয়েছে।
আকর্ষণীয় এবং বিনোদনমূলক মাল্টিমিডিয়া আধেয়র মাধ্যমে আমরা আরও ন্যায়সঙ্গত এবং প্রতিনিধিত্বমূলক মিডিয়া স্পেস তৈরি করার লক্ষ্য রাখি যা মিডিয়ার স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে, ব্যাহত করতে এবং ভেঙে ফেলতে পারে যা (মূলধারার শক্তিশালী প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমা ইহুদিবাদী (Zionist) মিডিয়া) অনেককে বাদ দিয়েছে এবং তাদের কণ্ঠহীন করে তুলেছে।
আমাদের গল্প বলার মূলে থাকবে সক্রিয়তা এবং সম্প্রদায় গঠন যা আন্তর্জাতিক সংহতি, ভাগ করা বোঝাপড়া এবং অন্যায়ের পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
আমরা যখন আমাদের নিজস্ব গল্প বলি, আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি এবং সংগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করি, তখন আমরা এই বিশ্বকে আমাদের ইচ্ছামতো কাঁপিয়ে এবং পুনর্গঠন করার লক্ষ্য রাখি।”
(বন্ধনীর ভিতরের বাক্য নিজের এবং কিঞ্চিৎ বাক্য, শব্দ পরিবর্তিত ও গুগল অনুবাদ ব্যবহৃত হয়েছে।)
সূত্র : https://www.youtube.com/@uncivilized_media
প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরওতো জানা
মার্কিন দেশের মোড়লগিরিতে ইউরোপিয়ান শিক্ষা-সভ্যতার হৃদয়কেন্দ্র, বড়লোকির মূল শিকড় উপনিবেশায়নের লালসা এখন খানিক ভিন্ন মোড়কে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, গণতন্ত্র, মানবধিকার রূপে দেশে দেশে বিতরণ করা হয় (পুরনো রূপেও চালু রয়েছে যেমন, ফিলিস্তিনি গণহত্যা, নানান চলমান যুদ্ধ ও কিছু মানসিক প্রতিবন্ধী দেশ প্রধান ও বিলিয়নারদের হুমকি-ধামকি, উপদেশ-নছীহতের মাধ্যমে)। কখনো সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা, কখনো পরিবেশ রক্ষা, ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষা, বাক-স্বাধীনতা রক্ষা, উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সকল ওষুধের সেরা, সকল কবজের সেরা কবজ গণতন্ত্র রক্ষা ও বিতরণের নামে দিকে দিকে ইউরোপ-আমেরিকার গণহত্যা, বোমাবর্ষণ, শাসন ব্যবস্থা ও শাসকের পরিবর্তন করা এমন দুধভাত যা কেউ আর উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেনা!
ভিয়েতনাম, কিউবা, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্থান, ইরান, ফিলিস্তিনসহ সারা দুনিয়াজুড়ে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গণহত্যা, যুদ্ধ, নিপীড়ন, নানাদেশে স্থানীয় জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পশ্চিমা তাবেদার শাসক বসিয়ে দিয়ে “গণতন্ত্র” নাযিল করার উদাহরণ ভুরি ভুরি! কিন্তু কেউ এর বিরুদ্ধে সামান্য কিছু বললেই সে পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকুক তার নিস্তার নেই। মামলা-হামলা-গুপ্তহত্যা সব তখন হাবিয়া দোজখের মতো করে তার উপরে নেমে আসবে এবং আসবেই। কারণ ইউরোপ-আমেরিকার আসল রূপ হচ্ছে ফাঁপাবুলির মুখোশের আড়ালে লুকানো ঔপনিবেশিক পচাগলা, বৈষম্য ও মুনাফাকেন্দ্রিক দুর্গন্ধময় সেই আদিরূপ। ফলে আল-জাজিরা টিভির কল্যাণে সারা দুনিয়ার মানুষজন ইউরোপ-আমেরিকার সকল প্রকার সাহায্য ও সমর্থন নিয়ে ইসরায়েলের বিগত প্রায় শত বছর ধরে চালানো গণহত্যা, জাতিগত নিধন দেখেও ভুলে যেতে হবে, ফিস ফিস করেও বলা যাবেনা, কোনো বইপত্রে লেখা যাবেনা, সিনেমা বানানো যাবেনা (ব্যতিক্রম রয়েছে যেমন সমবিষয় নিয়ে নির্মিত ২০২৫ য়ের অস্কার জেতা সিনেমা “No Other Land” বা ২০১১ সালের “5 Broken Cameras” ইত্যাদি ইত্যাদি)। তাহলে আপনি আমেরিকায় বাস করেও “সন্ত্রাসের অধ্যাপক” (Professor of Terror) পদবী পেয়ে যাবেন, যেকোনো স্থানে-সময়ে ফিলিস্তিনিদের উপরের গণহত্যা নিয়ে কিছু বললে, প্রতিবাদ করলে আপনি হয়ে যাবেন “ইহুদি-বিদ্বেষী” (Antisemitic), “দূষিত ও বিচারমূলক” ব্যক্তি (Toxic & Judgemental), “সন্ত্রাসী” এবং সকল প্রকার পশ্চিমা জ্ঞান-শিল্প-সাহিত্যের সতীন, কেউ আপনাকে পুছেও দেখবেনা (ঢাকার দৈনিক “প্রথম আলো” ১০ মার্চ ২০২৫ রয়টার্সের বরাতে খবরের শিরোনাম করেছে “যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার”!? সাথে সাথে মনে করতে থাকুন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও পুলিশ মিলে আমেরিকা-ইসরায়েলের গণহত্যা বিরোধী বিক্ষোভে কি রকম বাংলা পুলিশ-প্রশাসন মার্কা আচরণ করেছে! আমরা না হয় “সভ্যতার আলো” পাইনি কিন্তু যারা পেয়েছে বলে থাকে তাহলে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য কোথায়?) ।
(সাধারণত) পশ্চিমা শোষণ-নির্যাতন-গণহত্যা ইউরোপ-আমেরিকা কেন্দ্রিক কোনো খবরে, বইপত্রে উল্লিখিত থাকে তাদের মতো করে ফলে তাদের প্রচলিত জ্ঞানকাঠামো ব্যবহার করে আসল সত্য প্রকাশ (প্রায়শ) অসম্ভব। পশ্চিমা শিক্ষা-সভ্যতা তৈরি হয়েছে মূলত পুঁজি রক্ষার জন্য প্রকৃতি-পরিবেশ বা মানুষের রক্ষার জন্য নয়, সত্য আড়াল করে বিজ্ঞাপন প্রচারই তাদের লক্ষ্য। ফলে, শুধু তাদের স্বীকৃত, উদযাপিত ও সংজ্ঞায়িত বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামোর অধীনস্ত চর্চা, স্বীকৃতি, মননশীলতা আদপে তাদের লাভের গুড়ের যোগান দেবে, আপনার আমার নয়। (বলা যায় বিশেষত বর্তমানে) শিল্প-সিনেমা-সাহিত্য-দৃশ্য অনেক বেশি পরিমাণে কেতাবি ও কর্পোরেট মুনাফার প্রশ্নহীন আনুগত্যের অধীন, যা একেবারেই শৈল্পিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীন বিকাশের সহায়ক নয়। বর্তমান কোনো দৃশ্যকর্ম পশ্চিমা ব্যাকরণ, নৈতিকতা, তহবিল, সমর্থন, পুরষ্কার বাগানোর আগে অবধি আমাদের উক্ত কর্ম নিয়ে কোনো অবস্থান থাকেনা! কেন? আর যারা পুরষ্কার দিচ্ছে কর্মখানা তাদের কোনো না কোনোভাবে সমর্থন যোগাচ্ছে বলেই তারা দেখাচ্ছে বা স্বীকৃতি দিচ্ছে ফলে আমরা হাতেতালি কেন দিচ্ছি? প্রশ্নগুলো জরুরি।
পশ্চিমের “চিন্তা”র, “ভাবমূর্তি নির্মাণে”র, সত্য আড়ালের এবং ঔপনিবেশিক প্রকল্প হিসেবে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের উপরের (ইসরায়েলকৃত) প্রায় শতবছরব্যাপী পশ্চিমা সমর্থনে-সাহায্যে বলিয়ান হয়ে কিরূপে পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা ও জাতিগত নিধন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে তার চিত্র-ব্যখ্যা-বাস্তবতা-ইতিহাস প্রদর্শন করে “অসভ্য” ইউটিউব চ্যানেলের দৃশকর্ম সমূহ। “উত্তর-সত্য”য়ের (Post-truth) জামানায়, সাংস্কৃতিক আধিপত্যবিরোধী নব অন্তর্ভুক্তিমূলক ভাবনা, চৌকস উপস্থাপন, তথ্যভিত্তিক মতামত, নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ, যথাযথ রাজনৈতিক চিন্তার সমাহার “অসভ্য”। (নানা অঞ্চলের নানাবিধ সহযোগিতাকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দেশসহ) ইউরোপ-আমেরিকা-ইসরায়েলকৃত ফিলিস্তিনি জাতিগত নিধনের প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ স্বরূপ স্বল্পদৈর্ঘ্যের রচনামূলক দৃশ্যকর্মগুলো কখনো কখনো যেন গাজাবাসী ফিলিস্তিনিদের বাস্তবতা হয়েও পার্বত্য চট্টগ্রামের কবিতা চাকমার কবিতার বাস্তবতা ও কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি করে!
চিত্রসূত্র : https://www.facebook.com/photo/?fbid=2064605483952731&set=pcb.613649502381677
জ্বলি ন‘ উধিম কিত্তেই
কবিতা চাকমা
জ্বলি ন’ উধিম কিত্তেই!
যিয়ান পরানে কয় সিয়েন গরিবে—
বযত্তান বানেবে বিরানভূমি
ঝাড়ান বানেবে মরুভূমি,
গাভুর বেলরে সাঝ
সরয মিলেরে ভাচ।
জ্বলি ন’ উধিম কিত্তেই!
যিয়ান পরানে কয় সিয়ান গরিবে—
জন্মভূমত মানুচ বন্দী
মিলেরে কিন্যে দাসী বান্দী,
পহররে কানা
সৃষ্টির বানা।
অবহেলা অপমানে ক্রোধ
ভিদিরে তুবোল লো’র স্রোত
পাত্থর খুনি খুনি ভাঙে বিঘ্ন,
চেতনার সাগরত রণ তীক্ষ্ম।
— মর পরিপূরক গায় মুই-ই
জ্বলি ন’ উধিম কিত্তেই।
রুখে দাঁড়াব না কেন! | (জ্বলি ন’ উধিম কিত্তেই)
(কবিতা চাকমাকৃত মূল চাকমা ভাষা থেকে বাংলা অনুবাদ)
রুখে দাঁড়াব না কেন।
যা ইচ্ছে তাই করবে—
বসত বিরানভূমি
নিবিড় অরণ্য মরুভূমি,
সকালকে সন্ধ্যা
ফলবতীকে বন্ধ্যা।
রুখে দাঁড়াব না কেন!
যা ইচ্ছে তাই করবে—
জন্মভূমে পরবাসী
নারীকে ক্রীতদাসী,
দৃষ্টিকে অন্ধ
সৃষ্টিকে বন্ধ।
অবহেলা অপমানে ক্রোধ
ধমনীতে তুমুল রক্তের স্রোত
আঘাতে আঘাতে ভাঙে বিঘ্ন,
চেতনার সমুদ্র তারুণ্যে তীক্ষ্ম।
— আমার সম্পূরক একমাত্র আমিই
রুখে দাঁড়াব না কেন!
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন : চলচ্চিত্রকার, সমালোচক। ই-মেইল: maangorepublik@gmail.com
দোহাই
*Show me one dictatorship in the world that has not been supported by the United States government or some European governments. It almost doesn’t exist. I think a dictatorship and hegemony are part of the same phenomenon.
- Mahmoud Ahmadinejad
https://www.brainyquote.com/quotes/mahmoud_ahmadinejad_591314?src=t_hegemony
**Violating human rights is integral to the project of neoliberalism and global hegemony.
- Arundhati Roy
https://www.azquotes.com/quote/1571318?ref=hegemony
*** Wars are never fought for altruistic reasons. They’re usually fought for hegemony, for business. And then of course there’s the business of war.
- Arundhati Roy
https://www.azquotes.com/quote/988147?ref=hegemony
**** The question of hegemony is always the question of a new cultural order.
- Stuart Hall
https://www.brainyquote.com/quotes/stuart_hall_1092492
(অতি সামান্য শব্দ বদল করে গুগল অনুবাদ ব্যবহৃত হয়েছে।)
https://www.youtube.com/watch?v=mGgjsTn8Wwk
https://desistfilm.com/helmut-dosantos-an-interview-on-gods-of-mexico/
https://en.wikipedia.org/wiki/Aztec_mythology
https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_Aztec_gods_and_supernatural_beings
https://digitalfuturestold.com/posts/gods-of-mexico/
https://www.slantmagazine.com/film/gods-of-mexico-review-helmut-dosantos/
https://film-forward.com/star-reviews/gods-of-mexico
https://www.youtube.com/@uncivilized_media/videos
Daniel L. Everett | Don’t Sleep, There Are Snakes: Life and Language in the Amazonian Jungle | 2009
https://www.amazon.com/Dont-Sleep-There-Are-Snakes/dp/0307386120