সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৬ অক্টোবর ২০২২- ২৬ জানুয়ারি ২০২৩)

সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৬ অক্টোবর ২০২২- ২৬ জানুয়ারি ২০২৩)

অর্থনীতি

নিম্ন আয়ের মানুষ মধ্যবিত্তের তুলনায় দ্বিগুণ বাড়ি ভাড়া দেন

২৬ অক্টোবর, ২০২২, বণিক বার্তা

নিম্ন আয়ের মানুষ তুলনামূলকভাবে মধ্য আয়ের তুলনায় দ্বিগুণ বাড়ি ভাড়া দেন। নিম্ন আয়ের ক্ষেত্রে ১০০ বর্গফুট বাসার ভাড়া পড়ে চার হাজার টাকা। অন্যদিকে মধ্য আয়ের নাগরিকরা ১৫০০ বর্গফুট বাসার ভাড়া দেন ৩০ হাজার টাকা। 

‘নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসন ও নাগরিক সুবিধাসমূহ : প্রেক্ষিত ঢাকা’ শীর্ষক নগর কথা অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

আজ বুধবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, ইউএন-হ্যাবিট্যাট এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প-ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আবাসনের এ বৈষম্য কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন বক্তারা।

মাথাপিছু ত্রাণ ৪৭৫ গ্রাম চাল!

২৭ অক্টোবর ২২, সমকাল

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং হানা দেওয়ার আগেই ক্ষতিগ্রস্তদের কথা ভেবেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানের নির্দেশে আগেভাগেই মানবিক সহায়তা চলে যায় উপকূলের জেলায় জেলায়। ১৯ জেলায় ৪৭৫ টন চাল, ৯৫ লাখ টাকা, ১৯ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট, ৬ হাজার ৪১১ কার্টন ড্রাইকেক (প্রতি কার্টন ১.৫৬ কেজি), ৭ হাজার ৫৭৬ কার্টন বিস্কুট (প্রতি কার্টন ১.৩২ কেজি) বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ার পর ওই ত্রাণই এখন দুর্গতদের একমাত্র ভরসা। সরকারি হিসাবে, বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন ১০ লাখ মানুষ, যাঁদের বেশিরভাগেরই ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। তবে সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত ধরা হলে সেই সংখ্যাও ১০ লাখ। সে হিসাবে মাথাপ্রতি বরাদ্দ পড়ে ৪৭৫ গ্রাম চাল আর নগদ সাড়ে ৯ টাকা। এই সামান্য ত্রাণঢুকুও ক্ষতিগ্রস্ত সবাই পাচ্ছেন না। সরকারি ত্রাণের পরিমাণ ও বিতরণ নিয়েও দুর্গত মানুষের মনে রয়েছে ক্ষোভ।

বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়, বাড়ছে ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা

অক্টোবর ২৯, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

রাত প্রায় একটা। রাজধানীর ফার্মগেটের কাছে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভেতর থেকে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন ৩০ বছর বয়সী এক নারী। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। কে, কেন চিৎকার করছে, তা জানতে আশেপাশের থাকা লোকজনের মধ্যে এক ধরনের অনীহা দেখা গেল। যেন নিজে সমস্যায় পড়তে পারে ভেবেই তাদের এ অনীহা!

চিৎকার আরও জোরালো হয়ে উঠলে আশপাশের লোকজন খানিকটা কৌতূহলী হয়ে ওঠে এবং কী ঘটছে তা দেখার জন্য অটোরিকশার কাছে যায়। এর পরপরই ওই নারীর সঙ্গে অটোরিকশায় থাকা এক ব্যক্তি দ্রুত বের হয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

ওই নারীর ভাষ্য, ওই ব্যক্তি জোরপূর্বক তার ছবি তুলেছিলেন এবং তিনি ওই ব্যক্তির কাছে ছবিগুলো ডিলিট করার অনুরোধ করছিলেন।

অটোরিকশাচালক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ওই ব্যক্তি ৬০০ টাকায় ২ ঘণ্টার জন্য অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে ওই নারীর সঙ্গে ঘোরাঘুরি করছিলেন। এরপর ফার্মগেটে তারা থামেন।

নিজেকে হাসনাহেনা (ছদ্মনাম) বলে পরিচয় দেওয়া ওই নারী জানান, হতাশাগ্রস্ত হয়ে সম্প্রতি তিনি যৌনকর্মে জড়িয়ে পড়েন। ‘আমার পরিবার মনে করে আমার নাইট শিফটের চাকরি আছে। কিন্তু, আসলে আমি কী করি, সেটা জানলে তারা হতবাক হয়ে যাবে। কিন্তু, অর্থনৈতিকভাবে আমার পরিবারকে সাহায্য করতে এটা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’

‘ওই ব্যক্তি যে আমার ছবি তুললেন, এখন তিনি যদি সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন, তাহলে আমি কী করব? যদি শেষ পর্যন্ত আমার পরিবার সব জেনে ফেলে, তাহলে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না’, বলেন তিনি।

রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, সংসদ ভবন এলাকা, পল্টন, শ্যামলী, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১, মিরপুর-১৪, গুলিস্তান ও কমলাপুরসহ রাজধানীর ১০ স্থানে অনুসন্ধান করে ডেইলি স্টার দেখেছে, সম্প্রতি শহরের রাস্তায় যৌনকর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে।

যদিও এই তথ্যের পক্ষে সরকারি কোনো তথ্য নেই, তবে ১০ জন যৌনকর্মীর সাক্ষাত্কার নিয়ে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে ডেইলি স্টার। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে এ ১০ জন যৌন পেশায় আসতে বাধ্য হয়েছেন। বিশেষ করে মহামারির কারণে তারা এক প্রকার নিরুপায় হয়ে পড়েন।

ব্যাংকে ডলার–সংকট, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

০৪ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

ডলারের উচ্চ দাম ও সংকট চাপে ফেলেছে মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীদের। এতে খরচ বাড়ায় অনেক ব্যবসায়ী তাঁদের ব্যবসা সংকুচিত করে ফেলছেন। আবার চাহিদামতো আমদানি ঋণপত্রও খুলতে পারছেন না। ডলার নেই বলে অপারগতার কথা জানিয়ে দিচ্ছে ব্যাংক। ঋণপত্র খুলতে না পেরে সংকটে পড়েছেন তাঁরা। আবার এই সংকটে তাঁদের দেখারও কেউ নেই, তাঁদের পক্ষে সক্রিয় নেই কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন।

ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রাধিকার তালিকা নেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের। ফলে শিল্পের মূলধনি যন্ত্র, কাঁচামাল, খাদ্যসহ অতিগুরুত্বপূর্ণ অনেক আমদানি কমে গেছে। শিল্পের মূলধনি যন্ত্র ও কাঁচামাল আমদানি কমে গেলে অর্থনীতির গতি কমে আসে। প্রভাব পড়ে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আদায়ে। খাদ্য আমদানি কমে গেলে দাম বেড়ে যায়। সবকিছুই এখন ঘটছে অর্থনীতিতে। গত জুলাই-অক্টোবর সময়েই গম, চাল ও ডাল আমদানি কমেছে ৯ লাখ টন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত জুলাইয়ে কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও ব্যাংক ঋণপত্র খুলছিল। তবে অক্টোবরে এসে ঋণপত্র খোলা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। শুধু যাঁদের রপ্তানি আয় আছে ও বড় ব্যবসায়ী, ব্যাংক শুধু তাঁদের ঋণপত্রই খুলছে।

বিদেশ যাওয়া পৌনে ৯ লাখ নতুন শ্রমিকের রেমিট্যান্স গেল কোথায়

নভেম্বর ০১, ২০২২, বণিক বার্তা

কভিডসৃষ্ট দুর্যোগ কাটিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন ৮ লাখ ৭৪ হাজার শ্রমিক। সিংহভাগেরই গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুরেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশী অভিবাসী হয়েছেন। শ্রমিকের সংখ্যার সঙ্গে প্রধান এসব শ্রমবাজার থেকে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়ার কথা। কিন্তু একেবারেই বিপরীত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব থেকে গত অর্থবছরে (২০২১-২২) রেমিট্যান্স প্রবাহ ২১ শতাংশ কমেছে। সে ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশটি থেকে আসা রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অথচ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশে অভিবাসী হয়েছেন ৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৫৩ বাংলাদেশী শ্রমিক। ২০২১ সালেও পাড়ি দিয়েছেন ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন।

সৌদি আরব ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের যে দেশগুলোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাংলাদেশী শ্রমিক অভিবাসী হয়েছেন, তার সবক’টি থেকেই কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। গত অর্থবছরে ১৫ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। একই সময়ে কুয়েত থেকে কমেছে ১০ দশমিক ৪৩, ওমান থেকে ৪১ দশমিক ৫৬ ও কাতার থেকে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ রেমিট্যান্স আহরণ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার সিঙ্গাপুর থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৩৮ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরে সেই প্রবাহ আরো বেশি নিম্নমুখী। সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। অথচ আগের মাস আগস্টেও দেশটি থেকে ৩০ কোটি ডলার এসেছিল। আমিরাতের মতোই খারাপ পরিস্থিতি ওমান থেকে আসা রেমিট্যান্সের। সেপ্টেম্বরে কেবল ৪ কোটি ডলার এসেছে, যেখানে জুলাইয়েও এসেছিল প্রায় ৮ কোটি ডলার।

রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেলেও চলতি বছর ওমানে নতুন অভিবাসী হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮১ বাংলাদেশী। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৮৩ হাজার ৬৭৪, কাতারে ১৭ হাজার ২০৪, কুয়েতে ১৩ হাজার ৫৯৯ ও সিঙ্গাপুরে ৪৮ হাজার ২২৫ বাংলাদেশী নতুন অভিবাসী হয়েছেন। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজের সন্ধানে বিদেশে গিয়েছেন ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৯ জন। ২০২১ সালেও শ্রমিক হিসেবে বিদেশে গিয়েছিলেন ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ বাংলাদেশী।

শ্রমবাজারে নতুন করে যুক্ত হওয়া রেকর্ড পরিমাণ বাংলাদেশীর উপার্জিত অর্থের গন্তব্য নিয়েই এখন নানা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসীরা ঠিকই দেশে থাকা স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠাচ্ছেন। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে না পাঠিয়ে তারা মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন অবৈধ হুন্ডিকে। এতে স্বজনরা উপকৃত হলেও ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশ। বাড়ছে না ডলারের রিজার্ভ। অর্থনীতিবিদদের দাবি, ডলারের বিনিময় হার নিয়ে অস্থিরতার সুযোগে হুন্ডির বাজার জমজমাট হয়ে ওঠায় অভিবাসীরা অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।

হারিয়ে যাচ্ছে ‘গরিবের ট্রেন’

০৩ নভেম্বর ২২, সমকাল

ভাড়া তুলনামূলক কম। তবে ভ্রমণ আরামদায়ক ও নিরাপদ। তাই যাতায়াতে বেশিরভাগ মানুষের প্রথম পছন্দ ট্রেন। নিম্নবিত্ত মানুষের ভরসা বেশি লোকাল ট্রেনেই। এসব ট্রেন প্রায় প্রতিটি স্টেশনে থামে। আবার সিট না পেলে দাঁড়িয়েও যান অনেকেই। এগুলো থেকে আয় খুব একটা কম হয় না। কিন্তু নানা কারণে লোকাল ট্রেন চালানোয় আগ্রহ নেই রেলওয়ের। একের পর এক লোকাল ও কমিউটার ট্রেন বন্ধ হচ্ছে। নতুন করে এগুলো চালু করায় মনোযোগ নেই কর্তৃপক্ষের। রেলওয়ে আন্তঃনগর ট্রেন নিয়েই বেশি মনোযোগী।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে ১৪টি রুটে ৪২টি লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে সেগুলো চালু করছে না রেলওয়ে। বন্ধ থাকা ট্রেনগুলোতে (লোকাল, মেইল ও কমিউটার) দিনে ১৫ লাখ থেকে ১৬ লাখ যাত্রী চলাচল করতেন। এসব ট্রেন না থাকায় কমে গেছে রেলের আয়ও। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেলওয়ে যাত্রী পরিবহন ও আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে, তার চেয়ে যাত্রী কমে যায় ২৫ শতাংশ। এতে আয় কমেছে ৩২ শতাংশ। এই চিত্র থেকেই বোঝা যায়, ট্রেন বন্ধ থাকায় শুধু যাত্রীরাই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রেলও।

ট্রেনগুলো বন্ধ রাখার কারণ হিসেবে রেলওয়ে বরাবরই বলছে ইঞ্জিন ও কোচের (বগি) অভাবের কথা। এই সংকট কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত ট্রেনগুলো চালু করা যাবে না বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা মহামারির আগে ও পরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বহরে ৩০টি নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন এই অঞ্চলে ইঞ্জিনসংখ্যা ১৫৯। তবে এর একটি অংশ নিয়মিত বিকল থাকে। তাই দিনে ১০০-এর বেশি ইঞ্জিন পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ২০২০-২০২১ সালে রেলওয়ে দেড় শ মিটারগেজ কোচ আমদানি করে। তবে নতুন ইঞ্জিন ও কোচ যুক্ত হওয়ার পরও এ সময়ে একটি লোকাল ট্রেনও চালু করা যায়নি। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।

উন্নয়ন বাজেটের ৭৪ ভাগই পায় ঢাকাসহ ৬ জেলা, ৬ শতাংশ জোটে ২৫ জেলার

০৮ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকাকেন্দ্রিক বিনিয়োগের রাশ টেনে সারা দেশে সুষম বিনিয়োগ করা উচিত বলে মত দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা। যাতে সারা দেশে টেকসই ও পরিকল্পিত নগরায়ণ হয়।

বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল নগর সংলাপে বিশেষজ্ঞরা এই মত দেন।

 ‌‘উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণে বাংলাদেশের সুষম ও টেকসই নগরায়ণ: প্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নগরায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আবাসন ও নাগরিক পরিষেবা খাতে বরাদ্দের ৭৪ শতাংশ ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা ও নারায়ণগঞ্জ এই ৬টি জেলায়। আর ২৫টি জেলায় বরাদ্দ ছিল মোট উন্নয়ন বাজেটের মাত্র ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

চাল উৎপাদনে এখনো ঘাটতিতে বাংলাদেশ

নভেম্বর ০৮, ২০২২, বণিক বার্তা

দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন। যদিও এ সময় চালের মোট ভোগ ও ব্যবহার ছিল ৩ কোটি ৬৫ লাখ টন। সে অনুযায়ী গত অর্থবছরে দেশে চালের ঘাটতি ছিল সাড়ে ছয় লাখ টন। আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ টন। গত পাঁচ অর্থবছরে চাল উৎপাদন এবং ভোগ ও ব্যবহারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এ সময়ের পুরোটাই চালের ঘাটতি মোকাবেলা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করা হয়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। যদিও দেশের কৃষি উৎপাদন পরিসংখ্যানে উঠে আসছে এর ভিন্ন চিত্র। গত পাঁচ অর্থবছরে প্রধান খাদ্যশস্য চালে আমদানিনির্ভর থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) সন্নিবেশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এ পাঁচ বছরে চালের ভোগ ও ব্যবহার হয়েছে উৎপাদনের চেয়ে বেশি। স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং চালের জন্য আমদানিনির্ভরতা দিনে দিনে বেড়েছে।

আটা, চিনি ও তেলের সরবরাহে টান

০৯ নভেম্বর ২২, সমকাল

রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় চাহিদা অনুসারে মিলছে না আটা, চিনি ও বোতলজাত সয়াবিন তেল। কোথাও তেল পাওয়া গেলেও আটা নেই। আবার কোথাও আটা পাওয়া গেলে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। সরবরাহ সংকটের পাশাপাশি দামও বেশি পণ্য তিনটির। কিছুদিন আগে চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। নতুন করে বেড়েছে আটার দাম। গতকাল মঙ্গলবার পাড়া-মহল্লার দোকান এবং কয়েকটি বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।

পাড়া-মহল্লার দোকানে প্যাকেটজাত আটার সরবরাহ কিছুটা কম দেখা গেছে। এক সপ্তাহ আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিলারদের কাছ থেকে যেসব আটা ও ময়দা সংগ্রহ করেছেন, সেগুলোই বিক্রি করছেন দোকানিরা। তাঁরা বলছেন, বেশিরভাগ কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। কিছু জায়গায় খোলা আটা পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু দাম বেশি। প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। দুই দফায় দাম বাড়ানোর পরও বেশিরভাগ জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে না প্যাকেটজাত চিনি। কিছু জায়গায় খোলা চিনি পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

উৎপাদন কমেছে, বিক্রিতে মন্দা

০৯ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

চাহিদা থাকলেও গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংকটের কারণে সিরামিক, ইস্পাত, বস্ত্র, সিমেন্টসহ বিভিন্ন খাতের শিল্পকারখানার উৎপাদন ৩০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে বাধ্য হয়েছেন উদ্যোক্তারা। রপ্তানি আয় যাঁদের নেই, তাঁদের ঋণপত্র খুলতে চাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। ফলে দেশীয় শিল্পকারখানাগুলো কাঁচামাল–সংকটের আশঙ্কায় আছে। আবার দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো ক্রয়াদেশ কমাচ্ছে। এতে পণ্য রপ্তানিও নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে।

শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, ছয় মাস ধরে ডলার–সংকট। দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাসের চাপ চাহিদা অনুযায়ী থাকছে না। লোডশেডিংয়ের সমস্যাও ছাড়ছে না। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। সব মিলিয়ে সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কাই বেশি। এ রকম এক অবস্থায় ব্যবসা সম্প্রসারণ নয়, বরং চলমান ব্যবসা সামলাতেই সবাই হিমশিম খাচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থান নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের ছাপ এরই মধ্যে কোম্পানিগুলোর ওপর পড়তে শুরু করেছে। ইলেকট্রনিক খাতের বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ গত প্রান্তিকে (জুলাই-আগস্ট) এক যুগের মধ্যে প্রথম লোকসান করেছে। অন্যদিকে ইলেকট্রনিক খাতের দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটন গত প্রান্তিকে লোকসান করেছে, যা কিনা ২০১৪ সালের পর প্রথম। টাকার বিপরীতে ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই গত প্রান্তিকে ওয়ালটন ৪৬ কোটি ও সিঙ্গার ৮ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে।

প্রশ্নবিদ্ধ মূল্যস্ফীতির হিসাব

১২ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

জিনিসপত্রের দামের ওপর ভিত্তি করে মূল্যস্ফীতির হিসাব গণনা করা হয়। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলো জিনিসপত্রের দামের যে হিসাব করে, তার সঙ্গে বাজারমূল্যের গরমিল আছে। দেশে মূল্যস্ফীতির হিসাব করে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটি মাঠপর্যায় থেকে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম সংগ্রহ করে। সেই দামের ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হিসাব কষে তা প্রকাশ করা হয়।

আরেক সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুনসহ সব নিত্যপণ্যের প্রতিদিনের বাজারমূল্য প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি গণনায় বিবিএস বিভিন্ন পণ্যের যে দাম বিবেচনায় নেয়, তার সঙ্গে টিসিবির দামের মিল নেই। তাই সরকারি দুই সংস্থার দামের এই ফারাক মূল্যস্ফীতি গণনাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি দুই সংস্থা বিবিএস ও টিসিবির দুই রকম তথ্য মূল্যস্ফীতির হিসাবকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। টিসিবির দামের হিসাব বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম। আবার বিবিএস বলছে, মূল্যস্ফীতি কমেছে। তাদের হিসাবও বাজারের সঙ্গে মেলে না। বাজারের প্রকৃত দাম ধরেই মূল্যস্ফীতি গণনা করা উচিত।

বর্তমান সময়ে দেশে-বিদেশে মূল্যস্ফীতি বেশ আলোচিত বিষয়। বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশে। গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে মূল্যস্ফীতির এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এর আগে আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে।

তথ্যের গরমিল

জিনিসপত্রের দামে সরকারি সংস্থার তথ্যে গরমিলের কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বিবিএস মোটাদাগে ৪৭টি পণ্যের বাজারদরের ওপর ভিত্তি করে মূল্যস্ফীতি গণনা করে থাকে। একজন গরিব মানুষ চাল কিনতে তাঁর মোট ব্যয়ের ৩২ শতাংশ খরচ করেন। বিবিএসের হিসাবে গত অক্টোবর মাসে এক কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৫৭ টাকা। অন্যদিকে টিসিবি বলছে, গত মাসে মোটা চালের দাম ওঠানামা করেছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে।

মূল্যস্ফীতি গণনায় এক কেজি আটার দাম প্রায় ৫৬ টাকা ধরেছে বিবিএস। কিন্তু টিসিবির হিসাবে তা ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। ছোট দানার এক কেজি মসুর ডালের দাম ১৩৫ টাকা ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করেছে বিবিএস। টিসিবি বলছে, অক্টোবর মাসে মসুর ডালের দাম ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।

গত মাসে চিনি নিয়ে বেশ হইচই হয়েছে। বাজারে চিনির দাম বেশ চড়া ছিল। বিবিএসের কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে দেখেছেন, এক কেজি চিনির গড় দাম ছিল ৯৮ টাকা। টিসিবির হিসাবে গত মাসে চিনির দাম ছিল কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের ছিল ৪৫ টাকা। বিবিএস মূল্যস্ফীতির হিসাব গণনায় পেঁয়াজের দাম ধরেছে ৫৫ টাকা। রুই মাছের কেজি ৪০০ টাকা দাম, এটা বিবিএসের তথ্য। অন্যদিকে টিসিবির তথ্য হলো গত মাসে রুই মাছের কেজিপ্রতি দাম ছিল গড়ে ৩৫০ টাকা।

এভাবে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দামে পার্থক্য রয়েছে বিবিএস ও টিসিবির হিসাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির হিসাবটি বিবেচনায় আনে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির মতো সংবেদনশীল তথ্যের হিসাব হয় বিবিএসের কর্মকর্তাদের নেওয়া মাঠপর্যায়ের তথ্য নিয়ে।

এ বিষয়ে বিবিএসের জাতীয় আয় শাখার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মাঠপর্যায়ে জিনিসপত্রের যে দাম পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতেই মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হচ্ছে। বরং তিন মাস ধরে মাঠপর্যায়ের তথ্য আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে মাঠকর্মীর তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন।

মজুরির হার বৃদ্ধি নিয়ে ‘তৃপ্তির ঢেকুর’

গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশের সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পাশাপাশি মজুরির হারও বেড়েছে। এ নিয়ে তিনি স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু বাস্তবতা হলো মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে, এর কম হারে মজুরি বাড়ছে। গরিব মানুষ বেশির ভাগই শ্রমিক শ্রেণির। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি না বাড়লে তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। তাঁরা বাজার থেকে আগের মতো পণ্য কিনতে পারেন না। অবশ্য কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির চেয়ে মজুরি হার বৃদ্ধি কম হচ্ছে। গত অক্টোবর মাসে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। এর মানে একজন শ্রমিক ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ১০০ টাকা মজুরি পেলে এ বছর অক্টোবর মাসে মজুরি বেড়ে হয়েছে ১০৬ টাকা ৯১ পয়সা। কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। তার বিপরীতে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগস্টে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ—৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির গতি কম থাকায় অনানুষ্ঠানিক খাতের প্রায় ৫ কোটি শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছেন।

ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন পোলট্রি খামারিরা

১২ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

এক বছর আগেও নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার পোলট্রি খামারি শামসুর রহমানের খামারে ১০ হাজার ব্রয়লার মুরগি ছিল। ব্যবসা ছিল রমরমা। সেই খামারে এখন মুরগি আছে ৫ হাজারের মতো। গত এক বছরে মুরগির খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ও মুরগির বাড়তি দাম না পাওয়ার শামসুর রহমানের ২৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ফলে ব্যবসা সংকুচিত করে ফেলেছেন তিনি।

শামসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছরের শুরুতেও ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম ছিল প্রতি কেজি গড়ে ৪৭ টাকা। এখন সেই খাবার কিনতে হচ্ছে ৬৮ টাকায়। ২০০ থেকে ২৫০ টাকার ওষুধের ভায়ালের দাম বেড়ে হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। আবার কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, কিন্তু সেই তুলনায় দাম পাচ্ছি না।’

বিশ্ববাজারে ভুট্টা ও গমের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। একই সঙ্গে সয়ামিলসহ অন্যান্য কাঁচামালের দামও বাড়তি। এতে দেশের বাজারেও পোলট্রি খাবারের দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে অনেক খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউবা উৎপাদন করছেন কম।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য অনুযায়ী, পোলট্রি খাদ্যের কাঁচামালের দাম অনেক ক্ষেত্রে গড়ে ৬০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে যে ভুট্টার দাম ছিল প্রতি কেজি ১৭ টাকা ৩০ পয়সা, চলতি বছরের আগস্টে সেই দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ টাকা ৩০ পয়সায়।

পোলট্রি খাবারের অন্যতম উপাদান সয়ামিলের দামও বেড়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে প্রতি কেজি সয়ামিলের দাম ছিল ৪৭ টাকা ৭০ পয়সা, চলতি বছরের আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৭২ টাকা। একই সময়ে পোলট্রি খাবারের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ৭২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭৮ টাকা। এ ছাড়া পোলট্রি খাবারের অন্যান্য উপাদান, চালের কুঁড়া, ক্যানোলা মিল, গমের আটা, সাধারণ লবণসহ অন্যান্য উপকরণের দামও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

বিপিআইসিসির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে প্রথম আলোকে জানানো হয়, দেশে মুরগির খাবার তৈরির মিলগুলো কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে জটিলতার মুখে পড়েছে। তাতে আমদানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পোলট্রিশিল্পে আরও বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে।

মুরগির খাবারের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে ক্ষুদ্র খামারিরা ব্যবসা সংকুচিত করে নেওয়ায় কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র মুরগি খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার।

পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিপিআইসিসি ও বিপিএ বলছে, চলতি বছরের মাঝামাঝিতে দেশে ৮০ থেকে ৯০ হাজার ছোট-বড় মুরগির খামার ছিল। গত কয়েক মাসে ১০ থেকে ১৫টি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ করোনার আগে দেশের মুরগির খামারের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি। লোকসানের কারণে দিন দিন খামারের সংখ্যা কমছে।

বিপিআইসিসি ও বিপিএর তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুরগির খামারের সঙ্গে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। আর পোলট্রিশিল্পের বাজারের আকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু যেভাবে খামার বন্ধ হচ্ছে, তাতে বাজারের আকার কমে যাবে বলে জানান সংগঠন দুটির নেতারা।

গাজীপুর এলাকার মুরগির খামারি আজমল কাদীর প্রথম আলোকে বলেন, খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ পাইকারিতে খামারিরা দাম পাচ্ছেন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। পাইকারিতে প্রতিটি ডিম ৯ টাকায় বিক্রি হলেও ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি। পাইকারি দামের চেয়ে খুচরায় ৩ টাকা বেশি দামে ডিম বিক্রি হলেও খামারিরা এর কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না।

এদিকে খাবারের বাড়তি দামের সমস্যার পাশাপাশি খামারিদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বিদ্যুৎ-সংকট। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক খামারিকে বিকল্প হিসেবে জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ক্ষেত্রেও খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে তাই উৎপাদন খরচ বাড়তি। খামারিরা বলছেন, শীত মৌসুমে মুরগির বাচ্চা ফুটাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। সেটি না পেলে খামারিরা আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন।

অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টায় দেড় বছরে ৬০০ বাংলাদেশির মৃত্যু

নভেম্বর ১২, ২০২২, ইন্ডিপিন্ডেন্ট টিভি অনলাইন

দেড় বছরে অবৈধভাবে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছে ১৯ হাজার বাংলাদেশি। তাদের মধ্য অপহরণ-নির্যাতন ও পানিতে ডুবে প্রাণ গেছে ৬০০ জনের। পুলিশ বলছে, সারা দেশে মানবপাচারে সক্রিয় অন্তত ১০টি চক্র। আর এর হোতারা আছেন লিবিয়া। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। এ অবস্থায় প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলছেন, সরকার বৈধ পথে ইউরোপে লোক পাঠাতে কাজ করছে।

জীবন বদলের আশায় ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রতিদিনই ইউরোপে ঢোকার চেষ্ঠা করছে বাংলাদেশিরা। আর এই যাত্রা দালালের হাত ধরে। তাদের কেউ সফল হলেও অনেকেই সামিল হচ্ছেন মৃত্যুর মিছিলে।

এলসি খুলতে ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে আমদানিকারকরা

১৩ নভেম্বর ২০২২, শেয়ার বিজ

দেশের ব্যাংকিং খাতে কয়েক মাস ধরে ডলার সংকট চলছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিপত্র খোলার (এলসি) ক্ষেত্রে কঠোর নীতি অবলম্বন করছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক পণ্যের সঠিক দাম যাচাইয়ে কঠোর হচ্ছে। এতে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আমদানিকারকদের ভোগান্তির কারণে এলসি খোলার হার আগের মাসের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে কোনো কোনো ব্যাংক সরাসরি এলসি নিচ্ছে না। এ কারণে বেশিরভাগ গ্রাহক এলসির জন্য এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ঘুরছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের জুলাই থেকে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ কমতে শুরু করে। গত জুনে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৮৪৪ কোটি ডলার, জুলাইয়ে তা ৬৩৫ কোটি ডলারে নামে। আগস্টে এলসি খোলার পরিমাণ আরও কমে দাঁড়ায় ৬৩৩ কোটি ডলারে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে আরও কমে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭০ কোটি ডলারে। এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে এলসি খোলার হার।

সাবান-ডিটারজেন্ট কিনতে পারেন না, ভরসা ছাই

১৩ নভেম্বর ২২, সমকাল

ঝিনাইদহের শৈলকুপার কবিরপুর-হাবিবপুর এলাকার চাতাল শ্রমিক বিধবা কতুরী বেগম। ছয় মাস আগে থেকেই সাবান ও ডিটারজেন্টের পরিবর্তে কলাপাতার সাদা ছাই দিয়ে কাপড় কাচেন। আগে এক কেজি সয়াবিন তেল ৯০ টাকায় কিনলেও এখন কেনেন ২০০ টাকায়। অথচ চাতালে দুই মণের ১০ বস্তা ধান সেদ্ধ করে শুকিয়ে পান ১০০ টাকা; তাও তিন দিন লাগে। এ আয়ে খাবার জোগাড়ই কষ্টকর। সাবান, ডিটারজেন্ট কেনা তাঁর জন্য বিলাসিতা। অটোমিলের সংখ্যা বাড়ায় চাতাল বন্ধের শঙ্কাও আছে। সেটি হলে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে উঠবে তাঁর।

কতুরী বেগম বলছিলেন, ‘শাকপাতা খেয়ে কোনোরকমে দিন যায়। এক বস্তা ধান শুকালে পাই ১০ টাকা, মালিক সপ্তাহে পাঁচ কেজি চাল দেয়। যা আয় হয়, তা দিয়ে নুন-ডাল-তেল কিনে ফুরিয়ে যায়। সাবান কেনব কী দিয়ে? কত দিন যে সাবান মাখিনে রে ভাই! মাছ, গোস্ত দূরির কতা, শাক ঘুটার তেলই জুগাড় করতি পারিনে। আগে গাই মাকা সাবান ৩০ টাকায় হতো, এখন ৫০ টাকা। গায়ের জামাডা চায়ে আনিচি। ৭-৮ হাতের ঝুপড়ি ঘরে থাকি। স্বামী মারা গেচে বছর ১৬ আগে। মেয়ের বিয়েও দিয়েচি চাতালে কাজ করে।’

কতুরী বেগমের মতো চাতাল শ্রমিক মোমেনা খাতুন, আমেনা খাতুনেরও দিন কাটছে একইভাবে। স্থানীয় ঝাউদিয়া আবাসনের কৃষি শ্রমিক হাসেম আলী বলেন, আগে ১০-১৫ দিন পরপর কাপড় পরিস্কার করতেন। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন এক মাসেও পরিস্কার করতে পারেন না। খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। গায়ে মাখা সাবান-ডিটারজেন্ট কিনবেন কীভাবে? আরেক বাসিন্দা মাজেদা খাতুন বলেন, ‘গত দুই মাসে সাবান কী জিনিস- দেখিনি।’

শৈলকুপা পৌরসভার কর্মচারী মনিরুল ইসলাম। তাঁর পাঁচজনের সংসার। আগে চালসহ তাঁর মাসে খরচ হতো সাত হাজার টাকা। নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় এখন ১৪ হাজারেও কুলায় না। তিনি বলেন, আগে এক হালি ডিম কিনতেন ৩০ থেকে ৩২ টাকায়; এখন ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। তিনি যে বেতন পান, তাতে মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘাটতি থাকে।

আউশিয়া গ্রামের বর্গাচাষি মুকুল মণ্ডল জানান, জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য আগে ৬৫ টাকায় এক লিটার ডিজেল কিনতেন। এখন ১১৪ টাকা, চাষাবাদের খরচও বেড়েছে। সামনের বছর মন্দার আশঙ্কার কথা শুনে যে ধান আসবে, তা আর বিক্রি করবেন না। আগে সবাই ধান বিক্রি করে চাল কিনত। এখন এক বছরের ধান রেখে তারপর বিক্রি করবেন। এতে অন্য খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হবে চাষিদের।

বেসরকারি হাসপাতালের কর্মচারী ঝাউদিয়া গ্রামের আলপনা রানী বিশ্বাস। তিনি বলছিলেন, স্বামী মারা গেছে কয়েক বছর আগে। চারজনের সংসারে আগে খরচ ছিল ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তখনকার ৩০ টাকার চাল এখন ৬৫ টাকা। ৯০ টাকার সয়াবিন তেল ২০০ টাকা। ফলে ১৫ হাজার টাকায়ও সংসার চলছে না।

শৈলকুপা বাজারের পাইকারি মুদি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম জানান, এক বছর আগে ১০০ গ্রাম ওজনের একটি সাবান ছিল ৩২ টাকা। ছয় মাস পরে ৩৫ আর এখন বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। আগে ২০০ গ্রামের একটি টুথপেস্ট ১০০ টাকা থাকলেও এখন বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে ২-৩ টাকার মিনিপ্যাক শ্যাম্পু আগের দামেই আছে। কিন্তু আকাশচুম্বী ডিটারজেন্টের দাম। ছয় মাস আগে আধা কেজির দাম কোম্পানিভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা হলেও এখন ৭০ থেকে ৯০ টাকা।

এই ব্যবসায়ী বলেন, বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে মানুষ তিন হাজার টাকায় যে বাজার করত, এখন তা দিয়ে অর্ধেক পণ্য কিনছে। আগে একটি পণ্যে ৪ থেকে ৫ টাকা মুনাফা হলে এখন ২ থেকে আড়াই টাকা থাকে।

বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না, আশ্বাস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

নভেম্বর ১৩, বণিক বার্তা

ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সঙ্কট নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামীতেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না বলেও জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ রোববার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সঙ্কট নেই। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংকের আমানত তুলে নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক খবর প্রচারিত হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ: বিশ্বব্যাংক

১৪ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেন, বাংলাদেশ তার অসাধারণ উন্নয়নের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। তিনি একে উন্নয়নের একটি সফল ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেন।

আজ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এই মন্তব্য করেন মার্টিন রাইজার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু

১৪ নভেম্বর ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মারা গেছেন এক নারী।

সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার কলেজ রোড সংলগ্ন রেল বিটের কাছে এক ডিলারের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

মারা যাওয়া শিখা মালাকার (৩৮) সীতাকুণ্ড পৌরসভার মহাদেবপুর এলাকার তপন মালাকারের স্ত্রী।  ওই এলাকার পরিবার নিয়ে তারা ভাড়া থাকতেন।

 সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফৈার ডটকমকে বলেন, “ওএমএস এর চাল নিতে ওই মহিলা সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাড়ে ৮টার দিকে তিনি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যান। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”

সব সুবিধা খেলাপিদের জন্যই

১৫ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

১৯৯০ সালেও দেশে খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। সেই খেলাপি ঋণ এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গত ১৪ বছরে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।

ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। এখানে বছরের পর বছর ধরে খেলাপিদের নানা ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে বারবার। আইন সংশোধন করে একাধিকবার ঋণ তফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আর এসব সুযোগ-সুবিধা নিয়েই বড় বড় ঋণখেলাপি খেলাপির তালিকা থেকে বাইরে থেকে গেছেন। হয়েছেন আরও ক্ষমতাবান।

১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পরে অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান জাতীয় সংসদে খেলাপি ঋণগ্রহীতার নাম প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের পরে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া তালিকা প্রকাশ করে প্রভাবশালী ঋণখেলাপিদের রোষানলে পড়েছিলেন। সেই প্রভাবশালীরাই এখন সরকারের দেওয়া নানা সুযোগ নিয়ে খেলাপির তালিকা থেকে বের হয়ে গেছেন। এমনকি তাঁরাই এখন খেলাপি ঋণের ছাড় কীভাবে দেওয়া হবে, সেই নীতিমালাও তৈরি করে দিচ্ছেন।

যেভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ

দেশে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসেই (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এই হিসাবে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে খেলাপি বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার এখন ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

যেভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হওয়া সংজ্ঞা হচ্ছে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা। দেশে প্রথম খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। তবে পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞাটি ছিল ১৯৯৪ সালের। এর পর থেকে যতগুলো সরকার এসেছে, সবাই এর সংজ্ঞা নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খেলাপি হওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আবার খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ কতবার পুনঃ তফসিল করা যাবে, তারও পরিবর্তন করা হয়েছে বেশ কয়েকবার।

২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর শুরুতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যেমন, ২০১২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করে বলেছিল, কোনোভাবেই তিনবারের বেশি ঋণ পুনঃ তফসিল করা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালাটিও ধরে রাখতে পারেনি। প্রভাবশালীদের তদবির ও চাপে পিছু হটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে তিন মাস সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

প্রভাবশালী ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালে। সে সময় খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের বিশেষ এক স্কিম হাতে নেওয়া হয়। তখন নিয়ম ছিল তিনবারের বেশি ঋণ পুনঃ তফসিল করা যায় না। কিন্তু বেশির ভাগ প্রভাবশালী উদ্যোক্তাই তিনবার সুযোগটি নিয়েও খেলাপি হয়ে পড়েছিলেন। এরপরেই ঋণ পুনর্গঠন নামে নতুন এক সুবিধা দেওয়া হয়। ওই সুবিধার আওতায় দেশের বড় ১১টি শিল্প গ্রুপের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছিল। তারপরও এসব গ্রুপের বেশির ভাগই ঋণের কিস্তি আর পরিশোধ করেনি।

২০১৮ সালে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞার আবার বদল হয়। ঋণ পরিশোধের সময় আরও তিন মাস বাড়ানো হয়। একই সময় ঋণ অবলোপন বা রাইট অফের ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। তবে ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের ইতিহাসে ঋণখেলাপিদের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধাটি দেন। সে সময় ২ শতাংশ কিস্তি দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ রাখা হয়। নতুন নিয়মে ঋণ পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় দেওয়া হয়, এর মধ্যে প্রথম এক বছর কোনো কিস্তি দিতে হয়নি। সেই সুযোগ নেওয়া বেশির ভাগই পরে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

সিঙ্গাপুরে বাড়ছে আজিজ খানের সম্পদ, দেশে উল্টোরথে সামিট

১৬ নভেম্বর ২০২২, শেয়ার বিজ

সিঙ্গাপুরে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ২০১৮ সালেই নাম লিখিয়েছেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। কয়েক বছর ধরেই সে দেশে তার সম্পদের পরিমাণ বাড়ছে। যদিও দেশে অনেকটা উল্টো পথেই হাঁটছে সামিট পাওয়ার। কোম্পানিটির মুনাফায় নেমেছে ধস, যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এক বছরেই মুনাফা কমেছে ২০ শতাংশ। পাশাপাশি দায়দেনা অনেক বেড়ে গেছে সামিটের। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে কোম্পানিটির ডেট-ইকুইটি অনুপাত।

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ খাতের বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যেও মুনাফার দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে সামিট পাওয়ার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইপিএস (শেয়ারপ্রতি আয়) তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম ছিল কোম্পানিটির। যদিও চার বছর ধরেই সামিট পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা একই (১৫টি) রয়েছে। এর আগে ছিল ১৪টি। কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

সূত্রমতে, সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় এ বছর টানা পঞ্চমবারের মতো নাম ওঠে মুহাম্মদ আজিজ খানের। বিজনেস সাময়িকী ফোর্বসের গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত তালিকায় তিনি ছিলেন ৪২ নম্বরে। তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় তার সম্পদের পরিমাণ ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০২১ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি ডলার, ২০২০ সালে ৯৫ কোটি ডলার ও ২০১৯ সালে ৮৫ কোটি ডলার।

ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা মুহাম্মদ আজিজ খান দেশটির শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় প্রথম স্থান পান ২০১৮ সালে। ওই বছর সিঙ্গাপুরে তার ও তার পরিবারের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯১ কোটি মার্কিন ডলার। তবে ২০১৯ সালে মুহাম্মদ আজিজ খান জাপানি প্রতিষ্ঠান জেরার কাছে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ২২ শতাংশ শেয়ার ৩৩ কোটি ডলারে বিক্রি করে দেন। ফলে ২০১৯ সালে তার সম্পদের পরিমাণ কমে যায়। তবে এর পর থেকে আবার তার সম্পদের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে।

এদিকে সামিট পাওয়ারের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া হিসাববছরে সামিট পাওয়ারের আয় তথা টার্নওভার দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৩১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর আগের বছরে (২০২০-২১) এর পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৯৬৬ কোটি ছয় লাখ টাকা। অর্থাৎ গত হিসাববছরে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে এক হাজার ৩৫২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা ৩৪ দশমিক ১০ শতাংশ। যদিও আয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়েনি কোম্পানির মুনাফায়। বরং গত হিসাববছরে সামিট পাওয়ারের মুনাফা কমেছে ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ।

২০২০-২১ হিসাববছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ৮৪২ কোটি ৯২ লাখ টাকা, গত অর্থবছর তা কমে দাঁড়ায় ৬৭৩ কোটি টাকায়। এ হিসাবে এক বছরে সামিট পাওয়ারের মুনাফা কমেছে ১৬৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৯-২০ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছর কোম্পানিটির মুনাফার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৪৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং ৭২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ চার বছরের সবচেয়ে কম মুনাফা হয়েছে সামিটের। এর আগে ২০১৭-১৮ হিসাববছরে সামিট পাওয়ারের মুনাফার পরিমাণ ছিল ৫২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

ওএমএসের পণ্য পেতে সেমালা–আমজাদদের ভোর থেকে অপেক্ষা

১৬ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

মধ্য বয়সী আমজাদ হোসেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় থাকেন তিনি। ১০ থেকে ১২ হাজারের মতো আয়ে সংসার চলে টানাটানিতে। এ জন্য আজ বুধবার সকাল সাতটার আগে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) চাল ও আটা কিনতে রাজধানীর পরিবাগ এলাকার মোতালেব প্লাজার পেছনে আসেন। এখানে কমদামে চাল ও আটা পাওয়া যায় শুনে এসেছেন তিনি। তবে ভোরে এসে লাইনে দাঁড়ানোর পরও তাঁর সিরিয়াল পড়েছে ২৮ নম্বরে। অর্থাৎ, আমজাদ হোসেনের আগে আরও ২৭ জন এসে সারিবদ্ধ হয়েছেন। ইটের টুকরা, কাট বা পণ্য নেওয়ার প্যাকেট রেখে জায়গা ধরেছেন কেউ কেউ।

আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে নিয়মিত চাল ও আটা দিত। এ জন্য সকালে এসে সিরিয়াল দিলাম। তবে আমার আগে আরও অনেকে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসে শুনলাম, কয়েক দিন ধরে নাকি এখানে ট্রাক আসছে না। আজ আসবে কি না, তা নিশ্চিত না। কাজ ফেলে এসে অপেক্ষা করছি। দেখি, কী হয়।’

রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের ওএমএসের চাল ও আটা পেতে পরিবাগের এ জায়গায় আজ ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত শতাধিক লোক সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও ট্রাক আসেনি। এতে মানুষের অপেক্ষা বেড়েছে। এখানে আসা অধিকাংশ মানুষ সকালে না খেয়ে এসেছিলেন। অনেকে বলেছেন, এখানকার চাল না পেলে দুপুরে রান্না হবে না। বেলা বাড়তে শুরু করলে কেউ কেউ আবার কাজের প্রয়োজনে সারি ভেঙে চলেও যেতে শুরু করেন।

খালি পড়ে আছে ১৮০০ সরকারি ফ্ল্যাট

১৬ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

সরকারের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের আবাসনের সুবিধার্থে রাজধানীর মিরপুর–৬ নম্বর সেকশনের কাঠের কারখানা এলাকায় পাঁচটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ভবনের অধিকাংশ ফ্ল্যাট দুই বছর ধরে খালি। কর্মকর্তারা সেখানে যেতে আগ্রহী নন। একই সেকশনের শিয়ালবাড়ি এলাকার চিত্র আরও খারাপ। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সেখানে ছয়টি ভবন করা হয়েছে। গত জুন থেকে সব ভবনই ফাঁকা পড়ে আছে।

কাঠের কারখানা ও শিয়ালবাড়ি এলাকার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। দুই এলাকার এই ১১টি ভবনের প্রতিটি ১৪ তলা। খালি এসব ফ্ল্যাটে কর্মকর্তাদের ওঠার জন্য সরকারের আবাসন পরিদপ্তর থেকে বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও সাড়া মিলছে না। শুধু রাজধানীর এই দুই এলাকায় নয়, নোয়াখালী ও নারায়ণগঞ্জে নির্মিত আরও ১৫টি বহুতল ভবন এভাবে খালি পড়ে আছে। এসব ভবনের মোট ২ হাজার ৩৪৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১ হাজার ৮০০টির বেশি খালি পড়ে আছে।

ফের বাড়ল চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম

নভেম্বর ১৭, ২০২২, দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট

অবশেষে চিনি কোম্পানির প্রস্তাবই মানছে সরকার। প্যাকেটজাত চিনির দাম কেজিতে বাড়ল ১৩ টাকা। এখন থেকে কিনতে হবে ১০৮ টাকা দরে। একই সঙ্গে লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার সোয়াবিন তেল এখন ১৯০ টাকা। বৃহস্পতিবার নতুন দাম অনুমোদন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নাখোশ ক্রেতারা।

৩ নভেম্বর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০৮ টাকা করার প্রস্তাব করে সুগার রিফাইনারস এসোসিয়েশন। এরপর তা যাচাই-বাছাই জন্য সময় নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত আসার আগেই ১০৮ টাকা কেজি দরে চিনি বাজারে ছাড়ে কয়েকটি কোম্পানি। অবশেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও আসে একই সিদ্ধান্ত।

নতুন দামে এখন থেকে প্রতি কেজি প্যাকেট চিনি কিনতে হবে ১০৮ টাকায়। আর খোলা চিনির দাম ১০২ টাকা কেজি।

চিনির সঙ্গে বেড়েছে সয়াবিন তেলের দামও। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ১২ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকা ঠিক হয়েছে। এর আগে যা ছিল ১৭৮ টাকা। এ ছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে এখন ৯২৫ টাকা। আগে যা বিক্রি হত ৮৮০ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১৭২ টাকা।

খাবারের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে মাছ-মাংস

১৮ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

দেশে মূল্যস্ফীতি গত মে থেকে অক্টোবরে সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর পড়তে শুরু করেছে। খাবারের তালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিতে হচ্ছে তাঁদের। নিম্নমধ্য আয়ের মানুষও নতুন করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর তালিকায় যুক্ত হওয়ায় এই সংখ্যা বাড়ছে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশ্রমিকদের খাদ্যনিরাপত্তার সূচক নিম্নমুখী। তার মানে, পোশাকশ্রমিক ও তাঁর সন্তানেরা আগের চেয়ে কম খাবার খাচ্ছেন।

এসব তথ্য দিয়ে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, বর্তমানের অর্থনীতির বড় সংকট হচ্ছে খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকি। এই সংকট নিরসনে সামাজিক সুরক্ষার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্যশস্য আমদানির জন্য নতুন নতুন উৎস অনুসন্ধান ও বাজার তদারকির ওপর জোর দিয়েছে তারা।

ভোজ্যতেল চিনি আটা জোগানে ভাটা

১৮ নভেম্বর ২২, সমকাল

নিত্যপণ্যের বাজারে নতুন কোনো শুভবার্তা নেই, আছে দুঃসংবাদ। ভোজ্যতেল আর চিনির দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১২ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৯০ টাকা। প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনি ১৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১০৮ টাকা। গরিবের ওএমএসের আটাতেও পড়েছে দামের থাবা। ৬ টাকা বেড়ে এখন এক কেজি আটা কিনতে খেটে খাওয়া মানুষকে গুনতে হবে ২৪ টাকা। এর আগে গত রোববার বাজারের আটার দামও কেজিতে বেড়েছিল ৬ থেকে ৭ টাকা। ফলে নিত্যপণ্যের দামের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা মানুষ আরও দুর্বিপাকে পড়ল।

এদিকে কয়েক দফা দাম বাড়ানোর পরও বাজারে ভোজ্যতেল, চিনি ও আটার সংকট এখনও কাটেনি। কোনো কোম্পানি চিনি দিচ্ছে তো ভোজ্যতেল দিচ্ছে না। কেউ তেল দিলেও আটা সরবরাহ করছে না। এ কারণে বাজারে প্রয়োজনীয় এ তিন পণ্যের কিছুটা টান পড়েছে। তবে পাড়া-মহল্লায় এ সংকট খানিকটা বেশি। আবার কিছু জায়গায় এসব পণ্য পাওয়া গেলেও ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চিনির সংকট চলছে প্রায় দেড় মাস। এরপর যুক্ত হয়েছে আটার ঘাটতি। এক সপ্তাহ ধরে বাজারে ভোজ্যতেল নিয়ে লুকোচুরি। কোম্পানিগুলোর ডিলাররা চাহিদাপত্র নিয়েও পণ্য দিতে করছেন গড়িমসি। কোনো কোনো ডিলার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করায় দিচ্ছেন না ক্রয় রসিদ। এ কারণে খুচরা পর্যায়েও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার গতকাল ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এখন কোম্পানিগুলো হয়তো বাজারে এ দুই পণ্যের সরবরাহ বাড়াবে।

কেজিতে ৮-১৪ টাকা লাভ করেন চালকলমালিকেরা

১৯ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

দেশে ধান–চালের বাজারে কৃষক থেকে ভোক্তাপর্যায়ে পৌঁছাতে পাঁচবার হাতবদল হয়। প্রতিবার হাতবদলের সময় যোগ হয় খরচ আর মুনাফা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও অস্বাভাবিক মুনাফা করছেন চালকলমালিকেরা। তাঁরা প্রতি কেজি চাল ও এর উপজাত বিক্রি করে ৮ থেকে ১৩ টাকা ৬৬ পয়সা পর্যন্ত মুনাফা করছেন।

ধান থেকে চাল করার সময় যেসব উপজাত তৈরি হয়, চালকলমালিকেরা তা আলাদাভাবে বিক্রি করেন। এতে বাড়তি মুনাফা করলেও চালের দাম কমাচ্ছেন না তাঁরা। বরং খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়লে ও হাটে ধানের দাম বাড়লে ওই সুযোগে তাঁরা মিলগেটে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

‘বাংলাদেশে চালের দাম বৃদ্ধির একটি সমীক্ষা: কৃষক থেকে ভোক্তাপর্যায়ের অবস্থা’ শীর্ষক ওই গবেষণা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের নেতৃত্বে হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি কেজি ধান ভাঙিয়ে ৬০০ থেকে ৬৫০ গ্রাম চাল পাওয়া যায়। চালকলমালিকেরা ওই পরিমাণ চালের ওপরে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত মুনাফা দেখান। কিন্তু ধান ভাঙিয়ে চাল করার ফলে উপজাত হিসেবে যে কুঁড়া, ভাঙা চাল ও চালের ওপরের ছেঁটে ফেলা অংশ তৈরি হয়, তা চালকলমালিকেরা প্রতি কেজি ছয় থেকে নয় টাকা দরে বিক্রি করেন। সেই হিসাবে চালকলমালিকেরা অস্বাভাবিক মুনাফা করছেন। গবেষণায় সুপারিশ হিসেবে চালকলমালিকদের মিলগেটে চালের দাম কমানো উচিত বলে মত দেওয়া হয়েছে।

ধনীদের চেয়ে বেশি ভ্যাট দিচ্ছে অতি দরিদ্ররা: গবেষণা

নভেম্বর ১৯, ২০২২, দ্যা ইন্ডিপিন্ডেন্ট অনলাইন

দেশে আয় অনুযায়ী ধনীদের চেয়ে অতি দরিদ্ররা বেশি ভ্যাট দিচ্ছে। গবেষণা সংস্থা র‍্যাপিডের তথ্য বলছে, দরিদ্ররা তাদের আয়ের প্রায় ৮ শতাংশ ভ্যাট দেয় অথচ ধনীরা ব্যয় করে এক শতাংশ। শনিবার রাজধানীতে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে সংস্থাটি।

দেশের ধনী-গরীবের আয়-ব্যয়ের ওপর গবেষণা করেছে র‍্যাপিড। এ সময় পরোক্ষ করের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর ওপর জোর দেন গবেষকরা। তাদের তথ্য মতে, ১৯৯০ সালেও একজন গরীবের মাথাপিছু আয় ছিল এক শতাংশের বেশি। ২০১৬ সালে তা দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশে। উল্টোদিকে ধনী ব্যক্তির আয় ১৭ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশ হয়েছে।

র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান গবেষক আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, ধনীদের তুলনায় গরীবরা ভ্যাট দিয়ে বেশি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনছে। এতে আয়-ব্যয়ের বৈষম্য আরও বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাজস্ব আদায়ের ৬৫ শতাংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে। যার চাপ সইতে হয় ভোক্তাদের, এর মধ্যে দরিদ্রদের টানতে হয় বেশি। এক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ডের দুর্বলতাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন গবেষকরা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে আড়াই লাখের বেশি কিন্তু কর্পোরেট কর দেয় মাত্র ৩৫ হাজার কোম্পানি।

‘মাইনসের এত অভাব ধইরছে, এ্যালা ভিক্ষাও দিবার চায় না’

 নভেম্বর ২০, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন

‘মাইনসের এত অভাব ধইরছে, মানুষ এ্যালা ভিক্ষাও দিবার চায় না। মুই এ্যালা ভিক্ষা করিয়াও প্যাটের ভাত যোগবার পাবার নাইতছোং না। একবেলা চাইটটা খাং তো ফির আর একবেলা না খ্যায়া থাকা নাগে। কোনদিন কোনদিন মোক না খ্যায়া থাকা নাগে। এদোন অভাব গেইল ২০ বছরোত মুই দ্যাখোং নাই।’

কথাগুলো বলছিলেন আমরন বেওয়া (৬৮)। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরে দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আমরন বেওয়ার দুঃখ-কষ্টের যেন শেষ নেই।

প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী সোবাহান মিয়াকে হারান আমরন বেওয়া। স্বামীর রেখে যাওয়া জমি বিক্রি করে একমাত্র কন্যা সন্তান সোমেনা খাতুনের বিয়ে দেন। প্রায় ১০ বছর আগে স্বামীর রেখে যাওয়া ৭ থেকে ৮ বিঘা জমি ভাঙনের কবলে পড়ে তিস্তা নদীর উদরে বিলীন হয়ে যায়। অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার ঘরটি জরাজীর্ণ। ঝড়-বৃষ্টি আসলে অন্যের ঘরে আশ্রয় নিতে হয় তাকে। নদীভাঙনে জমি হারিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন তিনি। কাজ করার শারীরিক সামর্থ্য না থাকায় গেল ৪ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সরকারের দেওয়া প্রতিমাসে ৫০০ টাকা বয়স্কভাতা পাচ্ছেন তিনি। তাতে করে সংসার চলে না তার।

আমরন বেওয়া ডেইলি স্টারকে জানান, ৩ থেকে ৪ মাস আগে গ্রামের বাড়িগুলোতে গেলে ভিক্ষা পেতেন। প্রতিদিন ভিক্ষা করে ২ থেকে ৩ কেজি চাল এবং ৬০ থেকে ৭০ টাকা পেতেন। এখন ভিক্ষায় গেলে কোনো চাল পাচ্ছেন না। সারাদিনভর ১৫ থেকে ৩০ টাকা পান।

তিনি বলেন, ‘গ্রামের মানুষ এখন বলছেন, বাহে হামরাগুলাই কষ্টোত আছোং। ঘরোত চাইল নাই। তোমাক ভিক্ষা দেই কোনটে থাকি। মানুষ যদি এ্যালা ভিক্ষাও না দ্যায় তাকহইলে হামরাগুলা বাঁচি ক্যাদোন করি।’

আমরন বেওয়া গেল ৩ থেকে ৪ মাস ধরে মাছ মাংস ডিম খেতে পারেননি। রাতে শুধু রান্না করেন। সকালে পান্তাভাত খেয়ে বাইরে বের হয়ে যান। বেশি দূর হাঁটতে পারেন না। আশপাশের গ্রামগুলোতে ঘুরেন। বর্তমানে অভাব তার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

আমরন বেওয়ার প্রতিবেশী জমসের আলী (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, কয়েকমাসে আগে প্রায়ই তিনি আমরন বেওয়াকে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। কিন্তু এখন তাকে সহযোগিতা করতে পারছেন না। তিনি নিজেই দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করছেন। তার পরিবারের লোকজনকেও অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। বাজারে সব জিনিসপত্রের দামে ঊর্ধ্বগতি। আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ তাদের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কম দামের সরকারি লাল চিনি বিক্রি বন্ধ

২২ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

মজুত কম থাকায় ও চাহিদা অনুসারে মোড়কজাত করতে না পারার কারণে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) এক সপ্তাহ ধরে সাধারণ গ্রাহকের মধ্যে চিনি (লাল চিনি বলে পরিচিত) বিক্রি বন্ধ রেখেছে। এ অবস্থা আরও সপ্তাহখানেক চলবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

নিম্ন আয়ের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে চিনি দিতে রাজধানীর মতিঝিলে বিএসএফআইসি ভবনের নিচতলায় নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রে চিনি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। এখান থেকে মোড়কজাত প্রতি কেজি চিনি ৯২ টাকা দরে দুই থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত কিনতে পারেন গ্রাহকেরা। খোলাবাজারে এই চিনিই ১২০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কম দামে কিনতে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ নিয়মিত বিএসএফআইসি ভবনে ভিড় জমান।

সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) ভবনে চিনি কিনতে যান রাজধানীর কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম মজুমদার। কিন্তু ভবনে ঢুকতেই তাঁর চোখে পড়ে নোটিশ, যাতে লেখা রয়েছে—অনিবার্য কারণবশত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপাতত চিনি বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

কর্মকর্তারা জানান, বিএসএফআইসির উৎপাদিত চিনির প্রায় ৬০ শতাংশ দিতে হয় অত্যাবশ্যকীয় খাত হিসেবে বিবেচিত সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। অবশিষ্ট চিনির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মোড়কজাত করে স্বপ্ন, আগোরাসহ বিভিন্ন সুপারশপগুলোতে সরাসরি বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি নির্দিষ্ট পরিমাণ চিনি প্যাকেটজাত করে বিএসএফআইসি ভবনের নিচতলায় নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া অনুমোদিত ডিলাররা বিএসএফআইসির কাছ থেকে চিনি কিনে বাজারজাত করেন। একজন ডিলার ৮৫ টাকা কেজি দরে বছরে তিন–চারবার চিনি নিতে পারেন। একজন ডিলারের কাছে প্রতিবারে ২৫০ কেজি করে চিনি বিক্রি করা হয়।

বিএসএফআইসির কর্মকর্তারা জানান, কয়েক বছর ধরে দেশে আখমাড়াই ও চিনি উৎপাদনের পরিমাণ কমেছে। এ জন্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে। ২০২১–২২ অর্থবছরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চিনি উৎপাদিত হয়েছে ২৪ হাজার ৫০৯ টন। এর আগের অর্থবছরে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে সেবার চিনি উৎপাদিত হয় প্রায় ৪৮ হাজার ১৩৪ টন। আর ২০১৯–২০ অর্থবছরে চিনি উৎপাদন হয় ৮২ হাজার ১৪০ টন। অর্থাৎ দেশে প্রতিবছরই চিনি উৎপাদন কমছে।

এ ছাড়া সর্বশেষ ২০২১–২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আখমাড়াই হয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৪ মেট্রিক টন। যেখানে ২০১৯–২০ অর্থবছরে আখমাড়াই হয়েছিল ১৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি।

অন্যদিকে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। মূলত আখের উৎপাদন কমায় ও ছয়টি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিনি উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়েছেন বিএসএফআইসি সচিব চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার।

অর্থনৈতিক মন্দা : দোকানে দোকানে ছাঁটাই আতঙ্ক

৮ নভেম্বর ২০২২, কালবেলা

করোনার ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই অর্থনৈতিক মন্দায় চরম বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সব ধরনের দোকানে কমে গেছে বেচাকেনা। সারা মাস ব্যবসা করেও কারও কারও দোকান ভাড়ার টাকা উঠছে না। কুলিয়ে উঠতে না পেরে অনেকেই ছোট করে ফেলছেন ব্যবসা। বেশিরভাগ মালিক কর্মচারী ছাঁটাইসহ খরচ কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এতে সংকটে পড়েছেন দোকান কর্মচারীরা। এরই মধ্যে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। আর ছাঁটাই আতঙ্কে দিন পার করছেন অন্যরা।

ঢাকার মৌচাক, ফরচুন শপিং মল, আয়শা শপিং কমপ্লেক্স, শান্তিনগর টুইন টাওয়ার, বেইলি রোড, নিউমার্কেট এলাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, ইসমাইল ম্যানশন, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স এবং চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, লক্ষ্মীপুর ও মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন খাতের দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এসব তথ্য।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস, তীব্র লোডশেডিং, মার্কেট খোলা রাখার সময় কমিয়ে দেওয়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর। অনেক ব্যবসায়ী দোকান ছেড়ে দিচ্ছেন। আর মালিকরা দোকান ভাড়া ও বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন। কেউবা শোরুম বন্ধ করে গোডাউন বানাচ্ছেন। অনেকে মূল পুঁজি ভেঙে দোকানের নিয়মিত খরচ মেটাচ্ছেন। আবার অনেকে কিস্তির টাকা এড়াতে সপ্তাহে দু-এক দিন দোকান খুলছেন। কোনো কোনো মালিক কর্মচারীদের বিদায় করে দিয়ে নিজেই দোকানে বসছেন।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, দেশে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৭৬৩। এর মধ্যে বিভিন্ন মার্কেট ও পাড়া-মহল্লা মিলিয়ে ঢাকায় দোকানের সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখের মতো। মালিক ও কর্মচারী মিলিয়ে সারা দেশে এ খাতে কাজ করেন প্রায় ৩ কোটি মানুষ। সমিতির নেতারা বলছেন, ব্যবসায় মন্দার কারণে সারা দেশে ৪০ থেকে ৫০ লাখ দোকান কর্মচারী চাকরি হারাতে পারেন। ঢাকায় এ সংখ্যা ৭ থেকে ৮ লাখ হতে পারে।

২৫ হাজার টাকা ঋণের মামলায় ১২ কৃষক জেলে

২৫ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় ৩৭ জন কৃষকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুপুরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার কৃষকদের বরাত দিয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ বলেছে, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ওই কৃষকেরা। ঋণের টাকা পরিশোধ করার পরও তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

সাভার থেকে যাত্রাবাড়ী যাওয়া যাবে মাত্র এক ঘণ্টায়, তবে…

২৬ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

চীনের কঠিন শর্তের ঋণ ও চীনা ঠিকাদারের মাধ্যমে ঢাকায় আরেকটি উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত এই উড়ালসড়ক ২০২৬ সালে চালুর কথা রয়েছে, যার নাম ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়ক।

ঋণের কঠিন শর্ত

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাওয়া এবং মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতিকে সংকটে ফেলেছে। প্রয়োজনীয় আমদানি ও বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ কীভাবে হবে, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া ও বাস্তবায়নে সতর্কতা অবলম্বন করছে। এমন সময়ে ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়কটি বড় ব্যয়ের, কঠিন শর্তের ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এক দশক আগে নেওয়া বলে প্রকল্পটি থেকে সরে আসতে পারছে না সরকার।

উড়ালসড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে চীনা অর্থায়নে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকার) পদ্ধতিতে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার দেবে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। বাকিটা বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শুরুতে চীন নির্মাণকাজের শতভাগ অর্থ ঋণ হিসেবে দেওয়ার কথা বলেছিল। জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও শুল্ক-করসহ স্থানীয় অন্যান্য খরচ সরকারের। পরে চীন প্রকল্পের ৮৩ শতাংশ অর্থায়নে সম্মত হয়। মূল ঋণের সুদ, সার্ভিস ও কমিটমেন্ট চার্জ (অঙ্গীকারের বিপরীতে মাশুল) মিলিয়ে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। প্রথম পাঁচ বছর মূল সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হবে না। তবে কমিটমেন্ট চার্জ দিতে হবে। ২০২৭ সালের মে মাস থেকে পরবর্তী ১৫ বছরে সুদাসলে পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে।

বাংলাদেশকে দেওয়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা যে ঋণ দেয়, তার সুদের হার ১ শতাংশের নিচে থাকে। সাধারণত ৩০ বছরে শোধ করতে হয়। গ্রেস পিরিয়ড (ঋণ নেওয়ার পর যে সময়টা কিস্তি দিতে হয় না) ১০ বছর। চীনা জিটুজি ঋণে গ্রেস পিরিয়ড কম। ফলে উড়ালসড়ক ২০২৭ সালের মধ্যে চালু না হলেও সুদাসল পরিশোধ শুরু হয়ে যাবে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, জিটুজি পদ্ধতির শর্ত হিসেবে প্রথমে চীনের চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে সমঝোতা করে সেতু বিভাগ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্মুক্ত কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। চীনের প্রতিষ্ঠানটিকেই কাজ দিতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদার ও সেতু বিভাগের একাধিক কমিটি দর-কষাকষি করে নির্মাণকাজের ব্যয় নির্ধারণ করে। চূড়ান্ত পর্যায়ে দুই দেশের সম্মতিতে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে।

সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জিটুজি প্রকল্পের নেতিবাচক দিক হলো, একাধিক ঠিকাদারের মধ্যে দর যাচাই করা যায় না। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হারও ঠিকাদারকে বেশি দিতে হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পে কোনো কাজ যুক্ত করতে গেলে (ভেরিয়েশন) ঠিকাদারের দেওয়া দর গুরুত্ব পায়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ ধরনের বড় কাজে উচ্চ বেতনভোগী প্রকৌশলী, যন্ত্রপাতি ও গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ-মালামাল প্রায় সবই বিদেশ থেকে আসে। ফলে প্রকল্পের ব্যয়ের বেশির ভাগই ডলার হিসেবে বিদেশে চলে যায়।

আইএমএফের চাওয়া মেনে নেওয়া শুরু

২৭ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাওয়া বা শর্ত পূরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ভর্তুকি ও ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। আর রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আগামী জুনের মধ্যে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়ন করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারছে না হাই-টেক পার্ক

নভেম্বর ২৫, বণিক বার্তা

তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিকাশের উদ্দেশ্য থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করছে সরকার। এরই মধ্যে গাজীপুর, সিলেট ও রাজশাহীতে তিনটি হাই-টেক পার্কের নির্মাণকাজ শেষও হয়েছে। পার্কগুলোয় কার্যক্রম চালাচ্ছে খুবই স্বল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠান। বিনিয়োগকারীরা শুরুতে আগ্রহ দেখালেও দিনে দিনে তা কমে এসেছে। জমি বা ফ্লোর স্পেস বরাদ্দ নেয়ার পর উৎপাদন শুরুর জন্য নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না তারা। এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কগুলোয় বিপুল পরিমাণ জায়গা বরাদ্দ হলেও তা অব্যবহূতই পড়ে থাকছে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১০ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ)। বিএইচটিপিএর অধীনে এখন হাই-টেক পার্ক, আইটি পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারসহ মোট ৯২টি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে হাই-টেক পার্কের সংখ্যা চার। আইসিটি খাতের বৃহৎ পরিসরের উৎপাদন হাব হিসেবেই গড়ে তোলার লক্ষ্য থেকে হাই-টেক পার্কগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর মধ্যে সবার আগে উৎপাদনে এসেছে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি। এছাড়া সিলেট ও রাজশাহীতে নির্মিত হাই-টেক পার্কে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। রাজশাহীর হাই-টেক পার্কে দুই বছর আগেই উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো তা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়নি। এছাড়া সম্প্রতি ঢাকার দোহারে চতুর্থ ও সর্বশেষ হাই-টেক পার্কটি নির্মাণে গৃহীত প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

রাজশাহী শহর থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে পদ্মাপারে প্রায় ৩১ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় দুই বছর আগেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এখানে কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি। নতুন করে বিনিয়োগেও তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না উদ্যোক্তাদের মধ্যে। বর্তমানে সেখানে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জায়গা ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

রাজশাহী হাই-টেক পার্কে বরাদ্দযোগ্য জমি বা স্পেসের পরিমাণ ৮৩ হাজার ১১০ বর্গফুট। এ পর্যন্ত জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫৮ হাজার ৪১৬ বর্গফুট। এখনো খালি পড়ে রয়েছে ২৪ হাজার ৬৯৪ বর্গফুট। বিএইচটিপিএর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক রাজশাহীতে বিনিয়োগ করেছে মোটে আটটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বিজনেস অটোমেশন ৭ হাজার ৫০০ বর্গফুট, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ১ হাজার ৯৮৭, শপ আপ ২ হাজার ৩৬৩, রিয়েল আইটি ২ হাজার ৪৫৫, এমডি ইনফোটেক ১৪ হাজার ৩৮৭, ফ্লিট বাংলাদেশ ১৪ হাজার ৩৮৭, ডাটামাইন্ড লিমিটেড ২ হাজার ৭২৫ ও চালডাল লিমিটেড ১২ হাজার ৬১২ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে।

ফ্লিট বাংলাদেশের সিইও মো. খায়রুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা যারা দুই বছর আগে কার্যক্রম শুরু করেছি, তারা নিজ নিজ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, যেসব জায়গা এখনো খালি পড়ে আছে সেগুলো দ্রুতই পূরণ হয়ে যাবে।

বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া জমি অব্যবহূত ফেলে রাখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি কালিয়াকৈরেও। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ৩৫৫ একর জমির ওপর গড়ে তোলা দেশের প্রথম ও বৃহত্তম হাই-টেক পার্কটিতে ৮০-৮২টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ছোট পরিসরে বিনিয়োগকারীদের একাংশ কার্যক্রম শুরু করলেও বৃহৎ বিনিয়োগকারীরা তাদের বরাদ্দ পাওয়া জমি অব্যবহূত ফেলে রাখছেন। হাই-টেক পার্কটিতে এখন বৃহৎ পরিসরে সাতটি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান আইওটি ডিভাইস, দুটি প্রতিষ্ঠান অপটিক্যাল ফাইবার ও দুটি প্রতিষ্ঠান সেলফোন তৈরি করছে। চীনভিত্তিক ওরিক্স বায়োটেক লিমিটেড পার্কটিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে জায়গা বরাদ্দ নেয়। বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখনো এখানে কার্যক্রম শুরু করেনি ওরিক্স বায়োটেক।

যেসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারছে না তাদের বরাদ্দ বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানালেন বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি কালিয়াকৈর ও বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি রাজশাহীর ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মাহফুজুল কবির। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কাগজপত্রের জটিলতার কারণে অনেকেই এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারছেন না। হাই-টেক সিটির পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আবার যাদের কার্যক্রম চালানোর আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না, তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।

সিলেটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কে এ পর্যন্ত ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১ দশমিক ৯৮২ একর ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ হাজার ৭৬০ বর্গফুট স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বমানের বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে দেশী-বিদেশী তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে পার্কে আকৃষ্ট করার লক্ষ্য নিয়ে হাই-টেক পার্ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল আইসিটি পেশাজীবীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করা। কিন্তু এখনো সে সুযোগ তৈরি হয়নি। পার্কে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরুর পর সে সুযোগ তৈরি হবে।

জায়গা বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, জায়গা বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই অবকাঠামো নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেনি। অনেকের অবকাঠামো নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সুতরাং এখনই জায়গা বরাদ্দ নেয়া কোম্পানিগুলো উৎপাদনে যেতে পারছে না। আবার যারা স্পেস বরাদ্দ নিয়েছিলেন তাদের অধিকাংশই হাই-টেক পার্ক থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছেন।

সিলেটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কে ছোটবড় মিলিয়ে মোট ১২টি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পার্ক কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, পার্কটিতে সবচেয়ে বেশি ৩২ একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে র্যাংগস ইলেট্রনিকস। এছাড়া আরএফএল ইলেকট্রনিকস জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে ২০ একর এবং আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি পেয়েছে আট একর। ব্যাবিলন রিসোর্সেস, হেলথ ল্যান্ডমার্ক হোল্ডিং, টুগেদার আইটি, ইএলবি, অটোমেশন সার্ভিস লিমিডেট, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল বিল্ডিং প্রডাক্টস, অগ্রণী ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিমাণ জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে।

সিলেট হাই-টেক পার্কে এক একর জায়গার ওপর অবকাঠামো তৈরি শুরু করছে আইটি কোম্পানি টুগেদার আইটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজুল হক ভুঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, হাই-টেক পার্কে আমাদের অবকাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন শেড লাগানোর কাজ চলছে। এখনো আমরা উৎপাদনে যেতে পারিনি। অবকাঠামো নির্মাণ শেষে শিগগিরই উৎপাদনে যেতে পারব বলে আশা করছি।

জমির বাইরেও হাই-টেক পার্কের প্রশাসনকি ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে স্পেস বরাদ্দ পেয়েছে ছয় প্রতিষ্ঠান। তিনটি আইটি কোম্পানির পাশাপাশি অগ্রণী ব্যাংক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগকেও স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সিলেটের হাই-টেক পার্কে দুই হাজার বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে ইন টাচ আইটি। প্রতিষ্ঠানটি এখন সিলেটের হাই-টেক পার্ক থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী চৌধুরী মহসিন সিদ্দিক বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা আইসিটি ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে আমাদের অসুবিধাগুলো জানিয়েছিলাম। পরে এটা বাদ দিয়ে দিয়েছি। কারণ আমাদের যেসব চাহিদা ছিল সে অনুযায়ী তারা আমাদের সুবিধা দিতে পারেনি। এ কারণে আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি। হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে যে ভাড়া চেয়েছিল, তাতে আমাদের পোষাচ্ছিল না। এজন্য বাদ দিয়েছি।

২৫ কেজি চাল পেতে ৫০ জোড়া হাত

২৯ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

২৫ কেজি চালের শেষ বস্তাটি যখন ট্রাকের ওপর খোলা হয়, তখনো সামনে অর্ধশতাধিক লোকের জটলা। সবাই হাত বাড়িয়ে আছেন। চাল নিয়ে বাড়িতে ফিরতে চান। কিন্তু এই চাল তো পাঁচজনের বেশি পাবেন না। বাকিদের শূন্য হাতে ফিরতে হবে। অথচ তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভোর থেকে এই পাঁচ কেজি চালের অপেক্ষা করছিলেন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ওএমএসের (খোলাবাজারে বিক্রি) ট্রাকের সামনে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। বিকেল চারটা পর্যন্ত চাল ও আটা বিক্রির কথা থাকলেও বেলা দুইটার মধ্যেই সব পণ্য শেষ। গুনে গুনে দেখা গেল, সেখানে তখনো ৫৩ জন মানুষ পণ্য না পেয়ে শোরগোল শুরু করছেন।

তাঁদেরই একজন স্থানীয় বাসিন্দা সালমা আক্তার। ওএমএসের চাল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘সেই সকাল থেকে লাইনে আছি। এরপরেও চাল পেলাম না। নয়টার ট্রাক আসল এগারোটায়। তা–ও যদি চাল নিয়ে বাসায় ফিরতে পারতাম, তাহলে হতো। এই সময়ে কাজ করলেও লাভ ছিল। চাল না দিতে পারলে ট্রাকে বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হোক। কিন্তু কেউ পাবে, আর কেউ পাবে না, তা হতে পারে না। কারণ, সবাই এখন কষ্টে আছে।’

আয় কমেছে ৩৭% মানুষের, ব্যয় বেড়েছে বেশির ভাগের

১ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

দেশের বেশির ভাগ মানুষের সংসার চালানোর ব্যয় বেড়ে গেছে। বিপরীতে একটি বড় অংশের মানুষের আয় কমেছে। কিছু মানুষ আছেন যাঁদের আয় কমে যাওয়ায় তাঁরা পারিবারিক সম্পদ বিক্রি করে খাদ্য কিনছেন। আবার কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তি অথবা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক মাসিক প্রতিবেদনে মানুষের আয় কমা, ব্যয় বৃদ্ধি ও খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও বিপন্নতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন ২২ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে, সেপ্টেম্বর মাসে ৩৭ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। আয় কমার কারণ কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কেউ প্রতিদিন কাজ পাচ্ছেন না, আবার কারও আয় কমেছে পণে৵র মূল্যবৃদ্ধি ও আগের চেয়ে কম সহায়তা পাওয়ার কারণেও। ব্যয় বেড়েছে ৮৮ শতাংশ মানুষের।

ডব্লিউএফপি গত জুলাই থেকে এই প্রতিবেদন প্রতি মাসে প্রকাশ করে আসছে। টেলিফোন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ১ হাজার ২০০ মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে কয়েকটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। সেগুলো হলো মাঝারি ও মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের হার কমেছে। জুলাইয়ে যে হার ২৯ শতাংশ ছিল, তা কমে সেপ্টেম্বরে হয়েছে ১৭ শতাংশ। খাবার কিনতে ধার করা, চিকিৎসকের কাছে না যাওয়ার মতো খাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হওয়া মানুষের হারও কিছুটা কমেছে। সেপ্টেম্বরে চাপে বা সংকটে পড়ে ওই ধরনের কৌশল নিতে বাধ্য হওয়া মানুষের হার দাঁড়িয়েছে ৩৪ শতাংশ। জুলাইয়ে তা ছিল ৪৮ শতাংশ।

এমন দু–একটি ইতিবাচক দিকের পরও দেখা যাচ্ছে, মানুষের একটি বড় অংশ এখনো চাপে অথবা সংকটে রয়েছে। জরিপে উঠে আসে, ৮০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁদের জন্য এই সময়ে বড় আঘাত খাদ্যের চড়া দাম। জ্বালানি তেলের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, অসুস্থতা ও চিকিৎসার ব্যয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে এর পরে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মাসের পর মাস খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে এবং মানুষের আয় না বাড়লে, তা সামগ্রিকভাবে দেশে সামাজিক সমস্যা বাড়াবে।

ডব্লিউএফপির জরিপে উঠে আসা জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষের আয় কমেছিল আগস্টে, ৪৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে (৩৭ শতাংশ), তবে জুলাইয়ের পর্যায়ে ওঠেনি। জুলাইয়ে আয় কমার হার ছিল ৩৩ শতাংশ। এই তিন মাসে ৫১ থেকে ৬৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁদের আয় অপরিবর্তিত রয়েছে। আয় বেড়েছে খুব সামান্য সংখ্যক মানুষের। সেপ্টেম্বরে ৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁদের আয় বেড়েছে।

আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ৮৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁদের ব্যয় বেড়েছে। কিছু মানুষের ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন নেই। সামান্য কিছু মানুষের ব্যয় কমেছে বলে জানিয়েছেন।

জরিপে বিভাগওয়ারি খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। দেখা যায়, সিলেট বিভাগের শতভাগ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার (আংশিক, মাঝারি ও মারাত্মক) মধ্যে রয়েছেন। মাঝারি ও মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের হার বরিশাল বিভাগে ২৬, খুলনায় ২২, চট্টগ্রামে ১৮, রংপুরে ১৭, ঢাকায় ১৩, রাজশাহীতে ১২ ও ময়মনসিংহে ৯ শতাংশ। মাঝারি ও মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা থাকা মানুষের জাতীয় গড় হার ১৭ শতাংশ।

এখন মানুষের চার ধরনের সহায়তা দরকার বলে ডব্লিউএফপি চিহ্নিত করেছে। খাদ্যসহায়তা দরকার ৪২ শতাংশ মানুষের। জীবিকার উপায় ৪৬, স্বাস্থ্যসহায়তা ২৬, শিক্ষা ১৭ ও বাসস্থানের সহায়তা দরকার ৯ শতাংশ মানুষের।

জরিপে আর্থিক ও খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের কত অংশ সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পাচ্ছেন, তার হিসাব তুলে ধরা হয়। দেখা যায়, সংকটে থাকা প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন এ ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের আর্থিকসংকটে মানুষ পুষ্টিকর খাবার কেনা কমিয়ে দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামি খাবার কেনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এসব খাবারে সাধারণত পুষ্টিকর উপাদান কম থাকে এবং শর্করা বেশি থাকে, যা একজন মানুষের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার পথে বাধা তৈরি করে।

এক বছরের ব্যবধানে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ৩ বিলিয়ন থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলারে!

ডিসেম্বর ০৪, ২০২২, বণিক বার্তা

দেশে গত অর্থবছরে (২০২১-২২) মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে আগের অর্থবছরের চার গুণেরও বেশি। এর পেছনে পুরনো ঋণপত্রের (এলসি) বিলম্বিত অর্থ পরিশোধ ও যন্ত্রপাতির মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করা হলেও অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, শুধু এ দুটি বিষয় দিয়ে মূলধনি যন্ত্রের আমদানি ব্যয়ে এত বড় উল্লম্ফনকে কোনোভাবেই যৌক্তিকতা দেয়া যায় না। ওভার ইনভয়েসিংয়ের (আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা) মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তারা। একই সঙ্গে এ বিষয়ে বাণিজ্যিক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা বলছেন, সংস্থাগুলোর এখনই এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, যাতে সামনের দিনগুলোয় আর এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত অর্থবছরে দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৩২ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরেও (২০২০-২১) বাংলাদেশের আমদানিকারকরা এ বাবদ ব্যয় করেছিলেন ৩০৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরে মূলধনি যন্ত্র আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ৩৩৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর আগে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছিল কভিডের আগে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। সে সময়ও মূলধনি আমদানি সীমিত ছিল সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

ইসলামি ধারার ব্যাংককে টাকা ধার দিতে বিশেষ ব্যবস্থা

০৫ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিতে বিশেষ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা আজ সোমবার থেকেই কার্যকর হয়েছে। নতুন এ ব্যবস্থার নাম ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি।

এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এবং ইসলামিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করতে ১৪ দিন মেয়াদি তারল্য–সুবিধা ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শরিয়াহ ব্যাংকগুলো সপ্তাহের প্রতিটি কার্যদিবসে নিয়মিতভাবে এ সুবিধা গ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবে।

১০ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি

৮ ডিসেম্বর ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ২০১১ সালের ২৭.০৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৩৮% বেড়ে ২০২১ সালে দাঁড়ায় ৯১.৪৩ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।

মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেবট রিপোর্ট ২০২২’ শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে আরো জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের বৈদেশিক ঋণ এই একই সময়ে বেড়েছে ৮৩%, পাকিস্তানের বেড়েছে ১০১% এবং শ্রীলঙ্কার ১১৯%।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৯৫.৮৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের মজুদ ছিল ৭৩.৫০ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২১ সালে দেশের দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ ৭০.০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগে ছিল ৬০.৪১ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের মধ্যে ৬২.৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ পেয়েছে পাবলিক সেক্টর।

এদিকে, ২০২০ সালে যেখানে আইএমএফ ক্রেডিট এবং এসডিআর বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২.১১ বিলিয়ন ডলার; ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩.৩০ বিলিয়ন ডলারে।

এদিকে, স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ ২০২১ সালের শেষে ৬৫% বেড়ে হয়েছে ১৮.০৯ বিলিয়ন ডলার, যা এর আগের বছর ছিল ১০.৯৯ বিলিয়ন ডলার।

খাদ্যঘাটতির ৪৫ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

১০ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

খাদ্যঘাটতিতে থাকা বিশ্বের ৪৫টি দেশের তালিকায় আবারও এসেছে বাংলাদেশের নাম। ওই তালিকায় আফ্রিকার ৩৩টি, এশিয়ার ৯টি, লাতিন ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ২টি এবং ইউরোপের একমাত্র দেশ হিসেবে ইউক্রেনের নাম রয়েছে। উৎপাদন ও আমদানি হ্রাস এবং খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব দেশকে খাদ্যঘাটতির তালিকায় রেখেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।

জাতিসংঘের এই সংস্থা চলতি মাসে ‘শস্য উৎপাদনের সম্ভাবনা এবং খাদ্য পরিস্থিতি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি ৪ ডিসেম্বর প্রকাশ করেছে। তিন মাস পর পর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এফএওর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নাম তালিকায় যুক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক সংকট, রোহিঙ্গাদের খাদ্যের জোগান, বন্যার কারণে ফসল উৎপাদন হ্রাস এবং খাদ্যের আমদানি খরচ ও মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়। এই তালিকায় ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশের নাম রয়েছে।

‘এটা কি বাংলাদেশ, নাকি আমরা কোনো বেহেশত বানাচ্ছি’

ডিসেম্বর ১০, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা হয়ে গেলে প্রশ্ন জাগে এটা কি বাংলাদেশ, নাকি কোনো স্বর্গ বা বেহেশত বানানো হচ্ছে। বিদেশিরা এসেও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

আজ শনিবার বিকেলে সাভারের রেডিও কলোনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাড়ি টাঙ্গাইল। এই নবীনগর থেকে এবং টাঙ্গাইল যাওয়ার যে রাস্তা, আমি পৃথিবীর বহু দেশে গিয়েছি, প্রায় এমন কোনো দেশ নেই যে যাইনি। কিন্তু যখন চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে যাই হৃদয় প্রাণ জুড়িয়ে যায়। মনে হয় আমি কি বাংলাদেশে আছি, না আমি ওয়াশিংটনে আছি, টোকিওতে আছি?’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা অনেকেই পদ্মাসেতু দেখতে গিয়েছেন। এই মাওয়া থেকে ভাঙ্গা হয়ে গেলে মনে হয় এটা কি বাংলাদেশ? না বাংলাদেশকে আমরা কোনো স্বর্গ বানাচ্ছি, বেহেশত বানাচ্ছি? বিদেশিরা এসেও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।’

ভাটায় ‘দাদনে’ পুড়ছে কৈশোর-তারুণ্য

১১ ডিসেম্বর ২০২২, সমকাল

কৃষিজমি ও বসতি এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা । সেখানে বড়দের সঙ্গে কাজ করছে কিশোর-তরুণরাও। অবৈধভাবে তাদের কাজ করানোর পেছনের গল্পটা ভয়ংকর । টাকার বিনিময়ে শ্রমিক সর্দার অন্তত ছয় মাসের জন্য তাদের দরিদ্র পরিবার থেকে নিয়ে যান ভাটায় । কাজ করতে হয় বড়দের মতোই । ভারী কাজ করতে না পেরে বাড়ি ফিরতে চাইলে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না বাবা-মায়ের সঙ্গেও।

করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগে অনেক ইটভাটায় শিশু শ্রমের এমন সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে । সন্তানকে ভাটায় পাঠানোর পর অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারগুলো । নির্যাতনের কথা জানলেও স্ট্যাম্প চুক্তি থাকায় সন্তানকে ফেরাতে পারেন না বাবা-মা।

সম্প্রতি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি পরিবারে খোজ নিতে গিয়ে পাওয়া গেছে এমন ভয়ানক চিত্র। কিশোর তরুণদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে শত কিলোমিটার দূরে ভোলার চর ফ্যাসন ও লালমোহন উপজেলায়। এমন পাঁচজন কিশোর তরুণ নয়ন, আশিক, ভীম, আল আমিন ও অসীমকে ফেরাতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে পরিবারগুলো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শ্যামনগরের রামজীবনপুর জেলেপাড়ার তিন কিশোর ও দুই তরুণকে অর্ধলাখ থেকে শুরু করে লাখ টাকার চুক্তিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চরফ্যাসনে। সেখানে দুটি ইট ভাটায় কাজ করাচ্ছেন শ্রমিক সরদার মিজানুর রহমান। স্বল্প পরিশ্রমের শর্তে বাড়ি থেকে নিয়ে এলেও এখন কৌশলে আটকে রেখে ভারী কাজ করানো হচ্ছে। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে নিজেদের উদ্ধারের আকুতি জানিয়েছে তারা। বড়দের মতো কাজ করতে না পারায় তারা শিকার হয়েছে নির্যাতনের ।

ঘটনা জানার পর সন্তানদের ফেরাতে শ্যামনগরের ইউএনও মো. আক্তার হোসেনের কাছে গত বৃহস্পতিবার লিখিত আবেদন করেছে পাচজনের পরিবার । বাবা-মা জানিয়েছেন, চ্যালা দিয়ে গত রোববার রাতে বেধড়ক পেটানো হয়েছে । আশিক ধীবরের মা সারথি ধীবর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, রাত ৩টার সময় ঘুম থেকে তুলে শিশুদের বড়দের সঙ্গে কাজ করানো হয়। বিরতি চাইলে মারধর । অগ্রিম নেওয়া ৪৫ হাজার টাকা ফেরতের প্রস্তাব দিলেও মানছেন না সর্দার। প্রশাসন উদ্যোগ নেয়ায় তার স্বামী টাকা ম্যানেজ করে সেখানে যাবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চরফ্যাসনে কৃষিজমি ও বসতি এলাকায় অন্তত ২৪টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। কাজ করছে পাচ শতাধিক শ্রমিক। এর মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু প্রায় অর্ধশত শিশু-কিশোরদের ছয় মাসের কাজ করানোর চুক্তিতে ২০ হাজার থেকে অর্ধলাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। তবে তরুণরা পান লাখ টাকা পর্যন্ত।

সরেজমিনে শিশুশ্রমের প্রমাণ মিলেছে। একাধিক শিশু জানায়, শ্রমিক সরদার সহজ কাজ ও অধিক বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের ভাটায় নিয়ে আসেন। তবে করানো হচ্ছে মাটি বহনসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এ কাজ করতে না পারায় প্রায়ই সরদারের হাতে মারধরের শিকার হতে হয়।

স্বজনরা বলছেন, করোনাকালে স্কুল ও মাদ্রাসা বন্ধের সুযোগে লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন হয়ে পড়ে অনেক শিশু । গত অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে শ্যামনগরের জয়নগর গ্রামের মিজানুর রহমান ছয় মাসে ৫২ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের সন্তানদের নিয়ে যান। এর আগে ১ লাখ ১৫ হাজার ও ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় নিয়ে যান দুই তরুণকে । ভাটা থেকে বয়স্ক শ্রমিকরা পালিয়ে যাওয়ায় শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।.. ..

পরিত্যক্ত রেলপথে নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি

ডিসেম্বর ১১, ২০২২, বণিক বার্তা

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথটি ২০০৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রায় ২৮ কিলোমিটার রেলপথ। নজরদারির অভাবে চুরি গেছে অধিকাংশ রেল। অবশিষ্ট যেটুকু আছে, তাও চাপা পড়েছে মাটির নিচে। রেলপথটিতে ব্যবহূত মূল্যবান নাটবল্টু, তার, সিগন্যাল ব্যবস্থাসহ স্টেশনের আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর বেশির ভাগই আর নেই। শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ সেকশনের প্রায় ১৪ কিলোমিটার রেলপথের অবস্থা আরো খারাপ। ২০০৩ সাল থেকে বন্ধ রেলপথটির কোনো মালামালই এখন আর বহাল তবিয়তে নেই। কিছু রেল তুলে রাখা হয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে। অন্যদিকে রশিদপুর সাইডিং লাইনে রেল থাকলেও ফিশ প্লেট, ফিশ বোল্ট, স্লিপারের মতো গুরুত্বপূর্ণ মালামালের কোনো অস্তিত্ব নেই।

হবিগঞ্জ জেলায় সব মিলিয়ে এমন পরিত্যক্ত রেলপথ রয়েছে ৪১ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। আর দেশজুড়ে পরিত্যক্ত রেলপথের পরিমাণ ১৫৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার। গত ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৩তম সভার কার্যপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এসব পরিত্যক্ত রেলপথের বেশির ভাগ মালামালই রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারির অভাবে চুরি ও নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা জানান, পরিত্যক্ত রেলপথগুলোর মধ্যে কয়েকটি বন্ধ হয়ে যাওয়া শাখা লাইন এবং বিভিন্ন স্টেশনের সাইডিং লাইন। এগুলো দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় মাটিতে ঢেকে গিয়েছে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে বিদ্যমান স্লিপার।

ব্যাংকে টাকা রেখে ঠকছেন মানুষ

১৩ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

ব্যাংকে টাকা রেখে ঠকছেন আমানতকারীরা। ব্যাংক যে হারে সুদ দিচ্ছে, তার তুলনায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। এতে প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। এখন ব্যাংকে অর্থ রাখা মানেই লোকসান।

সুদহার জোর করে নয়-ছয় করে রাখার কারণেই সাধারণ মানুষের এই বিপত্তি। ২০২০ সালের শুরুতে সরকার ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। সেই হার এখনো বহাল আছে। অথচ বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় সংকট চলছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে দেশগুলো সুদহার বাড়িয়েছে। ব্যতিক্রম তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ। আর সুদহারে কোনো পরিবর্তনই আনেনি বাংলাদেশ।

মূলত কিছু ব্যবসায়ীকে খুশি করতেই ঋণের সুদহার কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ঋণ নেওয়া সস্তা হয়ে গেছে। এতে মূল্যস্ফীতির মধ্যেও মুদ্রা সরবরাহ বাড়ছে। সেই ঋণ দেওয়া হচ্ছে বেনামে ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে, এর বড় অংশ খেলাপি হচ্ছে, আরেক অংশ হচ্ছে পাচার।

যেভাবে সাধারণ মানুষ ঠকছে

অর্থনীতির তত্ত্ব অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় সুদের হার কম হলে তখন প্রকৃত সুদের হার ঋণাত্মক হয়। এখন যেমন হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১০। আর সে সময়ে দেশের ব্যাংক খাতের আমানতের গড় ভারিত (ওয়েটেড এভারেজ) সুদহার ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ফলে একজন আমানতকারীর প্রকৃত সুদহার ছিল ঋণাত্মক ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ (৯.১০-৪.০৯=৫.০১)। এর অর্থ হচ্ছে, ব্যাংকে ১০০ টাকা রাখলে এক বছর পর আমানতকারী প্রকৃতপক্ষে পাচ্ছেন ৯৪ টাকা ৯৯ পয়সা। অর্থাৎ প্রকৃত সুদের হার কমে গিয়ে বছর শেষে তাঁর মূল আমানতও ৫ টাকা ১ পয়সা খেয়ে ফেলছে মূল্যস্ফীতি। এখানেই শেষ নয়। একজন আমানতকারীর সুদ আয়ের ওপর দিতে হয় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর। ফলে প্রকৃত আয় আসলে আরও কমে যায়। নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। ফলে পরিস্থিতি প্রায় একই রকম আছে।

ওএমএসের চাল-আটার জন্য গাজলী বেগমের ২৮ ঘণ্টার অপেক্ষা

১৪ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

আধাপাকা দোকানের মেঝেতে শুয়ে আছেন কয়েকজন নারী। কাঁথা মুড়ি দিয়ে অনেকে জবুথবু হয়ে বসে আছেন। ঘড়িতে তখন রাত ১১টা। বাইরে শীতের আগমনী হিমেল হাওয়া বইছে। মেঝের এক পাশে ভাঙা ইট আর পিঁড়ির সারি। মেঝেতে যাঁরা শুয়েবসে আছেন, তাঁরা মূলত ওই ইট আর পিঁড়িগুলো পাহারা দিচ্ছেন। পরদিন সকালে ওই দোকানের সামনের সড়কের মোড়ে খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচির চাল-আটা পাওয়া যাবে। তাই আগের রাত থেকেই ইট আর পিঁড়ি দিয়ে নারীরা পণ্যপ্রাপ্তির লাইনে নিজের অবস্থার নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল সোমবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বিশ্বরোড মোড়ে এ দৃশ্যের দেখা মেলে। সেখানে পৌর এলাকার বালিগ্রামের গাজলী বেগমের (৬২) সঙ্গে কথা হয়। তাঁর সঙ্গে সরকারপাড়ার ফিরোজা বেগম (৩৮), সদর উপজেলার বারঘরিয়া ইউপির কাজিপাড়ার রোকশানা বেগম (৪২) ও পৌর এলাকার উপর রাজারামপুরের সাদিকুল ইসলামের স্ত্রী মুক্তারা বেগম (৩৮) শুয়ে ছিলেন। আরও তিনজন নারী সেখানে আছেন। তবে গাজলী ছাড়া অন্যরা কেউ কথা বলতে রাজি হলেন না। ওই নারীদের মধ্যে একজন বললেন, ‘কথা বলে কী লাভ! আপনারা কি আমাদের চাল-আটা পাইয়ে দিবেন?’

জ্বালানি তেল বিক্রিতে গরমিল ১৫.৫৫ লাখ মেট্রিক টনের

১৪ ডিসেম্বর ২০২২, শেয়ার বিজ

দেশে জ্বালানি তেল আমদানির সঠিক কোনো তথ্য নেই। কারণ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র সরাসরি তেল আমদানি করে। এছাড়া তেলের চাহিদার সঠিক হিসাবও নেই। জ্বালানি বিভাগ এক হিসাব দিচ্ছে, বিপিসি দিচ্ছে আরেক হিসাব। ফলে জ্বালানি তেল বিক্রির সঠিক তথ্যও পাওয়া যায় না। বর্তমানে দুই হিসাবে গরমিল প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ মেট্রিক টনের, যার বাজারমূল্য কয়েকশ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা-বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) প্রকাশিত ‘এনার্জি ডেটা ম্যানেজমেন্ট: চ্যালেঞ্জেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের ভুলের তথ্য বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। গত সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি বিক্রির ভিন্ন ভিন্ন হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর বিপিসির হিসাবে দেশে আট ধরনের জ্বালানি পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে ওই আট ধরনের জ্বালানি পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪৬ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩৯ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দুই হিসাবের পার্থক্য ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন। এতে বিপিসির হিসাবে জ্বালানি বিক্রি বেশি দেখানো হয়েছে ২৫ দশমিক ১০ শতাংশ।

নিট রফতানি জিডিপির মাত্র ৫ শতাংশ

ডিসেম্বর ১৭, ২০২২, বণিক বার্তা

দেশের মোট রফতানি আয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান ৮০ শতাংশেরও বেশি। কর্মসংস্থানের দিক থেকেও তৈরি পোশাক এখন দেশের বৃহত্তম খাত। শিল্পটিকে এখন দেখা হয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে। যদিও দেশের মোট জিডিপিতে তৈরি পোশাকের নিট রফতানির অবদান খুবই কম। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশের মোট জিডিপিতে তৈরি পোশাক খাতের নিট রফতানির অবদান ৫ শতাংশেরও কম।

আয়কর অব্যাহতি, ব্যাংক খাত বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে (ইডিএফ) ঋণ অর্থায়নসহ নানা ধরনের নীতিগত ছাড় ও সুবিধা পেয়ে থাকে তৈরি পোশাক খাত। এসব নীতি সহায়তার সুবাদে খাতটির সম্প্রসারণ হলেও জোরালো হয়নি জিডিপিতে তৈরি পোশাকের নিট রফতানির অবদান।

বিশ্বব্যাপী রফতানি খাতের প্রকৃত অবদানকে বিশ্লেষণ করা হয় নিট রফতানির হিসাবে। পণ্যের মোট রফতানি থেকে কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বাদ দেয়ার পর পাওয়া অবশিষ্ট অংককে বলা হয় নিট বা প্রকৃত রফতানি। আবার দেশের মোট জিডিপিতে নিট রফতানির অবদানকে দেখা হয় বাণিজ্য খাতের পরিস্থিতি পর্যালোচনার অন্যতম সূচক হিসেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের মোট রফতানি ছিল ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের কিছু বেশি। সেখান থেকে প্রায় ১ হাজার ৯৪৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বাদ দিলে নিট রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৩১৭ কোটি ডলারে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত অর্থবছরে জিডিপির মোট প্রক্ষেপিত পরিমাণ ৪৬ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। সে হিসেবে দেশের মোট জিডিপিতে তৈরি পোশাক খাতের নিট রফতানির অবদান দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশে।

‘কলকাতার চেয়ে ঢাকার মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ৪ গুণ বেশি’

ডিসেম্বর ১৭, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

যাত্রীসাধারণের মতামত ও কোনো ধরনের পর্যবেক্ষণ ছাড়া ঢাকার সিটিবাসের দ্বিগুণ হারে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ অযৌাক্তিক ও গণবিরোধী উল্লেখ করে চালুর আগেই মেট্রোরেলের কিলোমিটার প্রতি ও সর্বনিম্ন ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা ও ভারতের কলকাতা শহরের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, মাথাপিছু আয় ও গড় জিডিপি বিবেচনায় নিলে প্রায় সব সূচকে সমান অবস্থানে থাকলেও কলকাতার মেট্রোরেলের তুলনায় ঢাকার মেট্রোরেলে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া দ্বিগুণ বাড়তি ও সর্বনিম্ন ভাড়া ৪ গুণ বাড়তি নির্ধারণ করায় যাত্রীস্বার্থ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বেসরকারি লক্কড়-ঝক্কড় বাস কোম্পানিগুলো লাভবান হবে ও সামর্থ্যহীন যাত্রীসাধারণ মেট্রোরেল ব্যবহারের সক্ষমতা হারাবে। ফলে মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে।’

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘কলকাতায় মেট্রোরেলের ভাড়া সড়ক পরিবহনের তুলনায় সবচেয়ে কম, সেটা কলকাতা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। কলকাতায় মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ রুপি বা ৬ টাকা। আর ঢাকায় মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। কলকাতায় মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ ভাড়া ২৫ রুপি বা ৩১ টাকা। ঢাকায় মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা। কলকাতায় ৫ রুপি বা ৬ টাকা দিয়ে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়, ১০ রুপিতে ৫ কিলোমিটার, ১৫ রুপিতে ১০ কিলোমিটার, ২০ রুপিতে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়। ২০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ রুপি বা ৩১ টাকা লাগে। বাংলাদেশে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা, যা কলকাতার মেট্রোরেলের চেয়ে ৪ গুণ বেশি। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মেট্রোতে একই দূরত্বে ৪০ রুপি বা ৫০ টাকা লাগে। যা ছুটির দিনে ৩০ রুপিতে নেমে আসে। দিল্লির মেট্রোতে ৩২ কিলোমিটার পথ ৬০ রুপিতে যাতায়াত করা যায়।’

‘পাকিস্তানের লাহোরে অরেঞ্জ লাইন মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া পাকিস্তানি ২০ রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ টাকা। ২৭ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ৪০ রুপি বা ১৮ টাকা লাগে। লাহোরের মেট্রোতে প্রথম ৪ কিলোমিটার ২০ রুপি বা ৯ টাকা। ৫ কিলোমিটার থেকে ৮ কিলোমিটারের জন্য ২৫ রুপি বা ১১ টাকা, ৯ থেকে ১২ কিলোমিটরের জন্য ৩০ রুপি বা ১৪ টাকা লাগে। ১৩ থেকে ১৬ কিলোমিটারের জন্য ৩৫ রুপি বা ১৬ টাকা লাগে। ১৬ থেকে ২৭ কিলোমিটারের জন্য ৪০ রুপি বা ১৮ টাকা লাগে। আগে লাহোর মেট্রোতে যেকোনো দূরত্বে যাতায়াতের জন্য ৪০ রুপি বা ১৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা ছিল। এক সমীক্ষায় দেখা গেল, ৮৮ ভাগ যাত্রীই পুরো ২৭ কিলোমিটারের বদলে প্রথম ১৬ কিলোমিটার অংশে যাতায়াত করেন। তখন মেট্রো কর্তৃপক্ষ যাত্রীসাধারণের সুবিধার্থে এভাবে স্ল্যাব ভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ করেন’, বলেন তিনি।

চীনের ঋণে প্রতিশ্রুতির মাত্র ১৪% অর্থ ছাড়

১৯ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে বিশেষ উচ্চতায় নিতে ছয় বছর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশে এসেছিলেন। ঐতিহাসিক ওই সফরে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ, যোগাযোগ অবকাঠামো, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত ২৭টি প্রকল্পে চীন ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

তবে চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের পর পেরিয়ে গেছে ছয় বছর। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত চীনের প্রকল্পগুলোর মধ্যে আটটি প্রকল্পের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ৭৮০ কোটি ডলার হলেও এ পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। অর্থাৎ চীন প্রতিশ্রুত অর্থের মাত্র ১৪ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। আর ২৭ প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ২৭টি প্রকল্পের মধ্যে এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জন্য ছয়টি জাহাজ কেনা, দাসেরকান্দিতে পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প, মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত জ্বালানি তেলের পাইপলাইন ও ‘মুরিং’ স্থাপন, বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের উন্নয়ন, জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে তৃতীয় ধাপের উন্নয়ন এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন—এই আট প্রকল্পের জন্য ৭৮০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি সই হয়েছে। চীন এ পর্যন্ত দিয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার।

ব্যাংকগুলোর তার‌ল্য সংকটের মধ্যে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে ছাড় দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

১৯ ডিসেম্বর ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো তার‌ল্য সংকটে মধ্যে ব্যবসায়িদের মেয়াদী ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিশোধযোগ্য মেয়াদী ঋণের মাত্র ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি হবে না মর্মে সুযোগ দেওয়া হয়।

সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বকেয়া অংশ চলতি ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তিতে এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে একটি সার্কুলার ইস্যু করে সকল তফসিলি ব্যাংকের এমডিদের কাছে পাঠিয়েছে।

সুরক্ষার কথা শুধু মুখেই রোজ কমছে কৃষিজমি

২০ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

মোংলা বন্দর সচল রাখতে চলছে পশুর নদ খনন। বন্দর কর্তৃপক্ষ খননের বালু ফেলে মোংলার চিলা এলাকার ৭০০ একর জমিতে। এর পর তিন ফসলি এসব জমির চাষাবাস শিকেয় ওঠে। পশুর নদ খননের বাকি বালু একইভাবে খুলনার দাকোপের বাণীশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর তিন ফসলি জমিতে ফেলার তোড়জোড় চলে। তবে চাষিদের প্রতিরোধের মুখে আপাতত বন্ধ রয়েছে বালু ফেলার প্রক্রিয়া।

ইট তৈরিতে ফসলি জমির মাটি লুটের প্রতিবাদে খোদ কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নিজ জেলা টাঙ্গাইলের ক্ষুব্ধ কৃষকরা মন্ত্রীকে এ বছরের শুরুতে চিঠি দেন। মন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরও ইটভাটার মালিকদের ছোবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ওই এলাকার ফসলি জমি।

এভাবেই কখনও সরকারি-বেসরকারি উন্নয়নের কোপ, কখনও ব্যক্তি পর্যায়ের আগ্রাসনের কবলে পড়ছে কৃষিজমি।

ইটভাটার জন্য মাটি লুট, সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, জনসংখ্যার বিস্ম্ফোরণ, শিল্পায়ন, আবাসন প্রকল্প, নগরায়ণ, ব্যক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা কারণে দেশজুড়েই কৃষিজমি কমছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবতো আছেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাদি জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার বন্ধে সরকারকে হতে হবে কঠোর। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। প্রশাসনের উচ্চ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নিতে হবে সমন্বিত উদ্যোগ। অপচয় হওয়া জমির বড় অংশে চাষাবাদ করা গেলে তা ভবিষ্যৎ খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি ফসল বিন্যাস, পরিকল্পনা অর্থাৎ বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদকেই কৃষি উৎপাদনের গতি অব্যাহত রাখার একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

আবাসন কোম্পানির আগ্রাসন :ঢাকা মহানগরের চারপাশে গিয়ে দেখা যায়, আবাসন কোম্পানিগুলোর অগণিত সাইনবোর্ড। একেকটি কোম্পানি শত শত একর আবাদি জমি কিনেছে। তারা ওইসব জমি ভরাট করে বেশি দামে বিক্রি করবে। এর আগে এভাবেই শত শত একর ফসলি জমি কিনে নির্মাণ করা হয়েছে আবাসন। ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা।

ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২২০ হেক্টর আবাদি জমি অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি, শিল্পকারখানা, রাস্তাঘাট, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে মাথাপিছু চাষযোগ্য জমি ১৪ শতাংশ থেকে কমে ৬.২০ শতাংশ হবে।

ফসলহীন জমি :বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট জমির পরিমাণ ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৬৫ হাজার একর। এর মধ্যে ২ কোটি ৮১ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ হয়। এ ছাড়া প্রায় ৬ লাখ ৭১ হাজার একর জমি আবাদযোগ্য হওয়ার পরও তা চাষের আওতায় আসেনি। আবাদযোগ্য জমি অপচয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০ জেলার মধ্যে বান্দরবানে ১ লাখ ৬ হাজার একর, সুনামগঞ্জে ৯ লাখ ২৬ হাজার, ফরিদপুরে ৪৩ হাজার, সিলেটে ৩৯ হাজার, নেত্রকোনায় ৩২ হাজার, মৌলভীবাজারে ৩১ হাজার, চট্টগ্রামে ২৯ হাজার, টাঙ্গাইলে ২৩ হাজার, হবিগঞ্জে ২১ হাজার ও কিশোরগঞ্জে ২১ হাজার একর রয়েছে।

বিবিএসের তথ্য বলছে, ১৯৮০ সালে মোট জমির চেয়ে কৃষিজমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমে আসে।

কৃষিজমির মালিকরা আগে মূলত বর্গাচাষির হাতে চাষাবাদের ভার ছেড়ে দিতেন, তবু চাষাবাদের সঙ্গে তাঁদের কিছুটা হলেও সম্পৃক্ততা থাকত। কয়েক বছরে দেশের কৃষিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। এখন চাষের সঙ্গে জমি মালিকের সম্পর্কই থাকছে না।

অর্থনীতিবিদ স্বপন আদনান বলেন, দেশের প্রায় ৪৮ শতাংশ কৃষিজমি ইজারার আওতায় চলে গেছে। অকৃষি খাতের বিকাশের কারণে গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজের প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে।

বিআইডিএসের গবেষণা : বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ‘কৃষিজমি অকৃষি জমিতে রূপান্তর’ শীর্ষক এক গবেষণায় ১০ খাতে অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমি অকৃষি খাতে ব্যবহারের তথ্য তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে অপরিকল্পিত দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের বিষয়ে বলা হয়, প্রতি বছর মেট্রোপলিটন এলাকায় ১০.৫৩ শতাংশ, আরবান এলাকায় ৫.২৬, পেরি-আরবান এলাকায় ৯.৫২, রুরাল এলাকায় ৭.৫ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। ওইসব এলাকায় দোকান ও অপরিকল্পিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে প্রতিবছর মোট আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে ৮.৪৭ শতাংশ। অপরিকল্পিত কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে শুধু আরবান এলাকায় ৫.২৬ শতাংশ কৃষিজমি বিনষ্ট হচ্ছে। এই হিসাব অনুযায়ী এই খাতে প্রতিবছর মোট কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে ১.১৩ শতাংশ। অপরিকল্পিত শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩.৫১ শতাংশ, আরবান এলাকায় ৫.২৬ শতাংশ, পেরি-আরবান এলাকায় ২.৩৮ শতাংশসহ বছরে মোট ২.৮২ শতাংশ কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে।

অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণে প্রতি বছর মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫.২৬ শতাংশ, আরবান এলাকায় ৫.২৬ শতাংশ, পেরি-আরবান এলাকায় ১৯.০৫ শতাংশ, রুরাল এলাকায় ১০ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর এই খাতে নষ্ট হচ্ছে মোট ৯.৬০ শতাংশ কৃষিজমি। অপরিকল্পিত ঘর নির্মাণে প্রতিবছর মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫৯.৬৫ শতাংশ, আরবান এলাকায় ৫৫.২৬, পেরি-আরবান এলাকায় ৫২.৩৮ ও রুরাল এলাকায় ৫০ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এই হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর এই খাতে নষ্ট হচ্ছে ৫৪.৮০ শতাংশ কৃষিজমি। অপরিকল্পিত কারখানা নির্মাণে প্রতিবছর মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫.২৬ শতাংশ ও রুরাল এলাকায় ২.৫ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এই হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর এই খাতে নষ্ট হচ্ছে ২.৬৭ শতাংশ কৃষিজমি। অব্যবহূত জমির কথাও বলা হয়েছে গবেষণায়। মেট্রোপলিটন এলাকায় ১.৭৫ জমি অব্যবহূত রয়েছে। গবেষণার হিসাব অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর দশমিক ৫৬ শতাংশ জমি নষ্ট হচ্ছে।

বিবিএসের কাজ ও দক্ষতা নিয়ে মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীর প্রশ্ন

২৮ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শুমারিতে উঠে আসা তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অন্যদিকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম সরকারি সংস্থা বিবিএসের দক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে ‘কৃষিশুমারি ২০১৯’ প্রকাশ করে বিবিএস। সেই অনুষ্ঠানেই প্রকাশ্যে সরকারি এই সংস্থার কাজের মান ও দক্ষতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী।

শুমারিতে দেশে গবাদিপশু গরু-ছাগলের যে হিসাব উপস্থাপন করেছে বিবিএস, তা সঠিক নয় বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, গরু মানে তো দেশের অভ্যন্তরে থাকা সব গরু। ছাগল মানে তো দেশের ভেতরে থাকা সব ছাগল। কিন্তু সেই গরু-ছাগল নিয়ে এত ভাগাভাগি কেন? বিবিএস কেন বাণিজ্যিক খামার বাদ দিয়ে শুধু পরিবারভিত্তিক গরু-ছাগলের তথ্য প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পরিবারভিত্তিক যেমন গরু-ছাগল পালন করা হয়, তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও গরু-ছাগলের খামার রয়েছে। কিন্তু বিবিএস কৃষিশুমারিতে বাণিজ্যিক ফার্মের গরু-ছাগলের হিসাব যোগ করেনি। শুধু খানাভিত্তিক গরু-ছাগলের হিসাব করেছে। এভাবে শুমারি করা ঠিক হয়নি।

অন্যদিকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বিবিএসের কৃষিশুমারি কেন এত দেরিতে প্রকাশ করা হলো, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ১০ বছর পরপর কৃষিশুমারি হওয়ার কথা। কিন্তু বিবিএস তা করতে পারছে না। আবার সঠিক সময়েও শুমারির ফল প্রকাশ করতে পারছে না। তিন বছর আগে করা শুমারির ফলাফল কেন এখন প্রকাশ করা হলো, তা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।

‘কৃষিশুমারি ২০১৯’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন, বিবিএস মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান। অনুষ্ঠানে কৃষিশুমারির মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিবিএসের কৃষি শাখার পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ।

দেশে গরু-ছাগল বেড়েছে, তবে সঠিক সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এর আগে কৃষিশুমারি হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন গরু ছিল ২ কোটি ৫৭ লাখ। ২০১৯ সালের শুমারিতে তা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৯৫ লাখ। অর্থাৎ, ১১ বছরে দেশে গরু বেড়েছে ৩৮ লাখ।

একইভাবে দেশে আগের চেয়ে ছাগল বেড়েছে। ২০০৮ সালে ছাগল ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ। ২০১৯ সালের শুমারি অনুযায়ী, দেশে ছাগল আছে ১ কোটি ৯৪ লাখ। অর্থাৎ, আগের চেয়ে ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে ৩১ লাখ। যদিও গরু-ছাগলের এই তথ্য নেওয়া হয়েছে শুধু পরিবার (খানাভিত্তিক) থেকে। এই প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, শুমারিতে বাণিজ্যিক ও খানা দুটির তথ্যই থাকা উচিত। যাতে প্রকৃত তথ্য উঠে আসে।

শুমারি প্রকাশ অনুষ্ঠানে গরু-ছাগলের তথ্য নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিবিএসের তথ্যে কেন পার্থক্য থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকেরা। সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে গরু-ছাগলের তথ্য নিয়ে বিবিএসের সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে স্বীকার করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, জাতীয় তথ্য দেওয়ার দায়িত্ব বিবিএসের। সরকারের যেকোনো সংস্থা তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। তবে যেকোনো সংস্থার উচিত তাদের সংগ্রহ করা তথ্য বিবিএসকে দেখিয়ে নেওয়া। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তা করে না। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, তাদের (প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর) উচিত তথ্য প্রচারের আগে বিবিএসকে জানানো। তখন তথ্যগত বিভ্রান্তি দূর করা সম্ভব হবে।’

সমালোচনা অন্য তথ্য নিয়েও

কৃষিশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশে অস্থায়ী ফসলের জমির পরিমাণ এখন ১ কোটি ৬৪ লাখ একর, যা আগে ছিল ১ কোটি ৭৬ লাখ একর। অস্থায়ী ফসলের জমি বলতে কী বোঝায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি গ্রামের মানুষ। গ্রামেই আমার বেড়ে ওঠা। কিন্তু কখনো শুনিনি। অস্থায়ী ফসলের জমি কী?’

অনুষ্ঠানে একপর্যায়ে সাংবাদিকেরা জানতে চান, দেশে এখন কৃষকের সংখ্যা কত। এ সময় ‘কৃষিশুমারি ২০১৯’–এর প্রকল্প পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ জানান, শুমারিতে কৃষকের সংখ্যা বের করা হয়নি। প্রশ্নপত্র সেভাবে তৈরি করা হয়নি। তাঁরা শুধু কৃষি খানার (পরিবার) সংখ্যা বের করেছেন। কৃষিমজুর খানার হিসাব বের করেছেন। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, অনেক পরিবারে সন্তান তাঁর পিতাকে কৃষিকাজে সহায়তা করেন। তাই সন্তানকে কৃষক হিসেবে যোগ করা যায় না। এ কারণে শুমারিতে কৃষকের সংখ্যা বের করা হয়নি।

প্রকল্প পরিচালকের এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘এসব আমাদের পুরোনো অভ্যাস। আমরা আমলা। গতানুগতিক কাজ করতে আমরা অভ্যস্ত। এই ধারা আমাদের ভাঙতে হবে।’

আবাদি জমি কমলেও বাড়ছে কৃষির সঙ্গে যুক্ত খানা

শুমারিতে উঠে আসা তথ্য বলছে, দেশে এখন কৃষির সঙ্গে যুক্ত খানা আছে ১ কোটি ৬৯ লাখ। ২০০৮ সালের শুমারিতে ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ। অর্থাৎ ১১ বছরে কৃষির সঙ্গে যুক্ত খানা বেড়েছে ১৭ লাখ। অন্যদিকে এই সময়ে আবাদি জমির পরিমাণ চার লাখ একর কমেছে। এখন আবাদির জমির পরিমাণ ১ কোটি ৮৭ লাখ একর। যা আগে ছিল ১ কোটি ৯১ লাখ একর।

আবাদি জমির পরিমাণ কমলে কৃষি খানার সংখ্যা কীভাবে বাড়ে—এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, দেশে একান্নবর্তী সংসার ভাঙছে। পরিবার ছোট হচ্ছে। সে কারণে খানার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বাড়িঘর করার কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমছে।

মহিষ-মুরগি বেড়েছে

২০০৮ সালের শুমারিতে দেশে মোরগ-মুরগি ছিল ৯ কোটি ৭৮ লাখ। এখন তা বেড়ে ১৯ কোটি ৯৪ লাখে দাঁড়িয়েছে। হাঁসের সংখ্যা আগে ছিল ৩ কোটি ৯৪ লাখ। এখন বেড়ে ৭ কোটি ৪৪ লাখ হয়েছে। দেশে মহিষ আছে ৬ লাখ ৩৬ হাজার। যা আগে ছিল ৫ লাখ ৪১ হাজার।

পতিত জমি বেড়েছে ৯৪ হাজার একর

শুমারির তথ্য বলছে, পতিত জমির পরিমাণ গত ১১ বছরে ৯৪ হাজার একর বেড়েছে। দেশে এখন পতিত জমির পরিমাণ ২ লাখ ৪৪ হাজার একর। এসব জমিতে চাষাবাদ হয় না। আগে যা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার একর। করোনা মহামারি শুরুর পর সরকারের শীর্ষ মহল থেকে পতিত জমি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এক ইঞ্চি জমিও যাতে খালি পড়ে না থাকে, সে জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

ফসল মাড়াইয়ের যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে

শুমারিতে দেখা গেছে, দেশে কৃষিকাজে এখন ৯ লাখ ১৬ হাজার ফসল মাড়াইয়ের যন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। আগে যা ছিল ৬ লাখ ২৭ হাজার। পাওয়ার ট্রিলার (ধানমাড়াই ও জমি চাষ) আগে যেখানে ব্যবহার করা হতো ১ লাখ ৪৬ হাজার, তা বেড়ে এখন ৩ লাখ ৫৫ হাজারে পৌঁছেছে।

বিবিএসের কার্যক্রম নিয়ে নিজের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ১০ বছর পরপর কৃষিশুমারি হওয়ার কথা। কিন্তু বিবিএস এই নিয়ম পালন করে না। এর আগে ২০০৮ সালে কৃষিশুমারি হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী, ২০১৮ সালে শুমারি হওয়ার কথা। কিন্তু তারা সেটা শুরু করল ২০১৯ সালে। আর ফল প্রকাশ করছে ২০২২ সালে। দেরিতে শুমারির ফল প্রকাশ করার কারণে সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এক দশক আগের তথ্য দিয়ে প্রণয়ন করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

কুকুরপ্রতি ৫০০ টাকা কর: ঢাকা দক্ষিণের আধখেঁচড়া কর নিয়ম!

২১ ডিসেম্বর ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কোনো বাসিন্দা কুকুর পালন করলে প্রতি কুকুরের জন্য বার্ষিক কর দিতে হবে ৫০০ টাকা। এছাড়া ঘোড়া ও হরিণ পালনে প্রতিটির জন্য কর দিতে হবে ১ হাজার টাকা। যদিও এ সিদ্ধান্ত ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন করের এ অর্থ দিয়ে কী করবে, তা এখনও অস্পষ্ট।

‘সিটি কর্পোরেশন আদর্শ কর তফসিল, ২০১৬’-এর গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে, প্রতিটি পোষা জন্তুর জন্য বার্ষিক কর দিতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণের ভেটেরিনারি অফিসার (জোন-২ ও ৬) ডা. একেএম সালেহ রহমান জানান, দক্ষিণ সিটিতে আগে পোষা জন্তু নিবন্ধনের নিয়ম ছিল না। নিয়মটি কিছুদিন আগে চালু হয়েছে।

তিনি জানান, যারা নিবন্ধনের আওতায় আসবে তাদের পোষা জন্তুকে বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

কুকুরের ক্ষেত্রে মালিক লাইসেন্স নিলে সিটি কর্পোরেশন থেকে ডাক্তারের সুবিধা পাবেন।

অবশ্য ডাক্তার বিনামূল্যে দেখানো যাবে কি না, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

বেসরকারি বিদেশী ঋণের প্রায় ৭০ শতাংশেরই মেয়াদ মাত্র এক বছর

ডিসেম্বর ২২, ২০২২, বণিক বার্তা

দেশের বেসরকারি খাতে গত দেড় বছরে বিদেশী ঋণ প্রায় ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে এ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার। বিপুল এ বিদেশী ঋণের ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশের মেয়াদই সর্বোচ্চ এক বছর, ডলারের হিসাবে যার পরিমাণ ১৭ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭৭৫ কোটি। স্বল্পমেয়াদি বিদেশী এ ঋণ বেসরকারি খাতের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও এখন বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বেসরকারি খাতে স্বল্প মেয়াদে নেয়া বিদেশী ঋণের মধ্যে ১১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার ট্রেড ক্রেডিট বা বাণিজ্যভিত্তিক ঋণ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার হলো বায়ার্স ক্রেডিট। মূলধনি পণ্য ও সেবা আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা বিদেশী ব্যাংক থেকে এ ঋণ নিয়েছেন। বাকি ঋণের ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশী ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি এবং ১ বিলিয়ন ডলার ডেফার্ড পেমেন্ট বা বিলম্বিত দায়। সরাসরি স্বল্পমেয়াদি ঋণ ও দায় হিসেবে বিদেশী উৎস থেকে এসেছে ৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে বিদেশী উৎস থেকে নেয়া ১৭ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ এক বছর, যা বেসরকারি খাতের মোট বিদেশী ঋণের ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ। বাকি ৩১ দশমিক ৬ শতাংশের মেয়াদ এক বছরের বেশি। ডলারের হিসাবে এ ঋণের পরিমাণ ৮ দশমিক ১৯ বিলিয়ন। তবে বেসরকারি খাতের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মধ্যেও ১৩৩ কোটি ডলারের মেয়াদ এক থেকে তিন বছর। তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি বিদেশী ঋণ রয়েছে ৭৪ কোটি ডলার। পাঁচ থেকে সাত বছর মেয়াদি বিদেশী ঋণের পরিমাণ ৪৭ কোটি ডলার। আর সাত থেকে ১০ বছর মেয়াদি ৫৪ কোটি, ১০ থেকে ১২ বছর মেয়াদি ৫৩ কোটি ও ১২ বছরের বেশি মেয়াদি ৪৫৭ কোটি ডলার বিদেশী ঋণ রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড এক্সটারনাল ডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

রোজগারের নিশ্চয়তা নেই পৌনে দুই কোটি মানুষের

২৩ ডিসেম্বর ২০২২, কালবেলা

কাজ করার ক্ষমতা থাকার পরও দেশের পৌনে ২ কোটিরও বেশি মানুষের নিয়মিত রোজগারের নিশ্চয়তা নেই। এর মধ্যে ২৭ লাখ মানুষ সম্পূর্ণ বেকার, অর্ধবেকার ১৫ লাখ। যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না পেয়ে অনিয়মিত কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে আরও ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ। সব মিলিয়ে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ২৫ শতাংশই রোজগারের জন্য নিজেদের সামর্থ্যের পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুল এ জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা আগামী দিনে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, কর্মক্ষম কোনো মানুষ চেষ্টা করেও সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা কাজ না পেলে তিনি বেকার হিসেবে চিহ্নিত হবেন। অর্থাৎ এক সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেই তাকে আর বেকার হিসেবে ধরা হবে না। আবার সামর্থ্য থাকার পরও কোনো ব্যক্তি কাজ না খুঁজলে তাকে শ্রমশক্তির হিসেবেই ধরা হবে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। এর মধ্যে বয়স্ক এবং শিক্ষা গ্রহণে নিয়োজিত ৪ কোটি ৫৫ লাখকে শ্রমশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বাকি ৬ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ কোনো না কোনো কাজের উপযুক্ত। এর মধ্যে নানা ধরনের কাজে নিয়োজিত আছেন ৬ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার। বাকি ২৬ লাখ ৮০ হাজার সম্পূর্ণ বেকার। এ ছাড়া সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার কম কাজ পান ১৪ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ। তাদের অর্ধবেকার বা খণ্ডকালীন বেকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত ‘কর্মসংস্থান, উৎপাদনশীলতা এবং খাতভিত্তিক বিনিয়োগ সমীক্ষা’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা ২১ লাখ। তবে ওই প্রতিবেদন বলছে, কাগজে-কলমে বেকার না হলেও যোগ্যতা ও চাহিদা অনুযায়ী কাজ ও মজুরি পান না আরও ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব হিসাবের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত সমস্যা আছে। জরিপের সময় আগের সাত দিন কিছু সময় কাজ করলেও তাকে বেকার ধরা হয় না। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন, ওই সময় কিছু কাজ করেছেন; কিন্তু সারা বছর কাজ করতে পারেন না। এ পদ্ধতিতে জরিপ করার কারণে বেকারত্বের হার কম আসে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষায় নেই, কাজে নেই, এমনকি কোনো প্রশিক্ষণেও নেই।’

দেশে প্রতিবছর নতুন প্রায় ২১ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে দেশে-বিদেশে কাজ পাচ্ছে ১৩ লাখ। ফলে বছরে বেকারের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ করে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাবে বাংলাদেশে ২০০০ সালে সার্বিক বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ৩ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়। আর ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এরপর দেশে শ্রমশক্তি জরিপ না হলেও করোনা মহামারির প্রভাবে বেকারত্ব বেড়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘ট্যাকলিং দ্য কভিড-১৯ ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট ক্রাইসিস ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা ও লকডাউনের কারণে বাংলাদেশে স্বল্প মেয়াদে চাকরি হারান ১১ লাখ ১৭ হাজার তরুণ। দীর্ঘমেয়াদে তা ১৭ লাখ ৭৫ হাজারে দাঁড়ায়। করোনার পর এ বিশাল জনগোষ্ঠী আয়মূলক কাজে ফিরেছে কিনা—এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গবেষণা নেই।

সরকারি হিসাব বলছে, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৭৮ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। এর মধ্যে বড় অংশই জড়িত কৃষির সঙ্গে। একটি অংশ দিনমজুর, কেউ বা পরিবহন শ্রমিক, রিকশাচালক কিংবা ছোটখাটো নানা ধরনের পেশায় নিয়োজিত। নিয়োগপত্র তো দূরের কথা, বিশাল এ জনগোষ্ঠীর নিয়মিত কাজ ও আয়ের নিশ্চয়তাই নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন বলেন, ‘শ্রমবাজারে যুক্ত হওয়া মানুষের মধ্যে প্রতিবছর ৭ লাখের মতো দেশে চাকরি পায়। আরও ৬-৭ লাখ বিদেশে কাজের জন্য যায়। ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ কর্মহীন থাকে। এই মানুষের জন্য কাজের সংস্থান করতে হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে গতি আনতে হবে।’

শিক্ষিতরাই বেশি বেকার

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার গত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব সবচেয়ে বেশি। সরকারি হিসাবে প্রতি পাঁচজন বেকারের মধ্যে দুজন উচ্চ মাধ্যমিক বা এর চেয়ে বেশি শিক্ষিত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেই তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কর্মসংস্থানের জন্য মানসম্মত শিক্ষার অভাবও বেকারত্ব বাড়াতে ভূমিকা রাখছে বলে মূল্যায়ন তাদের।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশের মোট বেকারের ৩৯ শতাংশই শিক্ষিত। এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা বেকারের সংখ্যা ৬ লাখ ৩৮ হাজার, যা মোট বেকারের প্রায় ১৫ শতাংশ। স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা ৪ লাখ ৫ হাজার, যা মোট বেকারের ১১ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ পড়াশোনার সুযোগ পাননি এমন বেকারের সংখ্যা ৩ লাখ।

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে আমরা যদি কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে তারা নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে না। দেশের অগ্রগতিতেও অবদান রাখতে পারবে না। বরং অনেকে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, নানা অসামাজিক কাজে যুক্ত হচ্ছে। কাজেই এখান থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ থাকা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। তারা যদি বিদেশে যেতে চায় তাহলে সহযোগিতা দিতে হবে। কেউ যদি দেশে চাকরি করতে চায়, চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। আর তারা যদি উদ্যোগ সৃষ্টি করতে চায়, তাদের সহায়তা করতে হবে।’

অবশ্য শিক্ষিত এ জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বেকার মনে করেন না পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। তার মতে, গৃহশিক্ষকতা হোক বা অন্য কোনো কিছু হোক—এদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো কাজ করেন। কিন্তু আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়ায় এ মানুষগুলো নিজেদের কর্মজীবী মনে করেন না।

২০০০ থেকে ২০১৭ সাল সময়কালে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৮টি দেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পরের অবস্থান বাংলাদেশের।

একই গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের তরুণদের ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। এরা কোনো ধরনের শিক্ষায় যুক্ত নন, প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন না, আবার কাজও খুঁজছেন না।

সরকারি হিসাবেও তরুণদের নিষ্ক্রিয়তার এ চিত্রের কোনো ভিন্নতা নেই। পরিকল্পনা কমিশনের জিইডির সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ১ কোটি ২৫ লাখ ছদ্মবেকার। এরা কাজের মধ্যেও নেই, আবার পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণেও নেই। বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে না পারলে জনসংখ্যাজনিত লাভ (ডেমোগ্রাফি ডিভিডেন্ড) থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সরকারি চাকরিতে ঝোঁক তরুণদের

গত এক দশকে বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়ায় সরকারি চাকরি হয়ে উঠেছে শিক্ষিত তরুণদের মূল লক্ষ্য। স্নাতক পাস করেই চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতায় নেমে যাচ্ছে তারা। এ ক্ষেত্রে সবার প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির পদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই অনেকে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি শুরু করে। স্নাতক ফাইনালের পর, এমনকি তৃতীয় বর্ষ থেকেই ক্লাস বাদ দিয়ে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার জন্য গ্রন্থাগারে বেশি সময় কাটায় কেউ কেউ।

সরকারি চাকরির প্রতি উচ্চশিক্ষিতদের এ আকর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায় বিসিএস পরীক্ষাগুলোতে আবেদনের পরিসংখ্যানে। ৩৩তম বিসিএসে ৪ হাজার ২০৬টি পদের বিপরীতে যেখানে আবেদনকারী ছিল ১ লাখ ৯৩ হাজার, সেখানে ৪১তম বিসিএসে ২ হাজার ১৩৫টি পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৬২।

ব্যক্তি উদ্যোগ কিংবা বেসরকারি চাকরিতে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়া এবং সরকারি চাকরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কারণে তরুণদের মধ্যে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মর্যাদা, ক্ষমতা, আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা ও ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা—এ চার কারণে সরকারি চাকরির দিকে বেশি ঝুঁকছে তরুণরা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পেশাদারি মনোভাবের অভাবও সরকারি চাকরির আকর্ষণ বাড়ানোর কারণে বলে জানিয়েছেন চাকরি প্রার্থীরা।

সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার হার ৮০% বেড়েছে

ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, বণিক বার্তা

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়া অভিবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। দুঃসাহসিক এ যাত্রায় শুধু চলতি বছরেই পৌঁছেছেন ১৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশী, যেখানে ২০২১ সালে গেছেন ৭ হাজার ৮৩৮ জন। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ইউরোপের দেশটিতে সমুদ্রপথে বাংলাদেশী যাওয়ার হার বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) সমুদ্রপথে ইতালি অভিবাসী হয়েছেন ৯৪ হাজার ৩৪৩ জন। এর মধ্যে ১৫ শতাংশই গেছেন বাংলাদেশ থেকে। ২০২১ সালে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ৬২ হাজার ৯৪৩ জন অভিবাসী হয়েছিলেন, যাদের ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশই বাংলাদেশী। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে গত বছর ইতালি অভিবাসী হয়েছিলেন ৭ হাজার ৮৩৮ জন। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মৃত্যুঝুঁকির এ অভিযাত্রায় পা বাড়িয়েছেন ৭৮ দশমিক ৯৭ শতাংশের বেশি বাংলাদেশী, যেখানে গড় প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশের কম।

সমুদ্রপথে ইতালি যাত্রার দিক থেকে বাংলাদেশীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন কেবল মিসরীয় ও তিউনিসিয়ানরা। চলতি বছর ইতালি অভিবাসী হওয়াদের মধ্যে ২১ শতাংশ মিসরীয়, আর ১৮ শতাংশ তিউনিসিয়ান। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ গেছেন বাংলাদেশ থেকে। শীর্ষ দশে থাকা অন্য দেশগুলো হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া (৮ শতাংশ), আফগানিস্তান (৭ শতাংশ) ও আইভোরি কোস্ট (৫ শতাংশ)। এর বাইরে আফ্রিকার দেশ গিনি থেকে গেছেন ৪, ইরান থেকে ২, ইরিত্রিয়া থেকে ২ শতাংশ অভিবাসী।

মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে থাকা ভারতীয়দের নাম নেই সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি অভিবাসী হওয়াদের শীর্ষ তালিকায়। যদিও বাংলাদেশের তুলনায় প্রতিবেশী দেশটির জনসংখ্যা আট গুণেরও বেশি। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ছাড়া এ অঞ্চলের অন্য কোনো দেশের নাম এ তালিকায় নেই। আবার শীর্ষ দশে থাকলেও পাকিস্তান থেকে চলতি বছর সমুদ্রপথে ইতালি গেছেন মাত্র ২ হাজার ৭০৫ জন। মোট অভিবাসীদের মধ্যে যা কেবল ৩ শতাংশ। আর যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে সমুদ্রপথে ইতালি অভিবাসী হয়েছেন ৬ হাজার ৮০৯ জন, যা বাংলাদেশীদের অর্ধেকেরও কম।

ভৌগোলিকভাবে মিসর ও তিউনিসিয়া ইউরোপের প্রান্তসীমায়। তাদের মত্স্যজীবীদের নৌকা ও জাহাজ নিয়মিতই ওই পথে চলাচল করে। ফলে নিজেদের সমুদ্রসীমা পাড়ি দিয়েই দেশ দুটির নাগরিকরা ইউরোপ পৌঁছে যান। অন্যদিকে ইতালি বা ভূমধ্যসাগর উপকূল থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব প্রায় ৮ হাজার মাইল। এ অবস্থায় বাংলাদেশীরা প্রথমে লিবিয়া যান। সেখান থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি প্রবেশের যাত্রাটিকে বিপজ্জনক ও দুঃসাহসিকই বলতে হয়। কেননা এটিকে অবধারিতভাবে নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার পর্যায়েই পড়ে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশের তুলনায় সিরিয়া, ইরানসহ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ইতালি যাত্রা অনেক সহজ। এমনকি আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকেও তুলনামূলক সহজ ইতালি যাত্রা। অথচ এসব দেশের নাগরিকরাও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ায় বাংলাদেশীদের চেয়ে পিছিয়ে। প্রায় দুই দশক ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অর্থনীতিও ভঙ্গুর। তালেবানদের ক্ষমতা গ্রহণ ও কঠোর বিধিনিষেধের কারণে দেশটির নাগরিকরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে আসছে। সেখানে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এ সময় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কেন বাংলাদেশীরা ইতালি অভিবাসী হচ্ছেন, সেটি খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।

ঋণপত্র রেশনিংয়ের কবলে বড় শিল্পোদ্যোক্তারা

ডিসেম্বর ২৭, ২০২২, বণিক বার্তা

দেশের ব্যাংক খাতে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের সংকট এখনো বিদ্যমান। এ পরিস্থিতিতে প্রায় সব কোম্পানিকেই ঋণপত্র খোলা নিয়ে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। তবে সমস্যা বেশি মোকাবেলা করছে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থমূল্য বিবেচনায় বড় ঋণপত্র খুলতে চাইলে ব্যাংক তাতে সায় দিচ্ছে না। সব গ্রাহকের চাহিদার জোগান নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে ঋণপত্র রেশনিং করতে হচ্ছে। এভাবে ঋণপত্র রেশনিংয়ের কবলে পড়ছেন বড় শিল্পোদ্যোক্তারা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায়। নেতিবাচক ধারা দেখা গেছে দেশের রফতানি ও রেমিট্যান্সে। বেড়ে গেছে ডলারের বিনিময় মূল্য। ব্যাংকগুলোয় বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের তীব্রতা কমলেও তা ঘনীভূত হওয়া নিয়ে সংশয় এখনো রয়ে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে ঋণপত্র খোলা নিয়ে ব্যাংকগুলো সতর্ক অবস্থা ধরে রেখেছে। যেখানে সেখানে ঋণপত্র খোলা থেকে বিরত থাকছেন ব্যাংকাররা। বিশেষ করে আর্থিক বিবেচনায় বড় পরিমাণের ঋণপত্র খোলা হচ্ছে না। আর নিজ নিজ এক্সপোজার বা ডলার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী সব গ্রাহকের চাহিদা বিবেচনায় ঋণপত্র রেশনিং করছে ব্যাংকগুলো।

বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ঋণপত্র খোলার সমস্যা এখন কেমন তা জানতে ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক এক ডজন বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্যানুসন্ধান করেছে বণিক বার্তা। প্রায় সব কোম্পানিই বলেছে, ঋণপত্র খোলা নিয়ে সংকট এখনো কাটেনি। তবে ডলারের চাহিদা কিছুটা কমে এসেছে। রেমিট্যান্সও ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে ছোট ঋণপত্র খুললেও বড় ঋণপত্র খোলা থেকে বিরত থাকছে ব্যাংকগুলো। বড় ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে রেশনিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে বড় শিল্পোদ্যোক্তাদের।

পরিচালন বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যয় সুদ পরিশোধে

২৭ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

বাজেটের আকার বড় হচ্ছে। বাড়ছে সরকারের ব্যয়। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে বাজেট ঘাটতি। এ ঘাটতি মেটাতে নিতে হচ্ছে ঋণ। এতে প্রতি বছরই ঋণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ঋণের সুদ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে (২০২১-২২) দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের পরিচালন বজেটের সর্বাধিক ২৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এরপর রয়েছে জনপ্রশাসন। এ খাতে ব্যয় হয়েছে পরিচালন ব্যয়ের ২১ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। তবে সংশোধিত বাজেট কমিয়ে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়। বাজেটকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় বা পরিচালন বাজেটকে বলে রাজস্ব বাজেট। অন্য অংশ উন্নয়ন বাজেট, যার প্রধান অংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি।

উন্নয়ন বাজেটে গত অর্থবছর বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ২৬ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। আর ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা ছিল পরিচালন ব্যয়। এর মধ্যে ২৩ শতাংশ অর্থাৎ ৭০ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা সুদ পরিশোধে, যা পরিচালন ব্যয়ের ১৪টি খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। ২১ শতাংশ ব্যয় করে পরিচালন বাজেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত হচ্ছে জনপ্রশাসন।

এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৬৩ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। যদিও মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৭ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। পরিচালন বাজেটের ১৪ শতাংশ ব্যয় করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে শিক্ষা। বছর শেষে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি ৭৯০ লাখ টাকা। ৮ শতাংশ ব্যয় হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে ব্যয় হয়েছে ৮ শতাংশ। ৭ শতাংশ ব্যয় করেছে কৃষিতে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে পরিচালন বাজটের ৪ শতাংশ।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৮০ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধে; যা চলতি বাজেটের পরিচালন ব্যয়ে একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরে ঋণের সুদব্যয় খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। গত ৬ বছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে ১৪৩ শতাংশ।

৩০ থেকে ৪০ বছরে হবে ঋণ পরিশোধ

২৮ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণাধীন ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) প্রকল্পে সব মিলিয়ে খরচ হবে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এতে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। এই ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ সময় পাবে ৩০ থেকে ৪০ বছর। সরকার দেবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

বৈদেশিক ঋণের মতো সরকারের বিনিয়োগও পরিশোধ করতে হবে মেট্রোরেলের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল)। জাপানের কাছ থেকে পাঁচটি আলাদা চুক্তিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে ঋণ নিয়েছে ডিএমটিসিএল। ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করা হবে ইআরডির মাধ্যমে।

প্রকল্প নথি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দুই ঋণ চুক্তির সুদ শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার জন্য বছরে ১০ পয়সা সুদ দিতে হবে। ২০১৭ সালে সই হওয়া এই ঋণ চুক্তির গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। অর্থাৎ ২০২৭ সাল থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। চুক্তির মেয়াদ ৪০ বছর। অর্থাৎ ২০৫৭ সালের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। পরবর্তী তিন ঋণ চুক্তির সুদের হার ১ শতাংশ, দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং দশমিক ৭০ শতাংশ। এসব ঋণ শোধ দিতে হবে ৩০ বছরে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আগামী ৩০ থেকে ৪০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে জায়গায় পৌঁছবে, ঋণ পরিশোধে সমস্যা হবে না।

২০১২ সালে এমআরটি-৬ প্রকল্প অনুমোদন পায়। সে সময় খরচ ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। জাপানের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার জোগান দিত সরকার। প্রকল্প খরচ বাড়ায় সরকারি ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

২০২১ সালে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ কমিটি হিসাব দিয়েছিল, এমআরটি-৬-এ প্রতি মাসে পরিচালন খরচ হবে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ২২৯ টাকা। দৈনিক খরচ হবে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৫ হাজার ৭৪১ টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি টাকার বেশি যাবে শুধু জাইকার ঋণ ও সরকারের খরচ পরিশোধে। দৈনিক বৈদেশিক ঋণ বাবদ যাবে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৮৫ টাকা। সরকারের খরচ জোগাতে ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ১৮৫ টাকা লাগবে দিনে। প্রকল্পের ঋণ ও সরকারের খরচ বাড়ায়, এ দুই খাতের কিস্তিও বাড়বে।

মেট্রোরেল পরিচালনার বেতন-ভাতা বাবদ দিনে ১৩ লাখ ৯ হাজার ৭১৭ টাকা প্রয়োজন হবে। অন্য প্রশাসনিক খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১১ হাজার ৬৮৫ টাকা। মেট্রোরেলের রক্ষণাবেক্ষণে দিনে ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। ট্রেন পরিচালনায় দিনে বিদ্যুৎ বাবদ ৬৭ হাজার ৯৮৫ টাকা লাগবে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে এ খরচও বাড়বে। অন্যান্য ব্যয় ধরা হয় ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৩ টাকা।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, দৈনিক খরচ ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ খরচ মেটাতেই মেট্রোরেলের ভাড়া ২০২১ সালে কিলোমিটার-প্রতি ২ টাকা ৪০ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হলেও তা বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হয়েছে।

বিশেষ ধার পেল ইসলামী ব্যাংক

০২ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

তারল্যসংকট আরও প্রকট হয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে। বিদায়ী বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মোট ২৪ দিন বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ অর্থ জমা রাখতে (সিআরআর) ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য জরিমানা গুনছে ব্যাংকটি। গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে ও আমানতের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো তারল্য জমা রাখতে ৮ হাজার কোটি টাকা বিশেষ ধার নিয়েছে ইসলামী ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিরল এই সুবিধা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কোনো সুকুক বন্ড জমা ছাড়াই ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। যার সুদের হার ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সাধারণত সুকুক বন্ড ও বাংলাদেশ সরকার ইসলামিক বিনিয়োগ বন্ড জমা দিয়ে শরিয়াহ ব্যাংকগুলো টাকা ধার নেয়।

তবে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবহারযোগ্য বন্ড শেষ হয়ে এসেছে। ফলে বিরল এই ব্যবস্থায় টাকা ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও শরিয়াহ ব্যাংকগুলোকে নির্দিষ্ট সুদে টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ নেই।

বছরে ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার দাবি ব্রির গবেষকদের

জানুয়ারি ০২, ২০২৩, বণিক বার্তা

গত অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টন চাল। আর চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে সাড়ে ছয় লাখ টন চাল আমদানি করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাল আমদানিতে আগ্রহী করতে কয়েক দফায় দেয়া হয় শুল্কছাড়। এর পরেও আমদানি আশানুরূপ না হওয়ায় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। চাল আমদানির জন্য সরকারিভাবে নানা প্রচেষ্টা চালানো হলেও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে।

গ্রামের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি

০৩ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বনগজ গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম এবার শীত মৌসুমে এক একর জমিতে মুলা চাষ করেছেন। পাশের খাল থেকে খেতে পানি দেন। তাই বিদ্যুৎ বিল দিয়ে সেচ দেওয়ার ঝামেলা নেই। কিন্তু এই মৌসুমে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি করছেন ১০ টাকায়। এই দর গত ২০ ডিসেম্বরের। একই সময়ে ভালো মানের এক কেজি মুলা ঢাকার কারওয়ান বাজারে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত আসতে মুলার দাম বেড়েছে তিন গুণ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া ফুলকপি, লাউ, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজির দামও গ্রামের চেয়ে শহরে প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ। অবশ্য শহরের চেয়ে গ্রামে চালের দাম কিছুটা কম। আর মাছের আধার তো গ্রামই।

কৃষিপণ্যের প্রায় পুরোটাই গ্রামে উৎপাদিত হয়। এ জন্য গ্রামের কৃষকেরা উপযুক্ত দাম পান না। ফলে তাঁদের আয় কমে যাচ্ছে। আবার তাঁদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপও বেশি। যেখানে খাদ্যপণ্য উৎপাদিত হয়, সেখানে ভোগ্যপণ্য কিনতেই হিমশিম দশা। গ্রামে কর্মসংস্থানের বড় উৎস হলো কৃষি খাত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত ডিসেম্বর মাসের মূল্যস্ফীতির হিসাবে দেখা গেছে, ওই মাসে গ্রামে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। অন্যদিকে শহরে এই হার ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।

গ্রামের মানুষ কম যাচ্ছে শহরে

০৪ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

গ্রাম থেকে নগরে কম আসছে মানুষ। আট বছর আগের চেয়ে মহানগরগুলোর বস্তিতে, বস্তির বাইরে ও দেশের শহরগুলোতে কম হচ্ছে অভিবাসন। নগরের মানুষের স্বাস্থ্যে ইতিবাচক পরিবর্তনও লক্ষ করা যাচ্ছে।

গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন এবং শহরের মানুষের সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে নগর স্বাস্থ্য জরিপ ২০২১ প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদন বলছে, শহরে বাস করেও ১০ শতাংশ খানার দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেই। শহরে শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রবণতা নিম্নমুখী। এই প্রবণতা শিশুপুষ্টির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে দেশের মহানগর ও শহরের মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে এই জাতীয় জরিপের ফলাফল ও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) এই সেমিনারের আয়োজন করে। এই জরিপের নেতৃত্ব দিয়েছে নিপোর্ট।

৩০৯ পৃষ্ঠার জরিপ প্রতিবেদনে গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের ধরন, শহরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা পরিস্থিতি, মাতৃ ও নবজাতক সেবা, শিশুস্বাস্থ্য ও শিশুপুষ্টির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনের বস্তির সাড়ে ১০ হাজার খানা, বস্তির বাইরের ১৮ হাজার খানা এবং জেলা শহর ও পৌরসভার ৭ হাজার ৩৬০টি খানার ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। যেসব পৌরসভার জনসংখ্যা ৪৫ হাজারের ওপরে, তাদের এই জরিপের মধ্যে নেওয়া হয়েছে।

জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে ১০ জুন পর্যন্ত। এর আগে ২০০৬ সালে ও ২০১৩ সালে একই ধরনের জরিপ করা হয়েছিল। নগর স্বাস্থ্যের জন্য এই জরিপ প্রতিবেদনকে বিশেষ গুরুত্ব দেন গবেষক ও নীতিনির্ধারকেরা।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে একটি চিত্র পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে কৌশল নির্ধারণ সহজ হয়, নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়।

শহরে মানুষ কম আসছে, কেন

মহানগরগুলোর বস্তি, বস্তির বাইরের ও অন্যান্য শহরের নারী ও পুরুষের জন্ম কোথায় অথবা তারা কোথা থেকে এসেছে—এই তথ্য জরিপকারীরা সংগ্রহ করেছেন। মহানগরগুলোর বস্তির ৫৮ শতাংশ নারী ও ৪৮ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, তাঁরা গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন। ছোট শহরের ৩৪ শতাংশ নারী ও প্রায় ১৪ শতাংশ পুরুষ গ্রাম থেকে সেখানে গেছেন। মহানগরের বস্তির বাইরে বসবাস করা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার যথাক্রমে প্রায় ৪৬ ও ৩৫ শতাংশ।

আট বছর আগে একই ধরনের জরিপ হয়েছিল। তখন মহানগরের বস্তির প্রায় ৬৭ শতাংশ নারী ও প্রায় ৬৬ শতাংশ পুরুষ বলেছিলেন, তাঁরা গ্রাম থেকে বস্তিতে এসে উঠেছেন। মহানগরের বস্তির বাইরে এবং ছোট শহরে নারী ও পুরুষ আসার হার ২০২১ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে বেশি ছিল। এখন তা কম কেন—এই প্রশ্নের উত্তর জরিপ প্রতিবেদনে নেই।

সেই টেলিটক এখন সরকারের বোঝা

১০ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

২০০৫ সালে টেলিটক যখন বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে, তখন মানুষের আগ্রহের কোনো শেষ ছিল না। কারণ, সরকারি এই মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর কম খরচে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার প্রত্যাশা জাগিয়েছিল।

তখনকার পত্রিকা ঘেঁটে দেখা যায়, টেলিটক প্রতি মিনিট কথা বলার মাশুল (কলচার্জ) ধার্য করেছিল ৪ টাকা, যা গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে ছিল ৬ টাকা। রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত কথা বলা যেত ২ টাকা ৬০ পয়সা দিয়ে। টেলিটকের প্রি–পেইড একটি সিমের দাম ছিল তিন হাজার টাকা। এটিও অন্য অপারেটরের চেয়ে বেশ কম ছিল।

ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ায় তখন মানুষ লাইন ধরে টেলিটকের সিম (গ্রাহক শনাক্তকরণ নম্বর) কিনেছিলেন। আজ ১৭ বছর পর টেলিটক চারটি অপারেটরের মধ্যে গ্রাহকসংখ্যা, রাজস্ব ও নেটওয়ার্কের আওতার দিক দিয়ে সবার পেছনে। প্রতিষ্ঠানটি বছর বছর লোকসান দিচ্ছে। বাড়ছে দায়দেনা।

টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ওয়েবসাইটে গেলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ছবিসহ একটি উদ্ধৃতি দেখা যায়। সেটি হলো, ‘টেলিটককে মানুষের প্রত্যাশার জায়গায় নিয়ে যেতে আমরা কাজ শুরু করেছি এবং সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন টেলিটক হবে মানুষের প্রথম পছন্দ।’

মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি মোবাইল অপারেটরের সফল হওয়ার পেছনে মূল বিষয় হলো বিনিয়োগ। বিনিয়োগ না হলে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি না হলে কোনো প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে পারে না। টেলিটকে সরকারি যে বিনিয়োগ হওয়া প্রয়োজন, ছিল তা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর টেলিটকের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টেলিটককে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে কি না, সেই সংশয় রয়েই গেছে।

২০০৪ সালে যাত্রা

টেলিটক শতভাগ সরকার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর এটি যাত্রা শুরু করে। যদিও বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ২০০৫ সালের ৩১ মার্চ। টেলিটকের ওয়েবসাইটে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি কোনায় প্রতিটি মানুষকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী সেবা দেওয়া। সরকারের রাজস্বের নতুন উৎস হিসেবে কাজ করা এবং বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করাও টেলিটকের উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) গত অক্টোবর মাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মুঠোফোনের সক্রিয় সিমসংখ্যা এখন ১৮ কোটির বেশি। গ্রামীণফোনের ৮ কোটি, রবির সাড়ে ৫ কোটি ও বাংলালিংকের প্রায় ৪ কোটি গ্রাহক থাকলেও টেলিটকের গ্রাহক ৬০ লাখ ৭৫ হাজার, যা মোট গ্রাহকের ৪ শতাংশের কম।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে টেলিটকের সিম ব্যবহার বাধ্যতামূলক। আবার সরকারি কিছু সেবা নিতে টেলিটকের সিম থাকতে হয়। যেমন সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদন। এসব কারণে অনেকে টেলিটকের সিম রাখেন।

নেটওয়ার্কের আওতায় পিছিয়ে

প্রতিষ্ঠার পর ১৭ বছরেও টেলিটক দেশের বড় একটি অংশকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে পারেনি। কোম্পানিটি জানিয়েছে, দেশের ৬১ শতাংশ এলাকা টেলিটকের দ্বিতীয় প্রজন্মের (টু–জি) নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত। যেসব এলাকায় শুধু টু–জি নেটওয়ার্ক রয়েছে, সেখানে মানুষ ফোনে শুধু কথা বলা ও খুদে বার্তা পাঠাতে পারে। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য দরকার হয় থ্রি–জি ও ফোর–জি নেটওয়ার্ক।

দেশের ৫০ শতাংশ এলাকা টেলিটকের থ্রি–জি ও ৩২ শতাংশ এলাকা ফোর–জির আওতাভুক্ত। কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত কিছু বড় শহরে টেলিটক দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পেরেছে। অনেক শহরে সেটাও পারেনি। যেমন লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জে টেলিটকের ফোর–জি সেবা নেই। ঢাকার ২০ শতাংশ এলাকাও এই সেবার বাইরে। যদিও ফোর–জি সেবার ক্ষেত্রে বেসরকারি অপারেটরগুলো বহুদূর এগিয়ে গেছে।

নেটওয়ার্কের আওতা বাড়াতে দরকার বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস), যা টাওয়ার নামে পরিচিত। টেলিটকের বিটিএস আছে ৫ হাজার ৬৬১টি। যেখানে গ্রামীণফোনের ১৮ হাজার এবং রবির সাড়ে ১৫ হাজার বিটিএস রয়েছে।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুশফেকা ইসলাম ২০০৮ সাল থেকে টেলিটকের গ্রাহক। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাজধানীর নিকেতনের মতো এলাকার বাসিন্দা হয়েও তিনি নেটওয়ার্ক সমস্যায় পড়েন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন একটি নম্বর ব্যবহার করছেন। সেটা বদলাতেও পারছেন না।

বড় লোকসান

টেলিটকের লোকসান ধারাবাহিক। ১৭ বছরে তারা মাত্র দুই অর্থবছরে মুনাফার মুখ দেখেছিল। টেলিটকের দেওয়া হিসাব বলছে, ২০২১–২২ অর্থবছরে সেবা বিক্রি করে তাদের আয় ৪৯৮ কোটি টাকা। কিন্তু পরিচালন ব্যয় এত বেশি যে নিট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৫ কোটি টাকার বেশি। বিগত তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বশেষ অর্থবছরে লোকসান বেশি হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেলিটকের দেনা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২১৭ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে সরকারের পাওনা প্রায় ২ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। বিটিআরসির পাওনা আরও ১ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বিদ্যুৎ বিল হিসেবে পায় ৩৮৯ কোটি টাকার বেশি। শুধু সরকার নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও টেলিটকের দেনা রয়েছে। এর মধ্যে সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পায় ১৬৬ কোটি টাকা। ব্যাংক ও অন্য ঋণদাতারা পায় ১৯৪ কোটি টাকার মতো।

৫ হাজার ২১৭ কোটি টাকা দেনার বিপরীতে টেলিটকের পাওনা আছে ১৪১ কোটি টাকার মতো।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, টেলিটকের আর্থিক পরিসংখ্যান থেকে যা জানা যায়, তাতে মনে হয়, তাদের টিকে থাকার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি মূলধন, ঋণ, অনুদান রয়েছে এবং অব্যাহত লোকসানের কারণে তা শোধ করার পরিস্থিতিও নেই। এগুলো সরকারের দায় তৈরি করে।

বিটিআরসি পাওনা আদায় ও সেবার মান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অন্য অপারেটরদের ওপর যতটা কঠোর হয়, ঠিক ততটাই উদার থাকে টেলিটকের প্রতি। গত সেপ্টেম্বর মাসে কল ড্রপ ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছিল বিটিআরসি। সেখানে কোন অপারেটরের কল ড্রপের হার কত, তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। তবে টেলিটকের কোনো তথ্য সেখানে ছিল না।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার সেদিন বলেছিলেন, সরকারি এই অপারেটরদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে। তাদের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য একটু সময় দেওয়া হচ্ছে।

এক প্রকল্প অনুমোদন, একটি ফেরত

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গত আগস্ট মাসে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বাড়াতে ২ হাজার ২০৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে টেলিটক ৫০০টি নতুন টাওয়ার বসাবে। পাশাপাশি অন্য অপারেটরদের সঙ্গে ভাগাভাগির মাধ্যমে আড়াই হাজার টাওয়ার বাড়াবে।

নতুন করে ৩ হাজার টাওয়ার যোগ হলেও অন্যদের চেয়ে পিছিয়েই থাকবে টেলিটক। কারণ, টেলিটকের টাওয়ার দাঁড়াবে সাড়ে ৯ হাজারের মতো, যা অন্যদের চেয়ে অনেক কম। অপারেটরগুলো আগামী এক–দুই বছরের মধ্যে ফাইভ–জি চালুর চিন্তা করছে। টেলিটক ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি পরীক্ষা চালিয়েছে। কয়েকটি জায়গায় এ সুবিধা চালু হয়েছিল। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সুবিধা এখন বলার মতো অবস্থায় নেই।

রাজধানীতে টেলিটক ফাইভ-জি চালু করতে ২৩৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছিল। কিন্তু সরকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়নি, গত আগস্টে ফিরিয়ে দেয়।

টেলিটক কেন পারল না

টেলিটক কেন পারল না, তা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তা এবং টেলিযোগাযোগ খাতের বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেছেন, টেলিটকে লোকসানের জন্য জবাবদিহি নেই। লোকসান হলে কোম্পানি পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের কোনো ক্ষতি হয় না। পাশাপাশি টেলিটক সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, নজরদারি, পরিকল্পনার অভাবসহ নানা কারণে এটি সফল হতে পারেনি।

ডলার সংকটে আয় আটকে থাকায়, ফ্লাইটের সংখ্যা কমাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনগুলো

০৬ জানুয়ারি ২০২৩, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

বাংলাদেশ হয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে সপ্তাহে সাধারণত ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করতো টার্কিশ এয়ারলাইনস। বাংলাদেশ থেকে তুরস্কগামী ফ্লাইটের টিকিট বিক্রির ২৪ মিলিয়ন ডলার স্থানীয় মুদ্রা- টাকায় দেশের ব্যাংকগুলোতে রেখেছে তারা। টিকেট বিক্রির এ আয় পাঠাতে না পারায় আকাশপথে যাত্রীবাহী সংস্থাটি গত নভেম্বর থেকে সপ্তাহে মাত্র ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে তাদের কিছু করণীয় নেই।

টার্কিশ এয়ারলাইনসের মতোই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, মালিনদো এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজ এবং ক্যাথে প্যাসিফিকের মতো বেশিরভাগ বিদেশি এয়ারলাইন তাদের বাংলাদেশগামী ও বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়েছে একই কারণে। এ তথ্য জানা গেছে- অ্যাসোসিয়েশন অভ ট্রাভেল এজেন্টস অভ বাংলাদেশ (এটিএবি বা আটাব) এর সূত্রে। 

এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)-র ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত সংবাদ বিবৃতি অনুসারে, প্রত্যাবাসনের জন্য ২০৮ মিলিয়ন ডলারের এয়ারলাইন তহবিল আটকে রাখায় বাংলাদেশ – নাইজেরিয়া এবং পাকিস্তানের পরে – বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। জানা যাচ্ছে, বৈশ্বিক ডলার সংকটের মধ্যে ক্ষয়প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে চাঙ্গা রাখার জন্য এ তহবিল ব্যবহার করা হয়েছে।

ডলারের সঙ্গে এখন টাকারও সংকট

১১ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এতে ২০২২ সালে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। তাতেও মেটেনি ডলার–সংকট। বরং এর ফলে বেড়ে গেছে টাকার চাহিদাও। কারণ, ব্যাংকগুলোকে টাকা দিয়ে ডলার কিনে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হয়। ফলে ডলার কিনতে গিয়েই অনেক ব্যাংক টাকার সংকটে পড়ে গেছে।

আবার ব্যাংকগুলো যে পরিমাণে ঋণ বিতরণ করছে, আমানত জমা হচ্ছে তার অর্ধেক। আমানতের সুদ এখন মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম বলে অনেকেই ব্যাংকে টাকা রাখছে না। এর মধ্যে ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংকের অনিয়ম আলোচনায় আসায় গ্রাহকদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ফলে গত বছরের নভেম্বরেই পুরো ব্যাংক খাতের আমানত প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে।

এসবের প্রভাবে এখন এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ১০ শতাংশ সুদেও টাকা ধার করছে। এক দিনের জন্য কলমানি মার্কেটেও (অন্য ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করা) সুদহার বাড়ছে। বেড়েছে ট্রেজারি বিলের হারও। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে আমানতের সুদ বাড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। কারণ, ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাগদিদের খোঁজ রাখে না কেউ

১৩ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

কাকডাকা ভোরে দল বেঁধে ছুটছেন কয়েক নারী। তাঁদের সঙ্গে আছে হাঁড়ি-পাতিল, ঝুড়ি, দা-কোদাল, ছিপ-বড়শি। দিনভর চষে বেড়াবেন গাঁওগেরামের খাল-বিল, মাঠ-ঘাট, নদী-নালা। সেখান থেকে তাঁরা ধরবেন মাছ, কাঁকড়া-কুঁচিয়া ও কচ্ছপ। ভাগ্য সহায় হলে শিকার করবেন খরগোশও। বিকেল গড়িয়ে ঘোর সন্ধ্যায় তাঁরা ফিরবেন চিথলিয়াপাড়ার বাড়িতে। এর পর শুরু আরেক পর্ব।

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌর শহরের ব্যস্ত মোড়ে মোড়ে জটলা করে বসবেন নারীরা। ডালায় সাজানো হবে মাছ। ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি। দিন শেষে কারও আয় হবে ২০০ টাকা। কেউ আবার ২৫০ টাকা নিয়ে ফিরবেন ঘরে। এ দিয়েই মেটাতে হবে সংসার খরচ।

নিত্যদিন এমন করেই কাটিয়ে যাচ্ছেন বাগদি জাতিগোষ্ঠীর নারীরা। হরিণাকুণ্ডু শহরের প্রাণকেন্দ্র চিথলিয়াপাড়ায় পৌরসভা সড়কের গা গেঁষে তাঁদের পল্লি। সব মিলিয়ে কয়েকশ মানুষের বাস এখানে। সবাই বাগদি। সেই বাগদি জাতির মানুষ তাঁরা, যাঁদের উদ্দেশে প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ হেনরি লুইস মর্গান বলেছিলেন, ‘কোনো স্থানে স্মরণাতীতকাল থেকে বসবাসকারী আদিমতম জনগোষ্ঠী।’ যুগের পর যুগ চলে যায়, তাঁদের জীবনধারায় যেন এসবের ছোঁয়া লাগে না তেমন একটা।

আদিবাসী এ সম্প্রদায়ের নারীরাই নানা উপায়ে উপার্জনের জন্য শ্রম দেন। সাংসারিক কাজ আর পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখভাল করেন পুরুষ সদস্যরা। সময়ে সময়ে অবশ্য তাঁরাও হাল ধরেন। তাঁদের কেউবা সেলুন ও হোটেলে কাজ করেন। অনেকে মাছ ধরেন। এ সময়ে এসে রিকশা-ভ্যান চালকের পেশাও নিয়েছেন কেউ।

৯ সদস্যের পরিবারের খাবার জোটাতে প্রতিদিন সকালে বের হতে হয় নিমবালাকে। গ্রামে মাছ ধরে অন্য নারীদের মতো সন্ধ্যায় ফেরেন বাড়ি। রাতে শহরে মাছ বিক্রি করে ২০০-২৫০ টাকা আয় হয় তাঁর। প্রতিদিন তাঁর পরিবারে চালই লাগে পাঁচ কেজির মতো। বাজারে বর্তমানে ৫০ টাকার নিচে এক কেজি মোটা চালও মেলে না। ফলে আয়ের পুরোটাই চলে যায় চাল কিনতেই। ডাল-তেল আর তরিতরকারির বাজারও চড়া। তাই একটা কিনলে অন্যটা কেনার টাকা থাকে না নিমবালার গাঁটে। তাই কোনো বেলায় চিড়া-মুড়ি, কখনও শুধু ডাল-ভাত জোটে।

পল্লির অন্যতম প্রবীণ বাসিন্দা বাসুদেব বিশ্বাসের (৭০) আক্ষেপ, বংশপরম্পরায় এ এলাকায় বসবাস করলেও তাঁদের জন্য কেউ ভাবে না। কেউ খোঁজ নিতেও আসে না।

বাসুদেব বলেন, তাঁর সম্প্রদায়ের অল্প ক’জন বয়স্ক ভাতাসহ নানা সহায়তা পেলেও তিনি কিছুই পাননি। বছরে একবার ঈদের সময় পৌরসভা থেকে সামান্য চাল পান। শীতে মেলে একটি কম্বল। আর কেউ খোঁজ নেয় না।

বাগদি নারীদের অনেকে আবার ধানের মৌসুম শেষ হলে ইঁদুরের গর্ত খোঁড়েন। সেখান থেকে কুড়িয়ে পান কিছু ধান। কখনও কাঠ কেটে ও খড়ি কুড়িয়ে বিক্রি করেন। সামান্য আয়ে ডাল-ভাত খেয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন সংসার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সামান্য এ রোজগারে সংসারে চালাতে দিশেহারা তাঁরা। মাছ-মাংস বা ভালো খাবার কালেভাদ্রেও জোটে না।

বেশ কয়েক বছর আগে স্বামী হারিয়েছেন যমুনা রানী। বিধবা ভাতা হিসেবে যে ক’টি টাকা পান, তা দিয়ে সারা মাসের ওষুধের খরচও হয় না। তাই পাড়ার অন্যদের সঙ্গে মাছ ধরতে যান। যমুনার ভাষ্য, আগের আটার দাম কম ছিল। ফলে মাসের অর্ধেক সময় রুটি খেয়ে পার করতেন। এখন প্রতি কেজি আটার দামই ৬৫-৭০ টাকা। ফলে বাধ্য হয়ে দু’বেলা ডাল-ভাত খেয়েই পার করেন পরিবারের সদস্যরা। মাছ ধরার সামান্য আয়ে সংসার চলে না।

ঝিনাইদহ পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় আদিবাসী পরিবার আছে ৭০৪টি। সব মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ১০৮ জনের বাস এ জেলায়। তাদের মধ্যে অন্যতম বাগদি, কোল, পাহাড়ি, বর্মণ ও ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর সদস্যই বেশি। হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় যে ৮৭টি পরিবার আছে, তদের বেশিরভাগই বাগদি। তাদের মোট সংখ্যা ৪১০।

এ জাতির সদস্যরা সরকারিভাবে ‘হিন্দু তপশিলি জাতিবিশেষ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত। সারাদেশে তাঁদের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। মূলত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর এবং উত্তর-মধ্যাঞ্চলের সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরেই তাঁদের বসবাস। দেশের মূল জনস্রোত থেকে এখনও একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন বাগদিরা। যে কারণে শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসাসহ মৌলিক নানা অধিকার পৌঁছায়নি তাঁদের কাছে। প্রতিনিয়ত বাল্যবিয়ের শিকারও হচ্ছেন মেয়েরা।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এরিয়া ম্যানেজার আসাদুজ্জামান বলেন, আগে বাগদিদের জন্য তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টিসহ কিছু বিষয়ে প্রকল্প ছিল। এখন নেই। ২০০৭-২০০৮ সালের দিকে এগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

বাগদিদের নেতা সমির বিশ্বাস বলেন, প্রতি বছর সরকার থেকে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি, উপকরণসহ কিছু সুযোগ-সুবিধা মেলে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

সমাজসেবা কর্মকর্তা শিউলী রানী বলেন, উপজেলার আদিবাসী পরিবারের ৩৭ জন প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে বিশেষ ভাতা পান। এ ছাড়া ৭৫০ টাকা করে ৪৮ জনকে দেওয়া হয় অনগ্রসর শিক্ষা উপবৃত্তি। তবে এটি শুধু বাগদিদের জন্য নয়, উপজেলার সব আদিবাসীর জন্য।

বসে বসে বেতন নিচ্ছেন ২৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী

১৪ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

২০২০ সালের ১ জুলাই প্রায় সাড়ে ছয় হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করে লতিফ বাওয়ানী বন্ধ করে দেওয়া হলেও এখনো ৭৫ কর্মকর্তা ও ৯৭ কর্মচারী আছেন। তাঁরা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন।

একই দিন লতিফ বাওয়ানীর মতো বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয়। এতে ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক চাকরি হারান। সব কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও ২ হাজার ৯৪১ কর্মকর্তা–কর্মচারী ছিলেন। এখনো আছেন ২ হাজার ৫১৭ কর্মকর্তা–কর্মচারী।

আড়াই হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারীর মধ্যে রাজধানীর মতিঝিলে বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ে ১৫৪ কর্মকর্তা ও ১১০ কর্মচারী আছেন। সম্প্রতি তিন দিন প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অনেক কর্মকর্তা–কর্মচারীর চেয়ার ফাঁকা। দুই দিন গিয়ে ব্যবস্থাপক পর্যায়ের এক কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। তৃতীয় দিন দুই ঘণ্টার বেশি অপেক্ষার পর তাঁকে পাওয়া যায়।

কারখানা বন্ধ থাকলেও বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ের উৎপাদন বিভাগে আছেন ১০ কর্মকর্তা। বিভাগের তিন কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে টেবিল ফাঁকা দেখা যায়। একই কক্ষে দুই কর্মকর্তা গল্প করছিলেন। তাঁদের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা কোনো জবাব দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আপাতত কাজ নেই। করপোরেশন যখন যে কাজ দেয়, তা–ই তাঁরা করেন।

জানা যায়, বিজেএমসির প্রধান ও আঞ্চলিক কার্যালয়, পাটকল ও তিনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মরত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে যোগ্য ও দক্ষদের চাকরি স্থানান্তর বা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুপারিশ করতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় আন্তমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করে দেয়।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, বিজেএমসির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আত্তীকরণের চিন্তাভাবনা আছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পাট) তসলিমা কানিজ বলেন, আত্তীকরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি আইন হচ্ছে। এরপর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানুষের ওপর চাপ বাড়িয়ে আইএমএফের শর্ত পূরণ

১৫ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

তড়িঘড়ি করে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। এর আগে গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। আর গত জুনে বেড়েছে গ্যাসের দাম। বাকি আছে পানির দাম, তা–ও বাড়ানোরও উদ্যোগ আছে।

এখানেই শেষ নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন যে মাসে মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। একইভাবে আবারও সমন্বয় করা হবে পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের দামও। কারণ, সরকারকে এসব খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে। এটাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অন্যতম শর্ত।

আইএমএফের ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই সরকার কিছু শর্ত পূরণ করা শুরু করে দিয়েছে। মূলত যেসব শর্ত পূরণ করা সহজ, যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ায়, সেগুলোই সরকার দ্রুত করছে। কিন্তু অতীতেও দেখা গেছে যেসব সংস্কার অজনপ্রিয়, যার কারণে প্রভাবশালীরা চাপে পড়বে, তাদের সুযোগ-সুবিধা কমবে, সেসব শর্ত শেষ পর্যন্ত খুব একটা বাস্তবায়িত হয় না।

৯৯ সেতুর ৮৫টিরই উচ্চতা কম

১৫ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দেশের ৯৯টি সেতুর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছে ৮৫টিরই উচ্চতা কম। নিচু হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে এসব সেতুর নিচ দিয়ে বড় নৌযান চলাচল করতে পারে না। কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে নৌপথগুলো।

সাশ্রয়ী ও পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হয় নৌপথকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কয়েক দশক ধরে নৌপথের উন্নয়নে যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, তেমনি কম উচ্চতার সেতু নির্মাণ করে নৌপথকে অকেজো করে দেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর তথ্য অনুযায়ী, এসব কম উচ্চতার সেতু নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), বাংলাদেশ রেলওয়ের মতো সরকারি সংস্থাগুলোই। এমনকি এখনো কম উচ্চতায় সেতু নির্মাণ চলছে। যেমন সম্প্রতি টঙ্গীতে তুরাগ নদের ওপর পুরোনো কামারপাড়া সেতুর পাশে সওজ-এর আরেকটি সেতু নির্মাণ করেছে, যেটি কম উচ্চতার। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে উচ্চতা নিয়ে আপত্তি জানানোর পরও তা আমলে নেওয়া হয়নি। কম উচ্চতার টঙ্গী রেলসেতুর নির্মাণকাজও চলমান।

দেশের নৌপথগুলো দেখভালের দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএর। সংস্থাটির হিসাব বলছে, একসময় দেশে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল। এখন টিকে আছে মাত্র সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটারের মতো। নৌপথগুলোয় মোট কয়টি কম উচ্চতার সেতু আছে, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য বিআইডব্লিউটিএর কাছে নেই। সংস্থাটি ২০২১ সালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে নির্মাণ করা ৯৯টি সেতু নিয়ে একটি জরিপ প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়। এই জরিপে ৮৫টি সেতুর উচ্চতা কম পাওয়া যায়।

ঢাকার নোংরা জলে যাচ্ছে ২২৫ কোটি টাকা

১৫ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। শোধনাগার চালুও হয়েছে। কিন্তু রাজধানীর চারপাশের নদীদূষণ রোধের যে উদ্দেশ্য নিয়ে এটি করা হয়েছে, তা সেই কাজে আসছে না।

কারণ, এ প্রকল্পের আওতাধীন এলাকা থেকে পয়োবর্জ্য শোধনাগারে পৌঁছানোর পাইপলাইন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এখন কেবল হাতিরঝিলের একাংশের পানি পরিশোধন করতে পারছে। এ পরিশোধিত পানি বালু নদে গিয়ে অন্যান্য এলাকা থেকে আসা নোংরা পানির সঙ্গে মিশছে। যেনতেন এ কাজেই প্রতিষ্ঠানটি বছরে খরচ করছে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা।

ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, হাতিরঝিলের ড্রেনেজ লাইনের সঙ্গে সংযোগ না থাকায় বারিধারা-ডিওএইচএস খাল, গুলশান-বারিধারা লেক দূষণ প্রকল্পের মূল লাইন, মহাখালী ডিওএইচএস, বনানী ডিওএইচএস, কালাচাঁদপুর ও ডিআইটি এলাকার লাইন, কড়াইল ও টিঅ্যান্ডটি বস্তির লাইনের নোংরা পানি সরাসরি বালু নদে যাচ্ছে। ফলে পরিশোধিত আর হাতিরঝিলের নোংরা পানি একসঙ্গেই মিশছে।

‘টিকে থাকতে’ বিয়ের অনুষ্ঠান

১৮ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক উদ্বোধনের পর পাঁচ বছরে আট কোটি টাকার মতো আয় করেছে। এর মধ্যে সরকার পেয়েছে ২ কোটি ১২ লাখ টাকা।

পার্কটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কোম্পানি টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেড বলছে, তাদের লোকসান হচ্ছে। এ কারণে পার্কে এখন তারা বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। যাতে আয় বাড়ে। প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত আগের ছয় মাসে পার্কে ৫৫টি অনুষ্ঠান হয়েছে। এর মধ্যে বিয়ে ও বউভাতের মতো অনুষ্ঠান হয়েছে ২৩টি। বাকিগুলো চাকরি মেলাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান।

টেকসিটির মহাব্যবস্থাপক মোসলেম উদ্দীন শিকদার সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বিয়েশাদিজাতীয় অনুষ্ঠান না করলে টিকে থাকা যাচ্ছে না। যে কারণে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ভিত্তিতে এসব অনুষ্ঠান করা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আয়ের চেয়ে আমাদের ব্যয় বেশি হচ্ছে। ভবিষ্যতে লাভের আশায় এখন লোকসান দিয়ে পার্কটি দেখভাল করতে হচ্ছে।’

যশোর সফটওয়্যার পার্কের উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর। যশোর শহরের নাজির শঙ্করপুর এলাকায় ১২ একরের বেশি জমিতে প্রতিষ্ঠিত পার্কটিতে তিনটি ভবন রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য ইজারাযোগ্য জায়গা রয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার বর্গফুট। আরও রয়েছে আবাসন, সম্মেলন, মেলা আয়োজনসহ নানা সুবিধা। পার্কটি নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা।

সরকার শ খানেক হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে চালু হয়েছে ১০টি। এর মধ্যে একটি শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যশোরের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল ১. দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন, ২. মৌলিক অবকাঠামো করা, ৩. বিনিয়োগকারীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প স্থাপন ও ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা, ৪. কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং ৫. ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে জ্ঞানভিত্তিক শিল্প স্থাপন।

১০০ টাকার মাত্র ১৮ টাকা সরকারের

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ১৫ বছরের জন্য যশোরের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে টেকসিটিকে। ২০১৭ সালে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী মোট রাজস্বের ১৮ শতাংশ পায় সরকার। বাকি ৮২ শতাংশ পায় টেকসিটি।

উল্লেখ্য, সরকার হাইটেক পার্কের মতো দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরকার শুধু জমি তৈরি করে দিচ্ছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অংশীদারত্ব ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ, মুনাফার ৩০ শতাংশ পাবে সরকার।

হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্র আহ্বান করার মাধ্যমেই টেকসিটিকে পার্কটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে টেকসিটির বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের দাবি, টেকসিটি একেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একেক হারে ভাড়া আদায় করে। সরকারি মূল্যের বাইরে বাড়তি দাম ধরে বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হয়। কোনো সমস্যা হলে তারা সমাধান করে না। যদিও টেকসিটি কর্তৃপক্ষ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বছরখানেক আগে পার্কটি ছেড়ে যাওয়া এক বিনিয়োগকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, কাজের চেয়ে টেকসিটির সঙ্গে ঝামেলা মেটাতেই বিনিয়োগকারীদের সময় চলে যায়।

হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যশোরের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ৬১টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে। তবে সূত্র জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ই-কমার্স, কল সেন্টার, ইন্টারনেট সেবা, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় নিয়োজিত। ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার তৈরি বা বিপণন নিয়ে কাজ করে। ২০২০ সালে আইএমইডির এক প্রতিবেদনেও একই চিত্র উঠে এসেছিল।

পার্কে ৫ হাজার কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ছিল। তবে কর্মসংস্থান হয়েছে দেড় হাজারের মতো মানুষের। তাদের বেশির ভাগের বেতন-ভাতা খুব কম। ফলে বেশির ভাগই অল্প সময় কাজ করে অন্য কোথাও চলে যান।

সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিনিয়োগকারী প্রথম আলোকে বলেন, পার্কটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হয়েছে, সেটা সরকারিভাবে মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। তারপর এ ধরনের পার্ক কোথায় প্রতিষ্ঠা করা দরকার, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ছোটদের ঘাড়ে দামের পাহাড়

২০ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

বৃহৎ শিল্পকারখানার উদ্যোক্তারা গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন। সেখানে দাম বেড়েছে ৮৭ শতাংশ। তার মানে, প্রস্তাবের তুলনায় ক্যাপটিভে গ্যাসের ইউনিটের দাম ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সেই তুলনায় দামের পাহাড় চেপেছে ছোট শিল্পের উদ্যোক্তাদের ঘাড়ে—১৭৮ শতাংশ। ক্যাপটিভ ছাড়া অন্যান্য মাঝারি ও বড় শিল্পের ক্ষেত্রেও দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ শতাংশ।

এত দিন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্পভেদে গ্যাসের দাম ছিল ভিন্ন ভিন্ন। যেমন ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ছিল প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৭৮ পয়সা, মাঝারি শিল্পে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা, বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা। ক্যাপটিভে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ছিল ১৬ টাকা। জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর কথা বলে গত বুধবার সরকার চা ছাড়া অন্য সব শিল্পের গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে। তাতে বড়দের চেয়ে ছোট-মাঝারি শিল্পই বেশি চাপে পড়বে বলে জানান ব্যবসায়ী নেতারা।

গ্যাসের দাম এক লাফে ৮৭ থেকে ১৭৮ শতাংশ বাড়ানোর কারণে ছোট-মাঝারি ও বড় শিল্পের অনেক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উৎপাদন খরচ কতটা বাড়বে, তা নিয়েও হিসাব-নিকাশ শুরু করেছেন শিল্পমালিকেরা। তাতে কেউ কেউ হতাশাও প্রকাশ করেছেন। বাড়তি দাম দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া নিয়েও রয়েছে উদ্যোক্তাদের শঙ্কা। তবে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক। কারণ, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (ব্যবসায়ীরা) যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায়, তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব, সেই মূল্যই তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’ প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাবের কারণে ব্যবসায়ীরা ধরে নিয়েছেন, গ্যাসের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে খুব একটা লাভ হবে না।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব শিল্পের জন্য গ্যাসের একই দাম নির্ধারণ করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। আমরা ক্যাপটিভের ক্ষেত্রে ৫৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির অনুরোধ করেছিলাম। একই হারে অন্যান্য শিল্পেও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করলে তেমন কোনো সমস্যা হতো না। আমরা দু-এক দিনের মধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে গ্যাসের দাম সহনীয় করার বিষয়ে কথা বলব।’

গত ২০ ডিসেম্বর এফবিসিসিআই নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের শর্তে ক্যাপটিভের জন্য গ্যাসের প্রতি ইউনিটের জন্য ২৫ টাকা দাম প্রস্তাব করে।

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য প্রস্তুতকারক রপ্তানিমুখী মাঝারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান হিফস অ্যাগ্রোর চট্টগ্রামের পাথরঘাটা ও চাক্তাই এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তিনটি কারখানা রয়েছে। পাথরঘাটার কারখানায় মাসে ৬০ হাজার ও চাক্তাই কারখানায় মাসে ৫০ হাজার টাকা গ্যাস বিল দিতে হয়। গ্যাসের নতুন দাম কার্যকর হলে সেটি বেড়ে হবে যথাক্রমে ১ লাখ ৮০ হাজার ও দেড় লাখ টাকা।

হিফস অ্যাগ্রোর সিইও ছৈয়দ মোহাম্মদ শোয়াইব হাছান বলেন, ‘গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে প্রায় আড়াই শতাংশ। এমনিতেই আমরা বিভিন্ন সংকটে রয়েছি। ভারতে চিনির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫২ টাকা। আর আমাদের দেশে কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দামে। মুম্বাই থেকে সৌদি আরবের জেদ্দায় কনটেইনারভাড়া ৭০০-৮০০ ডলার। আর চট্টগ্রাম থেকে ভাড়া ১ হাজার ৮০০ ডলার। তাতে ভারতের চেয়ে আমাদের বিস্কুটের দাম দ্বিগুণ পড়ে যায়।’

গাজীপুরের চন্দ্রায় টাওয়েল টেক্স লিমিটেড বিভিন্ন ধরনের টেরি টাওয়েল পণ্য উৎপাদিত হয়। তাদের বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ ৪০ লাখ ডলার। নতুন করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বর্তমানে ভোর ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ থাকছে না। অবস্থার উন্নতি না হলে গ্যাসের নতুন দামে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ৩১ শতাংশ।

এমন তথ্যই দিলেন টাওয়েল টেক্সের এমডি এম শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, ‘হোম টেক্সটাইল খাতে আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। তারা ১ ডলারের বিপরীতে ২৫৬ রুপি পায়। আমরা পাই ১০২ টাকা। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর আমরা প্রতিযোগিতায় আরও পেছনে পড়ে যাব।’

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর সিরামিক, ইস্পাত, বস্ত্রকল, তৈরি পোশাকশিল্পসহ কয়েকটি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী, সিরামিক পণ্যের উৎপাদন খরচ ২০-২৫ শতাংশ, টনপ্রতি রডে ১২০০-৩০০০ টাকা, প্রতি কেজি সুতা উৎপাদনে গ্যাসের খরচ ২৫ সেন্ট থেকে ৪৯ সেন্টে দাঁড়াবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্যাসের নতুন দাম আমাদের জন্য একটা “শক”। আমাদের হিসাবে প্রতি টন রডের দাম তিন হাজার টাকা বাড়বে।’

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ছোট, মাঝারি ও বড়—সব শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম একই করা ন্যায্যতার পরিপন্থী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা এত বেশি টাকায় গ্যাস কেনার মতো অবস্থায় নেই। নতুন এ দাম কার্যকর হলে ছোট ও মাঝারি শিল্পের অনেকেই টিকে থাকতে পারবে না।

ডলার–সংকটে রোজার পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না

১৮ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

মার্কিন ডলারে আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসা তিনটি জাহাজের পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না। জাহাজগুলোতে পবিত্র রমজান মাসের বাজার সামনে রেখে আনা হয়েছে অপরিশোধিত চিনি ও ভোজ্যতেল। পণ্যের পরিমাণ প্রায় ৫৪ হাজার টন—আমদানি মূল্য ৩ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার।

পণ্যগুলো আমদানি করেছে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ ও ঢাকার মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)। আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ঋণপত্র খুলে এসব পণ্য আমদানি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা, তথা মার্কিন ডলারে দাম পরিশোধ করবে। কিন্তু ডলারের অভাবে ব্যাংক মূল্য পরিশোধ করতে পারেনি। এ কারণে বিদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না।

পিপিপির নামে কারখানা ‘ভাড়া’

১৯ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ করপোরেশন (বিটিএমসি) যে দুটি কারখানা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় দিয়েছে, তার একটি ঢাকার ডেমরার আহমেদ বাওয়ানী টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। এই কারখানা পিপিপির আওতায় ২০১৯ সালের ২৫ জুন তানজিনা ফ্যাশন লিমিটেডকে দেয় বিটিএমসি। কারখানাটি কেমন চলছে তা দেখতে অনুমতি চাইলে ৮ জানুয়ারি তানজিনা ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ আই এম হাসানুল মুজিব প্রথম আলোকে জানান, ভেতরে এখনো কাজ বাকি আছে। এ জন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

পরদিন ডেমরার আহমেদ বাওয়ানী টেক্সটাইল কারখানায় গেলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, কারখানায় তানজিনা ফ্যাশনের পাশাপাশি এখনো বিটিএমসির কিছু কর্মকর্তা–কর্মচারী রয়েছেন। কারখানার আগের সব যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়ায় সেখানে সুতা বা কাপড় উৎপাদিত হয় না। সোয়েটারের কাজ, কাপড়ে রং করাসহ গার্মেন্টের বেশকিছু কাজ চলে। গুদামসহ কিছু জায়গা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অন্যান্য কাজের জন্য ভাড়া দিয়েছে তানজিনা ফ্যাশন। কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন কিছু কক্ষ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভেতরে আগের স্থাপনাই রয়েছে।

হাসানুল মুজিবের দাবি, ভূমি ছাড়া সবকিছু বিটিএমসি তাঁদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন সেখানে ২ হাজার ৬০০ লোক কাজ করছেন। অবশ্য স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, সেখানে লোকবলের সংখ্যা হাজারখানেকের বেশি হবে না।

পিপিপির আওতায় দেওয়া বিটিএমসির আরেকটি কারখানা গাজীপুরের টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। ২০১৯ সালের ২১ জুলাই ওরিয়ন গ্রুপকে বিটিএমসি কারখানাটি দেয়। বিটিএমসির কর্মকর্তারা জানান, ওরিয়ন গ্রুপ কারখানার চারদিকে সীমানাপ্রাচীর করেছে। নতুন যন্ত্রপাতি আনার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

অর্থাৎ, পিপিপির আওতায় দেওয়ার সাড়ে তিন বছর হয়ে গেলেও এখনো কারখানা দুটি পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারেনি। এমনকি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতিও স্থাপন করতে পারেনি। এ অবস্থায় বিটিএমসি কারখানা দুটিকে বাড়তি সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে।

তানজিনা ফ্যাশনের হাসানুল মুজিব বলেন, ভূমি দেওয়ায় বছরে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ বিটিএমসিকে দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড এবং করোনার কারণে আরও দুই বছর এই অর্থ দিতে হবে না।

বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে বিটিএমসি চেয়ারম্যানের দপ্তরে যান এই প্রতিবেদক। চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পিপিপি প্রকল্পগুলোর প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা (বোর্ড শাখা) কাজী ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়।

কাজী ফিরোজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তানজিনা ফ্যাশনের কাছে কারখানা এখনো হস্তান্তর সম্পন্ন হয়নি। তবে হস্তান্তরের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ওরিয়ন গ্রুপের কাছে কারখানা হস্তান্তর করা হয়েছে। নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ কারখানা মেরামত করে পুরো উৎপাদনে যাওয়ার জন্য তাদের প্রথম তিন বছর সময় দেওয়া হয়। করোনার কারণে তাদের আরও দুই বছর ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এখন পর্যন্ত বিটিএমসির ১৬টি কারখানা পিপিপির আওতায় দেওয়ার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজপত্রে পিপিপি হলেও কারখানাগুলো মূলত ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে উৎপাদনে যাওয়ার জন্য যে সময় ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তা–ও কাজে লাগছে না।

বিটিএমসির ৮৬টি কারখানার মধ্যে ২৫টি প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মূলত বিটিএমসি নব্বইয়ের দশক থেকেই উৎপাদনে নেই। বছরের পর বছর এসব কারখানা ফেলে রাখা অবস্থায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি বিটিএমসির কারখানাগুলো চালুর নির্দেশনা দেন।

কারখানাগুলো আধুনিকায়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে সরকারিভাবে চালুর উদ্যোগ না নিয়ে বিটিএমসির কর্মকর্তারা পিপিপি ও ভাড়ার মাধ্যমে এগুলো সচল করার পরিকল্পনা করেন।

নামে পিপিপি, কাজে ভাড়া

বিটিএমসি কারখানার যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা বিক্রি করে শুধু জমি ৩০ বছরের জন্য পিপিপির আওতায় দিচ্ছে। পরবর্তী সময়ে আরও মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাভ–লোকসান যা–ই করুক না কেন, বছরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিটিএমসিকে দেবে। চুক্তির শর্তগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো মেনে চলছে কি না, তা বিটিএমসি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে দেখভাল করবে। এ বিষয়কেই কারখানা পিপিপিতে দেওয়া বলছে বিটিএমসি।

আবাসন নয়, জমির সবচেয়ে বড় বাজার তৈরি করেছে রাজউক

জানুয়ারি ২০, ২০২৩, বণিক বার্তা

রাজধানী ঢাকার আবাসন সমস্যা সমাধানে আড়াই দশক আগে পূর্বাচলে ‘নতুন শহর প্রকল্প’ হাতে নিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রকল্পটি হাতে নেয়ার সময় বলা হয়েছিল, রাজধানীর মধ্যবিত্তের আবাসন সংকট সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে প্রকল্পটি। যদিও এখন পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান নাগরিক চাপে বিপর্যস্ত ঢাকার আবাসন সমস্যা সমাধানে কোনো কাজেই আসেনি পূর্বাচল। বরং এখানকার বরাদ্দকৃত জমি অনেকের জন্যই খুলে দিয়েছে রাতারাতি বিত্তশালী হওয়ার পথ।

রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পটিকে এখন দেশের জমির সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে দেখছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তাদের ভাষ্যমতে, রাজউক এখানকার জমি অধিগ্রহণ করেছিল কাঠাপ্রতি সাড়ে ১৪ হাজার টাকারও কম মূল্যে। এরপর সে জমি বরাদ্দে তখন গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল দেড় লাখ টাকা করে। প্রতিবার মালিকানা বদলের পর এখানকার জমির দাম বাড়ছে কয়েক গুণ করে। বর্তমানে পূর্বাচলে জমির কাঠাপ্রতি গড় দাম দাঁড়িয়েছে ১ কোটি টাকার বেশিতে।

দাম বাড়তে বাড়তে এখন জমি কেনাবেচার এক রমরমা বাজারে রূপ নিয়েছে পূর্বাচল। এখানকার প্লট মালিকদের মধ্যে পূর্বাচলে আবাসন তৈরির চেয়ে জমি বিক্রির প্রবণতাই দেখা যাচ্ছে বেশি। সেভাবে আবাসন গড়ে না উঠলেও একেক জমি কয়েকবার হাতবদলের ঘটনাও ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পূর্বাচলে প্লট কেনার পর জমির মালিকরা কিছুদিন অপেক্ষা করেন। এর মধ্যে প্লটের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে তা আবার বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব প্লট ক্রয়মূল্যের চেয়ে ১৫-২০ গুণ বেশি দামে বিক্রি করে দেয়ার নজিরও পাওয়া যায়।

এখানকার প্লট মালিক ও কয়েকজন জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতাকারীর ভাষ্যমতে, নতুন শহরে আবাসন গড়ে না ওঠার বড় কারণ জমির উচ্চমূল্য। হাত বদল হলেই জমির দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি এখানে সব ধরনের নাগরিক সুবিধাও যদি নিশ্চিত করা যায়, তার পরেও অদূরভবিষ্যতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে না শুধু জমির উচ্চমূল্যের কারণে। বরং জমি কেনাবেচার মাধ্যমেই একটি শ্রেণী ক্রমাগত লাভবান হতে থাকবে।

কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বাংলাদেশের (সিএজি)  পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পসংক্রান্ত এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির জন্য রাজউক মোট জমি অধিগ্রহণ করেছে ৬ হাজার ২১৩ দশমিক ৫৫ একর (১ একরে ৬০ দশমিক ৫ কাঠা)। জমি অধিগ্রহণ বাবদ রাজউককে পরিশোধ করতে হয়েছে ৫২৪ কোটি ৭৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। রাজউকের অধিগ্রহণ মূল্য পড়েছে একরপ্রতি ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫০১ টাকা। সে অনুযায়ী, প্রতি কাঠা জমি অধিগ্রহণে রাজউককে মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে গড়ে ১৪ হাজার ৪৩৮ টাকা।

নতুন শহর এলাকায় সরজমিন পরিদর্শন ও প্লট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে এখন কাঠাপ্রতি গড় দাম ১ কোটি টাকা। সে হিসেবে রাজউকের অধিগ্রহণের পর এখানকার জমির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০০ গুণে।

সেচে খরচ বেড়েছে বিঘায় ৩০০ টাকা

২০ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

সার, বীজ, কীটনাশকসহ সব কৃষি উপকরণের বাড়তি দাম মাথায় নিয়ে হাঁড় কাপানো শীতে আবাদে ব্যস্ত উত্তরাঞ্চলের চাষি। রংপুরের গঙ্গাচড়ার সদর ইউনিয়নের চেংমারী গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান পাঁচ বিঘা জমিতে শুরু করেছেন বোরো ধানের আবাদ। বিদ্যুতের দাম বাড়ার পর থেকে তাঁর মনে শান্তি নেই। আগে সেচে ঘণ্টায় ৬০ টাকা নিলেও বিদ্যুতের দাম বাড়ার পর এই দামে আর পানি মিলবে না বলে আশঙ্কা তাঁর।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের আছে রবি ফসলের সুখ্যাতি। গত পাঁচ বছর এ এলাকার কৃষক বোরো আবাদে ঝুঁকেছেন। উপজেলার চরক্লার্কের কৃষক মহি উল্যাহ জানান, গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে সেচ খরচ ছিল দেড় হাজার টাকা। এ বছর বিঘাপ্রতি সেচ খরচ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা।

গাজীপুরের শ্রীনগরের তরিকুল ইসলামের ১০ হাজার মুরগির একটি খামার আছে। তিনি জানান, ১ হাজার মুরগি পালনের একটি ছাউনিতে শীতকালে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ খরচ হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। গরমে সেই খরচ আরও ৫০ শতাংশের মতো বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে প্রতি ইউনিটে খরচ বাড়বে গড়ে ৫ শতাংশ।

বিদেশি ঋণ শোধে চাপ বাড়ছে

২১ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

বিদেশি ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে। গত কয়েক বছরে চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকে নেওয়া কঠিন শর্তের ঋণ এ দুশ্চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ছয় বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ এমনিতেই বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সামনে ঋণ পরিশোধের এ চাপ আরও বাড়বে। কারণ, আগামী তিন বছরেই ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বর্তমানের চেয়ে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মূলত বিভিন্ন প্রকল্পে চীন ও রাশিয়া থেকে নেওয়া বাণিজ্যিক ঋণ পরিশোধের রেয়াতি সময় (গ্রেস পিরিয়ড) আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তখন ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়ে যাবে।

এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাড়ে চার শ কোটি ডলারের ঋণ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ঋণ পরিশোধের চাপও সামনে আসবে।

ঋণ পরিশোধ ৪০০ কোটি ডলার ছাড়াবে

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ১১২ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ছয় মাসে এত ঋণ পরিশোধ আগে কখনোই হয়নি। সামনে আরও বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে—এমন পূর্বাভাসও মিলেছে ইআরডির এক প্রতিবেদনে। নতুন ঋণ চুক্তি না হলে এবং শুধু পাইপলাইনে থাকা প্রতিশ্রুতি থেকে ঋণ মিললে এবং ডলারে আগামী কয়েক বছরে ঋণ পরিশোধে কী পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে, তা দেখানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। প্রতিবছরই এ পরিমাণ বাড়বে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৪০২ কোটি ডলার। ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ৫১৫ কোটি ডলার খরচ হবে। এরপর ঋণ পরিশোধ কমতে থাকবে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাত্র ১১৭ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল সরকারকে। এরপর প্রতিবছরই তা বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২০১ কোটি ডলার। তার মধ্য দিয়ে গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বার্ষিক ঋণ পরিশোধ ২০০ কোটি ডলার ছাড়াল। প্রতিবছর যত বৈদেশিক সহায়তা এ দেশে আসে, তার এক-পঞ্চমাংশের সমপরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হয়।

এক বছরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১১%

২২ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ঢাকা মহানগরে ২০২২ সালে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম ১১ শতাংশ বেড়েছে। সংগঠনটি বলেছে, ২০২২ সাল সাধারণ মানুষের জন্য একদমই স্বস্তির ছিল না।

ক্যাব রাজধানীর ১১টি বাজার থেকে ১৪১টি খাদ্য ও ৪৯টি খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং ২৫টি সেবার তথ্য সংগ্রহ করে মূল্যবৃদ্ধির এ হিসাব করেছে। সংগঠনটি সাধারণত প্রতিবছর বার্ষিক প্রতিবেদনে জীবনযাত্রার ব্যয় ও দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি তুলে ধরে। ২০২১ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি তারা। ২০২২ সালের প্রতিবেদনে সংগঠনটি হিসাব করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে। এবার মূল্যস্ফীতির হিসাবে দামের তুলনা করা হয়েছে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসকে ভিত্তি ধরে। অর্থাৎ ওই মাসে যে দাম ছিল, সেটার সঙ্গে তুলনা করে মাসে মাসে মূল্যবৃদ্ধির হিসাব করা হয়েছে। সার্বিকভাবে একটি গড় হিসাব তুলে ধরেছে তারা।

দেখা যায়, সার্বিকভাবে পণ্য ও সেবার গড় দাম বেড়েছে ১১ শতাংশের কিছু বেশি। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের মতো। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। এবার ক্যাব নিম্নআয়ের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কেমন ছিল, তা আলাদাভাবে দেখিয়েছে। তারা বলছে, সাধারণ পরিবারের তুলনায় নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ সাধারণের তুলনায় কিছুটা কম (৯ দশমিক ১৩) ছিল।

বড়রা ডেকে আনল ছোটদের বিপদ

২৬ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তার আগে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। ডলার-সংকটে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। বড় ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের অনেকে হয় ব্যাংকের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত, নয়তো ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁদের গভীর। আবার সরকারের সঙ্গে দেনদরবারেও এগিয়ে থাকেন বড়রা। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে সব দিক থেকে পিছিয়ে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। ফলে চলমান সংকটে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।

দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতেও ছোটদের কোনো প্রতিনিধি নেই। ফলে তাদের হয়ে কথা বলার কোনো লোকই যেন নেই কোথাও। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা, যাঁদের ছোটদের হয়ে কথা বলার কথা, তাঁরা সেটি করছেন না। ফলে বড়দের স্বার্থের বলি হচ্ছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। নতুন করে আবারও তার প্রমাণ মিলেছে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আলোচনায়। সরকারের সঙ্গে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আলোচনায় ছোটদের কথা ভুলে গেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। নিজেদের শিল্পকারখানা কতটুকু বাড়তি দামে টিকতে পারবে, সেই হিসাব–নিকাশ করে গ্যাসের দাম ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেন তাঁরা। ছোট-মাঝারি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতার কথা না ভেবে তাঁদের দেওয়া ‘সরল’ প্রস্তাব সরকারও লুফে নেয়।

সার ও চা-শিল্প ছাড়া অন্য সব শিল্পের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তাতে গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় শিল্পের গ্যাসের দাম ইউনিট প্রতি বাড়ছে সাড়ে ৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের গ্যাসের দাম বাড়ছে একলাফে ১৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এভাবেই বড় ব্যবসায়ীরা ছোট-মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ডেকে আনল মহাবিপদ। অথচ ১৪ বছরে ছয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেকবারই ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্পের জন্য আলাদা দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার সেটি অনুসরণ করা হয়নি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা কি বুঝেশুনেই কাজটি করেছেন? উত্তরটা জানতে হলে দেখতে হবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃত্বে কারা। সবগুলো প্রভাবশালী সংগঠনের শীর্ষ পদে বসে আছেন বড় ব্যবসায়ীরা। আগে একসময় সাধারণ সদস্যদের ভোটে এফবিসিসিআইসহ অধিকাংশ বাণিজ্য সংগঠনে নেতা নির্বাচিত হতো। নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সেই ব্যবস্থা এখন প্রায় জাদুঘরে যেতে বসেছে। এফবিসিসিআইয়ে সর্বশেষ ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালে, তা–ও আংশিক। মূলত সমঝোতার মাধ্যমেই অধিকাংশ বাণিজ্য সংগঠনের নেতা নির্বাচিত হচ্ছেন। এফবিসিসিআইসহ কয়েকটি সংগঠনের শীর্ষ নেতা কে হবেন, তা আবার সরকারের উচ্চপর্যায়ের সবুজসংকেতে হয়। তাতে বড় সংগঠনে ছোটদের (ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী) সংখ্যা শূন্যের কোঠায়।

গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ভর্তুকি কমাতে গত বছরের শেষ দিকে জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়। তখন প্রভাবশালী বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন সরকারের মন্ত্রী-সচিবেরা। সর্বশেষ গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গ্যাসের চাহিদা, সরবরাহ ও দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেন। সরকারের পক্ষ থেকে সেই সভায় গ্যাসের প্রতি ইউনিটের দাম ৪০ টাকা প্রস্তাব করা হলে ব্যবসায়ীরা নেতারা তাতে আপত্তি জানান।

পরে বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএ, পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ কয়েকটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এফবিসিসিআইয়ের নেতারা। ওই সভা শেষে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়ার শর্তে ক্যাপটিভের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। সেই চিঠিতে অন্য শিল্পের গ্যাসের দাম কী হবে, তা নিয়ে কোনো কথা ছিল না।

১৮ জানুয়ারি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। ওই দিনই জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেন, ‘…তারা (ব্যবসায়ীরা) যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায়, তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব, সেই মূল্যই তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

প্রধানমন্ত্রীর এ মনোভাবের পর বড় ব্যবসায়ী নেতারা দমে যান। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পরদিন এফবিসিসিআইয়ের এক অনুষ্ঠানে প্রভাবশালী একটি বাণিজ্য সংগঠনের একজন নেতার সঙ্গে কথা হয়। আলাপচারিতায় তিনি জানালেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। ওই দিনই আরও তিন-চারটি বাণিজ্য সংগঠনের নেতারাও একই কথা জানান।

প্রভাবশালী বাণিজ্য সংগঠনগুলো নীরবতা পালন করলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার–সংকট এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে এমনিতেই ব্যবসা কঠিন হয়ে গেছে। নতুন করে গ্যাসের পেছনে খরচ তিন গুণ বাড়বে। তাতে ব্যবসায় টিকে থাকাটা আরও কঠিন হয়ে যাবে তাদের জন্য।

ঢাকা চেম্বারের সদ্য বিদায়ী সভাপতি রিজওয়ান রাহমান গতকাল এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সংকটের সময় কেউ কারও দিকে তাকায় না। ছোট-মাঝারি শিল্পের কথা না ভেবে বড় ব্যবসায়ী নেতারা যেভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন, সেটি স্বার্থপর আচরণ। তাঁরা তাঁদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। সরকারও এই বড় সাহেবদের কথা শোনেন। তাই ডানে–বাঁয়ে হিসাব–নিকাশ না করে সব শিল্পের জন্য গ্যাসের একই দাম নির্ধারণ করেছে। বড়দের বাঁচাতে গিয়ে ছোটদেরও একই কাতারে বিবেচনা না করার এ মানসিকতাও অনৈতিক।

রিজওয়ান রাহমান আরও বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত নানামুখী সমস্যায় আছে। গ্যাসের দাম ১৭৮ শতাংশ বাড়ানোর পর তাদের সমস্যা আরও বাড়বে। অনেকেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না।

বড় চাপে ছোট বেকারি

২৬ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের চায়না বেকারি চার বছর ধরে উৎপাদনে থাকার পর সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় সব ধরনের কাঁচামাল ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে টিকে থাকতে না পেরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন মালিক। এতে প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক প্রায় এক লাখ টাকার ব্যবসা যেমন নেই হয়ে গেছে, কাজ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির সময় থেকে চাপটা শুরু হয়। এরপর গ্যাসের দাম বাড়ল। ব্যবসা টেকাতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বন্ধই করতে হলো। ৭০ লাখ টাকার বিনিয়োগ ছিল। এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকাই ব্যাংকঋণ। এখন দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে ঘুরছি।’

সরেজমিনে গতকাল বুধবার পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন ছোট বেকারির মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপকালে এই শিল্পের বেকায়দায় পড়ার কথা জানা যায়। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, হস্তচালিত রুটি, বিস্কুট ও কেক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো করোনার ধাক্কা কাটিয়ে যখন ব্যবসায় ফিরতে শুরু করছিল, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নিত্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজার চড়ে যায়। এর প্রভাবে দেশের বাজারে আটা, ময়দা, সয়াবিন তেলসহ বেকারিশিল্পের সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়ে যায়। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আবার বেড়েছে। এসব কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে ছোট ছোট বেকারিগুলো। অনেকে আবার পণ্যের দাম সমন্বয় ও উৎপাদন কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টায় আছে। কিছু প্রতিষ্ঠান সমজাতীয় বিকল্প ব্যবসার পরিকল্পনা করছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রুটি বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আরেক দফা জ্বালানির দাম বাড়িয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। সংশ্লিষ্টদের এটা বুঝতে হবে যে সবাই চাপের মধ্যে আছে। তবে ছোট ব্যবসায়ীদের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কম। এখন এ খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।

সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছয় হাজারের মতো ছোট-বড় বেকারি আছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে সারা দেশে ১০ শতাংশ বেকারি প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে ব্যবসা ছেড়েছে। আরও ২০ শতাংশের মতো বেকারি ব্যবসা ছাড়ার পরিকল্পনায় আছে। তারা ভালো বিকল্প খুঁজছে।

কাঁচামাল ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পর উৎপাদন কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টায় আছে, এমন বেকারিগুলোর একটি রাজধানীর শনির আখড়ার মনি ফুড প্রোডাক্টসের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শহীদ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানির দাম, উৎপাদন খরচ, শ্রমিকের পারিশ্রমিক—সবকিছুতেই বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। কিন্তু দাম সমন্বয় হয়েছে সেই তুলনায় অপ্রতুল। ৫৫ জনবলের কারখানায় এখন কাজ করছেন ১৫ জন। বিক্রয়কর্মী ১৭ জন থেকে কমে ৫ জনে নেমেছে।

এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী বেকারি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে হস্তচালিত রুটি, বিস্কুট ও কেক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা কাঁচামাল আমদানি করে সেই মালামাল দিয়ে পণ্য তৈরি করার ফলে বাড়তি সুবিধা পায়। এ জন্য ছোট বেকারিগুলোর বাড়তি দামে ওই সব কোম্পানি থেকে কাঁচামাল কিনে ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন।

বেকারির ব্যবসায়ীরা জানান, এ খাতের উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই কম শিক্ষিত। তাঁরা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কম দামের বিস্কুট, পাউরুটি, বানরুটি ও কেক উৎপাদন করেন। এ ধরনের পণ্যে তাই ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দেওয়া উচিত। আর শ্রমঘন শিল্প হওয়ায় এ খাতে কর্মসংস্থানের হারও বেশ ভালো। তিন লক্ষাধিক মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে বেকারি খাতে।

বাংলাদেশ রুটি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল হক বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাতে ছোট ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দেওয়া না গেলে বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আর ফিরতে পারবে না; বরং আরও অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে। কর্মসংস্থানও কমবে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যেই বেকারিগুলোতে অভিযান হয়। এতে জরিমানা ও হয়রানির শিকার হন ব্যবসায়ীরা। হয়রানির উদ্দেশ্যে করা অভিযানের প্রতিকার চান তিনি।

একসময় পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক বেকারি ব্যবসা বেশ জমজমাট ছিল। সেখান থেকে শিল্প স্থানান্তর শুরু হলে অনেক প্রতিষ্ঠান সাভার, রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় কারখানা সরিয়ে নেয়। ভারী যন্ত্র ছাড়াই হাতে তৈরি বেকারি পণ্য বানায় এসব প্রতিষ্ঠান। সারা দেশের ছোট বেকারিগুলোও প্রায় একই মডেলে চলে। ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোও চাপে আছে।

দিনাজপুরের হৃদয় অ্যাগ্রোর মালিক মো. সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাপ-দাদার ব্যবসা বলে অনেকে এখনো ব্যবসা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ব্যবসা করার পরিস্থিতি নেই।

দেশের বিস্কুটের বাজার কত বড়, তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে একাধিক কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের মতে, বাজার প্রায় ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। এর মধ্যে ব্র্যান্ডের বিস্কুটের বাজার প্রায় অর্ধেক, ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। বাকি বাজার ছোট বেকারিগুলোর হাতে। প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বিস্কুটের বাজার বড় হচ্ছে। তবে চলমান বাস্তবতায় প্রবৃদ্ধির এই হার কমবে বলে মনে করছেন বেকারি খাতের ব্যবসায়ীরা।

দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম

দিনে চাঁদা ওঠে ৬ কোটি টাকা, নিয়ন্ত্রণে শাসক দলের ২২ জন

২৯ অক্টোবর ২০২২, প্রথম আলো

ঢাকার সূত্রাপুর থানার শ্যামবাজার থেকে বাহাদুরশাহ পার্ক হয়ে লক্ষ্মীবাজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে এক হাজারের বেশি ছোট চৌকি বসানো, আছে বেশ কিছু রিকশাভ্যানও। এসব চৌকি ও রিকশাভ্যানে কাপড়চোপড়, প্রসাধনী, জুতা, বিছানার চাদর, মশারি, খেলনা, ফলমূল, শরবত, খাবার, গৃহস্থালি জিনিসপত্রসহ নানা ধরনের পণ্য সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। তবে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে চার হাত আয়তনের একেকটি চৌকি বা রিকশাভ্যান বসাতে তাঁদের অগ্রিম দিতে হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর পণ্যের ধরন অনুযায়ী দৈনিক একজন হকারকে দিতে হয় ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা।

কে বা কারা নেন এই টাকা, এমন প্রশ্নে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুরের ফুটপাতের ফাস্ট ফুড বিক্রেতা সৈয়দ তানভীর জিলানি প্রথম আলোকে বলেন, হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন ‘লাইনম্যান সরদার’ মো. ফিরোজের লোকজন। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে লাইনম্যান ও তাঁর সহযোগীরা মারধর করেন, মালামাল ফেলে দেন। ফিরোজ ও তাঁর দলবলের লোকজন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা বলে পরিচয় দেন।

বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের তথ্য বলছে, শুধু এই এলাকা নয়, গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, মিরপুর, উত্তরাসহ রাজধানীর ৬৫টি এলাকায় ফিরোজের মতো অন্তত ৩৮ জন লাইনম্যান সরদারের নেতৃত্বে ফুটপাতে হকার বসানো হয়। এসব হকারের কাছ থেকে চাঁদা তোলার জন্য নিযুক্ত আছেন দেড় শতাধিক লাইনম্যান। চাঁদা তোলার জন্য প্রত্যেক লাইনম্যানের সঙ্গে পাঁচ-সাতজন করে সহযোগী থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রভাবশালী রাজনীতিক ও একশ্রেণির পুলিশ সদস্য মিলে লাইনম্যান সরদার ও লাইনম্যান নিয়োগ দেন। কোনো কোনো এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকায় অন্তত তিন লাখ হকার রয়েছেন। এলাকাভেদে ও পণ্যের ধরন অনুযায়ী একজন হকারের কাছ থেকে দৈনিক ৯০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয় বলে হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির হিসাবে তিন লাখ হকারের কাছ থেকে দৈনিক গড়ে ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এ হিসাবে ফুটপাত থেকে প্রতিদিন চাঁদা ওঠে ৬ কোটি টাকা; মাসে ১৮০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটি ও বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, অবৈধ হকার্স সংগঠন ও লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজেরা অসাধু পুলিশ সদস্যদের যোগসাজশে চাঁদা তোলেন। বিভিন্ন থানা ও আদালতে মামলা হলেও তাঁরা গ্রেপ্তার এড়িয়ে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এম এ কাশেম।

নিয়ন্ত্রণে যাঁরা

সম্প্রতি বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের করা তালিকা অনুযায়ী, যেসব লাইনম্যান সরদার ও রাজনৈতিক নেতা চাঁদাবাজিতে যুক্ত, তাঁদের মধ্যে ২২ জন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা, কাউন্সিলর, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগ নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতা মারুফ আহমেদ, মতিঝিলের যুবলীগ নেতা সাগর আহমেদ, আওয়ামী লীগের নেতা বাচ্চু মিয়া, মতিঝিল থানা শ্রমিক লীগের নেতা নূর ইসলাম, ডিএসসিসি ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মাসুম মোল্লা, জুরাইনের যুবলীগের নেতা মো. ইব্রাহীম ও নুরুল ইসলাম (শ্রম আদালত ঘোষিত অবৈধ ছিন্নমূল হকার্স লীগের নেতা)। এই সাতজনের লোকজন মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী ও জুরাইন এলাকার ফুটপাতে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমদানি পণ্যের দর বেশি দেখিয়ে অর্থ পাচার

০১ নভেম্বর ২২, সমকাল

বৈশ্বিকভাবে ডলার সংকটের প্রেক্ষাপটে কোনো কোনো আমদানি পণ্যে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং (দর বেশি দেখানো) হয়েছে। আর গাড়ি আমদানিতে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক্ক থাকায় এখানে দেখানো হয়েছে আন্ডার ইনভয়েসিং বা কম দর। প্রবাসীদের ডলার কিনে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে। যে কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার আসছে কম। ডলার সংকটের এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাস ধরে আমদানির নথি পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পেয়েছে।

অর্থ পাচার প্রতিরোধে নিয়োজিত সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস।

জমি জালিয়াতির অভিযোগে ভোরের পাতা সম্পাদক এরতেজা গ্রেপ্তার

০১ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

জমি জালিয়াতির অভিযোগে ভোরের পাতার সম্পাদক কাজী এরতেজা হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ জানিয়েছেন।

পিবিআই জানায়, কাজী এরতেজা হাসানের বিরুদ্ধে রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় জমি জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা রয়েছে। ওই মামলার বাদী আশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ভূইয়ার ভাই সাইফুল ইসলাম। গত ১ জানুয়ারি দায়ের করা এই মামলায় আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ, রিয়াজুল আলম ও সেলিম মুন্সী।

তিন মাছ ব্যবসায়ীর দখলে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য

১১ নভেম্বর ২২, সমকাল

সুন্দরবনের প্রায় ৭১৫ বর্গকিলোমিটার অভয়ারণ্য এলাকার দখল নিয়ে রমরমা ব্যবসা করছেন তিনজন। সাধারণ জেলেদের কাছে ওই এলাকার খাল ইজারা দিয়ে বছরে হাতিয়ে নিচ্ছেন কয়েক কোটি টাকা। তাঁদের এ টাকার ভাগ পাচ্ছেন বন বিভাগের স্থানীয় কর্মচারী থেকে শুরু করে কর্মকর্তারাও। অভিযুক্ত মাছ ব্যবসায়ীরা হলেন- খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জহির উদ্দীন ওরফে জহির মেম্বার, কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কয়রা গ্রামের মোজাফফর হোসেন ওরফে মোজাফফর কোম্পানি ও একই ইউনিয়নের গোবরা গ্রামের আব্দুল খালেক। তবে দখলের হোতা জহির মেম্বার। অন্যরা দখলে পেরে না উঠে তাঁর সঙ্গে আপস করে ব্যবসায় অংশীদার হয়েছেন। বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা অবৈধ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। এতে বনের ক্ষতির সঙ্গে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। অন্যদিকে, মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন ক্ষেত্রে হানা দেওয়ায় স্থানীয় নদনদীতে কমছে মৎস্যসম্পদ; সেই সঙ্গে সংকটে পড়ছে বন্যপ্রাণী।

পদ্মার গতিপথই পাল্টে দিয়েছে বালুখেকোরা

১৯ নভেম্বর ২২, সমকাল

ঈশ্বরদীর পাকশীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচের মাপযন্ত্রে নির্ধারণ করা হয় পদ্মা নদীর পানির গভীরতা। রেল সেতুটির প্রথম দিকের সেই পিলারের কাছে তীব্র বর্ষায়ও পানি আসে না। শুস্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ সরে যায় আরও দূরে।

এর জন্য পদ্মায় পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া যেমন দায়ী, স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরাও কম দায়ী নন।

রেল সেতুটির কাছে নদীর মধ্যেই ৭০ বিঘা জমিতে তাঁরা গড়ে তুলেছেন বালু রাখার স্থান। নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু এনে এখানে স্তূপ করেন ব্যবসায়ীরা। এই স্থান থেকেই ট্রাক, ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাকে বালু পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বালুর স্তূপের কারণে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও পাশের লালন শাহ সেতুর প্রথম পিলারগুলোর কাছে আর এখন পানিই আসে না। পদ্মার পানিপ্রবাহ সরে গেছে অন্তত ৩০০ মিটার।

নদী গবেষকরা বলছেন, এখনই উদ্যোগ না নিলে নদীর অপর পাড়ে দেখা দিতে পারে ভয়াবহ ভাঙন। নদীর গতিপথে পরিবর্তন হলে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর পাশাপাশি ঝুঁকিতে পড়বে পুরো এলাকার পরিবেশ।

সেতুর পাশেই পরিবেশ ধ্বংসকারী এ কর্মযজ্ঞের দায় এড়াতে পারে না সরকারও। নদীর মধ্যে ওই জায়গা বালু ব্যবসায়ীদের কাছে লিজ দিয়েছে খোদ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কৃষিজমি হিসেবে লিজ দেওয়া হলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা করা হচ্ছে। তবে তাঁদের সরাতে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি রেলওয়ে।

সরেজমিন দুই সেতু এলাকায় দেখা যায়, সেতুর পাশে চরের মধ্যে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে শুধু বিশাল বালুর স্তূপ। সেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে ট্রাকে। আবার ট্রলারে করে আনা বালু নামিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন স্তূপ। একসময়ের প্রমত্ত পদ্মা প্রবাহিত হচ্ছে তার পাশ দিয়ে।

স্থানীয়রা জানান, বালুর এ ব্যবসায় জড়িত ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা। এখান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৮০০ ট্রাক বালু বিক্রি হয়। টাকার হিসাবে দিনে প্রায় ১০ লাখ টাকার ব্যবসা। যদিও এখানকার বালু ব্যবসার সমন্বয়ক পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাসের দাবি, বালু বিক্রির পরিমাণ দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ ট্রাক। তিনি আরও দাবি করেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে বালু স্তূপ করা হলেও এখান থেকে উত্তোলন করা হয় না। এই বালু কুষ্টিয়া, আলাইপুর, পাবনাসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে নৌকায় এনে এখানে রাখা হয়। পরে ট্রাকে করে বালু বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এ কারণে সেতু ঝুঁকিতে পড়ার কথা নয়।

এদিকে, এসব ট্রাক থেকে প্রতিদিন চাঁদা নেওয়া হয় ১০০ টাকা। সেই টাকা বিভিন্ন ভাগ হয়ে চলে যায় স্থানীয় নেতা থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তা পর্যন্ত। বিষয়টি স্বীকার করেছেন এনামুল হকও। সরেজমিন দেখা যায়, নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে বালুমহালে ট্রাক ও ট্রাক্টর আসছে। বালুবোঝাই করে যাওয়ার সময় তাদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা নিচ্ছেন কয়েকজন।

আলোচিত যত ব্যাংকঋণ কেলেঙ্কারি

২৪ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

ইসলামী ব্যাংক থেকে কাগুজে কোম্পানিকে ঋণ দেওয়ার ঘটনা প্রকাশের পর আবারও আলোচনায় এসেছে ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি। আগে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তার আদায় ও বিচারের কতটা অগ্রগতি হয়েছে, বিষয়টিও সামনে আসছে। গত এক যুগের প্রধান ঘটনাগুলো তালিকা করলে প্রথমেই আসবে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা।

এরপরই বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, জনতা ও প্রাইম ব্যাংকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের অনিয়ম, জনতা ব্যাংকের অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ অনিয়ম। এ ছাড়া আলোচিত ঘটনাগুলোর অন্যতম ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম, ইউনিয়ন ব্যাংকের বেনামি ঋণ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের ঘটনা। আবার ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের ঘটনা কয়েক বছর ধরেই আলোচনায়। এসব অনিয়মে ভূমিকা রেখেছে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জোরপূর্বক কয়েকটি ব্যাংকের মালিকানা দখল।

১. হলমার্ক কেলেঙ্কারি

২০১১ সালে হলমার্কসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (হোটেল শেরাটন) শাখা থেকে ঋণের নামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়, যা নিয়ে তখন বড় আলোচনা তৈরি হয়। বাতিল করা হয় সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আটক করা হয় সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও হলমার্কের মালিককে। সেই ঘটনার বিচারকাজ এখনো চলছে। টাকাও আদায় করতে পারছে না সোনালী ব্যাংক।

২. বেসিক ব্যাংকে অনিয়ম

২০১১-১২ সালে বেসিক ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রধান ভূমিকা রাখেন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু। এই টাকা থেকে ১১০ কোটি টাকা দিয়ে ঢাকায় সেনানিবাসে দেড় বিঘা জমির ওপর একটি বাড়ি কিনেছিলেন তিনি। এত বড় বাড়ি কেনার অর্থ আবদুল হাইয়ের ব্যাংক হিসাবে কীভাবে এসেছিল, তারও বিবরণ বিএফআইইউ পাঠিয়েছিল দুদককে। তবে শেখ আবদুল হাইয়ের কিছুই হয়নি। ব্যাংকও বড় অংশ টাকা আদায় করতে পারেনি।

৩. বিসমিল্লাহ গ্রুপ

২০১২-১৩ সালে বিসমিল্লাহ গ্রুপ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

ঘটনা প্রকাশের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা সোলায়মান, পরিচালক আনোয়ার চৌধুরী, নওরীন হাসিবসহ ঋণগ্রহীতারা। ওই কেলেঙ্কারির ঘটনায় ক্ষতিতে পড়ে জনতা, প্রাইম, যমুনা, প্রিমিয়ার ও শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংক।

৪. অ্যাননটেক্সের একক ঋণে বড় কেলেঙ্কারি

অ্যাননটেক্স গ্রুপের মালিক ইউনুস বাদল একাই। তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদারভাবে ঋণ দেয় জনতা ব্যাংক। এক গ্রাহককেই মাত্র ৬ বছরে তারা দেয় ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা। নিয়মনীতি না মেনে এভাবে ঋণ দেওয়ায় বিপদে ব্যাংক, গ্রাহকও ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে পাওনা এখন সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি, যার বড় অংশই এখন খেলাপি।

৫. ক্রিসেন্ট কেলেঙ্কারি

ভুয়া রপ্তানি নথিপত্র তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। এভাবে সরকারের নগদ সহায়তা তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। অপকর্মে সহায়তা করার পাশাপাশি ক্রিসেন্ট গ্রুপকে অর্থায়নও করেছে জনতা ব্যাংক। ক্রিসেন্টের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। বিদেশে রপ্তানির ১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। ফলে আটকে গেছে বড় অঙ্কের অর্থ। এ ঘটনায় কারও বিচার হয়নি।

৬. ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম

অনুমোদন পাওয়ার পরই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে ফারমার্স ব্যাংক। ফলে একসময় গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। সরকারের উদ্যোগে ব্যাংকটি বাঁচাতে মূলধন সহায়তা দেয় সরকারি চার ব্যাংক ও একটি বিনিয়োগ সংস্থা। এখন ঘুরে দাঁড়াতে নাম পরিবর্তন করে ফারমার্স ব্যাংক হয়েছে পদ্মা। তবে ঋণের টাকা আদায় করতে পারছে না।

৭. ইউনিয়ন ব্যাংকের বেনামি ঋণ

ভল্ট কেলেঙ্কারির পর ঋণেরও বড় অনিয়ম হয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংকে। শুধু ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে কোম্পানি গঠন করে ঋণের বড় অংশই বের করে নিয়েছে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান। আবার অনেক ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না। কাগুজে এসব কোম্পানিকে দেওয়া ঋণের বেশির ভাগেরই খোঁজ মিলছে না এখন। ফলে এসব ঋণ আদায়ও হচ্ছে না। ইউনিয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার যোগ্য বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ।

৮. সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে ব্যাংকটির আমানত ৩৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা ও বিতরণ করা ঋণ ছিল ৩১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।

কিন্তু ২০২১ সালভিত্তিক পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এসআইবিলের আরও ৫ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হওয়ার যোগ্য। এতে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ২৩ শতাংশের বেশি।

৯. আলোচনায় ন্যাশনাল ব্যাংক

পরিচালকদের মধ্যে কোন্দল, ক্রেডিট কার্ডে ডলার পাচার, বড় অঙ্কের সুদ মওকুফসহ নানা কারণে সংকটে ন্যাশনাল ব্যাংক। ফলে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণও আটকে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংকটিকে উদ্ধারে সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়ে পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

১০. ব্যাংক দখল

২০১৭ সালে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় জোরপূর্বক পরিবর্তন হয়। এ সময় দুই ব্যাংকের এমডিদেরও পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। আর এসব পরিবর্তনে তড়িঘড়ি সম্মতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পর থেকে ব্যাংক দুটিতে বড় অনিয়ম শুরু হয়।

ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’

২৪ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

ব্যাংকের নথিপত্রে নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডের অফিসের ঠিকানা বনানীর বি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ভবন। ঋণ পাওয়া মার্টস বিজনেস লিমিটেডের ঠিকানা বনানীর ডি ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে মিলল রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের অফিস। তবে মার্টস বিজনেস লাইন নামে তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এভাবেই ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে দুই কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র।

সব মিলিয়ে নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরেই এ অর্থ নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেওয়া হয় চলতি মাসের ১ থেকে ১৭ নভেম্বর। যার পরিমাণ ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এ জন্যই ব্যাংকটির কর্মকর্তারা চলতি মাসকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ বলে অভিহিত করছেন।

একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে এ কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এমন সময়ে এসব অর্থ তুলে নেওয়া হয়, যখন ব্যাংক খাতে ডলার–সংকটের পর টাকার সংকট বড় আলোচনার বিষয়। ব্যাংক তিনটির নথিপত্র পর্যালোচনা করে এ সব তথ্য মিলেছে।

কাগুজে কোম্পানি খুলে যেভাবে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ

২৫ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা বের করে নেবেন? পদ্ধতি খুবই সহজ। এ জন্য সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ভুয়া ঠিকানায় কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ঋণ নেওয়া। তবে এ জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মালিকপক্ষ ও ব্যবস্থাপনার যোগসাজশ লাগবে। আর প্রয়োজন হবে রাজনৈতিক সম্পর্কগুলো ব্যবহার করা। এতে চুপ থাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার নামে-বেনামে অনেকগুলো কোম্পানি খুলে তারপরই দখল করেছিলেন একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তিনি অবশ্য শিখেছিলেন আরেক বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রধানের কাছ থেকে। ব্যবসায়ী গ্রুপের সেই প্রধান শিখেছিলেন আবার দেশের একজন ব্যবসায়ী নেতার কাছ থেকে। তিনি মূলত এ পদ্ধতিতে কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ তুলে নিতেন।

ব্যাংকিং সূত্রগুলো জানায়, একসময় ব্যবসায়ীরা নিজের কোম্পানির নামে ব্যাংক থেকে ইচ্ছেমতো ঋণ নিতেন। এক প্রতিষ্ঠানের কাছে যাতে বেশি ঋণ চলে না যায়, এ জন্য সীমা আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরই শুরু হয় অন্যের নামে, ভুয়া নাম–ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া।

আবার অনেকে কোম্পানি না খুলে শুধু ট্রেডিং লাইসেন্স নিয়েই ব্যবসা করছেন। ব্যাংক থেকে তুলে নিচ্ছেন টাকা। সেই টাকা ব্যাংকে ফেরতও দিচ্ছেন না। এমন প্রথা বেশ পুরোনো। সাবেক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকও প্রায় ধ্বংসের পথে গিয়েছিল এসব কারণেই। এখন প্রশ্ন উঠছে, কে ঠেকাবে এ অব্যবস্থাপনা। কেন ভুয়া নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া বন্ধ হচ্ছে না। কমছে না খেলাপি ঋণের পরিমাণ।

ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যখন ব্যাংকের মালিকপক্ষ ভুয়া কোম্পানির নামে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে, তখন তা ঠেকানো কঠিন। কারণ, ব্যাংক কর্মকর্তারা চাকরি হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারে না। যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ নজরদারি ও সদিচ্ছা থাকে, তাহলেই সম্ভব আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা দেওয়া। তবে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি কম, এ জন্য আমানতকারীদের অর্থেরও সুরক্ষা সেভাবে দেওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, ২০১১ সালে আলোচিত হল–মার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাৎ করতে যেসব কোম্পানির নাম ব্যবহার করে, তার কয়েকটি ছিল কাগজনির্ভর। অর্থাৎ এসব কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এতে সোনালী ব্যাংকের লোকসান হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটাই এখন খেলাপি। ব্যাংকটি সেই ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

২০১৪-১৫ সালে অ্যাননটেক্স গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়। এ জন্য ২২টি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে গ্রুপটি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে বের হয়, মাত্র চারটি কোম্পানি পূর্ণাঙ্গ। অনেকগুলোই কাগুজে। আর এসব কোম্পানির মালিক বানানো হয় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এসব ঋণের বড় অংশ এখন খেলাপি। ফলে জনতা ব্যাংক এখন ঋণখেলাপিতে শীর্ষ।

বেসরকারি খাতের ইউনিয়ন ব্যাংকে ভল্ট কেলেঙ্কারির ঋণেও বড় অনিয়ম ধরা পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে। শুধু ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে কোম্পানি খুলে ঋণের বড় অংশই বের করে নেয় প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান। আবার অনেক ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না। কাগুজে এসব কোম্পানিকে দেওয়া ঋণের বেশির ভাগেরই খোঁজ মিলছে না এখন। ফলে এসব ঋণ আদায়ও হচ্ছে না।

ইউনিয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার যোগ্য বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ। একইভাবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকেও বড় অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংক দুটি এখনো এসব ঋণ খেলাপি করেনি। মেয়াদ বাড়িয়ে ও পুনঃ তফসিল করে ঋণগুলো নিয়মিত দেখাচ্ছে ব্যাংক দুটি।

এবার একই ধরনের ঘটনা ধরা পড়েছে ইসলামী ব্যাংক। যেসব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়া হয়েছে, তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকটির এমন ঋণ দেওয়া শুরু হয় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে। ব্যাংকটির যেসব কর্মকর্তা এতে সহায়তা দেন, তাঁদের দ্রুত পদোন্নতি হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঋণসংক্রান্ত বিভাগগুলোতে। এর মাধ্যমে বের করা হচ্ছে ভুয়া ঋণ। এসব ঋণের মেয়াদ দেওয়া হচ্ছে বেশি, যাতে সহজেই খেলাপি না হয়। ভুয়া কোম্পানি খুলে ঋণ নয়, দেশের তিনটি ব্যাংক দখলের সময়ও এমন কিছু কোম্পানির নাম ব্যবহার হয়েছিল।

ভয়ংকর এলসি জালিয়াতি: এসআইবিএলের ১৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে দুই প্রতিষ্ঠান

২৮ নভেম্বর ২০২২, কালবেলা

প্রশ্নবিদ্ধ আমদানি ঋণপত্রে (এলসি) আটকে গেছ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৬ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স না থাকলেও বছরের পর বছর ধরে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলে এই অর্থ নিয়ে গেছে দুটি প্রতিষ্ঠান। কাগজে-কলমে কাঁচামাল আমদানি দেখানো হলেও এর বিপরীতে পণ্য রপ্তানি হয়নি। প্রতিষ্ঠানের গুদামেও এসব কাঁচামাল বা পণ্যের অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়েছে এলসি জালিয়াতির ভয়ংকর এ ঘটনা। শুল্ক ও তদন্ত অধিদপ্তরে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের আলাদা দুটি চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কারসাজির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্ন তুলছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছরের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি ও কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগ থেকে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে পাঠানো চিঠির তথ্য অনুযায়ী, এসআইবিএলের বনানী শাখা থেকে শার্প নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৮৮৯টি ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলে। এসব এলসির বিপরীতে ব্যাংকটি পরিশোধ করেছে ১৫৮ কোটি ৫০ লাখ ২৪ হাজার ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ১৬ হাজার ৬৪২ কোটি ৭৫ টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা অনুযায়ী, শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের মেয়াদ দুই বছর। এ ছাড়া ৫ হাজার টাকা ফি দিয়ে প্রতি ২ বছর পরপর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। আর পণ্য প্রস্তুতের পর ২৪ মাস এবং বিশেষ পণ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আরও বেশি সময় তা ওয়্যারহাউসে রাখার বিধান রয়েছে।

গাজীপুরের টঙ্গীর শার্প নিটিংয়ের নামে ২০০৩ সালের ২ এপ্রিল বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স ইস্যু করা হয়, তবে এরপর আর তা নবায়ন করা হয়নি। শুধু তাই নয়, ওই সময়ের পর থেকে বারবার প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় তা বন্ডের অধীন শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পড়ে না। হালনাগাদ বন্ডেড ওয়্যারহাউসের লাইসেন্স না থাকলেও দীর্ঘ ৬ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের নামে এলসি ইস্যু করেছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বনানী শাখা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন বলছে, শুল্ক রেয়াতি সুবিধায় ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে আমদানি করা কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু শার্প নিটিং থেকে কোনো পণ্যই রপ্তানি হয়নি। প্রতিষ্ঠানের গুদামে গিয়ে আমদানি করা কাঁচামাল বা তা থেকে প্রস্তুত পণ্যের কোনো মজুত পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল।

আগের চেয়ে বেড়েছে মাদকের চোরাচালান

২৮ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১০১ ইয়াবা কারবারি ও পৃষ্ঠপোষক আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আশা করা হয়েছিল, এর মাধ্যমে টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তে মাদক চোরাচালান কমবে। কিন্তু ২ বছর ৯ মাস আগের ওই আত্মসমর্পণের ঘটনায় কোনো ফল হয়নি বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। পরিসংখ্যান বলছে, মাদকের চোরাচালান আগের চেয়ে বেড়েছে।

গত বুধবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আত্মসমর্পণকারী ওই ১০১ জনকে দেড় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন মামলার ১৮ আসামি। অবশিষ্ট ৮৩ জন পলাতক। পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাই আবদুল শুক্কুর, আবদুল আমিন ওরফে আমিনুল ইসলাম, মো. ফয়সাল, শফিকুল ইসলাম; চাচাতো ভাই মো. আলম; খালাতো ভাই মং মং সিং; ফুফাতো ভাই কামরুল ইসলাম; ভাগনে সাহেদুর রহমানসহ ১২ জন নিকটাত্মীয়।

কক্সবাজারে মূলত বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ইয়াবা উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়। সরকারের এই সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে কক্সবাজারে ১ কোটি ২৮ লাখ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০১ ইয়াবা কারবারি ও পৃষ্ঠপোষক আত্মসমর্পণ করেন। ওই বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ১ কোটি ৭৭ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরের বছর সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ২ কোটি ৩৯ লাখে। গত বছর ২ কোটি ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫০ ইয়াবার পাশাপাশি ২৩ কেজি ৮০২ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস) উদ্ধার করা হয়। আর চলতি বছরের ১০ মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ ইয়াবা ও ১৯২ কেজির বেশি আইস। ১৮ নভেম্বর উখিয়ার পালংখালীর রহমতের বিল গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করে বিজিবি।

নাগরিক সমাজের অভিমত

মাদকের বড় কারবারিদের লঘুদণ্ডে ক্ষুব্ধ রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, মাদক চোরাচালান আগের তুলনায় আরও কয়েক গুণ বেড়েছে। কারাগার থেকে বেরিয়েও তাঁরা শুদ্ধ হননি। তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা জরুরি ছিল।

ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ করিয়ে কার লাভ হলো—প্রশ্ন তুলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টেকনাফ শাখার সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ইয়াবা কারবারি ও পৃষ্ঠপোষকদের জন্য টেকনাফে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ নিহত হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন বাবা-ভাই, কেউ হারিয়েছেন স্বামী-সন্তান। মাদক চোরাচালান এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। যাঁরা আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়নি। এখন মাদকের টাকায় অনেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ১০১ ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেছিলেন নিজেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে। তাঁরা যখন কারাগারে বন্দী ছিলেন, তখন তাঁদের চক্রের সদস্যরা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। এখন গডফাদারদের অনেকে সরাসরি অথবা রোহিঙ্গার মাধ্যমে মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছেন। ইয়াবা কারবারিরা আত্মসমর্পণ করায় সমাজ ও সাধারণ মানুষের কোনো লাভ হয়নি, বরং আত্মসমর্পণকারীরা নানাভাবে লাভবান হচ্ছেন।

সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, আমরা কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব: হাইকোর্ট

২৮ নভেম্বর ২০২২, আজকের পত্রিকা

হাইকোর্ট বলেছেন, ‘সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, কিছু লোক টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কোটি কোটি লোক চেয়ে চেয়ে দেখবে? আমরা কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব? এটা কি হয়? অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন যা করছে তাতে মনে হয়, আমরা নাটক দেখছি। হাততালি ছাড়া আর কী আছে, না হয় বসে থাকতে হবে। কাজ হচ্ছে না কেন?’

বেসিক ব্যাংকের অর্থপাচার মামলার আসামি মোহাম্মদ আলীর জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানির সময় আজ সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।

ব্যাংকের অবস্থা কোথায় খারাপ, লিখিত দিয়ে যান, খতিয়ে দেখব: অর্থমন্ত্রী

২৯ নভেম্বর ২০২২, সময় নিউজ অনলাইন

দেশের সার্বিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছেন, ব্যাংকের খারাপ অবস্থার বিষয়ে লিখিত দিলে সরকার খতিয়ে দেখবে। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের অবস্থা কোথায় খারাপ, লিখিত দিয়ে যান, আমরা খতিয়ে দেখব।’

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে ‍গৃহনির্মাণ ঋণ ব্যবস্থাপনা মডিউলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এ কথা বলেন তিনি।

বড় অনিয়ম জেনেও চুপ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

০১ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

ইসলামী ব্যাংকের ঋণ বিতরণে বেশ আগে থেকে নানা অনিয়ম হলেও এত দিন চুপ ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। টানা এক দশক ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে পর্যবেক্ষক থাকলেও ২০২০ সালের মার্চে হঠাৎ তা প্রত্যাহার করে নেয় ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর পর থেকে দ্রুত ঋণ বাড়িয়েছে ইসলামী ব্যাংক। আবার এ ব্যাংক থেকে বেনামে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে সন্দেহ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই একটি বিভাগ গত আগস্টে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। এরপর গত তিন মাসে কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণে অনিয়ম হয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক থেকে ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ বের হওয়ার পর এখন হঠাৎ তৎপরতা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনিয়মের বিষয়ে অনেক খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সম্প্রতি ব্যাংকটিতে তদন্ত শুরু করেছে। সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী, অডিট ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যবিবরণী আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট-সুপারভিশন বিভাগে। রাজশাহীভিত্তিক ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারী নাবিল গ্রুপের নামে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ঋণ ছিল ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সন্দেহজনকভাবে ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি নজরে আসার পর তা ঠেকানোর চেষ্টা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ বিভাগ। এরই মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে নাবিল গ্রুপের ঋণ বেড়ে হয় ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। আর গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত হিসাবে তাদের ঋণ আরও বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। এর মানে গত আট মাসে শুধু নাবিল গ্রুপের ঋণ বেড়েছে ৭ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এর আগে গত ৩ অক্টোবর ‘বেনামি সন্দেহে তিন ব্যাংকের ৩২৭০ কোটি টাকার ঋণ’ শিরোনামে সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে প্রথম পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির মালিকানায় পরিবর্তন আসে। চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসে ব্যাংকটি। মালিকানা পরিবর্তনের পরও ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক ছিলেন। সাধারণত বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক (সাবেক মহাব্যবস্থাপক) পদমর্যাদার ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময়ের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা মো. রেজাউল ইসলাম ২০২০ সালের ১৯ মার্চ নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেলে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর আর কাউকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্যবেক্ষক প্রত্যাহারের পর ইসলামী ব্যাংকের ঋণ দ্রুতগতিতে বেড়েছে। এসব ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বেনামে নেওয়া হয়েছে।

এলসিতে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে

ডিসেম্বর ০১, ২০২২, বণিক বার্তা

দেশে এলসির ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি জানান, গত বছর এবং এবছরের অনেক এলসির তথ্য যাচাইয়ের সময় এ বিষয়টি ধরা পড়ে। ওভার ইনভয়েসিং করা ১০০ এলসি বন্ধ করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা চাইলে পরে তা সংশোধন করে প্রকৃত দরে আমদানি করতে পারবেন।

আজ বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনে গভর্নর এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শীর্ষ খেলাপিদের থেকে ঋণ আদায় হয়েছে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৬ শতাংশেরও কম

৩ ডিসেম্বর ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকে মোট ১১৯.৩৮ কোটি টাকা আদায় করেছে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, যা তাদের বার্ষিক ২,০৪৫ কোটি আদায় লক্ষ্যমাত্রার ৬ শতাংশেরও কম বলে সাম্প্রতিকতম তথ্যানুসারে জানা গেছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে– এই ছয় ঋণদাতা- সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক (বিডিবিএল) ও বেসিক ব্যাংকের এসব খেলাপিদের কাছে মোট শ্রেণিকৃত ঋণ ছিল ২১ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। এই তথ্য জানা যায়, গত অক্টোবরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সভায়  উপস্থাপন করা প্রতিবেদন সূত্রে। প্রতিবেদনটির একটি কপি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হাতে এসেছে।

অবলোপন করা ঋণ আদায়েও শম্বুকগতি:

অবলোপন করা ঋণ থেকেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায় করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংক তাদের ১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১১.৪৭ শতাংশ বা ১৮২ কোটি টাকা অবলোপনকৃত ঋণ আদায় করতে পেরেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, খেলাপি হওয়া মন্দ ঋণকে ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট থেকে বাদ দিয়ে পৃথক হিসাবে রাখাই হচ্ছে অবলোপন। আলাদা হিসাবে রাখা হলেও অবলোপিত ঋণ আদায়ের কার্যক্রম চলমান রাখতে হয়। এতে ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে খেলাপির পরিমাণ কম দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়।

২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলোকে ঋণ অবলোপনের সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সভায় উত্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংক অবলোপনকৃত ঋণের ৬৮৩ কোটি টাকার বার্ষিক  লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় করেছে ৬৯ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, ৩৪১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জনতা ব্যাংক আদায় করেছে ৭০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ৪০৫ কোটি টাকার বিপরীতে ৩৩ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৫৯ কোটি টাকার বিপরীতে ৪ কোটি,  বিডিবিএল ১৫ কোটি টাকার বিপরীতে ৫ কোটি এবং বেসিক ব্যাংক ৮৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাত্র ১ কোটি টাকা অবলোপনকৃত ঋণ আদায় করতে পেরেছে।

এই বছরের জুনের শেষপর্যন্ত, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের মোট অবলোপনকৃত ঋণ দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকায়। এরমধ্যে সোনালী ব্যাংকের ৬ হাজার ৭৭৬ কোটি, জনতার ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি, অগ্রণীর ৪ হাজার ১৮ কোটি, বিডিবিএলের ১ হাজার ৫০৭ কোটি, রূপালীর ৫৮৬ কোটি টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের ১ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা অবলোপনকৃত ঋণ রয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবলোপন করা ঋণের বিপরীতে নগদ আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংকের অর্জনই সন্তোষজনক নয়। এ ধরনের ঋণ থেকে নগদ আদায় করা খুব কষ্টকর হলেও- তা চৌকষভাবে আদায় করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঋণ আদায়ের হার বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া প্রতিবেদনটিতে।

খেলাপি ঋণ আদায়ের সার্বিক চিত্র

চলতি বছর জনতা ব্যাংকের ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্য থাকলেও, প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি- জুন) আদায় করতে পেরেছে মাত্র ১০৫ কোটি টাকা।

একই অবস্থা অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেরও। 

অর্থ বিভাগের সভার প্রতিবেদনটি অনুযায়ী, ১ হাজার কোটি টাকা আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক আদায় করতে পেরেছে ১৬৫ কোটি টাকা। একই পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের আদায় ২৪৮ কোটি টাকা।

আলিশান বাড়ির মালিক যখন ‘ভূমিহীন’

০৪ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

হোসেন মৃধা বাড়ির সামনে হাতল লাগানো চেয়ারে বসে ছিলেন। তাঁর বয়স প্রায় ৮০ বছর। পাশাপাশি তিনটি পাকা বাড়ি তাঁর তিন ছেলের। বড় ছেলে আবদুস সালাম মৃধা দুবাইয়ে, মেজ ছেলে আলাউদ্দিন মৃধা ও ছোট ছেলে মহিউদ্দন মৃধা সৌদি আরবপ্রবাসী। ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের

চর দড়িকান্দা মৌজার এই গ্রামের নামও হোসেন মৃধার নামে, হোসেনপুর। গ্রামের পাকা সড়কের ওপরেই বাড়ি। সড়কের ওপারে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।

হোসেন মৃধা জানান, মাঠেও তাঁদের পৈতৃক জমি রয়েছে। তবে তাঁর তিন ছেলেই খাসজমি বরাদ্দ পেয়েছেন। অথচ খাসজমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করার সরকারি নির্দেশ রয়েছে।

সম্প্রতি এক বিকেলে হোসেনপুরে গিয়ে কথা হয় হোসেন মৃধার সঙ্গে। তিনি কিছুটা অসুস্থ। তাঁকে কথা বলতে সহায়তা করছিলেন তাঁর তিন পুত্রবধূ শারমিন, ফাতেমা ও উম্মে হানি। তাঁরা জানান, তাঁদের স্বামীদের নামে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে খাসজমি বরাদ্দ হয়েছে। দলিলও সম্পন্ন হয়েছে। তবে জমির পরিমাণ বা কীভাবে তাঁরা খাসজমির বরাদ্দ পেলেন, তা তাঁরা জানেন না।

আরেক দিন পাশের উপজেলা দোহারের মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (সদ্য সাবেক) তোফাজ্জল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সড়কসংলগ্ন প্রাচীরঘেরা বিশাল পাকা বাড়ি। সামনে ফুলের বাগান ও সবজিখেত। প্রায় ৭০ বিঘা জায়গা নিয়ে তাঁদের এই পারিবারিক বাড়ি। তবে ভূমিহীন হিসেবে তাঁর ছেলে, মেয়ে, জামাই, ভাইসহ মোট ২০ জন খাসজমির বরাদ্দ পেয়েছেন। বরাদ্দপ্রাপ্তির কথা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন।

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, নবাবগঞ্জ ও দোহারে কৃষি খাসজমি বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। সম্প্রতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খাসজমি বিতরণ করা হয়েছে বিত্তবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে। যাঁরা খাসজমির বরাদ্দ বা ইতিমধ্যে দলিলের মাধ্যমে মালিকানা পেয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, কুয়েত, ইরাক, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে চাকরি করছেন। কেউ অনেক বছর প্রবাসে চাকরি শেষে দেশে ফিরে ব্যবসা করছেন। তাঁদের প্রায় সবারই গ্রামে একতলা বা দোতলা বাড়ি। গাড়িবারান্দায় লাল টালির ছাউনি, দোতলার খোলা ঝুলবারান্দায় বাহারি ফুলের গাছ লাগানো।

এ ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীরা বরাদ্দ পেয়েছেন খাসজমি। বাদ পড়েননি সাংবাদিকেরাও। অথচ যাঁদের এসব জমি পাওয়ার অগ্রাধিকার, সেই নিঃস্ব মানুষেরাই বঞ্চিত হয়েছেন। প্রচণ্ড ক্ষোভের সঙ্গে নবাবগঞ্জের হায়াতকান্দা গ্রামের অটোচালক আবুল কালাম বলছিলেন, ‘যাদের টাকা আছে, তারাই জমি পায়। যাদের টাকা নাই, তাদের জমিও নাই।’ সড়কের মোড়ে টিনের ছাপরায় থাকেন তিনি। খাসজমির জন্য আবেদন করেছিলেন; তবে পাননি। তাঁর মতো নিঃস্ব অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ভূমি অফিসের একশ্রেণির অসাধু লোকের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রভাবশালীরাই খাসজমি বরাদ্দ নিয়েছেন।

পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনের কারণে এই দুই উপজেলায় বহু মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তবে তাঁদের মোট সংখ্যা জানা যায়নি।

খাস কৃষিজমি বরাদ্দের বিষয়ে সরকারি নীতিমালায় ভূমিহীনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যে পরিবারের বসতবাড়ি ও কৃষিজমি কিছুই নেই কিন্তু পরিবারটি কৃষিনির্ভর, তাই ভূমিহীন। এ ছাড়া যে পরিবারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত বসতবাড়ি আছে কিন্তু কৃষিজমি নেই, সেই পরিবারও ভূমিহীন গণ্য হবে। তবে বসতবাড়ির সঙ্গে কৃষিজমি থাকলে তারা ভূমিহীন হিসেবে খাসজমি পাবে না।’

নীতিমালা অনুসারে, থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সদস্যসচিব হবেন। তাঁর নেতৃত্বে কমিটি সরেজমিনে যাচাই করে প্রকৃত ভূমিহীনদের খাসজমি বরাদ্দ দেবে; কিন্তু বাস্তবে এই দুই উপজেলায় তা করা হয়নি বলে অভিযোগ।

ট্রেনে টাকায় বাক্স-ড্রামের আসন

০৫ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

প্লাস্টিকের ড্রাম, কাঠের বাক্স ও কনটেইনারে বসে আছেন যাত্রীরা। প্রথম দেখায় মনে হবে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হয়তো এভাবে বসার ব্যবস্থা করেছে। সে হিসেবে বাড়তি আয়ও হওয়ার কথা। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। বগিটি সাধারণ নয়, বুফে কার (খাবার বগি)। আর যাত্রী যাঁরা উঠেছেন, তাঁরা টাকা দিলেও তা রেলওয়ের আয়ের খাতায় যোগ হয়নি। গেছে একটি চক্রের পকেটে।

দৃশ্যটি কিশোরগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের। যাত্রীদের কাছে বিষয়টি এখন স্বাভাবিক। কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনেও চলে একই ধরনের অনিয়ম।

সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, এক সময় যাত্রীদের কাছে চা-কফিসহ নানান খাবার বিক্রি ছিল বুফে কারের একমাত্র কাজ। এখন চা এবং হালকা নাস্তা পাওয়া গেলেও অবস্থা আগের মতো নেই। বুফে কারে হকাররা অনায়াসে ঢুকে পড়েন, খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করেন। অথচ আগে তাঁরা ঢোকার সাহস করতেন না। ঢুকলেও কর্মীরা বাধা দিতেন।

এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের ক্যাটারার আবু ছালেক। সম্প্রতি এগারসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনের বুফে কারে গেলে তিনি জানান, আগে দিনে ৮ হাজার টাকার মতো খাবার বিক্রি হতো। এখন কোনোদিন ১ হাজার টাকারও বিক্রি হয়। হকাররা ট্রেন দখল করে রেখেছে।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ও অন্য সূত্রে জানা গেছে, এখন এগারসিন্দুর ট্রেনে খাবার বগির মূল ব্যবসা বিনা টিকিটে ও স্ট্যান্ডিং যাত্রীদের কাছে আসন বিক্রি। ঢাকাগামী বিনা টিকিটের যাত্রীদের থেকে আদায় করে ২৫০ টাকা। স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীদের গুনতে হয় ১০০ টাকা। এর বিনিময়ে কাঠের বাক্স ও মোড়ার মতো প্লাস্টিকের ড্রাম দেওয়া হয়। বাক্সে চারজন আর ড্রামে একজন বসেন। যাত্রী এলে এগুলো বস্তা থেকে বের করে দেন কর্মীরা। এভাবে প্রতিদিন অন্তত ৪০ জন যাত্রী টাকার বিনিময়ে বসানো হয়। মাসে তাঁদের আয় অন্তত ২ লাখ টাকা।

ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করল বাংলাদেশ ব্যাংক

১২ ডিসেম্বর ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক দুটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক আবুল কালামকে ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সার্ভিস বিভাগের পরিচালক মোতাসিম বিল্লাহকে।

সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণে বড় অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যাংক দুটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ এই দুই ব্যাংক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক দুটিতে এই এস আলম গ্রুপের শেয়ার আছে। গ্রুপটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও।

আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে ঋণদাতার আর্থিক অবস্থার অবনতি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওই ব্যাংকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে।

আর্থিক খাতে কর্পোরেট সুশাসন পুনরুদ্ধার করতে সর্বশেষ এই দুই ব্যাংকসহ এখন পর্যন্ত নয়টি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

হাসপাতালের ২ ধরনের চিকিৎসা বর্জ্য বাজারে বিক্রি হয়: টিআইবি

ডিসেম্বর ১৩, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

হাসপাতালের ২ ধরনের চিকিৎসা বর্জ্য অবৈধভাবে বাইরে বিক্রয় করা হয় বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ মঙ্গলবার সকালে এক অনুষ্ঠানে ‘চিকিৎসা–বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

টিআইবি জানিয়েছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য এবং রিসাইকেল (পুনঃচক্রায়নযোগ্য) বর্জ্য বিক্রয় করা হয়।

টিআইবিরি গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চিকিৎসা বর্জ্যের অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বর্জ্য নষ্ট না করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। একটি সুপরিচিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কালোবাজারে প্লাস্টিক চিকিৎসা বর্জ্যের অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের আয়ের অন্যতম উৎস চিকিৎস বর্জ্য বিক্রয়।

দেশের এক-চতুর্থাংশ ব্যাংকেই বসেছে পর্যবেক্ষক-সমন্বয়ক

১৬ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারি-বেসরকারি ১৪ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এই দায়িত্ব পালন করছেন। দেশে ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। ফলে দেশের এক-চতুর্থাংশ ব্যাংক এখন পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক দিয়ে চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ আগ থেকেই অনিয়ম ধরা পড়া ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে আসছে। আবদুর রউফ তালুকদার গত ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংককে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। গত ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করা হবে। প্রতিটি ব্যাংকের অগ্রগতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করবেন।

তারই পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যাংকগুলোতে সমন্বয়ক বসানো শুরু হয়। ইতিমধ্যে পাঁচ ব্যাংকে সমন্বয়ক বসানো হয়েছে। ব্যাংক পাঁচটি হলো এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। আর আগে থেকেই পর্যবেক্ষক দেওয়া আছে—সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে। নতুন করে অনিয়ম ধরা পড়ায় পর্যবেক্ষক বসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে।

মা বাবা ছেলে মিলেমিশে ব্যাংকের টাকা লুট

১৭ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে নিয়ম অনুযায়ী জমা রাখতে হয় কিছু সম্পদ। ব্যাংকে জমা দিতে হয় সম্পদের দলিলপত্র। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই দলিল যাচাই করে সম্পদ মূল্যের একটি অংশ দেয় ঋণ হিসেবে। ঋণ নেওয়ার এমন নিয়ম থাকলেও তা মানছে না সব ব্যাংক। এক সম্পদ দেখিয়ে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ঘটনা ঘটছে একের পর এক। এমনই এক প্রতিষ্ঠান এইচআর গ্রুপ। এই গ্রুপের তিন কর্ণধার একই পরিবারের। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সম্পদ মূল্যের চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা লোপাট করেছেন ১৩ ব্যাংকের ৯০০ কোটি টাকা। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাঁদের দু’জন লাপাত্তা। অন্যজন কারাগারে।

এই তিনজন হলেন এইচআর গ্রুপের চেয়ারম্যান আনজুমান আরা বেগম; তাঁর স্বামী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন-উর রশিদ; তাঁদের ছেলে পরিচালক হাসনাইন হারুন। তাঁদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মামলা আছে অর্ধশতাধিক। বিভিন্ন মামলায় রায়ও হয়েছে। ওয়ারেন্ট আছে অন্তত ৬০টি। আনজুমান আরা বেগম ও হারুন-উর রশিদকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। হাসনাইন হারুনকে গত ১২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মা-বাবা-ছেলের সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এইচ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রুবাইয়া প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, চিটাগাং ইস্পাত লিমিটেড ও আমানত স্টিল লিমিটেড। ৩০ কোটি টাকার সম্পদ সিকিউরিটি হিসেবে রেখে আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন হারুন-উর রশিদ। সবচেয়ে বেশি মামলা আছে রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও চিটাগাং ইস্পাতের বিরুদ্ধে।

রাজনৈতিক প্রভাবে লুট হচ্ছে ব্যাংক

১৮ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

এই মুহূর্তে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট ব্যাংক লুট। ব্যাংক ব্যবস্থা বিনষ্ট হয়ে গেছে। প্রভাবশালীরা এখন ব্যাংক গিলে খাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লুটেরা গোষ্ঠী ব্যাংক করছে। এ কারণে মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক লুট হচ্ছে। খেলাপি ঋণের টাকা ও অবৈধ আয় পাচার করা হচ্ছে। এর সঙ্গে রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ীরা জড়িত।

গতকাল শনিবার অর্থনীতির সংকট নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি আয়োজিত সংলাপে এসব কথা বলেছেন বিশিষ্টজন। তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন তাঁরা। এ পথে না গেলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লুটেরা গোষ্ঠী নতুন করে ব্যাংক করবে। আবার কয়েক দিন পর লুট করবে।

বেগমদের ব্যাংক হিসাবে ৮২ হাজার কোটি টাকার মেয়াদি আমানত

ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, বণিক বার্তা

শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের বিচারে দেশে নারীরা এখনো বেশ পিছিয়ে। আবার যৌক্তিক মজুরির ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে অধিকার নিয়েও শোনা যায় নারীর বঞ্চনার অনেক ঘটনা। উদ্যোক্তা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলোর বৈষম্যের শিকার নারী। এখনো ব্যাংকসেবার বাইরেই থেকে গিয়েছেন দেশের ৭৪ শতাংশ নারী। এত অপ্রাপ্তি, বৈষম্য, বঞ্চনা ও উপেক্ষার মধ্যেও বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে ব্যাংকে গৃহিণী বা বেগমদের নামে গচ্ছিত মেয়াদি আমানতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গৃহিণীদের ব্যাংক হিসাবে মেয়াদি আমানত রয়েছে ৮১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা, যা ব্যক্তিশ্রেণীর মোট মেয়াদি আমানতের প্রায় ২৩ শতাংশ। গৃহিণীদের নামে মেয়াদি আমানতে জমা হওয়া অর্থ দেশের ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও বেতনভুক্ত বিপুল পরিমাণ চাকরিজীবীর জমাকৃত মোট মেয়াদি আমানতেরও কাছাকাছি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোয় ব্যক্তিশ্রণীর মোট মেয়াদি আমানত জমা হয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৯১ শতাংশ জমা রয়েছে বেতনভুক্ত চাকরিজীবীদের নামে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ২৬ শতাংশ মেয়াদি আমানতের অর্থ জমা করেছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী নারীদের জমাকৃত মেয়াদি আমানত এ দুই হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। শুধু গৃহিণী বা বেগম হিসেবে পরিচয় দানকারী নারীদের হিসাবে মেয়াদি আমানতের ২২ দশমিক ৯৩ শতাংশ অর্থ জমা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন শিডিউলড ব্যাংকস স্ট্যাটিসটিকসে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

৪ গ্রুপকে ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ, তথ্য জেনেও নীরব ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

‘খাদের কিনারায়’ শব্দটি দিয়েই বাংলাদেশের ব্যাংকিংখাতের বর্তমান পরিস্থিতিকে সবচেয়ে ভালোভাবে প্রকাশ করা যায়। অথচ, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ২০২১ সালের অক্টোবরের প্রথম দিকেই এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরও পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

২০২০ সালের ঋণ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ২০২১ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি বিভাগের প্রণীত প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল যে ৪ জন বড় ব্যবসায়ী জনতা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এসব ঋণ সময়মতো ফেরত না আসলে আমানতকারীরা সংকটে পড়তে পারেন।

এই ৪ ঋণগ্রহীতা হলেন— এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের ৪ সদস্য, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১ হাজার ৬৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা নিয়েছেন ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এই পরিবারের হাতে রয়েছে ৭টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বড় অংকের শেয়ার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে থাকা অল্প কয়েকজন ঋণগ্রহীতাকে এত বড় অংকের ঋণ দেওয়ার পর তারা যদি কোনো কারণে অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে এবং ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা বড় সমস্যায় পড়তে পারে।

পরবর্তীতে ঋণগ্রহীতাদের এত বড় অংকের ঋণ গ্রহণ নিয়ে অন্তঃগভীর পর্যালোচনা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি সুপারিশ করা হয়।

অর্থ আদায়ের পাশাপাশি ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা না হলে ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটের জন্য তা বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে, ঋণগুলো খেলাপি হয়েছে কি না, তা প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই সুপারিশ পেয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে।

দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিতে ন্যাশনাল ব্যাংক

 ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

লোকসানে পড়েছে বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। বড় কয়েকজন গ্রাহক ঋণখেলাপি হয়ে পড়ায় ও অন্যদের ঋণের কিস্তি আদায় না হওয়ায় ব্যাংকটির এই দশা হয়েছে। এর চেয়ে খারাপ তথ্য হলো, ব্যাংকটি আগে যেসব সুদ আয় খাতে নিয়ে মুনাফা করেছে, একটি গ্রুপের এমন ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করে দিয়েছে। এসব মুনাফা থেকে সরকারকে করও দিয়েছে ব্যাংকটি। চলতি বছর শেষের আর্থিক হিসাবে যা আরও বড় ধাক্কা দেবে। পাশাপাশি এর দায় মেটাতে হবে আরও কয়েক বছর।

এর মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক নিজের আর্থিক স্বাস্থ্যকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মকানুন না মেনে মালিকপক্ষের সুপারিশে এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব ঋণই এখন ব্যাংকটির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঋণ অনুমোদন, সুদ মওকুফসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই সহায়তা করেছে। ফলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কিছুই করার ছিল না।

জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন বলেন, ‘খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এ কারণে ব্যাংকের আয় অনেক কমে গেছে, লোকসান হয়েছে। সুদ মওকুফের পুরো বিষয়টি আমি জানি না। এত সুদ মওকুফ হলে অনেক দিন এই চাপ বয়ে বেড়াতে হবে। এক বছরে এসব সমন্বয়ও করা যাবে না। বাড়তি সময় দিতে হবে।’

আর্থিক চিত্র

সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংক নিট লোকসান করেছে ৩৫৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ১৩৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি। আর ২০২০ সালে নিট মুনাফা করেছিল ৩৪৮ কোটি টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ঋণ দিয়ে সুদ আয় করেছে ১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। আর বিনিয়োগ করে আয় করে ৪০৮ কোটি টাকা। কমিশন, ব্রোকারেজসহ অন্য আয় ১৮৯ কোটি টাকা।

এ সময়ে ব্যাংকটি আমানতকারীদের সুদ পরিশোধ করে ২ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। বেতন-ভাতা, ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হয় ৫৭২ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটি ৩২০ কোটি টাকা লোকসানে পড়ে যায়। সব মিলিয়ে লোকসান ৩৫৭ কোটি টাকা।

গত বছরের একই সময়ে ঋণ দিয়ে সুদ আয় করেছিল ২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। বিনিয়োগ করে আয় করেছিল ৪৯০ কোটি টাকা। কমিশন, ব্রোকারেজসহ অন্য আয় করেছিল ১৭৭ কোটি টাকা।

ব্যাংকটি আমানতকারীদের সুদ দিয়েছিল ২ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। বেতন-ভাতা, ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে খরচ করে ৫৫১ কোটি টাকা। ফলে পরিচালন মুনাফা করে ২৫৪ কোটি টাকা। কর পরিশোধ, নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার পর মুনাফা কমে হয় ১৩৫ কোটি টাকা।

বেড়েছে খেলাপি

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এক বছর আগে যা ছিল ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এখন ব্যাংকটির ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ ঋণই খেলাপি।

ন্যাশনাল ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মাইশা গ্রুপের চার প্রতিষ্ঠানের কাছে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে, যা খেলাপি হয়ে পড়েছে। গ্রুপটির প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মাইশা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট ও মাইশা রিয়েল এস্টেট, সিএলসি পাওয়ার ও ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি ও ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানিতে। মাইশা গ্রুপের কর্ণধার ছিলেন প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হক। এমন আরও কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। আবার অনেকে ঋণের কিস্তিও শোধ করছেন না।

সামনে আরও বিপদ

ন্যাশনাল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ ও গুলশান শাখার ১৩টি প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে দিয়েছে ব্যাংকটি। এসব সুদের বড় অংশ ব্যাংকটি গত ১০ বছরে আয়ে নিয়ে মুনাফা করেছে। আবার মুনাফা থেকে সরকারকে পরিচালক করও পরিশোধ করেছে। ফলে এসব সুদ এখন ব্যাংকটির আয় থেকে সমন্বয় করতে হবে।

ব্যাংকটির যে আর্থিক পরিস্থিতি তাতে এক বছরে কোনোভাবেই এত সুদ সমন্বয় করা সম্ভব না।

জানা যায়, সুদ মওকুফ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ চট্টগ্রামের একটি গ্রুপের। পাশাপাশি গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পুষ্টি ভেজিটেবল, ফেয়ারি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, নাফ ট্রেডিং ও আদিল করপোরেশন।

এদিকে ব্যাংকটি তারল্য-সংকটেও পড়েছে। অনেক শাখায় আমানত কমেছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা) জমা রাখতে পারছে না। এ জন্য প্রতিনিয়ত জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এরপরও ব্যাংকটির আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।

কাজ না করেই টাকা উত্তোলন

২৩ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সরকারি আব্দুর রাজ্জাক কলেজ থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ও প্যালাসাইডিং স্থাপন এবং পানিনিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণের জন্য দুটি প্রকল্পে চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত ৩০ জুন প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নিয়েছেন ডামুড্যা পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। তবে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই প্রকল্পে কোনো কাজ করেননি ওই নেতা।

গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর), কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির অধীনে শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের দেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে নজরুল ইসলামের মতো অনেকেই কাজ না করে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ সব টাকা তুলে নিয়েছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে।

নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি বছরের মে-জুন মাসের দিকে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর বর্ষা চলে আসায় কাজ করতে পারিনি। এখন প্রস্তুতি নিয়েছি, কাজটা করে ফেলব।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের অনুকূলে ৯১টি প্রকল্পের বিপরীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে অন্তত ১০টি প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে কোনো কাজ হয়নি। এ ছাড়া ১০টি প্রকল্পে কাজ হয়েছে আংশিক। অথচ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের বরাদ্দের টাকা গত ৩০ জুন উত্তোলন করা হয়েছে। এর আগে নাহিম রাজ্জাক ৯১টি প্রকল্পের তালিকা তৈরি করে তাঁর অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।

ঋণের ‘সুলতান’ টিপু

২৪ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

টিপু সুলতানের নাম শোনেননি এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর। টিপু সুলতান ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তা। তাঁর বীরত্ব দেখেছে ইংরেজরা। বগুড়ায়ও আছেন এক টিপু সুলতান! তবে বীরত্ব নয়, কুকীর্তির জন্যই এ টিপুর পরিচিতি। ঋণের নামে হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে চুষে নিয়েছেন এই পরিবহন ব্যবসায়ী। এখন বাঘা বাঘা ব্যাংক কর্মকর্তাকে ঘোল খাইয়ে ছাড়ছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খাতায় টিপু ঋণখেলাপির ‘রাজা’। সংস্থাটির ঋণখেলাপির ২০০ জনের তালিকায় রয়েছে তাঁর নাম।

টিপু ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন ‘টিআর ট্রাভেলস’-কে। সেই পরিবহন এখন দেউলিয়া। ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা বাসগুলো ফন্দি এঁটে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। সেই অত্যাধুনিক বাসগুলোর খোঁজ পেয়েছে সমকাল। বগুড়া ও খুলনার পরিত্যক্ত জঙ্গল আর ভাগাড়ে কৌশলে ফেলে রাখা হয়েছে হুন্দাই, মার্সিডিজ, ভলভোর মতো দামি বাস। অযত্নে ফেলে রাখা এই বাসগুলোর জন্যই জামানত ছাড়া বিপুল টাকা লগ্নি করে কয়েকটি ব্যাংক। অভিযোগ রয়েছে, একই গাড়ি বারবার একাধিক ব্যাংককে দেখিয়ে ঋণের টাকা তুলে পরিবহন ব্যবসায় না খাটিয়ে টিপু তা দেশের বাইরে পাচার করেছেন।

এদিকে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা বের করে পাচারের সঙ্গে জড়িত টিপুর বিরুদ্ধে তদন্তে রয়েছে দুদক। টিপুকে ধরতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তাঁকে ‘খুঁজে পাওয়া’ যাচ্ছে না।

কে এই টিপু সুলতান :বগুড়া শহরের দক্ষিণ চেলোপাড়া-নারুলী এলাকার মৃত মালেক মন্ডলের ছেলে টিপু। মালেক বৈবাহিক কারণে অনেক আগে থেকেই বাস করতেন খুলনার রেলগেট এলাকায়।

টিপু ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। পণ্য আমদানি করতেন সীমিত পরিসরে। ভোগ্যপণ্য ও পরিবহন খাতের ব্যবসায়ী হলেও টিপু ঋণ নিয়ে বনে যান খুলনার প্রভাবশালী পাট ব্যবসায়ী। বেশি দামে পাট কিনে, কম দামে রপ্তানি- এই ছিল তাঁর গোপন ফর্মুলা। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, রপ্তানিতে স্বর্ণপদক বাগাতে বাকিতে কিনে এই প্রক্রিয়ায় পাট রপ্তানি করতেন টিপু।

একাধিক ব্যাংকের ঋণখেলাপি হলেও খুলনায় তাঁর জীবনযাপন ছিল রাজকীয়।

টিপুর নাটকীয় উত্থান হয় ২০০৯ সালে। ডজন খানেক ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তাঁর মালিকানাধীন এসি, নন-এসি বাস চলাচল করত ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পথে। তবে সবই এখন অতীত। বাছবিচার না করে জামানত ছাড়াই টিপুকে ঋণ দেয় বিভিন্ন ব্যাংক। ২০০৯ সালে এই ব্যবসায়ীকে সাদা মনে প্রথম ১১০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল রূপালী ব্যাংকের দৌলতপুর শাখা। তবে সেই ঋণের এক টাকাও ব্যাংকটি ফেরত পাইনি। এর মধ্যে ২০১৬ সালের মার্চে জনতা ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের দায়ে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। জামিনে ছাড়া পেয়ে এর পর থেকেই হাওয়া।

দর-কষাকষি করে ঘুষ নেন তাঁরা

২৯ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

মাদারীপুরে দর-কষাকষি করে দুই রাজস্ব কর্মকর্তার ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ১০ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের মাদারীপুর সার্কেল কার্যালয়ের রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-২) রফিকুল ইসলাম ও (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীর কার্যালয়ে বসে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন।

ফাঁস হওয়া ভিডিওর শুরুতে এক ব্যবসায়ীর উদ্দেশে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এইডা কী আনছেন?’ পরে ৫০০ টাকার কয়েকটি নোট গুনে পকেটে ভরেন রফিকুল। এরপর রাজস্ব কর্মকর্তা রফিকুল বলেন, ‘কী যে করেন আপনারা? মানে…মাদারীপুরের লোক এত ধনী, দেশের মধ্যে তৃতীয় ধনী জেলা। আপনারা কেন এমন করেন?’

একপর্যায়ে ব্যবসায়ীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যা দিছেন, আমি এটা নিতে পারব না। এটা ইমরান সাহেবকে কি দেব? আমি কীভাবে বোঝাব? স্যারে তো বকব! আমি এটা নিতে পারব না। এই তিন (তিন হাজার) আমি নিতে পারব না। বাকিটা কখন দেবেন? আপনারা স্যারকে বলে যান, দেখা করে যান। কারণ, তিনি (ইমরান) আপনার অরিজিনাল স্যার। সে–ই আপনাকে বাঁচাতে পারব, মারতে পারব। বুঝছেন!’

১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ, দেশ ছাড়ার পর ব্যাংক হিসাব জব্দ

০৪ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

দেশের শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড বা তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাতের আরেক ঘটনা ঘটেছে। চারটি মিউচুয়াল ফান্ডে জমা থাকা প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে গেছেন ফান্ডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি।

২০১৮ সাল থেকে একটু একটু করে তহবিল থেকে অর্থ সরিয়ে নেন ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস (ইউএফএস) নামের সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর। ভুয়া লেনদেন ও আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজির মাধ্যমে এ আত্মসাতের ঘটনা ঘটানো হয়।

দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে এ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটলেও তহবিলগুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান বা হেফাজতকারী প্রতিষ্ঠান যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে হেফাজতকারী প্রতিষ্ঠানের ‘হেফাজতের’ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ দায়িত্বে ছিল সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

সরকারি কর্তা, দালাল মিলেমিশে অনিয়মে

০৪ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় হচ্ছে বড় বড় অবকাঠামো। এসব প্রকল্প ঘিরে অধিগ্রহণ করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষের জমি আর ভিটা। তবে এই অধিগ্রহণ নিয়ে কয়েক বছর ধরেই চলছে বিশৃঙ্খলা। ক্ষতিপূরণ পেতে দেরি, অনিশ্চয়তা ছাড়াও আছে দালাল ও একশ্রেণির কর্মকর্তার উৎপাত। দালালের সহায়তায় প্রকৃত জমির মালিকের বিরুদ্ধে ঠুকে দেওয়া হয় মামলা। অনেক জমির মালিকের ভাগ্য আটকে গেছে এমন ভুয়া মামলায়। এতে মিলছে না ক্ষতিপূরণ, ঠাঁই হচ্ছে না পুনর্বাসন কেন্দ্রে। আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদ করা হয়েছে বহু মানুষকে। আবার অনেককে পুনর্বাসন করা হলেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পের কারণে ইলিশ প্রজননসহ প্রাণ-প্রকৃতিরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গ্রামের পর গ্রাম অধিগ্রহণের আওতায় :সরকারি-বেসরকারি সংশ্নিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ৬,৫৬২.২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৪ হাজার ২০০। পুনর্বাসনের তালিকায় এসেছে ৩ হাজার ৪২৩ পরিবার। পুনর্বাসিত হয়েছে ১ হাজার ৫০০-এর মতো পরিবার। এখনও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলমান। পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ৯৮২.৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ১৩০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। সবাই পুনর্বাসনের তালিকায় এসেছে। কিন্তু এখনও ঘর হস্তান্তর হয়নি।

পটুয়াখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশনের (আরএনপিএল) নির্মাণকাজ চলছে। এ স্টেশনের জন্য ৯১৫.৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এখানে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ২৮১। পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৬ হাজার ৭০০ পরিবার। ২৮১ পরিবারকেই পুনর্বাসনের তালিকায় আনা হয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

পটুয়াখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সুপারথার্মাল পাওয়ার প্লান্ট (আশুগঞ্জ) নির্মাণের জন্য ৯২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮০ পরিবারকেই পুনর্বাসন তালিকায় আনা হয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

বিএনএস শেরেবাংলা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বৃহত্তম নৌঘাঁটি নির্মাণের জন্য ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও ৬২০ একর জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান। এ এলাকায় কত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে তথ্য পাওয়া যায়নি।

সবচেয়ে বেশি জমি অধিগ্রহণ হয়েছে কলাপাড়ার লালুয়া ও ধানখালী ইউনিয়নে। এ দুই ইউনিয়নের ২১ গ্রাম এখন জনবসতিশূন্য।

৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ

০৫ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫৮২ কোটি টাকা।

মেসার্স পোটন ট্রেডার্স সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের (পোটন) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। কামরুল আশরাফ খান সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সভাপতি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, তিনিই মূলত দেশে সারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।

ওয়াসার তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি!

০৯ জানুয়ারি ২৩, সমকাল      

একটি-দুটি নয়, ১৪ বাড়ি! দেশে নয়, সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে কিনেছেন এসব বাড়ি। সব বাড়ির দাম টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়াবে। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে তিনি এসব বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি কেনার অর্থের উৎস ও লেনদেন প্রক্রিয়ার তথ্য তালাশে নেমেছে ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিপুল পরিমাণ অর্থে একের পর এক বাড়ি কেনার ঘটনায় দেশটির গোয়েন্দা তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি কেনা এবং অর্থ পাচারকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় তাকসিম খানের নাম থাকা নিয়ে সম্প্রতি দুটি অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। অভিযোগে কিছু বাড়ির সুনির্দিষ্ট ঠিকানা, ছবি, কোন বাড়ি কখন, কত টাকায় কেনা- তা উল্লেখ করা হয়েছে। তাকসিম সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ‘গভর্নমেন্ট ওয়াচ নোটিশ’-এর একটি কপি অভিযোগের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

সিআইএসহ যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে), ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), দেশটির অন্যান্য সংস্থা ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল) তাকসিম এ খানের বিষয়ে কাজ করছে বলে ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ১৩ বছরে ওয়াসার এমডির দায়িত্বে থেকে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির টাকায় যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বাড়ি কিনেছেন তাকসিম। তাঁর কিছু বাড়ির তথ্য-প্রমাণ এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকিগুলোর তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

‘ভয়ংকর নভেম্বরের’ পর ডিসেম্বরেও অনিয়ম

০৮ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

ঋণ অনিয়মের কারণে আলোচনায় থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে (আইবিবিএল) গত ডিসেম্বরেও ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। নিয়ম না মেনে তিন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিন শাখা থেকে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ।

ব্যাংকটি এমন সময়ে এই অর্থায়ন করেছে, যখন তারল্য সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছেও টাকা ধার করতে হচ্ছে। ঋণ অনিয়ম রোধে ব্যাংকটিতে ১১ ডিসেম্বর পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

১৫ ডিসেম্বর থেকে ব্যাংকটির ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ, আদায় ও স্থিতির তথ্যও পর্যালোচনা করছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষক দল ব্যাংকটিতে পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

জনতা ব্যাংকের টাকায় কৃষক লীগ নেতার পাঁচ তারকা হোটেল

জানুয়ারি ১১, ২০২৩, বণিক বার্তা

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, যেটি ‘হলিডে ইন’ নামেই বেশি পরিচিত। বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা আলম আহমেদ পাঁচ তারকা এ হোটেলের মালিক। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের অর্থে এটি গড়ে তুললেও তিনি পরিশোধ করেননি ঋণ। সব মিলিয়ে হোটেলটির কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়েও এ ঋণ আদায় করতে পারেনি ব্যাংকটি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে খেলাপির খাতায় উঠেছে পুরো ঋণ।

জানা গেছে, শুরুতে হাবিব হোটেলের ঋণ জনতা ব্যাংকের ছিল না। বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে এ ঋণ অধিগ্রহণ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। যদিও অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছিল জনতা ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটি। ওই ঋণের ব্যাপারে কোনো সুপারিশও ছিল না সংশ্লিষ্ট শাখার। তার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিজেদের রীতিনীতি ভঙ্গ করে এ ঋণ অধিগ্রহণ করে জনতা ব্যাংক। ২০১৭ সালে অধিগ্রহণের সময় এ ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪৩ কোটি টাকা। অনিয়মের মাধ্যমে অধিগ্রহণের পর হাবিব হোটেলকে আরো ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। শেষ পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা।

দুবাইয়ে দেড় বছরে ৩৪৬ কোটি টাকার ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনেছেন বাংলাদেশিরা

১১ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

কানাডার বেগম পাড়ার পর এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতেও বাড়ি কেনায় বিপুল বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা। দুবাইয়ের সরকারি নথিপত্র ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালে জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশিরা দুবাইয়ে ১২ কোটি ২৩ লাখ দিরহাম বা ৩৪৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বাড়ি ফ্ল্যাট কিনেছেন।

বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্য়মে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালে জুন মাস পর্যন্ত যেসব দেশের মানুষ জমি-বাড়ি কিনছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা সবার আগে। দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রেও এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দুবাইয়ের আবাসন বাজারে বছরে ১৬ দশমিক ২ বিলিয়ন দিরহাম বা ৪৫ হাজার ৯১৫ কোটি টাকার। সেই তুলনায় বাংলাদেশিদের ৩৪৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ বড় কিছু নয় আর এই অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে বড়জোর ১০০ টি ফ্ল্যাট কেনা যাবে, এর বেশি কিছু নয়। বাংলাদেশিরা সেখানে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনেছেন, এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে এই অর্থ বৈধপথে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, তা অবৈধপথেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান বাড়ি কিনেছেন যুক্তরাষ্ট্রে

১৪ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। বিষয়টি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি। এই তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সস্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।

শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)।

মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সস্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।

ওসিসিআরপির করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পাঁচটি কনডোমিনিয়াম কিনেছিলেন আবদুস সোবহান। সে সময় ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ২৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া আশপাশের ভবনগুলোতে ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার মূল্যের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন তিনি। নিউইয়র্কে কেনা এসব সম্পত্তির নথিপত্র বলছে, সম্পত্তিগুলো নগদ অর্থে কেনা হয়েছিল। এগুলোর মালিকানায় রয়েছেন তাঁর স্ত্রী গুলশান আরাও।

ওসিসিআরপির করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবদুস সোবহান নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে আরও একটি সম্পত্তি (বাড়ি) কিনেছিলেন। ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ১২ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন। এর সাত মাস আগে বাংলাদেশে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

লন্ডনের অভিজাত এলাকায় প্রপার্টির শীর্ষ বিদেশী ক্রেতা বাংলাদেশীরাও

জানুয়ারি ১৫, ২০২৩, বণিক বার্তা

লন্ডনের সবচেয়ে অভিজাত এলাকাগুলো স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডন’ হিসেবে। গোটা লন্ডনে এসব এলাকায় প্রপার্টির দাম সবচেয়ে বেশি। বহুমূল্য এসব প্রপার্টির মালিকানাকে দেখা হয় অতিধনী ব্রিটিশদের আভিজাত্যের নমুনা হিসেবে। প্রপার্টি মূল্যের ভিত্তিতে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের পরিধি ও সংজ্ঞায় বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনভুক্ত এলাকাগুলো হলো নাইটসব্রিজ, মেফেয়ার, সাউথ কেনসিংটন, ওয়েস্ট ব্রম্পটন ইত্যাদি।

শুধু ব্রিটিশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য স্থানের অতিধনীরাও এখন প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনে প্রপার্টি ক্রেতাদের অভিজাত তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন। প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের প্রপার্টি বাজারে বিদেশীদের অবদান এখন ৪০ শতাংশেরও বেশি। ধনাঢ্য এসব ক্রেতার জাতীয়তাভিত্তিক শীর্ষ তালিকায় আছেন বাংলাদেশীরাও। প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের প্রপার্টি কেনায় জাপানি ধনীদের চেয়েও বেশি ব্যয় করেছেন তারা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনীদের বিনিয়োগ কোটায় অভিবাসনসংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে লন্ডনভিত্তিক অ্যাস্টনস। সংস্থাটি সম্প্রতি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের বিভিন্ন এলাকার বিদেশী প্রপার্টি ক্রেতাদের জাতীয়তাভিত্তিক একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট ও প্রপার্টি ব্যবস্থাপনা সংস্থা নাইট ফ্রাঙ্ক ও যুক্তরাজ্য সরকারের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি করা এ তালিকায় দেখা যায়, ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের বিদেশী প্রপার্টি ক্রেতাদের তালিকায় বাংলাদেশীদের অবস্থান ছিল নবম।

ওই নয় মাসে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনে ৯৮টি লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি ২৯ লাখ পাউন্ড মূল্যের প্রপার্টি কিনেছেন বাংলাদেশীরা। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এসব লেনদেনে গড় ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ লাখ পাউন্ড (প্রায় ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা)।

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসন এলাকাগুলোর অন্যতম লন্ডনের মেফেয়ার। বিলাসবহুল বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেফেয়ার প্রপার্টিজের কাছ থেকে এখানে সম্প্রতি একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন এক বাংলাদেশী। দেশের বেসরকারি এক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে তিনি।

মেফেয়ার এলাকার গ্রসভেনর স্কোয়ার এখন বিশ্বের বৃহৎ ধনকুবেরদের কাছেও অনেক ঈপ্সিত একটি জায়গা। গত কয়েক বছরে এখানে বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন ডজন খানেক বাংলাদেশী। বাড়িগুলোর মতো তাদের বিলাসবহুল দামি গাড়িও ঈর্ষান্বিত করে তুলছে সেখানকার বাসিন্দা স্থানীয় ও বিদেশী ধনকুবেরদেরও।

ইসলামী ব্যাংকের চার কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

২০ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের চার কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. সাইদ উল্লা, মো. মোশাররফ হোসেন, শহিদুল্লাহ মজুমদার ও ক্যাপ্টেন (অব.) হাবিবুর রহমান। তাঁরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় কর্মরত।

এর আগে ৮ জানুয়ারি একই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশের এই বিভাগ। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে নতুন করে ইসলামী ব্যাংকের চার কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের সত্যতার তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই ব্যাংকার এবং তাঁরা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে কর্মরত। তাঁরা ব্যাংকটিকে ধ্বংসের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে টালমাটাল করে সরকারকেও বেকায়দায় ফেলে দিতে চান।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি এই ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যাংক সম্পর্কে মনগড়া তথ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ান। তাঁরা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তাঁদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করা।

মামলার তদন্তই শেষ হচ্ছে না

২১ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সারা দেশে করা মামলার তদন্ত ও বিচারের অগ্রগতি নেই। বছরের পর বছর ধরে এসব মামলার তদন্ত চলছে। এই সংক্রান্ত দুদকের করা মামলা এবং ঢাকার ১৩টি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যা সব মিলিয়ে মাত্র ৫৬টি।

বিদেশে অর্থ পাচারের মামলার তদন্তের অগ্রগতি আরও খারাপ। এ অভিযোগে করা শতাধিক মামলার মধ্যে তদন্ত শেষ হয়েছে কেবল ১৫টির। অনেক মামলার তদন্তের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

তদন্তের সবচেয়ে দুর্বল দিক হচ্ছে, বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের পক্ষে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র আদালতে হাজির করতে পারছেন না কর্মকর্তারা। এ জন্য তদন্তসংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাবকে দায়ী করছেন আইনবিশেষজ্ঞরা। ফলে এতগুলো সংস্থা থাকলেও বাস্তবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এতে মানি লন্ডারিং করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন জড়িত ব্যক্তিরা।

প্রায় দুই বছর ধরে ঢাকার ১৩টি আদালতের সাধারণ ও বিচারিক নিবন্ধন খাতা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তরের তালিকা পর্যালোচনা করে মানি লন্ডারিং আইনে করা ৭৫২টি মামলার হিসাব পাওয়া গেছে। ২০০২ সাল থেকে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব মামলা হয়। এর মধ্যে দুদক ৪২৯টি, সিআইডি ১৭০টি, শুল্ক গোয়েন্দা ১৫০টি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তিনটি মামলা করেছে।

দেশের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে মানি লন্ডারিং মামলার বিচার হয়ে থাকে। তবে ঢাকা বিভাগের বাইরে কত মামলার তদন্ত বা বিচার চলছে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রথম আলোর কাছে নেই। এ ধরনের মামলার তদন্ত সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার কথা। বাস্তবে কোনো মামলারই তদন্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি। ৪ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত সময় লেগেছে কোনো কোনো মামলার তদন্তে।

মামলাগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখায় যায়, ২০ বছর আগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন পাস হওয়ার পর প্রথম আট বছরে গড়ে চারটি করে মামলা হয়েছে। তবে ২০১০ সালের পর বছরে গড়ে ৫৯টি করে মামলা হয়েছে।

এসব মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা তিনটি সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের সাতজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেন, তদন্ত সংস্থাগুলোর কাছে আধুনিক প্রযুক্তি, গোয়েন্দা নজরদারির মতো সরঞ্জামাদি এবং যে ধরনের প্রশিক্ষিত জনবল দরকার, তাতে ঘাটতি রয়েছে। আবার বিদেশ থেকে মামলার আলামত সংগ্রহ সময়সাপেক্ষ বিষয়। আবার কোনো কোনো মামলার তদন্তভার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার কাছে গেছে। এসব কারণে সময়মতো তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশে মানি লন্ডারিংসংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ ও জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে ২০০২ সালে প্রথম মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন পাস হয়। মানি লন্ডারিং বলতে বোঝানো হয়েছে অর্থ পাচার, স্থানান্তর বা রূপান্তর। মুদ্রা পাচারসহ ২৭ ধরনের অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিংয়ের আওতায় আসবে। এসব অপরাধের সরাসরি তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে দুদক, সিআইডি, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

ঢাকায় রাজউকের অফিস সহকারীর ৮ তলা বাড়ি

২১ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

জাফর সাদেক কাজ করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অফিস সহকারী পদে। বেতন  সর্বসাকল্যে ৪০ হাজার টাকা। গত ১৬ বছরে এই চাকরি করেই রাজধানীর আফতাবনগরে তিনি বানিয়েছেন আটতলা বাড়ি। মগবাজারে রয়েছে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। স্ত্রীর নামে শান্তিনগরের মেহমান টাওয়ারে রয়েছে দোকান। চলাচল করেন দামি গাড়িতে।

জাফর সাদেক পুলিশের অধীন একটি গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য স্বীকার করেছেন বলে জানতে পেরেছে প্রথম আলো। জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিও শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) প্রথম আলোর হাতে এসেছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তৎকালীন এক মন্ত্রীর সুপারিশে ২০০৬ সালে জাফর সাদেক রাজউকের অফিস সহকারী পদে চাকরি পান। চাকরির পাশাপাশি রাজউকের প্লট বিক্রি, নকশা পাস করিয়ে দেওয়ার অবৈধ বাণিজ্যে জড়িত হন তিনি। আর এসব কাজ করেই তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করলেন অর্থমন্ত্রী

২৪ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শীর্ষ এই খেলাপিদের মোট ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

আজ মঙ্গলবার সরকারি দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এ তথ্য তুলে ধরেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।

অর্থমন্ত্রী জানান, ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) ডেটাবেজে সংরক্ষিত ( ২০২২ সালের নভেম্বর মাসভিত্তিক) দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫।

মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির মধ্যে সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৬৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৮৫৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৫২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তাদের পুরোটাই খেলাপি ঋণ।

রাইজিং স্টিল কোম্পানির ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৪২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ৯৯০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৯৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তাদের পুরোটাই খেলাপি ঋণ।

রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ একই। তাদের খেলাপি ঋণ ৮৭৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

ক্রিসেন্ট লেদারস প্রোডাক্ট লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

সাদ মুসা ফেব্রিকস লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৩১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

বিআর স্পিনিং মিলস লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ সমান, ৭২১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

এসএ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৭২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭০৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

মাইশা প্রোপ্রার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের  ঋণের স্থিতি ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ৬৬৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৭৭০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৫১ কোটি ৭ লাখ টাকা।

মানহা প্রিকাস্ট টেকনোলজি লিমিটেডের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

আশিয়ান এডুকেশন লিমিটেড ঋণের স্থিতি ৬৫৩ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

এসএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৮৮৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৩০ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৮৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

এহসান স্টিল রি-রোলিং লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা

তালিকার সব শেষে সিদ্দিকী ট্রেডার্সের ঋণের স্থিতি ৬৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

তালিকায় নেই শীর্ষ ৬ খেলাপির নাম

 ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছেন, যাদের ১০টিই চট্টগ্রামের শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই ১০ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকা।

অথচ অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তালিকায় নাম নেই চট্টগ্রামের শীর্ষ ছয়টি ‘পলাতক’ শিল্প গ্রুপের, যাদের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এই ছয়টি শিল্প গ্রুপের মালিকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা বিদেশে পাচারেরও অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। ঋণের টাকা পরিশোধ না করে তারা ‘আত্মগোপনে’ আছেন। ঋণখেলাপির দায়ে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। মামলাগুলো এখন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন।

সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রকাশিত তালিকার ১ নম্বরে থাকা সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৬৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। কিন্তু তালিকায় নাম না থাকা চট্টগ্রামের নুরজাহান গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সিএলসির চেয়ে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ খেলাপি হয়েও তালিকায় নুরজাহান গ্রুপের নাম আসেনি।

একইভাবে তালিকার ২০ নম্বরে থাকা সিদ্দিকী ট্রেডার্সের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর চট্টগ্রামের জাতীয় পার্টির নেতা মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের ক্রিস্টাল গ্রুপের নামে ১২ ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রায় ২৫৯ কোটি টাকার বেশি ঋণ খেলাপি হয়েও ক্রিস্টাল গ্রুপের নাম শীর্ষ ২০-এ তালিকাভুক্ত হয়নি।

তালিকায় ১ থেকে ২০ নম্বরে থাকা ঋণখেলাপির চেয়ে বেশি ঋণ খেলাপি হয়েও চট্টগ্রামের ওই ছয় ‘পলাতক’ শিল্প গ্রুপের নাম না থাকার বিষয়টিকে ‘গোঁজামিলের’ তালিকা বলেছেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী।

প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘কারও কোনো জবাবদিহিতা নেই। তালিকাটি নিশ্চয় একচোখা নীতিতে করা হয়েছে। এমন গোঁজামিলের তালিকা সংসদে প্রকাশ করা অর্থমন্ত্রীর উচিত হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তালিকার ১ থেকে ২০ নম্বরে উল্লেখিত ঋণের চেয়ে বেশি খেলাপি ঋণের মামলা চলমান থাকার পরও শীর্ষ তালিকা’য় চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাপলাতক শিল্পমালিকদের নাম থাকবে না কেন? তারা তো হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন। চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ঋণখেলাপির দায়ে মামলা চালাচ্ছে। মামলা দায়েরকারী ব্যাংকগুলো নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংককে এ তথ্য জানানোর কথা। আর অর্থমন্ত্রীও নিশ্চয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হালনাগাদ তথ্য নিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছেন। তাহলে গোঁজামিলটা হলো কোথায়? সেটাই এখন অর্থমন্ত্রীর খুঁজে বের করা উচিত। অর্থমন্ত্রীর উচিত সংসদে সংশোধনী তালিকা প্রকাশ করা।’

সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির যে তালিকা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উপস্থাপন করেছেন, সেই তালিকায় চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠানই ১০টি। ওই ১০ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। আর যে ছয় শিল্প গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ শীর্ষ ২০ তালিকায় আসেনি, তাদের ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।

যদি ওই ছয় শিল্প গ্রুপের নাম শীর্ষ ২০-এ তালিকাভুক্ত হতো, তাহলে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠানই হতো ১৬টি। অর্থমন্ত্রী যে ছয়টি শিল্প গ্রুপের নাম উল্লেখ করেননি, সেই গ্রুপগুলোর মালিকদের কেউ সরাসরি এবং কেউ পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকায় নাম নেই নুরজাহান গ্রুপের। এই গ্রুপের চার কর্ণধারের বিরুদ্ধে সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন চট্টগ্রামে অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান।

নতুন করে পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা হলেন- মিজানুর রহমান, জহির আহমদ রতন, টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ার। তাদের মধ্যে টিপু সুলতান অন্য মামলায় কারাবন্দি আছেন। বাকি মালিকরা দেশ-বিদেশে পলাতক রয়েছেন।

তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জহির আহমদ রতন এখন দেশে অবস্থান করছেন বলে অর্থঋণ আদালতকে অবহিত করেছে ব্যাংক। তার পাসপোর্ট জব্দের আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে সাউথইস্ট ব্যাংক।

এছাড়া নুরজাহান গ্রুপের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলা চলছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জনতা ব্যাংকের দায়ের করা ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা খেলাপি ঋণের দায়ে গ্রুপের কর্ণধারদের পাঁচ মাসের আটকাদেশ দিয়েছিলেন অর্থঋণ আদালত।

চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বনেদি ব্যবসায়ীদের মধ্যে নুরজাহান গ্রুপ ছিল অন্যতম। ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় বড় অঙ্কের লোকসান, ঋণের টাকায় জমি কেনা ও কর্ণধারদের ‘ভোগবিলাসের’ কারণে গ্রুপটির কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের বড় অঙ্কের টাকা আটকে যায়। এ পর্যন্ত গ্রুপটির কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মাররিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেড, নুরজাহান সুপার অয়েল লিমিটেড, জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডসহ গ্রুপটির কমপক্ষে ২০টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে গেছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, নুরজাহান গ্রুপের কর্ণধার জহির আহমদ ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা অন্তত ৮ হাজার কোটি টাকা।

মোস্তফা গ্রুপের চেয়ারম্যান হেফাজতুর রহমানসহ সাত মালিকের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। ঋণখেলাপির মামলায় ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হন চেয়ারম্যান হেফাজতুর রহমান। বর্তমানে জামিনে থাকা হেফাজতুরের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান। গ্রুপটির সাত মালিকই এখন পলাতক। অথচ একসময় চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল মোস্তফা গ্রুপ।

মিশম্যাক গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকা। গ্রুপের পরিচালক তিন ভাই হুমায়ুন করিব, মিজানুর রহমান শাহীন ও মজিবুর রহমান কানাডা ও সিঙ্গাপুরে পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক ছাড়াও ঋণের টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) মামলা করেছে।

ইমাম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর ঋণের পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা। তিনি পালিয়েছেন আরব আমিরাতে। ইমাম গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে অন্তত ৬০টি। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৮৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের দায়ে মোহাম্মদ আলী, আলী ইমাম, মনির আহমেদ, ফেরদৌসী বেগম ও রিজিয়া খাতুনকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।

ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার তিন ভাই জয়নাল আবেদীন, জামিল আবেদীন ও মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। তারা তিনজনই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পালিয়ে আছেন। তারা সীতাকুণ্ডে শিপব্রেকিং ব্যবসায় জড়িয়েছিলেন। ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, এফঅ্যান্ডএফ শিপ রিসাইক্লিং, ম্যাক শিপবিল্ডার্স ও প্রিমিয়াম ট্রেড করপোরেশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তারা।

ক্রিস্টাল গ্রুপের কর্ণধার ও জাতীয় পার্টির নেতা মুরাদ ইব্রাহীমের ঋণের পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা। তিনিসহ তার সহযোগীরা এখন কানাডায় পালিয়ে আছেন। তারা একসময় চট্টগ্রামের শীর্ষ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ করে সেই টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন তারা।

প্রতিষ্ঠানের নামই বদলে ফেলেন ব্যবসায়ীরা

২৬ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

চট্টগ্রামের কোনো কোনো খেলাপি ব্যবসায়ী ঋণ নেওয়ার পর সেই প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টে ফেলেন। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে তালা। আবার কেউ ব্যাংককে না জানিয়ে অন্যের কাছে দিয়েছেন ভাড়া। ঋণের টাকা সরিয়ে নিয়েছেন অন্য খাতে; কিনেছেন জমি ও বাড়ি; করেছেন হাসপাতাল, পার্ক ও আবাসন প্রকল্প। অথচ জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন এই শীর্ষ খেলাপিরা। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, অর্ধেক প্রতিষ্ঠানই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের। গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের খেলাপি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন গিয়ে এসব তথ্য মিলেছে।

এসব অভিযোগ নিয়ে শীর্ষ খেলাপিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তবে কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শনের সময় কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। সেখানে বহু তথ্যের সত্যতা মিলেছে।

রাইজিং গ্রুপ :রাইজিং গ্রুপের কাছে ১৯ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। শুধু রাইজিং স্টিল লিমিটেডের নামেই খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। এই রাইজিং গ্রুপের কর্ণধার বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী। আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি এম সেকান্দর হোসাইন গতকাল এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা সরেজমিন দেখেন। তিনি জানান, আসলাম চৌধুরীর তিনটি শিপইয়ার্ড ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দখল হয়ে গেছে তাঁর পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি কারখানা। সীতাকুণ্ডের বারআউলিয়া রাইজিং শিপইয়ার্ডের মালিকানা হাতবদল হয়ে গেছে। ভাড়া নেওয়া ব্যক্তি এখন ব্যবসা করছেন। ইয়ার্ডটি বর্তমানে চালু রয়েছে। তবে এটি পরিচালনা করছেন রুবেল নামের এক শিপইয়ার্ড ব্যবসায়ী। রুবেল এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই ইয়ার্ডের বিপরীতে আসলাম চৌধুরীর ঋণ থাকতে পারে। আমরা তিনজন ভাড়ার বিনিময়ে আড়াই বছর ধরে এই ইয়ার্ড পরিচালনা করছি। ব্যাংক নয়, ভাড়ার টাকা আসলাম চৌধুরীর পরিবারকে দিচ্ছি।’ রুবেলের সঙ্গে জামাল পাশা ও আমিন নামের আরও দু’জনের অংশীদারিত্ব রয়েছে বলে জানান তিনি। নাম বদল করে আরেকটি ইয়ার্ড পরিচালনা করা বাবুল হাজিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনিও ভাড়া সূত্রে মালিকানা দখলে রেখেছেন ইয়ার্ডটি। আসলাম চৌধুরী ঋণ নেওয়ার সময় এটির নাম ছিল সেভেন বি অ্যাসোসিয়েটস। তবে বাবুল হক হাজি এটি পরিচালনা করছেন জাহিদুল শিপ রিসাইক্লিং নামে। এ ছাড়া কুমিরাতে রাইজিং গ্রুপের আরেকটি শিপইয়ার্ডের নাম বদল করে জাহিদুল এন্টারপ্রাইজ শিপইয়ার্ড রিসাইক্লিং নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে। রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপক মো. আজম বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের কুমিরা মডার্ন জুট মিল নামে একটি কারখানা ছিল। ওই কারখানাটি ২০১৬ সালে সিপি নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তা দখল করে এক প্রভাবশালী মহল।’

বাঁশবাড়িয়ার এঅ্যান্ডএ সুজ নামে জুতা তৈরির কারখানাটি বৈদেশিক বায়ারের মাধ্যমে পরিচালনা করছেন রাইজিং গ্রুপের পরিচালক আমজাদ চৌধুরী। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ১ হাজার ১০০ শ্রমিক। রাইজিং প্রতিষ্ঠানের তিনটি পেট্রোল পাম্প চালু আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া কালুরঘাট এলাকায় চালু আছে কনফিডেন্স সল্ট ও ড্রিংকিং ওয়াটার কারখানা। এতে শ্রমিক কাজ করছেন তিন শতাধিক।

স্বল্প সময়ে বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক ও বিএনপির বড় নেতা বনে যান আসলাম চৌধুরী। ২০০৪-০৫ সালেও আসলাম চৌধুরী রয়েল সিমেন্টের সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) হিসেবে চাকরি করতেন। কয়েক বছরে তিনি এক ডজনের বেশি কোম্পানির মালিক হন। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্বনামে-বেনামে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি। কিছু ঋণ পুনঃতপশিল করলেও এখনও তাঁর ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে বলে সংসদে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। রাইজিং স্টিল লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানেই এই টাকা খেলাপি আছে তাঁর।

রতনপুর গ্রুপ :রতনপুর গ্রুপের কাছে ব্যাংকের খেলাপি পাওনা আছে ৮৮৮ কোটি টাকা। তবে এই গ্রুপের শিপইয়ার্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে অবস্থিত। তিন বছর ধরে এই ইয়ার্ড বন্ধ। চারজন দারোয়ান পালাক্রমে ডিউটি করছেন। গতকাল কারখানায় গেলে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি তাঁরা। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, ‘ইয়ার্ড বন্ধ হওয়ার পর মালিকপক্ষের কেউ এখানে আসে না। তবে বিভিন্ন সময় ইয়ার্ডটি ভাড়া নেওয়ার জন্য অনেকে দেখতে আসেন।’ রতনপুর গ্রুপের বায়েজিদের কারখানায় ব্যাংক তালা ঝুলিয়েছে। এই কারখানা নিলামে তুলেও বিক্রি করতে পারেনি ব্যাংক।

চট্টগ্রামের ইস্পাত খাতের অন্যতম বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল আরএসআরএম রড। বার্ষিক টার্নওভার ছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কাজ করতেন ৮০০ কর্মী। করোনাকালে এই গ্রুপের কারখানা দুটির উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় ৪০ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কারণে তাদের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। বন্ধ এ কারখানা নিলামেও বিক্রি করতে পারেননি আদালত। কারণ, একই সম্পদ একাধিক ব্যাংকের কাছে রেখে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে রতনপুর স্টিল।

জানা গেছে, ১৯৮৪ সাল থেকে চট্টগ্রামে শিপ ব্রেকিং ও ইস্পাত খাতে ব্যবসা শুরু করেন নোয়াখালীর সেনবাগ এলাকার মাকসুদুর রহমান। ২০০৪-০৫ সালের দিকে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণ নেন তিনি। দীর্ঘদিনের ব্যবসার অভিজ্ঞতা ও ব্যাংকের বড় কর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে সহজে বড় অঙ্কের ঋণ সুবিধা নেয় আরএসআরএম। ঋণ নেওয়ার প্রথম কয়েক বছর ব্যাংকের পাওনা যথাসময়ে পরিশোধ করা হয়। ২০১১-১২ সালের পর ঋণ পরিশোধে গড়িমসি শুরু করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধাররা। এ বছর ব্যাংকের কাছে বারবার ঋণের বকেয়া পরিশোধে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মামলা কার্যক্রমকে স্থবির করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধাররা। এতে সফলতা না আসায় সোনালী ব্যাংক আদালতের নির্দেশে আরএসআরএমের কারখানা দুটি নিলামেরও উদ্যোগ নেয়। তবে একই মর্টগেজে একাধিক ঋণ থাকায় নিলামে কোনো আগ্রহী ক্রেতা পাওয়া যায়নি। এ প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাকসুদুর রহমানের ৮৮৮ কোটি টাকা ঋণখেলাপি থাকার কথা সংসদে প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। আরএসআরএম স্টিল, মডার্ন স্টিল, জুট স্পিনিং, রতনপুর রিয়েল এস্টেট, শিপ রিসাইক্লিংসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে রতনপুর গ্রুপের।

ওয়েস্টার্ন মেরিন :দেশে বড় আকারের কনটেইনার জাহাজ নির্মাণ করে তা প্রথমবারের মতো বিদেশে রপ্তানি করে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। ২০০০ সালে ব্যবসা শুরু করা এ প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ১৫০টি জাহাজ নির্মাণ করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিল। ১২ দেশে ৩৩টি জাহাজ রপ্তানি করে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আয়ও করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে কোম্পানির পরিচালকরা ব্যাংকের ঋণের টাকা বিলাসী জীবনযাপনে খরচ করে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটিকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ১১টি ব্যাংক ও ৮টি লিজিং কোম্পানিতে ওয়েস্টার্ন মেরিনের দেনা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। কিছু ঋণ তারা পুনঃতপশিল করায় তাদের খেলাপি ঋণ এখন ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা বলে সংসদে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

জাহাজ নির্মাণ করে যারা একসময় সুনাম কুড়িয়েছে বিদেশে, সেই শিপইয়ার্ড লিমিটেডের মালপত্রও সম্প্রতি ক্রোক করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, জাহাজ সরবরাহ করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির নামে গত বছর মামলাও করে দুবাইয়ের একটি কোম্পানি। এর ফলে ক্রয়াদেশ পাওয়া ১৪টি জাহাজ সরবরাহও অনিশ্চিত হয়ে গেছে ওয়েস্টার্ন মেরিনের। এদিকে এ বছরের শুরুতে সোনালী ব্যাংক চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ করপোরেট শাখায় ৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকার চেক ডিজঅনার হওয়ার পর আবার চেক প্রতারণার মামলা হয়।

সাদ মুসা গ্রুপ :১৯৮২ সালে পোশাক খাত দিয়ে ব্যবসা শুরু করে সাদ মুসা গ্রুপ। গত দুই দশকে তাদের উত্থান। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ মহসিন গড়ে তুলেছেন চট্টগ্রাম ফেব্রিক্স বোর্ড লিমিটেড, সাদ মুসা ফেব্রিক্স লিমিটেড, এমএ রহমান ডায়িং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, সাদ মুসা হোম টেক্সটাইল অ্যান্ড ক্লথিং লিমিটেডসহ প্রায় ১৫টি প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক কর্মকর্তারাই বলছেন, কিছু প্রতিষ্ঠান ভালো হলেও কয়েকটি নামসর্বস্ব। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্যই প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এভাবে বাড়িয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ।

ব্যাংকের টাকায় জমি কেনার হিড়িক :ঋণখেলাপিদের একটি বড় অংশ ব্যাংক থেকে নেওয়া টাকা বিনিয়োগ করেন জমিতে। বিএনপির আসলাম চৌধুরী, এসএ গ্রুপের সাহাবুদ্দিন, ওয়েস্টার্ন মেরিনের সাইফুল ইসলাম ও সাদ মুসা গ্রুপের এমডি মহসিন ঋণের টাকায় কিনেছেন জমি। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ১০০ একর জমিতে সাদ মুসা শিল্পপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। ১০০ বিঘা প্লটে একটি শিক্ষাপার্ক, ৪০ বিঘা জমিতে একটি হাসপাতাল, বসবাসের জন্য পরিকল্পিত গ্রাম, টেক্সটাইল চাহিদা পূরণে মিল এবং খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষি প্রকল্প করা হয়েছে। এসএ গ্রুপ ও ওয়েস্টার্ন মেরিন বিশাল বিলাসী করপোরেট অফিস করেছে নগরের আগ্রাবাদে। শিপইয়ার্ডের নামে জমিতে বিপুল বিনিয়োগ করেন আসলাম চৌধুরীও। রতনপুর স্টিলও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ নিয়ে নামে-বেনামে জমি কিনেছে সেই টাকায়।

বিনিয়োগ কোটায় বিভিন্ন দেশের ভিসা নিয়েছে দুই সহস্রাধিক বাংলাদেশী

জানুয়ারি ২৬, ২০২৩, বণিক বার্তা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগকারী হিসেবে অভিবাসন গ্রহণ করেছে অনেক বাংলাদেশী। বিনিয়োগ কোটার আওতায় দেশগুলোয় দীর্ঘমেয়াদে বসবাসের অনুমোদন নিচ্ছে তারা। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর আবেদন করছেন নাগরিকত্ব বা স্থায়ীভাবে বসবাসের (পিআর) সুযোগের জন্য।

বিনিয়োগ অভিবাসন-সংক্রান্ত ডাটাবেজ আইএমআই ডাটা সেন্টার নিয়মিতভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ কোটায় আবেদনকারীদের তথ্য সংগ্রহ ও তা প্রকাশ করছে। সেখানে বাংলাদেশীদের সম্পর্কে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, কভিড মহামারীর প্রাদুর্ভাবের আগ পর্যন্ত পাঁচ বছরে (২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল) এখান থেকে অনেকেই মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোয় বিনিয়োগকারী হিসেবে ভিসার আবেদন করেছে। আবার অ্যান্টিগা ও বারবুডা, সেইন্ট লুসিয়া এবং ভানুয়াতুর মতো ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশেও আবেদন হয়েছে বেশ কিছু। এমনকি অর্থনৈতিক দুর্বিপাকের মধ্যে থাকা ইউরোপীয় দেশ গ্রিসেও গোল্ডেন ভিসা ক্যাটাগরিতে আবেদনের তথ্য রয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এ আট দেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত প্রোগ্রামের আওতায় ভিসার আবেদন করেছে দেড় হাজারের বেশি বাংলাদেশী।

তবে আইএমআইয়ের তালিকাটি সম্পর্কে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিসংখ্যানটি অনেকটা রক্ষণশীল ও সীমিত পরিসরে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। দেশগুলোয় প্রকাশিত তথ্যের চেয়েও অনেক বেশি সংখ্যক বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য চালুকৃত গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করেছে। আবার তালিকায় উল্লিখিত আট দেশের বাইরেও পর্তুগাল, কানাডা ও সাইপ্রাসের মতো বেশ কয়েকটি দেশে গোল্ডেন এবং বিনিয়োগ ভিসার জন্য আবেদন করেছে অনেকে। সব মিলিয়ে শুধু কভিডের আগের পাঁচ বছরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদনকারী বাংলাদেশীর সংখ্যা অন্তত দুই সহস্রাধিক।

আইএমআইয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ কোটায় সবচেয়ে বেশি আবেদন হয়েছে ২০১৭ সালে। ওই সময়ে এ আট দেশে বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ ভিসার আবেদন জমা হয়েছে ৫৭৬টি। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা হয়েছে মালয়েশিয়ার এম২এইচ প্রোগ্রামের আওতায়। উল্লিখিত পাঁচ বছরে প্রোগ্রামটির আওতায় ভিসার আবেদন করেছে ১ হাজার ১৩০ বাংলাদেশী।

মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগকারী হিসেবে অভিবাসনের জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় প্রোগ্রাম হলো ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ বা এমএম২এইচ। এ প্রোগ্রামের আওতায় আবেদন করতে হলে আবেদনকারীকে লিকুইড অ্যাসেট বা তরল সম্পদ (নগদ অর্থ, ব্যাংকে জমা বা সহজে নগদায়নযোগ্য বিনিয়োগ) দেখাতে হয় কমপক্ষে ১৫ লাখ রিঙ্গিতের সমপরিমাণ। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী তা ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ (১ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত = ২৪ টাকা ৩৮ পয়সা)। এছাড়া মাসিক আয় দেখাতে হয় অন্তত ৪০ হাজার রিঙ্গিতের সমপরিমাণ (৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কিছু বেশি)। মূলত ধনাঢ্য বিদেশীদের মালয়েশিয়ায় অবস্থানের সুযোগ করে দিতে প্রোগ্রামটি চালু করা হয়েছে বলে দেশটির সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্যে উঠে এসেছে।

মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে এমএম২এইচ প্রোগ্রামের আওতায় ভিসা আবেদন সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ২০১৯ সালে দেশটিতে এ প্রোগ্রামের আওতায় অসংখ্য আবেদনকারী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এ সম্পর্কে কোনো তথ্য বা কারণ এখন পর্যন্ত দেশটি প্রকাশ করেনি। ২০২০ সালে প্রোগ্রামটি স্থগিত করা হয়, যা ২০২২ সালে আবার চালু করা হয়েছে।

দেশটির সরকার জানিয়েছে, এমএম২এইচ ভিসার আওতায় আবেদনকারীদের উৎস দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। ২০০২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে এ প্রোগ্রামের আওতায় ভিসার জন্য পাওয়া আবেদনের প্রায় ১০ শতাংশই এসেছিল বাংলাদেশীদের কাছ থেকে।

নিয়ম অনুযায়ী এমএম২এইচ ভিসা হাতে পাওয়ার পর মালয়েশিয়ার কোনো ব্যাংকে আবেদনকারীকে অন্তত ১০ লাখ রিঙ্গিত (প্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা) স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা রাখতে হয়। এছাড়া আবেদনকারীর প্রত্যেক পোষ্যের জন্য জমা রাখতে হয় অতিরিক্ত আরো ৫০ হাজার রিঙ্গিত (১২ লাখ টাকার কিছু বেশি)। মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত এ অর্থ উত্তোলন করা যায় না।

এমএম২এইচ ভিসায় মালয়েশিয়ায় অভিবাসন গ্রহণে সহায়তাকারী এজেন্সিগুলো জানিয়েছে, অভিবাসন গ্রহণ নয়, শুধু প্রপার্টি ক্রয়ের উদ্দেশ্য থেকেও চীনের মতো কোনো কোনো দেশ থেকে এ ভিসায় আবেদন করার নজির রয়েছে।

২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশীদের কাছে বিনিয়োগ কোটায় অভিবাসন গন্তব্য হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে ছিল অস্ট্রেলিয়া। এ সময় সেখানে বিনিয়োগকারী হিসেবে ভিসার আবেদন করেছে ৩১৭ বাংলাদেশী। দেশটিতে বিনিয়োগকারী হিসেবে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয় বিজনেস ইনোভেশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট (প্রভিশনাল) বা বিআইআইপি প্রোগ্রামের আওতায়। এ প্রোগ্রামের আওতায় আবার বিজনেস ইনোভেশন স্ট্রিম, ইনভেস্টর স্ট্রিম, সিগনিফিকেন্ট ইনভেস্টর স্ট্রিম, বিজনেস ইনোভেশন এক্সটেনশন স্ট্রিম, সিগনিফিকেন্ট ইনভেস্টর এক্সটেনশন স্ট্রিম, প্রিমিয়াম ইনভেস্টর স্ট্রিম ও অন্ট্রাপ্রেনিউর স্ট্রিম ইত্যাদি সাবক্যাটাগরি রয়েছে। এসব সাবক্যাটাগরির মধ্যে ইনভেস্টর বা বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত স্ট্রিমগুলোয় অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেতে বিনিয়োগ করতে হয় ২৫ লাখ থেকে দেড় কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৮ কোটি ৩৬ লাখ থেকে প্রায় ১১০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ থেকে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে বৈধভাবে বিনিয়োগের সুযোগ তেমন একটা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি বা নাগরিক অন্য দেশে নির্দিষ্ট অংকের বেশি বিনিয়োগ করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া তা করা যাবে না। আমরা যেটি দেখছি; যারা যাচ্ছে তারা কেউ অফিশিয়াল চ্যানেলে নিতে পারছে না। অফিশিয়ালি বাংলাদেশ থেকে এত টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এ অনুমতিটা দেবে না। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন তাকে এত বেশি টাকা দেশের বাইরে নিতে দেয়ার অনুমতি দেয় না। সুতরাং যারা এভাবে ভিসার অধিকারী হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই অবৈধ। তবে কেউ যদি বিদেশে উপার্জন করে বা তাদের পরিবারের কোনো সদস্য বিদেশ থেকে আয় করে টাকা দেয়; এমন দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে গড়ে এগুলো কালো টাকা। এ টাকাটা মূলত দুর্নীতির টাকা।’

যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারী হিসেবে ইবি-৫ ভিসা পাওয়ার অর্থ হলো দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি বা গ্রিন কার্ড পেয়ে যাওয়া। এজন্য দেশটির বেকারত্ব বেশি এমন কোনো এলাকায় ৮ লাখ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা) বিনিয়োগ করতে হয়। অথবা কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এমন এলাকায় সাড়ে ১০ লাখ ডলার (প্রায় ১১ কোটি টাকা) বিনিয়োগ অথবা অন্তত ১০ জন মার্কিন নাগরিকের সার্বক্ষণিক চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলে এ ভিসা পাওয়া যায়। আলোচিত পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ইবি-৫ ভিসার জন্য আবেদন করেছে ৩৩ বাংলাদেশী।

বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ক্যাটাগরি হলো ই২। এ ভিসা পেতে হলে ন্যূনতম দেড় লাখ ডলার (১ কোটি ২৯ লাখ টাকা) বিনিয়োগ করতে হয়। এ বিনিয়োগের অর্থ কখনোই তুলে নিতে পারবেন না বিনিয়োগকারীরা। পাঁচ বছরে এ প্রোগ্রামের আওতায় আবেদন করেছেন ১৬ বাংলাদেশী।

যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভিসা রয়েছে দুই ধরনের। এগুলো হলো টিয়ার ১ ইনভেস্টর ভিসা ও টিয়ার ১ অন্ট্রাপ্রেনিউর ভিসা। ব্রিটিশ অভিবাসন এজেন্সিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, টিয়ার ১ ইনভেস্টর ভিসা হলো যুক্তরাজ্যে সক্রিয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী অতিধনী ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত ভিসা প্রোগ্রাম। এ ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে অভিবাসনপ্রত্যাশীকে অন্তত ২০ লাখ পাউন্ড (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ২৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বেশি) যেকোনো মুহূর্তে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হিসেবে দেখাতে হয়। এ ভিসা গ্রহণকারীদের নিজ নিজ পোষ্যদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের সুযোগ রয়েছে। টিয়ার ১ অন্ট্রাপ্রেনিউর ভিসার আওতায় যুক্তরাজ্যে নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য উদ্যোক্তা হিসেবে বিনিয়োগ করতে হয় ২ লাখ পাউন্ড (আড়াই কোটি টাকার বেশি)। পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্যে টিয়ার ১ ইনভেস্টর ভিসায় আবেদনকারী বাংলাদেশীর সংখ্যা তিন। টিয়ার ১ অন্ট্রাপ্রেনিউর ভিসায় আবেদন করেছেন তিন বাংলাদেশী।

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের অ্যান্টিগা ও বারবুডায় বিনিয়োগের মাধ্যমে ভিসা পাওয়ার জন্য সিআইপি ভিসা (সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম) চালু হয় ২০১৩ সালে। এজন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হয়। এর একটি হলো দেশটির জাতীয় উন্নয়ন তহবিলে বিনিয়োগ। এজন্য অফেরতযোগ্য বিনিয়োগ বা অনুদান হিসেবে এ তহবিলে ২ লাখ ডলার (প্রায় ২ কোটি ৮ লাখ টাকা) জমা দিতে হয়। এছাড়া রিয়েল এস্টেট খাতে ৪ লাখ ডলার (৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার বেশি) মূল্যের প্রপার্টি ক্রয় অথবা যেকোনো ব্যবসায় ১৫ লাখ ডলার (প্রায় ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা) বিনিয়োগ করতে হয়। কভিডের আগের পাঁচ বছরে দেশটিতে এ কোটায় ভিসার জন্য আবেদন করেছেন ১১৮ বাংলাদেশী।

অনেকটা কাছাকাছি শর্তে ভিসা পাওয়া যায় ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের আরেক দেশ সেন্ট লুসিয়ায়। এক্ষেত্রে দেশটির জাতীয় উন্নয়ন তহবিলে প্রদেয় অনুদানের পরিমাণ ১ লাখ ডলার (প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ টাকা)। রিয়েল এস্টেট খাতে প্রপার্টি ক্রয়ের মাধ্যমে ভিসা পেতে দিতে হবে ২ লাখ ডলার (২ কোটি টাকার বেশি)। এছাড়া দেশটির দীর্ঘমেয়াদি সরকারি বন্ডে বড় অংকের বিনিয়োগের মাধ্যমেও এ কোটায় ভিসা পাওয়া যায়। আলোচিত সময়ে এখানে ভিসার জন্য আবেদন করেছেন আট বাংলাদেশী বিনিয়োগকারী।

ভানুয়াতুতে বিনিয়োগকারীদের ডিএসপি প্রোগ্রামের আওতায় পাঁচ বছরে ভিসার জন্য আবেদন করেছেন ১১ জন। একই সময়ের মধ্যে গ্রিসে গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করেছেন এক বাংলাদেশী।

শ্রমজীবি মানুষ

৪২ শতাংশ রিকশাচালক শ্রবণ সমস্যায় ভুগছেন: গবেষণা

০৮ নভেম্বর ২২, সমকাল

প্রতিনিয়ত বাড়ছে শব্দ দূষণ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে দিন দিন যা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ৪৩২ মিলিয়ন বা ৪৩ কোটি ২০ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ পেশাগত কারণে আর বাংলাদেশের এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন রিকশাচালকরা। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে প্রায় ৪২ ভাগ রিকশাচলকই এই শব্দ দূষণের শিকার। এরপরই ট্রাফিক পুলিশ ও লেগুনা চালকেরা।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইয়েন্সের ‘বাংলাদেশের রাজপথে শব্দদূষণ এবং শব্দদূষণের কারণে রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণ সমস্যা’ নিয়ে করা এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়াদের প্রতি চারজনে একজন কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪২ শতাংশই রিকশাচালক। এ ছাড়া প্রায় ৩১ ট্রাফিক পুলিশ, ২৪ শতাংশ সিএনজি চালক, ২৪ শতাংশ দোকানদার, ১৬ শতাংশ বাস, ১৫ শতাংশ প্রাইভেটকার এবং ১৩ শতাংশ মোটরসাইকেল। এ সব সমস্যায় ভোগাদের ৭ শতাংশের শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র (কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট) ব্যবহার জরুরি।

৬,৩০০ শ্রমিককে ছাঁটাই করল আকিজ জুট মিল

১৫ নভেম্বর ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশে চালু সর্ববৃহৎ পাটকল আকিজ জুট মিলের ছয় হাজার ৩০০ কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, বাইরের দেশের অর্ডার না থাকা এবং দেশের বাজারে পাটের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কারখানাটি পুরোপুরি সচল রাখা যাচ্ছে না। এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কারখানার অধিকাংশ শ্রমিক। আকিজ জুট মিলের নির্বাহী পরিচালক শেখ আব্দুল হাকিম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এই জুট মিলে তিন শিফটে যশোর, খুলনা ও নড়াইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। প্রতিদিন তাদের ২৩টি বাসের মাধ্যমে কারখানায় আনা-নেওয়া করা হয়।

মিলটির সিবিএ সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে গুণগত মানের পাট পাওয়া যাচ্ছে না এবং পাটের দামও অনেক বেশি।

‘এ কারণে উৎপাদন সীমিত করেছে কর্তৃপক্ষ। মিলে প্রায় ছয় হাজার ৩০০ বদলি শ্রমিক রয়েছে। মূলত তাদেরই কাজে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। বাকি ৭০০ স্থায়ী কর্মী দিয়ে মিলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাছাড়া বৈদেশিক অর্ডারও কমে গেছে,’ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তিনি।

তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড

২৪ নভেম্বর ২২, সমকাল

সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হওয়ার ঘটনায় করা মামলার কোনো কূল-কিনারা হয়নি গত ১০ বছরেও। সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য করা ৪৬ তারিখের মধ্যে মাত্র ৯ দিন সাক্ষী হাজির করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আর অভিযোগপত্রে উল্লিখিত ১০৪ জনের মধ্যে ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বিচারিক প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতাকে ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মালিকদের পক্ষে রাষ্ট্রের দায়সারা মনোভাবকে দায়ী মনে করেন সংশ্নিষ্টরা। শাস্তির বদলে তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেনকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন মৎসজীবী লীগের নেতা বানিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ শ্রমিক পুড়ে মারা যান। আগুন থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে আহত হন অন্তত ৫৫০ জন। এদের মধ্যে পরে আরও চার জন্য শারীরিক অসুস্থতায় মারা যান। সরকার ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। ওই দুর্ঘটনার পরের বছর ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ওই ভবনে পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৭৫ শ্রমিক নিহত হন। পরপর বড় দুটি দুর্ঘটনার কারণে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে চাপে পড়ে পোশাক খাত। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা জিএসপি স্থগিত করা হয়। বিদেশি ব্র্যান্ড ক্রেতা এবং আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও চাপ আসে। আইনের আওতায় দায়ীদের বিচারের দাবি তোলে বিভিন্ন শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠন।

তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে দুর্ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রতিটি অনুসন্ধানেই মালিক-কর্তৃপক্ষের শ্রমিক নিরাপত্তা বিষয়ে সার্বিক অবহেলাকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে মালিকসহ সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। একটি মামলা করেন এক নিখোঁজ শ্রমিকের ভাই। অপর মামলাটি করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। মামলার পর সিএমএম কোর্টে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। সাক্ষী করা হয় ১০৪ জনকে। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ওই বছরের ১ অক্টোবর। গত সাত বছরে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সর্বমোট ৪৬টি তারিখ ধার্য হয়। এর মধ্যে মাত্র ৯ দিন রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পেরেছে। অভিযোগপত্রে উল্লিখিত ১০৪ জনের মধ্যে মাত্র ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর ছিল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ। এ দিনও রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

বেতন বৃদ্ধির দাবি: হামলার প্রতিবাদে চৈতি গার্মেন্টসের শ্রমিকের বিক্ষোভ

১৭ ডিসেম্বর ২০২২, আজকের পত্রিকা

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত তিন শ্রমিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর দক্ষিণখানে চৈতি গার্মেন্টসের কয়েক শতাধিক শ্রমিক বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দক্ষিণখান থানাধীন চালাবনের চৈতি গার্মেন্টস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উত্তরার মহাসড়ক অবরোধের উদ্দেশ্যে আজমপুর রেলগেট এলাকার দিকে যায়। পরে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয়।

শুরুতে শ্রমিকেরা আজমপুর টু উত্তরখান সড়ক অবরোধ করেন। সেই সঙ্গে গার্মেন্টসটির সামনে বিক্ষোভ দেখান। ২০-২৫ মিনিট অবরোধের পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের উদ্দেশ্যে উত্তরার আজমপুরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আজমপুর রেলগেট এলাকায় পুলিশি বাধায় বেলা ১১টার দিকে তা পণ্ড হয়ে যায়। পরে শ্রমিকেরা চলে যান।

বকেয়া মজুরির দাবিতে সিলেটে চা শ্রমিকদের মশাল মিছিল

ডিসেম্বর ২০, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ৩ দাবিতে সিলেটে চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের মশাল মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে সিলেটে মশাল মিছিল করেছে চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা সদরের মালনীছড়া চা বাগান থেকে মশাল মিছিল শুরু হয়ে লাক্কাতুরা-চৌকিদেখি হয়ে রেস্ট ক্যাম্প বাজারে গিয়ে শেষ হয়।

চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সংগঠক অধীর বাউরীর সভাপতিত্বে ও রানা বাউরীর পরিচালনায় মশাল মিছিল শেষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দুই বছর পর পর চা শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চুক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু মালিকরা এই চুক্তি নিয়ে তালবাহানা করে। ২০২১-২২ সালের চুক্তিও এখনো হয়নি।’

এর আগে ৩০০ টাকা মজুরি, চুক্তি সম্পাদনসহ বিভিন্ন দাবিতে গত আগস্ট মাসে টানা ১৯ দিন ধর্মঘট করেন চা শ্রমিকরা। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা ১৭০ টাকা দৈনিক মজুরি মানতে বাধ্য হন।

এ বর্ধিত বেতন ২০২১-২২ সালের জন্য। এতে শ্রমিকরা গত ১৯ মাসের বর্ধিত টাকা (দৈনিক ৫০টাকা) পাওনা আছেন মালিকদের কাছে।

ইপিজেডে আলাদা শ্রম আইনের কারণে বঞ্চনা বেশি

ডিসেম্বর ২১, ২০২২, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) এলাকাগুলোয় আলাদা আইনের কারণে শ্রমিকরা বেশি বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। ২০১৯ সালে করা সরকারের এ আইনে হওয়া মামলার বিচার কাজের জন্য আলাদা শ্রম আদালতসহ ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা থাকলেও গত প্রায় চার বছরেও সেটি করা হয়নি। ফলে এ আইনে হওয়া মামলাগুলোর বিচারকাজ থেমে আছে। এতে শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টারের কনফারেন্স রুমে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ‘শ্রমিকদের শ্রমমান পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক গবেষণার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরিন আক্তার। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘কর্মজীবী নারীর’ গবেষণা কর্মকর্তা ফারহানা জুবাইদা ঊর্মি।

গবেষণার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কারখানা কর্তৃপক্ষের নানা রকম মানসিক চাপের কারণে নারী শ্রমিকরা সংগঠন, অধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং নেতৃত্বে আসার সাহস পান না। অন্য কমিটির তুলনায় সেফটি কমিটি এবং অ্যান্টি-হ্যারাসমেন্ট কমিটিতে নারী শ্রমিকদের উপস্থিতি বেশি হলেও কোনো রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। ইপিজেড নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করলেও অধিকারের বিষয়ে সচেতন করেনি। নারীরা উপার্জন করলেও পরিবারের আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

শ্রমিকের মজুরিই শুধু বাড়েনি

২৮ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

সকাল ১০টা। বাউফলের কালাইয়া মোকামে ধানের বস্তা মাথায় নিয়ে মই বেয়ে পাইকারের ট্রাকে তুলছিলেন সেলিম চৌকিদারসহ (৪২) অনেক শ্রমিক। আরেক দল মোকামের উত্তর ও পূর্বপাশে নদীর তীরে ভেড়ানো কার্গোতে ধানের বস্তা তুলছিলেন। শীতের সকালেও প্রত্যেকের শরীর থেকে ঘাম ঝরে পড়ছিল। অদূরে দাসপাড়া সেতুর ওপর কাজের সন্ধানে অপেক্ষা করছিলেন আরও অর্ধশতাধিক শ্রমিক। কালাইয়া মোকামে এমন কর্মব্যস্ততা দেখা যায় প্রতি সোমবার।

ধান কেনাবেচায় দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় মোকাম কালাইয়া। সোমবারের হাটে চার থেকে পাঁচ হাজার মণ ধান কেনাবেচা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মিল মালিকরা আসেন ধান কিনতে। এ মোকামকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে শত শত শ্রমিকের। প্রতি হাটেই অন্তত ২০ জন শ্রমিকের নতুন করে কর্মসংস্থান হয়। তবে তাঁদের মজুরি থমকে আছে একটি স্থানে। ধান-চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও তাঁদের মজুরি আর বাড়ে না।

শ্রমিক সেলিম চৌকিদার বলছিলেন, ‘একদিন কাজ কইররা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরি পাই। এইয়া দিয়া মোর সংসার চালাই। সব জিনিসের দাম বাড়ে, মোগো শ্রমের দাম বাড়ে না।’

স্থানীয় দাসপাড়া গ্রামের হৃদয় ঘরামী (৪৫) জানান, ভোরে সাইকেল চালিয়ে কালাইয়া বাজারে ধানের গোলায় আসেন তিনি। পাইকারের ধান মেপে বস্তা ভরে সেলাই করে মাথায় নিয়ে ট্রাক বা কার্গোতে তুলে দেন। এতে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি পান। এ কাজের জন্য সর্দারের মাধ্যমে শ্রমিকদের চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। সর্দার জাহাঙ্গীর জানান, ধানের মৌসুমের জন্য বাজারে ১০ জন শ্রমিক সর্দার আছেন। তাঁদের অধীন প্রায় ২০০ শ্রমিক কাজ করেন। বস্তাপ্রতি ২৮ টাকা মজুরি দেন আড়তদার। তবে তেল, চাল কিনে আর হাতে কিছু থাকে না।

জানে আলম বলছিলেন, ‘বউ, পোলা, মাইয়ারে পোলট্রি মুরগিও খাওয়াইতে পারি না। এহন ধানের সিজন, কামাই করি খাই। সিজন চইল্লা গেলে কী করমু, হেই চিন্তায় আছি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিনমজুরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বেকারত্ব ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে তাঁরা দিশেহারা। ফলে এ ধরনের জায়গাগুলোয় শ্রমিকের আনাগোনা বেড়েছে। কাজের সুযোগ হারানোর ভয়ে মজুরি নিয়ে তাঁরা কথা বলার সাহস পান না।

আশ্রাব সর্দার নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘কার্গো থেকে মোরা ১০ বছর সিমেন্ট খালাস করি। সিমেন্টের দাম হুনি বাড়ে, মোগো দাম বস্তাপ্রতি পাঁচ টাকাই দেয়, আর বাড়ে না।’ আশ্রাবের সঙ্গে সুর মিলিয়ে রফিক, খালেক ও জলিল আকন জানান, ঘামের সঙ্গে শরীরে কাদামাটি লেগে থাকে। সাবান দিয়ে গোসল করবেন, তাও ৬৫ টাকা। একজন আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘গরিবের কেউ নাই, আল্লাহ আছে।’

চার বছরে কৃষি শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে ৩৬.৫৬%

জানুয়ারি ০১, ২০২৩, বণিক বার্তা

কভিড প্রাদুর্ভাবের আগেও দেশের কৃষি শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরির বিপরীতে ক্রয়ক্ষমতা ছিল বাড়তির দিকে। কিন্তু মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ক্রমেই ক্রয়ক্ষমতা কমছে মজুরিভিত্তিক কৃষি শ্রমিকের। ২০১৯ সালেও একজন কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি দিয়ে দৈনিক ১৩ দশমিক ৪ কেজি চাল কেনা যেত। বর্তমানে সে সক্ষমতা নেমে এসেছে সাড়ে আট কেজিতে। এ অনুযায়ী গত চার বছরে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কৃষি শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে ৩৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইরি) যৌথ এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অব রাইস প্রাইস হাইক ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কৃষি মজুরির বিপরীতে শ্রমিকদের ক্রয়ক্ষমতা এখন ২০১৫ সালের পর সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। ২০১৫ সালে একজন শ্রমিক তার মজুরি দিয়ে দৈনিক ১০ দশমিক ১ কেজি চাল কিনতে পারতেন। এরপর ২০১৬ সালে কৃষি শ্রমিকের গড় সক্ষমতা ছিল ১০ দশমিক ৬ কেজি। ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৪ কেজিতে। কিন্তু এর পর থেকেই মজুরিভিত্তিক কৃষি শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। তা ২০২০ সালে ৯ দশমিক ১ কেজি, ২০২১ সালে ৮ দশমিক ৬ ও ২০২২ সালে ৮ দশমিক ৫ কেজিতে নেমে আসে।

দেশে খানাপ্রতি খরচের বড় একটি অংশই ব্যয় হয় চাল কেনায়। ব্রির আগের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে খানাপ্রতি বার্ষিক ব্যয়ের প্রায় ৩৪ শতাংশ যায় খাদ্যে। এ খাদ্য ব্যয়ের ৪১ শতাংশের বেশি খরচ হয় চাল কেনায়। চালের বাজারদর ক্রয়ক্ষমতার অবনমনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।

দেশে এখন বোরো মৌসুমে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৫০০ টাকা। আমন মৌসুমে তা ৪৪০ টাকা। আমন ও বোরো মৌসুমের কৃষি মজুরিকে সমন্বয় করে কৃষি শ্রমিকের দৈনিক গড় মজুরি ৪৭০ টাকা হিসাব করেছেন ব্রির গবেষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, দেশে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে মূলত কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের পর। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আরো গতিশীল ওঠে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে দেশের বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ। গোটা এশিয়ায় চালের মূল্যবৃদ্ধির হার এখন বাংলাদেশেই সর্বোচ্চ। প্রধান খাদ্যশস্যটির দামের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এখন মজুরিভিত্তিক কৃষি শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।

মানসম্মত জীবনযাপনে যা দরকার- তার চেয়ে অর্ধেক আয় করেন পোশাক শ্রমিকরা: সানেম

১ জানুয়ারি ২০২৩, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে যতটা প্রয়োজন– তার চেয়ে অর্ধেক আয় করেন দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা।  ২০২২ সালের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে তারা মাসে গড়ে ৯ হাজার ৯৮৪ টাকা আয় করেছেন।

এসময় তাদের ‘লিভিং ওয়েজ’ বা মোটামুটি মানসম্মত জীবনযাপনের জন্য যে আয় দরকার তা বসবাসের এলাকাভেদে ছিল- ১৯ থেকে ২৬ হাজার টাকা।  অর্থাৎ, প্রকৃত আয় ও ন্যুনতম চাহিদা পূরণে দরকারি অর্থচাহিদার মধ্যে পার্থক্য ছিল ৫১-৬০ শতাংশ। 

এসব তথ্য উঠে এসেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং (সানেম) এর এক প্রতিবেদনে। ‘লিভিং ওয়েজ, লিভিং প্লানেট: সেপ্টেম্বর ২০২২ আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আজ রোববার (১ জানুয়ারি) প্রকাশ করা হয়। 

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক অলাভজঙ্ক সংস্থা- মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচ্যুনিটিস- এর সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের এক গবেষণা প্রকল্পে কাজ করছে সানেম। তারই অংশ হিসেবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘আয়ের এই ঘাটতি পুরণে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আরো বেশি করে ওভারটাইম ও এবং অতিরিক্ত সময় (বৈধ কর্মঘণ্টার চেয়েও বেশি সময়) কাজের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে’। যেমন ২০২২ সালের জুনে শ্রমিকরা গড়ে ২৯০ ঘণ্টা কাজ করার কথা জানান। 

গবেষণায় বাংলাদেশের প্রধান পাঁচটি শিল্পাঞ্চল– ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের ১,৩০০ গার্মেন্টস শ্রমিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়ারিজ’ প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের এপ্রিল থেকেই তাদের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে।

২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১০৩৪ শ্রমিকের মৃত্যু

জানুয়ারি ২, ২০২৩, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১০৩৪ জন শ্রমিক নিহত এবং ১০৩৭ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৩৫ জন শ্রমিক নিহত এবং ১৫৫ জন আহত হন।

বিভিন্ন সেক্টরে ১৯৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ১১৫টি শ্রমিক অসন্তোষ ঘটে তৈরি পোশাক খাতে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে ‘বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্র ভিত্তিক বিলস জরিপ-২০২২’-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। জরিপে দুর্ঘটনা, নির্যাতন, শ্রম অসন্তোষ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই জরিপ প্রকাশ করা হয় সোমবার (২ জানুয়ারি)।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১০৩৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়, এরমধ্যে ১০২৭ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী শ্রমিক। খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ৪৯৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় নির্মাণ খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কৃষি খাতে। এছাড়া দিনমজুর ৪৬ জন, কনটেইনার ডিপোতে ৪৪, মৎস্য শ্রমিক ৪৩ জন, ইলেক্ট্রিক শ্রমিক ২২ জন, নৌ-পরিবহন খাতে ১৫ জন, হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিক ১২ জন, ইটভাটা শ্রমিক ১০ জন, জাহাজ ভাঙা শিল্প শ্রমিক ৭ জন, কেমিকেল ফ্যাক্টরি শ্রমিক ৬ জন এবং অন্যান্য খাতে ১০০ জন শ্রমিক নিহত হন।

২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১০৩৭ জন শ্রমিক আহত হন, এরমধ্যে ৯৬৪ জন পুরুষ এবং ৭৩ জন নারী শ্রমিক। মৎস্য খাতে সর্বোচ্চ ৫০৩ জন শ্রমিক আহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কনটেইনার ডিপোতে ১২৫ জন আহত হন। তৃতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক খাতে ৯০ জন শ্রমিক আহত হন। এছাড়া পরিবহন খাতে ৮৭ জন, নির্মাণ খাতে ৮৬ জন, নৌ পরিবহন খাতে ২৫, জাহাজ ভাঙা শিল্পে ২৩ জন, উৎপাদন শিল্পে ১৫ জন, কৃষি শিল্পে ১৫ জন, মেডিসিন ফ্যাক্টরিতে ১২ জন, দিনমজুর ৯ জন, স্টিল মিলে ৭ জন এবং অন্যান্য খাতে ৪০ জন শ্রমিক আহত হন।

সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, বজ্রপাত, অগ্নিকাণ্ড, সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলার ডুবি, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, মাথায় কিছু পড়া, বিষাক্ত গ্যাস, নৌ দুর্ঘটনা, দেয়াল/ছাদ ধসে পড়া, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ইত্যাদি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১০৫৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং আহত হন ৫৯৪ জন শ্রমিক।

জরিপ অনুযায়ী ২০২২ সালে কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার পথে ৩৬ জন শ্রমিক নিহত এবং ১২২ জন শ্রমিক আহত হন। নিহত শ্রমিকদের মধ্যে ১৩ জন নারী শ্রমিক এবং আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৫৩ জন নারী শ্রমিক ছিলেন। ২০২১ সালে কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার পথে ৯১ জন শ্রমিক নিহত এবং ১১৪ জন শ্রমিক আহত হন।

সংবাদপত্র ভিত্তিক জরিপ অনুযায়ী, ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হন ৩৩৮ জন শ্রমিক। এরমধ্যে ২৯৪ জন পুরুষ এবং ৪৪ জন নারী শ্রমিক। ৩৩৮ জনের মধ্যে ১৩৫ জন নিহত, ১৫৫ জন আহত, ৩৪ জন নিখোঁজ, ১ জনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয় এবং অপহৃত ১৩ জনকে পরবর্তীতে উদ্ধার করে পুলিশ। অপহৃতদের মধ্যে ১০জন মৎস্য শ্রমিক এবং তিনজন ইটভাটা শ্রমিক ছিলেন।

সবচেয়ে বেশি ৯০ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন পরিবহন সেক্টরে, যার মধ্যে ৬৪ জন নিহত, ২৬ জন আহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৬ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন মৎস্য খাতে, যার মধ্যে ৪ জন নিহত, ২২ জন আহত, ৩০ জন নিখোঁজ এবং ১০ জন শ্রমিককে উদ্ধার করে পুলিশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ জন গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ১২ জন নিহত, ২০ জন আহত, ১ জনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া ৩৩ জন গণমাধ্যমকর্মী নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে একজন নিহত এবং ৩২ জন আহত হন। ২৯ জন নিরাপত্তাকর্মী নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ১০ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হন। কৃষি খাতে ২৫জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ১৮ জন নিহত, ৬ জন আহত এবং একজন নিখোঁজ হন।

কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে—শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, ছুরিকাঘাত, খুন, রহস্যজনক মৃত্যু, অপহরণ, মারধর ইত্যাদি। ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হন ২৮৬ জন শ্রমিক। এরমধ্যে ২৩২ জন পুরুষ এবং ৫৪ জন নারী শ্রমিক।

জরিপ অনুযায়ী, ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রের বাইরে নির্যাতনের শিকার হন ৩৩০ জন শ্রমিক। এরমধ্যে ২১৩ জন নিহত, ৭৪ জন আহত, ১ জন নিখোঁজ, ৪২ জনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়। ৩৩০ জনের মধ্যে ২৫২ জন পুরুষ এবং ৭৮ জন নারী শ্রমিক। কর্মক্ষেত্রের বাইরে নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে—শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ছুরিকাঘাত, খুন, রহস্যজনক মৃত্যু, অপহরণ, মারধর ইত্যাদি। ২০২১ সালে ৩০০ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রের বাইরে নির্যাতনের শিকার হন।

২০২২ সালে বিভিন্ন সেক্টরে সব মিলিয়ে ১৯৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। জরিপ অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৮৯টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে বকেয়া বেতনের দাবিতে। এছাড়া দাবি আদায়ে ৪০টি, বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৯টি, বেতন বাড়ানোর দাবিতে ১১টি, লে-অফের কারণে ৭টি, বোনাসের দাবিতে ৬টি এবং অন্যান্য দাবিতে ২৪টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। আন্দোলন করতে গিয়ে এ সময় ১০ জন শ্রমিক আহত হন। আহতদের মধ্যে ৭ পুরুষ এবং ৩ জন নারী শ্রমিক ছিলেন। আহতদের মধ্যে সবাই টেক্সটাইল মিলের শ্রমিক ছিলেন।

২০২১ সালে বিভিন্ন সেক্টরে সব মিলিয়ে ৪৩১টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ১৭২টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে তৈরি পোশাক খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে পরিবহন খাতে। এছাড়া ২০২০ সালে বিভিন্ন সেক্টরে সবমিলিয়ে ৫৯৩টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে।

এলাকাভেদে নারী গার্মেন্টস কর্মীদের বেতনে ৬০ শতাংশ ফারাক: সানেমের সমীক্ষা

জানুয়ারি ২, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

দেশে অঞ্চলভেদে নারী পোশাক শ্রমিকদের মজুরিতে ৫১ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ ফারাক রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের পাঁচটি প্রধান শিল্প এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে পরিচালিত এক সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এই সমীক্ষা চালিয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, অঞ্চলভেদে পুরুষ পোশাক শ্রমিকদের মজুরির ব্যবধান ৪৫ শতাংশ থেকে ৫৪ শতাংশের মধ্যে।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা শহর, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারে ১ হাজার ৩০০ জন নির্বাচিত গার্মেন্টস শ্রমিককে নিয়ে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়েছে। এতে সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা মাইক্রোফাইন্যান্স অপারচুনিটিজ (এমএফও)।

সানেম জানিয়েছে, সমীক্ষার উত্তরদাতাদের তিন-চতুর্থাংশই নারী, যা মোটামুটিভাবে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমশক্তির গঠনকে প্রতিনিধিত্ব করে।

বর্তমানে দেশজুড়ে অঞ্চলভেদে নারীদের মজুরির ব্যবধান ৯ হাজার ৪০৮ টাকা এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৭ হাজার ৯৪৭ টাকা থেকে ১৪ হাজার ৪০০ টাকা।

সমীক্ষায় দেখা যায়, এপ্রিল-জুনের মধ্যে ওভারটাইম বাদে শ্রমিকদের মাসিক গড় আয় ছিল ৯ হাজার ৯৮৪ টাকা। এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের বেতন ছিল যথাক্রমে ৯ হাজার ৬৬৯ টাকা ও ১০ হাজার ৯২৮ টাকা।

মানসম্মত জীবনযাপনের জন্য একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের কত টাকা মজুরি হওয়া উচিত তারও একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে সানেমের সমীক্ষা প্রতিবেদনে। তারা বলেছে, ঢাকার জন্য মজুরি ১৯ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২২ হাজার ৯০০ টাকা, চট্টগ্রামের জন্য ২১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ২৬ হাজার টাকা এবং গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের জন্য ১৯ হাজার ২০০ থেকে ২২ হাজার ৯০০ টাকা।

জীবনমান বজায় রেখে খাদ্য, পানি, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, পোশাক এবং অপ্রত্যাশিত ব্যয় মেটানোর জন্য ন্যূনতম এই পরিমাণ মজুরি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আওয়ামী বিলিয়নেয়ার বানানোর কারখানা

নভেম্বর ০৩, ২০২২, বণিক বার্তা

‘বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন বিল’ পাসের সময় বিরোধী সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও গণফোরামের একাধিক সদস্য অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আওয়ামী বিলিয়নেয়ার বানানোর কারখানায় পরিণত হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের ঘোষণা দিয়ে সরকার ঘরে ঘরে লোডশোডিং পৌঁছে দিয়েছে। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দায়মুক্তির এ বিধানের কারণেই মানুষ সুবিধা ভোগ করছে।

গতকাল সংসদের বৈঠকে ‘বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজসম্পদ করপোরেশন বিল-২০২২’ পাসের জন্য উত্থাপন করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। পরে সংসদে স্থিরিকৃত আকারে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। এর আগে বিলটির ওপর দেয়া সংশোধনী এবং যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পিকার।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার জন্য নতুন আইন করতে বিলটি উত্থাপন করে প্রতিমন্ত্রী জানান, সামরিক আমলে প্রণীত এ-সংক্রান্ত আইন বাতিলের জন্য নতুন এ আইন করা হচ্ছে।

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, বিদ্যুৎ খাতকে আওয়ামী বিলিয়নেয়ার তৈরির কারখানা করা হয়েছে। কেন বিদ্যুতের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে? বড় বড় ট্রান্সমিশন লাইন, এসব কারখানা কাদের জন্য দেয়া হয়েছে? এসব রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কাকে দেয়া হয়েছে?

এগিয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প পিছিয়ে সঞ্চালন

১০ নভেম্বর ২২, সমকাল

এক লাখ কোটি টাকার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের ১২শ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এই ইউনিটটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা। ১২শ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটটির নির্মাণকাজ ২০২৫ সালে শেষ হবে। তবে এসব কাজ এগিয়ে চললেও বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ পিছিয়ে রয়েছে। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, কেন্দ্র প্রস্তুত থাকলেও সঞ্চালন লাইনের কারণে সময়মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু নাও হতে পারে।

আট ভাগে নির্মাণাধীন সঞ্চালন প্রকল্পের একটি অংশের নির্মাণকাজের অগ্রগতি মাত্র ২ শতাংশ। ভারত থেকে ঋণের অর্থ ছাড় ও ঠিকাদার নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণে দেরি হচ্ছে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে পিজিসিবি।

২০৫১ সাল পর্যন্ত টানতে হবে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা!

৭ নভেম্বর ২০২২, শেয়ার বিজ

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। এ সময় তারা বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশকিছু প্রশ্ন করে। সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে শেয়ার বিজ। তা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্ব

ইসমাইল আলী: বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নিয়মিতই ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। যদিও এসব কেন্দ্রের বড় অংশই বসে থাকছে। এতে বিদ্যুৎ খাতের বোঝা হয়ে উঠেছে ক্যাপাসিটি চার্জ। তবে এ চার্জ থেকে সহজেই মুক্তি পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বেসরকারি খাতে নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি না দিলেও আরও ২৯ বছর টানতে হবে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা।

আইএমএফের এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল গত ২ নভেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির সঙ্গে বৈঠকে করে। এ সময় আইএমএফ প্রতিনিধিদলের প্রশ্ন ছিলÑএখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে, সেটি ২০৩০ সালে শেষ হবে কিনা? তখন পিডিবি জানায়, ‘সেটি সম্ভব নয়, কারণ নতুন নতুন বেশকিছু আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) আসছে। তাদেরও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। এখন পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে, কবে নাগাদ ক্যাপাসিটি চার্জ শেষ করা যাবে।’

আইএমএফের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে পাইপলাইনে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে শেয়ার বিজ। এতে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে ৪১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পাইপলাইনে আছে। এছাড়া দেশীয় ও বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে আরও ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ১৭টি কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে। এসব কেন্দ্র ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। ফলে ক্যাপাসিটি চার্জ টানতে হবে ২০৫১ সাল পর্যন্ত। আর চলমান কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ শেষ হবে ২০৪৭ সালে।

পাইপলাইনে থাকা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ ২৫ বছর। এ তালিকায় রয়েছে ভারতের আদানি, দেশীয় এস আলম, ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগের রামপালসহ মোট সাতটি কেন্দ্র। গ্যাস বা এলএনজিভিত্তিক কেন্দ্রের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২২ বছর। এ তালিকায় আছে ভারতের রিলায়েন্স, দেশীয় সামিট, ইউনাইটেডসহ আটটি কেন্দ্র। এর মধ্যে দুটি কেন্দ্র দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক তথা এলএনজি/ডিজেলচালিত। আর ফার্নেস অয়েলচালিত দুটি কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোর মেয়াদ ১৫ বছর। এছাড়া বেশকিছু সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র পাইপলাইনে আছে। তবে এগুলোর জন্য কোনো ধরনের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে না।

রেন্টাল-আইপিপির বিদ্যুৎ কিনে বিল দিতে পারছে না পিডিবি!

১৫ নভেম্বর ২০২২, শেয়ার বিজ

বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় অর্ধেক আসে বেসরকারি খাতের আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) ও রেন্টাল কেন্দ্রগুলো থেকে। উচ্চ মূল্যে এ বিদ্যুৎ কিনলেও বিক্রি করতে হয় অনেক দামে। এতে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। অথচ অর্থ মন্ত্রণালয় ভর্তুকি ছাড় বন্ধ রেখেছে। এতে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি।

রেন্টাল ও আইপিপির পাশাপাশি সরকারি অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিলও বকেয়া পড়েছে। সব মিলিয়ে পাঁচ মাসে (মে-সেপ্টেম্বর) পিডিবির বকেয়া বিল জমেছে ৩৩ হাজার ৩৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকলে সংস্থাটির পক্ষে বিদ্যুৎ উৎপাদন চালিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পিডিবির তথ্যমতে, চলতি বছর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাপাসিটি চার্জ এবং অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় (ভিওএমপি) বাবদ বকেয়া পড়েছে আট হাজার ৮১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আর জ্বালানি বিল বকেয়া পড়েছে ২৪ হাজার ৫১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের বিল বকেয়া ১৯ হাজার ৩৩৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, কয়লার বিল তিন হাজার ১৩৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা, গ্যাস বিল এক হাজার ৮৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং সৌর বিদ্যুতের বিল ১৬০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

গ্যাস–বিদ্যুতের দাম বাড়ানো–কমানোর ক্ষমতা গেল সরকারের হাতে

০১ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

বিশেষ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা নিজের কাছে নিল সরকার। এ জন্য ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন), অধ্যাদেশ, ২০২২’ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার এটি জারি করা হয়। এর আগে গত ২৮ নভেম্বর অধ্যাদেশের খসড়াটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করেছেন।

আইনের মূল সংশোধনে বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসবের উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।

বসিয়ে রেখেই ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে ২৫৩ কোটি ডলার

৬ ডিসেম্বর ২০২২, শেয়ার বিজ

২০২০ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম ছিল দুই দশমিক শূন্য তিন ডলার। পরের মাস থেকে তা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। গত বছর জানুয়ারিতে তা ২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর এলএনজির দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়। গত আগস্টে তা ৫৪ দশমিক ১৬ ডলারে ওঠে। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে বিদ্যুৎ খাতে কমিয়ে দেয়া হয় গ্যাস সরবরাহ।

এর প্রভাবে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এর মধ্যেই আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসছে বেসরকারি খাতে এলএনজিচালিত ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। তাই এলএনজি না পাওয়া গেলে কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তবে বসে থাকলেও ২২ বছর ধরে এ কেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে।

বাংলাদেশ এনার্জি পাথওয়ে নামক এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসব তথ্য তুলে ধরেছে। তাদের তথ্যমতে, দেশে ২০টি এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে নির্মাণ করা হচ্ছে ছয়টি কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা তিন হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট। এলএনজিচালিত কেন্দ্রগুলোয় কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে প্রায় দুই দশমিক ৫৩ বিলিয়ন (২৫৩ কোটি) ডলার। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের পরিমাণও বাড়বে।

বর্তমানে পাইপলাইনে থাকা এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। এর মধ্যে ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপ নির্মাণ করছে ৭৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি কেন্দ্র। নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে নির্মাণাধীন এ কেন্দ্রটি আগামী বছর উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এ কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ন্যূনতম ৪৮৭ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার। ওই এলাকায় ৬০০ মেগাওয়াটের এলএনজিচালিত আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে ইউনিক গ্রুপ। এর ক্যাপাসিটি চার্জ ৩৯৭ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার। শিগগিরই এটির উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে।

মেঘনাঘাটে সামিট নির্মাণ করছে ৫৯০ মেগাওয়াটের ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এলএনজি অথবা ডিজেলচালিত এ কেন্দ্রটি আগামী বছর উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এর ক্যাপাসিটি চার্জ ন্যূনতম ৩৯৫ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন ডলার। একই এলাকায় ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরেকটি এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে মালয়েশিয়াভিত্তিক চীনা কোম্পানি এরদা পাওয়ার হোল্ডিংস। এটি ২০২৫ সালে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ৪০৪ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে কনফিডেন্স গ্রুপ। ২০২৭ সালে এ কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ৪৪৯ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলার। আর আনোয়ারায় ৫৯০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে ইউনাইটেড গ্রুপ। ২০২৬ সালে এ কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ৩৯৭ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার।

ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণে আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি

ডিসেম্বর ১৫, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ। আদানি গ্রুপের এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ বিষয়ক ১৬৩ পৃষ্ঠার ‘গোপন চুক্তি’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

গত ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনটি মূলত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। এর একটি বড় অংশজুড়ে আছে আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক ব্যবসা, যার একটি গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্প। ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ রপ্তানি হবে বাংলাদেশে।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের জুনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করেন।

নরেন্দ্র মোদির এই সফরের পর ভারতের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ গৌতম আদানির সঙ্গে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে গোড্ডায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করে।

ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে বলছে, এই বিদ্যুৎ বিষয়ক চুক্তিটি প্রথমে বাংলাদেশ ও ভারতের ‘উভয়ের জন্য লাভজনক’ বলে মনে হলেও আসলে তা বাংলাদেশের জন্য ‘খুবই কম লাভজনক’।

প্রতিবেদন বলছে, এটি ছিল নরেন্দ্র মোদির জন্য ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিকে শক্তিশালী করার ও ভারতীয় ব্যবসার প্রচারের একটি সুযোগ।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রবেশের সুবিধা’ দিতে বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে হওয়া ১৬৩ পৃষ্ঠার ‘গোপন চুক্তিপত্রে’র কপি পেয়ে তা ৩ জন বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পর্যালোচনা করানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

চুক্তি পর্যালোচনা করে ওয়াশিংটন পোস্টকে সিডনিভিত্তিক জ্বালানি বিশ্লেষক টিম বাকলি জানিয়েছেন, গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার পর কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও আদানিকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বছরে প্রায় সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে বাংলাদেশকে। বিদ্যুৎখাতের বৈশ্বিক মান অনুসারে যা ‘উচ্চমূল্য’।

বাণিজ্যিক উৎপাদনে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

১৮ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত থেকে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৬০ মেগাওয়াট ঢাকার জাতীয় গ্রিডে এবং ২০০ মেগাওয়াট খুলনা-বাগেরহাটে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় ইউনিটের ৭৯ দশমিক ৩৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

আরো দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল চুক্তির পথে পেট্রোবাংলা

ডিসেম্বর ২৪, ২০২২, বণিক বার্তা

দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতার দুটি ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) বা ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। আমদানি সংকটের কারণে এরই মধ্যে টার্মিনাল দুটির সরবরাহ সক্ষমতা নেমেছে ৫০ শতাংশের নিচে। এ পরিস্থিতির মধ্যে আরো দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। গ্যাস সংকটে এ ধরনের অবকাঠামোর প্রয়োজন না থাকলেও টার্মিনাল নির্মাণে তৎপর হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি এবং এ খাতের স্থানীয় কোম্পানি সামিট গ্রুপ।

জ্বালানি বিভাগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, এক্সিলারেট এনার্জি পটুয়াখালীর পায়রায় এবং সামিট কক্সবাজারের মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে। এরই মধ্যে এ টার্মিনাল নির্মাণে আর্থিক ও বাণিজ্যিক বিষয়গুলো নিয়ে দরকষাকষি চলছে পেট্রোবাংলার সঙ্গে। টার্মিনাল নির্মাণে শর্ত, অর্থনৈতিক দিক এবং চুক্তির নানা বিষয় বিশ্লেষণ চলছে। এরপর একটা পর্যায়ে পৌঁছালে নির্মাণ চুক্তির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

ডলার সংকটে বিদেশি ঋণের কিস্তি দিতে পারছে না পিডিবি!

২৯ ডিসেম্বর ২০২২, শেয়ারবিজ

দেশে ডলার সংকট বেড়েই চলেছে। এতে একদিকে এলসি (ঋণপত্র) নিষ্পত্তি বিলম্বিত (ডেফার্ড) হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঋণ পরিশোধ আটকে যাচ্ছে। সংকট কাটাতে ডলার সরবরাহের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরণাপন্ন হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক। পাশাপাশি ডলার ছাড় করতে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কেও অনুরোধ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় ডলার না পাওয়ায় বিদেশি ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এজন্য ডলার ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে পিডিবি। একই ধরনের চিঠি দিয়েছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাতা বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। কয়লার বিল পরিশোধে ডলার ছাড় করতে এ ডলার দরকার বলে জানানো হয়।

এদিকে সোনালী ব্যাংক এখনও ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এজন্য গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো এক চিঠিতে ৯২ মিলিয়ন ডলার ছাড় করতে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না।

বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে পিডিবি জানায়, বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সম্প্রসারণে ঋণ নিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক চায়না (আইসিবিসি) এবং পিডিবির মধ্যে চুক্তি হয়। এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির (ইসিএ) আওতায় এ চুক্তি হয়েছিল। একইভাবে ঘোড়াশাল গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (৩য় ইউনিট) নির্মাণে আইসিবিসির সঙ্গে আরেকটি চুক্তি হয়। দুই চুক্তির আওতায় আইসিবি ৪৪৫ দশমিক ৩৯২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়, যার বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সভরেন গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়।

২০টি কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করার কথা। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৯ কিস্তি ও ঘোড়াশাল (৩য় ইউনিট) বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮টি কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০ম কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এজন্য ১৫ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার দরকার। সোনালী ব্যাংকের এ ঋণ শোধ করার কথা থাকলেও দুবার ডেফার্ড হয়েছে। আর রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ঘোড়াশালের ঋণের ৯ম কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এজন্য ১৫ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার দরকার। বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতার জন্য উভয় ব্যাংক এ ঋণ পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

এদিকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ভারতের এক্সিম ব্যাংককে। এজন্য প্রয়োজনে ১৬ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার। জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এ কিস্তি দিতে হবে। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে এ কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। নির্ধারিত তারিখে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে ডিফল্ট (খেলাপি) সুদের শর্ত রয়েছে। এছাড়া আইসিবিসিকে সভরেন গ্যারান্টি দেয়ায় এ ঋণ শোধে ব্যর্থ হলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ অবস্থায় ৪৬ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলার ছাড় করতে ব্যাংকগুলো নির্দেশনা দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধমে অনুরোধ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেয় পিডিবি।

সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় ডলার না থাকায় গত ২১ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পৃথক চিঠি দেয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। যদিও পরে রূপালী ব্যাংক তাদের নস্ট্র হিসেবে জমা হওয়া ডলার থেকে পিডিবির ঋণের কিস্তি শোধ করেছে।

অন্যদিকে ডলার সংকটে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার বিল পরিশোধ করতে পারছে না বিসিপিসিএল। এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা আমদানিতে যথেষ্ট ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ছিল না বিসিপিসিএলের। এজন্য তাদের চীনের অংশীদার হিসেবে সিএমসি ৬ মাস বিলম্বে বিল পরিশোধের শর্তে কয়লা সরবরাহে আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল বিসিপিসিএল ও সিএমসির মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তিও সই হয়।

চুক্তির আওতায় সিএমসি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৪১ মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহ করে, যার মূল্য ৪৭৭ দশমিক ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুঞ্জীভূত বকেয়া দাঁড়িয়েছে ১১৬ দশমিক ১৪১ মিলিয়ন ডলার। এ অর্থ পরিশোধ না করলে সিএমসি নতুন করে কয়লা সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এতে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১১৬ দশমিক ১৪১ মিলিয়ন ডলার ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বিসিপিসিএল।

সূত্র জানায়, পর্যাপ্ত ডলার না থাকায় গত ২১ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংক ডলার চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল। ওই চিঠিতে ২৭০ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করেনি। পরে অন্যান্য উৎস থেকে কিছু ডলার সংগ্রহ করে সোনালী ব্যাংক। তবে এখনও ব্যাংকটির ডলার সংকট রয়েছে। এজন্য গতকাল ৯২ মিলিয়ন ডলার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আবারও চিঠি দিয়েছে সোনালী ব্যাংক।

লোডশেডিং কমলেও বাড়বে পিডিবির লোকসান

০১ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

ভারতের শিল্প গ্রুপ আদানির বিদ্যুৎ আগামী মার্চে আমদানি শুরু হবে। এতে লোডশেডিং কিছুটা কমতে পারে, বাড়বে পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) লোকসান। ভারতের উচ্চ করপোরেট ট্যাক্স, কয়লার দাম ও পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় এই বিদ্যুতের দাম বেশি হবে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি করে। পিডিবি সূত্রমতে, ওই বিদ্যুতের চেয়ে তিন গুণ বেশি দামে আমদানি করতে হবে আদানির বিদ্যুৎ। আর কয়লাভিত্তিক পায়রা কেন্দ্রের বিদ্যুতের চেয়ে দাম দ্বিগুণ বেশি হবে।

৮৪.৬ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে এই কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৩৪৪ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা। বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনে সমঝোতার মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর আদানির সঙ্গে ক্রয়চুক্তি সই করে পিডিবি।

চুক্তির দুর্বলতায় কয়লার খরচ বাড়াবে :এই বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে আদানি গ্রুপ ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ১৬৩ পৃষ্ঠার চুক্তিটি তিনজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। গত ৯ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম যত বেশিই হোক না কেন, পিডিবি নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড় পায়। অথচ, আদানির সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশকে কয়লার দাম আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী দিতে হবে। এতে জ্বালানি খরচ বেশি পড়বে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পিডিবির একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, চুক্তি অনুসারে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর জ্বালানি খরচ বিদ্যুতের মূল্যের সঙ্গে পরিশোধ করে পিডিবি। সাধারণত, কয়লার মূল্য নিউক্যাসল মূল্য সূচকের ভিত্তিতে গণনা করা হয়। যদি কোনো কোম্পানি উচ্চ মানের কয়লা বেশি পরিমাণে দীর্ঘমেয়াদে কেনে, তাহলে বাল্ক্ক মূল্যের ওপর ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পায়। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের চুক্তিতে এই ছাড়ের বিষয়টি উল্লেখ আছে। ফলে পিডিবি কয়লার হ্রাসকৃত দাম পরিশোধ করতে পারছে। কিন্তু আদানির চুক্তিতে এমন কোনো শর্ত নেই। ফলে আন্তর্জাতিক দরে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এতে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে।

ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ গড্ডা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেল খনির কয়লা ব্যবহার করবে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা কয়লা খালাস হবে ভারতের উড়িষ্যার ধামরায় অবস্থিত আদানির নিজস্ব বন্দরে। সেই বন্দর থেকে গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ৭০০ কিলোমিটার রেলপথে কয়লা নেওয়া হবে। আইইইএফএর তথ্যমতে, আদানি ভারতে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালায় এগুলো অধিকাংশই সমুদ্রের কাছে, যাতে সড়ক অথবা রেলে কয়লা পরিবহনের খরচ কমানো যায়। কিন্তু গড্ডার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্দর থেকে বেশি দূরে হওয়ায় কয়লা পরিবহনে বাড়তি ব্যয় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে।

বিদ্যুতের দাম বেশি: আইইইএফএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানির প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুৎ ১৬-১৭ টাকায় কিনতে হবে বাংলাদেশকে। যদিও আমদানি করা কয়লা দিয়ে উৎপাদিত পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ৮-৯ টাকা।

পিডিবির নিজস্ব প্রতিবেদনেও দাম বেশির তথ্য পাওয়া যায়। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানির কেন্দ্র থেকে চলতি অর্থবছর (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ আমদানির সম্ভাব্য পরিমাণ ২৯৮ কোটি ৭০ লাখ ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা)। এজন্য ব্যয় হবে ৫ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ১৭ টাকা ৮৭ পয়সা। এই দাম ভারত থেকে বর্তমানে আমদানি করা বিদ্যুতের গড় দামের প্রায় তিন গুণ। পিডিবির তথ্যমতে, গত অর্থবছর ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে ৬ টাকা ১১ পয়সা। চলতি অর্থবছর প্রতি ইউনিটের গড় দাম (আদানি ছাড়া) পড়বে ৬ টাকা ৪১ পয়সা।

পিডিবির লোকসান বাড়বে: ডলার সংকট ও অর্থের অভাবে বিদ্যুৎ কেনার বকেয়া বিল দিতে পারছে না পিডিবি। এরই মধ্যে আট মাসের বিল বকেয়া পড়েছে। সম্প্রতি চার মাসের বিল বাবদ ১৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা অর্থ বিভাগের কাছে ভর্তুকি চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত অর্থবছর পিডিবির লোকসান হয় ৩১ হাজার ৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। এক বছরে লোকসান বেড়েছে ১৯ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই (জুলাই ও আগস্ট) পিডিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। লোকসানের একটি বড় কারণ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিশোধিত উচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ। বিনিয়োগ ও অন্যান্য ব্যয়ের বিপরীতে একটা নির্ধারিত হারে অর্থ উদ্যোক্তাদের ফেরত দেওয়ার শর্ত থাকে চুক্তিতে। বিদ্যুৎ না কিনলেও চুক্তি অনুসারে এই অর্থ দিতে হয়, যা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে পরিচিত। ২০০৮-০৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে প্রায় ৯০ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করে পিডিবি। আদানির বিদ্যুৎ আমদানির শুরুর পর এই ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের হার আরও বাড়বে। ফলে পিডিবির লোকসানের পরিমাণও বাড়বে। পিডিবির তথ্যমতে, আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আনতে বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে প্রায় ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা, যা বর্তমানে ভারতকে দেওয়া ক্যাপাসিটি চার্জের দ্বিগুণ। ২৫ বছরে আদানিকে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ৯৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা দিতে হবে বাংলাদেশকে।

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

চুক্তির তিন বছর পর শুরু হচ্ছে বহুমাত্রিক জরিপ

০৪ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বহুমাত্রিক জরিপ (মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে) শুরু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক কোম্পানি টিজিএস-স্লামবার্জার। মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে টিজিএস।

বঙ্গোপসাগরের ২৬ ব্লকে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের জন্য ২০২০ সালের মার্চে পেট্রোবাংলার সঙ্গে টিজিএস-স্লামবার্জারের চুক্তি হয়। এর প্রায় তিন বছর পর এই ঘোষণা এলো।

ঘাটতি পূরণে চড়া দামে গ্যাস আমদানি করছে বাংলাদেশ। বিপরীতে সাগরের তেল-গ্যাসের অনুসন্ধানই শুরু করতে পারছে না। কারণ মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের তথ্য না থাকায় সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভূতত্ত্ববিদ বদরূল ইমাম বলেন, ভারত ও মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমায় বিপুল গ্যাস সম্পদের খোঁজ পেয়েছে। মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে গ্যাস তুলছে এবং তা রপ্তানি করছে চীনে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও জরিপ-ই শুরু করতে পারেনি।

টিজিএসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুরুতে প্রায় ১১ হাজার লাইন কিলোমিটার আধুনিক টুডি সার্ভে চালানো হবে। পুরো প্রকল্পে ৩২ হাজার লাইন কিলোমিটার মাল্টিক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভে চালানো হবে।

টিজিএসের সিইও ক্রিস্টিয়ান জোহানসেন মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা এই মাল্টিফেজ সিসমিক কর্মসূচিটি শুরু করতে পেরে আনন্দিত, যা বঙ্গোসাগরের তলদেশের সম্পদের বিষয়ে বোঝার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম। বিশ্বে এটি বিস্তৃত অনাবিস্কৃত সীমান্ত অববাহিকাগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। ২০২৪ সালের প্রথমদিকে জরিপের ফল পাওয়া যেতে পারে।’

আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। এর পর বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রে ভালো সাড়া না মেলায় সরকার পুরো সমুদ্রসীমায় একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক জরিপ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে নাম দিয়ে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। দরপত্র মূল্যায়নে নরওয়ের কোম্পানি টিজিএস এবং ফ্রান্সের স্লামবার্জার কনসোর্টিয়াম যোগ্য বলে নির্বাচিত হয়। এর পর পেট্রোবাংলা প্রস্তাব চূড়ান্ত করে চুক্তিপত্র অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির সায় নিতে জ্বালানি বিভাগে ফাইল পাঠায়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া অজ্ঞাত কারণে বাতিল করে আবার দরপত্র আহ্বানের জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

অভিযোগ উঠেছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহলের পছন্দের কোম্পানি কাজ না পাওয়ায় দর প্রক্রিয়া ঝুলে যায়। পরে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পুনঃদরপত্র আহ্বান ও ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি দরপত্র খোলা হয়। এবারও পাঁচটি প্রস্তাব জমা পড়ে। এবারও দরপত্র প্রক্রিয়ায় টিজিএস-স্লামবার্জার কনসোর্টিয়াম প্রথম হয়। এর পর চুক্তির প্রস্তাবনা জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। সেখানে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী দর প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি বলে আপত্তি জানান। পরে দরপত্র মূল্যায়নের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ২০১৭ সালে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে পাঠায়। এর পরও দীর্ঘদিন এই প্রস্তাব আটকে রাখা হয়। ওই প্রভাবশালী মহলের পছন্দের কোম্পানি ছিল এসপিইসি পার্টনার্স, যাদের মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে-সংক্রান্ত যোগ্যতা এবং সক্ষমতা খুবই কম। কোম্পানিটি দর প্রক্রিয়াতেই বাতিল হয়েছিল। সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষেপে ২০২০ সালের মার্চে টিজিএস-স্লামবার্জার কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করে পেট্রোবাংলা।

বঙ্গোপসাগরের অগভীর ও গভীর অংশকে মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে অগভীর অংশে ব্লক ১১টি। গভীর সমুদ্রে ব্লক ১৫টি। বর্তমানে শুধু অগভীর সমুদ্রের ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে কাজ করছে ভারতের তেল-গ্যাস কোম্পানি ওএনজিসি।

৮১২ কোটি বিনিয়োগে ১ লাখ কোটি টাকার এলএনজি ব্যয় সাশ্রয় করেছে বাপেক্স

জানুয়ারি ০৫, ২০২৩, বণিক বার্তা

গ্যাসের স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহ সংকট ও বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গুরুত্ব দেয় জ্বালানি বিভাগ। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাপেক্সকে গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে সফলতাও মিলেছে এরই মধ্যে। গত এক বছরে অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে নয়টি কূপের উত্তোলন শুরু ও বাড়িয়েছে বাপেক্স। এসব কূপে ৮১২ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ৭২৩ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার করেছে সংস্থাটি।

প্রতি ঘনফুটে ৩ টাকা ৪ পয়সার সামান্য বেশি মূল্যের বাপেক্স মার্জিন ধরে এ গ্যাসের দাম দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৩০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আবার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় তুলনামূলক সুলভে (প্রতি এমএমবিটিইউ ১৪ ডলার হিসাবে) এলএনজি আমদানি মূল্য হিসাব করলে এ পরিমাণ গ্যাসের দাম পড়ে ৯৬ হাজার ৩৬৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আবার স্পট এলএনজির গত বছরের গড় দাম ২৪ দশমিক ৭৫ পয়সা হিসাবে এ পরিমাণ গ্যাসের দাম পড়ে ১ লাখ ৭০ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। বর্তমানে স্পট মার্কেটে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ২৯ ডলার ৩৪ সেন্টে ওঠানামা করছে। এ দর অনুযায়ী বাপেক্স আবিষ্কৃত গ্যাসের দাম হিসাব করলে ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

আগামী দুই বছরে কয়লা আমদানিতে বার্ষিক প্রয়োজন পড়বে ৫ বিলিয়ন ডলার

জানুয়ারি ০৭, ২০২৩, বণিক বার্তা

ডলার সংকটের কারণে গত মাসে আমদানীকৃত কয়লার মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে জটিলতায় পড়ে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। সর্বশেষ ডলার সংকটে জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে না পেরে আমদানীকৃত কয়লা খালাস নিয়ে জটিলতায় পড়ে বিসিপিসিএল।

শুধু পায়রায় চালু বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য কয়লা আমদানি করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি)। এর মধ্যে আবার নির্মাণাধীন ও উৎপাদনের অপেক্ষায় থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে সাত হাজার মেগাওয়াটে। সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, সারা বছর এ সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে কয়লা প্রয়োজন সাড়ে ২৫ মিলিয়ন টন। গড় মূল্য টনপ্রতি ২০০ ডলার হিসাব করলেও আগামী দুই বছরে চালু হতে যাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য শুধু কয়লা আমদানি করতেই প্রয়োজন পড়বে ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারের বেশি।

শীতের মধ্যেও ঢাকার বাইরে চলছে লোডশেডিং

১০ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

শীত মৌসুমে তুলনামূলক কম বিদ্যুৎ–চাহিদার সময়ও টানা দুই দিন ধরে চলছে লোডশেডিং। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হলেও আজ মঙ্গলবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে অনেক এলাকায় আজও লোডশেডিং হয়েছে একাধিকবার। সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এটি জানা গেছে, উৎপাদন ব্যয় কমাতে জ্বালানি তেলচালিত বেশির ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই কয়লা ও গ্যাসচালিত তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় সরবরাহ–ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

‘যারা কুইক রেন্টাল নিয়ে বেশি কথা বলবে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেব’

১১ জানুয়ারি ২০২৩, যুগান্তর

যারা কুইক রেন্টাল নিয়ে বেশি কথা বলবে তাদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

মোকাব্বির খান সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে আজকের সংকটে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই কেবল দায়ী নয়, আমাদের অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় আছে। আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা, মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাট এবং বিদ্যুৎ খাতে কুইক রেন্টালের ইনডেমনিটি এরকম অনেক কিছুই দায়ী। এর ফলাফল কী হয়েছে? ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সাধারণ মানুষের জীবনজীবিকা আজ দুর্বিষহ। প্রধানমন্ত্রী এ সত্যতা স্বীকার করে ব্যবস্থা নেন বলে তাকে ধন্যবাদ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে কুইক রেন্টালের কথা বলা হচ্ছে, হ্যাঁ- এগুলোর প্রয়োজন ছিল। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এনেছিলাম বলেই বিদ্যুৎ আমরা মানুষকে দিতে পেরেছিলাম।

তিনি বলেন, বিএনপির শাসনামলে মানুষ বিদ্যুৎ পেত না। দিনের পর দিন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। ইন্ডাস্ট্রিগুলো চলতে পারত না। গ্যাসের জন্য হাহাকার ছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে এসব সমস্যার সমাধান করি। সে অনুযায়ী আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এরপরও যারা কুইক রেন্টাল নিয়ে বেশি কথা বলবেন তাদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বিদ্যুতের দাম ৫% বাড়ল, কার্যকর জানুয়ারি থেকেই

১২ জানুয়ারি ২০২৩, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

দুই বছর পর খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার; এতে ইউনিটপ্রতি দাম বাড়বে ৩৫ পয়সা।

নতুন এ দর জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এর ফলে খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত গড়ে দাঁড়াবে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা।

বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে গড়ে ৫ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন।

এদিন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদ্যুতের নতুন দর বিভিন্ন গ্রাহক শ্রেণি অনুযায়ী বাড়ানো হয়।

জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি গত ৮ জানুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়াতে গণশুনানি করলেও এবার দাম বাড়ানো হয়েছে সরকারের নির্বাহী আদেশে।

কয়লা সংকটে বন্ধ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন

জানুয়ারি ১৫, ২০২৩, বণিক বার্তা

কয়লা সংকটে বন্ধ রয়েছে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। কেন্দ্রটির কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে কয়লার অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কবে নাগাদ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ডলার সংকটে কয়লা আনতে না পাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে উৎপাদন শুরুর এক মাস পার হওয়ার আগেই উৎপাদন বন্ধের ঘটনা ঘটল। এ কারণে কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাওয়া নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। পরদিন থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। চলতি বছরের জুনে এই কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথাও জানিয়েছিল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

এবার গ্যাসের ‘ঘা’

১৯ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

গ্যাস সংকটে ঠিকমতো ঘোরে না কল-কারখানার চাকা। তবু সাত মাসের ব্যবধানে আবার গ্যাসের দাম বাড়াল সরকার। এবার এক লাফে রেকর্ড ৮২.১০ শতাংশ দাম বেড়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর এক সপ্তাহের মাথায় গ্যাসের দামও বাড়ল।

খানিকটা সুখবর হলো- বাসাবাড়ি, পরিবহন এবং সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম এ যাত্রায় বাড়েনি। বেড়েছে শুধু বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে। ফলে সব নিত্যপণ্যের দাম একযোগে বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পটভূমিতে আরেক দফা খরচের জাঁতাকলে পড়তে যাচ্ছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বিদ্যুতের মতো এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। নতুন দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। গতকাল বুধবার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর এ ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

খাত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেতে ভর্তুকি কমানোর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকারের বছরে আয় বাড়বে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়বে। ফলে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের বাড়তি দাম গুনতে হতে পারে। গ্যাসের বর্ধিত দাম শিল্পের খরচ বাড়িয়ে দেবে, এতে দ্রব্যমূল্য আরও ছুটতে পারে। সব মিলিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবন ধারণ আরও দুরূহ হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সরকার বলছে, পরিবহন ও আবাসিক খাতে দাম বাড়েনি। ফলে জনগণের ওপর তেমন চাপ পড়বে না। দাম বাড়ানোর ফলে এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে শিল্পে বেশি গ্যাস দেওয়া যাবে বলে মনে করছে সরকার।

দামের রেকর্ড : বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার (প্রতি ইউনিট) গ্যাসের গড় খুচরা দর ১১ টাকা ৯০ পয়সা। এটা বেড়ে এখন গড় দাম প্রতি ঘনমিটারে দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৬৭ পয়সা। বেড়েছে ৮২.১০ শতাংশ। এটা রেকর্ড। ২০০৯ সালে প্রতি ঘনমিটারের গড় দাম ছিল ৪ টাকা ৩৪ পয়সা। তখন থেকে এ পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে ছয়বার গ্যাসের দাম বেড়েছে।

গত সাড়ে ১৩ বছরে এই বৃদ্ধির হার ৪০০ শতাংশ। এর মধ্যে ২০০৯ সালের জুলাইয়ে গড়ে ১১.২২%, ২০১৫ সালের ১ আগস্ট ২৬.২৯%, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২২.৭০%, ২০১৯ সালের ১ জুলাই ৩২.০৮% এবং ২০২২ সালের ৫ জুন ২২.৭৮% বাড়ে গ্যাসের দাম।

শিল্প ও বিদ্যুতে খরচ বাড়বে : নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা বেড়ে ১৪ টাকা হয়েছে (বৃদ্ধি ১৭৯%)। শিল্প-কারখানার ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিটে ১৬ টাকা থেকে ১৪ টাকা বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে (বৃদ্ধি ৮৮%)। বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে ১৮ টাকা ২ পয়সা বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে (বৃদ্ধি ১৫০.৪১%)। মাঝারি শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে ১৮ টাকা ২২ পয়সা বেড়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে (বৃদ্ধি ১৫৪.৬৭ %)। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে ১৯ টাকা ২২ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা (বৃদ্ধি ১৭৮.২৯%)। এ ছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং অন্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বেলায় গ্যাসের দর হবে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা, যেখানে এত দিন দাম ছিল ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা (বৃদ্ধি ১৪%)।

দাম বাড়লেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সহসাই মিলছে না

২০ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

বিদ্যুৎ ও শিল্পে ১৭৯ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। উদ্দেশ্য, আন্তর্জাতিক খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে বেশি দামে এলএনজি কিনে এ দুই খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা। দাম বৃদ্ধির বর্ধিত আয় দিয়ে আগামী মার্চ থেকে সরকার ফের স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে দিনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়তে পারে ২০ কোটি ঘনফুট। এরপরও বিদ্যুৎ ও শিল্পের চাহিদা মেটাতে দিনে ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকবে। ফলে বাড়তি দামেও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চয়তা মিলছে না। তবে আগের চেয়ে গ্যাসের প্রবাহ বাড়বে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে যেখানে কয়লা, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে, সেখানে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা যথাযথভাবে কতটুকু বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে খাত-সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ।

মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে ১৫ কোটি ডলার

২৩ জানুয়ারি ২০২৩, শেয়ার বিজ

২০২৪ সালের মধ্যে দেশে উৎপাদনে আসবে বেশকিছু কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করেছে ২০২০ সালে। আর গত মাসে জাতীয় গ্রিডে একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে রামপাল কেন্দ্রটি। কয়েক মাসের মধ্যে আরও তিনটি কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। তবে এসব কেন্দ্রের জন্য গুনতে হবে উচ্চ হারে ক্যাপাসিটি চার্জ। এমনকি কয়লা সংকটে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এ চার্জ বন্ধ হবে না।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে আদানির প্রতিনিধির সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ করে পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয়।

বৈঠকের তথ্যমতে, কয়লাভিত্তিক এ পাঁচটি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা পাঁচ হাজার ৫০৫ মেগাওয়াট। এগুলোর জন্য মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে প্রায় ১৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার বা এক হাজার ৫৯৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা (এক ডলার=১০৬.৯৫ টাকা ধরে)। এ হিসাবে বছরে এসব কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বছরে গুনতে হবে ১৭৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার বা ১৯ হাজার ১৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

যদিও গত অর্থবছর বেসরকারি খাতের ৯৫টি কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ১৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এ হিসাব থেকেই বোঝা যাচ্ছে কয়লাভিত্তিক এসব কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ কতটা উচ্চ।

কর্ণফুলী গ্যাসের সব কর্মীকে ১৮ লাখ টাকা বোনাস

২৩ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাস বিক্রি বাবদ একটা মাশুল (বিতরণ মার্জিন) পায়। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্দেশনা অনুসারে এই মার্জিন ব্যতীত মুনাফার বাড়তি অর্থ নিজেদের কাছে রাখতে পারে না গ্যাস কোম্পানিগুলো। কিন্তু কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) কাছে বেশি দামে বিক্রি করা গ্যাসের লভ্যাংশ পেট্রোবাংলাকে গত ১০ বছর দেয়নি কর্ণফুলী গ্যাস (কেজিডিসিএল)। এর পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। এই অর্থ ৩৮৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী বোনাস হিসেবে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। শুধু ২০২১-২২ অর্থবছরে একেকজন বোনাস নিয়েছেন ১৮ লাখ টাকা।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানায়, ২০১০ সালে বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি ভেঙে কেজিডিসিএল গঠিত হয়। শুরু থেকেই কাফকোর সঙ্গে পৃথক চুক্তি অনুসারে অন্য সার কারখানার চেয়ে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করা হতো। বাখরাবাদ ২০১০ সাল পর্যন্ত কাফকোর কাছে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ পুরোপুরি পেট্রোবাংলাকে পরিশোধ করেছে। কেজিডিসিএল ২০১০ সালের জুলাই মাস থেকে এখন পর্যন্ত বিইআরসির নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত হারে কাফকোর কাছে গ্যাস বিক্রি করলেও বাড়তি টাকার একটি বড় অংশই পেট্রোবাংলার খাতে জমা করেনি।

এ বিষয়ে হিসাব চেয়ে পেট্রোবাংলা কেজিডিসিএলকে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১১টি চিঠি পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জ্বালানি বিভাগের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কাফকোর কাছ থেকে বিইআরসি নির্ধারিত গ্যাসের মূল্যের অতিরিক্ত অর্থের অর্ধেক পেট্রোবাংলার কোষাগারে দিতে হবে। সে সময় কাফকোর প্রতি ইউনিটের দাম ছিল ১২ টাকা আর বিইআরসি অন্য সার কারখানার জন্য নির্ধারণ করেছিল প্রতি ঘনমিটার ২ টাকা ৭১ পয়সা। অর্থাৎ ১ ইউনিটেই কাফকোর কাছ থেকে কেজিডিসিএল অতিরিক্ত পেত ৯ টাকা ২৯ পয়সা। পরে অন্য সার কারখানার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাফকোর দামও বেড়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ জুন বিইআরসি সার কারখানার প্রতি ঘনমিটারে দাম ৪.৪৫ টাকা এবং ২০২২ সালের জুনে তা বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ১৬ টাকা করে। এখন কাফকোর কাছে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

পেট্রোবাংলার হিসাব বলছে, ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত কাফকোর কাছে কেজিডিসিএল ৪৩৯ কোটি ঘনমিটারের বেশি গ্যাস বিক্রি করেছে। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুসারে এর দাম ৫ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা।

অন্য সার কারখানার নির্ধারিত মূল্য অনুসারে এই পরিমাণ গ্যাসের দাম ১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। ফলে কেজিডিসিএলের বাড়তি আয় ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেজিডিসিএল পেট্রোবাংলাকে দিয়েছে মাত্র ৯৬১ কোটি টাকা। বিইআরসির নির্দেশনা অনুসারে পেট্রোবাংলা পাবে ২ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা।

বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে

২৪ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) টাকার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পরিশোধ করতে পারছে না। গ্যাস বিলও বকেয়া। এর মধ্যেই ১৮ জানুয়ারি জ্বালানি মন্ত্রণালয় গ্যাসের দাম বাড়ানোয় পিডিবির ব্যয় বাড়ছে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাই অর্থসংকট কাটাতে বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির চারজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অর্থসংকট কাটাতে না পারলে পিডিবি গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ করতে পারবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিলও দিতে পারবে না। এতে আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে, লোডশেডিং বাড়তে পারে। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় দেখছেন না তাঁরা।

এর আগে গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় প্রায় ২০ শতাংশ (কার্যকর হয় ডিসেম্বর থেকে)। এটি সমন্বয়ে ১২ জানুয়ারি ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১০ বার ও খুচরায় ১১ বার বেড়েছে বিদ্যুতের দাম।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, পাইকারি বিদ্যুতের দাম নতুন করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। আর খুচরায় বাড়তে পারে ৫ শতাংশের মতো। তবে হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর দাম বাড়ানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে।

বাড়তি ব্যয় ৯০০০ কোটি টাকা

জ্বালানির অভাবে গত বছর জুলাই থেকে ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং করতে হয়েছে সরকারকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলাবাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা ওই সময় বন্ধ করে দেয় সরকার। এখনো এটি চালু হয়নি। এলএনজি আমদানি বাড়ানোর কথা বলে এ মাসে (১৮ জানুয়ারি) গ্যাসের দাম রেকর্ড (গড়ে ৮২ শতাংশ) হারে বাড়ায় সরকার। সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম।

দেশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর তারা দেশের ছয়টি বিতরণ সংস্থার কাছে পাইকারি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করে। বর্তমানে ৬ টাকা ২০ পয়সায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করছে পিডিবি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ইউনিটপ্রতি তাঁদের বর্তমান ব্যয় ৯ টাকার বেশি।

পিডিবি সূত্র বলছে, প্রতি ইউনিট (ঘনমিটার) গ্যাস ব্যবহার করে চার ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম বেড়েছে ৯ টাকা। তার মানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়বে গড়ে দুই টাকার বেশি। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ধেক আসে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে। এতে সামগ্রিকভাবে প্রতি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়বে গড়ে এক টাকা।

পেট্রোবাংলার অধীনে থাকা ছয়টি বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে গ্যাস নেয় পিডিবি। দিনে গড়ে ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। বর্তমান দামে (৫ টাকা ৪ পয়সা) বছরে পিডিবির গ্যাস বিল দাঁড়ায় ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আগামী মাস, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন দামে (ঘনমিটারপ্রতি ১৪ টাকা) বছরে পিডিবির গ্যাস বিল দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

ফলে দেখা যাচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে পিডিবির ব্যয় বাড়বে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দিনে ১৩০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করার কথা ভাবছে সরকার। সেটা হলে পিডিবির খরচ আরও বাড়বে।

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে মাসে গচ্চা যাবে ৭০০ কোটি টাকা!

২৪ জানুয়ারি ২০২৩, শেয়ার বিজ

কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে পায়রা উৎপাদন শুরু করেছে ২০২০ সালে। গত মাসে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে রামপাল কেন্দ্রটি। কয়েক মাসের মধ্যে আরও তিনটি কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় একই মানের কয়লা ব্যবহারের কথা থাকলেও দামের মধ্যে রয়েছে অস্বাভাবিক পার্থক্য। এর মধ্যে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার দাম ধরা হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির কেন্দ্রে কয়লার দাম ধরা হয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ বেশি। এতে মাসে গচ্চা যাবে প্রায় ছয় কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ৭০০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে আদানির প্রতিনিধির সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ করে পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয়। এক্ষেত্রে প্রতি কেন্দ্রের সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার (৮৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর) ধরে ব্যয় হিসাব করা হয়েছে।

পিডিবির তথ্যমতে, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানিকৃত কয়লার দাম ধরা হয়েছে প্রতি মেট্রিক টন ২৪৫ ডলার। এক্ষেত্রে প্রতি কেজি কয়লার ক্যালোরিফিক ভ্যালু (তাপন ক্ষমতা) ধরা হয়েছে চার হাজার ৬০০ কিলোক্যালরি। একই মানের কয়লা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কেনা হচ্ছে প্রতি মেট্রিক টন ২৫৪ দশমিক ৩৮ ডলারে। এছাড়া বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এ কয়লার দাম ধরা হয়েছে প্রতি মেট্রিক টন ২৬০ ডলার, বাঁশখালী এসএস পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ২৭০ ডলার ও আদানির জন্য ৩৪৭ ডলার।

এ হিসাবে পায়রার বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির কেন্দ্রে কয়লার দাম বেশি ধরা হয়েছে প্রতি মেট্রিক টনে ১০২ ডলার বা ৪১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করলেও আদানির কেন্দ্রে কয়লার দাম বেশি ধরা হয়েছে প্রতি মেট্রিক টনে ৭৭ ডলার বা ২৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহারের (৮৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর) ভিত্তিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ব্যয়ও বৈঠকে তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় পড়বে ১৩ টাকা ৮৯ পয়সা, বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৪ টাকা ৫৭ পয়সা, রামপালে ১৫ টাকা দুই পয়সা, বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৫ টাকা ৩৭ পয়সা ও আদানির ১৯ টাকা ৬২ পয়সা। অর্থাৎ পায়রার তুলনায় আদানির জ্বালানি ব্যয় বেশি পড়ছে ৫ টাকা ৭৩ পয়সা বা ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এদিকে পায়রার সঙ্গে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার দামের তুলনামূলক বিশ্লেষণ নিয়ে পৃথক আরেকটি হিসাব বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। এতে দেখানো হয়, নিউক্যাসেল কোল ইনডেক্স অনুযায়ী গত ডিসেম্বরে কয়লার দাম ছিল প্রতি মেট্রিক টন ৪০৪ ডলার। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যে মানের কয়লা কেনা হচ্ছে, তাতে প্রতি মেট্রিক টনে ৪৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। চুক্তিমতে, প্রতি টন কয়লার দাম ১১০ ডলারের বেশি হলে বাড়তি দামের ৫৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হয় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে।

পায়রার এ চুক্তির শর্ত দেশের অন্যান্য কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা হচ্ছে। তবে আদানির সঙ্গে ২০১৭ সালে সম্পাদিত চুক্তিতে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর বিবেচনা করা হয়নি। এতে চুক্তির ভুলে আদানির কয়লার জন্য পুরো দামই পরিশোধ করতে হবে। এতে চার হাজার ৬০০ কিলোক্যালরি তাপন ক্ষমতার কয়লায় মাসে গচ্চা যাবে প্রায় ৬৪ মিলিয়ন ডলার বা ৬৮৪ কোটি টাকা (এক ডলার = ১০৬.৯৫ টাকা)।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারের দেয়া বাড়তি সুবিধা এখানেই শেষ নয়। চুক্তির ভুলে আরও সুবিধা পাবে আদানি। এক্ষেত্রে যদি আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ দিতে প্রস্তুত থাকে, তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কোনো কারণে চাহিদা দিয়েও সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ না কেনে, তবুও আদানি কয়লার পুরো মূল্যই পাবে। তবে দেশীয় অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো শর্ত রাখা হয়নি।

আদানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির কপি খুঁজে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। চুক্তির ১৩.১-এর (জি) ধারার (৪) উপধারায় এ-সংক্রান্ত শর্ত রয়েছে। এতে দেখা যায়, ৮৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে (পূর্ণ ক্ষমতা) যদি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডিপেনডেবল ক্যাপাসিটি ৭০ শতাংশ থাকে, তবে পিডিবি যদি ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ কেনে তাহলে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ কয়লার দাম পরিশোধ করতে হবে। আবার ৬০ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে (অপূর্ণ ক্ষমতা) যদি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডিপেনডেবল ক্যাপাসিটি ৭০ শতাংশ থাকে তবে পিডিবি ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনলে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কয়লার দাম পরিশোধ করতে হবে।

পরিবেশ

সেতু নির্মাণের বাঁধে ‘মৃতপ্রায়’ নদী

০১ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

সেতুর পিলারের (খুঁটি) ভিত (বেজমেন্ট) ঢালাইয়ের জন্য নদীর দুই পাশে দেওয়া হয়েছে আড়াআড়ি মাটির বাঁধ। মাঝখানে ২০ ফুটের মতো জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। এতে ক্ষীণ ধারার পানিপ্রবাহও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

‘মৃতপ্রায়’ এ নদীর নাম টেকা। যশোরের অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার মাঝামাঝি টেকার ঘাট এলাকায় নদীটির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে গার্ডার সেতু।

পরিবেশবাদী ও নদী রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, সেতু নির্মাণের জন্য এভাবে বাঁধ দেওয়া নদী হত্যার শামিল। কারণ, পরে বাঁধ কেটে দেওয়া হলেও নিচে ভরাট হওয়ার কারণে নদীতে আর আগের পানিপ্রবাহ ফেরে না।

সেতুটি নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। মনিরামপুরের এলজিইডি সূত্র জানায়, ৫১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ দশমিক ৭ মিটার প্রস্থের পুরোনো সেতু ভেঙে একই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৯৬ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার।

দূষণে বিপন্ন স্বাস্থ্য, অর্থনীতি

০১ নভেম্বর ২২, সমকাল

বাংলাদেশে দূষণের মাত্রা প্রতি বছর ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে। দেশের প্রধান শহরগুলোতে উচ্চ শিল্পায়ন ও নগরায়ণ প্লাস্টিক ও বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। এটা স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করছে। ব্যাহত করছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এসব তথ্য দিয়েছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত মাত্রা থেকে এ দেশের শহরগুলোতে বায়ুদূষণ ১৫ গুণ। দেশে মোট মৃত্যুর ২০ শতাংশ ঘটেছে বায়ুদূষণের ফলে। বায়ুদূষণের কারণে গত ২০ বছর মৃত্যু ৯ শতাংশ বেড়েছে। ঢাকা শহরের নাগরিকরা ৮ বছরেরও বেশি প্রত্যাশিত আয়ু হারা দূষণের কারণে। অন্যদিকে প্রতি বছর মানুষের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। ২০০৫ সালে দেশে মাথাপিছু প্রতি বছর ৯ দশমিক ২ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহূত হয়। ২০২০ সালে তা ২২ দশমিক ৩ কেজিতে দাঁড়ায়।

এসব সমস্যার জন্য অতি মাত্রায় প্লাস্টিকের ব্যবহার, ইটভাটার দৌরাত্ম্য, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতিকে মূলত দায়ী করা হয়েছে।

সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক ইন সেন্টারে এক সভায় এসব উদ্বেগজনক তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ‘সিপিডি-গ্রিন সিটিজ ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এ সভার আলোচ্য বিষয় ছিল, ‘গ্রিনিং সিটিজ থ্রু রিডিউসিং এয়ার অ্যান্ড প্লাস্টিক পল্যুশন’ (বায়ু ও প্লাস্টিকদূষণ হ্রাসের মাধ্যমে সবুজ শহর)।

সভায় বলা হয়, নীতিগত পদক্ষেপ ছাড়া দূষণ সমস্যা আরও খারাপ হবে এবং স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বায়ু ও প্লাস্টিকদূষণ মোকাবিলায় নীতি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজন।

সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণের গুরুতর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যগত প্রভাব রয়েছে এবং তা অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। এটা উৎপাদনশীলতা কমিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে। শক্তিশালী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না হলে আগামী বছরগুলোতে বায়ুদূষণ বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ যানবাহন। ২০০৯ থেকে ‘২১ সালের মধ্যে ঢাকায় মোটরযানের নিবন্ধন বেড়েছে ২৮৩ শতাংশ। খারাপ বায়ু টাইপ-২ ডায়াবেটিস, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, ফুসফুসের রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগের জন্য দায়ী। এ অবস্থা নিরসনে সমন্বিত বহুমাত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। তিনি বলেন, পলিথিন-প্লাস্টিকের কারণে দেশের নদীগুলো মারাত্মক দূষিত হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর দূষণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের দায় ৩৯ শতাংশ। রূপসা নদীর ক্ষেত্রে এ হার ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য নদীদূষণের ক্ষেত্রেও প্লাস্টিক দায়ী।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, রাজধানীতে প্রতি বছর ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়। ৩৭ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। ১২ শতাংশের গন্তব্য নদীতে। অন্যান্য স্থানে পড়ে থাকে বাকি ৩ শতাংশ।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বায়ুর মান কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত থাকে না। জুলাই-আগস্ট মাসে কিছুদিনের জন্য বাতাসের মান থাকে চলনসই। এ ছাড়া বছরের বাকি সময়ে কখনও অস্বাস্থ্যকর, কখনও খুবই অস্বাস্থ্যকর থাকে। বায়ুদূষণের কারণে দেশবাসীর যে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, তার জন্য প্রত্যেককে প্রতি বছর ৮ হাজার ৩৩৪ টাকা খরচ করতে হয়। বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর ঢাকা মহানগরীতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪৪ কোটি মার্কিন ডলার। আর মোট ক্ষতির পরিমাণ ৬৫২ কোটি মার্কিন ডলার, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

বনভূমিতে কারখানা করতে ছাড়পত্র পরিবেশ দপ্তরের

০৮ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙা কারখানা করার জন্য কোহিনুর স্টিল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বনভূমি ইজারা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এবার ওই প্রতিষ্ঠান পেল পরিবেশগত ছাড়পত্র। পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া এ ছাড়পত্র বাতিল করতে লিখিত আপত্তি দিয়েছে বন বিভাগ।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগ ও পরিবেশবাদীদের দাবি, পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত শর্তাবলি পূরণ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তা করেনি। মূলত ইজারা ‘পাকাপোক্ত’ করতে তড়িঘড়ি করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এর আগে সেখানে কেওড়াবাগানের গাছ কাটার অভিযোগে ১৬ আগস্ট ও ২৫ সেপ্টেম্বর বন বিভাগ কোহিনুর স্টিলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে।

সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর ও তুলাতলি উপকূলে কোহিনুর স্টিলকে জেলা প্রশাসন চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৫ একর বনভূমি ইজারা দিয়েছে। সেই জায়গা তিন বছর আগে একই মালিকের বিবিসি স্টিলকে ইজারা দেওয়া হয়েছিল।

দূষণে নিঃস্ব বেলাই বিল

২২ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

গাজীপুরের চার উপজেলা লাগোয়া বেলাই বিল। কৃষি, দেশীয় মাছ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য—যেদিক থেকেই বিবেচনা করা হোক, এই বিলের গুরুত্ব অপরিসীম। কলকারখানার তরল বর্জ্য, ক্ষতিকর পদার্থের কারণে বিলটি এখন চরম মাত্রায় দূষণের শিকার। এই বিলের পানিদূষণে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ কারণে বিল থেকে যেমন দেশি জাতের মাছ হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি শ্রীহীন হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিলটির আয়তন প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার। গাজীপুর সদর, কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ ও শ্রীপুর উপজেলায় বিস্তৃত। এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষের কৃষিজমি রয়েছে এখানে। এখানে ধান চাষ করে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন। এ ছাড়া বর্ষাকালে আগে এই বিলে ঘুরে বেড়াতে পর্যটক আসতেন। মাছ ধরার জন্য জেলেরা আসতেন। দূষণের কারণে এসব কেবলই স্মৃতি।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিলটির মাঝখানে দুটি বড় খাল আছে। খাল দুটি বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে গিয়ে মিলিত হয়েছে তুরাগ, চিলাই ও বালু নদের সঙ্গে। আর এসব নদে টঙ্গী, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর, রাজেন্দ্রপুর ও শ্রীপুর এলাকার ৪০০ থেকে ৫০০ শিল্পকারখানার তরল বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গেলে দূষণ বাড়ে। তখন কৃষিকাজে সমস্যা হয়। তা ছাড়া ওই সময় দূষিত পানির দুর্গন্ধে পর্যটকেরাও এখানে আসেন না।

কমেছে ধান উৎপাদন

গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার সামনে সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন। ইউনিয়নের জামুনা সড়ক ধরে আরও তিন কিলোমিটার সামনে এগোলেই বেলাই বিল। ওদিক দিয়ে সম্প্রতি বিলে গিয়ে দেখা যায়, বিলজুড়েই কচুরিপানা। কমতে শুরু করেছে পানি। দূষণের কারণে কালো হয়ে উঠছে পানির রং। কোনো নৌকার চলাচল নেই। নেই মাছ শিকারিদের হাঁকডাক।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক কচুরিপানা সরিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন বোরো ধান চাষের জন্য। কথা হয় তাঁদেরই একজন ষাটোর্ধ্ব প্রতিপদ দাসের সঙ্গে। তাঁর মূল পেশা কৃষিকাজ। বিলে প্রায় আট বিঘা জমি রয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশকে প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ধান পেতেন ২৪ থেকে ২৫ মণ। কিন্তু ২০০০ সালের দিক থেকে বিলের পানিতে দূষণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তাতে কমতে থাকে ফলন। বর্তমানে বিঘাপ্রতি গড়ে ধান পান ১৩ থেকে ১৪ মণ।

উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা জানালেন আরও অনেক কৃষক। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিলে শুষ্ক মৌসুমে দূষিত পানির কারণে ধানের চারা মরে যায়। আবার বড় হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধান হয় না। পোকা বা আগাছায় ভরে যায় পুরো খেত। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না।

আগের মতো মাছ নেই

বেলাই বিলের মাছ প্রসঙ্গে কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের জেলে বিশেস্বর চন্দ্র দাসের (৩৫) সঙ্গে। তিনিসহ সাতজনের একটি দল প্রতি রাতে বিলে জাল ফেলে মাছ ধরতেন। পাঁচ-ছয় বছর আগেও গড়ে মাছ পেতেন ৩৫ থেকে ৪০ কেজি। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে একেকজন ভাগে পেতেন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। সেই আয়েই চলত তাঁদের সংসার। দূষণের কারণে কয়েক বছর ধরেই কমতে থাকে মাছের পরিমাণ। দুই বছর আগে পাওয়া যেত সাত থেকে আট কেজি। তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই সাতজনই জেলে পেশা ছেড়ে শুরু করেন দিনমজুরির কাজ।

তিস্তার বুকে শ্যালো বসিয়ে সেচের পানি তুলছেন কৃষক

জানুয়ারি ৩, ২০২৩, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

প্রায় ২ মাস আগেও তিস্তার বুকে পানিপ্রবাহ থাকলেও এখন প্রায় পানি শূন্য। এই নদীর বুকে বালু চরে ডিজেলচালিত শ্যালো পাম্প বসিয়ে সেচের পানি তুলে চাষাবাদ করছেন চাষিরা।

চরাঞ্চলের চাষিরা তিস্তার বুকে বালু চরে আলু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, পেঁয়াজ, মরিচ ও শাক-সবজি উৎপন্ন করতে কাজ করছেন নিরলসভাবে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা এলাকার কৃষক মেহের আলী আলী (৬০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিস্তা সড়ক সেতুর পাশে নদীর বুকে বালুচরে আলু ও মরিচ চাষ করেছি। পানি দরকার হওয়ায় নদীর বুকে শ্যালো মেশিন বসিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকজন মিলে শ্যালো থেকে সেচের পানি সংগ্রহ করে বালু চরে চাষাবাদ করছি।’

‘প্রায় ৮ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি,’ উল্লেখ করে একই চরের কৃষক শফিক উদ্দিন (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিস্তায় পানির প্রবাহ নেই। শ্যালো বসিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ৩৩-৩৫ ফুট পাইপ বসালে তবে পানি পাওয়া যায়।’

কালীগঞ্জ উপজেলার চর ভোটমারী এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আলু ও মিষ্টি কুমড়া চাষে প্রচুর পানি প্রয়োজন। তিস্তায় তেমন পানি নেই। চারদিকে ধু ধু বালুচর। অনেক দূরে একটি চ্যানেলে কিছুটা প্রবাহ থাকলেও সেখান থেকে পানি আনা কষ্টকর।’

‘ডিজেলচালিত শ্যালো পাম্পের সাহায্যে সেচের পানি সরবরাহ করায় চরে ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলার চর গড্ডিমারী এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চরে ১২ বিঘায় ভুট্টা চাষ করেছি। খেতে প্রতিদিনই সেচের পানি দিতে হয়। তিস্তায় তেমন পানির প্রবাহ না থাকায় শ্যালো বসিয়ে পানি তুলছি।’

‘গত ১০-১২ বছর থেকে আমরা এভাবে পানি তুলে চরে চাষ করছি,’ যোগ করেন তিনি।

সেন্ট মার্টিনে উজাড় হচ্ছে কেয়াবন, জেনেও চুপ প্রশাসন

০৫ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

দুর্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ‘রক্ষাদেয়াল’ সারিবদ্ধ কেয়াবন। পাঁচ বছর আগেও দ্বীপের চারপাশে কেয়াবন ছিল প্রায় ২০ কিলোমিটার। উজাড় হতে হতে সেই বন এখন ঠেকেছে ৮ কিলোমিটারে। প্রায় ১২ কিলোমিটার কেয়াবন নেই। কেয়াবন ধ্বংসের এই চিত্র জানান পরিবেশবাদী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। অবশিষ্টটুকুও কত দিন টিকে থাকবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন তাঁরা।

সেন্ট মার্টিনে কেয়াবন উজাড়ের একমাত্র কারণ হোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ। এসব স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে কেয়াবন আগুনে পুড়িয়ে ও কেটে ধ্বংস করা হয়েছে। এর ফলে সৈকতের বালিয়াড়ি বিলীন হচ্ছে। এর প্রভাবও ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। দুই বছর ধরে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হচ্ছে দ্বীপের শত শত নারকেলগাছ ও বসতবাড়ি, যা আগে কখনো হয়নি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

এভাবে কেয়াবন ধ্বংসের পেছনে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের গাফিলতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা। আর স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষাকারী কেয়াবন উজাড়ের প্রতিবাদ করলেও সুফল পাচ্ছেন না। কেননা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রভাবশালীরা ঠিকই পরিবেশ অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।

উড়ন্ত ছাইয়ে বিপর্যস্ত জনপদ, স্বাস্থ্যঝুঁকি

১৭ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

সড়কের কাছেই কালো কালিমিশ্রিত ছাইয়ের বিশালাকার স্তূপ। এসব ছাইয়ের প্রভাবে দুই শতাধিক বাড়ির প্রায় ছয় থেকে সাত শ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। এই চিত্র গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের তালতলী গ্রামের। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আলী পেপার মিল নামের একটি কারখানা অবৈধভাবে উন্মুক্ত অবস্থায় এসব ছাই জমা করেছে।

তালতলী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশের পথে পথে ছড়িয়ে আছে কারখানার কালিমিশ্রিত ছাইয়ের ক্ষতিকর প্রভাবের দৃশ্য। গাছপালার পাতা, ঘরের চাল, বারান্দায় ঝোলানো কাপড়, গৃহপালিত পশুর গায়েও কালির আস্তরণ। বাড়ি আঙিনার খড়ের গাদা কালিতে ছেয়ে আছে। প্রতিটি বাড়ির টিনের চালা কালো রং ধারণ করেছে।

জাহানারা বেগম নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আলী পেপার মিল তাদের কারখানার ভেতরে বিপুল পরিমাণ কাগজ ও ধানের তুষ পোড়ায়। এতে প্রচুর কালো কালি বাতাসে ভেসে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিদিন কাপড় ধুতে হয়।

কারখানার প্রাচীরের পাশে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গাঢ় কালো রংয়ের ছাইয়ের স্তূপটি ছোটখাটো পাহাড়ের মতো আকার ধারণ করেছে। আশপাশে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে আছে ছাইয়ের কিছু অংশ। এগুলো হাতে নেওয়ার পর ছাই ফেলে দিলেও হাত থেকে কালি সহজে সরানো যাচ্ছিল না।

তালতলী গ্রাম ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা হয়। গণমাধ্যমকর্মীর পরিচয় জেনে ভোগান্তির বিষয়ে গ্রামের লোকজন আগ্রহ নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তাঁদের কথায় উঠে আসে কারখানার ছাই ওই এলাকার জনজীবন বিষিয়ে তুলেছে। বাড়িতে

অনবরত কালিমিশ্রিত ছাই উড়তে থাকে। জানালা-দরজা দিয়ে ছাই ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। আসবাবে ধুলার স্তর জমে যায়। শিশুসহ বৃদ্ধদের নিশ্বাসে সমস্যা হয়। ১০ বছর ধরে এই ভোগান্তি পোহাচ্ছে স্থানীয় লোকজন। কারখানার লোকজন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও পরে কোনো ব্যবস্থা নেন না।

কালিমিশ্রিত ছাইয়ের কারণে বারান্দায় ঝোলানো কাপড়ে, গৃহপালিত পশুর গায়েও পড়ে কালির আস্তরণ। ১০ বছর ধরে চলছে এমন ভোগান্তি

স্থানীয় বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বারবার নিজেদের কষ্টের কথা কারখানার লোকজনকে জানিয়েছি। আমরা গরিব বলে আমাদের কথার কোনো গুরুত্ব নাই। কেউ আমাদের এই দুর্ভোগ সমাধানে এগিয়ে আসেনি।’

ছাইয়ের কারণে বিভিন্ন ভোগান্তি তুলে ধরে একই গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, কালি বাতাসে ভাসতে থাকে। এতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত বিভিন্ন রোগবালাইয়ে ভুগছেন তাঁরা। ধান কাটার পর সেগুলো মাড়াই করার সময় শরীর কালিতে কালো হয়ে যায়। শাকসবজি উৎপাদন করার সুযোগ নেই। কারণ, এসব কালিমিশ্রিত শাকসবজি কেউ কিনবে না।

কালিমিশ্রিত এসব ছাইয়ের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে বলে জানালেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশুবিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন, দীর্ঘদিন উড়ন্ত ছাইয়ের মধ্যে শিশুরা বেড়ে উঠলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে। অ্যালার্জি বেড়ে যাবে। ফুসফুস চরমভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। একসময় অ্যাজমাসহ ফুসফুসের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বাতেন সরকার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি কারখানা কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে, তারা কথা শোনে না, যা খুশি করে। এদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে। সেখানে লোকজনের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো ট্যাক্সও পরিশোধ করে না। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে মানুষগুলো স্বস্তিতে বাঁচতে পারবে।’

বাহাদুর শাহ পার্কে ইজারা

ইতিহাসের ওপর ‘আক্রমণ’

২২ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরে স্থায়ী অবকাঠামো বানিয়ে খাবারের দোকান চালুর আড়ালে লোভ এবং ভাগবাঁটোয়ারার বিষয়টি মূলত কাজ করছে—এমন সন্দেহ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই পার্ক রক্ষার দাবিতে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজস্ব আয় বাড়ানোর কথা বলে কার্যত বাংলাদেশের একটি বিরাট ঐতিহ্যকেই নষ্ট করছে। অথচ সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হচ্ছে খেলার মাঠ, উন্মুক্ত জায়গা, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও স্থান রক্ষা করা। তা না করে ‘ইতিহাসের ওপর আক্রমণ’ করা হচ্ছে।

বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরে গতকাল শনিবার বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে আয়োজিত সুধী সমাবেশে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেন, ‘বাহাদুর শাহ পার্কে খাবারের দোকান স্থাপন করতে ইজারার নামে পেছনের দরজা দিয়ে টাকার ভাগ–বাঁটোয়ারা হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন বা তারা (সিটি করপোরেশন) বোঝাতে পারে, এটা তো ছোট একটা রেস্তোঁরা, এতে কোনো অসুবিধা নেই। এটি কোনোভাবেই ছোট রেস্তোরাঁ নয়। লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, সুই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোনোর একটা ব্যবস্থা হচ্ছে।’

সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মেয়র (শেখ ফজলে নূর তাপস) যে কাজ করছেন, এটা হচ্ছে ইতিহাসের ওপর আক্রমণ বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। বাহাদুর শাহ পার্ক ‘মুনাফাখোরদের’ আগ্রাসনের শিকার হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরো দেশের জন্য এই পার্ক গুরুত্বপূর্ণ। এমন উন্নয়ন চাই না, যে উন্নয়নে কিছু মুনাফাখোরের হাতে টাকা জমতে থাকবে, সম্পদ জমতে থাকবে। আর দেশের বেশির ভাগ মানুষ অতিষ্ঠ হবে, অসুস্থ হবে। তাদের উন্মুক্ত জায়গা দখল হয়ে যাবে।’

বাহাদুর শাহ পার্ক রক্ষার দাবিতে স্থানীয় চারটি সংগঠনের জোট ‘ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ’ আয়োজিত সুধী সমাবেশে শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, লেখকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তি-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ উপেক্ষা করেই বাহাদুর শাহ পার্কে খাবারের দোকান বা ‘ফুড ভ্যান’ চালু করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইজারাদার নিয়োগ দিয়েছিল গত বছরের অক্টোবরে। ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয় ডিএআর হোল্ডিং লিমিটেড নামের একটি কোম্পানিকে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্পত্তি বিভাগ সূত্র বলছে, ইজারাদারকে পার্কের ভেতরে এমনভাবে দোকান তৈরি করতে বলা হয়েছিল, যাতে সেই দোকান যেকোনো সময়ে স্থানান্তর করা যায়। শর্তে আরও ছিল, ইজারাকৃত স্থান ‘যেখানে যে অবস্থায় আছে’ তা কোনোভাবে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা যাবে না। কিন্তু এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইজারাদার প্রথমেই সেখানে স্থায়ী স্থাপনা (দোকান ও গুদাম) তৈরি করেছে। এর পর গত সপ্তাহে দোকানের সামনের তিন দিকে বালু, ইট-সিমেন্ট দিয়ে দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০ ফুট এবং প্রস্থে ২৫ ফুট অংশ ঢালাই করা হয়েছে।

পানি

এক কলস পানির জন্য ৪০০ ফুটের টিলা পাড়ি

ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সরলা তাঁতী। অবসরপ্রাপ্ত চা-শ্রমিক। বয়স ৭০ বছর। তিনি মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাখাইছড়া চা বাগানের উড়িষ্যা টিলায় থাকেন।

স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১০ বছর হয়েছে। ছোট ছেলেকে নিয়ে থাকেন তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর সরলার জীবনে চরম অন্ধকার নেমে আসে। আগে স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করতেন।

সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২০০ ফুট ওপরে সরলার মাটির ঘর। চা-শ্রমিকের জীবনের গল্প অনেকেরই জানা, সরলা তাদেরই একজন।

সরলা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভীষণ কষ্টের জীবন। এক কলসি পানির জন্য প্রায় ৪০০ ফুট হেঁটে যাওয়া-আসা করি। টিলায় টিউবওয়েল বা পানির ব্যবস্থা নেই। তাই ঘরের সব কাজের জন্য নিচের একটি মাত্র টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে হয়। বৃষ্টির সময় উঁচু-নিচু এই পথ অনেক বিপজ্জনক থাকে।’

সরলার মতো অনেক মানুষ বাগানে আছে যাদের খোঁজ কেউ নেন না।

শিক্ষা

শিক্ষার প্রকল্প শুরু হয়, শেষ হয় না

২০ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

বিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প নেয়। ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। ছয় বছর পরে এসে দেখা যাচ্ছে, একটি শ্রেণিকক্ষও মাল্টিমিডিয়া হয়নি। প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৮ শতাংশের মতো। যদিও দুর্নীতির অভিযোগে এক দফা প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করা হয়েছে।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে প্রকল্পটি জীবিত না মৃত তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংশয়ে পড়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে একটি প্রকল্প চলতে পারে না।

মাউশির নেওয়া এ রকম ১০টি প্রকল্পের মোটামুটি সব কটিই বাস্তবায়িত হচ্ছে ধীরগতিতে। প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বারবার বাড়ানো হচ্ছে। নতুন করে যে মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতেও কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আবার সরঞ্জাম ও নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর চাপও তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করে পরিবার

জানুয়ারি ০৪, ২০২৩, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ পরিবারকে বহন করতে হয়। এর মধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পড়ালেখার খরচ মাত্রাতিরিক্ত বেশি। এক্ষেত্রে এনজিও স্কুলের ফি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তিন গুণ বেশি। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে এই ব্যয় নয় গুণ বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ বিশেষ করে পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় শিক্ষা ব্যয়ের একটি বড় অংশ পরিশোধ করতে হয় পরিবারকে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় সন্তানের স্কুলের ফি মেটাতে ৬ শতাংশ পরিবারকে ঋণও করতে হচ্ছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগিতায় পরিচালিত জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চিত্র। মঙ্গলবার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল জাতীয় পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

ইউনেস্কা বলছে, করোনা মহামারীর পর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় শিক্ষার ব্যয় বেড়েছে, ফলে অনেক পরিবার সন্তানের শিক্ষার খরচ জোগাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। প্রাইভেট টিউশন, শিক্ষা উপকরণসহ শিক্ষাসংক্রান্ত খরচগুলো সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একই। ফলে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে এটি অনেক পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে শিক্ষা খাতে বেসরকারি খাতের আধিপত্য বেশি থাকাকে পরিবারভিত্তিক শিক্ষাব্যয় বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে বেসরকারি খাতের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার একটা বড় অংশ এখনো কিন্ডারগার্টেন ও ইংরেজি মাধ্যম প্রতিষ্ঠানের দখলে। প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যাপক জাতীয়করণের পরও প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিশু পাঠদান নিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যায়। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়ছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার বিদ্যালয়ে। আর উচ্চশিক্ষায় এক-তৃতীয়াংশের বেশি ডিগ্রি দিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সব মিলিয়ে দেশের শিক্ষা খাত এখনো অনেকাংশেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠাননির্ভর।

যাতায়াত ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনা

৪ বছরে কাজ হয়নি অর্ধেকও

৭ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও রাসায়নিক শিল্পপার্কের কাজ অর্ধেকও শেষ হয়নি। বিসিকের উদ্যোগে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানে প্রায় ৩১০ একর জায়গায় রাসায়নিক শিল্পপার্ক নির্মাণ শেষ করার নির্ধারিত সময় ছিল চলতি বছরের জুন অবধি। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ৪৮ ভাগ কাজ হয়েছে। কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের এপ্রিলে।

এই বর্ধিত মেয়াদে নির্মাণকাজ শেষ হলে প্লট বরাদ্দ শুরু হবে। তারপর সেখানে কারখানা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হবে। অর্থাৎ পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের কারখানা স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হতে আরও বেশ কয়েক বছর লাগবে। মাঝের এই লম্বা সময় রাসায়নিকের কারখানা-গুদামে ভরা ‘মৃত্যুকূপ’ বলে পরিচিত পুরান ঢাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাস করতে হবে বাসিন্দাদের।

কেরানীগঞ্জ থেকে নবাবগঞ্জ সড়কের তুলসীখালী সেতুর পরেই মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উদ্যোগে রাসায়নিক শিল্পপার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। জায়গাটি মূলত মুন্সিগঞ্জের চিত্রকোট ইউনিয়নের আড়িয়াল বিলের প্রান্তবর্তী অংশ। সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। সড়কসংলগ্ন অংশে খানিকটা সীমানাপ্রাচীরও তৈরি করা হয়েছে।

প্রকল্পের বিপরীত পাশেই ভাড়া বাড়িতে প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়। প্রকল্প পরিচালক মো.হাফিজুর রহমান জানালেন, মাটি ভরাটের কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। সীমানাপ্রাচীর তৈরির কাজ চলছে, প্রায় ১০ ভাগ কাজ এগিয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ (ডিইডব্লিউ) লিমিটেড মাটি ভরাটের কাজ করছে। সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছে এমএম বিল্ডার্স নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্প পরিচালক জানালেন, ভূমি উন্নয়ন পর্যায়ের কাজ শেষে হলে পূর্তকাজ, অর্থাৎ ভেতরে সড়ক, অফিস ভবন, প্লট এসব নির্মাণকাজ শুরু হবে। তবে সময় বাড়লেও প্রকল্প বাস্তবায়নের খরচ কমেছে। প্রথম পর্যায়ে ৩১০ একর জায়গায় এই রাসায়নিক শিল্পপার্ক গড়ে তোলার জন্য ১ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সেখান থেকে এখন ১৬১ কোটি টাকা কম লাগবে। জমি অধিগ্রহণের জন্য যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার চেয়ে কম দামে জমি কিনতে পারায় খরচ কমেছে।

বৈদ্যুতিক যানের পক্ষে প্রকৌশলীরা

২৩ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

বৈদ্যুতিক রিকশা, অটোরিকশাসহ সারা দেশে তিন চাকার যান (থ্রি–হুইলার) চলাচল করলেও ঢাকা শহরে তা নিষিদ্ধ। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এসব বৈদ্যুতিক যানবাহন ঢাকায় চলার সুযোগ দেওয়া দরকার।

জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্মরণে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত দ্বিতীয় জেআরসি স্মারক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন বক্তারা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ যে স্মার্ট ভূমিকা রাখতে পারে’ শীর্ষক এ বক্তৃতার আয়োজন করে বুয়েট অ্যালামনাই।

বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে কার্বন নিঃসরণ কমাতে পশ্চিমাদের সঙ্গে নয়, নিজেদের পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় বুদ্ধিবৃত্তি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পরিবহন খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে গেলে আমি বলি—দেখো, আমাদের এক মিলিয়নের বেশি টেসলা (বৈদ্যুতিক থ্রি–হুইলার) আছে। এগুলো বেসরকারি খাতই করেছে টুকটাক করে। এটাকে আরও ভালো করা যায় কি না, ভেবে দেখতে হবে। এভাবে স্থানীয় সমাধান খুঁজতে হবে।’

সমাজে অর্থবিত্ত প্রদর্শন করার মাত্রা বাড়ছে, এতে সমাজের স্থিতিশীলতা ও সহমর্মিতা নষ্ট হয় বলে মনে করেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের পয়সা–বিদ্যুৎ থাকুক, কিন্তু আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করব না। এই মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। আমরা খাদ্যের ব্যাপারেও দেখব যে তা যেন নষ্ট না হয়। পানির ব্যাপারে দেখব, তা যেন নষ্ট না হয়। সে দিনও বলছিলাম যে, কৃষকেরা কোনো কোনো জায়গায় পাঁচ গুণ পানি ব্যবহার করে। তারা মনে করে, পানি ফসলের জন্য ভালো। কিন্তু তাদের যদি আমরা বোঝাই, তাহলে পানি ও বিদ্যুৎ তাৎপূর্ণভাবে কমাতে পারব।’ সরকার কার্বন নিঃসরণ কমানোর চেষ্টা করে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এই স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুর রহমান। বুয়েটের সাবেক এই শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকায় বৈদ্যুতিক ছোট যানবাহন নিষিদ্ধ। মূল সড়কে নয়, ঢাকার ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় চলে। ওরা রাতের বেলা বিদ্যুৎ চুরি করে চার্জ করে। ঢাকায় এগুলো অবৈধ করে রাখা দুর্ভাগ্যজনক।

সাইফুর রহমান বলেন, রাজশাহী, কক্সবাজারে প্রায় সব বৈদ্যুতিক যানবাহন। একবার চার্জ দিলে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার চলে। ঢাকাসহ সারা দেশে এসব বৈদ্যুতিক যানবাহন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘দেশে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বড় খাত পরিবহন। পদ্মা সেতু হওয়াতে আমাদের কার্বন নিঃসরণ কতটা কমেছে, তার হিসাব বিশ্বের কাছে জমা দিয়েছি। আমরা রাস্তা ও সেতু উন্নত করার চেষ্টা করছি। এটাও কার্বন নিঃসরণ কমাতে কাজে আসবে।’

২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী মারা যান। তাঁর স্মরণে আয়োজিত এ স্মারক বক্তৃতায় বুয়েটের উপউপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জব্বার খান বলেন, পৃথিবীতে খুব কম সংখ্যক মানুষকে স্মরণ করা হয়। স্যার (জামিলুর রেজা চৌধুরী) তাঁদের মধ্যে একজন। দেশকে ভালোবেসে দুঃসময়ে তিনি বিদেশ থেকে চলে এসেছিলেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বুয়েট অ্যালামনাইয়ের মহাসচিব প্রকৌশলী মাহতাব উদ্দিন, ট্রাস্টি অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।

সব আসামি জামিনে, শুরু হয়নি বিচার

২৪ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর মাঝখানে ‘অভিযান-১০’ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হলো গতকাল শুক্রবার। ৪১ প্রাণহানির এ দুর্ঘটনায় দুটি মামলা হলেও এখন পর্যন্ত বিচার শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে সব আসামিই জামিনে বের হয়ে আবার লঞ্চসংশ্নিষ্ট কাজে যুক্ত হয়েছেন। হতাহতদের পরিবারে কান্নার রোল থামেনি। ১৬ জনের হদিস মেলেনি। শনাক্ত হয়নি আট মরদেহ। ডিএনএ পরীক্ষায় ১৪ মরদেহ শনাক্ত হলেও কবর বুঝে পাননি স্বজনরা। এমনকি সরকারি-বেসরকারি সহায়তা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপনের কথা জানিয়েছেন অনেকে।

গত বছর ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে মাঝ সুগন্ধায় অভিযান-১০ লঞ্চে টানা ৩ ঘণ্টা জ্বলা আগুনে অঙ্গার হন সরকারি হিসাবে ৪১ জন। আগুন থেকে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে স্রোতের তোড়ে ১৬ যাত্রী চিরতরে ভেসে গেছেন- এমনটি ধরে নিয়েছেন স্বজনরা ও প্রশাসন। দুর্ঘটনার পরদিন ঝালকাঠি সদরের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন অপমৃত্যু মামলা করেন। পরে নৌ আদালতে আরেকটি মামলা করেন নৌ অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক শফিকুর রহমান। এ মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লঞ্চের মালিক মো. হামজালাল শেখ, শামীম আহমেদ, রাসেল আহমেদ, লঞ্চের মাস্টার রিয়াজ আহমেদ, খলিলুর রহমান, চালক মাসুম বিল্লাহ ও আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করে। চার মাস পর তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। মামলার আরেক আসামি পৈতৃক সূত্রে লঞ্চের মালিক ফেরদৌস হাসান নাবালক হওয়ায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়।

মামলার বিষয়ে নৌ আদালতের প্রসিকিউটিং অফিসার বেল্লাল হোসাইন সমকালকে জানান, নৌযান দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত মামলার বিচার হয় নৌ আদালতে। দুটি মামলাকে একটি করে আট আসামির নামে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এটি এখন অভিযোগ গঠন পর্যায়ে রয়েছে। আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেবেন। বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড, সঙ্গে জরিমানা হতে পারে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, অভিযান-১০ দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ইঞ্জিন গরম হয়ে আগুনের সূত্রপাত বলে জানায়। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সাতটি সুপারিশও করে। নৌ মন্ত্রণালয় গঠিত ওই তদন্ত কমিটির সদস্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তৎকালীন বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক (বর্তমানে কেন্দ্রীয় দপ্তরে) কামাল উদ্দিন ভূইয়া সমকালকে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁরা প্রতিবেদন জমা দেন। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে লঞ্চের ইঞ্জিনের ত্রুটিকে চিহ্নিত করা হয়। দুর্ঘটনার কয়েক দিন আগে লঞ্চটির সহনশীলতার চেয়ে উচ্চক্ষমতার একটি ইঞ্জিন অনুমতি ছাড়াই স্থাপন করা হয়। অপর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক সামগ্রী, মাস্টার-চালক ও কর্মীদের অনভিজ্ঞতার জন্য বাড়ে প্রাণহানি।

সারারাত গাড়ি চালিয়ে এসে ফিরতি যাত্রায় আবারও স্টিয়ারিং ধরেছিলেন চালক

২৬ ডিসেম্বর ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন

কুড়িগ্রাম সদরের ত্রিমোহনী বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক ব্যক্তি ও অটোরিকশাকে চাপা দেওয়া ‘আমার এন্টারপ্রাইজ’ নামে সেই বাসের চালক স্বপন মিয়া (৪৬) রাতভর গাড়ি চালিয়ে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোরে কুড়িগ্রাম পৌঁছেছিলেন। ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ফিরতি যাত্রায় আবারও তিনি বাসের স্টিয়ারিং হুইল ধরেছিলেন। রাত জেগে গাড়ি চালিয়ে এসে তিনি পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারেননি। দীর্ঘ পথ গাড়ি চালিয়ে এসে দু-তিন ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও চালকের আসনে বসার কারণে তিনি বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন বলে মনে করছেন পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা। এতে শ্রম আইন লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

মেঘনায় জাহাজডুবি, ইলিশের অভয়ারণ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

ভোলার মেঘনা নদীতে ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেলসহ ডুবে যাওয়া জাহাজটির উদ্ধার কাজ ২৪ ঘণ্টাতেও শুরু হয়নি। এতে জাহাজের তেল নদীতে ছড়িয়ে ইলিশের অভয়ারণ্যসহ জীবৈচিত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশ ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা কে এম শাফিউল কিঞ্জল বলেন, ‘গতকাল বিকেল ৫টা থেকে সারা রাত তেল উত্তোলন অব্যাহত আছে। এখনো তেল উত্তোলন চলছে। উত্তোলন করা তেল একটি বলগেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে তেল কিছুটা ছড়িয়ে পড়লেও তা বড় আকারের নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তেল পানিসহ উত্তোলন করছি। আরও কিছু মেশিনারি এসে পৌঁছালে পানি থেকে তেল আলাদা করে উত্তোলন করা সম্ভব হবে।’

ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটি থেকে তেল উত্তোলন করে পাশে রাখা বলগেটে ট্রান্সফার করছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্মপরিচালক (উদ্ধার) আবদুস সালাম জানান, এই অয়েল ট্যাংকারটির ওঠাতে পারে এমন কোনো উদ্ধারকারী জাহাজ বিআইডব্লিউটিএ’র নেই। মালিকপক্ষ সাগরবধূ-৩ নামে একটি উদ্ধার জাহাজ পাঠিয়েছে। আরও একটি উদ্ধার জাহাজ সাগরবধূ-৪ এলে দেশীয় পদ্ধতিতে ট্যাংকারটি ওঠানোর চেষ্টা করা হবে।’

প্রতিদিন ২৯ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু

জানুয়ারি ০২, ২০২৩, বণিক বার্তা

দেশে গেল বছর ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত ও ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত, ২০১ জন আহত হন। নৌ-পথে ২৬২ টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত, ৩৫৭ জন আহত এবং ৭৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৭ হাজার ৬১৭ টি দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন। সে হিসেবে প্রতিদিন দেশে ২৯ জনের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘আট বছ‌রে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ২০২২ সালে’

০২ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

সদ‌্য বিদায়ী ২০২২ সালে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছেন, যা গত আট বছ‌রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে সা‌ড়ে ২৮ শতাংশ দুর্ঘটনায় মোটরসাই‌কে‌লের সং‌শ্লিষ্টতা র‌য়ে‌ছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই সব তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে  সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতি‌বেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হ‌য়ে‌ছে, গত বছ‌রে রেলপথে ৬০৬ টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত এবং ২০১ জন আহত হয়েছে। ২৬২ টি নৌ দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জনের প্রাণ গে‌ছে।  ৭৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৭ হাজার ৬১৭ টি দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন।

৮ দিনের মাথায় মেঘনায় ডুবে যাওয়া তেলবাহী জাহাজ উদ্ধার

০২ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো

ভোলার মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়ার আট দিনের মাথায় তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের পর মালিকপক্ষ জাহাজটি নিয়ে আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়।

মুঠোফোনে ট্যাংকার জাহাজের মাস্টার মাসুদুর রহমান বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর ভোরে ভোলার মেঘনা নদীতে কুয়াশার কবলে পড়ে অন্য জাহাজের ধাক্কায় ১১ লাখ ৩৪ হাজার লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে ট্যাংকার জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ তলিয়ে যায়।

জাহাজটি উদ্ধার কাজ শুরু হয় গতকাল রোববার ১১টার দিকে। গতকাল বিকেল নাগাদ ট্যাংকারটি ভেসে উঠলে, ট্যাংকারের তেল খালাস করা হয়। ট্যাংকারে ছয়টি চেম্বার বা প্রকোষ্ঠ ছিল। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকি পাঁচটির তেল ও পানি প্রকষ্ঠ থেকে খালাস করা হয়েছে। এ তেলবাহী জাহাজ উদ্ধারে মালিকপক্ষের সাগর বধূ-৩, সাগর বধূ-৪, বার্জ হুমায়রা ও জোহুরা, তেলের ট্যাংকার সাগর নন্দিনী-৩ ব্যবহার করা হয়েছে।

বিশ্রাম পান না চালক, দুর্ঘটনা কাড়ে জীবন

১৮ জানুয়ারি ২৩, সমকাল

সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালার ৩২(৫) ধারায় গণপরিবহনের চালকের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৭ ডিসেম্বর কার্যকর হওয়া এই বিধিমালায় বলা হয়, একজন চালককে দিয়ে একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালানো যাবে না। এর পর কমপক্ষে আধা ঘণ্টা বিশ্রাম দিয়ে আবার তিন ঘণ্টা গাড়ি চালানো যাবে। তবে দিনে আট ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি একজন চালককে দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না।

এ নিয়ম মানতে হবে মালিককে। কিন্তু তা মানা হয় না। বিশ্রামহীন ড্রাইভিংয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে শরীয়তপুরে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার আগে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কায় যে অ্যাম্বুলেন্সের (ঢাকা মেট্রো-ছ-৭১-৩৪৮২) ছয় জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, তার চালক ২৬ ঘণ্টা ধরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

যদিও অ্যাম্বুলেন্সের মালিক মো. নূর আলমের দাবি, অভিযোগটি সঠিক নয়। তিনি সমকালকে জানিয়েছেন, সোমবার রাত ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সটি বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে। এর ঘণ্টা চারেক পর দুর্ঘটনা ঘটে।

তবে এর আগে রোববার রাত ১১টায় ঢাকা থেকে রওনা করে পরদিন দুপুর ১২টায় ভোলায় পৌঁছে অ্যাম্বুলেন্স। সেখান থেকে দুপুর ২টায় ফেরে বরিশালে। দিনে আট ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানোর নিয়ম থাকলেও, প্রায় ১৫ ঘণ্টা গাড়ি চালান চালক রবিউল ইসলাম। তবে মালিকের বক্তব্য, দুপুর ২টার পর থেকে বিশ্রামে ছিলেন চালক শ্রমিক। তাঁর ভাষ্য, কোথাও আট ঘণ্টা নিয়ম মেনে চালক নিয়োগ দেওয়া হয় না। তা সম্ভবও নয়।

মালিকরা খরচ বাঁচাতে চালককে দিয়ে একটানা গাড়ি চালালেও, এতে অপচয় হচ্ছে জীবনের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন, চালকদের বিশ্রাম দিতে হবে। তাঁদের ক্ষুধা ও ঘুম রয়েছে। কিন্তু চালক সংকটের অজুহাতে মালিকরা তা মানছেন না। পণ্যবাহী যানবাহনের চালকদের জন্য চারটি মহাসড়কে বিশ্রামাগার নির্মাণ প্রকল্পটি ছয় বছরেও সম্পন্ন হয়নি। দূরপাল্লার বাসে একাধিক চালক রাখার নিয়মও মানা হয় না।

গণতন্ত্র মতপ্রকাশের অধিকার

অন্য কোনো দেশে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির দৃষ্টান্তের কথা শুনিনি: জাপানি রাষ্ট্রদূত

১৪ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে বলে তাঁদের বলছে। তাই আগামী নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেবে বলে তাঁর আশা। আজ সোমবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আলোচনায় নির্বাচন নিয়ে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইতো নাওকি।

২০১৮ সালের নির্বাচনসংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে ইতো নাওকি বলেন, ‘আমি শুনেছি, (গত নির্বাচনে) পুলিশের কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছেন। আমি অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্তের কথা শুনিনি।’ আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না। ইতো নাওকি বলেন, কাজেই এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া দরকার। এটাই তাঁর দৃঢ় প্রত্যাশা।

বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা: চীন, ইরান ও মিসরের পরই বাংলাদেশ

১৭ নভেম্বর ২২, সমকাল অনলাইন

ইন্টারনেট ব্যবহার আজকাল কেবলই সেবা নয়, বিশ্বব্যাপী অধিকার হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। বেশি বাধাপ্রাপ্ত ইন্টারনেটসম্পন্ন দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রক্সির‌্যাকের করা ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা বিবেচনায় ২০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে প্রক্সির‌্যাক। সেন্সরশিপ স্কোরে ১১ এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ২১ নিয়ে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা চীনের। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইরান ও মিসর। এরপরের দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, তুরস্ক, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন্স, মেক্সিকো, ব্রাজিল, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাজ্য।

কর্তৃত্ববাদী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

০১ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

বিশ্বে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কর্তৃত্ববাদী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান হয়েছে। ‘দ্য গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি ২০২২’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিসট্যান্স (আইডিইএ)।

গত বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, কম্বোডিয়া ও কাজাখস্তানকে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, এখানে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া হচ্ছে।

নভেম্বরে ৪০ গায়েবি মামলায় আসামি ১০ হাজার: এমএসএফ

৩০ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

বিএনপির রাজশাহীর বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৪০টি  গায়েবি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১০ হাজার জনকে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) নভেম্বর মাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। চলতি মাসে ৫৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে একজন ছাত্রদল নেতাসহ সাতজন নিহত হয়েছেন।

ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ

দেশব্যাপী ২৩২১ অভিযান গ্রেপ্তার ১৩৫৬

০৫ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে সারাদেশে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩৫৬ জনকে। ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানে গত ৪ দিনে রাজধানীতে ৪৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার সব এলাকার হোটেল ও মেসেও দফায় দফায় যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন টিম।

১০ ডিসেম্বর ঘিরেই বিশেষ অভিযান

০৭ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে পুলিশের ‘বিশেষ অভিযান’ চলছে বলে মনে করে বিএনপি। দলটি বলছে, তালিকা ধরে তাদের মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সংগঠকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলার নেতারা অভিযানের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। প্রায় প্রতি রাতে বিভিন্নজনের বাড়িঘরে অভিযান চালানো হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুসারে, বিশেষ অভিযানে গত সোমবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ২৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত তিন দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১ হাজার ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য হচ্ছে, বিশেষ অভিযানের প্রথম পাঁচ দিনে (সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯৫ জনকে। সর্বশেষ সোমবার সকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত সারা দেশে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে তথ্য গতকাল দিতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর।

তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর বলছে, বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তারের সব তথ্য তারা পায়নি। গতকাল পর্যন্ত তাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে তাদের ১ হাজার ৪০০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের বড় অংশই বিএনপির মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মী।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলা–উপজেলার বিএনপি এবং এর অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অনেকে বাড়িতে থাকছেন না। ঢাকা মহানগর বিএনপির এমন পাঁচজন নেতার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের অভিযোগ, তাঁদের খোঁজে পুলিশ বাসায় যাচ্ছে। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ভয় দেখাচ্ছে।

আ.লীগের সমাবেশ হলে অনুমতি ও শর্তের বিষয়ে নীরব থাকে পুলিশ

০৭ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

জনদুর্ভোগ হবে—তাই ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার সড়কে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। যদিও গত এক মাসে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় প্রগতি সরণিতে এবং উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে দুটি বড় সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত ৫ ও ২০ নভেম্বর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি সড়কে ওই দুই সমাবেশের কারণে ব্যাপক জনদুর্ভোগ হলেও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) তখন নীরব ছিল।

এমনকি ওই দুটি সমাবেশ রাস্তার পরিবর্তে খোলা মাঠে করা বা সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর কোনো শর্ত দেওয়ার কথাও শোনা যায়নি। দুটি সমাবেশেই প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নয়াপল্টনে বিএনপি–পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ১

০৭ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির নাম মকবুল আহমেদ। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।

গাজীপুরে পুলিশের তল্লাশি, চেক করা হচ্ছে ‘ফোনের মেসেজ’

৮ ডিসেম্বর ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে গাজীপুরে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিটি গাড়ি ও যাত্রীদের তল্লাশি করছে পুলিশ।

পুলিশ দূরপাল্লার বাসের গতিরোধ করে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ, ব্যাগ, বস্তার পাশাপাশি মুঠোফোনের বিভিন্ন অ্যাপসের মেসেজ, ছবিও চেক করছে। এতে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, “১ ডিসেম্বর থেকেই আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় মহাসড়কে গাড়িতে তল্লাশি চলছে। প্রতি থানার আওতায় দুইটি করে চেক পোস্টে এ অভিযান চলছে।”

বিএনপি নেতাকে না পেয়ে ছেলেকে আটক

ডিসেম্বর ৮, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবির বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ রবির ছেলেকে আটক করেছে বলে পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত আনুমানিক ১টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে৷

মনিরুল ইসলাম রবি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভোররাত আনুমানিক ১টার দিকে আমার বাসায় পুলিশ অভিযান চালায়৷ ওই সময় বাসায় আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে ঘুমাচ্ছিল৷ শতাধিক পুলিশ সদস্য বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে৷ তল্লাশি চালিয়ে পুরো ঘর তছনছ করে।’

পুলিশ সদস্যরা অন্তত এক ঘণ্টা তার বাসায় অবস্থান করেন উল্লেখ করে রবি আরও বলেন, ‘আমি কোথায় আছি তা পরিবারের সদস্যদের কাছে জানতে চাওয়া হয়৷ আমাকে না পেয়ে আমার ছোটছেলে রোবায়েত ইশফাক প্রিয়তমকে (২০) ধরে নিয়ে যায়৷’

মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গভীর রাতে আটক করেছে পুলিশ: বিএনপি

০৯ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে পুলিশ আটক করেছে বলে দলের একজন নেতা জানিয়েছেন।

বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেছেন, গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা দলের শীর্ষস্থানীয় এই দুই নেতাকে তাঁদের বাসা থেকে আটক করে নিয়ে গেছেন।

রাস্তায় বাস নেই, পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে মানুষ

১০ ডিসেম্বর ২০২২, যুগান্তর

বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা না দিলেও দেখা মিলছে না বাসের।  একই চিত্র রাজধানীর প্রবেশপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশেও।

গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শনিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় এই চিত্র দেখা যায়। একই চিত্র রাজধানীর ভেতরেও।

মুঠোফোন ঘেঁটে ‘বিএনপি সমর্থক’ ১০-১২ জনকে পুলিশে দিল ছাত্রলীগ

১০ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ৷ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় অবস্থান করছেন।

ক্যাম্পাসের অন্যতম প্রবেশমুখ নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে থেকে মুঠোফোন ঘেঁটে বিএনপি-সমর্থক ১০-১২ জনকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগ।

আজ শনিবার সকালে ও দুপুরে দুই দফায় বিএনপি সমর্থক সন্দেহে ১০-১২ জনকে নীলক্ষেতের তোরণের সামনে আটক করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মারধর ও মুঠোফোন ঘাঁটার পর তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁরা।

জাপায় চলছে নাটক

রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা স্থগিত হলো পৌনে একঘণ্টা পর

১৪ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

জাতীয় পার্টিতে (জাপা) নাটক অব্যহত রয়েছে। বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তাঁর অনুসারীরা। কিন্তু পৌনে এক ঘণ্টা পর বিরোধীদলীয় নেতার প্রেস উইং পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার ঘোষণাটি স্থগিত করা হয়েছে।

রওশনপন্থিদের সূত্রের খবর, ‘উচ্চ পর্যায়ের’ নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়ে জাপার দখল নেওয়া থেকে নিবৃত্ত হয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাত করেন রওশন এরশাদ ও তাঁর ছেলে রাহগির আলমাহি এরশাদ সাদ। জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ডাকে।

‘প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টি পরিচালনা করেন, বিষয়টি এমন না’

ডিসেম্বর ১৫, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্ব নিয়ে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। দলের প্রধান কে হবেন, এ নিয়ে বেগম রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়। তাদের দুজনের মধ্যে সরকারের সঙ্গে রওশন এরশাদের সুসম্পর্ক রয়েছে।

জাপার সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা করা হয়েছে। দলটির সাবেক এক নেতার মামলায় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের গত ৩০ অক্টোবর থেকে দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। দলটি কে চালাচ্ছেন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছেন, এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনা আছে। আলোচনায় আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টি পরিচালনা করে থাকেন।

গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেগম রওশন এরশাদ, জি এম কাদের এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ বৈঠক করেন।

জাতীয় পার্টির চলমান সংকট বিষয়ে জি এম কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, সেটি স্বাভাবিক। এই দ্বন্দ্ব সব দলেই থাকে। তবে আমাদেরটা একটু বাড়িয়ে বলা হয়। অনেক সময় সংকটের সৃষ্টি করা হয়, টানাপোড়েন তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। কারণ আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে। আমি এটি স্বাভাবিক মনে করি। যে টানাপোড়েন আছে, সেটা তেমন কিছু না।’

আলোচনা আছে যে, জাতীয় পার্টি পরিচালিত হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায়। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর এই আলোচনা আরও জোরদার হলো কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টি পরিচালনা করেন, বিষয়টি এমন না। তার সঙ্গে আমাদের সখ্যতা অনেক আগে থেকেই ছিল। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টির শুভাকাঙ্ক্ষী। সেই হিসেবে অনেক সময় কিছু কথা বলেন। সেগুলো আমরা মানতে পারি, নাও পারি। আমাদের দল ভালো থাকুক, আমরা ভালো থাকি, এটা তো স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক কথা।’

বিশেষ অভিযান শেষ, ৯ দিনে গ্রেপ্তার ৮২৫৯ জন

১৫ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানের ১৫ দিন আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশ সারা দেশে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে অভিযানের ৯ দিনে সারা দেশে মোট ৮ হাজার ২৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ছয় দিনের বিশেষ অভিযানের ফলাফল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া যায়নি।

মহান বিজয় দিবস, খ্রিষ্টানদের বড়দিন ও খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণ উদ্‌যাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে এবং ঢাকায় দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে পুলিশ এ বিশেষ অভিযান চালায়। তবে বিএনপির অভিযোগ, তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতেই পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়েছে।

ফখরুলদের জেলজীবন দীর্ঘায়িত হচ্ছে

১৬ ডিসেম্বর ২২, সমকাল

হোক সেটা পুরোনো, কিংবা নতুন। মামলার বৃত্ত থেকে যেন বেরোতেই পারছে না বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারাও বাদ যাচ্ছেন না মামলার ফাঁদ থেকে। পুরোনো মামলা তো আছেই, এখন উজ্জীবিত বিএনপিকে ঠেকাতে নতুন মামলা ঠুকে বোতলবন্দির চেষ্টা চলছে। মামলার রোষে পড়ে আদালত আঙিনায় নেতাকর্মীর এখন নিত্যচক্কর। প্রিয় রাজনীতির মাঠকে আপাত বিদায় বলে দলটির অনেক শীর্ষ নেতার ঠাঁই কারাগারে। পুরোনো মামলায় জামিনে থাকলেও নতুন মামলায় ভুগতে হচ্ছে অনেককে। মামলায় অচেনা আসামির তালিকায় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে কারও কারও নাম। সারাদেশে পেন্ডিং মামলায় শোন অ্যারেস্টের ঘটনাও পেয়েছে গতি।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদ, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত আগস্ট থেকে সারাদেশে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। গত ১২ অক্টোবর থেকে একই দাবিতে ১০ বিভাগীয় নগরে গণসমাবেশও করে দলটি। গেল ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোলাপবাগের গণসমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি প্রথম ধাপের আন্দোলনে যবনিকা টানে। আন্দোলনের এ সময়ে সারাদেশে পাঁচ শতাধিক মামলায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। আসামি করা হয়েছে অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মীকে। অচেনা আসামি আরও কয়েক হাজার।

ঢাকার গণসমাবেশ ঘিরে গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীর রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়। এতে একজন নিহত ও অর্ধশত আহত হন। সংঘর্ষের পর পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে হানা দেয়। পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় আলাদা চারটি মামলা করে পুলিশ। এতে ৭২৫ জনের নাম উল্লেখসহ দুই হাজার ৯৭৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার হন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীসহ আরও অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা রয়েছেন। পুলিশের করা মামলায় নাম উল্লেখ করা নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস ছিলেন না।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক, গ্রেপ্তারদের মুক্তিসহ ৭ দাবি

১৭ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে নেতা–কর্মী ও আলেমদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন। আজ শনিবার বিকেলে হেফাজত নেতারা গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

এর আগে সকালে রাজধানীর গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তনে আয়োজিত ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে একই দাবি জানিয়েছিলেন হেফাজত নেতারা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারীও ছিলেন। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হেফাজতের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বিকেল পৌনে চারটার দিকে গণভবনে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা তারা বৈঠক করে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।

‘রাষ্ট্র মেরামতে’ বিএনপির ২৭ দফার রূপরেখা

১৯ ডিসেম্বর ২০২২, প্রথম আলো

সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ধরল বিএনপি। আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ রূপরেখা তুলে ধরা হয়। এর আগে ঢাকাসহ আট বিভাগেই গণসমাবেশ করে বিএনপি। সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ করে দলটি। সেখানেই এ রূপরেখা দেওয়ার কথা জানানো হয়। আজ রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ রূপরেখা তুলে ধরেন।

বিএনপির রূপরেখাটি তুলে ধরা হলো:

বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়া এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়িয়া তুলিয়াছিল, সেই রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাহাদের হাতে নাই। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকাঠামোকে ভাঙ্গিয়া চুরমার করিয়া ফেলিয়াছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করিতে হইবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরাইয়া দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হইবে। উক্ত ‘জাতীয় সরকার’ নিম্নলিখিত রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করিবে: 

১. বিগত এক দশকের অধিক কালব্যাপী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করিয়া রাখার হীন উদ্দেশ্যে অনেক অযৌক্তিক মৌলিক সাংবিধানিক সংশোধনী আনয়ন করিয়াছে। একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করিয়া সকল বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনা করিয়া এই সব রহিত/সংশোধন করা হইবে এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সাংবিধানিক সংস্কার করা হইবে। সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করিয়া জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হইবে।

২. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সকল মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হইবে। এই জন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাইতে হইবে। এই জন্য একটি ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠন করা হইবে। 

৩. বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হইবে।

৪. প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা হইবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুসমন্বয় করা হইবে।

৫. পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন না।

৬. বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে ‘উচ্চ-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’  প্রবর্তন করা হইবে।

৭. আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত—এমন সব বিষয় ব্যতীত অন্য সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়া দেখা হইবে।

৮. রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন, দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করিবার লক্ষ্যে বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করা হইবে। ইভিএম নয়, সকল কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা হইবে। আরপিও, ডেলিমিটেশন অর্ডার এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার করা হইবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা হইবে।

৯. সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠিয়া সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিবার লক্ষ্যে এই সকল প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা হইবে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগ প্রদান করা হইবে।   

১০. বাংলাদেশের সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হইবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা হইবে। জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ চাকুরীর শৃঙ্খলাবিধান সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক পরিচালিত হইবে। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পৃথক সচিবালয় থাকিবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে বর্ণিত পূর্বেকার ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হইবে। এই জন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন করা হইবে। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠিয়া কেবল জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, বিচারবোধ ও সুনামের কঠোর মানদণ্ডে যাচাই করিয়া বিচারক নিয়োগ করা হইবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫(গ) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ডসম্বলিত ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ প্রণয়ন করা হইবে।

১১. দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিষেবা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন গড়িয়া তুলিবার লক্ষ্যে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করিয়া প্রশাসন পুনর্গঠন করা হইবে। মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা হইবে।

১২. সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, মিডিয়া সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী এবং বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য মিডিয়া ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা হইবে। সৎ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করিবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হইবে; এই লক্ষ্যে আইসিটি অ্যাক্ট-২০০৬–এর প্রয়োজনীয় সংশোধন ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮ বাতিল করা হইবে। চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হইবে।

১৩. দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হইবে না। বিগত দেড় দশকব্যাপী সংঘটিত অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করিয়া একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা এবং শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। দেশের বাহিরে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ‘দুদকের’ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হইবে। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ করা হইবে।

১৪. সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হইবে। মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অমানবিক নিষ্ঠুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হইবে। ইউনিভার্সেল হিউম্যান রাইটস চার্টার অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হইবে। সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে মানবাধিকার কমিশনে নিয়োগ প্রদান করা হইবে। গত দেড় দশক যাবৎ সংঘটিত সকল বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্মম শারীরিক নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর ও অমানবিক অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ব্যক্তিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সুবিচার নিশ্চিত করা হইবে।

১৫. অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, করপোরেট নেতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হইবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে প্রবৃদ্ধির সুফল সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ করা হইবে।

উপরোক্ত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, জুডিশিয়াল কমিশন, মিডিয়া কমিশন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশনগুলি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্ব স্ব প্রতিবেদন দাখিল করিবে, যেন সংশ্লিষ্ট সুপারিসসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।

১৬. ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’—এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করিবেন। দলমত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল জাতিগোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্ম-কর্মের অধিকার, নাগরিক অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হইবে।

১৭. মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমিকদের প্রাইজ ইনডেক্স বেজড ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হইবে। শিশুশ্রম বন্ধ করা হইবে। চা-বাগান, বস্তি, চরাঞ্চল, হাওর-বাঁওড় ও মঙ্গাপীড়িত ও উপকূলীয় অঞ্চলের বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হইবে। 

১৮. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা হইবে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ রোধ করিবার লক্ষ্যে জনস্বার্থবিরোধী কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হইতে বিদ্যুৎ ক্রয়ে চলমান সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ করা হইবে। আমদানিনির্ভরতা পরিহার করিয়া নবায়নযোগ্য ও মিশ্র এনার্জি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং উপেক্ষিত গ্যাস ও খনিজ সম্পদ আবিষ্কার ও আহরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।

১৯. বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হইবে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হইবে না এবং কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাইবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিয়া এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগাইয়া ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হইলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা এবং আইনের আওতায় আনিয়া শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হইবে।

২০. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করিয়া গড়িয়া তোলা হইবে। স্বকীয় মর্যাদা বহাল রাখিয়া প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা হইবে।

২১. ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হইবে। এই সকল প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা হইবে, যেন তাহারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা রাখিতে পারে।

স্থানীয় প্রশাসন ও অন্য কোনো জনপ্রতিনিধির খবরদারিমুক্ত স্ব