মে দিবস এবং লড়াই-এর ঐক্যসূত্র

মে দিবস এবং লড়াই-এর ঐক্যসূত্র

আনু মুহাম্মদ

কার্ল মার্কসের (১৮১৮-১৮৮৩) মৃত্যুর তিনবছর পর ১৮৮৬ সালে সংগঠিত হয় মে দিবসের দুনিয়া কাঁপানো ঘটনা বা শ্রমিক অভ্যুত্থান। এর আগে মার্কস যখন পুঁজি গ্রন্থ নিয়ে কাজ করছেন তখন পুঁজিবাদের বিকাশের স্বরূপ বিশ্লেষণ করেছেন, একদিকে দেখেছেন এর নির্মমতা অন্যদিকে দেখেছেন শ্রমিকদের ক্রমশ সরব আবির্ভাব। তাঁর পুঁজি (১৮৬৭) গ্রন্থে কারখানা পরিদর্শকদের বহু রিপোর্ট সেসময়কার কারখানা ও শ্রমিকদের অবস্থা বর্ণনায় অন্যতম সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

প্রায় দেড়শ বছর পরে বাংলাদেশের কারখানাগুলোর অবস্থা সেরকমই, কিন্তু সরকারী দপ্তরে কোনো প্রামাণ্য দলিল নেই, কারখানা পরিদর্শক হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় ভূমিকা আমরা প্রত্যাশাই করতে পারি না। সরকার কারখানা পরিদর্শকদের চাইতে শিল্প পুলিশ নিয়োগে বেশি আগ্রহী, কারণ মালিকদের সেটাই দাবি। এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই যে, বেতন/মজুরি বকেয়া রাখা, নির্যাতন, প্রতারণার দায়ে শিল্প পুলিশ মালিকপক্ষের কাউকে কখনো আইনের আওতায় এনেছে; কিন্তু শ্রমিকদের বিরুদ্ধে তাদের একশন নিয়মিত। সেজন্য শিল্প পুলিশ মানে দাঁড়িয়েছে এমন বাহিনী যারা মালিকদের ইচ্ছামাফিক শ্রমিকদের হয়রানি নির্যাতন আটক করবে। প্রকাশ্যেই মালিকপক্ষ পুলিশ র‌্যাবকে গাড়িসহ নানা উপহার দেয়, শ্রমিকরা কী দিতে পারবে?

সরকার কারখানা পরিদর্শকদের চাইতে শিল্প পুলিশ নিয়োগে বেশি আগ্রহী, কারণ মালিকদের সেটাই দাবি। এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই যে, বেতন/মজুরি বকেয়া রাখা, নির্যাতন, প্রতারণার দায়ে শিল্প পুলিশ মালিকপক্ষের কাউকে কখনো আইনের আওতায় এনেছে; কিন্তু শ্রমিকদের বিরুদ্ধে তাদের একশন নিয়মিত।

মজুরি শ্রমিকের জন্ম ও বিকাশের সাথে পুঁজিবাদের জন্ম ও বিকাশের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ। মজুরি শ্রমিকের সংখ্যাবৃদ্ধি ছাড়া পুঁজিবাদের অস্তিত্ব ও বিস্তার সম্ভব হয় না। সেজন্য ইউরোপে শিল্প বিপ্লব কালে একদিকে যেমন পুঁজিপতি একটি শ্রেণী হিসেবে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে অন্যদিকে তেমনি তৈরি হয়েছে শ্রমিক শ্রেণী। একইসময়ে যুক্তরাষ্ট্রেও প্রায় একই চিত্র ছিলো। কাজের সময় কিংবা মজুরির তখন ঠিক ছিলো না। ক্রমেই নারী শিশুসহ শ্রমিকদের অবর্ণনীয় জীবন পরিবর্তনের জন্য অসংখ্য প্রতিবাদ বিক্ষোভ তৈরি হয়, সংগঠন গড়ে ওঠে। উনিশ শতকের ৬০/৭০/৮০ দশকের এসব আন্দোলনের ধারাবাহিকতাতেই ১৮৮৬ সালের মে মাসের ১ তারিখে তিন লক্ষাধিক শ্রমিকের ধর্মঘটের মধ্যে শিকাগো শহরের বড় সমাবেশে হামলা হয়। গুলিতে নিহত হন শ্রমিকেরা, পরে আবার প্রহসনমূলক বিচারে শ্রমিক সংগঠকদেরই ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। এই জীবনদান বৃথা যায়নি। একসময়ে যে দাবিকে বলা হয়েছে উন্নয়নবিরোধী, সন্ত্রাসী- ক্রমে সারাবিশ্ব সেই দাবিই গ্রহণ করেছে, মে দিবস পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক দিবসে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনও সেই ইতিহাস স্মরণ করতে ভয় পায়। তাই সারাবিশ্বে মে দিবস পালিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রে সরকারিভাবে এটা পালিত হয় না। তারা শ্রমদিবস পালন করে ৪ঠা সেপ্টেম্বর!

পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় পুঁজির দ্রুত সংবর্ধনের পাশাপাশি শ্রমের সাথে যুক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অস্তিত্বের লড়াইএ মে দিবসের কথাই আসে বারবার। অব্যাহত প্রান্তিকীকরণ ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তাঁদের বিকশিত হবার তাগিদ দেয় মে দিবস। এই লড়াইএর দুর্বলতা থাকলে তা শ্রমিকশ্রেণীকে কতটা হীন অবস্থায় ফেলতে পারে বাংলাদেশ তার দৃষ্টান্ত। ২০১৩ সালে রানা প্লাজায় যে শ্রমিক গণহত্যা সংগঠিত হল, বিশ্বের বৃহত্তম কারখানায় এরকম ধ্বসের পরও দেশে নিরাপত্তা, মজুরি ও সংগঠনের অধিকারের যে হাল তা এই দুর্বলতারই প্রকাশ। এই দুর্বলতার কারণেই লুটেরা দেশি চোরাই কোটিপতি ও আন্তর্জাতিক মুনাফাখোরদের সীমাহীন লোভ ও তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের ফলাফল হিসেবে বারবার কারখানা পরিণত হয় গণকবরে। রূপগঞ্জে, সীতাকুন্ডে পুড়ে নিহত হলেন শতাধিক শ্রমজীবী মানুষ, পুরনো ঢাকাসহ নানা স্থানে বিস্ফোরণ, ধ্বস, আগুনের প্রধান শিকার তারাই। নির্মাণ শ্রমিক নিহত হচ্ছেন নিয়মিত। এগুলোর কোনো প্রতিকার নাই, আর ঘটবে না এরকম অবস্থা সৃষ্টির কোনো চেষ্টাও নাই। সম্প্রতি বঙ্গবাজার নিউমার্কেট সহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকান্ডে সর্বস্ব হারা হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষই। সেখানে কতিপয় গোষ্ঠীর উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এইসব আগুনের ঘটনা এটা ভাবার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।

এই লড়াইএর দুর্বলতা থাকলে তা শ্রমিকশ্রেণীকে কতটা হীন অবস্থায় ফেলতে পারে বাংলাদেশ তার দৃষ্টান্ত। ২০১৩ সালে রানা প্লাজায় যে শ্রমিক গণহত্যা সংগঠিত হল, বিশ্বের বৃহত্তম কারখানায় এরকম ধ্বসের পরও দেশে নিরাপত্তা, মজুরি ও সংগঠনের অধিকারের যে হাল তা এই দুর্বলতারই প্রকাশ।

বাংলাদেশে গত কয় দশকে সমাজ ও অর্থনীতির মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে তার একটি বড় বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণীর গঠনের পরিবর্তন। বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে ৮০ দশক থেকে অনেকগুলো রাষ্ট্র্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। ২০০২ সালে বন্ধ হয়েছে আদমজী পাটকল, গত কয় বছরে বাকি সব পাটকল, চিনিকল। ৮০ দশক পর্যন্ত এই রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের শ্রমিকরাই ছিল দেশের শিল্প শ্রমিকদের প্রধান সংগঠিত অংশ। সরকার নির্বিশেষে রাষ্ট্র্রায়ত্ত শিল্প কারখানা বন্ধ করার প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র রাষ্ট্র্রায়ত্ত সম্পদ ব্যক্তিদখলে নেওয়ার প্রক্রিয়াই নয়, এটি একইসঙ্গে শিল্প শ্রমিকদের সংগঠিত শক্তিকে ভেঙ্গে দেওয়ার দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের অংশ। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে শিল্পখাতের মধ্যে রাষ্ট্র্রায়ত্ত শিল্পখাতের অবস্থ’ান খুবই প্রান্তিক। একই কারণে ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিকদের সংখ্যাও তুলনায় অনেক কম। রফতানীমুখী খাত হিসেবে গার্মেন্টস শিল্পখাতের মধ্যে এখন প্রাধান্যে। শিল্পখাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক এই খাতেই নিয়োজিত। এই খাত অনেক বেশি আলোচিত হলেও এখানেও ইউনিয়নের সংখ্যা হাতে গোণা, অন্যান্য সংগঠনের অবস্থাও খুবই দুর্বল।

অন্যদিকে গত কয়েক দশকে একই অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে উদ্ভুত হয়েছে কয়েক হাজার দখলদার চোরাই কোটিপতি। তাদের রক্ষা করতে দাঁড়িয়েছে মাফিয়া রাষ্ট্র। উৎপাদনশীল প্রক্রিয়া অব্যাহত এবং বিকশিত করার চাইতে অতিশোষণ, দখল, লুণ্ঠন ও পাচারের মধ্য দিয়ে দ্রুত সম্পদ কেন্দ্রীভবন এবং তা নিশ্চিত করতে সর্বজনের গণতান্ত্রিক অধিকার চুরমার করাই তাদের প্রধান কাজ। বাংলাদেশের রাজনীতি অর্থনীতি প্রধানত তাদের নিয়ন্ত্রণে। সেই কারণে জনগণের বৃহত্তম অংশ শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ তাদের ন্যুনতম গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত- বেশিরভাগ শিল্প কারখানায় কর্মক্ষেত্রে ন্যুনতম বাঁচার মতো মজুরি, ৮ ঘন্টা শ্রম দিবস, নিয়োগপত্র. সাপ্তাহিক ছুটি, কাজ ও কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা সবগুলো বা অধিকাংশই অনুপস্থিত। ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা এখনও অব্যাহত নিপীড়ন ও প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াইএর বিষয়। ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিয়ে কাজ করবার জন্য ধরপাকড় হামলা নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে প্রায়শই। যতগুলো আছে তার মধ্যে পোষা ইউনিয়নেরই আধিক্য।

জনগণের বৃহত্তম অংশ শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ তাদের ন্যুনতম গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত- বেশিরভাগ শিল্প কারখানায় কর্মক্ষেত্রে ন্যুনতম বাঁচার মতো মজুরি, ৮ ঘন্টা শ্রম দিবস, নিয়োগপত্র. সাপ্তাহিক ছুটি, কাজ ও কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা সবগুলো বা অধিকাংশই অনুপস্থিত।

গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশের মধ্য দিয়ে শ্রমিকশ্রেণীর গঠনে লিঙ্গীয় পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হয়েছে। এইখাতে অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। এর বাইরেও বিভিন্ন পেশাতেই নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারী ক্ষমতায়নের বহু গল্প শুনি আমরা, কিন্তু প্রতিদিনের খবরের কাগজে এই শ্রমজীবী নারীর নিরাপত্তাহীনতার, খুন, ধর্ষণ, হয়রানির খবর আসে। অব্যাহত বঞ্চনা ও নিপীড়ন মোকাবিলা করতে গিয়ে নারী শ্রমিক এক নতুন প্রতিবাদী সামাজিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

পুঁজির বর্তমান চাহিদা ও বিন্যাসের কারণে বর্তমানে প্রায় সকল খাতেই অস্থায়ী, দিনভিত্তিক, খন্ডকালীন, চুক্তিভত্তিক, ইনফর্মাল বা অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই এখন ক্রমবর্ধমান। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকের সংখ্যা সর্বোচ্চ যারা একেবারেই অসংগঠিত এবং চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে টিকে থাকার চেষ্টাই তাদের জীবন। অনলাইন শ্রমিকের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে যাদের অনিশ্চয়তা আরও বেশি। মে দিবসের মূল যে দাবী ৮ ঘন্টা কাজ করে বাঁচার মতো মজুরী তা থেকে বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের শ্রমিক মেহনতি মানুষসহ শিক্ষিত মজুরেরাও অনেক দুরে।

পুঁজির বর্তমান চাহিদা ও বিন্যাসের কারণে বর্তমানে প্রায় সকল খাতেই অস্থায়ী, দিনভিত্তিক, খন্ডকালীন, চুক্তিভত্তিক, ইনফর্মাল বা অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই এখন ক্রমবর্ধমান।

সংগঠিত হবার সুযোগ শিক্ষিত শ্রমজীবী মানুষদের জন্যও খুবই ক্ষীণ। সেকারণে ব্যাংক, বীমা, মিডিয়া, এনজিও, বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়, ক্লিনিক, অনলাইন খাত কোথাও কাজের ও আয়ের নিরাপত্তা দেখা যায় না। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষদের যেকোনো সময় ছাঁটাই করা, তাদের ওপর অন্যায় অবিচারের প্রতিকারের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেই। সরকার সর্বত্রই নীরব দর্শক। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থ দেখায় আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি ব্যবস্থায় বাংলাদেশের মতো এতোটা নিষ্ক্রিয় ব্যবস্থা কমই দেখা যায়।

দারিদ্র্য আর বঞ্চনার মধ্যে আছে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, তাদের জীবনে কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি ছাড়াই বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপন্ন (জিডিপি) আর গড় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। পরিসংখ্যানের চাতুর্য আর গড় হিসাবের প্রতারণায় ঢাকা থাকছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনের নির্মমতা। কৃষিতে কৃষকেরা, গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকেরা আর প্রবাসী শ্রমিকের রক্ত আর ঘাম দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রবৃদ্ধির উঁচু হার। অন্যদিকে বাণিজ্যিকীকরণের ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে গেছে। পরিবহণ ব্যয় বাসাভাড়া বেড়েছে। করোনা ও পরবর্তী বছরে কাজ ও আয়ের বিপর্যয়ে পড়েছে বেশিরভাগ মানুষ। বিশ^রেকর্ড করা সব প্রকল্পব্যয়ের অর্থ যোগাতে সরকারের সর্বব্যাপী সম্পদ সন্ধানে কর ফি গ্যাস বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, জিনিষপত্রের অনিয়ন্ত্রিত দামবৃদ্ধিতে প্রকৃত আয় কমে গেছে বেশিরভাগ মানুষের। দেশের মানুষের জীবিকা-সংস্থানকে উচ্ছেদ করে, নদী ব্যবস্থা আর বাংলাদেশের প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশকে ধ্বংস করে পুঁজিবাদ বিকাশ প্রক্রিয়ায় মোট দেশজ উৎপন্ন (জিডিপি)- বেড়েছে কিন্তু স্থায়ী স্থিতিশীল পরিবেশসম্মত সম্মানজনত কাজের সুযোগ বাড়েনি।

প্রকৃতপক্ষে শ্রমশক্তি ও মেধাশক্তি পুঁজির কাছে বিক্রি করে উদ্বৃত্ত মূল্য সম্প্রসারণে ভুমিকা রাখছেন এরকম নারী পুরুষের সংখ্যাই সমাজে ৯৯ শতাংশ। ‘আমরা ৯৯%’ শ্লোগান দিয়ে বিশ্বজুড়ে এই পরিচয়ই নতুনভাবে নির্মিত হচ্ছে।

বিশ্বের সব অঞ্চলেই পুঁজির ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার কাছে শ্রমশক্তি বিক্রির মানুষ অর্থাৎ মজুরেরও বিস্তার ঘটে সমাজের বিভিন্ন স্তরে বহুদূর। সেজন্য শুধু শিল্পখাতের মধ্যেই শ্রমিক পরিচয় সীমাবদ্ধ রাখলে পুঁজির আধিপত্য ও ক্রিয়ার প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। প্রযুক্তি বিকাশের মধ্য দিয়ে শ্রমশক্তি বিক্রেতাদের মধ্যে বহুধরন তৈরি হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে মধ্যবিত্ত কিন্তু সর্বক্ষণ অনিশ্চিত কাজে নিয়োজিত ডিগ্রীপ্রাপ্ত এখন অনেকেই। প্রকৃতপক্ষে শ্রমশক্তি ও মেধাশক্তি পুঁজির কাছে বিক্রি করে উদ্বৃত্ত মূল্য সম্প্রসারণে ভুমিকা রাখছেন এরকম নারী পুরুষের সংখ্যাই সমাজে ৯৯ শতাংশ। ‘আমরা ৯৯%’ শ্লোগান দিয়ে বিশ্বজুড়ে এই পরিচয়ই নতুনভাবে নির্মিত হচ্ছে। তাই মে দিবসের লড়াই শুধু কারখানা শ্রমিকের নয়, শিক্ষিতসহ অনলাইন অফলাইনের মজুরদেরও লড়াই যারা নিজেদের ‘মধ্যবিত্ত’ ভাবতে ভালোবাসেন।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •