সম্পাদকীয়
বাংলাদেশে সর্বজনের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চলছে। ২০০৮ এ নির্বাচিত হবার পর ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হবার বাসনা নিয়ে বর্তমান সরকার নির্বাচনসহ সকল প্রতিষ্ঠান চুরমার করেছে, জোরজবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতায় থাকার পথই অবলম্বন করছে। সরকারের এই অবস্থান ও জনগণের মধ্যে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা নানা আয়োজনে ব্যস্ত, যার মধ্যে ভিসানীতি অন্যতম। বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে বিভিন্ন তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের সারকথা তুলে ধরে বাংলাদেশে তার সম্ভাব্য কার্যকারিতা আলোচনা করা হয়েছে এই সংখ্যায়।
ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর আবারও ইসরায়েলি নির্বিচার আক্রমণ ও গণহত্যা চলছে। প্রথমে ব্রিটিশ পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই মধ্যপ্রাচ্যে এই অশান্তির বীজ বপন করেছে, পুষ্টি দিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি সংবাদপত্র দ্য হারেজ-এ প্রকাশিত একটি লেখাতেও হামাসের আক্রমণের পেছনে ইসরাইলের দায়দায়িত্বই তুলে ধরা হয়েছে। লন্ডনে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ঠিকই বলেছেন ‘দখলদার এবং অধিকৃতদের মধ্যে কোনো তুলনা চলে না’। আমরা ফিলিস্তনি জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি।
সংখ্যাবৃদ্ধির উচ্ছ্বাসের নীচে চাপা পড়ে আছে বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রের এক ভয়াবহ অবনতির চিত্র। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে প্রণীত শিক্ষানীতি পর্যালোচনা, বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং একইসঙ্গে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য করণীয় নিয়ে একটি লেখার প্রথম পর্ব প্রকাশিত হলো এই সংখ্যায়। পাশাপাশি সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনুষ্ঠিত কনভেনশনের সারপত্র প্রকাশ করা হলো।
দীর্ঘদিন কর্মময় ব্যস্ত জীবনের পর মানুষের প্রয়োজন নিরাপদ নিশ্চিত অবসর জীবন। দেশের সকল নাগরিকের সুরক্ষা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। বাংলাদেশে সম্প্রতি ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’ চালু করা হয়েছে। এই সংখ্যায় এই কর্মসূচি এবং সেইসাথে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করা হয়েছে।
বাজার প্রক্রিয়া বা এডাম স্মীথের ‘অদৃশ্য হস্ত’ দিয়ে নয়, পুঁজিবাদী বিশ্বের অর্থনীতি চলে দৃশ্যমান নানা শক্তির জোরে ও তৎপরতায়। এদের মধ্যে থাকে লবিস্ট, কনসালট্যান্ট কিংবা ইকোনোমিক হিটম্যান। কাজ না হলে বলপ্রয়োগ, খুন, দখল, সামরিক শাসন সবকিছুরই অভিজ্ঞতা বিভিন্ন দেশের আছে। বাংলাদেশে এরকম লোকদেরই আমরা চিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে। এই সংখ্যায় নমুনা হিসাবে এরকম একজনের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত অনুসন্ধান করা হয়েছে।
সুন্দরবন কিছু গোষ্ঠীর লাভ ও লোভের উন্মাদনার শিকার। সর্বশেষ বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার যৌথভাবে রামপাল প্রকল্প করে সুন্দরবনের অস্তিত্বের ওপর আঘাত করছে। এর সাথে যোগ হয়েছে পায়রা ও বরগুণায় চীনা বিনিয়োগে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প। আমাদের জানতে হবে এই সুন্দরবন কেন মহাপ্রাণ, কেন আমাদের অস্তিত্ব এর সাথে সম্পর্কিত। সেকারণেই সুন্দরবনের ইতিহাস এবং তার বিপুল প্রাণবৈচিত্র নিয়ে রচনার প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হলো এই সংখ্যায়।
২০১৮ সালে মজুরি নির্ধারণের পর গত কয়বছরে মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিকদের প্রকৃত আয় কমে গেছে, যদিও একই সময়ে শুধু ডলারের দামবৃদ্ধির কারণে মালিকেরা এক বছরে বাড়তি ৯০ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর চলমান আন্দোলনে অনেকগুলো সংগঠন থেকে নিম্নতম মজুরি হিসাবে দাবি উঠেছে ২৫ হাজার টাকা। এসব কর্মসূচী ও আলোচনার মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা নিম্নতম মজুরির প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। পরে মালিকপক্ষ প্রস্তাব করেছে ১০ হাজার ৪০০ টাকা। সিপিডির প্রস্তাব ধরে নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের বিষয় পরিষ্কার করা হয়েছে এই সংখ্যায়।
বর্তমান বিশ্বায়ন প্রকৃতপক্ষে একচেটিয়া পুঁজিবাদী বা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন। এর জাল থেকে বের হবার পথ সন্ধান করা হয়েছে একটি লেখায়। আরেকটি লেখায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির তুলনামূলক অবস্থান নিয়ে যেসব জরীপ প্রকাশ করে তা থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশে শোষণ পীড়ন থেকে মুক্তির সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। কিন্তু তার বেশিরভাগই অজানা বা অস্বচ্ছ। অসংখ্য মানুষের অবদান থাকলেও কেন্দ্রের কিছু ব্যক্তি ছাড়া আর কারও ভূমিকা বা চিন্তার খবর কমই পাওয়া যায়। সেজন্য আমরা তৃণমূলের সংগঠক নেতৃবৃন্দের খবর, তাদের অভিজ্ঞতা ও চিন্তা জানার চেষ্টা করছি। এবারে যাকে পেয়েছি তিনি হাওর অঞ্চলের মানুষ- শিক্ষক ও বিপ্লবী মো. সাইফুল ইসলাম।
ধারাবাহিক লেখা ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর ও তারপর’-এর ২য় পর্বে আলোচনা করা হয়েছে সংবিধান সংশোধন, জাতীয় ও ডাকসু নির্বাচন, সংসদে ভিন্ন স্বর এবং পরিকল্পনা কমিশনের জটিলতার কিছু দিক। আরেকটি ধারাবাহিক লেখা ‘২২ পরিবারের অতীত ও বর্তমান’ ১০ম পর্বে সামরিক শাসনকালে রাষ্ট্র-ব্যবসায়ের জৈবিক সম্পর্ক নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ উপস্থিত করা হয়েছে।
সক্রেটিসের বিচার এবং মৃত্যুদন্ড দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগের কথা হলেও এখনও তা আলোচনা বিতর্ক এবং অবশ্যই অনুপ্রেরণার বিষয়। ভারতের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ডি.ডি. কোসাম্বী এই বিচার নিয়ে লিখেছেন। তাতে সমসাময়িক ঘটনা ও বিষয়াবলীও আনা হয়েছে।
“আর রাত থাকবে না” এবং “প্রিপিকুরা”: সমসাময়িক “প্রযুক্তি” “আদিবাসী” ভাব-ভাবনা-চর্চার বিকাশের সুরতহাল নিয়ে চলচ্চিত্র পর্যালোচনা প্রকাশ করা হলো। এছাড়া অনলাইন সংস্করণে থাকছে গত কয়েকমাসের খবর।
আনু মুহাম্মদ
২৫শে অক্টোবর ২০২৩