বাজেট ২০২৪ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন

বাজেট ২০২৪ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন

মো: মনির

একনজরে বাজেট

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এবারের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদিত হয়েছে।

খাতভিত্তিক বাজেট ব্যয় প্রস্তাব: তুলনামূলক চিত্র

মূল্যস্ফীতির বাস্তবতা

প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের প্রধান লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে টানা ২৩ মাস উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এই সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে। যদিও স্বাধীন গবেষণা সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি সবচেয়ে অসহনীয় পর্যায়ে। মূল্যস্ফীতির যে হিসাব করা হয়, সেটি গড় হিসাব। সিপিডি বলছে, শুধু সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত পণ্য বাস্কেটের ভিত্তিতে হিসাব করা হলে মূল্যস্ফীতি আসলে ২০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) মে মাসের এক গবেষণায় বলেছে, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি শতকরা ১৫ ভাগ। বিবিএসের জরিপ পদ্ধতিতে নানা ত্রুটি আছে। ফলে বাস্তবে মূল্যস্ফীতি তাদের জরিপে প্রতিফলিত হয় না।

বিবিএসের জরিপ পদ্ধতিতে নানা ত্রুটি আছে। ফলে বাস্তবে মূল্যস্ফীতি তাদের জরিপে প্রতিফলিত হয় না।

জুনে প্রকাশিত ডব্লিউএফপির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। একই প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন এবং ৭০ শতাংশ মানুষ খাদ্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। সাধারণ মানুষ যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট, টানা ২৭ মাস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির হারের অর্ধেকের চেয়ে কম। প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় অনেক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

ডব্লিউএফপির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। একই প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন এবং ৭০ শতাংশ মানুষ খাদ্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। সাধারণ মানুষ যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট, টানা ২৭ মাস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির হারের অর্ধেকের চেয়ে কম।

মাসভিত্তিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি (বিবিএস)

                     ২০২৪

                 ২০২৩

মাস

খাদ্য মূল্যস্ফীতি (%)

মাস

খাদ্য মূল্যস্ফীতি (%)

জানুয়ারি

৯.৫৬

জুলাই

৯.৭৬

ফেব্রুয়ারি

৯.৪৪

আগস্ট

১২.৫৪

মার্চ

৯.৮৭

সেপ্টেম্বর

১২.৩৭

এপ্রিল

১০.২২

অক্টোবর

১২.৫৬

মে

১০.৭৬

নভেম্বর

১০.৭৬

  

ডিসেম্বর

৯.৫৮

 উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল মূল্যস্ফীতি ৬-এর ঘরে নামিয়ে আনা। অন্যদিকে সর্বশেষ ৩টি মুদ্রানীতি ছিল সংকোচনমূলক। যার প্রধান লক্ষ্য ছিল মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্বনীতি এবং মুদ্রানীতি দুই-ই ব্যর্থ হয়েছে। ধান, চাল, গম, আটা, ময়দাসহ নিত্যপণ্যের ওপর উৎসে কর ২ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা বাজেটের একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে এর সুবিধা কতটা মিলবে তা নিয়ে সংশয় আছে। কার্যত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্ত কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা।

বাজেট কি আদৌ সংকোচনমূলক?

সরকার এই বাজেটকে সংকোচনমূলক বাজেট বললেও রাজস্ব ব্যয় সেই অর্থে সংকোচন করা হয়নি। সরকারের প্রশাসনিক ও পরিচালন ব্যয় বেড়েই চলেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পরিচালন ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৬৩.৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১১.৯ শতাংশ বেশি। দেশে একদিকে চলছে যখন ডলার সংকট, রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি নেই, বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ সার ও জ্বালানির দাম।

সম্প্রতি এ অবস্থার মধ্যেই জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য ২৬১টি নতুন বিলাসবহুল গাড়ি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খরচ করার দিক থেকে সরকার একদিকে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলে, অন্যদিকে করে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়। অপচয় হয়। দুর্নীতি হয়। সেই অর্থ বাজারে যাচ্ছে। সুতরাং আর্থিক নীতি সম্প্রসারণমূলক। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

এ অবস্থার মধ্যেই জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য ২৬১টি নতুন বিলাসবহুল গাড়ি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খরচ করার দিক থেকে সরকার একদিকে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলে, অন্যদিকে করে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়। অপচয় হয়। দুর্নীতি হয়। সেই অর্থ বাজারে যাচ্ছে। সুতরাং আর্থিক নীতি সম্প্রসারণমূলক। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গোঁজামিল, বরাদ্দ অপ্রতুল

টাকার অঙ্কে বাড়লেও আগামী অর্থবছর জিডিপির তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমেছে। আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ জিডিপির ২ দশমিক ৪২ শতাংশ। অথচ বিদায়ী অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। আগের অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং তার আগের অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। সত্যিকার অর্থে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নয়, আগামী অর্থবছর এমন কিছু বিষয়কে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের তালিকায় দেখানো হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের সুদ, অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, কৃষি খাতে ভর্তুকি, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য কলোনি নির্মাণ, উপকূল অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তহবিল গঠন, চাকরিরত অবস্থায় মারা যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য অনুদান ইত্যাদি খাতের বরাদ্দকেও সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। একদিকে সামাজিক নিরাপত্তার নামে যা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রকৃত অর্থে এই খাতের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয়। আবার দেশে বিরাজমান ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে ভাতাসহ দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য থাকা নানান সামাজিক সুরক্ষা মোটেও যথেষ্ট নয়।

একদিকে সামাজিক নিরাপত্তার নামে যা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রকৃত অর্থে এই খাতের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয়। আবার দেশে বিরাজমান ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে ভাতাসহ দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য থাকা নানান সামাজিক সুরক্ষা মোটেও যথেষ্ট নয়।

বাজেটে আইএমএফের পরামর্শ অনুসরণ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি।

ভর্তুকি ব্যয় কমানোর জন্য আইএমএফের পরামর্শ অনুসরণ করে বর্তমান বাজেট বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির ভর্তুকি কমিয়ে দাম বাড়তে দেবে। স্বভাবতই এমন মৌলিক কিছুর মূল্যবৃদ্ধি চলমান মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে এবং উৎপাদন খরচ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে তুলবে। জানুয়ারি থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে এ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম তিনবার (প্রতিবার ৫ শতাংশ হারে) বাড়ানো হয়েছে। আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া বর্ধিত রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার পরোক্ষ করের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করছে এবং তাতে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া বর্ধিত রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার পরোক্ষ করের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করছে এবং তাতে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

 বাজেট অনুযায়ী রাজস্বের ৬৩ শতাংশের উৎস হবে পরোক্ষ কর এবং অবশিষ্ট ৩৭ শতাংশ আসবে প্রত্যক্ষ কর থেকে (শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের রাজস্বের ৭০-৮০ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর থেকে এবং আমাদের প্রতিবেশী ভারত ৫০ শতাংশ রাজস্ব প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে সংগ্রহ করে)। এই পরোক্ষ কর পণ্য ও সেবার দাম বাড়াবে এবং স্বল্প আয়ের ভোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বাজেট ঘাটতি পূরণের ব্যাংকঋণ ও অর্থের তারল্য বৃদ্ধি

যখন সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, তখন এটি অর্থনীতিতে অর্থের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। এই অতিরিক্ত তহবিলের জোগান তারল্য বৃদ্ধি করে, যা পণ্য ও সেবার চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। যদি পণ্য ও পরিষেবার সরবরাহ এই চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারে, তাহলে মূল্যস্ফীতি ঘটে। বর্ধিত সরকারি ঋণ অর্থনীতিতে সামগ্রিক চাহিদাকে উদ্দীপিত করতে পারে। যেহেতু সরকার ধার করা তহবিল ব্যয় করে, এটি পণ্য ও পরিষেবার অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি করে। এই বর্ধিত চাহিদা, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে না মিললে, বাড়ন্ত চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি হতে পারে। ভোক্তারা সীমিত সরবরাহের জন্য প্রতিযোগিতা করে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি অর্থায়নের প্রধান উৎস অভ্যন্তরীণ খাত। সরকার মূলত কেন্দ্রীয় ও তফসিলি ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ উৎসের ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশই ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে।১০

 

সরকারের আয়ের উৎস রাজস্ব আদায়ের হার খুবই কম। এত কম অর্থ নিয়ে সরকারের নিজস্ব ব্যয়গুলো তারা ঠিকভাবে চালাতে পারছে না। তাই সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। তা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা ছাপাতে হয়েছে। এই অতিরিক্ত টাকার প্রভাব বাজারে পড়বেই। মুদ্রা সরবরাহ কমছে না। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এটা চক্রাকারে ঘুরছে। সরকারের ব্যয় ও অপচয় কমানো এবং রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ছাড়া সরকারের হাতে টাকা থাকবে না। আর সরকার যদি এ রকম ব্যাংক থেকে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিতে থাকে, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী করা যায়?

সরকারি ব্যয় কমানোর মাধ্যমে বাজারে টাকার প্রবাহ কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত। এ ছাড়া উচ্চ আয়কারী ব্যক্তিদের ওপর করের হার বৃদ্ধি করে এবং করের আওতা বাড়িয়ে সরকার রাজস্ব বৃদ্ধি করতে পারে, যা অর্থনীতিতে চাহিদা কমাতে সহায়ক হয়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কৃষিঋণ বিতরণ বৃদ্ধি, কৃষি সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সরবরাহ উন্নত করা এবং সেচব্যবস্থা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে করমুক্ত আয়সীমা আরও বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার আয়সীমা বর্তমান ক্রয়ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করলে খুবই সামান্য।

বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি প্রশমিত করতে স্বল্প আয়ের মানুষকে সরাসরি নগদ সহায়তা একটি পদক্ষেপ হতে পারে। প্রত্যক্ষ নগদ সহায়তা ভোক্তাদের হাতে অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবাগুলোর খরচ বহন করার সক্ষমতা প্রদান করে। এই বর্ধিত ক্রয়ক্ষমতা চাহিদাকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং উৎপাদন স্থিতিশীল করতে বা বাড়াতে পারে। এর ফলে পণ্য ও পরিষেবার উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস পায়।

সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কমাতে এবং দাম স্থিতিশীল করতে সরকারি ভর্তুকি অপরিহার্য। এটি নিশ্চিত করা উচিত যে এই ভর্তুকিগুলো যেন প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছায়। এর পাশাপাশি বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা এবং সরবরাহ-শৃঙ্খলে বাধাসমূহ দূর করা। স্বল্প আয়ের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্যের সরবরাহ প্রদানের জন্য কার্যকরভাবে মুক্ত বাজারব্যবস্থার (Open Market System-OMS) মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিতরণ পরিচালনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে কঠোরভাবে বাজার মনিটর করা, বাজার কারসাজির সঙ্গে যুক্তদের আইনের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে।

ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করতে সহযোগিতা করবে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের উচিত সমস্ত শিল্পে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর সম্ভাবনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করা, যাতে ন্যূনতম মজুরি অর্জনকারী শ্রমিকরা মৌলিক খাদ্যখরচ বহন করতে পারে। প্রায় দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি খাতে বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত।

মো: মনির: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস।

ইমেইল: monir@bup.edu.bd

তথ্যসূত্র:

১। জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ সারসংক্ষেপ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পার্লামেন্টারি স্টাডিজ, জুন-২০২৪

২। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), জুন-২০২৪

৩। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), মে-২০১৪

৪। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, জরিপ মে-২০২৪

৫। বাংলাদেশ বাজার তদারকি প্রতিবেদন; এপ্রিল-২০২৪, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)

৬। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন (বিবিএস), এপ্রিল-২০২৪

৭। জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ সারসংক্ষেপ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পার্লামেন্টারি স্টাডিজ, জুন-২০২৪

৮। প্রথম আলো, ২৫ মে ২০২৪

৯। জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ সারসংক্ষেপ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পার্লামেন্টারি স্টাডিজ, জুন-২০২৪

১০। জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ সারসংক্ষেপ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পার্লামেন্টারি স্টাডিজ, জুন-২০২৪

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •