বিদ্যুৎ খাতের নতুন মহাপরিকল্পনায় পুরোনো ভূতের আছর!

বিদ্যুৎ খাতের নতুন মহাপরিকল্পনায় পুরোনো ভূতের আছর!

মওদুদ রহমান

জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে এই সরকার যা যা করছে তাতে শুধু এই খাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে তাই নয়, বর্তমান জটিল আর্থিক সংকটেরও অন্যতম উৎস এই খাতই। উন্নয়নের নামে ঋণ ও আমদানি নির্ভর এবং প্রাণবিনাশী বিদ্যুৎ প্রকল্প দেশি কতিপয় বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সাথে সাথে ভারত, জাপান, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির জন্য বিপুল মুনাফা এনে দিলেও বাংলাদেশের জন্য তৈরি করেছে আর্থিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। বারবার গ্যাস বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি এরই ফলাফল। নতুন মহাপরিকল্পনার নামে এই সর্বনাশা অপতৎপরতা কীভাবে অব্যাহত রাখা হচ্ছে এই লেখা সেটাই অনুসন্ধান করেছে।   

গল্পে আছে, এক অলস নাপিতের আলসেমিতে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে নাপিতের বউ আর মা খুব বকাঝকা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। নাপিত বেচারা মনে বড় কষ্ট নিয়ে কাঁধের ঝোলায় একটা আয়না আর একটা কাঁচি নিয়ে জঙ্গলের দিকে হাঁটা দেয়। সেই ঘন জঙ্গল ছিল ভূতদের আস্তানা। কিন্তু ঘরছাড়া নাপিতের নিজ জীবনের প্রতি আর কোনো মায়া অবশিষ্ট ছিল না। তাই সে জঙ্গলের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে আরও গভীরে ঢুকে ক্লান্ত হয়ে এক বিরাট গাছের নিচে বসে ঘুমিয়ে পড়ে। বেশ সময় পর হঠাৎ এক বিকট আওয়াজে জেগে উঠে নাপিত দেখে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক ভূত। এখনই খেয়ে ফেলবে, মেরে ফেলবে এমন একটা অবস্থা। ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া নাপিতের মাথায় হঠাৎ এক বুদ্ধি খেলে যায়। সে ভয় লুকিয়ে মনের সব সাহস জড়ো করে হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। এমন কাণ্ডে ভূত খুবই অবাক হয়, নাপিতকে জিজ্ঞেস করে এমন খুশির কারণ কী! নাপিত জবাবে বলে, ঘর থেকে বের হয়েছি একশটা ভূত ধরব বলে, তোকে পাওয়ার আগপর্যন্ত ধরেছিলাম নিরানব্বইটা, তোকে বন্দি করেই আমার ঝোলায় একশটা ভূত ধরা পূর্ণ হবে। এই বলেই, নাপিত ঝোলা থেকে আয়নাটা বের করে ভূতের মুখের সামনে এনে ধরে। বেচারা ভূত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দেখে আয়নায় অবিকল তারই মতো দেখতে আরেকটা ভূত। এবার পালটা ভূতের মনেই ভয় ধরে যায়। সে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয়। নাপিতের ঝোলায় নিজেকে বন্দি না করার আকুতি জানাতে থাকে। বিনিময়ে নাপিতের বাকি জীবনের সব কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। নাপিত তো মনে মনে বেজায় খুশি। সে নাচতে নাচতে বাকি জীবনের গোলাম করে ভূতকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কাজকারবার দেখলে কেবলই উপরের গল্পের ভূতের কথা মনে পড়ে। এ খাতে লাগাতারভাবে নিয়ম-নীতি প্রণয়ন, পুনঃপ্রণয়ন, পরিমার্জন ইত্যাদি দেখে মাঝেমধ্যে জানতে ইচ্ছা করে যে, সরকারের ঝোলায় কয়টা ভূত! কারণ, বিশাল আয়োজনের একের পর এক অকার্যকর মহাপরিকল্পনা তৈরিতে যে পরিমাণ সময় আর শ্রম নষ্ট হয় তা ভূতের ব্যাগার খাটুনি ছাড়া সম্ভব নয়। অবশ্য এই ভূতেরা যে মাগনা খাটে না তা বলাই বাহুল্য। এই দেশে সাধারণ মানুষের কষ্টের টাকা নীতি-নির্ধারকদের কাছে তেজপাতার মতন। তাই এখানে কোন ভূত কীভাবে কার স্বার্থ হাসিল করে আর কত টাকার ভাগ পায়, তা বোঝা যায় কিন্তু জানা যায় না।

১৯৯১-৯২ থেকে ২০০৮-০৯ পর্যন্ত সময়কালে সরকার গঠনে ধারাবাহিক পরিবর্তন ছিল। একবার আওয়ামী লীগ তো পরেরবার বিএনপি, আবার মাঝে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই সময়কালে আমরা পরস্পর সাংঘর্ষিক অনেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতি পেয়েছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পলিসি স্টেটমেন্ট অন পাওয়ার সেক্টর রিফর্মস’ ২০০০, ‘ন্যাশনাল এনার্জি পলিসি’ ২০০৪, ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান’ ২০০৬, ‘রিনিউয়েবল এনার্জি পলিসি’ ২০০৮, ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান’ ২০১০ এবং ‘থ্রি ইয়ার রোডম্যাপ ফর পাওয়ার সেক্টর রিফর্ম’ ২০০৮-১০। পূর্ববর্তী নীতির কার্যকর পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া নতুন নতুন নীতি প্রণীত হয়েছে আর ক্ষমতায় আসীন সরকারগুলো সব দোষের দায় চাপিয়েছে আগের সরকারের ঘাড়ে। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আছে ২০০৯ সাল থেকে। তাই এখন ইচ্ছা থাকলেও অপরের ঘাড়ে নিজের দোষ চাপানোর উপায় খুব একটা নেই। অবশ্য দোষ কেউ ধরিয়ে দিলেও যে এদের শোধরানোর খুব একটা ইচ্ছা আছে সেটাও বলা যাবে না। তাইতো স্থানীয় জনসাধারণের প্রতিবাদ আর বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ উপেক্ষা করেই সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলে বানিয়ে ফেলা হয়েছে রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর সামান্য লেখালিখি ও আলোচনার কারণে বিগত সময়ে ধারাবাহিকভাবে লেখক, গবেষক, ছাত্র-শিক্ষক আর সর্বোপরি সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ হুমকি, হামলা-মামলা আর জেল-জুলুমের শিকার হয়েছে তাতে কার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে নীতি-নির্ধারকদের ভুল ধরিয়ে দেবে!

নতুন মোড়কে পুরোনো মাল?

‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান ২০২৩’ প্রণয়নের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে আর প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালে [১]। এর আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা প্রণীত হয় ২০১৬ সালে। তখন এর নাম ছিল ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১৬।’ পূর্ববর্তী নীতি সম্পূর্ণ বাতিল করে নতুন নীতি প্রণয়ন করা অবশ্যই দোষের কিছু নয়। বরং সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব আর ভুল নিয়তে কোনো নীতি প্রণীত হয়ে থাকলে তাতে সংশোধন আনা কিংবা বাতিল করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করাটাই উচিত। ২০১৬ সালে প্রণীত নীতিমালা এরকম অসংখ্য দোষে দুষ্ট যার কারণে তা বাতিল করাটাই যুক্তিযুক্ত ছিল। সেই মহাপরিকল্পনার অসংগতি, দোষ-ত্রুটিগুলো তুলে ধরে ২০১৭ সালে সর্বজনকথায় একটা লেখা লিখেছিলাম যার শিরোনাম ছিল, ‘পিএসএমপি ২০১৬ : গোঁজামিলে ঠাসা এক মহা দলিল’ [২]।

বিদেশি অর্থায়নে, বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা, বিদেশি প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নের ওই মহাপরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের স্বার্থ পরিপন্থি আর জনজীবন ও পরিবেশবিধ্বংসী। পিএসএমপি ২০১৬ অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে ১৯ হাজার মেগাওয়াট কয়লা এবং ৭ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা কিনা ২০৪১ সাল নাগাদ বিদ্যুতের চাহিদার যথাক্রমে ৩৫ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ পূরণ করবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছিল। ওই মহাপরিকল্পনায় আমদানি করা বিদ্যুৎ আর নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকে একে অপরের বিকল্প হিসেবে জাহির করা হয়েছিল এবং বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক উৎপাদন সক্ষমতা দেখানো হয়েছিল মাত্র ৩ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট। অথচ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, কেবল বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাই বাংলাদেশের রয়েছে ২০ হাজার মেগাওয়াটের [৩]।

উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির হার শূন্য থেকে বাড়িয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ দিনপ্রতি ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সেই নীতিমালায়। ফলশ্রুতিতে ২০১৮-১৯ সাল থেকে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে এলএনজি যুক্ত হয়। ওই বছর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাসের জোগান ছিল ৯৬৫ বিলিয়ন ঘনফুট আর এলএনজি ছিল ১১৬ বিলিয়ন ঘনফুট, যা মোট ব্যবহৃত গ্যাসের ১১ শতাংশ। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এলএনজির জোগান ২০২১-২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২৪০ বিলিয়ন ঘনফুটে, যা মোট ব্যবহৃত গ্যাসের ২২ শতাংশ [৪]। ২০২২-২৩ সালে উৎপাদিত মোট বিদ্যুৎ ছিল ৮৮ হাজার ৪৫০ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা (/৮৮.৪ টেরাওয়াট আওয়ার) যার ৫২ শতাংশই (৪৫ হাজার ৯৯৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা/ ৪৫.৯ টেরাওয়াট আওয়ার) উৎপাদিত হয়েছে গ্যাস থেকে। যদি ধরে নিই যে, এই ৪৫ হাজার ৯৯৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টার ২২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে এলএনজি থেকে, তবে ২০২২-২৩ সালে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়ায় ১০ হাজার ১১৯ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা (/ ১০.১ টেরাওয়াট আওয়ার)। এক গবেষণায় দেখা যায়, এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ২০২২ সালে ছিল ইউনিটপ্রতি ৪৯ টাকা, যেখানে প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন খরচ পড়ে গড়পড়তায় ২ টাকা [৫]। সেই হিসাবে কেবল এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতেই ২০২২-২৩ সালে বাড়তি খরচ হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা, যার প্রায় পুরোটাই ডলারে পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে বাড়তি চাপ।

এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ২০২২ সালে ছিল ইউনিটপ্রতি ৪৯ টাকা, যেখানে প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন খরচ পড়ে গড়পড়তায় ২ টাকা। সেই হিসাবে কেবল এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতেই ২০২২-২৩ সালে বাড়তি খরচ হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা, যার প্রায় পুরোটাই ডলারে পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে বাড়তি চাপ।

বর্তমানে ৩ হাজার ৩৫৫ মেগাওয়াট এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে, যা আগামী দু-বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। ১ হাজার ৭৭০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ৫ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট সক্ষমতার এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাইসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছে, যা সম্পন্ন করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২০২৬ থেকে ২০৩৪ সালের মধ্যে উৎপাদন শুরু করবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে [৬]। যদি আগামী ৫ বছরের মধ্যে প্রাক্কলিত এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অর্ধেকও উৎপাদন শুরু করে, তবে ২০২৮ সাল নাগাদ মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৫ হাজার ৩৪৪ মেগাওয়াট। এই ৫ হাজার ৩৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো যদি গড়ে কেবল ৫০ শতাংশ সময়ও উৎপাদনে থাকে (৫০ শতাংশ ক্যাপাসিটি ফ্যাক্টর ধরে), তাহলে বছরে উৎপাদিত হবে ২৩ হাজার ৪০৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা (/২৩.৪ টেরাওয়াট আওয়ার) বিদ্যুৎ। যদি ধরেও নিই যে, এলএনজির আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য আগামী ৫ বছরে আর বাড়বে না, আর প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তির উৎপাদনের সঙ্গে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের পার্থক্য ৪৭ টাকাই থাকবে (উপরিউক্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী), তারপরও বছরে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করতে হবে কেবল এলএনজি আমদানি ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতেই। পিএসএমপি ২০১৬-তে বর্ণিত পরিকল্পনা অনুসারে কেবল এলএনজিই নয়, বরং নির্মাণাধীন পর্যায়ে রয়েছে মোট ৬ হাজার ১৬৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা পর্যায়ক্রমে উৎপাদনে আসবে ২০২৬ সাল নাগাদ, পরিকল্পনাধীন রয়েছে মোট ২ হাজার ৫২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা ২০৩২ সাল নাগাদ উৎপাদনে আসবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এদিকে জুন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট, যার ৩০ শতাংশ ছিল তরল জ্বালানিভিত্তিক (ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল), কয়লা ১১ শতাংশ এবং আমদানি করা বিদ্যুৎ ছিল ১০ শতাংশ।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট ব্যয় মেটাতে পেট্রোবাংলা, পিডিবি, বিপিসি, কয়লা খাত এবং ফার্নেস অয়েল খাত থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঁচ মাসের জন্য ৬০০ কোটি ডলারের বা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার (প্রতি ডলার ১০০ টাকা হিসাবে ধরে) চাহিদা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল। একই সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছে মজুত ছিল মাত্র ৩০০ কোটি ডলার [৭]। ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানি কমিয়ে আমদানি করা তেল, এলএনজি এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সময়ে সময়ে বন্ধ রাখায় ২০২৩ সালের পুরো গ্রীষ্ম বাংলাদেশে কেটেছে লোডশেডিংয়ের অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্যে। তবে এই লোডশেডিং করেও যে অর্থের খুব একটা সাশ্রয় হয়েছে তা বলা যাবে না। কারণ, অলস বসে থাকা কেন্দ্রগুলোর জন্যও রয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ, ঋণের কিস্তি পরিশোধসহ নানান খরচ। আর ঠিক এ কারণেই ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে তা তাদের কাছ থেকে কেনা বিদ্যুতের মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৫ শতাংশ [৮]।

উল্লিখিত কয়েকটি উদাহরণ আর সামান্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে স্পষ্টভাবেই বোঝা যায় যে, এযাবৎকালের ধারাবাহিক নীতি আর পিএসএমপি ২০১৬-এর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সংকটের গাড্ডায় ফেলে দিয়েছে। যে নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হয়, সাধারণ মানুষের জীবনের অসহায়ত্ব বাড়ে আর প্রাণ-প্রকৃতি সংকটের মুখে পড়ে; সে নীতি কেবল ভুল নয়, বরং অপরাধমূলক নীতি। এমন নীতি বাতিল করা আর নীতি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দুটোই জরুরি দাবি ছিল এবং আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে প্রকাশিত নতুন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতি আদতে কতটা নতুন, কতটা বাস্তবমুখী আর কতটা প্রাণ-প্রকৃতিবান্ধব হলো, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বটে। পরবর্তী আলোচনায় আমরা এ প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। আর এর শুরুতেই আমরা ছক ১ থেকে বিগত মহাপরিকল্পনা দুটোর বিভিন্ন সময়ের জন্য ঘোষিত লক্ষমাত্রা এবং খাতভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা দেখে নিতে পারি।

ছক ১: পিএসএমপি ২০১০ এবং ২০১৬ অনুযায়ী ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা এবং বিভিন্ন সময়ে খাতভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা [৯]

উৎস

পিএসএমপি ২০১০ অনুসারে ২০১৫ সাল নাগাদ ঘোষিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা (মেগাওয়াট)

২০১৫ সাল নাগাদ অর্জিত প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা (মেগাওয়াট)

২০১৫ সালে সর্বোচ্চ উৎপাদন (মেগাওয়াট)

পিএসএমপি ২০১৬ অনুসারে ২০২১ সাল নাগাদ ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা (মেগাওয়াট)

২০২১ সাল নাগাদ অর্জিত প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা (মেগাওয়াট)

২০২১ সালে সর্বোচ্চ উৎপাদন (মেগাওয়াট)

জানুয়ারি ২০২৪ নাগাদ অর্জিত প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা (মেগাওয়াট)

২ জানুয়ারি ২০২৪ সাল তারিখে সর্বোচ্চ উৎপাদন (মেগাওয়াট)

এ যাবৎকাল পর্যন্ত (২ জানুয়ারি ২০২৪ সাল তারিখ পর্যন্ত) সর্বোচ্চ উৎপাদন (মেগাওয়াট) 

কয়লা

৪৫০

২৫০

৯,০৩৬

৬,০০০

১,৭৬৮

১৩,৭৮৮ (২৯ এপ্রিল ২০২১ তারিখে এই পরিমাণ ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসে যা ছিল ২০২১ সালে সর্বোচ্চ)

৫,৪১২

১০,০৫৬

১৫,৬৪৮ (১৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে এই পরিমাণ ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ)

গ্যাস (প্রাকৃতিক গ্যাস + এলএনজি)

৯,৩৭৯

৭,৬২৮

৯,০০০

১১,৪৭৬

১১,৭০৮

তরল জ্বালানি

২,৬২৩

৩,৬৫৭

৩৫০০

৭,৬১৯

৬,৯৮২

বাঁধভিত্তিক জলবিদ্যুৎ (কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র)

২৩০

২৩০

২৩০

২৩০

২৩০

আমদানি

৫০০

৬০০

২০০০

১,১৬০

১,১৬০

সৌর

১১

২০০০

২২৯

৪৫৯

বায়ু

১০০

৩৭৮

মোট

১৩,২৯৩

১২,৩৬৫

২৩,১০৮

২২,৪৮২

২৫,৯৫১

বানরের পিঠা ভাগ

গল্পে আছে, এক গ্রামের দুই ইঁদুর গৃহস্থের ঘর থেকে পিঠা চুরি করে নিয়ে ভাগাভাগি করতে গিয়ে পড়ে যায় মহাবিপাকে। কে ভাগ করবে? কীভাবে ভাগ হবে? একজন আরেকজনকে ঠকাবে কি না, এই নিয়ে দুই ইঁদুরের মধ্যে বেজায় উত্তেজনা। মিটমাট করতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দুই ইঁদুর গেল এক বানরের কাছে। বানর শুরুতেই পিঠার এক বড় অংশে কামড় লাগিয়ে খেয়ে ফেলল। এরপর বাকি অংশটুকুর মাঝামাঝি দুই ভাগ করে দুই ইঁদুরকে দিল। ইঁদুর দুটি স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করল যে কাউকে কিছু না জিজ্ঞেস করেই বানর পিঠার বড় অংশ খেয়ে ফেলল কেন! বানর তখন উত্তর দিল, খেয়ে ফেলা পিঠাটা ছিল দুই ইঁদুরের মধ্যে পিঠা ভাগাভাগির কাজ করে দেওয়ার পারিশ্রমিক!

তো গল্পের ইঁদুররা নিজেদের পিঠা ভাগ করতে যায় বানরের কাছে, আর বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা নিজ দেশের জ্বালানি নীতি করার দায়িত্ব দেয় বিদেশি কোম্পানির কাছে। এই নীতি প্রণয়নে ধারাবাহিকভাবে পরামর্শক হিসেবে কাজ পেয়েছে জাপানের কোম্পানিগুলো আর ঋণ এসেছে জাপান তহবিল সংস্থা জাইকার তরফ থেকে। একই ঘটনা ঘটেছে ২০১০ সালের ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান’, ২০১৬ সালের ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান’ এবং ২০২৩ সালের নতুন নীতি ‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়নের ক্ষেত্রে। নীতিনির্ধারণে জাপানের এই সংশ্লিষ্টতা আপাতদৃষ্টিতে সরল মনে হলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এ দেশে জাপানের বিনিয়োগ আর অবকাঠামো নির্মাণে জাপানের বিভিন্ন কোম্পানির কাজপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতা হিসাবে নিলে সরল সাহায্যের আড়ালে জটিল সমীকরণের আভাস পাওয়া যায়।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে জাপানি অর্থায়ন হয়েছে ৪.০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (যার মধ্যে ১ শতাংশেরও কম এসেছে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে আর বাকি ৯৯ শতাংশ এসেছে ঋণ হিসেবে), যা একই সময়কালে অর্থায়নের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জার্মানির অর্থায়নের ১৬ গুণেরও বেশি। এই সময়কালে বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি অর্থায়নকৃত প্রথম ১০টি প্রকল্পের ৭টিই জাপানের। আবার একই সময়কালে সার্বিকভাবে জাপান ৫২.৫ শতাংশ অর্থায়ন করেছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে, ১৫.৭ শতাংশ, আর ১৪ শতাংশ অর্থায়ন করেছে যথাক্রমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন আর গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে [১০]। কেবল অর্থলগ্নিই নয়, বরং এসব প্রকল্পে জাপানি কোম্পানিগুলোর ব্যবসাও নিশ্চিত করা হয়েছে। যেমন: মাতারবাড়ি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ আর মালামাল সরবরাহের কাজ পেয়েছে জাপানের সুমিতোমো, তোশিবা এবং আইএইচআই কোম্পানি [১১]। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, একই ক্ষমতার কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে চীনের তুলনায় মাতারবাড়িতে ৮ থেকে ১০ গুণ খরচ বেশি হচ্ছে, যা ইতোমধ্যেই এটিকে এশিয়ার অন্যতম ব্যয়বহুল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিণত করেছে [১২], ঠিক একইভাবে জাপানি অর্থায়নে নির্মিতব্য মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও এর সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণের কাজ পেয়েছে জাপানি কোম্পানি নিপ্পন কই, অরিয়েন্টাল কন্সালট্যান্ট গ্লোবাল কোম্পানি ও পেন্টা ওশেন কন্সট্রাকশন কোম্পানি [১৩]। উল্লেখ্য যে, পিএসএমপি ২০১০-তে কয়লা আমদানি ও সার্বিক বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সুপারিশ করা হয় এবং উক্ত নীতি তৈরি হয় সে সময়ে জাপানের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থায় জড়িত সর্ববৃহৎ কোম্পানি টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ারের (টেপকো) সার্বিক কারিগরি সহায়তায়।

এই সময়কালে বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি অর্থায়নকৃত প্রথম ১০টি প্রকল্পের ৭টিই জাপানের। আবার একই সময়কালে সার্বিকভাবে জাপান ৫২.৫ শতাংশ অর্থায়ন করেছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে, ১৫.৭ শতাংশ, আর ১৪ শতাংশ অর্থায়ন করেছে যথাক্রমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন আর গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে।

গল্পের বানর তো তবুও অর্ধেক পিঠা খায় আর বাকি অর্ধেক ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু এত এত কোম্পানির ভিড়ে বাংলাদেশের ভাগে লাভের গুড়ের ছিটেফোঁটাও থাকে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি আর চুক্তিপত্রগুলোর গোপনীয়তা সেই সন্দেহকে বাড়িয়ে দেয় আরও বহুগুণ। স্বার্থের দ্বন্দ্বের বোঝা মাথায় নিয়ে এক হাতে নীতি প্রণয়ন আর অপর হাতে লগ্নি করা টাকার বহুগুণ মুনাফা হাতানোর এমন নির্লজ্জ প্রদর্শনী খুব কমই দেখা যায়।

নতুন নীতির ভেতর-বাহির

ভাত সেদ্ধ হয়েছে কি না, বুঝতে কয়েকটি চাল টিপে দেখাই যথেষ্ট। এর জন্য যেমন পাতিলসুদ্ধ ভাত টিপে টিপে দেখার প্রয়োজন হয় না, তেমনি কোনো নীতির নিয়ত বুঝতে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য, পরিসংখ্যানের উপস্থাপন আর ভাষার মারপ্যাঁচের দিকে দৃষ্টি দেওয়াই যথেষ্ট। সে হিসেবে ‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান ২০২৩’ (আইইপিএমপি-২০২৩) পড়ার শুরুতেই অনুসন্ধানী পাঠকের মনে খটকা লাগবে, যখন ‘এক্সিকিউটিভ সামারি’ অংশে ‘কপ’২৬-এ দেওয়া বাংলাদেশের ঘোষণায় বলা, ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রার কথা থেকে ‘নবায়নযোগ্য উৎস’ (renewable sources) শব্দযুগল বাদ দিয়ে ‘পরিষ্কার জ্বালানি’ (clean energy) শব্দযুগল ব্যবহার করা হয়। এটি যে ভুল নয় বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা ডকুমেন্টের বাকি অংশ পাঠে পরিষ্কার হয় [১৪]।

আইইপিএমপি-২০২৩-এ জিডিপির তিন ধরনের প্রাক্কলন করা হয়েছে। এক. ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষী জিডিপি প্রবৃদ্ধি (Prospective Plan 2041, PP2041 GDP case) হার যেখানে ২০২৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ এবং ২০৪০ সালে তা বেড়ে ৯.৮ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। দুই. আইএমএফ প্রাক্কলিত IMF Extension Case যেখানে ২০২৫ এবং ২০৪০-এ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশ এবং ৫.৪ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। তিন. উপরিউক্ত দুই অবস্থার মধ্যবর্তী অবস্থা যেটিকে In-between Case বলা হয়েছে, যেখানে ২০২৫ এবং ২০৪০-এ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশ এবং ৮.৬ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনামূলক পরিকল্পনা ও অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে আইইপিএমপি-২০২৩-তে PP2041 GDP case বিবেচনা করা হয়েছে। ঠিক একই বিবেচনায় ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জনসংখ্যা যথাক্রমে ১৯ কোটি ১০ লাখ, ২১ কোটি এবং ২১ কোটি ৪০ লাখ হবে বলে হিসাব করা হয়েছে। ২০৫০ সাল নাগাদ জ্বালানি চাহিদা ও জোগান প্রাক্কলনে মূলত Advanced Technology Scenario, ATS বিবেচনা করা হয়েছে, যেখানে বিগত সময়ে ধারাবাহিকতাগুলো (Reference Scenario) পরিবেশ এবং জলবায়ুগত পরিস্থিতি বিবেচনা নতুন নিয়মকানুন, পদ্ধতি এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে পরিবর্তিত হবে বলে আশা করা হয়েছে এবং এই চাহিদা ও জোগানের বছরভিত্তিক প্রবৃদ্ধি এবং খাতভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রাপ্তিতে ATS PP2041 এবং ATS In Between এই দুইয়ের সম্মিলনে পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

ATS PP2041 এবং ATS In Between অনুসারে সামগ্রিক জ্বালানি ব্যবহার (Total Final Energy Consumption, TFEC) ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সাল নাগাদ যথাক্রমে ৫৬, ৮৭, ১২৫ এবং ৫৫, ৮০, ১০৫ মিলিয়ন টন অব অয়েল ইকুইভ্যালেন্ট (Mtoe) হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০০০ ও ২০১৯ সালে এই জ্বালানি চাহিদা ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ৩৩ Mtoe। বলা হয়েছে, ATS PP2041 অনুসারে ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সাল নাগাদ প্রাক্কলিত জ্বালানি ব্যবহারের (TFEC) যথাক্রমে ২৮.৫ শতাংশ, ৩৬.৮ শতাংশ ও ৪২.৪ শতাংশ পূরণ হবে বিদ্যুতের মাধ্যমে আর ATS In Between অনুসারে ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সাল নাগাদ প্রাক্কলিত জ্বালানি ব্যবহারের যথাক্রমে ২৫.৪ শতাংশ, ৩২.৫ শতাংশ ও ৩৬.২ শতাংশ পূরণ হবে বিদ্যুতের মাধ্যমে। ATS PP2041 এবং ATS In Between অনুসারে সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সাল নাগাদ যথাক্রমে ২০৬, ৪১১, ৬৭৪ এবং ১৮৮, ৩৩৩, ৪৮৬ টেরাওয়াট-আওয়ার হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে ২০০০, ২০১০ ও ২০১৯ সালে বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১৬, ৪১ ও ৯১ টেরাওয়াট-আওয়ার। ATS PP2041 এবং ATS In Between অনুসারে ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সাল নাগাদ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যথাক্রমে ৫২ হাজার ৬০০, ৮৬ হাজার ১০০, ১ লাখ ৩৮ হাজার এবং ৪১ হাজার ৪০০, ৭৪ হাজার ৩০০ ও ১ লাখ ১১ হাজার মেগাওয়াট হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। ছক ২-এ আইইপিএমপি-২০২৩ থেকে প্রাপ্ত এবং লেখকের হিসাবকৃত তথ্য সন্নিবেশিত হলো।

ছক ২: আইইপিএমপি-২০২৩ অনুসারে বিভিন্ন সময়ে প্রাক্কলিত চাহিদা, উৎপাদন ক্ষমতা ও জোগানের তালিকা [১৫]

সময়কাল

সামগ্রিক জ্বালানি ব্যবহার (Total Final Energy Consumption, TFEC in Mtoe)

প্রাথমিক জ্বালানি জোগান (Total primary energy supply, TPES in Mtoe)

বিদ্যুৎ উৎপাদন (টেরাওয়াট-আওয়ার)

বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা (মেগাওয়াট)

প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা (Mtoe)

ATS PP2041

ATS In Between

ATS PP2041

ATS In Between

ATS PP2041

ATS In Between

ATS PP2041

ATS In Between

PP2041

In Between

২০৩০

৫৬

৫৫

৭৪

৭৩

২০৬

১৮৮

৫২,৬০০

৪১,৪০০

৩০.১

২৫.৬

২০৪১

৮৭

৮০

১১৮

১০৭

৪১১

৩৩৩

৮৬,১০০

৭৪,৩০০

৪৭.৪

৩৪.৮

২০৫০

১২৫

১০৫

১৬৯

১৩৮

৬৭৪

৪৮৬

১,৩৮,০০০

১,১১,০০০

৭২.৪

৪০.৪

 

জ্বালানি তেলের চাহিদা (Mtoe)

কয়লার চাহিদা (Mtoe)

কয়লার চাহিদা (মিলিয়ন টন)

‘পরিষ্কার’ জ্বালানিভিত্তিক উৎপাদন (Mtoe)

সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা (মেগাওয়াট)

PP2041

In Between

PP2041

In Between

ATS PP2041

ATS In Between

ATS PP2041

ATS In Between

PP2041

In Between

২০৩০

১৭.৬

১৭.৩

১৩.২

১৬.৭

২৪.৩

৩১.২

৫.৭

৫.২

২৯,২৫৭

২৭,০৮৭

২০৪১

৩০.৭

২৮.৮

১৫.২

২০.৪

২৭.৬

৩৮.১

২১.৯

১৭.৭

৫৮,৫৭৯

৫০,৩৬৪

২০৫০

৪৩.৪

৩৯.৭

১০.৫

২২.২

১৭.৪

৪১.২

৪৫.৫

৩৭.৮

৯৬,৭৬৭

৭০,৫১২

 

গ্যাসের চাহিদা মিলিয়ন ঘনফুট/ দিন, MMcfd)

এলএনজি চাহিদা [মিলিয়ন টন] (MMcfd)

এলএনজি আমদানি (মিলিয়ন টন)

অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন (মিলিয়ন ঘনফুট/ দিন, MMcfd)

পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা (মেগাওয়াট)

PP2041

In Between

PP2041 GDP Case

In Between

PP2041 GDP Case

In Between

স্থলভাগের গ্যাসকূপ

সমুদ্রবক্ষীয় গ্যাসকূপ

PP2041

In Between

২০৩০

৩,৩৮৪

২,৮৭৯

[১০.৮] (১,৪০৫)

[৬.৯] (৯০০)

১১

১,৭৭৯

২০০

২,৪০০

২,৪০০

২০৪১

৪,৯৮৫

৩,৭১৭

[২৫.২] (৩,২৮৭)

[১৫.৫] (২,০১৯)

২৫

১৬

৭৬৮

৯৩০

৪,৮০০

৪,৮০০

২০৫০

৮,১৪২

৪,৫৪৫

[৪৯.৪] (৬,৪৪২)

[২১.৮] (২,৮৪৫)

৪৯

২২

৪৭০

১,২৩০

৭,২০০

৪,৮০০

 

জ্বালানি তেল ও তেলজাত দ্রব্যের চাহিদা ও জোগান (মিলিয়ন টন)

কয়লার চাহিদা (মিলিয়ন টন)

কয়লার আমদানি (মিলিয়ন টন)

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কয়লার জোগান (মিলিয়ন টন)

বিপিসি

বেসরকারি শোধনাগার

এলপিজি

হাই স্পিড ডিজেল ও ফুয়েল অয়েল (আইপিপি)

মোট

PP2041

In Between

PP2041

In Between

সংক্ষিপ্ত পরিসর বিবেচনায়

২০৩০

১৩.৫

০.৫

২.৫

১৭.৫

২১.৬

২৭.৩

২৮.১

৩৫.৫

২০৪১

২৪.৯

০.৫

৩০.৪

২৪.৮

৩৩.৩

২৮.৩

৩৯.৪

২০৫০

৩২.৬

০.৫

১০

৪৩.১

১৭.১

৩৬.২

১৮.৩

৪৩.১

 

নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের প্রাক্কলিত ক্ষমতা (ATS Scenario) (মেগাওয়াট)

প্রাক্কলিত বিদ্যুতের দাম (টাকা/ ইউনিট)

সোলার পার্ক

ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ

স্থলভাগভিত্তিক বায়ুবিদ্যুৎ

সমুদ্রবক্ষীয় বায়ুবিদ্যুৎ

প্রথাগত বায়োমাসভিত্তিক বিদ্যুৎ

মডার্ন বায়োমাস (ওয়েস্ট টু এনার্জি)

বাঁধভিত্তিক জলবিদ্যুৎ

মোট

সৌরবিদ্যুৎ

স্থলভাগভিত্তিক বায়ুবিদ্যুৎ

২০৩০

৩,০৬১

২,০০০

৭৫০

১০

৯৩.৫

২৩০

৬,১৪৪.৫

২.৭

৫.৯

২০৪১

৩,৫০০

৬,০০০

১,৫৭৬

৬,০০০

১৫

১৫০

২৩০

১৭,৪৭১

২.৪

৫.৮

২০৫০

৬,০০০

১২,০০০

৫,০০০

১৫,০০০

২০

২৩০

২৩০

৩৮,৪৮০

২.১

৫.৮

 

উৎসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রাক্কলিত ক্ষমতা (PP2041 Scenario) (গিগাওয়াট)

 

কয়লা

তেল

গ্যাস (প্রাকৃতিক গ্যাস+এলএনজি)

বাঁধভিত্তিক জলবিদ্যুৎ + বায়ু + সৌর (ছাদভিত্তিক ব্যতীত)

পারমাণবিক

হাইড্রোজেন

অ্যামোনিয়া

বায়োমাস

আমদানি

মোট

২০৩০

১০.৬ (২০ শতাংশ)

৫.৮ (১১ শতাংশ)

২৫.৪ (৪৮ শতাংশ)

৩.৪ (৬.৫ শতাংশ)

২.৪ (৪ শতাংশ)

১.৩ (২.৪ শতাংশ)

০.০৫ (০.১ শতাংশ)

৪.২ (৮ শতাংশ)

৫২.৬**

২০৪১

৯.৬ (১১ শতাংশ)

০.৯ (১ শতাংশ)

৪১.৮ (৪৮ শতাংশ)

১১.৩ (১৩ শতাংশ)

৪.৮ (৫ শতাংশ)

৭.৬ (৯ শতাংশ)

২.৬ (৩ শতাংশ)

০.২ (০.২ শতাংশ)

৮.৭ (১০ শতাংশ)

৮৭.৫**

২০৫০

২.৮ (২ শতাংশ)

১.৪ (১ শতাংশ)

৬২.৯ (৪৬ শতাংশ)

২৬.২ (১৯ শতাংশ)

৭.২ (৫ শতাংশ)

২২.৪ (১৬ শতাংশ)

*

০.২৫ (০.২ শতাংশ)

১৪.৭ (১১ শতাংশ)

১৩৭.৮

 

উৎসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রাক্কলিত ক্ষমতা (In-Between Scenario) (গিগাওয়াট)

 

কয়লা

তেল

গ্যাস (প্রাকৃতিক গ্যাস+এলএনজি)

বাঁধভিত্তিক জলবিদ্যুৎ + বায়ু + সৌর (ছাদভিত্তিক ব্যতীত)

পারমাণবিক

হাইড্রোজেন

অ্যামোনিয়া

বায়োমাস

আমদানি

মোট

২০৩০

৯.৯ (২৪ শতাংশ)

৫.২ (১৩ শতাংশ)

১৫.৮ (৩৮ শতাংশ)

৩.২ (৭.৮ শতাংশ)

২.৪ (৫ শতাংশ)

০.৮ (২ শতাংশ)

*

০.১ (০.২ শতাংশ)

৪.১ (১০ শতাংশ)

৪১.৪**

২০৪১

১০.৯ (১৫ শতাংশ)

২.৫(৩.৩ শতাংশ)

৩০.৮ (৪১ শতাংশ)

১১.৩ (১৫ শতাংশ)

৪.৮ (৬ শতাংশ)

৪.৮ (৬ শতাংশ)

২.৬ (৩.৫ শতাংশ)

০.২ (০.২ শতাংশ)

৭.৭ (১০ শতাংশ)

৭৪.৩**

২০৫০

১১.৫ (১০ শতাংশ)

৬.৭ (৬ শতাংশ)

২৯.৩ (২৬ শতাংশ)

২৬.২ (২৩.৬ শতাংশ)

৪.৮ (৪ শতাংশ)

১১.২ (১০ শতাংশ)

৫ (৫ শতাংশ)

০.৩ (০.২ শতাংশ)

১৫.৭ (১৪ শতাংশ)

১১১.১**

* আইইপিএমপি-২০২৩ নীতিমালায় সুর্নিদিষ্টভাবে উল্লেখ করা নেই **একই ডকুমেন্টের বিভিন্ন অংশে প্রদত্ত উৎসভিত্তিক উৎপাদনের সামগ্রিক হিসাবে ঈষৎ গড়মিল রয়েছে

আমরা আগেই দেখেছি যে কীভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিবর্তে পরিষ্কার জ্বালানির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে আর এই চতুরতামূলক ভাষার মারপ্যাঁচের মধ্য দিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ, হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া, কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ সুবিধাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন–এই সবকিছুকে সৌর এবং বায়ুবিদ্যুতের সমার্থক হিসেবে হাজির করা হয়েছে। এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি নিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুতের মতো বিপজ্জনক বিদ্যুৎকে ‘পরিষ্কার’ জ্বালানির কাতারভুক্ত করা হয়েছে। (পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বহুমুখী বিপদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই বইতে: আনু মুহাম্মদ, কল্লোল মোস্তফা, মোশাহিদা সুলতানা সম্পাদিত, পারমাণবিক বিদ্যুৎ: বাংলাদেশে রূপপুর প্রকল্প ও বিশ্ব অভিজ্ঞতা, ২০২৩, দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড)।

চতুরতামূলক ভাষার মারপ্যাঁচের মধ্য দিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ, হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া, কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ সুবিধাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন–এই সবকিছুকে সৌর এবং বায়ুবিদ্যুতের সমার্থক হিসেবে হাজির করা হয়েছে। এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি নিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুতের মতো বিপজ্জনক বিদ্যুৎকে ‘পরিষ্কার’ জ্বালানির কাতারভুক্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া কোনো জ্বালানি নয়, বরং জ্বালানি থেকে পাওয়া শক্তির ধারক। যেমনটা ব্যাটারি কোনো জ্বালানি নয়, ঠিক তেমনি হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া। প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা থেকে যথাক্রমে উচ্চচাপ ও তাপে ‘স্টিম মিথেন রিফরমিং’ এবং ‘গ্যাসিফিকেশন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ‘কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ’-এর মাধ্যমে যদি ধরে রাখা হয়, তাহলে যে হাইড্রোজেন উৎপাদিত হয় সেটিকে বলা হয় ‘ব্লু’ হাইড্রোজেন। আর যদি ‘কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ’ ব্যবস্থা না রেখে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে চলে যেতে দেওয়া হয়, তাহলে উৎপন্ন হাইড্রোজেনকে বলা হয় ‘গ্রে’ হাইড্রোজেন। আবার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পানির মধ্যে প্রবাহিত করে ‘ইলেকট্রোলাইসিস’ প্রক্রিয়ায় যে হাইড্রোজেন তৈরি হয় সেটিকে বলা হয় ‘পিংক’ হাইড্রোজেন আর বায়ু কিংবা সৌরবিদ্যুৎকে ব্যবহার করে ‘ইলেকট্রোলাইসিস’ প্রক্রিয়ায় যে হাইড্রোজেন তৈরি হয় সেটিকে বলে ‘গ্রিন’ হাইড্রোজেন। প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রাকৃতিক গ্যাস কিংবা কয়লা থেকে প্রক্রিয়াজাত করে প্রতি কেজি হাইড্রোজেন তৈরিতে গড়পড়তা প্রায় ২০০ টাকার মতো খরচ হয় (প্রতি ডলার ১০০ টাকা হিসাবে ধরে)। এর সঙ্গে ‘কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ’-এর খরচ ধরলে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন মূল্য আরও বাড়ে আর পানিতে বিদ্যুৎ চালনা করে ‘ইলেকট্রোলাইসিস’ প্রক্রিয়ায় প্রতিকেজি হাইড্রোজেন তৈরিতে গড়পড়তা খরচ হয় ৫০০ টাকা। ফলে পৃথিবীজুড়ে উৎপাদিত হাইড্রোজেনের ৪৭ শতাংশ তৈরি হয় প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে আর যথাক্রমে ২৭ শতাংশ ও ২২ শতাংশ তৈরি হয় কয়লা ও তেলজাত দ্রব্য থেকে আর কেবল মাত্র ৪ শতাংশ হাইড্রোজেন ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হয় [১৬][১৭]। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হাইড্রোজেন, কয়লা কিংবা গ্যাস থেকে উৎপাদিত হাইড্রোজেনের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি খরুচে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড আর কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে, উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহণ আর শক্তির পুনরুৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়ায় ‘ব্লু’ হাইড্রোজেন, প্রাকৃতিক গ্যাস অথবা কয়লার তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি কার্বন নিঃসরণ করে, যার ফলে হাইড্রোজেনের পরিবেশগত ক্ষতিকর প্রভাব গ্যাস এবং কয়লার তুলনায় কম নয়, বরং বেশি [১৮]।

বাংলাদেশে এত পরিমাণ সৌর কিংবা বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ২০৫০ সাল নাগাদ নাই যে উদ্বৃত্ত বায়ু কিংবা সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা যাবে। অর্থাৎ ‘গ্রিন’ হাইড্রোজেন উৎপাদনের সম্ভাবনা শূন্য। বাকি রইল কয়লা ও গ্যাস পুড়িয়ে ‘গ্রে’ বা ‘ব্লু’ হাইড্রোজেন উৎপাদন কিংবা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রভিত্তিক ‘পিংক’ হাইড্রোজেন উৎপাদন, যার কোনোটাই নিরাপদ কিংবা দূষণমুক্ত উৎপাদন নয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে: কোন যুক্তিতে জ্বালানি নীতিতে হাইড্রোজেনকে ‘পরিষ্কার’ জ্বালানি উৎসের কাতারভুক্ত করা হলো? নিরাপদ হাইড্রোজেন স্টোরেজ তৈরি আর নিরাপদ হাইড্রোজেন পরিবহণের বিষয়টা নাহয় এই আলোচনার বাইরেই রাখলাম। বলে রাখা ভালো যে, অনিরাপদ হাইড্রোজেন সংরক্ষণ আর পরিবহণ ব্যবস্থার কারণে বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইডের তুলনায় ১২ গুণ বেশি ক্ষতিকর [১৯]।

অপরদিকে অ্যামোনিয়া গঠিত হয় নাইট্রোজেন আর হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে। বাতাসে থাকা নাইট্রোজেনকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আলাদা করে উচ্চচাপ ও তাপে হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যামোনিয়া উৎপাদন করা হয়। এই অ্যামোনিয়া সংরক্ষণ করে প্রয়োজনের সময় হাইড্রোজেন উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়, যে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে অথবা অ্যামোনিয়া প্রক্রিয়াজাতকারী ক্ষমতাসম্পন্ন ফুয়েল সেলের মাধ্যমে অ্যামোনিয়া সরাসরি শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে। সরাসরি দহনের মাধ্যমেও অ্যামোনিয়া থেকে শক্তি আহরণ করা যায়, তবে এতে অধিক পরিমাণ নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা দূষণের কারণ [২০]। একই আয়তনের তরল হাইড্রোজেনের তুলনার তরল অ্যামোনিয়া অধিক পরিমাণ শক্তি ধারণ করতে পারে বিধায় দীর্ঘসময়ের শক্তির বাহক হিসেবে অ্যামোনিয়া ব্যবহৃত হয়, আর স্বল্পসময়ে শক্তি ধরে রেখে দ্রুত রূপান্তরের কাজে হাইড্রোজেন ব্যবহৃত হয়। কাজেই এখানে স্পষ্ট যে, অ্যামোনিয়া উৎপাদন প্রক্রিয়া হাইড্রোজেন উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাশ্রয়ী মূল্যে যেমন দূষণমুক্ত বা পরিষ্কার হাইড্রোজেন উৎপাদন সম্ভব নয়, তেমনি অ্যামোনিয়াও পরিষ্কার হওয়া সম্ভব নয়। কাজেই আইইপিএমপি-২০২৩-এ পরিষ্কার জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন আর অ্যামোনিয়াকে উপস্থাপন করে ভবিষ্যৎ জ্বালানি জোগান এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় এই দুটি উপাদানকে হাজির করা আসলে একটা বড় রকমের ভাঁওতাবাজি।

হাইড্রোজেন আর অ্যামোনিয়াকে কেন্দ্র করে জাপানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়টিও আমাদের যথেষ্ট মনোযোগ দাবি করে। আইইপিএমপি-২০২৩ চূড়ান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকার এক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোনো রাখঢাক না রেখেই হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়াকে জ্বালানি জোগান অবকাঠামোয় যুক্ত করে নীতিমালা প্রণয়ন করায় সেই সময়ে বাংলাদেশ সফররত জাপানের বাণিজ্যমন্ত্রী এবং জাপানের বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাপানি কোম্পানি ‘নিউ এনার্জি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’-এর প্রধান মুখপাত্র বাংলাদেশে প্রথম অ্যামোনিয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাপানের আরেক কোম্পানি সুমিতোমো করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেনের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। উল্লেখ্য যে, এ কোম্পানির অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন প্ল্যান্ট করার ব্যবসা রয়েছে এবং গত বছরই চিলিতে বৃহদাকার হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া প্ল্যান্ট নির্মাণ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাপানের তোশিবা আর মিতসুবিশির প্রতিনিধি, যাদের রয়েছে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন প্ল্যান্ট নির্মাণ, সংরক্ষণ ও পরিচালনার ব্যবসা [২১] [২২]। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামোয় জাপানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো ছক-৪-এ।

আইইপিএমপি-২০২৩ চূড়ান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকার এক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোনো রাখঢাক না রেখেই হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়াকে জ্বালানি জোগান অবকাঠামোয় যুক্ত করে নীতিমালা প্রণয়ন করায় সেই সময়ে বাংলাদেশ সফররত জাপানের বাণিজ্যমন্ত্রী এবং জাপানের বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

নয়া নীতিমালায় উল্লিখিত অ্যামোনিয়া আর হাইড্রোজেন বাদ দিয়ে প্রকৃত নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসাব করলে (সৌর, বায়ু, বায়োমাস) ২০৩০, ২০৪১ এবং ২০৫০ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের যথাক্রমে ৬ শতাংশ, ৮ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ (টেবিল ৩ দ্রষ্টব্য)। অথচ পাশের দেশ ভারতে গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর এই আট মাসেই নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। সেখানে বৃহৎ বাঁধভিত্তিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যতীত নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৯৮ মেগাওয়াট, যা কিনা মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার (৪ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৮ মেগাওয়াট) ৩২ শতাংশ। ভারতে ইতোমধ্যে বায়ুবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ইউনিটপ্রতি মাত্র ২.৭ ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৩ টাকা মাত্র আর সৌরবিদ্যুতের প্রতি ইউনিট উৎপাদন ২ রুপিতে করা সম্ভব হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা মাত্র ২ টাকা ৬০ পয়সা (১ রুপি, ১ টাকা ৩১ পয়সা হিসাবে ধরে)। ভারত সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে চাহিদার মোট বিদ্যুতের ৫০ শতাংশের জোগান নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে করার ঘোষণা দিয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক ৫ লাখ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে [২৩] [২৪] [২৫] [২৬] [২৭] [২৮] প্রযুক্তির আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য কমতে থাকায় দেশে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের নানান কর্মযজ্ঞ চলছে, ঘোষিত হচ্ছে নিত্যনতুন লক্ষ্যমাত্রা। আইইপিএমপি-২০২৩ প্রণয়নকারী বিশেষজ্ঞদের এ বিষয়গুলো না জানা থাকার কোনো কারণ নেই। এমনকি এই নীতিমালায়ও ২০২১ সালের বাজারমূল্য হিসাবে কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজসম্পন্ন গ্যাসবিদ্যুৎ, হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ইউনিটপ্রতি উল্লেখ করা হয়েছে যথাক্রমে ৮.৪ টাকা, ১৪ টাকা ও ১৭ টাকা, যেখানে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের উৎপাদন খরচের হিসাব দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে মাত্র ৪ টাকা ও ৬ টাকা। কিন্তু লক্ষ্য যদি হয় কয়লা, তেল আর এলএনজি আমদানি বাণিজ্য বাড়ানো আর হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়ার নতুন বাজার তৈরি করা, তবে নানান অজুহাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে সহজেই বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া যায় এবং সেটাই করা হয়েছে এই নীতিমালায়। অবশ্য সামান্য যতটুকুই-বা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটার লাভের গুড়ও হয়তো চলে যাবে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি আর ব্যক্তির পকেটে। কারণ, পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মতো সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণেও লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয় না এবং নানা মহলে তদবির করে কোম্পানিগুলো সৌরবিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে নেয়। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনায় বাংলাদেশে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুতের মূল্য পড়ছে ৩ থেকে ৫ গুণ বেশি [২৯]।

ছক ৩: খাত ভিত্তিক প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

বিদ্যুৎ উৎপাদনী খাত

ATS PP2041 চিত্র (টেরাওয়াট-আওয়ার)

ATS In-Between চিত্র (টেরাওয়াট-ওয়ার)

২০৩০ সাল

২০৪১ সাল

২০৫০ সাল

২০৩০ সাল

২০৪১ সাল

২০৫০ সাল

কয়লা

৩৯.১ (১৯ শতাংশ)

৪৫.২ (১১ শতাংশ)

১৩.৫ (২ শতাংশ)

৫৬.৪ (৩০ শতাংশ)

৭০ (২১ শতাংশ)

৭৭.৮ (১৬ শতাংশ)

তেল

৮.২৪ (৪ শতাংশ)

৪.১ (১ শতাংশ)

৬.৮ (১ শতাংশ)

৯.৪ (৫ শতাংশ)

৩.৩ (১ শতাংশ)

৪.৯ (১ শতাংশ)

গ্যাস (প্রাকৃতিক গ্যাস+এলএনজি)

১০৭.১ (৫২ শতাংশ)

২১৪ (৫২ শতাংশ)

৩৫০.৫ (৫২ শতাংশ)

৭৭.১ (৪১ শতাংশ)

১২৬.৫ (৩৮ শতাংশ)

১৪৫.৮ (৩০ শতাংশ)

বাধভিত্তিক জলবিদ্যুৎ + বায়ু + সৌর

১২.৪ (৬ শতাংশ)

৩৩ (৮ শতাংশ)

৮৭.৬ (১৩ শতাংশ)

১১.৩ (৬ শতাংশ)

৩৬.৬ (১১ শতাংশ)

৭৭.৮ (১৬ শতাংশ)

পারমাণবিক

১৬.৫ (৮ শতাংশ)

৩৩ (৮ শতাংশ)

৪৭.২ (৭ শতাংশ)

১৫ (৮ শতাংশ)

৩০ (৯ শতাংশ)

২৯.২ (৬ শতাংশ)

হাইড্রোজেন

০ (০ শতাংশ)

৩৩ (৮ শতাংশ)

১০১.১ (১৫ শতাংশ)

০ (০ শতাংশ)

২০ (৬ শতাংশ)

৭৩ (১৫ শতাংশ)

অ্যামোনিয়া

*

*

*

*

৬.৭ (২ শতাংশ)

৭.৩ (১.৫ শতাংশ)

বায়োমাস

*

*

*

*

৩.৩ (১ শতাংশ)

৭.৩ (১.৫ শতাংশ)

আমদানী

২০.৬ (১০ শতাংশ)

৪১.১ (১০ শতাংশ)

৬৭.৪ (১০ শতাংশ)

১৭ (৯ শতাংশ)

৩৬.৬ (১১ শতাংশ)

৬৩.২ (১৩ শতাংশ)

মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন

২০৬ (১০০ শতাংশ)

৪১১ (১০০ শতাংশ)

৬৭৪ (১০০ শতাংশ)

১৮৮ (১০০ শতাংশ)

৩৩৩ (১০০ শতাংশ)

৪৮৬ (১০০ শতাংশ )

* আইইপিএমপি-২০২৩ নীতিমালায় সুর্নিদিষ্টভাবে উল্লেখ করা নেই

ভারতে ইতোমধ্যে বায়ুবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ইউনিটপ্রতি মাত্র ২.৭ ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৩ টাকা মাত্র আর সৌরবিদ্যুতের প্রতি ইউনিট উৎপাদন ২ রুপিতে করা সম্ভব হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা মাত্র ২ টাকা ৬০ পয়সা (১ রুপি, ১ টাকা ৩১ পয়সা হিসাবে ধরে)।

প্রাণ-প্রকৃতিবান্ধব সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে না হেঁটে নতুন নীতিমালা প্রণয়নকারীরা বাংলাদেশকে দেখিয়েছেন কয়লা, এলএনজি আর পারমাণবিক বিদ্যুতের পথ। সে হিসেবে বাংলাদেশে কয়লা আমদানি ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বেড়ে যথাক্রমে বছরপ্রতি ৩৫, ৩৯ ও ৪৩ মিলিয়ন টন হবে, যা কিনা ২০১৯ সালেও ছিল ৬.৯ মিলিয়ন টন। আর এলএনজি আমদানি ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বেড়ে দাঁড়াবে কমপক্ষে যথাক্রমে ৭, ১৬ ও ২২ মিলিয়ন টন, যা ২০২১-২২ সালেও ছিল ৫ মিলিয়ন টন [৩০]। এত পরিমাণ আমদানিতে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা জোগান নিশ্চিতের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে বন্দরকেন্দ্রিক অবকাঠামো, রাস্তাঘাট আর পরিবহণ নেটওয়ার্ক। সেই সঙ্গে রয়েছে মাটি, পানি আর বাতাস দূষণের চরমতম আশঙ্কা। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকা নাম লিখিয়েছে শীর্ষ দূষিত নগরের তালিকায়। প্রশ্ন হচ্ছে: এই নীতিমালায় ঘোষিত লক্ষমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে যদি আমদানি ব্যয়ের বোঝার অতিরিক্ত চাপে অর্থনীতির কোমর ভেঙে পড়ে কিংবা ক্ষতিকর জ্বালানি ব্যবহারের দূষণে আমাদের শ্বাসের বাতাসটুকু বিষাক্ত হয়ে যায়, তাহলে এর দায় কে নেবে?

প্রশ্ন হচ্ছে: এই নীতিমালায় ঘোষিত লক্ষমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে যদি আমদানি ব্যয়ের বোঝার অতিরিক্ত চাপে অর্থনীতির কোমর ভেঙে পড়ে কিংবা ক্ষতিকর জ্বালানি ব্যবহারের দূষণে আমাদের শ্বাসের বাতাসটুকু বিষাক্ত হয়ে যায়, তাহলে এর দায় কে নেবে?

ছক ৪: আইইপিএমপি-২০২৩-এ বর্ণিত বাংলাদেশের জন্য উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রা আর জাপানের স্বার্থ

বিষয়

বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা

জাপানের বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসাকেন্দ্রিক স্বার্থ

বৈদ্যুতিক গাড়ি

২০৫০ সালের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির ৪০ শতাংশ এবং ব্যবহৃত মোট বাস-ট্রাকের ১০ শতাংশ বিদ্যুৎচালিত হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০২১ সালে মোট আমদানি করা গাড়ির ৬৩ শতাংশ আসে জাপান থেকে, যার বাজারমূল্য ছিল ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একক দেশ হিসেবে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের গাড়ির বাজার ছিল জাপান থেকে আমদানি করা গাড়ির দখলে। শতকরা হিসাবে ২০১৩ সাল ব্যতীত (৪৬ শতাংশ) ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ৫০ শতাংশেরও বেশি গাড়ি আমদানি হয় জাপান থেকে, যা ২০১৬ সালে ছিল সর্বোচ্চ ৮১.৭ শতাংশ [৩১]। অন্যদিকে জাপান সরকার ২০২১ সালে ঘোষণা দিয়েছে যে, ২০৩৫ সালের মধ্যে জাপানের নির্মিত সব গাড়ি হবে বিদ্যুচ্চালিত [৩২]। জাপানে নির্মিত গাড়ির একটি বড় বাজার হিসেবে বাংলাদেশের নীতিমালায় বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিঃসন্দেহে জাপানের গাড়িশিল্প সহায়ক হবে।

হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া

২০২৩ থেকে ২০৫০ সাল মধ্যবর্তী সময়ে ৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, যাতে দরকার হবে ৬.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা

জাপান সরকারের ঘোষিত ‘ক্লিন এনার্জি স্ট্র্যাটেজি’ অনুসারে হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং আনুষঙ্গিক অবকাঠামো তৈরিতে জাপান বছরপ্রতি ৩০০ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (প্রতি টাকা ১.৩২ ইয়েন ধরে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগ করবে। এই স্ট্র্যাটেজির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে অ্যামোনিয়ার চাহিদার ক্ষেত্র তৈরি করা এবং প্রধানত এশিয়ার কিছু দেশে ২০৩৫ সাল থেকে অ্যামোনিয়া সরবরাহ শুরু করা এবং প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, বছরপ্রতি অন্তত ৩ মিলিয়ন টন অ্যামোনিয়া সরবরাহ করা। ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করা ব্লু এবং গ্রিন হাইড্রোজেনের দাম কেজিপ্রতি যথাক্রমে ২.৮২, ২.৫, ২.২৫ মার্কিন ডলার এবং ৪.৩৬, ৩.৪৩, ২.৬৬ মার্কিন ডলার হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। একইভাবে ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করা ব্লু এবং গ্রিন অ্যামোনিয়ার টনপ্রতি দাম যথাক্রমে ৩৫৫, ৩২৬, ৩০২ মার্কিন ডলার এবং ৬৩২, ৪৯২, ৩৭৮ মার্কিন ডলার হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে [৩৩]।

এলএনজি টার্মিনাল

নতুন নীতিমালায় মাতারবাড়িতে স্থলভাগভিত্তিক ১০০০ MMcfd গ্যাস সরবরাহ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ তৈরি হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পায়রায় ৬৩০-১,০০০ MMcfd এবং মহেশখালীতে ৫০০-৭৫০ MMcfd গ্যাস সরবরাহ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।

·   মহেশখালীতে বাংলাদেশের কোম্পানি সামিট গ্রুপের ৫০০ MMcfd গ্যাস সরবরাহ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। গত বছর এই একই গ্রুপের আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। স্থলভাগ ভিত্তিক ও ভাসমান এলএনজি অবকাঠামো নির্মাণ ও সরবরাহ কাজ সম্পন্ন করতে একই বছর জাপানের কোম্পানি জেরার সঙ্গে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের (২০ হাজার কোটি টাকা) চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশের কোম্পানি সামিট। এই একই কোম্পানি ‘জেরা’ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসায় নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে ২০১৯ সালে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির ২২ শতাংশ শেয়ার ৩৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ‘জেরা’ ২০১৫ সালে জাপানের ‘টেপকো’ (TEPCO) এবং চুবু (Chubu Electric Power)-এর যৌথ অংশীদারত্বের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এবং ২০১৯ সালের মধ্যে টেপকো এবং চুবুর জ্বালানি সরবহার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মালিকানা গ্রহণ করে জাপানের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসার কোম্পানিতে পরিণত হয় [৩৪] [৩৫]।

·   ২০২১ সালে জাপানের কোম্পানি টোকিও গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডকে মাতারবাড়িতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং অবকাঠামো নির্মাণের জন্য টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরির কাজ দেওয়া হয় [৩৬]।

স্বল্পমেয়াদি উন্নয়নের চটকদার ঝলক দেখাতে নীতিনির্ধারকরা ঘি ধার করে চলেছেন বিদেশি ব্যাংক আর কোম্পানিগুলো থেকে, কিন্তু আখেরে এর মাশুল গুনতে হচ্ছে এ দেশের সাধারণ মানুষকেই। নিজস্ব সক্ষমতার চর্চা বাদ দিয়ে বিদেশি অর্থায়নে আর স্বার্থান্ধ গোষ্ঠীর নির্দেশনায় করা নীতির বাস্তবায়নের মাধ্যমে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে দেশি-বিদেশি কিছু কোম্পানি আর ব্যক্তি। এর মাঝেই গড়ে উঠেছে প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র, ব্যবসা হয়েছে দেশি-বিদেশি সাপ্লাইয়ার, ঠিকাদার, আর পরামর্শক কোম্পানির অথচ প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন কখনো ১৬ হাজার মেগাওয়াটও ছাড়ায়নি। আমদানি ব্যয় মেটাতে দফায় দফায় বেড়েছে গ্যাস আর বিদ্যুতের দাম, ডলার সংকটে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার চালানে টান পড়ায় পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানি বন্ধ রাখায় গত বছরের প্রায় পুরোটা সময় মানুষের কাটাতে হয়েছে লোডশেডিংয়ের অসহনীয় যন্ত্রণায়। অবশ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে আমদানি ব্যয় সাশ্রয় করা গেলেও অলস বসে থাকা কেন্দ্রগুলোর বিপরীতে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা ‘ক্যাপাসিটি চার্জের’ নামে ঠিকই আদায় করে নিয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থ আর বিগত ১৪ বছরে এর পরিমাণ ৯০ হাজার কোটি টাকা [৩৭]। নতুন নীতিতে ন্যূনতম হিসাবেই ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সালের মধ্যে ৪১ হাজার মেগাওয়াট, ৭৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ১ লাখ ১১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা হবে একই সময়ে যথাক্রমে ২৭ হাজার মেগাওয়াট, ৫০ হাজার মেগাওয়াট এবং ৭০ হাজার মেগাওয়াট। ঘর পোড়া গরু নাকি সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। আমাদের তো প্রয়োজনের অতিরিক্ত ১০ হাজার মেগাওয়াটের অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতেই ইতোমধ্যে রিজার্ভের জমানো আম আর পিঠ বাঁচানো ছালা দুটোই গেছে। তাই এখনই সতর্ক না হলে নতুন করে শুরু করার মতো কোনো অবলম্বনই হয়তো আর অবশিষ্ট থাকবে না।

এর মাঝেই গড়ে উঠেছে প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র, ব্যবসা হয়েছে দেশি-বিদেশি সাপ্লাইয়ার, ঠিকাদার, আর পরামর্শক কোম্পানির অথচ প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন কখনো ১৬ হাজার মেগাওয়াটও ছাড়ায়নি। আমদানি ব্যয় মেটাতে দফায় দফায় বেড়েছে গ্যাস আর বিদ্যুতের দাম

ন্যূনতম জবাবদিহিতাহীন পরিবেশে বাহারি নামে করা একের পর এক মহাপরিকল্পনা আদতে লুটের মেশিনই সচল রাখছে। তাই বর্তমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতিটিও হয়তো কয়েক বছর পর নতুন নামে পরিবর্তিত হবে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর পুরোনো নিয়তে করা নতুন নীতির মাধ্যমে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত পরিবর্তনের আশা করলে বোকামির মাশুল বরাবরের মতো সাধারণ মানুষেরই মেটাতে হবে। দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক অনাচার আর লুটপাটের ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা কোনো টোটকা মলমে সারবে না। এই দুর্বৃত্তায়নের চক্র ভাঙতে প্রয়োজন শাসকগোষ্ঠীর নিয়তের পরিবর্তন, মহাপরিকল্পনা তৈরিতে সর্বজনের অংশগ্রহণ আর নিজেদের সক্ষমতার জায়গাগুলোর আশু অনুসন্ধান।

মওদুদ রহমান: প্রকৌশলী, গবেষক ও লেখক। ইমেইল: mowdudur@gmail.com  

তথ্যসূত্র:

[১] Japan International Cooperation Agency (JICA) website, https://www.jica.go.jp/Resource/project/english/bangladesh/016/outline/index.html, accessed on 6 January, 2024

[২] সর্বজনকথা, ৩য় বর্ষ: ৩য় সংখ্যা, ‘পিএসএমপি ২০১৬: গোঁজামিলে ঠাসা এক মহা দলিল,’ মে-জুলাই ২০১৭, https://sarbojonkotha.info/pdf/sk-11-psmp-2016-53-56.pdf

[৩] Asian Development Bank, Wind Energy Future in Asia, 2012.

[৪] Hydrocarbon Unit, Energy and Mineral Resources Division, Ministry of Power, Energy and Mineral Resources, ‘Energy Scenario of Bangladesh 2021-22,’ http://www.hcu.org.bd/sites/default/files/files/hcu.portal.gov.bd/publications/da1f3395_2c8f_4608_a48c_d184d5925d45/2023-03-14-07-47-0d3be29ec0b5cfc0dc6055e8eec23e37.pdf

[৫] The Business Standard, ‘LNG-based power cost was Tk49.49 per kwh last year: Sanem,’ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, https://www.tbsnews.net/bangladesh/energy/lng-based-power-will-cost-tk4949-kwh-sanem-702794

[৬] বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২-২৩।

[৭] প্রথম আলো, ‘ডলার–সংকটে ভুগছে বিদ্যুৎ–জ্বালানি, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ https://www.prothomalo.com/bangladesh/t1lpzjnm2d

[৮] দ্য ডেইলি স্টার,ডলার সংকটে বাড়ছে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, https://bangla.thedailystar.net/environment/natural-resources/electricity-fuel/news-454911

[৯] Bangladesh Power Development Board website, https://bpdb.gov.bd/, assessed on 5 January, 2024

[১০] Aid Atlas, https://aid-atlas.org/profile/japan/bangladesh/energy/2010-2021?usdType=usd_disbursement, assessed on 5 January, 2024

[১১] Sumitomo Corporation website, https://www.sumitomocorp.com/en/jp/news/release/2017/group/20170823, assessed on 5 January, 2024

[১২] Ghee Pee, Institute of Energy Economics and Financial Analysis, ‘Japan-funded Matarbari coal plant in Bangladesh costs 8 to 10 times more than comparable plants in China’ 1 June, 2022, https://ieefa.org/resources/japan-funded-matarbari-coal-plant-bangladesh-costs-8-10-times-more-comparable-plants

[১৩] Dhaka Tribune, ‘Matarbari deep sea port by 2025,’ 23 September, 2020, https://www.dhakatribune.com/bangladesh/224111/matarbari-deep-sea-port-by-2025

[১৪] 26th Session of the Conference of the Parties (COP26), United Nations Framework Convention on Climate Change (UNFCCC), https://unfccc.int/sites/default/files/resource/BANGLADESH_cop26cmp16cma3_HLS_EN.pdf

[১৫] Ministry of Power, Energy and Mineral Resources, Government of the People’s Republic of Bangladesh, ‘Integrated Energy and Power Master Plan (IEPMP) 2023,’ July, 2023

[১৬] Osman, A.I., Mehta, N., Elgarahy, A.M. et al. Hydrogen production, storage, utilisation and environmental impacts: a review. Environ Chem Lett 20, 153–188 (2022). https://doi.org/10.1007/s10311-021-01322-8

[১৭] International Renewable Energy Agency website, https://www.irena.org/Energy-Transition/Technology/Hydrogen, accessed on 6 January, 2024

[১৮] Blaine Friedlander,’Touted as clean, ‘blue’ hydrogen may be worse than gas or coal,’ 12 August, 2021 https://news.cornell.edu/stories/2021/08/touted-clean-blue-hydrogen-may-be-worse-gas-or-coal

[১৯] Nick Ferris Energy Monitor, ‘The underreported global warming impact of hydrogen gas’ 24 October, 2023, https://www.energymonitor.ai/tech/hydrogen/weekly-data-the-underreported-global-warming-impact-of-hydrogen-gas/?cf-view

[২০] Joseph El Kadi et. al, ‘H2 and NH3 – the Perfect Marriage in a Carbon-free Society,’ The Chemical Engineer, 28 May, 2020, https://www.thechemicalengineer.com/features/h2-and-nh3-the-perfect-marriage-in-a-carbon-free-society/

[২১] The Business Standard, ‘Japanese investors welcome govt’s move to adopt integrated energy master plan on renewable, advanced tech,’ 23 July, 2023, https://www.tbsnews.net/bangladesh/energy/japanese-investors-welcome-govts-move-adopt-integrated-energy-master-plan

[২২] Sumitomo Corporation, ‘Memorandum concluded on green hydrogen and ammonia production in Chile,’ 3 February, 2023, https://www.sumitomocorp.com/en/jp/news/topics/2023/group/20230203

[২৩] Ministry of New and Renewable Energy website, Government of India, https://mnre.gov.in/year-wise-achievement/, accessed on 6 January, 2024

[২৪] Ministry of Power website, Government of India, https://powermin.gov.in/en/content/power-sector-glance-all-india, accessed on 6 January, 2024

[২৫] Ministry of New and Renewable Energy, Government of India, ‘The tariff of wind power generation discovered in latest bid of SECI is Rs 2.69-2.70 per unit,’ 2 December, 2021 https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1777295

[২৬] Jyoti Gulia et. al, ‘Why India’s Solar Power Tariffs Reached an Historic Low,’ JMK Research & Analytics, Institute for Energy Economics and Financial Analysis, December, 2020 https://ieefa.org/wp-content/uploads/2020/12/Why-Solar-Power-Tariffs-in-India-Reached-an-Historic-Low_December-2020.pdf

[২৭] The Economic Times, ‘India to achieve 500 GW renewables target before 2030 deadline: RK Singh,’ 25 September, 2013, https://economictimes.indiatimes.com/industry/renewables/india-to-achieve-500-gw-renewables-target-before-2030-deadline-rk-singh/articleshow/103936965.cms

[২৮] Fatih Birol et. al, ‘India’s clean energy transition is rapidly underway, benefiting the entire world,’ International Energy Agency, 10 January, 2022, https://www.iea.org/commentaries/india-s-clean-energy-transition-is-rapidly-underway-benefiting-the-entire-world

[২৯] শেয়ার বিজ, ‘রেন্টাল-কুইক রেন্টালের ভূত এখন সৌরবিদ্যুতে!’ ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ https://sharebiz.net/%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%87%E0%A6%95-%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AD/

[৩০] The Financial Express, ‘Heavy reliance on LNG import,’ 8 November, 2023, https://thefinancialexpress.com.bd/views/views/heavy-reliance-on-lng-import

[৩১] Observatory of Economic Complexity website, https://oec.world/en/profile/bilateral-product/cars/reporter/bgd?latestTrendsFlowSelector=flow1, accessed on 5 January, 2024

[৩২] International Trade Administration, Japan Transition To Electric Vehicles, 7 July, 2021, https://www.trade.gov/market-intelligence/japan-transition-electric-vehicles

[৩৩] Masashi Watanabe, Ammonia Strategy and Policy in Japan, Ministry of Economy Trade and Industry, https://www.jogmec.go.jp/content/300381295.pdf

[৩৪] The Daily Star, ‘Summit signs $2b MoU with Japan’s Jera,’ 28 April, 2023, https://www.thedailystar.net/business/economy/news/summit-signs-2b-mou-japans-jera-3306146

[৩৫] JERA website, https://www.jera.co.jp/en/corporate/about/origin, accessed on 5 January, 2024

[৩৬] The Financial Express, Japan firm to study feasibility of Matarbari LNG terminal, 11 January, 2021, https://thefinancialexpress.com.bd/trade/japan-firm-to-study-feasibility-of-matarbari-lng-terminal-1610332704

[৩৭] প্রথম আলো, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ একটি ‘লুটেরা মডেল,’ ৯ জুলাই ২০২৩ https://www.prothomalo.com/business/wvgq6uqmwj

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •