চলচ্চিত্র আলোচনা
দক্ষিণ এশিয়ার সিনেমার সংসার যাত্রা
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন
বাংলাসহ পৃথিবীর সিনেমার ভূগোলের অন্যতম একজন প্রধান চলচ্চিত্র পরিচালক হচ্ছেন সত্যজিৎ রায় (২ মে ১৯২১–২৩ এপ্রিল ১৯৯২)। তার কাজের নানান আলোচনা চলছিল, চলবে, চলছে এরকম একটা ভাব বিরাজমান, ন্যূনতম দক্ষিণ এশিয়ার মানুষজনের, বিশেষ করে বাংলাভাষীদের এক অংশের ভেতর। তিনি ৩৬টি সিনেমা পরিচালনা করেছেন, ছোট-বড়, প্রামাণ্যচিত্র ইত্যাদি মিলিয়ে। রয়েছে চলচ্চিত্র সম্পর্কিত লেখা এবং ছোটদের জন্য রচনা করেছেন বেশকিছু সাহিত্য, উভয় ধরনের লেখাই একাধিক ভাষায় অনুবাদিত। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষজন অল্প-বিস্তর তার কাজ দিয়ে নানাভাবে সম্পর্কিত এবং ভিন্নভাবে তিনিও ভাবিত, সম্পর্কিত ছিলেন এ অঞ্চলের মানুষ নিয়ে যা তার কাজের বিষয়বস্তু পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়। তার ভাবনা, দর্শন, মতামত, অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা করা যায় তার কাজের পর্যালোচনার ভেতর দিয়ে। সিনেমায় মূলত তিনি গল্প বলেছেন, গল্প বলার জন্য নানাবিধ বৈচিত্র্যময় পেশার, শ্রেণির, লিঙ্গের মানুষের চরিত্র তিনি তৈরি করেছেন। রায়ের নির্মিত চরিত্রের ভেতর ‘পুরুষ চরিত্র’রা খায়, কাঁদে, সংসার করে, ভাবালুতায় ভোগে, নিজেকে বদলের স্বপ্ন দেখে এবং ভাবতে ভালোবাসে তারা বিপ্লবী! তার সিনেমার পুরুষেরা শিশু বয়স থেকে মৃত্যুপথযাত্রী, সব বয়সের, অনেক পেশার, অনেক রকমের এবং তাদের প্রভাব বাস্তব এবং সুদূরপ্রসারী। ফলে তার সিনেমার তৈরি করা চরিত্র একটা উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সিনেমার ইতিহাসে, যাকে খুব সহজে এড়ানো যায় না। সত্যজিৎ রায় একের পর এক সীমাবদ্ধ পুরুষ চরিত্র নির্ভর হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতাকেন্দ্রিক ভাবনার আশপাশে চলাফেরা করেন মতাদর্শিকভাবে, তবে পরিমিতি বজায় রেখে (তার তৈরিকৃত পুরুষ চরিত্রেরা, বিশেষত নায়কেরা কখনো সামাজিক কোনো অলঙ্ঘনীয়তা (Taboo) ভঙ্গ করে না, সামান্য চ্যুতি হলেই তার জন্য থাকে সমাজমান্য ব্যাখ্যা)। আর পরিমিতির ফাঁদে পড়েই হয়তো তিনি বাস্তবতাকে এড়িয়ে ভাবকল্পে ডুবে যেতে পারেন, তৈরি করতে পারেন ‘অপুত্রয়ী’ (১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৫৯), ‘কলকাতাত্রয়ী’ (১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৭৫), ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ (১৯৭০), ‘মহাপুরুষ’ (১৯৬৫), ‘কাপুরুষ’ (১৯৬৫), ‘আগন্তুক’ (১৯৯১), ‘নায়ক’ (১৯৬৬), ‘ঘরে বাইরে’ (১৯৮৪), ‘চারুলতা’ (১৯৬৪), জলসাঘর (১৯৫৮)-সহ আরও অনেক সিনেমার ‘পুরুষ’ চরিত্রদের। রায়ের সিনেমার পুরুষ চরিত্র মোটামুটি একইরকম গৎবাঁধা বিপরীতকামী পিতৃতান্ত্রিক পুঁজিবাদী কাঠামো আর ভিক্টোরিয়ান নীতিনৈতিকতা মেনে, কেউ সফল কেউ বিফল, কেউ ভিন্ন ইত্যাদির ঘোরাটোপে ঘুরপাক খায়। রায়ের পঞ্চাশের দশকের পুরুষ সমাজ বিবর্তনের ধারায় ধীরে ধীরে নানান সময়ের নানান নির্মাতার সিনেমার ভেতর দিয়ে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকরূপে হাজির সাইম সাদিকের ‘জয়ল্যান্ড’ (২০২২) সিনেমার ‘হায়দার’ হিসেবে। হালের নির্মাতা সাইম সাদিকের ‘হায়দার’কে ধরে তুলনামূলক পাঠ করা হয়েছে রায়ের ‘অপু’র কল্পিত সীমাবদ্ধ সমস্যা আক্রান্ত ‘পুরুষ চরিত্র’ উপস্থাপনা। তবে দক্ষিণ এশিয়ার সিনেমার ‘পুরুষ’ চরিত্র ভূগোলের শক্তিশালী সংযোজন ‘হায়দার’, ‘অপু’ উভয়জন।
চিত্র-১ অপুত্রয়ীর পোস্টার, যেখানে অপুত্রয়ী রূপদানকারী তিনজন ভিন্ন ভিন্ন অভিনেতাকে (যথাক্রমে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, স্মরণ ঘোষাল ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) অপুরূপে দেখা যাচ্ছে (‘অপু’ দক্ষিণ এশীয় পুরুষ চরিত্রের একধরনের সীমাবদ্ধ উপস্থাপন)।
চিত্রসূত্র: https://www.amazon.in/Tallenge-Pather-Panchali-Trilogy-Collection/dp/B07DCQ1VX3?th=1
চিত্র ২ সমকালীন শিল্পী ডেভিড ডব্লিউ ওয়াইমারের চিত্র যেখানে অপুর পুনরাবৃত্তিময় সীমাবদ্ধ জীবনকে ভণিতাহীন সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সত্যজিৎ রায়ের ‘পুরুষ’
সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা থেকে সাহিত্য, সবখানেই রয়েছে নানান পুরুষ চরিত্র, এখানে তার সিনেমার ‘পুরুষ’ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এবং তার সাহিত্যের পুরুষেরা এর চেয়ে খুব ভিন্ন কিছু নয়। রায়ের সিনেমার পুরুষদের বয়স, পেশা, শ্রেণি, জাতিগত ভিন্নতা ইত্যাদি বাইরের অমিল থাকলেও ভেতরগতভাবে তারা প্রায় অভিন্ন মানুষ। যেমন: ষাট-সত্তরের বাংলা বিক্ষোভে ফেটে পড়লেও তার পুরুষেরা প্রায় অবিচল থেকে সংসারের ঘানিকে মহান করে টানতে থাকে, নানান উছিলায়, সমাজমান্যতায় তাদের বড় টান। তারা প্রায় সমস্ত জীবন ধরে নিজের নামে, বাবা-দাদার জীবন কাটাতে থাকে এবং নিজের পরের জৈবিক প্রজন্মকে জীবনদর্শন, মূল্যবোধ, সাহসিকতার নামে বাপ-দাদার সীমাবদ্ধ পিতৃতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণা, বিক্রয়যোগ্য ভাবালুতা যথেষ্ট পরিমাণে দিয়ে যায়, ফলে সে পরের প্রজন্ম হয়তো নামে, ভূষণে ভিন্ন, কিন্তু ভেতরে প্রায় সমরূপ। রায়ের পুরুষ চরিত্র একাধারে খুব শালীন, রুচিপরায়ণ, পিতৃতান্ত্রিক, বিপরীতকামী স্বাভাবিকতায় বিশ্বাস করে, পুঁজিবাদী এবং অনেক প্রকার ভাবালুতা প্রকৃতি-পরিবেশ নিয়ে দেখালেও শেষ অবধি তারা প্রকৃতির ভোগবাদী ব্যবহার নিশ্চিত করে। বাইরের নানান সব অগভীর বৈচিত্র্যকে আলোকপাত করে ভেতরের চরিত্রকে আড়ালে রেখে সত্যজিৎ রায় নানান নামে, নানান ধামে নানা ধরনের পুরুষ চরিত্র তৈরি করেছেন সারা জীবন ধরে তার ৩৬ সংখ্যক সিনেমার ভেতর দিয়ে। তার সব পুরুষ চরিত্রে খানিক ছোঁয়া থাকে কোথাও-না-কোথাও ‘অপু’ চরিত্রের (এমনকি তার শেষ সিনেমা ‘আগন্তুক’ (১৯৯১)-এর মনোমোহন মিত্রেও!)। এবং সাধারণত তিনি দেশ থেকে বিদেশে, সবখানেই বিখ্যাত তার অন্যতম কারণ তিনি অপু চরিত্রের ছোটবেলার চিত্রায়ণ ‘পথের পাঁচালী’র পরিচালক। এসবসহ নানাবিধ বিষয় বিবেচনায় রেখে অপুকে তার পুরুষ চরিত্রের একজন প্রতিভূ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
অপু চরিত্রের সারসংক্ষেপ
যে সিনেমা ত্রয়ীর ভেতর দিয়ে অপু চরিত্র তৈরি হয়েছে নিচে তার নাম এবং অপু চরিত্রের সারসংক্ষেপ।
নাম: পথের পাঁচালী। পরিচালনা: সত্যজিৎ রায়। চিত্রনাট্য: সত্যজিৎ রায় (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ অবলম্বনে)। চিত্রায়ণ: সুব্রত মিত্র। সম্পাদনা: দুলাল দত্ত। সংগীত: রবি শঙ্কর। প্রযোজনা: পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং অরোরা ফিল্ম করপোরেশন দ্বারা বিতরণ। দৈর্ঘ্য: ১১২-১১৬ মিনিট। মুক্তির তারিখ: ২৬ আগস্ট ১৯৫৫ (ভারত)।
নাম: অপরাজিত। পরিচালক: সত্যজিৎ রায়। প্রযোজক: পশ্চিমবঙ্গ সরকার। চিত্রনাট্য: সত্যজিৎ রায় (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে)। মুক্তি: ১৯৫৬। দৈর্ঘ্য: ১১০ মিনিট। ভাষা: বাংলা। দেশ: ভারত।
নাম: অপুর সংসার। পরিচালক: সত্যজিত রায়। প্রযোজক: সত্যজিৎ রায়। রচয়িতা: সত্যজিত রায় (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে)। মুক্তি: ১ মে ১৯৫৯। দৈর্ঘ্য: ১০৭ মিনিট। দেশ: ভারত। ভাষা: বাংলা।
পথের পাঁচালী
অপুর জন্ম ঔপনিবেশিক বাংলার গ্রামের এক সাধারণ দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার ছোটবেলা কাটে বোন দুর্গা, মা সর্বজয়া এবং ইন্দির ঠাকরুণ আর কিছু সময় বাবা হরিহরের সঙ্গে নিশ্চিন্তপুর নামের গ্রামে। ছোটবেলায় গ্রামের ফলমূল, ফেরিওয়ালা, মেঘ, বৃষ্টি, প্রতিবেশী, কুকুর, কাশবন মিলিয়ে ভালোই যাচ্ছিল অপুর। তার প্রথম বিচ্ছেদ শুরু হয় ইন্দির ঠাকুরের মৃত্যুর ভেতর দিয়ে এবং তা শেষ হয় বিনা চিকিৎসায় দুর্গার মৃত্যু এবং চিরতরে গ্রামের সঙ্গে বিচ্ছেদের মাধ্যমে। তার এহেন বিচ্ছেদ পর্বের সূচনা সারা জীবন ধরে চলতে থাকে। ছোটবেলায় অপু সাধারণ আর দশজন গ্রামের বালকের মতোই ছিল এবং গ্রামের পানা, পুকুর, প্রকৃতির মাঝে জলপোকাদের সঙ্গে সমবেত জীবনে ছিল। বাইরের জিনিস বলতে হরিহরের মুখে শোনা গল্প বা দু-চারটে জিনিস, এসবের ভেতরেই একদিন কাশফুল ছাপিয়ে ঢুকে পড়ে ট্রেন। যা নাজিল হয়েছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ কাঠামো আরও পোক্ত করার জন্য এবং ট্রেন সে আমলে নিশ্চিত করেছিল পুঁজির ও পণ্যের নির্বিঘ্ন চলাচল। উপেক্ষিত হয়েছিল বাংলাসহ সমগ্র এলাকার স্থানীয় লোকজ যোগাযোগ জ্ঞান। উপেক্ষা নদীর এবং নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ও জীবনযাপন ব্যবস্থার। এসবের ভেতর দিয়ে সে হরিহরের আর্থিক কারণ ও তার পড়ালেখা, ভালো জীবনের আশায় মা-বাবার সঙ্গে পাড়ি জমায় আরেক নদী, গঙ্গাতীরের শহর কাশীতে। সেখানে সে ধীরে ধীরে পরিচিত হয় সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ইত্যাদির সঙ্গে। নিশ্চিন্তপুর গ্রামের প্রাথমিক পাঠ শেষ হয় অপুর।
অপরাজিত
গ্রাম ছেড়ে অপু মা-বাবার সঙ্গে কাশী শহরে আসে। এখানে সে বিভিন্ন ঘাটে, অলিগলিতে ঘুরে সময় কাটায়। তার বাবা হরিহর ঘাটে ধর্মগ্রন্থ পড়ে এবং পূজা-অর্চনা করে সংসার নির্বাহ করে। কিছুদিনের ভেতরেই তাদের জীবনে আবার নেমে আসে বিপদ। হরিহর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে সর্বজয়া অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, এভাবে চলতে থাকে অপুর জীবন। কিছুদিন কাশীবাসের পর অপু আবার তার মায়ের সঙ্গে মনসাপোতা গ্রামে চলে যায়। মা ভাবে ছেলে বাবার পেশায় অধিষ্ঠিত হবে, কিন্তু অপু পড়ালেখা করে এবং আবার শহরে ফিরে আসে, এবার ব্রিটিশ ভারতের এক সময়ের রাজধানী কলকাতায়। ধীরে ধীরে কলকাতায় তার রূপান্তর ঘটতে থাকে, সে পড়ালেখার কাঠামোগত অসুবিধায় পড়ে তাল মেলাতে পারে না আবার ভিন্ন দিকে বন্ধুত্বের ভেতর দিয়ে সে শহরের যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। পর্যায়ক্রমে বাড়ির সঙ্গে, সর্বজয়ার সঙ্গে, গ্রামের সঙ্গে, খোলা মাঠের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ স্থায়ী হয়ে ওঠে। একসময় সর্বজয়া, গ্রামীণ পিছুটান তার জন্য মানসিক চাপ নিয়ে আসে, এসবের অবসান ঘটে সর্বজয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে, অপু সকল বাঁধন, পিছুটান কাটিয়ে শহরবাসী হয়। শেষ হয় অপরাজিত সিনেমার অপুর কাহিনি।
অপুর সংসার
উচ্চতর পড়ালেখা করার সুযোগ, সামর্থ্য কোনোটা না থাকার দরুন অপু নানান জায়গায় চাকরির ধরনা দিতে শুরু করে, কিন্তু তার কপালে ঠিকঠাক যোগ্যতার অভাবে চাকরি জোটে না। যেহেতু কোনো কিছুতেই তার বিশেষ কোনো যোগ্যতা নেই, তাই বাঙালি সহজাত অভ্যাসে সে ধরে নেয় তাকে দিয়ে সৃজনশীল কিছু হবে! এবং এ ক্ষেত্রে পছন্দ করে সে লেখক হবে, উপন্যাস লিখে কোনোক্রমে ছেপে সে সবাইকে দেখিয়ে দেবে। বিয়ে-সংসার-সন্তান-চাকরি এসব তার জন্য নয়। অনেকদিন পর পুরোনো বন্ধু পুলুকে পেয়ে তার এসব পুরুষালি বাগাড়ম্বর উগরে দিতে থাকে। যদিও ভাড়াবাড়িতে ছাদে সে বাঁশি বাজালে পাশের বাড়ির এক মেয়ের আনাগোনায় তার আলোড়নের শেষ নেই! মানে পাশের বাড়ির মেয়েটার আনাগোনায় তার হৃদয় উদ্বেলিত হয়। এরকম অবস্থায় ঘটনাক্রমে সে কলকাতা ছেড়ে এক দূরবর্তী স্থানে যায় বিয়ের দাওয়াত খেতে এবং তার ভেতরের পুরুষালি বীরত্ব দেখানোর ফাঁদে সে নিজেই ধরা দিয়ে, বিয়ে করে বীর সেজে বউ নিয়ে কলকাতা ফিরে কেরানিগিরি করতে করতে ডুবে যেতে থাকে যাবতীয় বিপরীতকামী স্বাভাবিকতার পুনরাবৃত্তিময় রোমান্সে। তারপর তার স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেলে সে ছোট বাচ্চার দায়িত্ব এড়িয়ে আবার ঘুরেফিরে বেড়ায়। যে অপু দুর্গার সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজেছিল সে কয়লার খনির কর্মী, তাকে আর প্রকৃতি জাগায় না, সে এবার প্রকৃতির অধিপতি। এবং চারপাশ, রাজনীতি এমনকি সে নিজেকেও উপেক্ষা করে আর দশজন মানুষের মতন তার ‘স্বাভাবিক’ সংসার নেই বলে। একসময় তার ঔরসজাত মৃত স্ত্রীর সন্তানকে ফিরে পেয়ে সে আবার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য খুঁজে পায় এবং ছেলেকে তার এসব ‘জ্ঞান’ শিখিয়ে নিজেই ‘মানুষ’ করার জন্য সে তার সঙ্গে নিয়ে যায়। যেন তার ছেলের ভেতর দিয়ে আবার শুরু হলো আরেক অপুর জীবন। হাজার বছর ধরে চলতে থাকা চক্র প্রশ্নহীনভাবে চলছে, কোনো সংস্কার নেই, সীমাবদ্ধতা এড়ানোর আলোচনা নেই। অপুর সংসারের ভেতর দিয়ে শেষ হয় সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত, আলোচিত সিনেমাত্রয়ী এবং ‘পুরুষ চরিত্র’ অপুর।
আনন্দভূমি: হায়দারের আত্ম-উন্মোচন
নাম: জয়ল্যান্ড। পরিচালক: সাইম সাদিক। প্রযোজক: অপূর্ব গুরু চরণ, সারমাদ সুলতান খুসত, লরেন মান। রচয়িতা: সাইম সাদিক, ম্যাগি ব্রিগস। সুরকার: আব্দুল্লাহ সিদ্দিকি। চিত্রগ্রাহক: জো সাদে। সম্পাদক: সাইম সাদিক, জেসমিন তেনুচি। মুক্তি: ১৮ নভেম্বর ২০২২। দৈর্ঘ্য: ১২৭ মিনিট। দেশ: পাকিস্তান। ভাষা: পাঞ্জাবি, উর্দু।
চিত্র ৩ ‘জয়ল্যান্ড’ (২০২২) সিনেমার পোস্টারে হায়দার (আলী জুনেজো) ও বিবা (আলিনা খান) নামধারী দুজনকে দেখা যাচ্ছে।
চিত্রসূত্র: https://www.filmaffinity.com/en/filmimages.php?movie_id=543896
লাহোর শহরের সাধারণ এক পাড়ায় হায়দার তার বউ মুমতাজ, বাবা, বড় ভাই, ভাবি ও তাদের সন্তানসহ যৌথ পরিবারে বাস করে। তার মা নেই, বাবা খুব কর্তৃত্বপরায়ণ এক পুরুষ, যাকে এড়িয়ে কিছু করা বা হওয়া এ পরিবারে সম্ভব নয়। বড় ছেলের যেহেতু একের পর এক মেয়েসন্তান হচ্ছে তাই তার বাবার ইচ্ছা, ছোট বউ মুমতাজের ছেলে হলে বংশের বাতি জ্বালানোর লোক থাকবে এবং তিনি শান্তিতে মরতে পারবেন। মুমতাজ একটা বিউটি পার্লারে কাজ করে, হায়দার সিনেমার শুরুতে বেকার। কিছুদিনের ভেতর হায়দার একটা মুজরা নাচের দলের একজন নাচিয়ে হিসেবে যোগ দেয়, বাড়িতে জানানোর ফলে তার বদলে মুমতাজকে কাজ ছেড়ে ঘরের কাজে নুচ্চিকে (বড় ছেলের বউ) সাহায্য করার জন্য বাধ্য করা হয় (বেকার সময়ে এসব কাজ হায়দার করে দিত)। নাচের দলের হিজড়া বিবা ধীরে ধীরে হায়দারের প্রেমে পড়ে। হায়দার নিজেও জড়িয়ে পড়ে বিবার সঙ্গে, একপর্যায়ে তাদের শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয় এবং হায়দার চায় বিবা তাকে ভালোবাসুক, যৌনতা হোক, কিন্তু স্বাভাবিকভাবে একজন পুরুষের সঙ্গে সহজভাবে আরেক পুরুষের যৌন সম্পর্ক হোক সে সম্পর্ক। সে পুরুষের শারীরিক ভালোবাসার অজানা সম্পর্কে জড়াতে চায়, সে বিপরীতকামী স্বভাবের বেড়াজাল থেকে বের হতে চায়। কিন্তু বিবা হায়দারকে সমকামিতার অভিযোগে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়! হায়দার অসীম শূন্যতা নিয়ে বাড়ি ফিরে জানে সে বাবা হতে চলেছে এবং সন্তান ছেলে। বাড়ির পরিস্থিতি বদলে যায়, শুরু হয় হায়দারের ‘স্বাভাবিক’ পুরুষ হওয়ার দৌড়ঝাঁপ, অনাগত ছেলেসন্তানের ‘বাবা’র ভূমিকা উদ্যাপন, ফিরে আসে আনন্দ, উত্তেজনা, ভাব-ভালোবাসা। আর মুমতাজকে দেখি সে নিজের ভেতরে নেই, তার দম বন্ধ হয়ে আসছে, সে পালাতে চায়। এর আগেই বিবার কাছে শুনে হায়দার একদিন সমুদ্রের গল্প করে মুমতাজের কাছে, হায়দার কখনো সমুদ্র দেখেনি, মুমতাজ পরে যাওয়ার আশ্বাস দেয়। মুমতাজ পালাতে চায় বাধ্যতামূলক লিঙ্গ-ভূমিকার চাপ থেকে, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় বিষপান করে মারা যায়। হায়দার বুঝতে পারে এই মৃত্যুর পেছনে সে নিজেও দায়ী। কারণ, তার যৌনতা, বিপন্নতা সে নিজে আঁচ করতে পারলেও স্বীকার করেনি সাহস করে নিজের কাছে, একটা কিছু গুরুত্বহীন ভেবে রেখে দিয়েছে, মন খুলে আলো-বাতাসের সঙ্গে আলাপ করেনি, কখনো জানায়নি মুমতাজকে, তাহলে হয়তো ভিন্ন কিছু হতো। সে বুঝতে পারে বাধ্যতামূলক লিঙ্গ-ভূমিকায় অভিনয় হচ্ছে শুধু, এখানে জীবন নেই। নিজের এ আত্ম-উপলব্ধি অতীতে হলে হয়তো মুমতাজের সঙ্গে তার প্রেম-বিয়ে হতো না, সে বুঝে না-বুঝে একটা ‘বিপরীতকামী স্বাভাবিক’ জীবন চেয়েছিল কিন্তু পায়নি, এসব ব্যর্থতাবোধ, ‘স্বাভাবিক’ হতে পারা আবার না হতে পারার বৃত্ত ছেড়ে সে বের হয়ে যেতে চায়। সিনেমার গল্পের শেষে হায়দার অবশেষে সুমদ্রতীরে পৌঁছে, জামাকাপড়-ব্যাগ, মানুষের নির্মিত সমাজ-সংসার-মূল্যবোধ-পছন্দ-অপছন্দ-নারী-পুরুষ-সমকাম-বিপরীতকাম সব ফেলে দিয়ে সমুদ্রের আরও গভীরের নির্জনে মিশে যেতে চায় তার খোলা শরীর-মন-প্রাণ নিয়ে।
চিত্র ৪ ‘জয়ল্যান্ড’ সিনেমায় হায়দার (আলী জুনেজো) তার পরিবারের সঙ্গে।
চিত্রসূত্র: https://www.imdb.com/title/tt19719976/mediaviewer/rm3208067841?ref_=ttmi_mi_all_sf_20
অপুর সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে হায়দারের সহজ মানুষ হওয়ার যাত্রা
অপুর বেড়ে ওঠা থেকে শেষ অবধি ‘লিঙ্গনির্ভর’ শ্রমবিভাজন খুব পরিষ্কাররূপে দেখা যায়। সে ‘পুরুষ’ হিসেবে ‘নারী’র জন্য নির্ধারিত কাজগুলো করে না এবং যে কাজগুলোকে সামাজিকভাবে ‘পুরুষে’র বলে দেগে দেওয়া হয়েছে তার প্রতি তার অনেক আগ্রহ। অপু ‘আধুনিক’ মানুষ, তার ব্যক্তিগত পরিসর হিসেবে বউ, ঔরসজাত সন্তানের জন্য যে পরিমাণ আবেগ ও গুরুত্ব সে আরোপ করে, অন্য কিছুর প্রতি আর তেমন কোনো তীব্র টান বা গভীর আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় না, এমনকি তার নিজের মা এবং গ্রামের জন্যও নয়। সংসার সম্পর্কিত সীমাবদ্ধ জটিল ধারণা, পিতৃতান্ত্রিকতা, প্রাণ-পরিবেশবিনাশী অবস্থান। যেন সে আধুনিক ‘একক পরিবার’ হতে চায় যেখানে ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’ দর্শন আলোড়িত করে এবং আর কোনো কিছুর দরকার নেই। অপু যতটা-না ‘মানুষ’রূপে হাজির তারচেয়ে বেশি সে হাজির প্রথাগত সমাজমান্য ‘পুরুষ’ হিসেবে। আবার সে নারীর ‘উদ্ধারকর্তা’ এবং ‘স্বামী’ চরিত্রে উপস্থিত হয়ে পতিত নারীকে উদ্ধার করে এবং বউ বানিয়ে সস্তা সস্তা রোমান্সে ভরিয়ে তোলে তার ভাড়া বাসা। অপুর নিজের বাইরের পৃথিবী থাকলেও তার বউয়ের জন্য বরাদ্দ ‘ঘর’ এবং ‘স্বামী’। নারী তার প্রেম, আকর্ষণ, জীবন বদলে দেওয়া উপাদান কিন্তু সহকর্মী নয়। আর ভিন্ন দিকে পুরুষ তার নিকট কোনোভাবেই আকর্ষণ, চমক বা যৌনতা নিয়ে হাজির হয় না, এমনকি স্বপ্নেও নয়। বা পুরুষেরা কোনোভাবে তাকে আলোড়িত করতে পারে না। অপরদিকে নারীর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে চুল-দাড়ি রেখে, বাড়িঘর ছেড়ে দেবদাস সাজলেও ক্ষতি নেই, বিষাক্ত পৌরুষত্ব। তার যাপন, চর্চায় সে প্রচণ্ডভাবে ‘কুসংস্কার’ দূর করে ‘আলোকিত’ হতে চাওয়া ‘রেনেসাঁ’র মানুষ। এরকম পুরুষ চরিত্রের ভেতর দিয়ে আসতে আসতে বিবর্তিত হতে হতে দক্ষিণ এশিয়ার সিনেমায় ২০২২ সালে উপস্থিত হয় লাহোরের বিবাহিত, যৌথ পরিবারের তরুণ পুরুষ সদস্য হায়দার। অপুর তুলনায় হায়দারের ভূগোলের পৃথিবী অনেক ছোট। সে তার বাবা, ভাই, ভাবি, ভাতিজিদের সঙ্গে থাকে বউ মুমতাজসহ, বেকারত্ব ঘোচাতে তার মুজরার দলে হিজড়াদের সঙ্গে নাচতেও আপত্তি নেই। পুরুষের কাজ হিসেবে দেখা হয় যে গরু-ছাগল জবাই করাকে সে কাজেও সে আনাড়ি, জবাই করতে হিমশিম খেতে থাকে আর এহেন বিপর্যয় থেকে ছাগল নিজে জবাই করে তাকে উদ্ধার করে তার বউ মুমতাজ। সে রান্নাঘর, বাচ্চা সামলানো থেকে রোগীর সেবা, সব কাজে মুমতাজ বা ভাবি নুচ্চি, কারো চেয়ে কম যায় না। এবং তার ও মুমতাজের দাম্পত্যজীবনও খারাপ যাচ্ছিল না, কিন্তু সে বা মুমতাজ সমসাময়িক মানুষ। তারা বাধ্যতামূলক লিঙ্গ-ভূমিকার বাইরের স্বাধীন প্রান্তরে যেতে চায়, যেখানে তারা, নারী-পুরুষ নির্মাণের ঊর্ধ্বে শুধুই মানুষ বা প্রাণী। হায়দার নিজে পুরুষের অন্যায় সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও সমাজের বাধ্যতামূলক লিঙ্গ-ভূমিকার পুরুষে রূপান্তরিত না হয়ে, সুবিধাভোগ না করে নিজের জীবনযাপন করতে চায়, দেরি করে হলেও। এবং অপুর সংসার-সন্তান-উত্তরাধিকার-সমাজমান্যতা-নিম্ন-মধ্যবিত্ত মূল্যবোধের সীমানাপ্রাচীর থেকে হায়দার অনেক দূরে আর তার প্রচেষ্টা সীমানাহীন পৃথিবীর, এমনকি সে প্রথাগত নারী-পুরুষ সীমারেখা মুছে লীন হতে চায়। সেখানে অপু নিজে পুনরাবৃত্ত জীবনযাপন করে এবং নিশ্চিত করতে চায় সমাজমান্য প্রতিষ্ঠিত সার্বিক মূল্যবোধ।
অপু-হায়দার ধরে দক্ষিণ এশিয়ার সিনেমার পুরুষ সম্পর্কিত সমাচার
দক্ষিণ এশিয়ার মূল-ধারার সিনেমার পুরুষ চরিত্রেরা একেবারে অন্যরকম এবং বিপরীতমুখী। অপু, হায়দার মূলত উৎসবকেন্দ্রিক সিনেমার বাজারের সিনেমার চরিত্র। আর বাজারের প্রধান শর্ত অর্থ। উৎসবগুলোর অর্থনীতি ধরনের সঙ্গে উৎসবের সিনেমায় প্রদর্শিত অর্থনৈতিক কাঠামোর মিল বা মতাদর্শগত সাদৃশ্য চরিত্রগুলোর একধরনের নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়, যা পুঁজিকেন্দ্রিক শিল্পের, সিনেমার একধরনের সংকট। রায়, সাদিক দুজনে গল্প বলেন কিন্তু সাইম সাদিক বোধহয় রায়ের অপুর তুলনায় ভালোভাবে সংকট কাটাতে পেরেছেন হায়দারের ক্ষেত্রে, ফলে তার চরিত্রেরা শুধু মতাদর্শগত ভাবালুতায় ভোগে না। তারা অনেক সহজ-স্বাভাবিক, ন্যূনতম অপু এবং হায়দারের তুলনা করে এরকম ভাবা যেতে পারে। রায় ‘চারুলতা’য় (১৯৬৪) সংসারের সমাজ, চরিত্র, শ্রেণি দেখিয়েছেন কিন্তু অপরদিকে অপুত্রয়ীর ভেতর সাংসারিক বাস্তবতা, উপাদান এড়িয়ে সমাজমান্য প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ভাবকল্প আছে। অপু পুঁজিবাদী পারিবারিক পিতৃতান্ত্রিক বিপরীতকামী স্বাভাবিক সমাজ দর্শনের প্রতিফলন। হায়দার এসব সংস্কার পার হয়ে অনেক প্রাপ্তমনস্ক, বোধসম্পন্ন তার সঙ্গে মুমতাজের সম্পর্কের আদান-প্রদান আছে, একরৈখিক ভাবকল্পনা নয়। হায়দার জীবিত থাকতে নয় বাঁচতে চায়, নিজের মতো। তার ভেতরের আকুতি গভীর। ঠিক যেন ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’র (১৯৬০) নীতার মতো, তার চোখেমুখে ‘দাদা আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম।’ শেষ অবধি হায়দার নিজেকে সমর্পণ করে প্রাকৃতিক বিশালতার মাঝে (নীতা পাহাড় বেছে নিয়েছিল, সে সমুদ্রে যায়), সমুদ্রসৈকতে সে শুরুতে নিজের সুটকেস রেখে ধীরে ধীরে নেমে যেতে থাকে গভীর থেকে আরও গভীরে, নামতে নামতে সে একে একে খুলতে শুরু করে তার কাপড়। এসব সাংসারিক, শ্রেণিগত, লিঙ্গ প্রতীকতার ছাপ পার হয়ে সে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। প্রাকৃতিক বিশালতার আহ্বানে হায়দার নিজে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে। ঠিক যেমন নীতার কথা পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে শোনা যায়, তেমন হায়দারের কথাও সমুদ্রের ঢেউয়ের প্রতিধ্বনি হিসেবে ফিরে আসে। পক্ষান্তরে অপু বাধ্যতামূলক লিঙ্গ-ভূমিকার উদাহরণ হয়ে সমাজমান্য ভাবকল্পের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কাজ করে, অপুর সংসারের শেষের প্রাকৃতিক বিশালতার সঙ্গে অপু কাজল কেউ একাত্ম নয়, তারা প্রকৃতি থেকে বিযুক্ত। অপু প্রাণিজ-মানবিক, প্রাকৃতিক সমষ্টির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে নিজেকে ‘অধিপতিমূলক’ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, ফলে এমনকি ঔপনিবেশিক শহরের, সমাজের, সভ্যতার, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা তার চোখে ধরা পড়ে না। অপু-হায়দারের তুলনামূলক পাঠের ভেতর দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার পুরুষ চরিত্রের যেসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, এসব পুরুষ শুধু সিনেমায় নয় বাস্তব এবং বর্তমানে বিরাজমান।
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন: চলচ্চিত্রকার ও চলচ্চিত্র সমালোচক। ইমেইল: maangorepublik@gmail.com