সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৭ অক্টোবর ২০২৪- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫)
শ্রমজীবি মানুষের কথা
আশুলিয়ায় আন্দোলন: মারা গেলেন গুলিবিদ্ধ পোশাক শ্রমিক চম্পা
২৭ অক্টোবর ২০২৪, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর অনলাইন
ঢাকার আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে করা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ পোশাক শ্রমিক চম্পা খাতুন (২৫) মারা গেছেন। রোববার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে মারা যান তিনি। একই ঘটনায় আহত মোরশেদা বেগম (৩৫) এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চম্পার পেটে, বুকে ও হাতে গুলি ছিল। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে মারা গেছেন।
এর আগে বুধবার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১ টার দিকে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় জেনারেশন নীট ফ্যাশন কোম্পানি নামে ওই পোশাক কারখানায় সামনের রাস্তায় এই ঘটনা ঘটে ৷
আহতরা জানান, দেড় মাস আগে কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেন। এরপরেই বিপাকে পড়েন কয়েক হাজার শ্রমিক। এজন্য গত ৩দিন ধরে ওই কারখানাসহ আশপাশের আরও কয়েকটি কারখানা কর্মচারীরা আন্দোলন করছিলেন। তারা গত ৩ মাসের বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন।
তারা আরও জানান, বুধবার সকালে যথারীতি আন্দোলনে নামেন তার। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের শটগান দিয়ে গুলি চালায়। এতে আহত হন ৩ জন।
নিহত চস্পার ভাই মো. স্বপন জানান, তাদের বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার আহম্মেদপুর গ্রামে। চম্পা সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। স্বামী মো. মিঠু ও এক মেয়েকে নিয়ে আশুলিয়া দিয়াখালী এলাকায় থাকতেন।
মিরপুরে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পোশাকশ্রমিক গুলিবিদ্ধ
৩১ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো
রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে পোশাকশ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়েছে। একপর্যায়ে দুই পোশাকশ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ পোশাকশ্রমিকেরা পুলিশের একটি ও সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ দুই পোশাকশ্রমিক হলেন আল আমিন (১৮) ও ঝুমা আক্তার (১৫)। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ বলেছে, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তৈরি পোশাক কারখানার কয়েক শ শ্রমিক বিভিন্ন দাবিতে মিরপুর-১৪ নম্বর কচুক্ষেত সড়কে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। একপর্যায়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে।
শিল্পাঞ্চল থেকে ৩৩৫ দুষ্কৃতকারী গ্রেপ্তার: আইএসপিআর
০১ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
সাভার-আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে গত ৯ আগস্ট থেকে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে ৩৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি টাস্কফোর্স। একই সময়ে কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে ৭২৩টি সফল আলোচনার মাধ্যমে ৫৬টি কারখানা ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধ করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
একটি ‘মিলিয়ন ডলারের’ বিয়ে এবং বেতন না পাওয়া এক পোশাক কর্মীর মৃত্যু
৪ নভেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস্ট স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্যারিসে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফ্যাশন আইকন রোজমিন মাধবজিকে বিয়ে করেন জাভেদ। বিলাসবহুল ওই অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
সে বছর প্যারিসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিয়ের তালিকাতেও ছিল জাভেদের বিয়ের অনুষ্ঠান। তাই আয়োজনটি নজর কাড়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেরও। ভোগ ও ট্যাটলার ম্যাগাজিনেও জাভেদের বিয়ের অনুষ্ঠানের খবর ছাপা হয় ফলাও করে।
দেশের বাইরে অর্থবিত্তের এই জমকালো প্রদর্শনীর এক বছর পরেই দেশে দেখা গেল সম্পূর্ণ বিপরীত বাস্তবতা। দেশে জাভেদের পরিবারের মালিকানাধীন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস লিমিটেডের শ্রমিকরা মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে জীবন চালানোর জন্য রীতিমতো ধুঁকছেন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে এই কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। এ বিক্ষোভ একপর্যায়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে রূপ নেয়। ৯ সেপ্টেম্বর কারখানাটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হলেও শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলতে থাকে।
এরপর গতকাল কোম্পানি কর্মকর্তা, শ্রমিক নেতা, শ্রম মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএর এক বৈঠকে কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আইন অনুযায়ী শ্রমিক ও কর্মীদের সমস্ত বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে।
২৩ অক্টোবর সংঘর্ষে আহত চম্পা খাতুন (২৫) নামে একজন শ্রমিক ২৭ অক্টোবর মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েকদিন আইসিইউতে থাকার পর মারা যান তিনি।
এ নিয়ে সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষে চম্পাসহ তিনজন মারা গেছেন; আহত হয়েছেন কয়েক ডজন।
মিরপুরে ৭৮টি ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ, নিলামে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি
০৭ নভেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্টান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
প্রধান সড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধে মিরপুরে অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনের প্রধান সড়কে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়৷ ওইদিন দুপুর থেকে শুরু হয়ে এই অভিযান সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হাসান এই অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানে মোট ৭৮টি ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করে মোট ৩১৫টি ব্যাটারি জব্দ করা হয়। জব্দকৃত ৭৮টি অটোরিকশা এবং ৩১৫টি ব্যাটারি নিলামের মাধ্যমে ১০ লাখ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হাসান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ঢাকা শহরের প্রধান সড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল অনেক বেড়ে গেছে। প্রধান সড়কে বিপুল সংখ্যক অবৈধ অটোরিকশা চলাচলের ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনাও অনেক বেড়েছে। যানজট নিরসন ও সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
অভিযানে আরও অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটড (ডেসকো)। এসময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
কারওয়ান বাজারে উচ্ছেদের পর আবার ফুটপাতে হকাররা, আবার অভিযান
০৫ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রাস্তা ও ফুটপাত থেকে গতকাল সোমবার রাতে হকারদের উচ্ছেদ করার পর আজ মঙ্গলবার সকালে কয়েকজন হকার সবজি ও পণ্য নিয়ে আবার ফুটপাতে বসেছিলেন। সকালে যৌথ বাহিনী কারওয়ান বাজারে টহল দেওয়ার সময় তাঁদের অনেকেই মালপত্র নিয়ে সরে যান। পরে আবার কয়েকজন এসে বসে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ বলেছে, গতকাল রাত আটটার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব কারওয়ান বাজারের রাস্তার দুই ধারে ও ফুটপাতে বসা হকারদের উচ্ছেদ করে। রাত ১১টা পর্যন্ত চলা উচ্ছেদ অভিযানে শত শত হকারকে উচ্ছেদ করা হয়।
তৈরি পোশাকশিল্পে মালিক–শ্রমিক ঘোষণার ১৮ বিষয়ে অগ্রগতি সামান্য
১০ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
নিম্নতম মজুরি, হাজিরা বোনাস, মামলা প্রত্যাহারসহ ১৮টি বিষয়ে তৈরি পোশাক খাতের মালিক ও শ্রমিকেরা যে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন, দেড় মাস পার হলেও সেগুলোর বেশির ভাগই অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা-সংঘাত ও শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষ ওই সমঝোতায় পৌঁছায়। সরকারের এক মূল্যায়নে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত মাত্র সামান্য কয়েকটি বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে।
সমঝোতায় পৌঁছানো ১৮টি বিষয়ের অন্যতম ছিল শ্রম আইন সংশোধন করা। সরকারের পরিকল্পনা ছিল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এটি সংশোধন করা হবে। তবে আগামী মার্চ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে গত বুধবার পাওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১৮টি বিষয়ের কিছু পদক্ষেপের আংশিক বাস্তবায়ন হলেও বাকিগুলোর জন্য কাজ করছে বিভিন্ন কমিটি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ‘শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের যৌথ ঘোষণা হয়। ওই ঘোষণায় ২৫টি বিষয় জায়গা পেলেও ২৪ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মালিক ও শ্রমিকেরা ১৮টি বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছান ও চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্পাঞ্চলে যে অসন্তোষ দেখা দেয়, তা সমাধানের জন্যই সরকারের উদ্যোগে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে ওই আলোচনা হয়।
গাজীপুরে দিনভর শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ২১টি কারখানায় ছুটি, দুর্ভোগ
০৯ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় একটি পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় দুর্ভোগে পড়েন ওই মহাসড়কের চলাচলকারীরা। আজ শনিবার সকাল পৌনে ৯টায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পরে ওই কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে আশপাশের ২১টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টি এন জেড অ্যাপারেলস গ্রুপের পাঁচটি কারখানা রয়েছে। ওই কারখানার শ্রমিকদের বেতন–ভাতা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ রেখেছে। টি এন জেড গ্রুপের ছয়টি কারখানার তিন মাসের বেতন বকেয়া আছে। এ নিয়ে শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করেনি। পরে গত মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা মালেকের বাড়ি কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধনে অধ্যাদেশ
১০ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বিদ্যমান শ্রম আইন সংশোধন করে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করবে অন্তর্বর্তী সরকার। শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করা, তাঁদের চাকরিকালীন সুবিধা দেওয়া এবং নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করার বিষয়গুলো অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সচিবালয়ে আজ রোববার ‘বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা’বিষয়ক সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান শ্রম ও কর্মসংস্থানসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক আনোয়ার হোসেন এবং বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এপ্রিলের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত
১১ নভেম্বর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হবে কি না সে বিষয়ে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে ইতোমধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল রোববার এক বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যস্থতায় আলোচনার পর মজুরি নিয়ে শ্রমিক ও কারখানা মালিকরা ঐকমত্যে পৌঁছায়।
গাজীপুরের শিল্প এলাকায় পাওনা না পেয়ে বারবার সড়কে নামছেন শ্রমিকেরা
১২ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
গাজীপুরের শিল্পকারখানাগুলোয় শ্রমিক অসন্তোষ থামছেই না। বিভিন্ন দাবি নিয়ে বারবার মহাসড়ক আটকে দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত তিন মাসে অন্তত ২৫ বার ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। কয়েক দিন পরপর অবরোধের কারণে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়ছেন এসব পথে চলাচলকারী হাজারো যানবাহনের যাত্রীরা।
সর্বশেষ বকেয়া বেতন আদায় করতে গত শনিবার সকাল নয়টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সহস্রাধিক শ্রমিক। টানা ৫২ ঘণ্টা পর গতকাল সোমবার দুপুরে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। তবে দুই ঘণ্টা পর বিকেল চারটার দিকে আবারও তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। আগামী রোববারের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাসে রাত সোয়া ১০টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকেরা। এর আগে নগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় এ অবরোধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সড়কটিতে চলাচলকারী মানুষেরা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আশপাশের মোট ১২টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গাজীপুরে গত তিন মাসে অন্তত ২৫ বার ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। অবরোধ ছাড়াও অনেক স্থানে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তবে সেগুলো কারখানা এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই সময়ে জেলায় অন্তত ৪০টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে বলে শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
পোশাক কারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছে অক্টোবরের বকেয়া বেতন
১৩ নভেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে দেশের পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। বেতন না পেয়ে সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর ও মিরপুরে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। যার ফলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, কর্মস্থল ও গন্তব্যে পৌঁছাতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।
পরিস্থিতি শান্ত করতে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ (আইপি) ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) কর্মকর্তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক গতকাল (১২ নভেম্বর) বকে বেতনের দাবিতে পার্কের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। কিছু শ্রমিক সরে গেলেও, অবরোধ দীর্ঘক্ষণ ধরে স্থায়ী ছিল। এতে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। যদিও পরবর্তীতে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন তারা।
টঙ্গীর তারাগাছ অ্যাপারেলসের প্রায় ২ হাজার শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন। কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করে যে, নভেম্বরের ১৪ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হবে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।
সাভারের এজিআই অ্যাপারেলসের প্রায় ২ হাজার শ্রমিকও অক্টোবর মাসের বেতন চেয়ে কারখানার বাইরের সড়কে বিক্ষোভ করেন। এখানেও কর্তৃপক্ষ নভেম্বর ১৪ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়। অবরোধের কারণে প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি না হলেও স্থানীয় এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
মিরপুরে রিশাল গ্রুপের প্রায় ১,৫০০ শ্রমিক অক্টোবর মাসের বেতন না পেয়ে কারখানা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং কর্তৃপক্ষ সেদিনই বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে বেতন পরিশোধ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদ
১৩ নভেম্বর ২০২৪, দেশ রূপান্তর
রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও যৌথ বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার পৃথক দুই অভিযানে গুলিস্তান থেকে হকারদের ৫০০ চৌকি ও ভ্যান জব্দ করেছে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এদিকে ফার্মগেটে অভিযান চালিয়ে ফুটপাতের শত শত দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছে যৌথ বাহিনী।
অটোরিকশা চালকদের অবরোধে অচল ঢাকা
২২ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
সড়ক-রেলপথ অবরোধের ফলে দুই দিনের ব্যবধানে আবারও অসহনীয় যানজটে স্থবির ও দুর্বিষহ দিন দেখল রাজধানীবাসী। এবার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশের প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন চালকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তত ১২টি পয়েন্টে তাদের অবস্থানের ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা। সকাল ৯টা থেকে ৬ ঘণ্টা ধরে মূল অবস্থানটি ছিল মহাখালীতে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রিকশাচালকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যানবাহন এবং আশপাশের কয়েকটি স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়। রাজারবাগে আন্দোলনকারীদের হামলায় আহত হন তিন পুলিশ সদস্য।
এদিকে অবরোধের কারণে ছয় ঘণ্টা ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় দেখা দেয় শিডিউল বিপর্যয়। মহাখালী মোড় হয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সংলগ্ন পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে যানজট। এতে বিপাকে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। বিশেষ করে অসুস্থ ও বয়স্করা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।
বার্ষিক মজুরি ৯ % বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান, আশুলিয়ায় অন্তত ২৫ কারখানায় ছুটি ঘোষণা
১১ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি ৯ শতাংশ বাড়ার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছেন সাভারের আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা। বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) ১৫ শতাংশ করা, অর্জিত ছুটির টাকা প্রতি মাসে পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দেওয়ায় অন্তত ২৫টি কারখানা আজ বুধবার দুপুরের আগে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শিল্প–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নাসা গ্রুপের তিনটি কারখানা ১৩(১) ধারা অনুসারে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫-৩০টি কারখানার শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দেওয়ায় দুপুরের আগে বিভিন্ন সময়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বের হয়ে যান। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে, আজ বুধবার আশুলিয়ায় ইনক্রিমেন্ট ১৫ থেকে ২০ শতাংশের দাবিতে কাজ বন্ধ বা শ্রমিকেরা কাজ না করে চলে গেছেন এমন কারখানার সংখ্যা ২৫।
এড়িয়ে চলছে ব্যাংক ও বায়াররা, ৪০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে বেক্সিমকো
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা
গত আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে ব্যাংকিং সহায়তা ও কার্যাদেশ না পাওয়ার কারণ উল্লেখ করে, বেক্সিমকো গ্রুপ আজ তাদের গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত ১৬টি পোশাক কারখানায় কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিতে পারে। এই সিদ্ধান্তে বিপন্ন হতে পারে ৪০ হাজার কর্মীর জীবিকা।
বর্তমানে আর্থিক চাপ মোকাবিলা করতে পারছে না শিল্পগোষ্ঠীটি; এমতাবস্থায় চলমান পরিস্থিতিকে অটেকসই বলে বর্ণনা করেছেন বেক্সিমকো গ্রুপের একজন পরিচালক ও বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী।
কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতে আশ্বস্ত করেছিলেন যে আমাদের ব্যবসাকে সমর্থন দেওয়া হবে। যার ভিত্তিতে আমরা চার মাস ধরে কারখানা চালু রাখি। কিন্তু, কার্যত কোনো সহায়তা পাইনি।’
গত চার মাসে বেক্সিমকো ব্যয় করেছে ৩০০ কোটি টাকা, যার বেশিরভাগই গেছে শ্রমিকদের মজুরি দিতে, এরমধ্যে ১০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেওয়া হয়। শ্রমিকদের মজুরির দিতে মাসে ৬০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন বাবদ আরও ১৫ কোটি টাকা দরকার বেক্সিমকো গ্রুপের, গত চার মাস ধরে যারা বেতন পাননি।
ওসমান বলেন, ‘অন্যান্য কারখানার সাথে সাব-কন্ট্রাক্টে আমরা মাসে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছি, যা মোটেও যথেষ্ট নয়। আগে এসব কারখানা মাসে ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার আয় করতো।’
রেলের শ্রমিকদের তেজগাঁওয়ে অবরোধ, ট্রেন চলাচল বন্ধ
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, দেশ রূপান্তর
বকেয়া মজুরির দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ট্রেন স্টেশন অবরোধ করে রেখেছেন রেলওয়ের কিছু অস্থায়ী কর্মী। আজ মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১১টা থেকে তারা এখানে অবস্থান করছেন। এর কারণে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনটি দাবিতে এবার এসব অস্থায়ী শ্রমিক অবরোধ করেছেন রেলপথ। এর মধ্যে আছে পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ, সব শ্রমিকের বেতন পরিশোধ এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি।
কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিপেটায় ছত্রভঙ্গ বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা, ৭ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটার পর ছাত্রভঙ্গ হয়ে গেছেন বেক্সিমকোর আন্দোলনরত শ্রমিকেরা। এতে প্রায় সাত ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে গাজীপুর মহানগরীর সারাব এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ ঘোষণা করা ১৬টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। একপর্যায়ে তাঁরা ওই সড়কের চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বাড়ল ৯ শতাংশ
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
‘নিম্নতম মজুরি পুনঃমূল্যায়ন এবং বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট’ কমিটির সুপারিশের আলোকে পোশাক শিল্পে বার্ষিক ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল রোববার (২২ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদ্যমান শতকরা ৫ ভাগ বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে আরো শতকরা ৪ ভাগ যুক্ত করে সর্বমোট শতকরা ৯ ভাগ বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। নিম্নতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট অর্থাৎ শতকরা ৫ ভাগ বিদ্যমান অবস্থায় অব্যাহত থাকবে।
লিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে ৮ বাংলাদেশির মৃত্যু
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে গত সপ্তাহে ৮ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর লিবিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
শ্রম আদালতে শ্রমিকেরা বঞ্চিত, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২০ হাজার মামলা
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
শ্রম আদালতের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বার্থ পুরোপুরি সংরক্ষিত হচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতাই এর অন্যতম কারণ। আবার দীর্ঘসূত্রতারও কারণ আছে। কোনো কোনো আদালতে মামলা আছে কয়েক হাজার, এমনকি ছয় হাজারের বেশি। এসব আদালতের বিচারকেরা মামলা নিষ্পত্তি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। আবার এ–সংক্রান্ত ১৪টি আদালতের মধ্যে চারটিতেই ১০০টি করেও মামলা নেই। ২০০–এর কম আছে দুটি আদালতে। বাকি আটটিতে মামলার সংখ্যা এক হাজারের ওপরে।
শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের শেষ ভরসাস্থল হিসেবেই গঠন করা হয়েছিল শ্রম আদালত। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালসহ সারা দেশে একে একে ১৪টি শ্রম আদালত করে সরকার। এসব আদালতের অধীনে এখনো সব মিলিয়ে বিচারাধীন বা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ২০ হাজারের বেশি মামলা। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কর্মব্যস্ত শিল্পাঞ্চল এখন ভাঙা হাট
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রধান ফটকের পাশে টাইলসের বেদিতে ধুলার স্তর জমেছে। দেখেই বোঝা যায়, অনেক দিন কেউ সেখানে বসেনি। কর্মচাঞ্চল্যমুখর এলাকাটি এখন নীরব, নিস্তব্ধ। ফটকের কাছে ঝরাপাতা পরিষ্কার করছিলেন রতন কুমার মণ্ডল। বদলি শ্রমিক হিসেবে ১৯৮৬ সালে তিনি এই কারখানায় কাজ নেন। তাঁর মা–বাবাও শ্রমিক ছিলেন। কারখানা বন্ধের পর বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) কর্মচারী হিসেবে এখনো কাজ করছেন তিনি।
স্মৃতিচারণা করে রতন কুমার বলেন, ‘ক্রিসেন্টের বিশাল মাঠে মাইক বাজিয়ে ফুটবল খেলা হতো। কত আনন্দ, কত উল্লাস! আমরা যেন স্বর্গে বাস করতাম। বাজারঘাট সব মিলের ভেতরে ছিল। এখন পোড়োবাড়ির মতো মনে হয়। গালে পানি দেওয়ারও মানুষ নেই।’
১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৬৮ বছর বহু শ্রমিকের জীবিকা জুগিয়েছে ক্রিসেন্ট জুট মিল। ২০২০ সালের জুলাইয়ে বন্ধের সময় প্রায় ৯ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। কারখানার ১১৩ একর এলাকা গাছগাছালিতে ভরা। শ্রমিক কলোনির ভবনগুলোর জীর্ণদশা। একসময় দুই হাজার পরিবার থাকত সেখানে। এখন দু-একজন নিরাপত্তারক্ষী ও কয়েকটি পরিবার ছাড়া কেউ থাকে না।
২৪ ঘণ্টা শ্রমিক-কর্মচারীর কোলাহলে মুখর থাকত খুলনার শিল্পাঞ্চল। এখন সবই অতীত। সবখানে সুনসান নীরবতা।
ক্রিসেন্ট জুট মিল থেকে বিআইডিসি সড়কের এক কিলোমিটারের মধ্যে প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল। কারখানাটির শ্রমিক কলোনির সারি সারি ভবনগুলো এখন একেবারেই ফাঁকা। প্লাটিনাম ১ নম্বর ফটকের প্রবেশমুখে ‘বরিশাল স্টোর’ নামে ছোট্ট একটি দোকানে কাপড়চোপড় বিক্রি করেন শামসুল আলম। ১৯৭৯ সালে তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে খুলনায় এসে কারখানায় কাজ নেন। পাঁচ সন্তান নিয়ে কারখানার কলোনিতে থাকতেন। এখন বাইরে ভাড়া থাকেন। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় গ্রামে ফেরার মনস্থির করেছেন।
শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আগে প্রতি বৃহস্পতিবার ছিল ঈদের মতো। সেদিন শ্রমিকেরা মজুরি পেতেন। প্রতিটি কারখানার স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানে রমরমা কেনাবেচা চলত। সাপ্তাহিক মজুরির দিনে শ্রমিকেরা অভাব বুঝতেন না। শুধু ওই দিনই এই ছোট দোকানে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার কেনাবেচা হতো। আর এখন বসে বসে সময় কাটে।
দোকানের সামনে রিকশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন মো. কালাম। ঝালকাঠি থেকে খুলনায় এসে প্লাটিনাম ও ক্রিসেন্ট কারখানায় বদলি শ্রমিকের কাজ করেছেন। কালাম বলছিলেন, শিফট পরিবর্তনের সময় এ রাস্তা পার হওয়া যেত না। কারখানার গেটে খালি মাথা দেখা যেত। রিকশাচালক থেকে সবজি বিক্রেতা, সবারই ভালো আয় ছিল। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালালেও ৪০০ টাকা আয় হয় না।
খুলনার প্রায় প্রতিটি কারখানায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। প্লাটিনাম শ্রমিক কর্মচারী আবাসিক এলাকায় ১৯৬৪ সালে প্লাটিনাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কারখানা বন্ধের পর গত চার বছরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। ২০২০ সালে যেখানে ৭৬৮ জন শিক্ষার্থী ছিল, এখন সেটি ৩১২।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মদিজা খানম বলেন, মিল বন্ধের পর পরিবারের সঙ্গে গ্রামে কিংবা অন্য কোথাও চলে গেছে অনেক শিক্ষার্থী। স্কুলের প্রাণচাঞ্চল্যও কমে গেছে।
শুধু ক্রিসেন্ট-প্লাটিনামের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল নয়, খুলনার মীরেরডাঙ্গা এলাকার সোনালী জুট মিল, অ্যাজাক্স জুট মিল, আটরা শিল্পাঞ্চলের আফিল জুট মিল, শিরোমণি বিসিক শিল্প এলাকার মহসিন জুট মিলসহ বেসরকারি অনেক পাটকলই এখন বন্ধ। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টা শ্রমিক-কর্মচারীর কোলাহলমুখর খুলনার শিল্পাঞ্চলে কারখানায় কারখানায় এখন নীরবতা, নিস্তব্ধতা।
জীবনের নিরাপত্তা নেই, মেলে না শ্রমের মূল্যও
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
চরম ঝুঁকি নিয়ে অথৈ সাগর পাড়ি দিলেও আমাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র মেলে না। পদোন্নতিও হয় না। নেই কোনো সার্ভিস বুক। আজ মারা গেলে কাল নিঃস্ব হয়ে যাবে আমাদের পরিবার। কারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড, ক্ষতিপূরণ কিছুই দেওয়া হয় না। নেই কল্যাণ তহবিলও– চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য নামাতে নামাতে যখন এসব কথা বলছিলেন মাস্টার খোরশেদ, তখন তাঁর দুই চোখ ছলছল করছিল।
তাঁর কথার রেশ না কাটতেই পাশের লাইটার জাহাজের চালক হুমায়ুন রশিদ বলে ওঠেন, ‘অথচ মালিক, শ্রমিক ও সরকারের মধ্যে ২০১৯ সালের শেষে একটি ত্রিপক্ষীয় সভায় এসব সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। পাঁচ বছর পার হলেও কোনো দাবিই আলোর মুখ দেখেনি।
শুধু মাস্টার খোরশেদ কিংবা জাহাজচালক হুমায়ুন নন; মনে ক্ষোভ এবং চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে প্রতিদিন সাগর ও নদীপথ পাড়ি দেন দেশের লক্ষাধিক নৌযান শ্রমিক। জীবন ধারণের ন্যূনতম সুবিধা তো মেলেই না, উল্টো ‘পান থেকে চুন খসলেই’ তাদের চাকরি চলে যায়। সামান্য ভুলে যায় প্রাণটাও।
চাঁদপুরের মেঘনা নদীর হাইমচরের ঈশানবালার মাঝেরচর এলাকায় পণ্যবাহী জাহাজে সাতজনকে কুপিয়ে হত্যার পর একে একে স্পষ্ট হচ্ছে নৌপথের হযবরল অবস্থা। বেরিয়ে আসছে শোষণ-বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস। এর মধ্যে মাঝেরচরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত, বিচারসহ সুযোগ-সুবিধার বিভিন্ন দাবিতে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকরা।
দেওয়া হয় না ন্যূনতম মজুরি
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা, মালিকপক্ষের অতি মুনাফার চেষ্টা এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্লিপ্ততায় বছরের পর বছর ধরে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নৌ শ্রমিকরা। সবশেষ ঘোষণার তিন বছর পার হলেও মজুরি বোর্ড গঠন হয়নি। এমনকি ন্যূনতম মজুরিও বাস্তবায়ন করা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, অন্তত পাঁচ বছর আগে থেকে নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। সবশেষ বেতন স্কেলে এটি নির্ধারণ করা হয় ৭ হাজার ৮০০ টাকা। সেই বেতনও পান না লস্করসহ নিম্ন পদের ৮০ শতাংশ শ্রমিক। অথচ এসব শ্রমিকের দিনের পর দিন নৌযানে থাকতে হয়। মাসে ৪ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয় শুধু খাবারেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পণ্যবাহী একটি লাইটার জাহাজে মাস্টার, চালকসহ অন্তত ১২ জন কর্মী থাকেন। যাত্রীবাহী জাহাজে এ সংখ্যা ১২ থেকে ১৪ জন। এ ছাড়া পণ্য ওঠানো-নামানোসহ বিভিন্ন শ্রমিক এ সেক্টরে আছেন। সব মিলিয়ে দেশে এমন প্রায় দুই হাজার নৌযানে শ্রমিকের সংখ্যা লক্ষাধিক। অথচ নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্রের মতো চাকরির অনেক মৌলিক শর্তই পূরণ করেন না মালিকরা। এ নিয়ে চলতি বছরই অন্তত সাতবার কর্মবিরতিতে গেছেন নৌযান শ্রমিকরা। প্রতিবারই আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত অধরাই থেকে গেছে তাদের চাওয়াগুলো।
লঙ্ঘিত শ্রম আইন
শ্রম আইন অনুযায়ী, নৌযান শ্রমিকদের জন্য পাঁচ বছর পরপর নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের কথা। সেখানে বলা আছে, দ্রব্যমূল্য ও পরিবারের লোকজন যেন স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে, তা বিবেচনায় নিয়েই বেতন কাঠামো ঠিক করতে হবে। ২০২১ সালের জুনে এই সময়সীমা পার হলেও নতুন মজুরি কাঠামো হয়নি। সবশেষ ২০২২ সালে ১০ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকরা সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দিলে সরকার দাবি মানার আশ্বাস দেয়। তবে কোনো প্রাপ্যই নিশ্চিত হয়নি। এ ছাড়া শ্রমিক ও মালিকপক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণে ১০ লাখ টাকার যৌক্তিক দাবিও রয়ে গেছে অমীমাংসিত।
এদিকে চলতি বছরের মে মাসে নৌযান শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর সুপারিশ করে তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। দ্রুততম সময়ে মজুরি বাড়ানোর সুপারিশের পাশাপাশি তারা এ নিয়ে নৌযান শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে বৈঠক করার পরামর্শ দেয়। তবে সেই সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি শেষ পর্যন্ত।
মালিকপক্ষ-শ্রমিক নেতাদের ভিন্ন বক্তব্য
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, নৌপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। তাদের জীবনমান উন্নয়নে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পণ্য পরিবহনে সমতা না থাকায় বিশেষ সুবিধাভোগী কিছু মালিক শুধু গেজেট অনুযায়ী মজুরি দেন। কিন্তু অধিকাংশ নৌ শ্রমিকই গেজেট অনুযায়ী বেতন পান না। নিম্ন পদের কর্মীদের ৯০ শতাংশ নিয়োগপত্রই পান না। কিছু হলেই চাকরিচ্যুত করা হয়। চাঁদপুরের হাইমচরে একদিনে প্রাণ দিতে হলো সাত নৌ শ্রমিককে। সেই ঘটনা নিয়েও চলছে কানামাছি খেলা।
এক দশকে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ৮,২৯৮ শ্রমিক
১ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ২৯৮ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৬১৭ জন। শুধু গত এক বছরের হিসাবে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৭০৭ ও ২৯২।
গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ২৯৮ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৬১৭ জন। শুধু গত এক বছরের হিসাবে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৭০৭ ও ২৯২। এ সময়ে কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন ১১৩ জন শ্রমিক।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় ১৩টি দৈনিকের সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির (এসআরএস) জরিপ বলছে, সারা দেশে গত এক বছরে কর্মক্ষেত্রে ৬৩৯টি দুর্ঘটনায় ৭৫৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে যেসব শ্রমিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তাদেরও এ জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিলসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ২৭৩ শ্রমিকের মৃত্যু হয় পরিবহন খাতে। এর পরই রয়েছে কৃষি খাত। এ খাতে নিহত হন ১০২ জন। নির্মাণ খাতে নিহত হন ৯১ জন। এছাড়া ৪৩ জন রিকশা শ্রমিক, ৩৮ প্রবাসী শ্রমিক, ৩২ দিনমজুর, বিদ্যুৎ খাতে ২২ জন, ১৯ মৎস্য শ্রমিক, জাহাজ ভাঙা শিল্প ও স্টিলমিলে ৯ করে ১৮, নৌ-পরিবহন খাতে ৮, অক্সিজেন কারখানায় ৭, উৎপাদনে ৬, হোটেল-রেস্টুরেন্টে, রাইস মিল, ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ ও দোকানে পাঁচজন করে শ্রমিক নিহত হন। অন্যান্য খাতে নিহত হন ২৭ জন শ্রমিক।
সরকারি প্রকল্পের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে আসন পেতে মায়েদের ছোটাছুটি
০৪ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
সালেহা আক্তার (২৮) রাজধানীর গ্রিন লাইফ নার্সিং কলেজে শিক্ষকতা করছেন। দ্বিতীয় সন্তানের বয়স দুই মাস। তাঁর প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাস। চার বছর বয়সী বড় সন্তানকে সরকারের ‘২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের ‘পানি ভবন’ কেন্দ্রে রাখতে পেরেছেন। কেন্দ্রে দ্বিতীয় সন্তানের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত আসন পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা পাননি।
মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে আর দুই মাস পর কী হবে, সেটি ভেবে দুশ্চিন্তায় অস্থির রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকার এই বাসিন্দা। পানি ভবন কেন্দ্র থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, তিনি ১৫০ জনের সঙ্গে অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের আওতাধীন কেন্দ্রগুলোতে আসন পেতে অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে ৩৯১টি আবেদন। ৩৫৩টি আবেদনই রাজধানীর সাতটি কেন্দ্রের। রাজস্ব বাজেটে পরিচালিত সরকারি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের (৪৩টি) সেবার মান ও নিরাপত্তা নিয়ে যেখানে এন্তার অভিযোগ, সেখানে প্রকল্পের আওতায় তুলনামূলক উন্নত মানের এই ২০টি কেন্দ্রে সন্তানদের জন্য আসন পেতে মা-বাবাকে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।
এখনো ন্যূনতম মজুরির বাইরে ১০০ খাত-উপখাত
১২ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
দেশের মোট শ্রমিকশ্রেণির ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। তাঁদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি। আর দেশের শ্রমিকেরা সব মিলিয়ে ১৪২টি খাত ও উপখাতে কাজ করেন। এর মধ্যে পোশাক ও ট্যানারিসহ মাত্র ৪২টিতে ন্যূনতম মজুরির ঘোষণা আছে। অন্যদিকে হালকা প্রকৌশল, স্টিল রি রোলিং ও শিপ ব্রেকিংসহ ১০০ খাত–উপখাতে এখনো কোনো ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। সেসব খাতের শ্রমিকের জন্য কোনো আইনি সুরক্ষাও নেই।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজিত ‘শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ ও অধিকারসংক্রান্ত সংস্কার উদ্যোগ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
অর্থনীতি
অস্বাভাবিক দর পতনে তলানিতে শেয়ারবাজার
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল
টানা দর পতনে নাস্তানাবুদ দেশের শেয়ারবাজার। গতকাল রোববারও ব্যাপক দর পতন হয়েছে। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে দর হারিয়েছে ৮৫ শতাংশ শেয়ার। এর মধ্যে ১৫৯ শেয়ার গতকালই ৫ থেকে সাড়ে ১৬ শতাংশ দর হারিয়েছে। শুধু গতকালই নয়, গত আড়াই মাসে ২৯৬ শেয়ার কমপক্ষে ২০ থেকে ৭২ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে। পুঁজি হারিয়ে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের একটা অংশ রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরোনো অফিস ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।
দর পতনে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ অব্যাহতভাবে কমছে। গতকাল ঢাকার বাজারের প্রায় ৩০৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচাসহ সাকল্যে ৩১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরদিন যা ছিল ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
তহবিল ব্যয় সর্বনিম্ন, সুদের হার সর্বোচ্চ
২৮ অক্টোবর ২০২৪, বণিক বার্তা
বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা দরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যথায় মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল সংকটের কারণে বিপদে পড়বে। আর ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধও হয়ে যেতে পারে
দেশের প্রথম সারির ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফআই) তহবিলের বড় অংশই গ্রাহকদের সঞ্চয় ও ক্রমপুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সংগ্রহ ব্যয় খুবই কম। যদিও স্বল্প সুদের এ তহবিল থেকেই সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ সুদে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করছে তারা। উচ্চ সুদে নেয়া এ ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দেশের প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) সনদ নিয়ে বর্তমানে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৭৩১টি বেসরকারি ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান। পৃথক আইনে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকও এ ঋণ বিতরণ করে থাকে। এমআরএর বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের জুন শেষে দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের মোট তহবিলের আকার ছিল ৩৭ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৯৭ কোটি টাকাই ছিল গ্রাহকের সঞ্চয়। ১৪ হাজার ৩৯ কোটি টাকা ছিল ব্র্যাকের ক্রমপুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত। অলাভজনক না হলে উদ্বৃত্ত থাকা অর্থের পুরোটাই মুনাফার খাতায় নিতে পারত প্রতিষ্ঠানটি।
সে হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ব্র্যাকের মোট তহবিলের ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশই নিজস্ব উৎসের। বাকি ৪ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নিয়েছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্র্যাকের তহবিল ব্যয় ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। যদিও প্রতিষ্ঠানটির পোর্টফোলিও ইল্ড ছিল ২৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশের তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছে তারা।
ব্র্যাকের চেয়েও তহবিল ব্যয় অনেক কম ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আশার। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির তহবিল ব্যয় মাত্র ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ ব্যয় এতটা কম হওয়ার কারণ হলো আশার ক্রমপুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত। গত বছরের জুন শেষে আশার ক্রমপুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত ছিল ২১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে জমা ছিল গ্রাহকের ৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকার সঞ্চয়। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে আশার নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ১২০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৩১ হাজার ৮০ কোটি টাকার মোট তহবিলের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৫৮ শতাংশই ছিল নিজস্ব উৎসের। যদিও ব্র্যাকের মতো আশাও সর্বোচ্চ সুদ তথা ২৪ শতাংশে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করছে।
এমআরএর বিধান অনুযায়ী, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারে। আবার গ্রাহকের অনুকূলে অনুমোদনকৃত ঋণের একটি অংশও জামানত হিসেবে রাখা হয়। গ্রাহকদের সঞ্চয়ের বিপরীতে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করার শর্ত রয়েছে। যদিও এমআরএর তথ্য বলছে, দেশের বড় কোনো ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাই সঞ্চয়ের বিপরীতে গ্রাহকদের নির্ধারিত হারে সুদ পরিশোধ করছে না। বিপরীতে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ২৪ শতাংশ হারে সুদ আদায় করছে। এর বাইরেও বিভিন্ন ফি বাবদ আরো ৪-৫ শতাংশ সুদ অতিরিক্ত আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
‘ঢাকায় আইসাই ময়লার কাম পাইয়া গেছি’
২৮ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো
রাজধানীর মিরপুরের ভাষানটেক বাজার থেকে প্রায় এক শ গজ দূরে একটি আস্তাকুঁড়। ৭ অক্টোবর গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কয়েকটি শিশু-কিশোর কাজ করছে। কেউ ভ্যানগাড়ি থেকে ময়লা নামাচ্ছে, কেউ পুরোনো প্লাস্টিক পণ্য বাছাই করছে।
সবচেয়ে ছোট শিশুটির নাম সাগর হোসেন। বয়স ১৩ বছর। বাড়ি সুনামগঞ্জে। সাগর জানায়, মা–বাবা ও তিন ভাই-বোন মিলে ওদের পাঁচজনের পরিবার। মাস ছয়েক আগে ওদের বাবা ওদের নিয়ে ঢাকায় এসেছেন কাজের খোঁজে। এই বয়সে স্কুল ছেড়ে কাজে কেন—এই প্রশ্নে সাগরের উত্তর, ‘আয়পাতি না থাকলে খামু কী আর পরমু কী! গেরামে কাম নাই। তাই শহরে আইসি। ঢাকায় আইসাই ময়লার কাম পাইয়া গেছি।’
সাগর সেই সব শিশুর একটি, যারা নতুন করে শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে। গবেষণা বলছে, শিশুশ্রম সমস্যাটি বাংলাদেশে আগে থেকেই প্রকট ছিল। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণজনিত পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি সংকটে পড়া এবং পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে বহু পরিবার শিশু-কিশোরদের শ্রমে নিযুক্ত করতে বাধ্য হচ্ছে।
শিশুশ্রম নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ করেছে ২০২২ সালে। ‘জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় গত মার্চে। এতে বলা হয়, গত ১০ বছরে দেশে শিশুশ্রমিক বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৮৬ হাজার। শিশুশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ ৩৭ হাজার। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে ১০ লাখের বেশি শিশু। যেসব কাজে শিশুদের শারীরিক ও অন্যান্য ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, সেগুলোকে সরকার ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকাভুক্ত করে। ২০২২ সালে ৪৩ ধরনের কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ফেলা হয়।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গত দুই সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় শ্রমে নিযুক্ত ২০টি শিশু ও তাদের কয়েকটির পরিবারের কথা বলা হয়। তাদের প্রায় সবাই বলেছে, তাঁরা শিশুদের কাজ করতে পাঠিয়েছেন অর্থনৈতিক চাপে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুটির পড়াশোনায় মনোযোগ নেই বলে পরিবার কাজে পাঠিয়েছে। তবে অর্থনীতিই এ ক্ষেত্রে মূল কারণ।
প্রায় ৩ দশক ধরে বন্ধ থাকা সরকারি ২ টেক্সটাইল মিল চালু করবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
২৮ অক্টোবর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) সঙ্গে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের ভিত্তিতে, গত ২৭ বছর ধরে বন্ধ থাকা সরকারি দুটি টেক্সটাইল চালু করতে যাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
সীতাকুণ্ডের আরআর টেক্সটাইল মিল ও রাজশাহী টেক্সটাইলকে চালু করার উদ্দেশ্যে রোববার (২৬ অক্টোবর) প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও বিটিএমসির মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মিল দুটিকে যথাক্রমে চিটাগাং আরআর টেক্সটাইল লিমিটেড এবং বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইল লিমিটেড নামে রি-ব্র্যান্ড করা হয়েছে।
বস্ত্র-পাট ও নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দুটিসহ এখন পর্যন্ত ৭টি কল চালুর চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বাকি আছে আরও ১৭টি। ইজারা ও পিপিপি—উভয় দিক থেকে বাকিগুলো চালুরও চেষ্টা করা হবে।”
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, “আমরা ৩০ বছরের জন্য এই মিলগুলোর দায়িত্ব নিয়েছি এবং আশা করছি, মিল দুটির মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা ১ মাসের মধ্যে এই মিলগুলো ফের চালু করতে চাই।”
‘হামার ফির আকাল শুরু হইচে’
২৯ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল
‘কী করি বাহে, হামার ফির কাতি (কার্তিক) মাসের আকাল শুরু হইচে। ঘরোত এ্যাকনা দানা-পানিও নাই। কাম-কাজও মেলে না। তাতে জিনিসপত্রের যে দাম, হামারগুলার তো বুজি আর জানে (জীবন) বাঁচে না।’ এসব বলছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ চরের ষাটোর্ধ্ব নুর মোহাম্মদ।
সাম্প্রতিক বন্যার ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তিস্তাপারের মানুষ। রোপা আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু না হওয়া পর্যন্ত এলাকায় কাজও মিলবে না। চলতি বছর অতিদরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির কোনো বরাদ্দ আসেনি। এতে রংপুর অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বেকায়দায়।
সাধারণত এ সময় তেমন কাজ না থাকায় এ অঞ্চলের কৃষি শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েন। রংপুর জেলায় কৃষি শ্রমিক প্রায় দুই লাখ। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলসহ গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও তারাগঞ্জ এলাকার কৃষি শ্রমিকরা বছরের এই সময়ে কাজের সন্ধানে ছুটে যান দেশের নানা স্থানে। সকালে অনেকেই দলবেঁধে কাজ পাওয়ার আশায় শহরে যান। প্রত্যেকের বাইসাইকেলের পেছনে বাঁধা থাকে ডালি, কাস্তে, কোদাল, দা, খন্তাসহ কাজের বিভিন্ন উপকরণ। শ্রমিকের হাট বলে পরিচিত রংপুর শহরের শিমুলবাগ, জামতলা মোড়, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, বেতপট্টি কিংবা রেলওয়ে স্টেশনে বসে থাকেন তারা। কাজ না মিললে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
জাহাজ মালিকদের দুই পক্ষের বিবাদে বিশৃঙ্খল নদীপথে পণ্য পরিবহন
৩০ অক্টোবর ২০২৪, বণিক বার্তা
এসব লাইটারেজে করে অভ্যন্তরীণ নৌপথে আমদানীকৃত পণ্য পরিবহন করা হয় | ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানীকৃত পণ্য নদীপথে পরিবহনের ব্যবস্থা আবারো বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌরুটে এসব পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ভাড়া নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে মুখোমুখি জাহাজ মালিকদের দুই পক্ষ। তাদের এ বিবাদে জড়িয়েছেন শ্রমিকরাও।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানীকৃত পণ্য নদীপথে পরিবহনের ব্যবস্থা আবারো বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌরুটে এসব পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ভাড়া নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে মুখোমুখি জাহাজ মালিকদের দুই পক্ষ। তাদের এ বিবাদে জড়িয়েছেন শ্রমিকরাও। বর্তমানে এক পক্ষ চায় জাহাজ চলাচলে পুনরায় সিরিয়াল পদ্ধতি চালু হোক। অন্য পক্ষ চায় ব্যবসায়ীরা দরকষাকষি করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে নিজেরাই ভাড়া ঠিক করুক। প্রতিযোগিতামূলক দরে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পেতে উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা এখন এ দ্বিতীয় পক্ষকেই সমর্থন করছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বছরে হ্যান্ডলিং হয় প্রায় ১০ কোটি টন পণ্য। আমদানীকৃত ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালসহ নানা শিল্পপণ্য মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে (ছোট জাহাজ) স্থানান্তর করে পরিবহন করা হয় অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে। দুই দশক ধরে চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশের নানা গন্তব্যে লাইটার জাহাজ পরিচালনা করে আসা ‘ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল’ বা ডব্লিউটিসি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতেই জাহাজ ভাড়া কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। এতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ নানা গন্তব্যে নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ কমেছে ২০ শতাংশেরও বেশি।
সুদহার বৃদ্ধি ও বন্যায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা এসএমই খাতে
১ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়ন। ১৮ বছর আগে ব্যাংক ঋণ ও ধার নিয়ে পোলট্রি ব্যবসায় নেমেছিলেন এখানকার প্রত্যন্ত এক গ্রামের বাসিন্দা মাসুক।
ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়ন। ১৮ বছর আগে ব্যাংক ঋণ ও ধার নিয়ে পোলট্রি ব্যবসায় নেমেছিলেন এখানকার প্রত্যন্ত এক গ্রামের বাসিন্দা মাসুক। সাম্প্রতিক বন্যা তাকে একপ্রকার পথে বসিয়েছে। লোকসান গুনতে হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকার। এর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ব্যাংক ঋণের সুদহার। পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি এখনো। ঋণের কিস্তি সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারছেন না। ব্যবসায় ফেরা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
ফেনীর ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই এখন এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। পোলট্রি ব্যবসায়ী মাসুকের ভাষ্যমতে, ‘করোনার সময় প্রণোদনা ঋণ পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার এমন কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমার প্রায় দেড় কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ব্যাংক ঋণ ছিল, ধার-দেনা ছিল। এ পরিস্থিতির কারণে অনেক খামারি এখন ব্যবসা বন্ধ করে চলে যাচ্ছে। নতুন করে ব্যবসা দাঁড় করানোর মতো কোনো পরিস্থিতি ওদের নেই।’
নৌপথে পণ্য পরিবহনে বাড়বে খরচ
০২ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জ নৌপথে প্রতি টন গম পরিবহনে আগে খরচ হতো ৬৬২ টাকা। লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল’ থেকে জাহাজ বরাদ্দ নিলে এই ভাড়া দিতে হতো। গত বছরের ডিসেম্বরে সংস্থাটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে আমদানিকারকেরা দর–কষাকষি করে খোলাবাজার থেকে লাইটার জাহাজ ভাড়া নিচ্ছেন। তাতে একই পথে টনপ্রতি ভাড়া ১২০ টাকা কমে ৫৪০ টাকায় নেমেছে। ভোগ্যপণ্য ছাড়া সিমেন্টের কাঁচামাল পরিবহনে এই খরচ সাশ্রয় হচ্ছে আরও বেশি—টনপ্রতি ১৫৪ টাকা।
তবে এখন কম খরচে পণ্য পরিবহনের সুযোগ আর থাকছে না। কারণ, ভেঙে যাওয়া পুরোনো সংস্থাটি আবার নতুন নামে সংগঠিত হচ্ছে। এ জন্য গত ১৫ অক্টোবর নীতিমালা করেছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। নতুন নীতিমালায় পুরোনো সংস্থার নামের আগে বাংলাদেশ যুক্ত করে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো–অর্ডিনেশন সেল’।
নতুন নীতিমালায় জাহাজমালিকদের সংগঠনগুলো নিয়ে এই সেল গঠনের কথা বলা হয়েছে। তাদের ছাড়পত্র ছাড়া নদীপথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ নেই বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। ভাড়াও দিতে হবে তাদের নির্ধারিত দর অনুযায়ী। দর–কষাকষি করার কোনো সুযোগ নেই। তবে কারখানার নিজস্ব নামে লাইটার জাহাজ থাকলে সেগুলোতে পণ্য পরিবহন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
আমদানিকারকেরা বলছেন, নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে শুধু গম নয়, নৌপথে ভোগ্যপণ্যের মতো শিল্পের কাঁচামাল, সারসহ সব পণ্য পরিবহনে খরচ বাড়তে পারে।
খেলছে সিন্ডিকেট, বাগে নেই চালের বাজার
০৩ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
ভরপুর উৎপাদন, শুল্ক কমে তলানিতে, আমদানির দরজাও খোলা; পাশাপাশি জোরদার বাজার তদারকি কার্যক্রম। সরকারের এতসব আয়োজনেও বাগে আসছে না চালের বাজার। গেল এক মাসে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। পর্দার আড়ালে বাজারে খেলছে ‘সিন্ডিকেট’। ফলে বিফলে যাচ্ছে সরকারের ইতিবাচক সব উদ্যোগ।
খাদ্যশস্য মজুতেরও আছে নিয়ম। তবে সেই নিয়মের ধার না ধেরে হাজার হাজার টন চাল গুদামে ভরে রেখেছেন উৎপাদন এলাকার মিলার ও মজুতদাররা। চালের সংকট না থাকলেও বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিমভাবে দামের ঘোড়া ছোটাচ্ছেন তারা। এ কারসাজির সঙ্গে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধা পাওয়া বড় মিলার ও উৎপাদন অঞ্চলের কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী জড়িত। ঢাকার বাদামতলী, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও কারওয়ান বাজারের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীও রয়েছেন এই চক্রে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চালের মিল, বাজার ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পেয়েছে সমকাল।
প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা না তোলার আহ্বান বাংলাদেশ ব্যাংকের
০৬ নভেম্বর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
আমানতকারীদের টাকা নিরাপদ উল্লেখ করে প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংক থেকে তা না তোলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বানের কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা।
ব্যাংকিং খাতে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, যদি সব গ্রাহক একসঙ্গে টাকা তুলতে যান, তাহলে বিশ্বের কোনো ব্যাংকের পক্ষে তা দেওয়া সম্ভব নয়।
বেড়েই চলেছে মোটা ও মাঝারি চালের দাম
৭ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
অন্য সব নিত্যপণ্যের মতো কয়েক বছর ধরে দেশে চালের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি হওয়া ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ওঠানামা করলেও চালের দাম কমছে না।
অন্য সব নিত্যপণ্যের মতো কয়েক বছর ধরে দেশে চালের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি হওয়া ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ওঠানামা করলেও চালের দাম কমছে না। সম্প্রতি চিকন ও সুগন্ধি চালের দাম কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও দাম বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা মোটা ও মাঝারি ধরনের চালের।
দেশে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মোটা ও মাঝারি চাল কেনে। আগে দেশীয় উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে কিংবা আমদানি হলে চালের দাম কমত। কিন্তু এখন মৌসুম বা আমদানি কোনোটির প্রভাবেই চালের দামে অতটা তারতম্য হয় না। সম্প্রতি ভারত রফতানি শর্ত ও শুল্ক তুলে নেয়ার পাশাপাশি দুই দফায় চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশের স্থলে মাত্র ২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পরও পাইকারি বাজারে পণ্যটির দামে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি, উল্টো ১০ দিনের ব্যবধানে মোটা ও মাঝারি চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে।
বেকারত্ব, দুর্নীতি, বৈষম্যের কারণে ৫৫% তরুণ বিদেশে যেতে আগ্রহী: গবেষণা
০৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বেকারত্ব নিয়ে দেশের ৪২ শতাংশ তরুণ উদ্বিগ্ন। তাঁদের মতে, বেকারত্বের কারণগুলো হচ্ছে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ, নিয়োগে বৈষম্য এবং পারিবারিক জীবন ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে না পারা। এসবের ফলে ৫৫ শতাংশ তরুণ বিদেশে যেতে আগ্রহী।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
একই শিরোনামে ২০১০ ও ২০১৫ সালে দুটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ কাউন্সিল। এবারের গবেষণাটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩ হাজার ৮১ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন এমঅ্যান্ডসি সাচি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেসের ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক আইবেক ইলিয়াসভ।
অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৬৬ শতাংশে
০৭ নভেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্টান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর মাসে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি উভয়ই বেড়েছে। অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
অন্যদিকে সেপ্টেম্বরের এক অঙ্কের তুলনায় গত মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে দুই অঙ্কে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
কানের দুল বন্ধক রেখে টিসিবির চাল-ডাল কিনলেন গোলতাজ বেগম
০৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
৭৫ বছর বয়সী গোলতাজ বেগম থাকেন চট্টগ্রাম নগরের খাজা রোডে। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি জামালখানে টিসিবির লাইনে দাঁড়ান। পণ্য পেয়েছেন বেলা দুইটার দিকে।
ভাঙা গলায় প্রথম আলোকে গোলতাজ জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থ। ছেলেও বেকার। কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চলছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পেলেন। তাই ক্লান্ত। পরিবারের অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেন, স্বামী ঘর-বসা। বেশ কিছুদিন ধরে কাজে যেতে পারছেন না। আয় নেই। মেয়ের এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল বন্ধক রেখে কিছু টাকা পেয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে বাজার খরচ চলছে। সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে টিসিবির পণ্য কিনলেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের জামালখান মোড়ে গোলতাজ বেগমের সঙ্গে কথা হয়। এই মোড়ে তাঁর মতো টিসিবির ট্রাকের সামনে পণ্য কেনার জন্য দাঁড়ান প্রায় চার শ মানুষ। এর মধ্যে সাড়ে তিন শ মানুষ পণ্য পেয়েছেন।
সাড়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পরও পণ্য পেলেন না নিলুফা
০৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
তিন মাসের শিশু ঘরে রেখে বেলা সাড়ে ১১টায় পণ্য কেনার আশায় টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়ান গৃহিণী নিলুফা আক্তার। সারির ভিড় ঠেলে বেলা দুইটার দিকে কিছুটা সামনে এগিয়ে যান তিনি। এর মধ্যে ভিড়ও বাড়ে। মানুষের চাপে হঠাৎ ধাক্কাধাক্কিতে তিনি ছিটকে পড়েন সারি থেকে। পরে সারিতে দাঁড়িয়ে আর পণ্য পাননি। বেলা তিনটায় শেষ হয় পণ্য বিক্রি। সাড়ে তিন ঘণ্টার অপেক্ষার পরও তিনি খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সোয়া তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট মোড়ে কথা হয় নিলুফা আক্তারের (৩০) সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, তিন মাসের বাচ্চাকে ঘরে রেখে এসেছেন তিনি। স্বামী গাড়ির (প্রাইভেট কার) চালক। সে আয় দিয়েই চার মেয়ে ও স্বামী-স্ত্রীর সংসার।
আজ চট্টগ্রামের ২১ থেকে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর মধ্যে দেওয়ানহাট মোড়ে বেলা ১১টায় শুরু হয় পণ্য বিক্রি। বেলা তিনটার দিকে ৩৫০ ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রি শেষ হয়। এ জন্য পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন নিলুফা আক্তারসহ অন্তত ৩০ জন।
অপেক্ষার পর খালি হাতে ফিরতে হয় অনেককে
০৮ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
তিন মাসের শিশু ঘরে রেখে বেলা সাড়ে ১১টায় সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার আশায় টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়ান গৃহিণী নিলুফা আক্তার। সারির ভিড় ঠেলে বেলা দুইটার দিকে কিছুটা সামনে এগিয়ে যান তিনি। এর মধ্যে ভিড়ও বাড়ে। মানুষের চাপে হঠাৎ ধাক্কাধাক্কিতে তিনি ছিটকে পড়েন সারি থেকে। পরে সারিতে দাঁড়িয়ে আর পণ্য পাননি। বেলা তিনটায় শেষ হয় পণ্য বিক্রি। সাড়ে তিন ঘণ্টার অপেক্ষার পরও খালি হাতেই ফিরে গেছেন নিলুফা। ঘটনাটি গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট মোড়ের।
নিম্ন আয়ের মানুষকে বাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে পণ্য দিতে সরকার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সম্প্রতি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে এ কার্যক্রম চলছে। এরপর প্রতিদিনই পণ্য কিনতে টিসিবির ট্রাকের সামনে মানুষের ভিড় বাড়ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ট্রাকে পণ্য কম থাকায় প্রতিদিনই নিলুফা আক্তারের মতো অনেককে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার কাজীপাড়া, মিরপুর-৬ কাঁচাবাজার, মিরপুর-১০ গোলচত্বর, কালশী ফ্লাইওভার মোড়, ধানমন্ডি খেলার মাঠ, গাবতলী ও শুক্রাবাদ বাসস্ট্যান্ড এবং চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট ও জামালখান মোড়ে গতকাল সরেজমিনে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম ঘুরে দেখেন প্রথম আলোর চার প্রতিবেদক। এসব স্থানে পণ্যের তুলনায় ক্রেতার উপস্থিতি ছিল বেশি।
বাজারে নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের কারণে অনেক দিন ধরেই হিমশিম অবস্থা গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের। জিনিসপত্রে দাম বাড়তে থাকায় সর্বশেষ অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে আবার ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছেছে। গত এক মাসে বাজারে দাম বেড়েছে চাল, পেঁয়াজ, আলু, ব্রয়লার মুরগিসহ বেশ কিছু পণ্যের। এ কারণে টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।
কারিগরি শিক্ষাগ্রহণকারী ৮১ শতাংশের বেতন ১০ হাজার টাকার নিচে
০৫ অক্টোবর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
সরকারি বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ শেষে দ্রুত চাকরি মিললেও বেতন অনেক কম পওয়া যায় বলে উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে।
ওই জরিপে দেখা গেছে, কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারীর প্রায় ৮১.৪৮ শতাংশের বেতনই ১০ হাজার টাকার নিচে।
এছাড়া, ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে বেতন পান ১৪.৮১ শতাংশ, ৩০-৫০ হাজার টাকা বেতন পান ৩.৭০ শতাংশ। ৬০ হাজার টাকার উপরে বেতন পান এমন কাউকে পাওয়া যায়নি।
চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জ জেলায় পরিচালিত জরিপে এ চিত্র উঠে আসে।
জেলার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যন্ড কলেজসমূহ এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের ওপর এ জরিপ চালানো হয়।
গবেষকরা জানান, এর আগে সাতক্ষীরা ও পঞ্চগড় জেলাতেও একই ধরনের জরিপ হয়েছে। সেখানেও প্রায় একই চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষকেরা আরও জানান, কারিগরি শিক্ষাগ্রহণ সুনামগঞ্জের তরুণদের চাকরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেলার কারিগরি শিক্ষা সম্পন্ন করা ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ছয় মাসের মধ্যে কোনো না কোনো চাকরি পেয়েছেন। বাকি ২২ শতাংশের ছয় মাসের বেশি সময় লেগেছে।
দেশের ২৬% মানুষ তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায়, বেশি চট্টগ্রাম, রংপুরে : জরিপের তথ্য
০৯ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
দেশে সব ধরনের মোটা চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। মধ্যবিত্তের পছন্দের মাঝারি চালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২ থেকে ৩ টাকা (প্রায় ৮ শতাংশ) বেড়েছে। মোটা ও সরু চালের দাম বেড়েছে ২ টাকা (প্রায় ৭ শতাংশ)। তাই খাদ্য অধিদপ্তর ও টিসিবির ন্যায্যমূল্যের দোকানে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। রাজধানীর পুরান ঢাকা, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বেশির ভাগ এলাকায় কম দামে খাদ্যপণ্য কিনতে মানুষের ভিড় বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে একটি সমীক্ষায় দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কাজনক চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের ২ কোটি ৩৬ লাখ বা ২৬ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রার খাদ্যসংকটে ভুগছেন। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব মানুষ বিপদে থাকতে পারেন। তাদের মধ্যে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া তিন লাখ রোহিঙ্গাও রয়েছে। এ অবস্থায় তীব্র খাদ্যসংকটে থাকা ১৬ লাখ মানুষের জন্য জরুরি খাদ্যসহায়তা দরকার।
প্রতিবেদনে দেশের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের ভৌগোলিক অবস্থানও চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মানুষের বেশির ভাগ বাস করেন চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা ও সিলেট বিভাগে। দেশের ৪০টি এলাকায় খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, ৩৩টি এলাকার মানুষ সংকটজনক অবস্থায় রয়েছেন।
বোতলজাত ৬ টাকার পানি বিক্রি হয় ২০ টাকায়
১০ নভেম্বর ২০২৪, আজকের পত্রিকা
বোতলের পানি এখন দেশের কোটি কোটি মানুষের ভরসা। বাড়িতে পরিবারের জন্য ব্যবহার ছাড়াও হোটেল-রেস্তোরাঁ, উৎসব, সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান—সর্বত্র ব্যবহৃত হয় বোতলের পানি। দিনে দিনে এই পানি হয়ে উঠেছে দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ভোক্তাস্বার্থের পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই নির্ভরশীলতার সুযোগ নিয়ে কোম্পানিগুলো উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির তুলনায় অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। অনুসন্ধান বলছে, বাজার দখলে রাখতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের বড় মুনাফা দেওয়া চড়া দামের বড় কারণ।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দেশে বোতলে পানির ব্যবহার শুরু হয়। শুরুর দিকে এই পানি কিনে খাওয়া প্রায় বিলাসিতা মনে হলেও গত সাড়ে তিন দশকে জীবনযাপনের প্রায় সাধারণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে এটি। ক্রমেই বেড়েছে বাজার। প্রতিযোগিতা কমিশনের পর্যালোচনা অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে এই পানি বিক্রি হয়েছিল ৫৫ কোটি ২৪ লাখ ৫৯ হাজার লিটারের বেশি। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত (যে পর্যন্ত তথ্য পাওয়া গেছে) বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি লিটার।
একলাফে বড় মূল্যবৃদ্ধি
শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে আধা লিটার পানির বোতলের দাম একবারে ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা নির্ধারণ করে। গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিযোগিতা কমিশনের তৈরি করা ‘বোতলজাত পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিবিষয়ক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে’ এ তথ্য রয়েছে। এতে কোম্পানিভেদে মুনাফা বেড়ে যায় ৭১ দশমিক ২৩ থেকে ৪২০ শতাংশ পর্যন্ত। অনেক বেড়ে যায় ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতাদের লাভের অংশও। ফলে ৫০০ মিলির এক বোতল পানির উৎপাদন খরচ ৬-৭ টাকা হলেও ক্রেতাকে তা কিনতে হচ্ছে ২০ টাকায়। অনেকের অভিযোগ, ৭-৮টি কোম্পানি বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের মুনাফা অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ডলারের দাম ও কাঁচামালের আমদানি খরচ বৃদ্ধিকে দায়ী করেছিল কোম্পানিগুলো। তবে বিশ্লেষণ করে সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশন দেখতে পায়, সার্বিকভাবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে নামমাত্র।
প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের অনুসন্ধানে ঢাকা ওয়াসাসহ (ব্র্যান্ড নাম শান্তি) মোট ৮ কোম্পানির উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করে। এতে যোগসাজশ করে দাম বাড়ার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়। ওয়াসা ছাড়া বাকি ৭টি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এগুলো হলো কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজ লিমিটেড (কিনলে), ট্রান্সকম বেভারেজেস (অ্যাকুয়াফিনা), মেঘনা বেভারেজ (সুপার ফ্রেশ), পারটেক্স বেভারেজ (মাম), সিটি গ্রুপ (জীবন), আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ (স্পা) এবং প্রাণ বেভারেজ লিমিটেড (প্রাণ)।
বড় প্রকল্পের আয়ে উঠছে না পরিচালন ব্যয় ভর্তুকি দিয়ে কিস্তি শোধ
১১ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
কক্সবাজারে নতুন রেলপথ, ঢাকায় মেট্রোরেল, চট্টগ্রামে টানেল ও পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথ চালু হয়েছে গত দুই বছরে। দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের মেগা এ চার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের টাকায়।
কক্সবাজারে নতুন রেলপথ, ঢাকায় মেট্রোরেল, চট্টগ্রামে টানেল ও পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথ চালু হয়েছে গত দুই বছরে। দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের মেগা এ চার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের টাকায়। চালুর পর প্রকল্পগুলোর আয়-ব্যয়ের যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, আয় দিয়ে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ই উঠছে না। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে ঋণ পরিশোধ ব্যয়। চার প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সুদ ছাড়া বার্ষিক গড় কিস্তি দিতে হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হওয়ায় ঋণ পরিশোধে সরকারকে দিতে হচ্ছে ভর্তুকি।
খুচরা বাজারে আলু কেজিতে ৭০-৭৫ টাকা, কেন এত দাম
১২ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বাজারে এবার বেড়েছে আলুর দাম। গত দুই সপ্তাহে পণ্যটির দাম কেজিতে ১৫ টাকার মতো বেড়েছে। তাতে খুচরা বাজারে এক কেজি আলু ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে দুই মাস আগে পণ্যটির আমদানি শুল্ক কমিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর আমদানিও হয়েছে। তবে বাজারে এর প্রভাব দেখা যায়নি; বরং দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে হিমাগারে থাকা আলুর সরবরাহ শেষের দিকে। পাইকারি বিক্রেতারা চাহিদা অনুসারে আলুর সরবরাহ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে এ বছর অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে আলুর বীজ রোপণে দেরি করেছেন কৃষকেরা। এতে বাজারে আগাম আলু আসতে দেরি হচ্ছে। এসব কারণে আলুর দাম বাড়ছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও–তালতলা ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। তবে বড় বাজার থেকে পাল্লা (৫ কেজি) হিসাবে কিনলে কিছুটা কমে পাওয়া যায়। ১৫ দিন আগে আলুর কেজি ছিল ৫৫-৬০ টাকা।
মজুতদারেরা দাম বাড়াচ্ছেন
হিমাগারমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, গত জুন মাসে হিমাগার থেকে প্রতি কেজি আলু ৪২-৪৫ টাকায় পাইকারি বিক্রি হয়েছিল। সেই দাম এখন বেড়ে ৬২ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। হিমাগার পর্যায়ে এমন দাম আগে কখনো দেখা যায়নি। আলুর বাড়তি চাহিদার কারণে মজুতদারেরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, হিমাগার থেকে আলুর কেজিতে বাড়তি যে লাভ রাখা হচ্ছে, তার পুরোটাই মজুতদারেরা নিচ্ছেন। গত বছর এমন সময়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের তদারকির কারণে মজুতদারেরা এমন সুযোগ পাননি। কিন্তু এ বছর সে ধরনের অভিযান দেখা যায়নি।
ঋণসুবিধা দিয়ে বেক্সিমকোকে চালু রাখার সুপারিশ সরকারি কমিটির
১৫ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেতন দিতে না পারায় বেক্সিমকো গ্রুপের একাধিক কারখানায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। ওই সময় বেতন দিতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক ৫৫ কোটি টাকা ঋণ ছাড় করে। যদিও জনতা ব্যাংকে গ্রুপটির ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকাই এখন খেলাপি।
এ ছাড়া ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার রপ্তানি আয় দেশে আনছে না গ্রুপটি। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা। বর্তমানে তিনি কারাবন্দী।
বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা এখন আবার বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। এমন সময় গ্রুপটির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনায় বসেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অধীনে গঠিত ‘সংকটে থাকা প্রতিষ্ঠান প্রোফাইলিং তৈরিবিষয়ক কমিটি’। এতে গ্রুপটির কারখানা পরিচালনায় ও শ্রমিকদের বেতন দিতে নতুন করে ঋণসুবিধা প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের দেওয়া তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে এটিই সুপারিশ পেয়েছে। বেক্সিমকোর প্রাপ্ত মুনাফার পুরোটাই জনতা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে।
বেক্সিমকোর প্রস্তাব
সরকার পরিবর্তনের পর বেক্সিমকো গ্রুপ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে একটি প্রস্তাব জমা দেয়। তাতে তিনটি প্রস্তাব করা হয়। প্রথম প্রস্তাবে বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংকে থাকা ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার ঋণ সুদবিহীন ব্লক হিসাবে রাখার অনুরোধ জানায়। সেই সঙ্গে দায় পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় ও ঋণ পরিশোধে ২ বছরের ছাড় চেয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের অক্টোবর মাসের বেতন দিতে গত মঙ্গলবারের মধ্যে ৬০ কোটি টাকা চেয়েছিল তারা। পাশাপাশি আরও ৭০০ কোটি টাকার ঋণসুবিধা চায় গ্রুপটি। এ জন্য বেক্সিমকো কারখানা কর্তৃপক্ষ নতুন করে ৬৮৩ কোটি টাকার সম্পত্তি (জমি ও শেয়ার) বন্ধক রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে বেক্সিমকোর সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থের সংস্থান, গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থসংস্থানের জোগান ও পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে বেসরকারিভাবে অর্থের জোগান নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তৃতীয় প্রস্তাবে কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোম্পানি বন্ধ করতে হলে ২৪ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এতে শ্রমিকের পাওনা ৫৫৯ কোটি টাকা। এই টাকা জোগাড় করতে কোম্পানি বিক্রি করা ছাড়া বিকল্প নেই। পাশাপাশি বেক্সিমকো এ–ও জানিয়েছে, তাদের গ্রুপে ৪০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়েছে। তাই তারা কারখানা বিক্রি বা বন্ধ করার পক্ষে নয়।
কমিটির সুপারিশ
বেক্সিমকোর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সংকটে থাকা প্রতিষ্ঠান প্রোফাইলিং তৈরি বিষয়ক কমিটি’ কারখানাগুলোয় কর্মসংস্থান ও তাদের রপ্তানি আয় এবং বকেয়া ব্যাংক ঋণ আদায়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিটিকে চালু রাখার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি তারা বলেছে, জনতা ব্যাংকের দেওয়া ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার ঋণ সুদবিহীন ব্লকহিসাবে স্থানান্তর করে কোম্পানি চালু রেখে বেক্সিমকোর ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা যায়। বেক্সিমকোর প্রায় ৬৮৩ কোটি টাকা বাজার মূল্যের সম্পত্তি বন্ধক রাখার প্রস্তাবের বিপরীতে কোম্পানিকে ৬০০ কোটি টাকা ফান্ডেড ও ৪০০ কোটি টাকা নন–ফান্ডেড নতুন রপ্তানি ঋণ দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে কমিটি।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যথেচ্ছ অনিয়মের সুযোগ বন্ধ, তবে সংকট কাটেনি
১৬ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ব্যাংক দখল করে মানুষের জমানো টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাত করে কিংবা সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা বের করা, বাণিজ্যের ছদ্মবেশে অর্থ পাচার, ঋণখেলাপিদের নানা সুবিধা দেওয়া, টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক টিকিয়ে রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে ধস—ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আর্থিক খাতে ছিল এই চিত্র। দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার আগে এই পচন থামাতে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে, যথেচ্ছ অনিয়মের সুযোগ বন্ধ করতে হয়েছে। এর ইতিবাচক ফলও এসেছে; কিন্তু সংকট পুরোপুরি কাটেনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিনে দীর্ঘদিন ধরে চলা ডলার–সংকটের আপাত সমাধান হলেও ব্যাংকিং খাতে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, তা দূর করা যায়নি। বেসরকারি ৫-৬টি ব্যাংক থেকে গ্রাহকেরা এখনো চাহিদামতো টাকা তুলতে পারছেন না। এই ব্যাংকগুলো ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি লুটপাটের শিকার হয়েছিল। এসব ব্যাংকে অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আগের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল হয়েছে। কিন্তু তাদের তারল্যসংকট দূর হয়নি।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে বেশ কিছু ব্যাংককে ধার দিয়ে আসছিল। নতুন সরকার গঠনের পর টাকা ছাপিয়ে ধার দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। তাদের টাকার জোগান দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলো চাহিদামতো টাকা ধার পাচ্ছে না। ফলে প্রয়োজন অনুসারে টাকা তুলতে না পারায় গ্রাহকের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সার্বিকভাবে, ব্যাংক খাতের ওপর গ্রাহকের আস্থা ফিরে আসেনি।
পাকিস্তানের সঙ্গে জাহাজ চালুর নেপথ্যে
১৬ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে এত দিন সরাসরি কোনো কনটেইনার জাহাজসেবা ছিল না। দুই দেশের বাণিজ্যও বিলিয়ন ডলারের কম। তবে সরকারের পটপরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার জাহাজ পরিষেবা চালু নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
এ আগ্রহের সূত্রপাত ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাস বিষয়টি এক ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরার পর। বুধবার এক পোস্টে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমেদ মারুফের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, সরাসরি জাহাজ পরিষেবা পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর একটি বড় পদক্ষেপ।
ঋণমান কমাল মুডি’স, অর্থনীতির পূর্বাভাসও ‘নেতিবাচক’
১৯ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
এক বছরের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান কমাল আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও নানা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে সরকারের ইস্যুয়ার ও সিনিয়র
এক বছরের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান কমাল আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও নানা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে সরকারের ইস্যুয়ার ও সিনিয়র আনসিকিউরড রেটিং ‘বি১’ (B1) থেকে ‘বি২’-এ (B2) অবনমন করেছে সংস্থাটি। মুডি’সসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঋণমান সংস্থা দুই বছর ধরেই দেশের ঋণমানে অবনমন ঘটাচ্ছে। বিষয়টিকে দেশের অর্থনীতি ও ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। মুডি’সের তালিকায় বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়া আর যে কয়টি দেশের বি২ রেটিং রয়েছে সেগুলো হলো কম্বোডিয়া, মঙ্গোলিয়া, রুয়ান্ডা, নিকারাগুয়া, পাপুয়া নিউগিনি ইত্যাদি।
ঋণমান অবনমনের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতির পূর্বাভাস ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ করে দিয়েছে মুডি’স। প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্যমতে, ঋণমান ও অর্থনীতির পূর্বাভাস অবনমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিং ‘নট প্রাইম’ বা ‘শ্রেষ্ঠ গুণসম্পন্ন নয়’ হিসেবে অপরিবর্তিত থাকবে।
হিমাগার পর্যায়ে কঠোর তদারকি না থাকায় বাড়ছে আলুর দাম
২১ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
রংপুরে চাষিদের কাছ থেকে ২৩ টাকা কেজি দরে আলু কিনে তা হিমাগারে মজুত করেন ব্যবসায়ীরা। বস্তা কেনা, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ ও হিমাগার ভাড়ায় প্রতি কেজিতে আরও খরচ হয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সা। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ৩১ দশমিক ১০ পয়সা। অথচ সেই আলু এখন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৭০–৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। আলুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন।
হিমাগার মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা বলেন, আলুর দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, বিশেষ করে হিমাগারের আলু মজুতদারেরা দায়ী। এ ছাড়া জেলায় বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান না চালানোয় এবং তাঁরা কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় আলুর মজুতদারেরা অবাধে দাম বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন। এ ছাড়া হিমাগারে আলুর মজুত কমে যাওয়ার কারণে দামে প্রভাব পড়েছে।
পরিবারপ্রতি ৪,৫৪০ টাকা সহায়তার প্রস্তাব সিপিডির
২৪ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
দেশে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যেসব কর্মসূচি রয়েছে, তা পুরোপুরি কার্যকর নয়। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক উপকারভোগী এসব সহায়তা পান না। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বাজেট ও অর্থ বিতরণ নিয়েও রয়েছে জটিলতা। এমন বাস্তবতায় ইউনিভার্সেল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই) বা ‘সর্বজনীন ন্যূনতম আয়’ নামে একটি সমন্বিত সুরক্ষা কর্মসূচির প্রস্তাব করেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, নতুন এ পদ্ধতিতে দেশের প্রতিটি উপযোগী পরিবার জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম একটি আয় (অর্থসহায়তা) রাষ্ট্র থেকে পাবে। আর এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা গেলে জাতীয়ভাবে দারিদ্র্যের হার ৬ দশমিক ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। আগামী বাজেট থেকেই স্বল্প বা বিস্তৃত পরিসরে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
কর্মসূচির নানা দিক
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, দেশে দারিদ্র্য কমলেও বৈষম্য বেড়েছে। ফলে দারিদ্র্য টেকসইভাবে কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। সে লক্ষ্যেই ইউবিআই কর্মসূচি প্রস্তাব করা হয়েছে। সিপিডি হিসাব করে দেখেছে, সংশ্লিষ্ট পরিবারের আয়ের পাশাপাশি এসব পরিবারকে মাসে ৪ হাজার ৫৪০ টাকা ন্যূনতম সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। তাতে একটি পরিবার তার মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারবে।
মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, জাতীয়ভাবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বছরে সরকারের ৭৫ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা লাগবে। আর অতি দারিদ্র্যপ্রবণ ১১ জেলায় এটি বাস্তবায়ন করতে ১৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, আগামী বাজেটেই এ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে।
ন্যূনতম খাদ্য গ্রহণে খরচ করতে হচ্ছে দারিদ্র্যসীমার ব্যয়ের চেয়ে প্রায় ৭০% বেশি
২৭ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে সুস্থভাবে জীবনধারণের জন্য প্রতিদিন যে পরিমাণ খাদ্যশক্তি (২ হাজার ১০০ কিলোক্যালরি) গ্রহণ করতে হয়, তাতে প্রতি মাসে ব্যয় হওয়ার কথা ১ হাজার ৮০০ টাকা। সরকারিভাবে এটিকেই ফুড পোভার্টি লাইন বা খাদ্য দারিদ্র্যসীমা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক হিসাব অনুযায়ী, জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্যশক্তিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে এখন প্রতি মাসে মাথাপিছু ব্যয় করতে হচ্ছে ৩ হাজার ৫১ টাকা। সে অনুযায়ী, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম খাবার গ্রহণে একজন মানুষের ব্যয় হচ্ছে খাদ্য দারিদ্র্যসীমার চেয়ে ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
চীনা বিনিয়োগের কোনো প্রকল্পেই কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না
২৮ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
চীনের অর্থায়নে দেশে বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পগুলোর সিংহভাগই নির্মাণ হয়েছে গত দেড় দশকে। বাস্তবায়নাধীন আছে আরো বেশকিছু। এসব প্রকল্প নেয়ার সময় নানাভাবে এগুলোর আর্থিক মুনাফাযোগ্যতার তথ্য উপস্থাপন করেছিল বিগত সরকার। যদিও বাস্তবায়ন শেষে প্রকল্পগুলো চালু হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে পুরোপুরি ভিন্ন চিত্র। চালু হওয়ার পর থেকে প্রকল্পগুলোর আয় দিয়ে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ই উঠছে না। যদিও এগুলোর সুদসহ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপন হয় ১৯৭৫ সালে। সরকারের আর্থিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ ও বাজেট সহায়তা হিসেবে মোট প্রায় ১ হাজার ১০৫ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ছাড় হয়েছে প্রায় ৭৭৫ কোটি ডলার। ছাড় হওয়া এ অর্থে এখন পর্যন্ত বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার পথে আছে আরো বেশ কয়েকটি।
বাস্তবায়ন শেষ হওয়া প্রকল্পগুলো থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিশ্রুত বা কাঙ্ক্ষিত আর্থিক ফলাফল পায়নি বাংলাদেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্পটি হলো পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। বারবার সংশোধন করে কলেবর বাড়ানোয় প্রকল্পটি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলেও এর ঋণ পরিশোধ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। ইআরডির তথ্য বলছে, ডলারের অংকে প্রকল্পে চীনা ঋণ দাঁড়ায় ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখে। ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ ঋণের আসল পরিশোধে বাংলাদেশ সময় পাচ্ছে ১৪ বছর। এ হিসাবে বার্ষিক গড় ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। ঋণের সুদহার ২ শতাংশ। সার্ভিস চার্জ আরো দশমিক ২৫ শতাংশ।
পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথ দিয়ে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর থেকে আংশিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে তিনটি আন্তঃনগর ও দুটি মেইল ট্রেন চলছে এ পথে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ঋণ চুক্তি অনুযায়ী, গ্রেস পিরিয়ড শেষ করে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে এ প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। আয় দিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হওয়ায় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে ভর্তুকি দিতে হবে।
সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ৬ ব্যাংককে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
২৮ নভেম্বর ২০২৪, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি অনলাইন
নতুন করে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ৬টি ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
গভর্নর জানান, আগামী রোববার থেকে এসব ব্যাংকগুলোতে টাকা পেতে শুরু করবে গ্রাহকরা। তবে প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত টাকা না তুলতে গ্রাহকদের অনুরোধ করেন তিনি।
গভর্নর বলেন, ‘আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহযোগিতা দিচ্ছি। আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্যেই এটি দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।’
ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি বলেছিলেন, নতুন করে আর টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে না।
আবারও বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট বাজারে
২৯ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
দুই সপ্তাহ আগেই বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ–সংকট ছিল। এরপর সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) কমালে সরবরাহ কিছুটা বাড়ে। তবে তিন-চার দিন ধরে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ আবার কমেছে।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকার মতো বেড়েছে। তবে মোটা চাল, খোলা সয়াবিন ও পাম তেল, পেঁয়াজ, চিনি ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নাখালপাড়া সমিতি বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাড়ে ওষুধের দাম
৩০ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
জীবন রক্ষাকারী অর্ধশতাধিক ওষুধের দাম আবারও বেড়েছে। গত তিন মাসে কোনো কোনো ওষুধের দাম ১১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়মের তোয়াক্কা করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিত্যপণ্য কিনতে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ এ ধাক্কা সামলাতে খাদ্যপণ্যে কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছেন। দীর্ঘমেয়াদে পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মধ্যে দেখা দেবে পুষ্টি ঘাটতি। নিম্ন ও মধ্যবিত্তকে ওষুধের বাড়তি দাম চুকাতে হবে প্রাণের মূল্যে! যদিও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেল ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছু ওষুধের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
জানা যায়, অত্যাবশ্যকীয় ১১৭টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার। এর বাইরে যত ওষুধ বাজারে রয়েছে, বেশির ভাগ উৎপাদক কোম্পানির ঠিক করা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে এর জন্যও কিছু প্রক্রিয়া মানতে হয় কোম্পানিগুলোকে। নতুন দরের যুক্তিসহ অনুমোদনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। সরকার আমদানি কাঁচামালের সোর্স কান্ট্রি, দর, মানসহ বিভিন্ন বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে যাচাই শেষে সমন্বয় করে। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও এ নিয়ম মানেনি কোম্পানিগুলো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাজারে দাম কার্যকর করে তা অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বড় বড় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই সরকারকে চাপে রাখে। যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের সক্ষমতা না থাকায় অধিদপ্তরও মেনে নিতে বাধ্য হয়
এমনিতেই মানুষ তাঁর উপার্জনের বড় অংশ নিজের কিংবা পরিবারের চিকিৎসায় ব্যয় করছে। গত তিন মাসে ওষুধভেদে ১০ থেকে ১১০ শতাংশ দাম বেড়েছে, গড়ে যা ২৯ শতাংশ। হঠাৎ দামের লাফে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে অন্তত ৫০টি ওষুধ বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। এসব ওষুধের মধ্যে আটটির দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ১১, ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ২২ ও ৯টি ওষুধের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১১০ শতাংশ। বৃদ্ধির তালিকায় থাকা ২১টি ওষুধ স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের। এ ছাড়া এসিআই, এরিস্ট্রো ফার্মা, সার্ভিয়ার ফার্মা, ইউনিমেড ইউনিহেলথ, ড্রাগ ইন্টার ন্যাশনাল, বীকন ফার্মা ও নুভিস্তা ফার্মার বিভিন্ন ওষুধের দাম বেড়েছে। বৃদ্ধির তালিকায় যেমন শিশুর সর্দি-কাশির সিরাপ রয়েছে; তেমনি রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, ভিটামিন, ব্যথা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ওষুধ।
সড়কে আয়ের মাত্র ২১% ব্যয় হয় রক্ষণাবেক্ষণে
৩ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
দেশে সড়ক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে সরকার। জ্বালানি তেল ও যানবাহন থেকে শুল্ক, কর ও নিবন্ধন ফি আদায় এবং টোল বাবদ আয় হয় এ অর্থ। যদিও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয় তার মাত্র ২১ শতাংশ বা ৮ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। ফলে দেশের সড়ক নেটওয়ার্কের একটি বড় অংশই থেকে যাচ্ছে ভাঙাচোরা দশায়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সড়ক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘রোড মেইনটেন্যান্স ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড কস্ট রিকভারি অপশনস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ১২টি খাতে আয় করে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের কাস্টমস শুল্ক বাবদ বছরে আয় হয় ৬ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। অগ্রিম কর বাবদ ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় হয়। ১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা আসে অগ্রিম আয়কর বাবদ। মূল্য সংযোজন কর থেকে আয় হয় আরো ১০ হাজার ৮১২ কোটি টাকা।
তিন মাসের ব্যবধানে মাংসের ভোগ কমেছে প্রায় অর্ধেক
৪ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
সরকারি একটি ব্যাংকের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা আবুল কালাম। আগে প্রতি সপ্তাহে মাংস কিনলেও এখন মাসে কেনেন দুবার। বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি থাকায় কমেছে ক্রয়ক্ষমতা। ভোগপ্রবণতায় তাকে বেশ সতর্ক হতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনায় অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে প্রায় অর্ধেক কমিয়েছেন মাংস খাওয়া।
ক্রেতাদের এমন হিসাবি পদক্ষেপে বিক্রেতাদের বিক্রিও কমেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জনপ্রিয় মাংস বিতানে আগে দৈনিক ১৫-২০টি খাসি বিক্রি হলেও এখন তা নেমেছে ৮-১০টিতে। বিক্রেতা সুমন মিয়া জানান, এখন কাস্টমার কম, তাই বেচাবিক্রিও কম। পাশের ‘মা-বাবার দোয়া মাংস বিতান’-এ আগে দিনে তিন-চার মণ মাংস বিক্রি হতো। এখন তা আড়াই-তিন মণে নেমে এসেছে। বিক্রেতা এনামুল জানালেন, আগে মানুষের কাজকাম ছিল তাই মাংস কিনত। এখন হয়তো কাজ-আয় কমেছে, তাই মাংস বিক্রিও কমেছে।
সরকারি হিসাবেও মাংস উৎপাদনের তথ্যে ব্যাপক নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে তিন মাসের ব্যবধানে মাংস উৎপাদন বা ভোগ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত জুলাইয়ে দেশে মাংস উৎপাদন ছিল ১২ লাখ ২৫ হাজার টন। কিন্তু আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পটভূমিতে মাংস উৎপাদন নেমে এসেছিল ৬ লাখ ৪১ হাজার টনে। সেপ্টেম্বরে নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত ছিল। সে মাসে মাংস উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ ৩৯ হাজার টন। সর্বশেষ অক্টোবরেও মাংস উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ছয় লাখ টন। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে দেশে মোট মাংস উৎপাদন বা ভোগ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়েছে
৬ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
গণবিক্ষোভের মুখে দুই বছর আগে শ্রীলংকায় গোতাবায়া রাজাপাকসে সরকারের পতন হয়। ওই সময় অর্থনৈতিকভাবে নজিরবিহীন দেউলিয়াত্বের মুখোমুখি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতির হার ঠেকেছিল প্রায় ৭০ শতাংশে। ডলার সংকটের কারণে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করা দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ঋণাত্মক পর্যায়ে আছে তিন মাস ধরে। গত সেপ্টেম্বরের পর থেকে এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি নয়, মূল্যসংকোচনের ধারায় রয়েছে দেশটি। অর্থাৎ শ্রীলংকার বাজারে পণ্যের দাম না বেড়ে উল্টো কমছে। সর্বশেষ নভেম্বরে এসে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল ঋণাত্মক ২ দশমিক ১০ শতাংশ (মাইনাস ২.১০%)।
কয়েক বছর ধরে চরম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা না ফিরলেও চলতি বছরে এসে অর্থনৈতিকভাবে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশটি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছে পাকিস্তানও। নভেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল।
শ্রীলংকা ও পাকিস্তান সফল হলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, নভেম্বরে দেশের মূল্যস্ফীতি আরো বেড়েছে। অক্টোবরে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত মাসে তা আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশে। বিবিএসের এ তথ্য আমলে নিলে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চে।
দাম বাড়িয়ে বাজারে ফিরল ‘লুকানো’ সয়াবিন তেল
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
সয়াবিন তেল ঘিরে কতই না নাটক হলো এই ক’দিন! আচমকা বাজার থেকে হারিয়ে যায় বোতলজাত তেল। গতকাল সোমবার দাম বাড়ানোর এক ঘোষণায় সেই লুকানো তেলের বোতল ফিরেছে দোকানে দোকানে; সেজেছে থরে থরে। বাজারে যেন এখন বোতলজাত সয়াবিনের নহর বইছে!
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ‘সয়াবিন-কাণ্ড’ ঘটিয়ে নিজেরাই প্রমাণ করে দিলেন– এই কারসাজিতে তারাই ছিলেন। সংকট দেখিয়ে সরকারকে চাপে ফেলে একদিকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছেন, অন্যদিকে এই ক’দিন নানা অপকৌশলে ক্রেতার পকেটে ছুরি চালিয়ে টাকা লুটেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা স্রেফ দিনদুপুরে ডাকাতি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে তেলের কোনো সংকটই ছিল না। ফন্দি এঁটে কয়েক দিন ক্রেতার নাভিশ্বাস তুলে সরকারকে জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। অতীতেও ঘটেছে এমন ঘটনা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এমন কাণ্ড অপ্রত্যাশিত। প্রশ্ন উঠেছে, এ সরকারও কি সিন্ডিকেটের কাছে পরাস্ত?
ভোক্তার দাবি, আজ তেল, কাল চিনি, পরশু হয়তো অন্য কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সুবিধা নেবে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। তাতে একদিকে ভোক্তার খরচ বাড়বে, অন্যদিকে সরকারও পড়বে চাপে। তাই এখন যেসব তেলের বোতল বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে, সেগুলো কখন আমদানি করা হয়েছে, আমদানি দর কত ছিল, কবে নাগাদ বাজারজাত করা হয়েছে– এসব তথ্য খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করতে ছোট ব্যবসায়ীর জন্য সৃষ্টি করতে হবে আমদানির সুযোগ।
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণার পরপরই রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে ভরে গেছে তীর, ফ্রেশ, পুষ্টি, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল। কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ কয়েকটি বাজারে গতকাল রাতে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল ৮৪০ থেকে ৮৫০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। তবে ওইসব বোতলে দাম লেখা ৮১৮ টাকা।
সার সংকটে নাকাল কৃষক, মানতে নারাজ মন্ত্রণালয়
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
রবি শস্য চাষ করতে গিয়ে কৃষক চাহিদা মত এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার না পাওয়ার অভিযোগ করছেন।
সারের অভাবে বিশেষ করে আলু চাষিরা জমি তৈরি ও বীজ বপন করতে পারছেন না। ফলে অনেকে সরিষাসহ অন্য ফসলের চাষ করছেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার চাষি মাহবুবুর রহমান বলেন, আলুর চড়া দামের কারণে এবার ফসলটি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। কিন্তু বীজ সংকটের মধ্যে সারের সরবরাহ কম পাওয়া নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায়।
সারের সবচেয়ে বেশি চাহিদা হয় বোরো মৌসুম; ওই মৌসুম শুরুর আগে রবি মৌসুমেই খুচরা বিক্রেতা ও পরিবেশকরা বলছেন, পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের দাবি, কিছু পরিবেশক ‘দুষ্টুমি’ করছেন, বড় কোনো সংকট নেই।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বিএডিসির সারের পরিবেশক মেসার্স হিমেল ট্রেডার্স চলতি মাসে ৪৫ টন ডিএপি, ২৮ টন এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) ও ২০ টন টিএসপির বরাদ্দপত্র পেয়েছেন। কিন্তু ১ ডিসেম্বর ৭ টন ডিএপি, ৮ জন এমওপি ও ৫ টন টিএসপি সার পাওয়ার পর আর সরবরাহ আসেনি।
হিমেল ট্রেডার্সের মালিক হুমায়ুন কবির বলেন, তাদেরকে বলা হয়েছে গুদামে সার নেই।
“কৃষকদের চাহিদা মত সার দিতে পারছি না। যার ছয় বস্তা প্রয়োজন তাকে এক বস্তা দিয়ে ম্যানেজ করতে হচ্ছে,” দাবি তিনি।
সব পরিবেশকের একই পরিস্থিতিতে পড়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “ডিলাররা কৃষকের রোষানলেও পড়ছেন।”
আলু, সবজি, ডাল ও তেলবীজ চাষের জন্য প্রসিদ্ধ উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলাতে খোঁজ নিয়ে প্রতিটিতেই চাহিদা অনুযায়ী সার সংকটের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বস্তায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ করছেন কৃষক।
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম বলেছেন, কিছু খুচরা ডিলার ‘দুষ্টামি’ করছে। সরকার বিএডিসি ও বিসিআইসির (বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন) মাধ্যমে আর কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার সরবরাহ করে। এরপর এগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয় ডিলারদের কাছে। তাদের কাছ থেকে কিনে নেয় ‘খুচরা ডিলাররা’।
“তারা একটা সংকট তৈরি করে, তবে সবাই না, কিছু ডিলার। বেশি দামে বিক্রি করার জন্য, এটা পুরোটাই উদ্দেশ্যমূলক। তারা কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের প্যানিক তৈরি করছে যে, সার নেই, সার শেষ হয়ে যাবে।”
ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট শক্তিশালী, বাজারে সয়াবিন সরবরাহ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
‘ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট শক্তিশালী। ব্যবসার ক্ষেত্রটি বেশ জটিল। এই জটিল জিনিস ভাঙা বেশ কঠিন।’ লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর ৯ দিন পরও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক নয় কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে এ মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কি এতটাই শক্তিশালী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই। সিন্ডিকেট না বলে ব্যবসায়ী যারা আছে তারা যথেষ্ট শক্তিশালী। খুব বড় ব্যবসায়ী, মাঝারি বা যারা সরাসরি আমদানি করে, সাপ্লাই দেয়, আবার যারা এজেন্ট শুধু সাপ্লাইও দেয় না শুধু ডিও লেটার দেয়। এটা একটা জটিল জিনিস, যা ভাঙা কঠিন।’
দেশের ইতিহাসে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২৭ টাকায় পৌঁছেছে
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা
ওভারডিউ পেমেন্টের (বকেয়া পরিশোধ) চাপ, ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং এগ্রিগেটর এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর নানান কৌশলে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১২৭ টাকায় পৌঁছেছে।
অন্তত ৬টি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করতে ব্যাংকগুলোকে ১২৬.৫০-১২৭ টাকা পর্যন্ত দাম দিতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটিই ডলার-টাকার সর্বোচ্চ বিনিময় হার।
এর আগে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২৬ টাকায় পৌঁছেছিল। এতদিন পর্যন্ত সেটিই ছিল ডলারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। এরপর থেকে ডলারের দাম ওঠানামার মধ্যে থাকলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল।
বিশ্বব্যাংক থেকে ১১৬ কোটি ডলার ঋণ পেল বাংলাদেশ
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
তিন কর্মসূচি পরিচালনা করতে বিশ্বব্যাংক থেকে ১১৬ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ১৩ হাজার ৯২০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরস বাংলাদেশের জন্য এ ঋণ অনুমোদন দেয়। তিন কর্মসূচি হলো- স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি; পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবাগুলো উন্নত করা; সবুজ এবং জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা। ঋণের এ অর্থ দিয়ে কর্মসূচি তিনটি পরিচালনা করা হবে।
গরিবের টিসিবি পণ্যে বাড়ছে ‘হকদার’
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
সয়াবিন তেল ফেরত দিয়ে টাকা নিলেন মনোয়ার হোসেন। বিষণ্ন মুখে ফিরে যাচ্ছেন। পা তাঁর চলছে না, দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তখনও লাইনে থাকা অসংখ্য মুখে খিস্তি। গরিবের জিনিস নিতেও মানুষগুলোর বিবেকে বাধে না!
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী লিপিকার মোড়ে টিসিবি ট্রাকের সামনে এ ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে। এখানে হযরত এন্টারপ্রাইজ সয়াবিন তেল ও ডাল সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করছে। কথা বলে জানা যায়, মনোয়ার সরকারি চাকরিজীবী। মূল্যস্ফীতির চাপে সত্যিই তিনি অসহায়। বললেন, ‘পেট না চললে, বিবেক দিয়ে কী করব? কিন্তু হাত থেকে যখন মানুষ তেল কেড়ে নেন, কিছু করার থাকে না। বাধ্য হয়ে টাকা ফেরত নিয়েছি।’
বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম চড়া। দীর্ঘদিন উচ্চ মূল্যস্ফীতি চললেও আয় বাড়েনি মানুষের। ফলে সংসার সামাল দিতে মনোয়ারের মতো অসংখ্য মানুষ এখন টিসিবির পণ্য কিনছেন। এখানে আর গরিব বলে আলাদা করার সুযোগ থাকছে না। অনেক বাড়ির মালিক গৃহকর্মী পাঠিয়ে পণ্য কিনছেন।
টিসিবি দিনে জনপ্রতি ২ লিটার সয়াবিন তেল ও ২ কেজি মসুর ডাল বিক্রি করে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ এবং প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম নেয় ৬০ টাকা। বাজারে এখন সয়াবিন তেল ১৭৫ এবং মসুর ডালের কেজি ১০৫-১১০ টাকা। পরিবারের একজন পণ্য দুটি কিনলে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা সাশ্রয় হয়। সদস্য বৃদ্ধি করলে বাড়ে সাশ্রয়ের অঙ্কও। এ জন্যই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাকের অপেক্ষায় থাকছেন বহু মানুষ। বিক্রি শুরুর পর রীতিমতো ‘যুদ্ধে’ শামিল হচ্ছেন তারা।
মুরগির দাম ৩০–৪০ টাকা বাড়ল
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
রাজধানীর বাজারে তিন দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০–৪০ টাকা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব এবং গতকাল শনিবার রাজধানীর একাধিক বাজারে ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
টিসিবির হিসাবে দেখা গেছে, রাজধানীতে ১৮ ডিসেম্বর ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজিতে। আর সোনালি মুরগি মানভেদে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিরপুর–১২ নম্বর বাজার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে।
ক্রেতা ও বিক্রেতারা বলছেন, তিন দিন আগেও ব্রয়লার ১৭০–১৮০ টাকা দরে এবং সোনালি মুরগি ২৮০–৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
মুড়িকাটা পেঁয়াজের দামে হতাশ রাজশাহীর কৃষক
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
রাজশাহীতে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তবে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষকেরা। তাঁরা বলছেন, বেশি দামে পেঁয়াজ কন্দ কিনে লাগানোর কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের দাম কম; বর্তমান দামে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না। সামনে সরবরাহ বাড়লে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে।
পেঁয়াজের কন্দ থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ হয়। রাজশাহীতে এখন এই পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে মোকামে এই পেঁয়াজ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কলিগ্রাম মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলছেন। মাঠেই তাঁরা এই পেঁয়াজ বাছাই করে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। নারী শ্রমিকেরা পেঁয়াজ তুলে এক জায়গায় জড়ো করছেন। মাঠেই পাওয়া গেল পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম, ফজলুল হক, সাবাজুল ইসলামসহ অনেককে।
কৃষকেরা বলছেন, এবার রোপণ মৌসুমে বীজের দাম ছিল বেশি। ৭ থেকে ১২ হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজের কন্দ কিনে রোপণ করতে হয়েছে। গড়ে এক বিঘায় ১০ মণ করে বীজ লেগেছে। শুধু বীজের খরচই হয়েছে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। জমির ইজারা, সার কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি মিটিয়ে আরও ৪০ হাজার টাকার খরচ হয়েছে। জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা পর্যন্ত আরও খরচ হয়েছে। গড়ে এক বিঘা জমির জন্য কৃষককে মোট ব্যয় করতে হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এবার বৃষ্টি হওয়ার কারণে পেঁয়াজের জমিতে জো ধরতে দেরি হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ৭০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ হয়। এবার আর সেটা হচ্ছে না। এবার ৫০ থেকে ৬০ মণের বেশি পেঁয়াজ হচ্ছে না। এখন মোকামে এই পেঁয়াজ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
এখন ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারলে এবং ৬০ মণ হারে পেঁয়াজের উৎপাদন হলে প্রায় ৮৪ হাজার টাকা কৃষকের ঘরে আসছে। আরও ৩৬ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। আর বিঘাপ্রতি ৫০ মণ হারে পেঁয়াজ উৎপাদন হলে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা।
ঋণের টাকা দিতে ‘অক্ষম’ প্রতিষ্ঠানকে আবারও ঋণ দিল ইসলামী ব্যাংক!
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ঢাকা পোস্ট
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নতুন ঋণ অনুমোদন করেছে ইসলামী ব্যাংক। ‘ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেড’ নামের এক প্রতিষ্ঠানকে ২৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ব্যাংকটি। সম্প্রতি ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি বড় অঙ্কের এ ঋণ দেওয়ার অনুমোদন দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের ঋণ অনুমোদন সংক্রান্ত নথিতে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকটি এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করা টাকায় চলছে ইসলামী ব্যাংক। চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের টাকাও দিতে পারছে না। অথচ নতুন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম শুরু করেছে, এটা দুঃখজনক। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আস্তে আস্তে আবারো সক্রিয় হচ্ছে পূর্বের সুবিধাভোগীরা
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
গত দেড় দশকে দেশের অবকাঠামো নির্মাণ খাতে সবচেয়ে বেশি কাজ পাওয়া কোম্পানিগুলোর একটি তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। আওয়ামী লীগ নেতা ও দুর্নীতিবাজ আমলাদের ঘুস দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে।
গত দেড় দশকে দেশের অবকাঠামো নির্মাণ খাতে সবচেয়ে বেশি কাজ পাওয়া কোম্পানিগুলোর একটি তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। আওয়ামী লীগ নেতা ও দুর্নীতিবাজ আমলাদের ঘুস দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালালেও কোম্পানিটির প্রভাব এখনো কমেনি। গত ৪ ডিসেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে সুনামগঞ্জ জেলায় ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের পূর্তকাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। ৪২৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পেরও কাজ পেয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন।
তমার মতোই দেশের অবকাঠামো খাতের প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর অন্যতম ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। গত দেড় দশকে রেলসহ দেশের সড়ক ও অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলোর একচেটিয়া কাজ পেয়েছে কোম্পানিটি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এ গ্রুপটির প্রভাবও অক্ষুণ্ন রয়েছে।
অবকাঠামো নির্মাণ খাতে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বেশ মরিয়া। এজন্য তারা আগের মতোই বড় অংকের ঘুস লেনদেনে যুক্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের দুর্নীতি চক্রের অর্থনীতিতে কিছুটা ছেদ পড়েছিল। কিন্তু গত দুই মাসে সেটি আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজরা আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ফিরছে। পরিবহন খাতের চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যও অব্যাহত রয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ব্যাংক লুণ্ঠনের পথ সংকুচিত হলেও করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর খাতের অপব্যয় বন্ধ হয়নি। এখনো ব্যাংকের চেয়ারম্যান কিংবা প্রভাবশালীদের তদবিরে সিএসআর খাতের শত শত কোটি টাকার অপব্যয় হচ্ছে। আবার ঋণ দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ কিছু বেসরকারি ব্যাংকের ওপর প্রভাবশালী গ্রাহকদের চাপও বাড়ছে।
দেশে বড় অংকের ঘুসের লেনদেন ও দেনদরবারের প্রধানতম স্থান হিসেবে অভিজাত ক্লাব ও পাঁচ তারকা হোটেলগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। গত ৫ আগস্টের পর অভিজাত ক্লাবগুলোয় সুনসান নীরবতা নেমে এসেছিল। প্রায় খালি ছিল পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর লবি। কিন্তু সম্প্রতি অভিজাত ক্লাব ও তারকা হোটেলের লবিগুলোর জমজমাট অবস্থা ফিরেছে। এসব ক্লাব ও হোটেলের কিছু গ্রাহক পালিয়ে গেলেও নতুন ভোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের পালিয়ে যাওয়া নেতারা উপার্জিত অবৈধ অর্থের একটি অংশ বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। বাকি টাকা দেশের বড় কিছু করপোরেট গ্রুপে বিনিয়োগ হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের একটি অংশ অনেক আগে থেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি করপোরেট গ্রুপে বিনিয়োগ করা ছিল। সম্প্রতি গ্রুপটিতে তার গোপন অংশীদারত্ব আরো বেড়েছে। দেশের অন্য একটি করপোরেট গ্রুপে বিনিয়োগ ছিল আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের। নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এ নেতা সপরিবার বিদেশে পালালেও তার ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ ভালোভাবেই চলছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল সম্পত্তি রয়েছে শামীম ওসমানের। বর্তমানে তিনি দুবাইয়ে বেশ রাজকীয় হালে রয়েছেন। তার পরও সম্প্রতি তিনি দুবাইয়ে বসবাসকারী বাংলাদেশী একটি ব্যাংক চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় বড় অংকের অর্থ পাচার করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
চাঁদাবাজিসহ ঘুস, অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত থাকা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যেও অস্বস্তি রয়েছে। এ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদসহ সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, চাঁদাবাজের পরিবর্তন হলেও চাঁদাবাজির ধরনে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আইএমএফের দর্শনেই চলছে দেশের অর্থনীতি
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
শেষ হতে চলেছে ঘটনাবহুল ২০২৪ সাল। অভূতপূর্ব এক অভ্যুত্থানে পতন হয়েছে দেড় দশকেরও বেশি সময় বাংলাদেশ শাসন করা আওয়ামী লীগ সরকারের। এ ঘটনায় দেশে আর্থসামাজিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাগুলো আরো তীব্র হয়ে ওঠে। যদিও দেশের অর্থনীতিতে এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত হতে চলা ২০২৪ সালে দেশের অর্থনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ নিয়ে আয়োজন—
আর্থিক খাতে নৈরাজ্য ও লুটপাট জেঁকে বসেছিল দুরারোগ্য ব্যাধির মতো। জনজীবনে নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল মূল্যস্ফীতি। ধস নামছিল রিজার্ভে। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের শেষ বছরগুলো পার হয়েছিল যেকোনো সময় অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধসের আশঙ্কার মধ্য দিয়ে। বিপর্যয় ঠেকাতে সরকার দ্বারস্থ হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বেশকিছু শর্ত বেঁধে দেয়া হয়। চাপ প্রয়োগ করা হয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোসহ বেশকিছু খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দেয়া হয় সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণের। বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে দেয়া, নিট রিজার্ভ বাড়ানো, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার এবং ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ হ্রাসেও জোরারোপ করা হয়। এসব শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি তো হয়ইনি, উল্টো আরো জোরালো হয়ে জেঁকে বসে মূল্যস্ফীতি। পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থনৈতিক কর্মসূচির বড় অংশ জুড়ে ছিল আইএমএফের শর্ত পূরণ।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন দেশের আর্থসামাজিক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রত্যাশা তৈরি করে। তীব্রতর হয়ে ওঠে অর্থনীতি জনকল্যাণমুখী হয়ে ওঠার প্রত্যাশা। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলের প্রায় পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। যদিও এখনো আইএমএফের দর্শনেই চলেছে দেশের অর্থনীতি। দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নীতিগত কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না এখনো।
তিন ব্যাংক পেল ১২,৫০০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ ধার
০১ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
বিদায়ী বছরের আর্থিক হিসাব ভালো দেখাতে বেসরকারি খাতের তিন ব্যাংককে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক তিনটি হলো ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। এই টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলো গত সোমবার বছরের শেষ দিনের চলতি হিসাবের ঘাটতি পূরণ করেছে। এর ফলে ব্যাংক তিনটির চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত দেখানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক হিসাবের সুবিধার জন্য তিন ব্যাংককে দেওয়া ধারের এই টাকা আজ বুধবার ফেরত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া ধারের বাইরে আলাদা করে তারল্য সহায়তা হিসেবে এবি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ভ্যাট বাড়লেও জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না
২ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বাড়লেও জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ৪৩টি পণ্যে ভ্যাট বাড়ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন করে ভ্যাট আরোপ হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ওপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না— জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এতে জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের ডিউটি (শুল্ক) জিরো করে দিয়েছি। আপনি ছাড়টা দেখবেন। মূল্যস্ফীতির মূল ওয়েটের ইন্ডিকেটরগুলো হলো চাল, ডাল এগুলো; সেটা আপনারা জানেন। আমরা যে সকল জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছি এগুলো আমাদের মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ।’
কোম্পানি নিচ্ছে দুধের স্বাদ, খামারির মনে বিষাদ
০৩ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের শরিফুল ইসলামের খামারের ১৬ গাভি থেকে প্রতিদিন দুধ মেলে ২০০ লিটার। এক বছর আগেও প্রতি লিটার দুধ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করতেন ৪৫-৪৯ টাকায়। খামার পরিচালনা খরচ বাড়বাড়ন্ত থাকলেও দুধের লিটার ওই ৪৫-৪৯ টাকার ছকেই আটকা। এ নিয়ে শরিফুলের মনে যন্ত্রণার দহন। দুধের দামের এমন বেদনার সারথি শরিফুল শুধু একা নন, সারাদেশের সব প্রান্তিক খামারিরই একই নিয়তি।
খামারিদের যখন এমন বোবাকান্না, তখন প্রাণ, আড়ং, আকিজ, মিল্ক ভিটার মতো কোম্পানি লিটারে দাম বাড়িয়েছে ১০ টাকা। এক মাস আগেও প্রতি লিটার তরল দুধের দাম ছিল ৯০ টাকা, এখন তা শতক ছুঁয়েছে। বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, প্যাকেজিংসহ সব খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দুধের দামে।
খামারিরা বলছেন, কোম্পানিগুলো লিটারে ১০ টাকা বাড়ালেও প্রান্তিক খামারিকে দেওয়া হচ্ছে যৎসামান্য। দুধ উৎপাদনকারী নয়, করপোরেট প্রতিষ্ঠানই বাড়তি মুনাফা লুটছে। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্তের খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে প্রোটিনসমৃদ্ধ এ খাদ্য। এতে শিশুর পুষ্টি ঘাটতির শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুধের দাম পর্যালোচনার জন্য তদারকি কোনো সংস্থা নেই। কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়। এবারও বলা নেই, কওয়া নেই লিটারে ১০ টাকা দাম বাড়িয়ে দুধের ননী খাচ্ছে তারা। এ জন্য নানা খাতে খরচ বাড়ার ছুতা দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার স্বাভাবিক রাখতে মাংসের মতো তরল দুধের দাম নির্ধারণেরও পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
ব্যাংকের মুনাফার প্রধান উৎস এখন সরকারি কোষাগার
৫ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
দেশের ব্যাংকগুলোর আয়ের প্রধান উৎস এতদিন ছিল বেসরকারি খাত। মুনাফা করত শিল্প ও সেবা খাতে দেয়া ঋণের সুদ ও কমিশন থেকে। কিন্তু এ মুহূর্তে ব্যাংকের আয় ও মুনাফার প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে সরকারি কোষাগার।
দেশের ব্যাংকগুলোর আয়ের প্রধান উৎস এতদিন ছিল বেসরকারি খাত। মুনাফা করত শিল্প ও সেবা খাতে দেয়া ঋণের সুদ ও কমিশন থেকে। কিন্তু এ মুহূর্তে ব্যাংকের আয় ও মুনাফার প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে সরকারি কোষাগার। ব্যাংকগুলো এখন ব্যক্তি খাতকে না দিয়ে সরকারকেই বেশি ঋণ দিচ্ছে। এতে ফুলেফেঁপে উঠেছে বেশির ভাগ ব্যাংকের মুনাফা।
ব্যাংকের অর্জিত মুনাফার বড় অংশ এসেছে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ থেকে। এক বছর ধরেই সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার ১১-১৩ শতাংশ, যা নিকট অতীতে দেখা যায়নি। এত উচ্চ সুদের কারণে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগৃহীত আমানতের বড় অংশই সরকারকে ঋণ দেয়ার কাজে ব্যবহার করছে। এতে ব্যাংকের মুনাফা বাড়লেও সরকারের সুদ খাতের ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে
০৭ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
আমনের ভরা মৌসুম চলছে। নতুন ধানের চাল পুরোদমে বাজারে আসছে। কিন্তু দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার আশা করেছিল, আমন উঠলে চালের দাম কমবে।
বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, মোটা চালের দাম বেড়েছে মূলত সর্বশেষ এক সপ্তাহে—কেজিতে তিন থেকে চার টাকা। এ সময়ে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা। সরু চালের দাম এক সপ্তাহে বাড়েনি। কিন্ত এক মাসের হিসাবে বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার গত ১৪ নভেম্বর আশা প্রকাশ করেছিলেন, আমন ধান বাজারে এলে চালের দাম আস্তে আস্তে কমবে। যদিও নওগাঁ চাল ব্যবসায়ী রিরা ট্রেডার্সের মালিক আনোয়ার হোসেন গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণত মৌসুমের সময় ধানের আমদানি বেশি থাকে। ফলে চালের দাম কমে যায়। কিন্তু এবার উল্টো পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। আমনের ভরা মৌসুম চলছে, এরপরও ধানের দাম কমার নাম নেই। উল্টো বেড়ে যাচ্ছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। নতুন সরকার চালের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক অনেকটাই কমিয়েছে। সরকারিভাবে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কারণ, আমদানি ততটা হয়নি।
শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়াতে চায় সরকার
০৭ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে দুই বছর আগে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছিল গ্যাসের। গত বছরও কিছুটা দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর পরও শিল্পে গ্যাস–সংকট কাটেনি। এখন আবার সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলে গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়াতে চায় সরকার।
জ্বালানি বিভাগের অনুমোদন নিয়ে দাম বাড়াতে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরো গ্যাস বিল হবে নতুন দামে। পুরোনোদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় থাকছে প্রস্তাবে।
ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমেছে, তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ১৩ ছুঁই ছুঁই
০৬ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
ডিসেম্বর মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি কমেছে। সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি চাপে রাখা খাদ্য মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতির এই দুই হার এখনো দুই অঙ্কের ঘরে থাকার মানে হলো, নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বিদায়ী ২০২৪ সালের সর্বশেষ মাসের মূল্যস্ফীতি তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরের চলন্ত গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তার আগের বছরে, অর্থাৎ ২০২৩ সালে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৪৮।
মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি শিল্পে আয়কর দ্বিগুণ হল
০৮ জানুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
অর্ধ শতাধিক পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট ও শুল্ক-কর বাড়ানোর উদ্যোগের পর এবার মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ও কম্প্রেসর শিল্পের আয়কর বাড়িয়ে দিগুণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনে এ ধরনের শিল্পের আয়ের ওপর ২০ শতাংশ কর নির্ধারণ করেছে; এতদিন যা ১০ শতাংশ ছিল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী ২০২৫-২৬ করবর্ষ থেকে নতুন হারে আয়কর ধার্য হবে; অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে এ ধরনের শিল্পের যে আয় হবে, তার ওপর এই বাড়তি কর দিতে হবে।
স্থানীয় শিল্পে উৎপাদন সংকোচনে ব্যবসার খরচ বাড়ছে
৯ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকার। নীতি সুদহার (রেপো রেট) কয়েক দফা বাড়িয়ে তোলা হয়েছে ১০ শতাংশে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকার। নীতি সুদহার (রেপো রেট) কয়েক দফা বাড়িয়ে তোলা হয়েছে ১০ শতাংশে। এতে ব্যাংকভেদে ঋণের সুদহার উঠে দাঁড়িয়েছে কম-বেশি ১৫-১৬ শতাংশে। পুঁজি সংস্থানের ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় শিল্প খাতের উৎপাদনকে চাপে ফেলছে জ্বালানি সংকট। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গ্যাস সংকটে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে না। এতে পরিচালন ও মাথাপিছু ব্যয় বাড়ছে ব্যবসার। এর মধ্যেই শিল্প খাতে করভার ও শুল্কচাপ বাড়ছে। শিল্প খাতে শ্রম অসন্তোষ, আমদানির বিদ্যমান নানা প্রতিবন্ধকতা, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি ইত্যাদিরও প্রভাব পড়ছে শিল্প খাতের ব্যয় ও উৎপাদনে। এসবের সম্মিলিত প্রভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে শিল্প খাতের উৎপাদন। যদিও ব্যবসা পরিচালনার খরচ এখন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
আমদানিনির্ভর শিল্প খাতগুলোর জন্য এ ব্যয়কে আরো বাড়িয়ে তুলছে ডলারের বিনিময় হারের ঊর্ধ্বগতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দিন প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১৮ টাকা। এর ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় গতকাল তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২২ টাকায়।
রাজশাহীতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধে চাষিদের স্মারকলিপি
০২ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
এখন মুড়িকাটা পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। তবে এই সময় পেঁয়াজ আমদানির কারণে চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এমনকি তাঁদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। এই পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পেঁয়াজচাষিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে যে এ বছর বাঘা উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজের বীজ অনেক উচ্চমূল্যে কৃষকেরা ক্রয় করে জমিতে বপন করেন। ফলে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিঘাপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ মণ ফলন হয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এতে প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ তোলার এটা ভরা মৌসুম। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারণে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা হলে কৃষকেরা বিরাট লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
আলাদিনের চেরাগ নেই যে, সুইচ দিলেন আর কালকেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
০৯ জানুয়ারি ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, সম্প্রতি চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এ সমস্যা সাময়িক উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাতে কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই যে, সুইচ দিলে কালই বাজার ঠিক হয়ে যাবে।
তবে বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমর বোলাতের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যেগের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বশিরউদ্দীন বলেন, আমদানিকে উদার করা হয়েছে। শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমদানি শুরু হলেই যদি কেউ অনায্যভাবে মজুত করে থাকে, তাহলে তারাও ছাড়তে বাধ্য হবে। বাজারেও দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে।
এ সময়ের মধ্যেই তো অসাধু ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে, এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে বিষয়টি সাময়িক। কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই যে, আপনি সুইচ দিলেন আর কালকেই মার্কেটটা ঠিক হয়ে যাবে।’
শতাধিক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ল
১০ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। তাতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরেক দফা বেড়ে যেতে পারে সাধারণ মানুষের। যেমন মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়বে। আবার পোশাক–আশাকের দামও বাড়তে পারে ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে। বাড়তে পারে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার খরচও।
এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে মিষ্টি, ওষুধ, এলপি গ্যাস, ফলের রস, ড্রিংক, বিস্কুট, চশমার ফ্রেম, সিগারেটসহ নানা পণ্যের।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ–সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫। এই দুটি অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ গতকাল এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এর ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে।
এর আগে ১ জানুয়ারি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির এনবিআরের প্রস্তাব পাস করা হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। জাতীয় সংসদ না থাকায় অধ্যাদেশ দিয়েই শুল্ক-কর বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশকে দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে অর্থবছরের মাঝপথে এসে এক শর বেশি পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
টিসিবির কর্মসূচি: ট্রাক সেল বন্ধ, ৪৩ লাখ পরিবার কার্ড বাতিল
১০ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য গত অক্টোবর মাসে ট্রাকে করে তেল, ডাল ও চাল বিক্রির কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। ফলে টিসিবির পরিবার কার্ড না থাকলেও প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে সাড়ে ২৪ হাজার মানুষ ভর্তুকি মূল্যে এসব পণ্য কেনার সুযোগ পেতেন। মাত্র দুই মাস সাত দিন চলার পরে এ কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে সংস্থাটি।
অন্যদিকে গত অক্টোবরে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রির কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এটিও সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনিয়মের অভিযোগে সারা দেশে টিসিবির এক কোটি পরিবার কার্ডের মধ্যে ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
শুল্ক–কর বাড়ায় পকেট থেকে যাবে ১২ হাজার কোটি টাকা
১২ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
দেশে এখন বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। ডেঙ্গু ও সাধারণ জ্বরের রোগীর পথ্য হিসেবে বাড়তি চাহিদা থাকে মাল্টার। সরকার অবশ্য মাল্টা আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে। এতে মাল্টা আমদানিতে খরচ বাড়বে কেজিতে ১৫ টাকা। মোট শুল্ক–কর দাঁড়াবে কেজিতে ১১৬ টাকা। বাজারে মাল্টার দাম চড়া, কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
মাল্টার মতো বিভিন্ন ফল, রান্নার গ্যাস, মুঠোফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহার, রেস্তোরাঁয় খাবার, বিস্কুট, টিস্যু, ঢেউটিন, রংসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক–কর বাড়িয়েছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন হার ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শুল্ক–কর বাড়ানোর কারণে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় করা যাবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি কমবে।
অচলায়তনে রূপ নিয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি
১২ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
গ্রামাঞ্চলে ঋণপ্রবাহ কমেছে। এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি সর্বশেষ বন্যার ধকল। এর সঙ্গে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে সুদহার বৃদ্ধি ও এসএমই খাতের স্থবিরতা। কর্মসংস্থানেও দেখা যায়নি তেমন কোনো উন্নতি। পুঁজির সংস্থান করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তারা। জিডিপিতে গ্রামীণ অর্থনীতির ভরকেন্দ্র কৃষি খাতের অবদানও কমে এসেছে। টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়ছে অর্থনীতিতে প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখা গ্রামীণ উদ্যোগগুলোর। সব মিলিয়ে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির স্থবিরতায় এখন দুশ্চিন্তা বাড়ছে অর্থনীতিবিদদের।
দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি এখন এক প্রকার অচলায়তনে রূপ নিয়েছে উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্যার প্রাদুর্ভাব এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবজনিত বিপর্যয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভঙ্গুর দশা তৈরি হয়েছে। এখনো উৎপাদনে ফিরতে পারেনি গ্রামীণ শিল্পের অনেক উদ্যোগ। পরিস্থিতিকে আরো সঙ্গিন করে তুলেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব। এমনকি অনেকেই এখন ঋণ করার সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলেছেন। এর প্রভাব পড়তে পারে কর্মসংস্থানে। বাড়তে পারে কাজের সন্ধানে শহরমুখী মানুষের ঢল।
সরকারের ঋণ ২০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
১৩ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
সরকারের ঋণের পরিমাণ গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ২০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বিদেশী ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। প্রতি ডলার ১২০ টাকা (ওই সময়ের বিনিময় মূল্য) হিসাবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ১৩ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকায়। বাকিটা অভ্যন্তরীণ ঋণ। রাজস্ব আহরণ ও বৈদেশিক আয়ের তুলনায় এ ঋণের পরিমাণ বর্তমানে শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্য, কার্যকর ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে ভবিষ্যতে কঠিন সংকটের মধ্যে পড়তে হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেয়ার আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে জাতির কাঁধে রেখে যায় ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকার ঋণের বোঝা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি ও বিদেশী ঋণ ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে দেশের বাজেটের আকার যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি স্ফীত হয়েছে সরকারের ব্যাংক ঋণ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে সরকারের মোট ঋণ ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশী উৎস থেকে নেয়া হয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ২০ কোটি টাকার ঋণ। বাকি ১ লাখ ১৫ হাজার ৮১০ কোটি টাকা নেয়া হয় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। ব্যাংক খাতের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হয় এ ঋণ।
পদ না থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে ৭ হাজার ২১৫ জনের পদোন্নতি
১৪ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংকে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। এর মধ্যে ৭ হাজার ২১৫ জনই পদোন্নতি পেয়েছেন সুপার নিউমারারি (পদ ছাড়াই পদায়ন) ভিত্তিতে। নজিরবিহীন এ পদোন্নতি দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোর অর্গানোগ্রাম বা জনবল কাঠামো ভঙ্গ করে। পদ না থাকলেও এত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ইতিহাসে এর আগে কখনই এভাবে গণপদোন্নতির ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকগুলোয় এখন শৃঙ্খলা আরো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
সুপার নিউমারারি ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম), সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম), সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও), প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও) ও সিনিয়র অফিসার (এসও) পদে। এর মধ্যে কেবল ১ হাজার ৬৭ জনকে এসপিও থেকে এজিএম বানানো হয়েছে। এজিএম হলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর নির্বাহী পদের প্রথম ধাপ। বেতন-ভাতা ও পদমর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি এজিএম হওয়া প্রত্যেক কর্মকর্তা ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা ঋণ পান। ক্রয়কৃত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতি মাসে পান ৪২ হাজার টাকা। এছাড়া এজিএমদের জন্য ব্যক্তিগত কক্ষও (রুম) বরাদ্দ থাকে। পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কক্ষ ও চেয়ার-টেবিল দিতেই ব্যাংকগুলো এখন হিমশিম খাচ্ছে।
দেশে তিন বছর ধরে মানুষের প্রকৃত আয় কমছে
১৪ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
টানা তিন বছর ধরে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। তার বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ফলে এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের মানুষ। কিন্তু মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারির পর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো মাসেই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি মজুরি বৃদ্ধির হার। প্রতি মাসে গড়ে যত মজুরি বেড়েছে, মূল্যস্ফীতি ছিল তার চেয়ে বেশি। ফলে সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষের বাজার থেকে নিত্যপণ্য ও সেবা কেনার সামর্থ্য কমেছে।
পরিসংখ্যান যা বলছে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য–উপাত্ত অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ওই মাসে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বাড়লেও মজুরি বেড়েছে তার চেয়ে বেশি হারে। তাই মূল্যস্ফীতির চাপ মানুষের ওপর ততটা পড়েনি।
কিন্তু এর পরের মাস থেকেই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি মজুরি বৃদ্ধির গতি। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির কাছাকাছি ছিল মজুরি বৃদ্ধির হার। পরিস্থিতি পাল্টে যায় ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এসে। ওই বছরের আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎই ৪০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়। ফলে ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এরপর মূল্যস্ফীতির চাকার গতি আর থামানো যায়নি। কিন্তু মজুরির বৃদ্ধির গতি সেই অনুযায়ী বাড়েনি।
২০২৩ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। কিন্তু ওই বছর মজুরি বৃদ্ধির হার কোনো মাসেই ৮ শতাংশ ছাড়ায়নি। ৭ শতাংশের মধ্যেই তা আটকে ছিল।
সর্বশেষ ২০২৪ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল, যা ছিল সাড়ে ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ২০২৪ সালের ১২ মাসের মধ্যে প্রথম আট মাস মজুরি বৃদ্ধি হার ছিল ৭ শতাংশের ঘরে। শেষ চার মাস ৮ শতাংশের ওপরে ছিল এই হার।
ভ্যাট বৃদ্ধি নিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা
কিছু পণ্যে ভ্যাট বাড়ায় তেমন অসুবিধা হবে না
১৪ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ‘সরকারের রাজস্ব প্রয়োজন। প্রচুর ভর্তুকিও লাগে। এ অর্থ কোথাও না কোথাও থেকে সংগ্রহ করতে হয়। তাই কিছু পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, এতে তেমন কোনো অসুবিধা হবে না।’
গতকাল সকালে মাদারীপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
পাইকারিতে সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
দেশে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানোর অভিযোগ ছিল মিল মালিকদের বিরুদ্ধে। এরপর সরকার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে মূল্যবৃদ্ধির এক মাসের ব্যবধানে ফের সরবরাহ সংকট দেখিয়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলো। এক মাসের ব্যবধানে এরই মধ্যে পাইকারিতে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৩০০-৩৫০ টাকা বেড়েছে। সে হিসাবে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা।
ফের খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলে বিশেষ সুবিধা
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে অবশেষে খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলে আবার বিশেষ সুবিধা দিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল, সুদ মওকুফ ও ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা এই সুযোগ পাবে না। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে করতে বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি সাম্প্রতিক আন্দোলন, অগ্নিকাণ্ড, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ প্রকৃত ক্ষতির মুখে পড়া ২০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণে বিশেষ পুনঃতপশিলের প্রস্তাব কমিটির কাছে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে শিগগির নীতিমালা জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সরকারের সময় ঢালাওভাবে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। বিভিন্ন নীতি ছাড়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছিল। আবার প্রভাবশালীরা কিস্তি না দিলেও খেলাপি দেখানো হচ্ছিল না। আইএমএফের ঋণ নেওয়ার কারণে গত বছর থেকে কঠিন শর্ত মানতে হচ্ছে। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া অনেক ঋণ এখন খেলাপি হতে শুরু করেছে। আগের মতো বিশেষ সুবিধা বন্ধ হয়েছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত বছরের ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতের মোট ঋণের যা প্রায় ১৭ শতাংশ। খেলাপি ঋণ হু-হু করে বৃদ্ধির মধ্যে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন ঋণ পুনঃতপশিলে বিশেষ সুবিধার আবেদন জানিয়ে আসছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ছাড়ে পুনঃতপশিলের উদ্যোগ নিয়েছে।
দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যার অর্ধেকই হিসাবের বাইরে
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শ্রমশক্তির বাইরে রয়ে গেছে। দেশের ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বর্তমানে শ্রমবাজারে নেই। বিদ্যমান জনশক্তির মধ্যে আবার নারী-পুরুষ বৈষম্য প্রকট। মোট শ্রমশক্তির ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশই পুরুষ। বাকি ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ নারী।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলওর সদরদপ্তর থেকে ‘বৈশ্বিক কর্মসংস্থান এবং সামাজিক আভাস: ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
দেশে ১৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী কর্মী ও বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে শ্রমশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে বিবিএস। সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে এ ধরনের জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার। বিবিএসের সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ৯১১ জন।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে রাস্তায় নামবেন ব্যবসায়ীরা
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
কম দামের বিস্কুট, কেকসহ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নেতারা। তাঁরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে শুল্ক-কর ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ভোক্তার স্বার্থবিরোধী। বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান বাপার নেতারা। তাঁরা বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর করের বোঝা চাপানো হলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের শ্রমজীবী, প্রান্তিক কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। যে হারে ভ্যাট বাড়ানোর হয়েছে, তাতে বিস্কুট, কেক, জুসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। আর ভোক্তারা ক্রয়ক্ষমতা হারালে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।
দুই মাসে আমন সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশের কম
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
চলতি আমন মৌসুমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ লাখ টন। এ কর্মসূচির আওতায় গত ১৭ নভেম্বর আমন মৌসুমের সংগ্রহ অভিযান শুরু করে খাদ্য অধিদপ্তর। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত বুধবার পর্যন্ত এ কর্মসূচির আওতায় সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে মাত্র ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৫ টন। অর্থাৎ প্রায় দুই মাসে নির্ধারিত লক্ষ্যের এক-তৃতীয়াংশও সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, এ অভিযান চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সে অনুযায়ী হাতে দেড় মাসও সময় নেই। এ অল্প সময়ের মধ্যে বাকি ধান-চাল সংগ্রহ করা যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দিহান খোদ খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও।
ব্যর্থতায় রূপ নিতে চলেছে চীনা ঋণের আরেক বৃহৎ প্রকল্প
২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৭
নির্মাণকাজ শেষে দাশেরকান্দি পয়োবর্জ্য শোধনাগার চালু হয় ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। চীনা এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়িত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৭০ শতাংশের কাছাকাছি নির্বাহ হয়েছে এ ঋণ সহায়তার ভিত্তিতে। বিপুল অংকের ঋণে নির্মাণ হলেও দেশে চীনা ঋণে বাস্তবায়িত অন্যান্য প্রকল্পের মতো দাশেরকান্দি প্রকল্পটি থেকেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। সংযোগ লাইন নির্মাণ না হওয়ায় এর আওতাভুক্ত এলাকার সিংহভাগেরই পয়োবর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটি আওতাভুক্ত এলাকার মাত্র ২৫ শতাংশের বর্জ্য পরিশোধন করতে পারছে। সে অনুযায়ী, লক্ষ্যমাত্রার অধীন ৭৫ শতাংশ এলাকার পয়োবর্জ্য পরিশোধনে কোনো কাজেই আসছে না এটি।
রাজধানীর পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৩ সালে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করে ঢাকা ওয়াসা। এ মহাপরিকল্পনায় ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলোর দূষণ রোধে পাঁচটি পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে হাতিরঝিল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আফতাবনগরের কাছে দাশেরকান্দিতে পরিশোধনাগার প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। ঢাকা ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটিতে চীনা এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ। সরকারের ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। আর ঢাকা ওয়াসার ব্যয় ১০ কোটি। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ প্রকল্পটির ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০ বছর। প্রকল্পের সুদহার ২ শতাংশ। ২০২৭ সালে এ ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ইন্টারনেট, রেস্তোরাঁ, পোশাকে ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
মানুষের ব্যাপক সমালোচনা ও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কয়েকটি খাতে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মুঠোফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহারসহ তথ্যপ্রযুক্তি সেবার ওপর ২৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে আগের মতো ২০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।
একইভাবে রেস্তোরাঁর খাবারে বিলের ওপর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে আগের মতো ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর পোশাক, মিষ্টি, নন–এসি হোটেলসহ বেশ কিছু খাতের ভ্যাট হার কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। এসব খাতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকটি খাতে ভ্যাট হার কমানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থাটির দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, ভ্যাট হার কমানোর এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি কয়েক দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।
মধ্যবিত্তের চালের কেজি এখন ৮০ টাকা, মোটা চাল ৫৫
২২ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
মধ্যবিত্তরা সরু চাল খেতে অভ্যস্ত। মিনিকেট ও নাজিরশাইল সরু চালের মধ্যে দুটি জনপ্রিয় নাম। রাজধানীর বাজার থেকে এই দুই চাল কিনতে প্রতি কেজিতে দাম দিতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বেশি কিনলে দু-এক টাকা কম পাওয়া যায়।
সরু চালের দাম গত এক মাসে কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। এভাবে ধাপে ধাপে সরু চালের দাম বাড়ছে ২০২০ সাল থেকেই। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি এক কেজি সরু চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৪৫ টাকা, যা এখন ৭০ টাকা। সর্বোচ্চ দর ছিল ৬০ টাকা, যা এখন ৮৪ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রশিদ, ডায়মন্ড, সাগর, মোজাম্মেল ইত্যাদি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের সরু মিনিকেট চাল আসলে ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। সুপারশপে সুদৃশ্য মোড়কে বিক্রি হওয়া মিনিকেটের দাম আরও বেশি, ৯০ টাকার আশপাশে। ফলে মধ্যম আয়ের মানুষকে ৮০ টাকা কেজি চাল কিনতে হচ্ছে।
মোটা চালের দামও কম নয়। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি যা ৩০-৩৫ টাকা ছিল, তা এখন ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। এ হিসাব টিসিবির। ঢাকার শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে অবশ্য ৫৫ টাকার নিচে কোনো সেদ্ধ চাল পাওয়া যায়নি। মোটামুটি ভালো মানের মোটা চাল কিনতে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দিতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষকে। এক মাসে মোটা চালের দাম বেড়েছে তিন থেকে চার টাকা। অন্যদিকে বাজারে মাঝারি চাল পাওয়া যাচ্ছে জাতভেদে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়।
গাজীপুর-সাভারে সাড়ে পাঁচ মাসে বন্ধ ৬৮ কারখানা
২৪ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও গাজীপুরে গত সাড়ে পাঁচ মাসে ৬৮টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী ভিত্তিতে বন্ধ। এ ছাড়া ছয়টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কেয়া গ্রুপ। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের।
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব কারখানা বন্ধ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খেলাপি ঋণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় অনেক কারখানা খেলাপি হয়ে পড়ে। আবার ক্ষমতাচ্যুত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক কারখানার মালিক আত্মগোপনে থাকায় কারখানা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না কিছু কারখানা।
বন্ধ হওয়া ৬৮ কারখানার মধ্যে ৫১টি গাজীপুরে এবং সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ১৭টি। এসব কারখানায় কাজ করতেন অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক। বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকের অনেকেই কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায়ই বন্ধ থাকছে সড়ক-মহাসড়ক। তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অন্যদিকে কারখানা চালু করতে ঋণসহ বিভিন্ন সহায়তা চাইছে কোনো কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুর শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত। এ জেলায় ছোট–বড় মিলিয়ে মোট নিবন্ধিত কারখানা ২ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি তৈরি পোশাক কারখানা, ১ হাজার ১৫৪টি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ জানায়, গাজীপুরের পোশাক কারখানার মধ্যে ৩৫টি এখনো গত নভেম্বরের বেতন দিতে পারেনি। ডিসেম্বরের বেতন এখনো দেয়নি ৪৫ শতাংশ পোশাক কারখানা। বর্তমানে ৫ শতাংশ পোশাক কারখানায় শ্রম অসন্তোষ চলছে। ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি) নিয়ে জটিলতা চলছে ৯ শতাংশ পোশাক কারখানায়।
স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বন্ধ তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে রয়েছে গাজীপুর মহানগরীর সারাব এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি, টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার টিএমএস অ্যাপারেলস, চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইল, মাহমুদ জিনস ও হার্ডি টু এক্সেল, কোনাবাড়ীর পলিকন লিমিটেড, অ্যাপারেল প্লাস, টিআরজেড ও দি ডেল্টা নিট অন্যতম।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পরিচালনায় আগ্রহী সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
সৌদি মালিকানাধীন বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল বাংলাদেশের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী চেয়ারম্যান আমের এ আলিরেজা বলেন, মাতারবাড়ীকে এই অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ বন্দরে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে তাঁরা সহায়তা করতে পারেন।
শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে আমের এ আলিরেজা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি এই আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়তা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় আরও বন্দর তৈরি করবে, যাতে চট্টগ্রামকে এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি রপ্তানি এবং শিপিং হাবে পরিণত করা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনীতি ও সংস্কার
রাষ্ট্রপতি সরানোর পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি যে বিএনপিতে আটকে গেছে, তা পুরোপুরি স্পষ্ট। রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রশ্নে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অন্তর্বর্তী সরকার এবং জামায়াতে ইসলামী যেখানে একই সরলরেখায় দাঁড়িয়েছে; সেখানে বিএনপি কেন বেঁকে বসল! এমন প্রশ্ন দেশের মানুষের মনে মনে।
বিএনপি নেতারা সাংবিধানিক ‘শূন্যতা’ তৈরির কথা খোলামেলা বললেও ভেতরে ভেতরে রাজনৈতিক ‘ষড়যন্ত্রের গন্ধ’ পাচ্ছে দলটি। আদতে এই শঙ্কা থেকেই রাষ্ট্রপতির পক্ষে দলটির ‘কঠোর’ অবস্থান। এ পরিস্থিতিতে যে কোনো ‘ষড়যন্ত্র’ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দৃঢ় অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
রিটে সিপিবি-বাসদ ও কর্নেল অলির দলের নাম থাকায় ‘বিব্রত’ জাতীয় নাগরিক কমিটি
২৯ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো
আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে অনুমতি না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে গতকাল সোমবার উচ্চ আদালতে যে রিট হয়েছিল, সেখানে দলের তালিকায় কর্নেল (অব.) অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং সিপিবি ও বাসদের নাম দেখে ‘বিব্রত’ হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এখন একটি সুন্দর প্রক্রিয়ায় ‘গুছিয়ে’ রিট করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নাসীরুদ্দীন এ কথা বলেন। এর আগে অবশ্য রিট আবেদনকারীদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা) আইনজীবী আহসানুল করিম গতকালের ওই দুটি রিট না চালানোর কথা জানিয়েছেন।
অন্য বিষয়ে নজর না দিয়ে নির্বাচনের দিকে নজর দিন
৩০ অক্টোবর ২০২৪, সমকাল
অন্যান্য বিষয়ের দিকে নজর না দিয়ে নির্বাচনের দিকে নজর দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটির ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে বুধবার এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয় মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন,নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটু পরামর্শ করবেন- এটা প্রত্যাশা ছিল। তবে এটাকে বড় ধরনের সমস্যা মনে করছি না। আমরা মনে করি- দ্রুত ইলেকশন কমিশন হোক এবং ইলেকশন কমিশন অতি দ্রুততার সঙ্গে তাদের কাজটা করবে।
৬ এলাকায় বিএনপির চিঠি: নির্বাচনী সমঝোতা, নাকি অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো
৩১ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর ছয় নেতাকে এলাকায় জনসংযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে বিএনপির দেওয়া চিঠি নিয়ে নিজ দল ও শরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই চিঠি কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতার ইঙ্গিত, নাকি নির্বাচন সামনে রেখে এসব নেতাকে কাছে রাখার কৌশল, তা স্পষ্ট নয়।
২২ অক্টোবর সমমনা শরিক জোটের ছয় নেতাকে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগে সহযোগিতা করার জন্য ছয়টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ‘অতীব জরুরি’ নির্দেশনা–সংবলিত চিঠি দেয় বিএনপি। এই ছয় নেতা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন উল্লেখ করে চিঠিতে তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার থানা, উপজেলা বা পৌরসভায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে বলা হয়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে এই চিঠি দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট দলের বাংলাদেশে কোনো জায়গা এখন নেই: ড. ইউনূস
৩০ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো
ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য’ প্রকাশ করছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘দেশের রাজনীতিতে এ দলের এখন ‘‘কোনো জায়গা’’ নেই।’
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব মন্তব্য করেন। আজ বুধবার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ ১১ মামলার কার্যক্রম বাতিল
৩০ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের ১টি, নাশকতার অভিযোগে করা ১০টিসহ ১১টি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা পৃথক ১১টি আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার রুল চূড়ান্ত (অ্যাবসলিউট) করে এ রায় দেন।
আইনজীবী সূত্রগুলো বলছে, ১১টি মামলার মধ্যে রাজধানীর দারুস সালাম থানার ৭টি, যাত্রাবাড়ী থানার ৩টি ও রাষ্ট্রদ্রোহের ১টি মামলা। এসব মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন জামিন ছিলেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, আগুন
৩১ অক্টোবর ২০২৪,সমকাল
রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’ ব্যানারে একদল লোক একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যায়। এ সময় সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আগুন দেওয়া হয়। দুই পক্ষই দাবি করেছে, তাদের ওপর আগে হামলা হয়েছে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। সেই মিছিলটি শাহবাগ হয়ে বিজয়নগরে যায়। সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও দেশবিরোধী চক্রান্তের’ প্রতিবাদে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র শ্রমিক জনতা’র ব্যানারে শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল বের করেন। জাতীয় পার্টির কার্যালয় ঘেরাও করতে বিজয়নগরে যায় মিছিলকারীরা। সেখানে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি অবস্থানের ফলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
সেবা পেতে নগরবাসীর ছোটাছুটি, গলদঘর্ম
০২ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
রাজধানীর ফার্মগেটে সেজান পয়েন্টের দোতলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যালয়। বসতেন কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা কার্যালয়টিতে হামলা চালায়। এরপর ভবন মালিক কক্ষটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন। সেই থেকে বন্ধ ওয়ার্ড কার্যালয়টি। বসার জায়গা পাচ্ছেন না ওই ওয়ার্ডের সচিব রিফাত হোসেন। এদিকে প্রতিদিনই লোকজন সেবা নিতে এখানে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান। ফলে সেবা নিতে আসা লোকজন কোথায় গিয়ে অভিযোগ জানাবেন তাও বুঝতে পারছেন না। রিফাত হোসেন বলেন, ‘কাউন্সিলর না থাকলেও একটু বসার জায়গা থাকলে মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু কোথাও বসতে পারছি না, সেবা দেব কীভাবে?’এই ওয়ার্ডে সেবা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
গত বুধবার ডিএনসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে পাওয়া যায় কয়েকজন সেবাগ্রহীতাকে। বেশির ভাগই এসেছেন সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে। কারণ কিছুদিনের মধ্যে স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। তখন জন্মসনদ লাগবে। কিন্তু কার্যালয় তালাবদ্ধ দেখে ওয়ার্ড সচিবকে খোঁজেন তারা। অনেকে অবশ্য নাগরিকত্ব সনদ, উত্তরাধিকার সনদ এবং বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রত্যয়নপত্রের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরই ঢাকার দুই সিটির প্রায় সব ওয়ার্ড কার্যালয়ে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরদের অপসারণ করে সরকার।
ডিএনসিসির ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ের (তালতলা-শেরেবাংলা নগর ও পশ্চিম আগারগাঁও) সচিব জাকির হোসেন বলেন, ‘গত ৬ আগস্টে অফিসে এসে দেখি, কম্পিউটার, প্রিন্টার, এসি, টিভি, সোফা, ফ্যান, চেয়ার-টেবিল কিচ্ছু নেই, হামলাকারীরা সব নিয়ে গেছে। পরে একটি চেয়ার ও একটি টেবিল ম্যানেজ করে অফিসটা চালু রেখেছি। কেউ এলে বসতেও দিতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘আগে এক দিনে জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে দিতাম। এখন লাগে সাত দিন। নাগরিকত্বের সনদ দিতে আগে লাগত পাঁচ মিনিট, এখন লাগে পাঁচ দিন।’
কাউন্সিলর না থাকায় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাউন্সিলরের নাগরিক সেবা নির্দেশ দিয়েছে সরকার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একজন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৯টি সাধারণ ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ তো রয়েছেই। ওয়ার্ড কার্যালয়ে এসে কেউ সনদ চাইলে সেটি আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে স্বাক্ষর হয়ে ওয়ার্ড কার্যালয়ে সেই সনদ ফিরে যেতে কয়েক দিন লেগে যাচ্ছে।
সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, জন্ম-মৃত্যু ও নাগরিকত্ব সনদ পাওয়া এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ সেবা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে, যিনি ওয়ার্ডের লোকজনকে চেনেন না। এজন্য একটি জন্মসনদ নিতে ১০ দিনের বেশি লেগে যাচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটি গঠন শুরু, প্রথম কমিটি কুষ্টিয়ায়
০২ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন শুরু করেছে। কুষ্টিয়া জেলায় ১১১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে অন্য জেলাগুলোতেও কমিটি গঠন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আজ শনিবার রাত আটটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে এই কমিটি প্রকাশ করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর সেই পোস্টটি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে হাসনাত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেলের স্বাক্ষর রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঠিকানা হিসেবে লেখা হয়েছে ‘রূপায়ন টাওয়ার, ৩৪৫ দিলু রোড, ঢাকা-১২১২’।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি
০৬ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা চায় বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার রোডম্যাপ স্পষ্ট না করলে রাজপথে নামবে বলে জানিয়েছে দলটি। গত সোমবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দলটির নেতারা বলেছেন, কয়েক মাস ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বারবার এ দাবি জানানো হচ্ছে। বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও একই দাবি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। বরং সরকারের দু-একজন উপদেষ্টার বক্তব্য বিষয়টিকে আরও জটিল ও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন করে তুলেছে বলে অভিমত বিএনপি নেতাদের। এ প্রেক্ষাপটে রোডম্যাপ ইস্যুতে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখবে দলটি।
অভ্যুত্থানের তিন মাস পর তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছু হতাশা-ক্ষোভ দেখতে পাচ্ছি : হাসনাত আবদুল্লাহ
০৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
অভ্যুত্থানের তিন মাস পর তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছু হতাশা ও ক্ষোভ দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েছি, তাদের (শিক্ষার্থীদের) সঙ্গে কথা বলেছি এবং তরুণ প্রজন্মের যে চিন্তা এবং ভাষা, সেই ভাষার সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করেছি। অভ্যুত্থানের তিন মাস পরে এসে আমরা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছু হতাশা দেখতে পাচ্ছি, কিছু ক্ষোভ দেখতে পাচ্ছি।’
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের তেঁতুলতলায় গতকাল বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমসহ পঞ্চগড় জেলার সমন্বয়কেরা উপস্থিত ছিলেন। সারা দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো এবং সবার কথা শোনার অংশ হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে তেঁতুলিয়া থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে তাঁরা সংবাদ সম্মেলনে জানান।
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না
০৭ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনি কাঠামোয় আনতে জারি করা হচ্ছে অধ্যাদেশ। এটি জারি হলে আদালতে গিয়ে প্রশ্ন তুলে বর্তমান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা বা বাতিল করা যাবে না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার দিন পর্যন্ত হবে সরকারের মেয়াদ। সম্প্রতি ‘অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
এতে বলা হয়, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। বিলুপ্ত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই থাকছে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা। উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ পাবেন না ২৫ বছরের কম বয়সীরা। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে। অধ্যাদেশ কত দিনের মধ্যে জারি হতে পারে, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের পোস্টার সাঁটানোর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
০৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও বিভিন্ন দেয়ালে ছাত্রদলের পোস্টার সাঁটানোর প্রতিবাদে রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার গভীর রাতে এই বিক্ষোভ থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
৭ নভেম্বর ‘ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ সামনে রেখে অন্যান্য এলাকার মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোসহ বিভিন্ন দেয়ালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার সাঁটায় ছাত্রদল। বিষয়টি নিয়ে বুধবার দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা হয়। পরে রাতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
পালাবদলের তিন মাস: বাম নেতারা কী ভাবছেন?
০৮ নভেম্বর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ যেভাবে চলছে, তাতে ‘নাখোশ’ বামপন্থি দলগুলো। ‘মানুষ আশাহত হচ্ছে’ বলেও সতর্ক করেছেন একাধিক নেতা।
ছোট ছোট জমায়েতে এসব বক্তব্য তুলে ধরা হলেও সংবাদ মাধ্যম সেগুলো তুলে ধরছে না- এমন অভিযোগও এনেছেন একজন।
তাদের বক্তব্যের সারবত্তা হল, সরকারের ‘সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই’, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধেও তারা ‘ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে’। এ কারণে মানুষের আস্থায় চিড় ধরছে, ফলে সাবেক সরকারের কথা তাদের মনে পড়ছে।
রাজনৈতিক সংস্কার নির্বাচিত সংসদ করবে- বিএনপির পক্ষ থেকে আসা এমন বক্তব্যেও একমত বামপন্থি বেশ কয়েকটি দল। তারাও মনে করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত। অন্তত নির্বাচন কবে হবে, সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকতে চায়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তারা চান।
পোশাক শ্রমিকদের জন্য আন্দোলনে করে আলোচিত হওয়া বামপন্থি নেত্রী মোশরেফা মিশু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার বলুক যে, ‘আমি এই এই কাজ করতে চাই, এজন্য আমার এতদিন দরকার, এত দিন পরে নির্বাচন দেব, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে চলে যাব।’ কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার এই বিষয়ে কোনো অবস্থান দেশবাসীর কাছে তারা তুলে ধরলেন না।
“সরকারকে অবিলম্বে বলতে হবে, কতদিন থাকবে এবং এই সময়ে কী করবে। কিন্তু উপদেষ্টা হাসান আরিফ সাহেব বলেছেন চার বছর ক্ষমতায় থাকা দরকার। আর সেনাবাহিনীর প্রধান বলেছেন দেড় বছর। মানুষ তো চায় স্পষ্ট করে বলুন।”
থানা পর্যায়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন শুরু, প্রথম কমিটি যাত্রাবাড়ীতে
০৮ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
থানা পর্যায়ে কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামো বিস্তৃত করার কাজ শুরু করল জাতীয় নাগরিক কমিটি। শুক্রবার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানা কমিটি ঘোষণা করেছে তারা। শিগগিরই থানা ও জেলা পর্যায়ে আরও কয়েকটি কমিটি গঠন করা হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা রাইজিং’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণ–অভ্যুত্থানের লাইটহাউস (বাতিঘর) যাত্রাবাড়ী থানা প্রতিনিধি কমিটি ঘোষণা করা হলো। এ কমিটি ৬১ সদস্যের। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন নতুন এ কমিটি অনুমোদন করেছেন।
ঢাকাসহ সারা দেশে ১৯১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
১০ নভেম্বর ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ১৯১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
রবিবার (১০ নভেম্বর) সকালে বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এক ক্ষুদে বার্তায় এই তথ্য জানান।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সেভাবে প্রকাশ্যে কোনও কর্মসূচি পালন করছে না। তবে নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আজ বেলা ৩টায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নেতা-কর্মীদের জড়ো হয়ে মিছিল করার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচিকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ব্যানারে আজ দুপুর ১২টায় ঢাকায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণজমায়েত’ শিরোনামে কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছে তারা। রাত থেকেই সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা সেখানে অবস্থান নিতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
উপদেষ্টা সেখ বশির বাণিজ্যে, ফারুকী সংস্কৃতিতে, স্থানীয় সরকারে এলেন সজীব ভূঁইয়া
১০ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন তিন উপদেষ্টার মধ্যে ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আরেক নতুন উপদেষ্টা চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে দেওয়া হয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এত দিন অন্য দুই মন্ত্রণালয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সামলাতেন। এখন তিনি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
কেমন গেল অন্তর্বর্তী সরকারের ৩ মাস
০৮ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। আজ শুক্রবার (৮ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের ৩ মাস পূর্ণ হলো। কেমন গেল সরকারের এই তিন মাস।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে দেশের অর্থনীতি সচল ও বিভিন্ন সেক্টরের সংস্কারে মনোযোগ দিয়েছে এই সরকার। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারকাজ শুরু, সহিংসতায় অচল মেট্রোরেলের মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন চালু, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও আটটি জাতীয় দিবস বাদ দেওয়াসহ নানান কাজে ব্যস্ত ছিল অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে প্রথম দিকে নানান চাপে ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকারের কাছে একের পর এক দাবি দাওয়া নিয়ে হাজির হতে থাকেন বিভিন্ন মহলের লোকজন। কেউ আসেন চাকরি জাতীয়করণের জন্য, কেউ গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে। এছাড়াও ঘটেছিল মব জাস্টিজের ঘটনা, শিক্ষকদের পদত্যাগ, সচিবালয়ে আনসারের অবরোধ কর্মসূচি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ নিয়েও বেশকয়েক দিন আন্দোলন চলছিল। শেষমেশ সেটা রুখতেও সফল হন সরকার। সবই সামাল দিতে হয়েছে এই সরকারকে।
এদিকে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে টানাপড়েন এরই মধ্য শুরু হয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ সংলাপে নির্বাচনই প্রাধান্য পেয়েছে। তারা এই সরকারের কাছে নির্বাচন ও সংস্কারের একটি রোডম্যাপ চেয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো রোডম্যাপ দেয়নি। বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য দুটি কমন চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন তা হলো- দ্রব্যমূল্য এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা। এর বাইরে সংস্কার, নির্বাচন ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছেন তারা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। অনেকে আবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। দলীয় নেতারা ও আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ ও উচ্চপর্যায়ের আমলারাও গা-ঢাকা দেন।
হাসিনা সরকারের নৃশংস দমন-পীড়নে প্রাণ হারান শিশু-কিশোর-শিক্ষার্থী-নারীসহ হাজারো মুক্তিকামী মানুষ। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে জনতার এ বিজয়কে দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন আন্দোলনকারীরা।
আওয়ামী সরকারের অবসানের পর মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে রাষ্ট্র সংস্কার ও অর্থনীতি পুনর্গঠন করে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের ব্যাপারে বিপুল আশা ও উদ্দীপনা। দীর্ঘ স্বৈরশাসনে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রায়, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় লুণ্ঠনে অর্থনীতিও বিপর্যস্ত। সেই জায়গাগুলো সংস্কারের জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন করতে নেওয়া হচ্ছে উদ্যোগ। এরই মধ্যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তা হলো- সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। এছাড়া গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
জাতীয় আট দিবস বাদ
অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের দলীয় দিবস বলে পরিচিত আটটি জাতীয় দিবস বাদ দিয়েছে। দিবসগুলো হলো— ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস ও ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।
দিবসগুলো বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসগুলো জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো জাতীয় দিবস হওয়ার মতো নয়।
ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
এদিকে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা নিয়ে বিচারকাজ শুরু করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক অভিযোগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী-ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, দীপু মনি, আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও একই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা, পুলিশের তৎকালীন আইজিসহ বেশ কয়েকজন সদস্য, র্যাবের তৎকালীন ডিজি, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের আসামি করা হয়।
যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, সেই সঙ্গে আহত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে বড় বড় ঋণখেলাপি ও লুটেরা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দখল থেকে মুক্ত করে পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন; দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেড়শ ব্যক্তির তালিকা তৈরি ও ৭৯ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু; ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল; দায়মুক্তি আইন নামে পরিচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন চলমান সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা; গণশুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত; রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প কিংবা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে- এমন প্রকল্প পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত।
এছাড়া বলপূর্বক গুম হওয়া থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর ও বিগত সরকারের আমলে সংগঠিত গুমের ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন; আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনা জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন; মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী স্বর্ণা দাশ নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানানো ও দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা সংলাপ
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট ছাড়া অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত বৈঠক করছেন। সেখানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা সাক্ষাৎ করেন। দলগুলোর প্রতিনিধিরা বৈঠকে রাজনীতিতে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, সংস্কার এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। এছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
আ’লীগ কর্মীদের বেধড়ক পিটুনি, গ্রেপ্তার ৩৩
১১ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
শহীদ নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘিরে গতকাল রোববার রাজধানীতে ছিল ব্যাপক উত্তেজনা। এই কর্মসূচি প্রতিরোধে গণজমায়েত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং ইসলামী ছাত্রশিবির পালন করে অবস্থান কর্মসূচি। রাজধানীর অলিগলিতে সতর্ক ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে কয়েকটি স্থানে ঝটিকা মিছিল ছাড়া কোথাও দাঁড়াতে পারেনি আওয়ামী লীগ। তবে বিভিন্ন স্থানে বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়েছেন দলটির ২০ নেতাকর্মী। পুলিশ জানিয়েছে, অপতৎপরতা রোধে তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ একই স্থানে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করায় গতকাল ভোরেই জিরো পয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ও গুলিস্তান এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থান নেয়। টহল দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশি চালায় পুলিশ।
সরকার রাষ্ট্র সংস্কার কী করছে, রাজনীতিকেরা জানেন না
১২ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
সংবিধান সংস্কারসহ রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার কী করছে, রাজনৈতিক দলের নেতারা তা জানেন না। তাঁদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। এ সরকার সব রাজনৈতিক দল, সর্বস্তরের জনসাধারণের সমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় বসেছে। কিন্তু তিন মাস পর তারা তিনজন উপদেষ্টাও ভালোভাবে নিয়োগ দিতে পারেনি। উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্ররাই ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের অপসারণের দাবি তুলে সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে কতটুক সক্ষম হবে, তা নিয়ে গভীর শঙ্কা সৃষ্টি হবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘সংবিধান সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনারে রাজনৈতিক নেতারা এসব কথা বলেছেন। নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের’ উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরানোর দাবি
১১ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ রয়েছেন বলে মনে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের দাবি, উপদেষ্টাদের মধ্যে যাঁরা ‘সফট আওয়ামী লীগার’ বা ফ্যাসিস্ট দলের প্রতি সহানুভূতিশীল, অবিলম্বে তাঁদের সরিয়ে দিতে হবে। ছাত্র-জনতার অংশীদারত্বের বাইরে গিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটি মেনে নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
‘ছাত্র-জনতার অংশীদারত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের’ প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কাছাকাছি সময়ে প্রায় একই বিষয়ে একই জায়গায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধনের পৃথক কর্মসূচি ছিল। পরে দুটি কর্মসূচি যৌথভাবে পালন করা হয়।
ফ্যাসিবাদের ‘দোসরদের’ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের প্রতিবাদে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও যশোরে সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে।
বন্যার আড়াই মাস পরও ফেনীতে হয়নি গৃহহীনদের পুনর্বাসন
১২ নভেম্বর ২০২৪, চ্যানেল আই অনলাইন
ফেনীতে গত আগস্ট মাসের ভয়াবহ বন্যায় পানিতে ভেসে গেছে মানুষের ঘরবাড়ি, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রাস্তাঘাট, বীজতলা, মাছের ঘের ও আবাদি জমি।
এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ফেনীর ছয়টি উপজেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এবং জেলায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার বান্ডেল টিন ও নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় ফেনীতে ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর, ২৫০টি আধাপাকা ঘর সম্পূর্ণ ধ্বসে যায়। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
এছাড়া ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচাঘর এবং ২ হাজার ৬৩২টি আধাপাকা ঘরের আংশিক ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ৬৪ হাজার ৪১৫টি ঘরবাড়িতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো জানায়, আমাদের ঘর-দরজা সব বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। বন্যার প্রায় তিন মাস পার হলেও এখনও আমাদের থাকার জায়গা নেই। এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে তেরপালের নিচে আছি। নতুন করে ঘর তৈরির মত আমাদের অবস্থা নেই। সামনে যে শীত আসছে আমরা কিভাবে থাকবো। সরকার যদি আমাদের ঘরগুলো তৈরি করে দেয় তাহলে আমরা উপকৃত হব।
আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
১৩ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের দেখতে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি সবার সঙ্গে দেখা করেননি অভিযোগ তুলে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পথে তাঁর পথ আটকে বিক্ষোভ করেন আহত ব্যক্তিরা।
হাত, পা, চোখে ব্যান্ডেজসহ এই ব্যক্তিরা হুইলচেয়ারে করে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তাঁদের সবার সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত তাঁরা রাস্তা ছাড়বেন না। এ ছাড়া ঘোষণার পরও এখনো আহত ব্যক্তিদের এক লাখ টাকা করে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।
আহতরা বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাবেন, কর্মসংস্থানও হবে
১৪ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আহত ব্যক্তিরা দেশের সব সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে সারা জীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাবেন। চিকিৎসায় তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। আর কারও যদি দেশে চিকিৎসা সম্ভব না হয় এবং বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিজ্ঞানসম্মত সুপারিশ করা হয়, তাহলে সেই ব্যবস্থা করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় উপদেষ্টা ও একজন বিশেষ সহকারী। বৈঠক শেষে সরকারের পক্ষ থেকে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরা হয়। সিদ্ধান্তগুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান। তিনি এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ছিলেন।
‘সর্বজনকথা’র দশম বর্ষপূর্তি
‘উন্নয়ন হলে তো গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার কথা ছিল না’
১৬ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগের ১০ বছরের অনির্বাচিত সরকারের সময়কে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম কিংবা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের মতো সংস্থাগুলো ‘অলৌকিক উন্নয়নের’ সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। উন্নয়ন হলে তো গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার কথা ছিল না, তাহলে কেন দেশে গণ-অভ্যুত্থানের প্রয়োজন হলো? কী ফাঁক ছিল সেই উন্নয়নে? গত ১০ বছরের ‘সর্বজনকথা’ পড়লে সেই ফাঁকগুলো চেনা যাবে, এর পেছনের বিশ্লেষণ বোঝা যাবে।
রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ বিশ্লেষণমূলক জার্নাল ‘সর্বজনকথা’র দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে লেখক-পাঠক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। তিনি ‘সর্বজনকথা’র সম্পাদক। শুক্রবার বিকেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সর্বজনকথা’ শুধু একটি পত্রিকা নয়, বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থেই একটি সর্বজনের এবং সর্বপ্রাণের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়াস।
‘সর্বজনকথা’র বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক লড়াইকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আনু মুহাম্মদ লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
চলচ্চিত্রনির্মাতা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে বাংলা ভাষায় চলচ্চিত্র নিয়ে লেখার পরিসর খুবই সীমিত। যা দু-একটা পত্রিকা আছে, তাতেও একটি নির্দিষ্ট ধারার লেখা ছাপা হয়। সর্বজনকথাই একমাত্র যারা চলচ্চিত্র নিয়ে আমার ভিন্নধারা লেখা ছাপতে আগ্রহী দেখিয়েছিল।’
সর্বজনকথার লেখক ফাতেমা সুলতানা বলেন, ‘সর্বজনকথার বিষয়ভিত্তিক সূচিতে আমার লেখাটি “রাষ্ট্র” অংশে দেখে খুশি হয়েছি। সবখানেই দেখেছি, ধর্ষণ নিয়ে কোনো লেখা হলেই সেটিকে শুধু নারীর বিষয় হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সর্বজনকথা যে ধর্ষণকে শুধু নারীর বিষয় হিসেবে না রেখে রাষ্ট্রের মতো বড় পরিসরে নিয়ে এসেছে, এটা গুরুত্বপূর্ণ।’
সর্বজনকথার গবেষণা কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী নাফিসা নাওয়ার নিঝুম বলেন, ‘মাগুরার মতো মফস্সল শহরের ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী হিসেবে গবেষণার প্রতি আগ্রহ থাকলেও নিয়মতান্ত্রিকভাবে শেখার কোনো সুযোগ ছিল না। অনলাইনে কর্মশালা করে বিষয়টি শেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য সর্বজনকথার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সর্বজনকথার নির্বাহী সম্পাদক কল্লোল মোস্তফা, প্রকাশক মোশাহিদা সুলতানা, সম্পাদনা পরিষদের সদস্য তানজীমউদ্দিন খান, সামিনা লুৎফা, মাহা মির্জা এবং ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য রেজাউল করিম, শামীম ইমাম, মাহতাবউদ্দিন আহমেদ ও আনহা এফ খান।
মতবিনিময় সভায় সর্বজনকথার ১০ বছরের লেখা ও কার্যক্রম নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। সর্বজনকথার লেখক-পাঠক–শুভানুধ্যায়ীরা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে সর্বজনকথা সম্পর্কে তাঁদের মতামত, পরামর্শ, সমালোচনা ব্যক্ত করেন। শেষ পর্বে গান পরিবেশন করেন গায়ক মুসা কলিম মুকুল।
সভায় সর্বজনকথার লেখকদের মধ্যে নিজেদের স্মৃতি ও পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করেন হারুন অর রশিদ, নেসার আহমেদ, আলমগীর খান, সাঈদ ফেরদৌসহ অনেকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে যা যা ঘটল
১৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
৮ আগস্ট
- ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু। ১৬ উপদেষ্টা নিয়োগ। উপদেষ্টা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক।
- নিয়োগ পাওয়া উপদেষ্টারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের নির্বাহী পরিচালক আদিলুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, নারী অধিকারকর্মী ফরিদা আখতার, ইসলামি চিন্তাবিদ আ ফ ম খালিদ হাসান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম, নির্বাচনব্যবস্থা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শারমিন মুরশিদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায়, নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক-ই-আজম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
- নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল হলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।
- গাজীপুর ও জামালপুর কারাগারে বিক্ষোভ-গুলি।
৯ আগস্ট
- ৩ দিন বন্ধ থাকার পর দেশে ৩৬১ থানার কার্যক্রম শুরু।
- ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের পদত্যাগ।
- বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ওপর নজর রাখতে কমিটি করেছে ভারত সরকার।
- জামালপুর কারাগারে ৬ বন্দী নিহত।
১০ আগস্ট
- আদালত চত্বরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ৬ বিচারকের পদত্যাগ। অন্য পাঁচ বিচারপতি হলেন এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম ও কাশেফা হোসেন।
- সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান।
- পদত্যাগ করলেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
১১ আগস্ট
- চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ আট সিদ্ধান্ত উপদেষ্টা পরিষদের।
- রাজধানীর দিলকুশায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে গুলির ঘটনা। ২০১৭ সালের আগে ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এর পরে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ।
- ইউজিসি চেয়ারম্যান ও পাঁচ উপাচার্যের পদত্যাগ।
- বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে চার সদস্যের (মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, নজরুল হুদা, মোস্তফা কে মুজেরি, বদরে মুনির ফেরদৌস) একটি অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন।
- মায়ের ডাকের মানববন্ধন, গুমে জড়িত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের বিচার দাবি।
- দেশে ফিরলেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদ।
১২ আগস্ট
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক। সরকারকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেবে তারা।
- প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।
- সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি: স্বাধীন সাংবাদিকতার বাধা দূর করার আহ্বান। সম্পাদক পরিষদ বলছে, বিগত সরকার বাক্স্বাধীনতা, সৃজনশীলতা ও স্বাধীন সংবাদপত্রশিল্পের কণ্ঠ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি নিবর্তনমূলক আইন করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এসব আইনের মধ্যে রয়েছে উপাত্ত সুরক্ষা আইন (খসড়া) ২০২২, ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি রেগুলেশন ২০২১ (খসড়া), গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন ২০২২ (খসড়া), জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭, দ্য প্রেস কাউন্সিল (সংশোধন) অ্যাক্ট, ২০২২ (খসড়া)। প্রস্তাবিত এই বিশেষ আইনগুলো অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
- বাংলাদেশ ব্যাংকের চার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার পদত্যাগ। তাঁরা হলেন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও খুরশিদ আলম, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস এবং উপদেষ্টা আবু ফারাহ মো. নাসের।
- আপিল বিভাগে চার বিচারক নিয়োগ। তাঁরা হলেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক।
- সড়কে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ।
- জনগণ এখনো গ্রহণ করতে আসেনি, বরং দল পুনর্গঠন করুন: আওয়ামী লীগকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
১৩ আগস্ট
- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার।
- রাষ্ট্রের সংস্কার শেষে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন: খুলনায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
- ১৫ আগস্ট শোক দিবসের ছুটি বাতিল।
- আহসান এইচ মনসুর নতুন গভর্নর পদে নিয়োগ। সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৭ বছর নির্দিষ্ট থাকায় বিদ্যমান বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার অনুযায়ী আহসান এইচ মনসুর গভর্নর পদে নিয়োগ পেতে পারতেন না। কারণ, তাঁর বয়স এখন ৭২ বছর ৮ মাস। সে জন্য তাঁকে নিয়োগ দিতে সরকারকে ওই অর্ডার সংশোধন করতে হয়েছে। এতে গভর্নর পদের বয়সসীমা তুলে দেওয়া হয়।
- প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হলেন শফিকুল আলম।
- পুলিশের বড় রদবদল, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানকে অবসর।
১৪ আগস্ট
- ১১ সচিবের চুক্তি বাতিল, বাদ পড়ছেন শতাধিক।
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যাকাণ্ডে বিচারের উদ্যোগ।
- সাবেক মন্ত্রী শামসুল হক টুকু ও জুনাইদ আহ্মেদ পলক গ্রেপ্তার।
১৫ আগস্ট
- এস আলম ও তাঁর পরিবার সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব।
- ৩২ নম্বরে যেতে বাধা, মারধর। দিনভর উত্তেজনা।
১৬ আগস্ট
- উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হলেন আরও চারজন। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা মর্যাদা) সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা করা হচ্ছে। বাকি তিনজন হলেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ৮ উপদেষ্টার দায়িত্ব পুনর্বণ্টন। নতুন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
- সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান আট দিনের রিমান্ডে। তিনি সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরদিন তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
১৭ আগস্ট
- অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রে উত্তরণে পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: গ্লোবাল সাউথ সম্মেলনে ড. ইউনূস।
১৮ আগস্ট
- সংস্কারের পর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন: কূটনীতিকদের প্রধান উপদেষ্টা।
- প্রাণ রক্ষায় ৬২৬ জনকে সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়: আইএসপিআরের বিবৃতি। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ৬১৫ জন নিজ উদ্যোগে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে ৪ জনকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে সাতজন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন।
- বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
১৯ আগস্ট
- সিটি মেয়রসহ ১ হাজার ৮৭৬ জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ।
- সাবেক মন্ত্রী দিপু মনি গ্রেপ্তার।
২০ আগস্ট
- পুরোনো উদ্যোক্তাদের হাতে ফিরল ন্যাশনাল ব্যাংক। নতুন পর্ষদ গঠনের পর ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যাংক সিকদার গ্রুপের দখলে ছিল।
- সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল।
২১ আগস্ট
- পদ ছাড়লেন চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান।
- অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন। নেতৃত্বে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
২২ আগস্ট
- ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ১২ জেলা, মৃত্যু ৮।
- ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল।
২৩ আগস্ট
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৫ হত্যা মামলা।
২৪ আগস্ট
- বানভাসিদের পাশে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ।
২৫ আগস্ট
- চাকরি জাতীয়করণ নিয়ে আনসারদের সচিবালয় ঘেরাও, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।
- এস আলমমুক্ত হলো এসআইবিএল।
- মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন, বাড়ল নীতি সুদ হার।
- মেট্রোরেল চলাচল শুরু।
২৬ আগস্ট
- বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ফোনালাপ।
২৭ আগস্ট
- গুমের ঘটনা তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন। কমিশনকে তদন্ত করে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
- ইউসিবি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩০তম উপাচার্য হবেন।
২৮ আগস্ট
- জামায়াত ও ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল।
- প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মো. মাহফুজ আলম।
২৯ আগস্ট
- গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
- এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন।
৩০ আগস্ট
- ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, এটা স্বীকার করে নিতে হবে। কিন্তু সরকারে যে থাকে, তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা হবে।
৩১ আগস্ট
- জ্বালানি তেলের নতুন দর।
- এ সপ্তাহে ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা তোলা যাবে।
- এস আলমের অর্থ পাচারের তদন্ত শুরু: সিআইডি।
সেপ্টেম্বর ২০২৪
১ সেপ্টেম্বর
- ৩১ আগস্ট রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনা। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার-বিচার, নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবিতে সারা দেশে সব ধরনের চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা বন্ধের ঘোষণা চিকিৎসকদের। পরে দাবি পূরণের আশ্বাসে ১২ ঘণ্টা পর তাঁরা কাজে ফেরেন।
- আলোচিত ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের মালিকানাধীন গাড়িতে চড়ে নিজ এলাকা কক্সবাজারের পেকুয়ায় গিয়ে সংবর্ধনা নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।
২ সেপ্টেম্বর
- দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করেন এবং ২ সেপ্টেম্বর থেকেই তা কার্যকর হয়।
৩ সেপ্টেম্বর
- জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় আটক হয়েছিলেন ৫৭ বাংলাদেশি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সম্মান জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে সাধারণ ক্ষমা করে।
- পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও এ কে এম শহীদুল হক গ্রেপ্তার।
৪ সেপ্টেম্বর
- সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।
৫ সেপ্টেম্বর
- ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পূর্তিতে ঢাকার রাজপথে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের।
- প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ বাকি চার কমিশনার মো. আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও মো. আনিছুর রহমানের পদত্যাগ। ভবিষ্যতের প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন করার পরামর্শ দিলেন সিইসি।
- বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান মোহাম্মদ আজম। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান আফসানা বেগম। এ ছাড়া ইউজিসিতে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান এস এম এ ফায়েজ।
৬ সেপ্টেম্বর
- সরকার পতনের পর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০০৯ সালের পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মইন ইউ আহমেদ।
৭ সেপ্টেম্বর
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে নিয়োগ।
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যা।
৮ সেপ্টেম্বর
- ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আহ্বায়ক ও আখতার হোসেন সদস্যসচিব।
৯ সেপ্টেম্বর
- কারিগরি শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার অভিযোগে ৬ দফা দাবিতে রাজধানীর সাতরাস্তা ৬ ঘণ্টা টানা অবরোধ। রাজধানীতে তীব্র যানজট।
- শেয়ারবাজারে সালমান এফ রহমান এবং এস আলম পরিবারের সদস্য ও তাঁদের প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন।
- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন নাট্যনির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
১০ সেপ্টেম্বর
- রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৮ জন আহত। ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী আইডিয়াল কলেজের সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে যায়।
১১ সেপ্টেম্বর
- জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ। তিনি বলেন, সংস্কার চান, সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চান। সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত।
- নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন শাহদীন মালিক।
- জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগ দিয়ে জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপন পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল।
- জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকায় আবু সাঈদের ইলাস্ট্রেশন।
১২ সেপ্টেম্বর
- ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি ও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
- চিকিৎসকদের একটি অংশের বাধার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (চলতি দায়িত্ব) পদ থেকে অধ্যাপক রোবেদ আমিনকে সরিয়ে নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
১৩ সেপ্টেম্বর
- ভারী বর্ষণে কক্সবাজার ডুবে যায়। পাহাড়ধসে ৬ জনের মৃত্যু এবং মাছধরার ট্রলারডুবিতে ১ জন মারা যান।
১৪ সেপ্টেম্বর
- যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে আছেন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
১৫ সেপ্টেম্বর
- আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনে পরিবর্তন এনেছে সরকার। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গুমের ঘটনা কমিশনের তদন্তের জন্য বিবেচনায় আনা যাবে। এর আগের প্রজ্ঞাপনে সময়টি ছিল ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত। নতুন প্রজ্ঞাপনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশনকে তিন মাস সময় দিয়েছে সরকার।
- এস আলমের গৃহকর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা।
১৬ সেপ্টেম্বর
- জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের তথ্যানুসন্ধান দল ঢাকায়।
১৭ সেপ্টেম্বর
- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদান।
- সাভারের আশুলিয়ায় তিন সপ্তাহ ধরে শ্রম–অসন্তোষের মধ্যে জিরাবো এলাকায় শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মোছা. রোকেয়া বেগম নামের এক শ্রমিক নিহত।
১৮ সেপ্টেম্বর
- সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের যুক্তরাজ্যে বাড়ি ও সম্পদ নিয়ে আল-জাজিরার প্রতিবেদন।
১৯ সেপ্টেম্বর
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফ এইচ) হলে চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা একদল শিক্ষার্থীর। জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে কয়েক দফা মারধর করে হত্যা।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত।
- খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় লারমা স্কয়ারে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ।
- মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া স্টেশন চালু। সপ্তাহে ৭ দিন মেট্রোরেল চালুর সিদ্ধান্ত।
- সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে তাঁর সুনামগঞ্জের গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার।
২০ সেপ্টেম্বর
- খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালি সংঘাতের রেশ পার্শ্ববর্তী জেলা রাঙামাটিতেও ছড়ায়। সংঘর্ষ-সহিংসতায় পার্বত্য এই দুই জেলায় ৪ জন নিহত এবং অন্তত ৮০ জন আহত হন। দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি।
- সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া সহ-উপাচার্য মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ মো. ইসমাইল হোসেনকে শিক্ষার্থীরা শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন, এমন ভিডিও আলোচনায়।
- বায়তুল মোকাররমে খতিব দ্বন্দ্বে জুমার নামাজের পর সংঘর্ষ।
২১ সেপ্টেম্বর
- আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে পূজায় ৩ হাজার টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির সিদ্ধান্ত।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম নিজের পরিচয় নিয়ে প্রকাশ্যে।
২২ সেপ্টেম্বর
- ১১২ দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু।
- রাঙামাটি থেকে ১৪৪ ধারা উঠলেও খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে অবরোধে অচলাবস্থা।
- সিএজির পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ, পুলিশের লাঠিচার্জ।
২৩ সেপ্টেম্বর
- শ্রমিক অসন্তোষ। আশুলিয়ায় বন্ধ অর্ধশত কারখানা, গাজীপুরেও বিক্ষোভ।
২৪ সেপ্টেম্বর
- ইউনূস বাইডেনের বৈঠক। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন বাইডেনের।
- শেয়ার কারসাজিতে সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা।
- রয়টার্সকে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎকার। আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এ সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি।
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা ২০০ ছাড়াল।
২৫ সেপ্টেম্বর
- ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে গণ–অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করালেন প্রধান উপদেষ্টা।
২৬ সেপ্টেম্বর
- যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনূস ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বৈঠক। সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে বলে জানালেন ব্লিঙ্কেন।
- টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা ও ঘরের মাঠে শেষ টেস্ট খেলতে চাইলেন সাকিব।
২৭ সেপ্টেম্বর
- জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ।
- ভয়েস অব আমেরিকাকে সাক্ষাৎকারে ইউনূসের রিসেট বাটন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রথম স্বীকার করতে হবে যে ছাত্ররা বলেছে, আমরা “রিসেট বাটন” পুশ করেছি। এভরিথিং ইজ গন; অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলব। দেশের মানুষও তা চায়। সেই নতুন ভঙ্গিতে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সংস্কার করতে হবে।’
২৮ সেপ্টেম্বর
- ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা সরান এস আলম
- বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ সমন্বয়ের লক্ষ্যে গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিল।
২৯ সেপ্টেম্বর
- উত্তরের চার জেলায় বন্যা।
৩০ সেপ্টেম্বর
- সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
- আশুলিয়ার টঙ্গিবাড়ী এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে কাওসার হোসেন (২৭) নামের একজন নিহত এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে অন্তত পাঁচজন।
- জয়, পুতুল ও ববির ব্যাংক হিসাব জব্দ।
- সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ।
অক্টোবর ২০২৪
১ অক্টোবর
- বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজি, জরিমানা ৪২৮ কোটি টাকা।
- বিএনপির শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র ঘোষণা আদালতের।
২ অক্টোবর
- ক্রিকেটার শাকিব ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব তলব।
৩ অক্টোবর
- গুম কমিশন: আয়নাঘরের প্রমাণ পাওয়া গেছে, গুমের ৪০০ অভিযোগ
- টাইমের ১০০ উদীয়মান প্রভাবশালীর তালিকায় নাহিদ ইসলাম।
- দরপতনে বিএসইসি ঘেরাও।
৪ অক্টোবর
- ১৮ হাজার কর্মী নেওয়ার আশ্বাস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর।
৫ অক্টোবর
- রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ শুরু। প্রথম দিনের সংলাপ বিএনপির সঙ্গে।
৬ অক্টোবর
- গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ৭৩৭ জনের খসড়া তালিকা প্রকাশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
- সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
৭ অক্টোবর
- শাহদীন মালিকের পরিবর্তে অধ্যাপক আলী রিয়াজকে প্রধান করে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন।
৮ অক্টোবর
- দাম নিয়ন্ত্রণে সাড়ে চার কোটি ডিম আমদানির সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের।
- সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী জামিনে মুক্ত।
৯ অক্টোবর
- রাজস্ব বোর্ডের সংস্কারে পরামর্শক কমিটি গঠন।
- সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জামিনে মুক্ত।
১০ অক্টোবর
- বিশ্বব্যাংকের নতুন পূর্বাভাস: বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে ৪ শতাংশ হবে।
১১ অক্টোবর
- পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর, জোরালো সহযোগিতার আশ্বাস।
১২ অক্টোবর
- মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি সোনা লুট, মামলা।
১৩ অক্টোবর
- সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত।
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ।
১৪ অক্টোবর
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: বিচার শুরু করতে চেয়ারম্যান ও দুই সদস্য নিয়োগ। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার। দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
১৫ অক্টোবর
- সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১১ দিনের সরকারি সফরে ঢাকা ছেড়েছেন, যাবেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়।
- মিরপুর ১০ মেট্রোস্টেশন চালু, ব্যয় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
১৬ অক্টোবর
- ৭ মার্চসহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত। যে দিবসগুলো উদ্যাপন বা পালন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো হলো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, আইনজীবী সমাজ ও নাগরিক কমিটির হাইকোর্ট ঘেরাও, ১২ বিচারককে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত।
- বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু।
১৭ অক্টোবর
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
- খিলগাঁও থানায় আইনজীবী জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা।
- সাকিবের দেশে ফেরা হচ্ছে না।
- ঈদুল ফিতরে পাঁচ দিন, ঈদুল আজহায় ৬ দিন এবং দুর্গাপূজায় ২ দিন ছুটি।
- উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত—অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার পাবে ৩০ লাখ টাকা।
- সয়াবিন ও পাম তেলে শুল্কছাড়।
- পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন গ্রামের মানুষ।
১৮ অক্টোবর
- পল্লী বিদ্যুতের ৬ কর্মকর্তা তিন দিনের রিমান্ডে, রাষ্ট্রদ্রোহ ও সাইবার আইনে মামলা।
১৯ অক্টোবর
- দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি শুনেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন; কিন্তু তাঁর কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। এই কথোপকথন পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়।
- রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হবে: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে ব্রিফিংয়ে মাহফুজ আলম।
২০ অক্টোবর
- বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল।
- শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের ঘোষণা।
২১ অক্টোবর
- হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ অন্তর্বর্তী সরকার। বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলেছেন আইন উপদেষ্টা। তবে বঙ্গভবন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগকেন্দ্রিক মীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার জন্যও সবার প্রতি আহ্বান জানান।
- জামিন পেলেন জেড আই খান পান্না।
- দুদকের মামলায় আপিলের অনুমতি পেলেন ড. ইউনূস।
- পাঁচ সরকারি ব্যাংকে এমডি নিয়োগের চিঠি।
- ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ।
- বসুন্ধরার চেয়ারম্যানসহ পরিবারের আটজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা।
- ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’–এর কমিটিতে পরিবর্তন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমকে। আর এত দিন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২২ অক্টোবর
- রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে রাতে বিক্ষোভ।
- রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। শহীদ মিনারে ‘বিপ্লবী ছাত্র জমায়ত’ থেকে এ দাবি।
- সালমান এফ রহমান, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের লেনদেনের তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি।
২৩ অক্টোবর
- আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
- এইচএসসিতে বৈষম্যহীন ফলের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, পুলিশের ধাওয়া, আটক ৫৩ জন।
২৪ অক্টোবর
- চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ করার সিদ্ধান্ত উপদেষ্টা পরিষদের।
- গণমাধ্যম ঘেরাও করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা: তথ্য মন্ত্রণালয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয়টি বলেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমকে হুমকি দেওয়াসহ ঘেরাওয়ের ঘোষণার বিষয়টি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় অবহিত হয়েছে। এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। গণমাধ্যমকে হুমকি দেওয়াসহ ঘেরাওয়ের ঘোষণায় মন্ত্রণালয় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- সাত কলেজের সমস্যা নিরসনে কমিটি গঠন।
২৫ অক্টোবর
- সারদা পুলিশ একাডেমি: ক্লাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে প্রশিক্ষণরত ৫৯ এসআইকে শোকজ।
- যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর শেষে দেশে ফিরেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
- চট্টগ্রামে ৮ দফার দাবিতে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সমাবেশ, ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা।
২৬ অক্টোবর
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ।
- সন্ত্রাসমুক্ত মোহাম্মদপুরের দাবিতে থানার সামনে এলাকাবাসীর প্রতিবাদ।
২৭ অক্টোবর
- রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবি প্রসঙ্গে ১২ দলের বৈঠক: সাংবিধানিক সংকট চায় না বিএনপিসহ বিভিন্ন দল।
- শেয়ারবাজারে দরপতন: চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন সূচক।
- আবুল কাশেম ফজলুল হক বাংলা একাডেমির সভাপতি হলেন।
- গভীর রাতে গাজী দস্তগীরের বাড়িতে ডিবির অভিযান, ভাঙচুর।
- গ্রেপ্তারের পর সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ কারাগারে।
২৮ অক্টোবর
- আওয়ামী লীগসহ ১২ দলকে রাজনীতির বাইরে রাখতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তিন নেতার রিট।
- লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে গভর্নর: হাসিনার সহযোগীরা সরিয়েছেন ১৭ বিলিয়ন ডলার।
- এ মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
- সাম্প্রতিক শেয়ারের দরপতন নিয়ে বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ শুরু, দরপতন চলছেই।
- জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের দুই দিনের ঢাকা সফর শুরু।
২৯ অক্টোবর
- ১২ দলকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার রিট চালাবেন না সারজিসসহ তিন আবেদনকারী।
- আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ওপর জোর দিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।
- দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেছেন।
- রাজধানীর সাত কলেজ: শিক্ষার্থীদের ৫ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ।
- ২০ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি)।
৩০ অক্টোবর
- সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক: সব হত্যার বিচার করতে হবে।
- স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ বর্তমানে ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকায় তাঁকে ছাড়াই সরকার ডব্লিউএইচওর সঙ্গে সরাসরি কাজ করার জন্য সংস্থাটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সরকার।
- বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে করা একটি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
- হজ প্যাকেজ ঘোষণা, খরচ কমেছে।
৩১ অক্টোবর
- জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর, আগুন। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’র ব্যানারে একদল লোক একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর তাঁদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ওই কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।
- ফুল আর ভালোবাসায় সাফ নারী চ্যাম্পিয়নদের খোলা বাসে বরণ।
- মিরপুরে সেনা-পুলিশের সঙ্গে পোশাকশ্রমিকদের সংঘর্ষ, দুজন গুলিবিদ্ধ।
- বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সহিংসতায় ট্রাম্পের তীব্র নিন্দা।
- সাত কলেজের জন্য ঢাবির ভেতরেই আলাদা ব্যবস্থা।
নভেম্বর ২০২৪
১ নভেম্বর
- জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন: পুলিশের নিষেধাজ্ঞা মেনে দুই পক্ষের কর্মসূচি স্থগিত। কাকরাইলে দলের প্রধান কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল জাপা। সেই সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয় ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতা’র ব্যানারে। এ পরিস্থিতিতে কাকরাইলসহ আশপাশ এলাকায় সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পরে দুই পক্ষই কর্মসূচি স্থগিত করে।
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) থেকে এস আলমের নিয়োগ দেওয়া ৫৭৯ ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত।
২ নভেম্বর
- রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা: মির্জা ফখরুল ইসলাম।
- শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।
- শিল্পকলা একাডেমিতে বিক্ষোভের মুখে একটি নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ। দেশ নাটক প্রযোজিত নাটক ‘নিত্যপুরাণ’ মঞ্চায়নের সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে বিক্ষোভ করেন ২০ থেকে ২৫ ব্যক্তি। এ অবস্থায় নাটকটির মঞ্চায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশ নাটকের নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ওই ব্যক্তি স্বৈরাচার সরকার আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে কাজ করেছেন। ফলে তাঁর অংশগ্রহণে নাটক মঞ্চস্থ হতে পারবে না।
৩ নভেম্বর
- চাল আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর ছাড়া আর কোনো শুল্ক-কর নেই।
- ২৯ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি)।
৪ নভেম্বর
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কাজের অগ্রগতি তুলে ধরল ৬ সংস্কার কমিশন।
- শেয়ারবাজারে মূলধনি মুনাফায় কর কমাল এনবিআর।
- শৃঙ্খলাভঙ্গে আরও ৫৮ জন প্রশিক্ষণরত এসআইকে অব্যাহতি, এ নিয়ে দুই দফায় ৩১০ জনকে অব্যাহতি হয়।
৫ নভেম্বর
- গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের ব্রিফিং: ৮ গোপন বন্দিশালার সন্ধান, এখনো নিখোঁজ ২০০।
- ঢাকায় আলেমদের মহাসম্মেলন।
- জনতা ব্যাংক নিলামে ওঠাল এস আলমের জমি।
- সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ।
৬ নভেম্বর
- অক্টোবরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৯ শতাংশ।
৭ নভেম্বর
- বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত।
- তিন মাসের মধ্যে অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ—১০.৮৭ শতাংশ।
- বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন ভারতের সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদি।
- সাকিব আল হাসান ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ।
- সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ৬ দিনের রিমান্ডে, আদালতে আইনজীবীকে মারধর।
- আরও ১১৮ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি)।
৮ নভেম্বর
- নাটক বন্ধ নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির সামনে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিবাদ সমাবেশে ডিম নিক্ষেপ।
৯ ডিসেম্বর
- নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগকে সমাবেশ করতে দেবে না সরকার: প্রেস সচিব।
১০ নভেম্বর
- বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসিভার নিয়োগ।
- আরও তিন উপদেষ্টা ও তিন সহকারী নিয়োগ। দপ্তর পুনর্বণ্টন। নতুন তিন উপদেষ্টার মধ্যে ব্যবসায়ী শেখ বশিরউদ্দিনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আরেক নতুন উপদেষ্টা চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে দেওয়া হয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
- প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তিনজন বিশেষ সহকারী হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) খোদা বকশ চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক সায়েদুর রহমান ও অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম।
- ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রোববার শহীদ নূর হোসেন দিবসে ঢাকায় দিনভর ছিল উত্তেজনা। রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েও সেখানে যেতে পারেনি দলটি। তাদের কর্মসূচি প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে সেখানে একদিকে গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অন্যদিকে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
- হাসিনাকে ফেরাতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা।
- বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরে ৩৭ ঘণ্টা ধরে রাস্তা অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ।
১১ নভেম্বর
- বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জের উদ্বোধন প্রধান উপদেষ্টার।
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের’ উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরানোর দাবি।
- বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে মাহফুজ আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাস। মাহফুজ লিখেছেন, ‘শেখ মুজিব ও তাঁর মেয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে যা করেছেন, তার জন্য আওয়ামী লীগকে অবশ্যই দায় স্বীকার করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে অগণতান্ত্রিক ’৭২-এর সংবিধান থেকে শুরু করে দুর্ভিক্ষ, হাজার হাজার কোটি অর্থ পাচার, হাজার হাজার ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধীদের বিচারবহির্ভূত হত্যা (১৯৭২-৭৫, ২০০৯-২৪)। তাহলেই আমরা ’৭১-এর আগের শেখ মুজিবের কথা বলতে পারি। ক্ষমা প্রার্থনা ও ফ্যাসিস্টদের বিচার ছাড়া কোনো ধরনের পুনর্মিলন হবে না।’
১২ নভেম্বর
- শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি।
- শুধু বেক্সিমকো ফার্মায় রিসিভার নিয়োগের আদেশ স্থগিত।
- ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের অন্তরায় বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের বিবৃতি।
১৩ নভেম্বর
- জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের দেখতে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। তিনি সবার সঙ্গে দেখা করেননি অভিযোগ তুলে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পথে তাঁর পথ আটকে বিক্ষোভ করেন আহত ব্যক্তিরা। হাত, পা, চোখে ব্যান্ডেজসহ এই ব্যক্তিরা হুইলচেয়ারে করে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের পদত্যাগের দাবি করেছেন তাঁরা। পরে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার একজন সহকারী সেখানে যান। তাঁদের কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পাওয়ার পর আহত ব্যক্তিরা রাত সোয়া তিনটার দিকে হাসপাতালে ফিরে যান।
- সাগর-রুনি হত্যা মামলা, র্যাব থেকে তদন্তের দায়িত্ব গেল পিবিআইয়ের কাছে।
- আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী ছয় হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র ও প্রায় দুই লাখ গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। অস্ত্র, গোলাবারুদ–সংশ্লিষ্ট আড়াই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রতিরোধের ব্যাপারে সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেতন। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস-এ-তে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান।
১৪ নভেম্বর
- জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আহত ব্যক্তিরা দেশের সব সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে সারা জীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাবেন। চিকিৎসায় তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। আর কারও যদি দেশে চিকিৎসা সম্ভব না হয় এবং বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিজ্ঞানসম্মত সুপারিশ করা হয়, তাহলে সেই ব্যবস্থা করা হবে। সচিবালয়ে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় উপদেষ্টা ও একজন বিশেষ সহকারীর।
- ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ মারা গেছেন। এ নিয়ে এই আন্দোলন ঘিরে গত ১৬ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ৭৬৭ জনের মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো। সরকার এখন পূর্ণাঙ্গ তালিকা করছে। খসড়া তালিকায় নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে ৮৭২ জন
- বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের দুটি বিধান অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এই আইনের অধীনে করা কাজ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং চুক্তি করার বিষয়ে মন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ওই বিধান দুটিতে উল্লেখ রয়েছে। আইনটি ‘কুইক রেন্টাল’ আইন নামে পরিচিত।
প্রশাসন দুর্বৃত্তায়নের সহযোগীতে পরিণত হয়েছিল
১৬ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে জনপ্রশাসন আর জনপ্রশাসন ছিল না। সেটি পরিণত হয়েছিল লুটেরাদের সহযোগীতে।
এই স্বীকারোক্তি জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদেরই। তাঁরা বলছেন, এখন প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা যাতে রাজনৈতিক কর্মীদের মতো আচরণ করতে না পারেন, সেটা আচরণবিধির বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘প্রশাসনিক সংস্কার ও উন্নয়ন: বর্তমান প্রেক্ষিত ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা এসব কথা বলেন। এটি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার টানা চার মেয়াদে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করেছে।
জনপ্রশাসনকে হাতে রাখতে দলীয়করণ, গাড়ি-বাড়ি কিনতে ঋণসুবিধা, ইচ্ছেমতো পদোন্নতি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জনপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নানা কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হয়েছিলেন। সংগঠনটিও কিছু কিছু বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিল।
প্রশাসনে অস্থিরতা, চুক্তিতে নিয়োগ আগের ধারায়
১৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তিন মাস পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও গতি আসেনি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চুক্তিতে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করলেও বর্তমান সরকার নিজেরাই একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে চলেছে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ খালি। আরও তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ শূন্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনে বড় কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। যা হচ্ছে নিয়মিত (রুটিন) কাজ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা দিয়েছিল, চুক্তিতে থাকা সব কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করা হবে। গত তিন মাসে ১০১ কর্মকর্তার চুক্তি বাতিল হয়েছে; যাঁরা শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে একই সময়ে ৬৫ জন কর্মকর্তাকে চুক্তিতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ১২ মন্ত্রণালয়ে দুই বছর মেয়াদে সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চুক্তিভিত্তিক। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন পদে, কৃষি, বিটিআরসি, সিটি করপোরেশনেও চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ সময় সহকারী সচিব থেকে জ্যেষ্ঠ সচিব পর্যন্ত মোট ৮০ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ সাইম ও রায়হানের চিকিৎসা ঋণের টাকায়, কিস্তি পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পরিবার
১৬ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
৫ আগস্ট, বেলা দেড়টা। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় ছাত্র-জনতার এক দফা দাবির বিক্ষোভ মিছিল থেকে ফিরছিলেন মো. সাইম। হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি গুলি এসে লাগে সরকারি হাটহাজারী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা মো. সাইমের ডান পায়ের ঊরুতে। এরপর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
সাইমের অভিযোগ, চিকিৎসার জন্য সরকার থেকে এখন পর্যন্ত এক টাকাও অর্থসহায়তা পাননি তিনি। একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চিকিৎসার খরচ সরবরাহ করছে তাঁর পরিবার। এই কিস্তির টাকা পরিশোধ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁর বাবাকে।
মো. সাইমের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার রহুল্লাপুর গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ সিরাজ পেশায় নিরাপত্তাপ্রহরী। দুই বোন আর এক ভাইয়ের পরিবারের একমাত্র আশার আলো ছিলেন সাইম। তবে গুলি লাগার পর থেকে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাতে হচ্ছে সাইমকে।
জনবিমুখ নীতি থেকে সরে জনমুখী অর্থনীতির দিকে যাত্রা শুরু হয়নি
১৭ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
রাষ্ট্রের নাগরিকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সুরক্ষা, মৌলিক সেবার নিশ্চয়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি বৈষম্য প্রশমনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রণীত বাজেটগুলো পরিচিত জনকল্যাণমুখী বাজেট হিসেবে। বাংলাদেশের মানুষ জনকল্যাণমুখী বাজেট থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। এখানে বাজেট মানেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে জনগণের অর্থের যথেচ্ছ তছরুপ। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটটিও এর ব্যতিক্রম নয়। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফলে গণবিরোধী এ বাজেট কাঠামো পরিবর্তনের সুযোগ ছিল। যদিও অভ্যুত্থানের ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা সরকারের দেয়া বাজেটই বহাল রয়েছে। একইভাবে বহাল রয়েছে বিগত সরকারের গৃহীত রাজস্ব ও মুদ্রানীতিও। কিছু জায়গায় ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতির দর্শন ও ব্যবস্থাপনায় কোনো পরিবর্তন হতে দেখা যায়নি। বরং বৈষম্য বিলোপের ডাক দিয়ে একটি অভ্যুত্থান সফল হলেও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় তা দূর করার কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি।
শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৮৮ শতাংশ। ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশের কাছাকাছি। অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দামও। জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা এসব গণদ্রব্যের দাম কমানোর সুযোগ ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে। যদিও বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল ও পানির মতো গণদ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ চলছে আগের পদ্ধতিতেই।
দ্রব্যমূ্ল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষ। মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল গত বছরের জুনে। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও একই নীতি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে নীতি সুদহার উন্নীত করা হয়েছে ১০ শতাংশে। যদিও মূল্যস্ফীতি না কমে উল্টো অক্টোবরে এসে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ ছুঁয়েছে। আর খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি উঠেছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। অতিসংকোচনমূলক মুদ্রানীতির প্রভাবে বেসরকারি খাত বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা চলছে দেশের তৈরি পোশাক খাতসহ সব শিল্পে।
নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না
১৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও (রূপরেখা) পাওয়া যাবে। নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। তবে সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথাগুলো বলেন অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টা। সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে তিনি এই ভাষণ দেন। তাঁর এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে, সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে।’
ভাষণের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের লাখ লাখ শহীদ এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র, শ্রমিক, জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদকে সশ্রদ্ধ সালাম ও গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে স্মরণ করেন ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাঁরা আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন, যাঁরা ৯ দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, যাঁরা এক দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন এবং যাঁরা দেশকে এক হিংস্র স্বৈরাচারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন তাঁদের।
অন্তর্বর্তী সরকার তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইছে
১৬ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
অন্তর্বর্তী সরকার জন–আকাঙ্ক্ষার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, এই সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসররা বসে নেই। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্তের কারণে মনে হয় তারা জন–আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতে চাইছে না; বরং তারা যেটা ভালো মনে করছে, সেটাই হয়তো তারা চাপিয়ে দিতে চাইছে।
শনিবার বিকেলে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন এই সম্মেলনে।
তারেক রহমান আরও বলেন, অনেক অপ্রাপ্তি থাকার পরও জনগণ কিন্তু এখনো এই সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে, তারা আস্থা হারাতে চাইছে না। তবে একটা প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি আদৌ জনগণের ওপর আস্থা রাখতে চায়? কারণ, জনগণের সঙ্গে সরকারের আস্থার সম্পর্ক নিবিড় থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা ডালপালা বিস্তারের সুযোগ পাবে না। তিনি উল্লেখ করেন, ওরা (ষড়যন্ত্রকারীরা) কিন্তু ওত পেতে আছে, কীভাবে সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়া যায়। সেটা দেশের ভেতরে হোক, বাইরে হোক; প্রশাসনের ভেতরে হোক বা বাইরে হোক; ওরা কিন্তু ওত পেতে আছে। কারণ, এদের ব্যর্থ করে দেওয়া গেলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেওয়া যাবে।
সব ক্ষেত্রে দখল আধিপত্য চাঁদাবাজির সংস্কৃতি বহাল
১৯ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু ইতিবাচক অর্জন থাকলেও তা প্রত্যাশার চেয়ে কম বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, আইনশৃঙ্খলা অবনতির পাশাপাশি দখল, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি থেকে এখনও বের হওয়া যায়নি। পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিকাশ, দলীয়করণের বদলে আরেক দলীয়করণে প্রতিস্থাপন, ঢালাওভাবে শত শত মামলায় অসংখ্য ব্যক্তিকে আসামি করা, গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণের মতো বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চলমান।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রম পর্যালোচনায় টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাগুলোর বিষয়ে গণমাধ্যমসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত ও বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনকে ইতিহাসের স্বর্ণোজ্জ্বল অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকির বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গতকাল সোমবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর অভীষ্ট লক্ষ্যের যাত্রা শুরু হয়েছে। ব্যাংক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত ভূমিকা দেখা যায়নি। নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশন সংস্কার করলেই হবে না; রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিরও সংস্কার প্রয়োজন। কয়েকটি রাজনৈতিক দল বলছে, এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। তবে এই সরকারের ম্যান্ডেট নির্বাচিত সরকারের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সেনাপ্রধানের ঘোষণা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে টিআইবি। বিএনপির ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা ও প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক উদ্যোগের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দলের মধ্যে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি চলমান। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রভাব বেড়েছে। হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্য কার্যক্রম দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার বা কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধীরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে। সরকার সমর্থিত সংগঠনের মতো ভূমিকা পালন করতেও দেখা গেছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম প্রকাশ্যে দেখা গেছে। ধর্মান্ধ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে ধর্মীয়, জেন্ডার, জাতিগত, নৃতাত্ত্বিক ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যসম্পন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। হিযবুত তাহরীরের মতো দলের প্রকাশ্য কার্যক্রম চলছে।
রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ সংস্কার নিয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে প্রথমে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার কথা বললেও পরবর্তী সময়ে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি তুলেছে দলটি। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ভারতের কূটনৈতিক পরাজয় হয়েছে বলেও মত দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক চিত্র
সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন না করা, মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু, প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালনের সুযোগ থাকবে না মর্মে ঘোষণা করা হয়েছে। আটটি জাতীয় দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চারটি ব্যাংক নোট থেকে শেখ মুজিবের ছবি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা বা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হচ্ছে, তা এখনও বিতর্কিত।
প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তার পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানকে দলীয়মুক্ত করার অংশ হিসেবে পদোন্নতি, পদায়ন, বাধ্যতামূলক অবসর, চুক্তিতে নিয়োগ বাতিল এবং চুক্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাপক প্রশাসনিক রদবদল করা হয়েছে। প্রশিক্ষণরত ৩৬৯ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) বিতর্কিতভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চাপে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে অন্তর্বর্তী সরকার বাধ্য হয়েছে। এটা সিদ্ধান্ত নিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি বলে পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া বা না দেওয়ার চর্চা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হলেও সুপারিশের আগেই শেখ পরিবারের নামে প্রতিষ্ঠিত ২০ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ১০টি কমিশনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের ছয়টি কমিশনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো প্রতিনিধিত্ব না থাকা, নারীর সংখ্যা কম থাকা, সাবেক আমলার আধিক্য, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রাধান্য থাকার সমালোচনা রয়েছে। এ ছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও শিক্ষা খাতের সংস্কারে কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। সংস্কার কর্মসূচিতে ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতকেও যথাযোগ্য গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
জনপ্রশাসন
জনপ্রশাসনে সংস্কারের অংশ হিসেবে পতিত সরকারের সময় দলীয় বিবেচনায় বঞ্চিত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বদলি, পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতি ও পদায়ন ঘিরে সচিবালয়ে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ২৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদে নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। কোনো কোনো কর্মকর্তার বিতর্কিত কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেছে। যেমন– বগুড়ার নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাড়ি পরিদর্শন এবং সরকার ও প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক পোস্ট দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। পদোন্নতি পাওয়াদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকা, বিভাগীয় মামলায় শাস্তি এবং আওয়ামী লীগের নানা অপকর্মের সহযোগী বলে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। পদোন্নতি বা পদবঞ্চিত হওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। সার্বিকভাবে জনপ্রশাসনে কর্মসম্পাদনে পেশাদারিত্বের ঘাটতি লক্ষণীয়।
আইনের শাসন
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের চূড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি হিসাবে হতাহতের সংখ্যার তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। গত ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২৫৩ মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ২১৩টিই হত্যা মামলা। বেশির ভাগ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের আসামি করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী, হত্যার ইন্ধনদাতা ও নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১ হাজার ৬৯৫টি মামলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ক্ষেত্রবিশেষে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করা হচ্ছে। মামলায় ঢালাওভাবে আসামি হিসেবে নাম দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলার ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতে অনেককে আসামি করা হচ্ছে। মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নামেও চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সরকারের বিভিন্ন রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার নিয়ে লুকোচুরি দেখা গেছে। একেকজনকে একাধিকবার একেক জায়গা থেকে গ্রেপ্তারের সংবাদ দেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের পুরোনো ধারা বিদ্যমান। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আদালতে আক্রমণের শিকার হওয়া, পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রলীগ নেত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে লাঞ্ছিত হওয়া, সাবেক বিচারপতির ওপর আক্রমণ এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীর ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
মানবাধিকার
অন্তর্বর্তী সরকার গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করেছে। তবে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় করা নিয়ে উপদেষ্টাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়। কর্তৃত্ববাদের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন, চাঁদাবাজি, আর্থিক খাতসহ রাষ্ট্রীয় দখলের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত গোয়েন্দা সংস্থা, যেমন– ডিজিএফআই, ডিবি, এনএসআই, এনটিএমসি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা
সরকার পতনের পর কয়েক দিন সারাদেশে পুলিশি ব্যবস্থার অনুপস্থিতি ছিল; যে কারণে অনেক থানার অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে। পুলিশি কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করার ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তবে বড় একটি অংশের বিরুদ্ধে পদোন্নতি, পদায়ন ও বদলির বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের অনুপস্থিতি, নির্লিপ্ততা ও দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহের কারণে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সারাদেশে ছয় শতাধিক নিহত ও ১০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। বিভিন্ন আন্দোলন ঘিরে কমপক্ষে ৯০ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বেড়েছে। সারাদেশের ৯টি কারাগারে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। অনেক বন্দি পালিয়ে গেছেন। শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা দেখা গেছে। সারাদেশে আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক সহিংসতায় নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাদের অপরাধমূলক তৎপরতায় জড়িত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আরেকটি দিক ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী, প্রান্তিক ও ভিন্ন মতের জনগোষ্ঠীর আক্রান্ত হওয়া। ঐক্য পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে, যেখানে ৯ জন নিহত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টির বেশি মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সেসব ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। ২২টি জায়গায় শিল্পকলা একাডেমিতে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবাদের মুখে শিল্পকলায় নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করতে হয়েছে। এ ছাড়া মেলা আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন দাবিতে বেশ কয়েকটি আন্দোলন হয়েছে। এর মধ্যে সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেশজুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি এবং চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনা ঘিরে চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি উল্লেখযোগ্য। ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী, প্রান্তিক ও ভিন্ন মতের জনগোষ্ঠীর আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে দায়ীদের চিহ্নিত করা, তদন্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। সামরিক বাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিলেও জবাবদিহি কার কাছে, তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিভিন্ন বাহিনীর অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যা চলমান রয়েছে।
বিচার বিভাগ
সাবেক সরকারের সময় করা মামলা ও রায় থেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া হয়নি বিচারক নিয়োগের বিধিমালা। এটি হওয়ার আগেই আইন কর্মকর্তা ও বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক সরকারের সময় দায়ের করা মামলা ও রায় থেকে অব্যাহতি এবং দণ্ড মওকুফের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অর্থ পাচার রোধ
দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও এর মধ্যে দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা পদত্যাগ করার ফলে সংস্কারের আগেই এসব পদে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
তৈরি পোশাকশিল্পের ক্রমাগত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকের মাসিক হাজিরা বোনাস, টিফিন ও রাত্রিকালীন ভাতা বাড়ানো, নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নসহ ১৮ দফা বাস্তবায়নে মালিকপক্ষ সম্মতি দিলেও তৈরি পোশাকশিল্পে বিশৃঙ্খলা এখনও চলমান। সরকারের শুরুর দিকে সংকট থাকলেও ধীরে ধীরে রপ্তানি বেড়েছে। তবে আন্দোলন ও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীর গতি লক্ষ্য করা যায়।
ব্যাংক খাত ও শেয়ারবাজার
ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করার কথা বলা হলেও এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এদিকে বিভিন্ন উদ্যোগের পরও শেয়ারবাজার এখনও অস্থিতিশীল।
মূল্যস্ফীতি
সুদের হার ও ডলারের দামের কারণে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে বলে দেখা যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও ইতিবাচক কিছু দেখা যাচ্ছে না। উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনও অনেক বেশি।
আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ
কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এসব দেশ ও সংস্থার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, চীন, ইরান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে মানবাধিকার সুরক্ষা, সহিংসতার ঘটনার পূর্ণ এবং স্বাধীন তদন্তের প্রয়োজনীয়তা, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার সুরক্ষিত রাখা এবং সব শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীকে মুক্ত করা, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান এবং সহায়তার অঙ্গীকার করেছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মনোভাব ইতিবাচক হলেও বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফের মতো সংস্থার ঋণ সহায়তা-সংশ্লিষ্ট শর্তাবলি, বিশেষ করে ইতোমধ্যে সুদসহ ঋণ পরিশোধের অতিরিক্ত দায় সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।
রাজস্ব সংগ্রহ
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৩০ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। এমনকি আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও আয়কর– এই তিন খাতের কোনোটিতেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা
সব মিলিয়ে ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৬০ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সারাদেশের সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র– স্থানীয় সরকারের এই চার স্তরে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮৭৬ জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করা হয়েছে। তাদের জায়গায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা বিঘ্নিত।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
সরকারের দোসর ও আন্দোলনের বিরোধিতা করার অভিযোগে ঢালাওভাবে ১৬৭ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এই সময়েই গণমাধ্যমের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ, হুমকি-হামলাসহ কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করার তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হুমকিস্বরূপ। সাইবার নিরাপত্তা আইনে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে মামলা কেন নেওয়া হলো– তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সিঙ্গাপুরের নাগরিক দাবি করে বিনিয়োগের সুরক্ষা চাইলেন এস আলম
১৯ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে দাবি করেছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম। বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক ব্যবস্থা’ নিচ্ছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তির আলোকে তাঁর সুরক্ষা প্রাপ্য বলে মনে করেন সাইফুল আলম।
এ বিষয়ে সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পক্ষে আইনি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, তাঁরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিসি মামলা করতে পারেন। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
টবি ক্যাডম্যানকে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ
২১ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
লন্ডনভিত্তিক গার্নিকা ৩৭ ল’ ফার্মের যুগ্ম প্রধান টবি ক্যাডম্যানকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে টবি ক্যাডম্যান এ তথ্য জানিয়েছেন।
এক্সে পোস্টে টবি ক্যাডম্যান লিখেছেন, ‘এই ঘোষণা দিতে পেরে আমি আনন্দিত ও খুবই সম্মানিত বোধ করছি যে আমাকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন স্পেশাল প্রসিকিউটর অ্যাডভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখেনি সরকার
২০ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’–এর খসড়ায় সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশের যে বিধান প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তবে আরও কিছু সংশোধনী এনে করা অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
আজ বুধবার সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। আজই প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে অফিস করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নতুন সিইসি হলেন সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন
২১ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই সঙ্গে আরও চার কমিশনারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কমিশনার হিসেবে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা হলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সিইসি হিসেবে বিএনপি যে দুজনের নাম প্রস্তাব করেছিল, তার মধ্যে এ এম এম নাসির উদ্দীনের নাম ছিল। তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বিসিএস ১৯৭৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।
নতুন একটা চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত হচ্ছে: আনু মুহাম্মদ
২১ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক জায়গায় নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, নতুন একটা চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত হচ্ছে। হাটবাজারে ইজারাদারদের জুলুম এখনো বন্ধ হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা দাবি করেছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো—এ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। গত ৫ অক্টোবর অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যে ১৩ দফা দাবি জানানো হয়েছিল, এ সংবাদ সম্মেলনে সেগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন এর অন্যতম সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
সংবাদ সম্মেলনে একে একে ১৩ দফা প্রস্তাব পড়ে শোনান গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহা মির্জা। আনু মুহাম্মদ সেগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ব্যানারে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ শিরোনামে আগামী শনিবার বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশের সব শ্রেণিগত, ধর্মীয়, লিঙ্গীয়, জাতিগত, পেশাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সমাবেশ কর্মসূচি করা হবে বলে জানান আনু মুহাম্মদ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শহীদ, নিখোঁজ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণ তালিকা এখনো কেন প্রকাশিত হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের দায়িত্ব এখনো গ্রহণ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু মামলাগুলো সুনির্দিষ্ট না হওয়ার ফলে এটা সম্পর্কে আমাদের সংশয় আছে যে কতটা হবে। ১৫ বছরে দায়ের হওয়া মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি।…সংবিধান সংস্কার কমিশন অচিরেই একটা রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থিত করবে। তার ভিত্তিতে জনমত যাচাই করে একটা চূড়ান্ত রূপরেখা আমরা দেখতে পাব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আরও অনেক কাজ করার বাকি আছে। ইতিমধ্যে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। এগুলো সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, এবারের দুর্গাপূজা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। তবে দলগত সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কাজটা হয়নি। এটা না হওয়ার কারণে ভারতের মোদি সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার করছে। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ তথ্য প্রকাশ ও এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ভারত কিংবা পতিত সরকারের পক্ষে এ সুযোগ নেওয়া সম্ভব হবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, দ্রব্যমূল্য আসলে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। তেল, ডিম ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটা কোম্পানি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এ জায়গায় সরকারের যথাযথ ভূমিকা দেখা যায়নি। ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার বা শেয়ার কারসাজির বিষয়ে বিগত সরকারের সময়ে হওয়া দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল চুক্তি নবায়ন না করার প্রতিশ্রুতি সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘২০১০ সালের দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার দেশে বহু প্রাণবিনাশী প্রকল্প এবং দেশের জন্য বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বহু ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সে আইন বাতিল হয়েছে। এ আইনের অধীন করা প্রকল্পগুলো বাতিলের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অগ্রসর হবে বলে আশা করি।’
‘গত ১৫ বছরে আমাদের শিক্ষা খাত সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে’ মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের অনেক কাজ দীর্ঘ মেয়াদে করতে হবে। কিন্তু এই সরকার এগুলো শুরু করতে পারে।’
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানি কনভেনশনে অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুস্বাক্ষর করার পরামর্শ দেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এ কনভেনশন অনুযায়ী সরকার নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে পারে। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি আছে, বিশেষ করে সরকার পতনের কয়েক দিন আগে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার করা বিশেষ কিছু চুক্তি, সেগুলো এখনো প্রকাশিত হয়নি।
বিএনপি-জামায়াতের প্রস্তাবে ছিল নতুন সিইসির নাম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের নাম সার্চ কমিটির কাছে শুধু বিএনপি নয়, প্রস্তাব করেছিল জামায়াতে ইসলামীও। এবি পার্টি, লেবার পার্টিসহ আরও কয়েক দলের প্রস্তাবে ছিল সাবেক এই সচিবের নাম। সূত্রের খবর, দলগুলোর আলোচনায় নাসির উদ্দীনের নাম ঠিক হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও দলটির সমর্থকরা রাজনীতিতে না থাকায়, তাদের প্রস্তাবে কেউ আসেনি নতুন নির্বাচন কমিশনে।
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া সাবেক যুগ্ম সচিব তহমিদা আহমদের নাম ছিল বিএনপির প্রস্তাবে। আর জামায়াতের প্রস্তাবে ছিল নবনিযুক্ত আরেক কমিশনার তথা সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলামের নাম। দল দুটির সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সমর্থন জানিয়েছিলেন যে সেনা কর্মকর্তারা, তাদের একজন ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের প্রস্তাবে আবুল ফজল কমিশনার নিযুক্ত হয়েছেন।
আরেক কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদের নাম কোনো রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবেই ছিল না। জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে এসেছে সাবেক এই জেলা জজের নাম।
পাঁচ বিসিএসে নিয়োগ পাবে ১৮ হাজার ১৪৯ জন
২৪ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
পাঁচটি বিসিএসের মাধ্যমে মোট ১৮ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
আজ রোববার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সচিব বলেন, এর মধ্যে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে ১২ হাজার ৭১০ জন এবং নন-ক্যাডারে ৫ হাজার ৪৩৯ জন।
এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১% মানুষ, সব সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে ৬৫.৯%
২৩ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তবে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে বেশির ভাগ মানুষ (৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ) বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। আর শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতার।
১৮ দশমিক ৭ শতাংশ চান দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ নির্বাচন চান ১৮ মাসের মধ্যে। সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জনগণ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
কত দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত, এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ আর নির্বাচন কবে হওয়া উচিত সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি ১ দশমিক ১ শতাংশ।
নতুন নির্বাচন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করল জাতীয় নাগরিক কমিটি
২৪ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত আইনের অধীনে গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রত্যাখ্যান করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংগঠনটি বলেছে, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের কাছে নতি স্বীকার করে অন্তর্বর্তী সরকার ইসি গঠন করতে বাধ্য হয়েছে। এটি গণ–অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।’
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের আগে ইসি গঠনের প্রতিবাদে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ওই বক্তব্য তুলে ধরেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এদিকে আজই শপথ নিয়েছেন নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন কমিশনার। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত অনুসন্ধান কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি গত বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আমলে তৈরি আইনে এই নিয়োগ ও শপথের বিষয়েই বিরোধিতা জাতীয় নাগরিক কমিটির।
উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশটাকে অস্থির করে রেখেছে: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
২৫ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বাম ও ডান মানসিকতার কতিপয় নেতৃত্ব বা ব্যক্তি অভ্যুত্থানে এবং পরবর্তী সময়ে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, তাদের উন্মত্ততা, বিপ্লবী জোশ ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশটাকে অস্থির করে রেখেছে।
কয়েক দিন ধরে ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা এবং কলেজশিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার দুপুরে ফেসবুকে এক পোস্টে এ কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যাওয়া মাহফুজ আলম।
‘গণ-অভ্যুত্থান ও ছাত্র-তরুণবিরোধী শক্তি’ শিরোনামে দেওয়া ওই ফেসবুক পোস্টে দেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মাহফুজ আলম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পরের দশ-পনেরো বছরের ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে হত্যার ইতিহাস। যারা চায়নি বাংলাদেশ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াক, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে দিয়ে হত্যা করিয়েছে। তাদের নিজেদের ভুল ছিল না তা নয়, কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধাগণের একের পর এক হত্যা বাংলাদেশকে কীভাবে পিছিয়ে দিল, তা ইতিহাস একদিন বলবে।’
এবারের আন্দোলন সাহসী ছাত্র–তরুণদের নেতৃত্বে জনগণের আন্দোলন ছিল উল্লেখ করে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘কিন্তু একটি দল এবং দেশি–বিদেশি সুযোগ সন্ধানী এস্টাবলিশমেন্ট গত তিন মাসে ছাত্রদের ভিলিফাই (সম্মানহানি) করেছে, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন দিয়ে ছাত্রদের মধ্যে বিভেদ ঘটিয়েছে, অন্য একটি তরুণ দলকে লেলিয়ে দিয়েছে ছাত্রদের বিরুদ্ধে, তদুপরি ছাত্রদের সাথে সম্মানজনকভাবে ডিল তো করেইনি, বরং ছাত্রদের তারা শত্রু গণ্য করেছে।’
দুদক ‘সার্চ কমিটি’ বাতিলের দাবি জাতীয় নাগরিক কমিটির
২৭ নভেম্বর ২০২৪, আরটিভি নিউজ অনলাইন
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) নিয়োগের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একইসঙ্গে, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের আগেই দুদক গঠনের বর্তমান ‘সার্চ কমিটি’ বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের সই করা এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিদ্যমান দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবনার লক্ষ্যে গত ৩ অক্টোবর ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন’ নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ যেসব সদস্য নিয়ে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন’ গঠিত হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের দুর্নীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। এই কমিশনের কার্যক্রম এখনও সম্পন্ন হয়নি। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে তারা নিজেদের রিপোর্ট জমা দেবেন।
এতে আরও বলা হয়- আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি যে, সংস্কার প্রস্তাবনা আসার আগেই সরকার নতুন একটি ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন’-এর কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থাতেই সরকার কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিরোধী ও একটি অনভিপ্রেত পদক্ষেপ বলে জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে।
অভ্যুত্থানকারীদের মধ্যে বিভাজন নিয়ে নানা প্রশ্ন
২৭ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে সরকারের পতন ঘটালেও সাড়ে তিন মাসে সৃষ্টি হওয়া মতানৈক্য ও বিভাজন নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর তোপের মুখে পড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সোমবার রাতে রাজধানীর বাংলামটরে প্ল্যাটফর্মটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে সভায় নানা ইস্যু নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদসহ নেতারা।
বৈঠকে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, সমন্বয়ক মাহিন সরকার, রশিদুল ইসলাম রিফাত প্রমুখ অংশ নেন। একটি সূত্র জানায়, সব ছাত্র সংগঠন নিয়ে জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল গঠনসহ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বৈঠকে। আগামী মঙ্গলবার আবার বসবেন তারা।
সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলা এ সভায় ১৯ ছাত্র সংগঠন অংশ নেয়। তবে এতে বামপন্থি আট ছাত্র সংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কেউ অংশ নেননি। জোট মনে করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারেরই অংশ। তাদের কাজে ধোঁয়াশা রয়েছে। তারা কী চায়, স্পষ্ট নয়। হাসনাতসহ নেতারা বিভিন্ন সময় উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার কারণেই মব তৈরি হয়েছে। এগুলো পর্যালোচনা না করলে ডাকলেও যাবেন না তারা।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা: আপিল মঞ্জুর, খালাস পেলেন খালেদা জিয়া
২৮ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হয়েছিল। ওই রায় বাতিল ঘোষণা করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ রায় দেন। ফলে এ মামলা থেকে খালাস পেলেন খালেদা জিয়া।
এর আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির উদ্যোগ নেন তাঁর আইনজীবীরা। আপিল শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে মামলার পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরির জন্য অনুমতি চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন ৩ নভেম্বর মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল আপিল শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে আইনজীবী আসিফ হাসান ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হয়।
বড়পুকুরিয়া মামলা থেকে অব্যাহতি
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীও মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। আর জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু তাহের গতকাল এ আদেশ দেন।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমল ও অন্য সময়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা দেওয়া হয়েছিল। গতকাল দুটি মামলা থেকে থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। এখনো তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা বিচারাধীন।
কর ফাঁকির মামলায় তারেক খালাস
১৬ বছর আগে করা কর ফাঁকির মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০–এর বিচারক রেজাউল করিম গতকাল এ আদেশ দেন।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই মামলা করা হয়েছিল।
তিন মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাজের অগ্রগতি প্রকাশ
১০ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্তি হয়েছে ৮ নভেম্বর। এই তিন মাসে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করেছে, তার তথ্য প্রকাশ করেছে সরকার। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অনুযায়ী এসব কাজের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। সেখানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাজ আলাদা আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়।
যেমন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি হিসেবে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে গত তিন মাসে সচিব পদে ১২ জন, গ্রেড-১ পদে ৩ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ১৩৫ জন, যুগ্ম সচিব পদে ২২৬ জন ও উপসচিব পদে ১২৫ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যুগ্ম সচিব পদে ৯৬ জন ও উপসচিব পদে ১৮৯ জনকে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার পদে ৪ জন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পদে ৩ জন, জেলা প্রশাসক পদে ৫৯ জন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে ১১৮ জন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে ১৬৫ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ বা বদলি করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি
১ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। গতকাল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘এ অধ্যাদেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪ নামে অভিহিত হবে।’
উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর গতকাল এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, আইনটি বাতিল হলেও এর আওতায় সম্পাদিত চুক্তি বা চুক্তির অধীন গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বৈধভাবে সম্পাদিত বা গৃহীত হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ‘উক্ত আইনের আওতায় সম্পাদিত চুক্তির অধীন চলমান কোনো কার্যক্রম এমনভাবে অব্যাহত থাকবে অথবা নিষ্পন্ন করতে হবে যেন উক্ত আইন রহিত হয় নাই; এবং সরকার জনস্বার্থে উক্ত আইনের অধীন গৃহীত কোনো কার্যক্রম পর্যালোচনা করার অধিকার সংরক্ষণ করবে ও উক্ত কার্যক্রমের বিষয়ে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।’
গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা এখনো কেন অসম্পূর্ণ
০১ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনো হয়নি। আন্দোলনে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁরাও এখনো রাষ্ট্রের পুরো দায়িত্বের মধ্যে আসেননি। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ আছেন। অনেক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন, নয়তো হাত, পা ও চোখ হারিয়েছেন। তাঁদের অবস্থা শোচনীয়। কিন্তু তাঁদের দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের নেওয়ার কথা।
শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে এক সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের দাবিতে এ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘সন্তান ও অভিভাবক ফোরাম’। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।
সম্মেলনে সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, তালিকা করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ৫৩ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যথাযথভাবে হয়নি। গত সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এমন নামও দেখেছি, যাঁদের মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মই হয়নি। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তালিকা থেকে হারিয়ে গেছেন। জীবন দুর্বিষহ হয়েছে; কিন্তু রাষ্ট্র থেকে তাঁরা কোনো সহায়তা পাননি। আমরা নিশ্চয়তা চাই যে এর পুনারাবৃত্তি হবে না। এ কারণে বারবার তালিকার কথা আসছে। তিন মাস পরেও সরকারের অগ্রাধিকারের কাজটা যথাযথভাবে পালিত হয়নি।
আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য আবেদন করতে হচ্ছে কেন প্রশ্ন তুলে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। নতুন করে হাজার হাজার কোটি টাকা ছাপানোও হচ্ছে। অভ্যুত্থানে নিহত দুই হাজার ব্যক্তির পরিবার ও ১৯ হাজারের বেশি আহত ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো তো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বলা হয়েছে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ : শিশির মনির
০১ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর তিন আসামির আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, বিচারিক আদালতের বিচারটা অবৈধ বলা হয়েছে রায়ে। বিচারিক আদালতে আইনের ভিত্তিতে বিচারটা হয়নি।
মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে আজ রোববার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স নাকচ করে এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়। ফলে এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ দণ্ডিত সব আসামি খালাস পেলেন।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ এ রায় দেন।
রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ে ৪৯ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সবার আপিল মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। রুল যথাযথ ঘোষণা করেছেন। সবাইকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
ফলল না গভর্নরের কথা, টাকা তুলতে ভোগান্তিতেই দুর্বল ব্যাংকের গ্রাহকরা
০১ ডিসেম্বর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
অবস্থান থেকে সরে এসে দুর্বল ব্যাংককে সহায়তা দিতে টাকা ছাপানোর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের ঘোষণা অনুযায়ী গ্রাহকরা চাহিদা মত টাকা তুলতে পারছেন না।
গভর্নর বলছেন, গ্রাহকরা যে এখনও টাকা পাচ্ছে না সেই বিষয়টি তিনি ‘জানেন না’, কেন এমন হয়েছে, সেটি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
রোববার ন্যাশনাল ব্যাংক তার গ্রাহকদেরকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দিতে পারলেও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে বেশিরভাগ শাখা থেকে গ্রাহকরা পাঁচ হাজার টাকার বেশি তুলতে পারেননি।
যাদের হিসাব মতিঝিলের দিলকুশা শাখায়, তাদের মধ্যে এসআইবিএলের গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ২০ হাজার, ফার্স্ট সিকিউরিটি ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা ১০ হাজার টাকা করে তুলতে পেরেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগাযোগ করে জানা গেছে, চারটি ব্যাংকের মধ্যে গ্লোবাল ও ইউনিয়ন ব্যাংককে অল্প কিছু টাকা পেয়েছে, সোমবার দেওয়া হবে বাকিটা, তবে বাকি দুটি ব্যাংককে টাকা দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে।
২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে এই চারটিসহ মোট ছয়টি ব্যাংককে সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, তারল্য সংকটে ভোগা ব্যাংকগুলোতে রোববার থেকে গ্রাহকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারবেন।
ভিওএ জরিপঃ ৪৪.৭% মানুষ মনে করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার ‘আগের সরকারের তুলনায় খারাপ করছে’
ডিসেম্বর ০১, ২০২৪, ভয়েস অব আমেরিকা
বাংলাদেশে ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর বিশেষ করে খ্যাদ্য দ্রব্যের মূল্যস্ফীতি নির্দিষ্ট আয়ের পরিবারের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে, যার প্রতিফলন ভয়েস অফ আমেরিকার জরীপে দেখা গেছে। ফাইল ফটোঃ ৭ অগাস্ট, ২০২৪।
ভয়েস অফ আমেরিকার এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ মনে করেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ পারফর্ম করছে অথবা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে।
জরিপে দেখা গেছে, ৪৪.৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন চাল, মাছ, সবজি, ডিম, মাংস, তেল-এর মত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ পারফর্ম করেছে। এক-চতুর্থাংশের কম উত্তরদাতা – ২৩.৮ শতাংশ – মনে করেন বর্তমান সরকার আগের সরকারের তুলনায় ভাল করছে।
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ – ৩০.৮ শতাংশ – মনে করেন পরিস্থিতি আগে যা ছিল তাই আছে।
জরিপে ১,০০০ উত্তরদাতাকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলের সাথে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের তুলনা করতে বলা হয়।
সংস্কারের আগে দুদক গঠন নিয়ে প্রশ্ন
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
সরকার দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তৈরির আগেই সংস্থাটিতে চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের জন্য বাছাই বা সার্চ কমিটি গঠন করেছে। গত ২৯ অক্টোবর দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা (দুজন) পদত্যাগ করার পর ১০ নভেম্বর সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রতিটি পদের দুজনের নাম প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে নিয়োগ দেবেন।
প্রশ্ন উঠেছে, আগের প্রক্রিয়ায় একই মানদণ্ডে যদি দুদক গঠন করা হয়, তাহলে আবার সংস্কার কমিশন কেন? বর্তমান আইন অনুযায়ী নতুন কমিশনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। তারপর কি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী দুদকে নিয়োগ হবে, সেটা কি যুক্তিসংগত ও বাস্তব?
জানতে চাইলে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরা মনে করছেন, দুদকে কমিশনার নিয়োগপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসুক। কমিশনারের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব থাকতে পারে। কমিশনের মেয়াদ ও কমিশনারদের যোগ্যতার শর্তের বিষয়ে প্রস্তাব থাকতে পারে। এগুলো কমিশন গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি আরও বলেন, দুদক সংস্কার কমিশনের কাজ শেষ হওয়ার আগে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ সম্পন্ন হলে তা এ বিষয়ে সম্ভাব্য সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, সে প্রশ্নও বিশেষভাবে বিবেচ্য। কারণ, সংস্কার কমিশনের পরিধির আওতাভুক্ত অন্য প্রায় প্রতিটি বিষয়ই ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনার জন্য নতুন কমিশনের ভূমিকা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ক্ষতিপূরণ পাবেন বঞ্চিত দেড় হাজার কর্মকর্তা
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৬ বছরে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা ও যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বঞ্চিতদের দেওয়া আবেদন যাচাই-বাছাই শেষ করে এনেছে সরকারের গঠন করা কমিটি। সুপারিশও চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন পড়েছিল। যাচাই করে অন্তত দেড় হাজার কর্মকর্তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিটি। আশেপাশে যা যা আউটডোর অ্যাক্টিভিটি করতে পারেন
সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান সমকালকে বলেন, বঞ্চিতদের আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমাদের কাজ তা বাস্তবায়ন করা।
দেশের স্বার্থে সব দলের ঐক্য
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের অপপ্রচার, হস্তক্ষেপ ও উসকানির বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে দলগুলো।
গতকাল বুধবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যৌথ সংলাপে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সংলাপের শুরুতে রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তা রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, একযোগে পেয়েছি। কোনো মতভেদের মাধ্যমে পাইনি, কাউকে ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে ছিল, তাদের বের করে দিয়েছি।’
৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে একজন আইনজীবীকে হত্যার ঘটনা, বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আরজি জানানো এবং সবশেষ আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে গতকাল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল, বাম দলসহ ৩৫টির মতো রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এই সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য দেন।
বেক্সিমকোর লোকসানি কোম্পানি বিক্রি করতে চায় সরকার
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক খাতের ১৬টি কোম্পানির মালিকানা বিক্রি করে দেবে সরকার। এর বাইরে এই গ্রুপ সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। চালু থাকবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসসহ শুধু লাভজনক কোম্পানিগুলো। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত ১১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ছোট-বড়, জানা-অজানা মিলিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানির সংখ্যা ১৬৯। এর মধ্যে পোশাক খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৩২, যেগুলো উৎপাদনে রয়েছে। এই ৩২টি কোম্পানির মধ্যে ১৬ টির মালিকানা বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরে বেক্সিমকো গ্রুপের যেসব প্রতিষ্ঠান লোকসানে চলছে, সেগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের পর বন্ধ করে দেওয়া হবে।
গত ২৮ নভেম্বর ১১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির সভায় বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে গত ২৪ নভেম্বর ‘বেক্সিমকো শিল্প পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি’ গঠন করে। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। গত ২৮ নভেম্বর ছিল এই কমিটির প্রথম বৈঠক। সেখানেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র ও নথিপত্র থেকে জানা যায়।
মোমেন এবার দুদকের নেতৃত্বে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, সকাল সন্ধ্যা
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অবসর থেকে ফিরিয়ে এনে তাকে দেওয়া হয়েছিল জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের পদ। এর কিছুদিন পার না হতেই সেই মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের কাঁধে উঠল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়িত্ব।
এর মাধ্যমে প্রায় দেড় মাস পর নতুন চেয়ারম্যান পেল দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধের এই সংস্থাটি।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
একই সঙ্গে দুদকের নতুন দুই কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাফিজ আহসান ফরিদ।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের সদস্য আবদুল মোমেন এর আগে গত ১৭ আগস্ট সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন।
তিনি ১৯৮২ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগ দেন। কর্মজীবনে তিনি মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অন্যান্য পদে দায়িত্ব পালন করেন।
আবদুল মোমেন ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান ও বিমানের এমডি ছিলেন।
তার আগে নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন তিনি। এছাড়াও তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৯ সালে যুগ্ম সচিব থাকা অবস্থায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তাকে চাকরিতে ফিরিয়ে এনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব দেয়।
৩৮% মানুষ এখনও সিদ্ধান্ত নেননি কাকে ভোট দেবেন
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
দেশে এখন নির্বাচন হলে কোন দলকে ভোট দেবেন– সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি ৩৮ শতাংশ মানুষ। বাকি মানুষের ১৬ শতাংশ বিএনপিকে, ১১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে এবং ৯ শতাংশ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ৩ শতাংশ মানুষ অন্য ইসলামী দলগুলোকে ও ১ শতাংশ জাতীয় পার্টিকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করলে তাদের ভোট দেবেন ৪০ শতাংশ মানুষ (৩৯ শতাংশ পুরুষ, ৪৪ শতাংশ নারী)। ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন ৪৪ শতাংশ মানুষ (৪৭ শতাংশ পুরুষ, ৩৬ শতাংশ নারী)।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভের’ দ্বিতীয় ধাপের জরিপের ফলাফলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে (পিআইবি) এক অনুষ্ঠানে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিআইজিডির আয়োজনে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ : মানুষ কী ভাবছে’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা সহযোগী শেখ আরমান তামিম জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রত্যাহার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, দেশ রূপান্তর
তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে ভুল উদ্ধৃতি করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর ঘটনায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পিআইডিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। তথ্য অধিদপ্তর এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বুধবার একটি বিদেশি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তথ্য উপদেষ্টার বৈঠক ছিল। বৈঠক শেষে তথ্য উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে জনসংযোগ কর্মকর্তার পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে তাদের অধীনে সংস্কার হোক। তাই তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। দলগুলো সংস্কারের পরিবর্তে নির্বাচনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।’
বিএনপি সমর্থকদের হামলায় নাগরিক কমিটির সভা পণ্ড, আহত ৫
১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
বরিশালে বিএনপি সমর্থকদের হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির সভা পণ্ড হয়েছে। সোমবার সকালে নগরের সদর রোড বিবির পুকুরের দক্ষিণপাড়ে এ ঘটনা ঘটে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নাগরিক কমিটি বরিশাল মহানগর শাখা এ সভার আয়োজন করে।
নাগরিক কমিটির সভা আয়োজন স্থানের পাশেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়। বিকালে নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বিএনপিকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। ঘটনার পরপরই তারা কোতোয়ালী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
ফিরল গণভোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
সংবিধানের যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছিল, তার কিছু অংশ বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের বিধান বাতিল হয়ে গেল। তার জায়গায় ফিরল নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
সংবিধান বহির্ভূতভাবে ক্ষমতা দখল সংক্রান্ত ৭ এর ক ও খ অনুচ্ছেদও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ৭ মার্চ জাতির পিতা ও ২৬ মার্চ ইস্যু বহাল থাকবে। এগুলো পরবর্তী সংসদের বিষয়।
অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে হাইকোর্ট বলেন, এটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলস্বরূপ বিশেষ ব্যবস্থার সরকার।
রায়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় চালুর পাশাপাশি সংবিধান বহির্ভূতভাবে ক্ষমতা দখল সংক্রান্ত ৭ এর ক ও খ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে। সংবিধানের ৪২ (২) ধারা যেখানে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা খর্ব করে নিম্ন আদালতকেও সুপ্রিম কোর্টের মতো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল সেটি বাতিল হয়েছে এবং গণভোটের বিধান পুনরায় চালু করা হয়েছে।
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বাবরসহ ৬ জন খালাস, পরেশ বড়ুয়ার যাবজ্জীবন
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন খালাস পেয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ছয় আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ওই মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন।
গণ–অভ্যুত্থানে নিহত অনেককে ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে দাফন, পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা কম
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ-সংলগ্ন কবরস্থানে প্রতিটি কবরে একটি করে নামফলক আছে। তাতে দাফন করা মরদেহের নাম-পরিচয় লেখা রয়েছে। কিন্তু কবরস্থানের ৪ নম্বর ব্লকে ওই রকম কোনো নামফলক নেই। একটু পরপর ছোট ছোট বাঁশ পুঁতে রাখা আছে। কেউ বলে না দিলে বোঝার উপায় নেই যে সেগুলো ‘বেওয়ারিশ’ লাশের কবর।
সারি সারি কবরের দুই পাশে সরু হাঁটাপথ। মাঝখানের জায়গাটি সবুজ ঘাসে ছেয়ে আছে। ফুটেছে ঘাসফুল। সেখানে একটি সাইনবোর্ডে চোখ আটকে গেল। তাতে লেখা, এই কবরগুলোতে যাঁরা চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন, তাঁদের সবার পিতৃপরিচয় ছিল, ছিল তাঁদের পরিবার। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের কারণে তাঁরা বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়েছেন। তাঁরা তো বেওয়ারিশ ছিলেন না। বোঝা গেল, এগুলোর মধ্যে জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের কবরও রয়েছে। তাঁদের ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে সেখানে সমাহিত করা হয়েছে।
বেওয়ারিশ লাশগুলো জুলাই-আগস্টে দাফন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, যারা নাম-পরিচয় না জানা মরদেহ দাফন করে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, রায়েরবাজার কবরস্থানে তারা জুলাইয়ে ৮০ জনের ও আগস্টে ৩৪ জনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা অনেকেই আন্দোলনে নিহত। কিন্তু সংখ্যাটি কত, তা অজানা।
আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম জানিয়েছে, তারা জানুয়ারি থেকে নভেম্বর সময়ে ৫১৫টি মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। মাসে গড়ে ৪৭টি। তবে জুলাই মাসে সংখ্যাটি বেড়ে ৮০ হয়ে যায়। আগস্টে তারা দাফন করেছে ৩৪টি মরদেহ। যদিও ওই মাসের শুরু থেকে ১১ দিন অস্থিরতার মধ্যে তাদের কাছে কোনো লাশ দাফনের অনুরোধ আসেনি।
কারা আন্দোলনে গিয়ে নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিচয় কী—এসব জানতে তদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষা দরকার। কিন্তু সে উদ্যোগের গতি ধীর। ফলে রায়েরবাজারে দাফন করা আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। পরিবারগুলো স্বজনের কবর খুঁজে পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না।
জাতীয় নাগরিক কমিটি
রাজনৈতিক দল গঠনে ‘সহায়তা’ চাওয়া নিয়ে বিতর্ক
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সারা দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অপসারিত কাউন্সিলরদের ‘সর্বোচ্চ সহযোগিতা’ চেয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়কের দেওয়া এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা–সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা এ বিষয়টিকে ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন’ হিসেবে উল্লেখ করে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।
অবশ্য জাতীয় নাগরিক কমিটি বলছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী না হওয়া সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাউন্সিলরদের মধ্যে যাঁদের সরানো হয়েছে, তাঁদের অনেকেই জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন। আর নাগরিক কমিটি যা বলেছে, সেটা কারও পুনর্বাসন নয়। এটা একটা সাধারণ আহ্বান ছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মিস কমিউনিকেশন (ভুল–বোঝাবুঝি) হচ্ছে।
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান
প্রথম ধাপের খসড়ায় ৮৫৮ নিহত ও সাড়ে ১১ হাজার আহতের নাম
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতদের তালিকার প্রথম ধাপের খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরই মধ্যে সে তালিকা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়ায় নিহত ৮৫৮ ও আহত হিসেবে
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতদের তালিকার প্রথম ধাপের খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরই মধ্যে সে তালিকা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়ায় নিহত ৮৫৮ ও আহত হিসেবে ১১ হাজার ৫৫১ জনের নাম এসেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেলের দলনেতা (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার জহিরুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ কথা জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘকে এখনও পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়নি সরকার
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে দু’দফা বাংলাদেশে আসে জাতিসংঘের তদন্ত দল। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর সরকারি বাহিনীগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে। তবে সরকারের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ তথ্য না পাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে তারা প্রতিবেদন দিতে পারেনি বলে জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানায়। বিষয়টি সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার বলা হলেও অপরাধ এবং অনেক অপরাধীর তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অপারগতা লক্ষ্য করা গেছে, যা মোটেও কাম্য নয়। এ কারণে তথ্যানুসন্ধান দল তাদের প্রতিবেদন শেষ করতে পারছে না। অবশ্য নতুন করে জানুয়ারির মধ্যভাগে প্রতিবেদন শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় প্রতিবেদনও অসম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।
জনপ্রশাসনে এখনো অস্থিরতা
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে চার মাসে একের পর এক বিষয় নিয়ে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে। পদোন্নতি, পদায়নসহ নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের। নিয়মিত (রুটিন) কাজ ছাড়া নীতিনির্ধারণী বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে পারছে না প্রশাসন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, পদায়ন, পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নাগরিক সেবা সহজ করা, সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের গতি বাড়ানো ও দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে তেমন নজর দেওয়া হয়নি।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটি সুপারিশকে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার প্রশাসনে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বর্তমানে প্রশাসন থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নাগরিক সেবা সহজ করা, সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের গতি বাড়ানো ও দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে তেমন নজর দেওয়া হয়নি।
সংস্কার কমিশনের এই প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ কর্মকর্তা। আবার অন্য ২৫টি ক্যাডারের জোট আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদও কমিশনের সুপারিশে ক্ষোভ জানিয়েছে। তারাও আন্দোলনে নামছে। আজ সোমবার কেন্দ্রীয়ভাবে বিবৃতি, এরপর কলমবিরতি, মানববন্ধন ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ফলে জনপ্রশাসনে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
১৪০ দিনের যুদ্ধ শেষ হলো আরাফাতের
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবরে রাজধানীজুড়ে বিজয় মিছিল বের হয়। এই মিছিলে অংশ নেওয়ার আনন্দ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চায়নি মাদ্রাসাছাত্র আরাফাত হুসাইন (১২)। তাই সেদিন বিকেলে সে অন্য সহপাঠীর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে।
তবে মিছিলটি উত্তরার আজমপুর পূর্ব থানার সামনে যেতেই গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি গুলি আরাফাতের পেটের বাঁ পাশ দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। এর পর থেকে আরাফাতকে নিয়ে শুরু হয় দরিদ্র মা-বাবার যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। সাড়ে চার মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর গত রোববার রাতে সে মারা গেছে।
উত্তরার জামিয়া রওজাতুল উলুম মাদ্রাসার ইবতেদায়ি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত। শহীদুল ইসলাম ও সালেহা আক্তার দম্পতির তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের পাকুরিয়া এলাকায় ছোট্ট একটি বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন রিকশাচালক শহীদুল। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়।
স্বজনরা জানিয়েছেন, ছেলেকে বাঁচাতে শহীদুল অনেক কষ্ট করেছেন। দিনে রিকশা চালিয়ে রাতে হাসপাতালে আরাফাতের কাছে থাকতেন। ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে মা সালেহার চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে। না খেয়ে, না ঘুমিয়ে দিনের পর দিন হাসপাতালে কাটিয়েছেন তারা। অবশেষে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ছেলেটির মৃত্যু হয়।
এদিকে আরাফাত আহত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা পায়নি উল্লেখ করে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গতকাল বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম জানাজা শেষে আরাফাতের মরদেহ নেওয়া হয় উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টর আহলিয়া খেলার মাঠে। সেখানে বাদ মাগরিব আরেক দফা জানাজা শেষে পাশের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আরাফাতকে দাফনের পর কবরস্থানের পাশে বসে ছিলেন মা সালেহা আক্তার। এ সময় তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘এতদিন তো কত লোক বলছিল, বিদেশে নিলে আমার ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে। কই, সরকারের কেউ তো বিদেশ নেওয়ার ব্যবস্থা করল না! তার ভিসা দিল না। আমার ছেলের আর ভিসা লাগবে না।’
ক্ষুব্ধ আমলারা বেপরোয়া, এবার আলটিমেটাম
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের আলটিমেটাম দিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার তাঁকে অপসারণ না করলে কীভাবে করতে হবে, সেই পন্থা তাদের জানা আছে।
জনপ্রশাসন সংস্কারে মুয়ীদ চৌধুরীর একটি বক্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার রাজধানীতে রীতিমতো ব্যানার টানিয়ে সভা করেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে সরকারের প্রতি এমন অবস্থান চাকরিবিধি ও শিষ্টাচারের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা জানিয়েছেন, সংস্কার কমিশনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। কমিশনপ্রধানের বক্তব্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও তার বহিঃপ্রকাশ এভাবে করা ঠিক হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর আগে এক অনুষ্ঠানে প্রশাসন ক্যাডারের এত কর্মকর্তাকে একসঙ্গে কখনোই দেখা যায়নি। বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা রয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ব্যানারে তারা রাজধানীতে সমাবেশের পরিকল্পনাও করছেন।
সংস্কার বড় স্বপ্ন, নির্বাচনেও যেতে হবে, আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘সংস্কার খুব বড় স্বপ্ন, ঐক্য তার জন্য দরকার, নির্বাচনেও যেতে হবে। কিন্তু তার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে।’
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ এসব কথা বলেন। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুই দিনব্যাপী এই সংলাপের আজ ছিল প্রথম দিন। এ সংলাপের আয়োজক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ। আজ সকালে এই সংলাপের উদ্বোধন করা হয়।
সংলাপে দেওয়া বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সংস্কারমুখী মানুষকে আইনশৃঙ্খলা না দিয়ে, তার খাওয়ার ব্যবস্থা না করে, চাকরির নিশ্চয়তা না দিয়ে বিপথে নিয়ে যাবেন না। সর্বোত্তম পেতে গিয়ে আমরা যেন উত্তমকে হারিয়ে না ফেলি। আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে চাই, কিন্তু এই মুহূর্তের সমস্যাগুলো মনোযোগে না নিলে ওই জায়গাটায় পৌঁছানো যাবে না।’
সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
পেশাদার সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র
পেশাদার সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির স্বার্থে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যুকৃত স্থায়ী প্রবেশ পাস (Digital Access Control System) এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইস্যুকৃত অস্থায়ী প্রবেশ পাস ছাড়া সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি ব্যক্তিদের জন্য) সচিবালয় প্রবেশ পাস বাতিল করা হলো।’
১৪ দলের শরিকদের কার্যালয় খোলা, তবে মাঠে ফেরায় অনিশ্চয়তা
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
আওয়ামী লীগের সঙ্গী হিসেবে ১৪–দলীয় জোটের শরিকেরাও গভীর সংকটে রয়েছে। এই দলগুলোর এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। আবার কবে রাজনীতির মাঠে নামতে পারবে—এই প্রশ্নে দলগুলোর নেতা–কর্মীদের হতাশা বাড়ছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর তারা প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে পারেনি। রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুর গ্রেপ্তারের পর উল্টো শরিক দলের অন্য নেতারাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন।
তবে ঢাকায় ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), কমিউনিস্ট কেন্দ্রসহ ১৪ দলের শরিকদের প্রায় সবার দলীয় কার্যালয় খোলা আছে, নেতা–কর্মীদের উপস্থিতি নগণ্য। শীর্ষ নেতাদের আনাগোনা নেই। মধ্যম সারির ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী কার্যালয়ে আসেন।
১৪ দলের শরিকদের সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের সবকিছুতে সমর্থন দেওয়ার কারণে ১৪ দলের শরিকেরা স্বতন্ত্র অবস্থান পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চিন্তা ও কৌশল মেনে নিয়েই চলেছে তারা। এর পেছনে মন্ত্রী–সংসদ সদস্য হওয়া বা ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার বিষয় ছিল অন্যতম। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব, সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ১৪ দলের শরিকদেরও আওয়ামী লীগের সঙ্গে একই ‘ব্র্যাকেটে’ ফেলে দিয়েছে। ফলে ১৪ দলের শরিকদের ভাগ্যও আওয়ামী লীগের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরে এলে শরিকদের কিছুটা সম্ভাবনা আছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর শরিক দলগুলোর দু-একজন নেতা দেশ ছেড়েছেন। কেউ কেউ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। মামলায় নাম থাকা অন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারা অনেকটা আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। দলটির সূত্র বলছে, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ৫ আগস্টের পর দলীয় অফিসে আসেননি। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুও কারাগারে। ৫ আগস্টের পর দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারকে দলীয় কার্যালয়ে দেখা যায়নি। এর মধ্যে শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে থাকা দলীয় কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ হয়েছে। তবে এখন হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদের নিয়ন্ত্রণেই আছে কার্যালয়টি।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, জাতীয় পার্টি (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও দলের মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম দলীয় কার্যালয়মুখী হননি বলে জানা গেছে। গণতন্ত্রী পার্টি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই দুই ভাগে বিভক্ত হয়। কোনো অংশই এখন আর সেভাবে সক্রিয় নেই। একটি দলের কার্যালয়ে গেলে মধ্যম সারির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রেস রিলিজ দিয়ে হলেও দলের কর্মকাণ্ড চালু রাখার চেষ্টা চলছে।
রাতের ভোটের কারিগররা অধরা, আমলারাও আরামে
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল|
একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যান্য নির্বাচনী এলাকার মতো অবিশ্বাস্য ফলাফল ছিল বরিশাল-১ আসনে। শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ২ লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোটের বিপরীতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জহিরউদ্দিন স্বপন ১ হাজার ৩০৫ ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সেই নির্বাচনে বরিশালের জেলা প্রশাসক তথা রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন আজিয়র রহমান। জেলার পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থীরা বৈধ ভোটের ৯৩ থেকে ৯৯ শতাংশ পেয়ে জয়ী হন বলে ফল ঘোষণা করেছিলেন।
জালিয়াতি ছাড়া এমন ফল সম্ভব না হলেও অন্য সব রিটার্নিং কর্মকর্তার মতো আজিয়র রহমানও আওয়ামী লীগ আমলে পদোন্নতি পেয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাঁকে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে রাবার বোর্ডে বদলি করা হয়েছে। আজিয়রের ব্যক্তিগত ফেসবুকে দেখা যায়, সরকার বদলের সঙ্গে ভোল বদলেছেন। গত ২৬ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘কর্মজীবনে সব সময় চেষ্টা করেছি দায়িত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার।’
জহিরউদ্দিন স্বপন সমকালকে বলেছেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন রাতের ভোটের মূল হোতা। শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ব্যালট বাক্স ভরলেও রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা রাতের ভোটের মূল বাস্তবায়নকারী। তাদের সাজা দিতে হবে।’ বরিশালে অস্বাভাবিক ফলাফলের বিষয়ে জানতে আজিয়রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সমকাল। তিনি কথা না বলে বরং প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধের জন্য বিএনপি নেতাকে দিয়ে তদবির করান।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬৪ জেলায় ৬৫ রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। ফেনীতে তপশিল ঘোষণার পর জেলা প্রশাসক বদল হয়েছিল। ঢাকা মহানগর ও চট্টগ্রাম মহানগরে বিভাগীয় কমিশনাররা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। দুই মহানগরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা ছিলেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে। ৪৯৪ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা ছিলেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। ৬৭ রিটার্নিং ও ৫১২ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার সবাই চাকরিতে রয়েছেন। সমকাল ১৩ সাবেক রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। সবাই বিষয়টি এড়িয়েছেন। তাদের চারজনের কর্মক্ষেত্রে গিয়েও সাক্ষাৎ মেলেনি।
আওয়ামী লীগ শাসনামলের অন্যান্য অনিয়মের প্রতিকারে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিলেও নির্বাচনে জালিয়াতিতে জড়িতদের শাস্তির কথা নেই এখন পর্যন্ত। অন্তর্বর্তী সরকার একাদশ নির্বাচনের ছয় রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ওএসডি করেছে। কয়েকজনকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়েছে। বাকিরা আগের পদেই রয়েছেন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সমকালকে বলেছেন, ‘যেসব কর্মকর্তা চাকরিবিধি ও আইন লঙ্ঘন করে ভোট কারচুপিতে জড়িত ছিলেন, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের।’ কবে কীভাবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে– তা স্পষ্ট করেননি উপদেষ্টা।
ঘোষণাপত্র: সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, কর্মসূচি বদল
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জুলাই গণআন্দোলনের দলিল তৈরির পদক্ষেপের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
সোমবার মধ্যরাতে রাজধানীর বাংলা মোটরে সংগঠনের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম এ কথা বলেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্ববায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জরুরি বৈঠক করে মঙ্গলবার বিকালের ঘোঘণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচির বদলে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ পালনের সিদ্ধান্ত জানায় সরকার পতনে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
শাহবাগে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সড়ক অবরোধ
০২ জানুয়ারি ২০২৫, ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন
উন্নত চিকিৎসার দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। তাদের দাবি, হাসপাতালে তারা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না, এজন্য তারা সড়কে নেমেছেন।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়কে নেমে আন্দোলন শুরু করেন।
শাহবাগ থেকে ফার্মগেটমুখী সড়ক অবরোধ করেন তারা। ফলে সড়কের এক পাশে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
আন্দোলনে থাকা আহতদের একজন বলেন, “আমরা দেশ স্বাধীন করলাম, অথচ আমাদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।”
সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না করে দ্রুত নির্বাচন দিন
০৩ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
সংস্কার আগে, নাকি নির্বাচন আগে—এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক চলতে থাকলে দেশ সংকটের মধ্যে পড়বে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। তাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরতে শিগগির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে দলটি।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘ঢাকা সমাবেশে’ সিপিবি নেতারা এ দাবি জানান। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই প্রথম ঢাকায় বড় সমাবেশ করল সিপিবি। সমাবেশে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। সমাবেশ শেষে সিপিবির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে লাল পতাকা মিছিল করেন।
আ.লীগ নেতাকে নিজেদের কর্মী দাবি জামায়াতের, থানা থেকে ছাড়াতে তদবির
০৪ জানুয়ারি ২০২৫, আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের জয়দেবপুর থানা-পুলিশ মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে আটক করে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় থানায় নিয়ে আসে। এ খবর পেয়ে জামায়াতের বেশ কিছু নেতা-কর্মী আটক ব্যক্তিকে নিজেদের দলের কর্মী দাবি করে ছাড়াতে থানায় ভিড় করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আটক আওয়ামী লীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা শুক্রবার রাত ৮টার পর গাজীপুরের জয়দেবপুর থানা ঘেরাও করে থানার সামনে অবস্থান নেন। নির্দোষ ওই কর্মীকে থানা হেফাজত থেকে মুক্তি দিতে বলেন তাঁরা। তবে পুলিশ ও জামায়াতের নেতারা থানা ঘেরাওয়ের কথা অস্বীকার করেছেন।
আটক ব্যক্তির নাম শফিকুল সিকদার। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ী এলাকার মৃত নুরুল হকের ছেলে।
যুবলীগ নেতা হিসেবে আটক, ইসলামী আন্দোলনে নেতা পরিচয়ে মুক্তি
০৪ জানুয়ারি ২০২৫, আজকের পত্রিকা
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে যুবলীগের সাবেক এক নেতাকে আটকের পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে থানা-পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রাম থেকে যুবলীগের সাবেক ওই নেতাকে আটক করে পুলিশ। রাতেই মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
ওই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম নানজু (৫২)। তিনি সাবেক সেনা সদস্য এবং দাঁতভাঙা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি। তবে ২০১৩ সাল থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা যায়। জানা গেছে, বর্তমানে দলটির দাঁতভাঙা ইউনিয়ন শাখার শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক।
পাঁচ মাসে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকারসহ নানা দাবিতে ১০১ আন্দোলন
০৬ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
কে কখন কোন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বসবেন, এমন একটা আশঙ্কা নিয়ে ঢাকার মানুষকে এখন চলাচল করতে হয়। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যানারে ব্যস্ত সড়কে হাজির হচ্ছেন কেউ না কেউ। যাঁরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন, তাঁদের বেশির ভাগ নিজেদের ‘বঞ্চিত’ বা ‘বৈষম্যের শিকার’ দাবি করছেন।
কেউ সুনির্দিষ্ট ‘ব্যানার’ নিয়ে আন্দোলন করছেন, আবার কেউ ব্যানার ছাড়াই হঠাৎ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন। যেমন গত ২৬ আগস্ট সকালে হঠাৎ শাহবাগ এলাকার সড়ক অবরোধ করেন প্যাডেলচালিত শত শত রিকশাচালক। তাঁদের দাবি, ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢাকার সড়কে চলতে পারবে না।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক যৌক্তিক বা অযৌক্তিক দাবিতে অনেক পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষার্থী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ আন্দোলন শুরু করেছেন।
সেদিন শাহবাগের পাশাপাশি ঢাকার আরও কিছু এলাকার সড়কে নেমেছিলেন প্যাডেলচালিত রিকশাচালকেরা। তবে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় নামলেও সুনির্দিষ্ট কোনো সংগঠনের ব্যানারে তাঁরা সেদিন জড়ো হননি। যে যাঁর মতো করে এলেও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না ঢাকায়, এটিই ছিল মূল দাবি।
এ ঘটনার আড়াই মাস পর গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টের এক নির্দেশনার বিরোধিতা করে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে নামেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা। তাঁরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে শুরু করেন আন্দোলন। ওই আন্দোলনের মধ্যে ২১ নভেম্বর ঢাকার মহাখালীতে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা অবশ্য সফল হয়েছেন। রাজধানী ঢাকার মূল সড়কগুলো বাদে অলিগলির সড়কে চলাচলের অনুমতি আদায় করতে পেরেছেন তাঁরা। যদিও মূল সড়কেও এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেখা যাচ্ছে।
সড়ক অবরোধের ঘটনা গতকাল রোববারও ঘটেছে রাজধানী ঢাকায়। দুপুরের দিকে হঠাৎ মগবাজার মোড়ের কাছে অফিসার্স ক্লাব–সংলগ্ন প্রধান সড়ক অবরোধ করেন ঢাকা জেলায় (রাজধানীর বাইরে) চলাচলের নিবন্ধন পাওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক ও চালকেরা। এতে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ।
চলমান আন্দোলনের মধ্যে একটি হচ্ছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা। এই দাবিতে ১৫ আগস্ট থেকে জোরদার আন্দোলন শুরু করে চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি অংশ। যদিও একই দাবিতে কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন চলছে।
অবরোধকারীদের দাবি, ঢাকা জেলায় চলাচলের জন্য নিবন্ধিত অটোরিকশাও রাজধানীর সড়কে চলাচলের সুযোগ দিতে হবে। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধের পর সড়ক ছেড়ে যান তাঁরা। ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক যৌক্তিক বা অযৌক্তিক দাবিতে অনেক পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষার্থী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ আন্দোলন শুরু করেছেন। তাঁরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-আন্দোলন করায় ঢাকার যানজট আরও তীব্র হচ্ছে, মানুষের ভোগান্তি-কষ্ট বাড়ছে। সরকারি কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে।
ছোট-বড় মিলিয়ে এখন পর্যন্ত গত ৫ মাসে অন্তত ১০১টি আন্দোলনের তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো। এর মধ্যে অনেক সংগঠন ও গোষ্ঠীর আন্দোলন এখনো চলমান। এমন অনেক সংগঠনের ব্যানারেও আন্দোলন হচ্ছে, যেসব সংগঠনের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। শুধু দাবি জানানোর জন্য বেশ কিছু সংগঠনের জন্ম হয়েছে। আবার কেউ কেউ কোনো ব্যানার বা সংগঠন ছাড়াই আন্দোলনে নেমেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল একবারে নাজুক। বিপর্যস্ত অবস্থায় দায়িত্ব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যখন কিছুটা গুছিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তখন একের পর এক যৌক্তিক-অযৌক্তিক আন্দোলন শুরু হওয়ায় সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতি এখনো আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রথম দিকে আন্দোলনকারীরা নানা দাবি নিয়ে জড়ো হতেন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন) সামনে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন আন্দোলনকারীদের আরেকটি ‘পছন্দের’ জায়গা হয়ে ওঠে শাহবাগ। নিষেধাজ্ঞার কারণে যমুনার সামনে এখন কেউ কর্মসূচি পালন করতে না পারায় শাহবাগের ওপর ‘চাপ’ বেড়েছে। এর আগে কখনো কখনো যমুনার সামনে একসঙ্গে পাঁচ-ছয়টি সংগঠনও নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে দিনে ১৪-১৫টি সংগঠনও রাজপথে নানা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। যেমন ১৯ আগস্ট ঢাকার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে অন্তত ১৭টি সংগঠন। কারও দাবি চাকরি স্থায়ীকরণ, কেউ চায় দুর্নীতি রোধ, কেউবা বৈষম্যের ‘শিকার’, আবার কেউ ‘বঞ্চিত’ দাবি করে সেদিন সড়কে নেমেছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। উত্তরা, শাহবাগ, মিরপুর রোড, প্রেসক্লাব, সচিবালয়, রামপুরা, কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক আটকে সেদিন বিক্ষোভ করা হয়েছিল। এর মধ্যে যমুনার সামনে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছিলেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের নারীরা। সেদিন নানা আন্দোলনকারীর ভিড়ে বিডিআর থেকে চাকরিচ্যুত সদস্যদের একটি দল প্রেসক্লাবের সামনে জায়গা না পেয়ে এর বিপরীত পাশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
এমন পরিস্থিতিতে ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেছিলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সকল পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া, লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার, আমরা অবশ্যই করব। কিন্তু আমাদের ঘেরাও করে কাজে বাধা দেবেন না।’
প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানের পরও সড়ক আটকে আন্দোলন বন্ধ হয়নি। এখন যেসব আন্দোলন চলমান, এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের দুটি দল রয়েছে। এই দুটি দল আবার মুখোমুখি অবস্থানে আছে। একটি দলে রয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। অন্য দলে আছেন প্রশাসন বাদে অন্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ নামে ২৫ ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল, নিজ নিজ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন।
উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে, সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ ঘোষণার পর প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি করেছেন। দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন তাঁরা।
চলমান আন্দোলনের মধ্যে একটি হচ্ছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা। এই দাবিতে ১৫ আগস্ট থেকে জোরদার আন্দোলন শুরু করে চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি অংশ। যদিও একই দাবিতে কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীরা সংগঠিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের সামনে অবস্থানের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে ২৩ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন বহাল রাখা হয়েছে।
নানা নামে নানা সংগঠনের আন্দোলনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিভিন্ন ধরনের দাবি নিয়েই মানুষ আসছে। কেউ পদোন্নতিবঞ্চিত, বেতনবঞ্চিত, কাউকে খারাপ জায়গায় বদলি করা হয়েছে, কারও বেতন বাড়াতে হবে, কাউকে রাজস্ব খাতে নিতে হবে। সবকিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর দাবিদাওয়াকেন্দ্রিক। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে কেউ আসে না।
মন্ত্রণালয়ের ৩০ শতাংশ সময় ব্যক্তিগত এসব বিষয়ে ব্যয় হয় উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আরও বলেছিলেন, ‘কত রকম যে বঞ্চিত। যাকে আমি সারা জীবন জানতাম আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, সে-ও এসে কেঁদে দেয়—আমিও বঞ্চিত।’
নানা ব্যানারে আন্দোলন
ঊর্ধ্বতন-অধস্তন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বৈষম্য নিরসনসহ ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন অধস্তন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ১৩ আগস্ট আন্দোলনে নামেন আনসার সদস্যরা। দাবি আদায়ে ২৫ আগস্ট আনসার সদস্যরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সচিবালয় ঘেরাও করেন। সেই রাতে সচিবালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ হয়।
গত সাড়ে চার মাসে সবচেয়ে বেশি আন্দোলন করেছেন সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীরা। সবার দাবি, চাকরি স্থায়ী করতে হবে। এমন অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। উল্টো ঘটনাও আছে। সরকারি প্রকল্পে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের চাকরি স্থায়ী না করার দাবিতে দুটি সংগঠনকে আন্দোলনে নামতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা বা বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হওয়া ব্যক্তিদেরও আন্দোলনে নামতে দেখা গেছে। এর মধ্যে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুত সদস্যরাও চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘আয়নাঘরে’ বন্দীদের মুক্তি দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিতের দাবি, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কারণ নির্ণয়সহ নানা দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনকে মাঠে নামতে দেখা গেছে। রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঝুঁকি ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। চাকরিতে বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে আরও অন্তত ৬টি ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছিলেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
পেশাজীবীদের ব্যানারে আন্দোলনে নামা সংগঠনগুলোর মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ দফা আন্দোলন, রেলওয়ে গেটম্যানদের চাকরি স্থায়ীকরণ আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী গ্রাম-পুলিশ সমন্বয় কমিটি, বাংলাদেশ সচিবালয় বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী সংগঠন, ইউনিয়ন ও পৌরসভা ডিজিটাল সেন্টার পরিচালক সমন্বয় পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী সার্ভে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ছাত্র পেশাজীবী অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী প্রাথমিক শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ বাংলাদেশ, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কল্যাণ সমিতি ও বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমন্বয় কমিটি, ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ ও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন অন্যতম।
পোশাক কারখানার শ্রমিকেরাও বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চা-শ্রমিকেরাও আন্দোলনে আছেন। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের আন্দোলন এখনো চলমান। একই দাবিতে আরও কয়েকটি পক্ষ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের সময় তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এক আইনজীবী নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বিএনপির বিপরীতে বাকিরা
০৯ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
বিএনপি সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাইলেও অন্যরা তা আগে চায়। বিএনপি নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বললেও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের অভিমত, আগে তৃণমূলের ভোট দিতে জনদাবি রয়েছে। প্রকাশ্যে অবস্থান না জানালেও জামায়াতে ইসলামীর একই মনোভাব। শেখ হাসিনার পতন ঘটানো অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি আগে স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে।
সংগঠনটির সংশ্লিষ্টরা জনপ্রতিনিধিশূন্য স্থানীয় সরকারে আমলার পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রশাসক নিয়োগে চিঠি দিয়েছে উপদেষ্টাকে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া নির্ধারণে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কাজও শুরু হয়েছে।
বিএনপি সূত্রের ভাষ্য, সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচনে জোর দেওয়া, প্রশাসক নিয়োগ করা ছাত্রনেতৃত্বের রাজনৈতিক দল গঠনকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার লক্ষণ। সরকারি সুবিধার আশায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সরকার সমর্থিত নতুন রাজনৈতিক দলে ভিড়তে পারেন। অতীতেও তা-ই হয়েছে। গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অভিমত জানানো হয়, কোনো চাপে নতিস্বীকার না করে এবং কোনো পক্ষের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত জাতীয় নির্বাচনমুখী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে নেওয়া। দলটির নেতাদের মত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল হওয়ায় নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা, নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার আশঙ্কায়ও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনের বিরোধী বিএনপি।
শীতবস্ত্রের অভাবে লাখ লাখ মানুষ অসহায়
১০ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
শীতে কাঁপছে দেশ। কিন্তু হতদরিদ্র মানুষের শীত নিবারণের কাপড় নেই। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে গরিব মানুষের চাহিদার তুলনায় অনেক কম কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে কম্বলের পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষের জন্য জ্যাকেট/সোয়েটার বরাদ্দের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে শীতার্ত দুস্থ মানুষের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ৩৩ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং ১৫ হাজার ২৫০ পিস কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গড়ে জনপ্রতি বরাদ্দ ১১.৮১ টাকা। অল্প পরিমাণ কম্বল বিতরণ করা নিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
এদিকে শুধু কম্বলে শীত মানছে না দরিদ্র মানুষের। কম্বল বরাদ্দ থাকলেও ঘরের বাইরে যেতে যে শীতবস্ত্রের (জ্যাকেট/সোয়েটার) প্রয়োজন, তা নেই। শীতে কর্মহীন মানুষের জন্যও নেই মানবিক সহায়তা। রাজনৈতিক দলগুলো নেই শীতার্ত মানুষের পাশে। সরকারিভাবে যে অল্প শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে, তাও শহরের আশপাশে। দুর্গম এলাকায় যাচ্ছে না কম্বল। এমন পরিস্থিতিতে শীতপ্রবণ এলাকার লাখ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সমন্বয়ক রাসেল-রাফির দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেল অবশেষে
১১ জানুয়ারি ২০২৫, সিভয়েস২৪
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফাটল এখন প্রকাশ্যে। এরই মধ্যে প্ল্যাটফর্মটির মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ এবং আরেক শীর্ষ সমন্বয়ক রাসেল আহমেদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠেছে। আর এই অভিযোগের তীর—শীর্ষ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা রিজাউর রহমানের বিরুদ্ধে।
এদিকে, হামলার ঘটনায় শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে রাসেল আহমেদসহ কয়েকজন সমন্বয়ক চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। একপর্যায়ে সেখানেই রাফি-রিজাউর দলবলসহ উপস্থিত হন। এরপর উভয়পক্ষ জড়ায় হাতাহাতি-বিতণ্ডায়।
মাসউদ-রাসেলের ওপর হামলা, নেতৃত্বে রিজাউর
সংবাদ সম্মেলনে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিকেল ৩টায় নগরের বিপ্লব উদ্যানে পথসভা করে লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এবং সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ। সেই কর্মসূচি শেষে নগরের ওয়াসা মোড়ের একটি ভবনের পাঁচতলায় যান মাসউদ-রাসেলসহ অন্যান্যরা। সেখানে তারা একটি সভা করেন।
ওই সভায় উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘মিটিং চলাকালীন সময়ে হঠাৎ রিজাউর ডট গ্যাং সদস্যদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। এসেই মাসউদকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা প্রোগ্রাম করেছেন কাকে জানিয়েছেন’। উনি উত্তর দিলেন, ‘ফেসবুকেই তো এটা প্রচার করা হয়েছে এরকম একটা প্রোগ্রাম হবে’। রিজাউর তখন জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি আমাকে জানাননি কেন’। তখন মাসউদ জবাব দেন, ‘চট্টগ্রামের রাসেল-রাফিসহ যাদেরকে বলা দরকার তাদের বলেছি। আমি আপনাকে চিনি না। আপনি কে’। এরপরই রিজাউরকে ঘিরে অন্যরা ‘সমন্বয়ক-সমন্বয়ক’ স্লোগান দিতে থাকে।’
‘একপর্যায়ে রিজাউরের সাথে থাকা ডট গ্যাং সদস্যরা রাসেল এবং মাসউদকে ঘিরে ধরে। এরপর ওদেরই একজন কাকে যেন কল দিয়ে পোলাপান ডেকেছে। এ সময় ভাইদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং হামলা চালায়। একপর্যায়ে আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওমর ফারুক সাগর এসে আমাদের উদ্ধার করেন।’-বলেন তিনি।
পিরোজপুরে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধীদের হাতাহাতি, ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান
১২ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
পিরোজপুরে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের পক্ষে লিফলেট বিতরণের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের টাউন ক্লাব মাঠে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দুই পক্ষ একে অপরকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পিরোজপুর পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুছাব্বির হোসেনের নেতৃত্বে লিফলেট বিতরণ করেন নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের শহীদ মিনার চত্বর থেকে লিফলেট বিতরণ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পিরোজপুরের প্রতিনিধি জাবিদ হাসানসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীরা কিছুক্ষণ পর একই সময়ে শহরের টাউন ক্লাব মাঠে প্রবেশ করেন। এ সময় দুই পক্ষ একে-অপরকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
সিট নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা
১২ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
ময়মনসিংহ নগরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দ নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিয়েছে হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ রোববার বিকেলে ও সন্ধ্যায় হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় কলেজ এলাকায়।
পরে এ ঘটনায় ছেলেদের ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে কলেজে আগামী তিন দিনের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার সকাল আটটার মধ্যে ছেলেদের ছাত্রাবাস ত্যাগের জন্য বলা হয়েছে। আজ রাত আটটার দিকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
ঐক্যের কথা বলে বিভক্ত অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো
১২ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
শেখ হাসিনার পতন ঘটানো অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও, বিভেদে জড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির মতবিরোধ প্রকাশ্যে। দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বেড়েছে তিক্ততা। সব ইস্যুতেই ছাত্র নেতৃত্বের বিপরীতে অবস্থান বিএনপির। ছাত্র নেতৃত্বের সংগঠনগুলোতে দ্বন্দ্ব জামায়াতের প্রভাবে।
সরকার, দল ও সংগঠনগুলোর নেতাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তাদের ভাষ্য, অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে শুরু বিভেদ। নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে তা বিভক্তিতে রূপ নেয়। আগস্টে রাজনৈতিক দল ও ছাত্র নেতৃত্ব সংস্কারে সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও, দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি। তবে সংস্কারে জোর জামায়াত ও ছাত্র নেতৃত্বের। তাদের ভাষ্য, বিএনপি ক্ষমতায় বসলে অভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার করবে না।
সরকার চলতি বছরের শেষ থেকে আগামী বছরের প্রথমার্ধকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছে। এতে সন্দিহান বিএনপি ছাত্র নেতৃত্বের দল গঠনের উদ্যোগকে সরকারি সমর্থনের ফল এবং তাদের ক্ষমতার বাইরে রাখার চেষ্টা হিসেবে দেখছে। রাজনীতির মেরূকরণে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে চড়াও হয়েছে। জামায়াতকে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য বিদ্ধ করছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ না থাকায় রাজনীতির মাঠে দু’দল এখন প্রতিদ্বন্দ্বী।
ছাত্র নেতৃত্ব একাত্তর মুছে চব্বিশের অভ্যুত্থানকে গৌরবান্বিত করছে অভিযোগ বিএনপির। জামায়াত ও ছাত্র নেতৃত্ব বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুলনা করে চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বের দায় দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার ছাড়াও সংঘর্ষে জড়িয়েছে। বরিশালে বিজয় মিছিলে হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছে নাগরিক কমিটি। চট্টগ্রাম, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
আমলাদের চাপে পিছু হটছে কমিশন
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
আমলাদের চাহিদাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি এবং অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছিল কমিশন। তবে এখন কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে থাকছে না সেই প্রস্তাব। আমলাদের চাপে এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ক্যাডার কর্মকর্তাদের আন্দোলন আমলে নিয়ে নতুন করে সুপারিশ প্রতিবেদন তৈরি করছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ বাস্তবায়নে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জমা দেওয়ার সময় চেয়েছিল কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার কমিশনের চাহিদার ভিত্তিতে তাদের এ সময় দিয়েছে সরকার।
রাজনীতি ও আমলানির্ভরতা কমিয়ে দুদককে শক্তিশালী করতে ৪৭ সুপারিশ
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ লেনদেনকে অবৈধ ঘোষণা এবং আইনে কালো টাকা সাদা করার বৈধতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করাসহ ৪৭ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আজ বুধবার জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করেছে এ কমিশন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলছে। এর অংশ হিসেবে দুই ধাপে মোট ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গঠন করা হয় নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কমিশন।
দুর্নীতি দমনে সব সেবামূলক খাত স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেশনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। কমিশন বলছে, বেসরকারি খাতে ঘুষ লেনদেন এখন পর্যন্ত অবৈধ নয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের আওতায় সরকারি খাতের মতো বেসরকারি খাতেও ঘুষ লেনদেন অবৈধ, কিন্তু সেটা এখনো কার্যকর হয়নি।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এ কমিশনগুলোর প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় ৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়। এর মধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের জন্য ৩১ জানুয়ারি ও বাকি পাঁচটি কমিশনকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল। এর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দিতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা কমিশনগুলোর প্রতিবেদন দেওয়ার কথা আছে আগামী মাসের শেষের দিকে।
দুদককে শক্তিশালী, কার্যকর ও ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কমিশনারদের পদ বাড়ানো, নিয়োগ, সার্চ কমিটি, আইনের সংস্কার, বেতন বৃদ্ধি ও প্রণোদনার জন্য সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।
ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে এ সংস্কার কমিশন গত ৩ অক্টোবর তার কার্যক্রম শুরু করে।
দুর্নীতি দমন শুধু দুদকের একার কাজ নয়
সংস্কার কমিশন বলছে, দেশে জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কোনো কৌশল নেই। দুর্নীতি দমন শুধু দুদকের একার কাজ নয়, এখানে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় অনেক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। যেমন সংসদ, আইন ও বিচার বিভাগ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিভিন্ন কমিশন, ব্যবসা খাত ও রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের দুর্নীতিবিরোধী ভূমিকা থাকতে হবে। যে জাতীয় কৌশল প্রণয়নের কথা বলা হচ্ছে, তাতে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নির্ধারণ করা থাকবে; যার মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটি নিয়মিতভাবে নজরদারি করতে হবে।
সুনির্দিষ্ট কিছু আইন না থাকায় অর্থ পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সংস্কার কমিশন। কমিশন বলছে, যে ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ ও বন্ধুত্বের বলয় থেকে সিদ্ধান্ত নেন। এটা বন্ধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরাসন আইন দরকার।
বেনামি প্রতিষ্ঠান গড়ে এস আলম কয়েকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বেনামি কোম্পানির তথ্য প্রকাশ করা হয় না উল্লেখ করে সংস্কার কমিশন বলেছে, তারা মনে করে, বেনামি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে দেশের মানুষ জানে না। এমনকি অনেক সময় কর্তৃপক্ষের জানার সুযোগ থাকে না। তাই বেনামি প্রতিষ্ঠানের মালিকানার তথ্য একটা জাতীয় রেজিস্ট্রারে উল্লেখ থাকা উচিত। সেটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী আয়-ব্যয় নিয়মিত প্রকাশে গুরুত্ব
রাজনীতি ও নির্বাচনসংক্রান্ত অর্থায়নে স্বচ্ছতার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে কমিশন। তারা বলেছে, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী আয়-ব্যয় নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে। হলফনামার তথ্য প্রকাশ করতে হবে। যদি হলফনামায় পর্যাপ্ত তথ্য না থাকে, তথ্য গোপন করা হয় ও বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ থাকে, তবে তার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় থেকে জাতীয়—সব পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তাঁদের পরিবারের সবার সম্পদের বিবরণী নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন। সেটি নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করবে। এটি প্রতিবছর হালনাগাদ করতে হবে, যত দিন তাঁরা জনপ্রতিনিধি থাকবেন।
দুর্নীতি দমনে সব সেবামূলক খাত স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেশনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। কমিশন বলছে, বেসরকারি খাতে ঘুষ লেনদেন এখন পর্যন্ত অবৈধ নয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের আওতায় সরকারি খাতের মতো বেসরকারি খাতেও ঘুষ লেনদেন অবৈধ, কিন্তু সেটা এখনো কার্যকর হয়নি।
দুদককে শক্তিশালী করতে কয়েকটি আইন সংস্কারের কথা বলেছে কমিশন। দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইন এর একটি। যে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেন, তাঁর সুরক্ষায় আইন করতে হবে। একটা তথ্য প্রকাশ সুরক্ষা আইন রয়েছে, তবে সেটির কোনো প্রয়োগ ও কার্যকর প্রচার নেই। এ আইন যথেষ্ট নয়। তাই আইনটি সংশোধন করে কার্যকর ও প্রচার করার সুপারিশ করা হয়েছে।
দেশের প্রত্যেক নাগরিকের দেশ-বিদেশে থাকা ব্যাংক হিসাবের লেনদেন ‘কমন রিপোর্টি প্র্যাকটিস’–এর আওতায় আনার কথা বলেছে কমিশন। এর মাধ্যমে বিএফআইইউসহ (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব লেনদেনের তথ্য জানতে পারবে। এটি বার্ষিক প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করতে হবে। ১২২টি দেশ ইতিমধ্যে ওই প্র্যাকটিসের অধীন এসেছে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানও এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো হয়নি।
দুদকে নিয়োগ, সার্চ কমিটি প্রসঙ্গ
দুদকে নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা বিবেচনায় যে ধরনের পেশাগত বৈচিত্র্য থাকা দরকার, সেটি নিশ্চিত করতে একজন নারীসহ পাঁচজন দুদক কমিশনার নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। তাঁদের মেয়াদ হবে চার বছর।
সংস্কার কমিশন মনে করে শুধু কমিশনের সংখ্যা বাড়ালে হবে না। নিয়োগেও বৈচিত্র্য থাকতে হবে। যেসব পেশা দুদকের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা যুক্ত সেখান থেকে দুদকের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিতে হবে। দুদকে শুধু আমলাদের নিয়োগে যে প্রধান্য দেওয়া হয়, তা থেকে সরে আসতে হবে।
সংস্কার কমিশন চায় দুদক স্বাধীন ও কার্যকর হোক। তবে দুদকের কোনো স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। দুদক যে কাজ করবে, তার জবাবদিহি থাকবে। ভালো কাজের যেমন প্রশংসা থাকবে, তেমন কাজ করতে না পারলে জবাবদিহি করতে হবে।
দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে যে সার্চ কমিটি রয়েছে, সেটিকে সার্চ ও পর্যবেক্ষণ কমিটি করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। সার্চ কমিটির দুটি দায়িত্বের সুপারিশ করা হয়েছে। এর একটি, নিয়োগে যাচাই-বাছাই করা। অন্যটি, কমিশন কী কাজ করছে, সেটি পর্যবেক্ষণ করে ছয় মাস পরপর প্রতিবেদন দেওয়া।
রাজনৈতিক বিবেচনায় দুদকে নিয়োগ বন্ধে সাত সদস্যের বাছাই কমিটি করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, পরে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তি যিনি রয়েছেন, তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাছাই কমিটির প্রধান করার কথা বলা হয়েছে। এরপর সদস্য হবেন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিজিএ), সংসদ নেতার মনোনীত একজন, প্রধান বিরোধীদল থেকে মনোনীত একজন। এ ছাড়া একজন সরাসরি প্রধান বিচারপতি থেকে নিযুক্ত হবেন, যাঁর দুর্নীতিবিরোধী কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
দুদককে আমলাতন্ত্র মুক্ত করতে সচিব, মহাপরিচালক ও পরিচালক—পদগুলোতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যাঁরা দুদকের কাজের জন্য নিজেদের যোগ্য মনে করবেন, তাঁরা এসব পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া নিজস্ব প্রসিকিউশন বিভাগ ও প্রশিক্ষণ একাডেমি করা, ৫৪–এর ৩ ধারা বাতিল এবং বেতন দ্বিগুণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সুপারিশ করা হয়েছে দুদকে শৃঙ্খলা অনুবিভাগ রাখার। এটির দায়িত্ব হবে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে বরখাস্ত করা। কেউ যাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে না পড়েন, সে জন্য কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে নজরদারি অব্যাহত রাখার সুপারিশও করেছে কমিশন।
সংবিধানে বড় পরিবর্তনের সুপারিশ
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানোসহ সংবিধানে আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতাও হতে পারবেন না।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের সংস্কারের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সুপারিশের সারসংক্ষেপ পরে কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
সংবিধানের মূলনীতি ও সংসদের কাঠামোতে পরিবর্তন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো, মৌলিক অধিকারের পরিসর বাড়ানো, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলসহ সংবিধানের নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ অক্টোবর অধ্যাপক আলী রীয়াজকে প্রধান করে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সদস্যদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, লেখক ফিরোজ আহমেদ, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী মো. মুসতাইন বিল্লাহ এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সালেহ উদ্দিন সিফাত। কমিটিতে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ও অন্য সদস্যরা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। এ সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন তিন মাস ধরে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তারই সারাংশ উপস্থাপন করেছে। তবে এর পেছনে আছে অন্ততপক্ষে এক লাখ মানুষের মতামত, আছে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের অবদান, আছে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের মত এবং সেগুলোকে ধারণ করার চেষ্টা। কমিশনের সদস্যরা ছাড়াও আরও ৩২ জন গবেষক এই কাজে যুক্ত ছিলেন বলে জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের সুপারিশের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছিল কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার সুনিশ্চিকরণ ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের সুপারিশ
‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। আর প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ করার প্রস্তাবও করেছে কমিশন।
বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানের নাম হিসেবে উল্লেখ আছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংবিধানের প্রস্তাব হিসেবে বলা হয়েছে, ‘জনগণের সম্মতি নিয়ে আমরা এই সংবিধান জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করছি।’
দেশের বিদ্যমান সংবিধানে আছে বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত হবে। কমিশন সুপারিশ করেছে, সংবিধানের প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’ এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দের পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ এবং ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দ ব্যবহৃত হবে। তবে ইংরেজি সংস্করণে ‘রিপাবলিক’ ও ‘পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ শব্দগুলো থাকছে।
কমিশন ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি…’ এই বিধান বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। তারা বর্তমান অনুচ্ছেদ ৬ (২) ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ “বাংলাদেশি” বলে পরিচিত হবেন’ হিসেবে প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ করেছে।
গণতন্ত্রসহ নতুন ৫ মূলনীতির সুপারিশ
রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির মধ্যে তিনটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে গণতন্ত্র বহাল রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার নতুন আরও চারটি মূলনীতির সুপারিশ করেছে তারা।
বর্তমানে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার যে চার মূলনীতি রয়েছে, সেগুলো হলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল, তাতে রাষ্ট্র পরিচালনার এই চার মূলনীতি গৃহীত হয়েছিল।
সুপারিশ করা পাঁচ মূলনীতি হলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে এই পাঁচটি নীতি প্রস্তাব করা হয়েছে।
আর তিন মূলনীতি বাদ দেওয়ার বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশন সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ–সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করছে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা
বর্তমানে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০ জন সদস্য নির্বাচিত হন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সুপারিশ করেছে। আইনসভার নিম্নকক্ষ গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে। ৪০০ আসন নিয়ে হবে নিম্নকক্ষ। এর মধ্যে ৩০০ জন সদস্য নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। আর ১০০ জন নারী সদস্য সারা দেশের সব জেলা থেকে নির্ধারিত ১০০ নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। রাজনৈতিক দলগুলো নিম্নকক্ষের মোট আসনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ আসনে তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে প্রার্থী মনোনীত করবে।
এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স চার বছর কমিয়ে ২১ বছর করা, দুজন ডেপুটি স্পিকার রাখা; যাঁদের মধ্যে একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত হবেন। একজন সংসদ সদস্য একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং রাজনৈতিক দলের প্রধানের যেকোনো একটির বেশি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না।
আরও একটি বড় সুপারিশ করেছে কমিশন। তারা বলেছে, অর্থবিল ছাড়া নিম্নকক্ষের সদস্যদের মনোনয়নকারী দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। আইনসভার স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি সব সময় বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হবেন।
সংবিধান সংস্কার কমিশন বলছে, উচ্চকক্ষ মোট ১০৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০ জন সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত হবেন। রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে ৫ জন সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করবেন। বাকি ৫টি আসন রাষ্ট্রপতি মনোনীত করবেন। যারা কোনো কক্ষেরই সদস্য ও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন।
উচ্চকক্ষের স্পিকার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। আর উচ্চকক্ষের একজন ডেপুটি স্পিকার থাকবেন, যিনি সরকারদলীয় সদস্য ব্যতীত উচ্চকক্ষের অন্য সব সদস্যের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।
সংস্কার কমিশন বলেছে, সংবিধানের যেকোনো সংশোধনীতে উভয় কক্ষের দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন লাগবে। প্রস্তাবিত সংশোধনী উভয় কক্ষে পাস হলে এটি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটের ফলাফল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
আন্তর্জাতিক চুক্তির বিষয়ে কমিশন বলছে, জাতীয় স্বার্থ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রভাবিত করে, এমন কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি করার আগে আইনসভার উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদন নিতে হবে।
সাংবিধানিক কাউন্সিল
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তাঁরা দেখেছেন, গত ১৬ বছর বাংলাদেশ একনায়কতন্ত্র মোকাবিলা করেছে। ক্ষমতার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য ছিল না। এ কারণে যাতে কোনো একক ব্যক্তির কাছে বা প্রতিষ্ঠানের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে না পারে, সে জন্য ভারসাম্যের বিষয় হিসেবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল নামে একটি সংস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করেছেন।
রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে হবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিরোধীদলীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে হবে এই কাউন্সিল। নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানসহ কিছু পদে নিয়োগের জন্য কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবে।
রাষ্ট্রপতির মেয়াদ চার বছর
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মেয়াদ পাঁচ বছর। সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর। রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ দুবারের বেশি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। রাষ্ট্রপতি নির্বাচকমণ্ডলীর (ইলেকটোরাল কলেজ) সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হবেন। যেসব ভোটারের সমন্বয়ে নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হবে, তাঁরা হলেন—এক. আইনসভার উভয় কক্ষের সদস্য (একটি করে ভোট)। দুই. প্রতিটি ‘জেলা সমন্বয় কাউন্সিল’ সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট [উদাহরণ: ৬৪টি ‘জেলা সমন্বয় কাউন্সিল’ থাকলে ৬৪টি ভোট]; তিন. প্রতিটি ‘সিটি করপোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল’ সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট। রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। নিম্নকক্ষ থেকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী
সংবিধান সংস্কার কমিশন বলেছে, আইনসভার নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হবেন। আইনসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে যদি কখনো প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা আস্থা ভোটে হেরে যান কিংবা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রপতির কাছে এটা স্পষ্ট হয় যে নিম্নকক্ষের অন্য কোনো সদস্য সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন অর্জন করতে পারছেন না, তবে রাষ্ট্রপতি আইনসভার উভয় কক্ষ ভেঙে দেবেন। একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিনি একাদিক্রমে দুই বা অন্য যেকোনোভাবেই এই পদে আসীন হন না কেন, তাঁর জন্য এ বিধান সমভাবে প্রযোজ্য হবে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।
অন্তর্বর্তী সরকার, মেয়াদ
নির্বাচন করার জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এটি মূলত কাজের দিক দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো। এ বিষয়ে কমিশন যে সুপারিশ করেছে, সেগুলো হলো কমিশন আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ, সরকারের প্রধান ‘প্রধান উপদেষ্টা’ বলে অভিহিত হবে, আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে অথবা আইনসভা ভেঙে গেলে, পরবর্তী অন্যূন ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে কার্য পরিচালনা করবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন।
বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ
সংবিধান সংস্কার কমিশন উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ করে দেশের সব বিভাগে হাইকোর্ট বিভাগের সমান এখতিয়ারসম্পন্ন হাইকোর্টের স্থায়ী আসন চালুর সুপারিশ করেছে। তবে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আসন রাজধানীতেই থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশনের (জুডিশিয়াল অ্যাপয়েনমেন্টস কমিশন) সুপারিশ করা হয়েছে। এর সদস্যরা হবেন প্রধান বিচারপতি (পদাধিকারবলে কমিশনের প্রধান) ; আপিল বিভাগের পরবর্তী দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারক (পদাধিকারবলে সদস্য); হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুজন বিচারপতি (পদাধিকারবলে সদস্য); অ্যাটর্নি জেনারেল এবং একজন নাগরিক (সংসদের উচ্চকক্ষ কর্তৃক মনোনীত)।
কমিশন অধস্তন আদালতের পরিবর্তে ‘স্থানীয় আদালত’ ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে। স্থানীয় আদালতের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি, ছুটি, শৃঙ্খলাসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত থাকবে। এ জন্য একটি বিচারিক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিশন একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে।
জামিনে মুক্তির অধিকার অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ
সংস্কার কমিশন সংবিধানের অধিকার–সম্পর্কিত অনুচ্ছেদগুলো পর্যালোচনা করে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। সংবিধানে কিছু নতুন অধিকার যেমন খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, ইন্টারনেটপ্রাপ্তি, তথ্য পাওয়া, ভোটাধিকার ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ, গোপনীয়তা রক্ষা, ভোক্তা সুরক্ষা, শিশু, উন্নয়ন, বিজ্ঞান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিদ্যমান অধিকারের অনুচ্ছেদগুলো সংস্কার যেমন বৈষম্য নিষিদ্ধকরণের সীমিত তালিকা বর্ধিতকরণ, জীবনের অধিকার রক্ষায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা, জামিনে মুক্তির অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা এবং নিবর্তনমূলক আটকসংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
শক্তিশালী স্থানীয় সরকারে জোর
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনের ওপর জোর দিয়েছে কমিশন। জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কর্মসূচির অংশ না হলে, স্থানীয় পর্যায়ে সব উন্নয়নকাজের ওপর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ আর্থিক নিয়ন্ত্রণ এবং বাস্তবায়নের কর্তৃত্ব থাকবে। যেসব সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী স্থানীয় সরকারের কাজে সরাসরি নিয়োজিত, তাঁরা স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অধীন হবেন। এ ছাড়া একটি স্থানীয় সরকার কমিশন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে কমিশন।
গতকাল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, একটি ব্যাপক গণ–অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় তাঁরা এই প্রস্তাবগুলো রেখেছেন। তাঁরা আশা করছেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে।
উল্লেখযোগ্য সুপারিশ
‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’।
পাঁচ মূলনীতি হলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, সংসদের মেয়াদ ৪ বছর।
নিম্নকক্ষে ১০ শতাংশ আসনে তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে প্রার্থী। ২১ বছর হলে প্রার্থী হওয়া যাবে।
অর্থবিল ছাড়া নিম্নকক্ষের সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।
নারী আসনেও সরাসরি ভোট।
৪০% ভোট না পড়লে সংশ্লিষ্ট আসনে পুনর্নির্বাচন, সুপারিশ কমিশনের
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনে ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে সেই আসনে পুনর্নির্বাচনের সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। কমিশনের সুপারিশে নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে আরও বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে।
আজ বুধবার নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। এই কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
কমিশনের সুপারিশের নির্বাচনী ব্যবস্থা অংশে রয়েছে—
ক. নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল করা।
খ. নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা।
গ. কোনো আসনে মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।
ঘ. বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বন্ধ করা, রাজনৈতিক দলগুলোকে সৎ, যোগ্য এবং ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনে ‘না-ভোটে’র বিধান প্রবর্তন করা। নির্বাচনে না-ভোট বিজয়ী হলে সেই নির্বাচন বাতিল করা এবং পুনর্নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাতিল করা নির্বাচনে কোনো প্রার্থী নতুন নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারার বিধান করা।
কমিশনের সুপারিশের হলফনামা অংশে বলা হয়েছে—
ক. প্রার্থী কর্তৃক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রত্যেক দল তার প্রার্থীদের জন্য প্রত্যয়নপত্রের পরিবর্তে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা অনুরূপ পদধারী ব্যক্তি কর্তৃক হলফনামা জমা দেওয়ার বিধান করা, যাতে মনোনীত প্রার্থীর নামের পাশাপাশি মনোনয়ন বাণিজ্য না হওয়ার ও দলীয় প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ থাকে।
খ. পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেকোনো সময় নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত ব্যক্তির হলফনামা যাচাই-বাছাই করতে এবং মিথ্যা তথ্য বা গোপন তথ্য পেলে তার নির্বাচন বাতিল করা।
কমিশনের সুপারিশে নির্বাচনী ব্যয় অংশে রয়েছে—
ক. সংসদীয় আসনের ভোটার প্রতি ১০ টাকা হিসেবে নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণের বিধান করা।
খ. সকল নির্বাচনী ব্যয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা বা আর্থিক প্রযুক্তির (যেমন বিকাশ, রকেট) মাধ্যমে পরিচালনা করা।
গ. নির্বাচনী আসনভিত্তিক নির্বাচনী ব্যয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবিড়ভাবে নজরদারি করা।
ঘ. প্রার্থী এবং দলের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাবের রিটার্নের নিরীক্ষা এবং হিসাবে অসংগতির জন্য শান্তির বিধান করা।
কমিশনের সুপারিশের মনোনয়নপত্র অংশে রয়েছে—
ক. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আইনি হেফাজতে থাকা ব্যতীত সকল প্রার্থীর সশরীরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা।
খ. নির্বাচনী তফসিলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বৃদ্ধি করা, যাতে হলফনামা যাচাই-বাছাই করা ও আপিল নিষ্পত্তি জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কমানো, যাতে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সাশ্রয় হয়।
গ. প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করা। এ লক্ষ্যে আদালতের হস্তক্ষেপের বিষয়টি শুধু ‘কোরাম নন জুডিস’ ও ‘ম্যালিস ইন ল’-এর ক্ষেত্রে সীমিত করা।
ঘ. মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৫ বছরের আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেওয়ার বিধান করা।
ঙ. নির্বাচনী তফসিলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বৃদ্ধি করা, যাতে হলফনামা যাচাই-বাছাই করা ও আপিল নিষ্পত্তি জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কমানো, যাতে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সাশ্রয় হয়।
কমিশনের সুপারিশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ/গণমাধ্যম অংশে বলা হয়েছে—
ক. নিশ্চল পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া, যাতে পর্যবেক্ষকেরা সারা দিন কেন্দ্রে থাকতে পারে, কিন্তু ভোটকক্ষে সার্বক্ষণিকভাবে নয়।
খ. নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে প্রাক-নির্বাচনকালীন পর্যবেক্ষণের অফিশিয়াল অনুমতি প্রদান করা।
গ. পক্ষপাতদুষ্ট ভুয়া পর্যবেক্ষক নিয়োগ বন্ধ করা।
ঘ. ব্যক্তি পর্যায়ে পর্যবেক্ষক নিয়োগের বিধান চালু করা।
ঙ. পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ভবিষ্যতে নির্বাচন ভালো করার জন্য কাজে লাগানোর বিধান করা।
চ. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপগুলো সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষক সংস্থার জন্য সুস্পষ্ট করা। সরকারের পরিবর্তে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া।
ছ. নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিকদের সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ, অনিয়মের চিত্র ধারণ, নির্বাচনের দিনে মোটরসাইকেল ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করা।
কমিশনের সুপারিশ অংশে নির্বাচনী আচরণবিধি বিষয়ে বলা হয়েছে—
ক. ব্যানার, তোরণ ও পোস্টারের পরিবর্তে লিফলেট, ভোটার-প্রার্থী মুখোমুখি অনুষ্ঠান, পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও সরকারি গণমাধ্যমে প্রচারের সম-সুযোগ প্রদানের বিধান করা।
খ. সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ মেনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার বিধান করা।
গ. ১৯৯০ সালের তিন জোটের রূপরেখার মতো রাজনৈতিক দলের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন করা।
সংবিধান সংস্কার কীভাবে, গণভোট না সংসদে?
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
সংবিধান সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে– তা নিশ্চিত নয়। কমিশনপ্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব করেছেন। সেগুলো হলো– গণপরিষদ, গণভোট কিংবা কী কী সংস্কার হবে তা রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে চূড়ান্ত করে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে সংবিধান সংশোধন করা।
কমিশনপ্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ সমকালকে বলেছেন, এই তিনটির মধ্যে কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা ঠিক করবে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো। কমিশন সুপারিশে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব করেছে মাত্র। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে তৈরি হবে অভ্যুত্থান সনদ।
এর ভিত্তিতে হবে পরবর্তী নির্বাচন।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এর শেষে বলা হয়েছে, ‘জনগণের সম্মতি নিয়ে আমরা এই সংবিধান জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করছি।’ এর মাধ্যমে গণভোটকে বোঝানো হয়েছে কিনা– এ প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেছেন, এগুলো প্রস্তাব মাত্র। চূড়ান্ত হবে রাজনৈতিক ঐকমত্যে।
বিএনপি চায় নির্বাচিত সংসদে হবে সংবিধানের সংস্কার। দলটির নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে জানিয়েছেন, কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকবে– কোন কোন সংস্কার করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ তা আমলে নিয়ে সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে।
জামায়াতে ইসলামী চায় নির্বাচনের আগেই সংস্কার হোক। নতুন সংবিধানের অধীনে নির্বাচন এবং পরবর্তী সংসদ গঠিত হবে। দলটির আশঙ্কা, নির্বাচনের আগে সংস্কার না হলে, পরবর্তী সময়ে তা নাও হতে পারে। শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সূত্রপাত করা ছাত্র নেতৃত্বের সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি চায় গণপরিষদের মাধ্যম সংবিধানের সংস্কার করা হোক। সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর গণপরিষদই সংসদে রূপান্তরিত হবে।
কার প্রস্তাব কতটা আছে সুপারিশে
সংস্কার কমিশন সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংবিধানের আটটি ভাগে ৫৯ দফা সুপারিশ করেছে। বিএনপি কমিশনকে ৬২ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী ১৮ দফা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি ৬৯ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল। বিএনপির অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রয়েছে কমিশনের সুপারিশের।
জামায়াতের প্রধান প্রস্তাব ছিল এক কক্ষের সংসদ এবং আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন। বিএনপি দুই কক্ষের সংসদ এবং উচ্চকক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে গঠনের প্রস্তাব করেছিল। নাগরিক কমিটিও উচ্চকক্ষ চেয়েছিল। এসব প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রয়েছে কমিশনের সুপারিশের।
বিএনপি প্রধানমন্ত্রী পদ পর পর দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেছিল। জামায়াত এবং নাগরিক কমিটির প্রস্তাব ছিল কেউ জীবনে দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কমিশনও তাই সুপারিশ করেছে। নাগরিক কমিটি সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরিবর্তন এবং সংসদের মেয়াদ কমিয়ে চার বছর করার প্রস্তাব করেছিল। কমিশনও একই সুপারিশ করেছে। ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রস্তাব করেছিল বিএনপি এবং জামায়াত; তা রয়েছে কমিশনের সুপারিশে। প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাসের কথা বলা হয়েছে।
বহুল আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অর্থবিল ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে শিথিলের সুপারিশ করেছে কমিশন। নাগরিক কমিটি ৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ চাইলেও, জামায়াত শিথিলের প্রস্তাব করেছিল। বিএনপির প্রস্তাব ছিল, আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয় বাদে অন্য সব প্রশ্নে দলীয় সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। দলের প্রস্তাবের বিপক্ষেও ভোট দিতে পারবেন।
একমাত্র নাগরিক কমিটিই প্রস্তাব করেছিল, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব সংসদের উভয় কক্ষে অনুমোদিত হলেও, গণভোট লাগবে। গণভোট ছাড়া ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও সংবিধান সংশোধনের একই পথ দেখানো হয়েছে।
বিএনপি এবং জামায়াত– উভয় দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রস্তাব করেছিল। সংবিধান সংস্কার কমিশন নির্বাচনকালীন সর্বোচ্চ ৯০ দিন মেয়াদি অন্তর্বর্তী সরকারের সুপারিশ করেছে। সংবিধানের পুনর্লেখন চাওয়া নাগরিক কমিটির প্রস্তাব ছিল, প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা এবং রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারবেন না। এ সুপারিশ রয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
সব দল এবং সংগঠনই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা এবং অধস্তন আদালতকে সুপ্রিম কোর্টের একক নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব করেছিল। সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও তা রয়েছে।
কোন দল কী বলছে
বিএনপি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা প্রকাশ করে। এর পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনে দেওয়া বিএনপির প্রস্তাব ৩১ দফারই সংবিধান সংক্রান্ত সংস্কার প্রতিশ্রুতির বিস্তারিত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলটির সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, কমিশনের সুপারিশ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিশ্লেষণের পর মতামত জানাবেন। একই অভিমত জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
আনুপাতিক পদ্ধতির সংসদের প্রস্তাব সুপারিশে না থাকার বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেছেন, এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। কমিশন সুপারিশ করেছে মাত্র। জামায়াত সরকার ও রাজনৈতিক দলের আলোচনায় আনুপাতিক পদ্ধতি চাইবে। অনেক দলই তা চায়। জামায়াত ক্ষমতার ভারসাম্য এবং ভবিষ্যতে আর যাতে স্বৈরাচার না তৈরি হয়, এ লক্ষে প্রস্তাব দিয়েছিল। তার প্রতিফলন কমিশনের সুপারিশে রয়েছে। সুপারিশে জামায়াত সন্তুষ্ট কিনা– এ প্রশ্নে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন দলীয় ফোরামে আলোচনা-পর্যালোচনার পর মতামত জানানো হবে।
নির্বাচনের আগে না পরে, কখন সংস্কার হবে– এ প্রশ্নের মতো বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে কীভাবে সংস্কার হবে, তা নিয়েও ভিন্ন ভাবনা রয়েছে। জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার হলে, তা টেকসই হবে। তা না হলে কমপক্ষে একটি লিখিত রাজনৈতিক চুক্তি বা সনদ থাকতে হবে, যে দলই ক্ষমতায় যাক নতুন সংসদ সংবিধান সংস্কার করবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, তারা সুপারিশ পর্যালোচনা করে মতামত জানাবেন।
এই সরকার যে আলাদা, সেটা কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
গণ–অভ্যুত্থানের সময় দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিতে যে আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তরুণেরা, এর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তার মিল দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, এই সরকার ও সরকার–ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে অস্বীকার করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি জনগণের যা যা প্রয়োজন, তা অস্বীকারের লক্ষণও দৃশ্যমান। এই সরকার যে বিগত সরকার থেকে আলাদা, সেটা কাজের মধ্য দিয়েই তাদের প্রমাণ করতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। ‘আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে’ এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হাঁটছে না। বন্ধ কারখানার বেকার শ্রমিকদের নিয়ে কোনো মাথাব্যথা না থাকা, বিভিন্ন জাতি ও ভাষার মানুষের ওপর অত্যাচার এবং ‘আদিবাসী’ শব্দ থাকায় পাঠ্যবই থেকে গ্রাফিতি বাদ দেওয়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
আদিবাসী শব্দটি নিয়ে বিভ্রান্তি আছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আদিবাসী মানে আদি বাসিন্দা নয়। তার আলাদা একটা সংস্কৃতি, ইতিহাস, আইনকাঠামো ও জাতিগত বৈশিষ্ট্য আছে। …আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন তারা আদিবাসী শব্দটা বলত, কিন্তু ২০০৯ সালে সরকারে যাওয়ার পর হঠাৎ তারা বলল, আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। তার মানে, এখানে রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে আদিবাসী ধারণাকে অস্বীকার করার একটা রাজনৈতিক সম্পর্ক আছে। সেই কারণে যারা ক্ষমতায় যায়, তারা এটাকে অস্বীকার করতে চায়। …আদিবাসী শব্দ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কারও আপত্তি থাকলে আলোচনা করা যেতে পারে। আদিবাসী শব্দ থাকায় পাঠ্যবই থেকে গ্রাফিতি হঠাৎ বাদ দেওয়া এবং এর প্রতিবাদ করতে গেলে একটা গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী আক্রমণ…। সরকারকে তাদের ব্যাপারে খুবই নমনীয় দেখা যাচ্ছে। সেই হামলার প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ আবার আগের মতো করে আক্রমণ করল। এর পুরো দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর পড়ে।
গত বুধবার ঢাকার মতিঝিলে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ ওপর ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির’ হামলা এবং এর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার ‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার’ ওপর পুলিশি আক্রমণেরও প্রতিবাদ জানান আনু মুহাম্মদ। পুলিশি আক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, এর জন্য সরকারকে সরাসরি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। সরকার এ আক্রমণ করেছে। পুলিশি আক্রমণ, সন্ত্রাসী আক্রমণ ও ভ্যাটের (মূল্য সংযোজন কর) আক্রমণ—এই তিন ধরনের আক্রমণ থেকে সরকারকে অবশ্যই পিছিয়ে আসতে হবে।
সমালোচনা করলে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’
প্রাণ খুলে সরকারের সমালোচনা করার আহ্বানের বিষয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘প্রাণ খুলে সমালোচনার কথা বলা হবে, সমালোচনা করলে বলা হচ্ছে যে সমালোচনা মানে ফ্যাসিবাদের দোসর…। এ ধরনের কথাবার্তা আমরা আওয়ামী লীগের সময়ও শুনতাম যে এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার, তার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। এটাই হচ্ছে অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতন্ত্রী ফ্যাসিবাদের আবহ।’
যমুনার সামনের সড়কে মানুষের চলাচল সীমিত করার সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ভিআইপি সংস্কৃতি বন্ধ না করে এই সরকার প্রমাণ করছে যে তারা কোনো ধরনের পরিবর্তন করতে চায় না। আমলাদের পদোন্নতি দিয়ে ব্যয় বাড়ানো, টাকা নেই বলে জনগণের ঘাড়ে ভ্যাটের বোঝা চাপানো, খেলাপি ঋণ আদায়ের চেষ্টা না করা এবং লুটেরাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত না করারও সমালোচনা করেন তিনি।
কারও সঙ্গে আলোচনা না করে ‘ভ্যাট’ (মূল্য সংযোজন কর) নামক একটা ভয়ংকর জিনিস জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত পাঁচ মাসে জিনিসপত্রের দাম কমেনি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে, ডলার ও টাকার বিনিময় হারের কারণে অনেক রকম অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামে বেসরকারি কারা পরিদর্শক নিয়োগ
বিএনপির কবজায় ৮ পদ অন্যদের ভাগে ৪
১৮ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আগের মতোই বেসরকারি কারা পরিদর্শক নিয়োগ নিয়ে ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি হয়েছে। একসময় নিরপেক্ষ দানবীর, সমাজসেবক ও মানবাধিকারকর্মীরা নিয়োগ পেতেন। আওয়ামী লীগ সরকার সেই ধারা ভেঙে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়োগ দিয়ে প্রথম বিতর্ক সৃষ্টি করে। ৫ আগস্টের পরও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। নিরপেক্ষ ও প্রকৃত সমাজসেবকদের নিয়োগের পরিবর্তে কারা পরিদর্শক হিসেবে রাজনৈতিক দলীয় ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়েছেন। ছাত্রলীগের জায়গায় এবার ছাত্রদল, মহিলা দল ও বিএনপির আট নেতা নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া নিয়োগ পেয়েছেন একজন ছাত্র সমন্বয়ক, এলডিপির একজন নেতা, একজন এনজিওকর্মী এবং একজন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে একসময় কারাগারে খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদারও রয়েছেন।
অলাভজনক পদ হলেও কারা পরিদর্শক হয়ে অতীতে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে কারাগারে জামিনে বন্দি মুক্তি বাণিজ্য, অবৈধ সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, নিষিদ্ধ মোবাইল, মাদক সরবরাহসহ নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১২ পদে নিয়োগ পেতে এবার বিএনপি ছাড়াও দেড় শতাধিক উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সমন্বয়ক ও মানবাধিকারকর্মী আবেদন করেছিলেন।
রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ না হলে কীভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, প্রশ্ন আনু মুহাম্মদের
২০ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
ধর্মনিরপেক্ষ না হলে একটা রাষ্ট্র কীভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে—এই প্রশ্ন তুলে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হচ্ছে রাষ্ট্র, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ—এসব বিষয়ে রাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে। রাষ্ট্র সবাইকে সমান অধিকার ও সুযোগ দেবে। কোনো রাষ্ট্র যদি এই অবস্থানটা না নেয়, তাহলে তো সে রাষ্ট্র এমনিতেই অন্য ধর্মাবলম্বীদের আলাদা করে দিচ্ছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথ: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপ্রধান হিসেবে সমাপনী বক্তব্য দেন তিনি। দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ বিশ্লেষণমূলক জার্নাল ‘সর্বজনকথা’। সর্বজনকথার সম্পাদক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, সংবিধান সংস্কারের একটা প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটা বাদ দেওয়া হয়েছে। এই শব্দটা বাহাত্তরের সংবিধানে ছিল। তিনি বলেন, ‘তাতে যে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ পেয়েছি, তা নয়। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও আমাদের বিভিন্ন সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল।…বর্তমান সরকার ও সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর কাছে এখন আমরা “ইনক্লুসিভ” (অন্তর্ভুক্তিমূলক) শব্দটা শুনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও কারও কাছ থেকে এই প্রশ্নও শুনি যে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ হব নাকি অন্তর্ভুক্তিমূলক হব? এই প্রশ্নটা আমি বুঝতে পারি না। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ না হলে একটা রাষ্ট্র কীভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে?’
আনু মুহাম্মদ বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হচ্ছে রাষ্ট্র, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ—এসব বিষয়ে রাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে। সে সবাইকে সমান অধিকার ও সুযোগ দেবে। কোনো রাষ্ট্র যদি এই অবস্থানটা না নেয়, তাহলে তো সে এমনিতেই অন্য ধর্মাবলম্বীদের আলাদা করে দিচ্ছে। সে কী করে অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে?
এ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ যাচ্ছে, কিন্তু বাদ দিয়ে কোথায় যাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্ম অনুযায়ী রাষ্ট্র চলবে, এটা যদি হয়, তাহলে ভারতে বিজেপি তো ঠিকই আছে। অথচ ভারতে মুসলমানদের জন্য প্রকৃত অর্থে একটা বড় নিরাপত্তার জায়গা হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। যে জন্য শাহি মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে ভারতের যত মুসলিম ধর্মীয় নেতা আছেন, সবার একটাই দাবি—ভারত যেন ধর্মনিরপেক্ষ থাকে এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং এখানে যারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে অস্বীকার করে, তারা ভারতের মুসলমানদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলছে।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেয়ালচিত্রগুলোকেই ঘোষণাপত্র হিসেবে বিবেচনার কথা উল্লেখ করে সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘সেখানে যে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও তাদের ঘনিষ্ঠ সংগঠনগুলো তা থেকে অনেক পেছনে আছে।’
মতপ্রকাশে বাধা ও বৈষম্য
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেখা যাচ্ছে, মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করা, সহিংসতা বা চাপ সৃষ্টি করা, হামলা-হুমকির একটা নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। সেটা অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মের নামে হচ্ছে। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানে সব ধর্ম-মত, নারী—সবাই অংশ নিয়েছে। তখন গণতান্ত্রিক চৈতন্যটা খুব শক্তিশালী ছিল। কিন্তু আন্দোলন শেষ হয়ে যাওয়ার পর অসহিষ্ণু বা নিপীড়ক একেকটা পক্ষ আবির্ভূত হচ্ছে।
পাকিস্তানের ২২ পরিবারের চেয়ে বাংলাদেশের ২২ পরিবার অনেক বেশি সম্পদশালী—এমন মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের সম্পত্তি ও লুণ্ঠনের প্রক্রিয়ায় এখনো ছেদ পড়েনি। সেই সম্পত্তি রাষ্ট্রের মালিকানায় নিয়ে আসার কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। কিন্তু সরকার বলছে তাদের টাকার অভাব এবং সে জন্য জনগণের ওপর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়েছে। দেশে বৈষম্য বৃদ্ধির বিষয়টা একটা সামগ্রিক নীতিকাঠামোর মধ্য দিয়েই এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এরশাদ, খালেদা জিয়া, হাসিনা দেখি। কিন্তু অদৃশ্য কিছু শক্তি আছে, যাদের আমরা অত বেশি চোখে দেখি না।’
শিল্প, কৃষি, অনানুষ্ঠানিক খাত, জ্বালানি-বিদ্যুৎ, শিক্ষা, চিকিৎসা—এসব জায়গায় কী ধরনের পরিবর্তন হলো, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ করতে গেলে তা অনুসন্ধান করে সামগ্রিক পরিকল্পনায় করতে হবে বলে উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এই পরিবর্তন করতে গেলে একটা অদৃশ্য সরকার দেখা যাবে। বাংলাদেশে একটা অদৃশ্য সরকার এসব নীতি প্রণয়ন করে, যারা কখনো আলোচনায় আসে না।
রাজনৈতিক দলেও প্রয়োজন সংস্কার
রাজনৈতিক দলগুলোরও সংস্কার বা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি দলগুলোর সুনির্দিষ্ট তিনটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।
আনু মুহাম্মদের মতে, রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব যাঁরা দেবেন, তাঁদের একটা অবসরের বয়স ঠিক করতে হবে। দলের সব পর্যায়ের কমিটি যেন নির্বাচনের মাধ্যমে হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় রাজনৈতিক দল তাকেই বলা যাবে, যে দলে সমাজের সব অংশ বা বৈচিত্র্যের (নারী-পুরুষ, অন্য লিঙ্গ, অন্যান্য ধর্ম, বিভিন্ন বিশ্বাস) প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সমালোচনা
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কড়া সমালোচনা করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, যে নীতিমালার কারণে শেখ হাসিনার এই লুণ্ঠন ও সম্পদ পাচারের মডেলটা দাঁড়িয়েছিল, সেই নীতিমালা প্রণয়নের প্রধান কারিগর হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি গোষ্ঠী। তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের ওপরই ভরসা করছে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, বাংলাদেশের কিছু পরামর্শক, অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ, আমলা এবং কিছু ব্যবসায়িক গোষ্ঠী—এদের সম্মিলিত একটা জোটের মধ্য দিয়ে অর্থনীতির এই দশা। ফলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলে আবার এদের ওপরই ভর করলে কোনো পার্থক্য হবে না।
অর্থনীতি দুর্বল হলে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না
২০ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
সরকারি চাকরিতে বৈষম্য ছাপিয়ে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার কারণে আগের সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার নানা সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামোর অর্থপূর্ণ সংস্কার না হলে অন্য কোনো রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক সংস্কার টেকসই হবে না।
আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথ: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ত্রৈমাসিক জার্নাল সর্বজনকথা ও জার্মান-বাংলাদেশ ফোরাম যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে। এতে সভাপ্রধান ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও সর্বজনকথার সম্পাদক আনু মুহাম্মদ, স্বাগত বক্তব্য দেন সুজিত চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে আমাদের মধ্যে নানা ধরনের আশা, আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বর্তমান দেশ গঠনপ্রক্রিয়ায় কোন জায়গায় ঘাটতি রয়েছে, কোথায় বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন—এসব নিয়ে পর্যালোচনার জন্য এ সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে।’
সেমিনারে সকালের অংশে অর্থনীতি বিষয়ে চারটি অধিবেশন ছিল। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বরূপ ও করণীয়’ বিষয়ে আলোচনা করেন লেখক ও প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা। তিনি বলেন, অর্থনীতি হচ্ছে দেশের অন্যতম একটি ভিত্তি। এই ভিত্তি দুর্বল রেখে ওপরে যত ধরনের সংস্কারের ইমারত তৈরি করেন না কেন, তা ধসে যাবে।
দীর্ঘ সময় স্বৈরশাসন থাকলে শাসনকাঠামোতে নানা ধরনের ক্ষত দেখা যায় উল্লেখ করে কল্লোল মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশেও সেটি হয়েছে। এই ক্ষত পুরোপুরি না সারিয়ে ওপরে ওপরে শুধু মলম (সংস্কার বোঝাতে) দিয়ে কোনো লাভ হবে না। মানুষ এই সংস্কার গ্রহণ করবে না। তিনি বলেন, সংস্কার করে খুব সুন্দর একটা সংবিধান বানাতে পারেন। কিন্তু সেই সংবিধান খাওয়া-পরার নিশ্চয়তা না দিলে ও অর্থনৈতিক বৈষম্য না কমালে মানুষ তা গ্রহণ করবে না; বরং আরেকটা স্বৈরাচারী শক্তি এসে এসব সংস্কারকে উল্টে দিতে পারে।
সরকারে যে দলই আসুক, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণের ক্ষমতা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেন কল্লোল মোস্তফা। তিনি বলেন, সংসদে ব্যবসায়ী ও তাঁদের প্রতিনিধিরা সবচেয়ে বেশি আসছেন। এ কারণে বিগত সময়ে রাষ্ট্রীয় নীতির মাধ্যমেও লুণ্ঠন হতে দেখা গেছে। এটি অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটি বড় কারণ। এখান থেকে সরে আসতে হবে।
নীতি ব্যর্থতায় বেড়েছে অনানুষ্ঠানিক খাত
সেমিনারে ‘বাংলাদেশের পাঁচ দশকে শিল্পায়নের ব্যর্থতা ও অনানুষ্ঠানিক খাতের বিকাশ’ বিষয়ে আলোচনা করেন গবেষক ও লেখক মাহা মির্জা। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ৮৫ শতাংশ শ্রমিক অনানুষ্ঠানিক খাতে যুক্ত। বিগত সরকারগুলোর ধারাবাহিক নীতি ব্যর্থতার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদেরাও অনানুষ্ঠানিক খাত নিয়ে কম আগ্রহী।
মাহা মির্জা আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনীতির বিকাশ করতে পেরেছিল; কিন্তু বাংলাদেশ ঠিক উল্টো পথে হেঁটেছে। দেশে গত পাঁচ দশকে একদিকে কৃষিকে অলাভজনক করা হয়েছে, অন্যদিকে শিল্পায়নের ব্যর্থতায় আনুষ্ঠানিক খাত বড় হয়নি। এ কারণে অনানুষ্ঠানিক খাত বড় হয়েছে।
‘কৃষকের ন্যায্যমূল্য ও খাদ্যপণ্যের সিন্ডিকেট: রাষ্ট্রের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় সাংবাদিক সাঈদ শাহীন বলেন, ব্যবসায়ীদের মজুত সক্ষমতার বিপরীতে রাষ্ট্র নিজের সক্ষমতা বাড়াতে পারেনি। এ কারণে বাজারে সিন্ডিকেট ও বেশি পরিমাণে মধ্যস্বত্বভোগীর উপস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষিতে আগের তুলনায় মূল্য সংযোজন বাড়লেও কৃষকের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। এ সরকার ধরেই নিয়েছে যে দেশের খাদ্য পরিস্থিতি ও কৃষকেরা ভালো আছেন। এ কারণে হয়তো এই খাতে কোনো সংস্কার কমিশন হয়নি।
‘অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ভূমিকা’ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, ‘বিগত সময়ে বিদ্যুৎ খাতে জনস্বার্থবিরোধী বিভিন্ন আইন ও চুক্তি হয়েছে। রাজস্ব আয়ের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে। অথচ মানুষ ঠিকভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এভাবে বিদ্যুৎ খাতে নানাদিক থেকে আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।’
গত ১৫ বছরে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে মোশাহিদা সুলতানা বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সার্বিকভাবে আমাদের জীবনযাত্রা ও মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা।’
‘ক্ষতিকর চুক্তি বাতিল করতে হবে’
সেমিনারে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, বিদ্যমান বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেগুলো বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কিংবা আর্থিকভাবে বোঝা হয়ে আছে, সেসব বাতিল করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এ ধরনের চুক্তি বাতিল করার অনেক উদাহরণ রয়েছে। সুতরাং দেশেও এ ধরনের চুক্তি বাতিল করা সম্ভব।
বিদেশি ঋণ নিয়েও প্রশ্ন তোলা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, কোনো দেশে কোনো সরকার যদি অনির্বাচিত হয়, জনধিক্কৃত হয় এবং তাদের নেওয়া কোনো প্রকল্প যদি জনগণের সম্মতির বিরুদ্ধে হয় এবং ওই প্রকল্প ঘিরে যদি জনগণের প্রতিবাদ থাকে, তাহলে সে প্রকল্পের ঋণ ও চুক্তির দায়দায়িত্ব অস্বীকার করার অধিকার ও ক্ষমতা দেশের জনগণের আছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট আরোপের সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, বাজেট ঘাটতির কথা বলে জনগণের ওপর ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত নয়।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে
২২ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করবে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে স্বতন্ত্র এই কাউন্সিল যোগ্য ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতি বরাবর সুপারিশ করবে।
এমন বিধান রেখে আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এ দিন বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই অধ্যাদেশের বিষয়বস্তুসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের কথা জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তমত প্রকাশ-সংক্রান্ত মামলা ও ‘গায়েবি’ মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিচারক নিয়োগের জন্য আইন দিয়ে যোগ্যতা নির্ধারণে ব্যবস্থার কথা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যকর ফলাফল দেখা যায়নি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে সুপারিশের জন্য ২০০৮ সালের ১৬ মার্চ ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন অধ্যাদেশ’ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংসদে এটি আইন হিসেবে পাস হয়নি। সর্বোচ্চ আদালতে দলীয় বিবেচনায় বিচারক নিয়োগের অভিযোগ অনেক দিনের। বিভিন্ন সময় নীতিমালা বা আইন প্রণয়ন করে বিচারক নিয়োগের দাবি উঠেছে।
ধর্ম, সংস্কৃতি এবং সংখ্যালঘু-প্রান্তিক জনগোষ্ঠি
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ট্রাম্প
০১ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্তমানে বাংলাদেশ পুরোপুরি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চার দিন আগে বৃহস্পতিবার এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে এসব কথা বলেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির নেতা ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, ‘আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দেশটিতে দলবদ্ধভাবে তাঁদের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’
‘ব্যবসায়ী ও তৌহিদি জনতা’র বাধা, শোরুম উদ্বোধন করতে পারেননি মেহজাবীন
০৩ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
চট্টগ্রাম নগরে বাধার মুখে শোরুম উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারলেন না অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন সড়কের রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় খুকি লাইফ স্টাইল নামের শোরুমের উদ্বোধন করার কথা ছিল তাঁর।
মেহজাবীন চৌধুরীকে দিয়ে খুকি লাইফ স্টাইলের শোরুমের উদ্বোধনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানায় ‘রিয়াজউদ্দিন বাজারের সর্বস্তরের ব্যবসায়ী ও তাওহীদি জনতা’। বিকেলে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আগে শোরুমের সামনের এলাকায় অবস্থান নেন ৫০–৬০ জন ব্যক্তি। তাঁরা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মুসল্লি বলে পুলিশ জানায়।
শিল্পকলায় বিক্ষোভের মুখে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ
০৩ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
শিল্পকলা একাডেমিতে বিক্ষোভের মুখে একটি নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
দেশ নাটক প্রযোজিত নাটক নিত্যপূরাণ মঞ্চায়নের সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে বিক্ষোভ করেন ২০ থেকে ২৫ ব্যক্তি। এ অবস্থায় নাটকটির মঞ্চায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দেশ নাটকের মুখ্য পরিষদ প্রধান মাসুম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালায় নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছিল। এ সময় ফটকের বাইরে ২০ থেকে ২৫ ব্যক্তি স্লোগান দিয়ে নাটক বন্ধ করতে বলেন। দেশ নাটকের নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ ছিল—ওই ব্যক্তি স্বৈরাচার সরকার আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে কাজ করেছেন। ফলে তাঁর অংশগ্রহণে নাটক মঞ্চস্থ হতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার একপর্যায়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে নাটক আবার শুরু হয়। তবে আবারও ফটকের কাছে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং কেউ কেউ দেয়াল টপকে শিল্পকলার ভেতর প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় নাটক বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় দেশ নাট্যগোষ্ঠী।
চট্টগ্রামে ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে সংঘর্ষ, ফাঁকা গুলি, সাত পুলিশ সদস্য আহত
০৬ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ধর্মীয় সংগঠন নিয়ে দেওয়া পোস্ট শেয়ার করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে একদল বিক্ষোভকারীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁদের মধ্যে একজন সামান্য অ্যাসিডদগ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার হাজারী গলি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, হাজারী গলি এলাকার মো. ওসমান নামের এক দোকানদার কয়েক দিন আগে তাঁর ফেসবুকে হিন্দুদের ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের নাম উল্লেখ করে একটি পোস্ট শেয়ার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোক আজ সন্ধ্যার দিকে তাঁর দোকানে গিয়ে হামলা চালায়। ওই সময় তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সেখানে যান। ওসমানকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন তাঁকে তাদের হাতে তুলে দিতে দাবি জানায়। ওই সময় তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে ওসমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
হেফাজত নেতাদের চাপে নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা আয়োজনের অনুমতি বাতিল
২১ নভেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কাশিপুরের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে ‘মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি’ প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘মহতি সাধু সঙ্গ ও লালন মেলা’ আয়োজনের অনুমতি বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। নিরাপত্তার কারণ এবং স্থানীয় হেফাজত নেতাদের আপত্তির জেরে এই অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, ‘এই মেলা বন্ধের জন্য স্থানীয় হেফাজতের নেতারা দাবি জানিয়েছেন। মেলার অনুমতি দেয়া হলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় আমরা লালন মেলার অনুমতি প্রদান করিনি।’
এর আগে, গত ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা এই মেলাকে ‘ঈমান-বিধ্বংসী’ আখ্যা দিয়ে মেলা বন্ধে মিছিল করেন। পরে মুক্তিধাম আশ্রমের অদূরে জড়ো হয়ে সেখানে বক্তব্য রাখেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী সমাজ গঠনের ডাক
২৪ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
শহীদ মিনারের উন্মুক্ত পাদদেশে বহু রঙের থান কাপড় পেঁচিয়ে মঞ্চের নেপথ্য–কাঠামো তৈরি করা। তার সঙ্গে রেখাচিত্রে আঁকা বিভিন্ন জাতি–ধর্মের মানুষের মুখাকৃতি আটকে রাখা। তার সামনে এসে একে একে বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন ম্রো, চাকমা, সমতলবাসী নারী ও পুরুষেরা। ধর্ম–বর্ণ–শ্রেণি–ভাষা–লিঙ্গ মিলেমিশে একাকার। পরিবেশনাতেও ছিল বিপুল বৈচিত্র্য। পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে আলোচনা। সেখানেও উঠে এল সব ধরনের বৈষম্যের অবসান করে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক শক্তিশালী সমাজ গঠনের আহ্বান।
‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ নামের এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে গত ২২ আগস্ট গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি গঠিত হয়। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সমবেত যন্ত্রবাদন দিয়ে। জাতীয় সংগীতের সুর পরিবেশন করেন যন্ত্রশিল্পীরা।
আলোচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশ বহু জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ ও ভাষার দেশ। দেশ কেবল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ কারও নয়। প্রকৃতির মধ্যে বৈচিত্র্য আছে বলেই প্রকৃতি বিকশিত হয়েছে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করলেই সমাজ শক্তিশালী হবে। যে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান করেছে। দেয়ালে দেয়ালে শিক্ষার্থীরা যেসব গ্রাফিতি এঁকেছেন, সেখানেও উঠে এসেছে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত একটি সমাজ গঠনের আকাঙ্ক্ষা। তাই সবাই মিলে এ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তার
২৫ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাঁকে গ্রেপ্তার করার কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক।
রেজাউল করিম বলেন, পুলিশের একটি অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ডিবি গ্রেপ্তার করেছে। যারা আবেদন করেছে, তাদের কাছে তাঁকে হস্তান্তর করা হবে।
সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার প্রথম আলোকে বলেন, আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে যায় ডিবি। তাঁর ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল।
চিন্ময়ের গ্রেপ্তার ঘিরে সংঘাত, চট্টগ্রামে আইনজীবী নিহত
২৭ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামে সংঘর্ষ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীর এই সংঘাতের সময় চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫) নিহত হয়েছেন। আহত হন অন্তত ২০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে।
সোমবার ঢাকায় গ্রেপ্তার চিন্ময়কে গতকাল চট্টগ্রামের মহানগর আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে কড়া নিরাপত্তায় গতকাল আদালতে আনার পর থেকেই সেখানে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন জড়ো হতে থাকেন। আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের কয়েক জেলায় চিন্ময়ের অনুসারীরা বিক্ষোভ করেছেন। এদিকে আইনজীবী আলিফ হত্যার বিচার দাবি করে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এ ঘটনায় আজ আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলার ঘটনায় একজন নিহত
২৭ নভেম্বর ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন
শেরপুরের খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার (রহ.) ওরফে দোজা পীরের দরবারে (মুর্শিদপুর পীরের দরবার) হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে হাফেজ উদ্দিন (৩৯) নামে ওই ব্যক্তি মারা যান।
এর আগে ওই দরবারে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আট জনকে আটক করে।
শেরপুরে পীরের দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা
২৯ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর গ্রামের মুর্শিদপুর খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবার শরিফ ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই দরবারে হামলা চালানো হয়। সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ দরবারের নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও জনস্রোতের কারণে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
দরবারের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দরবারে লুটপাট চালানো হয়। গরু, মহিষ, ছাগল, দুম্বা, পুকুরের মাছসহ সব মালপত্র নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে দরবারে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, প্রায় ১৫ কোটি টাকার মালপত্র লুট হয়েছে। দরবারের গাছ পর্যন্ত কেটে নিয়ে গেছে লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ভোরে ৪০০-৫০০ লোক দরবারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় দরবারের খাদেমসহ পীরের মুরিদদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। গুরুতর আহত লছমনপুর কান্দা শেরীরচর গ্রামের হাফেজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি গত বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা আবারও দরবারে হামলা করে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় জমশেদ আলী কলেজ মাঠে নিহত হাফেজ উদ্দিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা ভোর থেকেই মুর্শিদপুর দরবার শরিফ এলাকায় এবং কুসুমহাটি বাজার এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শক্ত অবস্থান নেন। কিন্তু বেশ কয়েকটি রাস্তা দিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন দরবারে ঢুকে হামলা করে।
চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় তিন মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর
২৯ নভেম্বর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিনটি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে নগরীর পাথরঘাটার হরিশ চন্দ্র মুন্সেফ লেইনে শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দির, সংলগ্ন শনি মন্দির ও শান্তনেশ্বরী কালী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে মন্দির পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।
তারা বলছেন, কয়েকশ লোক বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে মন্দির লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে এবং শনি মন্দিরে ভাঙচুর করে। অন্য দুই মন্দিরের ফটক ভাঙচুর করা হয়।
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকারে রাখার দাবিতে ড. ইউনূসকে খোলা চিঠি
২৬ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন।
সোমবার সংগঠনটির যুগ্ম সমন্বয়কারী ও মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন এবং আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর সই করা এক খোলা চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
এতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগসন্ধিক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে, যা ইতোমধ্যে ন্যায়বিচার, শান্তি এবং জাতীয় ঐক্যের জন্য নতুন করে আশা তৈরি করেছে। আমরা বিশ্বাস করি এই সরকার আমাদের দেশমাতৃকাকে গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত করবে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন সরকারের অভিযাত্রায় আমরা ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনার নতুন বাঁকে এসে দাঁড়িয়ে আছি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২৬ বছর ধরে চুক্তির মূল উপাদানগুলো অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসী জনগণ এবং সারা দেশের নাগরিকদের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, বরং বাংলাদেশের সকল আদিবাসীদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখা এবং একই সাথে দেশের জাতীয় ঐক্যের জন্য অপরিহার্য। প্রায় দুই বছর সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন অক্লান্তভাবে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পক্ষে জনগণকে সম্পৃক্ত করে কাজ করে আসছে। পাহাড়ি জনগণ এবং বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর যাতে একই সাথে উচ্চস্বরে এবং স্পষ্টভাবে শোনা যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের আন্দোলন পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সারাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র-যুব ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ করেছে।
ছিলেন না কোনো আইনজীবী, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন শুনানি পিছিয়েছে
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি পিছিয়েছে। আজ মঙ্গলবার অবকাশকালীন আদালতের বিচারক চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় আদালত জামিন শুনানি পিছিয়ে দেন।
আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু শুনানিতে আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। যার কারণে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সময়ের আবেদন করা হয়। আদালত তা মঞ্জুর করে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
‘ধর্ম অবমাননা’: সুনামগঞ্জের হিন্দু বাড়িতে হামলা, যুবক আটক
কয়টি বাড়িতে হামলা হয়েছে জানতে চাইলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওসি জাহিদুল হক বলেন, “সেটি হিসাব করা হয়নি। ফেইসবুকে পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে ঘটনটি ঘটেছে।”
‘ধর্ম অবমাননা’: সুনামগঞ্জের হিন্দু বাড়িতে হামলা, যুবক আটক
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার একটি গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মংলারগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক জানান।
এ ঘটনায় পুলিশ মংলারগাও গ্রামের প্রফুল্ল দাসের ছেলে আকাশ দাসকে (২০) আটক করেছে; যার বিরুদ্ধে আরেকজনের ফেইসবুক পোস্টে গিয়ে ধর্মকে অবমাননা করে কমেন্ট করার অভিযোগ তুলেছে এলাকার কিছু লোকজন।
সংখ্যালঘুদের ‘টার্গেট’ করে সহিংসতার ঘটনায় ৮৮ মামলা, ৭০ জন গ্রেপ্তার
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
দেশে গত ৫ আগস্ট থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের টার্গেট (লক্ষ্য) করে সহিংসতার ঘটনায় ৮৮টি মামলায় ৭০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপরের ঘটনাগুলোর বিষয়েও মামলা হয়েছে। সেই তালিকাও পুলিশ করছে। এ কারণে মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বাড়বে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম এসব তথ্য জানান। পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি এসব তথ্য জানান।
সাম্প্রদায়িক যোগসূত্র মেলেনি ৯ মৃত্যুর আটটিতে
১২ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর হামলায় ৪ আগস্ট নিহত হন হবিগঞ্জ সদরের রিপন চন্দ্র শীল। তাঁর ছোট ভাই শিপন চন্দ্র শীল আগের দিন পুলিশের গুলিতে আহত হন। অভ্যুত্থানে শহীদের সরকারি তালিকায়ও আছে রিপন শীলের নাম। তবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের তালিকায় রিপন শীলকে সংখ্যালঘু নিপীড়নে নিহত দাবি করা হয়েছে।
গত ১১ অক্টোবর পৌর শহরের অনন্তপুর আবাসিক এলাকার রিপনের বাসায় গিয়েছিলেন সমকালের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি। সেদিন তাঁর মা রুবী রানী শীল, বোন চম্পা শীল এবং ভাই শিপন শীল নিশ্চিত করেছিলেন, শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর আন্দোলনে অংশ নিয়ে রিপন শীল প্রাণ হারান।
হবিগঞ্জ ছাত্রদল সভাপতি শাহ রাজিব আহমেদ রিংগন সমকালকে বলেন, রিপন শীল ছিলেন বিএনপিকর্মী। ৪ আগস্ট বিকেলে হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হাজার হাজার আন্দোলনকারীর প্রতিরোধে টিকতে না পেরে তৎকালীন এমপি আবু জাহিরের বাসায় অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীরা বাসাটি ঘেরাওয়ের সময় রিপন শীল ছিলেন সামনের সারিতে। আবু জাহিরের বাড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে তিনি শহীদ হন।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পরিসংখ্যানে ৪ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা ২ হাজার ১০টি। হত্যাকাণ্ড হয়েছে ৯টি। ভুক্তভোগী পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। আটটি হত্যায় সাম্প্রদায়িক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, জমি ও টাকা নিয়ে বিরোধ, পূর্বশত্রুতার জেরে নিহত হয়েছেন ছয়জন। থানা ঘেরাওয়ের সময় জনতার পিটুনিতে নিহত হয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। হৃদরোগে মারা গেছেন একজন। আরেকজনের খুনের কারণ এখনও অজানা। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে আটটি।
সুনামগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি, দোকানপাট ও স্থানীয় লোকনাথ মন্দির ভাঙচুর ও ক্ষতি করার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে।
আজ শনিবার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ৩ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার মংলারগাঁও গ্রামে আকাশ দাস (২০) তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে অবমাননাকর পোস্ট দেন। পোস্টটি ডিলিট করা হলেও স্ক্রিনশট নিয়ে এলাকার জনগণের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ পেয়ে দোয়ারাবাজার থানা-পুলিশ আকাশ দাসকে ঘটনার দিন আটক করে এবং সেই সময় স্থানীয় লোকজন আকাশ দাসকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁকে দোয়ারাবাজার থানায় না নিয়ে সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
নাটোরে মহাশ্মশানে ডাকাতি, মন্দিরে লুটপাট, সেবায়েতকে হত্যা
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি অনলাইন
নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার সেবায়েত তরুণ চন্দ্র দাসকেও হত্যা করা হয়েছে। লুটপাট করা হয়েছে মন্দিরে।গতকাল শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
নিহত তরুণ চন্দ্র দাস (৫৫) নাটোর শহরের আলাইপুর ধোপাপাড়া মহল্লার মৃত কালিপদ দাসের ছেলে। তিনি প্রায় দুই যুগ ধরে মহাশ্মশান মন্দিরেই থাকতেন।
মহাশ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সত্য নারায়ণ রায় টিপু সেবায়েত হত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শনিবার সকালে মহাশ্মশান মন্দিরেরর সদস্যরা ভোগ ঘরে গেলে সেবায়েত তরুণের হাত-পা বাঁধা মরদেহ দেখতে পান। তরুণ ২৩ বছর ধরে মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্বে ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
সত্য নারায়ণ রায় টিপু বলেন, ‘মন্দিরের দান বাক্সের ও ভান্ডার ঘরের তালা ভাঙ্গা এবং গ্রিল কাটা ছিল। সম্ভবত তরুণকে হত্যা করে ডাকাতরা মন্দিরের টাকা এবং কাঁসা পিতলের বাসনপত্র নিয়ে গেছে।’
বান্দরবানে ত্রিপুরা পাড়ায় ১৭ ঘরে আগুন দিলো দুর্বৃত্তরা, পাড়াবাসী ছিল বড়দিনের উৎসবে
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন
বান্দরবানের লামা উপজেলায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একটি পাড়ায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ১৭টি বসতঘর ভস্মীভূত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বেতছড়া ত্রিপুরা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামূল হক ভূঞা।
পাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বেতছড়া ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা বড়দিনের উৎসব পালন করতে পাশের এলাকায় অবস্থান করছিলেন। মধ্যরাতে হঠাৎ পাড়ার বাড়িঘরে আগুন দেখতে পান। সেখানে গিয়ে দেখেন পুরো পাড়া পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে তাদের ঘরের আসবাবপত্র, সোলার, হাঁড়ি-পাতিল, পোশাক ও কাগজপত্রসহ সবকিছু পুড়ে যায়। বর্তমানে তারা ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া পাড়ায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।
পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন-চার বছর আগে একদল লোক এসে দাবি করে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের স্ত্রীর নামে ওই পাড়ার জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তারা পাড়ার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে সেখানে একটি বাগান করেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই পাড়ার বাসিন্দারা আবার সেখানে এসে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। এরপর থেকে দখলদাররা আবারও উৎপাত শুরু করে। দেওয়া হয় পাড়ার বাসিন্দাদের হুমকি-ধমকি।
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল হত্যার তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছে না: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে (আলিফ) হত্যার ঘটনায় মামলার তদন্তপ্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। সংগঠনটি বলছে, এই হত্যা মামলা ঘিরে গ্রেপ্তার–বাণিজ্যের স্বার্থ আর সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে ফায়দা লোটার গোষ্ঠীস্বার্থ সমান্তরালভাবে সচেষ্ট।
‘চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ড–পরবর্তী পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন: পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। আজ রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করে।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গত ২৫ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। তার পরদিন তাঁকে চট্টগ্রাম আদালতে উপস্থিত করা হলে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার শিকার হন।
চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করতে গত ২৩ ডিসেম্বর গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রামে যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আজ তাদের পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব তুলে ধরল।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি জানায়, আইনজীবী সাইফুল হত্যাকাণ্ড ও সংঘাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৯০ জনকে নাম উল্লেখ করে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং ২ হাজার ৪০০ জনের অধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি থাকার কারণে গ্রেপ্তার–বাণিজ্য চলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিজন কলোনির ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা বাদে বেশির ভাগ পুরুষই বাড়ির বাইরে পালিয়ে আছেন বলেও উল্লেখ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
৪৩তম বিসিএস: বাদপড়া ১৬৮ জনের মধ্যে ৭১ জনই সংখ্যালঘু
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ভোরের কাগজ
এক বছর আগে থেকে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগের আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে; নতুন তালিকায় ১ হাজার ৮৯৬ জন নিয়োগ পাচ্ছেন। এতে এবার বিভিন্ন ক্যাডারের ১৬৮ জন প্রার্থী বাদ পড়েছেন। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের ১৫ জানুয়ারি ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগে চাকরিতে যোগ দিতে বলেছে। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।
আগের প্রজ্ঞাপনে ২ হাজার ৬৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল; যেখান থেকে এবার নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়লেন ১৬৮ জন। বাদপড়াদের মধ্যে ৭১ জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে। সোমবার রাত থেকে বাদপড়াদের আহাজারিতে ‘ফেসবুক’ ভারাক্রান্ত।
এর আগে এই বিসিএস থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া ২ হাজার ১৬৩ জনের মধ্যে থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্যাডারে ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে ১৫ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন করে নিয়োগ দিয়েছিল। সবশেষ প্রজ্ঞাপনের পর সব মিলিয়ে ৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়লেন মোট ২৬৭ জন। পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর পিএসসি চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। সোমবারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসির সুপারিশ পাওয়া ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীকে সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের প্রবেশ পদে নিয়োগ দেয়া হল। নতুন প্রজ্ঞাপনে সই রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নব-নিয়োগ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. উজ্জল হোসেনের। বাদ পড়াদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতনরা বলতে পারবেন।
‘বিসিএস স্বপ্ন’ পূরণ হয়েও হলো না ২২২ জনের, কেন বাদ পড়েছেন – জানে না কেউ
১ জানুয়ারি ২০২৫,বিবিসি নিউজ বাংলা
বাংলাদেশে ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সরকারি চাকরিতে ক্যাডার হিসেবে নিয়োগের জন্য প্রথম দফায় যাদের গেজেটভুক্ত করা হয়েছিলো, তাদের মধ্যে ১৬৮ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন গেজেট প্রকাশের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এই ১৬৮ জনের মধ্যে অন্তত ৭১ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, মানে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ১৫ই অক্টোবর যখন প্রথম দফার গেজেট প্রকাশ হয় সে সময়েই ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে গেজেট করেছিলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তখন যাদের বাদ দেয়া হয়েছিলো তার মধ্যে ৪৫ জন স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আর বাকি ৫৪ জন সরকারের ইচ্ছাতেই বাদ পড়েছিলো।
ময়মনসিংহে কাওয়ালি বন্ধের পর ভাঙা হল ২০০ বছরের মাজারটিও, আতঙ্ক
রাত ১১টায় কয়েকশ মাদ্রাসা ছাত্ররা গিয়ে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা চালায়; এরপর রাত ৩টার দিকে গিয়ে তারা মাজারটির একটি অংশ ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।
ময়মনসিংহে কাওয়ালি বন্ধের পর ভাঙা হল ২০০ বছরের মাজারটিও, আতঙ্ক
০৯ জানুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে হযরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহ (রাঃ)-এর মাজারে মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠান হামলা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর গভীর রাতে কয়েকশ মাদ্রাসা ছাত্র গিয়ে হামলা চালিয়ে ২০০ বছরের পুরনো মাজারটির একটি অংশও ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে।
বুধবার রাতে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শহরের রাজনৈতিক নেতা, সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। এ ঘটনায় শহরে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাত ১১টার দিকে নগরীর থানার ঘাট এলাকায় অনুষ্ঠান চলাকালে কাছের জামিয়া ফয়জুর রহমান রহ: মোমেনশাহী বড় মসজিদ মাদ্রাসার কয়েকশ ছাত্র গিয়ে সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। শিল্পীরা সেখান থেকে সরে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
ছাত্ররা মঞ্চ, শামিয়ানা, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। এ সময় বাধা দিতে এসে ছাত্রদের মারধরে কয়েকজন আহত হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গানের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর রাত ৩টার দিকে মাদ্রাসা ছাত্ররা গিয়ে মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তখন অবশ্য সেখানে খুব বেশি মানুষ ছিল না। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পর ছাত্ররা চলে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে খবর পেয়ে সেখানে জড়ো হতে থাকেন ভক্ত-আশেকানরা। একেবারে থানার ঠিক উল্টো দিকে এ ধরনের হামলার ঘটনায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ, যুক্ত হলো নতুন গ্রাফিতি
১২ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
আপত্তির মুখে নবম ও দশম শ্রেণির একটি পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ইতিমধ্যে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া এই বইয়ের অনলাইন ভার্সন বা পিডিএফে আগের সেই গ্রাফিতি বাদ দিয়ে নতুন একটি গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের একটি অংশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তাদের ভাষ্য, সংবিধান অনুযায়ী আদিবাসী শব্দটি ব্যবহারের সুযোগ নেই। সংবিধানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের নতুন পাঠ্যবইয়ে গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে নানাভাবে উঠে এসেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা। এর মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ থাকা একটি গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এর প্রতিবাদ জানিয়ে তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামে একটি সংগঠন। আদিবাসী শব্দটি বাতিলসহ কয়েকটি দাবিতে এই সংগঠনের ব্যানারে আজ রোববার মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ঘেরাও করে বিক্ষোভ করা হয়।
‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির’ আহ্বায়ক মোহাম্মদ জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, আজ তাঁদের বিক্ষোভ চলাকালে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিরা তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে তাঁরা জানিয়েছেন ভুল থেকে এটি হয়েছিল। এটি তাঁরা আজকের (রোববার) মধ্যেই সংশোধন করবেন। এ ছাড়া কারা এটি করেছেন, সেটি তাঁরা তদন্ত করে বের করবেন।
এনসিটিবির সামনে কর্মসূচি চলাকালে হাতাহাতি ও হামলা, অনেকে আহত
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না রাখা নিয়ে দুই পক্ষের বিক্ষোভ কর্মসূচির চলাকালে হাতাহাতি ও হামলা হয়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন।
আজ বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতি সংযোজনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ ৫ দফা দাবিতে আজ সকালে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ নামের একটি সংগঠন।
অন্যদিকে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একদল মানুষ পাঠ্যবইয়ে গ্রাফিতিটি পুনর্বহালের দাবিতে এনসিটিবির সামনে কর্মসূচি পালন করতে যায়।
ঘটনাস্থলে অবস্থান করে দেখা যায়, এনসিটিবির সামনে আগে থেকেই ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’র ব্যানারে একদল লোক অবস্থান নিয়ে ছিলেন। পরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেখানে যায় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারধারীরা।
সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে কর্মসূচিটি ছিল পূর্বনির্ধারিত। স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির ব্যানারেও সেখানে গতকাল কর্মসূচি দেওয়া হয়।
সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে সমবেত মানুষেরা এনসিটিবির সামনে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পুলিশ গিয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে মাঝে অবস্থান নেয়। তখন দুই পাশ থেকে দুই পক্ষ পরস্পরবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিল। ঘটনাস্থলে অবস্থান করে দেখা যায়, বেলা একটার কিছু সময় পর কিছু লোক সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে আসা মানুষের ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন আহত হন, তাঁদের মধ্যে একজন নারী।
প্রকাশ্য জনসভায় ‘কতলের’ পক্ষে যুক্তি দিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর
২৪ জানুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
সবাইকে শুধু আহ্বান জানিয়ে হবে না, প্রয়োজনে মারধর, এমনকি ‘কতল’ করার কথাও বললেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী।
তিনি বলেছেন, “এগুলারে পিডান লাগবে, কতল করা লাগবে, এগুলারে মাইর ছাড়া কোনো উপায় নাই। এগুলা দাওয়াতে ফেরবে না।”
শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ।
তিনি বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নর্সের একজন সদস্য এবং বরিশালের চরমোনাই আহছানাবাদ রাশিদিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ১৮ নভেম্বর সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নর্স পুনর্গঠন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইসলামের সমুন্নত আর্দশ ও মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসার কার্যক্রমকে বেগবান করার লক্ষ্যে নানা কাজ করে থাকে বলে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থার ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে।
ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলনের সম্মেলনে সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ বলেন, “হাসিনা ভারত সরকারের পুতুল হিসেবে ছিল। তুমি যেমনে নাচাও তেমনে নাচি পুতুলের কী দোষ। এখন তাদের ফিরিস্তি বাইর হচ্ছে। শেখ হাসিনা কত লক্ষ কোটি টাকা পাচার করছে। তার ছেলে জয়, মেয়ে পুতুল, তার বোন রেহানা লক্ষ লক্ষ টাকা পাচার করছে।.. …
সবাইকে শুধু ‘দাওয়াত’ করে পথে আনা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দাওয়াত দিয়া সব মানুষ হেদায়েত হবে? … (আরবিতে কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে) তাহলে কেসাসের কথা, খুনের পরিবর্তে খুন- আল্লাহ কেন এই আয়াত নাজিল করল? আল্লাহ জানেন, তার কিছু বান্দা আছে এরা চতুস্পদ জানোয়ারের চেয়ে, গরুর দলের চেয়ে খারাপ। এগুলারে পিডান লাগবে, কতল করা লাগবে, এগুলারে মাইর ছাড়া কোনো উপায় নাই। এগুলা দাওয়াতে ফেরবে না। এই যে দলিল।”
ইসলামী আন্দোলনের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, “যে সমস্ত ইসলামপন্থিরা বলে দাওয়াত দিয়া সব হেদায়েত হবে, এটা সম্পর্ণ কোরআন-হাদিস বিরোধী কথা। আপনাকে প্রয়োজনে মারতে হবে। আপনাকে লড়তে হবে প্রয়োজনে।”
সম্প্রতি কদমতলীতে একটি আয়োজন ‘ধ্বংস’ করার উদাহরণ দিয়ে মোসাদ্দেক বিল্লাহ বলেন, “পরশুদিন আমাদের এই কদমতলীতে ওরা বিশাল ডেকপার্টি করছে। যত বলে কেউ শোনে না। শতশত আমাদের মুসল্লি ভাইয়েরা তাওহিদি জনতা যাইয়া পিডাইয়া নাস্তানাবুদ করে, সব ধ্বংস করে দিছে। উলঙ্গ মহিলা প্রায় ২৫ জন ছিল।
“কালকে … মাদ্রাসায় প্রোগ্রাম করছি। সেখানেও সব পিডাইয়া লড়াইছি। এগুলা এমনে যায়? এগুলারে মারতে হবে। এই যে আমরা এগুলা বাদ দিছি, আমি সেই হাদিসটাই বলছি। যখন তোমরা তোমাদের ঘরে, সমাজে, রাষ্ট্রে অন্যায় দেখবা, প্রথমে শক্তি দিয়া ফিরাইবা। ঈমানের শক্তি না থাকলে তাকে মুখে মুখে বল। খালি মনে মনে ঘৃণা করলে হবে না, সবচেয়ে দুর্বল ঈমান হচ্ছে ওইটা।”
ছয় মাসে ৮০ মাজারে হামলা, বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
দেশে গত ৬ মাসে ৮০টি মাজার ও দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিশ্ব সুফি সংস্থা নামের একটি সংগঠন। কারা এসব হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে, এ বিষয়ে সংগঠনটি স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। সংগঠনের নেতারা বলছেন, এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব সুফি সংস্থার ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়েছে। সংগঠনটি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, এটি দরবার, খানকা ও আস্তানাগুলোর কর্ণধার এবং ওলি-দরবেশ-সাধকদের মাজারের তত্ত্বাবধায়কদের সমন্বয়ে গঠিত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন।
ধামরাইয়ে ভেঙে দেওয়া হলো একটি মাজার
২৪ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
মাজারটির প্রাচীর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ভেঙে ফেলা হয়েছে মাজার। পাশেই আরেকটি থাকার ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। দোচালা টিনের অপর ঘরটির দুই পাশের টিনের কিছু অংশে আঘাতের চিহ্ন। বারান্দায় বসে মলিন মুখে মাজারটি দেখছিলেন আমেনা বেগম (৭৫)।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার ধামরাই উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুন নালাই গ্রামের মৃত শুকুর আলীর বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শুকুর আলী শাহ ফকিরের মাজার ভাঙচুরসহ একটি বসতঘর ভাঙচুর এবং আরেকটি বসতঘরের দুই পাশের টিনের বেড়ার কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। এ ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে শুকুর আলীর দুই ছেলে তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ধামরাই ওলামা পরিষদ, ইমাম পরিষদের নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় কয়েকটি মসজিদ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কয়েকজন এ ঘটনায় জড়িত।
গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের অধিকার
গণমাধ্যমের ওপর হামলা-হুমকি বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থী: টিআইবি
০৬ নভেম্বর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ, নির্বিচারে মামলা, ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে হেনস্তার উদ্দেশ্যে স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা বৈষম্যহীন ‘নতুন বাংলাদেশ’র অভীষ্টের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনবে না উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করে।
‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি ফাঁকা বুলি’ প্রশ্ন তুলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের জন্য ভয়হীন পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। একইসঙ্গে, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার চর্চা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ
০৫ নভেম্বর ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিপন্থী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ এ আহ্বান জানায়।
এতে বলা হয়, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ও এর মধ্য দিয়ে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি হলো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। অন্তর্বর্তী সরকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ থেকে এ প্রতিশ্রুতি বারবার ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্পাদক পরিষদ অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা অক্ষুন্ন রাখার পরিবেশ নিশ্চিতের এ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এখনো সমাজের কোনো কোনো অংশ থেকে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতার ওপর নানাভাবে আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে দেশের শীর্ষ কয়েকটি মুদ্রিত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা-ঘেরাওয়ের হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি পত্রিকা তাদের প্রধান কার্যালয়ের নিরাপত্তা চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আবেদনও করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দ্রুতগতিতে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ্য।’
ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায়: সম্পাদক পরিষদ
১২ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের অন্তরায় বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ। আজ মঙ্গলবার সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ এক বিবৃতিতে এই কথা জানান।
এতে বলা হয়, তিন দফায় মোট ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি)। এ তালিকায় অনেক পেশাদার ও সক্রিয় সাংবাদিক এবং সম্পাদকের নামও রয়েছে, যা সম্পাদক পরিষদ ও এর সদস্যদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, স্কুলশিক্ষককে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ
১৮ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট দেওয়ায় খুলনার কয়রায় এক স্কুলশিক্ষককে তুলে নিয়ে মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেদকাশী কাঁচারি বাজার জামায়াত কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। এ সময় ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দেওয়ার সিদ্ধান্তে ওই শিক্ষককে ছেড়ে দেওয়া হয়।ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং সংক্রান্ত কোর্স
ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম বি এম হুমায়ুন কবির। তিনি বেদকাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এলাকায় খোঁজ নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তিনি প্রায় ফেসবুকে হাস্যরসমূলক পোস্ট দেন। ২০২৩ সালে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অর্থপাচার নিয়ে একটি পোস্ট দেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের রোষানলে পড়েন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে চেক প্রতারণা মামলায় কারাগারে যাওয়ায় চাকরি থেকে তিনি বরখাস্ত হয়েছেন।
টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেডে সরলো প্রথম আলোর সামনে ‘জেয়াফত’
২৪ নভেম্বর ২০২৪, সাম্প্রতিক দেশকাল
রাজধানীর কাওরান বাজারে দৈনিক প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া লোকজনকে সরাতে টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসময় এক শিশুসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আজ রবিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরের পর থেকে একদল লোক প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছিল।
তারা সেখানে গরু জবাই করে ‘জেয়াফতের’ আয়োজনও করেছিল। তাদের অবস্থানের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। অবস্থানকারীদের সরিয়ে দিতে তারা বারবার কথা বলেন। কিন্তু অবস্থানকারীরা সেখানে রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করে সরে যাবেন বলে জানান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধ না শোনায় সন্ধ্যার পর টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে অবস্থানকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
প্রথম আলোর সামনে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা, সরিয়ে দিল যৌথ বাহিনী
২৫ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনের সড়কে আজ রোববার দিনভর অবস্থান নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে একদল ব্যক্তি। এ কারণে রাজধানীর বৃহত্তম কাঁচাবাজারের আড়ত কারওয়ান বাজারের প্রধান সড়কটিতে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বারবার তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করে।
পরে সন্ধ্যায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যৌথ বাহিনী তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
এ সময় বিশৃঙ্খলাকারীদের আঘাত ও তাদের ছোড়া ইটপাটকেলে পুলিশের তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেনসহ ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আজ দুপুর ১২টার কিছু আগে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল একটি গরু নিয়ে প্রথম আলোর সামনে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। বেলা আড়াইটার দিকে তারা আবার প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে আসার চেষ্টা করে এবং পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ায়। এরপর তারা কারওয়ান বাজারের ভেতরের প্রধান সড়কে বসে পড়ে এবং সেখানে একটি গরু জবাই করে। এরপর থেমে থেমে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। সন্ধ্যা নাগাদ বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ জনে দাঁড়ায়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তারা দফায় দফায় ওই ব্যক্তিদের সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এরপরও তারা রাস্তা থেকে সরেনি।
সন্ধ্যায় সারা দেশ থেকে কারওয়ান বাজারে সবজিসহ নিত্যপণ্যবাহী গাড়ি আসার সময় হলে পুলিশ তাদের সরে যেতে সময় বেঁধে দেয়। এ সময় ওই ব্যক্তিরা আরও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। তখন পুরো কারওয়ান বাজারে একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। ব্যবসায়ীদের অনেকে দোকান বন্ধ করে দেন। মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজারে প্রবেশের অংশের ফটকও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাঁশি বাজিয়ে তাদের সরানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে কয়েকজন ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিকে লাঠিপেটা করে। কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
রাজশাহীতে প্রথম আলোর কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
২৫ নভেম্বর ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন
রাজশাহীতে দৈনিক প্রথম আলো কার্যালেয়ের সামনে হামলা চালিয়ে সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় কার্যালয়ের সামনে প্রথম আলো লেখা সংবলিত সাইনবোর্ডটি ভাঙচুরের পর খুলে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে নগরের বোয়ালিয়া থানা মোড়ে প্রথম আলো কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারীদের প্রথম আলো সাইনবোর্ড ভেঙে উল্লাস করতে দেখা গেছে।
তিন মাস না যেতেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে: মির্জা ফখরুল
২৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
৫ আগস্টের বিপ্লবের তিন মাস না যেতেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত কয়েক দিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও হানাহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘এই চেহারা নিয়ে কোনো দিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না, যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি। নিজের ঘরেই যদি বিভেদ থেকে যায়, আমরা সেটা কখনোই ঠিক করতে পারব না।’
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে, কারাগারে গেছে, নির্যাতিত হয়েছে। সেই মানুষগুলো ২০২৪-এর ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় অর্জন করেছে। সেই বিজয় অর্জন হয়েছে রাজপথে অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে, অনেক প্রাণের ভেতর দিয়ে। কিন্তু তার ফল কি এই বাংলাদেশ? তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। একজন আরেকজনের বুকের রক্ত ঝরাচ্ছি। এখন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আক্রমণ করছে।’
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এই কয়টা দিনে আমরা খুব চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। আপনি চিন্তা করতে পারেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আপনি চিন্তা করতে পারেন, যে মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য আমরা এত দিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি অন্তত চাই না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কী উন্মাদনা! কিছুসংখ্যক মানুষ আছেন…আপনাদের সোশ্যাল মিডিয়া আমি দেখি না সহজে। কিন্তু যখন দেখি, আতঙ্কিত হই। পুড়িয়ে দাও জ্বালিয়ে দাও—এ ধরনের কথাবার্তা। চিন্তা করতে পারেন, কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। আমরা কি বুঝি আমাদের ভয়টা কোথায়, আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমাদের পেছনে। বুঝি না, বুঝলে এ ধরনের দায়িত্বহীন কথাবার্তা আমাদের মুখ দিয়ে বের হতো না।’
হতাশা প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, কিছুসংখ্যক মানুষ—তাঁরা নিজেদের অত্যন্ত জনপ্রিয় সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন, আর গোটা জাতিকে আজকে তারা বিভাজনের দিকে উসকে দিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’ কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপি মহাসচিব উপস্থিত চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করবেন, আমি কারও নাম বলব না। কারও নাম বলতে চাই না। আপনারা ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন যে যারা আজকে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলছে, অনৈক্যের দিকে ঠেলছে, তারা আমাদের আসলে শত্রু না মিত্র। এ জিনিসগুলো বুঝতে হবে। আমি কথাগুলো ইচ্ছে করেই আজকে তুলে ধরলাম।’
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা ঘিরে সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছি প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য সব পত্রিকার ওপর যে আক্রমণ শুরু হয়েছে। আমি তীব্র নিন্দা জানাই তার। কারণ আমি সারা জীবন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি। এটা আমার বিশ্বাস, আস্থা।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র মানেটা কী, যে আপনি আপনার কথা বলবেন। আপনার সঙ্গে আমি একমত হতে না-ও পারি। কিন্তু আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আমি আমার জীবন দিয়ে রক্ষা করব—এটাই গণতন্ত্র।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পত্রিকা বন্ধ করার দাবি ও পত্রিকা দুটির প্রধান কার্যালয়ের ফটক ঘিরে বিক্ষোভের দিকে ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি এক ফ্যাসিস্টকে উৎখাত করেছেন। কারণ, সে আপনার গলা টিপে ধরেছিল, সে আমাদের মেরে ফেলছিল, কথা বলতে দিত না, ভোট দিতে দিত না, হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে। আবার এখন আরেকটা…একে বলতে দেওয়া যাবে না, একে নিশ্চিহ্ন করো, হাউ ডু ইউ জাস্টিফায়েড। আপনারা বলেন, এভাবে একটা সমাজ এগোতে পারে?’
সমাজের অত্যন্ত শিক্ষিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মুখ দিয়ে এসব কথা শুনতে হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, সে এদিকে যাবে না ওদিকে যাবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি ১৪-১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি, বহুবার জেলে গেছি, যেকোনো সময় আবারও জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি এই বাংলাদেশ দেখতে চাই না। আমি যা বিশ্বাস করি, আমার দল যা বিশ্বাস করে, আমি সেই কথা আমার প্রাণ গেলেও আমি বলব। আমি বিশ্বাস করি, উদারপন্থী গণতন্ত্রে, বিশ্বাস করি বাক্স্বাধীনতায়, ভোটের স্বাধীনতায়। আমি জানি, অনেকে অনেক কিছু বলেন, কিন্তু আমি এতটুকুও চিন্তা করি না। কারণ, আমরা রাস্তায় থেকে লড়ে লড়ে এই জায়গায় এসেছি। সময়–সুবিধামতো পালিয়ে যাই না আমরা, সামনেই দাঁড়াই।’
রৌমারীতে জামায়াতের হামলায় কৃষক সমাবেশ পণ্ডের অভিযোগ
২৯ নভেম্বর ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় জামায়াতের হামলা-ভাঙচুরের মুখে কৃষক সমাবেশ পণ্ড হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতারা।
হামলায় আহত হয়েছেন লেখক ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি নাহিদ হাসান নলেজ, ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের মামলার প্রধান আইনজীবী রায়হান কবিরসহ পাঁচজন।
শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স চত্বরে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে নাহিদ হাসান নলেজ জানান।
পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশের তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা বহাল
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এবার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী।
বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এবার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী। অনুমোদিত খসড়ায়ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো পুলিশের কোনো ধরনের পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের পূর্ণ ক্ষমতা বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে। এতে আপত্তি তুলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর মাধ্যমেও পুলিশি হয়রানির সুযোগ থেকে যাচ্ছে। যদিও পুলিশের বক্তব্য হলো অধ্যাদেশের বিধান অনুসরণ করেই তদন্ত, তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত সাতটি ধারা বাদ দেয়া হয়েছে। ধারাগুলো ছিল মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ড; পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ; আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি; অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, ইত্যাদির দণ্ড; মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার। আগের আইনের সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলের বিধান নতুন অধ্যাদেশে রাখা হয়নি। এছাড়া বাদ পড়েছে ক্ষমতা অপর্ণ, সাক্ষ্যগত মূল্য ও অসুবিধা দূরীকরণ শীর্ষক ধারাগুলোও।
তবে নতুন এ আইনে পুলিশের ক্ষমতা আগের মতোই রাখা হয়েছে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর ৩৬-এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার এমন বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকে যে কোথাও এ অধ্যাদেশে বর্ণিত কোনো অপরাধ কোথাও সংঘটিত হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে তিনি এমন বিশ্বাসের কারণ লিপিবদ্ধ করে ওই স্থানে প্রবেশ করে তল্লাশি চালাতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে পারবেন। তল্লাশি চালানোর সময় অপরাধে ব্যবহৃত কম্পিউটার, সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা তথ্য-উপাত্ত সরঞ্জাম এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক দলিল জব্দ করতে পারবেন। তথ্যপ্রমাণ নষ্টের আশঙ্কা আছে এমন বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকলেও তল্লাশি, গ্রেফতার ও জব্দের জন্য পুলিশের কোনো পরোয়ানার দরকার পড়বে না। ধারাটিতে সংশ্লিষ্ট স্থানে উপস্থিত যে কারো দেহ তল্লাশি এবং উপস্থিত যে কাউকে সন্দেহবশত গ্রেফতারের সুযোগ রাখা হয়েছে।
সময় টেলিভিশনে সাংবাদিক ছাঁটাইয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, বিবিসি নিউজ বাংলা
সময় টেলিভিশনে কর্মরত পাঁচ গণমাধ্যমকর্মীর একসঙ্গে চাকরি যাওয়ার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সামনে আসছে।
গত মঙ্গলবার ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এজেন্স ফ্রান্স প্রেসে-এএফপি এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
চাকরিচ্যুত পাঁচজন টেলিভিশন চ্যানেলটির বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে ছিলেন।
তাদের অভিযোগ, গত ১৮ই ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ কয়েকজনকে নিয়ে সময় টিভির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন এবং টিভি স্টেশনের ১০ জনের নামের একটি তালিকা দিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করতে চাপ দেন।
পরবর্তী সময়ে, সেই তালিকার পাঁচজনকে ডেকে পদত্যাগ করতে বলার পর তারা তাতে অস্বীকৃতি জানালে একই দিন হোয়াটসঅ্যাপে তাদের অব্যাহতিপত্র পাঠানো হয়।
প্রায় ১৫ জনের একটি দলসহ হাসনাত আব্দুল্লাহ সিটি গ্রুপের হেড অফিসে গিয়ে কয়েকজনকে চাকরি থেকে বাদ দেয়ার জন্য চাপ দেয়ার কথা বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান।
তবে সিটি গ্রুপে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও সেখানে গিয়ে ভয় দেখানো বা তালিকা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় সরকারের মুখপত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার নানা অভিযোগ তোলা হয় বেসরকারি সময় টেলিভিশনের বিরুদ্ধে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর এমন হস্তক্ষেপকে অশনিসংকেত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গাড়ি আমদানিতে এলসি মার্জিন শিথিল
০২ জানুয়ারি ২০২৫, যুগান্তর
গাড়ি আমদানির এলসি খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিনের শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে ব্যাংকার গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এলসি মার্জিন আরোপ করা যাবে। অন্যান্য গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ মার্জিন নিতে হবে। এ সিদ্ধান্ত আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
লুক্কায়িত খরচে হাত দিচ্ছে না সরকার, উল্টো জনপরিষেবায় দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা
১১ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হয়েছে ১৬ বার। পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরায় ১৪ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দামও। এতবার এসব জনপরিষেবার মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বিগত সরকারের দুর্নীতি-অনিয়ম, লুটপাট এবং লুক্কায়িত বা গোপন নানা ব্যয়কে (হিডেন চার্জ) দায়ী করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও এসব জনপরিষেবার দাম বাড়ানোর নানা উদ্যোগ, প্রস্তাব ও পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। এসব ব্যয়ের কারণ অনুসন্ধান ও তা কমানোর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো জনপরিষেবাগুলোর মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনীতিবিদ ও নাগরিক সংগঠনগুলোর ভাষ্যমতে, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনসাধারণের বড় প্রত্যাশা ছিল উচ্চ মূল্যস্ফৃীতির তীব্র চাপ থেকে রেহাই দিতে নাগরিকদের ইউটিলিটি বা জনপরিষেবা খাতের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য খাতগুলোর দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধের পাশাপাশি অযাচিত ব্যয় কমিয়ে আনা হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার আমলে সে পথে না গিয়ে জনসাধারণের ব্যয়ের বোঝা আরো বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা চলছে। বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে এ ধরনের উদ্যোগ জনজীবনকে আরো খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলবে। অভ্যুত্থানে পতিত বিগত সরকারের বিভিন্ন সময়ে নেয়া প্রকল্পগুলোয় অনেক হিডেন চার্জ বা লুক্কায়িত খরচ যুক্ত হয়েছে। এগুলোকে যৌক্তিকতার নিরিখে পর্যালোচনা হওয়া উচিত। সেটি করা গেলে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানিতে খরচ কমানো অনেকাংশেই সম্ভব ছিল।
বইমেলায় এবার প্যাভিলিয়ন পাচ্ছে না এক ডজন প্রকাশনী
১০ জানুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অমর একুশে বইমেলায় অতিরিক্ত সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ থাকার কারণে এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পাচ্ছে না এক ডজনেরও বেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
অন্যপ্রকাশ, আগামীসহ তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নের আকার ছোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটি।
এছাড়া বেশ কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন বাতিল করে তাদের ৩ ও ৪ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেলা পরিচালনা কমিটি।
‘জার্নিম্যান’ গত মেলায়ও প্রতিষ্ঠানটি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়েছিল, কিন্তু এবার মেলায় স্টলও বরাদ্দ পাচ্ছে না প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হওয়ার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন।
সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে জড়ালে শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: মাউশির নির্দেশনা
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
বর্তমান সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গুজবের সঙ্গে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া এক নির্দেশনাপত্রে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে। ২ জানুয়ারি এই নির্দেশনাপত্র দেওয়া হলেও এখন বিষয়টি জানাজানি হয়েছে।
মাউশির ওই নির্দেশনাপত্রে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর–সংস্থার মাসিক সমন্বয় সভায় বর্তমান সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা ও গুজবে উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হন, সে বিষয়ে মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক ও তৎপর থাকার সিদ্ধান্ত হয়।
এ অবস্থায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আওতাধীন জেলা-উপজেলার সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমান সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচর, প্রোপাগান্ডা ও গুজব ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।
দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম
শাহবাগের শিশুপার্ক: তাপসের দাপটে ৭৮ থেকে এক লাফে ৬০৩ কোটি টাকায় প্রকল্প পাস
২৯ অক্টোবর ২০২৪, প্রথম আলো
ঘটনার শুরু ২০১৮ সালে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি আসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। সেই চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়, যাতে খুশি হওয়ার কথা সিটি করপোরেশনের; কিন্তু ঘটনা গড়াল ভিন্ন দিকে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, শাহবাগে যে শিশুপার্ক রয়েছে, সেটির সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্পের (স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ–তৃতীয় পর্যায়) আওতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ৭৮ কোটি টাকা দেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর কারণ ওই প্রকল্পের জন্য শিশুপার্কের নিচ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পার্কিং হবে। এতে পার্কের কিছু রাইড (খেলনার উপকরণ ও বিনোদনের সরঞ্জাম) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন রাইড কেনার পাশাপাশি পার্কের আধুনিকায়নের জন্য মূলত ওই টাকা দিতে চেয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু এত ‘অল্প টাকায়’ আধুনিকায়নের কাজটি করা যাবে না উল্লেখ করে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি। তখন মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
এরপর ২০২০ সালের মে মাসে শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের দায়িত্ব নেন। কিছুদিন পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই প্রস্তাবের বিষয়টি তাঁর নজরে আসে; কিন্তু তিনিও মন্ত্রণালয়ের ৭৮ কোটি টাকা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঠিক করেন, শিশুপার্কের আধুনিকায়নের কাজটি সিটি করপোরেশন নিজেরাই করবে। পরে তাঁর উদ্যোগে শিশুপার্ক নিয়ে ৬০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়।
বিদেশি ‘নাগরিকত্ব’ নিয়ে মন্ত্রী-এমপি হন ২৪ জন
০৫ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গোপনে সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ‘রেসিডেন্স কার্ড’ (স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি) রয়েছে বেলজিয়ামের। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যুক্তরাজ্যের নাগরিক। সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও জুনাইদ আহ্মেদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধ অনুমতি বা ‘গ্রিন কার্ড’ রয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য ছিলেন, এমন ২৪ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব (কারও কারও ক্ষেত্রে রেসিডেন্স কার্ড বা গ্রিন কার্ড) থাকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেতে চাইলে একজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কোনো কোনো রাষ্ট্রে রেসিডেন্স কার্ড বা গ্রিন কার্ড পাওয়ার পরের ধাপে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতে পারেন না।
বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনায় ‘রিসিভার’ নিয়োগ
১১ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপে ‘রিসিভার’ নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই রিসিভারের কাজ হবে গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে রিসিভার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত করে তা ব্যবস্থাপনায় ছয় মাসের জন্য একজন রিসিভার নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এখন কারাবন্দী। পোশাক রপ্তানি ও ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বেক্সিমকো।
আনিসুলের প্রভাব, কাদেরের আশীর্বাদে টোল আদায়ে ব্যবসা সিএনএসের
১১ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুতে টোল আদায়ে মাত্র ছয় মাসের জন্য কারিগরি সহযোগিতার দায়িত্ব পেয়েছিল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড (সিএনএস)। কিন্তু তাদের আর সরানো যায়নি। ছয় মাসের জন্য ঢুকে তারা আট বছর সেতুটির টোল আদায়ে কাজ করেছে।
কাজটি নিজেদের দখলে রাখতে সিএনএস যে কৌশল নিয়েছিল, সেটি হলো মামলা। আদালতে গিয়ে তারা নতুন ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে রাখে অভিযোগ আছে, আদালতের আদেশ যাতে সিএনএসের পক্ষে যায়, সে জন্য প্রভাব বিস্তার করতেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আনিসুল হকের ছোট ভাই আরিফুল হক ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সিএনএসের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালের মার্চে মারা যান। সূত্র বলছে, আরিফুলের মৃত্যুর পর আনিসুল হকই নেপথ্যে থেকে সিএনএসের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। যদিও প্রতিষ্ঠানটিতে তাঁর কোনো পদ ছিল না।
‘মামলা কৌশলে’ শুধু যমুনা সেতু নয়, মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের কাজও সাত বছর করেছে সিএনএস। ২০১৮ সাল থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ভৈরব) ও শহীদ ময়েজ উদ্দিন (ঘোড়াশাল) সেতুর টোলও আদায় করছে তারা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত এক যুগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অন্তত পাঁচ ধরনের কাজ বাগিয়ে নেয় সিএনএস।
মিটার বাণিজ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ‘ভাই–বন্ধু’ চক্র
১২ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বিদ্যুৎ খাতে সাড়ে চার কোটির বেশি গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল গত আওয়ামী লীগ সরকার। একে একে ছয়টি বিতরণ সংস্থা মিটার আমদানি করতে থাকে। এ নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়। আর এ বাণিজ্যের পুরোটার নিয়ন্ত্রণ নেয় সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ‘ভাই-বন্ধু’ চক্র।
ছয়টির মধ্যে চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রিপেইড মিটার কেনার তথ্য সংগ্রহ করেছে প্রথম আলো। সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও মিটার আমদানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু মিটার কেনা হয়েছে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি অনুসরণ করে। আর কিছু কেনা হয়েছে উন্মুক্ত দরপত্র ডেকে। তবে অভিযোগ আছে, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী তাঁর বারিধারার বাসায় বসে ঠিকাদার চূড়ান্ত করে দিতেন। এরপর দরপত্র ডেকে কাজ দেওয়া হতো ওই ঠিকাদারের কোম্পানিকে।
টানেল ও মহাসড়কের টোলের বড় অংশ নিয়ে যায় ঠিকাদার
১৩ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল—এই তিন অবকাঠামো নতুন; কিন্তু এগুলোর মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ে বিপুল ব্যয় ধরে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। আর ঠিকাদার কাজ পেয়েছে কোনো প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়া।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দরপত্র ছাড়া নিজেদের পছন্দে ঠিকাদার নিয়োগে লাভবান হয়েছে কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান। সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। লোকসান হয়েছে দেশের মানুষের। তাঁদের এখন ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে, অন্যদিকে চলাচলে খরচ পড়ছে বেশি। অবকাঠামোগুলো থেকে যে আয় হচ্ছে, তার বড় অংশ নিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে (এক্সপ্রেসওয়ে) টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কোম্পানিকে দরপত্র ছাড়া কাজ দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। টোল আদায়ের জন্য তারা বছরে পাবে প্রায় ৯৬ কোটি টাকা। অথচ বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুতে বছরে মাত্র ১২ কোটি টাকায় টোল আদায় করছে চীনা কোম্পানি। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে কাজ পেয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে যমুনা সেতুতে তারা টোল আদায় শুরু করে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় ও সেটির রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ পাঁচ বছরে কোরীয় প্রতিষ্ঠানটিকে দেবে ৭১৭ কোটি টাকা। চালুর পর এক্সপ্রেসওয়েটি থেকে এখন পর্যন্ত যে টোল আদায় হয়েছে, তার ৮০ শতাংশই চলে গেছে ঠিকাদারের পেছনে।
খেলাপি ঋণ বেড়ে ২,৮৪,৯৭৭ কোটি টাকা, বেরিয়ে আসছে প্রকৃত চিত্র
১৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
দেশের ব্যাংকগুলোতে গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। তিন মাসেই ব্যাংক–ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে–বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। ফলে ব্যাংক থেকে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশই বর্তমানে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তখন দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল খেলাপি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবেদেরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড় অংশই পাচার হয়েছে বিদেশি।
করপোরেট কর অপব্যবহারে বছরে ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে বাংলাদেশ
নভেম্বর ২২, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পন্থায় মুনাফা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া এবং বিত্তবানদের একাংশ বিদেশে সম্পদ পাচার করায় বাংলাদেশ বছরে ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস ২০২৪ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদেশে ব্যবসারত বহুজাতিক কোম্পানিগুলো মুনাফার একাংশ বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ ৩৩৫ মিলিয়ন ডলার মিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। আর সম্পদশালীরা বিদেশে সম্পদ গড়ায় কর বছরে হারায় ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের (টিজেএন) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কর ক্ষতির পরিমাণ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের ২১ দশমিক চার শতাংশ।
এতে আরও বলা হয়, বহুজাতিক কোম্পানি ও সম্পদশালীরা কর ব্যবস্থার অপব্যবহারের কারণে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ প্রতি বছর ৪৯২ বিলিয়ন ডলার কর হারাচ্ছে।
উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা লুটপাট
০১ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা অপচয় বা নষ্ট হয়েছে। গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর ৪০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা লুটপাট করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে মূলত রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং বাড়তি খরচ দেখিয়ে এই বিপুল অর্থ লুটপাট করেছেন বিদায়ী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও সুবিধাভোগীরা।
অর্থনীতি নিয়ে সরকারের শ্বেতপত্রে প্রকল্পের নামে টাকা অপচয়ের এমন চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের পাশাপাশি এডিপির দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থের অপচয়—এসব বিষয় নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার বা ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা (বর্তমান বাজারদরে) অর্থ এডিপির মাধ্যমে খরচ হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি মনে করে, এডিপির মাধ্যমে যত টাকা খরচ করা হয়েছে, এর ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অপচয় ও লুটপাট হয়ে গেছে।
প্রকল্পের খরচ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার বিল তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ১৪ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চাঁদাবাজি, ঘুষ ও বাড়তি খরচের নামে চলে গেছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়নের প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি বিনিয়োগে বিপুল অর্থ অপচয় হয়েছে। আর্থিক সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই অনেক রাজনৈতিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আবার সময়ে সময়ে প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে। পছন্দের ব্যক্তিদের প্রতিযোগিতাহীনভাবে ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই ক্ষমতাসীনেরা লোক দেখানো ‘প্রেস্টিজ’ প্রকল্প নিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নানাভাবে ‘নয়-ছয়’ হয়েছে।
শ্বেতপত্র কমিটির দাবি ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে
২ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল প্রতিবেদন হস্তান্তর করে শ্বেতপত্র কমিটি | ছবি: পিআইডি
শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৭ লাখ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৭ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর দেশ থেকে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রতি বছর পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এসব অর্থ পাচার হয়।
আওয়ামী আমলের ১৫ বছরে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার
০২ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে মোট পাচার হয়েছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৮ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে এ প্রাক্কলন করা হয়েছে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। অর্থনৈতিক খবরের সাবস্ক্রিপশন
শ্বেতপত্রে অর্থ পাচারের অনুমিত পরিমাণ বাংলাদেশের প্রায় ৫টি বাজেটের সমান। গত অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ কোটি টাকা। এ ছাড়া ওই টাকায় প্রায় ১০০টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব। পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ পাচারের পরিমাণ দেশে আসা বিদেশি ঋণ এবং বিনিয়োগের দ্বিগুণ। বছরে পাচারের পরিমাণ সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। এ ছাড়া মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং সঞ্চয়ের ১১ দশমিক ২ শতাংশ।
গত ২ নভেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, ১৫ বছর ধরে প্রতিবছর দেশ থেকে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রায় ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি জিএফআইর রিপোর্ট এবং নির্দিষ্ট কিছু অনুমানের ভিত্তিতে অর্থ পাচারের প্রাক্কলন করেছে।
দুদকের অনুসন্ধান: বসুন্ধরার মালিকদের বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দের আদেশ
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ তাঁর পরিবারের আট সদস্যের বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গত ২১ নভেম্বর এ আদেশ দেন।
সম্পদ জব্দের আদেশের তালিকায় নাম থাকা অন্যরা হলেন আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী আফরোজা বেগম, তাঁদের তিন ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর, সাফিয়াত সোবহান ও সাফওয়ান সোবহান এবং তিন পুত্রবধূ সাবরিনা সোবহান, সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান ও ইয়াশা সোবহান। দুদক আদালতকে এই আটজনের প্রায় ১৪৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ, সম্পদ কেনা ও ব্যাংকে লেনদেনের তথ্য জানিয়েছে। এর বাইরে বিদেশে সম্পদ কেনা, বিনিয়োগ ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর টাকার পরিমাণ দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
দুদক বলছে, আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের কেউ বিদেশে টাকা পাঠাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেননি।
কর্মকর্তাদের কারসাজিতে পেঁয়াজ চাষে সর্বনাশ
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সরবরাহ করা ৩৪ টন পেঁয়াজের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৫৯ জেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এক কেজি করে মাগনা পেঁয়াজের বীজ পেয়ে ৩৪ হাজার কৃষকের মলিন মুখে ফুটেছিল চওড়া হাসি। প্রণোদনার এই বীজ যে এতটা যন্ত্রণার ঝাঁজ হয়ে ফিরবে, আন্দাজও করতে পারেননি চাষিরা। ঠিক সময়ে, সঠিক নিয়মে বীজ বপন করার পরও ৯৫ শতাংশ পেঁয়াজ চারা মাটি ফুঁড়ে বের হয়নি। বীজ থেকে পেঁয়াজ না আসায় এ বছর হাজার হাজার চাষির স্বপ্ন মাঠে মারা। এ পরিস্থিতির জন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদেরই দুষছে কৃষককুল।
কৃষকের অভিযোগ, সরকার যে পেঁয়াজ বীজ দিয়েছে, তা ভেজাল। বিএডিসির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার কারসাজিতেই এমন সর্বনাশ হয়েছে। একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে এভাবে নিম্নমানের ভেজাল বীজ কৃষকের হাতে তুলে দিচ্ছে। বীজ আমদানির নামে কোটি কোটি টাকা লুটে নিলেও এখনও তারা অধরা। অবশ্য অভিযোগ আসার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিকে ফের বিনামূল্যে উন্নত মানের পেঁয়াজ বীজ সরবরাহও করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিএডিসি গঠন করেছে আলাদা তদন্ত কমিটি। প্রণোদনার পেঁয়াজের বীজে ভেজাল ছিল, এরই মধ্যে তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আওয়ামী-ঘনিষ্ঠদের ঋণ দিয়ে নাজুক অবস্থায় জনতা ব্যাংক
১২ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক। ১০ শিল্প গ্রুপের কাছে ব্যাংকটির ৫৫ শতাংশ ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। প্রভাবশালী এসব গ্রাহক সময়মতো টাকা ফেরত না দেওয়ায় ব্যাংকটির ৬১ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এ কারণে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটি ১ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
সম্প্রতি সরকারের কাছে দেওয়া একটি চিঠিতে জনতার চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেছেন, জনতা ব্যাংকের ইতিহাসে এমন নাজুক অবস্থা আর কখনো হয়নি। ব্যাংকটি এখন গভীর সংকটে নিমজ্জিত। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সম্প্রতি এক সভায়ও নাজুক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরা হয়।
চার অর্থবছর ধরে বিএটি বাংলাদেশের ৩৮০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির সন্ধান পেয়েছে এনবিআর
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা
দেশের একক সর্বোচ্চ করদাতা ও শীর্ষ তামাকপণ্য কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ লিমিটেডের গত চার অর্থবছর ধরে ৩৭৯ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ফাঁকির তথ্য জানতে পেরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআরের এক অনুসন্ধান চলাকালে, বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) উদঘাটন করে যে, রাজস্ব কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে উচ্চমূল্যে সিগারেট বিক্রি করে এবং সেই অনুযায়ী কর না দিয়ে আইন ভঙ্গ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
রাজস্ব কর্তৃপক্ষটির সূত্রগুলো জানায়, বিএটি পুরনো মূল্যে সরকারকে কর দিয়ে ওয়্যারহাউজে নিয়ে পরবর্তীতে নতুন বর্ধিত দামে বিক্রি করলেও ওই পরিমাণ ভ্যাটের অর্থ সরকারকে দেয়নি।
এনবিআর কোনো অর্থবছরে সিগারেটের যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, পণ্য গুদামে নেওয়ার পূর্বে সেই হারে কর পরিশোধ করে বিএটি। তবে এক অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে কর দেওয়া পণ্য মজুত করে আরেক অর্থবছরে (অর্থাৎ, বাজেট ঘোষণার পরে) ডিলার বা পরিবেশকদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেছে সে অনুযায়ী কর না দিয়েই।
এস আলমের গাড়ি সরিয়ে বহিষ্কার তিন নেতাকে দলে ফেরালো বিএনপি
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়াকে দলীয় সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি চিঠিতে তাদের স্থগিতের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির এই তিন নেতার দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়।
চট্টগ্রামে শীর্ষ সমন্বয়কের ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, ‘দরকষাকষি’র সোয়া ৬ মিনিট
৭ জানুয়ারি ২০২৫, চট্টগ্রাম প্রতিদিন
চট্টগ্রামে মেলার আয়োজন করতে যাওয়া এক নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এক সমন্বয়কের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ৬ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার ঝড় উঠেছে। রিজাউর রহমান নামের ওই সমন্বয়ক অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক আরেক শীর্ষ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
ব্যাংক খাতে অনিয়মের সহযোগী ছিলেন ডেপুটি গভর্নরসহ অন্যরাও
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে ব্যাংক খাত, যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই খাত রক্ষা ও তদারকির দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর। ১৫ বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে ছিলেন তিনজন, যাঁদের বিরুদ্ধে অনিয়মের সহযোগী হওয়ার পাশাপাশি অবৈধ অর্থের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে যাঁরা ডেপুটি গভর্নর (ডিজি), আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা (বিএফআইইউ) ও অন্যান্য শীর্ষ পদে ছিলেন, তাঁদের অনেকেই অনিয়মে সহযোগিতা করার পাশাপাশি সুবিধাভোগী ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গতকাল মঙ্গলবার সাবেক ডিজি সিতাংশু কুমার (এস কে) সুরকে চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে। আদালত তাঁকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। এর আগে সম্পদের বিবরণী নোটিশের জবাব না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এ ছাড়া সংস্থাটি যাঁকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত ধ্বংসের কারিগর হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়, সেই নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে। দ্রুতই মামলা হতে পারে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
‘ভাগ্যবান’ ঋণখেলাপি আব্দুল আজিজ আবারো সক্রিয় বিনোদনজগতে
২৪ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ঋণখেলাপিদের অন্যতম ক্রিসেন্ট গ্রুপের আব্দুল আজিজ। বাংলা সিনেমা জগতের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধারও তিনি। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে জনতা ব্যাংক, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও আব্দুল আজিজ থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আদালতের পক্ষ থেকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে কার্যকর হয়নি সেটিও। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন শীর্ষ এ ঋণখেলাপি।
ব্যাংক ও চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আব্দুল আজিজ হলেন দেশের ‘ভাগ্যবান’ ঋণখেলাপি। দেশের বড় ঋণখেলাপিদের বেশির ভাগই হয় কারাগারে গিয়েছেন, নয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু এ তালিকার শীর্ষস্থানীয়দের অন্যতম হয়েও আব্দুল আজিজ সব সময় ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেছেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে দহরম-মহরম ছিল তার। জনতা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ বের করতে চলচ্চিত্র জগতের নায়ক-নায়িকাদের ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আবার গ্রেফতার এড়ানো বা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও এখন একই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ
বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমেছে ১১ হাজার মেগাওয়াটে
১ নভেম্বর ২০২৪, শেয়ারবিজ
নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্যাস সংকটে একদিকে গ্যাসভিত্তিক বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিল বকেয়া পড়ায় বড় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ বা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আদানিসহ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি করে ইউনিট। আর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোটাই বন্ধ। এতে সার্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক কমে গেছে। ফলে দেশব্যাপী হঠাৎ করে দুদিন ধরে লোডশেডিং বেড়েছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে।
গতকাল শেয়ার বিজের অফিসে অনেকেই কল করে জানান, গ্রামাঞ্চলে দিনরাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও সারা দিনে আট থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। এতে জনগণের ভোগান্তির সীমা নেই।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, কয়লাভিত্তিক বড় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি করে ইউনিট বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ আসে ভারতের ঝাড়খণ্ডের আদানি পাওয়ার থেকে। ওই কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। তবে বকেয়া বিল বাড়তে থাকায় তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। ৩০ অক্টোবর আদানি এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও গতকাল তা অর্ধেকে নামিয়ে আনে। ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রটি থেকে গড়ে সারাদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।এর আগে বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকিও দিয়েছিল আদানি।
বিদ্যুৎ খাতে আদানি ‘একতরফা’ চুক্তির সুযোগ নিচ্ছে
০১ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে জটিলতা কাটছে না। গত জুলাই থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিদ্যুৎ বিল করছে আদানি। বকেয়া বিল পরিশোধে বাংলাদেশকে চাপও দিচ্ছে। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে অর্ধেকের নিচে নামিয়েছে তারা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘একতরফা’ চুক্তির সুযোগ নিচ্ছে আদানি।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগেই কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। কয়লার চড়া দাম দিতে অস্বীকৃতি জানায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এরপর দাম কমাতে রাজি হয় আদানি। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম দামে কয়লা সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও দেয় তারা। তবে এক বছর পর এখন আবার ২২ শতাংশ বাড়তি দাম চাইছে আদানি।
বাড়তি দাম নিয়ে বিরোধ ও বকেয়া পরিশোধের তাগিদের মধ্যে সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর পিডিবিকে চিঠি দেয় আদানি। এতে বলা হয়, পিডিবি যাতে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়, নইলে আদানি ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে। কারণ, আদানি চলতি মূলধনের সংকটে রয়েছে।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পল্লী বিদ্যুতের ৬ কর্মকর্তা রিমান্ডে
অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় দায়েরকৃত পৃথক দুটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ছয় কর্মকর্তার তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আসামিরা হলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মুন্সীগঞ্জের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রাজন কুমার দাস, ব্রাক্ষ্মবাড়িয়ার নবীনগর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, কুমিল্লার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর উপমহাব্যবস্থাপক দীপক কুমার সিংহ, মাগুরার শ্রীপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রাহাত, নেত্রকোণার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মনির হোসেন ও সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর উপমহাব্যবস্থাপক বেলাল হোসেন।
এদের মধ্যে বেলাল হোসেন একটি মামলার আসামি। বাকি পাঁচজন আরেকটি মামলার আসামি।
রাষ্ট্রদ্রোহের পাশাপাশি বাদী তাদের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনের (সিএসএ) আটটি অভিযোগ এনেছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী শুক্রবার তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কয়লার অভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন অর্ধেকের নিচে
০৪ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। অথচ উৎপাদন হচ্ছে ৩ হাজার মেগাওয়াটের কম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল, ডলারের সংকট ও দরপত্র জটিলতায় কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারছে না বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এতে ৭টি কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ আছে দুটি। আর চারটিতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
পরিবেশবাদীদের আপত্তি থাকলেও সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলেই কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দিকে যায় গত আওয়ামী লীগ সরকার। সময়মতো এসব কেন্দ্র উৎপাদনে আসেনি। আবার উৎপাদনে আসার পর নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। বকেয়া বিল জমতে থাকায় চাপে পড়েছে এসব কেন্দ্র। ধাপে ধাপে বিল পরিশোধ বাড়াচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, তাপমাত্রা একটু কম থাকায় এখন বিদ্যুৎ চাহিদা তুলনামূলক কম। রাতে সর্বোচ্চ চাহিদা হচ্ছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। কয়লা থেকে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাড়তি খরচে জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাড়তি উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ঢাকার বাইরে অনেক জায়গায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গতকাল রোববার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এলএনজি ব্যবসায় চক্র, নেপথ্যে নসরুল হামিদ
০৮ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
খোলাবাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘুরেফিরে চারটি কোম্পানি বেশি কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি কাজ পেয়েছে সরকার পতনের পরও। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এলএনজি ব্যবসার এই চক্র মূলত গড়ে উঠেছে সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের মাধ্যমে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত ছয় অর্থবছরে এলএনজি আমদানির (জিটুজি ও খোলাবাজার) পেছনে সরকার খরচ করেছে ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৪২ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা।
দেশে প্রথমবারের মতো এলএনজি আমদানি শুরু হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে। প্রথম দিকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) আমদানি হয়। এর পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে খোলাবাজার থেকে আমদানি শুরু হয় ২০২০ সালের দিকে। তখন থেকে ঘুরেফিরে বেশি কাজ পাওয়া চারটি কোম্পানি হলো সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া ও গানভর, সুইজারল্যান্ডের টোটাল এনার্জিস ও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকসিলারেট এনার্জি। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, ৬০ শতাংশের বেশি এলএনজি সরবরাহ করেছে ভিটল এশিয়া ও গানভর। এই দুটি কোম্পানির সঙ্গে নসরুল হামিদের পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও পারিবারিক কোম্পানির ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এলএনজি সরবরাহে কোনো কাজ পায়নি ভিটল এশিয়া। তবে অক্টোবরে দুটি করে মোট চারটি এলএনজি কার্গো সরবরাহের কাজ পেয়েছে টোটাল ও গানভর।
ঋণের অর্থ নিজস্ব জিম্মায় রাখতে চায় রাশিয়া
১৬ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বাংলাদেশে নিজেদের দেশের একটি ব্যাংকের শাখা খুলতে চায় রাশিয়া। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ঋণের কিস্তির অর্থ নিজ দেশ বা নিজেদের জিম্মায় নিতেই বাংলাদেশে ব্যাংক শাখা খোলার জন্য চাপ তৈরি করেছে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ।
গত তিন মাসে প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি। এসব বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি বাংলাদেশে রাশিয়ার ব্যাংক শাখা খোলার অনুমতি চাওয়া হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের সুদ পরিশোধ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়ার কিছু ব্যাংককে সুইফট সিস্টেম থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং কিছু ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ার ঋণের কিস্তির অর্থ পাঠানো যাচ্ছে না। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ হিসাবে (এস্ক্রো অ্যাকাউন্ট) কিস্তির অর্থ জমা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সুদের ৬৩ কোটি ডলার জমা হয়েছে ওই হিসাবে। প্রতিবছর দুই কিস্তিতে এই অর্থ জমা হচ্ছে।
পাহাড়ে গ্যাস অনুসন্ধান দিয়ে শুরু করতে চায় পেট্রোবাংলা
১৮ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
পার্বত্যাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। তাই স্থলভাগের জন্য প্রায় তিন দশক আগে করা উৎপাদন বণ্টন চুক্তি বা প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) সংশোধনের মাধ্যমে নতুন খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। সেটি চূড়ান্ত করতে ডিসেম্বরের মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ শেষ করতে চায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। আগামী মার্চের মধ্যে পিএসসি চূড়ান্ত হলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে পেট্রোবাংলা বড় আকারে গ্যাসের অনুসন্ধান চালাতে চায়। পার্বত্যাঞ্চলে গ্যাস ব্লক ২২বি-তে প্রথম অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
পুরনো নীতি অনুসরণ করে বন্ডের মাধ্যমে বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধ হচ্ছে
২৪ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দুই বছরে বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকি বাবদ বিপুল অংকের অর্থ বকেয়া পড়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হয়। চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে কয়েক ধাপে বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও সারের ভর্তুকি বাবদ ২৬ হাজার কোটি টাকার বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। ভর্তুকি বাবদ বকেয়া থেকে যাওয়া বাকি দায় পরিশোধের ভার এখন গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। পাশাপাশি তৈরি হয়েছে নতুন দায় পরিশোধের চাপও। এ অবস্থায় বিগত সরকারের মতো বকেয়া পরিশোধে বন্ডের দ্বারস্থ হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধের চাপ আপাতভাবে সামাল দেয়া গেলেও এর মাধ্যমে মূলত বর্তমান দায়কে বিলম্বিত করা হচ্ছে। এতে ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা আরো বড় হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত বন্ডের পরিবর্তে রাজস্ব আয় বাড়িয়ে নিজস্ব অর্থে এ দায় পরিশোধ করার মতো টেকসই সমাধানের দিকে নজর দেয়া।
সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রির জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা
৩০ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বেসরকারি খাতে নতুন করে ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হবে না। মার্চেন্ট বিদ্যুৎ নীতি করা হচ্ছে। এতে সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রির জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে।বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জিং স্টেশন
আজ শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন ফাওজুল কবির খান। ‘জ্বালানির দ্রুত রূপান্তর: স্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার রাজধানীর ইআরএফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, হুইলিং চার্জ দিয়ে সরকারি সংস্থার বিতরণ লাইন ব্যবহার করতে পারবে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বিশেষ আইন বাতিল হয়েছে, বৈধতা পেয়েছে হাসিনা আমলের সব চুক্তি
৩ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিল করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সই করা অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে গত ২৮ নভেম্বর। অধ্যাদেশে বিতর্কিত আইনটি বাতিলের ঘোষণা দেয়া হলেও এর আওতায় চলমান প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চালু থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈধ বলে গণ্য করা হবে এ আইনের আওতায় করা চুক্তিগুলোকেও। তবে অধ্যাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিতর্কিত এ বিশেষ আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো জনস্বার্থে পর্যালোচনা ও এ-সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশটি জারির পর থেকেই বিতর্কিত এ বিশেষ আইনের আওতায় করা চুক্তি ও প্রকল্পগুলোকে বৈধতা দেয়া এবং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ অধ্যাদেশে বিগত সরকারের দায়মুক্তি আইন বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু এর আওতায় করা বিতর্কিত চুক্তি ও প্রকল্পগুলোকে দায়মুক্তির বড় সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। বৈধতা দেয়া হয়েছে আইনটির আড়ালে সংঘটিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ব্যাপক দুর্নীতি ও লুণ্ঠনকে।
বিদ্যুতে ‘শ্বেতহস্তী’ রামপালে সুন্দরবনের সর্বনাশ
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা পশুর নদে সাত-সকালে মাছ ধরছিলেন মুজাহিদ হোসেন। মাছ কেমন পাচ্ছেন– প্রশ্ন করতেই শোনা গেল তাঁর বারুদ-কণ্ঠ। বললেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র মহাসর্বনাশ করে দিয়েছে। ঘণ্টা তিনেক বসে কিছু মাছ পেয়েছি। এখন নামতে হবে মাছ বেচার যুদ্ধে। কেউ পশুর নদের মাছ কিনতে চায় না।’
কেন এ পরিস্থিতি– এমন প্রশ্নে হাতের ইশারায় দেখালেন একটু দূরে ধোঁয়া ওঠা রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুউচ্চ চিমনি। এলাকা ঘুরে পাওয়া গেল মুজাহিদের কথার সত্যতা। বছর পাঁচেক আগেও এসব এলাকা মুখর থাকত পাখির কূজনে। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কিছু দূরের গাছপালাও হয়ে গেছে বিবর্ণ। গাছে গাছে কমেছে নারকেল-সুপারি। বাড়িতে পোষা হাঁস-মুরগি সব সময় থাকে মরমর! বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের নদী-জলাশয়ের মাছও হয়ে গেছে ‘বিষ’। ঘরে ঘরে অসুখ-বিসুখ তো লেগেই থাকে।
সরকারি সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, পরিশোধন ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহৃত পানি ছাড়া হচ্ছে পাশের নদীতে। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়লা ও উৎপাদিত ছাই নিয়মিত দূষণ করছে আশপাশের পানি, মাটি ও বায়ু। ফলে এলাকায় বাড়ছে নাইট্রেট, ফসফেট, পারদসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে জলজ, বনজ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর। সংকটে বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন।
শুধু পরিবেশ কিংবা প্রতিবেশ নয়, ১৬ হাজার কোটি টাকার ভারত-বাংলাদেশের যৌথ মালিকানার কয়লাচালিত কেন্দ্রটি দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়েছে দাঁড়িয়েছে। অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনায় চালুর পর থেকেই পূর্ণ ক্ষমতায় খুব কম চলেছে কেন্দ্রটি। নিম্নমানের যন্ত্রপাতির কারণে বন্ধ হচ্ছে বারবার। গত অর্থবছরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতার মাত্র ২৪ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে। এ কেন্দ্রের জন্য গত অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা।
আট বছর পর আন্তর্জাতিক দরপত্র, কেউ সাড়া দেয়নি
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
২০১৬ সালে আহ্বান করা আন্তর্জাতিক এক দরপত্রের ভিত্তিতে বঙ্গোপসাগরের গভীরে ১২ নম্বর ব্লকে গ্যাস উত্তোলনের কাজ পেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি পস্কো দাইয়ু। যদিও
২০১৬ সালে আহ্বান করা আন্তর্জাতিক এক দরপত্রের ভিত্তিতে বঙ্গোপসাগরের গভীরে ১২ নম্বর ব্লকে গ্যাস উত্তোলনের কাজ পেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি পস্কো দাইয়ু। যদিও পেট্রোবাংলার সঙ্গে দাম নিয়ে মতবিরোধের কারণে একপর্যায়ে ব্লকটি থেকে গ্যাস না তুলেই চলে যায় কোম্পানিটি। পস্কো দাইয়ু এখন ওই ব্লকের পাশেই মিয়ানমার অংশে সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ঘেঁষে অবস্থিত মিয়া ও শোয়ে কূপ থেকে কোম্পানিটি এরই মধ্যে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তুলেছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এ গ্যাস পাইপলাইনে করে চীনে রফতানিও হয়েছে।
এ সময়ের মধ্যে দীর্ঘদিন সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আর কোনো দরপত্র আহ্বান করেনি পেট্রোবাংলা। প্রায় আট বছর বিরতির পর চলতি বছরের ১০ মার্চ বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। শুরুতে এ দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল গত ১০ সেপ্টেম্বর। পরে তা আরো তিন মাস বাড়িয়ে গতকাল ৯ ডিসেম্বর বেলা ১টা পর্যন্ত এ দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়। সময়সীমা বাড়ানোর পরও পেট্রোবাংলার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরপত্র জমা দেয়নি কোনো তেল-গ্যাস কোম্পানি।
বিপিডিবির আর্থিক ক্ষতি বাড়িয়ে চলেছে পিক লোড বিদ্যুৎ কেন্দ্র
১৪ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
দেশে গ্রীষ্ম মৌসুমে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে গড়ে চার হাজার মেগাওয়াট। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় পিক লোডভিত্তিক (চাহিদা বাড়লে ব্যবহার হয় এমন কেন্দ্র) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা রয়েছে সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট।
দেশে গ্রীষ্ম মৌসুমে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে গড়ে চার হাজার মেগাওয়াট। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় পিক লোডভিত্তিক (চাহিদা বাড়লে ব্যবহার হয় এমন কেন্দ্র) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা রয়েছে সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট। এর বেশির ভাগই বেসরকারি খাতের ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্র, যেখানে উৎপাদন খরচ সবসময়ই বেশি। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী, পিক আওয়ারে (দিন ও সন্ধ্যায়) বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেই কেবল এসব কেন্দ্র উৎপাদনে থাকার কথা। কিন্তু বেজ লোডভিত্তিক (সার্বক্ষণিক চালু থাকবে এমন) কেন্দ্রের জ্বালানি সংকটের কারণে উচ্চ মূল্যের পিক লোড কেন্দ্র চালাতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এতে সংস্থাটির আর্থিক ক্ষতি বেড়েই চলেছে।
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যুক্ত রয়েছে ১৪৪টি কেন্দ্র। বিপিডিবির হিসাব অনুযায়ী, এর মধ্যে বেজ লোডভিত্তিক কেন্দ্র রয়েছে মোট ৫২টি, যার মোট সক্ষমতা ১৯ হাজার ২২৯ মেগাওয়াট। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারিভাবে নির্মিত ৯২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে পিক লোডভিত্তিক।
বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি-অনিয়ম ধরায় গতিহীন উদ্যোগ !
১৮ জানুয়ারি ২০২৫, শেয়ারবিজ নিউজ
আওয়ামী লীগের শাসনামলে লাইসেন্স দেয়া বড় সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনা করছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি। অবসারপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এই কমিটি চুক্তিগুলোয় প্রাথমিকভাবে বেশকিছু অনিয়ম পায়। এসব অনিময় যাচাই-বাছাই ও প্রয়োজনে মামলার কাজে সহায়তার জন্য একটি লিগ্যাল ও তদন্তকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়ার সুপারিশ করে কমিটি।
গত ২৬ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সুপারিশ করে চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি। এরপর প্রায় দুই মাস পেরুলেও এখনও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ফার্ম নিয়োগ করা হয়নি। ফলে চুক্তির অনিয়ম বা সুপারিশ কার্যক্রম পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি। এছাড়া আদানির চুক্তি পর্যালোচনায় ১৯ নভেম্বর উচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিলেও তার অগ্রগতি নেই।
জানতে চাইলে গত সপ্তাহে চুক্তি পর্যালোচনা কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে জানান, এখনও কোনো বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বা আন্তর্জাতিক ল’ ফার্ম নিয়োগ হয়নি। তারা আরও বলেন, কমিটি যেসব অনিময় খুঁজে পেয়েছে তার ভিত্তিতে আরবিট্রেশন বা মামলায় যেতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে যাতে এগুলো ভ্যালিড হয় তাই আন্তর্জাতিক আইন ও তদন্তকারী সংস্থাকে অবিলম্বে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে এ ধরনের মামলা ও সহায়তার পূর্ব-অভিজ্ঞতা থাকাটা জরুরি। তবে এখনও সেটি করা হয়নি।
আরইবির মুনাফা বেড়েছে ৪৭% লোকসানে ডুবছে পবিসগুলো
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শেয়ারবিজ নিউজ
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। ৬১টি জেলার ৪৬২টি উপজেলার ৮৫ হাজার ৩৬৮ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পবিসগুলোর। তবে এসব সমিতিকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। যদিও নিয়ন্ত্রণের নামে মূলত চলে শোষণ ও সুদের ব্যবসা। এতে প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎসেবা প্রদানকারী পবিসের অধিকাংশ লোকসান ডুবছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরইবি ভাসছে মুনাফায়। গত অর্থবছর সংস্থাটির মুনাফা ৪৭ শতাংশ বেড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রণের নামে পবিসগুলোর সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম কুক্ষিগত করে রেখেছে আরইবি। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার সঞ্চালন লাইন থেকে শুরু করে গ্রাহকের ঘরের মিটার পর্যন্ত সবই কেনে আরইবি।
যদিও এগুলোর দাম পরিশোধ করতে হয় পবিসগুলোকে। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আরইবি কিনে থাকে নি¤œমানের যন্ত্রপাতি। আর নি¤œমানের এসব যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম দিয়ে পরিচালিত বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার দায়িত্ব পবিসগুলোর। তবে প্রতিবাদ করতে গেলেই মিলে বদলি, তিরস্কার বা শাস্তি। এদিকে গত জানুয়ারি থেকে সংস্কারের দাবিতে পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করলে তাদের নানাভাবে দমনের চেষ্টা করে যাচ্ছে আরইবি। সাময়িক বরখাস্ত, তাৎক্ষণিক চাকরিচ্যুতি (ইন্সটেন্ট রিলিজ), দূরের জেলাগুলোয় বদলি, পদোন্নতি না দেয়াÑসবরকম ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এমনকি রাষ্ট্রদোহিতার মামলা দিয়ে জেলেও ঢোকানো হয় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকেও বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কোনো সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়নি।
এলএনজি সরবরাহে বাংলাদেশের সঙ্গে বড় চুক্তি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গ বড় ধরনের একটি নন-বাইন্ডিং চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আর্জেন্ট এলএনজি, যার আওতায় বছরে ৫০ লাখ টন তরলীকৃত গ্যাস সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
গত সোমবার ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এলএনজি সরবরাহে দেশটির কোনো প্রতিষ্ঠানের এটিই সবচেয়ে বড় ধরনের চুক্তি বলে দাবি করা হচ্ছে।
এই চুক্তির মাধ্যমে নতুন মার্কিন প্রশাসনের জ্বালানিবান্ধব নীতিই প্রতিফলিত হলো।
আর্জেন্ট এলএনজি বছরে আড়াই কোটি টন এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতার একটি অবকাঠামো লুইজিয়ানায় গড়ে তুলছে ।
পোর্ট ফোরচনে তাদের প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে চুক্তি অনুসারে, এখান থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি পেট্রোবাংলার কাছে এলএনজি বিক্রি করতে পারবে। আর্জেন্টের সঙ্গে চুক্তিটি করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
পরিবেশ
সেন্ট মার্টিনে যেতে নিবন্ধনের পাশাপাশি লাগবে ট্রাভেল পাস
২১ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে যেতে নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে পর্যটকদের। আর এসব দেখভালের পাশাপাশি পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে ওই কমিটি গঠন করা হয়।
কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালককে করা হয়েছে সদস্য সচিব। এছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কক্সবাজার প্রতিনিধি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের কক্সবাজারের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কক্সবাজার প্রতিনিধি ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার প্রতিনিধি। তবে কাজের সুবিধার্থে প্রয়োজনে সদস্য বাড়াতে পারবে কমিটি।
ঢাকায় বায়ুদূষণ বাড়ছেই, বাড়ছে কাশি, শ্বাসকষ্ট
৩০ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
২৮ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, বেলা ১১টা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ২৫০ শয্যার টিবি (যক্ষ্মা) হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, বহির্বিভাগ রোগীর ভিড়ে ঠাসা। একটি চেয়ারও খালি নেই। দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শীত আসতেই রোগীর ভিড় বাড়ছে হাসপাতালটিতে। কেউ এসেছেন যক্ষ্মা নিয়ে, কেউ হাঁপানি বা অ্যাজমা নিয়ে, কেউ শ্বাসকষ্ট নিয়ে।
টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়শা আক্তার প্রথম আলোকে বললেন, ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তার সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার একটা সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে। দূষণ বেড়ে যাওয়ার এ সময়ে রোগীও বাড়ে।
যক্ষ্মা হাসপাতালে যখন রোগীর ভিড়, বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার জানাচ্ছে, বিগত সাত দিন ঢাকার বায়ুমান ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। শুষ্ক মৌসুমে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা প্রায়ই ১ নম্বরে থাকে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে রাত পৌনে ৯টায় বিশ্বের ১২৫টি শহরের মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে ঢাকা ছিল তৃতীয়। শীর্ষে ছিল পাকিস্তানের লাহোর, দ্বিতীয় ভারতের নয়াদিল্লি।
আইকিউএয়ারের ২০২৩ সালের বছরভিত্তিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ বেশি বাংলাদেশে। এ তালিকায় ১ নম্বরে বাংলাদেশ। এরপর রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, তাজিকিস্তান ও বুরকিনা ফাসো। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ১ নম্বরে ছিল ভারতের নয়াদিল্লি। এরপর রয়েছে ঢাকা, বুরকিনা ফাসোর ওয়াগাডুগু, তাজিকিস্তানের দুশানবে ও ইরাকের বাগদাদ।
বাগেরহাটে সুপেয় পানির সংকট, অধিকাংশ পিএসএফ অকেজো
০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ভূগর্ভস্থ স্বাদু পানির স্তর নেমে যাওয়া, লবণাক্ততা ও আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট উত্তরণে সময়ের সঙ্গে সরকারি প্রকল্পের ধরন বদলে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অগভীর নলকূপ, গভীর নলকূপ, সোলার পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এক হাজার থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ট্যাংকি বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু কোনোকিছুতেই এ সংকটের সুরাহা হয়নি।
বাগেরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ১৬ হাজার ৩৬১টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয় ১৪ হাজার ১২৬টি। পিএসএফ স্থাপন করা হয় ২ হাজার ৭৯৯টি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাগেরহাটের লবণাক্ত এলাকাগুলোতে সুপেয় পানির সংকট মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পুকুর পাড়ে তৈরি করা হয় পিএসএফ। কিন্তু তদারকির অভাবে সেগুলোর অধিকাংশই অকেজো হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে ওইসব এলাকার মানুষ সরাসরি পুকুরের পানি পান করছেন। এতে প্রতিটি পরিবারে পেটের পীড়াসহ রোগবালাই দেখা দিচ্ছে।
জালকুঁড়ি-ফতুল্লার কৃষিজমিতে এখন ময়লার ভাগাড়, শিল্প-কারখানা
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
একসময় দেশে সুগন্ধি কালিজিরা চাল আবাদের জন্য বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিল নারায়ণগঞ্জের জালকুঁড়ি। এখান থেকে সুগন্ধি এ চালের সরবরাহ যেত দেশের বিভিন্ন স্থানে। এর পাশাপাশি রাজধানী
একসময় দেশে সুগন্ধি কালিজিরা চাল আবাদের জন্য বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিল নারায়ণগঞ্জের জালকুঁড়ি। এখান থেকে সুগন্ধি এ চালের সরবরাহ যেত দেশের বিভিন্ন স্থানে। এর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চলগুলোর খাদ্য জোগানের বড় একটি উৎস হয়ে উঠেছিল নারায়ণগঞ্জের জালকুঁড়ি-ফতুল্লা। ক্রমেই সংকুচিত হতে হতে এখানে কালিজিরা চালের আবাদ এখন একপ্রকার বন্ধ। কৃষিজমি কমতে থাকায় এ অঞ্চলে অন্য সব ধরনের ফসলের আবাদও গত কয়েক বছর টানা হ্রাস পেয়েছে। আর কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে ময়লার ভাগাড় এবং একের পর এক শিল্প-কারখানা।
বর্তমানে জালকুঁড়ি-ফতুল্লা এলাকায় কৃষিজমি দেখা যায় কালেভদ্রে। সে জায়গায় গড়ে উঠেছে কলকারখানা আর নানা আবাসন প্রকল্প। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য দুর্বিষহ এক উৎপাত হয়ে দাঁড়িয়েছে শিল্পবর্জ্যে দূষিত স্থানীয় খালগুলো থেকে আসা দুর্গন্ধ। যেটুকু কৃষিজমি আছে, সেটুকুরও উর্বরতা দিন দিন কমছে। দূষণের প্রভাবজনিত রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে।
গ্রামেই বেশি কোমল পানীয়ের প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
পানি, জুস কিংবা কোমল পানীয়তে তৃষ্ণা নিবারণ করা হয়। এতে বোতলের পানিই ভরসা। তবে প্রায় প্রতিটি বোতলই তৈরি প্লাস্টিক দিয়ে। ঘরে-বাইরে এখন সমানতালে ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল। অথচ এই প্লাস্টিকের বোতল স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ডেকে আনছে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি। এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গ্রামে পানির নানা উৎস থাকলেও প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার বাড়ছে। শহরে পানির বোতল এবং গ্রামে কোমল পানীয়ের বোতল বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
গতকাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) ‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের পরিবেশগত প্রভাব: দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শীর্ষক প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বাংলাদেশের শহর-গ্রামে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ব্যবহারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বছরে প্রায় ৩ দশমিক ১৫ থেকে ৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে মাত্র ২১ দশমিক ৪ শতাংশ রিসাইকেল হয়। বাকি ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ প্লাস্টিক বোতল নদী, সমুদ্র এবং ডাম্পিং স্টেশনে জমা হয়। ভোক্তাদের মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন শহরের মাত্র ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং গ্রামের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। শহরাঞ্চলের খুচরা বিক্রেতারা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পানির বোতল বিক্রি করেন ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং গ্রামের খুচরা বিক্রেতারা কোমল পানীয়ের বোতল বিক্রি করেন ৮৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিমানবন্দর না হলেও হচ্ছে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি পার্ক, আবাসন প্রকল্প
ঝুঁকিতে দেশী মাছ ও কৃষির আধার আড়িয়ল বিলের প্রতিবেশ
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
মুন্সিগঞ্জে আড়িয়ল বিলের একাংশ ভরাট করে নির্মাণ হচ্ছে বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি পার্ক। বর্তমানে প্রকল্পটির ভূমি উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি পার্ক ছাড়াও এখানে বিল ভরাট করে
মুন্সিগঞ্জে আড়িয়ল বিলের একাংশ ভরাট করে নির্মাণ হচ্ছে বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি পার্ক। বর্তমানে প্রকল্পটির ভূমি উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি পার্ক ছাড়াও এখানে বিল ভরাট করে নির্মাণ হচ্ছে নানা আবাসন ও শিল্প-কারখানাও। তৈরি হয়েছে কিছু সড়ক। এতে আরো ভরাট হয়ে পড়েছে বিল। বাধাগ্রস্ত হয়েছে বিলের পানিপ্রবাহ। হুমকিতে পড়েছে দেশী মাছ এবং কৃষিকাজের বড় আধার হিসেবে পরিচিত আড়িয়ল বিল।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পরই মুন্সিগঞ্জের আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে সময় এখানকার প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় আড়িয়ল বিল ভরাট করে বিমানবন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবিদরা। একপর্যায়ে সেখানে বিমানবন্দর নির্মাণের চিন্তা থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগ সরকার।
এদিকে প্রাণঘাতী ও মর্মান্তিক কয়েকটি দুর্ঘটনার পর পুরান ঢাকা ও কেরানীগঞ্জে গড়ে ওঠা কেমিক্যাল গুদামগুলো ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার আলোচনা শুরু হয়। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা ঢাকার বাইরে সরিয়ে নিতে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের তুলসীখালি চিত্রকোট ও কামারকান্দা এলাকার ৩১০ একর জায়গায় বিসিক কেমিক্যাল শিল্প পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালে। তবে জমি অধিগ্রহণসহ নানা সমস্যায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আড়িয়ল বিলে ধান ও বিভিন্ন রবিশস্যের চাষ হয়। বর্ষায় মাছ চাষ ছাড়াও অনেক শামুক পাওয়া যায় এখানে। একসময় এ শামুক বিক্রি করেও অনেকের জীবিকা চলত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জৌলুস হারিয়েছে আড়িয়ল বিল।
সরজমিন দেখা যায়, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি পার্ক প্রকল্প এলাকায় ভূমি উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য বিলের একাংশ ভরাটের পর এখন আশপাশেও অনেক স্থানে তা ভরাট করে আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। বিলের ঠিক মাঝখান দিয়ে নির্মাণ হয়েছে বেশ কয়েকটি রাস্তা। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিলের পানিপ্রবাহ। বিলের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হওয়ায় এখন এখানে মাছের প্রাপ্যতা কমেছে। কমছে কৃষিজমির উৎপাদনশীলতাও।
ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীনের মহা-বাঁধ প্রকল্প অনুমোদন
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, বেনার নিউজ
বাংলাদেশ, ভারত ও তিব্বতি মানুষের বহুমাত্রিক উদ্বেগের তোয়াক্কা না করে ব্রহ্মপুত্র নদীর উজানে মহা-বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে চীন সরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বৃহত্তম এই জলবিদ্যুৎ ড্যাম নির্মিত হলে বাংলাদেশ, ভারত ও তিব্বতের ভূপ্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীববৈচিত্র্য, বাস্তুচ্যুত হবে হাজার হাজার মানুষ এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে অনেক ধর্মীয় স্থাপনা, তীর্থস্থান ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীর নিম্ন প্রবাহে মেদোগ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে চীনা সরকার।
এই বাঁধ প্রতি বছর ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা চীনের বিশাল থ্রি গর্জেস ড্যামের তুলনায় তিনগুণ বেশি।
ইয়ারলুং সাংপো নদী পশ্চিম তিব্বতের হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতে ব্রহ্মপুত্র এবং বাংলাদেশে যমুনা নদী নামে প্রবাহিত হয়।
শর্ত না মানায় ঝুঁকিপূর্ণ দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ
১২ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
সংরক্ষিত বনের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে রেলপথ। কাটা পড়ে কয়েক লাখ গাছ। রেলপথ বসানোর জন্য একের পর এক পাহাড় কেটে সমতল করা হয়। এর ফলে বিপন্নপ্রায় এশিয়ান হাতি চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করতে গিয়ে পদে পদে পরিবেশের ক্ষতি করা হয়। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় থাকায় বন বিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর কেউ-ই প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা দেয়নি। উল্টো সংরক্ষিত বনের তালিকা থেকে প্রকল্প এলাকাকে বাদ দেওয়া হয়। অবশ্য প্রকল্পের কাজ করার জন্য পরিবেশ সংরক্ষণে চারটি শর্ত বেঁধে দিয়েছিল বন বিভাগ। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কাজ প্রায় শেষ করলেও শর্তগুলো পুরোপুরি প্রতিপালন করেনি।
শর্ত না মেনে কাজ শেষ করায় বিপন্নপ্রায় হাতি চলাচলে ঝুঁকি রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ট্রেনের ধাক্কায় একটি বাচ্চা হাতি মারা গেছে। খাড়াভাবে কাটার কারণে ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটছে। এতে ট্রেন চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চারটি শর্তে সংরক্ষিত বনকে ‘ডি রিজার্ভ’ (সংরক্ষিত তালিকা থেকে বাদ) ঘোষণা করে ২০১৯ সালের ৬ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। নির্মাণকাজ শেষে ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন মাসে শেষ হবে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ।
আগের সরকারের দেখানো পথেই হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার
১৪ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
রাজধানীর অন্যতম জলাধার হাতিরঝিল ও পার্ক পান্থকুঞ্জের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি সংযোগ সড়ক (র্যাম্প)। ‘পরিবেশ বিধ্বংসী’ ও ‘জনবিরোধী’ অ্যাখা দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের র্যাম্পটি বাতিলের দাবিতে ৩২ দিন ধরে আন্দোলন করছে ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ ডিসেম্বর পার্কে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বিষয়টি নিয়ে তারা পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসারও আশ্বাস দিয়ে আসেন।
এরপর ২১ দিন পার হলেও তিন উপদেষ্টা বা সরকারের দায়িত্বশীল কেউ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি বলে অভিযোগ। আন্দোলনকারীরা উপদেষ্টাদের আশ্বাসকে দেখছেন ‘কথার বরখেলাপ’ হিসেবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা ফিডব্যাক তো পাইইনি, উল্টো আমাদের সঙ্গে বসার বিষয়ে তিন উপদেষ্টা মিলে যে কথা দিয়েছিলেন, সেটাও ওনারা রক্ষা করেননি। আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি। এখন আমাদের মনে হচ্ছে, ওনারা কথার বরখেলাপ করেছেন।’
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) পদ্ধতিতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এর মালিকানায় রয়েছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চাপেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এ র্যাম্প বাদ দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
বিষের বিপদে ‘রক্ষক’ সুন্দরবন
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট একের পর এক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বুক পেতে ঠেকিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। শুধু ঝড়-জলোচ্ছ্বাসেই নয়; লবণাক্ততা ও উষ্ণতা বৃদ্ধি, অচেনা রোগবালাই আর কীটপতঙ্গের আক্রমণেও দেশের এই অতন্দ্র প্রহরী এখন ক্ষতবিক্ষত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অসাধু মানুষের অত্যাচার। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের সবচেয়ে বড় রক্ষক সুন্দরবন আজ নিজেই বিপদে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধান বলছে, এ মুহূর্তে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো বনের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। এই অপতৎপরতার পেছনে কাজ করছে প্রভাবশালী অন্তত তিনটি গোষ্ঠী। প্রথমটি হলো বন উপকূলের একশ্রেণির মাছ ব্যবসায়ী, যাঁদের বলা হয় কোম্পানি মহাজন। তাঁরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জেলেদের প্ররোচনা দেন বিষ ছিটিয়ে দ্রুত বেশি মাছ শিকারে। আরেক গোষ্ঠী হলো অসাধু বনরক্ষী। কোম্পানি মহাজনদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তারা অভয়ারণ্যের নদী-খালে ঢুকে বিষ ছিটিয়ে মাছ ধরার সুযোগ করে দেন। এই দুই দলের সঙ্গে সম্প্রতি আবার যুক্ত হয়েছে বনদস্যুরা। এই চক্রটিকে সহযোগিতা করছেন এক শ্রেণির সাংবাদিক।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
চোখে লেন্স স্থাপনে নৈরাজ্য
০৭ নভেম্বর ২০২৪, সমকাল
দৃষ্টিশক্তির সমস্যা নিরসনে চোখে কৃত্রিম স্বচ্ছ লেন্স স্থাপনে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দৃশ্যমান তদারকি না থাকায় সংস্থাটির দেওয়া নির্দেশনা মানছে না সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখের ছানি অপসারণের পর সাধারণত লেন্স স্থাপন করা হয়। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে, অপারেশন প্যাকেজের নামে রোগীদের সঙ্গে কিছু হাসপাতাল ভয়ংকর প্রতারণা করছে। ওটি চার্জ, সিট ভাড়া ও ওষুধের খরচের বাইরেও অনেক হাসপাতাল সার্ভিস চার্জের নামে নিচ্ছে কয়েক গুণ টাকা। এ ছাড়া প্যাকেজের মধ্যে আলাদা করে লেন্সের দাম উল্লেখ করা হয় না। এতে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
তদারককারীরা নিষ্ক্রিয়, থমকে আছে রাজধানীর ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম
১৫ নভেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
এডিস মশার বিস্তার রোধে রাজধানীসহ সারা দেশের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আর এ কার্যক্রম পরিচালিত হয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও
এডিস মশার বিস্তার রোধে রাজধানীসহ সারা দেশের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আর এ কার্যক্রম পরিচালিত হয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নিয়ে দেশের প্রায় সব মেয়র ও কাউন্সিলরকে অপসারণ করে। এসব সংস্থায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সরকারি কর্মকর্তাদের। তবে চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে তাদের তদারকি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কর্মকর্তার ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তার কারণেই মূলত রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম থমকে আছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকালও একজনের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীতে। ভাইরাস জ্বরটিতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো ৩৯০ জন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ২৬৭ জন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২৩ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটিতে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ৪৭৮ ও দক্ষিণে ১৪ হাজার ১১৮ জন। রাজধানীতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৩৭ জনের।
স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতি, বদলি–পদায়নে বিরোধ
২২ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
স্বাস্থ্য খাতে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার ছিল জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা। নানামুখী পদক্ষেপের পরও কাজটি এখনো ঠিকমতো হচ্ছে না। স্বাস্থ্যে নিয়মিত কাজের বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ে বদলি–পদায়ন চলছে। যদিও এসব কাজ নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অনিয়মের মূলে ছিল দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ–পদোন্নতি। এর পাশাপাশি কেনাকাটায় ছিল সরকার–ঘনিষ্ঠদের ব্যবসায়িক দুর্নীতি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
বর্তমান সরকারের ১০০ দিনে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পেশাজীবীদের সংগঠনের নামে এখন দলীয় প্রাধান্য ভিন্নভাবে দেখা দিয়েছে, যা গণ–অভ্যুত্থানের বৈষম্যবিরোধী আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয়। তাঁরা এ–ও বলছেন, স্বাস্থ্য খাত প্রয়োজনীয় গুরুত্ব পায়নি।
নাগরিক সংগঠন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের আহ্বায়ক কাজী সাইফউদ্দীন বেন্নূর প্রথম আলোকে বলেন, অগ্রাধিকার বিবেচনায় জুলাই বিপ্লবে আহত ছাত্র-জনতার সঠিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা জরুরি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসকদের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি এই মন্ত্রণালয় এখনো দুর্নীতিমুক্ত হয়নি বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকায় এবার জিকা রোগী শনাক্ত
২৭ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ঢাকায় এবার জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত তিন মাসে আটজনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি জানা গেছে। গত বছরও পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তাঁরা এখন ঝুঁকিমুক্ত। আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এডিস মশাবাহিত জিকা রোগ দেশে প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) সংরক্ষিত রক্তের নমুনা পরীক্ষায় তা জানা যায়। জিকায় আক্রান্ত ওই রোগী ছিলেন চট্টগ্রামের। ২০১৭ সালে আইইডিসিআরের একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের মাধ্যমে বিষয়টি প্রথম জানা যায়।
ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে ৯৩% রোগী আর্থিক সংকটে পড়েন
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
দেশের যেসব কিডনি রোগীকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস সেবা নিতে হয়, তাঁদের মাসে গড়ে ৪৬ হাজার ৪২৬ টাকা ব্যয় হয়। বড় অঙ্কের এই ব্যয় করতে গিয়ে ৯৩ শতাংশ রোগীর পরিবার আর্থিক সমস্যায় পড়ে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। ‘আউট অব পকেট কস্ট অব কিডনি ডায়ালাইসিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি আজ সোমবার বিআইডিএসের চার দিনব্যাপী ‘বার্ষিক বিআইডিএস সম্মেলন-২০২৪’-এর তৃতীয় দিনে তুলে ধরা হয়। সম্মেলনটি হচ্ছে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে।
বিদেশগামী রোগীদের ৫৩% যান রোগ নির্ণয়ের জন্য
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী রোগীদের ৫৩ শতাংশ বিদেশ যান মূলত রোগনির্ণয় বা চেকআপের জন্য। যত রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশ যান তার ৫ শতাংশ চিকিৎসক। চিকিৎসার জন্য বিশ্বের যেসব দেশের মানুষ বিদেশে বেশি যায় সেই তালিকার দশম স্থানে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মানুষের বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার এই তথ্য শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। ‘চিকিৎসাসেবায় বিদেশমুখিতা: আমাদের উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই বৈঠক আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলেন, দেশের রোগীদের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে সরকার পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
চাহিদার ৯৭% ওষুধই মেলে না দেশের সবচেয়ে বড় কিডনি হাসপাতালে
১০ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা হালিমা আক্তার দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছেন। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে তিনি চলতি মাসের শুরুর দিকে এ রোগের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে (এনআইকেডিইউ) যান। তবে এর সেবার মান নিয়ে তার বিস্তর অভিযোগ। চিকিৎসকের দেয়া সাতটি ওষুধের মধ্যে হাসপাতাল থেকে পেয়েছেন কেবল দুটি। এছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় সিরিঞ্জ ও অন্যান্য ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও তিনি কিছুই পাননি। কিনতে হয়েছে বাইরে থেকে।
ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট থাকায় এনআইকেডিইউতে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগীকেই বাইরের ফার্মেসির দ্বারস্থ হতে হয়। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১০২ ধরনের ওষুধ সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে মিলছে কেবল ২০-২৫টি। কর্তৃপক্ষ বলছে, বরাদ্দ না থাকায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না দেশের বৃহত্তম এ কিডনি হাসপাতাল। বর্তমানে রোগীদের দেয়া হচ্ছে চাহিদার মাত্র ৩ শতাংশ ওষুধ। বাকি ৯৭ শতাংশ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।
শিক্ষা
ঢাবি ক্যাম্পাসে যান চলাচল সীমিত করে বিজ্ঞপ্তি
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ইত্তেফাক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার (১৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদের দপ্তর থেকে জারি করা এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। শুক্র, শনিবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা এবং অফিস চলাকালীন দিনগুলো বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রবেশপথগুলোতে (শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, বার্ন ইউনিট, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, পলাশী মোড় ও নীলক্ষেত) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি, জরুরি সেবা (অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, রোগী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য সরকারি গাড়ি) ব্যতীত অন্য কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না।
ঢাবি ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার হঠাৎ করে এর ৭ প্রবেশ পথে বেরিয়ার এবং সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স বক্স বসানো হয়। পলাশীর মোড়, নীলক্ষেত মোড়, শহীদ মিনার, শাহবাগ, শহীদুল্লাহ হল, হাইকোর্ট মোড় এবং শিববাড়ি ক্রসিং মোড়ে বসে এসব বেরিয়ার। ক্যাম্পাসের স্টিারযুক্ত গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন প্রবেশ করছেনা। টিএসসি, ভিসি চত্বর, শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বর এলাকায় রিকশা চলাচলও সীমিত হয়েছে।
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রাথমিক পর্যায়ে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় সব শিক্ষার্থীকে একই বই পড়ানো হয় এবং একই ধরনের শিক্ষা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। দেশে
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রাথমিক পর্যায়ে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় সব শিক্ষার্থীকে একই বই পড়ানো হয় এবং একই ধরনের শিক্ষা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে অন্তত ১১ ধরনের। ধরনভেদে প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমেও রয়েছে ভিন্নতা। সরকারিভাবে স্বীকৃত বা স্বীকৃতিহীন মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কারিকুলাম চালু আছে অন্তত পাঁচ রকমের। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ প্রাথমিক পর্যায়ে একই ধরনের কারিকুলামের আওতায় একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের কথা বলা হলেও দেড় যুগেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধরন ও কারিকুলামের এ ভিন্নতা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের শুরুতেই অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতার স্তরে ব্যাপক পার্থক্য তৈরি করে দিচ্ছে। পাশাপাশি তা সামাজিক বৈষম্যও বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ খাতসংশ্লিষ্টদের।
দেশে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবতেদায়ি মাদ্রাসা, উচ্চ মাদ্রাসাসংলগ্ন এবতেদায়ি মাদ্রাসা, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়, এনজিও পরিচালিত শিক্ষা কেন্দ্র, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট স্কুল, কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়।
এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় পুরোপুরি সরকারি কারিকুলামকেই অনুসরণ করা হয়। এ কারিকুলাম সাধারণ শিক্ষা কারিকুলাম নামেও পরিচিত। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোয় সাধারণ শিক্ষা কারিকুলামে নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বেশকিছু অতিরিক্ত বিষয়ও পড়ানো হয়। এবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং উচ্চ মাদ্রাসা সংলগ্ন এবতেদায়ি মাদ্রাসায় অনুসরণ করা হয় সরকার নির্ধারিত পৃথক কারিকুলাম। এ কারিকুলাম সাধারণ মাদ্রাসা কারিকুলাম নামে পরিচিত, যেখানে ধর্মীয় শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। আর কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলোয় সম্পূর্ণ নিজস্ব কারিকুলাম অনুসরণ করা হয়। এ দুই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন পদ্ধতিও পুরোপুরি আলাদা। কওমি মাদ্রাসায় কুরআন ও হাদিস শিক্ষায় জোর দেয়া হয় সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অনুসরণ করা হয় বিদেশী কারিকুলাম।
প্রাথমিক শিক্ষায় ১১ রকমের স্কুল, পাঁচ ধরনের কারিকুলাম
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রাথমিক পর্যায়ে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় সব শিক্ষার্থীকে একই বই পড়ানো হয় এবং একই ধরনের শিক্ষা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। দেশে
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রাথমিক পর্যায়ে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় সব শিক্ষার্থীকে একই বই পড়ানো হয় এবং একই ধরনের শিক্ষা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে অন্তত ১১ ধরনের। ধরনভেদে প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমেও রয়েছে ভিন্নতা। সরকারিভাবে স্বীকৃত বা স্বীকৃতিহীন মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কারিকুলাম চালু আছে অন্তত পাঁচ রকমের। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ প্রাথমিক পর্যায়ে একই ধরনের কারিকুলামের আওতায় একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের কথা বলা হলেও দেড় যুগেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধরন ও কারিকুলামের এ ভিন্নতা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের শুরুতেই অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতার স্তরে ব্যাপক পার্থক্য তৈরি করে দিচ্ছে। পাশাপাশি তা সামাজিক বৈষম্যও বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ খাতসংশ্লিষ্টদের।
দেশে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবতেদায়ি মাদ্রাসা, উচ্চ মাদ্রাসাসংলগ্ন এবতেদায়ি মাদ্রাসা, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়, এনজিও পরিচালিত শিক্ষা কেন্দ্র, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট স্কুল, কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়।
এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় পুরোপুরি সরকারি কারিকুলামকেই অনুসরণ করা হয়। এ কারিকুলাম সাধারণ শিক্ষা কারিকুলাম নামেও পরিচিত। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোয় সাধারণ শিক্ষা কারিকুলামে নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বেশকিছু অতিরিক্ত বিষয়ও পড়ানো হয়। এবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং উচ্চ মাদ্রাসা সংলগ্ন এবতেদায়ি মাদ্রাসায় অনুসরণ করা হয় সরকার নির্ধারিত পৃথক কারিকুলাম। এ কারিকুলাম সাধারণ মাদ্রাসা কারিকুলাম নামে পরিচিত, যেখানে ধর্মীয় শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। আর কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলোয় সম্পূর্ণ নিজস্ব কারিকুলাম অনুসরণ করা হয়। এ দুই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন পদ্ধতিও পুরোপুরি আলাদা। কওমি মাদ্রাসায় কুরআন ও হাদিস শিক্ষায় জোর দেয়া হয় সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অনুসরণ করা হয় বিদেশী কারিকুলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন ৫৭% ছাত্রী, ৩৪% ছাত্র
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়েন জান্নাতি ফাহমিদা। কিন্তু আবাসিক হলে সিট পাননি। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের এই ছাত্রী আজিমপুরের একটি মেসে (ছাত্রীনিবাস) থাকছেন। এ জন্য প্রতি মাসে তাঁকে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে।
ফাহমিদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাইরে থাকলে খাওয়ার সমস্যা, যাতায়াতের সমস্যা, পানির সমস্যা—মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ি। হল কর্তৃপক্ষকে অনেক বলেও সিট পাচ্ছি না।’
শুধু ফাহমিদাই নন। তাঁর মতো অনেক ছাত্রীকে আবাসিক হলে সিট না পেয়ে মেসে বা আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকতে হচ্ছে। এই ছাত্রীদের মতে, ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় তাঁরা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নিরাপত্তা নিয়েও থাকে নানা ধরনের শঙ্কা। তার ওপর অতিরিক্ত খরচ তো আছেই, যা তাঁদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১২ বছরের শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ছাত্রী ভর্তির হার দিন দিন বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ দুই শিক্ষাবর্ষে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী ভর্তির হার ছিল বেশি। কিন্তু সেই বিবেচনায় তাঁদের জন্য আবাসন সুবিধা বাড়েনি। ফলে বর্তমানে অধ্যয়নরত প্রায় ৫৭ শতাংশ ছাত্রী হলে সিট না পেয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই তুলনায় ছাত্রদের অবস্থা ভালো, তাঁদের ৩৪ শতাংশকে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে হচ্ছে।
এদিকে ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত পাঁচটি হলে সিট সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ ছাত্রীকে আবাসন সুবিধা দেওয়ায় গাদাগাদি করে থাকছেন তাঁরা। পাঠাগার, রিডিং রুম, ডাইনিং-ক্যানটিন, রান্নাঘর, শৌচাগার—সবখানে চাপ থাকে সব সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এরই মধ্যে প্রথম বর্ষের নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভর্তি সম্পন্ন হলে ছাত্রীদের আবাসন–সংকট আরও তীব্র হবে।
আবাসন–সংকট সমাধানের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করছেন ছাত্রীরা। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার অবস্থান কর্মসূচি পালন ও উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন ছাত্রীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রীদের আবাসন–সংকট কমাতে আপাতত বাঙ্ক বেড দিয়ে আসন বাড়ানো হয়েছে। যাদের আবাসিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে না, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তাঁদের আবাসন বৃত্তি চালু করা হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় দুটি আবাসিক হল নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে।
শিক্ষার্থী ভর্তির তুলনামূলক চিত্র
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালে ছাত্রী ভর্তির হার ছিল প্রায় ৩৮ শতাংশ। সেখানে চলতি বছর সেটা ছিল ৫০ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত বছর ছাত্রী ভর্তির হার ছিল আরও বেশি, ৫১ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত ১২ বছরে যে হারে ছাত্রী ভর্তি বেড়েছে, সেই বিবেচনায় আবাসন বাড়ানো হয়নি। সর্বশেষ ২০১২ সালে ছাত্রীদের আবাসনের জন্য কবি সুফিয়া কামাল হল উদ্বোধন করার পর আর কোনো হল নির্মাণ হয়নি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ২০২০ সালে ৪৮ শতাংশ, ২০২২ সালে ৪৭ শতাংশ, ২০২১ সালে ৪৫ শতাংশ ছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। ১২ বছরে ছাত্রী ভর্তির হার কখনো ৩৫ শতাংশের নিচে নামেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল আছে মোট ১৯টি। এর মধ্যে ছাত্রদের হল ১৩টি, ছাত্রীদের হল ৫টি এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১টি হল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৪০ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৮০ ছাত্রের জন্য ১৩টি হলে সিট রয়েছে ১৩ হাজার ৪৯৪টি। বিপরীতে ১৮ হাজার ৮৪৬ ছাত্রীর জন্য ৫টি হলে সিট রয়েছে ৪ হাজার ৮৪৩। এই হিসাবে প্রতিটি সিটের বিপরীতে ছাত্রের সংখ্যা ১ দশমিক ৫৮। আর প্রতি শয্যার বিপরীতে ছাত্রীসংখ্যা প্রায় ৪ জন। হলের প্রতিটি শয্যায় সাধারণত দুজনের আবাসন ধরে হিসাব করে থাকে কর্তৃপক্ষ।
যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করেই নিয়োগের পরীক্ষায় ডাক পেলেন সাবেক শিবির সভাপতি
০১ জানুয়ারি ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষিত ফলাফলের শর্ত পূরণ না করেই ডাক পেয়েছেন এক প্রার্থী। মোবারক হোসাইন নামের ওই প্রার্থী বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের এই পদের ক্ষেত্রে প্রার্থীর এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অথবা ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ থাকতে হবে। এই বিজ্ঞপ্তির অধীনে নিয়োগ পরীক্ষায় ডাক পাওয়া মোবারক হোসাইনের এইচএসসির জিপিএ ৪.০০-এর কম। তিনি ২০০৩ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫-এর মধ্যে জিপিএ-৩.৯০ পেয়ে পাস করেছিলেন।
৪১ কোটি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে গেছে ৬ কোটি
০২ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার পর গিয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে প্রধান শিক্ষক এ কে এম ওবাইদুল্লাহ অফিসেই ছিলেন। নতুন পাঠ্যবই নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বললেন, মাধ্যমিকে অষ্টম ও দশম শ্রেণির জন্য তিনটি করে বই পেয়েছেন। প্রাথমিকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির জন্যই এসেছে তিনটি করে বই। প্রাক্-প্রাথমিকে দুটি বইয়ের মধ্যে একটি করে পেয়েছেন। যেসব বই এসেছে, তা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে।
সেগুনবাগিচার এই বিদ্যালয়ের ভেতরে এক পাশে রমনা থানা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়। সেখানে গিয়ে জানা গেল, এই থানা কার্যালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা মিলিয়ে ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মোট পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৪টি। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত পেয়েছেন অষ্টম শ্রেণির জন্য ২২ হাজার ৭৭০টি এবং দশম শ্রেণির জন্য ২২ হাজার ৫৫৪টি। বাকি কোনো শ্রেণির বই গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
০২ জানুয়ারি, ২০২৫, কালের কন্ঠ
পোষ্য কোটা বাতিলের আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিনা অনুমতিতে বহিরাগতদের প্রবেশ ও অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের বিনা অনুমতিতে প্রবেশ ও অবস্থান নিষিদ্ধ করা হলো। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যানবাহন ও মানুষের চলাচলের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্মুক্ত করার দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের
০৩ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত করার আকস্মিক সিদ্ধান্তে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় জনমনে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে যানবাহন ও মানুষের চলাচলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে বৈঠকে এই দাবি জানান। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ ছিলেন। অন্যদিকে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, কামরুল হাসান মামুন, সামিনা লুৎফা, মারুফুল ইসলাম, কামাল আহমেদ চৌধুরী, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, রুশাদ ফরিদী, মোশাহিদা সুলতানা, কাজলী সেহরীন ইসলাম, দীপ্তি দত্ত ও মারজিয়া রহমান।
‘মার্চের আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছানো সম্ভব নয়’
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫, বার্তা২৪.কম
আগামী মার্চের আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই কথা জানান।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশীয় ছাপাখানায় সব বই মুদ্রণ, পরিমার্জন, বইয়ের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি থাকাসহ বিভিন্ন কারণেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।’
৪৩তম বিসিএসের ২২৭ জন এবং প্রশিক্ষণরত ২৫২ এসআইকে বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চায় শিক্ষক নেটওয়ার্ক
০৭ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
৪৩তম বিসিএসে সুপারিশ পাওয়া ২২৭ জন এবং রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে মৌলিক প্রশিক্ষণরত ২৫২ উপপরিদর্শককে (এসআই) বাদ দেওয়ার ‘যথোপযুক্ত কারণ’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। শিক্ষকেরা বলেছেন, জনগণের অংশ হিসেবে তাঁরা এর কারণ জানতে চান। সরকারের প্রদর্শিত যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে অবিলম্বে এই প্রার্থীদের পুনর্ভুক্তির পক্ষে তাঁরা সরব থাকবেন।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে সংগঠনটির পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন এটি। বিবৃতিতে ৪৮ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেন।
শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই না পেলেও বিক্রি হচ্ছে নীলক্ষেতে
১৪ জানুয়ারি ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন
২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে এখনও সরবরাহ করতে পারেনি সরকার। এবছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছে নামমাত্র কিছু বই। পরে আরও কিছু বই সরবরাহ করা হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখনও বই পায়নি। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, যৎসামান্য বই পাওয়া গেছে, তা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি বই হাতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে তা শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। অথচ সব ক্লাসের বিনামূল্যের পাঠ্যবই পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর নীলক্ষেতের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে। বাংলাবাজার থেকে একটি চক্র পাঠ্যবই কিনে চড়া দামে বিক্রি করছে শিক্ষার্থীদের কাছে।
জবি দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর, বিজ্ঞপ্তি জারি
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, কালবেলা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব আহমেদ শিবলী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়টি জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্ন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে অবশিষ্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে চলমান প্রকল্পের পুনর্মূল্যায়ন ও আরডিপিপি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
যাতায়াত ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনা
কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার চালকসহ সাতজন নিহত
২৬ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কালিকাপুর রেলক্রসিং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল গ্রামের আলী আহমদ, রফিক মিয়া, সাজু মিয়া, লুৎফা বেগম, সানু বেগম ও সফরজান বেগম এবং পাশের খোদাইধুলি গ্রামের হোসনে আরা বেগম। তাৎক্ষণিকভাবে যাত্রীদের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক।
মুন্সিগঞ্জে এক্সপ্রেসওয়েতে তদারকি নেই, সাইন–সংকেতও গতানুগতিক
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বৈরী আবহাওয়ায় সড়ক, মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের ন্যূনতম গতিসীমা মানা হচ্ছে না। কুয়াশা বা বৈরী আবহাওয়ায় সামনের কিছু একেবারে দেখা না গেলে যানবাহন চালানো একেবারে বন্ধ রাখার কথা বলা আছে; কিন্তু সেই নির্দেশনা কেউ মানছেন না। এ জন্যই ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কে গত দুই দিন একাধিক যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সড়ক সংশ্লিষ্ট সূত্র ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গতকাল সোমবার ও আগের দিন রোববার মুন্সিগঞ্জে এক্সপ্রেসওয়েতে যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে, এর পেছনে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে। এ ছাড়া বিপুল খরচের মাধ্যমে নির্মাণ করা মহাসড়কটির সাইন-সংকেতব্যবস্থাও আধুনিক নয়, গতানুগতিক। এর আগে যমুনা সেতু চালুর পর সেতুটির আগে-পরে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনার ধরন হচ্ছে, ঘন কুয়াশার কারণে একটি যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়লে পেছন থেকে একের পর এক যান এসে ধাক্কা দেয়। একে ‘পাইল আপ’ বলে। এ জন্য দৃষ্টিসীমা একেবারে কমে গেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড
ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল চার বছর আগেই
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিকবার্তা
সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ২০১৯ সালের শেষ দিকে সরজমিনে পরীক্ষা চালিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। এ প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ২০২০ সালের শুরুর দিকে। ওই প্রতিবেদনে সচিবালয়ের
সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ২০১৯ সালের শেষ দিকে সরজমিনে পরীক্ষা চালিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। এ প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ২০২০ সালের শুরুর দিকে। ওই প্রতিবেদনে সচিবালয়ের বেশ কয়েকটি ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থায় মারাত্মক ত্রুটি খুঁজে পাওয়ার কথা জানানো হয়। এগুলো দূর করতে সে সময় বেশকিছু সুপারিশও করেছিল ফায়ার সার্ভিস। এরপর পাঁচ বছরের কাছাকাছি সময় পার হলেও বাস্তবায়ন হয়নি সুপারিশগুলো।
সে সময় যেসব ভবনে ত্রুটিগুলো শনাক্ত হয়েছিল, তার মধ্যে গত বুধবার মধ্যরাতের পর শুরু হওয়া অগ্নিকাণ্ডের শিকার ৭ নম্বর ভবনটিও ছিল। রাত ২টার কিছু আগে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টার বেশি। আর তা পুরোপুরি নির্বাপণে সময় লেগে যায় ১০ ঘণ্টার কাছাকাছি। ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়েছে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি, কম্পিউটার ও আসবাব।
ফায়ার সার্ভিসের ২০২০ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১ থেকে ৫ নম্বর পর্যন্ত পাঁচটি, ৭ থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত চারটি এবং পরিবহন পুল ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থায় মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে। ভবনগুলোয় জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, ফায়ার লিফট ও আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভের ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো ফায়ার পাম্প সেট। ফায়ার ডিপার্টমেন্ট কানেকশন, রাইজার ও হাইড্র্যান্টের মতো জরুরি সরঞ্জামাদির ব্যবস্থাও রাখা হয়নি ভবনগুলোয়। বহুতল ভবনের সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে প্রত্যেক ফ্লোরে সেফটি লবি থাকার কথা থাকলেও তা রাখা হয়নি। পাশাপাশি ভবনগুলোর তিনটি সাধারণ সিঁড়ির মধ্যে ছাদে খোলা রয়েছে শুধু একটি। কক্ষগুলোর দরজার সুইংও ত্রুটিপূর্ণ। নেই স্মোক ডিটেকশন ও অ্যালার্ম সিস্টেম। ছাদে লাইটিং প্রটেকশন সিস্টেমও নেই।
এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা: এবার বাসমালিককে মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তার
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় বাসের ধাক্কায় তিনটি গাড়ির ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসের মালিক ডাবলু ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ডাবলু ব্যাপারী কাঁঠালবাড়ি এলাকার সিদ্দিক ব্যাপারীর ছেলে। এর আগে এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে বাসটির চালক মোহাম্মদ নূরুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে জানাতে আজ রোববার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হাঁসাড়া হাইওয়ে থানায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (গাজীপুর অঞ্চল) আ ক ম আকতারুজ্জামান বসুনিয়া বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার আগের দিন গাড়িটি ঠিকঠাক করে রাস্তায় নামানো হয়েছিল। বাসটির ফিটনেস ছিল না। এক বছর আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা (ব্যাপারী পরিবহন) তা নবায়ন করেনি। বাসের চালককে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাঁর ডোপটেস্ট করা হয়েছে। তিনি মাদক সেবন করতেন, তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না।
আকতারুজ্জামান বসুনিয়া বলেন, ওই দুর্ঘটনার দায় চালক–মালিক কেউ এড়াতে পারেন না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাত আরও অনেক আসামি রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু
৯ জানুয়ারি ২০২৫, বণিক বার্তা
দেশে এখন পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে সদ্যসমাপ্ত ২০২৪ সালে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২৪ সালে দেশে প্রাণহানি হয়েছে ৫ হাজার ৩৮০ জনের। এর আগে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ২০২১ সালে। সেবার সড়কে মৃত্যু হয়েছিল ৫ হাজার ৮৪ জনের।
দেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে দুটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকেও ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা গতকাল জানিয়েছে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ২৯৪ জনের। এর আগে যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামে আরেকটি সংগঠন ৮ হাজার ৫৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল।
পররাষ্ট্র বিষয়ক
ট্রেড ইউনিয়ন করার শর্ত শিথিলসহ শ্রম অধিকারের ১১ দফার বাস্তবায়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র
২৪ নভেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বাংলাদেশে শ্রম অধিকার–সংক্রান্ত ১১ দফার দ্রুত বাস্তবায়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র। এসব দফা বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধাও (জিএসপি) পাওয়া যাবে।
আজ রোববার ঢাকায় সচিবালয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি সফররত কেলি এম ফে রদ্রিগেজের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এমন আশাবাদের কথা শোনান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ সময় বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কত দ্রুত শ্রম অধিকারের এই ১১ দফা বাস্তবায়ন করতে পারি, সেটা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। এগুলো করতে পারলে আমরা অবশ্যই জিএসপি সুবিধা পাব।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলটি আলোচনায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের বিষয়ে জোর দেয়। এসব অধিকার এখনো আছে, তবে বিপরীতে রয়েছে নানা শর্ত। যুক্তরাষ্ট্র চায় শর্তগুলো শিথিল করা হোক। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব দফা বাস্তবায়নে প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করা হচ্ছে: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার
০১ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা পথে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস গতকাল শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাসটি সড়কের পাশে একটি ভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এ ঘটনাকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে পরিকল্পিত হামলা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এর জবাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুর্ঘটনার কবলে পড়া বাসের চালকও। তাঁরা জানিয়েছেন, আগরতলা থেকে আসা বাসটিতে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি, এটি নিছক সড়ক দুর্ঘটনা।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই দুর্ঘটনায় বাসের যাত্রীদের কেউ আহত হননি বা আঘাত পাননি। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভ্যানচালক সামান্য আহত হয়েছেন। তবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান সুশান্ত চৌধুরী।
আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা, ঢাকার কড়া প্রতিবাদ
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় গতকাল সোমবার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে হামলা চালানো হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু সংঘর্ষ সমিতিসহ কয়েকটি সংগঠনের সমর্থকেরা এ হামলা চালান। এদিন মুম্বাইয়ের বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাছাকাছি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) আয়োজনে কয়েক শ লোক বিক্ষোভ করেছেন। হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি হলো ভিএইচপির সহযোগী সংগঠন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগরতলার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পত্তি কোনো অবস্থাতেই লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং দেশের (ভারতের)
অন্যান্য স্থানে তাদের উপ ও সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তবে আগরতলার হামলার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে নিন্দা ও কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার ঘটনা বাংলাদেশ সরকারকে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ করেছে। ঘটনাপ্রবাহ দেখে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে হামলাটি পূর্বপরিকল্পিত। এ ঘটনা কূটনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক ভিয়েনা সনদের লঙ্ঘন। এ ছাড়া ওই হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল রাতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
কয়েক দিন ধরে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। গত রোববার ফেনীর সীমান্তবর্তী পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরের ভারত অংশে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সনাতনী হিন্দু সমাজের ব্যানারে কিছু ভারতীয় ওই বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় গতকাল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর আগে ২৮ নভেম্বর বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামের একটি সংগঠন কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ায়। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানিয়েছে। আর গতকাল পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠাতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আরজি জানান।
বাংলাদেশে আলু-পেঁয়াজ বন্ধ করে দেওয়া হবে: শুভেন্দু অধিকারী
০২ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি না দিলে সাময়িকভাবে পেট্রাপোল স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। এতেও কাজ না হলে নতুন বছর থেকে স্থলবন্দর পুরোপুরি বন্ধ করে ভারত থেকে আলু ও পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার বাংলাদেশের যশোরের বেনাপোল বন্দরের ওপারে পশ্চিমঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বৃহত্তম আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর পেট্রাপোলে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সমাবেশে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আজকে সিনেমার ট্রেলার দেখিয়ে গেলাম। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ না হলে এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাস মুক্তি না পেলে পাঁচ দিন স্থলবন্দর বন্ধ থাকবে। তারপর ২০২৫ সালে লাগাতার বন্ধ করে দেওয়া হবে। আলু-পেঁয়াজ কী করে যায়, তা আমরা দেখব। আমাদের নাম ভারতবর্ষ।’
ভারতের করিমগঞ্জে বিক্ষোভকারীদের বাধায় জকিগঞ্জ দিয়ে পণ্য আসা বন্ধ
০২ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
ভারতের শ্রীভূমির (করিমগঞ্জ) সীমান্তে সনাতনী ঐক্য মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের বাধার মুখে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি করা পণ্য দেশে নিয়ে আসতে পারছেন না। আজ সোমবার সকালে কিছু কমলা সিলেটের জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশে এলেও পরে আন্দোলনকারী সংগঠনটির বাধার মুখে আর কোনো পণ্য আসেনি।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেটের জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার অসিত কুমার আচার্য্য রাত আটটার দিকে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জকিগঞ্জ স্টেশন দিয়ে কেবল ভারত থেকে মালামাল আমদানি করা হয়। কোনো পণ্য রপ্তানি হয় না। আজ সকালের দিকে কিছু কমলা বাংলাদেশে এসেছে। পরে ওই পাশের (করিমগঞ্জ) একটি পক্ষের বাধার মুখে আর কোনো পণ্য বাংলাদেশে আসেনি।
আগরতলার বাংলাদেশ হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবা বন্ধ
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সমকাল
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর কনস্যুলার সেবা বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। মঙ্গলবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তার কারণে আপাতত আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে ওই মিশন থেকে বাংলাদেশের ভিসা সেবা বন্ধ থাকবে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, নিরাপত্তাহীনতাজনিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন, আগরতলাতে সকল প্রকার ভিসা ও কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
হোটেল থেকে বের করে দেওয়া, পণ্য বিক্রি না করা- ভারতে ইমিগ্রেশনে হয়রানির মুখে বাংলাদেশিরা
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় শেষবারের মতো পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ভ্রমণের জন্য গতকাল সোমবার (২ ডিসেম্বর) আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আগরতলায় যান কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাসিন্দা ফরিদ মিয়া। কিন্তু সেখানে গিয়ে বিপাকে পড়েন। বাংলাদেশি ও মুসলিম হওয়ায় ভাড়া নেওয়ার এক ঘণ্টা পরই তাকে হোটেল থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে হোটেল থেকে বের করে দিলেও তাকে ফেরত দেওয়া হয়নি ভাড়ার টাকা। পরে দিনভর চেষ্টার পর আজ মঙ্গলবার বিকেলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরির পর থেকেই দেশটিতে ভ্রমণ ও চিকিৎসার কাজে যাওয়া বাংলাদেশিরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ফরিদ মিয়া বলেন, হঠাৎ করে হোটেল কর্তৃপক্ষ এসে বলে বাংলাদেশি এবং মুসলিমদের হোটেলে থাকতে দেওয়া হবে না। হোটেলের যে ভাড়া নিয়েছিল, সেটাও ফেরত দেয়নি। ভয় দেখিয়ে হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে বাধ্য হয়ে শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটিয়ে সকালে দেশে ফেরার জন্য চেকপোস্টের দিকে রওনা হই। এখানে এসে দেখি বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। আর বলা হচ্ছে বাংলাদেশি ও ইউনূসের (প্রধান উপদেষ্টা) লোক পেলেই পেটাবে। সারাদিনের চেষ্টার পর বিকেলে দেশে ফিরতে পেরে মনে হচ্ছে প্রাণে বেঁচে ফিরেছি।
বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে চার শুল্ক স্টেশনে বাণিজ্য বন্ধ
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
সীমান্তের ওপারে বিক্ষোভের জের ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চারটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে দেশের প্রধান স্থলবন্দরগুলো দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখায় স্থলবন্দরগুলোর ইমিগ্রেশন দিয়ে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া শুল্ক স্টেশনগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজারের চাতলাপুর ও বটুলি এবং সিলেটের জকিগঞ্জ ও শেওলা। গত ২৭ নভেম্বর থেকে চাতলাপুর ও ২৮ নভেম্বর বটুলি স্থল শুল্ক স্টেশনে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। গত সোমবার থেকে বন্ধ আছে জকিগঞ্জ ও শেওলার কার্যক্রম।
এদিকে ৫ আগস্টের পর স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে পণ্য আমদানি কমেছে। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। দেশের নয়টি স্থলবন্দরের চলতি বছরের শেষ চার মাসের (আগস্ট থেকে নভেম্বর) সঙ্গে গত বছরের একই সময়ের তথ্য তুলনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
পঞ্চগড় সদর উপজেলার মোমিনপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। পরে দুপুরে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
নিহত যুবকের নাম আনোয়ার হোসেন (৩৫)। তিনি জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের দেবনগড়-আমজুয়ানি এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের মোমিনপাড়া সীমান্তের ৭৫১ নম্বর মেইন পিলারের ৮ থেকে ৯ নম্বর সাবপিলারের মাঝামাঝি এলাকায় তাঁর লাশ পড়ে ছিল।
ভারতীয়দের উদ্দেশে ১৪৫ নাগরিক
‘আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়ব, আপনারাও আপনাদের দেশে রুখে দাঁড়ান’
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো
‘ভারতের জনগণের কাছে আমাদের আবেদন’ শিরোনামে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৪৫ জন নাগরিক। বিবৃতিতে ভারতের জনগণের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘সাধারণ জনগণের জীবনের সংকট বিচার করলে দুই দেশের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা আর শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়ব, আপনারাও আপনাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।’
আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠানো হয়। ১৪৫ নাগরিকের পক্ষে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ৷
ভারতের জনগণের উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা এমন এক সংকটপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছি, যখন ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শোচনীয় অবস্থায় এবং কিছু ভারতীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমাগত উসকানি এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে চিড় ধরাতে চাইছে। ভারতের জনগণ ও ভারত সরকারকে আমরা কখনোই এক করে দেখি না। আমরা জানি, ভারতের জনগণও হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করে তার পতন ঘটিয়েছি আমরা। জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের সময় আপনারা আমাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন। আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপনাদের আর আপনাদের আন্দোলনে আমাদের সংহতি প্রকাশের ধারাবাহিকতা অনেক দিনের।’
সাম্প্রদায়িকতাকে ভারতীয় উপমহাদেশের বড় সমস্যা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রদায়িকতা মানুষে মানুষে বিভাজন ঘটায়, ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি করে বিভেদ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের অধিকার, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং জনজীবনের আরও অনেক জলজ্যান্ত সমস্যা আড়াল করার জন্য উপমহাদেশের প্রত্যেক শাসকগোষ্ঠীই সাম্প্রদায়িকতার হাতিয়ার কাজে লাগিয়েছে। তারা এই কৌশল খাটিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু উভয় জনগোষ্ঠীর ভোট পাওয়াটা নিশ্চিত করতে চায়। বিশেষত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কালে সংখ্যালঘু জনগণের ওপর হামলার ঘটনা বারবার ঘটতে দেখা যায়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারা বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, জমি দখল, মন্দির ভাঙচুর ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে এবং ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর সারা দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় অনেক রাজনৈতিক দল হিন্দু ঘরবাড়ি ও মন্দিরা পাহারায় এগিয়ে আসে এবং সম্প্রীতির নতুন নতুন নজির স্থাপন করে। এ ছাড়া ভারতের জাতীয় পতাকা মাড়ানোর ঘটনায়ও এ দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু ভারতের অনেকগুলো সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে আসল তথ্য প্রচার করেনি, এখনো করছে না। ভারতের এক সংবাদমাধ্যম ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটে একটি দুর্ঘটনাকে পরিকল্পিত হামলা বলে প্রচার করে। সেই প্রচারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আক্রমণ হয়, বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়।
সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভারত সরকার দুঃখ প্রকাশ করলেও মিথ্যা প্রচারণা বন্ধের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনা যথাযথভাবে দেখানো হোক। এ ধরনের প্রচারণা থেকে যেকোনো দেশেই লাভবান হয় সাম্প্রদায়িক শক্তি, লাভবান হয় শাসকগোষ্ঠী।’
সম্প্রতি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভারত সরকার যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে অবাক হয়েছেন বলে নাগরিকদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ‘চিন্ময় কৃষ্ণের বিচার পাওয়ার অধিকারকে আমরা সমর্থন করি, সেটা সবারই আছে। কিন্তু ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেভাবে তড়িঘড়ি তাঁর পক্ষে বিবৃতি দিল, তা বিস্ময়কর। তাঁকে আদালতে উপস্থিত করার দিন ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়। এ দেশের জনমানুষের সম্মিলিত চেষ্টায় এই ঘটনার অজুহাতে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠী বরাবরই অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। এ দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে এবং সকল ধরনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভূমিকা উজ্জ্বল। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানেও হিন্দু জনসাধারণের অনেকেই লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন৷
শেষে ভারতের জনগণের উদ্দেশে বাংলাদেশের ১৪৫ নাগরিক বলেছেন, ‘আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা ও শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়ব, আপনারাও আপনাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। আপনাদের দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের আকাঙ্ক্ষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে আপনারা এই চক্রান্ত প্রতিহত করবেন। এ লড়াই ভারতের বৃহৎ পুঁজির শোষণ-লুণ্ঠন আর নিপীড়ন-নির্যাতন-আধিপত্যের বিরুদ্ধে উভয় দেশের জনগণের নিরন্তর লড়াই; বিভেদ, বিদ্বেষ ও ধর্মকেন্দ্রিক স্বার্থান্বেষী চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই। এই লড়াইয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত জয়ী হব।’
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে আছেন আনু মুহাম্মদ, সলিমুল্লাহ খান, সাঈদ ফেরদৌস, হারুন-অর-রশীদ, স্বাধীন সেন, গীতি আরা নাসরীন, ফাহমিদুল হক, কামরুল হাসান মামুন, তুহিন ওয়াদুদ, সামিনা লুৎফা, মোশরেফা মিশু, সীমা দত্ত, আলতাফ পারভেজ, কল্লোল মোস্তফা, আশরাফ কায়সার, মাহা মীর্জা, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মানজুর-আল-মতিন, সায়ান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, কামার আহমাদ সাইমন, প্রীতম দাশ, সারোয়ার তুষার, সালমান সিদ্দিকী, মেঘমল্লার বসু প্রমুখ।
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি
রিউমার স্ক্যানার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪
চলতি বছরের জুনে হাইকোর্টের রায়ে ২০১৮ সালের কোটা বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করার পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছায়। এ রায়ের পর কোটা সংস্কার দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনে সরকার বাঁধা দিলে তা সংঘাত ও সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন সরকার পতনের একদফা দাবিতে রূপ নেয়। এরই ফলস্বরূপ ০৫ আগস্ট গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান হয়। সরকার পতনের পরও সারা দেশে সংঘর্ষ, হত্যাকাণ্ড, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যেই ০৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
এই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভারতেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে একের পর এক গুজব। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে, রাষ্ট্র ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ১২ আগস্ট থেকে ০৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর পাওয়া গেছে। এমন ভুয়া খবর প্রচারের তালিকায় ভারতের অন্তত ৪৯টি গণমাধ্যমের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে রিপাবলিক বাংলা সর্বাধিক ৫টি গুজব প্রচার করেছে। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ এবং লাইভ মিন্ট, যারা প্রত্যেকে অন্তত ৩টি করে গুজব প্রকাশ করেছে। এছাড়া, রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ এবং আজতক অন্তত ২টি করে গুজব প্রচার করেছে।
এসব গুজবের মধ্যে ছিল: শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার নামে ভুয়া খোলা চিঠি, মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ পুত্রের সন্ধানে মানববন্ধন করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার ভুয়া খবর, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভিত্তিহীন দাবি, ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি, পাকিস্তানি জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি, নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী হিসেবে প্রচার, বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়া গুজব, বাংলাদেশে মুসলিমদের হামলায় হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবিতে ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার, শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি এবং বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা জারির বিভ্রান্তিকর খবর।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার চলছে এক্সেও
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ইত্তেফাক
শুধু ফেসবুক নয়, আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সেও (সাবেক টুইটার) চলছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় আক্রান্ত- মূলত এমন ভুয়া তথ্য বেশি ছড়ানো হচ্ছে সেখানে। অপতথ্য ছড়াতে এক্সে নতুন আইডি খোলার হার বেড়েছে ২১৪ শতাংশ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এরকম অপতথ্য ছড়ানোর হার অস্বাভাবিক বেড়েছে। ভারতভিত্তিক বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে এমন অপপ্রচার বেশি ছড়ানো হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গত ২৬ জুলাই থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসে এক্সে বাংলাদেশের রাজনীতিবিষয়ক এক হাজারের বেশি পোস্ট দৈবচয়নের ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হয়। এসব বিশ্লেষণ করেই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। অপতথ্য যাচাইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে মেটার থার্ড পার্টি ফ্যাক্টচেক রেটিং ফ্রেমওয়ার্ক। এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন শামস ওয়াহিদ শাহাত, আপন দাস ও মোহাম্মদ আরাফাত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছেন ব্যবহারকারীরা। আগস্টে অপতথ্য ছড়ানোর ক্যাম্পেইন সবচেয়ে বেশি চলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে, যা প্রায় ৭৭ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ৩৫ শতাংশ কনটেন্ট এক্স, ফেসবুক ও ইউটিউবে একত্রে ছাড়া হয়েছে। অক্টোবরে ফেসবুক ও ইউটিউবে ছাড়া হয়েছে ২৩ শতাংশ। নভেম্বরে ভাইবার, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো ব্যক্তিগত মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে ৭১ শতাংশ। নতুন অ্যাকাউন্টগুলোর ৭৪ শতাংশ ভুল তথ্যসংবলিত পোস্ট করেছে। অপ্রাসঙ্গিক তথ্য প্রকাশ করেছে ২৪ শতাংশ। আর পরিবর্তন ও সহিংসতার ডাক দেওয়া পোস্ট ছিল ১ শতাংশ। অপতথ্য ছড়াতে অনেক ক্ষেত্রে ভেরিফায়েড মার্ক ব্যবহার করে সবাইকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। শীর্ষ ২০ হ্যাশট্যাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল #সেভহিন্দুসইনবাংলাদেশ এবং #বাংলাদেশিহিন্দুসজেনোসাইড।
দেশে বৈধভাবে অবস্থান করছেন ৪৫ হাজার ভারতীয়
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বৈধভাবে অবস্থান করছিলেন ৩৭ হাজার ৪৬৪ জন ভারতীয় নাগরিক। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ সংখ্যা আরো বেড়েছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বৈধভাবে অবস্থান করছিলেন ৩৭ হাজার ৪৬৪ জন ভারতীয় নাগরিক। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ সংখ্যা আরো বেড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের বিশেষ শাখার গত ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে দেশে বৈধভাবে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ৪৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে বৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশীদের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে ভারতীয়রাই শীর্ষে। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ দেশের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কাজ করছেন। আবার একাংশ পড়াশোনা করছেন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের দিক থেকেও ভারতীয়রা শীর্ষে। তাদের মধ্যে একাংশ বাংলাদেশে এসেছিলেন বৈধভাবে। কিন্তু পাসপোর্ট বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা অবৈধভাবে থেকে গেছেন। পুলিশের হিসাবে, বাংলাদেশে এভাবে অবস্থানরত ভারতীয়ের সংখ্যা ৭ হাজার ৪৭২। তাদের অনেকেই আত্মগোপনে থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন বলেও তথ্য রয়েছে।
আর কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই দেশে অনুপ্রবেশ করে থেকে যাওয়া কয়েক লাখ বিদেশীর মধ্যেও ভারতীয়ের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
দেশে বৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের বিশেষ শাখার ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদকৃত হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন বৈধভাবে অবস্থান করছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ বিদেশী। এর মধ্যে ভারতীয় ৪৫ হাজার। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মার্কিন পাসপোর্টধারীরা। দেশে এখন বৈধভাবে মার্কিন নাগরিক অবস্থান করছেন ১৩ হাজার। তাদের বড় একটি অংশ আবার যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। তৃতীয় অবস্থানে থাকা চীনের নাগরিক আছেন ১০ হাজার ৫০০। এ অনুযায়ী দেশে বৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশীদের ৫৭ শতাংশের বেশি এ তিন দেশের নাগরিক।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের নাগরিক আছেন ৭ হাজার ৫০০। এর বাইরে কানাডার ৪ হাজার ৫০০, নেপালের ৩ হাজার ৫০০, রাশিয়ার ৪ হাজার ৫০০, জাপানের ৪ হাজার ৫০০, শ্রীলংকার ২ হাজার ৫০০, পাকিস্তানের ২ হাজার, ইতালির ২ হাজার, বেলারুশের ৫০০, ইন্দোনেশিয়ার ৫০০, জাপানের ৫০০, ভুটানের ৩০০, পর্তুগালের ১৫০, ফিনল্যান্ডের ১০০ ও আর্জেন্টিনার ২২ জন বৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। আর অন্যান্য দেশের নাগরিক আছেন ১৭ হাজার ৯২৮ জন। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন।
শার্শা-বেনাপোল সীমান্তে ৩ বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪,সমকাল
যশোরের শার্শা ও বেনাপোল সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যদের নির্যাতনে তিন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে গতকাল বুধবার শার্শা উপজেলার পাঁচভূলাট সীমান্ত থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
বেনাপোলের পুটখালী সীমান্ত থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর মৃত্যু হয় একজনের। আরেকজনের লাশ শার্শার অগ্রভূলাট সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সবার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন– বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামের মৃত ইউনুচ আলী মোড়লের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৫০), দিঘিরপাড় গ্রামের আরিফ হোসেনের ছেলে সাবুর আলী (২৮) এবং চৌগাছা উপজেলার সাদাতপুর গ্রামের সাকিবুল (২০)। তাদের মধ্যে সাকিবুল দিঘিরপাড় গ্রামে নানাবাড়িতে থাকতেন।
মাহফুজ আলমের বক্তব্যের ‘তীব্র প্রতিবাদ’ ভারতের
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, বণিক বার্তা
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্যের ‘তীব্র প্রতিবাদ’ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বক্তব্যটিতে জনসম্মুখে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্যের ‘তীব্র প্রতিবাদ’ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বক্তব্যটিতে জনসম্মুখে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল। এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল এ মন্তব্য করেন রনধীর জয়সওয়াল।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘নয়াদিল্লি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেবেচিন্তে বক্তব্য রাখার বিষয়টি মনে করিয়ে দিতে চায়।’
রনধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশ পক্ষকে আমাদের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা বুঝতে পারছি, যে পোস্টের বিষয়ে কথা হচ্ছে, তা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আমরা জনসম্মুখে ভেবেচিন্তে বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই। ভারত বারবার বাংলাদেশের জনগণ ও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত দিয়েছে। সেখানে এ ধরনের বক্তব্যে জনসম্মুখে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষিত থেকে গেছে।’
মৌলভীবাজার সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চা শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, এনটিভি অনলাইন
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ভারতীয় সীমান্তের জিরো লাইন থেকে রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে গোপাল বাগতি নামে এক চা শ্রমিকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে বিজিবি ও পুলিশ। শনিবার বিকেলে পাহাড় থেকে বাঁশ আনতে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
নিহত গোপাল বড়লেখা উপজেলার নিউ সমনবাগ চা বাগানের মোকাম সেকশনের সাবেক ইউপি সদস্য অখিল বাগতির ছেলে। স্বজনদের অভিযোগ, সীমান্তের জিরো লাইনে বিএসএফ গুলি করে তাকে হত্যা করেছে। তার সাথে থাকা আরো কয়েকজন শ্রমিক পালিয়ে আসায় রক্ষা পেয়েছে।
গুগল সার্চে ভারতীয় মিডিয়ার দাপটে চাপা বাংলাদেশি সাংবাদিকতা
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, নেত্র নিউজ
রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ঢাকায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সাংঘর্ষিক দুটি বয়ান সামনে এসেছে। উভয় বক্তব্যই মনযোগ লাভের দাবি রাখে। সমর্থকদের বক্তব্য হলো, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নিপীড়ন নিয়ে সরব থাকায় চিন্ময়ের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। অন্যদিকে তার সমালোচকরা বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সংকটে জর্জরিত একটি সরকারকে আরো অস্থিতিশীল অবস্থায় ফেলতে বিরূপ প্রচারণায় লিপ্ত হয়েছিলেন এই হিন্দু ধর্মীয় নেতা।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক কৌশলে গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে হিন্দুরা। নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ ও ভারতপন্থী ভাবমূর্তি বজায় রাখতেও হিন্দুদের কাজে লাগিয়েছে দলটি। শত শত মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকার যখন নিজেরই স্বৈরতান্ত্রিকতার ভারে ধসে পড়ল, তখন হাসিনার অনুগতরা দেশজুড়ে সহিংস প্রতিশোধের শিকার হয়। এদের মধ্যে রয়েছে কিছু হিন্দুও।
কিন্তু একইসঙ্গে, হাসিনা যখন ভারতে আশ্রয় নিলেন, তার পরপরই দেশজুড়ে বিভিন্ন মন্দিরে হামলা হয়; ভাঙচুর করা হয় হিন্দুদের প্রতিমা। এই সকল ঘটনা শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হয়েছে, তেমন নয়। কোনো কোনো ঘটনার নেপথ্যে সাম্প্রদায়িকতার ছাপ স্পষ্ট। ফলে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এই আতঙ্ক ও উত্তেজনার সবচেয়ে তীব্র বিস্ফোরণ দেখা যায় চট্টগ্রামে। চিন্ময় দাসের সমর্থকরা চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। নিহত হন একজন মুসলিম আইনজীবী। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ জুড়ে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
অপরদিকে ভারতে চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের বিষয়টিই হয়ে উঠে মুখ্য। উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো এই উপলক্ষে দল ভারি করার কৌশলে নামে। তারই পরিণতি ঘটে ত্রিপুরায় বাংলাদেশের কনস্যুলেটে সহিংস হামলার মাধ্যমে। ফ্যাক্টচেকাররা দেখিয়েছেন, এই উস্কানি ও অপপ্রচারের বড় অংশেরই সূত্রপাত ভারতের বিশাল হিন্দুত্ববাদী অনলাইন নেটওয়ার্ক। ফলে সমালোচকদের অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের ট্র্যাজেডিকে পুঁজি করে ঘরোয়া রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুসারীরা।
কিন্তু এই বহুস্তরবিশিষ্ট জটিল ঘটনাপ্রবাহ বুঝতে আপনি যদি গুগলে সার্চ করে কোনো সরেজমিন প্রতিবেদন অথবা বিশ্লেষণ পড়তে চান, আপনাকে হতাশ হতে হবে। কেননা এই ঘটনা সম্পর্কিত কী-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে গুগলের প্রথম সারির ফলাফলে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের। অথচ, এই সংবাদ মাধ্যমগুলোর কোনো স্থায়ী প্রতিনিধি বাংলাদেশে নেই বললেই চলে।
সাধারণত ভাসা ভাসা তথ্য কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার পুনঃপ্রচার করেছে ভারতীয় এই ওয়েবসাইটগুলো। বিপরীত দিকে, সরাসরি ঘটনাস্থল থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের জায়গা হয়েছে একেবারে শেষ সারিতে।
এই বিষয়ে আরও স্পষ্টতা পেতে টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট থেকে আমরা বোঝার চেষ্টা করি কীভাবে গুগল সার্চ ফলাফল এত পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে উঠল। কীভাবে ভারতীয় গণমাধ্যম এমন একটি খবরের আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করলো, যেই ঘটনাটির সূত্রপাত বাংলাদেশের মাটিতে?
আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন—বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্র—গুগলে এই ঘটনার প্রধান কী-ওয়ার্ডগুলো দিয়ে খুঁজলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমই ফলাফলের শীর্ষস্থান দখল করে রাখে।
এমনকি বাংলাদেশে বসেও টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু বা হিন্দুস্তান টাইমস-এর মতো ভারতীয় সূত্রগুলোই বারবার জায়গা করে নেয় গুগলের ‘নলেজ প্যানেল’, ‘টপ স্টোরিজ’, ‘ভিডিও ক্যারাউসেল’ ও ‘নিউজ’ ট্যাব-এ। বাংলাদেশের দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো বা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর মতো প্রথম সারির দৈনিকের খবরের দেখা মেলে অনেক পরে। “চিন্ময় কৃষ্ণ দাস” বাংলায় বানান করে লিখে খোঁজ করলে কিছুটা ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে তারপরও বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোই এগিয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত প্রায় সব অঞ্চলেই গুগল সার্চের সর্বোচ্চ ৯০ ভাগ শীর্ষ স্থান দখল করে রেখেছে ভারতীয় বিভিন্ন সাইট। বাংলাদেশের খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যমগুলোকে পাওয়া যায় ত্রয়োদশ বা চতুর্দশ পাতায়, যেখানে খুব কম মানুষই স্ক্রোল করেন। পিগুরুস (PGurus) বা ডিডি নিউজ (DD News)-এর মতো অনেক অখ্যাত ভারতীয় ওয়েবসাইট ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের জাতীয় সব পত্রিকাকে।
কিন্তু গুগল চাইলেই স্থানীয় সংবাদ সূত্রকে অগ্রাধিকার দিতে পারে। যেমন, ১৬ ডিসেম্বর আমরা যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে সংঘটিত একটি বন্দুক হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতে গুগলে “madison school shooting” লিখে সার্চ দেই। তখন দেখা যায়, ফলাফলে ম্যাডিসন শহরের বিভিন্ন স্থানীয় ছোট সংবাদমাধ্যমের খবরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে জায়গা দিয়েছে গুগল। জাতীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রখ্যাত অনেক সংবাদমাধ্যম থাকলেও, এই ঘটনায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরকে প্রাধান্য দিতে গুগলের অসুবিধা হয়নি। আমরা বিভিন্ন ধরণের ডিভাইস ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ও বাইরে থেকে সার্চ দিয়ে দেখেছি, কিন্তু ফলাফলে তারতম্য ঘটেনি। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে যে একেবারে ক্ষুদ্র অঞ্চলের ক্ষেত্রেও গুগল তার সার্চ ফলাফলে ঘরোয়া সংবাদমাধ্যমকে অগ্রাধিকার দিতে সক্ষম।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা
১০ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
শেখ হাসিনার শাসনামলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে প্রসাধনীর যে প্রলেপ ছিল; সরকার পতনের পর তা ধুয়ে গিয়ে ক্ষত বের হয়ে আসছে। দিল্লির বৈরী আচরণের প্রভাব পড়েছে দুই দেশের সীমান্তে। ভারতের কাঁটাতারের বেড়া ও স্থাপনা নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সীমান্তে। গত কয়েক দিনে দুই দেশেরই সীমান্তরক্ষী বাহিনী অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েনের পাশাপাশি পরিখা খনন করেছে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিজিবির পাশে দাঁড়িয়েছে সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে তিন দিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। গত বুধবার সন্ধ্যায় সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত, তবে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বাংলাদেশিরা। সোম ও মঙ্গলবার এ নিয়ে দুই দফা এবং বুধবার দুপুরে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি দু’পক্ষ। সর্বশেষ ভারতের মাহদীপুরে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে একটি বৈঠকের পর কিছুটা স্বস্তি এসেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, অতিরিক্ত জওয়ান দুই দেশই সরিয়ে নিয়েছে। তবে উভয় দেশের সীমান্তেই তৈরি করা বাংকারগুলো রয়ে গেছে। নির্মাণসামগ্রীর কিছু অংশ সরানো হয়েছে। কিছু সামগ্রী পড়ে রয়েছে। বিজিবি ও বিএসএফ সতর্ক অবস্থায় নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে সীমান্তবাসীর যে জটলা ছিল, তা নেই।
ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি প্রকাশের দাবি
১১ জানুয়ারি ২০২৫, প্রথম আলো
এক দশকের অনির্বাচিত সরকার ও স্বৈরশাসন ছিল বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের প্রধান অবলম্বন। এ দেশে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে প্রতিবেশী দেশটি নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ট্রানজিট, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসম চুক্তির মাধ্যমে তারা এই আধিপত্য সৃষ্টি করেছে। তাদের সেই আধিপত্য রুখতে সব কটি চুক্তি সরকারকে প্রকাশ করতে হবে ও দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিল করতে হবে।
আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্য: স্বরূপ ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। আনু মুহাম্মদ সম্পাদিত ত্রৈমাসিক প্রকাশনা সর্বজনকথা ওই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ভারত প্রসঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের সুনির্দিষ্ট কিছু বক্তব্য, অভিযোগ ও সমস্যা আছে। এটা সাম্প্রদায়িক কোনো বিষয় নয়। এটি আধিপত্যের সমস্যা।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে আনু মুহাম্মদ বলেন, সমস্যাগুলো শুধু শেখ হাসিনার আমলে হয়েছে, তা নয়। তার আগেও হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার শর্তহীনভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। একের পর এক চুক্তি করেছে। এর প্রধান কারণ ছিল নির্বাচন ছাড়া চিরস্থায়ী ক্ষমতা তৈরি করা। সে কারণে তাঁর পুরো নির্ভরশীলতা তৈরি হয় ভারত রাষ্ট্রের ওপরে। এক দশকের যে অনির্বাচিত সরকার ও স্বৈরশাসন এটা ছিল ভারতের আধিপত্য বিস্তারের প্রধান অবলম্বন।
আনু মুহাম্মদ মনে করেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার এসেছে, তাদের যে প্রতিশ্রুতি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, সে অনুযায়ী অগ্রসর হতে হলে প্রথম কাজ হচ্ছে, সামরিক-বেসামরিক সব চুক্তি জনগণের সামনে প্রকাশ করা। যেসব চুক্তি জনস্বার্থবিরোধী, দেশের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো বাতিল করা। চুক্তি বাতিলের পথ অনুসন্ধান করা সরকারের প্রথম দায়িত্ব। তিনি ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তির পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সঙ্গে সই করা চুক্তিগুলোও প্রকাশ করার দাবি জানান।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্প, নদীর পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যার কথা তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক নির্বাচন যখন ছিল, তখন ভারতের সঙ্গে দর–কষাকষির একধরনের জায়গা ছিল। ২০০৮ সালের পর যখন ন্যূনতম নির্বাচনী গণতন্ত্রও আর থাকল না, তখন বাংলাদেশ ভারতের অনাচারের একটি ছিটমহলে পরিণত হয়। এই ছিটমহলের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তাঁকে এখন তাঁকে সুরক্ষা দিচ্ছে ভারত। বাংলাদেশে পরিবর্তনের পর ভারতের যে প্রতিক্রিয়া, তাতে স্পষ্ট হয়ে গেছে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনায় নিতেও তাদের কষ্ট হচ্ছে। কারণ, ছিটমহলের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনি এখন নেই।
উত্তেজিত হয়ে কথাবার্তা বলে মূল সংকটের জায়গায় নজর দেওয়া হচ্ছে না—এমন মন্তব্য করে তানজীমউদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে সেগুলো প্রকাশ করে বুঝিয়ে দেওয়া জরুরি, কীভাবে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বা অন্য কেউ কুক্ষিগত করেছে। চুক্তিগুলো প্রকাশ করা না হলে বোঝা যাবে না বাংলাদেশ এখনো কীভাবে ভারতের কাছে ছিটমহল হয়ে আছে। চুক্তিগুলো এখনো বহাল আছে। এগুলো শুধু আধিপত্যের নয়, চুক্তিগুলো নিপীড়নের।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা। তিনি বলেন, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারত সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। সীমান্তে নিয়মিত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। এসব কারণে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের একটি অংশ ধারাবাহিকভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এর ফলে সামাজিক মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের মধ্যে একধরনের বৈরিতা দেখা যাচ্ছে। ভারতবিরোধী রাজনৈতিক পাটাতন ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। এর কারণে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ হচ্ছে, এটা খুব ভীতিকর।
‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান জনপ্রিয় হচ্ছে উল্লেখ করে মাহা মির্জা বলেন, একধরনের রাজনৈতিক ‘রেটরিক’ ব্যবহার করা হচ্ছে; কিন্তু আধিপত্যবাদের স্বরূপ কী, কীভাবে আধিপত্য হচ্ছে এসব বিশ্লেষণে ঘাটতি আছে। পরিবেশবিধ্বংসী প্রকল্প, জনস্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ কী হবে, বাতিল করার প্রক্রিয়া কী হবে—এসব ভাবতে হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত কৌশলগতভাবে বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের একটি মাধ্যম বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল। ভবিষ্যতে এই নির্ভরতা আরও বাড়তে পারে। একবার নির্ভরতার জালে আটকে গেলে সেখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন হয়ে যায়।
লেখক-গবেষক কল্লোল মোস্তফা বলেন, ভারত বাংলাদেশে তার আধিপত্য বজায় রাখতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এমনকি নির্বাচনব্যবস্থার ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। শেখ হাসিনার সময়ে ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। এখন কি আধিপত্য নেই? এখন যে অনেকে স্লোগান দিচ্ছে, এই স্লোগান দিলেই কি আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে যাব?’
সীমান্তে হত্যা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসম চুক্তি, যৌথ নদীর পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে কল্লোল মোস্তফা বলেন, সমুদ্রের গভীর থেকে শুরু করে মহাকাশ পর্যন্ত যত বিষয় আছে, সব বিষয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি আছে। এসব চুক্তি নিয়ে কখনো আলোচনা হয়নি। জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিল না হলে ভারতীয় আধিপত্য থেকে যাবে।
সীমান্তে নিয়ম মানতে হবে, দিল্লিকে বার্তা ঢাকার
১৩ জানুয়ারি ২০২৫, সমকাল
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বেশ তৎপর ভারত। বেড়া নির্মাণ করতে গিয়ে সীমান্তের নিয়ম লঙ্ঘন করছে দেশটি। এ ব্যাপারে দিল্লিকে কঠোর বার্তা দিয়েছে ঢাকা। গতকাল রোববার বিকেলে ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে সীমান্তে দেশটির তৎপরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার কাছে সীমান্তে বিএসএফের কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন কোনো উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে ভারতের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।