গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শ্রমজীবীদের হিস্যা
‘সমাজপাঠ’-এর আয়োজনে গত ৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, বিকাল ৪ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শ্রমজীবীদের হিস্যা’-শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আলোচনা করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শাহাজাদ ফিরোজ, লেখক ও অ্যাক্টিভিষ্ট তুহিন খান, রিকশা শ্রমিক ওবায়দুল ইসলাম, পোশাক শ্রমিক মোহাম্মদ উদয়, পাটকল শ্রমিক আলমগীর হোসেন, বরিশালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সংগঠক সুজয় শুভ, সিলেট চা বাগানের ছাত্র-শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক তানজিনা বেগম এবং উক্ত সেমিনারে নিম্নোক্ত ধারনাপত্র উপস্থাপন করেন শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী সত্যজিৎ বিশ্বাস।
আজকে ‘সমাজপাঠ’-এর উদ্যোগে ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শ্রমজীবীদের হিস্যা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার শুরুতেই ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে জানা-অজানা সকল ছাত্র-শ্রমিক-জনতার শহীদী আত্মোৎসর্গকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
এ সভায় এরই মধ্যে আলোচনা করেছেন ছাত্র আন্দোলনের দুজন সংগঠক, কয়েকজন শ্রমিক সংগঠক। এরপরে আলোচনা করবেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহজাদ ফিরোজ এবং লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট তুহিন খান।
সিলেটের ছাত্র সংগঠক তানজিনা বেগম তাঁর আলোচনায় ছাত্রদের পাশাপাশি সিলেট অঞ্চলের চা-শ্রমিকদের জীবন নিয়ে আলোচনা করেছেন, চা-শ্রমিকদের বঞ্চনাময় জীবনের নানা দিক তিনি তুলে ধরেছেন। বরিশালের সুজয় শুভ বলেছেন ওই অঞ্চলের নৌযান শ্রমিক, মৎস্যজীবি, রিকশা ও অটো-রিকশা শ্রমিকদের কথা।
এখানে কথা বলেছেন রিকশা শ্রমিকদের প্রতিনিধি ওবায়দুল ইসলাম। তিনি স্বৈরাচার উচ্ছেদের আন্দোলনে রিকশা শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের রিকশায় অধ্যাপক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদসহ সমাজের শিক্ষিত মানুষেরা ওঠেন। কিন্তু আমাদের কথা কেউ ভাবে না। এছাড়া ওবায়দুল ইসলাম জানিয়েছেন যে তাঁর চেনা অনেক আহত রিকশা শ্রমিক আছেন যাঁদের চিকিৎসার খবর কেউ নিচ্ছে না। এমন একজন আহত শ্রমিক আজকের এই সভাতেও উপস্থিত আছেন।
আলোচনা করেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক মোহাম্মদ উদয়। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, যখন তাঁরা ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তখন সবাই বাহবা দিয়েছে। আর আজ যখন গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাঁদের বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছেন, কিংবা তাদের মজুরি বাড়ানোসহ অন্যান্য দাবির কথা বলছেন তখন কেউ কেউ বলছেন এসব ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত। একজন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী। বাজারে জিনিসপত্রের দাম কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, অথচ গার্মেন্ট শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর কথা বললেই মালিক, সরকার সবাই আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। আমাদের ওপর পুলিশ, শিল্প-পুলিশ, র্যাব, গুন্ডবাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হয়; কারখানা থেকে ছাঁটাই করা হয়। আমাদের কথা আলোচনা করা ছাড়া, আমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ করা ছাড়া এই দেশ কি কোনোদিন গণতান্ত্রিক হতে পারবে?
আমাদের সামনে আলোচনা করেছেন পাটকল আন্দোলনের শ্রমিক আলমগীর হোসেন। তিনি খুলনার স্টার জুটমিলসের শ্রমিক ছিলেন। ওই মিলটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা এখনো তাঁদের পাওনা বকেয়া বুঝে পাননি। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার পর দেশে ৭৮টা পাটকল ছিল, পরে পাটকলের সংখ্যা হয় ৮১টা। এক এক করে সবই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন পুরো পাটশিল্প তুলে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি হাতে। এই পাটকলগুলোর সাথে জড়িত শ্রমিক, পাটচাষী, পাটকলগুলোর চারপাশের ছোট দোকানদার, ব্যবসায়ী, রিকশাচালক এদের কথা কি সরকার একবারও ভেবেছে? বিগত সরকার ভেবেছে? বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভাববে? তাহলে আমাদের কথা না ভাবলে দেশটা কাদের স্বার্থে চলবে?
আমি যে আলোচনাটি এখানে রাখছি, সেটি একটা খসড়া হিসাবে প্রস্তাব করছি। শ্রমজীবী জনগণের বিভিন্ন অংশ, বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞ-গবেষকদের মতামতের ভিত্তিতে এ প্রস্তাব আমরা চূড়ান্ত করতে চাই।
ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনা ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়েছে। দেশে ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থাকে উৎখাত এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজের আকাক্সক্ষা গুরুত্বের সাথে আলোচিত হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানে সমতা ও ন্যায্যতার স্লোগান দিয়ে অকাতরে রক্ত দিয়েছে হাজারো ছাত্র-শ্রমিক-জনতা। বিশেষ করে দমন-পীড়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা দেখেছি শ্রমজীবী জনতার অসমসাহসী আত্মদান। ঢাকায় বসিলা, যাত্রাবাড়ি, উত্তরা, টঙ্গি, আশুলিয়া, গাজিপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামে হাজারখানেক ছাত্র-জনতার লাশের মধ্যে অজানা-অচেনা অর্ধেকই শ্রমজীবী মানুষ। যে ছাত্ররা জীবন দিয়েছে, যারা আহত হয়েছে, তাদের অধিকাংশই শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান।
ঢাকায় বসিলা, যাত্রাবাড়ি, উত্তরা, টঙ্গি, আশুলিয়া, গাজিপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামে হাজারখানেক ছাত্র-জনতার লাশের মধ্যে অজানা-অচেনা অর্ধেকই শ্রমজীবী মানুষ। যে ছাত্ররা জীবন দিয়েছে, যারা আহত হয়েছে, তাদের অধিকাংশই শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান।
অভ্যুত্থান পরবর্তীতে আমরা দেখছি- শিল্পাঞ্চলে পোশাক, ঔষধ, সিরামিক কারখানা থেকে শুরু করে রিকশা শ্রমিক, চা শ্রমিক, পাটকল শ্রমিকেরা তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামছে। আমরা দেখছি এসব আন্দোলনের দাবি, ভাষা,
আকাঙ্ক্ষাকে জানা-বোঝা এবং সমাধানের পথ অনুসন্ধানের চাইতে সেখানে সন্দেহের নানা উপাদানকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শিল্প এলাকায় অসন্তোষকে কেন্দ্র করে অন্তর্বতী সরকার কিছু করণীয় ঘোষণা করেছে, যদিও সেগুলো কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এর মধ্যেই গুলিতে আন্দোলনরত শ্রমিক হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে।
ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের যে আশাবাদ ও ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা দুর্বল করার জন্য নানা প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয়। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের এই লড়াইকে যে-কোনো মূল্যে এগিয়ে নিতে হবে। সেই লড়াইয়ে শ্রমিকশ্রেণির ভূমিকা আরো সচেতন এবং সংগঠিত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। এই অবস্থায় রাষ্ট্র সংস্কার কিংবা সাংবিধানিক অধিকারের এজেন্ডায় শ্রমজীবী নিপীড়িত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশীদারত্বের সুযোগ নিশ্চিত করার আলোচনা প্রায় নেই হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আজকের সেমিনার সে উদ্দেশ্য পূরণের সামান্য উদ্যোগ বলা যেতে পারে।
ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে নির্মম শিকার শ্রমজীবী জনতা
বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনে সবচেয়ে বেশি নিষ্পেষণের শিকার হয়েছিল শ্রমিকেরা। শিল্প সেক্টরে শ্রম-শোষণ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারি-শোষণ, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে নিপীড়ন, দলীয় ক্যাডার বাহিনীর চাঁদাবাজির প্রত্যক্ষ শিকার শিল্প ও ইনফরমাল সেক্টরের শ্রমজীবী মানুষ। শিল্প সেক্টরে শ্রম-শোষণ এবং নিপীড়নের মাত্রা বেশি হওয়ায় সেখানে অসন্তোষ চোখে পড়ে বেশি। তথাকথিত স্থিতিশীল, বিনিয়োগ-বান্ধব ব্যবসার পরিবেশের নামে সকল গোয়েন্দা সংস্থা, বাহিনী, দলীয় মাস্তান বাহিনী দিয়ে শিল্প এলাকায় ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কথা বললেই ছাঁটাই করা হয়েছে, প্রতিবাদ করলে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, ট্রেড ইউনিয়নে সংগঠিত হতে দেওয়া হয়নি।
এ দেশের শ্রমিকরা আগুনে পুড়ে, ভবন ধসে, বয়লার বিস্ফোরণে মারা গেছে। এসব মৃত্যু আসলে এক ধরনের হত্যাকা- ছাড়া কিছু নয়। এ শ্রমিকরা করোনায়, কারফিউতে মুত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কাজ করে গেছে, উৎপাদন সচল রেখেছে, দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। আর নিজেকে বঞ্চিত করে মাথাভারী, নিষ্ঠুর রাষ্ট্রযন্ত্রের খরচ যুগিয়েছে। ৫ বছর পর পর যে মজুরি রাষ্ট্র-মালিকপক্ষ নির্ধারণ করে তা প্রহসনের সামিল। প্রতিবারই মজুরি যতটুকু বেড়েছে তা শ্রমিকের রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে আদায় হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো মজুরি বৃদ্ধির সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দামবৃদ্ধির কারণে শ্রমিকের জীবনমানের কোনো পরিবর্তন হয় না।
আপনারা জানেন যে ট্রেড ইউনিয়ন হলো শ্রমিকের আইন স্বীকৃত অধিকার। আওয়ামী লীগের গত ১৬ বছরের শাসনামলে গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকেরা ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার চর্চার কোনো সুযোগ পায়নি। ইপিজেডগুলোতে কি আমাদের শ্রমিকরা কথা বলতে পারে? সরকার-রাষ্ট্র নির্লজ্জভাবে মালিকের হয়ে কাজ করেছে। ট্রেড ইউনিয়ন চর্চা সামান্য যেটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা বায়ারদের চাপে। অধিকাংশই মালিকদের লোকদেখানো পকেট ইউনিয়ন। সেখানে শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগই নাই। শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের শিল্প-কারখানাগুলোর, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন রফতানীমুখি কারখানাগুলোতে কর্ম-পরিবেশ কেমন? সেটা নিয়ে সরকার বা রাষ্ট্রের কোনো উদ্যোগ আমরা এতদিন দেখিনি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো রকম ভূমিকা চোখে পড়েনি। একই সাথে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া জানানোর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ের ওপর পুলিশি হস্তক্ষেপ বন্ধ করার জন্যেও আইন হওয়া দরকার।
বিগত ফ্যাসিবাদের আমলে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার অনির্বাচিত সংসদে পাটকল বন্ধ বিষয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। মিলগুলোতে ভয়ের পরিবেশ তৈরী করা হয়েছিল যাতে কোন আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে। এর ফলে, সরকারি হিসাব মতে কাজ হারিয়েছেন ৫৭ হাজার ১৯১ জন (স্থায়ী : ২৪,৮৮৬ জন, বদলি : ২৩,৮৪২ জন ও দৈনিক-ভিত্তিক : ৮,৪৬৩ জন) শ্রমিক। এর সাথে যুক্ত আরো কয়েক লক্ষ পরিবার। এই সকল মিল-কারখানাকে কেন্দ্র করে কাজ ও নানা ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে যারা যুক্ত ছিলেন তারা নিঃস্ব। এর আগে বিএনপি-জামাত সরকার আদমজী পাটকল বন্ধ করেছিল। এতে যে আদমজীর শ্রমিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল লক্ষ লক্ষ পাটচাষী। প্রায় ৪০ লক্ষের অধিক কৃষক পাট চাষের সাথে যুক্ত ছিলেন। সামনের বাংলাদেশে কৃষি-ভিত্তিক শিল্প কারখানাগুলো চালু করার সাথে যুক্ত আছে লক্ষ লক্ষ পরিবারের কর্মসংস্থানের ভাগ্য।
দেশে বর্তমান ২৮২টি বেসরকারি পাটকল যেখানে শ্রম আইনের কোন বালাই নেই। এসব মিলগুলোতে ছাঁটাই এবং ভয়ভীতির কারণে শ্রমিকদের দাবী-দাওয়া নিয়ে কোন কথা বলারই সুযোগ নেই। এসব বেসরকারি পাটকলে ন্যূনতম মজুরির কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই, দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়, শ্রম আইনের কোনো বালাই নেই।
বাংলাদেশে মোট সক্রিয় শ্রমশক্তির (active labour force) তথা শ্রমবাজারের ৮০-৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে বা ইনফর্মাল মার্কেটে কর্মরত। যেমন ছোট-ব্যবসায়ী- ফেরিওয়ালা, হকার, ভ্যানে পণ্যবিক্রেতা, চা-পান স্টল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মুদি দোকানদার, ছোট ছোট হোটেল-রেস্তোরাঁ, ক্ষুদ্র মাঝারি পাইকার, নির্মাণ শিল্পের শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, রিক্সা-ভ্যানচালক, কৃষিমজুর ইত্যাদি। এসব শ্রমিকদের কোন ধরণের দায়িত্ব সরকার নেয়নি। বরং তাদের দিন-রাত পরিশ্রমের টাকা থেকে পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের চাঁদা দিতে হয়েছে, সন্ত্রাসী ও প্রশাসনিক নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এরা অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী আধিপত্যের শিকার।
গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখি শিল্পের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি সচল রাখার ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তার একটি হলো কৃষি, আর অন্যটি হলো প্রবাসী শ্রমিক। কৃষি নিয়ে একটা বিষয় এখানে স্পষ্ট যে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পায় না। ধান চাষ করে কৃষক দিনে দিনে নিঃস্ব হয়। চিনিকলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, বন্ধ হচ্ছে, আখচাষীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকদের রক্ষা করার কি নীতি এবং পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, সেটা আমরা জানি না। কৃষিতে নিয়োজিত লক্ষ লক্ষ দিনমজুরদের স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করা হবে তাও অজানা।
গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখি শিল্পের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি সচল রাখার ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তার একটি হলো কৃষি, আর অন্যটি হলো প্রবাসী শ্রমিক। কৃষি নিয়ে একটা বিষয় এখানে স্পষ্ট যে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পায় না। ধান চাষ করে কৃষক দিনে দিনে নিঃস্ব হয়। চিনিকলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, বন্ধ হচ্ছে, আখচাষীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকদের রক্ষা করার কি নীতি এবং পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, সেটা আমরা জানি না। কৃষিতে নিয়োজিত লক্ষ লক্ষ দিনমজুরদের স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করা হবে তাও অজানা।
শুনতে পাচ্ছি যে প্রবাসী শ্রমিকদের ভিআইপির মর্যাদা দেওয়া হবে। কথাটা শুনতে বেশ চটকদার। কিন্তু যে শ্রমিকরা প্রবাসী হয় তাদের প্রবাসে যাওয়ার পথটা কি সুগম হবে? বিদেশে যাওয়ার আগে তারা যে নানা ধরনের হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হয়, বিপুল অর্থ খরচ করতে হয়- এসব সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে? এমন নানা প্রশ্ন আমাদের তুলতে হবে।
অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত : সুফল আসবে কি?
সীমাহীন দূর্নীতি-লুটপাট ও ফ্যাসিবাদী দু:শাসন পরবর্তী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্খা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। আমরা ষ্পষ্ট হতে চাই, সংবিধান সংস্কার বা রাষ্ট্র সংস্কারে শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থ কিভাবে রক্ষিত হবে? রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে যদি জনগণকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাহলে সংস্কারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা উৎপাদক শ্রমিক-কৃষক-জনতার স্বার্থ। আমরা জানি, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বের হয়ে প্রায় একই রাষ্ট্র কাঠামো এবং পুঁজিবাদী নিয়মে দেশ পরিচালিত হয়েছে। স্বাধীনতার দুই দশকে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ লুণ্ঠন ও চুরি-দুর্নীতির মাধ্যমে এখানে পুঁজি গড়ে উঠেছে। ৮০ দশক থেকে মুনাফা-কেন্দ্রিক বাজার অর্থনীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে শিল্প, সেবা, ব্যাংক সেক্টর ব্যাপক বি-রাষ্ট্রীয়করণ ও বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছিল। এর ফলে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, যোগাযোগসহ সকল পরিষেবা দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের আওতায় চলে গেছে। জনগণের স্বার্থে রাষ্ট্রের ভূমিকা ক্রমাগত কমতে কমতে এখন প্রায় শূন্য। মূলত দশ ভাগ মানুষের স্বার্থে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে নির্বাচিত বা অনির্বাচিত সরকারগুলো শিল্প, ব্যাংক, ব্যবসা, ভূমি কুক্ষিগত করেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দলীয় নেতৃত্ব, সামরিক-বেসামরিক আমলা, দেশি-বিদেশি পুঁজির স্বার্থধারী ব্যক্তি-গোষ্ঠীই এখানে সুবিধাভোগী হয়েছে। এই গোষ্ঠীর একাংশ অর্থনৈতিক লুণ্ঠনকে আরো নিরঙ্কুশ করার প্রয়োজনে ফ্যাসিবাদ জন্ম দিয়েছে।
তাই ফ্যাসিবাদী শাসন হঠাৎ করে এখানে আসেনি, এক দীর্ঘ অর্থনৈতিক কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার ফলাফলে এর উত্থান ঘটেছে। অনেক মনে করছেন, এই অর্থনৈতিক মনোপলিকে ভেঙে নতুন প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উত্তরণ ঘটানো যাবে। পুঁজিবাদের নিয়ম অনুযায়ী এই সংস্কার নতুন আরেকদল লুটেরা তৈরি ছাড়া আর কোনো ফলাফল আনবে না। কারণ খাদ্য, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি পরিষেবাকে রাষ্ট্রের আওতায় অধিকার হিসেবে গণ্য করা না হলে এসব নিয়ে ব্যবসা চলবেই। বাজার সিন্ডিকেট কখনো ভাঙা সম্ভব হবে না, ৯০ মানুষের স্বাস্থ্য-শিক্ষার অধিকারও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
প্রশ্ন হলো, খাদ্য, বস্ত্র, আবাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষার অধিকারকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার হিসবে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত নিশ্চিত করা হবে কি না? যদি হয় তাহলে বোঝা যাবে, দেশের মাটির নিচে ও উপরের সম্পদের ওপর, শ্রমিক-কৃষকের শ্রম থেকে অর্জিত সম্পদের ওপর তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এ কারণে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের সাথে উৎপাদন-বণ্টন ব্যবস্থাপনা সংস্কার ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রশ্ন হলো, খাদ্য, বস্ত্র, আবাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষার অধিকারকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার হিসবে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত নিশ্চিত করা হবে কি না? যদি হয় তাহলে বোঝা যাবে, দেশের মাটির নিচে ও উপরের সম্পদের ওপর, শ্রমিক-কৃষকের শ্রম থেকে অর্জিত সম্পদের ওপর তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এ কারণে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের সাথে উৎপাদন-বণ্টন ব্যবস্থাপনা সংস্কার ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
কৃষি ও কৃষক প্রশ্ন
গ্রামই আমাদের ইতিহাস, অর্থনীতি সংস্কৃতি মানুষের জীবন-জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বিদ্যমান অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জমি, জলা, জঙ্গলকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবন-জীবিকা ক্রমাগত সংকটাপন্ন। তাদের হাতে নেই কোন মালিকানা। জমি, জলা, জঙ্গল ক্রমাগত কেন্দ্রীভূত হয়েছে কালোটাকার মালিক, ঋণখেলাপি, ক্ষমতাসীন দখলদার, ধনী ব্যবসায়ীদের হাতে। ১৯৭২ সালে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা ছিল ৩২ ভাগ। গত ৫০ বছরে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৬ ভাগে এসে পৌঁছেছে। দুর্নীতি ঘুষ চোরাইটাকার কারণে জমির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। ঢাকা শহর এবং আশেপাশে ১০ হাজার একর জমি ভূমিদস্যুরা দখল করে রেখেছে, যেগুলো একসময় বনাঞ্চল, জলাভূমি ও কৃষিভূমি ছিল।
আসলে ৯০ ভাগ মানুষের স্বার্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে চাইলে কৃষি সংস্কার এবং ভূমি সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ‘ভূমি সংস্কার’ বলতে সাধারণত আমরা বুঝে থাকি গরিব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরকারি মালিকানার খাস জলা-জমির বণ্টন-বন্দোবস্ত; বর্গাদারসহ অন্যের মালিকানাধীন জমি-জলাতে যারা শ্রম দিচ্ছেন তাদের স্বার্থ-সংরক্ষণের সাথে যুক্ত বিষয়। প্রকৃতপক্ষে কৃষি সংস্কারের অনুষঙ্গ হলো উল্লিখিত ভূমি সংস্কারসহ ভূমি মালিকানার পরিবর্তন; অনুপস্থিত জমি-জলার মালিকানা ব্যবস্থার সুরাহা; সিলিং উদ্বৃত্ত জমি-জলা গরিব-প্রান্তিক কৃষিজীবী-জলাজীবীদের মধ্যে বণ্টন; সংশ্লিষ্ট আইনকানুনের পরিবর্তন; বর্গা/ভাগ-চাষসহ কৃষিতে বিভিন্ন ধরনের ভোগদখল স্বত্বের (টেন্যুরিয়েল সিস্টেম) পরিবর্তন; প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তর; ভূমি- জলাকেন্দ্রিক বিবাদ-মামলাজনিত অপচয় কমানো; রেকর্ড, রেজিস্ট্রেশন, প্রশাসন, ভূমি আইন, বাজার, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য, বিপণন, মজুরি; কৃষি-বীমা, কৃষি ঋণ, ভর্তুকি; পরিবেশবান্ধব কৃষি; জমি-জলায় নারীর অধিকার-উত্তরাধিকারসহ কৃষিতে নারী শ্রমের স্বীকৃতি; জমি-জলা-জঙ্গলে আদিবাসী মানুষের অধিকার; শত্রু ও অর্পিত সম্পত্তি আইনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সম্পত্তি প্রত্যর্পণ; ভূমি-জলা ব্যবহার নীতি; চর-হাওর-বাওরসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা; সুদবিহীন ঋণ, শস্য বহুমুখীকরণ, উপকরণ সংরক্ষণ; উৎপাদন অঞ্চল গঠন; মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন; প্রযুক্তি এবং ইনপুট খাতগুলোতে পরিবর্তন; বিশ্বায়নের আওতায় কৃষিতে সংশ্লিষ্ট নীতি-কৌশল নির্ধারণ।’ দেশের কৃষিকেন্দ্রিক অর্থনীতিকে সিংহভাগ মানুষের হাতে ফিরিয়ে দিতে হলে সামগ্রিক কৃষি ও ভূমি-সংস্কারের নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
কৃষিভিত্তিক শিল্পখাতের বিকাশ এবং পাটকল, চিনিকল শ্রমিকদের জন্য করণীয়
পাটকল-চিনিকলসহ সকল বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কলকারখানাগুলো চালুর জন্য একটি কমিশন গঠন করতে হবে। বিজিএমসি, বিটিএমসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করা এবং ক্ষতির কারণ চিহ্নিত করতে হবে। দ্রুত মিল-কলকারখানাগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে হবে। চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন করতে হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে।
পাটকল-চিনিকলসহ সকল বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কলকারখানাগুলো চালুর জন্য একটি কমিশন গঠন করতে হবে। বিজিএমসি, বিটিএমসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করা এবং ক্ষতির কারণ চিহ্নিত করতে হবে। দ্রুত মিল-কলকারখানাগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে হবে। চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন করতে হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে।
পোশাক সেক্টরে বণ্টন-ব্যবস্থাপনা সংস্কারের লক্ষ্যে
১) নিন্মতম মজুরি বোর্ড সংস্কার করতে হবে। মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য কারখানা-ভিত্তিক প্রতিটি ফ্লোর থেকে প্রত্যক্ষ ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য কারখানা-ভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
২) মজুরি নির্ধারণে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬’ সংশোধন করতে হবে। মজুরি নির্ধারণের মাপকাঠিতে কারখানার মুনাফা হিসাবে আনতে হবে।
৩) শ্রমিক স্বার্থ-বিরোধী সকল শ্রম আইন, বিধিমালা ও ধারা বাতিল নিশ্চিত করতে হবে।
৪) আবাসন, রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৫) রপ্তানির ৪%-৬% ইন্সেন্টিভ কারখানার সকল শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে সমপরিমাণ ভাগে বণ্টন করার আইন প্রণয়ন করতে হবে।
প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ
১. বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার খরচ অনেক বেশি। এর জন্য অনেক কারণ দায়ী। দালালের দৌরাত্ম্য ও সিন্ডিকেশন অন্যতম কারণ।
২. খরচ বেশি, আবার আয় তুলনামূলকভাবে কম। সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে যে আয় হয় তা দিয়ে খরচ ওঠে না। ফলে অভাব থেকেই যাচ্ছে। যে হারে লোক যাচ্ছে, সে হারে রেমিট্যান্স আসছে না।
৩. বিদেশে যাওয়ার আগে দেশের ভেতরের সকল স্তরে হয়রানি।
৪. বিদেশেও তাদের সমস্যা-অসুবিধা দেখা হয় না।
৫. দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে না পারায় এই ক্ষেত্রে বিদেশের শ্রমবাজার, দক্ষ লোকের চাহিদা, ধরতে পারছি না।
এ অবস্থায় মূল দাবি হলো শ্রমিক হিসাবে প্রবাসে যাওয়ার খরচ কমাতে হবে, এবং ধীরে ধীরে শূন্যতে নিয়ে আসতে হবে। সমস্ত হয়রানি-প্রতারণা বন্ধ করতে হবে। বিদেশের শ্রমবাজারের উপযুক্ত করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
চা শ্রমিকদের মজুরি ও ভূমি অধিকার আইন সংস্কার
চা শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, সুপেয় জল, স্যানিটেশনসহ অনেক আধুনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ১৭০ টাকা মজুরিতে তাদের ৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। দিনশেষে ২৩ কেজি পাতা তুললেই তবে পূরণ হয় মাথাপিছু লক্ষ্যমাত্রা। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেই তবে হাজিরা হিসেবে গণ্য করা হয়। বংশ পরম্পরায় যে জমিতে চা শ্রমিকরা বসবাস করে সেই জমির ওপর তাদের মালিকানা নেই।
রিকশা শ্রমিকদের দাবি
রিকশা-ভ্যান শ্রমিকরা হলো গ্রাম থেকে আসা বিশাল অংশের মানুষ, যাদের সারাবছর কৃষি কাজ থাকে না, বছরের একটা সময় তারা রিকশা চালায়। শহরে উপার্জিত অর্থ গ্রামে পাঠিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে রিকশা চালকেরা। শহরের বিভিন্ন বস্তিতে, শিল্পাঞ্চলে যারা বাস করে, সেসব পরিবারের পুরুষেরা রিকশা চালায়। ৯০ ভাগ রিকশা চালকদের কোনো রিকশা নাই। তাদের অনেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে রিকশা কেনে, বেশিরভাগ চালক গ্যারেজ মালিকদের রিকশা ভাড়ায় চালায়। শহরগুলোতে রিকশার চাপ কমাতে হলে অর্থনীতিতে প্রচুর কর্মসংস্থানের শর্ত সৃষ্টি করা লাগবে। সড়কে রিকশা নিয়ন্ত্রণ বা শৃঙ্খলা আনা তখনই সম্ভব হবে, যখন শিল্পে কর্মসংস্থান ও কৃষিতে মাঝারি ও ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্র অর্জন করবে।
বিগত সরকারের আমলে ব্যাটারি ও ইজিবাইক চালকদের আন্দোলনে লাইসেন্স দেওয়ার দাবি উঠেছিল। রিকশা চালকেরা পুলিশি হয়রানি ও চাঁদাবাজি অবসান চায়। অভ্যুত্থান পরবর্তীতে সমাবেশে তাদের দাবি ছিল-
১) আন্দোলনে আহত ও নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২) প্রত্যেক রিকশা চালকদের পরিচয়-পত্র দেওয়া। রিকশা চালকদের রেশন, চিকিৎসা ও আবাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৩) ব্যাটারি চালিত রিকশার লাইসেন্স দেওয়া। সিটি কর্পোরেশনগুলোতে ব্যাটারি রিকশার চলাচলের সুনির্দিষ্ট সড়কগুলো ঘোষণা করা।
৪) ‘রিকশা যার- লাইসেন্স তার’- নীতিতে রিকশার লাইসেন্স ব্যবস্থা করা। রিকশা কেনার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া এবং কর্পোরেশনের উদ্যোগে রিকশা গ্যারেজ তৈরি করা।
রাষ্ট্রীয় বরাদ্দে আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসার হিস্যা
একটি জনগোষ্ঠীর কারা কত অংশ উৎপাদন করে, কারা কত অংশ ভোগ করেÑ এই মাপকাঠির মধ্যে হিস্যার আলোচনাটি যুক্ত। যেমন রাষ্ট্রের বাজেট বরাদ্দ গরিবের ভোগ্য পণ্যের জন্য বরাদ্দ হবে নাকি সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ-শিল্প পুলিশের বন্দুক ও রেশনের জন্য বরাদ্দ হবেÑ তা দিয়ে নির্ধারিত হবে রাষ্ট্রটির গণতান্ত্রিক বা ফ্যাসিবাদী চরিত্র।
পাকিস্তান আমলে শিল্প-কারখানা স্থাপনের সময়ে শ্রমিকদের বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সমন্বিত করে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ৫৪ বছরে সেখান থেকে বাংলাদেশ সরে এসেছে। গাজীপুর, আশুলিয়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রামসহ সকল শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের আবাসন, বিনোদন, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নাগরিক সুবিধা তৈরিতে রাষ্ট্র কোনো ভূমিকা রাখেনি। আদমজী জুট মিলে এক সময়ে ২০ হাজার শ্রমিক থাকার মতো ২০টি শ্রমিক কোয়ার্টার, ১২টি শ্রমিক কলোনি, পাঁচটি খেলার মাঠ, শ্রমিক পরিবারের জন্য একটি হাসপাতাল, দুইটি হাই স্কুল, তিনটি প্রাইমারি স্কুল ছিল। ২০০২ সালে আদমজী কারখানা বন্ধ করে এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন করা হয়। সেখানে ৬৪ কারখানা তৈরি করে ৭০ হাজার শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হলেও শ্রমিকদের থাকার কলোনি বা কোয়ার্টার নেই, খেলার মাঠ নেই, চিকিৎসা কেন্দ্র নেই। আদমজী শ্রমিকের খেলার মাঠ এখন র্যাব-২-এর হেডকোয়ার্টার; কলোনি ও বাগানবাড়ি এখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের আঞ্চলিক কার্যালয় ও ব্যারাক। শ্রমিকের স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, চিকিৎসা বা বিনোদনের দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করে কি কোনো রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হতে পারে?
আদমজী শ্রমিকের খেলার মাঠ এখন র্যাব-২-এর হেডকোয়ার্টার; কলোনি ও বাগানবাড়ি এখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের আঞ্চলিক কার্যালয় ও ব্যারাক। শ্রমিকের স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, চিকিৎসা বা বিনোদনের দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করে কি কোনো রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হতে পারে?
অস্বাভাবিকভাবে দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি এবং শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া শ্রম-অসন্তোষের বড় কারণ। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে খাদ্য নিরাপত্তা মৌলিক অধিকার। দেশের একজন পুলিশ কনস্টেবলের সরকারি রেশনিং বরাদ্দ আছে- ১৬০ টাকায় ৩০ কেজি চাল, ৩০ কেজি আটা কেজি ডাল তেল ৮ কেজি চিনি ১ কেজি পোলাওয়ের চাল। তাহলে প্রশ্ন আসে, উৎপাদনশীল খাতে শ্রমজীবীদের জন্য কেন রেশনিং দেওয়া হবে না?
প্রাথমিক পর্যায়ে গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবারকে ৩০ কেজি চাল, ২০ কেজি আটা, পাঁচ কেজি চিনি, পাঁচ লিটার তেল রেশনিংয়ের মাধ্যমে দিলে ৩০ লক্ষ শ্রমিকের জন্য ৯ শত কোটি; বছরে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। বিজিএমইএ-বিকেএমই-এর সূত্রে জানা যায়, উৎস কর হিসেবে প্রদেয় ১ শতাংশ হারে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। এই সূত্রে জানা যায় সেন্ট্রাল ফান্ড, মুনাফার ০.৫ শতাংশ, কল্যাণ ফান্ড, আয়কর, ভ্যাট, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা সরকারি রাজস্বে জমা হয়। এক্ষেত্রে এই শিল্পের জন্যে রেশনিং খাতে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দেওয়া হলে ৩০ লক্ষ শ্রমিক পরিবার উপকৃত হবে।
রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বাণিজ্য-নীতি সংস্কার এবং টিসিবিকে কার্যকরের পদক্ষেপ ছাড়া এই পদক্ষেপ সম্ভব নয়। তাই ফরমাল-ইনফরমাল সেক্টরে শ্রমিকদের রেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
যেসব শিল্প এলাকায় এখন লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের বাস, সেখানে ১৫ বা ২০ বছর আগে যে কয়টি সরকারি স্কুল কলেজ ছিল তার আর বৃদ্ধি হয়নি। নতুন কোন সরকারি স্কুল-কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ সরকার নেয়নি। ফলে ব্যাপক বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন, স্কুল এবং মাদ্রাসা তৈরি হয়েছে। নাম সর্বস্ব এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের সন্তানেরা শিক্ষা গ্রহণ করে। অধিকাংশ মাদ্রাসা শ্রমিকের শিশুর ডে-কেয়ারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষাও শ্রমিকের জন্য দিবাস্বপ্ন। সরকারি উদ্যোগে পযার্প্ত স্কুল, ডে কেয়ার, কলেজ নির্মাণ করতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে শিক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। শ্রমিক এলাকাগুলোতে অত্যধিক বাসা ভাড়ার কারণে বেতনের বেশিরভাগ টাকা বাসা ভাড়াতে চলে যায়। একজীবনে শ্রমিকের যা মজুরি তার পক্ষে কোন জমি বা ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়। এজন্য শিল্পসেক্টরে সরকারি ও মালিকের যৌথ ব্যবস্থাপনা অর্থায়নে কলোনী-কোয়ার্টার ব্যবস্থা করতে হবে। শহরের বিভিন্ন স্থানে সরকারি জমিতে শ্রমজীবী মানুষের জন্য ঋণের মাধ্যমে বাসস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব। সাধারণ একটি হিসেবে বলা যায়-শ্রমিকের আবাসনের লক্ষ্যে ১১ তলা বিশিষ্ট সাড়ে ৪ হাজার স্কয়ার ফিটের বিল্ডিং নির্মাণে ২১ কোটি টাকা সম্ভাব্য খরচ হতে পারে। এতে প্রতি ফ্লোরে ৬ টি পরিবার করে মোট ৬৬ পরিবারের ব্যবস্থা করা সম্ভব। জমির খরচ বাদে প্রতি পরিবারের জন্য ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করে আবাসনের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব।
রাষ্ট্র পরিচালনায় শ্রমজীবী জনগণের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে প্রয়োজন
সংসদ: রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের অগণতান্ত্রিক বিধান বাতিল করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধু নমিনেশন ফর্ম তোলার জন্য যে টাকা লাগে, তা একজন শ্রমিকের চার মাসের মজুরির সমান। আইন প্রণয়নে ভূমিকা পালনে এই রাষ্ট্র শ্রমজীবীকে সংসদে যাওয়ার কোনো সুযোগই রাখেনি। প্রার্থীদের জামানতের অর্থ জাতীয় ন্যূনতম মজুরির অর্ধেকের বেশি হতে পারবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শ্রমঘন ও কৃষি-প্রধান এলাকায় শ্রমিক ও কৃষকের সংরক্ষিত ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
প্রশাসন: রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুলি-হামলা-মামলা-হয়রানি করা যাবে না। পুলিশকে নিপীড়ক নয়, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংস্কার করতে হবে।
বিচার বিভাগ: নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতিমুক্ত স্বাধীন, নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দেওয়ানী-ফৌজদারি-শ্রম আদালতে মামলা জট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
উৎপাদন বণ্টনের নতুন ব্যবস্থাপনা চাই
১৯৯০ সালের স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে ৯ বছরের লড়াইয়ের পর স্বৈরাচার মুক্ত, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার যে স্বপ্ন অভ্যুত্থানকারী জনতা দেখেছিল তা পূরণ হয়নি। অগণতান্ত্রিক বিধি-বিধান, আইনি কাঠামো অক্ষত রেখে তড়িঘড়ি ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াতেই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে স্তিমিত করা হয়েছিল। দেখা গেল সামরিক ও বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোকে ব্যবহার করে উৎপাদন ক্ষেত্রসহ পরিষেবা খাতগুলো ক্ষমতাসীনেরা দখল করতে শুরু করল। এখন ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকে সংস্কার করে রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করার যে অবশ্য প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে – সেই প্রয়োজন কি রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রত্যাশী রাজনৈতিক দল ও তাদের সাথে যুক্ত মালিকশ্রেণি চাচ্ছে? মনে রাখতে হবে, গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনই সব নয়, বিগত ৫৪ বছরের পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা আছে। বিশ্বব্যাংক – আইএমএফ, এডিবিসহ নানা সাম্রাজ্যবাদী সংস্থাগুলো এই ব্যবস্থার পরিচালকদের ব্যক্তিখাত ও বাণিজ্যিককরণের নীতিকে গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে। নব্য উদারবাদী নীতি বহাল রেখে, সকল সেবাখাত বাণিজ্যিকখাতে তুলে দেয়ার নীতি অব্যহত রাখলে মুনাফার লক্ষ্যেই সব পরিচালিত হবে। সেক্ষেত্রে নতুন লুটেরা সিন্ডিকেট তৈরি হবে, খাদ্যপণ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিয়ে পুরাতনের স্থানে নতুন ব্যবসাদার গোষ্ঠী জন্ম নেবে। এই গোষ্ঠী ভবিষ্যৎ নিজেদের লুণ্ঠনকে নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের কর্তৃত্বে এনে আবার ফ্যাসিবাদই ডেকে আনবে এবিষয়ে কোন সন্দেহ থাকার কারণ নেই। রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক অধিকারপূরণে সক্ষম করতে হলে রাষ্ট্রের উৎপাদন ব্যবস্থাপনার বন্টনকে সংস্কার করা ছাড়া ভিন্ন কোন পথ নেই।
শ্রমজীবী মানুষের হিস্যা নিশ্চিত না করলে ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচার বার বার ফিরে আসবে
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ঘোষিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ঘোষণাটি ছাপানো অক্ষরে রয়ে গেল স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও। গণতান্ত্রিক সংবিধান, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার আকাক্সক্ষা ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বড় সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কিন্তু এই সম্ভাবনা কখনো সার্থক হবে না সিংহভাগ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া। গণ-মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক হতে হবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা হলো, এই গণতান্ত্রিক সংগ্রামে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্ব দূরে থাক, অর্থনৈতিক দাবি আদায়ের স্তরেও সে নিজেকে উপস্থাপন করতে হিমশিম খাচ্ছে। এখানে গণতন্ত্রকামী বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা আজ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র-জনতার অভ্যন্তরে প্রতিশ্রুতশীল কর্মীদের আজ গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে বিকশিত করার স্বার্থে শ্রমজীবীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।