সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস পার হয়েছে। এই সময়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা অনুযায়ী যেমন জনগণের বিভিন্ন অংশ থেকে দাবি দাওয়া, সংস্কার প্রস্তাব আসছে তেমনি বৈষম্যবাদী রাজনীতি মতাদর্শের দাপট এবং আওয়াজও এর মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে। নিপীড়ন, বৈষম্য ও আধিপত্যের ব্যবস্থার পেছনের দেশি বিদেশি শক্তিগুলো এখনও অনেক বেশি ক্রিয়াশীল। বলাই বাহুল্য জনগণের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি এবং বৈষম্যবিরোধী শক্তি সমাবেশ এখন খুবই জরুরী। সরকার গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে পর্যায়ক্রমে আমরা লেখা প্রকাশ করছি।

গত ২০শে জানুয়ারি সর্বজনকথার আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে “স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথ: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সন্ধানে” শিরোনামে দিনব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনব্যাপী সেমিনারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য, কৃষকের ন্যায্য মূল্য ও খাদ্যপণ্যের সিন্ডিকেট, পাঁচ দশকে শিল্পায়নের ব্যর্থতা, বৈষম্য নিরসনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ভূমিকা, উচ্চশিক্ষার সংকট, জনস্বাস্থ্যের সংকট, লিঙ্গীয় বৈষম্যের নানান রূপ, জাতিগত সংকট নিরসনে করণীয় এবং বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির পথে বাধা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে লেখক ও প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, কৃষি সাংবাদিক সাইদ শাহীন, গবেষক ড. মাহা মির্জা, শিক্ষক ড. মোশাহিদা সুলতানা, শিক্ষক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডাক্তার হারুন-অর-রশিদ, শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফা, শিক্ষক ড. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, গবেষক রেং ইয়ং ম্রো, শিল্পী আন্তনী রেমা, আলেম ও বক্তা কাজী জাবের আহমেদ আল জাহাঙ্গীর এবং লেখক ও সাংবাদিক খোকন দাস। সেমিনার আয়োজনে সহযোগী বাংলাদেশ ‍উন্নয়ন ফোরামের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন সুজিত চৌধুরী। সর্বজনকথার পক্ষ থেকে স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন আনু মুহাম্মদ। সেমিনারে উপস্থাপিত বিভিন্ন বিষয়ের বক্তব্য আমরা ধারাবাহিকভাবে সর্বজনকথায় প্রকাশ করবো। এই সংখ্যায় প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা ও ড. মোশাহিদা সুলতানার বক্তব্য নিয়ে দুটো লেখা প্রকাশিত হলো।

ড. সামিনা লুৎফা এই সংখ্যায় লিখেছেন নারী ও কন্যার অধিকারের বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিদিনের জীবনে কোনো দৃষ্টিগ্রাহ্য পরিবর্তন এখনও নেই। কাজ, আয়, নিরাপত্তা এই সব বিষয় নিয়ে মানুষের প্রতিদিনের জীবন ও লড়াইএর চিত্র সরেজমিন অনুসন্ধানের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন মওদুদ রহমান তাঁর ‘কেমন আছেন’ লেখায়। বহুমাত্রিক বৈষম্যের সমাজে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিশুরা আরও বহুবিধ বৈষম্যের শিকার হয়ে বড় হতে থাকে। শৈশব থেকে যে জীবন তাকে দেয়া হয় তা নিয়ে কীভাবে একটি সুস্থ সমাজ গড়ে উঠতে পারে? ‘বৈষম্যের সমাজে শিশু স্বাস্থ্য’ শীর্ষক লেখায় একজন সংবেদনশীল শিশু চিকিৎসক হিসেবে ডা. বনানী চক্রবর্তী নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দিয়ে সেই বিষয়েরই কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন। 

মেহেদী হাসানের ধারাবাহিক লেখা ‘২২ পরিবারের অতীত ও বর্তমান’ শেষ পর্ব প্রকাশিত হবে আগামী সংখ্যায়। বিভিন্ন পর্বে প্রকাশিত লেখাগুলো শীগগিরই গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে। এছাড়া ধারাবাহিক লেখার অন্যগুলো ফাতেমা বেগমকৃত অনুবাদ ‘মৌলবাদের সংঘর্ষ: ক্রুসেড, জিহাদ এবং আধুনিকতা’ নবম পর্ব, ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর ও তারপর’ অষ্টম পর্ব এই সংখ্যায় প্রকাশিত হলো। বীথি ঘোষের সম্পাদনা ও ভূমিকাসহ ‘২৪-এর গণআন্দোলনের গান’ তৃতীয় পর্ব আছে এই সংখ্যায়। আনোয়ার হোসেন চলচ্চিত্র পর্যালোচনায় এবারে লিখেছেন ‘মেক্সিকোর ঈশ্বরগণ এবং অসভ্য’। রণজিৎ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন ধারাবাহিক লেখার এবারের পর্ব ‘সুন্দরবনের বনজ সম্পদ এবং বনজীবীদের অধিকার’।

গত ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে মেহেরপুরের মুজিবনগরের কৃষক সাইফুল শেখ পেঁয়াজ চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তার মৃত্যুর পেছনের কারণ ও বাংলাদেশের কৃষকদের দুরবস্থার মাঠপর্যায়ের চিত্র তুলে আনতে একটি তথ্যানুসন্ধ্যান চালায় ‘বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক’- খানি। এই অনুসন্ধান থেকে প্রাপ্ত তথ্য, বিশ্লেষণ ও প্রস্তাব গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা এখানে প্রকাশ করলাম।

আমাদের খেয়াল করতে হবে যে, হরিজন হিসেবে কথিত দলিত জনগোষ্ঠী মানুষের মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও নাগরিক অধিকার থেকে অনেক দূরে। তারা একইসঙ্গে শ্রেণীগত ও জাতিগত নিপীড়ন-বৈষম্যের শিকার। সমাজের কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দায়িত্ব পালন করলেও তাদেরকে অদৃশ্য অপমানিত অস্বীকৃত বঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিসেবেই জীবন পার করতে হয়। এ বিষয়ে বর্তমান পরিস্থিতি ও দাবি দাওয়া নিয়ে ‘হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন’ থেকে উপস্থাপিত বক্তব্য গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকাশ করা হলো এই সংখ্যায়।

আনু মুহাম্মদ

২৭ এপ্রিল ২০২৫ 

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •