২২ পরিবারের অতীত ও বর্তমান-১০

২২ পরিবারের অতীত ও বর্তমান-১০

সামরিক শাসন: রাষ্ট্র-ব্যবসায়ের জৈবিক সম্পর্ক

মেহেদী হাসান

বাংলাদেশে পুঁজিবাদের বিকাশ উল্লেখযোগ্য আকার নিয়েছে। এই বিকাশধারায় একদিকে তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের ২২ পরিবারের চেয়েও সম্পদশালী বেশ কিছু গোষ্ঠী, অন্যদিকে বৈষম্য ও পরিবেশ বিধ্বংসী তৎপরতাও অভূতপূর্ব মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ‘উন্নয়ন’ ধারার স্বরূপ বিশ্লেষণ, পুঁজির কেন্দ্রীভবনের ধরন, শ্রেণিবিন্যাস, এই ধারার পুঁজিবাদ বিকাশে রাষ্ট্রের ভূমিকা ইত্যাদি পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রবন্ধ কয়েক কিস্তিতে এই অনুসন্ধান বিশ্লেষণ হাজির করছে। দশম কিস্তিতে সামরিক সরকারের আমলে কী ধরনের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুরাতনের সাথে নতুন ধনী ব্যবসায়ী পুঁজি সম্প্রসারিত হয়েছে এবং রাষ্ট্র-ব্যবসায়ের সম্পর্ক গভীর হয়েছে, তার প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।

‘The emphasis on growth as an aggregate phenomenon that emerged only with industrial capitalism and turned into an unquestionable economic paradigm following the Second World War is not trivial. It implies that growth as we know it is capitalist growth, or actually accumulation of capital, constituted in processes of exploitation and expropriation peculiar to capitalism, measured by indicators designed by and for capitalist societies.’

‘During the post-war boom, we actually had decreasing inequality and very limited income going to the top income brackets. For the whole period from the 1940s to the end of the 1970s, the top 1% of earners received 9-10% of total income, no more. But in the short period since 1980, their share, that is the share of the top 1%, has gone up to 25%, while the bottom 80% have made virtually no gains.’

প্রাইভেটাইজেশন: বাজারকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর (সর্বজনের) অদৃশ্যমান প্রক্রিয়া- দৃশ্যমান ফলাফল

সত্তর দশকের ‘মুক্ত বাজার অর্থনীতি’র মৌলিক প্রস্তাবনা পরবর্তী আশির দশকে ‘নয়া উদারনৈতিক’ বাজার ব্যবস্থায় রূপ নেয়। যেখানে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপকে ন্যূনতম মাত্রায় নিয়ে আসার নানাবিধ বন্দোবস্ত থাকে। একদিকে, তথাকথিত বাণিজ্য উদারীকরণ নীতি-পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে পুঁজির বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করবে সরকার; রাষ্ট্রের সাথে ব্যবসার পারস্পরিক সম্পর্ক নিবিড় করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা গৃহীত হবে, অন্যদিকে, যে সকল প্রতিষ্ঠান ইতিপূর্বে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল বা আছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যক্তি পুঁজির নিয়ন্ত্রণে তুলে দেওয়ার যাবতীয় বন্দোবস্ত পাকাপোক্ত করাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ‘নয়া উদারীকরণ’ প্রক্রিয়ার ‘নয়া যাত্রা’ শুরু হয় সামরিক শাসনামলের গোড়া থেকে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যক্তি মালিকানায় তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে চলার অল্প কিছু সময় পর থেকেই, সামরিক শাসনামলে এই প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়। প্রাইভেটাইজেশন অর্থাৎ ব্যক্তি পুঁজির সম্প্রসারণের পক্ষে নানা ধরনের যুক্তি দেওয়া হয় সামরিক সরকারের সময়। প্রগতিশীল রাজনৈতিক অর্থনীতির বিশ্লেষকগণের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কিছু নতুন-পুরাতন ধনী ব্যক্তিদের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হওয়ার প্রেক্ষিতে এবং তাদের হাতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তুলে দেওয়ার জন্যই মূলত এসব যুক্তির অবতারণা করা হয়। উল্লেখ্য যে, এই প্রক্রিয়াটি কেবল বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর অনেক পুঁজিতান্ত্রিক দেশে একই প্রক্রিয়ায় প্রাইভেটাইজেশনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তি খাতে তুলে দেওয়ার চর্চা চলতে থাকে। শ্রমশক্তি শোষণভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার পক্ষে এই দৃষ্টিভঙ্গী যুক্তিসঙ্গত। সেই কারণে বুর্জোয়া সরকারগুলো এর পক্ষে নানা ধরনের আইন-কানুন-নীতি-পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ দেশেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের লোকসান বা ব্যর্থতাকে মূল কারণ দেখিয়ে ‘যুগের সাথে তাল মিলিয়ে’ বাংলাদেশের সরকার প্রাইভেটাইজেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

এর পেছনে যেসব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারণ দেখানো হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল যে, প্রাইভেটাইজেশন হলে সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং রাষ্ট্রের আর্থিক ঘাটতি সামাল দেওয়া যাবে (রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি-বাট্টা করে)। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের মধ্যে ছিল মূলত-অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা হ্রাস করা, আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সম্প্রদায়কে (যারা বাজারকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ‘উন্নয়নে’র ব্যবস্থাপত্র প্রদান করে) সন্তুষ্ট করা, সরকারি খাতের কর্মচারীদের ‘অত্যধিক’ চাহিদা সঙ্কুচিত করা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার দায় থেকে মুক্তি পাওয়া। যুক্তি দেওয়া হয় যে, প্রাইভেটাইজেশন হলে অধিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থাগুলো তাদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে পারে কারণ তারা উন্নতমানের নজরদারি এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানে সক্ষম থাকে। এর ফলে দক্ষতার বৃদ্ধি ঘটে, ‘উপযুক্ত’ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করে, প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়, ‘উন্নয়নে’র স্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদের যোগানের পথ সুগম হয়; যেমন, প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, জরুরী ত্রাণ এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হয়।

যেখানে ব্যক্তি খাত এরকম পারদর্শী-সক্ষম, সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের মানসম্পন্ন বিনিয়োগ অযথা জটিলতা তৈরি করে। এছাড়া, ‘অযোগ্য-অক্ষম-অদক্ষ’ শিল্প প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি ব্যক্তি বিনিয়োগের জন্য ক্ষতিকারক। প্রাইভেটাইজেশন রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি কমানো কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিক্রয় বাবদ রাজস্ব আয় অর্জনে সহায়তা করে কেবল তাই-ই নয় উপরন্তু, অর্থনেতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিরাজনীতিকরণে (Depoliticization) সহায়তা করে —সরকার/রাষ্ট্রের ভার লাঘব করে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ট্রেড ইউনিয়নের শক্তি হ্রাস করে এবং সর্বোপরি, সম্পদের ব্যক্তি মালিকানাভিত্তিক গণতন্ত্রের পথ সমৃদ্ধ করে। বলা হয়ে থাকে যে, প্রাইভেটাইজেশন সরকারের জন্য বর্ধিত হারে কর এবং কর বর্হিভূত রাজস্ব প্রাপ্তির সম্ভাবনা তৈরি করে। এই প্রক্রিয়া সঠিক প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ, ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা এবং রাজস্ব আদায়ে দক্ষতার বৃদ্ধি ঘটায়। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক (formal) খাতের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আরো বলা হয় যে, ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা থেকে উদ্ভূত প্রণোদনাগুলি পরিচালকদের আরও ভাল পর্যবেক্ষণের দিকে পরিচালিত করে, দায়িত্ব এড়ানোর আচরণ হ্রাস করে এবং সর্বোপরি এন্টারপ্রাইজের বর্তমান মানকে সর্বাধিক করে তোলে। ‘নয়া উদারনৈতিক’ দৃষ্টিধারী ‘থিংক ট্যাংক’ বুদ্ধিজীবী মহল থেকে প্রাইভেটাইজেশনের পক্ষের সরকারি অবস্থানকে শক্তিশালী করতে এই যুক্তিগুলোকে নানা মোড়কে উপস্থাপন করা হয়।

যারা বলেন যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার কারণে নয় বরং উপযুক্ত দাম নির্ধারণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনামূলক ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানের মুখে পড়ে- তাদের এই যুক্তির বিরোধিতা করে প্রাইভেটাইজেশনের পক্ষের ‘কট্টরপন্থী’ ধারার প্রতিনিধিদের বক্তব্য হলো যে, এই যুক্তি ভ্রান্ত কারণ রাষ্ট্র নয় বরং, ব্যক্তি মালিকানা ক্ষমতা-দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত। কর্পোরেট সংস্থা নিয়ন্ত্রিত একটি (পুঁজিবাদী) বাজারের অস্তিত্ব সংস্থাগুলোর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও প্রাইভেটাইজেশনের পক্ষাবলম্বনকারীদের যুক্তির বিপরীতে কোন কোন গবেষক রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের পরিমাণগত প্রসঙ্গ এনে বলেছেন যে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের উৎপাদনশীল পুঁজির চাইতে যদি ব্যক্তি খাতে কম বিনিয়োগ থাকে তাহলে হয়তো ব্যক্তি খাতে উৎপাদনশীল বিনিয়োগের উপর এক ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। এর কারণ হিসেবে নানা যুক্তি দেওয়া হয়। বলা হয়ে থাকে যে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাত শক্তিশালী অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও যেহেতু ব্যক্তি খাত বিকাশের স্বার্থে সরকারের নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি থাকে তাই ব্যক্তি মালিকরা পূর্বে যে অনুৎপাদনশীল খাতে পুঁজির বিনিয়োগ করে তার স্থলে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে।

প্রশ্ন হলো- ব্যক্তি খাতের বিকাশ এবং তার সাথে সম্পর্কিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে চিত্র সরকার ও মূল ধারার বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় তুলে ধরার চেষ্টা নেওয়া হয়েছে তার সুফল কি সর্বজনের খাতে প্রবাহিত হয়েছে? প্রাইভেটাইজেশনের পক্ষে যে যুক্তি তুলে ধরা হয় তার গভীর তাৎপর্য কী? এর ফলে, কোন ধরনের গোষ্ঠী বিশেষভাবে লাভবান হয়েছে, কারা ক্ষতির শিকার হয়েছে? কিংবা, প্রাইভেটাইজেশন প্রক্রিয়ার ফলে আদৌ কি বাংলাদেশের অর্থনীতির কোন সুদৃঢ় ভিত্তি তৈরি হয়েছে? সর্বোপরি, প্রাইভেটাইজেশন প্রক্রিয়ার ফলে কোন ধরনের পুঁজি অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে? রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু বিত্তশালী পরিবারের ‘হয়ে ওঠার’ সাথে সম্পর্কিত বিধায় এই প্রশ্নগুলোর অনুসন্ধান করা জরুরী। আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন,

‘‘বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএসএইডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, ৫০ ও ৬০ দশকে পাকিস্তানের মধ্যে প্রণীত নীতিমালা, পরিকল্পনা, প্রকল্প নিয়েই বাংলাদেশ কাজ শুরু করে। এসব অনেক প্রকল্প ‘সমাজতান্ত্রিক’ পরিকল্পনার মধ্যেও প্রবেশ করে। সুতরাং ‘অধনবাদী পথে সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব কৃষি-শিল্প-গ্রাম-অবকাঠামো-পানি উন্নয়ন নীতি সরকার গ্রহণ করছিল তার বেশির ভাগই ছিল বিশ্বব্যাংক-এডিবি-ইউএনডিপির বৈশ্বিক পুঁজিবাদের কৌশলগত পরিকল্পনা ও নীতি কাঠামো থেকে উদ্ভূত।”

এবং তারই ধারাবাহিকতায় প্রাইভেটাইজেশন নীতি-পরিকল্পনার দ্বারা ’৮০-র দশক থেকে ব্যক্তি খাতের মুনাফা বৃদ্ধির যাবতীয় অলি-গলি প্রশস্তকরণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। ব্যক্তি খাতের জন্য যে বিনিয়োগ তহবিল গঠন করা হয় তা দিয়ে হয় রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ‘বৈধতার’ সীমার মধ্যে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হয় কিংবা গোপনে অন্য খাতে বা বিদেশে প্রেরণ করা হয়। বিনিয়োগ তহবিলের ক্ষুদ্র একটি অংশই উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হয়।

কোনো কোনো গবেষকের দৃষ্টিতে প্রাইভেটাইজেশনের যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে তেমনি রয়েছে তার নেতিবাচক দিক। উদাহরণ হিসেবে, গবেষক ফারজানা নাহিদের ১৯৭৫ সালের Revised Industrial Policy’র সারসংক্ষেপ পর্যালোচনার কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি দেখিয়েছেন যে, প্রাইভেটাইজেশনের মধ্যে একদিকে যেমন ব্যক্তি খাত নির্ভর প্রবৃদ্ধি, স্টক মার্কেটের পুনর্বিন্যাস, বড় আকারের বেসরকারিকরণ, উদারনৈতিক ধরনের ঋণ নীতি এবং সহজ শর্তে ঋণদানের মাধ্যমে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের উল্লম্ফন, রপ্তানি খাতের উল্লম্ফন ইত্যাদির মতো ‘ইতিবাচক’ ধারাবাহিকতার দিক আছে, অন্যদিকে ঋণখেলাপীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার (Increased defaulters as ignored tax evasion, proper documents & funding for investments) মতো নেতিবাচক বিষয়গুলোও এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দেখা যায়।

প্রাইভেটাইজেশনের কেন্দ্রীয় দৃষ্টিভঙ্গীর (যা মূলত সামষ্টিক প্রয়োজনের পরিবর্তে ব্যক্তি পুঁজির আহরণ, সংবর্ধন, সম্প্রসারণ, পুঞ্জীভবন, কেন্দ্রীভবন ইত্যাদি) বিষয়ে কোন মৌলিক প্রশ্ন সচরাচর মূল ধারার বিশ্লেষক-আলোচক-গবেষক-সমালোচকদের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে পাওয়া যায় না। যার ফলে, প্রাইভেটাইজেশনের বাহ্যিক দিক অর্থাৎ পরিমাণগত পরিবর্তনের দিকগুলো নিয়েই প্রশ্নগুলো সীমাবদ্ধ থাকে। তাই, উদারনীতির ফলাফল বিষয়ের চাইতে প্রয়োজন খোদ কাঠামোগত দৃষ্টিভঙ্গীটিকেই প্রশ্ন করা। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিমুখ’ কোনদিকে তার আলোচনা করতে গিয়ে আনু মুহাম্মদ মূলত সেই মৌলিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-এডিবির বিভিন্ন প্রকল্প সমীক্ষা সুপারিশের ভিত্তিতে প্রণীত বাংলাদেশের শিল্প নীতিমালার কাঠামোর বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে তিনি দেখিয়েছেন যে, প্রাইভেটাইজেশনের আসল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলো হলো,

‘‘ক. রাষ্ট্রায়ত্ত খাত (শিল্প, অর্থকরী প্রতিষ্ঠান, পরিষেবা প্রতিষ্ঠান) ভেঙ্গে ফেলা। (প্রাইভেটাইজেশনের পথ উন্মুক্ত করতে গিয়ে সরকার কোন কোন ক্ষেত্রে বিধিবদ্ধ নীতি-পরিকল্পনার বাইরেও বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।)

খ. রাষ্ট্রায়ত্ত খাত ভেঙে ফেলার মাধ্যম হিসেবে যে কোনো পথ গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা: পানির দরে বিক্রি করা, বন্ধ করা, যৌথ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করা।

গ. রপ্তানি এবং আমদানী বাণিজ্য উদার করা।

ঘ. বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দু-একটি বাদে সকল ক্ষেত্র উন্মুক্ত করা।

ঙ. বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানিমুখী উৎপদানের জন্য সর্বোচ্চ সকল প্রকার সুবিধা দান (নগদ ভর্তুকি, শুল্কমুক্ত আমদানী-রপ্তানি, মুনাফা দেশের বাইরে পাঠানো, অবকাঠামো সমর্থন)।

চ. পুরোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের দায়িত্ব, ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং বিদেশি ও রপ্তানিমুখী বিনিয়োগের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভর্তুকি সম্প্রসারণ।

ছ. মজুরি ‘বৃদ্ধি’ না করা বরং তা সম্ভব হলে হ্রাস করা। জাতীয় নূন্যতম মজুরি না প্রচলন করা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে নূন্যতম মজুরি বাতিল করা।

জ. সকল পরিষেবা, যেমন, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধি করা।

ঝ. নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান, নতুন হাসপাতাল, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন থেকে সরকারের বিরত থাকা।

ঞ. চুরি, আত্মসাৎ, দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও দখল প্রক্রিয়ায় যারা শত/সহস্র বেআইনি (‘কালো’) শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে তাদের বিনিয়োগ করমুক্ত রাখা।

সামরিক-বেসামরিক, নির্বাচিত-অনির্বাচিত বিভিন্ন সরকারের আগমন এবং তাদের মধ্যকার আপাত ঝগড়াঝাটি তাই শিল্পখাতসহ অর্থনীতি সংক্রান্ত নীতিমালার এই ধারাবাহিকতা খর্ব করেনি। এবং এই নীতিমালার মূল খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব যেহেতু পালন করেছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা-এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, সেহেতু রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্র, মন্ত্রিসভা এবং সংসদের দায়িত্ব নিছক চামচে চাটুকার লুম্পেন ভাগীদার কিংবা একান্ত বাধ্যগত কর্মচারী থেকে ভিন্ন কিছু আর অবশিষ্ট থাকেনি।’’

১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রণীত শিল্প নীতি পর্যালোচনার সারসংক্ষেপ করে আনু মুহাম্মদ যে কাঠামোটি দেখিয়েছেন তার গোড়াপত্তন হয় ১৯৮০-র দশকে। তাঁর বিশ্লেষণ থেকে প্রাইভেটাইজেশন প্রক্রিয়ার জোরদার করার গোড়ার কাঠামোগত চিত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে।

তথাকথিত উন্নয়নশীল বিশ্বে বিরাষ্ট্রীয়করণ-বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ার ফলে অর্থনৈতিক ‘উন্নয়ন’ কিংবা সর্বজনের স্বার্থে ইতিবাচক কোন মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে এমন নজির পাওয়া কঠিন। জনগণের সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর কাছে যাদের সম্পর্ক ছিল সরকারি ক্ষমতাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে। সাব-সাহারান রাষ্ট্র এবং রাশিয়ার প্রাইভেটাইজেশন পলিসি’র ফলাফল পর্যালোচনা করেও দেখা গেছে যে, বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়ায় জনগণের সম্পদের হাত বদল হয়েছে কেবল। জনগণের হাত থেকে উত্পাদন-সম্পদের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছে ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর হাতে যারা তাদের ভাগ্যের চাকা বদলে নিয়েছে।১০

রাষ্ট্র-ব্যবসার জৈবিক সম্পর্ক কীভাবে পুঁজির সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করে

রাষ্ট্র এবং ব্যবসায়ী শ্রেণির পারস্পরিকতা এমন একটি সম্পর্ক যে সম্পর্কের মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ লাভবান হয় এবং এর ফলে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হয়। তবে এই ব্যবস্থায় ব্যবসায়ী শ্রেণির কোন অংশটি অধিকতর লাভবান হবে সেটি নির্ভর করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এবং ক্ষমতার সাথে সম্পত্তিবান শ্রেণির কোন অংশটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত তার উপর। যেসরকারই পরিবর্তন হোক না কেন এ ধরনের রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে পুঁজিকেন্দ্রিক বুর্জোয়া রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে। রাষ্ট্রীয় ‘সংস্কারমূলক’ কর্মসূচি (রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ) পুঁজির সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্থ করেনা বরং তার বিপরীতে ব্যক্তি পুঁজির বিস্তারকেই নানা উপায়ে সহযোগিতা করে থাকে।  বিস্তৃত পরিসরে ব্যক্তি মালিকানাধীন খাতে রাষ্ট্র তার সুবিধা প্রদান করে থাকে। এর বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ বিনিয়োগ-লগ্নীকরণ, ইনফরমাল কর লাঘব, ভর্তুকি, ব্যবসায়ী শ্রেণির সাথে নানা ধরনের চুক্তি এবং লাইসেন্স প্রদান ইত্যাদি ধরণগুলো অন্যতম। ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় এ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দল/নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তাদের নানাপ্রকার রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত অর্থ/সম্পত্তিগত সুবিধা প্রদান করে থাকে। এর ফলে একদিকে রাষ্ট্রীয় নানা ধরনের লাভজনক চুক্তি ব্যবসায়ী শ্রেণির করতলগত হয়, অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় খবরদারী-নজরদারী-হস্তক্ষেপজনিত নানা প্রক্রিয়া থেকে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান-সংস্থাগুলো রেহাই পায়। এভাবে পারস্পরিকতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র-ব্যবসার বন্ধন ক্রমশ দৃঢ় হয়।১১

বিভিন্ন গবেষকের গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ফারজানা নাহিদ দেখিয়েছেন কোন কোন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র-ব্যবসার আন্তঃসম্পর্ক ঘনিষ্ঠ রূপ লাভ করে। সরকার, ব্যবসায়ী শ্রেণি, আমলা, ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদরা কিভাবে পরস্পর পরস্পরের সম্পদ/সম্পত্তি/পুঁজির বন্ধনকে সমৃদ্ধ করে। তাঁর গবেষণা অনুযায়ী দেখা যায় যে, রাষ্ট্র নানা উপায়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করে থাকে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা/সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি মালিকরা রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত (ঘুষ) এবং রাজনৈতিক সুবিধাসহ নানা ধরনের সুবিধা প্রদান করে থাকে। অন্যান্য সুবিধাদির মধ্যে অন্যতম হলো, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায়/সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গকে অধিষ্ঠিত করা। এছাড়া সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাতে রাখতে নগদ অর্থে ঘুষ প্রদানের সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে অসাধারণ সরকারি সেবা-পরিষেবার সুযোগ পাওয়া যায়, কর প্রদান থেকে রেহাই পাওয়া যায়, রাষ্ট্রীয় নানা ধরনের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকা যায়, সরকারি নানা চুক্তি নিজেদের আয়ত্তে নেওয়া যায়, রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি থেকে শুরু করে অর্থ মূলধন যোগানের উৎস হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (পাবলিক লিঃ কোম্পানিও হতে পারে) ব্যবহার করা যায়, ব্যবসায়িক সুবিধার নিমিত্তে রাষ্ট্রীয় নীতি-পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করা যায় এবং অন্যান্য ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করা যায়। ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের খরচ বাড়ে তাই রাজনৈতিক/সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়া হয় যাতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের আওতামুক্ত থাকা যায়। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এই ঘুষ রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।১২

উপরন্তু রাষ্ট্র সর্বজনের কাছ থেকে কর-খাজনা-জরিমানা-ভাড়াবাবদ যে অর্থ-সম্পদ আদায় করে তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যক্তি পুঁজির সম্প্রসারণের জন্য ব্যয় করে। রাষ্ট্র-ব্যবসার জৈবিক বন্ধনের ফলে ব্যক্তি পুঁজি এই ধরনের সুবিধা (‘তোফা’/‘উপহার’) পেয়ে থাকে। এর বিনিময়ে ফার্মগুলো আমলা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর তহবিলের (নির্বাচন-কর্মসূচি-বিদেশ ভ্রমণ-সম্পত্তি থেকে শুরু করে নানা ধরনের বৈষয়িক উপহার ইত্যাদি) যোগান দিয়ে থাকে। এছাড়াও রাষ্ট্র-ব্যবসার আন্তঃসম্পর্কের ফলে ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো রাজনৈতিক দর কষাকষির ক্ষমতা অর্জন করে যার কারণে তারা পরবর্তীতে আবার ব্যবসায় সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে। ব্যবসায়ী অভিজাতদের সাথে রাজনীতিবিদদের সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণ হলো, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের উপর প্রভাবকে ধরা হয় ক্ষমতাসীন/ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের গতিশীল শক্তিমত্তার প্রকাশ হিসেবে, সমাজের স্থিতিশীলতার প্রকাশ হিসেবে।১৩

রাষ্ট্র-ব্যবসার পারস্পরিক জৈবিক এবং মিথস্ক্রিয়ামূলক সম্পর্ক (State-business nexus) সরকার, আমলা ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে কেবল সীমাবদ্ধ থাকে না, এই সম্পর্ক ব্যাংক পর্যন্ত গড়ায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। তথাকথিত ‘উন্নয়নশীল’ অর্থনীতির নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার সুযোগে সম্পদ আহরণ-কেন্দ্রীভবন-পুঞ্জীভবনের সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় দেশের অর্থনীতির কর্তৃত্বমূলক অবস্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। এবং এ কাজটি তারা করতে পারে নীতি নির্ধারকদের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার মধ্য দিয়ে।১৪

রাষ্ট্র-ব্যবসার পারস্পরিক জৈবিক এবং মিথস্ক্রিয়ামূলক সম্পর্ক (State-business nexus) সরকার, আমলা ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে কেবল সীমাবদ্ধ থাকে না, এই সম্পর্ক ব্যাংক পর্যন্ত গড়ায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রসারিত হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বিপর্যয়; বিরাষ্ট্রীয়করণ, ব্যবস্থাপনাগত নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংক পুঁজির ভূমিকা

আগেই বলেছি, ‘অনুন্নত’ কিংবা ‘উন্নয়নশীল’ দেশগুলোতে অন্যান্য অনেক কারণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের নিয়ন্ত্রণজনিত সমস্যাকে কেন্দ্র করে বিরাষ্ট্রীয়করণের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের যুক্তি তৈরি করে প্রাইভেটাইজেশন নীতির পক্ষের সরকার, দেশী-বিদেশী সংস্থা, মূল ধারার বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পুঁজির মালিকরা। অন্যদিকে, বিভিন্ন অনুসন্ধান-গবেষণায় এই যুক্তির বিপক্ষে এর অসারতা তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন সময়। এসমস্ত গবেষণায় বলা হয় যে, ‘উন্নয়নশীল’ দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিষদ কর্তৃক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান (SOEs) নিয়ন্ত্রণের সামান্যই ভূমিকা আছে। বলা হয় যে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অর্থনৈতিক বিবেচনার চাইতে জবাবদিহিহীন রাজনৈতিক প্রভাব অত্যধিক থাকার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান যথাযথ ভূমিকা নিতে পারে না। একদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে সরকার দলীয়ভিত্তিক রাজনৈতিকীকরণ এবং অন্যদিকে আমলাতান্ত্রিক স্বার্থে পরিচালিত হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীভাবে দাঁড়াতে পারেনা।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ফারজানা নাহিদ দেখিয়েছেন যে, জিয়াউর রহমান সরকার মূলত ব্যক্তিখাত নির্ভর অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তাঁর ‘প্রশাসনিক সংস্কারের’ মাধ্যমে। একদিকে ঋণসংস্থা এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ব্যক্তি পুঁজির ঋণ সংগ্রহের জন্য জিয়াউর রহমান উদারনৈতিক ঋণনীতির পন্থা অবলম্বন করেন অন্যদিকে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদ্যমান ধনী সম্পত্তিশালী পরিবারগুলোর হাতে তুলে দেন নামমাত্র মূল্যে। তিনি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ব্যক্তি খাতের জন্য ১৩৯.৫ কোটি টাকা (৮১.৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ দেন। পরবর্তী দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনায় এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৪৬ কোটি টাকায় (১১৩.৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। রপ্তানি নির্ভর শিল্প নীতি গ্রহণ ছাড়াও পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল, বৈচিত্র্যময়, বৃদ্ধি করতে ১৯৮৩ সালে প্রযুক্তি এবং গবেষণার জন্য জাতীয় কাউন্সিল (National council for Science and Technology–NCST) গঠন করা হয়।১৫ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে ১৯৮০ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ৩৪টি পরিবারের হাতে ব্যাংকে সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২,৫৩৮ কোটি টাকা। তাছাড়া ১,৭৫৯ কোটি টাকার সমপরিমাণ সম্পদ তারা পুঞ্জীভূত করে। মোহাম্মদ দুলাল মিয়া এবং ইয়াসুসি সুযুকি এই সম্প্রদায়ের উত্থানকে দেখেছেন, ‘…. rise to a new bourgeoisie in Bangladesh’ হিসেবে।১৬

বিরাষ্ট্রীয়করণ এবং ব্যক্তিখাতকেন্দ্রিক নীতি-পরিকল্পনার ফলে রাষ্ট্রীয় শিল্পখাতের গতিমুখ পরিবর্তিত হওয়া শুরু করে সত্তর দশকের মধ্যবর্তী সময় থেকে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্ব পেতে থাকে ব্যক্তিখাত। রাষ্ট্রীয় ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান (BSB, BSRS) থেকে ব্যক্তি মালিকদের ঋণ প্রদান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। নীচে ছকের সাহায্যে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের একটি চিত্র তুলে ধরা হলো —

ছক:২৩ বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং বিনিয়োগ (বর্তমান দর [১৯৮৪] অনুযায়ী অংশ)১৭

সাল

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি/GNP %

রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ/মোট বিনিয়োগ %

রাষ্ট্রীয় শিল্প বিনিয়োগ/মোট শিল্প বিনিয়োগ %

ব্যক্তিখাতে BSB, BSRS প্রদত্ত ঋণ/ব্যক্তিখাতে শিল্প বিনিয়োগ %

১৯৭৩

৮.৮

৮৮.৭

১৫.৮

১৯৭৪

৪.৩

৯০.৩

৭.৯

১৯৭৫

৩.১

৪৯.৪

৯০.৫

২৪.৮

১৯৭৬

৭.৯

৪৫.২

৮৪.০

২২.৩

১৯৭৭

৯.৫

৪৭.০

৮৭.৭

৩৬.৫

১৯৭৮

৯.১

৫৫.২

৮৪.২

৩১.৮

১৯৭৯

১০.৯

৫২.৩

৭৮.৭

৪২.৬

১৯৮০

১৩.১

৬১.০

৬৮.১

৫৪.৪

সূত্র: Table 3 1 : The Bangladesh state and investment, Column [1] Tables 2.4 and 5.1 lBRD [1984] Vol, II, [2] IBRD [1984] Vol,II Table 2.7 , [3] From our Table 14-B, 1, [4] BSB and BSRS are the two state owned institutions specializing in long-term financing, Loans refer to annual disbursements, A small additional amount of state credit for private capital forlation comes from the nationalized commercial banks, Govt of Bangladesh[1984) Tables pp, 118 and 132 and our Table 14-B, 1. Mushtaq Husain Khan, Clientelism, Corruption and Capitalist Development: An analysis of state intervention with special reference to Bangladesh, Dissertation submitted for the Ph.D degree, King’s College, February 1989.p.36.

১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত মোট প্রায় ২১৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তি মালিকানায় তুলে দেওয়া হয়। যার কিছু সম্পূর্ণ, কিছু আংশিক বিক্রি করা হয় এবং বাদবাকিগুলো তুলে দেওয়া হয় পূর্বতন বাঙালী মালিকদের হাতে (এই মালিকদের প্রতিষ্ঠানগুলো যুদ্ধের পর রাষ্ট্রীয়করণ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছিল।) এর মধ্যে ১১১টি ইউনিটের বিক্রয় মূল্য পাওয়া যায় যার পরিমাণ প্রায় ১১৬ কোটি টাকা। উল্লেখ্য যে, প্রকৃত মূল্যের চাইতে অনেক নীচে রাখার কারণে এই বিক্রয় মূল্য নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়।১৮ জিয়াউর রহমানের শাসনামলের শেষের অর্ধাংশে ব্যাপক হারে এবং খোলাখুলিভাবে অনেক ব্যক্তিকে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। কোনো কোনো গবেষক মনে করেন যে, বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর শাসনের বৈধতা সম্পর্কেই নানাবিধ যেসব সমালোচনামূলক প্রশ্ন উত্থাপন হতে থাকে, সেসব চাপ সামলাতে তিনি এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।১৯

একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নানা সময় ঋণ গ্রহণ করে খেলাপী হন কারণ তাদের যোগাযোগ রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সাথে। ঋণগ্রহীতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিবিদ হিসেবে আবির্ভূতও হতে দেখা যায়। এই খেলাপী/অখেলাপী ঋণগ্রহীতারা মিলে একটি আলাদা উদ্যোক্তা গোষ্ঠী হিসেবে দাঁড়ায়নি। এ সম্পর্কে সোবহান এবং সেন-এর উদ্ধৃতি তুলে ধরে মোশতাক হোসেন দেখিয়েছেন যে, বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে সত্যিকার অর্থে উদ্যোক্তা গোষ্ঠী হিসেবে ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। মূলধারার বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘রাজনৈতিক অভিজাতদের (রাজনীতিতে) উত্থান বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা বর্গ থেকে। তাদের শুরু হয়েছে কোন না কোন পেশা থেকে এবং শেষের পরিচয় দাঁড়ায় শিল্পপতি কাম ব্যবসায়ী হিসেবে।’ মোশতাক হোসেনের গবেষণায় সোবহান এবং সেন-এর উদ্ধৃতি ছিল এরকম,  

‘A significant number of laonees appear to have been politicians at one time or another. However, political elites as such do not constitute a seperate entrepreneurial group in the strictest sense because of the wide diversity of their socio-economic backgrounds. Political elites originate from almost every entrepreneurial group, starting from professionals and ending with industrialist-cum-traders. Political power is traded for public services and resources. Conversely access to state resources is translated into a political resource to enhance the power of the beneficiary and through him the influence of the regime.’২০

রাজনীতিবিদদের নিজস্ব অর্থনীতি, জনতুষ্টিমূলক কর্মকাণ্ড তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করে, অন্যদিকে, রাজনৈতিক ক্ষমতা তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত করে। ‘ঋণের বরাদ্দ, আমদানী-রপ্তানি লাইসেন্স, শিল্প প্লট বরাদ্দ; মোটকথা, লাভালাভের সাথে সম্পর্কিত রাষ্ট্রীয় যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকে এই রাজনীতিবিদ,’২১ আমলা এবং বড় পুঁজির মালিকদের নেতৃত্বদানকারী অংশটি। এভাবে রাষ্ট্র এবং অভিজাত রাজনীতিবিদদের পারস্পরিকতার মধ্য দিয়ে পুঁজির প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের শাসনব্যবস্থা সম্প্রসারিত হতে থাকে। 

ব্যক্তি পুঁজির সম্প্রসারণের জন্য সরকার যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার মধ্যে অন্যতম ছিল ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ প্রক্রিয়া। সামরিক সরকারের প্রথম কয়েক বছর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কী পরিমাণ ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়েছিল নীচের একটি ছকে তা তুলে ধরা হলো। এতে দেখা যাবে যে, একদিকে যখন রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, লোকসানের কারণ দেখিয়ে বরাদ্দ কমানো হয়, অন্যদিকে তখন ব্যক্তি খাতের জন্য ঋণের বরাদ্দ ক্রমাগত বাড়ানো হয়। রাষ্ট্রীয় এ সমস্ত ঋণ এবং অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার ফলে ব্যক্তি খাত অধিকতর হারে সম্প্রসারিত হয়। অর্থনীতিতে ব্যবসায়ী পুঁজির আধিপত্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাপ্ত ঋণের যে অংশটুকু উৎপাদনশীল (যদিও খুব ক্ষুদ্র একটি অংশ) খাতে নিয়োজিত হয় সেসব ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার দ্বারা সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনার বিকাশ ঘটে। মোটকথা, উৎপাদনশীল এবং ব্যবসায়ী — ব্যক্তি পুঁজির উভয় অংশেই মুনাফা বৃদ্ধির গতিশীলতা বাড়ে, কমে রাষ্ট্রায়ত্ত পুঁজির উৎপাদনশীলতা। সমগ্র অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় পুঁজির নিয়ন্ত্রণের স্থলে ব্যক্তি পুঁজির আধিপত্য, নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার শর্তগুলো পূরণ হতে থাকে।  

ছক: ২৪

অনুমোদনকৃত এবং বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ (কোটি টাকা হিসাবে)২২

বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা

অনুমোদনকৃত

বিতরণকৃত

সাল

পাবলিক

প্রাইভেট

মোট

পাবলিক

প্রাইভেট

মোট

১৯৭২-১৯৭৩

৪.৭৩

০.০৩

৪.৭৬

১৯৭৩-১৯৭৪

০.৬৮

১.৬৮

২.৩৭

২.১৮

২.২৭

৪.৪৫

১৯৭৪-১৯৭৫

৯.৩৩

৪.৩৭

১৩.৭০

১.৬১

১.৯০

৩.৫১

১৯৭৫-১৯৭৬

১০.৭৭

৯.১৯

১৯.৯৬

০.১৭

১.০৬

১.২৪

১৯৭৬-১৯৭৭

৪.৮৫

৩১.৫৪

৩৬.৪০

১.০১

৩.৯৩

৪.৯৪

১৯৭৭-১৯৭৮ (জুলাই-সেপ্টেম্বর)

১.৮৯

১.৮৯

০.৮১

০.৮১

বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক

অনুমোদনকৃত

বিতরণকৃত

 

পাবলিক

প্রাইভেট

মোট

পাবলিক এবং প্রাইভেট*

১৯৭২-১৯৭৩

০.৯৮

০.৬৯

১.৬৭

০,৭৮

১৯৭৩১-৯৭৪

৬.৬৮

০.৮৮

৭.৫৭

০.৮২

১৯৭৪-১৯৭৫

২২.৩৮

৪.৪০

২৬.৮৯

৩.৫৩

১৯৭৫-১৯৭৬

০.৬১

৫.৮৭

৬.৪৯

৮.৭৮

১৯৭৬-১৯৭৭

২.৪৭

১৭.৯৪

২০.৪২

৪.৪৫

১৯৭৭-১৯৭৮ (জুলাই-সেপ্টেম্বর)

১.২৭

১.২৭

২.৬৯

*হিসাব আলাদা করে দেওয়া হয়নি।

সূত্র: Table 1, Loans Sanctioned and Dispursed (in tens of millions of takas), M. A. Rahim, A Review of Industrial Investment Policy in Bangladesh, 1971-1977, Source: Asian Survey, Vol. 18, No. 11 (Nov., 1978), pp. 1181-1190, Published by: University of California Press Stable URL: http://www.jstor.org/stable/2643300, p. 1189.

বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (BSRS)-এর হিসাব থেকে নেওয়া ২৩৮ জন উদ্যোক্তার উপর করা একটি অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, শতকরা মাত্র ১০ ভাগ মালিকের ১৫ বছরের বেশী অভিজ্ঞতা ছিল ব্যবসায়ের, ২১.৪৩ শতাংশের অভিজ্ঞতা ১০ বছরেরও কম এবং ৪৫.৬৭% এর অভিজ্ঞতা ছিল ৫ বছরেরও কম। ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বেশীরভাগ উদ্যোক্তা ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়েছে বিরাষ্ট্রীয়করণকালীন সময়ে। কামরুল আলমের মতে অনভিজ্ঞ এই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়টি সঠিক প্রকল্পটি বাছাই করেনি বা করতে পারেনি এবং প্রকল্প প্রস্তাবগুলোর জন্য কনসালটিং ফার্মগুলোর উপর নির্ভরশীল ছিল। বিএসবি এবং বিএসআরএস-এর অর্থায়নকৃত শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ প্রকল্পের সাথে মালিকদের অতীত অভিজ্ঞতার কোন সম্পর্ক ছিল না।২৩ একটি ছকের সাহায্যে তিনি বিষয়টি তুলে ধরেছেন। চিত্রটি এরকম:

ছক: ২৫

শিল্পোদ্যোক্তা ঋণগ্রহীতা সম্প্রদায়ের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা২৪

উদ্যোক্তাদের ধরণ

অভিজ্ঞতা ০

১-৪ বছর

৫-৯ বছর

১০-১৫ বছর

১৫ বছরের বেশী

জানা যায়নি

মোট সংখ্যা

শিল্পোদ্যোক্তা সাথে ট্রেডিং ব্যবসা

৭১

৪৭

১৩

১৮

১৫৯

বৈদেশিক বাণিজ্যের সাথে জড়িত ট্রেডার

১০

১৯

স্থানীয় বাণিজ্যের সাথে জড়িত ট্রেডার

৪৪

১০

৭১

বৈদেশিক এবং স্থানীয় উভয়ের সাথে জড়িত ট্রেডার

৩৫

১৭

৬৮

প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা

১৬

১৬

প্রাক্তন আমলা

১৪

১৯

পরিবহণ এবং পরিষেবা খাতে জড়িত গোষ্ঠী

১২

১৩

৪১

পেশাজীবী

৩১

১৩

৫৬

অন্যান্য

১৪

মোট

৬৭ (১৪.৫০%)

২১১ (৪৫.৬৭%)

৯৯ (২১.৪৩%)

২৬ (৫.৬৩%)

৪৪ (৯.৫২%)

১৫ (৩.২৫%)

 

সূত্র: Rehman Sobhan and Binayak Sen, The Social Background of Entrepreneurship in Bangladesh (BIDS, 1987), p. 62. A.M. Quamrul Alam (1989), Privatisation policy and the problem of industrial development in Bangladesh, South Asia: Journal of South Asian Studies, 12:2, 49-68, DOI: 10.1080/00856408908723127, http://dx.doi.org/10.1080/00856408908723127, p.62.

যেসব ব্যক্তি এসব বিরাষ্ট্রীয়কৃত সম্পত্তির মালিক হলো তারা এসবের মালিকানা নিজেদের পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে তৎপর হয়। ১৯৮০-র শেষার্ধে এভাবে শতাধিক পারিবারিক সংস্থার আবির্ভাব ঘটে। এর মধ্যে কিছু ছিল নতুন আর কিছু ছিল পুরাতন। নতুনদের মধ্যে প্রাণ, প্যারাডাইজ, অরিয়ন, সামিট, বসুন্ধরা, ট্রান্সকম, অটবি, ড্রাগন, পিএইচপি এবং র‌্যাংগস অন্যতম। এই ব্যবসায়ীরা প্রাইভেটাইজেশনের সুযোগে প্রচুর পরিমাণে ব্যাংক ঋণ, চুক্তি এবং লাইসেন্স ইত্যাদির মালিকানা লাভ করে।

প্রাইভেটাইজেশন প্রক্রিয়ার ফলে লাভবান গোষ্ঠী

জিয়াউর রহমান সরকারের প্রাইভেটাইজেশন প্রক্রিয়ার ফলে ২৫৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি মালিকরা নিজেদের আয়ত্তে নিতে সমর্থ হয়। এটা ছিল ভবিষ্যৎ বড় পুঁজির মালিক হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকদের জন্য নতুন দিশা। এরশাদ সরকারের আমলে এর ধারাবাহিকতা আরও জোরদার হয়, ব্যক্তি পুঁজির সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে উল্লম্ফন ঘটে। ব্যক্তি পুঁজি সম্প্রসারণের নতুন এই উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ফলে যেসব ব্যক্তি এসব বিরাষ্ট্রীয়কৃত সম্পত্তির মালিক হলো তারা এসবের মালিকানা নিজেদের পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে তৎপর হয়। ১৯৮০-র শেষার্ধে এভাবে শতাধিক পারিবারিক সংস্থার আবির্ভাব ঘটে। এর মধ্যে কিছু ছিল নতুন আর কিছু ছিল পুরাতন। নতুনদের মধ্যে প্রাণ, প্যারাডাইজ, অরিয়ন, সামিট, বসুন্ধরা, ট্রান্সকম, অটবি, ড্রাগন, পিএইচপি এবং র‌্যাংগস অন্যতম। এই ব্যবসায়ীরা প্রাইভেটাইজেশনের সুযোগে প্রচুর পরিমাণে ব্যাংক ঋণ, চুক্তি এবং লাইসেন্স ইত্যাদির মালিকানা লাভ করে। নতুন ও পুরাতনদের মধ্যে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রথম সারির ১৪টি পারিবারিক ব্যবসায়ী গ্রুপের তালিকা ছিল নিম্নরূপ:-

ছক: ২৬

১৯৮০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের প্রথম সারির ২২ পরিবার (ব্যবসায়ী গ্রুপ)২৫

ক্রম

ব্যবসায়ী গ্রুপ

অধীনস্ত কোম্পানির সংখ্যা

প্রতিষ্ঠাকাল

ইসলাম গ্রুপ

২৪

১৯৬৩

ইস্পাহানি

২৩

১৯৪৭ পূর্ব

বেক্সিমকো

১৭

১৯৬৬

আনোয়ার

১৮

১৯৭১

এ. কে. খান

১৫

১৯৪৫

প্যান্থার

১৯৫৬

এ্যাপেক্স

১৯৭২

পেসিফিক

১৯৭৪

স্কয়ার

১৯৫৮

১০

এলিট

১৯৫৪

১১

আলফা টোব্যাকো

১৯৬৯

১২

কর্নফুলী

১৪

১৯৫৪

১৩

কুমুদিনী

১৯৩৩

১৪

পারটেক্স২৬

৭০ (বর্তমান পর্যন্ত)

১৯৬২

১৫

প্রাণ আরএফএল২৭

৫৮ (উইকিপিডিয়া প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান পর্যন্ত সর্বমোটের একাংশ)

১৯৮১

১৬

সিটি২৮

২৫ (বর্তমান পর্যন্ত)

১৯৭২

১৭

কনকর্ড২৯

১৩ (,,)

১৯৭৩

১৮

যমুনা৩০

২৪ (,,)

১৯৭৪

১৯

মেঘনা৩১

৪১  (,,)

১৯৭৬

২০

সানম্যান৩২

২৮  (,,)

১৯৭৫

২১

নাসির৩৩

১১  (,,)

১৯৭৭

২২

ড্রাগন৩৪

১১  (,,)

১৯৮০

সূত্র: MCCI, Members Directory 1988, Table 2.6, Top 14 Family Business Groups in Bangladesh, 1980, Farzana Nahid; Entrepreneurial Capacity and State Incapacity: Family Firms in Bangladesh, PhD Thesis, Institute of Graduate Studies University of Malaya, Kualalumpur, 2017, p. 32-33 এবং বর্তমান লেখকের অনুসন্ধান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে।

১৯৮০ সালের দিকে ব্যক্তিখাত নির্ভর শিল্প, উৎপাদনশীলতা ইত্যাদি বৃদ্ধির উপর জোর দেয়া হয়। ১৯৮২ সালের নয়া শিল্প নীতি এবং ১৯৮৬ সালের সংশোধিত শিল্পনীতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অগ্রণী ভূমিকাকে আরো সঙ্কুচিত করা হয়। এর ফলে রাষ্ট্রীয় একচেটিয়ার স্থলে ব্যক্তিখাত নির্ভর একচেটিয়া জায়গা করে নেয়। সাত ধরনের কৌশলগত শিল্পে কয়েকটি গোষ্ঠী একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। কৌশলগত শিল্পগুলোর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন ফার্মাসিউটিক্যালস, পাট, সিমেন্ট, খাদ্য এবং পানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকতর লাভবান হয়। আকিজ, আনোয়ার, স্কয়ার, এ.কে. খান, বেক্সিমকো এবং প্রাণ গ্রুপের পুঁজির সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা হাজির হয়।

১৯৮০ সালের বাণিজ্য নীতিতে রপ্তানি শুল্ক, ঋণ, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ, কোটা বরাদ্দ ইত্যাদি ধরনের সুবিধা প্রদানের ফলে গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সামনে অভূতপূর্ব সুযোগ হাজির হয় অর্থনীতিতে প্রধান জায়গা করে নেওয়ার জন্য। বড় মালিকগোষ্ঠী/পরিবার যেমন- বেক্সিমকো, আনোয়ার, আকিজ এবং স্কয়ার গ্রুপ, যারা টেক্সটাইল ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল তারা অন্য সবার চাইতে অধিকতর লাভবান হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে বাণিজ্য উদারীকরণের নিমিত্তে সরকার যেসব গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণ করে যেমন আমদানির ক্ষেত্রে পূর্বেকার বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, ক্রমাগত শুল্ক হার হ্রাস, রপ্তানি প্রণোদনার ক্রমবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক বিনিময়ের নিয়ন্ত্রণ শিথিল ইত্যাদি কারণে উপরোল্লিখিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর সামনে অধিকতর নিম্নহারের করের বিনিময়ে যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামালের অবাধ আমদানির সুযোগ হাজির হয়। এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাথে শহরের যোগাযোগের জন্য সরকার নতুন নতুন ব্রীজ এবং হাইওয়ে নির্মাণের কর্মসূচি গ্রহণ করলে এই ব্যবসায়ী ‍গোষ্ঠীগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়।৩৫ যাদের শিল্প-কারখানা শহরের বাইরে স্থাপন করা হয়েছিল তারা লাভবান হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের ফলে। এছাড়া যেসব গোষ্ঠীগুলো নির্মাণ ব্যবসার সাথে জড়িত তারা ঠিকাদারীর কারণে লাভবান হয়।

উদীয়মান অর্থনীতির সরকারগুলোর দ্রুত এবং ব্যাপক বাজারকেন্দ্রিক নীতিমালা গ্রহণ একদিকে যেমন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারকেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণে প্রভাবিত করে, অন্যদিকে দেশী এবং বিদেশী ব্যক্তি পুঁজির মালিকরা সরকারী নীতিমালার কারণে তাদের প্রতিষ্ঠানের মুনাফার কৌশলগুলোও ঢেলে সাজাতে থাকে। কোনো কোনো গবেষকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, প্রাইভেটাইজেশন হলো এমন কিছু প্রক্রিয়া যা মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর চাপ তৈরি করে যাতে এসব প্রতিষ্ঠান বাজারের প্রতিযোগিতাকে সামাল দেওয়ার জন্য ক্রমে পূর্বতন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বাজারকেন্দ্রিক ‘উন্মুক্ত’, ‘উদারনৈতিক’ কৌশল গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।

প্রাইভেটাইজেশনের আরেকটি দিক হলো, এই প্রক্রিয়ায় যৌথ অংশীদারী প্রতিষ্ঠানের (দেশী পুঁজির সাথে বিদেশী পুঁজির যৌথতা) সংখ্যা অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায় অথবা, বিদেশী বিনিয়োগ পরবর্তী সংগঠন-প্রক্রিয়া-অবকাঠামো ইত্যাদির পুনর্বিন্যাস এবং ‘পশ্চিমা ধরণ’ চর্চার মাধ্যমে দেশী পুঁজি-প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করে। পাশাপাশি, দেশীয় অভ্যন্তরীণ নীতিমালা যেহেতু অধিক হারে/পরিমাণে বাজারকেন্দ্রিক ‘হয়ে ওঠে’; দেশী সরকার তাদের দেশের বাজার বিদেশী পুঁজির বাজারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় এবং আন্তঃদেশীয় (বৈশ্বিক পুঁজির অবস্থান থেকে দেখলে আন্তঃআঞ্চলিক ব্যবস্থা) সংস্থাগুলোর (সার্ক, সাফ, ওআইসি ইত্যাদি ধরনের) সাথে অঙ্গীভূত হতে থাকে। দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ার দেশীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল, সাবকন্ট্রাক্টিং আয়োজনের স্থলে দেশী এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুঁজির নতুন ধরনের কৌশলগত সম্পর্ক প্রতিস্থাপিত হতে থাকে পুঁজির নতুন আন্তঃদেশীয় আয়োজনের কারণে।৩৬

(চলবে)

আগের পর্ব: ২২ পরিবারের অতীত ও বর্তমান-৯

পরের পর্ব: ২২ পরিবারের অতীত ও বর্তমান-১১

মেহেদী হাসান: গবেষক, লেখক। ই-মেইল: mehedihassan1@gmail.com

তথ্যসূত্র

‘Degrowth and socialism: Notes on Some Critical Juncture’ by Güney Işıkara and Özgür Narin, july 01, 2023. https://monthlyreview.org/2023/07/01/degrowth-and-socialism-notes-on-some-critical-junctures/

‘Behind the Economic Turbulence’: Suzi Weissman interviews Robert Brenner, May-June 2019, https://againstthecurrent.org/atc200/economic-turbulence/.

বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের উদ্বৃতি তুলে ধরে আলফ্রেড জি. এনহিমা বলেছেন, ‘‘Privatisation is defined in more general terms as the transfer of ownership and control from the public to the private sector. This can be executed in a number of different ways. In countries where capital markets are developed, privatisation is effected through the sale of the enterprise’s equity to the public. In developing countries where capital markets are underdeveloped, divesture is likely to involve the sale of the enterprise as a complete entity or through some form of a joint venture. In cases where the government fails to sell the state owned enterprise or enter into a joint venture agreement with private interests, liquidation measures can then be instituted. … Privatisation began to gain popularity in both developed and developing countries following the rather ambitious programme of privatisation embarked upon by the conservative government, led by Margaret Thatcher, former Prime Minister of the United Kingdom from 1979 to 1990. Indeed, privatisation programmes began to replace the big and rapid expansion in state ownership and public sector activities of the 1960s and 1970s. During these earlier periods, international policy prescriptions were more directed in favour of state planning and state ownership of public enterprises as such statist policies were viewed as essential for economic development. From the early 1980s, sentiments and perceptions on the effective roles of state owned enterprises changed among international financial institutions, influential donor agencies and a number of governments in the face of changing development paradigms and mounting evidence of poor performances of state-owned enterprises (Hardin, Herschel 1989). As it became increasingly clear that state owned enterprises were becoming huge burdens on government budgets, measures to curtail the economic role of the state through privatisation, among others were implemented (Walle, 1989). In the 1980s and beyond, privatisation became an integral and very vital element of the policy package that was later christened the “Washington Consensus” model of development that stressed market forces, trade and financial liberalisation, deregulation and the limited role for government control measures at the macro and micro economic levels (Williamson 2000, 2003). The privatisation doctrine emerged in policy discussions in the second half of the late 1970s and 1980s due to the convergence of a number of factors (Cook and Kirkpatrick 1988). First was the election of governments in a number of developed countries, most notably the United Kingdom and the United States in the late 1970 and early 1980s respectively that were ideologically committed to greater use of the markets in securing economic objectives.’’

Alfred G. Nhema: ‘Privatisation of Public Enterprises in Developing Countries: An Overview’, Dept. of Political and Administrative Studies University of Zimbabwe’, International Journal of Humanities and Social Science Vol. 5, No. 9; September 2015, p.247-248.  https://www.academia.edu/71201358/Privatisation_of_Public_Enterprises_in_Developing_Countries_An_Overview

৪‘‘From a certain viewpoint, capitalism can be seen as generalized commodity production where individual production units make independent decisions regarding what and how much to produce, which combination of inputs and technologies to employ, how to organize the production process, and so forth. As individual productive units have no choice but to relate to the rest of the picture through their products, value serves as the common ground where commodities are equated in terms of the quantity of abstract labor they contain, and where emerging profit differentials give cues on the rate and direction of new investment. The pursuit of profit constitutes the regulating principle, and production at the aggregate level is regulated as each excessive expansion or contraction sets in motion forces that counteract the deviation….Exploitation, reification of social relations, commodity fetishism, as well as an intensifying disruption of the metabolic relationship with nonhuman natures are integral parts of the (re)production process outlined above in a nutshell. They all exist in embryonic form in the individual production unit in the form of surplus value extraction, or exploitation of labor.’’

Güney Işıkara and Özgür Narin, ‘Degrowth and socialism: Notes on Some Critical Junctures’, https://monthlyreview.org/2023/07/01/degrowth-and-socialism-notes-on-some-critical-junctures/

Tanweer Akram: ‘Privatization of public enterprises in Bangladesh: Problems and prospercts’, Savings and Development, Vol. 24, No. 4 (2000), pp.439-458, https://www.jstor.org/stable/25830742,p.442-443.

আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিমুখ, বাঙ্গালা গবেষণা, প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০০৫, পৃঃ-১৯।

Farzana Nahid: Entrepreneurial Capacity and State Incapacity: Family Firms in Bangladesh, PhD Thesis, Institute of Graduate Studies University of Malaya, Kualalumpur, 2017, p. 39.

৮’’At first, these moves were neither well-organized nor policy-oriented; in order to provide an institutional framework for the reforms, a disinvestment board was established. This resulted in a further 255 SOEs, including ‘abandoned’ and vested properties, being divested or privatized between 1975 and 1981 (Dowlah, 1998; World Bank, 1995, 1997).’’ Shahzad Uddin; ‘Privatization in Bangladesh: The Emergence of ‘Family Capitalism’’, Development and Change 36(1): 157–182 (2005). Institute of Social Studies 2005. Blackwell Publishing, USA, p.158-159.)

আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিমুখ, বাঙ্গালা গবেষণা, প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০০৫, পৃঃ ২০-২১।

১০ ‘‘The failure of Russian privatisation, for example, is a case in point. Russia’s privatisation experience has been variously described as a failure or economic disaster. The discontent about the privatisation is reported by Nellis (1999:15) as follows: What was supposed to be a programme to distribute ownership and launch enterprises on a positive restructuring path became instead a transfer of productive resources from the state to a fortunate few who – unconstrained by transition, effective laws or countervailing powers – stripped the assets from the firms, and did not restore growth and create jobs; actions that might have justified such a transfer.’’ Alfred G. Nhema Privatisation of Public Enterprises in Developing Countries: An Overview, Dept. of Political and Administrative Studies University of Zimbabwe, International Journal of Humanities and Social Science Vol. 5, No. 9; September 2015, p.247-256. https://www.academia.edu/71201358/Privatisation_of_Public_Enterprises_in_Developing_Countries_An_Overview.p.254.

১১Joel Hellman and Mark Schankerman: ‘Intervention, corruption and capture: The nexus between enterprises and the state,’ Economics of Transition, Vol 8 (3), 2000, p.545-576.

১২Farzana Nahid: Entrepreneurial Capacity and State Incapacity: Family Firms in Bangladesh, PhD Thesis, Institute of Graduate Studies University of Malaya, Kualalumpur, 2017, p. 97.

১৩—Ibid—

১৪—Ibid—p. 97-98.

১৫—Ibid—p. 52-53.

১৬Mohammad Dulal Miah, Yasushi Suzuki: Power, Property Rights, and Economic Development; The Case of Bangladesh, Palgrave Macmillan, Singapore, 2018, page-94.

১৭Mushtaq Husain Khan: Clientelism, Corruption and Capitalist Development: An analysis of state intervention with special reference to Bangladesh, Dissertation submitted for the Ph.D degree, King’s College, February 1989. p.36.

১৮—Ibid—p.268.

১৯—Ibid—.p.63-64.

২০—Ibid—p.68.

২১—Ibid—p.71.

২২M. A. Rahim: A Review of Industrial Investment Policy in Bangladesh, 1971-1977, Asian Survey, Vol. 18, No. 11 (Nov., 1978), pp. 1181-1190, University of California Press. http://www.jstor.org/stable/2643300, p. 1189.

২৩A.M. Quamrul Alam: Privatisation policy and the problem of industrial development in Bangladesh, South Asia: Journal of South Asian Studies, 12:2, 49-68, 1989, http://dx.doi.org/10.1080/00856408908723127,

২৪—Ibid—p.62.

২৫Farzana Nahid: Entrepreneurial Capacity and State Incapacity: Family Firms in Bangladesh, PhD Thesis, Institute of Graduate Studies University of Malaya, Kualalumpur, 2017, p. 32-33 এবং বর্তমান লেখকের  অনুসন্ধানের ভিত্তিতে।

২৬https://en.wikipedia.org/wiki/Partex_Group, https://partexstargroup.com/about-us/partex-star-group/

২৭https://en.wikipedia.org/wiki/PRAN-RFL_Group

২৮https://en.wikipedia.org/wiki/City_Group

২৯https://concordgroupbd.com/chairmans-message/,https://en.wikipedia.org/wiki/Concord_Group

৩০https://jamunagroup.com.bd/company-profile

৩১https://www.mgi.org/about

৩২http://www.sunmanbirdem.com/,https://corporatebangladesh.net/sunman-group-of-companies/#:~:text=Sunman%20Group%20of%20Companies%20is,%2C%20polo%20knit%20%26%20sweater%20apparels.

৩৩https://en.wikipedia.org/wiki/Nasir_Group

৩৪https://en.wikipedia.org/wiki/Dragon_Group

৩৫Farzana Nahid: Ibid—p.62.

৩৬Robert E. Hoskisson, Lorraine Eden, Chung Ming Lau, Mike Wright: ‘Strategy in Emerging Economies’, Academy of Managemont Journal, 2000. Vol. 43. No. 3, p. 249-267.

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •