সরকারের পেনশন কর্মসূচি কি আসলেই সর্বজনীন?
কল্লোল মোস্তফা
দেশের সকল নাগরিকের সুরক্ষা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। দীর্ঘদিন কর্মময় ব্যস্ত জীবনের পর মানুষের প্রয়োজন নিরাপদ নিশ্চিত অবসর জীবন। কিন্তু তখনই বড় নিরাপত্তাহীনতা, দারিদ্র, অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষকে কাবু করে ফেলে। সেখানেই রাষ্ট্রের ভূমিকার গুরুত্ব। বহুদেশ এবিষয়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, সেগুলোর আরো বিকাশও ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’ চালু করা হয়েছে। এই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সর্বজনের জন্য প্রযোজ্য হবার কথা। এই লেখায় এই কর্মসূচি এবং সেইসাথে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সরকার ১৭ আগস্ট ২০২৩ থেকে দেশব্যাপী সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় পেনশন সুবিধা পেতে হলে নাগরিকদের নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা দিতে হবে। একজন নাগরিক যদি ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সে নাম নথিভুক্ত করেন, তবে তাকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং যদি ৫০ বছরের বেশি বয়সে নথিভুক্ত হন, তবে তাকে ন্যূনতম ১০ বছরের জন্য চাঁদা দিতে হবে।১
সরকার এই পেনশন কর্মসূচিটিকে সর্বজনীন বললেও এই কর্মসূচির আওতায় পেনশন সুবিধা পেতে হলে এমনকি নিম্ন আয়ের মানুষকেও চাঁদা দিতে হবে। যাচাই করা প্রয়োজন, চাঁদার বিনিময়ে পেনশন কর্মসূচি আসলে সর্বজনীন হতে পারে কিনা। এজন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গাইডলাইনের সঙ্গে প্রস্তাবিত পেনশন কর্মসূচির তুলনা করে দেখা প্রয়োজন। ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইএলও বিশ্বব্যাপী পেনশনব্যবস্থাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্বের বেশিরভাগ পেনশন ব্যবস্থার ডিজাইন করা হয়েছে আইএলওর কারিগরি সহায়তার ভিত্তিতে।২
পেনশন ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো: বয়স্ক ব্যক্তিদের আয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দারিদ্র্য প্রতিরোধ করা এবং বৈষম্য হ্রাস করা। পেনশন ব্যবস্থার ডিজাইনের ক্ষেত্রে আইএলও যেসব মূলনীতির কথা নির্দেশ করেছে, সেগুলোকে তিনটি প্রধান গ্রুপে বিভক্ত করা যেতে পারে: পেনশন ব্যবস্থার আওতা কতটুকু, পেনশন পর্যাপ্ত কিনা এবং ব্যবস্থাটি টেকসই কিনা।৩
পেনশন ব্যবস্থা এমন হওয়া প্রয়োজন যেন তা দেশের প্রত্যেক নাগরিককে বৃদ্ধ বয়সে আয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে। সর্বজনীনতার এই নীতিটি মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সনদের অন্তর্ভুক্ত। আর পেনশন ব্যবস্থার পর্যাপ্ততা দুভাবে বিবেচনা করা হয়: হরাইজন্টাল বা অনুভূমিক এবং ভার্টিক্যাল বা উল্লম্ব। হরাইজন্টাল ডাইমেনশনের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়, পেশা যা-ই হোক না কেন, বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে প্রত্যেক নাগরিক বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় পেনশনটুকু যেন পান। আর ভার্টিক্যাল ডাইমেনশনের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয় যে, পেনশন ব্যবস্থার সুবিধা এমন হওয়া প্রয়োজন যেন তা বয়স্ক ব্যক্তির পূর্ববর্তী উপার্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আর পেনশন ব্যবস্থাটিকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হয় যেন তা সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হয় অর্থাৎ এটি ভবিষ্যতে এমন কভারেজ এবং পর্যাপ্ততা অর্জন করতে পারে, যা আর্থিকভাবে টেকসই।
এই বহুমুখী উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য আইএলও একটি মাল্টি-টায়ার বা বহুস্তরভিত্তিক পেনশন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। একাধিক স্তরের পেছনে মূল যুক্তি হলো যে, পেনশন ব্যবস্থার আওতায় বিভিন্ন ধরনের মানুষকে তাদের জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। একটি বহুস্তরভিত্তিক পেনশন ব্যবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেসব স্তর থাকে সেগুলো হলো: করের অর্থে পরিচালিত মৌলিক পেনশন (টায়ার-০); একটি বাধ্যতামূলক, পেশাকেন্দ্রিক চাঁদাপ্রদানভিত্তিক পেনশন (টায়ার-১); এবং সম্পূরক পেনশন (টায়ার-২)। টায়ার-০ হলো একটি চাঁদাবিহীন পেনশন স্কিম, যার অর্থায়ন করা হয় জনগণের করের টাকায় সরকারের সাধারণ বাজেট থেকে। এই পেনশনের আওতায় একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর দেশের প্রত্যেক নাগরিকই পেনশন সুবিধা পেয়ে থাকেন, তবে যদি কেউ অন্যান্য স্তরের পেনশনের আওতাভুক্ত হন, তাহলে তিনি আর টায়ার-০ পেনশন পাওয়ার যোগ্য থাকেন না। এই স্তরের পেনশনের পরিমাণ এমন হতে হয় যেন একজন নাগরিক বৃদ্ধ বয়সে মর্যাদাপূর্ণ মানবিক জীবনযাপন করতে পারেন। অন্যদিকে টায়ার-১ পেনশন হলো পেশাভিত্তিক, এই পেনশনের আওতাভুক্ত পেশাজীবীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদার বিনিময়ে নির্দিষ্ট পেনশন সুবিধা ভোগ করেন। এই পেনশনে নিয়োগদাতা বা মালিকপক্ষ ও সরকারের নির্দিষ্ট পরিমাণ অবদান থাকে। পরিশেষে, টায়ার-২ পেনশন স্কিমটি হলো স্বেচ্ছামূলক ও সম্পূরক চাঁদা প্রদানভিত্তিক পেনশন, যার মাধ্যমে ব্যক্তি আরও বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন।৪
আইএলও মনে করে, যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত এবং যাদের আয় এত কম যে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দেওয়া সম্ভব নয়, তাদেরকে পেনশনের আওতায় আনার একমাত্র উপায় হলো করের অর্থে পরিচালিত চাঁদাবিহীন পেনশন। অর্থনীতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের আকার বড় হলে, শুধু চাঁদাভিত্তিক পেনশন চালু করা হলে দেশের জনগণের এক বড় অংশই পেনশনের আওতার বাইরে থেকে যায়।৫
আইএলও মনে করে, যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত এবং যাদের আয় এত কম যে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দেওয়া সম্ভব নয়, তাদেরকে পেনশনের আওতায় আনার একমাত্র উপায় হলো করের অর্থে পরিচালিত চাঁদাবিহীন পেনশন। অর্থনীতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের আকার বড় হলে, শুধু চাঁদাভিত্তিক পেনশন চালু করা হলে দেশের জনগণের এক বড় অংশই পেনশনের আওতার বাইরে থেকে যায়।
এখন যদি আমরা আইএলওর বহুস্তরভিত্তিক পেনশন ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবিত পেনশন কর্মসূচির তুলনা করি, আমরা দেখতে পাব যে, এর নাম ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’বলা হলেও, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির একটি অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য এই পেনশন কর্মসূচিতে অনুপস্থিত। আর তা হলো করের অর্থে পরিচালিত চাঁদাবিহীন টায়ার-০ পেনশন। সরকারের প্রস্তাবিত পেনশন কর্মসূচির আওতায় একজনকে কমপক্ষে ১০ বছরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ চাঁদা দিতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘প্রবাস’ স্কিমের আওতায় ৭ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার বা ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। বেসরকারিখাতের চাকরিজীবীদের ‘প্রগতি’ স্কিমের আওতায় ২ হাজার, ৩ হাজার বা ৫ হাজার টাকা, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ‘সুরক্ষা’ স্কিমে ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার বা ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। এছাড়া দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের (যার বর্তমান আয়সীমা বার্ষিক ৬০ হাজার টাকা) ব্যক্তিদের ‘সমতা’ স্কিমে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হবে। একমাত্র সমতা স্কিমে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। বাকিদের চাঁদায় সরকারের কোনো অবদান থাকবে না। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা ২০২৩ অনুসারে, বেসরকারি খাতের কর্মচারীরা এ স্কিমে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে মাসিক চাঁদার অর্ধেক কর্মচারী এবং অর্ধেক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রদানের বিধান রাখা হলেও পেনশন স্কিমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কোনো প্রতিষ্ঠান এ চাঁদা প্রদান করতে অস্বীকার করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। এর মানে হলো, প্রস্তাবিত পেনশন স্কিমটি খুব কম সরকারি অনুদানভিত্তিক টায়ার-২ পেনশন ব্যবস্থা। একারণেই জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ বিল পাস হওয়ার সময় বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য বলেছেন, এই পেনশনব্যবস্থা ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো। জনগণ চাঁদা দেওয়ার পর সরকার কী পরিমাণ অর্থ দেবে, সরকারের অংশগ্রহণ কী হবে, তা আইনে পরিষ্কার নয়।৬
প্রশ্ন হলো:নিম্ন আয়ের মানুষ কি প্রস্তাবিত পেনশন প্রকল্পের জন্য কমপক্ষে ১০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্ধারিত চাঁদা দিতে পারবেন? সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেখানে কোনো ধরনের চাঁদা ছাড়াই পেনশন পান, সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছ থেকে পেনশনের জন্য চাঁদা নেওয়া কি ন্যায্যতার দৃষ্টান্ত? এক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। ২০০৯ সালের আগপর্যন্ত থাইল্যান্ডে সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি খাতের কর্মচারী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য বেশ কয়েকটি কন্ট্রিবিউটরি বা চাঁদাভিত্তিক পেনশন চালু ছিল। কিন্তু এর ফলে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের খুব অংশই পেনশনের আওতায় এসেছিল। সব মিলিয়ে দেশের জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ পেনশনের আওতাভুক্ত ছিল। ২০০৯ সালের পর চাঁদাবিহীন করের অর্থ নির্ভর পেনশন চালু করার পরই কেবল থাইল্যান্ডের পেনশন সত্যিকার অর্থে সর্বজনীন হয়ে ওঠে।৭
প্রশ্ন হলো:নিম্ন আয়ের মানুষ কি প্রস্তাবিত পেনশন প্রকল্পের জন্য কমপক্ষে ১০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্ধারিত চাঁদা দিতে পারবেন? সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেখানে কোনো ধরনের চাঁদা ছাড়াই পেনশন পান, সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছ থেকে পেনশনের জন্য চাঁদা নেওয়া কি ন্যায্যতার দৃষ্টান্ত?
শুধু তা-ই নয়, থাইল্যান্ডের সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ১৯৯০-এর আর্টিকেল ৩৩ অনুসারে, থাইল্যান্ডের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য পেনশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে প্রতি মাসে বেসরকারি কর্মীর বেতনের ৭ শতাংশ (বেতনের সর্বোচ্চ সীমা ১৫ হাজার বাথ) চাঁদা হিসেবে জমা হয় যার ৩ শতাংশ বেসরকারি কর্মী নিজে দেন, ৩ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ১ শতাংশ সরকার প্রদান করে। আর প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের ক্ষেত্রে ব্যক্তির মাসিক চাঁদার অর্ধেক সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করে–ব্যক্তি মাসে ১০০ বাথ চাঁদা দিলে সরকার অনুদান দেয় ৫০ বাথ, ব্যক্তি মাসে ৩০০ বাথ চাঁদা দিলে সরকার দেয় ১৫০ বাথ।৮
থাইল্যান্ডের পেনশন ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের পেনশনের তুলনা করলে দেখা যায়: ১) বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের মতো চাঁদাবিহীন কোনো পেনশন নেই ২) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পেনশন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক নয় এবং ৩) প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের মাসিক চাঁদায় সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই।
১) বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের মতো চাঁদাবিহীন কোনো পেনশন নেই ২) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পেনশন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক নয় এবং ৩) প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের মাসিক চাঁদায় সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই।
ছক-১: থাইল্যান্ডের প্রধান প্রধান পেনশন স্কিম৯
স্কিমের নাম | যাদের জন্য প্রযোজ্য | স্কিমের ধরন | বৈশিষ্ট্য |
টায়ার-০, বেসিক পেনশন | |||
ওল্ড এইজ অ্যালাউন্স | সরকারি চাকরিজীবীবাদে সকল থাই নাগরিক | চাঁদাবিহীন | চাঁদা: প্রয়োজন নেই |
টায়ার-১, সোশ্যাল ইনস্যুরেন্স স্কিম | |||
এসএসও আর্টিকেল ৩৩- সোশ্যাল সিকিউরিটি ফান্ড | বেসরকারি চাকরিজীবী | বাধ্যতামূলক, চাঁদার বিনিময়ে নির্দিষ্ট সুবিধার পেনশন | চাঁদা: বেতনের ৭ শতাংশ (৩ শতাংশ কর্মী, ৩ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ১ শতাংশ সরকার) |
এসএসও আর্টিকেল ৩৯- সোশ্যাল সিকিউরিটি ফান্ড | চাকরিচ্যুত বেসরকারিকর্মী | ঐচ্ছিক, চাঁদারবিনিময়ে নির্দিষ্ট সুবিধার পেনশন | চাঁদা: মাসে ৪৩২ বাথ |
টায়ার-২, কম্প্লিমেন্টারি পেনশন স্কিম | |||
এসএসও আর্টিকেল ৪০- সোশ্যাল সিকিউরিটি ফান্ড | বাধ্যতামূলক পেনশনেরআওতার বাইরে থাকা কর্মী (অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী) | ঐচ্ছিক, চাঁদারবিনিময়ে নির্দিষ্ট সুবিধার পেনশন | চাঁদা: মাসে ১০০ বাথ ও সরকারের ৫০ বাথ অথবা মাসে ৩০০ বাথ ও সরকারের ১৫০বাথ। পেনশনধারী মাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার বাথ চাঁদা দিতে পারবেন, যদিও সরকারেরঅনুদান সর্বোচ্চ ১৫০ বাথ |
ন্যাশনাল সেভিংস ফান্ড | বাধ্যতামূলক পেনশনেরআওতার বাইরে থাকা কর্মী (অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী) | ঐচ্ছিক, চাঁদার বিনিময়ে নির্দিষ্ট সুবিধার পেনশন | চাঁদা: বছরে ৫০ থেকে ১৩ হাজার ২০০ বাথ। সরকার ব্যক্তির চাঁদা ও বয়স অনুযায়ীবছরে ৬০০, ৯৬০ অথবা ১ হাজার ২০০ বাথ প্রদান করে। |
বস্তুত, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের পেনশন কর্মসূচির মাধ্যমে পেনশনের অনুভূমিক এবং উল্লম্ব উভয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, আইএলওর দেওয়া তথ্যানুসারে, কানাডায় সব বয়স্ক ব্যক্তি চাঁদাবিহীন সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত৷ তুলনামূলক উচ্চ আয়ের নাগরিকদের জন্য স্বেচ্ছায় চাঁদা প্রদানভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি পেনশনের ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যদিকে সুইডেনে পেনশন ব্যবস্থার মূল উপাদান হলো একটি পেশাকেন্দ্রিক চাঁদাপ্রদানভিত্তিক পেনশন (টায়ার-১)। কিন্তু যাদের আয় নেই বা আয় কম, তাদের জন্য রয়েছে গ্যারেন্টেড পেনশন(টায়ার-০)। পর্তুগালেও একটি বাধ্যতামূলক চাঁদাপ্রদানভিত্তিক পেনশন ব্যবস্থা রয়েছে; কিন্তু যাদের পক্ষে চাঁদাভিত্তিক পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ সম্ভব নয়, তাদের জন্য রয়েছে চাঁদাবিহীন সামাজিক পেনশন (টায়ার-০)।১০
বাংলাদেশের বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব কর্মী এবং প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের এক বৃহৎ অংশের পক্ষে চাঁদার বিনিময়ে পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ দুরূহ।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই সব পেনশন ব্যবস্থার মধ্যে যথেষ্ট ভিন্নতা থাকলেও একটি বিষয় সব কটি পেনশন স্কিমের মধ্যেই দেখা যায়। আর তা হলো, সব কটি পেনশন ব্যবস্থায়ই চাঁদাবিহীন করের অর্থে পরিচালিত মৌলিক পেনশন (টায়ার-০) ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত, যার মাধ্যমে পেনশন ব্যবস্থায় নিম্ন আয়ের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশের বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব কর্মী এবং প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের এক বৃহৎ অংশের পক্ষে চাঁদার বিনিময়ে পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ দুরূহ। এ কারণেই প্রস্তাবিত পেনশন কর্মসূচিটিকে সত্যিকার অর্থে সর্বজনীন করতে হলে এতে চাঁদাবিহীন মৌলিক পেনশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
কল্লোল মোস্তফা: প্রকৌশলী, লেখক। ইমেইল: kallol_mustafa@yahoo.com
তথ্যসূত্র:
১) পটভূমি ও উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট
২) ‘The ILO Multi-Pillar pension model: Building equitable and sustainable pension systems’, ILO, September 2018
৩) ‘Review of the pension system in Thailand’, ILO, ২০২২
৪) ‘The ILO Multi-Pillar pension model: Building equitable and sustainable pension systems’, ILO, September 2018
৫) ‘Summary note on options for the design of a multi-tier pension system in VietNam’, আইএলও, ২০১৯
৬) ‘সবাইকে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে বিল পাস’, প্রথম আলো, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩
৭) ‘Universal Social Protection: Country cases’, ILO & World Bank, 2016
৮) ‘Review of the pension system in Thailand’, ILO, ২০২২
৯) পূর্বোক্ত
১০) পূর্বোক্ত