সংবাদপত্রের পাতা থেকে(২৭ জানুয়ারি- ২৬ এপ্রিল ২০২৪)

সংবাদপত্রের পাতা থেকে(২৭ জানুয়ারি- ২৬ এপ্রিল ২০২৪)

শ্রমজীবি মানুষের কথা

২০২৩ সালে দেশে এসেছে রেকর্ড ৪৫৫২ প্রবাসীর মরদেহ

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

পরিবারের দারিদ্র ঘোচাতে ২০১৯ সালে শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরব যান ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার হাবিব খালাসী। কিন্তু গত বছর লাশ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি।

রিয়াদে মেটাল-স্ক্র্যাপ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন এক সন্তানের পিতা হাবিব (৩৩)। সৌদি রাজধানীর বাইরে একটি এলাকায় পুরোনো ক্যামেল শেডে কাজ করার সময় গত ৩ মে মাথায় লোহার বড় টুকরো এসে পড়লে মৃত্যু হয় হাবিবের।

হাবিবের ছোট ভাই মাহবুব খালাসী টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, হাবিব যখন সৌদিতে যান, তখন তার পরিবারে ব্যাপক আর্থিক সংকট ছিল। কিন্তু সৌদিতে যাওয়ার পর হাবিব যখন টাকা পাঠাতে শুরু করেন, তখন তার পরিবার ভেবেছিল তাদের টানাপোড়েন শেষ হয়েছে।

হাবিবের মৃত্যুর পর এখন তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও নাবালক সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের (ডব্লিউইডব্লিউবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে রেকর্ড চার হাজার ৫৫২ প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ দেশে এসেছে। তাদের একজন হাবিব। এর আগের বছর দেশে আসে তিন হাজার ৯০৪ প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ।

স্বপ্ন নিয়ে প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক বিদেশে যান। বিশেষ করে, বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের প্রধান গন্তব্যস্থল মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু তাদের অনেককেই দেশে ফিরতে হয় লাশ হয়ে।

ডব্লিউইডব্লিউবি ১৯৯৩ সালে প্রথম এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ৫১ হাজার ৯৫৬ প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ দেশে এসেছে। গত ১০ বছরে এসেছে ৩৪ হাজার ৩২৩ প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ।

ডব্লিউইডব্লিউবির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে এসেছে ১৭ হাজার ৮৭১ প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ। এর ৬৭ দশমিক চার শতাংশই এসেছে উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) আওতাভুক্ত ছয় দেশ থেকে। দেশগুলো হলো—সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার ও বাহরাইন।

মরদেহগুলোর মধ্যে পাঁচ হাজার ৬৬৬টি এসেছে সৌদি আরব থেকে, এক হাজার ৯১৩টি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও এক হাজার ৮৯৩টি ওমান থেকে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এক কোটি ৬০ লাখ শ্রমিকের ৭৬ দশমিক তিন শতাংশই গিয়েছেন জিসিসির ছয় দেশে।

মৌলভীবাজারে শনাক্ত কুষ্ঠ রোগীর ৮৩ শতাংশ চা জনগোষ্ঠীর

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, বণিক বার্তা

কুষ্ঠ একটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রামক ব্যাধি। দেশের ১১টি জেলায় এখনো এ রোগের প্রাদুর্ভাব রয়ে গেছে। চা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ রোগের হার সবচেয়ে বেশি। মৌলভীবাজারে শনাক্ত কুষ্ঠ রোগীদের ৮৩ শতাংশই চা জনগোষ্ঠীর সদস্য বলে সরকারের তথ্যে উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চা শ্রমিকরা এ রোগের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। মূলত বসবাসের স্থান, অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর জীবনাচারের কারণে রোগটির প্রাদুর্ভাব তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

জেলা সদরের মৌলভী চা বাগানের শ্রমিক বিনয় চাষার পায়ের ত্বকে ক্ষত দেখা দেয় দেড় বছর আগে। ক্ষত একসময় বাড়তে থাকলে নিজ উদ্যোগে ওষুধ সেবন করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ক্ষত না শুকালে তিনি চা বাগানের নার্সের পরামর্শ নেন। বেসরকারি সংস্থা হিড বাংলাদেশের চিকিৎসক ক্ষতটিকে কুষ্ঠ রোগ বলে শনাক্ত করেন। নিয়মিত চিকিৎসা নেয়ার কারণে পঞ্চাশোর্ধ্ব বিনয় এখন অনেকটা সুস্থ। তবে তার স্ত্রীও এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

শুধু বিনয় চাষাই নন, এমন রোগী মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোয় অনেক পাওয়া যাচ্ছে বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। তারা বলছে, কুষ্ঠ রোগী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার বিড়ম্বনা এড়াতে শুরুতে আক্রান্তরা চিকিৎসকের কাছে আসতে চান না। একই সঙ্গে অসচেতনতা ও রোগের বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকার ফলে স্থানীয়দের মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। কুষ্ঠ রোগীদের সামাজিক বৈষম্যের শিকার হওয়ার শঙ্কাও থাকে। ফলে রোগীদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা প্রায় কঠিন।

সরকারের তথ্য বলছে, দেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত কুষ্ঠ রোগী চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরাও। কুষ্ঠ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ১১টি জেলা। এগুলো হলো মৌলভীবাজার, জামালপুর, বান্দরবান, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট ও মেহেরপুর। এসব জেলায় প্রতি লাখে পাঁচজন বা তারও বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার ৭৯ শতাংশ বাংলাদেশি: ব্র্যাকের গবেষণা

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পাঠানো ও ভালো চাকরির প্রলোভন দেখায় দালালরা। এ ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন শত শত বাংলাদেশি। তাদের লিবিয়া নিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রেখে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। জিম্মি করে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আদায় করা হয় অর্থ। ইউরোপগামী এ বাংলাদেশিদের ৭৯ শতাংশই নির্যাতনের শিকার। কিন্তু এত কিছুর পরও ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়া যাওয়ার এ প্রবণতা থামছে না।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। লিবিয়াফেরত ৫৫৭ বাংলাদেশির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি করা হয়।

আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, এক দশকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করা লোকজনের মধ্যে যেসব দেশের নাগরিক আছেন, বাংলাদেশ ওই তালিকার শীর্ষ দশে আছে।

মজুরি বৈষম্যের আখ্যান

০৩ মার্চ ২০২৪, সমকাল

যে পাখি ভোরের প্রথম সূর্যের রোসনাই মেখে ডানা মেলেছে নয়নাভিরাম সবুজ শ্যামলীমায়, তার চোখ ভরা শস্যের সমারোহ। ফসলের মাঠে দোলুল হাওয়ায় আঁকাবাঁকা মেঠোপথের বয়ে যাওয়া সমৃদ্ধির অদম্য এগিয়ে যাওয়া আগামীর স্বনির্ভর বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। তবে এতেও মিশে আছে মজুরি বৈষম্যের গাথা।

কড়া রোদ্দুর মাথায় করে ভরদুপুরে কোদালের ধারালো ফলায় তখনও কঠিন লাল মাটির বুক আলগা করছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া গ্রামে হলুদ শ্রমিক পাঁচ সন্তানের জননী সুন্দরী বেগম। মাটির বুক আলগা হলেও হাপর চলা ফুসফুসে তাঁর ক্লান্ত এখন দমের গাড়ি। মাটি ভেঙে হলুদ সংগ্রহ করছেন অন্য নারী শ্রমিকদের সঙ্গে। জন্মের পর গায়ের রং ছিল দুধে আলতা; তাই দেখে শখ করে দাদি আলতা বানু তাঁর নাতনির নাম রাখেন সুন্দরী বেগম। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা সুন্দরীর কম বয়সেই বিয়ে হয় পাশের গ্রামের দিনমজুর আব্বাসউদ্দীনের সঙ্গে; বিয়ের পর সুন্দরী জানতে পারেন অসুন্দরে ভরা এই জীবন আদতে নিকষ কালো। তাই সংসারে অসুস্থ স্বামীসহ সন্তানদের ভরণ পোষণের খরচ আসে সারাদিনের হলুদ উত্তোলনের কাজ করে পাওয়া ২৫০ টাকা থেকে। সে তুলনায় একজন পুরুষ শ্রমিক মজুরি পান ৬০০ টাকা। শ্রমের হাটে মজুরির এই বৈষম্য শুধু সুন্দরী বেগমের নয়, তাঁর সঙ্গে কাজ করা উপজেলার হাজারো নারী শ্রমিকের।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আন্তর্জাতিক কৃষি ব্যবস্থায় নারীর ভূমিকা নিয়ে ‘স্ট্যাটাস অব উইমেন ইন এগ্রিকালচার সিস্টেম-২০২৩’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কৃষিতে ২০০৫ সালে নারীর ভূমিকা ছিল ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়ায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে কৃষিতে নারীর ভূমিকা প্রায় ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশে এই হার বৈশ্বিক গড় হারের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। তবে মজুরি বৈষম্য ও মালিকানার প্রশ্নে দেশের নারী কৃষকদের অবস্থানকে অগ্রসর বলার সুযোগ নেই।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় দারিদ্র্য আর অভাব-অনটন ছিল যাদের নিত্য সঙ্গী, কয়েক দশকে বদলে গেছে কৃষিতে ভর করে তাদের জীবন-জীবিকা। ধান-পাট সবজিসহ মসলাজাতীয় ফসল চাষাবাদে বদলেছে কৃষকের ভাগ্য। এ জনপদে আনারস, কচু, কলা, আলু, হলুদসহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি আবাদ হয় বেশির ভাগই নারীদের হাতে। তবে দিনশেষে ভাগ্য বদলায় না সকাল-সন্ধ্যা মজুর খাটা নারী শ্রমিকের। হাতিলেইট গ্রামের ছফুটা বেগম, শারমিন, লাইলি, নুরজাহানরা অভিযোগ করেন, ‘সকাল থেইক্কা সইন্ধা বেলা আমরা কাম করি, আমগর লগে পুরুষরাও কাম করে। পুরুষরা পান ৬০০ আর আমরা পাই ২৫০ টেহা। কামকি কম করি আমরা? তেল, নুন, চাইল, ডাইল সবকিছুর দাম বাড়তি। এই ময়নায় কেমনে কাম করমু আমরা?’

বাংলালিংক কর্মীরা ছাঁটাই আতঙ্কে

০৭ মার্চ ২০২৪, আমাদের সময়

বেশ কিছু টাওয়ার বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর চাকরি নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন বাংলালিংকের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই মোবাইল অপারেটরটির ১২ কর্মীকে নতুন চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যরা আশঙ্কা করছেন, পরবর্তী সময় তাদের সঙ্গেও এমন আচরণ করা হবে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার শ্রম অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। তবে বাংলালিংক বলছে, টাওয়ার খাতের আগ্রহী কর্মীদের সব সুযোগ-সুবিধাসহ নতুন চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধান কার্যালয়ে কর্মীদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করে বাংলালিংক। সেখানে ১২ কর্মীকে অন্য একটি কোম্পানিতে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে কর্মীদের কেউ কেউ অস্বীকৃতি জানান। তারা বলছেন, তাদের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলালিংকের এক কর্মী আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের বেশ কিছু টাওয়ার বিক্রি হয়ে যাওয়ায় কিছু কর্মীকে এখানে প্রথমে চাকরি থেকে পদত্যাগ করার জন্য বলা হয়েছে। অথচ আমাদের এখানে চর্চা হলো সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কর্মীকে ছাড়ার। কিন্তু কোম্পানি সেটি করতে চায় না। তারা চাকরি ছাড়তে আমাদের মানসিক চাপ দিচ্ছে।’

অপর এক কর্মী বলেন, ‘কোম্পানি কোনো ধরনের ডকুমেন্ট দিচ্ছে না। কিন্তু তারা অন্য একটি কোম্পানির অফার লেটার দিচ্ছেন, চাপ দিচ্ছেন। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। একজন অসুস্থও হয়ে পড়েছে।’

কোম্পানির সিদ্ধান্তকে শ্রম আইনের বিধি লঙ্ঘন বলছে বাংলালিংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। এ নিয়ে মঙ্গলবার শ্রম অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলালিংক ডিজিটাল থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মীদের মৌখিকভাবে বলা হচ্ছে এবং চলে যাওয়ার জন্য রীতিমতো জোর খাটানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলালিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয় শ্রম অধিদপ্তরে পাঠানো ওই চিঠিতে।

শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে আইএলওতে প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশ

১৩ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) চলতি অধিবেশনে পশ্চিমা দেশগুলো প্রশ্ন তুলেছে। শ্রম অধিকার চর্চা, শ্রমিকদের ওপর হামলা–নির্যাতন বন্ধসহ শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার হয়নি বলে তারা মন্তব্য করেছে।

একই অধিবেশনে ভারত, চীন, সৌদি আরব, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলওর চলতি ৩৫০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির অগ্রগতি নিয়ে এক পর্যালোচনা হয়। অধিবেশনটি অনলাইনে সম্প্রচারিত হয়।

আলোচনার শুরুতে আইনমন্ত্রী আইএলওর পথনকশা অনুযায়ী বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটি উপস্থাপন করেন। তিনি শ্রম আইন সংশোধনে বাংলাদেশের জোরালো রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশের উদ্যোগের যথাযথ স্বীকৃতি না দিলে আইএলওসহ আন্তর্জাতিক অংশীজনদের সঙ্গে আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে।

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বিভিন্ন দেশ, জোট, সংগঠন ও আইএলওর পরিচালনা পরিষদের সদস্যসহ ২৪ জন বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। 

ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে ১০ লাখ শিশু

১৪ মার্চ ২০২৪, সমকাল

দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার। এদের মধ্যে ১০ লাখ ৭ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। আর ঝুঁকিপূর্ণ ৪৩ খাতের মধ্যে পাঁচটিতেই নিয়োজিত রয়েছে ৩৮ হাজার ৮ জন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পৃথক দুটি জরিপ প্রতিবেদন থেকে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপ প্রতিবেদন দুটি প্রকাশ করা হয়। জরিপে ৫ থেকে ১৭ বছরের বয়সী শিশুদের শিশুশ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নীতি অনুসরণে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। 

জরিপ প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টোমু পোটিয়াইনেন, ঢাকায় যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাইকমিশনার মাতো ক্যানেল, পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন প্রমুখ। বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

গতকাল প্রকাশিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী মোট শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬ হাজার। এদের মধ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার। এদের ১০ লাখ ৭ হাজারই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। ২ কোটি ৭৬ লাখ ৩ হাজার খানায় এসব শিশুর বসবাস। এসব শিশুর ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ স্কুলে যায়। 

জরিপ অনুযায়ী, ২০ লাখ ১ হাজার শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে, যারা কোনো পারিশ্রমিক পায় না। কৃষি, শিল্প ও পরিষেবা খাতে যথাক্রমে ১০ লাখ, ১১ লাখ ৯০ হাজার ও ১২ লাখ ৭০ হাজার শিশু কাজ করে। জরিপের তথ্য নেওয়া হয়েছে গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত। ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

৫ খাতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমিক ৩৮ হাজার

একই দিনে সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ-২০২৩ নামে আরও একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, মাত্র পাঁচটিতে নিয়োজিত রয়েছে ৩৮ হাজার ৮ শিশু। এ খাতগুলো হচ্ছে মাছ, কাঁকড়া, শামুক বা ঝিনুক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ (শুটকি মাছ উৎপাদন), পাদুকা উৎপাদন (চামড়ার তৈরি পাদুকা শিল্প), লোহা ও ইস্পাত ঢালাই (ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজ), মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) এবং ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালি সামগ্রীর মেরামত (অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং ও পোশাক খাত)। এর মধ্যে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে সবচেয়ে বেশি ২৪ হাজার ৯২৩ শিশু কাজ করে। অন্য চার খাতের মধ্যে শুঁটকি মাছ উৎপাদনে ৮৯৮ শিশু, চামড়ার তৈরি পাদুকা তৈরিতে ৫ হাজার ২৮১, ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে ৪ হাজার ৯৯ এবং অনানুষ্ঠানিক ও স্থানীয় টেইলারিং বা পোশাক খাতে ২ হাজার ৮০৫ শিশু কাজ করে। অর্থাৎ পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের মধ্যে শ্রমজীবী শিশুদের সবচেয়ে বড় অংশ নিয়োজিত রয়েছে অটোমোবাইল খাতে। এই খাতে কর্মরত শিশুর ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রাম এবং ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ শহর এলাকায় বসবাস করে।

এ জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়, গত বছরের ৩ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সময়ে। জরিপের প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, এই পাঁচটি খাতের ৪০ হাজার ৫২৫ প্রতিষ্ঠানে শিশুরা কাজ করে। ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছেলে এবং ২ দশমিক ৫ শতাংশ মেয়ে শিশু।

কর্মে থেকেও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় দেশের ২২ শতাংশ মানুষ

মার্চ ১৯, ২০২৪, বণিক বার্তা

রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আল-মামুন। চাকরির বেতন দিয়ে দুজনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই অফিসে যাওয়া-আসার পথে মোটরসাইকেলে ‘রাইডশেয়ার’ করেন তিনি। আরেক চাকরিজীবী মাহমুদুল হাসান (ছদ্মনাম) বেতনের টাকায় সংসার চালাতে না পেরে ঋণের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছেন। গত এক বছরে দুটি ক্রেডিট কার্ডও নিয়েছেন তিনি। এভাবে চাকরির বাইরে অন্য কাজ করে কিংবা ঋণ নিয়েও সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে মামুন ও হাসানদের। এমনকি কর্মে থেকে নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারছেন না তারা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘‌খাদ্যনিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩’-এ উঠে এসেছে, মামুন ও হাসানের মতো কর্মে থেকেও দেশের ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, যারা গৃহস্থালির কাজ করেন কিংবা কর্মের সন্ধানে আছেন, খাদ্যনিরাপত্তায় তাদের চেয়েও পিছিয়ে আছেন কর্মজীবীরা। গৃহস্থালির কাজে যুক্ত ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। কর্মের সন্ধানে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে এ হার ১৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। তবে যারা কোনো কাজ করেন না, তাদের মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার হার সবচেয়ে বেশি; ২২ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

বিবিএসের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, দেশের ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এদের মধ্যে গ্রামে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার হার ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। শহরে এ হার ২০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম সিটি করপোরেশন এলাকায়, ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে ১৮ শতাংশ মানুষ। আর ২২ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তার মানে, যারা দারিদ্র্যসীমার ওপরে আছে, তারাও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে।

বিবিএসের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শ্রেণীভিত্তিক বিভাজনে অতিদরিদ্রদের মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার হার ৭০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দরিদ্রদের মধ্যে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। মধ্যবিত্তদের মধ্যে এ হার ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ধনীদের মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগে ১ দশমিক ১১ শতাংশ।

ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে পাথর ভাঙছেন শ্রমিক

২৪ মার্চ ২০২৪, সমকাল

জীবন সংগ্রামী মমেনা বেগম। জটিল রোগে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও পাথর ভাঙার কাজ করে জীবন গড়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া এলাকায়। কাজ করেন তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় পাথরের সাইটে। ৪৫০ টাকা হাজিরায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। দীর্ঘদিন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করায় শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। জটিল সিলিকোসিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত মমেনা মাঝে মধ্যেই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান পাথরের স্তূপে।

ষাটোর্ধ্ব মমেনার ছেলেসন্তান নেই, স্বামী কিডনি রোগে শয্যাশায়ী। তিন মেয়েকে লালন-পালন করতে হয়। এখন নিজেই অসুস্থ। ১১ বছর ধরে পাথর ভাঙার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।

এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় অবাধে চলছে অবৈধ পাথর ভাঙার মেশিন। তিন শতাধিক ট্রাকে চলে পাথর ওঠানামা। চার শতাধিক মেশিনে উৎপাদিত পাথরের গুঁড়া আর বালুকণায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে গোটা এলাকা। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে প্রকৃতি ও পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে ফসলের ক্ষেত, ফল-ফুলের মুকুল। শ্রমিকদের পাশাপাশি স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ মরণব্যাধি সিলিকোসিসে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভুটান, নেপাল ও ভারত থেকে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ ট্রাকে বোল্ডার পাথর আমদানি হয়। দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেশিনে চলছে পাথর ভাঙার কাজ। এসব গুঁড়া পাথর বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে এখানে কাজ করেন বিভিন্ন এলাকার নারী-শিশুসহ পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক। সকাল থেকে শুরু হয় মেশিনের উচ্চ শব্দ। শ্রমিকের নাক, মুখ, শরীরসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর, ফসলের ক্ষেতেও জমে থাকে ধুলার স্তূপ। শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার করার উপায় নেই। কারণ মাস্ক পরলে তাতে ধুলা জমে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই এলাকায় ‘স্টোন ক্রাশিং জোন’ করার দাবি দীর্ঘদিন থেকেই উপেক্ষিত। শ্রমিকদের ন্যূনতম স্বাস্থ্য সচেতনতায় কারও কোনো উদ্যোগ নেই।

সিলেটে পাথর ভাঙার কলে জীবন ‘বিকল’

২৯ মার্চ ২০২৪, সমকাল

সিলেটে একের পর এক গড়ে উঠছে পাথর ভাঙার (ক্রাশিং) মিল। কয়েক বছরের মধ্যে জেলার পাঁচ উপজেলায় মিল ছাড়িয়েছে দেড় হাজার। এর মধ্যে ৯ শতাধিকই গড়ে উঠেছে অনুমোদন ছাড়া। ফসলি জমি নষ্ট করে অপরিকল্পিত এসব মিলের কার্যক্রমে বিপর্যস্ত পরিবেশ। পাথর ভাঙার শ্রমিক ছাড়াও স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগব্যাধিতে। সব জেনেশুনেও নির্বিকার প্রশাসন। খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরও রয়েছে ঘুমিয়ে। পাথর ভাঙার জন্য পৃথক জোন করার কার্যক্রমও থমকে গেছে।

কয়েক বছর ধরে সিলেটে পাথর কোয়ারি বন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কমে যাওয়ার কথা পাথর ভাঙার যন্ত্র। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় এখন মিল করতে পরিবেশের ছাড়পত্র নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলছেন স্টোন ক্রাশার মিল। প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ে যত্রতত্র মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা কোম্পানীগঞ্জেও।

সরেজমিন সিলেট-তামাবিল-জাফলং মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে মিল দেখা গেছে। বিশেষ করে জৈন্তাপুরের ৪ নম্বর বালাবাজার, চাংগিল, কদমখাল, বিরাইমারা, আসামপাড়া আদর্শ গ্রাম, শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি এলাকায় অন্তত ১০০ মিলের কার্যক্রম চলছে। এসব মিলের কোনোটি বাজারে, কোনোটি জনবসতি এলাকায়। অথচ নীতিমালায় রয়েছে– হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০০ মিটার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ির ১০০ মিটার এবং প্রধান সড়ক-মহাসড়কের ৫০ মিটারের মধ্যে পাথর ভাঙার কল করা যাবে না। নীতিমালা না মেনে সিলেটের পাঁচ উপজেলায় দেড় হাজারের বেশি মিল গড়েছেন মালিকরা। এসব মিলের ৯ শতাধিকই কোনো অনুমতি নেয়নি।

এমনকি সিলেট শহরতলির ধোপাগুলে ওসমানী বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর-সংলগ্ন এলাকায় বছরের পর বছর চলছে অর্ধশতাধিক মেশিন। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, তারা বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বললেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর অংশের মতো পার্শ্ববর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের চিত্রও নাজুক। ওই এলাকার মোহাম্মদপুর, মামার বাজার ও বল্লাঘাটে সড়কের পাশে চলছে অর্ধশতাধিক মিল। কোম্পানীগঞ্জের সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের পারুয়া বাজার এলাকা থেকে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি পর্যন্ত চলছে অন্তত ৮০০ ক্রাশার মেশিন। একইভাবে কানাইঘাট ও সিলেট সদরের লোভাছড়া, ধোপাগুল ও দক্ষিণ সুরমা এলাকায়ও গড়ে উঠেছে অসংখ্য মিল।

ক্রাশার মেশিনের শব্দ ও পাথরের ডাস্টে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এলাকাবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শব্দ ও ধুলোবালিতে নাকাল বসতবাড়ির লোকজনও। ভোলাগঞ্জ বাজার এলাকার ব্যবসায়ী এম এ করিম বলেন, ‘সকাল-বিকেল দোকানের সামনে ও বাড়ির ধুলো পরিষ্কারে পানি মারতে হয়। দিনকে দিন বসবাস কঠিন হয়ে উঠছে। অন্যত্র চলে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে বারবার বলা হলেও অভিযানে তাদের আগ্রহ নেই।

অবশ্য গত রোববার বিকেলে হঠাৎ করেই অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। এ সময় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত কয়েকটি লিস্টার মেশিন ভেঙে ফেলা হয়। আর ৩০-৪০টি মেশিন জব্দ করে। সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন জানান, প্রথমে কাউকে জানানো হয়নি। অভিযান শুরুর সময় স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নেওয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চার বছর সিলেটে আছি, এ সময় কাউকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। উচ্চ আদালতে মামলার কারণে ছাড়পত্র দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এমনকি নবায়নও করা হয় না।’

বসতবাড়ি ও সড়কের পাশে মিল স্থাপনের কথা স্বীকার করে কোম্পানীগঞ্জ স্টোন ক্রাশার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলকাছ আলী বলেন, ‘পাথর না পেয়ে মিল মালিকরা এখন সমস্যায় রয়েছেন।’

পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বালু তোলা ও মাটি কাটা হচ্ছে। রিট করলে ২০১৭ সালে আদালত সিলেটের অবৈধ ক্রাশার মেশিন উচ্ছেদ ও বাকি মিলগুলো নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। এর পর জৈন্তাপুর ও জাফলংয়ে পৃথক অঞ্চল গঠনের তৎপরতা শুরু হলেও, এখন থমকে আছে। যত্রতত্র স্টোন ক্রাশার মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। লোক দেখানো অভিযানে এসব বন্ধ করা যাবে না।

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণাধীন ব্রিজ ধসে শ্রমিক নিহত, আহত ২

এপ্রিল ২, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সিরাজগঞ্জে নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি ব্রিজের গার্ডার ধসে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুইজন।

আজ মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মো. জুবায়ের হোসেন (২০) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মিরপুর গ্রামের বাসিন্দা।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক মো. সুমন দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, নির্মাণাধীন ব্রিজে কাজ করার সময় হঠাৎ গার্ডার ভেঙে ব্রিজটি ধসে পরে। এ সময় তিন শ্রমিক চাপা পড়েন।

শিল্পাঞ্চলে ৫১ শতাংশের বেশি কারখানায় মার্চের বেতন হয়নি

এপ্রিল ০৯, ২০২৪, বণিক বার্তা

ঈদুল ফিতরের আগে শেষ কর্মদিবস আজ। অথচ শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর ৫১ শতাংশের বেশি কারখানা গতকাল পর্যন্ত তাদের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি। দেশের আট শিল্প ও শ্রমঘন এলাকায় মার্চের বেতন পেয়েছে কেবল ৪৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ কারখানার শ্রমিক। শিল্প পুলিশের হালনাগাদ তথ্যে এমনটাই উঠে এসেছে। আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেট—এ আট শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় মোট কারখানা রয়েছে ৯ হাজার ৪৬৯টি। শিল্প পুলিশের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত এসব এলাকার ৫১ দশমিক ২১ শতাংশ কারখানার শ্রমিক মার্চের বেতন পাননি। তবে ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে ৮১ দশমিক ৩৫ শতাংশ কারখানা।

শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় শ্রমঘন কারখানাগুলো মূলত পোশাক ও বস্ত্র খাতের। আট শিল্প এলাকায় তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানা সংখ্যা ১ হাজার ৫৬১। এর মধ্যে কেবল ৪১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কারখানার বেতন পরিশোধ হয়েছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত বকেয়া ছিল ৫৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ কারখানার বেতন। বোনাস পরিশোধ করা হয়ে ৮৮ দশমিক ৪০ শতাংশ কারখানায়।

ঈদের দিনেও চুলা জ্বলেনি তাদের বাড়িতে, বাসি পান্তা-খিচুড়িতেই ভরসা

১১ এপ্রিল ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

গত মার্চ থেকে নদীতে জাল ফেলার নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে মাছ শিকার করে বেঁচে থাকা এই মানুষদের। তাই এই সংকটময় সময়ে ঈদ আসলেও আনন্দ নেই।

ভোলা জেলার সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের মেঘনা তীরে শত শত জেলে নৌকা নোঙর করে আছে। দূর থেকে উচ্চ শব্দে গান বাজছে। কাছে গিয়ে দেখা গেল ছোট ছেলে ছোট ছেলেমেয়েরা নতুন জামা পড়ে আনন্দে মেতেছে। কেউ কেউ লটারি খেলছে। চারদিকে উৎসবের আবহ। দূর থেকে দেখলে মনে হয় এখানে যেন আনন্দের কমতি নেই।

কিন্তু বয়োজ্যেষ্ঠদের দিকে তাকালে বোঝা যায় এই ঈদ আনন্দের ছিটেফোঁটাও নেই তাদের মধ্যে। এমনকি অনেকের বাড়িতে চুলা পর্যন্ত জ্বলেনি, আগের দিনের পান্তা-খিচুড়ি খেয়েই ঈদ কাটাচ্ছেন তারা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা যায়।

গত মার্চ থেকে নদীতে জাল ফেলার নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে মাছ শিকার করে বেঁচে থাকা এই মানুষদের। তাই এই সংকটময় সময়ে ঈদ আসলেও আনন্দ নেই।

ঈদের দিন স্ত্রীকে মাংস কিনে খাওয়াতে না পেরে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা

১২ এপ্রিল ২০২৪, দেশ রূপান্তর

জামালপুরের বকশিগঞ্জে স্ত্রীকে মাংস কিনে খাওয়াতে না পেরে স্বামী হাসান আলী (২৬) নামে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকালে উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের বান্দের পাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হাসান আলী ওই এলাকার রহমত আলীর ছেলে। তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাসান আলী প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যান। শুক্রবার শ্বশুর বাড়ি থেকে স্ত্রী আফরোজা বেগমকে নিজ বাড়িতে আনার কথা ছিল হাসানের। সকাল ১১টা পর্যন্ত শ্বশুর বাড়িতে না যাওয়ায় তার স্ত্রী আফরোজা বেগম স্বামী হাসানের বাড়িতে চলে আসেন এবং ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পান। এ সময় তিনি ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে হাসান আলীকে ঘরের আরার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে ডাক-চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন এসে পুলিশকে খবর দিলে বিকেলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটির উদ্ধার করে। এ সময় পাশে একটি চিরকুট দেখতে পায় পুলিশ।

চিঠিতে হাসান আলী লিখেছে, ‘মা-বাবা তোমরা ক্ষমা করে দিও। আমি মরার পরে আমার বউ বাচ্চাকে দেখে রেখো। আমি জানি আমার বউ আমার সাথে রাগ করছে। ঈদে সবাই গুছ (গোস্ত) খাইছে, কিন্তু আমি বউকে গুছ খাওয়াইতে পারি নাই। আমি আমার বউয়ের মুখ ঈদের দিন বেজার (মন খারাপ) দেখছি। যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও।

তিনি আরও লিখেন, ‘তার স্ত্রী আফরোজা বেগমকে অনেক ভালবাসেন এবং তাকে ও তার সন্তানকে দেখে রাখার জন্য নিজ বাবা-মার প্রতি অনুরোধ করেন।’

স্ত্রীর উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘আফরোজা তোমার জীবন স্বাধীন করে দিলাম। তোমার জীবনে কেউ নাই।’

ঈদের আগে মার্চের পুরো বেতন পাননি সব শ্রমিক

১৬ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা বোনাস পেলেও মার্চ মাসের পুরো বেতন পাননি অনেকে। এমন প্রেক্ষাপটে ঈদ ও নববর্ষের ছুটি শেষে পোশাক কারখানা খুলতে শুরু করেছে।

শ্রমিকনেতারা অভিযোগ করে বলেন, কম হোক, বেশি হোক—কারখানাগুলো বোনাস দিয়েছে। তবে ছোট ও মাঝারি অনেক কারখানা মার্চের পুরো বেতন দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও চাকরি হারানোর ভয়ে আন্দোলনের ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে মালিকপক্ষের নেতারা বলছেন, যেসব কারখানা মার্চের পুরো বেতন দেয়নি, তারা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অসংগতির কথা শ্রমিকদের জানিয়েছে। ছুটির পর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দিয়ে দেবে কারখানাগুলো।

ঈদের আগে কত শতাংশ পোশাক কারখানা বোনাস ও বেতন দিয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে শিল্প পুলিশ সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পের সাড়ে ৯ হাজার কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়টি তদারক করেছে। সর্বশেষ ৯ এপ্রিল দুপুর ১২টা পর্যন্ত বেতন-ভাতা পরিশোধের তথ্য গণমাধ্যমকে দিয়েছিল।

শিল্প পুলিশের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাদের তদারকির আওতায় থাকা বিজিএমইএর ১ হাজার ৫৬১ কারখানার মধ্যে ২৭২টি বা ১৭ দশমিক ৪২ শতাংশ কারখানার বেতন বকেয়া ছিল। আর ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ কারখানার ঈদ বোনাস বাকি ছিল। অন্যদিকে বিকেএমইএর ৬২৬ কারখানার বোনাস ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ বাকি থাকলেও বেতন বাকি ছিল ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ অথবা ৮৪টি কারখানায়।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জানামতে, একটি কারখানা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারেনি। তবে তারা বোনাস দিয়েছে। এর বাইরে অনেক কারখানায় বেতনের একটি অংশ বকেয়া ছিল। এটা স্বাভাবিক বিষয়। অতীতেও ঈদের আগে কেউ কেউ বেতনের একটি অংশ দিত, ঈদের ছুটির পর বাকিটা পরিশোধ করত।’

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে আমাদের সংগঠনের অল্প কিছু সদস্য মার্চের পুরো বেতন দিতে পারেনি। তাদের কেউ কেউ বেতনের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ দিয়েছে। বেতনের একটা অংশও দেয় নাই, এমন কোনো কারখানা নেই।’ তিনি জানান, আজ (গতকাল) থেকে কারখানা খুলতে শুরু করেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছোট ও মাঝারি কারখানায় লামছামভাবে বোনাস দিলেও মার্চ মাসের পুরো বেতন দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও তারা তা প্রকাশ করেনি। কারণ, আন্দোলনে গেলে চাকরি হারানোর ভয় আছে। বর্তমানে পোশাক কারখানায় চাকরির সংকট রয়েছে। তাই কেউ ঝুঁকি নিতে চাননি। অনেক কারখানা শ্রমিকদের বেতন দিলেও কর্মচারীদের বেতন দেয়নি। ফলে অন্যবারের মতো এবারও অনেক পোশাকশ্রমিকের ঈদ নির্ঝঞ্ঝাট হয়নি।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের শোষণের অভিযোগ জাতিসংঘের

১৯ এপ্রিল ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। তারা অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে মালয়েশিয়াকে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার দেশটির স্থানীয় অনলাইন ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, তারা বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রতারণা সম্পর্কিত এক প্রতিবেদন দেখে হতাশ হয়েছেন, মালয়েশিয়ায় কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে এসে যাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

এ বিবৃতিতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে পরিচালিত অপরাধমূলক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতারণামূলক নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অভিবাসীরা প্রতারিত হচ্ছেন, কারণ তাদের ভুয়া কোম্পানি দ্বারা নিয়োগ করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য করা হয়েছে, যা তাদের ঋণের জালে বন্দি করেছে।

তারা উল্লেখ করেন যে, অনেক অভিবাসী মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেখেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ নেই এবং প্রায়ই তাদের ভিসাহীন থাকতে বাধ্য করা হয়। যার ফলে তাদের গ্রেপ্তার হয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে দুর্ব্যবহার এবং নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

এ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় কয়েক মাস বা তার বেশি সময় ধরে কর্মহীন বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থা খুবই নাজুক এবং অসম্মানজনক।

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর

শেষ হলো না খুনের মামলার বিচার

২৪ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারের রানা প্লাজা ধসের ১১ বছরেও খুনের মামলার বিচার শেষ হয়নি। মামলার ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এত দিনেও বিচার শেষ না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল সমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকজন আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় দীর্ঘদিন মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ছিল। এক বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গত জানুয়ারিতে খুনের মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা চালাচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ।

ইমারত আইনের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ

রানা প্লাজা ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরের বছর ২০১৬ সালের ১৪ জুন অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তবে ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে আবেদন করেন।

অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

অর্থনীতি

ডলার–সংকটের মধ্যে বিদেশি ঋণ শোধে চাপ আরও বাড়ছে

২৯ জানুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

চলমান ডলার-সংকটের মধ্যে বিদেশি ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে নেওয়া কঠিন শর্তের অনেক ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়েছে। এ কারণে দ্রুত বাড়ছে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ, যা আগামী বছরগুলোতে আরও বাড়বে।

সরকার ১০ বছর আগে বছরে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করত, এখন পরিশোধ করতে হয়েছে তার দ্বিগুণের বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, যদি সরকার নতুন করে আর বিদেশি ঋণ না নেয়, তারপরও সাত বছর পরে ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে এখনকার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ অর্থ খরচ করতে হবে।

দ্বিপক্ষীয় ঋণ নিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতুর রেল-সংযোগ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আরও অনেক প্রকল্প হচ্ছে বিদেশি ঋণে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব ঋণ পরিশোধের সময়কাল কম। এসব ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হওয়ায় সার্বিক ঋণ পরিস্থিতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব ঋণে বাস্তবায়িত বড় প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি পাওয়া শুরু হয়নি।

যেমন ১৮ হাজার কোটি টাকা খরচে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হয়। এতে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি চীনা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এই পথে এখন দিনে দুটি ট্রেন চলাচল করে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সব মিলিয়ে ৩২৮ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আগামী অর্থবছরে তা ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। পরের বছরগুলোতে ঋণ পরিশোধ বাড়তেই থাকবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হয়নি। ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়ে গেছে। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার কাছ থেকে ১ হাজার ১৩৮ কোটি মার্কিন ডলার (১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ঋণ নেওয়া হচ্ছে, যা বর্তমান মূল্যে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ।

বিদেশি ঋণ পরিশোধের এই চাপ বাড়ছে এমন সময়ে, যখন দেশ দীর্ঘ সময় ধরে ডলার-সংকটের মধ্যে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমছে। কারণ, প্রবাসী আয় কাঙ্ক্ষিত হারে আসছে না। রপ্তানি আয়ও আশানুরূপ নয়।

ডলার সংকটেও রপ্তানি প্রণোদনায় সংকোচন

৩১ জানুয়ারি ২০২৪, সমকাল

ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজন থাকলেও হঠাৎ রপ্তানিতে ব্যাপকভাবে প্রণোদনা কমিয়েছে সরকার। বস্ত্র ও পোশাক খাতে পাঁচ ধরনের পণ্যে নগদ সহায়তা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় প্রায় ৫৬ শতাংশ রপ্তানি হয়। এ ছাড়া অন্য সব খাতে নগদ সহায়তার হার কমানো হয়েছে। এমন একসময়ে প্রণোদনায় বড় ধরনের সংকোচন করা হলো, যখন বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের বেতন বৃদ্ধি, সুদহার বেড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে চাপে আছেন উদ্যোক্তারা। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এমনিতেই চরম ডলার সংকট রয়েছে। সংকট কাটাতে রপ্তানিতে উৎসাহ দেওয়ার পরামর্শ আসছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এতে রপ্তানি আরও কমতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডলার সংকট আরও তীব্র হতে পারে।

জানা গেছে, আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, বিদেশি ঋণ কমাসহ বিভিন্ন কারণে সরকার এখন আর্থিক সংকটে আছে। যে কারণে বিভিন্ন খাতের প্রণোদনা ও পাওনা যথাসময়ে দিতে পারছে না সরকার। শুধু সার ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি বাবদ সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর পাওনা ২৫ হাজার কোটি টাকা দায়দেনার বিপরীতে বন্ড ইস্যু করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, বস্ত্র খাতের পাঁচটি এইচএস কোডের আওতায় রপ্তানি হওয়া পণ্যে কোনো নগদ সহায়তা দেওয়া হবে না। এইচএস কোডগুলো হলো– ৬১০৫, ৬১০৭, ৬১০৯, ৬১১০ এবং ৬২০৩। এই পাঁচটি কোডে বস্ত্র খাতের মোট ৫৬ শতাংশ রপ্তানি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যেহেতু রপ্তানি আদেশ নেওয়ার সময় ভর্তুকিসহ হিসাব করে তারা পণ্যের দর নির্ধারণ করেন, ফলে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়া সরকার মাঝপথে এসে এভাবে হঠাৎ ভর্তুকি তুলে নেওয়া এবং কমানোয় তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন।

তরুণদের ৪১% কাজে নেই, শিক্ষায়ও নেই

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশের প্রায় ৪১ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। মানে হলো তাঁরা পড়াশোনায় নেই, কর্মসংস্থানে নেই; এমনকি কোনো কাজের জন্য প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। মেয়েদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তার হার বেশি, ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ। ছেলেদের মধ্যে এ হার কম, ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এই ধরনের তরুণের সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস, ২০২২ প্রতিবেদনে নিষ্ক্রিয় তরুণের এই হার তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি গত বুধবার প্রকাশ করা হয়। বিবিএস নিষ্ক্রিয় তরুণের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ধরেছে ১৫ থেকে ২৪ বছর। তাদের হার ধরে হিসাব করে দেখা যায়, নিষ্ক্রিয় তরুণের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ।

অর্থনীতিবিদ ও শ্রমবাজারবিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়েদের বাল্যবিবাহ, কাজ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব, শিক্ষার মানে ঘাটতি, যথেষ্ট কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়া, শোভন কাজের অভাব ও সামাজিক পরিস্থিতি নিষ্ক্রিয় তরুণের হার বেশি হওয়ার কারণ।

যখন পাঙাশ মাছের কাঁটাই শেষ ভরসা

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

আপনি যদি কখনো যাত্রাবাড়ি গিয়ে থাকেন তাহলে এলাকাটির ঠিক মাঝখানে অবস্থিত মাছ বাজারের কথা আপনার হয়তো জানার কথা।

এই বাজারের কিছু দোকানিকে দেখা যাবে পাঙাশ মাছের কাঁটা বিক্রি করতে। কাঁটাসহ মাছের মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ থাকলেও মাছ বলতে তেমন কিছুই থাকে না এতে। ছোট এই টুকরোগুলোর প্রতিটির দাম পড়ে ২০–৩০ টাকা।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে অনেক পরিবারের কাছে এখন এ কাঁটাই ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ মাছের দাম ১৫০ থেকে ২২০ টাকারও বেশি। অনেকেরই একটি মাছ পুরোটা কেনার সামর্থ্য থাকে না। তাদের জন্য এই ছেঁটে ফেলা মাছই একমাত্র অবলম্বন। ক্রেতারা যারা এই মাছের কাঁটা কেনেন, তারা সাধারণত মুড়িঘণ্ট রান্নায় এটি ব্যবহার করে থাকে। একসময়ের বনেদি এ খাবারটি এখন নিয়মিত হয়ে গিয়েছে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের পাতে।

স্থানীয়দের মতে, মাছের বাজারের পাইকারি মাছ সরবারহকারী ‘রাজীব ফিস সাপ্লাই’ এই ব্যবসার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় এখানকান ব্যবসায়ীদের।

রেস্তোরাঁগুলোতে কাঁটাবিহীন পাঙাশ বিক্রি হয় ৪০০ টাকা কেজি দরে। এসব মাছের বেঁচে যাওয়া কাঁটাগুলোই চলে আসে এই বাজারে।

দুই সন্তানের মা ৩৭ বছর বয়সি জেসমিন মাছের কাঁটা কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার গোটা মাছ কেনার সামর্থ্য নেই। তাই মাছের এই অবশিষ্ট কাঁটাই কিনি। অন্তত মাছের ঘ্রাণ আর একটু স্বাদ তো পাওয়া যায়।’

মাছের মাংসল অংশ কেটে নেওয়ার পর খুবই সামান্যই থেকে যায় কাঁটার গায়ে। এর সঙ্গে ডাল মিশিয়ে তৈরি করা পাঙাশ মাছের মুড়িঘণ্ট। অনেক সময় এটিই জেসমিনের পরিবারের একমাত্র প্রোটিনের উৎস। জেসমিনের মতো আরও অনেক পরিবারেরই এমন অবস্থা।

রাজীব ফিস সাপ্লাইয়ের এক দোকানির ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি প্রতিদিন প্রায় ৫০০টির বেশি মাছের কাঁটা বিক্রি করেন।

৫৯ বছর বয়সি রিকশাচালক ইদ্রিস দুর্মূল্যের এই বাজারে সম্পূর্ণ পাঙাশ মাছ খাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না। তাই নিরুপায় হয়ে পাঙাশ মাছের কাঁটা কিনতে তারও এই লাইনে দাঁড়ানো।

‘ঘরের সবাই প্রতিদিন ডিম খেতে খেতে বিরক্ত। তাই সপ্তাহে দুইবার কেনা হয় এ কাঁটাগুলো,’ বলছিলেন তিনি।

রফতানি তথ্যে সাত মাসে সাত বিলিয়ন ডলারের ফারাক

ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৪, বণিক বার্তা

রফতানি পণ্যের চালান দেশ থেকে সমুদ্র, নৌ, আকাশ বা স্থলপথে বেরিয়ে যাওয়ার আগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট নথির সঙ্গে তা যাচাই-বাছাই করে। নিয়ম অনুযায়ী বন্দরে পণ্যবাহী চালান পরিবহনের আগে কাস্টমস তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে রফতানির তথ্য প্রবেশ করানো হয়। এ পদ্ধতিতে এনবিআরের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা অ্যাসাইকুডায় স্থান পায় রফতানির শুল্কায়ন মূল্য বা অ্যাসেসড ভ্যালু। কাস্টমস কর্তৃক সর্বশেষ সাত মাসে মোট রফতানির অ্যাসেসড ভ্যালু ২৬ বিলিয়ন ডলার। আবার গত ৪ ফেব্রুয়ারি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, এ সময়ে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যদিও ইপিবির দাবি, এনবিআর তথা কাস্টমসের তথ্যের ভিত্তিতেই তারা এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।

অ্যাসাইকুডার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাত মাসে ৩৮ লাখ ৫২ হাজার ৫০৩ টন পণ্য রফতানি হয়েছে। এ পরিমাণ পণ্য রফতানির অর্থমূল্য ছিল ২ লাখ ৮৬ হাজার ৫২৪ কোটি ৬০ লাখ ৭২ হাজার ৮২০ টাকা। ডলারপ্রতি ১১০ টাকা বিনিময় হার ধরে হিসাব করলে অর্থমূল্যে রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬০৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯১ হাজার ৫৭১ বা ২৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

দুই সংস্থার পরিসংখ্যানে ৭ বিলিয়ন ডলারের বৈসাদৃশ্যের কারণ নিয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বৈদেশিক বাণিজ্যের পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক রফতানির তথ্য নিয়ে এ ধরনের বিভ্রান্তি কাম্য নয়। বিষয়টি এখন জাতীয় অর্থনীতির লক্ষ্য নির্ধারণ, নীতি প্রণয়ন থেকে শুরু করে সার্বিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। পরিসংখ্যানের এ বড় ফারাক কোনোভাবেই কাম্য নয়। আবার উভয় তথ্যেরই উৎস এক দাবি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের গোটা বাণিজ্য পরিসংখ্যান নিয়েই বড় ধরনের অনাস্থা তৈরি হচ্ছে।

ঢাকা ওয়াসা

‘শ্বেতহস্তী’ প্রকল্পের বোঝা গ্রাহকের কাঁধে

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

কাগজপত্রে ঢাকা ওয়াসা লাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও সেবার মান নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। অন্য বড় শহরগুলোর তুলনায় রাজধানীতে পানির দাম অনেক বেশি। তবে আবারও দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াসা শ্বেতহস্তীর মতো কিছু প্রকল্প নিয়েছে। সেগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার জন্য পানির দাম বাড়ানো হয়। কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি, প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্বচ্ছতাসহ ব্যর্থতার দায় কেন সাধারণ মানুষ নেবে?

দেশে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) আছে চারটি। এগুলোর পানি উৎপাদন খরচ প্রায় একই রকম। ঢাকা ওয়াসা বিদেশি ঋণে কয়েকটি বড় প্রকল্প নিয়েছে। এগুলো থেকে যে পরিমাণ পানি পাওয়ার কথা, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ঋণের কিস্তি শুরু হয়ে গেছে। এই কিস্তির টাকা যুক্ত করে পানির উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করা হয়। এ কারণেই দাম বাড়ছে।

চারটি ওয়াসার পানির উৎপাদন খরচের হিসাব নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি উৎপাদন খরচে তেমন পার্থক্য না থাকলেও কাগজপত্রে থাকে অনেক ফারাক। ঢাকা ওয়াসার প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির উৎপাদন খরচ ২৫ টাকা। আবাসিক গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে ১৫ টাকা ৯৮ পয়সা। বাণিজ্যিক গ্রাহককে গুনতে হয় ৪২ টাকা। খুলনা ওয়াসার উৎপাদন খরচ ১৬ টাকা ৫০ পয়সা।

আবাসিকে বিক্রি করে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা। বাণিজ্যিক মূল্য ১৪ টাকা। রাজশাহী ওয়াসার উৎপাদন খরচ ৮ টাকা ৯০ পয়সা। আবাসিকে ৬ টাকা ৮১ পয়সা, বাণিজ্যিকে ১৩ টাকা ৬২ পয়সায় বিক্রি করে। রাজশাহীর সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার উৎপাদন খরচের ব্যবধান প্রতি ইউনিটে ১৬ টাকার বেশি। বিক্রির ব্যবধান আবাসিকে ১০ টাকা ও বাণিজ্যিকে ২৮ টাকার বেশি। চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদন খরচ ১৯ টাকা। তাদের ৯০ শতাংশ পানিই ভূউপরিস্থ উৎসের এবং তা শোধন করা হয়। তারা আবাসিকে বিক্রি করছে ১৮ টাকা। তবে বাণিজ্যিকে ঢাকা ওয়াসার চেয়ে ৫ টাকা কমে ৩৭ টাকায় বিক্রি করছে।

ঢাকা ওয়াসার উৎপাদিত পানির ৭৫ শতাংশ গভীর নলকূপের। বাকি ২৫ শতাংশ পাওয়া যায় ভূউপরিস্থ উৎস থেকে শোধনের মাধ্যমে। শোধন করা পানির উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি। সে বিবেচনায় ঢাকার পানির দাম চট্টগ্রামের তুলনায় বেশি। খুলনায় ৬০ শতাংশ পানি শোধন করা হয়। রাজশাহীতে ৯০ শতাংশ পানি আসে গভীর নলকূপ থেকে। খুলনা ওয়াসার পানির দামও ঢাকার তুলনায় অনেক কম। এ ছাড়া মানের বিবেচনায় ঢাকা ওয়াসার পানি সবচেয়ে নিম্ন বলে অভিযোগ আছে। সরবরাহ ব্যবস্থায়ও আছে ত্রুটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিদেশি ঋণে নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণের কিস্তি শুরু হয়ে গেছে। কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে যে অর্থ প্রয়োজন, তা পানির দাম বাড়িয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করে সমন্বয় করতে হচ্ছে।

বন্ধ হয়ে গেল ব্যক্তিগত পেনশন বিমা পলিসি

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

দীর্ঘদিন ধরে জীবন বীমা করপোরেশনের (জেবিসি) সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিমা পলিসির নাম ছিল ‘ব্যক্তিগত পেনশন বিমা পলিসি।’ যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য এ ব্যবস্থা চালু ছিল। কিন্তু সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হওয়ায় এ পলিসি এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। কারণ, জেবিসি গত ১ ডিসেম্বর থেকে এটাকে চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে।

জেবিসির মহাব্যবস্থাপক হান্নানুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত পেনশন বিমা পলিসি অলাভজনক। এ কারণে অ্যাকচুয়ারিয়াল পরামর্শক পলিসিটির বিপণন বন্ধ করার সুপারিশ করেছেন। ফলে এর বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ করা হলো। এ সুপারিশ জেবিসির পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করেছে বলে গত বছরের ২৮ নভেম্বর সংস্থার এক অফিস আদেশে সবাইকে জানানো হয়েছে।

দেশে অবস্থানরত বিদেশীর সংখ্যা ১ লাখের ওপরে সবচেয়ে বেশি ভারত-চীনের

ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক বিদেশী নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। তাদের অনেকেরই কাজের অনুমতি নেই। কিন্তু এ বিদেশীদের হাত ধরে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আবার কর ফাঁকির কারণে রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। পাশাপাশি সংকুচিত হচ্ছে স্থানীয়দের কাজের সুযোগ। এ পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে অবস্থানরত বিদেশীদের একটি পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, দেশে অবস্থানরত বিদেশীদের সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৭। তাদের বেশির ভাগই ভারত ও চীনের নাগরিক।

কাজের অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী কর্মী বা নাগরিকদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে গতকাল রাজধানীতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে আগারগাঁওয়ের বিনিয়োগ ভবনে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। সভায় অনুমতি ছাড়া দেশে অবস্থানরত বিদেশী কর্মী বা নাগরিকদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন সুপারিশ ও মতামত তুলে ধরা হয়।

রিজার্ভ থেকে অর্থ জমা রেখে আইটিএফসি থেকে ঋণ

ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৪, বণিক বার্তা

ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) সঙ্গে ২১০ কোটি ডলারের একটি ঋণ চুক্তি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ চুক্তির আওতায় জ্বালানি তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে পারবে বাংলাদেশ। আইটিএফসির সঙ্গে এ ঋণ চুক্তিতে উল্লিখিত অর্থের ৭৬ শতাংশের অর্থের জোগান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এজন্য ঋণ তহবিলটিতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে জমা হবে ১৬০ কোটি ডলার। আর আইটিএফসির কাছ থেকে পাওয়া যাবে বাকি ৫০ কোটি। প্রসঙ্গত, সদস্য মুসলিম দেশগুলোর জ্বালানি খাতে ঋণসহায়তা দিয়ে থাকে আইটিএফসি। এক্ষেত্রে সংস্থাটি সবসময় অর্থায়ন করে কো-ফাইন্যান্সের ভিত্তিতে। এজন্য ঋণ তহবিলে গ্রহীতা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থায়ন থাকতে হয়।

সংস্থাটির সঙ্গে গতকালের চুক্তিটি সইয়ের পর এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা। যদিও অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি হলো অনেকটা নিজেদের রিজার্ভ থেকেই নিজেরা ঋণ নেয়া। এ চুক্তির আওতায় অতিরিক্ত হিসাবে আইটিএফসির কাছ থেকে প্রকৃতপক্ষে ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে কেবল ৫০ কোটি ডলার। যেখানে দেশের রিজার্ভ আটকা পড়বে ১৬০ কোটি ডলার। নতুন এ চুক্তির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ আরো চাপে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পিপিপিতে সংস্কার হবে সিইটিপি

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

ঢাকার সাভারের চামড়াশিল্প নগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) নকশাতেই ত্রুটি ছিল। এর কিছু যন্ত্রপাতি ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে, কিছু যন্ত্রপাতির জীবনকালও এখন শেষ পর্যায়ে। আবার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর কার্যক্ষমতা কমে গেছে। সে জন্য যথাযথ মাত্রায় পরিশোধন করা যাচ্ছে না বর্জ্য। এ ছাড়া কিছু ট্যানারি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ আছে।

সচিবালয়ে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, এসব কারণে চামড়াশিল্পে ইউরোপীয় মান নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ অর্জন করা যাচ্ছে না। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

শিল্পসচিব তাই ‘কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের সংশোধন ও মানোন্নয়ন এবং বিসিক চামড়াশিল্প নগর, ঢাকায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে গত বছরের অক্টোবরে এক বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি দাবি করেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে।

রেশমশিল্প নিভু নিভু

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রেশম চাষ বৃদ্ধি ও জনপ্রিয় করতে গত এক দশকে শতকোটি টাকার তিনটি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। তবে রেশম উৎপাদন বৃদ্ধিতে তা কোনো কাজে আসেনি। দেশে বর্তমানে রেশম সুতার চাহিদা রয়েছে ৪০০ টন। তবে সরকারিভাবে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র এক থেকে দেড় টন। বেসরকারিভাবে উৎপাদন হয় আরও তিন থেকে চার টন। তবে রেশম উন্নয়ন বোর্ড তাদের ‘গোঁজামিলে’র হিসাবে দাবি করছে, দেশে ৪১ টন সুতা উৎপাদনের।

এদিকে, সরকারিভাবে পরিচালিত দুটি রেশম কারখানায় লুম বা তাঁত রয়েছে ৬২টি। এর মধ্যে রাজশাহীর কারখানার ৪২টির মধ্যে চালু থাকে পাঁচ থেকে ছয়টি। তবে পর্যায়ক্রমে ১৯টি চালু রাখা হয়। অন্যদিকে, ঠাকুরগাঁওয়ের ২০টি পাওয়ার লুমের কারখানাটি পাঁচ বছরের জন্য গত মে মাস থেকে বেসরকারিভাবে পরিচালনার জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী ও বেসরকারি কারখানার মালিকরা জানান, দেশে রেশম সুতার চাহিদা পূরণ করা হয় বিদেশ থেকে বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা সুতায়। তবে সুতা সংকটে রাজশাহীর ৭৬টি কারখানার মধ্যে ৫৮টি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে। বিদেশি সুতায় কোনো রকম টিকে আছে অবশিষ্ট কারখানাগুলো। এগুলোও নিভু নিভু অবস্থায় চলে একবেলা বা আধবেলা। ফলে দিন দিন বেকার হচ্ছেন রেশম শিল্পের কারিগররা। ঐতিহ্য হারাচ্ছে রাজশাহীর রেশম শিল্প।

দেশে অতিধনী, অতিদরিদ্র পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

দারিদ্র্য বিমোচনে নানামুখী উদ্যোগ আছে সরকারের। কয়েক বছর ধরে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে। নতুন নতুন কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দও দেওয়া হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। তারপরও দেশে অতিদরিদ্র পরিবারের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে অতিধনী পরিবারের সংখ্যাও।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএসের) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালে দেশের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার ছিল অতিধনী। আগের বছর এটা ছিল ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রাম এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় অতিদরিদ্র পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। অবশ্য, দেশের সামগ্রিকভাবে অতিদরিদ্র পরিবারের হার জানায়নি বিবিএস।

চাহিদার মাত্র ৩৮% ডাল উৎপাদন, উদ্যোগ নেই আবাদ বাড়ানোর

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

বছরজুড়ে প্রায় ২৬ লাখ টনের চাহিদা থাকলেও দেশে মাত্র ১০ লাখ টন ডাল উৎপাদন হচ্ছে, যা চাহিদার মাত্র ৩৮ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে প্রতিবছর অর্ধেকেরও বেশি বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে। বছরে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন ডাল আমদানিতে ব্যয় হয় প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা। উৎপাদন কম হওয়ায় সব রকম ডালের দামই এখন বেশি। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম ভরসার এই খাদ্যপণ্যও নাগালে নেই। এবার রমজানের আগে বেড়েছে সব ধরনের ডালের দাম। গেল এক মাসে মসুর ডালের দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত। আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকট আর এলসি জটিলতায় চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হচ্ছে। এ কারণে শেষ কয়েক মাস ধরেই দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবুও ডালের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির তেমন উদ্যোগ নেই।

এখনও আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতিতে দেশ

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

আমদানি কমাতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত আছে। রপ্তানি আয়ে সামান্য হলেও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এতে করে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। প্রবাসী বা রেমিট্যান্স আয়ও কিছুটা বেড়েছে। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে চলতি হিসাবে এখন আর ঘাটতি নেই। তবে প্রত্যাশিত অনুযায়ী বিদেশি ঋণের ছাড় না হওয়া, ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়া, বিনিয়োগ কমাসহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। গত ডিসেম্বর শেষে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি রয়েছে ৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ৫৩৯ কোটি ডলার। অথচ গত বছরের একই সময়ে এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১৪ কোটি ডলার। আর্থিক হিসাবের বড় ঘাটতির কারণে সামগ্রিক লেনদেনেও উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে। সামগ্রিক লেনদেন পরিস্থিতির উন্নতির ওপর ডলার সংকটের সমাধানের অনেকটাই নির্ভর করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হিসাব প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ৬ মাসে আমদানি ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে ৩০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। একই সময়ে রপ্তানি শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ২৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমে এখন ৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন বা ৫৬০ কোটি ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।

পোশাকের ৫ পণ্যের প্রণোদনা পুনর্বহাল

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

পোশাক রপ্তানিকারকদের আপত্তির মুখে ভর্তুকি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ধাপে ধাপে ভর্তুকি প্রত্যাহারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেটি বহাল থাকলেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সময়সীমা তথা রোডম্যাপেও পরিবর্তন এসেছে। এতে নিট কাপড়ের টি-শার্ট, শার্ট, ট্রাউজার, ওভেন কাপড়ের জ্যাকেট ও ব্লেজার পোশাক খাতের এই পাঁচটি পণ্য ভর্তুকি ফিরে পেয়েছে। বাকি পণ্যেরর ক্ষেত্রে সময় বেড়েছে এক মাস।

এর আগে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৈরি পোশাক ও চামড়াসহ ৪৩ খাতের রপ্তানি পণ্যে প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে অর্থনীতিবিদরা সাধুবাদ জানালেও আপত্তি তোলে ব্যবসায়ীরা। রপ্তানিকারকদের দাবির মুখে অবশেষে কিছুটা পরিবর্তন  করে ফের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আগের সিদ্ধান্তের ১২ দিন পর সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকরের সময় এক মাস বাড়িয়ে জানুয়ারির বদলে ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ। এতে সবপণ্যই রপ্তানির বিপরীতে আরও এক মাস আগের হারেই নগদ সহায়তা পাবে।

এ ছাড়া পোশাক খাতের পাঁচটি পণ্যের রপ্তানির বিপরীতে প্রণোদনা আগামী জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে সার্কুলারে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, পুরুষদের শার্ট (এইচএস কোড ৬১০৫), পুরুষদের অর্ন্তবাস ও রাতে ব্যবহৃত শার্ট, পাজামা, গোসলের আগে ও পরে ব্যবহৃত পোশাক (এইচএস কোড ৬১০৭), টি-শার্ট, শরীর চর্চার জন্য আটসাঁটো জাতীয় পোশাক (এইচএস কোড ৬১০৯), জার্সি, কার্ডিগান, ওয়েস্ট কোটস জাতীয় পোশাক (এইচএস কোড ৬১১০), পুরুষদের জ্যাকেট, স্যুট, ব্লেজার, ট্রাউজারস, শিশুদের গলাবন্ধনী, ব্রেসওয়ারঅলস, ব্রিচেস অ্যান্ড শর্টস (সাঁতারের পোশাক বাদে) জাতীয় পোশাকে (এইচএসব কোড ৬২০৩) রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

গত ৩০ জানুয়ারি এ কয়টি খাতের পোশাকের ওপর রপ্তানির বিপরীতে প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা তুলে নিয়েছিল সরকার।

এরপর পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা এ প্রণোদনা তুলে দেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন। তারা এতে পোশাক খাত চাপে পড়বে বলে দাবি করেন। এ নিয়ে সরকার প্রধানসহ নীতি নির্ধারকদের সঙ্গেও দেখা করেন এ খাতের ব্যবসায়ী নেতারা।

সরকার গত অগাস্টে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রণোদনার হার নির্ধারণ করে দিয়েছিল। পরে ৩০ জানুয়ারি সার্কুলারের মাধ্যমে কিছু খাতে প্রণোদনা তুলে দিয়ে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার পরিমাণ কমানো হয়। অর্থবছরের বাকি সময়ের জন্য প্রণোদনার নতুন হারের তালিকাও সেদিন প্রকাশ করা হয়।

সেই তালিকা অনুযায়ী, শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে স‌র্বোচ্চ ১৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন রপ্তানিকারকরা, আগে যা ছিল ১ শতাংশ থেকে স‌র্বোচ্চ ২০ শতাংশ।

ডলার–সংকটে আটকে গেছে বিদেশি কোম্পানির লভ্যাংশ

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

ডলার–সংকটের কারণে আটকে গেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক তিন কোম্পানির ২২০ কোটি টাকার লভ্যাংশ বিতরণ। এক বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেও আটকে থাকা এ লভ্যাংশ বিদেশি মালিকদের কাছে পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো কোম্পানি তিনটি।

এই তিন কোম্পানির বাইরে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আরও দুটি কোম্পানির ৮১৬ কোটি টাকা দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর সম্প্রতি এই অর্থ তারা তাদের বিদেশি মালিকদের কাছে পাঠাতে পেরেছে।

তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি এবং আকাশপথে পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিদেশি বিমান সংস্থার বড় অঙ্কের মুনাফার প্রত্যাবাসনও বেশ দীর্ঘ সময় ধরে আটকে আছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা বা আইএটিএর গত জুনে প্রকাশ করা সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিদেশি বিভিন্ন বিমান সংস্থার ২১ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বাংলাদেশে আটকে আছে। এর বড় অংশই বিমানের টিকিট বিক্রি বাবদ পাওয়া অর্থ, যা তারা বিদেশের মূল কোম্পানিতে ফেরত নিতে পারছে না।

জানা গেছে, শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত নয় এমন একটি শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক কোম্পানির বড় অঙ্কের মুনাফাও কয়েক বছর ধরে আটকে আছে। প্রতিষ্ঠানটি এ মুনাফার অর্থ বিদেশে পাঠাতে কয়েক দফায় ডলার জোগাড়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে বিদেশি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে আপাতত মুনাফার অর্থ দেশে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোম্পানিটির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন এটিকে অগ্রাধিকার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছি। কারণ, আমরা বুঝতে পারছি ডলার–সংকট পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না।’

তালিকাভুক্ত কোম্পানির দেশীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশের অর্থ বিতরণে কোনো অসুবিধা না হলেও সমস্যা দেখা দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে।

নিয়ম অনুযায়ী, আর্থিক বছর শেষে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যে লভ্যাংশ ঘোষণা করে, তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করতে হয়। ঘোষিত এই লভ্যাংশ কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে বিতরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শেয়ারধারীদের প্রাপ্য এ অর্থ কোম্পানির পক্ষ থেকে আলাদা একটি ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। পরে ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের নিজ নিজ হিসাবে সেই অর্থ স্থানান্তরিত করে।

কিন্তু বহুজাতিক কয়েকটি কোম্পানি তাদের মালিকানায় থাকা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে লভ্যাংশ পাঠাতে পারেনি দীর্ঘ সময় ধরে চলা ডলার– সংকটের কারণে। ব্যাংকগুলো ডলার সরবরাহ করতে না পারায় লভ্যাংশের এ অর্থ এখন দেশেই আটকে আছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে মুনাফার টাকা এভাবে আটকে থাকলে তা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এ দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দেয়। ফলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিদেশি পোর্টফোলিও (পত্রকোষ) বিনিয়োগকেও তা প্রভাবিত করে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন মুনাফা আটকে থাকলে এর প্রকৃত সুবিধাভোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ, এ সময়ে টাকা অবমূল্যায়িত হলে তাদের মুনাফার পরিমাণ কমে যায়।

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি বা ফরেন চেম্বার) সাবেক সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী অবশ্য মনে করেন, আগের চেয়ে এখন পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ধাপে ধাপে লভ্যাংশ পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছে বিদেশি কোম্পানিগুলো। ডলার না পাওয়ার কারণে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় অনেকে অন্য মুদ্রায় লভ্যাংশ বিদেশে মালিকদের কাছে পাঠাচ্ছে। তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে বহুজাতিক তিনটি কোম্পানির মোট ২২০ কোটি টাকার লভ্যাংশ দেশেই আটকে আছে। এই কোম্পানি তিনটি হলো বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ এবং রেকিট বেনকাইজার বাংলাদেশ।

যাদের লভ্যাংশ আটকে আছে

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে বহুজাতিক তিনটি কোম্পানির মোট ২২০ কোটি টাকার লভ্যাংশ দেশেই আটকে আছে। এই কোম্পানি তিনটি হলো বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ এবং রেকিট বেনকাইজার বাংলাদেশ। এর মধ্যে বার্জারের সর্বোচ্চ ১৩৬ কোটি ৪০ লাখ, ম্যারিকোর ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ এবং রেকিট বেনকাইজারের ৩৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা আটকে আছে।

জানতে চাইলে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের কোম্পানি সচিব খন্দকার আবু জাফর সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ২০২২ সাল থেকে দেশে ডলার–সংকট শুরু হওয়ার পর বিদেশি মালিকদের লভ্যাংশ পাঠানো ক্ষেত্রে আমরা সমস্যায় পড়েছি। এ কারণে বেশ কিছু লভ্যাংশ আটকে আছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ (ডিএসই) একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে কোম্পানিগুলো তাদের লভ্যাংশ বিতরণ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেসব প্রতিবেদনের পাশাপাশি কোম্পানিগুলো সর্বশেষ আর্থিক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এসব বণ্টন না হওয়া লভ্যাংশকে অপ্রদেয় বা আনপেঅ্যাবল হিসাবে দেখানো হয়েছে। একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এর বাইরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিকম খাতের বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন এবং রবি আজিয়াটার প্রায় ৮১৬ কোটি টাকার লভ্যাংশ ডলার–সংকটের কারণে দীর্ঘদিন দেশে আটকে ছিল। এর মধ্যে ছিল গ্রামীণফোনের ৫৩৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ও রবি আজিয়াটার ২৮০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সম্প্রতি এ দুটি কোম্পানি লভ্যাংশের এ অর্থ বিদেশে মালিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়েছে বলে কোম্পানি দুটি জানিয়েছে।

তবে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষে কোম্পানি দুটি যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এ অর্থ অপ্রদেয় লভ্যাংশ হিসেবে দেখানো হয়েছিল।

গ্রামীণফোনের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২২ সালের জন্য আমরা যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিলাম, তার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা–সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশটি পাঠাতে দেরি হয়েছে। সম্প্রতি আমরা লভ্যাংশের এ অর্থ বিতরণ সম্পন্ন করেছি।’

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ১১টি। এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানি গত বছর বিদেশি মালিকদের কাছে তাদের প্রাপ্য লভ্যাংশের অর্থ পাঠাতে সমস্যায় পড়ে। বিদেশি মালিকানাধীন এসব প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ সাধারণত কোম্পানিগুলো ডলারে পাঠিয়ে থাকে।

গ্রামীণফোনের শেয়ারের ৫৫ দশমিক ৮০ শতাংশের মালিকানা রয়েছে নরওয়েভিত্তিক টেলিনর মোবাইল কমিউনিকেশনসের হাতে। রবি আজিয়াটার ৯০ শতাংশ শেয়ারের মালিক মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা ইনভেস্টমেন্টস (লাবুয়ান) লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভারতী ইন্টারন্যাশনাল পিইটি লিমিটেড। বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে জে অ্যান্ড এন ইনভেস্টমেন্টসের (এশিয়া) হাতে। রেকিট বেনকাইজারের প্রায় ৮৩ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় রয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মূল কোম্পানি। এ ছাড়া ম্যারিকো বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে ভারতের ম্যারিকো লিমিটেডের হাতে।

কোম্পানিগুলোর মালিকানায় থাকা বিদেশি এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর কোম্পানির মুনাফার ভাগ পান লভ্যাংশ হিসেবে। যেহেতু কোম্পানিগুলোর মালিকানার বড় অংশই বিদেশিদের হাতে, তাই ঘোষিত লভ্যাংশের সিংহভাগই চলে যায় এই মালিকদের কাছে।

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে মাদারীপুরের ৩ যুবকের মৃত্যু, নিখোঁজ ১

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে তিউনিশিয়ার জলসীমায় নৌকাডুবে মাদারীপুরের তিন যুবক মারা গেছেন। এদের মধ্যে একজন সদর উপজেলার এবং অন্য দুজন রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা। এছাড়া জেলার মকসুদপুর উপজেলার আরেক যুবক এখন নিখোঁজ রয়েছেন। নিহতদের স্বজনরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ওই ৩ যুবকের মৃত্যুর খবর আসলে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। আদরের সন্তানদের হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। এ ঘটনায় দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

গত ১৫ বছরে ২৬ বিলিয়ন আগের ৩৬ বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, বণিক বার্তা

২০০৮-০৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সরকার বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করেছে ২৬ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন (২ হাজার ৬০৯ কোটি) ডলার। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩-৭৪ থেকে ২০০৭-০৮ অর্থবছর পর্যন্ত ৩৬ বছরে পরিশোধ করেছে প্রায় ১৬ দশমিক ১ বিলিয়ন (প্রায় ১ হাজার ৬১০ কোটি) ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দেড় দশকে সরকারকে বৈদেশিক ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে আগের ৩৬ বছরের তুলনায় ৬২ শতাংশ বেশি।

ইআরডির সর্বশেষ প্রকাশিত ‘‌ফ্লো অব এক্সটারনাল রিসোর্সেস’ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) রেকর্ড সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করেছে সরকার। এ সময় শুধু মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি, যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬৭ কোটি ১৭ লাখ ডলারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বল্পমেয়াদি ঋণ যুক্ত করে তা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে সরকারকে বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৬৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে সরকারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব ও রেমিট্যান্সসহ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ না বাড়াতে পারলে এসব ঋণ সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

তিউনিসিয়া উপকূলে নিহত ৯ জনের অধিকাংশই বাংলাদেশি

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

লিবিয়া থেকে নৌকায় সাগরপথে ইউরোপ যাওয়ার সময় তিউনিসিয়ার উপকূলে নিহত ৯ অভিবাসীর অধিকাংশই বাংলাদেশের নাগরিক। বি‌ভিন্ন সূত্রে তা জানতে পেরেছে লি‌বিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস। ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শ‌নিবার দূতাবাস জানায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া উপকূল থেকে ৫২ জনের একদল অভিবাসী সাগরপথে ইউরোপ যাত্রাকালে তিউনিসিয়ার উপকূলে তাদের বহনকারী নৌকাটিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পরে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী নৌকাটি থেকে ৯ অভিবাসীর মৃতদেহ এবং ৪৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। জীবিত উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশের নাগরিক এবং তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী অধিকাংশই বাংলাদেশি।

৮৭% ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্ত কর দেন না

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

দেশে ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষদের ৮৭ শতাংশ কোনো ধরনের আয়কর দেন না, যা খুবই অগ্রহণযোগ্য। এই অবস্থার নিরসন করতে হবে।

গতকাল রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক্-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এসব কথা বলেছে। অর্থনীতি সমিতি আরও বলেছে, ‘এ দেশে ১৮ লাখ মানুষ কর দেন। তাঁদের মধ্যে ১০ লাখ সরকারি চাকরিজীবী এবং অন্যান্য চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। আমাদের হিসাবে, দেশে ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্তদের মধ্যে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা ৯-১০ লাখ হবে। এই সংখ্যা হওয়ার কথা ৭৮ লাখ ৩২ হাজার। এর মানে, ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্তদের ৮৭ শতাংশ কোনো ধরনের আয়কর দেন না।’

রাজস্ব আদায়ের তুলনায় বাড়ছে সরকারের ঋণের বোঝা

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

রাজস্ব আদায়ের তুলনায় সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে চলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যত টাকার রাজস্ব আদায় করছে, তার অর্ধেকের বেশি পরিমাণ অর্থ আবার সরকারকে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ করতে হচ্ছে। প্রতিবছরই সরকারের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায় না হওয়ার কারণে সরকারকে ঋণ করে বাড়তি খরচ মেটাতে হচ্ছে। ফলে রাজস্ব আদায়ের অনুপাতে সরকারের ঋণের হার বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে ঋণ পরিশোধের চাপও।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দেশে কর-জিডিপি অনুপাত এখনো ১০ শতাংশের নিচে। দুই দশক ধরেই কর-জিডিপি অনুপাত পরিস্থিতি ভালো নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। জিডিপির আকার যেভাবে বাড়ছে, সেই গতিতে রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। জিডিপির তুলনায় কর আহরণের দিক থেকে বিশ্বে যেসব দেশ সবচেয়ে পিছিয়ে আছে, বাংলাদেশ তার একটি।

এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১০ বছরের ব্যবধানে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের অনুপাতে দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। এর মানে, প্রতিবছর সরকারের ঋণ নেওয়া কেবল বেড়েই চলেছে। তিন-চার বছর ধরে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।

বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান, চীন, রাশিয়া, ভারতের মতো দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বেশি ঋণ নেয়। বেশির ভাগ ঋণ নেওয়া হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। আর অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে মূলত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেশি ঋণ করে সরকার। এ ছাড়া অর্থের বাড়তি চাহিদা মেটাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে এবং বন্ড ছেড়েও টাকা ধার নেওয়া হয়।

রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ১০ বছরের মধ্যে কোনো বছরই এনবিআর লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ২০১৩-১৪ অর্থবছর ছাড়া অন্য কোনো বছরে সংশোধিত লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি এই সংস্থা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্থাৎ ১০ বছর আগে সরকার দেশি-বিদেশি সংস্থা থেকে সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। ওই বছর এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। কিন্তু অনুন্নয়ন ব্যয় মেটাতে ও উন্নয়ন বাজেটে টাকার জোগান দিতে সরকারকে এনবিআরের আয়ের বাইরেও অতিরিক্ত অর্থ ঋণ করতে হয়েছিল, যা ছিল এনবিআরের আয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশের সমান। পরের এক দশক সময়ে এই হার শুধু বেড়েছে।

সর্বশেষ গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে সব মিলিয়ে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। এই অর্থবছরে এনবিআরের আদায় ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এনবিআর যে পরিমাণ অর্থ আদায় করতে পেরেছিল, খরচ মেটাতে তার তুলনায় অতিরিক্ত আরও ৫৩ শতাংশ অর্থ ঋণ করতে বাধ্য হয়েছিল সরকার।

চাকরির বাজারে বেকারের সারি

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, আজকের পত্রিকা

অর্থনীতি বড় হচ্ছে। বেসরকারি খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটছে। সরকারও উন্নয়ন খাতে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করছে। এসবে ভর করে বাড়ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। সরকার দাবি করছে, সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়ন হওয়ায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। তবে এত ভালো খবরের ভিড়ে হতাশাজনক খবর হলো, এই মুহূর্তে দেশে ২৩ লাখের বেশি বেকার চাকরি খুঁজছেন। গত বছরের শেষ তিন মাসেই বেকার বেড়েছে ৪০ হাজার। বেকারদের মধ্যে আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের অন্তত ২৮ শতাংশ বেকার রয়েছেন। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ডলারসহ নানা সংকটের কারণে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্থর গতি চলছে। তার প্রভাবেই চাকরির বাজারও কিছুটা সংকুচিত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে ২০১৮ সালে স্নাতক ও ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন আরিফুল ইসলাম। লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর থেকেই চাকরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন জানিয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনোটার প্রিলিমিনারি পাস করি তো লিখিত পরীক্ষায় আটকে যাচ্ছি। আবার কখনো সেটা উতরে গেলে ভাইভাতে আটকে যাচ্ছি।’

আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছরই হাজার হাজার ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। বেসরকারি খাতে চাকরির জন্য অনেক ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়ে। ফলে চাকরিতে কোথাও ঢুকতে না পারলে অভিজ্ঞতা হয় না। অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে চাকরি হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষিত আরিফের মতো এ রকম অসংখ্য তরুণ বেকারেরই চাকরি না পাওয়া নিয়ে এমন হতাশার গল্প রয়েছে।

জানা যায়, দেশে ডলার, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম। আমদানি কড়াকড়ি করায় শিল্পের যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানি কমছে। এতে নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্পের প্রসার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে নতুন কাজের সুযোগ কমছে। আর সঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সুদের হার বাড়িয়ে টাকার প্রবাহ কমানোর কারণে ব্যবসা ও শিল্পের প্রসার স্লথ হয়ে পড়ছে বলে উদ্যোক্তারা দাবি করেছেন। তাঁরা মনে করেন, এতে চাকরির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষিতরা সহসাই চাকরিতে ঢুকতে পারছেন না। আর সরকারও উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ পরিকল্পনা করলেও ঠিকমতো প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সামনে এডিপির আকারও কাটছাঁট করা হবে বাস্তবায়ন অদক্ষতা ও পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে। এর ফলেও বেকার জনগোষ্ঠীর একটি অংশের কাজ পেতে সমস্যা হচ্ছে। পোশাক, বস্ত্র, চামড়া ও হালকা প্রকৌশল খাতের অনেক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের অনেকেই ব্যবসা বাড়াচ্ছেন না, বরং পর্যাপ্ত পুঁজির অভাব ও খরচ বেড়ে যাওয়ায় কিছু জনবল কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই প্রবাহ কমেছে ৩৬ শতাংশ।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সব শেষ তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে জানা যায়, সংস্থার শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে ৮৩ শতাংশই তরুণ-তরুণী।

তথ্য-উপাত্ত বলছে, শ্রমশক্তিতে ২ কোটি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার যুবক-যুবতী আছেন, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। তাঁদের মধ্যে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৭৫ হাজার কাজের মধ্যে আছেন। যুবক-যুবতীদের মধ্যে ২১ লাখ ৪৮ হাজার বেকার, যা দেশের মোট বেকার জনগোষ্ঠীর ৮৩ শতাংশ।

বিবিএসের মতে, সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি, কিন্তু কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তাঁদেরই বেকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি জরিপের আগে ৩০ দিন বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ খুঁজেছেন, তাঁরাও বেকার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন। তাঁদের ১৩-১৪ লাখের দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান হয়। বাকিটা দেশের বাইরে যান।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যাংকঋণ বন্ধ, শেয়ার নিয়েও দ্বন্দ্ব

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের ঋণছাড় বন্ধ হয়ে গেছে। এ বছরের ৩০ মার্চের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে না জেনে গত ১৭ জানুয়ারি ঋণ আটকে দিয়েছে চীনের দুটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় নির্মাণকাজ নিয়ে অংশীদারি বিদেশি তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) বড় এই প্রকল্পে বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড ও চীনভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ এবং নির্মাণকাজের মাধ্যমে অংশীদার।

 প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো ইতালথাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি এবং চীনের শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ও সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

উড়ালসড়ক নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) লিমিটেড নামের কোম্পানি গঠন করে ইতালথাই। এতে অংশীদার ওই তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যথাক্রমে ৫১, ৩৪ ও ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ের নির্বাহক প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পটির মূল নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুসারে, মূল কাঠামো নির্মাণ ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ জোগান দেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আর ২৭ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার, যা ভায়াবিলিটি গ্যাপ (ভিজিএফ) নামে পরিচিত।

প্রকল্পের তথ্য অনুসারে, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ৫ হাজার ৫৯ কোটি ২১ লাখ ২২ হাজার ৩০০ (৪৬ কোটি ১০ লাখ ডলার) ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নার (আইসিবিসি) সঙ্গে ৪ হাজার ৩৮৯ কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজারসহ (৪০ কোটি ডলার) মোট ৯ হাজার ৪৪৮ কোটি ৯৮ লাখ ৪২ হাজার ৩০০ (৮৬ কোটি ১০ লাখ ডলার) টাকার ঋণচুক্তি করে। ঋণবিষয়ক এ চুক্তিতে এক্সিম ও আইসিবিসির পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে সিটি ব্যাংক এনএর ঢাকা শাখা। ইতিমধ্যে মোট ঋণ ছাড় হয়েছে ৫ হাজার ১৩৬ কোটি ৩ লাখ ২৩ হাজার ৯৯ টাকা (৪৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার)।

এফডিইই জানিয়েছে, চুক্তি অনুসারে এফডিইইর ব্যাংককে ১৭ বছর ধরে ৭ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার কথা।এরই মধ্যে ব্যাংক ১২ কিস্তিতে ঋণ ছাড় দিয়েছে। ১৩তম কিস্তিতে ঋণ আটকে যায়। সেটা ১৭ জানুয়ারি দেওয়ার কথা ছিল। চুক্তিতে ছিল, ২০২৪ সালের ৩০ মার্চের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং সে পর্যন্ত এক্সিম ও আইসিবিসি ব্যাংক ঋণ দেবে। এখন কোভিড, জমি অধিগ্রহণ, নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ ব্যাংক সময় বাড়াতে রাজি নয়। তারা ঋণছাড় করবে না বলেও জানিয়েছে।

‘যৌক্তিক মূল্য’র চেয়েও কেজিতে ১৯ টাকা বেশি ছোলায়

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

রোজা আসতে দুই সপ্তাহ বাকি থাকতেই ইফতারির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছোলার দাম চড়তে শুরু করেছে। মাস খানেক আগে প্রতি কেজি ছোলা ১০০ টাকায় মিললেও এখন গুনতে হচ্ছে ১১০ টাকা।

মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের মাদারীপুর মশলা ঘরের দোকানি রায়হান সরদারের ভাষ্য, পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরাতেও বেচতে হচ্ছে বেশি দরে।

“আগে আমাদের পাইকারিতে ছোলা কিনতে হতো ৯৬ টাকা কেজি দরে। বিক্রি করতাম ১০৫ টাকায়। এখন কিনতেই হয় ১০৩ থেকে ১০৪ টাকায়। তাই বিক্রি করি ১১০ টাকা কেজিতে।”

কারওয়ান বাজারের পাইকার একতা ট্রেডার্সের জুয়েল আহমেদ বললেন, তার দোকানে এখন ১০০ টাকা কেজি দরে ছোলা বিক্রি হচ্ছে, যা মাসখানেক আগে ৮৮ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হতো। নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ থেকে তাকে ছোলা কিনতে হয় ৯৭-৯৮ টাকা কেজি দরে।

জুয়েল পাইকারিতে ১০০ টাকা দরে ছোলা বিক্রির কথা বললেও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের তথ্যে তা দেখানো হয়েছে ৮৬ থেকে ৯৬ টাকা। সংস্থাটির ঘোষণা অনুযায়ী, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, রহমতগঞ্জ ও বাবুবাজার থেকে পাইকারি এ দরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

অবশ্য বাস্তবে সেই চিত্র মেলেনি, পাইকারির দর বেশ কিছু দিন ধরেই বেশি বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

একতা ট্রেডার্সের জুয়েল বলেন, “(মাস খানেক ধরে) ছোলা ১ থেকে ২ টাকা করে বেড়েছে। এক লাফে বাড়েনি। সত্যি বলতে রমজান হিসেবে যে দাম বাড়ে, তা এখনও বাড়ে নাই।

“এখন সাদা ছোলা আসছে, এগুলো ভাল। আর আগে ছিল কালো ছোলা। সেটার মান খারাপ, তাই দামও একটু কম ছিল।”

রোজায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে ‘হুজুগে’ ক্রেতাদের দুষছেন এই পাইকার।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৬ মাসে আয় কত, টোল বাড়াতে চায় কোম্পানি

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

মোমিনুল আবেদিন একটি বেসরকারি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাঁর অফিস রাজধানীর মতিঝিলে। তিনি থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা দ্রুতগতির উড়ালসড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তখন থেকে মোমিনুল আবেদিন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করছেন।

মোমিনুল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, আগে তিনি গাড়ি নিয়ে বাড্ডা হয়ে মতিঝিল যেতেন। সকাল সোয়া আটটায় রওনা দিয়ে অফিসে পৌঁছাতে তাঁর পৌনে ১০টা বেজে যেত। এখন তিনি একই সময় বাসা থেকে বের হয়ে কুড়িল থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে তেজগাঁও নামেন। এরপর ফার্মগেট হয়ে মতিঝিলের অফিসে পৌঁছান সকাল সোয়া ৯টার মধ্যে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে টোল আদায়ের পরিমাণ।

নির্বাহক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেডের তথ্যমতে, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলতি ফেব্রুয়ারির ২১ দিন (১ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি) দিনে গড়ে ৪২ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করেছে। দিনে গড়ে টোল আদায় হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এক্সপ্রেসওয়ে চালুর মাসে (সেপ্টেম্বর) দিনে গড়ে প্রায় ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করেছে। দিনে গড়ে টোল আদায় হয়েছে ২৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সি, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি), মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) ও হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) ক্ষেত্রে টোল ৮০ টাকা। সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা তার বেশি) টোল ১৬০ টাকা। মাঝারি ট্রাকের (৬ চাকা পর্যন্ত) টোল ৩২০ টাকা। ৬ চাকার বেশি ট্রাকের জন্য টোল ৪০০ টাকা।

এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল ও টোল আদায় বাড়লেও তা এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ের নয় বলে মনে করছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এফডিইই। প্রতিষ্ঠানটির মতে, দিনে গড়ে ৫০ হাজার যানবাহন চলাচল করলে কাঙ্ক্ষিত আয় হবে। এ অবস্থায় তারা টোল বাড়ানোর একটি প্রস্তাব সরকারকে দিতে চায়।

ঋণের চাপে ২ সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪, বণিক বার্তা

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ঋণের চাপে দুই সন্তানকে বিষপানে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন সায়মা বেগম (৩৩) নামে এক নারী। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের উত্তর ইসলামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

তবে স্বজনদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর বসতঘরে মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছে তাদের। নিহত শিশুরা হলো ছাইমুনা আক্তার (১১) ও মো. তাওহীদ (৮)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আট বছর আগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সৌদি আরব যান সায়মা বেগমের স্বামী অলি মিয়া। ঋণের চাপে অলি মিয়া দেশে আসতে পারেননি। সায়মা এক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আরেক এনজিওর ঋণ পরিশোধ করছিলেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিওর লোকজন তাদের বাড়ি আসতেন। এ নিয়ে প্রায়ই স্বামী অলি মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে ঝগড়া হতো সায়মা বেগমের। শনিবার রাতে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয় তার। রোববার সকালে কেরানীগঞ্জের একটি এনজিওর লোকজন বাড়িতে কিস্তির টাকা নিতে আসেন। তারা ঘরের দরজা ধাক্কাধাক্কি করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তারা জানালার একটি অংশ খুলে দেখতে পান সায়মা বেগম গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছেন।

গরুর মাংসে ‘অযৌক্তিক মুনাফা’ ১৫০ টাকা, হাত গুটিয়ে সবাই

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গরুর মাংসের দাম কত হওয়া উচিত, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই দ্রুত দামের পতন এবং ফের উত্থান- দুটোই দেখলেন ভোক্তারা।

সরকারি সংস্থা হিসাব করে মাংসের সর্বোচ্চ যে ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করেছে, বাজারে বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে।

এই ‘যৌক্তিক মূল্য’ বাস্তবায়নে যে ব্যবস্থাপনা সরকার আইনে তৈরি করেছে, সেটি কাজ করছে না উদ্যোগের অভাবে।

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে বাজার দর নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা সরকার বারবার বলে আসছে। কিন্তু বাড়তি মুনাফা ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ না থাকায় ক্রেতারা হতাশ।

২০২৩ সালের শুরুতে দর আটশ টাকা ছুঁয়ে ফেলার পর এপ্রিল থেকে এক দুই জন করে বিক্রেতা কম দামে মাংস বেচতে থাকলে এক পর্যায়ে অক্টোবর নভেম্বরে দাম ছয়শ টাকার নিচে নেমে আসে। কেউ কেউ এমনকি ৫৫০ টাকাতেও বেচতে শুরু করেন।

সে সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাংস বিক্রেতা ও ঢাকার বড় খামারিদেরকে নিয়ে একটি সেমিনার করার পর দেখা দেয় পাল্টা প্রতিক্রিয়া। খামারি আর বিক্রেতারা একজোট হয়ে যান। তারা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ৬৫০ টাকায় মাংস বেচার ঘোষণা দেন। এরপর ফেব্রুয়ারির শেষে দাম ফের আটশ টাকা ছুঁয়েছে।

বিক্রেতাদের দাবি, গরুর দাম বেড়েছে, তাই তাদেরকে বেশি দামে বেচতে হচ্ছে। খামারিরা বলছেন উৎপাদন খরচ বাড়ার কথা। কিন্তু এত কম সময়ে খরচ লাফ দেবে, সেটা বিশ্বাস করছেন না খোদ সরকারের কর্মকর্তারাও।

কারওয়ান বাজারে মাংস কিনতে আসা আল মামুনকে যৌক্তিক মূল্যের বিষয়টি জানালে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত বেশিতে কিনি, সেটা আমি কল্পনাও করিনি। বিক্রেতারা কত শতাংশ লাভ করতে পারবে তার একটা সীমা থাকা উচিত।”

কৃষিপণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে ২০১৮ সালে সরকার কৃষি বিপণন আইন ও তিন বছর পর বিধিমালা করে। কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচের বিবেচনায় কৃষক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেওয়া হয় সেখানে। একে আইনের ভাষায় বলে ‘যৌক্তিক মূল্য’।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এই যৌক্তিক মূল্য ঠিক করছে, তবে তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা তাদের নেই। যাদের তা বাস্তবায়ন করার কথা, তাদের আবার নেই উদ্যোগ।

এমনকি যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দাম কমার সময় মাংস বিক্রেতাদের ডেকে ‘একজোট’ করেছিল, তারাও এখন কিছু করছে না। অথচ কৃষি বিপণন থেকে ‘যৌক্তিক মূল্য তালিকা’ এই অধিদপ্তরেও পাঠানো হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘সব কিছু’ তারা করতে পারবেন না।

যৌক্তিক মূল্য কত

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর হিসাব করে দেখেছে, প্রতি কেজি গরুর মাংসের উৎপাদন খরচ এখন গড়ে ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। তারা খুচরায় ১৭ শতাংশ মুনাফা ধরে যৌক্তিক মূল্য ঠিক করা হয়েছে ৬৫৬ টাকা।

ঢাকার বসিলার খামারি তারেকুর রহমানের দেওয়া তথ্যেও অধিদপ্তরের এই হিসাবের মিল পাওয়া গেল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ৩০০ কেজি মাংস হয়, এমন একটি গরু উৎপাদনে খরচ পড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মত। তারা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভে সেই পশু বিক্রি করেন। এই হিসাবে প্রতি কেজি দাম পড়ে ৪৮০ টাকার মত।

মাংস বিক্রেতাদের পরিবহন, বিপণন ও কাটাকাটির পারিশ্রমিক ১০ হাজার টাকা ধরলেও গরুটির পিছনে মোট ব্যয় ধরা যায় সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এই হিসাবে সব খরচসহ প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়ে ৫১৬ টাকা।

কিন্তু শবেবরাতের আগের দিন ঢাকায় ৮০০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে গরুর মাংস। আগের সপ্তাহেই তা ছিল ৭৫০ টাকা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দাম ছিল ৬৫০।

মিডিয়ার ভূমিকার কারণেও কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বাড়ে: বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

মিডিয়ার ভূমিকার কারণেও কিন্তু দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে বলে মনে করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় আজ সোমবার তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে সদস্যদের জন্য ওই কর্মশালার আয়োজন করে ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।

বাংলায় রায় ও আদেশের চর্চা ও প্রবণতা নিয়ে সংবাদ উপস্থাপনের দুটি দিক টেনে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘আপনারা যেকোনো নিউজকে ইতিবাচকভাবে দেখবেন।’

প্রসঙ্গ ক্রমে উদাহরণ টেনে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে নিউজগুলো হয়। আমি সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলব, মিডিয়ার ভূমিকার কারণেও কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। সকাল আটটায় কোনো চ্যানেলে যদি বলে আজ খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সংকট; সকাল আটটায় যদি এই নিউজ করে; সকাল ১০টায় দেখবেন যে কারওয়ানবাজারে ৩০ ভাগ দাম বেড়ে যায়। ধরেন, বিকেলবেলায় শ্যামবাজারে দাম ৪০ শতাংশ বেড়ে গেল—একটা হাহাকার শুরু হয়ে যায়।…৮–১০টা টেলিভিশন যদি সারা দিন প্রচার করে ছোলার সংকট, পেঁয়াজের সংকট, রোজা আসছে, সয়াবিন তেল নেই। মজুত করা শুরু হয়ে যায়। মানুষও ঝাঁপিয়ে পড়ে। যেখানে দুই কেজি কিনলেই হয়, সেখানে সে ১০ কেজি কিনতে চায়। চাহিদা বেড়ে যায়। এই যে নিউজগুলো হয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ব্যাপারে, এটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত যে এখানে কিন্তু মিডিয়া পজিটিভ রোল–প্লে করে না। এখানে যদি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায়, বেশি কিনবেন না, কম কিনবেন, চাহিদা আছে, পর্যাপ্ত আছে।’

পোকার আক্রমণ ও খাটো জাতের উচ্চাশায় ব্যাহত নারকেল উৎপাদন

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪, বণিক বার্তা

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নারকেল উৎপাদনে উপযোগী দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। তবে দুই-তিন বছর ধরে নারকেলে পোকার আক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। পাশাপাশি ভিয়েতনামি খাটো জাতের গাছে নির্ধারিত সময় পরও ফলন আসেনি। এতে নারকেল উৎপাদন এক দশকের সর্বনিম্নে নেমেছে।

বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপকূলীয় জেলাগুলোসহ বিভিন্ন স্থানে নারকেল গাছে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বিধ্বংসী সাদা মাছি, কালো মাথা ক্যাটারপিলার ও মাকড়। এদিকে উৎপাদন কমে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে নারকেলজাত তেল, ছোবড়া, মশার কয়েল, কোকোডাস্ট ও মালা শিল্পে।

দেশে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে কমছে নারকেল উৎপাদন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে নারকেল উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৬ হাজার টন। ২০১৬-১৭ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত উৎপাদন হয় যথাক্রমে ৬ লাখ ৮৮ হাজার টন, ৬ লাখ ৬৩ হাজার, ৬ লাখ ৫০ হাজার, ৬ লাখ ৫৩ হাজার, ৫ লাখ ১৯ হাজার ও ৫ লাখ ১০ হাজার টন।

বোরো আবাদে বিপাকে চার জেলার কৃষক

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের প্রধান খাল ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পানিতে থাকে টইটম্বুর। তবে এবার পানিশূন্য খাল। এতে জিকের পানির ওপর নির্ভরশীল কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার কয়েক লাখ কৃষক বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

তিনটি পাম্প নষ্টসহ নানা কারণে জিকে এবার সময়মতো খালে পানি দিতে পারেনি। বোরো চারা রোপণ করতে না পারায় নষ্ট হচ্ছে বীজতলা। চাষ দিয়ে জমি পাকানোর অপেক্ষায় আছেন অনেকে। দ্রুত সমস্যা না কাটলে বোরোর উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

সরেজমিন কুষ্টিয়া সদরের বটতৈল এলাকায় জিকের প্রধান খাল পানিশূন্য দেখা যায়। পানির স্তর একেবারে নিচে নেমে গেছে। বটতৈল চারমাইল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরিষা তোলার পর মাঠে জিকের পানি আসে। ২০ থেকে ২৫ দিন আগে সরিষা তুললেও পানি আসার লক্ষণ নেই। কয়েক বিঘা জমি চাষ দিয়ে ফেলে রেখেছি, পাকাতে পারছি না। বোরো আবাদের কী হবে, বুঝতে পারছি না।

জেলার আরেক কৃষক মো. সাহাবুদ্দিন জানান, অন্যান্য বছর এ সময় মাঠে ধান রোপণ শেষ হয়ে যায়। এবার তারা শুরুই করতে পারেননি।

দু-একজন শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি তুলে চারা রোপণ করেছেন। জিকের পানি দিয়ে এক বিঘা আবাদে খরচ যেখানে বছরে ৩০০ টাকা, সেখানে শ্যালোতে প্রায় ৫ হাজার টাকা। লোকসানের ভয়ে অনেকেই আবাদ শুরু করছেন না।

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বাগচুয়া গ্রামের কৃষক হেকমত আলী বলেন, ‘দুই বছর ধরে জিকের পানি পাচ্ছি না। সামর্থ্যবানরা শ্যালোর পানি ব্যবহার করছেন। বাকিরা পিছিয়ে পড়ছেন।’

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাদেমাজু গ্রামের কৃষক আশাদুল হক জানান, পানি দেরিতে দেওয়ায় বোরো রোপণে বিলম্ব হয়েছে। হঠাৎ করে খাল পানিশূন্য, জমিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। বিকল্প হিসেবে ডিজেলচালিত শ্যালো ইঞ্জিনের মাধ্যমে পানি দিতে গিয়ে খরচ বাড়ছে।

একইভাবে ঝিনাইদহের শৈলকুপা ও মাগুরার কয়েকটি উপজেলার কৃষকরা কোনো ফসলই আবাদ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।

জিকে পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সভাপতি সাফায়েত হোসেন পল্টু বলেন, ‘পাম্প নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে বোরো আবাদে ব্যাঘাত ঘটবে।’

জিকে সূত্র জানায়, ভেড়ামারায় প্রধান পাম্প হাউসের দুটির মধ্যে ২০২২ সাল থেকে একটি নষ্ট। অন্যটি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছিল। জানুয়ারির শুরুতে চুয়াডাঙ্গায় পানি দিলে চাষিরা বোরো রোপণ করেন। কিন্তু কুষ্টিয়া এলাকায় জানুয়ারিতে সরিষা থাকায় কর্তৃপক্ষ ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পানি ছাড়া শুরু করে। দু’দিন চলার পর পাম্পে ত্রুটি দেখা দিলে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এখন পাম্প হাউসের তিনটি যন্ত্রই বিকল।

সেচ বন্ধে ক্ষতির মুখে ৫০ হাজার কৃষক

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

মেয়াদ শেষে নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় প্রায় তিন বছর বন্ধ সেচ কার্যক্রম। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ৫০ সহস্রাধিক কৃষক বাড়তি সেচ খরচ মেটাতে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের আওতায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ। প্রতি মৌসুমে প্রায় ৭০ হাজার টন ধান উৎপাদন কম হচ্ছে। স্থানীয়রা প্রকল্প প্রস্তাবনা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন দ্রুত না হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বলছে, কিছু সংশোধন, সরেজমিন যাচাইসহ সেচ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও টেকসই প্রকল্প প্রস্তাবনা চূড়ান্তের কাজ শেষ পর্যায়ে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই বাস্তবায়ন শুরু হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন ইউনিটের টারবাইন ঠান্ডা রাখতে মেঘনা নদীর বিপুল পরিমাণ পানি লাগে। পরে এই বর্জ্য পানি একটি আউটার চ্যানেল দিয়ে পুনরায় নদীতে ফেলা হয়। ১৯৭৫ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি হেড রেগুলেটর নির্মিত হলে পানির গতিপথ আংশিক পরিবর্তন করে তা পার্শ্ববর্তী জমির সেচ হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এটিই ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে বিএডিসির অধীনে ‘আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প’ নামে সেচ কার্যক্রম শুরু করে। একই সময় নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় এ ধরনের প্রকল্প গড়ে ওঠে। পরে ১৯৯০-৯৫ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দুটিকে একীভূত করে যাত্রা শুরু হয় ‘আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্প’, যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ জুন।

কৃষকরা জানায়, গভীর কিংবা অগভীর নলকূপ থেকে ভূগর্ভস্থ পানি সেচকাজে ব্যবহার করলে একরপ্রতি তাদের জ্বালানি খরচসহ লাগে ৮-১০ হাজার টাকা। বিপরীতে প্রকল্পের পানিতে একরে সেচ খরচ ২ হাজার টাকার মতো। কৃষি বিভাগের হিসাবে প্রকল্পের অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, সরাইল, সদর ও নবীনগর উপজেলার প্রায় ৩৪ হাজার এবং পলাশের ১৬ হাজার কৃষক এর সুবিধাভোগী। তারা নামমাত্র খরচে নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা পেয়ে আসছিল। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ যেমন কমত, তেমনি গড়ে ৭০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হতো। কৃষকরা প্রতি বোরো মৌসুমে আশুগঞ্জ অংশে প্রায় ৭০ হাজার টন ধান উৎপাদন করে আসছিল, যা এখন একেবারে বন্ধের পথে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পুকুর আংশিক ভরাট ও পরে ২০২০ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প বাস্তবায়নে সেচ প্রকল্পের প্রায় ১১ কিলোমিটার ড্রেন ও খাল ধ্বংস হয়ে যায়। এর পরই সেচ ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। এক পর্যায়ে ‘আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে স্থানীয় কৃষকরা আন্দোলনে নামলে বিএডিসির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব পায়। ২০১৯ সালের আগস্টে বিএডিসি, সওজ ও সিইজিআইএস যৌথ জরিপ শেষে সেচ সুবিধা  অব্যাহত রাখতে মন্ত্রণালয় ও বিএডিসির কাছে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়। ২০২০ সালের ১৭ জুন আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রকল্পটি সচলে যেসব সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়, তার একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। পাশাপাশি বিএডিসি সেচ ব্যবস্থা সচল রাখতে প্রায় ৪৭০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প প্রস্তাবনা দেয়। কিন্তু সেটি সাড়ে তিন বছরেও অনুমোদন পায়নি।

স্টেডিয়ামে খেলাধুলা হয় না, বসে গরু-ছাগলের হাট

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। উপজেলার শিয়ালকোল এলাকায় অবস্থিত এই স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ পাঁচ বছর আগে সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত এক দিনের জন্যও মাঠে গড়ায়নি কোনো খেলা। তবে নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে বসছে গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কেনাবেচার হাট। ফলে কোনো ধরনের খেলাধুলা ও শরীরচর্চার সুযোগ মিলছে না স্থানীয় তরুণ ও কিশোরদের।

অপরদিকে, প্রতিনিয়ত হাট বসায় অনেক আগেই নষ্ট হয়ে পড়েছে খেলার পরিবেশ। বেহাল মাঠে এখন মেলে বর্জ্যের গন্ধ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলেন, হাট বসিয়ে নষ্ট হয়ে পড়া মাঠটি খেলাধুলার উপযোগী করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সময়ের ব্যবধানে স্টেডিয়ামটি এখন পরিত্যক্ত স্থাপনায় পরিণত হচ্ছে।

সরেজমিনে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম ঘুরে দেখা যায়, খেলার মাঠজুড়ে খানাখন্দে ভরা, মাঠের চারিদিকে বসানো গ্যালারি বেঞ্চগুলোতে ময়লা-আবর্জনা আগাছায় ভরপুর, বৃষ্টির পানিতে মাঠের মাটি ও প্যালাসাইডিং ধসে গেছে। চরানো হয় গরু-ছাগল। বর্জ্যে মাঠের সৌন্দর্য নষ্ট, ভবনের আস্তরণ খসে পড়ছে। পাবলিক টয়লেট ভবন ও গোলপোস্টের বেহাল দশা।

সংশোধিত এডিপিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমছে ১৬,৫০০ কোটি টাকা

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

উন্নয়ন খরচে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত অগ্রাধিকারের তালিকায় এখনো বেশ পিছিয়ে। উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের দিক থেকে শীর্ষ তিন খাতের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নেই। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এ দুই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসছেন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারপরও বরাদ্দ বাড়ছে না। উল্টো সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) দুই খাতেই বরাদ্দ কমানো হচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, এবার সংশোধিত এডিপির আকার কমছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। তাতে এডিপির আকার কমে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে। আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।

এ খাতে বরাদ্দ কমছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি কম থাকায় এ দুই খাতে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। এডিপি সংশোধনে বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি কমবে এ দুটি খাতে।

আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত এডিপির মাত্র ৭ শতাংশের মতো বরাদ্দ রাখা হচ্ছে শিক্ষা খাতে। তাতে এই খাতের ১১৮টি প্রকল্প সব মিলিয়ে ১৭ হাজার ২২৩ কোট টাকা বরাদ্দ পাবে, যা মূল এডিপির চেয়ে অন্তত সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা কম। অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতের ৬১টি প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১২ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা সংশোধিত এডিপির প্রায় ৫ শতাংশ। এ খাতে বরাদ্দ কমছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি কম থাকায় এ দুই খাতে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। এডিপি সংশোধনে বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি কমবে এ দুটি খাতে।

মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী ডলার, চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগেই আরেক দফা বেড়েছে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম। এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। সেগুলো হলো ডলার-সংকট ও এর বাড়তি দাম, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট এবং উচ্চ শুল্ক।

তবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের নিজেদের যে ‘দায়িত্ব-কর্তব্য’ রয়েছে সেটি স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, দিন শেষে একটা কথা আছে, ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করেন। তাঁর মতে, এই অতি মুনাফা ও মজুতদারি থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যবসায়ীদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা চারটি কারণের কথা তুলে ধরে বলেন, ডলারের যে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে, সেই দরে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।

বরং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ‘ইচ্ছেমতো’ ডলারের দাম নিচ্ছে। সে জন্য পণ্য আমদানিতে খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া পরিবহনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির কারণে সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। সিন্ডিকেটের কারণে ব্রয়লার ও গরুর মাংসের দাম কমছে না। উচ্চ শুল্কের কারণে আকাশচুম্বী হয়েছে চিনি ও খেজুরের দাম।

বইমেলায় বিক্রি ৬০ কোটি টাকা, দর্শনার্থী ৬০ লাখ

০২ মার্চ ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন

৩১ দিনের অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ শেষ হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই মেলা চলে শনিবার (২ মার্চ) পর্যন্ত। এবারের বইমেলায় প্রায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এবং পুরো মেলায় প্রায় ৫০ লাখ লোকসমাগম হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজক বাংলা একাডেমি।

শনিবার (২ মার্চ) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার মূল মঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব কেএম মুজাহিদুল ইসলামের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে একাডেমির উপ-পরিচালক সাহেদ মমতাজ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, এবারের বইমেলায় প্রায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। আমাদের কাছে মোট হিসাব এখনও আসেনি। যেটা এসেছে, সেটি ৬০ কোটির কাছাকাছি। আজকের বিক্রিসহ আমাদের ধারণা এটি ৬০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বইমেলায় স্থাপিত আর্চ টাওয়ারের তথ্য মতে মেলায় প্রায় ৬০ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে।

মাসে মাথাপিছু ন্যূনতম খাদ্য গ্রহণ ব্যয়ে বিবিএসের সঙ্গে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ফারাক ৩৪%

মার্চ ০২, ২০২৪, বণিক বার্তা

একজন প্রাপ্তবয়স্কের দিনে খাদ্য গ্রহণ করতে হয় কমপক্ষে ২ হাজার ১২২ ক্যালরি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ক্যালরির এ খাদ্য গ্রহণে গড় মাথাপিছু ব্যয় মাসে ১ হাজার ৮৫১ টাকা। এটিকেই ফুড পোভার্টি লাইন বা খাদ্য দারিদ্র্যসীমা হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে বিবিএস। আর বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) হিসাবে, গত ডিসেম্বরজুড়ে এ ন্যূনতম ক্যালরিসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে দেশের মানুষকে মাথাপিছু ব্যয় করতে হয়েছে ২ হাজার ৭৯৯ টাকা। সে হিসেবে বিবিএসের মাথাপিছু ন্যূনতম খাদ্য গ্রহণের খরচ ডব্লিউএফপির তুলনায় ৩৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বা ৯৪৮ টাকা কম।

দুই সংস্থার তথ্যে এ বড় ব্যবধানের কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিবিএস যেটিকে খাদ্য দারিদ্র্যসীমা হিসেবে দেখাচ্ছে, সে মূল্যে একজন মানুষের পক্ষে খাবারের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। যে সময় পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে এ হিসাব দেখানো হচ্ছে, সে সময় যুদ্ধের অভিঘাতে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে গেছে বৈশ্বিক পণ্যবাজার। আবার এ-সংক্রান্ত জরিপ শেষ হওয়ার পর দেশে খাদ্যপণ্যের দাম আরো বেড়েছে। এর সঙ্গে পরিসংখ্যান পরিচালনায় পদ্ধতিগত দুর্বলতার অভিযোগও রয়েছে। সব মিলিয়ে এসব কারণেই দুই সংস্থার মধ্যে তথ্যগত ফারাক দেখা দিতে পারে।

এবার রোজা হবে আরও খরুচে

০৮ মার্চ ২০২৪, সমকাল

ইফতারে অন্তত দুইটা খেজুর আর এক গ্লাস শরবত মুখে তুলতে হয় রোজাদারকে। তবে সেই ন্যূনতম ইফতারি পণ্যেরই বেজায় দাম। খেজুরে এবার হাতই দেওয়া যাচ্ছে না, চিনির দামেও লম্ফঝম্প। আর শরবতের জন্য লেবু! এখনই আগুন দাম। রোজায় এক লেবু কত টাকা দিয়ে সদাই করতে হবে, সে চিন্তায় কপালে ভাঁজ ফেলছেন ক্রেতা।

এবার সেহরিতে আসা যাক। রোজা শুরুর আগেই ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি দেখাচ্ছে দামের তেজ। গরুর মাংস কেজিতেই বেড়ে গেছে অন্তত ১০০ টাকা। সব মাছের দামও বাড়বাড়ন্ত। শুধু খেজুর, চিনি, লেবু, মাছ-মাংস নয়; বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দরই বল্গাহীন। রমজান শুরুর পাঁচ-ছয় দিন আগে পণ্যের দরের এমন উড়াল গতিই বলে দিচ্ছে, এবার হবে আরও খরুচে রোজা।

গতকাল বৃহস্পতিবার হাতিরপুল কাঁচাবাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মাইনুল ইসলামের সঙ্গে। ছোলা, চিনিসহ রোজার কয়েক পদের পণ্য কিনতে গিয়ে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ। বললেন, ‘প্রতিবছর রোজার আগে সরকার বলে শুল্ক কমানো হয়েছে, দাম কমবে। তবে যারা বাজার করে, তারা জানে বাজারে কী হচ্ছে। শুধু মুখে বলে দিলে হয় না; কার্যকর করতে হয়।’

রোজায় পণ্যের দামের লাগাম টানতে সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল ও চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছিল। তবে সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য তিন পণ্যের শুল্ক ছাড়ে সরকারের টোটকা কাজে দেয়নি।

রোজার বাজারে আরও অস্বস্তি

১২ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

কয়েক বছর ধরে পবিত্র রমজান মাসে অন্তত কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারতেন মানুষ। কারণ, রোজা শুরুর সময় পেঁয়াজের মৌসুম চলে। এবার সেই পেঁয়াজের দরও চড়া।

রোজা শুরুর আগের দিন গতকাল সোমবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা। গত বছর রোজার আগে একই পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০ টাকার মধ্যে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তালিকা ধরে মোটা চাল, খোলা আটা, সয়াবিন তেল (বোতল), চিনি, মসুর ডাল (বড় দানা), অ্যাংকর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, দেশি রসুন, দেশি শুকনা মরিচ, রুই মাছ, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, ডিম (হালি) ও খেজুর—এই ১৫ পণ্যের মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত রোজার তুলনায় এবার ১০টি পণ্যের দাম বেশি; ৫টির কম।

যে পাঁচটি পণ্যের দাম কম, সেগুলোর মূল্য গত বছর অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তারপর কমেছে। তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়। ফলে সেগুলোর দামও চড়া বলা যায়।

যেমন ব্রয়লার মুরগি। ২০২২ সালের আগে ব্রয়লার মুরগি ছিল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। রোজা এলে দর কমত। কারণ, রোজায় রেস্তোরাঁগুলোতে মুরগির চাহিদা কমে যায়। এবার চিত্র ভিন্ন। দেশের বাজারে কয়েক মাস ধরে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ টাকার আশপাশে ছিল। এবার রোজায় দাম বেড়েছে। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২২০ টাকায়।

রোজা শুরুর আগের কয়েক দিনে এবার দাম বেড়েছে মসুর ডাল, অ্যাংকর ডাল, মুগডাল, ছোলা, চিনি, সোনালি মুরগি, গরুর মাংস, বিভিন্ন ধরনের মাছ, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, লেবু, শসা, ধনেপাতা ও ফলের দাম। কমেছে শুধু সয়াবিন তেলের দাম। সব মিলিয়ে বাজার চড়া।

বাচ্চা সংকটে খামার, নেপথ্যে ‘সিন্ডিকেট’

১২ মার্চ ২০২৪, সমকাল

তাড়াশ পৌর এলাকার মো. রমজান আলীর বাড়িতে প্রায় এক দশক ধরে পোলট্রি মুরগির খামার রয়েছে। প্রতিবার ৮০০ থেকে ৯০০ ব্রয়লার মুরগি তুলে বড় করে বিক্রি করেন। আগে ৩৫ দিনে বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধসহ খরচ পড়ত ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো। রমজানের সময় মুরগি বিক্রি করে আয় হতো ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। অথচ এখন সমান মুরগি পালনে খরচ হচ্ছে অন্তত ৩ লাখ টাকা। বেশি পুঁজি খাটিয়ে আয় হচ্ছে কম।

রমজান আলীর ভাষ্য, প্রায় চার সপ্তাহ ঘুরে কয়েক দিন আগে ডিলারের কাছ থেকে ৫৩ টাকা করে এক দিনের বাচ্চা কিনেছেন। এর দাম বছর দেড়েক আগেও ছিল ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। তিনি খামারটি চালু রাখতে পারলেও একই এলাকার গোলাম হাফিজ আট মাস ধরে তাঁর খামার বন্ধ রেখেছেন। বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং ঠিকমতো না পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তাঁর মতো খামার বন্ধ রেখেছেন পৌর এলাকার কোহিত মহল্লার খামারি শফিকুল ইসলাম, আজাদ হোসেন ও সাবেন আলীও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকদিন আগে ৫৩ টাকায় বিক্রি হওয়া এক দিনের বাচ্চা এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়ও মিলছে না। সাত-আট মাস ধরে মুরগির খামারে চলছে বাচ্চার সংকট। এতে চলনবিল অঞ্চলের বেশির ভাগ খামারে বাচ্চা তুলতে পারছেন না খামারিরা। বাচ্চা, খাবার, ওষুধসহ আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে। এতে অনেক খামার বন্ধ রয়েছে।

শুধু সিরাজগঞ্জ জেলায় চার হাজারের বেশি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগির খামার আছে। তবে নানা সংকটে প্রায় দুই হাজার খামার বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে দেড় হাজারই ব্রয়লার মুরগির জানিয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাচ্চা ও মুরগির খাদ্য সরবরাহকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের কারণে এমনটি ঘটছে। বাচ্চা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ পদ্ধতিতে খাবারও নগদ টাকায় কিনতে বাধ্য করে।

বাচ্চা ও খাবার সরবরাহ কমিয়ে কৌশলে খামারিদের পকেট কাটার অভিযোগ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু বাচ্চা বা খাদ্য নয়, অনেক সময় খামারে উৎপাদিত মুরগি বড় হলে তাদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। যদিও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন ভিন্ন তথ্য। তাঁর দাবি, সিরাজগঞ্জে ৮৪২টি ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে।

বাচ্চা ও মুরগির খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের কাছে খামারিরা জিম্মি হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ করেন খামারি শামীম হোসেন। তাঁর ভাষ্য, অল্প সময়ের মধ্যে বাচ্চা সংকট দূর না হলে ঈদে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির মাংসের বাজারে প্রভাব পড়বে। সংকটের কারণে তিনি চার মাস চাহিদা মতো বাচ্চা তুলতে পারেননি। আয় কমে যাওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

খেজুরের দাম বেশি বাড়ে দেশে এসে

১৩ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশের বাজারে বেশি বিক্রি হওয়া খেজুরের জাতের একটি হলো ইরাকের জাইদি খেজুর। দেশের আমদানিকারকেরা এবার প্রতি কেজি জাইদি খেজুর জাহাজভাড়াসহ আমদানি করেছেন ৯৬ টাকার আশপাশের দরে। বাজারে সেই খেজুর বিক্রি হচ্ছে তিন গুণের বেশি দামে।

প্রশ্ন হলো, দাম এতটা কেন বাড়ছে, কোথায় বাড়ছে? বিষয়টি নিয়ে জানতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের আমদানির উপাত্ত, আমদানিকারকদের ব্যয় ও বাজারদর বিশ্লেষণ করা হয়। কয়েকটি চালান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইরাক থেকে আমদানিতে জাহাজভাড়াসহ এক মেট্রিক টন বা এক হাজার কেজি জাইদি খেজুরের (প্যাকেটজাত) দাম পড়েছে ৮০০ মার্কিন ডলার (ডলারপ্রতি ১২০ টাকা ধরে কেজিপ্রতি ৯৬ টাকা)। এই খেজুরের দাম কেজিপ্রতি আড়াই ডলার ধরে (ট্যারিফ ভ্যালু বা শুল্ক আরোপের নির্দিষ্ট মূল্য) শুল্ককর আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে শুল্ককর পড়েছে কেজিতে প্রায় ১৩০ টাকা।

কয়েকটি চালান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯৬ টাকা কেজির খেজুরের ওপর ১৩০ টাকা দাঁড়ায় শুল্ককর। খুচরায় দাম হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

এ হিসাবে জাইদি খেজুর আমদানিতে কেজিপ্রতি আনুষ্ঠানিক ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২২৬ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহন ব্যয়, ব্যাংক ঋণের সুদসহ আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করার পর এক কেজি খেজুরে ব্যয় হয় ২৪০ টাকার মতো। তবে খেজুর আমদানিকারক থেকে পাইকারি, পাইকারি থেকে খুচরা—এভাবে কয়েকদফা হাতবদলে দাম বেড়ে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

খেজুরের দাম কেন এত বেশি বাড়ছে জানতে চাইলে ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ খেজুর যে দামে আমদানি করা হয়, শুল্ক দিতে হয় তার চেয়ে বেশি। খেজুর সংরক্ষণ ও পরিবহনের খরচ অন্যান্য পণ্যের তুলনায় বেশি।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার খেজুরের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং জাইদি খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারে অবশ্য দাম এর চেয়ে বেশি। ঢাকায় দেখা গেছে, অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের দাম ২০০ টাকার আশপাশে ছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্মারকে বলা হয়েছে, দেশে আমদানি করা বিভিন্ন মানের খেজুরের আমদানি মূল্য, আরোপিত শুল্ক, কর ও আমদানিকারকদের অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

আমদানি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ২০২২ সালে খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ককর বাড়িয়ে দেয়। খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট), ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ছিল। মোট করভার প্রায় ৫৯ শতাংশ। সম্প্রতি সরকার রোজা উপলক্ষে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। এতে কেজিপ্রতি দর ১৩ থেকে ৩৩ টাকা কমার কথা। কিন্তু কমেনি।

এক্সিমের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে পদ্মা ব্যাংক

মার্চ ১৫, ২০২৪, বণিক বার্তা

শরিয়াহ্ভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ব্যাংক দুটির পরিচালনা পর্ষদ এরই মধ্যে একীভূতকরণ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এ দুই ব্যাংকের মধ্যে আগামী সোমবার সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এটি সই হবে বলে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন।

ব্যাংক দুটির পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল এক্সিম ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পদ্মা ব্যাংক অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন হলে এক্সিম ব্যাংকের একাধিক পরিচালক এর বিরোধিতা করেন। তবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা শেষে পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়টি অনুমোদন পায়। এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদে প্রস্তাব পাসের পর দুপুরে জরুরি সভা ডাকে পদ্মা ব্যাংক পর্ষদ। সভা থেকে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। পরে ব্যাংক দুটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে জানানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংকটগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংকের যাবতীয় খেলাপি ঋণ সরকার গঠিত একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি কিনে নেবে। এতে একীভূতকরণের ফলে দুই ব্যাংকের আমানতকারীদের কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো ঝুঁকি থাকছে না। আবার পদ্মার কোনো খেলাপি ঋণ না থাকায় এক্সিম ব্যাংকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

একীভূতকরণের মাধ্যমে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়ে চলতি বছরের শুরুতে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনায় দুর্বল ব্যাংকগুলো সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে একীভূতকরণের পদ্ধতি ও দায়-দেনা নির্ধারণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখনো কোনো নীতিমালা ঘোষণা করা হয়নি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ নীতিমালা জারির প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের একীভূতকরণের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে। একীভূতকরণ শেষে বিলুপ্তি ঘটবে পদ্মা ব্যাংকের। আর ব্যাংকটির বিদ্যমান দায়-দেনা, সম্পদ ও জনবল এক্সিম ব্যাংকের বলে পরিগণিত হবে।

আইনের বেড়াজালে বন্দি ভোক্তার প্রতিকার

১৫ মার্চ ২০২৪, সমকাল

অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্করে পদে পদে ঠকছেন ক্রেতা। কষ্টের আয়ে থলে ভরে বাসায় ফিরছেন ‘বিষ’ কিনে। শুধু তাই নয়, কাঙ্ক্ষিত দাম নিয়েও গছিয়ে দিচ্ছে ভেজাল কিংবা নিম্নমানের পণ্য। হররোজ মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য হাজির হচ্ছে নতুন মোড়কে। ব্যবসায়ীদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে শহরকেন্দ্রিক যা দু-একটি অভিযোগ ভোক্তারা দিচ্ছেন; কিন্তু যথাযথ প্রতিকার পাচ্ছেন না ভোক্তা অধিকার সুরক্ষার প্রতিষ্ঠান থেকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় নীতি, বিধিবিধান, প্রশাসনিক কাঠামো– সবকিছু এখন ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। তারা নানা কৌশলে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের পকেট কাটছেন। বিপরীতে ভোক্তার স্বার্থ দেখভালের একমাত্র সক্রিয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হাত-পা যেন বাঁধা আইনের ফাঁকফোকরে।

 দিন দিন অভিযোগের পাহাড় জমলেও সংস্থাটি অভিযানে যেতে পারে না লোকবল সংকটে। আবার বিদ্যমান আইনে ই-কমার্স, স্বাস্থ্যসেবা, টেলিকম, বাড়িভাড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত নেই। এসব খাতে প্রতারিত হলেও ভোক্তার সামনে খোলা নেই প্রতিকার চাওয়ার কোনো পথ।

অবশ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোক্তার স্বার্থেই আইনে কিছু সংস্কার প্রক্রিয়াধীন। বিদ্যমান আইনে আরও পাঁচটি সেবা খাত যুক্ত হবে। জনবল সংকট নিরসনেও সৃষ্টি করা হবে নতুন পদ।

বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে আবার ঘুরবে চাকা

১৪ মার্চ ২০২৪, সমকাল

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের চাকা ঘুরছে আবার। বন্ধ থাকা ২০টি পাটকলের সবক’টিই পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসছে পাটকলগুলো। কাজে ফিরছেন হাজারো বেকার শ্রমিক। অনেকেই আশা করছেন, রপ্তানি পণ্যের তালিকায় আবার দাপট বাড়বে পাট ও পাটপণ্যের। অভ্যন্তরীণ বাজারেও বাড়বে ব্যবহার। চাহিদা বাড়ার ফলে আবাদ ও উৎপাদন বাড়বে পাটের।

প্রথম পর্যায়ে আজ ছয়টি পাটকল বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পাট দিবসের অনুষ্ঠানে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন তিনি। এই পাটকলগুলো আগেই ইজারার মাধ্যমে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ইজারা হয়েছে ৩০ বছরের জন্য। মালিকানার পরিবর্তে মাসিক ভাড়াভিত্তিক ব্যবহার হবে। আগের যেসব শ্রমিক কাজে আগ্রহী কিংবা সক্ষম, নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার শর্ত রয়েছে ইজারা চুক্তিতে।

ছয়টি পাটকল হচ্ছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলস, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কেএফডি, সিরাজগঞ্জের রায়পুরের জাতীয় জুট মিলস, যশোরের রাজঘাটের জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনার দৌলতপুর জুট মিলস ও যশোরের রাজঘাটের কার্পেটিং জুট মিলস লিমিটেড।

এসব পাটকলের মধ্যে ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলটি ইজারা দেওয়া হয়েছে বেসরকারি মালিকানাধীন জুট অ্যালায়েন্সের কাছে। জানতে চাইলে জুট অল্যায়েন্সের মুখ্য কর্মকৌশল কর্মকর্তা (সিএসও) আল কাজী গতকাল বুধবার সমকালকে বলেন, ২০ ধরনের বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করবেন তারা। এর মধ্যে উচ্চ চাহিদার লেমিনেটেড হেসিয়ান রয়েছে। উৎপাদিত সব পণ্যই রপ্তানিমুখী।

দৌলতপুর জুট মিলের ব্যবস্থাপনায় এসেছে বেসরকারি খাতের ফরচুন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনি ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি। পাটপণ্যের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ওই পাটকলে জুতাও তৈরি করবে। গত ৪ সেপ্টেম্বর মূল কারখানাসহ পাটকলের প্রায় ১৪ একর জায়গা ইজারা দেওয়া হয় ফরচুন গ্রুপকে। মাসিক সাড়ে ৯ লাখ টাকায় ৩০ বছরের জন্য এই ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর ১০ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানো হবে। মিলটিতে উৎপাদিত পাটপণ্য ভারত, তুরস্ক, কানাডা ও ইউরোপে রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ক্রমাগত লোকসানের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৭টি পাটকলের সব এখন বন্ধ। ২০২০ সালের ১ জুলাই ২৫টি পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। দুটি পাটকল বন্ধ হয় আরও আগেই। বন্ধ হওয়ার আগে ২৫টি পাটকলে ২৬ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। ৩৪ হাজার ৭৫৭ জন স্থায়ী শ্রমিকের পাওনা বাবদ নগদে ও সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এসব পাটকলে বস্ত্র ও পাটের ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিঙ্কেজ পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সবক’টি মিল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হলে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

রেমিট্যান্সের ওপর কর আরোপের পরামর্শ আইএমএফের

১৫ মার্চ ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

সরকারকে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এবং বিভিন্ন ধরনের বন্ডের ওপর দেওয়া কর সুবিধা প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

দেশে রিজার্ভ সংকটের এই সময়ে রেমিট্যান্স আনতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের অংশ হিসেবে বর্তমানে রেমিট্যান্সের ওপর পুরোপুরি কর অব্যাহতি রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রবাসী আয়ের ওপর ২.৫৮ শতাংশ নগদ প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে।

সংস্থাটির ঢাকা সফররত মিশন বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে ‘ইনকাম ট্যাক্স এক্সপেনডিচার’ শীর্ষক তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয় বলে জানিয়েছে বৈঠক সূত্র।

একইভাবে সরকারের বিভিন্ন ধরনের বন্ড, এমনকি শেয়ারবাজার থেকে আয়ের ওপর দেওয়া করছাড়ও বাতিল করার পক্ষে আইএমএফ।

বাণিজ্য মেলার অবকাঠামো

শুরুতেই নকশায় গলদ, আরও লাগবে ৪২৭ কোটি টাকা

১৬ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়াই ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার জন্য অবকাঠামো বানানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পর্যাপ্ত পার্কিং, গুদামঘর, বিদেশিদের থাকার ব্যবস্থা না রেখে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।

দুই বছর যেতে না যেতেই এখন সেসব কাজ নতুন করে করতে চায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এ জন্য খরচ হবে আরও ৪২৭ কোটি টাকা। সরকারি কোষাগার থেকে এ টাকা চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এ সংস্থা।

সরকারি নথি বলছে, একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে কেন্দ্র করে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে, তা পূর্বাচলে নেই। বাণিজ্য মেলা এলাকায় পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। পণ্য রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়নি গুদামঘর (ওয়্যারহাউস)। মেলা প্রাঙ্গণের আশপাশে বিদেশি ক্রেতা ও দেশি বিক্রেতাদের জন্য করা হয়নি বাসস্থানের (ডরমিটরি) ব্যবস্থা। পণ্য প্রদর্শনীর জন্য করা হয়নি পর্যাপ্ত এক্সিবিশন হল। কোনো বড় সম্মেলন বা বড় অনুষ্ঠান করার জন্য নেই মিলনায়তন।

মাংসসহ ২৯ পণ্যের দাম বেঁধে দিলো সরকার

১৫ মার্চ ২০২৪, সমকাল

পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ২৯টি কৃষি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। শুক্রবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে গরুর মাংস কেজিতে ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা এবং খাসির মাংস এক হাজার ৩ টাকা ৫৬ পয়সা দাম বেঁধে দেওয়া হয়।

এছাড়া কেজিতে মুগ ডালের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৫ টাকা ৪১ পয়সা, মাসকালাই ১৬৬ টাকা ৫০ পয়সা, ছোলা (আমদানি) ৯৮ টাকা ৩০ পয়সা, মসুর ডাল (উন্নত) ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা, মসুর ডাল (মোটা) ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা, খেসারি ডাল ৯২ টাকা ৬১ পয়সা, পাঙাস (চাষের মাছ) ১৮০ টাকা ৮৭ পয়সা, কাতল (চাষ) ৩৫৩ টাকা ৫৯ পয়সা।

ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা, সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা, ডিম প্রতি পিস ১০ টাকা ৪৯ পয়সা, দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা ৪০ পয়সা, দেশি রসুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা ৮১ পয়সা, আমদানি করা আদা প্রতি কেজি ১৮০ টাকা ২০ পয়সা, শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ৩২৭ টাকা ৩৪ পয়সা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ টাকা ২০ পয়সা, বাঁধাকপি কেজিপ্রতি ২৮ টাকা ৩০ পয়সা, ফুলকপি কেজিপ্রতি ২৯ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কেজিপ্রতি বেগুন ৪৯ টাকা ৭৫ পয়সা, শিম ৪৮ টাকা, আলু ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা, টমেটো ৪০ টাকা ২০ পয়সা, মিষ্টি কুমড়া ২৩ টাকা ৩৮ পয়সা, জাহিদি খেজুর ১৮৫ টাকা ৭ পয়সা, চিড়া (মোটা) ৬০ টাকা, প্রতি হালি সাগর কলা ২৯ টাকা ৭৮ পয়সা ও বেসন ১২১ টাকা ৩০ পয়সা দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

একীভূত হয়েছিল ১৪ বছর আগে, এখনো ধুঁকছে ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক

১৮ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

অপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত করার সিদ্ধান্ত কতটা ভুল হতে পারে, তার বড় উদাহরণ সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) পিএলসি। দেড় যুগ আগে দেশের দুটি বিপর্যস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে (বিএসআরএস) একীভূত করে গঠন করা হয়েছিল বিডিবিএল, যা ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে।

বিএসবি-বিএসআরএস একীভূত হয়ে নতুন নামে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু পুরোনো খেলাপি ঋণের বোঝা বয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে দেওয়া ঋণও খেলাপি হয়ে গেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসাসফল হতে পারেনি; বরং ধুঁকছে খুব। ব্যাংকটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার পরও এর কোনো উন্নতি ঘটেনি। এটি ব্যাংকিং ব্যবসার পরিবর্তে শেয়ার ব্যবসা ও ভবন ভাড়া বাবদ পাওয়া আয়ের ওপর নির্ভর করেই কোনোমতে টিকে আছে।

বিডিবিএলের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, একীভূত হওয়ার পর বাণিজ্যিক চরিত্রে ফিরে ‘আগ্রাসী ব্যাংকিং’ করার কারণেই মূলত প্রতিষ্ঠানটি দুর্দশায় পড়েছে। যে কারণে ঋণের ৪২ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। গত ডিসেম্বরের শেষে বিডিবিএলের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৯৮২ কোটি টাকা।

গৃহিণীদের ব্যাংক হিসাবে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের চেয়ে বেশি অর্থ!

মার্চ ১৮, ২০২৪, বণিক বার্তা

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ২০২৩ সাল শেষে গৃহিণীদের নামে জমা ছিল ২ লাখ ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকার আমানত। পরিমাণের দিক থেকে তা দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের আমানতের চেয়েও বেশি। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের ব্যাংক হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ ২ লাখ ৬৩৯ কোটি টাকা। আবার আমানতে প্রবৃদ্ধির দিক থেকেও দেশের ব্যবসায়ী, প্রবাসী, শিল্পপতি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীদের চেয়ে গৃহিণীরা এগিয়ে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০১৯ সালেও গৃহিণীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত তাদের আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৬৯ শতাংশ।

যদিও বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা ও জরিপ বলছে, দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ নারীর কাছে এখনো ব্যাংক সেবা পৌঁছেনি। শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের বিচারেও দেশের নারীরা এখনো বেশ পিছিয়ে। আবার যৌক্তিক মজুরির ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে অধিকার নিয়েও শোনা যায় নারীর বঞ্চনার অনেক অভিযোগ। উদ্যোক্তা হিসাবে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও নারীরা ব্যাংকগুলোর বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ রয়েছে। এত অপ্রাপ্তি, বৈষম্য, বঞ্চনা ও উপেক্ষার গল্পের বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে ব্যাংকে গৃহিণীদের গচ্ছিত আমানতে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন শিডিউলড ব্যাংকস স্ট্যাটিস্টিক্সের সর্বশেষ সংখ্যার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা ছিল ব্যক্তিশ্রেণীর। চাকরিজীবী, গৃহিণী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, অনিবাসী বাংলাদেশী, কৃষক ও মৎস্যজীবী, অবসরে যাওয়া ব্যক্তি, ছাত্র, বাড়ির মালিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের নামে এ আমানত ব্যাংকে জমা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৯২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার আমানত রয়েছে চাকরিজীবীদের। আমানতের স্থিতির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে গৃহিণী বা বেগমরা। সে হিসাবে ব্যক্তিশ্রেণীর আমানতের ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশের মালিকানাই গৃহিণীদের। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২ লাখ ৬৩৯ কোটি টাকার আমানত রয়েছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের ব্যাংক হিসাবে। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ স্বাধীন পেশাজীবীদের ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ৬৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা।

দেশে রেস্তোরাঁর সংখ্যা কত, ব্যবসা কত টাকার, জানেন কি

১৮ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর মোড়ে মোড়ে এখন রেস্তোরাঁ। জেলা ও উপজেলা শহরেও রেস্তোরাঁ বাড়ছে। বিনিয়োগ করছেন তরুণ উদ্যোক্তারা।

রেস্তোরাঁগুলোতে গ্রাহকও বাড়ছে। পরিবার নিয়ে, স্বজনদের নিয়ে, বন্ধুদের নিয়ে মানুষ রেস্তোরাঁয় খেতে যাচ্ছেন। ফলে রেস্তোরাঁগুলো দেশের অর্থনীতিতে বড় অঙ্কের মূল্য যোগ করছে, কর্মসংস্থান তৈরি করছে মানুষের।

এক দশকে রেস্তোরাঁ ৫৮% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজারে। নিরাপদ করতে সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ।

সমস্যা হলো, অনেক রেস্তোরাঁ হয়েছে আবাসিক ভবনে। অনেক রেস্তোরাঁ হয়েছে অফিস হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদন নেওয়া ভবনে। অনেক রেস্তোরাঁর নানা ধরনের সনদ ও অনুমোদনে ঘাটতি আছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও মানসম্পন্ন খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে অনেক রেস্তোরাঁয়।

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর রেস্তোরাঁর অনুমোদন ও অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি সামনে আসে। ওই ভবনে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল, কিন্তু ভবনটিতে রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদনই ছিল না।

আগুনে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ স্বজনদের নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে খেতে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ ভবনে থাকা রেস্তোরাঁগুলোতে কাজ করে সংসার চালাতেন।

রেস্তোরাঁশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কীভাবে পুরো ব্যবস্থা নিরাপদ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

আদিল মুহাম্মদ খান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স

বেইলি রোডের আগুনের পর রাজধানীজুড়ে অভিযান শুরু করে সরকারের পাঁচ সংস্থা—রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। সংস্থাগুলোর ‘বিচ্ছিন্ন’ অভিযানে রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলা, সিলগালা করে দেওয়া, কর্মীদের গ্রেপ্তার ও জরিমানার ঘটনা ঘটে। এর বাইরে সারা বছরই রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থা। রেস্তোরাঁর মালিকদের অভিযোগ, সারা বছর সংস্থাগুলোর অসাধু কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই তাঁদের চলতে হয়।

আরও পড়ুন

‘রেস্তোরাঁর অনুমতি কারা দিল, তাঁদের গ্রেপ্তার করুন’

‘রেস্তোরাঁর অনুমতি কারা দিল, তাঁদের গ্রেপ্তার করুন’

নগর–পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিরা বলছেন, রেস্তোরাঁয় উদ্যোক্তাদের কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এতে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনা দরকার। কিন্তু বিচ্ছিন্ন অভিযানে কোনো সমাধান আসবে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, এক দিনে সব অনিয়ম বন্ধ করা যাবে না। রেস্তোরাঁশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কীভাবে পুরো ব্যবস্থা নিরাপদ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

রেস্তোরাঁগুলো বছরে কত টাকার কেনাবেচা করে, তার হিসাবও উঠে এসেছে বিবিএসের জরিপে। বলা হয়েছে, এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা (গ্রস আউটপুট), যা এক দশক আগের তুলনায় তিন গুণের বেশি।

রেস্তোরাঁ কত

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২১ সালে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ করে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান জানতে জরিপটি করা হয়।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৫২টি। বাকি সব ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন।

আরও পড়ুন

রেস্তোরাঁয় ভরা ঢাকার এসব ভবন আসলে ‘টাইম বোমা’: স্থপতি ইকবাল হাবিব

রেস্তোরাঁয় ভরা ঢাকার এসব ভবন আসলে ‘টাইম বোমা’: স্থপতি ইকবাল হাবিব

বিগত এক দশকে বহু তরুণ রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়েছেন। তাঁদের একজন ঢাকার প্রনীল শামসাদ জাদিদ। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে তিনি চাকরি করতে যাননি। বন্ধুদের মতো বিদেশেও যাননি; বরং পরিবারের কাছ থেকে মূলধন নিয়ে রেস্তোরাঁ করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তিনটি ব্র্যান্ড নামের অধীনে তাঁর ১১টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। বেইলি রোডে আগুনের পর অভিযানে তাঁর দুটি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সন্তানেরা এখন বিভিন্ন এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে যাওয়ার মধ্যেই বিনোদন পায়।

শরীফ আল নূর, চিকিৎসক

প্রনীল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেস্তোরাঁ করার সময় কেউ বলেনি এত অনুমোদন লাগবে। আমরা জানতাম ট্রেড লাইসেন্স হলেই হয়। এখন ১০-১১টি সনদের কথা বলা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এখন যে আচরণ করা হচ্ছে, তা অমানবিক। মনে হচ্ছে দেশে না থেকে বিদেশে চলে গেলেই ভালো হতো।

বিনিয়োগ বাড়ায় রেস্তোরাঁয় কর্মসংস্থানও দ্বিগুণ হয়েছে। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, রেস্তোরাঁ খাতে যুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ ৭২ হাজার। এক দশক আগে সংখ্যাটি ছিল ৯ লাখের মতো। শুধু পুরুষ নন, রেস্তোরাঁগুলোতে এক লাখের বেশি নারীও কাজ করেন। কর্মীরা রেস্তোরাঁগুলো থেকে বছরে ৩১ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা পান বেতন, মজুরি ও অন্যান্য ভাতা পান। একেকজন কর্মী বছরে গড়ে পান ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

বাংলাদেশে পথশিশু রয়েছে ৩৪ লাখ

মার্চ ১৮, ২০২৪, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে ৩৪ লাখ পথশিশু রয়েছে। পথশিশুরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। নিরাপত্তহীনতা, খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই তারা বেড়ে উঠছে। তাদের সুন্দর শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে।

‘‌দ্য কোয়ালিটি স্টাডি অন চিলড্রেন লিভিং ইন স্ট্রিট সিচুয়েশনস ইন বাংলাদেশ ২০২৪’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বিদেশি ঋণ দুই বছরে বেড়ে হবে দ্বিগুণ

১৯ মার্চ ২০২৪, সমকাল

বিদেশি ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্কলন হলো, আগামী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এ বাবদ ব্যয় দাঁড়াবে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আসল ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি এবং সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মানে দুই বছরের মাথায় বিদেশি ঋণ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হবে। ক্রমবর্ধমান পরিশোধের চাপ মাথায় রেখে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করতে হচ্ছে সরকারকে।

সরকারের পক্ষে বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধের দায়িত্বে রয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-ইআরডি। পরিশোধের চাপ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্ধারিত ব্যয়সীমা ১৬ হাজার কোটি টাকা বাড়াতে চিঠি দিয়েছে ইআরডি। ইআরডি সচিব মো. শাহ্‌রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিদেশি ঋণের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অধিক হারে বৈদেশিক ঋণ আহরণ করা হয়েছে। ফলে পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তাছাড়া নতুন ঋণের পরিশোধও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

কৃষি বিপণনের ‘যৌক্তিক’ দামে বাজারে তালগোল

২০ মার্চ ২০২৪, সমকাল

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ২৯ পণ্যের দর বেঁধে দেওয়া নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা চলছে। রাজধানীসহ দেশের কোথাও নেই ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণের প্রভাব। উল্টো সব পণ্যের দাম আরও চড়েছে। পণ্যের দর বেঁধে দিয়েই ‘বিচারিক ক্ষমতা’ নেই– এমন ধুয়া তুলে পুরোদমে মাঠছাড়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বাজারের এমন অস্থির সময়েও বন্ধ অধিদপ্তরের ‘কৃষকের বাজার’। এমনকি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) পরিচালিত বাজারেও মানা হচ্ছে না নির্ধারিত দাম। অন্য মন্ত্রণালয় যেখানে নিজেরাই সুলভ দরে পণ্য বিক্রি করছে, সেখানে বাজারে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত রাখার মতো তেমন পদক্ষেপ নেই কৃষি মন্ত্রণালয়ের।

উল্টো কোনো বাতচিৎ ছাড়াই হঠাৎ ২৯ পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে বাজারের চলমান আগুন দামে যেন ঘি ঢেলেছে। বিতর্কের মুখে পড়েছে মূল্য তালিকা; তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। অসামঞ্জস্যপূর্ণ এ তালিকা ধরে অভিযানে গিয়ে তালগোল পাকাচ্ছে অন্য সংস্থা। ব্যবসায়ীদের যুক্তির মুখে হার মানতে হচ্ছে কখনও কখনও। ফলে রোজার আগে থেকেই বিভিন্ন পণ্যের দামে উত্তাপ থাকলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। সরকারের হুঁশিয়ারি, অভিযান আর পণ্য আমদানিতেও বাজার পরিস্থিতি বাগে না আসায় ক্রেতারা ক্ষোভে ফুঁসছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনগড়া মূল্য তালিকার কারণে বাজার হয়ে যাচ্ছে আরও নিয়ন্ত্রণহীন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে দ্রুত তাদের দরের তালিকা নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে বসা দরকার। অন্যদিকে বেঁধে দেওয়া ২৯ পণ্যের দরকে অসার, অর্থহীন ও কল্পনাপ্রসূত বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সংগঠনটি বলেছে, যথেষ্ট যাচাই-বাছাই ও বিবেচনা ছাড়াই সরকারি সংস্থাটি দাম নির্ধারণ করেছে। এ জন্য তারা প্রজ্ঞাপন স্থগিতের দাবি জানিয়েছে।

পরের বেলা ভাত জুটবে কিনা জানে না ৩৪ লাখ মানুষ

২০ মার্চ ২০২৪, সমকাল

খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে অনেকের জন্য। একবেলা খাবারের শেষে পরের বেলার চালের জোগান নেই– দেশে এ রকম পরিবারের হার ২ শতাংশ। আটা মজুত থাকে না ৬০ শতাংশ পরিবারে। নিত্যপণ্যের মধ্যে ডালের সংস্থান নেই ১৯ শতাংশ পরিবারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

খানা আয় ও ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পরিবারের সংখ্যা এখন ৪ কোটি ১০ লাখ। সংস্থার জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে দেশের ৩৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮০ জন মানুষের একবেলা খাওয়ার পর পরের বেলার চালের জোগান নেই।

খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩ নামে এ প্রতিবেদন গত শুক্রবার বিবিএসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়, খাদ্য এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ দেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে বড় উদ্বেগের বিষয়। এতে আরও বলা হয়, ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে জর্জরিত জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে কোনো দেশ অর্থনীতির ভিত গড়তে পারে না। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত হতে চাইলে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিতে ব্যাপক পরিমাণে কার্যকর বিনিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জানতে চাইলে বিবিএসের সংশ্লিষ্ট জরিপের প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম সমকালকে বলেন, মজুত বলতে পরিবারের কতটুকু খাদ্য আছে, তা দিয়ে কীভাবে চলতে পারে– তা বোঝানো হয়েছে। সরাসরি প্রশ্নের জবাব থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যের মজুত নিয়ে একাধিক সংস্থার কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে। তবে পরিবার পর্যায়ে খাদ্য পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা দেশে এটিই প্রথম। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত এ ধরনের জরিপও এটিই প্রথম। এ কারণে খাদ্য গ্রহণের এ নাজুক পরিস্থিতির প্রবণতা আগের তুলনায় বাড়ল, না কমলো– তা তুলনা করা যাচ্ছে না।

জরিপে নিত্যপণ্য হিসেবে প্রধান খাদ্য চাল, আটা ও মসুর ডালের মজুত জানতে চাওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২ শতাংশ পরিবারে জীবিকা নির্বাহের জন্য চালের কোনো মজুত নেই। অর্থাৎ আগামী বেলার খাবার অনিশ্চিত এসব পরিবারের। সিটি করপোরেশনের বাইরের চিত্র আরও খারাপ। গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চল মিলে ২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে চালের কোনো মজুত নেই।

প্রায় ৬৯ শতাংশ খানাপ্রধান বলেছেন, কেনার মাধ্যমে তারা চালের মজুত করে থাকেন। বাকিরা নিজস্ব উৎপাদন এবং সরকারি সংস্থা থেকে চাল পেয়ে থাকেন।

আটার ক্ষেত্রে মজুত আরও কম। ৬০ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারে আটার মজুত নেই। মজুত থাকে না গ্রামের ৬৮ শতাংশ পরিবারের। যেসব পরিবারে পণ্যটির মজুত থাকে, তাদেরও চলে সাড়ে ৯ দিন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান খাদ্য হিসেবে চালের ওপর নির্ভরতার কারণে আটার মজুত এত কম হয়ে থাকতে পারে। একইভাবে মসুর ডালের মজুত নেই ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারে।

লাভজনক প্রতিষ্ঠান এখন লোকসানে

২০ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দীর্ঘদিন ধরে লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। তাদের আয়ের প্রধান উৎস ফেরিতে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট আয়ের ৯৪ শতাংশই এসেছিল ফেরি খাত থেকে। তবে এই খাতে আয় ব্যাপক হারে কমে গেছে। এতে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানিয়েছে, গত অর্থবছরে ফেরি খাতে আয় কমেছে ২৩ শতাংশ, যার পরিমাণ ৯৩ কোটি টাকা। এতে ওই অর্থবছরে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছে ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর আগে কখনো তারা এত বড় লোকসানে পড়েনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক বছরে পদ্মাসহ কয়েকটি সেতু চালু হওয়ায় ফেরি খাতে বিআইডব্লিউটিসির আয় কমছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিআইডব্লিউটিসিকে লোকসান থেকে তুলে আনা কঠিন হবে। কারণ, আয়ের প্রধান উৎস ফেরি খাত সংকুচিত হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এই খাতে আয় আরও কমতে পারে। কারণ, ফেরিতে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার নিয়মিত কমছে।

১৩ অর্থবছরের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে বিআইডব্লিউটিসি প্রথম লোকসানে পড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৬ কোটি টাকা লোকসান হয়। পরের বছর লাভ করলেও গত দুই অর্থবছর টানা লোকসান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিআইডব্লিউটিসিকে লোকসান থেকে তুলে আনা কঠিন হবে। কারণ, আয়ের প্রধান উৎস ফেরি খাত সংকুচিত হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এই খাতে আয় আরও কমতে পারে। কারণ, ফেরিতে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার নিয়মিত কমছে।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতে একসময় ফেরিপথে পদ্মা নদী পাড়ি দিতে হতো। ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালুর পর এই পথে যাতায়াতের অন্যতম নৌপথ শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-মাঝিরকান্দি বন্ধ হয়ে যায়।

উত্তরাঞ্চলে খুলছে সম্ভাবনার দুয়ার

২৩ মার্চ ২০২৪, সমকাল

পিছিয়ে পড়া উত্তরাঞ্চলে অনেকেই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখান না। তাই গড়ে ওঠেনি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, তৈরি হয়নি নতুন উদ্যোক্তা। ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি পিছিয়ে রয়েছে এখানকার জেলাগুলো। তবে এবার খুলছে সম্ভাবনার দুয়ার।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) উত্তরের বেশ কয়েকটি জেলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে। ইতোমধ্যে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে যমুনা নদীর তীরে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম শতভাগ সবুজ অর্থনৈতিক অঞ্চল। আর সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামে হচ্ছে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ ছাড়া রাজশাহী, রংপুর, নাটোর, পঞ্চগড়, দিনাজপুর এবং গাইবান্ধায় প্রকল্পের কাজ প্রক্রিয়াধীন।

ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পরও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বাস্তবায়ন হলে এ জনপদের মানুষের জন্য তা হবে আশীর্বাদ।

ইতোমধ্যেই এ অঞ্চলের নীলফামারী ও পাবনায়  গড়ে ওঠা দুটি ইপিজেড পেয়েছে দারুণ সাফল্য। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি এই অঞ্চলে গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।

অবস্থানগত কারণে কুড়িগ্রামের সঙ্গে ভারত ও ভুটানের যোগাযোগ বেশ ভালো। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল, কাঁচামাল তৈরির সম্ভাবনা এবং মানবসম্পদ মিলিয়ে কুড়িগ্রামে যৌথ অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির  প্রচেষ্টায় যুক্ত রয়েছে বেজা।

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বেজা ২০১৮ সালে এই অঞ্চলকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দেয়। বিভিন্ন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোক্তা যৌথভাবে এর মালিকানায় রয়েছে। ১ হাজার ৪১ একর জায়গায় এ অঞ্চল গড়ে উঠছে।

এখানে ভূমি উন্নয়নের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। দেশি ও বিদেশি ১৪টি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ১১০ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছে। বাকি জমির জন্য সৌদি আরব, জাপান, চীন, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নরওয়েসহ কয়েকটি দেশের বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে যোগাযোগও করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে ভূমি উন্নয়নের কাজে প্রকৌশলগত সহায়তা দিচ্ছে জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (জেডিআই)।

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ১৪টি প্রতিষ্ঠান বস্ত্র, তৈরি পোশাক, ডাইং ফ্যাক্টরি, সুতা উৎপাদন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ পণ্য ও ইলেট্রিক পণ্য উৎপাদনের জন্য প্লট বরাদ্দ পেয়েছে। এখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৫ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে তারা মনে করছেন। তাদের মূল এলাকায় সব মিলিয়ে ৪০০ প্লট থাকছে।

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলায় মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা যে হারে উন্নতি হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। ওই সেতুর পর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এ জনপদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এখন আমাদের আশার আলো এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। এগুলো বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের বেকার সমস্যা দূর হবে। বিনিয়োগকারীরাও কাঁচামাল আনা ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে বাড়তি সুবিধা পাবেন।

এদিকে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সম্ভাবনা যাচাই করতে ভুটানের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি কুড়িগ্রাম ঘুরে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুড়িগ্রাম জেলার বৃহৎ এলাকা চরাঞ্চল। এখানকার পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য জেলায় কলকারখানা প্রয়োজন। এখান থেকে ভুটান অনেক কাছে। ফলে ভুটানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত হবে। মানুষের সক্ষমতা বাড়বে।

কুড়িগ্রামের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বেজা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ৮০ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ভুটানের ফুন্টশোলিং এলাকার দূরত্ব কম। সহজে যাতায়াত করা যায়। ফলে ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে জেলার আর্থসামাজিক অবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত হবে। সর্বোপরি জেলার স্থল সীমান্ত পথে বহুল প্রতীক্ষিত ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু ত্বরান্বিত হবে।

পরিকল্পনায় যেসব অঞ্চল

বগুড়ার শাজাহানপুরে ২৫১ একর জমিতে তৈরি হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বেজা এবং জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এটা নিয়ে কাজ করছে। শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের পাঁচটি মৌজার জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ জানান, বগুড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই মুহূর্তে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু জটিলতা রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হলে সহজেই সমাধান করা যাবে। আর সরকারের অনুমতি পেলে প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমেও বাস্তবায়ন সম্ভব।

নাটোরের লালপুরের আরজী-বাকনাই রসুলপুর, বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর, বালিতিতা, লালপুর ও চরজাজিরা মৌজায় পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চর এলাকায় ৩ হাজার ৪১৮ একর সরকারি খাসজমির ওপর প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের এলাকা থেকে পদ্মা নদীর দূরত্ব ৬ কিলোমিটার, ঈশ্বরদী জংশন থেকে ১৫ কিলোমিটার ও ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কৃষিনির্ভর এলাকা হওয়ায় এখানে কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা বিকাশের সুযোগ রয়েছে। গ্যাস ও প্রয়োজনীয় কাঁচামালের পর্যাপ্ত সুবিধা পাওয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে বেজা চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, নাটোরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে এলাকার প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এখানে কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উপযোগী স্থান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালপুরে পদ্মার চরে প্রস্তাবিত ‘নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ২০১৫ সালেই অনুমোদন দেন। এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো বাধা নেই।

রাজশাহীর পবা উপজেলার কয়রা, জয়কৃঞ্চপুর, মাড়িয়া, বালানগর ও ভবানীপুর এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। মোট জমির পরিমাণ ২০৪ একর। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি রাজশাহীর হারিয়ান রেলস্টেশন থেকে ১০ কিলোমিটার এবং বিমানবন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। স্থানটির সঙ্গে সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগের সুবিধা রয়েছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, কৃষিপ্রধান রাজশাহী অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যের উৎপাদন হয়। এখানে আমসহ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে উঠলে স্থানীয় কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল রাজশাহীর পবায় করা যাবে কিনা, তা জানার জন্য চার মাস আগে আমাদের মতামত চাওয়া হয়। আমরা করা যেতে পারে বলে মতামত দিয়েছি। পবায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য খাস জমি আছে। এটা হলে রাজশাহীতে শিল্প-কারখানা হবে।

তিনি বলেন, এই এলাকার উপযোগী এবং কৃষিনির্ভর শিল্প হলে এলাকার আম, টমেটো ও সবজির বহুমুখী ব্যবহার হবে। এতে এলাকার অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টেপামধুপুর ইউনিয়নের হয়বৎ খাঁ মৌজায় ২৫৪ একর খাস জমিতে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে। ইতোমধ্যে জমি নির্বাচনের কাজ চূড়ান্ত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ-সংক্রান্ত পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান এ তথ্য জানান।

রংপুরের গুরুত্ব তুলে ধরে গবেষক ও লেখক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, এ বিভাগটি দারিদ্র্যের শীর্ষে আছে। এখানে উন্নয়ন বৈষম্য কমেনি। রংপুর বিভাগের সঙ্গে ঢাকা বিভাগের বৈষম্য তিন গুণ। ঢাকা বিভাগের দারিদ্র্য ১৬ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী পৌর বন্দর থেকে জেলা শহর পর্যন্ত ৫০০ একর জমিতে সরকারি উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের ১ হাজার ৮৪২ একর জমিতে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (আরইপিজেড) স্থাপনের এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় এ জমি বেপজার অনুকূলে হস্তান্তরের নির্দেশনা দেয়।

রয়েছে নানা জটিলতা

উত্তরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করার ক্ষেত্রে নানা জটিলতাও রয়েছে। বগুড়ায় জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ভূমি মালিকদের নামে ২০১৭ সালে অধিগ্রহণের নোটিশ ইস্যু করা হয়। তবে ভূমি মালিকদের পক্ষ থেকে জমির মূল্য দেড় গুণের পরিবর্তে ২০১৭ সালের আইন অনুযায়ী তিন গুণ চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। এখন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মামলার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না।

বগুড়ার সাবেক জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, এত বেশি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে প্রকল্পটি লাভজনক হবে কিনা, সে ব্যাপারে বেজা কর্তৃপক্ষ নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) করতে চায়।

রংপুরের ব্যাপারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বিভাগের আয়তন, জনসংখ্যা এবং প্রয়োজনের হিসাব করলে এখানে অন্তত ২০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়া প্রয়োজন। রংপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরের অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। কারণ রংপুর বিভাগে চার কোটি মানুষের খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। দেশের খাদ্য জোগানদাতা হিসেবে নাম থাকবে রংপুর বিভাগের আর উন্নয়নের তলানিতে পড়ে থাকবে, এটি মেনে নেওয়া যায় না। সরকারের উচিত বৈষম্য দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

আগেরগুলো কেমন চলছে

পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের বিশেষ অঞ্চল পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেড। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৭ হাজার ১২৫ জন। ব্যাটারি, প্রক্রিয়াজাত প্লাস্টিক, অ্যাগলোমারেট, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, প্লেন পলি, রেডিমেড গার্মেন্ট, ক্রাফট, হেয়ার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লাভস, গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও অন্যান্য বায়োকেমিক্যাল পণ্য উৎপাদন হচ্ছে এখানকার কারখানাগুলোয়।

ঈশ্বরদী ইপিজেডে ২১টি কারখানা চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১২টিই বিদেশি। বাস্তবায়নাধীন ২০টি প্রতিষ্ঠান। ৩২৪টি প্লটের সবগুলোই চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতিশীল হয়ে উঠছে স্থানীয় অর্থনীতি। এখানে চীন, হংকং, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মার্শাল আইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কারখানা গড়ে তুলেছে।

উত্তরের সীমান্ত জেলা নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ২০০১ সালে উত্তরা ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর এক সময়ের দারিদ্র্যপীড়িত এই এলাকাটি এখন শিল্পোন্নত এলাকায় পরিণত হয়। বর্তমানে এই ইপিজেডে ২৫টি চালু শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩৫ হাজার কর্মী কর্মরত রয়েছেন। এখানে এখন পর্যন্ত ২৩.৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে এবং ২৩৪.২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরাসরি চীনের সঙ্গে লেনদেনে যাচ্ছে

২৪ মার্চ ২০২৪, সমকাল

ডলারের বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন বাড়াতে এবার চীনের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নায় অ্যাকাউন্ট খুলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেনের বার্তা প্রেরণে সুইফটের আদলে গড়ে ওঠা চায়নার সিআইপিএসে যুক্ত হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ চীনের মাধ্যমে পরিশোধ করা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রাথমিক কাজের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ। যে কারণে দেশটির পাওনা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার সোনালী ব্যাংকে একটি ‘স্ক্রো’ হিসাব খুলে সেখানে জমা করা হচ্ছে। রাশিয়ার অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া এ প্রকল্পে চুক্তিমূল্যের ৯০ শতাংশ তথা ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার অর্থায়ন করছে দেশটি। প্রকল্পের মূল ঋণ পরিশোধ শুরু হবে ২০২৭ সালের মার্চ থেকে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা ও দেশটির লেনদেন ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাশিয়ার ঋণ পরিশোধের চিন্তা করা হচ্ছে। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে রূপপুরের পাওনা সরাসরি রাশিয়াকে পরিশোধ না করে পিপলস ব্যাংক অব চায়নার মাধ্যমে পরিশোধের জন্য একটি প্রটোকল চুক্তি সই হয়। তবে বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় অন্য যে কোনো দেশের লেনদেন নিষ্পত্তির বার্তা পাঠানোর একমাত্র উপায় ‘সুইফট’। ফলে এভাবে অর্থ পরিশোধের বিষয়টি সুইফট যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কায় ওই পরিশোধ করা হয়নি।

শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার হার বাড়ছে, বেড়েছে বিদেশ গমনও

মার্চ ২৫, ২০২৪, বণিক বার্তা

দ্রুত নগরায়ণের প্রভাবে শহরের পরিধি বাড়ছে। তবে শহর ছেড়ে মানুষের গ্রামে ফিরে যাওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। ২০২৩ সালে প্রতি হাজারে প্রায় ১৪ জন গ্রামে ফিরেছে। পাঁচ বছর আগে এ হার ছিল গড়ে একজনেরও কম। গত পাঁচ বছরে বিদেশ গমনের হার বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে গতকাল এক অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছেন

২৪ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে পাস করার তিন বছর পরও ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসের) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ফেলো বদরুন নেসা আহমেদ। তিনি জানান, বিআইডিএস সম্প্রতি (২০২৩ সাল) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। ওই গবেষণায় তিন বছর আগে পাস করা শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তাদের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার তিন বছর পরও প্রায় ২৮ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট চাকরি পাচ্ছেন না।

যে ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার, তাঁরা কোন কোন বিষয়ে পড়েছেন, তা-ও দেখা হয়েছে গবেষণায়। এতে দেখা যায়, যাঁরা বেকার থাকছেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বিএ (পাস) ডিগ্রিধারী। এ ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা, বাংলা, ইসলামির ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বেকারের হার তুলনামূলক বেশি। বিপুলসংখ্যক নারীও বেকার থাকছেন।

গবেষণার তথ্য বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী বেতনে চাকরি করছেন। এ ছাড়া ১৬ শতাংশ আত্মকর্মসংস্থানে আছেন এবং ১৩ শতাংশের বেশি খণ্ডকালীন কাজ করছেন।

যাঁরা বেতনে ও মজুরির বিনিময়ে কর্মে নিয়োজিত আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কর্মে নিয়োজিত আছেন। মূলত বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষক পদে তাঁরা চাকরি করছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অনেকে তৈরি পোশাক খাতের নিচু পদেও যাচ্ছেন। কৃষি খাতেও যুক্ত আছেন অনেকে।

দেশের উচ্চশিক্ষায় যত শিক্ষার্থী আছেন, তাঁদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অংশ কেন এখনো চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না, সেটাও খোঁজা হয়েছিল গবেষণায়।

বদরুন নেসা আহমেদ বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে যেটি জানা গেছে তার মধ্যে একটি হলো, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমে সমসাময়িক জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। যার কারণে পাস করেও অনেকেই চাকরি পাচ্ছেন না। ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে। বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেসব সুবিধা পায়, তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে। সেসব সুবিধা দেওয়া গেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের হার কমে আসবে।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিলাসী জীবন নিষিদ্ধ

১৩ মার্চ ২০২৪, যুগান্তর

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে এবং আদায় বাড়াতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসাবে প্রথমেই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কঠোরভাবে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করার আইনি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবেন, তারা বিমান ভ্রমণ, ট্রেড লাইসেন্স, কোনো কোম্পানির নিবন্ধন এবং শেয়ার ছাড়ার অনুমোদনও পাবেন না। একই সঙ্গে বাড়ি, গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট কিনে নিবন্ধন করতে পারবেন না। অর্থাৎ কোনো সম্পদ বা কোম্পানি করে নতুন ব্যবসা করতে পারবেন না। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলার পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধে মামলাও চলবে। কোনো ব্যাংক বিধি ভঙ্গ করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ছাড় দিলে তাদের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের জরিমানাসহ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের তথ্য অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিতকরণের কাজ ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, এর আলোকে এ নির্দেশনা জারি হলো।

সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপির আওতায় কেবল ছোট বা দুর্বল ঋণখেলাপিরা আটকা পড়বেন। বিপরীতে প্রভাবশালী খেলাপিদের বেরিয়ে যাওয়ার ফাঁকফোকর রাখা আছে। কারণ, ইচ্ছাকৃত খেলাপি নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকের হাতে। এর ফলে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীসহ সমাজের বিগশর্টদের অনেকে ছাড় পেয়ে যাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রভাবশালীদের জোর তদবিরের মুখে বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় অনেক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কঠোর হওয়া কঠিন হবে। এজন্য ব্যাংক চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পুনর্গঠন বা নবায়ন করে ছাড় দিতে পারবে। মূলত এ সুযোগ বন্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে সার্কুলারের মধ্যে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বলে দিতে হতো। মোদ্দা কথা, ইচ্ছাকৃত খেলাপির সংজ্ঞায় যিনি বা যে প্রতিষ্ঠান পড়তে যাচ্ছেন তাকে নতুন ঋণ দিয়ে কিংবা ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া যাবে না। সম্ভাব্য ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বাঁচাতে ব্যাংক বড় ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী গ্রাহকদের খেলাপি ঋণ বিশেষ ব্যবস্থায় নবায়ন বা নতুন ঋণ দিয়ে নবায়ন করার সুযোগ করে দিতে পারে। এতে খেলাপি ঋণ আদায় বাধাগ্রস্ত হবে। তবু ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শনাক্ত করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা ইতিবাচক। ব্যাংক বড়দের ছাড় না দিলে তারাও এর আওতায় পড়বেন।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হলে তিনি বা ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা বিমান ভ্রমণ করতে পারবেন না। তারা নিজ নামে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ট্রেড লাইসেন্স নিতে পারবেন না। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক অ্যান্ড কোম্পানিজ ফার্মস থেকে কোনো কোম্পানির নিবন্ধন পাবেন না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকেও কোনো কোম্পানির শেয়ার ছাড়া বা বন্ড ইস্যুর অনুমোদন পাবেন না। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা চূড়ান্ত করার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওইসব তালিকা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোয় পাঠাবে। আইন অনুযায়ী ওইসব দপ্তর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সংশ্লিষ্ট সেবাদানে বিরত থাকবে।

এতে আরও বলা হয়, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি ইত্যাদি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অর্থাৎ প্রচলিত আইন অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা গাড়ি, বাড়ি, জমি বা ফ্ল্যাটের নিবন্ধন করতে পারবেন না। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননা পাবেন না। কোনো ইচ্ছাকৃত খেলাপি তার সমুদয় ঋণ পরিশোধ করার পর ৫ বছর অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে গণ্য হলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচলিত আইন মেনে তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে বা তাকে অপসারণ করতে পারবে। সার্কুলারে আরও বলা হয়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার পর ওই তালিকার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আপিল না করলে বা তার করা আপিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গৃহীত না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক গ্রাহকের কাছে সমুদয় পাওনা ফেরত চেয়ে ২ মাসের নোটিশ দিতে পারবে। নোটিশ প্রদানের দুই মাসের মধ্যে পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পর্ষদের অনুমোদন সাপেক্ষে ওই গ্রহীতার বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলা করতে পারবে। এ মামলা করা হলেও ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না, চলমান থাকবে।

মার্চে দৈনিক গাড়ি চলাচল নেমে এসেছে আড়াই হাজারের নিচে

মার্চ ২৫, ২০২৪, বণিক বার্তা

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রবেশমুখ ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে যান চলাচল শুরু হয় গত বছরের ২৯ অক্টোবর। শুরুতে দৈনিক পাঁচ হাজারের অধিক গাড়ি চলাচল করত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচলের হার কমেছে। চলতি মার্চে টানেল দিয়ে পার হওয়া দৈনিক গাড়ির সংখ্যা নেমে এসেছে আড়াই হাজারের নিচে। এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামজুড়ে। সম্প্রতি শহরে যানজট তীব্র হয়েছে। এর পেছনে টানেলের সংযোগ ও ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) তথ্যে জানা গেছে, উদ্বোধনের পর প্রথম কয়েক মাস টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল ক্রমেই বাড়ছিল। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও প্রতি মাসে টানেল দেখতে আসা পর্যটক, কক্সবাজারমুখী যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। তবে চলতি মাসে টানেল ঘিরে যানবাহনের চাপ অস্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে গেছে। কক্সবাজারমুখী পর্যটকবাহী যানবাহনের চাপ না থাকায় টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল কমেছে বলে জানিয়েছে টানেল কর্তৃপক্ষ। তবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে।

সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৯৪২টি করে যানবাহন টানেল ব্যবহার করেছে। তবে প্রথম থেকে ১২তম রমজানে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল করেছে গড়ে ২ হাজার ২৭৩টি। তার আগে গত বছরের অক্টোবরে যানবাহন চলাচলের গড় ছিল ৫ হাজার ৬৩৬টি, নভেম্বরে ৫ হাজার ৫৪৪, ডিসেম্বরে ৬ হাজার ২৭৩, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪ হাজার ৯০ এবং ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক যানবাহন চলাচলের গড় ছিল ৪ হাজার ৯৪২টি।

২০ মাস ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে বাংলাদেশ

মার্চ ২৭, ২০২৪, বণিক বার্তা

গত অর্থবছরের পুরো সময়ে ৯ শতাংশের ওপরে ছিল বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসেও এ ঊর্ধ্বমুখিতা বজায় থাকতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে টানা ২০ মাস ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের জীবনযাপনও কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতিতে তিন দশকে আর কখনই এত দীর্ঘসময় উচ্চ মূল্যস্ফীতি স্থায়ী হতে দেখা যায়নি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্বের কারণেই এটি জেঁকে বসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নব্বইয়ের দশকে বেসরকারি খাতের উত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির বিকাশ শুরু হয়। ওই দশকে কখনো কখনো মূল্যস্ফীতি বাড়লেও তা খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। এক বছর বাড়লেও পরের বছরই তা কমে গেছে। ওই দশকে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন ছিল ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর পরের দশকের শুরুতে ২০০০-০১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ওই দশকে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

এরপর গত দশকে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে ২০১১-১২ অর্থবছরে, যার হার ছিল ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। চলতি দশকের প্রথম দুই অর্থবছর ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৫৬ ও ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির ওই ধারা অব্যাহত আছে এখনো।

গ্রামে দারিদ্র্যের হার কমলেও বেড়েছে শহরে

মার্চ ২৭, ২০২৪, বণিক বার্তা

দেশে গত পাঁচ বছরে দারিদ্র্যের সূচকে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়েছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে। জরিপের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার কমেছে। একই সময়ে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে শহরাঞ্চলে। ২০১৮ সালে গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৫ থেকে ২০২৩ সালে ২১ দশমিক ৬ শতাংশে নামলেও শহুরে দারিদ্র্যের হার ১৬ দশমিক ৩ থেকে বেড়ে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়ায়। গতকাল সানেমের পাঠানো গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় এমন চিত্র।

কভিড-১৯-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দেশের চ্যালেঞ্জ ও দারিদ্র্য নিয়ে সানেম ও ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে ‘কভিড-১৯ মহামারী, মহামারী-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং দারিদ্র্যের গতিশীলতা: একটি অনুদৈর্ঘ্য পারিবারিক জরিপ থেকে প্রমাণ’ শীর্ষক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় মৌলিক চাহিদার খরচ পদ্ধতি অনুসরণ করে ২০ স্তরের ভোগব্যয়ভিত্তিক দারিদ্র্যসীমা পরিমাপ করা হয়েছে। ২০ স্তরের মধ্যে আটটি গ্রামীণ, আটটি শহুরে ও চারটি মেট্রোপলিটন এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, উচ্চ দারিদ্র্যসীমা অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, গ্রামীণ এলাকায় ২১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। নিম্ন দারিদ্র্যসীমা অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে চরম দারিদ্র্যের হার পরিমাপ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, গ্রামীণ এলাকায় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ দারিদ্র্যের হার পরিমাপ করা হয়েছে রংপুর ও বরিশালে। রংপুরে এ হার ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বরিশালে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ।

বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের সূচকেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। গ্রামীণ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে তা ২০১৮ সালে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকার প্রদত্ত সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় এসেছে ৩৭ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এর মধ্যে টিসিবি ফ্যামিলি কার্ড সেবা সর্বোচ্চ সংখ্যক তথা ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ পরিবারের কাছে পৌঁছেছে। এছাড়া বার্ধক্য ভাতা ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, বিধবা, স্বামী নিগৃহীত, দুস্থ মহিলা ভাতা ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ, আর্থিকভাবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ভাতা ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছে। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই অর্থাৎ ৪৭ শতাংশ সেবা খাতে নিযুক্ত, ৩৬ কৃষি ও ১৮ শতাংশ শিল্প খাতে কর্মরত। জাতীয় পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় এ হার ৩ দশমিক ৬ ও শহরাঞ্চলে ৪ দশমিক ৬ শতাংশে রয়েছে।

চাল ‘উদ্বৃত্ত’, তবু বাড়ছে দাম

২৮ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

চালের উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে শুভংকরের ফাঁকি রয়েই গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে চালের উৎপাদন যথেষ্ট ভালো, চাহিদার চেয়ে কমপক্ষে ৫০ লাখ টন বেশি। ফলে আমদানির দরকার নেই। কিন্তু চাল উদ্বৃত্ত থাকার পরও দেশের বাজারে দফায় দফায় দাম বাড়ছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর হিসাবে বাংলাদেশে চলতি বছর চাহিদার তুলনায় চালের উৎপাদন কিছুটা কম। গমের আমদানি কমে যাওয়ায় বেড়েছে চালের চাহিদা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) হিসাবে চলতি অর্থবছরে মোট ৪ কোটি ১২ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে। এর মধ্যে বোরো ২ কোটি ৯ লাখ টন, আউশ ৩০ লাখ টন ও আমন ১ কোটি ৭০ লাখ টন। আর দেশে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ টনের কাছাকাছি। সেই হিসাবে দেশে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা।

অপরদিকে ইউএসডিএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর (২০২৩-২৪) শেষে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন ৩ কোটি ৬৩ লাখ টনে দাঁড়াবে। একই সময়ে ভোগের পরিমাণ হবে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টন। অর্থাৎ ভোগ আর উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্য ১৩ লাখ টন। চাল উৎপাদন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ইউএসডিএর উৎপাদন তথ্যে বড় একটি ফাঁরাক রয়েছে।

বাজারে রমজানের এই সময়ে চালের চাহিদা কিছুটা কম থাকে। এতে দাম বাড়ার কথা নয়। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় শুরুতে চালকলের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে। চালকলের মালিকেরা দাম না বাড়ানোর প্রতিজ্ঞা করেন। তারপরও দাম কমেনি; বরং বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার চালের দাম কমাতে পুরোনো কৌশলই বেছে নিয়েছে। আমদানি শুল্ক ৬৭ থেকে ১৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। প্রাথমিকভাবে ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দুই লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে।

বিবিএস’র জরিপ

কেন এই উল্টোগতি?

২৮ মার্চ ২০২৪, মানবজমিন

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের আর্থসামাজিক অধিকাংশ সূচকই নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩’-এর জরিপে দেখা গেছে, দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে। সেই সঙ্গে শিশুমৃত্যু, বেকারত্ব,  বাল্যবিবাহ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তা পরিসংখ্যান ২০২৩’-এর  তথ্য বলছে, দেশের এক-চতুর্থাংশ পরিবারকে খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে ঋণ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া একবেলা খাবারের শেষে পরের বেলার চালের জোগান নেই দেশে এমন পরিবারও রয়েছে। আর জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ অনুযায়ী, শ্রমে থাকা শিশুদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। অর্থাৎ বিবিএসের প্রকাশিত অধিকাংশ সূচকের ধারাই নেতিবাচক লক্ষ্য করা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর এই নেতিবাচক ধারা দেশের জন্য উদ্বেগের বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর নেতিবাচক ধারার কারণ হিসেবে তারা কোভিড ও সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা রাখার অভাবকে দায়ী করছেন।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমেছে। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশীয় পয়েন্ট।

প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে: ২০২৩ সাল শেষে দেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ু কমে ৭২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশে ১৯৬০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিটি দশকেই এই হার বেড়েছে। এর মধ্যে কেবল ষাটের দশকের মাঝামাঝি, অর্থাৎ ১৯৬৫ সাল নাগাদ যে বৃদ্ধি ঘটেছে, দশক শেষে মানে ১৯৭০ সালে এসে তার কিছুটা অবনতি হয়েছে। পরবর্তী প্রায় সব দশকে, একটি মাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া, পাঁচ বছর করে বেড়েছে দেশের মানুষের গড় আয়ু। এর মধ্যে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে গড় আয়ু বেড়েছে সাত বছর। যদিও ২০১০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত গড় আয়ু বৃদ্ধি কিছুটা স্থবির হয়ে আছে।

আশঙ্কা বাড়িয়েছে শিশুমৃত্যু: স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু প্রতি হাজারে ছিল ১৪১ জন, সেটা থেকে উন্নতির ধারাবাহিকতার সর্বোচ্চ শিখরে বাংলাদেশ পৌঁছেছিল ২০২০ সালে, তখন হাজারে মৃত্যু ছিল ২১ জন। সেই সাফল্য ম্লান হতে শুরু করেছে ২০২১ সালের পর থেকে। ওই বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে ২০২৩ সাল শেষে শিশুমৃত্যু বেড়ে হাজারে এখন ২৭ জনে ঠেকেছে। শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়াটা স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাকেই ইঙ্গিত করে।

আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বাল্যবিবাহ: এক বছরের ব্যবধানে দেশে বাল্যবিবাহের হার বেড়েছে। স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স জরিপে দেখা যায়, ২০২৩ সালে দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী নারীদের মধ্যে বিয়ের হার ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২২ সালেও এই হার ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১৮ বছরের আগে বিয়ের হারও বেড়েছে। গত বছর দেশে এই বয়সী নারীদের বিয়ের হার ছিল ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ, অন্যদিকে ২০২২ সালেও এই হার ছিল ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।

কমেছে নারীর প্রজনন হার: প্রজনন হার বলতে বোঝায় ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী একজন নারী কতোজন সন্তান জন্ম দিতে পারেন। ২০২২ সালে নারীদের প্রজনন হার কিছুটা বেড়ে ২ দশমিক ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সাল শেষে তা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমেছে: বিবিএসের তথ্য বলছে, দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন দম্পতিরা। বর্তমানে দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারের হার ৬২ দশমিক ১ শতাংশ, ২০২২ সালেও যা ছিল ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

সন্তান জন্মদানে অস্ত্রোপচার বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে: এদিকে দেশে সিজারিয়ান সেকশন বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে সিজারের ঘটনা ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের হার ২০২২ সালের (৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ) তুলনায় কমে ২০২৩ সালে হয়েছে ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

কিশোরী নারীদের মধ্যে সন্তান জন্মের হার বৃদ্ধি পেয়েছে: ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের মধ্যে সন্তান জন্মের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসভিআরএস জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপ অনুযায়ী, ২০২২ সালে কিশোরী নারীদের মধ্যে সন্তান জন্মদানের হার ছিল ৪১ দশমিক ৮৭ শতাংশ আর ২০২৩ সালে সেটি বেড়ে ৪৩ দশমিক ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ১৫ বছর বয়সী কিশোরীদের মধ্যে সন্তান জন্মদানের হার ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

প্রতিবন্ধিতা বৃদ্ধি পেয়েছে: ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আশঙ্কাজনক হারে প্রতিবন্ধিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসভিআরএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে দেশে প্রতিবন্ধিতার হার ছিল ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ আর ২০২৩ সালে সেটি বেড়ে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে।

দীর্ঘ হচ্ছে শিক্ষিত বেকারের মিছিল: দেশে গত বছরের শেষ তিন মাসে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে ৪০ হাজার। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ২৩ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭০ হাজার আর নারী বেকারের সংখ্যা ৭ লাখ ৮০ হাজার। বিবিএস’র সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কাজ নেই ৪০ শতাংশ তরুণের: বাংলাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। এসভিআরসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে শিক্ষা, কর্মে কিংবা প্রশিক্ষণে নেই- এমন তরুণের সংখ্যা ৩৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ হয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই নারী। তরুণদের মধ্যে মাত্র ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ অলস, আর তরুণীদের মধ্যে এই হার ৬০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। জরিপের তথ্য বলছে, এই জনগোষ্ঠীর ৪১ দশমিক ৩ শতাংশই গ্রামে বাস করে। অন্যদিকে শহরের তরুণদের মধ্যে এমন অলস তরুণ জনগোষ্ঠী ৩৫ দশমিক ২১ শতাংশ।

মৌলিক চাহিদা মেটাতে ঋণ করে ২৬ শতাংশ পরিবার:  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্যনিরাপত্তা পরিসংখ্যান ২০২৩-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের এক-চতুর্থাংশ পরিবার খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে ঋণ করছে। এক্ষেত্রে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষই বেশি ঋণ করছে। শহর ও গ্রামের মানুষ এই ঋণের বড় অংশই নিচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে চড়া সুদে।

খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় কোটি মানুষ: মাঝারি পর্যায়ে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় থাকা পরিবার বলতে বোঝানো হয়েছে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার গ্রহণে যারা অক্ষম তাদের। আর তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় থাকা পরিবার বলতে বোঝানো হয়েছে খাদ্য কমানোর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে। বিবিএসের হিসাবে, জরিপকালে দেশে প্রায় ২২ শতাংশ পরিবার মাঝারি পর্যায়ের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ছিল। আর শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ পরিবার তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ছিল।

পরের বেলা ভাত জুটবে কিনা জানে না ৩৪ লাখ মানুষ: খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে অনেকের জন্য। একবেলা খাবারের শেষে পরের বেলার চালের জোগান নেই- দেশে এমন পরিবারের হার ২ শতাংশ। আটা মজুত থাকে না ৬০ শতাংশ পরিবারে। নিত্যপণ্যের মধ্যে ডালের সংস্থান নেই ১৯ শতাংশ পরিবারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এদিকে খানা আয় ও ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পরিবারের সংখ্যা এখন ৪ কোটি ১০ লাখ। আর জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সেই হিসাবে দেশের ৩৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮০ জন মানুষের একবেলা খাওয়ার পর পরের বেলার চালের জোগান নেই।

ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু: জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শিশু শ্রমজীবী। যার মধ্যে ১৭ লাখ ৮০ হাজার শিশুশ্রমে যুক্ত। শ্রমে থাকা শিশুদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তাদের মধ্যে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে কাজ করে সবচেয়ে বেশি।

১০ বছরে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১৫০%

৩০ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

এক দশক আগে একজন মানুষ বাজার থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কিনতে পারতেন। এখন এক কেজি গরুর মাংসের জন্য খরচ করতে হয় অন্তত ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশ।

অথচ সরকারি হিসাব বলছে, দেশে গত এক দশকে গরুর উৎপাদন বেড়েছে। গরু-ছাগল-মুরগিসহ সব ধরনের মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, গরুর মাংসের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে কেন? বিষয়টি নিয়ে তিনজন প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকা এবং কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গরুর উৎপাদন বৃদ্ধি না হওয়ায় মাংসের দাম বেড়েছে। অবশ্য গরুর মাংস বিক্রি করা ব্যবসায়ীরাও অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের তদারকিতেও ঘাটতি আছে।

ক্যাবের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল গড়ে ৩০০ টাকা। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয় ৪০০ টাকা। তার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর দাম বেড়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল গড়ে ৩০০ টাকা। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয় ৪০০ টাকা। তার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর দাম বেড়েছে। ২০২১ সালে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় প্রায় ৬০০ টাকায়।

অন্যদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ২৯ মার্চ (গতকাল শুক্রবার) ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। অর্থাৎ ২০১৪ সালের তুলনায় এখন গরুর মাংস প্রতি কেজি ১৫০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

দেশে গরুর উৎপাদন ও মূল্য বৃদ্ধির যে সম্পর্ক, তা জটিল বলে মনে করেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহ যদি আরও বেশি হতো, হয়তো গরুর মাংসের দাম এতটা বাড়ত না। মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে চাহিদা বৃদ্ধি, গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং সার্বিক মুদ্রাস্ফীতিও বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালেও ঢাকা শহরে দিনে ৫ হাজার গরু জবাই হতো। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে থাকায় মানুষ গরু মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়। ২০২৩ সালে দিনে গরু জবাই হতো দেড় হাজারের মতো। এই রমজান মাসে ঢাকায় দিনে ২০০০-২২০০ গরু জবাই করা হচ্ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ২৯ মার্চ (গতকাল শুক্রবার) ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়।

ভারত থেকে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায় ২০১৪ সালে। এর কারণ ভারত গরু রপ্তানি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। এর পরের ১০ বছরে দেশে গরুর উৎপাদন–সম্পর্কিত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করেছে প্রথম আলো।

২০১৪ সালের আগে প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ গরু ভারত থেকে বাংলাদেশে আসত। যেমন ২০১৩ সালে ভারত থেকে গরু এসেছিল ২৩ লাখ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে গরুর সংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ। এরপর প্রতিবছরই গরুর সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে গরুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি ৪৯ লাখে। অর্থাৎ এক দশকে দেশে গরুর সংখ্যা (উৎপাদন) বেড়েছে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার বা প্রায় ৬ শতাংশ (৫ দশমিক ৮২ শতাংশ)।

ভারত থেকে বছরে যে সংখ্যায় গরু আমদানি করা হতো, সেই ঘাটতি এখনো পূরণ হয়নি। বছরে ঘাটতি ছিল ২০ লাখ, সেখানে পূরণ হয়েছে ১৩ লাখ। দরকার আরও প্রায় ৭ লাখ। এর সঙ্গে বাড়তি চাহিদাও যুক্ত হয়েছে গত এক দশকে। চাহিদা ও সরবরাহের এই পার্থক্য দামে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা।

৪০-৫০% বেশি দামে মুরগির বাচ্চা কিনছেন খামারিরা

মার্চ ৩১, ২০২৪, বণিক বার্তা

পোলট্রি খাতে মাংস ও ডিমের জন্য সাধারণত একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা কেনেন খামারিরা। যেসব মোরগ-মুরগির মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন হয়, সেগুলোকে বলা হয় ‘প্যারেন্ট স্টক’ (পিএস)। আর পিএস উৎপাদন হয় ‘গ্র্যান্ড প্যারেন্ট’ (জিপি) স্টক থেকে। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ে হঠাৎ ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির একদিনের বাচ্চার সরবরাহ প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। এর মধ্যে বাজারে চাহিদাও বেশি। ফলে নির্ধারিত দামের চেয়ে ৪০-৫০ শতাংশ বেশি টাকায় বাচ্চা কিনতে হচ্ছে খামারিদের।

প্রাণিসম্পদ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জিপি ও পিএসের বাজারের প্রায় পুরোটাই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে। গত বছরের মে মাসে একদিনের বাচ্চার দাম ৫০-৫৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এরপর সম্প্রতি আরেক দফায় ১০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৬০-৬৩ টাকা।

করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বাচ্চা সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক খামারিরা। কোথাও কোথাও বাচ্চা কিনতে হচ্ছে ৮৫-৯৫ টাকায়। এতে মাস খানেক পরে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

শেয়ারবাজারে ৪৮ দিনে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি ১ লাখ কোটি টাকা

০২ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

টানা দরপতনে মাত্র ৪৮ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদেরই ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ১৮ জানুয়ারি থেকে গতকাল ১ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের বাজারমূল্যের হিসাব বিবেচনায় নিয়ে এ ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। এ সময়ে ঢাকার শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে মোট ৪৮ দিন।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে প্রতিদিন বাজার মূলধনের হিসাব করে ডিএসই। ডিএসইর হিসাবে গত ১৮ জানুয়ারি বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। গতকাল সোমবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৪৮ দিনে তালিকাভুক্ত সব সিকিউরিটিজ ১ লাখ ১০ হাজার ২৩১ কোটি টাকা বাজারমূল্য হারিয়েছে। তাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যক্তিশ্রেণি থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তারাও। কারণ, সিকিউরিটিজের দাম কমে যাওয়ায় তাঁদের প্রত্যেকেরই পোর্টফোলিও বা পত্রকোষ সংকুচিত হয়েছে। এর মধ্যে যাঁরা শেয়ার বা অন্যান্য সিকিউরিটিজ বিক্রি করে দিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সরাসরি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আর যাঁরা বিক্রি করেননি, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ক্ষতি অনাদায়ি (আনরিয়ালাইজড) হিসেবে পত্রকোষে হিসাবভুক্ত হয়েছে।

আরো ৩৩ গভীর নলকূপ বসাবে ওয়াসা, বাড়তে পারে পানির ব্যয়

এপ্রিল ০২, ২০২৪, বণিক বার্তা

রাজধানীতে দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ৩১৫ কোটি লিটার। এর মধ্যে ওয়াসা সরবরাহ করে প্রায় ২৯৮ কোটি লিটার। বাকি ১৭ কোটি লিটার পানির চাহিদা পূরণে রাজধানীতে আরো ৩৩টি গভীর নলকূপ বসাতে চায় ওয়াসা। যদিও ২০২১ সালের মধ্যে চাহিদার ৭০ শতাংশ পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সংস্থাটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গভীর নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো হলে পানির দাম বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া আরো নিচে নেমে যাবে পানির স্তর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত তিন দশকে পানির স্তর প্রায় ৫০ মিটার নিচে নেমেছে। এখন প্রতি বছর দুই-তিন মিটার নিচে নামছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ উৎস থেকে পানি তোলা কঠিন হয়ে পড়বে। আবার ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় ভূ-উপরিস্থ পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

পরিকল্পনা কমিশনের সূত্রমতে, নগরীতে ১৭ কোটি লিটার পানির চাহিদা মেটাতে ১৪৫টি গভীর নলকূপ বসানোর প্রস্তাব দেয় ওয়াসা। এর মধ্যে ৮০টি গভীর নলকূপ স্থাপনে ৭৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালে। কিন্তু আরো ৩৩টি নলকূপ অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের অধীনে ৪৪৩টি গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপনও করা হচ্ছে। পুনরায় চালু হচ্ছে ১৮০টি গভীর নলকূপ। নির্মাণ হবে ৩০০ পাম্পঘর।

গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করায় প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভূগর্ভস্থ পানি বিভাগের ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯৫ সালে ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ৩২ মিটার নিচে। ২০০০ সালে তা ৪১ মিটার নিচে নেমে যায়। ২০০৫ সালে হয় ৫৪ মিটার এবং ২০১৫ সালে তা ৭১ মিটার নিচে নেমে যায়। পানির স্তর ৭৪ মিটার গভীরে নেমে যায় ২০২০ সালে। তেজগাঁও এলাকায় এটা ৭৭ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে।

গবেষণায় পূর্বাভাস দেয়া হয়, ২০২৫ সালের মধ্যে পানির স্তর ৮০ মিটার নিচে নেমে যেতে পারে। আর ২০৩০ সালে তা ৮৫ ও ২০৩৫ সাল নাগাদ ১০০ মিটার নিচে নেমে যতে পারে।

সারের আমদানি ব্যয় কমেছে ৫১ শতাংশ, কৃষক সুফল পাবেন কি

এপ্রিল ০৩, ২০২৪, বণিক বার্তা

আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে সব ধরনের সারের দাম। ফলে আগের চেয়ে কম মূল্যে পণ্যটি আমদানি করতে পারছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সারের আমদানি ব্যয় কমেছে ৫১ শতাংশের বেশি। যদিও গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উপকরণটি আগের দামেই কিনতে হচ্ছে কৃষকদের।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার আগের চেয়ে অর্ধেক দামে সার আমদানি করলেও এতে কৃষক লাভভান হচ্ছেন না। কেননা দেশের বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। এতে করে কৃষি খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। কমে যাচ্ছে কৃষকের মুনাফার মার্জিন। একই সঙ্গে তা খাদ্যের উৎপাদন এবং বাজার পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। প্রভাব ফেলছে সার্বিক মূল্যস্ফীতিতেও।

দেশে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি)—এ চার ধরনের সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। রাসায়নিক এসব সারের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম ওঠে রেকর্ড সর্বোচ্চে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের আগস্টে কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়ার দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ায় সরকার। গত বছরের এপ্রিলে আরেক দফায় কেজিতে ৫ টাকা করে বাড়ানো হয় সব ধরনের সারের দাম। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ২৭ টাকা, ডিএপি ২১, টিএসপি ২৭ ও এমওপির দাম ২০ টাকা।

ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করছে সরকার: সিপিডি

এপ্রিল ৪, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, বাংলাদেশের ঋণ ও পরিশোধের বাধ্যবাধকতা বাড়ছে, যা সরকারকে অপর্যাপ্ত রাজস্ব আদায়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধের জন্য ক্রমাগত নতুন ঋণ নিতে বাধ্য করছে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমরা পাকলিক ও পাবলিকলি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণের দায়বদ্ধতার একটি বড় অংশ পরিশোধের জন্য ঋণ নিচ্ছি।’

তিনি এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এ কথা বলেন।

সিপিডি ও এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে ঢাকার লেকশোর হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সিপিডি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক ঋণ এবং ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার হার বেড়েছে।

২০২৩ সালের জুনে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদেশি ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা একই বছরের সেপ্টেম্বরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

ব্যাংক একীভূত নীতিমালার কিছু বিষয়ে উদ্বেগ, প্রশ্ন

০৫ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে এমনিতেই উদ্বিগ্ন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে এ–সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা কিছু কিছু বিধান এ উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দুর্বল মানের সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তের পর গতকাল বৃহস্পতিবার এ–সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন এ নীতিমালায় বলা হয়েছে, দুর্বল যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত হবে, সেটির পরিচালকেরা পাঁচ বছর পর আবার একীভূত হওয়া ব্যাংকের পর্ষদে ফিরতে পারবেন। যদিও এ ক্ষেত্রে তাঁদের কিছু শর্ত মানতে হবে। কিন্তু ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ বিধানের মাধ্যমে সেসব পরিচালককে একধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যাঁদের কারণে ব্যাংক খারাপ হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পাঁচ বছর বিরতির পর তাঁদের আবার পর্ষদে ফেরার বন্দোবস্ত রাখা হলো।

বিদেশি ঋণ নিয়ে প্রতারণামূলক বাস্তবতার মধ্যে আছি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

০৪ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন যে সরকার বিদেশি ঋণে একের পর এক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তার সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না কেন। তাঁর মতে, একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বৈদেশিক ঋণের মেগাপ্রকল্পকে পুঁজি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে, এমনকি বিদেশে অর্থও পাচার করছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা রাজস্ব বাজেট থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে একটি টাকাও দিতে পারছি না। বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা প্রতারণামূলক বাস্তবতার মধ্যে আছি। ঋণ নিয়ে এত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে এর প্রতিফলন নেই। এত কিছু করলাম কিন্তু মানুষ সুবিধা পেল না কেন?’

আজ সিপিডি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ এবং পরিশোধের সক্ষমতা: উদ্বেগের কারণ আছে কী?’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর এক হোটেলে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতারণামূলক বাস্তবতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ এখনো ২৩ শতাংশে কেন আটকে আছে? সরকারি হিসাবে, জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদন অনুসারে, মানুষের গড় আয়ু কমেছে, মৃত্যুহার বেড়েছে। আবার বেকারের সংখ্যাও বেড়েছে। ২৫ শতাংশ পরিবারকে ঋণ করে চলতে হয়। গত দেড় দশকে এত কিছু করলাম; তাহলে মানুষ এসবের সুফল পেল না কেন?

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো আরও বলেন, শিক্ষা খাতে এখনো জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ২ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে ১ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ বাড়াতে পারিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘উল্টো আমরা কী দেখলাম, ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের টাকা লুটতরাজ হয়েছে। বৈদেশিক ঋণের মেগা প্রকল্পকে একশ্রেণির স্বার্থানেষী গোষ্ঠীর পুঁজি সঞ্চয়ের নতুন উৎস হিসেবে উৎসাহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে তা বেশি হয়েছে। আমার বিশ্বাস মেগা প্রকল্পের সঙ্গে ওই বিশেষ গোষ্ঠীর টাকা পাচারের সংশ্লেষ পাওয়া যাবে।’

অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাসহ আফ্রিকার দেশগুলোর চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। কীভাবে আমরা ভবিষ্যতে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করব, কীভাবে আমরা রপ্তানির সক্ষমতা বাড়াব—তা নিয়ে বেশি চিন্তা করা উচিত। কারণ রপ্তানি বাড়লে তা ঋণ পরিশোধকে সহজ করবে। এখন রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা দরকার।

রেহমান সোবহান আরও বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একজন বিশেষ উপদেষ্টা আছে, যার একটি শক্তিশালী ব্যবসায় অভিজ্ঞতা আছে। তাকে দুর্নীতি এবং বিশেষ সুবিধাভোগীদের মোকাবিলা করতে হবে। সিপিডির চেয়ারম্যানের মতে, ঋণ করে প্রকল্প করলে ২০-৫০ শতাংশ খরচ বেড়ে যায়। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি এবং ব্যবস্থাপনা বড় ইস্যু হয়ে যায়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসা রাজস্ব দিয়ে উন্নয়ন খরচের জোগান দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ঋণ করে ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। কারণ, সরকার রাজস্ব বাজেটের যে হিসাব দেয়, তাতে শুধু সুদ বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে ঋণের আসল পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ থাকে না। এর মানে ঋণের বড় অংশ আমরা ঋণ করে পরিশোধ করছি।

বড় ছাড় গ্রুপভুক্ত ঋণখেলাপিদের

০৪ এপ্রিল ২০২৪, যুগান্তর

খেলাপি ঋণের আদায় বাড়াতে এবং নতুন ঋণখেলাপি হওয়া ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তখনই খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কোনো গ্রুপভুক্ত পরিচালক, প্রতিষ্ঠান বা কো¤পানিগুলো খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বড় ছাড় পাবে। আগের নিয়মে কোনো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বা কোনো ব্যক্তি খেলাপি হলে ওই গ্রুপের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি নতুন ঋণ পেত না। খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নতুন ঋণ নিতে হতো। এখন থেকে কোনো গ্রুপের কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বা পরিচালক খেলাপি হলেও ওই গ্রুপের খেলাপি কোম্পানি, পরিচালক বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যরা ব্যাংক ও ফিন্যান্স কোম্পানি থেকে নতুন ঋণ নিতে পারবে।

এ বিষয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

সূত্র জানায়, মূলত বড় ঋণখেলাপিদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরছিল, ঠিক তখনই এমন সিদ্ধান্ত খেলাপি ঋণের ব্যাপারে এ ধরনের বড় ছাপের ফলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এটি খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উলটো যাত্রা। এতে খেলাপি ঋণ আদায় কমে যাবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি শনাক্ত হবে কম। একই সঙ্গে বেড়ে যেতে পারে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত গ্রুপগুলোর জন্য ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। কারণ, বিদ্যমান নীতির কারণে এখন গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত খেলাপি হয় না, হলেও তা দ্রুত নবায়ন করে ফেলে। কারণ, গ্রুপের একটি কোম্পানি খেলাপি হলে একই গ্রুপের অন্য কোনো কোম্পানি নতুন ঋণ পাবে না। ফলে তাদের পুরো ব্যবসা আটকে যেতে পারে। এ কারণে গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত খেলাপি হয় না। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সার্কুলারের ফলে কোনো গ্রুপের কোনো কোম্পানি খেলাপি হলেও ওই গ্রুপের অন্য কোম্পানিগুলো নিয়মিতভাবেই নতুন ঋণ পাবে। ফলে গ্রুপের একটি কোম্পানি খেলাপি হলেও এতে কোনো সমস্যা হবে না। এ কারণে যেসব গ্রুপ অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তারা কোনো একটি ছোট বা কম গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানিকে খেলাপি করে ওই ঋণ অন্য খাতে নিয়ে ব্যবহার করতে পারে। একই সঙ্গে নতুন ঋণও নিতে পারবে। এতে ঋণখেলাপি কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি গ্রুপের মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ আরও বেড়ে যাবে। জনগণের আমানত নিয়ে তা ফেরত না দেওয়ার প্রবণতাও বাড়বে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বেশির ভাগ জায়গায় কাজ বন্ধ, কিন্তু কেন

০৪ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

ঋণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ জায়গায় ঢাকা দ্রুতগতির উড়ালসড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

গত মঙ্গলবার নির্মাণকাজের পাঁচটি জায়গা (ওয়ার্ক স্টেশন-স্টকইয়ার্ড) ঘুরে দেখা গেছে, হাতিরঝিল ছাড়া আর কোথাও কাজ চলছে না। হাতিরঝিলেও সীমিতসংখ্যক জনবল নিয়ে কাজ চলছে। বাকি চারটি জায়গায় (কাওলা, মগবাজার, মালিবাগ ও কমলাপুর) অল্পসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রিসহ কিছু কর্মী রাখা হয়েছে।

কর্মীদের ভাষ্য, কোথাও এক মাস ধরে কাজ বন্ধ, কোথাও দুই মাস।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই মাসে অন্তত ৮০ শতাংশ কর্মীকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠিয়েছে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।

অর্থসংকটে বেশির ভাগ জায়গায় কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে নির্মাণ ও পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড। প্রথম আলোর এক ই–মেইলের জবাবে ৩ এপ্রিল এফডিইইর পক্ষ থেকে বলা হয়, কাজ চালু রাখার জন্য ঋণ পেতে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোম্পানির কাজ চলছে।

এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য এফডিইই কোম্পানি লিমিটেড নামের কোম্পানি গঠন করে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট। কোম্পানির অংশীদার তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যথাক্রমে ৫১, ৩৪ ও ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ হলো এক্সপ্রেসওয়ের নির্বাহক প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুসারে, মূল কাঠামো নির্মাণব্যয়ের ৭৩ শতাংশ জোগান দেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আর ২৭ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার, যা ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং (ভিজিএফ) নামে পরিচিত।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঋণ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শেয়ার নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেও প্রকল্পের নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

এফডিইইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাই নাগরিক ভাস্কন খান্নাভা গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর কার্যালয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, চলতি বছরের ৩০ মার্চের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে না জেনে গত ১৭ জানুয়ারি ঋণ আটকে দিয়েছে চীনের দুটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান চায়না এক্সিম ব্যাংক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না (আইসিবিসি)।

রাজশাহীতে ব্যবসায়ীরা এবার কেন এত আলু কিনলেন

০৬ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

রাজশাহীতে এবার মাঠেই প্রায় তিন গুণ দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। গত বছর কৃষকেরা মাঠপর্যায়ে যেখানে প্রতি কেজি আলু ১১-১২ টাকায় বিক্রি করেছিলেন, সেখানে এবার বিক্রি হচ্ছে ৩৩ টাকায়। কৃষকেরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা মাঠ থেকেই চড়া দামে আলু কিনে নিচ্ছেন। সে জন্য তাঁরা সব আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে ব্যাপক হারে আলু কিনে নিয়েছেন, যাতে পরে বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে একচেটিয়া মুনাফা করতে পারেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা স্মরণকালে মাঠে আলুর এত দাম পাননি। এবার উৎপাদন কম হয়েছে। তাই দাম বেড়েছে। কিন্তু রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উৎপাদন ঘাটতির কথা মানতে নারাজ।

রাজশাহীতে গত বছর মৌসুমের শুরুতে মাঠে প্রতি কেজি আলু সাড়ে ১১ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার শুরুতে ২৫ টাকা ছিল, যা ইতিমধ্যে ৩৩ টাকায় উঠেছে। রাজশাহীর খুচরা বাজারে এখন ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি বিপণন কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছেন। তাঁরা আলু কিনে গুদামজাত করে রাখছেন। এতে কৃষকেরা আপাতত লাভবান হলেও পরে ব্যবসায়ীরা বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে একচেটিয়া মুনাফা করতে পারেন।

চাষিরা বলছেন, এ বছর এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা বেশি। জমির ইজারামূল্য, আলুবীজের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়েছে। গত বছর এক বিঘা জমির ইজারা মূল্য ছিল ১৫ হাজার টাকা, যা এবার বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার টাকা। গতবার বীজ কেনায় বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা, এবার হয়েছে ১৮-২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া শ্রমিকের জনপ্রতি মজুরি ৩০০ থেকে বেড়ে ৫০০ টাকা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী জেলার ৯ উপজেলায় এবার ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ৩৬ হাজার ৫০০ হেক্টরে। জেলার প্রায় অর্ধেকই চাষ হয় তানোর উপজেলায়। এদিকে শর্ষের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা এবার এটির চাষ বাড়িয়েছেন। এতে আলুর আবাদ কমেছে। গত বছর রাজশাহীতে ১০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ টন। তবে রাজশাহীতে বছরে আলুর চাহিদা ৮০ হাজার টন। উদ্বৃত্ত থাকা আলু অন্য জেলাগুলোয় যায়।

তানোর উপজেলার চাষি আবদুল আওয়াল জানান, এ বছর তিনি ৮০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। গত অক্টোবরের শেষে বৃষ্টির কারণে আলুর ফলন কম হয়েছে। আগে যেখানে এক বিঘা জমিতে ৭০ বস্তা পর্যন্ত আলু পাওয়া যেত, সেখানে এবার পাওয়া গেছে ৫৫-৫৭ বস্তা।

বিএডিসির সাবেক মহাব্যবস্থাপক আরিফ হোসেনও বলেন, এবার বৃষ্টিতে আলুর উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আবার তীব্র শীতের সময়ে চাষিরা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করায় তাতে আলুগাছ রক্ষা পেলেও ফলন কমে গেছে। আর ফলন কমার কারণেই আলুর দাম বেড়েছে। রাজশাহীর কৃষকেরা স্মরণকালে মাঠে এত বেশি দাম পাননি।

এদিকে ফলন কম হওয়ার কারণে রাজশাহীর সব হিমাগার এবার আলুতে ভরে যায়নি। রাজশাহী হিমাগার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, তাঁর নিজের পাঁচটি হিমাগারের মধ্যে দুটি ভরেছে। বাকি তিনটির একটির ১০ ভাগ, একটির ২০ ভাগ ও একটির ৩০ ভাগ খালি রয়েছে। তিনি বলেন, রাজশাহী জেলায় মোট ৩৬টি হিমাগার রয়েছে। এবারের আলু তোলা শেষ হয়ে গেলেও এখনো হিমাগারের ২০ শতাংশ খালি পড়ে রয়েছে।

উৎপাদন মৌসুমে আলুর এত দাম বাড়ার বিষয়ে নতুন কথা বলছেন জেলা বিপণন কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন। সম্প্রতি রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বদলি হয়ে যাওয়া এই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দাম বৃদ্ধি সম্পূর্ণ ব্যবসায়ীদের কারসাজি। যেখানে আলুর উৎপাদন খরচ ১৩ থেকে ১৪ টাকা হওয়ার কথা, সেখানে তাঁরা ২৮-৩০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। ভালো দাম পেয়ে চাষিরাও মাঠেই আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন ব্যবসায়ীরা সব আলু মজুত করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবেন।

মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, সাধারণত হিমাগারে রাখার পর চাষিদের ঘরে যে আলু উদ্বৃত্ত থাকে, তা দিয়ে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। জুলাই থেকে হিমাগারের আলু বাজারে আসে। নভেম্বর নাগাদ হিমাগারের আলু খালাস হয়ে যায়। গত বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি হঠাৎ অতিরিক্ত দামে ব্যবসায়ীরা চাষিদের উদ্বৃত্ত আলু কিনে নিয়ে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন। কিন্তু নভেম্বরে তাঁরা আর হিমাগারের আলু ছাড়েননি। দাম বাড়িয়ে ডিসেম্বরে ছাড়েন। এবারও তা-ই হবে। কারণ, মার্চ-এপ্রিল-মে মাসের চাহিদা মেটানোর আলু চাষিদের ঘরে না উঠে ব্যবসায়ীদের গুদামে চলে গেছে। তাঁরাই এখন আস্তে আস্তে বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবেন বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

একই দূরত্ব, তবু কলকাতার চেয়ে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম দ্বিগুণ

০৭ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

ছুটি কাটাতে দেশের বাইরের গন্তব্যে উড়োজাহাজযাত্রা জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে আগের চেয়ে উড়োজাহাজের সংখ্যা বেড়েছে; বেড়েছে যাত্রীসংখ্যাও। এতে টিকিটের দাম কমার কথা। কিন্তু উল্টো বাড়ছে।

বিশেষ করে ঈদের মতো উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বাইরে উড়োজাহাজে করে অবকাশযাত্রায় বাড়তি বাণিজ্যের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একই দূরত্বের গন্তব্যে কলকাতার চেয়ে ঢাকা থেকে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া পড়ছে।

ঢাকা ও কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুরের দূরত্ব প্রায় একই। উড়োজাহাজে সরাসরি ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরে যেতে সময় লাগে ৪ ঘণ্টা ২০ মিনিট। কলকাতা থেকে যেতে ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিট লাগে।

তার মানে এই গন্তব্যে উড়োজাহাজের জ্বালানি খরচে তেমন পার্থক্য হবে না। অথচ ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর যেতে উড়োজাহাজের টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ২৮ হাজার টাকা। কলকাতা থেকে তা পাওয়া যাচ্ছে টাকার হিসাবে মাত্র ১৫ হাজারে।

এবার ১০ এপ্রিল থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হচ্ছে। এদিনের সিঙ্গাপুর গন্তব্যের টিকিটের দাম জানতে অনলাইন টিকিট বুকিংয়ের একাধিক ওয়েবসাইট ঘুরে এই তথ্য পাওয়া যায়।

দেশ থেকে বাইরে বেড়াতে যাওয়ার আরেকটি জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ডের ব্যাংকক। ঢাকা ও কলকাতা থেকে উড়োজাহাজে করে আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছানো যায় ব্যাংকক। কলকাতা থেকে টিকিট মিলছে জনপ্রতি ১২ হাজার টাকায়। ঢাকা থেকে টিকিটের দাম ৩০ হাজার টাকা।

রাজবাড়ীতে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদ‌লিত হয়ে বৃদ্ধার মৃত্যু

৭ এপ্রিল ২০২৪, যমুনা টিভি অনলাইন

রাজবাড়ী‌তে যাকাতের কাপড় নি‌তে গিয়ে টিনের গেইট ভেঙে ঢুক‌তে গি‌য়ে ধাক্কায় মা‌টি‌তে পড়ে অজ্ঞাত (৬০) এক বৃদ্ধা ম‌হিলার মৃত্যু হয়েছে।

রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল সা‌ড়ে ৬টার দি‌কে শহ‌রের ভবানীপুর আলহাজ মো. দে‌লোয়ার হো‌সেনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘ‌টে।

বাড়ির দে‌লোয়ার মালিক বলেন, তি‌নি প্রতি বছ‌রের মতো এবারও ২৭ রমজা‌নে তার প্রায় সা‌ড়ে ৩ হাজার অসহায়, হত‌দিরদ্র মানু‌ষের মা‌ঝে যাকা‌তের শা‌ড়ি ও লু্ঙ্গি বিতর‌ণের ব্যবস্থা করেন। এ জন্য প্যান্ডেল ও গরমের জন্য ফ্যানের ব্যবস্থা রাখেন। সকাল ৭টা থে‌কে শা‌ড়ি ও লুঙ্গি বিতর‌ণের কথা থাক‌লেও ফজ‌রের নামাজা‌রের সময় থে‌কে মানুষ জ‌ড়ো হ‌তে থা‌কে। হঠাৎ সকাল সা‌ড়ে ৬টার দি‌কে বাড়ির একপা‌শের টি‌নের গেইট ভেঙে এক সা‌থে সবাই ধোকার চেষ্টা ক‌রে হত‌দরিদ্ররা। এ সময় এক বৃদ্ধা ম‌হিলা ধাক্কা লে‌গে মা‌টি‌তে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বিত্তশালীদের কেনাকাটা বাড়লেও কমছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা

এপ্রিল ০৮, ২০২৪, বণিক বার্তা

এবার ঈদে অভিজাত শপিংমলগুলোয় লাইন ধরে ক্রেতারা প্রবেশ করছেন। পছন্দের পোশাকও কিনছেন তারা। এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মার্কেটে। ক্রেতা তুলনামূলক কম। মার্কেটে এলেও দাম শুনে পছন্দের পোশাক কিনতে পারছেন না। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

ঈদের সময় পাঞ্জাবির দোকানে তুলনামূলক বেশি বেচাকেনা হয়। সম্প্রতি পাঞ্জাবির বাজারে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইল্লিয়্যিন। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের ইল্লিয়্যিনের শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে ক্রেতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আউটলেটটির বাইরে ক্রেতারা সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছেন। ভেতর থেকে কেউ বের হলে ঢুকছেন অন্য ক্রেতা। এ ব্র্যান্ডের পণ্যের মূল্যও আকাশছোঁয়া। কথা হয় সে শোরুমের এক জ্যেষ্ঠ বিক্রয় সহকারীর সঙ্গে। ব্যবস্থাপনা পর্ষদের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেচাবিক্রি সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তবে নাম প্রকাশ হবে না নিশ্চিত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে পাঞ্জাবির চাহিদা বেড়েছে। অনেক ক্রেতাকে আমরা ঠিকমতো পণ্য সরবরাহ করতে পারছি না। অধিকাংশ পাঞ্জাবির সাইজ শেষ। অবশিষ্ট একটি-দুটি সাইজে মিললে পাঞ্জাবি পাচ্ছেন ক্রেতারা। এর পরও দৈনিক চারশর বেশি পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে এ আউটলেট থেকে। এসব পাঞ্জাবির দাম ৩ হাজার ৬৫০ থেকে শুরু হয়ে ৯ হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।’

বসুন্ধরা শপিংমলে অবস্থিত পাঞ্জাবির আরেকটি শোরুম লুবনান। প্রতিষ্ঠানটির শোরুম ইনচার্জ রিয়াজ হোসেন রাজু জানান, তারা দৈনিক ২৫০-৩০০টির বেশি পাঞ্জাবি বিক্রি করছেন। দাম ২ হাজার ৫০০ থেকে শুরু হয়ে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে অনেক সময় গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সাইজ দিতে পারেন না তারা। রিয়াজ হোসেন রাজুর ভাষ্য, লুবনানের প্রতিটি শোরুম একটি ডিজাইনের ১২টি করে পাঞ্জাবি পায়। অনেক সময় নির্দিষ্ট ডিজাইনের পাঞ্জাবি সাইজ অনুযায়ী সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ চাহিদার বিপরীতে উৎপাদনে সীমাদ্ধতা রয়েছে। দেখা গেল, প্রদর্শনী থেকে গ্রাহক পাঞ্জাবি পছন্দ করে সাইজ মিলিয়ে দিতে বলছেন, স্টোরে গিয়ে দেখা যায় ওই সাইজ বিক্রি হয়ে গেছে।

ইল্লিয়্যিন থেকে পাঞ্জাবি কিনে বেরিয়েছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম। হাতে বেশ কয়েকটি ব্যাগ দেখে জিজ্ঞেস করতেই জানালেন চারটি পাঞ্জাবি কিনেছেন তিনি। কামরুল হাসান বলেন, ‘ঈদে যা কিছুই হোক সবারই নতুন পাঞ্জাবি লাগে।’ দাম বেশি হলেও পরিবারের লোকদের খুশি করতে ইল্লিয়্যিন থেকে পাঞ্জাবি কিনেছেন তিনি।

একই শপিংমলের আরেকটি শোরুম দেশী দশ। স্বনামধন্য ১০টি ফ্যাশন ব্র্যান্ড নিপুণ, কে-ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা ও সৃষ্টির সমন্বয়ে একই ছাদের নিচে ব্যবসা করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন ব্যবস্থাপক মো. শরীফুজ্জামান জানান, রমজানের শুরু থেকে ভালো ব্যবসা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এপ্রিলের শুরু থেকে ব্যবসা কমে এসেছে। এ সময়ে বেচাকেনা আগের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে দাবি করছেন তিনি।

এখানে পোশাক কিনতে আসা ইসরাত জাহান নামে এক তরুণী বলেন, ‘‌নতুন পোশাক ছাড়া ঈদ কল্পনাই করা যায় না। আবার ঈদের পর পারিবারিক অনুষ্ঠান আছে। সেজন্য একাই তিনটি জামা নিয়েছি।’

তুলনামূলক বিপরীত চিত্র পাওয়া গেল নিউমার্কেটে। সাধারণত মধ্যবিত্তরা এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। মার্কেটটিতে মানুষের ভিড় থাকলেও বিকিকিনি সে অনুযায়ী হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ক্রেতারা মার্কেটে আসেন ঠিকই। জামাকাপড়ও হাতে নিয়ে দেখেন। তবে অধিকাংশ না কিনে চলে যান। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের পাঞ্জাবি ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া বলেন, ‘‌এ বছর আশানুরূপ বিক্রি করতে পারিনি। ক্রেতারা পোশাক কিনতে এসে দরদাম করে চলে যাচ্ছেন। দিনে ২০-২৫টির বেশি পাঞ্জাবি বিক্রি করতে পারছি না।’

গুলিস্তানের ফুটপাতে শার্ট-প্যান্ট নিয়ে বসেন মো. রুবেল হোসেন। ঈদ উপলক্ষে পাঞ্জাবির সংগ্রহ বাড়িয়েছেন তিনি। তবে প্রথম লটে সংগৃহীত পাঞ্জাবিই বিক্রি করে শেষ করতে পারেননি। দৈনিক সর্বোচ্চ সাত-আটটি পোশাক বিক্রি করতে পারছেন তিনি। কোনো কোনোদিন দু-তিনটিতেই থেমে থাকে এ সংখ্যা। রুবেল বলেন, ‘‌ফুটপাতে মানুষের আনাগোনা হয়, ভিড় হয়। তবে মানুষ জামাকাপড় কিনছেন না। ১০ জন মানুষ দেখে একজন কিনছেন। বাকিরা দাম জিজ্ঞেস করেই চলে যাচ্ছেন।’

একই চিত্র নিউমার্কেটের ফুটপাতেও। নিম্নবিত্ত মানুষের শেষ ভরসা ফুটপাতের দোকানে তুলনামূলকভাবে দাম কম হওয়ায় এখান থেকে পছন্দের পোশাক কেনেন স্বল্প আয়ধারীরা। তবে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে তাদের সে স্বপ্নও ফিকে হয়ে যেতে বসেছে। নিউমার্কেটের প্রধান ফটকের পাশের ফুটপাতের একটি দোকানে কন্যা সন্তানের জন্য জামা নেড়েচেড়ে দেখছিলেন দিনমজুর হাকিম সবুর। অনেকক্ষণ দেখার পর একটি জামা পছন্দ করেছেন তিনি। তবে দোকানিকে দাম জিজ্ঞেস করতেই চেহারা মলিন হয়ে আসে তার। পকেটে হাত দিয়ে টাকার হিসাব করে দাম মেটাতে পারেননি। কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে পোশাকটি রেখে দেন তিনি। জিজ্ঞেস করলে হাকিম সবুর বলেন, ‘‌ছোট ছেলেটার জন্য একটা শার্ট কিনেছি। প্যান্ট কেনার টাকা নেই। মেয়েটা একটা ফ্রকের আবদার করছিল। কাল আরো কিছু টাকা জমিয়ে এসে নেব।’

ফুটপাতের আরেক দোকানি কালাম মিয়া বলেন, ‘‌মানুষ এখন আগের মতো কেনাকাটা করতে পারছে না। আমাদেরও বেচাবিক্রি কম। ঈদের বাজারের দিকে তাকিয়ে থাকি আমরা। তবে এবার খুব একটা লাভ করতে পারছি না।’

আজিমপুরের এক মুদি ব্যবসায়ী মকবুল রহমান ফুটপাত থেকেই পরিবারের জন্য পোশাক কিনছিলেন। তিনি বলেন, ‘‌মার্কেটে জামা-কাপড়ের অনেক দাম। ফুটপাতই এখন শেষ ভরসা। দুই মেয়ে আর এক ছেলের জন্য ফুটপাত থেকে পোশাক কিনে আগামীকাল বাড়ি যাব। স্ত্রীর জন্য একটা শাড়ি কিনব ভেবেছিলাম। সন্তানদের জন্য কিনতেই জোগাড় করা টাকা শেষ। নিজের জন্য কিছু কিনিনি।’

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে বেসিক ব্যাংক

এপ্রিল ০৯, ২০২৪, বণিক বার্তা

বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে সরকারি রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকে গতকাল অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংকের একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এ নিয়ে ব্যাংক দুটির পরিচালনা পর্ষদে আলোচনাও হয়। তবে এক্ষেত্রে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসছিল না। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই বেসিক ব্যাংককে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের ব্যাংক খাতে মার্জার-অ্যাকুইজিশন নিয়ে অনেক আলোচনাই হচ্ছে। আমরাও এর বাইরে নই। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিকল্পগুলো নিয়ে আমরা পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করছি। নির্দিষ্ট কোনো দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়ে আমি জ্ঞাত নই। তবে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে যদি কোনো কঠিন সিদ্ধান্তও নিতে হয়, সেক্ষেত্রে সিটি ব্যাংক প্রস্তুত রয়েছে।’

মার্চে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮১ শতাংশ

১০ এপ্রিল ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

চলতি বছরের মার্চে দেশের মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

মঙ্গলবার সর্বশেষ আর্থিক পরিসংখ্যানে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস।

বিবিএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্চে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে, আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশে।

৩ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার

এপ্রিল ১৬, ২০২৪, বণিক বার্তা

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে শিল্প খাতে, ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ শতাংশ।

সরকার চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। যদিও এ লক্ষ্যমাত্রাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে তুলনামূলক রক্ষণশীল প্রক্ষেপণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবিও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বড় কোনো সমস্যায় নয়, বরং উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব, ডলার সংকট ও আর্থিক খাতের দুর্দশার কারণেই জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমছে। আর আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল কম আসায় শিল্প খাতে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করায় প্রবৃদ্ধি কমাটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এটাকে মেনে নেয়ারও পরামর্শ তাদের। খাতসংশ্লিষ্টরা যদিও বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট সমাধান না হলে ভবিষ্যতে শিল্পোৎপাদন আরো কমে আসবে।

আপাতত আর কোনো ব্যাংক একীভূত হবে না: বাংলাদেশ ব্যাংক

১৬ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

আপাতত আর কোনো ব্যাংককে একীভূত করা হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, যে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার ফলাফল ও অভিজ্ঞতা যাচাইয়ের পর নতুন করে অন্য কোনো দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ১০টি ব্যাংককে একীভূত করার মাধ্যমে পাঁচটিতে নামানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই পাঁচ ব্যাংকের বাইরে এখন নতুন করে আর কোনো ব্যাংককে স্বেচ্ছায় একীভূতকরণ করা হবে না। কারণ, এ বিষয়ে আমাদেরও কতটা সক্ষমতা আছে, এটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি ব্যাংক নিরীক্ষা করতে তিনটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান লাগবে। দেশে ভালো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব আছে। এই পাঁচ ব্যাংক থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনের দিনে আরও ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’

সম্ভাবনা থাকলেও কমছে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি

২০ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

দীর্ঘদিন ধরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ছিল ৯৭ কোটি মার্কিন ডলারের। গত অর্থবছরে এই রপ্তানি কমে ৯১ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। তার মানে ১০ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়েনি, উল্টো ৬ শতাংশ কমেছে।

পাটপণ্যের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বজুড়ে পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। তবে কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। যদিও বিশ্বমানের পাট উৎপাদনে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পাটের উৎপাদন থেকে শুরু করে পাটপণ্য নিয়ে গবেষণা, নকশার উন্নয়ন, বিপণনসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি সমন্বিত পথনকশা দরকার। সেই পথনকশা অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হলেই পাটপণ্যের রপ্তানি বাড়বে।

পানি আমদানি হচ্ছে বছরে লাখ ডলারের

২২ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে পানি আমদানি শুরু হয় প্রায় ২৫ বছর আগে। শুরুতে বিদেশি বোতলজাত পানির ব্যবহার ছিল খুবই কম। তবে ধীরে ধীরে আমদানি করা পানির ব্যবহার বাড়তে থাকে। শুরুর দিকে ইউনিভার্সাল ট্রেডিং হাউস ও ফুডেক্স ইন্টারন্যাশনাল বোতলজাত পানি আমদানি করে। এখন এই দুটি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিং কোম্পানি, হোলসেল ক্লাব লিমিটেডসহ ২০-২২টি প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে পানি আমদানি করছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গত পাঁচ বছরের পানি আমদানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরে গড়ে সাড়ে তিন লাখ লিটার বিদেশি বোতলজাত পানি আমদানি হচ্ছে দেশে। এর মধ্যে অবশ্য গত বছর পানি আমদানি কিছুটা কমে গেছে। গত বছর বোতলজাত পানি আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার লিটার। গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি পানি আমদানি হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর আমদানি হয়েছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার লিটার। মূলত বাংলাদেশে ফ্রান্স, ফিজি ও ইতালির পানিই বেশি আমদানি হচ্ছে। এসব পানি বেশি আমদানি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য থেকে।

চিনির বাজার: সরকারি থেকে বেসরকারি নিয়ন্ত্রণে

এপ্রিল ২২, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

প্রায় দুই দশক আগেও দেশের চিনি শিল্পে ১৫ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার আধিপত্য থাকলেও এখন তা পাঁচ বেসরকারি কারখানার নিয়ন্ত্রণে।

তারপরও ২০২৩ সালে আমদানি করা ১৭ লাখ টন অপরিশোধিত চিনির প্রায় ৭০ শতাংশই ছিল দুই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই) ও সিটি গ্রুপের দখলে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুসারে, মেঘনা গ্রুপ সাড়ে ৪০ শতাংশ ও সিটি গ্রুপ সাড়ে ২৮ শতাংশ অপরিশোধিত চিনি আমদানি করছে।

চিনির তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক ছিল এস আলম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে দেশের চিনির চাহিদার প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ মিটিয়েছিল।

ওই বছর অবশিষ্ট অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছিল অন্য দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড ও দেশবন্ধু সুগার মিলস।

ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পরিশোধন সক্ষমতা বাড়ানোয় গত অর্থবছরে দেশের নয় হাজার কোটি টাকার বেশি দামের চিনির বাজারে এখন এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য চলছে।

বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ ৪ মে থেকে

এপ্রিল ২৩, ২০২৪, বণিক বার্তা

রেলযাত্রায় ১০০ কিলোমিটারের অতিরিক্ত দূরত্বে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে আগামী ৪ মে। ওই দিন বা এর পরের যেকোনো সময়ে উল্লিখিত দূরত্বের বেশি ভ্রমণের জন্য এখনকার চেয়ে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করতে হবে রেলযাত্রীদের। ৪ মের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে আগামীকাল। এ অনুযায়ী কাল থেকেই যাত্রীদের ওই দিন বা এর পরের যেকোনো সময়ের জন্য ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করে টিকিট কিনতে হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে গতকালই একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয় ১৯৯২ সালে। এরপর ২০১২ সালে সেকশনাল রেয়াত বাতিল হলেও চালু ছিল দূরত্বভিত্তিক রেয়াত। সম্প্রতি রেলওয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোয় নতুন করে ভাড়া না বাড়িয়ে দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ৪ মে থেকে কার্যকর হবে।

দূরত্বভিত্তিক রেয়াতি সুবিধায় ৩২ বছর ধরে মূল ভাড়ায় ১০১-২৫০ কিলোমিটার ভ্রমণে ২০ শতাংশ, ২৫১-৪০০ কিলোমিটারে ২৫ ও ৪০১ কিলোমিটার বা এর বেশি দূরত্বের জন্য ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর্থিক চাপ ও লোকসান কমাতে এখন এ সুবিধা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে রেলওয়ে। এর পাশাপাশি ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে ট্রেনে অতিরিক্ত সংযোজিত কোচ ও আবেদনের মাধ্যমে রিজার্ভকৃত টিকিটেরও। এক্ষেত্রে রিজার্ভেশন চার্জের ভিত্তিতে অতিরিক্ত সংযোজিত কোচ ও আবেদনের মাধ্যমে রিজার্ভকৃত নন-এসি টিকিটে ব্যয় বাড়ছে মূল ভাড়ার ২০ শতাংশ। এসি টিকিটে বাড়ছে ৩০ শতাংশ।

দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম

গ্রাহকের টাকায় জমিবিলাস, আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান ২ হাজার ২০ শতাংশ জমি কিনেছেন

২৭ জানুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার ‘গ্রাহকের টাকায়’ ২ হাজার ২০ শতাংশ জমি কিনেছেন। দলিল সূত্রে এসব জমি খুঁজে পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

জমিগুলো কেনা হয়েছে গাজীপুরে। স্থানীয় বাসিন্দা, আলেশার নিয়োগ করা তত্ত্বাবধায়ক ও জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আলেশার কেনা জমির পরিমাণ আরও বেশি। সিআইডি যে পরিমাণ জমির হদিস পেয়েছে, তার দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। অবশ্য তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, দলিলে জমির দাম কম দেখানো হয়েছে। আসলে এই পরিমাণ জমির বাজারমূল্য অন্তত ১৫০ কোটি টাকা।

যেমন এক জায়গায় প্রতি শতাংশ জমির দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেখানে জমির বাজারমূল্য প্রতি শতাংশ সর্বনিম্ন দুই লাখ টাকা।

২০২১ সালের দিকে যখন আলেশা মার্ট গ্রাহককে বড় ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রির নামে টাকা ওঠাচ্ছিল, তখনই জমিগুলো কেনা হয়। ওই সময় কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এর একটি এই আলেশা মার্ট। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার এখন কারাগারে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে করা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের একটি মামলার তদন্ত করছে। তাদের তদন্তেই আলেশার বিপুল পরিমাণ জমি কেনার তথ্য বেরিয়ে আসে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মনিরুজ্জামান গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে মঞ্জুর আলমের ২ হাজার ২০ শতাংশ জমি জব্দ করা হয়েছে।

নীতি অবনত ব্যবস্থার উপঢৌকন কি রাজউকের প্লট

জানুয়ারি ২৮, ২০২৪, বণিক বার্তা

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আইন সংশোধন হয় ১৯৮৬ সালে। সংশোধিত নতুন আইনে বলা হয় ‘সরকার যাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাকেই প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে’। ওই ধারাটির মাধ্যমে সরকারি আবাসন প্রকল্পগুলো হয়ে ওঠে ক্ষমতাবলয়ের কাছের লোকদের সুবিধা দেয়ার হাতিয়ার। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঐতিহাসিকরা বলছেন, তৎকালীন স্বৈরশাসককে শাসন টিকিয়ে রাখতে বরাবরই সরকারি আমলা, রাজনীতিবিদসহ সমাজের প্রতাপশালী ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিদের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে বেশি। বিভিন্ন সময়ে বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, প্রশাসন, রাজনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের নানা ব্যক্তির সমর্থনেরও প্রয়োজন পড়েছে। এ সমর্থনের বিনিময়ে এসব মানুষকে সম্পদ বাড়ানোর পথ প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছে নানাভাবে। পাশাপাশি উপঢৌকন হিসেবে দেয়া হয়েছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গৃহায়ন ও গণপূর্ত আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত আবাসিক এলাকা ও সরকারি প্রকল্পে প্লটের বরাদ্দ পেয়েছিলেন বিচার বিভাগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সরকারি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, কোটিপতি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, চলচ্চিত্র শিল্পীসহ সরকারঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তি।

এ সংস্কৃতি বজায় রাখে পরের সরকারগুলোও। তৎকালীন বিভিন্ন মাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে রাজধানীর সবচেয়ে অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীতে ৩০১টি প্লট বরাদ্দ দেয় রাজউক। ওই বরাদ্দ প্রক্রিয়া সে সময় ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। সে সময় এসব প্লটের মধ্যে ৫৯টির জন্য বরাদ্দ দেয়ার মতো কোনো জায়গাই চিহ্নিত করা যায়নি। জায়গা না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ  দেখা দেয়, এগুলো বরাদ্দ দিতে হলে এলাকাদুটির লেক ও জলাশয় ভরাট করা ছাড়া গতি নেই। তখন ৩০১টি প্লটের জন্য ১৩ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল। প্রতি আবেদনের জন্য জমা দিতে হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা করে। ১৩ হাজার মানুষের মধ্যে বাছাই করে ৩০১ জনকে নির্বাচিত করে রাজউক। নির্বাচিতদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ছিলেন তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তা ও সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। প্লটের বরাদ্দ পান ১১ জন মন্ত্রী, ৬২ জন সংসদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাত কর্মকর্তা এবং সরকারদলীয় নেতাদের শতাধিক আত্মীয়-স্বজন। এমনকি সচিব পর্যায়ের সিনিয়র ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক জুনিয়র সরকারি কর্মকর্তাদের প্লট বরাদ্দ দেয়ারও অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সে সময় গণমাধ্যমগুলোয় বেশ আলোড়ন তৈরি করেছিল।

তৎকালীন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদে দাবি করা হয়, রাজউক পত্রিকায় বরাদ্দের জন্য আবেদনপত্র চাওয়ার পর দেড় বছর সময় লেগে গিয়েছিল বরাদ্দপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করতে। বরাদ্দ চাহিদা চাওয়ার সময় যিনি গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন, তিনি তার পছন্দমতো ৩০১ জনকে বাছাই করে একটি তালিকা করেন। ওই মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর নতুন মন্ত্রী এসে সে তালিকা বদলে নিজের পছন্দমতো আরেকটি তালিকা করেন। তাতে তিনি নিজের নামও অন্তর্ভুক্ত করেন। অবশ্য সরকার পরবর্তী সময়ে বরাদ্দটি বাতিল করে।

রাজউকের প্লট ডেভেলপমেন্ট ও বরাদ্দ প্রক্রিয়া পুরোটাই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিসহায়ক বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাজউকের আবাসন কার্যক্রমে আমরা এক ধরনের বৈষম্য দেখতে পাই। বরাদ্দের ক্ষেত্রে যাদের প্রাধান্য দেয়া হয় তারা কোনো না কোনোভাবে দলীয় রাজনীতি বা শাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। এর ফলে ক্ষমতা প্রবাহের একটা নমুনা তৈরি হয়। রাজউকের সম্পদ মানেই তো রাষ্ট্রের সম্পদ। সংবিধান অনুযায়ী এগুলোর বণ্টন বৈষম্যহীন হওয়ার কথা। সেটি না হয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বরাদ্দ দিয়ে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকভাবে আরো বৈষম্য তৈরি করেছে।’

২০০২ সালে নেয়া হয় উত্তরা আবাসিক শহর (তৃতীয় পর্ব) প্রকল্প। এখানেও প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বেশি। যদিও প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আবাসন সংকট নিরসনের কথা। এখানে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও বিচারপতিদের দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এক্ষেত্রে আইনগতভাবেই তাদের জন্য কোটামুক্ত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা। সে অনুযায়ী আবেদন করলেই তারা বরাদ্দ পেয়ে যাবেন। তাদের জন্য প্লট নিশ্চিতের পরই অন্যদের জন্য কোটা মেনে বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। এ অনুযায়ী উত্তরা আবাসন প্রকল্পের তৃতীয় পর্বে সর্বাধিক ২৮ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য। এর বাইরেও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও প্রতিরক্ষা  কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে যথাক্রমে ১, ১ ও ২ শতাংশ। এছাড়া ২ শতাংশ বরাদ্দ আইনজীবীদের জন্য। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার চাকরিজীবীদের জন্য বরাদ্দ ১২ শতাংশ। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের জন্য বরাদ্দ ৮ শতাংশ। ১০ শতাংশ বরাদ্দ আছে বেসরকারি কর্মকর্তাদের জন্য। প্রবাসীদের জন্য ১০ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য ও সংরক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য ৫ ও ১০ শতাংশ কোটা রেখেছে রাজউক।

রাজউককে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ। তিনি বণিক বার্তাকে বলেছেন, ‘রাজউকের গঠনতন্ত্রই এমন যে সরকারি আমলা কিংবা রাজনীতিবিদরা চাওয়া মাত্রই রাজউকের চেয়ারম্যান বা বোর্ড মেম্বারদের প্রভাবিত করে ফেলতে পারে। আমরা যতই বলি রাজউকের গঠনতন্ত্র সংস্কার করা হোক, কোনো সরকারই এ সুবিধাজনক অবস্থা থেকে সরে আসেনি এবং ভবিষ্যতেও কেউ আসতে চাইবে না। এসব কারণেই রাজউক পরিণত হয়েছে আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে। সরকার চাইলেই পার্ক-জলাশয়কে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দিতে বাধ্য হয় রাজউক।’

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ১৯৯৫ সালে। এটি হাতে নেয়া হয়েছিল মধ্যবিত্তের জন্য আবাসন প্রকল্প হিসেবে। যদিও এখন পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান নাগরিক চাপে বিপর্যস্ত ঢাকার আবাসন সমস্যা সমাধানে কোনো কাজেই আসেনি প্রকল্পটি। বরং এখানকার বরাদ্দকৃত জমি অনেকের জন্যই খুলে দিয়েছে রাতারাতি বিত্তশালী হওয়ার পথ। প্রকল্পটিকে দেশে জমির সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে দেখছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তাদের ভাষ্যমতে, রাজউক এখানকার জমি অধিগ্রহণ করেছিল কাঠাপ্রতি সাড়ে ১৪ হাজার টাকারও কম মূল্যে। এরপর সে জমি বরাদ্দে তখন গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল দেড় লাখ টাকা করে। প্রতিবার মালিকানা বদলের পর এখানকার জমির দাম বাড়ছে কয়েক গুণ করে। এখন পূর্বাচলে জমির কাঠাপ্রতি গড় দাম কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এ প্রকল্পের জমি সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছেন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। কোটা সুবিধায় প্রকল্পের আবাসিক প্লটের প্রায় এক-চতুর্থাংশই পেয়েছেন তারা। লটারির মাধ্যমে তাদের প্রকল্পের জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার কাঠারও বেশি। কাঠাপ্রতি ৫০ লাখ থেকে শুরু হয়ে বর্তমান বাজারদরে জমির মূল্য উঠেছে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত।

প্রকল্পটিতে প্রথম পর্যায়ের লটারির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের ১ হাজার ৬৩২টি প্লট বরাদ্দ দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার চাকরিজীবীদের ৬৫৪, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি কোটায় ৪৭২, বেসরকারি চাকরিজীবীদের ৫৯১, প্রবাসী কোটায় ৫৯১, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৯৬, সচিব কোটায় ২৪, আইনজীবী কোটায় ১১০, বিচারপতি কোটায় ১৪, সংসদ সদস্য কোটায় ৫৭, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোটায় ৫৭, অন্যান্য কোটায় ১৮১, শিল্পী কোটায় ১৫১ ও সাংবাদিক কোটায় ৫৫টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া রাজউক কর্মকর্তা, সংরক্ষিত ও প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। লটারির পরও বিভিন্ন সময় পূর্বাচলের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রথম বরাদ্দের পর থেকে এ পর্যন্ত জমি ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রচুর প্লটের মালিকানা বদল হয়েছে।

অন্যকে সুবিধা দিতে গিয়ে বিএডিসি নিজেই গাড্ডায়

২৯ জানুয়ারি ২০২৪, সমকাল

কম দামে উন্নতমানের বীজ কৃষকের হাতে তুলে দেওয়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) দায়িত্ব। তবে বীজ বিতরণ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বীজ সংকট, ভেজাল, নিম্নমান, দামে নয়ছয়, বরাদ্দে ঘাপলাসহ নানা অনিয়ম ছাপিয়ে এবার বিপুল পরিমাণ বীজ অবিক্রীত থেকে যাওয়ার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, বেসরকারি কোম্পানিকে বীজ বিক্রির সুযোগ করে দিতে গিয়ে বিএডিসি এ গ্যাঁড়াকলে নিজেরাই পড়েছে।

চলতি রবি মৌসুমে বিএডিসির ৩৭ হাজার টনের বেশি বীজ অবিক্রীত থাকায় সরকারের প্রায় ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার লোকসান গোনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। এসব বীজ এখন বিএডিসির জন্য ‘গলার ফাঁস’! বাধ্য হয়ে এই বীজধান এখন চাল বানিয়ে বেচা ছাড়া আর কোনো গতি নেই। এভাবে বেচলেও মোটা অঙ্কের টাকা গচ্চা যাবে সরকারের।

বীজ অবিক্রীত থাকায় বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ার শঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। উচ্চফলনশীল ধানের বীজ কাজে না লাগায় প্রায় ৪ দশমিক ২ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন কম হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। এটি দেশের কৃষিতে বড় ধাক্কা বলেও মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা।

অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি কোম্পানির বিক্রি বাড়াতে বিএডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার একটি চক্রের আঁতাতে কৃষকের কাছে সঠিক সময়ে বিএডিসির বীজ পৌঁছে না। বেসরকারি সংস্থাগুলোর বীজ বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর বিএডিসি বীজ বাজারে দেয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির বীজ অবিক্রীত থেকে যায়। এ ছাড়া দক্ষ জনবলের অভাব ও দায়িত্বে অবহেলার কারণেও কৃষক সরকারের কম দামের বীজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএডিসির সাবেক এক মহাব্যবস্থাপক (বীজ) বলেন, বোরো মৌসুমের শুরুতে সঠিকভাবে তদারকি করা হলে এত বীজ অবিক্রীত থাকত না। মূলত অক্টোবর থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বোরো বীজ রোপণ শুরু হয়। এর পর আর বীজ রোপণের সময় থাকে না। ফলে এসব বীজ এই মৌসুমে কোনো কাজে আসে না। তিনি বলেন, বেসরকারি কোম্পানির বীজ কখনও অবিক্রীত থাকে না। প্রতি বছর দেশে আমদানি করা উচ্চমূল্যের ১২ হাজার টন ভুট্টা বীজ বিক্রি হয়। অথচ সরকার ভালো মানের ভুট্টা বীজ উচ্চ দরে সংগ্রহ করেও বিক্রি করতে পারে না।

জানা গেছে, বিএডিসির বীজ উৎপাদন করা হয় চুক্তিবদ্ধ চাষির মাধ্যমে। উৎপাদিত বীজ প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ করে পরবর্তী মৌসুমে তা কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। বেসরকারি এবং বিভিন্ন সংস্থার উৎপাদিত বীজের চেয়ে বিএডিসির বীজে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ফলন হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএডিসির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মজুত বীজের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৫০ টন। আউশ, আমন, বোরো ধানের বীজ রয়েছে ৬৬ হাজার ২৪৭ টন। এর মধ্যে বোরো ধানের বীজ অবিক্রীত রয়েছে ২৮ হাজার ৫ টন। এ ছাড়া উচ্চফলনশীল গম, ভুট্টা, ডাল বীজ, তৈল বীজ, সবজি বীজ, মসলা ও পাট বীজও অবিক্রীত রয়েছে ৫ হাজার ৬১৩ টন। গম বীজ ৫ হাজার ১৯৩ টন, ভুট্টা বীজ ৩০ টন, ডাল ও তৈল বীজ  ৩৩০ টন, সবজি বীজ ১৩ টন, মসলা  ৪৪ টন। উচ্চফলনশীল বোরো বীজ বিএডিসির সারাদেশের ২৭টি অঞ্চলে ৮ হাজার ৫৩৬ ডিলার এবং ১০০টি বীজ বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করা হয়। তবে এ বছর রবি মৌসুমে সব মিলিয়ে অবিক্রীত বীজ রয়েছে ৩৭ হাজার টন। কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এত বিপুল পরিমাণ বীজ অবিক্রীত থাকায় এ মৌসুমে ফসলের উৎপাদন কমে যাবে ৪ দশমিক ২ লাখ টনের বেশি। আর এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকারও বেশি।

দেশের দুর্নীতি উদ্বেগজনক

৩১ জানুয়ারি ২০২৪, সমকাল

সরকারি কেনাকাটায় অনিয়ম, প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীল নীতি কার্যকর না হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা কারণে দেশে অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়েছে দুর্নীতি। বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০২৩-এ বাংলাদেশে দুর্নীতি উদ্বেগজনক হারে বাড়ার চিত্রই ফুটে উঠেছে। এবার দুই ধাপ অবনতি হয়ে ১৮০ দেশের মধ্যে নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান দশম। স্কোরও ১ পয়েন্ট কমে হয়েছে ২৪।

গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিকভাবে এই সূচক একযোগে প্রকাশ করা হয়। একই দিনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বাংলাদেশের দুর্নীতির সূচক প্রকাশ করে। এবার টিআই সূচকের প্রতিপাদ্য ছিল ‘দুর্নীতি ও অবিচার’। এবারের সূচকে ৯০ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। একই সঙ্গে ১১ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে সোমালিয়া। রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস ভবনের টিআইবি কার্যালয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের দুর্নীতির ধারণা সূচক তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। টিআইবি বলেছে, দুর্নীতির ধারণা সূচকে স্কোর ও অবস্থানের এই অবনমন প্রমাণ করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতি ঘোষণাসহ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গীকার-সূচকের তথ্যের সময়কালে বাস্তবিক অর্থে কার্যকর প্রয়োগ হয়নি; বরং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের আরও অবনতি হয়েছে।

সুদ দিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ইসলামী ব্যাংক

জানুয়ারি ৩১, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

নগদ অর্থ সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং নীতিমালা লঙ্ঘন করে সুদের বিনিময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো সুদ গ্রহণ বা পরিশোধ করতে পারে না।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকের ৮৫১তম পর্ষদ সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ সুদের হারে ১৪ দিনের জন্য এই ঋণ নেয়।

সভায় ‘কল অ্যান্ড শর্ট নোটিশ ডিপোজিট’ নামে পরিচিত তারল্য সহায়তার আওতায় এই অর্থ দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন পায় এবং পরের দিনই এই অর্থ ইসলামী ব্যাংককে দেওয়া হয়।

এই প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারল্য সহায়তার মেয়াদ শেষ হলেও ইসলামী ব্যাংক এখনো পুরো টাকা পরিশোধ করতে পারেনি।

এই অর্থের মধ্যে সোনালী ব্যাংক তাদের অভ্যন্তরীণ ঋণসীমার বাইরে গিয়ে ৬২১ কোটি টাকা সরবরাহ করেছে এবং তারা বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও জানিয়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরে ‘ডিজিটাল’ কারসাজি করে রাজস্ব ফাঁকি

৩১ জানুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের ওজন স্কেলে (ওজন পরিমাপক যন্ত্র) কারসাজি করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে একটি চক্র। ওজন স্কেলের জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যারের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই আমদানিকারকদের ভারত থেকে পণ্য আনার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

এ কাজে বন্দরের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। জালিয়াতিতে জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে এ ঘটনায় ছয়টি তদন্ত কমিটি করা হলেও ছয় মাসেও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, দেশে স্থলবন্দর আছে ২৪টি। এর মধ্যে বেনাপোল দিয়ে সবচেয়ে বেশি ৬০-৭০ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। দেশের বৃহত্তম এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ৭-৮ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়। গত অর্থবছরে বন্দর থেকে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে সরকার। বন্দর ও কাস্টমস-সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, শুধু গত অর্থবছরেই ওজন কারসাজির মাধ্যমে প্রতারকেরা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে।

রাবির ছাদ ধসেও জড়িত বালিশ-কাণ্ডের ‘মজিদ সন্স লিমিটেড’

৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ঢাকা পোস্ট

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হলের নির্মাণের টেন্ডার পায় রূপপুর বালিশ-কাণ্ডের আলোচিত ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে নির্মাণাধীন ১০ তলাবিশিষ্ট শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান হলের একাংশের ছাদ ধসের ঘটনা ঘটে। এতে সাতজন নির্মাণশ্রমিক আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে পাঁচজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হলেন- গাইবান্ধার আজাদুল (৩৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিফাত (২২), রাজশাহী গোদাগাড়ীর সিহাব (২৫), রাসেল এবং সুরেজ। আর দুইজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাবির প্রকল্পের আওতায় ১০ তলাবিশিষ্ট শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান আবাসিক হল এবং ২০ তলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পায় রূপপুরের বালিশ-কাণ্ডে আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। কামারুজ্জামান হলে ৩০ ফুট উচ্চতার একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণের কাজ চলছে। আর গতকাল থেকে অডিটোরিয়ামের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। আজ ছাদ ধসের এই ঘটনা ঘটে।

১৩ লাখের বেশি কর্মী গেলেও প্রবাসী আয় বাড়েনি: রামরু

৩১ জানুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশ থেকে গত বছর বিভিন্ন দেশে গেছেন ১৩ লাখের বেশি কর্মী। দেশের ইতিহাসে এক বছরে এটি সর্বোচ্চ। আগের বছরের তুলনায় বিদেশে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তবে প্রবাসী আয় বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

তবে দেশের মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়নি। আবার পুরুষ কর্মী বাড়লেও আগের বছরের তুলনায় নারী কর্মী কমেছে ২৭ শতাংশ।

জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ বুধবার আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতি ও প্রকৃতি ২০২৩: অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রতিবছরই অভিবাসন খাত বিশ্লেষণ করে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১২ কর্মকর্তার দায় চিহ্নিত

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

আট বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার সরিয়ে নিয়েছিল হ্যাকাররা। ওই ঘটনায় করা মামলার তদন্ত এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। যদিও সিআইডি বলছে, তাদের তদন্ত শেষ পর্যায়ে।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সুইফট সিস্টেমের নিরাপত্তাব্যবস্থা সংরক্ষণে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে হ্যাকাররা দেশের রিজার্ভের টাকা সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নরসহ ১২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দায় পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।

বাকি কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন একজন নির্বাহী পরিচালক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত), একজন মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে ডেপুটি গভর্নর), চারজন যুগ্ম পরিচালক (তাঁদের দুজন বর্তমানে উপমহাব্যবস্থাপক, একজন যুগ্ম পরিচালক ও একজন অবসরে), তিনজন উপমহাব্যবস্থাপক (দুজন বর্তমানে জিএম) ও দুজন উপপরিচালক।

তৎকালীন গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালকের বাইরে বাকি কর্মকর্তারা তখন ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং, আইটি অপারেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ, পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ এবং ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিংস রুমের কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁদের কেউ সার্ভার কক্ষ খোলা রেখে, কেউ ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে, কেউবা অনুপস্থিত থেকে প্রকারান্তরে হ্যাকারদের সুযোগ করে দিয়েছেন।

তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানের দায় সম্পর্কে তদন্তে যে বিষয়টি উঠে এসেছে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন রিজার্ভ সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) সার্ভার একটি সংবেদনশীল ব্যবস্থা। তা সত্ত্বেও গভর্নর সুইফটের মাধ্যমে আরটিজিএসের (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) সংযোগ করার অনুমোদন দেন এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেন। এটাকে অপরাধমূলক উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা। আরটিজিএস একটি বিশেষায়িত তহবিল স্থানান্তর ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিক তহবিল স্থানান্তর করা যায়।

রাজীবের হাতে আলাদীনের চেরাগ

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মানবজমিন

পাঁচ বছর আগে সম্পদ বলতে ছিল পিতার রেখে যাওয়া ১০ শতাংশ জমি। একটি টিনের ঘর। এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। প্রতিষ্ঠা করেছেন রাজকীয় রাজ প্যালেস, রাজ রিয়েল এস্টেট এন্ড কনস্ট্রাকশন, রাজ এগ্রো, রাজ লেদার, রাজ বডি ফিটনেস সেন্টার, আইয়ান ফ্রেশ ডেইরি ফার্ম, রাজ মঞ্জুরী ভিলা, রিভার ভিউ রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টার, ইকোসিটি হাউজিং প্রকল্প, রূপকথা অ্যাপারেলস ও ওয়াসিল উদ্দিন ফাউন্ডেশন নামে প্রায় ডজন খানেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গড়েছেন বিশেষায়িত শিল্প গ্রুপ ‘রাজ গ্রুপ’। বর্তমানে এই গ্রুপের আনুমানিক সম্পদের পরিমাণ অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা। তিনি সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব। উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারই তার হাতে তুলে দিয়েছে আলাদিনের চেরাগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজনীতির শুরুতে হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক, অস্ত্র ও হত্যাচেষ্টার ডজন খানেক মামলায় জড়িয়েও কীভাবে পার পেয়ে গেলেন? এই প্রশ্ন জনমনে। সাভার থানার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়ও ছিল রাজীবের নাম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিপুল পরিমাণ টাকা আর নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেই দ্রুতগতিতে এগিয়ে গেছেন রাজীব। এ পথে কেউ বাধা হলেই তার উপর অস্ত্র নিয়ে হামলে পড়েছেন। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, পদ বাণিজ্য, সস্ত্রাসবাদ, টেন্ডারবাজি, গার্মেন্ট দখল, ঝুট ব্যবসার মাধ্যমে ২০১৭ সালের পর থেকে সাভার উপজেলার সর্বত্র একক আধিপত্য বিস্তার করেন রাজীব। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, হকার্স লীগ, শ্রমিক লীগ ও যুব মহিলা লীগ নিজের কব্জায় নিয়েছেন। সবখানেই তার খবরদারী। যার দাপটে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও তটস্থ। অল্প সময়েই ভাগ্য বদলে গেছে রাজীবের। সরকারি অফিস, ফুটপাথ, গার্মেন্টস, হাটবাজার, হাসপাতাল, ক্লিনিক, বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ সবই রাজীবের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে। কেউ চাঁদা তোলেন, কেউ আবার বালু, কুলিবিট ও ডিশ ব্যবসা করেন। পরিবহন, নদী ও আবাসন ব্যবসাও তাদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে স্রোতের বেগে বেড়েছে সম্পদ। রাজীবের অনুকম্পায় সম্পদে ফুলে ফেঁপে উঠেছে তার সহযোগীরাও। কেউ কেউ দখল করেছেন একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি। গত কয়েকদিনে সাভারের হেমায়েতপুর সরজমিন ঘুরে মঞ্জুরুল আলম রাজীবের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের নানা তথ্য পাওয়া গেছে।

শুরুটা ছিল হলমার্ক থেকে:

হলমার্ক দিয়েই প্রথমে রাজীবের সম্পদের যোগান শুরু হয়। অভিযোগ আছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া হলমার্কের মেশিনারীজ বিক্রি করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মালিক হন মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও তার ভাই ফখরুল আলম সমর। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হেয়ামেতপুর তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের নন্দখোলা এলাকায় হলমার্ক গ্রুপের ৪৩টি কারখানার মেশিন, যন্ত্রাংশ, জেনারেটর, সুতা, কাপড়, হাই ভলিউম লো স্পিড ফ্যান, প্রিন্টিং, ফিনিশিং, ওয়াশিং টেস্টিং, এমব্রয়ডারি, কুলিং যন্ত্র, বয়লার, কারখানার  ছাউনি, দরজা, জানালা এমনকি মূল ফটক চুরি হয়। বিদেশ থেকে আনা এক হাজার ২০০ টন সুতা ও ফেব্রিক্সও চুরি হয়। নির্মাণকাজের ৩ কোটি ইট, ১৫০ টন রড ও ১৩০০ বস্তা সিমেন্ট কিনেছিল হলমার্ক। ২০১৪ সালে তাও নাই হয়ে যায়। হলমার্কের নিবন্ধনবিহীন ১০টির বেশি দামি গাড়ি ও কাভার্ড ভ্যানও হারিয়ে যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হলমার্ক গ্রুপের এমডি জেসমিন গ্রেপ্তারের পর তার ভাই শামীম আল মামুন এই কারখানাগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। পরে শামীমকে হটিয়ে কারখানার নিয়ন্ত্রণ নেন সাভার উপজেলার চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, ফখরুল আলম সমর ও তাদের অনুসারীরা। প্রায় প্রতি রাতেই ট্রাক ভরে এসব মালামাল সরিয়ে নেন রাজীব। এ কাজে ব্যবহার করা হয় তেঁতুলঝোড়া ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার আইয়ূব আলী, ছোট ভাই কাইয়ূম, ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার নাজমুল হোসেন, যুবলীগ নেতা বেলাল আহমেদ, মামুন হোসেন, রিপন, সিরাজ দেওয়ান, অন্তর রহমান, ফয়সাল আহমেদ, নগরচরের সাইফুল আলম, আলী, রবিন, রাজীবের বোন জামাই পরিচয় দেয়া রিপনকে। মালামাল লুটের পর বর্তমানে কারখানাগুলোর ভবন ভেঙে জমি দখল করে প্লট আকারে বিক্রির চেষ্টা করছেন। কিছু জমি জনতা হাউজিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলমার্কের পুরোনো এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, এখানে অনেক বড় একটি স্পিনিং মিল ছিল। ২০১১ সালে হলমার্ক স্পিনিং, আনোয়ার স্পিনিং মিলের জন্য জার্মানি ও জাপান থেকে অত্যাধুনিক ১৩০০ সুইং এন্ড নিটিং মেশিন আমদানি করা হয়। কিন্তু এমডি স্যার গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৫ ধাপে রাতের আঁধারে এসব সরিয়ে নেয়া হয়। সরিয়ে নেয়া এলাকার অনেকেই দেখেছে। স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালে কারখানার মেশিনপত্র, জেনারেটর, টিনের শেডও খুলে নিয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হলমার্কের বেশির ভাগ কারখানায় যন্ত্রপাতি নেই। খামারের দুই হাজার ৯০০ গরুর মাত্র ৯টি গরু আছে। বিক্রি হয়ে গেছে গোয়ালের অর্ধেক শেডও। আর হলমার্কের মেশিন, জেনারেটর ও যন্ত্রাংশ লুটে নিয়ে সাভার ও গাজিপুরের কয়েকটি কারখানায় বিক্রি করা হয়।

দখলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সম্পদ: হলমার্ক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের দক্ষিণে সীমানা প্রচীর ঘেঁষা হলমার্কের প্রায় ৫০ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে শেড নির্মাণ করে আইয়ান ফ্রেশ ডেইরি নামে একটি গরুর ফার্ম করেছে রাজীব। ফার্মে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ প্রায় ৪০০ গবাদিপশু আছে। অভিযোগ রয়েছে, খামারের জমিটি ২০২০ সালে দখল করেন রাজীব। হেমায়েতপুর শহীদ রফিক সেতুর পাড়ে হলমার্কের একটি নির্মাণাধীন কারখানা দখল করে রিভার ভিউ রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টার করা হয়েছে। পাশের ধলেশ্বরী নদীর পাড় দখল করে রেস্টুরেন্টের টং তৈরি করা হয়। দখলের পর রাজীব এই স্থাপনা কাজল, শাওন, রফিকের কাছে ৩০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে মাসে ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এ ছাড়া সাভার থানা স্ট্যান্ডে ল্যাব জোন হাসপাতালের পেছনে বারী রিহাব সেন্টারের ৫ তলা ভবন দখল করে আবাসিক ভাড়া দিয়ে রেখেছেন রাজীবের শ্যালক সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রুবেল। এটা নিয়ন্ত্রণ করে সাভার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সোহেল রানা। এ ছাড়া হেমায়েতপুর নগরচর পুষ্প ব্রিকসের পাশে নগরচর মৌজা আরএস. ১৬৫নং দাগে ১৫৭ শতাংশ জমি দখল করে একেএইচ ডায়িং এন্ড নিটিং ফ্যাক্টরির কাছে ১৭ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন রাজীব ও তার ভাই ফখরুল আলম সমর। জমির মালিক নিলুফার হক জমি উদ্ধারে আদালতে মামলা করেন। অভিযোগ আছে, ৫ শতাংশ খাস জমি দখলের সময় ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৫২ শতাংশ জমি বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। সাভার আড়াপাড়া মৌজায় এসএ. ২নং দাগে রাজা হরিশচন্দ্রের বাড়ির পুকুর পাড় ঘেঁষা ৪০ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি দখল করে আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করছেন মঞ্জুরুল আলম রাজীব। ৫তলা ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। মামলা নং-২৩৫২/২০১২। আমিনবাজার ইউনিয়নের বরদেশী গ্রামের শেষ মাথা থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার নদী ও ফসলি জমি দখল করে রাজউকের অনুমোদনহীন ইকোসিটি হাউজিং প্রকল্প নামে আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড লাগিয়ে শত শত বিঘা জমি দখলে নেয়া হয়েছে। রাজউক প্রজ্ঞাপন দিয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বললেও তা মানেনি। মঞ্জুরুল আলম রাজীব এই দখল কাজে আমিনবাজার ইউপি চেয়ারম্যান রকিব আহমেদকে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

খালের মাটি গেছে ইটভাটায়, রাজীবের পকেটে ১৫০ কোটি: ২০২১ সালে ভাকুর্তা ইউনিয়নে বলিয়ারপুর থেকে মুশুরীখোল ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার তেঁতুলঝোড়া ভাকুর্তা ও যাদুরচর খাল খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল সালেহ এন্ড ব্রাদার্স। প্রায় ৩৫০ ফিট চওড়া ও ২০ ফিট গভীর খালের পাড়ে কোনো মাটি নেই। স্থানীয়রা বলছে, ভেকু দিয়ে খননের পরে রাতের আঁধারে ডাম্প ট্রাকে করে লাখ লাখ ঘনফুট মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। সূত্র বলছে, খালের মাটি তুরাগ ব্রিকস, সনি ব্রিকসসহ আশপাশের ইটভাটা ও হাউজিং প্রকল্পের কাছে বিক্রি করা হয়। এতে দেড় বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার মাটি বিক্রি করা হয়। সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের সহায়তায় এই কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন ভাকুর্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল বাতেন। মাটি বিক্রির টাকা দুই হাত ঘুরে রাজীবের কাছে চলে যায়।

অবলোপন বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

খেলাপি ঋণ আদায়ে অবলোপন নীতিমালা আরও শিথিল করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো ঋণ তিন বছরের পরিবর্তে দুই বছর ‘মন্দ মান’ হিসেবে খেলাপি হলেই তা অবলোপন করে ব্যাংকের ব্যালান্সশিট থেকে বাদ দেওয়া যাবে। এ উপায়ে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ কমানো হবে। পাশাপাশি আলাদা কোম্পানির কাছে অবলোপন করা ঋণ বিক্রি, এমডির কর্ম মূল্যায়নে ঋণ আদায়ের লক্ষ্য অর্জন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোরতা, ঋণ পরিশোধে আর নমনীয়তা না দেখানোসহ একটি রোডম্যাপ বা পথনকশা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানো এবং করপোরেট সুশাসন জোরদার বিষয়ে আলোচনায় সুনির্দিষ্ট ১৭টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অনুকূলে সরকার ইস্যু করা বন্ড জামানত রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিনা সুদে ধার, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অভিবাসন পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে ১ হাজার কোটি টাকার প্রাক-অর্থায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

এস আলমের বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল খারিজ, চাইলে দুদক–বিএফআইইউ অনুসন্ধান করতে পারবে

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধানে নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে হাইকোর্টের দেওয়া স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমটো) রুল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের ইস্যু করা সুয়োমটো রুল ডিসচার্জড (খারিজ) করা হলো। যা–ই হোক এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট(বিএফআইইউ) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধা হবে না।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এস আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের করা আবেদন (লিভ টু আপিল) নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, বিএফআইইউ ও দুদক চাইলে এখন ওই অভিযোগ অনুসন্ধান করতে পারে।

গত বছরের ৪ আগস্ট ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে “এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প” (এস আলমের আলাদিনের চেরাগ) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। এরপর গত ৬ আগস্ট হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।

অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। দুদক, বিএফআইইউ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এস আলম ও তাঁর স্ত্রী গত ২১ আগস্ট লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন, যা গত ২৩ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত বিষয়বস্তুর ওপর সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। একই সঙ্গে লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৮ জানুয়ারি শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কেসি ও আহসানুল করিম। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। পত্রিকার খবর নজরে আনা আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক শুনানিতে অংশ নেন।

পরে আবেদনকারীদের আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুয়োমটো রুল খারিজ হওয়ায় হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ থাকছে না। তবে দুদক ও বিএফআইইউ যদি মনে করে তাহলে আইন অনুসারে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে বাধা নেই।’

শুনানির বিষয়ে আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘হাইকোর্টের রুলে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীকে বিচার হওয়ার আগেই অর্থ আত্মসাৎকারী ও পাচারকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীর বক্তব্যও শোনা হয়নি। তাই রুল ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত ও খারিজযোগ্য, শুনানিতে বলেছি।’

পরে আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ছিল। আজকের আদেশের ফলে হাইকোর্টের এই নির্দেশ থাকছে না। তবে দুদক ও বিএফআইইউ নিজে চাইলে নিজ উদ্যোগে অনুসন্ধান করতে পারবে।’

ডলার কারবার ব্যাংক-মানি এক্সচেঞ্জের যোগসাজশে

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

দেশে ডলার সংকটের নেপথ্যে রয়েছে কিছু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা প্রতিদিন যে শতকোটি টাকার বেশি মূল্যের ডলার ও বিদেশি মুদ্রা আনেন, তা জালিয়াতির মাধ্যমে কুক্ষিগত করছে চক্রটি। জাল ভাউচারে যাত্রীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে পরে তা খোলাবাজারে (কার্বমার্কেট) ছাড়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

দুদক সচিব বলেন, ‘গত সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিশেষ এনফোর্সমেন্ট টিম হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রটির বিদেশি মুদ্রা গ্রাস করার প্রমাণ পেয়েছে।’

এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দেশের বর্তমান অর্থনীতির সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ। নানা উদ্যেগের পরও এটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছেনা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।

সোমাবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ২৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা বেশি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।

এই খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। যদিও আন্তর্জাতিক মানদন্ডে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ শতাংশ পর্যন্ত সহনীয় ধরা হয়।

ঠাকুরগাঁওয়ে নদী ভরাট করে রিসোর্ট নির্মাণের অভিযোগ

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪,  ইত্তেফাক

ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদী ভরাট করে রিসোর্ট নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। সদর উপজেলার মোহম্মদপুর ইউনিয়নে ফেরসাডাঙ্গী ঘাটে ব্রিজের নিচের অনেকটা অংশ ভরাট করে ‘শ্বেতপদ্ম রিসোর্ট লিমিটেড’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রশাসন থেকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও চলমান রয়েছে নির্মাণ কাজ। জেলা প্রশাসক বরাবর কৃষকরা নির্মাণ কাজ বন্ধ ও নদী ভরাট না করার জন্য লিখিত অভিযোগ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজের নিচের নদীর অংশ ভরাট করা হচ্ছে। নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত করে এবং নদীকে সংকীর্ণ করে বাঁধ নির্মাণের জন্য ধার তৈরি করা হচ্ছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ আরও বাড়লে আশেপাশের কৃষি জমিগুলো নদীগর্ভে চলে যাবে বলে অভিযোগ করছেন কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দ মুহাম্মদ আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি এ রিসোর্ট নির্মাণ করছেন। তিনি শ্বেতপদ্ম রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান। নদীর পাশে তার নিজস্ব জমিও রয়েছে। প্রকল্প শুরুর আগে নভেম্বর ২০২৩ সালে নদী পরিমাপের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেছিলেন তিনি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান নদীর সীমানা নির্ধারণ ও সরকারি স্বার্থ রক্ষায় একটি কমিটি গঠন করে দেন এবং প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। কিন্তু এ কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই রিসোর্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে দেন।

৯০৭ কোটি টাকার প্রকল্প নিতে ‘কারসাজি’

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

জনবলের অভাবে ভবঘুরেদের জন্য সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে যথাযথ সেবা দিতে না পারলেও ভবন নির্মাণে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণে ৯০৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করাতে ‘তদবির’ করছে তারা।

সমাজসেবা এই প্রকল্প নিতে ‘কারসাজির’ আশ্রয়ও নিয়েছে। ৯০৭ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজকে তারা ৮১টি ভাগে ভাগ করেছে, যাতে এই প্রকল্পের কেনাকাটায় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন না লাগে।

সাধারণত সরকারি ভবন নির্মাণের মতো পূর্তকাজ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তাদের সে বিষয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু সমাজসেবা ভবন নির্মাণ করাতে চাইছে তৃতীয় পক্ষ, অর্থাৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে। তারা কেন গণপূর্তকে বাদ দিয়ে ভবন নির্মাণের প্রকল্প নিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

সমাজসেবার প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কমিশন সূত্র বলছে, তদবির থাকলেও কমিশনের কোনো কোনো কর্মকর্তা এভাবে প্রকল্পটির অনুমোদন দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন।

সরকারি কেনাকাটার প্রস্তাব মূল্যায়নকারী সংস্থা সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সাবেক মহাপরিচালক ফজলুল করীম প্রথম আলোকে বলেন, একই ধরনের কাজে আলাদা আলাদা প্যাকেজ করার অর্থ এখানে কোনো দুরভিসন্ধি আছে। পছন্দের কাউকে কাজ পাইয়ে দিতে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসা উচিত।

৯০৭ কোটি টাকার প্রকল্প

ভবঘুরে ও ভিক্ষায় নিয়োজিত মানুষদের সরকারি তত্ত্বাবধানে রেখে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য উপায়ে সমাজে পুনর্বাসিত করার চেষ্টাটি পুরোনো। এ জন্য ১৯৪৩ সালে করা হয় ভবঘুরে আইন। নতুন করে ২০১১ সালে সরকার ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন করে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন গাজীপুরে দুটি এবং নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও রাজধানীর মিরপুরে একটি করে দেশে মোট ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে চারটি নির্মাণ করা হয় ১৯৭৭ সালে। দুটি আরও আগে, ১৯৬১ সালে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ভবঘুরে, ছিন্নমূল মানুষ ও ভিক্ষুকদের আশ্রয় দেওয়া হয়। তবে ভবনগুলো জরাজীর্ণ।

এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ভবন নির্মাণে ‘বিদ্যমান ছয়টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে প্রথম পাঠানো হয় গত বছরের জুনে। তার পর থেকে প্রকল্পটি নিয়ে প্রক্রিয়াগত কাজ চলছে।

সমাজসেবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ঘেঁটে দেখা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে কাজের ধরন প্রায় এক হলেও সেসব কাজ ছোট ছোট ৮১টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। কোনোটি ১০ কোটি, কোনোটি ২০ কোটি টাকার প্যাকেজ। সর্বোচ্চ একটি প্যাকেজে ধরা হয়েছে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা।

নথিপত্র বলছে, ৭৪টি প্যাকেজ ‘ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে প্রকল্প পরিচালককে রাখা হয়েছে। ছয়টি হোস্টেল ভবন নির্মাণসহ বাকি সাতটি প্যাকেজ অনুমোদনকারী হিসেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে রাখা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ’ শীর্ষক নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্মাণ ও পূর্ত কাজে ১০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে যেকোনো কেনাকাটার প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করতে হবে। এই কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী। এতে মোট ১৩ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী থাকেন। সচিব থাকেন ৯ জন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা বলছে, সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, অনিয়ম রোধ করা, স্বজনপ্রীতি ঠেকানোসহ নজরদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাই সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাজ। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভা কমিটিকে এড়াতেই প্রকল্পটির কেনাকাটার ৮১টি প্যাকেজ করা হয়েছে।

সরকারি ক্রয়বিধির (পিপিআর) ১৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, ‘ক্রয়কারী উহার ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় কোনো নির্দিষ্ট ক্রয় পদ্ধতি বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা পরিহারের উদ্দেশে সাধারণত একটি প্রকল্প বা কর্মসূচির কোনো অংশ নিম্নতর মূল্যমানের একাধিক প্যাকেজে বিভক্ত করিবে না।’

অবশ্য ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনায় বাস্তবায়নের সুবিধার জন্য একাধিক প্যাকেজ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে ক্রয়বিধিতে। তবে সরকারি ক্রয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঁচটি এলাকার ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য ৮১টি প্যাকেজ করা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের আসবাব কিনতে প্রায় তিন কোটি টাকা ও পুবাইলের জন্য প্রায় সাড়ে চার কোটি, ময়মনসিংহের জন্য তিন কোটি, নারায়ণগঞ্জের জন্য প্রায় চার কোটি, মিরপুরের জন্য দুই কোটি এবং মানিকগঞ্জের জন্য দুই কোটি টাকা আলাদা করে ব্যয় ধরা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, চাইলে আসবাব কেনার কাজ একসঙ্গে করা যেত।

একইভাবে বিছানাপত্র, ক্রীড়াসামগ্রী, যন্ত্রপাতি, বিদ্যুতের উপকেন্দ্র (সাবস্টেশন) নির্মাণ, লিফট, অস্থায়ী ছাউনি নির্মাণ ও একাডেমিক ব্লক স্থাপনে আলাদা করে প্যাকেজ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ছোট ছোট প্যাকেজে কাজ করার কৌশল বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ নেবেন। এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেবেন।

অবশ্য সমাজসেবার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করাতেই নির্মাণকাজ গণপূর্ত অধিদপ্তরকে না দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তর ছোট ছোট ভাগে আগেও প্রকল্প নিয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের নামে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিকে (একনেক) এড়িয়ে নেওয়া এসব প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত বছরের আগস্টে ছয়টি প্রকল্পে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। আর কাজ পেয়েছে সরকারের প্রভাবশালীদের ‘খাতিরের’ ব্যক্তিদের সংস্থা। ওই সব প্রকল্প তখন ‘খাতিরের প্রকল্প’ নামে পরিচিতি পায়।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে নতুন ভবন করা দরকার। তবে প্রকল্প নিতে হবে স্বচ্ছভাবে।

সেবা নেই আশ্রয়কেন্দ্রে

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে ১ হাজার ৯০০টি আসন রয়েছে। এসব কেন্দ্রে আছেন ৯০৯ নিবাসী। মানে হলো, এখন যত আসন আছে, সেখানেই লোক থাকে না। পাশাপাশি জনবলের সংকট প্রকট।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, জনবলের সংকটের বিষয়টি তিনি জানেন। সেই কারণে নতুন প্রকল্প নেওয়ার পাশাপাশি জনবল নিয়োগের ওপর জোর দিচ্ছেন তাঁরা। তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে রাজস্ব খাতে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়াটা বেশ দীর্ঘ। ৪৫৮ জনবল নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা আছে, ভবঘুরে ব্যক্তিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদান, ভরণপোষণ, শিক্ষা, বৃত্তিমূলক ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান, শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক উৎকর্ষ সাধন, কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিকতার সংশোধন ও উন্নয়ন; স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, সমাজে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা—এসব তাদের লক্ষ্য।

এসব কাজ কেমন চলছে, তা জানতে ৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১ নম্বরে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভবনের নিচতলায় চার বছরের একটি শিশুকে আশ্রয়কেন্দ্রের নিবাসী আরেক শিশু (৯) দুপুরের খাবার খাওয়াচ্ছে। যদিও শিশু দুটির মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। একটি শিশু বাক্‌প্রতিবন্ধী। তার পরিচর্যায় কোনো পরিচর্যাকর্মী দেখা গেল না।

জানা গেল, ৩ ফেব্রুয়ারি মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে বের হয়ে চার বছরের শিশুটি রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে হারিয়ে যায়। পুলিশ খোঁজাখুঁজি করে অভিভাবককে না পেয়ে তাকে মিরপুরে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে রাখে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিশুটিকে আজিমপুরে ছোটমণি নিবাসে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

৫ ফেব্রুয়ারি আশ্রয়কেন্দ্রের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানে বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৩০ জন একসঙ্গে খাবার খাচ্ছেন। সেখানে কোনো পরিচর্যাকর্মী নেই। একজনের শরীরে মারধরের চিহ্ন দেখা গেল। তাঁকে চিকিৎসক দেখানো হয়নি। সেখানে ভবঘুরেদের দেখাশোনায় ১০টি প্রহরীর পদ থাকলেও কোনো প্রহরী কর্মরত নেই। একজন চিকিৎসকের পদ থাকলেও সেটি খালি। প্রশিক্ষণ, কাউন্সেলিং—এসব দূরের কথা।

মিরপুরের আশ্রয়কেন্দ্রটিতে আসন আছে ২০০টি। নিবাসী রয়েছেন ৫৬ জন। কেন্দ্রের তথ্যমতে, ওই কেন্দ্রে অনুমোদিত পদ ৩০টি। এখন কর্মরত আছেন ১২ জন। তাই তাঁরা সেবা দিতে পারছেন না।

মিরপুর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক, পরিচর্যাকারী না থাকায় নিবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়। ১০ জন পরিচর্যাকারী চাওয়া হয়েছে। এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, শুধু মিরপুর নয়, সব সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রেই বেশির ভাগ পদ শূন্য।

‘ভাগ-বাঁটোয়ারার নকশা’

দেশের কিছু কিছু সরকারি সংস্থার তৈরি করা ভবন নির্মাণের পর ফেলে রাখা হয়েছে। কারণ, সেগুলো জনবল ও অন্যান্য কারণে ব্যবহার হচ্ছে না। যেমন মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রশিক্ষণের জন্য গত ছয় বছরে দেশের ১৪ জেলায় ১৫টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ভবন নির্মাণ করেছে সরকার। কিন্তু প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রশিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় ভবনগুলো খালি পড়ে আছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভবন করলে কর্মকর্তারা লাভবান হন। পণ্য ও উপকরণ কেনাকাটায় নানা ধরনের কমিশন বাণিজ্য হয়। ঠিকাদারের ব্যবসা হয়। সে কারণে ভবন নির্মাণেই আগ্রহ বেশি। সমাজসেবা ভবন নির্মাণের আগ্রহই শুধু দেখাচ্ছে না, প্রকল্প নিচ্ছে কৌশল করে।

সমাজসেবার নতুন প্রকল্পটির বিষয়ে জানিয়ে মতামত জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এটা স্পষ্ট যে প্রভাবশালী ব্যক্তি পারস্পরিক যোগসাজশ করে ভাগ-বাঁটোয়ারার নকশা করছে। দুর্নীতিপরায়ণরা নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছেন। তিনি বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতির কথা বলছে। কর্তৃপক্ষকে সমাজসেবার প্রকল্পটি খতিয়ে দেখতে হবে।

উপাচার্যদের ‘‌আত্মীয় কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হয়ে উঠছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো?

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, বণিক বার্তা

শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ মোট ৫৮টি পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া গত ২ ডিসেম্বর সম্পন্ন করেছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের একজন উপাচার্য অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের ছেলে শাওন চন্দ্র সামন্ত তনু। তবে এ নিয়োগে যোগ্যতা নিরূপণের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি। এ বিষয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন পর্যন্ত যারা উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের সবাই মেয়াদকালে কোনো না কোনো আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সেকশন অফিসার হিসেবে চাকরি পেয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভুঁইয়ার ছোট ছেলে হামিম আল রশীদ।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ২০২২ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিনের মেয়ে অহনা আরেফিনকে। এর কিছুদিন পরই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে নিয়োগ পান বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুবের মেয়ে ফারজানা মাহবুব। এছাড়া বশেমুরবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন তার মেয়াদকালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগের শর্ত শিথিল করে তার ভাতিজা খন্দকার মাহমুদ পারভেজকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

দেশের উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে দেশে বিগত কয়েক দশকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়িয়েছে সরকার। দীর্ঘদিন ধরেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতিসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। শিক্ষাবিদদের অভিযোগ, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন উপাচার্যদের আত্মীয়দের ‘‌কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হয়ে উঠেছে। নতুন নিয়োগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে আত্মীয়-অনুসারীসহ কাছের মানুষদের নিয়োগ দিচ্ছেন উপাচার্যরা। কম-বেশি প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই উপাচার্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় এমন অভিযোগ উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মীয়স্বজনসহ নিজস্ব লোক নিয়োগদানের মাধ্যমে উপাচার্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও প্রশাসনে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছেন। আবার কারো কারো উপাচার্য হিসেবে নিযুক্তি বেকার আত্মীয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রশাসনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রমে ব্যাঘাতও ঘটছে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ মোট ৩৯ জনের নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। তবে গত ২ ডিসেম্বর রিজেন্ট বোর্ডে সর্বমোট ৫৮ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এদের মধ্যে সেকশন অফিসার পদে তিনজনের পরিবর্তে ছয়জন, ল্যাব অ্যাটেন্ডেন্ট পদে ছয়জনের পরিবর্তে নয়জন এবং অফিস সহায়ক পদে পাঁচজনের পরিবর্তে ১১ জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইকিউএসি বিভাগের হিসাবরক্ষক পদের অনুমোদন না থাকলেও একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার হিসেবে গত মাসের মাঝামাঝি নিয়োগ পেয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভুঁইয়ার ছোট ছেলে হামিম আল রশীদ। এর আগেও তিনি বিভাগীয় শিক্ষক থাকা অবস্থায় তার বড় ছেলে আসাদুল্লাহ হিল কাফি এবং উপ-উপাচার্য থাকা অবস্থায় তার এক ভাগনি নিয়োগ পেয়েছেন।

অভিযোগ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশ কয়েকজন সাবেক উপাচার্যও তাদের মেয়াদকালে কোনো না কোনো আত্মীয়কে সেখানে নিয়োগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ নিয়োগেও প্রার্থীদের মধ্যে উপাচার্যের ছেলের তুলনায় যোগ্য প্রার্থী ছিল। আর উপাচার্যের ছেলের নিয়োগের ক্ষেত্রে ভেরিফিকিশনের নিয়ম মানা হয়নি। ১৯ ডিসেম্বরেই তারা কাজে যোগদান করেন।

আবার দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে একে অন্যের সন্তানকে শর্ত ভঙ্গ করে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও আছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের মেয়ে অহনা আরেফিনকে নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুবের বিরুদ্ধে।

সে সময় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্যতা হিসেবে মাস্টার্স ডিগ্রির কথা উল্লেখ করা ছিল। এতে বলা হয়েছিল মাস্টার্স ডিগ্রিধারী প্রার্থী না থাকলে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের বিবেচনা করা হবে। ওই বিভাগের প্রার্থীদের তালিকা অনুযায়ী যারা আবেদন করেছিলেন তাদের মধ্যে একাধিক মাস্টার্স ডিগ্রিধারী প্রার্থী ছিলেন। যদিও মাস্টার্স ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ পান অহনা আরেফিন।

তার নিয়োগের কয়েক মাস পরই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান ড. একিউএম মাহবুবের মেয়ে ফারজানা মাহবুব। অভিযোগ রয়েছে, সেখানেও ফারজানা মাহবুবের চেয়ে ভালো ফলাফলধারী থাকলেও বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যের মেয়ে হিসেবে তিনি বাড়তি সুযোগ পেয়েছেন।

বশেমুরবিপ্রবিতে এর আগেও শর্ত শিথিল করে উপাচার্যের আত্মীয়দের নিয়োগ দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তৎকালীন উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের ভাইপো খন্দকার মাহমুদ পারভেজ। তৎকালীন নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণী বাধ্যতামূলক থাকলেও মাহমুদ পারভেজের দুটোতেই ছিল দ্বিতীয় শ্রেণী। নিয়োগসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগে পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের একটি তদন্ত কমিটি খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে অপসারণের সুপারিশ করে।

এমন দুর্যোগ কখনো দেখিনি, প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে নিচ্ছে, কার কাছে যাব: ড. ইউনূস

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে থাকা আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে নেওয়ার অভিযোগ তুলে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা বহু রকমের দুর্যোগের ভেতর দিয়ে যাই। এরকম দুর্যোগ আর দেখি নাই কোনোদিন যে, হঠাৎ করে বাইরের থেকে কিছু লোক এসে বলল তোমরা সরে যাও।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস। এই ভবনে ড. ইউনূসের গড়া মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান আছে, যার প্রতিটির চেয়ারম্যান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা একটা ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি। আমরা এই সুন্দর বিল্ডিংটা বানিয়েছিলাম অতি সম্প্রতি। আমরা যখন গ্রামীণ ব্যাংকে ছিলাম, তখন আমাদের অফিস ওখানে ছিল। যখন আমাদের যাওয়ার পালা আসল তখন আমরা ভাবলাম আমরা সবাই মিলে একটা বিল্ডিং করি যেখানে আমরা শান্তিতে কাজকর্ম করতে পারব। এটাই সেই জিনিস; আমাদের স্বপ্নের বীজতলা। এটা তার একটা নমুনা।’

ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘হঠাৎ চারদিন আগে (১২ ফেব্রুয়ারি) দেখলাম বাইরের লোক এসে এটা জবরদখল করে নিচ্ছে। আমরা বাইরের লোক হয়ে গেলাম তাদের কাছে। তারা এটা তাদের নিয়মে চালানোর চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারলাম না এটা কীভাবে হয়।’

ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি মন্তব্য করে এই নোবেলজয়ী আরও বলেন, ‘আমরা পুলিশকে বললাম যে এরকম কাণ্ড হচ্ছে। আপনারা এসে দেখেন। ঠিক করে দেন। পুলিশ প্রথমে (অভিযোগ) গ্রহণই করল না। তারপর একবার এসে ঘুরে গেল। কোনো অসুবিধা দেখল না। আমরা তাদের বললাম—দেখেন আমাদের দরজায় তালা দিয়ে যাচ্ছে তারা। সকাল বেলা এসে তালা খুলে দিচ্ছে। এখনো সেই পরিস্থিতি বিরাজমান।’

সোমেশ্বরীর বালুমহাল ইজারা প্রক্রিয়া স্থগিত

ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪, বণিক বার্তা

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় সোমেশ্বরী নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীতে বালুমহাল ইজারা দরপত্রসংক্রান্ত সব কার্যক্রমের ওপর গতকাল স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে দেয়া আদেশ নেত্রকোনা জেলা প্রশাসককে অবহিত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অনিয়ন্ত্রিত বালি ও পাথর উত্তোলন থেকে সোমেশ্বরী নদী রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০১৫ সালে একটি মামলা করে। মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত একই বছরের ২৯ জুলাই রুল জারি করেন। ওই রুলে বালুমহাল ইজারাসংক্রান্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে সোমেশ্বরী নদীকে কেন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চওয়া হয়েছিল। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বালুমহালে নতুন করে ইজারা দরপত্রসংক্রান্ত সব কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক সোমেশ্বরী নদীতে পাঁচটি বালুমহাল ১৪৩১ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারার উদ্দেশ্যে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেন। এর মাধ্যমে আদালতের আদেশ এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ লঙ্ঘন করা হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি আহ্বান করা দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গতকাল। বর্তমানে বালুমহালগুলো থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ রুহীর মালিকানাধীন মেসার্স রুহী এন্টারপ্রাইজ ও মো. জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন মেসার্স জিহান এন্টারপ্রাইজ ইজারাগ্রহীতা হিসেবে বালি উত্তোলন করছে।

রুল জারির পাশাপাশি আদালত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক ও দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নদীর প্রতিবেশগত অবস্থা নিরূপণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আইন ও ইজারা শর্ত অনুযায়ী নদী থেকে বালি ও পাথর উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ এবং উত্তোলনে পাম্প ও ড্রেজার মেশিন ব্যবহার প্রতিরোধ করতে বলা হয়েছে।

পণ্যবাহী ট্রাকে উত্তরের পথে পথে চাঁদাবাজি

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে গেল সপ্তাহেই খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদাবাজি বন্ধে দু’দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। তবু উত্তরাঞ্চলের পথে পথে পণ্যবাহী ট্রাকে রাখঢাক ছাড়াই চলছে ‘সরব’ চাঁদাবাজি। অনেক ক্ষেত্রে পোশাকধারী পুলিশ সদস্য, কখনও পুলিশ পরিচয়ে তাদের দালাল পণ্যবাহী গাড়ি থেকে চাঁদা তুলছে। সমকাল অনুসন্ধান চালিয়ে এর সত্যতাও পেয়েছে। এ কারণে পণ্যমূল্যের লাগামহীন দাম কোনোভাবে বাগে আসছে না। 

সরেজমিন দেখা গেছে, নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত একটি ট্রাককে ১৪ স্থানে ৫  হাজার ৪০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। সঙ্গে রয়েছে ‘মান্থলি’ চাঁদা। সৈয়দপুর উপজেলা শহর হলেও জেলা সদরের চেয়েও ব্যস্ত। পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে বাইপাস সড়ক রাতভর থাকে জমজমাট। ট্রাকে মালপত্র তোলা হয় রাতে। সকালে সেগুলো যাত্রা করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে। গত মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আলুবাহী ট্রাকে চড়ে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে ব্যবসায়ী পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন এ প্রতিবেদক।

দীর্ঘ ৩৫৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে চালক তাজুল মিয়া ট্রাকের স্টিয়ারিংয়ে বসলেন ছোট্ট কালো ব্যাগ নিয়ে। আর সহকারী মজনু মিয়ার হাতে পলিথিনের ব্যাগে বোঝাই খিলিপান। মধ্যবয়স্ক তাজুল পান চিবাতে চিবাতে যাত্রা শুরু করলেন। গাড়ি বাইপাস সড়কে উঠতেই সহকারী মজনু হাঁক দিলেন, ‘ওস্তাদ, খাড়াইছে’।

দেখা গেল, ৪-৫ জন পোশাকধারী পুলিশ দাঁড়িয়ে। ট্রাক থামালে এক পুলিশ সদস্য জানালার কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল। ২০০ টাকা চাই তার। বলল, ‘বউনি হয়নি। মালপানি ছাড়।’ ২০০ টাকা দিয়ে ট্রাক নিয়ে সামনে এগোলেন তাজুল। বললেন, ‘চাঁদা না দিয়ে কখনও এই চৌরাস্তার মোড় পার হতে পারি না। খুব ছ্যাঁচড়া এরা। ১০০ টাকা হলেও নেবে।’

এবার বোঝা গেল তাজুলের কালো ব্যাগের রহস্য। পথখরচ তথা চাঁদা মেটাতে এতে রাখা খুচরা টাকা। বাকি পথেও এভাবে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হবে?– প্রশ্নে এক গাল হেসে বললেন, ‘সবে তো শুরু। সামনে দেখেন, কী অবস্থা হয়! রাতদিন পরিশ্রম করে বাড়ি করার সাহস করি না। আর পুলিশের একজন কনস্টেবল একাধিক বাড়ির মালিক হয়। এসব না করলে তারা কীভাবে চলবে!’

সকালের ফাঁকা রাস্তায় বাড়ে ট্রাকের গতি। ছুটছে তারাগঞ্জ উপজেলা হয়ে ইকরচালী বাজারের দিকে। কিছুটা এগিয়ে বালাবাড়ী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি তল্লাশি চৌকি। সেখানে পুলিশ সদস্যরা হাত তুলে দিল গাড়ি থামানোর সংকেত। তাজুল জোর গলায় বললেন, ‘মালটির গাড়ি।’ শুনে বাধা দিল না তারা।

‘মালটি’ কী– প্রশ্নে তাজুল বললেন, এ হলো সড়কে যাতায়াতের মাসিক চুক্তি। বিভিন্ন এলাকা পুলিশ ইজারার মতো বিক্রি করে। এতে লেনদেন ডিজিটাল। নির্দিষ্ট নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠাতে হয়। ট্রাকপ্রতি মাসে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। একেই বলে মালটি। তাজুলের বক্তব্যে বোঝা গেল, শব্দটি আসলে মালটি নয়; মান্থলি।

 অর্থাৎ ট্রাকটি মাসকাবারি চাঁদা দিয়েছে। এক মাসের জন্য বালাবাড়ী হাইওয়ে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে আর আটকাবে না ট্রাকটি। তাজুল জানালেন, মান্থলির টাকা মহাজন দেন।

বালাবাড়ী হাইওয়ে পুলিশ তল্লাশি চৌকির পর ট্রাক চলে দ্রুত লয়ে। একটানে চলে আসে পাগলাপীর বাজার এলাকায়। সড়কে যানজট নেই, তবে ট্রাকের গতি কমিয়ে দেন চালক। দেখা গেল, লাঠি হাতে ৪-৫ জন পুলিশ। তারা চালককে নামতে বলছে। তবে তাজুল সিটে বসে ১০০ টাকার তিনটি কড়কড়ে নোট ধরিয়ে দিতেই এগিয়ে যাওয়ার সংকেত পেলেন। তাজুল বললেন, ‌ভাগ্য ভালো। আজ ৩০০ টাকায় ছাড়া পেয়েছি; অন্যদিন ৫০০ নেয়।

গাড়ি ছুটছে রংপুর শহরের দিকে। শহর পার হয়ে নার্সিং কলেজ এলাকায় পুলিশ সার্জেন্ট ট্রাক থামানোর সংকেত দিলেও উপেক্ষা করে এগিয়ে যান তাজুল। একইভাবে মেডিকেল মোড় হয়ে সিটি বাসস্ট্যান্ড ছাড়িয়ে বাইপাস হয়ে মডার্ন মোড়ে আসে ট্রাক। সেখানে অপেক্ষমাণ সার্জেন্টদের হয়ে ‘কলার বয়’ এগিয়ে আসে। কথা বলার পর ৩০০ টাকা দিতে হলো।

গাড়ি চলছে এবার রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে। শঠিবাড়ী এলাকায় আসার পর দূর থেকে মনে হলো, পুলিশের তল্লাশি চলছে। তাজুলের ভাষ্য, তল্লাশি আসলে নাটক। মিথ্যা অজুহাতে ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায়ের ফন্দি। সেখানে ওভারব্রিজের নিচে আয়েশ করে বসে থাকা পুলিশ সদস্যদের দিতে হলো ৫০০ টাকা। এর পর বড়দরগা হাইওয়ে ফাঁড়ির তল্লাশি চৌকিতে ২০০ টাকা, পলাশবাড়ী মোড়ে জোরজবরদস্তি করে ৫০০ টাকা আদায় করল পুলিশ। টাকা না দিলে গাড়ি আটকের রেকার নিয়ে বসে আছে তারা।

গোবিন্দগঞ্জ এসে ফের তল্লাশি! গাড়ি থামিয়ে ট্রাকের কাগজপত্র নিয়ে নিচে নামলেন তাজুল। কিছুক্ষণ পর অস্থায়ী পুলিশ বক্স থেকে ফিরে জানালেন, এখানকার পুলিশ সদস্যরা কিছুটা ‘সৎ’। তারা চাঁদার টাকা হাত পেতে নেয় না। টেবিলের খোলা ড্রয়ারের মধ্যে ফেলে দিতে হয়। দূর থেকে যে কেউ দেখলে ভাববে, কাগজ যাচাই শেষে ছেড়ে দিচ্ছে। তবে ড্রয়ারে রাখতে হচ্ছে ৫০০ টাকা।

গাড়ি চলতে চলতে দুপুর ২টা বাজল। খাবারের বিরতিতে থামতে হলো পথের পাশের ভাতের দোকানে। বিস্তারিত কথা হয় তাজুলের সঙ্গে। জানালেন, মাসে ১৫টি ট্রিপ নিয়ে ঢাকা যান। কোথায় কী হয়, কীভাবে পুলিশের লোক দেখানো তল্লাশি থেকে ছাড়া পেতে হয়, সব মুখস্থ। টাকা না দিলে পুলিশ হয়রানি করে; মামলা দেয়। ট্রাকচালক ও গাড়ির মহাজনরা নিরুপায়। ব্যবসা করলে এসব মেনে নিয়েই তা করতে হবে।

আবার রওনা। পথ এখন বগুড়ার সীমানা ধরে। এখানে মোকামতলা এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকি থাকলেও সেদিন কেউ সড়কে ছিল না। তবে বিপত্তি ঘটল গোকুল এলাকায়। সেখানে মহাসড়কে কাগজপত্র পরীক্ষার নামে একের পর এক ট্রাক থামাচ্ছে পুলিশ। মামলাও দিচ্ছে। তাজুলের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। গাড়ি থেকে নেমে বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে জানালেন, সবই ঠিক আছে। তার পরও ৬০০ টাকা দিতে হলো। তাদের দাবি ছিল ১ হাজারের। হাতে-পায়ে ধরে ৪০০ কমিয়েছি। গাড়ি স্টার্ট করে তাজুল জানালেন, বগুড়ার দ্বিতীয় বাইপাস ব্যবহার করবেন। কারণ প্রথম বাইপাসে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয়।

চাঁদা কোথায় কীভাবে আদায় হয়, তা দেখতেই যাত্রা। তাই প্রতিবেদকের অনুরোধে বাইপাস দিয়ে যেতে রাজি হলেন তাজুল। মাটিডালি চারমাথা হয়ে বনানীর দিকে গাড়ি ছোটে। এই পথে পূর্বনির্ধারিত দুটি পয়েন্ট চারমাথা ও ভবেরবাজারে টাকা দিতে হলো না। সেখানে নাকি কিছুদিন আগে র‍্যাব অভিযান চালিয়েছে। চাঁদাবাজরা কেউ বের হচ্ছে না।

গাড়ি তিনমাথা রেলগেট পার হওয়ার সময় ওত পেতে থাকা পুলিশ সদস্যরা অতিরিক্তি মালপত্র পরিবহনের অভিযোগে রেকার বিল ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিল ‘কলার বয়’কে দিয়ে। শর্ত দেওয়া হলো– ১ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেবে। পুলিশকে ৫০০ আর কলার বয়কে ১০০ টাকা দিয়ে নিষ্কৃতি মিলল।

গাড়ি ছুটছে এবার বগুড়া-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে। এই পথে বেশ কিছু পুলিশ সদস্যের পাহারা থাকলেও কেউ সংকেত না দেওয়ায় গাড়ি থামাতে হয়নি। বিপত্তি বাধল হাটিকুমরুল মোড়ে। সেখানে গাড়ি থামিয়ে নেওয়া হলো ৫০০ টাকা। উত্তরবঙ্গের পথ শেষ হলো।

যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে ট্রাক প্রবেশ করে টাঙ্গাইলে। সেখানে পুলিশ চাঁদা আদায় করে নতুন কায়দায়। কাগজপত্র ঠিক থাকলে এক রেট, না থাকলে আরেক। রেকার লাগালে সেই বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত জরিমানা ও দালালদের স্পিডমানি দেওয়ার অলিখিত নিয়ম করা হয়েছে। যমুনা সেতুর গোলচত্বরে পুলিশ সদস্যরা তাজুলের ট্রাকের সব কাগজ নিয়ে নেয়। এখানে দিতে হলো ৮০০ টাকা। রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে তাজুল বললেন, ‘আর একটু পর আসলে এই ধরাটা খাইতাম না। এরা বেশি রাতে থাকে না।’

অন্ধকার হয়ে এলো সেতু পার হতে। সংযোগ সড়ক ধরে ট্রাক প্রবেশ করল এলেঙ্গায়। পুলিশের পরিচয় দিয়ে ‘কলার বয়’ নিল ২০০ টাকা। গাড়ি এবার টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়কে। দ্রুতগতিতে চলছে। রাত সাড়ে ১০টায় চন্দ্রার মোড়ে আবারও গতি কমে গেল। সেখানে পুলিশের লোক পরিচয়ে এক ব্যক্তি নিল ৩০০ টাকা। ঢাকা-বাইপাস হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তায় আরেক দল নিল ২০০ টাকা। মীরেরবাজারে আবার থামানো হলো কাঁচপুর ব্রিজের ঢালে। একইভাবে সেখানেও দিতে হলো ২০০ টাকা। এর পর গন্তব্য শেষ হলো গাউছিয়া হয়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে। বেশি রাত না হলে এখানেও একাধিক টিম অপেক্ষায় থাকত বলে জানালেন চালক তাজুল।

আইন মেনে গ্রামীণের ৭ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

আইন মেনেই গ্রামীণ টেলিকম ভবনের সাতটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ। তিনি বলেছেন, এসব প্রতিষ্ঠানে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো মালিকানা বা শেয়ার নেই।

রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয়ে আজ শনিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল মজিদ এসব কথা বলেন। ড. ইউনূস গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তাঁদের আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠান তিনি ব্যবসার মুনাফা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ড. ইউনূসের সেই অভিযোগের জবাব দিতে আজ সংবাদ সম্মেলন ডাকে গ্রামীণ ব্যাংক।

সংবাদ সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানি লন্ডারিং করেছেন—এমন প্রমাণ হাতে রয়েছে বলে দাবি করেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ড—এসব প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা সরিয়েছেন। গত সাত মাস নিরীক্ষা (অডিট) করে তাঁরা এসব তথ্য পেয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ড. ইউনূস ব্যবসার মুনাফা দিয়ে গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণসহ অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান করেননি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

গ্রামীণ ব্যাংক ড. ইউনূসের কোনো প্রতিষ্ঠান জবরদখল করেনি। সবকিছু আইন মেনে করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ড. ইউনূসের নয়; বরং গ্রামীণ ব্যাংকের।

ব্রহ্মপুত্রের পানিতে যাচ্ছে ২৭৬৩ কোটি টাকা, একদিকে খনন অন্যদিকে ভরাট

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

জামালপুর শহরের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি গত শনিবার বেলা দুইটার দিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ পার হচ্ছিলেন। নৌকায় নয়, হেঁটে। নদের মাঝখানে হাঁটুপানি। তাই পার হতে তাঁর কোনো অসুবিধাই হচ্ছিল না।

অথচ ব্রহ্মপুত্র নদের এই জায়গা গত বছরই খনন করা হয়। সরকারি প্রকল্পে ব্যয় হয় বিপুল অর্থ। কিন্তু খনন করার পর নদটি আবার প্রায় আগের মতো ভরাট হয়ে গেছে।

ফেরিঘাটে পাওয়া গেল স্থানীয় বাসিন্দা বিল্লাল হোসেনকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খননের নামে বালুর ব্যবসা হয়েছে। পরিকল্পিত খনন হয়নি। নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কাজ হয়নি। তাঁর প্রশ্ন, যদি তা–ই হতো, এক বছরের ব্যবধানে নদের এই অবস্থা কেন?

অনেক ক্ষেত্রে খননের পর বালু ফেলা হয়েছে নদের চরে অথবা তীরে। বর্ষায় সেই বালু আবার নদীতে মিশে নদটি ভরাট হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বিপুল পরিমাণ বালু নদের তীরে রাখা আছে। আগামী বর্ষায় পানি এলে তার একাংশ নদে গিয়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ২ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের খননকাজ করছে। গাইবান্ধা, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ—এই পাঁচ জেলায় নদের ২২৭ কিলোমিটার অংশ খনন করার কথা। কোনো কোনো এলাকায় খনন শেষ, কোনো কোনো এলাকায় কাজ চলছে, কোনো কোনো এলাকায় কাজ শুরু হয়নি। তবে গত কয়েক বছরে যেসব এলাকায় খনন হয়েছে, সেসব এলাকার মানুষ হতাশ। তাঁরা বলছেন, খনন করে কোনো লাভ হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে খননের পর বালু ফেলা হয়েছে নদের চরে অথবা তীরে। বর্ষায় সেই বালু আবার নদীতে মিশে নদটি ভরাট হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বিপুল পরিমাণ বালু নদের তীরে রাখা আছে। আগামী বর্ষায় পানি এলে তার একাংশ নদে গিয়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের বক্তব্যের জবাব দিল ইউনূস সেন্টার

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

গ্রামীণ ব্যাংকে থাকাকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানি লন্ডারিং করেছেন বলে গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যে অভিযোগ তুলেছে, সেটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর বলে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনূস সেন্টার।

আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদের কথা জানায় ইউনূস সেন্টার।

গত শনিবার গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ সংবাদ সম্মেলন করে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। তিনি বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ড—এসব প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা সরিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের ভাষ্য হচ্ছে, দেশের খ্যাতিমান নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের বার্ষিক নিরীক্ষা করেছে। তারা বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল ও সরকারের গঠিত কমিটি এমন কোনো আর্থিক অসংগতি খুঁজে পায়নি। তা ছাড়া ড. ইউনূসের কর্মকালে গ্রামীণ ব্যাংক বোর্ড পরিচালিত হয়েছে সমাজের শ্রদ্ধাভাজন ও বিদগ্ধ ব্যক্তিদের দ্বারা।

গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূসের মালিকানা নেই বলে ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে ইউনূস সেন্টার বলেছে, ড. ইউনূস নিজেই বারবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকসহ তাঁর সৃষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে তাঁর কোনো শেয়ার বা মালিকানা নেই। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক ব্যতীত তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর ২৮ ধারা অনুসারে গঠিত। যার কোনো ধরনের মালিকানা থাকে না।

গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণে ড. ইউনূস আর চেয়ারম্যান নেই, নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের জন্মলগ্ন থেকে ড. ইউনূস চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত আছেন। প্রতিষ্ঠান দুটির শুরুতে তাদের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনে চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্য মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা গ্রামীণ ব্যাংকের হাতে ছিল। পরে প্রতিষ্ঠান দুটি পরিচালনার সুবিধার্থে কোম্পানি আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ৪৮ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। সেটি ২০১১ সালের ২৫ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গ্রামীণ টেলিকমের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ ও ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করে আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ধারাগুলো সংশোধন করা হয়। তাই গ্রামীণ ব্যাংক এখন এ দুটি প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে নিয়োগ দিতে পারে না।

গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২৪ কোটি টাকা অনুদান নিয়েছেন—এমন ভাষ্যের বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠার সময়ে নরওয়ে থেকে ১৯ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড থেকে ৩০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে ঋণ চুক্তিটি গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ডের সিদ্ধান্তের আলোকে গ্রামীণ কল্যাণের নামে ঋণ চুক্তি হয়। যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিটি গ্রামীণ কল্যাণে হস্তান্তর করা হয়েছে, তাই এ বাবদ গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো অর্থ প্রদানের প্রযোজ্যতা নেই।

ট্রাস্ট ব্যাংকের মামলায় গ্রেপ্তার শীর্ষ ঋণখেলাপি মাকসুদুর রহমান

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

ঋণখেলাপির মামলায় ইস্পাত খাতের কোম্পানি মডার্ন স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাকসুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মডার্ন স্টিলের পাশাপাশি মাকসুদুর রহমান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্পাত খাতের কোম্পানি রতনপুর স্টিল রি–রোলিং মিলস বা আরএসআরএমেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বেসরকারি ট্রাস্ট ব্যাংকের করা ঋণখেলাপির এক মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। এ মামলায় মাকসুদুর রহমানসহ মোট চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়। অপর তিন অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন কোম্পানিটির পরিচালক মো. আলাউদ্দিন এবং মাকসুদুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান ও মারজানুর রহমান। এই চারজনের বিরুদ্ধেই আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। এর মধ্যে মাকসুদুর রহমানকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সাম্রাজ্য যুক্তরাজ্যে

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের ব্যক্তিগত আবাসিক রাস্তায় একটি সম্পত্তি ২০২২ সালে ১ কোটি ৩৮ লাখ ডলারে (১৫২ কোটি টাকায়) বিক্রি হয়। রিজেন্টস পার্ক এবং লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে পাথর ছোড়া দূরত্বে যুক্তরাজ্যের রাজধানীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকাগুলোর একটিতে সাদা টাউনহাউসের সারি। একটি সম্পত্তি বিপণন কোম্পানির আলোকচিত্রে দেখা যায়, এর মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত জানালা, বেশ কয়েকটি ফ্লোরজুড়ে সর্পিল সিঁড়ি, রয়েছে থিয়েটার এবং ব্যায়ামাগার।

সম্পত্তি প্ল্যাটফর্মের হিসাবে বর্তমানে বাড়িটির দাম ১৮০ কোটি টাকারও (১.৩ কোটি পাউন্ড) বেশি। বাড়িটি বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের মালিকানাধীন।

অথচ বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দেশটির কোনো নাগরিক, বাসিন্দা এবং সরকারি কর্মচারী বছরে ১২ হাজার ডলারের (১৩ লাখ ১৭ হাজার টাকার) বেশি অর্থ দেশের বাইরে নিতে পারেন না। বাংলাদেশের আইনে করপোরেশনের বিদেশে তহবিল স্থানান্তরেও নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। শুধু কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হয়।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ গত জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে তাঁর মালিকানাধীন কোম্পানি প্রায় ২০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড (২৭৭০ কোটি টাকা) মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি কিনে যুক্তরাজ্যে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউস করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে এ পরিসংখ্যান পেয়েছে বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গ।

আর্থিক খাতে এক বছরে ৬৫ শতাংশ বেড়েছে সন্দেহজনক লেনদেন

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছে, গত অর্থবছরে ব্যাংক খাতে ঋণসংক্রান্ত সন্দেহজনক লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে এ সময়ে পুরো আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন সার্বিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, আগের অর্থবছরের তুলনায় যা প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। ব্যাংক খাতের বেনামি ও প্রতারণাপূর্ণ ঋণ বন্ধ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির ‘রোগ’ সারাতে বাংলাদেশ ব্যাংক পথনকশা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই এই চিত্র উঠে এসেছে।

বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের কাছে পাঠানো ঋণসংক্রান্ত সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২০, যা এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩৪১টি। অর্থাৎ এ ধরনের লেনদেন প্রতিবেদনের সংখ্যা বেড়ে দেড় গুণ হয়েছে। আর গত অর্থবছরে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা, ব্রোকারেজ হাউসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিএফআইইউতে সব মিলিয়ে সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল ১৪ হাজার ১০৬টি, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৮ হাজার ৫৭১টি।

খুলনার কয়রায় ভূমি অধিগ্রহণ না করেই চলছে বেড়িবাঁধ নির্মাণ

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রামের জেলে আবুল কালাম গাজী। ১৯৯২ সালে শাকবাড়ীয়া নদীর বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন বিলে ১৫ কাঠা জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেন। সেই থেকে নয়জনের সংসার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। এখন তাঁর জমির ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বেড়িবাঁধ। তবে রাস্তার কাজ শুরু হলেও জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। ফলে ক্ষতিপূরণের টাকাও পাননি।

আবুল কালাম গাজী বলেন, ‘কিছুদিন আগে খাজনাও দিয়েছি। এখন শুনছি বাড়ির ওপর দিয়ে বাঁধের রাস্তা হবে। কাজও শুরু হইছে। বিনা নোটিশে বাঁধের রাস্তার কথা বলে আমার বসতঘরটি ভেঙে ফেলতে বলছে। আমাগো তো আর অন্য কোনো জায়গাজমি নাই। সরকার যদি এই জমি নেয়, তাহলে আমাদের ক্ষতিপূরণ দিবে। তাও তো পাইনি। আর পাব কি না, সেটাও জানিনে। ঘর ভাঙলে পাশে যে কোথাও নতুন ঘর তৈরি করার মতো জমি, টাকা কিছুই নাই আমার।’

আবুল কালাম গাজীর মতো একই সমস্যায় আছেন একই এলাকার ইউনুস সরদার। গোলপাতার ছাউনি দেওয়া নিজ ঘরের চালা খুলতে খুলতে তিনি বলেন, ‘১২ কাঠা জমি কিনে বাড়িটি করেছিলাম। ৮ কাঠা চলে যাচ্ছে বাঁধে। ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তারা এসে আমার ঘর সরিয়ে নিতে বলেছেন। তবে অধিগ্রহণ–সংক্রান্ত কোনো লিখিত নোটিশ পাইনি।’

খুলনার কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ না করে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির ওপর বাঁধের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে বাঁধের পাশে ঘর বা জমি থাকা মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার আগেই তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। টাকা পাবেন কি না, তা নিয়েও তাঁদের শঙ্কা রয়েছে।

বহুমাত্রিক দখলবাজিতে থ্রি এঙ্গেল মেরিন

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

এক দশক আগেও সবুজ ক্ষেত আর ফল-ফসলে সমৃদ্ধ ছিল মুন্সীগঞ্জ জেলার দ্বীপসদৃশ উপজেলা গজারিয়ার নয়ানগর মৌজার সদর ইউনিয়ন। তিন ফসলি জমিগুলোতে ফলত ধান, আলু, ভুট্টা। বর্ষায় পাওয়া যেত প্রচুর মাছ। বছরে শত শত কোটি টাকার ফসলই ছিল সেখানকার কৃষকদের আয়ের প্রধান উৎস। সেই সবুজ মাঠ আর কৃষিজমি এখন যেন ধু-ধু মরুভূমি। ২০১১ সালের স্যাটেলাইট চিত্রে যে ভূখণ্ডটি নদীর পানি আর সবুজ গাছগাছালিতে ছিল পরিপূর্ণ, পরের বছরগুলোতে সেখানে বাড়তে থাকে বালুভূমি। বালুতে ভরে ওঠে নদী, খাল। চাপা পড়ে যায় উর্বর কৃষিজমি। সেখানে গড়ে ওঠে ‘থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড’ নামের একটি জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। রুদ্ধ হয়ে যায় শত শত কৃষকের জীবিকার পথ।

২০১১ সালে নয়ানগর মৌজায় মেঘনার কূলঘেঁষে কিছু জমি কিনে যাত্রা করে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড। তখন থেকেই দৃশপট পাল্টাতে শুরু করে। মেঘনা নদী, ফুলদী নদী, কুমারিয়া খাল, বুরুরচক খাল, মালিকানার কৃষিজমি, সরকারের খাসজমি সবই ঢুকে যেতে থাকে প্রতিষ্ঠানটির পেটে।

বিভিন্ন সময়ে ওই এলাকা ঘুরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নদী, খাল, বিল ও কৃষিজমি ভরাট করে দখল এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট করার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ও তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। নদী রক্ষা কমিশন, জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য চিঠিও দিয়েছে। কিন্তু নদী, খাল, জমি দখলমুক্ত হয়নি।

ট্রান্সকম গ্রুপের পাঁচ কর্মকর্তা গ্রেফতার

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪, বণিক বার্তা

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানের শেয়ার জালিয়াতি, বিভিন্ন ব্যাংকে তার রেখে যাওয়া স্থায়ী আমানতের অর্থ আত্মসাৎ এবং জাল দলিল সৃজনের অভিযোগ তুলে তিনটি পৃথক মামলা করেছেন তার মেজো মেয়ে শাযরেহ হক। এসব মামলায় ট্রান্সকমের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান, সিইও সিমিন হোসেনসহ প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। রাজধানীর গুলশান থানায় বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি)  মামলাগুলো নথিভুক্ত করা হয়।

এসব অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির দুই পরিচালকসহ পাঁচজনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন—প্রতিষ্ঠানের আইন উপদেষ্টা ফখরুজ্জামান ভুইয়া, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) আব্দুল্লাহ আল মামুন, ম্যানেজার আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিক এবং সহ-কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক।

ট্রান্সকমের দুই বোনের লড়াই: সিইও সিমিন ও মা শাহনাজের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন শাযরেহ

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

বাংলাদেশের ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শাযরেহ হক বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) গুলশান থানায় তার বড় বোন ও মাসহ ট্রান্সকমের আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা মামলা করেছেন।

শাযরেহের বড় বোন সিমিন রহমান ট্রান্সকমের বর্তমান সিইও।

তার মা শাহনাজ রহমান গ্রুপটির বর্তমান চেয়ারম্যান। দুটি মামলায় শাহনাজের নাম রয়েছে।

সিমিন রহমান বিশ্বাসভঙ্গ, জালিয়াতি ও দলিল জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শাযরেহ ও তার প্রয়াত ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে পারিবারিক সম্পত্তির—যার মূল্য দাবি করা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা—ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, এই অভিযোগে এ মামলা করেন শাযরেহ।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হাতে তিনটি মামলার নথি এসেছে। মামলাগুলোর কয়েকটি অভিযোগ নিচে তুলে ধরা হলো।

অর্থ আত্মসাৎ

মামলার নথিতে শাযরেহ লিখেছেন, তার বাবা বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও এফডিআরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রেখে মারা যান। ওই অর্থের নমিনি ছিলেন তার মা শাহনাজ রহমান।

শাযরেহ অভিযোগ করেছেন, ২০২০ সালের ১ জুলাই লতিফুর রহমান মারা যাওয়ার পর ওই টাকা তার উত্তরাধিকারীদের (ওয়ারিশ) মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু তার বাবার মৃত্যুর পর তার বড় বোন (সিমিন) সব টাকা নিজের ও তার মায়ের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলেন বলে মামলার এজাহারে দাবি করেছেন শাযরেহ।

শাযরেহ আরও দাবি করেছেন, ২০২০ সালের ৩ আগস্ট তার বড় বোন ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্সের ১৮ শতাংশ শেয়ার উক্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা থেকে ৬০ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার বাহানায় নিজের নামে হস্তান্তর করেন।

শাযরেহ দাবি করেছেন, তার বোন ও মা পরস্পরের যোগসাজশে লতিফুরের অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে এই কাজ করেছেন।

ট্রান্সকমের শেয়ার থেকে উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করা

আরেক মামলায় শাযরেহ দাবি করেছেন, তার বোন ট্রান্সকমের আরও চার কর্মকর্তার সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তিনটি ফর্ম ১১৭ (হস্তান্তর দলিল) তৈরি করে রেজিস্ট্রার অভ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) জমা দিয়ে বেআইনিভাবে ট্রান্সকমের বেশিরভাগ শেয়ারের মালিকানা নিয়ে নেন।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, বাদীকে জানানো হয়েছিল যে তার পিতা তাকে ৪ হাজার ২৭০টি শেয়ার, তার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে ৪ হাজার ২৭০টি শেয়ার এবং তার বোনকে ১৪ হাজার ১৬০টি শেয়ার হস্তান্তর করেছেন।

কিন্তু বাদী কখনোই হস্তান্তর দলিলে (ফর্ম ১১৭) স্বাক্ষর করেননি বলে দাবি করেছেন। তার বাবাও জীবিতাবস্থায় কখনও হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষর করেননি বলে দাবি করেছেন বাদী শাযরেহ হক। আসামিরা এসব নথি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

ডিড অভ সেটেলমেন্ট (মীমাংসার দলিল) জালিয়াতি

আরেকটি মামলায় শাযরেহ দাবি করেছেন, তার মা ও বোন ট্রান্সকমের অন্য তিন কর্মকর্তার সহযোগিতায় তার [শাযরেহ] এবং তার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ডিড অভ সেটেলমেন্ট (মীমাংসার দলিল) তৈরি করেছেন।

শাযরেহ দাবি করেছেন, পরে ওই ডিড অভ সেটেলমেন্ট ব্যবহার করে সিমিন ও শাহনাজ ট্রান্সকম গ্রুপের শেয়ার নিজেদের নামে হস্তগত করাসহ গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইওর পদ নিজেদের নামে করে নিয়েছেন।

শাযরেহ দাবি করেছেন, তিনি কখনও তার পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে ডিড অভ সেটেলমেন্ট করেননি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরিতে চোরাবালি

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

শিক্ষা সনদ নকল, অভিজ্ঞতার সনদেও দুই নম্বরি। এ রকম ভুয়া সনদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা) প্রথম শ্রেণির চাকরি জুটিয়েছেন অন্তত ২৪ জন। নিরীক্ষা কিংবা তদন্ত– কোনো কিছুতেই চাকরির গায়ে টোকা লাগেনি। অসংকোচে বছরের পর বছর  চাকরি করে যাচ্ছেন এসব চতুর কর্মকর্তা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরির জালিয়াতি কীর্তি এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কয়েক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এ প্রতিষ্ঠানে। তারাও চাকরি করছেন অবলীলায়। এসএসসির গণ্ডি পেরোনো জাল সনদধারী কয়েকজন বনে গেছেন কর্মকর্তা। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রকৃত উত্তীর্ণ প্রার্থী নিয়োগ পেলেও চাতুরী করে চাকরি পাওয়া কর্মকর্তাও টিকে আছেন! দু’জনই তুলছেন সরকারি বেতন!

এমনকি ফাউন্ডেশনের অধীন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগেও প্রবঞ্চনার প্রমাণ মেলে তদন্তে। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দিয়ে দেওয়া হয় ধামাচাপা। এ ছাড়া প্রকল্পের নিয়োগেও জাল সনদের উদাহরণ ভূরি ভূরি। বছরের পর বছর এমন অনিয়ম চলতে থাকলেও লাগাম টানার ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নেই হেলদোল। উল্টো কেউ উদ্যোগী হলে তা বীরদর্পে ঠেকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্নবিদ্ধ উপায়ে করা হচ্ছে অডিট আপত্তির নিষ্পত্তি।

সবাইকে ‘খুশি’ করেই জাটকা মারার মচ্ছব

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের কম আকারের ইলিশের পোশাকি নাম ‘জাটকা’। এ অবয়বের ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা ভাঙলেই জেল-জরিমানা। তার পরও সরকারের নিষেধাজ্ঞা মানতে যেন বয়েই গেছে! এখন জাটকা কেনাবেচা হয় না এমন মাছের বাজার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। নদীতে আহরণ, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সরবরাহ, মোকামের আড়তঘরে পাইকারি বিক্রি এবং খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো– চলছে সর্বসমক্ষে। আইনবিরোধী এ কর্ম প্রতিরোধে প্রান্তিক পর্যায়ে জলে-স্থলে ‘সজাগ’ মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড। তবু জাটকা নিধন, পরিবহন ও বিপণন সবকিছুই যেন বল্গাহীন। কেন হচ্ছে, কীভাবে চলছে– সেটা খোঁজার চেষ্টা করেছে সমকাল।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশাসনের প্রতিটি ধাপে ‘খুশি করে’ জাটকা ধরার যেন এক উৎসবই চলছে মেঘনাসহ আশপাশের নদনদীতে। এর পেছনে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের প্রশ্রয়ে প্রভাবশালী চক্র। এমন দুই নম্বরি ব্যবসায় তারা বড় লগ্নি করে তুলে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। অপকীর্তি দেখেও মুখে কুলুপ লাগানোদের তালিকায় আছেন মৎস্য অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠ কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, নিষেধাজ্ঞার সময় পুলিশের বিভিন্ন শাখায় মাসিক চাঁদা দিয়ে চলে জাটকা নিধন। শরীয়তপুরের আড়তদারদের নাকি প্রতিদিন পুলিশের মেসে খাবারের জন্যও দিতে হয় মাছ। এর মধ্যেও চলে ‘নিয়ম রক্ষার’ জাটকা নিধনবিরোধী অভিযান। তবে অভিযানের খবর ‘বাতাসের আগেই’ যেন চলে যায় মাঝনদীতে জেলে নৌকায়। এসব জমজমাট জাটকা কারবারে ‘মাছের রাজা’ ইলিশের হয়ে যাচ্ছে মহাসর্বনাশ।

বন্যপ্রাণী পাচারের ‘ট্রানজিট’ বাংলাদেশ

০৩ মার্চ ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

প্যাটাগোনিয়ান মারা। কিছুটা খরগোশ ও কিছুটা হরিণের মতো দেখতে এই প্রাণীর আবাসস্থল দক্ষিণ আমেরিকার প্যাটাগোনিয়ার বিশাল এলাকাসহ আর্জেন্টিনার অনেক জায়গায়। এই তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণীটি উপমহাদেশের এই অংশে কখনও পাওয়া গেছে এমনটা জানা যায় না।

কিন্তু ২০২১ সালের মার্চ মাসে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার তুষখালী সীমান্ত এলাকায় ফেলে রাখা বস্তা থেকে সাতটি বিপন্নপ্রায় প্রাণী উদ্ধার করেন সীমান্তরক্ষী সদস্যরা।

পরের বছর, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা থেকে উল্লুক, সজারু, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল এবং কালো মথুরাসহ বিপুল সংখ্যক বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ গত বছরের জানুয়ারিতে কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে দুটি ভালুকের বাচ্চা উদ্ধার করা হয়।

এর আগে ২০১৮ সালে যশোরের শার্শা সীমান্তের কাছে একটি গোয়ালঘর থেকে নয়টি জেব্রা এবং ২০১৭ সালে যশোর থেকে দুটি সিংহ শাবক ও একটি চিতাবাঘ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এর অর্থ হলো, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অনেক বিদেশি ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণি এদেশে পাচার হচ্ছে কারণ; বন্যপ্রাণী পাচারের ট্রানজিট হটস্পট হিসাবে কাজ করছে বাংলাদেশ।

বাস থেকে হাজার কোটি টাকা ঘুষ-চাঁদা আদায়

০৬ মার্চ ২০২৪, সমকাল

ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস থেকে বছরে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা ঘুষ ও চাঁদা আদায় করা হয়। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বাসের ফিটনেস ও অন্যান্য কাগজ হালনাগাদ করতে ৯০০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঘুষ নেয়। মামলা থেকে বাঁচতে বাস মালিকরা হাইওয়ে এবং ট্রাফিক পুলিশকে ৮৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঘুষ দেন। রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদা তোলা হয় ২৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মালিক ও শ্রমিক সংগঠন ১২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে বাস থেকে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভার ইজারাদাররা পার্কিং ইজারার নামে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন।

দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, মালিক-শ্রমিক সংগঠন সরকারের চেয়ে ক্ষমতাধর; চলছে অনিয়ম-দুর্নীতির মহোৎসব।

এ প্রতিবেদনকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন আজগুবি তথ্য দেওয়া হয়েছে। পুলিশও বলছে, প্রতিবেদনটি একপেশে। তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ভাষ্য, ঘুষ ও চাঁদাবাজির অঙ্ক আরও অনেক বড়।

দেশের ২৪ শতাংশ বাসের ফিটনেস নেই

৫ মার্চ ২০২৪, মানবজমিন

সড়কে বাণিজ্যিকভাবে চলাচলকারী প্রত্যেকটি বাসের জন্য নিবন্ধন ও ৩ ধরণের সনদ বাধ্যতামূলক থাকলেও ৪০.৯ শতাংশ বাস কর্মী ও শ্রমিকদের মতে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এক বা একাধিক বাসের নিবন্ধন সহ কোন না কোন সনদের ঘাটতি আছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকালে ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংস্থাটির দাবি, ১৮.৯ শতাংশ বাসের নিবন্ধন, ২৪ শতাংশ বাসের ফিটনেস, ১৮.৫ শতাংশ বাসের ট্যাক্স টোকেন ও ২২ শতাংশ বাসের রুট পারমিট নেই।

টিআইবির গবেষক মুহা: নূরুজ্জামান ফারহাদ, ফারহানা রহমান ও মোহাম্মদ নূরে আলম গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস শ্রমিকদের দৈনিক প্রায় ১১ ঘন্টা কাজ করতে হয়। যাদের মধ্যে ৮২ শতাংশের কোন নিয়োগপত্র নেই, ৬৯.৩  শতাংশের নেই নির্ধারিত মজুরি। যাত্রী সেবা প্রসঙ্গে সংস্থাটি দাবি করেছে, জরিপে অংশগ্রণকারী ৭৫.৮ শতাংশ  যাত্রী, ৪৮ শতাংশ শ্রমিক এবং ৫১.৮ শতাংশ মালিক বাসের মাত্রাতিরিক্ত গতিকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

২২.২ শতাংশ কর্মী/শ্রমিকদের মতে, মদ্যপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে চালক গাড়ি চালান এবং কন্ডাক্টর/হেলপার/সুপারভাইজার বাসে দায়িত্ব পালন করেন – সিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে এ হার ৪৫.৯ শতাংশ এবং আন্তঃজেলার ক্ষেত্রে ১৯.২ শতাংশ বলে জানায় সংস্থাটি।

নির্দেশনার যথাযথ প্রয়োগের অভাবে চলন্ত বাসে চালকেরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, ফলে অনেকসময় প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনা ঘটে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের সাথে বিআরটিএ’র প্রকাশিত তথ্যের গরমিল রয়েছে বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি।

বিআরটিএ’র তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫,০২৪ জন এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী এ সংখ্যা ৭,৯০২ জন।

ভরাট-দখলে বিলীন বুড়িগঙ্গার ১৬ কিলোমিটার: গবেষণা

০৫ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

বুড়িগঙ্গা নদীর সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার ওয়াশপুর থেকে হযরতপুর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার ভরাট, দখল ও প্রবাহশূন্যতার শিকার হয়ে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি ২৫ কিলোমিটার প্রবহমান রয়েছে। ‘বুড়িগঙ্গা: নিরুদ্ধ নদী পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

 আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শুক্রাবাদে দৃকপাঠ ভবনে গবেষণার ফল তুলে ধরেন প্রধান গবেষক ও নদীরক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই গবেষণা চালানো হয়েছে। গবেষণায় জিপিএস ট্র্যাকিং ও সিএস ম্যাপ ব্যবহার ছাড়াও সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।

যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে দৃক পিকচার লাইব্রেরি ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। গবেষণা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), রিভারাইন পিপল, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), দ্য ডেইলি স্টার ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিকভাবে বুড়িগঙ্গার সম্পূর্ণ অংশ শনাক্ত ও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। নদীটির প্রকৃত উৎসমুখ ও দৈর্ঘ্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। যেমন পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৯ কিলোমিটার, বিআইডব্লিউটিএ ৪৫ কিলোমিটার, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ২৯ কিলোমিটার এবং পর্যটন করপোরেশন ২৭ কিলোমিটার হিসেবে বুড়িগঙ্গার দৈর্ঘ্য উল্লেখ করেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদী বুড়িগঙ্গার উৎপত্তিস্থল। নদীটি সমাপ্ত হয়েছে কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের জাজিরা বাজারের কাছে ধলেশ্বরী নদীতে। এর মোট দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার। ১৯১২ সালে যতীন্দ্রমোহন রায়ের লেখা ‘ঢাকার ইতিহাস’ বইয়েও বুড়িগঙ্গার দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার বলে উল্লেখ রয়েছে।

বুড়িগঙ্গার প্রবহমান ২৫ কিলোমিটার অংশে সীমান্ত পিলার আছে এবং শুকনা ১৬ কিলোমিটার অংশে সীমান্ত পিলার নেই বলে জানান শেখ রোকন। তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গার ১৬ কিলোমিটার সরকারি নথি থেকে মুছে দেওয়ার মধ্য দিয়ে দখলকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এই শুকনা অংশে সীমান্ত পিলার দেওয়া হয়নি। পিলার দেওয়া হয়েছে কেবল বুড়িগঙ্গার প্রবহমান অংশে। প্রবহমান অংশে এক হাজারের মতো পিলার পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৭০০ পিলার অক্ষত অবস্থায় নেই।

অনলাইনে নামজারি, পদে পদে হয়রানি

১০ মার্চ ২০২৪, সমকাল

জমির নামজারির ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশনের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ভূমি মন্ত্রণালয় ঘটা করে ঘোষণা দিচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের দুর্ভোগ কমাতে সব ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু জমি ও ফ্ল্যাটের নামজারির ক্ষেত্রে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।

নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে অনলাইনে জমা দেওয়ার পরও সেগুলোর হার্ড কপি এসিল্যান্ড অফিসে দিতে হয়। আবেদন গ্রহণ করার পর এসিল্যান্ড অফিস থেকে শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এ ব্যাপারে মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হলেও কার কখন শুনানি হবে, তা উল্লেখ করা হয় না। সেবাপ্রত্যাশীরা সকাল থেকে সারাদিন বসে থাকার পরও অনেককে ওই দিন শুনানির জন্য ডাকা হয় না। কাউকে কাউকে পুনরায় আবেদন করতে বলা হয়। আবার এসব বিষয়ে অনলাইনে সঠিক তথ্য মেলে না।

অভিযোগ উঠছে ধাপে ধাপে হয়রানির ফাঁদ পেতে রাখা হচ্ছে ঘুষ আদায়ের জন্য। সরেজমিনও মিলেছে এর প্রমাণ।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, রাজধানীর এসিল্যান্ড অফিসে নামজারির আবেদনের জন্য গেলেই দেখা মেলে সুযোগসন্ধানী লোকদের। নানা ঝামেলার কথা শুনিয়ে এক পর্যায়ে চাওয়া হয় ঘুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবাপ্রত্যাশী সমকালকে বলেন, তিনি জমির নামজারির জন্য ধানমন্ডির এসিল্যান্ড অফিসে যাওয়ার পর ফ্রন্ট ডেস্কের সহকারী পরিচয় দেওয়া আবদুল মতিন কথা বলার এক পর্যায়ে ২০ হাজার টাকা চান। টাকা দিলে পুরো কাজটিই করে দেবেন বলে জানানো হয়। তবে সামর্থ্য না থাকায় তিনি এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি কাগজপত্র জমা দিয়েছেন অনেক দিন হলো, কিন্তু কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না।

সূত্র জানায়, নামজারির আবেদন ফি ৭০ টাকা। আবেদনটি গ্রহণ করা হলে ডিসিআর ফি বাবদ ১ হাজার ১০০ টাকা জমা দিতে হয়। এর বাইরে আর অর্থ খরচের বিষয় নেই। কিন্তু প্রতিটি এসিল্যান্ড অফিসে নানা কৌশলে আদায় করা হয় বড় অঙ্কের অর্থ।

‘জালিয়াতি’ করে তারা সড়কের বড় ঠিকাদার

১০ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

সড়কের যে পাঁচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কাজ পায়, তাদের তিনটিই জালিয়াত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। নতুন নতুন ঠিকাদারি কাজ পেতে তারা নথি জাল করেছে বলে উঠে এসেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের তদন্তে। দুটির বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত চলছে।

সওজ সূত্র জানিয়েছে, তারা মোট ২৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি পেয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ ছয়টিকে বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রথম আলোতে গত বছরের ১৪ অক্টোবর ‘সড়কের ৫১% কাজ পেয়েছেন ‘‘প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ ’’৫ ঠিকাদার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সড়কে গুটিকয়েক ঠিকাদারের বেশির ভাগ কাজ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর উচ্চ আদালতে একজন আইনজীবী রিট আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে গত ১৯ নভেম্বর সওজ তদন্ত কমিটি গঠন করে।

২৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি পেয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। ৬টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম রেজাউল করিমকে প্রধান করে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গত জানুয়ারি মাসে প্রতিবেদন জমা দেয়। ফেব্রুয়ারি থেকে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়।

সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তদন্ত করে কিছু জালিয়াতি পেয়েছেন, ব্যবস্থাও নিয়েছেন। এটা চলমান প্রক্রিয়া। আরও যাচাই-বাছাই চলছে। যাদেরই জালিয়াতি পাওয়া যাবে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জালিয়াতিতে বড়রা

সওজ সূত্র জানিয়েছে, যে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি পাওয়া গেছে, তারা সড়কের ৯০ শতাংশের বেশি ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। যদিও সড়কে কাজ করা ঠিকাদারের মোট সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১০০।

জালিয়াতি চার ধরনের: ১. জাল কর্মসম্পাদন সনদ জমা দেওয়া। অর্থাৎ যে ঠিকাদারি কাজ তারা করেনি, সেগুলোও উল্লেখ করেছে। ২. টাকার অঙ্কে কাজের পরিমাণ বেশি দেখানো। ৩. কাজ শেষ করেছে দেরিতে, কিন্তু দেখিয়েছে তারা যথাসময়ে কাজ করেছে। ৪. আর্থিক সক্ষমতা দেখাতে একটি দরপত্রে একই সনদ বারবার জমা দেওয়া। ৫. যৌথ উদ্যোগের ভুয়া তথ্য জমা দেওয়া।

সওজ সূত্র জানিয়েছে, যে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি পাওয়া গেছে, তারা সড়কের ৯০ শতাংশের বেশি ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। যদিও সড়কে কাজ করা ঠিকাদারের মোট সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১০০।

কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), গণপূর্ত অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ বিভিন্ন সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিয়েছে, যার মধ্যে জাল সনদ রয়েছে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এসেছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরে সওজর ৫১ শতাংশ কাজ পেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, মুহাম্মদ আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড, মোজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মো. মাহফুজ খান লিমিটেড ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড।

আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের জালিয়াতির বিষয়ে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সাতক্ষীরা এবং একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ৫৬টি সনদ জমা দিয়েছিল, যা ছিল জাল।

দরপত্রবিষয়ক তথ্যভান্ডার টেন্ডার ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (টিডিএমএস) তথ্য বলছে, বিগত পাঁচ বছরে সওজে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ১০০টি ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন। কাজগুলো টাকার অঙ্কে ছোট। সম্মিলিত পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। তারা ঢাকা অঞ্চলে বেশি কাজ পেয়েছে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এসেছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরে সওজর ৫১ শতাংশ কাজ পেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, মুহাম্মদ আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড, মোজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মো. মাহফুজ খান লিমিটেড ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড।

জালিয়াতির বিষয়ে আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন কর্তৃপক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। সওজ সূত্র জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময়ে তারা সড়কে কোনো ঠিকাদারি কাজ পাবে না।

সওজে বেশি কাজ পাওয়া আরেক ঠিকাদার হাসান টেকনো। তারা পাঁচ বছরে পাঁচ শতাধিক ঠিকাদারি কাজ করেছে, যার অর্থমূল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। তদন্তে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন ধরনের জাল সনদ জমা দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যেমন হাসান টেকনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চারটি কাজ করে ১২০ কোটি টাকা বিল পাওয়ার অভিজ্ঞতা দেখায় আরেকটি দরপত্রে। যদিও ওই কাজগুলো তারা করেনি।

জালিয়াতির দায়ে হাসান টেকনোকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নাজমুল হাসান গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর টুকটাক ভুল আছে। যেসব ঠিকাদারি কাজে তিনি যৌথভাবে অংশ নিয়েছিলেন, সেগুলো নিয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। কারণ, তাঁর অংশীদার আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশনসহ অন্যরা ভুয়া নথি জমা দিয়েছে।

সড়কের আরেক শীর্ষস্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আগামী জুন পর্যন্ত। বিগত পাঁচ বছরে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ সড়কে প্রায় ১ হাজার ২২০টি ঠিকাদারি কাজ করেছে, যার অর্থমূল্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে মেসার্স সালেহ আহমেদ ও জামান এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে দুই বছর এবং মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে আগামী জুন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়।

কামরাঙ্গীরচরে দক্ষিণ সিটির প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বাসিন্দারা

০৮ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

সেবামূলক কাজ করা সিটি করপোরেশনের কাজ। তা না করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে বসবাসরত প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দাকে উচ্ছেদ করে সেখানে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল করতে চায়। শত বছর ধরে বসবাসরত ওই সব বাসিন্দাকে বাস্তুচ্যুত করে এমন প্রকল্প নেওয়া কতটা যৌক্তিক।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ড্যাপ-কামরাঙ্গীরচর, অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন এবং জনগণের ভাবনা’শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাসিন্দারা এ প্রশ্ন তোলেন। কামরাঙ্গীরচর নাগরিক পরিষদের ব্যানারে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে তাঁরা বলেন, গত বছরের ১১ অক্টোবর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় এক অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, কামরাঙ্গীরচরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হবে। ওই দিন তাঁরা জানতে পেরেছেন পুরো এলাকার ২০ লাখ বাসিন্দাকে বাস্তুচ্যুত করে সেখানে এই প্রকল্প নেওয়া হবে। সেখানে ১ হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ৫০তলা ভবন নির্মাণ করা হবে বলেও তাঁরা মেয়রের বক্তব্যে জানতে পেরেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের না জানিয়ে এমন প্রকল্প নেওয়ায় তাঁরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।

কামরাঙ্গীরচরে কী ধরনের প্রকল্প হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানতে নানা মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জানিয়ে বৈঠকে ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, কখন, কীভাবে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হবে, তাঁরা এখন পর্যন্ত জানতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে, কামরাঙ্গীরচরে যাতে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া না হয়। সিটি করপোরেশনের চিঠি পেয়ে রাজউক এখন আর কামরাঙ্গীরচরে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে না।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কামরাঙ্গীরচর এলাকা। এই এলাকায় ২০ হাজারের বেশি ভবন রয়েছে। মিশ্র ভূমি ব্যবহারের এই এলাকায় শত শত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে।

গত ১১ অক্টোবর কামরাঙ্গীরচরের লোহার ব্রিজ থেকে নিজামবাগ বেড়িবাঁধ পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামরুল সরণির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, ‘তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া এলাকা রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে পাঁচ তারকা হোটেল বানানো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ওই এলাকায় পরিকল্পিত আবাসন, কনভেনশন হল, ৫০ তলাবিশিষ্ট নান্দনিক ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর হয়ে চার সারির সড়ক নির্মাণ করা হবে। এভাবেই কামরাঙ্গীরচরকে একটি আধুনিক নগরীতে পরিণত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির এমন পরিকল্পনার প্রতিবাদেরই আজ এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে কামরাঙ্গীরচরে বসবাস করে আসছেন। দক্ষিণ সিটির এই প্রকল্পকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়, তাঁরা কোথায় যাবেন?

শাহ আলম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘মেয়র তাঁদের বলেছেন, “তোমরা টাকা পাবা অন্য জায়গায় গিয়ে থাকবা।” এটা অবাস্তব পরিকল্পনা। এটা বাতিল করতে হবে।’

ধরে নিয়ে কিস্তিতে ঘুষ নেয় পুলিশ

১৩ মার্চ ২০২৪, কালবেলা

পরনে জিন্সের প্যান্ট, গায়ে গোল গলার গেঞ্জি, কানে ব্লুটুথ ডিভাইস, মাথায় গোল ক্যাপ। পেছনে ঝোলানো ছোট ট্রাভেল ব্যাগ। দেখে মনে হতে পারে কোনো ব্যান্ড দলের গায়ক কিংবা কমেডি মুভির নায়ক। তবে এসবের কিছুই তিনি নন। এই ব্যক্তি রাজধানীর তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ওয়াসিম। এমনই বেপরোয়া চলাফেরা তার। এই এসআইর অত্যাচারে ফাঁড়ি এলাকায় বসবাসকারীরা অতিষ্ঠ। অসংখ্য মানুষকে ধরে বিনা অপরাধে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অযথা কাউকে ধরে আনার পর যদি দেখেন ওই ব্যক্তির কাছে টাকা নেই, তাহলে বাকিতে ছেড়ে দিয়ে তিনি ঘুষ নেন কিস্তিতে। ঘুষের টাকা নির্ধারণ করতে ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) উপপরিদর্শক টিএম আলামিন সিভিল এভিয়েশনের গার্ড রুমে বসান ‘আদালত’; ‘বিচারক’ তিনি নিজেই। এরপর ঘুষের টাকা নির্ধারণ করে কিস্তিতে তা তোলেন এএসআই ওয়াসিম।

পুলিশের এই বেপরোয়া কর্মকর্তা ওয়াসিমের একটি কল রেকর্ড এসেছে কালবেলার হাতে। সেখানে এক ভুক্তভোগীকে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম স্যার।

টাকা ১৭ হাজার তো মিলাইবার পারছি না। কালকে মিলাই দিই? ওই কর্মকর্তা বলেন, বুঝি নাই।’ তখন ভুক্তভোগী বলেন, ‘টাকা তো সব মিলাইবার পারছি না।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তোরে মাইরালামু; কিন্তু এ্যাকে বারে মাইরা ফেলামুরে। স্যার, মারেন কাটেন যা করেন; আল্লাহ যদি বাঁচাই রাখে কালকে টাকা দিয়া আমু। এত কথা কয়া অবে না। তোরে তাড়াতাড়ি আইতে কইছি, তুই আয়।’

এ ছাড়া আরও কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে কালবেলার হাতে। একটি ফুটেজে দেখা যায়, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে বাউনিয়ার একটি গ্যারেজ থেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত লাইনম্যান জসিম ৫০০ টাকা করে তুলছেন। প্রতি শনিবার ফাঁড়ির পুলিশের নাম বলে বাউনিয়া এলাকার প্রায় শতাধিক গ্যারেজ থেকে তোলা হয় এই টাকা। এ ছাড়া বৈধ-অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইজিবাইক (মিশুক) ও অটো গ্যারেজ, লেগুনা স্ট্যান্ড, পাকার মাথার অটোস্ট্যান্ড, বটতলা ফুটপাতে বসা ফুচকার দোকান, চা দোকানসহ বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে মাসে অন্তত কয়েক লাখ টাকা তোলা হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।

আইসি আলামিনের ‘আদালত’: গত ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি সারাদিন সরেজমিন দিয়াবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার বাউনিয়া দক্ষিণ ও উত্তর পাড়া, বটতলা, সুলতান মার্কেট, বাউনিয়া বাজার, বাদালদি, উলুদাহা, তাফালিয়াসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে অন্তত ২০ ভুক্তভোগীর সন্ধান পায় কালবেলা। তারা কালবেলাকে নগদ-বাকিতে আসামি ছাড়ার বিস্তারিত জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোর্সের সহায়তায় নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ব্যক্তিদের টার্গেট করে প্রথমে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বাউনিয়া বটতলার সিভিল এভিয়েশনের গার্ড রুমে। এরপর সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ (আইসি) সালিশ বসান। ওই সালিশি সভায় রাজাসনে বসেন আইসি আলামিন নিজেই। জরিমানা করা হয় খেয়ালখুশিমতো। তাৎক্ষণিক কেউ সেই টাকা দিতে না পারলেও কোনো সমস্যা নেই। সুযোগ রয়েছে কিস্তিতে পরিশোধের। এই গার্ড রুমের সালিশির ভিডিও কালবেলার হাতে রয়েছে। তবে কেউ কথা না শুনলে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। ভয়ভীতি দেখিয়ে ও মিথ্যে মামলা দিয়ে নানাভাবে করা হয় হয়রানি।

সরেজমিন খুঁজে পাওয়া যায় কল রেকর্ডের সেই ব্যক্তিকেও। তার নাম মো. জাবেদ। পেশায় রিকশাচালক। জাবেদের স্ত্রী গার্মেন্টসে কাজ করেন। জানতে চাইলে ভুক্তভোগী জাবেদ কালবেলাকে বলেন, ‘রাস্তা থাইকা ধইরে নিয়া যায় ওয়াসিম স্যার। পরে বলে আমি না কি মাদক বেচি। আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। না দিলে মাদক দিয়ে চালান দেবে বলে জানান। মামলার ভয়ে ধারকর্জ করে ৩ হাজার টাকা জোগাড় করে দিই ওয়াসিম স্যারকে। বাকি ১৭ হাজার টাকা রিকশা বিক্রি করে দিতে বলে আমাকে ছেড়ে দেয়।’

মাদক কারবারিদের টাকায় ডিএনসির ‘পিকনিক’

০৯ মার্চ ২০২৪, দেশ রূপান্তর

গাজীপুরের টঙ্গীর কেরানিরটেক বস্তির ইব্রাহিম মারুফ সিনথিয়ার কাছ থেকে ২ লাখ, বাতেরটেক বস্তির সেলিম মিয়ার কাছ থেকে ২ লাখ এরকম বিভিন্নজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে জমকালো পিকনিকের আয়োজন করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এসব ব্যক্তি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত।

গত ২ মার্চ গাজীপুরের ছুটি রিসোর্টে এই পিকনিকের আয়োজন করা হয়। তবে পিকনিকের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেয়নি ডিএনসি। পিকনিকে যোগ দিয়েছেন কিন্তু ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই পিকনিক আয়োজন করেন ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী এবং গাজীপুর জেলার উপপরিচালক মেহেদী হাসান। তারাই পিকনিকের সব ব্যয়ভার বহন করেন। বিপুল এ ব্যয়ের উৎস বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে পাওয়া অর্থ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসির কয়েকজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মিটার রিডারদের হাতে বিলের ‘ চোরা চাবি’

১৯ মার্চ ২০২৪, সমকাল

কখনও বাণিজ্যিক ভবন হয়ে যাচ্ছে আবাসিক, কখনও ভবন নির্মাণের তথ্য হচ্ছে গুপ্ত। আবার কেউ মিটার খুলে রেখে পানির বিল কমিয়ে দেওয়ার ধান্দায় ব্যস্ত। গভীর নলকূপের তথ্য লুকাতে কেউ হয়ে ওঠেন ‘গভীর জলের মাছ’। ওয়াসার পানি ব্যবহারে এমন ছলাকলায় খোদ মিটার রিডাররাই অতিশয় দক্ষ। পানির বিল নিয়ে রকমারি কাণ্ড করে ফায়দা লুটছেন ওয়াসার এসব অসাধু বিলিং সহকারী; করছেন নিজের পকেট ভারী।

ওয়াসার পানিকাণ্ডে কালেভদ্রে দুয়েকজন শাস্তির মুখোমুখি হলেও অনেকে ছড়ি ঘুরিয়েই যাচ্ছেন। ভবন মালিক, মিটার রিডারদের তদারককারী সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও), রাজস্ব কর্মকর্তা এবং ওয়াসার দুয়েকজন অসাধু বড় কর্তাও এমন অনিয়মের সঙ্গী।

এসব কারসাজির দাঁড়ি টানতে তিন মাস অন্তর মিটার রিডারদের এলাকা বদলের নির্দেশনা থাকলেও অনেকে বছরের পর বছর খুঁটি গেড়েছেন। ফলে পানির বিল নিয়ে অনিয়মের বল্গা ছুটছেই। অবশ্য ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্নীতির ব্যাপারে শূন্য সহনশীল নীতি নিয়েছে তারা। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা।

এদিকে, এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে গত ১১ মার্চ ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৪ ও ১০-এ (মিরপুর এলাকা) অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানকালে গত তিন মাসে বিচ্ছিন্ন করা সংযোগ ও নতুন সংযোগ দেওয়া হোল্ডিংয়ের তালিকা সংগ্রহ করে দলটি। এ ঘটনায় দেলোয়ার নামে এক বিলিং সহকারীকেও বরখাস্ত করে ঢাকা ওয়াসা।

জবানবন্দিতে কাকে কাকে দায়ী করেছিলেন হল-মার্কের তানভীর

২০ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

স্বাধীনতার পর ব্যাংক খাতে ঋণ কেলেঙ্কারির তালিকা করলে সেটি বেশ লম্বাই হবে। একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে, যার বেশির ভাগেরই কোনো সুরাহা হয়নি। আত্মসাৎ করা অর্থও উদ্ধার হয়নি। তবে নানা কারণে এই তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। কেলেঙ্কারির সেই ঘটনা ছিল ২০১১ ও ২০১২ সময়ের।

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি, ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা এবং কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী মিলে কীভাবে ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা যায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। আবার একটি ব্যাংকের মাত্র একটি শাখা থেকে সর্বোচ্চ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা হিসেবেও এটা সবচেয়ে বড়। বলা যায়, সবার চোখের সামনে থেকেই কেলেঙ্কারির এ ঘটনা ঘটেছিল।

সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা (আগে ছিল শেরাটন শাখা, সে সময় এর নাম ছিল রূপসী বাংলা শাখা) থেকে জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে একা হল-মার্কই তুলে নেয় ২ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। একটি ব্যাংকের একটি শাখায় একটি কোম্পানির এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা আর কোথাও ঘটেছে বলে ব্যাংকিং খাতের কেউ এখনো বলতে পারেননি।

হল-মার্ককে প্রথম ঋণ দিয়েছিল পরিচালনা পর্ষদই। এই সুযোগ নিয়ে রূপসী বাংলা শাখা নিয়মিতভাবে হল-মার্ক গ্রুপকে জালিয়াতি করতে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ কর্মকর্তা এই জালিয়াতির সুযোগ করে দেন। জালিয়াতির ঘটনা যাতে উদ্‌ঘাটিত না হয়, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তা জালিয়াতির কথা জানতে পেরে তা উদ্‌ঘাটনের ব্যবস্থা নিলে তাঁদের বদলি করা হয় এক দিনের নোটিশে। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীদের পৃষ্ঠপোষকতাও ছিল। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক উপদেষ্টা, একজন প্রতিমন্ত্রীর নামও পাওয়া গিয়েছিল।

রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এ কে এম আজিজুর রহমান এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছেন। তবে তাঁকে সহায়তা করেছিলেন ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবীরসহ ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাই। আজিজুর রহমান আটক অবস্থায় মারা গেছেন।

হল-মার্ক গ্রুপের এমডি ছিলেন তানভীর মাহমুদ আর চেয়ারম্যান ছিলেন তাঁর স্ত্রী জেসমিন ইসলাম। এক যুগ আগের এই ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় করা এক মামলায় গতকাল মঙ্গলবার তানভীর মাহমুদ, জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাসেম। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে, তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত বলে আদালত মনে করেন। তবে সংশ্লিষ্ট আইনে এই অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন, তাই তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া অন্য সাতজন হলেন তানভীরের ভায়রা হল-মার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, সাইফুল হাসান, নকশি নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও আবদুল মতিন।

দণ্ডিত বাকি আট আসামি হলেন সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার, সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সফিজউদ্দিন এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান। এই আটজনের মধ্যে জামাল উদ্দিনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকিদের ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

তানভীর মাহমুদের সেই জবানবন্দি

হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় মামলা হয়েছিল একাধিক। এর মধ্যে এক মামলায় ২০১২ সালের ১৮ আগস্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তানভীর মাহমুদ। নিজেকে অনেকটা নির্দোষ দাবি করলেও কেলেঙ্কারির নানা বিবরণ দিয়েছিলেন সেই জবানবন্দিতে। সেখানে তিনি বলেছিলেন,

‘আমি ব্রাহ্মণপাড়া স্কুল থেকে ১৯৮৭ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৯ সাল আখাউড়া শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে—পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ায়, ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে কাফরুলের ১৯০/২ তালতলায় হল-মার্ক প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। তারপর ধীরে ধীরে আমার ব্যবসা বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে ৮–৯টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে আমি হল-মার্ক গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করি। বর্তমানে আমার ৬৫টি চলমান প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে গার্মেন্টস ৩৪টি। সব কটি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক আছে। গত ২০০৪–০৫ সালের দিকে গার্মেন্টস থেকে লোকাল ব্যাক টু ব্যাক এলসি পাওয়ার পর আমি সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখায় হল-মার্ক প্যাকেজিংয়ের নামে হিসাব খুলি। বর্তমানে এই শাখায় আমার ৫৭টি হিসাব রয়েছে। বর্তমানে ১৮টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এই লায়াবিলিটি (দায়বদ্ধতা) রয়েছে। ২০১০ পর্যন্ত আমার ব্যবসা ভালো (ফেয়ার) ছিল।

সাইফুল ইসলাম রাজা আগে আমার জিএম ছিল। পরে প্যারাগন গ্রুপের মালিক হয়। আবদুল মালেক আমার ব্যবসার পরিচালক ছিল। কিছুদিন আগে সে নকশি নিট কম্পোজিট নামে গোপনে ব্যবসা শুরু করে। তসলিম হাসান টি অ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপের পরিচালক। আমার পক্ষে সব ব্যাংক হিসাব দেখত রাজা ও মালেক। অনেক সময় আমি তাদের কাছে ব্যাংক চেক দিয়ে রাখতাম। তসলিম হোসেন আগে থেকেই ভুয়া এলসির কাজ করত। আমার দুই লোক রাজা ও মালেক এই তসলিমের সঙ্গে মিলে কিছু একটা করতে পারে, আমি বিষয়টি পরে জানি। এর মাঝে তারা আমার কিছু সই জাল করে। এর মধ্যে ২০১২ সালের প্রথম দিকে হিসাবমতে আমার লায়াবিলিটি দাঁড়ায় ২০০০ কোটির ওপরে।

হোটেল শেরাটন শাখার ম্যানেজার আজিজ, এজিএম সাইফুল হাসান ও ব্যাংকের সাবেক অফিসার মতিন, অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান (অবসরপ্রাপ্ত), ক্যাশ অফিসার সাইদুরের এসব কাজে যোগসাজশ ছিল। আমাকে বিভিন্ন দফায় সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের আতিকুর রহমান (এমডি চলতি দায়িত্ব), জিএম কার্যালয়ের জিএম ননী গোপাল, মীর মহিদুর, ডিএমডি সাইফুল ইসলাম, জিএম সিরাজী ফেব্রুয়ারি ২০১২–এর দিকে ডাকলে আমি সব দায় স্বীকার করি। আমি বলি, আমার এগুলো লিমিট করে কিস্তি করার জন্য। আমি আরও বলি, আমি সব টাকা পরিশোধ করে দেব এবং প্রয়োজনীয় মর্টগেজ যা লাগে আমি দেব। ৪–৫ দিন পর তারা বোর্ড থেকে একটা সার্কুলার করে শেরাটন শাখায় পাঠায়। তখন ম্যানেজার আজিজ ৪০টা কোম্পানির নামে আইবিপি (ইনল্যান্ড বিল পারচেজ) স্যাংশন করে প্রতিটি কোম্পানির নামে ৩০ কোটি টাকা করে।

২০১২ সালের সম্ভবত এপ্রিলে তসলিম, মালেক, রাজা, ম্যানেজার আজিজ সাহেব, ডিএনএ স্পোর্টসের মালিক শিখা আমাকে ব্যাংকের বারান্দায় ডেকে নিয়ে বলে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ম্যানেজ করতে তিন কোটি টাকা লাগবে।

২৪ মে (পরে বলে এপ্রিলে) বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট দল এলে আমাকে ডাকে। তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, আমি কীভাবে এত টাকা নিয়েছি। আমি বলি আমি বৈধভাবে নিয়েছি। এটার দায়দায়িত্ব আজিজ সাহেবের। ২৪ মে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে সব ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বলে টাকা সমন্বয় করতে। নতুন এমডি এসে আমাকে ডাকে। সেখানে ডিএমডি ইকবালসহ সাবেক জিএমরা এবং নতুন ম্যানেজার আবুল কাশেম (আজিজ সাহেব বরখাস্ত হওয়ায়) ছিল। তারা আমাকে টাকা সমন্বয় এবং প্রয়োজনীয় জমি মর্টগেজ বা বন্ধক রাখতে বলে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি বিভিন্নভাবে ৪৫২ কোটি টাকা পরিশোধ করি। ৬১ একর জমি বন্ধক দিয়েছি। ব্যাংকের তথ্যমতে আমার মোট দায় ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। ৪৫২ কোটি দেওয়ার পর দায় থাকে ২ হাজার ২০২ কোটি টাকা। মর্টগেজ দেওয়া ৬১ একর জমির বর্তমান বাজারমূল্য ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় ২৪টি চিঠি দিয়ে আমার ব্যবসা চালু করাসহ টাকা পরিশোধের জন্য ২০ বছর কিস্তি চাই। কিন্তু কোনো চিঠির উত্তর পাইনি। তবে দুদকের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ব্যাংক একটি চিঠি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের চিঠি দেয়। যা অবাস্তব বলে আমি উত্তর দিই। গ্রেপ্তার হওয়ার পরও আমি আরও মর্টগেজসহ টাকা পরিশোধের কিস্তি চাই এবং ব্যবসা করার সুযোগ চাই। আমি কোনো টাকা বিদেশে পাচার করিনি। আমি টাকা নিয়ে শুধু ইন্ডাস্ট্রি করেছি। আমি আমার জীবনে চিকিৎসার জন্য শুধু একবার সিঙ্গাপুর গিয়েছি।

যাই হোক, এই জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংক ম্যানেজার আজিজ, এজিএম সাইফুল হাসান, অফিসার মতিন, অবসরপ্রাপ্ত ওয়াহিদুজ্জামান, ক্যাশ অফিসার সাইদুর জড়িত ছিল। আমার পরবর্তী জিএম তুষারের মাধ্যমে তসলিম, রাজা ও মালেক—এই তিনজন ব্যাংকের কাঁচা রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করে এসব কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময় টাকা দিত। এটা তুষারও জানত। শাখার কর্মকর্তাদের এভাবে আনুমানিক তিন কোটি টাকা দেওয়া হয়। সোনালী ব্যাংক জিএম কার্যালয়ে তসলিম, রাজা ও মালেক—তিনজন জিএম মীর মহিদুর ও অফিসার ওয়াহিদুজ্জামানকে (এই লোক বিভিন্ন সময় ব্রাঞ্চ ইনস্পেকশনে আসত) প্রায় সময়ই ২–৫ লাখ টাকা করে মোট ৮০–৯০ লাখ টাকার একটা হিসাব দেয় আমাকে। জিএম কার্যালয়ের নতুন জিএম ননী গোপালকেও নাকি আমার লোকেরা বিভিন্ন সময় টাকা দিত।

ননী গোপাল কাজে যোগদানের ১৫ দিন পর আমাকে অফিসে ডেকে নিয়ে তার চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা সাহায্য চায় এবং তার মেয়ের জন্য একটি ই-৭১ মোবাইল চায়। আমি ১৫ দিনের মধ্যে ওই টাকা ও মোবাইল সাহায্য হিসেবে দিই। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের আইটিএফডি বিভাগের সাবেক এজিএম বর্তমান ডিজিএম সফিজউদ্দিনকে তসলিম, মালেক, রাজা, ডিজিএম আজিজ সপ্তাহে এক লাখ টাকা করে মোট ৭০-৮০ লাখ টাকা দিয়েছে বলে তারা আমাকে হিসাব দেখায়। এ ছাড়া প্রধান কার্যালয়ের ডিএমডি আতিকুর রহমানকে আমি ম্যানেজার আজিজের কথামতো চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা দিই।

২০১২ সালের সম্ভবত এপ্রিলে তসলিম, মালেক, রাজা, ম্যানেজার আজিজ সাহেব, ডিএনএ স্পোর্টসের মালিক শিখা আমাকে ব্যাংকের বারান্দায় ডেকে নিয়ে বলে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ম্যানেজ করতে তিন কোটি টাকা লাগবে। এবং এটা বোর্ড সদস্য একজনকে দিতে হবে। আমি একপর্যায়ে রাগারাগি করলাম। তারা আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। তসলিম সাহেব বলে, “আমি নিজে দেব ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, হল-মার্ক দেবে ১ কোটি এবং বাকি ৮০ লাখ মালেক, রাজা ও শিখা দেবে।” আমি রাগারাগি করে চলে আসি। আজিজ সাহেবসহ এরা সবাই আমাকে ফোন করে টাকার বিষয়ে খুব বিরক্ত করতে থাকে। তসলিম বলে, সে নাকি ইতিমধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছে।

আমাকে চাপ দেওয়ার একপর্যায়ে তুষারকে বলি ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য। এটা এপ্রিল মাসের ঘটনা। তুষার একদিন তসলিম সাহেবের সামনে ব্যাংকের বারান্দায় ৫০ লাখ টাকা দেয়। কদিন পর তসলিম ও এক পরিচালক (ডাইরেক্টর) আমার বাসায় গিয়ে বাকি ৫০ লাখ টাকা চায়। আমি রাগারাগি করে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তসলিম অজ্ঞান হয়ে যায়। আমার জিএম তুষার ও তসলিমের পরিচালক আতিকুর রহমান তখন তসলিমকে অ্যাপেলো হাসপাতালে নিয়ে যায়। তসলিম, মালেক, রাজা ও আজিজ সাহেব আমাকে না জানিয়ে তুষারকে চাপ দিয়ে অথবা (ডাইরেক্ট) সরাসরি ক্যাশ থেকে কাঁচা রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি দিয়ে লাখ লাখ টাকা বিভিন্নজনকে দেওয়ার নাম করে নিয়ে যেতে। পরে তুষারকে চাপ দিয়ে, তার কাছে থাকা আমার সই করা ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়ে যেত। তুষার মূল ঘটনার সময় আমার গ্রুপে ছিল না। ঘটনা ঘটার পর আমি তুষারকে নিয়োগ দিই। তারা তুষারকে চাপ দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে।

আজিজ সাহেব সব জেনেই তাদের আলাদাভাবে লোন দিয়েছে, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে। আনোয়ার স্পিনিং, ম্যাক্স স্পিনিং, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজ, স্টার স্পিনিং মিলস—রাজা ও মালেক সাজিয়েছে।

তসলিম বিভিন্ন সময় আমাকে ডিজিএফআই আর সাংবাদিকদের ভয় দেখাত। তসলিম প্রায় সময় মালয়েশিয়া যেতে এবং সেখানে গিয়ে তুষারের কাছে টাকা চাইত। আমাকে গার্মেন্টস ব্যবসায় নামায় মালেক আর রাজা। এরা দুজন তসলিম হাসানের সঙ্গে মিলে এই জালিয়াতি ঘটায় এবং আমার লায়াবিলিটি বাড়ায়। তারা আমার কোম্পানির এলসি থেকে ৩০–৪০% কমিশন খেয়ে আমার দেনা বাড়ায়। এরা প্রত্যেকে গোপনে কয়েকটা করে ইন্ডাস্ট্রি করেছে।

আজিজ সাহেব সব জেনেই তাদের আলাদাভাবে লোন দিয়েছে, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে। আনোয়ার স্পিনিং, ম্যাক্স স্পিনিং, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজ, স্টার স্পিনিং মিলস—রাজা ও মালেক সাজিয়েছে। পরে আমি নিজে বাঁচার জন্য, যেহেতু সব আমার অ্যাকাউন্টের দায়, সেহেতু আমি সব স্বীকার করে সব দায় এসব নামের কোম্পানির বিপরীতে সমন্বয় করেছি। এটা ডিজিএম আজিজ সাহেবের কথামতো মালেক, রাজা ও তসলিম সাহেব চালাকি করে করেন। (পরে বলেন) আমি করি নাই, ওরা করেছে।

আমার স্ত্রী নামমাত্র কোম্পানির পরিচালক। সরকারি নিয়মের কারণে লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে দুজন লাগে বিধায় আমার স্ত্রীকে পরিচালক করেছি। সে সম্পূর্ণ নির্দোষ। সে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করে না। এটা আমার জবানবন্দি।’

হল-মার্কের তানভীর, জেসমিন, তুষারসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন, ৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড

১৯ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় করা মামলায় হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, জেসমিন ইসলামসহ নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরসহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাসেম আজ মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করেন।প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের সরকারি কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া নয়জন হলেন, তানভীর মাহমুদ, তানভীর মাহমুদের  স্ত্রী ও হল-মার্ক  গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম,  তানভীরের ভায়রা হল-মার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিযা, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, সাইফুল হাসান, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও আবদুল মতিন।

ফুলেফেঁপে উঠেছে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব

১৯ মার্চ ২০২৪, কালবেলা

দেশে ভোগ্যপণ্যের দামের লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। সরকারের দিক থেকে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। সর্বশেষ ২৯টি ভোগ্যপণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়া হলেও এর কোনোটিই নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় অনেককে সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে। যাদের সেই সুযোগ নেই তারা প্রয়োজনের তালিকা কাটছাঁট করে কিংবা ধার-দেনা করে চলছেন। তবে সুযোগমতো ঠিকই অতিরিক্ত মুনাফা করে নিচ্ছেন ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা। ভোক্তার পকেট ফাঁকা করে নিজেদের ব্যাংক হিসাব স্ফীত করছেন তারা। দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে খাত ও ধরনভিত্তিক আমানতের সর্বশেষ হিসাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনেও এর প্রমাণ মিলেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৪০ হাজার কোটির বেশি টাকা। অথচ একই সময়ে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবের আমানত কমে গেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোগ্যপণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণনে জড়িতদের টাকা জমা থাকে মূলত পাঁচ ধরনের ব্যাংক হিসাবে। এগুলো হলো— কৃষকের ব্যক্তিগত হিসাব, কৃষি ও কৃষিভিত্তিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের হিসাব, আমদানি-রপ্তানিকারকদের হিসাব, ভোগ্যপণ্য বিপণনকারীদের ব্যক্তিগত হিসাব এবং শিল্পপতিদের ব্যক্তিগত হিসাব।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে কৃষিপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ও আমদানিকারকদের আমানত কমলেও বাকি তিন ধরনের হিসাবে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। অথচ অর্থবছরের শুরুতে এই আমানতের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যক্তি হিসাবে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা থাকা ব্যাংক হিসাবকে ধরা হয় স্বল্প আয়ের মানুষের আমানত হিসাব। গত ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংক খাতে এ ধরনের হিসাব সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৬১ হাজার ৯৫টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ ৮০ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। এর আগে গত জুনে এ ধরনের ১৩ কোটি ২০ লাখ ৮৭ হাজার ২২০টি হিসাবে টাকার পরিমাণ ছিল ৮২ হাজার ৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে স্বল্প আমানতের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও তাতে টাকার পরিমাণ ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া ব্যাংকে জমা রাখা টাকা খরচের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

একইভাবে আর্থিক সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রও ভেঙে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, ভাঙানো হয়েছে তার চেয়ে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বেশি। শুধু জানুয়ারি মাসে এই ব্যবধান ছিল ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।

রাঙামাটিতে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে বসতি উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন

১৯ মার্চ ২০২৪, আজকের পত্রিকা

পর্যটনকেন্দ্র ও সীমান্ত সড়ক নির্মাণের নামে বিভিন্ন গ্রামের বসতি উচ্ছেদের জন্য সেনাবাহিনী থেকে নির্দেশনা দেওয়ার প্রতিবাদে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় অজিত কুমার চাকমার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পূণ্যরানী চাকমা, মদন বিকাশ চাকমা, জিকো চাকমা, ইনটুমনি তালুকদার, উলিচিং মারমা প্রমুখ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন জেলার জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সেনাবাহিনী সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে গ্রামের পর গ্রাম উচ্ছেদ করছে। নতুন করে জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ির গাছবান পাড়া, থুম পাড়া মানুষকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সেনাবাহিনী। শত বছরের সৃজিত বাগান-বাগিচা, ধানখেত ধ্বংস করে দিচ্ছে, কিন্তু কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী এখন প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। গ্রাম উচ্ছেদ করে নতুন নতুন নাম দেওয়া হচ্ছে। এখন এসব এলাকার মানুষের জুম চাষ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় উদ্বাস্তু মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, সীমান্ত সড়ক হচ্ছে এতে স্থানীয়দের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এই সড়ক নির্মাণ করায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। জোর করে সড়ক ও পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করছে সেনাবাহিনী। স্মারকলিপিতে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশনা প্রত্যাহার, জুমচাষে বাধা না দেওয়া, পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ এবং বাগান-বাগিচা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুনর্বাসনের দাবি জানানো হয়।

এনআরবিসি ব্যাংকের বোর্ডরুমে অস্ত্রধারী

মার্চ ২১, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে থাকছে এনআরবিসি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি এবং বোর্ডরুমে বন্দুক নিয়ে প্রবেশের ঘটনা।

অর্থপাচার, ঋণ অনিয়ম, অতিরিক্ত ব্যয় ও নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয় নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। ৭০০ কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া ও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংককে।

তৎকালীন চেয়ারম্যান ফরাসত আলীকে বোর্ড থেকে পদত্যাগ করতে হয়। মুজিব ও ফরাসতকে পরিচালক পদ থেকে দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিষিদ্ধ করে এবং পরবর্তীকালে বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়।

কিন্তু নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন এমন একজন, যার বিরুদ্ধে আগেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল এবং ব্যাংকটিতে এখনো অনিয়ম অব্যাহত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংকটির সভার কার্যবিবরণী এবং অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ও সুপ্রিম কোর্টের নথির শত শত পৃষ্ঠা গত ছয় মাস ধরে বিশ্লেষণ করে দ্য ডেইলি স্টার ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ অসংখ্য অনিয়ম, এমনকি অস্ত্র দিয়ে ভীতি সৃষ্টির করার মতো ঘটনার বিষয়েও জানতে পেরেছে।

চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে ঋণ কেলেঙ্কারি ও বোর্ডরুমে বন্দুক নিয়ে প্রবেশ করার ঘটনা তুলে ধরা হলো।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪০তম সভা হয় ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। সভায় ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল ও পরিচালক আদনান ইমামের সঙ্গে প্রবেশ করেন এক ব্যক্তি, যার হাতে ছিল একটি সাব-মেশিনগান। তমাল ও আদনান তখন ছিলেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।

নথি থেকে জানা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের আরেক সদস্য আবু বকর চৌধুরী চলে যেতে বলার আগ পর্যন্ত ওই কক্ষেই অবস্থান করছিলেন সেই বন্দুকধারী।

এর আগে ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর পরিচালনা পর্ষদের ৩৯তম সভায় পারভেজ ও অল্টারনেটিভ ডিরেক্টর আবু মোহাম্মদ সাইদুর রহমান তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান ফরাসত আলীকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

ওই সময় পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যাংক থেকে ৬৪ কোটি টাকা পাচার ও ১৬৫ কোটি টাকা পাচারচেষ্টার অভিযোগের অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছিল বোর্ডে।

অভিযোগটি উঠেছিল তিনজন পরিচালক—পারভেজ, আদনান ও রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজুর বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে রফিকুল ব্যাংকটির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান। এই অভিযোগ আছে আরও একজন স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার এএম তুষার ইকবাল রহমানের বিরুদ্ধেও। ওই সময় বোর্ডে ১৮ জন সদস্য ছিলেন।

পরিচালনা পর্ষদের অল্টারনেটিভ ডিরেক্টর সাইদুর রহমান ও একেএম মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধেও বোর্ডে তদন্ত চলছিল। সাইদুর রহমানের ছেলে হলেন এএম তুষার ইকবাল রহমান।

তাদের মধ্যে পাঁচজন বর্তমানে ব্যাংকটির বোর্ড সদস্য।

গত ছয় মাসে দ্য ডেইলি স্টার ব্যাংকটির সভার কার্যবিবরণী ও অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নথিও দেখেছে। এগুলোতে দেখা গেছে কীভাবে এই ছয়জন নিজেদের বা তাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে—এমন প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামি ঋণ নিতে জোট বেঁধেছে।

পারভেজ ও আদনানসহ ছয়জনই তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে ব্যাংকের তদন্তে অসন্তুষ্ট হয়েই পারভেজ ও আদনান ‘বোর্ড কর্মকর্তাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতে’ সাবমেশিন গান নিয়ে আসেন। বোর্ড সভায় বন্দুক আনার এই ঘটনার দুই বছরের মধ্যে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বসম্মতভাবে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পারভেজ তমাল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি এই পদে আছেন।

বোর্ডরুমে বন্দুক আনার কারণ

২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের ৪৮তম সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে ব্যাংকের তদন্তে অসন্তুষ্ট হয়েই পারভেজ ও আদনান ‘বোর্ড কর্মকর্তাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতে’ সাবমেশিন গান নিয়ে আসেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, সহিংসতা সৃষ্টি ও অস্ত্র প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল অভিযুক্ত পরিচালক ও তাদের সহযোগীদের বেনামি ঋণ ও বেনামি চুক্তিসহ অন্যান্য অপকর্ম আড়াল করার জন্য বোর্ডের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।

পারভেজ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বন্দুকধারী ব্যক্তিকে বোর্ডরুমে নেওয়ার স্বপক্ষে দাবি করেছেন যে তিনি তার লাইসেন্সপ্রাপ্ত দেহরক্ষী।

বোর্ড সভায় বন্দুক আনার এই ঘটনার দুই বছরের মধ্যে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বসম্মতভাবে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পারভেজ তমাল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি এই পদে আছেন। একইসঙ্গে পরিচালনা পর্ষদ ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রফিকুল ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আদনানকে মনোনয়ন দেয়।

৫৬তম বোর্ড সভার কার্যবিবরণী অনুসারে, তাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সেই বছরই বাতিল করা হয়েছিল।

এনআরবিসি ব্যাংক ও রাশিয়ার করপোরেট রেজিস্ট্রি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বরিশালের বাসিন্দা পারভেজ প্রবাসী ছিলেন এবং রাশিয়ায় ‘আইটি ডিস্ট্রিবিউশন, রিয়েল এস্টেট হোল্ডিং ও লজিস্টিক কনসালটেশন’ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় জড়িত ছিলেন।

ডেইলি স্টারের হাতে আসা নথিপত্রে দেখা যায়, বোর্ড চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পারভেজের বিরুদ্ধে বেনামি ঋণ, অবৈধভাবে মুনাফা অর্জন, ব্যাংকিং নীতি লঙ্ঘন ও আর্থিক তছরুপের আরও অভিযোগ উঠেছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যে কোম্পানিকে পারভেজ বেনামি ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যবহার করতেন বলে বোর্ড তদন্ত করেছিল, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সেই ল্যানটা সার্ভিসেসকে কোটি কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা স্পন্সর পরিচালক পারভেজ। ২০১৬ সালে এনআরবিসি ব্যাংকের স্পন্সর পরিচালকদের মূলধন ছিল ৫২০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে পারভেজের ২০ কোটি, তুষারের ২০ কোটি, ফিরোজের ২০ কোটি, রফিকুলের ২০ কোটি ও আদনানের ১০ কোটি টাকার শেয়ার মূলধন রয়েছে বলে ব্যাংকের নথি সূত্রে জানা গেছে।

পরিচালনা পর্ষদের ৪৮তম সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, পূবালী কনস্ট্রাকশন, এনইএস ট্রেডিং, ভলান্টারি অর্গানাইজেশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (ভিওএসডি) নামে একটি এনজিও, ল্যানটা সার্ভিসেস ও অর্নিতা অ্যাগ্রোর নামে ৬৪ কোটি টাকা বেনামি ঋণ নিয়েছেন পারভেজ, আদনান, রফিকুল, তুষার ও ফিরোজ। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রকাশ না করেই এ ঋণ নেওয়া হয়েছে।

কে কত নিল

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক একটি কমিটি গঠন করে এবং পাঁচজন পরিচালকসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থপাচারসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত শুরু করে।

পরিচালনা পর্ষদের ৪৮তম সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, পূবালী কনস্ট্রাকশন, এনইএস ট্রেডিং, ভলান্টারি অর্গানাইজেশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (ভিওএসডি) নামে একটি এনজিও, ল্যানটা সার্ভিসেস ও অর্নিতা অ্যাগ্রোর নামে ৬৪ কোটি টাকা বেনামি ঋণ নিয়েছেন পারভেজ, আদনান, রফিকুল, তুষার ও ফিরোজ। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রকাশ না করেই এ ঋণ নেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকিং পরিভাষায় এগুলোকে ‘সম্পর্কিত পক্ষের ঋণ’ বলা হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ঋণদাতা ব্যাংকের পরিচালকদের অবশ্যই ঋণগ্রহীতা কোম্পানির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ঘোষণা করতে হবে।

এই ৬৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে আদনান একাই এনইএস ট্রেডিং (১৯ কোটি) ও পূবালী কনস্ট্রাকশনের (নয় কোটি) নামে ২৮ কোটি টাকার দুটি ‘বেনামি ঋণ’ নিয়েছেন। ৪৬ ও ৪৮তম বোর্ড সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, মোস্তাফিজুর, তুষার ও ফিরোজের সঙ্গে মিলে অর্নিতা অ্যাগ্রোর নামে আরও তিন কোটি টাকা ঋণ নেন তিনি।

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে দেখা গেছে, অর্নিতা অ্যাগ্রো আদনান ও মোস্তাফিজুরের মালিকানাধীন এবং ঋণের তিন কোটি টাকা দুদিনের মধ্যে আইপিই ক্যাপিটালের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নথিতে দেখা যায়, আইপিই ক্যাপিটাল আদনান ইমামের পারিবারিক ব্যবসা এবং তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক।

এনআরবিসি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আদনানকে যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যার লন্ডন ও ঢাকায় রিয়েল এস্টেট ও প্রাইভেট ইক্যুইটিসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে।

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনইএস ট্রেডিং আদনান এবং তার ব্যবসায়িক অংশীদার ও শ্যালকের মালিকানাধীন, যিনি লন্ডনে বাস করেন।

তদন্ত কমিটির সামনে আদনানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, পূবালী কনস্ট্রাকশনের মালিক তারই এক কর্মচারী এবং পূবালী কনস্ট্রাকশনের জন্য নয় কোটি টাকা ঋণ আদনানের শ্বশুরের জমির বিপরীতে নেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পারভেজও পূবালী কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে যুক্ত। তদন্ত শুরুর আগে তিনি পূবালী কনস্ট্রাকশনের অ্যাকাউন্টে দুই কিস্তিতে অন্তত ৮৭ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন।

২০১৬ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবির তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে লেখা এক চিঠিতে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন তদন্তে দেখা গেছে, আদনান অর্নিতা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের নাম ব্যবহার করে তিন কোটি টাকার ‘বেনামি’ ঋণ নিয়েছেন।

ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৪৪-৪৮তম সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বোর্ড সদস্যরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান হয়েও রফিকুল আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করা থেকে আদনানকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

পরিচালনা পর্ষদের ৪৪তম সভায় বোর্ড সদস্যরা বলেছিলেন, আদনান তার প্রতিষ্ঠান আদ্রিতা ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকের বনানী শাখার অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য প্রকৃত ব্যয় ৫৬ লাখ টাকার বিপরীতে এক কোটি টাকার বিল জমা দিয়েছেন, যেখানে তার জালিয়াতির বিষয়টি স্পষ্ট।

৩০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া এনজিও ভিএসডিওর প্রতিষ্ঠাতা ব্যাংকটির বর্তমান পরিচালক মোস্তাফিজুর।

একাধিক বোর্ড সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ ল্যানটা সার্ভিসেসের নামে তিন কোটি টাকা বেনামি ঋণ নিয়েছেন।

যেদিন ল্যানটাকে তিন কোটি টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়, সেদিনই পারভেজ তার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে লিয়েন হিসেবে এফডিআর আকারে এক কোটি টাকা ল্যানটার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ল্যানটা সার্ভিসেসের অনুকূলে ঋণ বিতরণের সুবিধার্থে পারভেজ ওই অর্থ জমা রেখেছিলেন।

বোর্ডরুম থেকে কোর্টরুম

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের এপ্রিলে পারভেজ, আদনান ও রফিকুলকে বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে তারা তিনজন বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন।

বিচারপতি মো. রেজাউল হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই তিনজনকে পদে পুনর্বহাল করলেও তাদের শেয়ার সাময়িকভাবে জব্দ করে ব্যাংকে সংযুক্ত করেন। একইসঙ্গে যেসব বোর্ড মিটিংয়ে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত বিষয়ে আলোচনা হবে, তাদের সেসব সভার বাইরে রাখার নির্দেশও দেন আদালত।

ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী ওই তিনজনকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার বোর্ডের নেই—এর ওপর ভিত্তি করেই তাদের পদে পুনবর্হাল রাখার সিদ্ধান্ত দেন আদালত। ‘তবে তার মানে এই নয় যে, ব্যাংক বা পরিচালনা পর্ষদ আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে না।’

আদালত রায়ে বলেন, আবেদনকারীরা (অভিযুক্ত পরিচালকরা) ফাঁকফোকরের মাধ্যমে বেনামি ঋণ নেওয়ার পথ তৈরি করেছেন।

রায় অনুযায়ী, বোর্ডের তদন্ত রিপোর্টে পূবালী কনস্ট্রাকশন ও এনইএস ট্রেডিংয়ের ঋণের সঙ্গে আদনান ইমামের যোগসাজশ এবং এসব প্রতিষ্ঠানে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বেঞ্চ আরও বলেন, ল্যানটার সঙ্গে পারভেজ ও রফিকুলের যোগসূত্রের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং পূবালী কনস্ট্রাকশন ও এনইএস ট্রেডিংয়ের সঙ্গে পারভেজের সংশ্লিষ্টতার দৃশ্যমান যোগসূত্র রয়েছে এবং এর মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া যায় যে আবেদনকারী ওই ব্যাংক থেকে বেনামি ঋণ নিয়েছেন এবং ওই দুই সংস্থার পেছনে থাকা ব্যক্তি তিনি।

মাত্র দুই মাসের মধ্যে ল্যানটার ঋণসীমা দুই কোটি টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ছয় কোটি টাকা করা হয়। ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল ঋণসীমা আরও বাড়িয়ে সাড়ে নয় কোটি টাকা করা হয়। পরবর্তী আরও তিনটি সভা শেষে আরও ৫০ লাখ টাকা ‘প্রণোদনা ঋণ’ পায় ল্যানটা। ২০২১ সালে ল্যানটার সাড়ে নয় কোটি টাকার ঋণসীমা নবায়ন করা হয়। নথিপত্রে দেখা যায়, মাত্র দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটিকে গাড়ির জন্য চার কোটি ২৮ লাখ টাকার তিনটি ঋণ দেওয়া হয়েছে।

ল্যানটা সার্ভিসেসের জন্য ভালোবাসা

ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের এসব অনুসন্ধান ও আপিল বিভাগের রায়ের তিন বছর পর ল্যানটা সার্ভিসেসকে এনআরবিসি ব্যাংক অন্তত ১৪ কোটি টাকা ঋণ দেয় বলে একাধিক সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে।

২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পারভেজের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের সভায় ল্যানটাকে সাড়ে চার কোটি টাকার সমন্বিত ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়।

সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, পারভেজের বিরুদ্ধে ল্যানটার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্ত ও বেনামী ঋণ নেওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্ট ব্যাংককে যে নির্দেশ দিয়েছে, সেসব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

মাত্র দুই মাসের মধ্যে ল্যানটার ঋণসীমা দুই কোটি টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ছয় কোটি টাকা করা হয়। ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল ঋণসীমা আরও বাড়িয়ে সাড়ে নয় কোটি টাকা করা হয়। পরবর্তী আরও তিনটি সভা শেষে আরও ৫০ লাখ টাকা ‘প্রণোদনা ঋণ’ পায় ল্যানটা। ২০২১ সালে ল্যানটার সাড়ে নয় কোটি টাকার ঋণসীমা নবায়ন করা হয়।

নথিপত্রে দেখা যায়, মাত্র দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটিকে গাড়ির জন্য চার কোটি ২৮ লাখ টাকার তিনটি ঋণ দেওয়া হয়েছে।

পারভেজ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর ল্যানটা সার্ভিসেসের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ল্যানটা ফরচুনা প্রপার্টিজ ২০১৯ সালের জুনে ৮৭ লাখ টাকার চুক্তিসহ একাধিকবার ব্যাংকের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ পায়।

উভয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল বিন আলম ব্যাংকটির একজন গ্রাহক।

প্রভিডেন্ট ফান্ড চুরি

এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকের জুনিয়র টেলার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট টেলারদের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকেও অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এনআরবিসি ব্যাংক চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিজেরা সম্পন্ন করে না। এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট নামে ভিন্ন একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োগের কাজটি করা হয়।

নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের মালিকানায় অন্যান্যদের মধ্যে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত পারভেজ, আদনান, রফিকুল ও মোস্তাফিজুরও ছিলেন।

এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের প্রভিডেন্ট ফান্ড, ল্যানটা সার্ভিসেস ও এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণীতে দেখা যায় যে কীভাবে ল্যানটা সার্ভিসেস বিভিন্ন সময়ে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যাংক অ্যাকাউন্টটিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে।

ওই অর্থ ব্যাংকের কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের অ্যাকাউন্টে এবং পরে ল্যানটা সার্ভিসেসে যায়। মূলত এই অর্থ কোথায় যাচ্ছে, সেটি আড়াল করতেই এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তা স্থানান্তর করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাব থেকে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের অ্যাকাউন্টে এক কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। একই দিন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ লাখ টাকা ল্যানটা সার্ভিসেসে স্থানান্তর করা হয়।

প্রায় দেড় বছর পর ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্টে এক কোটি টাকা ফেরত দেয় এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট।

কিন্তু ডেইলি স্টারের হাতে থাকা এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের কয়েকশ পৃষ্ঠার লেনদেন বিবরণীর কোথাও দেখা যায়নি যে ওই ৬০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে ল্যানটা সার্ভিসেস।

চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারের কবলে এনআরবিসি ব্যাংক

২২ মার্চ ২০২৪, সমকাল

পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন পরিচালক মিলে কোম্পানি খুলে তার মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মী। পর্ষদের বৈঠকে খাবার কেনায় অস্বাভাবিক ব্যয়ের তথ্য মিলেছে। একই দিন সকালে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে বিকেলে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বাজেয়াপ্তযোগ্য শেয়ারের মালিকানা নেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যানের ব্যবসায়িক অংশীদারের নামে। প্রবাসীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি এনআরবিসি ব্যাংকে এভাবে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চলছে যথেচ্ছাচার। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক পরিদর্শনে ব্যাংকটিতে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি ব্যাংকের সাত উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। এর আলোকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা এনআরবিসি ব্যাংকে এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা সাত সহস্রাধিক। দেশের অন্য কোনো ব্যাংকে এত দ্রুত কর্মীর সংখ্যা বাড়েনি। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বেশির ভাগ নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জনপ্রতি ৬ থেকে ৯ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে– এমন একটি অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিদর্শন করে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে, ১০৫ জন ট্রেইনি অফিসার নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল পরীক্ষার জন্য মোট ৩০৪ প্রার্থীকে আমন্ত্রণ জানায় ব্যাংক।

সকালে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে অস্বাভাবিক দ্রুততায় একই দিন বিকেলে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে ৯৬ জনের চাকরির বয়স শেষ পর্যায় তথা ২৯ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। চারজনের বয়স-সংক্রান্ত কোনো তথ্য ছিল না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল বলেছে, নির্বাচিত অধিকাংশের বয়স ২৯ বছরের বেশি হওয়া অস্বাভাবিক। এতে প্রমাণিত হয়, পূর্বনির্ধারিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতেই এমন পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৫ জনের অনলাইন আবেদনও পাওয়া যায়নি। যদিও চেয়ারম্যানের টাকা নেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি, তবে পরীক্ষা নেওয়ার অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া ও অপেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রার্থী নির্বাচন করায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়ে থাকতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়।

জানতে চাইলে পারভেজ তমাল গতকাল সমকালকে বলেন, করোনার কারণে তখন তড়িঘড়ি করে একই দিন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওই নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আপত্তি জানানোর পর তা বাতিল করা হয়। এখানে কোনো ধরনের দুর্নীতির বিষয় সঠিক নয়।

এনআরবিসি ব্যাংকের মানবসম্পদ নীতিমালা অনুযায়ী, কর্মমূল্যায়নের ভিত্তিতে একজন কর্মকর্তাকে একবারে সর্বোচ্চ তিনটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া যাবে। আবার পদোন্নতির জন্য অন্তত দুই বছরের এসিআর থাকতে হবে। কাজী মো. সাফায়েত কবির, মো. জাফর ইকবাল হাওলাদারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন ২৭ কর্মকর্তাকে চার থেকে ১৩টি পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যাংকের বোর্ড সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে চেয়ারম্যানের অপছন্দের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নানা উপায়ে চাপ প্রয়োগ করে ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল সমকালকে বলেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওই ইনক্রিমেন্ট দিয়েছিলেন। এটা নিয়মবহির্ভূত জানার পর পরিচালনা পর্ষদ তা বাতিল করে। অভিজ্ঞতা ছাড়া নিয়োগ কিংবা চাপ প্রয়োগ করে কাউকে বের করে দেওয়ার তথ্য সঠিক নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, চেয়ারম্যানের জন্য একটি অফিস বরাদ্দ দিতে পারে ব্যাংক। অথচ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের মতিঝিলে প্রধান কার্যালয়ে এবং ব্যাংকটির গুলশান শাখায় একটি করে অফিস ব্যবহার করার তথ্য পেয়েছে পরিদর্শক দল।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে পরিচালনা পর্ষদের উচ্চ ব্যয়ের কিছু উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। একটি সভায় তিনজন পরিচালকের জন্য ২০ বাস্কেট ফল কিনে ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়। আবার নির্বাহী কমিটির এক সভায় তিনজনের দুপুরের খাবার বাবদ ২০ পিস ইলিশ, ২০ পিস চিংড়ি ভুনা, ২০ পিস চিতল, ২০ পিস রূপচাঁদা কিনে খরচ দেখানো হয় ৫৮ হাজার ৬৫০ টাকা। এভাবে পর্ষদের প্রতি সভায় সম্মানী বাদে প্রত্যেক পরিচালকের পেছনে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ের তথ্য পেয়েছে পরিদর্শক দল, যা অস্বাভাবিক বলা হয়েছে।

নিজেরাই প্রতিষ্ঠান খুলে কর্মী নিয়োগ

ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা, অফিস সহায়ক ও পুলের গাড়ি সরবরাহকারী নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালে চেয়ারম্যানসহ ৯ জন পরিচালক মিলে ‘এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি কোম্পানি খোলেন, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২১ সালের শুরু থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭১৪ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বান এবং অভিজ্ঞতা যাচাই ছাড়াই এসব নিয়োগের বিপরীতে সার্ভিস চার্জ বাবদ ব্যাংক থেকে ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন তারা।

এ ছাড়া ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজের ১০ শতাংশ শেয়ার কয়েকজন পরিচালক নিজেদের নামে নেন। এ দুটি ঘটনাকে নিয়মের পরিপন্থি ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব হিসেবে উল্লেখ করে দণ্ডনীয় অপরাধ বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, কোনো জবাবদিহি না থাকায় এ কোম্পানির মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে ইচ্ছামাফিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৪ সাল ও ২০২২ সালের জুনের নির্দেশনায় পরিচালক বা তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকের কোনো পণ্য, সেবা ও সংগ্রহ বা কেনার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠির পর সম্প্রতি তারা কোম্পানির শেয়ার অন্যদের নামে হস্তান্তর করেছেন। যদিও এসব শেয়ারের সুবিধাভোগী বর্তমান চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন পরিচালকই আছেন। এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের নামে বিভিন্ন সময়ে ঋণও দিয়েছে ব্যাংক। সেই ঋণের টাকা বেশির ভাগ সময় নামসর্বস্ব কোম্পানি লানতা সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর হয়েছে।

জানা গেছে, এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট ও স্টারলিংকস হোল্ডিংস বনানীর এডব্লিউআর এনআইবি টাওয়ারে অবস্থিত। এ ভবনের মালিকানায় রয়েছে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আদনান ইমামের এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্ট। পারভেজ তমালের সব শেয়ার তাঁরই ব্যবসায়িক সহযোগী স্টারলিংকস হোল্ডিংসের মালিক শফিকুল আলমের নামে হস্তান্তর করে তাঁকেই এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে। শফিকুল আলমের প্রতিষ্ঠান রিলায়েবল বিল্ডার্সের নামে এনআরবিসি ব্যাংকের হাতিরপুল শাখায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। বিপুল অঙ্কের এ ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে রয়েছে বরিশালের আলেকান্দা মৌজায় অবস্থিত ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ জমি।

এসব বিষয়ে এস এম পারভেজ তমাল সমকালকে বলেন, সব পরিচালক মিলে একটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি খোলা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার জারির পর শেয়ার অন্যদের নামে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

বাজেয়াপ্তযোগ্য শেয়ার হস্তান্তর

প্রবাসী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে ২০১৩ সালে তিনটি এনআরবি ব্যাংক অনুমোদনের অন্যতম শর্ত ছিল– বিদেশে কর পরিশোধিত অর্থে উদ্যোক্তা মূলধনের জোগান দিতে হবে। তবে তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচারের টাকা বিদেশে নিয়ে এবিএম আব্দুল মান্নান ও কামরুন নাহার সাখীর নামে শেয়ার কেনেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শহীদুল আহসান। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শনে এ বেনামি শেয়ার চিহ্নিত করে তা বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ বাজেয়াপ্ত না করে বিভিন্ন উপায়ে এতদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

গত অক্টোবরে আব্দুল মান্নানের নামে থাকা ৪ কোটি ৭০ লাখ ১ হাজার ৮৮৬টি শেয়ারের (পরিশোধিত মূলধনের ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ) মধ্যে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৫১১টি শেয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমামের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর কামরুন নাহার সাখীর শেয়ার মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ঋণ সমন্বয়ের জন্য দেওয়া হচ্ছে।

এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ার চলতি মার্চ পর্যন্ত লক-ইন তথা বিক্রি বা হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার ২০২১ ও ২০২২ সালের জন্য ঘোষিত বোনাস শেয়ারও ২০২৫ ও ২০২৬ সালের আগে বিক্রি করা যাবে না। অথচ নিয়ম অমান্য করে বিশেষ বিবেচনায় ব্লক মার্কেটে এই শেয়ার কেনাবেচার অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এর মধ্যে গত ৩১ অক্টোবর ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের ব্যবসায়িক অংশীদার শফিকুল আলমের অনুকূলে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৯৯২টি এবং নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমামের স্ত্রী নাদিয়া মোমিন ইমামের কাছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৪টি শেয়ার বিক্রি করা হয়। আর মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল আহসানের মেয়ে রেহনুমা আহসানের অনুকূলে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১৫টি শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে।

অর্থ পাচারের তথ্য আড়াল করেছে এনআরবিসি ব্যাংক

মার্চ ২২, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে তুলে ধরা হলো কীভাবে ব্যাংকটির উত্তরা শাখা তৈরি পোশাক রপ্তানির নামে অর্থ পাচারের বিষয়টি আড়াল করতে চেয়েছে।

এনআরবিসি ব্যাংকের উত্তরা শাখার ছয়জন গ্রাহকের অন্তত ৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার রপ্তানি আয় দেশে ফেরত আসেনি এবং শাখাটি এই তথ্য আড়াল করেছে বলে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও মামলার নথি থেকে জানা গেছে।

উপরন্তু, এদের মধ্যে পাঁচটি কোম্পানি ৯০ কোটি টাকার এলসির বিপরীতে কোনো ধরনের রপ্তানি করেনি। যার ফলে ব্যাংকটির ডলারের খরচ হলেও তা আর ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না।

২০২১ সালের ১৯ আগস্টে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তরা শাখা গত চার বছরে এই অর্থ ফোর্সড লোন হিসেবে দেখায়।

তথ্য আড়াল করার সুবিধার্থে এরপর সেটিকে সাধারণ ঋণে রূপান্তরিত করে বারবার পুনঃতফশিল করা হয়েছে  বলে জানা গেছে ব্যাংকের সভার কার্যবিবরণী থেকে।

রপ্তানির অর্থ না আসার পরও রপ্তানি নথি জমা না দিয়েই অর্থ তুলে নেওয়া এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটির সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত আছেন ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমাম।

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনটিতে বলা হযেছে, ‘বেশ কয়েকবার লক্ষ্য করা গেছে যে শাখাটি ফরেন ডকুমেন্টারি বিল পার্চেজ লোন অ্যাকাউন্ট তৈরি করে তাদের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি বিল পরিশোধ করেছে, যেখানে এই বিলগুলো সংশ্লিষ্ট রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা উচিত ছিল।’

গত বছরের ১১ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যাংকটির ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, প্রতারণামূলকভাবে তারা ব্যাংক থেকে ৭৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং ইক্সোরা অ্যাপারেলস নামে একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরির নাম ব্যবহার করে পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ টাকা পাচার করেছে। রপ্তানি আয় দেশে না আনা ছয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হলো এই ইক্সোরা।

এনআরবিসির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এনআরবিসি নিয়ে একাধিক তদন্ত হয়েছে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ইক্সোরার সঙ্গে আদনানের সংশ্লিষ্টতা

ইক্সোরার নিবন্ধন সংক্রান্ত নথির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত আছেন আদনান ইমাম। এর আগে বেনামি ঋণের মাধ্যমে অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত চলাকালীন এনআরবিসি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের সঙ্গে তাকেও ব্যাংকের বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তারা দুজনেই অর্থ পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, একটি ‘স্বার্থান্বেষী মহলের তোলা এই অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।

ইক্সোরার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন আদনান।

দুদকের তদন্ত অনুসারে, ইক্সোরা অ্যাপারেলস ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ টাকার পোশাকের ১২টি চালান যুক্তরাজ্যে পাঠিয়েছে। কিন্তু এ বাবদ রপ্তানি আয় দেশে আনেনি।

২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এনআরবিসি ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন থেকে তৈরি করা নথি অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকটির বৃহত্তম ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ইক্সোরা ১৯তম।

নথিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, কোম্পানিটি এর মোট ঋণের মধ্যে ১১৯ কোটি টাকা ২০২৭ ও ২০২৮ সাল পর্যন্ত পুনঃতফশিল করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এরপরও সময়মতো কিস্তি পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির অতিরিক্ত বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয় কোটি টাকায়।

কোম্পানিটি ২০১৬ সালের আগস্টে এনআরবিসির সঙ্গে ব্যাংকিং শুরু করে।

ওই বছরই কোম্পানিটি যখন প্রথম ঋণ নেয়, তখন এর মালিকদের মধ্যে রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও মাসুদ রানার কাছে ছিল ৪০ শতাংশ করে শেয়ার। এছাড়া, তাদের স্ত্রীদের প্রত্যেকের নামে ছিল ১০ শতাংশ করে মালিকানা। দুদকের মামলায় রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও মাসুদ রানাকে আসামি করা হয়েছে।

২০২৩ সালে এনআরবিসি ব্যাংকের সবচেয়ে বড় খেলাপি ঋণগ্রহীতা পলিগনের মোট বকেয়া ঋণ গত নভেম্বরে দাঁড়িয়েছিল ৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকায় এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই টাকা আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা হয়েছে।

২০২১ সালে কোম্পানিটির ৮৩ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় ভাইব্রানিয়াম নামে আরেকটি কোম্পানি।

ভাইব্রানিয়ামের নিবন্ধন নথি অনুযায়ী, এর চেয়ারম্যান বদরুল হাসান পাটোয়ারী। তিনি জেনেক্স ইনফোসিস নামে একটি কোম্পানির সেক্রেটারি। সেই জেনেক্স ইনফোসিসের চেয়ারম্যান আদনান ইমাম।

মাত্র ১০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন দিয়ে চালু করা হয়েছিল ভাইব্রানিয়াম। কোম্পানির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে চালু করার দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তারা এমন একটি কোম্পানি কিনেছে যাদের রয়েছে ৭৮ হাজার ১৬৪ বর্গফুটের কারখানা ও ৮০০টি মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং কারখানার প্রতিদিন আট হাজার পিস পোশাক তৈরির সক্ষমতা আছে।

এনআরবিসি ব্যাংক কোম্পানিটির ঋণসীমা অন্তত আটবার নবায়ন করেছে এবং তিনবারই হয়েছে বদরুল হাসান পাটোয়ারী মালিকানা নেওয়ার পর।

দুদকের মামলায় বদরুল হাসান পাটোয়ারীকে আসামি করা হয়নি। অথচ, দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, একের পর এক ঋণ নিয়েও কোম্পানিটি পরিশোধ করেননি।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গ্রাহকের লেনদেন সন্তোষজনক না হওয়ার পরও ঋণ দেওয়া হয়েছিল।’

২০২৩ সালের জুনে বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানিটিকে ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচটি আদেশের বিপরীতে তিন লাখ ৫৮ হাজার ২৭৩ মার্কিন ডলার মূল্যের রপ্তানি আয় সামঞ্জস্য করার জন্য ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আদনান ইমাম বলেন, ‘ইক্সোরা অ্যাপারেলস এনআরবিসি ব্যাংকের ক্লায়েন্ট এবং আমার সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমাকে বলা হয়েছিল যে, মহামারি চলাকালীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ইক্সোরাও আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল এবং ব্যাংক অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো ইক্সোরাকেও সহায়তা করেছে। আমাকে আরও বলা হয়েছিল যে, পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ টাকা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দুদক বিষয়টি তদন্ত করেছে এবং কোনো সমস্যা খুঁজে পায়নি।’

নিখোঁজ ডলার

এনআরবিসি ব্যাংকের ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কম্প্লায়েন্স ডিভিশনের (আইসিসিডি) ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পলিগন ফ্যাশন লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানি আট লাখ ৩৩ হাজার ৯২৮ মার্কিন ডলার বা নয় কোটি ১০ লাখ টাকার রপ্তানি আয় দেশে আনেনি।

কোম্পানিটি পোশাকের চালান পাঠাতেও ব্যর্থ হয় এবং তিন দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এলসি নিস্পত্তি করতে পারেনি, যা খোলা হয়েছিল উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আমদানির জন্য।

২০২৩ সালে ব্যাংকটির সবচেয়ে বড় খেলাপি ঋণগ্রহীতা ছিল পলিগন। গত বছরের নভেম্বরে কোম্পানিটির মোট বকেয়া ঋণ দাঁড়িয়েছিল ৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকায় এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই টাকা আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা হয়েছে।

এরপর ব্যাংকটির উত্তরা শাখা গাজীপুরভিত্তিক কোম্পানির দায় ৭৪টি ফোর্সড লোনে পরিণত করে।

এত টাকা ঋণ পাওয়ার উপযুক্ত না হলেও পলিগনকে এই পরিমাণ অর্থ ঋণ দেওয়া হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ফলে গ্রাহক যথাযথভাবে তহবিল ব্যবহার করতে পারেনি। তার তহবিল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল এবং তারা হয়তো তহবিল অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।’

ঋণ অনুমোদন করার আগে চালানের মূল্যের ওপর ভিত্তি করে গ্রাহকের ক্রেডিট রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হয় ব্যাংককে। কিন্তু তদন্তকালে অডিট দল দেখতে পেয়েছে যে কয়েকজন গ্রাহকের ক্রেডিট রিপোর্ট নেই।

এছাড়াও, রপ্তানির প্রমাণ হিসেবে ব্যাংকটি কোম্পানিটির সব রপ্তানি নথি সংগ্রহ করেনি বলেও দেখেছে তদন্ত দল।

প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, দেনা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পলিগন এই অর্থ ফেরত দিতে পারবে না। ২০২১ সালের নভেম্বরে ঋণটি পুনঃতফসিল করা হয়।

২০২১ সালের আইসিসিডি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকটির ২০তম বৃহত্তম ঋণগ্রহীতা ছিল ব্লেসিং নিটওয়্যার লিমিটেড।

কোম্পানিটির ছয় লাখ ৬১ হাজার ৮৫ ডলার (সাত কোটি ২০ লাখ টাকা) মূল্যের রপ্তানি আয় ব্যাংকে জমা করা হয়নি। আরও কয়েকটি এলসির বিপরীতে চালান করতে না পারায় ব্যাংককে আরও দুই দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার (২৫ কোটি টাকা) পরিশোধেও ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিটি।

এসব ঘটনায় এমনটিই বোঝা যায় যে, ব্যাংকটি আমানতকারীদের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না।

— ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো

প্রতিবেদনে বলা হযেছে, ‘দেখা গেছে যে শাখাটি রপ্তানি নিশ্চিত না করে বা অরিজিনাল অথেন্টিকেটেড বিল অব লেডিং না করে অসম্পূর্ণ নথির বিপরীতে গ্রাহককে অযৌক্তিক সুবিধা দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।’

ফেরত না আসা এই অর্থ ফোর্সড লোনে পরিণত করা হয়েছে এবং কোম্পানিটি এই তহবিল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর এসব ঋণকে সাধারণ ঋণে পরিণত করা হয়।

ইনসাইড নিট লিমিটেড তাদের রপ্তানির তিন লাখ এক হাজার ১৯১ ডলার বা তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে এই অর্থ ফোর্সড লোনে পরিণত করতে বাধ্য করেছে, যা ‘সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত’ বলে উল্লেখ করেছে আইসিসিডি।

কারখানা পরিদর্শনকালে আইসিসিডি টিম এলসির বিপরীতে কোনো পণ্যের মজুত দেখতে পায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এতে প্রতীয়মান হয় যে গ্রাহকের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার এবং স্থানীয় বাজারে পণ্যের স্টক ইচ্ছা মতো বিক্রি করেছে।’

উপরন্তু, কোম্পানিটি আরও কিছু চালান পাঠাতে পারেনি। ফলে ব্যাংকের দশমিক নয় লাখ ডলার (নয় কোটি ৭০ লাখ টাকা) এলসির বিপরীতে কোনো ডলার আয় হয়নি।

২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর এনআরবিসি ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ডিভিশনের সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ‘ব্যাংকের মূলধনের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে নতুন গ্রাহক গ্রহণ সক্ষমতা’ এবং ‘সুনাম’ বাড়াতে এসব ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫এফ অ্যাপারেলস রপ্তানির ১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ফেরত দেয়নি এবং অসম্পূর্ণ রপ্তানি নথির বিপরীতে এই ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

চালান সম্পন্ন করতে না পারায় কোম্পানিটি সাত লাখ ডলারের (সাত কোটি ৬০ লাখ টাকা) ঘাটতিও রেখেছিল।

প্রতিবেদন বলছে, ‘ব্যাংকটির শাখা কোনো শিপিং নথি ও লেডিংয়ের আসল বিল ছাড়াই আলোচনা করেছে এবং ফলস্বরূপ এই বিলের জন্য কোনো চালান সম্পন্ন করা হয়নি।’

এতে বলা হয়েছে, ব্যাংক এই অর্থ ফোর্সড লোনে পরিণত করেছে এবং কোম্পানিটি এই তহবিল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে।

২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ১২৯তম বোর্ড সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, কোম্পানিটির ১২ কোটি ২৩ লাখ টাকার ২৪টি ফোর্সড লোন ১০ বছরের জন্য সাধারণ ঋণে পরিণত করা হয়েছে।

রিলাক্স ফ্যাশন লিমিটেড ৮৫ হাজার ৮২০ ডলার বা ৯৪ লাখ টাকা ফেরত দেয়নি এবং এই ঋণ ফোর্সড লোনে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও, অসম্পূর্ণ রপ্তানির ফলে ব্যাংকের আট লাখ ডলারের (নয় কোটি টাকা) অপূরণীয় এলসি খুলতে হয়েছে।

আইসিসিডি বলছে, ‘রপ্তানি নীতি লঙ্ঘন করে রপ্তানি এলসির মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অতএব, রপ্তানি আয় ব্যাক-টু-ব্যাক বাধ্যবাধকতা নিষ্পত্তির জন্য পর্যাপ্ত হবে না।’

২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল এনআরবিসি ব্যাংকের বোর্ড সভার কার্যবিবরণী থেকে দেখা যায়, রেকর্ড থেকে অর্থ পাচারের তথ্য মুছে দিয়ে ফোর্সড লোনগুলোকে ‘সাধারণ’ ঋণে রূপান্তরিত করে পাঁচ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

এনআরবিসি ব্যাংক: কিছু কর্মকর্তার জন্য সন্দেহজনক পুরস্কার

মার্চ ২৩, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্বে তুলে ধরা হলো কীভাবে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং নিজেদের মানবসম্পদ নীতি লঙ্ঘন করে তাদের ২৭ কর্মকর্তার বেতন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তে দেখা গেছে, দেশের ব্যাংকিং নিয়মের পাশাপাশি এনআরবিসি ব্যাংকের নিজস্ব মানবসম্পদ নীতিরও লঙ্ঘন করে ২০২২ সালে ব্যাংকটির অন্তত ২৭ জন কর্মীর বেতন বাড়ানো হয়েছে বিস্ময়কর পরিমাণে। কিছু ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ পর্যন্তও বেড়েছে বেতন।

২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এনআরবিসি ব্যাংকের একটি অফিস আদেশ অনুযায়ী, তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে একবারে ১৩টি পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছিল।

দুই উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন বাড়ানো হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত, যা তাদের মূল বেতনের প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। অন্তত ১০ জন কর্মকর্তার বেতন ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে এবং বাকিদের বেড়েছে ১৮ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।

এনআরবিসির অফিস আদেশে এই ২৭ জনের মোটা অংকের বেতন বৃদ্ধিকে ‘ব্যাংকের লক্ষ্য অর্জনে ব্যতিক্রমী অবদান’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের (এফআইসিএসডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের ইনক্রিমেন্ট ব্যাংকিং আইনের পাশাপাশি এনআরবিসির নিজস্ব মানবসম্পদ নীতিমালারও লঙ্ঘন।

ব্যাংকটির নীতিমালার বরাত দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষ একজন কর্মীকে (প্রতি বছর) সর্বোচ্চ তিনটি ইনক্রিমেন্ট দিতে পারে।’

সেই সময়ে ব্যাংকটির মোট ৩ হাজার ৮০০ কর্মী ছিল।

ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের এক সার্কুলার অনুযায়ী, ইনক্রিমেন্ট অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাঝে সর্বজনীনভাবে দেওয়া উচিত, নির্বাচিত কয়েকজনের জন্য নয়।

ওই ২৭ কর্মকর্তার ইনক্রিমেন্ট পরে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে যে ‘এই অনিয়মের জন্য স্পষ্টভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করার পরও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে থাকা নথি থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে এই ‘ব্যতিক্রমী অবদান’ রাখা কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত দু-একজন কীভাবে অনিয়মের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে জড়িত ছিলেন।

তাদের একজন এনআরবিসি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ও ওভারড্রাফট (ওডি) অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারে জড়িত ছিলেন।

তিনি হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যাংকের আর্থিক প্রশাসন বিভাগের প্রধান মো. জাফর ইকবাল হাওলাদার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বেতন ৩৯ শতাংশ বেড়ে এক লাখ চার হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৪৪ হাজার ৬০০ টাকা হয়। যদিও সিদ্ধান্তটি পরবর্তীতে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

‘অবদান’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, এনআরবিসি শুধু অযাচিতভাবে তার বেতন বৃদ্ধিই করেনি, অযথা পদোন্নতিও দিয়েছে।

মো. জাফর ইকবাল হাওলাদার ২০১৩ সালে প্রিন্সিপ্যাল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এক বছরের মধ্যে তাকে ব্যাংকের নিজস্ব মানবসম্পদ নীতিমালা ভঙ্গ করে ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এফএভিপি) হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়ে। অথচ, ব্যাংকটির মানবসম্পদ নীতি অনুযায়ী এই পদোন্নতির জন্য অন্তত দুই বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক। একইভাবে এফএভিপি হওয়ার এক বছরের মধ্যে তাকে আবারও নীতি ভঙ্গ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

তার ওভারড্রাফট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টগুলো বিশ্লেষণ করে এক অদ্ভুত প্যাটার্ন দেখা যায়। তার ওডি অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ আসে, তারপর একই পরিমাণ অর্থ অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় বা ক্রেডিট কার্ড বিল হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। এই লেনদেনগুলো কখনো একদিনের ব্যবধানে, আবার কখনো একইদিনে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যে অ্যাকাউন্ট থেকে তার অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে সেই একই অ্যাকাউন্টে আবার টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।

অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য থাকলেও ওভারড্রাফট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে একজন গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খরচ করতে পারেন, বিল পরিশোধ করতে পারেন। এই ধরনের অ্যাকাউন্ট প্রতি বছর রিনিউ করা হয়। যার অর্থ হচ্ছে, ব্যাংকের কাছে এমন অ্যাকাউন্টের স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক সব ধরনের লেনদেনের সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে।

জাফরের ওডি অ্যাকাউন্টটি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে খোলা হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই লেনদেনের এই প্যাটার্ন দেখতে পাওয়া যায়।

২০১৬ সালে পরিচালক থাকাকালীন ‘বোর্ডের অন্যান্য সদস্য ও কর্মকর্তাদের ভয় দেখানোর জন্য’ বন্দুকধারী একজনকে নিয়ে বোর্ডরুমে ঢুকেছিলেন পারভেজ তমাল। ব্যাংকের একাধিক কার্যবিবরণী অনুযায়ী, সেইসময়ে বেনামি ঋণ নিয়ে ব্যাংক থেকে ৬৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে পারভেজসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল বোর্ড।

পারভেজ বন্দুকধারীকে বোর্ডরুমে আনার স্বপক্ষে বলেন, বন্দুকধারী তার দেহরক্ষী। এমনকি কোনো ধরনের অর্থ পাচারে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

দ্য ডেইলি স্টার জাফরের সঙ্গে সম্পর্কিত ছয়টি ক্রেডিট কার্ড ও পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন বিশ্লেষণ করেছে, যা থেকে লেয়ারিংয়ের বিষয়টি সামনে এসেছে।

২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তিনি তার অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন করেছেন।

এই প্রতিবেদনের জন্য শুধু মাত্র সেই লেনদেনের তথ্য দেখা হয়েছে যেগুলো ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে হয়েছে এবং একই দিনে বা পরবর্তী দিনে প্রতিবারে ১ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।

প্যাটার্নে এমন অসংখ্য লেনদেন দেখা যায়, যেখানে জাফরের অ্যাকাউন্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়েছে এবং তারপরে তিনি কিছু সময় পরই সেই টাকা আবার পরিশোধ করে দিয়েছেন।

আয়ের সঙ্গে বেমানান

ব্যাংকের নিজস্ব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড টেররিস্ট ফাইন্যান্সিং রিস্ক ম্যানেজমেন্ট নীতি অনুসারে, ‘লেয়ারিং হলো অর্থ পাচার প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় পর্যায়, যেখানে অবৈধ তহবিল বা সম্পদ স্থানান্তর করা হয়, ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সেগুলোর উত্স গোপন করা হয়। জটিল লেনদেনের জালে আর্থিক ব্যবস্থায় তহবিল লুকিয়ে রাখা যেতে পারে।’

নীতিতে বলা হয়েছে, সন্দেহজনক লেনদেনের একটি সূচক হলো ‘গ্রাহকের ব্যবসা বা পেশার সঙ্গে মানানসই নয় এমন ঘন ঘন নগদ লেনদেন।’

জাফরের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তার অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করা হয়েছে। অথচ, এই লেনদেনের তুলনায় তার ব্যাংক থেকে পাওয়া মাসিক বেতন বহুগুণ কম।

তার অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে মূলত দুটি উপায়ে। একটি হচ্ছে ওয়্যার ট্রান্সফার, নগদ বা চেক জমার মাধ্যমে সরাসরি তার অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর। অপরটি হচ্ছে তার অনেকগুলো ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে যেকোনোটিতে টাকা জমা করা।

টাকা বিভিন্নভাবে বের হয়েছে—যে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা এসেছে সেখানেই আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে, এনআরবিসি বা অন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গেছে, জাফরের নামে ক্রেডিট কার্ডে টাকা পাঠানো হয়েছে, একজন ব্যক্তির নামে চেক দেওয়া হয়েছে, ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে।

২০১৮ ও ২০২০ সালের মধ্যে এমন সাতটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে একটি ক্রেডিট কার্ড থেকে তার অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে এবং একই দিনে বিল হিসেবে তিনি অন্য ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ খরচ করেছেন বা টাকা ট্রান্সফার করেছেন।

২০১৮ সালের ৯ জুলাই তিনি তার ক্রেডিট কার্ড থেকে ওভারড্রাফট অ্যাকাউন্টে পাঁচ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন এবং কার্ড দিয়ে চার লাখ ৫৪ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করেন। তিনি ২০২০ সালের ১১ থেকে ১৩ মে একই কাজ বারবার করেছেন। এই তিন দিনে অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং পরবর্তী দিনে চারটি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন।

২০১৭ সালে চারটি এবং ২০২০ সালে এমন একটি উদাহরণ রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড থেকে তার ওডি অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে এবং তিনি একই দিনে বা পরবর্তী দিনে এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছেন।

এ ছাড়া, ২০১৭-২০১৮ সালে চারটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ব্যাংকের প্রধান শাখার সঙ্গে আরেকটি এনআরবিসি অ্যাকাউন্ট থেকে জাফরের ওডি অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠানো হয়েছে এবং তিনি একই দিনে একই অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠিয়েছেন।

এনআরবিসি ব্যাংকের ৪ শীর্ষ কর্তার মধ্যাহ্নভোজে ২০ প্লেট ভাত, ১১৮ প্লেট তরকারি!

মার্চ ২৩, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষ পর্বে তুলে ধরা হলো এনআরবিসির ব্যবস্থাপনার শীর্ষ কর্তাদের খাবারের প্রবল রুচির তথ্য। তাদের খাবারের বিল দেখে বোঝা কঠিন যে, অফিস মিটিং চলাকালীন কেউ কীভাবে এত খাবার খেতে পারে।

অর্থপাচার, ঋণ অনিয়ম, অতিরিক্ত ব্যয় ও নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয় এনআরবিসি ব্যাংক। ৭০০ কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া ও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংককে।

তৎকালীন চেয়ারম্যান ফরাসত আলীকে বোর্ড থেকে পদত্যাগ করতে হয়। মুজিব ও ফরাসতকে পরিচালক পদ থেকে দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিষিদ্ধ করে এবং পরবর্তীকালে বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়।

কিন্তু নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন এমন একজন, যার বিরুদ্ধে আগেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল এবং ব্যাংকটিতে এখনো অনিয়ম অব্যাহত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংকটির সভার কার্যবিবরণী এবং অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ও সুপ্রিম কোর্টের নথির শত শত পৃষ্ঠা গত ছয় মাস ধরে বিশ্লেষণ করে দ্য ডেইলি স্টার ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ অসংখ্য অনিয়ম, এমনকি অস্ত্র দিয়ে ভীতি সৃষ্টির করার মতো ঘটনার বিষয়েও জানতে পেরেছে।

চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষ পর্বে তুলে ধরা হলো এনআরবিসির ব্যবস্থাপনার শীর্ষ কর্তাদের খাবারের প্রবল রুচির তথ্য। তাদের খাবারের বিল দেখে বোঝা কঠিন যে, অফিস মিটিং চলাকালীন কেউ কীভাবে এত খাবার খেতে পারে।

এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার শীর্ষ কর্মকর্তাদের খাবারের রুচি প্রবল।

চার কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর এনআরবিসি ব্যাংক পর্ষদের নির্বাহী কমিটির ৫৬তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই চারজন হলেন নির্বাহী কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুরুল ইসলাম, তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমান এবং পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন সদস্য ফরাছত আলী ও লকিয়ত উল্লাহ।

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসা বিলের কপি অনুযায়ী, গুলশানের কস্তুরী গার্ডেনে এই চার জনের মধ্যাহ্নভোজের জন্য ব্যাংকের খরচ হয়েছে ৪১ হাজার ৯১ টাকা।

বিলে ২০ প্লেট ভাত ও ১১৮ প্লেট তরকারির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে—১৮ প্লেট ফুল চিকেন ভুনা, ১৮ প্লেট চিতল কোফতা, ১৭ প্লেট গরুর মাংসের আচারি কারি, ১৬ প্লেট টাকি মাছের ভর্তা, ১৭ প্লেট বাতাশি মাছের কারি, ১৭ প্লেট মিক্সড সবজি ও ১৫ প্লেট ডাল।

বিলে দুই ক্রেট পানির বোতল ও ২০ বোতল কোকও ছিল। ওই চার জনের গাড়িচালক এই ভোজে অংশ নেননি এবং দুপুরের খাবারের জন্য তাদের প্রত্যেককে ৩০০ টাকা করে দেওয়া হয়।

তাদের মধ্যাহ্নভোজ বাবদ করা এই খরচ বিধিমালা বহির্ভূত, যেহেতু নির্বাহী কমিটির সভায় যোগদানের জন্য পরিচালকরা নিয়মিত ফি ছাড়া অন্য কোনো আর্থিক বা কোনো ধরনের সুবিধা নিতে পারেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, চার মাস পর ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কার্যনির্বাহী কমিটির ৬১তম সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তখন আটজনের মধ্যাহ্নভোজে ৪৮ হাজার ৬৯১ টাকা খরচ হয়। তাদের খাবারের তালিকায় ছিল ১৬ প্লেট করে ইলিশ, চিংড়ি কারি, মাটন কড়াই, চিংড়ি ভর্তা ও ডাল এবং ১৭ প্লেট করে রূপচাঁদা, বাটার চিকেন ও ভাত।

সভায় সদস্যদের ফি, রিফ্রেশমেন্ট ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচসহ নির্ধারিত মোট বাজেটের চেয়ে ৪৫ হাজার ৬৭০ টাকা বেশি ব্যয় করা হয়।

এক মাস পর কার্যনির্বাহী কমিটির ৬২তম সভায় থাকা আট জনের মধ্যাহ্নভোজে ব্যয় হয় ৬৭ হাজার ১৩৭ টাকা।

ভাউচারে দেখা গেছে, কার্যনির্বাহী কমিটির ৬১ ও ৬২তম বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক মো. মাসুদ বিশ্বাসও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৭ সালের ১৮ জুন ৫৫তম বোর্ড সভায় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন না করা হলেও সভায় উপস্থিত নয় সদস্য ৩৫ ঝুড়ি ফল পেয়েছেন, যার মূল্য দুই লাখ টাকার বেশি বলে বিলের কপি থেকে জানা গেছে।

রমজান মাসেও তাদের খাবারের পরিমাণ কমেনি।

২০১৯ সালের ২৮ মে পরিচালনা পর্ষদের ৮১তম সভায় অংশ নেওয়া আট পরিচালক নেন ইফতারের ৬০টি বক্স। বিল কপিতে দেখা গেছে, এর জন্য খরচ হয়েছে ৬২ হাজার ১০০ টাকা।

২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর পরিচালনা পর্ষদের ৭৫তম সভা ও কার্যনির্বাহী কমিটির ৮০তম সভায় ১১ জনকে ‘খাওয়াতে’ ব্যয় হয় এক লাখ ১৬ হাজার ৫২৫ টাকা। রসিদে দেখা যায়, উপস্থিত ১১ জনের পরিবর্তে ৩৭ জনের জন্য দুপুরের খাবারের বিল করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের (এফআইসিএসডি) এক তদন্তে ২০১৩ সাল থেকে ২০টি ব্যয়ের রেকর্ড পর্যালোচনা করে বলা হয়েছে, এসব ক্ষেত্রে ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে।

আইনে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংকের নির্বাহী বোর্ডের সভায় অংশগ্রহণের জন্য নিয়মিত ফি ব্যতীত কোনো ব্যাংক পরিচালক ব্যাংক থেকে কোনো আর্থিক বা অন্য কোনো সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন না।’

২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও কার্যনির্বাহী কমিটির আরও ১৩টি সভার ব্যয়ের তালিকা দেখেছে ডেইলি স্টার। সেগুলোর সবগুলোতেই খাবার বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে দেখা গেছে।

মেট্রোরেলের ক্যান্টিন ভাড়া ১ হাজার টাকা : তদন্তের নির্দেশ

২১ মার্চ ২০২৪, ঢাকা পোস্ট

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) উত্তরা ডিপোতে অবস্থিত ৭ হাজার ৫৮০ বর্গফুটের স্টাফ ক্যান্টিন মাসিক এক হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়ার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এক মাসের মধ্যে সড়ক ও পরিবহনক সচিবকে  তদন্ত করে রিপোর্ট আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ১ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বিজ্ঞাপন কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

‘প্রয়োজন’ নেই, তবু নতুন তথ্যভান্ডার করতে চাপ

২৫ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

মোবাইল অপারেটররা আগ্রহী নয়। প্রয়োজন নেই বলে মনে করে সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারও (এনটিএমসি)। তারপরও গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার তৈরি করতে মোবাইল অপারেটরদের চাপ দিচ্ছে বিটিআরসি। গত বুধবার এ বিষয়ে নতুন করে অপারেটরদের চিঠি দেওয়া হয়।

তথ্যভান্ডার করা নিয়ে মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চিঠি চালাচালি চলছিল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকেই। গত ২৫ জানুয়ারি দেওয়া একটি চিঠিতে তথ্যভান্ডার করার প্রস্তুতি নিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিল বিটিআরসি। তবে অপারেটররা তথ্যভান্ডার করেনি।

বিটিআরসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মোবাইল অপারেটরগুলো বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার (বিএনডিএ) ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্যগুলো নেবে। প্রক্রিয়াটিকে বলা হচ্ছে ‘ইলেকট্রনিক টেলিযোগাযোগ গ্রাহক নিবন্ধন ফরম অটোফিলকরণ’।

বিএনডিএর একটি সেবা হলো পরিচয়, যা ২০১৯ সালের জুলাই মাসে চালু হয়। এই সেবার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি তথ্যভান্ডার থেকে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই সুবিধা দেওয়া হয়। পরিচয় সেবাটি পরিচালনা করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডিজিকন টেকনোলজিস। নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডার থেকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় সেবা দিয়ে পরিচয় যে রাজস্ব আয় করে, তার বড় অংশই (৮০ থেকে ৯০ শতাংশ) পায় ডিজিকন।

ডিজিকন টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহেদ শরীফ গত ১৮ জানুয়ারি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁরা শুধু কারিগরি সেবা দিয়ে থাকেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারে প্রবেশের সুযোগ নেই। তিনি জানান, পরিচয় কাজটি পেয়েছে সরাসরি ক্রয়প্রক্রিয়া বা ডিপিএম পদ্ধতিতে।

অপারেটররা বলছে, তারা এখন গ্রাহকের তথ্য যাচাই করে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডার থেকে। এ জন্য গ্রাহকপ্রতি ৫ টাকা কমিশনকে দেয় তারা। অন্যদিকে ছবি যাচাইয়ের সুবিধা যোগ করে একই কাজে পরিচয় চাইছে গ্রাহকপ্রতি ১০ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডিজিকনকে ব্যবসা পাইয়ে দিতেই তথ্যভান্ডার তৈরির এই চাপ।

বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ

৩১ মার্চ, ২০২৪, কালের কন্ঠ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ভাঙ্গা চৌরাস্তা থেকে টেকেরহাট হয়ে সামনে এগোলেই গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল গ্রাম। নিভৃত এই পল্লীর মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র, যেখানে এক রাত থাকতে গেলে গুনতে হয় অন্তত ১৫ হাজার টাকা। রিসোর্টের ভেতরে ঘুরে দেখা গেছে একই সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর হাতে গড়া আভিজাত্যের অপরূপ মিশেল। বিশাল আকৃতির ১৫টি পুকুরের চারপাশে গার্ড ওয়াল, দৃষ্টিনন্দন ঘাট, পানির কৃত্রিম ঝরনা ও আলোর ঝলকানি।

পার ঘেঁষে রয়েছে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স কটেজ। বিদেশি শিল্পীদের নিপুণ হাতে তৈরি হয় এসব স্থাপত্য নকশা। কটেজের ভেতর থেকে পুকুর পর্যন্ত এমন পথ নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে মাটিতে পা ফেলার প্রয়োজন নেই; সরাসরি কটেজ থেকে কাচে ঘেরা আবরণ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় শান-বাঁধানো ঘাটে। সাভানা ইকো রিসোর্টের পরিধি এতটাই বড় যে সাহাপুর গ্রামের নাম লিখে গুগলে সার্চ দিলে এই রিসোর্টটিই আগে ভেসে ওঠে পর্দায়।

প্রায় এক হাজার ৪০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই ইকো রিসোর্টের বিভিন্ন জায়গায় মাটি ভরাট করে বানানো হয়েছে কৃত্রিম পাহাড়। সাগরের কৃত্রিম ঢেউ খেলানো সুইমিং পুলও রয়েছে এখানে। আছে হাজারের বেশি ভিয়েতনামি নারকেলগাছসহ বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ। রয়েছে উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেমসহ বিশাল আকৃতির কনসার্ট হল।

দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একক পরিবারের জন্য বানানো এসব কটেজের পেছনে ব্যয় হয়েছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি। যুগলদের কাছে কটেজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রিসোর্টের ভেতরে এখন আরো ৫০টি কটেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এত সব আয়োজন যেখানে, সেই রিসোর্টের নিরাপত্তায় পাশেই বসানো হয়েছে ‘বিশেষ’ পুলিশ ফাঁড়ি। যাতায়াতের জন্য সরকারি খরচে বানানো হয়েছে সাত কিলোমিটারের বেশি পাকা সড়ক।

দেশে এ রকম নজিরবিহীন আভিজাত্যে ঘেরা পর্যটন স্পটটির মালিকপক্ষ কারা জানেন? অবিশাস্য হলেও সত্য যে রাষ্ট্রীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রাপ্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের পরিবার।

সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বেনজীরের বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর এবং পরিচালক ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর।

শুধু এই এক ইকো রিসোর্টই নয়, পুলিশের সাবেক এই প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তা তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের নামে অন্তত ছয়টি কম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে। এর পাঁচটিই নিজ জেলা গোপালগঞ্জে। জেলা সদরের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে রয়েছে বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদ। দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরো ১০ বিঘা জমি।

এই বিপুল সম্পদের মালিক পরিবারের কর্তা পুলিশের সাবেক আইজি ও র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ সরকারি বেতন-ভাতা থেকে কত টাকা উপার্জন করেছেন, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় করেছেন এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা। এর বাইরে পদবি অনুযায়ী পেয়েছেন আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। বাংলাদেশ পুলিশের ৩০তম মহাপরিদর্শক ছিলেন তিনি। ২০১১, ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)। অবসরে যাওয়ার আগে ২০২১ সালে ভূষিত হন শুদ্ধাচার পুরস্কারেও। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার পর বেরিয়ে আসে সাবেক এই পুলিশকর্তার থলের বিড়াল।

সম্পদের মালিকানায় স্ত্রী ও দুই মেয়ে

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুকৌশলী বেনজীর আহমেদ নিজের নামে কোনো সম্পদ করেননি, করেছেন তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে। গোপালগঞ্জে সাভানা ফার্ম প্রডাক্টস, সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেড, সাভানা ন্যাচারাল পার্ক, সাভানা ইকো রিসোর্ট, সাভানা কান্ট্রি ক্লাব বানিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড নামের একটি কম্পানিতে বড় মেয়ে ফারহিনের নামে এক লাখ, আর ছেটে মেয়ে তাহসিনের জন্য কেনা হয়েছে আরো এক লাখ শেয়ার। এম/এস একটি শিশির বিন্দু (রেজি. পি-৪৩০৩৬) নামের ফার্মের ৫ শতাংশের মালিকানায় নাম রয়েছে বড় মেয়ের। আরো ৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে ছোট মেয়ের। একই প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার রয়েছে ১৫ শতাংশ অংশীদারি। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিতে মোট ২৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও মেয়েদের।

যৌথ মূলধনী ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে একটি নথি কালের কণ্ঠ’র হাতে এসেছে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাবেক পুলিশ ও র‌্যাব কর্তা বেনজীর আহমেদ তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাভানা অ্যাগ্রো। ২০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনধারী সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক তিনজন। ১০টি শেয়ারধারী স্ত্রী জীশান মীর্জা চেয়ারম্যান, সমপরিমাণ শেয়ারের অধিকারী ২৯ বছর বয়সী বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর এমডি। আর মাত্র ২৪ বছর বয়সী ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর আছেন পরিচালক হিসেবে। প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে সরেজমিনে যায় কালের কণ্ঠ। সেখানে দেখা গেছে, ২০ কোটি নয়, সাভানা অ্যাগ্রোর রয়েছে কয়েক শ কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ব্যবসা।

বেনজীর আহমেদের পরিবারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো সাভানা ন্যাচারাল পার্ক প্রাইভেট লিমিটেড। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানির (আরজেএসসি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই কম্পানির অনুমোদিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকা। সাভানা অ্যাগ্রোর মতো এই কম্পানির মালিকানায়ও আছেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে। যথারীতি এখানেও স্ত্রী চেয়ারম্যান এবং মেয়েদের একজন এমডি, অন্যজন পরিচালক। প্রত্যেকের হাতে রয়েছে এক লাখ করে মোট তিন লাখ শেয়ার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই পার্কের আয়তন প্রায় ৬০০ বিঘা। পার্কটি বড় করতে পাশে আরো ৮০০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। এখন ভরাট করা হচ্ছে।

যৌথ মূলধনী কম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে পাওয়া নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাভানা অ্যাগ্রোর নিবন্ধনে ঠিকানা হিসেবে দেওয়া হয়েছে ২২৮/৩, শেখপাড়া রোড, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঠিকানাটি বেনজীরের শ্বশুরবাড়ি। বেনজীরের শ্বশুরের নাম মীর্জা মনসুর উল হক ও শাশুড়ির নাম লুত্ফুন নেসা মনসুর।

নথির তথ্য মতে, বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার জন্ম ১৯৭৩ সালের ১০ জুলাই। বড় মেয়ের জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ছোট মেয়ে জন্মেছেন ২০০০ সালের ১২ এপ্রিল। দুই মেয়ে মাত্র ২৯ ও ২৪ বছর বয়সেই কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন প্রভাবশালী পুলিশকর্তা বাবার অবৈধ আয়ের ওপর ভর করে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্ত্রী জীশান মীর্জারও তেমন কোনো বৈধ আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও বিপুল বিনিয়োগে গড়ে তোলা ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। জীশান মীর্জার পৈতৃক সূত্রে এত পরিমাণ সম্পদ পাওয়ার সুযোগ নেই। একইভাবে বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীরের ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বিয়ে হলেও ছোট মেয়ের এখনো বিয়েই হয়নি। বড় মেয়ের বিয়ের প্রায় ১২ বছর আগে থেকেই বেনজীর কম্পানিগুলোর জন্য জমি কেনা শুরু করেন এবং মেয়েকে কম্পানির এমডি বানান।

সরেজমিনে বেনজীরের রিসোর্ট

বেনজীরের সম্পদের খোঁজে সরেজমিন অনুসন্ধানে গোপালগঞ্জ যায় কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানী দল। বৈরাগীটোল এলাকায় সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কটিকে স্থানীয়রা ‘বেনজীরের চক’ নামে চেনে। পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের ডিজি থাকাকালে এলাকাটিতে স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে প্রায় এক হাজার ৪০০ বিঘা জমি কেনেন তিনি। এসব জমির বিঘাপ্রতি ক্রয়মূল্য ছিল তিন থেকে আট লাখ টাকা।

এলাকাবাসী জানায়, বেনজীর জমিগুলো কেনার পর অন্ততপক্ষে ১৫ ফুট ভরাট করে রিসোর্ট বানিয়েছেন। কারণ এগুলো ছিল বদ্ধ জলাশয়। নিচু হওয়ায় বেনজীরের রিসোর্টটি আগে ছিল মাছের অভয়ারণ্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাভানা রিসোর্টে ১৫টি কটেজ বানানো শেষ করে পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এগুলো কাপলদের কাছে শুধু দিন হিসাবে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা, রাত হিসাবে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত একই দামে, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। রিসোর্টে চাকরিরত দায়িত্বশীলরা জানান, যেকোনো বয়সী ছেলেমেয়ে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই এসব কটেজে থাকতে পারে। চাইলে রাত যাপন করতে পারে। বেনজীর বিলাসবহুল এই রিসোর্ট চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন থাইল্যান্ডসহ পশ্চিমা বিশ্বের আদলে।

রিসোর্টটির আলোকসজ্জা করতে কোনো মিটার ছাড়াই কিলোমিটারের পর কিলোমিটার বিদ্যুতের সরকারি তার সরবরাহ করা হয়েছে কোনো খুঁটি ছাড়াই। মাটির ওপর দিয়ে নেওয়া এসব বৈদ্যুতিক তার যে কারো জন্যই প্রাণনাশের হুমকিস্বরূপ। সাগরের কৃত্রিম ঢেউ খেলানো সুইমিং পুলও রয়েছে এখানে। আছে হাজারের বেশি ভিয়েতনামি নারকেলগাছসহ বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ।

শুধু তাই নয়, রিসোর্টটির নিরাপত্তায় পাশেই বসানো হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থায় উন্নতি না হলেও এই রিসোর্টে প্রবেশ স্বাচ্ছন্দ্য করতে সাত কিলোমিটার সড়ক পাকা করা হয়েছে সরকারি খরচে। রিসোর্টের ভেতরেও সর্বত্র করা হয়েছে ঢালাইয়ের রাস্তা। রিসোর্টের সব রাস্তার হিসাব করলে দেখা যায়, প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক পিচ ঢালাই করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, বেনজীরের নিজ প্রতিষ্ঠানের এসব রাস্তাও করা হয়েছে সরকারি খরচে।

জানতে চাইলে রিসোর্টের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানী টিমকে বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ এটিকে সাজাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে বড় ইকোপার্ক ও বিলাসবহুল রিসোর্টের পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে। এ জন্য যা যা দরকার, তা-ই করা হচ্ছে।’

বেনজীরের কেনা জমির কয়েকজন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ক্রমাগত চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন বেনজীর। ভয়ভীতিতে কাজ না হলে ভেকু দিয়ে জমির মাটি নিয়ে যেতেন। গভীর গর্ত করে শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রি করতে বাধ্য করতেন। পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন পদে থাকায় তাঁর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি জমির মালিকরা।

ঢাকা ও পূর্বাচলে বিপুল টাকার সম্পদ

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশানে সুবিশাল অভিজাত একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে বেনজীর আহমেদের। গুলশান ১ নম্বরের ১৩০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটির নাম ‘র‌্যাংকন আইকন টাওয়ার লেক ভিউ’। ভবনের ১২ ও ১৩তম তলায় আট হাজার ৬০০ বর্গফুটের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাঁর। সূত্র জানায়, আট হাজার ৬০০ বর্গফুটের এই অ্যাপার্টমেন্টের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

ভবনটি নির্মাণ করে র‌্যাংকন ডেভেলপমেন্টস। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯.৭৫ কাঠা জমিতে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের আয়তন দুই হাজার ১৫০ বর্গফুট। এখানে রয়েছে ১৩টি ফ্লোর এবং দুটি বেইসমেন্ট। সত্যতা নিশ্চিত করতে সরেজমিনে গেলে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মো. সবুজ কালের কণ্ঠকে জানান, ১২ ও ১৩তম তলায় রয়েছে বেনজীরের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।

এ ছাড়া রাজধানীর মগবাজার আদ-দ্বীন হাসপাতাল সংলগ্ন ইস্টার্ন প্রপ্রার্টিজের একটি বহুতল ভবনে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন বেনজীর আহমেদ।

পূর্বাচলে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি করেছেন বেনজীর আহমেদ। আনন্দ হাউজিং সোসাইটির দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় পোড়া মোড়ের পাশের এলাকায় অন্তত ৪০ কাঠা জমির ওপর গড়েছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। জমি ও বাড়ির মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা বলে ধারণা স্থানীয়দের।

ওই এলাকার বাসিন্দা মো. শাহাদাত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই এলাকা ডোবা ও বিল হিসেবে আমরা দেখেছি। কিছুদিন আগেও এসব এলাকায় আমরা মাছ ধরেছি। পুলিশের কর্মকর্তারা আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরপরই বেনজীর আহমেদ এই জায়গায় মাটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন।’

দীর্ঘদিন ধরেই আনন্দ হাউজিং সংলগ্ন এলাকায় অটো চালান মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, সোসাইটির ভেতরে সবচেয়ে দামি বাড়ি এটি। আনন্দ হাউজিং এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে বেনজীরের ডুপ্লেক্স বাড়িটি দেখার জন্য মাঝেমধ্যে ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর পূর্বাচলের ফারুক মার্কেটের পেছনের দিকে ১৭ নম্বর সেক্টরের ৩০১ নম্বর রোডের জি ব্লকে ১০ নম্বর প্লটের মালিক পুলিশের সাবেক এই আইজি। স্থানীয়রা বলছেন, ১০ কাঠা পরিমাণের এই প্লটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা। বেনজীর আহমেদ পুলিশের আইজি থাকাকালে এই প্লট কেনেন। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, পুলিশের এই সাবেক আইজি তাঁর ১০ কাঠার প্লটটি বিক্রির পরিকল্পনা করছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। ওই এলাকার মোহাম্মদ নাঈম, আব্দুল কাদের ও মোহাম্মদ মোহসিন নামের তিন ব্যক্তি পুলিশের সাবেক এই আইজির ১০ কাঠার প্লটটির বিষয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নাওড়ায় বেনজীর আহমেদের রয়েছে দুই বিঘা জমি, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

কর্ণফুলীর তীর দখল করে সাম্রাজ্য আ’লীগ নেতার

৩১ মার্চ ২০২৪, সমকাল

চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় ১৯৮৫ সালে প্রশস্ততা ছিল ৯৫২ মিটার। দখল ও ভরাটে তা এখন ৪৪৬ মিটারে নেমে এসেছে। এ নদীর বুকে ভরাট হওয়া জমিতে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন মহিউদ্দিন বকুল নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা। ভরাট হওয়া জায়গায় তিনি বসিয়েছেন বরফকল। সাগর থেকে নিয়ে আসা মাছ সংরক্ষণের জন্য করেছেন কোল্ডস্টোরেজ। অবৈধ বিশাল বালুমহালও তৈরি করছেন নদী পাড়েই। এমনকি একটি বিশাল ট্রাকস্ট্যান্ডও খুলে বসেছেন।

নদীতীরের সরকারি জায়গায় একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। প্রতিদিন বরফকল ও কোল্ডস্টোরেজের বর্জ্য কর্ণফুলীতে পড়ে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। ক্রমাগত দখল, ভরাট ও ইজারা প্রক্রিয়ার কারণে ৩৯ বছরে নদীটির প্রশস্ততা কমছেই।

উচ্চ আদালত এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিলেও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে মহিউদ্দিনের অবৈধ সাম্রাজ্য। নদী কমিশন এসব বরফকল, মাছ বাজার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য বারবার তাগাদা দিলেও রহস্যজনক কারণে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নদীর জায়গা ইজারা নিয়ে বরফকল, কোল্ডস্টোরেজ গড়ে তোলেন মহিউদ্দিন। তার পাশাপাশি কর্ণফুলী ঘিরে মাছ বাজারসহ দুই হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা।

নদী রক্ষায় পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০১০ সালে হাইকোর্টে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আবেদন জানিয়ে রিট করে। ২০১৬ সালে হাইকোর্ট কর্ণফুলী তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো অবৈধ উল্লেখ করে উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। তার পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক লোক দেখানো কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও বেশির ভাগই রয়ে যায় অক্ষত।

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসে কর্ণফুলী তীরের ২ হাজার ১৮১টি স্থাপনাকে অবৈধ চিহ্নিত করে সুপ্রিম কোর্ট উচ্ছেদের চূড়ান্ত নির্দেশ দেন। তবে জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ এ রায় বাস্তবায়ন করছে না।

উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী, জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নদীর উভয় তীরের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীকে ২০০০ সালের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। নদীতীরে বরফকল, কোল্ডস্টোরেজ, বালুমহাল, দোকান ও ঘরবাড়ি সবই অবৈধ।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৪৫০০ টাকার ২ পাইপ কাটার কিনেছে ৯৩ লাখ টাকায়

এপ্রিল ১, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

গত ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩৪৪ দশমিক ৫ কেজি ওজনের একটি ছোট চালান আমদানি করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা এ চালানটির আমদানি মূল্য দেখানো হয় ২ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা বা ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৩ মার্কিন ডলার।

আমদানির দুই দিন পর ১১ জানুয়ারি কায়িক পরীক্ষায় দেখা যায়, জার্মানির তৈরি দুটি পাইপ কাটারের দাম ৯২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। একইভাবে একই জার্মান কোম্পানির দুটি হাতুড়ির দাম দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

এই ধরনের অস্বাভাবিক দাম দেখে বিভ্রান্ত হয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চালানটি আটকে দিয়ে সিপিজিসিবিএল ও পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাছে ব্যাখ্যা চায়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি ইস্যুকৃত এরকম দুটি চিঠি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

গত ২৭ মার্চ দ্য ডেইলি স্টার দাম পরীক্ষার জন্য জার্মান কোম্পানি কেএস টুলসের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করে। ওয়েবসাইটটি দেখায়, একই মানের একটি পাইপ কাটারের দাম ৬০ দশমিক ২৭ ইউরো বা প্রায় ৭ হাজার ২৩২ টাকা। সে হিসাবে আমদানি মূল্য ৬৪২ গুণ বা ৬৪২০০ শতাংশ বেশি দেখানো হয়েছে।

কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আমদানি করা একটি হাতুড়ির দাম ১৩ দশমিক ৯ ইউরো বা ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। আমদানি মূল্যে যার দাম ৫৫ গুণ বা ৫৫০০ শতাংশ বেশি দেখানো হয়েছে।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কেনা দুটি হাতুড়ির দাম দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা। ছবি: সংগৃহীত

কাস্টমস সূত্র জানায়, শুধু এই দুটি পণ্য নয়, এই চালানের ১৯টি পণ্যই অযৌক্তিক উচ্চমূল্যে আমদানি করা হয়েছে।

এনবিআরের নথিতে এসব পণ্যের আমদানি ব্যয় এনবিআরের সার্ভারের (আমদানি-রপ্তানি ডেটাবেস) রেকর্ড মূল্যের চেয়ে ৫ থেকে ১৮ হাজার ৫৪৫ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে।

এই ডেটাবেসটি মূলত আমদানি রপ্তানি মূল্যসহ বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্কিত তথ্যের একটি সংরক্ষণাগার।

চালানটিতে থাকা অন্যান্য টুলসের মধ্যে রয়েছে সেট মেকানিক্যাল প্লায়ার, মাঙ্কি প্লায়ার, টুলবক্স, চিসেল অ্যান্ড স্পান্সার, স্প্যানার এবং কার ফিটার সেট। এসব পণ্য সরবরাহ করে জাপানের সুমিটোমো করপোরেশনের পক্ষ থেকে কেএস টুলস ওয়ার্কজেউজ।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কায়িক পরীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাইপ কাটার টুলের দাম ডেটাবেস মূল্যের চেয়ে ১৮ হাজার ৫৪৫ গুণ, পাইপ রেঞ্চ ১ হাজার ৫৩ গুণ, মাঙ্কি প্লায়ারের দাম ৯১২ গুণ, স্ক্রু ড্রাইভারের দাম ৮৩৩ গুণ এবং হাতুড়ির দাম ১১২ গুণ বেশি।

বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট

০২ এপ্রিল, ২০২৪, কালের কন্ঠ

লোগোগাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নলজানী গ্রামে ১৬০ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত ভাওয়াল রিসোর্ট। ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল প্রায় ১০৬ বিঘা জমির ওপর এটির যাত্রা শুরু। পরে এতে যোগ হয় আরো ৫৪ বিঘা জমি। ৬২টি ভিলার সঙ্গে হেলিপ্যাড, রেস্তোরাঁ, জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুল, স্পাসহ অনেক কিছু রয়েছে এর ভেতরে।

কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই রিসোর্টের একটি বড় অংশই গড়ে তোলা হয়েছে বনের জমি জবরদখল করে। এতে নেপথ্যে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। কেননা এই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশ শেয়ারের মালিকানা বেনজীরের পরিবারের হাতে।

অনুসন্ধান বলছে, বনের জমি দখল করে রিসোর্ট গড়ে ওঠার সময়কালে বেনজীর আহমেদ ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার।

রীতিমতো পুলিশি পাহারা বসিয়ে বনের জমিতে সীমানাপ্রাচীর লাগিয়ে রিসোর্টের কাজ শুরু হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশকর্তা বেনজীরের বনের জমি দখল করে রিসোর্ট বানানোর ঘটনায় স্তম্ভিত বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারাও।

রামাদা হোটেলজানা গেছে, আম্বার গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এই ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। তবে প্রতিষ্ঠার কোনো একপর্যায়ে এতে যুক্ত হন বেনজীর আহমেদ।

ডিএমপি কমিশনার হিসেবে প্রভাবশালী হওয়ার সুবাদে রিসোর্টের ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নেন তিনি।

বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ভাওয়াল রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা জানান, ভাওয়াল রিসোর্টের ভেতরে ও প্রবেশমুখে বন বিভাগের ৬.৭৩ একর জমি রয়েছে। অর্থাৎ বনের বিশাল এই জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ভাওয়াল রিসোর্ট। বন বিভাগের তথ্য মতে, ভাওয়াল রিসোর্টের দখল করা জমির মধ্যে রয়েছে ৪ নম্বর বরইপাড়া মৌজার ০৩, ২৭৯ ও ২৭১ নম্বর সিএস দাগে ১১ বিঘা।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, বেনজীরের ক্ষমতার দাপটে সবাই ছিলেন নির্বিকার, নিরুপায়।

তিনি তখন ডিএমপি কমিশনার থাকার কারণে বেআইনিভাবে পুলিশ পাহারায় বনের জমিতে সীমানাপ্রাচীর দেন। নিরুপায় হয়ে বনের ওই জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ মামলা করে বন বিভাগ। মামলাটি এখনো চলমান বলে নিশ্চিত করেন রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানা।

সরেজমিনে গেলে ভাওয়াল রিসোর্ট সংলগ্ন নলজানী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রিসোর্টের মালিকপক্ষ পারটেক্স গ্রুপ এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ—এ কথা জানার পর বেনজীরের ভয়ে এলাকার কেউ ওদিকে যাওয়ার সাহসই করে না। যখন তারা বনের জমিতে সীমানাপ্রাচীর বসিয়ে দখল করেছে, তখন কারো সাহস হয়নি প্রতিবাদ করার।

স্থানীয়রা আরো জানায়, ভাওয়াল রিসোর্টের নির্মাণকাজ চলাকালে প্রায়ই এখানে আসতেন বেনজীর আহমেদ। কাজ চলার সময় স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা দিনরাত পালা করে সেখানে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকতেন।

পরিচয় গোপন করে কথা বললে রিসোর্টের সিনিয়র রিজার্ভেশন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রিসোর্টটির মালিকানায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার মালিকদের কয়েকজনের মধ্যে সাবেক আইজিপি বেনজীরও রয়েছেন।

বনানীর হোটেলএ ছাড়া ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন আহমেদও বলেছেন, ‘পারটেক্স গ্রুপের মালিকের ছেলে ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ রিসোর্টটির মালিক। তবে কার কত ভাগ মালিকানা তা জানা নেই।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যথারীতি এখানেও বেনজীর আহমেদ চাতুরীর মাধ্যমে নিজের নামটি ব্যবহার করেননি। স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামেই রিসোর্টের শেয়ার কেনা হয়। জানা গেছে, এই রিসোর্টে এক রাত থাকতে গেলে গুনতে হয় সর্বনিম্ন ১১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ৭৬০ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ এলাকায় প্রতি বিঘা জমির বর্তমান মূল্য ২০ লাখ টাকা।

শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাবেক আইজিপির আরো সম্পদের খোঁজ পেয়েছে কালের কণ্ঠ। রাজধানীর বনানীতে অভিজাত হোটেল ইউনিক রিজেন্সিতে বেনজীর আহমেদের বিনিয়োগ রয়েছে। একইভাবে কক্সবাজারেও দুটি হোটেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ লগ্নি করেছেন তিনি। পদ্মা ব্যাংক এবং কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাও কিনেছেন বেনজীর।

পাচারের টাকায় বিদেশে যত সম্পদ

পুলিশের সাবেক আইজিপি ও র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদের দুবাই, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় বিপুল বিনিয়োগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন পদে চাকরির সুবাদে বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধ উপার্জনের টাকা পাচার করে বিনিয়োগ করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বেনজীর আহমেদের দুবাইয়ে রয়েছে শতকোটি টাকার হোটেল ব্যবসা। সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের সোনার ব্যবসা। এ ছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জমি কিনেছেন বলে জানা গেছে।

তবে বেনজীর বিনিয়োগ করলেও তিনি কোথাও নিজের নাম রাখেননি। সব জায়গায় তিনি স্ত্রী জীশান মীর্জা, স্ত্রীর ভাই মীর্জা মনোয়ার রেজা, দুই মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিনিয়োগ করেছেন।

দুবাইঅনুসন্ধানে জানা গেছে, দুবাই শহরের কেন্দ্রস্থল মাকতুম স্ট্রিটে অবস্থিত বিলাসবহুল কনকর্ড হোটেল অ্যান্ড স্যুইটসে মোটা অঙ্কের শেয়ার রয়েছে বেনজীরের। হোটেলটি বিখ্যাত দুবাই ক্রিকের ওপর দুর্দান্ত প্যানোরমিক ভিউ অফার করে। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দুবাই ক্রিক, গলফ ও ইয়ট ক্লাব, সোনা ও মসলার বাজার, প্রধান কেনাকাটা ও অবসরকেন্দ্রগুলোর খুব কাছে এ হোটেল। দুবাইয়ে অবস্থিত গ্র্যান্ড মসজিদ থেকে তিন মাইল দূরে এ হোটেলের অবস্থান।

দেশ থেকে টাকা পাচার করে গড়ে তোলা বেনজীরের এই হোটেলে আছে অ্যাপার্টমেন্ট, এক্সিকিউটিভ, স্যুইটসসহ অত্যাধুনিক রুম, যেগুলোর ভাড়া প্রতিদিন ৩৫০ থেকে দেড় হাজার দিরহাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয় মুস্তাফা মার্টের পাশে অবস্থিত নিজি জুয়েলার্সটির মালিকানায়ও রয়েছেন বেনজীর আহমেদ। দেশ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করে সেখানে তিনি বিনিয়োগ করেছেন।

বেনজীরের বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিলে জানা যায়, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ বিদেশে বিনিয়োগের কোনো অনুমতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেননি। তাঁর কোনো প্রতিষ্ঠানের বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ অর্থপাচারের মাধ্যমেই তিনি বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত দেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন নিয়েছে এমবিএম গার্মেন্টস, রেনেটা, প্রাণ ফুডস, নাসা গ্রুপের এজে সুপার গার্মেন্টস, কলাম্বিয়া গার্মেন্টস, আকিজ জুট, মবিল যমুনা বাংলাদেশ, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, ডিবিএল, স্কয়ার ফার্মা, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং, সার্ভিস ইঞ্জিন, আকিজ জুট, বেক্সিমকো ফার্মা, এসিআই হেলথকেয়ার, বিএসআরএম, সামিট পাওয়ার, টেকআউট লিমিটেড প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ দেশে ডলার সংকট চলছে। অথচ অর্থনীতির এমন সংকটময় সময়ে বেনজীর অনুমোদন না নিয়েই টাকা পাচার করে বিদেশে কয়েক শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

এ ছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে বেনজীর আহমেদ পাচার করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বেনজীরের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ঋণ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও কত টাকা দিয়েছে সেটি জানাতে নারাজ।

দেশে আরো সম্পদের খোঁজ

বেনজীরের মালিকানা প্রকাশ্যে না আনলেও কক্সবাজারের কলাতলীতে দুটি বিলাসবহুল হোটেলে রয়েছে তাঁর বিনিয়োগ। হোটেল দুটির নাম হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্রিমিয়ার ও হোটেল রামাদা লিমিটেড।

বনানীর সি ব্লকের ১৫ নম্বর রোডের ৫৯ নম্বর বাড়ির ঠিকানায় আছে হোটেল ইউনিক রিজেন্সি। এ হোটেলেও বিনিয়োগ আছে বেনজীরের। হোটেলটিতে এক রাত থাকতে গেলে গুনতে হয় সর্বনিম্ন ১০০ ডলার বা ১২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ ডলার বা ৩০ হাজার টাকা। এ হোটেলে আছে ডিলাক্স সিঙ্গল, ডিলাক্স টুইন, ডিলাক্স কিং, প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইটস, ভিআইপি স্যুইটস, সুপিরিয়র কিং প্রভৃতি বিলাসবহুল রুম।

এ ছাড়া কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়েও বিনিয়োগ আছে বেনজীরের। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটি ক্যাম্পাস র‌্যাংগস আরএল স্কয়ার, প্রগতি সরণিতে অবস্থিত। আর স্থায়ী ক্যাম্পাস হচ্ছে পূর্বাচল নিউ টাউনের ৯ নম্বর সেক্টরে।

২০১৩ সালের ৩ জুন দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড নামে যাত্রা শুরু হয় বর্তমানের পদ্মা ব্যাংক পিএলসির। ব্যাংকটির মালিকানায় আছেন বেনজীর পরিবারের সদস্যরা। ঋণ অনিয়মে ডুবতে বসা ব্যাংকটি ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক হিসেবে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ব্যাবসায়িক দুরবস্থায় ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করে। ২০২১ সাল পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসান ছাড়িয়েছে ৯০০ কোটি টাকার ওপরে। পরের দুই বছরের চূড়ান্ত হিসাব মেলেনি এখনো। তবে নাম বদলানোর পরের চার বছরে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটিতে নতুন করে মূলধন থেকেই ক্ষয় হয় ২৪৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

সেন্ট মার্টিন-কক্সবাজারেও ভূ-সম্পত্তি

০২ এপ্রিল, ২০২৪, কালের কন্ঠ

পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া—ইসিএ) সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রয়েছে পুলিশের সাবেক আইজি ও র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদের ৪১৮ শতাংশ জমি। এর মধ্যে মোহাম্মাদ ওয়াজিউল্লাহ নামের এক ব্যক্তির ২৫০ শতাংশ জমি ও নারকেলবাগান দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে বেনজীরের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণপাড়া গ্রামের সব মানুষের যত জমি আছে, তার চেয়ে বেশি জমি একাই কিনেছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। দ্বীপের উত্তরপাড়ায় জমি কিনে সীমানাপ্রাচীরও দিয়েছেন তিনি।

বর্তমানে বেনজীরের জমিটির দেখভাল করছেন মাওলানা আব্দুর রহমান।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেল, স্থানীয়রা জমিটি ‘বেনজীর স্যারের জমি’ হিসেবেই চেনে। জমির সীমানা রক্ষার জন্য কোরাল পাথর তুলে এনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি কংক্রিটের পিলার দিয়ে জমির চারদিকে সীমানা দেওয়া হয়েছে।

বানানো হয়েছে বড় একটি গেট, যা ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া—ইসিএ আইন ১৯৯৫, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ আইন এবং পরিবেশ আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

এ ছাড়া সেন্ট মার্টিনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বীপঘেঁষা এলাকা উত্তরপাড়া গ্রামের মোহাম্মাদ ওয়াজিউল্লাহ নামের এক ব্যক্তির ২৫০ শতাংশ জায়গা দখলের অভিযোগ উঠছে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে। ওয়াজিউল্লাহ জমিটি সেন্ট মার্টিন ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মুক্তার আহমদ ও মাহে আলমের কাছ থেকে কিনেছেন। পুরো ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্তার কামাল।

স্থানীয় ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, সেন্ট মার্টিনের জিনজিরা দ্বীপ মৌজার ১০৩০ নম্বর খতিয়ানের ১৭৮৬ দাগে ৮.২৫ শতাংশ, একই দাগে ১৪.১৪ শতাংশ, ৪৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৪০ শতাংশ জমি রয়েছে বেনজীরের নিজ নামে। এ ছাড়া ১৭২৫ দাগে রয়েছে ২২ শতাংশ জমি। জমির নামজারিতে মালিকের নাম দেওয়া হয়েছে হারুনুর রশিদের পুত্র বেনজীর আহমেদ। ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার হোল্ডিং নম্বর ১৬৬। তার জমির খতিয়ানের নামজারি ও জমাভাগ মামলা নম্বর ছিল ৩৫৫ (আই)/২০১৪-১৫ এর ১২/২/২০১৫ ইং তারিখের আদেশ মতে অত্র খতিয়ান সৃজন করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়।

জমিটির বিক্রেতা ছিল স্থানীয় মৌলভী আব্দুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। খতিয়ানটি সত্যায়ন করেছেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার জাহিদ ইকবাল ও উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো মোছাম্মদ মুসা। খতিয়ানটিতে দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন মোট জমির পরিমাণ ১ একর ৬৮.২৫ শতাংশ।

টেকনাফ ভূমি অফিসের সাবেক সহকারী তহশিলদার আবদুল জব্বার প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণপাড়া এলাকায় বেনজীর আহমেদ সাহেবের জমি আছে। এসব জমি তিনি কিনেছেন ২০১৬ ও ২০১৭ সালে। এর পরেও উনি নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামেও কিনেছেন বেশকিছু জমি।’

২০১১ সালে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করা মৌলভী আব্দুর রহমান এলাকায় বেনজীরের খাস লোক হিসেবে পরিচিত। তিনিই ওই এলাকায় বেনজীরের জমিজমা দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভী আব্দুর রহমান নিজেও ২০১১ সালে তিন একর জায়গা বেনজীর আহমেদের কাছে বিক্রি করেন। বেনজীর এসব জমি প্রতি একর কেনেন মাত্র ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকায়, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। জমি কেনার পর বেনজীর আহমেদের নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রাখা ছিল। পরে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারির পর নিজের নামের সেই সাইনবোর্ড খুলে ফেলার নির্দেশ দেন তিনি।

সেন্ট মার্টিনে জমি কেনার সত্যতা নিশ্চিত করেন সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউয়িন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের দক্ষিনপাড়া গ্রামে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ সাহেবের মালিকানায় জমি আছে। আগে পুরো জমির চারদিকে বেড়া দেওয়া ছিল, উনার নিজের নামে সাইনবোর্ড টাঙানো ছিল, কিন্তু এখন নেই। তবে জমির পরিমাণ কত তা আমার জানা নাই।’

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্তার কামাল এই প্রতিবেদককে জানান, দ্বীপের উত্তরপাড়ায় একটি নারকেলবাগানসহ এক দাগে ১২০ শতাংশ জায়গা আছে বেনজীর আহমেদের। এটা দেখভালের দায়িত্বে আছেন মৌলভী আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। এ ছাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণপাড়ায় ১৭৮৬ দাগে বেনজীর আহমেদের রয়েছে দেড় একর জমি।

ইনানীতে স্ত্রী ও কন্যাদের নামে ৮৭ শতাংশ জমি

বেনজীর আহমেদ র‌্যাবের ডিজি থাকার সময় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ইনানী মৌজায় ৮৬.৯৪ শতাংশ জমি কেনেন। কিন্তু চতুর এই সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ওই জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করেননি। রেজিস্ট্রি করিয়েছেন শ্যালক মীর্জা মনোয়ার রেজা, স্ত্রী জীশান মীর্জা এবং তিন কন্যা ফারহীন রিশতা বেনজীর, তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর ও জাহরা জেরিন বিনতে বেনজীরের নামে। এর মধ্যে ছোট মেয়ে জাহরা জেরিন বিনতে বেনজীর জমি রেজিস্ট্রির সময় নাবালক ছিল। এই জমির বিএস খতিয়ান ও বিএস দাগ নং ৪৭৬২, ৩৭৩৯, ৫২৮২, ৭১৮২, ৫৬৯১, ৫২৮১ ও ৭৭৬৬।

তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, জমির দলিলে মীর্জা মনোয়ার রেজা ও জীশান মীর্জার পিতা মীর্জা মনসুর-আল-হকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি বেনজীর আহমেদের শ্বশুর। দুজনেরই ঠিকানা দেওয়া হয়েছে শেখপাড়া, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ফরিদাবাদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর ও জাহরা জেরিন বিনতে বেনজীরের পিতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে বেনজীর আহমেদ। বেনজীর আহমেদের পিতা হারুনুর রশিদের তথ্যও ওই দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে। দলিলে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর তিন কন্যার ঠিকানা দেখানো হয়েছে বৈশাখী রোড, সবুজবাগ, গোপালগঞ্জ সদর, গোপালগঞ্জ পৌরসভা, গোপালগঞ্জ।

সোনারপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর পরিশোধ রসিদের তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, জীশান মীর্জার হোল্ডিং নম্বর ৫৬৯১, জমির শ্রেণি নাল (আবাসিক), দাগ নং ১০৩৯১ ও জমির পরিমাণ ৭.৩৩ শতক। ২০২৩ সালের ২৮ মে এই কর পরিশোধ করা হয়। জীশান মীর্জার নামে একই দিনে আরো ১৮ শতক জমির ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া হয়। ২ নম্বর রেজিস্টার অনুযায়ী জমিটির হোল্ডিং নম্বর ৫২৭১ ও দাগ নং ১০৩৮৯।

কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ মে ফারহীন রিসতা বিনতে বেনজীরের ভূমি করও সোনারপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমা করা হয়। ২ নম্বর রেজিস্টার অনুযায়ী জমিটির হোল্ডিং নম্বর ৭৭৬৬, দাগ নং ১০৩৯১, ১০৩৮৯। এখানে জমির পরিমাণ ৩.৫, ৬.৫ ও ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫ শতাংশ। একই দিনে মীর্জা মনোয়ার রেজাসহ অন্যদের ভূমি উন্নয়ন করও পরিশোধ করা হয়। তবে ২০২৩ সালের ২৯ মে উখিয়া উপজেলার ইনানী-২ মৌজার এই জমি গাজীপুর সদরের নলজানি, চান্দনার বাসিন্দা মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকীর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে স্ত্রীর নামে ৭০ শতাংশ জমি

কক্সবাজারের উখিয়া থানার মেরিন ড্রাইভের পাশে এলজিইডি ভবন সংলগ্ন ইনানী মৌজায় বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে রয়েছে ৭০ শতাংশ জমি। জমিটি জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন মেম্বার দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। জমিটি কেনা হয় ২০০৬ সালে।

কক্সবাজারের উখিয়া থানার জালিয়া পালং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শামসুল আলম নিশ্চিত করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভের পাশে এলজিইডি ভবনের কাছাকাছি ইনানী মৌজায় বেনজীর আহমেদ সাহেবের ৭০ শতাংশ জমি আছে। এই জমিটি কিনে দেন আমার ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য নাজিম উদ্দিন ও একই এলাকার সোনারপাড়ার মৌলভী আবুল বাশাক। বর্তমানে তাঁরাই দুজন এই জমি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন।’

গ্রুপভুক্ত ঋণখেলাপিদের ছাড়, কার স্বার্থ রক্ষা করবে

০৫ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

ঋণখেলাপিরা কার্যত আবারও ছাড় পাচ্ছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলেও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে নতুন করে ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবে। তবে প্রতিষ্ঠানটি ইচ্ছাকৃত খেলাপি, নাকি যৌক্তিক কারণে খেলাপি হয়েছে, ব্যাংক তা দেখবে। আর এসব বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই প্রজ্ঞাপন জারির পর ঋণখেলাপিরা প্রকাশ্যে উল্লাস করেছেন, এমন খবর হয়তো নেই। তবে তাঁদের হাসিমুখ কল্পনা করে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, খেলাপি গ্রাহকদের ঋণ নেওয়ার পথ শেষ পর্যন্ত উন্মুক্ত হয়েছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ হলো, যেভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে। ঋণখেলাপি গ্রাহকদের ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিবর্তন এনে। গত জুলাইয়ে যখন সংসদে এটি পাস হয়, তখন তাতে অতিরিক্ত সংশোধনীর প্রস্তাব করেছিলেন সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্য, যিনি বর্তমানে সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।

জাতীয় সংসদের ফ্লোরে কোনো আইনে সংশোধনী আনা একটি সাধারণ ঘটনা। তবে ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধনী আনতে আহসানুল ইসলামের প্রস্তাব কোনো সাধারণ ঘটনা ছিল না। ঠিক আগের মাসে, অর্থাৎ জুনে কয়েকজন ব্যাংক পরিচালক সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি লিখিত প্রস্তাবে জানিয়েছিলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে একই গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠান যাতে ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। ওই প্রস্তাবে তাঁরা বলেছিলেন, ঋণ ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি না হলে বা যুক্তিসংগত কারণে ঋণখেলাপি হয়ে পড়লে, সেই ঋণকে খেলাপি হিসেবে গণ্য করা উচিত হবে না। ব্যাংক পরিচালকেরা যখন এই প্রস্তাব জমা দেন, তখন সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়ায় এমন কোনো ধারা ছিল না। অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংসদে যে মতামত পেশ করে, তাতেও ব্যাংক পরিচালকদের প্রস্তাবটি স্থান পায়নি। পরে আইনটি আহসানুল ইসলামের আনা সংশোধনীসহ পাস হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের সহযোগী কোম্পানিকে ঋণ পাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। তবে মন্দের ভালো যে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পালনের জন্য তারা ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। আর অনুমোদন দেওয়ার চূড়ান্ত দায়িত্ব নিজের হাতেই রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কিন্তু যে প্রশ্নের উত্তর বিশেষজ্ঞরা পাচ্ছেন না, তা হলো ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত হবে কীভাবে। তাত্ত্বিক সংজ্ঞায়, ইচ্ছাকৃত খেলাপি তাঁরাই, যাঁরা সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ঋণের টাকা পরিশোধ করেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করা কঠিন কাজ, তবে তাঁর উদ্বেগ অন্য জায়গায়। তাঁর মতে, শক্তিশালী একটি গোষ্ঠী আইন পরিবর্তন করাতে সক্ষম হয়েছে। এখন তারা যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি নয়, সেই প্রমাণও বের করবে এবং এরপর ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে যাবে।

ব্রহ্মপুত্র যেখানে কেবলই বালুমহা৩ল, অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে

০৬ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

নদের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও শুকনো। কোথাও আবার সরু খাল। যেখানে পানি আছে, সেখানে ‘বাংলা ড্রেজারে’ (অননুমোদিত খননযন্ত্র) বালু উঠছে। শুকনো জায়গায় নদের বুক খুঁড়ে তুলে নেওয়া হচ্ছে শত শত ট্রাক বালু। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যত্রতত্র বড় বড় পুকুর ও ডোবার সৃষ্টি হয়েছে। নদের মাঝখানে ও তীরে বিশাল বালুর স্তূপ।

জামালপুর শহরের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকার ব্রহ্মপুত্র সেতুর ওপরে দাঁড়ালে চোখে পড়ে এমন দৃশ্য। এককালের খরস্রোতা নদটির ক্ষতবিক্ষত দশা দেখে মনে হয়, ব্রহ্মপুত্র এখানে যেন নদ নয়, কেবলই বালুমহাল।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদটি গাইবান্ধা, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদের জামালপুর শহরের ছনকান্দা থেকে পিয়ারপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুটি বালুমহাল গত বছর ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এরপর থেকে দিন-রাত বালু তোলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইজারার নামে অপরিকল্পিতভাবে বালু তুলে নদটি হত্যা করছেন বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের।

আওয়ামী লীগ নেতারা ইজারাদার

গত বছর জেলা প্রশাসন সদর উপজেলায় নদের ২৭২ একর এলাকা দুটি বালুমহাল হিসেবে ইজারা দেয়। ছনকান্দা ও চর যথার্থপুর এলাকা নিয়ে গঠিত বালুমহালটি ৫২ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য (বাংলা ১৪৩০ সন) ইজারা পায় মেসার্স হাজী এন্টারপ্রাইজ। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জামালপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. হাজী বাহার উদ্দিন। শরিফপুর, নান্দিনা, নরুন্দি ও পিয়ারপুর এলাকা নিয়ে গঠিত অপর বালুমহালটির ইজারা পায় মেসার্স নিধি এন্টারপ্রাইজ। এর স্বত্বাধিকারী মো. আলম আলী শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি মাত্র ২ লাখ টাকায় বালুমহাল ইজারা পেয়েছেন।

‘বাংলা ড্রেজারে’ সর্বনাশ

জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তর পাশ ঘেঁষে ব্রহ্মপুত্র বয়ে গেছে। সড়ক থেকে অর্ধশত রাস্তা নেমেছে নদের বুকে। এসব রাস্তা দিয়ে শত শত ট্রাক একদম নদের মধ্যে চলে যায়। ভেকুর (এক্সকাভেটর) মাধ্যমে ট্রাকে বালু ওঠানো হয়। এরপর ট্রাকগুলো চলে যায় শহরের বিভিন্ন স্থানে। এক্সকাভেটরের মাধ্যমে নদের পাড় কেটেও মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, কিছুদিন আগেও মহাসড়ক থেকে অনেক দূরে ছিল নদের অবস্থান। অপরিকল্পিত বালু তোলায় নদ ভাঙতে ভাঙতে মহাসড়কের একদম কাছে চলে এসেছে।

বানারেরপাড় থেকে নান্দিনা পূর্ব বাজার পর্যন্ত নদটি একদম মহাসড়কঘেঁষা। সেখানে ভাসমান নৌকার মধ্যে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হয়। পাইপের মাধ্যমে এসব বালু সড়কের সঙ্গে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। সেখানে থেকে ট্রাকে ভর্তি করে বিভিন্ন স্থানে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। নদের তীরে দাঁড়ালে বাংলা ড্রেজারের বিকট শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়।

মাদক ব্যবসায়ীর সন্তানকে পড়াতে রাজি না হওয়ায় ৪ মাস জেল খাটলেন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী

০৬ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

মাদক ব্যবসায়ীর সন্তানকে প্রাইভেট পড়াতে রাজি হননি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রী। এ জন্য তাঁর ওপর নেমে এসেছিল অকল্পনীয় নিপীড়ন। ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগসাজশে তাঁকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। বিভাগীয় তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় এই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

গত ১২ মার্চ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক অফিস আদেশে এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।

নিপীড়নের শিকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী সদ্য মা হয়েছেন। তিনি এ ঘটনায় এখনো আতঙ্কিত বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বামী। কারণ, এখনো তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি বলেছেন, ‘একটাই সান্ত্বনা—আমরা অন্যায় করিনি, এখন এ কথা বুক ফুলিয়ে বলতে পারব।’

ঠিকাদার কাজটি পান ‘জালিয়াতি’ করে

০৬ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

সাভারে জ্বালানি তেলবাহী যান (লরি) উল্টে চারজনের মৃত্যুর পেছনে যে ঠিকাদারের ‘গাফিলতি’ রয়েছে বলে অভিযোগ, সেই ঠিকাদার নির্মাণকাজটিও পেয়েছিলেন জালিয়াতি করে। নির্ধারিত সময়ে তাঁরা কাজ শেষও করেননি।

ঢাকার অদূরে সাভারের জোরপুল এলাকায় ২ এপ্রিল ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তেলবাহী লরি উল্টে আগুন ধরে যায়। ওই আগুনে পাশের আরও চারটি যান পুড়ে যায়। এতে ১ শিশুসহ ১০ জন অগ্নিদগ্ধ হন। মারা যান ৪ জন।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের ভাষ্য, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোরপুলে ইউটার্ন (যানবাহন ঘোরানোর জায়গা) নির্মাণকাজের জন্য আনা ব্লক মহাসড়কে রাখা হয়েছিল। ছিল না কোনো সতর্কতামূলক নির্দেশনা। চাকার নিচে ব্লক পড়ে লরিটি উল্টে যায় বলে অভিযোগ আছে।

ঈদযাত্রায় বাসে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া, কোথাও দেড় থেকে দুই গুণ

০৯ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে শেরপুরগামী সোনার বাংলা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন দুই চাচাতো ভাই মিলন মিয়া ও উজ্জ্বল মিয়া। তাঁদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। তবে কোনো টিকিট দেওয়া হয়নি। একই বাসের যাত্রী লিমন খানের কাছ থেকেও এক হাজার টাকা নেওয়া হয়। তাঁর টিকিটে শুধু আসন চিহ্নিত করা, ভাড়া উল্লেখ নেই।

এই তিনজন ছাড়াও বাসের ভেতরে থাকা আরও প্রায় ১৩-১৪ জন যাত্রীর কাছ থেকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কেউ টিকিট পেয়েছেন, কেউ আবার পাননি। যাঁদেরকে টিকিট দেওয়া হয়েছে, তাঁদের টিকিটেও ভাড়ার পরিমাণ উল্লেখ নেই।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে শেরপুরের দূরত্ব ২২৭ কিলোমিটার। নির্ধারিত ভাড়া ৬১৬ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে শেরপুর যেতে ভাড়া লাগে ৫০০-৫৫০ টাকা। তবে ঈদ উপলক্ষে এই গন্তব্যের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এক হাজার টাকা। যা বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া থেকে দেড়গুণ এবং স্বাভাবিক সময় থেকে প্রায় দ্বিগুণ।

শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণের ২৮৪ কোটি টাকার ‘পণ্ডশ্রম’ প্রকল্প

১৭ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

হতে হবে দরিদ্র পরিবারের সন্তান, থাকতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত, আর বয়স সর্বোচ্চ ১৭– শিশুশ্রম নিরসনে তালিকা করার সময় এসব শর্তের ধার ধারেননি প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এ সুযোগে দরিদ্র শিশুদের জন্য সরকারের নেওয়া প্রকল্পের উপবৃত্তির টাকা নিয়ে গেছে সচ্ছল পরিবারের শিশুদের পরিবার। ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত না থাকলেও প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে প্রতি মাসে গুনে নিয়েছে এক হাজার টাকা। ১০ মাসের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শেষে এককালীন জনপ্রতি ১৩ হাজার টাকার প্রণোদনা নিয়েও হয়েছে নয়ছয়। সরকারি কর্মকর্তাদের আশকারায় বেশির ভাগ এনজিও প্রকল্পের এ টাকা লোপাট করে।

এমন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্যায়)’ প্রকল্পে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন কার্যালয়ের আলাদা পরিদর্শন প্রতিবেদনে বিস্তর অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।

যাদের জন্য এ আয়োজন, সেই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত দরিদ্র শিশুদের কপালে জোটেনি প্রকল্পের উপবৃত্তি। এতে প্রকল্পের টাকা গচ্চার পাশাপাশি হয়েছে সময়ের অপচয়, ৪২ পেশায় নিয়োজিত শিশুদের ঝুঁকিমুক্তও করা যায়নি। এত অনিয়মের পরও শিশুশ্রম নিরসন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের নামে আড়াই হাজার কোটি টাকার নতুন আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। গত জুনে ওই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও শেষ হয়েছে।

অ্যাননটেক্সের ঋণ: সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ, সংকট বাড়বে জনতা ব্যাংকের

১৯ এপ্রিল ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংককে ৩ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অ্যাননটেক্স গ্রুপকে এই সুবিধা দিয়েছিল জনতা ব্যাংক। কিন্তু এক অডিটে ঋণ কেলেঙ্কারি ও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর তা বাতিলের নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী, জালিয়াতির শিকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিকে অ্যাননটেক্সের কাছে পাওনা ৬ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে শ্রেণিকরণ করতে হবে।

গত ১ এপ্রিল এক চিঠিতে এসব নির্দেশ দিয়েছে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনতা ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এতে জনতার মোট খেলাপি ঋণ ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি দাঁড়াবে, যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিকে আরও সংকটে ফেলবে।

বেনজীর আহমেদের সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধানে দুদক

২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ০৪

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের সম্পদ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিন সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে গত ৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু গণমাধ্যমে তাঁর (বেনজীর) বিষয়ে একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুদক আইন অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করেছে।

কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি

এপ্রিল ২৩, ২০২৪, বণিক বার্তা

সনদ জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে আলী আকবর খানকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আজ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। সনদ জালিয়াতির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পেলে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার

২৫ এপ্রিল ২০২৪, কালবেলা

মিল্টন সমাদ্দার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে পরিচিত একটি নাম। মানবতার সেবক হিসেবে তার পাঁচটি ফেসবুক পেজে অনুসারী (ফলোয়ার) সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। অসহায় মানুষের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রম। রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার আবেদনে সাড়াও মেলে প্রচুর। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার।

এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু এটাই মিল্টনের আসল চেহারা নয়। মানবিকতার আড়ালে তিনি যা করেন, তা গা শিউরে ওঠার মতো। যেই প্রতিষ্ঠানের জন্য এত পরিচিতি, সেই আশ্রম ঘিরেই ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন মিল্টন। প্রকৃতপক্ষে যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, প্রচার করছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ। লাশ দাফন করার যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতেও আছে বিরাট গরমিল। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ।

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, সাংবাদিকদের প্রতিবাদ

২৫ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ফলে সাংবাদিকেরা আগের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছে না। এক মাস ধরে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন সাংবাদিকেরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন একসময়ে এই কড়াকড়ি আরোপ করেছে, যখন নানা সমস্যায় আর্থিক খাত টালমাটাল। বেশির ভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ধারে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংকটে পড়া কয়েকটি ব্যাংক। আবার ঋণখেলাপিদের দাপট আগের মতোই আছে। এমন পরিস্থিতিতে অপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক একত্রকরণ শুরু হয়েছে।

শিক্ষা

ঢাকার প্রাথমিক পর্যায়ের ৮০% শিক্ষার্থীই পড়াশোনা করছে বেসরকারি স্কুলে

ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৪, বণিক বার্তা

দেশজুড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল বিনামূল্যে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা। প্রায় প্রতিটি জেলায়ই প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এসব বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে এখানেই। ব্যতিক্রম শুধু ঢাকা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখানকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিকের মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাকি ৮০ শতাংশই অধ্যয়ন করছে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

যদিও ঢাকার বাইরে প্রাইমারি পর্যায়ের শিক্ষার্থীর অর্ধেকেরও বেশি পড়াশোনা করছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে ৫৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ৬৪ দশমিক ১১, রংপুরে ৪৮ দশমিক ৯, খুলনায় ৬৪ দশমিক ১৯, ময়মনসিংহে ৫৭ দশমিক ২৪, সিলেটে ৬৭ দশমিক ২ ও বরিশালে ৭৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে সরকারি বিদ্যালয়ে।

প্রাথমিক শিক্ষা পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, ঢাকায় প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ৯০৭ জন। তাদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে ৪৫ হাজার ৪১৮ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২৩। তাদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে মাত্র ২ লাখ ৯০ হাজার ৬০৩ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে এখানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২০ দশমিক ৬ শতাংশ পড়াশোনা করছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাব, নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধিক্য এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের অনীহার কারণেই ঢাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীরা কম ভর্তি হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হার ৪ বছরে সর্বনিম্ন

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হার ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর গড় ভর্তি হারের চেয়ে নিচে ছিল। এক দশক ধরে সামান্য বৃদ্ধির পর ২০২২ এ এসে তা আবারো কমে যায়, যা গেল চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হার ২০২১ সালের ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বৈশ্বিক গড় ছিল ৪২ শতাংশ। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে—বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে, সেখানে গড় হার ৩৭ শতাংশ।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়বহুল এবং এটি দিন দিন আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।’

তিনি বলেন, ভর্তি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে ব্যয় বৃদ্ধি।

ইউনেস্কো গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২ অনুযায়ী, বাংলাদেশে পরিবারগুলো শিক্ষার মোট ব্যয়ের প্রায় ৭১ শতাংশ যোগান দেয়।

এত বিপুল ব্যয় সত্ত্বেও স্নাতকের পর কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত, বলেন আজাদ চৌধুরী।

‘আমরা একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় খুলছি কিন্তু স্নাতকদের কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে এগুলো চালু হচ্ছে না। একাডেমি-ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে যোগসূত্রের অভাব রয়েছে।

লেবার ফোর্স জরিপ ২০২২ অনুসারে, পাঁচ বছরে স্নাতক বেকারত্ব দ্বিগুণ হয়েছে।

২০১৬-১৭ সালের জরিপে মোট ৩ লাখ ৯০ হাজার গ্র্যাজুয়েট বেকার পাওয়া গেছে। জরিপের সর্বশেষ সংস্করণে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৯ হাজারে।

বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২০১৬-১৭ সালের ১১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

১৫ শতাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ নেই

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

গবেষণামূলক কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম বড় একটি দায়িত্ব। কিন্তু দেশের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় গুরুত্ব দিচ্ছে না। শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫ শতাংশ ২০২২ সালে গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ রাখেনি। এর মধ্যে কয়েকটি পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে।

এ ছাড়া নতুন কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও ওই বছর গবেষণায় বরাদ্দ ছিল না।

অবশ্য পরিচিত ও সুনাম থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণায় তুলনামূলক বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তুলনামূলকভাবে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার অবস্থাও ভালো।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫% ট্যাক্স দিতে হবে

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪, বণিক বার্তা

সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর (ট্যাক্স) দিতে হবে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি করে গতকাল আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত দুই প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র চালানোর জন্য ট্যাক্স আহরণ দৈনন্দিন কাজ। অর্ডিন্যান্স অনুসারে সবার জন্য ট্যাক্স ধার্য করা আছে। ব্যক্তিদের জন্য ২৫ শতাংশ। সেখানে তাদের (প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়) কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এর সঙ্গে ছাত্রদের সম্পর্ক নেই। ভ্যাট হলে ছাত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকত। এখন ট্যাক্স তাদের (প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ) মালিকদের দিতে হবে। আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে।

যৌন হয়রানির ঘটনা বারবার, প্রকাশ্যে এলে শুরু হয় তোড়জোড়

২০ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা। কখনো কখনো নারী শিক্ষকেরাও ভুক্তভোগী হচ্ছেন।

দেশের শীর্ষ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দুই বছরে ২৭টি যৌন হয়রানির ঘটনা পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় অভিযোগ জমা পড়েছে যৌন হয়রানিবিষয়ক অভিযোগ জানাতে গঠিত ‘অভিযোগ কমিটি’তে। হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই কমিটি গঠন করা হয়। তবে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটির কার্যকারিতা কম। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা এই কমিটির কথা জানেনই না।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনেক অভিযোগ এই কমিটিতে জমা হয় না। অনেক ঘটনা শিক্ষার্থীরা গোপন রাখেন হয়রানির ভয়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানালেও তা গোপন রাখা হয়। ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তবে ঘটনা প্রকাশ্যে এলে সক্রিয় হয় প্রশাসন।

দেশের আড়াই কোটির বেশি মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে

২৬ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

দেশের ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৪১ শতাংশ গত বছর প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার বাইরে ছিল। ওই সময় অর্থাৎ ২০২৩ সালে তারা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী হিসেবে ছিল না। মোট জনসংখ্যার হিসাবে শিক্ষার বাইরে থাকা শিশু ও তরুণের এই সংখ্যা ২ কোটি ৬২ লাখের বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত রোববার বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩-এর ফলাফল প্রকাশ করে। সেখানে শিক্ষাবহির্ভূত জনসংখ্যার বিষয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য বিবিএস ৩ লাখ ৮ হাজার ৩২টি পরিবারের ওপরে জরিপ পরিচালনা করে।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, শিক্ষাবহির্ভূত জনগোষ্ঠীর হার ২০২২ সালের তুলনায় খুব সামান্য কমেছে। তবে করোনার আগের সময়ের তুলনায় এই হার এখনো অনেক বেশি। মহামারির ঠিক আগে ২০১৯ সালে দেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে না থাকা জনগোষ্ঠীর হার ছিল ২৯ দশমিক ২৭। সেই হিসাবে শিক্ষার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর হার গত ৫ বছরে প্রায় ১১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে।

স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, সাধারণত ৫ থেকে ২৪ বছর হলো মানুষের শিক্ষাকালীন বয়স। এ সময়ে যেকোনো ব্যক্তির প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পড়াশোনার মধ্যে থাকার কথা। এই বয়সী মানুষের মধ্যে যারা কখনোই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়নি কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়েছে, তাদের হিসাব দেখানো হয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে ব্যবধান হ্রাসে শিক্ষার্থী বেড়েছে আলিয়ায়, দারিদ্র্যে বেড়েছে কওমিতে

মার্চ ২৯, ২০২৪, বণিক বার্তা

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বাসিন্দা মো. আবুল কালাম। নিজে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও দুই সন্তানকে পড়াচ্ছেন আলিয়া মাদ্রাসায়। এ বিষয়ে তার ভাষ্য হলো ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার নিশ্চয়তা থাকায় সন্তানকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন তিনি। আবুল কালাম বলেন, ‘‌আমাদের সময় মাদ্রাসায় শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হতো। কিন্তু এখন আলিয়া মাদ্রাসা ও স্কুলে একই বই পড়ানো হয়। বরং মাদ্রাসায় বাড়তি হিসেবে ধর্মীয় বিষয়গুলো পড়ানো হয়। সন্তানকে মাদ্রাসায় ভর্তি করালে আধুনিক ও ধর্মীয়—দুটো শিক্ষাই পাওয়া যাচ্ছে। আর এখন দেশে অনেক ভালোমানের মাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসা থেকে পড়েও ছেলে-মেয়েরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। এ কারণে সব দিক বিবেচনা করে দুই সন্তানকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছি।’

শুধু আবুল কালামই নন, বিগত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অভিভাবক সন্তানদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসা বেছে নিয়েছেন। দেশে বর্তমানে মূলধারার মাদ্রাসা রয়েছে দুই ধরনের—আলিয়া ও কওমি। এর মধ্যে আলিয়া মাদ্রাসাগুলোর তথ্য সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ শিক্ষাতত্ত্ব ‍ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০২২ অনুযায়ী বর্তমানে আলিয়া মাদ্রাসাগুলোয় ইবতেদায়ি (প্রাথমিক সমমান) থেকে কামিল (স্নাতকোত্তর সমমান) পর্যন্ত ৪০ লাখ ২০ হাজার ৬৯০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে, যা ২০ বছরে সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে এসব মাদ্রাসায় মোট শিক্ষার্থী ছিল ৩৮ লাখ ৬ হাজার ৩৩৬ জন। সে অনুযায়ী গত চার বছরে আলিয়া মাদ্রাসাগুলোয় শিক্ষার্থী বেড়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৪ জন বা ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

আলিয়া মাদ্রাসার পাশাপাশি শিক্ষার্থী বেড়েছে কওমি মাদ্রাসায়ও। দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম বর্তমানে ছয়টি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে বৃহত্তম হিসেবে ধরা হয় বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক)। এ বোর্ডের অধীন মাদ্রাসাগুলোয় গত তিন বছরে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক লাখ।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলিয়া মাদ্রাসা ও স্কুলের পাঠ্যপুস্তক এখন একপ্রকার অভিন্ন। গত কয়েক বছর মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের একাংশ মেডিকেল, বুয়েটসহ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছেন। আবার কিছু কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে বিদেশী কিছু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি থাকায় সেখান থেকেও অনেকে সরাসরি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার খরচ কম হওয়ায় দরিদ্র অনেকেই সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষাকেই বেছে নিচ্ছেন। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি এসব বিষয়ও এখন মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষার্থী বাড়ানোয় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন তারা।

প্রাথমিকে ২৫ ও মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে

৩০ মার্চ ২০২৪, দেশ রূপান্তর

গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে। এক জরিপে বলা হয়েছে, প্রাথমিকে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ বেড়েছে শিক্ষা ব্যয়।

‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা: মহামারি উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বুয়েটে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত

০১ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এই আদেশ দিয়েছেন।

বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়।

২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষের দেওয়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ বৈধতা নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন আজ রিটটি করেন।

শিক্ষক সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে সরকারি কলেজগুলোয়

এপ্রিল ০৪, ২০২৪, বণিক বার্তা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পটিয়া সরকারি কলেজ। কলেজটি সরকারীকরণ হয় ৪৪ বছর আগে। বর্তমানে এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষক সংকট। প্রতিষ্ঠানটিতে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ৪৯ জন। এ অনুযায়ী কলেজটিতে প্রতি ২০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র একজন।

কলেজটিতে সর্বশেষ নতুন শিক্ষকের পদ সৃজন করা হয়েছিল এটিকে সরকারি করার সময় ১৯৮০ সালে। সে সময়ে এখানে শিক্ষকের পদ সৃজন করা হয়েছিল ৫৬টি। এরপর গত ৫৩ বছরে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। যদিও এ সময় নতুন করে আর কোনো শিক্ষকের পদ সৃজন করা হয়নি। এমনকি এখন এ ৫৬ পদের মধ্যেও আটটি শূন্য অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে এ কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রির প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন একজন। অ্যাকাউন্টিংয়ে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন তিনজন। দর্শনের জন্য শিক্ষকের পদ মাত্র দুটি। এমনকি কলেজটিতে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ছাড়া আর কোনো অধ্যাপকের পদ নেই।

একই সমস্যায় কম-বেশি ভুগছে দেশের অধিকাংশ সরকারি কলেজ। বাংলাদেশ শিক্ষাতত্ত্ব ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষক সংকট ক্রমেই বেড়ে চলছে। বর্তমানে সরকারি কলেজগুলোয় প্রতি শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী আছে ৯৭ জন, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে দেশে সরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ছিল ১:৭৯।

ব্যানবেইসের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি কলেজগুলোর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত সবচেয়ে বেশি স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজগুলোয়। এসব কলেজে এখন প্রতি ১১৭ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন একজন। এছাড়া স্নাতক পর্যায়ে ৭৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন, ডিগ্রি (পাস) কলেজগুলোয় ৫৫ ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজগুলোয় ৪১ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক রয়েছেন।

শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সুবিধা খাতে ঘাটতি ৫৬০ কোটি

১৯ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (এমপিওভুক্ত) শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে বছরে ঘাটতি ৫৬০ কোটি টাকার বেশি। প্রতি বছরই এ ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাভাবে ৩৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এ জন্য ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন।

গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার অনিষ্পন্ন আবেদন নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সেখানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে বিপদজনক রাসায়নিক, ক্যান্সারের ঝুঁকি!

চ্যানেল আই অনলাইন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দেশের বাজারে বহুল ব্যবহৃত টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে বিপদজনক মাত্রায় রাসায়নিক ‘প্যারাবেন’ পাওয়া গেছে, যা মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াবে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

সাউথ কোরিয়ার ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ (ডব্লিউআইওইএইচ) সংস্থার সহযোগিতায় এই গবেষণাটি পরিচালনা করে বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারকে এই রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে প্যারাবেনের উপস্থিতি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

প্যারাবেন কী?

প্যারাবেন হলো জেনোস্ট্রোজেন। অর্থাৎ মানবদেহে বিদ্যমান হরমোনের মতোই এর রাসায়নিক গঠন। প্যারাবেন যা সাধারণত প্রসাধনী, দৈনন্দিন ব্যবহৃত ব্যক্তিগত পরিচর্যা পণ্য (টুথপেস্ট, হ্যান্ডওয়াশ, সাবান, শ্যাম্পু) মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো কার্যকর প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে। প্যারাবেন কম খরচ এবং সহজলভ্য হওয়ার কারণে উৎপাদনকারীরা এটি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করে থাকে।

শতাধিক বছরেরও বেশি সময় ধরে খাদ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল, ব্যক্তিগত যত্ন এবং প্রসাধনী শিল্পগুলিতে প্যারাবেনগুলি সংরক্ষণাগার হিসাবে নিরাপদে ব্যবহৃত হয়েছে। প্যারাবেনের প্রধান ধরণগুলির মধ্যে মেথিলপ্যারাবেন, এথিলপ্যারাবেন, প্রোপলপ্যারাবেন, বুটিলপ্যারাবেন, আইসোপ্রাইপ্যারাবেন এবং আইসোবটিয়ালপ্যারাবেন।

যা পাওয়া গেল গবেষণায়

বাংলাদেশের জনপ্রিয় টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশগুলোতে প্যারাবেনের ব্যবহারের মাত্রা অনুসন্ধানের গবেষণা পরিচালনা করে এসডো। গবেষণা পরিচালনার জন্য ঢাকার বিভিন্ন স্থানীয় দোকান থেকে টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশের ৩০টি নমুনা সংগ্রহ করার পর ল্যাব পরীক্ষার জন্য সাউথ কোরিয়ার ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ (ডব্লিউআইওইএইচ) সংস্থায় পাঠানো হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশের সকল নমুনাতেই নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নমুনাগুলোতে ফ্লোরাইড (শুধু টুথপেস্টে) এবং সোডিয়াম ডাইক্লোরাইডের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। প্রাপ্তবয়স্কদের পারসোনাল কেয়ার পণ্যে ২২টি নমুনার মধ্যে ৫টি পণ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, একটি টুথপেস্টে ১ হাজার ৮২৩ মাইক্রোগ্রাম এবং দুটি হ্যান্ডওয়াশের নমুনায় ১ হাজার ৪০৩ মাইক্রোগ্রাম ও ১ হাজার ৮৩৪ মাইক্রোগ্রামের প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এমনকি শিশুদের একটি টুথপেস্টেও ৬৫৯ মাইক্রোগ্রাম মিথাইলপ্যারাবেন এবং ৫০.৫ মাইক্রোগ্রাম বিউটাইলপ্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

৪২% শিক্ষকের পদ খালি রেখে চলছে সরকারি মেডিকেল কলেজ

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের নিজস্ব কোনো হাসপাতাল নেই। হাতেকলমে শিখতে ও সন্ধ্যাকালীন পাঠ নিতে শিক্ষার্থীদের যেতে হয় জেলা সদর হাসপাতালে। প্রতিদিন চারবার যাওয়া-আসায় কমপক্ষে চার ঘণ্টা সময় চলে যায়। এভাবে চলছে ১২ বছর।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। কলেজটি ঝিলংজা ইউনিয়নে। আর সদর হাসপাতাল শহরের মধ্যে। কলেজ ও হাসপাতালের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। যাওয়া-আসা করতে হয় শহরের মধ্য দিয়ে।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমবিবিএস তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে হয় দিনে দুবার, সকালে ও সন্ধ্যায়। একবার যেতে এক ঘণ্টা সময় যায়। এভাবে দুবার যাওয়া ও দুবার আসায় প্রতিদিন চার ঘণ্টা সময় চলে যায়। শিক্ষার্থীদের ওপর বড় চাপ যাচ্ছে।’

কলেজে আরও সমস্যা আছে। গত শনিবার পঞ্চম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজে পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক নেই। প্রত্যেক বিভাগে শিক্ষকের স্বল্পতা আছে। অফথালমোলজি বা চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগে একজনও শিক্ষক নেই।

কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে একজন অধ্যক্ষসহ শিক্ষকের পদ আছে ৯৫টি। এর মধ্যে ৪২ জন শিক্ষকের পদ খালি। এই কলেজে অধ্যাপকের পদ আছে ১৫টি, এর মধ্যে ১২টি পদই খালি। কলেজ পড়ানোর কাজ চালাচ্ছেন মূলত প্রভাষকেরা। তাঁদের পদ আছে ২৫টি, তাঁদের মধ্যে আছেন ২১ জন। ৪৪ শতাংশ শিক্ষক ছাড়াই চলছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ।

তবে এ অবস্থা শুধু একটি সরকারি কলেজের নয়। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৩৭টি। প্রায় সব মেডিকেল কলেজ তীব্র শিক্ষক–সংকটের মধ্যে আছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক ছাড়া যথাযথ পাঠদান ও পাঠ গ্রহণ সম্ভব না। যথাযথ পাঠ গ্রহণ ছাড়াই প্রতিবছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করে চিকিৎসকের পেশাজীবন শুরু করছেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজে ৪২ শতাংশ শিক্ষকের পদ খালি।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গ্রামের ১৪ শতাংশ মানুষ

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে গ্রামাঞ্চলের ১৪ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, শহরে এ হার আরও বেশি। এই আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান ২৬ শতাংশ। সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালে আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা ও ময়মনসিংহের আট উপজেলায় সমীক্ষাটি চালানো হয়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, এ দুই বিভাগে ৭০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন। আর গ্রামের ১৪ শতাংশ মানুষ এরই মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। শহরে বসবাসকারীদের মধ্যে আক্রান্তের হার আরও বেশি বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়। ২৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ১১ হাজার মানুষের ওপর সমীক্ষাটি চালানো হয়।

খুলনা অঞ্চলে স্ট্রোক বেশি

০৬ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন-সংলগ্ন উপজেলা কালীগঞ্জের সোনাটিকারী গ্রামের মো. গোলাম বারির বয়স ৪০ বছরের কিছু বেশি। বছর তিনেক আগে তিনি স্ট্রোক বা পক্ষাঘাতের শিকার হন। তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। সেই থেকে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। চলাফেরা স্বাভাবিক হয়নি। আগে কৃষিকাজ করতেন তিনি, এখন মুদিদোকান চালানোর চেষ্টা করছেন।

২২ ফেব্রুয়ারি মো. গোলাম বারির স্ত্রী এই প্রতিবেদককে বলেন, বড় মেয়েটার বিয়ে দেওয়ার পর মনটা ভালো ছিল না। একদিন হঠাৎ স্ট্রোক করে। তবে কেন স্ট্রোক করল, তার উত্তর তাঁদের জানা নেই। তিনি আরও বলেন, এলাকায় স্ট্রোক নতুন না। দুই বাড়ি পরে আরও একজন স্ট্রোকের রোগী আছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বুলবুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিতভাবে স্ট্রোকের রোগী হাসপাতালে না এলেও মাঝেমধ্যে রোগী আসে। গুরুতর রোগী সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

দেশের এই অঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোক বাড়ছে বলে আলোচনা আছে। এই অঞ্চলে পানীয় জলের সংকট চলছে। এলাকার নদী-খাল-বিল-পুকুরের পানি সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে বেশি লবণাক্ত। খাবারে ও পানীয় জলে লবণ বেশি। খাবার ও জলের সঙ্গে নিয়মিতভাবে লবণ বেশি খাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক বেশি। তবে এ নিয়ে গবেষণালব্ধ সুনির্দিষ্ট তথ্য হাতে নেই।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের সাতটি বিভাগের মধ্যে স্ট্রোকের হার সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগে। এ-ও দেখা গেছে, খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে স্ট্রোক বেশি তিনটি জেলায়: খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে। গবেষণায় ময়মনসিংহ বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে স্ট্রোকের প্রবণতা ও ঝুঁকিবিষয়ক গবেষণাটি করেছে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স রিসার্চ।

আরও পড়ুন

কীভাবে ঠেকাবেন হিট স্ট্রোক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) থেকে সংগ্রহ করা পরিসংখ্যানেও দেখা যায়, স্ট্রোকে মৃত্যুহার আট বিভাগের মধ্যে খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে ২০ হাজার ৬৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। তাতে দেখা যাচ্ছে, খুলনা বিভাগে মৃত্যুহার (প্রতি এক হাজার জনসংখ্যায়) শূন্য দশমিক ১৭। এরপর আছে ঢাকা বিভাগ। এই বিভাগে মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ১৬। স্ট্রোকে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম বিভাগে, শূন্য দশমিক শূন্য ৬।

সরকারি হাসপাতালে ৭ হাজার ৪৫৯ জন চিকিৎসক ওএসডি হয়ে আছেন

০৯ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

‘যেখানেই যাই, সেখানেই হাসপাতালে ডাক্তার থাকে না শুনতে পাই’—এ আক্ষেপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরই ৭ হাজার ৪৫৯ জন চিকিৎসককে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে রেখেছে, যা সরকারি চিকিৎসক সংখ্যার ২১ শতাংশ।

বিশেষ ভারপ্রাপ্ত মানে হলো, এই চিকিৎসকেরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া থেকে দূরে রয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসক–স্বল্পতার এটি অন্যতম কারণ। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক–স্বল্পতার কারণে রোগীরা অনেক ক্ষেত্রে সেবা পান না। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের নিয়ে ঢাকায় আসার প্রবণতা রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত চারটি কারণে সরকারি কর্মক্ষেত্রের চিকিৎসকেরা ওএসডি হন। প্রথমত, উচ্চশিক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা ছুটি নেন চিকিৎসকেরা। দ্বিতীয়ত, লিয়েন বা ছুটি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে (সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার বাইরে) কাজ করা। তৃতীয়ত, অনুমোদিত পদের চেয়ে পদোন্নতি পাওয়া চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি হলে কাউকে কাউকে ওএসডি করে রাখতে হয়। চতুর্থত, অপরাধ করলে শাস্তি হিসেবে ওএসডি করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কারণে ওএসডি হওয়া চিকিৎসকের সংখ্যা ৫০ জনের কম। অন্যদিকে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার জন্য ওএসডি হওয়া চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ওএসডির সুবিধা ভোগ করছেন। অনেকে যোগ্য হয়েও সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে কার্যকর নীতিমালা দরকার।

চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী মনে করেন, চিকিৎসকদের বড় সংখ্যায় ওএসডি হিসেবে রাখার প্রবণতার অবসান হওয়া উচিত। এত অধিকসংখ্যক চিকিৎসককে ছুটিতে রাখার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। তিনি বলেন, অনুমোদিত পদ অনুযায়ী জনবল থাকার পরও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের স্বল্পতার একটি বড় কারণ অধিকসংখ্যক ওএসডি।

চিকিৎসকদের সমস্যাটি পুরোনো। জেলা-উপজেলায় চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়ার পর দেখা যায়, কয়েক মাস থেকেই তাঁরা ওএসডি হয়ে চলে আসেন। এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, সভা হয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ঢাকার ছয় হাসপাতালে রোগীদের জন্য কটু গন্ধের ভাত, পানির মতো ডাল ও ছোট টুকরার মাছ

১১ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

বাগেরহাটের নৃপতি দাশ জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। তাঁর জিবে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাই তাঁকে নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়াতে হচ্ছে। তবে ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নৃপতির জন্য হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয়েছিল তাতে ছিল মোটা চালের ভাত, প্রায় গলে যাওয়া একটু সবজি, পাতলা ডাল আর ভেজে রান্না করা এক টুকরা মাছের লেজ।

নৃপতির জন্য স্যুপ বা তরল খাবার কেন দেওয়া হলো না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জানা গেল, চিকিৎসক রোগীর ফাইলে ‘নরমাল ডায়েট’ লিখে রেখেছেন। তাই তাঁকে সাধারণ খাবারই দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু হাসপাতালের খাবার খেতে পারছেন না, তাই স্যুপসহ অন্য খাবার কিনতে দিনে দেড় শ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে, জানালেন মেয়ে শ্রাবন্তী।

সম্প্রতি রাজধানীর ছয়টি হাসপাতাল সরেজমিনে ঘুরে রোগীর খাবার ও পথ্যের সার্বিক চিত্রটি দেখার চেষ্টা করেছেন এই প্রতিবেদক। হাসপাতালগুলো হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।

হাসপাতালগুলো ঘুরে কিছু সাধারণ অভিযোগ পাওয়া গেছে: মোটা চালের ভাত, ভাতে কটু গন্ধ, ডাল–পানির মতো পাতলা ও স্বাদহীন তরকারি। ক্যালরি মেপে রোগীর বয়স, ওজন ও রোগের ধরন অনুযায়ী খাবার দেওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে পুষ্টিবিদ রাখা হয়েছে নামে মাত্র। এ ব্যাপারে নজরদারির ঘটতি আছে।

ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার অভিযোগের প্রতিকার নেই

১৬ মার্চ ২০২৪, সমকাল

রাজধানীর মালিবাগের জেএস হাসপাতালে গত মাসে খতনা করাতে গিয়ে আহনাফ তাহমিন আয়হাম নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে শিশুটির পরিবার থানায় মামলার পাশাপাশি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ দেয়।

ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে এন্ডোস্কোপি করাতে গিয়ে একই মাসে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে রাহিব রেজা (৩১) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তাঁর স্বজনও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ও হাসপাতালটির বিরুদ্ধে মামলা এবং বিএমডিসিতে পত্র দিয়েছেন।

গত জানুয়ারিতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করতে নিয়ে পলি খাতুন নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। তাঁর স্বজনও চিকিৎসক সিরাজী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিএমডিসিতে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করেন।

চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্ব সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএমডিসির। ওপরের তিনটি অভিযোগের তদন্তই শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

এসব অভিযোগ তো তুলনামূলক নতুন। এখানে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুসহ গত ২০ বছরে পাঁচ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে অর্ধেক অভিযোগই নিষ্পত্তি করতে পারেনি সংস্থাটি। এতে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটাকে নখদন্তহীন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরাই।

এ ছাড়া এ ধরনের অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও জমা পড়ে। তবে সেখানে এ পর্যন্ত কত অভিযোগ জমা পড়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও হিসাব নেই কারও কাছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসে বিভিন্ন হাসপাতালে অনিয়ম ও চিকিৎসায় অবহেলা নিয়ে কমপক্ষে ১০টি অভিযোগ জমা পড়ে। তবে এর প্রতিকার দিতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। অনেক সময় মাঝপথে তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেই।

অধিদপ্তর শুধু হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তবে জনবল সংকটের কারণে ব্যবস্থা নিতে অনেক সময় লেগে যায়।

বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. লিয়াকত হোসেন বলেন, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগে। অনেক ক্ষেত্রে মাঝপথে অভিযোগ উঠিয়ে নেন রোগীর স্বজন। এতে বিপাকে পড়তে হয়। জনবল ও বিচারিক সক্ষমতার অভাবে বিচারে এই ধীরগতি। প্রতিষ্ঠানটির নেই নিজস্ব ভবন, দক্ষ জনবলের সংকটও তীব্র। এ ছাড়া নানা সংকটে প্রতিষ্ঠাটি জর্জরিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএমডিসি শুধু চিকিৎসকদের নৈতিক বিষয়গুলো দেখে থাকে। এ ছাড়া হাসপাতালে মৃত রোগীদের ডেথ রিভিউ বা মৃত্যু পর্যালোচনা যথাযথ না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসায় ত্রুটি শনাক্ত করা জটিল হয়ে পড়ে। চিকিৎসকদের জেল-জরিমানা করার বিধান নেই বিএমডিসির।

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের নামে মামলাও হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিএমডিসিতে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তবে এ ধরনের অভিযোগে একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা কিংবা বিচার হওয়ার নজির নেই। বস্তুত প্রতিষ্ঠানটির সেই ক্ষমতাও নেই। তারা সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বড়জোর কোনো চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।

শিশুমৃত্যু বেড়েছে, কমেছে গড় আয়ু

২৫ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

দেশে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। নবজাতক, এক বছরের কম বয়সী এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু—তিন ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হার বাড়তি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বিগত পাঁচ বছরের হিসাবে এমন চিত্র উঠে এসেছে। শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমেছে। ২০২৩ সালের হিসাবে, দেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। আগের বছর যা ছিল ৭২ দশমিক ৪।

বিবিএসের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদনে (২০২৩) এই হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।

বিবিএস প্রতিবছরই ‘ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ প্রকাশ করে থাকে। এ পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্ম, মৃত্যু, আয়ুষ্কাল, বিয়ের মতো নানা বিষয়ের চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১ জুলাই দেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজারে।

বিবিএসের হিসাবে, দেশে পুরুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৮ বছর। অন্যদিকে নারীর গড় আয়ু হয়েছে ৭৩ দশমিক ৮ বছর। এর মানে, গড় হিসাবে এ দেশে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন। প্রত্যাশিত গড় আয়ু মানে হলো, ২০২৩ সালে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা গড়ে ৭২ দশমিক ৩ বছর আয়ু পেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়।

শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমেছে। ২০২৩ সালের হিসাবে, দেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। আগের বছর যা ছিল ৭২ দশমিক ৪।

শিশুমৃত্যু কেন বাড়ল

বিবিএস বলছে, ২০২২ সালে দেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২৫ জন, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ২৭। পাঁচ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২১।

অন্যদিকে এক মাসের কম বয়সী নবজাতকের মৃত্যুহার হঠাৎ বেড়ে গেছে। প্রতি এক হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে ২০ জন মারা যায়। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৬। পাঁচ বছর আগে ছিল ১৫। এ ছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৩ জন। ২০২২ সালে ছিল ৩১ জন। পাঁচ বছর আগে ছিল আরও কম, ২৮ জন।

ভেজাল চেতনানাশকে তিন শিশুর মৃত্যু

০৩ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভেজাল চেতনানাশকে তিন প্রতিবন্ধী শিশু মারা গেছে। ব্যবহৃত ওষুধের নমুনা পরীক্ষায় মৃত্যুর কারণ শনাক্ত করেছে বিএসএমএমইউ। বিএসএমএমইউর সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকেরা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এই তিন শিশু ছাড়াও গত তিন-চার মাসে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে চেতনানাশক প্রয়োগের পর শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এসব মৃত্যুর কারণও ভেজাল চেতনানাশক হতে পারে। বাজারে নকল বা ভেজাল চেতনানাশক ‘হ্যালোথেন’ রয়েছে।

চার মাসের ব্যবধানে বিএসএমএমইউর অ্যানেসথেসিয়া অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বয়স পাঁচ বছরের কম। তারা ছিল শ্রবণপ্রতিবন্ধী।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চেতনানাশক ‘হ্যালোথেন’ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। দেশে হ্যালোথেন তৈরি করত শুধু এসিআই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসিআইয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বব্যাপী হ্যালোথেনের ব্যবহার কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এসিআই গত বছরের জুন মাস থেকে হ্যালোথেনের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করে দেয়।

হ্যালোথেন রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে নিশ্বাসের সঙ্গে রোগীর শরীরে দেওয়া হয় এটি।

অবেদনবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিশিয়ানসের (বিএসএ-সিসিপিপি) ধারণা, বাজারে নকল হ্যালোথেন আছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চেতনানাশক ব্যবহারের পর বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনার পেছনে এই নকল বা ভেজাল হ্যালোথেন থাকতে পারে।

তিন শিশুর মৃত্যু

চার মাসের ব্যবধানে বিএসএমএমইউর অ্যানেসথেসিয়া অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বয়স পাঁচ বছরের কম। তারা ছিল শ্রবণপ্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে শিশু।

বিএসএমএমইউ সূত্র জানিয়েছে, শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রবণসহায়তায় কানে বিশেষ যন্ত্র স্থাপন করা হয়। এর নাম ‘কক্লিয়ার’। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক–কান–গলা বিভাগে ‘কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট’ নামের একটি কর্মসূচি আছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় এই কর্মসূচি থেকে দরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী শিশুদের কক্লিয়ার দেওয়া হয়। বাজারে একেকটি কক্লিয়ারের দাম ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা। শিশুদের সম্পূর্ণ অজ্ঞান করার পর কানে কক্লিয়ার বসানো বা স্থাপন করা হয়। এই তিন শিশুকেও কক্লিয়ার স্থাপনের আগে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে হ্যালোথেন দেওয়া হয়েছিল। তাদের একজন মারা গেছে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর, এরপর একজন ১০ জানুয়ারি এবং শেষ জন ৩০ জানুয়ারি।

হ্যালোথেন কেন ব্যবহার করা হলো

গত বছরের ১৫ জুন এসিআইয়ের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেশের চিকিৎসকদের কাছে এবং চিকিৎসকদের সংগঠনগুলোর কাছে দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী হ্যালোথেনের ব্যবহার কমে আসছে এবং ভবিষ্যতে হ্যালোথেনের বাণিজ্যিক ব্যবহার থাকবে না। তাই তারা হ্যালোথেন উৎপাদন ও সরবরাহের অবস্থায় আর নেই। এসিআইয়ের পক্ষ থেকে হ্যালোথেনের বিকল্প ব্যবহারের জন্য চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

এর চার দিন পর ১৯ জুন এসিআই কর্তৃপক্ষ সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরেকটি চিঠি দেয়। সেই চিঠিতে বলা হয়, হ্যালোথেন তৈরির কাঁচামালের সরবরাহ না থাকায় তাদের পক্ষে বাজারে হ্যালোথেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ওই চিঠির পর আট মাস চলে গেছে। বিএসএমএমইউ বা অন্য হাসপাতালে এত দিন পরে কীভাবে তা ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে বিএসএমএমইউর দুটি বিভাগ একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

অধ্যাপক দেবাশিস বনিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যন্ত্র ও হ্যালোথেন কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রকল্পের। আমরা শুধু জনবল দিয়েছি।’

অন্যদিকে নাক–কান–গলা বিভাগের কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক এ এইচ এম জহিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা হ্যালোথেন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা জানি না। আমাদের জানার কথাও না। এটা অবেদনবিদদের জানার কথা। তাঁরা কাজটি নিয়মিত করেন।’

খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে বড় প্রভাবক স্বাস্থ্য ব্যয়

এপ্রিল ০৫, ২০২৪, বণিক বার্তা

হাসপাতালগুলো গত এক বছরে রোগ নির্ণয়ে করা বিভিন্ন পরীক্ষার ফি বাড়িয়েছে (সরকার নির্ধারিতগুলো ছাড়া) কমপক্ষে ১৫ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ৪০ শতাংশও ছাড়িয়েছে। একই সময়ের মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ ফি ও ওষুধের ব্যয় বেড়েছে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে এ ব্যয় বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এ মুহূর্তে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য ব্যয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত ডিসেম্বর শেষে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ সময় খাদ্যবহির্ভূত খাতগুলোর মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি ছিল স্বাস্থ্যসেবায়। এর আগে অক্টোবরে জনসাধারণের স্বাস্থ্য ব্যয়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩ শতাংশ। নভেম্বরে স্বাস্থ্য ব্যয়ের হার ছিল তুলনামূলক স্থিতিশীল। এ সময় খাতটিতে ব্যয় বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ। আর ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য ব্যয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

চিকিৎসকরাও বলছেন, রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা করা ও ওষুধের পেছনেই স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীদের ব্যয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে রাজধানীর বহুল পরিচিত একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত এক বছরে আমাদের হাসপাতালে রোগ নিরীক্ষায় ব্যয় বেড়েছে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো রোগীদের কাছ থেকে অত্যধিক মূল্য রাখছে। যে পরীক্ষায় ৩০০ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা, সেখানে রোগীদের কাছ থেকে রাখা হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা। আর বছর শেষে অনেক চিকিৎসকের কনসালটেশন ফি বাড়ানো হয়েছে। ডাক্তারভেদে ফি ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে দেড় হাজার আবার দেড় হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০০ বা ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। কারো কারো ক্ষেত্রে তা ৩-৪ হাজার টাকাও করা হয়েছে। আবার ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়িয়েছে কয়েক দফায়।’

টাকার অভাবে তিন কোটি মানুষ পায় না চিকিৎসা

০৭ এপ্রিল ২০২৪, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করলেও নিশ্চিত করা যায়নি সবার জন্য স্বাস্থ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে বড় বাধা চিকিৎসা ব্যয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণাপত্র অনুযায়ী, সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে ব্যক্তির ওপর স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ কমাতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে ঘটছে উল্টো ঘটনা। ব্যক্তির স্বাস্থ্য ব্যয় দিন দিন বাড়ছে আর সরকারের ব্যয় কমছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৯ শতাংশের বেশি নিজের পকেট থেকে খরচ করে এই দুই দেশের নাগরিকরা। আর সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয়ে রোগীর নিজের ব্যয়ের অংশ সবচেয়ে বেশি।

সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বছরে ৮৬ লাখের বেশি মানুষের আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। আর ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে। অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে ১৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসাই পাচ্ছে না। এ হিসাবে ব্ছরে এ দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ প্রয়োজন হলেও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছে পারছে না।

মফস্‌সলে ১৮ সমস্যার মধ্যে কাজ করেন চিকিৎসকেরা

১৯ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

মফস্‌সলে চিকিৎসকদের নানা সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না; নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কর্ম–এলাকায় চিকিৎসকদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার ভালো সুযোগ পায় না। নারী চিকিৎসকেরা যথাযথ সম্মান পান না। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে নোংরা পরিবেশে কাজ করতে হয়।

গ্রামাঞ্চলে বা ছোট শহরে কাজের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা এমন ১৮ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। এসব কারণে চিকিৎসকেরা মফস্‌সলে থাকতে চান না। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ বলছেন, এসব সমস্যার সমাধান না করলে হাজারো চেষ্টায় সরকার গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসক ধরে রাখতে পারবে না।

পরিবেশ

ঢাকার খাল-নদী দূষণ করছে ঢামেকসহ ২২০ হাসপাতাল

জানুয়ারি ২৯, ২০২৪, বণিক বার্তা

পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক)। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোনো তরল বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি প্লান্ট। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, ঢামেকের তরল বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে ঢাকার জীববৈচিত্র্যের আধার হিসেবে খ্যাত বুড়িগঙ্গা। শুধু ঢামেক নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) ২২০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের তরল বর্জ্য দূষিত করছে রাজধানীর খাল ও নদ-নদীগুলোকে।

দূষণকারী হাসপাতালের তালিকায় নাম রয়েছে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল, ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল, ইনফেকশাস ডিজিজেস হসপিটাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটাল, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর। পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিত চিঠি দিলেও হাসপাতালগুলো তরল বর্জ্য নির্গমন কমাচ্ছে না।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ঢাকা জেলার নদ-নদী, খাল-বিল দূষণকারীদের তালিকা চাওয়া হয় ২০২১ সালের নভেম্বরে। এক মাস পর পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার খাল ও নদ-নদী দূষণকারীদের তালিকা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে প্রাথমিকভাবে দূষণের ২৮০টি উৎস চিহ্নিত করা হয়। সেখানে দেখা যায়, শিল্পবর্জ্যের পাশাপাশি রাজধানীর হাসপাতালের তরল বর্জ্যও দূষণের একটি বড় উৎস। প্রতিবেদনে উল্লিখিত ২৮০টি উৎসের মধ্যে ২২০টিই ছিল হাসপাতাল।

৪ হাজারের বেশি ইটভাটা অবৈধ

৩০ জানুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

দেশে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও খুব বেশি সুফল মিলছে না; বরং অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করলেও সেগুলো আবার চালু হয়ে গেছে। দেশে চালু অর্ধেকের বেশি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই, চলছে ইটভাটা আইন অমান্য করে।

চলতি সপ্তাহে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত চার বছরে প্রায় ১ হাজার ৫০০ অবৈধ ইটভাটা বেড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ হাজার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করলেও সেগুলোর ৭৫ শতাংশই আবার চালু হয়ে গেছে।

অবশ্য বেসরকারি পর্যবেক্ষণ বলছে, দেশের বেশির ভাগ ইটভাটা নিয়মবহির্ভূতভাবে চলছে। এসব ইটভাটার কারণে ঘটছে বায়ুদূষণ। গতকাল সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বায়ুর মানের দিক থেকে বিশ্বে ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষ চারের মধ্যে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩-এ বলা হয়েছে, বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা করা যাবে না। কৃষিজমিতেও ইটভাটা অবৈধ। অথচ দেশের প্রায় শতভাগ ইটভাটা এই আইন মানছে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে মোট ৭ হাজার ৮৬টি ইটভাটা চালু আছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এসব ইটভাটায় বছরে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ ইট তৈরি হচ্ছে। এসব ইটভাটার বছরে ১৩ কোটি মেট্রিক টন মাটি লাগে। মূলত কৃষিজমির ওপরের উর্বর অংশ কেটে ইট তৈরি হচ্ছে।

জলাধার ভরাটের দৌড়ে এগিয়ে সরকারি সংস্থা

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প যাতে জলাধারের অবাধ প্রবাহে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে বারবার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ। কিন্তু আইনকানুন, সরকারপ্রধানের নির্দেশনা– কেউই কানে তুলছে না। ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসার কথা যাদের, উল্টো তারাই নির্মূল করছে জলাভূমি। অনুসন্ধান বলছে, জলাশয় দখলের দৌড়ে এগিয়ে আছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। আইনের তেমন কার্যকারিতা না থাকায় দখলকাণ্ডে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিও। দখলদার চেনা গেলেও জলাভূমি থেকে তাদের তাড়ানোর তাড়া নেই কোনো সরকারি সংস্থার। কোনো কোনো সময় জলাশয় উদ্ধারের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আদালতে গেলে দখলদার পাল্টা মামলা ঠুকে থামিয়ে দেয় উচ্ছেদ প্রক্রিয়া। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে ধুঁকছে জলাধার; ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে জলাশয়।

পরিসংখ্যানও দিচ্ছে জলাশয়শূন্য হওয়ার প্রমাণ। ২৮ বছরের মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় জলাধারের পরিমাণ কমে তা এখন দাঁড়িয়েছে ৭ ভাগের ১ ভাগে। ১৯৯৫ সালে ঢাকার সাড়ে ২০ শতাংশ জায়গাজুড়ে ছিল জলাশয়ের পরিধি। ২০২৩ সালে এসে তা ৩ শতাংশেরও নিচে এসে ঠেকেছে। হাওর এলাকায় গত তিন দশকে ৮৭ শতাংশ জলাভূমি কমে ৪০০ বর্গকিলোমিটারে নেমেছে। এতে বন্যার ব্যাপকতা বাড়ছে বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিশ্বের ৩৮ শতাংশ জাহাজই ভাঙা হয় বাংলাদেশে

ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৪, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা শিল্পের যাত্রা শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে। লাভজনক হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে অনেকগুলো ইয়ার্ড। সেখানে বিদেশ থেকে নানা ধরনের পুরনো জাহাজ এনে ভাঙতে থাকেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।ফলে বর্তমানে বিদেশী জাহাজের ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ডগুলো। গবেষণা সংস্থা এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের পরিত্যক্ত ৪৪৬টি জাহাজের মধ্যে ৩২৫টিই ভাঙার জন্য পাঠানো হয় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শিপইয়ার্ডে, এর মধ্যে ১৭০টিই ভাঙা হয় চট্টগ্রামে। যা মোট জাহাজের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। এসব জাহাজের মধ্যে অধিকাংশেই রয়েছে পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর খণিজ পদার্থ অ্যাসবেস্টস।

২০০২ সালে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন জাহাজে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান অ্যাসবেস্টস ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। আর বাংলাদেশে ভাঙা ১৭০টির মধ্যে ১৫৯টি জাহাজই তৈরি হয়েছে ওই নিষেধাজ্ঞার আগে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, জাহাজগুলোতে অ্যাসবেস্টস থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, যখন সেগুলো তৈরি করা হয়েছে, ওই সময় জাহাজ নির্মাণে অ্যাসবেস্টস ব্যবহারের ব্যাপক প্রবণতা ছিল।

এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজ ভাঙার সময় দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিকরা বিস্ফোরণ, বিষাক্ত ধোঁয়া এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসেন। জাহাজ ভাঙার সময় এসব ক্ষতিকর পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্রেও। এসব বিষাক্ত উপাদানে বায়ু ও পানি দূষিত হচ্ছে। এসব জাহাজে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান অ্যাসবেসটস নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের জীববৈচিত্র্য। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় জাহাজ ভাঙার কারণে পরিবেশ দূষিত হয়ে নাজুক অবস্থানে পড়ে গিয়েছে সুন্দরবনের মতো সংবেদনশীল বনাঞ্চলও। একইসঙ্গে তা ক্ষতিগ্রস্ত করছে সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকাকে।

শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে ৪৪৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আর অতীতের গবেষণায় এসব শিল্পের এক তৃতীয়াংশ শ্রমিকই ফুসফুসের রোগ অ্যাসবেস্টোসিসে ভুগে মারা গিয়েছে। শুধু ২০২৩ সালেই চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ডগুলোতে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ৬ জন, এসব ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১৯জন শ্রমিক।

বাংলাদেশে ভাঙা জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে জাপানি ও দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানির আটটি করে জাহাজ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, গ্রিক, সিঙ্গাপুর, রুশ ও ইন্দোনেশিয়ান কোম্পানির ছয়টি করে জাহাজ। এসব জাহাজের অধিকাংশই ওইসব দেশের পতাকাধারী ছিল না। জাহাজগুলোর মালিকরা বিভিন্ন কারণে সুবিধাজনক দেশের পতাকা ব্যবহার করত। মূলত প্রকৃত মালিককে আড়াল করে অন্য কোনো দেশের নামে জাহাজগুলো নিবন্ধন করা হতো। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সিয়েরা লিওন, কমোরোস, লাইবেরিয়া, পানামা ও গ্যাবনসহ আরো কয়েকটি দেশ। চট্টগ্রামে যে ছয়টি গ্রিক জাহাজ ভাঙা হয়েছিল তাতে কমোরোস, বাহামা ও লাইবেরিয়ার পতাকা ছিল।

জাহাজ ডাম্পিংকারীদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীনা মালিকরা। দেশটিতে জাহাজ রিসাইকেলের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও তারা ভাঙার জন্য ৭১টি জাহাজ বিক্রি করেছে, এর মধ্যে ৫৯টিই এসেছে বাংলাদেশের শিপইয়ার্ডগুলোতে।

সংরক্ষিত বন ডুবিয়ে প্রভাবশালীদের হ্রদ, মাছ চাষ

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

চট্টগ্রামে একটি বনের প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমি ডুবিয়ে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সেই হ্রদে করা হচ্ছে মাছ চাষ।

বনটি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া এবং সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এটি বড়হাতিয়া বন নামে পরিচিত। এই বনের একটি অংশ সংরক্ষিত, আরেকাংশ রক্ষিত।

সংরক্ষিত বনে হ্রদ তৈরি তো দূরের কথা, সেখানে প্রবেশই নিষিদ্ধ। আর রক্ষিত বনে অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করা যায়। বড়হাতিয়া বনের যে জায়গায় হ্রদ তৈরি করা হয়েছে, তা সংরক্ষিত ও রক্ষিত দুই অংশের মধ্যেই পড়েছে।

হ্রদটি তৈরি করা হয়েছে বনের সোনাকানিয়া নামের একটি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে। বাঁধের দৈর্ঘ্য ২০০ ফুটের মতো। প্রস্থ ২০ ফুট ও উচ্চতা ১০০ ফুট।

বন বিভাগ বলছে, হ্রদ তৈরির কারণে গামারি, সেগুন, চিকরাশি, অর্জুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় প্রায় পাঁচ লাখ গাছ মারা গেছে। ডুবে যাওয়া জায়গার মধ্যে বন্য হাতির চলাচলের পথ ছিল। খ্যাঁকশিয়াল, শজারু, বন্য শূকর, বনমোরগ, ময়ূর, গুইসাপ, অজগরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী এবং নানা প্রজাতির প্রাণী বাস করত সেখানে।

বন বিভাগ ও উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানিয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মাটির বাঁধটি নির্মাণ শুরু হয়। শেষ হয় ওই বছরের মার্চে। এরপর থেকেই চলছে মাছ চাষ। কৃষকেরা বলছেন, বাঁধ দেওয়ার ফলে ছড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এতে লোহাগড়া ও সাতকানিয়ার ৪ হাজার ২৫৫ একর জমির চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষকেরা শুরু থেকেই সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে এলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি।

অবশ্য বন বিভাগের দাবি, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করলেও সদ্য সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম-১৫) আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।

কৃষকদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণ ও হ্রদ তৈরিতে জড়িত ব্যক্তিরা ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা নেজামুদ্দীন নদভীর একান্ত সচিব ও জেলা পরিষদের সদস্য এরফানুল করিমের ঘনিষ্ঠ।

চিনিকলের বর্জ্যে কালচে দুই নদীর পানি

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

জয়পুরহাট চিনিকলের অপরিশোধিত বর্জ্য নালার মাধ্যমে আক্কেলপুরের আওয়ালগাড়ি গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া চিড়ি নদীতে পড়ছে। নদীটি সেখান থেকে পৌর সদরের সোনামুখী সেতু এলাকায় তুলসীগঙ্গা নদীতে মিলিত হয়েছে। এতে জামালগঞ্জ পাঁচ মাথা থেকে সোনামুখী তুলসীগঙ্গা নদী পর্যন্ত চিড়ি এবং দক্ষিণের অংশ থেকে হলহলিয়া রেলসেতু পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার তুলসীগঙ্গার পানি দূষিত হয়ে কালচে রং ধারণ করেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা মিলেছে এমন দৃশ্যের। স্থানীয়রা বলছেন, পানি কালচে হয়ে দূষিত হওয়ায় দুটি নদীর মাছ ও পানিতে বসবাস করা জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। এ পানির কারণে আশপাশের এলাকায়ও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্যে চিড়ি এবং তুলসীগঙ্গা নদীর পানি দিয়ে কৃষকরা জমিতে সেচও দিতে পারছেন না। এতে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। তবে চিনিকলের বর্জ্যে নদী দূষণ হচ্ছে না বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

তাদের এ দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন চিড়ি নদীর পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল মোত্তালেব। তিনি বলেন, চিনিকলের বর্জ্যের দূষিত পানিতে চিড়ি ও তুলসীগঙ্গা নদীর পানি কালচে ও দুর্গন্ধ হয়ে গেছে। এ পানি দিয়ে কৃষকরা সেচ দিতে পারছেন না। দূষিত পানি নিষ্কাশন বন্ধে অনেকবার আন্দোলন করেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা।

দুই নদীপাড়ের বাসিন্দাদের ভাষ্য, চিনিকলে পুরোদমে আখ মাড়াই চলছে। এর ময়লা, দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি নদীগুলোয় প্রবেশ করায় এলাকায় বসবাস দুর্বিষহ হয়ে গেছে। আওয়ালগাড়ি গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পানি দিয়েই দু’পাশের কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া হতো। ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে এলাকার কৃষকরা কোনো কাজেই এ পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। তাছাড়া তুলসীগঙ্গা নদীর নবাবগঞ্জ ঘাট এলাকায় মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। সেটিরও ক্ষতি হচ্ছে।

চিনিকলের দূষিত পানি দিয়ে সেচ দিতে পারেন না জানিয়ে আওয়ালগাড়ি গ্রামের কৃষক আবু কালাম বলেন, বেশি খরচে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে ফসলে পানি সেচ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়েছে।

তুলসীগঙ্গা নদীতে মাছের অভয়াশ্রম রয়েছে। দূষিত পানিতে অভয়াশ্রমের মাছ মরে যাচ্ছে। সুগার মিলের বর্জ্য নদীতে পড়া রোধ না করতে পারলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে পারে। এমন তথ্য জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক শফিউল আলম বলেন, নদীকেন্দ্রিক কয়েকশ মৎস্যজীবী পরিবার আছে। তাদের পরিবার মাছের ওপর নির্ভরশীল। এ মাছ মরে যাওয়ায় তারাও অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে।

নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন আওয়ালগাড়ি গ্রামের শাজাহান আলী। তবে বছরের এ সময়ে চিনিকলের দূষিত পানি তুলসীগঙ্গায় প্রবেশ করায় মাছ মরে যায় বলে দাবি তাঁর। মাছ না পাওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে আছেন বলে জানান তিনি। প্রতিবছরই নদী দুটি দূষিত হয় বলে জানান আক্কেলপুর সরকারি মুজিবর রহমান কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক আসাদুর রহমান। তিনি বলেন, মাছ ও জলজ প্রাণী মরে পানি দূষিত হয়। এতে মশা-মাছি জন্মায়, রোগ ছড়ায়।

করতোয়ায় বাঁধ দিয়ে বালুর ব্যবসা ভূমি কর্মকর্তার

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

বগুড়া সদর উপজেলায় তেলিহারা এলাকায় করতোয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এলাকার প্রভাবশালী রবিউল ইসলাম খান করতোয়ার বুকে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বালুর ব্যবসা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে বালু তুলে ব্যবসা করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রবিউল ইসলাম ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার হিসেবে টাঙ্গাইলের সখীপুরে কর্মরত। পাশাপাশি প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি নদী থেকে বালু তুলে ব্যবসা করছেন। রবিউলের পক্ষ থেকে তাঁর নিয়োজিত লোকজন বালু ব্যবসা দেখভাল করেন। সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন রবিউল বাড়িতে এসে নিজেই বালু উত্তোলন কার্যক্রম তদারক করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করায় বর্ষা মৌসুমে নদী-তীরবর্তী অনেক কৃষকের আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে নদীর স্রোতোধারা বন্ধ করে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়ায় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। বাঁধের কারণে পানির প্রবাহ না থাকায় নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে ভাটি অঞ্চলে কৃষকদের সেচ কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

বালাইনাশক নিয়ন্ত্রণে নেই নিয়মের বালাই

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

কার্বোফুরান। দানাদার এই কীটনাশক এতটাই ভয়ংকর, জমিতে একবার ব্যবহার করলে ৩০ দিন পর্যন্ত ফসলে লেপ্টে থাকে এর বিষাক্ততা। এটি প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক– দুই কাজই করে। এই ‘শক্তিধর’ বালাইনাশক আগে ব্যবহার করলে পোকা আসে না ফসলের ধারেকাছে, আর কীটপতঙ্গ হানা দেওয়ার পর ব্যবহারে কীট মুহূর্তেই মারা পড়ে। কার্বোফুরানের বিষাক্ততা মানবস্বাস্থ্য ও আবাদযোগ্য জমির উর্বরতার জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে ২০১৬ সালে তা নিষিদ্ধের আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে গত ৩০ জুন কার্বোফুরান নিষিদ্ধ করে সরকার। পরে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের আবদারে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা গেল ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে কার্যকর নজরদারি না থাকায় যেন ফুরাচ্ছে না কার্বোফুরান। এখনও সারাদেশে প্রকাশ্যেই হচ্ছে এ কীটনাশক বিষের দেদার কেনাবেচা।

শুধু কার্বোফুরান নয়; দেশে ভূরি ভূরি মানহীন নিষিদ্ধ বালাইনাশকের (পেস্টিসাইড) কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে কৃষককুল। আবার ডিলারনির্ভর ব্যবসায়ীরা ‘লাভের গুড়’ খাওয়ার আশায় নানা কসরত করে বিদেশ থেকে নিম্নমানের বালাইনাশক উড়িয়ে আনছেন দেশে। অন্যদিকে, কাঁচামাল আমদানির পর দেশে প্রক্রিয়াজাত করে বিপণন করা কীটনাশকের মান অনেক সময় ঠিক থাকছে না। এ ছাড়া একটি অসাধু সিন্ডিকেট নকল কীটনাশক তৈরি করে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বৈধ কোম্পানির কীটনাশকের দামও বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। ফলে উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেকই খরচা হয়ে যাচ্ছে কীটনাশকের পেছনে। অথচ বালাইনাশকের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবসা থামাতে নেই ফলপ্রসূ উদ্যোগ।

নষ্ট হচ্ছে ফসল, মরছে মাছ চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

রাঙামাটির মানিকছড়ির একটি রাবার কারখানা থেকে অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি ছড়ায় ফেলায় প্রায় এক হাজার একর জমির ধান ও সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ছড়ার পানি দূষিত হওয়ায় মারা যাচ্ছে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। পানির সংস্পর্শে আসায় স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব। 

স্থানীয়রা জানান, মানিকছড়ির বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে ফোরস্টার রাবার অ্যান্ড লেটেক্স কারখানা নামের প্রতিষ্ঠানটি রাবার প্রক্রিয়াজাত শুরু করে। স্থানীয় রাবার বাগান থেকে কষ এনে কারখানাটিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ শেষে ঢাকায় পাঠানো হয়। এ রাবার উৎপাদনে ব্যবহার করা বিভিন্ন কেমিক্যালমিশ্রিত বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে মানিকছড়ি ছড়াতে। বর্ষা মৌসুমে ছড়ায় অনেক পানি থাকায় তেমন সমস্যা না হলেও শুষ্ক মৌসুমে তাদের জন্য এটি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারা আরও জানান, শুষ্ক মৌসুমে মানিকছড়ি, মগবানের আদর্শ গ্রাম, রঙ্গেছড়ি, উগেয়েছড়ি, আমছড়ি, কারবোপাড়া, গাত্তোছড়া, দেপ্পোছড়ি মুখসহ কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষের জমিতে সেচ এবং নিত্যব্যবহারের একমাত্র পানির উৎস এই ছড়া। তবে দূষিত এ পানি সেচ দিলে ধানের চারা ও ক্ষেতের ফসল মারা যাচ্ছে। পানি শুকিয়ে গেলে এক ধরনের আবরণ পড়ছে জমিতে। এমন অবস্থায় কৃষকরা বোরো ধানের জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করেছেন। গোসলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে এ পানি ব্যবহার করায় দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। এমন পরিস্থিতিতে কৃষির ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় হাজারো পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ছড়া থেকে সেচ দেওয়া জমির ধান লালচে হয়ে মারা যাচ্ছে। বর্জ্যের কারণে মানিকছড়ি ছড়ার ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পানি সাদা হয়ে উঠেছে। রাবার কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, সামনে কোনো সাইনবোর্ডই নেই। কারখানার ভেতরে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে কেমিক্যালের ড্রাম। কিছু দূর গেলে দেখা মেলে মূল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার। সেখানে বেশ কয়েকটি চৌবাচ্চায় রাখা হয়েছে কেমিক্যালমিশ্রিত বর্জ্য। এই বর্জ্যই ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি ফেলা হয় ছড়াতে। 

দেপ্পোছড়ি গ্রামের অভিনাথ চাকমা, মাল্লিক কুমার তঞ্চঙ্গ্যাসহ একাধিক কৃষক জানান, রাবার ফ্যাক্টরি থেকে কেমিক্যাল বর্জ্য ফেলায় ছড়ার পানি ঘোলাটে ও সাদা হয়ে গেছে। এ পানি সেচ দিলে ফসল মরে যাচ্ছে। গোসল করলে বিভিন্ন চর্মরোগ হচ্ছে। ছড়ার মাছও মারা যাচ্ছে। এ কারণে তারা  ছড়ার পানি ব্যবহার করতে পারছে না। পানির প্রধান উৎস হওয়ায় তারা খুব কষ্টে আছে।

শিল্পবর্জ্যে কমছে কৃষির উৎপাদন

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

কারখানার তরল বর্জ্যে বিষিয়ে উঠেছে তুরাগ নদ ও খাল–বিল। সম্প্রতি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইবাড়ি মকশবিল এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

মাসুদ রানা, গাজীপুর

গাজীপুরের মুক্ত জলাশয়ের সুস্বাদু মাছে একসময় রাজধানী ঢাকার আমিষের চাহিদা মিটত অনেকখানি। নদী-বিলে মাছ ধরে সংসার চালাতেন প্রান্তিক জেলেরা। কিন্তু শিল্পকারখানার বর্জ্যে মুক্ত জলাশয়ের মাছের পরিমাণ দিন দিন কমছে। কারখানার আশপাশের জমিতে কমছে ফসলের উৎপাদন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার শত শত শিল্পকারখানার তরল বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই বাইরে ফেলা হচ্ছে। সেই দূষিত পানি ও বর্জ্য গিয়ে পড়ছে তুরাগ নদ ও খাল-বিলে। এ কারণে আশপাশের জলাশয় ও ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি পরিবেশ অধিদপ্তরকে।

এদিকে খোদ পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় দুই হাজারের অধিক পোশাক কারখানার মধ্যে কেবল ৬০০ ডাইং কারখানায় ইটিপি বা বর্জ্য শোধনাগার রয়েছে। সেগুলোরও সব কটি কার্যকর নয়। পরিবেশদূষণের অভিযোগে বিভিন্ন কারখানায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্নের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কিছুদিন পর আবার চালু হচ্ছে সেই কারখানাগুলো।

মহানগরীর কোনাবাড়ী, বাইমাইল, কড্ডা ও বাঘিয়া, কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ তুরাগ নদ ও আশপাশের বিল থেকে মাছ ধরে পরিবারের খাওয়ার চাহিদা মেটাতেন। কিন্তু কারখানার তরল বর্জ্যের কারণে এখন মাছ মরে যাচ্ছে। যেটুকু মাছ পাওয়া যায়, সেগুলোও খাওয়ার অনুপযোগী। রান্না করলে রাসায়নিকের গন্ধ পাওয়া পায়।

বাঘিয়া এলাকায় তুরাগ নদের তীরে শতাধিক মাঝি পরিবার বংশপরম্পরায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। গ্রামের বাসিন্দা জরুনাল রাজবংশী পাশের বিলে নৌকা নিয়ে জাল ফেলছেন। কিন্তু গত ১০ দিনে কোনো মাছের দেখা পাননি বলে জানালেন তিনি। দূষণে বিলের মাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে জরুনাল রাজবংশী বলেন, ‘আগের মতো মাছ এখন আর পাওয়া যায় না। হাতে কাজকাম নেই, তাই জাল ফেলে বসে আছি যদি কিছু পাওয়া যায়।’

গাজীপুর মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল শাহীন জানান, জেলায় ১ হাজার ৭২০ হেক্টর বিল রয়েছে। এ ছাড়া তুরাগ, বংশাইসহ ১০টি নদ–নদীর ১ হাজার ৭৫৩ হেক্টর জলাশয়ে প্রতিবছর ২ হাজার ৩২৩ মেট্রিক টন দেশি মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু গত ১৪ বছরে মাছের উৎপাদন কেবলই কমছে। এর জন্য প্রধানতম দায়ী কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য। সুস্বাদু দেশি মাছের উৎপাদন ফিরিয়ে আনতে হলে প্রশাসনের সব বিভাগের সমন্বয় জরুরি বলে জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৪ বছর আগে গাজীপুরের মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন হতো ২০ হাজার ৩৬১ মেট্রিক টন। বর্তমানে মুক্ত জলাশয়ে এই মাছের উৎপাদন কমে ১ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।

নগরের কোনাবাড়ী এলাকায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে (বিসিক) ডাইং ও ওয়াশিং কারখানা রয়েছে ১০টি। সরেজমিন দেখা গেছে, কারখানার প্রধান ফটকের সামনের নালা দিয়ে কুচকুচে কালো পানি ফেলা হচ্ছে। নাক না ধরে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় না। এই তরল চলে যাচ্ছে বাইমাইল তুরাগ নদের পাড় ও আশপাশের বিলে। ওই নালা দিয়ে শুধু বিসিকের লাইন নয়, আশপাশের কারখানাগুলোর তরল বর্জ্যের লাইনও সংযুক্ত করা হয়েছে। কড্ডা, বাইমাইল, সদর উপজেলার মনিপুর, টঙ্গীর বিসিকসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানাতেও একই দৃশ্য দেখা গেছে।

কোনাবাড়ী বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী বলেন, বিসিকের ভেতরে থাকা সব কারখানা ইটিপি ব্যবহার করছে। সেগুলো নিয়মিত মনিটরিংও করা হয়। আশপাশের অন্য কারখানার বর্জ্য বিলে বা নদে ফেলা হচ্ছে বলে তাঁর ধারণা।

কলকারখানার বর্জ্যে ফসলি জমির উৎপাদনও কমছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া শিল্পায়নের কারণে গত ১৫ বছরে জেলার ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি কমেছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কালিয়াকৈরের ঐতিহ্যবাহী মকশ বিলের কোলঘেঁষা গ্রাম তালতলী। সেখানকার বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী অতুল সন্ন্যাসী। একসময় নিজের পাঁচ-ছয় বিঘা জমিতে ফসল চাষ করে সারা বছর খেতেন তিনি। এখন আর সেসব জমি চাষের উপযোগী নেই। অতুল সন্ন্যাসী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়ির আশপাশের প্রায় সব জমি আমার। আগে পাঁচ-ছয় বিঘা জমিতে সবজি, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করতাম কিন্তু এখন আর করতে পারি না। মিলের পচা পানির কারণে কিছু লাগালেও এখন হয় না। বহু আন্দোলন করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জেলায় কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ২১৫ হেক্টর। বর্তমানে কৃষিজমি আছে ১ লাখ ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা দূষণের কারণে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বলে, জেলার দুই হাজারের অধিক পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৬০০ ডাইং কারখানায় ইটিপি রয়েছে। কিন্তু খাল-বিল ও নদীর দিকে তাকালেই দেখা যায়, এসব ইটিপি নিয়ম মেনে চালানো হয় না। পোশাক কারখানা বহাল রেখে নদী ও বিলে বিশুদ্ধ পানি মিলবে না। অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানোর চেষ্টা করেন বলে দাবি এই কর্মকর্তার।

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. মনির হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরে তুরাগ নদের তীরের বিভিন্ন জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হলেও দূষণের মাত্রা কমেনি। একটা সময় শিল্প স্থাপন করাটাই গুরুত্ব পেয়েছিল বেশি, কিন্তু পরিবেশের দিকটি বিবেচনা করা হয়নি। এখন সময় এসেছে নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ের পরিবেশ রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের।

পুনঃখননে সাতক্ষীরার মরিচ্চাপ নদীকে পরিণত করা হচ্ছে খালে!

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪, বণিক বার্তা

দখল-দূষণে ছন্দ হারিয়েছে জেলার একসময়ের স্রোতস্বিনী মরিচ্চাপ নদী। নাব্যতা ফেরাতে তাই সরকারিভাবে এটি পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, যেভাবে খনন করা হচ্ছে তাতে নদী কেটে আসলে খাল বানানো হচ্ছে। তাদের দাবি, মূল নদীর কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ বাদ দিয়ে খননকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে কিন্তু এভাবে কাজ চললে সরকারি অর্থ অপচয়ের বাইরে কাজের কাজ কিছুই হবে না।

উপকূলীয় গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম, আজিজুল ইসলাম ও আব্দুল হান্নান গাজী জানান, যেভাবে মরিচ্চাপ নদী পুনঃখনন করা হচ্ছে তা জনসাধারণের কোনো উপকারে আসবে না। মূল নদীর ৭৫ শতাংশ বাদ দিয়ে খনন করা হচ্ছে। তাছাড়া কোথাও কোথাও ঘুরিয়ে ইচ্ছামতো খনন করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।

আশাশুনি উপজেলা সদরের বাসিন্দা ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এসএএম আব্দুল ওয়াহেদ জানান, মরিচ্চাপ নদীকে কেন্দ্র করে আশাশুনি বা দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটে। খুলনা ও বরিশালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগমাধ্যম ছিল নৌপথ হিসেবে মরিচ্চাপ নদী। এই নদীর বুক চিরে চলত লঞ্চ, স্টিমার, বড় বড় নৌকা। সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলের পণ্যসামগ্রী এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পরিবহন করা হতো এই রুটে। এ কারণেই মরিচ্চাপ নদীর তীরে গড়ে ওঠে আশাশুনি বা বর্তমান উপজেলা সদর।

তিনি বলেন, ‘মরিচ্চাপ নদীর নাব্যতা ফেরাতে সরকার পুনঃখননের ব্যবস্থা করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, নদী কেটে খাল বানানো হচ্ছে। এক্সভেটর মেশিন দিয়ে জমাট পলিমাটি নদীর পাড়ে ফেলে রাখা হচ্ছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে ওই মাটি ধুয়ে নদী ফের ভরাট হয়ে যাবে।’

দুর্যোগের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বড় পরিবারের দিকে ঝুঁকছে ক্ষতিগ্রস্তরা

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪, বণিক বার্তা

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে বাংলাদেশে। প্রভাব পড়ছে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের হেলথ সিকিং বিহেভিয়ার বা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ প্রবণতায়। প্রভাবিত হচ্ছে স্থানীয় নারী ও পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য। দুর্যোগের কারণে শিশুমৃত্যুর হার বেশি হওয়া এসব এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোয় এখন ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এতে এসব পরিবারে এখন অধিক সন্তান জন্মদানের প্রবণতাও বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি অনুভব করেন বেশি ও অতীতে সন্তান হারানোর অভিজ্ঞতা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে অধিক সন্তান জন্মদানের প্রবণতা বেশি।

প্রজনন স্বাস্থ্যবিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, শিশুমৃত্যুর হার, মাতৃমৃত্যুর হার এবং প্রজনন স্বাস্থ্য একটি দেশের মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নির্দেশক। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোয় শিশুমৃত্যুর হার বেশি। ফলে এসব এলাকার স্থানীয়দের অনেকের মধ্যেই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার খোঁজে বাড়তি সন্তান জন্মদানের প্রবণতা দেখা যায়। এতে এলাকাভেদে টোটাল ফার্টিলিটি রেট বা মোট প্রজনন হার (টিএফআর) কম-বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে জলবায়ু, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈজ্ঞানিক সাময়িকী নেচারের হিউম্যানিটিস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস কমিউনিকেশনস জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে দেখা যায়, বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোর অর্ধেকের বেশি নারীর মধ্যে তিন বছরের কম ব্যবধানে সন্তান জন্ম দেয়ার প্রবণতা বেশি। এসব এলাকার ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ নারীর মধ্যে এ প্রবণতা দেখা যায়। আর দুর্যোগের ঝুঁকি নেই, এমন এলাকায় এ হার ৩৬ শতাংশ।

ফার্মগেট পার্কের জায়গায় স্টেশন প্লাজা নির্মাণের অনুমতি পেল ডিএমটিসিএল

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪, বণিক বার্তা

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেটসংলগ্ন আনোয়ারা উদ্যানের জায়গায় মেট্রোরেলের স্টেশন প্লাজা নির্মাণের অনুমতি পেয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। পার্কটির মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর। রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ২০১৮ সাল থেকে যদিও অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে পার্কটিকে মেট্রোরেলের প্রকল্প অফিস ও নির্মাণ উপকরণ রাখার কাজে ব্যবহার করে আসছে ডিএমটিসিএল। এখন সেই স্থানেই নির্মাণ করা হবে স্টেশন প্লাজা।

ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তরা-কমলাপুর মেট্রোরেলের চারটি স্টেশনে তৈরি হবে স্টেশন প্লাজা। ফার্মগেট ও আগারগাঁও ছাড়া বাকি দুটি স্টেশন প্লাজা হবে উত্তরা ও কমলাপুরে। এতে শিশুদের জন্য থাকবে বিনোদনের ব্যবস্থা। যাত্রীদের জন্য রাখা হবে বিপণিবিতান, সময় কাটানোর জন্য হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কফিশপ ও বিনোদন কেন্দ্র। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনেই পরিচালিত হবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম, যাতে ভাড়া-বহির্ভূত কার্যক্রম থেকে আয়ের ৩০ শতাংশ উঠিয়ে আনা যায়। স্টেশন প্লাজা নির্মাণের পরিকল্পনাও ভাড়া-বহির্ভূত কার্যক্রমের অংশ। মেট্রোরেলের পরিচালন ব্যয় মেটানোর স্বার্থে পুরো বিশ্বেই এমনটি করা হয়।

যদিও পার্কের জায়গায় স্টেশন প্লাজা নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছিল ডিএনসিসি। এর আগে মেয়র আতিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে জানিয়েছিলেন, ফার্মগেটে স্টেশন প্লাজা বা শপিং‌মলের কোনো প্রয়োজন নেই। এমনিতেই সেখানে অনেক শপিংমল রয়েছে। কিন্তু এলাকাটিতে কোনো উন্মুক্ত জায়গা নেই। খেলার মাঠ নেই। এখানে স্টেশন প্লাজার চেয়ে পার্ক বেশি জরুরি।

সুন্দরবনে ৮ নদীতে দিনে চলছে ৩৪৫ জাহাজ

০২ মার্চ ২০২৪, সমকাল

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের মধ্যে পশুরসহ আটটি নদী দিয়ে চলাচল করছে দেশি-বিদেশি হাজারো জাহাজ। প্রতিদিন চলছে গড়ে ৩৪৫টি। এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনের নদী, মাটি, গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর ওপর। এ প্রভাব কতটা ভয়াবহ তা নিরূপণে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কাজ হলেও এখনও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কোনো গবেষণা। ক্ষতি নিরসনেও নেওয়া হয়নি কার্যকর উদ্যোগ। এতে হুমকিতে পড়ছে গোটা বনের জীববৈচিত্র্য।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত সুন্দরবনের মধ্যে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ পশুর নদ দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু হয় ১৯৫৪ সালে। ৭০ বছর ধরে এই রুটে দেশি-বিদেশি জাহাজ চলছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকার জাহাজ ১৯৭২ সাল থেকে মোংলা হয়ে সুন্দরবনের মধ্যে থাকা কালিঞ্চি, রায়মঙ্গল, কাচিকাটা, আড়পাঙ্গাসিয়া, বজবজা, আড়ুয়া শিবসা, শিবসা ও পশুর নদ দিয়ে ভারতে যাওয়া-আসা করে। অন্য সাত নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল করে ৫২ বছর ধরে।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, পশুর নদ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে চলাচল করে দেশি-বিদেশি ২২৫টি জাহাজ। অন্য সাতটি নদীতে প্রতিদিন এ সংখ্যা গড়ে ১২০। এ দুটি রুটের জাহাজে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকার, ফ্লাইঅ্যাশ, কয়লা, ফার্নেস অয়েল, পাথর, এলপি গ্যাস, খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য থাকে।

সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, জাহাজগুলো থেকে নিঃসৃত তেল ও অন্যান্য বর্জ্য বনের পানি ও মাটিতে দূষণ ঘটায়। জাহাজের ঢেউয়ের কারণে তীর ভেঙে পলি পড়ে নদীর নাব্য কমে যায়। জাহাজের শব্দ এবং রাতে আলো বন্যপ্রাণীদের আতঙ্কিত করে তোলে। বনের মধ্যে নদীতীরে এখন আর আগের মতো বন্যপ্রাণী ও পাখি দেখা যায় না।

বন বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বনের মধ্যে নদীতে গত ৯ বছরে কয়লা, সার, ফার্নেস অয়েল, ক্লিংকার, ফ্লাইঅ্যাশসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে অন্তত ২৬টি জাহাজ ডুবে গেছে। জাহাজে থাকা ফার্নেস অয়েল, কয়লা, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকার ও স্লাগ, পাথর, সার প্রভৃতি রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে নদীর পানি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মাটিতে। কিন্তু বারবার ঘটা এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, দূষণ ঠেকানো কিংবা ডুবে যাওয়া জাহাজ দ্রুত উত্তোলনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপই নেই। কোনো জাহাজ ডুবলে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ এনে তা উদ্ধারে সময় লাগে দু-তিন সপ্তাহ থেকে এক মাস।

এস আলম সুগার মিলে আগুন

চিনিকলের বর্জ্যে মাছ ভাসছে কর্ণফুলীতে

০৬ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকায় এস আলম চিনিকলের গুদামের অপরিশোধিত চিনির গলিত পানির কারণে কর্ণফুলী নদীতে মাছসহ নানা জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।

আজ বুধবার সকাল থেকে কর্ণফুলী নদীতে বিপুলসংখ্যক মৃত মাছ ভাসতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় জেলে ও পরিবেশবিদদের মতে, নদীর পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় এত মাছ মারা যাচ্ছে।

গত সোমবার কর্ণফুলী নদীর পাড়ে অবস্থিত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গুদামে আগুন লাগে। আজ তৃতীয় দিনে এসেও আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। এদিনও ফায়ার সার্ভিসের আটটি গাড়ি আগুন নেভাতে কাজ করছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিনিকলের বর্জ্য মিশ্রিত পানির কারণে বেশ কিছু মাছ ও কাঁকড়া মারা গেছে। আমাদের একটা দল ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছে।’

নদীতে ভাসতে থাকা মাছ ধরতে সেখানে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন ও জাহাজের শ্রমিকেরা। বুধবার বেলা ১টায় কর্ণফুলী নদীর চট্টগ্রাম বন্দরের এলাকায়

নদীতে ভাসতে থাকা মাছ ধরতে সেখানে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন ও জাহাজের শ্রমিকেরা। বুধবার বেলা ১টায় কর্ণফুলী নদীর চট্টগ্রাম বন্দরের এলাকায়ছবি-সৌরভ দাশ

গুদামে আগুন লাগার পর থেকে অপরিশোধিত চিনির গলিত পানি গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে। ১০০ মিটারের দুটি নালা ঘুরে নদীটিতে গিয়ে পড়ছে এ পানি। এতে পোড়া তেলের মতো অপরিশোধিত চিনির বর্জ্য ভাসতে দেখা যাচ্ছে নদীতে। গতকাল মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদপ্তর নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

গত সোমবার কর্ণফুলী নদীর পাড়ে অবস্থিত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গুদামে আগুন লাগে। আজ বুধবার তৃতীয় দিনে এসেও আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। এদিনও ফায়ার সার্ভিসের আটটি গাড়ি আগুন নেভাতে কাজ করছে।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক কামরুল হাসান বলেন, পানিতে চিনির বর্জ্য মিশে যাওয়ায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। এতে জলজ প্রাণী হুমকিতে পড়বে।

গভীর নলকূপে পানি নেই, বোরো নিয়ে সংকটে কৃষক

০৭ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

করফুল দাস বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের চালক। তাঁর নলকূপ থেকে প্রায় ২০০ বিঘা বোরো ধানের জমিতে সেচ দেওয়া যেত। পানি ওঠা কমতে থাকায় গত বছর ৮০ বিঘা পর্যন্ত সেচ দেওয়া গেছে। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার কড়কড়িয়া গ্রামের এই নলকূপের অধীনে এবার কোনো বোরোর আবাদ হয়নি। পানির অভাবে চাষিরা শর্ষে আর গম চাষ করেছেন। করফুলও তাঁর ৯ বিঘা বর্গা জমিতে গম ও শর্ষের চাষ করেছেন।

রাজশাহী ও রংপুরের ১৬ জেলায় বিএমডিএর সেচের আওতায় বোরো ধান চাষ করেন কৃষকেরা। তবে বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী অঞ্চলে বিএমডিএর গভীর নলকূপগুলোতে ঠিকমতো পানি উঠছে না। সংকট আছে নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জেও। এতে বাধ্য হয়ে ধানের বদলে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। এই তিন জেলার ২১টি ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। যেখানে একসময় ১৬০ ফুট অ্যাকুইফার (পানির জলধারক স্তর) ছিল। এখন সেটা ৬ ফুটে নেমে এসেছে বলে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) এক গবেষণায় বলা হয়েছে।

এখনো ধান রোপণ শেষ হয়নি। সেচসংকটসহ আরও কিছু কারণে ৩০০-এর কিছু বেশি গভীর নলকূপ এখন বন্ধ আছে। আর বিএমডিএর আওতাভুক্ত ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে এবার সেচসংকট রয়েছে।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, তাদের তত্ত্বাবধানে ১৫ হাজার ৮২৩টি গভীর নলকূপ ও প্রায় ৮০০ লো-লিফট পাম্প রয়েছে। এর আওতায় রয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমি। এর মধ্যে ৩ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হওয়ার কথা। এখনো ধান রোপণ শেষ হয়নি। সেচসংকটসহ আরও কিছু কারণে ৩০০-এর কিছু বেশি গভীর নলকূপ এখন বন্ধ আছে। আর বিএমডিএর আওতাভুক্ত ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে এবার সেচসংকট রয়েছে।

দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী

মার্চ ০৮, ২০২৪, বণিক বার্তা

আবাসস্থল হারিয়ে ক্রমেই হুমকির মুখে দেশের বন্যপ্রাণী। আবার বন উজাড়ে কমছে খাদ্যের জোগান। এমন নানা সংকটে উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী মিলে গত ১০০ বছরে দেশ থেকে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী চিরতরে হারিয়ে গেছে। ঝুঁকির কাছাকাছি রয়েছে আরো ৯০ প্রজাতির প্রাণী। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। তবে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী নিজেই। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য ও বাসস্থান সংকট, বন উজাড়, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ নানা কারণে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। আইইউসিএনের ২০০০ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত বন্যপ্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা ছিল ১৩। আর ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্তর তথ্য দেয়া হয়েছে । অর্থাৎ এ ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে আঞ্চলিকভাবে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ১৬ প্রজাতির প্রাণী।

আইইউসিএনের তালিকা অনুযায়ী দেশে মোট ৫৬৬ প্রজাতির পাখি ছিল একসময়। তবে ১০০ বছরের মধ্যে ১৯ প্রজাতির পাখি চিরতরে হারিয়ে গেছে। এ সময়ে বিলুপ্ত হয়েছে ১১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও এক প্রজাতির সরীসৃপ। বিলুপ্ত হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে ডোরাকাটা হায়েনা, ধূসর নেকড়ে, নীলগাই, বান্টিং বা বনগরু, বনমহিষ, সুমাত্রা গন্ডার, জাভা গন্ডার, ভারতীয় গন্ডার, বাদা বা জলার হরিণ, কৃষ্ণষাঁড় ও মন্থর ভালুক। পাখির মধ্যে রয়েছে লালমুখ দাগিডানা, সারস, ধূসর মেটে তিতির, বাদা তিতির, বাদি হাঁস, গোলাপি হাঁস, বড় হাড়গিলা বা মদনটাক, ধলাপেট বগ, সাদাফোঁটা গগন রেড, রাজশকুন, দাগি বুক টিয়াঠুঁটি, লালমাথা টিয়াঠুঁটি, গাছ আঁচড়া ও সবুজ ময়ূর। আর সরীসৃপজাতীয় প্রাণীর মধ্যে মিঠাপানির কুমির বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে।

এদিকে ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নানা কারণে আমাদের পরিবেশ আজ সংকটাপন্ন। বুনোহাতির দল থেকে শুরু করে পাখি, এমনকি সাগরের তলদেশের প্রাণী হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ১০০ বছরে দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী।’

বছরে ২০ মিলিমিটারের বেশি ডুবছে চট্টগ্রাম নগরী

মার্চ ০৮, ২০২৪, বণিক বার্তা

চট্টগ্রাম শহর প্রতি বছর সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে গড়ে ২০ মিলিমিটারের বেশি হারে। বন্দরনগরীর সাগরে নিমজ্জনের গতি এখন বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের বার্ষিক গড় উচ্চতা বৃদ্ধির ১০ গুণ। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত ডুবন্ত শহরগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাপক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, পরিবেশ দূষণ, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ বন্দরনগরীর ঝুঁকিকে বহু গুণে বাড়িয়ে তুলেছে। প্রতিবেশগত যেকোনো বিপর্যয় চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূপ্রকৃতির পাশাপাশি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকির মাত্রায় ভয়াবহ পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে।

আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম। বঙ্গোপসাগরের ব্যস্ততম বন্দরটিও এখানেই অবস্থিত। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে সিংহভাগ অবদানই চট্টগ্রাম নগরীর। ভোগ্যপণের সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জও এখানেই অবস্থিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে সিটি করপোরেশনের অধীন এলাকাগুলোর মোট জনসংখ্যা ৩২ লাখের বেশি। দ্রুতবর্ধনশীল এ জনসংখ্যা ২০৩৫ সালের মধ্যে ৭০ লাখ ছাড়ানোর পূর্বাভাস রয়েছে। এরই মধ্যে নগরী ও এর বাসিন্দাদের ওপর প্রতিবেশগত বিপর্যয়ের প্রভাবগুলো প্রকট হয়ে উঠেছে। সামনের দিনগুলোয় এসব প্রভাব নগরজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বায়ুদূষণে গত বছর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ

মার্চ ২০, ২০২৪, বণিক বার্তা

সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের তালিকায় ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সবার ওপরে। আর রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকার অবস্থান ছিল বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়। গতকাল ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৩’-এ এসব তথ্য তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তালিকায় বাংলাদেশের পরেই রয়েছে পাকিস্তান ও ভারত। আর দূষিত রাজধানীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারতের নয়াদিল্লি।

পরিবেশবিদরা বলছেন, দূষণ কমাতে হলে সরকারকে অবিলম্বে দায়ী খাতগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব নয়।

আইকিউএয়ারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী ৩০ হাজারের বেশি স্টেশনের মাধ্যমে বিশ্বের ১৩৪টি দেশের ৭ হাজার ৮১২টি স্থানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৩ তৈরি করেন আইকিউএয়ারের বিশেষজ্ঞরা।

বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান ‘পিএম ২.৫’ বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি হিসাব করেই মূলত বায়ুমান নির্ণয় করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে এ অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া যাবে না।

আইকিউএয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি ছিল ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, যা ডব্লিউএইচওর বেঁধে দেয়া মানদণ্ডের প্রায় ১৬ গুণ। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তানে প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি ছিল ৭৩ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম, যা ডব্লিউএইচওর বেঁধে দেয়া মানদণ্ডের চেয়ে অন্তত ১৪ গুণ। ভারতে প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি ছিল ৫৪ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম। বায়ুদূষণের তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে তাজিকিস্তান ও বারকিনা ফাসো।

বন রক্ষা প্রকল্পেই বনের সর্বনাশ

২১ মার্চ ২০২৪, সমকাল

ভাওয়াল বনে সেই ১৯৫৫ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের প্রবীণ বেলায়েত হোসেন পেয়েছিলেন ময়ূরের ডিম। সেই ডিম মুরগির তায়ে ফুটিয়ে দিয়েছিলন ময়ূরের প্রাণ, সেবা-যত্নে বড়ও করেছিলেন। ভাওয়াল বনে এখন ময়ূরের দেখা পাওয়া যেন ডুমুরের ফুল! ১৯৮৫ সালে এ বনে সবশেষ ময়ূর দেখেছিলেন বেলায়েত হোসেন। হরিণহাটি কালিয়াকৈরের মৌচাক ইউনিয়নের নামকরা গ্রাম।

হরিণের অবিরাম হাঁটাহাঁটির জন্যই গ্রামটির নাম হয়েছিল হরিণহাটি। হরিণ ও ময়ূরের পাশাপাশি একসময় এ বনে ছিল বাঘের গর্জনও। বাঘের স্মৃতি নিয়ে এখনও গাজীপুরের শ্রীপুরে দাঁড়িয়ে আছে ‘বাঘের বাজার’।

বন আর জীববৈচিত্র্য যখন হারিয়ে যাচ্ছিল তখন তা টিকিয়ে রাখতে গাজীপুরে ২০১০ সালে গড়ে তোলা হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক’। তবে বন আর বনের প্রাণী তো বিপন্নই, উল্টো সাফারি পার্কের ভেতরে সুরক্ষিত থাকা জেব্রাসহ বহু প্রাণী একের পর এক মারা যাচ্ছে। বন বাঁচানো তো দূরের কথা, হাতের নাগালের প্রাণী টিকিয়ে রাখতেই সবাই এখন ব্যতিব্যস্ত।

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কেরও একই দুর্গতি। দুটি সাফারি পার্কের অবস্থা যখন কাহিল, তখন সংরক্ষিত বন মৌলভীবাজারের জুড়ীর লাঠিটিলায় বন বিভাগ গড়ে তুলছে আরেকটি সাফারি পার্ক। গত নভেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটির জন্য ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ মিলেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ভেঙে পাহাড় ও গাছ কেটে সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নিজের নির্বাচনী এলাকায় (বড়লেখা-জুড়ী) ৫ হাজার ৬৩১ একর জায়গাজুড়ে এ সাফারি পার্ক নির্মাণ হচ্ছে।

দেশের প্রাকৃতিক বন, বাস্তুতন্ত্র ও প্রাণ-প্রজাতির সুরক্ষা জোরদার ও নিরাপদ না করে একের পর এক এমন প্রকল্পের স্রোত বইছে। কখনও সমাজিক বনায়নের নামে বিদেশি গাছ রোপণ, কখনও টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের নামে প্রাকৃতিক বনের বদলে কৃত্রিম বন গড়ে তোলা হচ্ছে। আবার ভুল জায়গা নির্বাচনের কারণেও টিকছে না সরকারের বনায়ন প্রকল্প। ফলে বছর বছর কমছে বন। বনের প্রতি নির্ভর মানুষ হারাচ্ছে জীবিকা। গত ১৭ বছরে প্রায় ৬৬ বর্গকিলোমিটার বন হারিয়ে গেছে বলে রেইন ফরেস্ট ফাউন্ডেশন নরওয়ের (আরএফএন) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বন বিভাগই বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় যে কোনো দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে আছে মাত্র ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) গবেষণা বলছে, মধুপুর গড়ে ১৯৮৯ সালে প্রাকৃতিক বনের পরিমাণ ছিল ৪৩ শতাংশ। ২০০৭ সালে তা নেমে আসে ২৯.৮ শতাংশে।

এ পটভূমিতে আজ নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বন দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘উদ্ভাবনায় বন, সম্ভাবনাময় বন’।

কিছু প্রকল্পের কারণে বনের ক্ষতি

জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট পার্টিসিপেটরি অ্যাফরেস্টেশন অ্যান্ড রিফরেস্টেশন প্রজেক্ট (সিআরপিএআরপি) নিয়েছিল সরকার। এতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ুসহিষ্ণু প্রজাতি গাছ দিয়ে বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এর সুফল মেলেনি। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে নোয়াখালীর হাতিয়ার নিউ চর জোনাকে ৪০ হেক্টর জায়গায় বিভিন্ন জাতের চারা রোপণ করে বন বিভাগ। দ্বীপ উপজেলা সদর ওছখালীর ১০ হেক্টরেও মাউন্ড (স্তূপাকৃতির) বনায়ন করা হয়। একই সময় জাহাজমারা রেঞ্জের নিঝুমদ্বীপে ৮ হেক্টর এবং নলচিরা রেঞ্জে ১০ হেক্টরেও বনায়ন করা হয়। তবে মাটির লবণাক্ততায় একটি চারাও টেকেনি।

জলবায়ু প্রকল্পের টাকায় উপকূলীয় বন বিভাগে লাগানো হয়েছে আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস। এগুলো মাটির গুণ নষ্টের পাশাপাশি দেশীয় গাছেরও ক্ষতি করে। গত বছর বন অধিদপ্তরের টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম দেশের জন্য ক্ষতিকর ১৭টি বিদেশি উদ্ভিদ প্রজাতিকে চিহ্নিত করেছে। 

জলবায়ু তহবিলের অর্থায়নে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকায় গাছ লাগানো হয়েছিল। তবে বন হয়ে ওঠার আগেই এলাকাটি বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটিকে (বেজা) হস্তান্তর করে বন বিভাগ। পটুয়াখালী ও নোয়াখালীর প্রায় ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর বন উজাড় হয়েছে তাতে। অথচ ওই বন সৃজনে খরচ হয়েছিল প্রায় ৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

এর আগে বিদেশি প্রজাতির গাছ দিয়ে সামাজিক বনায়নের শুরু ১৯৮৯-৯০ সালে। সামাজিক বনায়ন করতে গিয়ে নির্বিচারে কাটা হয়েছে শালকপিস ও অন্য দেশি প্রজাতির বৃক্ষ। প্রথম পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ইউক্যালিপটাস লাগানো হয়েছিল। ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে মধুপুরে দ্বিতীয় সামাজিক বনায়ন প্রকল্প ছিল ফরেস্ট্রি সেক্টর প্রজেক্ট। দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকারি বনভূমিতে ইউক্যালিপটাস লাগানো বন্ধ হয়।

বন বিভাগের হিসাবে, ১৯৮১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৫ হাজার ২৮৩.০৩ হেক্টর জমিতে ব্লক বা উডলট (জ্বালানি কাঠের বন) লাগানো হয়। টাঙ্গাইলের মধুপুর বনে এ কর্মসূচির মাধ্যমে লাগানো জলবায়ুর অনুপযোগী বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি গাছের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বনের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য। এক সময় প্রাকৃতিক শালবন ছিল এবং এখনও কাগজে-কলমে গেজেটভুক্ত বনভূমি। ১৯৯৫ সালে বন বিভাগ ও সরকারি অন্য সংস্থা বনাঞ্চলে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো নিষিদ্ধের পক্ষে মত দেয়।

বন সম্প্রসারণ কার্যক্রম ও স্থানীয় দরিদ্র জনগণকে আর্থিকভাবে উপকৃত করতে ষাট দশকের শুরুর দিকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি শুরু হয়। উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী নামে আরেকটি সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে ১৯৯৪-৯৫ সালে যুক্ত হয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। ২০১০ সালের ১১ আগস্ট সামাজিক বনায়নের অগ্রগতিবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি নিয়ে বলেছিলেন, ‘এত দিন বিদেশি দাতা সংস্থার পরামর্শে সামাজিক বনায়নের নামে এ ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে। এ গাছের নিচে অন্য কোনো গাছ জন্মায় না, এমনকি পাখিও বসে না। আকাশমণি গাছের রেণু নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে গেলে অ্যাজমা হয়।’

২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি বন অধিদপ্তরের টেকসই বন ও জীবিকা বা সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুড (সুফল) প্রকল্প শুরু হয়। ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকার এ প্রকল্পে সরকার ৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে। বাকি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এর আওতায় আছে পাঁচটি বনাঞ্চল এবং আট বিভাগের ২৮ জেলার ১৬৫ উপজেলার ৬০০ গ্রাম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে সুফল প্রকল্পের বিষয়ে বলা হয়েছে, ৭১ শতাংশ গাছ লাগানো হলেও এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তগুলো মানা হয়নি। শর্ত ছিল– শাল, গর্জন, সোনালু, লটকন, নাগেশ্বর, বন আমড়া, খাড়াজোড়া, গামার, নেওড়, কুম্ভি কানাইডাঙ্গা, জলপাই, কদম, জামসহ বিভিন্ন গাছের চারা লাগাতে হবে। তবে লাগানো হয়েছে অন্য গাছ। তা ছাড়া এসব গাছের চারার ৪০ শতাংশও প্রথম বছরেই মারা গেছে।

এদিকে পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না নিয়েই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প এলাকার বিদ্যমান গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছে বন বিভাগ। কক্সবাজার, ধোয়াপালং ও ইনানি রেঞ্জ কর্মকর্তাদের গত ১০ সেপ্টেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ এ নির্দেশ দেয়।

২০২০ সালে সুন্দরবনের ভেতরে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন (ইকো ট্যুরিজম) সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ নামে প্রকল্প হাতে নেয় বন বিভাগ। এখন ইকো ট্যুরিজমের নামে বনের ভেতরে হয়েছে কংক্রিটের স্থাপনা। স্থায়ী স্থাপনাগুলো দীর্ঘ মেয়াদে বন্যপ্রাণী ও বনের প্রতিবেশ-পরিবেশের ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ–ভারত নৌপথে রাতেও নৌযান, বিপদে সুন্দরবন

২১ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত নৌপথে এক যুগে নৌযান চলাচল বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল না করার কথা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে নৌযান চলাচলের কারণে নদী ভাঙছে। কমে যাচ্ছে বনের আকার। বিভিন্ন সময় কয়লা, সিমেন্টের কাঁচামালবাহী জাহাজডুবিতে পানি দূষিত হচ্ছে। এতে বনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।

নৌপথে বাণিজ্য সম্প্রসারণে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’ স্বাক্ষরিত হয়। যার আওতায় দুই দেশের নৌপথ ব্যবহার করে প্রতি মাসে কয়েক শ পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ চলছে। ভারতের হেমনগর থেকে এসব নৌযান রায়মঙ্গল নৌসীমান্ত হয়ে সুন্দরবনের রায়মঙ্গল, কাঁচিকাটা, মালঞ্চ, আড়পাঙ্গাসিয়া, বাটুলা নদী দিয়ে খুলনার কয়রার আংটিহারা শুল্ক স্টেশনে পৌঁছায়।

সেখানে কাগজপত্রের কাজ শেষে সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া, বজবজা, আড়ুয়া শিবসা, শিবসা নদী হয়ে নলিয়ান-চালনা হয়ে মোংলা বা খুলনায় যায়। চালনা থেকে রায়মঙ্গল পর্যন্ত প্রায় ১২২ কিলোমিটার পথ। এর মধ্যে ১০০ কিলোমিটারের মতো এলাকা সুন্দরবনের মধ্যে পড়েছে। এ পথ পাড়ি দিতে নৌযানগুলোকে অন্তত ৮ ঘণ্টা সময় লাগে।

খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো প্রথম আলোকে বলেন, বনের ভেতর দিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে নৌযান চলাচল করলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হবে, এটাই স্বাভাবিক। বেশি শঙ্কার বিষয় হলো, আগের তুলনায় নৌযান চলাচল অনেক বেড়েছে। এ কারণে বনের কেমন ক্ষতি হচ্ছে, তা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর করণীয় ঠিক করা হবে।

দ্বিগুণ হয়েছে নৌযান চলাচল

আংটিহারা শুল্ক স্টেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এই নৌপথ ধরে দুই দেশের মধ্যে ৮ হাজার ৩৪২টি জাহাজ চলাচল করেছে। মাসে গড়ে জাহাজ চলেছে ৬৯৫টি। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল মাসে গড়ে ৮৩৭। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে গড়ে ৭০১টি জাহাজ চলাচল করে।

এক যুগ আগেও এই পথে জাহাজ চলাচলের সংখ্যা ছিল প্রায় অর্ধেক। ২০১২ সালে এই পথে ৪ হাজার ২৮১টি জাহাজ চলাচল করে। সে সময় মাসে গড়ে জাহাজ চলাচলের সংখ্যা ছিল ৩৫৭। ২০১৩ সালে জাহাজ চলে ৪ হাজার ৩২৮টি। প্রতি মাসে গড়ে চলেছে ৩৬১টি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দশকে দেশে সিমেন্টশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। ভারত থেকে বেশি আমদানি করা হয় সিমেন্টের কাঁচামাল ফ্লাই অ্যাশ। সিমেন্ট কারখানাগুলো নদীর তীরে হওয়ায় ফ্লাই অ্যাশ আনতে এ নৌপথ ব্যবহার করা হয়। নৌপথে পণ্য পরিবহন স্থলপথের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। এসব কারণে নৌযান চলাচল বেড়েছে।

রাতেও চলছে নৌযান

বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ খুলনার যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আশ্রাফ উদ্দীন বলেন, দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এ নৌপথে নৌযান চলাচল বেড়েছে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এ নৌপথে সুন্দরবনের ভেতরের অংশে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত (রাতে) কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। যেসব জাহাজে বিআইডব্লিউটিএ পাইলট দেয়, পাইলটদেরও এ রকম নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সরঞ্জাম নিয়ে সুন্দরবনে আসা জাহাজ। বজবজা, সুন্দরবন, খুলনা, ২২ মার্চ ২০১৮

রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সরঞ্জাম নিয়ে সুন্দরবনে আসা জাহাজ। বজবজা, সুন্দরবন, খুলনা, ২২ মার্চ ২০১৮ছবি: সাদ্দাম হোসেন

বন বিভাগ, স্থানীয় লোকজন ও জাহাজ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌপথের বড় অংশই সুন্দরবনের মধ্যে। দিন-রাতের বিষয় মাথায় না রেখে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন ২০-২২টি জাহাজ চলাচল করে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে বেশির ভাগ জাহাজ খালি যায়। ভারত থেকে সিমেন্টের কাঁচামাল ফ্লাই অ্যাশ, কয়লা, ফার্নেস অয়েল, পাথর, স্টিল সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে ফেরে।

সর্বনাশ জেনেও ভূগর্ভের পানিই ভরসা ওয়াসার

২২ মার্চ ২০২৪, সমকাল

তিলোত্তমা নগরী ঢাকার প্রায় আড়াই কোটি মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে প্রতিদিনই বাড়ছে পানির চাহিদা। দূষণের কারণে ঢাকার চারপাশের নদী ও জলাশয়ের পানি ব্যবহারের উপযোগিতা না থাকায় চাহিদার জোগান দিতে ভূগর্ভস্থ পানিই যেন হয়ে উঠেছে ‘অন্ধের নড়ি’। তথ্য বলছে, প্রায় ৭০ শতাংশ পানি তুলতে হচ্ছে মাটির গভীর থেকে। তবে যে হারে পানি খরচা হয়ে যাচ্ছে তাতে দ্রুত নামছে পানির স্তর। নিয়ম না থাকলেও সিটি করপোরেশন এলাকায় তুমুল উৎসাহে বসছে গভীর নলকূপ। এতে চাপ পড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর, নষ্ট হচ্ছে সুপেয় পানির উৎস।

‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ কর্মসূচির আওতায় নেওয়া উদ্যোগে বলা হয়েছিল– ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভূউপরিস্থ পানির (সারফেস ওয়াটার) উৎপাদন বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ করা হবে। আর ভূগর্ভস্থ পানির উৎপাদন ৩০ শতাংশে নামানো হবে। এ জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিলেও ফল হয়েছে উল্টো। এখন প্রতিদিন ঢাকা ওয়াসা যে ২৯০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে এর ৭০ শতাংশই আসছে গভীর নলকূপ থেকে। ৩০ শতাংশ পানি মিলছে ভূউপরিস্থ উৎস থেকে।

জলবায়ুর টাকায় সড়কে বাতি বসানোর হিড়িক

২৮ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

চারদিকে পানি; কিন্তু সে পানি পান করার উপায় নেই, লোনা। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলের নারীদের তাই বহুদূর থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হয়।

শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আড়পাঙ্গাসিয়া গ্রামের শ্রাবণী বিশ্বাস (৩৯) বলছিলেন, তাঁকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে প্রতিদিন দুইবার যাওয়া-আসা করতে হয় সুপেয় পানির জন্য। বাড়ির কাছে একটা ব্যবস্থা হলে এত কষ্ট তাঁকে করতে হতো না।

শ্রাবণীর মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের শিকার নারীদের জন্য সরকারের একটি তহবিল আছে। নাম ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট (বিসিসিটি)’, যা জলবায়ু তহবিল নামেও পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের জীবনে বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্প নিতে এই তহবিল গঠন করা হয় ২০০৯ সালে।

জলবায়ু তহবিলের টাকায় ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩২২টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০৯টি সড়কবাতি বসানোর প্রকল্প, যা মোট প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ।

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এই তহবিলের টাকায় একের পর এক সৌরবিদ্যুতের সড়কবাতি বসানোর প্রকল্প নেওয়া হয়েছে গত পাঁচ বছরে। যদিও সড়কবাতি বসানোর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারও এ ধরনের প্রকল্পকে অগ্রাধিকারে রাখেনি। অন্যদিকে সড়কে জলবায়ু তহবিলের টাকায় বসানো সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল ও বাতি বেশি দিন টিকছেও না।

জলবায়ু তহবিলের টাকায় ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩২২টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০৯টি সড়কবাতি বসানোর প্রকল্প, যা মোট প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ ৩৩৮ কোটি টাকা। ২৩টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে নর্দমা নির্মাণের জন্য। এতে ব্যয় হবে ৪১ কোটি টাকা।

বাকি ৯০টি প্রকল্পের মধ্যে ইকো-ট্যুরিজম, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, মাটির ক্ষয়রোধ, উর্বরতা শক্তির হ্রাস ঠেকানো, জলাশয়ে সবজি ও মসলা চাষ, সারা দেশে বনায়নের লক্ষ্যে চারা উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব জলবায়ু-সহনীয় গৃহনির্মাণ, জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ ইত্যাদি বিষয়ে প্রকল্প রয়েছে।

পরিবেশ দূষণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ

বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার অকালমৃত্যু, আর্থিক ক্ষতি জিডিপির ১৭.৬%

মার্চ ২৯, ২০২৪, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের ফলে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে। যার মধ্যে শুধু বায়ু দূষণে ৫৫ শতাংশের মৃত্যু হচ্ছে। আর পরিবেশ দূষণে ২০১৯ সালে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এতে বায়ু দূষণের অবদান ছিল ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ।

গতকাল বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ) নামের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো জরুরি পদক্ষেপ নিলে বছরে ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। সিসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। দূষণের ফলে শিশুদের আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে বছরে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট। দেশের ১৭ শতাংশ মানুষ এখনো আর্সেনিকযুক্ত পানি গ্রহণ করছে। রান্নার কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে বায়ু দূষণ তৈরি হয়ে শিশু ও নারীদের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। এক্ষেত্রে এলপিজি বা বৈদ্যুতিক রান্নার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে দূষণ কমানো যায়। শিল্পের বর্জ্য ও অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।

অতিরিক্ত লবণপানিতে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে

২৮ মার্চ ২০২৪, আজকের পত্রিকা

পানির লবণাক্ততা দেশের ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লবণপানি ব্যবহারের কারণে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।

আজ বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দেশে নিরাপদ পানি সুবিধার আওতায় আছে ৬০ শতাংশ মানুষ। পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের সুবিধা পাচ্ছে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ।

বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর বিপন্নতা’ শীর্ষক এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। মিরপুরে এমজেএফ টাওয়ারের আলোক অডিটরিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল ‘জলবায়ু ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা: প্রেক্ষিত জেন্ডার’।

সাজেকে পাহাড় কেটে সুইমিংপুল

২৮ মার্চ ২০২৪, আজকের পত্রিকা

সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১ হাজার ৮০০ ফুট উপরে পাহাড় কেটে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মেঘপল্লী রিসোর্ট নির্মাণ করছে সুইমিংপুল। প্রকাশ্যে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাটা হচ্ছে পাহাড়। এতে সাজেকের প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার রুইলুই, হামারি এবং কংলাক এই তিনটি পাড়া নিয়ে সাজেক পর্যটনকেন্দ্র। নয়নাভিরাম প্রকৃতির সবুজে ঘেরা ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় ও মেঘের অপূর্ব মিলনের জন্যই সাজেককে বলা হয়ে থাকে মেঘের রাজ্য। এদিকে দিনে দিনে সাজেকে বেড়েছে পর্যটক। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রিসোর্ট, কটেজ, হোটেলসহ রেস্তোরাঁ। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অপরিকল্পিত এসব স্থাপনায় ঢাকা পড়ছে প্রকৃতির সেই চেনা রূপ। দৃষ্টিপাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডজন ডজন কটেজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে সাজেকের পাহাড় কেটে সুইমিংপুল নির্মাণের কাজ করছে মেঘপল্লী রিসোর্ট। এতে যেমন সাজেকের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তেমনি রয়েছে পাহাড় ধসের ঝুঁকি।

দেশে আবাদি জমির মাটিতে পুষ্টি উপাদান কমেছে

এপ্রিল ০৬, ২০২৪, বণিক বার্তা

ফসফরাস, নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, সালফার, বোরন কিংবা জিংক—এগুলো সবই মাটির গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। ফসলের গুণগত মান মূলত এসব উপাদানের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) গবেষণা বলছে, এক দশকের ব্যবধানে দেশের আবাদি জমিতে গুরুত্বপূর্ণ এসব পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।

‘সয়েল ফার্টিলিটি ট্রেন্ডস ইন বাংলাদেশ ২০১০ টু ২০২০’ শীর্ষক গবেষণায় মাটিতে ফসফরাস, সালফার, পটাশিয়াম, বোরন ও জিংকের পরিমাণ দেখা হয়। এক্ষেত্রে ২০১০ সালের সঙ্গে ২০২০ সালের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন গবেষকরা। তাতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে মাটিতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিযুক্ত এলাকা অস্বাভাবিক বেড়েছে।

গবেষণায় মাটির পুষ্টি উপাদানগুলোকে চার শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো অতিনিম্ন থেকে নিম্ন, মধ্যম, পরিমিত এবং উচ্চ থেকে অতিউচ্চ। এক্ষেত্রে অতিনিম্ন থেকে নিম্ন এবং মধ্যম স্তর হচ্ছে ঘাটতিযুক্ত এলাকা।

মাটির পুষ্টি উপাদানগুলোর অন্যতম ফসফরাস। বীজের অঙ্কুরোদ্গম থেকে শুরু করে এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উপাদানটি। ২০১০ সালে দেশে মোট আবাদি জমির ৩৮ দশমিক ৬০ শতাংশে ফসফরাসের অবস্থা ছিল অতিনিম্ন থেকে নিম্ন। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশে। এছাড়া ২০১০ সালে ২১ দশমিক ১৪ শতাংশ মধ্যম, ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ পরিমিত এবং ২৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ মাটিতে ফসফরাস উচ্চ থেকে অতি উচ্চ স্তরে ছিল। তবে ২০২০ সালে মধ্যম স্তরে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, পরিমিত স্তরে ১২ দশমিক ৩৮ এবং উচ্চ থেকে অতি উচ্চ স্তরে ফসফরাস ছিল ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।

উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশের সহায়তা করে সালফার। এ উপাদানের ঘাটতি হলে ফসল পরিপক্ব হতে বেশি সময় লাগে, মানও কমে যায়। গাছের উচ্চতাও স্বাভাবিক গতিতে বাড়ে না। ২০১০ সালে দেশে মোট আবাদি জমির ৩৪ দশমিক ৪৫ শতাংশে সালফারের অবস্থা ছিল অতিনিম্ন থেকে নিম্ন। এ সময় ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশে মধ্যম, ১১ দশমিক ৩৯ পরিমিত এবং ৩৫ দশমিক ৫১ জমিতে উচ্চ থেকে অতি উচ্চ স্তরে সালফার ছিল। তবে ২০২০ সালে সালফারের অবস্থা অতিনিম্ন থেকে নিম্ন স্তর ছিল ৪৬ দশমিক ৪১ শতাংশ জমিতে। মধ্যম স্তরে ছিল ২০ দশমিক ৯৬ শতাংশ, পরিমিত স্তরে ১৫ দশমিক ২১ এবং উচ্চ থেকে অতি উচ্চ স্তরে সালফার ছিল ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ জমিতে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করা হয়। ফলে চাষের খরচ যেমন বাড়ছে, আবার পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। নাইট্রোজেন যদি ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে যায়, তাহলে তা মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুদের মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। আবার ফসফরাস বেশি দেয়া হলে তা বৃষ্টির পানিতে বা বন্যায় খালের পানিতে মিশে যায়। ফলে প্রায়ই মাছ মারা যেতে দেখা যায়। বোরন শিশুদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। ফলে কৃষককে পরিমিত সার ব্যবহারে সচেতন করতে হবে।

পটাশিয়াম ফসলের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ২০১০ সালে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ আবাদি জমিতে পটাশিয়ামের অবস্থা ছিল অতিনিম্ন থেকে নিম্ন স্তরে। ২০২০ সালে তা এমন জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ দশমিক ২৩ শতাংশে। ২০১০ সালে ২২ দশমিক ১১ শতাংশ মাটিতে মধ্যম, ২০ দশমিক ২৭ শতাংশে পরিমিত এবং ২৯ দশমিক ২৯ শতাংশ জমিতে উচ্চ থেকে অতি উচ্চ স্তরে পটাশিয়াম ছিল। ২০২০ সালে এসে মধ্যম স্তরে ৩০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, পরিমিত স্তরে ১৩ দশমিক ৩৬ এবং উচ্চ থেকে অতি উচ্চ স্তরের জমিতে পটাশিয়াম ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

উদ্ভিদের কোষ প্রাচীর গঠন এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে বোরন। ২০১০ সালে দেশে মোট আবাদি জমির ২৫ দশমিক ৯৯ শতাংশে বোরনের অবস্থা ছিল অতিনিম্ন থেকে নিম্ন পর্যায়ের। ওই সময় ২০ দশমিক ৯ শতাংশ জমিতে মধ্যম, ১৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে পরিমিত এবং ৩৭ দশমিক শূন্য ৪ জমিতে উচ্চ থেকে অতি উচ্চ স্তরে বোরন ছিল। তবে ২০২০ সালে বোরনের অবস্থা অতিনিম্ন থেকে নিম্ন স্তরে ছিল ৩০ দশমিক ৭৮ শতাংশ জমিতে। মধ্যম স্তরে ছিল ২৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ জমিতে, পরিমিত স্তরে ছিল ১৫ দশমিক ৯ এবং উচ্চ থেকে অতি উচ্চ স্তরে ছিল ২৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ জমিতে। 

মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাটির এসব পুষ্টি উপাদানের মধ্যে কোনোটির পরিমাণ কম হলে ফসলের উৎপাদন কমে যাবে। অর্থাৎ সব উপাদানই পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকতে হবে। এসব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দূর করতে সার ব্যবহার করা হয়। তবে এতে ফলনের গুণগত মানে প্রভাব পড়ে; স্বাদেও পরিবর্তন ঘটে।

১০ বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি কমেছে জিংকের পরিমাণ। ২০১০ সালে আবাদি জমির ২৮ দশমিক ৭১ শতাংশে জিংকের অবস্থা ছিল অতিনিম্ন থেকে নিম্ন স্তরে। ২০২০ সালে এমন জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ দশমিক ৮৪ শতাংশে। এছাড়া ২০১০ সালে জিংকের অবস্থা ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশে মধ্যম, ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশে পরিমিত এবং ৩৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ উচ্চ থেকে অতিউচ্চ স্তরে ছিল। ২০২০ সালে মাটিতে জিংকের অবস্থা ছিল মধ্যম স্তরে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ জমিতে, পরিমিত স্তরে ৪ দশমিক ৬৫ এবং উচ্চ থেকে অতি উচ্চ স্তরে ছিল ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

খুলনায় নলকূপ পাম্পে পানি নেই, হাহাকার

১৯ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

খুলনা  নগরীর শেখপাড়া এলাকায় সিরাজুল ইসলামের চারতলা ভবন। সেখানে রয়েছে নলকূপ ও মোটর দিয়ে পানি তোলার ব্যবস্থা। কিন্তু এ মাসের প্রথম থেকে নলকূপ ও মোটর কোনোটিতেই পানি উঠছে না। ওয়াসার পাইপলাইনের পানি দিয়ে অন্য প্রয়োজন মিটছে। খাবার ও রান্নার পানির জন্য তাঁকে ছুটতে হচ্ছে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে। সিরাজুল আক্ষেপ করে বলেন, ‘পানির এই কষ্ট কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। নিজের বাড়িতে কল থাকতেও খাবার পানির জন্য পাশের বাড়ি যাচ্ছি। দিনে সবার সামনে পানি টানতে লজ্জা লাগে, তাই রাতে আনি।’

 নগরীর মৌলভীপাড়া টিবি বাউন্ডারি রোডে মডার্ন টাওয়ারের সামনে প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে পানি নিতে যান অন্তত ৫০-৬০ জন। ওই ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী মো. বাবুল জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ৯টা এবং বিকেল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত সাবমার্সিবল পাম্প চালিয়ে লোকজনকে বিনামূল্যে পানি দেওয়া হয়। আশপাশের অনেক বাড়ির নলকূপ ও পাম্পে পানি না ওঠায় তারা এখান থেকে পানি নিয়ে যান।

চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে  খুলনা  নগরীর বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য মানুষকে খাবার পানির জন্য এমন অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হচ্ছে। এ মাসের প্রথম দিক থেকে শেখপাড়া, গোবরচাকা, বড় মির্জাপুর, ছোট মির্জাপুর, বাইতিপাড়া, টুটপাড়াসহ আরও অনেক এলাকার বাড়ির অগভীর নলকূপ থেকে একেবারেই পানি উঠছে না। আগে সড়কের পাশে ছোট মির্জাপুর এলাকায় দুটি, বড় মির্জাপুর এলাকায় দুটি, বাইতিপাড়া এলাকায় দুটি, দেবেন বাবু রোড ও টিবি বাউন্ডারি রোডে একটি নলকূপ ছিল। পানি না ওঠায় সেগুলো খুলে ফেলা হয়েছে। গভীর নলকূপের সঙ্গে যাদের পাম্প রয়েছে, সেগুলোতেও পানি ওঠার পরিমাণ কমে গেছে। ঠিকমতো পানি উঠছে শুধু গভীর নলকূপের সঙ্গে থাকা সাবমার্সিবল পাম্পে। তবে তা স্থাপন ব্যয়বহুল হওয়ায় সবাই বসাতে পারছেন না।  খুলনা ওয়াসা পাইপলাইনে পানি সরবরাহ করলেও তা পানের উপযোগী নয়।

ওয়াসার পানিতে লবণ, যাচ্ছে না মুখে তোলা

২০ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

কাপ্তাই হ্রদ থেকে স্পিলওয়ে দিয়ে পানি ছাড়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সেই পানি কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে মিশে গিয়ে সাগরের পানিকে উজানের দিকে যেতে বাধা দেয়। এভাবে নদীর পানিকে লবণাক্ততা থেকে রক্ষা করে হ্রদের পানি। আর এই পানি পরিশোধন করে নগরবাসীর মধ্যে সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কিন্তু  কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় সেভাবে পানি ছাড়া হচ্ছে না। নেই তেমন বৃষ্টিপাতও। ফলে সাগরের পানি উজানে উঠে আসায় নদীর পানিও মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে পড়েছে।

এমনিতেই সংকটের কারণে অনেক এলাকায় পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আবার এখন যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, তা লবণের কারণে মুখে তোলা যাচ্ছে না। প্রতিবছর গ্রীষ্মে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এবার গ্রীষ্ম শুরু হতে না হতেই এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। দিনে দিনে বাড়ছে পানিতে লবণের মাত্রা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

ঢাকার বাতাসে উত্তাপ বাড়াচ্ছে পাঁচ ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস

২২ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

ঢাকার বাতাসে পাঁচ ধরনের গ্যাসের স্তর তৈরি হয়েছে। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে এসব গ্যাস তৈরি হচ্ছে, যা ঢাকার বাতাস ও মাটিকে আরও উষ্ণ করে তুলছে। তাপপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এসব ক্ষতিকর গ্যাসের কারণে রাজধানীর আবহাওয়া অসহনীয় হয়ে উঠেছে। একদল বিজ্ঞানীর দুটি সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দীর্ঘমেয়াদি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, ঢাকার বাতাসে পাঁচ ধরনের গ্যাস জমা হচ্ছে, যা শহরবাসীর নানা রোগবালাই এবং সমস্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বাতাসকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে। পাঁচ ধরনের গ্যাস হচ্ছে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড ও ওজোন। এসব গ্যাস ১০ থেকে ৪০০ বছর পর্যন্ত শহরের বাতাসে রয়ে যেতে পারে।

কাসাভা চাষের জন্য উজাড় হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

২২ এপ্রিল ২০২৪, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার পিঠাছড়া এলাকায় ১০ একর পাহাড়ি বনভূমির মালিক আবু তাহের। ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাহেরের এই পাহাড়ি বনভূমিতে ৫০টিরও বেশি প্রজাতির গাছ, বিভিন্ন স্তন্যপায়ী, উভচর প্রাণি, পাখি ও সরীসৃপের আবাসস্থল ছিল। তাহের মাঝে মাঝে ফল ও কাঠ সংগ্রহ করতে এই বনে যেতেন। কিন্তু, গত বছরের ডিসেম্বরে তাহের সেখানে গিয়ে দেখতে পান তার ১০ একর বনভূমির সব গাছপালা কেটে উজাড় করে ফেলা হয়েছে।

তাহের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদসহ প্রভাবশালীরা কাসাভা চাষের জন্য জায়গা তৈরি করতে সব গাছ ও ঝোপঝাড় কেটে ফেলেছেন, যা স্থানীয়ভাবে শিমুল আলু নামে পরিচিত। দক্ষিণ আমেরিকার বিশেষ জাতের এ শষ্য গত কয়েক বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাষ হচ্ছে।

গত ২৭ মার্চ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও মানিকছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কাসাভা চাষের জন্য শত শত একর বনভূমি উজাড় করা হয়েছে এবং প্রতি বছর চাষের পরিমাণ বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে কাসাভা বা শিমুল আলুর মতো কন্দ শস্য চাষের জন্য বন কেটে ফেলা বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক নয়। এই ধরনের কৃষি পদ্ধতি মাটি ক্ষয়ের দিকে পরিচালিত করতে পারে এবং ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলে।

মাটিরাঙ্গায় ১২০০ একর পাহাড়ি বনাঞ্চলে এখন কাসাভা চাষ হচ্ছে এবং কাসাভা চাষ মাটিরাঙ্গা ছাড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। প্রাণ এগ্রো বিজনেস লিমিটেড ও রহমান কেমিক্যাল লিমিটেডের তথ্য অনুসারে, খাগড়াছড়িতে তাদের সর্বমোট ৬ হাজার ৬০০ একর কাসাভা বাগান রয়েছে।

এই কোম্পানি দুটির  লক্ষ্য ২০২৬ অর্থবছরের মধ্যে কাসাভা চাষ ১৫ হাজার একর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা। প্রাণ এগ্রোর লক্ষ্য রাঙামাটিতে কাসাভা চাষ ৩৭৮ একর থেকে এক হাজার একরে উন্নীত করা। এছাড়া ২০২৪ অর্থবছরে ১৫০ একর বনভূমি দিয়ে প্রাণ এগ্রো বান্দরবানে কাসাভা চাষ শুরু করে। তাদের তথ্য মতে,  ২০২৬ অর্থবছরে তা এক হাজার একর জমিতে পৌঁছাবে।

বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ

টাকার অভাব, ডলার–সংকটে বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে বিপুল বকেয়া

২৮ জানুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বিপুল পরিমাণ দেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। একদিকে তারা টাকার অভাবে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে বিদ্যুতের দাম যথাসময়ে দিতে পারছে না; অন্যদিকে মার্কিন ডলারের অভাবে বকেয়া রাখতে হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিদেশি কোম্পানিগুলোর পাওনা।

সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া সর্বশেষ হিসাবে, দেশে উৎপাদনরত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে পাওনা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। পিডিবি বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাছে গ্যাস বিল বকেয়া রেখেছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

ভারতের আদানির কাছে বিদ্যুতের দাম বকেয়া পড়েছে ৫০ কোটি ডলারের মতো (প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা)। জ্বালানি তেল আমদানিকারক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে বিদেশি সরবরাহকারীরা পাবে প্রায় ২৭ কোটি ডলার (প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা)। আর বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলনকারী মার্কিন কোম্পানি শেভরন গ্যাসের দাম বাবদ পাবে ২০ কোটি ডলার (প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।

মিটার ভাড়া হঠাৎ দ্বিগুণ, তিতাস জানালো ‘সরকারের সিদ্ধান্ত’

জানুয়ারি ২৯, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

তিতাস গ্যাসের আবাসিক প্রিপেইড মিটার ভাড়া সম্প্রতি ২০০ টাকা করা হয়েছে।

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পেট্রোবাংলার আওতাধীন সব গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আবাসিক প্রি-পেইড মিটারের মাসিক ভাড়া চলতি জানুয়ারি মাস থেকে ২০০ টাকা করা হয়েছে।

২০২২ সালের জুলাই থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মিটার ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। তার আগে ভাড়া ছিল ৬০ টাকা।

আজ সোমবার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে তিতাস জানায়, প্রতিটি প্রি-পেইড মিটারের লাইফ ১০ বছর বিবেচনা করে এর মূল্য, ইনস্টলেশন, ওয়েব সিস্টেম, মিটার ও সার্ভার মেইনটেন্যান্স চার্জ ইত্যাদি ব্যয় বাবদ প্রতিটি মিটারের মূল্য ২৫ হাজার টাকা।

তিতাস গ্যাস কোম্পানি ঋণ নিয়ে এ সব মিটারের ব্যবস্থা করেছে। মিটারের পুরো মূল্য একসঙ্গে না নিয়ে গ্রাহকদের সুবিধার্থে মাসিক ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে ওই মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তিতাস।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির টাকায় আদানি পাওয়ারের ‘পোয়া বারো’

জানুয়ারি ৩০, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

ভারতের আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কেনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রচুর মুনাফা হয়েছে।

২০১৭ সালের নভেম্বরে বিশ্লেষকদের সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানির জন্য আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে চুক্তি করে। বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, এর ফলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটিই বেশি লাভবান হবে।

ভারতের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরে আদানি পাওয়ারের আয় ৪০ শতাংশ বেড়ে ৩৭ হাজার ১৭৩ কোটি রুপি (৪৮ হাজার ৯১১ কোটি টাকা) হয়। ঝাড়খণ্ড ইউনিট থেকে আয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। এটি মোট আয়ের ১৪ দশমিক তিন শতাংশ।

এভাবে নয় মাসে আদানি পাওয়ারের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩০ শতাংশ বেড়ে ১৮ হাজার ৯২ কোটি রুপিতে (২৩ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা) দাঁড়িয়েছে।

দেশী কোম্পানির গ্যাসের মূল্য ১৭৩৫ কোটি টাকা, এলএনজিতে ব্যয় ৩২০০০ কোটি টাকা

জানুয়ারি ৩০, ২০২৪, বণিক বার্তা

দেশে স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত সরকারি কোম্পানি তিনটি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানিগুলো মোট গ্যাস সরবরাহ করেছে ৮৪১ কোটি ২০ লাখ ঘনমিটার। এ গ্যাস বিক্রি করে মূল্য পাওয়া গেছে ১ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত অর্থবছরে আমদানীকৃত এলএনজি সরবরাহ হয়েছে ৫৭৪ কোটি ৫২ লাখ ঘনমিটার। এ অনুযায়ী গত অর্থবছরে এলএনজি আমদানি হয়েছে স্থানীয় সরকারি গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানিগুলোর মোট সরবরাহের ৬৮ শতাংশের সমান।

এই এলএনজি আমদানির ব্যয়ের হিসাব-সংক্রান্ত চূড়ান্ত তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি পেট্রোবাংলা। তবে সংস্থাটির অর্থ ও অপারেশনস বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত অর্থবছরে দেশে এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সে অনুযায়ী গত অর্থবছরে এলএনজিতে ব্যয় হয়েছে স্থানীয় সরকারি কোম্পানিগুলোর উত্তোলনকৃত গ্যাসের বিক্রয়মূল্যের ১৮ গুণেরও বেশি।

দেশের গ্যাস খাতে এলএনজির অবদান ও এ বাবদ ব্যয়ের অসামঞ্জস্য নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তাদের ভাষ্যমতে, অস্থিতিশীল বাজার থেকে উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানি করে দেশের জ্বালানি খাতের আর্থিক স্বাস্থ্যকে হুমকিতে ফেলা হয়েছে। বিশেষ করে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে গিয়ে পেট্রোবাংলার আর্থিক চাপ ও দায়দেনা এখন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশের স্থানীয় তিন গ্যাস কোম্পানি বর্তমান দৈনিক গ্যাস উত্তোলন করছে ১০৯ কোটি ঘনফুট। কোম্পানিগুলো প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের জন্য মূল্য পায় ১০ টাকা। আর বিদেশী উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানের (আইওসি) কাছ থেকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায় ২ ডলারে। জাতীয় গ্রিডে স্বাভাবিক সময় এলএনজি সরবরাহ হয় ৭৫ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ হচ্ছে ৫৯ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুট। পেট্রোবাংলা গত অর্থবছরে এ এলএনজি কিনতে ব্যয় করেছে প্রতি এমএমবিটিইউতে (হাজার ঘনফুটের সমান) ২৫-৩৫ ডলার পর্যন্ত।

অর্থ নেই, পাইপলাইন নেই, বাড়তি এলএনজি কেনাবেচার চুক্তি হয়ে যাচ্ছে

ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৪, বণিক বার্তা

জাতীয় গ্রিডে এলএনজির সরবরাহ বাড়াতে ২৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন (মহেশখালী/মাতারবাড়ী-বাখরাবাদ) নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এ প্রকল্প এখন পরিকল্পনা কমিশনে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৪০ কোটি ডলার। এ অর্থের উৎস নিয়ে এখনো নিশ্চিত নয় সরকার। যদি চলতি বছরও কাজ শুরু হয়, পাইপলাইন নির্মাণ শেষ হতে সময় লেগে যাবে অন্তত ২০২৯ সাল। পাইপলাইন বা অর্থের জোগান নিয়ে নিশ্চিত না হলেও এরই মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি তিনটি এলএনজি সরবরাহ চুক্তি সই করেছে পেট্রোবাংলা। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এলএনজি আমদানি ও পাইপলাইনের কাজে সমন্বয় না থাকলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে পেট্রোবাংলাকে।

পেট্রোবাংলার নতুন ও অপেক্ষমাণ চুক্তিগুলোর আওতায় ২০২৬ সাল নাগাদ দেশে সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন টন অতিরিক্ত এলএনজি আসার কথা রয়েছে। এ পরিমাণ এলএনজি আনতে বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার গুনতে হবে সংস্থাটিকে। যদিও এমন এক সময় এসব চুক্তি করা হচ্ছে, যখন সংস্থাটি বিদ্যমান চুক্তির আওতায়ই এলএনজি আমদানির অর্থ সংস্থান করতে পারছে না। আমদানির অর্থ পেতে কখনো গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ), আবার কখনো বিদেশী ঋণের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এলএনজি আমদানিতে পর্যাপ্ত অর্থের জোগান ও পরিকল্পিতভাবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণকেই এখন পেট্রোবাংলার বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এলএনজি আমদানির কার্যক্রম বাড়াতে গত বছরের জুনে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। কক্সবাজারের মহেশখালীতে জ্বালানি খাতের স্থানীয় কোম্পানি সামিট গ্রুপের এ টার্মিনাল নির্মাণের কথা। এটি নির্মাণের কার্যক্রম এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সামিট গ্রুপের পরিচালক ফয়সাল খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌বর্তমানে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আমরা টিইউএ (টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছি।’

এছাড়া মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির পটুয়াখালীর পায়রায় আরেকটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের কথা রয়েছে। দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার এ টার্মিনাল নির্মাণে এখনো পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি সই করতে পারেনি কোম্পানিটি। যদিও এরই মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি সরবরাহের জন্য নতুন করে জিটুজির আওতায় দুটি এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে ফেলেছে পেট্রোবাংলা। অপেক্ষমাণ রয়েছে বেসরকারি খাতে এলএনজি আমদানিতে আরেকটি নতুন চুক্তি। ওই চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি শুরু হতে পারে ২০২৬ সাল নাগাদ। আমদানির প্রক্ষেপণের হিসাব অনুযায়ী, তখন জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ হওয়ার কথা দৈনিক ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

দেশে বৃহদায়তনে এলএনজি সরবরাহের জন্য বড় সক্ষমতার কোনো পাইপলাইন নেই। এলএনজি আমদানিকে ঘিরে নতুন যে পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেটিও চালু হতে সময় লাগবে অন্তত ২০২৯ সাল। এখনো এ প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন হলেও এর অর্থায়ন কীভাবে আসবে সেটিও এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেনি সঞ্চালন কোম্পানি গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় কেঁপে উঠেছে ভূমি, শতাধিক বাড়িতে ফাটল

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের নর্থ প্যাড এলাকার আশপাশের ভূমি গতকাল শনিবার রাতে কেঁপে উঠেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোছা. জিলুফা সুলতানা বলেন, কম্পনের খবর পেয়ে তিনি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ নিয়ে সকালে কথা বলেছেন। আপাতত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের ড্রিলিংয়ের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। কেন এ রকম কম্পন দেখা দিয়েছে, তা তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি রোববার থেকেই কাজ শুরু করেছে। তাঁরা আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলায় দেশের অন্যতম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা অবস্থিত। এ গ্যাসক্ষেত্রের নর্থ প্যাডের পশ্চিমে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাগ, জামারগাঁও. রাধাপুর, রামেরগাঁও, মধুরা, সাদুল্লাহসহ বেশ কিছু গ্রাম আছে। গ্রামগুলোয় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। গতকাল রাত ১০টার দিকে হঠাৎ করে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। কিছুক্ষণ পরপর ভূমি কাঁপছিল। এ তীব্র কাঁপুনিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। অনেকে ছোটাছুটি শুরু করেন। শতাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। এলাকাবাসী রাতেই গ্যাসক্ষেত্রের সামনে এসে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেন। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এলাকাবাসীকে শান্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

এদিকে রোববার বিকেলেও বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের চৌরাস্তা এলাকায় স্থানীয় লোকজন এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সমাবেশে বসতঘরে ফাটল ধরার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চান ভুক্তভোগীরা। অন্যথায় তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কথা বলেন।

আদানির বিদ্যুতের দাম ৮১ শতাংশ বেশি

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, আজকের পত্রিকা

ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ। আদানিসহ ভারতের সরকারি-বেসরকারি পাঁচটি কোম্পানির আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। অন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলোর গড় দামের তুলনায় আদানির বিদ্যুতের দাম ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। বিপিডিবির ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ভারতের যে পাঁচটি কোম্পানি থেকে বিপিডিবি বিদ্যুৎ আমদানি করে, সেগুলো হলো এনভিভিএন লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া, পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড, সেম্বকর্প এনার্জি ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং আদানি গ্রুপের আদানি পাওয়ার।

বিপিডিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, আদানি ছাড়া ভারতের অন্যান্য কোম্পানি থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে খরচ পড়েছে ৪ দশমিক ২২ থেকে ৯ দশমিক ৯৫ টাকা। সেখানে আদানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশকে গুনতে হয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ২ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকার ভারতের আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বিদ্যুৎ আমদানি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে। তার মধ্যে দুটি কেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ না নিয়েও পরিশোধ করা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকার বেশি। বাকি ছয়টি কেন্দ্র থেকে গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে।

আরও ৩ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে এস আলম

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে আরও ৩ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে এস আলম গ্রুপ। এর মধ্যে অর্ধেক আসবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে।  জীবাশ্ম জ্বালানি, যেমন– কয়লা বা গ্যাস দিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকবে। প্রকল্পে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এস আলম। ২০২৭ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করছে তারা।

বর্তমানে বাঁশখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রুপটির। এটি এসএস পাওয়ার প্লান্ট নামে পরিচিত।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন ১ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩ হাজার একর ভূমি প্রয়োজন। ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আরও জমি  অধিগ্রহণের  প্রয়োজন হবে। বিদ্যমান ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির জন্য ৬০৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে এস আলমকে। এতে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয় তাদের। ভূমি অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলনে ৭ জন নিহত হয়।

এলএনজিতে সামিট বৃহৎ জ্বালানি তেল পরিশোধনাগারে এস আলম

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, বণিক বার্তা

জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার চট্টগ্রামভিত্তিক ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের  দ্বিতীয় ইউনিট (ইআরএল-২) নির্মাণে যুক্ত হতে যাচ্ছে এস আলম গ্রুপ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে এস আলম গ্রুপের। দেশের গ্যাস খাতের অবকাঠামো ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বড় বিনিয়োগ করছে জ্বালানি খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সামিট গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগে দেশের তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি এরই মধ্যে সরকারের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি সরবরাহ নিয়ে সরকারের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির একটি চুক্তি এখন চূড়ান্তভাবে সইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে।

ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। চলতি মাসে ইস্যুকৃত ও মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বা এর সাবসিডিয়ারি ইআরএল এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ প্রকল্পের কারিগরি ও আর্থিক, বাস্তবায়নের মোডালিটি, বাস্তবায়নোত্তর ব্যবস্থাপনা কৌশল ও ইকুইটি হিস্যাসহ আনুষঙ্গিক সব বিষয় আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করবে। যৌথ চুক্তির আওতায় বিপিসির নিজস্ব জমিতে তিন-পাঁচ মিলিয়ন টন ক্ষমতাসম্পন্ন এ রিফাইনারি স্থাপনে এস আলম গ্রুপের সমঝোতা স্মারক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। ঐকমত্যে পৌঁছলে দুই পক্ষ একযোগে এসপিভি (স্পেশাল পারপাস ভেহিকল) কোম্পানি গঠন অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে বিপিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে প্রকল্পটির বিষয়ে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক সুব্রত ভৌমিক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পটি জ্বালানি খাতের বড় একটি প্রকল্প। এটি এগিয়ে নিতে বেসরকারি উদ্যোক্তা হিসেবে এস আলম আগ্রহ দেখিয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে। তবে এখনো বিষয়টি দুই পক্ষের আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে আমরা আশাবাদী।’

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। ইআরএল ইউনিট-২ নির্মাণ করা গেলে দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বার্ষিক প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা দাঁড়াবে ৪৫ লাখ টনে, যা দেশের বিদ্যমান জ্বালানি পরিশোধন সক্ষমতার তিন গুণ।

ইআরএল-২ নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে জ্বালানি বিভাগের এ-সংক্রান্ত আগেকার কিছু প্রাক্কলনে দেখা গেছে, এতে সম্ভাব্য ব্যয়ের পরিমাণ হতে পারে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে এ ব্যয়ের পরিমাণ আরো বেশি হওয়ার কথা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

দেশে এখন জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার রয়েছে একটি। ইস্টার্ন রিফাইনারির এ পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করা হয় স্বাধীনতার আগে ১৯৬৮ সালে। এটির বার্ষিক প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বছরে ১৫ লাখ টন। ৫৬ বছর ধরে পরিশোধনাগারটি একনাগাড়ে জ্বালানি তেল পরিশোধন করছে। বর্তমানে বিপিসির বার্ষিক জ্বালানি তেলের (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত) চাহিদা ৬০ লাখ টন।

অন্যদিকে বেসরকারি খাতের আরেক জায়ান্ট সামিট গ্রুপ এখন বিদ্যুতের পাশাপাশি এলএনজি খাতে ক্রমেই বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। দেশের তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) নির্মাণে এরই মধ্যে পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের ১৪ জুন অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে (একনেক) এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। কোম্পানিটি এখন টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য টিইউএ (টার্মিনাল ইউজ অ্যাগ্রিমেন্ট) নিয়ে কাজ করছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীতে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার টার্মিনাল নির্মাণ করবে সামিট। বর্তমানে সেখানে সামিটের ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার আরো একটি টার্মিনাল রয়েছে। পরিকল্পনাধীন টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হলে সামিটের দৈনিক এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতা দাঁড়াবে ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে।

তবু গ্যাস আমদানির বড় বড় চুক্তি

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

দেশে মার্কিন ডলারের সংকটের মধ্যেই আরও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির চুক্তি করছে সরকার। গত বছরের জুন ও নভেম্বরে তিনটি চুক্তি হয়েছে। আরেকটি চুক্তি শিগগিরই হতে পারে।

চারটি চুক্তির অধীনে ২০২৬ সালের জুন থেকে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহের কথা দিনে ১৭০ কোটি ঘনফুট। এখন সক্ষমতা রয়েছে ১১০ কোটি ঘনফুট। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয়েছে দিনে ৯০ কোটি ঘনফুটের কম।

বাড়তি গ্যাস তরল অবস্থায় এনে তা রূপান্তরের জন্য নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে, যার কাজ শুরু হয়নি। বাড়তি গ্যাস সরবরাহের জন্য নতুন পাইপলাইন দরকার। সেই প্রকল্পে অর্থায়নও নিশ্চিত হয়নি।

ডলার–সংকটের কারণে বাড়তি গ্যাস আমদানি করতে না পারায় সরকার দেশে উত্তোলনে জোর দিয়েছে। এমন সময়ে কেন দীর্ঘমেয়াদি আমদানি চুক্তি এবং চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস আনতে ডলার কোথা থেকে আসবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী আমদানিতে ব্যর্থ হলে বিদ্যুৎ খাতের কেন্দ্রভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জের মতো মাশুল দিতে হতে পারে।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নতুন বছর শুরুর আগে কতটুকু গ্যাস আমদানি করা হবে, তা জানালে চুক্তির ন্যূনতম পরিমাণের চেয়ে ১০ শতাংশ গ্যাস কম আনার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সূচি অনুসারে কোনো চালান আমদানির সিদ্ধান্ত দুই মাস আগে বাতিল করলে তা অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয় সরবরাহকারীরা। এ ক্ষেত্রে চুক্তির দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি হলে জরিমানা দিতে হয়। এই শর্তটিও সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়।

বিদেশ থেকে গ্যাস দুইভাবে কেনা হয়। একটি হলো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যার মাধ্যমে গ্যাস আসে কাতার ও ওমান থেকে। অন্যটি খোলাবাজার থেকে কেনা, যেখানে গ্যাসের দামে ব্যাপক ওঠা–নামা হয়। আমদানি করা গ্যাসের ৭০ শতাংশের মতো আসে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থেকে।

নতুন চার চুক্তি

দেশে এখন দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো। গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে ২০১৮ সালে আমদানি শুরু হয়। বিদেশ থেকে গ্যাস দুইভাবে কেনা হয়। একটি হলো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যার মাধ্যমে গ্যাস আসে কাতার ও ওমান থেকে। অন্যটি খোলাবাজার থেকে কেনা, যেখানে গ্যাসের দামে ব্যাপক ওঠা–নামা হয়। আমদানি করা গ্যাসের ৭০ শতাংশের মতো আসে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থেকে।

নতুন করে কাতার ও ওমানের কাছ থেকে গ্যাস আনার ১৫ বছর মেয়াদি দুটি চুক্তি হয় গত বছরের জুনে। মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে গত নভেম্বরে ১৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি করা হয়েছে। দেশীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সামিট গ্রুপের সঙ্গেও শিগগিরই একটি চুক্তি হবে। এটিও হবে ১৫ বছর মেয়াদে। চারটি চুক্তিতেই গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে ২০২৬ সালে।

এক্সন মবিলের সঙ্গে জ্বালানি বিভাগের ফের বৈঠক

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগামী মার্চে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা ৷ এতে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরন ৷ যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কোম্পানি এক্সন মবিলের প্রতিনিধি দল সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় এসেছে৷ এক্সনের প্রতিনিধি দলের প্রধান মঙ্গলবার জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ তারা জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার সঙ্গেও আলোচনা করবে ৷ সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে৷

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গত বছরের মার্চে প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করে এক্সন মবিল। সে সময় তারা গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লক ইজারা চেয়েছিল। এ নিয়ে কয়েক দফা চিঠিও দেয় মার্কিন কোম্পানিটি ৷ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে তাদের আলোচনাও হয় ৷ তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে এই আলোচনা থমকে থাকে৷

সিলেট- ভোলার ১০ কূপের কাজ পাচ্ছে চীন-রাশিয়া

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর চাপ কমাতে সরকার গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ওপর জোর দিয়েছে। চলছে স্থলভাগে ৪৬টি কূপ খননের কাজ। আরও ১০০ কূপ খনন করা হবে। দেশি কোম্পানি বাপেক্সের পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দিচ্ছে সরকার। চীনের সিনোপ্যাককে সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচটি ও রাশিয়ার গ্যাজপ্রমকে ভোলায় পাঁচটি কূপ খননের কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধানে এই কাজ তাদের দেওয়া হচ্ছে বলে পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়। এতে ব্যয় হতে পারে ২০ মিলিয়ন ডলার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিনোপ্যাক ও গ্যাজপ্রম এরই মধ্যে তাদের প্রস্তাব দাখিল করেছে। তাদের দর প্রস্তাব নিয়ে দর কষাকষি করছে জ্বালানি বিভাগ। বিশেষজ্ঞ কেউ কেউ বলছেন, বিদেশি কোম্পানির চেয়ে বাপেক্সের কূপ খনন খরচ কম। তা ছাড়া দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ দিলে প্রতিযোগিতা হতো, খরচ কমে আসত। তবে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে সরকার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা শুধু বাপেক্সকে দিয়ে সম্ভব নয়। দ্রুত কাজ করতে হবে। তাই বিশেষ বিধানে সমঝোতার মাধ্যমে সিনোপ্যাক ও গ্যাজপ্রমকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দুটিই যোগ্য কোম্পানি। আগেও তারা বাংলাদেশে কাজ করেছে। 

গ্যাজপ্রমকে দেওয়া হবে ভোলার শাহবাজপুর-৫, শাহবাজপুর-৭, শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট-১ এবং ভোলা নর্থ-৩ ও ভোলা নর্থ-৪ কূপের কাজ। এর মধ্যে শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট অনুসন্ধান কূপ এবং বাকি চারটি উন্নয়ন কূপ। সিনোপ্যাক খনন করবে রশিদপুর-১১, রশিদপুর-১৩, সিলেট-১১, কৈলাসটিলা-৯ এবং ঢুপিটিলা-১ কূপ। এগুলোর ৪টি অনুসন্ধান ও একটি উন্নয়ন কূপ।

এবারও গ্রীষ্মে থাকছে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা ডলার—দুটির সংকটেই ভুগছে বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে টাকার ঘাটতি মেটাতে যাচ্ছে সরকার। এতে দেশীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া বিল পরিশোধে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে ভারতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল ও জ্বালানি আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের জোগানের অনিশ্চয়তা কাটেনি। এতে গ্রীষ্মে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে উৎপাদন সক্ষমতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে ঘাটতি আছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ্বালানি তেলের (ডিজেল, ফার্নেস) সরবরাহে। চাহিদামতো জ্বালানি না পাওয়ায় গত দুই বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যাপক লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয়েছে ভোক্তাদের। এর মধ্যে গত বছর গ্রীষ্মের আগে টানা তিন দফা দাম বাড়িয়েও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি।

এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। গত বছরের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে ১১ শতাংশের মতো। একই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে একই হারে। তবে গত বছরের মতোই সক্ষমতার বড় একটি অংশ বসিয়ে রাখতে হতে পারে জ্বালানির অভাবে। গড়ে ২৫ শতাংশ সক্ষমতা বসে ছিল সর্বোচ্চ চাহিদার সময়েও। এর বাইরে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত বন্ধ থাকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সক্ষমতা। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকুক বা বন্ধ থাকুক, চুক্তি অনুসারে সব কেন্দ্রকে ভাড়া পরিশোধ করতে হয়; যা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে পরিচিত। গত অর্থবছরে পিডিবি ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া পরিশোধে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, গত বছর ৪১ শতাংশ সক্ষমতা অলস বসে ছিল।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি বাড়ল ৭৫ পয়সা

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে আরেক দফা বাড়ল গ্যাসের দাম। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের বর্তমান দাম ১৪ টাকা। নতুন করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। নতুন দাম চলতি ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

আজ মঙ্গলবার সরকারের নির্বাহী আদেশে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে নতুন দাম ঘোষণা করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (ক্যাপটিভ) জন্য ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়েছে।

বিদ্যুতের দাম ধাপে ধাপে বাড়বে

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

বিপুল ভর্তুকির চাপ সামলাতে সরকার বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করবে। আপাতত এই সমন্বয় মানে দাম বাড়ানো।

প্রথম দফায় দাম বাড়ছে আগামী মাস মার্চ থেকে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ দফায় ইউনিটপ্রতি দর ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা বাড়তে পারে।

দাম বাড়ানোর বিষয়টি জানানোর সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী এ-ও জানিয়েছেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। ঘাটতি মেটাতে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আগামী তিন বছর ধরে ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করা হবে।

ব্যয় তিন গুণ, তবু কেনা হয় তেলভিত্তিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

তেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় অন্য জ্বালানির তুলনায় তিন গুণের বেশি। তবু সারা বছরই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে সরকার। বসে থাকছে গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার বড় একটি অংশ।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে এখন ১ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে জ্বালানি খরচ গড়ে ১৭ টাকা। গ্যাসে খরচ দাঁড়ায় চার টাকার আশপাশে। কয়লায় ব্যয় ছয় টাকার মতো।

ব্যয় বেশি হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে তেল ব্যবহার করে।

একই অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় ২৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি ইউনিট ১১ টাকা ৫২ পয়সায়, যার একটি কারণ তেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন। পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ১০ শতাংশ কমালে বছরে সাশ্রয় হতে পারে অন্তত ৯ হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ে ৩.৭% আর ক্যাপাসিটি চার্জ বৃদ্ধি পায় ৫৬ শতাংশ

ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪, বণিক বার্তা

দেশে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৮৭ হাজার ২৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। সরকারি, বেসরকারি ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে এ পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ সময় ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ব্যয় বেড়েছে ৫৬ শতাংশ।চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় যুক্ত হতে যাচ্ছে আরো অন্তত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রও রয়েছে। মোট সক্ষমতায় এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র যুক্ত হলে চলতি অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা খাতসংশ্লিষ্টদের।

আহরণের প্রস্তাব অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানির

ব্রহ্মপুত্রের প্রতি কিলোমিটারে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার খনিজ

৬ মার্চ ২০২৪, মানবজমিন

কোথায় কীভাবে লুকিয়ে আছে সম্পদ বলা মুশকিল। পায়ের নিচে পড়ে আছে হাজার হাজার কোটি টাকার রত্ন। কেউ কোনোভাবেই অনুভব করতে পারেনি। আমার চিরচেনা ব্রহ্মপুত্র নদ বর্ষায় টইটম্বুর আর শুষ্ক মৌসুমে কেবলই বালি আর বালির স্তূপ। ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে যাওয়া অথবা বন্যার পানিতে একূল-ওকূল গড়াগড়ি করা বালিতে লুকিয়ে আছে অগাধ সম্পদ। তাও আবার মহামূল্যবান ৬টি খনিজ পদার্থ। এমন কল্পনা উত্তরের সাধারণ মানুষ তো নয়ই গবেষকরা কখনো করেননি। সেই বালিই এখন দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে হাতছানি দিচ্ছে। ইতিমধ্যে এভারলাস্ট মিনারেলস লি. নামক অস্ট্রেলিয়ার একটি কোম্পানি উত্তরের জেলা গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বালুচরে এক্সপ্লোরেশন কাজ সম্পন্ন করেছে এবং মাইনিং লাইসেন্সপ্রাপ্তি ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।

গেল কয়েক সপ্তাহ ব্রহ্মপুত্র নদের এমন গুপ্তধন নিয়ে অনুসন্ধান করেন মানবজমিন-এর এই প্রতিবেদক। সেখানে উঠে আসে অবহেলিত এলাকায় সন্ধান মেলা খানিজ পদার্থের বিস্তারিত।

উত্তরের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের বালিতে মূল্যবান ছয়টি খনিজ পদার্থের সন্ধান মিলেছে।

বালির নিচে লুকিয়ে থাকা এসব খনিজ পদার্থ হচ্ছে- ইলমেনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজ। এসব খনিজের মধ্যে জিকরন সিরামিক, টাইলস, রিফ্যাক্টরিজ ও ছাঁচ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। রঙ, প্লাস্টিক, ওয়েলডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস, ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় রুটাইল। শিরিশ কাগজ উৎপাদনে ব্যবহার হয় গারনেট। চুম্বক, ইস্পাত উৎপাদনসহ বিভিন্ন কাজে লাগে ম্যাগনেটাইট। টিটেনিয়াম মেটাল, ওয়েল্ডিং রড ও রঙ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় ইলমেনাইট। আর কাঁচ শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল কোয়ার্টজ।

গবেষণায় শনাক্তের পর ‘ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি’ (আইএমএমএম) বলেছে প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের দাম ৩ হাজার ৬শ’ ৩০ কোটি টাকা। গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের বালিতে প্রচুর পরিমাণে এসব খনিজ সম্পদ আছে নিশ্চিত করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

খনিজ সম্পদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি’র সদ্য বিদায়ী পরিচালক ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান মানবজমিনকে জানান, ‘কুড়িগ্রাম অংশে ব্রহ্মপুত্র নদের বালিতে পাওয়া গেছে ইলমিনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজের মতো মূল্যবান ছয়টি খনিজ। এখানকার বালিতে আরও খনিজ শনাক্তের কাজ করছেন গবেষকরা।’

ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ বর্গ কিমি ও ১০ মি. গভীরতায় মাইনিং কার্যক্রম ও পৃথককৃত মিনারেলের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ৩৬৩ মিলিয়ন ডলার বা ৩৬৩০ কোটি টাকা। দেশে বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন চরের খনিজ বালু নির্মাণ ও পূর্ত কাজের আওতায় ব্যবহার করে সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় হচ্ছে ৮০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে যদি ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী এলাকায় দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী মহল কর্তৃক আনুমানিক ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনিজ বালু প্রসেসিং সেন্টার স্থাপন করা হয় সেখান থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ টন খনিজ পাওয়া সম্ভব। যা ১০ বছরের মধ্যে মূলধন উঠে আসবে এবং ২২০০ জনবলের কর্মসংস্থান হবে এবং লাভজনক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, কর্মসংস্থান ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা হবে।

ইতিমধ্যে এভারলাস্ট মিনারেলস লি. নামক অস্ট্রেলিয়ার একটি কোম্পানি গাইবান্ধা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বালুচরে এক্সপ্লোরেশন কাজ সম্পন্ন করেছে এবং মাইনিং লাইসেন্সপ্রাপ্তি ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।

সূত্র থেকে জানা যায়, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন বালুচর থেকে ১ হাজার ৫শ’ টন বালু সংগ্রহ করা হয়। খনিজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতি টন বালি থেকে ২ কেজি ইলমিনাইট, ২শ’ গ্রাম রুটাইল, ৪শ’ গ্রাম জিরকন, ৩.৮ কেজি ম্যাগনেটাইট, ১২ কেজি গারনেট ও ৫০ কেজি কোয়ার্টজ মিনারেল পাওয়া যায়। গবেষকরা বলছেন- প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকা এবং ১০ মিটার (৩০ ফুট) গভীরতায় থেকে প্রাপ্ত খনিজের বাজার মূল্য ৩ হাজার ৬শ’ ৩০ কোটি টাকা। এই সম্পদ কীভাবে উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াজাত করা যায় তা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা চিন্তা করছেন।

অপর আরেকটি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহরণে গাইবান্ধায় ২ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর বালুচর লিজ চায় অস্ট্রেলিয়ান একটি প্রতিষ্ঠান। নিজ খরচে খনিজ আহরণের পর সরকারকে ৪৩ ভাগ দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে এভারলাস্ট লিমিটেড নামের অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিটি বেশ কিছুদিন ধরে গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি উপজেলায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের ৪ হাজার হেক্টর বালুচরে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের কাজ করছে। বালাসীঘাট এলাকায় একটি প্লান্টও স্থাপন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার ফুলছড়ির বালাসীঘাট, সদরের মোল্লারচর এবং কামারজানি এলাকায় ২ হাজার ২৯৫ হেক্টর বালিচর লিজ চেয়ে খনিজ আহরণের আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে আহরণের পর সরকারকে ৪৩ ভাগ দেয়ার প্রস্তাব করেছে তারা। তবে এনিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অকটেনের দাম কমছে ৪ টাকা, পেট্রলে ৩ টাকা, ডিজেলে ৭৫ পয়সা

০৭ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

 বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ চালু করেছে সরকার। দেশে প্রথমবারের মতো স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। কাল শুক্রবার থেকে নতুন দর কার্যকর হচ্ছে।

 প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনে দাম কমেছে ৭৫ পয়সা। পেট্রল কমেছে ৩ টাকা ও অকটেনে কমেছে ৪ টাকা।

 জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে আজ বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৯ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা। ভেজাল প্রতিরোধে কেরোসিনের দাম ডিজেলের সমান রাখা হয়। অকটেনের দাম ১৩০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১২৬ টাকা। আর পেট্রলের দাম ১২৫ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১২২ টাকা।

বড়পুকুরিয়া-ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার উদ্যোগ

০৭ মার্চ ২০২৪, সমকাল

বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। নির্মাণাধীন ও চালু মিলিয়ে কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াচ্ছে ১১ হাজার ৩২৯ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে বছরে মোট কয়লার প্রয়োজন হবে ৩৩.৬ মিলিয়ন টন। বড়পুকুরিয়া থেকে বছরে মাত্র ১ মিলিয়ন কয়লা তোলা হয়। নতুন খনি চালু না হলে চাহিদার প্রায় পুরো কয়লা আমাদনি করতে হবে। এতে খরচ হবে ৬ বিলিয়ন ডলার।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের জ্বালানি দিন দিন আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে। এতে বাড়ছে অর্থনীতির ওপর  চাপ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট। ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। তাই সরকার দেশীয় জ্বালানি উত্তোলন ও অনুসন্ধানে জোর দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের কয়লা খনিগুলো নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। দেশের পাঁচ কয়লা খনির মধ্যে বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতি, খালাসপীর ও  দীঘিপাড়ায় ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে এবং জামালগঞ্জে কোল গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

দীর্ঘদিন ধরে খনি থেকে কয়লা তোলার পদ্ধতি নিয়ে চলছে বিতর্ক। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলন হয়। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। ২০০৬ সালের ওই আন্দোলনের পর দেশীয় খনি থেকে কয়লা তোলার বিষয়টি ঝুলে যায়।

কয়লা উত্তোলনে বিরোধিতাকারী পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদের ভাষ্য, খনির কারণে এলাকার কৃষিজমি ধ্বংস, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা নষ্ট ও পরিবেশ দূষিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময় বলেছেন,  কৃষিজমির ক্ষতি করে কয়লা তোলা হবে না। এ জন্য জ্বালানি বিভাগ বিশদ জরিপ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাবনা নিয়ে যাচ্ছে। কীভাবে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা করা হবে, স্থানীয়দের পুনর্বাসন, উত্তোলন শেষে ভূমিকে আবার চাষযোগ্য করে তোলাসহ সার্বিক বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

সম্প্রতি হাইড্রোকার্বন ইউনিট দেশীয় কয়লার ওপর একটি প্রস্তাবনা জ্বালানি বিভাগে উপস্থাপন করে। এতে বলা হয়, দেশে জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। গ্যাসের মজুত কমছে। ফলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর ওপর চাপ বাড়বে। কেন্দ্রগুলোর চাহিদা অনুসারে কয়লা আমদানি করতে হলে আগামীতে বছরে ৬ বিলিয়ন ডলার লাগবে।

বর্তমানে ডলার সংকটে জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। কয়লা সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর  উৎপাদন প্রায় বন্ধ ছিল। দেশীয় কয়লার নিশ্চিয়তা পেলে ডলারের ওপর চাপ কমবে, জ্বালানি নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। 

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নকারী জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার এক উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কয়লা মজুতের পরিমাণ ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন টন, যা ২০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমান। ১০ শতাংশ তোলা গেলে ২০ টিসিএফ পাওয়া যাবে। অভ্যন্তরীণ কয়লা দিতে পারে বহুমুখী সুবিধা। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণ ও আমদানিনির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, নতুন খনি থেকে কয়লা তোলার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জামালগঞ্জে কোল গ্যাসিফিকেশন, বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত খনি ও দীঘিপাড়ায় কয়লা তোলা নিয়ে জরিপ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি পূর্ণাঙ্গ ফলাফল উপস্থাপন করা হবে।

তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এর ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। পরিবেশের ক্ষতি তো হচ্ছেই, অর্থনীতিও চাপে পড়েছে। কয়লা তোলার উদ্যোগ নেওয়া হলে তা হবে আরও সর্বানাশা সিদ্ধান্ত। স্থানীয়রা নিজেদের রক্ষায় জীবন দিয়েছিল। তাই সরকার এই হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবে না বলে তিনি আশা করেন।

ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, কয়লা তোলার বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্তে আসা দরকার ছিল। কারণ কয়লার চাহিদা বেড়েছে, আরও বাড়বে। পুরোটা আমদানিনির্ভর হলে জ্বালানি নিরাপত্তা থাকবে না। তিনি বলেন, দেশে আসলে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যাবে না। ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে যতটুকু করা যায়, সেদিকে এগোতে হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নিতে সরকার অনেক দেরি করে ফেলছে। কয়লা খনির উন্নয়নে বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন  বিনিয়োগ করছে না। তবে অনেক কোল কোম্পানি নিজেরা বিনিয়োগ করবে। এ জন্য ভালো নেগোশিয়েশন করতে হবে। আগে সরকার শক্তিশালী অবস্থায় ছিল। এখন সরকার এগিয়ে গেলে কোম্পানিগুলো সে সুযোগ নেবে। তার পরও উদ্যোগ দরকার। তবে সবার আগে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জরিপ করতে হবে। ফল ইতিবাচক হলেই কয়লা তোলা উচিত।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কয়লা তোলা হবে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেই। স্থানীয়দের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে কয়লার খনি হলে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন কমবে। বিপরীতে আগামীতে বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার কয়লা আমদানি করতে হবে।

রপ্তানির সুযোগ রেখে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান

মার্চ ১১, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক এলাকায় তেল-গ্যাসের অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে (আইওসি) আমন্ত্রণ জানিয়ে দরপত্রের আহ্বান করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)।

রোববার তারা দরপত্রের এই আহ্বান জানায়।

২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক সীমানা-বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর এবারই প্রথম সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে এই বৃহৎ উদ্যোগ নিলো সরকার।

পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অগভীর সমুদ্রের ১১টি ব্লকের মধ্যে নয়টি (এসএস-০১, ০২, ০৩, ০৫, ০৬, ০৭, ০৮, ১০ ও ১১) এবং গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লকের (ডিএস-০৮ থেকে ডিএস-২২) জন্য এই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগে থেকে দুটি অগভীর সমুদ্রের ব্লক ভারতের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস করপোরেশনকে (ওএনজিসি) অনুসন্ধানের জন্য দেওয়া আছে।

আন্তর্জাতিক যেসব কোম্পানির দৈনিক অন্তত ১৫ হাজার ব্যারেল তেল বা প্রতিদিন ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের অভিজ্ঞতা আছে, কেবল তাদের দরপত্রে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে।

দরপত্রে অংশ নিতে হলে কোনো কোম্পানিকে নিজ দেশের বাইরে অন্তত একটি কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কোম্পানিগুলো এক বা একাধিক ব্লকের জন্য দরপত্রে অংশ নিতে পারবে।

মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) ২০২৩-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার মধ্যে আগ্রহী তেল-গ্যাস কোম্পানিকে দরপত্র জমা দিতে হবে।

পিডিবির বিল বকেয়া পড়েছে ৫৯ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা!

শেয়ার বিজ নিউজ, ২০ মার্চ ২০২৪

বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া বিলের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গত অর্থবছর শেষে সরকারি-বেসরকারি কেন্দ্র ও ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল ২১ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসেই বকেয়া বাড়ে ১৫ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। এতে বাধ্য হয়ে বন্ডে বকেয়া বিলের কিছুটা পরিশোধ করে সরকার। পাশাপাশি ভর্তুকিও ছাড় করা হয়।

যদিও চাহিদার তুলনায় অর্থ মন্ত্রণালয় ভর্তুকি দিচ্ছে অনেক কম। ফলে বকেয়ার পরিমাণ না কমে আরও বেড়ে গেছে। গত জানুয়ারি শেষে বকেয়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার মাসে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বকেয়া বেড়েছে ২২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। বকেয়া বিল নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পিডিবি। তাই জরুরি ভিত্তিতে চলতি অর্থবছরের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা ভর্তুকির অবশিষ্ট ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

গত ৬ মার্চ পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ঋণের বিপরীতে ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বন্ডের মাধ্যমে পরিশোধের পরও ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি এবং আদানিসহ ভারত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ মোট অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৭০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়াও সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি ও দেশীয় আমদানি নির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

রমজান শুরুর আগে পাঠানো এ চিঠিতে আরও বলা হয়, আসন্ন পবিত্র রমজান, সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে অপরিশোধিত বিল পরিশোধের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ভর্তুকির অবশিষ্ট অর্থ ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা ছাড় করা প্রয়োজন। এর মধ্যে ভর্তুকি বাবদ চলতি মাসে চার হাজার কোটি টাকা, এপ্রিলে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা, মে মাসে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা এবং জুনে চার হাজার ৭০১ কোটি টাকা ছাড়ের প্রয়োজন হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড় করেছে অর্ধেকেরও কম; তথা ১৭ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। এখনও ভর্তুকির ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা ছাড় করা বাকি রয়েছে। এ অর্থই ছাড় করতে অনুরোধ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। যদিও চলতি অর্থবছরের ভর্তুকির বেশিরভাগ অংশই গত অর্থবছরের ঘাটতি পূরণে ব্যয় করবে পিডিবি। ফলে আগামীতে বিদ্যুৎ খাতের ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পাবে।

গ্রীষ্মের আগেই গ্রামে লোডশেডিং

১৯ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

শীত বিদায় নিতেই বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। সঙ্গে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। দেশের কোনো কোনো জেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষকে এখনই দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে।

অবশ্য দিনের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা এখনো উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকে পৌঁছায়নি। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর একাংশ অলসই থাকছে। তবু লোডশেডিংয়ের কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই। জ্বালানি আমদানির জন্য যথেষ্ট টাকা ও মার্কিন ডলার সরকার দিতে পারছে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা এখন দিনে ১২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। গ্রীষ্মকাল শুরু হলে অর্থাৎ এপ্রিলে তা বেড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়াতে পারে। জ্বালানির সরবরাহ না বাড়ালে তখন লোডশেডিং পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

ঢাকার বাইরে শহর এলাকায় লোডশেডিং করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা পিডিবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো।

বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র বলছে, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। গতকাল সোমবার দিনে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল বেলা তিনটায় ১২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ওই সময়ে সরবরাহে ঘাটতি ছিল ৭৫৭ মেগাওয়াট, যা লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। এর আগে গত রোববার ছুটির দিনে রাত আটটায় সারা দেশে সর্বোচ্চ ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে।

ঢাকায় বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে কোনো লোডশেডিং করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে দুই সংস্থা ডেসকো ও ডিপিডিসি। তবে কারিগরি কারণে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। ঢাকার বাইরে শহর এলাকায় লোডশেডিং করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা পিডিবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো।

‘সস্তার কয়লা’ এখন পিডিবির বোঝা, বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেনা ২৫ হাজার কোটি টাকা

২৫ মার্চ ২০২৪, আজকের পত্রিকা

জাপানের সরকারি সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা করা হয় ২০১০ সালে। সে পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়, যার অর্ধেকের বেশি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেয় সরকার। ব্যাপক আকারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ শুরুতেই দেশে ও বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ে। তখন সরকারের প্রধান যুক্তি ছিল, কয়লার বিদ্যুৎ সব থেকে সস্তা। ১৩ বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, কয়লা কোনোভাবেই সস্তা না। স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত দিক বাদ দিলেও কয়লার বিদ্যুতে ইউনিটপ্রতি খরচ সৌরবিদ্যুৎকে ছাড়িয়ে গেছে।

কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে বিপুল উৎপাদন ব্যয়ের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। উচ্চমূল্যে কেনা বিদ্যুতের দাম দিতে গিয়ে গত বছর পিডিবির লোকসান হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া পাওনা দিতে পারছে না। পিডিবির কাছে বেসরকারি এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় সম্পর্কে সরকার হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল। সে কারণে ১৭টি কেন্দ্রের অনুমতি দিলেও পরে সাতটি বাতিল করে দিয়েছে। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনার ছয়টি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র পুরোভাগে উৎপাদনে এসেছে। বাকি চারটি উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। উৎপাদনে আসা কেন্দ্রগুলোর গড় উৎপাদন ব্যয় ইউনিটপ্রতি প্রায় ১০ টাকা থেকে ২১ টাকা। অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুতে বর্তমানে উৎপাদন ব্যয় প্রতি ইউনিটে ১১ টাকার মতো।

দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও হবে রূপপুরে

০৩ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরেই হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বর্তমান পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশেই সমান ক্ষমতার এ প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালে শুরু হতে পারে। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশেই দ্বিতীয় প্রকল্পের জন্য ৮০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দেশ রাশিয়াকেই এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছে বাংলাদেশ। রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করা হবে।

প্রথম প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতার পাশাপাশি ৯০ শতাংশ আর্থিক খরচ ঋণ হিসেবে দিয়েছিল মস্কো। দ্বিতীয় প্রকল্পও এ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হতে পারে বলে জানা গেছে।

রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রথম প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন তিনি। পাশাপাশি দ্বিতীয় প্রকল্প বিষয়ে আলোচনা করেন।

গরমের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং, গ্রামে ভোগান্তি বেশি

০৪ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

দেশজুড়ে মৃদু তাপপ্রবাহ চলছে। তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। অতিরিক্ত গরমে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে দুর্ভোগ বেশি। শীতকাল শেষ হতে না হতে এখনই অনেক এলাকায় ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। রোজায় তীব্র গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের ভোগান্তি জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তথ্যমতে, এখন দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। যদিও দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তাই লোডশেডিং করে ঘাটতি সামলাতে হচ্ছে।

বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে জানা যায়, দেশে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। এ জন্য গ্রামগঞ্জে লোডশেডিং বেড়েছে বেশি। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুরে অপেক্ষাকৃত বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। চট্টগ্রামেও লোডশেডিং বেড়েছে। তুলনামূলক লোডশেডিং কম বরিশাল বিভাগে।

চলতি অর্থবছরে বিপিসির নিট মুনাফা হতে পারে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা

এপ্রিল ০৬, ২০২৪, বণিক বার্তা

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। এর ধারাবাহিকতায় মুনাফায় ফিরেছে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনে নিয়োজিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় হিসাব করে দেখেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সংস্থাটির নিট মুনাফা হবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল ২০২৩-২৪-এ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি লোকসান করতে পারে বিপিসি।

সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে বিপিসির মোট বিক্রি দাঁড়াতে পারে ৭৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৫৫ টনে, যার অর্থমূল্য ৮৪ হাজার ২৫৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে সংস্থাটি জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করেছিল ৭২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৩ টন। টাকার অংকে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৯ হাজার ১৮৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যারেলপ্রতি ৯৬ ডলার ৬৫ সেন্ট মূল্যে অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছিল বিপিসি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চলতি বছরের হিসাবে এর ব্যারেলপ্রতি মূল্য ধরা হয়েছে ১০৩ ডলার ৪৮ সেন্ট।

চলতি অর্থবছরে সংস্থাটির বিক্রীত পণ্যের মোট (পরিচালন) ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৬১৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর আগে তা ১ লাখ ১২ হাজার ৭৯ কোটি ১০ লাখ টাকায় দাঁড়াতে পারে বলে প্রাক্কলন করেছিল মন্ত্রণালয়। গত অর্থবছরে বিপিসির এ বাবদ মোট ব্যয় ছিল ৭৩ হাজার ৩২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আয়ের তুলনায় ব্যয় কমায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিপিসির মোট পরিচালন উদ্বৃত্ত হিসাব করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর আগে এ বাবদ ৯ হাজার ২৭৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পরিচালন লোকসানের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। গত অর্থবছরে সংস্থাটির পরিচালন উদ্বৃত্ত ছিল ৫ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বিপিসির নিট মুনাফা হতে পারে ৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। যদিও শুরুতে ১০ হাজার ১৯ কোটি টাকা নিট লোকসানের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। আর গত অর্থবছরে সংস্থাটির নিট মুনাফা হয়েছিল ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

বিদ্যুতে অপরিশোধিত বিল ৬০ হাজার কোটি টাকা

১৮ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি, আদানিসহ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাবদ গত জানুয়ারি শেষে অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।

এ অবস্থায় সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট ভর্তুকির প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা গত মার্চ থেকে পরবর্তী চার মাসে পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। মার্চের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে ভর্তুকির অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড় করার অনুরোধ ছিল।

কিন্তু সরকারের কোষাগারে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় গত ২৮ মার্চ ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পর এ খাতে আর কোনো অর্থ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ঋণের বিপরীতে ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ইস্যু করার পাশাপাশি ভর্তুকি বাবদ অর্থ ছাড় করা হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দের এখনও অবশিষ্ট রয়েছে ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি, আদানিসহ ভারত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ মোট অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া একই সময়ে সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি ও দেশীয় আমদানিনির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত জানুয়ারি পর্যন্ত অপরিশোধিত বিল প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুতে ভোগান্তি কমছে না

২৩ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

দেশজুড়ে তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না অনেকে। স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ঘরেও টিকতে পারছে না দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। বিদ্যুতের ঘাটতিতে অনেক এলাকায় সেচকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। গ্রাম এলাকায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এরই মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি অর্থ সংকটে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো কম চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতেও লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। গত রোববার রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বিদ্যুৎ যাওয়ার তথ্য মিলেছে। আনুষ্ঠানিক লোডশেডিং শুরু হলে শহরের পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে।

যাতায়াত ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনা

ঢাকা নগর পরিবহনের বাসে মুখরক্ষার উদ্যোগও বন্ধের পথে

২৯ জানুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

যত্রতত্র বাস থামবে না, টিকিট ছাড়া কেউ উঠবে না, নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকেই যাত্রী ওঠাতে হবে—এসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই বছর আগে চালু করা হয়েছিল ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন, প্রতিশ্রুতির কিছুই আর মানা হচ্ছে না। সড়কের যেকোনো জায়গায় যাত্রীর হাতের ইশারাতেই থামে বাস। ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চালু করা মুখরক্ষার এই উদ্যোগও এখন বন্ধ হওয়ার পথে।

দুই ধাপে মোট ১৫০ বাস দিয়ে চালু হয়েছিল ঢাকা নগর পরিবহনের সেবা। এখন বাস চলছে মাত্র ৩০টি, তা-ও শুধু সরকারি সংস্থা বিআরটিসির। বেসরকারি কোম্পানিগুলো শুরুতে সরকারের এই উদ্যোগে থাকতে আগ্রহ দেখালেও পরে তারা সরে গেছে। ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ঢাকা নগর পরিবহনের প্রথম বাসসেবা চালু হয়েছিল। পরে আরও দুটি রুটে (চলাচলের সুনির্দিষ্ট পথ) এই সেবা চালু হয়েছিল। এখন একটি রুটে আর বাস চলছে না, বাকি দুটিও বন্ধ হওয়ার পথে।

যে তিনটি রুটে ঢাকা নগর পরিবহনের সেবা চালু হয়, সেসব রুটে বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির অন্তত ৪০০টি বাস চলে বলে বিআরটিসির চালকেরা জানান। ফলে যেসব বেসরকারি কোম্পানি ঢাকা নগর পরিবহনে যুক্ত হয়েছিল, তারা লাভ করতে পারেনি।

ঢাকার ভেতরে চলাচল করা সব পরিবহন কোম্পানিকে একই ‘ছাতার নিচে’ আনার লক্ষ্যে সরকার ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গঠন করে। এর দেড় মাস আগে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দেশকাঁপানো আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গঠনের তিন বছর পর ঢাকা নগর পরিবহনসেবা চালু হয়, ধীরে ধীরে যার ব্যাপ্তি আরও প্রসারিত হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু ঘটেছে ঠিক তার উল্টোটা।

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির প্রতিশ্রুতি ছিল, ঢাকা নগর পরিবহনের বাস চালুর পর অন্য কোনো কোম্পানির বাস ওই রুটে চলতে পারবে না। কিন্তু যে তিনটি রুটে ঢাকা নগর পরিবহনের সেবা চালু হয়, সেসব রুটে বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির অন্তত ৪০০টি বাস চলে বলে বিআরটিসির চালকেরা জানান। ফলে যেসব বেসরকারি কোম্পানি ঢাকা নগর পরিবহনে যুক্ত হয়েছিল, তারা লাভ করতে পারেনি।

এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেন থেকে কনটেইনার পড়ে শ্রমিক নিহত

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, আরটিভি নিউজ

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণিতে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেন থেকে কনটেইনার ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই শামীম মিয়া (৩৯) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে তেজকুনী পাড়া রেল কলোনি সংলগ্ন এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত শামীম মিয়া নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার সাদাঘর কান্দি গ্রামের আলী হোসেনের সন্তান।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন জানান, বিজয় সরণি ফ্লাইওভারের নিচে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৩৪৮ ও ৩৪৯ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে ক্রেন দিয়ে কনটেইনার সরানো হচ্ছিল। এসময় হঠাৎ ক্রেন থেকে কনটেইনারটি ছিটকে নিচে পড়ে যায়। এতে কনটেইনারে চাপা পড়ে শ্রমিক শামীম মারা যান।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় ক্রেন অপারেটর আজহারুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে।

বারবার প্রাণহানির দায় কার

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

তিন মাস আগে যমজ কন্যাসন্তানের বাবা হন শামীম মিয়া (৩৯)। সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার সাদাঘরকান্দি এলাকায়। তবে ফুটফুটে শিশুদের পাশে থেকে আনন্দঘন সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়নি শামীম মিয়ার; বরং পরিবারের সদস্যদের খাবার জোটানোর তাগিদে ঢাকায় এসে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছিলেন। সেই কাজ করতে গিয়েই নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কনটেইনার পড়ে মৃত্যু ঘটে এ নির্মাণ শ্রমিকের। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এ নিয়ে পরপর দু’দিন এক্সপ্রেসওয়ের সরঞ্জাম পড়ে প্রাণ গেল দু’জনের। এর আগে বুধবার মগবাজারের দিলু রোড পানির পাম্প এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ে থেকে লোহার মই পড়ে মতিউর রহমান নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। গত বছরের ২৯ মে বনানীতে এক্সপ্রেসওয়ের ওপর থেকে রড পড়ে মারা যায় এক শিশু।

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত সরকারি তথ্যে গরমিল

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

গত ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ৩৬ জন চিকিৎসা নেন। তিন দিন আগে এ সংখ্যা ছিল ৩৯। কিন্তু সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যানে ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলায় একজন থাকলেও ২৫ জানুয়ারি নেই কোনো আহত। বিআরটিএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে সাতশর কম মানুষ আহত হন। কিন্তু শুধু গত জানুয়ারিতে চমেকের জরুরি বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ৭৭১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

গত ১৬ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো প্রকাশিত বিআরটিএর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৫ হাজার ৪৯৫ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ হাজার ২৪ ও আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৯৫ জন। সড়কে হতাহত নিয়ে বেসরকারি সংগঠনের তথ্যের সঙ্গে বেজায় ফাঁরাক সরকারি পরিসংখ্যানের। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, ২০২৩ সালে সড়কে ৬ হাজার ২৬১ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৭ হাজার ৯০২ এবং আহত ১০ হাজার ৩৭২ জন। অবশ্য এ সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত বলেছে বিআরটিএ।

জবাবে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সাতটি সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য সংগ্রহ করে।

গত সোমবার চিঠির মাধ্যমে তা বিআরটিএকে জানিয়েছে।

সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৫৩ হাজার ২০৭ জন ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকার পঙ্গু, নারায়ণগঞ্জের খানপুর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ৫৩৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে। তবে তাদের মধ্যে কতজন ভর্তি হয়েছেন, সে হিসাব দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫৬৩ জন।

বিআরটিএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই মাসে সড়কে সর্বোচ্চ ৯৩৫ জন আহত হন। কিন্তু ওই মাসে দুর্ঘটনায় আহত ১ হাজার ২৬৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পঙ্গু হাসপাতাল।

দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি ৯ হাজারের বেশি হাসপাতাল রয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বড় সাতটি হাসপাতালের তথ্য দিয়েছে। সংগঠনটির চিঠিতে জেলা সদরের ৬৪ হাসপাতালে দিনে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ছয়জন চিকিৎসা নেন বলা হয়েছে। এই হিসাবে বছরে ১ লাখ ৪০ হাজার রোগী শুধু জেলা হাসপাতালেই চিকিৎসা নেন। আট বিভাগীয় হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আরও ১ লাখ ৫ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। উপজেলা পর্যায়ের সরকারি এবং ৮ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল হিসাবে ধরলে, বছরে ৩ লাখের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নেন।

অনিরাপদ সড়কে অসহায় পথচারী

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, কালেরকন্ঠ

৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টা। ঘটনাস্থল সিলেটের জালালাবাদের নতুন বাজার খেয়াঘাট এলাকা। সড়ক দিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী দলবেঁধে যাচ্ছিল। ওই পথে দূর থেকে একটি ট্রাক আসতে দেখেন স্থানীয়  বাসিন্দা তারেক আহমদ মোহন।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ট্রাকের গতি কমাতে ইশারা  করেন তিনি। গতি তো কমেইনি, উল্টো ট্রাকটি চাপা দেয় তাঁকে। এতে ঘটনাস্থলেই মোহনের মৃত্যু হয়।

৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল পৌনে ৪টা।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট এলাকা। বাড়ি থেকে  বের হয়ে সড়ক পার হওয়ার সময় ভটভটি ধাক্কা দেয় ৮০ বছর বয়সী আলহাজ আইজুদ্দিনকে। এতে আইজুদ্দিনের সঙ্গে ভটভটি চালক রুবেল মিয়াও গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজনই মারা যান।

শুধু এই তিনজনের মৃত্যুই নয়, দেশে সারা বছরই প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে পথচারীরা। দুর্ঘটনাগুলোর  মধ্যে দুই যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ, একটি গাড়িকে পেছন থেকে এসে আরেকটি গাড়ির ধাক্কা দেওয়া,  উল্টে খাদে পড়ে যাওয়া, গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকটা গতানুগতিক পর্যায়ে চলে গেছে।

অন্যদিকে পথচারীরা কোনো ধরনের যান ব্যবহার না করেও সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে পথচারীর মৃত্যুর যে চিত্র পাওয়া গেছে, তা রীতিমতো ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে যত মানুষ নিহত হয়, তার চার ভাগের প্রায় এক ভাগই পথচারী।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, গেল বছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ছয় হাজার ৫২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৪৫২ জনই পথচারী। অর্থাৎ মোট মৃত্যুর ২২.২৫ শতাংশই পথচারী। তাদের মধ্যে সড়কে হাঁটার সময় নিহত হয়েছে ৬৮২ জন, যা মোট পথচারী মৃত্যুর ৪৬.৯৬ শতাংশ। আর সড়ক পারাপারের সময় মৃত্যু হয়েছে ৭৭০ জনের, যা মোট পথচারী মৃত্যুর ৫৩.০৪ শতাংশ।

দুর্ঘটনাগুলো মোটা দাগে দুই দিক থেকে ভাগ করা যায়। একপক্ষে দুর্ঘটনার জন্য যানবাহন দায়ী, অন্যপক্ষে পথচারী। সংগঠনটির তথ্য বলছে, যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে ৮২৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা ৫৬.৯৫ শতাংশ। বিপরীতে পথচারীর অসতর্কতার কারণে ৬২৫টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা ৪৩.০৫ শতাংশ।

সময় ও সড়কের ধরন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি পথচারীর মৃত্যু হয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়কে। আর মৃত্যু বেশি সকালে। গেল এক বছরে জাতীয় মহাসড়কে ২৬.০৩ শতাংশ, আঞ্চলিক সড়কে ৩২.৩০ শতাংশ, গ্রামীণ সড়কে ২৩.৯৬ শতাংশ, শহরের সড়কে ১৭.২৮ শতাংশ এবং অন্যান্য স্থানে ০.৪১ শতাংশ পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনায় পথচারী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ভোরে ২.৬১ শতাংশ, সকালে ৩৩.২৬ শতাংশ, দুপুরে ১৬.৯৪ শতাংশ, বিকেলে ২৩.৪৮ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৯.০৯ শতাংশ এবং রাতে ১৪.৬০ শতাংশ।

গ্রামে গ্রামে ‘কঙ্কাল’ সড়ক

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

খুলনার কয়রার দেউলিয়া বাজার থেকে ঘোলপাড়া হয়ে ঝিলেঘাটা বাজারে যে সড়ক গেছে, সেটির দৈর্ঘ্য প্রায় ছয় কিলোমিটার। সড়কটির পিচ উঠে ইটের খোয়া বেরিয়ে যাওয়ায় গাড়ি চলে হেলেদুলে। রাস্তাটি থাকে ধুলায় ধূসর। এতে সড়কের পাশের গাছপালা, বসতবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছে বালুর প্রলেপ। এ রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগের শেষ নেই, তেমনি সড়কের দু’পাশের বাসিন্দারাও ধুলাবালির যন্ত্রণায় হাঁপিয়ে উঠেছেন।

শুধু এ সড়কই নয়; দেশের প্রায় সব গ্রামীণ সড়কের এখন একই প্রতিচ্ছবি। পাকা রাস্তার বেশির ভাগের অবস্থা খারাপ। আর কাঁচা রাস্তা যাচ্ছেতাই। অনেক সড়কের বিটুমিন ও ইট উঠে কঙ্কালসার। রাস্তার রাস্তায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কিছু কিছু সড়ক ভেঙেচুরে একাকার। আবার গত বন্যায় হাওরের তছনছ সড়ক এখনও থেকে গেছে সংস্কারের বাইরে।

এমনকি গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ, আধুনিকায়ন ও মেরামতের দায়িত্ব পালন করে যে সংস্থা, সেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়ন্ত্রণাধীন মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের নিজ জেলা কুমিল্লার বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কও বিধ্বস্ত।

গ্রামীণ সড়কের ‘মুমূর্ষু’ পরিস্থিতি নিয়ে জনপ্রতিনিধির হৃদয়েও হচ্ছে রক্তক্ষরণ। সেই চোটের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ৪ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সাতক্ষীরা সদর আসনের জাতীয় পার্টির এমপি আশরাফুজ্জামান আশু তাঁর নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাটের করুণ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পোস্ট অফিস মোড় থেকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ সড়ক হয়ে কোনো অন্তঃসত্ত্বা যদি যাতায়াত করেন, তাহলে রাস্তায় তাঁর ডেলিভারি (সন্তান প্রসব) হয়ে যাবে।’

জানা গেছে, সারাদেশে গ্রামীণ সড়ক রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক ১ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। এসব রাস্তার দেখভাল করে এলজিইডি। প্রতিবছরের মে মাসে প্রতিষ্ঠানটি সড়কের বাস্তব পরিস্থিতি সংগ্রহ করে তা মেরামতের জন্য জুন-জুলাইয়ে সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দের আবেদন করে। গত বছর সরকারের কাছে রাস্তা মেরামতের জন্য এলজিইডি ৩০ হাজার কোটি টাকার আবেদন করেছিল। বিপরীতে বরাদ্দ মেলে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা পেয়েছে এলজিইডি।

এলজিইডির গড় হিসাব অনুযায়ী, প্রতি কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের জন্য প্রয়োজন হয় ৪০ লাখ টাকা। বরাদ্দের টাকায় ৫ হাজার ২৮৫ কিলোমিটার সড়কের মেরামতকাজ করছে সংস্থাটি। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। এ সময়ে সম্পূর্ণ মেরামতের বাইরে রয়েছে প্রায় ৭১ হাজার কিলোমিটার সড়ক। গত আট-নয় মাসের ব্যবধানে এসব সড়কের অবস্থা আরও বেহাল হয়েছে।

ঢাকার বেইলি রোডে বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জন, এ পর্যন্ত যা জানা গেল

০১ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর বেইলি রোডে  বহুতল একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জনে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আজ শুক্রবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন এসব তথ্য জানান।এ ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ভর্তি আছেন।

বেইলি রোডের ভবনটিতে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন ছিল না: রাজউক

০১ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর বেইলি রোডে যে ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেটিতে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন ছিল না বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

 ভবনটিতে আটটি রেস্তোরাঁ, একটি জুস বার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ও একটি চা-কফি বিক্রির দোকান ছিল। ছিল মুঠোফোন ও ইলেকট্রনিকস সরঞ্জাম এবং পোশাক বিক্রির দোকানও। 

 ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে র‍্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন, ভবনে অনেকগুলো গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যায়।

বেইলি রোডের ওই ভবনে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন নিহত হন। ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন, যাঁরা শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। ভবন থেকে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

রাজউক জানিয়েছে, ভবনটির অনুমোদন আটতলার। শুধু আটতলায় আবাসিক স্থাপনার অনুমোদন আছে।

রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটির এক থেকে সাততলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তবে তা শুধু অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহারের জন্য। রেস্তোরাঁ, শোরুম (বিক্রয়কেন্দ্র) বা অন্য কিছু করার জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

বেইলি রোডের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তিনবার চিঠি দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস

০১ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর বেইলি রোডের সাততলা ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

 গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে। আজ শুক্রবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পরিদর্শনে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এই ভবনে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে লাগা ওই আগুনে আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ভর্তি আছেন।

লোকবল কম, ট্রেন বাড়ানো যাচ্ছে না

০১ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

লোকবল কম থাকায় পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে পারছে না রেলওয়ে। বর্তমানে মাত্র চার জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। আগামী জুলাইয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালুর প্রস্তুতি আছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে চীন থেকে ১০০ নতুন কোচ আনা হয়েছে। এসব কোচ দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলপথে সাত-আটটি আন্তনগর ট্রেন চালানো সম্ভব। পর্যাপ্ত ট্রেন চালানো যাচ্ছে না বলে এসব কোচের একটি অংশ দেশের অন্যান্য রেলপথের ট্রেনে যুক্ত করা হয়েছে।

২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হয়। তখন থেকে দ্বিতল এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। আর নিচ দিয়ে তৈরি হয়েছে ট্রেন চলাচলের পথ। রেলপথে পদ্মার দুই পারে যোগাযোগ স্থাপন করতে নেওয়া হয় আলাদা প্রকল্প, যা ‘পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প’ নামে পরিচিত। গত বছরের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ নভেম্বর শুরু হয় যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল। এর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নতুন রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

পদ্মা সেতুর দুই পারে রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের ঋণের পরিমাণ ২৬৭ কোটি ডলার। ট্রেন পুরোপুরি চালু না হলেও ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে সরকারকে। গত মাসে এ বাবদ প্রায় ২ কোটি ২৩ লাখ ডলার চীনা এক্সিম ব্যাংককে পরিশোধ করতে হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মূল রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার অংশ চালু হয়েছে। ফরিদপুর থেকে যশোর পর্যন্ত বাকি অংশ আগামী জুলাই মাসে চালু করার কথা রয়েছে।

প্রকল্পের সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, নতুন এই রেলপথ চালু হলে প্রতিদিন ২৪ জোড়া বা ৪৮টি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে লোকবলের অভাব, ইঞ্জিনের সংকটসহ নানা কারণে এই লাইনের পুরো সক্ষমতা কাজে লাগাতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে বলে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে। ঢাকা থেকে ফরিদপুর, রাজবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় কমিউটার ট্রেন (কম দূরত্বে যাতায়াতের জন্য) চালুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমানোর কথা বলা হয়েছিল সমীক্ষায়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত নভেম্বরে উদ্বোধনের পর তিন জোড়া আন্তনগর ট্রেন চালু হয়েছে নতুন রেলপথে। আর কমিউটার ট্রেন চলছে এক জোড়া। কমিউটার ট্রেনটি খুলনা পর্যন্ত চলাচল করে বলে ঢাকার আশপাশের যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে পারছে। আন্তনগর ট্রেনগুলো কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুরের মধ্যে দু-একটি স্টেশনে থামছে। ফলে এসব ট্রেনেও পথের যাত্রী কম।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, ট্রেন চালানোর মতো লোকবল কম। অবশ্য লোকবল যে লাগবে, তা আগেই জানত রেলওয়ে। এ জন্য প্রকল্প প্রস্তাবে নতুন এই রেলপথে ট্রেন চালানো, যাত্রীসেবা দেওয়া এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন শ্রেণির ১ হাজার ৬৮০ জন নতুন লোক নিয়োগের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছিল। নতুন রেলপথ চালুর সিদ্ধান্ত হওয়ার পর এক বছর ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চিঠি–চালাচালি করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এখনো লোকবলকাঠামোর অনুমোদন হয়নি।

নিজের নকশা করা ভবনেই যেতে নিষেধ করলেন স্থপতি, জানালেন অসহায়ত্ব

০২ মার্চ ২০২৪, সমকাল

গাউসিয়া টুইন পিক। বাইরে থেকে যে কারও নজর কাড়বে দৃষ্টিনন্দন এ ভবন। রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে ফেয়ার ফেস কংক্রিট ও গ্লাসে আবৃত বহুতল ভবনটির ডিজাইনার প্রখ্যাত স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশের প্রতিষ্ঠান ভিসতারা আর্কিটেক্টস। খোদ তিনিই এই ভবনটিতে সাধারণ মানুষকে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রকাশ করেছেন নিজের অসহায়ত্ব। বলেছেন- ভবনমালিক ও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তার নির্দেশনা না মেনেই স্থাপনাটিকে অনিরাপদভাবে ব্যবহার করছেন, যা মানুষের জানমালের জন্য হুমকিস্বরূপ।

নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কেউ যেন সেখানে না যান ফেসবুকে এক পোস্টে সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টারকেও জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের কোজি গ্রিন কটেজ বহুতল ভবনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় যখন মানুষের মাঝে উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে সেই সময় দেশের অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকি ও এ নিয়ে উদাসীনতার চিত্র তুলে ধরলেন তিনি।

অননুমোদিত ভবন চিহ্নিত করা হলেও ভাঙা সম্ভব হয়নি

০২ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ২০১৯ সালে বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনা তদন্ত করে ৬২ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। সে সময় অননুমোদিত ১ হাজার ৩০০ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেগুলো ভাঙা সম্ভব হয়নি। নারায়ণগঞ্জে একটি ফুড ফ্যাক্টরিতে আগুনের ঘটনায় আজ পর্যন্ত বিচার শুরু হয়নি।

এসব ঘটনাকে একধরনের দায়মুক্তি উল্লেখ করে শ ম রেজাউল করিম এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারে প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান।

আজ শনিবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম এসব কথা বলেন।

এর আগে আজ বিকেলে সংসদের বৈঠকের শুরুতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বেইলি রোডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বড় অপরাধীদের বিচার হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

২০১৯ সালে বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। ওই সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। ওই ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর ঘটনা তদন্ত করে তাঁরা ৬২ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্য, সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরও সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। তারপর চার্জশিট দেওয়ার সময় অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, আজকে পর্যন্ত সে মামলার অভিযোগ গঠন পর্যন্ত হয়নি।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা সে সময় ১ হাজার ৩০০ ভবনকে চিহ্নিত করেছিলাম, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে, যে ভবনের প্ল্যান ঠিক নেই, যে ভবনের অধিকাংশ ফ্লোর অননুমোদিতভাবে করা হয়েছে, সে ভবনগুলো কিন্তু ভাঙা সম্ভব হয়নি। এটাও কিন্তু এক প্রকার দায়মুক্তি দেওয়া।’

সতর্কতা শোনেনি কেউ, চলছিল অনুমোদনহীন আট রেস্তোরাঁ

০২ মার্চ ২০২৪, সমকাল

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বেরিয়ে আসছে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবন নির্মাণের নানা অনিয়ম। আটতলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবনে ছিল না রেস্তোরাঁ ব্যবসার অনুমোদন। অথচ প্রায় প্রতিটি তলাতেই ধুমধামে চলেছে নামিদামি আটটি রেস্টুরেন্ট। ক্রেতা আকৃষ্ট করতে এগুলোর সাজসজ্জাও হয়েছিল খুবই দাহ্য উপকরণে। শুধু তাই নয়, যে ২২ শর্তে ফায়ার সেফটি প্ল্যানের অনুমোদন দিয়েছিল, তার একটিও কেউ অনুসরণ করেনি। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ তিন দফায় এসব নিয়ে নোটিশ দিলেও আমলে নেননি ভবন মালিকরা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর গতকাল শুক্রবার রাজউক বোর্ড সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) আবদুল আহাদকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটিতে প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রধান স্থপতি, সংশ্লিষ্ট এলাকার অথরাইজড অফিসার, পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের সদস্য করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল ‘এএমপিএম’, পলাতক কর্মকর্তারা

০২ মার্চ ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন

রাজধানীর বেইলি রোডে ‘গ্রিন কোজি কটেজ’-এ অগ্নিকাণ্ড ও ৪৬ জন নিহতের ঘটনায় ভবনটির ব্যবস্থাপনার নানা গলদ সামনে এসেছে। দেশের শীর্ষ রিয়েল এস্টেট কোম্পানি আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ ভবনটি নির্মাণ করে। আর ভবনটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে একই প্রতিষ্ঠানের সিস্টার কনসার্ন ‘এএমপিএম (আমিন মোহাম্মদ প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস) প্রাইভেট লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা প্রধান ছিলেন অন্য একজন কর্মকর্তা, যিনি ঘটনার পর ‘আত্মগোপনে’ চলে গেছেন।

ভবনটির আশপাশের দোকানি ও ভবন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তারা জানান, ২০১৫ সালে ভবনটির নির্মাতা আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ ফ্ল্যাট হস্তান্তর করে। আর দেখভালের দায়িত্বটি রেখে দেওয়া হয় এই প্রতিষ্ঠানের অধীনেই। ‘এএমপিএম প্রাইভেট লিমিটেড’ ভবনটির সিকিউরিটি, সেফটি, গার্ডস ও লিফট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছিল।

রাজউকের একটি সূত্র জানায়, ভবনটির ছয় তলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক অফিস হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি ছিল। ছয় ও সপ্তম তলা ছিল আবাসিক হিসেবে ব্যবহারের অনুমতিপ্রাপ্ত। নির্মাণের পর ২০১৫ সালে মালিকানা হস্তান্তর করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। জমির মালিক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি করে দেয়। পরে সপ্তম তলার স্পেসটি (অন্তত ১৬০০-১৮০০ স্কয়ার ফুট) আবারও কিনে নেয় এএমপিএম প্রাইভেট লিমিটেড।

অগ্নিদুর্ঘটনায় শুধু দায় চাপানোর চেষ্টা

০৩ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীতে বড় কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেই দেখা যায়, কোনো না কোনো সরকারি সংস্থার গাফিলতি ও তদারকির অভাব ছিল। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীর আগুন থেকে শুরু করে সর্বশেষ বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড—চিত্রটি একই।কিন্তু কোনো ঘটনায় সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

বেইলি রোডের আটতলা ভবন গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সামনে এসেছে একই গাফিলতির চিত্র। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলা করেছে তার এজাহারে বলা হয়েছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দোকান পরিদর্শকদের ‘ম্যানেজ’ করে ভবনে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করা হচ্ছিল।

পুলিশের মামলাটিতে নাম উল্লেখ করে ভবনের মালিক প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁর মালিক ও ভবনের তত্ত্বাবধায়ককে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি কোনো সংস্থা বা সংস্থার কোনো কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিদর্শনে ভবনে অগ্নিঝুঁকির চিত্র নিয়মিতই বেরিয়ে আসে। যেমন ২০২৩ সালে তারা সারা দেশে ৫ হাজার ৩৭৪টি ভবন পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ২ হাজার ১১৮টি ভবনে ঝুঁকি খুঁজে পায়। ৪২৪টি ভবনকে তারা অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ঢাকায় বিগত পাঁচ বছরে হওয়া অন্তত ৯টি বড় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা নিজেদের দায় অন্য সংস্থার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার তদন্তে সরকারি সংস্থার গাফিলতির চিত্র উঠে আসে। কিন্তু তাদের ‘দায়মুক্তি’ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

বেইলি রোডের ভবনটিতে আগুনের ঝুঁকি জেনেও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি

বেইলি রোডের ভবনটিতে আগুনের ঝুঁকি জেনেও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি

এবার এভাবে দায়মুক্তি দেওয়ার সমালোচনা করলেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য এবং সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনা তদন্ত করে ৬২ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।

আরও পড়ুন

মর্গে থাকা সেই বিবর্ণ পুতুলের পরিচয় জানা গেল, মায়ের জন্মদিনে জন্ম, মৃত্যুও হলো একই দিনে

বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। তিনি গতকাল সংসদে আরও বলেন, ‘আমরা সে সময় ১ হাজার ৩০০ ভবনকে চিহ্নিত করেছিলাম, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে, যে ভবনের প্ল্যান (নকশা) ঠিক নেই, যে ভবনের অধিকাংশ ফ্লোর (তলা) অননুমোদিতভাবে করা হয়েছে, সে ভবনগুলো কিন্তু ভাঙা সম্ভব হয়নি। এটাও কিন্তু একপ্রকার দায়মুক্তি দেওয়া।’

গ্রিন কোজিতে একটি চুলাও ব্যবহারের অনুমতি ছিল না

০৩ মার্চ ২০২৪, সমকাল

চেয়ার-টেবিল পুড়ে অঙ্গার। ছাই হয়ে গেছে আসবাব। গ্যাসের সিলিন্ডার পড়ে আছে এলোমেলো। কোনোটির গায়ে ধোঁয়ার কালো আস্তরণ। কিছু সিলিন্ডার আবার পুরোপুরি অক্ষত। ফ্রিজের ভেতরে কোমল পানীয় ও বোরহানির বোতলগুলো দগ্ধ হয়ে কুঁকড়ে গেছে। রেস্তোরাঁর নানা খাবার সামগ্রী অঙ্গার। কোনটি সিরামিকের, কোনটি কাচের থালা চেনা দায়। বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের অন্দরমহলে বিভীষিকার ছাপ। সাত তলাজুড়েই যেন ধ্বংসস্তূপ। ব্যতিক্রম কেবল বহুতল ভবনটির ছাদ। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কয়েকটি মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোনসেটের কভার। ওই ভবন থেকে যে ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশ ছাদে গিয়ে ছোট্ট একটি জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বেঁচে যাওয়া অনেকে সমকালকে জানান, আগুন লাগার পর কোনো অ্যালার্ম বাজেনি। তাই ভবনটির বিভিন্ন তলায় রেস্তোরাঁয় যারা প্রিয়জনের সঙ্গে খাবার খেতে ব্যস্ত ছিলেন, তাদের কাছে অনেকক্ষণ পর আগুন লাগার খবর পৌঁছে। ততক্ষণে ভবনের সরু সিঁড়িতে ধোঁয়া ও আগুনের কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে চেষ্টা করেও ছাদ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। গ্রিন কোজির অনেক রেস্তোরাঁর গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা ব্যবহারের অনুমতিই ছিল না।

আগুন-বিস্ফোরণ: ‘সরকারি কর্মকর্তারা কোথায়?’

৩ মার্চ ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে প্রাণঘাতি আগুনে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মীদের দায় নিয়ে জোর প্রশ্ন ওঠার মধ্যে পুলিশের করা মামলায় রাজউক কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ হওয়ার’ তথ্য মিলেছে। তবে সেই কর্মকর্তা কারা, সে বিষয়ে মামলায় কিছু বলা হয়নি, তাদের কাউকে আসামিও করা হয়নি।

একজন নগর পরিকল্পনাবিদ প্রশ্ন তুলেছেন, রাজউক কর্মকর্তার ‘ম্যানেজ’ হওয়ার তথ্য পাওয়ার পর কেন তাদের আসামি করা হবে না? সেই ভবনে পানি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বা ট্রেড লাইসেন্স প্রদানকারী ও কর আদায়কারী সংস্থা কেন জবাবদিহিতার মুখে পড়বে না?

ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যাদের দেখার দায়িত্ব ছিল, তারা কী করল?

সংসদে প্রশ্ন উঠেছে, রাজউকের কর্মকর্তারা কোথায়?

প্রতিবারই এ ধরনের দুর্ঘটনার পর ভবনের ত্রুটির কথা শোনা যায়, সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধেও অবহেলার অভিযোগ ওঠে।

সংসদেই সাবেক একজন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেছেন, অর্ধযুগ আগে আলোড়ন তৈরি করা একটি ঘটনায় তারা যাদের দায় চিহ্নিত করেছিলেন, তাদের সবাইকে আসামিও করা যায়নি।

এবারও জানা গেছে, গ্রিন কোজি কটেজের প্রতিটি ফ্লোরে যেভাবে রেস্তোরাঁ বসানো হয়েছিল, তার কোনো অনুমোদন ছিল না। ভবনটির বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও তা ছিল অফিস হিসেবে ব্যবহারের। তারপরেও আট তলা ভবনটি ঠাসা ছিল রেস্তোরাঁয়।

সেই ভবনটি যে অগ্নি ঝুঁকিতে ছিল, তা জানত ফায়ার সার্ভিস। একবার নয়, তিনবার নোটিস করেছে সংস্থাটি। কিন্তু আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

গত বছরের মার্চে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ২৩ জনের মৃত্যুর পর জানা যায় ভবনটি পাঁচ তলা করার অনুমোদন ছিল রাজউকের।

বিস্ফোরণের পর রাজউক কর্মকর্তারা পুলিশ সঙ্গে নিয়ে সাত তলা ওই মালিকের বাসায় গেলে ১০ তলা পর্যন্ত করার আরেকটি নকশা দেখানো হয়। তবে ওই নকশায় রাজউকের কোনো সিল বা স্বাক্ষর ছিল না।

সেই প্রাণঘাতি দুর্ঘটনার পর আলোচনা মিইয়ে যায়। রাজউকের কাউকে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

নিমতলী থেকে সিদ্দিকবাজার: কোনো অগ্নিকাণ্ডের মামলার রায় হয়নি আজও

০৩ মার্চ ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৭১ জন নিহত হন।

একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে পাশের একটি ট্রান্সমিটারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার একদিন পর ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন।

তদন্তের তিন বছর পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আবদুল কাইয়ুমও ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক হাসান সুলতান ও তার ভাই হোসেন সুলতান সোহেলসহ আটজনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।

এর এক বছর পর ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

নয় মাসের ব্যবধানে গত বছরের ১৭ অক্টোবর মামলার অভিযোগকারী আসিফের সাক্ষ্য রেকর্ড করেন আদালত। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২১ মার্চ।

এই মামলায় মোট ১৬৭ জনকে সাক্ষী করা হয়।

মামলার কার্যক্রমে এত দেরি হওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাজহারুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অভিযোগ গঠনের সময় মামলাটি অন্য আদালতে ছিল। পরে তা ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-৮ এ স্থানান্তর করা হয়। এ কারণে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে কিছুটা সময় লাগছে।’

আগুনের ঘটনায় মামলা

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

অগ্নিদূর্ঘটনা মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা এবং আজও রায় না হওয়ার হিসাবে এটা কোনো ব্যতিক্রম ঘটনা নয়। শত শত মানুষের মৃত্যুর কারণ যেসব আগুনের ঘটনা, এর কোনো মামলারই রায় আজ পর্যন্ত হয়নি।

চুড়িহাট্টা দুর্ঘটনার নয় বছর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১২৪ জন নিহত হন।

এ ঘটনায় বংশাল থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি হয়েছে। কোনো তদন্ত হয়নি। তাই এত মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারের সম্মুখীনও করা সম্ভব হয়নি।

আইন বিশেষজ্ঞ খুরশীদ আলম খান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি, কষ্ট পাই। বড় বড় ঘটনায় প্রতিবাদ হয়, মামলা হয়। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই আমরা ঘটনাগুলো ভুলে যাই।’

তিনি জানান, আগুনের ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদন্ত ত্রুটিপূর্ণ হয়। কারণ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার প্রবণতা বেশি।

তিনি আরও বলেন, ‘এমন ক্ষেত্রে আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করা হয় না। ফলে অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে যান।’

যেসব ক্ষেত্রে বিচার শুরু হয়, সেগুলোও বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে ১১২ শ্রমিক মারা যান।

এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা হয়। ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক একেএম মহসিন উজ্জামান খান কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেন, মাহমুদা আক্তার ও ১১ কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।

২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালত ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আদালতের রেকর্ড অনুসারে মোট ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

আগুনের ঘটনায় মামলা

নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় আগুন। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সর্বশেষ সাক্ষীর জবানবন্দি ২০২২ সালের ১৮ মে রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর আর কোনো সাক্ষী আদালতে আসেননি। কারখানা মালিক দেলোয়ারকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হলেও এখন তিনি জামিনে আছেন।

একই ঘটনা ঘটেছে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রেও। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৫ জন মারা যান। ঘটনার দুদিন পর বনানী থানায় মামলা করে পুলিশ।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলাটির চার্জশিট দাখিল করলেও এখনো বিচার শুরু হয়নি।

ঢাকা মেট্রোপলিটনের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুল্লাহ আবু ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় মৃত্যু মামলায় সাক্ষী পেতে আমরা হিমশিম খাই। অনেক সময় সাক্ষী পাওয়া যায় না। ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় দেরি হয়ে যায়।’

তবে শিগগির বিচার শেষ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

২০২১ সালের ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫৪ জনের মৃত্যুতে দায়ের করা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর দাখিল করে সিআইডি। অভিযোগপত্র থেকে হাসেম ফুডসের পরিচালকদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

মামলার শুনানি এখনো শুরু হয়নি।

২০২১ সালের ২৭ জুন ঢাকার মগবাজার এলাকায় গ্যাস লিকেজের কারণে হওয়া বিস্ফোরণে অন্তত সাতজন নিহত হন। এটি এখন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের (বিডিইউ) তদন্তাধীন।

গত বছরের ৮ মার্চ রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে একটি সাততলা ভবনের বেসমেন্ট ক্যাফেতে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ২৫ জন নিহত এবং প্রায় ১০০ জন আহত হন।

এর একদিন পর বংশাল থানায় মামলা করা হয় এবং সিটিটিসি ইউনিটের বিডিইউ মামলার তদন্ত শুরু করে। তদন্ত আজও শেষ হয়নি।

রাজউকের ইন্সপেক্টররা এক একজন ‘জামাই’

০৪ মার্চ ২০২৪, সমকাল

কোনো জমির মালিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে ভবনের নকশা অনুমোদনের আবেদন করলে প্রথমেই লাগে ইমারত পরিদর্শকের (বিল্ডিং ইন্সপেক্টর) মতামত। স্থান পরির্দশন করে পরিদর্শকের মতামত ইতিবাচক না হলে নকশা অনুমোদনের আবেদন ‘গোড়ায় গলদ’ হয়ে যায়। তখন থেকেই শুরু হয় ইন্সপেক্টরদের উৎকোচ বাণিজ্য। এর পর ভবন তৈরির সময় নানা অনিয়মের ধুয়ো তুলে চলে বাণিজ্য। পুরো কাজ শেষ হওয়ার পরও থামে না তাদের ‘যন্ত্রণা’। আবাসিক ভবনের অ-আবাসিক ব্যবহারসহ নানা ছুতোয় ইন্সপেক্টরদের বাণিজ্য চলতেই থাকে। এ জন্য রাজউকে ইন্সপেক্টরদের আরেক নাম ‘জামাই’।

রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনে পুড়ে কঙ্কাল হওয়া গ্রিন কোজি কটেজের অনুমোদনের সময় ওই এলাকার ইন্সপেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন সেলিম বকাউল। ২০১৫ সালে ওই এলাকার ইন্সপেক্টর হয়ে আসেন আওরঙ্গজেব সিদ্দিকী নান্নু। পরে নান্নু বদলি হয়ে চলে যান বনানী এলাকায়। নান্নু বনানী এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নান্নু আসামি ছিলেন। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে আবার সিদ্ধেশ্বরী এলাকার দায়িত্বে আসেন। আর সিদ্ধেশ্বরী থেকে মোহাম্মদপুরে বদলি করার পর সেলিম বকাউলের বিরুদ্ধে স্থানীয় ভবন মালিকদের কাছ থেকে নানা উসিলায় উৎকোচ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। তখন সেলিম বকাউলকে নবগঠিত গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (গাউক) বদলি করা হয়। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে সেই বদলি বাতিল করে আবার মহাখালীতে চলে এসেছেন বকাউল। তাঁর স্ত্রী মোসা. নাসরিন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) উচ্চমান সহকারী পদে চাকরি করায় সেলিম বকাউল চলেন বুক ফুলিয়ে। রাজউকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও তাঁকে সমীহ করে চলেন।   

সর্বনাশের পর হম্বিতম্বি

০৫ মার্চ ২০২৪, সমকাল

বেইলি রোডের রেস্তোরাঁয় ঠাসা ভবনে আগুনে ৪৬ মৃত্যুর পর ঘুম ভেঙেছে কর্তৃপক্ষের। আগের দিনের মতো গতকাল সোমবারও রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে সিটি করপোরেশন, পুলিশ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ফায়ার সার্ভিস।

ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের ১৪ তলা কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবন সিলগালা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। একই এলাকার আলোচিত গাউছিয়া টুইন পিক ভবনের বর্ধিতাংশ ভেঙে দিয়ে সব রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে রাজউক। কেয়ারি ক্রিসেন্টের ১৩ তলার ভিসা প্রসেসিংয়ের একটি অফিসে অগ্নিনিরাপত্তা না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়। তবে মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্য অভিযানে আটক অধিকাংশ রেস্তোরাঁ শ্রমিক ও কর্মচারী। ভবন মালিকের কাউকে আটকের খবর পাওয়া যায়নি।

নকশা না মেনে গড়ে ওঠে রেস্তোরাঁ

অভিযানে দেখা যায়, কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনের নকশা লঙ্ঘন করে নিচতলার প্রবেশপথ সংকুচিত করে রেস্তোরাঁ নির্মাণ করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ছাদে ওঠার সিঁড়ি। ছাদে অনুমোদন ছাড়াই আরেক তলা নির্মাণের কাজ চলছে। ভবনের তৃতীয় থেকে ১২ তলা পর্যন্ত ১৫টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। অভিযান হতে পারে– এ শঙ্কায় গতকাল এগুলো বন্ধ ছিল। তবে ভবনের সপ্তম ও পঞ্চম তলায় জরুরি নির্গমন সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার দেখা গেছে। আগের মতো সিঁড়ি বন্ধ নেই। মালপত্রও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। 

নিচতলার ‘আফতাব রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কাবাব’ গতকালও খোলা ছিল। এখানে আগে রেস্তোরাঁ ছিল কেয়ারি ক্রিসেন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি সুমন চৌধুরীর। তিনি সমকালকে জানান, তিনি মাসে দেড় লাখ টাকা ভাড়া দিতেন ফ্লোর মালিককে। মাসে আড়াই লাখ টাকা ভাড়া দাবি করলে দোকান ছেড়ে দেন। ব্যবসায়ী জানান, নকশা অনুযায়ী লিফট ও সিঁড়ি পর্যন্ত যেতে ভবনের নিচতলায় ২৪ ফুটের প্রবেশপথ রাখা হয়েছে।

তবে ১৬ ফুটে রেস্তোরাঁ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশপথ মাত্র ৮ ফুটের। আগুন লাগলে বের হওয়ার সুপরিসর পথ নেই। এর জন্য ফ্লোর মালিকরা দায়ী। সুমন চৌধুরী বলেন, রেস্তোরাঁ মালিকরা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন। ফ্লোর মালিকরা নকশা না মেনে জরুরি নির্গমন পথে স্থাপনা নির্মাণ করলে এর দায় ভাড়াটিয়ার নয়। কিন্তু ঝড়ঝাপ্টা সব যাচ্ছে ভাড়াটিয়ার ওপর দিয়ে। ভবন বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকে বেকার হয়ে গেছেন। অথচ রেস্তোরাঁগুলো ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলছে। ভবনে কোন ধরনের স্থাপনা করা যাবে, সেটি মালিকদের বিষয়। কিন্তু তাদের কিছুই হচ্ছে না।

এস আলমের গুদামে পুড়ল ‘লাখ টন’ চিনি

৫ মার্চ ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে এস আলম গ্রুপের চিনি পরিশোধন কারখানার গুদামে ভয়াবহ আগুনে প্রায় এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা।

সোমবার বিকাল ৪টার আগে আগে কর্ণফুলী থানার ইছাপুর এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের চারটি গুদামের মধ্যে একটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

তবে তখনও তা পুরোপুরি নেভানো যায়নি। মধ্যরাতেও গুদামের ভেতরে ধিকি ধিকি জ্বলছিল বলে ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন।

কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক সংলগ্ন ইছাপুর এলাকায় ১১ মেগাওয়াটের এস আলম পাওয়ার প্লান্টের পাশেই এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিল। পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ দিয়েই চিনি কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চলে।

কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, রোজার মাস সামনে রেখে মিলের চারটি গুদামে মোট চার লাখ টন অপরিশোধিত চিনি মজুদ করা হয়েছিল। পরিশোধনের পর ওই চিনি বাজারে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে ১ নম্বর গুদামের সব চিনি পুড়ে গেছে।

রোজা শুরুর মাত্র এক সপ্তাহ আগে বিপুল পরিমাণ চিনি ভষ্মীভূত হওয়ায় এর প্রভাব বাজারে কতটা পড়বে, এখন চলছে সেই আলোচনা।

ঢাকায় গাউছিয়ার মতো বিপণিবিতানসহ ২ হাজার ৬০০ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি

০৪ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

ঢাকার গাউছিয়া মার্কেটটি নারীদের কাছে জনপ্রিয় বিপণিবিতান। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেখানে কেনাকাটা করতে যান। অথচ তাঁরা জানেন না বিপণিবিতানটি আগুনের অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে।

গাউছিয়ার উল্টো দিকে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ)। গাউছিয়া ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটকে ২০১৯ সালে অগ্নিনিরাপত্তার দিক দিয়ে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে একাধিকবার নোটিশ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে গত বছরের এপ্রিলে আগুন লাগে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, গাউছিয়ায় আগুন লাগলে ভেতর থেকে মানুষের বের হওয়া কঠিন হবে। ফলে হতাহতের বড় আশঙ্কা রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের হালনাগাদ তথ্য বলছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান। তালিকায় রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ভবন।

গাউছিয়ার মতো রাজধানীর ২ হাজার ৬০৩টি ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের হালনাগাদ তথ্য বলছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান। তালিকায় রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ভবন।

২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের এই তালিকা তৈরি করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ঢাকার সব ভবন পরিদর্শন করতে পারেনি। ফলে রাজধানীতে মোট কত ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, তা জানা সম্ভব নয়। পরিদর্শনে ফায়ার সার্ভিস অগ্নিঝুঁকির দিক দিয়ে দুটি শ্রেণিতে ভবনগুলোকে ভাগ করে—ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ। সংস্থাটির হিসাবে, ২ হাজার ৬০৩টি ভবনের মধ্যে কটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, তা তাৎক্ষণিকভাবে হিসাব করে জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

ফায়ার সার্ভিস ২০২৩ সালে ৫৮টি বিপণিবিতান পরিদর্শন করে। সংস্থাটি বলছে, সবগুলোতেই কমবেশি ঝুঁকি পাওয়া গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া গেছে ৩৫টি, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া গেছে ১৪টি এবং অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া গেছে ৯টি বিপণিবিতান। তার মধ্যে একটি গাউছিয়া।

‘গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করি বলার পর পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে আসে’

০৬ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

ভোলার মো. বিল্লাল রাজধানীর মহাখালী এলাকায় বছর দুয়েক আগে একটি চায়ের দোকান দেন। দোকানে চা বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তিনি দোকানে চা বিক্রি করছিলেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠায়।

পরে জরিমানার টাকা জমা দিয়ে বিকেলে আদালতের হাজতখানা থেকে ছাড়া পান বিল্লাল। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা দোকানে এসে জিজ্ঞাসা করেন, আমি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করি কি না। হ্যাঁ বলার পর পুলিশ আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়।’

বিল্লালের মতো অন্তত ৮০০ জনকে সোম ও মঙ্গলবার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্যাস সিলিন্ডার রাস্তায় রেখে জনসাধারণ-যানচলাচলে বাধা সৃষ্টি করা, চিৎকার-চেঁচামেচি-হুল্লোড় করে জনসাধারণের বিরক্তি সৃষ্টির চেষ্টাসহ ডিএমপি অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এসব ব্যক্তিকে সোম ও মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আদালতে জরিমানা দেওয়ার পর প্রত্যেকে ছাড়া পেয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রেস্তোরাঁর ভবনগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা না থাকায় বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকার ৭২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অগ্নিঝুঁকিতে

মার্চ ৭, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজে পৃথক দুটি আবাসিক ভবনে কলেজটির ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ক্লাস করে।

দুটি ভবনের একটি আট তলা এবং অন্যটি ছয় তলার। দুটি ভবনেই রয়েছে মাত্র পাঁচ ফুট প্রশস্ত সিঁড়ি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে এই সিঁড়ি ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স গতবছর তাদের সর্বশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

কলেজের অধ্যক্ষ মাকসুদ উদ্দিন দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে কর্তৃপক্ষ তাদের সেটি জানায়নি।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমাদের প্রতিটি তলায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। ছাদে একটি রিজার্ভ পানির ট্যাংকও আছে।

রাজধানীর যে ৭২০টি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্ভাব্য অগ্নিঝুঁকির জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এটি তার একটি।

ফায়ার সার্ভিস ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর ধরে ঢাকার ৮০১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে খুঁজে পেয়েছে।

বাকি ১৬টি প্রতিষ্ঠানে সন্তোষজনক অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ওই সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে এক হাজার ৫২৭টি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে ৩৩৬টিকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং এক হাজার ৭২টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে জানিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে ভবনগুলোকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে, যেমন প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য সিঁড়ির সংখ্যা, সিঁড়ির প্রশস্ততা, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের সংখ্যা, ফায়ার হাইড্রেন্টের প্রাপ্যতা এবং জলাধারের সক্ষমতা।

রেলওয়ের প্রায় অর্ধেক পদই শূন্য

 মার্চ ১০, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

গত ১৫ মাসে ৫ হাজারেরও বেশি কর্মী নিয়োগ করার পরও বাংলাদেশ রেলওয়ে চলছে প্রয়োজনীয় জনবলের অর্ধেক নিয়ে। ফলে, যাত্রীদের মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারছে না সংস্থাটি।

রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল পরিবহন সংস্থাটিতে মোট ৪৭ হাজার ৬৩৭টি অনুমোদিত পদের মধ্যে বর্তমানে ২৪ হাজার ৪০৩ জন কাজ করছেন এবং খালি রয়েছে ২৩ হাজার ২৩৪টি পদ।

রেল কর্মকর্তারা জানান, শূন্য পদের মধ্যে ২০ হাজার ৬৬৬টি তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রেডের কর্মচারীদের।

নিয়োগ নীতির অভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পর বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০২২ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রেডের নন-গেজেটেড কর্মী নিয়োগ দেওয়া শুরু করে। ২০২০ সালের নভেম্বরে রেলওয়ের জন্য নতুন নিয়োগ বিধি অনুমোদিত হওয়ার পর এই নিয়োগ শুরু হয়।

ইতোমধ্যে অনেক কর্মচারী অবসরে যাওয়ার কারণে নতুন নিয়োগ অনুমোদিত কর্মী সংখ্যার মাত্র অর্ধেক নিয়ে কাজ করছে রেলওয়ে।

রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেলওয়ের সেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন চালু করার পরে জনবল সংকট আরও প্রকট হয়েছে।

গত বছর চালু হওয়া চারটি নতুন রুটে আরও ট্রেন পরিচালনা শুরু করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে মনে করছেন রেল কর্মকর্তারা।

বর্তমানে চলমান সংকটের কারণে সারাদেশে ৫০৭টি রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে ১০০টিরও বেশি বন্ধ রয়েছে বলে জানান তারা।

২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে সহকারী স্টেশন মাস্টার, গার্ড, পয়েন্টসম্যান, কারিগরি সহকারী (খালাসি), সহকারী লোকোমাস্টার এবং ওয়েম্যান হিসেবে মোট ৫ হাজার ৩৪২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অধিকন্তু, পয়েন্টসম্যান ও বুকিং সহকারীসহ আরও কয়েকটি পদের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।

শনিবার রাজধানীর রেল ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বাংলাদেশ রেলওয়েতে জনবল সংকটের কথা স্বীকার করেন।

তিনি জানান, দেশের সবচেয়ে বড় লোকোমোটিভ এবং ক্যারেজ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ ধারণক্ষমতার অর্ধেকেরও কম জনবল নিয়ে চলছে।

সম্প্রতি তিনি সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ পরিদর্শন করেছেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে সেখানে ২ হাজার ৮০০ জন অনুমোদিত জনবলের বিপরীতে মাত্র ৮৫০ জন কর্মী কাজ করছেন। এর ফলে তাদের সক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে।’

সড়ক পরিবহন আইন: সাজা কমছে, জামিনের সুযোগও বাড়ছে

১৩ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

সড়ক পরিবহন আইনের বিভিন্ন ধারায় সাজা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি দুটি ধারা অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে বিদ্যমান আইনের অন্তত ১২টি ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আজ বুধবার মন্ত্রিসভায় ‘সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’–এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। পরে বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনিও প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

বর্তমানে আইনের ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারা অজামিনযোগ্য। প্রস্তাবিত আইনে ৮৪ ও ৯৮ ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ ধারায় ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মোটরযান চালানোর ফলে দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের দণ্ডের কথা আছে। এই ধারায় মোটরযানের মালিককে বিমা করতে বলা হয়েছে। আর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কোনো মোটরযানের কারিগরি নির্দেশ অমান্যের দণ্ডের কথা আছে ৮৪ ধারায়।

আর ১০৫ ধারা এখনকার মতো অজামিনযোগ্যই থাকছে। দুর্ঘটনা–সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তির কথা আছে এই ধারায়। এতে বলা আছে, এই আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হলে বা তাঁর প্রাণহানি ঘটলে, সে–সংক্রান্ত অপরাধগুলো দণ্ডবিধিতে থাকা বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে। তবে শর্ত হিসেবে বলা আছে, দণ্ডবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কেউ গুরুতরভাবে আহত হলে বা প্রাণহানি ঘটলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী ব্যক্তিকে অযোগ্য ঘোষণা এবং লাইসেন্স বাতিল, প্রত্যাহার ও স্থগিত করার বিষয় আছে আইনের ১২ ধারায়। এই ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, প্রত্যাহার বা বাতিল করা হলে তিনি কোনো মোটরযান চালাতে পারবেন না। এটি লঙ্ঘনের জন্য এখন শাস্তি আছে ৩ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। প্রস্তাবিত আইনে জরিমানা কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

৬৯ ধারায়ও সাজা কমানো হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যতীত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত, প্রদান বা নবায়নে বিধিনিষেধ রয়েছে। বর্তমানে এই ধারা লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর, তবে কমপক্ষে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা ও কমপক্ষে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। সেটি কমিয়ে এখন সাজার মেয়াদ দুই বছর রাখা হলেও অর্থদণ্ড কমিয়ে তিন লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আইনের ১৪–এর বিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি কন্ডাক্টরের লাইসেন্স ছাড়া কোনো গণপরিবহনে এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। যদি কোনো ব্যক্তি তা করেন, তাহলে অনধিক এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রস্তাবিত আইনে এখানে সাজা ঠিক রাখা হলেও সুপারভাইজারেরও কথা যুক্ত করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন করা ও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে সর্বোচ্চ ১ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড রয়েছে। এ ছাড়া চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষ সূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। প্রস্তাবিত আইনে শাস্তি কমেনি। তবে এখন দুটি অপরাধ একত্রে করলে শাস্তি হয়। এখন আলাদা করে বলা হয়েছে, যদি ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন না করেন অথবা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন, তাহলে এই শাস্তি হবে।

বর্তমানে মিটারে জালিয়াতির জন্য অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ (এক) পয়েন্ট কাটা হবে। প্রস্তাবিত আইনে সেটি কমিয়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। অতিরিক্ত ওজন বহন করে মোটরযান চালানোর সাজাও কমানো হয়েছে।

টার্মিনাল উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা এবং চাঁদাবাজির শাস্তি হবে দণ্ডবিধি অনুযায়ী। ট্রাফিক সাইন ও সংকেত লঙ্ঘন করলে অনধিক ১ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড হবে। এ ছাড়া চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। প্রস্তাবিত আইনে জরিমানা দুই হাজার টাকা করা হয়েছে।

অগ্নিনিরাপত্তা: বিচ্ছিন্ন অভিযান, তদন্ত গতিহীন

১৪ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সরকারি সংস্থাগুলো ‘যে যার মতো’ শত শত রেস্তোরাঁ ও ভবনে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু সমন্বয়হীন এসব অভিযানের সুফল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বেইলি রোডের ভবনটিতে আগুন লাগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে। ৩ ও ৪ মার্চ শুরু হয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে অভিযান। দুই সিটির সঙ্গে ছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।

ডিএমপি এই ১০ দিনে ১ হাজার ১৩২টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে। রাজউক ৩৩টি ভবনে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুটি ভবন ও দুটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করার পাশাপাশি ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জরিমানা করেছে ২২টি প্রতিষ্ঠানকে, পরিমাণ ৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা।

সরকারি সংস্থাগুলো ‘দায় সারতে’ই অভিযানগুলো চালাচ্ছে বলে মনে করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দায়সারা অভিযানে সমস্যার সমাধান হবে না। এটা করতে হবে পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে। তিনি বলেন, অভিযানের আগে ভবনগুলো কী অবস্থায় আছে, সে বিষয়ে জরিপ করা প্রয়োজন। যেসব ভবনে নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে, সেসব ভবন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করার পাশাপাশি নিয়মিত সমন্বিত অভিযান চালাতে হবে।

‘দায় সারা’র অভিযানেও ইতিমধ্যে ভাটা পড়েছে। ডিএমপির অভিযান বন্ধ। দক্ষিণ সিটি গতকাল বুধবার কোনো অভিযান চালায়নি। উত্তর সিটি চালিয়েছে। রাজউক গতকাল তিনটি ভবনে গেছে।

■ পুলিশের অভিযানে ৩ মার্চ থেকে গ্রেপ্তার ৮৭২ জন।

■ ৩৩টি ভবনে রাজউকের অভিযানে সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা।

■ দুটি ভবন ও দুটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করেছে দুই সিটি করপোরেশন। জরিমানা করেছে ১৩ লাখ টাকা।

ভোটের আগে ঘটা করে উদ্বোধন, চলছে না ট্রেন

১৬ মার্চ ২০২৪, সমকাল

সাড়ে চার মাস আগে ঘটা করে উদ্বোধন করা হলেও ভারতের ঋণে (এলওসি) নির্মিত খুলনা-মোংলা রেললাইনে ট্রেন চলছে না।  দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিলের আগে কাজ বাকি রেখে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করা হয়েছিল। ভারতের ঋণে রেলের অন্য চার প্রকল্পের কাজও গতিহীন এবং নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ঋণ পেতে সময় লাগছে।

গত ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রকল্প দুটির উদ্বোধন করেন। তবে এলওসি প্রকল্প নিয়ে রেলের সভার নথি অনুযায়ী খুলনা-মোংলা রেলপথের অবশিষ্ট কাজ ভারতের ঠিকাদারকে চলতি মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভারতের ঋণের প্রকল্পবিষয়ক সভায় বলা হয়েছে, ব্যালান্স ট্র্যাক লিঙ্কিংয়ের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। ফলে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। চুক্তি অনুযায়ী, প্রকল্পে মালপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব ছিল ভারতের ঠিকাদার ইরকনের। প্রকল্পের প্যাকেজ-১-এর ভ্যারিয়েশনের প্রস্তাব রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে।

রেল সচিব হুমায়ুন কবীর সমকালকে বলেন, ১৫ মার্চের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দেবে ঠিকাদার। এর পর পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে খুলনা-মোংলা রেলপথে। এর পর যাত্রাবাহী ট্রেন চলবে। কবে নাগাদ চলবে, তা স্পষ্ট না করে সচিব জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে মোংলা থেকে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলবে।

ভারতের ঋণে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ডিসেম্বরে অনুমোদন পায়। পরিকল্পনা ছিল, তিন বছরে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু দু’বার সংশোধন করে প্রকল্প মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা না করে ২০১০ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। সেই সময় ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। দুই দফায় বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এতে ভারত ঋণ দিচ্ছে ২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পর্যালোচনা অনুযায়ী, ভারতের ঠিকাদারের লারসেন অ্যান্ড টু ব্রো লিমিটেডের সরবরাহ করা স্লিপার ছিল নিম্নমানের। তা বাতিল হওয়া, অনভিজ্ঞ সাব কন্ট্রাক্টর নিয়োগ এবং জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজে দেরি হয়েছে।

আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্পে বাংলাদেশ অংশে ১০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণে ৪৭৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এতে ভারত অনুদান দিয়েছে ৪২১ কোটি টাকা। গত ১ নভেম্বর প্রকল্প উদ্বোধন করা হলেও ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৯৬ শতাংশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে ভারতের আগরতলার নিশ্চিন্তপুর স্টেশন পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা তাই উদ্বোধনের সাড়ে চার মাস পরও আলোর মুখ দেখেনি। রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইন মিটারগেজ হওয়ায় ভারতের সঙ্গে আগরতলা রেললাইন দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা সম্ভব নয়। রেল সচিব বলেছেন, পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনায় বাণিজ্যিক চুক্তিসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি বাকি রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেল কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ভোটের কথা মাথায় রেখে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে প্রকল্প দুটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। চলতি বছর খুলনা-মোংলা রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। তবে আখাউড়া-আগরতলার ক্ষেত্রে আগামী কয়েক বছরেও এই সম্ভাবনা নেই।

রেল সূত্র জানিয়েছে, ঋণ ছাড়ে গড়িমসি, নানা শর্ত, প্রতিটি ধাপ অনুমোদনে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের  জটিলতায় ভারতের ঋণের প্রকল্প এগোয় না। ঋণের শর্তানুযায়ী, ভারতের ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগ এবং নির্মাণসামগ্রী কেনার বাধ্যবাধকতাও কাজের গতি শ্লথ করেছে। ভারতকে অনুরোধ এবং তাগদা দিয়েও কাজ হয়নি।

প্রথম ও দ্বিতীয় এলওসিতে ১৬ হাজার ৮১৬ কোটি টাকায় ছয়টি প্রকল্প চলছে রেলে। ভারত ঋণ দেবে ১১ হাজার ৬১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২৭ ফেব্রুয়ারির সভায় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। ২০১১ সালের জুলাইয়ে অনুমোদিত এ প্রকল্পের ব্যয় ৪৭৭ শতাংশ বেড়েছে। প্রকল্পের অনুমোদনের পর সাড়ে ১২ বছরে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারির সভায় বলা হয়েছে, প্রকল্পটিতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরামর্শক নেই। তিন দফা সময় বাড়িয়েও পরামর্শক পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ দরকষাকষিতে পরামর্শক হতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান চুক্তি মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করে। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, টাকার অঙ্ক বাড়াতে দেশটির সরকারের অনুমোদন লাগবে।

প্রায় ১২ বছরে ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ রেললাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর  ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন প্রকল্পের ৩৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছিল। তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। ভারত ঋণ দেবে ২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজে গতি আনতে বাড়তি ২১ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন ডলার ছাড় করতে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংককে তাগাদা দিয়েছে রেলওয়ে।

এলওসির ঋণে ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্প অনুমোদনের পর প্রায় ছয় বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ভারত ঋণ দেবে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। আগামী জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে। নিশ্চিতভাবেই তাই সময় ও ব্যয় বাড়াতে হবে।

৯৮ কোটি টাকায় সমীক্ষা করতে ভারতের প্রতিষ্ঠান রাইটস ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং আরভি ইন্ডিয়াকে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে ২০২২ সালে সেপ্টেম্বরে। এখনও সমীক্ষার চূড়ান্ত প্রতিবেদন, চূড়ান্ত নকশা এবং দরপত্র ডকুমেন্ট তৈরি করেনি পরামর্শক। ১৫ মার্চের মধ্যে তা দিতে তাগিদ দিয়েছে রেলওয়ে। ঋণের ৩০ কোটি ডলার এখনও পাওয়া যায়নি। তা দ্রুত অনুমোদন করতে এক্সিম ব্যাংককে বলেছে রেলওয়ে।

২০১৮ সালে অনুমোদিত ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়ছে। তবে ১ শতাংশও অগ্রগতি হয়নি ভারতীয় ঋণের এ প্রকল্পে। অর্থাৎ, নির্মাণ শুরু করতেই আরও কয়েক বছর লাগবে। এখনও সমীক্ষা ও নকশা হয়নি। একই অবস্থা ৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার খুলনা-দর্শনা ১২৬ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের। এই প্রকল্পের অগ্রগতি সাড়ের ৩ শতাংশ। এ দু্ই প্রকল্পে ভারতের ৪ হাজার ৫৭ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা। প্রকল্প অনুমোদনের পর সাড়ে পাঁচ বছরে দেশটি দিয়েছে পৌনে ৮ কোটি টাকা।

খুলনার সালাম জুট মিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

বিশাল কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না

০৫ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না খুলনায় ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিমালিকানাধীন সালাম জুট মিলে। এর আগেও একবার নোটিশ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। তাতে টনক নড়েনি মালিকপক্ষের।

এ অবস্থায় বুধবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিশাল পাটকলটিতে। ঈদের আগে বেতন ও মজুরি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন চার শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন শিকদার বুধ ও বৃহস্পতিবার আগুন নিয়ন্ত্রণকাজ তদারকি করেন। তিনি জানান, পাটকলটির চতুর্দিকে পানির পাইপলাইন থাকার কথা থাকলেও, তা নেই। ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর, ওয়াটার হাইড্রেন্ট, হাইপ্রেশার হোজ, ওয়াটার রিজার্ভার, পাম্প হাউসসহ প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য যে পদ্ধতিতে মজুত করা বা রাখার কথা, তাও মানা হয়নি। তারা ‘সেফটি প্ল্যান’ গ্রহণ করেনি। এ ব্যাপারে এর আগে তাদের একবার নোটিশ দেওয়া হলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি।

সড়ক প্রকল্পে উপেক্ষিত ‘সেফটি অডিট’

৬ এপ্রিল ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর রোড সেফটি অডিট ছাড়াই দুই লেনের মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে সড়ক নিরাপত্তার ঝুঁকি উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

৬৪ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৮৩৫ কিলোমিটার মহাসড়ক সম্প্রসারণে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১২টি প্রকল্প রয়েছে। যার মাত্র তিনটির নকশা পর্যায়ে সেফটি অডিট করা হয়েছিল।

একটি প্রকল্পের নিরীক্ষা করেছিল অধিদপ্তর নিজেই, বাকি দুটি করেছিল অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান।

সড়ক নির্মাণের সময়, নিরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘এর অভাবে সম্প্রসারিত এসব সড়ক প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।’

তিনি বলেন, নকশা, বাস্তবায়ন এবং নির্মাণ পরবর্তী পর্যায়ে স্বাধীন নিরীক্ষকদের দিয়ে সেফটি অডিট করানো উচিত।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর মাত্র ১,০৫৫ কিলোমিটার সড়কের সেফটি অডিট চালিয়েছে, যার অর্থ ২২,৪৭৬ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৯৫ শতাংশেরও বেশি সড়কের কখনও অডিট করা হয়নি।

রোড সেফটি অডিট পদ্ধতিগত, আনুষ্ঠানিক এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন যা বিদ্যমান বা পরিকল্পিত সড়কের সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করে এবং দুর্ঘটনা হ্রাস করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।

নিরাপত্তার বিষয়ে এ ধরনের ঘটনা এমন সময়ে ঘটছে যখন প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫ হাজার ৪২৫টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৫ হাজার ২৪ জন নিহত হয়েছেন। তবে কয়েকজন সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনকর্মী জানিয়েছেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কের নকশায় ত্রুটি দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সড়কের নকশা, নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।

সেফটি অডিট ছাড়াই সড়ক সম্প্রসারণ

বর্তমানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রায় ৮০০ সড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে কমপক্ষে ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এ সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-সিলেট ২১০ কিলোমিটার, টাঙ্গাইল (এলেঙ্গা)-রংপুর ১৯০ কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাইদহ ৪৮ কিলোমিটার, সিলেট-তামাবিল ৫৬ কিলোমিটার, আখাউড়া-আশুগঞ্জ ৫১ কিলোমিটার, কুমিল্লা (ময়নামতি)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ধরখার) ৫০ কিলোমিটার, সিলেট-শেওলা ৪৩ কিলোমিটার, পাঁচদোনা-ঘোড়াশাল ২০ কিলোমিটার, ফেনী-নোয়াখালী ৫০ কিলোমিটার, কুমিল্লা-নোয়াখালী ৫৯ কিলোমিটার, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা ১০ কিলোমিটার সড়ক এবং ঢাকা বাইপাসের ৪৮ কিলোমিটার ।

সওজ সূত্র জানায়, শুধুমাত্র ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, সিলেট-শেওলা মহাসড়ক, এবং ঢাকা বাইপাস রোডের নকশা পর্যায়ে রোড সেফটি অডিট করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ শতাংশ অডিট

সওজের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৪ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৫৮ কিলোমিটার জেলা সড়ক রয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের রোড সেফটি অডিট করে। সেসময় পাঁচটি জাতীয় মহাসড়কের ৫০০ কিলোমিটার নিরীক্ষা করা হয়।

নিরাপত্তা ইস্যু সমাধানের জন্য সুপারিশ করার পাশাপাশি, অডিট রিপোর্টে অবশিষ্ট জাতীয় মহাসড়কের সেফটি অডিট সম্পূর্ণ করার জন্যও বলা হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর তিনটি মহাসড়কের ৩০০ কিলোমিটার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই মহাসড়কের ২৫৫ কিলোমিটার অডিট করে।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিবারের

এপ্রিল ৭, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের ছয় সদস্য পরিচালক হিসেবে থেকে বিমা প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে উঠে এসেছে একটি অডিট রিপোর্টে।

কোম্পানিটির বরখাস্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানের অভিযোগের ভিত্তিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) অডিটটি পরিচালনা করে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস অবশ্য কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়মের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন।

২০২৩ সালে গোলাম কুদ্দুসকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগসহ ১৭টি অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য আইডিআরএ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অডিট ফার্ম হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়।

সোনালী লাইফ পরবর্তীতে রাশেদকে বরখাস্ত করে। গোলাম কুদ্দুসের বড় মেয়ের সাবেক স্বামী রাশেদ। কোম্পানির টাকা আত্মসাতের মামলায় বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।

অডিট শুরু হওয়ার পর ১৮ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন গোলাম কুদ্দুস।

বেইলি রোডে আগুন: শুধু নিজেদের গাফিলতি খুঁজে পেল না রাজউক

০৮ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতি পেয়েছে রাজউকের তদন্ত কমিটি। নিজেদের কোনো গাফিলতি বা দোষ খুঁজে পায়নি তারা। যদিও কোনো ভবন যে উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে, ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তার কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে হচ্ছে কি না, সেটি দেখভালের দায়িত্ব রাজউকের।

অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ২৭ মার্চ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

 গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে রমনা থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, রাজউকের দোকান-পরিদর্শকদের ‘ম্যানেজ’ করে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলছিল। তবে রাজউকের তদন্তে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য উঠে আসেনি।

হবিগঞ্জে প্রাণ-আরএফএলের কারখানায় আগুন নিয়ন্ত্রণে, লাফিয়ে পড়ে নারী শ্রমিকের মৃত্যু

১০ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ওলিপুরে প্রাণ-আরএফএলের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে চিপসের কারখানায় লাগা আগুন আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় আতঙ্কে কারখানার ছয়তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রাণ-আরএফএলের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের চিপস উৎপাদন ইউনিটে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় এ আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। অগ্নিকাণ্ডের সময় লাফিয়ে পড়ে মারা যাওয়া নারীর নাম নাজমা বেগম (৪০)। তাঁর বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলায়। এ ছাড়া আতঙ্কিত হয়ে তাড়াতাড়ি বের হতে গিয়ে ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে মা ও শিশুসহ নিহত ৫

১১ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

রাজধানীর সদরঘাটে পন্টুনে বাঁধা দুই লঞ্চের মাঝ দিয়ে আরেকটি লঞ্চ ঢুকানোর সময় একটি লঞ্চের রশি ছিঁড়ে মা ও শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক দম্পতি ও তাদের চার বছরের একমাত্র সন্তান রয়েছে। তারা হলেন, মো. বেলাল (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা (২৪) এবং তাদের চার বছর বয়সী মেয়ে মাইশা। নিহত অপর দুজন হলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের তরুণ রবিউল (১৯) এবং পটুয়াখালীর রিপন হাওলাদার (৩৮)।

ঈদের দিন আজ বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে ১১ নং পন্টুনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফায়ার ফাইটার আনিসুর রহমান জানান, সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের অ্যাম্বুলেন্সে করে গুরুতর আহত অবস্থায় কয়েকজনকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে পাঁচজন সেখানে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে নৌপুলিশের সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘাটে বাঁধা টিপু-১৩ ও তাশরিফ-৪ লঞ্চের মাঝ দিয়ে ঢুকতে যায় ফারহান-৬ নামের লঞ্চটি। এ সময় ফারহান ধাক্কা দেয় টিপুকে আর টিপুর ধাক্কায় তাশরিফের রশি ছিঁড়ে যায়। রশির বাড়িতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

ফারহান ও তাসরিফ লঞ্চের এই ধাক্কাধাক্কির নেপথ্যে যা

১৩ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

তুলনামূলক ভালো আবহাওয়ার কারণে এবার ঈদুল ফিতরের দিন ভালোভাবেই কাটছিল। বড় ধরনের কোনো খারাপ খবর ছিল না। কিন্তু হঠাৎ বিকেলে এতে ছেদ ঘটায় রাজধানীর সদরঘাটের খবরটি। একটি লঞ্চের ধাক্কায় আরেকটি লঞ্চের ছিঁড়ে যাওয়া মোটা রশির আঘাতে একই পরিবারের তিনজনসহ পাঁচ যাত্রীর মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে পোশাকশ্রমিক বিল্লাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী-মেয়ের সঙ্গে ছিল আরও একজন। যে পৃথিবীর আলো না দেখার আগেই এই ঘটনায় বিদায় নিয়েছে। নিহত বিল্লালের স্ত্রী মুক্তা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

কেউ কেউ দুর্ঘটনা বললেও এটি মোটেও কোনো দুর্ঘটনা নয়; বরং এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি অন্যায় চর্চার ফল। একই নৌপথে চলাচল করা বিভিন্ন মালিকের লঞ্চগুলোর মধ্যকার ঠেলাঠেলি মর্মান্তিক এই ঘটনার জন্য দায়ী বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। আর সদরঘাটের এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত লঞ্চ দুটির যাত্রী টানতে বেপরোয়া চলাচলের কথা অনেকেরই জানা।

একটু লক্ষ করলে দেখবেন, ঈদের দিন সদরঘাটে যে ঘটনাটি ঘটল, এর সঙ্গে একই নৌপথে চলাচল করা দুটি লঞ্চ জড়িত। এর একটি এমভি তাসরিফ-৪ ও অপরটি এমভি ফারহান-৬। লঞ্চ দুটি ঢাকা থেকে ভোলার দক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশনের বেতুয়া পর্যন্ত চলাচল করে। এই নৌপথের যাত্রীরা জানেন, এমভি ফারহান-৬-এর মালিকপক্ষে রয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। ফারহানের পাশাপাশি টিপু নামেও তাঁর একাধিক লঞ্চ রয়েছে। অপরদিকে তাসরিফ লঞ্চের মালিকপক্ষ দেশের একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। যাঁদের সঙ্গে ভোলা-২ আসনের (বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান) বিএনপির সাবেক একজন সংসদ সদস্যের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। তাসরিফ লঞ্চের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী ভোলার বাসিন্দা।

ঘটনার মূল যেখানে

বেতুয়া থেকে কয়েক বছর আগে ঢাকায় এমভি তাসরিফের কয়েকটি লঞ্চ চলাচল শুরু করে। এতে এই নৌপথে শুরুর দিকে বড় ধরনের ধাক্কা খায় গোলাম কিবরিয়ার মালিকানাধীন লঞ্চগুলো। এর পেছনে প্রধান কারণ ছিল-দীর্ঘদিন ধরে নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলার মনপুরা, বেতুয়া, তজুমদ্দিন, হাকিমুদ্দিন, দৌলতখান প্রভৃতি নৌপথে একক আধিপত্য ছিল গোলাম কিবরিয়ার মালিকানাধীন লঞ্চগুলোর। তাদের যাত্রীসেবা নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ ছিল প্রতিদিনকার ঘটনা। বিভিন্ন উৎসবে কোম্পানি কেবিন ও স্টাফ কেবিনের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ভাড়া কয়েক গুণ আদায় করা, লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা ইত্যাদি অভিযোগ ছিল।

ফারহান ও টিপু লঞ্চের এসব অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কোনো যাত্রী প্রতিবাদ করলে ক্ষমতার দাপটে তাঁর উল্টো পরিণতির শিকার হওয়ার নজির রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৬ নভেম্বর কোরবানির ঈদের ছুটিতে ভোলার দৌলতখানে টিপু লঞ্চ থেকে এক যাত্রীকে পিটিয়ে মেঘনা নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। কয়েক দিনের মাথায় ওই যাত্রীর লাশ ভেসে ওঠে। অভিযোগমতে, লঞ্চটি ঢাকা থেকে ভোলার দৌলতখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা পুনরায় যাত্রী নেওয়ার জন্য যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে না দিয়ে জোর করে ভোলার ইলিশা ঘাটে নামিয়ে দেয়। সময়ের ব্যবধানে দৌলতখান থেকে ইলিশার দূরত্ব নৌ ও সড়ক-উভয় পথে এক ঘণ্টার মতো। এতে অন্য যাত্রীরা নেমে গেলেও ওই যাত্রী এর প্রতিবাদ করে লঞ্চে বসে থাকেন। পরে তাঁকে ওই পরিণতি ভোগ করতে হয় বলে অভিযোগ। এ নিয়ে তখন প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল।

তবে সে সময় বিষয়টি জাতীয়ভাবে ততটা আলোচিত হয়নি। কারণ, একই দিন (২০০৯ সালের ২৬ নভেম্বর) ভোলার লালমোহনের নাজিরপুরে বিএনপির চেয়ারপারসনের পরিবারের মালিকানাধীন কোকো-৪ লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছিল। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৮১ জনের প্রাণহানি হয়। তখন এ ঘটনা কয়েক দিন ধরে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়। তাতে অনেকটাই চাপা পড়ে যায় টিপু লঞ্চের ঘটনাটি।

এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে টিপু ও ফারহান নামের লঞ্চগুলো নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ ছিল। পরে তাসরিফ লঞ্চ চালু হলে যাত্রীদের একটা বড় অংশ এই লঞ্চে যাতায়াত শুরু করে। পাশাপাশি এই লঞ্চের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যের আত্মীয়তার বিষয়টিও তাসরিফ লঞ্চের যাত্রী পেতে সাহায্য করে। এ ছাড়া লঞ্চের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী ভোলার হওয়ায় সেটিও যাত্রীদের সঙ্গে তাদের একটি বাড়তি যোগাযোগের পথ তৈরি করে দেয়। 

ফলে এই নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা জানেন, এমভি তাসরিফ ও ফারহান নামের লঞ্চগুলোর মধ্যে এমন রেষারেষি বহুদিন ধরে চলে আসছে। কে কার আগে যাত্রী নেবে, কে যাত্রীদের কতভাবে আকৃষ্ট করবে, কে কার আগে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে-এসব বিষয়ে নেতিবাচক প্রতিযোগিতা চলে তাদের মধ্যে। তবে এ উদাহরণ শুধু তাসরিফ বা ফারহানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বিভিন্ন নৌপথে অনেক লঞ্চের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

এস আলমের কারখানায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ড, জনমনে নানা প্রশ্ন

১২ এপ্রিল ২০২৪, বাংলা ট্রিবিউন

চট্টগ্রামভিত্তিক অন্যতম বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কারখানাগুলোতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটেই চলছে। গত দুই মাসে শিল্প গ্রুপটির অন্তত তিনটি কারখানায় আগুন লেগেছে। এসব আগুনের ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা বা অন্য কিছু—তা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন বারবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখার প্রতিও জোর দিচ্ছেন কেউ কেউ। যদিও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আগুন লাগার এসব ঘটনা স্বাভাবিক। এতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা ছিল না, অজান্তেই ঘটে গেছে।’

এর মধ্যে গেলো মার্চ মাসে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন ‘তাজা মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড’ হিমাগারে পৃথকভাবে আগুন লাগে। সবশেষ আজ শুক্রবার (১২ এপ্রিল) এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড নামে ভোজ্যতেলের মিলের একটি গুদামে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। যে গুদামটিতে আগুন লেগেছে ওই ভবনের মাত্র ১০ ফুট দূরত্বেই ছিল তেলের মজুত। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, তেলে আগুন ছড়িয়ে পড়লে তা নেভানো কঠিন হতো। শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

এর আগে গত ৪ মার্চ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকায় অবস্থিত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১ নম্বর গুদামে আগুন লাগে। প্রায় ৬ দিন পর ৯ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা সম্ভব হয় বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। আগুন লাগা গুদামটিতে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনির মজুত ছিল। আগুন নির্বাপণের পর প্রায় ৮০ শতাংশ চিনি রক্ষা করা সম্ভব হয় বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

দিকে এস আলমের চিনির গুদামে আগুন লাগার পর শুরু হয় চিনির বাজারে দামে অস্থিরতা। সরবরাহ ঘাটতির অজুহাতে কেজিপ্রতি দাম বাড়ে ৫ টাকা পর্যন্ত।

ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন—কিছুই ছিল না ইউনিক পরিবহনের সেই বাসটির

এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

ফরিদপুরে ইউনিক পরিবহনের যে বাসের সঙ্গে পিকআপের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হন, সেই বাসটি ফিটনেস ছাড়পত্র ও ট্যাক্স টোকেন ছাড়াই তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলাচল করছে।

এমনকি যেই ঢাকা-মাগুরা রুটে দুর্ঘটনাটি হয়, সেই রুটে বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-১৭৫৯) চলাচলের অনুমোদনও ছিল না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাসটির চট্টগ্রাম-বগুড়া রুটে চালানোর অনুমোদন থাকলেও ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে তা আর হালনাগাদ করা হয়নি।

কিন্তু সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বেশ কয়েকটি ধারা লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই দূরপাল্লার এই বাসটি চলাচল করেছে।

অন্যদিকে যে পিকআপের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়, পণ্য পরিবহনের সেই পিকআপটিও বিধি লঙ্ঘন করে যাত্রী পরিবহন করছিল।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর এলাকায় ঘটা এই দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আরও অনেকে আহতও হয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, হতাহতরা সবাই পিকআপের (যশোর-ন ১১-১৩৩৯) যাত্রী ছিলেন।

আনাড়ি হাতে ২০ টন ট্রাক, ফের সড়কে ঝরল ১৪ প্রাণ

১৮ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

ঝালকাঠি শহরের  গাবখান সেতু থেকে নেমে টোল দেওয়ার জন্য সারিবদ্ধ কয়েকটি গাড়ি। টোল পরিশোধ হওয়ায় সবে এগোতে শুরু করেছে একটি প্রাইভেটকার। তার ঠিক পেছনে তিনটি ইজিবাইক (থ্রি-হুইলার) ও একটি পণ্যবাহী পিকআপ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দানবের মতো এসে একটি ট্রাক (খুলনা মেট্রো–ট–১১–০৯৫৭) পিষে দিল পাঁচটি গাড়ি।

গতকাল বুধবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক সড়কে ঝালকাঠি শহরসংলগ্ন  গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় মর্মন্তুদ এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে প্রাইভেটকারে একই পরিবারের ছয়জন রয়েছেন। আহত অন্তত ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি। গত মঙ্গলবার ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপের সংঘর্ষে ১৫ জন নিহতের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই ঝালকাঠিতে এ দুর্ঘটনা ঘটল। এদিকে গতকাল আলাদা ঘটনায় ছয় জেলায় দুই দম্পতিসহ আরও ১১ জন নিহত হয়েছেন।

ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মহিতুল ইসলাম জানিয়েছেন, দুই অ্যাক্সেলের ট্রাকটির অনুমোদিত ধারণক্ষমতা ১৩ টন হলেও সিমেন্টবোঝাই ছিল প্রায় ২০ টন। ট্রাকচালকের ছিল হালকা যান চালানোর লাইসেন্স।

অতিরিক্ত ওজন মিথ্যা প্রমাণে সরানো হলো ১৫০ বস্তা সিমেন্ট

১৮ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

ঝালকাঠি শহরের  গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক থেকে ১৫০ বস্তা সিমেন্ট সরানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এগুলো সরানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রলি থানায় নিয়ে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হালকা যান চালানোর লাইসেন্সধারী আনাড়ি চালকের হাতে ২০ টন ওজনের ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঘটনা মিথ্যা প্রমাণে মালিকপক্ষের নির্দেশে সিমেন্ট সরানো হয়েছে।

বাসচাপায় প্রকৌশলীর মৃত্যু

ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন– কিছুই ছিল না বাসটির

২০ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে চাকরির পরীক্ষা ছিল ইরানি চৌধুরীর। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় তাঁকে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বটি স্বামী মইদুল ইসলাম সিদ্দিক শুভ (৩৭) নিয়েছিলেন। কাওলা এলাকার বাসা থেকে বেরিয়ে মোটরসাইকেলে স্ত্রীকে বনানীতে নিরাপদে পৌঁছে দেন তিনি। এর পর আবার বাসায় ফিরছিলেন। তার আগেই রাইদা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের চাপায় মইদুল প্রাণ হারান। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি মোটরসাইকেলসহ তাঁকে ছেঁচড়িয়ে নিয়ে যায় প্রায় ১৫ ফুট। গাড়ির সামনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই সিভিল এভিয়েশনের এই জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী নিহত হন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাইদা পরিবহনের বাসটির ফিটনেস নেই। ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর পর আর ফিটনেস করানো হয়নি। এ ছাড়া ট্যাক্স, টোকেন ও রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের নভেম্বরে। রাইদা পরিবহনের বাস পোস্তগোলা থেকে উত্তরা খালপাড় পর্যন্ত চলাচল করে। বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত এই সড়কে বাসচালকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ফলে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। গত আট বছরে আড়াই শতাধিক মানুষ এই সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

লাইনের দুর্বলতা ঢাকার ফন্দি, তাপের ওপর দায় চাপাচ্ছে রেল

২০ এপ্রিল, ২০২৪, কালেরকন্ঠ

নানা ধরনের সমস্যায় ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের অর্ধেকের বেশি রেললাইন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না ট্রেন। এর মধ্যে গ্রীষ্মের তাপের অজুহাতে ট্রেনের গতি আরো কমানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টা অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো হয়েছে।

কেননা, সারা দেশের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি থাকলেও এই নির্দেশনা সব জায়গার জন্য দেওয়া হয়নি। যেসব অঞ্চলে রেললাইন বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, সেখানেই ট্রেনের গতি কমানোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

কয়েক দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা বেশি থাকলেও সেখানে ট্রেনের গতি কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়নি। অথচ চট্টগ্রামে তুলনামূলক তাপমাত্রা কম থাকলেও এই অঞ্চলে তাপ বাড়লে ট্রেনের গতি কমাতে বলা হয়েছে।

নিয়মিত ট্রেন চলাচলের জন্য দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার রেললাইন ব্যবহারযোগ্য। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার রেললাইন তুলনামূলক নতুন। বাকিগুলোর ৭০ শতাংশের আয়ুষ্কাল শেষ। ঝুঁকিতে থাকা এসব রেলপথে ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হলেও এখনো রয়ে গেছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত অনেক রেললাইন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের মোট রেললাইনের ৯০ শতাংশ নির্মিত হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভাজনের আগে, যেগুলোর অবস্থা এখন খুব একটা ভালো নয়।

বর্তমানে দেশের ৪৩ জেলায় রেলপথ রয়েছে। এর ৩৯টিতেই রয়েছে রেললাইনে সমস্যা। রেলের মান নষ্ট হওয়া, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, মাটি সরে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ঈদযাত্রায় ৩৯৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৭: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

এপ্রিল ২০, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

এছাড়া রেল পথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যু ও ২১ জন আহত হয়েছেন। নৌ পথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।

সড়ক, রেল ও নৌ পথে মোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও এক হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছেন।

বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় প্রকৌশলী নিহত: বাসচালকের ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল না

২০ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া গতির বাসের চাপায় সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশলী মুইদুল ইসলাম নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার বাসচালক হাসান মাহমুদের ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল না। বাসটির ফিটনেস সনদও দেখাতে পারেননি চালক। 

আজ শনিবার সকালে বরিশালের হিজলা থেকে হাসানকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানা গেছে বলে র‍্যাব–১ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়।

কানাইপুরে ১৫ মৃত্যু: তদন্তে উঠে এসেছে সেই সড়ক দুর্ঘটনার ৪ কারণ

২২ এপ্রিল ২০২৪, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি অনলাইন

ফরিদপুরের কানাইপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহতের ঘটনায় গঠন করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এই দুর্ঘটনার পেছনে চারটি কারণ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গতকাল রোববার রাতে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—ঈদের পরে বাসচালকের দীর্ঘসময় গাড়ি পরিচালনায় ক্লান্তি আর চোখে ঘুম, দুটি যানবাহনেরই অধিক গতি, মহাসড়কে নিজস্ব লেনে ব্রেক করা ও মহাসড়কে অটোরিকশার উপস্থিতিতেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

ঘন ঘন বাঁক, চলে অবৈধ যান

২২ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের কামারখালী সেতু থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত ৭৩ কিলোমিটারে গত এক বছরে ৫৭টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৫৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ ১৫ জন নিহত হয়েছেন। ঘন ঘন বাঁক, অপরিকল্পিত গতিরোধক, বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা উঁচু-নিচু (রাটিং) হয়ে যাওয়া, মহাসড়কে অবাধে তিন চাকার যান চলাচলসহ নানা কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।

সাজেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ল ট্রাক, নিহত ৯

২৫ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

রাঙামাটির বাঘাইছড়ির দাড়িপাড়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মিনি ট্রাক খাদে পড়ে ৯ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ছয়জন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বাঘাইছড়ি উপজেলার শিজকছড়া-উদয়পুর সড়কের সাজেক ইউনিয়নে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উদয়পুর সীমান্ত সড়কের কাজ করার জন্য গতকাল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে মিনি ট্রাকে করে ১৫ জন শ্রমিক যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ট্রাকটি দাড়িপাড়া এলাকার ৯০ ডিগ্রি পাহাড়ে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গভীর খাদে পড়ে যায়।

সড়কে যেন হত্যাকাণ্ড চলছে

২৬ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

ফরিদপুরে ১৬ এপ্রিল বাস ও ছোট ট্রাকের সংঘর্ষে ১৫ জনের মৃত্যুর পর জানা গিয়েছিল, বাসটির ফিটনেস সনদ নেই। অবৈধভাবে ট্রাকে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল। সড়কেও ছিল কিছু খানাখন্দ। পরে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি জানায়, অতিরিক্ত গতি, বাসচালকের ঘুম ঘুম ভাব এবং বাসের সামনে ইজিবাইক এই দুর্ঘটনার কারণ।

বাসের ফিটনেস আছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। ট্রাকে যাত্রী তোলা ও অতিরিক্ত গতি ঠেকানো এবং তিন চাকার যান মহাসড়কে চলাচল বন্ধ রাখার দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের। সড়ক খানাখন্দমুক্ত রাখার কাজটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ)। আর চালকের বিশ্রাম নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিকপক্ষের।

শুধু ফরিদপুর নয়, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ২২ এপ্রিল বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর জানা যায়, বাসটি ফিটনেসহীন, ৪৩ বছরের পুরোনো। এর পাঁচ দিন আগে (১৭ এপ্রিল) ঝালকাঠিতে সিমেন্টবাহী ট্রাকের চাপায় ১৪ জনের মৃত্যুর পর বেরিয়ে আসে, চালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না।

গণতন্ত্র মতপ্রকাশের অধিকার

মিষ্টি আর ফুল নিয়ে ওসিকে শুভেচ্ছা জানালেন পটিয়ার সংসদ সদস্য

২৮ জানুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

চট্টগ্রাম নগরের একটি থানায় এসে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। সঙ্গে নিয়ে এলেন নানা স্বাদের মিষ্টিও। গত শুক্রবার নগরের খুলশী থানায় এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মন্তব্য করছেন লোকজন। এমনকি খুলশী থানার ওসি শেখ নেয়ামত উল্লাহ তাঁর ফেসবুকে ছবিসহ বিষয়টি পোস্ট দেন। পরে তিনি তা সরিয়ে নেন।

ডিলিট করে দেওয়া ওই পোস্টে ওসি লিখেছিলেন, ‘তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া আসন হতে নির্বাচিত সাংসদ (সংসদ সদস্য), তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি জনাব মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। পটিয়ায় কাজ করার সুবাদে কাছ থেকে এই নিরহংকার মানুষটিকে অবলোকন করেছি। একদম সাদামাটা যাপিত জীবনের অধিকারী। কথাকে বাস্তবে রূপ দিতে নিজের অবস্থান ভুলে আমাকে দেখতে চলে আসলেন খুলশী থানায়। সাথে নিয়ে আসলেন মিষ্টি ও ফুল, তারপর শুভেচ্ছা পর্ব। এই সরল মহৎপ্রাণ সাংসদের জন্য শুভকামনা, পটিয়ার জন্য শুভকামনা।’

সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা পটিয়া। সংসদ সদস্য হয়ে নগরের একটি থানার ওসিকে ফুল দিতে আসার ঘটনায় অনেকে অবাক হয়েছেন।

আবার ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সমঝোতার আসনে জয়ী ১১ জন সংসদ সদস্য নিয়ে বিরোধী দলের আসনে বসেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটি আগের সংসদে ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। আওয়ামী লীগের টানা শাসনে গত দুটি সংসদের সঙ্গে তুলনা করলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদেও বিরোধী দলের আসনে কোনো পরিবর্তন নেই।

নতুন সংসদে জাতীয় পার্টি কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা রাখতে পারবে, এটি মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলটির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ভোট বর্জন করে সংসদের বাইরে রয়ে গেছে। এমন পটভূমিতে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের নিয়ে একপক্ষীয় সংসদের চেহারা নিয়েছে বলা যায়।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, বড় দুই দলের অনুসারী বা সমর্থক দেশের সিংহভাগ মানুষ। রাজনীতিও বিভক্ত দুই দলকে কেন্দ্র করে। নির্বাচন, আন্দোলনে অন্যান্য দলের বেশির ভাগই দুই দলের নেতৃত্বে ভাগ হয়ে যায়। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এবার নির্বাচন বর্জন করে বিএনপির নেতৃত্বে বিভিন্ন দল ও জোট সরকার পতনের আন্দোলনে ছিল। আর আওয়ামী লীগ তার শরিক, মিত্রদের নিয়ে নির্বাচন করেছে।

সংসদীয় ছয়টি স্থায়ী কমিটি

দেখা দিতে পারে স্বার্থের দ্বন্দ্ব

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৯ সদস্যের মধ্যে ৬ জনই পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁদের অন্তর্ভুক্তিতে এই কমিটিতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা সংঘাত দেখা দিতে পারে। কারণ, জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালিবিধি অনুযায়ী, এমন কোনো সদস্য সংসদীয় কমিটিতে নিযুক্ত হবেন না, যাঁর ব্যক্তিগত, আর্থিক ও প্রত্যক্ষ স্বার্থ কমিটিতে বিবেচিত হতে পারে, এমন বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে।

বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবার বাণিজ্যসহ অন্তত ছয়টি কমিটিতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। অন্য পাঁচটি হলো শ্রম ও কর্মসংস্থান; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ; নৌপরিবহন; প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

কোনো সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাজ হলো তার আওতাধীন মন্ত্রণালয়ের কাজ পর্যালোচনা করা। পাশাপাশি বিভিন্ন অনিয়ম ও গুরুতর অভিযোগের প্রশ্ন সামনে এলে তা তদন্ত করা। আইন পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করা বিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া বা সুপারিশ করাও সংসদীয় কমিটির কাজ। তবে ২০১৪ সালে গঠিত দশম এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের পর গঠিত একাদশ সংসদে বেশির ভাগ সংসদীয় কমিটি ছিল নিষ্ক্রিয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরুর মাত্র পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ৫০টি সংসদীয় কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি কমিটি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত। বাকি ১১টি কমিটি সংসদের বিভিন্ন বিষয়সম্পর্কিত।

কমিটিগুলোর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সদ্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তাঁর পেশা ব্যবসা (পোশাকশিল্প ও অন্যান্য)। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে শেখ হেলাল উদ্দিনের পেশা ব্যবসা ও রাজনীতি (ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া)। আর কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে শেখ আফিল উদ্দিন, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও মাহমুদ হাসান পেশায় ব্যবসায়ী। এ কমিটির একমাত্র নারী সদস্য সুলতানা নাদিরা মধুমতি টাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এস এম আল মামুনের রয়েছে জাহাজভাঙাশিল্পের ব্যবসা। এ কমিটির আরেক সদস্য শামীম ওসমান তৈরি পোশাক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিম মাহমুদ হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি একজন আইনজীবী। সে সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক আইন ও জ্বালানিবিষয়ক পরামর্শক। এই কমিটির আরেক সদস্য আবদুর রউফের পেট্রলপাম্পের ব্যবসা রয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য গোলাম কিবরিয়া লঞ্চ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। তিনি জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) ওয়েবসাইটে ‘স্নিগ্ধা ওভারসিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিজাম উদ্দিন হাজারীর নাম রয়েছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী (নোয়াখালী-৬) ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তিনি স্থানীয় সরকারের কাজও করে থাকেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

চেয়ারম্যান ‘কাঠের পুতুল’ এমপি-ইউএনও সর্বেসর্বা

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বসতে নেতারা যে এত উতলা, আদতে ওই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এলাকায় ‘কাঠের পুতুল’! জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে প্রত্যক্ষভাবে জনগণেরই কল্যাণ করতে পারছেন না তারা। এলাকার উন্নয়নে তারা পান না সরকারি কোনো বরাদ্দ। স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাই (ইউএনও) এলাকার সর্বেসর্বা। উপজেলার প্রতিটি উন্নয়নকাজ হয় কমিটির মাধ্যমে। চেয়ারম্যানরা কমিটির সভাপতি থাকলেও উপদেষ্টা করা হয় স্থানীয় এমপি আর ইউএনওকে। ফলে কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে চেয়ারম্যানদের প্রস্তাব অনেক ক্ষেত্রে ধোপে টেকে না!

উপজেলা চেয়ারম্যানরা মাস গেলে ভাতা পান মাত্র ১০ হাজার টাকা। ভাইস চেয়ারম্যানরা আরও কম– ৭ হাজার ৫০০। ভাইস চেয়ারম্যানরা ভাতার বাইরে আর কিছু না পেলেও চেয়ারম্যান হাঁকাতে পারেন একটি জিপগাড়ি; সঙ্গে চালক আর মাসে ২০০ লিটার জ্বালানি।

উপজেলা পরিষদ আইন ঘেঁটে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদের মূল কাজ ১৭টি, সঙ্গে ৩৮ রকমের দায়িত্ব। এতে চেয়ারম্যানের ১৩টি, ভাইস চেয়ারম্যানের ১২টি আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ১৩টি দায়িত্ব বণ্টন করা আছে। এর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখা, যোগাযোগ ও ভৌত অবকাঠামো, কৃষি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া, সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং সংস্কৃতির উন্নয়ন। এসব কাজে প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থানের ক্ষমতা উপজেলা পরিষদের হাতে না থাকায় তারা কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেন না। ফলে উপজেলা পরিষদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

মনজুরুল আহসান খানের বিরুদ্ধে আবার ব্যবস্থা সিপিবির

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে প্রবীণ রাজনীতিক মনজুরুল আহসান খানের বিরুদ্ধে আবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি।

তাকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পদ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে; দলের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে ছয় মাসের জন্য।

সিপিবির নেতৃত্বকে সরিয়ে দিতে সম্মেলনের পরিকল্পনা করার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় বক্তব্য দেওয়ার নবম দিনে এমন সিদ্ধান্ত এল।

সোমবার সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে সভা শেষে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সদস্য পদ স্থগিত থাকার সময় মনজুরুলের বিরুদ্ধে নতুন কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে আবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ। ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় সোমবার তিনি এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে ওই কর্মশালার আয়োজন করে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।

সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে বলতে গিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে যে এই আইনটা সাংবাদিকবান্ধব আইন বা ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন–বান্ধব আইন। বারবার একটা কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়,… আগে মানহানির জন্য হুট করে জেলে দেওয়া যেত। এখন জরিমানার বিধান করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন বোদ্ধা ব্যক্তি যাঁরা, তাঁরাও বিভিন্ন আর্টিকেলে এ নিয়ে কথাগুলো বারবার বলে এসেছেন।’

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ‘আইনের পাঁচটি ধারা (২২, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৮) যেকোনোভাবে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে।…যদিও ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়ে হয়তোবা আপনারা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু কয়েকটা সেকশন খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এই জার্নালিজমে (সাংবাদিকতায়)।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলা থেকেই অব্যাহতি পেলেন জবি শিক্ষার্থী খাদিজা

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা আরেকটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটি মামলা থেকেই খাদিজাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

আজ রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলাটির অভিযোগ গঠনের জন্য শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। শুনানি শেষে অভিযোগ গঠন করার মতো উপাদান না থাকায় খাদিজাকে অব্যাহতি দেন আদালত। সেইসঙ্গে মামলার আরেক আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের অংশটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি একই আদালতে কলাবাগান থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ছিল। ওই দিন শুনানি শেষে আদালত ওই মামলায় অভিযোগ গঠনের মতো উপাদান না থাকায় খাদিজাকে অব্যাহতি দেয়।

গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন

০৮ মার্চ ২০২৪, ইত্তেফাক

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন গণতন্ত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সীমাবদ্ধ ছিল। যার মধ্যে রয়েছে- সমাবেশ, সমিতি, আন্দোলন, এবং বক্তৃতা। বিচারিক কার্যক্রম ও গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ে।

ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি উল্লেখ এতে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগি চুক্তি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতা ভোটারদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতের অনুকূল পরিবেশ ছিল না, এমনকি সমালোচনামূলক বক্তব্য ও স্বচ্ছতার বিষয়টিও সীমিত ছিল।

এতে আরও বলা হয়, সাংবিধানিক নিয়ম মেনে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ছিল একটি অত্যন্ত মেরুকৃত রাজনৈতিক পরিবেশে পরিচালিত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার শরিকরা নির্বাচন বয়কট করায় আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব ছিল। বিরোধীরা সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছিলো, যা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে বিরোধী দলের ধারাবাহিক বিক্ষোভ ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর গুরুতর রূপ নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেতাদের গণগ্রেপ্তারের ফলে দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়।

নির্বাচনকালীন সময়ে বিরোধী দলগুলোর সমাবেশ, সমিতি, আন্দোলন এবং বক্তৃতার স্বাধীনতা কঠোরভাবে সীমিত করা হয়। বিএনপির প্রায় সব সিনিয়র নেতাকে কারাবন্দি করায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বিএনপির পক্ষে অসম্ভব ছিল, বলে উল্লেখ করা হয়।

নির্বাচনের দিন অনিয়ম ও বিচ্ছিন্ন সহিংসতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণভাবে সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নির্বাচনের দিন ব্যালট বাক্স ভর্তি এবং জালিয়াতির প্রচেষ্টাসহ নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীরা ভোটে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটির তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলা করা হয়েছিল। ২৫টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। তবে অন্যান্য ঘটনার যথেষ্ট তদন্ত করা হয়নি।

নির্বাচনে ভোটের হারকে ব্যাপক বৈষম্যের চিত্র উল্লেখ করে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটের হার ছিল ৪১.৮ শতাংশ। এটাই সারা দেশে ব্যাপক বৈষম্যের চিত্র প্রদর্শন করে। চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিক ফলাফল অনুযায়ী- আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল প্রার্থীরা ২২৩টি আসন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি, জাতীয় পার্টি পায় ১১টি আসন। আসন ভাগাভাগির চুক্তিতে আরও দুটি দল একটি করে আসন পেয়েছে। কল্যাণ পার্টি জিতেছে একটিতে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখী বাম জোটের বিক্ষোভে পুলিশের বাধা

১১ মার্চ ২০২৪, আজকের পত্রিকা

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও ধাপে ধাপে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার প্রতিবাদে এবং বিদ্যুৎ খাতের বিপর্যয় ও সংকটের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত ও বিচারের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখী বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভের আয়োজন করে বাম জোট। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর জোটের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে যেতে চাইলে পল্টন মোড়ে পুলিশি ব্যারিকেডের মুখে পড়েন তারা। এ সময় পুলিশ ও জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পর পল্টন মোড়েই ব্যারিকেডের সামনে বসেন পড়েন জোটের নেতা-কর্মীরা।

‘নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, সেই টাকা তুলবই’

২৮ মার্চ ২০২৪, ঢাকা পোস্ট

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে।

বক্তব্যে মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার পাঁচটা বছরের (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না। আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে) ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলব। যে ভাবেই হোক তুলবই। এতটুক অনিয়ম আমি করবই। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।

তিনি আরও বলেন, ওই সময় এক টাকাও খরচ হয়নি আমার। শুধু ব্যাংকে ২৫ লাখ টাকা জমা রাখতে হয়, ওটা রেখেছি। এক টাকাও খরচ নাই, ২৫ লাখ টাকা তুললাম। ট্যাক্স ফ্রি ২৭ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছিলাম। চাইলে ১ কোটি টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম। আমার যখন টাকা নাই তখন ২৭ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। এবার আমি কিনব, ওই টাকা দিয়ে কিনব। ওই যে টাকা, ওই টাকা তুলে নিব আমি। খালি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা তুলব।

উপজেলায়ও আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ

১৬ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও লড়াই হতে যাচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগের নেতাদের নিজেদের মধ্যে। প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলটির গড়ে তিনজন করে প্রার্থী হচ্ছেন।

গতকাল সোমবার ছিল প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। ১৫০টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ৬৯৬ জন। ১৪১টি উপজেলায় দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্তত ৪৬৬ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নেতা আছেন কমবেশি ৪৫ জন। তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর জামায়াতে ইসলামীর অন্তত ২২ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় সারা দেশে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখনো আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও নেই। তাদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ এবার উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিচ্ছে না। দলটির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন।

স্বাধীনতা সূচকে ২৫ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

১৭ এপ্রিল ২০২৪, যুগান্তর

বৈশ্বিক স্বাধীনতা সূচকে ২৫ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এই সূচকে ২০২৩ সালে ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম। আগে ছিল ১১৬তম। দেশের নির্বাচন, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং আইনের স্বাধীনতার ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিল। রিপোর্টের নাম ‘গ্লোবাল ফ্রিডম ও প্রসপারিটি’। বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির অভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সমৃদ্ধির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম। রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএস এআইডি ও এশিয়া ফাউন্ডেশন মঙ্গলবার এ রিপোর্ট প্রকাশ করে।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

চট্টগ্রামে উচ্ছেদ অভিযানে হকার-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট ও স্টেশন রোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে হকারদের প্রায় এক ঘণ্টা সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পাঁচ পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। সংঘর্ষ চলাকালে সিটি করপোরেশনের পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। হকারদের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আজ সোমবার ওই এলাকায় ভাসমান হকারদের সরিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সময় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ, হকার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ৮ ফেব্রুয়ারি ফলমন্ডি থেকে নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় ফুটপাত থেকে ভাসমান হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। অভিযান শেষে কিছু হকার পুনরায় ফুটপাত দখল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার আবারও উচ্ছেদ অভিযানে যায় সিটি করপোরেশন।

মায়ের পাশ থেকে অসুস্থ ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ র‌্যাবের বিরুদ্ধে

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথশ আলো

‘আমার ছেলে রহমত উল্লাহ গুম হয়েছে। ছেলেকে আমার বুক থেকে নিয়ে গেছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় আছে। ছেলেকে ফেরত চাই।’

আজ সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন মা মমতাজ বেগম।  গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর  আয়োজনে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গুম হওয়া রহমত উল্লাহকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

প্রায় পাঁচ মাস ধরে ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ রহমত উল্লাহর কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না বলে জানান তাঁর মা। তাঁর অভিযোগ, র‌্যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাকের একটি দল তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে।

 রহমতউল্লাহর মা বলেন, তাঁর ছেলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারও সঙ্গে কোনো বিবাদও নেই। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘কিছুই আমি জানি না। কোনো খোঁজ দেয় না।’

‘কিশোর গ্যাং’ প্রশ্রয় দেন ঢাকার ২১ কাউন্সিলর

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় বছর সাতেক আগে ১১ জন ব্যক্তি মিলে ৪ শতাংশ জমি কেনেন। তিন মাস আগে সেই জমিতে ভবন নির্মাণ করতে গেলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন স্থানীয় ‘গাংচিল বাহিনী’র সদস্যরা। জমির মালিকেরা পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করতে পেরেছেন।

মালিকদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদার টাকা দিতে একটু দেরি হয়েছিল। সে কারণে নির্মাণশ্রমিকদের মারধর করা হয়েছিল। গাংচিল বাহিনীকে চাঁদা না দিয়ে ওই এলাকায় কোনো ভবন নির্মাণ করা যায় না।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাংচিল বাহিনীর নেতা মো. মোশারফ হোসেন ওরফে লম্বু মোশারফ পুলিশের তালিকাভুক্ত অপরাধী। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। তাঁকে ও তাঁর বাহিনীকে প্রশ্রয় দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ।

আসিফ আহমেদ গত ২১ জানুয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে কোনো অপরাধীর সখ্য নেই। আমি চার বছর হলো রাজনীতিতে এসেছি। এসব অপরাধী আগে থেকেই এলাকায় ছিল।’

অবশ্য এলাকাবাসী বলছেন, আসিফ কাউন্সিলর হয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে বরং তাদের প্রশ্রয় দেওয়া শুরু করেন। গাংচিল বাহিনীর সদস্যরা আসিফের সভা ও মিছিলে অংশ নেন। মোশারফের পাশে বসা অবস্থায় আসিফের ছবিও রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোশাররফ যুবলীগের পদ পাওয়ার চেষ্টায় আছেন।

প্রথম আলোর অনুসন্ধান ও পুলিশের নিজস্ব প্রতিবেদন সূত্রে ঢাকায় গাংচিল বাহিনীর মতো অন্তত ৮০টি বাহিনীর খোঁজ পাওয়া গেছে, যেগুলোর বেশির ভাগ ‘কিশোর গ্যাং’ নামে পরিচিত। নামে কিশোর গ্যাং হলেও এসব বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যের বয়স ১৮ বছরের বেশি। তাঁরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখলে সহায়তা, ইন্টারনেট সংযোগ, কেব্‌ল টিভি (ডিশ) ব্যবসা ও ময়লা–বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, উত্ত্যক্ত করা, যৌন হয়রানি করা, হামলা, মারধরসহ নানা অপরাধে জড়িত।

বাহিনীগুলোর নেতাদের কেউ কেউ সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করেন। কেউ কেউ রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও আশ্রয় পান রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ২১ জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ‘গ্যাং’ প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এসেছে।

সারা দেশের ‘কিশোর গ্যাং’ নিয়ে পুলিশ প্রতিবেদন তৈরি করেছিল ২০২২ সালের শেষ দিকে। এতে বলা হয়েছে, সারা দেশে অন্তত ১৭৩টি কিশোর গ্যাং রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে এদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৭৮০টি। এসব মামলায় আসামি প্রায় ৯০০ জন। রাজধানীতে কিশোর গ্যাং রয়েছে ৬৬টি। চট্টগ্রাম শহরে আছে ৫৭টি। মহানগরের বাইরে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ২৪টি গ্যাং। বেশির ভাগ বাহিনীর সদস্য ১০ থেকে ৫০ জন।

ঢাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছিল, তার চেয়ে এখন পরিস্থিতি খারাপ। যেমন পুলিশের তালিকার বাইরে ঢাকায় আরও অন্তত ১৪টি কিশোর গ্যাংয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে।

ডিএমপি সূত্র বলছে, ২০২৩ সালে রাজধানীতে যত খুন হয়েছে তার ২৫টির কিশোর গ্যাং সংশ্লিষ্ট।

বাহিনীগুলো শুধু অপরাধই করে না, আধিপত্য বজায় রাখতে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়ায়। ডিএমপি সূত্র বলছে, ২০২৩ সালে রাজধানীতে যত খুন হয়েছে তার ২৫টির কিশোর গ্যাং সংশ্লিষ্ট।

কিশোর গ্যাং নতুন করে আলোচনায় এসেছে ৯ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে একটি খুনের ঘটনায়। ওই দিন ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করার জেরে নীরব হোসেন (১৭) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে খুন করেন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর চর থেকে মিলন হোসেন (২৭) নামের যুবকের ৯ টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হন জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এস কে সজীব। পুলিশ বলছে, তিনি একটি কিশোর গ্যাংয়ের নেতা।

ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় একসময় শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন। এখন ক্ষমতাসীন দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো কোনো নেতার নাম আসছে। অপরাধী বাহিনীর রাজনৈতিক সংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান ৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা কিশোর গ্যাংয়ের নামে অপরাধ কার্যক্রম চালায়, তাদেরকে আমরা সন্ত্রাসী বলব। সন্ত্রাসীদের কোনো নির্দিষ্ট দল নেই।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীরা যে–ই হোক না কেন, আমরা তাদের শক্ত হাতে দমন করছি, ভবিষ্যতেও করব।’

অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাহিনীগুলো একদিনে গড়ে ওঠেনি। রাজনীতিবিদদের প্রশ্রয় ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এসব বাহিনী এখন ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। রাজধানীতে, বড় শহরে মানুষের নিরাপদ বসবাসের ক্ষেত্রে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে এসব বাহিনী।

আওয়ামী লীগের ৩ মেয়াদে পুলিশে ৮৩৫৭৭ পদ সৃষ্টি: সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের জনবল পর্যাপ্ত না থাকার কারণে সরকারের গত তিন মেয়াদে ৮৩ হাজার ৫৭৭টি পদ বাড়ানো হয়েছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, পুলিশ জনসংখ্যার অনুপাত আগের তুলনায় কমেছে। বিভিন্ন দেশ ও মানদন্ডের তুলনায় পুলিশের জনবল বাড়ানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সোমবার সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তরে নোয়াখালী-৩ আসনের সরকার দলীয় এমপি মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এসব কথা জানান। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে পুলিশের মোট মঞ্জুরীকৃত জনবল ২ লাখ ১৪ হাজার ১৭৬টি (পুলিশ পদ ২ লাখ ৩হাজার ৩৬৭টি এবং নন-পুলিশ পদ ১০৮০৯টি) । আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের জনবল পর্যাপ্ত না থাকায় বর্তমান সরকার বিগত তিন মেয়াদে ৮৩ হাজার ৫৭৭টি পদ বৃদ্ধি করেছে।

৯ হাজার ৩৭০ বাংলাদেশি বিদেশের কারগারে: সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সমকাল

৯ হাজার ৩৭০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক/প্রবাসী বিদেশের কারাগারে আটক রয়েছেন বলে সংসদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি জানান, এসব বন্দিরা ২৭টি দেশের কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবের কারাগারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭৪৬ জন আটক রয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তুরস্কের কারাগারে বন্দি রয়েছেন ৫০৮ জন।

আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ, অব্যাহতি পেলেন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিসহ আটজন

২০ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান ওরফে মুনিয়া হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত। এর ফলে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ অন্যরা।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮–এর বিচারক শওকত আলী আজ বুধবার চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেন। ওই ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক (পিপি) প্রসিকিউটর রেজাউল করিম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকে কেএনএফের হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুট

০৩ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

বান্দরবানের রুমায় নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা ও ১৪টি অস্ত্র লুট করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটে। রাত পৌনে ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে পাওয়া যায়নি।

 সোনালী ব্যাংক বান্দরবান অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মোহাম্মদ ওসমান গণি আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সোনালী ব্যাংক রুমা শাখায় ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা নিয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। রুমা শাখায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা থাকার কথা। সেগুলো ভল্ট ভেঙে নিয়ে গেছে। এই ঘটনার পর এ অঞ্চলের ব্যাংকের সব শাখায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

 

রুমার পর এবার বান্দরবানের থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি

০৩ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

বান্দরবানের রুমার পর এবার থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি হয়েছে।

আজ বুধবার বেলা একটার দিকে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অং প্রু ম্রো প্রথম আলোকে বলেন, বেলা একটার দিকে থানচি সদরের  শাহজাহানপুরের দিক থেকে তিনটি চাঁদের গাড়িতে করে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে বাজার এলাকায় প্রবেশ করে। এরপর থানচি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে নগদ টাকা যা পেয়েছে তা নিয়ে চলে যায়। এরপর তারা আবার ওই তিন গাড়িতে করে শাহজাহানপুরের দিকে চলে।

রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সোনালী ব্যাংকের থানচি শাখায় হামলার খবর পেয়েছি। পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেছে। তারা কাজ করছে। 

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে  বান্দরবানের রুমায় নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা ও ১৪টি অস্ত্র লুট করেছে বলে খবর পাওয়া যায়।

১৭ ঘণ্টায় দুই ব্যাংকের তিন শাখায় অস্ত্রধারীদের হামলা

০৪ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

বান্দরবানের দুই উপজেলা রুমা ও থানচিতে ১৭ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা করল অস্ত্রধারীরা। রুমায় তারা অস্ত্রের মুখে মানুষকে জিম্মি করে এবং থানচিতে বাজারে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে।

রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে হামলা করেও অস্ত্রধারীরা কোনো টাকা নিতে পারেনি। তবে বুধবার দুপুর একটার দিকে থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় হামলা করে তারা সাড়ে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে যায়।

হামলাকারীরা রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) নিজামুদ্দিনকে জিম্মি করে নিয়ে গেছে। পাশাপাশি তারা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করেছে। মানুষের মুঠোফোনও নিয়ে গেছে তারা।

রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির সঙ্গে নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা জড়িত বলে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, থানচিতে হামলার সঙ্গেও একই গোষ্ঠী জড়িত।

‘শান্তি আলোচনা’র মধ্যে চরমপন্থায় কেএনএফ

০৪ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। বছর দুয়েক আগে পার্বত্য এলাকায় তারা নানা তৎপরতা শুরু করে। চাঁদার দাবিতে অনেককে জিম্মিও করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যদের অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণও দেয় তারা।

গত বছর গহিন জঙ্গলে কেএনএফের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদের এবং শারক্কীয়ার বেশ কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সঙ্গে গত ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেলপাড়ায়। কিন্তু শান্তি আলোচনা চলার মাঝপথে কেএনএফ হঠাৎ কেন চরমপন্থা বেছে নিল– তা নিয়ে চলছে জল্পনা। তাদের এ কার্যক্রমের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে শান্তি আলোচনার উদ্যোগও। রাঙামাটি ও বান্দরবানের ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য গঠনের ঘোষণা দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল এ সংগঠনের। এর পর থেকে নানা ইস্যুতে অশান্ত হচ্ছে বান্দরবান।

কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আগামীকাল ৫ এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল আরেকটি বৈঠক। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার নেতৃত্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে ২০২৩ সালের জুন মাসে ১৮ সদস্যের শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। এর পর থেকে দফায় দফায় দু’পক্ষের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সরাসরি বৈঠকে চারটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দ্বিতীয় বৈঠকে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে শান্তির পথে এগোচ্ছিল সবাই। তবে হঠাৎ অবস্থান পাল্টে চরমপন্থা বেছে নিল কেএনএফ।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডাকাতি চেষ্টা, ৩০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ

০৪ এপ্রিল ২০২৪, সমকাল

বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মালামাল নিয়ে পালানোর সময় আটকাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন কেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মীরা। এ সময় ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যসহ কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৫ জন আহত হন। পরে ৩০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্তর-পশ্চিমে (মেটেরিয়াল ইয়ার্ড) ৩ নম্বর টাওয়ার (ডিউটি পোস্ট) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- এসএসএসএলের নিরাপত্তা সুপারভাইজার আকরাম (৫৫), সাইদুল ইসলাম (৩৭), মিন্টু বৈরাগী (৪০) ব্রজেন মন্ডল (৩০) ও আনসার ব্যাটালিয়নের হাবিলদার কামাল পাশা (৩৮)। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়। পরে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গুরুত্বর আহত ব্রজেন মন্ডল ও আনসার সদস্য কামাল পাশাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫২ জন কারাগারে

০৯ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর শুরু হওয়া সমন্বিত অভিযানে গ্রেপ্তার ৫২ জনকে আজ মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এর আগে গ্রেপ্তার দুজনকেও আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। অভিযানে এই পর্যন্ত ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার হয়েছে।

২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপক অপহরণ, টাকা লুট ও পুলিশ-আনসারের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক উদ্ধার হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ও টাকা উদ্ধার করা যায়নি। নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফ এ সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। এ ঘটনায় রুমা ও থানচি থানায় ছয়টি মামলা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও টাকা উদ্ধারের অভিযানে অংশ নিচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। অভিযান সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী।

রুমা-থানচিতে ৫ কেজির বেশি চাল বহনে বাধা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

১০ এপ্রিল ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও চিম্বুক পাহাড়ের বাসিন্দাদের পাঁচ কেজির বেশি চাল পরিবহনে বাধা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ৫ কেজির বেশি চাল পরিবহনের ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতি নিতে বলা হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, এটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানের অংশ। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের‌ খাদ্য ও অর্থ যোগান বন্ধ করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

থানচি উপজেলার স্থানীয় মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ কেজির বেশি চাল নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ চেকপোস্টে আটকে দোকানে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ত্রিপুরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল বাসায় চাল শেষ হয়ে গেছে। তাই বাজার থেকে চাল কিনে বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা আমাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করেন এত চাল কেন। বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি বলার পর তারা জানান কেউ পাঁচ কেজির বেশি চাল বহন করতে পারবে না। থানায় গিয়ে আগে ওসির অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।’

উপজেলার নারিকেল ও আপ্রু মং পাড়া নিবাসী দুই মারমা বলেন, ‘বাজারে গিয়ে বিশ কেজি চালের বস্তা কিনে নিয়ে আসছিলাম। পথে পুলিশ ও আনসার বাহিনীরা বাধা দেয়, বলে এত চাল নিয়ে যেতে পারব না। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, উপরের নির্দেশ। ওসির অনুমতি নিতে হবে। নিরুপায় হয়ে চালের বস্তা আবার দোকানে ফেরত দিয়ে আসি।’

একই অবস্থায় চলছে চিম্বুক পাহাড়েও। পাহাড়ের এম্পো পাড়া, বাগানপাড়া, ১৮ মাইল চিম্বুক পাড়া এলাকার বাসিন্দারা বান্দরবান সদর থেকে চাল কিনে নিয়ে যাওয়ার পথে মিলনছড়ি এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে তাদের আটকে দেওয়া হয় এবং চাল ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

বান্দরবান চিম্বুক রোডে থ্রি-হুইলার যান চালক মো. আরিফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল ৩-৪ জনের চালের বস্তা নিয়ে ভাড়ায় যাচ্ছিলাম। মিলনছড়ি এলাকার পুলিশ চেকপোস্টে আটকে দিয়ে চাল বান্দরবান ফেরত পাঠাতে বলে। ম্রোদের উদ্দেশে পুলিশ বলেছে, কেউ পাঁচ কেজির বেশি চাল বহন করতে পারবে না।’

চিম্বুক পাহাড়ের ক্রামাদি পাড়ার বাসিন্দা সিংপাত ম্রো ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে আমাদের সাধারণ জনগণের ওপর এভাবে অমানবিক হওয়াটা কখনো কাম্য নয়। চিম্বুক পাহাড়ে এমনিতেই পানির সংকট। তার মধ্যে আবার চাল বহনে বাধা। এত সংকটে ফেলে দিলে মানুষ যাবে কোথায়।’

কেএনএফ কেন পার্বত্য চুক্তি ও জেএসএস বিদ্বেষী

১৩ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

কেএনএফ শুরুতে পাহাড়ে নতুন রাজ্যের দাবি থেকে সরে এসে এখন কেটিসির মতো স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান চায়। এমন মৌলিক একাধিক দাবির ক্ষেত্রে পরিবর্তন হলেও একটি বিষয়ে তাদের অবস্থানের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি, তাহলো জেএসএস এবং আঞ্চলিক পরিষদ বিরোধিতা। পাহাড়ের প্রথম রাজনৈতিক দল জেএসএসের প্রতি তাদের বিদ্বেষ আগে যেমন ছিল এখনও তেমন আছে। সেই সঙ্গে আছে আঞ্চলিক পরিষদ ও চাকমা বিদ্বেষ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে বিশেষ দুই প্রতিষ্ঠান আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন জেলা পরিষদ গঠিত হয়। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই দুই প্রতিষ্ঠান বিশেষ বলে মনে করেন স্থানীয় সরকারের বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু পার্বত্য চুক্তির সম্পাদন প্রক্রিয়া সহজে হয়নি। দেশের মধ্যেই এর প্রবল বিরোধিতায় নামে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

এর ফলে পাহাড় হাতছাড়া হয়ে যাবে বলেও ভয় দেখায় ওই দলগুলো। পুনর্বাসিত বাঙালিদের অনেকে চুক্তির বিরোধিতা করে। পাহাড়িদের একটি অংশ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নাম দিয়ে চুক্তির বিরোধিতা করে এবং ‘পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের’ দাবি করে। এসব বিরোধিতার পরও চুক্তি হয়। চুক্তির পর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলেও সেই চুক্তি কিন্তু বাতিল করেনি।

তিন পার্বত্য জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী ঐতিহ্যবাহী প্রশাসনিক পদ হলো চিফশিপ এবং হেডম্যান। এদের বেশির ভাগই চাকমা, নয়তো মারমা সম্প্রদায়ের। ইউনিয়ন, উপজেলা এবং ব্যবসা, এনজিও, প্রশাসনিক সব পদে হয় চাকমা, নয় মারমা জনগোষ্ঠীর লোকজনের প্রাধান্য। এ নিয়ে চাকমা ও মারমা ছাড়া অন্য গোষ্ঠীগুলোর কিছুটা ক্ষোভও আছে।

কিন্তু আজ পর্যন্ত তিন জেলা পরিষদের কোনো নির্বাচন হয়নি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের লোক জেলা পরিষদে বসে। আর জেলা পরিষদের নির্বাচন না হওয়ায় আঞ্চলিক পরিষদেরও নির্বাচন হয়নি। চুক্তির ফসল এই আঞ্চলিক পরিষদকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। চুক্তির পর ভূমি, নিজস্ব পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর কোনো সুরাহা হয়নি।

চুক্তি বাস্তবায়নে কমিটির সভা স্থানীয় বাঙালি সংগঠনগুলোর প্রবল বিরোধিতায় একাধিকবার বানচাল হয়ে যায়। তাদের পেছনে বড় শক্তির আশীর্বাদ আছে বলে অভিযোগ করেছেন পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা। তিনি একাধিকবার চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের অনীহার কথা বলেছেন। সরকারের কোনো অংশ ভেতরে-ভেতরে চুক্তির বিরোধিতায় সক্রিয়—এমন অভিযোগও আছে তাঁর।

আঞ্চলিক পরিষদ, জেএসএস এবং চাকমা জাতিসত্তাকে সমান্তরাল বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার কেএনএফ হয়তো প্রকাশ্যে করেছে। কিন্তু এমন বিদ্বেষ পাহাড়ে নতুন নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মধ্যে চাকমারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে তারা এগিয়েও।

তিন পার্বত্য জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী ঐতিহ্যবাহী প্রশাসনিক পদ হলো চিফশিপ এবং হেডম্যান। এদের বেশির ভাগই চাকমা, নয়তো মারমা সম্প্রদায়ের। এ জন্য পাহাড়ে বাঙালি বাদে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং ব্যবসা, এনজিও, প্রশাসনিক সব পদে হয় চাকমা, নয় মারমা জনগোষ্ঠীর লোকজনের প্রাধান্য। এ নিয়ে চাকমা ও মারমা ছাড়া অন্য গোষ্ঠীগুলোর কিছুটা ক্ষোভও আছে। তবে পাহাড়ের দুই দশকের আন্দোলন শুধু চাকমাদের ছিল না, সেখানে পাহাড়ের সব জাতিগোষ্ঠীরই অংশগ্রহণ ছিল।

জারলাম বম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেএসএসের প্রতি পাহাড়ের ১১টি জাতিসত্তারই সমর্থন ছিল।’

যদিও সেই সময় সংখ্যায় কম কিছু জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে জেএসএস-বিরোধিতা ছিল। যেমন ম্রোদের মধ্যে ‘গরম বাহিনী’ নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্ম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সংখ্যায় ছিল নগণ্য। এই বাহিনীর জন্ম হয়েছিল বান্দরবানে, আজ যেখানে বেশি সক্রিয় কেএনএফ। এমন সশস্ত্র গোষ্ঠী গঠিত হয় ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়। ওই সময় বান্দরবানের একটি বড় অংশজুড়ে ‘মগ পার্টি’ নামের একদল সশস্ত্র যুবকের আবির্ভাব ঘটে।

মূলত নির্বাচনের কাজে ব্যবহারের জন্য শাসক দলের বড় কোনো নেতা তাদের একজোট করেছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে বান্দরবানের সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর মগ পার্টির পেছনে কোনো ইন্ধনের অভিযোগ একাধিকবার এ প্রতিবেদকের কাছে অস্বীকার করেছেন।

যাহোক, নির্বাচনের পরপর মগ পার্টির চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে বান্দরবান এবং এর লাগোয়া রাঙামাটির রাজস্থলীর মানুষ। তবে একপর্যায়ে এসব তাণ্ডব বন্ধ হয়। ঘটনাক্রমে মগ পার্টির আক্রমণের লক্ষ্য ছিল জেএসএস-সমর্থক পাহাড়ি মানুষ।

পাহাড়ে আরও ‘শান্তি প্রস্তাব’

হঠাৎ করেই ২০২২ সালের জুন মাসে পাহাড়ে চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ ‘সরকারের কাছে’ একটি ‘শান্তি প্রস্তাব’ উপস্থাপন করে। গত ৯ জুন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ২ নম্বর চেঙ্গী ইউনিয়নের বড়কলক এলাকায় এক অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা এ দাবিনামা হস্তান্তর করেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক মেজরের কাছে।

এই কথিত শান্তি প্রস্তাব এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। কারণ, ইউপিডিএফ কোনো সশস্ত্র আন্দোলনে ছিল না। তাদের নেতা প্রসিত বিকাশ খীসাসহ একাধিক নেতা জাতীয় নির্বাচনগুলোতেও অংশ নিয়েছেন একাধিকবার। তাই সরকারের বাইরের একজন ব্যক্তির কাছে এমন শান্তি প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি আলোচনার সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমও এ নিয়ে প্রতিবেদন করে। জেএসএস এই তৎপরতা প্রত্যাখ্যান করে। পাহাড়ের অনেকের কাছেই বিষয়টি ছিল অদ্ভুত। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য চাইলেও তিনি এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। এ নিয়ে কয়েক দিনের আলোচনার পর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ পাহাড়িরা পার্বত্য চুক্তির যেমন পক্ষে, আবার আঞ্চলিক পরিষদসহ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও তাদের আস্থা কম নয়। এমন পরিস্থিতিতে ‘চাকমা’ কর্তৃত্বের অভিযোগ তুলে কেএনএফ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে

পার্বত্য চুক্তি প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা?

কখনো মগ পার্টি, কখনো শান্তি প্রস্তাব আবার শেষে কেএনএফের কেটিসি—পাহাড়ি এবং পাহাড় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বাঙালিদের অনেকেরই কথা, মূলত পার্বত্য চুক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। তাঁরা মনে করছেন, পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে দুই দশকের সশস্ত্র সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু এ চুক্তির মূলধারাগুলো এখনো অবাস্তবায়িত থাকার জন্য নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং অনেক পক্ষ নানা সুযোগ গ্রহণ করছে।

পাহাড়ের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নারীনেত্রী নিরূপা দেওয়ান বলছিলেন, ‘কেএনএফের তৎপরতা দেখে একটি শিশুও বুঝতে পারবে এর পেছনে আসলে কী বা কারা আছে। পার্বত্য চুক্তির মূল চেতনাকে নস্যাৎ করে দেওয়াই এসব গোষ্ঠীর মূল কাজ। আর পেছন থেকে তাদের তৎপরতায় সায় দিচ্ছে বড় কোনো স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। এসব পাহাড়ে নতুন নয়। কিন্তু সরকারের কখনোই উচিত হবে না তাদের মদদ দেওয়া।’

মধুখালীতে মন্দিরে প্রতিমায় আগুন, সন্দেহে পিটুনিতে দুজনের মৃত্যু

১৯ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় একটি মন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে জড়িত সন্দেহে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিককে মারধর করেছেন স্থানীয় লোকজন। তাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা দুজন সহোদর।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিবাগত রাত ১টার দিকে একজন এবং রাত আড়াইটার দিকে আরেক শ্রমিক মারা যান।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পঞ্চপল্লি গ্রামের মন্দিরে প্রতিমার শাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। মন্দিরের পাশেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। এ ঘটনাটি ওই শ্রমিকদের দ্বারা সংঘটিত হতে পারে এমন ধারণার বশবর্তী হয়েই এ হামলার ঘটনা ঘটে।

 পররাষ্ট্র বিষয়ক

টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের নয়, দাবি ভারতের

ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৪, বণিক বার্তা

টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশে নয়, বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বলে দাবি করেছে দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। গত ২ জানুয়ারি নিজেদের জিওগ্র্যাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই পণ্য হিসেবেও এ শাড়িকে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে জিআই পণ্য। তাই কোনো একটি পণ্যকে এর তালিকাভুক্ত করতে মুখিয়ে থাকে দেশগুলো। কিন্তু জটিলতা বাঁধে যখন একই পণ্যকে একাধিক দেশ নিজেদের বলে দাবি করে। এমনটাই ঘটেছে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে।

ভারতের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত বৃহস্পতিবার করা এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘‌টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত। এটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রঙ এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। এটি এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন।’

গবেষকদের মতে, টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশে। এর নামের মধ্য দিয়েই তা উঠে এসেছে। ইতিহাসও টাঙ্গাইল শাড়িকে বাংলাদেশের বলে সাক্ষী দেয়। সে বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যেকোনো স্থানের ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে সেখানকার সাংস্কৃতিক ইতিহাস গড়ে ওঠে। টাঙ্গাইল শাড়ির ইতিহাসটিও তাই। বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় টাঙ্গাইলের ছেলেরা পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে লুঙ্গি-গামছা। এ অঞ্চলের মেয়েরা পরিধান করে শাড়ি, যা টাঙ্গাইল শাড়ি হিসেবে পরিচিত হয়েছে। টাঙ্গাইল অঞ্চলটি যখন থেকে গড়ে ওঠে তখন থেকেই এ শাড়ি তৈরি শুরু হয়। এ শাড়ির নাম থেকেই এর উৎপত্তি বোঝা যায়।’

বাংলাদেশের বেশকিছু পণ্যের জনপ্রিয়তা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে জায়গা করে নিয়েছে বিদেশের মাটিতে। বিশেষ করে অবস্থানের কারণে পেয়েছে জিআই স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি থাকা পণ্যটি দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজারেও আধিপত্য করে বেড়ায়। অন্যদিকে, সফট পাওয়ার (প্রভাব বিস্তারক) হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে। বাণিজ্যিক সুবিধা পাওয়া তখন সহজ হয়।

দেশে ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। ডব্লিউআইপিও নিয়ম মেনে পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে সরকারের এ বিভাগটি।

এ বিষয়ে ডিপিডিটির সহকারী পরিচালক মো. বেলাল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় জিআই পণ্য এগিয়ে থাকে। এর দাম ২০ শতাংশ কখনোবা এরও বেশি হয়। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর পণ্যগুলো আগের চেয়ে অধিক পরিমাণে রফতানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।’

মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে বাংলাদেশীসহ নিহত ২

ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪, বণিক বার্তা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে এক বাংলাদেশীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। নিহত দুজনের একজন বাংলাদেশী নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি)  বেলা পৌনে তিনটার দিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মর্টারশেলটি এসে পড়ে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া বণিক বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত নারী জলপাইতলী গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা (৫৫)। নিহত রোহিঙ্গার নাম নবী হোসেন (৬৫)। তিনি বালুখালী আশ্রয়শিবিরের ৮-ই ব্লকের বাসিন্দা। তিনি হোসনে আরার বাড়িতে ধানখেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে এসেছিলেন। এ ঘটনায় আরো এক শিশু আহত হয়েছে। শিশুটি নিহত হোসনে আরার নাতি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত হোসনে আরা জলপাইতলীর বাদশা মিয়ার স্ত্রী। অন্য দিনের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নবী হোসেন নামের এক রোহিঙ্গা বাদশা মিয়ার কৃষি জমিতে কাজ করতে আসে। দুপুরে হোসনে আরাসহ নবী হোসেন জলপাইতলীর বাদশার দোকানে ভাত খাচ্ছিলেন। এ সময় মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া মর্টারশেল তাদের ওপর এসে পড়ে ও বিস্ফোরিত হয়।

ভারতীয় ঋণের শর্তে পরিবর্তন চায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানই

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪, বণিক বার্তা

ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় নেয়া ঋণে দেশের ১২ জেলায় হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করছে সরকার। এলওসি ঋণের শর্তে প্রকল্পে ঠিকাদার-পরামর্শক হিসেবে কোনো ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলা রয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে এতে ব্যবহৃত মালামালের ৭৫ শতাংশ আনতে হবে ভারত থেকে। তবে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে হাই-টেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য এ শর্ত কিছুটা শিথিল করে ৬৫ শতাংশে নামাতে সম্মত হয়েছে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটিতে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো (এলঅ্যান্ডটি)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ না করে এসব মালামাল ভারত থেকে আনতে গেলে খরচ ও সময়—দুটোই ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঋণের শর্ত পরিবর্তন বা আরো শিথিল করে বাংলাদেশ থেকেই অধিকাংশ মালামাল সংগ্রহ করতে দেয়া প্রয়োজন।

প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায় ২০১৭ সালে। এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। সময় বাড়তে বাড়তে এরই মধ্যে তিন বছরের প্রকল্প গড়িয়েছে সাত বছরে। অগ্রগতি হয়েছে ১৫ শতাংশ। যদিও এরই মধ্যে প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণের অর্থ পরিশোধ শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় সংশোধন করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। এতে ব্যয় বাড়ছে ১২৭ শতাংশ। মোট প্রকল্প ব্যয় অনুমোদিত ১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা থেকে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে ৪ হাজার ১৯৭ কোটি টাকায়। এটি বারবার পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে প্রধানত প্রকল্পে ব্যবহার্য মালামালের উৎস নিয়ে বিতর্ককে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য থাকলেও দুই দেশ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আগামী রোববার ঢাকায় আসছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গত অক্টোবরে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছিল নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্তরে দুই দেশের মধ্যে সফর বিনিময় শুরু হবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরটি হচ্ছে।

সীমান্ত হত্যা শূন্যে আনতে যৌথ টহল জোরদার

১০ মার্চ ২০২৪, সমকাল

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গুলিতে যেন কাউকে প্রাণ হারাতে না হয়, সে জন্য যৌথ টহল জোরদারে ঐকমত্য হয়েছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। গতকাল শনিবার ঢাকার পিলখানায় মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শেষে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে উভয় পক্ষ।

পাঁচ দিনের সম্মেলনের শেষ দিন গতকাল সকালে পিলখানার শহীদ আশরাফ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, গত ২২ জানুয়ারি বিএসএফের গুলিতে যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে বিজিবি সদস্য রইশুদ্দিনের মৃত্যু কোনো টার্গেট কিলিং ছিল না। ওই দিন অন্ধকার ও কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। দুই পক্ষের মধ্যেই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে কূটনৈতিক ও আইনি লড়াইয়ে বাংলাদেশ

১৪ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। পাশাপাশি ভারতের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আইনি লড়াইয়ের জন্যও তৈরি হচ্ছে।

ভারতের শিল্প মন্ত্রণালয় গত ২ জানুয়ারি ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’ বা ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’ নামে একটি শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই উদ্যোগ বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। টাঙ্গাইল শাড়ির ব্যবসায়ীসহ জিআই বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞ, অধিকারকর্মীরা বলছেন, টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। ভারতে ‘টাঙ্গাইল’ নামে কোনো এলাকা নেই। তাই ভারতের উদ্যোগ অন্যায্য।

নওগাঁ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

২৬ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো

নওগাঁর পোরশা সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আল আমিন (৩২) নামের এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ভোরে পোরশা উপজেলার নিতপুর সীমান্তচৌকির (বিওপি) অদূরে মিলমারি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৬ ব্যাটালিয়নের (নওগাঁ) অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহম্মদ সাদিকুর রহমান এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নিহত আল আমিন উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের নিতপুর কলোনীপাড়া গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় আল আমিন আরও কয়েকজনের সঙ্গে নিতপুর সীমান্ত এলাকার ২৩২ নম্বর প্রধান স্তম্ভের পাশ দিয়ে ভারতের ভেতর যান। গরু নিয়ে নিতপুর সীমান্তের মিলমারি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার সময় আজ ভোর সাড়ে চারটার দিকে ভারতের মালদহ জেলার বিএসএফ ১৫৯ ব্যাটালিয়নের আগ্রাবাদ ক্যাম্পের জওয়ানরা তাঁদের ধাওয়া করেন। এ সময় অন্যরা পালিয়ে আসতে পারলেও আল আমিন গুলিবিদ্ধ হন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে ভারতে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে বিএসএফের সদস্যরা আল আমিনের মরদেহ নিয়ে যান।

পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

২৬ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি এক তরুণ নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার ভোরে পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালঙ্গিহাট সীমান্তে ভারতের ভেতরে ডোরাডাবরী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণের নাম আবুল কালাম (২৪)। তিনি শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া (ইসলামপুর) গ্রামের মৃত অফির উদ্দিনের ছেলে।

স্বজন ও স্থানীয় থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালঙ্গির (পকেট) গ্রাম সীমান্তের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব-পিলারের পাশ দিয়ে আবুল কালামসহ কয়েকজন বাংলাদেশি গরুসহ বিভিন্ন মালামাল আনতে গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভারতের জামালদহ থানার ডোরাডাবরী গ্রামে যান। আজ ভোরে ফেরার সময় ভারতের কোচবিহার জেলার ১৬৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ডোরাডাবরী বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যদের মুখোমুখি হন তাঁরা। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়েন। এতে আবুল কালাম গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে বিএসএফ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে সরে গেলে আবুল কালামের সঙ্গীরা তাঁর লাশ সেখান থেকে নিয়ে গ্রামে ফেরেন। খবর পেয়ে পাটগ্রাম থানা-পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে ৬১ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের ঝালঙ্গি কাম্পের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. শাহীনুর রহমান বলেন, নিহত তরুণের বুকের ডান পাশে গুলির চিহ্ন আছে। দেখে মনে হয়েছে, বুকে ভেদ করে গুলি বাইরে বের হয়ে গেছে।

বিবিধ

ঝুঁকিতে পিছিয়ে থাকা ১৫ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষাও

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, প্রথম আলো

শেরপুর জেলা সদরের গৃদ্দাদা নারায়ণপুর গ্রামে হুদি জাতিগোষ্ঠীর ১২টি পরিবার আছে। এ জাতিগোষ্ঠীর কেউই তাঁদের ভাষায় কথা বলতে পারেন না। এ তথ্য জানিয়ে এ জাতিসত্তার সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস বলছিলেন, ‘আমি তো পারি না, আমার সন্তানেরাও পারে না। অভাবের কারণে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারি না, সেখানে ভাষা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ কই?’

বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে হুদি একটি। হুদিদের নিজস্ব হিসাবে, তাদের সংখ্যা ২০ হাজারের কাছাকাছি। হুদিদের মতো অনেক জাতিসত্তা আছে, যারা ভাষাকে হারিয়ে ফেলেছে। ভাষা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস (সিল) বাংলাদেশের এমন ১৫টি ভাষার বিপন্নতার চিত্র তুলে ধরেছে। সংস্থাটি বলছে, এসব জাতিসত্তার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থান দুর্বল, আবার তাদের ভাষার অবস্থাও ঝুঁকির মধ্যে।

কেন এই গবেষণা

সিল প্রায় তিন বছর ধরে ১৫ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে গুণগত ও পরিমাণগত গবেষণা করছে। এসব জাতিগোষ্ঠী হলো কন্দ, গঞ্জু, বানাই, বাড়াইক, বাগদি, ভূমিজ, খাড়িয়া, মালো, মুসহর, তেলি, তুরি, রাজোয়ার, হুদি, পাত্র ও ভুঁইমালী।

সিলের এদেশীয় পরিচালক কর্নেলিয়াস টুডু বলেন, ‘আমরা যেসব জাতিগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে কাজ করেছি, তারা খুব কম পরিচিত। তাদের আরও দৃশ্যমান করা আমাদের কাজের উদ্দেশ্য ছিল। ভাষার বিপন্নতা তুলে ধরার উদ্দেশ্য হলো, তাদের সংরক্ষণে নিজেরা কাজ করা বা অন্যদের উৎসাহিত করা। আমরা দেখেছি, যে জাতিগোষ্ঠীর অবস্থা যত বিপন্ন, তাদের ভাষাও ততটাই বিপন্ন।’

ভাষার বিপন্নতা

ভাষার অবস্থা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন মানদণ্ড রয়েছে। তার মধ্যে সিল বেছে নিয়েছে এক্সপেন্ডেড গ্রেডেড ইন্টারজেনারেশনাল ডিসরাপশন স্কেলকে (ইগিড্স)। এই মানদণ্ড অনুযায়ী, ভাষার অবস্থা বোঝার ১০টি স্তর রয়েছে। প্রথম থেকে তৃতীয় স্তরে যেসব ভাষা থাকে, সেগুলোর অবস্থা অপেক্ষাকৃত ‘ভালো’। এসব ভাষা জাতীয় বা আঞ্চলিক পর্যায়ে ব্যবহৃত। চতুর্থ ও পঞ্চম স্তরে আছে সেসব ভাষা, যেগুলো শিক্ষায় ব্যবহৃত হয় এবং সাহিত্য আছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম স্তর অনেকটা ঝুঁকির। ইগিড্‌সের নবম ও দশম স্তরে থাকা ভাষা বিলুপ্ত বা মৃত।

সিলের গবেষণা অনুযায়ী, মালো, বাড়াইক ও গঞ্জু সম্প্রদায়ের লোকেরা মৌখিকভাবে ‘সাদরি’ ভাষা ব্যবহার করে থাকে, তবে সাদরি ভাষার কোনো লিখিত প্রচলন তাদের মধ্যে নেই। তেলি সম্প্রদায়ের ভাষা ‘নাগরি’, তুরি সম্প্রদায়ের ‘খট্টা’, মুসহর সম্প্রদায়ের ‘দেশওয়ালি’ ও ‘নাগরি’, কন্দ সম্প্রদায়ের কুই ও উড়িয়া ভাষা এবং ভূমিজ সম্প্রদায়ের ভূমিজ ভাষা হুমকির সম্মুখীন।

পাত্র সম্প্রদায়ের ‘লালেংথার’ ভাষা এবং বানাই সম্প্রদায়ের ‘বানাই’ ভাষা হুমকির মুখে থাকলেও এ ভাষার লোকেরা নিজেরা যোগাযোগের মাধ্যমে এর ব্যবহার করে। অষ্টম স্তরে আছে রাজোয়ার সম্প্রদায়ের ‘খট্টালি’ আর খাড়িয়া সম্প্রদায়ের ‘ফার্সি’ ভাষা। দশম স্তর; অর্থাৎ বিলুপ্ত বা মৃতপ্রায় ভাষার অন্তর্ভুক্ত হলো বাগদি, হুদি ও ভুঁইমালী। এই সম্প্রদায়গুলোর ভাষার মৌখিক প্রচলন নেই, লিখিত তথ্যও পাওয়া যায়নি।

তারবিহীন ব্রডব্যান্ড সেবা দেওয়ার অনুমতি পেল মোবাইল অপারেটররা

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশের টেলিকম অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস (এফডাব্লিউএ) দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এতে তাদের গ্রাহকরা তার ছাড়াই ওয়াইফাই সংযোগ পাবেন।

এই উদ্যোগটি হয়তো দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ে পরিবর্তন আনবে। কারণ এতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারী (আইএসপি) ও টেলিকম অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে এবং গ্রাহকদের সামনে বিকল্প সুযোগ তৈরি হবে।

নতুন ফাইভ-জি নির্দেশিকা কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এফডাব্লিউএ পরিষেবা অনুমোদনসহ অপারেটররা ওয়ারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাসাবাড়ি ও ব্যবসার মতো নির্দিষ্ট স্থানে দ্রুত-গতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবে।

এটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার পরিসর আরও বাড়াবে, বিশেষ করে যেসব এলাকাতে তার দিয়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার সুযোগ সীমিত।

তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করতে এফডাব্লিউএ সাধারণত ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের উচ্চ-গতির ক্ষমতা ব্যবহার করে।

তবে শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশের টেলিকম অপারেটরগুলো এখনো বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি চালু করতে অনিচ্ছুক হওয়ায় এই সেবা সম্প্রসারণে সময় লাগবে।

জাতিবর্ণের করাল গ্রাস

০৩ মার্চ ২০২৪, সমকাল

ঘটনাটি ২০২৩ সালের ১ অক্টোবরের। কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে জীবন বাসফোর (১৬) নামের এক শিক্ষার্থী রংপুরের কাচারী বাজারের মৌবন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে নাশতা করার জন্য যায়। হোটেলের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বুঝতে পেরে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন তাদের। সঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেন একটি চিরকুট। এতে প্রতিষ্ঠানের প্যাডে লেখা– ‘হোটেলে হরিজনদের প্রবেশ নিষেধ’। এর প্রতিবাদে পরদিন মানববন্ধন করা হয়। তিন দিন পর পুলিশ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় হোটেলের কর্মচারীরা শিক্ষার্থী জীবন বাসফোরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে সুরাহা করে।

শিক্ষার্থী জীবন বাসফোরের ঘটনা প্রকাশ পেলেও প্রতিদিনকার বহু ঘটনা  পড়ে যায়। রংপুর শহরের অধিকাংশ হোটেলে বসার সুযোগ পায় না হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। নগরীর সেন্ট্রাল রোডে ফাল্গুনী হোটেল থেকে কৌটায় করে চা নেন জয়া বাসফোর। অগ্রণী ব্যাংকের নিচে দুই সন্তানসহ সেই চা ভাগ করে রুটি দিয়ে পান করেন। হোটেলে বসে খাওয়ার অধিকার নেই তাদের। এভাবেই হোটেল থেকে পার্সেল করে নিয়ে খেতে তারা অভ্যস্ত। এই জীবনকে মেনে নিয়ে চলছে রংপুরের হরিজন সম্প্রদায়ের প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

জয়া বাসফোর প্রতিবেদককে বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবা-মাকে দেখেছি হোটেল থেকে এইভাবে খাবার নিতে। আমিও এইভাবে খাবার নিই, আমার সন্তানরাও এইভাবে খাবার নেবে। আমাদের হোটেলে বসতে দেওয়া হয় না। তাহলে আপনাদের জাতের মানুষরা হোটেলে বসবে না।’

জয়ার দীর্ঘশ্বাস যেন টেনে নিয়ে যায় কোনো এক অচ্ছুত পাড়ায় কিংবা শরৎচন্দ্রের কোনো উপন্যাসে। যেখানে জাতপাতের নাম করে পিছিয়ে রয়েছে মানবসভ্যতা। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও এ দেশের হরিজন সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষের মতো রংপুরের প্রায় ৭০০ পরিবার প্রতিদিন জাতিগত বৈষম্যের শিকার বলে জানান এখানকার হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সভাপতি সুরেশ বাসফোর।

রংপুরে হরিজন কলোনিগুলোতে আবাসন সংকট, পয়ঃনিষ্কাশন সংকট, মেয়েদের ঋতুচক্র চলাকালীন অপরিচ্ছন্নতা, বাল্যবিয়ে, কম বয়সে মা হওয়া, মাদক সেবন, পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়াসহ রয়েছে নানা সমস্যা।

অব্যাহতির নোটিশ

এপ্রিল ২, ২০২৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হককে অব্যাহতির নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এই নোটিশ অবিলম্বে কার্যকর বলে গণ্য হবে।

সৈয়দ আশফাকুল হক ১৯৯৩ সালে দ্য ডেইলি স্টারের ক্রীড়া বিভাগে যোগদান করেন। এরপর তিনি ক্রমান্বয়ে ক্রীড়া সম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, প্রধান বার্তা সম্পাদক এবং অবশেষে ২০১৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সব নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ মুক্তি পেয়েছে

১৪ এপ্রিল ২০২৪, প্রথম আলো

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ২৩ নাবিকসহ মুক্তি পেয়েছে। বাংলাদেশে সময় শনিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে এ খবর নিশ্চিত করেছে জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, হেলিকপ্টার থেকে ডলার ফেলার পরই নাবিকদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে কত ডলার মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এরপর তারা জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়।

নিজ দেশের উপকূলে নেওয়ার নয় দিনের মাথায় দস্যুরা মুক্তিপণের জন্য জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নানা পর্যায়ে দর-কষাকষির পর দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছছিল বলে ঈদের আগেই আভাস দিয়েছিল জাহাজটির মালিকপক্ষ।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •