সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৭ জানুয়ারি- ২৫ এপ্রিল ২০২৩)
অর্থনীতি
তালিকায় নেই শীর্ষ ৬ খেলাপির নাম
২৭ জানুয়ারি ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছেন, যাদের ১০টিই চট্টগ্রামের শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই ১০ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকা।
অথচ অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তালিকায় নাম নেই চট্টগ্রামের শীর্ষ ছয়টি ‘পলাতক’ শিল্প গ্রুপের, যাদের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এই ছয়টি শিল্প গ্রুপের মালিকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা বিদেশে পাচারেরও অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। ঋণের টাকা পরিশোধ না করে তারা ‘আত্মগোপনে’ আছেন। ঋণখেলাপির দায়ে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। মামলাগুলো এখন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন।
সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রকাশিত তালিকার ১ নম্বরে থাকা সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৬৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। কিন্তু তালিকায় নাম না থাকা চট্টগ্রামের নুরজাহান গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সিএলসির চেয়ে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ খেলাপি হয়েও তালিকায় নুরজাহান গ্রুপের নাম আসেনি।
একইভাবে তালিকার ২০ নম্বরে থাকা সিদ্দিকী ট্রেডার্সের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর চট্টগ্রামের জাতীয় পার্টির নেতা মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের ক্রিস্টাল গ্রুপের নামে ১২ ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রায় ২৫৯ কোটি টাকার বেশি ঋণ খেলাপি হয়েও ক্রিস্টাল গ্রুপের নাম শীর্ষ ২০-এ তালিকাভুক্ত হয়নি।
তালিকায় ১ থেকে ২০ নম্বরে থাকা ঋণখেলাপির চেয়ে বেশি ঋণ খেলাপি হয়েও চট্টগ্রামের ওই ছয় ‘পলাতক’ শিল্প গ্রুপের নাম না থাকার বিষয়টিকে ‘গোঁজামিলের’ তালিকা বলেছেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী।
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘কারও কোনো জবাবদিহিতা নেই। তালিকাটি নিশ্চয় একচোখা নীতিতে করা হয়েছে। এমন গোঁজামিলের তালিকা সংসদে প্রকাশ করা অর্থমন্ত্রীর উচিত হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তালিকার ১ থেকে ২০ নম্বরে উল্লেখিত ঋণের চেয়ে বেশি খেলাপি ঋণের মামলা চলমান থাকার পরও শীর্ষ তালিকা’য় চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাপলাতক শিল্পমালিকদের নাম থাকবে না কেন? তারা তো হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন। চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ঋণখেলাপির দায়ে মামলা চালাচ্ছে। মামলা দায়েরকারী ব্যাংকগুলো নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংককে এ তথ্য জানানোর কথা। আর অর্থমন্ত্রীও নিশ্চয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হালনাগাদ তথ্য নিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছেন। তাহলে গোঁজামিলটা হলো কোথায়? সেটাই এখন অর্থমন্ত্রীর খুঁজে বের করা উচিত। অর্থমন্ত্রীর উচিত সংসদে সংশোধনী তালিকা প্রকাশ করা।’
সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির যে তালিকা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উপস্থাপন করেছেন, সেই তালিকায় চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠানই ১০টি। ওই ১০ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। আর যে ছয় শিল্প গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ শীর্ষ ২০ তালিকায় আসেনি, তাদের ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু টানেলে ব্যয় বৃদ্ধির ধাক্কা টোলে
২৮ জানুয়ারি ২৩, সমকাল
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর চেয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলে গড়ে আড়াইগুণ বেশি টোলের প্রস্তাব করে সেতু বিভাগ। সেটিই চূড়ান্ত করেছে অর্থ বিভাগ। এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের পর তা কার্যকর হবে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দফায় প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বেড়েছে। এ জন্য চীন থেকে নিতে হয়েছে বাড়তি ঋণ। এরই ধাক্কা টোলে ঠেকছে, যা সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই সরকারকে তুলতে হবে।
প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, ১২ ধরনের যান চলাচলের অনুমতি দিয়ে টোল হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। শাহ আমানত সেতুর কাছাকাছি টোল হার বিবেচনার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা থেকে সরে আসে অর্থ বিভাগ। কারণ চীনের ঋণের অর্থ টোল থেকেই ওঠাতে হবে। প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার টানেল নির্মাণে ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। ২০১৫ সালে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প পাস হয়, মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের নভেম্বর। পরে ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রথম দফা সংশোধন করে ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। বিশ্বব্যাপী ডলারের মূল্যবৃদ্ধির জেরে মেয়াদের সঙ্গে বর্তমানে এ প্রকল্পের ব্যয় আরও ৩১৫ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
দাম বেশি বাজারে, আয় বেশি সরকারের
২৮ জানুয়ারি, ২০২৩, প্রথম আলো
বাজার থেকে এক কেজি চিনি কিনতে এখন ক্রেতাদের খরচ হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। এই টাকা থেকে পরোক্ষভাবে সরকার পাচ্ছে প্রায় ২৯ টাকা, যা চিনির কাঁচামাল আমদানির সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেটে নেওয়া হয়।
চিনির আমদানিমূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয়ও সমানতালে বাড়ছে। তবে চিনির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েন ক্রেতারা। বাজারে গিয়ে হিমশিম খান তাঁরা। এদিকে রোজাও ঘনিয়ে আসছে। এর আগেই চিনির দাম অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হয়ে আছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যগুলোর মধ্যে গম ও ডাল আমদানিতে শুল্ক-কর নেই। তবে চাল, চিনি ও তেল আমদানিতে শুল্ক-কর দিতে হয়। গত বছর বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় দেশেও দাম বাড়ছিল এসব পণ্যের। সে জন্য ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে গত বছর রোজার আগে সয়াবিন ও পাম তেলে শুল্ককর তিন দফা কমানো হয়। চালেও কমানো হয় শুল্কহার। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে চিনির দাম দ্বিগুণ হলেও ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে পণ্যটির ওপর থেকে করভার কমানো হয়নি।
দেশীয় চিনিশিল্পের সুরক্ষায় সরকার চিনিতে করভার আরোপ করেছিল। তবে দেশে চিনি উৎপাদন হয় খুবই কম। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে চিনি উৎপাদন হয় প্রায় ২৫ হাজার টন। একই সময়ে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনি বাজারজাত হয় ২৫ লাখ টন। অর্থাৎ চিনির বাজার ৯৯ শতাংশই আমদানির ওপর নির্ভরশীল।
চিনির বাজার স্বাভাবিক করতে শুল্ক কমানোর সুপারিশ করে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিনির ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (৩০ শতাংশ) প্রত্যাহারে আমরা এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি। এখন বিষয়টি এনবিআর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।’
বাজার নিয়ন্ত্রণে শুধু শুল্ক কমানোই নয়, গত সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ মাসে চারবার চিনির দাম বেঁধে দেয় সরকার। তাতেও চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
দেশে চিনির ব্যবহার বাড়ছে। একসময় কেবল ঘরে ও রেস্তোরাঁয় মিষ্টিজাতীয় পণ্য তৈরিতে চিনির ব্যবহার হতো। বর্তমানে খাদ্যপণ্যশিল্পের আকার বাড়ায় এই শিল্পেও চিনির চাহিদা বাড়ছে। আমদানি ও উৎপাদন মিলিয়ে এখন বছরে ২২-২৩ লাখ টন চিনি ব্যবহার হচ্ছে। আমদানির সিংহভাগই কাঁচা চিনি। এই কাঁচা চিনি দেশীয় পরিশোধন কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে তা বাজারে ছাড়া হয়।
মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সরকারের আয়ও বাড়ছে
অপরিশোধিত চিনি আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর মূসক বা ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর ৫ শতাংশ দিতে হয়। এর বাইরে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনিতে কাস্টমস শুল্ক রয়েছে তিন হাজার টাকা।
চিনিতে ট্যারিফ ভ্যালু টনপ্রতি ৩৫০ ডলার ধরে করভার হিসাব করা হয়। বিশ্ববাজারে চিনির দাম বাড়ায় আমদানিকারকেরা এখন প্রতি টন ৪৭০-৪৮০ ডলার দাম ঘোষণা দিচ্ছেন। এতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ ভ্যালু বাদ দিয়ে আমদানিকারকদের ঘোষণা দেওয়া দর ধরে চিনির শুল্কায়ন করছে।
জানতে চাইলে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কাস্টমস এখন ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৬ টাকা ধরে শুল্কায়ন করছে। এতে চিনিতে করভার আরও বেড়েছে। এ মাসে যেসব চিনি আমদানি হচ্ছে সেগুলোতে প্রতি কেজিতে এখন ৩০-৩২ টাকা শুল্ককর দিতে হয়। শুল্ককর কমানো হলে চিনির দামও কমবে।
রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে দেখা যায়, ২০২২ সালে গড়ে প্রতি কেজি চিনি আমদানিতে সরকার শুল্ককর পেয়েছে প্রায় ২২ টাকা। এ বছরে অর্থাৎ চলতি জানুয়ারি মাসে যেসব চিনি বাজারজাত হয়েছে, সেগুলোতে করভার কেজিপ্রতি ২৯ টাকা পরিশোধ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বন্ডের আওতায় নতুন করে বেশি দামে যেসব চিনি আমদানি হয়েছে, তা খালাস হলে করভার আরও বাড়বে। করভার বৃদ্ধির চাপটা গিয়ে পড়বে ভোক্তাদের ওপর।
গত কয়েক বছরের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চিনি আমদানির বিপরীতে ধারাবাহিকভাবে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে। ২০২০ সালে চিনি থেকে রাজস্ব আয় হয় ৪ হাজার ১৪ কোটি টাকা, যা পরের বছর ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২২ সালে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত বছরের মতো আমদানি হলেও এ বছর চিনিতে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের আশা করছেন এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অবশ্য করভার কমানো হলে এই আয় কমবে।
রাজস্ব বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, শুল্ক কমানো হলে যে সরকারের রাজস্ব আয় কমবে, সেটি খেয়ালে রেখেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে করছেন তাঁরা।
সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে এখন লাইফস্টাইল ও বুটিক রিসোর্ট
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
তথ্য–প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প স্থাপন ও ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য জ্ঞানভিত্তিক শিল্প স্থাপনের উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। সেখানে বিনিয়োগকারী ও কর্মীদের জন্য তৈরি করা আবাসন সুবিধা বা ডরমিটরিতে চালু হয়েছে রিসোর্ট।
২৬ জানুয়ারি পার্কের ডরমিটরিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘লাইফস্টাইল ও বুটিক রিসোর্ট’ হিসেবে উদ্বোধন করা হয়। রিসোর্টের পরামর্শক হিসেবে খান প্রপার্টিজ গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছরের জন্য দায়িত্ব দিয়েছে টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেড। উল্লেখ্য, টেকসিটি ১৫ বছর পার্কটির ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান।
তথ্য–প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার যে শ খানেক হাই–টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করছে, তার একটি যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। এটি চালু হয় ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর। যশোর শহরের নাজির শঙ্করপুর এলাকায় ১২ একরের বেশি জমিতে প্রতিষ্ঠিত পার্কটিতে তিনটি ভবন রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য ইজারাযোগ্য জায়গা রয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার বর্গফুট। আরও রয়েছে আবাসন, সম্মেলন, মেলা আয়োজনসহ নানা সুবিধা। পার্কটি নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা।
শীর্ষ ২০ খেলাপির অর্ধেকই ন্যাশনাল ব্যাংকের
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির যে তালিকা সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছেন, তাঁদের অর্ধেকই বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্রাহক। একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংকটির মালিকানায় রয়েছে এবং বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণের কারণে এই ব্যাংকটি সমস্যায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী কয়েক দিন আগে ২০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীর্ষ ২০ খেলাপির ১০ জনই ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্রাহক। এই ব্যাংকটি সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন। তারল্যসংকটের কারণে মাঝেমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক। এ জন্য জরিমানাও গুনেছে ব্যাংকটি।
ব্যাংকটির এমন পরিস্থিতিতে মালিকপক্ষের চাপে পদত্যাগ করেছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেহমুদ হোসেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক মেহমুদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করার পর জানিয়েছে যে তিনি তার দায়িত্বে ফিরবেন।
সংসদে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০ শীর্ষ খেলাপির মোট ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) ডেটাবেজে সংরক্ষিত (২০২২ সালের নভেম্বর মাসভিত্তিক) দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো গ্রুপের কোনো ঋণ খেলাপি হলে পুরো ঋণই খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়। সেই গ্রুপের ঋণ নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তাই পুরো ঋণকে খেলাপি ধরে হিসাব করা হয়েছে।
শীর্ষ ২০ খেলাপির মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের ১০ খেলাপি গ্রাহক হলো সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, সাদ মুসা ফেব্রিকস, এস এ অয়েল রিফাইনারি, মাইশা প্রোপ্রাটি ডেভেলপমেন্ট, রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল, সামান্নাজ সুপার অয়েল, মানহা প্রিকাস্ট টেকনোলজি, এহসান স্টিল রি-রোলিং ও সিদ্দিক ট্রেডার্স।
মেডিকেল ডিভাইসের বাজারে হাহাকার
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, মানবজমিন
ডলারের সংকট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জীবন রক্ষাকারী মেডিকেল ডিভাইসের বাজারে। আমদানিনির্ভর চিকিৎসা সরঞ্জামে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থার অত্যাবশ্যকীয় এসব পণ্যের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। এসব পণ্যের ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যাদের কাছে আগের কিছু জিনিস আমদানি করা ছিল তারা ৪ থেকে ৫ গুণ দামে বিক্রি করছেন এসব পণ্য। গত ৪ মাস ধরে এসব পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংক থেকে এলসি বা ঋণপত্র খোলা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা।
এদিকে, ইতিপূর্বে আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসগুলো ক্রমেই শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, মেডিকেল ডিভাইস আমদানির জন্য ব্যাংক থেকে এলসি বা ঋণপত্র খোলার সমস্যা চলমান থাকলে, দেশে অতি শিগগিরই মেডিকেল ডিভাইসে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিবে। দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং জনগণের জীবন হুমকির সম্মুখীন হবে। দেশীয় চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ মেডিকেল ডিভাইস দেশে উৎপাদিত হয় এবং অবশিষ্ট মেডিকেল ডিভাইসগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় বলেও ওই চিঠিতে তুলে ধরা হয়।
এ খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলার সংকটের জটিলতায় তারা এলসি খুলতে পারছেন না। বিষয়টি তারা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে এক-দেড় মাস আগেই জানিয়েছেন।
সুদহারের সীমা তুলতে হবে, কমাতে হবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
সুদের হারের সীমা তুলে নিতেই হবে। আর প্রতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে হবে কমপক্ষে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যে সাড়ে তিন বছর ধরে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেবে, সেই সময়ের মধ্যে রাজস্ব-জিডিপি বাড়াতে হবে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ। শুধু তাই নয়, প্রতিবছর জিডিপির দশমিক ৫০ শতাংশ হারে রাজস্ব বৃদ্ধির নীতি অর্থ মন্ত্রণালয়কে গ্রহণ করতে হবে আগামী জুনের মধ্যে।
গত রাতে আইএমএফ এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে। সংস্থাটি আরও বলেছে, ঋণ কর্মসূচি চলাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, রাজস্ব স্বচ্ছতা আনা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
ঋণের শর্তে ‘চাপ আসবে’ সাধারণ মানুষের ওপরও
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে যে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়া যাচ্ছে, তার মূল্যও কম নয়। কারণ, এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঋণের বদলে বিপরীতে মোটা দাগে ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। অর্থনীতির বর্তমান সময়ে শর্তগুলো পূরণের খেসারত দিতে হতে পারে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষকে।
মূল শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে একটিই দাম ঠিক করা, জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সব সময় সমন্বয় করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।
দেশে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে ২১ ব্যক্তির
ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৩, বণিক বার্তা
আইন ও সংবিধানের ভিত্তিতে আমানতকারীদের তথ্য সুরক্ষিত ও গোপন রাখতে পারে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো। যেকোনো অবস্থায়ই ব্যাংকগুলো থেকে আমানতকারীর গোপন তথ্য পাওয়া অসম্ভব। এজন্য বিশ্বের ধনীদের কাছে বৈধ-অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থ জমা রাখার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য সুইজারল্যান্ড। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গোপন আমানত জমা রাখতে সেখানে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক বেসরকারি ব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংকটি হলো ক্রেডিট সুইস। ১৬৬ বছর ধরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানটি এখন বিশ্বব্যাপী গোপন অর্থ আমানতের সবচেয়ে বড় গন্তব্যগুলোর একটি।
ব্যবসায়িক কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পদশালীদের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে জুরিখভিত্তিক ব্যাংকটি। প্রায় দেড় দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পদশালীদের পরিসংখ্যান নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা উইং, যা প্রকাশ হয় গ্লোবাল ওয়েলথ ডাটাবুক শিরোনামে। ক্রেডিট সুইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৈরি করা ডাটাবেজটির সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২২ সালের সংস্করণে দেখা যায়, দেশে এখন ৫০ কোটি ডলার বা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিমাণের সম্পদ আছে ২১ ব্যক্তির কাছে। কভিড মহামারীর মধ্যেও ২০২১ সালে দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে, এমন ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। ওই বছরের শেষে দেশে ১ মিলিয়ন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকার সমপরিমাণ) বা এর বেশি মূল্যমানের সম্পদের মালিক ছিল ৩০ হাজার ৫৫৯ জন। ২০২০ সালে কভিডের বছরে এ সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৩৯৯ জন।
দেশের অর্থনীতিকে বিপত্তির মুখে ঠেলে দিয়েছিল কভিড মহামারীর প্রাদুর্ভাব। কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন অনেকে। অবনতির দিকে যায় দারিদ্র্য পরিস্থিতি। করোনা প্রাদুর্ভাবের পরের বছর ২০২১ সালটিকে দেখা হচ্ছিল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বছর হিসেবে। যদিও এ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তুলেছিল কভিডের নতুন ধরনের আবির্ভাব, নতুন সংক্রমণ ঢেউ ও বিধিনিষেধ। পরিস্থিতি আরো সঙ্গিন হয়ে পড়ে বছরের শেষার্ধ্বে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের অস্থিতিশীলতায়। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশে বিভিন্ন সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর সম্পদ বৃদ্ধি থেমে থাকেনি। বরং এ সময় দেশে অতিধনীদের সংখ্যা আরো দ্রুতগতিতে বেড়েছে।
ডাটাবেজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে দেশে ৫০ কোটি ডলারের বেশি (৫ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার বেশি) সম্পদ ছিল ২১ ব্যক্তির কাছে। এ সময় ১০ থেকে ৫০ কোটি ডলারের (১ হাজার ৭০ কোটি থেকে ৫ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা) সম্পদ ছিল ৪৩ ব্যক্তির। এছাড়া ৫-১০ কোটি ডলারের (৫৩৫ কোটি থেকে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা) সম্পদ ছিল ৩৯ ব্যক্তির হাতে। ৪০০ ব্যক্তির হাতে ছিল ১-৫ কোটি ডলারের (১০৭ কোটি থেকে ৫৩৫ কোটি টাকা) সমপরিমাণ সম্পদ। ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ডলারের (৫৩ দশমিক ৫ কোটি থেকে ১০৭ কোটি টাকা) সমপরিমাণ সম্পদ ছিল ১ হাজার ১২৫ জনের। ২৮ হাজার ৯৩১ জনের কাছে সম্পদ ছিল ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ ডলারের (১০ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা)।
ক্রেডিট সুইসের ভাষ্যমতে, মূলত নিট উচ্চমূল্যের সম্পদ মালিকদের (হাই নিট ওয়ার্থ ইনডিভিজুয়াল) তথ্য জানতে ডাটাবেজটি নিয়মিতভাবে তৈরি করা হয়। নিট সম্পদের মালিকানার হিসাব করা হয় ব্যক্তির মালিকানাধীন আর্থিক ও অনার্থিক সম্পদের (স্থাবর সম্পদ যেমন জমি, বাড়ি ইত্যাদি) মোট মূল্য থেকে দায়দেনা বাদ দিয়ে।
এলসি খুলতে না পারায় বাজারে ব্লাড ব্যাগের সংকট
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
রক্তদাতা থাকলেও ব্লাড ব্যাগের অভাবে রক্ত সংগ্রহ করতে পারছে না ব্লাড ব্যাংকগুলো। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্লাড ব্যাগের সংকটে দেশে রক্ত পরিসঞ্চালন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ডলার সংকটের কারণে এলসি (লেটার অফ ক্রেডিট/ঋণপত্র) খুলতে সমস্যা হওয়ায়, বিশ্ববাজারে দাম এবং কাস্টমস খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী ব্লাড ব্যাগ আমদানি করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। ফলে দেশের হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে ব্লাড ব্যাগের সংকট।
রক্তদাতা থাকলেও ব্লাড ব্যাগের অভাবে তাদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে পারছে না ব্লাড ব্যাংকগুলো। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্লাড ব্যাগের অভাবে দেশে রক্ত পরিসঞ্চালন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে ভর্তি বার্নের (দগ্ধ) রোগীদের চিকিৎসায় ডাবল ব্লাড ব্যাগ প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু হাসপাতালটিতে এখন ডাবল ব্লাড ব্যাগের যে মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১০ দিন কাজ চালানো যাবে। বার্ন ইনস্টিটিউটে মাসে ১,৬০০ থেকে ২,০০০টি ব্লাড ব্যাগের প্রয়োজন হয়।
ব্যাংক ও রাজস্ব খাতে সংস্কারের শর্তে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
আর্থিক খাতসহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো সংস্কারবিহীন আছে বহু বছর। দেশের অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বিশেষজ্ঞেরা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে এলেও সরকার কখনোই তা আমলে নেয়নি। এবার তবে আমলে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কথা। ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সংস্কারের শর্তে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে গত সোমবার রাতে এ ঋণ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে তা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংস্থাটি জানায়।
আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। বাংলাদেশ সরকার যেসব সংস্কার কর্মসূচি ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছে, একই সঙ্গে এ কর্মসূচি সেগুলোর বাস্তবায়নেও সহায়তা করবে।
তবে ঋণের বদলে বাংলাদেশকে যে সংস্কারে হাত দিতে হবে, তা-ও বলে দিয়েছে আইএমএফ। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতির সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সংস্কারকাজ করা, যাতে সরকারের সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজ করার সক্ষমতা বাড়ে। এ ছাড়া আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা, নীতিকাঠামোগুলোকে আধুনিক করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার ক্ষমতাও অর্জন করতে হবে বাংলাদেশকে।
ঋণ দিয়ে আইএমএফ যা বলছে
ঋণ অনুমোদনের বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ বলেছে, বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) এবং বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ হচ্ছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ হচ্ছে ১৪০ কোটি ডলার। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশকে সহায়তার জন্য একটি নতুন তহবিল হচ্ছে আরএসএফ, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম ঋণ পেল।
পুরো ঋণ কর্মসূচির মধ্যে ইসিএফ/ইএফএফ থেকে শিগগির বাংলাদেশ পাবে ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বাকি ঋণ পাওয়া যাবে তিন বছরে অর্থাৎ ছয়টি সমান কিস্তিতে ৩৬ মাসে। দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে এ বছরের ডিসেম্বরে আর শেষ কিস্তি পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। এসব কিস্তির পরিমাণ ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ বলেছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সরকারকে উচ্চাভিলাষী সংস্কার কার্যক্রমের গতি বাড়াতে হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হতে গেলে মানবসম্পদ ও অবকাঠামো খাতে করতে হবে বিপুল বিনিয়োগ। একই সঙ্গে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনেও বিনিয়োগ জরুরি। বাংলাদেশ সরকার এসব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও অবগত।
বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ বলেন, রাজস্ব খাতে সংস্কার করলে বাংলাদেশ সামাজিক খাত, উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যয় বৃদ্ধি করতে পারবে। তবে সে জন্য করনীতি ও রাজস্ব প্রশাসন—উভয় খাতেই হাত দিতে হবে। রাজস্ব সংস্কার হলে সরকারি অর্থায়ন, বিনিয়োগ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে। এতে সরকারের ব্যয় সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা যেমন বাড়বে, শাসনব্যবস্থাও উন্নত হবে। আর আর্থিক খাতের দুর্বলতা কমলে, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা উন্নত করা হলে ও পুঁজিবাজারের উন্নতি করা গেলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন আইএমএফের ডিএমডি। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। আর সে জন্য দরকার হচ্ছে বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে আইএমএফ হয়তো আমাদের এ ঋণ দেবে না। তাঁরা ভেবেছিলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো দুর্বল, তাই আইএমএফ বিরত থাকবে। এ ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।’
সংস্কার যেখানে জরুরি
আইএমএফের শর্তের মধ্যে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যাংক, রাজস্ব ও জ্বালানি—এ তিন খাতের সংস্কারের কথাই আছে। নীতি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ব্যাংক ও জ্বালানি খাতের কিছু কাজ চলমান। বেশি পিছিয়ে অবশ্য রাজস্ব খাত। জিডিপির তুলনায় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি করা সংস্কারের বড় কাজ। এ নিয়ে সময়বদ্ধ পরিকল্পনা থাকছে আইএমএফের শর্তে। আর আছে আয়কর আইন সংসদে পাস করা ও শুল্ক আইন করা।
ঋণ পাওয়ার আগেই ব্যাংক খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেমন রিজার্ভের গণনাপদ্ধতি আইএমএফের চাওয়া অনুযায়ী করা হচ্ছে। খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের কাজও চলছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে। এ বিষয়ক আইনের খসড়া তৈরি করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের কথা থাকছে আইএমএফের। এটা সংশোধনের কাজ চলছে।
ঋণ খেলাপির সংজ্ঞায় পরিবর্তন চায় আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংক এ নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। সংস্থাটি চায় ঋণগ্রহীতা তিনটি কিস্তি পরিশোধ না করলেই খেলাপি হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ছয়টি কিস্তি পর্যন্ত ছাড় দিয়ে রেখেছে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় আইএমএফ। বর্তমানে তা ২০ শতাংশের বেশি। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ারও শর্ত থাকছে। সে পথেও বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিবাচক। তবে ধীরে ধীরে।
জানা গেছে, আইএমএফ চায় বছরে চারবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হোক। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে তা দুবার ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে। আর রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার আইএমএফের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ১০০ কোটি ডলার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ভর্তুকি কমাতে প্রথমে জ্বালানি তেল, পরে বিদ্যুৎ এবং সবশেষে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। জ্বালানি তেলের দাম মাসে মাসে সমন্বয় করার ঘোষণাও রয়েছে সরকারের। সারের ওপর ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ থাকলেও সরকার এতে রাজি হয়নি এবং আইএমএফও তা মেনে নিয়েছে।
সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনের সুদের হিসাব বাদ দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর বরাদ্দের হিসাব করতে পরামর্শ রয়েছে আইএমএফের। অর্থ বিভাগ তা করবে বলে রাজি হয়েছে।
এনবিআরের অংশে কর ছাড় বাতিল চায় আইএমএফ। এনবিআর কর ছাড়ের পরিমাণ নির্ধারণ নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। গত মাসে ঢাকা সফরের সময় আইএমএফের ডিএমডি অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ এসব উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করে গেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আইএমএফ বলুক আর না-ই বলুক; ব্যাংক, রাজস্ব ও জ্বালানি—মোটা দাগে এ তিন খাতের সংস্কার অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। এখন আইএমএফের কথায় যদি হয়, তো ভালো। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, প্রতিশ্রুতি সরকার রাখবে কি না। দেখা গেছে, প্রতিশ্রুতি না রাখলেও আইএমএফ কিস্তি দেয়। একটু দেরিতে দেয়।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রাজস্ব খাতের। কর সংগ্রহে এনবিআরের কোনো মনোযোগ নেই। সংস্থাটি খালি লোকবল নেই বলে অজুহাত দেয়। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে যাওয়ার এই সময়ে এখনকার মতো এনবিআর দিয়ে চলবে না। এ খাতে ব্যাপক সংস্কার দরকার। আর ব্যাংক খাতে সংস্কার তো অবশ্যই দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি গ্রাহকদের ছাড় দিয়েই যাচ্ছে। আর ব্যাংকের মালিকপক্ষের স্বার্থে সরকার ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করেই চলেছে। আইএমএফের শর্তে এ ব্যাপারে কঠোর শর্ত থাকবে বলে আশা করছি।’
বস্তি ছেড়ে উঁচু ভবনে, ‘স্বপ্ন’ মনে হচ্ছে তাঁদের
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
বস্তির খুপরি ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে দুই দশকের বেশি সময় কাটিয়েছেন ইয়াসমিন। তখন আশপাশের পরিবেশ ছিল নোংরা। বিদঘুটে গন্ধ ছিল নিত্যসঙ্গী। বিদ্যুৎ না থাকলে গা দিয়ে ঘাম বেয়ে বেয়ে পড়ত। ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে অন্য সময়ে ঠিকমতো হাঁটাচলা করা যেত না। বৃষ্টি হলে বিপত্তি আরও বাড়ত, ঘর থেকে বেরোনোর উপায় থাকত না। সেই ইয়াসমিন এখন উঠেছেন আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বহুতল ভবনে। যে ভবনটি বস্তিবাসীদের জন্য তৈরি করে দিয়েছে সরকার।
রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরের বাউনিয়াবাঁধ এলাকায় ১৪ তলাবিশিষ্ট ৫টি ভবন নির্মাণ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ১৪টি ভবনের মধ্যে একটি ভবনে একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছে ইয়াসমিনের পরিবার। ইয়াসমিনের মতো এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বস্তিবাসীর এসব ফ্ল্যাটে থাকার বন্দোবস্ত হয়েছে।
বস্তি থেকে বহুতল ভবনে ওঠার পর প্রতিক্রিয়া কী—এমন প্রশ্নে ইয়াসমিন বললেন, ‘আগে ৩০ জন মিলে একটা বাথরুম ব্যবহার করতাম। এক ঘরের মধ্যে কেউ চৌকিতে ঘুমাত, কেউ মাটিতে। বসবাসের মতো পরিবেশ ছিল না। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আলাদা ফ্ল্যাটে থাকছি। এখানে আলাদা বাথরুম ও বারান্দা আছে। বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর আছে। লিফটে করে ফ্ল্যাটে ওঠা যায়। পরিবেশ অনেক ভালো। এমন ভবনে থাকতে পারব, এ তো স্বপ্নেও ভাবিনি।’
‘সপ্তাহে এক দিন পারলে মাছ কিনি, নাইলে ডাইল-ডিম’
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
সকালটা ধীরে ধীরে ফরসা হয়ে উঠছে। হালকা শীত আছে। কুয়াশাও হালকা। কিছু নারী-পুরুষ হাঁটতে বেরিয়েছেন। যাঁর যাঁর মতো এদিক-ওদিক ছুটছেন। শহরের একটি গলিপথ দিয়ে হনহন করে ছুটছিলেন নূর ইসলাম (৫০)। কাঁধে কোদাল, হাতে ঝোলানো টুকরি। টুকরির মধ্যে ভাঁজ করা বাজারের একটি খালি ব্যাগ। গামছা দিয়ে গলা-মাথা প্যাঁচানো।
মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা চত্বরে সাতসকালে শ্রমিকের হাট বসে। নানা দিকের শ্রমিকেরা এসে ভিড় করেন। নূর ইসলামও কাজের উদ্দেশ্যে সেদিকেই ছুটছেন। দেরি হলে কাজ না-ও পেতে পারেন। এক দিন কাজ না পাওয়ার অর্থ, আরও কিছু দেনা বাড়া।
শহরের আলাউদ্দিন সড়কে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নূর ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাইল সাড়ে ৬০০ টেকা (টাকা) রুজি করছিলাম। ৫ কেজি চাউল কিনছি, ১ কেজি লবণ কিনছি, আধা কেজি পিঁয়াজ কিনছি, আড়াই শ রসুন কিনছি। মাছ আর আনছি না কাইল। সবকিছু কিনি আর টেকা রইছে (থাকে) না। এক কেজি তরকারি কিনলে ৫০–৬০ টেকা লাগে।’ তিনি বলেন, ‘কাজ সব দিন মিলে না। আইজ খালি হাতে বাইর অইছি। কাজ পাইতাম (পেতে) পারি, না-ও পাইতাম পারি। কিতা করমু (কী করব) আর।’
নূর ইসলামের বয়স ৫০ বছর। এই দীর্ঘ ভ্রমণে কোনো অবসর ছিল না, এখনো নেই। তবে কথা বলার মধ্যে মুখে মৃদু একটা হাসি আছে। এই একটা জায়গায় হয়তো জীবন তাঁকে কাবু করতে পারেনি। সবকিছুকে সহজ করে মানিয়ে নেওয়ার একধরনের সহজাত শক্তি বঞ্চনার মতো জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। হয়তো এই শক্তিতেই হাসিমুখে পোড় খাওয়া জীবনের কথাগুলো বলতে পারেন তিনি।
অবস্থার কথা কইয়া (বলে) লাভ নাই। কেউ শুনতো চায় না। পয়সাঅলার লগে মাতন (সাথে কথা বলা) যায় না। তারার যেমন খুশি চলতে পারে।
নূর ইসলাম, শ্রমিক, মৌলভীবাজার
নূর ইসলামের বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে। বাড়িতে এখনো বাপ-দাদার ভিটা আছে। কিন্তু শেষ কবে বাড়িতে গেছেন, সেটা আর মনে করতে পারেন না। সেই ছোটবেলা বাবার হাত ধরে মৌলভীবাজার এসেছিলেন। দেখতে দেখতে ৩৫-৪০ বছর কেটে গেছে। এখনো এখানেই থিতু হয়ে আছেন। বাবা ট্রাক-শ্রমিকের কাজ করতেন। তিনিও বড় হয়ে বাবার পথেই হেঁটেছেন। অন্য কোনো পথ, অন্য কিছু করার কথা মাথায় আসেনি। তবে ১০-১২ বছর ধরে আর ট্রাকে কাজ করেন না। টুকরি-কোদাল নিয়ে প্রতি সকালে বাসা থেকে বের হন। এটিই এখন তাঁর জীবিকার পথ।
মৌলভীবাজার শহরের কাজীরগাঁও এলাকায় থাকেন নূর ইসলাম। আগে যে ঘরে ভাড়া থাকতেন, সেখানে গ্যাসের সংযোগ ছিল। মালিকের ইচ্ছা হয়েছে, কিছুদিন হলো গ্যাস সংযোগ কেটে দিয়েছেন। কিন্তু কেন কাটা হলো, এটা তিনি জানেন না। এখন লাকড়ির চুলাতেই রান্নাবান্না চলে। এক ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ত। টাকার জন্য এবার আর ভর্তি করাতে পারেননি। মেয়ের পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ছেলে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে।
নূর ইসলাম জীবনের সমস্যা-সংকটের কথা খুব একটা বলতে চান না। তিনি বলেন, ‘কষ্টমষ্ট করি কাম (কাজ) করি। অবস্থার কথা কইয়া (বলে) লাভ নাই। কেউ শুনতো চায় না। পয়সাঅলার লগে মাতন (সাথে কথা বলা) যায় না। তারার যেমন খুশি চলতে পারে।’
আগের চেয়ে মজুরি বেড়েছে, কিন্তু সংসার ঠিকমতো চলে না নূর ইসলামের। তাঁর ভাষায়,Ñ‘আগে ৩০ টাকা থাকি ৬০ টাকা রুজি করছি। সংসার ভালোমতো চলছে। বেশি অভাব বুঝছি না। অখন (এখন) দিনে ৬০০ টেকা, সাড়ে ৬০০ টেকা রুজি করি। কিন্তু ঠিকমতো চলতাম পারি না। সংসার চালানোই কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘সপ্তাহে এক দিন পারলে মাছ কিনি। নাইলে ডাইল-ডিম। অখন (এখন) ডাইল-ডিমরও দাম বাড়ছে। আর মাংস হঠাৎ টেকা বেশি অইলে মন চাইলে কিনি।’
মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা চত্বরে প্রতিদিন কয়েক শ শ্রমজীবী মানুষ ভিড় করেন। এই ভিড়েরই একজন নূর ইসলাম। এখানে দরদামে পোষালে কাজে যান। সব দিন কাজ পাওয়াও যায় না। কাজ পেলে একটু স্বস্তি থাকে, অন্তত চাল-ডালটা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন। না হলে দোকানদারের সামনে গিয়ে হাত পাততে হয়। নূর ইসলাম বলেন, ‘কাজ না পাইলে দোকান থাকি (থেকে) বাকি-টাকি নেই। কাম পাইলে আবার দিলাই (দিয়ে দিই)।’
ব্যাংক তদারকির ‘নতুন ব্যবস্থায়’ গলদ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
দেশের দুর্বল মানের পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য ব্যাংকগুলোতে সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যোগ দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন সমন্বয়ক নিয়োগের কারণে ব্যাংকগুলো থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে পর্যবেক্ষক। কিন্তু সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকগুলোতে তদারকি বাড়ানোর যে উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে, সেটির কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত পর্যবেক্ষকেরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় অংশ নিয়ে পর্ষদের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজেদের মতামত দিতে পারতেন। কিন্তু সমন্বয়কদের ক্ষেত্রে পর্ষদ সভায় অংশ নেওয়ার বিধানটি রাখা হয়নি। ফলে পর্ষদের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারছেন না সমন্বয়কেরা। শুধু সভার সিদ্ধান্ত কার্যবিবরণী আকারে অনুমোদনের পর পাঠানো হয় সমন্বয়কের কাছে। এর ফলে সমন্বয়ক জানার আগেই পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ঋণের টাকাও তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
এ অবস্থায় সমন্বয়কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেসরকারি খাতের যে পাঁচটি ব্যাংকের পর্যবেক্ষক সরিয়ে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘সমন্বয়কেরা ব্যাংকগুলোর সবকিছু দেখছেন। ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি উন্নতিতে তাঁরা ভূমিকা রাখবেন, এমনটাই প্রত্যাশা। তবে পর্ষদ সভায় যোগ দেওয়া সমন্বয়কদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। প্রয়োজন মনে করলে তাঁরা যোগ দিতে পারেন।’
পর্যবেক্ষক থেকে সমন্বয়ক
রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলো সংস্কারে বিশ্বব্যাংক ২০০৪ সালে বিশেষ কর্মসূচি নেয়। এর আওতায় ব্যাংকগুলোকে কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। এরপর ব্যাংকগুলোর সূচকের উন্নতি করতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, যাঁরা ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী কমিটি ও নিরীক্ষা কমিটির সভায় অংশ নিতে পারতেন। এমনকি বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভিন্নমত দেওয়ার সুযোগও ছিল। সভার সিদ্ধান্তও পর্যবেক্ষকেরা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতেন। তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে সেগুলো হলো এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক।
গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। গত ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকের অগ্রগতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করবেন। এরপর এবি, ওয়ান, ন্যাশনাল, পদ্মা ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষক সরিয়ে সমন্বয়ক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সমন্বয়ক জানার আগেই টাকা উত্তোলন
গত ২৮ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদের ৪৭৫তম সভায় ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ঋণ নবায়নের প্রস্তাব ওঠে। প্রস্তাবে বলা হয়, সীমাতিরিক্ত ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ ঋণপত্র খোলা হয়েছে। অন্য ব্যাংকের এই গ্রাহকের ঋণ খেলাপি অবস্থায় রয়েছে। ঋণ নবায়ন হলে গ্রাহক ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাবেন।
এ জন্য পর্ষদের আলোচ্যসূচি দেখেই ২৭ ডিসেম্বর ব্যাংকটিতে নিযুক্ত পর্যবেক্ষক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম আপত্তি জানিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নাইমুজ্জামান ভূঁইয়াসহ ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ই-মেইলে ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ঋণ নবায়নের বিষয়ে আপত্তি জানান।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার অসুস্থতায় আমেরিকায় হাসপাতালে ভর্তি, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান পারভিন হক সিকদারও সভায় যোগ দেননি। অন্য পরিচালকদের উপস্থিতিতে ২৮ ডিসেম্বরের সভায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ব্যাংকটির পরিচালক রিক হক সিকদার। সভায় ব্যাংটির কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়কের আপত্তির কথা জানালেও তা অনুমোদন হয়ে যায়। সেদিনই গ্রাহক গুলশান করপোরেট শাখা থেকে ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা নগদ তুলে নেন।
গ্রাহকের হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২৮ ডিসেম্বর চার দফায় ৫ কোটি টাকা করে ও এক দফায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা তোলা হয়।
ব্যাংকটির সভায় ঋণটি নবায়নের বিষয়টি সমন্বয়ক জানতে পারেন সভার কার্যবিবরণী হাতে পাওয়ার পর। তার আগেই ঋণের টাকা তুলে নেন গ্রাহক। তাই সমন্বয়কের এ ক্ষেত্রে কার্যত কিছুই করার ছিল না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
৭৯টি প্লটের মধ্যে ৭৭টিই খালি
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীতে লায়লা অ্যাগ্রোর নামে তিন কাঠার তিনটি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা মো. জামাল শরীফ। তাঁর ইচ্ছা, এসব প্লটে একটি ডালের মিল করবেন। প্লটের প্রথম আবেদনের সময় জমির ভাড়া বাবদ নির্ধারিত অর্থের দুই ভাগ জমাও দিয়েছেন। বাকি টাকা ৪ বছরে মোট ১০ কিস্তিতে পরিশোধ করে ৯৯ বছরের জন্য প্লট বুঝে পাওয়ার কথা। কিন্তু সরাসরি জমির মালিকানা না থাকায় কোনো ব্যাংক উদ্যোক্তা জামাল শরীফকে ঋণ দিতে রাজি হচ্ছে না। তাই জামাল শরীফ বিসিক কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর প্লটের বরাদ্দ বাতিলের আবেদন করেছেন।
শুধু জামাল শরীফই নন, ঝালকাঠি বিসিকে প্লটের বেশি দাম এবং প্লটের বিপরীতে ব্যাংকঋণ না পাওয়ায় অনেক উদ্যোক্তাই এখন সেখানে কারখানা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাই ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর ৭৯টি প্লটের মধ্যে ৭৭টিই ফাঁকা পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত ২৭ জন উদ্যোক্তাকে ৫০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব প্লটের মধ্যে দুটি বাদে বাকিগুলোতে কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, যে দুটি কারখানা উৎপাদনে এসেছে সেগুলো হলো সারেং ফার্নিচার ও রাইসা পলিমার। বাকি ১ জন উদ্যোক্তার বিপরীতে ২৫টি প্লট বরাদ্দের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। বাকি উদ্যোক্তারা প্লট নিয়েও কারখানা তৈরি কাজ শুরু করেননি। এদিকে পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলে বেসরকারি উদ্যোগে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু ঝালকাঠি বিসিক এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এ শিল্পনগরীতে কারখানা করতে আগ্রহী হচ্ছেন না উদ্যোক্তারা।
প্লাস্টিকের পাইপ তৈরির একটি কারখানা করতে চীন থেকে যন্ত্রপাতি আনার চেষ্টা করেও আনতে পারছি না। কারণ, কোনো ব্যাংক ঋণপত্র খুলছে না। কিন্তু বসে বসে বিসিকের কিস্তি দিয়ে যেতে হচ্ছে।’
আবদুস সাত্তার, মালিক, সুন্দরবন পলিমার
শহরের সুতালরী খালসংলগ্ন বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে প্রায় ১১ একর জমির ওপর ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন করা হয়। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে এ শিল্পনগরীর কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৯ সালের জুনে। ১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বিসিক শিল্পনগরীতে ৭৯টি প্লট রয়েছে। ২০১৯ সালে এ শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দ শুরু হয়। প্লটের প্রতি শতাংশের দাম ধরা হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্লট বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী, ৩১ মাসের মধ্যে উৎপাদনে যেতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎপাদন শুরু করতে না পারলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। তবে অধিকাংশ শিল্পোদ্যোক্তা এসব প্লটের বিপরীতে ব্যাংকঋণ না পাওয়ায় কারখানা করতে পারছেন না।
দেশের রাস্তায় ঘুরছে টেসলা-অডির দামি বৈদ্যুতিক গাড়ি
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন বৈদ্যুতিক গাড়ি জনপ্রিয় হচ্ছে, তখন বাংলাদেশেও এ ধরনের গাড়ির আমদানি ধীরে ধীরে হলেও বাড়তে শুরু করেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা কেটে যাওয়ার পর আমদানি বাড়ছে। এক-দুটি থেকে শুরু করে এ ধরনের গাড়ির আমদানি এখন অর্ধশতাধিক ছাড়িয়ে গেছে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত টেসলা। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় এই বৈদ্যুতিক গাড়িও এখন বাংলাদেশের রাস্তায় চলছে। সংখ্যায় কম হলেও পথ চলতে পথচারীর চোখে পড়তে পারে এ ধরনের গাড়ি। তবে শুধু টেসলাই নয়, ইউরোপের অডি, মার্সিডিজ কিংবা পোরশে ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়িও চলছে দেশের রাস্তায়।
বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার এখন বেশ বড় হলেও বাংলাদেশে এত দিন এ ধরনের গাড়ি খুব একটা আমদানি হয়নি। গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি শুরু হলেও প্রায় পাঁচ বছর বৈদ্যুতিক গাড়ির কোনো নিবন্ধন পাননি ক্রেতারা। ফলে নিবন্ধনবিহীন গাড়ি পুলিশের চোখ এড়াতে কম দূরত্বের যাতায়াতে চালাতেন ব্যবহারকারীরা। জানাজানি যাতে কম হয়, সে জন্যই এ পন্থা বেছে নেন বৈদ্যুতিক গাড়ির মালিকেরা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রথম টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি হয় ২০১৭ সালে। ঢাকার রয়েল মোটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা গাড়িটির আমদানিমূল্য ছিল প্রায় ৮২ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড বা ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। শুল্ক–করসহ গাড়িটি আমদানিতে খরচ পড়ে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এটিসহ এখন পর্যন্ত টেসলার পাঁচটি বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে টিবিএইচ কোম্পানি দুটি গাড়ি এবং বিগ অটোমোবাইলস ও আরপিএম মোটরস একটি করে টেসলা গাড়ি আমদানি করেছে।
বিশ্বজুড়ে অবশ্য টেসলা গত বছর ১৩ লাখ ১৩ হাজার গাড়ি বিক্রি করেছে, আয় করেছে সাড়ে ৮১ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ১৫০ কোটি ডলার (৮ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা)। টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী।
টেসলা আমদানির বিষয়টি এত দিন অপ্রকাশিত থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে প্রথম জার্মানির বৈদ্যুতিক অডি গাড়ির বাজারজাত শুরু হয়েছে। অডি গাড়ির পরিবেশক প্রোগ্রেস মোটরস ইম্পোর্টস লিমিটেড গত মাসে ‘অডি ই-ট্রন’ ব্র্যান্ডের গাড়ি বাজারজাতের ঘোষণা দেয়। এ পর্যন্ত ২৮টি গাড়ি আমদানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ‘অডি ই-ট্রন’ গাড়ি একবার চার্জ দিলে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো যায়। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর খুব কম সময়ে এটিতে গতি ওঠানো যায়।
প্রোগ্রেস মোটরস ইম্পোর্টস লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ফজলে সামাদ গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশবান্ধব ‘অডি ই-ট্রন’ বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বাজারজাত করা বৈদ্যুতিক গাড়ি। এই ব্র্যান্ডের প্রতিটি গাড়ির দাম ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। তিনি বলেন, আগামী ২০৩০ সালের পর ইউরোপে তেলচালিত গাড়ি বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশেও বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার আরও বড় হবে।
টেসলা ও অডি ছাড়াও পোরশে ব্র্যান্ডের ৯টি ও মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের আরও ৯টি বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি হয়েছে দেশে। এ ছাড়া এমজি জেডএস ব্র্যান্ডের দুটি বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি হয়েছে। পোরশে ব্র্যান্ডের টাইক্যান মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানিমূল্য পড়েছে ৫৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার ডলার। গাড়িভেদে শুল্ক, করসহ একেকটির আমদানিতে খরচ হচ্ছে ১ কোটি ৩৬ লাখ থেকে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা পর্যন্ত। মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে কমবেশি দেড় কোটি টাকা খরচ পড়ছে। তবে এসব গাড়ি আমদানিমূল্যের চেয়ে বেশি দামেই বাজারে বিক্রি হয়।
সংসারে ব্যয়ের চাপে কাটছাঁট ইন্টারনেটে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
দেশে ছয় মাস ধরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমছে। কমেছে স্মার্টফোন উৎপাদন। একইভাবে কমেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ব্যবহারকারী।
কমার এই প্রবণতা এমন একটা সময়ে দেখা যাচ্ছে, যখন দেশে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সব মিলিয়ে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যয় বাড়লেও মানুষের আয় সেভাবে বাড়ছে না। ফলে সংসারের ব্যয় কমাতে সাধারণ মানুষ যেসব খাতে কাটছাঁট করছেন, তার একটি ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, গত জুলাইয়ে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল প্রায় ১২ কোটি ৭৬ লাখ, যা ডিসেম্বরে কমে ১২ কোটি ৪৪ লাখে নামে। অর্থাৎ কমেছে ৩২ লাখ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গ্রাহকসংখ্যা তুলে ধরা ওয়েবসাইট নেপোলিয়নক্যাটের তথ্য বলছে, বিগত সাত মাসে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী কমেছে সোয়া কোটির মতো। এদিকে বিটিআরসির হিসাবে, গত ডিসেম্বরে দেশে স্মার্টফোন উৎপাদিত হয়েছে তিন লাখের কিছু বেশি, যা আগস্টেও ৮ লাখ ছিল।
ডলার–সংকটে ভুগছে বিদ্যুৎ–জ্বালানি
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
জ্বালানি–সংকটে শীত মৌসুমেও দিনে এক ঘণ্টা নিয়মিত লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সামনে গ্রীষ্ম মৌসুম। আগামী মাস থেকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকবে। বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী মে মাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ জন্য কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ্বালানি তেল আমদানির ডলারের সংস্থানই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত কৃষিসেচ মৌসুম। এ সময় দেশে বোরো আবাদ হয়। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত গরমও বেশি। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। সব মিলিয়ে তখন বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে সর্বোচ্চ। উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
গত বছরের ১৭ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। এবার মে মাসে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন সক্ষমতা আছে ২৪ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট। জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি বলে গত বছরের জুলাই থেকে টানা কয়েক মাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করা হয়েছে।
ডলার–সংকটে কয়লা আমদানি না হওয়ায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এক মাস বন্ধ রাখতে হয়েছে। কয়লার বিল বকেয়া রেখে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। পাঁচ মাসের বিল বকেয়া থাকায় জ্বালানি তেল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারি খাতের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকেরা। নিয়মিত ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এলএনজি আমদানি বাড়াতে পারছে না বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। ডলারের চাহিদা জানিয়ে সব প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছে। তাদের পাঁচ মাসে ৬০০ কোটি ডলার (৬৩ হাজার কোটি টাকা, ডলার ১০৫ টাকা ধরে) লাগবে।
গুলশান এলাকা থেকে ১৫ জনকে আটক
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে পড়া মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও গাড়িতে থাকা যাত্রীদের কাছে হাত পেতে টাকা চাইছিলেন তারা মিয়া নামের এক ব্যক্তি। এমন সময় সেখানে ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে অভিযান চলছিল। অভিযানে থাকা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যরা তারা মিয়াকে আটক করে পুনর্বাসনে পাঠাতে গাড়িতে তোলেন।
কিন্তু আটক হওয়ার পর পুনর্বাসনকেন্দ্রে যেতে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না তারা মিয়া। তিনি ভিক্ষুক নন বলে কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেন। তিনি হাত জোড় করে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধও করেন। একপর্যায়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের তিনি এক হাজার টাকা দিতে চান।
গতকাল বুধবার দুপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর মোড় এলাকায়। সেখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যৌথভাবে ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছিলেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক তুহিন রেজা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (তারা মিয়া) একটি প্রাইভেট কারের দরজার গ্লাসে টোকা দিয়ে যাত্রীর কাছে টাকা চাইছিলেন। এমন সময় তাঁকে আটক করা হয়। ঘটনার ভিডিও চিত্র ও ছবি রয়েছে।
তবে তারা মিয়ার দাবি, তিনি ভিক্ষুক নন, তখন ভিক্ষাও করছিলেন না। তারা মিয়ার ডান হাত কবজি থেকে কাটা, বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী এলাকায়।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষিত এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি দূর করার লক্ষ্যে ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১–এর আওতায় অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে গুলশান এলাকায় ১৬ জনকে আটক করা হয়। তবে এক নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আটকের পর মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩–এর কার্যালয়ের সামনে একটি গাড়িতে তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়। এ সময় আটক হওয়া ব্যক্তিদের কেউ কেউ নিজেকে ভিক্ষুক নন দাবি করে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছিলেন। আবার কেউ কেউ বলছিলেন, তাঁরা আর ভিক্ষা করবেন না। কেউবা গুলশান-বনানী এলাকায় ভিক্ষার জন্য যাবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েও ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছিলেন।
সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাঁদের আশ্বস্ত করে বলছিলেন, তাঁদের আর কষ্ট করে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হবে না। অভিযানে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মিরপুর-১ নম্বরে অধিদপ্তরের পুনর্বাসনকেন্দ্রে নেওয়া হবে।
আটক হওয়া ব্যক্তিদের একজন বরিশালের জয়নাল আবেদীন। তাঁর দাবি, তিনি ভিক্ষুক নন। আটকের আগে ভিক্ষাও করছিলেন না। তিনি চরমোনাইয়ে যাবেন। কিন্তু পকেটে টাকা নেই। তাই মানুষের কাছে ভাড়ার জন্য হাত পাতছিলেন।
রেনু আরা নামের এক নারী বলেন, তিনি বাড়ি থেকে নাতনির জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে তাঁর কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছিলেন। মাঝেমধ্যে তিনি পান খাওয়ার ১০-২০ টাকার জন্য মানুষের কাছে হাত পাতেন। তবে ভবিষ্যতে তিনি এমন কাজ আর করবেন না।
সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পারভেজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আটক হওয়ার পর অনেকে ভবিষ্যতে আর ভিক্ষা করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ছাড়া পেয়েই আবার ভিক্ষা করতে শুরু করেন তাঁরা।
অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩–এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইন অনুযায়ী আটক ব্যক্তিদের সাময়িক হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আড়াই লাখ কোটি টাকার শুল্ক–কর অব্যাহতি কারা পাচ্ছে
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
শুল্ক–কর অব্যাহতির কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় করা যায় না বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক গবেষণার হিসাবে দেখা গেছে। এই পরিমাণ অব্যাহতিপ্রাপ্ত শুল্ক–কর আদায় করা গেলে রাজস্ব আদায় প্রায় ৮০ শতাংশের মতো বেড়ে যেত।
এনবিআরের আরেকটি গবেষণা বলছে, স্বল্প করহার, কর অব্যাহতি এবং কর অবকাশ সুবিধাগুলোর কারণে দেশে কর–জিডিপির বর্তমান অনুপাত সম্ভাব্য প্রকৃত অনুপাতের তুলনায় ২ দশমিক ২৮ শতাংশ কম হচ্ছে।
এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক এবং নানা খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেয় এনবিআর। চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলেন, সব কর অব্যাহতি অবশ্য যে খারাপ, তা নয়। কিছু কিছু খাতে কর অব্যাহতির কারণে ওই সব খাত শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে এবং অর্থনীতিতে অবদানও রাখছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণের শর্ত হিসেবে কর ছাড়ের পরিমাণ কমাতে বলেছে। বাংলাদেশ এই শর্ত পালনে রাজিও হয়েছে।
বাংলাদেশে কারা, কখন, কীভাবে কর ছাড় পায়—এর সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই। কারণ, কর ছাড়গুলো বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া হয়েছে। কখনো কখনো অর্থবছরের মাঝখানে প্রজ্ঞাপন দিয়েও কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এসব সুবিধা দেওয়ার ফলে লাভ কতটা হয়েছে—এর বিস্তারিত কোনো গবেষণা করেনি এনবিআর। তাই কর ছাড়ের সব তথ্য এক জায়গায় সংরক্ষিত নেই।
এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর অব্যাহতি কমাতে হবে। তবে কোন কোন খাতে কর অব্যাহতি কমানো হবে, তা নিয়ে একটি পর্যালোচনা করা উচিত। কারণ, সব কর অব্যাহতি খারাপ নয়। শিল্পায়নের স্বার্থেই কিছু কর অব্যাহতি দেওয়া হয়।’
আয়কর খাতে মোটাদাগে মোট আটটি খাত কর ছাড় পায়। এবার দেখা যাক, আয়কর খাতে কোথায় কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক ও রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল
রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন করলে এলাকাভেদে ১০ বছর পর্যন্ত ২৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুবিধা মেলে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক এবং সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) প্রকল্পেও কর অবকাশ সুবিধা আছে।
ভৌত অবকাঠামো
শিল্প খাতের পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, জ্বালানি, যোগাযোগ এবং অন্যান্য অত্যাবশকীয় ৩৯ ধরনের ভৌত অবকাঠামো খাতে নির্মাণের পর ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন হারে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতেও বড় ধরনের কর অব্যাহতি সুবিধা আছে। যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আয়, বিদেশি ঋণের সুদ, শেয়ার হস্তান্তরের ফলে মূলধনি মুনাফার ওপর অর্জিত আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো–হাউ ফি, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ফি এবং বিদেশি কর্মীদের আয়ের ওপর নির্দিষ্ট হারে কর ছাড় আছে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাত
২২টি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০০৮ সালেলর ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া আছে।
পোশাক খাত
রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের জন্য সাড়ে ২৭ শতাংশ করপোরেট করের পরিবর্তে ১২ শতাংশ হারে করসুবিধা আছে। পরিবেশবান্ধব কারখানা হলে এই হার ১০ শতাংশ।
হস্তশিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা
হস্তশিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভারের ওপর ২০২৪ সালের ৩০ জুন করমুক্ত আয়ের সুবিধা দেওয়া আছে। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত এলাকায় হস্তশিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কারখানা করলে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কর ছাড় মেলে।
কৃষি
কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক উৎপাদন থেকে প্রথম ১০ বছর পুরোপুরি আয়করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পাটজাত পণ্য উৎপাদন করলে ওই প্রতিষ্ঠানের করহার ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা আছে। রাইসব্রান তেল উৎপাদনশিল্প, ফল–শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন, শিশুখাদ্য উৎপাদন হতে অর্জিত আয়ের ওপর এলাকাভেদে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রেয়াতি হারে কর অব্যাহতির সুবিধা আছে।
সামাজিক উন্নয়ন
কোনো প্রতিষ্ঠানে মোট কর্মীর ১০ শতাংশ বা ২৫ জনের বেশি তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলে ওই প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত আয়করের ওপর ৫ শতাংশ বা তৃতীয় লিঙ্গের কর্মীদের দেওয়া বেতন–ভাতার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কর রেয়াতির সুবিধা পায়। একই নিয়মে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলেও একই হারে কর–সুবিধা মেলে।
অন্যান্য
বাংলাদেশে উৎপাদিত অটোমোবাইল (থ্রি–হুইলার ও ফোর–হুইলার) প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক উৎপাদনের দিন থেকে প্রথম ১০ বছর করমুক্ত আয়ের সুবিধা পায়। পরের ১০ বছর তাদের মাত্র ১০ শতাংশ কর দিলেই হয়। এ ছাড়া দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রথম ১০ বছর আয়করমুক্ত সুবিধা দেওয়া আছে।
ভ্যাট নেই অনেক পণ্যে
এনবিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপিতে অবদান রাখা ৫০ শতাংশ পণ্যে ভ্যাট নেই। কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা সেবা খাতে কোনো ভ্যাট নেই। এই খাতগুলো জিডিপিতে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ অবদান রাখে।
এ ছাড়া জিডিপিতে প্রায় ২৩ শতাংশ অবদান রাখা শিল্পপণ্যের ওপর ভ্যাট নেই। যেমন রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার, লিফট, মোটর ভেহিকেল, মোবাইল ফোন, হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা আছে। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামাল, সাবান–শ্যাম্পুর কাঁচামাল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সার্ভার, মাদারবোর্ড উৎপাদনে কোনো ভ্যাট নেই। সফটওয়্যার উন্নয়নেও একই সুবিধা আছে।
এর বাইরে বিভিন্ন খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় ভ্যাট দিতে হয় না। ৪৮৯টি প্রাথমিক পণ্য এবং জীবনধারণ ও রক্ষায় ব্যবহার করা বিভিন্ন মৌলিক পণ্যে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫০ ধরনের সেবায় ভ্যাট নেই।
আমদানি পণ্যে শুল্ক নেই
দেশে যত টাকার পণ্য আমদানি হয়, এর মধ্যে ৪৪ শতাংশের উপর শুল্ক–কর আরোপ করা হয় না। এসব পণ্য ও সেবার মধ্যে খাদ্যপণ্য, শিল্পায়নে ভূমিকা রাখে এমন পণ্যই বেশি। এ ছাড়া কিছু সরকারি প্রকল্পের পণ্য আমদানিতে শুল্ক–কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার কূটনীতিক এবং বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আন্তর্জতাতিক সংস্থার গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আছে বলে এনবিআর হিসাব করে দেখেছে।
এ ছাড়া শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ড–সুবিধা পায়। এসব প্রতিষ্ঠান বিনা শুল্কে কাঁচামাল এনে পণ্য বানিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে। এই সুবিধা পাওয়া শিল্পের মধ্যে পোশাকশিল্প অন্যতম।
এনবিআর হিসাব করে দেখেছে, ২০১৯–২০ অর্থবছরে দেশে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে শুল্ক–কর অব্যাহতি দেওয়ার কারণে ৪৪ শতাংশ বা ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৬ কোটি টাকার পণ্যে কর আরোপ করা যায়নি।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ আমদানি কমেছে ৯১%
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩, বণিক বার্তা
দেশে ওষুধের জোগানের ৯০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো। বাকি যেটুকু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, সেগুলো প্রধানত ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি ও স্নায়বিকসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। জটিল পরিস্থিতিতে রোগীর জীবন রক্ষায় ব্যবহূত এসব ওষুধের আমদানিতেও এখন বিরূপ প্রভাব ফেলছে ডলার সংকট। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) অতিপ্রয়োজনীয় এসব ওষুধের আমদানি কমেছে ৯১ শতাংশ। ওষুধের পাশাপাশি হ্রাস পেয়েছে কাঁচামাল আমদানি। একই সঙ্গে কমেছে ওষুধ শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিও।
আমদানীকৃত ওষুধ ও উপকরণের অভাবে এখন জটিল অস্ত্রোপচারও হ্রাস পেয়েছে বলে চিকিৎসক ও বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাদের ভাষ্যমতে, বাজারে এখন আমদানীকৃত যেসব ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোরও দাম অনেক বেড়েছে। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে আগামী জুন-জুলাই নাগাদ প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট তীব্র হওয়ার পাশাপাশি জটিল অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে মোট ওষুধ আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল ৫৩ কোটি ৬৪ লাখ বা ৫৩৬ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলারের। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে খোলা হয়েছে মাত্র ৪৫ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলারের। এ অনুযায়ী গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ওষুধ আমদানিতে এলসি কমেছে ৯১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। একই পরিস্থিতি ওষুধ আমদানির এলসি নিষ্পত্তিতেও। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ওষুধের এলসি নিষ্পত্তি ছিল ৫৪৭ মিলিয়ন ডলারের। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ওষুধ আমদানিতে মাত্র ৪৯ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। এ হিসাবে ওষুধ আমদানির এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৯০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
খাদ্যের দাম বাড়ায় বেঁচে থাকতে তিন ‘উপায়’
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
কুড়িগ্রাম সদরের তালকু কালোয়াত গ্রামের দেলোয়ারা বেগম টমেটোর খেতে কাজ করছিলেন। সারা দিন কাজ করে ২০০ টাকা মজুরি পান। দেলোয়ারা বলছিলেন, ‘তিন বেলা ভাত খাই। দিনে লাগে দুই কেজি চাল। আগে ১৭০ টাকা পেতাম। তাতেও কোনোমতে পাঁচজনের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়া যেত। এখন ভাত-আলু আর সবজির দুইটা পাতা দিয়ে রান্না করে কোনোমতে চলে।’ শেষ কবে মাছ-মাংস খেয়েছেন, ভুলে গেছেন দেলোয়ারা। হতাশার সুরে বললেন, ‘আপনারা যদি কোরবানির ঈদে কিছু মাংস দেন, তাহলে খাইতে পারব।’
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ২০২২–এর জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের আয়-ব্যয় নিয়ে জরিপ করেছে। এতে তাদের খাদ্যপণ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা বাবদ খরচের তথ্য উঠে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে চাল ও আটার দাম কমেছে। তবে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বাবদ খরচ বেড়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে। তবে এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে দেশের অর্ধেকের (৫৩ শতাংশ) বেশি মানুষ। খাদ্যের দাম বাড়ায় তারা তাদের জীবনযাত্রার অন্যান্য খরচ কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
জরিপে দেখা গেছে, একজন মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যতটা খাবার দরকার, তার দাম এক বছরে ১২ শতাংশ বেড়েছে। আর গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে, অর্থাৎ এক মাসে বেড়েছে ৪ শতাংশ। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম খাবার কেনা বাবদ মাসে মাথাপিছু খরচ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩৯ টাকা, যা উপার্জন করা গরিবের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। ২২ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
গত সপ্তাহে প্রকাশ করা ডব্লিউএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য ৬৮ শতাংশ মানুষের জন্য গভীর দুশ্চিন্তার বিষয়। খাদ্যপণ্যের মধ্যে চালের দাম এক বছরে বেড়েছে ১১ শতাংশ। আর কোভিড সংক্রমণের আগের সময় অর্থাৎ ২০২০–এর মার্চের আগের তুলনায় বেড়েছে ৬১ শতাংশ।
সেবা খাতে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহ কেন
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
বাংলাদেশে যাঁরাই পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহী, তাঁদের বেশির ভাগই বিনিয়োগ করতে চান সেবা খাতে। সরকারের কাছে দেওয়া দেশি, বিদেশি কিংবা যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন সেবা খাত হিসেবে চিহ্নিত বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে।
গত ২০২১–২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মাধ্যমে মোট ১ হাজার ১২৪টি বিনিয়োগ প্রকল্প নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশিই সেবা খাতের। এ ক্ষেত্রে দেশি বিনিয়োগকারীদের চেয়ে বরং বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল।
বিডার তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরে যত দেশীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব করা হয়েছে, তার ৪৩ শতাংশই করা হয়েছে সেবা খাতে। অন্যদিকে সেবা খাতে বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাবের হার ছিল এ খাতে করা প্রস্তাবের অর্ধেকের বেশি বা ৫১ শতাংশ।
জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ অনুসারে, অটোমোবাইল, এভিয়েশন, পরিবহন, যোগাযোগ, ওয়্যারহাউস, সুপারশপ, বিপণিবিতান, রেস্তোরাঁ, লজিস্টিক, বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদিকে সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়।
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সেবা খাতের অবদান এখন ৫১ শতাংশের বেশি। ফলে দেখা যাচ্ছে, শিল্প উৎপাদন খাতের তুলনায় সেবা খাত ঘিরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।
বিডার তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা সেবা খাতের পর রাসায়নিক (২০ শতাংশ), বস্ত্র (১৫ শতাংশ), ইঞ্জিনিয়ারিং (১০ শতাংশ) ও কৃষি (৪ শতাংশ) খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে ২০২১–২২ অর্থবছরে সেবা খাতের পর বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ ছিল রাসায়নিকে (১৪ শতাংশ), ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (১৪ শতাংশ), বস্ত্র (৮ শতাংশ) ও কৃষি খাতে (৪ শতাংশ)। এ ছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, প্রিন্টিং, ট্যানারি ও চামড়া, গ্লাস ও সিরামিক ইত্যাদি খাতেও বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে গত অর্থবছরে।
এর আগের তিন অর্থবছরেও বিডাতে সেবা খাতে বিনিয়োগ প্রস্তাব তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। যেমন ২০২০–২১ অর্থবছরে বিডায় নিবন্ধিত স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্যে সেবা খাতে বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ১২ শতাংশ এবং বিদেশি ও যৌথ প্রকল্প প্রস্তাব ৭৩ শতাংশ। ২০১৯–২০ অর্থবছরে ৪৭ শতাংশ ও ২০১৮–১৯ অর্থবছরে ১৪ শতাংশ স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব করা হয় সেবা খাতের জন্য। তবে এই দুই অর্থবছরে সেবা খাতে বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব ৪ শতাংশের কম ছিল।
সার্বিকভাবে দেখা যায়, বিডার মাধ্যমে সেবা খাতে বিনিয়োগ প্রস্তাব ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সেবা খাতে বিনিয়োগ প্রস্তাব যেমন বাড়ছে, প্রকৃত বিনিয়োগও বাড়ছে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।
ফলে এখন মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপি) সেবা খাতের অবদান সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২০–২১ অর্থবছরে জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ছিল ৫১ শতাংশের বেশি। এর আগের ছয় অর্থবছরেও জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ৫০ শতাংশের বেশি হিসাব করা হয়েছে।
পায়রার অর্থ পরিশোধেই অসুবিধায় রূপপুর এলে কী হবে?
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩, বণিক বার্তা
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি অর্থ বিভাগে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, অর্থ ও বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান না থাকায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানির বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। এখনো প্রতিষ্ঠানটির কাছে কয়লার মূল্য বাবদ প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার পাবে রফতানিকারকরা। বাকি অর্থ পরিশোধ না হলে কয়লা আমদানি করা হবে না বলে জানিয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)।
উপসচিব তাহমিনা বেগম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, কয়লা আমদানির অর্থ পরিশোধ না করায় সিএমসির ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং কমে গেছে। এ অর্থ পরিশোধ হলে কয়লা আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বকেয়া থাকায় ১ জানুয়ারি থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে আগামী মার্চ থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অনাদায়ী বকেয়া অর্থ পরিশোধে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান করা জরুরি।
বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো বিসিপিসিএলের অপর এক চিঠি থেকে জানা যায়, পায়রায় কয়লা সরবরাহ চুক্তি অনুযায়ী সিএমসি ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কয়লা আমদানিতে অর্থায়ন করেছে। কয়লা আমদানি বাবদ সিএমসির পাওনা প্রায় ৪৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে ১৮০ দিনের মধ্যে পরিশোধের শর্তে কয়লা আমদানিতে বকেয়ার পরিমাণ ১৫ কোটি ১৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে ২০২২ সালের অক্টোবরের জন্য প্রায় ৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের, নভেম্বরে ৫ কোটি ৮৩ লাখ ও ডিসেম্বরের জন্য প্রায় ৩ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের কয়লা আমদানির অর্থ বকেয়া রয়েছে। এ অর্থের পুরোটা পরিশোধ সাপেক্ষে কয়লা আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করবে সিএমসি।
তবে ১৫ কোটি ১৫ লাখ ডলার বকেয়ার মধ্যে দুটি কিস্তিতে ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার এরই মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিপিসিএলের কর্মকর্তারা। সে অনুযায়ী এখনো অন্তত সাড়ে ৩ কোটি ডলার বকেয়া রয়েছে।
শুধু কয়লা আমদানি নয়, জটিলতা রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নেয়া ঋণের অর্থ পরিশোধের দিক থেকেও। ডিসেম্বরেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণের চতুর্থ কিস্তি পরিশোধ করার কথা ছিল। এটি এখনো পরিশোধ করা যায়নি।
অর্থ ও ডলার সংকটের কারণে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণ ও বকেয়া পরিশোধ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এ অবস্থায় রূপপুরসহ বৃহৎ সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে বিদ্যুৎ বিল, জ্বালানি আমদানি ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে সরকারকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
দেশে গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে বেশ কয়েকটি বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। রাশিয়া, চীন ও ভারতের কাছ থেকে নেয়া ঋণের ভিত্তিতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশগুলোর কাছ থেকে এ পর্যন্ত নেয়া ঋণের মোট পরিমাণ সাড়ে ৩ হাজার কোটি ডলারেরও ওপরে। এর বড় অংশই রয়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোয়। আগামী ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে এসব ঋণের বিপরীতে বিপুল অংকের অর্থ পরিশোধ করা শুরু হবে বাংলাদেশের।
পূর্বাচলে পানির দাম ৩১% বেশি
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
রাজউক সম্প্রতি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ শুরু করেছে। তবে সংস্থাটি পানির যে দাম নির্ধারণ করেছে, তা ঢাকা ওয়াসার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেকটা বেশি।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা ওয়াসার ওয়েবসাইটে দেওয়া পানির দাম তুলনা করে দেখা যায়, পূর্বাচলের বাসিন্দাদের আবাসিক শ্রেণিতে পানির দাম ৩১ শতাংশ ও বাণিজ্যিকে ৭ শতাংশ বাড়তি দেওয়া লাগবে। অবশ্য রাজউক বলছে, ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করেই পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজধানীতে জনসংখ্যার চাপ কমাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের ৬ হাজার ১৫০ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠছে পূর্বাচল নতুন শহর। এতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এই শহর গড়তে রাজউকের নেওয়া প্রকল্প ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় সেখানে এখনো বসতি গড়ে ওঠেনি। তবে পূর্বাচলে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচলে এখন পর্যন্ত ২৯০টি বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আবেদন পড়েছে ৩১৩টি।
রাজউকের কর্মকর্তারা জানান, পূর্বাচলের ৩০টি সেক্টরের মধ্যে আপাতত ১, ২, ৩ নম্বর সেক্টর এবং ৪ নম্বর সেক্টরে (আংশিক) দুটি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই চার সেক্টরে প্লট আছে প্রায় তিন হাজার। এসব প্লটের মালিকেরা চাইলে পানির সংযোগ নিতে পারবেন। গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ২০টি পানির সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আরও পাঁচটি সংযোগের আবেদন জমা পড়েছে।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, পূর্বাচলে পানি সরবরাহ করার কথা ছিল ঢাকা ওয়াসার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওয়াসা অপারগতার কথা জানায়। পরে রাজউক পানি সরবরাহে সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) প্রকল্প নেয়।
রাজউকের পানি সরবরাহ–সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। ঢাকা শহরের অন্যান্য এলাকায় একই পরিমাণ পানি সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসা নেয় ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম হবে ৪৫ টাকা, যা ঢাকা ওয়াসার চেয়ে ৩ টাকা বেশি।
পানির দাম বেশি হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক মো. বদিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সাত সদস্যের একটি কমিটি পানির দাম নির্ধারণ করেছে। পূর্বাচলে পানির সংযোগ এখন কম, সেই তুলনায় পরিচালন ব্যয় বেশি। এ বিবেচনায় ভর্তুকি মূল্যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
সংযোগ না নিলেও দিতে হবে টাকা
রাজউকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পূর্বাচল এলাকায় পানি সরবরাহ–সংক্রান্ত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হলে পানির সংযোগ না নিলেও প্লটের মালিকদের ন্যূনতম একটি ফি দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ মেটানোর জন্য এটি করা হতে পারে বলে রাজউক সূত্র জানিয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্প এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করবে রাজউক। পরের ১১ বছর পানি সরবরাহ–সংক্রান্ত প্রকল্পটি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাজউক বিনিয়োগ করবে ২৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বাকি টাকা বিনিয়োগ করবে ইউনাইটেড ড্যালকট ওয়াটার লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। মোট চারটি পর্বে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
রাজউক বলছে, অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হলে প্রকল্পের আয় থেকে প্রতিবছর ইউনাইটেড ড্যালকটকে ৫৭ কোটি টাকা করে দেওয়া হবে। ১১ বছরে ৬২৭ কোটি টাকা পাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পুরো পূর্বাচলকে ১৫টি অঞ্চলে (ডিস্ট্রিক্ট মিটারড এরিয়া বা ডিএমএ) ভাগ করা হয়েছে। ১৫টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তুলে সেটি সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্পের পরিচালক মো. বদিউল আলম জানান, ২০৩৫ সালের পর ভূ-উপরিস্থ পানি শোধন করে সরবরাহ করার পরিকল্পনা আছে রাজউকের।
গভীর নলকূপ নিয়ে প্রশ্ন
এদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সারা বিশ্বেই গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহকে পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঢাকা ওয়াসাও টেকসই পানি সরবরাহের জন্য গভীর নলকূপের পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধন করে সরবরাহ করার দিকে জোর দিচ্ছে। এমন অবস্থায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পূর্বাচলে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগর–পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, গভীর নলকূপ দিয়ে তোলার কারণে ঢাকার বিভিন্ন অংশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বাড়ে। এ জন্য ভূ-উপরিস্থ পানি শোধন করে সরবরাহ করার প্রতি জোর দেওয়া হয়। তিনি বলেন, রাজউকের উচিত ছিল পূর্বাচলের আশপাশের নদ-নদীগুলো দূষণমুক্ত রেখে সেখান থেকে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া।
উদ্বোধনের পরই ভাঙতে হবে হাজার কোটি টাকার সড়ক
২৫ ফেব্রুয়ারি ২৩, সমকাল
রাজধানীর কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও অত্যাধুনিক আট লেন পূর্বাচল সড়কটির কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে উদ্বোধন করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে বাকি কাজগুলো জোরেশোরে সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু জানা গেছে, উদ্বোধনের পরপরই সড়কটি ভেঙে ফেলতে হবে। কারণ ওই সড়কের ঠিক মাঝ দিয়ে বসবে মেট্রোরেলের খুঁটি বা স্প্যান। ২০২৪-এর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শুরু হতে পারে তা স্থাপনের কাজ। সড়কটিতে পড়েছে অনেক সেতু, আন্ডারপাস ও গ্রেড ইন্টারসেকশন। সেগুলোও ভাঙা পড়বে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম পাতাল রেলের (এমআরটি-১ লাইন) নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ওই রেলপথের বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত থাকবে ভূগর্ভে। আর রূপগঞ্জের পীতলগঞ্জ থেকে জোয়ারসাহারা নতুনবাজার পর্যন্ত রেলপথটি হবে পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের মাঝের বিভাজক বরাবর ওপর দিয়ে তথা উড়ালপথ হিসেবে।
যে দোকানে কেনা যাবে এক টুকরা মুরগি
০২ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় মুরগির একটি দোকানের সামনে টাঙানো রয়েছে একটি নোটিশ। তাতে লেখা ‘এখানে মুরগির মাংস টুকরা হিসেবেও বিক্রি করা হয়।’
দোকানটির নাম সেলিম পোলট্রি শপ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এই দোকানে টুকরা হিসেবে মুরগির মাংস বিক্রি চালু হয়েছে। দোকানটিতে ওজন অনুযায়ী একটি মুরগি কাটার পর চার ভাগ করে টুকরা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের বাজারে বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। অন্যদিকে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। সেই হিসাবে ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রতি টুকরার দাম পড়বে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা। আর সোনালি মুরগির মাংসের প্রতি টুকরার দাম পড়বে ৭৭ থেকে ৮০ টাকা।
টুকরা হিসেবে মুরগি বিক্রয়ের উদ্যোগটি নিয়েছেন চকবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা মো. কায়সার আলী চৌধুরী। তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে মুরগির দাম মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। শুধু মুরগি নয়, অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও অনেক বেশি। নিম্নবিত্ত ও ব্যাচেলর থাকা ছাত্ররা যাতে সাধ্যের মধ্যে মুরগির মাংস কিনতে পারেন, সেই চিন্তা থেকে চকবাজারে টুকরা হিসেবে মুরগি বিক্রির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ধানমন্ডি লেক যেন ব্যবসাকেন্দ্র
০২ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
রাজধানীর ধানমন্ডি লেকের ভেতরে রবীন্দ্রসরোবরের পাশে একটি খাবারের দোকান। নথিপত্রে নাম ‘ফুড ভ্যান’, থাকতে পারবে একসঙ্গে চারটি। তবে সেগুলো আসলে ভ্যান নয়, স্থায়ী কাঠামোতে তৈরি রেস্তোরাঁ। ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গিয়ে দেখা গেল, রেস্তোরাঁটির শ খানেক টেবিলে বসে আছেন কয়েক শ মানুষ। কেউ খাবার খাচ্ছেন, কেউ অপেক্ষায়।
এই রেস্তোরাঁর ইজারা দেওয়া হয়েছে ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক গোলাম রাব্বানি ওরফে হিরুকে। গত জুলাইয়ে তিনি ধানমন্ডি লেকে চারটি ‘ফুডভ্যান’সহ তিনটি রেস্তোরাঁ ইজারা পান। তাঁর কাছ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজস্ব পেয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
লেকটিকে সাতটি সেক্টরে ভাগ করে ছয়টি সেক্টর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছে ইজারা দিয়েছে দক্ষিণ সিটি। চলছে ১৩টি রেস্তোরাঁ।
ধানমন্ডি লেককে সাতটি সেক্টরে ভাগ করে ছয়টি সেক্টরকে এভাবে ইজারা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ইজারাপ্রাপ্ত ছয়জনই আওয়ামী লীগ এবং দলটির অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা। ছয়টি সেক্টরের অধীনে লেকে পরিচালিত হচ্ছে ১৩টি রেস্তোরাঁ। অভিযোগ উঠেছে, যেসব শর্তে তাঁদের ইজারা দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা তা মানছেন না। অন্যদিকে লেকটি দিন দিন পরিণত হচ্ছে ব্যবসাকেন্দ্রে।
মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে অর্থ পাচার ৪১৩৫ বাংলাদেশির
০৬ মার্চ ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ
মালয়েশিয়ায় কমপক্ষে ৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। মোট ৪ হাজার ১৩৫ জন বাংলাদেশি এই অর্থ দিয়ে দেশটিতে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। সুইস ব্যাংকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে তৈরি করা কর্মকৌশল-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
গত ৬ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার-সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তসহ কৌশলপত্রটি গত ২ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে বিএফআইইউ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম (এমএমটুএইচ)’ একটি বহুল আলোচিত অভিবাসন কর্মসূচি। চীন ও জাপানের পর বাংলাদেশি নাগরিকরা এমএমটুএইচ কর্মসূচির সবচেয়ে বড় গ্রাহক বা অংশীদার।
২০০৩ থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৪২ হাজার ২৭১ জন এই সুযোগ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ৪ হাজার ১৩৫ জন (বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়)। এ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য পঞ্চাশের নিচের বয়সের ব্যক্তির জন্য কমপক্ষে ৫ লাখ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা) এবং পঞ্চাশ বা তদূর্ধ্ব বয়সের জন্য কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ রিঙ্গিত (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৪ লাখ টাকা) তরল সম্পদ প্রদর্শন করতে হয়।
ছয় মাসে বাজেটের মাত্র ২৪% বাস্তবায়ন
০৯ মার্চ, ২০২৩, বণিক বার্তা
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণাকালে দেশের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা হবে জানিয়ে সে সময় তিনি ইউক্রেন সংকটজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করে চলতি অর্থবছরে অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। অর্থ জোগাড়ের নিশ্চয়তা না থাকলেও ওই সময়ে বাজেট ঘোষণা হয় ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার। অর্থবছরের প্রথম অর্ধাংশে (জুলাই-ডিসেম্বর) এ বাজেটের এক-চতুর্থাংশও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি সর্বশেষ মাসিক রাজস্ব প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মন্ত্রণালয় ও সরকারি বিভাগগুলো অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে বরাদ্দকৃত বাজেটের মাত্র ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের মাত্র ১৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। আর পরিচালন খাতে ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ অর্থ। যদিও সরকারের সংস্থাগুলো দাবি করছে, অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাজেট অনেক গতি পাবে। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের পর্যবেক্ষণ হলো সরকার এখন অর্থ সংগ্রহ নিয়ে বেশ চাপে রয়েছে। বিষয়টি এখন রীতিমতো বড় ধরনের সংকটে রূপ নিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ঘাটতি বাজেট পূরণে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে লক্ষ্যমাফিক অর্থ সংগ্রহ করা যায়নি। বিদেশী উৎস থেকে চলতি অর্থবছরে ঋণ নেয়ার নিট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নেয়া নিট বিদেশী ঋণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকায়। দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাংক খাত থেকে নিট ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার। ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ব্যাংক খাত থেকে ২৪ হাজার ৭১৭ কোটি টাকার নিট ঋণ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকেও এ সময়ে সরকারের নিট ঋণ বাড়েনি।
শতকোটি টাকা ক্ষতির বোঝা ভোক্তার কাঁধে
১১ মার্চ ২৩, সমকাল
দেশে রমজানের পণ্য এনে এবার অবিশ্বাস্য তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে কয়েকটি বড় আমদানিকারক গোষ্ঠী এবং বিদেশি পাঁচ জাহাজ। জরুরি প্রয়োজনে আমদানি করা পণ্য যেখানে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে খালাস হওয়ার কথা, সেখানে তা করতে ১৪ থেকে ১৫ গুণ বাড়তি সময় লেগেছে। নজিরবিহীনভাবে জাহাজগুলো অতিরিক্ত দাঁড়িয়ে ছিল সব মিলিয়ে ২৫০ দিনেরও বেশি। এর মধ্যে একটি জাহাজকে সর্বোচ্চ ১৩৬ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি জাহাজের বিপরীতে প্রতিদিন ৪২ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে আমদানিকারকদের।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মূল্য পরিশোধ করলেও ডলার সংকটে বাংলাদেশের ব্যাংক তা বিদেশে পাঠাতে না পারায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জাহাজগুলোকে বসিয়ে রাখায় অতিরিক্ত প্রায় ১০৭ কোটি টাকা গচ্চা গেছে আমদানিকারকদের। কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, আমদানিকারকরা ক্ষতির এ টাকা এবার তুলে দেবেন ভোক্তার কাঁধে। প্রতি কেজি পণ্যে এখন বাড়তি দাম গুনতে হবে ভোক্তাকে ৫ থেকে ১০ টাকা।
ভরসা এখন মুরগির ফাটা ডিম আর গিলা-কলিজায়
১১ মার্চ, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ২ মাসের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। প্রতি ডজন মুরগির ডিমের (লাল) দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়।
প্রোটিনের সবচেয়ে সস্তা উৎস হিসেবে পরিচিতি ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ এখন ঝুঁকছেন মুরগির গিলা-কলিজা, গলা ও পা কেনার দিকে। ডিমের দামও বেড়ে যাওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনছেন ফেটে যাওয়া ডিম।
গত ৩ দিনে ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে মুরগির গিলা-কলিজা, গলা, পা ও ফাটা ডিম বিক্রি হয় এমন দোকানগুলোর সামনে ১ ঘণ্টা করে দাঁড়িয়ে থাকেন এই প্রতিবেদক। এ সময় অন্তত ১৫ জনকে এগুলো কিনতে দেখেন তিনি।
তাদের মধ্যে ৫ জনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। আরও ৪ জনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩ দিনের ব্যবধানে গিলা-কলিজার দামও ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরকারের বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধের হিসাবে বিভ্রান্তি
১২ মার্চ ২০২৩. শেয়ার বিজ
কভিড-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশের অর্থনীতি। রেমিট্যান্সে নিম্নমুখী গতি ও রপ্তানিতে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় এ সময় সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে রিজার্ভ কমছে দ্রুত। ফলে আমদানি নিয়ন্ত্রণে এলসি খোলায় নানা শর্ত আরোপ করা হয়। খোলাবাজারেও ডলার বিক্রি কমিয়ে দেয়া হয়। এতে পণ্য আমদানি ও বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে জটিলতায় সম্মুখীন হতে হয়।
যদিও বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কত, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বৈদেশিক ঋণের ভিন্ন ভিন্ন হিসাব দিচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বা ইআরডি কারোর হিসাবেরই মিল নেই। ফলে বিদেশি ঋণের বিপরীতে বছরে কী পরিমাণ কিস্তি পরিশোধ করতে হয় তার হিসাবেও দেখা দিয়েছে গরমিল।
সম্প্রতি ইআরডি প্রকাশিত ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্সেস ইনটু বাংলাদেশ ২০২১-২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি, কিস্তি পরিশোধসহ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৬৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৫৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। এ ঋণের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে গৃহীত বিদেশি ঋণের স্থিতি ২১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ও বহুপাক্ষিক উৎস থেকে গৃহীত ঋণের স্থিতি ৩৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। এ ঋণকেই ইআরডি সরকারের নিজস্ব ঋণ হিসেবে দেখায়।
এর বাইরে সরকারের সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ সাত দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের ঋণ রয়েছে পাঁচ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের ঋণ রয়েছে এক দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত এসব ঋণকে যদিও সরকারের নিজস্ব ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করেনি ইআরডি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জুনশেষে সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৬৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ‘ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড এক্সটার্নাল ডেট জানুয়ারি-জুন ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, গত জুনশেষে সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৫৭ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। এ ঋণের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে গৃহীত বিদেশি ঋণের স্থিতি ২৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ও বহুপাক্ষিক উৎস থেকে গৃহীত ঋণের স্থিতি ৩৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
এর বাইরে সরকারের সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১২ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে আইএমএফের ঋণ তিন দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে আইএমএফ বলছে, গত জুনশেষে সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৭২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। গত মাসে বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদনের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছর শেষে সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৬৫ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এ ঋণের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে গৃহীত বিদেশি ঋণের স্থিতি ২১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ও বহুপাক্ষিক উৎস থেকে গৃহীত ঋণের স্থিতি ৩৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।
এর বাইরে সরকারের স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে দুই দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেও দেখানো হয়েছে। তবে ইআরডির হিসাবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেখানো হয় না। এছাড়া সরকারের সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছয় দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। তবে সংস্থাটির নিজস্ব প্রদত্ত ঋণকে সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ না দেখিয়ে বহুপাক্ষিক উৎস থেকে গৃহীত ঋণ হিসেবে দেখিয়েছে আইএমএফ। এর পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৯৮৪ মিলিয়ন ডলার।
এক বছরে বন্ধ হয়েছে ৫১০ শিল্প-কারখানা
মার্চ ১৩, ২০২৩, বণিক বার্তা
কাজ না থাকায় ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানা বন্ধ রেখেছে দক্ষিণখানের অ্যাচিভ ফ্যাশন লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ছবি: সালাহউদ্দিন পলাশ
ঢাকার দক্ষিণখানের নয়াপাড়ায় স্থাপিত পোশাক কারখানা অ্যাচিভ ফ্যাশন লিমিটেড। কভিড অভিঘাতে ২০২১ সালে কাজ কমে যাওয়ায় সংকটে পড়ে কারখানাটি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সংকট আরো তীব্র হয়। আশপাশের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিস্থিতিও খারাপ থাকায় সাব-কন্ট্রাক্ট বা ঠিকাপদ্ধতিতেও কাজ জোগাতে ব্যর্থ হয় অ্যাচিভ ফ্যাশন। এ অবস্থায় টিকতে না পেরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি কারখানা বন্ধের নোটিস ঝুলিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শুধু পোশাক খাতের অ্যাচিভ ফ্যাশনই নয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, শিল্প অধ্যুষিত ছয় এলাকা আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ২০২২ সালে বন্ধ হয়ে গেছে ৫১০টি শিল্প-কারখানা। এর মধ্যে আশুলিয়া এলাকায় বন্ধ হয়েছে ৯৬টি, গাজীপুরে ১৫৭টি, চট্টগ্রামে ৮০টি, নারায়ণগঞ্জে ২০টি, ময়মনসিংহে ছয়টি ও খুলনায় ১৫১টি কারখানা।
কঠিন হচ্ছে বিদেশি ঋণ শোধ চোখ রাঙাচ্ছে ৩ মেগা প্রকল্প
১৪ মার্চ ২০২৩, শেয়ারবিজ
সরকারের বিদেশি ঋণ গত কয়েক বছর ধরে দ্রুত বাড়ছে। এর মধ্যে বেশকিছু কঠিন শর্তের ঋণ রয়েছে। এতে বৈদেশিক ঋণের স্বস্তিদায়ক অবস্থা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে। কঠিন হয়ে যাচ্ছে বিদেশি ঋণের কিস্তি ও শর্ত। এছাড়া আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকটি মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে। এতে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ আরও কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্সেস ইনটু বাংলাদেশ ২০২১-২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি, কিস্তি পরিশোধসহ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিদেশি ঋণের ভারিত গড় সুদহার ছিল এক দশমিক ৩০ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় এক দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় দুই দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ দুই বছরে ভারিত গড় সুদের হার ৬২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে গেছে।
বিদেশি ঋণের গড় সুদের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের গড় সময়সীমাও কমে আসছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর সরকারের বিদেশি ঋণ শোধের গড় সময় ছিল ১১ দশমিক ৩ বছর। ২০২০-২১ অর্থবছর তা কমে দাঁড়ায় ১১ বছর। আর ২০২১-২২ অর্থবছর তা আরও কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৪ বছর। একইভাবে সরকারের বিদেশি ঋণের গড় ম্যাচুরিটির মেয়াদকালও কমে আসছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর সরকারের বিদেশি ঋণের গড় ম্যাচুরিটির মেয়াদ ছিল ১৩ দশমিক ১ বছর। ২০২০-২১ অর্থবছর তা কমে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৮ বছর। আর ২০২১-২২ অর্থবছর তা আরও কমে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৭ বছর।
ইআরডি বলছে, সরকারের বিদেশি ঋণ পরিশোধের শর্ত কঠিন হওয়ার পাশাপাশি চাপ বাড়াচ্ছে ডলারের বিনিময় হার ও লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট (লাইবর) বৃদ্ধি পাওয়া। ২০২০-২১ অর্থবছর বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছিল যথাক্রমে চার হাজার ২০৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা ও ১২ হাজার ৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছর এ দুই খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে চার হাজার ২২৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছে ১৩ হাজার ১১৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
ইআরডির তথ্যমতে, আগামী কয়েক বছর সরকারের ঋণ পরিশোধে ব্যয় ক্রমেই বাড়বে। ২০২৭ সালে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। তবে নতুন করে ঋণের পরিমাণ না বাড়লে ২০৩০ সালের পর থেকে সরকারের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ কমতে শুরু করবে। এজন্য আগামী তিন-চার বছরকে বিদেশি ঋণ পরিশোধে সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং সময় বলে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর শেয়ার বিজকে বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে সেটি স্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে সরকারি এমন কিছু প্রকল্পে বিদেশি ঋণ নেয়া হয়েছে, যেগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। এতে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে সরকারের বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে, যা অর্থনীতিকে চাপে ফেলতে পারে। আর সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে, রিজার্ভও কমছে। তাই বিদেশি ঋণ পরিশোধ আগামীতে ডলার ও রিজার্ভের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তখন বিনিময় হারও দ্রুত পরিবর্তন হবে।
সূত্রমতে, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে তিনটি মেগা প্রকল্প বিদেশি ঋণ পরিশোধে সরকারকে বেশি চাপে ফেলবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এগুলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ও কর্ণফুলী টানেল। এ তিন প্রকল্পের জন্য বছরে কিস্তি দিতে হবে (সুদ ছাড়া) প্রায় ৮০ কোটি ডলার।
বেসরকারি এক গবেষণা সংস্থা প্রকাশিত ‘ইজ বাংলাদেশ মিররিং শ্রীলঙ্কা অ্যান্ড পাকিস্তান?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সরকারের বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পে গৃহীত বিদেশি ঋণ ম্যাচিয়র হয়ে যাবে। এতে ২০২৯-৩০ অর্থবছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনটিতে তিনটি মেগা প্রকল্পের ঋণ ও বার্ষিক কিস্তির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো বাংলাদেশ সরকারের বোঝা বাড়াবে। এতে দেখা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়া থেকে গৃহীত ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হবে ২০২৬ সালে। এর পর থেকে ২০ বছরে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করতে হবে। এতে বার্ষিক কিস্তির পরিমাণ দাঁড়াবে (সুদ ছাড়া) ৫৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
একইভাবে চলতি বছর ম্যাচিয়র হবে চীন থেকে নেয়া পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ও কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের ঋণ। এতে আগামী বছর থেকে দুই প্রকল্পের জন্য কিস্তি দিতে হবে যথাক্রমে ১৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ও পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এ দুই প্রকল্পের ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ২ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার ও ৮০ কোটি ডলার। উভয় ঋণের মেয়াদকাল ১৫ বছর।
‘রুটি-কলা খাইয়াই ৫০ ট্যাকা শ্যাষ, ঘরে কী নিমু’
১৪ মার্চ ১৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
‘মুরব্বিরা কইতো “নুন আনতে পান্তা ফুরায়” বর্তমানে হইলো সেই অবস্থা। বাজারে ৫০০ ট্যাকা নিয়া গেলে তরকারি কিনি এরপরে আর তেল-মরিচ কিনার ট্যাকা নাই। তেল আধা লিটার কিনলেই ১০০ ট্যাকা যায় গা। গরিব মানুষ খাইবো কী?’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছে রিকশায় বসে ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক মো. খায়রুল ইসলাম পাউরুটি খাচ্ছিলেন আর এই কথাগুলো বলছিলেন। ঢাকা শহরে এক বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন তিনি। আগে কৃষিকাজ করতেন। স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে তার ৪ সদস্যের পরিবার। এখন মোহাম্মদপুরে এক কক্ষের ভাড়াবাসায় থাকেন তিনি।
জানতে চাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘দৈনিক আয় হয় ৪০০-৬০০ ট্যাকা। রিকশায় জমা দিতে হয় দেড়শ ট্যাকা। খাওয়ায় লাগে দেড়শ ট্যাকা। এই ৩০০ ট্যাকা বাদ দিয়া কামাই করতে হইবো। রুটি-কলা খাইয়াই ৫০ ট্যাকা শ্যাষ। ঘরে কী নিমু! ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করতেছে, অগোরে খাওয়ন লাগতো না? কী খাওয়ামু, কেমনে খাওয়ামু?’
পাশেই রিকশায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আরেক রিকশাচালক মো. মুকতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগে পুঁই শাকের আঁটি ছিল ১০-১৫ টাকা এখন ৪০-৫০ টাকা। কী খাবেন? আমাদের মতো মানুষের খাওয়ার কী আছে? ওই ডাল-আলু ভর্তা। এই আরকি!’
মুকতার হোসেনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ৬০০ টাকার মতো আয় করেন তিনি। খাবার খরচ ও মালিকের কাছে রিকশার জমার টাকা দিয়ে বাসায় নিয়ে ফিরতে পারেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসারের টানাপোড়েন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে ১০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে মোটামুটি একটা বাজার করে আনা গেছে। এখন ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে আপনি কী আনতে পারবেন? কিছুই তো আসে না।’
‘আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নাই বাবা। সরকারে আমাদেরকে দিবে না। এখন রেশন কার্ড নিতে গেলে আগে যাচাই করে বিএনপি করে না আওয়ামী লীগ করে। যদি আওয়ামী লীগ করে তো কার্ড দেয়। আমাদের মতো নীরিহ মানুষের জন্য আর কী আছে! বুড়া মানুষ দেখে অনেকে রিকশায়ও উঠে না। বলে—না চাচা আপনার গাড়িতে যাবো না। এই হইলো অবস্থা,’ বলেন তিনি।
‘দেশের পরিস্থিতি খারাপ। এখন উচিত কথা বলতে গেলে মানুষের গায়ে লাগে। রিকশা চালাই, অতটুক ভাত খাই। এই গরিব মানুষের দুঃখ কষ্ট নিয়ে চলতে হয় আরকি বাবা!’
হঠাৎ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার শীর্ষ গন্তব্য আবুধাবি-দুবাই
মার্চ ১৬, ২০২৩, বণিক বার্তা
গোটা বিশ্বেই উচ্চশিক্ষায় বিদেশযাত্রার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি বাংলাদেশেও। যদিও হঠাৎ করেই বাংলাদেশীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার শীর্ষ গন্তব্য হয়ে উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত কিউএস র্যাংকিংয়ে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান ১৫০-এরও পরে। তার পরও গত বছর বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে বিদেশে পাড়ি জমানো শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশিসংখ্যকই গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবি ও দুবাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য নিয়ে প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো)। সংস্থাটির সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এখন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ইউএই। ২০২২ সালে ১১ হাজার ১৫৭ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন আবুধাবি ও দুবাইসহ ইউএইর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। সে হিসেবে গত বছর বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়া মোট শিক্ষার্থীর ২২ শতাংশই গেছেন ইউএইতে। যদিও এর আগে কখনই বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশীদের গন্তব্য হিসেবে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায়ও ছিল না দেশটি।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা
১৬ মার্চ ২৩, সমকাল
কথা ছিল, ২০১৪ সাল থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক) দিয়ে চলবে গাড়ি। নানা বিপত্তিতে ৯ বছর পরও সেই উড়াল সড়কের কাজ শেষ হয়নি। কাজ করতে গিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে অন্য উন্নয়ন প্রকল্পের ঝঞ্ঝাট লেগেই আছে।
২০২৩ সালের মার্চে এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর-বনানী অংশ চালু হবে; সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার এ ঘোষণা দিলেও কাটছে না প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা। ফলে ধীরগতিতে চলা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগতে পারে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর যতটুকু জমি দিয়েছে, তাতে মহাখালীর র্যাম্পে ওজন ব্রিজ নির্মাণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ের বিনিয়োগকারী। মেট্রোরেলের এমআরটি-৫ (দক্ষিণ) লাইনের সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের অ্যালাইনমেন্ট সাংঘর্ষিক। কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রয়োজন হবে গভীর খননে। এ জন্য রাস্তা বন্ধ রাখতে হবে তিন মাস। এ কাজে ৬ মিলিয়ন ডলার এবং ২৩৮ দিন বাড়তি সময় চায় এক্সপ্রেসওয়ের বিনিয়োগকারী।
হাতিরঝিলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণে রয়েছে রাজউকের আপত্তি। পান্থকুঞ্জের জমি দিতে চায় না পার্কটির মালিক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পরিষেবা লাইন স্থানান্তরের টাকা নিয়েও ফেরত দিয়েছে সংস্থাটি। রেলওয়ের পরিকল্পনা রয়েছে কমলাপুরে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণের। তাই এক্সপ্রেসওয়ের নকশা বদল করে টোল প্লাজা দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে এখনও সম্মতি দেয়নি রেল। আবার রেলের প্রকল্প, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণে বাধা হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে।
সরকার ভর্তুকি কমায়, সংস্কার করে না
১৯ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
ঋণের শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যেসব কথা বলে, তার বেশির ভাগই সরকার মানতে পারে না। সরকার যেটা করে, সেটা হলো ভর্তুকি তুলে নেওয়া বা পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধি করা। এতে সাধারণ মানুষের জীবন আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে।
ব্যাংক খাতের সংস্কার, খেলাপি ঋণ কমানো বা কর–জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করা—এসব সংস্কার হয় না। কারণ, এসব করতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সাহস প্রয়োজন। ফলে আইএমএফের শর্তে ধনীদের সমস্যা হয় না।
ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার আয়োজিত ‘আইএমএফ-এর ঋণ: ভোগ করবে কে, পরিশোধ করবে কে?’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণ হলে দেশের অর্থনীতির ভালো হবে, এটা একধরনের উইশফুল থিঙ্কিং বা মন বলে সত্য। বাংলাদেশ এর আগে ১২ বার আইএমএফের ঋণ নিয়েছে, কিন্তু তারপরও দেশে খেলাপি ঋণ বা কর-জিডিপির অনুপাত বাড়েনি; বরং কমেছে। আইএমএফ তাদের দেওয়া শর্তের বিষয়ে খুব বেশি আন্তরিক নয়। সরকার তাদের অনেক শর্ত পূরণ করতে পারে না। কিন্তু যেটা পারে, সেটা হচ্ছে দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়াতে। এতে জনগণের খরচের বোঝা বাড়ে।
দেশের জ্বালানি খাত পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন আনু মুহাম্মদ। সরকারের ভুল নীতির কারণে তা হচ্ছে, কিন্তু আইএমএফ এ বিষয়ে একটি কথাও বলে না। সে জন্য তাঁর অভিযোগ, আইএমএফ আন্তর্জাতিক পরিসরে বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে।
সরকারের নীতিগত অবস্থান প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আইএমএফ বা বাইরে থেকে এসে কেউ সংস্কার করতে পারবে না। সংস্কার করতে হবে নিজেদের তাগিদে। দেশে মৌলিক নীতিগত সংস্কার হচ্ছে না, নীতিগত সমন্বয়ও নেই।
এদিকে দীর্ঘদিন ডলারের বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার কারণে এখন তার খেসারত দিতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এত দিন টাকার মান ৪০ শতাংশ অতিমূল্যায়িত ছিল। ডলার-সংকট শুরু হওয়ার পর ২৫ শতাংশের মতো টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আরও ১৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন করতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর অভিযোগ করেন, ব্যাংকঋণের সুদহার বেঁধে রাখার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কাঙ্ক্ষিত হারে ঋণ পাচ্ছে না। বড়রা সব পেয়ে যাচ্ছে, তা–ও আবার কম সুদে। সবদিক থেকেই বড় ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। এভাবে বড়রা লাভবান হওয়ার কারণে সমাজে যেমন বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
আইএমএফের শর্তের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে—এ বিষয়ে আনু মুহাম্মদের সঙ্গে একই সুরে কথা বলেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন। তাঁর অভিযোগ, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আইএমএফ সবার ওপর একই ধরনের শর্তারোপ করে। সে জন্য তারা বিশ্বের সবচেয়ে অজনপ্রিয় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান।
শওকত হোসেন আরও বলেন, এবার বাংলাদেশ বেশ আগেভাগে আইএমএফের ঋণ চেয়েছে, শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশের হয়নি। বাংলাদেশ ঋণ চেয়েছে, বেলআউট নয়।
আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করার কারণ অর্থনৈতিক। এটা রোগের লক্ষণ বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তাঁর মতে, রোগটা হলো গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার অভাব, জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার অভাব। বর্তমান সংসদকে ‘তথাকথিত নির্বাচিত সংসদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রকৃত নির্বাচন করতে হলে পাঁচ বছর পরপর হলেও জনগণের কাছে যেতে হয়। কিন্তু তা হচ্ছে না বলে যারা সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করছে, সরকার তাদেরই তুষ্ট করছে।
ব্রয়লার কেজি প্রায় ৩০০, সোনালি মুরগি ৪০০ টাকা ছুঁই ছুঁই
২০ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আরেক দফা বেড়েছে। তাতে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি প্রায় ৩০০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ৪০০ টাকার কাছাকাছি চলে গেছে। এই দুই ধরনের মুরগির জন্য এই দাম এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। রমজানে আর পণ্যের দাম বাড়বে না, এক সপ্তাহে ধরে সরকারের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও রোজার আগেই বাড়তে শুরু করল মুরগির দাম।
আজ সোমবার রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা মুরগি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে খুচরা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। আর সোনালি মুরগির খুচরা দাম পড়ছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা। গতকাল এক দিনের ব্যবধানেই খুচরা বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। গত দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ১০০ টাকার ওপরে বেড়েছে।
ঈদের পর আর গরুর মাংস খাওয়া হয়নি শাড়ি বিক্রেতা রাবেয়ার
২১ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধার কাঁধে কাপড়বোঝাই একটি গাট্টি, হাতে ব্যাগ। কাপড়ের ভারে একদিকে হেলে পড়েছেন ওই বৃদ্ধা। সূর্য তখন মাথার ওপরে। তেজি রোদে পাড়া-মহল্লার সড়কে হেঁটে হেঁটে ওই বৃদ্ধা শাড়ি ও থ্রি-পিস বিক্রি করছেন। আলাপে জানা গেল, তাঁর নাম রাবেয়া বেগম। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তাই প্রায় দেড় যুগ ধরে সংসারের দায়িত্ব রাবেয়া বেগমের কাঁধে।
রাবেয়া বেগমের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকায়। তবে তিনি পরিবার নিয়ে পিরোজপুর পৌরসভার রাজারহাট মহল্লায় ভাড়া থাকেন। বাড়িতে আছেন স্বামী আমির আলী শেখ (৬৮), মেয়ে রোকসানা বেগম, (৩৮) আর নাতনি সানজিদা আক্তার (১৮)। তবে তাঁদের মধ্যে আমীর আলী অসুস্থ। আর মেয়ে রোকসানা সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে গেছেন।
পরিবারের এমন অবস্থায় রাবেয়া একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। মূলত নিম্ন আয়ের মানুষই রাবেয়ার ক্রেতা। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফেরি করে শাড়ি ও থ্রি-পিস বিক্রি করে তাঁর আয় হয় মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে চারজনের খাওয়া, ঘরভাড়া ও ওষুধের খরচ জোগাড় করতে হয়। এর মধ্যে গত কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে রাবেয়ার নাভিশ্বাস উঠে গেছে। আবার কিছুদিন পরই রমজান মাস শুরু। সব মিলিয়ে রাবেয়া যেন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
রাবেয়া বলেন, তাঁর স্বামী আমির আলী একসময় রিকশা চালাতেন। দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল। তবে প্রায় ১৮ বছর আগে আমির আলী শেখ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন অনেক বছর ধরে। এ জন্য তিনি রিকশা চালানো ছেড়ে দেন। বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরেন রাবেয়া বেগম। শুরু করেন শাড়ি-কাপড়ের ব্যবসা। এভাবে দেড় যুগ পার করে দিয়েছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। তবে এক মেয়ে রোকসানার স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। পরে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে রোকসানা চলে আসেন মা-বাবার কাছে। রোকসানাও কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে গেছেন। তিনিও কোনো কাজ করতে পারেন না। টাকাপয়সার অভাবে রোকসানার মেয়ে সানজিদার পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল সোমবার বেলা দুইটার দিকে পিরোজপুর পৌরসভার রাজারহাট মহল্লার সড়কে কথা হয় রাবেয়া বেগমের সঙ্গে। সকাল থেকে কাপড় নিয়ে ঘুরেছেন। তখন দুপুরের খাবার খেতে ঘরে ফিরছিলেন।
রাবেয়া বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে বের হই। বাতের ব্যথা। কাঁধে ভারী জিনিস নিয়ে চলতেও কষ্ট হয়। এভাবে সারা দিন খেটে ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়। আবার কখনো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকাও আয় হয়। সব মিলায় মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা থাকে। এই টাকা থেকেই দেড় হাজার টাকা ঘরভাড়া দিতে হয়। স্বামীর ওষুধ কেনা লাগে। চারজনের সংসারের খরচ আছে।’
সংসার খরচের কথা বলতেই রাবেয়া হতাশ হয়ে পড়েন। রাবেয়া বলেন, ‘আগে জিনিসপত্রের দাম কম ছিল। তখন ভালোমন্দ খেতে পারতাম। কিন্তু এখন ডিম, আলু, শাকসবজি কিনি। মাঝেমধ্যে সস্তায় পাওয়া মাছ কিনে খাওয়া হয়। গত বছর কোরবানিতে প্রতিবেশীদের দেওয়া গরুর মাংস খেয়েছি। এরপর আর গরুর মাংস খাওয়া হয়নি। আগে মুরগি কিনতাম মাঝেমধ্যে। গত দুই মাসে মুরগিও কেনা হয়নি। কদিন পরপর সবকিছুর দাম বাড়ছে। আমার আয় বাড়ছে না। সামনে রোজা আসছে। রোজায় একটু ভালো খেতে হলে তো খরচ আরও বেড়ে যাবে। ঈদে নাতিদের নতুন জামাকাপড় দিতে হবে। এসব ভাবতে গেলে প্রেশার বেড়ে যায়।’
এবার রোজায় দাম বেশি
২৩ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
দেশে গত বছর পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এবারের রোজার ঠিক আগে সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে। মানে হলো, চিনির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৩৭ থেকে ৪০ টাকা।
২০২২ সালে রোজা শুরু হয় ৩ এপ্রিল। ওই দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা ও গতকাল বুধবারের তালিকা ধরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চাল, মসুর ডাল, আলু ও পেঁয়াজের দামে তেমন কোনো হেরফের নেই। বাকি বেশির ভাগ পণ্যের দাম চড়া। বৃদ্ধির হারটিও অনেক বেশি।
উদাহরণ ব্রয়লার মুরগি। নিম্নবিত্তের প্রাণিজ আমিষের এই বড় উৎসটি এখন তাঁদের নাগালছাড়া। টিসিবির হিসাবে ব্রয়লার মুরগির কেজিপ্রতি দর উঠেছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়, যা গত বছরের রমজানের চেয়ে ৫১ শতাংশ বেশি। ঢাকার কারওয়ান বাজার, মালিবাগ বাজার ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে গতকাল দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের দামেও স্বস্তির কোনো খবর নেই। ফার্মের মুরগির এক হালি ডিম কিনতে ব্যয় হবে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা, যা গত বছরের রমজান মাসের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি।
বাজারে মাছের দাম অনেকটাই বেড়েছে। চাষের কই, পাঙাশ, তেলাপিয়া—এই তিন মাছের দর সাধারণত স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু গত এক বছরে দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ছোট পাঙাশ মাছ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় ১ কেজি পাওয়া যেত। সেটা এখন কিনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। গতকাল বুধবার রাজধানীর মালিবাগ ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি ওজনের পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। মাঝারি আকারের তেলাপিয়া কেনা যাচ্ছে কেজি ২০০ টাকায়।
এবার প্রতি কেজি আটা কিনতে হবে সর্বনিম্ন ৫৫ টাকায়। গত বছর রোজায় আটার কেজি ছিল সর্বনিম্ন ৩৪ টাকা। এটা খোলা আটার দাম। বাজারে প্যাকেটজাত আটা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর রোজায় ৪০-৪৫ টাকা ছিল।
সাত জেলা, ১৫৯ উপজেলাকে গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী
২২ মার্চ ২৩, সমকাল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আরও সাতটি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেছেন। বুধবার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় গৃহহীনদের হাতে বিনামূল্যে আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি আধাপাকা বাড়ি হস্তান্তর করেন তিনি।
বিশ্ববাজারে দাম কমার সুফল নেই দেশে
২৪ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে প্রায় ১০ মাস আগে বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে রেকর্ড হয়েছিল। সে তুলনায় এখন বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বেশির ভাগের দাম তুলনামূলক কম। দু–একটি বাড়লেও খুব বেশি অস্থিতিশীল হয়নি বৈশ্বিক বাজার। তবে বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে সেই হারে দাম কমেনি। আবার বিশ্ববাজারে যেগুলোর দাম বেড়েছে, দেশে বেড়েছে তার দ্বিগুণ হারে।
বিশ্ববাজারে মতো দাম না কমার কারণ হিসেবে ডলার, গ্যাস–বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। আবার বাজারে প্রতিযোগিতা কমে সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় পণ্যের দামও বেড়েছে। অর্থাৎ এত দিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বা বিশ্ববাজারের মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দেওয়া হলেও বাস্তবে অভ্যন্তরীণ কারণেই এই সুফল মিলছে না।
প্রধান আটটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিমূল্য ও খুচরা বাজার তুলনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এই আট পণ্য হলো সয়াবিন তেল, পামতেল, চিনি, আটা তৈরির গম, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ছোলা ও মটর ডাল।
সয়াবিন তেলের উদাহরণ দেওয়া যাক। গত বছর মে মাসে বন্দর দিয়ে অপরিশোধিত সয়াবিনের গড় আমদানিমূল্য ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৮৮৩ ডলার। এই মাসে খালাস হওয়া সয়াবিনের আমদানিমূল্য কমে হয়েছে ১ হাজার ৩৩১ ডলার। প্রতি টনে কমেছে ৫৫২ ডলার বা প্রায় ২৯ শতাংশ। এ হিসাবে দেশেও একই হারে কমার কথা। অথচ দেশে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৮ শতাংশ।
বাকি ২১ শতাংশ কেন কমেনি—জানতে চাইলে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, মে মাসের সঙ্গে এখনকার ডলারের দাম তুলনা করলে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। গ্যাস–বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সয়াবিন পরিশোধনের খরচও বেড়েছে। ডলার ও প্রক্রিয়াজাত খরচ আমলে নেওয়া হলে বাস্তবে বাজারে সয়াবিনের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক কম।
সয়াবিনের মতো পাম তেলের দামও কমেছে বিশ্ববাজারে। ১০ মাস আগে যে পাম তেলের আমদানিমূল্য ছিল প্রতি টন ১ হাজার ৫৩৩ ডলার, এখন তা নেমে এসেছে ৯৭৫ ডলারে। এ হিসেবে বিশ্ববাজারে কমেছে ৩৬ শতাংশ। তবে একই সময়ে দেশে দাম কমেছে ২৬ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে দাম কমার তালিকায় আরেকটি পণ্য মসুর ডাল। এই পণ্যটি প্রতি টনে কমেছে ১৮০ ডলার বা ২০ শতাংশ। তবে দেশের বাজারে কমেছে ১০ শতাংশ। এখন মোটা মসুর ডাল কেজি ১০০ টাকা।
গত বছর মে মাসে আটা তৈরির গমের টনপ্রতি আমদানিমূল্য ছিল গড়ে ৩৬০ ডলার। মাঝে দাম বাড়লেও রাশিয়া–ইউক্রেন শস্য চুক্তির পর ইউক্রেন গম রপ্তানি শুরু করে। তাতে বিশ্ববাজারে গমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এ মাসে আমদানি হওয়া আটা তৈরির গমের টনপ্রতি মূল্য পড়েছে ৩৬০ ডলার। বিশ্ববাজারে একই থাকলেও দেশে একই সময়ের ব্যবধানে খুচরা বাজারে আটার দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
যেমন গত বছর মে মাসে প্যাকেটজাত এক কেজি আটার দাম ছিল ৪৮ টাকা, এখন তা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আমদানি তথ্য ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আটার দাম বাড়ার জন্য দুটি কারণ দায়ী। যেমন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও দেশে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। নভেম্বরের মাঝামাঝি ভারত থেকে গম আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ইউক্রেন বা অন্য বিকল্প বাজার থেকে গম আমদানি করতে পারছেন শুধু গুটিকয় বড় ব্যবসায়ী।
বিশ্ববাজারে কমেছে, দেশে বেড়েছে
বাজারে একটি পণ্য পাওয়া গেছে, যেটির দাম বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে বেড়েছে। এই পণ্যটি হলো পেঁয়াজ। ভারত থেকে এখন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে প্রতি টন ১৩৯ ডলারে। গত বছর মে মাসে আমদানি মূল্য ছিল ১৮৬ ডলার। অর্থাৎ আমদানি মূল্য ২৫ শতাংশ কমেছে। তবে দেশে খুচরা বাজারে এখন আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে। গত বছর মে মাসে দাম ছিল কেজি ৩০ টাকা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের একজন আমদানিকারক প্রথম আলোকে বলেন, এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে কেজিপ্রতি সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ১৩ থেকে ১৪ টাকা। তবে কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র দেওয়া হবে না, এমন গুজবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
বিশ্ববাজারের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে
১০ মাসের তুলনায় বিশ্ববাজারে এখন চিনি, ছোলা ও মটর ডালের আমদানি মূল্য কিছুটা বেশি। তবে বিশ্ববাজারে যা বেড়েছে, তার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে দেশের বাজারে।
যেমন চিনির কথা ধরা যাক। গত বছর মে মাসে বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া অপরিশোধিত চিনির গড় আমদানি মূল্য ছিল টনপ্রতি ৪৫৭ ডলার। এই মাসে খালাস হওয়া চিনির টনপ্রতি গড় আমদানি মূল্য ৪৯১ ডলার। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ। একই সময়ে খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে চিনির দাম বাড়ছে। তবে বাড়তি দামে কেনা চিনি দেশে পৌঁছায়নি। আবার চিনিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কাস্টমস শুল্ক টনপ্রতি তিন হাজার টাকা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে ৫ শতাংশ। এতে আগে যেখানে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা শুল্ক দিতে হতো, এখন দিতে হচ্ছে ২৫ টাকা। নতুন শুল্কহারে বেশ কিছু চিনিও খালাস হয়েছে।
চিনির মতো মটর ডালের দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে ১৪ শতাংশ। দেশে খুচরা বাজারে প্রক্রিয়াজাত মটর ডালের দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
আবার ছোলার দামও বিশ্ববাজারে ৭ শতাংশ বাড়লেও দেশে ১৪ শতাংশ বেড়েছে। অবশ্য ছোলার দাম পাইকারি বাজারে এখন কমতির দিকে। খুচরায় এখনো পুরোপুরি প্রভাব পড়েনি। ছোলার দামে মোটামুটি সুফল পাওয়ার কারণ হলো বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ভারত থেকে বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী ছোলা আমদানি করতে পেরেছেন।
বড় ভূমিকা ডলারের মূল্যবৃদ্ধির
বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে কমবে কি না, তা নির্ভর করছে মূলত দেশে ডলারের দাম কত, তার হিসাবে। যেমন ১০ মাস আগেও এক ডলারের আমদানি পণ্যের দাম দেশে পড়ত ৮৬ টাকা। এখন বিশ্ববাজারে একই দাম থাকলেও কদিন আগেও পরিশোধ করতে হয়েছে ১০৬ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত। এখন ১১৪ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ শুধু ডলারের কারণেই ১০ মাসের হিসাবে ৩২ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে।
ভারত থেকে ‘বাংলাদেশি পণ্য’ আমদানি করল এলিট পেইন্ট
মার্চ ২৪, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ভারত থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও ‘বাংলাদেশি পণ্য’ (প্রোডাক্ট অব বাংলাদেশ) লিখা প্রায় সাড়ে ৩ টন সাইনবোর্ড প্রিন্টার্স আমদানি করেছে এলিট প্রিন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। আইন লঙ্ঘন করে আমদানি করায় তাদের এই চালানটি আটকে দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা।
কাস্টমস আইন-১৯৬৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্য বা বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির সুযোগ নেই। এই আইনের ধারা ১৫ অনুযায়ী তা আমদানি নিষিদ্ধ এবং ধারা ১৫৬ এর (১)(৯) অনুযায়ী এসব পণ্য বাজেয়াপ্ত হওয়ার পাশাপাশি আমদানিকারক বা জড়িত ব্যক্তিকে পণ্যের দ্বিগুণ জরিমানার বিধান আছে।
কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, ভোক্তা অধিকার বিবেচনায় প্রস্তুতপণ্যের গায়ে অবশ্যই প্রস্তুতকৃত দেশের নাম থাকতে হয়। ঘোষণাপত্রেও ‘কান্ট্রি অব অরিজিন’ হিসেবে সে দেশের নাম উল্লেখ করতে হয়।
কিন্তু এলিট প্রিন্ট এ চালানের সব দলিলপত্রে ‘কান্ট্রি অব অরিজিন’ ভারত উল্লেখ করলেও পণ্যের গায়ে ‘প্রোডাক্ট অব বাংলাদেশ’ লেখা আছে। তারা নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম, লোগো ও মোড়ক ব্যবহার করে প্রায় ৩ হাজার প্লাস্টিক কনটেইনার ভর্তি রং এমনভাবে আমদানি করেছে, যা সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করা সম্ভব।
পোলট্রি খাতে কয়েকটি কোম্পানিই সর্বেসর্বা
মার্চ ২৪, ২০২৩, বণিক বার্তা
মুরগির বাচ্চা ও পোলট্রি খাদ্যের (ফিড) সিংহভাগ উৎপাদন করছে কয়েকটি কোম্পানি। পাশাপাশি ডিম ও মাংসের বাজারেও বড় একটি অংশ তাদের দখলে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি চুক্তির ভিত্তিতে কোম্পানির বাইরে অন্য অনেক খামারিকেও কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানিগুলো। বাজারের আকৃতি, মুনাফাসহ ব্যবসায়িক বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের বিষয়ে কোম্পানিগুলো বরাবরই এক ধরনের গোপনীয়তা বজায় রাখে। কোম্পানিগুলোর দাবি, ডিম ও মাংসের বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ১০-১৫ শতাংশের বেশি হবে না। যদিও খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পোলট্রি পণ্যের বাজারের সিংহভাগই কোম্পানিগুলোর দখলে। বলতে গেলে বাজারের গতিপ্রকৃতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।
কয়েক মাস ধরেই অস্থিতিশীল মুরগি ও ডিমের বাজার। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন মহল থেকে চেষ্টা করা হলেও সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। এর মধ্যে আবার প্রান্তিক খামারিরাও মুনাফা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। পোলট্রি বাজারে বর্তমানে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবশালী হিসেবে দেখা হয় সেগুলোর মধ্যে হলো কাজী ফার্মস গ্রুপ, নারিশ, প্যারাগন, আফতাব, কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, ডায়মন্ড এগ, রাশিক/জামান গ্রুপ ইত্যাদি।
পোলট্রি খাতে মাংস ও ডিমের জন্য মুরগির একদিন বয়সী বাচ্চা ক্রয় করে থাকেন খামারিরা। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব বাচ্চা যেসব মোরগ-মুরগির মাধ্যমে উৎপাদন হয়; সেগুলোকে বলা হয় প্যারেন্ট স্টক (পিএস)। আর পিএস উৎপাদন হয় গ্র্যান্ড প্যারেন্ট স্টক (জিপি) থেকে। দেশে জিপি ও পিএসের বাজারের পুরোটাই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে।
ব্রয়লারের জিপি স্টকের বাজারে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ৮৫ শতাংশ। ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাস দেশের পোলট্রি খাতে করপোরেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক গবেষণা চালায়। গবেষণার ভিত্তিতে ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘পোলট্রি সেক্টর স্টাডি বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে আসে, দেশে মাংসের জন্য পালনকৃত ব্রয়লার মুরগির জিপি স্টক সবচেয়ে বেশি রয়েছে কাজী ফার্মস গ্রুপের। দুটি খামারে তাদের ৪৯ হাজার জিপি ব্রয়লার রয়েছে। ব্রয়লারের জিপির বাজারের ৩৪ শতাংশই কাজী ফার্মসের দখলে। প্রতিষ্ঠানটির ব্রয়লার ও লেয়ারের পিএস খামার রয়েছে সাতটি। যেগুলো একদিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদন করছে। কোম্পানিটির জবাইখানায় একদিনে ১০ হাজার মুরগি প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা রয়েছে। তাদের মোট হ্যাচারির সংখ্যা ১৩টি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ফিড কারখানা রয়েছে দুটি।
কাজী ফার্মসের মতোই প্যারাগন, আফতাব, নারিশ ও সিপিও একই সঙ্গে খাদ্য, বাচ্চা, ডিম ও মাংস উৎপাদন করে থাকে। প্যারাগন গ্রুপের দুটি খামারে ব্রয়লারের জিপি রয়েছে ১৪ হাজার। জিপি ও লেয়ার ফার্মের সংখ্যা তিনটি। প্রতিষ্ঠানটির জবাইখানায় সক্ষমতা একদিনে পাঁচ হাজার। হ্যাচারি রয়েছে সাতটি। আর খাদ্য উৎপাদন কারখানা রয়েছে পাঁচটি।
পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ
ডজনখানেক তদারক সংস্থা, সুফল মেলে না
২৫ মার্চ ২৩ , সমকাল
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইন রয়েছে। বাজার তদারকির দায়িত্বেও আছে এক ডজনের বেশি সংস্থা বা অধিদপ্তর। তবে আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই। আবার দুই-তিনটি ছাড়া বাকি সংস্থাগুলোর কোনো তদারকিও চোখে পড়ে না। আর এ সুযোগটি লুফে নিচ্ছে উৎপাদক ও আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা দোকানি পর্যন্ত সর্বস্তরের ব্যবসায়ী। যে যার মতো সুযোগ বুঝে অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। দাম বাড়ানোর জন্য একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। আর দামের ভারে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। এই বিষাক্ত চক্রের কবলে পড়ে অনেক পণ্য এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
অবশ্য পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখার কাজে নিযুক্ত সংস্থাগুলোর দাবি, তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। কারও কারও মন্তব্য– মজুত, কালোবাজারি, অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে তাঁদের হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই।
নিত্যপণ্যের বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি মনিটরিং টিম রয়েছে। এ ছাড়াও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ঢাকা সিটি করপোরেশন, র্যাব এবং জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করে। সরকারের হাতে আছে বিশেষ ক্ষমতা আইন। রমজান উপলক্ষে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে রয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর মনিটরিং টিম। বাজার নিয়ন্ত্রণে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাজের সুবিধার জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আইন। যেমন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯, কৃষি বিপণন আইন-২০১৮। সংস্থাগুলোর নিজ নিজ আইন অনুযায়ী, সারাবছর মাঠে থাকার কথা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাাশি অনিয়ম ও ভেজালের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার নির্দেশনাও আছে। কিন্তু এসব টিমের তদারকি তেমন চোখে পড়ে না।
সংস্থাগুলো হাত গুটিয়ে বসে থাকা, আইনের শিথিল প্রয়োগের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ পর্যন্ত অসাধু কোনো ব্যবসায়ীকে তার অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার নজির নেই। শুধু প্রতি বছর রমজানকে কেন্দ্র করে মাঠে তাদের কিছু হাঁকডাক দেখা যায়, যা শেষ পর্যন্ত কোনো সুফল দেয় না।
পোলট্রি খাতে ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা লুট: পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন
২৪ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
সরকারি তদারকি না থাকায় দেশের পোলট্রি খাতে হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি দাবি করেছে, পোলট্রি খাতের করপোরোট প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৫২ দিনে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করেছে। সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। প্রান্তিক খামারিদের ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ এখন কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব৵য় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত এসব মুরগি বিক্রি হয়েছে। তাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কেজিপ্রতি অন্তত ৬০ টাকা বেশি মুনাফা করেছে।
করপোরেট প্রতিষ্ঠানের (তাদের চুক্তিভিত্তিক ফার্মসহ) মাধ্যমে থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টন মুরগি বাজারে আসে। সেই হিসাবে দিনে তাদের অতিরিক্ত মুনাফা হয় ১২ কোটি টাকা। এভাবে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৫২ দিনে ৬২৪ কোটি টাকা মুরগি বিক্রির মাধ্যমে লাভ করেছে কোম্পানিগুলো। আর এক দিনের মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে তাদের মুনাফা ৩১২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনটির দাবি, দেশে প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। এসব বাচ্চা কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে। একেকটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। খুদে বার্তা দিয়ে সেই বাচ্চা প্রতিটি এখন ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় দেওয়ার কথা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। প্রতিটি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে কোম্পানিগুলো।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ব্রয়লার মুরগির অস্বাভাবিক দামের কারণ প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতি পোষাতে না পেরে খামার বন্ধ করে উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়েছেন। এ সুযোগে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পোলট্রির ফিড বা খাবার ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রান্তিক খামারি উৎপাদনে গেলে তখন বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে ক্ষতিতে ফেলছেন। তারা আরও বলেছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে। চুক্তিভিত্তিক খামারও রয়েছে তাদের। এতে করে বাজার তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা না গেলে এই খাতের অস্থিরতা কমানো সম্ভব নয়।
‘সবই ঠিক আছে, কিন্তু সবকিছুর দাম বেশি, এখন জীবন অনেক কঠিন’
২৭ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নিয়মিত ফুল বিক্রি করে ১২–১৫ জন শিশু। সবার বয়স ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। দিনের পুরোটা সময় স্মৃতিসৌধের ভেতর ও বাইরে দর্শনার্থীদের কাছে ফুল বিক্রির বায়না ধরে কাটে তাদের। কেউ ফুল কেনেন, কেউ কেনেন না। সাধারণ দিনগুলোয় দর্শনার্থী থাকে কম। ফলে আয়ও হয় সামান্যই।
বিশেষ দিবসগুলোর আগে কয়েক দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় স্মৃতিসৌধের বাইরেই ফুল বিক্রি করতে হয় এসব শিশুকে। তবে যেকোনো জাতীয় দিবসে স্মৃতিসৌধে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। এ কারণে ফুল বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফোটে। ফলে এসব শিশুর কাছে যেকোনো দিবস মানেই প্রতিদিনের চেয়ে একটু বেশি আয়। দিনটিতে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারের পূর্ণ নিশ্চয়তা।
এসব শিশুর মতোই স্বাধীনতা দিবস নিয়ে একই ভাবনা দিনমজুর জাকির হোসেনের। গতকাল শনিবার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’
স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন গতকাল দুপুরে স্মৃতিসৌধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সবুজ মিয়া, মো. হাসান, মো. হোসাইন, মো. লাবিবসহ ১০-১৫ জন শিশু স্মৃতিসৌধের সামনে অপেক্ষারত দর্শনার্থীদের কাছে গোলাপ ফুল বিক্রির চেষ্টা করছে। এ সময় দু–তিনজন ফুল কেনেন, বাকিরা ‘না’ বলে দেন।
মো. সবুজের মা মুন্নি আক্তার বাঁশের ঝুড়িতে করে গোলাপ ফুল বিক্রি করেন। সবুজ সেখান থেকে কয়েকটি গোলাপ নিয়ে দর্শনার্থীদের কাছে গিয়ে বিক্রির বায়না ধরেন। স্বাধীনতা দিবসে তার অপেক্ষা প্রতিদিনের চেয়ে একটু বেশি ফুল বিক্রির।
সবুজ বলে, ‘এখন স্মৃতিসৌধের ভেতরে ঢুকতে দেয় না৷ কাল (আজ) ঢুকতে দিব। তখন অনেক ফুল বিক্রি হইব।’
কঠিন শর্তে আরও চীনা ঋণ নিচ্ছে সরকার
৩১ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
আবারও চীনের কাছ থেকে কঠিন শর্তে ৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। রাজশাহী ওয়াসার পানি শোধনাগার এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জাহাজ কেনার প্রকল্পে এ অর্থ আসছে। এর মধ্যে রাজশাহী ওয়াসার পানি শোধনাগার প্রকল্পের ঋণের দর-কষাকষি শেষ। আগামী মাসে ঋণচুক্তি হবে। অন্যটির দর-কষাকষি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ দুটি প্রকল্পে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে।
এসব ঋণের শর্ত হলো চীনের এক্সিম ব্যাংকই প্রকল্পের ঠিকাদার ঠিক করে দেবে। সুদের হার সোয়া ২ শতাংশের মতো হলেও ঋণ পরিশোধের সময় মাত্র ১৫ বছর। এ ছাড়া গ্রেস পিরিয়ড পাঁচ বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালে ঋণচুক্তি হলে ২০২৭ সাল থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বেশ কম বলে ঋণের কিস্তির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হয়। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো সংস্থা থেকে ঋণ নিলে ৩০-৩৫ বছরে পরিশোধ করতে হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী ওয়াসার জন্য ভূ–উপরিস্থ পানি শোধনাগার স্থাপনের জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে সাড়ে ২৭ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে এক্সিম ব্যাংক ও ইআরডির কর্মকর্তারা এ ঋণ নিয়ে দর-কষাকষি চূড়ান্ত হয়েছে। এখন ঋণচুক্তির দলিলপত্র তৈরি করা হচ্ছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যেই উভয় পক্ষের মধ্যে ঋণচুক্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন ইআরডির কর্মকর্তারা। প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে এ দর-কষাকষি হয়েছে।
অন্যদিকে দুই বছর ধরে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জন্য ছয়টি জাহাজ কেনার প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। এ প্রকল্পে ২৫ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হতে পারে। ঋণচুক্তি হলে চার বছরের মধ্যে এসব জাহাজ সরবরাহ করবে চীন। এটা সরবরাহকারী ঋণ। চীন টাকা দেবে, জাহাজও দেবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও ইআরডি থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঠিকাদার নিয়োগ, কাজের মান, সুদের হার, ঋণ পরিশোধের সীমা—এসব বিদেশি সহায়তাপুষ্ট অন্য প্রকল্প থেকে ভিন্ন। তাই সংবেদনশীলতা বিবেচনায় দর-কষাকষিতে সময় লাগে।
এ বিষয়ে বড় অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীনের ঋণ যতটা না আমাদের সহায়তা করার জন্য, এর চেয়ে চীনের ব্যবসা সম্প্রসারণই মূল উদ্দেশ্য। যেমন, রাজশাহীর ওয়াসার ওই প্রকল্পে চীনা ঠিকাদার কাজ করবে, চীনের জিনিসপত্র ব্যবহার করা হবে। প্রকৌশলী, পরামর্শক—সব চীনের। ঋণের সিংহভাগ অর্থ আবার চীনে ফেরত যাবে। যেহেতু কোনো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঠিকাদার ঠিক করা হয় না, তাই প্রকৃত খরচের তুলনায় অনেক বেশি খরচ হয়। কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।’ তিনি জানান, এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এ ধরনের কঠিন শর্তের ঋণের প্রকল্পে ১৫-২৫ শতাংশ বাড়তি খরচ হয়।
ঋণ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই চীনা ঠিকাদার
২০১৮ সালের জুলাই মাসে রাজশাহী ওয়াসার জন্য ভূ–উপরিস্থ পানি শোধনাগার স্থাপনের জন্য ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। গোদাগাড়ীতে এ শোধনাগার হবে। প্রকল্পটি পাসের সময় বলা হয়েছিল, চীনা ঋণ পাওয়া সাপেক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। চীনের ঋণের অর্থ এখনো না পাওয়ায় এত দিন প্রকল্পটির কাজ শুরু করা যায়নি। ইতিমধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে আর ঋণের আলোচনাও শেষ হয়েছে।
চীনের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি এত দিন চূড়ান্ত না হলেও চার বছর আগেই চীনা ঠিকাদার হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ করপোরেশন এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। চীনের এক্সিম ব্যাংক এই ঠিকাদার ঠিক করে দেয়। ঠিকাদারি কোম্পানি সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রকল্প পরিকল্পনা, খরচ—সবকিছুতে পরামর্শ দেয়। পরে ২০২১ সালের মার্চ মাসে রাজশাহী ওয়াসা এবং চীনা ঠিকাদার হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ করপোরেশনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু তখনো চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া নিয়ে দর-কষাকষি শেষ হয়নি, অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়নি।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৮ সালের ইআরডির এক চিঠির ভিত্তিতে আমরা হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ করপোরেশনের সঙ্গে কাজ শুরু করি। আমরাই সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রকল্প নকশাসহ সব করেছি, ওই কোম্পানির কর্মকর্তারা শুধু পরামর্শ দিয়েছেন। চীনের এক্সিম ব্যাংকই এই ঠিকাদার ঠিক করে দিয়েছে। ঋণের অর্থ না পাওয়ায় এখনো মূল কাজ শুরু করতে পারিনি। যেহেতু চীনা ঋণের দর-কষাকষি চূড়ান্ত হয়ে গেছে, তাই অর্থ পেলে আগামী দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।’
সীমিত পরিসরে দরপত্র
গত ডিসেম্বর মাসে সীমিত পরিসরে দরপত্র বা লিমিটেড টেন্ডারিং মেথডের (এলটিএম) মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে চীন রাজি হয়েছে। তবে রাজশাহী ওয়াসার প্রকল্পের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। সাধারণত কোনো প্রকল্পের জন্য ঋণ প্রস্তাব দিলে চীনা কর্তৃপক্ষই ওই নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য চীনা ঠিকাদার চূড়ান্ত করে দেয়। ওই ঠিকাদারই কাজটি সম্পন্ন করে থাকে। দরপত্রের মাধ্যমে একাধিক ঠিকাদার থেকে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাছাই করার সুযোগ থাকে না।
লিমিটেড টেন্ডারিং মেথড (এলটিএম) পদ্ধতিতে কোনো প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করলে শুধু চীনা ঠিকাদারেরা অংশ নেবেন। ওই দরপত্রের অংশ নেওয়া একাধিক ঠিকাদারের মধ্যে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হবে। বর্তমানে ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে নেওয়া প্রকল্পে এলটিএম পদ্ধতিতে ভারতীয় ঠিকাদার ঠিক করা হয়।
বাণিজ্যিক চুক্তি করতেই দুই থেকে আড়াই বছর
চীনা ঋণে যত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সবগুলোর বাণিজ্যিক চুক্তি করতেই দুই থেকে আড়াই বছর সময় চলে গেছে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, একটি প্রকল্পে ঋণের জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংকে প্রস্তাব পাঠানো হলে চীনা কর্তৃপক্ষ প্রথমে প্রকল্পের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সুবিধা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর ঋণ দেওয়ার বিষয়ে একমত হলে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশের ওই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় বা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। উভয় পক্ষ বসে পুরো প্রকল্পের নকশা ও কার্যপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পর বাণিজ্যিক চুক্তি হয়। এভাবে পুরো কাজটি করতে প্রায় দুই থেকে আড়াই বছর সময় চলে যায়।
মোট ১৮৫৪ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি
গত ১০ বছরে চীনের কাছ থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নিয়ে ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। প্রকল্পগুলোর অন্যতম হলো কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মাণ; শাহজালাল সার কারখানা; দাশেরকান্দি পয়োবর্জ্য শোধনাগার; ইনফো সরকার-৩; ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ; মডার্নাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেকশন; বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও বিতরণ; অন্যতম।
এসব প্রকল্পে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮৫৪ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত দেড় হাজার কোটি ডলার ছাড় হয়ে গেছে। চীনের ঋণগুলোর একটি ছাড়া বাকি ১১টির সুদের হার সোয়া ২ শতাংশ এবং গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৫ বছর।
ইতিমধ্যে শাহজালাল সার কারখানা, পদ্মা-যশলদিয়া পানি শোধনাগার ও তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন—এ তিন প্রকল্পে পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধ শুরু হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ১০০ কোটি ডলারের মতো ঋণ পরিশোধ হয়েছে।
দেশে খাদ্য উৎপাদন কমায় বাড়ছে আমদানি ব্যয়
২৭ মার্চ, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও খাদ্যপণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েই চলেছে। দেশে খাদ্য আমদানি ব্যয় এক দশক আগের তুলনায় আড়াই গুণ বেড়ে ৮০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চাল, গম, মসলা, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ, ডাল, চিনি ও দুগ্ধজাত পণ্য কিনতে এই ৮০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে বেসরকারি ও সরকারি সংস্থাগুলো খাদ্য সামগ্রী আমদানিতে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা ১ বছর আগের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি।
সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।
অথচ, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৮১ কোটি টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
এবার টানা চতুর্থ বছরের মতো অপর্যাপ্ত স্থানীয় উৎপাদনের কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানিতে বেশি অর্থ খরচ করছে বাংলাদেশ।
কৃষি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ৮৮ দশমিক ২৯ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমি পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগের অভাব রয়েছে। ফলে, আমদানি নির্ভরতা এত বেশি।
‘রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল পণ্য’ হওয়ায় দেশের প্রতিটি সরকার চাল উৎপাদন বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং এর উন্নত জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণায় আরও বেশি বরাদ্দ দিয়েছে।
কৃষি বিশ্লেষকদের মতে, বৈচিত্র্যময় কৃষি উৎপাদন করা হয়নি বা কম হয়েছে। এর ফলে, তৈলবীজ, ডাল ও দুগ্ধজাত পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে পর্যাপ্ত মনোযোগ পায়নি। এর ফলে এসব পণ্যের জন্য বিশ্ববাজারের ওপর দেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
এসব পণ্য উৎপাদনকারী বেশ কিছু দেশ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ ঘাটতি ও মূল্যের অস্থিরতা রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরের সপ্তাহগুলোতে বেশ কয়েকটি দেশ বিভিন্ন ধরণের খাদ্য পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, বাড়তি কর আরোপ করে।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটের একটি ব্লগ পোস্ট অনুসারে, এ ধরনের উদ্যোগ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের উচ্চমূল্য বৃদ্ধির কারণ হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির নীতি অনুসরণ করলেও অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়া উচিত। তা না করলে করোনা মহামারি ও ডলার সংকটের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করব কীভাবে?’
বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত ১ বছর ধরে ডলার সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ।
সংকটের মধ্যেও পায়রা বন্দরকে রিজার্ভ থেকে অর্থ দিতে হচ্ছে
২৭ মার্চ, ২০২৩, বণিক বার্তা
পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে বাস্তবায়ন হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ প্রকল্প। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। চ্যানেলটির খননকাজ শেষ করে গতকাল তা পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে বেলজিয়ামভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জান ডে নুল’। চুক্তি অনুযায়ী, আরো এক বছর চ্যানেলটির রক্ষণাবেক্ষণকাজ করবে তারা। এসব কাজের বিল বাবদ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ফেব্রুয়ারিতে ১৭০ মিলিয়ন ইউরো বা ১৮৩ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণচুক্তি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে আরো প্রায় ২৭৭ মিলিয়ন ইউরো। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এমনিতেই ধারাবাহিকভাবে কমছে। সেই রিজার্ভ থেকে রাবনাবাদ চ্যানেল খননকাজের মতো ‘অলাভজনক’ প্রকল্পের অর্থ পরিশোধ চলমান সংকটকে আরো প্রকট করে তুলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
ঢাকা শহরে এক পরিবারের খাবার খরচ মাসে ২২,৬৬৪ টাকা
২৭ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
ঢাকা শহরের চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবারের পেছনেই খরচ হয় ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। তবে মাছ-মাংস না খেলে এই খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকায়। এই হিসাব গত ফেব্রুয়ারি মাসের। এক বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি খাবার খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
আজ সোমবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট প্রস্তাববিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেল, মরিচ, হলুদ, আদা, রসুনসহ ১৭টি নিত্যপণ্যের প্রতিদিনের বাজারদর এবং একজন মানুষ গড়ে কী পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে, এর ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করেছে। সিপিডি বলছে, একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খাবারের পেছনে খরচ করতে হয়।
সিপিডি আরও বলেছে, ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা শহরের চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবার কিনতে খরচ হয়েছিল ১৮ হাজার ১১৫ টাকা। মাছ-মাংস না খেলে সেই খরচ ছিল ৫ হাজার ৬৮৮ টাকা।
গুলশানে এত বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন কারা
২৮ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
ঢাকায় অভিজাত এলাকার তালিকা করলে শীর্ষস্থানে থাকবে গুলশান। যেখানে বসবাস করেন সমাজের বিত্তবানদের একাংশ। সেই সংখ্যাটি বছর বছর বাড়ছে। তার কারণ, প্রতিবছরই গুলশানে অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে দামও।
২০১০ সাল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ১৩ বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭ শতাংশ বা ২২ হাজার ৮৭৬টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে গুলশানে।
তারপরের অবস্থানে রয়েছে ধানমন্ডি, সেখানে তৈরি হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৪টি অ্যাপার্টমেন্ট। এরপর যথাক্রমে মোহাম্মদপুরে ১৪ হাজার ৮০২ টি, মিরপুরে ১২ হাজার ১১১টি, বনানীতে ৮ হাজার ৭৪টি এবং উত্তরায় ৬ হাজার ৭২৮টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে।
আগামী বছর পর্যন্ত আরও ১৩ হাজার ৭০০ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণাধীন রয়েছে। তার মধ্যে গুলশানেই নির্মাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৮৯টি অ্যাপার্টমেন্ট। এর বাইরে ধানমন্ডিতে ১ হাজার ৮৮০টি, মিরপুরে ১ হাজার ২০৯টি, রমনায় ১ হাজার ৭৫টি, উত্তর বাড্ডায় ৯৪০টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণাধীন রয়েছে।
বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এমন তথ্যই জানিয়েছে বাংলাদেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০টি ফ্ল্যাট সরবরাহ করে বাংলাদেশের আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। তার মধ্যে উচ্চ ও মাঝারি অভিজাত ফ্ল্যাটের সংখ্যা ছিল ৭৪ হাজার ৪২৯টি। এসব উচ্চ ও মাঝারি অভিজাত ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটি টাকার ওপরে।
গত বছর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গফুটের গড় দাম ছিল ১৪৩ মার্কিন ডলার। তবে গুলশানে এ গড় দাম ১৬৬ ডলার। তার মানে দেশীয় মুদ্রায় প্রতি বর্গফুটের গড় দাম ১৭ হাজার ৪৩০ টাকা। এই দাম অনুযায়ী, গুলশানে ২ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের দাম দাঁড়ায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি।
গুলশানের পর অ্যাপার্টমেন্টের দাম সবচেয়ে বেশি বারিধারায়। এখানে গত বছর প্রতি বর্গফুটের গড় দাম ছিল ১৬০ ডলার ৭৪ সেন্ট। দেশীয় মুদ্রায় এ দাম দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৮৭৮ টাকায়। ২০১০ থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বারিধারায় ৫ হাজার ৫৬৫টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে। আর ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ গড় দাম ধানমন্ডিতে, বর্গফুটপ্রতি ১৫৩ ডলার। তাতে দেশীয় মুদ্রায় প্রতি বর্গফুটের দাম দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৫ টাকা। গত ১৩ বছরে ধানমন্ডিতে ১৭ হাজার ৪৯৪টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে।
জানতে চাইলে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক খন্দকার মারুফ জাহান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ প্লাজা থেকে গুলশান ২ নম্বর পর্যন্ত আবাসন প্রকল্পে প্রতি বর্গফুট অ্যাপার্টমেন্ট বর্তমানে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর উত্তর গুলশানে প্রতি বর্গফুটের দাম ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।
‘মাছের মাথা এখন আমগো ভরসা’
২৮ মার্চ ২৩, সমকাল
কারওয়ান বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে শেষমেশ দুটি কাতলা মাছের মাথা কেনেন নাছরিন বেগম। প্রতিটি মাথা বিক্রেতা ৪০ টাকা চাইলে দরকষাকষি করে তিনি দুটির দাম দেন ৭০ টাকা। পরে তা পলিথিনে ভরে বাসার দিকে রওনা দেন নাছরিন। মাছ না কিনে শুধু মাথা দিয়ে চলবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিন দোকানে তেলাপিয়া দেখলাম। যে দাম চাইলো তাতে কেনার সাধ্য নাই, মাছের মাথাই আমগো ভরসা।’ স্বামী পঙ্গু। তাই দুই সন্তানসহ চারজনের সংসার খরচ চালাতে হয় নাছরিনকেই। তিনি বলেন, ‘ছেলেটা কারওয়ান বাজারে সবজি কুড়িয়ে বিক্রি করে। আমি বাসাবাড়িতে কাম করি। এ আয় দিয়েই চলি। মাছ কিনবো ক্যামনে।’
গতকাল সোমবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে মাছের মাথা বিক্রি করছিলেন স্বপন। এসব মাথা কারা কেনেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখেন, মাছের দাম বেশি হওয়ায় এখন কমবেশি সব শ্রেণির মানুষই মাথা কিনতে আসেন।’ স্বপনের কথার সত্যতা মিলল ওই দোকানের পাশে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে। শুধু নাছরিন নন, মেসের অনেক ব্যাচেলরও মাছের মাথা কিনছেন। নিম্ন-মধ্যবিত্তদের অনেকেই মাছের বদলে তিন-চারটা করে মাথা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ডলার সংকটে জ্বালানি তেলের বিল দিতে বিলম্ব
২৮ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
জ্বালানি তেলের মধ্যে দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ডিজেল নিয়ে ৪ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে জাহাজ এমটি দাই অ্যান। কিন্তু বকেয়া পরিশোধ না করায় জাহাজে থাকা ৩৩ হাজার টন তেলের খালাস আটকে দেয় চীনের সরবরাহকারী কোম্পানি ইউনিপেক সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড। তেল খালাসে দেরি হলে দিনে জরিমানা ৩২ হাজার ডলার। তবে দুই পক্ষের সমঝোতায় জরিমানা ছাড়াই বকেয়া পরিশোধ করা হয়। এরপর ২৬ মার্চ এই জাহাজের তেল খালাস হয়।
বিল পরিশোধের জটিলতায় প্রায়ই জ্বালানি তেলের জাহাজ আটকে যাচ্ছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তিনজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তাঁরা বলেন, বিল পরিশোধের জন্য ব্যাংকে প্রয়োজনীয় ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এতে সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিচ্ছে বিপিসির কাছে তেল বিক্রি করা বিদেশি কোম্পানিগুলো।
বিপিসি সূত্র বলছে, গতকাল ২৭ মার্চ পর্যন্ত জ্বালানি তেলের বিল বকেয়া পড়েছে ২৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাবে সিঙ্গাপুরের কোম্পানি ভিটল। ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার পাবে আরব আমিরাতের এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ইনক)। ইন্দোনেশিয়ার পিটি বুমি সিয়াম পুসাকু (বিএসপি) পাবে ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (আইওসিএল) পাবে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অনেক চাপাচাপির পর ভারতীয় এ কোম্পানির ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের একটি বিল সম্প্রতি পরিশোধ করা হয়েছে। এসব বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে নিয়মিত পরিশোধিত জ্বালানি তেল (ডিজেল, পেট্রল, অকটেন) কিনে থাকে বিপিসি।
দেশের দরিদ্রতম জনপদে বাঁচার লড়াই
২৯ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
উত্তর চর সাজাই গুচ্ছগ্রামে বাড়ি দিনমজুর শেখ ফরিদের (৩৫)। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কাকডাকা ভোরে চরের আলপথ ধরে হেঁটে, ব্রহ্মপুত্রের হাঁটুপানি ডিঙিয়ে যান কর্তিমারী বাজারে। আশা ছিল, একটি কাজ পাবেন। বাজারে গিয়ে দেখেন, কামলা (দিনমজুর) বেশি, গৃহস্থ কম। ফলে কাজ আর মিলল না।
কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে উত্তর চর সাজাই গ্রাম। আর কর্তিমারী বাজার রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়নে। ফরিদের গ্রাম থেকে কর্তিমারী চার কিলোমিটার দূরে।
২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ফরিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী সামেলা খাতুনসহ তিনি ঘরের বারান্দায় বসে বথুয়া শাকের আঁটি বাঁধছেন। ফরিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘুইরা আইসা মানুষের ক্ষেত থাইকা বইতা হাক (বথুয়া শাক) তুলেছি। ম্যালা খুঁইজা ১৪ আঁটি পাইছি। তিন আঁটি করে ১০-১২ টাকা ব্যাচা যাবে। ঘরের পেছনে বরইগাছ ঝাইড়া ১০-১২ কেজি বরই পাড়ছি। এন্যা (এগুলো) বেইচা পোলাপানগোরে খাওয়ানোর নিগা (জন্য) তরিতরকারি কেনা নাগব।’
গত বছর দেশের ৫৭৭টি উপজেলা ও থানার দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দারিদ্র্য মানচিত্র করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এতে দেখা যায়, রাজিবপুর, কোদালকাটি ও মোহনপুর—এই তিন ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চর রাজিবপুর দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা, দারিদ্র্যের হার ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ। আর ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয়ের তথ্যমতে, কুড়িগ্রাম দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা। দারিদ্র্যের হার প্রায় ৭১ শতাংশ।
সম্প্রতি জেলার চর রাজিবপুরের বিভিন্ন গ্রাম ও চর ঘুরে শতাধিক দিনমজুর, কৃষক, বর্গাচাষি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপে উঠে এসেছে তাঁদের অভাব ও দুর্দশার কথা। তাঁরা কাজের খোঁজে দিগ্বিদিক ছুটছেন। কৃষক ও বর্গাচাষিরা নিজেদের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি বেচে বোরো মৌসুমের তেল, সারের খরচ সামলানোর চেষ্টা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, বন্যা ও নদের ভাঙনের মতো দুর্যোগের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাঁরা আরও দরিদ্র হচ্ছেন।
চরম খাদ্যসংকট
উত্তর চর সাজাই গুচ্ছগ্রামে ৪০-৪৫টি পরিবার বসবাস করে। তাদের মধ্যে অন্ধ, ভিক্ষুক, পঙ্গু মানুষও আছেন। এলাকায় এখন কাজ নেই। বেশির ভাগ পুরুষ কাজের খোঁজে ঢাকা বা টাঙ্গাইলে গেছেন। এসব পরিবারের নারী-শিশু-বৃদ্ধরা পড়েছেন চরম খাদ্যসংকটে।
চরের বাসিন্দা ফারজানা বেগম ১ বছরের ছেলেকে নিয়ে ঘাস তুলছেন। তাঁর ৪ বছর বয়সী আরেকটি ছেলে আছে। স্বামী রবিউল ইসলাম কাজের খোঁজে টাঙ্গাইলে গেছেন। ফারজানার সম্পদ বলতে একটি ছাগল। কিছুদিন আগে জন্মের সময় ছাগলের দুটি বাচ্চা মারা গেছে।
ফারজানা বলেন, স্বামী ১০ দিন আগে ৫০০ টাকা দিয়ে গেছেন। অল্প অল্প খরচ করছেন। ছাগলের চিকিৎসায় ২০০ টাকা গেছে। রাতে ডাল-ভাত খেয়েছেন। সকালে দুই বাচ্চাসহ পান্তাভাত খেয়েছেন। বাচ্চাদের একটা ডিম কিনে খাওয়ানোরও সামর্থ্য নেই তাঁর।
২৬ ফেব্রুয়ারি কোদালকাটি বাজারে কথা হয় দিনমজুর ফজলুল হকের সঙ্গে। তিনি কোমরের ব্যথা নিয়ে টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে ৪০ দিন পর বাড়ি ফিরছেন। তিনি বললেন, সাতজনের সংসার। জিনিসের অনেক দাম। ৪০ দিন যা উপার্জন করেছেন, বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই তা শেষ।
সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা দরে চাল তুলতে ডিলার আজগর আলীর বাড়ির উঠানে বসে ছিলেন রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম। পরনে ছেঁড়া লুঙ্গি। বলেন, ‘রোজগার নাই। দিনে তিন কেজি চাল লাগে। ৩০ কেজি চালে কয় দিন চলে?’
প্রধান সমস্যা নদের ভাঙন
চর রাজিবপুর অনেকটা দ্বীপের মতো। জনসংখ্যা ৮৪ হাজার। জেলা সদর থেকে উপজেলাটি ব্রহ্মপুত্র নদে বিভক্ত। এখানে প্রধান সমস্যা নদের ভাঙন। বেশির ভাগ বসতিই অস্থায়ী।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঘরগুলো আকারে ছোট। চালে টিন, বেড়া পাটখড়ির। নদে ভাঙা পরিবারগুলো অন্যের জমি চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নিয়ে থাকে। বেশির ভাগই পেশায় দিনমজুর। সম্পদ বলতে এক-দুটি গরু, ছাগল আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বললেন, নদের ভাঙনের কারণে মানুষ যাযাবরের মতো জীবনযাপন করছেন। তাঁর দাবি, ২০১৬ সালের আয়-ব্যয়ের তথ্য অনুযায়ী, রাজিবপুর দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের উপজেলা। এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির (এসএসকে) আওতায় বসতবাড়ির ধরন, ভিটেবাড়ি, আবাদি জমির পরিমাণ, খানাপ্রধানের আয়ের উৎস, শিক্ষা-চিকিৎসা ব্যয়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিসহ ৪৩টি বিষয়ে রাজিবপুরের তথ্য সংগ্রহ করছে জরিপকারী দল। এই দলের উপজেলা সমন্বয়ক মাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজিবপুরের ১৭ হাজার ৩১০ খানার মধ্যে ১৩ হাজার ৪১৫টির তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ অতিদরিদ্র। কোদালকাটির ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০০ খানার মধ্যে ৩০ খানা পাওয়া গেছে। বাকিরা নদের ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।
অভাবে সন্তান দত্তক
কোদালকাটি ইউনিয়নের শুক্কুর মেম্বারপাড়ার সাহিদা মা আয়েশা খাতুন, ছেলে সাজেদুল (১২), সাজু (৮) ও মেয়ে ফাতেমাকে (৬) নিয়ে একসঙ্গে থাকেন। বড় মেয়ে জোসনার (১৩) পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়েছে। জোসনার ছেলে জুনাইদের বয়স দেড় বছর।
সাহিদার দেড় বছর বয়সী আরেকটি মেয়ে আছে। নাম কুলসুম। জন্মের ৪১ দিন পর তাকে রৌমারী উপজেলার বকবান্দার নুর হোসেন-রাবেকা দম্পতির কাছে দত্তক দেন। এখন কুলসুমের নাম নাদিয়া।
২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাড়িতে গিয়ে জানা গেল, সাহিদা চরে মরিচ তুলতে গেছেন। তাঁর মা আয়েশা বলেন, সাহিদার স্বামী ইবরাহিম আলী চার বছর আগে হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। সাহিদা তখন থেকে দিনমজুরি করেন। কুলসুমের জন্মের সময় তাঁর কাজ বন্ধ থাকলে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে।
আয়েশা জানান, তাঁরা ভূমিহীন। ভাগনে জহিরুল এই জায়গায় আশ্রয় দিয়েছেন। আগে একটি ঘর ছিল। কিছুদিন আগে শোলা (পাটখড়ি) ও পলিথিন দিয়ে আরেকটি ঘর তুলেছেন। এই ঘরে তিনি থাকেন। একটি গরুও আছে। তিন মাস আগে জ্যাঠাতো ভাই ইমানের কাছ থেকে গরুটি আদি (ভাগে নেওয়া) নিয়েছেন।
পড়ন্ত বিকেলে সাহিদা বাড়ি ফেরেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয়-সাতজন মানুষ একহাতে পালতে হয়। বাচ্চা হইল, ইনকাম (আয়) করে খাওয়াইনোর কেউ নেই। সেই জন্য মানুষকে দিছি।’
সাহিদা গত দুই বছর ভিজিডির চাল পেয়েছিলেন। এবার নাম বাদ গেছে। তাঁর মা আয়েশা ছয় মাস হলো বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। বিকেল শেষে সন্ধ্যা নামে। সাহিদার দুই ছেলে সাজেদুল ও সাজু তখনো ঘরে ফেরেনি। তারা অভাবে পড়াশোনা বাদ দিয়েছে। প্রতিবেশী শামিমা আক্তার ও হনুফা বেগম বলেন, ছেলে দুটি ঘুঘু ধরে ২০ টাকা পেলে আনাজ (তরকারি) আনে। মাকে টাকা দেয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাসুদ আহমেদ বলেন, তাঁর ওয়ার্ডের ৩০০ খানার মধ্যে ২০০টির চিত্র কমবেশি একই।
যা বললেন উমর আলী
উমর আলী ও তাঁর ছেলে একটি বাছুর বিক্রি করতে ইব্রাহিম রাজিবপুর হাটে যাচ্ছিলেন। তিনি ৩০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করছেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গালিয়াপাড়ার খাজার ঘাটে তিনি বলেন, বোরো খেতের ডিজেল ও সার কিনতে টাকা লাগবে। ধান কিনতে হবে। ছেলে কাজ করতে টাঙ্গাইলে যাবেন। তাঁকে যাতায়াতভাড়া দিতে হবে। এ জন্য গরু বিক্রি ছাড়া উপায় নেই।
এক পোয়া মরিচ
বজলার রহমান যাচ্ছিলেন রাজিবপুর বাজারে। দক্ষিণ চর সাজাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ কেজি কাঁচা মরিচ নিয়ে হাটে যাচ্ছেন। তাঁর ভাষ্য, এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) মরিচের দাম ২৫ টাকা। এর বেশি কেউ কেনেন না। তাই এক পোয়া করে প্যাকেট করেছেন।
সংকটেও কোটি টাকার বেশি দামি ফ্ল্যাটের বিক্রি বেশি
২৯ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। অন্যদিকে রড, সিমেন্টসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। এ কারণে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে গেছে। এতে চলতি বছর রাজধানীতে ৭০-৮০ লাখ টাকা দামের ফ্ল্যাটের চাহিদা কমেছে। তবে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকাগুলোয় কোটি টাকার বেশি দামের ফ্ল্যাটের বিক্রি কমেনি।
আবাসন খাতের কয়েকজন ব্যবসায়ী বললেন, দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে থাকলেও অভিজাত এলাকাগুলোয় কয়েক কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাটের বেচাবিক্রিতে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। ফলে উচ্চমূল্যের ফ্ল্যাট নির্মাণ করে, এমন আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা এখন ভালো। অভিজাত এলাকার বাইরে এক কোটি টাকার কম দামের ফ্ল্যাটের তেমন ক্রেতা নেই। এ জন্য ছোট ও মাঝারি আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়ে মন্দাভাব যাচ্ছে। এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রীর উচ্চমূল্য ও নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) ভবন নির্মাণে উচ্চতাসংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে আবাসন খাতের পরিস্থিতিকে জটিল করছে।
দেশের আবাসন খাতে উচ্চ, মধ্যম ও তুলনামূলক কম দামের ফ্ল্যাটের চাহিদা ও জোগান কেমন, তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। একটি বৈশ্বিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০টি ফ্ল্যাট তৈরি করেছে বাংলাদেশের আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে উচ্চ ও মাঝারি দামের তথা অভিজাত ফ্ল্যাট ৭৪ হাজার ৪২৯টি। এ ধরনের ফ্ল্যাট এক কোটি থেকে কয়েক কোটি টাকা দামে বিক্রি হয়।
জানতে চাইলে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সহসভাপতি সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটের বিক্রি ভালো। কারণ, সমাজের একশ্রেণির মানুষের কাছে প্রচুর অর্থ রয়েছে। তাঁদের কাছে ফ্ল্যাটের দাম কিংবা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কোনো সমস্যা নয়। অন্যদিকে সমাজের নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ আর্থিকভাবে চাপে পড়ায় কোটি টাকার কম দামের ফ্ল্যাট বিক্রি কমেছে।
ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে
এক বছর আগেও প্রতি টন রডের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা। বর্তমানে সেটি বেড়ে লাখ টাকার ঘরে। আবার এক বছরের ব্যবধানে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের দাম ৪৩০ টাকা বেড়ে ৫৩০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। একইভাবে পাথর, ইট, বালু, বৈদ্যুতিক তার, টাইলস, স্যানিটারিওয়্যারসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দামই বেড়েছে। তাতে কমবেশি সব আবাসন প্রতিষ্ঠানই ফ্ল্যাটের দাম ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
কম খাচ্ছে ৭১ শতাংশ পরিবার
২৯ মার্চ ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ
* পর্যাপ্ত খাবার না থাকা নিয়ে চিন্তিত ৭২.৯৪% পরিবার
* দিনে একবেলা খাবার বন্ধ রাখে ৩৭.৩৮% পরিবার
* ব্যয় বেড়েছে ১৩.১% পরিবারের
* ছয় মাসে খাবারের ব্যয় বেড়েছে ১৭.২%
* টিকে থাকতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছে ৯০%-এরও বেশি পরিবার
* সঞ্চয় ব্যবহার করেছে ৩৫.৩% পরিবার
* সন্তানের পড়ালেখার খরচ কমিয়েছে ১০.৪% পরিবার
* মাংস খাওয়া কমিয়েছে ৯৬.৪% পরিবার
* মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮.২২% পরিবার
* ডিম খাওয়া কমিয়েছে ৭৭% পরিবার
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৭১ দশমিক ১৯ শতাংশ পরিবার এখন প্রয়োজনের তুলনায় কম খাচ্ছে। ছয় মাস আগেও এই হার ছিল ৪২ দশমিক ০৬ শতাংশ। ধার করে চলছে ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার। বর্তমানে ঘরে পর্যাপ্ত খাবার না থাকা নিয়ে চিন্তিত থাকে ৭২ দশমিক ৯৪ ভাগ পরিবার। ছয় মাস আগে এই হার ছিল ৪১ দশমিক ২৫ ভাগ। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম আয়োজিত ‘কেমন আছেন নিম্ম আয়ের মানুষ’ শীর্ষক এক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। বুধবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
৯ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত আট বিভাগের ১ হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর এই জরিপ চালানো হয়েছে। এর মধ্যে গ্রাম ও শহরের রয়েছে ৮০০টি করে পরিবার।
ছয় মাস আগে ২০ দশমিক ৩১ শতাংশ পরিবারকে দিনে একবেলা খাবার বন্ধ রাখতে হতো। বর্তমানে এই হার ৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ছয় মাস আগে মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা পরিবার ছিল ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বর্তমানে এটি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সানেম বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একজন নিম্ম আয়ের মানুষের আয় ছিল মাসে ১৪ হাজার ৩০ টাকা। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতেও এটি প্রায় সমান, ১৪ হাজার ২৫ টাকা। তবে আয় না বাড়লেও বেড়েছে খরচ।
জাতীয়ভাবে ব্যয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। ছয় মাস আগে একটি পরিবারের ব্যয় ১২ হাজার ৮৮০ টাকা থাকলেও এখন এটি ১৪ হাজার ৫৬৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ছয় মাস আগে গ্রামের একটি পরিবার ১৩ হাজার ৫৯ টাকা খরচ করলেও এখন এর পরিমাণ ১৪ হাজার ৬৭৮ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।
শহরের একটি পরিবারের ১২ হাজার ৭০২ টাকার খরচ ছয় মাসের ব্যবধানে এখন ১৪ হাজার ৪৬১ টাকায় পৌঁছেছে। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি খরচ বেড়েছে খাবারের। ছয় মাস আগে খাবার কিনতে লাগত গড়ে ৮ হাজার ১৪১ টাকা। এখন তা বেড়ে ৯ হাজার ৫৪৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ খাবারের ব্যয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ।
দেশে বেকারত্বের হার কত
৩১ মার্চ ২৩, সমকাল
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপে বেকারত্বের চিত্র দেশের শ্রমবাজারের বর্তমান পরিস্থিতির প্রতিফলন নয়। বিবিএসের প্রাথমিক প্রতিবেদনে কিছু অবাস্তব এবং বিপরীতমুখী তথ্য দেখা গেছে। প্রকৃত পরিস্থিতি জানতে বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে বেকারত্বের সংজ্ঞা নিরূপণ করা প্রয়োজন। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ এমন মত প্রকাশ করেছেন।
গত মঙ্গলবার বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, আগের জরিপের তুলনায় দেশে বেকারত্ব কমেছে। বেকারত্বের হার মোট শ্রমশক্তির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। দেশে বেকারের সংখ্যা এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার। পাঁচ বছর আগে ছিল ২৭ লাখ। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। আগের জরিপ ছিল ২০১৬-১৭ সালের।
বিবিএস জানিয়েছে, জরিপ পরিচালনায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মসংস্থানের সংজ্ঞা অনুসরণ করা হয়। জরিপকালীন কোনো উত্তরদাতা যদি বলে থাকেন, তিনি গত সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, তাহলে তাঁকে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হিসেবে ধরা হয়েছে। পরিবারের জন্য হাঁস–মুরগি পালন করলেও তাঁকে বেকার বলা যাবে না। এমনকি উৎপাদনশীল কাজে মজুরি না পেলেও তাঁকে বেকার বলা যাবে না। ১৫ বছর এবং তার বেশি বয়সীদের শ্রমশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
আইএলওর কর্মসংস্থান খাতের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. রিজওয়ানুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপের উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে, ২০১৬-১৭ সালের তুলনায় বেকারত্বের হার কমেছে। কিন্তু একে সুসংবাদ বলে মনে করা যায় না। কারণ আইএলও’র সংজ্ঞা অনুযায়ী জরিপে যেভাবে বেকার চিহ্নিত করা হয়, তা থেকে বাংলাদেশের মতো দেশের শ্রমবাজারের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। এ সংজ্ঞায় জরিপের আগের সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজ করেননি কিন্তু কাজ করতে ইচ্ছুক এবং সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছিলেন– এই তিন শর্ত পালন করলেই একজনকে বেকার বলে গণ্য করা হয়। যেসব দেশে বেকারদের জন্য কোনো ভাতা বা সহায়তা নেই এবং তাদের একটা বড় সংখ্যা দরিদ্র, সেসব দেশে সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজ করেননি এরকম মানুষের সংখ্যা কম হওয়ারই কথা। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, আর্থিক অনটনের কারণে অনেকেই কিছু একটা করে সামান্য হলেও উপার্জনের চেষ্টা করেন। এ ধরনের মানুষ হয়তো বেকার হিসেবে চিহ্নিত হন না; কিন্তু তাদের অনেকেই কর্মরত হলেও দরিদ্র। এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বাড়ল না কমলো, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী মোট কর্মসংস্থানে কৃষির অংশ বেড়েছে এবং শিল্পের অংশ কমেছে। কভিড মহামারির সময় থেকেই দেখা যাচ্ছিল যে, শিল্পখাতে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে আর শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে গ্রামে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে কৃষিতে উদ্বৃত্ত শ্রম রয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষি থেকে শ্রমিক শিল্প খাতে যাবে এমনটিই আশা করা হয়। সেখানে কৃষিতে নিয়োজিতের সংখ্যা বাড়া এবং শিল্পে কমা অবশ্যই উল্টোমুখী প্রবণতা। এটি একদিকে যেমন অর্থনৈতিক দুরবস্থার ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে নীতিমালার ব্যর্থতারও পরিচায়ক।
তিন মাসে মেট্রোরেলের আয় ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা
৩০ মার্চ, ২০২৩, ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা
গত বছরের শেষদিকে দেশের ইতিহাসে প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়। উদ্বোধনের পর মেট্রোরেলে এখন পর্যন্ত ১০ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছে। এতে পরিষেবাটির আয় হয়েছে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, উদ্বোধনের পর গত তিন মাসে বিদ্যুৎ বিল, আনসার, স্কাউটসহ পুরো ব্যবস্থাপনা খরচসহ মেট্রোরেলের ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
সিন্ডিকেটের খাঁচায় বন্দি মুরগি
৩১ মার্চ ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ
দেশের খোলাবাজারে সর্বোচ্চ দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় গত ২৩ মার্চ- ২৭০ টাকা কেজি দরে। পরে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে নাটকীয়ভাবে তা প্রায় ১০০ টাকা কমে আসে। এতে বাজারে স্বস্তি নেমে এলেও সবখানে এই আলোচনা দানা বেঁধে ওঠে, কেন এই নাটকীয় দরপতন! কেননা, মাত্র তিন দিন আগেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনায় উৎপাদক বড় করপোরেটগুলো ব্রয়লার মুরগির দাম ১৯৫ টাকা কেজি দরে নামিয়ে আনতেই গড়িমসি করছিল। এমন প্রেক্ষাপটে প্রতিদিনের বাংলাদেশের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আসলে বৃহৎ চারটি কোম্পানির সিন্ডিকেটের কাছে বন্দি মুরগির বাজার।
সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রতিদিনের বাংলাদেশ দেখেছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ডিম, মুরগীর বাচ্চা ও খাবারের দাম নিজেরাই নির্ধারণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো দিকনির্দেশনা নেই বা থাকলেও অনুসরণ করা হয় না।। প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগ, মনোপলির মাধ্যমে এর মধ্যে মাত্র ৫২ দিন বাজার থেকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তুলে নিয়েছে ৯৩৬ কোটি টাকা। এজন্য প্রাণি সম্পদ অধিপ্তরের অবহেলা আর সেচ্ছাচারিতাকেও দায়ী করেন তারা।
উৎপাদন খরচের বিবরণ জমা দিতে নারাজ কোম্পানিগুলো
২০১০ সালে প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় পোলট্রি খাতসংক্রান্ত একটি স্থায়ী কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটি ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর বৈঠক করে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ৫ ডিসেম্বর আরেকটি সভা আহ্বান করা হয়। সভায় উপস্থিত প্রান্তিক খামারিদের প্রতিনিধি জানান, বৈঠকটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তখনকার পরিচালক প্রশাসন ও বর্তমান মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ছাড়াও তৎকালীন পরিচালক (উৎপাদন) ও বর্তমান পরিচালক (প্রশাসন) মো. রেয়াজুল হক জসিম উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকে মুরগীর বাচ্চা ও ফিডের উৎপাদন খরচ জানাতে সব পক্ষকে এক মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রান্তিক খামারিদের পক্ষ থেকে উৎপাদন খরচের বিবরণ জমা দেওয়া হয়েছিল। যদিও কর্পোরেট কোম্পানিগুলো এখনও তা জমা দেয়নি।
এই প্রতিনিধি জানান, বিস্ময়কর হলো বৈঠকে কমিটি গঠনের আহ্বান জানানো হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যদি স্থায়ী কমিটি থেকেই থাকে, তাহলে আবারও কমিটি গঠন করতে হবে কেন? যদি ২০১০ সালে উৎপাদন খরচ নির্ধারণে কমিটি গঠিত হয়ে থাকে, তাহলে ২০২২ সালেও তা নির্ধারিত হয়নি কেন? এর অর্থ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তাতেই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ নিতে নিতে পারছে।’
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বাজার বিশ্লেষক ও ভোক্তা কণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। সিন্ডিকেট করে সবকিছুর দাম বাড়ানো হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দেখভাল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বেশ ভালোভাবেই করতে পারতো। কিন্তু সেটা তারা করেনি। প্রাণিসম্পদ আছে শুধু কিছু ট্রেইনিং আর প্রমোশনাল কর্মকান্ড নিয়ে ব্যস্ত। এ সংস্থাটির অবহেলায় বাজারে সেচ্ছাচারিতা চলছে। এতে সুযোগ নিচ্ছে করপোরেট কোম্পানিগুলো।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশ, ৭১ ফিড, নারিশ পোল্ট্রি ফিড এন্ড হ্যাচারি, নাহার ইত্যাদি ১২টি বৃহৎ কোম্পানির মধ্যে কাজী ফার্মস, প্যারাগণ, ৭১ ফিড এবং নারিশ মনোপলির ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রাখছে।
খামারিদের বাধ্য করা হচ্ছে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে
মনোপলির মাত্রা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রান্তিক খামারিদের রীতিমতো কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে বাধ্য করছে বড় করপোরেটগুলো। প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, করপোরেট কোম্পানিগুলো তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারিদের জন্য বাচ্চার দর সব সময়ের জন্য স্থির রেখেছেন ৩৫ টাকা। আর ফিডের বস্তার দাম একইভাবে স্থির রেখেছেন ২৬০০ টাকায়। অথচ প্রান্তিক খামারিরা একেকটি বাচ্চা কিনতে গুণতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে এক বস্তা ফিড কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৩৭৪০ টাকা। এতে চড়া মূল্য দিয়ে বাচ্চা ও ফিড কিনে মুরগি উৎপাদন করতে গিয়ে লোকসানে পড়ছেন প্রান্তিক খামারিরা। আবার প্রান্তিক খামারিদের মুরগি বাজারে আসা শুরু করলে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে মুরগি বিক্রি করে। এতে বড় ধরণের লোকসানের মুখে পড়ে বাজার থেকে ছিটকে পড়ছে খামারিরা। বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান বলছে, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে প্রান্তিক খামারিদের সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে নেমেছে মাত্র ৬০ হাজারে। এরমধ্যে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের জন্য ১২ শতাংশ অর্থাৎ ১৯ হাজার চুক্তিবদ্ধ খামারি রয়েছে।
প্রান্তিক খামারিরা জানান, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের ক্ষেত্রে প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে স্ট্যাম্পে চুক্তি করা হয়। এ ছাড়া খামারির দুটি ব্ল্যাংক চেক, জমির দলিলের ফটোকপিও নিয়ে নেওয়া হয়। লোকসান হলে খামারি টাকা পরিশোষে ব্যর্থ হলে ২০ হাজার টাকা পাওনার বিপরীতে ২০ লাখ টাকার মামলা করে করপোরেটগুলো। ৭১ ফিড আনুমানিক দুই থেকে চারশ মামলা করেছে খামারিদের নামে। শুধু তাই নয়, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে প্রতি কেজি মুরগিতে খামারিকে লাভ দেওয়া হয় ১০ থেকে ১২ টাকা। কিন্তু এর মধ্যে ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ খরচ এবং শ্রমের দাম খামারিকেই বহন করতে হয়। লোকসানের ভয়ে অনেক প্রান্তিক খামারি বাধ্য হয়েই এই দাসত্বের চক্তিতে যাচ্ছেন।
সংগঠনটির দাবি, দেশে প্রতিদিন মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। এসব বাচ্চা কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে। একেকটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। অথচ প্রতিটি বাচ্চা এখন ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় দেওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। ফলে প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে করপোরেট কোম্পানিগুলো।
দায় এড়াচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর
রহস্যজনক হলো, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গত ৫ ডিসেম্বর মুরগির বাচ্চা ও ফিডের দাম নির্ধারণের জন্য কমিটি গঠন ও কৌশলপত্রের জন্য এক মাস সময় বেঁধে দিলেও এখন দায় চাপাতে চাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘাড়ে। সংস্থাটির মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উৎপাদন কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত। দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় এই অধিদপ্তরের ভূমিকা নেই। এটা পারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজার নিয়ন্ত্রণও প্রাণিসম্পদ ওইভাবে করতে পারে না। এটার জন্য বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। আমরা এককভাবে কিছুই করতে পারব না।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দাম আসলে ব্যবসায়ীরাই নির্ধারণ করে। এটা আমাদের আয়ত্তে নাই। এটা ঠিক আমাদের ভূমিকা রাখা উচিত। আসলে অনেক কিছু করার আছে। কিন্তু করা যায় না।’
দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় একচেটিয়া ভূমিকার বিষয়ে জানতে কাজী ফার্মস গ্রুপের পরিচালক ও বিড্রার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি কাজী জাহিনের সঙ্গে চেষ্টা চালিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এরপর তাকে হোয়াটসএ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠালে প্রতি-উত্তরে তিনি জানান, বর্তমানে তিনি ব্যাংকক অবস্থান করছেন, এসে জানাবেন।
এ প্রসঙ্গে বিড্রার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা দেবাশিস নাগ বলেন, ‘বাচ্চা ও ফিডের দাম স্ব-স্ব কোম্পানির উৎপাদন খরচের ওপর নির্ধারণ করে থাকে। আমদানি ও উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়েই নির্ধারিত হয় দাম। একেক কোম্পানির বাচ্চা ও ফিডের দর আলাদা হয়ে থাকে। এখানে প্রতিটি কোম্পানি তার উৎপাদন খরচ অনুয়ায়ী দাম নির্ধারণ করে। তাই কোম্পানিভেদে বাচ্চা ও ফিডের দামও আলাদা হয়। এখানে সরকারি কোনো সংস্থার হস্তক্ষেপ বা নির্দেশনা নেই। মাকের্টের চাহিদার ওপরেই বাজার চলে।’
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন দাবি, সরকারি তদারকি না থাকায় এই খাতের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৫২ দিনে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ৫২ দিনে মুরগি বিক্রি করে করপোরেট কোম্পানিগুলো লাভ করেছে ৬২৪ কোটি টাকা, আর একদিনের মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে মুনাফা হয়েছে ৩১২ কোটি টাকা।
গত জানুয়ারিতে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। কিন্তু মার্চ মাসের ২৩ তারিখ তা উঠে ২৭০ টাকায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ তলব করে বৃহৎ চার প্রতিষ্ঠানকে। ভোক্তা অধিদপ্তরে এসে বৃহৎ চার প্রতিষ্ঠান- কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের খামার পর্যায়ে রমজানে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করবে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা দরে। তবে খামার পর্যায়ে এই দামে তিনদিন বিক্রি হলেও চতুর্থ দিনে মুরগি বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৬০ দরে। অভিযোগ রয়েছে, হঠাৎ দাম এতো কমে যাওয়ার মূল কারণ প্রান্তিক খামারিদের মুরগি খোলাবাজারে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠা। প্রান্তিক খামারিদের ন্যায্যমূল্যে থেকে বঞ্চিত করতে ফার্ম পর্যায়ে বড় আকারে দরপতন করে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।
নিম্ন আয়ের ৭১% পরিবার কম খাচ্ছে
৩০ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষের খরচ বেড়ে গেছে। তাই তাদের সংসার চালাতে ধারদেনা করতে হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনের তুলনায় তারা কম খাচ্ছে। দেশের নিম্ন আয়ের ৭১ শতাংশ পরিবার এখন প্রয়োজনের তুলনায় কম খাচ্ছে। তাতে নিম্ন আয়ের ৯০ শতাংশ পরিবারের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গেছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জরিপের এ তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি। জরিপের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান ও গবেষণা পরিচালক সায়মা হক।
সানেম জানিয়েছে, দেশের ৮টি বিভাগের ১ হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর চলতি মাসে এ জরিপ করা হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি—এই ছয় মাসের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে গত সেপ্টেম্বরের অবস্থা ও চলতি মার্চ মাসের অবস্থা জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরে সানেম বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিম্ন আয়ের ৪২ শতাংশ পরিবার পাওয়া যায়, যারা প্রয়োজনের তুলনায় কম খাচ্ছে। মার্চে সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ শতাংশে। জরিপে অংশ নেওয়া নিম্ন আয়ের ৭৩ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। ৭৮ শতাংশ পরিবার বলেছে, তারা পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছে না। একই সংখ্যক পরিবার জানিয়েছে, ঘুরেফিরে তারা এখন কয়েকটি পদের খাবারই খান।
সানেমের জরিপে আরও উঠে এসেছে, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের ৩৭ শতাংশ পরিবার তিন বেলার মধ্যে এক বেলা খেতে পারছে না। ৪০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এমন অনেক দিন তাদের ঘরে কোনো খাবার ছিল না। এ সময়ে এমনও দিন গেছে, পুরো দিন না খেয়ে কেটেছে ১৮ শতাংশ পরিবারের।
জরিপে অংশ নেওয়া নিম্ন আয়ের ৭৪ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তাদের সংসার চলছে এখন ধারদেনা করে। আবার ৮৫ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, আগামী ছয় মাসে তাদের আরও ধার করতে হবে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৫ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠান থেকেই তারা ধারদেনা করছে। সানেম বলছে, এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে মানুষ সুদের দুষ্টচক্রে পড়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। এ ছাড়া ৩৭ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তারা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করেছে। সমবায় সমিতি থেকে ধারের কথা জানায় ২৩ শতাংশ পরিবার। ৩৫ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তারা সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে।
সানেম বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ছয় মাস আগেও যেসব পরিবার মাসে চারবার মুরগির মাংস খেত, এখন তারা তা দুইবার খায়। মাছ ও ডিম খাওয়া কমিয়েছে যথাক্রমে ৮৮ ও ৭৭ শতাংশ পরিবার। গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে শহরের মানুষ খাবার জোগাড় করতে বেশি ভুগছে। আর গ্রামের মানুষের চাপ বেড়েছে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে। জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারের মধ্যে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার।
নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর এ অবস্থার জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন ও বাজার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে সানেম। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষ কেমন আছে, তা অনেকের জানা। আমরা তাদের চাপের বিষয়টি পেশাগত দায়িত্বের মধ্য দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বলেন, জরিপে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, তা এসডিজির লক্ষ্য অর্জন থেকে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে পারে।
তিন মাসে মেট্রোরেলের আয় ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা
মার্চ ৩০, ২০২৩, ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা
গত বছরের শেষদিকে দেশের ইতিহাসে প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়। উদ্বোধনের পর মেট্রোরেলে এখন পর্যন্ত ১০ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছে। এতে পরিষেবাটির আয় হয়েছে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, উদ্বোধনের পর গত তিন মাসে বিদ্যুৎ বিল, আনসার, স্কাউটসহ পুরো ব্যবস্থাপনা খরচসহ মেট্রোরেলের ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
চাপে পড়ে ১২শ কোটি টাকা ফেরত ৫৪২ ঋণখেলাপির
০১ এপ্রিল ২৩, সমকাল
চট্টগ্রামের মহল মার্কেট বন্ধক রেখে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৬০ কোটি টাকা ঋণ নেন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আহমেদ। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় তা খেলাপি হয়ে যায়। সুদে-আসলে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় ৮৬ কোটি টাকা। অনেক দেনদরবার করেও ঋণের অর্থ আদায় করতে না পেরে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে ব্যাংক। সেই মামলায় আদালত বন্ধকি মহল মার্কেটে কোতোয়ালি থানার ওসিকে রিসিভার নিয়োগ করেন। রিসিভার মার্কেটের ভাড়া তুলে তা ব্যাংকে জমা করতে শুরু করেন। ‘রিসিভার নিয়োগ’ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরই খেলাপি ঋণ ফেরত দিতে বিদ্যুৎ গতিতে উদ্যোগী হন ঋণখেলাপি জসিম। বন্ধকি সম্পদ হাতছাড়া হওয়ার পরই মাত্র ৯ মাসের মাথায় ১ ফেব্রুয়ারি ঋণের ২৫ কোটি টাকা আদালতে জমা দিতে বাধ্য হন তিনি। বাকি ৩৫ কোটি টাকা তিন মাসে ফেরত দেওয়ার চুক্তি করেন।
শুধু রিসিভার নিয়োগই নয়; সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ ১২ বছর আগের রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মামলায় ১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ করে জামিন পান চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোস্তফা গ্রুপের মালিক হেফাজতুর রহমান, জহির উদ্দিনসহ আট পরিচালক, চেয়ারম্যান ও এমডি। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়রি ১৮ বছরের পুরোনো ইসলামী ব্যাংকের ঋণখেলাপি মামলায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা পরিশোধ করে মেসার্স সিদ্দিকী অ্যান্ড কোম্পানি মামলা থেকে অব্যাহতি নেয়। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রাইম ব্যাংকের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির তিন ঘণ্টার মধ্যে ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করে জামিন নেন ছিদ্দিক ট্রেডার্সের মালিক আবু সাঈদ চৌধুরী। একইভাবে জেল খাটা থেকে বাঁচতে ১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ চোখ বুজে ফেরত দিতে বাধ্য হন ব্যবসায়ী তিন ভাই মোহাম্মদ হাসান, মহসীন ও সেলিম। সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর মেসার্স লোটাস করপোরেশনের মালিক তাঁরা।
২০ গুণ লাভ দেখে ‘মরিয়া’ তাঁরা
২ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ পাওয়া ঠিকাদারেরা তাঁদের বিনিয়োগের চেয়ে বছরে বা প্রতি মাসে ২০ গুণের বেশি লাভ করবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ কারণে বর্জ্যের কাজ নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা।
করপোরেশন থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া ময়লার বিল নিলেও উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে বছরে উঠবে ১৯১ কোটি টাকা। বিপরীতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে করপোরেশন পাবে মাত্র ৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর বাইরে যানবাহন কেনা, কর্মীদের বেতন, পোশাক ও জিনিসপত্র কিনতে ঠিকাদারদের ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
অর্থাৎ সব খরচ বাদ দিলেও ৫৪টি ওয়ার্ডের ৫৪ ঠিকাদারের পকেটে যাবে বছরে ১১০ কোটি টাকা। এই আয়ের হিসাব করা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটির রাজস্ব বিভাগের দেওয়া হোল্ডিং সংখ্যা ধরে। ব্যয়ের ধারণা নেওয়া হয়েছে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে যুক্ত ও দরপত্র জমা দিয়েছেন—এমন ১৫ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানমালিকের সঙ্গে কথা বলে।
উত্তর সিটির অন্তত ৩৫টি ওয়ার্ডের দরপত্রে কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। ময়লার কাজ পেতে তাঁরা নিজের নামসহ স্ত্রী, ভাই, ভাগনে-ভাতিজা, জামাতা, স্বজন কিংবা রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠদের নামে দরপত্র জমা দিয়েছেন।
কিছু ওয়ার্ডে ময়লা সংগ্রহের কাজে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোও দরপত্র জমা দিয়েছে। তবে কাউন্সিলররা তাদের প্রত্যয়ন দেননি। ফলে অভিজ্ঞতা থাকলেও নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যয়নের অভাবে বাদ পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন তাঁদের অনেকেই।
ব্যয় ৮০ কোটি টাকা, আয় ১৯১ কোটি টাকা
উত্তর সিটি ময়লার বিল মাসে পুরোনো ৩৬টি ওয়ার্ডের জন্য (১-৩৬) ১০০ টাকা এবং নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের (৩৭-৫৪) জন্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে।
উত্তর সিটিতে মোট হোল্ডিংয়ের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার। এর মধ্যে পুরোনো ৩৬টি ওয়ার্ডে ২ লাখ ৫৬ হাজার এবং বাকি প্রায় ১৯ হাজার হোল্ডিং নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে। ঢাকার ভবনে ফ্ল্যাট বা বাসার সংখ্যায় ভিন্নতা থাকে। করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ হোল্ডিংপ্রতি ৬-৮টি বাসা ধরে নিয়ে কাজ করে।
সে অনুযায়ী পুরোনো ৩৬টি ওয়ার্ডের ১৫ লাখ ৩৭ হাজার বাসায় ১০০ টাকা এবং বাকি ১৮ ওয়ার্ডের ১ লাখ ১৩ হাজার বাসায় ৫০ টাকা ধরে ময়লার বিল আসবে ১৯১ কোটি টাকার মতো। যদিও নতুন ওয়ার্ডের অনেক বাড়ি এখনো গৃহকরের আওতায় আসেনি।
ঠিকাদারদের সিটি করপোরেশনকে এককালীন বছরে নতুন ও পুরোনো ওয়ার্ডের জন্য দিতে হবে যথাক্রমে ৬ লাখ ও ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ঠিকাদারদের পিকআপ, ভ্যান, কর্মীদের সুরক্ষাসরঞ্জাম, পোশাক ও বর্জ্য সংগ্রহের সরঞ্জাম কিনতে হবে। ভ্যানপ্রতি দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, দুজন কর্মী এসটিএসে (অস্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) এবং প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে সুপারভাইজারের বেতন দিতে হবে। দরপত্র জমা দেওয়া ব্যক্তিদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, এসব খাতে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৮০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
অর্থাৎ আয় ও ব্যয়ের খাতগুলোর হিসাব করলে দেখা যায়, ঠিকাদারেরা যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করবেন, মাসে এর ২০ গুণের বেশি তাঁদের আয় হবে।
কর ফাঁকি ও অস্বচ্ছতায় বছরে ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা হারাচ্ছে সরকার: সিপিডি
০৩ এপ্রিল ২৩, সমকাল
কর ফাঁকি ও অস্বচ্ছ ব্যবস্থার কারণে সরকার বছরে ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কেটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। টাকার এই অংক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ অর্থের ৮ গুণ; আর স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের দুইগুণ। এ ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে সরকার বছরে রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা।গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘কর্পোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা: জাতীয় বাজেটে এর প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা ওই প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সিপিডি ও খ্রিস্টিয়ান এইডের সহযোগিতায় গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।
কর ফাঁকির ধরন তুলে ধরে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, কর অস্বচ্ছতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, কর ফাঁকি ও কর এড়ানো। কর ফাঁকি দিতে গিয়ে কোম্পানি তার প্রকৃত আয় কম দেখায়। অন্যদিকে আইনি কাঠামোর আওতায় সরকারের দেওয়া সুবিধা গ্রহণ করে কর কম দিয়ে থাকে। এটাও কর অস্বচ্ছতা।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ১৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কর ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে প্রতিবছর সর্বনিম্ন ৪১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত করছাড় দেওয়া হয়। এভাবে প্রতিবছর ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ৬৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। দুই খাত মিলে ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬৮ শতাংশ মানুষ করযোগ্য আয় করার পরও আয়কর দেন না। কর জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি না হওয়ার কারণে এটা হচ্ছে। অন্যদিকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে ২ লাখ ১৩ হাজার কোম্পানি রেজিস্টার্ড হলেও রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ৪৫ হাজার কোম্পানি।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ২০১০ সালে করের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, এই খাত থেকে সরকার প্রতিবছর ৮৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে, যা জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ। এই টাকা যদি পাওয়া যেত তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় তিনগুণ করা যেত। অর্থাৎ, কর নেট বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। বড় অংশই করের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে কর ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে কর-জিডিপির অনুপাত ৯ শতাংশে নেমে আসার তথ্য উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশে অবশ্যই কর জিডিপির হার ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের কর আদায় পরিস্থিতি সেই মান থেকে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে।
ধানক্ষেতে লবণপানি, কৃষকের চোখে জল
০৬ এপ্রিল ২৩, সমকাল
সবিতা হালদার। সংসারে একটু সচ্ছলতার জন্য গরু বিক্রির ৪০ হাজার টাকা ও এনজিও থেকে ঋণের ৫০ হাজার টাকায় ছয় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। ফলনও বেশ ভালো হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন, এবার হয়তো বছর ভালো কাটবে। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন নোনাপানিতে ডুবে গেছে।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কালেখারবেড় এলাকার সবিতা ধান ঘরে তুলতে মাত্র ১৫ দিন সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা চিংড়ি চাষের জন্য খালের বাঁধ কেটে লবণপানি ঢোকানোয় নষ্ট হয়ে গেছে তাঁর কষ্টার্জিত ফসল।
সদর উপজেলার কাশিমপুর এলাকার সুজন শেখ চার বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন। তাঁর জমি কৃষি বিভাগের সহায়তা পাওয়া ব্লকের মধ্যে ছিল। প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ও করেছেন। কৃষি বিভাগের করা সেচ লাইন দিয়ে পানি দিয়েছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে তাঁর জমির ধানও মরে গেছে। নদীতে লবণপানি ঢোকানোয় তা সেচ লাইনেও চলে আসে। এতেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি।
একই চিত্র বাগেরহাটের তিন উপজেলার অন্তত ৪০টি এলাকায়।
একদিকে চাষাবাদের জন্য মিষ্টিপানির অভাব, অন্যদিকে খালে লবণপানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। এ কারণে গত এক মাসে তিন উপজেলায় অন্তত ১১শ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে, ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
কৃষক-জেলেদের উচ্ছেদ করে উচ্চবিত্তের আবাসন গড়বে রাজউক
এপ্রিল ০৭, ২০২৩, বণিক বার্তা
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বংশী নদী থেকে উত্পন্ন হয়ে রাজধানীর সীমান্ত দিয়ে এঁকেবেঁকে চলেছে তুরাগ নদ। মাঝে ঢাকার সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নে এসে ভাগ হয়েছে দুটি ধারায়। মূল শাখাটি আমিনবাজার হয়ে পড়েছে বুড়িগঙ্গায়, অন্যটি বিরুলিয়া থেকে আশুলিয়া-টঙ্গী হয়ে বালু নদে গিয়ে মিশেছে। ঢাকার একাংশকে ঘিরে রাখা এ নদ অনেক আগে থেকেই দখল-দূষণে বিপর্যস্ত। শিল্প ও পৌর বর্জ্য কিংবা কচুরিপানার জটলায় নৌ যোগাযোগও প্রায় অচল। শত বছর মেয়াদি সীমানা পিলার গেড়েও দখল থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ এ নদ। এবার তুরাগতীরে উচ্চবিত্তের জন্য আবাস গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। যদিও সংস্থাটির দাবি, আশুলিয়া ও তুরাগের বন্যাপ্রবাহ এলাকা রক্ষা করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, চলমান ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) আশুলিয়ার বড় অংশকে বন্যাপ্রবাহ এলাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিনিয়তই এলাকাটি ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে নানা অবকাঠামো। ভরাট হচ্ছে তুরাগ নদও। তাই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায়ই একটি কমপ্যাক্ট টাউনশিপের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজউক। প্রকল্পের মাধ্যমে আশুলিয়া ও তুরাগের বন্যাপ্রবাহ এলাকা রক্ষাসহ অতি উচ্চবিত্তের জন্য নির্মাণ করা হবে আবাসন। তবে এর জন্য অন্তত ১৩টি জেলেপল্লী, স্থানীয় কৃষক, মাঝি ও নদীকেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহ করা মানুষদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।
উচ্চবিত্তের আবাসনের জন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ এবং জীবিকার ক্ষেত্র তাদের বিল ও নদী থেকে বঞ্চিত করার কঠোর সমালোচনা করেছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, নদীতীরবর্তী মানুষের জীবন-জীবিকা সংকুচিত করে নদী রক্ষার নামে উচ্চবিত্তের জন্য আবাসন গড়ার কোনো অধিকার রাজউকের নেই।
বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে ‘বোট পিপল’ আরো বেড়েছে
এপ্রিল ০৭, ২০২৩, বণিক বার্তা
ইউরোপে অভিবাসনের উদ্দেশ্যে ছোট নৌকা বা ভেলায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়াকে বলা হয় বোট মাইগ্রেশন। আর এভাবে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা পরিচিত ‘বোট পিপল’ হিসেবে। বিপত্সংকুল এ পন্থায় গত বছর ইতালিতে পৌঁছেছেন ১৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশী। অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ এ উপায়ে অভিবাসী গমন ঠেকাতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। এর পরও ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ইউরোপীয় দেশগুলোয় বাংলাদেশী বোট পিপল গমনের সংখ্যা কমছে না। বরং গত বছর শুধু ইতালিতেই বাংলাদেশী বোট পিপল গমনের হার বেড়েছে ৯৪ শতাংশের বেশি।
ইতালিতে বাংলাদেশীদের ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে মার্চে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম)। ‘মাইগ্রেশন ফ্রম বাংলাদেশ টু ইতালি ভায়া লিবিয়া’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে, এ পথ পাড়ি দেয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে বাংলাদেশীর হার এখন দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। ২০১৯ সালেও এমন অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে বাংলাদেশীর হার ছিল ৬ শতাংশ। ২০২১ সাল শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশে। প্রায় দ্বিগুণ হয়ে এ হার গত বছর শেষে দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে।
দরিদ্র মানুষের খাবারেও প্রভাবশালীদের চোখ
০৭ এপ্রিল ২৩, সমকাল
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকা। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা। খাঁ খাঁ রোদে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির (ওএমএস) ট্রাকের সামনে চালের জন্য কয়েকশ মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা। ৩০ টাকা কেজি দরে জনপ্রতি ৫ কেজি চাল বিক্রির কথা থাকলেও এখানকার ছবি ভিন্ন। ৩০ কেজি ওজনের এক বস্তা চাল এক ব্যক্তির কাছে বেচে দিলেন ওএমএসের ট্রাক সেল কার্যক্রমের কর্মী। বাড়তি টাকার বিনিময়ে ১০-৩০ কেজি চাল অনেককে দিতে দেখা যায়। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে রাজধানীর আরও বেশ কয়েকটি পয়েন্টে। শুধু ওএমএস নয়, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রিতেও চলছে এমন রকমারি ঘাপলা।
দুটি পণ্য বিক্রিতেই ক্ষমতা দেখাচ্ছেন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ প্রভাবশালীরা। কার্ড বিতরণে অনিয়ম, এক স্থান থেকে পণ্যের ট্রাক আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য বিক্রি না করা, পণ্য গায়েব করে দেওয়া, কালোবাজারে বিক্রিসহ নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে সরকারের কঠোর বার্তা, গ্রেপ্তার, তদন্ত কমিটিসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থায়ও বন্ধ হয়নি অনিয়ম। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকেই সরকারের এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
‘ঘরের মধ্যে বড় বড় ফাটল ধরছে, বাতাসে কাঁপে’
০৭ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
‘আগে ঘর ছিল না, মানুষের বাড়ি বাড়িতে থাকতাম। শেষ বয়সে কই থাকমু, এইডা লইয়া সব সময় চিন্তা করতাম। সরকারি পাকা ঘর পাইয়া সব চিন্তা শেষ হইছিল। আমাগো মতো ঘরহারা মানুষের খুশির সীমা ছিল না। ওই ঘরই অহন বড় দুশ্চিন্তার কারণ হইয়া দাঁড়াইছে। ঘরের মধ্যে বড় বড় ফাটল ধরছে, বাতাসে কাঁপে, দেওয়ালের বালু আগলা হইয়া পইরা যাইতাছে। গত বছর একটা ঘরের বারান্দা পইড়া গেছে। মনে অয় এবার তুফান ছাড়লে আমাগো ঘরও মাথার ওপরে ভাইঙা পড়বো।’
কথাগুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের দেওয়ানকান্দি এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা কুলসুম বেগম। তিনি সেখানের ৭৮ নম্বর ঘরে থাকেন। এমন দূরবস্থা ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্তত ১০ থেকে ১৫টি ঘরের। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘরগুলোর পলেস্তারা খসে পড়া, সুপেয় পানির সংকট, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই পানি চলে আসা, রাস্তা ও শৌচাগারগুলোর দুরবস্থা।
গুলিস্তান হকার্স মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্তরা দোকান পাননি, আশ্বাসেই ১৮ বছর পার
০৮ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
বঙ্গবাজারের মতোই ভয়াবহ আগুনে ১৮ বছর আগে পুড়ে গিয়েছিল রাজধানীর গুলিস্তানের পুরান বাজার হকার্স মার্কেট। ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসের সেই অগ্নিকাণ্ডে জীবিকার সম্বল হারিয়েছিলেন ওই মার্কেটের (বিপণিবিতান) ১ হাজার ৬৪৬ জন ব্যবসায়ী। তখন সিটি করপোরেশন থেকে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, টিনের তৈরি দ্বিতল ওই পোড়া মার্কেটের জায়গায় ১২ তলা ভবন নির্মাণ করে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিস্তিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা তোলা হয়েছিল।
টিনের তৈরি দ্বিতল পুরান বাজার হকার্স মার্কেটে (মূলত পোশাক বিক্রি হতো) অগ্নিকাণ্ডের ১৮ বছর পরও নতুন মার্কেট ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। গত প্রায় দুই দশকে সেখানে মাত্র চারটি তলার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পুরো ১২ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হতে আর কত বছর লাগবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তখন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ছিল। মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা। অগ্নিকাণ্ডের পর ব্যবসায়ীরা নাশকতার অভিযোগ করেছিলেন।
হেসেখেলে হাওয়া ৩২২ কোটি
৯ এপ্রিল, ২০২৩, দেশ রুপান্তর
ঢাকায় সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে বেশ কিছু পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। সেখানে সাবওয়ের বিষয়ে কোনো ধারণা নেই। এরপরও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) ৩২২ কোটি টাকা ব্যয়ে সাবওয়ের সমীক্ষা করেছে। যদিও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় ৬ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা খরচ করে ২৫৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নির্মাণ সম্ভব নয়। এই বাস্তবতায় সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা গেছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, সমীক্ষার কাজটি ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা খরচ করেই করা যেত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) এবং এর আগে যেসব পরিকল্পনা হয়েছে কোথাও ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান এবং সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে সাবওয়ের কথা বলা হয়নি। এই অবস্থায় সাবওয়ের সমীক্ষা করে শত শত কোটি টাকা খরচ করা সরকারি অর্থের অপচয় বৈ অন্য কিছু না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালে স্পেন ও জাপানের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বিবিএ ঢাকায় সাবওয়ে সমীক্ষার কাজ দেয়। প্রথমে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয় ২১৯ কোটি টাকায়। পরে তা সংশোধন করে ৩২২ কোটি টাকা করা হয়। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, এখান থেকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে ৩১৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি টাকা অন্যান্য খাতে খরচ করা হয়েছে।
পৌনে পাঁচ কোটি তরুণের দেশ, কর্মক্ষম মানুষ ৬২ শতাংশ
১০ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
তারুণ্যের জয়গান চলছে দেশে। মোট জনসংখ্যার ৪ ভাগের ১ ভাগ এখন তরুণ, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। সংখ্যায় ৪ কোটি ৭৪ লাখ। জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তারুণ্যের পাশাপাশি দেশে কর্মক্ষম মানুষের পাল্লাও ভারী। মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। সংখ্যায় যা ১০ কোটি ৫০ লাখ। পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল রোববার সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বয়সভিত্তিক বিভাজন
তারুণ্যের বয়স বিভাজন নিয়ে জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মোট জনগোষ্ঠী এখন ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীর হার ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীর হার ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের তরুণ হিসেবে ধরা হয় দেশে। সে হিসেবে তারুণ্যের হার ২৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ, সংখ্যায় যা পৌনে পাঁচ কোটি।
তরুণ জনগোষ্ঠী নিয়ে সরকারের ভাবনা কী, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গতকাল সন্ধ্যায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত যতগুলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে, সবগুলোতে তরুণদের সামনে রাখা হয়েছে। সরকারের মূল লক্ষ্য তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। দেশে দারিদ্র্যের হার কমে আসছে বলে জানান তিনি।
বিবিএস জানিয়েছে, দেশে প্রবীণ বা ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম। মোট জনগোষ্ঠীর ১ কোটি ৯৮ লাখ মানুষ ষাটোর্ধ্ব। এ হার ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
চূড়ান্ত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার
জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে এখন জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন। মোট জনগোষ্ঠীর ৪৯ দশমিক ৫১ শতাংশ পুরুষ। নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৫০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় নারী ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯১৭ বেশি।
ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাবে দেখা যায়, দেশে এখন মুসলমান জনসংখ্যা ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ৪২ হাজার ৭৮ জন, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৯১ শতাংশ। অন্য ধর্মাবলম্বীর হার ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
শুমারির তথ্য আরও বলছে, গ্রামে বসবাস করছে ১১ কোটি ৬১ লাখ মানুষ, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। শহরে বসবাস করছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ বা ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বিভাগভিত্তিক বিভাজন
বিবিএসের তথ্য বলছে, দেশে এখন সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করে ঢাকা বিভাগে—৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৫ জন, যা মোট জনগোষ্ঠীর ২৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম বিভাগে বাস করে ৩ কোটি ৪১ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশ। এরপরই আছে রাজশাহী বিভাগ—১২ দশমিক ২৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম মানুষের বসবাস বরিশাল বিভাগে—মাত্র ৯৩ লাখ ২৫ হাজার, যা মোট জনগোষ্ঠীর সাড়ে ৫ শতাংশ।
বিভাগভিত্তিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির তথ্য বিশ্লেষণ করে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন অনুষ্ঠানে বলেন, আগের দশকে দেশে নগরায়ণ বেড়েছে ১ শতাংশ হারে। কিন্তু এই দশকে নগরায়ণ হয়েছে দশমিক ৪ শতাংশ হারে। সাধারণত দেশ উন্নত হলে নগরায়ণ বাড়ে। এই দশকে নগরায়ণের গতি কমেছে। এই গতি কেন কমল, তা খুঁজে বের করতে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ প্রয়োজন।
সোনায় মোড়ানো ২০ হাজার টাকা কেজির জিলাপির অর্ডার নেওয়া বন্ধ
১০ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
গত সপ্তাহে এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সোনায় মোড়ানো জিলাপি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা। গত মঙ্গলবার দেওয়া ওই পোস্টে বলা হয়েছিল, বিশেষ জিলাপির প্রতি কেজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এর মাত্র সাত দিনের মাথায় আরেকটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে হোটেলটির কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, তারা আর জিলাপির অর্ডার নিচ্ছে না।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ‘গোল্ড জিলাপি সোল্ড আউট’। অর্থাৎ, সোনার আবরণে ঢাকা জিলাপি বিক্রি শেষ হয়েছে।
কৃষকের কাঁধে আবার সারের দামের বোঝা
১২ এপ্রিল ২৩, সমকাল
সারের দাম বাড়ানো হবে না– এমন কথা সাত দিন আগেই বলেছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তাঁর সেই কথা টিকল না। পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ বেড়ে গেছে চার ধরনের সারের দাম। কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়তি দর কার্যকর হয়েছে গত সোমবার থেকেই। অতিরিক্ত ভর্তুকির চাপ সামাল দিতে ৯ মাসের মধ্যে আরেক দফা সারের দাম বাড়াল সরকার। এবার দাম বেড়েছে ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের। সারে সরকার যে ভর্তুকি দেয়; দাম বাড়ানোর ফলে বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়, যা আসবে কৃষকের পকেট থেকে। গত আগস্টে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ানোর চক্কর থেকে বের না হতেই গতকাল মঙ্গলবার কৃষকের কাঁধে ফের ভর করল দামের বোঝা।
বিশ্ববাজারে ইউরিয়ার ৬২% ডিএপির ২৪%, টিএসপির ২৫ শতাংশ দাম কমেছে
এপ্রিল ১২, ২০২৩, বণিক বার্তা
রাসায়নিক সারের চাহিদা পূরণের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ। দেশে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি)—এ চার ধরনের সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চারটির দামই এখন আন্তর্জাতিক বাজারে কমতির দিকে রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের চলতি মাসে হালনাগাদকৃত পিংক শিটের (আন্তর্জাতিক বাজারসংক্রান্ত নিয়মিত প্রতিবেদন) তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক বছরে ইউরিয়া সারের দাম কমেছে প্রায় ৬২ শতাংশ। একই সময়ে ডিএপির মূল্যহ্রাস হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। টিএসপি ও এমওপির দাম কমেছে যথাক্রমে প্রায় ২৫ ও ৪৭ শতাংশ।
কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি আগামী অর্থবছরের সারের সম্ভাব্য চাহিদার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে দেশে সারের মোট চাহিদা হবে প্রায় ৬৮ লাখ টন। এর মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশই ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ইউরিয়া সারের। আসন্ন অর্থবছরে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা নিরূপণ হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টন, যা রাসায়নিক সারে নির্ধারিত মোট চাহিদার ৩৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি মূল্য বৃদ্ধি পায় ইউরিয়ার। ওই সময় প্রতি টনের গড় মূল্য ৮২১ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। তবে এর পর থেকেই দাম কমতির দিকে রয়েছে। পরের প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সারের মূল্য নেমে আসে ৭৭৪ ডলার ২০ সেন্টে। এরপর কমতে কমতে গত মার্চে প্রতি টনের গড় মূল্য দাঁড়ায় ৩১৩ ডলার ৫০ সেন্টে। সে অনুযায়ী অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়ার দাম ৬১ দশমিক ৮১ শতাংশ কমেছে।
দারিদ্র্য কমেছে, বৈষম্য বেড়েছে
১৩ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
গত ছয় বছরে দেশের দারিদ্র্যের হার আরও কমেছে। এখন সার্বিক দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ছয় বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালে এ হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে দারিদ্র্য কমার গতি কমেছে, বৈষম্যও বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল বুধবার খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২–এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছে। জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের বিবিএস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিবিএসের উপপরিচালক এবং খানার আয় ও ব্যয় জরিপ প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, দেশে এখন অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ছয় বছর আগে যা ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। শহরের চেয়ে গ্রামে দারিদ্র্য বেশি। গ্রামে এখন দারিদ্র্যের হার সাড়ে ২০ শতাংশ, শহরে এই হার ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এ সময়ে বছরে গড়ে দশমিক ৯৩ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে দারিদ্র্য কমেছে। এর আগের ছয় বছরে অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে প্রতিবছর গড়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে দারিদ্র্য কমেছিল। অর্থাৎ দারিদ্র্য কমার গতি কমে গেছে।
অন্যদিকে মানুষের মধ্যে আয়বৈষম্য আগের চেয়ে বেড়েছে। বিবিএসের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে গিনি সহগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৯৯ পয়েন্ট। ২০১৬ সালে গিনি সহগ ছিল দশমিক ৪৮২ পয়েন্ট। সাধারণত দশমিক ৫০০ হলেই একটি দেশকে উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে দিক থেকে অতি সামান্য দূরে আছে বাংলাদেশ।
দেশের এক–তৃতীয়াংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত
১৬ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
দেশের মানুষের পরিবারপ্রতি ধার বা ঋণ করা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এক-তৃতীয়াংশ পরিবার ধার করে জীবন যাপন করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত বুধবার খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছে বিবিএস। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিবিএস মিলনায়তনে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির উপপরিচালক এবং খানার আয় ও ব্যয় জরিপ প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৭ শতাংশ পরিবার গত এক বছরে হয় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান, নয়তো বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ঋণ বা ধার করেছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপকালে গড়ে ৩৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ পরিবার ঋণ বা ধারের কথা জানিয়েছে। ২০১৬ সালের জরিপে ধার বা ঋণ করে চলা পরিবার ছিল গড়ে ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। সেই হিসাবে গত ৬ বছরে দেশে ধার করে চলা পরিবারের সোয়া ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি বেড়েছে।
দেশে মানুষের গড় আয়ু কমার যে ব্যাখ্যা দিল বিবিএস
১৭ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
কোভিডে মৃত্যুকে গড় আয়ু কমার কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এই প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন দেশে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর। এর আগের বছরের প্রতিবেদনের অনুযায়ী, তখন মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর। দেশের মানুষের গড় আয়ু আগের চেয়ে কমে গেছে।
আজ সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুর এই হিসাব দিয়েছে বিবিএস। তাদের করা বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস–২০২১ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে বিবিএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গড় আয়ু কমার ব্যাখ্যা দেন।
গড় আয়ু কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস–২০২১ প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, কোভিড ও কোভিড–পরবর্তী নানা জটিলতায় মানুষের মৃত্যু বেড়েছে। মৃত্যুজনিত কারণেই গড় আয়ু কমেছে।
এসইউভিতে আগ্রহ, বিক্রি বাড়ছে
১৯ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
বাংলাদেশের বাজারে স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকেলের (এসইউভি) বিক্রি বাড়ছে। ২০২২ সালে ১০ হাজার ২৪০টি এসইউভি নিবন্ধিত হয়েছে, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গাড়ি বিপণনকারী কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেই একটু বাড়তি আয়ের ক্রেতারা এখন সেডান কারের বদলে এসইউভি কেনার চেষ্টা করছেন। কারণ, এসইউভিতে চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। দূরের পথে যাত্রায় এই গাড়িকে বেশি নিরাপদ মনে করেন ব্যবহারকারীরা।
কত এসইউভির নিবন্ধন
বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে গত মার্চ পর্যন্ত মোট ৮৪ হাজার ৭৬৫টি এসইউভি নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর ৬৭ শতাংশই নিবন্ধিত হয়েছে ২০১১ সালের পর। নিবন্ধনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসইউভি নিবন্ধন বেশি বেড়েছে গত সাত বছরে। সবচেয়ে বেশি নিবন্ধিত হয় ২০২১ সালে ৭ হাজার ৬০২টি ও ২০২২ সালে ১০ হাজার ২৪০টি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১ হাজার ৯৮৭টি এসইউভি নিবন্ধন দিয়েছে বিআরটিএ।
ঈদযাত্রার বগি-সিট কমেছে সেখানেও ভিআইপির থাবা
১৯ এপ্রিল ২৩, সমকাল
রেলওয়ের জন্য হাজার কোটি টাকায় ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) এবং বগি (কোচ) কেনা হলেও ঈদযাত্রায় কমছে ট্রেনের আসন। গত ঈদুল আজহায় ঢাকা থেকে যাত্রা করা ৩৬ আন্তঃনগর ট্রেনে ৭৫টি অতিরিক্ত বগি যোগ করেছিল রেল। এবার দিতে পেরেছে ৫০টি। আগের বছরের চেয়ে ২৫ বগি কমে যাওয়ায় প্রায় দেড় হাজার আসন কমেছে ঈদযাত্রার ট্রেনে। রেলওয়ে সূত্রে এসব তথ্য পেয়েছে সমকাল।
আসন কমলেও ‘ভিআইপিদের’ টিকিট দিতে রেল এখনও উদারহস্ত। এবারের ঈদযাত্রায় শতভাগ অনলাইনে বিক্রির দাবি করা হলেও প্রচুর টিকিট সার্ভারেই দেওয়া হয়নি। তা সংরক্ষিত রাখা হয় মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, আমলাদের জন্য। একদিকে ঈদযাত্রার ট্রেনে আসন কমে যাওয়া, অন্যদিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের’ জন্য টিকিট সংরক্ষণ করায় বঞ্চিত হয়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, প্রতি ট্রেনে ছয় আসনের একটি ডাবল কেবিন, তিন আসনের দুটি সিঙ্গেল কেবিন, শীতাতপ এবং শোভন চেয়ার কামরার ১০টি করে আসন রেল মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অলিখিত নির্দেশে রাখা হয়েছে। আদতে রাখা হয়েছে আরও বেশি। আগের রেলমন্ত্রীর আমলে যেভাবে রেল ভবনে খাতা খুলে টিকিট বিলানো হতো, কয়েক বছর ধরে তেমনটা হচ্ছে না। শুধু ক্ষমতাবানরা পাচ্ছেন টিকিট।
বগি কেনা হচ্ছে, তবে আসন কমছে
২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে রেলে নজর দেয় আওয়ামী লীগ। গত ১৩টি বাজেটে রেলকে এক লাখ দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এই অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হলেও রেলে বগি ও আসন কমছে। যদিও রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে বগি ও আসনের সম্পর্ক নেই।
গত অক্টোবরে প্রকাশিত রেলওয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক দশকে ২১০টি ব্রডগেজ এবং ২৯০টি মিটারগেজ বগি কেনা হয়েছে। আরও ৪৫০ বগি ক্রয় প্রক্রিয়াধীন। অক্টোবরের পর চীন থেকে ৪৫টি এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৪০টি বগি এসেছে। সব মিলিয়ে ৫৮৫টি নতুন বগি কেনা হলেও ট্রেনের বহরে বগি ও আসন কমছে।
রেলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে আন্তঃনগর ট্রেনে বগি ছিল ৮৮৬টি। ওই বছরের ঈদুল ফিতরে মেরামত করে বহরে যোগ করা হয় ১৩৮টি বগি। আট বছর পর এসে, দেশের অভ্যন্তরে চলা ৫২ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেনের বগি ৭২২টি। ঢাকা থেকে ঈদযাত্রায় যে ৩৬ আন্তঃনগর ট্রেন চলবে, তাতে বগির সংখ্যা ৪৭৫টি। আর বাড়তি যোগ করা হবে ৫০টি। যদিও রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন মার্চে জানিয়েছিলেন, ৫৩টি বগি যোগ করা হবে। তবে বগির অভাবে তা পারেনি রেল।
বগির মতো কমছে আসনও। ২০১৮ সালের ঈদুল ফিতরে ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা ছিল ৩১। এতে আসন ছিল ২৫ হাজার ৩৪৫। পাঁচ জোড়া ঈদের বিশেষ ট্রেনে আসন ছিল ৩ হাজার ৮৯০ আসন। সব মিলিয়ে আসন ছিল ২৯ হাজার ২৩৫। গত পাঁচ বছরে পাঁচটি ট্রেন বাড়লেও আসন বাড়েনি। বিদেশ থেকে হাজার কোটি টাকায় বগি আমদানি করা হলেও এবারের ঈদযাত্রায় ৩৬ ট্রেনে আসন সংখ্যা ২৫ হাজার ৭৭৮। বিশেষ ট্রেন মিলিয়ে এ সংখ্যা ২৮ হাজারের কিছু বেশি।
২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরে ৩৩টি নিয়মিত এবং চারটি বিশেষ ট্রেনে আসন সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ২২৪। পরের দুই বছর করোনার কারণে ঈদযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে। গত বছরের ঈদযাত্রার ৩৬ ট্রেনে আসন ছিল ২৬ হাজার ৬৬৪, যা এ বছরের চেয়ে প্রায় এক হাজার বেশি। লাখো কোটি টাকা খরচ করে নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং ইঞ্জিন-বগি কিনলেও আসন কেন কমছে? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে।
চিনির দরে ‘ছিনিমিনি’ চলছেই
১৯ এপ্রিল ২৩, সমকাল
চিনির দর নিয়ে ‘ছিনিমিনি’ থামছেই না। আমদানি শুল্ক ছাড়ের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেজিতে ৩ টাকা কমিয়ে খোলা চিনি ১০৪ এবং প্যাকেটজাত ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু বাজারে চিনির দাম তো কমেইনি, উল্টো লাফিয়ে বেড়েছে।
তিন দিন আগে হঠাৎ সংকটের অজুহাতে খোলা চিনি ১৩০ টাকা হয়। এরপর কিছুটা কমলেও গতকাল মঙ্গলবার খুচরা বাজারে ফের ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বকেয়া ৪১৫৭ কোটি টাকা, বিপিসিকে তেল সরবরাহ না করার কথা জানাল ৭ বিদেশি প্রতিষ্ঠান
এপ্রিল ১৯, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী ৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে প্রায় ৩৯২ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। চিঠি দিয়ে সেই পাওনা আদায়ে বিপিসির ওপর চাপ প্রয়োগ করছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বকেয়া আদায়ের আগ পর্যন্ত জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা।
সর্বশেষ ইন্ডিয়ান অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (আইওসিএল) পাওনা আদায়ে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। আর পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড তাদের ২৯ দশমিক ০৩ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পাওনা প্রদানের জন্য গত ১৪ এপ্রিল চিঠি দিয়ে বিপিসিকে ২১ এপ্রিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
বিপিসি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিপিসির ফান্ড সংকট নেই। মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলার সংকটের কারণে এলসির (লেটার অব ক্রেডিট) মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি তেল সরবরাহ বাবদ বিপিসির কাছে পাওনাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ভিটল এশিয়া, চীনা প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির (ইএনওসি), ভারতীয় আইওসিএল, ভারতীয় নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল), সিঙ্গাপুরের পেট্রো চায়না ও ইন্দোনেশিয়ার বুমি সিয়াক পুসাকো (বিএসপি) উল্লেখযোগ্য।
বাসে ভাড়া বেশি তাই দলবেঁধে ট্রাকে ঈদযাত্রা
এপ্রিল ২১, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
রাত ১০টা বেজে ৪০ মিনিট। নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন প্রান্তিক সার্ভিস স্টেশন তেলের পাম্পে সারিবদ্ধ ৪টি পণ্যবাহী ট্রাক দেখা যায়। ট্রাকগুলোতে পণ্য নেই, তাতে চেপে বসেছেন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা।
ঈদ উপলক্ষে বাস ভাড়া বেশি। তাই কম ভাড়ায়, দ্রুত সময়ে বাড়ি পৌঁছাতে এ বিকল্প উপায় বেছে নিয়েছেন নিম্ন আয়ের লোকজন।
যাত্রী ও ট্রাক চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চারটি ট্রাকেরই শেষ গন্তব্য ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা। যাত্রীরাও সবাই আশেপাশের গ্রামের। তাদের অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জ শহরে দিনমজুরি কিংবা কোনো পোশাক কারখানায় কাজ করেন।
ময়মনসিংহের দাপুনিয়ার বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম। ৮ বছর ধরে নাপায়ণগঞ্জ শহরে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ভাড়াবাসায় থাকেন নগরীর দেওভোগ মাদরাসা এলাকায়। ঈদ উপলক্ষে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন তিনি। বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাক।
ব্রি-২৮ ধানে ব্লাস্ট রোগ, হাওরের কৃষকের মলিন ঈদ
এপ্রিল ২২, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
হাকালুকি হাওরের কৃষক সামসুল ইসলামের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭। হাওরে বর্গা চাষ করা ধান বেচেই পরিবার চালাতে হয় তাকে।কিন্তু, তার চাষ করা ধানের খেতে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ।
আজ শনিবার ঈদের দিন দ্য ডেইলি স্টারকে সামসুল ইসলাম বলেন, ‘গাজী বীজ না পাওয়ায় বর্গা ৪ কিয়ার খেতে (১ কিয়ার প্রায় ৩০ শতক) ব্রি-২৮ ধান লাগাইছিলাম। প্রতি কিয়ারে ১৫-১৮ মন ধান পাইমু আশা আছিল। যখন ধান আসার কথা তখন বেমার লাগি গেছে। গাছ ভালা, পাতা ভালা, কিন্তু ধান জ্বইল্লা শেষ।’
ধানখেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার মদনগৌরীর এই কৃষক। বলেন, ‘হয়ত চিকিৎসা করলে ভালা অইতো। কিন্তু কৃষি বিভাগের লোক আইছে না। তারার অবহেলায় আমরা আরও শেষ অই গেছি। গেল বছরও এই অবস্থা আছিল।’
‘মনে করছিলাম ঈদোর আগে ধান কাটিলিমু। ঈদটা বালা যাইব। কিন্তু এই ৪ কিয়ারে কাঁচি লাগানির পরিস্থিতি নাই। প্রতি কিয়ারে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হইছে। বড় বেকায়দায় পড়ি গেলাম। সারা বছর কিতা খাইতাম, চিন্তাত ঘুম লাগে না,’ বলেন সামসুল।
জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হাওরে ব্লাস্ট রোগে কিছু ধানের জমি নষ্ট হয়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা শুরু হয়েছে।’
কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মাথায় রেখে আগামীবার বীজ বিতরণ করা হবে। প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন। একজনকে দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব নয়। তবু আমরা চেষ্টা করছি।’
দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম
নদী দখল নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান হাওলাদার অভিযোগ করেছেন, কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর আত্মীয়স্বজন এবং তাঁকে যাঁরা চেয়ারম্যান বানিয়েছেন, তাঁরা সবাই নদী দখলদার। এসব দখলদারকে আড়াল করতে তিনি নদী দখলদারদের তালিকা বাতিল করে দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে নদী রক্ষা কমিশন এ তালিকা তৈরি করেছিল।
গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তব্য দিতে গিয়ে মুজিবর রহমান হাওলাদার এমন অভিযোগ করেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
১০৪টি ইটভাটার ১০৩টিই অবৈধ
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
মেহেরপুর জেলায় ইটভাটা রয়েছে ১০৪টি। এর মধ্যে মাত্র একটি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েছে। এই ছাড়পত্র পেতে আবেদন করেছেন ৮৫টি ভাটার মালিক। তাঁদের ভাটা পরিদর্শন করে শর্ত পূরণ না হওয়ায় এখনো ছাড়পত্র দেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর। এর ফলে জেলায় বৈধ ভাটা মাত্র একটি। এত বিপুলসংখ্যক অবৈধ ইটভাটা প্রশাসনের নাকের ডগায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ১৭ জানুয়ারি মুজিবনগর উপজেলায় খুলনা ও কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে ১০টি ইটভাটাকে মোট ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর গাংনী উপজেলার চারটি ইটভাটাকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করে উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর পৃথক অভিযান চালিয়ে এভাবে কেবল জরিমানা করেই দায় সারছে, কোনো অবৈধ ভাটা বন্ধ হচ্ছে না; বরং জরিমানার পর আরও জোরেশোরে ইট প্রস্তুত করতে দেখা গেছে অবৈধ ভাটাগুলোকে।
আ.লীগ ও জাসদ নেতারা মিলেমিশে পদ্মার বালু লুট
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
শুকিয়ে যাওয়া পদ্মার বুকে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি করে তোলা হচ্ছে মাটি ও বালু। সেই বালু পরিবহনে বানানো হয়েছে দীর্ঘ মাটির রাস্তা। গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের বাগগাড়ি এলাকায়ছবি: তৌহিদী হাসান
শুকনা মৌসুমে পদ্মার বুক খুঁড়ে অবৈধভাবে মাটি ও বালু তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক শ ট্রাক ও ট্রলিতে করে সেই মাটি ও বালু শহরে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রাক চলাচলের জন্য নদীতে বাঁধ দিয়ে বানানো হয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ মাটির রাস্তা। কোনোরকম ইজারা ছাড়াই কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় প্রায় এক মাস ধরে নদীর মাটি ও বালু লুটপাট চলছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও জাসদের নেতা–কর্মীরা এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অবশ্য গত রোববার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করার পর সন্ধ্যায় শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন সড়ক অবরোধ করে ভেড়ামারা শহর প্রায় অচল করে দেন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ভেড়ামারায় রাজনীতির মাঠে মহাজোটের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিরোধ সবচেয়ে বেশি। বিরোধে একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু পদ্মা নদী থেকে মাটি ও বালু লুটপাটে কোনো বিরোধ নেই, এখানে তাঁরা একে অপরের সঙ্গী।
নেতারা মিলেমিশে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের সাতটি স্থান থেকে প্রতিদিন বালু ও মাটি তুলে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন কয়েক শ ট্রাকে মাটি ও বালু তুলে ৭ থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। সেই টাকা নেতা–কর্মীদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা হয়। ব্যক্তিমালিকানাধীন কৃষিজমি থেকেও জোর করে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
আমরা কী পাপ করেছি মেয়রসাব, প্রশ্ন তেলেগু নারীর
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধলপুরে তেলেগু সম্প্রদায়ের ১৩০টি পরিবারকে কলোনি ছেড়ে যেতে বলেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এই সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের উদ্দেশে তেলেগু সম্প্রদায়ের নারী রামনাম্মা বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমাদের ঘুম নেই, খাওয়া নেই। আমরা কী পাপ করেছি মেয়রসাব? আমরা কী অপরাধ করেছি? এই মাটিতে জন্ম কি আমাদের ভুল?’
রামনাম্মা বলেন, ‘আমরা এখন যেখানে বসবাস করছি, আগে সেখানে পা দিলে রক্ত আসত। এই মাটি এখন শক্ত হয়েছে। আর প্রশাসনের চোখে পড়ে গেছে। আমরা কোথায় যাব? আপনারা যদি এই জায়গা নিতে চান, বিষ দিয়ে আমাদের তেলেগু সবাইকে মেরে ফেলেন। তারপরে জায়গা নেন।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে দেশের আটটি নাগরিক সংগঠন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে এই তেলেগু নারী কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেন।
‘আউটফল তেলেগু কলোনির ভূমিহীন ১৩০টি পরিবারকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করার পাঁয়তারার প্রতিবাদে’ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, নিজেরা করি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), ব্লাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, এএলআরডি ও ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী।
৯ ফেব্রুয়ারি তাঁদের দুই দিনের মধ্যে এই এলাকা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সিটি করপোরেশন। তারপর স্থানীয় কাউন্সিলর ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একই নির্দেশ দেন। এ কথা ছড়িয়ে পড়লে কলোনিজুড়ে উচ্ছেদ–আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শহর পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় তাঁরা বসবাস করে আসছিলেন। ১৯৮২ সালে একটি এনজিওর মাধ্যমে টিকাটুলী থেকে তাঁদের সায়েদাবাদ হুজুরবাড়ী এলাকায় আনা হয়। পরে হুজুরবাড়ীর জায়গাটি এরশাদ সরকার লিখে দিয়ে ১৯৯০ সালে সরকারিভাবে তাদের ধলপুরে আনা হয়, যা পরবর্তী সময়ে মেথর কলোনি নামে পরিচিতি লাভ করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এএলআরডির ব্যবস্থাপক (প্রোগ্রাম) রফিক আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বস্তি উচ্ছেদ মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে, পুনর্বাসন ছাড়া কোনো বস্তি বা কলোনি উচ্ছেদ করা যাবে না। কারণ, সংবিধানে জনগণের বাসস্থানের অধিকার রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত। এখানে বৈধভাবে বসবাসরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উচ্ছেদ হবে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
রাত ৮টার পর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে তোলা হয় প্রায় ২৩ কোটি টাকা
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া ও উত্তোলন করা যায়। তবে ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা রাত ৮টার পর এক গ্রাহককে নগদ ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে গত ২৮ ডিসেম্বর।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, নির্ধারিত সময়ের পর নগদ লেনদেন করে ব্যাংকের কর্মকর্তারা গুরুতর অনিয়ম করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ভাগ্যবান যে গ্রাহক এই সুবিধা পেয়েছে, সেই কোম্পানির নাম ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড, যার কর্ণধার আলী হায়দার রতন। ২৮ ডিসেম্বর বিকেলে ব্যাংকটির পর্ষদে গ্রাহকের ঋণ নবায়ন হয়। এরপর ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত শাখায় পাঠানো হয়। এরপর রাত ৮টা ২৩ মিনিট থেকে ৯টা ৪ মিনিটের মধ্যে তোলা হয় টাকা।
কালোটাকার সুযোগ আর কত
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম গত বুধবার সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে এক প্রাক্-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘শেয়ারবাজারের কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেই বাজার চাঙা হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।’ তিনি সত্যি কথাই বলেছেন। কারণ, তাঁর আমলেই গত দুই অর্থবছরে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাড়া একদম কম।
২০২০-২১ অর্থবছরে ২৮৬ জন ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫১ জন করদাতা এই সুযোগ নিয়েছেন। এতে সব মিলিয়ে ৪৩০ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে গেছে। বাজারও আশানুরূপ চাঙা হয়নি।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে এ পর্যন্ত মোট ২১ বার নানাভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে সুযোগটি মিলেছে ৪০ বছর। সাধারণত দেশের অভ্যন্তরে উপার্জিত কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেওয়া হয় দেশের বাইরে পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগ। কিন্তু এখনো সুযোগটি কেউ নেননি।
৪৭ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে
১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার প্রথমবারের মতো কালোটাকার মালিকদের বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেন। ওই সময়ে এক শ টাকার নোট বাতিল করা হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান তাঁর সামরিক শাসনামলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেন। পরে একে একে এরশাদ সরকার, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার (১৯৯৬-২০০১), বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকার (২০০১-২০০৬), তত্ত্বাবধায়ক সরকার (২০০৭-০৮) এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদেই সুযোগটি দেওয়া হয়। শুধু ১৯৯১-৯৬ সালের বিএনপি সরকারের আমলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান প্রথম বাজেট বক্তৃতায় এই ধরনের সুযোগ না দেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু পরের মেয়াদে (২০০১-০৬) তিনি কথা রাখতে পারেনি।
এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, এই পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে, মানে সাদা হয়েছে। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ১৫ বছরে মাত্র ৯৫ কোটি টাকা সাদা হয়। আওয়ামী লীগের শেষ তিন মেয়াদে (২০০৯-২৩) প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে।
রাতের অন্ধকারে কৃষি জমির মাটি লুট
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
পরিবেশ আইন অমান্য করে কয়েক মাস ধরে গাজীপুর নগরের বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে কৃষিজমির উর্বর মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। এতে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। সন্ধ্যা হতেই চলাচল শুরু করে মাটিভর্তি শতাধিক ট্রাক। চলে রাতভর। মাটিবাহী ট্রাকের প্রভাব পড়ছে সড়কগুলোতেও। মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়ে চলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী ভূমি কার্যালয়ের আওতাধীন বাইমাইল, কড্ডা, ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকার কৃষিজমিগুলো থেকে রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে মাটি। বছর দশেক ধরে চলছে এই ধরনের মাটিকাটা। সম্প্রতি তা বেড়েছে।
গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা আসলাম হোসেন বলেন, ভাওয়াল মির্জাপুর বাজারের উত্তর পাশে তুরাগ নদের পারের এলাকা থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে কৃষিজমি। এ ছাড়া পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে মাটি কেটে নিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
গাজীপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের ১০ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফসলি জমির মাটি কাটা তাই বেআইনি।
বাইমাইল এলাকায় তুরাগ নদের পাড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ওই এলাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপের দক্ষিণ পাশে তুরাগ নদ ঘেঁষে ফসলি জমি থেকে প্রতিদিনই মাটি লুট করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা ভেকু (এক্সকাভেটর) দিয়ে কোথাও ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এসব গর্তে পাশের কৃষিজমির মাটিও ভেঙে পড়ছে। কোনো কোনো জমির মালিক টাকার লোভে মাটি বিক্রি করলেও অধিকাংশ কৃষক বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করছেন।
মাটি ব্যবসায়ীদের লুট থেকে বাদ যাচ্ছে না খাসজমি, খাল ও নদ-নদীর তীর। এসব মাটির শেষ ঠিকানা হচ্ছে ইটভাটা। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় এরই মধ্যে শতাধিক একর কৃষিজমি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। জমিগুলোয় বোরো ধান আর শর্ষে চাষ করা হতো। গভীর গর্ত করে মাটি কাটায় ওই সব জমিতে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
গাজীপুরে বাইমাইল এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ওই এলাকায় কয়েক বিঘা জমির ওপর ধান চাষ ও বিভিন্ন সবজি লাগিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। রাতের আঁধারে শিপন আহমেদ নামের এক মাটি ব্যবসায়ী কৃষিজমি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পাশের কৃষিজমির মাটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মাটিকাটা বন্ধ না করলে একসময় ওই এলাকা থেকে কৃষিজমি হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।
কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়টি শিকার করে শিপন আহমেদ বলেন, ‘যাঁরা মাটি বিক্রি করছেন, তাঁরা জেনেশুনেই বিক্রি করছেন। আর আমরা কিনে নিয়ে আশপাশের ইটভাটামালিকদের কাছে বিক্রি করছি। এই এলাকার মাটি ইটভাটার জন্য খুবই উপযোগী মাটি।’
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–তে মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ বিষয়ে বলা হয়েছে, অন্য আইনে যা–ই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে গাজীপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, খোঁজ নিয়ে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হবে।
৩৩৫৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা পেল অ্যাননটেক্স
০১ মার্চ ২০২৩, বিজনেস পোস্ট অনলাইন বাংলা
তিন হাজার ৩৫৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা পেয়েছে বহুল আলোচিত সমালোচিত অ্যাননটেক্স গ্রুপ। পুরো ঋণের টাকা পরিশোধের শর্তে পোশাক খাতের গ্রুপটিকে এই সুবিধা দিয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক।
গ্রুপটির সুদবাবদ মোট তিন হাজার ৩৫৯ কোটি টাকার মধ্যে ২০৮৩ কোটি টাকা আরোপিত সুদ; ৯৭২ কোটি টাকা অনারোপিত সুদ এবং ৩০২.৯৯ কোটি টাকা দন্ড সুদ।
গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ অ্যাননটেক্সকে এই সুদ মওকুফ সুবিধা দিয়েছে বলে বিজনেস পোস্টকে জানান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, চলতি বছরের জুনের মধ্যে গ্রুপটি তাদের সকল দায় দেনা পরিশোধ করে দিবে। ইতোমধ্যে কোম্পানিটি ১৪১ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে বলে জানান ব্যাংক কর্মকর্তারা।
২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অ্যাননটেক্স গ্রুপের ২২ কোম্পানির মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৫২৭.৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। এই ঋণ প্রদানে একক গ্রাহক ঋণসীমা লঙ্ঘণ করেছিল ব্যাংকটি ।
অনিয়মের মাধ্যমে প্রদানকৃত এই ঋণ ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থ্য অবনতির দিকে নিয়ে গেছে। গত কয়েক বছর ঋণের কিস্তি অনিয়মিত হওয়ার পর, চলতি বছরের জুনের মধ্যে অ্যাননটেক্স ঠিক কীভাবে এই বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যাংকিং খাত বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিজনেস পোস্ট জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুস সালাম আজাদের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জনতা ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এস আলম গ্রুপ অ্যাননটেক্সের ঋণের দায় গ্রহণ করছে। মাহফুজুর বলেন, আননটেক্স আগামী ছয় মাসের মধ্যে জনতা ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন শেষ করবে।
এস আলম গ্রুপ অ্যাননটেক্সের ঋণের দায়দেনা কেন কিনবে? জিজ্ঞাসা করা হলে, মাহফুজুর বলেন, “গ্রুপটি আমাদের ব্যাংকের দায়সহ অ্যাননটেক্সের বেশ কয়েকটি কোম্পানি কিনেছে। কিন্তু আমরা এই বিষয়ে এস আলম গ্রুপ কী ভাবছে তা জানি না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপত্তি, তবু হাজার কোটি টাকার ঋণ
০২ মার্চ ২৩, সমকাল
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা সমন্বয়কের লিখিত আপত্তি উপেক্ষা করে বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এক সভাতেই হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ অনুমোদন ও নবায়ন করা হয়েছে। অন্যদিকে, সমন্বয়ককে না জানিয়ে সরাসরি ১০টি স্মারক উপস্থাপন করা হয় পর্ষদ সভায়। নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ মানা হচ্ছে না। ব্যাংকটির সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী সমন্বয়কের পরামর্শ মেনে চলার কথা। সম্প্রতি এসব অনিয়ম তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন ব্যাংকটিতে নিযুক্ত সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নূরুল আমীন।
সুশাসনের ঘাটতিসহ কয়েকটি কারণে গত ডিসেম্বরে ওয়ান ব্যাংককে ‘দুর্বল’ চিহ্নিত করে নিবিড় তদারকির জন্য সমন্বয়ক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির প্রতিটি সভার আগে ব্যাংক থেকে পাঠানো স্মারক পর্যালোচনা করে এমডি বরাবর নিজের মতামত ও পরামর্শ দেন সমন্বয়ক। সমন্বয়ক নিয়োগের পর পর্ষদের বৈঠক হয় গত ২৩ জানুয়ারি। এ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়কের অনেক পরামর্শই ব্যাংকটি মানেনি
অযোগ্য পাইলট নিয়োগের মাশুল দিচ্ছে বিমান
১ মার্চ, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর উড়োজাহাজ উড্ডয়নের জন্য চুক্তিভিত্তিক পাইলটদের একটি ব্যাচ নিয়োগ দিয়েছিল। নিয়োগের সময় বিমান দাবি করেছিল যে তাদের পাইলট সংকট থাকায় অবিলম্বে এই নিয়োগ দিতে হবে।
এর ১ বছর পরে নিয়োগকৃত ১৪ জন পাইলটের মধ্যে মাত্র ৫ জন উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করেছে। বাকিরা আটকে আছেন জাল সনদ, অযোগ্যতা ও লাইসেন্সিং পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে।
সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।
বিমান তাদেরকে দিয়েছে মোটা অংকের বেতন, সেইসঙ্গে প্রশিক্ষণের জন্য খরচ করেছে বিপুল অর্থ; যার সবই গেছে জলে।
অপারেশন ম্যানুয়াল অনুযায়ী, বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭ উড়তে ফার্স্ট অফিসারদের কমপক্ষে ৩০০ ঘণ্টার ফ্লাইং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্তদের কারোই সেই অভিজ্ঞতা নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ তুলেছে দুর্নীতির। তারা গত বছর বলেছিল, ‘কেন অযোগ্য পাইলটদের চুক্তিতে নিয়োগ দিতে হবে, যেখানে যোগ্য পাইলটদেরই পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ আছে?’
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) সরকারি চিঠিতে এটিকে ‘নিরাপত্তা উদ্বেগ’ হিসেবে অভিহিত করেছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে বিমানকে তদন্ত করতে বলেছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারির বিমানের একটি নথি অনুযায়ী, নিয়োগ পাওয়া ১৪ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জন ক্যাপ্টেন এবং ১ জন ফার্স্ট অফিসার উড়োজাহাজটি ওড়ানোর সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
বিমান অবশ্য এ বিষয়ে একের পর এক নিয়ম লঙ্ঘন করছে এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারা পাইলটদের রক্ষা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় ফার্স্ট অফিসার সাদিয়া আহমেদের বিষয়টি। একটি সাম্প্রতিক তদন্তে জানা গেছে, তিনি জাল শিক্ষাগত সনদ জমা দিয়েছেন। ওই জাল সনদ অনুযায়ী, তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন বিজ্ঞান শাখা থেকে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তিনি শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে মানবিক শাখা থেকে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছিলেন।
সিএএবির নিয়ম অনুযায়ী, বাণিজ্যিক পাইলটদের বাধ্যতামূলকভাবে পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতসহ এইচএসসি বা সমমানের সনদ থাকতে হবে।
সাদিয়া বিমানের চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের স্ত্রী।
এই ১৪ পাইলটের মধ্যে সাদিয়াই একমাত্র পাইলট নন যিনি জাল সনদ দিয়েছেন।
জাল এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স (এটিপিএল) জমা দেওয়ায় ফার্স্ট অফিসার আল মেহেদী ইসলামের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। পাইলট ইন কমান্ড হতে হলে এই সনদ প্রয়োজন হয়।
লাইসেন্সটিতে সিএএবির ফ্লাইট সেফটি বিভাগের সাবেক সহকারী পরিচালক শিরিন সুলতানার জাল সই ছিল।
সীমা অক্সিজেন প্লান্টের সীমা ছাড়ানো অনিয়ম
০৬ মার্চ ২৩, সমকাল
বিস্ফোরণে ছয় জীবন কেড়ে নেওয়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্লান্টের পায়ে পায়ে ছিল অনিয়ম। ওই প্লান্টে শুধু অক্সিজেন সিলিন্ডারই ছিল না, অনুমোদন না থাকার পরও ছিল কার্বন ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেন সিলিন্ডারও। নিয়ম অনুযায়ী, এসব গ্যাস সিলিন্ডার আলাদা কক্ষে থাকার কথা। তবে প্লান্টে বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা অক্সিজেনের পাশাপাশি একসঙ্গে পেয়েছেন কার্বন ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেন সিলিন্ডার। অনিয়মের এখানেই শেষ নয়, কারখানাটিতে অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা ছিল না। হয়নি কখনও অগ্নিনির্বাপণ মহড়াও। লাইসেন্স আছে কিনা তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।
এদিকে বিস্ফোরণে এক দিন পর ঘটনাস্থলে মালিক পক্ষের দেখা মিলেছে। তবে তাদের বক্তব্যও ছিল দায়সারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। মালিক পক্ষ ও তদারককারী সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এই মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না।
দুবাইয়ে যেভাবে সম্পদ বাড়ছে বাংলাদেশিদের
১১ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
বাংলাদেশের রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় সংগ্রহে ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় শীর্ষ উৎস ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটি এ তালিকার তৃতীয় স্থানে নেমে যায়, তার জায়গা দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আর হারানো স্থান ফিরে পায়নি দেশটি। কারণ, আরব আমিরাতের কয়েকটি শহর এরই মধ্যে হয়ে উঠেছে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের অন্যতম স্থান। অনেকেই দেশ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ নিয়ে সেখানে বিনিয়োগ করছেন। এ কারণে ইউএই থেকে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসাও কমে গেছে, যা দেশে ডলার–সংকট তীব্র করেছে।
সরেজমিনে গত দুই সপ্তাহে ইউএইর দুবাই, শারজাহ, আবুধাবি ও আজমান রাজ্য ঘুরে জানা গেছে, বাংলাদেশিরা এসব জায়গায় নিজের ও অন্যের নামে নিজস্ব ভিলা, ফ্ল্যাট, ছোট হোটেল, তারকা হোটেলসহ নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন। এসব বিনিয়োগে নিজেদের আড়াল করে রাখছেন অনেকেই। এ জন্য তাঁরা বাংলাদেশের পরিবর্তে আলবেনিয়া, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব ব্যবহার করেছেন। এভাবে ইউএইর কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ ‘পাম জুমেইরা’, জুমেইরা, সিলিকন ওয়েসিস, এমিরেটস হিল, দুবাই মেরিনা ও বিজনেস বের মতো অভিজাত এলাকাগুলোতেও নিজস্ব বাড়ি ও তারকা হোটেল গড়ে তুলেছেন কেউ কেউ। এসব এলাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনীদেরও সম্পদ রয়েছে।
অভিজাতদের বন্যপ্রাণীর শখে বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশ
১৪ মার্চ, ২০২৩, বণিক বার্তা
জাতীয় সংসদের এক সদস্যের বাগানবাড়ি থেকে গত বছর তিনটি হনুমান জব্দ করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বিপন্ন প্রজাতির এ হনুমান লালন-পালন করা আইনে নিষিদ্ধ হলেও তা জানতেন না বলে সে সময় ওই সংসদ সদস্য জানিয়েছিলেন।
শুধু ওই সংসদ সদস্য নয়, দেশের বিত্তশালী সম্প্রদায়ের অনেককেই এমন অননুমোদিতভাবে বন্যপ্রাণী পুষতে দেখা যায়। কারো কারো বাড়িতে শোভা পায় বন্যপ্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (যেমন গণ্ডার বা হরিণের শিং, হাতির দাঁত, বাঘছাল ইত্যাদি)। কেউ শখ পূরণ করতে গিয়ে বা কেউ আভিজাত্যের প্রদর্শন হিসেবে এ ধরনের বন্যপ্রাণী বা প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রাণী বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বড় একটি অংশ অবৈধভাবে সংগৃহীত। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বিদেশ থেকে আনা হয়েছে পাচার বা অননুমোদিত আমদানির মাধ্যমে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে মালি থেকে আনা চারটি বিপন্ন প্রজাতির গ্রিভেট বানর আটক করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ফ্রেইট ইউনিট। অননুমোদিতভাবে আমদানীকৃত বানরগুলোকে নিয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটকে চিঠি পাঠান বিমানবন্দর কর্মকর্তারা। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা সেগুলোকে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে কোয়ারেন্টিনের জন্য ছেড়ে দেন। এ জাতীয় বানরের একেকটির মূল্য সাড়ে ৪ হাজার ডলার বা তার বেশি।
এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী পাচার কার্যক্রমের বড় একটি কেন্দ্র হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। বেশকিছু গবেষণায় এর সপক্ষে নানা পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। বন্যপ্রাণী চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুটে সরবরাহকারী ও গন্তব্য—দুই ভূমিকাই পালনের অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশী চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে। আবার দেশের মধ্যেই তারা গড়ে তুলেছে বন্যপ্রাণী কেনাবেচার বাজার, যার ক্রেতাদের বড় অংশ হলো অভিজাতরা।
তাদের এ শখ পূরণ অব্যাহত থাকলে বিষয়টি যেকোনো সময়ে বাংলাদেশের জন্যও বড় বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশবাদী ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ-সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, বিভিন্ন দেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এখন বন্যপ্রাণী চোরাচালান প্রতিরোধে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে। চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রকে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপসহ নানা পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। চোরাচালান প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণে বিভিন্ন দেশকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে নানা বিড়ম্বনার মুখেও পড়তে হচ্ছে।
রপ্তানি পণ্যের আড়ালে ৩৮২ কোটি টাকা পাচার ৪ প্রতিষ্ঠানের
১৪ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
চারটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে ৩৮২ কোটি টাকা পাচার করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি করা পণ্য থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আর দেশে ফেরেনি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আলম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বলছে, ওই চারটি প্রতিষ্ঠান হলো সাবিহা সাইকি ফ্যাশন, এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন, ইমু ট্রেডিং করপোরেশন ও ইলহাম ট্রেডিং করপোরেশন। এসব প্রতিষ্ঠান টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, হুডিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়ায় রপ্তানি করেছে।
ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা মেরে আমেরিকায় পালালেন আমজাদ
১৯ মার্চ, ২০২৩, বাংলাদেশ প্রতিদিন
ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা মেরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছেন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন। পাচার করা অর্থে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ছাড়াও একাধিক বাড়ি কিনে সেখানেই বসবাস করছেন। নানা রকম জালিয়াতির মাধ্যমে আমানতকারীদের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন দেশে পাচারের তথ্য উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন লকপুর গ্রুপের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন। চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি চার ব্যাংক থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। ব্যাংকের টাকা তিনি একা মারেননি, এ কাজে ব্যবহার করেছেন স্ত্রী, কন্যা, ভাতিজি ও লকপুর গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও।
এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন ব্যাংকটির খুলনা ও কাটাখালী শাখা থেকে নামে-বেনামে প্রায় ২৭২ কোটি টাকা সরিয়েছেন। ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে টাকা তোলার পাশাপাশি কর্মচারীদের নামেও তিনি ঋণ নিয়েছেন। আবার করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা তহবিল থেকেও শ্রমিকদের বেতনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে অতিরিক্ত টাকা তুলেছেন। এস এম আমজাদ হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলনা ও বাগেরহাটের কাটাখালীকেন্দ্রিক হওয়ায় তিনি ঢাকার কোনো শাখায় অনিয়ম না করে বেছে নিয়েছেন খুলনা ও কাটাখালী শাখাকে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানান, এস এম আমজাদ হোসেনের ভাতিজি মাহফুজা খানম রিশাকে চেয়ারম্যান করে গঠিত কোম্পানি আলফা এক্সেসরিজের নামে ৪৮ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয় ব্যাংকটির ৪৫তম পর্ষদ সভায়। আলফা এক্সেসরিজের নামে নেওয়া ঋণের পুরো সুবিধাভোগী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন লকপুর গ্রুপ। আলফা এক্সেসরিজকে সব মিলিয়ে ২০০ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দিয়েছে এসবিএসি ব্যাংকের কাটাখালী শাখা। ঋণের পুরোটাই এখন খেলাপি।
২০১৬ সালের ২ জুন এস এম আমজাদ হোসেন খুলনা বিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের খুলনা শাখা থেকে ৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। খুলনা বিল্ডার্সের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক আমজাদ। বাকি ৪৯ শতাংশ শেয়ার তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের নামে। নথিপত্রে খুলনা বিল্ডার্সের ব্যবসার ধরন হিসেবে নির্মাণ ও আমদানি-রপ্তানির কথা বলা হলেও সেখানে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন এসবিএসি ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে এসবিএসি ব্যাংকের খুলনা শাখা থেকে ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি লকপুর গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে ২২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে ৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের জোগান দেওয়া হয় সাউদার্ন ফুড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে, যেটির চেয়ারম্যান আমজাদের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। আর তার ভাই এস এম আবুল হোসেন আছেন প্রতিনিধি হিসেবে। কাটাখালী শাখায় এস এম আমজাদের নামে ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ঋণ রয়েছে। সেটিও এখন খেলাপি।
এস এম আমজাদ হোসেন ও এসবিএসি ব্যাংকের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন মিলে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খুলে নিজেদের ব্যাংকের বিজয়নগর শাখা থেকে ২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এ ঋণের ৮ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন আমজাদ হোসেন। এস এম আমজাদ হোসেন ও তার স্ত্রী-কন্যার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নিজ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি আরও তিনটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৭১২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন আমজাদ হোসেন। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের খুলনা করপোরেট শাখা থেকে লকপুর গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন পলিমারের নামে ১৫১ কোটি, মুনস্টার পলিমারের নামে ৯০ কোটি ৮১ লাখ ও বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিংয়ের নামে ৯৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ঋণের পুরোটাই খেলাপি। এই অর্থ আদায়ে মামলাও করেছে ব্যাংক। দেশের একটি শীর্ষ বেসরকারি ব্যাংক থেকে ‘রূপসা ফিশ কোম্পানি’ নামে লকপুর গ্রুপের অন্য এক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৩৭৪ কোটি টাকার ঋণপত্র খুলে পুরোটাই পাচার করেছেন আমজাদ হোসেন। এসব ঋণের টাকা তিনি পরিশোধ করছেন না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন আমজাদ হোসেন। আমেরিকা, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। পাচার করা অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে টাকা সরিয়েছেন।
ব্যাংক চলছে ধারে, তবু অ্যাননটেক্সে উদার জনতা
২০ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
তারল্যসংকটে পড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ধার করতে হচ্ছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংককে। গত এক বছরে বেড়েছে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণও। এমন কঠিন সময়ে ব্যাংকটির অন্যতম বড় গ্রাহক অ্যাননটেক্সের ঋণের ৩ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে দিয়েছে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
ব্যাংকটির পর্ষদের শর্ত হলো, ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঋণটি নিয়মিত থাকবে। এরপর জুন মাসের মধ্যে অ্যাননটেক্সকে ৪ হাজার ৮২০ কোটি টাকা শোধ করতে হবে। শোধ করতে না পারলে অ্যাননটেক্সের ঋণ বিরূপ মানে খেলাপি অবস্থায় চিহ্নিত করবে জনতা ব্যাংক। গত বছরের ডিসেম্বের এই সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকটি।
এর আগে ন্যাশনাল ব্যাংক চট্টগ্রামের একটি গ্রুপের ২ হাজার ১৯৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করে। এরপর থেকে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির তারল্যসংকট আরও প্রকট হয়। ওই একই পথ অনুসরণ করছে জনতা ব্যাংক।
অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ ব্যাংক খাতে বেশ আলোচিত বিষয়। ২০২০ সালে জাতীয় সংসদে পেশ করা শীর্ষ ঋণখেলাপিদের তালিকায় ১ম স্থানে ছিল গ্রুপটি। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ১৮টি প্রতিষ্ঠান খুলে জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নেন এসবের প্রকৃত মালিক মো. ইউনুছ ওরফে বাদল একাই। সুদসহ পরে যা বেড়ে হয় ৮ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা।
কী প্রক্রিয়ায় হচ্ছে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাননটেক্সের বিপুল পরিমাণ সুদ মওকুফের ধারণাটি এসেছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের অনেকটা একই রকম উদ্যোগের ধারণা থেকে। ন্যাশনাল ব্যাংক ২০২১ সালে চট্টগ্রামের একটি গ্রুপের সাত গ্রাহকের ২ হাজার ১৯৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করে দেয়। এরপর ওই সাত প্রতিষ্ঠান ৪ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা পরিশোধ করে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে বের হয়ে যায়। বিভিন্ন শর্ত দিয়ে এক দিনেই সাত গ্রাহকের সুদ মওকুফ করার বিষয়ে তখন অনাপত্তি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
যে সুদ মওকুফ করা হয়েছিল, তা আরোপিত হয়েছিল ১০ বছরে। ন্যাশনাল ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার গুলশান শাখা ২০০৩ সাল থেকে বিভিন্ন সময় এই সাত প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, চট্টগ্রামের যে গ্রুপের সুদ মওকুফ করেছিল ন্যাশনাল ব্যাংক, সেই গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাননটেক্স গ্রুপ। কয়েকটি ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে ওই গ্রুপের হাতে। অ্যাননটেক্স গ্রুপের সব কোম্পানির মালিকানা নেওয়ার বিনিময়ে সুদ মওকুফের মাধ্যমে ঋণ শোধ করার আশ্বাস দেয় গ্রুপটি। জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এতে সায় দেন। এরপর সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
তবে ইসলামী ব্যাংকের পর শরিয়াহভিত্তিক আরও কয়েকটি ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়ায় সেই উদ্যোগ আপাতত থমকে যায় বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। ফলে অ্যাননটেক্সের সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রামের গ্রুপটির একজন কর্মকর্তা জানান, ইসলামী ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অ্যাননটেক্স গ্রুপের কোম্পানিগুলো কেনার সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে।
হাজার টাকার বাদামের আমদানিমূল্য ১৯৬ টাকা
০২ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
খুচরা বাজারে তুরস্কের মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। অথচ এ খেজুর আমদানি হচ্ছে সর্বনিম্ন ১০৬ থেকে ২৬৫ টাকায়। আবার প্রতি কেজি এক হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হওয়া মরিয়ম কিংবা আজওয়া খেজুরের আমদানি দরও ১০০ থেকে ১০৬ টাকা। সাধারণ মানের খেজুর আমদানির সর্বনিম্ন দর প্রতি কেজি ১৪ থেকে ৫৩ টাকা।
খেজুরের মতো এমন অস্বাভাবিক কম দর আছে কাজুবাদামেও। ভিয়েতনাম থেকে আনা কাজুবাদামের কেনা দাম প্রতি কেজি ১২৭ থেকে ১৯৬ টাকা। কিন্তু বাজারে এই কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি এক হাজার টাকায়।
বাজারে দামের তুলনায় এই দর দেখে নিশ্চয়ই চোখ কপালে উঠছে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কাগজপত্রে এমন দরে এসব পণ্য বিদেশ থেকে কেনার কথা কাস্টম হাউসকে জানাচ্ছেন আমদানিকারকেরা। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কায়নের সময় দর কিছুটা বাড়িয়ে ধরছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে সাবেক সচিবের পাঁচ বই কেনার নির্দেশ
০৫ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্নারে পাঁচটি বই কিনতে চিঠি পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সব বই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সাবেক সচিব মুন্শী শাহাবুদ্দীন আহমেদের লেখা।
বঙ্গবন্ধুর ১০০ ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর ৬-দফা বাঙালির মুক্তির সনদ, বঙ্গবন্ধুর বাজেট ১৯৭১-১৯৭৫, বঙ্গবন্ধুর উক্তি সংগ্রহ এবং মানবতার জননী শেখ হাসিনা—এই পাঁচটি বইয়ের মোট দাম ৩ হাজার ১৭৩ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি–বেসরকারি কলেজ এবং উচ্চবিদ্যালয়গুলোকে বইগুলো কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
দেশে ৬২১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬২৫টি সরকারি কলেজ রয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত এই চিঠি সংগ্রহ করেছেন।
ব্যাংকের টাকায় বিলাসী জীবন তাঁর
০৯ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর হ্যামলেট টাওয়ারে অফিস তাঁর। পরিবার নিয়ে থাকেন আরেক অভিজাত এলাকা গুলশানে। চড়েন দামি গাড়িতে। ব্যবসায়ী পরিচয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকায় এমন বিলাসী জীবন যাপন করেন। তিনি সেলিম চৌধুরী। সেলিম ও তাঁর স্বজনদের কাছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পাবে ৪টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে সেলিম ও তাঁর স্বজনেরা পরিশোধ করেননি। ব্যাংকের মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কিন্তু তাঁরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেলিম চৌধুরী বিপিএলে দলও কিনেছিলেন। ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত থাকায় ২০১৪ সালে তাঁর দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসকে বিপিএল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।
বাফুফের কেনাকাটায় যেসব জালিয়াতি ধরেছে ফিফা
১৫ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
আর্থিক জালিয়াতির দায়ে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছর নিষিদ্ধ ও ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানা করার আগে দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানি কার্যক্রম চালিয়েছে ফিফা। মোট ৪টি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে ধারা ১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ধারা ১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব), ধারা ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) ও ধারা ২৮ (তহবিল তছরুপ ও অপব্যবহার)।
এর মধ্যে প্রথম তিনটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিফার স্বাধীন এথিকস কমিটির বিচারিক চেম্বার। কেনাকাটা ও ফিফার তহবিল অপব্যবহার নিয়ে আবু নাঈম সোহাগকে পাঠানো ৫১ পৃষ্ঠার চিঠিটি ফিফার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। যে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বাফুফে ও এএফসিকে।
যেসব অনিয়মের জন্য সোহাগের এই শাস্তি, সব কটি ঘটনা ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে। যেটির তদন্ত শুরু হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। গত বছর অক্টোবরে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ফিফার সদর দপ্তরে শুনানি হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। যেখানে সোহাগ ও তাঁর পক্ষে চারজন আইনজীবী অংশ নেন।
বাফুফেকে দেওয়া ফিফার তহবিলের ব্যবহার নিয়েও বেশ কিছু অসংগতি ধরা পড়েছে ফিফার তদন্তে। কেনাকাটায় চারটি অনিয়মের কথা বিস্তারিত উল্লেখ করেছে ফিফা। এখানে থাকল শুধু সেই অংশটাই—
ক্রীড়া পরিধেয় সামগ্রী কেনা
২০২০ সালের জুনে আবাসিক ক্যাম্প ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ম্যাচের জন্য কিছু ক্রীড়া পরিধেয় সামগ্রী ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটি। এই কেনাকাটায় দরপত্র জমা দেয় স্পোর্টস লিংক, স্পোর্টস কর্নার ও রবিন এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান। বিডিংয়ে মালামাল সরবরাহের কাজ পায় স্পোর্টস লিংক। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ৩০ হাজার ২৭ ডলার (প্রায় ৩২ লাখ টাকা) মূল্যের পণ্য সরবরাহের কার্যাদেশ দেন সোহাগ।
কন্ট্রোল রিস্ক গ্রুপের তদন্তে উঠে আসে, যে তিনটি প্রতিষ্ঠান বিড করেছিল, সব কটিই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। তিন বিডেই ‘কোটেশন’ শব্দটি ‘Qutations’ বানানে লেখা। কোনোটিতেই প্রতিষ্ঠানের সিল নেই। দুটি বিডের বক্তব্য শুরু হয়েছে একই কথা দিয়ে, ‘…পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে।’ যদিও তাদের কোনো অর্ডারই দেওয়া হয়নি।
২০২১ সালের ৫ মার্চ ফিফার নিয়োগ করা বিডিও এলএলপির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি দরপত্রের ডিজাইন একই রকম। রবিন এন্টারপ্রাইজের দরপত্রে যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেটি ভুয়া। স্পোর্টস কর্নার আর স্পোর্টস লিংক পাশাপাশি ঠিকানায় অবস্থিত। আবার স্পোর্টস লিংকের মালিক রবিনই সম্ভবত স্পোর্টস কর্নারের সাবেক মালিক। এ ছাড়া দরপত্র প্রস্তাব ও সরবরাহ নিশ্চিতের সময়েও ধারাবাহিকতা নেই।
যা থেকে ফিফার কমিটি সিদ্ধান্তে আসে যে তিনটি দরপত্রের উৎসই এক—তিনটি আলাদা কোম্পানির নয়।
ফুটবল কেনা
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ১৩ হাজার ৯২১ ডলার (প্রায় ১৫ লাখ টাকা) দামে ৪০০টি ফুটবল কেনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এখানেও দরপ্রস্তাব দিয়েছিল তিনটি প্রতিষ্ঠান—মারিয়া ইন্টারন্যাশনাল, এইচ ইউ জামান ট্রেডিং ও ওফেলিয়াস ক্লোজেট। দরপ্রস্তাবে জেতে ওফেলিয়াস।
সোহাগের সরবরাহ করা কাগজে লেখা আছে, ‘ফিফা অনুমোদিত বাফুফের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ২০১৯–২০ মৌসুমের ম্যাচ পরিচালনার জন্য এই কেনাকাটা জরুরি।’ ব্যাখ্যায় বলা হয়, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ক্রীড়াপণ্য সরবরাহ করে থাকে।
কন্ট্রোল রিস্কের প্রতিবেদনে উঠে আসে, ওফেলিয়াস ক্লোজেটের যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে তাদের অস্তিত্ব নেই। তারা নারীদের পোশাক বানায়। বাফুফেকে ফুটবল সরবরাহের প্রতিষ্ঠান নয় এটি। মারিয়া ইন্টারন্যাশনাল ও এইচ ইউ জামান ট্রেডিংয়ের দরপ্রস্তাবে তাদের খুঁজে পাওয়ার মতো তথ্য নেই। কোনো সিল নেই দরপ্রস্তাবে।
নিরীক্ষায় উঠে আসে, ওফেলিয়াসের ফুটবল সরবরাহের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাদের কোনো আমদানি সনদও নেই। তবে এক বন্ধুর সনদ ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছেন সরবরাহকারী। প্রতিষ্ঠানটিকে চালান ছাড়াই অর্থ পরিশোধ করে বাফুফে।
প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়, এটি স্পষ্ট যে সব কটি দরপ্রস্তাবই বানানো। মারিয়া ইন্টারন্যাশনাল ও এইচ ইউ জামান ট্রেডিংয়ের স্বাক্ষরসহ যে দরপত্র দেওয়া হয়েছে, সেটিও মূল কাগজ নয়, ফটোকপি।
বিমানের টিকিট
২০১৯ সালের নভেম্বরে ফ্লাইট টিকিট বাবদ আল মারওয়া ইন্টারন্যাশনালকে ১৯ হাজার ৯২৫ ডলার (প্রায় সোয়া ২১ লাখ টাকা) দেয় বাফুফে। খাত হিসেবে দেখানো হয় জাতীয় দলের ওমান সফর। এ ক্ষেত্রে দরপ্রস্তাব দেয় আর মারওয়া, পূরবী ইন্টারন্যাশনাল ও মাল্টিপ্লেক্স ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস।
তিনটি দরপ্রস্তাবই শুরু হয়েছে একই কথা দিয়ে, যেখানে রুট শব্দটি একই বানানে লেখা ‘rout’। সব কটিতে সংখ্যার ভুল একই রকম (১, ৩, ৪), একই তারিখে জমা দেওয়া এবং দেখতে একই রকম। পূরবী জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমানের টিকিট কেনায় দরপ্রস্তাব দেওয়ার কথা নয় বলে উল্লেখ করে কন্ট্রোল রিস্ক গ্রুপ। পূরবী ও মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, তারা দরপ্রস্তাব দেয়নি। বাফুফের সঙ্গে কোনো কাজও করেনি।
ঘাস কাটার যন্ত্র
২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ৪১২ মার্কিন ডলারে (প্রায় দেড় লাখ টাকা) ঘাস কাটার যন্ত্র কেনে বাফুফে। দুটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দেয়। একটি বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার, আরেকটি শোভা এন্টারপ্রাইজ। কাজটা পায় বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার। ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর সোহাগ কার্যাদেশ দেওয়ার দুই দিন পর শারমিন এন্টারপ্রাইজ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দেয়।
এখানে পাওয়া অনিয়মের মধ্যে আছে বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠানের নামের বানানে ভুল। শোভা এন্টারপ্রাইজ আর শারমিন এন্টারপ্রাইজের দরপ্রস্তাব দেখতে এক রকম। শারমিন এন্টারপ্রাইজে যোগাযোগ করলে তারা নিজেদের শোভা এন্টারপ্রাইজ হিসেবে পরিচয় দেয়। বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এ বিষয়ে উপসংহার হচ্ছে, সব দরপত্রই একই জায়গা থেকে করা হয়েছে।
২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে রিং শাইন টেক্সটাইল
১৮ এপ্রিল ২০২৩, বিজনেস পোস্ট অনলাইন বাংলা
গত ২২ বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে আগের মালিকপক্ষ। যার মূলে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুং ওয়ে মিন, যিনি ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক।
পুঁজিবাাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অধীনে একটি তদন্ত কমিটি এবং বিশেষ নিরীক্ষকের সংকলিত একটি প্রতিবেদনে এ অনিয়মের ঘটনাটি উঠে এসেছে।
বিএসইসির এ প্রতিবেদনটি সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং দ্য বিজনেস পোস্ট একটি অনুলিপি পেয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, কোম্পানিটির মালিকপক্ষ টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার (টিটি) এর মাধ্যমে ১২৪ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা পাচার করেছে। তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, স্পনসর পরিচালক এবং বেশকিছু অজানা বিদেশী অ্যাকাউন্টে এ তহবিল স্থানান্তর হয়েছে ৷
এ ছাড়াও, আমদানিতে মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়ে কোম্পানিটি ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল সংগ্রহের নামে ৮৪৫ কোটি টাকা পাচার করেছে।
এর পাশাপাশি, একজন ব্যবসায়ী ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে কোম্পানিটির দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে যথাক্রমে ১৯.২ কোটি এবং ২০ কোটি টাকা পাচার করেছেন।
উল্লেখ্য, কোম্পানির সমস্ত স্পনসর ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং তাইওয়ানের বাসিন্দা।
ঋণ নিয়ে দেশত্যাগ: যেভাবে ঋণ পরিশোধ করা এড়িয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা
১৯ এপ্রিল ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
বড় সংখ্যক ঋণ খেলাপির দেশত্যাগ করে বিদেশে বসবাসের ঘটনায় সংকটের মধ্যে পড়েছে চট্টগ্রামের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঋণদাতা ব্যাংকগুলো, শিল্পের অভ্যন্তরীণ, আইনজীবী ও আদালতের কর্মকর্তাদের মতে, গত এক দশকে প্রায় ২০ হাজার কোটি ঋণ নিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন চট্টগ্রামের ২২ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৩৩ কর্ণধার। এসব ব্যবসায়ীর মধ্যে ১১ জন রয়েছেন কানাডায়। ৬ জন লন্ডনে, ৪ জন যুক্তরাষ্ট্রে, ৩ জন মালেশিয়ায়, ৩ তিনজন সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ২ জন তুরস্কে এবং ১ জন করে অস্ট্রেলিয়া, মন্টেনিগ্রো ও সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। ৩৩তম ব্যক্তি কোথায় রয়েছেন তা জানা যায়নি।
এদের সবার বিরুদ্ধে আর্থিক ও চেক প্রত্যাখ্যান আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। ২৬ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা। তবে নিষেধাজ্ঞার আগেই ১৩ জন এবং নিষেধাজ্ঞার পর অন্য ১৩ জন দেশত্যাগ করেন।
তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, এদের কেউ কেউ বিদেশে পাঁচ তারকা হোটেল, মানি এক্সচেঞ্জ, আবাসন, সুপার শপ ও পেট্রল পাম্পের মতো বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
শ্রমজীবি মানুষ
ন্যূনতম ২২ হাজার টাকা মজুরির দাবি গার্মেন্টস কর্মীদের
জানুয়ারি ২৭, ২০২৩, বণিক বার্তা
৬৫ ভাগ বেসিকসহ ২২ হাজার টাকা ন্যূনতম বেতন ঘোষণা এবং অবিলম্বে মজুরি বোর্ড পুনঃগঠনসহ ৮ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন গার্মেন্টস কর্মীরা।
আজ শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টার সময় গাজীপুর চৌরাস্তায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
কর্মসূচিতে নেতারা বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের লাগামহীন দাম বাড়ছে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বেড়েই চলছে। এ সব কারণে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষরা বর্তমানে দিশেহারা। শ্রমিকেরা বর্তমানে অনাহারে অর্ধাহারে শিল্পে কাজ করে যাচ্ছেন।
মানববন্ধনে নেতারা অবিলম্বে মজুরি বোর্ড পুনঃগঠন করে হেলপার অর্থাৎ সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকদের জন্য মজুরি ৬৫ ভাগ বেসিকসহ সর্বমোট ২২ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণের জোর দাবি জানান।
কোথায় যাবে সহস্রাধিক জেলে পরিবার
৩০ জানুয়ারি ২৩, সমকাল
বংশপরম্পরায় বাঁওড় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন ৭৭ বছর বয়সী নরেন হালদার। গত সপ্তাহে বাঁওড় রক্ষায় অন্যদের সঙ্গে তিনিও এসেছিলেন মানববন্ধনে। তিনি বলেন, জীবনের ৬৮ বছরই কেটেছে জাল দড়া টেনে। শেষ বয়সে সারা জীবনের আয়ের একমাত্র সম্বল সেই বাঁওড়ই এখন তাঁদের হাতছাড়া হতে চলেছে। ফলে তাঁরা রোজগারহীন হয়ে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
সম্প্রতি ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার ছয়টি বাঁওড় ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর বাঁওড়টি অন্যতম। ব্রিটিশ আমল থেকে এই বাঁওড়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে সহস্রাধিক জেলে পরিবার। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বাঁওড়পাড়ে মানববন্ধন করেন এসব পরিবারের শতাধিক সদস্য। তাঁদের দাবি, এসব বাঁওড় ইজারা দিলে তাঁরা এর ত্রিসীমানায় যেতে পারবেন না। এতে কর্মহীন হয়ে পড়বেন তাঁরা।
লাশ হয়ে ফিরলেন ৭১৪ নারী
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
সৌদি আরবে যাওয়ার দেড় বছরের মাথায় মৃত্যু হয় ঝিনাইদহের শাকিলা খাতুনের। তাঁর বয়স ছিল ২০ বছরের আশপাশে। গত বছর যখন তাঁর লাশ দেশে আসে, তখন নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’র কথা।
শাকিলার চাচা মোমিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৌদি আরব থেকে বলে দিয়েছিল, শাকিলার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। লাশ দেশে আনার পর কোনো তদন্ত হয়নি। তাই আমরা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি।’ তবে তিনি বলেন, সৌদিতে যাওয়ার পর বিভিন্ন সময় মুঠোফোনে নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন শাকিলা।
সরকারের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যর ভিত্তিতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তৈরি করা হিসাবে, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বিগত সাত বছরে ৭১৪ জন বাংলাদেশি নারী শ্রমিক লাশ হয়ে ফিরেছেন। অস্বাভাবিক বিষয় হলো, বড় অংশের ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ দেখানো হয়েছে স্বাভাবিক মৃত্যু, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও আত্মহত্যা।
শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। তাঁদের মারাত্মক ও জটিল কোনো রোগ থাকলে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আটকে যাওয়ার কথা। তাই স্বাভাবিকভাবে এত মৃত্যু কেন হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সনদে লেখা ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে মারা যাওয়া শ্রমিকদের স্বজনদেরও। যদিও এসব মৃত্যু নিয়ে কোনো ময়নাতদন্ত হয় না।
জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, লাশ দেশে ফেরার পর শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো পরিস্থিতি এখনো আসেনি। লাশ আসার পর তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশকে শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে আপত্তির কথা জানালে তা শ্রমবাজারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। লাশ সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা অবস্থায়ই দূতাবাসকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সনদে স্বাভাবিক মৃত্যু
কত নারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ‘স্বাভাবিক’ লেখা হয়, তার একটি হিসাব পাওয়া যায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল সময়ে ৪০৪ জন নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। এর মধ্যে ২২৭ জনের ক্ষেত্রে সনদে স্বাভাবিক মৃত্যু লেখা ছিল, যা মোট মৃত্যুর ৫৬ শতাংশ।
ওদিকে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, বিগত সাত বছরে (২০১৬ থেকে ২০২২) যে ৭১৪ জন নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে, তাঁদের ২৬২ জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে সনদে স্বাভাবিক মৃত্যু উল্লেখ ছিল (৩৭ শতাংশ)। মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ লেখা ছিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক। এ কারণে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ১৩৮ জনের ক্ষেত্রে, যা মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আত্মহত্যাকে। মৃত্যুসনদে আত্মহত্যা লেখা হয়েছে ১১৬ জন নারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে (১৬%)। বাকি নারী শ্রমিকদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা (১০৮), অসুস্থতা (৩৪), হৃদ্রোগ (২৩), হত্যা (১৬), অজানা রোগ (১০), ক্যানসার (৫) ও করোনাকে (১) উল্লেখ করা হয়েছে।
বেশির ভাগ নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে সৌদি আরব (২০২), জর্ডান (৯৬), লেবানন (৭৮) এবং ওমানে (৫৮)।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) ২০১৭ সাল থেকে দেশে আসা ৫৪৮ নারী শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ ও করণীয় বিষয়ে একটি গবেষণা করেছে। ‘ডেথ অব ফিমেল মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ইন ডেস্টিনেশন কান্ট্রিজ’ শিরোনামের এ গবেষণা অনুযায়ী, ৬৯ শতাংশ নারী শ্রমিকের ‘স্বাভাবিক’ ও ৩১ শতাংশের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে। এই হিসাবের ক্ষেত্রে তারা রোগে মৃত্যুকে স্বাভাবিক শ্রেণিতে রেখেছে।
রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি মৃত্যুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। দূতাবাসগুলোকে শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে।
তাঁদের বয়স অল্প
মারা যাওয়া নারী শ্রমিকদের স্বজন ও অভিবাসন-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রমিকেরা যে দেশে মারা যান, সে দেশের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মৃত্যুসনদ লিখে দেন। বাংলাদেশ দূতাবাস এই সনদ লাশের সঙ্গে দেশে পাঠায়। এর বাইরে কোনো ময়নাতদন্ত হয় না।
ব্র্যাকের পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশে গিয়ে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হওয়া নারী শ্রমিকদের বেশির ভাগের বয়স ছিল ৪০ বছরের কম। রামরু জানিয়েছে, তাদের গবেষণায় স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা নারীদের গড় বয়স পাওয়া গেছে ৩৭ বছর। যেমন হবিগঞ্জের ববিতা গত বছর সৌদি আরবে মারা যান। তাঁর বাবা নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে, নথিপত্রে ববিতার বয়স লেখা হয়েছিল ২৮ বছর। তবে প্রকৃত বয়স আরও কম। তাঁর মেয়ের বড় কোনো রোগব্যাধি ছিল না।
সৌদি আরবেই গত বছরের ১২ জুন মারা যান গৃহকর্মীর কাজে যাওয়া রীনা বেগম। মারা যাওয়ার মাত্র ১৪ মাস আগে দেশটিতে গিয়েছিলেন তিনি। রীনার স্বামী রহিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ৮ জুন স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর শেষবার কথা হয়। এর পর থেকে তিনি স্ত্রীর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাচ্ছিলেন। এক মাস পর এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে রীনার মারা যাওয়ার খবর জানান। গত বছরের অক্টোবরে রীনার লাশ দেশে আনা সম্ভব হয়।
রহিম চৌধুরী আরও বলেন, রীনার বয়স ৪০ বছরের বেশি নয়। তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই সন্দেহের কথা কাকে বলবেন, তা তিনি জানেন না। লাশের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাশ বাড়িতে আনার পর সবাই দ্রুত দাফনের পরামর্শ দেন। তাঁরা শুধু মুখ দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।
এত বেশি নারী শ্রমিকের ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যু আসলে স্বাভাবিক কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক লায়লা আরজুমান্দ বানুর কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যে বয়সে নারী শ্রমিকেরা কাজের জন্য বিদেশ যাচ্ছেন, সে বয়সে ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যুর বিষয়টি অস্বাভাবিক। তাঁরা যে সুস্থ, সে সনদ পাওয়ার পরই বিদেশ যাচ্ছেন। তাই বিদেশে গিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, জন্মগত কোনো অসুখ বা প্রসবসংক্রান্ত জটিলতায় এ বয়সে মৃত্যু হতে পারে। তবে নারী শ্রমিকদের বেলায় তা হওয়ার কথা নয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদ্রোগও বেশি হয় ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের। তাই নারী শ্রমিকদের প্রতিটি মৃত্যুর তদন্ত হওয়া জরুরি।
‘আত্মহত্যা’ নিয়েও সন্দেহ
সৌদি আরবে যাওয়ার মাত্র ১১ দিনের মাথায় গত বছরের ১৮ জুলাই মারা যান নরসিংদীর রায়পুরার হাজেরা বেগম। তাঁর মৃত্যুর সনদে লেখা হয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
হাজেরার তিন শিশুসন্তান রয়েছে। তাদের নিয়ে গত মাসে প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন হাজেরার বড় বোন নাদিরা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাজেরার বয়স ছিল ২৬। স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার পর হাজেরা সন্তানদের খরচ জোগাতে বিদেশে কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেই মানুষ কি আত্মহত্যা করতে পারেন?
বিদেশে কাজ করতে যাওয়া নারী শ্রমিক রেশমার বাবা ছিদ্দিক মাতুব্বর, জহুরা বেগমের বড় বোন রোখসানা বেগমসহ আরও অনেক স্বজনের প্রশ্ন, কাজ করতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আত্মহত্যা করেছেন, সেটা কি ঠিক? আর আত্মহত্যাই যদি করেন, তাহলে সেটা কী পরিস্থিতিতে, সেসব কি তদন্ত হবে না?
জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রথম আলোকে বলেন, মৃত্যুর কারণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নের বাইরে এ পর্যায়ে তাঁর কোনো মন্তব্য নেই।
প্রাণ নিয়ে দেশে সুমি
বাংলাদেশ থেকে নারীরা মূলত গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যান। ২০২২ সালে গিয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ সৌদি আরব, ১৬ শতাংশ ওমান, ১১ শতাংশ জর্ডান ও বাকিরা অন্যান্য দেশে গেছেন। আরব দেশগুলোতে বিশেষ করে সৌদি আরবে নারীদের ওপর নির্যাতনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
যেমন ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন পঞ্চগড়ের সুমি আক্তার। সেখানে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তখন তিনি এক ভিডিওতে বলেছিলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব। আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই।’
সুমির ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। পরে জেদ্দায় বাংলাদেশে উপদূতাবাসের হস্তক্ষেপে সুমিকে তাঁর নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে দেশটির পুলিশ।
সুমির মতো খুলনার আবিরনও সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। তবে বেঁচে ফিরতে পারেননি। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ভোরে কফিনে মোড়ানো অবস্থায় দেশে আসে তাঁর লাশ। লাশের সঙ্গে থাকা সনদে তাঁর মৃত্যুর কারণ লেখা হয় ‘হত্যা’। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আবিরন হত্যা মামলায় সৌদির গৃহকর্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন দেশটির আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেছেন। আপিল এখন বিচারাধীন।
আবিরনের স্বজনেরা ভাগ্যবান। তাঁরা বিচার পাচ্ছেন। বাকি বাংলাদেশি নারীদের, নাগরিকদের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্তের দাবিই তোলে না বাংলাদেশ।
বিদেশ থেকে লাশ হয়ে আসা নারীদের ৭৯ শতাংশই গৃহকর্মী: রামরুর গবেষণা
৩১ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
বিদেশে কাজ করতে গিয়ে নারীরা লাশ হয়ে ফেরত আসছেন। লাশ দেশে আসার পর মৃত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলেও দেশে পুনরায় ময়নাতদন্তও করা হচ্ছে না। নারী শ্রমিক পাঠানোর যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, সেখানে শ্রমিকের মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট দেশের মালিককে দায় নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে। অভিবাসী নারী শ্রমিকদের মৃত্যু নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আলোচকেরা এসব কথা বলেছেন।
২০১৭ সাল থেকে দেশে আসা ৫৫৮ নারী শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ ও করণীয় বিষয়ে ‘ডেথ অব উইমেন মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স ইন ডেস্টিনেশন কান্ট্রিজ’ শীর্ষক এই গবেষণা করেছে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে এ গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণায় ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে আসা ৬৯১ নারী অভিবাসীর মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন দেশে যাওয়া নারী শ্রমিক ছিলেন ৫৫৮ জন। গবেষণার তথ্য বলছে, মৃত্যু সনদে উল্লেখ করা মৃত্যুর কারণ অনুযায়ী ৬৯ শতাংশ শ্রমিকের স্বাভাবিক (বিভিন্ন রোগসহ) এবং ৩১ শতাংশ নারী শ্রমিকের অস্বাভাবিক (দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা) মৃত্যু হয়েছে।
গবেষণায় ১০০টি পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, যাদের লাশ দেশে এসেছে তাদের ৭৯ শতাংশই গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশে কাজ করতে গিয়েছিলেন। ১০ শতাংশের বিদেশে যাওয়ার আগেই কোনো না কোনো ক্রনিক অসুখ ছিল। পরিবারের সদস্যরা স্বজনের মৃত্যুর তথ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জানতে পেরেছেন ওই দেশে কর্মরত অন্য বাংলাদেশি শ্রমিক বা অন্যদের কাছ থেকে। দূতাবাস থেকে খবরটি পেয়েছেন সবার শেষে। লাশ পাওয়া পরিবারগুলোর ৪৮ শতাংশই মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার করার দাবি
০২ ফেব্রুয়ারি ২৩, সমকাল
গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন ও ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ) ও ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইসিবি)। বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
আইসিবি সভাপতি আমিরুল হক আমিনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জি-স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক আব্দুল ওয়াহেদ। তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি ২৩ হাজার টাকার নিচে হলে তা কোনোভাবে ন্যায্য মজুরি হবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন ও ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকাসহ পাঁচটি গ্রেডে মজুরি কাঠামো ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।
রেশনিং ব্যবস্থা ও মজুরি বোর্ড চালুর দাবি পোশাককর্মীদের
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বাংলা ট্রিবিউন
ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণা করে অবিলম্বে নতুন মজুরি বোর্ড গঠন এবং প্রতিটি কারখানায় রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছেন পোশাক শিল্পের কর্মীরা।
শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’ আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে এসব তারা দাবি জানান।
সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে পোশাককর্মীরা তাদের বর্তমান মজুরি দিয়ে কোনোভাবেই সংসার চালাতে পারছে না। অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। তারপরও তারা পোশাক তৈরি করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চেলেছে।
গুচ্ছগ্রাম ছাড়ছেন সাঁওতালরা
০৪ ফেব্রুয়ারি ২৩, সমকাল
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গুচ্ছগ্রামের সাঁওতাল পরিবারের অনেকেই ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় ঘর ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
পাঁচ বছর আগে উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের বেতারা গ্রামে ৭০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এসব ঘরে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাঁওতালদের পুনর্বাসন করা হয়। তাঁদের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা ছিল স্থানীয় প্রশাসনের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোনো কোনো ঘরের চালের টিনে মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। অধিকাংশ ঘরেই তালা ঝুলতে দেখা গেছে। কোনোটির ভিটের মাটি ধসে যাচ্ছে।
সাঁওতালরা পূর্বস্থানে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যেখানে পুনর্বাসন করা হয়েছে, সেই জায়গাটি চরবেষ্টিত। এ কারণে কাছাকাছি কৃষিকাজের তেমন সুযোগ নেই। জীবিকার তাগিদে ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল
নতুন ভবনে ভাড়া তিন গুণ
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
রাজধানীর নীলক্ষেতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের পুরোনো দুটি ভবনে এক কক্ষে চারজনের একটি আসনের ভাড়া মাসে ১ হাজার ১২০ টাকা। পুরোনো ভবনের পাশেই নতুন একটি ১০ তলা ভবন হয়েছে। সেটিতে এক কক্ষে চারজন থাকতে জনপ্রতি ভাড়া ৩ হাজার ৭৪৬ টাকা। অর্থাৎ নতুন ভবনে ভাড়া তিন গুণের বেশি।
নতুন ভবনে কক্ষ পুরোনোটির চেয়ে একটু বড়। বাড়তি সুবিধা হলো, এতে বিউটি পারলার, লন্ড্রি ও ব্যায়ামাগারের জায়গা রয়েছে। সমস্যা হলো, উদ্বোধনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এসব সুবিধা চালু হয়নি। কবে চালু হবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। নতুন ভবনের বাসিন্দা কর্মজীবী নারীরা বলছেন, ভবনটিতে ঝাড়বাতি ও এলইডি বাতির নির্দেশকের মতো বিলাসিতা করা হয়েছে। কিন্তু যে সুবিধা খুবই জরুরি, সেই ক্যানটিন সুবিধা নেই। খেতে হয় পুরোনো ভবনে গিয়েই। নারীদের জরুরি পণ্য বিক্রির দোকানও নেই।
মানসিক নির্যাতনের শিকার ৬৭% গৃহকর্মী
১৩ ফেব্রুয়ারি ২৩, সমকাল
দারিদ্র্য, পেশার সহজলভ্যতা, বিয়েবিচ্ছেদসহ নানা কারণে গৃহকর্মীর কাজ বেছে নেন অনেক নারী। সেই পেশায় এসে ৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ৯১ শতাংশ গৃহকর্মীর জেন্ডার সহিংসতার সাহায্য চাওয়ার বিষয়ে হেল্পলাইন নম্বর সম্পর্কে ধারণাই নেই। ৪২ শতাংশ আবাসিক গৃহকর্মী বসারঘর কিংবা রান্নাঘরের মতো খোলা জায়গায় ঘুমান। ৭৫ শতাংশ খ কালীন গৃহকর্মী বস্তিতে অবস্থান করেন। গৃহকর্মীদের গড় মাসিক আয় ৫ হাজার ৩১১ টাকা, যেখানে তাঁদের মাসিক গড় খরচ ১০ হাজার ৮০১ টাকা।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) আয়োজিত শোভন কাজ ও কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সহিংসতা বিষয়ে গৃহশ্রমিকদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
২৪ কারখানার ১১টি বন্ধ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
প্লট বরাদ্দ পেয়ে ব্যাংকঋণ নিয়ে কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের লাপাত্তা হওয়া, গ্যাস-সংকট, জনবলের অভাব, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা সমস্যায় মানিকগঞ্জের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) শিল্পনগরীর রুগ্ন দশা। ফলে ৩৫ বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না এই বিসিক শিল্পনগরী। বর্তমানে ২৪টি শিল্পকারখানার মধ্যে ১৩টি কারখানা চালু রয়েছে।
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বিসিক শিল্পনগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। গ্যাস ও আর্থিক সংকটের পাশাপাশি কাঁচামালের স্বল্পতাসহ নানা সমস্যায় কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। লোকসানের মুখে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, বিসিকে প্লট বরাদ্দ নিয়ে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কেউ কেউ লাপাত্তা হয়েছেন। এ ছাড়া বাজারজাতকরণে কৌশলগত দক্ষতা এবং ব্যবসায়ী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ২১ অক্টোবর দেশের ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দরিদ্র লোকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে জেলা সদরের গোলড়া এলাকায় ১০ দশমিক ৪০ একর জমিতে মানিকগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই শিল্পনগরীতে শিল্পকারখানার জন্য ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বর্তমানে ২৪টি শিল্পকারখানার মধ্যে মেসার্স সুপার সাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেসার্স চিশতি পিভিসি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেসার্স জে অ্যান্ড জে এসেনশিয়াল প্রোডাক্টস লিমিটেড, মেসার্স পারলি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ ১৩টি কারখানা চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে এবং ৩টি আংশিক চালু রয়েছে। বন্ধ আছে নয়টি কারখানা। এগুলো হলো বাংলাদেশ অ্যাপারেল অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, মেসার্স আলবাট্রস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেসার্স রিলায়েবল মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, নাহার গার্ডেন, ঢাকা ফুড প্রোডাক্টস, ইয়ার্ন কনসার্ন লিমিটডে, মেসার্স ফ্যামিলি প্রোডাক্টস কোম্পানি লিমিটেড, মেসার্স রিফ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড ও অ্যালুমিনা প্রাইভেট লিমিটেড।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, বন্ধ হওয়া শিল্পকারখানাগুলোর মূল ফটকে তালা ঝুলছে। কোনো কোনো কারখানা বেশ আগে বন্ধ হওয়ায় লতা-পাতা ও ময়লা-আবর্জনায় আচ্ছাদিত হয়ে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে ভবনগুলো।
বিসিক শিল্পনগরীর মেসার্স সুপার সাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি কেব্ল তৈরির কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপক উত্তম ভৌমিক বলেন, কয়েক বছর ধরে গ্যাসের সংকট চলছে। রাতের বেলায় সামান্য গ্যাস পাওয়া গেলেও দিনের বেলায় থাকে না। এ ছাড়া কাঁচামাল-সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মালিক প্লটের বিপরীতে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ ঋণ নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। কেউ কেউ শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি না করে সেই অর্থ দিয়ে অন্য স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন। ঋণ পরিশোধ না করায় বিসিকের ছয়টি শিল্প ইউনিটের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
মেসার্স রিফ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপির দায়ে বন্ধ রয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি বিসিক থেকে ২৭ হাজার বর্গফুট জমি বরাদ্দ নিয়ে রূপালী ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখা থেকে ১৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাপারেল অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকঋণে দেউলিয়া হয়েছে। ৪ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করায় বেসিক ব্যাংক লিমিটেড গুলশান শাখা নিজেদের কবজায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ৯ হাজার ৯০০ বর্গফুট জমি নিলাম করেছে। এলবাট্রোস ফেব্রিক্স প্রাইভেট লিমিটেড ব্যাংকে ৬ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করে লাপাত্তা।
আর বিসিক নগরীর ইয়ার্ন কনসার্ন লিমিটেড সোনালী ব্যাংক থেকে ৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করায় সেটিও দেউলিয়া হয়েছে। এ ছাড়া নাহার গার্ডেন প্রাইভেট লিমিটেড বিসিক থেকে ৪৫ হাজার বর্গফুট জমি বরাদ্দ নেয়। তার মধ্যে ৩১ হাজার ৫০ বর্গফুটের বিপরীতে বেসিক ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখা থেকে ৩৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ১০ ভাগও হবে না।
পা পড়ে না পরিদর্শকের
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, দেশ রুপান্তর
উৎপাদনমুখী মোট কারখানা ৫০ হাজার। অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিদর্শনযোগ্য কারখানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার। এই কাজটুকু করার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরই পরিদর্শক আছেন ৬০০।
শুধু কলকারখানা অধিদপ্তরের পরিদর্শকরাই একমাত্র তদারককারী নন। তাদের সঙ্গে আছেন পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগের পরিদর্শক। যাদের প্রত্যেকের কাজ বিভিন্ন অবস্থান থেকে কারখানা পরিদর্শন করা। নিজের কাজটুকু করলে কোনো কারখানাই তদারকির বাইরে থাকতে পারে না। কোনো না কোনো অধিদপ্তরের পরিদর্শকের পা কারখানায় পড়বেই।
কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? আগুন লাগলে বা অন্য কোনো সংকট এলেই বলা হয় জনবল ঘাটতির জন্য তারা কিছু করতে পারছেন না। আসলেই জনবল ঘাটতি, নাকি দায়িত্ব এড়ানো?
সরকারের কোনো দপ্তর সমন্বিত পরিকল্পনাই করেনি। কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ফলাও করে লোক না থাকার কথা বলে। তারপর সাংগঠনিক কাঠামোর পরিসর বাড়াতে চিঠিপত্র চালাচালি করে। একপর্যায়ে তারা জনবল বাড়িয়েও নেয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের মাধ্যমে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপে করের বোঝা। অথচ সেবা যেখানে ছিল সেখানেই থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, আসলে জনবলের ঘাটতি নেই, সংকট পরিকল্পনায়।
এক প্রশ্নের জবাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) সৈয়দ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনবল নিয়ে বসে থাকলে দুর্ঘটনা কমবে না। জনবল পূর্ণ মাত্রায় কখনোই পাওয়া যাবে না। সব সময় ঘাটতি থাকবে। দেশে পুলিশ প্রায় দুই লাখ। এখন ১৭ কোটি মানুষকে সেবা দিতে হয় এই কম পুলিশ দিয়েই। আইনগতভাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরই কারখানা পরিদর্শন করা মূলকাজ। তারা কারখানার পাশাপাশি শ্রমিকের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে প্রতিবেদন দেয়। শুধু তাদের ওপর নির্ভর না করে যারা বর্তমানে কারখানা পরিদর্শন করে, তাদের সবাইকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স করা যেতে পারে। এতে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ কোনো কারখানা তদারকির বাইরে থকবে না। সব কারখানা সমান গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বেশি শ্রমিক কাজ করে বা রপ্তানিমুখী কারখানা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই আইজি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিল্প খাতের অগ্নিকা- ও অন্যান্য সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখনই যে সচিব এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন তিনিই জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। আগের সচিব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ৯৯৩টি পদের সঙ্গে আরও ১ হাজার ৭৯১টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দেন সরকারকে। এসব পদের জন্য ১১টি জিপ, ৫টি সিডান কার, ৩৭টি মাইক্রোবাস ও ১ হাজার ৫৩টি মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাবও একই সঙ্গে জুড়ে দেন। ব্যাপক কর্মযজ্ঞ পালনের চিত্র তুলে ধরে আগের সচিবের পথ ধরে বর্তমান সচিবও এসব পদ আরও বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরেন।
অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসও তাদের জনবল ঘাটতির কথা ডাক ছেড়েই বলে। গাজীপুরের টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরণের পর পরিদপ্তর থেকে অধিদপ্তরে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হলেও তা ঝুলে আছে। সারা দেশের কারখানাগুলোর বয়লার সেটআপ, রক্ষণাবেক্ষণ ও নবায়নযোগ্যতা তাদেরই দেখভাল করার কথা। কিন্তু সরকারি অফিসের কাজ হয়তো সরকারি গতিতেই চলে। মাঝখান থেকে অকালে ঝরে যায় নিরীহ কিছু প্রাণ। নামকাওয়াস্তে গঠিত তদন্ত কমিটি মৃতদের পরিবারকে নামমাত্র অনুদান দিয়ে দায় সারে।
কলকারখানা অধিদপ্তরের ৬০০ পরিদর্শকই একমাত্র তদারককারী দল নয়। বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পরিদর্শক ৩১ জন। বয়লার পরিদপ্তরে পরিদর্শক কাজ করেন ৬২ জন। পরিবেশ অধিদপ্তরে ৪৫০ জন পরিদর্শনের কাজ করেন। পরিদর্শন করেন ফায়ার সার্ভিসে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা ৩৭৬ জন। এর বাইরে বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা এবং তিতাসসহ গ্যাসভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থায় কয়েকশ পরিদর্শক তো রয়েছেনই।
এসব পরিদর্শকের প্রত্যেকের কাজ কারখানা পরিদর্শন করা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা কারখানা পরিদর্শন করেন। এসব পরিদর্শকের প্রত্যেকেরই আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শকরা কারখানা বা অর্থনৈতিক ইউনিটের সার্বিক বিষয় তদারকি করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি শিল্পকারখানার মালিক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, নিয়ম করে তারা সবাই কারখানায় আসেন। তারা আসলেও কোনো কাজ করেন না। তারা ম্যানেজারের রুমে গিয়ে ম্যানেজ হয়ে যান। প্রত্যেক ইউনিটের পরিদর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট হারে মাসোহারা দিতে হয়। মাসোহারার চুক্তিতে না এলে তাদের সঙ্গে পারা যায় না। তারা বিভিন্ন আইনকানুন বিধিবিধানের প্যাঁচে ফেলে দেন। এ কারণেই তাদের সঙ্গে মাসোহারার চুক্তিতে যাই। বিষয়টি কোনো গোপন নয়। এদেশের যেকোনো শিল্পপতি তা জানেন। শিল্পপতি কাম সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরাও এর ভুক্তভোগী। কারখানাসংক্রান্ত পরিদর্শকরা নিজের কাজটুকু করলে কোনো কারখানাই তদারকির বাইরে থাকতে পারে না। কারখানায় সমস্যা থাকলে কোনো না কোনো দপ্তরের পরিদর্শকের নজরে তা পড়বেই।
সিটি করপোরেশনের বাইরে কারখানার স্থাপনা করতে স্থানীয় সরকারের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে তা কেউ অনুসরণ করে না। কারণ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পরিষদে গেলেই অনেক টাকা ডিমান্ড করে। অথচ না গেলে কেউ খবরও নেয় না। এ কারণে সিটি করপোরেশনের বাইরের বেশিরভাগ কারখানার স্থাপনাগত অনুমোদন নেই। অথচ বহুতল কারখানার নকশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নকশার সঙ্গে ফায়ার লাইসেন্স এবং ট্রেড লাইসেন্স গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।
২০১৫ সালের অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী দেশে ৮৩ লাখ ইকোনমিক ইউনিট রয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আওতায় ২৩টি উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব বলে শ্রম মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইকোনমিক ইউনিটের আওতায় দোকানপাটসহ সবকিছু রয়েছে। গুরুত্বের তালিকায় একটা মুদি দোকান আসতে পারে না। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে উৎপাদনমুখী মোট কারখানা ৫০ হাজার। এরমধ্যে পরিদর্শনযোগ্য কারখানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার। এই ৫ হাজার কারখানাকে ঘিরে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালিত হয়। এসব কারখানায় প্রতিমাসেই কোনো না কোনোভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শকদের পরিদর্শন করতে হয়। এসব দপ্তরের মোট পরিদর্শকের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫১৯ জন। তাদের মধ্যে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শনের দায়িত্ব ভাগ করে দিলে বছরে মাত্র তিনটি কারখানা ভালোভাবে পরিদর্শনের দায়িত্ব পড়ে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী টিমভিত্তিক ও এককভাবে পরিদর্শন করা হয়। মাসে এককভাবে ১৫টি দোকান ও প্রতিষ্ঠান এবং যৌথভাবে ১৫টি কারখানা পরিদর্শন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শকদেরও মাসভিত্তিক পরিদর্শন করতে হয়।
যখনই অগ্নিকা- হয় তখনই জেগে ওঠেন সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা। তবে নারায়ণগঞ্জে হাশেম ফুড কারখানায় অগ্নিকা-ের পর প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ‘কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে শিল্পকারখানা সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পরিদর্শনের আলোকে শিল্পকারখানাগুলোর অবকাঠামো, অগ্নি ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের জন্য অবস্থা পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিডাকে। সাচিবিক দায়িত্ব পেয়ে বিডা ১০৮টি উপকমিটি গঠন করে। এসব কমিটি ৫ হাজার ২০৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট মানদ-ের ২৫ শতাংশের কম স্কোর করেছে। ২০৬টি প্রতিষ্ঠান মানদ-ের ৫০ শতাংশ স্কোর করেছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে সালমান এফ রহমান জানান, আরও ১০ হাজার শিল্প-কলকারখানা পরিদর্শন করা হবে। এ ছাড়াও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের জনবল ও কার্য অধিক্ষেত্র বৃদ্ধির মাধ্যমে এটিকে একটি কর্তৃপক্ষে রূপান্তর করা হবে। যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট মানদ-ের ২৫ শতাংশের কম স্কোর করেছে তাদের আগামী তিন মাস সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্নয়ন না ঘটলে সেসব কোম্পানিকে সিলগালা করা হবে। ২০৬টি প্রতিষ্ঠান মানদ-ের ৫০ শতাংশ স্কোর করায় সেসব কোম্পানিকে আগামী ৬ মাস সুযোগ দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ে পরিবেশের উন্নয়ন না ঘটলে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও পরিদর্শনকৃত সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের বিদ্যমান ত্রুটিসমূহ অবগত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব অ্যাসোসিয়েশনকে পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং নির্দেশনা সম্পর্কে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা।
দোকান কর্মচারীরা মাসিক ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা মজুরি চান
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
দোকান কর্মচারীদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা মাসিক মজুরি নির্ধারণ এবং নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত কাজের জন্য ওভারটাইম দেওয়াসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় দোকান কর্মচারী ফেডারেশন।
এক সপ্তাহ আগে রাত ৮টার পরিবর্তে ১০টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার যে দাবি বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছিল, তাকে অযৌক্তিক হিসেবে বর্ণনা করে এর বিরোধিতা করেছেন দোকান কর্মচারীদের নেতারা। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় দোকান কর্মচারী ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক।
সীতাকুণ্ডে সস্তা শুধু শ্রমিকের জীবন, মৃত্যু ডালভাত
০৬ মার্চ ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ
বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং জলবায়ুর অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকায় গড়ে উঠেছে জাহাজভাঙা শিল্প।
আশির দশকে যাত্রা শুরু করা এই শিল্প প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করে ইস্পাত শিল্প। এই দুই শিল্পের প্রয়োজনে লিংকেজ শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে অক্সিজেন কারখানাও। এর বাইরে জুট মিল, ওষুধ ও পোশাক শিল্প, আমদানি-রপ্তানি পণ্য স্থানান্তরের জন্য ডিপোসহ বহু কারখানা স্থাপিত হয়েছে সীতাকুণ্ডে। ফলে সীতাকুণ্ড এখন ভারী শিল্পের উর্বরভূমি।
এসব শিল্প-কারখানায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজে নিয়োজিত। তাদের হাত ধরেই বিকশিত হচ্ছে শিল্পোৎপাদন, এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি, অথচ সেই শ্রমিকদের নিরাপত্তায় নেই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা। এ কারণে প্রতিবছরই সীতাকুণ্ডের কারখানাগুলোতে বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। স্থানীয় শ্রমিক নেতারা আক্ষেপ করে বলছেন, এখানে সস্তা শুধু শ্রমিকের জীবন, মৃত্যু ডালভাত। একের পর এক দুর্ঘটনার পরও তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কেউ ভাবে না।
এদিকে বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনায় শ্রমিক হতাহতের সব ঘটনায় থানায় মামলা পর্যন্ত হয় না। শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় মালিকপক্ষ নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে বেশি আগ্রহী থাকে। ফলে শ্রমিকদের পরিবার বিচার পায় না। আবার বড় কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর পুলিশ মামলা নিলেও সেই মামলা থাকে গতিহীন।
বিস্ফোরণ ও অগ্নিদুর্ঘটনায় সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত বছরের ৪ জুন বিএম ডিপোতে। দাহ্য পদার্থ বিস্ফোরণ ও অগ্নিদুর্ঘটনায় সেদিন মারা যান ৫১ জন। আহত হন অন্তত ২০০। সেই ঘটনায় সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকী বাদী হয়ে ডিপোর আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তবে মামলায় প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য মালিকপক্ষকে আসামি করা থেকে বিরত ছিল পুলিশ।
সরকারি প্রতিবেদনেই কারখানার নিরাপত্তায় ঘাটতি ধরা পড়েছিল
০৭ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পরিদর্শনে সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কারখানায় নানা ধরনের ঘাটতি ধরা পড়েছিল প্রায় ১৪ মাস আগে। বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডের (বিডা) নেতৃত্বে সরকারের নয়টি সংস্থার প্রতিনিধিদল তখন কারখানাটি পরিদর্শন করেছিল। পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক, অগ্নি, অবকাঠামো, পরিবেশ ও বিস্ফোরণ–সংক্রান্ত—এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে (শ্রেণি) কারখানাটিতে নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল। আর এখন বিস্ফোরণের পর জানা গেল, কারখানাটি চলছিল মাত্র দুজন ডিপ্লোমাধারী (প্রকৌশলে ডিপ্লোমা ডিগ্রি) জনবল দিয়ে।
২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর সীমা অক্সিজেন কারখানা পরিদর্শন করে বিডার প্রতিনিধিদল। পরিদর্শনে কারখানার ত্রুটি চিহ্নিত করে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয় গত বছরের ৩০ মার্চ। মূলত ২০২১ সালের জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সরকার সারা দেশে কলকারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে প্রধান করে গঠন করা হয় জাতীয় কমিটি। বিডার নেতৃত্বে কারখানা পরিদর্শনের জন্য উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটি যে পাঁচ হাজার কারখানা পরিদর্শন করে, সীমা অক্সিজেন লিমিটেড ছিল তারই একটি।
‘বাড়ি বেইচ্চা সুদ দিঅন লাগব’
০৮ এপ্রিল ২৩, সমকাল
সুদে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ৬ কানি জমিতে ধান চাষ করেছিলেন শেফালি বেগম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেদির হাওরে তাঁর জমি। আশা ছিল, ধান বিক্রি করে সুদের টাকা শোধ করবেন; সারা বছরের ভাতের ব্যবস্থাও হবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। পোকা ও ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ফসল ওঠানো নিয়ে শঙ্কায় আছেন শেফালির মতো উপজেলার অন্য কৃষকরাও।
গতকাল শুক্রবার মেদির হাওরে শেফালি আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন, ‘খেতেত সার আর ওষুদ মেলাতা (অনেক) দিছি। কিন্তু কোছতানতে (কিছুতেই) কাম হয়ছে না। অতলা (এত) খরচ দিয়া যে এমন মাইর খামু বুঝতাম পারছি না। আমরা এমনই তো গরিব, এর মইধ্যে খেতের ধানও গেছে।’ সারা বছর পরিবারের খোরাকি আর ঋণ শোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শেফালি। তাঁর মনে হয়, ‘বাড়ি বেইচ্চা সুদের ট্যাহা দিঅন লাগব।’
কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে কীটনাশক প্রয়োগ করেননি কৃষকরা। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়া ও অতিমাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগের ফলে ধানে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়েছে। তাঁদের দাবি, বোরো মৌসুম শুরুর আগেই ব্রি-২৮ ধান রোপণে কৃষকদের মানা করেছিলেন। তবে সহজলভ্য বীজ ধান রোপণের ফলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
তবে কৃষকদের ভাষ্য, কৃষি কর্মকর্তারা ব্রি-২৮ ধান রোপণ না করতে বললেও বিএডিসি ব্রি-২৮ ধান ও ২৯ রোপণে উদ্বুদ্ধ করছে। তাঁরা কার কথা শুনবেন, এ নিয়ে দোটানায় পড়েন। দুই বিভাগের দুই রকম কর্মকাণ্ডে বিরক্ত কৃষকরা।
চা শ্রমিকদের মধ্যে কুষ্ঠ বিশ্বে সর্বোচ্চ
০৮ এপ্রিল ২৩, সমকাল
অলোকা গঞ্জুর বাঁ হাতের ত্বক বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। সেদিকে তাঁর নজরই ছিল না। পরে দেখলেন, হাতের আঙুলগুলো জড়িয়ে শক্ত হয়ে যাচ্ছে এবং চা পাতা তুলতে সমস্যা হচ্ছে। ৪৭ বছরের অলোকা বলেন, ‘কী হচ্ছে, আমার কোনো ধারণাই ছিল না।’ সিলেটের এ চা শ্রমিকের রোজগারের ওপর নির্ভরশীল তাঁর স্বামী, চার সন্তান ও তিন নাতি-নাতনি। চিকিৎসার জন্য অলোকা যখন গেলেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে! বাঁ হাতটাই অকেজো হয়ে পড়েছে, যা সারিয়ে তোলার আর্থিক সামর্থ্য তাঁর নেই।
গতকাল শুক্রবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, চা শ্রমিক অলোকা কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিপ্রোসি মিশনের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানে কর্মী রয়েছেন ছয় লাখের মতো, যাঁরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। বিশ্বে কুষ্ঠ আক্রান্তের হার তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত বছর দেশে ২ হাজার ৯৭৪ জনের কুষ্ঠ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ২০০ জন প্রতিবন্ধিতার শিকার। এর মধ্যে শুধু মৌলভীবাজার জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬০ জন। এ কারণে জেলাটিকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৭২। তাঁদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার হন ১৬৫ জন।
পথশিশুদের ৬২% কর্মক্ষেত্রে মার খায়, নির্যাতনের শিকার প্রায় সবাই
১০ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
দেশের প্রায় সব পথশিশু তাদের কর্মক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। এক জরিপে বলা হয়েছে, নির্যাতনের শিকার পথশিশুর হার প্রায় ৯৬ শতাংশ। তাদের মধ্যে প্রায় ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ পথশিশু শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় বা মার খায়। প্রায় ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু মৌখিক হুমকি পায়। এ ছাড়া কাজ থেকে ছাঁটাই, মজুরি কমিয়ে দেওয়া—এসব ঘটনাও ঘটে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পথশিশুদের জরিপ ২০২২ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে আরও বলা হয়েছে, বেশির ভাগ পথশিশু সপ্তাহে ১ হাজার টাকা বা ১০ ডলারের কম অর্থের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছে।
পথশিশুদের পুরো সপ্তাহের আয় হাজার টাকার কম
১১ এপ্রিল ২০২৩, আজকের পত্রিকা
দেশের পথশিশুরা পুরো সপ্তাহ কাজ করে এক হাজার টাকারও কম পায়। চায়ের দোকান, কারখানা এবং ওয়ার্কশপে তারা কাজ করে। তাদের এক-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষেত্রে আহত হয়। বাকি অর্ধেক শিশু শিকার হয় সহিংসতার। কাজে বাধ্য হওয়া এসব শিশুর প্রায় অর্ধেকেরই বয়স ৯ বছর।
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’
শীর্ষক জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। গতকাল সোমবার এই জরিপ প্রকাশিত হয়।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পথশিশুদের বেশির ভাগই ছেলে, যা মোট সংখ্যার ৮২ শতাংশ। তাদের বেশির ভাগ দারিদ্র্যের কারণে বা কাজের সন্ধানে পথে নেমেছে। এসব শিশুর প্রায় ১৩ শতাংশ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। ৬ শতাংশ শিশু এতিম অথবা বাবা-মা বেঁচে আছেন কি না জানে না। এই শিশুদের প্রতি তিনজনের মধ্যে অন্তত একজন জীবনের সবচেয়ে মৌলিক সুযোগ-সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত। তারা খোলা জায়গায় ঘুমায়। প্রায় অর্ধেক শিশু মাটিতে ঘুমায় শুধু একটি পাটের ব্যাগ, শক্ত কাগজ, প্লাস্টিকের টুকরো বা একটি পাতলা কম্বল নিয়ে। শিশুদের প্রতি সহিংসতার প্রতি তিনটি ঘটনার একটি ঘটে রাতে তাদের ঘুমের সময়।
ঢাকাসহ আট বিভাগের ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ পথশিশুর কাছে গিয়ে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে জরিপ প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। জরিপে পথশিশুদের মোট সংখ্যা না থাকলেও ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই পথচারীদের নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে।
পথশিশুদের প্রতি ৪ জনের মধ্যে ৩ জন পড়তে বা লিখতে পারে না। জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের অর্ধেকের বেশি জানায়, জরিপের আগে তিন মাসের মধ্যে তারা জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা ও পানিবাহিত রোগে ভোগে।
রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর: বিচার চলছে ঢিমেতালে
২১ এপ্রিল ২০২৩, আজকের পত্রিকা
ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর পূর্ণ হবে ২৪ এপ্রিল। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই শিল্প দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ১৩৬ জন পোশাকশ্রমিক। এই মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার চলছে ঢিমেতালে। আর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সেই ভবন নির্মাণে ত্রুটি থাকার অভিযোগে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনে দায়ের করা মামলাটির জট খোলেনি এখনো। দীর্ঘদিন হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে এটি। হাইকোর্টে শুনানিরও কোনো উদ্যোগ নেই।
রানা প্লাজা ধসে বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি ছাড়াও গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন আরও ১ হাজার ১৬৯ জন শ্রমিক। এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে শ্রমিকদের মৃত্যুতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই। পরে সাক্ষীর পর্যায়ে এসে থেমে যায় মামলার কার্যক্রম। হাইকোর্টের আদেশে পাঁচ বছর স্থগিত থাকে মামলাটি। পরে গত বছরের জানুয়ারিতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। গত ১ বছর ৩ মাসে ৩৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ মামলায় অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে।
আদালত সূত্র বলছে, মামলাটির ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন একজন। তিনি হলেন রানা প্লাজা ভবনের মালিক সোহেল রানা। জামিনে আছেন ৩২ আসামি। পলাতক ছয়জন। মারা গেছেন দুই আসামি।
বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ
অর্থ সংকট, তবু এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ সম্প্রসারণে এশিয়ায় সপ্তম বাংলাদেশ
জানুয়ারি ২৮, ২০২৩, বণিক বার্তা
বিদ্যুৎ কেন্দ্র সচল রাখতে বৈশ্বিক ঊর্ধ্বমুখী দরের মধ্যেও জ্বালানি সংগ্রহে মরিয়া পাকিস্তান। এর মধ্যেই দুঃসংবাদ দিল দেশটিতে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহকারী ইতালিয়ান প্রতিষ্ঠান ইএনআই। দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তির আওতায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে আর এলএনজি কার্গো সরবরাহ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি। এর কারণ হিসেবে পাকিস্তানের নজিরবিহীন রিজার্ভ সংকট, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভঙ্গুর দশা এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণকেই দায়ী করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বিদ্যমান এ সংকটের মধ্যেই এশিয়ায় এলএনজি টার্মিনাল সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় দেশটির অবস্থান ছয় নম্বরে উঠে এসেছে। পাকিস্তান এ খাতে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব পেয়েছে বলে জ্বালানি খাতের মার্কিন তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের’ এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর পরই বাংলাদেশের অবস্থান, এশিয়ায় সপ্তম। এলএনজি টার্মিনাল সম্প্রসারণে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ।
‘অ্যামিড মার্কেট টারমইল, এশিয়াস লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস প্ল্যানস রিচ এ ফরক ইন দ্য রোড’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত ডিসেম্বরে প্রকাশ করে গ্লোবাল এনার্জি মনিটর। সংস্থাটির সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে বছরে ৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহ সক্ষমতার টার্মিনাল রয়েছে। বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে ১৫ দশমিক ১ মিলিয়ন টনের। তবে ২৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন সক্ষমতার এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চীন। এর পরেই প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান। দেশ দুটির এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে সম্ভাব্য প্রস্তাব রয়েছে যথাক্রমে ৭২ দশমিক ১ বিলিয়ন ও ১০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের।
এদিকে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রেও জানা গেছে, বাংলাদেশে ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ সক্ষমতার দুটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে পেট্রোবাংলার কাছে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় চুক্তির বিষয়ে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছে কোম্পানি দুটি। দেশে বর্তমানে এলএনজি সরবরাহের জন্য দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতার দুটি এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। এর একটির মালিকানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ। অন্যটির মালিকানায় যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি। দুটি টার্মিনালই কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত।
সস্তার বিদ্যুৎ এখন গলার কাঁটা
২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, দৈনিক বাংলা
কয়লার দহন মান বা ক্যালরিফিক মান ৪৬০০ হলে বিশ্ববাজারে প্রতি টনের দাম ১৫০ ডলার। জাহাজ ভাড়া ৫০ ডলার যোগ হলে প্রতি টনের দাম বড়জোর ২০০ ডলার হওয়ার কথা। কিন্তু এই মানের কয়লা আদানি গ্রুপ ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কিনছে ৩৪৭ ডলারে। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ২৪ টাকা ২৮ পয়সা।
অথচ বাংলাদেশের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫০৪০ ক্যালরিফিক মানের কয়লা কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়ছে ২৪৭ ডলার এবং কেন্দ্রটির ইউনিটপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১৩ টাকার কিছু বেশি।
পায়রা ও গোড্ডার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে এই খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ২৫ বছর আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে বড় অর্থঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
শুধু আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের দামই বেশি পড়বে, এমন নয়। আমদানি করা কয়লাচালিত পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয়ও অনেক বেশি। এর মধ্যে আদানি ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ বা কেন্দ্র ভাড়াও দেয়া হয়েছে বেশি। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেয়া হয়েছে ৪.২৫ ইউএস সেন্ট যা বর্তমান দেশি মুদ্রায় ৪.৫৪৫৪ টাকা, আর রামপালকে দেয়া হয়েছে ৪.৮৫ ইউএস সেন্ট বা দেশি মুদ্রায় ৫.১৮৭০ টাকা। আদানি ভারতের বৃহৎ গ্রুপ আর রামপালে ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান এনটিপিসির মালিকানা রয়েছে।
পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতার মুখে বাগেরহাটের সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর হলেও এটি কম মূল্যে বিদ্যুৎ দেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় অনেক চড়া।
এমনকি সৌরবিদ্যুৎ থেকেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। তা ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৩২০ মেগাওয়াটের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট চালু হয় গত ডিসেম্বরে। কিন্তু ইউনিট পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে যেতে পারছে না কারিগরি ত্রুটির কারণে। আদৌ কেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় চলবে কি না, তা নিয়ে এখনই প্রশ্ন উঠেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, পরিবেশের ওপর ঝুঁকি বাড়িয়ে অর্থনীতিতে নাজুক অবস্থায় ফেলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে কতটা লাভবান হবে বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম সরাসরি বাড়াতে পারবে সরকার
৩০ জানুয়ারি ২৩, সমকাল
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে নিতে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। গতকাল রোববার পাস হওয়া এই বিলের বিরোধিতা করে সংসদের বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেন গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান। এ সময় তিনি বিদ্যুৎ খাতের ইনডেমনিটির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, কালো আইনের আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে।
গতকাল সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। গত ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের এই ধারায় সংশোধন আনা হয়। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পর বসা সংসদের প্রথম দিনের বৈঠকে তা উপস্থাপন করতে হয়। সে অনুযায়ী গত ৫ জানুয়ারি অধ্যাদেশটি সংসদে তুলেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল এটি বিল আকারে সংসদে পাস হয়েছে।
আবার বাড়লো বিদ্যুতের দাম
৩১ জানুয়ারী ২০২৩, সংবাদ
আইএমএফের ঋণ অনুমোদন হওয়ার দিনই বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ালো সরকার। এবার খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম গড়ে পাঁচ শতাংশ এবং পাইকারিতে আট দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সরকারের নির্বাহী আদেশে বাড়ানো বিদ্যুতের নতুন এ দাম আজ থেকে কার্যকর হবে।
গত সোমবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে তা প্রকাশ করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে বলা হয়, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য বিদ্যুতের এই দাম বাড়ানো হয়েছে।
এক মাসেই (জানুয়ারি) সরকারের নির্বাহী আদেশে একবার গ্যাসের দাম এবং দুইবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রত্যেক মাসেই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার কথা আমরা আগেই বলেছিলাম। আমাদের আর ভর্তুকি দেয়ার সুযোগ নেই। এখন এভাবে সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই যেতে হবে।’
আগে গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াতো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সম্প্রতি আইন সংশোধন করে নিজের হাতে এই ক্ষমতা নেয় সরকার।
গত ১২ জানুয়ারি খুচরা বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ, ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের শিল্পে ১৬০ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৭৮ শতাংশ ও বাণিজ্যিক খাতে ১৪ শতাংশ বাড়ানো হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে। ৩০ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে আবার খুচরা বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ৮ দশমিক শতাংশ বাড়ানো হলো।
এলপিজির দাম বাড়ল সিলিন্ডারে ২৬৬ টাকা
ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৩, বণিক বার্তা
ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহকৃত ১২ কেজি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডারের দাম এক লাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। চলতি মাসের জন্য প্রতি সিলিন্ডার এলপিজির দাম ১ হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করেছে কমিশন, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা।
বাংলাদেশের সঙ্গেও আদানির কারসাজি
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, দৈনিক বাংলা
ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসার কথা আগামী ২৬ মার্চ থেকে। শুরুতেই আদানি গ্রুপ শেয়ার কারসাজির মতো গোড্ডা কেন্দ্রের কয়লার দামে কারসাজি শুরু করেছে।
জাহাজ ভাড়াসহ গোড্ডায় ব্যবহৃত কয়লার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ২০০ ডলার, আর তারা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে ৪০০ ডলারে বিক্রির জন্য চিঠি দিয়েছে। প্রকৃত দাম থেকে কারসাজি করে টনপ্রতি ২০০ ডলার বাড়তি নেবে আদানি গ্রুপ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্টে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা গত ৩১ জানুয়ারি আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন নির্মাণের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এই মামলার শুনানি হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া পিডিবি কয়লার দাম বাড়তি চেয়েছে তা জানতে চেয়ে আদানিকে চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া পিডিবি আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তির (পিপিএ) সংশোধন চেয়েছে।
আদানি কয়লার দাম ৬০% বেশি চায়
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
ভারতের আদানি গ্রুপ যে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে, সেই কেন্দ্রের জন্য কয়লার দাম বেশি ধরতে চায় তারা। আদানি কয়লার দাম বেশি ধরলে বাংলাদেশকে অনেকটা বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, আদানি গ্রুপ প্রতি টন কয়লার দাম ধরতে চায় ৪০০ ডলার। এই দরে কয়লা আমদানির ঋণপত্র খোলার কথা তারা জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। অথচ বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত রামপাল এবং বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে করা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার দাম পড়ছে প্রতি টন ২৫০ ডলারের মতো। কিন্তু আদানি প্রতি টন কয়লার যে দাম প্রস্তাব করেছে, তা রামপাল ও পায়রার চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি।
তবে আদানির প্রস্তাব করা কয়লার দাম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পিডিবি। দর নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতিনিধিদল পাঠাতে গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে আদানিকে চিঠিও দিয়েছে পিডিবি। সে অনুযায়ী আদানির একটি কারিগরি প্রতিনিধিদল আলোচনা করতে ঢাকায় আসবে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, আদানি কয়লার দাম পুনর্মূল্যায়নে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুতের চুক্তিতে পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না: আদানি গোষ্ঠী
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
ভারতের আদানি গোষ্ঠীর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনায় মূল্যছাড় চাইছে বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার ভারতের স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে প্রকাশিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানা গেছে। তবে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তির শর্ত নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা হচ্ছে না বলে আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়াকে ৩ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে আদানি গোষ্ঠী জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মূল্যছাড়ের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে জানতে আদানি গ্রুপের মুখপাত্র ভারসা চৈনানির সঙ্গে যোগাযোগ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। তিনি এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না জানিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
‘ফিটনেস’ সমস্যায় রামপাল
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে থাকলে বয়লারের টিউব ফেটে যাচ্ছে। বয়লারটি জার্মানির হলেও এর টিউব ভারতীয়। টিউব ফেটে যাওয়া মাত্র কেন্দ্রটির উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কাছাকাছি সময়ে পায়রায় একই ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়, যার টিউব এসেছে জাপান থেকে। সেখানে কোনো ত্রুটি দেখা দেয়নি। তার ভাষ্য, রামপালের টিউবটি দুর্বল ও নিম্নমানের হওয়ায় বারবার ফেটে যাচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ বিষয়ে বলেছেন, ‘সব ঠিক আছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই।’
কয়লার অভাবে ২৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত বুধবার ফের চালু হয়েছে রামপাল কেন্দ্রটি। বৃহস্পতিবার সেখানে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক সুভাষ কুমার পাণ্ডে সংবাদ সম্মেলন করে জানান।
শুক্রবার সকালে উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, কেন্দ্রটিতে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। যদিও বিকালে তিনি বলেন, ৪০০ মেগাওয়াট। আর সন্ধ্যায় বলেন, ফুল লোডে অর্থাৎ ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এসব তথ্য থেকেও বোঝা যায়, কেন্দ্রটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
রামপাল কেন্দ্রটি এখন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার কথা। এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, নিম্নমানের যন্ত্রাংশের বিষয়ে। যে কারণে পূর্ণ ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর পর গত চার মাসের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট মাত্র ৯৭ ঘণ্টা ৬০০ মেগাওয়াটের ওপরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। একেকটি ইউনিটের ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। দ্বিতীয় ইউনিট জুনে চালু হওয়ার কথা।
ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যৌথভাবে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফসিএল) গঠন করে কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ঋণসহায়তায় কেন্দ্রটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেকট্রিক লিমিটেড (ভেল)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি বেইজ লোড পাওয়ার প্ল্যান্ট। এ ধরনের কেন্দ্রের প্রধান শর্ত হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। সাধারণত বিদ্যুৎ খাতের মেরুদণ্ড হিসেবে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু রামপাল সেই শর্ত পূরণ করার ক্ষেত্রে শুরুতেই সংকটে পড়েছে। কোনো কেন্দ্র দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন করতে না পারলে তাকে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
বিদ্যুৎ বিভাগ, পিডিবি এবং রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্র বলছে, কেন্দ্রটি ৬০০ মেগাওয়াট লোডে দীর্ঘ সময় ধরে চালালে বয়লারের টিউব ফেটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। একাধিকবার এমন ঘটায় কেন্দ্রটির পূর্ণক্ষমতায় উৎপাদন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। একটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে শুরুতেই এ ধরনের ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তারা এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, বয়লারের একটি সেকশনে টিউব থাকে। তার ভেতরে পানি থাকে। টিউব থেকে বাষ্প বের হয়ে তা টারবাইন ঘোরায়। এই বাষ্পের পরিমাণ বাড়ালেই টিউব ফেটে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা নিয়ে চুক্তি পর্যালোচনা হচ্ছে
২০ ফেব্রুয়ারি ২৩, সমকাল
চুক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কয়লার দাম বেশি ধরেছে ভারতের আদানি গ্রুপ। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার দাম বেশি হলে বিদ্যুৎ কিনতে বেশি খরচ হবে বাংলাদেশের। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা। কয়লার দর নিয়ে আলোচনার জন্য আদানিকে চিঠিও দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ পরিস্থিতিতেই দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা আমদানি, সরবরাহ, কয়লার দাম নির্ধারণের পদ্ধতি পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য বিদ্যুৎ সচিবের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির বৈঠক হতে পারে আজ।
পায়রা কেন্দ্রসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে পিডিবির চুক্তিতে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর বিবেচনা করে দাম নির্ধারণের কথা বলা আছে। আদানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর নেই। তাই কয়লার দর বেশি দেখানোর সুযোগ পায় আদানি।
৭ মাস পর স্পট এলএনজি সরবরাহ শুরু, গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে সামান্য
২৩ ফেব্রুয়ারি ২৩, সমকাল
ফের স্পট মার্কেট (আর্ন্তজাতিক খোলা বাজার) থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস পর গত সোমবার স্পট এলএনজির কার্গো দেশে এসেছে। এরপরই গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির অল্প উন্নতি হয়েছে।
৮৫০ কোটি টাকায় ৬২ হাজার টন এলএনজির কার্গোটি সরবরাহ করেছে টোটাল এনার্জি। এই কাগোর প্রতি এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন বৃটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজির দাম পড়ে ১৯ দশমিক ৭৪ মার্কিন ডলার।
আগামী দুই-এক সপ্তাহে আরেক কার্গো এলএনজি আসার কথা রয়েছে, যা সরবরাহ করেব জাপানের জেরা কোম্পানি। এ কার্গোর প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়ঝে ১৬.৫০ মার্কিন ডলার। এভাবে জুন পর্যন্ত মাসে স্পট থেকে মাসে দুই কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সোমবার পেট্রোবাংলা ২৭৪.২৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে এলএনজি থেকে পাওয়া গেছে ৫৪.৭৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস।
গত ১৭ মার্চ দেশে গ্যাসের সরবরাহ ছিল ২৬৬.৮৩ কোটি ঘনফুট, যার মধ্যে এলএনজি থেকে পাওয়া যায় ৪৫.৬৭ কোটি ঘনফুট।
মাঝসমুদ্রে রূপপুরের পণ্য খালাস রুশ জাহাজের
২৩ ফেব্রুয়ারি ২৩, সমকাল
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম খালাস করেছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ উরসা মেজর। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের মাঝসমুদ্রে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি পণ্য খালাস শুরু করে, যা গত সোমবার শেষ হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে দেয়নি বাংলাদেশ। আর রাশিয়াও পণ্য খালাস করতে এক প্রকার জেদ ধরে ছিল। সবশেষে মাঝসমুদ্র থেকে জাহাজের পণ্য বাংলাদেশি পতাকাবাহী ফিডার জাহাজে করে মোংলা বন্দরে নিয়ে আসা হয়। যে কোনো সময়ে জাহাজটি বঙ্গোপসাগর ছাড়বে। আর জাহাজ খালাস হওয়ার পরই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মস্কো।
কয়লাবিদ্যুৎও দামি, মাশুল মানুষের
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ উদ্যোগে যখন (২০১২) কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়, তখন বলা হয়েছিল ইউনিটপ্রতি খরচ দাঁড়াবে সাড়ে ৭ থেকে ৮ টাকা। কিন্তু রামপাল উৎপাদনে আসার পর এখন দেখা যাচ্ছে, ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৪ টাকার বেশি।
কয়লাবিদ্যুতের এই দর এখন ফার্নেস তেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের কাছাকাছি। বাড়তি ব্যয়ের কারণ দুটি—এক. বিশ্ববাজারে কয়লার দাম ও মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। দুই. বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির সময় কয়লার মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া ‘যথাযথ’ না হওয়া।
কয়লাবিদ্যুৎ পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু সরকার এই বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকেছিল সাশ্রয়ী দামের কথা বলে। এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু রামপাল নয়, পটুয়াখালীর পায়রায় বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত পায়রা কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠীর কাছ থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও বাড়তি দাম পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার এখন ‘কিছু একটা’ করার কথা ভাবছে। কয়লার দাম নির্ধারণের কৌশল ঠিক করতে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে কাজ করছে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি।
গত ২৩ জানুয়ারি গঠন করা এই কমিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানির চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট আমদানিপ্রক্রিয়া ও সরবরাহপদ্ধতি পর্যালোচনা করছে। কয়লা সরবরাহ, ঋণপত্র খোলা ও আমদানির অনুমতি বিষয়ে সুপারিশ করবে তারা। গত সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক করেছে এ কমিটি। বৈঠকে অংশ নেওয়া তিনজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে কয়লা কেনার প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য দেশ কীভাবে কয়লা কেনে, সেটিও দেখা হচ্ছে। আরও বৈঠক করা হবে। এরপর কয়লা কেনার প্রক্রিয়া নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সুপারিশ বা মতামত জানাবে কমিটি।
কমিটি গঠনের কারণ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ-সচিব হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কয়লা আমদানি নিয়ে অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল। বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত কমিটি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে এবং করণীয় বিষয়ে সুপারিশ করবে। এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে যে দাম পড়ে তা ধরলে গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও বেশি। বরং কয়লা থেকে কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বিশ্ববাজারে কয়লার দাম কমছে। এটি আরও কমবে।
অবশ্য আগে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, তেলভিত্তিক বিদ্যুতের বদলে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালু হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, খরচ তো কমছেই না বরং মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। জানুয়ারি মাসে খুচরায় দুই দফায় ১০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতের দাম।
সব মিলিয়ে গত ১৪ বছরে খুচরায় বিদ্যুতের দাম ১২ দফা বেড়েছে। আর পাইকারিতে বেড়েছে ১১ বার।
গ্যাস থেকে কয়লায় জোর
২০০৫ সালে করা বিদ্যুৎ খাতের প্রথম মহাপরিকল্পনা ছিল গ্যাসনির্ভর। এর পর ২০১০ সালের মহাপরিকল্পনায় কয়লার ওপর জোর দেওয়া হয়। ওই মহাপরিকল্পনা ধরে বড় কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা ও রামপাল, ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে চট্টগ্রামে এস আলমের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র। বরিশালের বরগুনায় ৩০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠার পর্যায়ে রয়েছে।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে দেশে বিতর্ক ও আন্দোলন হয়েছে। পরিবেশবাদীরা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে দাবি করেছেন। জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বলে উল্লেখ করে বলা হয়, এগুলো পরিবেশদূষণ কম করবে। যদিও কয়লাবিদ্যুৎ থেকে সরে আসতে অনুমোদন দেওয়ার পরও সরকার ২০২১ সালের জুনে ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করেছে।
নতুন কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের মধ্যে ২০২০ সালে প্রথম উৎপাদনে আসে পায়রা। গত ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসে রামপাল। ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য প্রতিষ্ঠিত আদানির ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে শিগগিরই।
সব মিলিয়ে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। যার মধ্যে কয়লাবিদ্যুৎ ১২ শতাংশ। অবশ্য এ হিসাবে এখনো আদানি, এস আলম ও বরগুনার বিদ্যুৎকেন্দ্র ধরা হয়নি।
ব্যয় কত দাঁড়াচ্ছে
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাব বলছে, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) কয়লা থেকে বিদ্যুৎ কিনতে (প্রতি ইউনিট) গড়ে পিডিবি খরচ করেছে ১৩ টাকা ৪০ পয়সা। তবে আমদানি করা কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৪ টাকা ৭৯ পয়সা। আর ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে খরচ হয়েছে ১৬ টাকা ৮৬ পয়সা। বেসরকারি খাতের (আইপিপি) ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় আরও কম।
ফলে দেখা যাচ্ছে কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এখন আর সস্তা নয়। দাম ফার্নেস তেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের কাছাকাছি।
কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ডিসেম্বরে একটি পর্যালোচনা করে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল। তাদের হিসাবেও দেখা যায়, চুক্তির সময় যে দামে বিদ্যুৎ কেনার আশা ছিল, তার চেয়ে এখন প্রায় দ্বিগুণ দাম পড়ছে। যেমন পায়রা থেকে কেনা বিদ্যুতের দর পড়ার কথা ছিল ইউনিটপ্রতি সাড়ে ৬ টাকার মতো। এখন কয়লার দর টনপ্রতি ২৪৫ ডলার ধরা হলে বিদ্যুতের দাম ১৮ টাকা পড়তে পারে।
সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লায় জোর দেওয়ার সুফল সাধারণ মানুষ পায়নি বলে মনে করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বিদ্যুৎ খাত বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, ফার্নেস তেলের চেয়ে অর্ধেকের কম হওয়ার কথা কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ। কিন্তু অযৌক্তিকভাবে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ধরে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই সস্তার কয়লা বিদ্যুৎ মুনাফা হয়ে বিনিয়োগকারীদের পকেটে চলে যাচ্ছে। এটা রামপাল, পায়রা, আদানি, সব ক্ষেত্রেই।
পিডিবি সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, পায়রা থেকে গত অর্থবছরে সংস্থাটি বিদ্যুৎ কিনেছে ইউনিটপ্রতি ১৪ টাকা ৭৯ পয়সায়। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া গিয়েছিল ৬ টাকায়। আদানি গ্রুপের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ সাড়ে ৮ থেকে ৯ টাকায় পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। এখন এটি ১৫ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, আদানি কয়লার দাম বেশি চাচ্ছে। এ নিয়ে আপত্তিও জানিয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) গত মাসের একটি প্রতিবেদন বলছে, গত জুলাই মাসে দেশে প্রতি টন কয়লা আমদানি হয়েছে গড়ে ২০৬ মার্কিন ডলার দরে। এর পর থেকে তা কমে অক্টোবরে গড়ে ১৩৪ ডলার দাঁড়ায়। নভেম্বরে দাম একটু বেড়েছে, টনপ্রতি দাঁড়িয়েছে ১৫০ ডলারের কিছু বেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডিসেম্বর কয়লা আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে টনপ্রতি ১১৫ ডলার ধরে। জানুয়ারিতে দর পড়েছে ১১৯ ডলার। অবশ্য কয়লার কমতি দামের মধ্যেও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে।
বিদ্যুতের অপ্রতিযোগিতামূলক ক্রয় চুক্তিগুলোই কি রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বোঝা
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩, বণিক বার্তা
২০১০ সাল থেকে অপ্রতিযোগিতামূলক ও অসম ক্রয় চুক্তি পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টের (পিপিএ) ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এসেছে অনেকগুলো আইপিপি। এসব চুক্তি সম্পাদনের প্রক্রিয়াটিও অনেকটাই অস্বচ্ছ ও গোপনীয়। এসব পিপিএর ভিত্তিতে আইপিপিগুলো ঝুঁকি ও প্রতিযোগিতামুক্ত পরিবেশে ব্যবসা করার সুযোগ পেলেও বিদ্যুৎ খাতের একক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসান ও দায়ের বোঝা বেড়েছে। অর্থ না থাকায় এখন আবার আইপিপিগুলোর পাওনাও পরিশোধ করতে পারছে না সংস্থাটি।
বিদ্যমান পিপিএ কাঠামোর আওতায় মোটাদাগে পাঁচ ধরনের শর্ত আইপিপিগুলোকে বিপুল পরিমাণ মুনাফার নিশ্চয়তা দিলেও বিপত্তি বাড়াচ্ছে বিপিডিবির। টেক অর পে (টিওপি) শর্তের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পাচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতিতে স্থাপিত সক্ষমতার ভিত্তিতে ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়ার নিশ্চয়তা। কেন্দ্রগুলোর জ্বালানির ব্যয় সংস্থানের ভারটিও বর্তাচ্ছে বিপিডিবির ওপরই। বিদ্যুতের দাম টাকায় পরিশোধ করা হলেও ট্যারিফ নির্ধারণ হচ্ছে ডলারে। আবার সভরেন গ্যারান্টির মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে নেয়া বিদেশী ঋণের দায়ভারও নিজের ওপর টেনে নিচ্ছে রাষ্ট্র। এতে আইপিপিগুলো খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচলেও ভারী হয়ে উঠছে রাষ্ট্রীয় দায়ের বোঝা। এর সঙ্গে সঙ্গে কর অব্যাহতি ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের সুবিধাও পাচ্ছে আইপিপিগুলো।
আইপিপি খাতের উদ্যোক্তাদের যেকোনো পরিস্থিতিতে মুনাফার নিশ্চয়তা থাকলেও চাপ বাড়ছে বিপিডিবি ও সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। বর্তমানে গোটা বিশ্বেই বিদ্যুতের এ ধরনের অসম-অপ্রতিযোগিতামূলক ক্রয় চুক্তি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে পুরনো চুক্তিগুলোকে পর্যালোচনা শুরু করেছে। কেনিয়া ও ফিলিপাইনসহ বেশ কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে পুরনো চুক্তি পর্যালোচনাসহ সার্বিক পিপিএ কাঠামোয় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। অনেক দেশে এ পরিবর্তনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীনও রয়েছে। এসব দেশেও নতুন ক্রয় চুক্তিতে টিওপি শর্তের পরিবর্তে এখন টেক অ্যান্ড পে (টিএপি) শর্তকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বেশি। এ শর্ত অনুযায়ী অভিহিত সক্ষমতা নয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় প্রকৃত সক্ষমতার (প্লান্ট ফ্যাক্টর) ওপর। আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালানি সংস্থানে ব্যর্থ হলে বা নিজস্ব কোনো পরিচালনগত সমস্যার কারণে উৎপাদন চালু রাখতে না পারলে ক্রেতা সংস্থার ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধেরও বাধ্যবাধকতা থাকে না।
গত দশকের শুরুতে দেশের বিদ্যুৎ খাতের বড় সমস্যা হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছিল উৎপাদন সক্ষমতার বিষয়টি। সে সময় খাতটিতে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দেয়া শুরু করে সরকার। কিন্তু এখন এসব সুযোগ-সুবিধাকে গোটা অর্থনীতির জন্য বড় বোঝা হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পর্যবেক্ষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, এসব শর্ত নিরন্তর দেউলিয়াত্বের হুমকিতে থাকা প্রতিষ্ঠান বিপিডিবির লোকসানের বোঝাকে ক্রমেই আরো ভারী করে তুলেছে। ভর্তুকিতে টিকে থাকা প্রতিষ্ঠানটি এখন কেন্দ্রগুলোর জ্বালানির মূল্যসহ পাওনাও পরিশোধ করতে পারছে না।
বিপিডিবির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ এখন ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এজন্য প্রধানত সংস্থাটির আইপিপি-নির্ভরতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ সংস্থাটির ব্যয় হয়েছে ৭৪ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে আইপিপি থেকে কেনা হয়েছে ৪৯ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত অর্থবছরে বিপিডিবির ক্রয়কৃত বিদ্যুতের ৬৬ শতাংশেরও বেশি এসেছে আইপিপি থেকে। এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ সংস্থাটির ব্যয় বেড়েছে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২২ হাজার কোটি টাকা। বর্ধিত এ ব্যয়ের ৯৬ শতাংশই খরচ হয়েছে আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কেনায়। আইপিপিগুলোকে দেয়া অর্থের বড় অংশই আবার ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে পরিশোধিত অর্থ।
এর মধ্যেই আবার নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হচ্ছে। চলতি পঞ্জিকা বর্ষেই নতুন ২৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা, যার ১৩টিই আইপিপি। বিদ্যমান পিপিএ কাঠামো অনুযায়ী লোকসানের ভারে ভারাক্রান্ত অবস্থায়ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাবদ ব্যয় টানতে হবে বিপিডিবিকে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি নিজেই চলছে সরকারি ভর্তুকির ওপর নির্ভর করে। গত অর্থবছরেও সরকারের কাছ থেকে সংস্থাটিকে ভর্তুকি নিতে হয়েছে ২৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা।
আবার আইপিপিগুলোর জ্বালানিসংক্রান্ত দায়ভারও নিজ ঘাড়ে তুলে নিয়েছে বিপিডিবি। বিদ্যুতের বিল দেয়ার সময় এর সঙ্গে জ্বালানির মূল্যটিও যুক্ত করে দিচ্ছে আইপিপিগুলো। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি সংগ্রহজনিত যাবতীয় ঝুঁকি বহন শেষ পর্যন্ত বিপিডিবিকেই বহন করতে হচ্ছে।
সক্ষমতা হারিয়ে ভর্তুকি পাওয়ার পরও সংস্থাটি এখন আইপিপিগুলোর পাওনা টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সংস্থাটির কাছে আইপিপিগুলোর চার মাসের পাওনা বকেয়া রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। আইপিপি উদ্যোক্তাদের দাবি, বিপুল পরিমাণ টাকা আটকে পড়ায় তারা এখন জ্বালানির সংস্থানসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করতে পারছেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিদ্যুৎ খাতে মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি পুরোপুরি প্রতিযোগিতাহীন। বাজার নয়, বিপিডিবির সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করছে আইপিপিগুলো। আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো স্থাপন হচ্ছে শুধু উদ্যোক্তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রেও কোনো ধরনের টেন্ডার বা প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে না।
পাকিস্তানের বিদ্যুৎ খাতের সব সংকটই বাংলাদেশে দৃশ্যমান
ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩, বণিক বার্তা
পাকিস্তানে ২০১৩ সালেও বিদ্যুৎ খাতের সার্কুলার ডেবট বা চক্রাকার ঋণ ছিল ৪৫ হাজার কোটি রুপি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যেই তা কয়েক গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি রুপিতে। বর্তমানে দেশটির সার্কুলার ডেবট দাঁড়িয়েছে মোট জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশে। বিদ্যুৎ খাতের এ সার্কুলার ডেবটকেই এখন দেশটির সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর অন্যতম হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সার্কুলার ডেবট মূলত এক ধরনের সরকারি ঋণ। কোনো দেশের বিদ্যুতের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পাওনা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে এ ঋণচক্র শুরু হয়। পাওনা অর্থ না পেয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও এক পর্যায়ে জ্বালানি সরবরাহকারীদের বিল ও দেশী-বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হতে থাকে। এর সঙ্গে সঙ্গে সার্বিক খাতের লোকসান বাড়ার পাশাপাশি সরকারেরও দায় বড় হতে থাকে।
পাকিস্তানে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে দেশী-বিদেশী ঋণের ওপর নির্ভর করে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদা তৈরি করতে না পারায় উচ্চ সুদহারে নেয়া বাণিজ্যিক ঋণে নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অর্থনৈতিক কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। আবার বিদ্যুৎ খাতের জ্বালানি পরিকল্পনাও ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। সংগতিপূর্ণ সঞ্চালন ব্যবস্থা না থাকায় বিপুল সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে গুনতে হয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ। আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সম্পাদনের সময় ট্যারিফ নির্ধারণ হয়েছে ডলার ইনডেক্সেশন (ডলারে মূল্য নির্ধারণ করে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ) পদ্ধতিতে। এতে প্রতিবার পাকিস্তানি রুপির অবমূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। দিন দিন এ ব্যয়ের মাত্রা দেশটির ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা বিতরণ কোম্পানিগুলোর সক্ষমতাকে ছাড়িয়ে বড় হয়েছে। এতে যে দায় তৈরি হয়েছে, এক পর্যায়ে তা বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশটির সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ পরিমাণ ভর্তুকি দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এর ধারাবাহিকতায় খাতটিতে সৃষ্ট ঋণের দুষ্টচক্রের ভার এখন পাকিস্তানের সরকার তথা গোটা অর্থনীতিকেই বহন করতে হচ্ছে।
পরিস্থিতি সঙ্গিন হয়ে পড়ায় পাকিস্তানে এখন বিদ্যমান বিদ্যুৎ নীতি পর্যালোচনার দাবি উঠেছে। যদিও এরই মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হয়েছে ঋণের বোঝায় জর্জরিত পাকিস্তান। আপাতত সংকট মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের অর্থছাড়ের অপেক্ষায় আছে দেশটি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আইএমএফ এখন পর্যন্ত পাকিস্তানকে ঋণের অর্থছাড় না করার বড় একটি কারণ সার্কুলার ডেবট নিয়ন্ত্রণের শর্ত পালনে ব্যর্থতা। সংস্থাটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের সর্বশেষ আলোচনায় উঠে আসে, বিদ্যুতের মূল্য ব্যাপক হারে বাড়ানোর পরও খাতটিতে সার্কুলার ডেবটের পরিমাণ ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৯৩১ কোটি ডলার) রুপির নিচে আটকে রাখা সম্ভব হবে না। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে; দেশটির নীতিনির্ধারকরাও বলছেন, পাকিস্তান এরই মধ্যে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া বাকি।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি উৎপাদন কেন্দ্রের (আইপিপি) আধিপত্য বেশি। আবার দুই দেশে বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষেত্রে শর্ত ও কাঠামোও অনেকটাই সমজাতীয়। ক্যাপাসিটি চার্জ, জ্বালানি ক্রয় ও মূল্য পরিশোধের শর্ত, ডলার ইনডেক্সেশন (ডলারে ট্যারিফ নির্ধারণ, স্থানীয় মুদ্রা পরিশোধ), সভরেন গ্যারান্টি এবং কর সুবিধার নীতিগুলোও প্রায় একই রকম। দুই দেশেই বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো লাভজনকভাবে ব্যবসা করলেও দায় ও আর্থিক চাপে পড়েছে রাষ্ট্র ও জনসাধারণ। বিষয়টিকে এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনলে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও খাতটিতে ঋণের ভয়াবহ এক দুষ্টচক্র তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। পাকিস্তানে পরিস্থিতি এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এখনই সতর্ক না হলেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পক্ষেও এ সংকট সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ডলার সংকটের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ঝুঁকি দিনে দিনে আরো প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে।
একক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসান ও ঋণের বোঝা এখন মারাত্মক আকার নিয়েছে। এরই মধ্যে সংস্থাটির ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিপুল এ লোকসানের পুরোটাই ভর্তুকি বা ঋণ আকারে দিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরেও সরকারের কাছ থেকে সংস্থাটিকে ভর্তুকি নিতে হয়েছে ২৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা।
আবার সংস্থাটির কাছে সরকারের পাওনাও বকেয়া রয়েছে বিপুল পরিমাণ। শুধু ২০১৬-০৭ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই সংস্থাটিকে সরকার ঋণ দিয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিপিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা এখন বিপিডিবির নেই। আবার এ ঋণের কারণে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সংস্থাটির সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তিতে যেতে চাইছে না বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এজন্য এ বিপুল পরিমাণ ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে বিপিডিবি। তবে এতে সাড়া দেয়নি সরকার। লোকসান আর দায়ের ভারে বিপর্যস্ত প্রতিষ্ঠানটি এখন আইপিপিগুলোকেও পাওনা অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। সংস্থাটির কাছে আইপিপিগুলোর পাওনা অর্থ বকেয়া রয়েছে চার মাস ধরে, যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা।
গোটা বিদ্যুৎ খাতেই গত এক দশকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বিপুল মাত্রায় বেড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে খাতটিতে শুধু সরকারেরই দায়-দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকায়। এর মধ্যে খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি বকেয়া পরিশোধ বাকি রয়েছে ৭৮ হাজার ৯১ কোটি টাকা। ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার দায় তৈরি হয়েছে বিদেশী ঋণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে।
লাভের ভাগ আদানির, লোকসান বাংলাদেশের
ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
লাভের ভাগ গৌতম আদানির আর লোকসানটা বাংলাদেশের—ভারতীয় এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তিটিকে এক কথায় এভাবেই বলা যেতে পারে।
আদানির সঙ্গে হওয়া এই চুক্তিটি সরকারিভাবে গোপন রাখা হলেও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কেউ কেউ এটি গণমাধ্যমকে দিয়েছেন। সম্প্রতি একটি নিউজ পোর্টালও এটি প্রকাশ করেছে।
‘চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল, একপেশে এবং বাংলাদেশের জনগণের টাকায় এশিয়ার সাবেক শীর্ষ ধনীর পকেট ভরার চুক্তি,’ এমন বিশ্লেষণ সিডনিভিত্তিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ টিম বাকলির, যিনি এই খাতে ৩০ বছর ধরে গবেষণা করছেন।
দ্য ডেইলি স্টারের সংগ্রহ করা চুক্তিটি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেনে বা না জেনেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এমন একটি চুক্তি সই করেছে, যেখান থেকে আদানি পাওয়ার কয়লা ক্রয় থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ রপ্তানি পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে ‘অতিরিক্ত’ লাভ করার সুযোগ পাবে। এমনকি আদানি যদি চুক্তির কোনো শর্ত না মানে, তবু বাংলাদেশের জন্য এই চুক্তি থেকে বের হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
এছাড়া, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ আগামী ২৫ বছরের জন্য আদানি পাওয়ারের করের বোঝা বহন করবে, যে বোঝা ভারতীয় কোম্পানিটি তার সরকারের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ছাড় পেয়েছে। অর্থাৎ চুক্তিটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে আদানি তার সরকারকে ট্যাক্স দেবে না, কিন্তু সেই ট্যাক্সের টাকা চুক্তিতে আগে থেকে যোগ করা ছিল বলে বাংলাদেশকে দিয়ে যেতে হবে।
ওয়াশিংটন পোস্টের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ২০১৯ সালে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) ঘোষণা করার কারণে চুক্তির ২৫ বছরে শুধু ক্লিন এনার্জি সেস (কার্বন নিঃসরণের বিপরীতে প্রদেয় এক ধরনের কর) থেকে ১ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে।
এটা কেবল এক ধরনের কর থেকে বাড়তি আয়। আদানি বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে রপ্তানিমুখী বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় কর ছাড়সহ অগণিত সুবিধা পাবে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খরচ কমিয়ে ফেলতে পারবে।
টিম বাকলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কর ছাড়ের কারণে আদানির ১ বিলিয়ন ডলারের অনেক বেশি টাকা বেঁচে যাবে। যেমন, আদানি চীন থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম আমদানির জন্য কর ছাড় থেকে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে। কিন্তু এই টাকা তারা ঠিকই বাংলাদেশের কাছ থেকে আদায় করবে। এতে আদানির পুরোই লাভ।’
অবশ্য, কর ছাড়ের টাকায় বাংলাদেশের ভাগ না পাওয়ার বিষয়টি আদানি পাওয়ারের কাছে ‘ব্যবসা’। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদানির একজন মুখপাত্র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চুক্তিটি সই হওয়ার সময় তো আমরা জানতাম না যে করের পরিমাণ কমবে। এটা তো আমরা আমাদের ব্যবসায়িক বুদ্ধি খাটিয়ে ছাড় আদায় করেছি। এটা তো আমাদের লাভ।’
তিনি বলেন, ‘যদি কোনো কারণে আমাদের বাড়তি কর দিতে হতো, সেটা তো আমরা পিডিবির ওপর চাপাতাম না। আমরা কত টাকা খরচ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করব, সেটা আগে থেকেই নির্দিষ্ট। তাই ওই টাকাটা থেকে যত কম খরচে বানানো যাবে, সেটা আমাদের আয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আদানির চুক্তি পর্যালোচনা করে এক আইনজীবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চুক্তিটি যদি ন্যায্য হতো, তবে আদানির কর সুবিধার বেঁচে যাওয়া টাকার একটা অংশ বাংলাদেশও পেত।’
যদিও গত ২৪ ফেব্রুয়ারি লিখিত প্রশ্নের জবাবে আদানির অন্য একজন মুখপাত্র বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশকে কর ছাড়ের টাকা দিতে হবে না।’
টিম বাকলি জানান, কর ও শুল্ক ছাড়াও চুক্তির মূল শর্তে বলা হয়েছে, যে কোনো কারণে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ না কিনলেও, বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) বাবদ বছরে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে।
তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ রক্ষায় বিভিন্ন আন্দোলনের পরিচিত মুখ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন, এটি কোনো চুক্তি নয়, বরং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী আদানিকে বাংলাদেশের দেওয়া উপহার।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অন্যায্য চুক্তির দিক থেকে সব রেকর্ড ভেঙেছে আদানির এই চুক্তি।’
আদানির সম্ভাব্য চুক্তি লঙ্ঘন
২০১৭ সালে চুক্তি সই করার সময় আদানি পাওয়ার বিভিন্ন কর অনুমান করে একটি টাকার অংক নির্ধারণ করে, যা পরবর্তী ২৫ বছরে বাংলাদেশ তাদের পরিশোধ করবে। এর মধ্যে রয়েছে ১২ শতাংশ আবগারি শুল্ক, ১৫ শতাংশ পরিষেবা কর, ভ্যাট ও ভারতে প্রদেয় আয়কর।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের নীতিমালা সংশোধন করে আদানির গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়, যে ধরনের সুবিধা এর আগে কোনো বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়নি।
ভারতীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সরকারি নথি অনুসারে, শুধু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে বলে গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, এই বিদ্যুৎ যদি যদি বাংলাদেশে রপ্তানি না হতো তাহলে আদানি কর ছাড় পেত না।
বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এসইজেড হিসেবে ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে আবগারি শুল্ক, রাষ্ট্রীয় পণ্য ও পরিষেবা করের ক্ষেত্রে আদানির বেশিরভাগ ব্যয়, প্রথম ৫ বছরের জন্য আয়করের শতভাগ মওকুফ করা হয়েছে।
চুক্তির ১৩ ডি (আই) ধারা অনুযায়ী, যে ধরনের কর প্রাথমিকভাবে দিতে হবে বলে ধারণা করা হয়েছে, তার কোনো পরিবর্তন হলে তা পিডিবিকে অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে। চুক্তির আরেকটি ধারায় সেই পরিবর্তিত ধারণার হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়ার বিষয়টি উল্লেখও আছে। কিন্তু একইসঙ্গে আছে আরেকটি আইনি বাধা।
‘সংবেদনশীল তথ্য’ বলে নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেছেন, এসইজেড ঘোষণার প্রায় ৪ বছর পরেও ঠিক কত টাকা বেঁচে গেছে সে সম্পর্কে আদানি পিডিবিকে লিখিতভাবে জানায়নি।
বাংলাদেশের চুক্তি আইন ১৮৭২ অনুযায়ী, আদানির তথ্য গোপন করা চুক্তিভঙ্গের শামিল।
সারা বিশ্বে আদানি গ্রুপের অন্যায় কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি করা বব ব্রাউন ফাউন্ডেশনের অলাভজনক প্রকল্প আদানিওয়াচের একটি সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এখানে চুক্তিভঙ্গ হয়েছে এবং চুক্তিটি আইনত অকার্যকর কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷
চুক্তির সাধারণ নিয়ম অনুসারে, চুক্তিভঙ্গ হলে নির্দোষ পক্ষের জন্য (এক্ষেত্রে পিডিবি) ২টি বিকল্প থাকবে। একটি ক্ষতিপূরণ দাবি, অন্যটি চুক্তি বাতিল।
কিন্তু মজার ব্যাপারটি এখানেই। চুক্তির একটি অস্বাভাবিক ধারার কারণে এই চুক্তিভঙ্গের ফলে পিডিবি চুক্তিটি বাতিল করতে পারবে না।
৪.২ (এল) ধারা অনুযায়ী, পিডিবি তখনই কেবল ‘নোটিশ অব ডিফল্ট’ জারি করতে পারবে, যদি চুক্তিভঙ্গের কারণে কোম্পানির কোনো ক্ষতি হয় বা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে।
যেহেতু কর ছাড় থেকে বেঁচে যাওয়া অর্থের পরিমাণ গোপন করা আদানির উৎপাদন সক্ষমতাকে বাধা দেয় না, তাই এ ধরনের কাজের জন্য আগামী ২৫ বছর বাংলাদেশ চুক্তি বাতিলের ক্ষমতা রাখে না।
নথি অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরের দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে এই ধারাটি ব্যবহার করা হয়নি।
তবে আদানি পাওয়ার কর ছাড়ের বিষয়ে পিডিবিকে জানিয়েছিল বলে দাবি করেছেন আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র।
ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে তাকে এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ সরবরাহ করার অনুরোধ করা হলে তিনি ‘ব্যবসায়িক গোপনীয় নথি’ বিধায় অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা পিডিবিকে জিজ্ঞেস করুন। গত ৫ বছরে আমরা যেসব চিঠি পাঠিয়েছি, সেগুলো যদি তারা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে তবে তাদের কাছে প্রমাণ থাকা উচিত।’
আদানির মুখপাত্রের দাবি, আদানির বিদ্যুতের খরচ বেশি হবে, এর কোনো ভিত্তি নেই। ‘আমরা তো এখন পর্যন্ত কোনো ইনভয়েস ইস্যু করি নি। কমার্শিয়াল অপারেশন শুরু হলে ইনভয়েস দেওয়া হবে। তখন বিষয়টি পরিষ্কার হবে যে আমাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ কত। আমাদের হিসাবে, এটা হবে বাংলাদেশের যে কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে কম।’
কর ছাড়ের সুবিধা না দিয়ে আদানির বাড়তি লাভ
কারমাইকেল কয়লাখনি (অস্ট্রেলিয়ায় আদানির কয়লার খনি, যেখানে অধিক ছাইসহ কম শক্তির কয়লা উত্পাদন করা হয়), কয়লা বন্দর, রেললাইন, গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং তাদের মালিকানাধীন ট্রান্সমিশন লাইনের কিছু অংশ— চুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে গৌতম আদানি বেশি মুনাফা করবে।
টিম বাকলির মতে, চুক্তিটি ‘কস্ট প্লাস প্লাস’। এটা এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেন আদানির আরও বেশি লাভ নিশ্চিত হয় এবং বাংলাদেশ সেই লাভের ছোট একটি অংশও না পায়।
চুক্তির বিভিন্ন ধারায় আদানি পিডিবির সামনে মুলা ঝুলিয়েছে এবং পরের ধারাতেই তা কেড়ে নিয়েছে।
যেমন, চুক্তির একটি ধারায় বলা হয়েছে কর ছাড় পেলে ক্যাপাসিটি চার্জ কমানো হবে। ১৩ (ডি)(৪) ধারা অনুযায়ী, ‘বাণিজ্যিক কার্যক্রমের তারিখ অনুযায়ী কর অনুমানের পরিবর্তনের ফলে এককালীন চার্জ বা ব্যয়ে (বা চার্জ বা ব্যয়ের এককালীন বৃদ্ধি বা হ্রাস) সমন্বয় হবে ক্যাপাসিটি চার্জের মধ্যে।’
এমনটাই তো হওয়া উচিত।
কিন্তু চুক্তির এই ধারায় যে ন্যায্যতার কথা বলা হয়েছে, ঠিক পরের ধারাতেই (৫) বলা হয়েছে, ‘উভয়পক্ষ এ বিষয়ে সম্মত হয়েছে যে, প্রাথমিক কর অনুমানের কোনো পরিবর্তনের কারণে কোনো ধরনের সমন্বয় হবে না… যতক্ষণ না বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হয়।’
চুক্তিটি পর্যালোচনাকারী আইনজীবী বলছেন, চুক্তির ১৩ ধারার মূল বক্তব্য হচ্ছে কর অনুমানের যে কোনো পরিবর্তন যদি পিডিবির পক্ষে যায়, তাহলে কোনো সমন্বয় হবে না। এটা নিঃসন্দেহে ‘বৈষম্য’র সুস্পষ্ট উদাহরণ।
ওই আইনজীবী বলেন, ‘আদানি চুক্তিতে একটি ধারা তৈরি করেছে, যেখানে বিপিডিবিকে কোনো কর ছাড় দেওয়া হবে না। এর অর্থ তারা মূলত ক্যাপাসিটির জন্য অতিরিক্ত চার্জ করতে পারে।’
বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিজিডব্লিউইডি) সদস্য সচিব মেহেদী হাসান মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে যৌক্তিক পুনর্বিন্যাস সম্পর্কে একটি ধারণা দেন।
তিনি বলেন, ‘কর ছাড়ের পর আদানির ক্যাপাসিটি চার্জ ১২-১৫ শতাংশ কমানো উচিত ছিল।’
অধ্যাপক আনু মুহম্মদ এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘এখানে স্পষ্টতই কোনো আলোচনা হয়নি। আদানি এই শর্তগুলো দিয়েছে এবং বাংলাদেশ রাজনৈতিক লাভের জন্য সব শর্ত মেনে নিয়েছে।’
টিম বাকলি বলেন, ‘করপোরেট কর ছাড় আদানির জন্য উৎপাদন খরচ কমাতে এবং লাভের পরিমাণ বাড়ানোর একটি উপায় ছিল। আদানি অস্ট্রেলিয়ায় তার কয়লা খনির জন্য যে পরিমাণ কর দেয়, তা কমানোর জন্য একাধিক উপায়ও বের করেছে।’
বাংলাদেশ কেন এই চুক্তিতে সই করেছে?
মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপের শেয়ার কারসাজির তথ্য প্রকাশের পর বাংলাদেশেও আদানি পাওয়ারের চুক্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ে।
আগেও যারা বিভিন্ন সময় আদানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন, তারা জানতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ কেন চাহিদা না থাকার পরেও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েই যাচ্ছে।
মেহেদী হাসান ভারতের অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান গ্রোথওয়াচের সঙ্গে যৌথভাবে একটি নিবন্ধ লেখার পর বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ‘প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।’
হাসান বলেন, ‘তবে আমাদের কথাগুলো রয়ে গেছে এবং এখন সেগুলোই বের হয়ে আসছে। এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়কর হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টা এমন না যে, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বুঝতে পারেননি। যারা এর আগেও অনেক বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে, তারাই আদানির চুক্তির সময় দায়িত্বে ছিলেন। তারা জানতেন যে এই চুক্তি বাংলাদেশের পক্ষে নয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির একটি সূত্র জানায়, ‘এই চুক্তিপত্রটি পড়ার জন্য আমরা খুব বেশি সময় পাইনি, বিদ্যুৎ বিভাগ নিজেই এটি যাচাই করে আমাদের শেষ সময়ে জানিয়েছে।’
এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
পিডিবি চেয়ারম্যান কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলেও তিনি এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।
তার অনুরোধে ডেইলি স্টার হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নগুলো লিখে পাঠালেও এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার সময় পর্যন্ত সেগুলোর উত্তর দেননি।
পরিত্রাণের উপায় কী?
আদানির সঙ্গে হওয়া বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির ১৯.৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো বিরোধের সমাধান করা না গেলে তা শেষ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার, ২০১৬ এর ষষ্ঠ সংস্করণের সালিশের নিয়ম অনুসারে নিষ্পত্তি করা হবে।
দ্য ডেইলি স্টারকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আইনজীবী বলেন, পিডিবি আদর্শিকভাবে এই চুক্তি বাতিল করতে সিঙ্গাপুরে যেতে পারে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এই ব্যয়বহুল চুক্তির খরচ জনগণকেই বহন করতে হবে। বাংলাদেশের জনস্বার্থ বিবেচনায় না নিয়েই চুক্তিটি করা হয়েছে বলেই আমরা এর বিরোধিতা করি।’
ডলারে চুক্তি, খেসারত দিচ্ছে পিডিবি
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ক্রয় চুক্তি করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চুক্তিতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম হিসাব করা হয় মার্কিন ডলারে। গত এক বছরে ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫ টাকা। এতে এক বছরে পিডিবির বাড়তি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। তারপরও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি হচ্ছে ডলারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল টাকায় পরিশোধ করা হয়। কিন্তু চুক্তি ডলারে করায় বিল হিসাব করা হয় ডলারের চলতি বিনিময় হার ধরে। এক বছর আগে ১ ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরে বিল দিত পিডিবি। এখন সেই ডলার ১০৫ টাকা দরে বিল দিতে হচ্ছে।
সরকার যদি চুক্তির সময় বিল টাকায় হিসাব করার শর্ত রাখত, তাহলে বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতো না। এই টাকা অবশ্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই ওঠাচ্ছে সরকার। বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে পিডিবির ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ায়। গত জানুয়ারি মাসে দুই দফায় খুচরা বিদ্যুতের দাম ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১২ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ঘাটতি সামলাতে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানোর চিন্তা আছে সরকারের।
আদানির সঙ্গে ‘গোপন’ বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থ পরিপন্থী
ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
২০১৫ সালের আগে-পরে বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এরপর যতটা না চাহিদা বেড়েছে, তারচেয়ে বেশি বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে আরেকটি ব্যয়বহুল চুক্তির কোনো প্রয়োজন ছিল? পরিসংখ্যান বলছে, না।
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম বাংলাদেশ সফরের ২ মাসের মাথায় ১১ আগস্ট আদানি পাওয়ারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে পিডিবি। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ভেতরেই একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার প্রস্তাব ছিল আদানির। কিন্তু সমঝোতার ২ বছর পর ২০১৭ সালে—যখন দেশে ইতোমধ্যেই কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলছিল—সরকার ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি কেন করেছিল, এর কোনো যৌক্তিকতাই খুঁজে পাওয়া যায় না।
দ্য ডেইলি স্টারের অনুরোধে আদানির সঙ্গে করা চুক্তিটি পর্যালোচনা করে দেশ-বিদেশের ৩ জন আইন ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, চুক্তিটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং শুধুমাত্র আদানি গ্রুপের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করেই তা করা হয়েছে।
সিডনিভিত্তিক ক্লাইমেট এনার্জি ফাইন্যান্স, অস্ট্রেলেশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ টিম বাকলি বলেন, ‘এক কথায় এই চুক্তিটিতে কেবল আদানিই জিতেছে। এই চুক্তিটি এতটাই বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী যে আমি ভাবছি, কোনো সচেতন মানুষ কেন বাংলাদেশের পক্ষে এই চুক্তিটি সই করবেন।’
২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আদানির সঙ্গে চুক্তিটি সই করেছিলেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তৎকালীন সচিব মিনা মাসুদ উজ্জামান। এই চুক্তিতে সম্মত হওয়ার বিষয়ে সরকারি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ডেইলি স্টার।
এ বিষয়ে বর্তমানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মিনা মাসুদ উজ্জামান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কিছুই মনে নেই। এগুলো সাধারণত চেয়ারম্যানের অনুমোদন হয়ে তারপর সচিবের কাছে আসে। পুরো প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে ছিলাম আমি।’
২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পিডিবির চেয়ারম্যান ছিলেন খালেদ মাহমুদ। তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
বর্তমানে বারাকা পাওয়ারের স্বাধীন পরিচালক খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী না। বুঝতেই পারছেন, এখন সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ।’
২৫ বছর যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, বাংলাদেশ থেকে তার পুরোটাই কেনার ‘শর্তহীন ও অপরিবর্তনীয়’ নিশ্চয়তা পেয়েই প্রায় ১৪ হাজার ৮১৬ কোটি ভারতীয় রুপি ব্যয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে আদানি পাওয়ার। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, আদানির সঙ্গে করা এই চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার কোনো সুযোগ পিডিবির নেই।
অবকাঠামো বিষয়ক চুক্তির খসড়া তৈরিতে বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের একজন শীর্ষ করপোরেট আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আদানি পাওয়ার যদি চুক্তির কোনো ধারা নাও মানে, তবু পিডিবি চুক্তিটি বাতিল করতে পারবে না। বরং তাদেরকে চুক্তিভঙ্গের প্রতিকার খুঁজতে হবে এবং সেই বিবরণটিও যৌক্তিক ও বিস্তারিত হতে হবে। এমনকি প্রতিকারের জন্য আদানিকে সময় দিতে হবে।’
এমনকি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও আদানিকেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
‘এটি অবশ্যই একটি অন্যায্য চুক্তি। এই চুক্তি জননীতির পরিপন্থী’, বলেন এই আইনজীবী।
কিন্তু বিষয়টি এমন নয় যে, সরকারের এর আগে কখনো বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) দরকষাকষির অভিজ্ঞতা ছিল না। ডেইলি স্টারের অনুরোধে পায়রা ও রামপাল চুক্তি পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওই দুটি চুক্তিও মানসম্পন্ন নয়, তবে সেগুলোতে অপর পক্ষকে এমন ব্যাপক পরিসরে লাভ দেওয়া হয়নি।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটির স্থায়ী ও পরিবর্তনশীল সব খরচের সব ধরনের বিনিয়োগ ঝুঁকি এই চুক্তির মাধ্যমে পিডিবির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
এমনকি ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি পাওয়ার কোম্পানি আদানি অন্য যেসব চুক্তি করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে করা চুক্তিটিতেই পরিবর্তনশীল খরচের (কয়লার দাম, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত খরচ ইত্যাদি) ঝুঁকি অপর পক্ষের কাঁধে চাপানো হয়েছে এবং নিজেদের ওপর নামমাত্র ঝুঁকি রেখেছে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠজন গৌতম আদানির প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে করা চুক্তির সবচেয়ে লুণ্ঠনমূলক দিক রয়েছে কয়লার দাম ও ক্যাপাসিটি চার্জের (বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া) মধ্যে।
যে কয়লা দিয়ে আল্ট্রা-সুপারক্রিটিকাল প্রযুক্তির এই পাওয়ার প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে, তার দাম নির্ধারণ করা হবে ইন্দোনেশিয়ার কয়লা সূচক ও অস্ট্রেলিয়ান নিউক্যাসল সূচক অনুযায়ী। দুটো সূচকের গড় দামে প্রতি কেজি ৬,৩৩২ কিলোক্যালরি মানের কয়লার দাম যা হবে, তার ভিত্তিতে ওই মাসের কয়লার দাম নির্ধারণ করা হবে।
‘এর মানে হলো, আদানি পাওয়ার যদি ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া ছাড়া অন্য দেশ থেকে কম দামে কয়লা কেনে, আর সূচকের দাম বেশি থাকে, তবে তারা বেশি দাম নিতে পারবে।’ এই মন্তব্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলমের। তিনি বলেন, কয়লার ক্যালোরিফিক মান তারা কম করে ধরেছে, যাতে বেশি পরিমাণ কয়লা ব্যবহার করতে হয়।
পিপিএতে উল্লেখ করা হয়েছে, পিডিবির কাছে কেজিপ্রতি ৪,৬০০ কিলোক্যালরি মানের কয়লার দাম নেবে আদানি।
টিম বাকলি বলেন, ‘আদানি যে কয়লা ব্যবহার করবে, সেই গুণমানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন একটি সূচকে যদি দাম নির্ধারণ করা হয়, তাহলে তা কীভাবে সেটা ন্যায্য হতে পারে? জ্বালানি বিষয়ে আমার কয়েক দশকের বিশ্লেষণের অভিজ্ঞতায় দেখা এটিই সম্ভবত এমন একটি চুক্তি, যেখানে আদানির জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত উদার।’
চুক্তি পর্যালোচনাকারী আইনজীবী বলেন, ‘যদিও চুক্তিতে সূচক পরিবর্তন করার বিধান রয়েছে, কিন্তু সেটা প্রায় অসম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘কোনো সূচক যদি প্রত্যাহার হয়ে যায়, পাওয়া না যায় বা অনুপযুক্ত হয়, তাহলে তা পরিবর্তন করা সম্ভব। কিন্তু এই “অনুপযুক্ত” মানে কী, তা আমরা জানি না।’
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, আদানি পাওয়ারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজ ভারতের বৃহত্তম কয়লা ব্যবসায়ী। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় তাদের নিজস্ব কয়লাখনি রয়েছে এবং গোড্ডা প্ল্যান্টের জন্য কয়লার সম্ভাব্য সরবরাহকারী তারাই।
কয়লার পরিবহন ও এর লজিস্টিক সম্পর্কিত খরচ ব্যাল্টিক এক্সচেঞ্জ ড্রাই ইনডেক্স ও প্ল্যাটস অয়েলগ্রাম বাংকারওয়্যার সিঙ্গাপুরের মতো প্রাসঙ্গিক বৈশ্বিক সূচকগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে একটি ভারতীয় গ্রামে অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা উড়িষ্যার ধামরা বন্দরে পাঠানো হবে এবং সেটিও আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন আদানি পোর্টস ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
ধামরা পোর্ট কোম্পানিকে কয়লা আনলোডিং, স্টোরেজ, রেলওয়ে ওয়াগনগুলোতে লোডিং ও বন্দর সম্পর্কিত ডকুমেন্টেশনসহ বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কয়লা ভারতীয় রেলওয়ের ওয়াগনগুলোতে করে ৬৯৫ কিলোমিটার দূরে বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাবে।
কয়লা নির্ধারিত গন্তব্যে পাঠানোর এই দীর্ঘ যাত্রার ক্ষেত্রে আর্মস লেন্থ প্রাইসিং হবে কি না, তা জানা নেই।
আর্মস লেন্থ প্রাইসিং একটি আদর্শ প্রক্রিয়া, যেখানে একজন ক্রেতা ও বিক্রেতা সম্পর্কহীন থেকে লেনদেন করবে যেন উভয়পক্ষের লেনদেনে স্বার্থের কোনো দ্বন্দ্ব না থাকে।
পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা পরিবহন ও সরবরাহের জন্যও পিডিবিকে অর্থ দিতে হয়। তবে এই খরচ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করা হয় এবং কয়লার চূড়ান্ত দামের সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়। ফলে একটি একটি প্রতিযোগিতামূলক খরচ পাওয়ার সুযোগ থাকে।
উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কয়লা সরবরাহকারীর সঙ্গে পিডিবির যাচাই-বাছাই ও বিভিন্ন ছাড়ের বিধান রেখে পৃথক ক্রয় চুক্তি হয়। পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের এক বছর আগে নির্ধারণ করা চাহিদার বিপরীতে এই চুক্তি হয়। তবে চালান (ইনভয়েস) হবে পিডিবির অনুমোদন সাপেক্ষে।
আদানির বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিতে ‘ন্যূনতম অফটেক গ্যারান্টি’ রয়েছে, যার ফলে উৎপাদিত বিদ্যুতের অন্তত ৩৪ শতাংশ কিনতেই হবে বাংলাদেশকে। ফলে পিডিবির চাহিদা যদি কমও থাকে বা বিদ্যুৎ না নেয়, তারপরও ওই ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কয়লার খরচ দিতে হবে। একইসঙ্গে গুণতে হবে কয়লা সরবরাহকারী, পরিবহনকারী ও বন্দর অপারেটরদের সব জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ।
পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য এমন কোনো ন্যূনতম সীমা নেই।
এই ২টির সঙ্গে আদানির পিপিএর মধ্যে পার্থক্যের আরেকটি প্রধান বিষয় হলো ক্যাপাসিটি চার্জ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বয়লার, টারবাইন ও জেনারেটর কত ঘণ্টার জন্য চালানো হচ্ছে, সে অনুপাতে প্রতি বছর বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একটি ভাড়া দিতে হয়।
যেখানে পায়রা ও রামপালের কর্তৃপক্ষ তাদের মূলধন ব্যয়, ইক্যুইটি রিটার্ন, ঋণের সুদ, অবমূল্যায়ন, কার্যকরী মূলধনের সুদ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে একটি চার্জ নির্ধারণ করেছে, সেখানে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তিতে স্বেচ্ছাচারি একটি সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার ফাইন্যান্স করপোরেশন ও ইউনিট আরইসি থেকে ভর্তুকিযুক্ত হারে ১০ হাজার ৭৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে নির্মিত আদানি গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে পরবর্তীতে যে বিদ্যুৎ কেনা হবে, তাতে পিডিবির জন্য অন্যদের তুলনায় বেশি খরচ হবে।
তবে সরকার যদি সতর্কতার সঙ্গে এই চুক্তি করত, তাহলে হয়তো তা এতটা জনস্বার্থবিরোধী হতো না।
চুক্তি সই হওয়ার ১ বছরেরও বেশি সময় পরে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় ৪২৫ হেক্টর জমি নির্ধারণ করেছিল, যেখানে অত্যাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে আদানি পাওয়ারকে বেশ কিছু কর ও শুল্ক প্রদান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যাপাসিটি চার্জ, বিদ্যুতের দাম ও কয়লার দাম কমে আসার কথা। কারণ, এগুলো দাম সব ধরনের কর ও শুল্ক যোগ করেই হিসাব করা হয়েছিল।
কিন্তু চুক্তির ধারা অনুযায়ী, শুধুমাত্র কর, শুল্ক বা ব্যয় যদি বাড়ে, তাহলেই শুধু এই পরিবর্তনগুলো হবে। কমলে সেটা সমন্বয় হবে না, যা চুক্তিটি একপাক্ষিক হওয়ার আরেকটি যথাযথ উদাহরণ।
ওই আইনজীবী বলেন, ‘এই ধারা অযৌক্তিক। এটা অন্যায্যতার একটি স্পষ্ট উদাহরণ। কোনো বিবেক সম্পন্ন মানুষ এই ধরনের ধারার সঙ্গে একমত হতে পারে না।’
টিম বাকলির মতে, অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে কর ছাড় পাওয়ার কারণে ২৫ বছরে আদানির ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ সাশ্রয় হবে।
পায়রা ও রামপাল চুক্তিতে হরতাল, যুদ্ধ বা আইন পরিবর্তনের মতো রাজনৈতিক ঘটনাকে ‘ফোর্স মেজ্যুর’ হিসেবে গণ্য করেছে। অর্থাৎ এ সময়ে কোনো কিছু ঘটলে উভয় পক্ষই একে অপরের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পাবে।
কিন্তু আদানি পাওয়ারের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, এমন কোনো ঘটনায় বাংলাদেশ যদি বিদ্যুৎ না নিতে পারে, ক্যাপাসিটি চার্জ ও জরিমানাসহ সব ধরণের পাওনা তাদের দিতেই হবে। কিন্তু একই কারণে যদি তারা যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারে, তবে পিডিবিকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দিতে তারা বাধ্য নয়।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ওই আইনজীবী বলেন, ‘রাজনৈতিক কোনো কারণে যদি আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারে, সেক্ষেত্রে আপনি তাদের ধরতে পারবেন না। তাদেরকে ক্যাপাসিটি চার্জ, বিদ্যুতের দামসহ অন্যান্য বকেয়া পরবর্তীতে পরিশোধ করতে হবে।’
‘কিছু না করেও তারা টাকা নিয়ে যাবে। এটা এক ধরনের ডাকাতি। এই ধারা একেবারেই বেআইনি। এই ধরনের ধারা দেখার পরে মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন’, যোগ করেন ওই আইনজীবী।
চুক্তির আরেকটি অযৌক্তিক ধারা হলো যদি রাজনৈতিক কোনো কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সেটা মেরামত ও এই সংশ্লিষ্ট সব ব্যয় পিডিবিকে দিতে হবে।
রামপাল বা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে এই সম্পূরক খরচ দিতে হবে না। এই খরচের কারণেও আদানির বিদ্যুতের খরচ বেড়ে যেতে পারে।
আদানির জন্য আরেকটি সুবিধাজনক ধারা হলো গ্রিডে মোট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার নির্ভরযোগ্য সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য প্রথমবারের পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করতে পারার সুবিধা।
মানসম্পন্ন পিপিএ অনুযায়ী, এই পরীক্ষা একবারই করা হয় এবং সেই ফলাফলটি ৩০০ মাসের জন্য প্রযোজ্য থাকে। বিদ্যুৎকেন্দ্র পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে তাকে জরিমানা দিতে হয়।
গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে আদানি পাওয়ার নিজস্ব খরচে আরেকটি পরীক্ষা করতে পারবে।
নতুন পরীক্ষায় যদি প্রত্যাশিত রিডিং পাওয়া যায়, তবে তারা আগে পিডিবিকে দেওয়া ক্ষতিপূরণের টাকাও ফেরত নিতে পারবে।
ওই আইনজীবী বলেন, ‘চুক্তির প্রতিটি স্তরে ফাঁকফোকর রাখা হয়েছে। তারা এক হাতে দিচ্ছে এবং অন্য হাতে ফিরিয়ে নিচ্ছে।’
২০১৪ সাল থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর পদে আছেন নসরুল হামিদ এবং ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে আছেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। এ বিষয়ে তাদের মন্তব্য জানতে চাইলে তারা কথা বলতে রাজি হননি।
বাংলাদেশের কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান এম শামসুল আলম বলেন, ‘এই ধরনের একটি চুক্তিতে সই করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা বিশ্বাস করি, এই চুক্তিতে থাকা দুর্নীতিগুলো চিহ্নিত করার ক্ষমতা আমাদের এজেন্সিগুলোর আছে।’
‘চুক্তি বাতিল করলেও কোনো সমাধান হবে না। যারা এই ধরনের চুক্তি করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে, তা বাংলাদেশের গ্রহণ করতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম।
‘গোড্ডা থেকে ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে আসবে, যেটি শিল্প-ঘন অঞ্চল নয় এবং সেখানে এত বেশি বিদ্যুতের চাহিদাও নেই। ফলে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অব্যবহৃতই রাখতে হবে এবং ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ডলার দিয়ে যেতে হবে’, বলেন তিনি।
টিম বাকলি বলেন, ‘পুরো চুক্তিটি এশিয়ার এই সাবেক শীর্ষ ধনীকে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া একটি উপহার।’
আদানির বিদ্যুৎ কমপক্ষে ৩৪% না কিনলে গুনতে হবে জরিমানা!
শেয়ার বিজ, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আদানির ঝাড়খণ্ডের গড্ডা কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর চুক্তি করে বাংলাদেশ। আগামী মাসে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে। এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম এ কেন্দ্র থেকে বছরে কমপক্ষে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনতেই হবে। না হলে জরিমানা গুনতে হবে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি ক্যাপাসিটি চার্জ তো রয়েছেই। যদিও দেশীয় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এ ধরনের গ্যরান্টি বা জরিমানার বিধান নেই।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের স্বাক্ষরিত ১৬৩ পৃষ্ঠার গোপন চুক্তি (পিপিএ) বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। চুক্তিটি সরকারিভাবে গোপন করে রাখা হলেও সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তা অনলাইনে প্রকাশ করে দেয়।
চুক্তির ৩.১-এর (বি) ধারায় বলা হয়েছে, পিডিবিকে চুক্তির প্রত্যেক বছর কেন্দ্রটির বিদ্যমান সক্ষমতার কমপক্ষে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনতে হবে, যা ‘মিনিমাম অফটেক কমিটমেন্ট’ হিসেবে বিবেচ্য হবে। যদি বাংলাদেশ তা কিনতে ব্যর্থ হয় তাহলে পিডিবির পক্ষ থেকে আদানি পাওয়ারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ক্ষতিপূরণের মধ্যে থাকবে আদানির কয়লার দাম, কয়লা পরিবহন ব্যয়, বন্দরে কয়লা খালাস ব্যয়, যা আদানি কয়লা সরবরাহ চুক্তি, কয়লা পরিবহন চুক্তি ও কয়লা হ্যান্ডলিং চুক্তির আওতায় বহন করবে।
শর্তটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, যদি বাংলাদেশ আদানির সক্ষমতার ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ কেনে তাহলে ২০ শতাংশের দাম পরিশোধ করবে। তবে সক্ষমতার ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ না কেনার ফলে অবশিষ্ট অংশের (৩৪% – ২০% = ১৪%) কয়লার দাম, কয়লা পরিবহন ব্যয়, বন্দরে কয়লা খালাস ব্যয় পরিশোধ করতে হবে। দেশীয় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের এ ধরনের গ্যারান্টি বা জরিমানার বিধান নেই। এছাড়া সক্ষমতার পুরোটার (৮৫% প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর) জন্য ক্যাপাসিটি চার্জও পরিশোধ করতে হবে।
যদিও জরিমানার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অবিচার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, আদানি নিজস্ব খনির কয়লা ব্যবহার করবে, নিজস্ব জাহাজে করে তা নিজেদের বন্দরে খালাস করবে। আবার নিজস্ব ট্রেনে তা বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে যাবে। তাই চাহিদা না থাকলে বাংলাদেশ যদি বিদ্যুৎ নাও কেনে তাতে আদানির কোনো লোকসান হবে না। তাহলে কেন ক্ষতিপূরণের শর্ত দেয়া হয়েছে?
আদানির সঙ্গে অসম চুক্তি ক্ষতির মুখে পিডিবি
০১ মার্চ ২৩, সমকাল
ভারতের শিল্পগ্রুপ আদানির কাছ থেকে অন্তত ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ না নিলে জরিমানা গুনতে হবে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রিতে অন্যায্য সুবিধা পাচ্ছে আদানি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে আদানির চুক্তিপত্র ঘেঁটে এ রকম তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে চুক্তিপত্রের ফটোকপি পেয়েছে সমকাল। ১৬৭ পৃষ্ঠার চুক্তিপত্রে দেখা যায়, আদানিকে যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিককে সেই সুবিধা দেওয়া হয়নি। ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটি থেকে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসার কথা।
বিশ্বাসযোগ্য সূত্রমতে, আদানিকে নজিরবিহীনভাবে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পায়রাতে বাংলাদেশ ও চীনের মালিকানাধীন দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, কক্সবাজারের মাতারবাড়ী, বরগুনা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও চট্টগ্রামের এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যেসব সুবিধা আদানি পেয়েছে, এর একটিও এই ছয়টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়নি। আদানিকে দেওয়া অতিরিক্ত সুবিধার মধ্যে রয়েছে ঘোষিত চাহিদার থেকে কম বিদ্যুৎ নিলে ব্যবহার না করা কয়লার দাম বাংলাদেশকে দিতে হবে। যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, কেন্দ্র পরিচালনা, কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট– সব মিলিয়ে চুক্তিতে থাকা শর্তগুলো অন্য কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেওয়া হয়নি। এর ফলে এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পেতে বাংলাদেশকে বেশি ব্যয় করতে হবে। গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ আদানি চাইলে পিডিবি ছাড়াও যে কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে। অথচ কেন্দ্রটির নির্মাণের অর্থ, বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন থেকে সবকিছুর বিনিয়োগ ধরেই কেন্দ্রটির বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে। এ চুক্তিটি সই হয় ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর।
বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ল
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
সরকারের নির্বাহী আদেশে আবার বাড়ল বিদ্যুতের দাম। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মার্চ মাসের বিদ্যুতের বিলেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে। আজ মঙ্গলবার রাতে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
এর আগে গত জানুয়ারিতে দুই দফায় বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। এটি জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দুই ভাগে কার্যকর হয়েছে। সবশেষ ৩০ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনে খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ এবং পাইকারি পর্যায়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম।
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির চাপ সামলাতে এ বছর প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করছে সরকার। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৩ বার বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম।
ঢাকায় এসে আদানি জানাল চুক্তি পরিবর্তন হবে না
১ মার্চ, ২০২৩, দৈনিক বাংলা
বাংলাদেশের সঙ্গে করা আদানির চুক্তির পরিবর্তন করবে না ভারতের এই শিল্পগ্রুপটি। চুক্তিতে যেসব শর্ত রয়েছে, সেই শর্তেই বাংলাদেশকে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। তবে বাংলাদেশ বাড়তি দামে কয়লা কিনবে না, আদানিকে কয়লার দাম কমানোর একটি পদ্ধতি বের করতে হবে।
কয়লার দাম নিয়ে জটিলতা নিরসনে আদানি পাওয়ারের চার সদস্যের এক প্রতিনিধিদল গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসে। তাদের সঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তা ও বিদ্যুৎ সচিবের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত জানুয়ারিতে আদানি প্রতি টন কয়লার দাম ৪০০ ডলারে আমদানি করার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে চাহিদাপত্র পাঠালে শুরু হয় জটিলতা। দেশে চালু থাকা তিনটি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র গড়ে ১৫০ থেকে আড়াই ডলারে কয়লা কিনছে।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজে দেরি করে রাশিয়ার ঠিকাদার, জরিমানা গোনে বাংলাদেশ
০২ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের নির্মাণকাজে রাশিয়ার ঠিকাদার দেরি করলে জরিমানা দিতে হয় বাংলাদেশকে। ইতিমধ্যে সরকার রাশিয়াকে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা জরিমানা হিসেবে দিয়েছে। আরও ৩১ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে, যা এখনো বকেয়া।
বাংলাদেশকে এই জরিমানা দিতে হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় রাশিয়ার সঙ্গে করা চুক্তির শর্তের কারণে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত আন্তসরকার ঋণচুক্তি বা ইন্টার-গভর্নমেন্টাল ক্রেডিট অ্যাগ্রিমেন্টের (আইজিসিএ) দফা ২–এর অনুচ্ছেদ ৫-এ বলা হয়েছে, কোনো বছরে বাংলাদেশ যদি পূর্বনির্ধারিত পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে না পারে, তাহলে বাংলাদেশ সরকারকে ব্যয় না হওয়া অর্থের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অঙ্গীকার বা কমিটমেন্ট ফি হিসেবে রাশিয়াকে দিতে হবে। উল্লেখ্য, রাশিয়ার ঠিকাদার নির্মাণকাজে দেরি করলে অর্থ ব্যয় সম্ভব হয় না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই অঙ্গীকার ফি আসলে জরিমানা। আর এটি যে অযৌক্তিক, তা বলা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেই। কারণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজে দেরি করলে তারা করে। সেখানে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই।
বিদ্যুতে ৩৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা দিয়ে কী করবে বাংলাদেশ
১১ মার্চ, ২০২৩, বণিক বার্তা
দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট (সরকারি আরেক হিসাব অনুযায়ী ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট)। ২০২৭ সাল নাগাদ উৎপাদনে (আমদানীকৃতসহ) আসার কথা রয়েছে আরো ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এছাড়া চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে আড়াই হাজার মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সব মিলিয়ে ওই সময়ে দেশে বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ানোর কথা ৪১ হাজার মেগাওয়াটের বেশিতে। তবে সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে অবসরে যাবে প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সেক্ষেত্রে ২০২৭ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ খাতের মোট উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ৩৭ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশিতে।
অথচ দেশে এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ খাতের দৈনিক চাহিদা সীমাবদ্ধ থাকছে ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। অব্যবহূত থাকছে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। আগামী চার বছরে এ চাহিদা যদি বার্ষিক ১ হাজার মেগাওয়াট করেও বাড়ে, তবু উদ্বৃত্ত সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াবে। বিষয়টি উদ্বিগ্ন করে তুলছে দেশের বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত ক্রমেই সক্ষমতা বাড়িয়ে গেলেও এখনো এর সঙ্গে সংগতি রেখে চাহিদা তৈরি করা যায়নি। আবার বিদ্যুতের দাম যেভাবে বাড়ছে, সেক্ষেত্রেও সামনের দিনগুলোয় খাতটিতে প্রত্যাশিত মাত্রায় চাহিদা তৈরি করা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে অনেক। সঞ্চালন ব্যবস্থাও দুর্বল। বাড়তি সক্ষমতার ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে গিয়ে এরই মধ্যে প্রায় দেউলিয়া হওয়ার দশায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এর মধ্যেই আবার ২০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জের মতো অনুৎপাদনশীল ব্যয় সংস্থাটির দুর্দশাকে আরো চরমে নিয়ে যাওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে।
নির্বাচনের আগে মার্কিন তেল-গ্যাস কোম্পানির প্রস্তাবে কি আবারো দ্বিধা
মার্চ ১৮, ২০২৩, বণিক বার্তা
আবারো শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কোম্পানির বৃহৎ আকারে গ্যাস অনুসন্ধানের প্রস্তাব। জ্বালানি খাতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোম্পানি এক্সনমোবিল ১৫টি ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানের প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলাকে। প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনার পর এখন জ্বালানি বিভাগে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। জ্বালানি বিভাগ যাচাই শেষে তা পাঠাবে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহলের কাছে। তবে নির্বাচনের আগে বিশ্বের বৃহৎ মার্কিন কোম্পানির এমন প্রস্তাব এরই মধ্যে দোদুল্যমানতায় ফেলেছে খাতটির নীতিনির্ধারকদের।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন কোম্পানির চাপ ও রফতানির সিদ্ধান্ত না নেয়ায় ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে—এমনটাই অভিযোগ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর। আবারো একই ধরনের সন্ধিক্ষণ। তবে এ মুহূর্তে গ্যাসের তীব্র সংকট থাকায় রফতানির প্রসঙ্গটি অমূলক বলে দাবি করছে পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট সূত্র। যদিও বঙ্গোপসাগরের ভূরাজনীতি বিবেচনায় বিশ্বের বৃহৎ মার্কিন কোম্পানিকে এত অধিকসংখ্যক ব্লক জরিপ ও অনুসন্ধানের কাজ দেয়া যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ।
উদ্বোধনী দিনেই ভারত থেকে এলো ১ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল
১৮ মার্চ ২৩, সমকাল
ভারত-বাংলাদেশ ডিজেল পাইপলাইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। ১৩১.৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনটি দিয়ে বছরে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টন জ্বালানি আমদানি করা যাবে। উদ্বোধনী দিনে এসেছে ১ হাজার ৯৩০ টন তেল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালুর ফলে বাংলাদেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হবে। এটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করবে।
আসামের নুমালীগড় রিফাইনারি থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ডিজেল আসছে এই পাইপলাইনে।
শেখ হাসিনা পাইপলাইনটি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় দেশের প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের বিশেষ করে ভারতের যাঁরা দিনরাত পরিশ্রম করে এই পাইলাইন নির্মাণ করেছেন তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় এবং সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হতো। পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আসামের একটি ভালো বাজার বাংলাদেশে সৃষ্টি হলো, যেখানে এই ডিজেল মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে এবং সেখানে আসামবাসীও লাভবান হবে, ভারতবাসীও লাভবান হবে।
তিনি বলেন, পার্বতীপুরে বর্তমানে আমাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার টন। তবে, আমরা এই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, এই পাইপলাইনের উদ্বোধন দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করল। দু’দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার সব ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। সেটা রেল হোক, বা পরিহন, বা বিদ্যুতের গ্রিড কিংবা তথ্যপ্রযুক্তি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তার ফলেই দু’দেশের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেল যোগাযোগ আবার চালু হয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে দু’দেশের মধ্যে পেট্রোলিয়াম বাণিজ্য বছরে ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। পাইপলাইন চালুর ফলে তা আরও বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের এপ্রিলে পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সই হয়। একই বছরের অক্টোবরে এনআরএল বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানির জন্য বিপিসির সঙ্গে ১৫ বছরমেয়াদি আরেকটি চুক্তি করে। ২০২০ সালের মার্চে পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড ও বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। ভারত ৩৭৭ কোটি রুপি ব্যয়ে পাইপলাইনটি নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশে পড়েছে ১২৬.৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতে ৫ কিলোমিটার। মাটির তিন ফুট নিচে পাইপলাইন বসানো হয়েছে। বাংলাদেশ অংশের লাইনটি পঞ্চগড়, নীলফামারী হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে প্রবেশ করেছে। এতে ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ ও ১৩৪ দশমিক ১২ একর জমি হুকুমদখল করা হয়েছে।
ভারত অংশে ৯১ দশমিক ৮৪ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে এনআরএল আর বংলাদেশ অংশে ২৮৫ দশমিক ২৪ কোটি রুপি ভারত সরকার অনুদান হিসেবে দিয়েছে।
৬ দশমিক ৮০ একর মোট ২৮ হাজার ৮০৯ টন ধারণক্ষমতার ছয়টি ফুয়েল স্টোরেজ ট্যাঙ্ক ও অগ্নিনির্বাপণের কাজের জন্য ৩ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার দুটি পানির ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে পার্বতীপুর ডিপোর ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার টন। নতুন ট্যাঙ্কের নির্মাণ শেষ না হওয়ায় পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কোম্পানির তিনটি ডিজেল ট্যাঙ্ক খালি করে তাতে আমদানি করা নতুন তেল রাখা হচ্ছে। পাইপলাইনে সব সময় ৬৭ লাখ লিটার তেল মজুত থাকবে। প্রথম তিন বছর বছরে আড়াই থেকে ৩ লাখ টন তেল আনা হবে। পরে তা পর্যায়ক্রমে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত হবে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, বিদেশ থেকে ডিজেল আমদানিতে প্রতি ব্যারেলে প্রিমিয়াম দিতে হয় বর্তমানে ১১ ডলার। ভারত থেকে আমদানি করা ডিজেলে খরচ দিতে হবে ৫.৫০ ডলার। বছরে আড়াই লাখ টন তেল আমদানি করলে খরচ কমবে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১৫ বছর পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আমদানি করা হবে।
বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসের দাম কমার সুবিধা পাবে না দেশের ভোক্তারা
মার্চ ২২, ২০২৩, বণিক বার্তা
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম গত নয় মাসে ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে। পণ্যটির মূল্য এখন ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী। পাশাপাশি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দামও কমেছে ৮১ শতাংশ। যদিও দেশের বাজারে এখনই জ্বালানি পণ্যের এ মূল্যপতনের সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
দেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও জ্বালানি পণ্যের দাম সমন্বয় করা হবে। যদিও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এখন বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম কমলেও তা স্থিতিশীল নয়। তাই দেশের বাজারে এখনই পণ্যের দাম কমানো বা সমন্বয় করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বাজারে এখনই জ্বালানি তেল কিংবা গ্যাসের দাম কমানোর পরিকল্পনা নেই সরকারের। সরকার মূলত ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেশকিছু শর্তও রয়েছে। তাই কমানোর পরিবর্তে বরং আরো কয়েক দফা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) ব্যারেলপ্রতি দাম গত বছরের ৯ জুন ছিল ১২১ ডলার ৫১ সেন্ট। গতকাল তা ছিল ৬৮ ডলার ২০ সেন্ট। সে হিসেবে গত নয় মাসে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ৪৪ শতাংশ। আর আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম গত বছরের জুনে ছিল ১২২ ডলার ১ সেন্ট। বর্তমানে তা মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৭৬ ডলার ২৬ সেন্টে। এ সময়ের মধ্যে ব্রেন্টের দাম কমেছে ৩৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম প্রতি এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) রেকর্ড সর্বোচ্চ ৬৯ ডলার ৬১ সেন্টে গিয়ে উঠেছিল। বতর্মানে তা কমে নেমেছে ১৩ ডলার ১৫ সেন্টে। অর্থাৎ গত সাড়ে ছয় মাসেরও বেশি সময়ে এলএনজির দাম কমেছে ৮১ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক হারে কমলেও সরকার চাইছে দেশের বাজারে তা না কমিয়ে লোকসান ও ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে। এছাড়া এ মুহূর্তে সেই সুযোগ সরকারের হাতেও কম বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, আইএমএমের ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নানা ধরনের নির্দেশনা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে সরকারের ব্যয় সক্ষমতা বাড়ানো। সে নির্দেশনা বাস্তবায়নের দিনকাল খুব দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জ্বালানি পণ্যের দাম সমন্বয়ে একটি সময়ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালু করতে হবে। ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত মাসে বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সময় শর্ত পরিপালন ও সংস্কার পর্যালোচনা করে দেখবে আইএমএফ। এটিকে অতিজরুরি হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম কমলেও দেশের ভোক্তারা এর সুফল যে পাচ্ছে না তা অনেকটাই নিশ্চিত। এক্ষেত্রে আইএমএফের শর্তই প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে। তার পরও জ্বালানি তেল বা গ্যাসের দাম কমাতে চাইলে সরকার তা কীভাবে কমাবে সে বিষয়ে নতুন করে রূপরেখা খুঁজতে হবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
দেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ কার্যক্রমের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটি জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে। একই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ে জ্বালানি বিভাগ বিপিসির লাভ-লোকসানের হিসাব আমলে নিয়ে মূল্য সমন্বয়ের ঘোষণা দেয়। বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা বাজার পর্যালোচনা করছি। তবে এ মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর মতো পরিস্থিতি আসেনি। এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব।’
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট তৈরি হয়। এর ছয় মাসের মাথায় পণ্যটির দাম এক লাফে বেড়ে যায় ৫০ শতাংশ। এলএনজির দামও বাড়তে থাকে হু হু করে। দেশের বাজারেও তাই জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ানো হয় কয়েক দফায়। এর মধ্যে তিন দফা দাম সমন্বয় করে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি বেড়েছে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অকটেনে লিটারপ্রতি ৫১ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং পেট্রলে লিটারপ্রতি ৩১ দশমিক ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মূল্য সমন্বয়ের পর বর্তমানে ডিজেল ও কেরোসিন লিটারপ্রতি দাম ৬৫ থেকে বেড়ে ১০৯ টাকা হয়েছে। এর মধ্যে দুই দফা দাম বেড়েছে, আর এক দফা কমেছে। এছাড়া অকটেন লিটারপ্রতি ৮৯ থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা এবং পেট্রল লিটারপ্রতি ৮৬ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ, বৃহৎ শিল্পে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং মাঝারি শিল্পের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। উত্পাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তিন দফায় ১৫ শতাংশ (প্রতিবার ৫ শতাংশ করে) বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এর মধ্যে এক দফায় বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়।
এলএনজি আমদানি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা
২৩ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
দেশীয় উৎস থেকে আগামী কয়েক বছরে গ্যাস সরবরাহ খুব বেশি বৃদ্ধির তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। এর মধ্যেই প্রতিবছর গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। তাই চাহিদা পূরণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তিনটি নতুন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন ও এলএনজি আমদানির উৎস বাড়াতে কাজ করছে সরকার।
গত ২ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার। তিনি জানান, পায়রায় একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল করার বিষয়ে এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে এক মাসের মধ্যেই একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। এ টার্মিনালের সক্ষমতা হবে দিনে ৫০ থেকে ১০০ কোটি ঘনফুট। প্রথমে ৫০ কোটি ও পরে বাড়ানো হবে। আর মহেশখালীতে একটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণে সামিটের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু বিষয়ে মতানৈক্য দূর হলেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এ টার্মিনাল থেকে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এলএনজি সরবরাহ করা যাবে। তবে পায়রায় পাইপলাইন না থাকায় গ্যাস সরবরাহ পেতে তিন বছর লাগতে পারে। এর বাইরে মহেশখালীতে স্থলভাগের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। জমির বিষয়ে পিডিবির অনাপত্তি পেলেই এখানে প্রস্তুতি কাজ শুরু হবে। এটি প্রথমে ১০০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতার করা হবে, পরে আরও ১০০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতা যুক্ত হবে।
টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি এলএনজি কেনার নতুন উৎস নিয়েও কাজ করছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮ সাল থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। কাতার ও ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি দুটি চুক্তি আছে পেট্রোবাংলার। বছরে ৫৬টি এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে তারা। চুক্তি অনুসারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে আনুপাতিক হারে এ দাম নির্ধারিত হয়। এতে করে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম চড়া হলেও তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায় এ চুক্তি অনুসারে। এখন নতুন করে দুই দেশের সঙ্গে আলাদা করে দুটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। শিগগিরই ওমানের সঙ্গে অনুস্বাক্ষর হতে পারে। এরপর কাতারের সঙ্গে চুক্তি হবে। তবে এ দুই দেশ থেকে নতুন করে কী পরিমাণ এলএনজি আসবে, কত দাম হবে; তা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
চার বিদেশি কোম্পানির তিনটিই চলে গেছে, ১০ বছরেও নতুন দরপত্র হয়নি
২৪ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
সমুদ্র বিজয়ের এক দশক পরও গ্যাস অনুসন্ধানে তেমন অগ্রগতি নেই। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে চারটি বিদেশি কোম্পানি কাজ শুরু করলেও তিনটি চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য গত ১০ বছরে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। নতুন দরপত্র আহ্বানের উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) চূড়ান্ত হয়নি দুই বছরে। চলতি বছরও নতুন চুক্তির সম্ভাবনা কম।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তিনজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সর্বশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে নতুন পিএসসির কাজ চলছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র বলছে, পিএসসি-২০২২ নামের নতুন খসড়া ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে আইনি যাচাই (ভেটিং) শেষে জ্বালানি বিভাগে এসেছে। এখন এই খসড়া অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। কারণ, জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাঁর অধীনে। তাঁর অনুমোদনের পর খসড়া যাবে মন্ত্রিসভায়।
বদলাচ্ছে গ্যাসের দাম ও মুনাফা ভাগাভাগি
পিএসসি-২০১৯ অনুসারে, প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম রাখা হয়েছিল গভীর সমুদ্রের জন্য সোয়া সাত মার্কিন ডলার। আর অগভীর সমুদ্রের জন্য দাম ধরা হয়েছিল সাড়ে পাঁচ ডলার।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন পিএসসির খসড়ায় কোনো নির্ধারিত দাম রাখা হয়নি। এতে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল) দামের ১০ শতাংশ গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে-বাড়লে আনুপাতিক হারে গ্যাসের দামও কমবে-বাড়বে।
এখন বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৭০ ডলার। খসড়ার হিসাব অনুযায়ী, সে ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের দাম হবে ৭ ডলার। আবার জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ১০ ডলার।
বহুজাতিক কোম্পানি ও পেট্রোবাংলার মধ্যকার মুনাফা ভাগাভাগির সূত্র এবার বদল করা হচ্ছে। আগে বিনিয়োগ ও পরিচালন খরচ তুলে নেওয়ার পর মুনাফা ভাগাভাগি করত দুই পক্ষ। এতে গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ৫৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পেত পেট্রোবাংলা। উৎপাদন বাড়লে পেট্রোবাংলার মুনাফার হার বাড়ত। তবে এবার গ্যাসক্ষেত্র থেকে আয় করা মোট রাজস্বের ওপর ভাগাভাগির ব্যবস্থা হচ্ছে। এতে ৩৫ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্বের ভাগ পাবে পেট্রোবাংলা। শুরুতে ঠিকাদার কোম্পানির বিনিয়োগের খরচ তোলার সময় পেট্রোবাংলার আয় কম হবে। ধীরে ধীরে খরচ কমে আসবে। তখন পেট্রোবাংলার আয় বাড়বে।
পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পরামর্শক কোম্পানির সুপারিশে এই পদ্ধতি রাখা হচ্ছে। এতে বিদেশিদের আগ্রহ বাড়বে। তেল-গ্যাস খাতের অন্যতম শীর্ষ বহুজাতিক কোম্পানি এক্সনমবিল ইতিমধ্যে দরপত্র ছাড়া চুক্তি করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এমন কোম্পানির আগ্রহ সমুদ্রে গ্যাস থাকার সম্ভাবনার বিষয়টিকে আরও জোরালো করে।
ওএনজিসি সময় পেছাচ্ছে বারবার
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অগভীর সমুদ্রের ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে পিএসসি সই করে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড (ওভিএল)। চুক্তি অনুয়ায়ী, চার বছরের মধ্যে জরিপ ও দুটি কূপ খননের কথা ছিল। কিন্তু ওভিএল নির্ধারিত সময়ে তা করতে না পারায় তিন বছর সময় বাড়ানো হয়। একটি কূপ খনন করে গ্যাসের সন্ধান পায়নি ওভিএল। বাকি দুটি কূপ খনন করতে আরও দুই বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। এখন তারা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় পাবে। দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে একমাত্র বিদেশি কোম্পানি হিসেবে তারাই এখন কাজ করছে। তবে ওভিএলের কাজের গতিতে সন্তুষ্ট নয় পেট্রোবাংলা। সংস্থাটির দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ওভিএলকে বারবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। কূপ খননের জন্য এখন পর্যন্ত তারা ঠিকাদার নিয়োগ করেনি।
শেষ হয়নি বহুমাত্রিক জরিপ
আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি হয়। অবশ্য তার আগেই বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ। কাজ শুরু করলেও বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায় মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপস, অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও সিঙ্গাপুরের ক্রিস এনার্জি গঠিত যৌথ কোম্পানি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু।
২০১৩ সালেই সমুদ্রে জরিপ চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে মিয়ানমার। অন্যদিকে দেশে বহুমাত্রিক জরিপ চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালে জরিপের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। জ্বালানি বিভাগের পরামর্শে ২০১৬ সালে পুনঃ দরপত্রে একই কোম্পানি নির্বাচিত হয়। ২০২০ সালের মার্চে চুক্তি হয়। আর কাজ শুরু হয়েছে মাত্র দুই মাস আগে। চুক্তি অনুযায়ী, নিজস্ব অর্থায়নে জরিপের কাজটি যৌথভাবে করছে নরওয়ের টিজিএস ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরাসি কোম্পানি স্লাম বে জ্যে। জরিপের তথ্য বিক্রি করে তারা বিনিয়োগের টাকা তুলবে।
পেট্রোবাংলার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ১১ হাজার লাইন কিলোমিটার জরিপ করার কথা। ইতিমধ্যে ১০ হাজার লাইন কিলোমিটারের বেশি জরিপ হয়ে গেছে। আগামী জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে জরিপের তথ্য পাওয়া যাবে।
লাকড়ি, পাতা দিয়ে রান্নাকারী ২৩ শতাংশ নারী উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন
২৯ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
দেশের গ্রামের মাঝবয়সী নারীদের সারা দিনে গড়ে ৩ ঘণ্টা ১৭ মিনিট রান্না ঘরে কাটে। এ সময় তাঁদের বড় অংশের রান্নার কাজ হয় লাকড়ি, তুষ, শুকনা গোবর ও শুকনা পাতায়। আর এতে যে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়, তা মূলত রান্নাঘরেই ঘুরপাক খায়। নিশ্বাসের সঙ্গে ওই ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করে। এর ফলে এভাবে রান্নাকারী নারীদের ২৩ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। গ্যাস বা বিদ্যুৎ (কম দূষণ হয় এমন জ্বালানি) দিয়ে রান্না করা নারীদের তুলনায় ওই নারীদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ বেশি।
দেশের বেশির ভাগ গ্রামীণ পরিবারের রান্নায় কাঠ ও গোবরের মতো জৈব জ্বালানি ব্যবহার হয়। এসব জৈব জ্বালানি ব্যবহারের ফলে প্রচুর পরিমাণ অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা ও কার্বন মনো–অক্সাইড তৈরি হয়; যা নারীদের উচ্চ রক্তচাপের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে
শাখাওয়াত হোসেন, গবেষণা দলের প্রধান ও শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘আমেরিকান জার্নাল অব হিউম্যান বায়োলজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন গবেষক যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন। ‘বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে রান্নার জ্বালানি ব্যবহারের সম্পর্ক’ শীর্ষক গবেষণাটিতে উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও নারীরা আরও নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
বিদ্যুৎ কেনায় বিপিডিবির ব্যয় বাড়ছে ২৪ হাজার কোটি টাকা
এপ্রিল ০৪, ২০২৩, বণিক বার্তা
বিদ্যুৎ কেনার ব্যয় সংকুলান নিয়ে চাপে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। একদিকে জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যয়, অন্যদিকে বিপুল অংকের ক্যাপাসিটি চার্জ। সব মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত অর্থ দিয়ে বিদ্যুৎ ক্রয়ের ব্যয় সংকুলান অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে নতুন করে সংশোধন করতে হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিপিডিবির জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বিপিডিবিকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৬০ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। মার্চে তা বাড়িয়ে এ বাবদ মোট ৮৪ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ। সে অনুযায়ী এবার বিপিডিবির বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় বাড়ছে প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ২৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের জন্য করা আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু
০৯ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের ৮০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হলে ওই প্রকল্পে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের
গত শুক্রবার ভারতের স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করা এক নোটিশে আদানি পাওয়ার বলেছে, ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলায় অবস্থিত তাদের ৮০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে।
তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং!
১৬ এপ্রিল ২০২৩, শেয়ার বিজ
বিশেষ প্রতিনিধি: কয়লাভিত্তিক নতুন কয়েকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসা ও গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধিতে গত মাস থেকে চাহিদার কাছাকাছি ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন। এতে লোডশেডিং হলেও তা ছিল ন্যূনতম পর্যায়ে। এমনকি এক সপ্তাহ আগেও তা সীমিত আকারেই ছিল। তবে কয়েকদিন ধরে তা বাড়ছে। ১৩ এপ্রিল দেশে রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও বড় ধরনের লোডশেডিং হয়। আর পহেলা বৈশাখের ছুটির দিনে (১৪ এপ্রিল) তা ভয়াবহ রূপ নেয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। উৎপাদন বাড়িয়েও ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছে না। এতে অনেকটা বাধ্য হয়েই লোডশেডিং বাড়াতে হয়েছে। এছাড়া উৎপাদন পর্যায়ে যে ঘাটতি থাকে বিতরণ পর্যায়ে তার চেয়ে কমপক্ষে ৫০০ মেগাওয়াট চাহিদা বেশি থাকে। ফলে বিতরণ পর্যায়ে লোডশেডিং আরও বেশি হচ্ছে। তবে তাপমাত্রা না কমলে লোডশেডিং কমানো কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা।
ফুলগাজীতে বিদ্যুৎ অফিসে হামলা, সোনাগাজীতে ছাত্রলীগের পাহারা
১৮ এপ্রিল ২০২৩, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ফেনীতে অব্যাহত লোডশেডিংয়ে ‘অতিষ্ঠ’ হয়ে ফুলগাজী উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা করে ইট- পাটকেল নিক্ষেপ করেছে ‘বিক্ষুব্ধ’ গ্রাহকরা।
সোমবার রাতে উপজেলার মুন্সীরহাট বাজারে পল্লী বিদ্যুতের (সাব-সেক্টর) উপকেন্দ্রে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানান ফুলগাজী পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইকবাল মাহদী।
তিনি বলেন, “বিক্ষুব্ধ লোকজন মুন্সীরহাট বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হামলা করার জন্য আসেন। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং কাঁটাতারের বেড়া ছিঁড়ে ফেলেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
ফুলগাজী থানার ওসি মো. আবুল হাসিম বলেন, “ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এনেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।”
সোনাগাজী বিদ্যুৎ অফিসে ছাত্রলীগের পাহারা
ছাগলনাইয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলার ঘটনার পর পরই সোনাগাজী উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের কয়েকটি কেন্দ্রে বাড়তি সতর্কতায় পাহারা দিচ্ছে ছাত্রলীগ।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন সাইমুন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জোনাল অফিস চরচান্দিয়া, মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুলাখালী সাব-জোনাল অফিস, বগাদানায় কুটির হাট সাব-জোনাল অফিস (অভিযোগ কেন্দ্র), চরদরবেশের কাজীরহাট সাব-জোনাল অফিস, মঙ্গলকান্দির ডাকবাংলা সাব-স্টেশনে পাহারা দেন।
তিন ঘন্টার জন্য সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ’ভেল্কি’
২০ এপ্রিল ২০২৩, শেয়ার বিজ
পরপর তিন দিন সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে বিদ্যুৎ খাত। এ সময় ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। তবে এ উৎপাদনে রয়েছে ফাঁকি। শুধু সন্ধ্যা থেকে রাতের কিছু সময় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। পরে তা কমিয়ে আনা হয়। এমনকি সর্বোচ্চ উৎপাদনের (রাত ৯টা) তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের লোডশেডিং হয়। দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও কমিয়ে দেয়া হয়। এতে দিনেও বড় ধরনের লোডশেডিং হচ্ছে এক সপ্তাহ ধরে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, গত তিন দিন ধরে সন্ধ্যা ৭টা বা সাড়ে ৭টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়। রাত ৯টায় তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। আর ১০টা বা সাড়ে ১০টার পর কমে আবার ১৫ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে আসে। তবে সর্বোচ্চ উৎপাদনের সময়ও উৎপাদন পর্যায়ে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। বিতরণ পর্যায়ে তা হাজার মেগাওয়াটের বেশি থাকে।
১৯ এপ্রিলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওইদিন রাত ৯টায় ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল, যা রেকর্ড। সে সময়ও উৎপাদন পর্যায়ে ঘাটতি ছিল ৪২৮ মেগাওয়াট। সেদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল রাত ১টায় এক হাজার ৮২০ মেগাওয়াট। ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৬৯৬ মেগাওয়াট।
১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করে। সে সময় ১৫ হাজার ১২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। আর রাত ১০টায় উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার ৪৪৮ মেগাওয়াট। সাড়ে ১০টায় তা ১৪ হাজার ৮৯৫ মেগাওয়াটে নেমে আসে। এরপর থেকে কমতে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন আর বাড়তে থাকে লোডশেডিং।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়েছে গ্যাসের গন্ধ, আতঙ্কে বাসিন্দারা
২৫ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আজ সোমবার রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে এ খবর আসতে শুরু করেছে।
ইতিমধ্যে রাজধানীর মগবাজার, দিলু রোড, রামপুরা, মহাখালী, পূর্ব রাজাবাজার, ক্রিসেন্ট রোড, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বাড্ডা ও হাজারীবাগ এলাকায় গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন এলাকার মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্যাসের চুলা না জ্বালানো এবং দেশলাই না জ্বালানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। অনেকে অভিযোগ করেছেন, তিতাসের জরুরি যোগাযোগের নম্বরে ফোন করে সংযোগ পাননি।
ঘটনাটি কী ঘটেছে সে বিষয়ে জানতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়। তিতাসের গুলশান টিমের সুপারভাইজার আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা চাপ কমিয়ে দিয়েছি। ধীরে ধীরে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিল কাজ পাচ্ছে
২৫ এপ্রিল ২০২৩, যুগান্তর
গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পাচ্ছে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল। কোম্পানিটি সাগরের ১৫টি ব্লকে এই অনুসন্ধান চালাতে চায় বলে সরকারের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ এ প্রস্তাবের ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। তবে মার্কিন কোম্পানিটির সঙ্গে চ‚ড়ান্ত চুক্তি করার আগে তার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, এক্সন মবিলের প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। আমরা এ প্রস্তাবের ব্যাপারে ইতিবাচক আছি। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে বলেছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি
আগামী সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করবে। তিনি বলেন, অনুসন্ধান শেষে যদি সবকিছু ফলপ্রসূ হয়, তাহলে এক্সন মবিলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) করা হবে। এজন্য পিএসসিকেও ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।
পরিবেশ
ধানমন্ডি লেকের বাণিজ্যিকীকরণে লাভবান হচ্ছেন প্রভাবশালীরা ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ
জানুয়ারি ২৮, ২০২৩, বণিক বার্তা
যানজট আর জনাকীর্ণতায় বিপর্যস্ত রাজধানীবাসীর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার জায়গা দেশের প্রথম আরবান ডিজাইন প্রজেক্ট ধানমন্ডি লেক। তরতাজা সকাল কিংবা আনন্দমুখর সন্ধ্যা কাটাতে নগরবাসী ছুটে আসে এখানে। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক বছরে লেকের পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়েছে আরো বেশি। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, রাজধানীর লেকগুলোর মধ্যে ধানমন্ডি লেকেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্যিক পরিধি বৃদ্ধিই এমন ভয়াবহতার কারণ। আবার এমন অতিবাণিজ্যিকীকরণে সরকার নয়, লাভবান হচ্ছে প্রভাবশালী মহল। এ ধারা চলতে থাকলে অচিরেই ধানমন্ডি লেক ভ্রমণের বদলে কেনাকাটার স্পটে পরিণত হবে।
দেশের প্রথম পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ১৯৫৬ সালে লেকসহ ২৪০ দশমিক ৭৪ হেক্টর জমিতে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়। ধানমন্ডি এলাকার প্রায় ১৬ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এ লেক। ১৯৯৮-২০০১ সালে ধানমন্ডি লেক এলাকাটি সংস্কার করে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। লেকের পুরো অংশে রয়েছে ওয়াকওয়ে, নির্দিষ্ট অংশজুড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের প্যাডেল বোট চালানোর সুবিধা। এছাড়া রয়েছে তিনটি ছোট ছোট দ্বীপসহ পাঁচটি ব্রিজ।
কিন্তু নগর বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়েছে লেক এলাকা। বেড়েছে দোকানপাট ও পার্কিং জোন। এমন বাণিজ্যিকীকরণে দিনে দিনে লেকের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশেরও। বিষয়টা নজর এড়ায়নি স্থানীয় বাসিন্দা ফারজানা কবিরেরও। তিনি বলেন, ‘আগে লেকের পাড়ে হাঁটতে এলে মন ভালো হয়ে যেত। আর এখন চারদিকে দোকান, হকার, অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি মিলে লেকের আগের সৌন্দর্য আর নেই।’
নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বণিক বার্তাকে বলেন, ‘একটি পরিকল্পিত লেক নির্মাণের লক্ষ্য ছিল আমাদের। এখানে আমরা কিছু দোকান রেখেছিলাম, পার্কিং এলাকা রেখেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) লেক এলাকাটিকে এত বেশি বাণিজ্যিক চোখে দেখছে যে এখন দোকান আর পার্কিং স্পেসে তা ঘিঞ্জি হয়ে পড়েছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে লেক নির্মাণ করা হয়েছিল তা ব্যর্থ হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের কথা কানেই তুলছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’
ধানমন্ডি লেককে মোট সাতটি সেক্টরে ভাগ করে ইজারা দিচ্ছে ডিএসসিসি। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর (নতুন ১৬) সড়ক থেকে ধানমন্ডি ৩২ (নতুন ১১) নম্বর সড়কের সেতু পর্যন্ত এলাকাটি ১ নম্বর সেক্টর। এই সেক্টরে ‘সাম্পান’ নামে একটি ফুড কোর্ট ও আটটি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর (নতুন ১১) সেতু থেকে মিরপুর রোডের শেখ রাসেল স্কয়ার হয়ে কলাবাগান মাঠের উত্তর সীমানা পর্যন্ত এলাকাটি ২ নম্বর সেক্টর। এখানে ‘বজরা’ নামে একটি ফুড কোর্ট, ৩০টি পার্কিংয়ের জায়গা, একটি গণশৌচাগার এবং শেখ রাসেল শিশু পার্ক রয়েছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর (নতুন ১১) সেতু থেকে ধানমন্ডি ১৬ (নতুন ১২/এ) নম্বর সড়কের সেতু পর্যন্ত ৩ নম্বর সেক্টর। এ সেক্টরে একটি ফুড কোর্ট, ২০টি ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা, দুটি গণশৌচাগার, একটি স্কেটিং ক্লাব রয়েছে। ধানমন্ডি ১৬ নম্বর সড়কের (নতুন ১২/এ) লেকের পশ্চিম দিকের সংযুক্ত সড়ক থেকে ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কের সেতু পর্যন্ত ৪ নম্বর সেক্টর। এ সেক্টরে ‘ডিঙ্গি’ নামে একটি ফুড কোর্ট রয়েছে। রয়েছে ছয়টি পার্কিংয়ের জায়গা। ৫ নম্বর সেক্টরে ‘পানশী’ নামে একটি রেস্টুরেন্টসহ ২০টি পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে। ধানমন্ডি ৮ নম্বর সেতু থেকে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের পেছনের প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত এ সেক্টর। ধানমন্ডি ৮ নম্বর সেতু থেকে ধানমন্ডি ৬ নম্বর সড়কের লেকের পূর্ব অংশ পর্যন্ত লেকের ৬ নম্বর সেক্টর। এ সেক্টরে ‘তরী’ নামে একটি ফুড কোর্ট, একটি গণশৌচাগার, ১২টি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে। ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কের সেতু থেকে সাত মসজিদ সড়কের দুটি অংশ তথা সুগন্ধা কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীত পাশ পর্যন্ত এবং বিজিবি ফটক থেকে বিপরীত পাশ পর্যন্ত এলাকাটি ৭ নম্বর সেক্টর। এ সেক্টরের আয়তন অন্যান্য সেক্টর থেকে অনেক বড়। এখানে পাঁচটি ফুড ভ্যান, দুটি ফুড কোর্ট, ৩২টি পার্কিংয়ের জায়গা ও একটি গণশৌচাগার রয়েছে।
বর্তমানে এসব সেক্টরে রেস্টুরেন্ট ও পার্কিং জোনের পরিধি বাড়িয়ে ইজারা দিচ্ছে ডিএসসিসি। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল ধানমন্ডি লেকের মাত্র ৩ শতাংশ ক্যাফেটেরিয়া ও রেস্টুরেন্ট হবে। কিন্তু ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ এটাকে ১২ থেকে ১৫ শতাংশে বর্ধিত করেছে। একটি পার্ক বা লেকে কখনই ৫ শতাংশের বেশি দোকান রাখার নিয়ম নেই। ডিএসসিসির বাণিজ্যিক কার্যক্রম সে শর্তও ভেঙে দিয়েছে।’
ঢাকার বাতাসে বিষাক্ত প্লাস্টিক কণা
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
ঢাকার বাতাসে এক নতুন বিপদ দানা বাঁধছে। এত দিন বাতাসে নানা দূষিত বস্তুকণা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। শঙ্কা বাড়িয়েছিল অতিভারী ধাতুর উপস্থিতি। মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ওই বস্তুকণা পরিমাপ করে গবেষকেরা ঢাকার বাতাসকে বিপজ্জনক বলছিলেন। এবার গবেষকেরা ঢাকার বাতাসে বিষাক্ত অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রো প্লাস্টিকের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। ঢাকাবাসীর নিশ্বাসের সঙ্গে ওই কণা শরীরে প্রবেশ করছে। এতে ক্যানসার, শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ তৈরি হচ্ছে, যা ওষুধেও দূর হবে না বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। ফলে এর উৎস নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয় এবং টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় ঢাকার মোট ১৩টি এলাকার বাতাসের নমুনা নেওয়া হয়। এলাকাগুলো হলো ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-১৩, পশ্চিম কাজীপাড়া, শান্তিনগর, আরামবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ও ফজলুল হক হল, খিলক্ষেত, ফার্মগেট, মহাখালী, মুগদা, বাসাবো। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার বাতাসের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম। তিনি গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, আপনি চান বা না চান, নিশ্বাসের সঙ্গে ওই ক্ষতিকর উপাদান প্রবেশ করছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং যাতে তা প্রকৃতিতে ফিরে না যায়, সে লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা করা হলেও তার কোনো প্রয়োগ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। যে কারণে এই দূষণ বেড়েই চলেছে।’
বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালসহ বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর হিসাবে, গত দুই বছর ঢাকা সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর হয়ে উঠেছে। গত জানুয়ারি মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে ঢাকার বাতাস বিপজ্জনক ও দুর্যোগপূর্ণ ছিল।
মাটি-পানি থেকে রক্তে প্লাস্টিক
বাংলাদেশে হওয়া একাধিক গবেষণায় নদী ও সমুদ্রের মাছ, পানি, মাটি ও চায়ের মধ্যে অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পান গবেষকেরা।
২০২২ সালে নেদারল্যান্ডসে এক গবেষণায় মানুষের রক্তেও উপাদানটি পাওয়া যায়। সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের রক্তের নমুনা নিয়ে গবেষকেরা পরীক্ষা করেন।
একই বছর চীনের চারটি শহরের বাতাসে এই বস্তুকণার ভেসে বেড়ানো নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়।
প্লাস্টিক কণা নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে প্রথমে ফুসফুস, পরে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে ক্যানসার থেকে শুরু করে স্নায়ুজনিত নানা রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং শ্বাসজনিত অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
মো. আতিকুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক
তার আগে ২০২১ সালে বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের নগরগুলোতে গত দেড় যুগে প্লাস্টিকের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। রাজধানীতে বছরে মাথাপিছু প্রায় ২৩ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়। এই প্লাস্টিকের প্রায় অর্ধেক মাটি ও পানিতে রয়ে যায়। তৈরি করে মারাত্মক দূষণ। জনস্বাস্থ্যকে ফেলে হুমকিতে।
রূপগঞ্জের বালু নদ দূষণ পচা পানিতে বিপর্যস্ত জনজীবন
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, দৈনিক বাংলা
রাজধানীর উপকণ্ঠ রূপগঞ্জের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে বালু নদ। একসময় এই নদ ছিল এর অববাহিকার মানুষের জীবন-জীবিকার অপরিহার্য অনুষঙ্গ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে নদ হারিয়েছে যৌবন। দখলে-দূষণে সে নদ এখন বিপর্যস্ত করে তুলছে মানুষের জীবন। বালু নদের দূষিত ও কালো পানি স্থানীয় কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও হয়ে দাঁড়িয়েছে হুমকি। গত প্রায় আড়াই যুগ ধরে নদীপাড়ের মানুষজনকে এ নোংরা পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। দূষিত পানির কারণে নদে এখন কোনো মাছ নেই, উল্টো বেড়েছে মশা ও রোগবালাইয়ের উপদ্রব, কমেছে ফসলের উৎপাদন।
স্থানীয়রা বলছেন, রাজধানীর আবাসিক এলাকা ও শিল্পকারখানার সব পয়োবর্জ্য এসে পড়ে এ নদে। ফলে এখানকার পানি আলকাতরার মতো কালো হয়ে গেছে, স্থানীয়রা যার নাম দিয়েছেন ‘পচা পানি’। ঢাকার নাসিরাবাদ, ডেমরা, বেরাইদ, ত্রিমোহনী ও রূপগঞ্জের ৫০ গ্রামের লাখো মানুষের কাছে বালু নদের এই পচা পানি এখন অভিশাপ। নদের পানির অতিরিক্ত দূষণ ও কটূ গন্ধে তীরবর্তী এলাকার প্রাণ-পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
শীতলক্ষ্যার মোহনা ডেমরা থেকে শুরু হয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদে মিলেছে বালু নদ। এ নদ থেকে দুটো ছোট নদ নড়াই ও দেবধোলাই ঢুকেছে ঢাকার রামপুরায়। এ নদ দুটো দিয়ে ঢাকার মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, গুলশান, তেজগাঁও, সবুজবাগ ও মতিঝিলসহ বিশাল এলাকার শিল্প ও পয়োনালার বর্জ্য এসে রামপুরা ব্রিজের নিচ দিয়ে বালু নদে পড়ছে। বছরের পর বছর আবর্জনা পড়তে পড়তে নদের পানিই এখন বর্জ্য হয়ে গেছে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, বালু নদের মোট দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে দৈনিক ১০ লাখ ঘনমিটার পয়োবর্জ্য, ৫৬ কোটি ঘনমিটার বর্জ্যমিশ্রিত পানি ও বিভিন্ন কলকারখানার ৪৫০ ঘনফুট বর্জ্য প্রতিদিন এ নদে পড়ছে। এ ছাড়া বালু, নড়াই ও দেবধোলাইয়ের ওপর রয়েছে সহস্রাধিক খোলা পায়খানা। এসব থেকে আরও ৫৬০ ঘনফুট পয়োবর্জ্য এসব নদের পানিতে মিশছে।
স্বাভাবিক নিশ্বাস নিতে পারছে না ৪০% শিশু
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
ঢাকার গুলিস্তান থেকে ঠাটারি বাজারের দিকে কিছু দূর এগোলেই নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। মূল ফটকের সামনের রাস্তায় যানবাহনের জট আর বাজারের হট্টগোল। স্কুল ভবনের চারপাশেই কাঁচাবাজার আর কারখানা। যানবাহন চলাচলে ধুলা ঢুকছে বিদ্যালয়ের ভেতর। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে।
বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আকাশ জানায়, স্কুলে আসা ও যাওয়ার পথে ধুলা খেতে হয়। ক্লাসের মধ্যেও ধুলা আর ধোঁয়ার যন্ত্রণা। কোনো না কোনো ক্লাসের কেউ না কেউ ঠান্ডা–কাশিতে ভুগছেই উল্লেখ করে শিশুটি জানায়, আগে শীতকালে বাতাস খারাপ থাকত। এখন সারা বছরই ধুলা খেতে হয়।
খুদে এই শিক্ষার্থীর বক্তব্যের প্রতিফলনই ঘটেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লিন এয়ার রিসার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায়।
চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ কমিউনিকেশন–এ প্রকাশিত ওই গবেষণা বলছে, শিশুরা দিনের ১৭ শতাংশ সময় কাটায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যে কারণে শ্রেণিকক্ষ ও খেলার মাঠের পরিবেশ সাধারণভাবে নিরাপদ থাকার কথা। কিন্তু রাজধানী ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাঙ্গণ দূষিত বায়ু ও বিষাক্ত গ্যাসে ভরে উঠছে।
গবেষণায় বিদ্যালয়গুলোতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম-১, পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ পরিমাপ করা হয়। আর ক্ষতিকর গ্যাসের মধ্যে নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড, ভোলাটাইল অর্গানিক ও কার্বন ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে সর্বোচ্চ প্রায় তিন গুণ (২ দশমিক ৯) বেশি পাওয়া গেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ডব্লিউএইচওর মানমাত্রা হচ্ছে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৪৫ মাইক্রোগ্রাম পিএম ১০ থাকতে হবে, পিএম ২.৫ থাকবে ১৫ মাইক্রোগ্রাম। এর চেয়ে বেশি থাকলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। শ্রেণিকক্ষে হেজারডাস বা আপদ পর্যায়ের গ্যাস ও মারাত্মক ক্ষতিকর পর্যায়ের দূষিত বায়ু পাওয়া গেছে।
গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক শতাব্দী রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে স্কুলগুলোর বেশির ভাগই প্রধান সড়ক ও বাণিজ্যিক এলাকার গলির মধ্যে। যে কারণে বাতাস প্রবাহের জায়গা কম। আবার দূষিত বাতাস সহজে স্কুলে প্রবেশ করে আর বের হতে পারে না। যার শিকার হচ্ছে শিশুরা।’
যে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে, নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় সেগুলোর একটি। বাকিগুলো হলো কমলাপুর হাইস্কুল, নিউ মডেল বহুমুখী হাইস্কুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, খিলগাঁও গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল হাইস্কুল, মানিকনগর মডেল হাইস্কুল, আহমেদাবাগ হাইস্কুল ও বাড্ডা হাইস্কুল।
গবেষণায় শ্রেণিকক্ষে থাকা ২৫০ জন শিশুর শ্বাস–প্রশ্বাস নেওয়ার স্বাভাবিক ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। নিশ্বাস পরিমাপ করার বিশেষ যন্ত্র ফ্লো মিটার দিয়ে করা ওই পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ শিশু স্বাভাবিকভাবে শ্বাস–প্রশ্বাস নিতে পারেনি। আর বেশির ভাগ শিশুর বায়ুদূষণজনিত কোনো না কোনো সমস্যা পাওয়া গেছে।
পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া এবং ৯ থেকে ১২ বছর বয়সী এসব শিশুর মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়। তাতে দেখা যায়, তারা ঠান্ডা, কাশি, সর্দি, জ্বর, মাথাব্যথাসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। দূষিত বায়ু ও গ্যাসের কারণে তাদের ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করছে না বলে গবেষকেরা মনে করছেন।
টানা তিন দিন দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে ঢাকা
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা
ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় আবারও প্রথম স্থানে উঠে এসেছে। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ৫৫ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ৩৭০ নিয়ে দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম স্থান ধরে রাখে ঢাকা। এ টানা তিন দিন ধরে তালিকার শীর্ষ অবস্থানে করছে ঢাকা। এর আগে, ডিসেম্বররে শেষ সপ্তাহে এবং জানুয়ারির শুরু থেকে একাধিকবার এ তালিকার শীর্ষে উঠে আসে ঢাকা।
শনিবার সকালে ভারতের দিল্লি ও মুম্বাই যথাক্রমে একিউআই ২৫১ ও ২২০ স্কোর নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান স্থানে রয়েছে।
খাল নিয়ে ‘খামখেয়ালির’ খেসারত ১৩ কোটি টাকা
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে শতবর্ষী একটি খাল ভরাট করে এখন আবার খনন করতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। ভরাট করতে তাদের ব্যয় হয়েছিল তিন কোটি টাকা। এখন আবার খনন করতে ব্যয় হবে ১০ কোটি টাকা।
বেপজার বিরুদ্ধে অভিযোগ, খালটি ভরাট করার ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মহাপরিকল্পনা ও তাদের সঙ্গে করা চুক্তির শর্ত মানেনি। আইনও ভেঙেছে। পরে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বেপজা ভরাট করা খালটি আবার খননের উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছে।
চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফেনীতে ৩০ হাজার একরের বেশি জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। সেই শিল্পনগরের ভেতর কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) করা হচ্ছে, যার একটি বেপজার। জমির পরিমাণ ১ হাজার ১৫০ একর। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্যই খাল ভরাট করেছে বেপজা।
খালটির নাম ডাবরখালী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় সোয়া ছয় কিলোমিটার। প্রস্থ কোথাও ২০ ফুট, কোথাও ৪০ ফুট। খালটির শুরু মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরৎ গ্রামে। ওই গ্রামের এক পাশে পাঁচ হাজার একরের মতো নিচু কৃষিজমি রয়েছে। সেই জমির পানি খালটি হয়ে বঙ্গোপসাগরে নিষ্কাশিত হয়। ওই জমিতে বর্ষায় ধান এবং বছরের অন্য সময় রবিশস্য, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বঙ্গোপসাগরের কাছে খালের ওপর পুরোনো একটি স্লুইসগেট রয়েছে। সেখান থেকে সমুদ্র পর্যন্ত অংশের পানি লবণাক্ত থাকে। বাকি অংশের পানি মিঠা। খালের মিঠা পানির অংশে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। ইছাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা প্রথম আলোকে জানান, ২০১৮ সালে খালটির দুই কিলোমিটার অংশ খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
বেপজা খালের সোয়া দুই কিলোমিটার ভরাট করেছে ২০২১ সালে। বড় অংশ ভরাট করে ফেলায় খালটি এখন মৃতপ্রায়। ৪ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডাবরখালী খালের শুরুর এক কিলোমিটার আর শেষ দিকের তিন কিলোমিটারের অস্তিত্ব আছে। মাঝখানের সোয়া দুই কিলোমিটার খাল বালু দিয়ে ভরাট করা।
খাল ভরাটের প্রতিবাদে ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি ওই এলাকায় মানববন্ধন করেন প্রায় ১ হাজার কৃষক। কৃষকদের অভিযোগ, খাল ভরাটের কারণে বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষিজমির একাংশে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। যাঁরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাঁরা এখন মাছ একেবারেই কম পাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, খালটি ভরাট করা ঠেকাতে তখন আন্দোলন করেও লাভ হয়নি।
‘বেপজা আইন ভঙ্গ করেছে’
দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ করছে বেজা। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার দায়িত্বও তাদের। এই শিল্পনগরের বড় অংশজুড়ে ভূমি উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। বেশ কিছু শিল্পকারখানাও সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বেজা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের যে মহাপরিকল্পনা করেছে, সেখানে সব কটি খাল রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে খাল আছে সাতটির মতো। এর মধ্যে তিনটি বড়—বামনসুন্দর, ইছাখালী ও ডাবরখালী। বেজা বলছে, তারা যেসব জায়গায় ভূমি উন্নয়ন করছে, সেখানকার খাল রক্ষা করেই বালু ফেলা হচ্ছে। ডাবরখালী খালের প্রাকৃতিক প্রবাহ ঠিক রেখে সড়ক তৈরির জন্য তারা এক কোটি টাকা ব্যয় করে একটি সেতুও নির্মাণ করেছিল। তবে খাল ভরাট করায় সেতুটির অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। একই কারণে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে বর্ষার সময় পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা একটি স্লুইসগেটও।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাল ভরাট করে বেপজা বড় ধরনের ভুল করেছে। তারা আইন ভঙ্গ করেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খালটি পুনরায় খনন করতে তাদের নির্দেশ দিয়েছে। আমরাও তাগিদ দিয়েছি। তারা রাজি হয়েছে খালটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে।’
বেপজা শুধু বেজার মহাপরিকল্পনা ও চুক্তির শর্তই ভঙ্গ করেনি, তারা খালটি ভরাট করার মাধ্যমে পানি আইনও ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পানি আইনে (২০ নম্বর ধারা) বলা হয়েছে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা জলাধার ভরাট করে জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ বা তার প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আইন লঙ্ঘন করে সরকারেরই একটি সংস্থা এভাবে একটি খাল ভরাট করে ফেলবে, এটা বড় ধরনের অপরাধ। জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।
বেপরোয়া ‘মনোভাব’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালটি ভরাট করার ক্ষেত্রে বেজা আপত্তি জানিয়েছিল। তবে বেপজার কিছু কর্মকর্তা বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তাঁরা খালটি ভরাট থেকে সরে আসেননি। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশেই খালটি খনন করার সিদ্ধান্ত নেয় বেপজা। উল্লেখ্য, বেজা ও বেপজা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। বেজার বর্তমান কর্মকর্তারা খালটি নতুন করে খনন করার বিষয়ে ইতিবাচক।
খাল যখন ভরাট করা হয়, তখন বেপজার অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন হাফিজুর রহমান। তিনি এখন অবসরে। যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
নথিপত্র বলছে, খালটি আবার খনন করতে গত ৩১ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে বেপজা। আগামী ২ মার্চ দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। খালটি খননে যে ১০ কোটি টাকা ব্যয় হবে, তা বেপজা নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে। আগে ভরাট করতে ব্যয় করা তিন কোটি টাকাও বেপজার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে।
বেপজা বলছে, খালটি ভরাট করার সময় তাদের লক্ষ্য ছিল, পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে ছোট নালা তৈরি করা হবে। সেটির সংযোগ থাকবে তিন কিলোমিটার দূরের বামনসুন্দর খালের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বেপজার অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের বর্তমান পরিচালক এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, খালটি আঁকাবাঁকা হওয়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যাঘাত ঘটছিল। তাই ভরাট করা হয়েছিল। তবে সরকারের নির্দেশে আবার খনন করা হবে।
চট্টগ্রামে তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত, ৬০ হাজার লিটার তেল মিশছে নালা–খালে
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে রেলওয়ের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) তেলবাহী ট্রেনের তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ওয়াগন থেকে প্রায় সব তেল পড়ে গেছে। ওয়াগন থেকে পড়ে যাওয়া তেল নালা-খাল হয়ে নদীতে মিশে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নগরের গুপ্তখাল এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন তেল কোম্পানি থেকে তেল ভর্তি করে ট্রেনটি সিজিপিওয়াইতে আসছিল। ইয়ার্ডে প্রবেশ করার মুহূর্তে লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ট্রেনটিতে ১৬টি ওয়াগন ছিল। একটি ওয়াগনের তেল ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার লিটার। দুটি ওয়াগন থেকে প্রায় সব তেল পড়ে গেছে, অর্থাৎ ৬০ হাজার লিটার তেল পড়ে গেছে। বাকি ওয়াগন থেকেও তেল পড়ছে।
দেশে নতুন বিধিতে বায়ুদূষণে ছাড়
১৬ ফেব্রুয়ারি ২৩, সমকাল
শীতের কুয়াশার মতো ধুলায় ধূসর রাস্তা। চলন্ত যানবাহনের পেছনে কুণ্ডলী পাকিয়ে বাতাসে উড়ছে ধুলাবালু। ফলে বিশ্বের অন্যসব দূষিত বায়ুর শহরকে পেছনে ফেলে প্রায়ই ১ নম্বরে উঠে আসছে রাজধানী ঢাকা। শিল্পকারখানার দূষণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষও। ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে বাড়ছে দূষণ। এর মধ্যে ক্ষতিকর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণার (পিএম ২.৫) কারণেই দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে পরিস্থিতি ভয়ংকর হচ্ছে। বাস্তবায়ন হচ্ছে না আইন। উল্টো সর্বশেষ জারি হওয়া বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালায় ছাড় দেওয়া হয়েছে দূষণকে। পিএম ২.৫-এর সর্বনিম্ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাড়িয়ে দূষণকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। তাপবিদ্যৎ কেন্দ্রের কার্বন নিঃসরণের সর্বোচ্চ সীমা উন্নত দেশের মানমাত্রার চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিঃসরণ মানমাত্রার পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
এতে মূল প্রবন্ধে ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনুধাবন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বস্তুকণা ২.৫-এর মানমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম থেকে কমিয়ে ৫ মাইক্রোগ্রাম করেছে। অথচ বাংলাদেশে সম্প্রতি পাস হওয়া বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২-এ বায়ুর মানমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম করা হয়েছে। আর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্বন নিঃসরণের সর্বোচ্চ সীমা সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইড এবং বস্তুকণার মানমাত্রা যথাক্রমে ঘনমিটারে ২০০, ২০০ এবং ৫০ মিলিগ্রাম করা হয়েছে, যা উন্নত দেশের মানমাত্রার চেয়ে নূ্যনতম ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি। উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের দেশে উন্নয়ন কর্মকাে নিঃসরণের মাত্রার যে মানদ মেনে চলে, সেই মানমাত্রা উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তারা আমাদের দেশে কাজ করার সময় মানে না।
১১৩টি ভাটার ৯২টিই অবৈধ
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো
আইন লঙ্ঘন করে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ ইটভাটায় অবাধে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কৃষিজমি ও লোকালয়ে এসব ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ইটভাটার চিমনির কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। উচ্চ আদালত নভেম্বর মাসে এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও ব্যবস্থা না নেওয়ায় মালিকেরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রহীন এসব ইটভাটায় বিপুল উৎসাহে ইট তৈরি করছেন।
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কুড়িগ্রাম কার্যালয় সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ১১৩টি, যার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে ২১টির। বাকি ৯২টি ইটভাটার কোনো অনুমোদন নেই। এর মধ্যে নাগেশ্বরী উপজেলায় ২৪টি, উলিপুর উপজেলায় ২০, সদর উপজেলায় ১৬, রৌমারী উপজেলায় ১০, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৫, রাজারহাট উপজেলায় ২, ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ৫, চিলমারী উপজেলায় ৪ ও রাজীবপুর উপজেলায় ৬টি ইটভাটা অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ওই সব ইটভাটার কোনোটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এর মধ্যে ৪৭টি ইটভাটা কখনোই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র সংগ্রহ করেনি।
কক্সবাজারে হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে খামার-বাগান, নীরব বন বিভাগ
১১ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
কক্সবাজারের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির চাইন্দা খোন্দকার পাড়ার পশ্চিমের পাহাড়ে বন্য হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে চলছে মৎস্য, পোলট্রির খামার ও ফল-সবজির বাগানের কাজ। ইতিমধ্যে ৬০-৭০ একরের বনাঞ্চল সাবাড় করা হয়েছে।
এক মাস ধরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে পুকুর খনন, বাঁশের খুঁটি টেনে বিদ্যুৎ-সংযোগ, রাসায়নিক দ্রব্য ও আগুনে গাছপালা ধ্বংস এবং শ্রমিক দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ফলের গাছপালা রোপণ, প্লট আকারে জায়গাজমি বেচাবিক্রি হলেও নীরব বন বিভাগ। তাতে হাতির বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে। পাখির আবাসস্থল নিশ্চিহ্ন হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে বনের জীববৈচিত্র্যও।
হাতির অবাধ বিচরণের অভয়ারণ্যে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ-সংযোগ টেনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাণিজ্যিক খামার গড়ে তোলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল।
গ্রীষ্মের আগেই সুপেয় পানির সংকটে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষ
১১ মার্চ ২০২৩, বিবিসি বাংলা
তীব্র গরম পড়ার আগেই বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও এর আশেপাশের উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রীষ্মের তাপদাহ বাড়ার সাথে সাথে এই সংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
গত বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবারে শীতের পর থেকেই খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও এর আশেপাশের অঞ্চলের গভীর নলকূপ থেকে আর পানি উঠছে না। সুপেয় পানির অন্য উৎসগুলোয় লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়েছে।
আবার লবণ পানি পরিশোধন করতে যে ফিল্টারগুলো বসানো হয়েছিল সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় দুষ্কর হয়ে পড়েছে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ।
খাবার পানি সংগ্রহে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
যমুনা নদী ছোট করার চিন্তা
১২ মার্চ ২০২৩, কালবেলা
যমুনা নদী প্রতি বছর বড় হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার সময় নদীটি ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হয়ে যায়। এত বড় নদীর প্রয়োজন নেই। তাই এটির প্রশস্ততা সাড়ে ৬ কিলোমিটার সংকুচিত করা হবে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং প্রাকৃতিক পানি প্রবাহের অন্যতম উৎস যমুনাকে ছোট করার এমন আইডিয়া এসেছে খোদ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের মাথা থেকে। এজন্য তারা ১১শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও প্রণয়ন করেছেন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যখন বারবার ব্যয় সংকোচনের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে, সে সময় মন্ত্রণালয়টি এমন প্রকল্প নিয়েছে কোনো ধরনের গবেষণা ছাড়াই। বিশেষজ্ঞরা বিরল এ প্রকল্পকে অবাস্তব বলছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী ছোট করতে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাংলাদেশ তো বটেই—পৃথিবীর কোনো দেশেই আগে প্রয়োগের নজির নেই। এ কারণে প্রকল্পটি নিয়ে খোদ সরকারের ভেতরেই প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের একটি পক্ষ বলছে, কোনো ধরনের জরিপ ছাড়া ঋণের টাকায় এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রকল্পের বিরোধিতা করে নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রকল্প নেওয়া ঠিক হবে না, এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। বাড়তে পারে বন্যা প্লাবনের ঝুঁকি। পাশাপাশি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে দেশের অন্যতম স্থাপনা পদ্মা সেতু এবং যমুনা সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সেন্ট মার্টিনকে মেরে ফেলা হচ্ছে
১৬ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জাহাজ থামানোর ঘাট বা জেটি তৈরি হয়েছে দ্বীপটির পূর্ব পাশে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জেটি থেকে কিছু দূরের পশ্চিম সৈকতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে তিনতলার তিনটি ভবন নিয়ে গড়ে উঠেছে আটলান্টিক রিসোর্ট নামের একটি স্থাপনা। দুটি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে গত নভেম্বরে। একটি ভবনের নির্মাণকাজ এখনো চলছে।
আটলান্টিক রিসোর্টের আঙিনায় দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, সেখানে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা আছে যে দেশের ১৩টি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) একটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। মানে হলো, এ দ্বীপের পানি, মাটি, বায়ু বা প্রাণীর ক্ষতি করে, এমন কোনো কাজ সেখানে করা যাবে না। এ কারণে সেখানে কোনো স্থাপনা নির্মাণে ছাড়পত্র দেয় না পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু আটলান্টিক রিসোর্টটি ছাড়পত্র ছাড়া সবার সামনেই নির্মিত হয়েছে।
এটা কীভাবে সম্ভব হলো, জানতে চাইলে আটলান্টিক রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোলেমান প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ৪০টির বেশি বহুতল ভবনের (দুই ও তিনতলা) হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে। সেগুলো যেভাবে নির্মিত হয়েছে, আটলান্টিক রিসোর্টও সেভাবেই হয়েছে।
সোলেমান যে দাবি করেছেন, তা ভুল নয়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অনেকগুলো বহুতল ভবন রয়েছে। বহুতল ও একতলা মিলিয়ে সেখানে হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা ২৩০টির বেশি। এর মধ্যে গত দুই বছরে তৈরি হয়েছে অন্তত ১৩০টি। এখন নির্মাণকাজ চলছে ৩০টির বেশি রিসোর্ট ও কটেজের। পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, একটি পর্যটন স্থাপনা নির্মাণেও তাদের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ঠেকানোর কাজটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে দ্বীপটিকে রক্ষার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। কক্সবাজারে জেলা প্রশাসন ও টেকনাফে উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় রয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপেই পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি কার্যালয় আছে, পুলিশ ফাঁড়ি আছে। কিন্তু সবার চোখের সামনে দ্বীপটিতে নির্মাণসামগ্রী নেওয়া হয়, নির্মাণকাজ চলে, হোটেল ও রিসোর্ট উদ্বোধন হয়, পর্যটকেরা যান, দারুণ ব্যবসা হয়—কিন্তু কেউ বাধা দেয় না।
আইন প্রয়োগকারীদের ভবনেরই ছাড়পত্র নেই
১৭ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
সেন্ট মার্টিনে অবৈধভাবে শুধু বেসরকারি হোটেল-রিসোর্টই নির্মাণ করা হয়নি, সেখানে স্থাপনা করেছে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীও। সরকারিভাবে নির্মিত এসব স্থাপনার কোনো কোনোটিতে সরকারি কর্মকর্তারা বেড়াতে গিয়ে থাকেন। আবার কোনো ক্ষেত্রে তা সাধারণ মানুষের কাছে ভাড়াও দেওয়া হয়।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ একটি প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে ইসিএ হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালার ১৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রচলিত বিধিমালা, প্রবিধান মালা, পরিপত্র বা আইনগত দলিলে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাভুক্ত কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মতি নিতে হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, স্থাপনা নির্মাণ মানে হলো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন। এ কারণে সেন্ট মার্টিনে নির্মিত হোটেল-রিসোর্ট অবৈধ। একইভাবে সরকারি সংস্থার নির্মাণ করা স্থাপনাও নিয়মবহির্ভূত। দ্বীপটিতে বহুতল ও একতলা মিলিয়ে সেখানে হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা ২৩০টির বেশি। এর মধ্যে গত দুই বছরে তৈরি হয়েছে অন্তত ১৩০টি। এখন নির্মাণকাজ চলছে ৩০টির বেশি রিসোর্ট ও কটেজের। পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, একটি পর্যটন স্থাপনা নির্মাণেও তাদের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। তেমনি সরকারি সংস্থাও ছাড়পত্র নেয়নি বলে জানা গেছে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জেলা প্রশাসনের স্থাপনার নাম ‘দ্বীপ ব্যবস্থাপনা ও তথ্য কেন্দ্র, সেন্ট মার্টিন’। তবে সেটি আসলে বাংলো। বাংলোর ভেতরে ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে কাঠ দিয়ে। ছাউনি খড়ের। তবে প্রতিটি ঘরের সঙ্গে যুক্ত শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করে। কক্ষ আছে ১০টি।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দ্বীপের পূর্ব পাশের সৈকতে রিসোর্টের মতো সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বাংলোটি চালু হয় গত ডিসেম্বরে। সেখানে আগে জেলা পরিষদের একটি যাত্রীছাউনি ছিল। সেটি ভেঙে তৈরি করা হয় বাংলোটি। এটি নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড ও টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে।
পুলিশ ফাঁড়ি ভবনে রাতযাপন নিরাপদ মনে করে অনেকে আগ্রহ দেখান। কিন্তু যাকে–তাকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয় না।
মোহাম্মদ শামীম, পুলিশ অফিসার্স মেসের কক্ষ ব্যবস্থাপনা
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও জানান, সরকারের কর্মকর্তারা বেড়াতে গেলে এই বাংলোতে থাকেন। প্রতি রাত থাকার জন্য কক্ষের ভাড়া লাগে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা, যা অন্য রিসোর্টে তিন থেকে চার গুণ বেশি।
নির্জন দ্বীপে আলোকসজ্জা ডেকে আনছে অন্ধকার
১৭ মার্চ ২০২৩, প্রথম আলো
অন্ধকার রাতে জমকালো আলোকসজ্জা দেখে মনে হতে পারে কোনো বিয়ে বাড়ি। আদতে এটি একটি হোটেল। পর্যটক টানতে তিনতলা ভবনটিতে এত আলোকসজ্জা করা হয়েছে। আটলান্টিক রিসোর্ট নামের হোটেলটির অবস্থান বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের পশ্চিম সৈকতে।
দ্বীপের চারদিকের সৈকতে গড়ে তোলা অবৈধ রিসোর্ট-কটেজগুলোতে এভাবে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত জ্বালানো হয় রঙিন বাতি। নির্জন সৈকত আলোকিত থাকায় মানুষের হইচই-নাচগান লেগে থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত সৈকতে থাকে সামুদ্রিক ভাজা মাছ বিক্রি, বারবিকিউসহ নানা খাবারের পসরা। সৈকত আলোকিত থাকায় বালুচরে চলে পর্যটকবাহী ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও সাইকেল। এতে ধ্বংস হয় লাল কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্য। ময়লা–আবর্জনায় সয়লাব হয় সৈকত। প্লাস্টিক ও পলিথিন ছড়ায় সমুদ্রের পানিতে, জমা হয় পানির নিচের প্রবালের আস্তরে। লোকজনের হইচই-দৌড়ঝাঁপ থাকায় বালুচরে ডিম পাড়তে পারে না সামুদ্রিক মা কচ্ছপ।
দ্বীপের পরিবেশকর্মী আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর থেকে মা কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসে সৈকতে। ৯ মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কোনো কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করা যায়নি। আলোকিত সৈকতে লোকজনের হইচই লেগে থাকায় সম্ভবত মা কচ্ছপ ডিম পাড়তে অস্বস্তি বোধ করে ফিরে যেতে পারে।
হুমকিতে ইলিশের অভয়ারণ্য
১৮ মার্চ ২৩, সমকাল
বরগুনায় ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য খোলা জাহাজে কয়লা পরিবহন করা হচ্ছে। এতে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদী দূষণের শিকার। পরিবেশবাদীদের দাবি, দূষণের কারণে দেশের ইলিশের অন্যতম অভয়াশ্রম হুমকিতে পড়েছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী টেংরাগিরি সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বনের জীববৈচিত্র্যও নষ্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, বরগুনার তালতলীতে চায়না রিসোর্স নির্মিত ৩০৭ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত ১ জানুয়ারি চালু হয়। এ প্রকল্পের ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক থাকলেও দেশীয় প্রতিষ্ঠান আইসোটেকের এখন কোনো হদিস মিলছে না। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্য এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়না থেকে ৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার মার্কিন ডলার, ব্যাংক অব চায়না লিমিটেড (সিঙ্গাপুর শাখা) থেকে ৫ কোটি ১৭ হাজার ৫০০ ডলার ও ব্যাংক অব চায়না লিমিটেড (বেইজিং শাখা) থেকে ৩ কোটি ১০ হাজার ৫০০ ইউএসডি ঋণ নেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চুক্তির সময় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরা হয় ৬ দশমিক ৭৭ টাকা। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বেশি হওয়ায় বিদ্যুতের দামও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত জানুয়ারিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ প্রায় ১ হাজার ২৪ কোটি টাকার কর মওকুফ করে সরকার।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য খোলা বার্জে কয়লা আনা হচ্ছে । গত ১১ মার্চ এ ধরনের ৮টি বার্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে নোঙর করে। পরিবেশবাদীদের দাবি, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সংরক্ষিত ও দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন টেংরাগিরি থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে। বরগুনার পাথরঘাটার সংরক্ষিত লালদিয়া বন থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম। এ জন্য কয়লাচালিত কেন্দ্রটি এই দুই বনের অপূরণীয় ক্ষতি করবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল সমকালকে বলেন, ‘জাহাজ থেকে কয়লা পড়ে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। কারণ এসব কয়লায় সালফারসহ ক্ষতিকারক পদার্থ রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে পথে তালতলীর কেন্দ্রে কয়লা আনা হচ্ছে, তা তিন নদীর মোহনা এবং দেশের ইলিশের অন্যতম অভয়াশ্রম। পাশেই টেংরাগিরি বন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে এমনিতেই এলাকার জীববৈচিত্র্য ঝুঁকিতে। এখন কয়লায়ও খোলা বার্জে আনা হলে দূষণ কয়েক গুণ বাড়বে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য কয়লা ঢেকে রাখা জাহাজে পরিবহন করার কথা। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা ঢেকে আনা হয়। বরগুনার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সময় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের বাংলাদেশি অংশীদার আইসোটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল আলম সমকালকে বলেন, ‘কয়লা জাহাজে ঢেকে আনা হবে– এ ধরনের কথা হয়েছে। সেটি হলে তো দূষণের শঙ্কা নেই।’
কিন্তু এখন বাস্তবে উল্টো ঘটছে। জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন সমকালকে জানান, কয়লা তো ঢেকে পরিবহন করার কথা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।
জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি : তালতলী উপজেলার ৪১ নম্বর ছোট নিশানবাড়িয়া মৌজার খোট্টারচর এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয় ৩১০ একর। এ জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি হয়েছে বলে ২০২২ সালের ১১ মে প্রতিবেদন দেয় টিআইবি। সংস্থাটি জানায়, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৮১ একর ভূমির প্রয়োজন হলেও, অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩১০ একর। এতে ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করে টিআইবি।
সংরক্ষিত বনও অরক্ষিত
২১ মার্চ ২৩, সমকাল
দিনে দিনে কমে আসছে বনভূমি। মানুষের আগ্রাসন ও নানা উন্নয়ন প্রকল্পে হারিয়ে যাচ্ছে গভীর বন। এ অবস্থায় ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট ভূখণ্ডের ১৭ শতাংশকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল করার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে জাতিসংঘের একটি সনদে স্বাক্ষর করে ওই ঘোষণা দেওয়া হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশই তাতে সম্মত হয়। কিন্তু এখনও সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো যেটুকু সংরক্ষিত বন আছে, তাও উজাড় হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। দখলদারদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে সংরক্ষিত এসব বনে। আর নানা প্রকল্পেও নেওয়া হয়েছে সংরক্ষিত বন ধ্বংসের আয়োজন। এমন প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বন দিবস। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন, যদি থাকে সমৃদ্ধ বন’।
বন দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন ভবনে আলাচনা সভা ও সামাজিক বনায়নে উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের চেক বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সংরক্ষিত বনে ৮৮ হাজার ২১৫ দখলদার : জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, বিশ্বব্যাপী ২০০০-২০১৫ সময়ে প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ বন উজাড় হয়েছে। বাংলাদেশে তা ২ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশে বছরে ২ হাজার ৬০০ হেক্টর বন উজাড় হয়। বন বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। সারাদেশে বনের জমি জবরদখল করে রেখেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৬৬ জন। তাঁদের দখলে আছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বনভূমি। দখলের থাবা থেকে রক্ষা পায়নি সংরক্ষিত বনভূমিও। মোট দখলদারদের মধ্যে ৮৮ হাজার ২১৫ জন সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে রেখেছেন। তাঁদের জবরদখলে আছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ দশমিক শূন্য ৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি।
গ্যাস অনুসন্ধানের ড্রিলিং: এবার আগুনে পুড়ল সংরক্ষিত রাজকান্দি বন
১৫ মার্চ ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা
সিলেট বিভাগের যতগুলো বন আছে তার মধ্যে সমৃদ্ধ একটি বন হচ্ছে কমলগঞ্জের রাজকান্দি সংরক্ষিত বন। এই বনটি হামহাম জলপ্রপাতের জন্য পর্যটকদের কাছেও পরিচিত। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এই বনকে অনেক গবেষক বন্যপ্রাণীদের ‘হটস্পট’ বলে অভিহিত করেন।
সম্প্রতি এই বনাঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানে ড্রিলিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে ড্রিলিংকৃত বনের তিনটি টিলা আগুনে পুড়ে ছারখার হয়েছে। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ভূগভর্স্থ বিস্ফোরণের ঘটনাও হয়েছে যা আগামী সপ্তাহে আরও বড় আকারে হবে।
সংরক্ষিত এই রাজকান্দি বনে ড্রিলিং ও ভূগভর্স্থ বিস্ফোরণ এবং বনের টিলাভূমি আগুনে পুড়ে যাওয়ায় তা জীববৈচিত্র্য ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর জন্য হুমকির কারণ বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য ও সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গত তিন সপ্তাহ ধরে রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানে ড্রিলিং কার্যক্রম শুরু করেছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিএনপিসি)। সংরক্ষিত বনে গ্যাস অনুসন্ধানে সিলেট বনবিভাগের অনাগ্রহ থাকলেও মন্ত্রণালয়ের শর্ত মোতাবেক অনুমতি সাপেক্ষে তারা ড্রিলিং শুরু করেছে।
এরইমধ্যে গত বুধবার রাজকান্দি বনের সাঙ্গাইসাফি, কাঁঠালকান্দি ও বাঘাছড়া এলাকার তিনটি টিলা আগুনে পুড়ে যায়। একটি ড্রিলিং স্পটে মাটির রেকর্ডিং জিওফোন (ক্যাবল) পুড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য এ বনের ভেতরে ড্রিলিং-ভূগর্ভে বিস্ফোরণে জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণির অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের শর্তসাপেক্ষে অনুমতি নিয়ে ৩ ডি সাইসমিক জরিপ কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মন্ত্রণালয়ের শতার্দির মধ্যে রয়েছে তুলনামূলক গাছপালাবিহীন ফাঁকা স্থানে ড্রিলিং করা, বনের ভেতরে যানবাহন প্রবেশ না করা ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর কোন কার্যক্রম না করা, গাছপালা কাটা ও বনজ সম্পদের ক্ষতি না করা। কিন্তু তার কোনো শর্তই মানা হচ্ছে না।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার ৫০০ বর্গ কি.মি. এলাকা নিয়ে সার্ভে, ড্রিলিং ও রেকর্ডিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করে বিজিপি, চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের নির্দেশনায় এ্যাকরেজ ব্লক-১৩ ও ১৪ এর অবমুক্ত এলাকায় ৩-ডি সাইসমিক জরিপ প্রকল্প গত জানুয়ারি পর্যন্ত বস্তি, চা বাগান ও হাকালুকি হাওর এলাকায় কার্যক্রম সম্পন্ন করে। সে সময় বস্তির বেশ কিছু বসতঘরের দেয়ালে ফাটল ধরার অভিযোগ উঠে। সবশেষে রাজকান্দি বনাঞ্চলে শর্তসাপেক্ষে জরিপ কাজের অনুমতি পায় ওই প্রতিষ্ঠান। তবে গ্যাস অনুসন্ধানে সংরক্ষিত বনে জরিপ কাজ জীববৈচিত্র্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ বলেও সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। বনটিতে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
দেশের সবচেয়ে দূষিত নদী লবণদহ, হাঁড়িধোয়া ও সুতাং
মার্চ ২৫, ২০২৩, বণিক বার্তা
এককালে বাংলাদেশের বড় পরিচয় ছিল নদীমাতৃক দেশ। সে পরিচয় ছাপিয়ে এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে ‘দূষিত নদীর দেশ’। বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর প্রায় সবগুলোয়ই শিল্পবর্জ্য ও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। দেশের ৫৬টি প্রধান নদ-নদীর ওপর সম্প্রতি করা এক গবেষণার তথ্য বলছে, এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত নদী গাজীপুরের লবণদহ, নরসিংদীর হাঁড়িধোয়া ও হবিগঞ্জের সুতাং। এ গবেষণায় ৫৬টি নদ-নদীতেই সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি দূষণের অস্তিত্ব মিলেছে, তবে তুলনামূলক বেশি দূষিত নদী ওই তিনটি।
পরিবেশবিদরা বলছেন, শিল্পবর্জ্যের দূষণের সঙ্গে প্লাস্টিক দূষণ নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি পৌরবর্জ্য নদী দূষণে নতুন মাত্রা যোগ করছে। এমন দূষণের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর অবস্থানে না গেলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ খাবার পানির ঝুঁকিতেও পড়বে বাংলাদেশ।
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) উদ্যোগে দেশের ৫৬টি প্রধান নদ-নদীর দূষণ নিয়ে এক বছরব্যাপী গবেষণাকর্ম শেষ হয়েছে সম্প্রতি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলমান এ গবেষণাকর্মের তথ্য প্রকাশিত হয় গত ১৪ মার্চ। গবেষণায় ৫৬টি নদীর পানির গুণাগুণ পরিমাপ করে দেখা গেছে, শুধু শহর বা উপশহরে নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নদীতেও প্লাস্টিক ও শিল্পবর্জ্যের দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে। নদী বহমান, তাই দূষণ স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে এক নদী থেকে অন্য নদীতে ছড়ায়।
গবেষণার তথ্যমতে, সবচেয়ে দূষিত তিন নদীর পানির গুণাগুণ প্রায় সমান। লবণদহ, হাঁড়িধোয়া ও সুতাংয়ে পানির ক্ষারতার পরিমাণ যথাক্রমে ৫, ৪ দশমিক ১ ও ৪। পানিবিজ্ঞানীদের মতে, বিশুদ্ধ পানির পিএইচ বা ক্ষারের পরিমাণ ছয় থেকে সাতের মধ্যে থাকতে হয়। এর কম হলে পানিকে আম্লিক এবং বেশি হলে ক্ষারীয় বলা হয়। পিএইচের মানমাত্রা বেশি ও কম দুটোই মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর।
তিন নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মানমাত্রা ভয়াবহ রকম কম। লবণদহে অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ২১, হাঁড়িধোয়ায় শূন্য দশমিক ৬ ও সুতাংয়ে শূন্য দশমিক ৪। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পানিবিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ অবশ্যই ৪ দশমিক ৫ থেকে ৮ মাত্রায় থাকতে হবে। নয়ত জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
দূষণের ৯৬টি উৎস চিহ্নিত
০১ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
শিল্পকারখানার তরল বিষাক্ত বর্জ্যে দিন দিন বিষিয়ে উঠছে গাজীপুরের তুরাগ নদ ও খাল-বিল। পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ তুরাগের। পানি হয়ে উঠেছে কুচকুচে কালো। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে মহানগরীর কড্ডা পর্যন্ত তুরাগ নদের ৪০ কিলোমিটার দূষণের জন্য ৯৬টি স্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থান দিয়ে কলকারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্য তুরাগ নদে গিয়ে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের যৌথ উদ্যোগে টঙ্গী নদীবন্দর থেকে কড্ডা এলাকা পর্যন্ত তুরাগ নদ পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়। টঙ্গীর আরিচপুর থেকে শুরু করে মাছিমপুর, টঙ্গী বাজার, কামারপাড়া, রুস্তমপুর, ইছরকান্দি, কাশিমপুর হয়ে কড্ডা বাজারে গিয়ে এ পরিদর্শন শেষ হয়।
পরিদর্শনের বিষয়ে প্রতিনিধিদলের প্রধান বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন জানান, তাঁরা মোট ৯৬টি দূষণ উৎস চিহ্নিত করতে পেরেছেন। উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্পকারখানার ১৭টি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৮, খামারের ১২, হাটবাজারের ৬, সংযুক্ত নদী–খাল ৩, বসতবাড়ি ও অন্যান্য ৫০টি।
পুড়িয়ে দেওয়া হলো বিশাল প্যারাবন, থেমে নেই কিংশুকের রিসোর্ট নির্মাণকাজ
০২ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো
কক্সবাজারের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতে প্যারাবন উজাড় ও দখল করে কিংশুক ফার্মস লিমিটেডের রিসোর্ট তৈরির কাজ থেমে নেই। এখন চলছে আগুন দিয়ে প্যারাবন উজাড়। এতে পাখির আবাসস্থল নষ্টের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।
গত এক মাসে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্যারাবন নিধনের একাধিবার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও আজ শনিবার পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দখলদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠনের নেতারা বলছেন, প্যারাবন দখল করে রিসোর্ট ও মাছের খামার তৈরির সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। এর পেছনে খরচ হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ কারণে অনেকে চুপ করে আছেন।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজারের প্যাঁচারদ্বীপের ভরাখালে ১৫ থেকে ২০ একরের মতো প্যারাবন আছে। প্রায় ২০ বছর আগে উপকূলীয় বন বিভাগ এই প্যারাবন সৃজন করেছিল। প্যারাবন ৪০ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ছিল। কিন্তু এক মাস ধরে কিংশুক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্যারাবনের অন্তত ২০ হাজার গাছপালা উজাড় করে রিসোর্ট ও মাছের খামার তৈরি করছেন। প্রতিষ্ঠানটি বনের ভেতরে ৭০০ ফুট লম্বা পাকা দেয়াল তুলে ১০ একরের বেশি প্যারাবন দখলে নিয়েছে। প্যারাবনের ভেতরে গাড়ি চলাচলের মতো রাস্তা ও মৎস্য খামারের বেড়িবাঁধ নির্মাণ অব্যাহত আছে। এখন আগুন দিয়ে ছয় একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করা হয়েছে। অবশিষ্ট প্যারাবনও নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এ পর্যন্ত সরকারি দপ্তরের কেউ সেখানে যাননি।
অবকাঠামোর চাপে পাঁচ বছরে ভরাট বুড়িগঙ্গার ১১ শাখা খাল
এপ্রিল ০২, ২০২৩, বণিক বার্তা
রাজধানীর মানচিত্রে এখনো এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে শ্যামপুর-কদমতলী খাল। ৫০-৬০ ফুট প্রস্থ ও ১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ জলাশয়ের উৎসমুখ শ্যামপুরে আর পতন কদমতলীতে। যদিও সেখানে গিয়ে এ খালের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সর্বশেষ প্রকাশিত (২০১৯) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাস্তা নির্মাণের ফলে সেটি ভরাট হয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী তিতাস, জিয়া সরণিসহ অন্যান্য খালও দখল আর দূষণে বিপর্যস্ত। পরিণত হয়েছে ছোট নালায়।
বুড়িগঙ্গার ওপর পরিচালিত সম্প্রতি এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ আশপাশ এলাকায় বুড়িগঙ্গার ১৯টি শাখা খালের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরেই ভরাট হয়েছে ১১টি খাল। পরিবেশবিদরা বলছেন, খালের সীমানা নির্ধারণ না থাকায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরক