সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কনভেনশন
গত ২রা অক্টোবর ২০২৩, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কনভেনশন-২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এই কনভেনশনের শুরুতে যে ধারণাপত্র উপস্থাপন করা হয় গুরুত্ব বিবেচনা করে তা এখানে প্রকাশ করা হলো।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যু’নামে একটি নিবন্ধে ব্রিটিশ সাহিত্যসমালোচক ও অধ্যাপক টেরি ইগলটন দেখিয়েছিলেন বিশ্বায়নের করাল গ্রাসে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক প্রয়োজনের পরিপূরক মানুষ তৈরি ও জ্ঞান সাধনার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পুঁজিপতিদের মুনাফার অবাধ ক্ষেত্রে পরিণত করার নীলনকশার বাস্তবায়ন চলছে। শাসকগোষ্ঠী শিক্ষার মর্মবস্তু ধ্বংস করে একদিকে যেমন ফ্যাসিবাদের সাংস্কৃতিক জমিন তৈরি করছে, অন্যদিকে চলছে নয়া উদারীকরণ অর্থনীতির প্রবল জোয়ার। নয়া উদারীকরণ নীতি ক্রমাগত সামাজিক সুরক্ষা খাতকে সংকুচিত করছে। ফলে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ পরিষেবা খাতসমূহ পরিণত হয়েছে পুঁজিপতিদের মুনাফা লিপ্সার অন্যতম ক্ষেত্রে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে একদিকে যেমন মুনাফার পাহাড় গড়া হচ্ছে, অন্যদিকে সংকুচিত করা হচ্ছে শিক্ষার অধিকার।
আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও মৃত্যুপথযাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)-এর সংশোধিত ১২ বছর মেয়াদি কৌশলপত্রের (২০১৮-২০৩০) বাস্তবায়ন চলছে। ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে মঞ্জুরি কমিশন ২০ বছর মেয়াদি উচ্চশিক্ষার কৌশলপত্র: ২০০৬-২০২৬ (Strategic Plan for Higher Education : ২০০৬-২০২৬) নামে একটি পরিকল্পনা হাজির করে, যা ২০১৮ সালে সংশোধন করে ৪ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে দ্বিতীয় ধাপে কৌশলপত্র (২০১৮-২০৩০) আকারে হাজির করে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমরা এর বিরোধিতা করি। আমরা দেখিয়েছিলাম, এই কৌশলপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক চরিত্র ধ্বংস করে উচ্চশিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করবে। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষার মর্মবস্তু ধ্বংস করে শিক্ষাকে ‘বাজারমুখী’ করবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান চিত্র দেখলেই আমাদের বক্তব্যের সত্যতা কতখানি তা বোঝা যায়। বিগত ১৭ বছরে ক্রমাগত বেড়েছে বেতন-ফি, এসেছে সিলেবাসে পরিবর্তন। মৌলিক বিষয়গুলোর আসন কমেছে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিভাগ খোলা, বাণিজ্যিক কোর্স চালুসহ চলছে শিক্ষাবিধ্বংসী নানা আয়োজন। ২০১৬ সালে কৌশলপত্র বাস্তবায়নের ১০ বছরের অভিজ্ঞতার সার-সংকলন আমরা পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করেছিলাম, যা ‘সর্বগ্রাসী অক্টোপাসের কবলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। শুরু থেকেই আমাদের সংগঠন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, জনগণের বিভিন্ন অংশের কাছে এ কৌশলপত্রের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে মতামত গঠন ও আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়।
নিচে ইউজিসির কৌশলপত্রে শিক্ষার ওপর নানামাত্রিক আক্রমণের যে পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। কৌশলপত্রে বলা হয়েছে-
১. সরকার আগামী ২০ বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে তার বরাদ্দের অংশ ৯০% থেকে কমিয়ে ৭০%-এ হ্রাস করার পরিকল্পনা করতে পারে। অর্থায়নের ঘাটতি পূরণ করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থের উৎস তৈরি করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে টিউশন ফি বৃদ্ধি ও ছাত্রঋণের প্রকল্প প্রবর্তন করতে হবে।
২. অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির কয়েকটি খাতের মধ্যে রয়েছে ছাত্রবেতন বৃদ্ধি, আবাসন ও ডাইনিং চার্জ বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা ভাড়া দেওয়া, ক্যাফেটেরিয়া ভাড়া, কনসালটেন্সি সার্ভিস, বিশ্ববিদ্যালয় বিমা ইত্যাদি।
৩. চাকরি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ছাত্রসংখ্যা, বিষয়বস্তু, সিলেবাস নির্ধারিত হবে এবং এর ওপরবিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নির্ভর করবে।
৪. ঐতিহাসিকভাবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মানবিক ও প্রকৃতি বিজ্ঞান পড়ানো হয় তার সঙ্গে বর্তমান চাকরি বাজার বা বাস্তব জীবন ধারণের সম্পর্ক খুবই কম। ইতোমধ্যে গত কয়েক বছরের জ্ঞানবিজ্ঞানের শাখায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।
৫. স্থানীয় ও বৈশ্বিক চাহিদাসমূহ পূরণের লক্ষ্যে ব্যবহারিক জ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ব্যবসায় ও বাণিজ্যের মতো বিষয়গুলোতে ছাত্র সংযোগ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।
৬. প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ থেকে বোঝা যায় কিছু সংখ্যক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভাবনাময়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বাড়লে পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। ফলে শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটবে।
৭. আবাসিক হলের ব্যবস্থা ছাত্রদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটের মতো বিভিন্ন প্রশাসনিক কাঠামোতে প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে ও উপাচার্য নিয়োগের ভূমিকা রাখার মধ্য দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
৯. ডিন ও প্রভোস্ট পদমর্যাদার ব্যক্তিদের মধ্য থেকে পর্যায়ক্রমে উপাচার্য সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যদের মনোনয়ন দেবেন।
১০. মঞ্জুরি কমিশনকে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ নামে নামকরণ করা যেতে পারে। এটা কমিশনকে একটি ভালো ভাবমূর্তি দেবে এবং কর্তৃত্ব ও ভূমিকাকে শক্তিশালী করবে।
১১. গবেষণার তহবিল বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে নিয়ে ‘গবেষণার বাণিজ্যিকীকরণ’ করতে হবে। তত্ত্বগত গবেষণা,যা তুলনামূলক ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ, তা কমিয়ে দেশের ব্যবহারিক চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ গবেষণা বাড়াতে হবে।
১২. অনলাইন শিক্ষণ, ভার্চুয়াল ক্লাসরুম ইত্যাদি পদ্ধতির প্রয়োগ বাড়াতে হবে।
১৩. উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল সচল করতেহবে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে IQAC প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১৪. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
গত ১৭ বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র বেতন-ফি বেড়েছে বিপুল হারে। ২০০৬ সালের পর থেকে যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, প্রত্যেকেই এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে। কৌশলপত্রের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এবং আয় বাড়ানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ আয় কথাটার অর্থ হলো, রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ কমবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। কৌশলপত্র অনুসারে এ আয়ের পথগুলো হলো: ছাত্র বেতন বৃদ্ধি, আবাসন ও ডাইনিং চার্জ বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা ভাড়া দেওয়া, ক্যাফেটেরিয়া ভাড়া, কনসালটেন্সি সার্ভিস, বিশ্ববিদ্যালয় বিমা ইত্যাদি। এভাবে রাষ্ট্র-সরকার শিক্ষার আর্থিক দায়িত্বকে কার্যত অস্বীকার করছে।
সরকার বলছে,‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সময় শেষ, দেশ এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ প্রবেশ করেছে। এখন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা হবে ‘স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা’ আর ক্যাম্পাস হবে ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’। কথাগুলো শুনতে ভালো লাগলেও এর মধ্যে নিহিত আছে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুযাত্রা’ । এই স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হবে? বলা হচ্ছে, স্মার্ট যুগের বিশ্ববিদ্যালয় হবে ‘ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রি’র সেতুবন্ধ। অর্থাৎ সহজ কথায় বললে ইন্ডাস্ট্রির চাহিদাপূরণ করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, বিষয়বস্তু, ধরন ইত্যাদি পরিচালিত হবে পুঁজির স্বার্থে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করবে দেশি-বিদেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠান। সাধারণভাবে এটা সবাই জানেন যে, পুঁজির স্বার্থ মুনাফার সর্বোচ্চকরণ। যেখানে মুনাফার স্বার্থ রক্ষিত হয়,সেখানে জনগণের স্বার্থ বিঘ্নিত হতে বাধ্য। ফলে জনগণের অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক স্বার্থের সেবা না করে মুষ্টিমেয় মালিকশ্রেণির স্বার্থে ব্যবহৃত হবে। আর এ কারণে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পড়ানো হবে এবং গবেষণার বিষয়বস্তু কী হবে তা নির্ধারণ করে দেবে। এতে একদিকে জ্ঞানচর্চা, সত্যানুসন্ধান যেমন মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক স্বায়ত্তশাসনের ওপর নেমে আসবে বহুমুখী আক্রমণ। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গবেষণা খাতে অর্থ বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন করেছে। এভাবে বেসরকারি পুঁজির বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশের পথ প্রশস্ত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নাইট কোর্স, উইকেন্ড কোর্স, এক্সিকিউটিভ কোর্স, প্রফেশনাল কোর্সপ্রভৃতি নামে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এসব কোর্স সম্পন্ন করতে এক থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। এসব কোর্স শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণকে ত্বরান্বিত করছে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। ছাত্র-শিক্ষকের মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করছে এবং অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক ডিসিপ্লিন-এর ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উচ্চশিক্ষার কৌশলপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয়েরউৎস হিসেবে অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়াসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাড়া দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ কয়েক বছরেই অবকাঠামোর বাণিজ্যিক ব্যবহার ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, জিমনেসিয়াম, ডরমিটোরি, কনফারেন্স রুম, টিএসসি ইত্যাদি ভাড়া দেওয়া হয়। বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবন ও হলের ছাদ মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার, বিভিন্ন মোড়ে বিজ্ঞাপনী কোম্পানির বিল বোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা ব্যক্তিমালিকানাধীন দোকানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। প্রশাসন ছাত্রদের অধিকার সংকুচিত করেই এসব অবকাঠামো ভাড়া দিচ্ছে। খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলো প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
উচ্চশিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির নামে ২০০৯ সালে ইউজিসির কৌশলপত্রে হেকেপ প্রজেক্ট যুক্ত হয়। কয়েক দফায় সংশোধিত এ প্রকল্প শেষ হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। পুরো প্রকল্পের ফলাফল হিসেবে আমরা জ্ঞান উৎপাদনের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য কিছুই পাইনি। পেয়েছি কিছু অবকাঠামোগত কর্মকা- আর ব্যাপক দুর্নীতি। হেকেপ-এর প্রজেক্ট কোন বিভাগ পাবে তা নিয়ে চলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এমনকি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রজেক্টের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে রেষারেষিতে বন্ধ ছিল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। Public Private Partnership (PPP), IQAC (Institution of Quality Assurance Cell)-সহ চালু করা হচ্ছে শিক্ষার মর্মবস্তু ধ্বংসের নানান প্রকল্প। IQAC-এর মাধ্যমে শিক্ষার মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার নামে বাস্তবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে শিক্ষার বাজার উপযোগিতা। Accreditation Council-এর মাধ্যমে বাজারমুখী বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি খর্ব করা হবে বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসন। শুধু তা-ই নয়, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা বলে চালু হচ্ছে ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’, যা বাস্তবে ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাকে উৎসাহিত করছে। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণকে আরও বাড়াবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এর একটা বড় অংশই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো গড়ে তোলা হচ্ছে নির্দিষ্ট মডেলে, যা সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবনায় গৃহীত ইউজিসির কৌশলপত্রের অন্তর্ভুক্ত। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে শুধু প্রযুক্তি সম্পর্কিত ও ফলিত বিষয়গুলোর প্রাধান্য থাকছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বেতন-ফি অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অনেক বেশি। আবাসিক হল ও আসনসংখ্যা সীমিত। প্রতিষ্ঠান চলে উপাচার্যের ইচ্ছায় এবং উপাচার্য নিযুক্ত হন আচার্যের ইচ্ছায়। এখানে স্বায়ত্তশাসন সম্পূর্ণ নির্বাসিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মতামত প্রদান এবং গণতান্ত্রিক কোনোপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না।
সরকার বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন হরণের অপতৎপরতায় লিপ্ত। বস্তুত বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে সরকার নিজেদের পরিকল্পনাকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে। এজন্য গঠিত হচ্ছে ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ এবং প্রস্তাব করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ভেঙে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ গঠনের। এই ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ এবং প্রস্তাবিত ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন। ইউজিসির কার্যাবলি ও ক্ষমতা আরও সম্প্রসারণ এবং প্রায়োগিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন আইন’-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এটি করা হয়েছে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও আমলাতান্ত্রিক উপায়ে। যেখানে ইউজিসির প্রস্তাবনাকে সম্পূর্ণ পাশ কাটানো হয়েছে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ইউজিসির যতটুকু ভূমিকা ছিল, এতে তা-ও খর্ব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণরূপে সরকারের মুখাপেক্ষী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
গবেষণাকে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। শিক্ষার মান কতটা উন্নতি হবে, তা নির্ধারিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দ্বারা। গবেষণা খাতে বরাদ্দ খুবই কম। যতটুকু বরাদ্দ তারও যথাযথ ব্যবহার হয় না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হচ্ছে না এবং শিক্ষার মান ক্রমেই নিম্নগামী হচ্ছে। স্বায়ত্তশাসন হরণ এবং জনপরিসরকে ধ্বংস করে শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী সময় ক্যাম্পাসগুলোতে পুলিশ এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ অধিক আধিপত্য বিস্তার করেছে। এদের যৌথ তৎপরতায় ক্যাম্পাসে ভয় ও চাপের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জায়গা যত কমছে তত বাড়ছে বিচ্ছিন্নতা। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আড্ডা-মেলামেশার জায়গা, চায়ের দোকান ইত্যাদি তুলে দিয়ে জনপরিসরকে সংকুচিত করছে। আর ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র এবং এ ধরনের অন্যান্য অবকাঠামো ভাড়া দিয়ে বা বাণিজ্যিক ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক আড্ডাস্থল থেকে সরিয়ে দিচ্ছে, যা প্রশাসনের পরিকল্পিত পদক্ষেপ।
সেমিস্টার পদ্ধতিতে সময় খুব কম থাকে। অল্প সময়েরমধ্যে বড় সিলেবাস শেষ করার তাড়া থাকে। যার ফলে কোনো কোর্সের সর্বব্যাপক ও গভীরে গিয়ে অধ্যয়ন কঠিন হয়ে পড়ে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা যদি আন্তরিক থাকেনও, তা সত্ত্বেও পুরো কোর্স সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। এর সঙ্গে ল্যাব, ইনকোর্স, ক্লাস টেস্ট, মিডটার্ম এসব যুক্ত হয়ে সংকট আরও ঘনীভূত হয়। ফলে খুব অল্প বা ভাসা ভাসা ধারণা নিয়েই একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।
শিক্ষাঙ্গনে বাণিজ্যিক পরিবেশ ছাত্র-শিক্ষকের শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ককে নষ্ট করছে। সরকার শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ নীতিকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শিক্ষকদের বিক্রেতা এবং শিক্ষার্থীদের ক্রেতা হিসেবে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। তাই উচ্চশিক্ষা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানগুলো এমন শিক্ষক চায় না যারা মানবিক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহমর্মী হবে।
আবাসন সংকট এবং একে কেন্দ্র করে গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতন নিয়মিত ঘটনা। দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই আবাসন সংকট চরম। আবার আবাসন ব্যবস্থা যতটুকুও আছে তাতে ছাত্রলীগের প্রবল দখলদারিত্ব। প্রায়ই গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বাস্তবে নির্যাতনের ভয়াবহতা এবং সংখ্যা পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের চেয়ে বহুগুণ বেশি। গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতন সইতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়া, এমনকি মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই নারকীয় পরিস্থিতি কেন তৈরি হয়েছে? এই সংকটের মূল কারণ নিহিত আছে আবাসন ব্যবস্থার সংকট এবং ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্বের মধ্যে। গণরুম-গেস্টরুমকে কেন্দ্র করে মূলত ছাত্রলীগের রাজনীতি আবর্তিত হয়। আর এই গণরুম-গেস্টরুমে ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ তৈরি করে শিক্ষার্থীদেরজোরপূর্বক মিছিল-মিটিংয়ে যেতে বাধ্য করে। এভাবে প্রথম বর্ষ থেকেই একজন ছাত্রের নৈতিক মেরুদ- ভেঙে দিয়ে তার স্বাধীন বিকাশের পথ রুদ্ধ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলোতেও খাবারের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। খাবারের দাম বাড়লেও পুষ্টিমান মোটেও বাড়েনি। অবস্থা এতটা ভয়াবহ যে, শিক্ষার্থীদের একাংশ খাবারের দামের ক্রমবর্ধমান গতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে এক বেলা খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খাদ্য ও পুষ্টিমানের দুরবস্থার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়- প্রশাসনের বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ক্যান্টিনগুলোর ইজারাব্যবস্থা, ভর্তুকির অনুপস্থিতি, উদাসীনতা-অব্যবস্থাপনা এবং ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজি এবং খেয়ে টাকা না দেওয়ার মানসিকতা।
২০১৯ সালে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু বিগত জাতীয় নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনও সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের ‘যৌথ তৎপরতায়’ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট কেন্দ্রগুলো দখল, জাল ভোট, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোটের লাইন জ্যামিংসহ নানা জবরদস্তিমূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্রহসনের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।ডাকসু নির্বাচনের পর প্রায় ৪ বছর অতিবাহিত হলেও পুনরায় নির্বাচনের আয়োজন করছে না প্রশাসন। শুধু ডাকসু নয়, সারা দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে নারাজ প্রশাসন। প্রতিটি ক্যাম্পাসে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ছাত্র-যুবসমাজের মধ্যে রাজনৈতিক চর্চা গড়ে উঠত। ভিন্নমত ও চিন্তাচর্চার আদান-প্রদানের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক আবহ গড়ে উঠত। শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবি নিয়ে কথা বলতে পারত। সে পথ আজ বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। বুর্জোয়া শ্রেণির দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি সমাজ অভ্যন্তরে ভয়াবহ দুর্নীতি, লুটপাট ও অনৈতিকতার জন্ম দিচ্ছে। এ সর্বগ্রাসী আক্রমণ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ও রক্ষা পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণসহ নানা অনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়ে পড়ছেন।
শিক্ষার্থীদের মানসিক ব্যাধি ও আত্মহত্যার প্রবণতা সমাজে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টিকে স্বীকার করছে, কিন্তু তার প্রতিকারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আত্মহত্যার মতো দুঃখজনক ঘটনাগুলোকে রাষ্ট্র, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু একজন ব্যক্তির বিশেষ প্রবণতা, ব্যর্থতা ও না-পারা হিসেবে চিহ্নিত করছে। কিন্তু কোন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিম-লে এ ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে, তা তারা এড়িয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থায় বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া যত বাড়ছে, একজন শিক্ষার্থীকে তত শিক্ষা গ্রহণের জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ‘বিনিয়োগকৃত’ এ অর্থ পরবর্তী সময়ে যে কোনো মূল্যে তাকে ফেরত পেতে হবে; এই চাপ বাড়ছে। এ জন্য যে কোনো মূল্যে ভালো রেজাল্ট ও ভালো চাকরি লাভের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়ছে। সংকটগ্রস্ত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রত্যেকের কর্মসংস্থান ও মানবিক জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। ভবিষ্যৎ জীবনের এ অনিশ্চয়তা ও ব্যর্থতা থেকেই চরম হতাশা তৈরি হচ্ছে ও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে মাদকের বিস্তার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মাদক কারবার এবং সেবনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এক বিরাট অংশ যুক্ত। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও মাদকের জালে আটকা পড়ছে। গণরুমগুলোতে সিনিয়ররা জুনিয়রদের সঙ্গে মাদক সেবন করছে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে: গাঁজা, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবনকে ‘স্বাভাবিকীকরণ’ করা হচ্ছে। মাদক সেবনের ফলে অনেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। এর ফলে ড্রপআউট, আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেক রকমের অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে।
ভর্তি পরীক্ষার খরচ, ভোগান্তি, সময়, মানসিক চাপ থেকে শিক্ষার্থীরা রক্ষা পাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি একদমই পূরণ হয়নি। অব্যবস্থাপনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বাণিজ্যিক মনোবৃত্তির কারণে শিক্ষার্থীদের হয়রানি এবং অর্থ-ব্যয় দুই-ই বেড়েছে।
উচ্চশিক্ষা ধ্বংসে শাসকদের আক্রমণই শেষ কথা নয়, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধও জারি আছে। বিগত ১৭ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অনেক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। তবে শাসকগোষ্ঠী তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যতটা পরিকল্পিত, ছাত্রসমাজ ততটা সংগঠিত নয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের এই সংকটের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়। তাই সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশিষ্টজনের মতামতকে তুলে ধরতে এবং উচ্চশিক্ষার সংকটগুলো চিহ্নিত করতে আমরা ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কনভেনশন-২০২৩’-এর আয়োজন করেছি । এতে ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাবিদসহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। আপনাদের এ অংশগ্রহণ, মতামত, সহযোগিতা উচ্চশিক্ষার বেসরকারিকরণ-বাণিজ্যিকীকরণ-সংকোচনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করবে-সেই প্রত্যাশায়।