প্রীতি উরাং হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত দাবি

যৌথ বিবৃতি

প্রীতি উরাং হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত দাবি

২ এপ্রিল ২০২৪  দেশের ১১৭ জন নাগরিক গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে আদিবাসী শিশু প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং কয়েকটি গণমাধ্যমের পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত তাদের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। সরকারের কাছে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার নিরপেক্ষ, দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে।

“বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমরা জানতে পারি, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ ঢাকার মোহম্মদপুরে ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় ১৩ বছর বয়সী শিশু প্রীতি উরাং কর্মরত ছিল। তাকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। প্রীতির বাবা অভিযোগ করেছেন, ওই গৃহে কাজ করার সময় সৈয়দ আশফাকুল হকের পরিবার প্রীতিকে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে দিত না। শিশুটি পড়ে যাওয়ার আগে প্রায় ১৩ মিনিট ঝুলে ছিল এবং বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। আশফাকুল হকের বাসা থেকে কেউ তাকে সাহায্য করেনি। আশপাশের মানুষজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতে চাইলেও ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। শিশুটি পড়ে যাওয়ার পর ওই বাড়ির কেয়ারকেটার তাকে হাসপাতালে ফেলে চলে আসে। পরে সে মারা যায়। লক্ষণীয় হলো, প্রীতির প্রাক-স্কুলের নথি এবং ওই ফ্ল্যাটের ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ দুটোই গায়েব হয়ে গেছে। এটাও লক্ষণীয়, এজাহারে প্রীতির বয়স ১৩ বছরের বদলে ১৫ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে একে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সৈয়দ আশফাকুল হকের ওই ফ্ল্যাট থেকে ২০২৩ তারিখের ৬ আগস্ট ৭ বছরের আরও এক গৃহকর্মী পড়ে গিয়েছিল বা লাফ দিয়েছিল। সে বেঁচে আছে। তার মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ আছে, তার জননাঙ্গের গভীর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত ৩-৩-৩ সেন্টিমিটার দীর্ঘ-চওড়া-গভীর ক্ষত রয়েছে। তার জননাঙ্গে অপারেশন করা হয়েছে। আমাদের সরেজমিন প্রতিনিধিদের সে জানায়, পড়ে যাওয়ার আগেই সে দুপায়ের মাঝে আঘাত পেয়েছিল। সে কারণে সে মরে যেতে চেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ওই শিশুটির পরিবারের সঙ্গে ২ লাখ টাকায় বিষয়টির আপসরফা হয়েছে। যদিও টাকা মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে চলে গেছে।

ঘটনার ১০ দিন পর ডেইলি স্টারের সম্পাদক এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘প্রীতির ঘটনায় তারা দুঃখ প্রকাশ করছে এবং ডেইলি স্টার সবসময় শিশু অধিকার সমুন্নত রাখার নীতিতে অটল আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।’ তার এ বক্তব্য বিস্ময়কর ও দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি, ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের নির্বাহী সম্পাদককে দ্রুত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ন্যায়বিচারের পথকে সুগম করা। নয়তো ব্যক্তির অপরাধে প্রতিষ্ঠান দায়ী হবে।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং তদন্ত প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অবহেলায় আমরা তীব্র ক্ষোভ এবং নিন্দা জানাচ্ছি। প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ডের নামান্তর বলে আমরা মনে করি। কোনো প্রভাবশালী মহলের চাপে তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হলে আমরা তা মেনে নেব না। আমরা বলিষ্ঠ কণ্ঠে এ ঘটনার নিরপেক্ষ স্বাধীন ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। সেই সঙ্গে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে নিম্নোক্ত দাবিগুলো তুলে ধরছি—

ক) প্রীতি উরাংসহ আগের সব ঘটনার পুনঃতদন্ত করে দ্রুত দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

খ) প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুকে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড বিবেচনা না করে এ মামলা অবিলম্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।

গ) প্রীতির পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

ঘ) মৃতবৎ অবস্থায় যে শিশুটি বেঁচে আছে তার যথোপযুক্ত চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ঙ) শিশুটির শরীরের বিশেষ ক্ষতটি পরীক্ষা করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে হবে।

চ) সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসার ৩ জন শিশু গৃহসহকারী ছিল। তারা ৭, ৮ এবং ১১ বছর বয়সে কাজে যোগ দেয়। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী ১৪ বছর পূর্ণ হয়নি এমন ব্যক্তি শিশু। শ্রম আইনের ৩৪ ধারা অনুয়ায়ী, কোনো শিশুকে কোনো পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। সৈয়দ আশফাকুল হক কিংবা তার পরিবারের কোনো সদস্য শিশু যৌনশোষক কি না, সে বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি আমরা।

ছ) ওই বাড়ির যে নিরাপত্তারক্ষীরা প্রীতিকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে দেয়নি, তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

জ) দেশের সকল সংবাদমাধ্যমের সম্মানিত সম্পাদকদের কাছে, এই মহান পেশার নিরপেক্ষতা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

ঝ) ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হককে অবিলম্বে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •