সংবাদ পত্রের পাতা থেকে- ২৭ জুলাই- ২৫ অক্টোবর ২০২৩

সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৭ জুলাই- ২৫ অক্টোবর ২০২৩)

অর্থনীতি

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ একাধিক বেসরকারি ব্যাংক ঋণপত্রের দায় পরিশোধ করতে পারছে না

জুলাই ৩১, ২০২৩, বণিক বার্তা

দেশের ব্যাংকগুলোর বিদেশী হিসাবে (নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট) ডলার স্থিতি কিছুটা বেড়েছে। তবে ব্যাংকগুলোর দায়ের তুলনায় ডলার সরবরাহ অনেকটাই কম। ফলে আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) দায় মেটাতে এখনো ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। এতে দিন যত যাচ্ছে রিজার্ভের ক্ষয়ও তত বাড়ছে। চলতি জুলাইয়ের ২৬ দিনেই রিজার্ভে ক্ষয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫২ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ২৬ জুন দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিদেশী হিসাবে রিজার্ভ ডলারের স্থিতি ছিল ৫৫৩ কোটি ডলার, যা মে মাসের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। যদিও জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতের স্বল্পমেয়াদি বিদেশী ঋণ ছিল ১ হাজার ৩৬৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৯৭ কোটি ডলার ছিল ডেফার্ড পেমেন্ট বা বিলম্বিত দায়। মূলত যথাসময়ে এলসি দায় পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের এ বিদেশী ঋণ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত এ তিন মাসে ১ হাজার ৪৩৮ কোটি ডলারের নতুন এলসি খোলা হবে। এর মধ্যে ব্যাক টু ব্যাক এলসির সম্ভাব্য দায়ের পরিমাণ হবে ২৫০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক আমদানির এলসি দায় পরিশোধে প্রতিদিনই ব্যর্থ হচ্ছে। এসব ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ দায়ের পরিমাণ এখন প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। সরকারি এলসির পাশাপাশি বেসরকারি খাতের এলসি দায়ও পরিশোধ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। দিনের শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডলার সংগ্রহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ধরনা দেয়া। প্রতিদিনই এ ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিলিয়ন ডলার কেনার প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্রির পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০ কোটি ডলারে সীমাবদ্ধ থাকছে।

রিজার্ভে গড়া তহবিলের ঋণও ‘খেলাপি’

০১ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ থেকে দেওয়া ঋণ ফেরত পাচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছু রপ্তানিকারক শিল্পগ্রুপ এই ঋণ নিয়েছে, তবে সেই রপ্তানি আয় দেশে আসছে না।

আবার যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ দেওয়া হয়েছিল, সেই ব্যাংকগুলোর কাছেও ফেরত দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ডলার নেই। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ বা ‘খেলাপি’ হয়ে গেছে ইডিএফের ঋণ। এ জন্য জরিমানা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

 বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে ১৯৮৯ সালে গঠন করা হয় ইডিএফ, যা থেকে কাঁচামাল আমদানির জন্য উদ্যোক্তাদের ডলারে ঋণ দেওয়া হয়। একাধিক ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত বছরের এপ্রিলে ডলার–সংকট শুরু হওয়ার পর ইডিএফ ঋণে সুদহার বাড়ানো হয়। এরপর চলতি বছরের মার্চে নানা নিয়মকানুন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ইডিএফের আকার ধীরে ধীরে কমছে। ইডিএফের ঋণ ৭ বিলিয়ন বা ৭০০ কোটি ডলার থেকে কমে হয়েছে ৪১০ কোটি ডলার। ইডিএফ–সুবিধা ধীরে ধীরে বন্ধের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কারণ, ইডিএফের ঋণকে আর রিজার্ভের হিসাবে দেখানো যাচ্ছে না। আবার রিজার্ভ বাড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত রয়েছে। গত বুধবার আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার। তবে প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলারের কম।

দেড় কোটি টাকার গাড়ি কিনতে পারবেন শীর্ষ সরকারি চাকরিজীবীরা

০১ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

নতুন গাড়ি কেনা বন্ধের সিদ্ধান্তের এক মাস না যেতেই কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি থেকে সরে এসেছে সরকার। গতকাল সোমবার নতুন নির্দেশনার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গাড়ি কেনার পথ খুলে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এর আগে গত ২ জুলাই অর্থ বিভাগ এক পরিপত্রের মাধ্যমে নতুন যানবাহন কেনা বন্ধের কথা জানিয়েছিল।

সরকারি কর্মচারীদের জন্য গাড়ি কেনার পথ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি গাড়ির বাজেটও বাড়ানো হয়েছে। তাতে সরকারে শীর্ষ কর্মচারীরা পাবেন আগের চেয়ে বেশি দামি গাড়ি। এত দিন গাড়িবাবদ সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল ৯৪ লাখ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ রেজিস্ট্রেশন, শুল্ক-করসহ গাড়ির দাম নির্ধারণ করে গত সোমবার নতুন নির্দেশনাটি দিয়েছে।

চীন, রাশিয়া ও ভারতের ঋণের কারণে চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে

০৬ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

বিদেশি ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়ছে। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরেই আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৭ শতাংশের বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। আর গত ছয় বছরের হিসাব ধরলে পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে, বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৪ কোটি ডলার ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০১ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৭৩ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ বেড়েছে।

সম্প্রতি তৈরি করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩২৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। ছয় বছর পর (২০২৯-৩০ অর্থবছর) তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫১৫ কোটি ডলার। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যদি আরও কোনো ঋণ না-ও নেয়, তবু ২০৬২ সাল পর্যন্ত ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হবে।

অর্থনৈতিক সংকটে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রায় আয় অনেক কমে গেছে। সে তুলনায় ব্যয় বেড়েছে। এতে সরকারের চলতি ও আর্থিক হিসাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো হলেও প্রবাসী আয়ে ওঠানামা রয়েছে। ডলারে নেওয়া বেসরকারি খাতে ঋণের বড় অংশই আর নবায়ন হচ্ছে না। আর এমন এক সময়ে সরকারের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে গিয়েও ডলার খরচ বেশি হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ

আগস্ট ০৭, ২০২৩, বণিক বার্তা

রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের হাতে রয়েছে ৩৪টি প্রকল্প। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কক্সবাজারে নতুন রেলপথ নির্মাণ, যমুনা নদীতে রেলের জন্য স্বতন্ত্র সেতু নির্মাণসহ নতুন রেলপথ ও সেতু নির্মাণ, বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, রোলিং স্টক সংগ্রহ ও রেলওয়ের কারিগরি মানোন্নয়ন করা হচ্ছে প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে পারেনি রেলওয়ে। এক বা একাধিকবার সংশোধন করে ব্যয় ও মেয়াদ বা দুটোই বাড়ানো হয়েছে ২০টির বেশি প্রকল্পে। যেসব প্রকল্প এখনো সংশোধন হয়নি, সেগুলোও রয়েছে সংশোধনের অপেক্ষায়। রেলওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে এ দুরবস্থার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, বিশেষ করে প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতাকে দায়ী করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গত ২০ জুন রেল ভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে রেলওয়ের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ রেলওয়েতে চলমান পাঁচটি প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর একটি চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণ। প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পগুলোর একটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ৬ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। অনুমোদনের সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ৪২ মাস। সে হিসেবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হয়ওয়া কথা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির মেয়াদ ৩০০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬৮ মাসে উন্নীত করা হয়। অন্যদিকে ৮৭৪ শতাংশ বাড়িয়ে রেলপথটির নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা।

ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়াল গেজ লাইন ও টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে নতুন আরেকটি ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৩৬ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও বর্তমানে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ১৯২ মাসে উন্নীত করা হয়েছে। সে হিসেবে মেয়াদ বৃদ্ধির হার ৪৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে ৮৪৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির হার প্রায় ২৯৪ শতাংশ।

প্রায় ১৩ বছর ধরে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত নতুন একটি রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ৩৭ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও প্রকল্পটি শেষ করতে লেগে যাচ্ছে ১৬৭ মাস। সে হিসেবে মেয়াদ বৃদ্ধির হার ৩৫১ শতাংশ। একইভাবে প্রায় ১৪৮ শতাংশ বেড়ে রেলপথটির নির্মাণ ব্যয় বর্তমানে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া আখাউড়া-লাকসাম ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন রেলপথটির মেয়াদ বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ৭২ মাসের প্রকল্পটির মেয়াদ ঠেকেছে ১২৬ মাসে। তবে ব্যয়ের দিক দিয়ে ব্যতিক্রম উদাহরণ তৈরি করেছে এ প্রকল্প। মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) তুলনায় ১৫ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্থ কম ব্যয় হয়েছে এতে।

গত ২০ জুন প্রকল্প বাস্তবায়নবিষয়ক এক সভায় উপস্থাপিত ‘‌ইমপ্লিমেন্টেশন অব রেলওয়ে প্রজেক্টস: প্রসপেক্টস, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য মোটা দাগে ১০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও দক্ষ জনবলের ঘাটতি। এর বাইরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার দুর্বলতা, ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, ব্যয় প্রাক্কলনে দুর্বলতা, কেনাকাটা প্রক্রিয়ায় জটিলতা, উন্নয়ন সহযোগীদের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় দীর্ঘসূত্রতা এবং বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ সমন্বয়ে জটিলতাকে দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সামষ্টিক অর্থনীতির বড় হুমকি ৩০-৩৫ বিলিয়ন ডলারের হুন্ডি-হাওলার বাজার

আগস্ট ০৮, ২০২৩, বণিক বার্তা

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক অপরাধমূলক কার্যক্রম। পণ্য বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচার, স্বর্ণ-মাদকসহ অন্যান্য দ্রব্য চোরাচালান ও মানব পাচারের মতো অপরাধমূলক কার্যক্রমে হুন্ডি-হাওলার ব্যবহার বৃহৎ রূপ ধারণ করেছে। অত্যন্ত রক্ষণশীলভাবে হিসাব করে দেখা গেছে, দেশে হুন্ডি-হাওলার বাজার এখন ৩০-৩৫ বিলিয়ন (৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি) ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আরো গভীর ও গবেষণাভিত্তিক অনুসন্ধান চালালে দেখা যাবে দেশে হুন্ডি-হাওলার বাজার আকৃতি হয়তো এর চেয়েও অনেক বড়।

হিসাব অনুযায়ী, দেশে আন্তর্জাতিক পণ্য বাণিজ্যে হুন্ডি-হাওলার মাধ্যমে লেনদেনকৃত অর্থের পরিমাণ কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স হিসেবে আসছে আরো ১০ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া দুর্নীতি ও কালোবাজারির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ পাচার, স্বর্ণ ও অন্যান্য পণ্য চোরাচালান, মানব পাচারের মতো কার্যক্রমে হুন্ডি-হাওলার অবদান ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার। 

বাংলাদেশ সরকার ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর প্রিভেন্টিং মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফাইন্যান্সিং অব টেরোরিজম ২০১৯-২১’ শীর্ষক একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছে। কৌশলপত্রে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের গন্তব্য হিসেবে ১০টি দেশের কথা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত (বিশেষ করে দুবাই), মালয়েশিয়া, কেইমান আইল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস। এসব গন্তব্যে অর্থ পাচারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো হুন্ডি-হাওলা।

অভিযোগ রয়েছে, পণ্য বাণিজ্যে কর ফাঁকি দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ হুন্ডি বা হাওলার দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের অনেকেই আন্ডার ইনভয়েসিং (আমদানি মূল্য প্রকৃতের চেয়ে কম দেখানো) করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে পণ্যমূল্যের অপ্রদর্শিত অংশটুকু পরিশোধ করা হয় হুন্ডি বা হাওলার মাধ্যমে। বিষয়টিকে এখন দেখা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য তথ্যে গরমিলের অন্যতম বড় কারণ হিসেবে। চীন ও বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যানে ২০২১ সালে বাণিজ্যের আকারের গরমিল ছিল ৫ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন (৫৬৮ কোটি) ডলারের বেশি। এ গরমিলের পরিমাণ গত বছর আরো বেড়ে ৭ দশমিক ৫২ বিলিয়ন (৭৫২ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যায়। চীনের পর ভারতের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১-২২ অর্থবছরের তথ্যে গরমিল রয়েছে ৩ দশমিক ১৯ (৩১৯ কোটি) বিলিয়ন ডলারের। প্রধান বাণিজ্য গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য পরিসংখ্যানে গরমিল রয়েছে ২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন (২৯৩ কোটি) ডলারের। অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ব্যবধানের তথ্য বিশ্লেষণ করলেও দেখা যাবে, দেশে পণ্য বাণিজ্যের আড়ালে হুন্ডি-হাওলায় লেনদেন হচ্ছে কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ডলারের।

এবার ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা থেকে সরে গেল সৌদি কোম্পানি

০৮ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

এবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে সৌদি আরবের কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিস্ট এজেন্সি। তবে কোম্পানিটি এখনো শেয়ার বিক্রি করেনি। এর আগে ইসলামী ব্যাংকের পুরো শেয়ার ছেড়ে দিয়ে পরিচালনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

তারও আগে বেশ কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দেয়। ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পর এই শেয়ার বিক্রি শুরু হয়। এসব শেয়ার কিনে ব্যাংকটির একক নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় এস আলম গ্রুপ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে যে নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকটি এখন তারল্য সংকটে ভুগছে।

ইসলামী ব্যাংকের কোনো শাখা ঋণ দিতে পারবে না

১০ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

ইসলামী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকেরা (ব্রাঞ্চ ম্যানেজার) আর কোনো ঋণ দিতে পারবেন না। এমনকি বিভাগীয় ও জোন প্রধানেরাও কোনো ঋণ অনুমোদন করতে পারবেন না। পাশাপাশি ঋণের সীমাও বাড়াতে পারবেন না তাঁরা। তবে কৃষি খাতে তাঁদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বহাল রাখা হয়েছে। ব্যাংকটির মোট ঋণের মাত্র ৩ শতাংশ দেওয়া হয়েছে কৃষিতে।

আগে সবক্ষেত্রে শাখা ব্যবস্থাপক ও জোন প্রধানেরা পদক্রম ভেদে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারতেন, যার বড় অংশই যেত গ্রামীণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে এসেছে। এখন সব ঋণ দেওয়া হবে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনে। এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারবেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।

গত ১৯ জুন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৩২৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভাতেই পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন আহসানুল আলম। তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে। এর আগে আহসানুল আলম ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা নেওয়ার পর এবারই প্রথম পরিবারের সদস্যদের ব্যাংকে যুক্ত করে এস আলম গ্রুপ।

আগামী চার মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করতে পারবে বাংলাদেশ?

১০ অগাস্ট ২০২৩, বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতকে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসা এবং ডলার সংকটের কারণে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস ইনভেস্টর এবং এসএন্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দেয়ায় নতুন করে ঋণ কতটা পাওয়া যাবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

সাধারণত এ ধরণের সংস্থার ঋণমান কমিয়ে দেয়ার কারণে বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি হারে সুদ দিতে হতে পারে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ গত অর্থ বছরে প্রায় পনের বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ পেলেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত এ ধরণের ঋণ তো আসেনি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকটে বৈদেশিক ঋণের সুদ বাড়ছে এবং পাশাপাশি কমছে ঋণ পরিশোধের সময়। ফলে গত অর্থ বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে ঋণ পরিশোধের চাপও।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ ঋণ পরিশোধের ‘সক্ষমতা’ বাংলাদেশের নেই এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর সরকারি পদক্ষেপের প্রচেষ্টাও তার দৃষ্টিতে আসেনি।

“সমস্যার মাত্রাটা অনুধাবন করতে পারছে না সরকার। করলে তারা কিভাবে বলতে পারে যে দু মাসে এ সমস্যার সমাধান হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

কর্মকর্তারা বলছেন, ১২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সরকারকে শোধ করতে হবে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাকি প্রায় নয় বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ বেসরকারি খাতের।

৫ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে ২৮১ কোটি টাকার বেশি জরিমানা

আগস্ট ১১, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

নগদ ও তারল্যের ন্যূনতম সীমা ধরে রাখতে না পারায় চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে শরিয়াহভিত্তিক ৫টি ব্যাংককে ২৮১.৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর মধ্যে বেসরকারি খাতের সর্ববৃহৎ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংককে সর্বোচ্চ ১৬২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর আছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (৬১.৩ কোটি টাকা), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (৩০ কোটি টাকা), ইউনিয়ন ব্যাংক (২০ কোটি টাকা) ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (৮ কোটি টাকা)।

সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সারোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যেসব ব্যাংক সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতিতে ভুগছে, তাদের নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করা হচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আমানত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হয়। একে বলা হয় ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর)। এছাড়া গ্রাহকদের আমানতের ন্যূনতম শতাংশ নগদ, স্বর্ণ বা অন্যান্য সিকিউরিটিজ আকারে রাখতে হয়। একে সংবিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) বলা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ন্যূনতম সিআরআর প্রয়োজন নগদের ৪ শতাংশ এবং এসএলআর প্রয়োজন আমানতের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

সিআরআর ও এসএলআর বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে প্রতিদিনের ঘাটতির পরিমাণের ওপর যথাক্রমে ৯ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই ৫টি ব্যাংক সিআরআর ও এসএলআর ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।’

যেমন, গত ৩০ জুন ইসলামী ব্যাংকের সিআরআর ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, কিন্তু তাদের এসএলআর সীমা ঠিক ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ওই দিন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের (এফএসআইবিএল) সিআরআর ঘাটতি ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং এসএলআর ঘাটতি ৯০০ কোটি টাকা। এই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) সিআরআর ঘাটতি ছিল ৭০০ কোটি টাকা এবং এসএলআর ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংকের সিআরআর ঘাটতি ছিল ৬০০ কোটি টাকা এবং এসএলআর ঘাটতি ছিল ৪৬০ কোটি টাকা এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (জিআইবি) সিআরআর ঘাটতি ছিল ৩৬০ কোটি টাকা এবং এসএলআর ঘাটতি ছিল ৪৬০ কোটি টাকা।

পরে সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতির কারণে ৫টি ব্যাংককে ৫.৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংককে ২.৯ কোটি টাকা, এফএসআইবিএলকে ১.৩ কোটি টাকা, এসআইবিএলকে ৭৯ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংককে ৫৪ লাখ টাকা এবং জিআইবিকে ৩৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ভবন হয় কোটি টাকায়, পড়ে থাকে অবহেলায়

১২ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

দ্বিতল বাজার ভবনটি প্রস্তুত। রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর হাটে এই ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু এখন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ভবনটি। বৈদ্যুতিক বাতি, বেসিন, পানির কল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মেঝেতে জমেছে পানি। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দেওয়ার জন্যই ভবনটি নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু দোকান বরাদ্দ না দেওয়ায় চালু হয়নি বাজারটি।

এই ভবনের মতোই ৮৭টি বাজারের নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে ‘দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক এক প্রকল্পের আওতায়।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি টাকায় নির্মিত হাসপাতাল, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মতো অব্যবহৃত ভবনের বিষয় সামনে এসেছে। এ রকমই এই বাজার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। হাজার কোটি টাকা খরচ করে উপজেলা পর্যায়ে বাজার ভবন করেছে সংস্থাটি। কিন্তু দোকান বরাদ্দ দিতে না পারায় ভবনগুলো অলস পড়ে নষ্ট হচ্ছে। নির্মিত ভবনগুলোর দোকানের শাটার, টাইলস, মেঝেতেও দৃশ্যমান ত্রুটি দেখা যাচ্ছে। পড়ে থাকায় একদিকে ভবনের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকল্পের মূল্য উদ্দেশ্যও পূরণ হচ্ছে না। প্রতিবছর রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, দেশের ৬৪ জেলার সব উপজেলা এলাকায় মোট ৫০৭টি বাজার ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। প্রতিটি বাজার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার মতো। কিন্তু দোকান বরাদ্দের বিধিমালা জটিলতায় একটি ভবনও চালু করা যায়নি।

প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে এর ডিপিপি বা উন্নয়ন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গ্রামীণ বাজার উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষি ও অকৃষি পণ্য বাজারজাতের সুবিধা বাড়ানো, গ্রামপর্যায়ে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি। গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

চালুর আগেই বেঁকে গেল রেললাইন

১২ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে রেল যাওয়ার কথা আগামী সেপ্টেম্বরে। কিন্তু গত সপ্তাহের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নির্মাণাধীন রেললাইনের একটি অংশে পাথর ও মাটি ভেসে গেছে। রেললাইন উঁচু-নিচু ও বাঁকা হয়ে গেছে। এতে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী এলাকায় বন্যার পানিতে রেললাইন ডুবে এ অবস্থা হয়েছে। টানা অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকা গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে ডুবতে শুরু করে। মঙ্গলবার ভোরে রেললাইন পানিতে তলিয়ে যায়। পরদিন বুধবার পানি নামে। এরপর রেললাইন উঁচু-নিচু ও বাঁকা হয়ে যাওয়া এবং লাইন থেকে পাথর ও মাটি সরে যাওয়া দৃশ্যমান হয়। এ পরিস্থিতির জন্য অপরিকল্পিত রেলপথ নির্মাণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ ও এলাকাবাসী। তাঁরা বলছেন, ছোট ছোট যে কালভার্ট রাখা হয়েছে, সেগুলো পানিনিষ্কাশনের জন্য যথেষ্ট নয়।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদর্শন করেন। তাঁদের মতে, এক কিলোমিটারজুড়ে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করা যাবে। তাই নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চালু নিয়ে সমস্যা হবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যে অঞ্চলে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখান দিয়ে বান্দরবানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে এসে সাগরে গিয়ে পড়ে। রেললাইন নির্মাণের সময় তা বিবেচনায় নেওয়া দরকার ছিল। এখন রেললাইন করার কারণে পানিনিষ্কাশনের পথ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে বন্যার ব্যাপকতা বেড়েছে। মানুষকে যেমন ভুগতে হচ্ছে, তেমনি রেলের সম্পদ নষ্ট হয়েছে।

গতকাল শুক্রবারও রেললাইনের দুই পাশের এলাকা ও বিলে পানি জমে ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের এলাকায় এমন ভয়াবহ বন্যা হয়নি। রেললাইনের কারণে পানিনিষ্কাশনের পথ আটকে যাওয়ায় তাঁদের এলাকার বাড়িঘর ডুবে গেছে। যদি রেললাইনে পর্যাপ্ত কালভার্ট বা সেতু নির্মাণ করা হতো, তাহলে এত ক্ষতি হতো না।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদর্শন করেন। তাঁদের মতে, এক কিলোমিটারজুড়ে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করা যাবে। তাই নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চালু নিয়ে সমস্যা হবে না। বন্যার পানিতে রেললাইনের এ অবস্থার কারণে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং তা সংস্কারে কত অর্থ ব্যয় হবে, তা এখনো পরিমাপ করা হয়নি বলে জানান তাঁরা।

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ নরসিংদীর ৯ জন

১২ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

অবৈধভাবে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ৯ তরুণ-যুবক। বেঁচে যাওয়া কয়েকজন ও দালাল সূত্রে এ খবর তাঁদের স্বজনদের কাছে পৌঁছার পর থেকেই পরিবারের সদস্যরা মাতম করছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে ৯ তরুণ-যুবক নিখোঁজ থাকার তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।

নিখোঁজ নয়জন হলেন বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), মৃত হাছেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে কামাল (৩৪), ভাটের গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২), আবদুল মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল মিয়া (৩৩) ও রায়হান মিয়া (২২), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), দেওয়ানের চর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে মো. ইমন (২০) ও নিলক্ষীয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১)।

তাঁদের স্বজনদের ভাষ্য, ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় তাঁরা লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যেতে চেয়েছিলেন। লিবিয়ায় থাকা মূল দালাল বেলাব উপজেলার দুলালকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন ও তাঁর সহযোগী শাহিনুর বেগমের মাধ্যমে ওই টাকা দিয়ে দেশ ছাড়েন ৯ তরুণ-যুবক। গতকাল খবর আসে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ওই নয়জন নিখোঁজ আছেন।

নিখোঁজ আনোয়ার হোসেন ওরফে কামালের ছোট ভাই জামাল মিয়া বলেন, ‘ঘটনা লোকমুখে শুনে লিবিয়ায় থাকা দালাল জাকির হোসেনের মোবাইলে কল করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মিলন মেম্বার তাদের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হন। পরে মিলন মেম্বারের মাধ্যমেই ঘটনা জানতে পারি আমরা। নিখোঁজদের মধ্যে আমার ভাইও আছে।’

জামাল মিয়া আরও বলেন, ৫-৬ মাস আগে জাকির ও শাহিনুরের সঙ্গে ১২ লাখ টাকায় ইতালিতে নেওয়ার চুক্তি হয় তাঁর ছোট ভাইয়ের। এলাকার আরও কয়েকজনের সঙ্গে তাঁকে প্রথমে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছুদিন আরও অনেকের সঙ্গে গেমঘরে (যাত্রার আগে যেখানে তাঁদের রাখা হয়) ছিলেন তাঁরা। গত বুধবার রাত ৮টায় ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করার ৪০ মিনিট পরই তাঁদের বহনকারী নৌকাটি ডুবে যায়। দালাল জাকিরের তত্ত্বাবধানে থাকা ২০ জনের মধ্যে ১১ জন বেঁচে ফিরলেও ৯ জন নিখোঁজ হন।

নিখোঁজ রবিউলের ভাই ইব্রাহিম মিয়া বলেন, আট মাস আগে ভৈরবের দালাল রবিউল্লার মাধ্যমে লিবিয়ায় যান রবিউল। কিন্তু সেখানে তাঁকে বৈধ কোনো কাগজ করে দেওয়া হয়নি। এরপর দালাল জাকির হোসেন তাঁকে ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এখন শুনতে পাচ্ছেন রবিউলও নিখোঁজ।

পণ্য আমদানি থেকে বিক্রি – কীভাবে সব নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট

১২ অগাস্ট ২০২৩, বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কয়েকজন ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের আমদানিকারকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের জন্য জরুরি নিত্যপণ্যের আমদানি এখন প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে হাতেগোনা কয়েকটি গোষ্ঠী।

তবে বাজারের নিয়ম অনুযায়ী পণ্য আমদানি ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার বদলে তারা একে অন্যের সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে পণ্য আমদানির প্রতিটি পর্যায়ে তাদের কর্তৃত্ব তৈরি করেছে।

এর ফলে বাজারের ওপর একক ‘কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা’ হয়েছে তাদের, যার জের ধরে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে ভোক্তারা।

আবার ডলারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে বিপদে পড়েছেন ছোট আমদানিকারকদের অনেকে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের এসব আমদানিকারকদের অনেকেই এখন ডলার সংকট আর কথিত সিন্ডিকেট চক্রের সম্মিলিত ‘আগ্রাসনে’ টিকতে না পেরে সরে দাঁড়াচ্ছেন দীর্ঘদিনের আমদানি বাণিজ্য থেকে ।

আবার সরে গিয়েও এসব বিষয়ে তারা মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন, যদি একারণে তাদের অন্য ব্যবসাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।

“এখানে বড়রা সব একজোট। আমরা ছোটোরা এমনকি এই বড়দের কাছ থেকেও আমরা নিজেদের ইচ্ছে মতো পণ্য নিতে পারি না। বরং তারাই আমাদের ঠিক করে দেয় কোন পণ্য আমরা কার কাছ থেকে কত দরে কিনবো। এভাবেই কয়েকজন মিলে সব করায়ত্ত করেছে,” – বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন চট্টগ্রামের একজন ব্যবসায়ী।

ঢাকায় গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ডঃ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমও বলছেন গত কয়েক বছর ধরেই আমদানির ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং কয়েকটি জরুরি পণ্যের মার্কেট শেয়ার এখন কয়েকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে।

“আমদানি থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত নিজেদের বলয় তৈরি করে নিজেদের শর্তে বাজারে পণ্য দিচ্ছে তারা। তাদের কথা মতো না হলে অন্যরা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

বাজারে প্রতারণা বা ম্যানিপুলেশন বন্ধ করে ভোক্তাদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রতিযোগিতা কমিশন বলছে এ চিত্র তাদেরও জানা।

তবে কারা কীভাবে এসব করছে – এর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি সমীক্ষা করছে এই সংস্থাগুলো।

“এছাড়া আমরা কয়েকটি স্যুয়োমটো মামলাও করেছি কথিত বড় কয়েকটি গোষ্ঠীর কার্যক্রমের বিষয়ে। এগুলো শুনানি পর্যায়ে আছে,” – বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।

প্রসঙ্গত, গত জুনেই বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রসঙ্গে মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, “সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। তবে তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে। এজন্য আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্য থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি”।

বাংলাদেশে অনেক সময় কোনো ভোগ্যপণ্যের দাম অতিমাত্রায় বাড়লে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি দাম নির্ধারণ করে দেয়।

যদিও অনেক ক্ষেত্রে বাজারে সেটিও কার্যকর হয় না।

পণ্য আমদানির জন্য সুপরিচিত কয়েকটি বড় গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল – কিন্তু তাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আমদানির প্রতিটি ধাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেট

বাংলাদেশে চিনি, ডাল, তেলসহ সতেরটি পণ্যকে নিত্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব মূল পণ্যগুলো আলাদা করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এগুলোর মার্কেট শেয়ার বড় কয়েকজন আমদানিকারকদের হাতে।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে একটি চক্র জরুরি নিত্যপণ্য আমদানি করা থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে তার একটি ‘ভয়াবহ চিত্র’ পাওয়া গেছে।

“বড় ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে ব্যবসা ভাগাভাগি করছে বলেই আমরা ছোটোরা রেস থেকে ছিটকে গেছি। তাদের অবাধ্য হয়ে কোনো ব্যবসাই আমরা এখানে করতে পারবো না।” বিবিসিকে বলছিলেন একজন ব্যবসায়ী।

“এখানে সিন্ডিকেটের বাইরে কিছু কল্পনাও করা যায় না,” – বলেন তিনি।

এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী যে ধারণা দিয়েছেন তা হলো – বড় ভলিউমে পণ্য আমদানি করা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একজোট হয়েছে। এখন মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা ওই বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে নিজের ইচ্ছে মতো পণ্য কিনতে পারেন না।

উদাহরণ স্বরূপ – একজন উদ্যোক্তা ভাবলেন, তিনি একশ কোটি টাকার চিনি বা লবণ কিনবেন। সেজন্য বড় ব্যবসায়ীদের কাছে গেলে তারাই ঠিক করে দেন যে কোন পণ্য কত দামে কার কাছ থেকে কিনতে হবে।

এতে রাজী না হয়ে উদ্যোক্তাটি যদি মনে করেন তিনি ব্রাজিল থেকে একশ কোটি টাকার চিনি আনবেন, সে অনুযায়ী তিনি আমদানি করলেও – বড় গোষ্ঠীরা “তার আমদানি মূল্যের চেয়ে কম দামে বাজারে চিনি ছেড়ে” তাকে লোকসানের মুখে ফেলে দেবে।

আবার বড় চক্রের বাইরে থেকে কেউ আমদানি করতে এলসি খুলতে চাইলেও ব্যাংক রাজী হবেনা। এমনকি বাধা আসবে কাস্টমস-ভ্যাটসহ নানা দফতর থেকে।

আর ভয়ংকর ব্যাপার হলো, সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে বা তাদের সিগন্যাল ছাড়া কোনো পণ্য আনলে সেগুলো বন্দরে আনার জন্য লাইটার ভেসেল পর্যন্ত পাওয়া যায় না। এমনকি শ্রমিক গোষ্ঠীও এসব পণ্য খালাসে কাজ করতে আগ্রহী হয়না।

ফলে অন্যদের আমদানি করা পণ্য কতদিন সাগরে বা জাহাজে পড়ে থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। আবার খালাস হলেও কাস্টমস ও কর বিভাগ ছাড়পত্র দেবে কিনা – তা নিয়েও সংশয় থাকে।

“এভাবে প্রতিটি পদে পদে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে সিন্ডিকেট। টাকা থাকলেও এদের সাথে কেউ পেরে উঠবে না। এমনকি সরকার একটু দাম নির্ধারণ করে দিলে তারা পণ্য হয়তো জাহাজেই রেখে দেবে কিছুদিন – যাতে সংকটে পড়ে সরকারই চাপ দেয় যে দাম যাই হোক, পণ্য আনুন,” বলছিলেন একজন ব্যবসায়ী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কথিত সিন্ডিকেট বলতে যাদের বোঝানো হয় তারা একদিকে যেমন বড় আমদানিকারক, আবার নানা ভাবে ব্যাংকগুলোর মালিকানা বা ব্যবস্থাপনার কর্তৃত্বেও আছেন তারাই।

আবার সাগরের বড় জাহাজ থেকে বন্দরে খালাসের জন্য ব্যবহৃত লাইটার জাহাজগুলোও তাদের কিংবা তাদের সহযোগীদের।

ফলে শ্রমিকরাও মালিকদের বাইরে গিয়ে অন্য কারও জন্য কাজ করতে পারেন না বিপদে পড়ার ভয়ে।

সব কিছুই এই সিন্ডিকেটের হওয়ায় সরকারের রাজস্ব বিভাগের লোকজনও থাকেন চাপের মুখে।

“আপনার যত টাকা থাকুক, এদের বাইরে গিয়ে কেউ পণ্য আনার জন্য কোনো ব্যাংকে এলসিই খুলতে পারবেন না। কারণ ব্যাংকও তাদের। হাই কানেক্টেড (উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ) না হলে ব্যাংক কারও এলসি খুলবে না,” বলছিলেন ওই ব্যবসায়ী।

আবার কথিত সিন্ডিকেট কোন পণ্য এনে যাদের মাধ্যমে বাজারজাত করবে – সেসব প্রতিষ্ঠানও নামে-বেনামে তাদের পরিবারের লোকজনেরই।

এমনকি বড় বড় বাজারগুলোর জন্য এসব পণ্যের ডিলারশিপও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট লোকজনের হাতে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন অনেক ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা যে দামে অন্যদের কাছে পণ্য বিক্রি করেন – তারা মানি রিসিট দিতে চান না, যা রীতিমত অপরাধ।

“ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বড়রা ধীরে ধীরে পুরো সাপ্লাই চেনটা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত তারা নিজেদের বলয় তৈরি করেছে। তাদের শর্ত মতোই সব হচ্ছে। তাদের কথা মতো না হলে অন্যরা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। যে কোনো পরিবেশেই হোক ব্যবসা বাণিজ্যে এমন পরিস্থিতি আশঙ্কা জনক,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. মোয়াজ্জেম।

তিনি বলছেন বড় গোষ্ঠীগুলো শুধু পণ্য আনাটাই নয়, জাহাজ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে।

সরকারের সঙ্গে দাম নিয়ে আলোচনা হলে, বাজেটে শুল্ক হ্রাস বৃদ্ধির বিষয় থাকলে, অথবা সরকার দাম কমানোর বা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে—সে সময় হয়তো তারা জাহাজ সাগরেই রেখে দেবেন।

“এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভোক্তারা ও ঝুঁকিতে থাকবে বাজার ব্যবস্থাপনা। বাজারের মূল্যবোধ, ভ্যালুজ, সংস্কৃতি সবই নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে”, – বলছিলেন মি. মোয়াজ্জেম।

নিজের ঘরে ঝুলছিল কৃষকের নিথর দেহ

১৫ আগস্ট ২৩, সমকাল

রামগড়ে ঋণে জর্জরিত এক কৃষক চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের সোনারখীলে নিজ বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

কৃষক মো. ইসমাইল (২৫) এলাকার মো. ইদ্রিস মিয়ার ছেলে। তাঁর সংসারে স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। নিজের দোচালা টিনের ঘর থেকে তাঁর নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ইসমাইল স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন এনজিও থেকে অনেক টাকা ঋণ নিয়ে বসতঘর নির্মাণ করেন। কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে নতুন ঋণের চাপে পড়ছিলেন। কৃষি ছাড়া উপার্জনের বিকল্প উপায় না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। পাওনাদাররা প্রায়ই বাড়িতে এসে টাকার জন্য চাপ দিতেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হতো। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ও অভাব-অনটনে তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য আমান উল্লাহ।

আরও ৪ প্রকল্প বাদ দিতে চায় বাংলাদেশ

১৯ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

ভারতীয় ঋণে প্রকল্প গ্রহণের আগ্রহ কমছে বাংলাদেশের। যে কারণে গত তিন বছরে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) বা গুচ্ছ ঋণ থেকে আটটি প্রকল্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। আরও চারটি প্রকল্প প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মূলত ভারতীয় ঋণের কঠিন শর্ত, ঠিকাদারদের বেশি দাম চাওয়া, প্রতি পদে পদে সম্মতি নেওয়াসহ নানা কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রকল্প প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আগে প্রত্যাহার করে নেওয়া আট প্রকল্পে সব মিলিয়ে ১১৩ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা ছিল। নতুন করে আরও যে চারটি প্রকল্প প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, সেগুলোতে বরাদ্দ আছে ১০১ কোটি ডলার। গত এক যুগে ভারতের তিনটি এলওসির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রায় ৭৫০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫০ কোটি ডলারের মতো ছাড় করা হয়েছে। এসব ঋণে সব মিলিয়ে ৪০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত এক যুগে ভারতীয় ঋণের ছাড় ও প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বেশ কম। বাংলাদেশ ও ভারত—দুই দিকেই আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা আছে। নানা নিয়মকানুনের কারণে উভয় পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় লাগে। আবার ঠিকাদারেরা যে দর দেন, তা অনেক বেশি। যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদারদেরই কাজ দিতে হবে, তাই বেশি দর দিলেও আমরা তা নিতে বাধ্য। তাতে একধরনের জিম্মি হয়ে যাই।’

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘ভারত থেকে ৭৫ শতাংশ কেনাকাটা করে ভৌত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। সার্বিকভাবে ভারতীয় এলওসির অভিজ্ঞতা ভালো নয়। তাই এলওসি থেকে প্রকল্প প্রত্যাহার বা বেরিয়ে আসাকে সমর্থন করি।’

প্রকল্প প্রত্যাহারের প্রস্তাব

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, এলওসির তালিকা থেকে আরও চারটি প্রকল্প বাদ দিতে একটি প্রস্তাব ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছে গত ডিসেম্বরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। প্রকল্পগুলো হলো বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুরে নতুন ওয়ার্কশপ নির্মাণ (৭ কোটি ডলার); প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী স্থাপন (সাড়ে ১৬ কোটি ডলার); নৌ মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম বে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ (৪০ কোটি ডলার) এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প (সাড়ে ৩৭ কোটি ডলার)। চারটিই ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প।

এক্সিম ব্যাংকের শর্ত অনুসারে, প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ কেনাকাটাই ভারত থেকে করতে হবে। তবে কর্মকর্তারা মনে করেন, এই চার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতীয় ঠিকাদারকে ইট-বালু, রড-সিমেন্ট—সবই ভারত থেকে আনতে হবে।

ব্যাংক খাতের সবচেয়ে ক্ষতের বছর কি ২০২২ সাল

আগস্ট ২০, ২০২৩, বণিক বার্তা

ব্যাংক খাতে ইতিহাসের সর্বোচ্চ নিট মুনাফা দেখানো হয়েছে ২০২২ সালে। আগের বছরের তুলনায় এ সময় দেশের ব্যাংকগুলোর মুনাফার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৩ শতাংশ। গত ৫২ বছরে খাতটিতে এ পরিমাণ নিট মুনাফা আর কখনই দেখা যায়নি। যদিও এ সময় পুনঃতফসিল করা হয়েছে খেলাপি হতে যাওয়া ৬৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ। তার পরও বছর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশিতে। প্রভিশন বা সঞ্চিতি ঘাটতিও ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর পরও বছর শেষে ব্যাংক খাতে নিট মুনাফা দেখানো হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, যার সিংহভাগই আবার লভ্যাংশ হিসেবে বের করে নিয়েছেন মালিকরা। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা ছিল ৫ হাজার ২০ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে গত বছর ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা ১৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। সে হিসেবে নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৩ শতাংশের বেশি। কভিডের আগের বছর ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা ছিল ৬ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এরপর ২০২০ সালে তা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায়। মূলত প্রভিশন বা সঞ্চিতি বাবদ কম অর্থ সংরক্ষণের কারণেই এ সময়ে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফায় অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মুনাফায় ব্যাপক উল্লম্ফনের এ বছরটিতে ব্যাংক থেকে পরিচালকদের ঋণ গ্রহণও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ি, ব্যাংক থেকে নেয়া পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। তবে পরিচালকদের নিজের নাম ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া এ ঋণের চেয়েও বেনামি ঋণ বেশি বলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আবার পরিচালকদের নেয়া ঋণই দফায় দফায় পুনঃতফসিল করছে ব্যাংকগুলো। গত বছর যেসব ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে, তার উল্লেখযোগ্য অংশের সুবিধাভোগীও ব্যাংক পরিচালকরা। এ সময় পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) সামর্থ্যের বাইরে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলেছে ব্যাংকগুলো, যার অনেকগুলোই ছিল ব্যাংক পরিচালকদের স্বার্থের অনুকূলে। এসব এলসি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, ২০২২ সালে ব্যাংক খাতে রেকর্ড নিট মুনাফা হওয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি। বরং এ সময়ে দেশের ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত আরো বেশি দুর্বল হয়েছে। নিট মুনাফা দেখানোর মাধ্যমে মালিকপক্ষ লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি ছাড়ের কারণে অনেক খেলাপি ঋণও নিয়মিত দেখানো হচ্ছে। এ ধরনের ঋণ থেকে কৃত্রিম আয়ও দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ‘‌উইন্ডো ড্রেসিংয়ের’ মাধ্যমে করা এ মুনাফা শেষ পর্যন্ত ব্যাংক খাতকে আরো বেশি নাজুক ও দুর্বলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দীন মনে করছেন, ২০২২ সালে দেশের ব্যাংক খাত ভালো ছিল, এটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌ব্যাংকগুলোর যে আয় দেখা যাচ্ছে, সেগুলো উইন্ডো ড্রেসিং বা চাতুরী বিন্যাসের ফল। প্রকৃত অর্থে গত বছর দেশের ব্যাংক খাত শক্তিশালী হয়নি। বরং উদ্যোক্তারা বড় অংকের নিট মুনাফা বের করে নেয়ায় ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংক পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ ব্যাংকার বলেন, ‘‌তিন বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন ধরনের ছাড় দেয়া হয়েছে। এ কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও অনেক গ্রাহক খেলাপি হয়নি। আবার ব্যাংকগুলো খেলাপি হওয়ার যোগ্য এমন ঋণকেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো আয় বাড়িয়ে দেখিয়েছে। গত বছর ব্যাংকগুলো রেকর্ড ৬৩ হাজার কোটি টাকার ঋণও পুনঃতফসিল করেছে। ফলে ব্যাংকগুলোকে সঞ্চিতিও কম রাখতে হয়েছে। এভাবে ব্যাংকগুলো নিট মুনাফা বাড়িয়েছে। যদিও পুনঃতফসিল ও নীতি ছাড় পাওয়া এসব ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা কম।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশই এখন পুনঃতফসিলকৃত। এর মধ্যে ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে গত বছর। রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল করা সত্ত্বেও ২০২২ সাল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে ‘স্ট্রেসড’ বা ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ হিসেবে দেখায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। একই সময়ে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতিও ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। আবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাতের অন্তত এক-চতুর্থাংশ ঋণই ছিল দুর্দশাগ্রস্ত। খেলাপির খাতায় ওঠা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো গ্রাহক উচ্চ আদালতে মামলা করছে। এসব মামলায়ও আটকা পড়েছে বিপুল পরিমাণ ঋণ।

ব্যাংকগুলোর ঋণ বড় গ্রাহকদের কাছে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ার অভিযোগ অনেক পুরনো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টের তথ্যেও একই কথা উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, শীর্ষ তিন গ্রাহক খেলাপি হয়ে গেলে দেশের অন্তত ২২টি ব্যাংক ন্যূনতম মূলধন সক্ষমতা (সিআরএআর) হারাবে। গত ডিসেম্বর শেষে পর্যাপ্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশের ১১টি ব্যাংক। রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল করা না হলে দেশের অন্তত অর্ধেক ব্যাংকই মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হতো বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা।

বছর শেষে নিট মুনাফায় ১৮৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখানো হলেও এ সময় ব্যাংকগুলোর সুদ আয়ে এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কোনো প্রবৃদ্ধি দেখা যায়নি। যদিও এ সুদ আয়কে দেখা হয় ব্যাংকের মুনাফার প্রধান উৎস হিসেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর সুদ বাবদ আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। এ সময়ে ব্যাংকগুলো বিতরণকৃত ঋণ থেকে ৯৬ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা সুদ আদায় করেছে। যেখানে এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে সুদ আয় ছিল ৮৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা। 

আবার গত বছর ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন ধরনের আমানতের বিপরীতে সুদ পরিশোধের ব্যয়ও বেড়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর সুদ ব্যয় হয়েছে ৬৯ হাজার ১১০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৬৩ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। সুদ ব্যয় বাদ দিয়ে ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোর নিট সুদ আয় হয়েছে ২৭ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ২৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর নিট সুদ আয় বেড়েছে ১৮ শতাংশ।

সুদ ছাড়াও ব্যাংকের আয়ের অন্যান্য উৎসের মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ, ফি ও ট্রেজারি খাত থেকে আয়। ২০২২ সালে এ খাত থেকে ব্যাংকগুলোর আয় হয়েছে ৪৬ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরে এ খাতে আয় ছিল ৪০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এ খাতে ব্যাংকগুলোর আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে ২০২২ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর মোট আয় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৬৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর মোট আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ।

ব্যাংকগুলোর আয়ের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় পরিচালন খাতে। ২০২২ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর পরিচালন খাতে ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরে এ খাতে ব্যয় ছিল ৩৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। এ সময়ে পরিচালন খাতে ব্যয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। মোট আয় থেকে পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা হয় সেটি সঞ্চিতিপূর্ব মুনাফা নামে পরিচিত। ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোর সঞ্চিতিপূর্ব মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ২২০ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরে এ মুনাফা ছিল ২৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর সঞ্চিতিপূর্ব মুনাফা বেড়েছে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ।

ব্যাংক খাত শক্তিশালী হওয়ার কারণে নিট মুনাফা বেড়েছে এটি বলার সুযোগ নেই বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘কিছু ব্যাংক ভালো করছে এটিও মানতে হবে। গত বছর ব্যাংকগুলো ট্রেজারি ও বিনিয়োগ থেকে ভালো আয় পেয়েছে। নিট মুনাফা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটির ভূমিকা আছে। তবে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান বেড়েছে এটি বলা যাবে না।’

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, ‘‌খেলাপি হওয়ার যোগ্য এমন ঋণও আয়ের খাতে নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে মুনাফা বাড়লেও ব্যাংক দুর্বল হচ্ছে। কারণ এসব ঋণ ভবিষ্যতে খেলাপি হয়ে যেতে পারে। তখন খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখতে হবে। এভাবে ব্যাংকের ক্ষতি আরো অনেক বেড়ে যাবে।’

বিতরণকৃত ঋণের ঝুঁকি কমাতে এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন হারে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। স্বাভাবিক শ্রেণীর ঋণের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ থেকে শুরু করে মন্দ ঋণের ক্ষেত্রে শতভাগ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। গত বছর দেশের ব্যাংকগুলো বিভিন্ন শ্রেণীর ঋণের বিপরীতে মাত্র ৮ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছে। যেখানে ২০২১ সালে সংরক্ষিত সঞ্চিতির পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে সঞ্চিতি সংরক্ষণের হার কমেছে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ। যদিও ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ব্যাংকগুলো ২১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছিল।

সঞ্চিতি কম সংরক্ষণের কারণে ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোর করপূর্ব মুনাফার পরিমাণ বেড়েছে ৯৭ দশমিক ১০ শতাংশ। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর করপূর্ব মুনাফা হয়েছে ২৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ১২ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ব্যাংকগুলো সরকারকে ১১ হাজার ২৩০ কোটি টাকার কর পরিশোধ করেছে। যেখানে আগের বছরে পরিশোধ করেছিল ৭ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। এ সময়ে কর বাবদ ব্যাংকগুলোর ব্যয় বেড়েছে ৪২ দশমিক ২ শতাংশ। সরকারকে কর পরিশোধের পর ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা দাঁড়ায় ১৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকায়।

ব্যাংকগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২২ সালে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকেরই নিট মুনাফা বেড়েছে। বিশেষ করে বিদেশী ব্যাংকগুলোর মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ছিল অস্বাভাবিক। শুধু বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল ১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ৭৫৮ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি।

গত বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে রেকর্ড পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়। এ কারণে বিদেশী ব্যাংকগুলোর মুনাফায় উল্লম্ফন হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ ব্যাংকই ঋণ পুনঃতফসিল ও নীতি ছাড়ের কারণে মুনাফা বাড়িয়ে দেখাতে পেরেছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে রেকর্ড ৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা নিট লোকসান দেয় ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির এ পরিমাণ লোকসান না হলে ব্যাংক খাতের নিট মুনাফা আরো বড় হতো।

এক সময় ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিলের প্রস্তাব নিজ পর্ষদে পাস হওয়ার পর তা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচাই-বাছাইয়ের পর পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতো। কিন্তু গত বছরের জুলাইয়ে পুনঃতফসিলের ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে নিজেরা ইচ্ছেমতো ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পায় ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতিকেই খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে উল্লম্ফনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিয়ন্ত্রণে নেই ডিমের বাজার

২০ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

করোনাকাল শুরুর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকার বাজারে এক হালি ডিমের দাম ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। রাজধানীর বাসিন্দাদের সেই ডিম এখন কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।

বাজারে ডিমের এই চড়া দাম কোনো সাময়িক সমস্যা নয়, বরং মাসের পর মাস ধরে ডিম নাগালের বাইরে থাকছে। ফলে সহজলভ্য এই প্রাণিজ আমিষ খেতে পারছেন না নিম্ন আয়ের মানুষ। শুধু ডিম নয়, চড়া মাছ ও মাংসের বাজারও। ফলে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষও বিপাকে রয়েছে।

ছোট ও মাঝারি খামারিরা বলছেন, ডিমের দাম নির্ধারণে তাঁদের ভূমিকা নেই। বাজারে ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে উঠেছে। তারা যে দাম ঠিক করে দেয়, সেই দরেই বিক্রি হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ১৩ আগস্ট ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।

একই দিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, দেশে যে ডিমের উৎপাদন, তাতে সঠিক ব্যবস্থায় বিন্যাস হলে আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই।

মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর বাজারে অভিযান চালানো শুরু হয়। কিন্তু ডিমের দাম কমেছে ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এখন বড় বাজারে এক ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। পাড়া–মহল্লার মুদিদোকান থেকে এক হালিডিম কিনতে হচ্ছে ৫৫ টাকায়। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে ডিমের দাম অনেকটাই কম।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রথম আলোর সংবাদদাতা অমর সাহা জানান, সেখানে গতকাল শনিবার প্রতি ৩০টি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬০ রুপিতে। তাতে প্রতিটি ডিমের দাম পড়েছে ৫ রুপি ৩৩ পয়সা যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ টাকা ৫ পয়সা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ভলান্টারি কনজ্যুমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান ভারতের চেন্নাই থেকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরেছেন। তিনি জানান, গত বুধবার তিনি চেন্নাইয়ে ৬টি ডিম কিনেছেন ৪২ রুপি দিয়ে। বাংলাদেশি মুদ্রায় হালি পড়েছে ৩৭ টাকা।

ডিম খাওয়াও কমাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ

২০ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

গাজীপুরের তিন সড়ক এলাকায় রাস্তার পাশে একটি ভাসমান ভাতের হোটেলে গত বুধবার দুপুরে খাবার খাচ্ছিলেন পোশাকশ্রমিক আবদুল আজিজ। স্পেরো নামের একটি কারখানায় কাজ করেন তিনি। আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুরে বিরতির সময় বাড়িতে গেলে গাড়িভাড়া লাগে ২০ টাকা।

কিন্তু বিশ্রাম নেওয়ার সময় থাকে না। তাই বেশির ভাগ সময় দুপুরের খাবার হোটেলে খেয়ে নিই। বছর দুই আগে ভাতের সঙ্গে ডিম আর ডাল খেলে লাগত ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এখন এক প্লেট ভাত আর ডিম খেলেই লাগে ৫০ টাকা। সঙ্গে অন্য কিছু নিলে লাগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মাছ আর মাংসের কথা বাদই দিলাম।’

বাজারে পাল্লা দিয়ে একের পর এক বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী যাত্রায় সর্বশেষ সংযোজন ডিম। লাগামছাড়া দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ মাছ-মাংস খাওয়া আগেই কমিয়ে দিয়েছেন। প্রাণিজ আমিষ বলতে ডিমই ছিল তাঁদের ভরসা। এখন ডিমের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে এখন প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৫০ টাকার নিচে নেই।

তাতে নিম্ন আয় ও শ্রমজীবী মানুষ ডিম খাওয়াও কমাতে শুরু করেছেন। হোটেল-রেস্তোরাঁয় এখন একটি ডিমভাজি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ২৫ টাকা। আর ডিমের তরকারি প্রতি বাটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে। তাতে শুধু গাজীপুরের মতো শ্রমিক-নির্ভর এলাকায় নয়, রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার কষ্ট আগের চেয়ে আরও বেড়েছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মালিবাগ, খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকা ঘুরে ও একাধিক নিম্ন আয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেও জানা যায়, সংসার চালাতে তাদের হিমশিম অবস্থা। মালিবাগ বাজারের পান বিক্রেতা মো. সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচজনের পরিবারে আমরা আগে প্রতি শুক্রবার মাংস খেতাম। এখন মাসে দুইবার মাংস খাই। মাছের দামও বাড়তি, তাতে মাছ খাওয়াও কমাতে হয়েছে। আর ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন শুধু ছোট ছেলের জন্য ডিম কিনি। আগে প্রতিজন একটি করে ডিম খেতাম। দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন একটি ডিম দুজনে ভাগ করে খাই।’

ডিমের বাড়তি দামের কারণে মানুষ যে এখন ডিম খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন, তা বোঝা যায় ভাতের হোটেলের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে। গাজীপুরের কড্ডা এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী লিটন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর হোটেলে আগে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০টি ডিম বিক্রি হতো। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন দিনে ২০ থেকে ৩০টি ডিম বিক্রি হয়। কারখানার শ্রমিক ও রিকশাচালকেরা বেশি ডিম খেতেন। এখন শাক, ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে চলে যান।

ভারতে শুল্ক ৭ টাকা, দেশে বাড়ল ১৫ টাকা

২১ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত আজ সোমবার শুল্ক আদায় শুরু করেছে। প্রতি কেজিতে গড়ে শুল্ক আদায় করা হচ্ছে সাত টাকা। এ হিসাবে দেশেও প্রতি কেজিতে সাত টাকা বাড়ার কথা আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। তবে শুল্ক আরোপের খবরে গত দুই দিনে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা।

গত শনিবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানায়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর এই শুল্ক বহাল রাখা হবে বলে ভারত সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। এই খবরে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এক দিনের ব্যবধানে খুচরায় ৫৫ টাকার ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।

দেশের নয়টি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির তথ্য পাওয়া গেছে। এসব স্থলবন্দরের তথ্যে দেখা যায়, ভারত থেকে গড়ে প্রতি কেজি ১৬ সেন্টে বা ১৭ টাকায় ঋণপত্র খুলে পেঁয়াজ আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। এর অর্থ, ভারতের ব্যবসায়ীরা গড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৬ সেন্টে রপ্তানি করছেন। আজ সোমবার ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই রপ্তানিমূল্যের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই শুল্ক আদায় করে ভারতীয় অংশ থেকে পণ্য ছাড় শুরু হয়।

আরব আমিরাতে বাংলাদেশীর সংখ্যার সঙ্গে রেমিট্যান্সের সামঞ্জস্য নেই

আগস্ট ২২, ২০২৩, বণিক বার্তা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১১ শতাংশ স্থানীয়। বাকি ৮৯ শতাংশই বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া প্রবাসী। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। যদিও দেশটি থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের দিক থেকে বাংলাদেশী শ্রমিকদের অবস্থান ষষ্ঠ। সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান ভারতীয়রা। দ্বিতীয় স্থানটি পাকিস্তানিদের। সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকে তৃতীয় ফিলিপাইন, চতুর্থ ইরান ও ও পঞ্চম স্থানে মিসর।

অভিযোগ রয়েছে, আরব আমিরাতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশই আসছে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে। মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশটি এখন বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারেরও অন্যতম প্রধান গন্তব্য হয়ে উঠছে।

আরব আমিরাত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ইউএইতে বসবাসরত ৯০ লাখ বিদেশীর মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যা সাড়ে ৭ লাখ। দেশটিতে বসবাসরত ১ কোটির কিছু বেশি সংখ্যক লোকের মধ্যে ৭ দশমিক ৪ শতাংশই বাংলাদেশী। কয়েক বছরে এ দেশ থেকে আমিরাতগামীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শুধু গত দেড় বছরেই প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশী অভিবাসী হয়েছেন আমিরাতে। তবে সে অনুপাতে বাড়েনি রেমিট্যান্স প্রবাহ।

এডিপির সর্বোচ্চ ৩৮% বরাদ্দ পেয়েও ঢাকায় দারিদ্র্যের হার কেন বাড়ছে

আগস্ট ২২, ২০২৩, বণিক বার্তা

দারিদ্র্য বিমোচন ও এসডিজি অর্জনে সরকার গত এক যুগে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। ফলে ১২ বছর আগের তুলনায় দারিদ্র্যের হার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই সময়ে চরম দারিদ্র্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। জাতীয় পর্যায়ে ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ এ সময়ে কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। কিন্তু সারা দেশে দারিদ্র্য কমলেও উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে ঢাকায়। এখানে দারিদ্র্য না কমে উল্টো প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে। অথচ প্রতি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় হচ্ছে ঢাকা বিভাগে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ঢাকা একাই পেয়েছিল এডিপির মোট বরাদ্দের ৩৮ শতাংশ অর্থ। দেশের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে জিডিপির বড় জোগানদাতা ঢাকা বিভাগ। বৈদেশিক রেমিট্যান্সেও বড় অবদান এ বিভাগের। এর পরও এখানে দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ঘিরে এক ধরনের গোষ্ঠীতান্ত্রিক পৃষ্ঠপোষক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ফলে রাজনৈতিক মধ্যস্বত্বভোগীরা উন্নয়ন বরাদ্দ ও সামাজিক নিরাপত্তার ভাগ নিয়ে গেলেও যাদের পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছেন না। আর আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানও তৈরি হয়নি সেভাবে। কারো কারো মতে, বিভিন্ন এলাকা থেকে গরিব মানুষ কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসায় এখানে দারিদ্র্য বেড়েছে। কেউ কেউ করোনার প্রভাবকেও একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন। মূল্যস্ফীতির অভিঘাতেরও ভূমিকা থাকতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, এখানকার দারিদ্র্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত ভঙ্গুর। তাই সামান্য ধাক্কাতেই মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। অর্থাৎ গরিব মানুষ দারিদ্র্যসীমার খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। জরিপে প্রাপ্ত তথ্যের যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন আছে কারো কারো। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় উচ্চমানসম্পন্ন ডাটা দেয়া হয়েছে জরিপে।

বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর তথ্যমতে, গত ছয় বছরে জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য বেড়েছে ঢাকায়। ২০১৬ সালে এ বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৬ শতাংশ। ২০২২ সালে এটি প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশে। এ সময়ে ঢাকা বিভাগের গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় আড়াই শতাংশ। ২০১৬ সালের ১৯ দশমিক ২ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে এটি ২১ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শহরাঞ্চলে এ হার ১২ দশমিক ৫ থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি কমেছে রংপুর বিভাগে। সেখানে ২০১৬ সালের ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ দারিদ্র্য ২০২২ সালে এসে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এডিপির অঞ্চলভিত্তিক বরাদ্দ নিয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) কর্তৃক ‘বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের আঞ্চলিক বিন্যাস’ শীর্ষক একটি গবেষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল মোট এডিপির ৩৭ শতাংশ অর্থ। একই অর্থবছরে বিভাগটিতে এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল মোট এডিপির ৩৮ শতাংশ অর্থ। যেখানে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল মোট এডিপির মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ অর্থ। এ হিসাবে কম বরাদ্দ পাওয়া অন্য দুই বিভাগ থেকে ঢাকা প্রায় ১৩ গুণ বেশি বরাদ্দ পেয়েছিল। বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের সাধারণ সরকারি সেবা, প্রতিরক্ষা এবং জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা ছাড়া বাকি ১২টি খাতের চলমান প্রকল্পের বাজেটগুলোর জেলা ও আঞ্চলিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছিল। আইপিডির পক্ষ থেকে গবেষণাটি পরিচালনা করেন পরিকল্পনাবিদ রেদওয়ানুর রহমান ও সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান।

বুলেট ট্রেনের খোঁজ নেই, বৃত্তাকার রেলে ‘অপচয়’

২২ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে বুলেট ট্রেন চালুর লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

বুলেট ট্রেনের মতো বৈদ্যুতিক ট্রেন, বৃত্তাকার ট্রেনসহ নানা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেছে রেলওয়ে। মানুষকে দ্রুতগতির ট্রেনে চলাচলের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প আর নেওয়া হয়নি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ২০টি সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ও কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেগুলোর পেছনে ব্যয় হয়েছে ৮৩৯ কোটি টাকা।

কিন্তু সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাগুলো শেষ করে প্রকল্প নেওয়া হয়নি। যদিও সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষায় সব কটি প্রকল্পই বাস্তবায়নযোগ্য এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বলে দেখানো হয়েছিল। আর কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বর্তমানে রেলওয়েতে আরও আটটি সম্ভাব্যতা যাচাই ও কারিগরি সহায়তা প্রকল্প চলমান। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৬৪ কোটি টাকা।

সাধারণত বড় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নীতিগত সম্মতি থাকার পরই কেবল সম্ভাব্যতা যাচাই হয়। কিন্তু রেলওয়েতে খেয়ালখুশিমতো সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে অর্থ অপচয় করার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে কমিশন-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়। আবার কর্মকর্তারা বিদেশভ্রমণের সুযোগ পান। কিন্তু রেল লোকসান দিতেই থাকে।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন অবশ্য টাকা খরচ করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে খারাপ কিছু দেখেন না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থেকে সম্ভাব্যতা যাচাই করে রাখা হচ্ছে। এক প্রকল্প নিয়ে দু-তিনবারও সম্ভাব্যতা যাচাই হয়। অর্থায়ন পাওয়ার জন্য এটা মেনে নিতে হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর রেল কেন অর্থায়ন পায় না? যেখানে অর্থায়নের অনিশ্চয়তা থাকে, সেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই কেন হয়? আর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলে নতুন করে সমীক্ষা করে প্রকল্প নিতে হয়।

বুলেট ট্রেন বাদ, এখন বৈদ্যুতিক ট্রেন

বুলেট ট্রেনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খবরটি রেলওয়ে থেকেই দেওয়া হয়েছিল। তা ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছিল। এ কাজে পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল চীনের চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন ও বাংলাদেশের মজুমদার এন্টারপ্রাইজকে। ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা প্রণয়নসহ অন্যান্য প্রতিবেদন জমা দেয়। তারা জানায়, বুলেট ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯৬ হাজার কোটি টাকা লাগবে।

বুলেট ট্রেনের জন্য উড়ালপথে রেললাইন স্থাপনের পরামর্শ দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। সমীক্ষা অনুসারে, ঢাকা-চট্টগ্রামের প্রস্তাবিত পথে বুলেট ট্রেনে নিরবচ্ছিন্নভাবে যেতে সময় লাগার কথা ৫৫ মিনিট।

বুলেট ট্রেনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্যেই চীনসহ বিভিন্ন দেশের কাছে অর্থায়নের অনুরোধ জানানো হয়। চায়না রেলওয়ে গ্রুপ ও চায়না রেলওয়ে ডিজাইন জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি) পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগ্রহ দেখায়। তবে তা আর এগোয়নি।

এবার বৈদ্যুতিক ট্রেনের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে রেলওয়ে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এবং গাজীপুরের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করার লক্ষ্য নিয়ে গত জুলাইয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সমীক্ষা শুরু হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তুরস্কের তুমাস তার্কিশ ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটিং অ্যান্ড কন্ট্রাক্টিং নামে প্রতিষ্ঠানকে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, বৈদ্যুতিক ট্রেনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর ব্যয় আরও বাড়তে পারে।

বৃত্তাকার রেলপথ ও পায়রায় ট্রেন

ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) বৃত্তাকার রেলপথ ও পাতালরেলের (সাবওয়ে) কোনো সুপারিশ নেই। অথচ ঢাকার চারদিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণে ২০১৮ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। নিয়োগ করা হয় চায়না রেলওয়ে সিচুয়ান সার্ভে অ্যান্ড ডিজাইন গ্রুপ কোম্পানি এবং বাংলাদেশের বেটস কনসালটিং সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যাডভাইজারস লিমিটেডকে। ২৫ কোটি টাকা খরচ করে তিন বছর সমীক্ষা চালায় তারা।

সমীক্ষা শেষে পরামর্শকেরা জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭১ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পে অর্থায়ন পাওয়া যায়নি। তাই প্রকল্প হয়নি।

একই সময় সরকারের সেতু বিভাগ ঢাকার ভেতরে ও চারপাশে চারটি সাবওয়ে নির্মাণে ২০১৮ সালে স্পেনের টিপসাসহ কয়েকটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জোট বা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করে। এতে খরচ হয় ৩২২ কোটি টাকা। এর বাইরে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড ঢাকায় ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণে কাজ করছে। এই ছয়টি লাইনের কিছু অংশ উড়ালপথে এবং কিছু পাতালপথে যাবে।

রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বৃত্তাকার, সাবওয়ে ও মেট্রোরেল প্রায় একই ধরনের গণপরিবহন। তিনটি একসঙ্গে ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে নির্মাণ করা প্রায় অসম্ভব। এত বিপুল বিনিয়োগ করাও কঠিন। ফলে সাবওয়ে ও বৃত্তাকার রেল প্রকল্পে রেলওয়ে ও সেতু বিভাগের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পগুলো অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয়নি।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর পায়রা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ২০১৬ সালে প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পর ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছরের জুনে নকশা প্রণয়নসহ প্রকল্পটি তৈরি করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা।

রেললাইনটি নির্মাণে ২০১৬ সালেই ডিপি রেল নামে যুক্তরাজ্যের একটি ‘ভুঁইফোড়’ কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছিল রেলওয়ে। এরপর আর বিষয়টি এগোয়নি। চীন, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের অর্থায়ন পেতে চেষ্টাও চালিয়েছিল সরকার। কিন্তু পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর পর্যন্ত রেলপথে ওভারপাস/আন্ডারপাস নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে (২০১৯ সালে শেষ)। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঢাকায় দুটি ওভারপাস নির্মাণ করেছে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ চার বছরে কিছুই করেনি।

আরও সম্ভাব্যতা যাচাই

চট্টগ্রামের জালানীহাট থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত মিশ্র গেজ রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। দুই বছরে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এরপর রেলপথ নির্মাণে আর কোনো উদ্যোগ নেই।

জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর পথে বিদ্যমান রেলপথের সমান্তরাল আরেকটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করার লক্ষ্যে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৫ সালের দিকে। ব্যয় হয় সাড়ে আট কোটি টাকা। এরপর চীনের সঙ্গে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে দর-কষাকষিও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চীন সরে দাঁড়ায়। কেউ আর বিনিয়োগ করেনি।

জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে রেল সংযোগের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিশদ নকশা তৈরিতে ২০১৭ সালে প্রকল্প নেওয়া হয়। দুই বছরে ব্যয় হয় পৌনে পাঁচ কোটি টাকা। একই সময়ে মিরসরাই-ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলে রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই ও পূর্ণাঙ্গ নকশা প্রণয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এতেও পৌনে পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু মূল নির্মাণকাজের আর কোনো খবর নেই।

নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর পর্যন্ত রেলপথে ওভারপাস/আন্ডারপাস নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে (২০১৯ সালে শেষ)। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঢাকায় দুটি ওভারপাস নির্মাণ করেছে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ চার বছরে কিছুই করেনি।

কিন্তু অনেক সময় যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্প নিয়ে বাস্তবায়ন করে রেলওয়ে। রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ডেমু ট্রেন কিনতে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। খরচ হয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। পরে দেখা গেছে, ট্রেনগুলো অকালে অকেজো হয়ে গেছে।

কারিগরি সহায়তা প্রকল্প

রেলে এখন সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা, চীন ও ভারত। রেলওয়ে সূত্র বলছে, এডিবি ও জাইকা প্রায়ই কারিগরি সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নের শর্ত দিয়ে থাকে।

যদিও কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের সুফল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ধরনের প্রকল্পের মধ্যে মূল প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা বৃদ্ধির মতো বিষয় থাকে। থাকে রেলের সংস্কার প্রকল্প। কিছু প্রকল্পে রেলে কিছু নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আর কিছু বড় বই তৈরি এবং কিছু কর্মকর্তার বিদেশভ্রমণ ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি।

যেমন বাংলাদেশ রেলওয়ে সংস্কার প্রকল্প শুরু হয় ২০০৬ সালে। অস্ট্রেলিয়ার স্ম্যাক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি টেনে নেয় ২০১৯ সাল পর্যন্ত। এর আওতায় পরামর্শকদের বেতন, ভাতা ও গাড়ি, মোটা মোটা বই তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা।

‘চাপ থাকে’

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, রেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা অবসরের পর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি নেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়া এবং পরে সেখানে চাকরিতে যোগ দিয়ে ‘তদবিরের’ অভিযোগ রয়েছে।

২০১২ সাল থেকে প্রায় তিন বছর রেলের মহাপরিচালক ছিলেন মো. আবু তাহের। অবসরে গিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়া কতটা নৈতিক, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবসরের পর কারও চাকরি করার সামর্থ্য থাকলে তা করা তো অন্যায় হওয়ার কথা নয়।

কেন বারবার সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প নেওয়া হয়, কিন্তু প্রকল্প হয় না, জানতে চাইলে আবু তাহের বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প বেশির ভাগ ওপর মহল থেকে আসে। কিন্তু অর্থায়নের সংকটে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় না।

বিপুল বিনিয়োগ, লোকসানে রেল

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর রেলের উন্নয়নে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এ সময়ে রেলের সেবার পরিসর সংকুচিত হয়েছে। ট্রেন চলছে আগের চেয়ে কম। রেলের লোকসানের বোঝাও ভারী। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেল লোকসান দিয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: ই-গেট রইল শুধু শোভা হয়ে

২৩ আগস্ট ২০২৩, আজকের পত্রিকা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ই-গেটের (ইলেকট্রনিক গেট) স্ক্রিনে নীল আলো জ্বলছে। পাশেই বড় পর্দায় প্রচার করা হচ্ছে, এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলে দ্রুতই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবে। তা দেখে দুবাইফেরত আশিকুর ইসলাম পাশে থাকা লম্বা সারি ছেড়ে নিজের পাসপোর্ট ব্যবহারের চেষ্টা করেন। কিন্তু ই-গেটে মেশিন তাঁর পাসপোর্ট পড়তে পারে না। আবার গিয়ে পাশের কাউন্টারেই দাঁড়ান তিনি। দীর্ঘ সারিতে ঘণ্টাখানেক থেকে ইমিগ্রেশন শেষ করে বেরিয়ে আসেন। যদিও ই-পাসপোর্টধারী এই যাত্রীর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৮ সেকেন্ডে শেষ হওয়া কথা ছিল।

আশিকুর ইসলাম গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুনেছি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম আমরা ই-গেট সুবিধা পেয়েছি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব কাজ করে। কিন্তু যাওয়া-আসার সময় একবারও এই সুবিধা পেলাম না। সেই লাইনেই দাঁড়াতে হলো আমাকে। তাহলে এত টাকা খরচ আর প্রচারের কী দরকার ছিল?’

আশিকুর ইসলামের এই প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে জানার চেষ্টা করলেও কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। কারিগরি ত্রুটির অজুহাতে প্রসঙ্গ এড়িয়ে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

ই-গেট সেবার অবস্থা জানতে চাইলে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহরিয়ার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানা যায়, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই বছর দেড়েক আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য ২৭টি ই-গেট সেবা চালু করা হয়। তারও আগে ১১ মাস পরীক্ষামূলকভাবে তা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। শুরুতে কয়েক দিন ঠিকমতো চললেও হঠাৎ জটিলতা দেখা দেওয়ায় গেটগুলো এখন অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে।

সস্তা আমিষও এখন নাগালের ‘বাইরে’

২৪ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

বাজারে যে মাছগুলো বছরের পর বছর ‘সস্তা’ বলে পরিচিতি ছিল, তা এখন দামি হয়ে উঠেছে। যেমন পাঙাশ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ডিএএম) হিসাবে, ২০১৩ সালে সারা দেশ মিলিয়ে ছোট পাঙাশের প্রতি কেজির গড় দাম ছিল ১১৪ টাকা। ২০২১ সালে এই দর ছিল ১১১ টাকা। এখন ঢাকার বাজারে ছোট পাঙাশ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে। একটু বড় হলে দাম ২৫০ টাকার আশপাশে ওঠে।

পাঙাশের মতো তেলাপিয়া, চাষের কই, রুই, কাতলা ইত্যাদি চাষের মাছের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। এসব মাছ স্বল্প আয়ের মানুষের প্রাণিজ আমিষের বড় উৎস।

মাছের বিকল্প হিসেবে নিম্ন আয়ের মানুষ ডিম বা ব্রয়লার মুরগি থেকে পুষ্টি নেবে, সে উপায়ও নেই বললেই চলে। কারণ, মাছের মতোই বেড়েছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। আর গরু ও খাসির মাংসের দাম তো বছর বছর বাড়ছে। বেড়েছে দুধের দামও।

বাড়িতে ফোন করলে এখন আর জানতে চাই না কী রান্না হয়েছে। কারণ, বেশির ভাগ দিনই তাঁদের নিরামিষ খেতে হয়।

টালি খাতা বিক্রেতা ফারুক আহমেদ

চাল, ডাল, তেল, চিনি ও আটার দাম অনেক দিন ধরেই চড়া। নতুন করে আলোচনায় পেঁয়াজ। গত শনিবার ভারত রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সিলেটের বাজারে ‘বুঙ্গার চিনি’

২৪ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

ভারত থেকে চোরাই পথে আসা চিনিতে সয়লাব সিলেটের বাজার। সিলেটের পাইকারি বাজার কালীঘাটেই দৈনিক এক থেকে দেড় কোটি টাকার চোরাই চিনি কেনাবেচা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এরপর দেশীয় নানা ব্র্যান্ডের স্টিকারযুক্ত বস্তায় ভরে এসব চিনি পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। চোরাচালানে আসা এসব চিনি স্থানীয়ভাবে ‘বুঙ্গার চিনি’ নামে পরিচিত।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, জেলার জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী শতাধিক স্থান দিয়ে চোরাই পণ্য সিলেটে প্রবেশ করে। সীমান্ত এলাকার অন্তত এক হাজার চোরাকারবারি এই কাজে জড়িত। প্রায়ই চোরাই চিনি আটকের খবর পাওয়া গেলেও পাচারের পরিমাণের তুলনায় তা খুবই কম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সম্প্রতি চোরাচালানের চিনি পাইকারি বাজারে পৌঁছে দিতে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কথা বলায় হামলার শিকার হয়ে এক আইনজীবী আদালতে মামলাও করেছেন। সীমান্ত এলাকার স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তাদের নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া চোরাচালানের চিনি নগরের কালীঘাট বাজার পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব নয়।

জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে ১ হাজার ৪৩১ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব বস্তায় ৭১ হাজার ৪৯ কেজি চিনি ছিল। এসব ঘটনায় ২৩টি মামলা হয় এবং পুলিশ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বিজিবি সিলেট সেক্টরের আওতাধীন সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার তিনটি ব্যাটালিয়নের সীমান্ত এলাকায় গত ১ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৯ হাজার ২৫২ কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়েছে, যার মূল্য ২ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার ৪৩৫ টাকা।

অর্থমন্ত্রী অনিয়মিত, দেখা দেন না গভর্নর, অর্থসচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান

২৪ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

অর্থনীতির সংকট কাটছে না। ডলারের দর এখনো অনেক বেশি। সরকারের হিসাবেই মূল্যস্ফীতি কমেছে অতি সামান্য, বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পতনও ঠেকানো যাচ্ছে না।

অথচ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, নীতির সমন্বয়হীনতা, মনিটরিংয়ের অভাব, আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় না থাকা, অতিমাত্রায় আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতা এবং জবাবদিহির অভাবের কারণেই বাংলাদেশ সংকট থেকে বের হতে পারছে না। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহারা মানুষ ও একটি দুর্বল অর্থনীতির ভিত্তি নিয়েই বাংলাদেশ নতুন আরেকটি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে।

বিশ্ব অর্থনীতির এ রকম এক সংকটের সময় সারা বিশ্বেই অর্থনীতিসংক্রান্ত নীতিনির্ধারকেরা আছেন চালকের আসনে। অথচ বাংলাদেশে অর্থনীতি বিষয়ের নীতিনির্ধারকদের দেখাই পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অর্থমন্ত্রী নিয়মিত কার্যালয়ে আসেন না। অর্থসচিব কারও সঙ্গে কথা বলেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও দেখা পাওয়া দুষ্কর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান কোনো অনুষ্ঠানেই যান না। এসব নীতিনির্ধারকের সঙ্গে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা, গবেষক বা অর্থনীতিবিদ—কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তাঁরা কারও পরামর্শও নেন না। এতেই দেখা দিয়েছে নানা ধরনের সমন্বয়হীনতা। এর ফল ভোগ করছে দেশের সাধারণ মানুষ।

সরকারি চাকরির আবেদনে দিতে হবে ভ্যাট

আগস্ট ২৫, ২০২৩, বণিক বার্তা

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের কাছ থেকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবেদন ফির ওপর টেলিটক কর্তৃক আদায়কৃত ১০ শতাংশ কমিশনের ওপর এ কর আদায় করা হবে। এর ফলে চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন ব্যয় কিছুটা বাড়বে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্প্রতি চাকরির আবেদন ফি পুনঃনির্ধারণ করে এ নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে প্রথমবারের মতো প্রার্থীদের কাছ থেকে এ ধরনের কর আদায়ের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। নতুন এই প্রজ্ঞাপন জারির ফলে একই বিষয়ে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপনটি বাতিল হলো।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, টেলিটকের মাধ্যমে অনলাইনে সরকারি চাকরির পরীক্ষা ফি বাবদ নেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে টেলিটককে দিতে হবে, আর ভ্যাট হিসেবে আদায় করা হবে কমিশনের ১৫ শতাংশ। আগে আবেদন ফির ওপর ১০ শতাংশ কমিশন নেওয়ার বিধান থাকলেও এই কমিশনের ওপর কোনো ভ্যাট আদায় করা হতো না।

সংশোধিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন ফি ২০০ টাকা প্রদেয় হলে, চাকরিপ্রার্থীকে ১০ শতাংশ কমিশন হিসাবে অতিরিক্ত ২০ টাকা এবং কমিশনের ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে আরও ৩ টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ প্রার্থীকে মোট ফি দিতে হবে ২২৩ টাকা।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ৪৫ লাখ ডলার

আগস্ট ২৬, ২০২৩, বণিক বার্তা

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা হয় ২০১১ সালের নভেম্বরে। সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করতে সংস্থাটির সময় লেগে যায় আরো চার বছর। এর পরের আট বছরে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারেনি বেজার অধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় সরাসরি বা প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে মাত্র ৪৫ লাখ ডলার (সর্বশেষ বিনিময় হার অনুযায়ী ৪৯ কোটি টাকার কিছু বেশি)।

দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে পরিকল্পিত ও বিশেষায়িত শিল্প অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সরকার। বেজাকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন, ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্দেশ্য থেকে। এজন্য ২০১০ সালে একটি আইন প্রণয়ন হয়। আর এ আইনের ভিত্তিতে পরের বছরের নভেম্বরে যাত্রা করে বেজা। শুরু থেকেই নানা বাধাবিপত্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সংস্থাটিকে। সীমিতসংখ্যক কর্মীবাহিনী নিয়ে সংস্থাটির সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করতে সময় লেগে যায় ২০১৫ সাল। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় দেশী বিনিয়োগকারীরা সাড়া দিলেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহের হিসাব পাওয়া যাচ্ছে মূলত ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে। ওই অর্থবছরে অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিট এফডিআই প্রবাহ এসেছে সাড়ে ৩ লাখ ডলার। এরপর গত অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে নিট এফডিআই প্রবাহ আসে ২১ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর পরের প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চে এসেছে ২০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় নিট এফডিআই প্রবাহ এসেছে ৪৫ লাখ ডলার।

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদেশী বিনিয়োগ না আসার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিত করতে না পারাকে দায়ী করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে বেজার বক্তব্য হলো অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিতে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, যা সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলেই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিত করা যাবে।

পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের প্রবাহ, কর্মসংস্থান ও শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। বেজার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এর মধ্যে ৯৭টির অনুমোদন হয়েছে। অনুমোদিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে ৬৮টি সরকারি ও ২৯টি বেসরকারি। এর মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়ে এখন পর্যন্ত উৎপাদনে যেতে পেরেছে ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। নির্মাণাধীন রয়েছে ২৯টি। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় এ মুহূর্তে উৎপাদনরত কারখানা আছে ৪২টি। এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের। এছাড়া নির্মীয়মাণ শিল্প-কারখানার সংখ্যা ৫০টি। এখন পর্যন্ত বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় মোট বিনিয়োগ হয়েছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন (৪৫০ কোটি) ডলার। এর ৯৯ শতাংশের বেশিই দেশী বিনিয়োগ। এছাড়া সরকারি পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন (২ হাজার ৩৯৭ কোটি) ডলার। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় দেশী-বিদেশী মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন (২ হাজার ৮৪৭ কোটি) ডলার।

ভারত চিনি রপ্তানি বন্ধ করলে কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে

২৬ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

আগামী অক্টোবরে শুরু হওয়া নতুন মৌসুমে ভারত চিনি রপ্তানি বন্ধের পরিকল্পনা করছে। বৃষ্টির অভাবে আখের ফলন কমে যাওয়ায় দেশটি এ রকম পরিকল্পনা করছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ভারত তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে চিনি আমদানিতে বাংলাদেশের খরচ বেড়ে যাবে। তবে এ নিয়ে দেশের আমদানিকারকদের কেউ কেউ অবশ্য উদ্বিগ্ন নন। তাঁরা বলছেন, ভারতের চিনি রপ্তানি বন্ধের খবরটি উদ্বেগের, তাতে খুব দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ, অন্য দেশের চিনি পাওয়া যাবে। সরকার ঋণপত্র (এলসি) খোলায় সুবিধা ও শুল্কহারে ছাড় দিলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাব কমবে।

বাংলাদেশে চিনির বাজার এখন মূলত পাঁচটি পরিশোধন কারখানার হাতে। ওই পাঁচ কারখানা হলো মেঘনা সুগার রিফাইনারি, সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রি, এস আলম রিফাইন্ড সুগার রিফাইনারি, আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি ও দেশবন্ধু সুগার রিফাইনারি। এসব কারখানা অপরিশোধিত চিনি এনে পরিশোধনের মাধ্যমে বাজারজাত করে থাকে। এর বাইরে খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিশোধিত চিনি এনে বাজারজাত করে। এর পরিমাণ অবশ্য মোট আমদানির ১০ শতাংশের কম।

চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন সুগার রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করলে বিশ্ববাজারে চিনির দাম বাড়তে পারে। তাতে দেশে আমদানি ও সরবরাহ নিয়ে খুব সমস্যা হবে না। কারণ, অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা যাবে। তবে এ জন্য চিনি আমদানির ঋণপত্র খুলতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তা এখনই নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ মূলত ব্রাজিল থেকেই অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে আসছে। করোনার আগের বছরগুলোয় মোট অপরিশোধিত চিনি আমদানির ৪–১৩ শতাংশ আনা হতো ভারত থেকে। এর বাইরে থাইল্যান্ড থেকেও মাঝেমধ্যে চিনি আমদানি করা হতো। তবে করোনার সময় বিশ্বব্যাপী জাহাজভাড়া বেড়ে গেলে ভারত থেকে আমদানি বাড়তে থাকে। কারণ, ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে পরিবহনভাড়া কম পড়ে। যেমন ২০২১–২২ অর্থবছরে অপরিশোধিত চিনির ৪৪ শতাংশ ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরও মোট আমদানির ৩৯ শতাংশ হয়েছে ভারত থেকে।

আমদানিকারকেরা জানান, ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে খরচ কম পড়ে। আবার দ্রুততম সময়ে আমদানি করা যায়। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার অর্থ হলো ব্রাজিল বা অন্য দেশ থেকে আমদানিতে পণ্য পরিবহনভাড়া বাবদ বাড়তি টাকা পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ ভারতের রপ্তানি বন্ধের প্রভাব পড়বে পণ্য আমদানির খরচে।

গত বছরের জুলাই–আগস্ট থেকে দেশের বাজারে চিনি নিয়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। কখনো গ্যাস–বিদ্যুৎ সমস্যায় উৎপাদন ব্যাহত হয়ে বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে। আবার কখনো বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ও দেশে ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শুধু ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ায় এক বছরের ব্যবধানে চিনি আমদানিতে খরচ ২৭ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে আবার গত অর্থবছরে ঋণপত্র (এলসি) সংকটে চিনি আমদানি কমে যাওয়ায় সরবরাহেও সমস্যা দেখা দেয়। এভাবে এক সংকট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেক সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে।

৭০% মানুষ মনে করে দেশের অর্থনীতি ভুল পথে চলছে

আগস্ট ৩০, ২০২৩, বণিক বার্তা

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভুল পথে চলছে বলে মনে করে প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ। অন্যদিকে ৮৪ শতাংশ মানুষের ধারণা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আর ৪৪ শতাংশ মনে করছে, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি। দেশের মানুষের এ মতামত উঠে এসেছে দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে। এশিয়া ফাউন্ডেশন গতকাল তাদের ওয়েবসাইটে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

‘দ্য স্টেট অব বাংলাদেশ’স পলিটিক্যাল, গভর্ন্যান্স, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি: অ্যাকর্ডিং টু ইটস সিটিজেনস’ বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, শাসন, উন্নয়ন ও সামাজিক পরিস্থিতি: নাগরিকদের মত শীর্ষক জরিপটিতে ৬৪ জেলার মোট ১০ হাজার ২৪০ নাগরিকের মতামত নেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলা থেকে সমানসংখ্যক নারী-পুরুষ এ জরিপে অংশ নেয়। এর মধ্যে গ্রামের বাসিন্দা ৬৪ ও শহরের ৩৬ শতাংশ। ২০১১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে পরিচালিত গবেষণাটি চলে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। উত্তরদাতাদের কাছে মূলত রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিদের বিষয়ে নাগরিকদের উপলব্ধি, সমাজ ও অর্থনীতির গতিশীলতা, গণতন্ত্র ও নির্বাচন, নাগরিকত্ব, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নীতির প্রভাব এবং সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।

২০১৭ ও ২০১৯ সালেও একই ধরনের গবেষণা করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বর্তমান তথ্যের পাশাপাশি আগের তথ্যচিত্রও তুলে ধরা হয়। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কোন পথে রয়েছে—এমন প্রশ্নে ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা জানায়, অর্থনৈতিকভাবে দেশ ভুল পথে আছে। তবে সঠিক পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা। যদিও ২০১৯ সালে ৭০ দশমিক ৩ শতাংশ নাগরিক মনে করত, বাংলাদেশ ঠিক পথে রয়েছে আর ২৮ শতাংশ মানুষ মনে করত ভুল পথে রয়েছে দেশ। মূলত স্বল্প আয়ের লোকজনের মতামতেই এ তথ্য বেশি উঠে এসেছে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও আস্থার সংকট ফুটে উঠেছে এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বিআইজিডির গবেষণা প্রতিবেদনটিতে। ২০১৯ সালে ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ লোক মনে করত, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে। তবে ২০২২ সালে সে ধারণার হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ১ শতাংশে। আগের জরিপে ভুল পথে আছে মনে করত ৩০ শতাংশ মানুষ। নতুন জরিপে সেটিও বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

সামাজিক ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসেনি উত্তরদাতাদের পক্ষ থেকে। ২০১৯ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সঠিক পথে ছিল বলে মনে করত ৭৭ শতাংশ মানুষ এবং ২১ দশমিক ৯ শতাংশ মনে করত ভুল পথে এগোচ্ছে দেশ। তবে ২০২২ সালে সঠিক পথে আছে বলে মনে করে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। সেক্ষেত্রে সাড়ে ১৯ শতাংশেরই আস্থা কমেছে। এখন ভুল পথে রয়েছে বলে মনে করে ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি।

চীনা ঋণের জাহাজের দাম বাড়ছে ৫০%

২৭ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

চীন থেকে নতুন ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। এই ঋণের অর্থে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জন্য চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ কেনা হবে। প্রাথমিক পরিকল্পনায় ছয়টি জাহাজ কেনার কথা ছিল। কিন্তু ডলার এবং জাহাজ নির্মাণের সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই এখন সেই দামে মিলবে চারটি জাহাজ। আড়াই বছরের দর-কষাকষির পর চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে জাহাজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

এসব জাহাজ কেনার জন্য সাড়ে ২৩ কোটি ডলারের সরবরাহকারী ঋণ দিচ্ছে চীন। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এই বাণিজ্যিক ঋণচুক্তি হতে পারে। বাণিজ্যিক ঋণচুক্তির পরপরই চীনা কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন বা সিএমসিকে জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হবে। এই কোম্পানি দর-কষাকষির পর্যায়ে জাহাজের নকশা, পরিমাপসহ যাবতীয় বিষয় ঠিক করেছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে ডলার–সংকটের এই সময়ে সরকারিভাবে জাহাজ কেনার উদ্যোগ থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ছয়টি জাহাজ কিনতে হলে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন এবং এর জন্য নতুন করে আলোচনা চালাতে হতো। বাকি দুটি জাহাজ আলাদা প্রকল্পের মাধ্যমে চীনা ঋণে কেনা হবে।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চীনের সঙ্গে এই ঋণ নিয়ে আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। তখন ৮০ হাজার ডিডব্লিউটি সক্ষমতার তিনটি মাদার বাল্ক জাহাজ ও ১ লাখ ১৪ হাজার ডিডব্লিউটি সক্ষমতার তিনটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার কেনার কথা ছিল। পরে আড়াই বছর ধরে এ নিয়ে দর-কষাকষি চলে। কিন্তু এর মধ্য ডলারের দাম বেড়েছে, জাহাজ নির্মাণের লোহাসহ সব জিনিসের দাম বেড়েছে—এসব কারণ দেখিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষ ছয়টি জাহাজ দিতে পারবে না বলে জানায়। বাংলাদেশ তাতেই রাজি হয়। এখন সেভাবেই বাণিজ্যিক চুক্তি হবে।

ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে গত দেড় বছরে ডলারের দাম প্রায় ২৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। এই সময়ে প্রতি ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১০৯ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপসহ বিভিন্ন ধরনের ইস্পাতের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরবরাহকারী ঋণে ঋণদাতারা প্রথমে বেশি পণ্যের কথা বলে, পরে দর-কষাকষির চূড়ান্ত পর্যায়ে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে পণ্যের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। এটি পুরোনো কৌশল। দর-কষাকষির নানা পর্যায়ে এ দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের “সন্তুষ্ট” করার অভিযোগও আছে। এ ছাড়া ডলার–সংকটের এ সময়ে বিদেশি মুদ্রায় জাহাজ কেনার প্রয়োজন নেই। দিলে ছয়টি জাহাজ, না হয় চুক্তি বাতিল করা উচিত।’

প্রকল্পে যা আছে

চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রায় আড়াই বছর দর-কষাকষির পর গত ২৮ ডিসেম্বর প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। গত এপ্রিল মাসে ২ হাজার ৬২০ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। এর মধ্যে চীন সরকারের ঋণ ২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। ১৬৭ কোটি ৬৫ লাখ আরএমবির সমপরিমাণ চীনা মুদ্রায় ঋণ দেওয়া হবে। চীন সরকার তাদের এক্সিম ব্যাংক থেকে এই তহবিল নিয়ে বাংলাদেশকে দেবে। জানা গেছে, এই ঋণ পরিশোধের সময় ১৫ বছর। এর মধ্যে চার বছর গ্রেস পিরিয়ড। সব মিলিয়ে সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, আগে ছয়টি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ডলারের পাশাপাশি জাহাজ বানানোর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় চারটি জাহাজ দেবে চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন আরও বলেন, ‘দর-কষাকষির শুরুতে যে পরিমাণ ঋণ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম, তা বাড়াতে হলে আবার নতুন করে আলোচনা করতে হতো। তাই ঋণের অঙ্ক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বাকি দুটি জাহাজ আলাদা আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে চীনা ঋণে কেনা হবে।’

জাহাজের দাম বেড়েছে ৫০%

প্রকল্পের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, বর্তমানে একটি মাদার বাল্ক জাহাজের দাম পড়ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৮০ কোটি টাকা। প্রথম যখন দর-কষাকষি শুরু হয়েছিল, তখন একই জাহাজের দাম ধরা হয়েছিল ৫২০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকারের দাম পড়ছে ৪৬২ কোটি ডলার। আগে এর দাম ছিল ৩০৮ কোটি ডলার। এখন এ ধরনের জাহাজ কিনতে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ দাম দিতে হচ্ছে।

দর-কষাকষির প্রতিটি পর্যায়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন প্রতিনিধিরা ছিলেন। এই কোম্পানির প্রতিনিধিরা আগের দামে জাহাজ দিতে না পারার কথা জানিয়েছেন। কারণ, ডলার ও বিভিন্ন সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধি। চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন জাহাজগুলোর নকশা ও পরিমাপসহ সবকিছু করেছে।

চীনা ঋণের বিপরীতে দরপত্র আহ্বান করা হয় না। এটি সরবরাহ ঋণ, তাই বাণিজ্যিক ঋণচুক্তি হওয়ার পর সরাসরি চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনকে জাহাজ বানানোর কার্যাদেশ দেওয়া হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে জাহাজ চারটি বানিয়ে বাংলাদেশকে হস্তান্তর করা হবে।

সিন্ডিকেটের ‘লম্বা হাত’

৩১ আগস্ট ২৩, সমকাল

দিন দশেক আগে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরে বাংলাদেশের বাজারে পণ্যটির দাম বাড়ে কেজিতে ২০ টাকা। অথচ দেশে বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের ঘরে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। তুলকালাম কাণ্ড ঘটে কাঁচামরিচের বাজারেও। সরবরাহে ঘাটতির অজুহাতে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ১০০ টাকা থেকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে হাজার টাকায় পৌঁছে।

এদিকে, গত এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দর নিম্নমুখী। কিন্তু দেশের বাজারে পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী। সরকার বারবার দাম বেঁধে দিলেও তা কার্যকর হয়নি। একইভাবে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল ও গুঁড়া দুধের দাম কমলেও দেশের বাজারে কমেনি।

কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি? বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডলার সংকট, বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি, উৎপাদন কম ইত্যাদি অজুহাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মুষ্টিমেয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান। নানা কায়দায় সিন্ডিকেট গড়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় তারা। ভোক্তারা বাড়তি দামের চাপে পড়লেও সরকারের মন্ত্রী-সচিবরা বলছেন, ‘সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়’ তারা।

অর্থনীতিবিদ ও ভোক্তা অধিকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সিন্ডিকেট প্রতিরোধ করতে হবে। কারা সিন্ডিকেটে জড়িত, তা সরকারের নীতিনির্ধারকরাও জানেন। তবে সিন্ডিকেটে জড়িতদের হাত এতই লম্বা যে, তা ভাঙা দুরূহ। রাজনীতির ঊর্ধ্বে এসে ব্যবস্থা না নিলে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়। তবে রাষ্ট্র চাইলে যে কোনো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

অর্থনীতি ভুল পথে গেছে ভুল সিদ্ধান্তে, সমন্বয়হীনতায়

৩১ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

ইতিহাসে আর্থিক হিসাবের সর্বোচ্চ ঘাটতি নিয়ে একটি অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও ব্যয়ে সবচেয়ে বেশি পার্থক্য ছিল বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরেই। এ কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের পতন ঠেকাতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক হিসাবে সর্বোচ্চ ঘাটতির কারণে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতাও ছিল রেকর্ড পরিমাণে।

কেবল লেনদেনের ভারসাম্যে নয়, বিগত অর্থবছর ছিল সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিহাসের অন্যতম খারাপ অর্থবছর। এ সময় গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ শতাংশের বেশি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেছে প্রায় ১৪ শতাংশ, রিজার্ভ কমেছে অর্ধেক, কমেছে বেসরকারি বিনিয়োগ, শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ব্যাপকভাবে, বেড়েছে খেলাপি ঋণ, দুর্বল হয়েছে ব্যাংক খাত।

সংকট মেটাতে সরকার যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বেশির ভাগই কাজ করেনি; বরং বেশ কিছু সিদ্ধান্ত উল্টো ফল দিয়েছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় এত সব ভুলের কারণেই এখনো অর্থনীতিকে সামাল দিতে পারছে না সরকার।

সাধারণ মানুষের জন্যও গত অর্থবছরটি ছিল সীমাহীন চাপের বছর। বিগত অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই সময়ের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এই একটি সূচকের কারণেই সাধারণ মানুষ ছিল দ্রব্যমূল্যের চাপে পিষ্ট। সে সময় বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাটাই ছিল বেশি। আর ছিল সমন্বয়হীনতা ও জবাবদিহির ঘাটতি। একাধিক জরিপে অংশ নিয়েও মানুষ এ কারণেই বলেছে, দেশের অর্থনীতি ভুল পথে আছে।

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। কোভিডের প্রভাব কমে আসার পর অর্থনীতি যখন উত্তরণের পর্যায়ে ছিল, তখনই রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। এতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে বেশির ভাগ দেশ মুদ্রা সরবরাহ কমানোসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু বাংলাদেশ নেয় উল্টো পথ। এ সময়ে সংকট মেটাতে সরকার যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বেশির ভাগই কাজ করেনি; বরং বেশ কিছু সিদ্ধান্ত উল্টো ফল দিয়েছে।

যেমন সুদহার ৯ শতাংশ করা, ডলারের বিপরীতে টাকার দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে রাখা, ডলারের চারটি হার নির্ধারণ, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য বেশি রাখা, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণে ছাড়, জ্বালানি খাতকে আমদানিনির্ভর করা ইত্যাদি। এর মধ্যে বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল সুদহার না বাড়িয়ে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে রাখার চেষ্টা। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় এত সব ভুলের কারণেই এখনো অর্থনীতিকে সামাল দিতে পারছে না সরকার।

নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরেরও প্রায় দুই মাস হতে চলল। এ সময়েও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। ডলারের সংকট আগের মতোই আছে, বরং দর আরও বাড়ছে। রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচেই আছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি ধরলে এর পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন ডলারের মতো। মূল্যস্ফীতি কমছে অতি সামান্য। অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো থাকলেও কমেছে প্রবাসী আয়।

রফতানিতে নয় বিলিয়ন ডলারের তথ্য তারতম্য!

আগস্ট ২৯, ২০২৩, বণিক বার্তা

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে পণ্য রফতানি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ডলারের। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ড্যাশবোর্ডের হিসাবে দেখা যায়, রফতানিকারকরা গত অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানির ঘোষণা (ইএক্সপি) দিয়েছেন ৪ হাজার ৬৩১ কোটি ডলারের। এ অনুযায়ী দুই সংস্থার গত অর্থবছরের রফতানি তথ্যে গরমিল রয়েছে ৯২৪ কোটি (৯ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলারের। ইপিবি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রফতানি তথ্যে বরাবরই গরমিল থাকলেও গত অর্থবছরেই তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রফতানি তথ্যের এ বড় ব্যবধান এখন ভাবিয়ে তুলেছে খোদ নীতিনির্ধারকদেরও। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ১০ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে ‘রফতানি পরিসংখ্যানে গরমিল দূরীকরণ’ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গত অর্থবছরসহ রফতানি তথ্যের ধারাবাহিক গরমিলের পর্যালোচনা নিয়ে আলোচনা হয়। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌পর্যালোচনায় দেখা গেছে ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি তথ্যে গরমিলের যৌক্তিক কারণ রয়েছে। তবে গত অর্থবছরে ৯ বিলিয়ন ডলারের গরমিলটা অনেক বেশি। এ কারণেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪ হাজার ৬৩১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির ঘোষণা দিয়েছেন রফতানিকারকরা। ঘোষিত এ পরিমাণের মধ্যে ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির তথ্য নিশ্চিত করতে পেরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে দেশে প্রত্যাবাসিত হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৬ কোটি ডলার। প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় আছে প্রায় ২২১ কোটি ডলার। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের এজেন্সি কমিশন, ব্যাংক চার্জ কেটে সর্বোচ্চ ২ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেশে প্রত্যাবাসনের সুযোগ রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত সভার পর্যালোচনায় বলা হয়, স্বাভাবিকভাবেই ইপিবির পরিসংখ্যানে রফতানির অংক বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের চেয়ে বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু পার্থক্যও সীমাবদ্ধ থাকতে পারে সর্বোচ্চ ২-৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে। কিন্তু গত অর্থবছরে তারতম্য দেখা যাচ্ছে ৯২৪ কোটি ডলারের, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের মধ্যে ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ড্যাশবোর্ডের সঙ্গে এনবিআরের অ্যাসাইকুডা সিস্টেমের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ স্থাপিত রয়েছে। ব্যাংকগুলো ড্যাশবোর্ডে যে রফতানির ঘোষণা দেবে, সেটিই পণ্য রফতানি হিসেবে গণ্য হবে। এর মধ্যে পুনঃরফতানি ও পণ্যের নমুনা বা স্যাম্পল রফতানির মতো নন-ব্যাংকিং চ্যানেলের তথ্য বাদ যাবে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪ হাজার ৬৩২ কোটি ডলারের রফতানির ঘোষণার চেয়ে বেশি অর্থমূল্যের পণ্য রফতানির সুযোগ তেমন একটা নেই।

ফেসবুক–অ্যাপে যেভাবে চলছে ডলার কেনাবেচার রমরমা ব্যবসা

৩১ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

দেশজুড়ে বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার কেনাবেচার রমরমা ব্যবসা চলছে। ডলার–সংকটের সময়ে এ ঘটনা ঘটছে সবার নজরের মধ্যেই। ডিজিটাল মাধ্যমে চলছে এ ব্যবসা। এর মাধ্যমে একদিকে দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া দেশে এ ধরনের ব্যবসার কোনো বৈধতা নেই।

অবৈধ এ ব্যবসা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের যেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না, চুপচাপ আছে সংশ্লিষ্ট অন্য দপ্তরগুলোও। কেউ অভিযোগ করেননি বলে অজুহাত তাদের। অন্য দপ্তরগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সবার মধ্যেই নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে অন্যের ঘাড়ে দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে।

ফরেক্স ট্রেডিং কী, কারা করছে

বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার ব্যবসাকে ইংরেজিতে বলা হয় ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং, সংক্ষেপে ফরেক্স ট্রেডিং। কারেন্সি ট্রেডিং নামেও তা পরিচিত। যে কেউ চাইলেই তা করতে পারে এবং স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার কেনাবেচার মতোই এ মাধ্যমেও ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতার সরাসরি দেখা হওয়ার কোনো দরকার পড়ে না।

ফরেক্স ট্রেডের সঙ্গে কতজন জড়িত, এ বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান দেশে নেই। তবে ব্যবসা যাঁরা করছেন, তাঁদের কেউ কেউ অনুমান করছেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে দেশে ৫০ হাজারের মতো ব্রোকার রয়েছে, যারা নতুন নতুন গ্রাহক ধরছে। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি এ অবৈধ ব্যবসা প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তরুণসমাজের একাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করে নেশার মতো ঝুঁকে পড়েছে এ ব্যবসায়। আর এর মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। মাত্র পাঁচ ডলার দিয়েই ব্যবসা শুরু করতে পারছেন কেউ কেউ।

ফেসবুকে ফরেক্স ট্রেডিং বিডি নামের গ্রুপটির সদস্য ৩৫ হাজার। ফরেক্স ট্রেডিং করে কীভাবে আয় করা যায়, তার বিশদ বিবরণ ফেসবুকেই রয়েছে। একই গ্রুপে রয়েছে ‘একজন ঝরে পড়া ট্রেডারের গল্প’। আল মামুন নামের একজনের স্ট্যাটাস হচ্ছে, ‘ফরেক্স এমন একটা আয়ের পথ, যেখানে পরিশ্রম দিয়ে সফলতা অর্জন করতে হবে। নতুন অনেকেই এসে কান্নাকাটি করেন না–বুঝে। মনে করেন ১০০ ডলার দিয়ে এক হাজার ডলার আয় করে ফেলবেন। ১০ ডলার দিয়ে শুরু করা ভালো।’

মনিরুজ্জামান রিবন নামের একজন একটা স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, ‘গিগামেক্সে আমার ৩০০ ডলার বিনিয়োগ আছে। সামনের মাস থেকে কি আমি লাভ তুলতে পারব না? আমাকে কি আরও ২০০ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে?’

ফরেক্স ট্রেডিং বাংলাদেশ পেজ তৈরিকারী তারিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, তিনি নিজে ব্যবসা করেন না। ডলার কেনাবেচা অবৈধ হলেও ফরেক্স ব্যবসা অবৈধ নয়। তিনি শখের বশে ব্লগ করেন, যাতে দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশিরা শিখে ফরেক্স ব্যবসা করতে পারেন।

অবৈধ এ ব্যবসা কীভাবে শুরু হয়

অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত দুজনের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ফেসবুক বা ওয়েবসাইট থেকে জেনে বা ব্যবসা করছে, এমন কারও মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে নতুন নতুন গ্রাহক তৈরি হচ্ছে। এরপর প্রথমেই একটি হিসাব খোলা হয়, যাতে নাম, ঠিকানা ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য উল্লেখ করতে হয়।

পরে বলতে হয়, কোন মাধ্যমে ব্যবসা করতে চান এবং কী ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে চান—বিটকয়েন নাকি লাইটকয়েন। এর পরের ধাপ হচ্ছে ডেমো ট্রেড। অর্থাৎ নিজের অর্থে ব্যবসা শুরুর আগে ব্যবসার চর্চা। তারপর ডলার জমা করতে হয়।

ব্যাংকের মাধ্যমে ডলার জমা দিলে ধরা পড়ার ভয় থাকার কারণে নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয়। কারও যদি ক্রেডিট কার্ড না থাকে, তাহলে গ্রাহকের পক্ষে ব্রোকারদের কেউ ডলার জমা দেয় এমন শর্তে যে ওই ডলারের সমপরিমাণ টাকা তিনি এমএফএসের মাধ্যমে ব্রোকার বা ব্রোকারের পক্ষে কারও কাছে জমা দেবেন।

অনলাইনে এ অবৈধ ব্যবসায়ের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম এক্সএম ও মেটাট্রেডার। মেটাট্রেডার ফোর ও মেটাট্রেডার ফাইভ—এ দুটি এখন বেশি চলছে।

বিটিআরসি গত মঙ্গলবারের বৈঠকে বলেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ৩৭ শতাংশ, আর এমএফএসের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ।

আমদানি কমিয়ে অর্থনীতির সংকট সমাধান সম্ভব কি

সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৩, বণিক বার্তা

নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও গত বছরের জুলাইয়ে দেশের ব্যাংকগুলোয় পণ্য আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছিল ৬ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন বা ৬৩৫ কোটি ডলারের। কিন্তু চলতি বছরের জুলাইয়ে ব্যাংকগুলো মাত্র ৪৩৭ কোটি ডলারের নতুন এলসি খুলতে পেরেছে। এ হিসাবে অর্থবছরের প্রথম মাসে ব্যাংকগুলোয় আমদানি এলসি খোলা কমেছে ৩১ শতাংশেরও বেশি। এর আগে ২০২২ পঞ্জিকাবর্ষের মার্চে রেকর্ড ৯৫১ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। সে সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে আমদানির নতুন এলসি অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতিতে প্রকৃত অর্থে আমদানির চাহিদা কত, সেটি নিয়েই প্রশ্ন ওঠা শুরু করেছে।

গত দুই বছর দেশে ডলারের বিপরীতে টাকার অন্তত ২৮ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে গত এক বছরে দেশে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামও বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমদানিনির্ভর পণ্যে। এর বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে মূল্যস্ফীতিতে। সর্বশেষ জুলাইয়েও দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যেকোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব হলো, অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা। যদিও এ দায়িত্ব পালন করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যর্থ হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা অভিযোগ তুলছেন।

দেশের অর্থনীতিতে এ মুহূর্তে আমদানির প্রকৃত চাহিদা কত, এমন প্রশ্নের উত্তর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাওয়া যায়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে বর্তমানে জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম নিম্নমুখী বা স্থিতিশীল। অনেক পণ্যের দাম ২০২১ ও ২০২২ সালের তুলনায় অর্ধেক। কিন্তু দেশের বাজারে পণ্যের দামে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় জনগণ দাম কমার সুফল পাচ্ছে না। এ কারণে চেষ্টা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি কমছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশের শিল্প খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি পণ্যের এলসি খোলা কমেছে। এর মধ্যে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির নতুন এলসি কমেছে ৩৬ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য প্রায় ৩১ শতাংশ ও মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসিও ২২ শতাংশের বেশি কমেছে। একই সময়ে ভোগ্যপণ্যের আমদানির এলসিও কমেছে ২১ শতাংশের বেশি। সবচেয়ে বেশি ৫০ শতাংশ এলসি কমেছে জ্বালানি তেল আমদানির। গত অর্থবছরেও (২০২২-২৩) এলসি খোলা কমে যাওয়ার এ হার অব্যাহত ছিল। অর্থবছরটিতে নতুন এলসি ২৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে উঠে এসেছে। আমদানি কমিয়ে মূলত বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সামলানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি রিজার্ভের ক্ষয় থামানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রিজার্ভের পরিমাণ ২৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত রয়েছে। গত ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬) দেশের রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। যদিও আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ সংরক্ষণ নিয়ে এরই মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরজুড়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি পার করে বাংলাদেশ। অর্থবছরটিতে রেকর্ড ৮৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। এতে ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতিও ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকে। এ অবস্থায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশের এলসির লাগাম টেনে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ৬৯ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এক্ষেত্রে আমদানি কমে যায় ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আগে তার ব্যাংক প্রতি মাসে ৪০ কোটি ডলারের আমদানি এলসি খুলত। এখন সে এলসির পরিমাণ মাসে ১০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল চাহিদা সত্ত্বেও ডলার না থাকায় তারা এলসি খুলতে পারছে না। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধের কারণে বেশি দামে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় কেনা যাচ্ছে না। এখন আমদানিকারকরা ব্যাংকের বাইরে গিয়ে রফতানিকারকদের কাছ থেকে দরকষাকষি করে ডলার কিনছেন। এতে প্রতি ডলারের দাম ১১৫-১১৭ টাকায়ও উঠে যাচ্ছে। আবার ব্যাংক এলসি খুলতে না পারায় হুন্ডির বাজার শক্তিশালী ও বড় হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই বলছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানির আড়ালে দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমদানিতে বিধিনিষেধ ও তদারকি বাড়ানোয় গত অর্থবছরে অর্থ পাচার কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় এমন সব পণ্যের আমদানিও কমেছে। গত অর্থবছর শেষে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণও ৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। তবে বিদেশী ঋণ পরিশোধের চাপের কারণে লেনদেনের সামগ্রিক ঘাটতি (বিওপি) ৮ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা আমদানির এলসি খুলতে পারছেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা দাবি করলেও বিপরীত তথ্য দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও ব্যাংক নির্বাহীরা। তারা বলছেন, ডলার সংকট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির কারণে অর্থনীতির প্রতিটি খাতই চাপের মুখে আছে। আমদানিনির্ভর শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসা একেবারেই সংকুচিত হয়ে এসেছে। রফতানিমুখী শিল্প খাতেও সংকটের প্রভাব দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ক্ষরণ চলছে, সেটি দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।

আমদানি কমে যাওয়ায় দেশের রফতানিমুখী বস্ত্র ও পোশাক খাতে সংকট দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে বলে জানান বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। বণিক বার্তাকে এ শিল্পোদ্যোক্তা বলেন, ‘আমদানিসংক্রান্ত পরিসংখ্যানেই বোঝা যাচ্ছে যে শিল্পগুলোর কর্মকাণ্ড সংকুচিত হচ্ছে। উৎপাদন কমে আসছে। দেশের প্রতিটি শিল্প খাতেই একই অবস্থা। নির্মাণ শিল্প খাতের রড, সিমেন্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাদের বিক্রি ও উৎপাদন কমে গেছে। টেক্সটাইল খাতের অনেক স্পিনিং মিল এখন বসে আছে। যেগুলো চলছে সেগুলোর ৩০-৪০ শতাংশ সক্ষমতাও ব্যবহার হচ্ছে না। সরকারের নীতির কারণে হোক, নিজস্ব কারণে হোক বা বাজার চাহিদার কারণে হোক; শিল্প খাতগুলোর কর্মকাণ্ড নিম্নমুখী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপগুলোয় মনে হচ্ছে, শিল্প প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদন কর্মকাণ্ডের চেয়েও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যাংকগুলোকে তারা কত কম ঋণপত্র খোলার অনুমতি দেবে।’

প্রায় একই ধরনের কথা বলছেন স্কয়ারের নির্বাহী পরিচালক (ফাইন্যান্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘টেক্সটাইল খাতের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মূলধনি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কম। কভিডের পরপর কিছু হলেও এরপর টেক্সটাইল খাতে বড় কোনো বিনিয়োগ হয়নি। এ মুহূর্তে পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদা নিম্নমুখী। ফলে ক্রয়াদেশ তেমন একটা আসছে না, সবাই সাপ্লাই চেইনকে শ্লথ করে দিয়েছে।’

চাহিদামতো কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে না পারায় এরই মধ্যে উৎপাদন ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন ভারী শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ইস্পাত খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা। মজুদ কাঁচামাল দিয়ে ফিনিশড পণ্য উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও স্ক্র্যাপ গলিয়ে বিলেট কিংবা অ্যাঙ্গেল তৈরির প্লান্টের উৎপাদন কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণপত্র খুলতে ব্যবসায়ীদের এ বিড়ম্বনা না কাটলে অচিরেই অনেক শিল্প-কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

যারা বলছেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই, তারা অর্থনীতিই বোঝেন না

৩১ আগস্ট ২৩, সমকাল

‘যারা বলছেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই, তারা অর্থনীতিই বোঝেন না’- এই মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘অর্থমন্ত্রীকে পাওয়া যায় না। অর্থনীতিবিদদের অভিমত যে, ভুলনীতির কারণে দেশের অর্থনীতিতে সংকট বাড়ছে’ এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বঅর্থনীতিতে বাংলাদেশ রোল মডেল যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তারপরও যারা বলছেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই তারা অর্থনীতিই বোঝেন না।

অর্থনীতিকে বড় বিপদে ফেলছে ডলার সংকট

০৪ সেপ্টেম্বর ২৩, সমকাল

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে যেসব সমস্যার মুখে পড়েছে, এর মূলে রয়েছে মার্কিন ডলারের সংকট। নীতিনির্ধারকরা মনে করেছিলেন, ডলারের সংকট এবং এর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সাময়িক। তারা দীর্ঘদিন ধরে বলছেন, অচিরেই এর সমাধান হবে। কিন্তু সেই ‘অচিরেই’ আর আসছে না। ডলার সংকট ও দর বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি অর্থনীতিকে বিপদে ফেলছে।

এর মধ্যে গতকাল রোববার আরও উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গেল আগস্টে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ। আগস্টের রেমিট্যান্স গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন, যা বৈদেশিক মুদ্রার কমতে থাকা রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে।

রেকর্ড উৎপাদনেও আলুর রেকর্ড দাম

০৬ সেপ্টেম্বর ২৩, সমকাল

রাজধানীর তেজতুরিবাজার এলাকায় বিবিএর ছাত্র তারেক হাসানের মেসজীবন। গতকাল মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার থেকে আলু কিনতে গিয়ে তাঁকে খেতে হয়েছে দামের ধাক্কা। ৪৫ টাকা দরে দুই কেজি আলু কিনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। বললেন, ‘খরচ ও সময় বাঁচাতে মেসে বেশির ভাগ সময় আলুভর্তা, ডিম আর ডাল রান্না হয়। এক মাস আগে যে আলু কিনেছি ৩২ টাকায়, আজ গুনতে হয়েছে ৪৫ টাকা। আলু তো আমদানি করতে হয় না। তাহলে দাম বাড়ছে কোন যুক্তিতে?’

হাতিরপুল কাঁচাবাজার থেকে ৫০ টাকা দরে তিন কেজি আলু কিনেছেন আসিফ। গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওয়ার্ডবয়ের চাকরি করেন তিনি। আসিফ বলেন, ‘১৫ হাজার টাকা বেতন পাই। কম মাইনের কারণে বেশির ভাগ সময় আলু-ডিমই ভরসা। সম্প্রতি ডিমের দাম বাড়ার কারণে আলুভর্তা খাচ্ছি বেশি। তবে সেটিরও দাম বাড়ায় এখন নতুন দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’

দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ নিম্ন আয়ের মানুষও। নাখালপাড়া সমিতি বাজার থেকে ৪৮ টাকা দিয়ে এক কেজি আলু কিনেছেন গৃহিণী সাহানারা বেগম। তাঁর স্বামী রিকশাচালক। তিনি বলেন, ‘মাছে হাত দেওয়া যায় না। সব ধরনের সবজির দামও বেশি। সামনে আলু খাওয়াও কমাতে হবে।’

শুধু তারেক হাসান, আসিফ কিংবা সাহানারা বেগমই নন; আলুর দাম ভোগাচ্ছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে।

দেশে এবার রেকর্ড ভেঙেছে আলুর উৎপাদন। হিমাগারেও আছে ভরপুর মজুত। তবু বাজারে  রেকর্ড দরে বেচাকেনা হচ্ছে আলু। রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় এক কেজি আলু কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সবজিজাতীয় এ পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণের কাছাকাছি। আর এক মাসে কেজিতে বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৬ টাকা। এ পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেশের হিমাগারে কত আলু মজুত আছে, সে তথ্য সংগ্রহে নেমেছে। কেন আলুর দাম এমন টালমাটাল? সমকাল এ তথ্য তালাশ করতে নেমে পেয়েছে ‘নানা মুণির নানা মত’!

আলুর দাম বাড়ানোর পেছনে মধ্যস্বত্বভোগী ও হিমাগারের মালিকদের হাত রয়েছে বলে মনে করেন ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, হিমাগারে মজুত আলু ও উৎপাদনের তথ্য যাচাই করলেই এক সপ্তাহের মধ্যে নাগালে চলে আসবে দাম। খোদ সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনেও দাম বাড়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করা হয়েছে। যদিও হিমাগার মালিকদের দাবি, চড়া দামের পেছনে তারা নেই; দাম বাড়াচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। আর বিক্রেতারা বলছেন, আলু বেশি উৎপাদন হয় উত্তরাঞ্চলে। সেসব এলাকায় এখন দাম বাড়তি। এ কারণে ঢাকার বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে বাজারে আলুর সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বছরে আলুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ টন। তবে এ মৌসুমে ফলন আগের বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ টন। পরের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ টন বেড়ে উৎপাদন দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ টনে। সেই হিসাবে চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২২ লাখ টন বেশি উৎপাদন হয়েছে।

এদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এবার ৩৬৫ হিমাগারে প্রায় ২৫ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এখনও প্রায় ২২ লাখ টন আলু মজুত রয়েছে। যদিও হিমাগার মালিকরা বলছেন, মে মাস থেকেই হিমাগারের আলু সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত নেই।

উৎপাদন খরচের পাঁচ গুণ দাম খুচরায়

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা। কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজির দাম হতে পারে ১৫ টাকার মতো, যা খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৩২ টাকা হতে পারে। অথচ হিমাগার থেকে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকায়, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। মাসখানেক আগে ঢাকার খুচরা বাজারে আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা ছিল। তবে সোম ও মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারে আলুর কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা দরে। পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। এই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৯ থেকে ১৬ টাকা।

সাধারণ মানের এসব আলুর পাশাপাশি কিছু এলাকার সুস্বাদু আলুও পাওয়া যায় বড় বাজারগুলোতে, যেগুলোর দাম দ্বিগুণের বেশি। বগুড়ার লাল আলুর কেজি ৬০ ও ময়মনসিংহ এলাকার ছোট গোল আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে এ দুই এলাকার আলুর কেজি বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৪৫ থেকে ৫০ এবং ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনন্দিন বাজার প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশের বেশি।

কারসাজিতে কারা?

পাইকার ও আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি বাজারে আসে না। মাঠ থেকে তোলার পর সিংহভাগ চলে যায় হিমাগার ও মজুতদারের কাছে। তাদের হাত ধরে তা বাজারে আসে। মাঝখানে বড় একটা সময় থাকে হিমাগারে। প্রায় বছরজুড়ে সংরক্ষণের সময়টাতে ব্যবসায়ীরাই মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। অনেক হিমাগার মালিকও আবার আলুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মূলত তারাই হিমাগারে আলু রেখে বাজারে সংকট সৃষ্টি ও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ান।

গত জুলাইয়ে খোদ সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনেও আলুর বাজারের কারসাজির চিত্র উঠে আসে। সংস্থাটির প্রস্তুত করা ‘বাংলাদেশে আলুর সাপ্লাই চেইন ও মূল্যবৃদ্ধি’ বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, হিমাগার থেকে চাহিদা অনুযায়ী আলু খালাস হচ্ছে না। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অপকৌশল করে আলুর দাম বাড়াচ্ছে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সমকালকে বলেন, দাম বাড়ানোর মূল কারিগর হিমাগারের মালিক ও মজুতদাররা। তবে দাম বাড়ার ফলে ভোক্তার খরচ বাড়লেও এর সুফল কৃষক পাচ্ছেন না। কৃষিপণ্যের প্রকৃত উৎপাদন খরচ হিসাব করতে কৃষি বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা প্রতিনিধি নিয়ে তদন্ত করা উচিত। একই সঙ্গে আড়ত, হিমাগার পর্যায়ে কী হচ্ছে– তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এ পদক্ষেপ নিলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে বাধ্য।

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উৎপাদন একটু বেশি হলে চাষিরা আলু বিক্রি করতে পারেন না। অনেক সময় ইচ্ছা করলেও আলুর দাম বাড়ানো যায় না। এবার উৎপাদন বেশি। তার পরও আলুর দাম বেশি কেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে। সিন্ডিকেট থাকলে তা ভাঙতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে উদ্যোগ নিতে হবে।

মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হিমাগার মালিকদের দ্বিমত

সরকার আলুর ফলনের রেকর্ড তথ্য দিলেও কোল্ডস্টোরেজের মালিকদের দাবি, সরকারের তথ্য ঠিক নয়। এ বছর অন্তত ২০ লাখ টন আলু উৎপাদন কম হয়েছে। হিমাগার ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, গত বছরের চেয়ে এবার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আলু কম এসেছে হিমাগারে। ফলে মে মাস থেকেই হিমাগার থেকে বাজারে আলু সরবরাহ করা হচ্ছে।

হিমাগার ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগারের আলুর মাত্র ১০ শতাংশ হিমাগার মালিকদের, ৫০ শতাংশ মজুতদার ব্যবসায়ীর আর বাকি ৪০ শতাংশ কৃষকের। এর মধ্যে কৃষকরা ২০ শতাংশ আলু রাখেন বীজের জন্য। বাকি ২০ শতাংশ বাজারে বিক্রি করে দেন। সব মিলিয়ে হিমাগারে সংরক্ষিত ৮০ শতাংশ আলু খাওয়ায় ব্যবহার হয়। চিপস ও অন্য খাদ্যপণ্য উৎপাদনের জন্য কিছু আলু সংরক্ষিত রাখে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। রপ্তানি করার জন্যও ভালো মানের কিছু আলু থাকে হিমাগারে।

বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, উৎপাদন খরচ, হিমাগার ভাড়াসহ প্রতি কেজি আলুতে খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ টাকা। তবে হিমাগারেই এখন আলুর কেজি ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা। এর সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফা, পরিবহন ও অন্য খরচ যোগ হয়ে খুচরা পর্যায়ে যেতে যেতে ৫০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এটা অস্বাভাবিক।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, কোন পর্যায়ে কী পরিমাণ আলু মজুত আছে, তা কৃষি বিভাগ থেকে সংগ্রহ করে দিলে ভোক্তা অধিদপ্তরের বাজার তদারকি সহজ হবে। তবে গতকাল থেকে সারাদেশের হিমাগারে মজুত আলুর তথ্য সংগ্রহে কাজ শুরু হয়েছে।

বগুড়ায় আলু আটকে রেখে কৃত্রিম সংকট

বগুড়া ব্যুরো থেকে এস এম কাউসার জানান, বগুড়ায় গত বছরের এ সময়ে খুচরায় আলুর কেজি ছিল ১২ টাকা, যা এখন তিন গুণের বেশি বেড়েছে। দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত বলে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। হিমাগারে রাখা আলু চাহিদা অনুযায়ী বের না করে সংকট তৈরির মাধ্যমে দাম বাড়ানো হয়েছে।

হিমাগার মালিকরা বলছেন, বগুড়া-জয়পুরহাটের ৬২ হিমাগারে মজুত করা হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার ২৪৭ টন আলু। বগুড়া জেলা কৃষি বিপণন বিভাগের তথ্য বলছে, জুনে চাহিদার বিপরীতে হিমাগার থেকে আলু বের করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৬০৪ টন। জুলাইয়ে বের করা হয় মাত্র ২৪ হাজার ১২৪ টন। অথচ বাজারে জুলাইয়ে চাহিদা ছিল গড়ে ৬৫ হাজার টনের। ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে হিমাগার থেকে আলু বের না করায় সেই থেকে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়।

জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও শাহ সুলতান কোল্ডস্টোরেজের মালিক আবদুল গফুর বলেন, দাম কমে যাওয়ায় গেল কয়েক বছর হিমাগারে আলু রেখে লোকসান দিয়েছেন মজুতদাররা। এবার দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা বেশ লাভবান হয়েছেন। তবে আলুর কোনো সিন্ডিকেট নেই। শাকসবজির দাম বাড়ায় আলুর দামও বেড়েছে।

কৃষি বিপণন বিভাগের মাঠ ও বাজার পরিদর্শক আবু তাহের বলেন, কী কারণে আলুর দাম বেড়েছে, তা আলু ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা ভালো জানেন।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পলাশ কুমার সরকার জানান, বেশির ভাগ কৃষক আলু উৎপাদনের পরই বিক্রি করে দেন। বড় ব্যবসায়ীরা তা কিনে হিমাগারে মজুত করেন। এখন কৃষকের ঘরে আলুর মজুত নেই। হিমাগার থেকে সীমিত আকারে সরবরাহ করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে

সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৩, বণিক বার্তা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৭ কোটি ২ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে অনুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৪৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ কমেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাত্র ১৭ কোটি ২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা একক মাসের হিসাব অনুসারে তিন বছরে সর্বনিম্ন। রেমিট্যান্স প্রবাহের দিক থেকে শীর্ষ তালিকার দ্বিতীয় স্থানটি টানা তিন বছর দখলে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু জুলাই ও আগস্টে এসে তা চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে হঠাৎ রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় পতনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, তিন বছর আগে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে দেখা যায়। দেশটি থেকে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছিল, তার কোনো যৌক্তিকতা পাওয়া যায়নি। এখন আবার রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় পতন হয়েছে। হঠাৎ করে তা অর্ধেকের নিচে নেমে আসারও কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ঢাকার একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে দেশটি থেকে আসা রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে প্রভাবশালীদের একটি অংশ দেশটিতে পাচার করা অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছিলেন। এর একটি অংশ রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এ কারণে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পথও অনেকটাই সংকুচিত হয়ে এসেছে, যা দৃশ্যমান হচ্ছে রেমিট্যান্সে বড় পতনের মাধ্যমে।

বাজারে উত্তাপ, মানুষ দিশাহারা

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

বাজারে গেলেই ‘বুকের ব্যথা বেড়ে যায়’ রাজশাহীর আবদুর রহমানের। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শহরের সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে সবজির দাম করছিলেন তিনি। বেসরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন ৬০ বছরের কিছু বেশি বয়সী এই মানুষ। এখন পরিবারের সবার জন্য বাজারের কাজটি তিনিই করেন। সিঅ্যান্ডবি মোড় এলাকা থেকে বাজারে এসে দেখলেন, প্রায় সব সবজির দামই চড়া। গেল সপ্তাহের তুলনায় গোল বেগুনের দামই ২০ টাকা বেড়ে হয়ে গেছে ৭০ টাকা। দাম শুনে আবদুর রহমান দোকানদারকে বললেন, সবকিছুর দাম শুনলে বুক ধড়ফড় করে, বুকের ব্যথা বেড়ে যায়।

কিংবা ধরা যাক পাবনার বেড়া উপজেলার পৌর এলাকার শেখপাড়া মহল্লার রেখা খাতুনের কথা। তাঁর স্বামী সেলুনে কাজ করে প্রতিদিন আয় করেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। নিজে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে সামান্য আয় করেন। ছেলের বিধবা বউ, নাতি-নাতনিসহ পাঁচ সদস্যের সংসার এই আয়েই চালাতে হয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদককে তিনি জানালেন, সপ্তাহখানেক আগে বাড়িতে ডিমের ঝোল রান্না হয়েছিল, খেয়েছিলেন অর্ধেক ডিম। এর পর থেকে ডাল বা একটা সবজি দিয়ে কোনোমতে সবাইকে ভাত খেতে হচ্ছে।

অথবা শোনা যাক শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের কাছারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিধবা ফিরোজা বেগমের (৫৫) কথা। স্বামী মারা গেছেন চার বছর আগে। এক ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ের পর ফিরোজার খোঁজও রাখেনি কেউ। একার সংসার চালাতে ধানের আড়তে পড়ে থাকা ধান জমিয়ে বিক্রি করেন তিনি। ‘শুঁটকি ছাড়া আর কোনো মাছ শেষ কবে খাইছিলাম, মনে নাই।’ প্রথম আলোকে জানালেন তিনি।

দেশের পাঁচটি জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন বাজারে খবর নিয়ে, আর ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে মোটামুটি একই চিত্র দেখেছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা। এই চিত্রই জানাচ্ছে নিম্ন আয় ও সীমিত আয়ের বেশির ভাগ মানুষকে সংসার চালাতে এখন প্রতিটি খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হচ্ছে।

এমন গল্প একটি-দুটি নয়, অনেক। একই গল্প দিনাজপুরের দপ্তরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহজাদার, টাঙ্গাইলের সখীপুরে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করা ফরিদা আক্তারের, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বাসিন্দা করিম উল্লাহর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিকশাচালক রমজান মিয়ার, নেত্রকোনা পৌরসভার বলাইনগুয়া এলাকার কাঠমিস্ত্রি রতন চন্দ্র তালুকদারের কিংবা সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অটোভ্যানচালক ইব্রাহিম হোসেনের। সবজি, মাছ অথবা নিত্যপণ্যের বাজারে দামের যে উত্তাপ তৈরি হয়েছে, তাতে সংকটে রয়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা।

ঢাকার মহাখালী কাঁচাবাজারে গতকাল সকালে বাজার করতে আসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তানজীলুল ইসলাম। তিনি বলছিলেন, ‘বাজার করে এখন আর শান্তি নেই। পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে যে হারে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে, সে হারে কমছে না। এ রকম অস্বস্তি নিয়ে আর কত দিন চলতে হবে, জানি না।’

ফোর্বসের সিঙ্গাপুরে শীর্ষ ধনীর তালিকায় ৪১তম

সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৩, বণিক বার্তা

দেশের বেসরকারি খাতের শীর্ষ স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে প্রথম উৎপাদনে আসে সামিটের তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সে সময় কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩৩ মেগাওয়াট। ২০০৮ সালে এ সক্ষমতা দাঁড়ায় ১০৫ মেগাওয়াটে। মূলত ২০০৯ সালের পর থেকেই বিপিডিবির সঙ্গে একের পর এক বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তিতে আবদ্ধ হতে থাকে কোম্পানিটি। প্রথমে কুইক রেন্টাল পরে আইপিপি স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে থাকে সামিট পাওয়ার। বিশেষ করে গত এক দশকে বেসরকারি খাত থেকে বিপিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ে সামিট পাওয়ারই প্রাধান্য পেয়েছে সবচেয়ে বেশি এর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোম্পানির মুনাফা ও সম্পদের পরিমাণ। এ সময়ের মধ্যেই সিঙ্গাপুরে ব্যবসা চালানোর অনুমতি পায় সামিট গ্রুপ। বর্তমানে সামিটের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান জায়গা করে নিয়েছেন দেশটির শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায়।

১৯৫৫ সালে জন্ম নেয়া মুহাম্মদ আজিজ খানের উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয় মাত্র ১৮ বছর বয়সে। বাবার কাছ থেকে নেয়া ৩০ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে ছাত্রাবস্থায় ১৯৭৩ সালে পুরান ঢাকায় জুতা তৈরির মাধ্যমে তার ব্যবসায় হাতেখড়ি। এসব জুতার একটি অংশ বাটা কোম্পানিকে সরবরাহ করতেন তিনি। জুতা তৈরির পাশাপাশি পিভিসি (পলি ভিনাইল ক্লোরাইড) আমদানি শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি চিটাগুড়ের রফতানি ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করেন। দেশের হয়ে তিনিই প্রথম চিটাগুড় রফতানি করেন। দুই যুগের বেশি সময় ধরে তিনি ট্রেডিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

প্রায় অর্ধশতকের ব্যবসায়ী জীবনে ট্রেডিং থেকে শুরু করে জ্বালানি, বন্দর, ফাইবার অপটিকসহ নানা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়েছেন মুহাম্মদ আজিজ খান। তবে তার সমৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বিদ্যুতের ব্যবসা। এ ব্যবসার হাত ধরেই গত এক দশকে সম্পদে বড় উল্লম্ফনের দেখা পেয়েছেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান।

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের গত বুধবার প্রকাশিত সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় গত বছরের চেয়ে একধাপ এগিয়েছেন আজিজ খান। স্বীকৃতি পেয়েছেন সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনী ব্যক্তির। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, মুহাম্মদ আজিজ খানের মোট সম্পদ রয়েছে ১১২ কোটি ডলারের।

ফোর্বসের ২০২২ সালের সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায় আজিজ খানের অবস্থান ছিল ৪২ নম্বরে। সে সময় তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। সে হিসাবে চলতি বছর সিঙ্গাপুরের ধনীদের তালিকায় এক ধাপ এগোনোর পাশাপাশি তার সম্পদ বেড়েছে ১২ কোটি ডলার।

সিঙ্গাপুরের ধনীদের তালিকায় আজিজ খানের অবস্থান ৪১তম হলেও ফোর্বসের করা বৈশ্বিক বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় তার স্থান দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৫৪০তম। ২০২১ সালেও আজিজ খানের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি ডলারের। পরের বছরই তা ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।

২০১৮ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯১ কোটি ডলারের। ২০১৯ সালে এটি কমে ৮৫ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। তবে ২০২০ সালে সম্পদ বেড়ে ৯৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার হয়। দেখা যাচ্ছে চার বছর ধরেই ফোর্বসের হিসাবে তার সম্পদ বাড়ছে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো আজিজ খান সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন। সে বছর তিনি ছিলেন ৩৪ নম্বরে।

ডিমের উৎপাদনের হিসাবে গরমিল

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার রাজাবাড়ী গ্রামের নবাব আলী পেশায় একজন ভ্যানচালক। মা, স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। দুটি বড় হাঁস আছে জানিয়ে নবাব আলী বলেন, ‘দুই-তিন মাস আগে আঁশে (হাঁস) ছয়-সাতটা ডিম দিছিল। তারপর আর ডিম দিছে না। আঙ্গর কিইন্না (কিনে) খাওয়ার সামর্থ্য নাই।’

 নবাব আলী ও তাঁর পরিবারের মতো স্বল্প আয়ের বহু মানুষের পাতে এখন আর ডিম পড়ে না বললেই চলে। অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ায় অনেকেই ডিম কিনে খেতে পারছেন না।

 বাস্তবতা যখন এমন, তখন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, প্রতিবছরই ডিমের উৎপাদন বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট লোকজন বলছেন, উৎপাদন বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই দাম কমে আসে। অথচ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিমের বাড়তি উৎপাদন দেখালেও দাম বেড়েই চলেছে। ফলে অধিদপ্তরের হিসাবে গলদ আছে।

দেশে কী পরিমাণ দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদিত হয়, তার হিসাব প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাসিক ও বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকে। তাদের হিসাব বলছে, দেশে প্রতিবছর ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যেখানে দেশে ১ হাজার ৫৫২ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়েছে, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ডিম।

অধিদপ্তর সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এ বছরের জুলাই মাসে। তাতে দেখা গেছে, পাঁচ মাস (মার্চ-জুলাই) ধরে ডিমের উৎপাদন বাড়ছে। মার্চে যেখানে উৎপাদন ছিল প্রায় ১৫৯ কোটি, জুলাই মাসে সেখানে হয়েছে প্রায় ২১০ কোটি ডিম।

কেবল তা-ই নয়, চলতি বছরের জুলাইয়ে যে পরিমাণ ডিম উৎপাদিত হয়েছে, তা সর্বশেষ চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে যেখানে ডিমের উৎপাদন ছিল ১৪০ কোটির বেশি, চলতি বছরের জুলাইয়ে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২১০ কোটি।

ডিম উৎপাদনের ভিন্ন তথ্য তুলে ধরছে এই খাতের বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস। তাদের হিসাবে, ২০২২ সালের জুন মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশে ডিম উৎপাদন কমছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে জুলাই মাসেও ধারাবাহিকভাবে কম ডিম উৎপাদিত হয়েছে। কাজী ফার্মসের হিসাবে, চলতি বছরের মার্চে দেশে ১১৮ কোটি ডিম এবং জুলাইয়ে হয়েছে প্রায় ১১৬ কোটি ডিম; অর্থাৎ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জুলাইয়ে ডিম উৎপাদনের যে হিসাব দিয়েছে, তার অনেক কম উৎপাদনের কথা বলছে কাজী ফার্মস।

সরকারি হিসাবে, ডিমের উৎপাদন বাড়ছে। বেসরকারি হিসাবে, কমছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন বিপরীতমুখী তথ্যের মধ্যে দেশে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। পুষ্টিকর এই খাবার চলে গেছে স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর যে হিসাব প্রকাশ করে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে খোদ ওই অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যেই। নাম না প্রকাশের শর্তে এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মনগড়া। সঠিক হিসাব না থাকায় সরকার আগাম কৌশল গ্রহণ করতে পারে না। সরকার যদি আগাম জানতে পারত এই পরিমাণ ডিমের ঘাটতি থাকবে, তাহলে উৎপাদন বাড়িয়ে কিংবা আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করতে পারত। তা না হওয়ায় বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। আর এর সুবিধা ভোগ করছে এই খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠান।

ঋণের চাপে আত্মহত্যা বাড়ছে

১০ সেপ্টেম্বর ২৩, সমকাল

ঝিনাইদহ শহর থেকে ১০ কিলোমিটারের পথ। মূল সড়ক পেরিয়ে ইট বিছানো রাস্তায় আধা কিলোমিটার পেরোলেই হলিধানী গ্রাম। শহর থেকে কাছের সুন্দর এ গ্রামের কেউ ব্যবসা করেন, কারও সংসার চলে কৃষিকাজে। দূর প্রবাসেও থাকেন কেউ কেউ। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যাই এখানে বেশি। কোনো রকমে কায়ক্লেশে চলছে তাদের সংসার। কঠিন জীবনের মুখোমুখি হয়ে বাধ্য হন এনজিও এবং মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে। আর এই ঋণের সুদ শোধ করতে না পেরে পড়েন কঠিন বিপদে। অপমান-অপদস্থ হয়ে দিন পার করেন তারা। ঋণের জ্বালা সইতে না পারাদের একজন ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম (৫৫)। শেষমেশ তিনি বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। সুদের যন্ত্রণা তাঁর হৃদয় আঙিনা কতটা ক্ষতবিক্ষত করেছে, তা ফুটে উঠেছে জীবননাশের আগে লিখে যাওয়া চিরকুটের অক্ষরে অক্ষরে।

গত শুক্রবার চিরকুটে তিনি লেখেন, ‘সুদখোরদের অত্যাচারে বাঁচতে পারলাম না। আমার জায়গাজমি, বাড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি। একেকজনের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া, তার সাত-আট-দশ গুণ টাকা দিয়েও রেহাই দিল না তারা। কেউ কেস করেছেন, কেউ অপমান-অপদস্থ করেছেন। আমি আর সহ্য করতে পারছি না, তাই বিদায় নিলাম। আমার জানাজা হবে কিনা জানি না। যদি হয়, তখন সব সুদখোর টাকা চাইতে এলে আমার শরীরটাকে কেটে ওদের দিয়ে দেবেন। সুদখোরদের বিচার আল্লাহ করবে। সুদখোরদের নাম বললাম না, কিন্তু তারা সবাই টাকার জন্য আসবে। তখন বুঝতে পারবেন, তারা কারা। আমি ক্ষমার অযোগ্য, তবু ক্ষমা করে দেবেন।’

গতকাল শনিবার সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, স্বজনের আহাজারি। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। সিরাজের স্ত্রী সবুরা খাতুন বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে হলিধানী বাজারে একটি কনফেকশনারির দোকান দেন। হঠাৎ দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লে দোকান ছেড়ে দেন। এর মাঝে অনেক পাওনাদার তাঁকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন। দুই বিঘা জমি ও বাড়ি বিক্রি করেও সুদ শোধ করতে পারলেন না।

ঋণ শোধ করতে না পেরে এ রকম আত্মহত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। আর প্রতিটি ঘটনার পেছনেই আছে উচ্চ সুদহারের ঋণ। এর সঙ্গে আগের মতো কাজ না পাওয়া। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ দিশেহারা। তারা ঋণ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে উচ্চ সুদহার তাদের আরও ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে ফেলছে। ঋণের ফাঁদে শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্তরাও আটকা পড়ছেন। প্রচলিত ব্যাংকের সুদহার কম হলেও সেখান থেকে ঋণ পাওয়া সহজ নয়। ফলে তারা উচ্চ সুদহারে অপ্রচলিত, ব্যক্তি খাত এবং এনজিও থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ওই ঋণের সুদ আর কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তারা এখন নাজেহাল। এমন পটভূমিতে আজ রোববার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করো’।

একের পর এক আত্মহত্যা

গতকালও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মাসুদ আলম নামের এক যুবক ঋণের চাপ সহ্য না করে আত্মহত্যা করেন। গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জে লোকসানের কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নেন রোকন উদ্দিন। ঋণে ছিলেন জর্জরিত। মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে কিশোরগঞ্জ শহরতলির চরশোলাকিয়া এলাকার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে নিজের জীবন শেষ করে দেন।

এদিকে, গত বুধবার রাজশাহীর চারঘাটে মাছচাষি আবদুল কুদ্দুস এনজিও ঋণের চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। ৩০ আগস্ট কুমিল্লার তিতাসের কড়িকান্দি বাজারের কলা ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন এনজিও ঋণের চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার তাসলিমা আক্তার (৩৬)। কিস্তির জন্য মঙ্গলবার চাপ দিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। এতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এনজিওসহ নানাজনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার খোকন আকন্দ। পাওনাদারদের চাপ সইতে না পেরে গত বুধবার গলায় ফাঁস দেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে ঋণের চাপে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। গত তিন মাসে গণমাধ্যমের সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে ঋণের চাপে ২৮টি আত্মহত্যার ঘটনা খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, দুর্গম এলাকার ঘটনা গণমাধ্যমে অনেক সময় উঠে আসে না।

এনজিওর ঋণের জাল

এনজিও ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে দেশীয় এনজিওর সংখ্যা ২ হাজার ৩১৮। এর মধ্যে অধিকাংশেরই আছে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি। এ ছাড়া গ্রামে গ্রামে আছে মাল্টিপারপাস কোম্পানি; আছে নানা সমিতিও। সূত্র জানিয়েছে, দেশের ৩ কোটি ৫২ লাখের বেশি পরিবার ক্ষুদ্রঋণ পরিষেবার আওতায় রয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন গ্রামের এনজিওর ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঋণ নেওয়ার পরের সপ্তাহ থেকে কিস্তি আদায় শুরু হয়। কৃষকের জমিতে ফসল ভালো না হলেও ঋণগ্রহীতাকে ঘরের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ঘটি-বাটি বিক্রি করে সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। যখন তাতেও কুলায় না, তখন ভিটেমাটি ও ঘর বিক্রি করতে হয়। এমনও বহু ঘটনা ঘটেছে যে কিস্তি আদায়কারীরা ঋণের দায়ে ঋণগ্রহীতার ঘর ভেঙে নিয়ে গেছে। এ বীভৎসতায় আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। ঋণ নেওয়ার সময় ব্যাংক চেক জমা নেওয়া হয়। আর কিস্তি দিতে দেরি হলেই সেই চেক ডিজঅনার দেখিয়ে মামলা দেওয়া হয়।

মহাজন ও সমিতি থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে বিপাকে মানুষ

গত ৯ জুলাইয়ের ঘটনা। বগুড়ার গাবতলীতে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গৃহবধূকে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে দাদন ব্যবসায়ী গোলজারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অপমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই গৃহবধূর দিনমজুর স্বামী আবদুল মালেক (৪০)।

গ্রামে গ্রামে গজিয়ে ওঠা সমিতি বা সুদের কারবারিদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে অনেকেই চাপে পড়েন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমিতি থেকে ১০ হাজার টাকা সুদে ঋণ নিয়ে মানুষকে সপ্তাহে ৩০০ টাকা করে ৪০ কিস্তি দিতে হয়। টানা দুই সপ্তাহ টাকা দিতে না পারলে অতিরিক্ত এক সপ্তাহের টাকা গুনতে হয়।

ফেনীর সোনাগাজীর কৃষক আবদুল ওহাব সুদে টাকা নিয়ে চাষবাস করেন। কেন মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছেন– তাঁর যুক্তি, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া অনেক কঠিন। দ্রুত সার বা সেচের পানি যখন দিতে হয়, তখন কোথায় টাকা পাব? সুদের টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে চাপ দেওয়া হয় জেনেও টাকা নিয়েছিলাম। মজুরি বা অন্য কোনো কাজ করে টাকা শোধ করতে হয়।’

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের পূর্বচরবাটা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম এবার তিন একর জমিতে আমন চাষ করেছেন। এ জন্য তিনি গ্রামের মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, গায়ে-গতরে খেটে চাষ করলে খরচ পুষিয়ে যায়। তবে চাষের খরচ সামলাতে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে যাচ্ছি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, গ্রামগঞ্জের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থা অনুমোদনহীন। আবার যাদের লাইসেন্স আছে, তারাও ক্ষুদ্রঋণের কোনো নীতিমালা অনুসরণ করে না। তাই তাদের নীতিমালার মধ্যে আনা উচিত।

লোকসানি বিআরটিসি মুনাফায়

১০ সেপ্টেম্বর ২৩, সমকাল

সরকারি বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের মতো লোকসানে ধুঁকতে থাকা সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হাজার কোটি টাকা ঋণের ভারে ন্যুব্জ প্রতিষ্ঠানটি এখন লাভের মুখ দেখেছে। ধারাবাহিক মুনাফা করছে। গত তিন বছরে বহরে নতুন বাস ও ট্রাক যোগ না হলেও আয় আড়াই গুণ বেড়েছে। একসময় আট মাস বকেয়া পড়লেও ৮৭৩ জন নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের পরও টানা আড়াই বছর নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন বিআরটিসির কর্মীরা। অপরাধের শাস্তিও পেতে হচ্ছে।

বিআরটিসির বদলে যাওয়ার চিত্র পাওয়া গেল প্রতিষ্ঠানটির নথিতে। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর মাঝে কয়েক বছর বাদ দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত নিয়মিত লোকসান গুনেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাস ও ট্রাক কেনায় সরকারি ও বিদেশি ঋণের ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। সরকারের কিনে দেওয়া বাস-ট্রাক চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে চলতে হয় সংস্থাটিকে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৫৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে বিআরটিসির খরচ ছিল ২৬৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সেই বছর লোকসান ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ৯ মাস বেতন বকেয়া পড়ায় ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি রাজধানীর জোয়ার সাহারা ডিপোতে তালা দেন চালক-শ্রমিকরা। ১৬ মাসের বেতন বকেয়া পড়েছিল নারায়ণগঞ্জ ডিপোতে।

ঘুরে দাঁড়ানো শুরু

২০১৯-২০ অর্থবছরে বাস, ট্রাক, ওয়ার্কশপ এবং প্রশিক্ষণ থেকে ৩৪৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে পরিচালন ব্যয় হয় ৩৪৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ফলে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা মুনাফা হয়। ওই মুনাফার কারণ ছিল ভারতের ঋণে (এলওসি) ৫৮১ কোটি টাকায় ৬০০টি বাস এবং ২১৭ কোটি টাকায় ৫০০টি ট্রাক কেনা। পরিচালনায় মুনাফা হলেও তখন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারেনি সংস্থাটি।

২০২১-২২ অর্থবছর থেকে বিআরটিসি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই সময়ে বহরে নতুন বাস ও ট্রাক যুক্ত না হলেও ওই অর্থবছরে রেকর্ড ৪৭৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা আয় করে। বিপরীতে খরচ হয় ৪৪০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। মুনাফা হয় ৩৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এই রেকর্ড ভেঙেছে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। গত অর্থবছরে ৬৩১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা আয় করেছে সংস্থাটি। খরচ হয়েছে ৫৮৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। মুনাফা হয়েছে ৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও বিআরটিসি কীভাবে মুনাফা করছে, তা জানতে সংস্থাটির মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার চেহারাও বদলে গেছে। ভবনের নিচতলায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মতো চকচকে অভ্যর্থনা কক্ষ তৈরি হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবিশাল কক্ষটি নানা উপকরণে সুজ্জিত।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিআরটিসিতে যোগ দেন বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম। তিনি জানালেন, চেয়ারম্যান পদে যোগদানের আগের ১৫ দিন পরিচয় গোপন করে ডিপোতে ডিপোতে ঘোরেন। ১১১টি সমস্যা চিহ্নিত করেন।

অপরাধের শাস্তি পেতে হয়

বিআরটিসিতে অনিয়ম-দুর্নীতির সাজার নজির ছিল না। সাজা দিলেও তা প্রত্যাহার হতো। সমকালে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অনিয়ম প্রমাণিত হলেও ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট তিন কর্মকর্তাকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই সময়ে ছয়জনের শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়। তবে এ নজির থেকে বেরোতে পেরেছে বিআরটিসি। গত আড়াই বছরে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাসহ ৩৭ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

২০২১ সালে বিআরটিসিতে ৮৭টি বিভাগীয় মামলা হয়। এতে ১৬ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

পদানবতি, বেতন কর্তনসহ বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয় ২৮ জনকে। ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ১৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। গত আড়াই বছরে ২১০টি মামলার ১৬৭টি নিষ্পত্তি হয়েছে। মোট ৬৮ জনকে পদানবতি, বেতন কর্তনসহ বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরেই ৪২টি মামলায় ২০ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, শাস্তি দেওয়া মূল উদ্দেশ্য নয়। অনিয়ম করে পার পাওয়া যাবে না– এই বার্তা দেওয়াই লক্ষ্য। তা পূরণও হচ্ছে। আগে মাসে বিআরটিসির ৬০-৬৫ বাস বছরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা গুনত। গত বছরে দু’বার জরিমানা হয়েছে।

ভাঙা গাড়ির জঞ্জালমুক্ত

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিআরটিসির বহরে বাসের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮২৪টি। কিন্তু সচল গাড়ি ছিল ১ হাজার ২১০টি। এর মধ্যে অনরুট অর্থাৎ সড়কে চলত মাত্র ৮৮৫টি। হাজারখানেক বাস অচল, নয়তো অলস বসেছিল। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিআরটিসির বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৩৫০টি। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ২৪৮টি। অনরুট বাস অর্থাৎ সড়কে চলছে ১ হাজার ২০৩টি। লিজে চলছে ৩৮টি বাস।

৪৭৪টি বাস কোথায় গেল– প্রশ্নে বিআরটিসির চেয়ারম্যান জানালেন, অচল ও মেরামত অযোগ্য ছিল। বিক্রি করে দিয়ে জঞ্জাল কমিয়েছেন। তাজুল ইসলাম বলেন, এসব অচল বাস ডিপোতে জায়গা দখল করে রাখায় নতুন কেনা কোটি টাকার বাস রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে রাখতে হতো। রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হতো। অচলগুলো বিক্রি করায় নতুন বাস ডিপোতে সুরক্ষিত থাকে। এতে মেরামত খরচও কমেছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিআরটিসিতে ট্রাকের সংখ্যা ছিল ৫৯০টি। বর্তমানে আছে ৫৮৫টি। এর মধ্যে ৫০০টি চলছে। ৭৯টি মেরামত অযোগ্য। বিক্রি করে দেওয়া হবে।

গাড়ি চালানোর ‘অনীহা’ কেটেছে

বাস ও ট্রাকের ভাড়া আয়ের প্রধান উৎস হলেও বিআরটিসির গাড়ি চালাতে আগ্রহ ছিল না। ২০১৬ সালের ৬ আগস্টের নথি অনুযায়ী, ওই সময় সচল বাসের ১ হাজার ৪৯টি বাসের অর্ধেক দৈনিক সড়কে চলত। এর আগে দুই বছরে এক দিন সর্বোচ্চ ৮২১টি বাস পথে নেমেছিল। সর্বনিম্ন ৪০৬টি বাস চলার নজির আছে। বাকি ছয় শতাধিক বাস ডিপোতে অলস বসে থাকত। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার এ নিয়ে ক্ষোভ জানালেও ফল হয়নি।

অভিযোগ ছিল, বিআরটিসির কর্মকর্তারা বেসরকারি মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশে বাস বসিয়ে রাখতেন। সংস্থাটি সেই ধারা থেকে বের হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ৯৬ শতাংশ বর্তমানে নিয়মিত সড়কে চলছে।

বিআরটিসির লাভের খবর জানানোর পর গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সামছুল হক সমকালকে বলেছেন, নিয়ম মেনে চললে লাভ করার কথা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কয়েকজন মালিক মিলে একটি বাস চালিয়ে  মুনাফা করেন। ২ হাজার বাস ও ট্রাক থাকার পরও বিআরটিসির লোকসান করার কারণ ছিল না। বসিয়ে রেখে ইচ্ছা করে লোকসান করা হতো।

ট্রাকের আয় বেড়েছে, বাসে মুনাফা

২০২০-২১ অর্থবছরে বাস চালিয়ে বিআরটিসি আয় করেছিল ২৩৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বাসের সংখ্যা না বাড়লেও গত অর্থবছরে আয় করেছে ৪১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। বাস পরিচালনায় ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয়েছে ৩৮৬ কোটি ৫৫ লাখ। মুনাফা করেছে ২৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

ট্রাক থেকে আগেও মুনাফা করত বিআরটিসি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ট্রাক থেকে সংস্থাটির আয় ছিল ১০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় করেছে ১৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। মুনাফা হয়েছে ১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা।

রাজধানীর কল্যাণপুর ডিপোর ম্যানেজার নূর-ই-আলম সমকালকে বলেছেন, গত আড়াই বছরে স্বচ্ছতা এসেছে। ব্যয় সংকোচন করা হয়েছে। তাই আয় বেড়েছে। নিয়মিত বেতন দিয়েও মুনাফা করা সম্ভব হয়েছে।

সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, বিআরটিসি ভালো করছে। তবে আরও ভালো করা সম্ভব।

গাড়ি বেড়েছে, কমেছে মেরামত খরচ

নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালে অনরুট ৮৮৫ বাসের নিয়মিত মেরামতে বছরে ৬৬ কোটি টাকা খরচ হতো। বর্তমানে ১ হাজার ২০০ বাসের নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে খরচ ৪২ কোটি টাকা। ব্যয় কীভাবে কমল– প্রশ্নে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তিন নম্বর টায়ার লাগিয়ে এক নম্বরের বিল নেওয়া হতো। শ্রমিক-কর্মচারীদের খুব একটা দোষও নেই। তারা বেতন পেতেন না। অনিয়ম না করলে কীভাবে সংসার চালাবেন?’

২০১৬ সালের ২ জুলাইয়ের নথি অনুযায়ী, সেই বছর চট্টগ্রাম ডিপোতে ১৮ হাজার টাকার রং গাড়িতে লাগাতে ৫৩ হাজার টাকা খরচের ভাউচার জমা হয়। গাজীপুর ডিপোতে গাড়ি মেরামতে ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও বাস সচল ছিল না। ২০১৬ সালের এপ্রিলে মন্ত্রীর পরিদর্শনে তা হাতেনাতে ধরা পড়ে।

বিআরটিসির জন্য ২০১৯ সাল পর্যন্ত কেনা অধিকাংশ বাস ও ট্রাকের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাসের আয়ুষ্কাল ২০ বছর ধরা হলেও বিআরটিসির বাস পাঁচ বছরও টেকে না। ২০০৯ সালে ১২২ কোটি টাকায় ২৭৯টি বাস কেনা হয়। সেগুলোর ১২৫টি সচল। ২০১৩ সালে ২৮২ কোটি টাকায় আনা হয় দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানির ২৫৫টি বাস। প্রতিটি বাসের দাম পড়ে কোটি টাকার বেশি। কারিগরি শাখার তথ্য অনুযায়ী, এর ৮১টি ছয় বছরের মধ্যে মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

৩৩ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ ৪০ হাজারে তৈরি

২০১৩ সালে ভারত থেকে কেনা ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাসের ৪৪টি বিকল হয়ে যায়। প্রতিটি বাসের দাম পড়েছিল ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। তাজুল ইসলাম জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার সময় মাত্র ছয়টি বাস সচল ছিল। গত বছর ২১টি আর্টিকুলেটেড বাস সচল করা হয়েছে। আরও আটটি সচলের অপেক্ষায়।

আর্টিকুলেটেড বাসের মাঝে রাবার বেলোস নামের জোড়া থাকে। এই জোড়া খুলে যাওয়ায় বাসগুলো বিকল হয়ে যায়। মেরামত সম্ভব হলেও রাবার বেলোস মেরামত করা যাচ্ছিল না। কারিগরি শাখা জানিয়েছে, প্রতিটি রাবার বেলোসের দাম ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ভারত থেকে আনতে হয়। সেই রাবার বেলোস গাজীপুরের ওয়ার্কশপে বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল মো. জাহিদ হোসেনের টিম ৪০ হাজার ৬৯৯ টাকায় তা তৈরি করেছে। তাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ওয়ার্কশপটিকে বিশ্বমানে উন্নীত করার সুযোগ রয়েছে।

পেনশনও মিলছে

বাস-ট্রাকের আয়ের টাকা প্রতিদিন জমা দেওয়ার নিয়ম বিআরটিসিতে মানা হতো না। ডিপো ম্যানেজাররা হাতে রাখতেন। ২০১৬ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, আট কোটি টাকার বেশি জমা হয়নি। ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সংস্থাটিতে বকেয়া বেতন ছিল ২০ কোটি ২১ লাখ টাকা। গত ৩০ জুন পর্যন্ত এর মধ্যে ১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বকেয়া থাকার বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেছেন, এগুলো সব আগের। গত আড়াই বছরে মাসের ১ তারিখে বেতন হচ্ছে। আগের বকেয়াসহ অনেকে এখন একসঙ্গে দুই মাসের বেতন পাচ্ছেন।

চাকরি শেষে পেনশন গ্র্যাচুইটি না পাওয়া বিআরটিসিতে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ২৩১ জন কর্মীর গ্র্যাচুইটির ২৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বকেয়া ছিল। এখনও বকেয়া ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তাজুল ইসলাম বলেছেন, আড়াই কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছে। বিআরটিসি যে ধারায় চলছে, তা অব্যাহত থাকলে কিছুই বকেয়া থাকবে না। চালক-শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ফলে তারা বৈধভাবেই বাড়তি টাকা পাচ্ছেন।

আর্থিক সংকটের সময় দেশে বিলিয়নেয়ার আরো বেড়েছে

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩, বণিক বার্তা

লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ, রেমিট্যান্সে ভাটাসহ সামষ্টিক অর্থনীতির নানামুখী সংকটের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে সরকার ও সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এমন অবস্থায়ও একশ্রেণীর মানুষের ধনসম্পদ আরো ফুলে-ফেঁপে উঠছে। সুইজারল্যান্ডের ইউবিএস ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশীয় মুদ্রায় ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি বা এর ওপরে সম্পদশালী ব্যক্তির সংখ্যা বাংলাদেশে প্রায় এক হাজার ৭০০, যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে, স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ চার লাখ কোটি টাকার বেশি। যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশ।

এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। সর্বশেষ গত আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। ডলার সংকটের কারণে চাহিদা অনুসারে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে আমদানির পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে উৎপাদনমুখী শিল্পের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ক্রমাগত ক্ষয়ের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে (বিপিএম৬) দেশের রিজার্ভ এখন ২ হাজার ১৭০ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত রফতানিতে গত অর্থবছরে প্রত্যাশিত হারে প্রবৃদ্ধি হয়নি। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম আরেক খাত রেমিট্যান্স পরিস্থিতিও আশাব্যঞ্জক নয়। গত অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে নামমাত্র প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে। দেশের ব্যাংক খাতের পরিস্থিতিও নাজুক। সুশাসনের ঘাটতির পাশাপাশি খেলাপি ঋণ খাতটির জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে অর্থনীতির এসব সংকটের আঁচ লাগছে না দেশের বিলিয়নেয়ারদের গায়ে।

ব্যবসায়িক কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পদশালীদের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে জুরিখভিত্তিক ক্রেডিট সুইস ব্যাংক। প্রায় দেড় দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পদশালীদের আর্থিক পরিসংখ্যান নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা উইং, যা প্রকাশ হয় গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট শিরোনামে। তবে এ বছর ক্রেডিট সুইসকে অধিগ্রহণ করে নেয় সুইজারল্যান্ডের আরেক ব্যাংক ইউবিএস। ফলে এবার বিশ্বের সম্পদশালীদের ডাটাবেজ প্রকাশ করেছে ইউবিএস ব্যাংক। ডাটাবেজটির সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২৩ সালের সংস্করণে দেখা যায়, ২০২২ সাল শেষে দেশে ৫০ কোটি ডলার বা সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) বেশি পরিমাণের সম্পদ আছে ২২ ব্যক্তির কাছে। যেখানে ২০২১ সাল শেষে এ ক্যাটাগরির সম্পদশালীর সংখ্যা ছিল ২১ জন। ১০ কোটি থেকে ৫০ কোটি ডলার বা ১ হাজার ১০০ কোটি থেকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে ৪৪ জনের কাছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৩ জন।

২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশে ৫ থেকে ১০ কোটি ডলার বা ৫৫০ কোটি থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদ ছিল এমন ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে, যা ২০২১ সালে ছিল ৩৯ জন। ১ থেকে ৫ কোটি ডলার বা ১১০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২০২২ সাল শেষে ছিল ৪২৩ জন। যেখানে ২০২১ সালে এ ক্যাটাগরির সম্পদশালীর সংখ্যা ছিল ৪০০ জন। সব মিলিয়ে দেশে ১১০ কোটি থেকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২০২২ সাল শেষে ৫২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫০৩ জন। দেখা যাচ্ছে এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে শতকোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে ২৬ জন। এর মধ্যে ১১০ কোটি থেকে ৫৫০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ২৩ জন। ইউবিএসের প্রতিবেদনে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে এমন বাংলাদেশীর সংখ্যা ২০২২ সাল শেষে ১ হাজার ১৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২১ সাল শেষে যা ছিল ১ হাজার ১২৫ জন। বর্তমান বিনিময় হার বিবেচনায় নিলে ৯০ লাখ ৯১ হাজার ডলারের সম্পদ থাকলে বাংলাদেশী মুদ্রায় তা ১০০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। ফলে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ডলারের সম্পদ থাকা ১ হাজার ১৫৬ জন ব্যক্তির মধ্যে কিছুসংখ্যক শত কোটিপতির তালিকায় স্থান পাবে। এতে প্রকৃত হিসাবে বাংলাদেশের শত কোটিপতির সংখ্যা ৫২৯ জনের বেশি হবে। স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে ২০২১ সালে এসব সম্পদশালীর টাকার অংকে সম্পদের পরিমাণ ২০২২ সালের তুলনায় কিছুটা কম ছিল।

ব্যাংক খাতে অস্বস্তি বাড়ছে

১১ সেপ্টেম্বর ২৩, সমকাল

ডলার সংকটের মধ্যে ব্যাংক খাতে চলছে টাকার টানাটানি। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে অনেক ব্যাংক নিয়মিত ধার করছে। এর পরও কিছু ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না। এই সংকটের মূলে রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আস্থাহীনতা ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত অনুযায়ী খেলাপি ঋণ কমানো ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে চাপে রয়েছে ব্যাংক খাত। এমন সময়ে একের পর এক পদত্যাগ করছেন বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। এ নিয়ে ব্যাংক খাতে তৈরি হয়েছে নতুন অস্বস্তি।

মালিকানা বদল বা পরিচালকদের চাপে পড়ে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কয়েকটি ব্যাংকের এমডি পদত্যাগে বাধ্য হন। করোনা শুরুর পর ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত শিথিলতা। তখন এমডিদের ওপর তেমন চাপ ছিল না বলে মনে করা হয়। ওই তিন বছরে পদত্যাগ করেন একজন এমডি। তবে চলতি বছর যেন এমডিদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে।

গত ১৬ জানুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্তৃত্বে থাকা ‘সিকদার পরিবার’-এর চাপে পদত্যাগ করেন ব্যাংকটির এমডি মেহমুদ হোসেন। এর পর গত জুলাইয়ে পদত্যাগ করেন ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরী। গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমান। এত কম সময়ে চার এমডির পদত্যাগ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এসব এমডি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও পরিচালকদের চাপেই তারা পদ ছাড়তে বাধ্য হন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১১ বছরে সর্বোচ্চ, মানুষের কষ্ট আরও বাড়ল 

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য গতকাল রোববার প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিবিএসের হিসাবে, গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশে উঠেছিল। এক দশকের মধ্যে গত আগস্ট মাসে হঠাৎ খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়। বিবিএস ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, দুই মাস কিছুটা কমার পর গত আগস্ট মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির হার এখন প্রায় ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই করছে। জুলাই মাসে যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সেই তুলনায় খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যআগস্টে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২২ সালে আগস্টে একজন মানুষ যে পণ্য ও সেবা ১০০ টাকায় কিনতেন, চলতি বছরের আগস্টে একই পণ্য কিনতে তাঁর খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা।স্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

মানুষ কুলিয়ে উঠতে পারছে না

১২ সেপ্টেম্বর ২৩, সমকাল

কোনো জরিপ না করেই বলা যায়, বর্তমানে দেশের প্রধান সমস্যা দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি। সাম্প্রতিক একটি জরিপের ফলাফলও তাই। এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত দেশব্যাপী ১০ হাজার মানুষের ওপর এক জরিপে ৯৭ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামবৃদ্ধি তাদের জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছে, এই প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক।

জরিপটি করা হয় গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে। তখন সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ শতাংশের কাছাকাছি। এখন তা প্রায় ১০ শতাংশ। ফলে বাজারের উত্তাপ এবং টিকে থাকার কষ্ট এখন আরও বেড়েছে। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দরের সঙ্গে সমাজের বেশির ভাগ মানুষ কুলিয়ে উঠতে পারছে না। গরিব ও  নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর জিনিসপত্রের বাড়তি দামের চাপ আরও বেশি। কেননা তাদের ব্যয়ের বেশির ভাগ অংশ খাদ্য কিনতে ব্যয় হয়। বিবিএসের সর্বশেষ  হিসাবে আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা প্রায় একযুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।

দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ব্যাখ্যায় অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ নীতিনির্ধারকরা কয়েক মাস ধরে বিশ্ববাজারকে দায়ী করছেন।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারদর পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন বিশ্ববাজারে বেশির ভাগ পণ্যের দাম কম। সর্বশেষ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য কমতে থাকায় এবং এর সঙ্গে নিজেদের ব্যবস্থাপনার দক্ষতার মাধ্যমে অনেক দেশ সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি কমাতে পেরেছে। বাংলাদেশে কমছে না, বরং বাড়ছে। চরম সংকটে পড়ে শ্রীলঙ্কার  মূল্যস্ফীতি  এক বছর আগে ৭০ শতাংশে উঠেছিল। গত জুলাই মাসে তাদের মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশে নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশ বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি বাগে আনতে পেরেছে। যারা মূল্যস্ফীতি কমিয়েছে, তাদের বেশির ভাগই বাজারে চাহিদা কমানোর পদক্ষেপ নিয়ে বিশেষত সুদের হার বাড়িয়ে এ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। বাংলাদেশেও গত মুদ্রানীতিতে সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর আগে থেকেই আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ ছিল। সরকারের ব্যয় সংকোচনেরও নানা উদ্যোগ ছিল। তারপরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বাজারে একেক সময় একেক পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে মানুষের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে আলু, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি।

সরকারি ঋণের ৩৮% প্রবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা কি

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩, বণিক বার্তা

বৈদেশিক বাণিজ্যের চাপ সামলাতে আমদানি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিও এক অংকের ঘরে নেমে এসেছে। যদিও সরকারি ঋণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই-পরবর্তী এক বছরে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৩৮ শতাংশের বেশি। এ সময়ে সরকারের নেয়া ১ লাখ ৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা নিট ঋণের সিংহভাগের জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্পদ সৃষ্টি না হলেও নতুন টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেয়ার এ নীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরে দেশে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা এক যুগে সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) মূল্যস্ফীতির হার আরো বেড়েছে। জুলাইয়ে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশের পর আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে। বাংলাদেশে ঊর্ধ্বমুখী হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখন নিম্নমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামও নেমে এসেছে এক বছর আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি কমানোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতিতে পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়নের বিরূপ প্রভাবও বাজারে পড়েছে। আবার সরকারের আয়ের উৎসগুলোও সংকুচিত হয়ে এসেছে। কমেছে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে ঋণপ্রাপ্তিও। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে যে ঋণ দিয়েছে, সেটি মূল্যস্ফীতি উসকে দেয়ায় বড় ভূমিকা রাখছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সরকারের ঋণ গ্রহণ ও ব্যয় কমাতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিধারা এখন খুবই খারাপ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌অর্থের সংকট সত্ত্বেও সরকার একের পর এক মেগা প্রকল্প নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণের জোগান দিচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। আবার কোনো দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে যেসব উদ্যোগের মাধ্যমে সেটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়, বাংলাদেশে সে ধরনের কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। যেসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে, সেগুলো আর কমবে বলে মনে হয় না। কারণ দেশের বাজার ব্যবস্থার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে পারেনি। কার্ব মার্কেটের সঙ্গে ব্যাংকে ডলারের দরে ১০ টাকার ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এটি চলতে থাকলে অর্থনীতি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

দুই বছর আগে আর্থিক সংকটে পড়ে ক্রমাগত রুপি ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিল শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্পদ সৃষ্টি না করেই নতুন মুদ্রা ছাপানোর প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে দেশটির সাবেক রাজাপাকসে সরকারকে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শ্রীলংকার মূল্যস্ফীতি ঠেকেছিল প্রায় ৬০ শতাংশে। বিপর্যয়কর সে পরিস্থিতি সামাল দিতে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী নীতি গ্রহণ করে গভর্নর পি নন্দলাল বীরাসিংহের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার এক ধাক্কায় ১০ শতাংশ বাড়িয়ে মুদ্রা সরবরাহের লাগাম টেনে ধরা হয়। আর্থিক খাতের সংস্কারে নেয়া হয় নানামুখী উদ্যোগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া উদ্যোগের সুফল এরই মধ্যে পেতে শুরু করেছে শ্রীলংকার জনগণ। গত মাসে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটির সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার নেমে আসে মাত্র ৪ শতাংশে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে নতুন টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ নেয়ার নীতি চালু রয়েছে এখনো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৭৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। অন্যান্য উৎস থেকে সরকারের আরো ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার কথা রয়েছে। তবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বলছে, সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দেয়ার সক্ষমতা এ মুহূর্তে দেশের ব্যাংক খাতের নেই। আবার সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ দেশের অভ্যন্তরীণ অন্যান্য উৎস থেকেও পরিকল্পনা অনুযায়ী ঋণ নেয়া সম্ভব হবে না। বিদেশী উৎস থেকেও সরকারের ঋণপ্রাপ্তি কমে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের বিভিন্নমুখী ব্যয় আরো বাড়বে। এক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় নির্বাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো বেশি হারে নতুন টাকা ছাপাতে হবে। সেটি হলে দেশে মূল্যস্ফীতির হার আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই শেষে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতি ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে এ ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সরকারের ব্যাংকঋণ স্থিতি ১ লাখ ৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা বেড়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিতে উল্লম্ফন হলেও দেশের বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১ অংকের ঘরে নেমে গেছে। জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। যদিও দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সিংহভাগই বেসরকারি খাতনির্ভর।

৮৪% মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি

৩০ আগস্ট, ২০২৩, দৈনিক বাংলা

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভুল পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ। অন্যদিকে বেশির ভাগ মানুষ বলেছেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

দেশের মানুষের এই মতামত উঠে এসেছে দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে। এতে বলা হয়, অর্থনীতির ক্ষেত্রে দেশের ভুল পথে যাওয়ার কথা বলেছেন প্রায় ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা। আর নিজেদের জীবনে দ্রব্যমূল্যের আঘাত মারাত্মকভাবে পড়ার কথা বলেছেন ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা।

জরিপটি গতকাল মঙ্গলবার এশিয়া ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দেশের ৬৪ জেলার ১০ হাজার ২৪০ জন মানুষের ওপর করা এই জরিপে তথ্য নেয়া হয় গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি সময়ে। প্রতিটি জেলা থেকে ১৬০ জন উত্তরদাতা নেয়া হয়েছে। উত্তরদাতাদের মধ্যে অর্ধেক ছিলেন নারী।

এশিয়া ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে এটি সুশাসন, নারীর ক্ষমতা, জেন্ডার বৈষম্য দূর করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে। অন্যদিকে বিআইজিডি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা সংস্থা।

দুই সংস্থার জরিপ ‘দ্য স্টেট অব বাংলাদেশ’স পলিটিক্যাল, গভর্ন্যান্স, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি: অ্যাকোর্ডিং টু ইটস সিটিজেনস’ (বাংলাদেশের রাজনৈতিক, শাসন, উন্নয়ন ও সামাজিক পরিস্থিতি: নাগরিকদের মত) ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও করা হয়।

জরিপে একটি প্রশ্ন ছিল এমন, আপনি কি মনে করেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথে যাচ্ছে। জবাবে ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বাংলাদেশ ভুল পথে যাচ্ছে। ২৫ শতাংশের মত হলো, বাংলাদেশ সঠিক পথে যাচ্ছে। আর ৪ শতাংশ বলেছেন, তারা এ বিষয়ে জানেন না। ১ শতাংশ উত্তরদাতা উত্তর দেননি।

এই প্রশ্নে ২০১৯ সালের জরিপে কী উত্তর এসেছিল, তা-ও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। দেখা যায়, ওই বছরের জরিপে ৭০ শতাংশের কিছু বেশি উত্তরদাতা বলেছিলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে। তখন ২৮ শতাংশ ভুল পথে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।

উল্লেখ্য, যাদের আয় কম, সেই সব উত্তরদাতার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশ ভুল পথে যাওয়ার মতামত বেশি এসেছে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক নিয়েও জরিপে উত্তরদাতাদের মতামত নেয়া হয়। সাড়ে ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভুল পথে যাচ্ছে, হারটি ২০১৯ সালে ছিল প্রায় ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে ৩৯ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে। ২০১৯ সালে হারটি ছিল প্রায় ৬৪ শতাংশ।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভুল পথে যাচ্ছে, এমন মতামত দিয়েছেন আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ।

২০১৯ সালের জরিপ অনুযায়ী, সামাজিক দিক দিয়ে সঠিক পথে রয়েছে বলে মনে করেন ৭৭ শতাংশ মানুষ। ২০২২ সালে হারটি কমে নেমেছে সাড়ে ৫৭ শতাংশে। সামাজিক দিক দিয়ে দেশ ভুল পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন প্রায় ৩৯ শতাংশ মানুষ, এটা ২০১৯ সালে ছিল প্রায় ২২ শতাংশ।

দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো কী কী- এই প্রশ্নের উত্তরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ সামনে এনেছেন নিত্যপণ্যের দামকে। এরপর রয়েছে অর্থনীতি অথবা ব্যবসার মন্দা, বেকারত্ব অথবা জীবিকার সমস্যা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অথবা অসহিষ্ণুতা, দুর্নীতি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি।

নিত্যপণ্যের দামকে ৪৪ শতাংশ মানুষ সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা ২০১৯ সালে ছিল ৩৩ শতাংশ। অর্থনীতি অথবা ব্যবসার মন্দা সামনে এসেছে ১১ শতাংশের উত্তরে, যেটা ২০১৯ সালে ছিল ৫ শতাংশ। বেকারত্ব অথবা জীবিকার সমস্যা সামনে এনেছেন ১০ শতাংশ মানুষ, যেটা ২০১৯ সালে ছিল ১৮ শতাংশ। দুর্নীতিকে সামনে এনেছেন ৩ শতাংশ মানুষ, যা ২০১৯ সালে ছিল ১১ শতাংশ।

১৮ শতাংশ অন্যান্য সমস্যাকে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ৪ শতাংশ উত্তরদাতা প্রশ্নটির উত্তর জানেন না বলে জানিয়েছেন।

জরিপে প্রশ্ন ছিল, সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কি আপনার জীবনে আঘাত হেনেছে। উত্তরে ৮৪ শতাংশ বলেছেন, আঘাত ছিল মারাত্মক। ১৩ শতাংশের উত্তর ছিল, তারা কোনো না কোনোভাবে আঘাত পেয়েছেন।

দ্রব্যমূল্যের কারণে আঘাত না পাওয়া মানুষের হার খুবই কম। যেমন খুব একটা আঘাত পাননি বলে জানিয়েছেন মাত্র ১ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ২ শতাংশ বলেছেন, তারা মোটেও আঘাত পাননি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক দলের কর্তৃত্ব দেখা যায়- এই মতের সঙ্গে শক্তভাবে ও মোটামুটিভাবে একমত পোষণ করেছেন ৭২ শতাংশ উত্তরদাতা। হারটি ২০১৯ সালে ৮৬ শতাংশ ছিল।

রাজনীতিতে প্রভাবশালী দলটির ভূমিকা নেতিবাচক মনে করেন ৫৫ শতাংশ উত্তরদাতা, যা ২০১৯ সালে ছিল ৩৮ শতাংশ। দলটির ভূমিকা ইতিবাচক বলে মনে করেন ৩৬ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে ছিল ৫৯ শতাংশ।

জরিপে উঠে আসে, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি কমে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ মানুষ রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত দিয়েছিলেন, যা ২০২২ সালে কমে ১৩ শতাংশে নেমেছে। ৪৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য যথেষ্ট করেছে ও করছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ (৭২ শতাংশ) বলেছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। সেতু নির্মাণের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন জরিপে অংশ নেয়া প্রায় অর্ধেক মানুষ (৪৭ শতাংশ)। ২৮ শতাংশ মানুষ কৃতিত্ব দিয়েছেন সরকারকে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কৃতিত্ব দিয়েছেন ১ শতাংশ করে উত্তরদাতা।

পেঁয়াজ কেনাবেচার তথ্য গোপন, নিয়ন্ত্রণে আসছে না দাম

১২ সেপ্টেম্বর ২৩, সমকাল

আল মদিনা স্টোর দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান। পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৮ টাকা দরে বিক্রি করছে তারা। ওই পেঁয়াজ কত টাকা দরে কেনা, তার কোনো কাগজপত্র নেই তাদের হাতে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. কাশেম বলেন, ‘আমরা কমিশনে ব্যবসা করি। স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও ব্যাপারীরা পেঁয়াজ সরবরাহ করেন। তারা কোনো রসিদ দেন না।’ 

বাজারের কাঁচা পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান কাজী স্টোরে গিয়ে জানা যায়, তারাও একইভাবে ব্যবসা করছে। পেঁয়াজ আমদানির কোনো রসিদ তাদের কাছে নেই। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘এখানে ব্যবসায়ীরা অল্প কয়েক টাকা লাভে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। তাই রসিদ বা ভাউচার থাকে না।’

তবে বাজার-সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পণ্য কেনার রসিদ না রাখা খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের একটি কৌশল। পেঁয়াজসহ বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানির রসিদ না রেখে কেউ কেউ চড়া দামে তা বিক্রি করেন। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে।

কেন দাম বাড়ছে, সংকট কোথায়

৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

বাজারে আলুর কেজি ৫০ টাকা ছুঁয়েছে, যা ১৫ দিন আগেও ছিল ৪০ টাকার নিচে। ঠিক এক বছর আগে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছিল ২৮ টাকা দরে; অর্থাৎ এক বছরে আলুর দাম ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।

সরকারি তথ্য বলছে, দেশে এ বছর আলুর উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। এমনকি চাহিদার তুলনায়ও অনেক বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। সে জন্য আলুর দাম বাড়ার কথা নয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ কম হয়েছে। তাই আলুর চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়ে গেছে।

এদিকে আলুর দাম বাড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, এটির চাহিদা, উৎপাদন ও সংরক্ষণ (মজুত) নিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের তথ্যে বড় ধরনের গরমিল রয়েছে।

উৎপাদন বাড়লেও দাম বেশি

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২১-২২ মৌসুমে দেশে মোট ১ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়। আর গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে আলু উৎপাদিত হয় ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার টন; অর্থাৎ এক বছরে উৎপাদন বেড়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার টন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে দেশে আলুর চাহিদা ছিল ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টন। সেই হিসাবে দেশে চাহিদার বিপরীতে ১৬ লাখ টনের মতো উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আলুর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে আলুর দাম বাড়াচ্ছেন। তাঁরা হিমাগার থেকে চাহিদা অনুসারে আলু খালাস করছেন না। এ ছাড়া পরিবহনের সমস্যা, ফেরি ও টোল প্লাজায় আলু বহনকারী গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হতে না পারাও দাম বাড়ার কারণ বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি।

হিমাগারে সংরক্ষণ কমেছে

চলতি বছর দেশে ৪৩ জেলায় ৩৬৫টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। এসব হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা ৩০ লাখ টনের বেশি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২২ সালে এসব হিমাগারে মোট ২৭ লাখ ৮ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। তবে চলতি ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ২৪ লাখ ৯২ হাজার টনে। এর মধ্যে খাওয়ার আলু ১৮ লাখ ২১ হাজার টন; বাকিটা বীজ আলু।

যেসব জেলায় আলু উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণ বেশি হয়, তার মধ্যে মুন্সিগঞ্জ অন্যতম। এই জেলার রিভারভিউ হিমাগারের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮০ হাজার বস্তা। এ বছর আলু এসেছে মাত্র ৭৫ হাজার বস্তা।

হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারি তথ্যে উৎপাদন বেশি দেখালেও আসলে আলু উৎপাদন কমেছে। এ কারণে চলতি বছর হিমাগারগুলোতে গত বছরের তুলনায় কম পরিমাণে আলু সংরক্ষণ করতে পেরেছেন তাঁরা।

মুন্সিগঞ্জের আলু ব্যবসায়ী রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আলু উৎপাদনের সরকারি তথ্য ও বাস্তবতার মধ্যে মিল নেই। এ বছর হিমাগারে প্রয়োজনের তুলনায় আলু মজুত হয়েছে কম। তাতে অবশ্য এখনই বাজারে প্রভাব পড়ার কথা নয়।

ঢাকার কারওয়ান বাজারের ব্যাপারী আবদুর রহিম বলেন, হিমাগার থেকে বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে। এ জন্য খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়তি।

তথ্যের গরমিল

দেশে নভেম্বর মাসে আলুর আবাদ করা হয়। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফসল তোলা হয়। উৎপাদিত আলুর একটি অংশ হিমাগারে সংরক্ষণ না করেই জানুয়ারি-মে পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হয়। অবশিষ্ট অংশ কৃষকদের কাছ থেকে কিনে হিমাগারে রাখেন ব্যাপারী ও পাইকারি বিক্রেতারা। সাধারণত জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারে হিমাগারের আলু সরবরাহ হয়।

বিএআরসির হিসাবে, পাঁচ মাসে হিমাগারের বাইরে থাকা আলু বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৪০ লাখ টন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরে হিমাগারে মোট ২৪ লাখ ৯২ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে ৬৫ লাখ ২০ হাজার টন আলুর হিসাব মেলে। অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার টন।

এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার তথ্যে বড় তারতম্য রয়েছে। এ জন্য আলুর চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্যে মিল নেই।

নগদ ডলারের চরম সংকট

১৪ সেপ্টেম্বর ২৩, সমকাল

ডলার সংকটের কারণে চাহিদামতো এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি বিদেশ ভ্রমণ, চিকিৎসা, টিউশন ফিসহ বিভিন্ন কাজে প্রয়োজনীয় নগদ ডলারেরও চরম সংকট চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্স বাড়ানোর চেয়ে দর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কখনও ব্যাংকে পরিদর্শন আবার কখনও মানিচেঞ্জারে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। অভিযান আতঙ্কে কিছু মানিচেঞ্জার এখন বন্ধ রয়েছে। এতে সংকট আরও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হুন্ডিতে ডলারের চাহিদা এখন অনেক বেশি। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ঠিক করা রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের বিপরীতে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনতে পারছে না বেশির ভাগ ব্যাংক। আমদানিকারকদের চাহিদা মেটাতে অনেক ব্যাংক এখন ১১৬ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনছে। আর বিক্রি করছে ১১৭ টাকায়। বাড়তি দরে ডলার বেচাকেনার কারণে সম্প্রতি ১৪টি ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে সাতটি মানিচেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত, চার মানিচেঞ্জারের মালিক গ্রেপ্তার এবং ১০টি মানিচেঞ্জারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করল সরকার

আজকের পত্রিকা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম নির্ধারণ করল সরকার। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং প্রতিটি ডিম সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নতুন এই মূল্যতালিকা ঘোষণা করেন। বৈঠকে কৃষিসচিব উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া সয়াবিন তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমানো হয়েছে। প্রতি কেজি বোতলজাত সয়াবিন ১৬৯ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাম তেলের দাম লিটারে চার টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৪ টাকায়।

আবাদ বেড়েছে, দামে হতাশ পাটচাষিরা

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

মানিকগঞ্জে এবার পাটের আবাদ বাড়লেও কৃষকের মনে উচ্ছ্বাস নেই। কেননা, এ বছর প্রতি মণ পাটের দাম কমেছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। পাট বিক্রি করে উৎপাদন খরচ মিটিয়ে লাভ পাচ্ছেন না কৃষকেরা। পাটের দাম নিয়ে তাঁদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

কয়েকজন পাটচাষি ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করায় স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীই এবার পাট কিনছেন না। এতে বাজারে পাটের দাম কমে গেছে। বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে পাট বিক্রি করে চাষিদের কোনোরকমে উৎপাদন খরচ উঠছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাতটি উপজেলায় পাটের আবাদ হয়ে থাকে। গত বছর জেলায় ৩ হাজার ৯৭৩ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এতে উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার ৬৩ মেট্রিক টন পাট। এ বছর তা বেড়ে ৪ হাজার ৬৫৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাট উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন। গতবার ভালো দাম পাওয়ায় এবার বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন কৃষকেরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ বপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, পানি সেচ, শ্রমিক খরচ, জাগ দেওয়া, আঁশ ছড়ানো শেষে শুকিয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়েছে ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ৭ থেকে ৮ মণ ফলন পাওয়া যায়। পাটবীজ, কীটনাশক সবকিছুরই দাম বেড়েছে। এবার শ্রমিকের মজুরি ব্যাপক বেড়ে গেছে। ফলে পাট চাষে খরচ বেশি বেড়েছে।

দেশের অন্যতম পাটের মোকাম হলো ঘিওর পাটের হাট। সপ্তাহের বুধবার এখানে হাট বসে। ওই হাটে গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, ছোট–বড় বিভিন্ন যানবাহনে করে চাষিরা হাটে পাট নিয়ে আসছেন। এ ছাড়া নদীপথেও পাট নিয়ে আসছেন অনেকে। হাটে আসার পর দরদাম কষে ব্যবসায়ীদের কাছে পাট বিক্রি করছেন চাষিরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল হাটে প্রায় তিন হাজার মণ পাট কেনাবেচা হয়েছে। দাম কম থাকায় কৃষকেরা হাটে পাট কম আনছেন। হাটের ইজারাদার শামসুল আলম খান বলেন, মানভেদে প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় পাট কেনাবেচা হয়েছে।

তিন মণ তোশা পাট নিয়ে হাটে আসেন জেলার দৌলতপুর উপজেলার ধামশ্বর গ্রামের সপু মিয়া (৬৫)। প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। এই দামে পাট বিক্রি করে হতাশা প্রকাশ করে এই পাটচাষি বলেন, ‘হালচাষ থেকে শুরু করে হাটে পাট নিয়ে আসতে যা খরচ হচ্ছে, তাতে লাভ হচ্ছে না। টেনেটুনে চালান (উৎপাদন খরচ) উঠছে। এর থেকে ভুট্টার আবাদ করলেও ভালো আছিল।’

দৌলতপুরের খলসি গ্রামের পাটচাষি আবদুল মালেক বলেন, ‘কামলার (শ্রমিক) সাথে পরিবারের মানুষজন মিল্যা আমরা হাড়ভাঙা খাটুনির কাজ করি। কিন্তু সেই খাটুনির কোনো দাম পাওয়া গেল না। প্রতি মণ পাটের দাম আড়াই হাজার টাকা পাওয়া গেলে আমরা কিছুটা হইলেও লাভ পাইতাম।’

জামালপুর সদরের পিয়ারপুর গ্রাম থেকে এই হাটে পাট কিনতে আসেন বাদল দাস (৫০)। তিনি বলেন, চার বছর ধরে এই হাটে পাট কিনে কুমিল্লার চান্দিনায় বেসরকারি পাটকল জনতা জুট মিলে বিক্রি করে আসছেন। ভরা মৌসুমে এবার হাটে পাট কম উঠেছে। গত বছর এই সময়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে প্রতি মণ পাট কিনলেও এবার কিনছেন ২ হাজার টাকা দরে।

হাটের ইজারাদারের লোকজন, কয়েকজন কৃষক ও পাট ব্যবসায়ী বলেন, সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করার পাশাপাশি পাটের চাহিদাও কমে গেছে। ফলে স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীরা পাট কিনছেন না। বেসরকারি পাটকলগুলোর জন্য দূরের পাট ব্যবসায়ীরা হাটে এসে পাট কিনছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়লে চাহিদা ও দাম বাড়বে। এতে চাষিরা লাভবান হবেন। আরও বেশি পাট আবাদ করবেন।

সরকার দাম বেঁধে দিলেও কার্যকর নিয়ে সংশয়

১৫ সেপ্টেম্বর ২৩, সমকাল

নিত্যপণ্যের বাজার নাগালের বাইরে চলে গেলে বাধ্য হয়ে দাম বেঁধে দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদপ্তর। তবে বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর করা নিয়ে সব সময় প্রশ্ন ওঠে। দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত দরে বিক্রি না হলে আমদানির হুমকিও দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। গতকাল বৃহস্পতিবার এই তিন পণ্যের দর বেঁধে দেওয়ার পরও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতারা দাম রাখছেন যে যার মতো।

এর আগে যতবারই ভোজ্যতেল ও চিনির দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল, খুচরা থেকে সরবরাহকারী কাউকেই তা মানতে দেখা যায়নি। ফলে ভোক্তারা দাম কমার সুফল পান না।

 বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক। তবে মুখে মুখে দাম বেঁধে দিলেই হবে না। এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য সরবরাহ না বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করলে তা কার্যকর হবে না। পাশাপাশি কৃত্রিম সংকট হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববাজারে প্রতিটি ডিম ৫.৬১ টাকা, দেশে সাড়ে ১২ টাকা

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের বর্তমান দামের সঙ্গে দেশের বাজারে একই পণ্যের দামে বড় রকমের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের তুলনায় বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্য অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা নথিতে দেখা গেছে। সামগ্রিকভাবে দামের পার্থক্য অনেক বেশি। বিশেষ করে দেশের বাজারে ডিমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। যদিও বাংলাদেশে ডিম আমদানি হয় না।

গত বুধবার কৃষিপণ্যের মূল্য পর্যালোচনাসংক্রান্ত সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে উপস্থাপনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে এই চিত্র উঠে এসেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে পেঁয়াজ, আদা, কাঁচা মরিচ ও ডিমের দাম কমেছে। এই সময়ে পেঁয়াজের দাম প্রতি মেট্রিক টনে কমেছে ১২ শতাংশ, আদার দাম কমেছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, কাঁচা মরিচের দাম ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ডিমের দাম প্রতিটিতে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মধ্যে শুধু রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

গত এক মাসে দেশের বাজারে প্রতি কেজিতে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।

অন্যদিকে গত এক মাসে দেশের বাজারে প্রতি কেজিতে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে কাঁচা মরিচ ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপনায় দেখানো হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ২৬ দশমিক ৭০ টাকা (প্রতি ডলার ১০৯.৫০ টাকা হিসাবে)। ওই দিন রসুনের দাম ছিল প্রতি কেজি ১৯৩ দশমিক ৫৯ টাকা, আদার দাম ছিল ১২৩ দশমিক ৫২ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১২০ দশমিক ১৮ টাকা। ডিমের দাম প্রতি পিস ছিল ৫ দশমিক ৬১ টাকা। উপস্থাপনায় অন্য পণ্যের দাম ডলারে উল্লেখ করা হলেও ডিমের দাম টাকায় দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপনায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, দেশে চলতি বছর ডিমের চাহিদাতিরিক্ত সরবরাহের পরিমাণ ১৩৪ দশমিক ৫৮ কোটি পিস। উপস্থাপনার পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত সরবরাহ বিবেচনায় দেশে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতিটি লাল ডিম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ দশমিক ৫০ টাকা এবং প্রতিটি সাদা ডিম পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও বলছে, দেশের পাইকারি বাজারে গত ২২ আগস্ট প্রতি কেজি আলুর বিক্রয়মূল্য ছিল ৩৩ দশমিক ৮৪ টাকা এবং ১১ সেপ্টেম্বর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ টাকায়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ দিনে পাইকারি বাজারে আলুর দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ, যার সঙ্গে অতিরিক্ত ব্যয়ের সম্পৃক্ততা নেই।

কৃষিপণ্যের মূল্য পর্যালোচনাসংক্রান্ত সভায় জানানো হয়েছে, দেশে এ বছর আলুর উৎপাদন ছিল ১ দশমিক ১২ কোটি মেট্রিক টন, যা গত বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। তবে আলু মজুতের পরিমাণ কমেছে বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে।

চাষি যে আলু ১০ টাকা কেজি বিক্রি করেছিলেন, সেই আলু এখন ৫২ টাকায় কিনছেন

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

মৌসুমে চাষিদের কাছে ব্যবসায়ীরা আকারভেদে আলু কিনেছিলেন গড়ে কেজি ১০ টাকায়। এসব আলু হিমাগারে মাস দুয়েক রাখার পরেই বিক্রি শুরু হয় কেজি ২৮-৩০ টাকা। বর্তমানে সেই আলু হিমাগার থেকেই পাইকারি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৪৪ টাকা কেজি। বাজারে তা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় খোদ চাষিরাও অনেকে খাওয়ার জন্য আলু কিনে খেতে পারছেন না। আলুর বাজারের এমন চিত্র রংপুরের আট উপজেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোয়।

রংপুর অঞ্চলে সাধারণত কার্ডিনাল, স্থানীয় জাত সাদা পাটনি, শীল ও ঝাউ বিলেতি আলুর চাষ হয়। বর্তমানে কার্ডিনাল জাতের আলু খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৪৩ টাকা, সাদা আলু ৫০ টাকা, শীল ও ঝাউ বিলেতি আলু কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, তাঁদের হিমাগার থেকেই কিনতে হচ্ছে প্রতি কেজি আলু গড়ে ৪৪ টাকায়।

১০ টাকা কেজির আলু কীভাবে ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা জানতে ৯ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫ জন আলুচাষি, ২৫ জন ব্যবসায়ী, চারজন কৃষি কর্মকর্তা, ২০ জন শ্রমিক ও ১০ জন হিমাগার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের ভাষ্য, আলু উৎপাদনে কেজিপ্রতি চাষিদের খরচ পড়েছে প্রায় ৯ টাকা। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আলু তুলে চাষিরা জমি থেকে বিক্রি করেছেন ১০-১১ টাকা কেজি। গত মার্চে ব্যবসায়ীরা ৫০ কেজির বস্তায় ভরে আলু হিমাগারে রেখেছেন। প্রতিটি বস্তা কিনতে হয়েছে ৫৫ টাকায়। হিমাগার ভাড়া দিতে হচ্ছে বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা। প্রতি কেজি আলুতে শ্রমিকসহ পরিবহন খরচ পড়েছে দুই টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুতে ব্যবসায়ীদের খরচ পড়েছে ২০ টাকা। আর কৃষক পর্যায়ে খরচ ১৮ টাকা। সেই আলু প্রকারভেদে বর্তমানে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে কেজি গড়ে ৪৪ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৪৮ টাকা। তবে মানভেদে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা পর্যন্ত।

মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩, বণিক বার্তা

কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভাঙন রোধে রাস্তাটি আরো প্রশস্ত করার জন্য একটি প্রকল্প নিয়েছে সেতু ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। গত বছরের জুনে এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পাস হয়। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সড়কটি প্রশস্ত করা হলে প্রকল্প এলাকায় আরো গাছ ও পাহাড়ি বন কাটা পড়বে বলে জানিয়েছেন মেরিন ড্রাইভের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে গবেষণাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এর ফলে হুমকির মুখে পড়বে সামুদ্রিক কাছিম ও লাল কাঁকড়ার আবাস। ব্যাহত হবে এ অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য। সড়ক প্রশস্ত করে নয় বরং ভাঙন রোধে বিজ্ঞানসম্মত অবকাঠামো নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে ২০০৮ সালে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ শুরু হয়। প্রথম পর্বে কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হয়। দ্বিতীয় পর্বে ২০১৬ সালে ইনানী থেকে শিলখালি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এবং তৃতীয় পর্বে শিলখালি থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয় ২০১৮ সালে। সড়কটি পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে। কিন্তু গত বছর হঠাৎ করেই সড়কটিতে ভাঙন শুরু হয়, চলতি বছরে যা তীব্র আকার ধারণ করে।

মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভাঙন রোধে গত বছর ‘কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রশস্তকরণ’ প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক বিভাগ। প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, প্রথম ধাপে ১ হাজার ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে উখিয়া উপজেলার পাটুয়ারটেক পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করা হবে। এছাড়া রেজুখালের ওপর নির্মাণ করা হবে ৩০৫ মিটারের দুই লেনের সেতু। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফের নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, পর্যটন শিল্পের প্রসার এবং প্রকল্প এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২৫ সালের জুন পর্যন্ত।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক প্রশস্ত করতে গেলে কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের দুই পাশে কয়েক লাখ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। মেরিন ড্রাইভের তীরঘেঁষেই রয়েছে সমুদ্রসৈকতের লাল কাঁকড়া, কচ্ছপ, ডলফিন ও সাগরলতাসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাঁচটি নির্ধারিত স্থান। এছাড়া রয়েছে পাহাড় ও পাহাড়ি বন। তারা বলছেন, সড়কটি প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের সার্বিক পরিবেশ ও প্রাণীদের আবাস ক্ষতির মুখে পড়বে।

মিরসরাইয়ে চারণভূমি সংকট মহিষ কমেছে ৪৩ শতাংশ

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩, বণিক বার্তা

চারণভূমি সংকটে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অথনৈতিক অঞ্চলের সড়কে চরে বেড়াচ্ছে মহিষ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পরিত্যক্ত চরগুলোয় সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলায় কমে গেছে চারণভূমি। যার প্রভাব পড়েছে মহিষের খামারে। চারণভূমি সংকটে গত পাঁচ বছরে মহিষ পালন কমেছে ৪৩ শতাংশ।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি পাঁচ বছর পরপর উপজেলায় পশু শুমারি হয়। এতে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে মিরসরাইয়ে মহিষের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার। কিন্তু বর্তমানে মহিষ আছে চার হাজার ৭২৫টি। পাঁচ বছরে মহিষের সংখ্যা কমেছে ৪৩ শতাংশ। উপজেলার সবচেয়ে বেশি মহিষ ছিল ইছাখালী ও সাহেরখালী ইউনিয়নে। ওই দুই ইউনিয়নে হাজার হাজার একর চর থাকায় খামারিরা নির্বিঘ্নে মহিষ পালন করতেন। কিন্তু পরিত্যক্ত চরগুলোয় সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলায় কমে গেছে মহিষের চারণভূমি। তাই মহিষ পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন খামারিরা।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম ফরিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মিরসরাইয়ে গত বছর মহিষের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। মহিষের চারণভূমি কমে যাওয়ায় পালনের আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। চরাঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে মূলত মহিষের সংখ্যা কমেছে।’

ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরৎ এলাকায় মহিষ পালক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের আয়ের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পশু পালন। তার মধ্যে মহিষ অন্যতম। ২০১৪ সালে আমার দুটি মহিষ জলদস্যুরা লুট করে নিয়ে যায়। পরে আরো দুটি মহিষ কিনেছিলাম। এখন এগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। এখন মহিষ পালনের জায়গা না থাকায় চরের মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।’

আরেক মহিষ পালক বাবুল সওদাগর বলেন, ‘মহিষ পালন করে চরাঞ্চলের অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে। কিন্তু দিন দিন মহিষ পালন কমে যাচ্ছে। মহিষ পালনের জন্য অনেক বেশি জায়গা প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে চরাঞ্চলে মহিষ পালন অনেক সুবিধা। কিন্তু চরাঞ্চল কমে যাওয়া মহিষ পালন করতে চাচ্ছে না অনেকে।’

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, প্রাকৃতিক চারণভূমি কমে যাওয়ায় গবাদিপশু লালন-পালনে বিকল্প খাদ্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে খামারিদের। হয় দুই বা তিন ফসলি জমিতে ঘাসের চাষ করতে হচ্ছে অথবা বাজার থেকে কৃত্রিম খাবার কিনতে হচ্ছে। এতে গবাদি পশু লালন-পালনে ব্যয় বাড়ছে। কৃত্রিম গো-খাদ্যের ওপর চাপ পড়ায় এক দশকে গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে তিন গুণ। এ পরিস্থিতিতে মহিষ পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন খামারিরা।

সাহেরখালী ইউনিয়নের দুই ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, ‘আগে বিভিন্ন চরে গিয়ে মহিষের দুধ কিনে আনতাম। সে দুধকে দইয়ে পরিণত করে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতাম। প্রতি কেজি মহিষের দুধের দই বিক্রি হতো ৬০-৮০ টাকা। কিন্তু এখন মহিষের দুধ পাওয়া কঠিন। এখন এক কেজি দই ১২০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’

পেনশন স্কিম থেকে উন্নয়ন কাজে ঋণ নেবে সরকার: পরিকল্পনামন্ত্রী

ইন্ডিপেন্ডেন্টট টিভি অনলাইন, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

উন্নয়ন কাজের জন্য পেনশন স্কিম থেকে সরকার ঋণ নেবে। এর ফলে বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। শনিবার সকালে রাজধানীর এফডিসিতে পেনশন স্কিম বিষয়ে ‘ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট’ শিরোনামে এক ছায়া সংসদ বিতর্কে তিনি একথা বলেন।

প্রকল্প বিলম্বের খেসারত: আমদানির ভর্তুকি দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ

দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি– সার আমদানির অর্থ দিয়ে ঋণের একটি কিস্তি পরিশোধ করেছে। শুধুমাত্র প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরির কারণে– দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া উৎপাদকটি এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।

আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে কারখানাটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এরমধ্যেই প্রকল্পের জন্য জাপান থেকে নেওয়া একটি ঋণের প্রথম কিস্তির ৫২১.৩৭ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। 

সার কারখানা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জাপানি ঋণের প্রথম কিস্তি দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ১৩ সেপ্টেম্বর। আর তা দেওয়ার কথা ছিল, কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে। কিন্তু, প্রকল্প বাস্তবায়ন ৬ মাস পিছিয়ে দেওয়ায় পরিস্থিতি এ মোড় নেয়।

এই টাকা ঘোড়াশাল পেয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)-র থেকে। সরকার বিসিআইসির মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানি করে। ঘোড়াশাল প্রকল্পের দায়িত্বেও রয়েছে সংস্থাটি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শেই বিসিআইসি এ টাকা দেয় বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।  

জানা যায়, কিস্তি পরিশোধের টাকা চেয়ে বেশ কয়েকবার অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বিসিআইসি। কিন্তু, মন্ত্রণালয় তা দিতে পারেনি।

প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘টাকার ব্যবস্থা নিয়ে একটু জটিলতা তৈরি হয়েছিল, পরবর্তীতে আমরা নির্ধারিত সময়েই সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পেরেছি। সারে ভর্তুকির টাকা থেকে এই কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে।’

সুদ-মুক্ত এই ঋণ আপাতত বিসিআইসির ঘোড়াশাল প্রকল্পের দেনার সমস্যার সমাধান করলেও – এতে সার আমদানির টাকা পরিশোধে নতুন চাপের মধ্যে পড়লো সংস্থাটি। ইউরিয়া সার আমদানিতে বিসিআইসির ইতোমধ্যেই প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।    

নব-নির্মিতব্য কারখানাটির (ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার পিএলসি) বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৯.২৪ লাখ টন। নতুন এ কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে পুরোনো দুটি সার কারখানা বন্ধ করতে হয়েছে সরকারকে।

বিসিআইসির সূত্রমতে,  সর্বশেষ প্রতি কেজি ইউরিয়া আমদানিতে সরকারের খরচ হয়েছে ৭০ টাকা। তবে আমদানিকৃত এই সার কৃষক পর্যায়ে ২৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এ হিসাবে, প্রতি কেজি ইউরিয়াতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ৪৩ টাকা।

চীন ও জাপানের ঋণে কারখানা নির্মাণ

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সার কারখানাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯২০ টাকা ঋণ দিচ্ছে চীন ও জাপানের ঋণদাতারা। কারখানাটির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে ইউরিয়ার উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা ও খরচ কমানোর লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। 

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে, তুলনামূলক কঠিন শর্তে – জাপানি ও চীনা ঋণদাতাদের একটি কনসোর্টিয়াম – ব্যাংক অব টোকিও-মিতসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড এবং হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেড (এইচএসবিসি)-র থেকে ঋণ নেওয়া হয়।

সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের তারিখ ছয় মাস পিছিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হলেও, ঋণ পরিশোধের সময় পেছাতে রাজি হয়নি জাপানের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান।

ঋণ চুক্তি অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মধ্যে জাপানি ঋণদাতাটিকে মোট তিনটি কিস্তিতে এক হাজার ২৯০ কোটি টাকা দিতে হবে।

৫১৭.৫৭ কোটি টাকার দ্বিতীয় কিস্তিটি আগামী অর্থবছরের মার্চে এবং ২৫৫ কোটি টাকার তৃতীয় কিস্তি মে মাসে দিতে হবে বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তারা।

ইউরিয়া আমদানিতে প্রভাব পড়বে?

জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর বিসিআইসির বোর্ড সভায় ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

সভার বিষয়ে অবহিত কর্মকর্তারা টিবিএসকে জানান যে, আলোচনায় বিসিআইসির পরিচালকরা বলেন, নির্ধারিত তারিখের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে- তা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে। একারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে তারা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সারের ভর্তুকি বরাদ্দ থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিআইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, ‘কিস্তি দেওয়ার ফলে সার আমদানির ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে বিসিআইসি-র ওপর নতুন করে চাপ তৈরি হলো। কারণ এই টাকা দেওয়া হয়েছে সারের ভর্তুকির বরাদ্দ থেকে, যা আসে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে।’

তিনি আরো জানান যে, আপাতত আমদানি কমিয়ে আনারও সুযোগ নেই বিসিআইসির হাতে। কারণ, গ্যাস সংকট ও ঘোড়াশাল কারখানায় পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে– তাদের আওতাধীন তিনটি সার কারখানা বন্ধ করে রাখতে হয়েছে।

বিসিআইসির সূত্রমতে, সারের আমদানির অর্থ পরিশোধে সংস্থাটি এমনিতেই চাপে রয়েছে। কারণ ইতোমধ্যেই ইউরিয়া আমদানি বাবদ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বকেয়া আছে।

কৃষি ভর্তুকির তহবিল অযৌক্তিকভাবে অপসারণের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান। এ ধরনের বিচ্যুতি ঘটলে অবিলম্বে তা সংশোধন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। নাহলে দেশের সার আমদানিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।

জাহাঙ্গীর আলম খান সরকারের প্রতি দুটি সুপারিশ করেন: প্রথমত, বকেয়া বিল দ্রুত নিষ্পত্তি এবং দ্বিতীয়ত,উৎপাদন শুরুর সুবিধার্থে স্থানীয় সার কারখানাগুলোয় ধারাবাহিক গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা।

ঘোড়াশাল চালু করতে পুরোনো কারখানা বন্ধ

বিসিআইসি বর্তমানে চারটি সার কারখানা পরিচালনা করছে। এগুলো হলো- শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল), যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল), চিটাগং ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল) এবং আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল)।

তবে ২০২২ সালের নভেম্বরে চিটাগং ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, এবছরের এপ্রিলে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড এবং ৯ সেপ্টেম্বর যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড বন্ধ করা হয়। কারণ নির্মাণাধীন ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজারে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে সরকার এসব কারখানায় গ্যাস সরবরাহ হ্রাস করে।

অর্থাৎ, নতুন কারখানায় সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগে পুরাতন কারখানাগুলিকে বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে সরকারের আমদানি নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

ঘোড়াশাল কারখানা বর্তমানে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে থাকলেও, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নভেম্বরের আগে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে না।

অবশ্য প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক বলেন, ‘গ্যাসের সরবরাহ ঠিক থাকলে নতুন এ কারখানাটি অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানো সম্ভব হয়।’

৬ পণ্যের একটিরও সরকারি দর কেউ মানছে না

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

সরকার খুচরা বাজারে ছয়টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। যদিও নির্ধারিত দর কেউ মানছে না। বাজারে অভিযান চলছে। কিন্তু তাতেও নতুন দর কার্যকর করানো যাচ্ছে না।

যেমন নির্ধারিত দর অনুযায়ী প্রতি কেজি আলু খুচরা বাজারে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম ঠিক করে দেয়। এর কোনোটিই বাজারে কার্যকর হয়নি। প্রায় প্রতি মাসেই বেঁধে দেওয়া হয় ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। যদিও বাজারে দাম থাকে বেশি।

নির্ধারিত দর বনাম বাজারদর

দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে ২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে। তখন আতঙ্কের কেনাকাটা বাজারে সরবরাহ–সংকট তৈরি করেছিল। এরপর সরবরাহ–সংকট, দেশীয় পরিস্থিতিসহ নানা কারণে দর বাড়তিই ছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সরবরাহ–সংকট, মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, দেশে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর কারণে উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে পণ্যের দাম বেড়েছে।

এসব কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি উঠে গেছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ১০ সেপ্টেম্বর জানায়, গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিবিএস উদ্বেগজনক মূল্যস্ফীতির হার প্রকাশের চার দিন পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বৈঠক করে তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়।

দাম ঠিক করে দেওয়া পণ্যের একটি আলু। বিগত কয়েক বছর আলু নিয়ে এমন পরিস্থিতি হয়নি। সাধারণত মৌসুমের শুরুতে আলু প্রতি কেজি ১৫ টাকা এবং শেষ দিকে নভেম্বর-ডিসেম্বরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। এবার সেপ্টেম্বরেই আলুর কেজি ৫৫ টাকায় উঠে যায়। এমন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি আলুর দাম ঠিক করে দেওয়া হয় ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গত শনিবার মুন্সিগঞ্জে হিমাগার পরিদর্শনে গিয়ে বলেছিলেন, হিমাগার থেকে রসিদের মাধ্যমে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে হবে। গতকাল সকালে দুটি হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত দরে আলু বিক্রি হচ্ছে না। রিভারভিউ কোল্ড স্টোরেজ নামের একটি হিমাগার থেকে মূল্য নির্ধারণ ছাড়াই আলু চট্টগ্রামের আড়তে পাঠানোর কাজ চলছিল।

ঢাকার কারওয়ান বাজার, নতুন বাজার ও গুদারাঘাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। এ দর তিন দিন আগের তুলনায় কেজিতে প্রায় ৫ টাকা কম। তবে নির্ধারিত দরের চেয়ে ১০ থেকে ১৪ টাকা বেশি।

প্রতি হালি ডিমের দর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৮ টাকা, যা বাজারদরের চেয়ে সামান্য কম। সেই দরও কার্যকর হয়নি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তালিকা বলছে, প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে।

দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা নির্ধারিত দরের চেয়ে ২১ থেকে ২৫ টাকা বেশি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, যা কার্যকর হওয়ার কথা গতকাল থেকে। তবে এখনো নতুন দামের তেল বাজারে আসেনি। অবশ্য ভোজ্যতেল বেশির ভাগ সময় নির্ধারিত দরে বিক্রি হয়। কিন্তু চিনিতে দর মানা হয় না। এখন প্রতি কেজি খোলা চিনির নির্ধারিত দর ১৩০ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে।

সরকার যদি তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের নির্ধারিত দর কার্যকর করতে পারে, তাহলে একটি পরিবারে মোটামুটি ২৫০ টাকা সাশ্রয় হবে এক মাসে। কিন্তু এই টাকার প্রায় দ্বিগুণ চলে যাবে রান্নার গ্যাসের বাড়তি দামের পেছনে।

বিইআরসি চলতি মাসের জন্য ১২ কেজির প্রতিটি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ঠিক করেছে ১ হাজার ২৮৪ টাকা, কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। পাঁচজনের একটি পরিবারে মাসে দুটি সিলিন্ডার লাগে। এতে বাড়তি দিতে হয় ১৩২ থেকে ৬৩২ টাকা। ঢাকায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাম নেওয়া হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে রাজধানীর পরিবারগুলোর বাড়তি ব্যয় হয় মাসে ৪৩২ টাকা।

সর্বজনীন পেনশন

এক মাসে গ্রাহক ১৩ হাজার, সাড়া নেই প্রবাস কর্মসূচিতে

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করে গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ১২ হাজার ৮৮৯ জন বাংলাদেশি চাঁদা পরিশোধ করেছেন। গত ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পেনশন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর এক মাসে নতুন এই কর্মসূচির প্রতি যে সাড়া পাওয়া গেছে, বিশ্লেষকেরা তাকে ‘যথেষ্ট নয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।

বহুল প্রতীক্ষিত এ কর্মসূচির উদ্বোধনের দিন থেকেই সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সেদিনই জাতীয় পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে অন্তত ৮ হাজার মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছিলেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে সেদিন চাঁদা পরিশোধ করেন।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে অনেকে নিবন্ধন করলেও চাঁদা পরিশোধকারীদের সংখ্যা গতকাল সকাল পর্যন্ত ছিল ১২ হাজার ৮৮৯ জন। কর্মকর্তারা বলেন, যাঁরা কিস্তির চাঁদা পরিশোধ করেছেন, কেবল তাঁরাই পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন বা এনরোলমেন্ট করেছেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

গত এক মাসে পেনশন স্কিমে সব মিলিয়ে ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৭১ হাজার টাকার কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

৫,৬০০ কোটি টাকার নির্মাণ ব্যয় ১০,৬৯০ কোটিতে

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শেয়ার বিজ

চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। জিটুজি ভিত্তিতে এটি নির্মাণ করছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। এজন্য উচ্চ সুদে ঋণ দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদিত প্রকল্পটি আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তবে এরই মধ্যে কয়েক দফা বেড়েছে এর নির্মাণব্যয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে টানেলটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে গত জানুয়ারিতে সর্বশেষ হিসাবে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অর্থাৎ টানেল নির্মাণব্যয় বেড়েছে পাঁচ হাজার ৮৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা বা ৯০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। টোল দিয়ে চলতে হবে এ টানেলে।

সেতু বিভাগের সূত্রমতে, দেশের প্রথম টানেল নির্মাণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। সিসিসিসি ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হংকংয়ের ওভিই অরূপ কনস্ট্রাকশন যৌথভাবে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এর ভিত্তিতেই এর নির্মাণব্যয় চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তখন টানেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে অর্থায়নের নিশ্চয়তা না থাকায় সে সময় ডিপিপি ফেরত দেয় পরিকল্পনা কমিশন। পরে টানেলটি নির্মাণে সিসিসিসির সঙ্গে নির্মাণ চুক্তি সই করে সেতু বিভাগ।

সিসিসিসির প্রস্তাবনার ভিত্তিতে ২০১৫ সালে জুনে প্রকল্পটি ব্যয় ধরা হয় সাত হাজার ৭৮৪ কোটি ছয় লাখ টাকা। তবে সিসিসিসির কিছু প্রস্তাবে আপত্তি তুলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। এরপরও নির্মাণব্যয় না কমে উল্টো বেড়ে দাঁড়ায় আট হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওই ব্যয়েই প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়।

এদিকে ঋণচুক্তি সম্পাদনে দেরি হওয়ায় টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় দুই বছর পর। তবে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি, ভ্যাট ও কর পরিশোধের হার বৃদ্ধি, সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি, পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তর ইত্যাদি খাতে ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে ২০২০ সালে টানেলটি নির্মাণব্যয় বেড়ে যায়। সে সময় এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

ওই সময় প্রকল্পটিতে পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা ছিল চীনের এক্সিম ব্যাংকের। বাকি তিন হাজার ৯৬৭ কোটি ২১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করতে হবে। দুই শতাংশ সুদে ২০ বছরে চীনের ঋণ শোধ করতে হবে। তবে পরবর্তীতে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নির্মাণ শুরুর পরও টানেল ব্যয় স্থির থাকেনি। এর মধ্যে একবার জরুরি ভিত্তিতে ৪৯৪ কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব বিশেষ অনুমোদন দেয়া হয়। তবে নির্মাণব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ প্রকল্প ব্যয়ের পাঁচ শতাংশের মধ্যে থাকায় তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) পাঠানো হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (অবকাঠামো) এ প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

অন্যদিকে, গত জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের ব্যয় আরেক দফা বাড়ানো হয়। সে সময় এ নির্মাণব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন চার হাজার ৬১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ ছয় হাজার ৭০ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়Ñপ্রাইজ কন্টিনজেন্সি খাতে প্রদত্ত অতিরিক্ত অর্থ রাখা, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি, প্রকল্পের কার্যক্রমের পরিধি পরিবর্তন, সার্ভিস এরিয়ার তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং গৃহসজ্জা সামগ্রী ক্রয়, নতুন অঙ্গ সংযোজন/বিয়োজন, ভ্যাট ও আইটি বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি।

এরই মধ্যে কর্ণফুলীর কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে উদ্বোধনের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এছাড়া গত জুলাইয়ে টানেলটির টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেল পারাপারে সর্বনি¤œ

 টোল ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাইভেটকার, জিপ ও পিকআপের জন্য। আর সর্বোচ্চ টোল দিতে হবে ট্রাক ও ট্রেইলারকে। ট্রেইলারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত টোলের সঙ্গে প্রতিটি এক্সেলের জন্য আরও ২০০ টাকা করে বাড়তি দিতে হবে। তবে টানেলে বাইক চলাচলের অনুমতি নেই।

ব্যাংক ঋণ

বড়রা লুট করলেও কৃষকরা ফেরত দিচ্ছেন

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, বণিক বার্তা

দেশের ব্যাংক ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই বড় শিল্প, ব্যবসা ও সেবা খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি প্রায় একই। ব্যাংকের খেলাপ হওয়া ঋণের সিংহভাগই বড় গ্রাহকদের নেয়া। খেলাপি এসব বড় গ্রাহক ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিলেও আইনি প্রক্রিয়ারও বাইরে থেকে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেশের কৃষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের কৃষকরা ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিচ্ছেন, সুদসহ তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করছেন।

দেশের ব্যাংকগুলো থেকে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) কৃষকরা ৩২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। বিপরীতে তারা পরিশোধ করেছেন ৩৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর আগেও কৃষকরা ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের চেয়ে বেশি পরিশোধ করেছেন। এমনকি কভিড-১৯ সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যেও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের চেয়ে আদায় হয়েছে বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। ওই বছর কৃষকরা ২৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করেছেন।

যদিও ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণ করেছিল ৭২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় করতে পেরেছিল ৬৪ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের শিল্প ঋণ বিতরণ ও আদায়ের চূড়ান্ত হিসাব এখনো প্রকাশ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরেও এ খাতে বিতরণের চেয়ে আদায় কম হয়েছে। এর আগের পাঁচ অর্থবছরের তথ্য পর্যালোচনায়ও দেখা গেছে, প্রতিবারই ব্যাংকগুলো শিল্প খাতে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে, আদায় হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫২ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা ছিল কৃষি খাতে। সে হিসাবে ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে কৃষকরা পেয়েছেন মাত্র ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। কৃষি খাতে বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৬ শতাংশ এখন খেলাপি। যদিও দেশের ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের খাতভিত্তিক গড় খেলাপির হার ৯ শতাংশ।

৩ মাসে কোটি টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৩৩৬২

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন- এই তিন মাসে ১ কোটি টাকার বেশি জমা আছে এমন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৩৬২টি।

আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি জমা থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২টি। জুন শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি অ্যাকাউন্টে মোট ৭ লাখ ৩১ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা জমা ছিল। এছাড়া, মার্চ শেষে ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট জমা ছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪৩ শতাংশ এসব ধনীদের। তিন মাস আগে যা ছিল ৩২ দশমিক ২৮ শতাংশ।

বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডে ২৭.৫ শতাংশ কর আরোপ

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

চলতি অর্থবছর থেকে বেসরকারি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মচারী কল্যাণ তহবিল থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। শুধু তাই নয়, এই আয়ের ওপর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

২০২৩ সালের আইনে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর কর আরোপের এই বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশের তহবিলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক এবং করছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে।

৯ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বন্ধকি সম্পত্তির বুদবুদের ওপর ব্যাংক

সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, বণিক বার্তা

ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সহায়ক জামানত হিসেবে এখনো জমি বা ফ্ল্যাটের মতো স্থাবর সম্পত্তিনির্ভর দেশের ব্যাংক খাত। যদিও ব্যাংকের কাছে বন্ধক থাকা সম্পদ বিক্রি করেও খেলাপি ঋণ আদায় সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, জামানতের সম্পদ বিক্রি করে দেশের ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের মাত্র ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ আদায় করতে পারছে। সে অনুযায়ী, জামানত থাকার পরও অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে ৮৭ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ। জামানত বিক্রি করে অবলোপন করা ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি আরো খারাপ।

জামানতের সম্পদ বিক্রি করে ঋণ আদায় সম্ভব না হলেও ব্যাংকগুলো জমি-বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে। এক যুগ আগে ২০১০ সালে জমি বন্ধকের বিপরীতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময় বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে জমি বন্ধক রেখে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ২০ হাজার ৯০৪ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। সে অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৬৩ দশমিক ৬৮ শতাংশই গেছে জমি-ফ্ল্যাট-বাড়িসহ রিয়েল এস্টেট সম্পত্তি বন্ধকের বিপরীতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঋণের নামে অর্থ লোপাটের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সংগতি রেখেই জমি বন্ধক রেখে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করা অপেক্ষাকৃত সহজ। সরকারি খাসজমি, বিতর্কিত মালিকানার জমি বন্ধক রেখেও ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ বের করে নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা সহযোগীর ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালীদের বন্ধকি জমির মূল্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। এ কারণে জামানতের সম্পদ বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় সম্ভব হচ্ছে না।

এক মাসে রিজার্ভ কমলো ২ বিলিয়ন ডলার

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বাংলা ট্রিবিউন

রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। গত এক মাসের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার (১৯৮ কোটি) বা প্রায় ২ বিলিয়ন কমে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭৩৩ কোটি ডলার। এর আগে গত ২৩ আগস্ট গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯৩২ কোটি ডলার।

সংকটের মধ্যে সরকারের ‘গাড়িবিলাস’

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

করোনাকালে দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়েছিল। এখন চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধপরবর্তী সংকট। এই সংকটে সরকার মিতব্যয়িতা, অর্থাৎ কৃচ্ছ্রসাধনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই চলছে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গাড়ি কেনা।

সরকারি কর্মচারীদের সরকার সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি দেয়। এর বাইরে নতুন করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য গাড়ি কেনা হচ্ছে। ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের জন্য গাড়ি কেনার প্রস্তাব জমা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। প্রকৌশলী ও পুলিশের গাড়ি কেনার প্রস্তাবও জমা আছে।

সরকার গাড়ি কেনার ব্যয়সীমাও সম্প্রতি বাড়িয়েছে। এখন ৯৪ লাখ টাকার বদলে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি কেনা যাবে।

যদিও সরকার টাকার সংকটে রয়েছে। কয়েকটি খাতে ভর্তুকির অর্থ যথাসময়ে দেওয়া হচ্ছে না। জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হয়েছে। সারে ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়ানো হয়েছে দুই দফা। বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো কিছু খাদ্যপণ্যে শুল্কছাড়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি দপ্তরে সব ধরনের যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে বলে গত জুলাইয়ে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে বলা হয়েছিল, ১০ বছরের পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে।

গাড়ি কেনা বন্ধের কথা জানিয়ে ২০২০ সালের জুলাইয়ে এবং ২০২২ সালের জুলাইয়ে দুটি পরিপত্র জারি করেছিল অর্থ বিভাগ।

নতুন গাড়ি

ডিসি ও ইউএনওদের জন্য ২৬১টি নতুন গাড়ি কিনতে ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবে গত ২৭ আগস্ট অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ৬৪ জেলার মধ্যে ৬১ জেলার ডিসিরা পাবেন নতুন গাড়ি। আর ইউএনওদের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০টি গাড়ি। শর্ত শিথিল করে তাঁদের ২৭০০ সিসির (ইঞ্জিনক্ষমতা) গাড়ি দেওয়া হচ্ছে, যা গ্রেড-১ ও ২ (সচিব ও অতিরিক্ত সচিব) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের প্রাধিকার।

১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের জন্য নতুন গাড়ি কিনতে ২০ কোটি টাকা চেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

গাড়ি চান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলীরাও। তাঁরা চান ৪৩৩টি গাড়ি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গত ২৭ আগস্টের একটি বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ওই প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়নি। তাই রাজস্ব বাজেট থেকে ক্রমান্বয়ে কেনা হবে।

পুলিশ গত বছর সেপ্টেম্বরে গাড়িসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কিনতে একটি প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে গাড়ি কিনতে চাওয়া হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা।

মুরগির বাচ্চার দাম ঊর্ধ্বমুখী, ডিম ও মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

বাজারে এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় মুরগির বাচ্চা কম উৎপাদন হওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে যা ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। এদিকে সরকার আইন করে এক দিনের মুরগির বাচ্চার আমদানি বন্ধ করতে যাচ্ছে। ফলে এ বাজার গুটিকয়েক কোম্পানির হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রান্তিক খামারিদের।

খামারি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাস আগে বাজারে একদিন বয়সী ব্রয়লার মুরগির একটি বাচ্চার দাম ছিল ২৭ থেকে ৩৫ টাকা। এখন যা ৪৯ থেকে ৫০ টাকা। প্রতিটি বাচ্চার দাম কমবেশি ২০ টাকা বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচে তা যোগ হবে। খামারিরা মুরগি বিক্রির সময় এই অতিরিক্ত দাম রেখে দিতে চাইবেন।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস নেতিবাচকে নামিয়ে আনল ফিচ

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩, বণিক বার্তা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাসকে স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচকে নামিয়ে এনেছে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা ফিচ রেটিংস। তবে ঋণমানের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা বা লং টার্ম ফরেন কারেন্সি ইস্যুয়ার ডিফল্ট রেটিং (আইডিআর) ‘‌বিবি মাইনাসে’ বহাল রেখেছে সংস্থাটি।

অর্থনৈতিক পূর্বাভাস স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচকে আনার বড় কারণ হিসেবে ফিচের গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে রিজার্ভের পতন ও ডলার সংকটকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে নেয়া নীতিগত পদক্ষেপ এবং বিদেশী আনুষ্ঠানিক ঋণদাতাদের ক্রমাগত সহায়তাও রিজার্ভের পতন ও স্থানীয় বাজারে ডলার সংকট প্রশমন করতে পারেনি।

ফিচের ভাষ্যমতে, অর্থনীতিতে দেশের বাইরে ঘটা ঘটনাবলির অভিঘাত প্রশমনের মতো উপাদান (বাফার) কমে এসেছে। এসব বাফার দুর্বল হয়ে পড়ায় অর্থনীতিতে বহিঃস্থ অভিঘাত মোকাবেলায় বেশ নাজুক অবস্থানে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের বিদেশী ঋণ প্রোফাইল এখনো নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও এখনো অনুকূলে। আবার সরকারের ঋণ সমতুল্য অনেক দেশের তুলনায় বেশ কম। এ কারণে ঋণমান এখনো বিবি মাইনাসে বহাল রাখা হয়েছে। যদিও এসব ইতিবাচক বিষয়ের বিপরীতে সরকারের রাজস্ব আহরণ ও মাথাপিছু আয় কম হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্বলতা এবং সুশাসনের সূচকগুলোর ঘাটতির মতো বিষয়গুলোরও মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

দেশে রাশিয়ান ওলিগার্কের মতো শ্রেণি তৈরি হয়েছে

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মানবজমিন

দেশে রাশিয়ান ওলিগার্কের মতো শ্রেণি তৈরি হয়েছে। যারা সম্পদশীল ও রাজনৈতিকভাবে খুবই প্রভাবশালী। যার ফলে আয় বৈষম্য খুব দ্রুতই বাড়ছে। আর এই বৈষম্য বাড়ার পেছনে রয়েছে মূলত ৪টি কারণ। সেগুলো হলো- ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পাওয়া, রাজস্ব আদায় অগ্রগতি না হওয়া, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে স্বল্প বরাদ্দ দেয়া এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি থাকা। এদিকে গত এক যুগে দেশে ধনী-গরিব বৈষম্য বেড়েছে ৮০ গুণ। দেশের উন্নয়ন হলেও এর সুফল পৌঁছায়নি সবার কাছে, যা আগামীতে টেকসই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।

গতকাল রাজধানীর কেআইবিতে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন আখ্যান ও সমান্তরাল বাস্তবতা: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক প্লাটফর্মের সংলাপ ও জনপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব বলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

দুবাইয়ে ১১ হাজার কোম্পানি বাংলাদেশিদের, ছয় মাসে বেড়েছে ৪৭ শতাংশ

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে। দেশটির একটি রাজ্যে নিবন্ধিত কোম্পানির যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, তাতে এই চিত্র দেখা গেছে। চলতি বছরের কেবল প্রথমার্ধেই (জানুয়ারি থেকে জুন) দুবাই চেম্বার অব কমার্সে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সদস্যপদ নেওয়ার হার ৪৭ শতাংশ বেড়েছে।

ছয় মাসে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন ১ হাজার ৪৪টি কোম্পানি দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ নিয়েছে। তাতে দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ পাওয়া বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কোম্পানির মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭৫টি।

১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দুবাই চেম্বার অব কমার্স চলতি মাসে নিজেদের ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করে। এই চেম্বারের সাড়ে তিন লাখের বেশি সদস্য কোম্পানি চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৩ হাজার ৭০০ কোটি দিরহাম বা ৩ হাজার ৭২৯ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি ও পুনরায় রপ্তানি করেছে বলে ওয়েবসাইটে তথ্য দেওয়া হয়েছে।

টেলিটকে বিনিয়োগ করতে চায় বসুন্ধরা গ্রুপ

সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

খুঁড়িয়ে চলা রাষ্ট্রায়ত্ব সেল ফোন অপারেটর টেলিটকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। কৌশলগত বিনিয়োগকারীর হওয়ার এই প্রস্তাবটি যাচাই করে দেখছে টেলিটক। এটি এমন একটি পদক্ষেপ যা দেশের মোবাইল ফোন ব্যবসার চিত্র পাল্টে দিতে পারে।

১৯ বছরের পথচলায় প্রথম দুই বছর ছাড়া বাকি সব বছরেই লোকসানে থাকা টেলিটকের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে জমা দেওয়া এই প্রস্তাবে নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, গ্রাহক পরিসেবা বৃদ্ধি এবং টেলিটকের সিস্টেম আপগ্রেড করার একটি রূপরেখা দেওয়া হয়েছে বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের পক্ষ থেকে।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নির্দেশে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২৩ দশমিক ১ কোটি টাকা অর্থাৎ ২৭ দশমিক ২ শতাংশ সার্বিক লোকসানে থাকা টেলিটক এই প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে।

কঠিন শর্তের দ্বিপাক্ষিক ঋণ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধকে কঠিন করে তুলতে যাচ্ছে

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

আগামী বছরগুলোতে ঋণ পরিশোধের বোঝা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের ব্যালান্স অভ পেমেন্টের ওপর চাপ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ নমনীয় শর্তের বহুপাক্ষিক ঋণের চেয়ে কঠিন শর্তের দ্বিপাক্ষিক ঋণ নেওয়া দ্রুত বাড়ছে।

দ্বিপাক্ষিক ঋণ সাধারণত বহুপাক্ষিক ঋণের তুলনায় কম নমনীয় হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ঋণের শর্তাবলি আলোচনার বা প্রয়োজনে পেমেন্ট পুনর্নির্ধারণের সুযোগ কম পেতে পারে।

এ ধরনের ঋণে সুবিধাজনক শর্ত সাধারণত বহুপাক্ষিক ঋণের চেয়ে কম থাকে। দ্বিপাক্ষিক ঋণের সুদের হার বেশি হয়, সেইসঙ্গে গ্রেস পিরিয়ডও পাওয়া যায় কম এবং এ ঋণের শর্তগুলোও আরও কঠিন হয়ে থাকে।

দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতারা প্রায়ই প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়ার ওপর শর্তারোপ করে, যার জন্য ঋণগ্রহীতাদের নির্দিষ্ট দেশ বা কোম্পানি থেকে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হয়। অন্যদিকে বহুপাক্ষিক ঋণদাতারা সাধারণত উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেয়, ফলে ঋণগ্রহীতাও সুবিধামতো ঠিকাদার বাছাই করতে পারে।

তাছাড়া দ্বিপাক্ষিক ঋণে উপকরণ কেনার ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্তও আরোপ করা হয়। যেমন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ঋণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে নির্মাণসামগ্রীর ৮৫ শতাংশ কিনতে হবে ভারত থেকে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট বিদেশি ঋণে বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণের হিস্যা ছিল ৫৯ শতাংশ; ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বহুপাক্ষিক সংস্থার ঋণের অংশ ছিল ৬৯ শতাংশ। এই সময়ে বাংলাদেশের মোট ঋণে দ্বিপাক্ষিক ঋণের হিস্যা ২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪১ শতাংশ হয়েছে।

এছাড়া, তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের দায় বেড়ে হয়েছে ৬২.৩১ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছরে মোট বৈদেশিক ঋণের দায় বেড়েছে ৬২ শতাংশ।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় হওয়ায় ঋণ-দায় বাড়ছে। মেগা প্রকল্প ছাড়াও কোভিড পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার যে বাজেট সহায়তা নিয়েছে, তার কারণেও বৈদেশিক ঋণের দায় বেড়েছে বলে জানান তারা।

বৈদেশিক ঋণের দায় বাড়ার কারণে ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়বে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ২.৬৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে। বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সরকার যে ঋণ নিয়েছে, সেইসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে ইআরডি।

ইআরডির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ বেড়ে ৩.৫৬ বিলিয়ন ডলার হবে। আর ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে যাথাক্রমে ৪.২১ বিলিয়ন ও ৪.৭২ বিলিয়ন ডলার।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এসেছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ঋণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে, এই পরিবর্তন দেশের ঋণ নেওয়ার খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য দেশের ওপর আরও চাপ তৈরি করতে পারে।

ইআরডির তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট বৈদেশিক ঋণে বিশ্বব্যাংকের অংশ কমে হয়েছে ৩১.৩৪ শতাংশ, আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩২.৬০ শতাংশ। যদিও এ সময়ে বিশ্ব্যাংকের ঋণের দায় ১৮.১২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৯.৫৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। মাত্র দুই বছর আগে, ২০২০-২১ অর্থবছরে, বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বকেয়া ঋণে বিশ্বব্যাংকের অংশ ছিল ৩৬ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের মতোই বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের দায়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) হিস্যাও কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে মোট বৈদেশিক ঋণের দায়ে এডিবির অংশ ছিল ২৩.৮৮ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২২.৬৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের দায়ে জাপানের অংশ ১৭.৬৫ শতাংশ, রাশিয়ার অংশ ৯.৪৭ শতাংশ এবং চীনের অংশ ৮.৬২ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া মোট ঋণের দায়ে ২০১৬ সালে চীনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) অংশ বেড়ে ২.৪ শতাংশ হয়েছে।

ইআরডির তথ্য আরও বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সরকারের বৈদেশিক ঋণের দায় বেড়ে হয়েছে ৬২.৩১ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছর শেষে বৈদেশিক ঋণের দায় ছিল ৫৫.৬০ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ অর্থবছর আগে বৈদেশিক ঋণের দায় ছিল ৩৮.৪৭৫ বিলিয়ন ডলার।

প্রবাসী আয়ে বড় ধস, ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

০১ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো

দেশের চলমান ডলার–সংকটের মধ্যে বড় ধরনের দুঃসংবাদ নিয়ে এল প্রবাসী আয়ের তথ্য। ডলার–সংকট কাটাতে অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যখন প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বাড়িয়ে ডলার–সংকট মোকাবিলার কথা বলছেন, তখনই প্রবাসী আয়ে এ দুঃসংবাদ মিলল। গত ৪১ মাসে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় দেশে এসেছে সেপ্টেম্বর মাসে। প্রবাসী আয়সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের শেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশে এক-তৃতীয়াংশ মানুষের নেই মানসম্মত বাসস্থান

০২ অক্টোবর ২০২৩, ইনডিপেনডেন্ট অনলাইন

নিজের কোনো জমি নেই- দেশে এমন মানুষের সংখ্যা ৯১ লাখ। আর মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ (এক-তৃতীয়াংশ) মানুষের নেই মানসম্মত আবাস। এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বসতি দিবস। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে কেউ ভূমিহীন থাকবে না- এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭ পরিবারকে জমিসহ নতুন ঘর দিয়েছে সরকার।

রাজধানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দা ঝর্না বেগম। পরিবারের পাঁচ সদস্যের বসবাস এই ঘরে। পশুপাখি এবং মানুষের একসঙ্গে বসবাস। রান্নাও একই ঘরে।

ঝর্না বেগম বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। চলফেরা করতে সমস্যা হয়। একটু খোলামেলা পরিবেশ পেলে ভালো হতো।’

এমন গল্প রাজধানীর প্রতিটি বস্তিতে। কারও আবার নেই এক টুকরো জমিও। মানসম্মত আবাস তাদের কাছে কেবলই স্বপ্ন। রাজধানীতে অনেকের আবার সেই সামর্থ্যটুকুও নেই, থাকতে হচ্ছে ফুটপাতে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা জরিপের তথ্য বলছে, নিজের কোনো জমি নেই, দেশে এমন মানুষের সংখ্যা ৯১ লাখ। আরেক পরিসংখ্যান বলছে, মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ মানুষের নেই মানসম্মত বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাস।

ডলারের সব উৎসে ভাটা

০৩ অক্টোবর ২৩, সমকাল

বিদেশি ঋণের ছাড়, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই, রপ্তানি কিংবা প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স)– কোনো উৎস থেকেই নেই সুখবর। ডলারের সব উৎসে চলছে ভাটার টান। অন্যদিকে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হচ্ছে আগের চেয়ে ঢের। এ ঋণে সুদের হারও এখন বেশি। একে তো ডলার আসছে কম, আবার পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। এ দ্বিমুখী পরিস্থিতি রিজার্ভ সংকটের চাপকে আরও অসহনীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ১০ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পদ্ধতিতে এ হিসাব করা হয়েছে।

আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলে না

০৪ অক্টোবর ২৩, সমকাল

ঈশ্বরদী পৌর এলাকার সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের শাবানা খাতুন। মাসিক ১১ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন ঈশ্বরদী ইপিজেডের একটি কারখানায়। সেই হিসাবে তাঁর প্রতিদিনের আয় ৩৬৬ টাকা। একই গ্রামের গৃহবধূ টিয়া খাতুন মাসিক ৯ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন আরেক প্রতিষ্ঠানে। তাঁর প্রতিদিনের আয় ৩০০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এ টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

এ দুই শ্রমিক জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের তুলনায় বেতন কম। যাতায়াত, চাল, ডাল, তেল, লবণ, সবজিসহ অনেক জিনিসপত্র কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে। অনেকটা নুন আনতে পানতা ফোরানোর মতো অবস্থা। এক কেজি বেগুন ৬০ টাকা। কচুর লতি ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অন্য সবজিও ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একটি ডিমও এখন ১৩ টাকা। প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের দাম নাগালের বাইরে। সপ্তাহে একদিন ডিম রান্না করেন। তাও সন্তানদের পাতে একটির পরিবর্তে অর্ধেক দিতে হচ্ছে।

ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় শাবানা ও টিয়ার মতো প্রায় ১৩ হাজার নারী শ্রমিক রয়েছেন। বড় অংশই ঈশ্বরদীর বাসিন্দা। পাশের লালপুর, বাঘা, চারঘাট, বড়াইগ্রাম, আটঘরিয়া, চাটমোহর, টেবুনিয়া, পাবনা, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, দৌলতপুরের শ্রমিকও আছেন। শ্রমিকরা বলছেন, সামান্য আয়ে প্রতিদিন ভর্তা, সবজি কিংবা ডাল-ভাত ঠিকমতো জোগাড় করতে পারছেন না। পরিবারের সদস্যদের জন্য মাছ-মাংস কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সন্তানরা মাছ কিংবা মাংস দিয়ে ভাত খেতে চাইলে লজ্জায় মুখ লুকাতে হয়। দ্রব্যমূল্য অনুযায়ী বেতন বাড়ানো হয়নি। কথা বললে চাকরি হারানোর ভয় থাকে। বাধ্য হয়ে এ বেতনেই কাজ করছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, বেপজার নিয়ম অনুসরণ করেই শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়।

ইপিজেড কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ৪১টি কারখানার মধ্যে চালু আছে ২০টি। চালুর অপেক্ষায় ও নির্মাণাধীন রয়েছে ২১টি। শ্রমিক-কর্মচারী আছে প্রায় ১৮ হাজার। এর মধ্যে নারী শ্রমিক ১২ হাজার ২০০ জন। বিদেশি ৭৬ জন কর্মরত রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল ৮টায় কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। সে কারণে নারীদের ঘুম থেকে উঠতে হয় ভোরে। রান্না ও সংসারের কাজ সেরে কারখানার উদ্দেশে রওনা হন ৬টার মধ্যে। রাতে বাড়ি ফেরেন। কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পর ফের শুরু হয় কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি।

জানা গেছে, সাধারণ নারী শ্রমিকদের মাসে গড়ে বেতন ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা। তাদের প্রতিদিনের মজুরি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তবে অভিজ্ঞ কিছু শ্রমিকের বেতন বেশি। টিয়া খাতুন জানান, দক্ষ শ্রমিক হলেও প্রতিষ্ঠান বদল করায় তাঁর বেতন ১০ হাজার থেকে কমিয়ে ৯ হাজার টাকা করা হয়েছে। নারী শ্রমিকরা বলছেন, দিনে ৫০০-৬০০ টাকা না হলে ন্যূনতম বাজার খরচ হয় না। আগে কর্মস্থলে যাতায়াতে ২০-৩০ টাকা খরচ হতো। এখন বেড়ে হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। বিদ্যুৎ বিল, জ্বালানি, পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, ওষুধ কেনা, কাপড়-চোপড়সহ অনেক ধরনের খরচ রয়েছে। সামান্য আয়ে সব জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মুদি দোকান থেকে অধিকাংশ শ্রমিকই বাকিতে জিনিসপত্র কেনেন। বেতন পেলে দেনা শোধ করে আবার বাকিতে পণ্য নেওয়া শুরু করেন। তবে শাক-সবজি, ডিম কিংবা পাঙাশ-সিলভার কার্প মাছ কেউ বাকিতে দেয় না। এতে কষ্ট বাড়ে জানিয়ে নারী শ্রমিকরা জানান, মুদি দোকানে হিসাবের খাতায় বাকির পরিমাণ বাড়ছে। অনেকের খেয়ে না খেয়ে চলতে হচ্ছে। মাসের শুরুতে কিছুদিন স্বাচ্ছন্দ্যে চলে। বাকি দিনগুলো কষ্টে চলতে হয়।

দুঃসহ জীবন

৫ অক্টোবর ২০২৩, মানবজমিন

তিন বছর বয়সী নুহা। মাছ-মাংস ছাড়া কিছুই খেতে চায় না। প্লেটের পাশে ডিম দেখলে বেজায় খুশি। মায়ের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে। কিন্তু তিন-চার মাস ধরে বড্ড অভিমান তার। মাছ-মাংসের দেখা নেই। খাবারের প্লেট দেখলেই এদিকে-সেদিকে ছোটাছুটি করে। কখনো লুকিয়ে থাকে টেবিলের নিচে আবার কখনো দেয়ালের পাশে। মা শিরিনা বেগম সন্তানের মুখে খাবার দিলেই কান্নাকাটি করে। শাক-সবজি দিয়ে খেতে চায় না।

নুহা ঠিকমতো খাবার না খাওয়ায় তার অসহায় বাবা-মাও চিন্তিত। নুহার বাবা সিহাব বলেন, তিন-চার মাস ধরে মাছ-মাংস আগের মতো কিনতে পারি না। কয়েকদিন আগেও বাচ্চার পাতে ডিম দিতাম। কিন্তু সেটিরও দাম বাড়ছে। মেয়েটি শাক-সবজি দিয়ে ভাত খেতে চায় না। আগে প্লেটে মাছ-মাংস দেখলে নিজেই দৌড়ে আসতো খেতে। শাক-সবজি খেতে খেতে ও নিজেই এখন বিরক্ত। আয় নেই অথচ দিন দিন সব জিনিসের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে।

নুহার মা শিরিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী একটি হোটেলের কর্মচারী। মাস শেষে ১০ হাজার টাকা বেতন পান। তা থেকে ঘর ভাড়া ৬ হাজার টাকা দিতে হয়। মেয়েটার জন্য কোনো বাড়তি খাবারও কিনতে পারি না। গত তিন মাস ধরে আমি একটা বাসায় কাজ করি। সেখান থেকে সারাদিন কাজ করে মাসে ৪ হাজার টাকা পাই। এই দু’জনের টাকা দিয়ে কিছুই হয় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম শুধু বাড়তি নয়, একদম নাগালের বাইরে চলে গেছে। সামনের দিনগুলো কীভাবে যাবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

শুধু নুহার পরিবার নয়, কম আয় করেন এমন পরিবারের মানুষেরা দুঃসহ সময় পার করছেন নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে। নানা প্রয়োজনে যারা শহরে মেসে থাকেন তাদেরও বেড়েছে ভোগান্তি। শুধু কম আয়ের মানুষই না মধ্যবিত্ত ও মধ্যম আয়ের মানুষদেরও নাভিশ্বাস অবস্থা নিত্যপণ্যের উচ্চ দামের কারণে। প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা থেমে নেই। কোনো না কোনো অজুহাতে বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম।  এ কারণে কম বা সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে।

সারাদিন যা আয় করেন তা দিয়ে সংসারের খরচ চালান হেলাল উদ্দিন। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। কিছুটা বয়সও হয়েছে তার। তিনি বলেন, দিনের আয় দিনে খাই। কখনো ১ হাজার, কখনো ৭০০-১০০০ টাকা আয় হয়। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার সংসার। ঢাকার রাজাবাজারে থাকি। ঘর ভাড়া দিতে হয় ৭ হাজার টাকা। যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে আলু ভর্তা দিয়েই খেতে পারি। বাজার করতে গেলে পকেটে টাকা থাকে না। কী দিয়ে কী কিনবো সব কিছুর দামই তো বাড়তি। এই আয়ের টাকা দিয়ে মাছ-মাংস কেনা যায় না, এগুলো আমরা কল্পনাও করতে পারি না। শুধু খাওয়া ছাড়া কি সংসারে আর কোনো খরচ নেই? ওষুধপাতিও কিনতে হয়। ছোট সন্তানদের অনেক বাড়তি কিছুর চাহিদা থাকে কিন্তু মিটাতে পারি না। মেজো মেয়েটা কয়েকদিন মাংস খেতে চাচ্ছে কিন্তু দিতে পারছি না। অল্পকিছু মাংস কিনতে গেলেও পকেট থেকে ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হয়ে যায়।

কাওরান বাজারের মদিনা হোটেলের ম্যানেজার রাজ বলেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে আমাদের লসে ব্যবসা করতে হচ্ছে। বাজারে গেলে কোনোকিছু কম দামে পাওয়া যায় না। দাম কমার আশায় হোটেল চালিয়ে রাখতে হচ্ছে। আজ যে ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে হয়তো কাল দাম কমলে ভালো যাবে। সামনে নির্বাচন এটিও ভাবাচ্ছে।

এই ব্যবসায়ী মনে করেন নিত্যপণ্যের দামের কারণে মানুষ খাবারের পরিমাণটা আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছে। বাড়তি দামের কারণে মানুষ হোটেলে খাবার কমিয়ে দিয়েছে। আগে যারা হোটেলে আসলে মাছ, মাংস দিয়ে ভাত খেতো তারা এখন কোনোমতে সবজি বা ডাল-ভর্তা খেয়ে চলে যাচ্ছে। ডাল-সবজি, ভর্তা শেষ হয়ে যায় কিন্তু মাছ-মাংস ধরা থাকে। তিনি বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে কর্মচারীও কমিয়ে দিয়েছি।

তেজতুরি বাজারের একটি মেসে থাকেন শিউলি আক্তার। তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট একটি চাকরিতে যুক্ত রয়েছি। মাসে ৪-৫ হাজার টাকা আয় হয়। গতকাল বাজারে গিয়ে আধা কেজি ঢেঁড়স, আলু আর মরিচ কিনেছি তাতেই অনেক টাকা খরচ। আগে নিয়ম করে একটা ডিম খেতাম কিন্তু সেটি গত দুই মাস ধরে খাচ্ছি না। দুই মাস ধরে কোনো ডিম কিনছি না। মাছ-মাংস তো কিনতেই পারি না। এই টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া দিতে হয় ৩ হাজার টাকা। সবকিছুর এত দাম বাড়লে আমরা খাবো কী? কীভাবে চলবো। অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে জীবন।

দিনমজুর জসিম বলেন, স্ত্রী- সন্তান ঢাকায় ছিল। দুই মাস হলো তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। নাখালপাড়ার এক রুমের একটি বাসায় তাদের নিয়ে থাকতাম। আমি দিনমজুরের কাজ করি। দিনে ৭০০-৯০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া দেয়ার পরে কিছুই থাকে না। উপায় না পেয়ে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি রংপুরে পাঠিয়ে দিয়েছি। কয়েকমাস আগেও ভালো চলছিল। কিন্তু গত চার মাস ধরে এই টাকায় কিছুই হয় না। বাজারে গেলে কিছুই কিনতে পারি না।

রাস্তায় ফেরি করে আচার বিক্রি করেন মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম বাড়ছে কিন্তু মানুষের দাম বাড়েনি। আমরা কার কাছে বলবো এই কষ্টের কথা, কে আছে আমাদের। আমরা নিরুপায়, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আরও আগে। এই টাকা দিয়ে কী করবো খাবো না বাসা ভাড়া দিবো। বাসায় গেলে ছোট মেয়েটা দৌড়ে আসে কী নিয়ে এসেছি- তাদের হাতে বাড়তি কোনো খাবার দিতে পারি না। বাজারে গেলে কম দামের মধ্যে কিছুই পাই না। তেল কিনতে গেলে টাকা শেষ। মাছ-মাংস কিনতে পারে না। অথচ এক বছর আগেও এই টাকার মধ্যে অনেক কিছু খেয়েছি।

রিজার্ভ কমছেই, পতন ঠেকানো যাচ্ছে না

০৫ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমছেই। আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা চেষ্টার পরও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না।

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ এখন কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি (২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯০ কোটি (২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার।

এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। আইএমএফ সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি বা ১৭ বিলিয়ন ডলার। গত দুই বছরে প্রতি মাসেই রিজার্ভ গড়ে ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার করে কমেছে।

‘শুধু আমদানি না, সব ধরনের বিদেশি খরচ যাতে মেটানো যায়, এ জন্য নিট রিজার্ভ ধরে রাখাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, দুর্যোগ হলে খাদ্য ও সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে, কৃষির জন্য সার আনতেই হবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এখন যে প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে শুধু তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে, অন্য কোনো খরচ নয়। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচকই হলো বৈদেশিক মুদ্রার এই রিজার্ভ। কিন্তু এই রিজার্ভের পতনই ঠেকানো যাচ্ছে না।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আর্থিক ভঙ্গুরতা বেড়েছে

অক্টোবর ০৮, ২০২৩, বণিক বার্তা

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে এ ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ২৫ শতাংশই খেলাপির খাতায় উঠেছে। গত ডিসেম্বর শেষেও এ ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার ২০ শতাশের নিচে ছিল। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর মূলধন কাঠামো আরো ভঙ্গুর হয়েছে। বেড়েছে ব্যাংকগুলোর সঞ্চিতি (প্রভিশন) ঘাটতির পরিমাণও। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সম্পদের বিপরীতে আয় (আরওএ) এবং ইকুইটির বিপরীতে আয়ও (আরওই) নেতিবাচক (ঋণাত্মক) ধারায় চলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে সরকার মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর দীনতার এ চিত্র উঠে এসেছে।

সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)—এ ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে এ ছয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এর মধ্যে এক জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৩২ দশমিক ৬৪ শতাংশই এখন খেলাপি। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণও ১৬ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। সোনালী ব্যাংকের ১২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। সরকারি খাতের সর্ববৃহৎ এ ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের হার ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ১৯ শতাংশের বেশি। লুণ্ঠনের শিকার হওয়া বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ৮ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এ ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৬২ দশমিক ৬৬ শতাংশই খেলাপি। বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের হারও ৪৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে, যার পরিমাণ ৯৭১ কোটি টাকা।

দেশের ব্যাংক খাতের জন্য অনুসরণীয় ব্যাসেল-৩-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার (সিআরএআর) ন্যূনতম ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ থাকার কথা। যদিও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ ব্যাংকগুলো মাত্র ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ সিআরএআর রাখতে পেরেছে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিও রাখতে পারেনি এ ব্যাংকগুলো। ফলে জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ছয় ব্যাংকের নিট খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশে। অর্থাৎ, এ ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ১১ শতাংশের কোনো সুরক্ষা কবচ নেই।

যেকোনো ব্যাংকের লাভ-লোকসানের চিত্র ফুটে ওঠে সম্পদের বিপরীতে আয় (আরওএ) এবং ইকুইটির বিপরীতে আয়ে (আরওই)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি সূচকই নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে। মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর সম্পদের বিপরীতে আয় (আরওএ) ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। আর ইকুইটির বিপরীতে আয় (আরওই) ঋণাত্মক ২ দশমিক ৭৪ শতাংশে নেমে গেছে। অর্থাৎ, সমন্বিতভাবে এ ব্যাংকগুলো লোকসানে পড়েছে। যদিও এর আগের তিন প্রান্তিকে দুটি সূচকই ধনাত্মক ধারায় ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

০৯ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো

নতুন করে দেশি-বিদেশি আরও চার ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। ফলে গত জুন শেষে দেশে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন করে যে চারটি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে সেগুলো হলো নতুন প্রজন্মের বেসরকারি বেঙ্গল ব্যাংক ও সিটিজেনস ব্যাংক এবং বিদেশি মালিকানাধীন হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। চারটি ব্যাংকে গত মার্চ শেষেও মূলধন উদ্বৃত্ত ছিল।

ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকায় তাতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতিও বাড়ছে। ফলে কোনো কোনো ব্যাংকে নতুন করে মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আবার আগে থেকে ঘাটতি থাকা কিছু ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি আরও বেড়েছে।

আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যাংকিংয়ের আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, সব ব্যাংককে একটি নির্দিষ্ট হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের অর্থ ও প্রতিবছরের মুনাফা থেকে এ মূলধন সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মূলধন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বা রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেটের ১০ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেই পরিমাণ মূলধন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেসব ব্যাংক এ নীতিমালা অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারে না, সেসব ব্যাংককে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলধন ঘাটতিতে থাকা সেসব ব্যাংক শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন শেষে যে ১৫টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে তার মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ৫টি, বেসরকারি খাতের ব্যাংক ৬টি, বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংক ২টি ও বিশেষায়িত ব্যাংক ২টি। জুন শেষে এ ১৫ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। গত মার্চে মূলধন ঘাটতিতে ছিল ১১টি ব্যাংক। ওই ১১ ব্যাংকের সম্মিলিত ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে ১৬৯ কোটি টাকা। আর ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে ৪।

গত জুন শেষে মূলধন ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো হলো অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ছয় ব্যাংক হলো বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বেঙ্গল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। এর মধ্যে বেঙ্গল ও সিটিজেনস ব্যাংক নতুন করে গত জুন শেষে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে হাবিব ব্যাংক ও ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। জুন শেষে ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ৫৪১ কোটি টাকায়। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।

নতুন করে যে চারটি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দেখা দিয়েছে সিটিজেনস ব্যাংকের। জুন শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৭ কোটি টাকার বেশি। অথচ মার্চ শেষে ব্যাংকটির প্রায় ৩ কোটি টাকা মূলধন উদ্বৃত্ত ছিল। এ ছাড়া জুন শেষে বেঙ্গল ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক ও ব্যাংক অব পাকিস্তানের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮৮, ৩৬ ও সাড়ে ৪২ কোটি টাকায়।

১৫ দুর্বল ব্যাংকের আরও অবনতি

০৮ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো

কোনো ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হলে বা অবনতির আশঙ্কা থাকলে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষকের পরিবর্তে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া শুরু হয় গত বছরের জুলাইয়ে, বর্তমান গভর্নরের যোগদানের পর থেকে।

পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন সভায় যোগদানের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক তদারকি করে আসছেন। এরপরও গত এক বছরে বিশেষ তদারকিতে থাকা বেশির ভাগ ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

দেশের এক–চতুর্থাংশ বা ১৫টি ব্যাংক এখন এমন বিশেষ তদারকির আওতায় রয়েছে। এই তদারকির কাজে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বাড়তি ভাতাও দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তদারকির আওতায় থাকা একাধিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো তারল্য জমা রাখছে না, বন্ধ হয়নি এদের ঋণের অনিয়মও।

এসব ব্যাংকের বাইরে আরও তিনটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ও কিছু বেসরকারি ব্যাংক অনিয়মের কারণে সংকটে পড়েছে। কিন্তু এরপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিশেষ তদারকির আওতায় আনছে না। এসব কারণে ‘তদারকি মডেল’ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা। ফলে এসব ব্যাংক কোন উপায়ে সঠিক পথে ফিরবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের ইঙ্গিত ছাড়া ব্যাংক খাত সঠিক পথে ফিরবে না। কারণ, এসব ব্যাংকের মালিকানার সঙ্গে জড়িত ও বড় গ্রাহকদের অনেকে প্রভাবশালী ও সরকারঘনিষ্ঠ। তাঁদের অনেকে সরকারের পদেও রয়েছেন। ফলে তাঁদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো নীতি প্রয়োগ করছে না। এর ফলে অনেক ভালো ব্যাংক দিন দিন খারাপ হয়ে পড়ছে। আমানতকারীদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

তদারকিতে থাকা ১৫ ব্যাংকের মধ্যে ৭টি চলছে সমন্বয়ক দিয়ে। এই ব্যাংকগুলো হচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। এ ছাড়া পর্যবেক্ষক বসানো হয়েছে ৮ ব্যাংকে—সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে গত এক বছরে (জুলাই ২০২২-জুন ২০২৩) ১২টিতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আবার নতুন নতুন ঋণ অনিয়মের ঘটনাও ঘটেছে। আর খেলাপি ঋণ কমেছে শুধু বেসিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের।

৩ মাসে বৃদ্ধি পাওয়া খেলাপি ঋণের ৯৩ শতাংশই মাত্র ১১ ব্যাংকের

৮ অক্টোবর ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা অনলাইন

দেশের ব্যাংকিংখাতে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪,৪১৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৯৩ শতাংশ খেলাপি ঋণই মাত্র ১১টি ব্যাংকের।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত পূরণের মধ্যে ব্যাংকগুলোর অস্বাভাবিক হারে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে এমনটিই জানিয়েছে তারা। কেন খেলাপি ঋণ বাড়ছে তা নির্ধারণে বিশেষ তদারকি জরুরি বলেও মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রেকর্ড করেছে অগ্রণী, বেসিক, জনতা, রূপালী, এবি, আইএফআইসি, মার্কেন্টাইল, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১০টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তিন মাসে বেড়েছে ৪০০ কোটি টাকা থেকে প্রায় ১,৮০০ কোটি টাকা

এছাড়া, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের একাই খেলাপি ঋণ বেড়ছে  ১৩,৬৫৫ কোটি টাকা। এতে ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮,৫৪২ কোটি টাকায়, যা ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ৩২.৬৪ শতাংশ।

আলোচ্য সময়ে বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি বেড়েছে এবি ব্যাংকের ১,৮৮৩ কোটি টাকা। এরপরে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের ১,৬১৫ কোটি টাকা।

অর্থনীতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে

অক্টোবর ১০, ২০২৩, বণিক বার্তা

বাংলাদেশের অর্থনীতি যে এত দ্রুত পরিবর্তন হবে সেটি কেউ ভাবতে পারেনি। সরকারের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ এমনকি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদের কাছেও এ পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগের। বেসরকারি খাতও স্নায়ুচাপে। তারাও মনে করছে না যে বাংলাদেশ সহজেই এ থেকে বের হতে পারবে। বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার দেশের দূতাবাসগুলো তাদের দেশের কোম্পানির পাওনা আদায়ে দৌড়ঝাঁপ করছে। বিদেশী অনেক ব্যাংক বাংলাদেশের এলসি খুলছে না কিংবা অনীহা দেখাচ্ছে। এমনকি সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যবসা বাড়িয়েছেন এমন অনেক ব্যবসায়ীও (বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতের) এখন সরকারের কাছ থেকে পাওনা অর্থ ছাড় করতে না পেরে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অনুসরণ না করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচকই এখন চাপের মধ্যে রয়েছে। মূল্যস্ফীতির বাড়-বাড়ন্তে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগের মাসের তুলনায় এ সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা ১২ শতাংশের নিচে নামানো যায়নি।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই কমছে। সর্বশেষ ৪ অক্টোবর আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসারে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। নিট রিজার্ভ ছিল ১৭ বিলিয়ন ডলার। গত সেপ্টেম্বরেই রিজার্ভ কমেছে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যেখানে গত দুই বছরে প্রতি মাসে গড়ে ১ বিলিয়ন ডলার করে রিজার্ভ কমেছে। রিজার্ভের ক্রমপতনে সরকারের আমদানি সক্ষমতাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রিজার্ভ সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

রিজার্ভের পতন ঠেকাতে সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপানি ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির পরিমাণ কমেছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিল্প প্রবৃদ্ধিতে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিও এক অংকে নেমে গেছে। অন্যদিকে দেশের বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস রফতানিতেও সুখবর নেই। তৈরি পোশাক থেকে রফতানি আয় বাড়লেও অন্যান্য খাতের রফতানি কমেছে। পাশাপাশি বৈদেশিক আয়ের আরেক বড় উৎস রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধিও এখন নিম্নমুখী। গত সেপ্টেম্বরে ৪১ মাসের মধ্যে দেশে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বাজারে ডলারের দামে বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এতে ডলারের প্রাপ্যতার সংকট আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। এমনকি অনেক ব্যাংকই ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছে না।

অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও এখন বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। তারা বলছেন, টেকসই উন্নয়ন আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু এক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না।

এবার আইডিবিও ইসলামী ব্যাংক ছেড়ে গেল

১১ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো

এবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মালিকানা ও পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়াল সৌদি আরবভিত্তিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্ত ছিল আন্তর্জাতিক ঋণদাতা এই সংস্থা। আইডিবির পক্ষে সবশেষ ব্যাংকটিতে পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ আল-মিদানী। এখন তিনি আর পর্ষদে নেই, ব্যাংকটি শেয়ারও ছেড়ে দেওয়া শুরু করেছে। এর আগেও অনেক বিদেশি সংস্থা ব্যাংকটি ছেড়ে যায়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। গ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম এখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। তিনি জেএমসি বিল্ডার্সের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান।

পণ্য আমদানিতে জাহাজ ভাড়া

কনটেইনারে কমেছে ৭০-৮০ শতাংশ, বাল্কে কমেছে ২০-৪২%

অক্টোবর ১২, ২০২৩, বণিক বার্তা

দেশে পণ্য আমদানিতে সবচেয়ে বড় উৎস দেশ চীন। দেশটি থেকে ৪০ ফুট কনটেইনারে সরাসরি পণ্য আনায় ভাড়া কমেছে ৭১-৭৫ শতাংশ, ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে ভাড়া কমেছে ৭০ থেকে প্রায় ৭৩ শতাংশ। চীন থেকে ২০ ফুটের কনটেইনারে সরাসরি পণ্য আমদানিতে গত এক বছরে জাহাজ ভাড়া কমেছে ৭২-৭৩ শতাংশ। ৮০ শতাংশ কমেছে ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে।

গত এক বছরে কনটেইনারের মতো বাল্কেও পণ্য আমদানিতে জাহাজ ভাড়া কমেছে ব্যাপক হারে। এ সময় কৃষ্ণ সাগরীয় দেশগুলো (রাশিয়া-ইউক্রেন) থেকে বাল্কে গম আমদানিতে জাহাজ ভাড়া কমেছে ২০-৩০ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া-ভিয়েতনাম থেকে সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানিতে ভাড়া কমেছে ৩০-৩৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে চট্টগ্রামে বাল্কে স্ক্র্যাপ আমদানিতে ভাড়া কমেছে ৪০ থেকে প্রায় ৪২ শতাংশ।

সমুদ্রপথকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গত এক বছরে জাহাজ পণ্য পরিবহন খরচ ব্যাপক মাত্রায় কমেছে। আমদানিনির্ভর দেশগুলোর প্রায় প্রতিটির ভোক্তা মূল্যসূচকে এর প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। যদিও ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। গত এক বছরে এখানে পণ্যের দাম ও ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ক্রমাগত বেড়েছে। বিভিন্ন সময় এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে পণ্যের পরিবহন খরচকে বারবার দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও চট্টগ্রাম বন্দর ও পরিবহন কোম্পানিগুলো থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজ ভাড়া ব্যাপক মাত্রায় কমেছে।

ব্যয় সংকোচনের মধ্যে ২৬১ গাড়ি কেনার অনুমোদন

১২ অক্টোবর ২৩, সমকাল

আর্থিক সংকটে রয়েছে সরকার। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় সংকোচনের নীতি ঘোষিত রয়েছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি যানবাহন কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। এই কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যেই জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের জন্য ৩৮০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় ২৬১টি জিপ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। কোনো দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে এসব দামি গাড়ি কিনবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর।

গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সাধারণত এ বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী নিজে কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। কিন্তু গতকালও কোনো ব্রিফ করা হয়নি।

এবার ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের রেকর্ড

অক্টোবর ১৩, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বাংলাদেশ ব্যাংক, খেলাপি ঋণ, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনবিএফআই, ব্র্যাক ব্যাংক, আহসান এইচ মনসুর,

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ইতোমধ্যে রেকর্ড খেলাপি ঋণে জর্জরিত। তবে, দেশের অর্থনীতির জন্য আরেকটি উদ্বেগজনক খবর হলো, ব্যাংকের পর এবার ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) রেকর্ড খেলাপি ঋণে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে এ খাতে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

জুন শেষে ৩৫টি এনবিএফআইয়ের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ দশমিক ২ শতাংশ বেশি (৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যেসব কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে, এই খাতে প্রকৃত খেলাপি ঋণ তার চেয়ে অনেক বেশি।’

খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় দেশের ২৪% মানুষ

১৬ অক্টোবর, প্রথম আলো

দেশের প্রতি চারজনের একজন খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় আছেন। আর হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৪৬ শতাংশ আছেন এ অবস্থায়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) থেকে চলতি মাসে প্রকাশ করা এক জরিপ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

‘বাংলাদেশ ফুড সিকিউরিটি মনিটরিং রিপোর্ট: মে-আগস্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে ৩ অক্টোবর। দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়া এবং এ কারণে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির বৃদ্ধি খাদ্য পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্রীষ্মকালে কম বৃষ্টি হয়েছে ও টানা তাপপ্রবাহ ছিল। বিশেষ করে রাজশাহী বিভাগে তাপপ্রবাহের তীব্রতা ছিল বেশি। গত আগস্টে চট্টগ্রাম ও সিলেট হঠাৎ বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে। গত বছরও একই ধরনের আবহাওয়ার কারণে খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছিল।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ‘বাংলাদেশ মার্কেট মনিটর: মে-জুলাই’ শীর্ষক আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডব্লিউএফপি। সেখানে সংস্থাটি প্রবাসী আয় কমে যাওয়া এবং রিজার্ভ-সংকটের (বৈদেশিক মুদ্রা) কারণে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে বলে উল্লেখ করে। একই সঙ্গে সার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় চাল ও সবজির মতো খাদ্যপণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। গত আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ শতাংশ কমেছে এবং টাকার মান এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

এ ছাড়া ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রকাশ করা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা ও ব্যয় জরিপে দেশে দারিদ্র্য ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ বলা হয়েছিল। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও দারিদ্র্যের হার কমেছে বলে এ জরিপে উঠে আসে।

দেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর অবস্থা বুঝতে মিরপুরের পূর্ব কাজীপাড়ার বাসিন্দা মিনারা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন তিনি। পরিবারের অন্য তিনজনের দুজন দিনমজুরির কাজ করেন। সব মিলিয়ে পরিবারের আয় মাসে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। পরিবারে তিন বেলার খাবার জোগাতে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চালের দাম কিছুটা কমেছে, কিন্তু সবজি-ডিমের খরচ তো বেড়েছে।

এ পটভূমিতে আজ সোমবার বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘পানিই জীবন, পানিই খাদ্য। কাউকে পেছনে ফেলে এগোনো যাবে না।’

ডব্লিউএফপির প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি গুদামে ১৫ লাখ টনের ওপরে চাল ও দেড় লাখ টনের মতো গম আছে। আর স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বিস্তৃত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় চাল ও গম বিতরণ করছে সরকার। খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত কর্মসূচির বাইরে সরকার টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য চাল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করছে। ফলে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি যে ২৪ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে তথ্য দিচ্ছে, তা সঠিক মনে হয় না।

খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার চিত্র ও কারণ

ডব্লিউএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে দেশের ২৪ শতাংশ মানুষ এবং হতদরিদ্র পরিবারগুলোতে ৪৬ শতাংশ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছেন। তবে মধ্য আয়ের পরিবারগুলোর ৯ শতাংশ এবং উচ্চ আয়ের পরিবারের ৩ শতাংশ এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েছে।

এদিকে জাতিসংঘের পাঁচটি সংস্থার বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টিসংক্রান্ত ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সোয়া পাঁচ কোটির বেশি মানুষ খাদ্যে তীব্র থেকে মাঝারি ধরনের নিরাপত্তাহীন অবস্থায় আছেন। এর মধ্যে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষ।

ডব্লিউএফপির জরিপে ৭১ শতাংশ পরিবার খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াকে সর্বোচ্চ উদ্বেগের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রতি ১০ জনের ৭ জন জীবনযাত্রার মান কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। যাঁদের বড় অংশ আগের চেয়ে খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, ঋণ করছেন এবং উৎপাদনশীল সম্পদ বিক্রি করছেন ও বাকিতে খাবার কিনছেন।

খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার কারণ হিসেবে সংস্থাটি প্রতিবেদনে বলেছে, মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে ও ধারাবাহিক দারিদ্র্য (ক্রনিক পোভার্টি) পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার চিত্র উঠে আসে।

বাড়ছে ঋণগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা

খাবার কিনতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বলে ডব্লিউএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বাকিতে খাবার কিনতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এ ধরনের মানুষের সংখ্যা চলতি বছরের মে মাসে ছিল ৩২ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে ৪৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাকিতে খাবার কিনতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা সিলেটে ৫৩ শতাংশ ও চট্টগ্রামে ৫৮ শতাংশ। এসব মানুষ সরকারি ও বেসরকারিভাবে খুব বেশি সহায়তাও পাননি। মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ আগস্ট মাসে সহায়তা পেয়েছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ১০ পরিবারের ৩টি পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। আর দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় এ হার জনসংখ্যার অর্ধেক। দেশের ৭৪ শতাংশ মানুষ কম পরিমাণে ও সস্তা খাবার কিনছেন। সামগ্রিকভাবে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমেছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যে অভাবী মানুষ বেড়েছে, তা রাস্তায় বেরোলেই বোঝা যায়। তাই একটি অংশের মানুষ যে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন, তা সবার আগে স্বীকার করে নিতে হবে। ‘দেশে বিপুল পরিমাণে খাদ্য মজুত আছে, উৎপাদন ভালো হয়েছে’—এসব কথা বললেই দরিদ্র মানুষের পেটে খাবার যাওয়া নিশ্চিত হয় না। এ জন্য বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে।

ডব্লিউএফপি ২০২২ সালের জুলাই থেকে খাদ্যনিরাপত্তা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জরিপ করছে। সারা দেশ থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে নেওয়া ১ হাজার ২০০ মানুষের ওপরে এ জরিপ করা হচ্ছে। শুরুতে অতিমারি করোনার প্রভাব ও পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মানুষের আয় কমে যাওয়া এবং ব্যয় বেড়ে যাওয়ার চিত্র উঠে আসে। সর্বশেষ জরিপে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার চিত্র উঠে এল।

ভারতে যে ফাঁদে পড়ে মানুষ আত্মহত্যা করছেন, সেই ঋণের অ্যাপ বাংলাদেশে

১৬ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলৌ

ভারতের মুম্বাইয়ের আইনজীবী ভূমি সিনহা মুঠোফোনের অ্যাপভিত্তিক একটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪৭ হাজার রুপি নিয়েছিলেন। পরে সুদ ও আসলে তাঁর কাছে দাবি করা হয় ২০ লাখ রুপি।

ঋণ শোধ করেও পার পাননি ভূমি। ব্ল্যাকমেল (প্রতারণা) আর ফোনের অত্যাচারে তিনি শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যাকেই ভরসা মনে করেছিলেন। পরে স্বজনেরা তাঁকে রক্ষা করেন।

অবশ্য ভারতে অ্যাপভিত্তিক ঋণের ফাঁদে পড়ে ৬০ জনের মতো মানুষ আত্মহত্যা করেছেন বলে গত সপ্তাহে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়। উদ্বেগজনক দিক হলো, বাংলাদেশেও ঋণ দেওয়ার অ্যাপ বাড়ছে। আর ওই সব অ্যাপ আইন মানছে না।

যেমন ‘সান ওয়ালেট সিকিউর লোন’ নামের একটি অ্যাপ ব্যক্তিপর্যায়ে ৬ থেকে ২৪ শতাংশ সুদে ৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের প্রস্তাব দিচ্ছে। অ্যাপটি চলতি বছরের এপ্রিলে গুগলের প্লে স্টোরে আসে। এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে।

বাংলাদেশে অ্যাপ খুলে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণার ঘটনায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট আটটি মামলার তদন্ত করছে। এসব মামলায় গত আগস্টে চীনের ৭ নাগরিকসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অ্যাপটির মূল্যায়ন (রিভিউ) অংশ ঘেঁটে দেখা যায়, বেশির ভাগ ব্যক্তিই নেতিবাচক মতামত দিয়েছেন। বাবু মিজি নামের একজন লিখেছেন, ‘অ্যাপটি কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে আমার সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করছে। তার প্রমাণ আছে।’

বাংলাদেশে অ্যাপ খুলে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণার ঘটনায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট আটটি মামলার তদন্ত করছে। এসব মামলায় গত আগস্টে চীনের ৭ নাগরিকসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের নাগরিকেরা অ্যাপভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণের প্রলোভন দেখান। বিনা জামানতে ঋণ দেওয়ার কথা বলে মানুষকে ফাঁদে ফেলেন। ওই অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য, ই-মেইল, মুঠোফোনের নম্বরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর কাউকে ৫ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা দাবি করা হয়। গ্রাহক টাকা দিতে অস্বীকার করলে ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়াসহ মামলার ভয় দেখানো হয়।

অনলাইনে কিছু অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার প্রচারণা নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে জানান, এগুলো শুনেছেন। কিছু বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাকি যেগুলোর নাম আসছে, সেগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে।

ছয় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে ১.১২ লাখ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি

১৬ অক্টোবর ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

ছয়টি বড় অবকাঠামো প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় ১.১২ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রকল্পগুলোর নথি পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এই অর্থ দিয়ে চারটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ করা যেত।

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে উদ্ভূত সরাসরি ক্ষতি রয়েছে এই অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশে। আরেকটি বড় অংশ হলো টোল এবং যাত্রী ও মাল পরিবহন থেকে ভাড়া না পাওয়ার ফলে উদ্ভূত আর্থিক ক্ষতি।

এছাড়া এ বিলম্বের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি যেমন হয়েছে, তেমনি দেশ ও নাগরিকরা সুফল পেতেও বিলম্বের শিকার হয়েছে।

পদ্মা সেতু, খুলনা-মোংলা রেললাইন, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট, ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলপথ সম্প্রসারণ ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন—এই ছয়টি প্রকল্পের নথির তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এসব তথ্য জানতে পেরেছে।

অদক্ষতা, অর্থায়ন সংগ্রহে বিলম্ব, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা এবং সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশায় ত্রুটির কারণে এই প্রকল্পগুলো ৪ থেকে ১২ বছর বিলম্বের শিকার হয়েছে।

অনুমোদন দেওয়ার সময় কাজ শেষ করতে প্রত্যেকটি প্রকল্পের জন্য গড়ে ৫ বছর সময় দেওয়া হয়েছিল। তারপরও প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে।

প্রাক্কলিত অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং ব্যয়বৃদ্ধির হিসাবে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্প। কারণ এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে প্রাথমিক পরিকল্পনার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি, আর ব্যয় বেড়েছে প্রাথমিক হিসাবের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পদ্মা সেতু। এরপর রয়েছে খুলনা-মোংলা রেললাইন, ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলপথ সম্প্রসারণ, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট এবং কর্ণফুলী টানেল।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, কাজ শেষ করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়া ছাড়াও আরও একাধিক ক্ষতি হয়।

প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় ভোক্তার অধিকার বঞ্চিত হয়েছে, দেশ বিনিয়োগ বঞ্চিত হয়েছে, মন্থর হয়েছে কর্মসংস্থান ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি এবং ঋণ পরিশোধে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ভবিষ্যতের ওপরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অবকাঠামো প্রকল্পগুলো ব্যবসার খরচ হ্রাস, গণপরিবহনে যাতায়াত সহজ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে পারত। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিলম্ব এসব খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।’

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করা গেলে তা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সাহায্য করতে পারত, যা উৎপাদনের পাশাপাশি আয় বাড়াত। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ত, যা আরও বিনিয়োগ আকর্ষণ করত।

সামগ্রিক ক্ষতি

এই ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে গত বছর শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্পটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে, তা-ও অনেক বিলম্বের পর। আর কর্ণফুলী টানেল, খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চলতি মাসের শেষের দিকে ও আগামী মাসে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

সরকার যখন এই প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয়, তখন টোল আদায় থেকে তাৎক্ষণিক আর্থিক লাভ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। এ ছয়টি প্রকল্প যানবাহন পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, সময় সাশ্রয়, যাত্রী ও মাল পরিবহনের সুবিধা, ট্রাফিক ডাইভারশন, জ্বালানি খরচ হ্রাস, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং দূষণ কমানোসহ সম্ভাব্য ৫০ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকার অর্থনৈতিক সুফল এনে দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 

এই ছয় প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা, কিন্তু পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা। শুধু বিলম্বের জন্যই সরাসরি ক্ষতি হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

টিবিএসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে ২৩ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামানের মতে, প্রকল্প অনুমোদনের পর্যায়ে অপর্যাপ্ত জরিপ, ত্রুটিপূর্ণ নকশা এবং অসম্পূর্ণ প্রাক্কলনের মতো বেশ কিছু দুর্বলতার কারণে প্রাথমিকভাবে বেঁধে দেওয়া সময় ও ব্যয় অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় এবং বাস্তবায়নের সময় কম দেখানো হয়। এছাড়া অনুমোদন পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি পর্যায়ে প্রত্যাশিত রিটার্ন অনেক বেশি দেখানো হয়। ত্রুটিপূর্ণ প্রাক্কলনের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পগুলো নেওয়ার ফলে সময়মতো বাস্তবায়ন ও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কনসালটেন্ট, প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারদের মধ্যে দক্ষতা ও নিষ্ঠার অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন হাদিউজ্জামান।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল সাড়ে তিন বছরে।

কিন্তু বিলম্বের কারণে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা।

রেললাইনটি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ বলে জানিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। আগামী মাসে এই লাইনের মাধ্যমে রেলসেবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুসারে, বিলম্বের কারণে এই লাইনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে ভাড়া বাবদ যে ৫ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা আয় করতে পারত, তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এছাড়া যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয়ে সাশ্রয়, জ্বালানির ব্যবহার ও পরিবেশ দূষণ কমে আসায় আরও ৯ হাজার ৫৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারত।

নির্ধারিত সময়ে রেলসেবা চালু না হওয়ায় বঞ্চিত আর্থিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাগুলোর মূল্য যোগ করলে বিলম্বের মোট খেসারত দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতু

২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় ধরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়, সেইসঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয় ২০১৫ সাল পর্যন্ত।

কিন্তু সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় গত বছর, ২০২২ সালের জুন মাসে।

বিলম্বের কারণে এই অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ১২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে করা একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালে সেতুটি চালু হলে গত নয় বছরে মোট টোল আদায় হতো ৭ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

এছাড়া যানবাহন পরিচালনা এবং ভ্রমণের সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের মাধ্যমে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ২০ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে উঠে এসেছে প্রকল্পের নথিতে।

খুলনা-মোংলা রেলপথ

প্রকল্পটি ২০১০ সালে শুরু হয়, ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা।

আগামী মাসে লাইনটি উদ্বোধন হওয়ার কথা থাকলেও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের তারিখ এখনও চূড়ান্ত করেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে।

২০১৫ সালের মধ্যে ৬৪.৭৫ কিলোমিটার রেল সংযোগের কাজ শেষ হলে চলতি অর্থবছর নাগাদ যাত্রী ও মাল পরিবহন থেকে আয় হতো ৩ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।

এছাড়া ট্রাফিক ডাইভারশন, জ্বালানি খরচ সাশ্রয়, দুর্ঘটনা হ্রাস এবং আর্থ-সামাজিক সুফল মিলিয়ে এ প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে ৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় করত।

তিন দিক মিলিয়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করায় বিলম্বের কারণে সম্মিলিত ক্ষতি হয়েছে ১৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।

ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলপথ সম্প্রসারণ

২০১২ সালের জুলাইয়ে ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণের প্রকল্প নেওয়া হয়। লক্ষ্য ছিল আড়াই বছর, অর্থাৎ ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে।

কিন্তু প্রকল্পটির কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৭ সালের আগে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে না—অর্থাৎ বাস্তবায়িত হতে ১২ বছরের বেশি বিলম্ব হবে।

এ বিলম্বের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা, যা প্রাথমিক প্রাক্কলনের চেয়ে ২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা বেশি।

১২ বছরের বিলম্বের কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৪ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা আয়ের সুযোগ হারিয়েছে।

এছাড়া ট্রাফিক ডাইভারশন, দুর্ঘটনা হ্রাস, ভ্রমণের সময় হ্রাস এবং আর্থ-সামাজিক সুফলের মাধ্যমে এ প্রকল্প থেকে ৩ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকার সুফল পাওয়ার কথা ছিল।

বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে এ প্রকল্প থেকে মোট ১১ হাজার ৯১ কোটি টাকার পুঞ্জীভূত ক্ষতি হচ্ছে।

বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট

বিমানবন্দর এলাকা থেকে ৩৫ মিনিটে জয়দেবপুর যাতায়াতের জন্য ২০.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২ সালে অনুমোদন পায়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের মধ্যে বিআরটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনও সেবাটি চালু করার প্রত্যাশিত তারিখ ঠিক করেনি। এর মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এ প্রকল্পে সরাসরি ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গত আট বছরে যাত্রী ভাড়া থেকে ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা আয় করার কথা ছিল বিআরটির। আর যানবাহন পরিচালনার ব্যয়, যাতায়াতের সময়, দুর্ঘটনা এবং দূষণ কমার ফলে এ প্রকল্প থেকে ৫ হাজার ৭৭ কোটি টাকার সুফল পাওয়ার কথা ছিল।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বিত হওয়ায় মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।

বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট

বিমানবন্দর এলাকা থেকে ৩৫ মিনিটে জয়দেবপুর যাতায়াতের জন্য ২০.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২ সালে অনুমোদন পায়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের মধ্যে বিআরটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনও সেবাটি চালু করার প্রত্যাশিত তারিখ ঠিক করেনি। এর মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ার ফলে সরাসরি ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

প্রকল্পের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত আট বছরে যাত্রী ভাড়া থেকেই সরাসরি ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা আয় আনার কথা ছিল বিআরটির। আর যানবাহন পরিচালনার ব্যয়, যাতায়াতের সময়, দুর্ঘটনা এবং দূষণ কমার ফলে এ প্রকল্প থেকে ৫ হাজার ৭৭ কোটি টাকার সুফল পাওয়ার কথা ছিল।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বিত হওয়ায় মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।

কর্ণফুলী টানেল

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মাল্টি-লেন রোড টানেল প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১১ সালে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মধ্যে টানেলটি চালু হওয়ার কথা ছিল। বিলম্বের কারণে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা।

নির্ধারিত সময়ের চার বছর পর, চলতি মাসে অবকাঠামোটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পের নথি অনুসারে, বিলম্বের ফলে ১ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার টোল আদায়ের সুযোগ হারিয়েছে সরকার।

এছাড়া ভ্রমণের সময়, দুর্ঘটনা ও পরিবহন ব্যয় হ্রাস হিসাবে নিয়ে প্রকল্পটি থেকে ৩ হাজার ৯২৯ কোটি টাকার সুফল পাওয়ার কথা ছিল।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় সার্বিক ৭ হাজার ৭১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জলবায়ু তহবিলের ৫৩৬ কোটি টাকা ফেরত না দেওয়ায় পদ্মা ব্যাংকের এমডিকে তলব

১৭ অক্টোবর ২০২৩, আজকের পত্রিকা

জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের এফডিআরের ৫৩৬ কোটি টাকা আদায়ের জন্য পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারেক রিয়াজ খানকে তলব করেছে সংসদীয় কমিটি। আজ মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তাঁকে তলবের সিদ্ধান্ত হয়। গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম—কিছু অর্থ দিয়েছিলাম ফারমার্স ব্যাংকে, পরবর্তীতে সেটা হয়েছে পদ্মা ব্যাংক। সেটা নিয়ে আমরা আপডেট চেয়েছি। যা কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আসবে। প্রাথমিকভাবে আমরা জেনেছি ওই ব্যাংক থেকে রি-পেমেন্টের একটা নতুন শিডিউল দেওয়া হয়েছে। সেটা জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই শিডিউল অনুযায়ীও আমরা পেমেন্টগুলো পাচ্ছি না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে দেশে বৈধ পথে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩৪ দশমিক ৩৬ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে শেষবার এর চেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছিল ২০২০ সালের এপ্রিলে। ওই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১০৯ কোটি মার্কিন ডলার।

ডাবল কাউন্টিং: রপ্তানির হিসাব বেশি হওয়ার নেপথ্য রহস্য

২০ অক্টোবর ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের রপ্তানির পরিমাণে ভুল হিসাব করা হচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত পরিমাণের চেয়ে বেশি দেখানো হচ্ছে রপ্তানি। বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন।

এই সমস্যাটি ‘ডাবল কাউন্টিং’ নামে পরিচিত। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ এই সমস্যায় ভুগছে। কারণ রপ্তানিকারকরা স্থানীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) থেকে যে পণ্য ও অ্যাকসেসরিজ কেনে, তা দুইবার রপ্তানির হিসাবের মধ্যে আসছে—একবার রপ্তানিকারকের রপ্তানি হিসেবে, আরেকবার ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি হিসেবে।

স্টেকহোল্ডাররা বলছেন, রপ্তানির ডাবল কাউন্টিংয়ের ফলে দেশের রপ্তানির পরিমাণ বেশি দেখাচ্ছে। এতে রপ্তানি খাতের প্রকৃত পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

কর্মকর্তারা টিবিএসকে বলেন, এনবিআর ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে রপ্তানির পরিসংখ্যান হিসাব করায় এই বিভ্রান্তিকর তথ্যের সৃষ্টি হয়েছে।

রপ্তানির ডাবল কাউন্টিং ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি পরিসংখ্যানের মধ্যে বড় ব্যবধানের কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইপিবির হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এর মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে আসেনি।

স্টেকহোল্ডারর বলছেন, দেশে না আসা রপ্তানি আয়ের মধ্যে ডাবল কাউন্টিংয়ের অংশও রয়েছে।

ডাবল কাউন্টিংয়ের ব্যাপারটি নারায়ণগঞ্জের এমবি নিট ফ্যাশনস লিমিটেডের উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক। প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে প্রায় ১,০০,০০০ ডলারের গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ কিনেছে ইপিজেড থেকে, যা দিয়ে পোশাক তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি করেছে। এই অ্যাকসেসরিজের খরচসহ রপ্তানিকৃত পোশাকের মূল্য এমবি নিট ফ্যাশনসের রপ্তানির হিসাবে যুক্ত হয়েছে; আবার যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা অ্যাকসেসরিজ কিনেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানির হিসাবেও যুক্ত হয়েছে। 

এভাবে শত শত কোম্পানির রপ্তানি এই পদ্ধতিতে ডাবল কাউন্ট করা হচ্ছে। এই সংখ্যাটি বেশ বড়।

ইপিবির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্থানীয় রপ্তানি কোডের মাধ্যমে রপ্তানি হয়েছে ১.৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এই পরিমাণ রপ্তানির অর্থ ডাবল কাউন্ট হয়েছে এবং তা বছরের পর বছর ধরে চলছে বলে উল্লেখ করছেন স্টেকহোল্ডাররা।

ইপিবির তথ্যানুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ডাবল কাউন্টের পরিমাণ ছিল ১.০৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ছিল ০.৪৯ বিলিয়ন ডলার।

খুলনার দৌলতপুর পাটকল

বন্ধ কারখানা বেসরকারি উদ্যোগে চালু হচ্ছে

২১ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো

সাড়ে তিন বছর বন্ধ থাকার পর খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল দৌলতপুর জুট মিলটি ফরচুন গ্রুপের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এখন বেসরকারি খাতের ফরচুন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনি ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি সেখানে নতুন করে উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে নিয়োগ করা হয়েছে শ্রমিক-কর্মচারী। কেনা হয়েছে পাটও। পাটপণ্যের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ওই পাটকলে জুতাও তৈরি করবে।

এদিকে বন্ধ সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সরকারি মালিকানায় চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের দাবিতে নাগরিক ও শ্রমিকদের বেশ কয়েকটি সংগঠন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

গত রোববার দৌলতপুর পাটকল সরেজমিনে দেখা যায়, মিলের প্রধান ফটকে বড় করে লেখা—‘দৌলতপুর জুট মিলস লিমিটেড, পরিচালনায় ইউনিওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি’। কারখানার ভেতরে শ্রমিকেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। পাটকলের পুরোনো যন্ত্রপাতিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে কেনা পাটের মান যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)  সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালে স্থাপিত দৌলতপুর জুট মিলটি ২০০২ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১২-১৩ অর্থবছরে মিলটি পুনরায় চালু করা হয়েছিল। কিন্তু লোকসানের কারণে ২০২০ সালের জুলাইয়ে আবারও বন্ধ হয়ে যায় পাটকলটি। গত ৪ সেপ্টেম্বর মূল কারখানাসহ পাটকলের প্রায় ১৪ একর জায়গা ইজারা দেওয়া হয় ফরচুন গ্রুপকে। মাসিক সাড়ে ৯ লাখ টাকায় ৩০ বছরের জন্য এই ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রতি ৫ বছর পরপর ১০ শতাংশ করে ভাড়া বাড়ানো হবে। এরই মধ্যে তিন বছরের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করেছে ফরচুন গ্রুপ।

ফরচুন গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ) মো. ইসহাক আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন করে মিলটি আমরা আবার চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, আগামী মাসে উৎপাদনে যেতে পারব। এ মিলে উৎপাদিত পাটপণ্য ভারত, তুরস্ক, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হবে।’

মো. ইসহাক আলী আরও বলেন, ‘জুতার ব্যবসা থেকে পাটের ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছি। জুতা তৈরিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি লাগবে। এ জন্য নতুন যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছে। জুতার কারখানার জন্য আমাদের অন্য কারখানা থেকে ১০০ কর্মীকে প্রাথমিকভাবে খুলনায় বদলি করে আনা হয়েছে। জুতার কারখানার জন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ শ্রমিক লাগবে। চলতি বছরের শেষে জুতা উৎপাদন শুরু করার আশা করছি।’

আমির হোসেন হাওলাদার ২০২০ সালে পাটকল বন্ধের সময় তিনি দৌলতপুর জুট মিলে লাইন সরদার ছিলেন। তিনি বলেন, এখন বেতন  কম। তারপরও কাজের সংস্থান হওয়ায় খুশি।

নতুন করে চালু হতে যাওয়া এ কারখানার ব্যবস্থাপক ফরচুন গ্রুপের মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, কারখানাটিতে প্রায় ২৫০ তাঁত আছে। এর মধ্যে ১৫০ তাঁত ঠিক করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ অঞ্চলের বিভিন্ন পাটকলে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্য থেকে ৭০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মিল চালুর আগে সব মিলিয়ে ৫০০ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে।

বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলের বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে যশোরের জেজেআইকে আকিজ গ্রুপের কাছে, খুলনার দৌলতপুর জুট মিল ফরচুন গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইজারাগ্রহীতারা এসব মিলে পাটপণ্যই উৎপাদন করবেন। এ ছাড়া খুলনার ক্রিসেন্ট, খালিশপুর, ইস্টার্ন এবং যশোরের কার্পেটিং জুট মিলেরও ইজারার বিষয়ে অনুমোদন মিলছে। খালিশপুর জুট মিল রেডিয়্যান্ট গ্রুপ, যশোরের কার্পেটিং ও ইস্টার্ন জুট মিলকে ভারতের একটি কোম্পানি নিতে চাচ্ছে। আর খুলনার স্টার ও প্লাটিনাম জুট মিল ইজারা দেওয়ার জন্য আবারও দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী গোলাম রব্বানী বলেন, ইজারা দেওয়ার উদ্যোগটা খুব ভালো। আবার এ অঞ্চলে শ্রমিকদের কর্মচঞ্চলতা ফিরবে। আর পুরো মিল ইজারা দেওয়া হচ্ছে না, আবার দীর্ঘ মেয়াদেও দেওয়া হচ্ছে না। ইজারার বাইরে যে অংশ, সেটি বিজেএমসির ব্যবস্থাপনায় থাকছে।

পাটকল রক্ষায় গঠিত সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক কুদরত ই খুদা বলেন, অতীতে দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত থেকে বেসরকারি খাতে দেওয়া কোনো পাটকলই ভালোভাবে চলেনি। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে লুটপাট করার জন্য এসব মিল ইজারা নেয়। মিলগুলো শ্রমিকের কারণে লোকসান হয়নি, লোকসান হয়েছে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও দুর্নীতির কারণে। তাই ইজারার মাধ্যমে নয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানায় মিলগুলো চালু করা দরকার।

১০ টাকায় উৎপাদিত সবজির বাজারমূল্য ১২০ টাকা

অক্টোবর ২২, ২০২৩, বণিক বার্তা

সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতি মৌসুমেই বিভিন্ন সবজির উৎপাদন খরচের হিসাব রাখে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী এক কেজি বেগুন উৎপাদনে খরচ হয় ১০ টাকার কিছু বেশি। অথচ বিভিন্ন হাত ঘুরে রাজধানীর খুচরা বাজারে সেই সবজি ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ১০ গুণেরও বেশি দামে। আকার ও মানভেদে লম্বা ও গোল বেগুন বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত। এর কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা সামনে আনেন নানা অজুহাত।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি কাঁচা পেঁপে উৎপাদনে ৯ টাকা খরচ হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ ৭ টাকা ২২ পয়সা। রাজধানীর বাজারে এ সবজি এখন ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি করলা উৎপাদনে সাড়ে ৯ টাকা খরচ হলেও ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। ১০ টাকা ২৬ পয়সায় উৎপাদিত প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ৮০-৯০ টাকা ও গোল বেগুন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার লাল গোল বেগুনের দাম গিয়ে ১৫০-১৬০ টাকায় ঠেকেছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৮০-৯০ টাকা, শসা ৫০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ৮০, কাঁকরোল ৯০, কাঁচামরিচ ১৬০-২২০, শিম ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি পিস লাউ ৭০-৮০ টাকা, জালি ৫০-৭০, ফুলকপি ৫০ ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। যদিও কৃষি বিপণনের হিসাবে, প্রতি কেজি পটোল উৎপাদনে খরচ হয় ৯ টাকা ৬৯ পয়সা, ঢেঁড়স ১২ টাকা ৪০ পয়সা, শসা ১০ টাকা ৮৪ পয়সা, চিচিঙ্গা ১১ টাকা ৪৭ পয়সা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা ১৭ পয়সা। আর প্রতি পিস লাউ ১৩ টাকা ২০ পয়সা ও জালি উৎপাদনের পেছনে ৯ টাকা ১৯ পয়সা খরচ হয়।

উৎপাদন খরচের সঙ্গে খুচরা বাজারের দামে অনেক বেশি তফাত থাকলেও কৃষকরা এর অংশীদার হতে পারছেন না। বগুড়ার বাজারে প্রতি কেজি শিম ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও কৃষক পাচ্ছেন কেবল ৮০ টাকা। ঠিক একইভাবে খুচরা বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া পটোল ৩০ টাকা, ৪০ টাকার পেঁপে ৭-৮ টাকা, ৬০ টাকার লাউ ৩০ টাকা ও ১২০ টাকার বেগুন কৃষক বিক্রি করছেন ৭০ টাকায়।

সবজি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা বলছেন, খেত থেকে সবজি তুলে পাইকারিতে তারা অল্প দামে বিক্রি করেন। তবে সেটি বিভিন্ন হাত ঘুরে অনেক মূল্য বেড়ে যায়। বগুড়ার সদর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের কৃষক রবিউল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাজারে দেখি সব সবজির আকাশছোঁয়া দাম। কিন্তু আমরা তো এত পাচ্ছি না।’ 

আবার সবজির পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে যেতেই দাম বাড়ে প্রায় দ্বিগুণ। পাইকারিতে প্রতি কেজি শসা ৩২-৪০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকায়। ৬০ টাকার করলা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্বাভাবিক পরিবহন ব্যয়, রাস্তায় চাঁদাবাজি, উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিক্রয় কেন্দ্র পর্যন্ত দফায় দফায় আড়তদারি (কমিশন) খরচসহ নানা ব্যয়ের কারণে সবজির দাম অস্বাভাবিক হচ্ছে। আবার চলতি অক্টোবরের প্রথম দুই সপ্তাহে বৃষ্টি থাকায় আগাম শীতকালীন সবজি আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন স্থানের সবজির উৎপাদন। এতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। আবার রাজধানীতে সবজি আনতে বিভিন্ন স্থানে বাড়তি চাঁদার কারণেও দাম বেড়ে যায় বলে তারা জানান।

সর্বজনীন পেনশন তহবিল থেকে ১১ কোটি টাকা বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে: অর্থমন্ত্রী

২২ অক্টোবর ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

সর্বজনীন পেনশন তহবিলে জমা হওয়া অর্থ থেকে ১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ১০ বছর মেয়াদি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

রোববার (২২ অক্টোবর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের বিনিয়োগের উদ্যোগ রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশই পেনশন তহবিল থেকে পুঁজি সংগ্রহ করে থাকে। আগে প্রভিডেন্ট ফান্ড গ্র্যাচুইটি ছিল, এখন পেনশন তহবিল তার বিকল্প।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তি চাঁদা দিয়ে পেনশন তহবিলে নিবন্ধন করেছেন। রোববার (২২ অক্টোবর) পর্যন্ত তহবিলে ১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা জমা হয়েছে।

‘এর মধ্যে ১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা দশ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সুদহার ১০.৫ শতাংশ।’

তিনি আরও বলেন, পেনশন তহবিলে জমা হওয়া টাকা সুরক্ষিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে ১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

নগদ ও কড়ি পাচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক

২২ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো

দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ৮ প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিন প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল উইং চালুর অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি তিন প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমতি পাবে। তবে এখন অনুমতি পাওয়া দুই প্রতিষ্ঠানের সেবা কেমন, তা পর্যালোচনার পর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ৯ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করা হয়। একটির সঙ্গে বিমা কোম্পানি যুক্ত থাকায় ৮টিকে বিবেচনা করেছে পরিচালনা পর্ষদ।

মেজবাউল হক জানান, নগদ ডিজিটাল ব্যাংক ও কড়ি ডিজিটাল ব্যাংককে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ১০ ব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত ডিজিটেন ডিজিটাল ব্যাংক, বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়ার ডিজিটাল ব্যাংককে ডিজিটাল উইং চালুর অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া দুই পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক চালুর ৬ মাস পর সেবা পর্যালোচনা করে আরও তিন ব্যাংককে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো হলো স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক ও জাপান-বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক চালুর অনুমতি পাওয়া নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের সঙ্গে বর্তমান উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি রয়েছে সামিট ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান ফরিদ খানসহ অন্যরা। আর কড়ি ডিজিটাল ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা হাবিবুল্লাহ এন করিম, তিনি সাবেক অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের স্বামী। এই লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ৫২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনের আগেই বহুল কাঙ্ক্ষিত ডিজিটাল ব্যাংক চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। দেশে এর আগে প্রচলিত ধারার ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পেত। এবার ব্যবসায়ী ও আমলাদের প্রাধান্য দেখা গেল মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।

ঘোষণার ৩-৪গুণ বেশি রপ্তানি, টাকা আসে কম

২৩ অক্টোবর ২০২৩, শেয়ার বিজ

রপ্তানির ঘোষণা দেয়া হয়েছে প্রায় দুই লাখ রেডিমেড গার্মেন্ট পণ্য। কায়িক পরীক্ষায় পাওয়া গেল প্রায় তিন লাখ পণ্য। জালিয়াতি এখানে শেষ নয়। প্রতি কেজি পণ্যের মূল্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে শূন্য দশমিক ৩৫ থেকে এক দশমিক ১৭ ডলার। একটি, দুটি নয়- ৩৭টি চালানে অতি নিন্মমূল্য বা নামমাত্র মূল্য ঘোষণা দিয়ে টি-শার্ট, সুইপ শার্ট, প্যান্ট,  ট্রাউজার, ক্যাপ প্রভৃতি রপ্তানির চেষ্টা করেছে একটি বাণিজ্যিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। শুধু এই প্রতিষ্ঠান নয়, বেশিরভাগ ‘বাণিজ্যিক রপ্তানিকারক’ প্রতিষ্ঠানের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাত্র এক সপ্তাহে একটি বেসরকারি ডিপোয় রেডিমেড গার্মেন্টে ১১টি চালান যাচাই করেন কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা, যাতে প্রতিটি চালানে ৯ থেকে ১৮৬ শতাংশ পর্যন্ত অনিয়ম পেয়েছেন।

অনিয়মের মধ্যে রয়েছেÑঘোষণার তিন-চারগুণ বেশি পণ্য, ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য, নামমাত্র মূল্য ঘোষণা, অ্যাসাইকুডায় শুল্কায়ন না করে ম্যানুয়ালি শুল্কায়ন করা প্রভৃতি। অথচ এসব চালান কাস্টমস কর্মকর্তারা পরীক্ষণ করে ‘ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য’ পেয়েছেন মর্মে প্রতিবেদন দিয়েছেন। অনিয়মের সঙ্গে রপ্তানিকারক, কাস্টমস কর্মকর্তা ও ডিপো কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্যিক রপ্তানিকারকরা ঘোষণার তিন-চারগুণ বেশি পণ্য রপ্তানি করছেন। অথচ রপ্তানির এই টাকা দেশে আসে না। তাদের রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার রোধ করতে হলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এনবিআর সূত্রমতে, রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ রপ্তানিতে জালিয়াতি করছে। পণ্য রপ্তানিতে কখনও কম, কখনও বেশি ঘোষণা দিচ্ছে। আবার কখনও অতি নি¤œমূল্য ঘোষণা দিয়ে পণ্য রপ্তানি করছে। কখনও এক পণ্য ঘোষণা দিয়ে আরেক পণ্য রপ্তানি করছে। এর মাধ্যমে একদিকে রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে, অন্যদিকে রপ্তানির টাকা দেশে আসছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে অহরহ এসব ঘটনা ঘটছে। কখনও কাস্টম হাউস আবার কখনও কাস্টমস গোয়েন্দা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পণ্য আটক, মামলা ও জরিমানা করছে। কিন্তু এসব বাণিজ্যিক আমদানিকারক যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে জালিয়াতিতে কাস্টম হাউসের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

একাধিক সূত্রমতে, রপ্তানির ক্ষেত্রে কাস্টমসের তদারকি নেই বললেই চলে। প্রায় ক্ষেত্রেই রপ্তানির পণ্য চালান অ্যাসাইকুডায় শুল্কায়ন না করে ম্যানুয়ালি শুল্কায়ন করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা যেসব রপ্তানি পণ্য চালান শুল্কায়ন করে সঠিক পেয়েছেন, সে চালান কাস্টমস গোয়েন্দা শুল্কায়ন করার পর জালিয়াতির তথ্য পেয়েছেন, এমন নজিরও রয়েছে।

সূত্রমতে, কাস্টমস গোয়েন্দা মাত্র এক সপ্তাহে ১১টি রপ্তানি চালান যাচাই করে, সবকটিতে অনিয়ম পেয়েছে। এসব চালানে অস্বাভাবিক পরিমাণে মিথ্যা ঘোষণাসহ অতিরিক্ত ‘রেডিমেড গার্মেন্ট’ পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে অর্থপাচারের  বিষয়টি উদ্ঘাটন করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা। কাস্টমস গোয়েন্দা এসব চালান পরীক্ষণের সময় কাস্টম হাউসের প্রতিনিধি, একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ইহছাক ব্রাদার্স নামে বেসরকারি ডিপোয় থাকা বাণিজ্যিক রপ্তানিকারকদের এসব চালান ‘ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে’Ñউল্লেখ করে কাস্টমস কর্মকর্তারা পরীক্ষণ করে ছেড়ে দিয়েছে। এসব রপ্তানিকারক রপ্তানির আড়ালে প্রচুর অর্থপাচার করেছে। এছাড়া এসব চালানের মাধ্যমে অর্থপাচারের চেষ্টা করেছেন। কাস্টমস গোয়েন্দা সেই ১১টি চালানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনসহ কাস্টম হাউসকে চিঠি দিয়েছে। ‘রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার রোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’ করতে অনুরোধ জানিয়ে ১৭ অক্টোবর চিঠি দেয়া হয়।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই ১১টি চালানে ঘোষণাবহির্ভূত বা ঘোষণা অতিরিক্ত প্রায় ৯ থেকে ১৮৬ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য পাওয়া গেছে। সি নাম্বার অনুযায়ী, ৫ অক্টোবরের একটি চালানে ৫৩ হাজার ৪০০টি রেডিমেট গার্মেন্ট পণ্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পরীক্ষণে ঘোষণার অতিরিক্ত ৯৯ হাজার ৩০৮টি পণ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ঘোষণার তুলনায় এই চালানে ১৮৬ শতাংশ বেশি পণ্য পাওয়া গেছে। অথচ কাস্টমস এই চালান পরীক্ষণ করে ‘ঘোষণার সঙ্গে সামসঞ্জ রয়েছে’ বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছে। একইভাবে ২৪ সেপ্টেম্বরের একটি চালানে ৫৩ হাজার ৭৩৫টির স্থলে ৮৩ হাজার ২৫৯টি অতিরিক্ত পাওয়া গেছে। এই চালানে অতিরিক্ত পাওয়া পণ্যের পরিমাণ ১৮১ শতাংশ। ৫ অক্টোবরের একটি চালানে ৫৩ হাজার ৭৩৫টি পণ্যের বিপরীতে অতিরিক্ত পাওয়া গেছে ৮৩ হাজার ২৫৯টি পণ্য, যা ঘোষণার অতিরিক্ত প্রায় ১৫৫ শতাংশ। ২৫ সেপ্টেম্বরে একটি রপ্তানিকারকের তিনটি চালানে ৯১ হাজার ৯৩১টি ঘোষণা অতিরিক্ত পণ্য পাওয়া গেছে, যা ঘোষণার চেয়ে ৭০, ৫৮ ও ৫১ শতাংশ বেশি। ৫ অক্টোবরের অপর এক রপ্তানিকারকের দুটি চালানে ৫৮ হাজার ৮১৮টি অতিরিক্ত পাওয়া গেছে, যা ৩৯ ও ৩৪ শতাংশ বেশি। ২৫ সেপ্টেম্বরের একটি চালানে ঘোষণার চেয়ে ১৪ হাজার ৮৭৪টি বেশি পাওয়া গেছে, যা ঘোষণার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। ২২ সেপ্টেম্বরের একটি চালানে ঘোষণার চেয়ে ছয় হাজার ১৩৯টি বেশি পাওয়া গেছে, যা ঘোষণার ১০ শতাংশ বেশি। ৫ অক্টোবরের একটি চালানে ছয় হাজার ১৩৭টি বেশি, যা ঘোষণার চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি।

 ১১টি চালান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পরীক্ষিত সব রপ্তানি চালানেই অস্বাভাবিক মিথ্যা ঘোষণা পাওয়া গেছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই পণ্য চালান ‘অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম’-এ শুল্কায়ন না করে ম্যানুয়ালি শুল্কায়ন করে রপ্তানি অনুমতি দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে অর্থপাচারের অপচেষ্টার বিষয়টি সুষ্পষ্ট। এতে সব ঘটনার সঙ্গে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ছাড়াও শুল্কায়নকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি কাস্টমসসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের নজরে এসেছে। এছাড়া ডিপো কর্তৃপক্ষের অ্যাসাইকুডা পর্যবেক্ষণের সুযোগ না থাকায় বিল অব এক্সপোর্টের হার্ড কপির বিপরীতে পণ্য চালান রপ্তানির উদ্দেশ্যে ছাড় প্রদান করে থাকে, যার মাধ্যমে কৌশলে পণ্য জাহাজীকরণের পর শুল্কায়ন কার্যক্রম অ্যাসাইকুডাতে সম্পন্ন করা হয়। রপ্তানি চালান পরীক্ষণ বা শুল্কায়নসহ অন্য সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে এ-জাতীয় ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না বলে কাস্টমস গোয়েন্দা মনে করে।

অন্যদিকে বাণিজ্যিক রপ্তানিকারকদের রপ্তানি চালানের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে কাস্টম হাউসকে দেয়া চিঠিতে আটটি সুপারিশ করে কাস্টমস গোয়েন্দা। যার মধ্যে রয়েছেÑম্যানুয়ালি পণ্য চালান শুল্কায়ন দ্রুত বন্ধ করা, বিশেষ করে বাণিজ্যিক রপ্তানিকারকসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ চালানের ক্ষেত্রে; শুল্কায়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ আয়োজন; জড়িত আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শুল্কায়ন ও পরীক্ষণকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; ঝুঁকিপূর্ণ বা অস্তিত্বহীন রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের পণ্য চালান নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ; ডিপো কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের অ্যাসাইকুডা পর্যবেক্ষণের জন্য আইডি, পাসওয়ার্ড সরবরাহকরণ; সব রপ্তানি চালান পাঁচ বা দুই শতাংশ পরীক্ষণ না করে ঝুঁকিপূর্ণ চালান চিহ্নিত করে, বিশেষ করে বাণিজ্যিক রপ্তানিকারকের পণ্য চালান ১০০ শতাংশ পরীক্ষণ; বন্দরের ন্যায় সব ডিপো গেটে নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণে কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন করা।

সরকারি বহুতল এই ভবনগুলো এখন বোঝা

২৩ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো

ঢাকা জেলা পরিষদের ২০ তলা একটি ভবন সাত বছর ধরে খালি পড়ে রয়েছে। পুরান ঢাকার জনসন রোডের মোড়ে অবস্থিত এ বহুতল ভবনটি নির্মাণের সময় নিয়মনীতি মানা হয়নি। ২০১৬ সালে অনিয়ম ধরা পড়ার পর এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে ভবনটি অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে।

‘বিপুল ব্যয়ের ভবনটি খালি পড়ে আছে, নথি গায়েব’ শিরোনামে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। প্রতিবেদনটি প্রকাশের এক বছর পর ‘ঢাকা টাওয়ার’ নামে ওই ভবনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে খোঁজ নেন এ প্রতিবেদক। দেখা গেল, এটি আগের মতোই খালি পড়ে আছে।

অব্যবহৃত থাকায় ভবনটি দিন দিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এক বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। ভবন নির্মাণসংক্রান্ত ফাইলের নথি এখনো পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি এর নকশাও।

ঢাকায় গত কয়েক বছরে ঢাকা টাওয়ারের মতো সরকারি বেশ কিছু বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ভবনের খালি পড়ে থাকা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে প্রথম আলো। প্রতিবেদন প্রকাশের পর এসব স্থাপনার অবস্থা এখন কী, সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, কিছু ভবন চালু হয়েছে। যেমন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন, তথ্য কমিশন ভবন, ডাক ভবন, মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন ভবন। তবে কিছু ভবন এখনো আগের মতোই খালি পড়ে আছে।

ঢাকা টাওয়ার নামের ভবনটি নির্মাণ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। ভবনটি নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নেয়নি ঢাকা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনকি নকশাও পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যাতে ধরা না পড়েন, সে জন্য সব ধরনের নথি গায়েব করে ফেলা হয়েছে। এসব অনিয়মের সঙ্গে কারা জড়িত, তাঁদের নাম প্রকাশ করছে না কেউ। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। আবার রহস্যময় কারণে ভবনটি চালুও করা হচ্ছে না। ফলে ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। ভবনে দোকান ও জায়গা (স্পেস) ভাড়া নিতে যাঁরা টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।

ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবার চোখের সামনে ২০ তলা ভবন হয়ে গেল। অথচ এর নকশা পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো নথি পাওয়া যাচ্ছে না। এটা কীভাবে সম্ভব?’ তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে জানার চেষ্টা করছি কেন ভবনটি বন্ধ, মন্ত্রী-সচিব কিছুই বলছেন না।’

ডলার–সংকটে আমদানি ব্যয় কমছে, অনিশ্চয়তায় উৎপাদন খাত

২৫ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো

ডলার–সংকটের পরিস্থিতিতে সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তাতে বিলাস পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কিছুটা কমেছে বটে। তবে ডলার–সংকট কমেনি, বরং বেড়েছে। এ কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমতে শুরু করেছে। ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন কমার প্রবণতা শুরু হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই–সেপ্টেম্বরে শিল্প খাতে কাঁচামালভেদে আমদানি ৩ থেকে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হচ্ছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, বস্ত্র, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, প্রাণিখাদ্য, জাহাজ নির্মাণ, সমুদ্রগামী জাহাজ, ওষুধ, রাসায়নিক ইত্যাদি।

উদ্যোক্তারা বলছেন, বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় রপ্তানিমুখী বিভিন্ন খাতের কাঁচামাল আমদানি কমেছে। তবে আমদানি প্রতিস্থাপকশিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমার কারণ দুটি; এক. ডলার–সংকট, দুই. চাহিদা কম। তা ছাড়া আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচামাল আমদানি কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে শিল্প খাতে উৎপাদন কমতে থাকবে। আর ধারাবাহিকভাবে এই প্রবণতা কর্মসংস্থান ও জিডিপির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, অর্থনীতিতে দুষ্টচক্র তৈরির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। শক্ত হাতে জরুরি ভিত্তিতে এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। অর্থ পাচার ও হুন্ডি রোধে কঠোর পদক্ষেপ এবং প্রবাসী আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, ডলার–সংকট আরও তীব্র হলে অর্থনীতি বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।

শ্রমজীবি মানুষ

নির্মাণকাজে ছিল না কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা

৩১ জুলাই ২০২৩, প্রথম আলো

গাজীপুরের টঙ্গীতে সিটি করপোরেশনের নালা নির্মাণকাজের সময় একটি বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ধসে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে টঙ্গীর ঝিনু মার্কেটের দেওয়ানবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সেখানকার কর্মরত শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, নির্মাণকাজে প্রয়োজনীয় কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকার কারণেই সীমানাপ্রাচীর ধসে ওই শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর বন্ধ রয়েছে কাজ। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না নির্মাণকাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারের।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের কড়ইকান্দি গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে বকুল হোসেন (৩৫), নর্দানগর গ্রামের মো. আকন্দের ছেলে মো. সুলতান (৫০) ও কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর গ্রামের ধনু মিয়ার ছেলে মো. সবুজ (৩৫)। নিহত তিনজনেরই মাথায় আঘাত ছিল। এ ছাড়া নয়ন (২৫) ও মাহাতাব (৩০) নামের আরও দুজন আহত হন। এর মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য মাহাতাবকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টঙ্গীর ঝিনু মার্কেটের দেওয়ানবাড়ি এলাকায় (৪৩ নম্বর ওয়ার্ড) সিটি করপোরেশনের নালা নির্মাণের কাজ চলছে। কয়েক দিন ধরে খননকাজ করছেন শ্রমিকেরা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কাজ। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সেখানে কাজ করছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক। এর মধ্যে হঠাৎ নালাঘেঁষা একটি বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ধসে পড়ে কর্মরত শ্রমিকদের ওপর। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় ব্যক্তি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পাঁচজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যান টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে। পরে সেখানে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছুদিন আগেও দেয়ালটির কিছু অংশ ভেঙে পড়ছিল। আমরা তখন বাঁশের ঠেকা দিয়ে নিছিলাম। কিন্তু তারপরও আমরা ঠিকাদারের কথামতো কাজে গেলে এ ঘটনা ঘটে। আমাদের চোখের সামনে তিনটা লোক মারা গেল।’

গতকাল রোববার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণকাজ চলমান নালাটি একটি সরু গলির মতো জায়গায়। দুই পাশে বহুতল ভবন। সমতল থেকে নালার গভীরতা প্রায় আট ফুট। সীমানাপ্রাচীরটি ছিল একদম নালাঘেঁষা। ঘটনাস্থলে এখনো পড়ে আছে ধ্বংসাবশেষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নালাটি নির্মাণের ঠিকাদারের দায়িত্ব পান স্থানীয় ঈমান আলী নামের এক ব্যক্তি। তাঁর তত্ত্বাবধানে ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিক তিন থেকে চার মাস ধরে নালা নির্মাণ করছেন। এ বিষয়ে জানতে ঈমান আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।’

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পুরো ঘটনাটি তদন্ত করছি।’

অযত্নে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি, শ্রমিকেরা এখনো বেকার

০৫ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

১৯৫৬ সালে খুলনার খালিশপুরে ১১৩ একর জমির ওপর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাটকল ক্রিসেন্ট জুট মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ৬৫ বছর চলার পর লোকসানের কারণে ২০২০ সালের জুলাই মাসে এটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয় সরকার। শ্রমিকদের পাওনাও কিছুটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

পাটকলটি তিন মাস পর আবার চালু হবে, এমন প্রতিশ্রুতিও তখন দেওয়া হয়; কিন্তু তিন বছরেও তা চালু হয়নি। অযত্নে-অবহেলায় অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে ক্রিসেন্ট জুট মিলের যন্ত্রপাতি। কোনো বরাদ্দ না থাকায় রক্ষণাবেক্ষণও নেই। ফলে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন এই পাটকলের শত শত তাঁত মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ক্রিসেন্ট জুট মিল বন্ধ করে দেওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক। তাঁদের অনেকেই এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ কেউ মুটে-মজুরের কাজ করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিলের পর ক্রিসেন্ট জুট মিলই হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় জুট মিল।

সম্প্রতি খুলনার খালিশপুরের ক্রিসেন্ট জুট মিলে গিয়ে দেখা গেছে, একসময়ের কর্মচাঞ্চল্যে মুখর এলাকাটি অনেকটাই পোড়োবাড়ির মতো পড়ে আছে। শ্রমিক কলোনির ভবনগুলোর জীর্ণদশা। ভবনের দেয়ালে গুল্মজাতীয় গাছ জন্মে গেছে। দু-একজন নিরাপত্তারক্ষী ও কয়েকটি শ্রমিক পরিবার ছাড়া সেখানে আর কেউ থাকেন না। তবে গাছগাছালিতে ভরা কলোনিটির কিছুই বদলায়নি। শুধু মানুষ নেই। তিন বছর আগে দুই হাজার শ্রমিক পরিবারকে কলোনি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

কলোনি পেরিয়ে একটু এগোলেই মূল কারখানার গেট। নিরাপত্তারক্ষীরা প্রবেশে বিধিনিষেধের কথা শোনান। পরে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই মন খারাপের আরও গল্প শুরু। ২ নম্বর কারখানার ভেতরে কয়েক শ তাঁত মেশিন, যেখানে একসময় বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কাজ করতেন। কারখানা ভবনজুড়ে পাট থেকে সুতা তৈরির যন্ত্রপাতি, চট সেলাইয়ের মেশিন, ওজন করার যন্ত্র, চটের বস্তায় ছাপ দেওয়ার যন্ত্রগুলো সারি সারি সাজানো। তবে তাঁত মেশিনে জং ধরেছে, এটা-সেটা খুলে পড়ে গেছে। অনেক সেলাই মেশিন ভাঙা। ওজন করার যন্ত্র অকেজো। জানা গেল, যন্ত্রগুলো ঠিকঠাক রাখতে কোনো বরাদ্দ ও কর্মী নেই।

জানা গেছে, ক্রিসেন্ট জুট মিলের ৩টি কারখানায় এখন মোট ১ হাজার ১০০ তাঁত মেশিন আছে। পঞ্চাশের দশকে যখন মিলটি চালু করা হয়, তখন যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত জেমস মেকি অ্যান্ড সন্স কোম্পানি থেকে এসব স্বয়ংক্রিয় তাঁত মেশিনসহ অন্য যন্ত্রপাতি আনা হয়েছিল। দৈনিক ১০০ টন পাটের বস্তা ও চট—এসব পণ্য বানানোর সক্ষমতা ছিল মিলটির। পাটের সোনালি দিনে এই কারখানার পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো।

কারখানা ভবন থেকে বেরিয়ে একটু এগোতেই চোখে পড়ল পাট বিভাগের ভবন। এটি ছিল চাষি ও ব্যাপারীদের কাছ থেকে পাট কেনার জায়গা। পাটকল বন্ধ হয়ে গেলেও জীর্ণ ভবনের দেয়ালের বোর্ডে এখনো ২০২০ সালের ২০ জুলাইয়ের পাটের দর লেখা রয়েছে।

আরেকটু এগোতেই কামারশালা, যেখানে মেশিনের লোহালক্কড় সারাই করা হতো। ওই ভবনও এখন পোড়োবাড়ির মতো দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই জীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে কার্পেন্টার ভবন। এর সামনেই যানবাহন বিভাগ। সেখানে একটি বাস ও  ট্রাক পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয় কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপক রইছ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিলটির যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিজেএমসির পক্ষ থেকে কোনো বরাদ্দ নেই। মাঝেমধে৵ কারখানার ভেতরের ময়লা-আবর্জনা ঝাড়ামোছা করা হয়। এসব মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ করতে তেল কিনতে হবে। ১০০-এর মতো মিস্ত্রি লাগবে। আগের মিস্ত্রিরা তো চাকরি হারিয়ে চলে গেছেন। তাঁদের কোথায় পাব?’

শ্রমিকদের মানবেতর জীবন

ক্রিসেন্ট জুট মিলে ৩ হাজার ৮০০ স্থায়ী শ্রমিক ও ২ হাজার অস্থায়ী শ্রমিক ছিলেন। অস্থায়ী শ্রমিকেরা ‘বদলি শ্রমিক’ হিসেবে পরিচিত। উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করার পর তাঁদের বেশির ভাগের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। কিন্তু শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাঁদের দাবি অনুযায়ী টাকা দেওয়া হয়নি। অস্থায়ী শ্রমিকেরা এই অভিযোগ বেশি করেছেন। তাঁদের দাবি, নামের বানান ঠিক না থাকায় অনেকে টাকা পাননি।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকদের প্রাপ্য অর্থ দেওয়া হয়নি। বদলি শ্রমিকদের অনেকে টাকা পাননি। তিন মাস পর পাটকল চালু হবে আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের বের করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের অনেকেই এখন আশপাশের এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রিসেন্ট জুট মিলের গেটের কাছে প্রতিদিন সকালে ২০-২৫ জনের জটলা থাকে। কারণ, পাশেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুদাম। সেখানে মালবোঝাই ট্রাক এলে তা নামানোর কাজ করেন পাটকলের এসব সাবেক শ্রমিক। তবে সব দিন কাজ মেলে না। তাঁদের কেউ একসময় মেকানিক ছিলেন, কেউবা ছিলেন মিস্ত্রি। কেউ মেশিন-সহায়ক ছিলেন। এখন তাঁরা মুটে-মজুরের কাজ করে কোনোমতে জীবন যাপন করছেন।   

ক্রিসেন্ট বাজারে কথা হলো মো. খলিল নামের একজনের সঙ্গে। তিনি জানান, নিজে বদলি শ্রমিকের কাজ করতেন। কাজ পেতেন রাতের পালায়। খলিলের দাবি, তিনি ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা পাননি। নিঃস্ব অবস্থায় চাকরি হারিয়েছেন। এখন ভাড়ায় ইজিবাইক চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান।

জানা গেছে, ক্রিসেন্ট জুট মিল চালানো হয়েছে ২০২০ সালের ৩ জুলাই পর্যন্ত। কিন্তু কাগজে-কলমে দেখানো হয়েছে, ৩০ জুন উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। ফলে স্থায়ী শ্রমিকদের একটি ইনক্রিমেন্ট যোগ করা হয়নি। এ কারণে ১৫-২০ বছর ধরে কাজ করা শ্রমিকেরা এক থেকে দেড় লাখ টাকা কম পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন।

চীনের আগ্রহ

এদিকে ক্রিসেন্ট জুট মিল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে গত তিন বছরে তিনবার দরপত্র আহ্বান করে বিজেএমসি। কিন্তু সাড়া মেলেনি। তবে সম্প্রতি বে গ্রুপ আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এই শিল্পগোষ্ঠী চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে জুতার কারখানা করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে চীনের একটি প্রতিনিধিদল ক্রিসেন্ট জুট মিল এলাকা পরিদর্শন করে গেছে। কোরিয়া ও ভারতের একটি কোম্পানির সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে বলে শোনা যায়।

শুধু ক্রিসেন্ট জুট মিল নয়, খালিশপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুটি মিল, দৌলতপুর জুট মিল—তিনটি পাটকলও ২০২০ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ওই তিন পাটকলের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এসব পাটকলের যন্ত্রপাতিও নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি শিল্পনগর হিসেবে খুলনার সেই জৌলুশও যেন মুছে যাচ্ছে।

ঐতিহ্যবাহী ক্রিসেন্ট বিদ্যালয়ও দুরবস্থায়

ক্রিসেন্ট জুট মিল চালুর বছরই; অর্থাৎ ১৯৫৬ সালে এর চত্বরেই প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনার ঐতিহ্যবাহী ক্রিসেন্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ২০২০ সালে ক্রিসেন্ট জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর অনেক শ্রমিক এই অঞ্চল ছেড়ে চলে যান। ফলে গত তিন বছরে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। ২০২০ সালে যেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী ছিল, সেখানে এখন আছে ৩৫০ জনের মতো। শিক্ষকের সংখ্যাও ২৫ থেকে কমে ১০-এ নেমেছে।

বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খাদিজা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কত প্রিয় শিক্ষার্থী ছিল আমাদের। তাদের বাবারা (শ্রমিক) চাকরি হারিয়েছেন। শহরে থেকে পড়াশোনার সামর্থ্য নেই। তাই পরিবারের সঙ্গে গ্রামে কিংবা অন্য কোথাও চলে গেছে আমাদের সেসব ছাত্রছাত্রী। তাদের অনেকেই হয়তো পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। তাদের কথা মনে পড়লে খুব কষ্ট লাগে।’

লাঠিপেটা করে মালিবাগে রেললাইন থেকে অস্থায়ী শ্রমিকদের সরিয়ে দিল পুলিশ

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

রাজধানীর মালিবাগে রেললাইন আটকে কর্মসূচি পালন করা রেলের অস্থায়ী শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আজ রোববার সকাল ১০টার পর থেকে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন শুরু করেন। বেলা দুইটার পর তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

শ্রমিকদের অভিযোগ, রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকেরা চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে কর্মসূচি পালন করছেন। এর ধারাবাহিকতায় আজও কর্মসূচি পালন করছিলেন। দুপুরে হঠাৎ পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে রেললাইন থেকে সরিয়ে দেয়।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশের লাঠিপেটার সময় অনেকেই আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত তিনজনকে পুলিশ হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে।

হাসেম ফুডে অগ্নিকাণ্ড

৫৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মালিক ও তাঁর চার ছেলেকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মালিকপক্ষকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। যদিও তদন্তে কারখানার মূল নকশা না মানা, শর্ত ভঙ্গ করে অন্য পণ্য উৎপাদন, অনুমতি ছাড়া কারখানা সম্প্রসারণ, অগ্নিনির্বাপণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না রাখাসহ নানা ধরনের অনিয়ম পেয়েছে সিআইডি। অভিযোগপত্রে কারখানার চার কর্মকর্তা ও সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দুই পরিদর্শককে আসামি করা হয়েছে।

গতকাল রোববার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক মোকছেদুর রহমান ১৩ পৃষ্ঠার এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ঘটনার দুই বছর এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো। আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলার দ্বারা মৃত্যু সংঘটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ধারায় একজন আসামির সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। মামলাটি করা হয়েছিল হত্যা মামলা হিসেবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাসেম ফুডে আগুনে পুড়ে ৫৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সিআইডি। আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

অভিযোগপত্রে অব্যাহতি পাওয়া এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন হাসেম ফুডের মালিক আবুল হাসেম (৭০), তাঁর চার ছেলে হাসিব বিন হাসেম (৩৯), তারেক ইব্রাহিম (৩৫), তাওশীফ ইব্রাহিম (৩৩) ও তানজীম ইব্রাহিম (২১)। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন—কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহনে শাহ আজাদ (৪৩), উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ (৫৪), সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কাম প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন (২৬) ও প্রধান প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল ও ইলেট্রিক) ওমর ফারুক (৩৮), কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক নেছার উদ্দিন (৪০) ও সৈকত মাহমুদ (৩৭)।

দুর্ঘটনাকবলিত ভবনে শ্রমিকদের বের হতে ভেতর ও বাইরে থেকে খোলার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রতিটি ফ্লোর নেট দিয়ে শ্রমিকদের আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। সিঁড়িও তালাবদ্ধ ছিল। কারখানায় শ্রমিকদের ফায়ার প্রশিক্ষণ ও ফায়ার কর্মী ছিল না।

২০২১ সালের ৮ জুলাই রূপগঞ্জের হাসেম ফুড কারখানায় আগুনে পুড়ে কর্মকর্তা-শ্রমিকসহ ৫৪ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম ও তাঁর চার ছেলেসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। আবুল হাসেমসহ ছয় আসামি বর্তমানে জামিনে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোকছেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তার আগে আরও চার কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেছেন। তদন্তে তাদের প্রাপ্ত ফলাফল তিনি নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করেন। এরপর কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কারখানার মালিকসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলার ফলাফল বাদীকে জানানো হয়েছে। মামলায় বাদীসহ ৯১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার বাদী নাজিম উদ্দিন আহমেদ বর্তমানে চট্টগ্রামে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত। এ বিষয়ে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার ফলাফলের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁকে কিছু জানাননি। এই ঘটনায় কারখানার মালিক দায় এড়াতে পারেন না। এ কারণে হত্যা মামলা হয়েছিল। অভিযোগপত্রে কী আছে, তা দেখে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

হাসেম ফুডে যত অনিয়ম

তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁর দাখিল করা অভিযোগপত্রে কারখানার বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরেছেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩৪ হাজার ৫০০ বর্গফুটের হাসেম ফুড কারখানার মূল নকশায় তিনটি সিঁড়ি থাকলেও নির্মাণকালে দুটি সিঁড়ি রাখা হয়। ২০২০ সালের ২ মে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ম্যাংগো জুস উৎপাদনের জন্য ছাড়পত্র নেওয়া হলেও কারখানায় শর্ত ভঙ্গ করে লাচ্ছা সেমাই, টোস্ট, মুড়ি, ক্যান্ডি, জ্যাম জেলি, আচার, ম্যাংগো বার, সফট ড্রিঙ্ক ইত্যাদি খাবার উৎপাদন হতো। দুই দশমিক ৫৯ একর জমির ছাড়পত্র নেওয়া হলেও অনুমতি ছাড়া নসিলা উৎপাদনের জন্য কারখানা সম্প্রসারণ করা হয়।

কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়নি উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত ভবনে শ্রমিকদের বের হতে ভেতর ও বাইরে থেকে খোলার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রতিটি ফ্লোর নেট দিয়ে শ্রমিকদের আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। সিঁড়িও তালাবদ্ধ ছিল। কারখানায় শ্রমিকদের ফায়ার প্রশিক্ষণ ও ফায়ার কর্মী ছিল না। দুর্ঘটনাকবলিত ভবনের নিচতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল। সেই দাহ্য পদার্থের সঙ্গে উৎপাদিত মালামাল মজুত করে রাখা হয়েছিল। কারখানার ভবনের ভেতরে মেশিন স্থাপনে দূরত্বের লেআউট প্ল্যান মানা হয়নি। এগজাস্ট ফ্যানও ভবনের ভেতরে রাখা ছিল। নকশা অনুযায়ী কারখানার দক্ষিণ পাশে ২০ ফুট রাস্তা ও পূর্ব পাশে ১০ ফুট এবং পশ্চিম পাশে ২০ ফুট রাস্তা রাখার কথা থাকলেও তা রাখা হয়নি। শিশু আইন অমান্য করে শিশুশ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আগুনে পোড়া অধিকাংশ মৃতদেহ শিশুর বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নিয়মিত কারখানাটি পরিদর্শন করেনি। অথচ কারখানার লাইসেন্স অসাধুভাবে নবায়ন করে গেছেন। প্রতিষ্ঠানের উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া ও পরিদর্শক নেছার উদ্দিন কারখানা পরিদর্শনে উদাসীনতা দায়িত্বে অবহেলার কারণে ৫৪ শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক শাহ্ আলম যথাযথভাবে কারখানা পরিদর্শন না করে সনদ নবায়ন করেছেন। অবেহলার কারণে ৫৪ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না।

আগুন লাগার কারণ

হাসেম ফুডসের মালিক ও তাঁদের নিয়োগতকৃত কর্মকর্তাদের অপরিকল্পনা অব্যবস্থাপনাজনিত কারণে বৈদ্যুতিক গোলযোগে সৃষ্ট আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে বলে তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

হাসেম ফুড সেন্ট্রাল স্টোরে কম্প্রেসোর মেশিনের গরম বাতাস বের হতে দুটি এগজাস্ট ফ্যান খোলা জায়গায় না লাগিয়ে ফ্লোরের ভেতরে লাগানো ছিল। এগজাস্ট ফ্যানের গরম বাতাস দাহ্য পদার্থের ওপর পরে উত্তপ্ত থাকত। কেব্‌লের ইনসুলেশন গলে একটা আরেকটার ওপর লেগে ভোল্টেজ কারণে আগুনের স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়ে তা কেব্‌লের ইনসুলেশনের ওপর পড়ে। একপর্যায়ে আগুন নিচতলার দাহ্য বস্তুর ওপর ধরে যায়। এগজাস্ট ফ্যানের কারণে আগুন ধরে যায়। আগুন সিঁড়ি, লিফট, নিচতলা, থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত কনভয়ের বেল্ট, কেব্‌ল ডকেট, জানালার কাছে রক্ষিত ফিনিস গুডস, রেজিন, ভোজ্যতেল, প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের মালামাল, গুদামের কারণে আগুন নিচতলা থেকে ষষ্ঠতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

মালিক ও চার ছেলের বিরুদ্ধে ‘সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই’

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মামলার এজারনামীয় আসামি কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহেন শাহ, উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কাম এডমিন সালাউদ্দিন, প্রধান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক ও কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পদিরর্শন অধিদপ্তর পরিদর্শক নেছার উদ্দিন ও সৈকত মাহমুদ পেনাল কোডে ৩০৪ (ক) ৩৪ ধারায় (অবহেলাজনিত মৃত্যু) প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।

তদন্তকালে আবুল হাসেম ও তাঁর চার ছেলের বিরুদ্ধে মামলায় জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অভিযোগে বর্ণিত পেনাল কোড ৩০২ (হত্যা)/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭ ধারায় সত্যতা পাওয়া যায়নি। আবুল হাসেম ও তাঁর চার ছেলে বিরুদ্ধে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য–প্রমাণ না পাওয়ায় তাঁদের অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা, সাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ভিডিও ফুটেজ, মরদেহ সুরতহাল, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন, হাসেম ফুডসের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য কার্যকলাপ, উদাসীনতাসহ নিজেদের খুশিমতো কারখানা পরিচালনা করার কারণে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। এতে কারখানা কর্মকর্তা-শ্রমিক ৫১ জন আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। আগুনের ঘটনায় তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে মারাত্মক আহত হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

পোশাকশিল্পে ৩৫ বছর বয়স হলেই বেকার হওয়ার শঙ্কা

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো

অন্যান্য দিনের মতোই গত ২৭ জুন কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিলেন পেয়ারা বেগম। গাজীপুরের টিআরজেড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে তিনি জুনিয়র ফিনিশিং অপারেটর। পরদিন থেকে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে। বেলা ১১টার দিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাঁকে ডেকে পদত্যাগ করতে বললেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে তাঁর বয়স ৫০ বছর। পেয়ারা বেগমের পুরো পরিবারের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেল।

এই বছরেরই ২৮ জানুয়ারি গাজীপুরের আরেক পোশাক কারখানা লিজ অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৫৩ বছর বয়সী কর্মী রওশন আরার চাকরি চলে যায়। তিনি সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন।

একই এলাকার তাজ নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে দুই বছর কাজ করার পর গত ১৫ মে ছাঁটাই হন ৪৮ বছর বয়সী ফায়েজা বেগম। তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ অপারেটর।

গত ২৭ ও ২৮ জুলাই এই তিন নারীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলো। কোনো পোশাক কারখানায় গেলে পেয়ারা, রওশন ও ফায়েজাদের বয়সী নারীদের উপস্থিতি বিরল। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, পোশাক কারখানায় নারীদের গড় বয়স ২৫ বছর। ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নারীর হার ১০ শতাংশের বেশি নয়। অন্যান্য চাকরি থেকে অবসরের স্বাভাবিক বয়স যেখানে ৫৯ বছরের কম নয়, সেখানে পোশাক কারখানায় ৩৫-৪০ বছর বয়স মানেই ‘বুড়ো’ হয়ে যাওয়া। অথচ ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের (২০২২-২৩ অর্থবছর) রপ্তানি আয়ের এই খাতে অভিজ্ঞতার কোনো মূল্য নেই। কখনো তাঁদের চাকরি হারাতে হয়, কখনো চাকরি ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।

এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) তৈরি ‘পোশাক কারখানার কর্মীদের ওপর জরিপ প্রতিবেদনে’ (আ সার্ভে রিপোর্ট অন গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স অব বাংলাদেশ ২০২০) বলা হয়েছে, দেশে পোশাককর্মীদের গড় বয়স ২৬ বছর। নারীদের গড় বয়স ২৫ ও পুরুষের ২৭ বছর। জরিপটি পরিচালনা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

বন্ধ পাটকল পুনরায় চালুর দাবি পাট চাষী ও ব্যবসায়ী সমিতির

১১ সেপ্টেম্বর ২৩, সমকাল

বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের মধ্যে কমপক্ষে ১০টি পাটকল সরকারিভাবে পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পাট চাষী ও পাট ব্যবসায়ী সমিতি।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশ পাট চাষী ও পাট ব্যবসায়ী সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আজিজ বলেন, ২০২০ সালের ১  জুলাই একটি নোটিশের মাধ্যমে বিজেএমসি’র অধীন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কথা ছিল পাটকলগুলো তিনমাসের জন্য সাময়িক বন্ধ করা হবে। কিন্তু প্রায় সাড়ে তিন বছর পার হলেও এখনও কোনো মিল চালু হয়নি। সরকার বিভিন্নভাবে ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দিয়ে মিলগুলো চালাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে কেউ কেউ কিছু কিছু মিল লিজ নিয়েও উৎপাদন করছেন না। ফলে মিলগুলোর মেশিনপত্র মরিচা পরে অকেজো হয়ে যাচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা কলোনি ছেড়ে অন্যত্র মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের সন্তানদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। এর ওপর নির্ভরশীল পাটচাষী ও ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ীরাও চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। অথচ মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বহাল আছেন। এমনকি কোনো কাজ না করেও সাড়ে তিন বছর যাবৎ বিজেএমসি’র প্রধান কার্যালয়সহ ২৬টি জুট মিলের প্রায় তিনশত কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতি মাসে বেতন নিয়ে যাচ্ছেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কেমন আছেন রিকশাচালক, মুচি কিংবা ভেলপুরি বিক্রেতারা?

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

দেশে দিনদিন বেড়েই চলেছে দ্রব্যমূল্য। ক্রমাগত বাড়তে থাকা পণ্যমূল্যে ধুঁকছে নিম্ন আয়ের মানুষ। আগস্টে প্রধান খাদ্যদ্রব্যগুলোর বৈশ্বিক মূল্য দুই বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছালেও, বাংলাদেশে এই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৪%, যা ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৯.৯২%।

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যতটুকু খাবার প্রয়োজন, তা যোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে এ শ্রেণির মানুষকে। কিভাবে চলছেন তারা?

মুচি রামপ্রসাদ  

‘ঢাকা শহরে পানিটাও তো কিনা খাইতে হয়। ঘরের পানির কল কোনো সময় নষ্ট হয়া গেলে টাকার অভাবে কয়েকদিন পানি ছাড়াই চলি। বাজার করতে গেলে দিশাহারা লাগে।’ বলছিলেন ৪৬ বছর বয়সী রামপ্রসাদ। রাজধানীর ব্যস্তমত রাস্তার পাশে বসে প্রায় ২৯ বছর যাবত মুচির কাজ করছেন তিনি।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের গেটের কোণায় রামপ্রসাদের বসার জায়গা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে বসেই জুতা সেলাই করেন। সারাদিনের কাজ শেষে হাতে থাকে সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।

মধ্যবয়সী লোকটি থাকেন রাজধানীর গোপীবাগের ভাড়া বাসায়। মা, স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে এক ঘরেই বসবাস। ঘরের ভাড়া ছয় হাজার টাকা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি তিনি।

ছয়-সাত বছর আগের তুলনায় বর্তমানে কয়েকশো টাকা দৈনিক রোজগার বেড়েছে রামপ্রসাদের। কিন্তু আগের চেয়ে তার জীবন এখন অনেক কঠিন। কোনো কোনো দিন পরিবার নিয়ে থাকতে হয় না খেয়েও। তার ভাষ্যে, ‘আগে ইনকাম হয়তো কম ছিল, কিন্তু তখন চলছি ভালো। জিনিসপত্র সস্তা ছিল, সবকিছু মোটামুটি কিনতে পারছি।’

নিত্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দামের কথা উল্লেখ করে বলছিলেন, ‘পোল্ট্রি মুরগির মাংস ছয় মাসেও একবার খাওয়া পড়ে না। খাসির মাংসের কথা তো চিন্তাও করি না। যেইডা গরীবেরা খাইতাম, নিম্নতম খাবার, পাঙ্গাস মাছ, তেলাপিয়া মাছ- এডিরও আমরা ধারেকাছে যাইতে পারি না এহন। বাচ্চাকাচ্চাদের জন্য ডিম কেনারও উপায় নাই। সবজির দামও অনেক। ভালোগুলা তো কিনতে পারি না। আলু-টালু যেগুলা নষ্ট আলাদা কইরা রাখে, ওইডা কিনা আনতে হয়।’

ঘরে বৃদ্ধা মা অসুস্থ, স্ত্রীর শরীরও দুর্বল খুব। লো প্রেশারের কারণে প্রায়ই মাথা ঘুরে পড়ে যান তিনি। রামপ্রসাদ নিজেও ভুগছেন হার্টের অসুখে। কিন্তু চিকিৎসা করানোর সাহস করে উঠতে পারেন না। হাসপাতালের সামনে বসে কাজ করেন বলে ডাক্তার হয়তো সহজেই দেখাতে পারবেন, কিন্তু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধপত্র কেনার ক্ষমতা নেই বলে টিকে থাকতে হয় শরীরকে পাত্তা না দিয়েই।

বড় দুই মেয়ের বিয়ের সময় ঋণ হয়েছে অনেক। প্রতি মাসেই ধারদেনায় চলতে চলতে এখন তার ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকায়। তিন দশক আগে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে এসে রাজধানীতে জীবিকার খোঁজে আশ্রয় নেওয়া রামপ্রসাদের রোজ কাটে পরের দিন খেতে পাবেন কি না সেই দুশ্চিন্তায়।

ভেলপুরি বিক্রেতা মুজিবুর রহমান

রোজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ভেলপুরি বিক্রি করেন মুজিবুর রহমান। স্কুল ছুটির পর কাজে বিরতি নিয়ে বাসায় ফিরেন কিছুক্ষণের জন্য। এরপর আবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসেন হাতিরঝিলের পাশে। দুইবেলা ভেলপুরি বিক্রি করে মুজিবুরের দৈনিক আয় হয় হাজার-বারোশো টাকার মতো।

দুই ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। মেয়েটা এবার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে ইস্পাহানী বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে, ছেলেটা উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছে ঢাকা উদ্যান সরকারি কলেজে।

পরিবার নিয়ে দিলুরোড এলাকায় সাবলেট থাকেন মুজিবুর রহমান। সব বিলসহ মাস শেষে বাসা ভাড়া দিতে হয় প্রায় সাড়ে ১১ হাজার টাকা। মেয়ের স্কুল আর প্রাইভেটের মাসিক বেতনে যায় ছয় হাজার টাকার মতো। ছেলের প্রায় তিন হাজার টাকা। মাসের বাকি সব খরচ চালাতে প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হয় মুজিবুরকে।

‘কোনোরকমে বাঁইচা আছি এইখানে। ঢাকা শহরে থাকতে গেলে সব খরচই বেশি। অন্যকোনো খরচ তো কমানোর উপায় নাই, খাবার-দাবারেই যত কমানো যায়। শাক, ডাল বা অন্য সবজিই কিনি বেশি। সপ্তাহে একদিন হয়তো তেলাপিয়া মাছ কিনতে পারি। ছয় মাস আগে মুরগি খাওয়া হইছিল, বাসায় মেহমান আসা উপলক্ষে। কুরবানির ঈদ ছাড়া গরু চোখে দেখার সুযোগ নাই। জীবনের এখন নাভিশ্বাস অবস্থা,’ বলছিলেন মুজিবুর।

আট বছর আগে ভেলপুরির ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তখনের চেয়ে এখন সব কাঁচামালের দাম অন্তত তিনগুণ বেড়েছে বলে জানান তিনি। আটবছর আগের ও পরের দাম তুলনা করে বলেন, ‘টক বানাই যে তেঁতুলটা দিয়া এইডার দাম ছিল ৫৫ টাকা কেজি, এখন এইডা কিনি ১৫০ টাকায়। এক কেজি শুকনা মরিচ কিনতাম ১৭০ টাকায় আর এখন এইডার দাম ৪৪০ টাকা। পুরিগুলা আগে কারখানা থেইকা কিনতাম ৭০ পয়সা-১ টাকা পিস কইরা। এখন তিন টাকা হয়া গেছে।’

নিজে কষ্ট করে হলেও ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের পড়ালেখায় কখনো ছাড় দিতে চাননি মুজিবুর রহমান। কিন্তু দিন দিন দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত পরিবার নিয়ে শহরে টিকে থাকতে পারবেন কি না তা নিয়েই এখন সন্দিহান তিনি।

রিকশার চাকায় দুলাল শেখের কঠিন জীবন

‘যখন জমা খরচ ২০ টাকা ছিল, তখন থেইক্যা রিকশা চালাইতেছি। এখন রিকশার জন্য প্রতিবেলা জমা দেই ৭০ টাকা। দুই বেলা মিলাইয়া অখন খরচ হয় ১৪০ টাকা। আরো খরচ তো আছেই,’ বলছিলেন রিকশা চালক দুলাল শেখ। গত ৩৩ বছর ধরে ঢাকা শহরের অলিগলিতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। 

গত ৩৩ বছরে দুলাল দেখেছেন ঢাকার অনেক উত্থান-পতন। শহুরে জীবনে আয়-ব্যয়ের সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে হাপিত্যেশ করেছেন বহুবার। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার খরচের পাশাপাশি জীবনমানের ব্যয় সবই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গত কয়েক বছরে। সবশেষে চলতি বছরের খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির (১২.৮২ শতাংশ) সাথে তাল মিলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি কী- তা বোঝেন না দুলাল। কিন্তু বোঝেন খাবারের দাম বেড়েছে। তাই অনেকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেই বলেন, ‘মাছ, আলু, ডিমের দাম আগের থেইক্যা অনেক বাড়ছে।’ 

দুলাল শেখের রিকশা চালানো শুরু অভাব থেকেই। ১৯৮৯ সালের শেষদিকে জামালপুর থেকে প্রথম ঢাকা শহরে আসেন তিনি। নিরিবিলি জামালপুর ছেড়ে মনে খানিকটা খেদ নিয়েই ব্যস্ত শহর ঢাকায় পা রেখেছিলেন। মাথায় তখন অজস্র চিন্তা। একে তো পরিবার ছেড়ে নতুন জায়গা, তার উপর খুঁজতে হবে কাজ। শহর থেকে অর্থ উপার্জন করে পাঠাতে হবে পরিবারের কাছে।

নব্বই দশকের শুরুতে ঢাকায় কাজ খুঁজতে এসে বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছিলো তাকে। পড়ালেখার ডিগ্রিও সেভাবে ছিল না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু পারিবারিক অনটনে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করতে পারেননি। জামালপুরে থাকাকালীন যদিও বাবাকে মাঠের কাজে সাহায্য করতেন, কিন্তু তাতে সংসারের অভাব কিছু কমেনি। তাই বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসা আর এখানেই জীবিকার অবলম্বন হিসেবে সঙ্গী করেন রিকশাকে। 

গত ৩৩ বছরে রিকশার চাকার সাথে সাথে ঘুরেছে দুলালের জীবনের চাকাও। পরিবার বড় হয়েছে, চুল দাঁড়িতেও পাক ধরেছে। কিন্তু খরচের খেরো খাতায় আয় ব্যয়ের হিসাব যেন মিলতেই চাইছে না। যাপিত জীবনের হিসাব মেটাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে তার। 

দুলাল শেখ ঢাকায় বর্তমানে একাই থাকেন। ঢাকার তেজগাঁওয়ের দিকে একটি সাবলেটে থাকেন তিনি। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের বাকি সদস্যরা থাকেন জামালপুরে।

রিকশা চালিয়ে প্রতি মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা উপার্জন করলেও খরচের দিক থেকে তা দু ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ঢাকায় নিজে থাকার জন্য ৪ হাজার টাকা আর কিছুটা হাতখরচ রেখে বাকিটা পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। তাতেই চলছে দুলালের সংসার।

ঢাকায় থাকার জন্য এই ৪ হাজার টাকায় কোন কোন খাতে খরচ নির্বাহ করেন, তা জানতে চাইলাম দুলাল শেখের কাছে। দুলাল বলেন, ‘আমি ফ্যামিলির খরচ, নিজের খরচ, ঘর ভাড়া, ভাতের বিল, গোসলের জন্য পাম্পের বিল দেই। পাম্পে গোসল করলে মাসে ৪৫০ টাকা লাগে। দুইবেলায় ভাতের বিল মিলায়ে মাসে ৩ হাজার টাকা দেই। সিট ভাড়া দেই ৫০০ টাকা। সব মিলাইয়া ৪ হাজার থেকে ৫০ টাকা কম।’

অর্থাৎ, খাবার পিছু দুলালের দুপুর আর রাতের জন্য নির্ধারণ থাকে দৈনিক ১০০ টাকা। তবে সকালের খাবারের হিসাব আলাদা। অধিকাংশ দিন সকালে চা-বনরুটি খেয়েই কাটিয়ে দেন দুলাল। তাতেও দৈনিক ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ হয়। ঢাকা শহরে থাকতে গিয়ে দুলালকে গুণতে হয় গোসলের হিসাবও। পাম্পে গোসল বাবদ দৈনিক খরচ হয় ১৫ টাকা। সিট ভাড়া বাবদ প্রতিদিনের খরচ হয় ১৬.৬৭ টাকা।

দৈনিক থাকা, খাওয়া গোসল বাবদ দুলালের খরচের তালিকায় থাকে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। যদি একবেলা রিকশা চালান তাহলে খরচের ফর্দে যোগ করতে হয় ৭০ টাকা আর দুইবেলা রিকশা চালালে আরো ১৪০ টাকা।

দুলালের খরচ প্রতিদিন নির্ধারিত থাকলেও আয় প্রতিদিনের ভিত্তিতে হচ্ছে না। কোনো কোনোদিন অসুস্থ থাকলে কাজেও যেতে পারেন না। সেদিন আয় না হলেও খরচ কিন্তু ঠিকই হয়।

রিকশাচালক হিসেবে ৩৩ বছরের জীবনে রিকশা ভাড়া অনেকবার বাড়লেও বাড়েনি দুলালের আয়। বরং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খরচ। যাত্রীর সাথেও ভাড়া নিয়ে বচসা লেগে থাকে নিত্যদিন। তার উপরে শহরে বেড়েছে রিকশাচালকের সংখ্যা। প্রতিযোগিতা ও নানান প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েই প্রতিদিন লড়াই করে যাচ্ছেন দুলাল শেখ।

টাকা পয়সার সংকট নিয়ে বাড়ি থেকেও নানান সময়ে আসে অভিযোগ। বছর কয়েক আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির আপ্যায়নের দিকেও তাই তাকে খেয়াল রাখতে হয় নিয়মিত।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকার উপায়ও বাতলেছেন দুলাল শেখ। দুলাল বলেন, ‘এই বছর আমি ৫০ টাকা কেজি আলু কিনছি। তবে এমন ভুল আর জীবনে হবে না। কেমনে হবে না? পরের সিজনে বিশ কেজি, চল্লিশ কেজি অথবা এক মণ আলু কিন্যা দেশে ফালায়ে রাখমু’।

পাল্টা প্রশ্নে জানতে চাইলাম, বেশি আলু কিনে রাখলে তো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বীরের মতো হেসে দুলাল শেখ উত্তর দেন, ‘খাটের নিচে বালু শুকায়ে আলু থুয়ে দিলে অমনেই থাকবো। আলু নষ্ট হইবো না।’

নারী শ্রমিকরা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন কি?

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩, বণিক বার্তা

দেশের শিল্প, কৃষি ও সেবাসহ সব খাতের কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে এক দশক ধরে নারীদের জন্য সংকুচিত হচ্ছে শহরের কর্মসংস্থান, যার প্রভাবে শহরকেন্দ্রিক কর্মে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। বিপরীতে এ সময়ে গ্রামে বেড়েছে তাদের কর্মসংস্থান। এছাড়া অনেকে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন অভিবাসী হিসেবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে নারীর শহরকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান হ্রাস ও গ্রামাঞ্চলে বৃদ্ধি পাওয়ার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরে শিল্পায়নের প্রসার, কর্মক্ষেত্রের পরিসর

বৃদ্ধি এবং নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও জীবনযাত্রার ধারাবাহিক ব্যয় বৃদ্ধি, কভিডের প্রভাব ও মূল্যস্ফীতির কারণে নারীরা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ৭ কোটি ৩৪ লাখ শ্রমশক্তি রয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ ও ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৩ সালে গ্রামীণ এলাকায় নারী শ্রমশক্তি ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ, যা ২০২২ সালে ২ কোটি ৯ লাখে দাঁড়ায়। সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র দেখা যায় শহর এলাকায়। ২০১৩ সালে ৪৫ লাখ নারী শ্রমশক্তি শহর এলাকায় কাজ করলেও ২০২২ সালে তা ৪০ লাখে দাঁড়ায়। শতাংশের হিসাবে এক দশকে গ্রামে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী শ্রমশক্তি বেড়েছে। অন্যদিকে শহরে এক দশকে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমশক্তি কমেছে।

আধুনিক ফ্ল্যাটে কেমন আছেন বস্তির বাসিন্দারা?

০৪ অক্টোবর ২০২৩, বাংলা ট্রিবিউন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর বস্তির বাসিন্দাদের জন্য ভাড়াভিত্তিক আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের কালশী সংলগ্ন বাউনিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় ছয় বিঘা জমির ওপর বস্তিবাসীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ১৪ তলা বিশিষ্ট পাঁচটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ইতোমধ্যে তিনটি ভবনের ভাড়াভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাট বস্তিবাসীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য দুটি ভবনে আরও ২৩৩টি ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ শেষে হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে।

সোমবার (২ অক্টোবর) সরজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায় বুঝে পাওয়া এসব ফ্ল্যাটে ইতোমধ্যে মিরপুরের কলাবাগান বস্তির কার্ডধারী বাসিন্দারা বসবাস শুরু করেছেন। অবাসযোগ্য ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে নির্মল পরিবেশে এসে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন তাদের সবাই। কারও কারও ঘরে শোভা পাচ্ছে নতুন আসবাবপত্র। অধিকাংশ ফ্ল্যাটের বারান্দায় বেড়ে উঠছে নানা রকমের ফুল গাছ।

বাসিন্দারা জানান, ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকার অধরা স্বপ্ন এখন বাস্তব। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এসব ফ্ল্যাটে এসে নিজেদের এখন আর বঞ্চিত মনে হচ্ছে না। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি আর স্বল্প আয়ের কারণে এসব ফ্ল্যাটের সহনীয় ভাড়াও এখন চাপ বলে মনে হয় কারও কারও।

সার্ভিস চার্জসহ ৫৯০০ টাকার থাকার সুবিধা পাচ্ছেন বরাদ্দ পাওয়া বস্তিবাসী। ৬২০ থেকে ৭১৯ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি ফ্ল্যাটে রয়েছে দুটি করে বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি ড্রয়িং রুম, বেসিন, রান্নাঘর, একটি আলাদা টয়লেট ও একটি আলাদা বাথরুম। টাইলস করা এসব ফ্ল্যাটের দুই পাশে বাতাস চলাচলের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা।

এছাড়া প্রতিটি ভবনে রয়েছে দুটি লিফট ও প্রশস্ত সিঁড়ি, কমিউনিটি হল, অগ্নিনির্বাপণ ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, ৪০ কেভিএ জেনারেটর ও ২৫০ কেভিএ সাব-স্টেশন, প্রশস্ত ওয়াকওয়ে ও সৌন্দর্যবর্ধনের লাইটিংসহ আধুনিক সুবিধা। প্রতিটি ভবনের নিচতলা বরাদ্দপ্রাপ্তদের সাধারণ ব্যবহার ও ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য ভবনের সামনে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে।

কথা হয় ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া সেলিনা বেগমের সঙ্গে। স্বামী, এক মেয়ে, এক ছেলে ও ছেলের বউ মিলে বর্তমানে এখানে রয়েছে। স্বামী ভ্যানে করে মুরগী বিক্রি করেন, ছেলে বেনারসি কারচুপির কারিগর। এর আগে গত ৩০ বছর ধরে ছিলেন মিরপুর কলাবাগান বস্তিতে।

তিনি বলেন, বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় আইসা বস্তিতে উঠি, কিন্তু কোনোদিনই এই পরিবেশ ভালো লাগতো না। খুপরি ঘর। গোছলের জায়গা ছিল না। লজ্জা লাগতো। আবার মেয়ে বড় হইতাছে। কিন্তু উপায় ছিল না। স্বামী যেইখানে রাখছে সেইখানেই মানায়া নিতে হইছে। মনে একটা ইচ্ছা ছিল, আল্লাহ যদি তৌফিক দেয় ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালো জায়গায় থাকবো। কিন্তু আয় রুজি ভালো না হওয়ায় সেই ইচ্ছা আর পূরণ হয় না। গত বছর থেকে এই ফ্ল্যাটে থাকার সুযোগ পাইছি। ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট বাড়ির যে ভাড়া, কখনও কল্পানাও করি নাই। এখন সেইটা সম্ভব হইতাছে। চারদিক কি বাতাস! নিজের ঘর দুয়ার।

মর্জিনা আক্তার নামে আরেক বসিন্দা বলেন, ছেলে-মেয়েগুলারে ভালো জায়গায় রাখতে পারতাছি। এইটাই ভালো। কিন্তু আমাদের তো আয় কম। বস্তিতে থাকার কোনও খরচ ছিল না। বিদ্যুৎ আর পানির জন্য ৫০০ টাকা দিলেই হইতো। এখন এইখানে আইসাই ছয় হাজার টাকা ঘর ভাড়া। গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল নিয়া আরও খরচ। এইসব খরচ দিয়া পেটে খাওন দিতে কষ্ট হইয়া যায়। ভাড়া যদি আরও কম দিতো তাইলে আমাগো জন্য উপকার হইতো।

বাসিন্দারা জানান, শুরুতে এসব ফ্ল্যাটে আসার আগ্রহ ছিল না বস্তিবাসীর। তাই ফ্ল্যাটের চাবি বুঝে পাওয়ার পরও অপেক্ষায় ছিলেন ভালো কোনও সুবিধা পাওয়া যায় কিনা। তবে সর্বশেষ সবার সঙ্গে মিল করে আসতে বাধ্য হন তারা। কিন্তু চাবি বুঝে পাওয়ার পর থেকেই এসব ফ্ল্যাটের ভাড়া গণনা শুরু হয়। ফলে প্রথমে না ওঠার পরও অনেকেই চার বা পাঁচ মাসের বকেয়া ভাড়ার দায় মাথায় নিতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের প্রথমে বলা হইছিল ফ্ল্যাট কিস্তিতে বুঝায়া দিবো। কিন্তু পরে শুনি ভাড়া থাকতে হইবো। আমরা বংশ ধইরা ভাড়াটিয়াই থাইকা যামু! আর আমাদের আয় আর কত? ফ্ল্যাট ভাড়া ৬ হাজার টাকা, গ্যাস লাগে দুই সিলিন্ডারে ৩ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ কার্ডে হাজার পনেরোশো। সিব মিলায়া ১০ হাজার টাকা। এইখানের বেশির ভাগ মানুষের আয় ১৫ হাজার টাকা। বাকি ৫ হাজার টাকা দিয় খামু কী আর সংসার চালামু কী। এইখানে সুবিধা ভালো কিন্তু তার আমাদের পোষায় না।

সিপিডির পর্যালোচনা

পোশাকশ্রমিকের জন্য ন্যূনতম ১৭,৫৬৮ টাকা মজুরি দরকার

০৯ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে একটি শ্রমিক পরিবারের প্রয়োজনীয় খাবারের খরচ মাসে ১৬ হাজার ৫২৯ টাকা। আর খাদ্যবহির্ভূত খরচ ১২ হাজার ৮৮২ টাকা। একেকটি শ্রমিক পরিবারের গড় সদস্যসংখ্যা ৩ দশমিক ৭। তার মধ্যে উপার্জনক্ষম সদস্য ২। সেই হিসাবে শ্রমিকের মাসিক নিম্নতম মজুরি হওয়া দরকার ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশ্রমিকের নিম্নতম মজুরি নিয়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। সংস্থাটি সর্বনিম্ন গ্রেডের জন্য সাড়ে ১৭ হাজার টাকা মজুরির প্রস্তাব করে, যার ৫৫ শতাংশ মূল মজুরি এবং মূল মজুরির ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া।

এ ছাড়া মোট মজুরির ৭ শতাংশ খাদ্য ভাতা, ৫ শতাংশ চিকিৎসা ভাতা, সাড়ে ৩ শতাংশ যাতায়াত ভাতা এবং সন্তান লালন–পালনের জন্য ২ শতাংশ ভাতার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ৫ ও ৬ নম্বর গ্রেডকে একীভূত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

সিপিডি মনে করে, বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান যদি প্রতি পিস পোশাকের জন্য মূল্য হিসেবে অতিরিক্ত ৭ সেন্ট করে দেয়, তাহলে বাড়তি মজুরি দিতে কারখানার মালিকদের ওপর কোনো চাপ পড়বে না।

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গতকাল রোববার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্রিশ্চিয়ান এইডের সহায়তায় ‘তৈরি পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ অনুষ্ঠানে মজুরিসংক্রান্ত গবেষণার তথ্য তুলে ধরে সিপিডি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৭৬ কারখানা ও ২২৮ পোশাকশ্রমিকের ওপর করা জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে এই গবেষণা করা হয়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী তামিম আহমেদ। তাঁরা বলেন, জরিপে অংশ নেওয়া ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ কারখানার ব্যবস্থাপনায় যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে তাঁদের আপত্তি নেই। অন্যদিকে শ্রমিকদের প্রত্যাশা ১৮ হাজার ২৮৮ টাকা। আর বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন দাবি করেছে ২৫ হাজার টাকার ন্যূনতম মজুরি।

পোশাক শিল্পে সবচেয়ে কম মজুরি বাংলাদেশে

অক্টোবর ০৯, ২০২৩, বণিক বার্তা

দেশের রফতানি আয়ের প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক। এ খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ রফতানিকারক বাংলাদেশ। অথচ শীর্ষস্থানীয় রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম মজুরি পান এ দেশের শ্রমিকরা। আর সবচেয়ে বেশি মজুরি চীনে। দেশটিতে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম বেতন ৩০৩ ডলার ৫৯ সেন্ট। ইন্দোনেশিয়ায় ন্যূনতম মজুরি ২৪২ ডলার ৯৪ সেন্ট। কম্বোডিয়ায় এর পরিমাণ ২০০ ডলার। আর প্রতিবেশী ভারতে এ খাতে একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন ১৭১ ডলার ১৮ সেন্ট। বাংলাদেশে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৭২ ডলার ৪২ সেন্ট। রাজধানীতে গতকাল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সংলাপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

‘গার্মেন্টস খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ: পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করে সিপিডি ও বেসরকারি সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইড। সংলাপে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। মূল্যস্ফীতি ও শ্রমিকের আর্থিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এ প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।

সিপিডি বলছে, ৭৬টি কারখানার ২২৮ জন শ্রমিকের ওপর গবেষণা করে মজুরি বাড়ানোর এ প্রস্তাব দিয়েছে তারা। ক্রেতারা যদি প্রতি পিস পণ্য মাত্র ৭ সেন্ট (প্রায় ৮ টাকা) বেশিতে নেয় তাহলে এ মজুরি দিতে কোনো চাপ তৈরি হবে না। আগামী নভেম্বরে পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার কথা রয়েছে। তবে ঘোষণার পর সেটি কার্যকর হচ্ছে কিনা সেটি অন্তত তিন মাস পর্যবেক্ষণের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। কেননা ২০১৮ সালে ঘোষিত মজুরি কাঠামো এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র গবেষণা সহকারী তামিম আহমেদ। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ন্যূনতম মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দুজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে সামনে রেখে একটি পরিবারের ন্যূনতম খরচ হিসাব করে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একজন পোশাক শ্রমিকের পরিবারের খাওয়া খরচ ১৬ হাজার ৫২৯ টাকা। অন্যান্য খরচ ১২ হাজার ৮৮১ টাকা। মোট মাসিক খরচ দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৪১০ টাকা। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি যোগ করলে দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৯৪২ টাকা।’

দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম

মডেল মসজিদে ‘মডেল অনিয়ম’

০১ আগস্ট ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

রাজশাহীর গোদাগাড়ী। ২০২১ সালের জুনে মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হয় এখানে। কিন্তু পরিদর্শনে দেখা গেছে, মডেল মসজিদটির কাঠের দরজা ত্রুটিপূর্ণ। চারটি প্লাস্টিকের দরজাও নিম্নমানের। ঝড়বৃষ্টি হলে রয়েছে জানালার গ্লাস খুলে পড়ার আশঙ্কা। মসজিদ ভবনের বৈদ্যুতিক কাজের মানও ভালো না। বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ লাইনে পানি চলে আসে। ফ্যানের সুইচবোর্ড একেবারেই নিম্নমানের। সেপটিক ট্যাংকের সম্মুখে প্লাস্টার নেই। পিলার, দেয়াল ও মিনারে ফাটল ধরেছে। মার্বেল পাথর ভাঙা। মসজিদের গেটের সামনে পানি জমে যায়। সার্বিক কাজের মানও ভালো না।

শুধু এই মসজিদ নয়, দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি হিসেবে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই প্রকল্পের অধিকাংশ মসজিদ নির্মাণেই এমন চিত্র দেখা গেছে। সম্প্রতি প্রকল্পটির নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ডেভেলপমেন্ট টেকনিক্যাল কনসালট্যান্টস (প্রা.) লিমিটেডকে (ডিটিসিএল) পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি ৫৬০টি মডেল মসজিদ থেকে সম্পন্ন এবং কাজ চলমান রয়েছে এরকম ১৭৫টি নমুনা মডেল মসজিদ পরিদর্শন করে নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়মের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। অনিয়মকারীরা সরকারের এই মডেল প্রকল্পটিকে যেন ‘অনিয়মের মডেল’ হিসেবেই বেছে নিয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘খাতিরের’ প্রকল্প

করের টাকায় মন্ত্রী-সচিবের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান

০২ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের গ্রামে তাঁর মায়ের নামে ‘করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার মা ও শিশু বিশেষায়িত হাসপাতাল’ নির্মিত হচ্ছে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। পাঁচতলা ভবনের এই হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ৮০ শতাংশ অর্থ বা ৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর, যেটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করছে মন্ত্রীর মায়ের নামের এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার উন্নয়ন সংস্থা। নির্মাণকাজ পেয়েছে মন্ত্রীর ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

নির্মাণকাজ চলতে থাকা হাসপাতালটির এক কিলোমিটারের মধ্যেই সরকারি উপজেলা হাসপাতাল রয়েছে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রীর অধীন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পের মাধ্যমে মন্ত্রীর মায়ের নামে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা স্বার্থের সংঘাত। মন্ত্রীরা শপথ নেন এই বলে যে ‘তাঁরা অনুরাগ অথবা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না।’ নিজের মায়ের নামে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় নিজের অধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের অর্থ ব্যয় শপথের বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত।

অবশ্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু মন্ত্রী নন, আমলারাও নিজের মা-বাবা অথবা স্বজনের নামে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রশিক্ষণকেন্দ্র ইত্যাদি স্থাপনা করেছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৮টি প্রকল্পের (ডায়াবেটিক হাসপাতাল ছাড়া) মাধ্যমে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করেছে অথবা করছে, যার অন্তত ১১টি মন্ত্রী অথবা আমলাদের মা-বাবা অথবা স্বজনের নামে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুদানে হাসপাতাল, প্রশিক্ষণকেন্দ্র বা সমজাতীয় স্থাপনা নির্মাণ ও পরিচালনা করে এনজিও। নিয়ম হলো, শহর এলাকায় প্রকল্প করতে মোট ব্যয়ের ৬০ শতাংশ ও গ্রাম এলাকায় ৮০ শতাংশ অর্থ সরকার দেবে, বাকিটা দেবে এনজিও। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যেসব এনজিও প্রকল্প পাচ্ছে, সেগুলোর এ ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সক্ষমতা নেই। এনজিওগুলো মূলত নিজেদের স্বজনের নামে মন্ত্রী-সচিবেরা প্রতিষ্ঠা করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থাপনা নির্মিত হলেও সেবাদান কার্যক্রম চালু হচ্ছে না।

চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংকও ডুবছে খেলাপি ঋণে

০২ আগস্ট ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

দেশের ব্যাংক খাতের উন্নতিতে বড় বাধা হয়ে উঠেছে খেলাপি ঋণ। দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। ২০১৩ সালে অনুমতি পাওয়া চতুর্থ প্রজন্মের ৯টি ব্যাংকও রক্ষা পায়নি এই খেলাপি ঋণের কবল থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত মার্চ শেষে এই ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। পাঁচ বছর আগে তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯৪০ কোটি। অর্থাৎ পাঁচ বছরে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা।

৯টি ব্যাংকের মধ্যে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পরিচালনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো হলোÑ মধুমতি, মিডল্যান্ড, ইউনিয়ন, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, মেঘনা ও পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)। আর প্রবাসীদের মালিকানায় অনুমোদন পায় এনআরবি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড। এর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে পদ্মা ব্যাংক। এ ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ মোট ঋণের প্রায় ৬০ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি খাতে বাংলাদেশে প্রথম ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮২ সালে। ওই বছর ১২ এপ্রিল আরব-বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংক লিমিটেড যাত্রা শুরু করে। পরবর্তী এক দশকে দেশে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ায় আটটিতে। যেগুলোকে প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০০ সালে অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোকে দ্বিতীয় এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত সময়কে ব্যাংকের তৃতীয় প্রজন্ম ধরা হয়। এই সময়ে ডাচ্-বাংলা, ইস্টার্ন, এক্সিম, আল-আরাফাহ, সাউথইস্ট, প্রাইম, প্রিমিয়ারসহ মোট ২২টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এসে ২০১২ থেকে ১৩ সালের মধ্যে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। এই ব্যাংকগুলোকে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসা শুরুর ৯ বছর পার হলেও ব্যাংকসেবায় বিশেষ কোনো নতুনত্ব আনতে পারেনি চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো। গতানুগতিক ধারায় কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। পর্ষদের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি আর বিভিন্ন ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছে ব্যাংকগুলো। নানা অব্যবস্থাপনায় নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নিজেদের ইচ্ছামতো চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠান। ঋণের নামে চলছে লুটপাট। দিন দিন বাড়ছে খেলাপি ঋণের বোঝা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ব্যাংকপাড়ায় বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের আরও ৭টি ‘খাতিরের’ প্রকল্প আসছে, ব্যয় ১৬০ কোটি টাকা

০৩ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

বিধবা ও স্বামীর হাতে নিগৃহীত নারী এবং অবহেলিত, দুস্থ ও বেকারদের জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিতে আরও সাতটি প্রকল্প নিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হবে ১৬০ কোটি টাকা।

যদিও এ ধরনের প্রকল্পে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর আগে নেওয়া এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও সুফল না পাওয়ার চিত্র উঠে এসেছে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘খাতিরের প্রকল্প’। কারণ ‘খাতিরের’ ভিত্তিতে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় এবং পরে ইচ্ছেমতো অনিয়ম করা হয়।

নতুন করে সাতটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য গত মাসে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। কমিশন এখন তা পর্যালোচনা করছে। এর আগে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এ ধরনের প্রকল্পে কী সুফল পাওয়া গেছে, তার মূল্যায়ন কারও কাছে নেই।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের প্রকল্পগুলোতে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই। এই দপ্তরে আমি নতুন এসেছি। তবে নতুন করে যেসব প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হচ্ছে, সেগুলো ভালো করে দেখা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, পরিকল্পনা কমিশন যদি মনে করে তাহলে নতুন প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেবে।

এর আগে নেওয়া প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে কত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলতে পারবে।

বেস্ট হোল্ডিংসকে শেয়ারবাজারে আনতে আইনি ছাড়

০৩ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ানের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংসকে শেয়ারবাজারে আনতে এবার আইনি ছাড় দিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর আগে ২০২০ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রভাবশালী একটি পক্ষ লা মেরিডিয়ানকে ‘সরাসরি তালিকাভুক্তির’ উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন সেই প্রক্রিয়া আটকে দিয়েছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এখন সেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাই আইনি ছাড় দিয়ে কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আসার পথ সহজ করে দিয়েছে।

বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত হলেও রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার ‘লা মেরিডিয়ান’ হোটেলটি অনেকেই চেনেন। লা মেরিডিয়ান হোটেল ছাড়াও বেস্ট হোল্ডিংসের আওতায় ম্যারিয়টসহ আরও কয়েকটি হোটেল এবং বিলাসবহুল ভিলা ও রিসোর্ট উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। কোম্পানিটি গত বছর শেয়ারবাজারে আসার জন্য বিএসইসিতে আবেদন জমা দেয়।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, বেস্ট হোল্ডিংস বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে আসতে চায়। কারণ, কোনো কোম্পানি শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর বেশি চাইলে ওই কোম্পানিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আসতে হয়। এই পদ্ধতি ছাড়াও স্থিরমূল্য বা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও ছেড়ে শেয়ারবাজারে আসা যায়। সে ক্ষেত্রে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করতে হয়। বেস্ট হোল্ডিংস তাদের শেয়ারের জন্য প্রিমিয়াম বা অধিমূল্য নিতে চায় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। বেস্ট হোল্ডিংস বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে ৩৫০ কোটি টাকা তুলতে চায়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, আগেরবার সরাসরি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় এবার আইপিও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসার উদ্যোগ নিয়েছে বেস্ট হোল্ডিংস কর্তৃপক্ষ। শেয়ারবাজারে আসার আগেই প্রাইভেট প্লেসমেন্ট ও বন্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যাংকের কাছ থেকে বড় অঙ্কের মূলধন সংগ্রহ করেছে। প্রাইভেট প্লেসমেন্টে কোম্পানিটির শেয়ার কিনেছেন বা মালিকানায় শরিক হয়েছেন শতাধিক রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটিতে ওই সব ব্যক্তি ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগ আটকে আছে। তাই কোম্পানিটিকে দ্রুত বাজারে এনে ওই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ ফেরত দিতে পুনরায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজটি যাতে নির্বিঘ্নে হতে পারে, সে জন্য আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে যেসব আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলোয় ছাড় দেওয়া হয়েছে।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পাবলিক ইস্যু আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি আইপিওতে আবেদনের দুই বছর আগে থেকে শুধু বোনাস শেয়ার ইস্যু ছাড়া অন্য কোনোভাবে মূলধন বাড়াতে পারে না। কিন্তু কোম্পানিটি এ রকম সময়ের মধ্যে বন্ড ছেড়ে বড় অঙ্কের মূলধন সংগ্রহ করেছে। বন্ডের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে আবার শেয়ারেও রূপান্তর করা হয়েছে। তাতে আইন অনুযায়ী কোম্পানিটির আইপিও আবেদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এ কারণে আইনি বিধানে কোম্পানিটিকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। আইনি ছাড়ের বিষয়টি গত ২৭ জুলাই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

গেজেটে বলা হয়েছে, আইপিও আবেদনের আগে কোম্পানিটি যত ধরনের শেয়ার ইস্যু করেছে, সেগুলোর ওপর তিন বছরের বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা বা লক-ইন থাকবে। যেদিন থেকে কোম্পানিটির শেয়ার পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে, সেদিন থেকে এ লক-ইনের সময় গণনা শুরু হবে। এ ছাড়া আইপিও অনুমোদনের আগে নতুন করে আর কোনো শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না কোম্পানিটি।

দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে : কুবি উপাচার্য

৩১ জুলাই ২০২৩, যায়যায় দিন

‘অনেকেই বলে দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমি বলব উল্টো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন কথা বলতে পারে। যে ঘুষ খায়, সে পদ্মা পাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মা পাড়ের গরীব মানুষেরা ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই অর্থনীতিবিদগণ দুর্নীতি কখনো কোনো বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করে তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকে। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গা থেকে যদি বলি, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাঁধা নয়।’

সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুর আড়াই টায় ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স রুমে মার্কেটিং বিভাগের ১৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী তানভীর সালাম অর্ণব এবং তাসমিয়া মাহমুদ এর সঞ্চলনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আবদুল মঈন।

এস আলমের আলাদিনের চেরাগ

 আগস্ট ৪, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি বলে দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে জানা গেছে।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বিশাল এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সেই তালিকায় নেই। কাগজপত্রে আরও দেখা যায়, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য যে সম্পদ কিনেছেন এবং সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তার নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ থেকে ৪০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য নেওয়া হয়েছে।

তবে, এই পরিমাণ অর্থ ২০০৯ সালের পর সিঙ্গাপুরে এস আলমের কেবল দুটি হোটেল ও একটি বাণিজ্যিক স্পেস কেনা ৪১১ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের দশ ভাগের এক ভাগ মাত্র।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিতে আরও দেখা যায়, এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে সিঙ্গাপুরে ১ লাখ ৭ হাজার মার্কিন ডলার পাঠিয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানও এস আলমের মালিকানাধীন নয়।

বিদেশে এস আলমের বিনিয়োগ সম্পর্কে জানতে ডেইলি স্টার বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সাড়া দেননি।

বিদেশে বিনিয়োগ দাপ্তরিকভাবে কোনো গোপনীয় বিষয় নয়। তারপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গোপনীয় বিষয় হিসেবে দেখে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এস আলম তাদের কাছ থেকে কখনো বিদেশে অর্থ নেওয়ার কোনো ধরনের অনুমতি নেননি।

তাদের মধ্যে একজন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে এস আলম বিদেশে অর্থ পাঠানোর জন্য কোনোদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেয়নি।’ অন্য দুই জনও এই তথ্য আলাদাভাবে নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড়পত্র ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। এই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদণ্ড এবং যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ড।

১৯৮৫ সালে সাইফুল আলম এস আলম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তখন থেকে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।

তার ব্যবসার পরিধি পণ্য বাণিজ্য থেকে মাছ ধরা, নির্মাণ সামগ্রী থেকে আবাসন ব্যবসা, টেক্সটাইল থেকে মিডিয়া, আন্তঃনগর বাস থেকে শিপিং এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ থেকে ব্যাংকিং, বীমা পর্যন্ত বিস্তৃত।

ডেইলি স্টারের অনুসন্ধান বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্যে গত ৬ জুলাই ও ২৩ জুলাই দুই দফা লিখিতভাবে এস আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আমরা বিদেশে তার বিনিয়োগ ও তহবিলের উৎস সম্পর্কে জানতে বেশ কিছু লিখিত প্রশ্ন তাকে পাঠাই, তাতে এ বিষয়ে তার বক্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হয়। দুই বারই তিনি তার আইনজীবী এ হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মাধ্যমে উত্তর দেন। এতে বলা হয়, প্রকাশিত হওয়ার আগে পুরো সংবাদ প্রতিবেদনটি তাকে না পাঠালে তিনি জবাব দেবেন না—যেটি সাংবাদিকতার চর্চা নয়।

সিঙ্গাপুর থেকে সাইপ্রাস হয়ে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস

এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন অফশোর বিজনেসের যে বিস্তৃত জাল বুনেছেন, তার কিছু অংশ ডেইলি স্টারের কাছে থাকা নথি থেকে জানা গেছে। আমাদের অনুসন্ধানে এস আলম ও তার স্ত্রীর সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস এবং সাইপ্রাসে বিনিয়োগের সন্ধান পাওয়া গেছে।

ভূমধ্য সাগরীয় ছোট দেশ সাইপ্রাস ২০০৭ সালে তাদের ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ কর্মসূচি চালু করে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা সংস্থার মতে, এই প্রকল্পের আওতায়, দেশটির আবাসনখাতে প্রায় ২ মিলিয়ন ইউরো (২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ এবং সাইপ্রাস সরকারের গবেষণা ও ভূমি উন্নয়ন তহবিলে আরও ২ লাখ ইউরো অনুদানের বিনিময়ে ধনী বিদেশিদের সাইপ্রাসের নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়।

সিঙ্গাপুরের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড করপোরেট রেগুলেটরি অথরিটি (এসিআরএ) থেকে পাওয়া প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, এর দুই বছর পর ২০০৯ সালের ২৭ আগস্ট সাইফুল আলম ও ফারজানা পারভীন নিজেদের সাইপ্রাসের নাগরিক এবং সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা দেখিয়ে সিঙ্গাপুরে ক্যানালি লজিস্টিকস প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন।

সে সময় কোম্পানিটির ইস্যু করা ও পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার)। এস আলম ও তার স্ত্রী একমাত্র শেয়ারহোল্ডার ছিলেন। আলম ৩০ মিলিয়ন শেয়ারের ৭০ শতাংশ এবং তার স্ত্রী বাকি ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন।

সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটিতে রেসিডেন্স পারমিট বা বিদেশিদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।

বিশ্বের বেশ কিছু বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর থেকেই পরিচালিত হয়, যার মধ্যে বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়িক গোষ্ঠীও রয়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের (আইসিআইজে) তৈরি অফশোর লিকস ডেটাবেস অনুযায়ী, প্রায় ৬ হাজার শেল কোম্পানি (নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান) সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যুক্ত।

এ ছাড়াও এস আলম ও তার স্ত্রী ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের আরও একটি অফশোর শেল কোম্পানি পিকক প্রপার্টি লিমিটেডের সঙ্গেও যুক্ত। সিঙ্গাপুর থেকে ১৭ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরের ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস এমন এক ট্যাক্স হ্যাভেন বা কর স্বর্গ যেখানে আয়কর, করপোরেট কর বা মূলধনী কর নেই।

আরেক কর স্বর্গ সাইপ্রাসে ২০১৬ সালে এস আলম অ্যাকলেয়ার ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান কেনেন। সাইপ্রাসের কোম্পানির রেজিস্ট্রার বিভাগ এবং অফিসিয়াল রিসিভারের নথি অনুসারে, পরবর্তীতে কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে অ্যাকলেয়ার ইন্টারন্যাশনাল রাখা হয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটি অবৈধ আর্থিক লেনদেনের একটি পরিষ্কার উদাহরণ। বিশেষ করে যদি কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া না যায় যে গোল্ডেন পাসপোর্টের জন্য দেওয়া অর্থ, দেশের বাইরে বিনিয়োগ ও সম্পদ ক্রয় এবং কর স্বর্গগুলোতে অফশোর কোম্পানি—এসব কিছু বৈধ বৈদেশিক আয় থেকে এসেছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুটি বৈধ উপায়ে ব্যবসা বা বিনিয়োগের জন্য বিদেশে টাকা পাঠানো যায়। তার একটি হলো, রপ্তানিকারকদের রিটেনশন কোটার একটি নির্দিষ্ট অংশ ‘শুধু রপ্তানিকারক বা তাদের সহায়ক সংস্থা এবং সহযোগীদের আমদানি ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য’। অন্যটি হলো বিদেশে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে।

তিনি কোনো নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘কিন্তু তার মানে এই না যে, তারা সেখানে আলাদা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে ব্যবসা করবে। সহায়ক কিছু করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানিকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে।’

সোনার হরিণ চাই

চালু হওয়ার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট এস আলমের ক্যানালি লজিস্টিকস সিঙ্গাপুরের ‘লিটল ইন্ডিয়া’য় ১৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৩২৮ কক্ষের গ্র্যান্ড চ্যান্সেলর প্রাইভেট লিমিটেড হোটেলটি কেনার জন্য চুক্তি সই করে। হোটেল মালিকদের পক্ষ থেকে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের এবং সিঙ্গাপুর সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জের কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে এ তথ্য জানানো হয়।

চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ‘চুক্তিমূল্য কয়েকটি কিস্তিতে নগদে পরিশোধ করা হবে।’ সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, চুক্তির শর্ত পূরণ করে ক্যানালি ইতোমধ্যেই ‘প্রাথমিক আমানত ও ব্যালেন্স ডিপোজিটসহ ১৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) পরিশোধ করেছে।’

সিঙ্গাপুরের একটি ল ফার্ম এই চুক্তিতে হোটেলের প্রতিনিধিত্ব করে।

ডেইলি স্টারের পাওয়া সাম্প্রতিক নথিতে দেখা যায়, সিঙ্গাপুরের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসিআরএর কাছে হোটেল গ্র্যান্ড চ্যান্সেলরের দাখিল করা নথিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের শেষে হোটেলটির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অধিগ্রহণের এক বছর পরে হোটেলটির নাম পাল্টে গ্র্যান্ড ইম্পেরিয়াল হোটেল প্রাইভেট লিমিটেড করা হয় এবং এখন সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রস্থলে হিল্টন গার্ডেন ইন সেরাঙ্গুনের ব্র্যান্ড নামে হোটেলটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের গণমাধ্যম দ্য বিজনেস টাইমস অনুসারে, ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুরের ১৯তলা সেন্ট্রিয়াম স্কয়ারে ২৭ হাজার বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক স্পেস ১০০ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় ক্যানালি।

অধিগ্রহণের এক বছর পর ক্যানালি লজিস্টিকস তার নাম পরিবর্তন করে উইলকিনসন ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড করে, ২০২১ সালে যার সম্পদের মোট মূল্য ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১০ হাজার কোটি টাকা)। এই প্রতিবেদন লেখার সময় সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের কাছে ২০২২ সালের কোনো কাগজপত্র ছিল না।

প্রতিষ্ঠানটি যখন একের পর এক সম্পত্তি ক্রয় করেছে, এর তিন বছরের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের বিবরণীর তথ্য থেকে জানা যায়, কোম্পানির আয়ের চেয়ে ব্যয় ছিল বেশি।

উইলকিনসনের আর্থিক বিবরণীতে দেখা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তার বার্ষিক আয় কখনই ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেনি। ২০২০ সালে এটি ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৯ সালে ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল।

উইলকিনসনের আর্থিক বিবরণীতে আরও দেখা যায়, ২০১৯ ও ২০২১ সালের মধ্যে কোম্পানিটি কমপক্ষে ৫৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের অর্জিত পরিমাণের কয়েকগুণ বেশি।

একই সময়ে কোম্পানিটি ৪৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন পেয়েছে।

যদিও অর্থায়ন মূলধন বা ঋণ আকারে আসতে পারে, তবে কাগজপত্র দেখে বিশ্লেষকরা বলছেন যে, আলম ও তার স্ত্রী যেহেতু অন্তত ২০২০ সালের শেষ নাগাদ একমাত্র শেয়ারহোল্ডার ছিলেন, তাই এই অর্থ ব্যাংক ঋণ বা নগদ ঋণ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ধোঁয়াশার আড়ালে

সিঙ্গাপুরের এই বিপুল ব্যবসায়িক সম্রাজ্য এমন এক ঠিকানার আড়ালে চলে, যার অস্তিত্ব কেবল কাগজে-কলমে আছে।

ডেইলি স্টার উইলকিনসনের নিবন্ধিত ঠিকানায় একজন সোর্স পাঠিয়েছিল, যিনি উইলকিনসনের অফিশিয়াল ঠিকানা কোলিয়ের কোয়ে রোডের ওশেন ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারে ব্যবসার নির্দেশিকা (বিজনেস ডিরেক্টরি) দেখেছিলেন। সেখানে উইলকিনসন ইন্টারন্যাশনালের নাম ছিল না। কিন্তু কোম্পানির হোটেল কেনার চুক্তিতে জড়িত আইনি প্রতিষ্ঠানটির নাম একই ঠিকানায় খুঁজে পান।

সিঙ্গাপুরের সরকারি উন্মুক্ত ডেটা পোর্টালের ২০২৩ সালের জুনের তথ্য অনুসারে, ওই ভবন থেকে ৫০০ শেল কোম্পানি (নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান) তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। যদিও তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটির এখন আর অস্তিত্ব নেই।

আলম ও তার স্ত্রী ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর উইলকিনসনের পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের পিকক প্রপার্টি হোল্ডিংস লিমিটেড নামে একটি অফশোর কোম্পানিতে তাদের মালিকানা হস্তান্তর করেন। ২০১৭ সালে প্যারাডাইস পেপারস ফাঁস হলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কোম্পানির অফশোর কার্যক্রম উন্মোচন হয়। এরমধ্য দিয়ে কর স্বর্গ হিসেবে শিরোনামে উঠে আসে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের নাম।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, নিবন্ধিত ঠিকানায় পিকক প্রপার্টিকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। একই ঠিকানায় ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের আর্থিক পরিসেবা কমিশনে নিবন্ধিত একটি অফশোর এজেন্ট নিউহ্যাভেন করপোরেট সার্ভিসেসের নাম পাওয়া গেছে।

২০১৭ সালের প্যারাডাইস পেপারস ফাঁসের পর জানা যায়, চার তলা এই হলুদ বিল্ডিংটি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের রাজধানী রোড টাউনে জেমস ওয়াল্টার ফ্রান্সিস হাইওয়ের গোল চত্বরের কাছে অফশোর কোম্পানিগুলোর জন্য পোস্টাল অফিস বক্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গ্রাহককে যথাযথভাবে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না করা বা গুরুত্বের সঙ্গে না নেওয়া এবং যেখানে সামনা-সামনি গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই সেক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থা বা অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার কারণে ২০১৫ সালে নিউহ্যাভেন করপোরেটকে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের মানি লন্ডারিং আইনে ২৫ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছিল।

নাম মুছে ফেলা

সিঙ্গাপুরের কোম্পানি থেকে নিজের নাম সরিয়ে ফেলার পর এস আলম অং লে কিম নামে সিঙ্গাপুরের এক নাগরিককে উইলকিনসন কোম্পানির একমাত্র পরিচালক হিসেবে মনোনীত করেন। তবে ডেইলি স্টার দৃশ্যত তার কোনো অনলাইন উপস্থিতি পায়নি।

তার প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৯ সালে ১২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কেনা হোটেল আইবিস সিঙ্গাপুর নোভেনার কাগজপত্রেও আলমের নাম পাওয়া যায়নি।

সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হোটেলটির কাগজপত্রে দেখা যায়, এটি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন, যার সবগুলোই উপরে উল্লিখিত আইনি প্রতিষ্ঠান এবং এর চূড়ান্ত মালিক ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের একটি অফশোর কোম্পানি।

হোটেলটি ২০১৩ সাল থেকে ক্যানোপাস টু প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন, কিন্তু কোম্পানির বর্তমান ঠিকানা আর উইলকিনসের ঠিকানা হুবহু এক, এমনকি প্রতিটি ইউনিট নম্বরও।

ক্যানোপাসের একমাত্র শেয়ারহোল্ডার ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসভিত্তিক হ্যাজেল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থা, যা উইলকিনসনের অফিসের ঠিকানায় নিবন্ধিত। সিঙ্গাপুরের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড করপোরেট রেগুলেটরি অথরিটির কাছ থেকে পাওয়া নথি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুনে এস আলমের কাছে বিক্রির মাত্র ৩ মাস আগে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ট্যাক্স হ্যাভেন সুবিধার পাশাপাশি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে তথ্য গোপন রাখার অধিকার রয়েছে, এবং সেই দেশে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো অফিসিয়াল কাগজপত্রে তাদের শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালকদের নাম দিতে আইনতভাবে বাধ্য নয়।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলো সাধারণত শেল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। কারণ দেশটি চায় এই অর্থ তাদের দেশেই থাকুক।’

‘তাদের ট্যাক্সের প্রয়োজন নেই। তাদের বিনিয়োগ দরকার। সুতরাং, তারা ট্যাক্স ছাড় দিতে পারে। কিন্তু আমাদের ট্যাক্স দরকার এবং সে অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে তারা (অর্থ পাচারকারীরা) আমাদের দেশকে কর থেকে বঞ্চিত করছে,’ বলেন ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর।

তিনি এও বলেন যে, উৎসেই এটি বন্ধ করা দরকার, যেমন—এই লোকদের ব্যাংকের মালিক হতে না দেওয়া।

পুতুল পরিচালক

২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর এস আলম তার সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানে ‘ক্যাসিনো কিংপিন’ শাহেদুল হককে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। শাহেদুল তখন এস আলম গ্রুপের আংশিক মালিকানাধীন ঢাকার ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম ২০২৩ সালের জুনের মাঝামাঝিতে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন। এর আগ পর্যন্ত তিনি ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের উল্লেখযোগ্য অংশীদারত্ব রয়েছে।

২৮ বছর বয়সী আহসানুল আলম এস আলম গ্রুপের বর্তমান পরিচালকও।

শাহেদুল ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন ব্যাংক ও উইলকিনসনের পরিচালক ছিলেন।

ইউনিয়ন ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়ে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বাংলাদেশি কোম্পানি রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকার বেশি প্লেসমেন্ট পেয়েছে। বর্তমানে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স নাম পরিবর্তন করে হয়েছে আভিভা ফাইন্যান্স।

প্লেসমেন্ট হলো মূলধন সংগ্রহের জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে সিকিউরিটিজ বা বন্ড বিক্রি করা।

গত বছরের শেষের দিকে এস আলম গ্রুপ কীভাবে ইসলামী ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিচ্ছে, তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক দেখতে পায়, ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট ঋণের সিংহভাগই গেছে ৩০০টি স্থানীয় শেল কোম্পানি বা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কাছে। বাংলা দৈনিক প্রথম আলো সে সময়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

২০১৯ সালে অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ক্যাসিনো ব্যবহার করে অর্থপাচারে জড়িতদের মধ্যে শাহেদুলকে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তার নামের সঙ্গে ‘ক্যাসিনো’ উপাধিটি জড়িয়ে হয় ‘ক্যাসিনো শাহেদুল’।

গত বছরের নভেম্বরে ৩২ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। দুদকের তদন্তকারীরা জানান, শাহেদুল দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন এবং কখনো আদালতে হাজির হননি।

যুক্তরাষ্ট্রের উন্মুক্ত ভোটার রেকর্ড থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, শাহেদুল ও তার স্ত্রী সারিনা তামান্না হক মিশিগানের ক্যান্টনের নিবন্ধিত ভোটার এবং সেখানে তাদের সম্পত্তিও রয়েছে।

দুই বাড়ির বৃত্তান্ত

সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া রেকর্ডে দেখা যায়, এস আলম ও তার স্ত্রী ২০২১ সাল পর্যন্ত মধ্য সিঙ্গাপুরের নোভেনায় ১২ হাজার ২৬০ বর্গফুটের একটি বাড়ির মালিক ছিলেন।

২০১৮ সালে এই সম্পদের বার্ষিক রেন্টাল ভ্যালু ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। তবে ২০২২ সালে সিঙ্গাপুরের জিকো ট্রাস্ট লিমিটেড এর বৈধ মালিক হয়।

জিকো ট্রাস্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, ‘একটি ট্রাস্ট গঠনের সুবিধার মধ্যে রয়েছে গোপনীয়তা ও সম্পদ সুরক্ষা। ট্রাস্টগুলো অফশোর (সেটেলরের নিজ দেশের বাইরে) ও ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যার ফলে সেটলরের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা যায়।’

‘ব্যক্তিগত ট্রাস্টের অন্যতম সুবিধা হলো—সম্পদ সুরক্ষা। যেহেতু ট্রাস্টি সম্পদের আইনি মালিক, সেহেতু সেটলরকারী তার অধিকার ত্যাগ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ঋণদাতা, দেউলিয়াত্ব ও বিনিময় নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে এক ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে’, বলা হয়েছে ওয়েবসাইটে।

সিঙ্গাপুরে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বাড়ির মালিক ছিলেন এই দম্পতি। এর মালিকানাও পেদাং ট্রাস্ট সিঙ্গাপুর প্রাইভেট ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সিঙ্গাপুর ২০০৮ সালে এস্টেট শুল্ক বাতিল করে। সুতরাং, সিঙ্গাপুর ট্রাস্ট থেকে মূলধনের আয় বণ্টন কর মুক্ত এবং সিঙ্গাপুরের ট্রাস্টের উত্তরসূরিদের কোনো এস্টেট শুল্ক ছাড়াই সুবিধাভোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

রিজার্ভ চুরির সব সন্দেহজনক যোগসূত্রই গভর্নর সচিবালয়কেন্দ্রিক

আগস্ট ০৫, ২০২৩, বণিক বার্তা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভার হ্যাকের উদ্দেশ্যে রিজার্ভ চুরির আগে একটি ফিশিং ই-মেইল বার্তা পাঠিয়েছিল হ্যাকাররা। ওই বার্তায় সাড়া দেয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক এএফএম আসাদুজ্জামানের ব্যবহৃত কম্পিউটার ডিভাইস থেকে। চাকরির জন্য সাক্ষাতের ডাক পাওয়ার প্রত্যাশা জানিয়ে প্রেরক রাসেল আহলাম একটি কভার লেটার ও একটি জীবনবৃত্তান্ত বা বায়োডাটা পাঠিয়েছিলেন ওই ই-মেইল বার্তায়। যে সময় ওই বার্তায় সাড়া দেন এএফএম আসাদুজ্জামান, নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী তখন তার কাজের জায়গায় থাকার কথা না। ওই ফিশিং বার্তাকে কাজে লাগিয়েই গভীর রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হ্যাকাররা। পরে রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে সরিয়ে নেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ। এছাড়া রিজার্ভ চুরির আগে একজন ডেপুটি গভর্নরকে অনুপস্থিত দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে এ আরটিজিএসের ফাইল অনুমোদনের ঘটনাটিও ঘটে এ দপ্তর থেকেই। রিজার্ভ চুরি নিয়ে সন্দেহজনক এসব সূত্রের প্রায় সবক’টিই গভর্নর সচিবালয়কেন্দ্রিক বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

অর্থ ও তথ্য আত্মসাৎ করে নেয়ার উদ্দেশ্যে কোনো মেইল বা লিংক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ফিশিং পরিভাষাটি ব্যবহার হয়। মূলত কোনো সংগঠন বা ব্যক্তিকে টার্গেট করে প্রতারণামূলক ই-মেইল পাঠিয়ে স্পর্শকাতর তথ্যে ঢুকে পড়াই হচ্ছে স্পিয়ার-ফিশিং। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় হ্যাকারদের বার্তা গ্রহণকারী ডিভাইসটি শনাক্তের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জব্দ করা কম্পিউটারসহ অন্যান্য ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পাশাপাশি অধিকতর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয় থেকে জব্দ করা ডিভাইসের নমুনা সংগ্রহ করে নেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ল্যাবে। কয়েক দফা এসব নমুনা পরীক্ষার পর সংস্থাটি নিশ্চিত হয় রাসেল আহলাম নামে হ্যাকারদের পাঠানো ফিশিং মেইলটি সর্বপ্রথম ক্লিক করা হয় যে ডিভাইস থেকে, সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ের কর্মকর্তা এএফএম আসাদুজ্জামানের। তিনি তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ে মহাব্যবস্থাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ব্যাংকের নিজস্ব সার্ভার ব্যবহার করে তিনি ফিশিং মেইলে সাড়া দেন। মেইলটিতে সিভি সংযুক্ত করা ছিল। সেই ফাইলটিতে ক্লিক করার পরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হ্যাকাররা। রাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে আরটিজিএসের মাধ্যমে কয়েকটি ট্রানজেকশনে সরিয়ে নেয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন (১০ কোটি ১০ লাখ) ডলার।

নতুন ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ

০৫ আগস্ট ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

‘বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’- এই কথার সঙ্গে মিল আছে রাজধানীতে গড়ে ওঠা বেশ কিছু সরকারি বহুতল ভবনের। ঝাঁ-চকচকে এসব অট্টালিকা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। অথচ বাইরে থেকে যতটা সুন্দর, ভেতরের কাঠামোটা ঠিক ততখানি মজবুত নয় এসব ভবনের। খোদ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউকের পরীক্ষানিরীক্ষার ফলই বলছে সে কথা। সম্প্রতি রাজধানীর বেশ কিছু সরকারি ভবনের মান পরীক্ষা করে দেখেছে রাজউক। এরপর তারা ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার ২২৯টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে; যার মধ্যে ৩৭ শতাংশই নতুন ভবন। এগুলো নির্মাণ করা হয়েছে ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। যদিও সরকারি স্থাপনা নির্মাণের সময় আয়ুষ্কাল ধরা হয় কমপক্ষে ১০০ বছর।

গত মার্চে বিভিন্ন সরকারি ভবন পরীক্ষা করে রাজউক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের যে তালিকা প্রকাশ করে তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এমন সব অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে আসেÑ যা দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। যেমনÑ রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভবন রয়েছে চারটি। এর মধ্যে একটি আশির দশকে নির্মিত। রাজউকের তালিকা অনুযায়ী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এ খবর শুনে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল সবচেয়ে পুরনো ভবনটিই হয়তো তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তাদের সেই সন্দেহ ভুল প্রমাণ করে সদ্য পাঠদান শুরু হওয়া সবচেয়ে নতুন ছয়তলা দৃষ্টিনন্দন ভবনটিই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় চলে এসেছে। রাজউকের নথি অনুযায়ী, ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ভবন ২০২২ সালের শেষদিকে তাদের বুঝিয়ে দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপর চলতি বছরের শুরুতে সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠদান শুরু হয়। সে হিসাবে ব্যবহার শুরু করার মাত্র দেড়-দুই মাসের মধ্যে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে রাজউক। এই তালিকায় থাকা স্কুলের অপর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ২০০৮ সালে নির্মিত।

হাজারীবাগের সালেহা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে নির্মিত আটতলা একটি ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে ১৯৯৮ সালে নির্মিত পাঁচতলা আরও একটি ভবন রয়েছে এ তালিকায়। সাভারের আশুলিয়ায় দোসাইদ এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি চারতলা ভবনÑ যা ২০১৭ সালে নির্মিত, সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে মূল্যায়ন করে কাঠামো পুনর্নির্মাণের সুপারিশ করেছে রাজউক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ম না মেনে নির্মাণের কারণে নতুন ভবনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। রাজউক এখন পর্যন্ত সরকারি মালিকানাধীন অল্প কিছু ভবন পরীক্ষা করেছে। বাকি ভবনগুলো পরীক্ষা করলে নির্মাণকাজে অনিয়মের আরও ভয়াবহ চিত্র সামনে আসতে পারে।

পরীক্ষানিরীক্ষার পর রাজউক সরকারি ৪২টি ভবন ভেঙে ফেলার কথা বলেছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালে নির্মাণ করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একটি ১৭ তলা ভবন রয়েছে। পাশাপাশি বনানী বিদ্যানিকেতন, দোসাইদ এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজে ও সালেহা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৮২টি ভবন রেট্রোফিটিং (রেট্রোফিটিং হচ্ছে নির্মিত স্ট্রাকচারের ক্যাপাসিটি বাড়ানো। সাধারণত পুরোনো স্ট্রাকচার, যা লোড নিতে পারছে না বা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত; এ রকম বিল্ডিংয়ে রেট্রোফিটিং করা হয়) করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ভূমিকম্প সহনশীল স্থাপনা গড়তে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় রাজউকের ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় অর্থাৎ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং গাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার কিছু প্রতিষ্ঠানে জারিপ চালানো হয়। সেই জরিপে ৩ হাজার ২৫২টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সংস্থাটি। তার মধ্যে ২২৯টি ভবনে ত্রুটি খুঁজে পায় বিশেষজ্ঞ দল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু পাবলিক স্ট্রাকচার নিয়ে এই জরিপ পরিচালিত হয়েছেÑ যার মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন। ব্যক্তিগত ও বেসরকারি ভবনগুলো পরিদর্শন করা হয়নি।

বিশেষজ্ঞ দলের পর্যবেক্ষণে তৈরি তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বেশিরভাগই শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মাণ করা। তা ছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তর ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু ভবন রয়েছে তালিকায়। এসব ভবনের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও হাসপাতাল রয়েছে। ভূমিকম্প বা স্বাভাবিক সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন ধসে পড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া কোনো দুর্যোগ বা বিপর্যয়ে এসব ভবনে দ্রুত উদ্ধার কাজ চালানো কঠিন হবে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিপদের মাত্রা অনেকগুণ বেশি বলে গণ্য করা হচ্ছে।

তালিকা বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ২২৯টি ভবনের মধ্যে ৮৫টি ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মিত, যা তালিকায় থাকা মোট ভবনের শতকরা ৩৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ২০১৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছে ৮টি ভবন। ২০১০ সালের পরে ৪৯টি এবং ২০১৪ সালের পর ২৯টি ভবন নির্মাণ করা হয়। এত কম সময়ে সরকারি ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাহাজ ত্রুটিপূর্ণ দেখালেই পকেট ভরে সার্ভেয়ারের

০৬ আগস্ট ২৩, সমকাল

দেশি জাহাজ ও ট্রলারের ফিটনেস যাচাই করে নৌ-বাণিজ্য দপ্তর। বাংলাদেশে আসা বিদেশি জাহাজের চলাচল উপযুক্ততাও যাচাই হয় এই দপ্তর থেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার (আইএমও) নিয়ম মেনে জাহাজের ফিটনেস সনদ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না এবং এ ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন এই দপ্তরের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক এক রিপোর্টে উঠে এসেছে এই কথা।

বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৪ হাজার ৭০০ জাহাজ এবং ট্রলারের জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের সার্ভে, লাইটহাউস পরিদর্শন, নাবিকদের চোখ পরীক্ষা, বিদেশি জাহাজের পোর্ট স্টেট কন্ট্রোল সার্ভেসহ ৩০ ধরনের কাজ করতে হয় নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের। জাহাজ মালিকদের অভিযোগ, ঘুষ না পেলে এই দপ্তরের কর্মকর্তারা তাদের সনদ পাল্টে ফেলছেন। ত্রুটিপূর্ণ নৌযানের তালিকায় ফেলছেন ভালো নৌযানও। যত বেশি জাহাজ তাঁরা ত্রুটিপূর্ণ দেখাতে পারেন, তত বেশি পুষ্ট হয় তাদের পকেট।

নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের অধীনে থাকা জাহাজের মধ্যে সমুদ্রগামী ৯২, কোস্টাল ও তেলবাহী ৩২০, ফিশিং ট্রলার ১৪০, ফিশিং বোট ১ হাজার ৮০০, কার্গো বোট ২ হাজার ২০০ এবং অন্যান্য ক্যাটাগরির ১৫০টি জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজ বা ট্রলারের মান ও নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে সনদ যাচাই করতে পারেন দপ্তরের সার্ভেয়াররা। এখন বন্দরে জাহাজ এলেই পরিদর্শনে যেতে যেন মরিয়া হয়ে ওঠেন নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা। পরিদর্শনে গিয়ে জাহাজের বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়ে তাঁরা ঘুষ নেন। কেউ কেউ নেন সিগারেট, প্রসাধনী, মদ কিংবা অন্য উপঢৌকন। এ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে আইএমও।

আমলাদের পদোন্নতির জন্য মন্ত্রীদের ‘তদবিরের’ হিড়িক

০৯ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য মন্ত্রীদের আধা সরকারি পত্র (ডিও) দেওয়া বন্ধ হচ্ছে না। সাম্প্রতিককালে ১০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে ৯ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডিও দিয়েছেন।

কোনো মন্ত্রী ডিও দিয়েছেন কোনো কর্মকর্তাকে সচিব করতে। কেউ ডিও দিয়েছেন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির অনুরোধ জানিয়ে। ডিওগুলো পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও জ্যেষ্ঠ সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর কাছে।

ডিও দেওয়া মন্ত্রীরা হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারও এক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে ডিও দিয়েছেন।

হাজার কোটি টাকা গিলল ১২ প্রতিষ্ঠান

১১ আগস্ট ২০২৩, আজকের পত্রিকা

নজিরবিহীন ঋণ কেলেঙ্কারি আর গ্রাহকের আমানতের টাকা লোপাটের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ছাড়া আরও ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম শহীদ রেজা ও প্রাইম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানও আছে। হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে আইএলএফএসএলে নিরপেক্ষ পর্ষদ বসানো হলেও আগেই গ্রাহকের জমানো প্রায় সব টাকা চুষে নিঃশেষ করা হয়েছে। পর্ষদ এখন টাকা ফেরত চাইলে খেলাপিরা উল্টো হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার কেউ কেউ ঋণের প্রায় পুরো টাকাই মেরে দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

জানতে চাইলে আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক। আমরা তা আদায়ের চেষ্টা করছি। ঋণখেলাপিরা বলেন, আমরা তাদের খেলাপি বাড়িয়ে দেখাচ্ছি। বাড়িয়ে দেখানোর সুযোগ নেই। কারণ, আদালতে অসত্য তথ্য দিলে তার দায়

তো আমাদের ওপর বর্তাবে। আশা করি, সামনে আমাদের বকেয়া ঋণ আদায় বাড়বে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক, আইএলএফএসএলসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, ঋণ কেলেঙ্কারিতে বর্তমানে প্রায় পুরো ব্যাংক ও আর্থিক খাতই প্রশ্নবিদ্ধ। পরিচালকেরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের ব্যাংক থেকে লোপাট করছেন টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের আমানতের টাকা নামে-বেনামে লুটে নেওয়ায় এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রায় দেউলিয়া হয়েছে। এ রকমই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে আইএলএফএসএল। এর দেওয়া মোট ৪ হাজার ১৩০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপিই ৯১ শতাংশ বা ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। জানা গেছে, মাত্র ১২টি প্রতিষ্ঠানই হাতিয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এর আগে পি কে হালদার একাই প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লুটে নেন।

প্রথম আলোসহ চারটি পত্রিকাকে এস আলমের আইনি নোটিশ

১২ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সরকারের দুই সচিব, প্রথম আলোসহ চার পত্রিকার সম্পাদক ও সাতজন সাংবাদিক বরাবর আইনি নোটিশ দিয়েছেন এস আলম গ্রুপ ও এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। নোটিশে আগামীকাল রোববার সকাল ১০টার আগে এস আলম গ্রুপ ও এর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাবলিক ডোমেইন থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রসচিব এবং তথ্য ও সম্প্রচারসচিবকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এ জাতীয় সংবাদ প্রকাশ না করার দাবি জানানো হয়েছে।

মোহাম্মদ সাইফুল আলমের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি গত বৃহস্পতিবার ওই নোটিশ পাঠান। নোটিশে বলা হয়, ১৩ আগস্ট সকাল ১০টা বা এর আগে প্রতিবেদনগুলো সরানো না হলে সাইফুল আলম এবং এস আলম গ্রুপের মৌলিক অধিকার সুরক্ষার জন্য যথাযথ প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে।

নোটিশে তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব প্রতিবেদনের কারণে এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ৪৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

প্রথম আলো পত্রিকায় গত বছরের ২৪ নভেম্বর প্রকাশিত ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এবং প্রতিবেদক সানাউল্লাহ সাকিব বরাবর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে দুটি প্রতিবেদনের জন্য। এর একটি প্রকাশিত হয়েছিল গত বছরের ৬ ডিসেম্বর, এস আলম গ্রুপের সম্পদের তদন্ত বিষয়ে। আরেকটি প্রকাশিত হয় ৪ আগস্ট ‘এস আলম গ্রুপের আলাদিনের চেরাগ’ শীর্ষক শিরোনামে। এ জন্য ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনাম, নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক, সাংবাদিক পার্থ প্রতিম ভট্টাচার্য ও জাইমা ইসলামকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

নিউএজ পত্রিকায় গত ৩০ নভেম্বর ‘এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ তুলে নিয়েছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ জন্য নিউএজ-এর সম্পাদক নূরুল কবীর এবং প্রতিবেদক মোস্তাফিজুর রহমানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার সম্পাদক ইনাম আহমেদ, রিপোর্টার জেবুন নেছা আলো ও সাখাওয়াত প্রিন্সকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে গত বছরের ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য। যার শিরোনাম ছিল ‘কীভাবে ২৪ বছর বয়সী গ্রিনহর্ন ৯০০ কোটি টাকা ঋণ পেলেন’।

প্রসঙ্গত, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ ‘এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প’ (এস আলমের আলাদিনের চেরাগ) শিরোনামে ৪ আগস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আনার পর ৬ আগস্ট বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে ইসলামীসহ তিন ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন নজরে আসার পর গত বছরের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। ওই ঘটনা অনুসন্ধান করে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ এবং সিআইডিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

খেলাপির চেয়ে পুনঃ তফসিল ঋণ বেশি

১৪ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

ব্যাংকগুলো সর্বশেষ ২০২২ সালে ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেছে। তা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, আবার ব্যাংকগুলো নিজেরাও পুনঃ তফসিল করেছে। ফলে এসব ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। এরপরও গত বছরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। পুনঃ তফসিল করা ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশেন কাছাকাছি হতো।

ব্যাংকগুলো এত খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করার ফলে গত বছর তাদের নিট মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ৫ হাজার ২২ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোর ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি কমে ৮ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকায় নামে, যা ২০২১ সালে ছিল ১৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। ব্যাংকের মুনাফা বেশি হলে মালিক ও শেয়ারধারীরা যেমন বেশি মুনাফা পান, তেমনি সরকারও বেশি কর পায়।

এদিকে গত বছরের শেষে পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। ফলে খেলাপি ঋণের চেয়ে পুনঃ তফসিল করা ঋণ এখন বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২২-এ এসব তথ্য পাওয়া গেছে, যা গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়ে রেখেছে। আইএমএফ পুনঃ তফসিল করা ঋণ ও আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়া ঋণকে খেলাপি হিসেবে দেখানোর পক্ষে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুনঃ তফসিল করা ঋণও খেলাপি, আইএমএফ এ কথাই বলে। পুনঃ তফসিল করা ঋণ হিসাবে ধরলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ২৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখলাম পুনঃ তফসিলের হার ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গড় খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের একটু কম। এর বাইরে মামলায় আটকা আরও ১ লাখ কোটি টাকা।’

আহসান মনসুর আরও বলেন, ‘কার্পেটের নিচে ময়লা রাখলে কি আর ঘর পরিষ্কার হয়? ময়লা তো ঘরে থেকেই যায়। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। এসব বলে সর্বনাশ করে ফেলেছে। পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি ছাড়া চোখের সামনে কোনো আশাবাদ নেই।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করে আর্থিক প্রতিবেদন থেকে মুছে ফলা হয়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত যা ছিল ৬০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে ২০২২ সালে। এই বছরে পুনঃ তফসিল করা হয় ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালে ছিল ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে পুনঃ তফসিল করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। পুনঃ তফসিল করা ঋণের ৭১ শতাংশ বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর, ২৪ শতাংশ সরকারি ব্যাংকগুলোয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পুনঃ তফসিল করা ঋণের ২০ শতাংশ আবার খেলাপি হয়ে পড়েছে। ৮০ শতাংশ ঋণ নিয়মিত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে শিল্প খাতে। পুনঃ তফসিল করা ঋণের প্রায় ৩১ শতাংশ শিল্প খাতের। এরপরই রয়েছে পোশাক ও টেক্সটাইল খাত। পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে রয়েছে পুনঃ তফসিল করা ঋণের ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাণিজ্যিক ঋণ ও চলতি মূলধন ঋণের ক্ষেত্রে এই হার ৯ শতাংশ। তবে এখন সবচেয়ে বেশি পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি দেখা যায় জাহাজভাঙা ও নির্মাণ খাতে, যা প্রায় ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালের শেষে ব্যাংক খাতের আমানতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের ওপর চাপ ছিল। এ জন্য গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ৯ লাখ ১০ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা ধার দেয়। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ৮ লাখ ৬০ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ধার দেওয়া-নেওয়া করে। ২০২১ সালে এই পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।

ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের ৪ ভাগের ১ ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ

১৪ আগস্ট, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

২০২২ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা, বকেয়া পুনঃতফসিল করা ঋণ ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ও বকেয়া খেলাপি ঋণ ৪৪ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।

গত বছরের শেষে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের মোট পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। এটি অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ খাতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে।

গতকাল রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে মোট খেলাপি ঋণ (এনপিএল), বকেয়া পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ও বকেয়া পুনর্গঠিত খেলাপি ঋণের হিসাব কষে অর্থের এই পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২২ শেষে মোট অনাদায়ী ঋণ ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মোট ঋণের চার ভাগের এক ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ।

২০২২ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা, বকেয়া পুনঃতফসিল করা ঋণ ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ও বকেয়া খেলাপি ঋণ ৪৪ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের এই পরিমাণ চলতি অর্থবছরের বাজেটের প্রায় অর্ধেক। ব্যাংকিং খাত যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা এই চিত্র দেখে বোঝা যায়।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের হিসাব দিতে হচ্ছে।

এক সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি জুনে বার্ষিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ প্রকাশ করত। আইএমএফ শর্ত দিয়েছে যে তা আবার শুরু করা উচিত।

গত জানুয়ারিতে আইএমএফ স্টাফ রিপোর্টে বলা হয়েছিল—কোভিড-১৯ আর্থিক সহায়তা নীতিমালার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। যেহেতু এই নীতিগুলো শিথিল করায় ব্যাংকিং ব্যবস্থার লোকসান ধীরে ধীরে উঠে আসতে পারে, তাই সম্পদের শ্রেণিবিন্যাস, বিশেষ করে পুনর্গঠিত ঋণের বর্তমান ব্যালেন্স শিটের ঝুঁকিগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরা উচিত। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ যথাযথভাবে প্রকাশ করা উচিত।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতের সম্পদের গুণগতমানে সামান্য অবনতি হয়েছে। কেননা, খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।

২০২২ সালের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বকেয়া ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ ছিল। এটি আগের বছর ছিল ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙাশিল্পে খেলাপি ঋণ ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যসব খেলাপি ঋণের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ।

চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পে খেলাপি ঋণ আছে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, বস্ত্রশিল্পে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও তৈরি পোশাকশিল্পে ১১ দশমিক ১২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিয়মিত ও পুনঃতফসিলকৃত বা পুনর্গঠিত ঋণের যথাযথ পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা এবং খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের গতি ব্যাংকিংশিল্পের সম্পদের মান উন্নত করতে পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়া এবং অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক ঘটনার কারণে ব্যবসায় ধীর গতির পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এটি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সম্পদের গুণমানকে নেতিবাচক করে দিতে পারে।

মহামারির সময় চালু করা ঋণ স্থগিতের সুবিধা বাতিল হওয়ায় ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

২০২২ সালে ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। এটি আগের বছর ছিল ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনাপূর্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে সেই বছরে পুনঃতফসিলের পরিমাণ খুব বেশি ছিল না।’

২০১৯ সালে পুনঃতফসিল করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।

২০২২ সালের শেষে পুনঃতফসিল করা ঋণের ৮০ দশমিক ৮ শতাংশ অশ্রেণিবদ্ধ রয়ে গেছে।

বকেয়া পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙাশিল্প, ২৯ দশমিক ২ শতাংশ শিল্প খাত ও ২১ দশমিক ১ শতাংশ বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পে রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, বেশিরভাগ খাতেই শ্রেণিকৃত বকেয়া পুনঃতফসিলকৃত ঋণের অনুপাতিক হার বেড়েছে।

জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙা খাতের পর শিল্প, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র এবং রপ্তানি-ঋণ খাতে শ্রেণিকৃত বকেয়া পুনঃতফসিলকৃত ঋণের আনুপাতিক হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

ব্যাংকের পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা

আগস্ট ১৪, ২০২৩, বণিক বার্তা

খেলাপি ঋণ কম দেখাতে পুনঃতফসিলের নীতি উদার করে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন চাইলে নিজেরাই যেকোনো ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারছে। নীতি ছাড়ের এ সুযোগে ব্যাংকগুলোও ঋণ পুনঃতফসিলের রেকর্ড গড়েছে। শুধু ২০২২ সালেই ব্যাংকগুলোর পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে শিল্প খাতের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের। পুনঃতফসিল করা ঋণের ৭১ শতাংশই করেছে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো। গ্রাহককে খেলাপি হওয়া থেকে বাঁচাতে ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, পুনঃতফসিল করা ঋণের ১৯ শতাংশ আবারো খেলাপির খাতায় উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের পুনঃতফসিলকৃত ঋণ স্থিতির ৩৬ শতাংশই বাড়ে কভিড-১৯ সৃষ্ট দুর্যোগের পর। ২০১৯ সাল শেষেও ব্যাংকগুলোর পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। ২০২২ সাল শেষে এ ধরনের ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। অর্থাৎ ২০২০ সাল-পরবর্তী সময়ে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি বাড়ে ৭৬ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।

আগে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত এককালীন বা ডাউন পেমেন্ট জমা দিতে হতো। কিন্তু খেলাপিদের প্রতি নমনীয় হতে গিয়ে ২০১৯ সালে ডাউন পেমেন্টের হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। যদিও ব্যাংকের প্রভাবশালী বড় গ্রাহকরা কোনো ডাউন পেমেন্ট না দিয়েও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকের অনুকূলে ঋণসীমা বাড়িয়ে দিয়েও ব্যাংকগুলো খেলাপি হওয়ার যোগ্য ঋণকে নিয়মিত দেখাচ্ছে।

অন্যদিকে ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষমতাও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে ব্যাংকগুলো নিজ পর্ষদে পুনঃতফসিলের প্রস্তাব পাস করে সেটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচাই-বাছাইয়ের পর পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করত। কিন্তু গত বছরের জুলাইয়ে পুনঃতফসিলের ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনটি জারি হওয়ার পর ব্যাংকগুলো নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ‘উদারতাকেই’ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে উল্লম্ফনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে চেয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণপ্রাপ্তির শর্তের মধ্যেও খেলাপি ঋণ কমানোর বিষয়টি রয়েছে। আবার ব্যাংকগুলোও নিজেদের স্বার্থে খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা করেছে। সব পক্ষের চাওয়া এক হয়ে যাওয়ায় খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে। কিন্তু বিপরীতে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

পুনঃতফসিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ লুকানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আগে ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালা অনেক কঠোর ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেস-টু-কেস পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দিত। নির্দিষ্ট অংকের ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ না করলে কোনো ঋণই পুনঃতফসিল হতো না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। প্রভাবশালী গ্রাহকরা এখন ডাউন পেমেন্ট না দিয়েও ঋণ পুনঃতফসিল করে নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজের ক্ষমতা ও দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর হাতে দিয়ে দিয়েছে। এ কারণে ব্যাংক নিজের ইচ্ছামতো ঋণ পুনঃতফসিল করছে। এতে আপাতদৃষ্টিতে ব্যাংকের ঋণ পরিস্থিতি ভালো দেখালেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে ভয়াবহ। বাছবিচার না করে পুনঃতফসিল করা ঋণ আদায় হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’

পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে ‘স্ট্রেসড’ বা ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ হিসেবে দেখায় আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। একই সময়ে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতিও ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। আবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাতের অন্তত এক-চতুর্থাংশ ঋণ এখন দুর্দশাগ্রস্ত।

২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পুনঃতফসিলের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে দুই দফায় প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই নীতিমালার কিছু শর্ত শিথিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নীতিমালার সুবিধা নিয়ে ২০১২ সালে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে ব্যাংকগুলো। এর পরের বছর থেকে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনঃতফসিলের গতি। ২০১৩ সালেই ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পান খেলাপি গ্রাহকরা। এরপর ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৩৫০ কোটি ও ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। ২০১৬ সালে পুনঃতফসিল করা হয় ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এর পর থেকে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ বাড়ছেই।

২০১৭ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে পুনঃতফসিল করা হয় আরো ২৩ হাজার ২১০ কোটি টাকার ঋণ। আর ২০১৯ সালে পুনঃতফসিলের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ডাউন পেমেন্ট মাত্র ২ শতাংশে নামিয়ে আনায় ওই বছর পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০২০ সালে কভিড-১৯ সৃষ্ট দুর্যোগে পুনঃতফসিলের হার কিছুটা কমে আসে। ওই বছর ব্যাংকের কোনো টাকা পরিশোধ না করেও গ্রাহকরা খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পান। তার পরও ২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর পুনঃতফসিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে পুনঃতফসিল করা হয় ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকার ঋণ। আর ২০২২ সালে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন। ২০২২ সাল শেষে পুনঃতফসিলকৃত ঋণ স্থিতির ৩১ দশমিক ৭ শতাংশই ছিল শিল্প খাতের। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত। এ খাতের উদ্যোক্তারা ২০ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন। এছাড়া পুনঃতফসিলকৃত ঋণের প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবসায়িক, ৯ দশমিক ৫ শতাংশ চলতি মূলধন, ৬ দশমিক ২ শতাংশ নির্মাণ, ৫ শতাংশ আমদানির আর ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কৃষি খাতের।

পুনঃতফসিলকৃত ঋণ আবারো খেলাপি হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, ২০২২ সাল শেষে পুনঃতফসিলকৃত মোট ঋণ স্থিতির ১৯ দশমিক ২ শতাংশ আবারো খেলাপি হয়ে গেছে। এ ধরনের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। পুনঃতফসিলের পরও খেলাপি হওয়া ঋণের ৬১ শতাংশই বৃহৎ শিল্পের। এক্ষেত্রে সামনের সারিতে রয়েছে জাহাজ নির্মাণ ও ভাঙা শিল্প, শিল্প খাত এবং তৈরি পোশাক খাত।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থীকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে: সিআইডি

১৩ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

১৬ বছরে ১০ বার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থীকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ রোববার ঢাকায় সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া এই তথ্য জানান।

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার ১২ ব্যক্তির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই ১২ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—ময়েজ উদ্দিন আহমেদ, সোহেলী জামান, মো. আবু রায়হান, জেড এম সালেহীন ওরফে শোভন, মো. জোবাইদুর রহমান ওরফে জনি, জিলুর হাসান ওরফে রনি, ইমরুল কায়েস ওরফে হিমেল, জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে মুক্তার, রওশন আলী ওরফে হিমু, আক্তারুজ্জামান তুষার, জহির উদ্দিন আহমেদ ওরফে বাপ্পী ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার। সিআইডি বলছে, গ্রেপ্তার ১২ ব্যক্তির মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক আছেন।

সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ২০২০ সালের প্রশ্নপত্র ফাঁস-সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে জসীম উদ্দীন ও মোহাম্মদ সালামকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল হোতা ছিলেন জসীম। তাঁর খালাতো ভাই সালাম স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রেসের মেশিনম্যান। তাঁরা আদালতে ৬৪ ধারার জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে সবশেষ গ্রেপ্তার ১২ জনের নাম আসে। তাঁরা পলাতক ছিলেন। অবশেষে তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলো।

সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ২০০১ থেকে পরবর্তী ১৬ বছরে চক্রের সদস্যরা ১০ বার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। শিক্ষিত লোকজন এই চক্রে জড়িত। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তাঁরা বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনেক ব্যাংক চেক ও পরীক্ষার প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।

মশা মারতে আনা বিটিআই আমদানি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানের

১৫ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

মশার লার্ভা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আমদানি করা জৈব কীটনাশক বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস বা বিটিআই নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠেছে। আমদানিকারক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই কীটনাশক সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল লিমিটেডের প্রস্তুত করা বলে দাবি করলেও সেটা সত্য নয় বলে দাবি করছে কোম্পানিটি। এ নিয়ে সিঙ্গাপুরের ওই কোম্পানি নিজেদের ফেসবুক পেজে একটি সতর্কবার্তাও দিয়েছে।

সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সকাল সাতটার দিকে ওই বার্তা শেয়ার করা হয়। এ ঘটনা জানার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেটকে বেস্ট কেমিক্যাল থেকে পণ্য কেনার প্রমাণ দিতে বলেছে উত্তর সিটি করপোরেশন।

সতর্কবার্তায় যা বলা হয়েছে

‘জালিয়াতির সতর্কবার্তা’ (স্ক্যাম অ্যালার্ট) শিরোনামে দেওয়া ওই বার্তায় লেখা হয়, ‘এটা আমাদের নজরে এসেছে যে বাংলাদেশের মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পাঁচ টন বিটিআই লার্ভিসাইড পণ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) সরবরাহ করেছিল। এতে তারা জালিয়াতির মাধ্যমে (ফ্রডলি) আমাদের কোম্পানির নাম (বেস্ট কেমিক্যাল) বিটিআইয়ের প্রস্তুতকারক হিসেবে ব্যবহার করেছে।’

খেলাপি ঋণের ৪০ শতাংশই বাণিজ্যিক ও পোশাক খাতে

১৮ আগস্ট ২০২৩, প্রথম আলো

সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ব্যাংকের ঋণসংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার সবই ছিল ট্রেডিং বা বাণিজ্যিক ঋণ। এসব ঋণের বেশির ভাগই পণ্য আমদানির বিপরীতে দেওয়া হয়েছে। দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বড় উদ্বেগ এখন বাণিজ্যিক ঋণে। ব্যাংকগুলো এককভাবে সবচেয়ে বেশি ঋণও দিয়েছে এই খাতে। মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ২৪ শতাংশই এই খাতের ঋণ।

বাণিজ্যিক ঋণের পরেই খেলাপির শীর্ষে আছে তৈরি পোশাক খাতের ঋণ। দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের প্রায় ৪০ শতাংশই এ দুই খাতের। অর্থাৎ দেশের খেলাপি ঋণের এক-তৃতীয়াংশই এ দুই খাতে পুঞ্জীভূত। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন, ২০২২ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, বাণিজ্যিক ঋণের ক্ষেত্রে খুব বেশি নথিপত্র প্রয়োজন হয় না। কিছু ব্যাংক সহজেই এই ঋণ দিয়ে থাকে। এর আগে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের এই খাতের ঋণ দিয়ে অনেক ব্যাংক আটকা পড়েছিল। এরপর এখন আবারও কিছু ব্যাংক এই খাতের ঋণে ঝুঁকছে, যা পুরো ব্যাংক খাতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

বাণিজ্যিক ঋণের মাধ্যমে অর্থ পাচারও সহজ। কারণ, পণ্যের পরিমাণ অনেক হওয়ায় তা সব সময় যাচাই করা হয় না। এ জন্য ব্যাংকগুলোর এসব ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভালোভাবে বাছবিচার করে দেওয়া উচিত।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক ঋণে অনেক ব্যাংকের টাকা আটকে গেছে। বাণিজ্যিক ঋণের মাধ্যমে অর্থ পাচারও সহজ। কারণ, পণ্যের পরিমাণ অনেক হওয়ায় তা সব সময় যাচাই করা হয় না। এ জন্য ব্যাংকগুলোর এসব ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভালোভাবে বাছবিচার করে দেওয়া উচিত। ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় একধরনের প্রতিযোগিতাও থাকে, যা ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।

 সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, অন্য ঋণের চেয়ে শিল্প খাতের ঋণ তুলনামূলক ভালো। এসব ঋণ নিয়ে কী হচ্ছে, তা দেখা যায়। ফলে তদারকি সহজ হয়।

আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ গেছে ট্রেড ও কমার্স বা বাণিজ্যিক খাতে। এই খাতে ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার ৯০২ কোটি টাকা বা ১০ শতাংশ। ২০২১ সালে এই খাতে ঋণ ছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা।

গত বছর শেষে দেশের খেলাপি ঋণের ২৪ শতাংশই ছিল বাণিজ্যিক ঋণ। আর ১৬ শতাংশ ছিল পোশাক খাতের।

ঋণের দিক থেকে দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে বড় শিল্প খাত। এ খাতে ২০২২ সাল শেষে ঋণ ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এরপরই পোশাক খাতে ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। পোশাক খাতে ২০২২ সাল শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকায়।

নির্মাণ, পরিবহন ও যোগাযোগ এবং অন্য সেবা খাতে ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। টেক্সটাইল খাতে ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ আছে, এমন খাতগুলোর মধ্যে আরও আছে কৃষিভিত্তিক শিল্প। এসব খাতে ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৯ হাজার ৪১ কোটি টাকা।

এদিকে খেলাপি ঋণের হারে শীর্ষে রয়েছে জাহাজভাঙা ও নির্মাণশিল্প। এই খাতে ২০২২ সাল শেষে ঋণ ছিল ২১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপি ৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এরপরই খাতভিত্তিক খেলাপি ঋণের হারে শীর্ষে টেক্সটাইল ও পোশাক খাত।

গত বছর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এর বাইরে পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি গত বছর শেষে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। পাশাপাশি অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯ হাজার ৭২১ কোটি টাকায়।

ফলে ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (সিএআর) অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে রয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত ছিল ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তবে ওই সময়ে পাকিস্তানের ব্যাংকগুলোর এই অনুপাত ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ভারতের ১৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

যেসব ঋণ কখনো নেওয়াই হয়নি, গ্রামবাসীদের তা পরিশোধ করতে বলছে ব্যাংক

১৮ আগস্ট ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

২০২১ সালের ১৯ জুন মারা যান সালেহা বেগম। এর দুই বছর পর জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে গত ১০ আগস্ট দুটি পৃথক নোটিশ পান তার স্বামী ফয়েজ উল্লাহ। দুটি নোটিশেই তাকে দেড় লাখ টাকা করে ঋণ পরিশোধ করতে বলা হয়।

সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মান্ডারিতলা গ্রামের অধিবাসী ফয়েজ উল্লাহ, এর কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। কারণ, কোনো ঋণ নেওয়া তো দূরের কথা– তিনি বা তার স্ত্রী কখনো ঋণের জন্য আবেদনও করেননি।

নোটিশ পাওয়ার পরই তড়িঘড়ি করে জনতা ব্যাংকের বাড়বকুণ্ড শাখায় ছোটেন ফয়েজ। সেখানকার কর্মকর্তারা তাকে জানান, ২০২১ সালে সালেহা ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার তিনটি ঋণ নেন, যার সবগুলোই খেলাপি রয়েছে।

এরমধ্যে দুটি ঋণ ছিল কৃষি ও গবাদিপশু পালনের জন্য, আর তৃতীয় ঋণটি ছিল করোনার প্রণোদনা প্যাকেজ সংক্রান্ত।

ফয়েজ জানতে পারেন, তার স্ত্রীর নামে দুটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে, যেখানে ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেনদেন নথিভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, ঋণগ্রহীতার মৃত্যুর ১৫ মাস পরেও হয়েছে লেনদেন। এসব হিসাবে ঋণের কিস্তি হিসেবে টাকা জমাও দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের নথি অনুসারে, তার স্ত্রী যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিলেন, সেই একই পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং একই প্যাকেজের তিনটি ঋণ খেলাপি করেছেন পেশায় কৃষক ফয়েজ উল্লাহ নিজেও। 

এ ঘটনা শুধু ফয়েজের বেলাতেই ঘটেনি।

একই গ্রামের আরো অন্তত ৩৩ ব্যক্তি খেলাপি ঋণ পরিশোধের দাবি সংক্রান্ত একই রকম নোটিশ পেয়েছেন। এদের সকলেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী – কৃষক, দিনমজুর বা তাদের গৃহিণী – যারা কোনোদিন ব্যাংক ঋণের আবেদনই করেননি।

এসব ঘটনার একটি একক যোগসূত্র আছে– ঋণের নথিপত্রে, ফয়েজসহ সকলের ঋণের গ্যারান্টর বা জামিনদার হিসেবে আহমেদুর রহমান নামের এক গ্রামবাসীর উল্লেখ আছে। 

নোটিশ পাওয়া ১৪ জন গ্রামবাসী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আলাপকালে জানান, করোনাকালীন ১,০০০ টাকা সহায়তা পেতে তাদের ব্যাংকে নিয়ে যান আহমেদুর রহমান। এই টাকা পেতে তাদের ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়।

ফয়েজ অবশ্য জানান, আহমেদুর তাকে এবং তার স্ত্রীকে একটি ঋণের জামিনদার হতে অনুরোধ করেন। পরে এই দম্পতি কিছু কাগজে সই-ও করেছিলেন।

ইমাম হোসেন ও নাসরিন আখতার নামের আরেক দম্পতি আবিস্কার করেন, তাদের নামে এ ধরনের ছয়টি ঋণ নেওয়া হয়েছে। এমনকী ঋণের কিস্তি হিসেবে ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমাও করা হয়েছে, যদিও এসম্পর্কে কিছুই জানতেন না তারা।

ইমাম টিবিএসকে বলেন, ‘করোনাকালীন ১,০০০ টাকা অনুদান পাইয়ে দিতে আহমেদুর আমাদের ব্যাংকে নিয়ে যান। এরপর তিনি ও ব্যাংকের কর্মকর্তারা আমাদের বলেন, সহায়তা পেতে হলে একাউন্ট খুলতে হবে।’

৩৫ বছর বয়সী দিনমজুর করিম উদ্দিন জানান, নোটিশ পাওয়ার পর তিনি হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। তার স্ত্রী ও মায়ের নামে অবশ্য মাত্র একটি করে ঋণ নেওয়া হয়েছে। সেটুকুই যা বাঁচোয়া। 

নথি অনুসারে, ২০২১ সালের জুন মাসে করিম উদ্দিন ও তার মায়ের জন্য ঋণ মঞ্জুর করে ব্যাংক। এর একমাস পর তার স্ত্রীর নামেও ঋণ মঞ্জুর করা হয়।

করিম বলেন, ‘সহায়তা পেতে কেন ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে- একথা জিজ্ঞেস করলে ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, স্বচ্ছতার জন্যেই এটা করতে হবে।’

আরেক নোটিশপ্রাপ্ত রেহানা বেগম জানান, ‘কর্মকর্তারা বলেন, সরকার আমাদের ব্যাংক হিসাবে ১,০০০ টাকা জমা দেবে, এজন্য ব্লাঙ্ক চেকেও সই নেওয়া হয়। এখন আমরা আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।’

মাণ্ডারিতলার গ্রামবাসীদের কাছে পাঠানো নোটিশগুলো অনুসারে, সবকয়টি ঋণ ২০২১ সালের মার্চ থেকে নভেম্বরের মধ্যে ছাড় করা হয়েছে।

ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মিটন ঘোষ স্বাক্ষরিত নোটিশগুলোয় সতর্ক করে বলা হয়, ঋণগ্রহীতারা ১৫ দিনের মধ্যে সুদসহ সম্পূর্ণ ঋণের অংক পরিশোধে ব্যর্থ হলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নোটিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ব্যাংকের কর্মকর্তারা ঋণগ্রহীতাদের সাথে একাধিকবার সরাসরি দেখা করেছেন ও ফোনে কথা বলেছেন, কিন্তু তারপরও তারা ঋণ পরিশোধ করেননি। তাই ‘আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে, গ্রহীতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসবের মূলে যিনি

করোনা মহামারির সময় অনেক গ্রামবাসী তাদের চাকরি বা আয়ের উৎস হারান। এসময় তাদের করোনাকালীন সরকারি অনুদান পেতে সহায়তা করার উছিলায় ব্যাংকে নিয়ে যান আহমেদুর রহমান। 

একই গ্রামের বাসিন্দা আহমেদুরের বাড়বকুণ্ড বাজারে একটি দোকান আছে। তার মাধ্যমেই ব্যাংক কর্মকর্তারা এসব ব্যক্তির সাথে পরিচিত হন বলে উল্লেখ করেন মিটন ঘোষ।

ওই সময়ে ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন ইমতিয়াজুল আলম, বর্তমানে তিনি ব্যাংকের লালদীঘি শাখায় কর্মরত আছে। ইমতিয়াজুল এবং সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এসব ঋণ প্রদানে ভূমিকা রেখেছিলেন বলে জানান মিটন ঘোষ।

মঙ্গলবার ইমতিয়াজুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণ জারি ও ছাড়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আহমেদুর রহমানের থেকে কোনো সুবিধা নেইনি। তিনি তার আত্মীয়স্বজনকে ব্যাংকে পাঠাতেন। তার কথার ভিত্তিতে, আমরা সেসব ব্যক্তির নামে ঋণ দেই। এখন আমরা বুঝতে পারছি, তিনি সরকারি অনুদান পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এসব মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন।’

ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে বিধিমালা ভঙ্গ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমতিয়াজুল আলম স্বীকার করেন যে, ‘প্রক্রিয়ায় কিছু ঘাটতি ছিল’।

তিনি আরো বলেন, ‘এসব ঋণের সুদ ৪ শতাংশ হওয়ায়, রহমান হয়তো লাভবান হয়েছে। ব্যাংকে তার ভালো অংকের এফডিআর থাকায় আমারা তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, বৃহস্পতিবারেই সকল খেলাপি ঋণ পরিশোধ করে দেবেন।’

কিন্তু, বৃহস্পতিবার মিটন ঘোষ জানান, কোণো ঋণই এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, এসব ঋণের জামিনদার আহমেদুর রহমান, সেই সবকিছু জানে।

এদিকে নোটিশ পাওয়ার পর থেকেই ঋণের বিষয়ে জানতে আহমেদুরের বাড়িতে ভিড় করছেন গ্রামের মানুষজন। কিন্তু, তিনি কোনো দায়িত্ব নিতে নারাজ। বরং, সব দোষ দিচ্ছেন ব্যাংককে।

‘আমি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। তারা আমার গ্রামের বাসিন্দা ছিল বলে, আমি জামিনদার হিসেবে ব্যাংকের অনুরোধে কাগজপত্রে সই করেছিলাম। এজন্য ব্যাংক দায়ী। গ্রামবাসীরা ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করেনি। এখন তারা মিথ্যা বলছে,’ রহমান বলেন।

রহমানের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার না পেয়ে গ্রামবাসী বিষয়টি মিমাংসা করার উদ্দেশ্যে পুলিশ ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে যান।

টিবিএস-এর সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জালাল উল্লাহ বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর আমি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন তারা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংক কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।’

‘শুধু ব্যাংক কর্মকর্তারা জানেন কীভাবে ঋণ দেওয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে ব্যাংক আমাদের কাছে এসে তাদের গ্রাহকদের ঠিকানা যাচাই করে দেখে যে তারা আমাদের এলাকায় থাকেন কি-না।’

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদাকাতুল্লাহ মিয়াজাই মনে করেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আহমেদুর রহমানের যোগসাজশ রয়েছে। ‘আমার এলাকায় আমরা এমন অন্তত ৫০টি অভিযোগ পেয়েছি,’ তিনি বলেন।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, এ শাখার অধীনে ৫০–৫৫ জন এমন সন্দেহজনক ঋণের শিকার হয়েছেন।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ টিবিএসকে বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছি। তারা সবাই বলেছেন, তারা ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেননি। আমাদের প্রাথমিক তদন্তে আমরা তাদের দাবির সত্যতাও পেয়েছি।’

এখন যা বলছে ব্যাংক

জনতা ব্যাংকের বাড়বকুণ্ড শাখার ব্যবস্থাপক মিটন ঘোষ টিবিএসকে বলেন, ‘আমাদের কাছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সুপারিশসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র রয়েছে। আর ঋণগ্রহীতারা নিজেরাই তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলেছেন।’

তিনি বলেন, ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক আহমেদুর রহমান ব্যাংকটির সঙ্গে বেশ কয়েকজন ঋণগ্রহীতার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘ঋণ নেওয়ার পর ঋণগ্রহীতারা হয়তো আহমেদুর রহমানের সঙ্গে ওই টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু, এখন তাদের নোটিশ দেওয়ার পর তারা ব্যাংককে দায়ী করছেন।’

‘ঋণ বিতরণের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। যদিও সমস্ত নথিপত্র ঠিকঠাকই রয়েছে, তবে ঋণ পর্যবেক্ষণে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে,’ তিনি বলেন।

ডিমের বাজার থেকে প্রতিদিন ৮-১২ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে: ভোক্তা অধিদপ্তর

১৪ আগস্ট ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

দেশে দৈনিক চার কোটি ডিমের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে প্রতি ডিম ২-৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি করে প্রতিদিন ৮ থেকে ১২ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করা হয়েছে—যা খামারি, পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবার পকেটে ঢুকেছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি)।

সোমবার ডিমের উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা তুলে ধরেন ডিএনসিআরপির মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান।

এমএলএম এমটিএফই বন্ধ, বাংলাদেশ থেকে চলে গেলো কয়েক হাজার কোটি টাকা

১৯ আগস্ট ২০২৩, বাংলা ট্রিবিউন

আবারও এমএলএম কোম্পানির প্রতারণায় জড়িয়ে সর্বস্বান্ত হলো দেশের লক্ষাধিক যুবক। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং ক্রিপ্টো ট্রেডিং করা এমএলএম কোম্পানি এমটিএফই।

ধারণা করা হচ্ছে, এই কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকাপাচার হয়েছে। একইসঙ্গে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিদেশি একটা অ্যাপের ফাঁদে অনলাইনে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন হাজারও মানুষ।

দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করতো। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল। তবে অধিকাংশই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী বলে অভিমত সাইবার বিশ্লেষকদের।

দেশজুড়ে জাল বিছালেও প্রশাসন ছিল নিশ্চুপ

২১ আগস্ট ২৩, সমকাল

মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ; সংক্ষেপে এমটিএফই। দেশজুড়ে বহুধাপ বিপণন (এমএলএম) কারবারের ডিজিটাল জাল বিছিয়ে তুলে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ভুঁইফোঁড় এই অনলাইন প্রতিষ্ঠানের চাতুরীর ফাঁদে পড়ে বরিশাল, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, উত্তরাঞ্চলসহ অনেক এলাকার লাখ লাখ মানুষ এখন ফতুর। দেশে অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে অনলাইনের সব কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। কেউ কেউ বলছেন, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে যে পরিমাণ অর্থ গায়েব করেছে, এর চেয়ে ১০ গুণ টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লুট করেছে এমটিএফই।

২০২১ সালের পর থেকে এমটিএফই বাংলাদেশে ভার্চুয়ালি কার্যক্রম চালালেও তা কেন প্রশাসনের নজরে এলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের আনাচে-কানাচে সভা-সেমিনার করে কোম্পানিতে যুক্ত হলে কেমন সুবিধা মিলবে– এর জাদুকরি বয়ানও দেওয়া হয়েছিল। এসব সেমিনারে উপস্থিত থাকতেন এমটিএফইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিনিয়োগ করে কীভাবে ‘শিকড় থেকে শিখরে’ ওঠা যায়, সেই গল্প শোনাতেন তারা। নিয়ম না থাকলেও প্রলুব্ধ করতে দেশের বিভিন্ন জেলায় তিনশর বেশি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেকে আবার ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এমটিএফইর সভা-সেমিনারের ছবি প্রকাশ করে অন্যদের আকৃষ্ট করতেন। ৭ আগস্ট প্রথমে কারিগরি ত্রুটির কথা বলে গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন সেবা বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানটি। হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে গত বৃহস্পতিবার অনলাইন থেকে একেবারেই হাওয়া হয়ে যায় এমটিএফই।

২২ হাজারের চাকরি পেতে ২২ লাখ

২০ আগস্ট, ২০২৩, দেশ রুপান্তর

প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি ‘সোনার হরিণ’। বিসিএসে, কিছু ব্যতিক্রম বাদে, একজন প্রার্থীকে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পেতে সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রাখতে হয়। প্রার্থীরা একমনে চার-পাঁচ বছর অনুশীলন করেন। তাও লাখ লাখ প্রার্থীর মধ্যে চাকরি হয় অল্পজনেরই। প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার চাকরির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

পুরোপুরি ভিন্ন পরিস্থিতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেকশন অফিসারসহ নানা পদে। এগুলো প্রথম শ্রেণির চাকরি। মেধা বা যোগ্যতা নয়, টাকা আর তদবির থাকলে সেখানে চাকরি হয়। সম্প্রতি বেশ কিছু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে লেনদেন হয়েছে বলে ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে।

প্রত্যেক জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করার নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী শুরুতেই কয়েকশ চাকরি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে তেমন মন না থাকলেও নিয়োগের মহোৎসব চলছে। শিক্ষক নিয়োগে লেনদেন কম হলেও তদবির চলে, তবে মেধাবীরাও নিয়োগ পান। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পুরোটাই তদবিরে আর লেনদেনের মাধ্যমে হয়। আত্মীয়করণও আছে। লিখিত পরীক্ষা লোকদেখানো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে ঘুষের রেট অনেকটাই নির্ধারিত। সবখানে প্রায় এক রেট। যত টাকা স্কেলের চাকরি প্রায় তত লাখ টাকা ঘুষ। সবচেয়ে লোভনীয় সেকশন অফিসার পদ। এ পদে বেতন স্কেল ২২ হাজার টাকা, আর ঘুষের রেট ২২ লাখ টাকা। ২০ লাখেও কখনো হয়। দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ১২ থেকে ১৫ লাখ, তৃতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৮ থেকে ১০ লাখ এবং চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে ঘুষের রেট ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা।

‘বিশেষ বিবেচনায়’ বেক্সিমকোকে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ

২২ আগস্ট ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিশাল অঙ্কের ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন শাখার এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি জনতা ব্যাংক থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি শিল্প গ্রুপকে ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার এই ঋণ দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এই ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। হিসাব অনুযায়ী, এর মাধ্যমে তারা কেবল একটি গ্রুপকেই ব্যাংকের মূলধনের ৯৪৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ ঋণ সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু কোনো একক গ্রাহককে মূলধনের ২৫ শতাংশের (ফান্ডেড ও ননফান্ডেড) বেশি ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই। একাধিকবার গ্রুপের সার্বিক তথ্য চেয়ে চিঠি দিলেও তা পরিপালন করেনি জনতা ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গ্রুপের মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য দেয় ব্যাংকটি। এরপর নতুন করে আরও ৪৭৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ঋণের আবেদন করেছে বেক্সিমকো। এর সূত্র ধরে বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। কেননা এত বড় সিদ্ধান্ত ব্যাংকের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে জনতা ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ জুলাই জনতা ব্যাংকের ৭৭৮তম পর্ষদ সভায় বেক্সিমকো গ্রুপের ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এই সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কোনো গ্রাহককে বিশেষভাবে একক গ্রাহক ঋণসীমা এবং ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতির বিধান রয়েছে। প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলেও জনতা ব্যাংককে এই ঋণের বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পরিদর্শন শাখার প্রতিবেদনে এ বিষয়ে দেশের রপ্তানি খাতে বেক্সিমকো গ্রুপের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়- ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট নিরসনে অবদান রাখছে। এ ছাড়া এই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। এই সার্বিক বিবেচনায় ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে উল্লিখিত গ্রাহকদের হিসাবে রপ্তানি ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য জনতা ব্যাংক লিমিটেড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউতে (সমঝোতা স্মারক) একক গ্রাহক ঋণসীমা সংক্রান্ত উপধারা ৪(১) ও (২) থেকে অব্যাহতি প্রদানের ক্ষেত্রে অনাপত্তি প্রদান করা সমীচীন হবে মর্মে প্রতীয়মান হয়।’

বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতফসিল ও একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রমের দায় থেকে জনতা ব্যাংককে মুক্তি দিলেও দুটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১. ব্যাংকে গ্রাহকের মোট ঋণের পরিমাণ আর বাড়ানো যাবে না। ২. ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রাহকের ঋণসুবিধা ২৫ শতাংশ সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।

এর আগে গত ১৮ জুলাই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৭৭৬তম সভায় বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেডের অনুকূলে ১২০ দশমিক ৪৮ কোটি টাকার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ও ১২৪ দশমিক ৬৪ কোটি টাকার রপ্তানি বিল ও সার্টিফিকেট ক্রয় বাবদ সাময়িক আগাম, ক্রিসেন্ট ফ্যাশনস অ্যান্ড ডিজাইনের অনুকূলে (প্রায়) ৪০ দশমিক ৩৯ কোটি টাকার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ও ১২ দশমিক ৯২ কোটি টাকার প্যাকিং ক্রেডিট সুবিধা, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলসের অনুকূলে (প্রায়) ৪৮ দশমিক ৬৫ কোটি টাকার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ও ১১ দশমিক ১২ কোটি টাকার প্যাকিং ক্রেডিট সুবিধা, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজের অনুকূলে (প্রায়) ৪৮ দশমিক ২৬ কোটি টাকার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ও ১১ দশমিক ৯২ কোটি টাকার প্যাকিং ক্রেডিট সুবিধা এবং শাইনপুকুর গার্মেন্টসের অনুকূলে (প্রায়) ৪৯ কোটি টাকার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ও ১১ দশমিক ৯৮ কোটি টাকার প্যাকিং ক্রেডিট সুবিধাসহ সর্বমোট ৪৭৯ দশমিক ৩৬ কোটি টাকার ঋণসুবিধা অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে ৩০৬ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা ননফান্ডেড ও ১৭২ দশমিক ৫ কোটি টাকা ফান্ডেড ঋণ।

সেই অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ জুলাই ব্যাংকের গ্রাহকদের অনুকূলে একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি চাওয়া হয়।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের সাথে ব্যাংকসমূহের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থিক পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়ে থাকে। সমঝোতা স্মারকের নানা শর্ত ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে ব্যাংকের জন্য, যা সকল গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংকসমূহের সাথে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের কোনো শর্ত কোনো সুনির্দিষ্ট গ্রাহকের জন্য নির্ধারণ বা আরোপ করা হয় না বিধায় আলোচ্য গ্রাহক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য চুক্তির শর্ত পরিপালন হতে অব্যাহতি প্রদানের বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত নয়।’

জনতা ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সভাসমূহের বোর্ড মেমো পর্যালোচনায় দেখা যায় ৩০ জুন ২০২৩ তারিখ ভিত্তিতে জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো লিমিটেড ও এর অন্য ২৯টি প্রতিষ্ঠানের ফান্ডেড দায় রয়েছে ২১ হাজার ৬১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকার ৯৩৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ ছাড়া ফান্ডেড ও ননফান্ডেড মিলিয়ে মোট দায় ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি ৩ লাখ (ননফান্ডেড ঋণের ৫০ শতাংশ নিয়ে মোট ঋণ হিসাবায়ন করা হয়েছে) কোটি টাকা। যা ব্যাংকের মূলধনের ৯৪৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এই মুহূর্তে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নতুন করে ৪৭৯ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা অনুমোদন করা হলে ব্যাংকে বেক্সিমকো লিমিটেড ও এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ফান্ডেড দায় দাঁড়াবে ২১ হাজার ৭৮৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। যা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের ৯৪১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এবং ফান্ডেড ও ননফান্ডেড মিলিয়ে মোট দায় দাঁড়াবে ২২ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। যা ব্যাংক মূলধনের ৯৬৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

ইতঃপূর্বে এ বিভাগ থেকে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস, ঢাকা শাখার গ্রাহক বেক্সিমকো লি., বেক্সিমকো ফার্মা লি. ও ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লি. ও ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিঃ ইউনিট-২-এর ঋণ সুবিধার ক্ষেত্রে একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রমণে অনাপত্তি দেওয়া হয়েছে। ওই গ্রাহকদের মধ্যে বেক্সিমকো লি. ও বেক্সিমকো ফার্মা লি. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বিধায় তাদের সঙ্গে গ্রুপের অন্য কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠানের দায় যুক্ত হবে না। তবে ইতঃপূর্বে ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লি. ও ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লি. ইউনিট-২-এর ঋণসুবিধা একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করায় এ বিভাগের কাছ থেকে অনাপত্তির জন্য আবেদন করার সময় জনতা ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দায়-দেনার পরিপূর্ণ হিসাব পাঠানো হয়নি। তখন কেবল ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লি. ও ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লি. ইউনিট-২Ñ এই দুটি প্রতিষ্ঠানের দায়-দেনার হিসাব পাঠানো হয়। বর্তমানে গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দায়-দেনার হিসাব পাঠানোর পর দেখা যায় ব্যাংকে বেক্সিমকো লি. ও এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ফান্ডেড দায় রয়েছে ২১ হাজার ৬১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং মোট দায় ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি ৩ লাখ টাকা।

বর্তমানে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসে ক্রিসেন্ট ফ্যাশনস অ্যান্ড ডিজাইন লি.-এর ফান্ডেড দায়ের পরিমাণ ১ হাজার ২৯৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা ব্