বিশ্বব্যাপী খাদ্য এবং দারিদ্র্যের কৌশলগত সঙ্কট

মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখার স্বার্থে জিইয়ে রাখা

বিশ্বব্যাপী খাদ্য এবং দারিদ্র্যের কৌশলগত সঙ্কট

কলিন টডহান্টার

রাশিয়া-ইউক্রেন-ন্যাটো যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর যোগান সংকট দেখা দিয়েছে। এর সুযোগে এগুলোর সাথে যুক্ত কতিপয় বহুজাতিক কোম্পানি এবং রাষ্ট্র অতিমুনাফা ও আধিপত্য নিশ্চিত করার পথ ধরেছে। এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত একটি পর্যালোচনা করা হয়েছে এ লেখায়। অনুবাদ করেছেন মেহেদী হাসান। মূল লেখার লিংক: https://countercurrents.org/2022/08/an-engineered-food-and-poverty-crisis-to-secure-continued-us-dominance/

২০২২ সালের মার্চে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস (Antonio Guterres) ইউক্রেন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ‘অনাহারের ভয়াবহতা এবং বৈশ্বিক খাদ্যব্যবস্থার চরম বিপর্যয়’ সম্পর্কে সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন। গুতেরেস বলেছিলেন, সরবরাহ প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং এর ফলে অতিদরিদ্র মানুষজন চরম বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থা আবার বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতার বীজ বপন করছে।

আন্তর্জাতিক খাদ্য বিশেষজ্ঞদের (International Panel of Experts on Sustainable Food Systems) মতে, সারা বিশ্বে বর্তমানে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহের ঘাটতিজনিত কোনো ঝুঁকি নেই। (উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ার ফলে তার বিতরণ-সরবরাহে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়, কিন্তু যুদ্ধের ফলে বণ্টন ব্যবস্থার সাপ্লাই চেইন বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে সংকট তৈরি হচ্ছে)।

আমরা আমাদের চারপাশে খাদ্যের যথেষ্ট প্রাচুর্য দেখতে পাই, কিন্তু দাম ঊর্ধ্বমুখী। সমস্যাটি খাদ্য ঘাটতিজনিত নয়; বরং খাদ্যপণ্য নিয়ে ফাটকাবাজিজনিত। মানুষের চাহিদা ও প্রকৃত খাদ্য নিরাপত্তার বিপরীতে একটি অন্তর্নিহিত ত্রুটিযুক্ত খাদ্যব্যবস্থাকে কর্পোরেট কৃষি ব্যবসায়ী এবং পণ্য সরবরাহকারীদের স্বার্থে ব্যবহারের কারণে বিশ্বব্যাপী এ সমস্যা (সাধারণের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাওয়া) দেখা দিয়েছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ হলো একটি ভূরাজনৈতিক বাণিজ্য ও জ্বালানি সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব। এই যুদ্ধ রাশিয়া ও ইউরোপের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক (proxy) যুদ্ধ; রাশিয়া থেকে ইউরোপকে আলাদা করার একটি চেষ্টা। একদিকে ইউরোপকে বিপর্যস্ত করা এবং অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর (ইউরোপের জনগণকে) পুনরায় আরও নির্ভরশীল করে তোলার জন্য রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাইকেল হাডসন (Michael Hudson) সম্প্রতি বলেছেন, শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধ হলো ইউরোপ ও জার্মানির বিরুদ্ধে। (রাশিয়ার বিরুদ্ধে) নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হলো ইউরোপ ও অন্য মিত্রদের সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা থেকে বিরত রাখা।

১৯৮০ সাল থেকে উদারনৈতিক নীতিমালা মার্কিন অর্থনীতিকে ভেতর থেকে ফাঁপা করে দিয়েছে। রাষ্ট্রটির অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীল ভিত্তি মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এর আধিপত্য বজায় রাখার একমাত্র উপায় হিসেবে বেছে নেওয়া হয় চীন ও রাশিয়ার (বিশেষত অর্থনীতির) ভিত্তিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া এবং ইউরোপকে দুর্বল করা। হাডসন বলেন, বছরের শুরুতে বাইডেন এবং মার্কিন নয়া রক্ষণশীলরা নর্ডস্ট্রিম ২ এবং রাশিয়ার সঙ্গে সমস্ত (জ্বালানি) বাণিজ্য অবরুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছিল, যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ খাতে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করতে পারে।

১৯৮০ সাল থেকে উদারনৈতিক নীতিমালা মার্কিন অর্থনীতিকে ভেতর থেকে ফাঁপা করে দিয়েছে। রাষ্ট্রটির অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীল ভিত্তি মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এর আধিপত্য বজায় রাখার একমাত্র উপায় হিসেবে বেছে নেওয়া হয় চীন ও রাশিয়ার (বিশেষত অর্থনীতির) ভিত্তিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া এবং ইউরোপকে দুর্বল করা।

বর্তমানে ‘green agenda’-র নানা ধরনের বাগাড়ম্বর সত্ত্বেও অন্যান্য দেশের ওপর কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করে আছে। এমনকি রাশিয়া ও চীন ডলার থেকে দূরে সরে গেলেও মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখার প্রচেষ্টার যে মূল চাবিকাঠি–তেল ও গ্যাসের ডলারে মূল্য নির্ধারণ (এবং এর ফলে ঋণ) এবং নিয়ন্ত্রণ–সেটি রয়েই গেছে।

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কীভাবে কার্যকরী হবে (এবং এর প্রভাব) যুক্তরাষ্ট্র তা আগেভাগেই জানত। তারা জানত, এই নিষেধাজ্ঞা বিশ্বকে দুটি ব্লকে বিভক্ত করার অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে এবং একটি নতুন শীতল যুদ্ধের ইন্ধন জোগাবে, যার একদিকে থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ আর অন্যদিকে থাকবে প্রধানত দুটি দেশ-চীন ও রাশিয়া। মার্কিন নীতিনির্ধারকরা এও জানতেন যে, জ্বালানি ও খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্যের কারণে ইউরোপ ভয়ংকর দুর্বিপাকে পড়বে এবং ক্রমবর্ধমান দামের কারণে খাদ্য আমদানিকারক দক্ষিণ বিশ্বের মানুষ চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হবে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বড় ধরনের সংকট সৃষ্টির কৌশল এই প্রথমবারের মতো করেছে এমনটি নয়। (তারা বরাবরই) অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দামে (বৃদ্ধিজনিত) অসহনীয় তীব্র আঘাতের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে নির্ভরশীলতা এবং ঋণের ফাঁদে কার্যকরীভাবে আটকে ফেলতে চেষ্টা করে।

Andrew Gavin Marshall ২০০৯ সালে বিস্তৃত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, ১৯৭৩ সালে (তখনো ডলারের স্বর্ণভিত্তিক মানদণ্ড থেকে বেরিয়ে আসার খুব বেশিদিন হয়নি) হেনরি কিসিঞ্জার মধ্যপ্রাচ্যের (আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ এবং ‘জ্বালানি সংকট’) ঘটনাগুলো নিজেদের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) স্বার্থে ব্যবহার করতে কীভাবে সক্রিয় হয়েছিলেন। ভিয়েতনামে যুদ্ধের কারণে কার্যত দেউলিয়া হওয়া এবং জার্মানি ও জাপানের অর্থনৈতিক উত্থানের কারণে হুমকির সম্মুখীন হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের নেওয়া কৌশলগুলো বিশ্বব্যাপী অব্যাহত আধিপত্য বজায় রাখতে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল।

ভিয়েতনামে যুদ্ধের কারণে কার্যত দেউলিয়া হওয়া এবং জার্মানি ও জাপানের অর্থনৈতিক উত্থানের কারণে হুমকির সম্মুখীন হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের নেওয়া কৌশলগুলো বিশ্বব্যাপী অব্যাহত আধিপত্য বজায় রাখতে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল।

কিসিঞ্জার ওপেকভুক্ত (Oil producing & export countries-OPEC) দেশগুলোর তেলের দাম অত্যধিক বৃদ্ধি নিরাপদ করতে এবং এভাবে উত্তর সাগরের (North Sea) তেল সম্পদের ওপর নিজেদের অতিরিক্ত সুবিধা আদায়কারী অ্যাংলো-আমেরিকান তেল কোম্পানিগুলোর জন্য পর্যাপ্ত মুনাফা আদায়ে সাহায্য করেছিলেন। এ ছাড়াও তিনি সৌদিদের সঙ্গে পেট্রোডলার ব্যবস্থাকে সংযুক্ত করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে আফ্রিকান দেশগুলোকে একই পথের পথিক হতে সহায়তা করেন, যারা আবার (তেলভিত্তিক) শিল্পায়নের পথে যাত্রা শুরু করে এবং অন্যদিকে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এই দেশগুলোই (মার্কিন বলয়ে) নির্ভরশীলতা এবং ঋণের পাকচক্রে ঘুরপাক খেতে থাকে।

এটি ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয় যে, উচ্চহারে দাম নির্ধারণের তেলনীতির লক্ষ্য ছিল ইউরোপ, জাপান এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের ক্ষতিসাধন করা। বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা নিশ্চিত করার জন্য জেনে বুঝে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের দারিদ্র্য অবস্থাকে জিইয়ে রেখে আবারও বিশ্বমানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করছে রাষ্ট্রটি। এই নির্ভরশীলতা এবং ঋণগ্রস্ততা সৃষ্টির কাজে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

মার্কিন নীতির কারণে কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য এবং অনাহারের জ্বালায় ভুগবে (এখনো যে দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে)। ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে যে মানুষগুলো (যাদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফাইজার গংয়ের মায়াকান্নার অন্ত নেই এবং (মহামারিকালীন) যাদের প্রত্যেকের দুই বাহুতে তারা সুঁই ফোটাতে চেয়েছিল) মারাত্মক পর্যুদস্ত আর ভয়াবহ ক্ষতির শিকার।

সাধারণ ধারণার বিপরীতে, রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ফলাফলের হিসাব কষতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো ভুল করেনি। মাইকেল হাডসন দেখিয়েছেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর লাভের পাল্লা ভারী হচ্ছে এবং জ্বালানি রপ্তানিকারক হিসেবে মার্কিন অর্থনীতির বিনিময় ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছে। অধিকন্তু রাশিয়াকে দেওয়া নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো রাশিয়ার রপ্তানি (সার উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত গম ও গ্যাস) হ্রাস করা এবং সে সুযোগে কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা। কৃষি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এদিক দিয়েও লাভবান হবে। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের ওপর আধিপত্য বজায় রাখতে চায়।

মাইকেল হাডসন দেখিয়েছেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর লাভের পাল্লা ভারী হচ্ছে এবং জ্বালানি রপ্তানিকারক হিসেবে মার্কিন অর্থনীতির বিনিময় ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছে। অধিকন্তু রাশিয়াকে দেওয়া নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো রাশিয়ার রপ্তানি (সার উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত গম ও গ্যাস) হ্রাস করা এবং সে সুযোগে কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা। কৃষি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এদিক দিয়েও লাভবান হবে।

বর্তমান নীতিগুলো, বিশেষত দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য এবং ঋণসংকট তৈরি করার জন্য সুকৌশলে সাজানো হয়েছে। তুলনায় বেশি তেল এবং খাদ্য আমদানির মূল্য পরিশোধের জন্য গৃহীত ঋণের বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ঋণসংকটকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় (জনগণের) সম্পদ বিক্রি এবং ব্যক্তিমালিকানার হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রাখতে (অতীতের ন্যায়) বিভিন্ন দেশের সরকারকে বাধ্য করতে পারে।

‘কোভিড ত্রাণ’ নামক ঋণের ছত্রছায়ায় এই সাম্রাজ্যবাদী কৌশলটি এসেছে, যা মূলত একই ধরনের (সাম্রাজ্যবাদী) উদ্দেশ্য পূরণ করেছে। আইএমএফ কোভিড-১৯ ঋণ-এর ওপর করা অক্সফাম-এর একটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালে ৩৩টি আফ্রিকান দেশকে মিতব্যয়ীতার নীতি (মূলত রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ গুটিয়ে বাজারব্যবস্থাকে প্রাইভেট পুঁজির হাতে সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দেওয়ার নীতি) অনুসরণ করতে উৎসাহিত (চাপ দেওয়া) করা হয়েছিল। যার ফলে, বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোকে ২০২২ সালের মধ্যে ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা দিয়ে অন্যথায় (যদি ঋণ পরিশোধে ব্যয় না হতো) তারা তাদের খাদ্য আমদানির খরচ মেটাতে পারত।

২০২১ সালে ৩৩টি আফ্রিকান দেশকে মিতব্যয়ীতার নীতি (মূলত রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ গুটিয়ে বাজারব্যবস্থাকে প্রাইভেট পুঁজির হাতে সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দেওয়ার নীতি) অনুসরণ করতে উৎসাহিত (চাপ দেওয়া) করা হয়েছিল। যার ফলে, বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোকে ২০২২ সালের মধ্যে ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা দিয়ে অন্যথায় (যদি ঋণ পরিশোধে ব্যয় না হতো) তারা তাদের খাদ্য আমদানির খরচ মেটাতে পারত।

অক্সফাম ও ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনালের (Development Finance International) অনুসন্ধান অনুযায়ী, আফ্রিকান ইউনিয়নের ৫৫টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ৪৩টি রাষ্ট্রকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মোট ১৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরকারি খাতের ব্যয় (জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা খাতের গৃহীত পদক্ষেপগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত) কাটছাঁট করার উদ্যোগ নিতে হবে (বিশেষত ঋণের কারণে)।

২০২০ সালের মার্চ মাসে বিশ্ব অর্থনীতি থমকে যাওয়া (lockdown) উপলক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ঋণের একটি অভূতপূর্ব প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। (নতুন ঋণের সঙ্গে আসে কঠোর শর্তাবলি) শর্তাবলির মানে হলো, জাতীয় সরকারগুলোকে পশ্চিমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। ডলারভিত্তিক এই ঋণ মার্কিন ডলারকে শক্তিশালী করতে এবং বিভিন্ন দেশের ওপর মার্কিন রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য (আধিপত্য) সাধনের শক্তি জোগাতে সহায়তা করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরি করছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য রাশিয়া এবং বিশেষ করে চীনা শিবির ও তার ‘belt road’ উদ্যোগের মধ্যে ঢুকে না গিয়ে বিশ্বের দক্ষিণের বেশির ভাগ অংশ যেন তার প্রভাব বলয়ে ঘুরপাক খায়, তা নিশ্চিত করাই এর (মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার) উদ্দেশ্য।

২০১৪ সালে মাইকেল হাডসন (Michael Hudson) বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কৃষি এবং খাদ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বৈশ্বিক দক্ষিণের বেশির ভাগ অঞ্চলের ওপর আধিপত্য করতে সক্ষম হয়েছে। নিজেদের ফসলে নিজেদের ভরণপোষণের জন্য নয়; বরং অর্থকরী ফসল এবং রপ্তানিমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদনের শর্তসাপেক্ষ বিশ্বব্যাংকের ভূরাজনৈতিক ঋণকৌশল (নির্ভরশীল) দেশগুলোকে খাদ্য ঘাটতির অঞ্চলে রূপান্তরিত করেছে।

নিজেদের ফসলে নিজেদের ভরণপোষণের জন্য নয়; বরং অর্থকরী ফসল এবং রপ্তানিমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদনের শর্তসাপেক্ষ বিশ্বব্যাংকের ভূরাজনৈতিক ঋণকৌশল (নির্ভরশীল) দেশগুলোকে খাদ্য ঘাটতির অঞ্চলে রূপান্তরিত করেছে।

মার্কিন ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে তেল খাত এবং কৃষি ব্যাবসাকে একসঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।

কার্গিল (Cargill), আর্চার ড্যানিয়েল মিডল্যান্ড (Archer Daniel Midland), বুঞ্জ (Bunge) ও লুই ড্রেফাসের (Louis Dreyfus) মতো আন্তর্জাতিক কৃষি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ নামক প্রভাবশালী ধারণাটির প্রসার ঘটিয়েছেন। জন-জাতির খাদ্যপণ্যের ক্রয়ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক সে ধারণার সমর্থন জুগিয়েছে। এর সঙ্গে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার কোনো সম্পর্ক নেই; বরং এই ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত যা কিছু, তা বিশ্ববাজার এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং যেসবের প্রক্রিয়া আবার নিয়ন্ত্রণ করছে বিশাল বিশাল সব কৃষি ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত চক্রগুলো।

তেলের পাশাপাশি বহু দশক ধরে মার্কিন ভূরাজনৈতিক কৌশলের একটি অপরিহার্য উপাদান হলো বিশ্বব্যাপী কৃষির ওপর নিয়ন্ত্রণ। ধনী তেল ব্যবসায়ীদের স্বার্থ কায়েমের উদ্দেশ্যে সবুজ বিপ্লব রপ্তানি করা হয়েছিল। অন্যদিকে দরিদ্র দেশগুলো বৃহৎ কৃষি-পুঁজির রাসায়নিক উপাদান (সার-কীটনাশক) এবং তেলনির্ভর কৃষির মডেল গ্রহণ করে (কৃষক উদ্ভাবিত প্রাকৃতিক কৃষির পরিবর্তে) যার জন্য কৃষির প্রয়োজনীয় উপাদান ও সম্পর্কিত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ঋণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

এটি জাতিগুলোকে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার একটি জটিল ফাঁদে জড়িয়ে ফেলে। যে ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে রপ্তানিমুখী মনোচাষের ওপর নির্ভরশীল। এটি আবার সার্বভৌম মার্কিন ডলারভিত্তিক ঋণ পরিশোধ এবং বিশ্বব্যাংক/আইএমএফের ‘কাঠামোগত সমন্বয়’ কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখেছি, বিশ্বের অনেক দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পরিবর্তে খাদ্য ঘাটতি এলাকায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে।

এবং আমরা এটাও দেখছি যে, দেশগুলোকে কৃষিপণ্য উৎপাদনের গোপন ঘূর্ণিপাকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। একদিকে ‍তেল এবং খাদ্য কেনার প্রয়োজনে বৈদেশিক মুদ্রা (মার্কিন ডলার) অর্জন, অন্যদিকে এটি আবার রপ্তানিমুখী অর্থকরী ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ঘেরাটোপ হিসেবে কাজ করছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষিবিষয়ক চুক্তি {Agreement on Agriculture (AoA)} ‘বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা’র ছদ্মবেশে এ ধরনের করপোরেট নির্ভরতার জন্য প্রয়োজনীয় বাণিজ্যব্যবস্থা তৈরিতে সহায়তা করে।

অনাহারের প্রক্রিয়া তৈরি, মুনাফা শোষণ অর্থাৎ পরিকল্পনামাফিক খাদ্যসংকট প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে Navdanya International-এর জুলাই ২০২২-এর একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন এবং বাণিজ্য উদারীকরণ নীতি-পরিকল্পনার মাধ্যমে (আন্তর্জাতিক) মূলত বৃহৎ কৃষি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো লাভবান হয়েছে এবং সবুজ বিপ্লবের বাস্তবায়ন সম্পর্কিত দায়ভারকে এড়ানোর চেষ্টা জারি রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইউএস লবি এবং বাণিজ্য আলোচনার নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক কারগিল ইনভেস্টর সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও গোল্ডম্যান স্যাক্সের নির্বাহী ড্যান আমস্টুটজ (Dan Amstutz), যিনি ১৯৮৮ সালে রোনাল্ড রিগান কর্তৃক GATT-এর উরুগুয়ে রাউন্ডের জন্য প্রধান আলোচক নিযুক্ত হন। যিনি মার্কিন কৃষি ব্যাবসার স্বার্থকে নয়া নীতির ভেতর অঙ্গীভূত করতে সাহায্য করেন এবং যে নীতিমালা আবার পণ্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য ও শিল্প কৃষি সম্প্রসারণের পরবর্তী গতি-প্রকৃতি পরিচালনা করতে সহায়ক হবে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি বিষয়ক চুক্তি বা AoA বিশ্ববাজারের দাম এবং দামের ওঠানামার ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য কৃষকদের রক্ষাকবচগুলোকে (রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাপ্ত সুবিধাদির ফলে একধরনের রক্ষাকবচ) বাদ দিয়ে দিয়েছে। আবার একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহৎ কৃষি ব্যাবসার সুবিধার্থে তাদের কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার ব্যতিক্রমী ব্যবস্থাও বলবৎ রেখেছে।

Navdanya লিখেছে: ‘রাষ্ট্রীয় শুল্ক নিরাপত্তা এবং ভর্তুকি অপসারণের ফলে ক্ষুদ্র কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। এর ফলে কৃষক এবং ভোক্তাদের মধ্যে আয়-ব্যয়ের একধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। একদিকে কৃষকরা যা উৎপাদন করেন, তার জন্য দাম পান কম, অন্যদিকে ভোক্তারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দাম প্রদান করেন। মাঝখানে লাভের (বাণিজ্যিক) বড় অংশটি কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত মধ্যস্বত্বভোগীরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেন।’

‘খাদ্য নিরাপত্তা’র নামে বিশ্ববাজার প্রক্রিয়ায় সংযুক্তি এবং ক্ষমতাবান করপোরেটগুলোর স্বার্থে খাদ্য সার্বভৌমত্ব এবং খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার পুরো ব্যবস্থাটিকে বিনষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

এসবের কার্যকারিতা বোঝার জন্য আমাদের ভারতের দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। ভারতে সাম্প্রতিককালে বাতিল হওয়া কৃষি খামার আইনের লক্ষ্য ছিল, বিশ্বের অন্যান্য দেশ যে ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, সে উপায়ে দেশটিকে নয়া উদারনীতির ‘shock therapy’-র লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা।

‘উদারীকরণ’ সম্পর্কিত আইনটির আংশিক লক্ষ্য ছিল মার্কিন কৃষি ব্যাবসার স্বার্থকে পরিপুষ্ট করা। ভারতের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য মজুত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়ার মাধ্যমে নিরাপত্তাহীনতার ফাঁদে ফেলা এবং পরবর্তী সময়ে সঞ্চিত বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে অস্থির বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীদের কাছে ধরনা দিয়ে খাদ্যের জন্য দরকষাকষি করা। বছরব্যাপী ব্যাপক কৃষক বিক্ষোভের কারণেই কেবল ভারত সরকারকে এই পথ অনুসরণ করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক ফটকাবাজির মাধ্যমেও বর্তমান সংকটকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। Navdanya লাইটহাউস রিপোর্টস (Lighthouse Reports) এবং দ্য ওয়্যার (The Wire)-এর একটি তদন্ত প্রতিবেদনের উল্লেখ করে দেখিয়েছে যে, কৃষিপণ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিনিয়োগ সংস্থা, ব্যাংক এবং হেজ ফান্ডগুলো কীভাবে ফাটকা বাজারের (ভবিষ্যতের মুনাফা বৃদ্ধির মহল সাজিয়ে) মাধ্যমে কৃষিপণ্যের ক্রমবর্ধমান খাদ্যের দাম থেকে লাভ হাতিয়ে নিচ্ছে। এই বাজার ব্যবস্থায় ভবিষ্যৎ দরের সঙ্গে প্রকৃত চাহিদা এবং জোগানের কোনো সম্পর্ক নেই; বরং প্রকৃত অর্থে সম্পূর্ণ কারবার চলে ফাটকা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে।

আর্চার ড্যানিয়েলস মিডল্যান্ড (Archer Daniels Midland), বুঞ্জ (Bunge), কারগিল (Cargill) ও লুই ড্রেফাস (Louis Dreyfus) এবং ব্ল্যাক রক (Black Rock) ও ভ্যানগার্ডের (Vanguard) মতো বিনিয়োগকারীরা দিনের পর দিন ধরে বিশাল সব আর্থিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে কিছু ‘দরিদ্র’ দেশে রুটির (নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের) দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। (আনু মুহাম্মদ-এর ভাষ্যানুযায়ী, এসব দেশকে দরিদ্র দেশ না বলে বলা উচিত দরিদ্রের দেশ। সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও দেশের সম্পদের ওপর জনগণের মালিকানা-কর্তৃত্ব-নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে এসব দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি)।

বর্তমানের খাদ্যসংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক কৃষি ব্যবসায়ীরা উদ্ভট ধরনের ‘সমাধানের’ কথা বলছেন। আরও বেশি উৎপাদন করতে এবং আরও ভালো ফলন খোঁজার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। বিষয়টি এমন, যেন সংকটের কারণ উৎপাদনের স্বল্পতা! তাদের এভাবে বলার অর্থ হলো, আরও বেশি রাসায়নিক উপাদান (সার, কীটনাশক), আরও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল এবং এ-জাতীয় প্রক্রিয়ার ফাঁদে ফেলে দিয়ে অধিকাংশ কৃষককে ঋণ ও নির্ভরতার মধ্যে আটকে ফেলার বন্দোবস্ত করা।

বর্তমানের খাদ্যসংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক কৃষি ব্যবসায়ীরা উদ্ভট ধরনের ‘সমাধানের’ কথা বলছেন। আরও বেশি উৎপাদন করতে এবং আরও ভালো ফলন খোঁজার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। বিষয়টি এমন, যেন সংকটের কারণ উৎপাদনের স্বল্পতা! তাদের এভাবে বলার অর্থ হলো, আরও বেশি রাসায়নিক উপাদান (সার, কীটনাশক), আরও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল এবং এ-জাতীয় প্রক্রিয়ার ফাঁদে ফেলে দিয়ে অধিকাংশ কৃষককে ঋণ ও নির্ভরতার মধ্যে আটকে ফেলার বন্দোবস্ত করা।

ঘুরেফিরে সেই একই ধরনের মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে বলা হয়, সারা বিশ্ব তার নিজস্ব উৎপাদনের অভাবে অনাহারে ভুগবে এবং তার জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, বৃহৎ কৃষি ব্যবসায়ীদের তৈরি করা ব্যবস্থার কারণে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধির জাঁতাকলে পড়ে সাধারণ মানুষকে পিষ্ট হতে হচ্ছে।

এবং সেই একই পুরোনো গল্প: একটি সমস্যার সমাধানের কৌশলে নতুন প্রযুক্তিগুলোকে প্রতিস্থাপনের স্বার্থে চাপ তৈরি করা এবং সংকটের অন্তর্নিহিত মূল কারণগুলো উপেক্ষা করে পরবর্তী সময়ে যথারীতি তাদের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সংকটকে ব্যবহার করা।

কৃষিবিদ্যা, সংক্ষিপ্ত সরবরাহ লাইন, খাদ্য সার্বভৌমত্ব এবং অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে বর্তমান পরিস্থিতির সম্ভাব্য সমাধানগুলোর বিস্তৃত বর্ণনা করে বছরব্যাপী Navdanya-এর বহু নিবন্ধ এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সাধারণ মানুষের জীবনমানের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের জন্য যুক্তরাজ্যের মতো জায়গায় শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে সমর্থন সংগ্রহ করা হচ্ছে। রেল ইউনিয়ন নেতা মিক লিঞ্চ (Mick Lynch) শ্রমিক শ্রেণির পারস্পরিক শ্রেণিগত সংহতি এবং সচেতনতার ভিত্তিতে বিলিয়নিয়ার শ্রেণির বিরুদ্ধে আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন, যারা তাদের শ্রেণিস্বার্থ সম্পর্কে খুবই ওয়াকিবহাল।

যে বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে আমরা বসবাস করছি, যেখানে স্বৈরতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী নতুন বিশ্বব্যবস্থা সাধারণ মানুষের অধিকার, জীবিকা এবং জীবনযাত্রার মানগুলোর ওপর ধ্বংসাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করছে তার বিরুদ্ধে সর্বজনের সংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ-লড়াইয়ের মাধ্যমেই কেবল এর ওপর অর্থপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করা যেতে পারে।

বহুদিন ধরে ‘শ্রেণি’র বিষয়টি মূলধারার রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যে অনুপস্থিত। একমাত্র ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ প্রশ্নটিকে সামনে হাজির করানো সম্ভব। যে বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে আমরা বসবাস করছি, যেখানে স্বৈরতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী নতুন বিশ্বব্যবস্থা সাধারণ মানুষের অধিকার, জীবিকা এবং জীবনযাত্রার মানগুলোর ওপর ধ্বংসাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করছে তার বিরুদ্ধে সর্বজনের সংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ-লড়াইয়ের মাধ্যমেই কেবল এর ওপর অর্থপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করা যেতে পারে।

Colin Todhunter: বৃটেন ভিত্তিক খাদ্য, কৃষি এবং উন্নয়নবিষয়ক লেখক ও গবেষক।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •