সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৮ এপ্রিল - ২৩ জুলাই ২০২২)
অর্থনীতি
কোথাও মিলছে না সয়াবিন তেল, হঠাৎ ‘উধাও’
০২ মে ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
রাজধানীর দিলু রোডে ঢোকার মুখে দুই সারিতে ১০টির বেশি মুদি দোকান। একটু অদূরেই একটি বড় সুপারশপ। এগুলোর কোনোটিতেই সয়াবিন তেল না পেয়ে তাহির মাহমুদ এগিয়ে যান ওই রোডের আরেক প্রান্তে, যেখানে রয়েছে আরও অন্তত পাঁচটি দোকান। সেখানেও মিলল না তেল; বাড়তি পরামর্শ এল সরিষার তেল নিয়ে যাওয়ার।
রোববার দুপুরে যখন শুনলেন তেল নেই, তখন তিনি অফিসে যাবার পথে কিনে দিয়ে যাবেন জানিয়ে বাসা থেকে বের হন। তাদের অফিস সবসময়ই খোলা থাকে; ছুটির মধ্যে ডিউটি পড়েছে তাই এদিনও যেতে হচ্ছে তাকে। তাড়া থাকায় কী করা যায় ভাবতে ভাবতেই অফিসের পথে রওনা দেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এ কর্মকর্তা।
কয়েক কিলোমিটার দূরে অফিসের কাছে মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকার দোকানগুলোতেও ঢু দিলেন পরিস্থিতি বুঝতে। সেখানেও একই কথা দোকানিদের সয়াবিন নাই, কোথাও কেউ তেল দিচ্ছে না।
নিরুপায় হয়ে বাসায় ফোন করে কথা বললেন বিকল্প নিয়ে। অফিসে ঢুকে চালডাল, পান্ডামার্ট, মিনাক্লিকের মত অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বোতলজাত সয়াবিনের খোঁজ চালালেন; তবে মিলল না। চালডালে শুধু পলিব্যাগের সয়াবিন পাওয়া গেল- তাও এক লিটারের বেশি দেবে না বলে জানাল কর্তৃপক্ষ।
ঈদের আগে এবার সত্যিই চিন্তাতেই পড়লেন তিনি। খোঁজ নিলেও আরও দুয়েক জায়গায়। তার আত্মীয় থাকেন রামপুরার বনশ্রীতে। সেখানেও সয়াবিন নেই বলে খবর এল।
শেষে পান্ডামার্ট থেকে সূর্যমুখী তেল কিনলেন সয়াবিনের প্রায় দ্বিগুণ দামে। অপেক্ষার তো উপায় নেই, কেননা ঈদ যে সামনে।
এভাবেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে তেলের খোঁজে ঘণ্টাখানেকের ‘অবাক করা’ অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন তাহির মাহমুদ।
তিনি বলেন, দিলু রোডের দূরত্ব রাজধানীর অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার থেকে কাছেই। ডিলাররা তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে এ এলাকার দোকানিদের অনেকেই নিজে থেকে কারওয়ান বাজার থেকে তেল এনে বেশ কয়েকদিন বিক্রি করেছেন। তবে গত কয়েকদিন তারা সেখানেও তেল পাননি।
তাহিরকে এসব কথা বলেছেন দিলু রোডের দোকানি মেহেদি ইসলাম; যার কাছ থেকে তিনি নিয়মিত কেনাকাটা করে থাকেন।
ঈদের দুদিন আগে রোববার এ চিত্র শুধু দিলু রোডের খুচরা দোকানের নয়; ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ মুদি দোকানের। ছোট বড় সব মুদি দোকানেই সয়াবিন ও পাম তেলের দেখা মিলছে না; ঈদের বাজার করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।
যারা আগে তেল কেনেননি তাদের অনেককে বিভিন্ন বাজারে তেলের জন্য এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ছুটতে দেখা গেছে। হঠাৎ করে তেল উধাও হয়ে যাওয়ায় উপায় না দেখে অনেকেই বেশি দাম দিয়ে সরিষা, রাইস ব্রান কিংবা সূর্যমুখী তেল কিনতে বাধ্য হয়েছেন।
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়ছে
০৫ মে ২০২২, প্রথম আলো
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়ছে। বাণিজ্যসচিবের সঙ্গে মিলমালিকদের বৈঠকের পর বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৮ টাকা। বর্তমানে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বাজারে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শনিবার থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে।
৪১% পরিবার স্বাস্থ্যকর খাবার কিনতে পারে না
০৬ মে ২০২২, প্রথম আলো
দেশের ৪১ শতাংশ পরিবারের স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। দারিদ্র্যসীমার নিচে বা দারিদ্র্যসীমার ঠিক ওপরে থাকা পরিবারগুলো স্বাস্থ্যকর খাবার কিনতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে আছে মেহেরপুর জেলার মানুষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের যৌথ গবেষণায় দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সামর্থ্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। শিগগিরই গবেষণা প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে বলে পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার কেনার সামর্থ্য অনেকের নেই। এ বিষয়ে জ্ঞানেরও ঘাটতি আছে।
বিভিন্ন সূচকে শিশুপুষ্টির উন্নতির তথ্য দিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধান ও মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে। তারপরও দেশের মানুষ তিন মাত্রার অপুষ্টির ঝুঁকিতে আছে। দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৮ শতাংশ শিশুর উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম ও ৮ শতাংশ শিশু কৃশ বা তীব্র অপুষ্টির শিকার। ৪০ শতাংশ নারী রক্তস্বল্পতায় ভুগছে অর্থাৎ তারা অণুপুষ্টিকণার ঘাটতির শিকার। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক ১৬ শতাংশ পুরুষ ও ১৮ শতাংশ নারীর ওজন বেশি। ওজন বেশি এমন নারী–পুরুষের মধ্যে স্থূলতা বাড়ছে। এসব অপুষ্টির একটি কারণ পুষ্টিজ্ঞানের ঘাটতি।
এই গবেষণায় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পর্যালোচনা করে পুষ্টির ঘাটতি চিহ্নিত করা ও সেই ঘটতি পূরণে সুপারিশ তৈরি করার জন্য এই গবেষণাটি করা হয়েছে।
প্রধান গবেষক এবং পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, কিছু মানুষ সামর্থ্য না থাকার কারণে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনতে পারে না। অনেকে খাদ্যের গুণাগুণ সম্পর্কেও জানে না, তাই সামর্থ্য থাকলেও মানুষ ঠিক খাবার কেনে না। দেশে সহজলভ্য এমন খাদ্যের গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বয়সী এবং বিভিন্ন ধরনের (গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী, কঠোর পরিশ্রমী) মানুষের জন্য ২১টি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা এ গবেষণা প্রতিবেদনে আছে।
গবেষকেরা দেখেছেন, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যতালিকায় আছে আট শ্রেণির খাদ্য: শস্য (চাল, গম), ডাল, সবজি (পাতাসহ সবজি ও পাতাবিহীন সবজি), ফল, মাংস–মাছ–ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত, তেল এবং মিষ্টি (গুড়, চিনি, মধু)। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যে আট শ্রেণির খাদ্য থাকাই যথেষ্ট নয়, তাতে প্রয়োজনীয় ক্যালরি ও অত্যাবশ্যকীয় অণুপুষ্টিকণাও থাকতে হবে। বাংলাদেশের বাজারের খাদ্যের দাম হিসাব করে গবেষকেরা দেখেছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য দৈনিক ৮৩ টাকা প্রয়োজন। এই হিসাব ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের দ্রব্যমূল্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
গবেষকেরা বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টির তথ্য নিয়েছেন নিউট্রিশন সার্ভে অব বাংলাদেশ (২০১৭–১৮) এবং বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড হাউসহোল্ড সার্ভে (২০১৫) থেকে। মানুষের ব্যয়ক্ষমতার তথ্য নিয়েছেন হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (২০১৬) থেকে।
প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল। ২০১৬ সালে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। ২০৯১ সালে ওই হার কমে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের জুনে দেখা যায়, পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এবং জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় এই সময়ের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিস্থিতি কোথায় কেমন
গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার ক্ষমতা সবচেয়ে কম খুলনা বিভাগের মানুষের। খুলনা বিভাগের ৬৬ শতাংশ পরিবারের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। সেই সামর্থ্য আছে মাত্র ৩৪ শতাংশ পরিবারের। তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থা চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগের ৭৫ শতাংশ পরিবারের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সামর্থ্য আছে।
৬৪ জেলার মধ্যে সামর্থ্যের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে ভালো অবস্থানে কক্সবাজার জেলা। এ জেলার ৯১ শতাংশ পরিবারের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সামর্থ্য আছে। অন্যদিকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মেহেরপুরে। দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চরের এই জেলার ৭৬ শতাংশ পরিবারের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সামর্থ্য নেই।
শহর ও গ্রামের পরিবারগুলোর মধ্যে সামর্থ্যের তারতম্য আছে। শহরের ৩৯ শতাংশ পরিবারের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। গ্রামে সামর্থ্য নেই ৪২ শতাংশ পরিবারের। গবেষকেরা বলছেন, গ্রামের পরিবারগুলোর সামর্থ্য কম থাকার কারণ হয়তো এই যে, গ্রামের মানুষের আয়–উপার্জন তুলনামূলকভাবে কম এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতাও কম।
ভোজ্যতেলের ৮৮% আমদানি করেছে চার কোম্পানি
০৬ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
শিল্প সুবিধায় ২০২১ সালে বিশ্ববাজার থেকে ১৮ লাখ ১৮ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এ তেল আমদানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। শুল্ক কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিল্প খাতে আমদানি করা ভোজ্যতেলের ৮৮ শতাংশই হয়েছে টিকে, মেঘনা, সিটি ও এস আলম—এ চার কোম্পানির অধীনে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২১ সালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল (শিল্প খাতে) সুবিধায় আমদানি হওয়া ১৮ লাখ ১৮ হাজার টন (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত) ভোজ্যতেলের শুল্কায়ন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, যার মূল্য ১৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। শুল্কায়ন বিবেচনায় টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের অধীনে আমদানি হয়েছে ভোজ্যতেলের ৮৮ শতাংশ। শিল্প খাতে আমদানির কারণে এসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান প্রথমেই কর পরিশোধ না করে বরং ট্যাংকে রাখা তেল খালাসের সময় ধাপে ধাপে পরিশোধের সুযোগ পায়।
ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম, তারা কথা রাখেনি: বাণিজ্যমন্ত্রী
০৯ মে ২০২২, প্রথম আলো
সয়াবিন তেল নিয়ে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কারসাজি করেছেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কারচুপির কারণে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। দামও বেড়েছে। তবে বাজারে সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট কেন তৈরি হলো, তেলের দাম কেন বাড়ল, তা জানতে আজ সোমবার সচিবালয়ে ব্যবসায়ী, মিলারসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাণিজ্যমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ, টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিকুল আথহার তাসলিম, বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষসহ অন্যরা।
বাদাম তেল খাওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
৭ মে ২০২২, মানবজমিন
সয়াবিন তেল তথা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় বাদাম তেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এক সময় বাদামের তেল হতো। সেই তেল দিয়েই ভাজাপোড়া হতো। আমাদের সেদিকে আবার দৃষ্টি দিতে হবে। আজ বিকাল সাড়ে পাঁচটার পর গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের উদাহরণ টেনে বলেন, লন্ডনে রেশন করে তেল দেয়া হচ্ছে। সেখানে ১ লিটারের বেশি কেউ তেল কিনতে পারবে না। প্রত্যেকটা জিনিস সুনির্দিষ্ট করে দিচ্ছে। এরকম একটা অবস্থা সারা বিশ্বেই। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জাহাজ ভাড়া এতো বেড়ে গেছে।
রেকর্ড উচ্চতায় বাংলাদেশে পরিবহন ব্যয়ের সূচক
১০ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
গত এক দশকে দেশে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) পরিবহন ও যোগাযোগ উপখাতের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, গত এক দশকে সিপিআই পরিবহন ও যোগাযোগ সূচক বৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ। অস্থিতিশীল কয়েকটি অর্থনীতি ছাড়া আর কোনো দেশ এদিক থেকে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য বলছে, দেশটিতে গত এক দশকে সিপিআই পরিবহন ও যোগাযোগ সূচক বেড়েছে ৪০ পয়েন্টের সামান্য বেশি। ভারতে ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিপিআই পরিবহন ও যোগাযোগ সূচক প্রায় ৫৫ পয়েন্ট বৃদ্ধির তথ্য দিয়েছে দেশটির পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়। পাকিস্তানের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, একই সময়ে দেশটিতে সিপিআই পরিবহন ও যোগাযোগ সূচক বেড়েছে প্রায় ৬০ পয়েন্ট। মালয়েশিয়ায় গত এক দশকে সিপিআই পরিবহন ও যোগাযোগ সূচক বেড়েছে প্রায় ১৫ পয়েন্ট।
অন্যদিকে দেশে গত এক দশকে সিপিআই পরিবহন ও যোগাযোগ সূচক ১৯১ পয়েন্ট বেড়েছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে উঠে এসেছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশে সিপিআই পরিবহন ও যোগাযোগ সূচকের অবস্থান ছিল ১২৭ পয়েন্ট। চলতি বছরের মার্চে এ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৮ পয়েন্টে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি হিসেবে ধরে সিপিআই প্রকাশ করে আসছে বিবিএস। ভিত্তি বছরে সূচকের মান ধরা হয় ১০০ পয়েন্ট।
ডলারের বাজার অস্থির, অস্বস্তি
১২ মে ২০২২, প্রথম আলো
অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে দাম বাড়ছে মার্কিন ডলারের। আমদানি দায় মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে গত দেড় মাসে কয়েক ধাপে ডলারের দাম বেড়েছে ৭০ পয়সা। গত সোমবার যা বেড়ে হয়েছে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা।
তবে ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের জন্য আমদানিকারকদের থেকে নিচ্ছে ৯২-৯৩ টাকা। এ কারণে খরচ বাড়ছে আমদানি পণ্যের। যার প্রভাব পড়ছে ভোগ্যপণ্যের দামে। ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে।
‘আগে দুইটা পরোটা খাইতাম, এখন একটা দিয়ে সারতে হচ্ছে’
১২ মে ২০২২, প্রথম আলো
খুলনার রূপসা নতুন বাজার লঞ্চঘাট মোড়ের ওপর একটি হোটেলে মানুষ সকালের নাশতা করছেন। হোটেলের ভেতরে বেশ কয়েক জায়গায় সাদা কাগজে বড় হরফে লেখা—‘০১/০৫/২০২২ ইং তারিখ হতে পরোটা প্রতি পিস ১০ টাকা’। অথচ গত মাসেও ওই হোটেলে ৫ টাকায় পরোটা পাওয়া যেত। সয়াবিন তেল, ময়দা, গ্যাস—তিনটারই দামই বেড়েছে। তাই অনেকটা নিরুপায় হয়েই খাবারের দাম বাড়িয়েছেন বলে জানান ওই হোটেলের মালিক।
হোটেলের মালিক মো. নুরুল হক শিঙাড়া তৈরি ফাঁকে বলেন, ‘পরোটার পাশাপাশি শিঙাড়া–পুরিতেও ২ টাকা করে বাড়াতে হয়েছে। আগের ৩২ টাকা কেজির ময়দা এখন ৬০ টাকা। আর তেলের দাম তো কয়েক দিন পরপর বাড়ে। ৩০ কেজির এলপিজি গ্যাস কয়েক মাস আগে ২ হাজার ৮০০ টাকা ছিল। এখন সেটা ৩ হাজার ২৫০ টাকায় কিনলাম। এসবের পর পোষাতে গেলে তো দাম একটু বাড়তেই হবে, বলেন!’
হোটেলে নাশতার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ইসরাফিল শেখ। স্থানীয় একটি মাছের আড়তে কাজ করেন। আলাপের মধ্যে নিজে থেকেই বলে উঠলেন, ‘ভাই, আগে দুইটা পরোটা খাইতাম, এখন একটা দিয়ে সারতে হচ্ছে। আয়ের ওপর দিয়ে তো চলতে হবে। তিনটা পরোটা আর এক বাটি ডাল মিলিয়ে ৪০ টাকা। যদি শখ করে একটা ডিম নেওয়া যায়, তাহলে তো হইলই! মাসে বেতনই পাই অল্প টাকা। সব মিলিয়ে ধরেন ডেইলি ২৫০ টাকা আয়। ওই টাকা আয় কইরে একবার নাশতা করলেই দিনের আয়ের চার ভাগের এক ভাগ টাকা নাই হইয়ে যায়।’
পাশে দাঁড়ানো ইসরাফিলের সহকর্মী মো. শাওন গাজী বলেন, ‘নাশতা তো গেলই। একটু-আধটু চা তো খেতে হয়। রুটি, কেক—সবকিছুর দাম বাড়ছে। ৫ টাকার বনরুটি এখন ১০ টাকা হইয়ে গেছে। এত সবকিছুর দাম বাড়লে পারা যায়!’
নূর আলম ইসলামও মাছের আড়তে কাছ করেন। ইসরাফিল–শাওনদের দেখে তিনিও এগিয়ে এসে আলোচনায় যোগ দেন। নূর আলম বলেন, ‘সংসার চালানোই কঠিন হয়ে গেছে। ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা বেতন। এর মধ্যে নাশতা করতেই যদি ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা চলে যায়, তাহলে আর টাকা দিয়ে মা খাবে কী, বউ-বাচ্চা খাবে কী! এ জন্য নাশতা করতিছি না। চা আর বিস্কুট খেয়ে নিচ্ছি।’
সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধের নির্দেশ
১৩ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে সরকার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকাল এ-সংক্রান্ত পরিপত্রটি জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষা সফর, এপিএ এবং ইনোভেশনের আওতামুক্ত ভ্রমণ ও ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। এ আদেশ উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অবিলম্বে আদেশটি কার্যকর হবে।
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত সভার পর বুধবার গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের বিষয়ে বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন থেকে প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, বিদেশ সফর আর নয়। যদি বিশেষ কারণে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে যেতে হয়, তাহলেই যাবেন, অন্যথায় নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর কমানো হচ্ছে, কমানো হবে।
এদিকে দামি গাড়ি ও নিত্যব্যবহার্য ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার সময় এখন ৭৫ শতাংশ অর্থ অগ্রিম জমা দিতে হবে। এছাড়া শিশুখাদ্য, খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, ওষুধ, কৃষি ও রফতানিমুখী শিল্প ছাড়া সব আমদানিতে ৫০ শতাংশ অর্থ আগে দিতে হবে। আগে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দিয়েই পণ্য আমদানি করা যেত।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: তিন বছর আয় করতে পারেনি, খরচ উঠবে কবে
১৪ মে ২০২২, বিবিসি বাংলা
চার বছর আগে ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স-এর নতুন প্রযুক্তির রকেট ফ্যালকন নাইনে করে যখন মহাকাশে প্রথম স্যাটেলাইটটি পাঠিয়েছিল বাংলাদেশে, তখন দেশটি মহাকাশে পদচিহ্ন আঁকা এলিট দেশগুলোর ক্লাবে প্রবেশের গৌরব অর্জনের পাশাপাশি এটা থেকে অনেক আয় করারও স্বপ্ন দেখেছিল।
কিন্তু চার বছর পর এসে কর্তৃপক্ষ বলছে, নানা কারণে উৎক্ষেপনের প্রথম তিন বছরে স্যাটেলাইটটি থেকে কোন আয় করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে খরচ উঠে আসার যে প্রাথমিক হিসেব নিকেশ করা হয়েছিল, তাতে দেখা যাচ্ছে এই খরচ উঠতে আরো বেশি সময় লাগবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তৈরি এবং উৎক্ষেপণে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল, যা উৎক্ষেপণের সময় বলা হয়েছিল, পরবর্তী সাত বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যে তুলে আনা সম্ভব হবে।
কিন্তু স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপনের চার বছর পূর্তিতে এসে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন, “চার বছরের মধ্যে প্রথম তিন বছরে আমরা নানা কারণে কোন আয় করতে পারিনি। কিন্তু আস্তে আস্তে আমরা আয় করতে শুরু করছি।”
বছরে ঠিক কী পরিমাণ আয় হচ্ছে স্যাটেলাইট থেকে সে বিষয়ে তথ্য দেননি মি. ইসলাম।
রাজধানীর জলাবদ্ধতা
৩ হাজার কোটি টাকা জলে
১৪ মে ২২, সমকাল
রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি বড় নগরীতে বৃষ্টির পর জলাবদ্ধতার ঘটনা নতুন নয়। জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে প্রকল্পও হয়েছে অনেক; খরচও আকাশচুম্বী। তবু এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মেলেনি নগরবাসীর। পুরো বর্ষা আসতে প্রায় এক মাস বাকি, মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। এ বছর অল্প সময়ে অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছরও অবধারিতভাবে ডুববে রাজধানী, জলাবদ্ধতায় ভুগতে হবে নগরীর বহু এলাকার বাসিন্দাকে।
২০০১ সালে ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প’ নিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে ২০১১ সালে ২০৩ কোটি টাকায় প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। কিন্তু তার পরের বর্ষা মৌসুমে আবার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ওই প্রকল্পের মূল্যায়ন করে দেখতে পায়, প্রকল্পের আওতায় যেসব কাজ করার কথা ছিল, সে রকম অনেক কাজের কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপর দ্বিতীয় ধাপের জন্য আরও ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প-২ বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৩ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষে রাজপথ যেন সাগর-নদীতে পরিণত হয়। কেবল এ দুটি প্রকল্পই নয়, গত দেড় দশকে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকা ওয়াসা এবং অবিভক্ত ও বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশন। করপোরেশন দুটি মহানগরে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের প্রায় ১০ শতাংশ খরচ করেছে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে। জলাবদ্ধতা কমেনি।
রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে
১৫ মে ২০২২, প্রথম আলো
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল ও তেলের দাম বেড়ে গেছে। সঙ্গে বেড়েছে জাহাজের ভাড়াও। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। এর চাপ গিয়ে পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। কারণ, আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে জোগান দিতে হচ্ছে আমদানির খরচ। এ অবস্থায় চলতি হিসাবের লেনদেন ভারসাম্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
এখন যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আবার আমদানি খরচ এভাবে বাড়তে থাকলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে। আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপ রয়েছে রিজার্ভের হিসাব সঠিক নিয়মে করার। সেটি করতে গেলে রিজার্ভের অর্থে গঠিত রপ্তানিকারকদের ঋণ তহবিল, সরকারি প্রকল্প ও শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ঋণ এবং সোনালী ব্যাংকে রাখা আমানত রিজার্ভের হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে। এতে রিজার্ভ কমবে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি। এখন রিজার্ভ রয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।
রাশিয়া, ইউক্রেনের পর ভারত থেকেও গম আমদানি বন্ধ
১৫ মে ২০২২, প্রথম আলো
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশে গম আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে উঠেছিল ভারত। দেশটি গত শুক্রবার গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এতে বাংলাদেশের বাজারে গমের দাম বেড়ে গেছে, যা আগে থেকেই বেশ চড়া ছিল।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) শুক্রবারের তারিখ দিয়ে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা রপ্তানিতে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে দুটি ক্ষেত্রে রপ্তানি করা যাবে—১. ইতিমধ্যে খুলে ফেলা যেসব ঋণপত্র (এলসি) বাতিলযোগ্য নয়, তার বিপরীতে এবং ২. খাদ্য ঘাটতিতে থাকা দেশের সরকারের অনুরোধের বিপরীতে ভারত সরকার অনুমতি দিলে।
‘বাজারের চাপে জীবন চ্যাপটা অইয়্যা গ্যাছে’
১৫ মে ২০২২, প্রথম আলো
দুপুর গড়িয়ে গেছে। রোদের তাপ আর তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে উঠেছেন রিপন মিয়া। মাথার ওপর ছোট্ট বৃষ্টিরোধক ত্রিপলের ছাউনি, তার নিচে ছোট্ট একটি ফ্যান ভোঁ ভোঁ শব্দে ঘুরছে। কিন্তু ঘাম থামে না। এমন অসহ্য পরিবেশেই গতকাল শনিবার দুপুরে একটা প্যান্ট সেলাই করছিলেন রিপন। পাশে একজন গ্রাহক দাঁড়ানো। নতুন প্যান্ট কিনে উচ্চতায় ছোট করতে এসেছেন তিনি।
বরিশাল নগরের গরিব আর নিম্ন মধ্যবিত্তদের মার্কেট হিসেবে পরিচিত হাজী মুহসীন হকার্স মার্কেটের ঘিঞ্জি গলির মধ্যে পাঁচ হাত দৈর্ঘ্য, তিন হাত প্রস্থের খোলা জায়গায় রিপন মিয়ার সেলাইয়ের দোকান। নতুন-পুরোনো জামা-প্যান্ট ঠিকঠাক করে যে আয়, তা দিয়ে চলে তাঁর জীবন। নিচু হয়ে কাজের ফাঁকে মাথা তুলে হেসে বললেন, ‘কিছু কাজ করাইবেন?’ ‘না’ সূচক জবাব শুনে তিনি হতাশ হলেন না; বরং হাসির রেশ অম্লান। হাতের কাজ শেষ হলে আবার হাসি দিয়ে বললেন, ‘বসতে দিমু কিতে, চেয়ার যে নাই।’
আয়রোজগার আর সংসারের কথা তুলতেই রিপন মিয়ার হাসি ম্লান হয়ে আসে। বলেন, ‘বাজারের চাপে জীবনটা চ্যাপটা অইয়্যা গ্যাছে।’ স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে তিনজনের সংসার তাঁর। মেয়ে জান্নাতির বয়স ১৩, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী অঞ্জনা বেগম পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। থাকেন নগর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে কাশীপুর এলাকায়। যে জায়গায় তিনি সেলাই মেশিন নিয়ে বসেছেন, সেখানে বসতে তাঁকে অগ্রিম জামানত দিতে হয়েছে এক লাখ টাকা। আর মাসে ভাড়া ছয় হাজার। কীভাবে চ্যাপটা হলো জীবন—প্রশ্ন শুনে আঙুলের কর গুনে দেখালেন দিনের ব্যয়।
রিপন মিয়া বলেন, প্রতিদিন ২০০ টাকা দোকানভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ৬০, বাড়ি থেকে আসা-যাওয়ার ভাড়া ১০০, দুপুরের খাবার ১০০, চা-নাশতাসহ টুকটাক খাবারে আরও ১৫০ টাকা। সব মিলিয়ে দিনে তাঁর ব্যয় আছে ৬১০ টাকা। এরপর সংসারের ব্যয়, মেয়ের পড়াশোনা, অসুখ-বিসুখের খরচ। আছে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা ঋণের কিস্তি। পকেট থেকে ২২০ টাকা বের করে দেখালেন। বললেন, ‘এহন বেলা বাজে দেড়টা, আয় অইছে ২২০ টাকা। কন মোরা ক্যামন আছি?’
ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে
১৭ মে ২০২২, প্রথম আলো
বোরো মৌসুমের চাল বাজারে আসা শুরু করতেই দেশের প্রধান এই খাদ্যশস্যের দাম বাড়ল। ঢাকা, কুষ্টিয়া ও নওগাঁর পাইকারি বাজারে চালের দাম ধরনভেদে কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। সেখানে দাম বেড়েছে কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা। যদিও খুচরা বাজারের চাল ব্যবসায়ীদের আগের কেনা। বাড়তি দামের চাল খুচরায় পৌঁছায়নি।
সাধারণত বোরো মৌসুম শুরু হলে চালের দাম অনেকটাই কমে যায়। স্বস্তি পায় মানুষ। এ মৌসুমে দাম কমে যাওয়ার কারণ, বোরোতে দেশের মোট চালের প্রায় ৫৫ শতাংশ উৎপাদিত হয়। বিপুল সরবরাহ দাম কমিয়ে দেয়। এবার দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। নতুন মৌসুমের চাল বাজারে এসে যখন দাম কমার কথা, তখনই সরবরাহ কম এবং দাম বাড়ছে।
পদ্মা পাড়ি দিতে কত খরচ হবে, জানাল সরকার
১৭ মে ২০২২, প্রথম আলো
পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে, পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং মাঝারি ট্রাকে লাগবে ২ হাজার ৮০০ টাকা।
গত ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতুর জন্য টোলের হার প্রস্তাব করে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠায় সেতু মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অনুমোদনের পর আজ তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সেতু বিভাগ থেকে যে টোলের হার প্রস্তাব করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর তা হুবহু অনুমোদন দিয়েছে।
সরকারের নির্ধারণ করা টোলের হার অনুসারে, বর্তমানে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হতে যে টাকা লাগে, সেতু পার হতে এর চেয়ে গড়ে দেড় গুণ বেশি টাকা খরচ করতে হবে। আর দ্বিতীয় দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলের সঙ্গে তুলনা করলে তা হবে প্রায় দ্বিগুণ।
পদ্মা সেতুর টোল আদায়কারী ও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগ করেছে সেতু বিভাগ। এ কাজ পেয়েছে কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। এর মধ্যে এমবিইসি বর্তমানে মূল সেতুর নির্মাণকাজ এবং কেইসি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য এই দুটি প্রতিষ্ঠান টোল আদায়, সেতু ও সেতুর দুই প্রান্তে যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি চালু এবং সেতু ও নদীশাসনের কাজ রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এর জন্য ৫ বছরে তাদের দিতে হবে ৬৯৩ কোটি টাকা।
খোলাবাজারে ডলারের দামে ‘সেঞ্চুরি’
১৭ মে ২২, সমকাল
খোলাবাজারে ডলারের দাম আবারও বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো ডলারের দর উঠেছে ১০১ থেকে ১০২ টাকায়। গতকাল সোমবারও খোলাবাজারে ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়। এর আগে কখনো ডলারের দর ১০০ টাকা অতিক্রম করেনি।
আমদানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স কমাসহ বিভিন্ন কারণে ডলারের ব্যাপক সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি
কষ্ট বাড়ছে গরিব ও মধ্যবিত্তের
২০ মে ২০২২, প্রথম আলো
চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, লবণসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের কারণে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। তাঁদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোজগার বৃদ্ধি না পাওয়ায় বাজারের তালিকা থেকে সদাই কাটছাঁট করতে হচ্ছে। মাসের বাজার খরচ আঁটসাঁট করছেন অনেকে। ফলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন।
কয়েক মাস ধরে চাল, ডাল, গম, তেল, ময়দা, লবণসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের পাশাপাশি খাদ্য–বহির্ভূত পণ্যের দামও বেড়েছে। যেমন পোশাক, খাতা-কলম, বাসাভাড়া, যাতায়াত ভাড়া। বিশেষ করে গত নভেম্বর মাসে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পরপরই জীবনযাত্রার খরচ বাড়তে শুরু করে। আবার গত বছরের মাঝামাঝি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারেও ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারকে আরেক দফা উসকে দেয়।
জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সরকারি হিসাবে তা মূল্যস্ফীতি দিয়ে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হিসাব করে। দেশে গত তিন মাস ধরে টানা মূল্যস্ফীতি হয়েছে, যা ৬ শতাংশের ওপরে আছে। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। এই এপ্রিল মাসেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে মানুষ। কিন্তু সরকারি হিসাব বলছে, এপ্রিল মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কমেছে।
করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়েই ছোট-বড় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই এখন নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার তুলনায় কম। অথচ এসব দেশকেও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে হয়। তাই বাংলাদেশের ৬ শতাংশের মতো মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে ইতিমধ্যে অর্থনীতিবিদেরা প্রশ্ন তুলেছেন।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশযাত্রা বন্ধ
২৩ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশের বিদ্যমান ডলার সংকট কাটাতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে কোনো ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যক্তিগত ভ্রমণেও বিদেশ যেতে পারবেন না। ব্যাংকারদের বিদেশে প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার, কর্মশালা কিংবা শিক্ষাসফরে অংশগ্রহণও নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে পৃথক এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) কর্মকর্তারা বিদেশে প্রশিক্ষণ, সেমিনার কিংবা কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাতে পারবেন না। এ খাতে কোনো ডলার ছাড় না করতে অনুমোদিত ডিলারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কাকে সুবিধা দিতে সুদ মওকুফের এই ছাড়
২৪ মে ২০২২, প্রথম আলো
দেশের শীর্ষ দুই ব্যবসায়ী গ্রুপ একে অপরের ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা নিয়েছে। যার অনাপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরও অনেক গ্রুপ নিজেদের সুদ মওকুফ করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর সবই বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ।
এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা জারি করে বলেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করতে পারবে না। ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো আগের আয় থেকে সুদ মওকুফ করতে পারবে। ফলে সুদ মওকুফ সুবিধা নিতে কয়েকটি গ্রুপ যে অপতৎপরতা শুরু করেছে, তাদের সুবিধা করে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের পরিচালক, তাঁদের পরিবারের সদস্য ও পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
ব্যাংক পরিচালকদের অশুভ জোট
ব্যাংক পরিচালকেরা আগে নিজের ব্যাংক থেকে ইচ্ছেমতো ঋণ নিতেন। পরে আইনি বাধার কারণে সেই সুযোগ কমে যায়। এরপর শুরু হয় এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের আঁতাতের মাধ্যমে সীমার বেশি ঋণ নেওয়া। যার মাধ্যমে উভয় ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে গড়ে ওঠে অশুভ জোট। এখন সেই পরিচালকেরা ‘অশুভ আঁতাত’–এর মাধ্যমে একে অপরের ঋণের পুরো সুদ মওকুফ করে নিচ্ছেন।
সম্প্রতি চট্টগ্রামভিত্তিক একটি গ্রুপের সব ঋণের সুদ মওকুফ করে দিয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। আবার রাজধানীর একটি গ্রুপের ঋণের সুদ মওকুফ করে দিয়েছে ইসলামী ধারার ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলো পড়ছে ঝুঁকিতে। আর সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে পড়েছে জনগণের আমানত।
সংসার খরচ কমিয়েও কিনতে পারছেন না ছেলের বই
২৭ মে ২০২২, প্রথম আলো
গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় হঠাৎ ঝোড়ো বৃষ্টি শুরু হয়। কিন্তু তীব্র দাবদাহে অস্থির নগরবাসীর জন্য স্বস্তির এই বৃষ্টি ফুটপাতের পানি বিক্রেতা মো. ওয়াসিমের কাছে ছিল দুশ্চিন্তার। কারণ, বৃষ্টিতে তাঁর পানি বিক্রি কমেছে। ওয়াসিম জানান, সম্প্রতি নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এমনিতেই দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে তাঁর; এর মধ্যে বৃষ্টি ব্যবসায় প্রভাব ফেলেছে। অর্থাভাবে নবম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলেকে প্রয়োজনীয় বই কিনে না দিতে পারায় মানসিক কষ্টে ভুগছেন ভ্রাম্যমাণ এ পানি বিক্রেতা।
ফার্মগেটসংলগ্ন তেজগাঁও মহিলা কলেজের গলির সামনে দাঁড়িয়ে ওয়াসিমের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ওয়াসিম জানান, এত দিন মাসে যা আয় হতো, তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার খরচ চালিয়ে নিতেন। কিন্তু এখন সেটি পারছেন না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সংসার খরচে টান পড়েছে। তাতে অনেক খরচ কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। উল্টো মাঝেমধ্যে ধারদেনা করতে হচ্ছে।
ঢাকার সায়েদাবাদের একটি আবাসিক হোটেলে থাকেন ওয়াসিম। আর তিন ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী থাকেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙা ইউনিয়নের সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে পাওয়া ঘরে। ওয়াসিম জানান, দৈনিক ৭ থেকে ৮ কেস (১ কেসে ১২ বোতল) পানি বিক্রি করে গড়ে ৭০০ টাকা আয় হয় তাঁর। এ টাকায় নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ মিটিয়ে পরিবারের জন্য মাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা পাঠাতে পারেন তিনি। কিন্তু এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে।
ফুটপাতের এই হকার জানান, সায়েদাবাদ থেকে প্রতিদিন সকালে বাসে মালিবাগ রেলগেট আসেন। পরে সেখান থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত হেঁটে আসেন। সন্ধ্যার দিকে আবার একইভাবে সায়েদাবাদ ফিরে যান। ওয়াসিম আরও বলেন, ‘ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার এলাকায় বেশি যানজট থাকে। তাই ভালো বিক্রির আশায় এ এলাকায় আসি।’
রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল
সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব তিন দেশের কনসোর্টিয়ামের
২৭ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো সংস্কারে বিনিয়োগ নিয়ে আসছে বিদেশী তিন কোম্পানির কনসোর্টিয়াম ‘সুগার ইন্টারন্যাশনাল’। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), জাপান ও থাইল্যান্ডের তিনটি কোম্পানি নিয়ে কনসোর্টিয়ামটি গড়ে তোলা হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন চিনিকলগুলো সংস্কারে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার (সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি) বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে এ কনসোর্টিয়াম। এর মধ্য দিয়ে চিনিকলগুলো হয়ে উঠবে যৌথ ব্যবস্থাপনাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। যৌথ ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো মুনাফার ধারায় ফিরবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রক্রিয়াটি এরই মধ্যে কিছুদূর এগিয়েছেও। প্রকল্পের অর্থায়নকারীও জোগাড় করেছে কনসোর্টিয়াম। সুগার ইন্টারন্যাশনালের বিনিয়োগকৃত অর্থের প্রধান উৎস জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) ও থাইল্যান্ডের এক্সিম ব্যাংক। বিনিয়োগের অর্থের ৭০ শতাংশ কনসোর্টিয়ামকে ঋণ হিসেবে জোগান দেবে ব্যাংক দুটি। বাকি ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ হচ্ছে কনসোর্টিয়ামের মূলধন হিসেবে।
‘সংসার আর চলছে না, বাঁচার উপায় নেই’
২৭ মে ২০২২, প্রথম আলো
তেল, আটা, লবণ, চিনিসহ সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন রিকশাচালক কুতুব শেখ (৩৯)। তাঁর আশঙ্কা, সামনে আরও কঠিন দিন আসছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকবেন, সেই চিন্তায় রাতে তাঁর ঘুম আসে না।
কুতুব শেখ থাকেন ফরিদপুর পৌরসভার ভাজনডাঙ্গা এলাকায় সড়ক বিভাগের জায়গায়। নিজের কোনো জমি নেই। স্ত্রী, দুই মেয়ে, অসুস্থ মা ও ছোট ভাই নিয়ে তাঁর সংসার।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কুতুব শেখের মতো শঙ্কায় রয়েছে শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। কীভাবে সামনের দিনগুলো কাটবে, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত।
ফরিদপুর শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা খাদিজা বেগম। তিনি বলেন, ‘সংসারে সদস্য পাঁচজন। স্বামী, ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি। খুব কষ্টে আছি। সংসার আর চলছে না। আমাদের তো আর বাঁচার উপায় নেই।’
আটা রসুন চিনি চালের দাম আরও চড়েছে
২৭ মে ২২, সমকাল
আগে থেকেই আটার দামে বইছে হাওয়া। সেই হাওয়া এখন আরও জোরেশোরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আটা কেজিতে বেড়েছে সাত থেকে আট টাকা। চালের বাজারও নেই স্থির। বাড়ছে ধাপে ধাপে। এক কেজি চাল কিনতে গড়ে এক থেকে দুই টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাকে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করতে পারে বাজারে- এমন খবর ছড়িয়ে দিয়ে চিনির দামটাও অচেনা করার চেষ্টা চলছে। দু’দিনেই চিনি কেজিতে বেড়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা। আমদানি রসুনও বেড়েছে আরেক দফা। এই মসলা পণ্যের লম্ম্ফ কেজিতে ২০ টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, মগবাজার, তেজকুনিপাড়া ও নাখালপাড়া এলাকা ঘুরে জানা গেছে এসব তথ্য।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়ছে। টানা ১০ দিন ধরেই বাড়ছে চালের দাম। আর ভারত রপ্তানি বন্ধ করবে- এমন খবরে চিনির দাম বেড়েছে। আরও বাড়তে পারে- এমন ইঙ্গিতও দিচ্ছেন ডিলাররা।
সরকারি টাকায় শিক্ষাসফর, ফেরার পরদিন গেলেন অবসরে
২৫ মে ২০২২, প্রথম আলো
গত রোববার ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস। সেদিন তিনি চলে যান পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি)। অথচ এর ঠিক আগের দিন সরকারি খরচে নেদারল্যান্ডস ও স্পেনে শিক্ষাসফর শেষে দেশে ফেরেন। তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
একজন আমলা অবসরের আগমুহূর্তে যাওয়া এ শিক্ষাসফর সরকারের কী কাজে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর ১০ দিনের এ সফরের সম্পূর্ণ খরচ বহন করা হয়েছে সরকারি তিনটি প্রকল্পের তহবিল থেকে। অবসরের দ্বারপ্রান্তে থাকা আমলাদের শিক্ষাসফরকে সরকারি অর্থের অপচয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঋণ শোধে সরকারের দ্বারস্থ সেনা এডিবল
২৮ মে ২০২২, প্রথম আলো
ভোজ্যতেল পরিশোধন কোম্পানি সেনা এডিবল অয়েল ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা করে এলেও এখন তা পরিশোধ করতে পারছে না। তাই ঋণ পরিশোধের বিষয়ে সুবিধা চেয়ে কোম্পানিটি সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের শরণাপন্ন হয়েছে।
সেনাকল্যাণ সংস্থার সহযোগী এই প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে সুবিধা দেওয়া যায়, তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার অনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, সেনা এডিবল অয়েলের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রশিদ উল আলমসহ অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সেনা এডিবল অয়েলকে সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি অনিষ্পন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সেনা এডিবল অয়েল সরকারকে জানিয়েছে যে ভোজ্যতেলের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ (মনোপলি) প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বাজারের অস্থিতিশীলতা রোধ করতে সেনাকল্যাণ সংস্থা সেনা এডিবল অয়েল প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠাকালে কোম্পানিটি ৫৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, যার মধ্যে ৩৪০ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ। এর মধ্যে বেসরকারি পূবালী ব্যাংক থেকে ১৪০ কোটি টাকা এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) থেকে ২০০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। সুদাসলে তা এখন দাঁড়িয়েছে ৪৩৪ কোটি টাকা।
বাজার পরিস্থিতি
ভরা মৌসুমে আরও বাড়ল চালের দাম
২৯ মে ২০২২, প্রথম আলো
চলতি মাসের শুরুতে একজন ক্রেতা যে দামে চাল কিনেছেন, মাসের শেষে এসে চাল কিনতে গেলে তাঁকে বড় ধাক্কাই খেতে হবে। কারণ, তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম অনেকটা বেড়েছে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা। সব মিলিয়ে তিন সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে আট টাকা।
দেশে এখন চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। প্রতিবছর এই সময় চালের দাম কমতির দিকে থাকে। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো, যা দেখে বিস্মিত বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রশিদও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার লাইফে (জীবনে) এই ভরা মৌসুমে এভাবে মিনিকেট চালের দাম বাড়তে দেখিনি। দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা (শিল্পপতিরা) হয়তো ধান ও চাল মজুত রেখেছে। এ ক্ষেত্রে তদারকি বাড়ানো দরকার।’
১ মণ ধান উৎপাদন খরচ ৮০০ বিক্রি ৭৬০ টাকা
৩০ মে, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাই বাংলা
লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি হাটে ২ মণ ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন কৃষক আব্দুল হামিদ (৬০)। হাটে প্রায় দেড় ঘণ্টা বসে থাকার পর তিনি প্রতিমণ ধান ৭৬০ টাকা বিক্রি করেন। আশা ছিল গত বছরের মতো ৯৪০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করবেন। কমদামে ধান বিক্রি করে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।
এ দৃশ্য গত মঙ্গলবার বিকালের। আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের শালমরা গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাইকাররা ধানের দাম যখন কম বলছিলেন তখন ভেবেছিলেন ধানগুলো বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাব। কিন্তু, পরিবারে নগদ টাকার প্রয়োজন হওয়ায় বাধ্য হয়েই কমদামে ধান বিক্রি করলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করে ৮৯ মণ ধান পেয়েছি। তেল, সার ও কীটনাশকের দাম বেশি। শ্রমিক খরচও বেড়ে যাওয়ায় প্রতিমণ ধান উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮০০ টাকা। ধান চাষ করে এ বছর লোকসানের মুখে পড়েছি। ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষ করা লাভ ছিল।’
একই হাটে ভারত চন্দ্র বর্মণ (৬৭) এসেছিলেন ৩ মণ ধান বিক্রি করতে। আদিতমারী উপজেলার পূর্ব দৈলজোর গ্রামের এই কৃষক ৪ বিঘা জমি থেকে ধান পেয়েছেন প্রায় ৬৮ মণ। তিনি প্রতিমণ ধান ৭৮০ টাকা দরে বিক্রি করায় হতাশ হয়ে পড়েন। গত বছর এই সময়ে তিনি প্রতিমণ ধান এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন।
ভারত চন্দ্র বর্মণ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ বছর ধান উৎপাদনে গত বছরের তুলনায় অনেক খরচ বেশি। অথচ এ বছর ধান বিক্রি করতে হচ্ছে গত বছরের চেয়ে কম দামে।’
লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৮% খেলাপি ঋণ আদায়, অসন্তোষ গভর্নরের
৩০ মে ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চার ব্যাংক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী) তাদের খেলাপি গ্রাহকের থেকে চলতি অর্থবছর ১,৬১০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কিন্তু চলতি সময়ে আদায় করেছে মাত্র ১৩৩ কোটি টাকা। যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।
গভর্নর রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোকে বড় ঋণের চেয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য ছোট গ্রাহকদের ঋণ বিতরণে প্রাধান্য দিতে বলেছেন ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের। একইসঙ্গে বড় গ্রাহকদের কাছে আটকে থাকা ঋণ আদায়ে জোরালো ভূমিকার কথা বলেছেন।
গভর্নর রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর সিএমএসএমই ও কৃষিখাতের ঋণের ব্যাংকগুলোর অনেক পিছিয়ে থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংকের সিএমএসএমই খাতের ঋণ খুবই শ্লথগতির ছিল।
বেকারিতে তৈরি পাউরুটি-বিস্কুট-কেকের দাম বাড়ছে
৩১ মে ২২, সমকাল
হাতে তৈরি (নন ব্র্যান্ড) পাউরুটি, বিস্কুট, কেকজাতীয় খাদ্যের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াচ্ছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। এসব খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত ময়দা, চিনি, ডালডা ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা যায়।
‘টেনেটুনেও দিন চালানো যাচ্ছে না’
০১ জুন ২০২২, প্রথম আলো
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কালীবাড়ি মোড়ে সকাল হলেই জড়ো হন দুই থেকে আড়াই শ নারী-পুরুষ। কাজের সন্ধানে শহর ও গ্রাম থেকে আসেন তাঁরা। একসময় সংখ্যাটা আরও কম ছিল। দিন দিন এই শ্রমের হাটে বাড়ছে অভাবগ্রস্ত মানুষের ভিড়।
ষাটোর্ধ্ব শুকুর আলী এখানে আসেন ১৫ বছর ধরে। দোয়ারাবাজার উপজেলার সাউদেরগাঁও গ্রামে তাঁর বাড়ি। প্রতিদিন আসা-যাওয়ায় ৪০ টাকা ব্যয় হয়। তবে সব দিন কাজ মেলে না। মঙ্গলবার সকালে এখানে শুকুর আলীর সঙ্গে প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানান, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর আয়েই সংসার চলে। তিন দিন ধরে শুধু আসা-যাওয়া করছেন। কোনো কাজ পাননি। কাজ পেলে দিনে রুজি হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে বাজারসদাই নিয়ে বাড়ি যান। ঘরের লোকজন তাঁর অপেক্ষায় থাকেন। যেদিন খালি হাতে ফেরেন, সেদিন বড় কষ্ট হয়।
সকাল সাড়ে ৯টা বাজার পরও কাজ না পাওয়ায় হতাশ শুকুর আলী বলেন, আগের মতো কাজ নেই। লোকজনও বেশি। কেউ একজন শ্রমিক নিতে এলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন। আজও মনে হয় খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হবে।
শুক্কুর আলীর পাশে ফুটপাতে বসে আছেন একই গ্রামের ধরণি কান্ত দাস (৫৫)। তিনি ঘরের সংস্কারকাজ করেন। একটি থলের মধ্যে হাতুড়ি, করাতসহ বিভিন্ন সামগ্রী। ধরণি কান্ত দাস বলেন, ‘চাল-ডাল, তেল, লবণসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে। এখন পোয়া হিসেবে তেল কিনি। ডাল-ভাত খাওয়াই দায় হয়ে পড়েছে। একদিন কাজ পাইলে, তিন দিন বেকার যায়। টেনেটুনেও সংসার চালানো যাচ্ছে না। সব বিপদ তো গরিব মানুষের।’
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা সবুজ মিয়া (৪০) আগে একটি বেকারিতে কাজ করতেন। করোনার সময় বেকারিটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে প্রতিদিন এখানে আসেন কাজের খোঁজে। কোনো দিন কাজ মেলে, আবার কোনো দিন মেলে না। সবুজ বলেন, ‘ঘরে মা অসুস্থ, তাঁর চিকিৎসা, সবার খাওয়াদাওয়া সবই আমার ওপর। একটা মেয়ে স্কুলে পড়ে। তার লেখপাড়ার খরচও জোগাড় করতে হয়। কিন্তু দিন তো খালি কঠিন হচ্ছে। বাঁচার উপায় তো দেখছি না।’
শহরের আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা তহুর আলী (৪৮) জানান, এখানে একসময় শহরের শ্রমিকেরা আসতেন বেশি। এখন আসছেন গ্রামের লোকজন। তহুর আলী বলেন, এবার হাওরে বন্যার জন্য ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সবাই সমস্যায় আছেন। তাই শহরে কাজের জন্য আসছেন তাঁরা।
অর্থবছরের ১১ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ
০২ জুন, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশে প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্সের পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের মে মাসেও রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ কমেছে। গত মাসে দেশে প্রবাসীরা ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। যদিও ২০২১ সালের মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স ।
করোনাভাইরাস সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে অর্থনীতির প্রতিটি সূচক বিধ্বস্ত হলেও চাঙ্গা ছিল দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৬ শতাংশেরও বেশি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির রথ থেমে যায়। অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) রেমিট্যান্স কমেছে ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এক সেতু নিয়ে আড়াই কোটি খবর, ভিডিও
৪ জুন, ২০২২, কালের কন্ঠ
পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অসংখ্য সংবাদ হয়েছে। হয়েছে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়; লেখা হয়েছে বিশ্লেষণ। প্রকাশিত হয়েছে ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন। বাংলাদেশের পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব, ব্লগ মিলে কত খবরের উৎস হয়েছে পদ্মা সেতু? সার্চ ইঞ্জিন গুগল বলছে, পদ্মা সেতু নিয়ে গত কয়েক বছরে অন্তত আড়াই কোটি প্রতিবেদন হয়েছে।
গুগলে ইংরেজিতে ‘পদ্মা ব্রিজ নিউজ’ লিখে সার্চ দিলে এক কোটি ২৩ লাখ খবরের লিংক পাওয়া যায়। ইংরেজিতে শুধু ‘পদ্মা ব্রিজ’ লিখলে ৬০ লাখ ১০ হাজার খবরের লিংক পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ছবি, ভিডিও, ওয়েবসাইট থাকলেও বেশির ভাগই সংবাদ।
গুগলে বাংলায় ‘পদ্মা সেতুর সংবাদ’ লিখে সার্চ দিলে ১৪ লাখের মতো খবরের লিংক পাওয়া যায়। আর বাংলায় ‘পদ্মা সেতুর নিউজ’ লিখে সার্চ দিলে পাওয়া যায় ১৬ লাখ ২০ হাজার লিংক। শুধু ‘পদ্মা সেতু’ লিখলে পাওয়া যায় ৩৬ লাখ লিংক। এই লিংকগুলোতে পদ্মা সেতু নিয়ে করা প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রচলিত গণমাধ্যমের বাইরের খবরও এসব লিংকে পাওয়া যায়।
রেকর্ড খেলাপি ঋণ, ছাড়াল ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা
০৫ জুন ২০২২, ঢাকা পোস্ট
নানা সুবিধা পেয়ে এখন আর ঋণ পরিশোধ করছে না গ্রাহক। ফলে লাগাম ছাড়িয়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ অঙ্ক। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
তিন মাস আগেও ২০২১ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। আর গত বছরের মার্চের তুলনায় খেলাপি বেড়েছে ১৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। এর আগে, ২০২১ সালের মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে তাকে খেলাপি করা হয়নি। ফলে আদায় তলানিতে নামলেও খেলাপি ঋণ কম ছিল।
গ্যাসের নতুন দাম যৌক্তিক, বলল এফবিসিসিআই
০৫ জুন ২০২২, ঢাকা পোস্ট
বিশ্বজুড়ে এলএনজির দাম বৃদ্ধি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বৈশ্বিক সরবরাহে অস্থিরতার মধ্যেও দেশে গ্যাসের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
রোববার (৫ জুন) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের নতুন দাম সম্পর্কে জানানো হয়। নতুন মূল্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিতরণ কোম্পানিগুলোর ১০০ শতাংশের বেশি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপরীতে ক্যাপটিভ বিদ্যুতে সাড়ে ১৫ শতাংশ, বৃহৎ শিল্পে ১১.৯৬ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বিপরীতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের জন্য গ্যাসের দাম প্রায় ৩৭ শতাংশ কমানো হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে বাড়ানো হয়েছে ১২.৮১ শতাংশ।
বাজেট ২০২২–২৩
ব্যবসাবান্ধব বেশি, জনবান্ধব কম
১০ জুন ২০২২, প্রথম আলো
.. .. অতিমারির পর এখন উদ্বেগ অতি মূল্যস্ফীতি। নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির চাপের কথা স্বীকার করেছেন ঠিকই। কমানোর কথাও বলেছেন। কিন্তু স্বস্তি দেওয়ার মতো কোনো পথ দেখাননি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর নিজের ছাতার নিচে সবাইকে সমানভাবে আশ্রয় দেননি, বরং ছাতাটা তুলে দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের হাতেই। নানাভাবে তাঁদের কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় শিল্পকে সংরক্ষণের যে নীতি তিনি নিয়েছিলেন, তা আরও জোরদার করেছেন। আবারও প্রণোদনার কথা বলেছেন। অর্থমন্ত্রীর আশা অনেকটা এ রকম—এই পথে বিনিয়োগ বাড়বে, তাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, মানুষ কাজ পাবে, আয় বাড়বে।
এতেই স্বস্তি ফিরবে মানুষের জীবনে। অনেকটা সেই পুরোনো আমলের বাতিল হওয়া উপচে পড়া তত্ত্বের মতো। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেট অনেক বেশি ব্যবসায়ীবান্ধব হলেও সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার বা জনবান্ধব ততটা হতে পারেনি।.. ..
বেতন-ভাতা, মঞ্জুরি ও সাহায্য, ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধেই চলে যায় রাজস্ব ব্যয়ের প্রায় সবটা। আর এবার তো ভর্তুকি নিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীকে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৫৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে ভর্তুকি ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ থাকছে ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। আর নতুন অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হবে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান যে প্রবণতা, এ খাতে ব্যয় আরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এটিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মানছেন অর্থমন্ত্রী।
ব্যয়ের চাপে আবারও বিশাল একটি বাজেট দিতে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয়ই ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা, বাকি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা হচ্ছে উন্নয়ন ব্যয়। অর্থমন্ত্রীর বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি হচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর বড় অংশই আসবে অভ্যন্তরীণ থেকে। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকেই নেওয়া হবে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ঋণ নেওয়ার কথা ছিল ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে এত অর্থ সরকার নিলে বেসরকারি খাতের ভাগে কতটা পড়বে, সেটিও এখন বড় প্রশ্ন।
নতুন অর্থবছরে বাংলাদেশকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে ১৭ হাজার কোটি টাকা। আর সব মিলিয়ে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারকে অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া মোট ব্যয়ে বেতন-ভাতা খাতের অংশ ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ভর্তুকি ও প্রণোদনার অংশ ১৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং সাহায্য মঞ্জুরির অংশ ১৬ দশমিক ১ শতাংশ।
এত সব খরচ মিটিয়ে অর্থমন্ত্রীর হাতে থাকে সামান্যই অর্থ। কেননা ব্যয় যত বাড়ছে, তত বাড়ছে না আয়। অর্থমন্ত্রী অবশ্য বাজেটে আগের তুলনায় রাজস্ব আয় বৃদ্ধির একটি কৃতিত্ব নিয়েছেন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংশোধিত বাজেটে এক টাকাও আয় কমানো হয়নি। অর্থাৎ পুরোটাই আদায় হবে।
আবার তিনি নিজেই হিসাব দিয়েছেন যে গত মার্চ পর্যন্ত সময়ে আদায় হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ শেষ তিন মাসে আদায় করতে হবে আরও ১ লাখ ১৮ কোটি ৩৬১ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত কতটা আদায় সম্ভব হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। অর্থমন্ত্রী এর ওপর ভিত্তি করেই নতুন অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিশাল এক রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েই বাজেট তৈরি করেছেন। সুতরাং সাধারণ মানুষের ওপর বাড়বে করের চাপ।
বাড়বে করের চাপ
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বহু বছর আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘মানুষের জীবনে কেবল দুটি জিনিসই সুনির্দিষ্ট। একটি হচ্ছে মৃত্যু, অন্যটি কর।’ এ কথাকেই অনেকে রসিকতা করে বলেন, মৃত্যু তো আসলে একবারই ঘটে, কিন্তু কর আসে প্রতিবছর। যেমনটি এবারও এসেছে।
অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেট বক্তৃতাও বরাবরের মতো বিশাল। এতে ৩৪৩টি অধ্যায় রয়েছে আর পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৭২। এর ১১৪টি অধ্যায়েই অর্থমন্ত্রী রাজস্ব কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়েছেন। অতীতে রাজস্ব কার্যক্রম নিয়ে কোনো অর্থমন্ত্রীকে এতটা পৃষ্ঠা খরচ করতে হয়নি। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের কথা মেনে অর্থমন্ত্রী হয়তো কর দেওয়াকে মানুষের জীবনে সুনির্দিষ্ট করেই ছাড়বেন। অর্থমন্ত্রী খানিকটা হতাশা নিয়েই বলেছেন, দেশে মধ্যবিত্ত বা তদূর্ধ্ব শ্রেণির জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি হলেও অধিকাংশই আয়কর দেন না। অর্থমন্ত্রী বাজেটে আয়করের ওপরই বেশি জোর দিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ক্ষেত্রে কর অব্যাহতিকে অন্যতম বাধা বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে বাজেটে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর অব্যাহতির মাত্রা কমিয়েছেন। তবে করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতোই তিন লাখ টাকা রেখেছেন। ব্যবসায়ী মহলের দাবি মেনে করপোরেট করহার শর্ত সাপেক্ষে আড়াই শতাংশ কমিয়েছেন। অর্থাৎ করপোরেট করসুবিধা পেতে হলে সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকব্যবস্থায় করতে হবে। যাঁরা কর ফাঁকির জন্য ব্যাংক লেনদেন এড়িয়ে চলেন, তাঁরা এই প্রস্তাব পছন্দ করবেন না।
আবার অনেক ধরনের সরকারি সেবা পেতে বা বড় কেনাকাটায় টিআইএন দাখিলই যথেষ্ট ছিল। অর্থমন্ত্রী এসব টিআইএনধারীর জীবনও খানিকটা কঠিন করেছেন। নতুন বাজেটের প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন ৩৮ ধরনের সেবা পেতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণের জন্য আবেদন, পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ, কোনো কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হওয়া, ব্যবসায়িক সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ, সন্তান বা পোষ্যের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ালেখা করা, অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া ইত্যাদি।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারে কম্পিউটারের ওপর সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সেই ধারার পরিবর্তন আনলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী। ল্যাপটপ আমদানিতে কর বসিয়েছেন তিনি। ধনী ব্যবসায়ীরা দেশে স্বর্ণ ব্যবসায় নেমেছেন।
অর্থমন্ত্রী তাঁদের জন্য স্বর্ণ আমদানিতে অগ্রিম কর তুলে নিয়েছেন। আর যাঁরা বিদেশে সম্পদ পাচার করেছেন, অন্য দেশে বাড়ি–গাড়ি করেছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়েছেন। পাচার করা অর্থ দেশে আনলে বা ঘোষণা দিয়ে কর পরিশোধ করলে বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। নির্বাচনের আগের বছরে কাদের জন্য এই সুযোগ, সেই প্রশ্নও উঠেছে। অর্থমন্ত্রী ভ্যাটখেলাপিদের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের মতো পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করা এবং ঋণখেলাপিদের কর দেওয়ার ব্যবস্থা করেও প্রশংসা পাচ্ছেন।
সব মিলিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়েই তিনি কর প্রস্তাবগুলো তৈরি করেছেন। যেমন বৈশ্বিক অতিমারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়, রপ্তানিমুখী শিল্প বহুমুখীকরণ, তার পশ্চাৎ শিল্পে প্রণোদনা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, ইলেকট্রনিকস, আইসিটি খাত ও ভারী শিল্পের বিকাশ, ব্যবসা সহজ করা, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং স্থানীয় শিল্পের বিকাশ।.. ..
বাজেট ২০২২-২৩
কর উদ্যোগ: ধনীদের স্বস্তি, অন্যদের বোঝা
১০ জুন ১০, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন
গত কয়েক মাসে জীবনযাপনের খরচ বাড়তে থাকায় সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।
তাদের যুক্তি, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ালে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের পরিবারগুলো জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান খরচ কিছুটা পোষাতে পারবে। তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে কিছু পরিমাণে সুরক্ষা দিতে পারবে।
তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে তাদের জন্য আয়করে কোনো সুখবর নেই। কারণ করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি।
এর অর্থ হচ্ছে, একজন মানুষের মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকার বেশি হলেই তাকে আয়কর দিতে হবে।
আয়ের পরিমাণ করের হার ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করের হারেও কোনো পরিবর্তন আসেনি।
তবে ব্যক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগের অনুমোদন যোগ্য সীমা আয় নির্বিশেষে কমানো হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে একজন ব্যক্তি তার মোট আয়ের ২০ শতাংশ বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্টে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকৃত অংকের ওপর ১৫ শতাংশ কর রেয়াত পাবেন।
চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগযোগ্য আয়সীমা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে যাদের ১৫ লাখ টাকার বেশি আয়, তাদের জন্য কর রেয়াতের হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই পরিবর্তনে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের অর্থাৎ নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত করদাতারা আগের চেয়ে রেয়াত কম পাবেন। ফলে তাদের ওপর করের চাপ বাড়বে।
অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত বেশি আয়ের করদাতা বা উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা কর রেয়াত বেশি পাবেন।
উদাহরণস্বরূপ, বিদায়ী বছরে ৬ লাখ টাকা উপার্জনকারী একজন করদাতা বিনিয়োগের অনুমোদিত ২৫ শতাংশ হারে তার মোট আয়ের ওপর ২২ হাজার ৫০০ টাকা কর রেয়াত পেতেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগের অনুমোদিত সীমা কমায় তিনি কর রেয়াত পাবেন ১৮ হাজার টাকা। ফলে করদাতার ওপর করের বোঝা বাড়বে এবং তার হাতে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য কম টাকা থাকবে।
অপরদিকে, একজন ব্যক্তি যদি বছরে ২০ লাখ টাকা উপার্জন করেন, তাহলে তিনি ১৫ শতাংশ রেয়াতের সুবিধা নিয়ে আগামী অর্থবছরে ৬০ হাজার টাকা কর রেয়াতের সুবিধা পাবেন। এতদিন পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে ৫০ হাজার টাকা রেয়াত পেতেন তিনি। অর্থাৎ তাদের ওপর করের ভার কমবে।
বাজেট ২০২২–২৩
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ল, নাকি কমল
১১ জুন ২০২২, প্রথম আলো
চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরে ২০ লাখ ৮ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মাসে ৭৫০ টাকা হারে ভাতা পেয়ে আসছেন। তাঁদের সংখ্যা আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫৭ হাজার বাড়িয়ে ২৩ লাখ ৬৫ হাজার করা হচ্ছে। জনপ্রতি মাসিক ভাতাও ১০০ টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৮৫০ টাকা।
এ ছাড়া মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে উপকারভোগী রয়েছেন ১০ লাখ ৪৫ হাজার। আগামী অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার বেড়ে দাঁড়াবে ১২ লাখ ৫৪ হাজার। এ খাতে নতুন অর্থবছরে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কর্মসূচির সংখ্যা ১২৩টি থেকে কমিয়ে ১১৫টি করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এই বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।.. ..
অর্থ বিভাগ আগামী অর্থবছরের জন্য যে ১১৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির তালিকা তৈরি করেছে, তাতে দেখা যায় অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন বাবদ ২৮ হাজার ৩৭ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ ৭ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা, করোনার কারণে ব্যাংকের সুদ মওকুফ ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সুদ ভর্তুকি বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এগুলোকেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বলছে সরকার।
‘এক বেলা আলুভর্তা আর আরেক বেলা ডাইল দিয়া খাই, মাছ-গুস্ত চোহেও দেহি না’
১৫ জুন ২০২২, প্রথম আলো
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক আজমাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বড় বড় কথা কইয়্যা তো লাব নাই। এক বেলা আলুভর্তা আর আরেক বেলা ডাইল দিয়া খাই, মাছ–গুস্ত চোহেও দেহি না। তারপরও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই যে প্রতিদিন দুই বেলা খাইতে পারি।’
আজ বুধবার সকালে ময়মনসিংহ নগরের সানকিপাড়া বাজারের সামনে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা প্যাডেলচালিত রিকশাচালক আজমাদ হোসেন এসব কথা বলেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কুশমাইল গ্রামে।
প্রতিদিন ময়মনসিংহ শহরে রিকশা চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। ময়মনসিংহ শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট। পাশাপাশি প্যাডেলচালিত হাতে গোনা কিছু রিকশা এখনো রয়ে গেছে গ্যারেজ–মালিকদের কাছে। সেসব রিকশা যেন অলিখিতভাবে বৃদ্ধ রিকশাচালকের জন্য বরাদ্দ থাকে।
বাজারের ভারী ব্যাগ বহন করতে যাঁদের অসুবিধা হয়, কাছাকাছি দূরত্বের এমন যাত্রীরাই কেবল প্যাডেলচালিত রিকশায় চড়েন। গন্তব্যে নামার পর যাত্রীরা ১০ বা ২০ টাকা ভাড়া দেন।
প্যাডেলচালিত মন্থরগতির রিকশায় যাত্রীদের চড়তে অনীহা লক্ষ করা যায়। আজমাদের মতো বয়স্ক চালকেরা প্যাডেলচালিত পুরোনো ও জীর্ণ রিকশা নিয়ে সকালে নগরের সানকিপাড়া কাঁচাবাজারের মুখে বসে থাকেন। বাজারের ভারী ব্যাগ বহন করতে যাঁদের অসুবিধা হয়, কাছাকাছি দূরত্বের এমন যাত্রীরাই কেবল প্যাডেলচালিত রিকশায় চড়েন। গন্তব্যে নামার পর যাত্রীরা ১০ বা ২০ টাকা ভাড়া দেন।
বৃদ্ধ আজমাদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন সকাল ছয়টায় বাড়ি থেকে রওনা হয়ে সকাল আটটায় ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছান। তারপর আকুয়া গরুর খোঁয়াড় এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে প্যাডেলচালিত রিকশা নেন। বিকেল পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে আবার বাড়ি ফিরে যান। সারা দিনের রোজগারে কখনোই ৩০০ টাকা ছাড়ায় না। রিকশার প্রতিদিনের ভাড়া ৬০ টাকা আর নিজের যাতায়াত খরচ কমপক্ষে ৬০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে চলে সংসার।
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড়; ১ বছরে বেড়েছে ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা
১৬ জুন, ২০২২, যমুনা টিভি অনলাইন
বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড় জমেছে সুইস ব্যাংকে। সুইজারল্যান্ডে মাত্র ১২ মাসে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা করেছেন তারা। সব মিলিয়ে সুইস ব্যাংকগুলোতে এখন বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ ৮ হাজার ২৭৫ কোটি। যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। দেশে যখন টাকা পাচার ঠেকানোর তোড়জোড়, তখন নজিরবিহীন গতিতে সুইস ব্যাংকে টাকা জমিয়েছেন বাংলাদেশিরা। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সারা বিশ্বের ধনীদের অর্থ, গোপনে গচ্ছিত রাখার জন্য বহুদিনের খ্যাতি সুইজারল্যান্ডের। কঠোরভাবে গ্রাহকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখে সুইস ব্যাংকগুলো। যে কারণে প্রচলিত বিশ্বাস, অবৈধ আয় আর কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা জমা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে।
নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য না দিলেও এক দশক ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, প্রতি ফ্রাঁ ৯৫ টাকা করে ধরলেও দেশি মুদ্রায় যা ৮ হাজার ২৭৫ কোটি।
ঠিক এক বছর আগে, এই টাকার অঙ্ক ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্রাঁ বা ৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা।
নতুন-পুরোনো দালালে চাঙ্গা কিডনি বাণিজ্য
২৩ জুন ২২, সমকাল
অনেকটা লেজ হারানো শেয়ালের গল্পের মতো। ফাঁদে আটকা পড়ে লেজ গেছে; অন্যদের লেজ থাকতে দেব না। নিজে দালাল ধরে ৮-১০ বছর আগে কিডনি বিক্রি করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। চেনা পথঘাটে এখন নিজেই দালাল বনে গেছেন। বয়সের কারণে বাবা পারছেন না, হাল ধরেছেন ছেলে। জেল থেকে বেরিয়েও ফের কিডনি বিক্রির দালালি করছেন। এভাবেই নতুন-পুরোনো দালালে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় আবারও জমে উঠেছে ভয়ংকর কিডনি বেচাকেনা।
ঢাকায় বসে পুরো কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে একটি চক্র। তাদের শক্ত নেটওয়ার্ক এখন উপজেলার ৩৫টি গ্রামে পৌঁছে গেছে। এসব গ্রামের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গত ১৮ মাসে তাঁদের কিডনি বিক্রি করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত দুই মাসে ১৮ দালালকে গ্রেপ্তার করেছে। এর পরও থেমে নেই তৎপরতা। দালালের খপ্পরে পড়ে রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দেশে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা
২৩ জুন, ২০২২, বণিক বার্তা
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। এর বাইরে উচ্চ আদালতের নির্দেশের (স্থগিতাদেশে) কারণে ২১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা আদায় করা যাচ্ছে না। গতকাল সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তরে তিনি এসব মন্তব্য করেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সিআইবি ডাটাবেজে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। এর বাইরে উচ্চ আদালতের নির্দেশ বহাল আছে এমন ঋণস্থিতির পরিমাণ ২১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা, যা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আদায় করতে পারছে না।
বাস ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নৈরাজ্য
২৮ জুন ২২, সমকাল
পদ্মা সেতু হয়ে বাস চলাচলের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তৈরি হয়েছে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গমুখী জেলাগুলোতে বাস চলতে বাধা দিচ্ছেন সেখানকার পরিবহন নেতারা। পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াতের জন্য নতুন বাস নামাতে শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি।
গত রোববার চালু হওয়া পদ্মা সেতু হয়ে বাস চালানোর অনুমোদিত রুট ১৫টি। এর ১২টিই ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে। নতুন বাস নামানোর অনুমোদন এখনও দেওয়া হয়নি। ফলে বাস চালানোর চেষ্টা হচ্ছে যার যেমন ইচ্ছামতো। রাজধানীর গাবতলী টার্মিনাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলা অভিমুখে বাসের পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলের অনুমতি নেই, পথও নেই। এগুলো সায়েদাবাদে স্থানান্তরের জায়গাও নেই।
আগের দিনের মতো গতকাল সোমবারও পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে ওপারের শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুরের গাড়ির তীব্র সংকট ছিল। এতে যাত্রীরাও ভুগছেন বেশ। মাওয়া থেকে ছাড়া গাড়িগুলো ফরিদপুরের ভাঙ্গার পর যেতে দিচ্ছেন না সেখানকার পরিবহন নেতারা। তবে সংখ্যায় কম হলেও ঢাকা থেকে বরিশাল, খুলনার মতো দূরবর্তী গন্তব্যের বাস নির্বিঘ্নে চলছে।
বাধা দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে ভাঙ্গা উপজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আনিসুর রহমান সমকালকে বলেন, ঢাকার বাস উপজেলায় থেমে থেমে চললে স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে নতুন বাস নামাতে বিনিয়োগ করেছেন। ঢাকার বাস বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা বা দূরের জেলায় গেলে আমাদের আপত্তি নেই। পদ্মা সেতুর কাছের উপজেলা পর্যায়ে যাত্রী নিয়ে গেলে স্থানীয়দের বিনিয়োগের কী হবে?
পদ্মা সেতু চালুর প্রথম দিন থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিআরটিসি ঢাকা-শরীয়তপুর পথে বাস চালাচ্ছে। গত রোববার চলেছে দুটি বাস। আইন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআরটিসি বাসের রুট পারমিট লাগে না। গতকাল এসব বাস চলতে বাধা দেন শরীয়তপুরের পরিবহন নেতারা। ঢাকা থেকে বিআরটিসি বাস শরীয়তপুর পর্যন্ত যেতে পারেনি; ডামুড্যা থেকে ফিরে আসে।
ছোটদের খেলায় বড়দের লাভ
২৭ জুন ২০২২, আজকের পত্রিকা
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক আধুনিকায়ন করা হবে। বসানো হবে ১৫টি রাইডস (খেলনা)। এ জন্য ডিএসসিসি খরচ করতে চায় ৪৪১ কোটি টাকা। এসব রাইডস বাচ্চাদের দেখিয়ে আকৃষ্ট করতে ৫ কোটি টাকায় বসানো দরকার চারটি ডিজিটাল ডিসপ্লে। রাইডস চড়তে গেলে তো টিকিট কেটে ঢুকতে হবে, সে জন্য ১০ কোটি টাকা লাগবে টিকিটিং সিস্টেম বসাতে। ঘোরাফেরার সময় প্রকৃতির ডাক পড়লে টয়লেটে যেতে হবে। তাই ছয়টি টয়লেট বানাতে খরচ করতে হবে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। তখন তো আবার পানিও লাগবে, সে জন্য ২ কোটি টাকা লাগবে দুটি নলকূপ বসাতে। এ ধরনের আরও আছে।
সব মিলিয়ে পার্কে শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ বাড়াতে ৬১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল ডিএসসিসি। গত ফেব্রুয়ারিতে এ প্রস্তাব নিয়ে কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অস্বাভাবিক দাম পুনর্নির্ধারণ করে বিস্তারিত তথ্য, ব্যাখ্যাসহ আবার প্রস্তাব দেওয়ার জন্য প্রকল্পটি ডিএসসিসিতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখনো ডিএসসিসি সংশোধিত প্রস্তাব কমিশনে পাঠায়নি।.. ..
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবান্ধব রাইডস
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবে ডিএসসিসি বলেছে, শিশু-কিশোরসহ জনগণের উন্নতমানের বিনোদনসেবার সুযোগ সৃষ্টি করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবান্ধব রাইডস বসানো হবে। মোট ১৫টি রাইডস বসাতে খরচ হবে ৪৪১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রতিটির দাম গড়ে সাড়ে ২৯ কোটি টাকা।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবান্ধব খেলনা কেমন জিনিস তা বুঝছে না পরিকল্পনা কমিশন। তাদের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, ‘ডিপিপিতে যেসব রাইডসের ছবি ও ডিজাইন দেওয়া হয়েছে, তাতে এ বিষয়টি পরিলক্ষিত হয় না।’
কমিটি আরও বলেছে, ‘প্রস্তাবিত রাইডসসমূহের প্রাক্কলন তিনটি কোম্পানির নিকট হতে সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনটি কোম্পানি আলাদা আলাদা প্রাক্কলন প্রদান করেছে। এখান থেকে গড় মূল্য বের করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ কোম্পানির মূল্যই প্রাক্কলন বলে হিসাব করা হয়েছে। এখানে প্রতিটি রাইডসের ক্ষেত্রে তিনটি কোম্পানির দর থাকা সমীচীন হবে।’
চার ডিসপ্লেতে ৫ কোটি
প্রকল্প প্রস্তাবে ডিএসসিসি বলেছে, আধুনিকায়নের পরে পার্কটিতে কী কী সুবিধা থাকবে, তা তুলে ধরতে সেখানে বসানো হবে চারটি ১০ ফুট বাই ১৫ ফুট ডিজিটাল ডিসপ্লে। এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটির জন্য খরচ হবে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ডিজিটাল ডিসপ্লে চোখে পড়ে শহরবাসীর। বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই সেগুলো বসিয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও কয়েকটি ডিসপ্লে স্থাপন করেছে, যেগুলোতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। মন্ত্রীর দপ্তরের সামনে যে ৭ ফুট বাই ৫ ফুটের এলইডি ডিসপ্লে বসানো হয়েছে, তার দাম সাড়ে 8 লাখ টাকা। যে প্রতিষ্ঠান এটি সংযোজন করেছে, তার কর্মকর্তা ওসমান গনি বলেন, ‘বিভিন্ন মানের ডিজিটাল ডিসপ্লে পাওয়া যায়। ১৫ ফুট বাই ১০ ফুট একটি এলইডি ডিসপ্লের দাম পড়তে পারে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা।’
প্রস্তাবের ওপর মতামতে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, ‘চারটি এলইডি স্ক্রিন বাবদ ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যধিক বলে প্রতীয়মান হয়।’… …
মানুষ গোনায় অবহেলা হয়েছে, জনশুমারি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর স্বীকারোক্তি
২৯ জুন ২০২২, প্রথম আলো
দেশজুড়ে ১৫ থেকে ২১ জুন চলা জনশুমারির কাজে অবহেলা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তাঁর মতে, সাত দিনব্যাপী চলা এই কর্মযজ্ঞে অনেকের মধ্যে দায়িত্বহীনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ কারণে অনেকে গণনা থেকে বাদ পড়েছেন। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজের দায়িত্বশীল মন্ত্রী হিসেবে স্বীকার করছি, এবারের মানুষ গোনার কাজে অবহেলা হয়েছে।’
বেসরকারি খাতে যাচ্ছে আরও সাত পাটকল
৩০ জুন, ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা জোনে অবস্থিত আরও সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ৫-২০ বছরের জন্য ভাড়া-ভিত্তিক লিজ দেওয়ার জন্য সাতটি বেসরকারি সংস্থাকে চূড়ান্ত করেছে সরকার।
বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- বে গ্রুপ, রশিদ গ্রুপ, পান্ডুঘর গ্রুপ, স্টিলমার্ক গ্রুপ, ফরচুন গ্রুপ এবং অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক গোল্ডেন ফাইবার অস্ট্রেলিয়া পিটিওয়াই লিমিটেড।
এর আগে প্রথম দফায়, বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) দরপত্রের মাধমে চারটি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে।
ইজারা দেওয়া পাটকলগুলো হলো- জাতীয় জুট মিলস, আরআর জুট মিলস, এমএম জুট মিলস, গুল আহমেদ জুট মিলস, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, দৌলতপুর জুট মিলস এবং প্লাটিনাম জুট মিলস।
২০২০ সাল থেকে বন্ধ থাকা মিলগুলিকে পেতে হলে, চূড়ান্ত চুক্তিতে সই করার জন্য ইজারাদারদের ২৪ মাস আগে ভাড়া দিতে হবে। লিজের শর্ত অনুযায়ী, ভাড়া পরিশোধের জন্য তারা ছয় মাস সময় পাবে।
ইজারা দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত করা বেসরকারি কোম্পানিগুলো হয় ইতিমধ্যেই পাট ব্যবসায় নিয়োজিত অথবা দেশে-বিদেশে পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনা করে এ খাতে নতুন বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে।
ইজারা শর্তাবলীর অধীনে, ফার্মগুলিকে শুধুমাত্র পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য মিলের বিদ্যমান যন্ত্রপাতি, জমি এবং অন্যান্য সক্ষমতা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু, তারা ব্যাংক ঋণ পাওয়ার জন্য মিলের সম্পত্তি বন্ধক রাখতে পারবে না।
ইজারা গ্রহীতারা মিলগুলিকে তার নিজস্ব নামে এবং পদ্ধতিতে পরিচালনা করবে, এবং নিজস্ব ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য সম্পর্কিত নথির মাধ্যমে লেনদেন করবে।
বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, রশিদ গ্রুপের সহযোগী সংস্থা- রশিদ অটোমেটিক রাইস মিলস লিমিটেড, ঢাকা জোনের অধীনে সিরাজগঞ্জে অবস্থিত জাতীয় জুট মিলস। দেশের চালের বাজারে ৩০ শতাংশ অংশীদারিত্বসহ গ্রুপটি ইতিমধ্যে আলেয়া জুট মিলস নামে একটি পাটকলেরও মালিক।
বিজেএমসি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আরআর জুট মিল লিজ দেওয়ার জন্য পান্ডুঘর গ্রুপের ইন্টারস্টফ অ্যাপারেলস লিমিটেডকেও বেছে নিয়েছে। বে গ্রুপের গুড ব্যাগ অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, বেস্টলা লিমিটেড এবং জুট ফাইবার্স বিডি এতে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করবে।
একই অঞ্চলে অবস্থিত এমএম জুট মিলস স্টিলমার্ক গ্রুপের স্টিলমার্ক বিল্ডিং লিমিটেডের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রি-ইঞ্জিনিয়ারড স্টিল বিল্ডিং প্রস্তুতকারক। এই প্রথম গ্রুপটি পাট খাতে প্রবেশ করছে।
আরমাডা স্পিনিং মিলস সীতাকুণ্ডের গুল আহমেদ জুট মিলস এবং ফিনস্টে ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড এগ্রো পার্ক পাবে যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ।
গোল্ডেন ফাইবার অস্ট্রেলিয়া পিটিওয়াই লিমিটেড খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত দৌলতপুর জুট মিলের ইজারা পেয়েছে এবং ফরচুন সুজ প্লাটিনাম জুট মিলস অধিগ্রহণ করেছে।
গোল্ডেন ফাইবার অস্ট্রেলিয়া পিটিওয়াই এবং স্লেগাহ হোল্ডিংস পিটিওয়াই লিমিটেড দৌলতপুর জুট মিলসে বিনিয়োগ করবে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফরচুন গ্রুপের একটি কোম্পানি ফরচুন সুজ প্ল্যাটিনাম জুট মিলস লিজ নিয়েছে, তবে এতে বিনিয়োগ করবে না। তার পরিবর্তে, বিনিয়োগ করবে এ গ্রুপের আরেকটি কোম্পানি ফরচুন জুটেক্স।
আমদানি ব্যয়ের চাপে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছাড়িয়েছে ১৭ বিলিয়ন ডলার
০৫ জুলাই ২২, সমকাল
আমদানি ব্যয়ের চাপে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে ঘাটতি আরও বেড়ে গেছে। গত অর্থবছরের ১১ মাসে এ ঘাটতি ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। রপ্তানি বাড়লেও আমদানির সঙ্গে পার্থক্য অনেক বেড়েছে। এ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। অন্যদিকে রেমিট্যান্স কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে চলতি হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি বেড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) চলতি হিসাবে বাংলাদেশের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৩ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল মাত্র ২৭৮ কোটি ডলার। এর মানে ঘাটতি বেড়েছে ৬ গুণের বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৩৯ শতাংশ বেশি। এ সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৪ হাজার ৪৫৮ কোটি ডলার। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৮২ কোটি ডলার। এ সময়ে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। ১১ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯১৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ২৮৪ কোটি ডলার।
চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকলেও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত অনেক বেড়েছে। উদ্বৃত্তের পরিমাণ ১ হাজার ৩৩৫ কোটি ডলার। এর বড় কারণ বৈদেশিক ঋণ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি। এ সময়ে নিট বিদেশি ঋণ এসেছে ৬৮০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ৪২৩ কোটি ডলার ছিল।
অন্যদিকে এ সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২০৫ কোটি ডলার, যা আগের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। আর্থিক হিসাবের অবস্থা ভালো থাকলেও সার্বিক লেনদেনে ঘাটতি হয়েছে ৪৩০ কোটি ডলার। এর কারণ চলতি হিসাবে বড় ঘাটতি। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে সার্বিক লেনদেনে ৮৫২ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছেই, এবার ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার
৫ জুলাই ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
অর্থবছর শেষে রপ্তানি আয়ের প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ হলেও জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো বছরের আমদানির তথ্য এখনও আসেনি। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক মে পর্যন্ত আমদানি ব্যয়ের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
এতে দেখা গেছে মে পর্যন্ত অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় এবং রেমিটেন্সে নেতিবাচক ধারা বজায় থাকায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩০ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ঘাটতি বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ (১০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার)। আগের অর্থবছরের আলোচিত সময়ে যা ছিল ২০ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।
এর প্রভাবে দেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও ১৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার পার করেছে, যেটিও ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এক মাস আগেও এপ্রিল শেষে যা ছিল ১৫ দশামিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।
আর গত বছরের মে থেকে এক বছরের ব্যবধানে চলতি হিসাবের এ ঘাটতি ৬ গুণের বেশি বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের মে মাসে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।.. ..
চলতি হিসাবে এত ঘাটতিতে বাংলাদেশ এর আগে কখনই পড়েনি। গত ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ঘাটতিতে পরে এক সময়ে উদ্বৃত্ত থাকা চলতি হিসাবের ভারসাম্য। ওই অর্থবছর শেষে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতিই ছিল সবচেয়ে বড়।.. ..
আমদানি বাড়ায় এক সময়ে সার্বিক ভারসাম্যের (ওভার অল ব্যালেন্স) উদ্বৃত্তও ঋণাত্বক হয়েছে। গত অর্থবছরের মে মাসে যেখানে উদ্বৃত্ত ছিল ৮ দশমিক ৫১ বিলয়ন, গত এপ্রিলে তা ঋণাত্বক হয়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৭১ বিলিয়নে। আর মে শেষে হয় ঋণাত্বক ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
কোরবানির ‘সংগ্রহ করা মাংস’ বিক্রি করে বাসা ভাড়া দেবেন বস্তির মাজেদা
১১ জুলাই, ২০২২, ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা
ঢাকায় বসবাসকারী নিম্নআয়ের মানুষেরা ঈদের দিন কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। রবিবার (১০ জুলাই) বাংলাদেশে ঈদ-উল-আজহা উদযাপন করা হয়। এদিন রাজধানীর অলিতেগলিতে বিত্তবানরা পশু কোরবানি করেছেন।
ঈদের সংগ্রহ করা মাংস বিক্রির অন্যতম কারণ হিসেবে তারা ঢাকায় বাস করতে “অতিরিক্ত ব্যয়ের” কথা জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে ৩০ বছর ধরে বাস করছেন স্বামী পরিত্যক্তা মাজেদা বেগম (৬০)। তিনি রাজধানীর নিমতলী বস্তিতে থাকেন এবং মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
ঈদের দিনে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করেছেন তিনি; আবার সেই মাংস এনে বিক্রি করেও দিয়েছেন কারওয়ানবাজারে।
না খেয়ে মাংস বিক্রি করে দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দা বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, “বাসার জন্য এক-দেড় কেজি রাখছি, বাকিটা বিক্রি করে বাসা ভাড়া দিমু, বাসা ভাড়া তো সব মিলিয়ে ৫-৬ হাজার টাকা। আগে ৪ হাজার টাকা ছিল। এখন তো বস্তিমালিক সব মিলিয়ে ৬ হাজার টাকা নেয়। মাংস খাইলেই তো চলবে না, বাসা ভাড়াও তো দিতে হবে।”
রাজধানীর কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা মাংসের ক্রেতা নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ, যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। যারা বছরের অন্যান্য সময়েও গরুর মাংস কিনতে পারেন না সাধারণত এ সময় কম দামে (কেজি ২৫০-৪০০ টাকা) মাংস কেনেন।
৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামল রিজার্ভ
১২ জুলাই ২২, সমকাল
রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত চাপে রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে দেশের অর্থনীতির শক্তির পরিচায়ক এই অন্যতম সূচকের সামর্থ্য। সেই চাপে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ বা আকু) পাওনা পরিশোধের পর মঙ্গলবার বৈদেশিক মুদ্রার মজুত দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। গত দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ৪০ বিলিয়নের নিচে নামল। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চামড়ার ন্যায্য দাম মেলেনি
১৩ জুলাই ২২, সমকাল
কোরবানির পশুর চামড়ার দামের কথা ভুলেই গেছে অনেকে। বিপর্যয়কর এ অবস্থা এক যুগেরও বেশি সময়ের। তবে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যে মহাবিপর্যয়কর ও ভয়াবহ পরিস্থ্থিতি তৈরি হয়েছিল, এ বছর তেমনটি হয়নি। ন্যায্য মূল্য তো নয়ই, কোথাও সরকারের বেঁধে দেওয়া দরেও চামড়া কেনাবেচা হয়নি। তবে গতবারের তুলনায় চামড়াপ্রতি ঢাকায় ১০০-২০০ টাকা, দেশের অন্যত্র ৫০-১০০ টাকা বেশি দর পাওয়া গেছে। ছাগলের চামড়ার বেশিরভাগ গত বছরের মতো নষ্ট হয়েছে। তবে ক্রেতার অভাবে বা দাম না পেয়ে গত বছরের মতো গরুর চামড়া নষ্ট বা পুঁতে ফেলার ঘটনা ঘটেনি।
চামড়ার দাম কমার কারণ হিসেবে ঢাকার বড় মৌসুমি ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের দাবি, সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পুরোপুরি আন্তর্জাতিক ‘কমপ্লায়েন্স’ অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রকৃত আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। কেমিক্যাল, লবণ ও শ্রমিক মজুরিকেও দায়ী করলেন তাঁরা।
তার পরও চাহিদা অনুযায়ী এ বছর চামড়া না পাওয়ায় গতবারের তুলনায় আকার ভেদে চামড়াপ্রতি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম দিয়েছেন। যদিও ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের দিন রাত ৯টার পর লালবাগের পোস্তায় গত বছর বড় গরুর যে চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়ও কেনার কেউ ছিল না, এবার তা হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অর্থাৎ চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। তবে এটাও ঠিক, চামড়ার প্রকৃত দাম হওয়া উচিত বা এক যুগ আগের তুলনায়ও এবারের বাজারদর চারভাগের একভাগও নয়। পোস্তার পারভেজ হোসাইন বলেন, ২০১২-১৩ সালেও বড় চামড়া ৪ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। গত বছর একই সাইজের চামড়ার দর ছিল ৬০০-৭০০ টাকায়। এ বছর ওই সাইজের চামড়ার জন্য সর্বোচ্চ ১২শ টাকা দাম দিতে হয়েছে।
ঢাকার বাইরের অবস্থা অতটা স্বস্তিদায়ক নয়। গ্রামাঞ্চল তো বটেই সব মফস্বল শহর, এমনকি জেলা ও বিভাগীয় শহরেও বিক্রেতারা চামড়ার ভালো দাম পাননি। ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার বড় গরুর চামড়ার দামও কোথাও কোথাও দুইশ টাকা, কোথাও পাঁচশ টাকা সেধেছেন ছোট মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। গত তিন বছরে ব্যবসায় মন্দা থাকায় এ বছর পাড়া-মহল্লাভিত্তিক ছোট মৌসুমি ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল কম। কোরবানিদাতারাও চামড়া বিক্রির অপেক্ষায় না থেকে মাদ্রাসা, এতিমখানা বা মসজিদে দান করেছেন।
স্বাস্থ্যকর খাবার কিনতে পারে না ৭৩% মানুষ
১৫ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
বাংলাদেশে একজন মানুষের দৈনিক স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য খরচ পড়ে প্রায় ২৭৬ টাকা। জনসংখ্যার ৭৩ শতাংশেরই এ টাকা খরচ করে স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। জাতিসংঘের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে ‘বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন যৌথভাবে প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন সংস্থা (ইফাদ), ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘের সদস্য প্রায় সব দেশের তথ্য এ প্রতিবেদনে আছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে মোট জনসংখ্যার হারে স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ্যের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে নেপাল, তারপরই পাকিস্তানের অবস্থান। ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের কিছুটা ভালো। ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা ও ভুটান।
ফাঁকফোকরে কৃষিকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ধুম
১৮ জুলাই, ২০২২, সমকাল
রাজধানীর ফার্মগেটে খামারবাড়ি। সরকারের কৃষি-সংক্রান্ত বহু প্রকল্পের কেন্দ্র। এই দপ্তরগুলো কয়েক মাস ধরে অন্যরকম মুখর। ইউরোপে নেদারল্যান্ডসের আলমেয়ার শহরে চলছে আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার বা উদ্যানতাত্ত্বিক প্রদর্শনী। ১৪ এপ্রিল থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত; নাম ‘ফ্লোরিয়েড এক্সপো-২০২২’। এই মেলা ঘিরে খামারবাড়িতে ধুন্ধুমার আলোচনা। কে নেদারল্যান্ডস যাচ্ছেন, কার নামে বিদেশ সফরের সরকারি আদেশ (জিও) জারি হলো- কর্মকর্তাদের কক্ষে কক্ষে এমন কথাবার্তার ঢেউ। মেলা দেখতে মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থা থেকে ১৫০ জনের তালিকা করা হয়। অন্তত ১০০ কর্মকর্তা ঘুরেও এসেছেন। একা নন, কেউ উড়াল দিয়েছেন স্ত্রীকে নিয়ে, আবার কারও সফরসঙ্গী ছিলেন স্বামী। অনেকে সেনজেন ভিসার সুযোগে ঘুরে এসেছেন অন্য দেশ।
করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্নিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে বিদেশ সফরে যাওয়ার ধুম পড়ে। এখন চলছে নেদারল্যান্ডস যাওয়ার মাতামাতি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের পরিপত্র জারির পরও ফাঁকফোকরে ভ্রমণ বন্ধ নেই কর্মকর্তাদের। ছোট-বড় প্রায় সব প্রকল্পেই রাখা হয়েছে বিদেশ সফরের সুযোগ। কখনও প্রশিক্ষণের নামে, কখনও মেলা কিংবা আনারস দেখতে, আবার কখনও মসলা চাষ শিখতে বিলাসী ভ্রমণে যাচ্ছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। অপ্রয়োজনেও ভ্রমণে ছুটছেন অনেকে। বিদেশ যেতে কর্মকর্তারা লেগে আছেন তদবিরে। এসব সফরে সরকারি ভান্ডার থেকেও খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি বরাদ্দ না থাকলেও ভ্রমণ থেমে নেই, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টাকায়ও বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ।
কম গুরুত্বের ৮১ প্রকল্পের বরাদ্দ স্থগিত
১৫ জুলাই, ২০২২, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টুয়েন্টিফোর অনলাইন
কম গুরুত্বের ৮১ প্রকল্পের বরাদ্দ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আর ৬৩৬ উন্নয়ন প্রকল্পে কমানো হচ্ছে সরকারের খরচ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসবের পাশাপাশি সরকার পরিচালনার খরচ কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ বছর সরকারের বাস্তবায়নের তালিকায় রয়েছে অন্তত ১ হাজার ৩৭২ প্রকল্প। এ ক্যাটাগরিতে রয়েছে পদ্মা রেলসেতু, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ৬৪৬ প্রকল্প। এগুলো চলবে স্বাভাবিক গতিতেই।
ক্যাটাগরি বি-তে রয়েছে জেলা কারাগার, আঞ্চলিক পাসপোর্ট ভবন নির্মাণসহ ৬৩৬ প্রকল্প। এগুলোতে বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ খরচ করা যাবে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নতুন কার্যালয়, কনভেনশন সেন্টার, করভবন নির্মাণের মত সারা দেশের ৮১টি সি ক্যাটাগরির প্রকল্প আপাতত বন্ধ থাকবে।
ঢাকা মেট্রোরেল
সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে, সময় দেড় বছর
১৮ জুলাই ২২, সমকাল
যাতায়াতে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ কমাতে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়ন। কাজ শেষ হলে উন্নত ট্রেনে কম সময়ে পৌঁছানো যাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। উত্তরা থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার পথে অসহনীয় যানজট থেকে মিলবে কাঙ্ক্ষিত মুক্তি। কিন্তু এ আশায় অধীর অপেক্ষার পালা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। কাজ শেষ হতে আরও অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে। একই সঙ্গে ব্যয় বাড়ছে ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। অবশ্য আগামী ডিসেম্বরে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আংশিক ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (লাইন ৬) প্রকল্পে নির্মাণকাজের জন্য বাড়তি সময় ও অর্থ চেয়ে দ্বিতীয় দফা সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড।
বাংলাদেশের বিদেশী ঋণ
পাঁচ বছর আগে ৪৫ বিলিয়ন, এখন তা বেড়ে ৯৩ বিলিয়ন ডলার
১৯ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
বিদেশী উৎস থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশী উৎস থেকে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫৮১ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) মার্চ শেষে বিদেশী এ ঋণের পরিমাণ ৯৩ দশমিক ২৩ বিলিয়ন (৯ হাজার ৩২৩ কোটি) ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ২১ শতাংশ। বিপুল অংকের এ ঋণের ৭৩ শতাংশই সরকারের। বাকি ২৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছে দেশের বেসরকারি খাত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে বিদেশী উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৮২৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার সরাসরি সরকার ঋণ নিয়েছে। এ ঋণের পুরোটাই দীর্ঘমেয়াদি। বাকি ১১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। মার্চ শেষে বিদেশী উৎস থেকে বেসরকারি খাতের নেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।
মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিদেশী উৎস থেকে দেশের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদেশী ঋণের এ উল্লম্ফন ভবিষ্যতে বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, দেশে এ মুহূর্তে ডলারের তীব্র সংকট চলছে। আগামীতে এ সংকট আরো গভীর হবে। এ অবস্থায় বিদেশী ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও চাপে থাকতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন
ঋণখেলাপিদের জন্য এবার গণছাড়
১৯ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
করোনায় ক্ষতিতে ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে ঋণ পরিশোধে ছাড় দিয়েছিলেন সাবেক গভর্নর ফজলে কবির। এর ফলে ব্যবসায়ীরা ঋণ শোধ না করেও দুই বছর ব্যাংকের খাতায় ছিলেন ভালো গ্রাহক। এখন ওই সুবিধা উঠে গেছে, তবে অনেক ব্যবসায়ী আগের মতোই ঋণ শোধ করেছেন না। ফলে বাড়ছে খেলাপি ঋণ।
আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগদান করার পাঁচ কার্যদিবসের দিন খেলাপি ঋণ ঠেকাতে বড় ছাড় দিয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ঋণ আদায় না বাড়লেও সাময়িকভাবে কমবে খেলাপি ঋণ। আর বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই নীতিমালা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত।
নতুন নীতিমালার ফলে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে। আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। পাশাপাশি এসব ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে পরিশোধ করা যাবে। আগে এসব ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো। আবার নতুন করে ঋণও পাওয়া যাবে।
পাশাপাশি খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পুরো ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক মালিকেরাই ঠিক করবেন, কী সুবিধা পাবেন ঋণখেলাপিরা। আগে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগত। যা স্বয়ং গভর্নর অনুমোদন করতেন। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে সেই ক্ষমতার পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দিয়েছেন।
কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নতুন নীতিমালার ফলে ব্যাংকের ঋণ আদায় আরও কঠিন হয়ে পড়বে। এর ফলে তারল্য ব্যবস্থাপনায় হযবরল পরিস্থিতি দেখা দেবে। এতে বাড়াতে হবে আমানতের সুদ। আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে। নতুন ঋণ বিতরণ মন্থর হয়ে পড়বে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর হাতে ক্ষমতা দেওয়ায় অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে।
জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে নতুন রেকর্ড
১৯ জুলাই ২২, সমকাল
গত জুন মাসে দেশে সার্বিকভাবে পণ্য ও সেবার দর বৃদ্ধির হারে নতুন রেকর্ড হয়েছে। জুন মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে মে মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪২ শতাংশে ওঠে, যা ছিল ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। জুনে গ্রাম এলাকায় সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ০৯ শতাংশ, যেখানে শহরে এ হার ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। শহরে হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত সূচকে গ্রামে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং শহরে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলে লাখ টাকার আইসক্রিম খেতে ক্রেতার অভাব নেই!
১৯ জুলাই, ২০২২, দেশ রুপান্তর
আইসক্রিমের দাম লাখ টাকা হলেও তা ঢাকার একটি ‘পাঁচ তারা’ হোটেল অর্ডার সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
রোববার হোটেল সারিনার ফেসবুক পাতায় একটি পোস্টে বলা হয়, ‘ঢাকার সবচেয়ে দামি আইসক্রিম পাওয়া যাচ্ছে ৯৯,৯৯৯ টাকায়’। পোস্টের সঙ্গে কাচের ছোট বাটিতে সোনায় মোড়ানো আইসক্রিমের ছবিও দেওয়া হয়।
মুহূর্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই তা শেয়ার দেন। ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার একদিনের মধ্যেই এই প্যাকেজটি ‘ওভারবুকড’ হয়ে যাওয়ার কারণে এর অর্ডার নেয়া বন্ধ আছে বলে জানায় হোটেল কর্তৃপক্ষ।
অর্থনীতির তেজি অবস্থা হঠাৎ চোরাবালিতে
২১ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
করোনাসৃষ্ট অর্থনৈতিক দুর্যোগে পর্যুদস্ত ছিল বিশ্ব অর্থনীতি। যদিও দুর্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল সমৃদ্ধির পথে। নিয়ন্ত্রিত ছিল মূল্যস্ফীতি। বড় প্রবৃদ্ধিতে ছিল রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তেজি ভাব ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশের রফতানি ছাড়ায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে হঠাৎ করেই চোরাবালিতে ঠেলে দিয়েছে।
গত অর্থবছরের (২০২১-২২) মে পর্যন্ত ১১ মাসেই দেশের আমদানি ব্যয় ছাড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। ইতিহাস সৃষ্টি করা এ আমদানি ব্যয়ের নেতিবাচক প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে বৈদেশিক বাণিজ্যের সবক’টি সূচকে। দিন যত যাচ্ছে দেশের অর্থনীতির মৌলিক সূচকগুলো ততই নাজুক হয়ে উঠছে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে ১৫ শতাংশেরও বেশি। গত মে পর্যন্ত অর্থবছরের ১১ মাসেই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। একই সময়ে সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতি ঠেকেছে ১৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে। পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৭ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। চাপের মুখে পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ২০২১ সালে ৪৮ বিলিয়নে উন্নীত হওয়া রিজার্ভের পরিমাণ ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার। ওই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে দেশের আমদানি সক্ষমতা ছিল প্রায় আট মাসের। প্রায় আট বিলিয়ন ডলার কমে যাওয়ার পরও বর্তমানে রিজার্ভ আছে ৩৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। কিন্তু এ পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে দেশের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে সাড়ে চার মাস। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ আছে ৩১ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার প্রভাব পড়েছে ডলারের বাজারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। যদিও ডলারের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৮ শতাংশেরও বেশি। গতকাল প্রতি ডলার ১০০ টাকার বেশি দরে কিনেছে দেশের মানি এক্সচেঞ্জগুলো। আর খুচরা বাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১০৩ টাকায়। তবে বেশি দাম দিয়েও খুচরা বাজারে আগের মতো বড় অংকের ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশের অর্থনৈতিক সংকটে নড়েচড়ে বসেছে সরকারও। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেলসহ নানা ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। সংকটের কারণে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও চাপের মুখে পড়েছে। জ্বালানিসাশ্রয়ী নীতিতে হাঁটতে গিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে এনেছে সরকার। সারা দেশে লোডশেডিংয়ের শিডিউল করে দেয়ার মতো কঠোর নীতিও চালু করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে চাপে পড়েছে দেশের শিল্প উৎপাদন। এরই মধ্যে শিল্পোদ্যোক্তারা নিজেদের উদ্বেগের কথা জানাতে শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভুল নীতির কারণে আজকের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে যে অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়েছে, সেটি দ্রুতই কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই। বরং আগামীতে এ পরিস্থিতি আরো জটিল হবে।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণসহায়তা নেয়ার আলোচনা উঠেছে। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। এক্ষেত্রে আইএমএফ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার জরুরি বাজেট সহায়তা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ‘এসএমই খাতের উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষায়’ ব্যয় করতে এ পরিমাণ অর্থ ঋণ দিতে শিগগির আইএমএফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে অর্থ বিভাগ।
২০২৪ সালের পর অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসবে: সিপিডি
২১ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
আগামী ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসতে পারে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)। দেশের ২০টি মেগাপ্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধ শুরু হলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশংকার কথা জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতের জটিলতা এড়াতে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। এজন্য এখন থেকে একটি কর্মপরিকল্পনা নেয়ার কথাও বলা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের বৃহৎ ২০টি মেগা প্রকল্প: প্রবণতা ও পরিস্থিতি’বিষয়ে ভার্চুয়ালি এক প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এসব কথা বলেছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের ২০টি মেগা প্রকল্পে প্রায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। যার মধ্যে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৬২ দশমিক ১৭ শতাংশ বা ৪৩ বিলিয়ন ডলার। এসব ঋণের বড় অংশই নেয়া হয়েছে রাশিয়া, জাপান এবং চীনের কাছ থেকে। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের যে হার, তাতে অনেকগুলো ২০৩০ সালেও শেষ হবে না। কিন্তু ২০২৪ সাল থেকেই এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে। ফলে ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসবে। প্রথম চাপটা আসবে চীন থেকে। এরপর রাশিয়া, তারপর জাপান। এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসার আশঙ্কা রয়েছে।
এসময় দেশের ২০টি বড় প্রকল্প বিশ্লেষণ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পে ঋণ পরিশোধের সময় এগিয়ে আসছে, যা অর্থনীতির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব প্রকল্পের তালিকার অন্যতম হলো পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ ইত্যাদি।
২০ প্রকল্পের ১৫টিই ভৌত অবকাঠামো উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এর মধ্যে ৫০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে রাস্তাঘাটে। ৩৫-৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় হয়েছে। বাকি অর্থ স্বাস্থ্যসহ অন্যখাতে দেওয়া হয়।
দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম
প্যান্ডোরা পেপারসে আরও ৩ বাংলাদেশির নাম
০৪ মে ২২, সমকাল
বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, শাসক দলের পরিবার সদস্য, বড় ব্যবসায়ী, সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের অফশোর কোম্পানিতে গোপন বিনিয়োগের তথ্য ফাঁস করা প্যান্ডোরা পেপারস খ্যাত নথিতে আরও তিন বাংলাদেশির নাম এসেছে।
নতুন তালিকায় আসা তিন বাংলাদেশি হলেন, ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসের এস হেদায়েত উল্লাহ, এস রুমি সফিউল্লাহ এবং সিলেটের শাহজালাল উপশহরের স্প্রিং গার্ডেনের বাসিন্দা শাহিদা বেগম শান্তি। হেদায়েত ও সফিউল্লাহ একই পরিবারের সদস্য।
রেলের ১০ ইঞ্জিন কেনায় অনিয়ম
৭ মে, ২০২২, কালের কণ্ঠ
বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে সম্প্রতি যুক্ত হওয়া ১০টি মিটার গেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ক্রয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইঞ্জিনগুলো ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়নি। চুক্তিতে তিন হাজার হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন দেওয়ার কথা থাকলেও দুই হাজার হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে। এমন আরো দুটি ব্যত্যয় পাওয়া গেছে।
তার পরও রেলওয়ে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করেছে।
রেলওয়েকে ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কম্পানি। দাম ছিল ৩২২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এরই মধ্যে ৯০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। যদিও তখনকার প্রকল্প পরিচালক এই ইঞ্জিন গ্রহণ এবং দাম পরিশোধের বিষয়ে আপত্তি দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া সরকারের একটি সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে জানানোর জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছে।
প্রতিবেদনে এই অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁরা হলেন রেলওয়ের তখনকার মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান, বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী এবং ঠিকাদার আফসার বিশ্বাস।
প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের তত্ত্বাবধানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ও গোপনে ‘স্বাধীন পর্যবেক্ষক’ নিয়োগ করে অনিয়মগুলো আড়াল করে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। আর অনিয়ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো প্রতিবেদন দেয়।
ওই ইঞ্জিন ক্রয় প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন নূর আহাম্মদ হোসেন। তিনি ১০ ইঞ্জিন বুঝে নিতে রাজি হননি। সরবরাহকারী হুন্দাই রোটেমকে বিল দেওয়াও বন্ধ করে দেন। এরপর নূর আহাম্মদকে বদলি করে হাসান মনসুরকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেয় মন্ত্রণালয়। গত বছরের ৪ অক্টোবর রেল ভবনে একটি সভা করে ইঞ্জিনগুলো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ৫ অক্টোবর ইঞ্জিনগুলো রেলের বহরে যুক্ত হয়।
বিনা টিকিটে এসি কামরায় রেলমন্ত্রীর ৩ আত্মীয়, জরিমানার পর টিটিই বরখাস্ত
০৭ মে ২০২২, প্রথম আলো
টিকিট ছাড়াই পাবনা থেকে ঢাকামুখী ট্রেনে উঠে এসি কামরায় বসেছিলেন তিন যাত্রী। ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) এলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের আত্মীয় পরিচয় দিয়েছিলেন তাঁরা। তখন টিটিই বিনা টিকিটে ভ্রমণের জন্য তাঁদের কাছ থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন। পাশাপাশি এসি কামরাও ছাড়তে হয় তাঁদের। গত বৃহস্পতিবার রাতের এ ঘটনার পর ওই টিটিইকে মুঠোফোনে বরখাস্ত করার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার তিনি আর কাজে যোগ দিতে পারেননি।
বরখাস্ত হওয়া টিটিই হলেন মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি পশ্চিম রেলের সদর দপ্তর ঈশ্বরদীতে সংযুক্ত।
শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা ওই তিন যাত্রীর কাছে টিকিট দেখতে চাইলে তাঁরা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। পরে তাঁদের এসি কামরা থেকে শোভন কামরার টিকিট দেওয়া হয়। এই অপরাধেই আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
অনিয়ম-দুর্নীতিতে বড় হচ্ছে রেলে লোকসানের অংক
০৯ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
যাত্রী ও পণ্যবাহী মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ৩৯৪টি ট্রেন পরিচালনা করে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করে যা আয় হয়, তার চেয়ে বেশি অর্থ ট্রেনগুলো পরিচালনায় ব্যয় হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছর ১ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে রেলওয়ে। গত পাঁচ বছরে লোকসানের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। ধারাবাহিক এ লোকসানের জন্য রেলের অনিয়ম-দুর্নীতিকে দায়ী করেছে খোদ রেলপথ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হলো রেলের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করা না হলে, রেলের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবং যাত্রীসেবার মান না বাড়ানো হলে লোকসান কমানো কষ্টকর হবে। সম্প্রতি রেল পরিষেবার মানোন্নয়ন ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি সম্পর্কিত এক আলোচনা সভায় এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রেলে অনিয়ম বেশি হয় এমন খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা। টিকিট কালোবাজারি কিংবা টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা নিয়মিতভাবেই ঘটছে। এসব কাজে রেলওয়েরই কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে টিকিট পরিদর্শকসহ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের বিরুদ্ধে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগও পুরনো।
যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনায় বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ছাড়াও বাংলাদেশ রেলওয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির একাধিক খাত চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খাতগুলো হলো সম্পত্তি ইজারা ও হস্তান্তর, অবৈধ স্থাপনা তৈরি, কেনাকাটা, ভূমি অধিগ্রহণ, যন্ত্রাংশ নিলাম, টিকিট বিক্রি, ট্রেন ইজারা, ক্যাটারিং ইত্যাদি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে ট্রেন পরিচালনার ব্যয় ও আয়ের মধ্যে ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। পাশাপাশি বিদ্যমান সম্পদগুলো সুষ্ঠু ব্যবহার করে রেলকে সহজেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যেত। কিন্তু এসব শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বাস্তবে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না।
তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি
১১ মে ২২, সমকাল
তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আজ বুধবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে টিআইবি। ‘বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ওয়েবিনারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে দুটি কয়লাভিত্তিক ও একটি এলএনজিভিত্তিক। জমি ক্রয়, অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ খাতে এই দুর্নীতি হয়েছে। এই টাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিওকর্মী ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের পকেটে গেছে।
টিআইবি জানায়, বরিশালের ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে। এটি মূলত গুণগত গবেষণা। গবেষণার সময়কাল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল। গবেষণাটি করতে গিয়ে সরকারি দপ্তর, স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, তিনটি প্রকল্পেই দুর্নীতি হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এই প্রকল্পে ২৫৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্রে ভূমি কেনাবেচায় দুর্নীতি হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা। আর ১৬ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বরিশালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারত, চীন, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে তিন টাকা থেকে সোয়া পাঁচ টাকা পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি দাম ধরা হয়েছে। বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৬ টাকা ৬১ পয়সা, যা অন্য দেশের তুলনায় ১ টাকা ৪৬ পয়সা থেকে ৩ টাকা ১৫ পয়সা বেশি। বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৬ টাকা ৭৭ পয়সা, যা অন্য দেশের তুলনায় ৩ টাকা ৩১ পয়সা বেশি।
টিআইবি বলেছে, অন্য দেশগুলোতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যতটুকু জমি অধিগ্রহণ করা দরকার, বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জমি ছিল ৮১ একর। কিন্তু অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩১০ একর। বাঁশখালীতে দরকার ছিল ৩০৪ একর। জমি নেওয়া হয়েছে ৬৬০ একর। মাতারবাড়ীতে জমির প্রয়োজন ছিল ৪১৮ একর। কেনা হয়েছে ১ হাজার ৩৫৮ একর। এই জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়েই দুর্নীতি হয়েছে বেশি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি না করেই প্রতি টন কয়লার প্রাথমিক দাম ১২০ ডলার হিসাব করে বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করায় দুর্নীতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইআইএ ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করা হয়েছে। ইআইএ না করে প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এগুলোকে অনিয়ম বলছে টিআইবি।
মেয়রের গোডাউন থেকে ৩ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ
১২ মে ২২, সমকাল
নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মাজেদুল বারী নয়নের গোডাউন থেকে প্রায় ৩ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পৌরসভার মৌখাড়াবাজারে মেয়রের ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স নয়ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের গোডাউন থেকে ওই তেল জব্দ করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নাটোরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান তানভীর ও র্যাব-৫ এর সদস্যরা এই অভিযান পরিচালনা করেন।
৭ জেলায় প্রায় ২ লাখ লিটার তেল জব্দ
১১ মে ২০২২, প্রথম আলো
সরকার ভোজ্যতেলের দর ঠিক করে দেওয়ার পাঁচ দিনেও বাজারে সংকট কাটেনি। গতকাল মঙ্গলবারও দেশের অনেক স্থানে ক্রেতারা বাজারে ও অলিগলির দোকানে নির্ধারিত মূল্যে সয়াবিন তেল পাননি। কিন্তু জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও পুলিশের অভিযানে গুদাম থেকে বেরিয়ে আসছে ব্যবসায়ীদের মজুত করা হাজার হাজার লিটার তেল।
গত দুই দিনে সাত জেলায় অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় এক ব্যবসায়ীর গুদামে মজুত করা ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। ওই ব্যবসায়ীকে জরিমানার পর তিন দিনের মধ্যে ওই তেল খোলাবাজারে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে তেল মজুতের দায়ে গতকাল আট জেলার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
পিকে হালদার ভারতে গ্রেফতার, গডফাদাররা এখনো অপ্রকাশ্যে
১৫ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার হালদার ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন। যিনি পিকে হালদার নামেই বেশি পরিচিত। গতকাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগর থেকে তাকে গ্রেফতার করে দেশটির অর্থসংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তবে পালিয়ে থাকা পিকে হালদার ভারতে গ্রেফতার হলেও অর্থ আত্মসাতের পেছনে থাকা তার গডফাদাররা এখনো অপ্রকাশ্যেই রয়েছেন।
আর্থিক খাতের একজন শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং তার আগে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন পিকে হালদার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বেতন-ভাতাসহ বৈধ উৎস থেকে তার আয় ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কিন্তু এর বাইরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী থাকা অবস্থায় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল এ সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। পাশাপাশি এ অর্থ পাচারও করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ফেরার ছিলেন পিকে হালদার। তাকে ধরতে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টও জারি করা হয়েছিল। অবশেষে অর্থ পাচারের অভিযোগে গতকাল তাকে গ্রেফতার করেছে ভারতের ইডি।
শিক্ষামন্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা সেই ডিসি বদলি
১৯ মে ২০২২, প্রথম আলো
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) চার জেলায় ডিসি পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুরের ডিসি অঞ্জনা খান মজলিসকে নেত্রকোনার ডিসি হিসেবে বদলি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
চাঁদপুরে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ভাইসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা–কর্মীর জমি দখলের বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য আলোচিত ছিলেন ডিসি অঞ্জনা খান মজলিস। দীপু মনির ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ওরফে টিপুসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী ভুয়া দলিলের মাধ্যমে ৪৮ একরের বেশি জমির দখল নেন। জেলার হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরে আছে এসব জমি। তাঁরা পরে সেখানে মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার ও সবজিবাগান গড়ে তোলেন। ওই এলাকার নাম বদলে নিজের নামে ‘টিপুনগর’ নামকরণ করেন। বিষয়টি তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি করে। এ নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ দখলের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ এপ্রিল চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার টিপুনগরের খাসজমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়। মামলায় জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়।
এনএসইউর চার ট্রাস্টির জামিন নামঞ্জুর পুলিশে সোপর্দ
২৩ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
অর্থ আত্মসাতের মামলায় আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টিকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হেফাজতে নেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই চারজনকে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এনএসইউর এ চারজন ট্রাস্টি হলেন রেহানা রহমান, এমএ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ। ওই মামলায় জামিন চেয়ে চারজনের করা পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সরকারের দেড় হাজার কোটি টাকা নয়ছয়
দুই উড়োজাহাজ লিজ
৩১ মে ২২, সমকাল
দুর্নীতির দরজা খোলা রেখেই মিসর থেকে উড়োজাহাজ লিজ নিয়েছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। লিজের প্রক্রিয়া, মেরামতসহ নানা ক্ষেত্রে সরকারি টাকা ক্ষতি, অপচয় ও আত্মসাৎ করা হয়েছে কম-বেশি দেড় হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১ নম্বর সাব-কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সরকারি টাকা আত্মসাতের সুযোগ রেখে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর আগেও উড়োজাহাজ লিজসহ নানা কাণ্ড ঘটিয়েছে। এতে সরকারি টাকা অপচয় ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এবার মিসর থেকে দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ পাঁচ বছরের জন্য লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের বিরাট অঙ্কের টাকা অপচয় ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটল।
জানা গেছে, সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১ নম্বর সাব-কমিটি তদন্ত করেছে। তদন্তে বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকার ক্ষতি, অপচয় ও আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। সাব-কমিটি ওই অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনাটি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনটি দুদকে পাঠিয়েছে।
ভেজাল সিরাপে মৃত্যু: ১০৪ শিশুর পরিবারকে ১৫ লাখ করে টাকা দেওয়ার নির্দেশ
০২ জুন, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ১৯৯১ ও ২০০৯ সালে মারা যাওয়া ১০৪ শিশুর পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
রিট পিটিশনের রায় দেওয়ার সময়, ভুক্তভোগী পরিবারকে অর্থ প্রদানের পর ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ উৎপাদনের জন্য দায়ী কোম্পানি বা ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য ঔষধ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর শিশুদের মৃত্যুর ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।
হাইকোর্ট সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারার অধীনে দায়ী কোম্পানি ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি
সিন্ডিকেটে মন্ত্রীর স্ত্রী, ৩ এমপির প্রতিষ্ঠান
০৪ জুন ২২, সমকাল
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ব্যবসা সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পাওয়া যে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি পেতে যাচ্ছে, তার তিনটির মালিক তিন এমপি। একটির মালিক এক মন্ত্রীর স্ত্রী। দুই এমপির এজেন্সি ব্যবসায় নতুন হলেও কর্মী পাঠানোর কাজ পেতে যাচ্ছে।
যে ২৫ এজেন্সি নিয়ে সিন্ডিকেট হচ্ছে তার তালিকা পেয়েছে সমকাল। মালয়েশিয়ার ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমেও (এফডব্লিওসিএমএস) তালিকাটি ছিল। যদিও সম্প্রতি তা মুছে ফেলা হয়েছে।
তালিকায় রয়েছে ফেনী-২ আসনের সরকারদলীয় এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রতিষ্ঠান স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড (আরএল-১৫৫১)। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত মাত্র ৯১ জন কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে। ঢাকা-২০ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি বেনজির আহমদের প্রতিষ্ঠান আহমদ ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১১৪৬) সাত বছরে মাত্র ৩৮৭ জন কর্মী বিদেশ পাঠিয়েছে।
তালিকায় রয়েছে ফেনী-৩ আসনের এমপি ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (আরএল-১৩২৭)। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটাল ইন্টারন্যাশনালও (আরএল- ১১৩) রয়েছে। জনশক্তি ব্যবসায় অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৮৮৫ জন কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে।
চাল মজুতের মামলায় স্কয়ার ফুডের এমডির জামিন
০৬ জুন ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের গুদামে অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ১২৪ টন আতপ চাল জব্দের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অঞ্জন চৌধুরীকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৬ সপ্তাহ পর তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন আদালত।
তার আগাম জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (৬ জুন) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি সাহেদ নুরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বেনামি ঋণে বড় ঝুঁকিতে ইউনিয়ন ব্যাংক
৩০ জুন ২০২২, প্রথম আলো
বেসরকারি খাতের ইউনিয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা বেশির ভাগ ঋণে বড় ধরনের অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে কোম্পানি গঠন করে ঋণের বড় অংশই বের করে নিয়েছে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান। আবার অনেক ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না। কাগুজে এসব কোম্পানিকে দেওয়া ঋণের বেশির ভাগেরই খোঁজ মিলছে না এখন। ফলে এসব ঋণ আদায়ও হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এর আগে ঋণ অনিয়মের এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকের হল–মার্ক কেলেঙ্কারি ও সাবেক ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) এবং বহুল আলোচিত পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে।
জানা গেছে, বিতরণ করা ঋণ আদায় না হলেও ইউনিয়ন ব্যাংক এসব ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করছে না। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার যোগ্য, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যত ঋণ বিতরণ করেছে, তার সিংহভাগই খেলাপি বা অনিয়মের ঋণে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় এসব অনিয়ম ও করণীয় বিষয়ে ব্যাংকটির সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর গত ২৭ এপ্রিল ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ নিয়ে একটি চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঘুষ ছাড়া এমপিও মেলে না
০৩ জুলাই ২০২২, সমকাল
.. .. অনুসন্ধানে দেখা যায়, এমপিওভুক্তির জন্য আগে শুধু শিক্ষা ভবনে ঘুষ দিতে হতো। আর এখন দফায় দফায় ঘুষ দিতে হচ্ছে কমপক্ষে তিনটি ঘাটে- উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস ও আঞ্চলিক উপপরিচালকের কার্যালয়ে (ডিডি অফিস নামেই বেশি পরিচিত)। একজন শিক্ষক প্রথমে অনলাইনে আবেদন করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি কাগজপত্র পরখ করে সব ঠিক থাকলে তা পাঠান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি আবার সেগুলো যাচাই-বাছাই করে পাঠান মাউশির বিভাগীয় আঞ্চলিক উপপরিচালকের (ডিডি) কাছে। ডিডি সেগুলো আবারও যাচাই করে সব ঠিক থাকলে এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচন করেন। প্রতি বিজোড় মাসের ১৫ তারিখের পর মাউশি সব আঞ্চলিক উপপরিচালককে নিয়ে সভা করে এমপিওভুক্তি চূড়ান্ত করে। এভাবে একই শিক্ষকের একই কাগজপত্র এই তিন স্তরে, তিন অফিসে যাচাই-বাছাই করার সময় চলে হয়রানি ও ঘুষ আদায়।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি সমকালকে বলেন, ‘এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে এখন আগের চেয়ে ঘুষ-বাণিজ্য কয়েক গুণ বেড়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী পর্যন্ত সবাই যেন ফাঁদ পেতে বসে আছে শিক্ষকদের হয়রানিতে ফেলে টাকা আদায়ের।’
ছাত্রলীগের পদ কোটি টাকা
৬ জুলাই, ২০২২, দেশ রুপান্তর
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করে আসছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরকম কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন সময় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ মূলত ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের কমিটির মেয়াদ না থাকায় পদ বিক্রির ব্যাপারটিতে জয়-লেখক আগের চেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন।
দেশ রূপান্তর গত তিন দিন ধরে ছাত্রলীগের অন্তত এক ডজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে। এর মধ্যে যারা জয়- লেখকের হয়ে অনেক শাখা কমিটির পদ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িয়েছেন তারাও রয়েছেন। এ নেতারা বলছেন, জয়- লেখকের পদবাণিজ্যের একটি চক্র রয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যসহ এ চক্রের সদস্যরা আর্থিক লেনদেন করে। রাজধানীর কোন কোন জায়গায় এসব আর্থিক লেনদেন হয় সেটাও তারা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, মহানগর, গুরুত্ব জেলা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটিতে পদ পেতে কোটি টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। কারণ এসব এলাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের উন্নয়নকাজ ও শিল্পকারখানা বেশি। এ কারণে সেখানে চাঁদাবাজি ও টেন্ডার বাণিজ্যও হয় বেশি। এসব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্থানীয় নেতারা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হন।
এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজের জন্য কমিশন চাওয়ার অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও পদ হারান। তাদের শুধু দায়িত্ব থেকে সরিয়েই দেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দুজনকে দানব বলেও মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করার পর জয়-লেখকের পদবাণিজ্য আলোচনায় আসে। সেখানে উন্নয়নকাজের টেন্ডার ও কমিশন বাণিজ্যের ঘটনা রয়েছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সহসভাপতি দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, পদ বেচাকেনার ঘটনা সত্য। শুধু পদপ্রত্যাশী ছাত্রনেতাদের কাছ থেকেই নয়, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছ থেকেও টাকা ও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে জয় ও লেখকের বিরুদ্ধে। এ নেতারা বলছেন, পদবাণিজ্য করে বিভিন্ন শাখার কমিটির নেতা বানানো হয় বলেই পরে ওই নেতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, চাঁদাবাজি ও টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে।
রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢাবি ছাত্রের অবস্থান
১৩ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি। শুরুতে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করলেও পরে পুলিশের এক সদস্যের বাধার মুখে তিনি গণস্বাক্ষর বন্ধ রেখেছেন। এর মধ্যে মহিউদ্দিনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আরও কয়েকজন অবস্থান কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছেন।
মহিউদ্দিন রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এর আগে গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেন তিনি। গত মাসে রেলের টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর ঈদুল আজহার আগে ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অনশন শুরু করেন মহিউদ্দিন। ১০ জুলাই ঈদের দিনেও তিনি অবস্থানে ছিলেন।
মহিউদ্দিনের ছয় দফা দাবি হলো: টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহজ ডট কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করা ও হয়রানির ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া, যথোপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করা ও অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, যাত্রীচাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া, ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক-তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক নজরদারি ও শক্তিশালী তথ্য সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বাড়ানো এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
চুনোপুঁটি ধরা পড়ে বোয়ালরা আরামে
১৪ জুলাই ২২, সমকাল
ওয়াসিম ও ফরিদ দু’জনের বাড়ি একই এলাকায়। তাঁরা কক্সবাজারে বসবাসও করতেন একই বাসায়। দু’জনের কর্মস্থলও একই স্থানে। কক্সবাজার জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার তাঁরা। ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঘুষের ৬৫ লাখ টাকাসহ ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওই দিনই অভিযান চালিয়ে আরেক সার্ভেয়ার ফেরদৌসের বাসা থেকে ২৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হলে একে একে ১৩ জন গ্রেপ্তার হন। এঁদের কেউ সার্ভেয়ার, কেউ তহশিলদার, কেউ দালাল- এককথায় চুনোপুঁটি। অথচ এ ঘটনায় উদ্ধার করা হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর থাকা রোয়েদাদ বইসহ সাত বস্তা বিভিন্ন আলামত। নিয়মানুযায়ী রোয়েদাদ বই থাকার কথা তৎকালীন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম কিংবা তাঁর সুপারভাইজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসারের কাছে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন এই দুই কর্মকর্তার কারও টিকিটিও স্পর্শ করেনি দুদক।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও নাম এসেছে ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তাদের। ঊর্ধ্বতনরা ঘুষের ভাগ পেয়েছেন বলে উঠে এসেছে তদন্তেও। তারপরও ভূমি অধিগ্রহণের কোনো ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি কোনো রাঘববোয়াল।
ভূমি অধিগ্রহণের নামে কক্সবাজারের তিন মেগা প্রকল্পে সংঘটিত হয়েছে ৭৮ কোটি টাকার দুর্নীতি। এ দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ১৪০ জনকে চার্জশিটভুক্ত আসামি, ১৫ জনের বিরুদ্ধে নতুন মামলা এবং ৯৬ জনের বিরুদ্ধে সম্পদ অনুসন্ধানের নোটিশ করার অনুমতি চেয়ে দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনটি তদন্ত প্রতিবেদন গিয়েছিল গত বছরের ৩০ জুন। এখন যাঁরা ঘুষ ও দুর্নীতির টাকাসহ হাতেনাতে ধরা পড়ছেন, তাঁদের অনেকের নাম ছিল সেই তদন্ত প্রতিবেদনে। কিন্তু ৬২০ পৃষ্ঠার সেই তিন তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা পড়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন ৭৮ কোটি টাকা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রধান হোতারা।
শ্রমজীবি মানুষ
অনিশ্চয়তার জীবন, কয়লা খনিতে
০১ মে, ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
দিনে আলো দেখেন মাত্র একবার, বেশি কাজ করলেও নেই ওভারটাইম, পানি আর শুকনো খাবার ছাড়া কাজের সময়ে আর কিছুই খাওয়ার সুযোগ নেই, ঘেমে-নেয়ে মাটির গভীরে কাজ করতে হয় ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে- তারা বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিক।
এই শ্রমিকদের শ্রমে উত্তোলন করা কয়লা দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিটে উৎপাদন হচ্ছে; যা সরাসরি যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে এক হাজার ১৪৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের বিপরীতে কাজ করেন ২০০ চীনা শ্রমিক। খনিটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হলেও, কয়লা উত্তোলন কাজে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি/সিএমসি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে সরকার চুক্তিবদ্ধ।
বাংলাদেশি শ্রমিক এরশাদ হোসেন জানান, তারা ভূ-গর্ভের এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার ফিট গভীরে কাজ করেন। সেখানে তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গেট পাশ জমা দিয়ে খনিতে নামার সময় কোনো নিবন্ধন খাতায় নাম লেখা হয় না- এমন অভিযোগ করে এরশাদ বলেন, “খাতা ব্যবহার না করায় ভিতরে কেউ নিখোঁজ হলে কোনো প্রমাণ থাকবে না। অথচ কর্মকর্তারা ভূ-গর্ভে নামলে তাদের ক্ষেত্রে খাতা রক্ষা করা হয়।”
একবার নামার পর কাজ শেষ না করে খনি থেকে ওঠার নিয়ম নেই জানিয়ে শ্রমিক সোহাগ বলেন, “কাজের আট ঘণ্টা প্রচণ্ড তাপের মধ্যে সেখানেই থাকতে হয়। সেখানে খাবার খাওয়ার কোনো পরিবেশ নেই। পানি আর বিস্কুট বা শুকনা খাবার খেয়েই থাকতে হয়।”
“কারণ, কয়লার কালো কালি আর শরীরের ঘাম একাকার হয়ে যায়। ভূ-গর্ভ থেকে বের হওয়ার পর নিজেকে নিজেই চিনতে পারি না।”
আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলেও ওভারটাইম না পাওয়ার অভিযোগ এসেছে শ্রমিক হযরত আলীর কাছ থেকে।
বড়পুকুরিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেতন সর্বনিম্ন ২২ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। নেই বিমা ব্যবস্থা। দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক পঙ্গু হলে পান ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
চীনা শ্রমিকরা খনিতে ডলারে বেতন পেলেও সেই অংকটি জানা যায়নি।
মে দিবসে গাজীপুরে বেতন বোনাসের দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ
০১ মে ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভসহ অবস্থান ধর্মঘট করেছেন।
নগরের ভোগড়া এলাকায় জিএম অ্যান্ড জেসি কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা শনিবার দুপুর থেকে বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। তারা কারখানার ভেতরেই রাত যাপন এবং শুকনো খাবার খেয়ে ইফতার ও সেহেরি সারেন।
রোববার মে দিবসের সকালেও শ্রমিকদের কারখানার ভেতরে অবস্থার করতে দেখা গেছে।
কারখানার শ্রমিক স্বপ্না বলেন, “শনিবার লাঞ্চের পর কারখানায় এপ্রিলের বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। বেতন ও ঈদ বোনাস নিয়ে বাড়ি যাওয়ার আনন্দ-উদ্দীপনা মনে নিয়ে সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। কিন্তু দুপুরের আগেই কারখানার কর্মকর্তারা আমাদের বেতন-বোনাস না দিয়ে একে একে গা ঢাকা দেন।
“এরপর শ্রমিকরা যখন বেতন-বোনাসের জন্য অপক্ষো করতে থাকে, তখন তারা জানতে পারেন তাদের পাওনা দেওয়ার মতো কারখানার কেউ নেই। এ কথা শুনে শ্রমিকদের ঈদের আনন্দে ছেদ ঘটে; তাদের মধ্যে অসন্তোষ শুরু হয়। তাই বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।”
ঘামে ভেজা ঘাট শ্রমিকের দিন
০১ মে ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
জাহাজ থেকে ৯০ কেজির বস্তা নামাতে সাত টাকা আর ৬০ কেজির বস্তায় মজুরি তিন টাকা। কাজও মেলে না সব দিন, মাঝে-মধ্যে অসুস্থ হয়েও বেকার থাকতে হয়।
দেড় বছর ধরে চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকার একটি জেটিতে ঘাট শ্রমিক হিসেবে এমন হাড়ভাঙা খাটুনির দিন পার করছেন ভোলার চরফ্যাশনের বাসিন্দা মোহাম্মদ সজীব।
ঘাটে দাঁড়ানো জাহাজ থেকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ বস্তা মালামাল মাথায় করে নামিয়ে ট্রাকে তুলে পান সাত থেকে আটশ টাকা। দিনে দুইবেলা ভাত আর তিনবেলা নাস্তা মিলে খরচ আড়াই থেকে তিনশ টাকা।
বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মাসহ তিন ভাইয়ের সংসার। সামান্য এই আয় থেকে জমিয়ে প্রতি সপ্তাহে তাকে বাড়িতেও টাকা পাঠাতে হয়। জমার খাতা তাই অনেকটাই শূন্য।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ভোলা থেকে কাজের সন্ধানে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এসেছেন ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্নে। সদরঘাট এলাকায় পরিচিতদের সহায়তায় লেগে পড়েন ঘাট শ্রমিকের কাজে।
শনিবার দুপুরে নগরীর সদরঘাট এলাকার একটি ঘাটে কথা হয় সজীবের সঙ্গে। দুপুরের তপ্ত রোদে ক্লান্ত হয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। আলাপে উঠে আসে তার সংগ্রামের গল্প আর অনাগত এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
ঈদে সবাই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেও সজীবসহ তার মতো অনেকেই বাড়ির পথ ধরবেন না। এই সময়টায় বাড়ি যেতে খরচ বেশি হওয়ায় পরে কোনো এক সময় তারা বাড়ি যাবেন।
বেতন-বোনাসের দাবিতে গার্মেন্টস মালিকের বাসার সামনে শ্রমিকরা
০১ মে ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
বেতন-বোনাস না পাওয়ায় গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা উত্তরায় এসে মালিকের বাসার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে বাড়িটিতে মালিককে পাননি তারা। পরে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন ও পুলিশের আশ্বাসে তারা মধ্যরাতে গাজীপুর চলে যান।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) ইফতারের পর উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর সড়কের ২৯ নম্বর বাসার সামনে অবস্থান করে বেতন-বোনাসের দাবিতে গাজীপুরের বাসন এলাকার ‘জিম অ্যান্ড জেসি’ গার্মেন্টেসের শ্রমিরা আন্দোলন শুরু করেন।
গার্মেন্টসটির মালিক মো. আনিছুজ্জামান ওই বাড়িতে থাকেন। তবে শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচির সময় তাকে বাড়িতে দেখা যায়নি। তিন পালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
শুঁটকি পল্লিতে নারী শ্রমিকদের কান্না
০১ মে ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
তিন সন্তানসহ ৩০ বছর বয়সী হারেছা বেগমকে ছেড়ে গিয়েছেন তার স্বামী। এ অবস্থায় সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে তিনি কাজ নেন কক্সবাজারের নাজিরার টেক শুঁটকি পল্লিতে। তবে সারাদিন কাজ করে তিনি পান মাত্র ২৫০-৩০০ টাকা। এ নিয়ে খুব কষ্টে ও টানাপোড়েনের মধ্যে দিন কাটে হারেছার।
শুধু হারেছা নন, তার মতো কক্সবাজার শুঁটকি পল্লিতে কাজ করেন প্রায় ১২ হাজার নারী শ্রমিক। তাদের প্রত্যেকের দৈনিক মজুরি ২০০-৩০০ টাকা। এ দিয়ে খুব কষ্টে চলে তাদের সংসার। অথচ শুঁটকি পল্লিতে নারী শ্রমিকরা পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে বেশি কাজ করেন।
হারেছা বেগম বলেন, ২০২০ সালের দিকে কক্সবাজারের মহেশখালী ঘোরকঘাটা এলাকায় স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর থেকে নানা জায়গায় বিচার চেয়ে ঘুরেছি। তবে কোনও বিচার পাইনি। পরে কক্সবাজার শহরে এসে কাজ নিয়েছি শুঁটকি পল্লিতে। সেই থেকে তিন শিশু সন্তান নিয়ে শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। পরিবারের খরচ যোগাতে বাধ্য হয়েই শুঁটকি মহালে দিনমজুরের কাজ করি। প্রতিদিন ভোর ৬টায় কাজে আসি, ফিরি সন্ধ্যা ৭টায়। দৈনিক ১১ ঘণ্টা কাজ শেষে মজুরি পাই ৩০০ টাকা। এই টাকায় আসলে এখন আর সংসার চলে না। অথচ একই জায়গায় একই কাজ করে আমার পুরুষ সহকর্মীরা দৈনিক মজুরি পান ৫০০ টাকা করে।
খেটে খাওয়া শ্রমিককে এখন কম খেতে হয়
০১ মে ২২, সমকাল
ঘর ভাড়া নিয়ে বড় বাজে অভিজ্ঞতা ইয়াছিন মিজির। দুঃসহ অপমানের। সেই অভিজ্ঞতার পর থেকে নিজের বাঁচা-মরার আগে বাড়ি ভাড়ার টাকাটা জোগাড় রাখতে হয়। ঘরে বৃদ্ধ মা, অবুঝ তিন কন্যা। ভাতের বন্দোবস্তও না রেখে হয় না। এ দুই খরচের টাকা হাতে রেখেই বাদবাকি ভাবনা। এ রকম খরচের খতিয়ানে মাসের প্রথম সপ্তাহেই ইয়াছিনের হাত খালি। দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হয় টানাটানি। তৃতীয় সপ্তাহ যেন আর চলে না। মাস কয়েক আগেও পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। মাসের খরচ নিয়ে এ টানাটানির কারণে দেনা পরিশোধে প্রতি মাসেই ওয়াদার বরখেলাপ হয়ে যাচ্ছে। আগামী মাসের বেতন পেলে টাকা ফেরত দেবেন এ ওয়াদায় পাঁচ মাস আগে সাত হাজার টাকা ধার করেন তিনি। তারপর প্রতি মাসেই চলছে এ ওয়াদা ভাঙা আর নবায়ন। ছোট ভাই মোহন অবশ্য বিষয়টি বুঝতে পারে। ওয়াদামত টাকা না পেয়ে মন খারাপ করেছে দুই-একবার, তবে মুখ ফোটে কিছু বলেনি।
মজুরির চেয়ে জিনিসপত্রের দাম (মূল্যস্ফীতি) বেশি হওয়ায় এ রকম ধারদেনায় চলছে এখন খেটে খাওয়া শ্রমিকের দিন। গত কয়েক মাস ধরে যে হারে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সে হারে মজুরি বাড়েনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএ) হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত দুই মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে মজুরি বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মার্চে বেড়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। অথচ এ দুই মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২২ এবং ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয়ের কারণে মাসের খরচের হিসাব মেলাতে এখন ইয়াছিনের মতো এরকম হিমশিম খেতে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষকে। নানান কায়দায় কম আয়ে মাস পার করার কৌশল নিতে হচ্ছে। কেউ সঞ্চয় ভেঙে মাসের খরচ মেটাচ্ছেন। কেউ ধারদেনা করে। কেউ কম খেয়ে খাদ্যের মতো মৌলিকতম চাহিদার সঙ্গে আপস করছেন। আবার এ তিন ধরনের ঘটনাই একইসঙ্গে সঙ্গি করে চলছে কোনো কোনো শ্রমিকের দিন।
ঈদ যাত্রায় খরচ বোনাসের অর্ধেক টাকা
১ মে, ২০২২, কালের কন্ঠ
দুই বছর পর করোনামুক্ত ঈদ। ফলে এবার গ্রামের বাড়ি ফেরার ইচ্ছাটাও প্রবল। এই ইচ্ছা পূরণে নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যয় হচ্ছে বোনাসের অর্ধেক টাকা। নিম্নমধ্যবিত্তদের আরো বেশি।
আর মধ্যবিত্তরা ঈদ বোনাসের টাকা নিয়ে বারবার কষছে হিসাব।
নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত—এই তিন শ্রেণির পরিবারের একজনের বোনাসের টাকা হিসাব করে দেখা গেছে, ব্যয়ের তুলনায় বোনাসের টাকা অনেক কম। এর মধ্যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে গণপরিবহনের বাড়তি ভাড়া। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এসব মানুষের কাছে গণপরিবহনের বাড়তি ভাড়া ঈদের আনন্দকে অনেকটা ফিকে করে দিয়েছে।
এবার ঈদ বাজারের হিসাব-নিকাশ শেষ করেছেন আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টের কর্মী শরীফ আহমেদ। বেতনের অর্ধেক পেয়েছেন তিনি বোনাস। কম্পানিভেদে হেল্পার পদের কর্মীদের বেতন আট হাজার টাকা। সে হিসাবে শরীফ বোনাস পেয়েছেন চার হাজার টাকা। আর যেসব কারখানা বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত নয়, তারা বোনাস দেয় হাজার দুয়েক টাকা। শরীফের পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৫।
ঈদ বোনাসের হিসাব দিতে গিয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই বোনাসে কী হয়? বোনাস পাইছি চার হাজার টাকা। বাড়ি যাই না দুই বছর। ছুটিও কম পাই। এবার বাড়ি যাব। কিন্তু বাসভাড়া তো অনেক। গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়। বাসের টিকিট কেটেছি। পাঁচজনের জন্য বাসের টিকিট ভাড়া লাগল তিন হাজার ২০০ টাকা। বোনাসের বাকি রইল আর ৮০০ টাকা। ওই টাকা খরচ হবে পথে সাহরি খেতে। সব মিলিয়ে ঈদ বোনাসের টাকা পথেই শেষ। ’
তিনি বলেন, ‘আমার বউ চাকরি করে। বেতনের কিছু টাকা না থাকলে জামা আর সেমাই কেনা হতো না। ’
শরীফের মতো অনেক মানুষের একই হাল। তাঁদের কেউ বাসভাড়া, ঈদের কেনাকাটা সমন্বয় করতে না পেরে রাজধানীতেই থেকে যাচ্ছেন। তেমন একজন রবিউল ইসলাম। থাকেন সভারে। পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়ি। অল্প বেতন, বোনাস কম। তাই এবার তিনি গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন না।
রবিউল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি চাকরি করি গার্মেন্টের হেলপার পোস্টে। বেতন পাই আট হাজার টাকা। বোনাস পাইলাম চার হাজার টাকা। বাড়িভাড়া আর থাকা-খাওয়ায় লাগে সাত হাজার টাকা। বাড়ি গেলে বাসভাড়া লাগত এক হাজার ৫০০ টাকা। আর খালি হাতে তো বাড়ি যাওয়া যায় না। তাই এবার বাড়ি গেলাম না। তবে ঈদে কিছু টাকা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। ’
এপ্রিলের বেতন হয়নি ১৭ শতাংশ কারখানায়
০১ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশের শিল্প অধ্যুষিত সাত এলাকার কারখানাগুলোয় কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৪৩ লাখ। কারখানা রয়েছে ৯ হাজার ১৭৭টি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৯৬ শতাংশ কারখানায় আসন্ন ঈদ উপলক্ষে উৎসব ভাতা পরিশোধ হয়েছে। যদিও প্রায় ১৭ শতাংশ কারখানা এখনো এপ্রিলের বেতন পরিশোধ করেনি।
শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত প্রায় সব কারখানায়ই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কারখানায় ছুটি থাকবে আট-দশ দিন। তবে বরাবরের মতো এবারের ঈদেও বস্ত্র খাতের সুতা উৎপাদনকারী প্রায় ২০০ কারখানার কিছু শাখা খোলা থাকবে। এসব শাখার মেশিন সচল রাখতে নিয়োজিত থাকবেন স্বল্পসংখ্যক কর্মী। বাকি কর্মীদের অধিকাংশই ছুটি কাটাতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
কারখানাগুলোর বেতন-বোনাস পরিশোধের হালনাগাদ জানতে চাইলে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, বোনাস পরিশোধ হয়েছে ৯৬ শতাংশ কারখানায়। এপ্রিলের বেতন পরিশোধ হয়েছে ৮৩ দশমিক ১২ শতাংশ কারখানায়।
পোশাক রপ্তানি বাড়ছে, তবু শ্রমিকের ঈদ কেন নিরানন্দ
০২ মে ২০২২, প্রথম আলো
২০১৪ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। রাজধানীর বাড্ডায় তোবা গ্রুপের পাঁচ কারখানার ১ হাজার ৬০০ শ্রমিক তিন মাসের বেতন, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাস না পেয়ে ঈদুল ফিতরের আগের দিন থেকে অনশন শুরু করেন। ঈদের দিনসহ টানা ১১ দিন অনশন করার পর শ্রমিকেরা বেতন পান। এ জন্য পুলিশের লাঠিপেটা, এমনকি রাবার বুলেটও জুটেছে শ্রমিকদের কারও কারও ভাগ্যে।
অভিযোগ আছে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতার ওই আন্দোলনকে পুঁজি করে তোবার মালিক দেলোয়ার হোসেন তখন কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পান। ২০১২ সালের নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১১ শ্রমিককে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে তিনি কারাগারে ছিলেন।
তোবার সেই ঘটনার পর দেশ-বিদেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত। তারপর প্রায় আট বছর হতে চলল। তবে পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। তোবার সেই পাঁচ কারখানার মতো আর বড় ঘটনা না ঘটলেও, প্রতি ঈদের আগেই বেতন-ভাতার দাবিতে কিছু কারখানার শ্রমিককে সড়কে নামতে হচ্ছে। শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করলে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ লাঠিপেটা করছে। সেই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমএইর নেতারা তৎপর হচ্ছেন। তাতে কিছু কারখানার সমস্যা সমাধান হয়। তবে কিছু কারখানার শ্রমিককে বেতন-ভাতা ছাড়াই নিরানন্দ ঈদ করতে হয়। এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অনেক কারখানার শ্রমিকই বেতন-ভাতা পাননি।
গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার জিএম অ্যান্ড জেসি কম্পোজিট লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বেতন ও বোনাসের দাবিতে শনিবার থেকে অবস্থান নেন। কারখানার ভেতরেই রাত যাপন করেছেন তাঁরা। কারখানার ভেতরেই পানি-বিস্কুট খেয়ে ইফতারি ও সাহ্রি করেছেন শ্রমিকেরা। রোববার বেলা দুইটায়ও কারখানার ভেতরে শ্রমিকেরা অবস্থান করছিলেন। বেতন-বোনাস না নিয়ে কারখানা ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।
গত সোমবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর পল্লবীর কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস নামের একটি কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া মজুরির দাবিতে মিরপুর ১১ নম্বর সড়কে অবস্থান নেন। একই দাবিতে ইন্ট্রাকো ডিজাইন ও ইন্ট্রাকো ফ্যাশন—এই দুই কারখানার শ্রমিকেরা উত্তরার জসিমউদ্দিন-আজমপুর সড়ক অবরোধ করেন। তিন কারখানার শ্রমিকেরা দাবি করেছেন, তাঁদের ২-৩ মাসের মজুরি পাওনা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস বেতন-ভাতা দিলেও ইন্ট্রাকো ডিজাইন ও ইন্ট্রাকো ফ্যাশন শ্রমিকদের উৎসব ভাতা দিতে পারেনি।
বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে পোশাক শ্রমিকদের অনশন
০৩ মে, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
নারায়ণগঞ্জে ৩ মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবি এবং কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে অনশন করছেন একটি পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় শহরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ‘বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ নামে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা অনশন শুরু করেন।
শ্রমিকেরা জানান, আদমজী ইপিজেডে অবস্থিত বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেডে ৭০০ শ্রমিকের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন বকেয়া। গত ২০ এপ্রিল বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল মালিকপক্ষ। ওইদিন শ্রমিকেরা কাজে গিয়ে কারখানা বন্ধ পায়। তারপর থেকেই আন্দোলন চলছে।
কারখানার শ্রমিক ফরিদ হোসেন বলেন, একাধিকবার তারিখ দিলেও বেতন দেয়নি মালিকপক্ষ। আজ ঈদের দিনে আমরা সেমাই পর্যন্ত কিনতে পারিনি টাকা নেই বলে। যে কারণে অনশনে বসেছি। আমাদের দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেতন-বোনাস দিতে হবে।
বছরে ১৪৭ দিনই মাছ ধরা নিষেধ, দুর্দশায় জেলেরা
১৫ মে ২০২২, প্রথম আলো
দেশের সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সুরক্ষা ও মাছের বংশবিস্তারে সুযোগ দিতে সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। নিষেধাজ্ঞার দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় সমুদ্রগামী লাখো জেলের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
জেলেরা বলছেন, বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে কয়েক ধাপে ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় লাখো জেলে ও ব্যবসায়ীর মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। জেলেরা যে সরকারি সহায়তা পান, তা অপ্রতুল। ফলে তাঁদের জীবন কাটে চরম দুর্দশায়।
মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিল ৬০ দিনের অভয়াশ্রমের নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে না হতেই আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এমনিতেই করোনাকালে তাঁদের রোজগারে টান পড়ায় ঋণ আর ধারদেনায় জর্জরিত। এই ১৪৭ দিন ছাড়াও ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের চালের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা এমন মতও দিয়েছেন যে সাগরে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ৬৫ দিন দরকার আছে কি না, তা বৈজ্ঞানিকভাবে বিচার–বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত। কারণ, প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ১৫ এপ্রিল থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত। প্রতিবেশী দেশের সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ যখন শেষ হয়, তখন আমাদের দেশে তা শুরু করায় সব সময়ই জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন, ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ করে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরে নিয়ে যান। সে ক্ষেত্রে দেশে এই সময়সীমা ১ মে থেকে ৩০ জুন করা হলে তা বেশি কার্যকর হতে পারে বলেও মত দেন তাঁরা।
তাজরীনের সেই দেলোয়ার এখন ঢাকা উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি
১৭ মে ২০২২, প্রথম আলো
আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১২ সালে পুড়ে মারা যান ১১১ জন পোশাকশ্রমিক। সেই ঘটনার মূল আসামি তাজরীনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। মামলার সুরাহা হয়নি ১০ বছরেও। অথচ এই দেলোয়ার হোসেনকে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি করা হয়েছে।
১১ মে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেলোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও আবদুল জলিলকে সাধারণ সম্পাদক চূড়ান্ত করা হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের এ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে। তাঁরা বলছেন, ২০১৮ সালে রাজনীতি শুরু করেছেন দেলোয়ার। সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিতে টাকার বিনিময়ে নেতৃত্বের পদ বাগিয়ে নিচ্ছেন এখন।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা, শিক্ষা স্বাস্থ্যেও পিছিয়ে চা শ্রমিকরা
২০ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
১৯২১ সালের ২০ মে। চাঁদপুরের মেঘনাঘাটে পিতৃপুরুষের আদি ঠিকানায় ফিরে যেতে চাওয়া চা শ্রমিকদের ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়েছিল ব্রিটিশ সৈন্যরা। মৃত্যু হয়েছিল কয়েক হাজার শ্রমিকের। এর পর থেকে প্রতি বছরই দিনটিতে নিহত সে শ্রমিকদের স্মরণ করা হচ্ছে। পালন করা হচ্ছে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসেবে।
ওই ঘটনার পর পেরিয়েছে ঠিক ১০১ বছর। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে সবকিছুতেই পরিবর্তন এসেছে অনেক। বদলায়নি চা শ্রমিকদের জীবন। সারা দিনের খাটুনির পর বাগানে মজুরি মিলছে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুপেয় পানিসহ মৌলিক সব সূচকেই পিছিয়ে চা শ্রমিকের জীবন।.. ..
এখনো সর্বোচ্চ দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে বাগানে কাজ করছেন তারা। চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ (বিটিএ) ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের চুক্তির ভিত্তিতে মজুরি নির্ধারণ করা হয়। প্রতি দুই বছরের জন্য এ চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দৈনিক ১১৭-১২০ টাকা করে পাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। এজন্য একজন ‘এ’ শ্রেণীর শ্রমিক দিনে ১২০ টাকা, ‘বি’ শ্রেণীর শ্রমিক ১১৮ ও ‘সি’ শ্রেণীর বাগানের শ্রমিক ১১৭ টাকা পেয়ে থাকেন। এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর করোনা মহামারীসহ নানা কারণে আর কোনো চুক্তি সম্পাদন হয়নি।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী জানান, ২০১৯ সালের অক্টোবরে গঠন করা হয় মজুরি বোর্ড। কিন্তু শুরুতেই বোর্ড বিতর্কের জন্ম দেয়। ২০২১ সালের ১৩ জুন মজুরি বোর্ড চা শ্রমিকদের মজুরি ১১৭-১২০ টাকা করে খসড়া ঘোষণা দেয়। অথচ এ খসড়া প্রকাশের আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকেই চা শ্রমিকরা ১১৭-১২০ টাকা করে পাচ্ছেন। এতে আমাদের সঙ্গে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। গত চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর অতিক্রম হয়েছে কিন্তু মজুরি বোর্ড মজুরি সুপারিশ করতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, শোষণ-প্রতারণার শিকার হয়ে ১০১ বছর আগে চা শ্রমিকরা যখন নিজ দেশে ফেরত যেতে চেয়েছিলেন, তখন তাদের ফেরাতে গুলি চালানো হয়। অথচ এখন শ্রমিকরা যখন চা বাগানে থাকতে চান, তখন তাদের নানা কৌশলে বের করে দেয়া হচ্ছে।
ডাব বিক্রেতা সুমনার জীবনযুদ্ধ
‘ডর লইয়্যা বইয়া থাকলে সন্তানগো মুখে খাওন জুটব না’
২০ মে ২০২২, প্রথম আলো
অটোরিকশাচালক স্বামীর আয়ে বেশ ভালোই চলছিল সুমনার সংসার। বছরে অন্তত একবার নতুন জামা, সন্তানের লেখাপড়া আর নিত্যকার খরচ জুগিয়ে চলে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু এর মধ্যেই হঠাৎ সামনে আসে স্বামীর বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন। যে স্বপ্ন অদৃষ্টের লিখনের মতো সুমনাকে গৃহবধূ থেকে করেছে গৃহপরিচারিকা, রাস্তার চা বিক্রেতা থেকে নগরের ডাব বিক্রেতা। শহর যখন নীরব, মানুষ যখন ঘরে ফেরায় ব্যস্ত, তখনো সড়কবাতির আলোয় চলে তাঁর জীবনযুদ্ধ। ক্রেতা পাওয়ার আশায় নির্জন শহরে চলে তাঁর হাঁকডাক।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে সুমনার সঙ্গে দেখা হয় গাজীপুর শহরের রাজবাড়ী ঢালে। সন্ধ্যারাতের বৃষ্টি আর সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় সেদিন একটু আগেভাগেই ফাঁকা হয় রাস্তাঘাট। চারদিক নির্জন। সুমনা বসে আছেন সড়কবাতির নিচে একটি চেয়ারে। পাশেই ডাবভর্তি ভ্যান। অনেকক্ষণ পরপর দু-একজন পথিক হেঁটে আসতে দেখলেই উঠে এসে দাঁড়াচ্ছেন ভ্যানের পাশে। কিন্তু কেউ ডাব না কিনলে পরক্ষণেই মন খারাপ করে আবার বসে পড়ছেন চেয়ারে।
এর মধ্যেই হেঁটে যাওয়া এক তরুণকে দেখে সুমনার আকুতিসূচক ডাক, ‘ও মামা, একটা ডাব খাইয়্যা যান…আর মাত্র এই কয়ডা ডাব বাকি।’ তরুণ ঘুরে দাঁড়ালেন। একটা ডাব কিনলেন। এবার ডাব খেতে খেতে সুমনার কাছে তাঁর জিজ্ঞাসা—‘এত রাতে একা বসে আছেন, নিরাপত্তা নিয়ে আপনার ভয় করছে না?’ দৃঢ়কণ্ঠে সুমনার উত্তর, ‘পেটে খিদা থাকলে মনের ভয়ে কাজ হয় না। ডর লইয়্যা বইয়া থাকলে সন্তানগো মুখে খাওন জুটব না, নিজেরও না খাইয়্যা মরণ লাগব। গরিবের ডরভয় থাকন নাই।’ তরুণের বুঝতে বাকি রইল না, সুমনার মতো মানুষের জন্য ‘পৃথিবী গদ্যময়’।
সুমনা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্টসংখ্যক ডাব বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে রাস্তায় নামেন। সেদিনও তা–ই করেছেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম বিক্রি হয়। ১৫টি ডাব এখনো অবিক্রীত। তাই রাতের সঙ্গে গভীর হচ্ছিল তাঁর কপালের চিন্তার ভাঁজ। কারণ, এই ১৫টি ডাব বিক্রি না হলে চালানের টাকা উঠবে না। পরের দিন মহাজনের দাদন খেতে হবে। তাই রাত বেশি কি কম তা নিয়ে ভাবছেন না।
শ্রমিকের এক দিনের খাবার
চাল, আটা, ডাল, তেলে ব্যয় বেড়েছে ৪০%
২১ মে ২০২২, প্রথম আলো
একজন শ্রমজীবী মানুষের এক দিনের খাবারের জন্য প্রয়োজনমতো চাল, আটা, ডাল, তেল, আলু ও চিনি কিনতে বছর তিনেক আগে যে ব্যয় হতো, এখন তার চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি খরচ হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের ২০২১ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, উচ্চমাত্রায় সক্রিয় একজন মানুষের খাদ্যতালিকায় দৈনিক ৩৩৩ গ্রাম চাল, ৩৯ গ্রাম আটা, ৫০ গ্রাম আলু, ৬০ গ্রাম ডাল, ৪৫ গ্রাম ভোজ্যতেল ও ২৫ গ্রাম চিনি দরকার।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারির বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, তখন একজন শ্রমিকের এক দিনের খাদ্যের জন্য এসব পণ্য পরিমাণমতো কিনতে ব্যয় হতো ২৩ টাকার কিছু কম। এখন হয় ৩২ টাকার বেশি।
এই জরিপে শ্রমিকের খাদ্যতালিকায় এসব পণ্য ছাড়াও বীজজাতীয় খাদ্য, শাক, কলা, মাছ, দুধ ও কাঁঠালের বিচি রয়েছে। সব মিলিয়ে তালিকায় ১৪টি পণ্য রয়েছে, যা ২ হাজার ৩০০ ক্যালরি খাদ্যশক্তির সমান।
জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালে জরিপকালে একজন শ্রমজীবীর এক দিনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম ছিল ১২৪ টাকা। মাঝারি মাত্রায় সক্রিয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যয় ছিল ৬৮ টাকা আর কম সক্রিয় মানুষের ক্ষেত্রে ব্যয় দেখানো হয়েছিল ৫৬ টাকার কিছু বেশি। শিশুদের বয়সভেদে ৩৩ থেকে ১২১ টাকার খাদ্যের দরকার ছিল ২০২১ সালে।
খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে ও আয় না বাড়লে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া কমিয়ে দেন দরিদ্র মানুষেরা। তাঁরা ডাল, ভাত, আলু ও সবজি খেয়ে কোনোমতে জীবন যাপন করেন।
পঞ্চগড়ে কারখানা মালিক সিন্ডিকেটে জিম্মি চা চাষি
২৩ মে ২২, সমকাল
কারখানা মালিক সিন্ডিকেটের কারণে পঞ্চগড়ে এবার নির্ধারিত মূল্যেও চা পাতা দিতে পারছেন না চাষি ও বাগান মালিকরা। সময়মতো চায়ের কাঁচা পাতা দিতে না পেরে তাঁরা চরম বিপাকে রয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ে বাগান থেকে পাতা উত্তোলন করতে না পেরে চা গাছ বড় হয়ে বাগান নষ্ট হচ্ছে।
শনিবার জেলার বিভিন্ন এলাকার চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে চা পাতা তুলতে না পারায় গাছ বড় হয়ে গেছে। কমিটি নির্ধারিত ১৮ টাকা কেজিদর সিন্ডিকেট করে কারখানার মালিকরা কমিয়ে দেওয়ায় ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা। এ কারণে ভরা মৌসুমে তাঁরা কাঁচা পাতা অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে পারছেন না। বিভিন্ন কারখানার সামনে চা পাতা নিয়ে ধরনা দিচ্ছেন চা চাষিরা। স্থানীয় সাজেদা রফিক চা কারখানা, নর্থ বেঙ্গল টি ইন্ডাস্ট্রিসহ কয়েকটি চা কারখানা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কারখানায় চাহিদার তুলনায় পাতা সরবরাহ বেশি বলে তাঁরা আর চা পাতা কিনছেন না। কারখানা মালিকদের দাবি, কাঁচা পাতার উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি হওয়ায় আপাতত কৃষকদের কাছ থেকে পাতা কেনা হচ্ছে না। পাশাপাশি ভালো মানের পাতা না পাওয়ায় তাঁরা মানসম্পন্ন চা উৎপাদন করতে পারছেন না। এ জন্য অকশন মার্কেটে ভালো দাম না পাওয়ায় তাঁরাও চাষিদের চাহিদামতো দাম দিতে পারছেন না।
শ্রমিকদের ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধের আশ্বাস, মামলা প্রত্যাহার
২৩ মে ২০২২, জাগো নিউজ
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধের আশ্বাসের ভিত্তিতে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ মে) হাইকোর্টের কোম্পানি কোর্টে এ তথ্য জানান তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান। কোম্পানি কোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। এর পরে রিটটি খারিজ করা হয়। এ ছাড়া অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে থাকা পৃথক আরো পাঁচটি আবেদনও খারিজ হয়।
গ্রামীণ টেলিকম কর্মীদের এই পাওনা আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে তাই ১১০টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে লড়াই করে আসা আইনজীবী ইউসূফ আলী বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
আইনজীবী বলেন, ‘কর্মীদের পক্ষ থেকে গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা, দুইটি রিট ও তিনটি আদালত অবমাননার অভিযোগ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অন্যদিকে পাওনা পরিশোধ চেয়ে শ্রম আদালতে আরও ১০৪টি মামলা করেছিলেন মোট ১৭৬ জন কর্মী।’
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মিরপুরে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
০৪ জুন, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন
মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। উত্তেজিত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ এবং শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
শনিবার দুপুর আড়াইটায় পোশাক শ্রমিকরা মিরপুর-১০ নাম্বার গোলচত্বর, ১৩ (আয়ুর্বেদিক কলেজ) ও ১৪ নাম্বারের (কচুক্ষেত মিলি সুপার মার্কেট), পল্লবী, ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
কাফরুল থানার ইনসপেক্টর (তদন্ত) কামরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সকাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি কারখানার শ্রমিক বিক্ষোভ করেন। দুপুরে লাঞ্চের পর আরও কিছু পোশাক কারখানার বেতন বৃদ্ধির দাবিতে তারা সড়ক অবরোধ করেছেন।
শ্রমিকদের দাবি, নিত্যপণ্যের দাম অনেকে বেড়েছে তাই তারা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আমাদের দাবি আমাদের বেতন বৃদ্ধি করা হোক।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে বিজিবির একটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। ২টি মোটরসাইকেলে আগুন লাগানো হয়েছে। পরে পুলিশ এসে উত্তেজিত শ্রমিকদের থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। শ্রমিকরাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন।
মিরপুরে সড়ক অবরোধ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা
০৫ জুন ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছে পোশাক শ্রমিকরা। আজ রবিবার (৫ জুন) সকালে আশপাশের ভিশন গার্মেন্ট, জুকি, লোডস্টার, সারশ, পলকা, এমবিএম গার্মেন্টসহ বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়কে নেমে এসে সড়ক অবরোধ করেছেন।
এদিন সকাল থেকেই মিরপুর ১০ নম্বরে এসে জড়ো হতে থাকেন পোশাক কর্মীরা। এক পর্যায়ে সড়ক বন্ধ করে দেন তারা। এতে আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
ভিশন গার্মেন্টের শ্রমিক মিথিলা বলেন, ‘আমরা যে বেতন পাই তাতে আমাদের সংসার চলে না। মালিক কিংবা সরকার আমাদের কথা শোনে না, তাই আমরা রাস্তায় নেমেছি। আমার বেতন বাড়ানোর জন্য রাস্তায় নামিনি। আমাদের প্রতিদিনের চাল ডাল ও সবজির দাম কমানোর জন্য রাস্তায় নেমেছি।’
মিলন ঘরামি নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট মালিক সবাই এক। তারা তাদের লাভ দেখেন। শ্রমিকের সংসার কীভাবে চলে, তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নাই।
এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরেও একই দাবিতে মিরপুর-১০ নাম্বার গোলচত্বর, ১৩ (আয়ুর্বেদিক কলেজ) ও ১৪ নাম্বারের (কচুক্ষেত মিলি সুপার মার্কেট), পল্লবী, ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পোশাককর্মীরা।
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ
নিহত শ্রমিকপ্রতি ২ লাখ, আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেবে সরকার
০৫ জুন ২২, সমকাল
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের পরিবার প্রতি ২ লাখ টাকা এবং আহত প্রতি শ্রমিককে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেবে সরকার। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে এ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসায় আরো সহায়তার প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হবে।
আজ রোববার শ্রমমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বরাত দিয়ে মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ঢাকায় মাসে এক পরিবারের খাবার খরচ ২১,৩৫৮ টাকা
০৬ জুন ২০২২, প্রথম আলো
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে সড়ক অবরোধ করেন। দুপুরের দিকে শ্রমভবনে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় সভায় শ্রমিকনেতা ও সাংসদ শাজাহান খান শ্রমিকদের এই আন্দোলনকে ‘হঠকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন।
অবশ্য বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষকেরা বলছেন, সরকারি হিসাবের চেয়েও প্রকৃত মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে বসবাসরত একজন ব্যক্তির মাসিক খাবার খরচ ৫ হাজার ৩৩৯ টাকা। চারজনের একটি পরিবারের ক্ষেত্রে এই খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ৩৫৮ টাকা। যদি কোনো পরিবার পুরো মাসে একবারও মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও মুরগি না খায়, তাহলেও খরচ ৮ হাজার ১০৬ টাকা। ব্যক্তি বা পরিবারের মাসিক এই খাবার খরচ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
খাবারের সঙ্গে এক কক্ষের ঘরভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল, চিকিৎসা ব্যয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্য ক্রয়, সন্তানের পড়ালেখার খরচ, যাতায়াত, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের বিল হিসাব করলে ঢাকার আশপাশের এলাকায় চার সদস্যের এক পরিবারের মাসিক খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৫৪৮ টাকা। তবে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে বাড়িভাড়া বেশি। সে ক্ষেত্রে মাসিক খরচ হবে ৪৭ হাজার ১৮২ টাকা। খাবারের তালিকা থেকে মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও মুরগি বাদ দিলেও তা ৩৩ হাজার ৮৪১ টাকায় দাঁড়ায়।.. ..
শ্রমিকের মজুরিতে মিটছে না ব্যয়
দেশের কোনো শিল্প খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরিই চার সদস্যের পরিবারের এক মাসের খাবার খরচ অর্থাৎ ২১ হাজার ৩৫৮ টাকার কাছাকাছি নয়। এমনকি মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও মুরগি বাদ দিয়েও মাসিক ৮ হাজার ১৬ টাকা খাবার খরচও কোনো কোনো খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি দিয়ে মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
২১ খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি হিসাব করে বিষয়টি দেখিয়েছে সিপিডি। যেমন প্রতিবছর ৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে চামড়া ও জুতা কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বর্তমানে ৭ হাজার ৪৫৯ টাকা। এই খাতের কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার ৯৮১ টাকা।
একইভাবে তৈরি পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার ৮৮৪ টাকা। সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের এ খাতের কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি ৯ হাজার ৩১২ টাকা। তার মানে চামড়া ও জুতা কারখানা কিংবা তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম যে মজুরি, তা দিয়ে চারজনের একটি পরিবারের মাসিক খাবার খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
বর্তমানে শিল্প খাতের মধ্যে জাহাজভাঙায় ন্যূনতম মজুরি সবচেয়ে বেশি। প্রতিবছর ৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি ধরলে এ খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৭২৪ টাকা। আর কর্মচারীদের মজুরি ১৬ হাজার ৬৯৫ টাকা। এই খাতের শ্রমিকেরা যে মজুরি পান, তা দিয়ে চারজনের একটি পরিবারের মাসিক খাবার খরচ মিটছে না।.. …
পোশাককর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
বেতন বাড়াতে গিয়ে চাকরি গেলে বেতনহীন হয়ে পড়বেন
০৭ জুন ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং বেতন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আন্দোলনের কারণে কারখানা বন্ধ হলে তো চাকরি চলে যাবে। কেউ অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে এ কূল ও কূল, দু’কূল হারাতে হবে। তখন বেতন আর বাড়বে না, বেতনহীন হয়ে যেতে হবে। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে।’
মঙ্গলবার (৭ জুন) ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন-গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রফতানির বিষয় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতনতো বন্ধ হয়নি। আমরাতো নিজেরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, টাকা দিয়েছি। ভর্তুকি দিয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা যাতে বেতনটা সরাসরি পায়, সেই ব্যবস্থা করেছি। সরাসরি ফোনের মাধ্যমে টাকা দিয়েছি। মালিকদের হাতে তো দিইনি। তারপরও গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলন করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বেতন বাড়া, এটা-সেটা নানা দাবিতে আন্দোলন করতে যায়। এই রফতানি যদি বন্ধ হয়, তাহলে পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমও যাবে, ছালাও যাবে। বেতন আর বাড়বে না, তখন চাকরিই চলে যাবে। ঘরে ফিরে যেতে হবে। তখন কী করবে?’
মাকে মজুরি কম দেওয়ার প্রতিবাদ করায় কিশোরকে হত্যা
১০ জুন ২২, সমকাল
ধানের চাতালে কর্মরত মাকে মজুরি কম দেওয়ার প্রতিবাদ করায় জুয়েল হোসেন নামে এক কিশোরকে পিটিয়ে আহত করেন চাতাল মালিক ও তার লোকরা। তাদের মারধরে জুয়েল গুরুতর আহত হলেও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধা দেন চাতাল মালিক। এরপর বিনা চিকিৎসায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জুয়েলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জুয়েলের মা জোছনা বেগম দুপচাঁচিয়া থানায় মামলা করলে শুক্রবার দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- দুপচাঁচিয়া উপজেলার ছোট পাইকপাড়া গ্রামের আফসার আলী (৬৫) ও ধারশুন গ্রামের সালামতের ছেলে সাদিকুল ইসলাম ভোলা (২৫)। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার কলেজ গেইট এলাকায়।
ডিম-সবজিতে ঝুঁকেছেন নিম্ন আয়ের শ্রমিকরা
১২ জুন ২২, সমকাল
বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দূরপাল্লা রুটের বাস সাউদিয়া পরিবহনের কাউন্টারের সামনে যাত্রী ডাকাডাকির (কলম্যান) কাজ করেন ২৭ বছর বয়সী নিলয়। তাঁর দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা। টার্মিনালের পেছনের হোটেলে দৈনিক তিনবেলা খাবার খেতে তাঁর খরচ হয় ১৭০ টাকা।
তিনি জানান, তিন-চার মাস আগেও হোটেলে তিনবেলা খেতে খরচ হতো ১২০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খাবারের খরচও ৫০ টাকা বেড়েছে। এ হিসাবে মাসে বেড়েছে দেড় হাজার টাকা। তবে তাঁর বেতন এক টাকাও বাড়েনি।
নিলয় নিয়মিত যে হোটেলে খান, সেটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। নাম মদিনা হোটেল। ভাঙাচোরা টিনের ঘরে এ হোটেলে শুধু পরিবহন শ্রমিকরাই খেয়ে থাকেন। তাঁদের সবারই দৈনিক মজুরি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এই মানুষগুলোর জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্দশা।
যেখানে শিশুশ্রম এখনো ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা
১২ জুন ২০২২, প্রথম আলো
১২ ও ১৩ বছর বয়সী মামাতো–ফুপাতো দুই ভাই তাদের পরিবারের সঙ্গে থাকে রাজধানীর শ্রমঘন এলাকা কামরাঙ্গীরচরে। ২০২০ সালে করোনা শুরুর আগে দুজন স্থানীয় একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। করোনায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পর শিশু দুটির বাবা–মায়েরা বাড়ির কাছের এক প্লাস্টিক কারখানার মালিককে ধরে কাজে ঢুকিয়ে দেন।
৮ জুন বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কামরাঙ্গীরচরের নূরবাগে ওই প্লাস্টিক কারখানায় গিয়ে দেখা হয় দুই ভাইয়ের সঙ্গে। মেঝেতে বসে ভারী যন্ত্রের হাতল সজোরে চেপে ফ্যানের ক্লিপ বানাচ্ছিল বিরতিহীনভাবে। প্রথম আলোকে তারা জানাল, প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে কাজে যোগ দিয়েছে। স্কুল খুলে গেলেও এ বছর আর ফিরে যায়নি। তারা জানায়, সকাল ৯টা থেকে রাত ৮–৯টা পর্যন্ত কাজ করে। তবে কারখানার এক প্রাপ্তবয়স্ক কর্মীর দাবি, শিশু দুটি এত সময় কাজ করে না। ওই কারখানায় আরেকটি কিশোরকে কাজ করতে দেখা গেছে।
নূরবাগে পাঁচটি কারখানা ও কালারবাড়ি নামের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর বাসস্থান ঘুরে দেখা যায়, সেখানে শিশুশ্রম ‘স্বাভাবিক’ একটি বিষয়। অ্যালুমিনিয়ামের দুটি কারখানায় ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী চার কিশোরকে কাজ করতে দেখা গেছে। কালারবাড়িতে ২৫টি পরিবার বসবাস করে। এর মধ্যে একটি পরিবারের ৭ বছর বয়সী এক ছেলে শিশুকে মায়ের সঙ্গে কাজে যুক্ত থাকতে দেখা গেছে।
আজ ১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করি, শিশুশ্রম বন্ধ করি।’
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে, ‘শিশু’ অর্থ ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করেনি এমন ব্যক্তি এবং ‘কিশোর’ অর্থ ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করেছে এবং ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করেনি এমন ব্যক্তি। জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০ অনুসারে, শিশুদের আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে দেওয়া যাবে না। কিশোরদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসকের কাছ থেকে শিশু–কিশোরদের সক্ষমতা সনদ নিয়ে শর্ত সাপেক্ষে হালকা কাজে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
সবশেষ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০১৩ অনুসারে, দেশে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ লাখ শিশু শ্রমের আওতায় পড়েছে। বাকি শিশুদের কাজ অনুমোদনযোগ্য। কর্মরত শিশুদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে ১২ লাখ ৮০ হাজার। আর ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে।
২১% পথশিশু মাদকের বাহক
২৬ জুন ২০২২, প্রথম আলো
দেশের ২১ শতাংশ পথশিশুকে মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর পথশিশুদের ৫৮ শতাংশ কোনো না কোনো মাদক নেয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
অধিদপ্তরের ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, নারী ও শিশুদের মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহার করছেন মাদক কারবারিরা।
এ পটভূমিতে আজ রোববার দেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি’।
গবেষণার অংশ হিসেবে দেশব্যাপী ১ হাজার ৬০০ পথশিশুর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯২৮টি শিশু বলেছে, তারা মাদক সেবন করে। অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ পথশিশু মাদকসেবী। এই ৯২৮ জনের মধ্যে ৩৩৬টি শিশু বলেছে, তারা মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদকের বাহক হিসেবেও কাজ করে। শতাংশের হিসাবে যা ২১।
ছয় মাসে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ৩৩৩ শ্রমিক
০১ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) সীতাকুণ্ডসহ দেশের ২৪১টি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৩৩৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গত বছরের একই সময় ২২০টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৩০৬ জন নিহত হয়েছিলেন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু উভয়ই বেড়েছে। বেসরকারি সংস্থা সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মোট ২৬টি দৈনিক সংবাদপত্র (১৫টি জাতীয় ও ১১টি স্থানীয়) পর্যবেক্ষণ করে জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। যেসব শ্রমিক কর্মক্ষেত্রের বাইরে, কর্মক্ষেত্র থেকে আসা-যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ও অন্য কোনো কারণে মারা গিয়েছেন তাদের এ জরিপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে পরিবহন খাতে। এ খাতে নিহতের সংখ্যা ১৩৮ জন। এছাড়া সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (যেমন—ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ১০০ জন, নির্মাণ খাতে ৪৮, কলকারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে ২৬ এবং কৃষি খাতে ২১ জন নিহত হয়েছে।
মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় (পরিবহন খাতে) ১৫৩ জন, আগুনে পুড়ে ৫৭, বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে ২৫; ছাদ, শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ২৩; মাচা বা ওপর থেকে পড়ে ১৯, বজ্রপাতে ১৫, বয়লার বিস্ফোরণে ১৫, রাসায়নিক দ্রব্য, সেপটিক ট্যাংক বা পানির ট্যাংকের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে নয়; পাহাড়, মাটি, ব্রিজ, ভবন, ছাদ, দেয়াল ধসে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পানিতে ডুবে আটজন শ্রমিক নিহত হয়।
পাননি ছুটি, বাধ্য হয়ে কাজের সময় অসুস্থ পোশাককর্মীর মৃত্যু
০৫ জুলাই ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
গাজীপুরে ছুটি না পেয়ে অসুস্থতা নিয়ে কাজের সময় জাহিদুল ইসলাম (২৭) নামে এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৪ জুলাই) বিকালে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকার গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টসে এ ঘটনা ঘটে। জাহিদুল কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টসে সুইং অপারেটর পদে চাকরি করতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার একাধিক শ্রমিক জানান, গত ৪-৫ দিন ধরে জাহিদুল ইসলাম অসুস্থ ছিলেন। বারবার ছুটি চেয়ে পাননি। ছুটি চাইতে গেলে কারখানার লাইন চিফ কামরুল ইসলাম জানান, প্রশাসন বিভাগ থেকে ঈদের আগে ছুটি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। ছুটি না পেয়ে সোমবারও অসুস্থতা নিয়ে কাজে যোগ দেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় আরও অসুস্থ হয়ে পড়ায় কামরুলের কাছে ছুটি চাইতে যান। এ সময় ‘শিপমেন্টের চাপ আছে’ বলে ছুটি না দিয়ে ফিরিয়ে দেন।
দুপুরে বিরতির পর জাহিদ কারখানায় এসে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবারও ছুটি চাইতে গেলে লাইন চিফ কামরুল বলেন, ‘মরে গেলেও ছুটি দেওয়া যাবে না’। অসুস্থ শরীর নিয়েই কাজ করতে থাকেন জাহিদ। বিকাল সাড়ে ৩টায় মেঝেতে পড়ে যান। সহকর্মীরা উদ্ধার করে কারখানার মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাইরের হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কারখানার প্রশাসন সহকারী (টাইম কিপার) মনির হোসেনকে সঙ্গে দিয়ে মাওনা আলহেরা হাসপাতালে পাঠায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। সহকর্মীরা জাহিদের মৃত্যুর খবর শুনে কাজ বন্ধ করে কারখানার বাইরে বিক্ষোভ করেন। এ সময় পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
৬২% কৃষকই পিঠ ও মাংসপেশির ব্যথায় ভুগছেন
২৮ এপ্রিল, ২০২২, বণিক বার্তা
শরীরের যেকোনো হাড়, পেশি, টেন্ডন, লিগামেন্ট (পেশি ও অস্থির সন্ধিস্থল) ও নরম টিস্যুতে ব্যথা হলে তাকে মাস্কুলোস্কেলেটাল ডিজঅর্ডার (এমএসডিএস) বলে। দেশের প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে এখন এ ধরনের জটিলতার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এজন্য তাদের অনিয়ন্ত্রিত ও অতিরিক্ত কায়িক শ্রমের প্রবণতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের ভাষ্যমতে, চাষাবাদে কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের সুযোগ নেই প্রান্তিক কৃষকদের। দিনরাত উদয়াস্ত শারীরিক পরিশ্রমে ভর করেই চাষাবাদ করে যাচ্ছেন তারা। অনিয়ন্ত্রিত ও অতিরিক্ত কায়িক শ্রমে দেহে জন্ম নিচ্ছে নানা জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যাধি। বিশেষ করে মাস্কুলোস্কেলেটাল ডিজঅর্ডারের প্রাদুর্ভাব এখন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
দেশের কৃষকদের মধ্যে এমএসডিএসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে এখন পর্যন্ত বেশকিছু গবেষণা হয়েছে। প্রতিটিতেই কৃষকদের মধ্যে হাড় ও মাংসপেশির ব্যথার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির তথ্য জানানো হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের ওপর পরিচালিত এমন এক গবেষণায় দেখা যায়, ৬২ শতাংশ কৃষক কোনো না কোনো ধরনের এমএসডিএসে ভুগছেন। ‘আ ক্রস কাট সার্ভে অন মাস্কুলোস্কেলেটাল ডিজঅর্ডারস অ্যামাং ফার্মার্স ইন সিলেকটেড এরিয়াস অব নর্দার্ন পার্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায়, গবেষণার আওতাধীন কৃষকদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ (এমএসডিএসে মোট ভুক্তভোগীর ৭১ শতাংশ) পিঠের নিম্নাংশের ব্যথায় ভুগছেন। এছাড়া ঘাড়, হাঁটু ও পায়ের ব্যথায় ভুগছেন যথাক্রমে ৯, ৬ ও ৩ শতাংশ (মোট ভুক্তভোগীর সাড়ে ১৪, ৯ ও সাড়ে ৫ শতাংশ) কৃষক। শারীরিক ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার ভিত্তিতে গবেষণাটি চালানো হয়। এতে অংশ নেয়া কৃষকের ৬৯ শতাংশ দিনে ১০-১৫ ঘণ্টা কৃষিসংশ্লিষ্ট কোনো না কোনো কাজে যুক্ত থাকেন। প্রতিদিন খেতে ৫-৮ ঘণ্টা কাজ করেন ৬৭ শতাংশ কৃষক। মূলত কম আয়ের ও অতিরিক্ত শ্রমের সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের মধ্যেই এমএসডিএসের প্রাদুর্ভাব বেশি।
অনিয়ন্ত্রিত কায়িক শ্রমকেই প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে মাস্কুলোস্কেলেটাল ডিজঅর্ডারের প্রাদুর্ভাব বাড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, প্রান্তিক কৃষকদের অনেকেই কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করেন না। ঝুঁকে বীজ বপন বা চারা রোপণ থেকে শুরু করে চাষাবাদ, বাছাই, কর্তনসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ যেভাবে করছেন, তা তাদের দেহের জন্য সুবিধাজনক না। আবার যারা কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করছেন, কম্পনসহ নানা কারণে সমস্যায় পড়ছেন তারা। দেহের কর্মকালীন অবস্থাই তাদের মধ্যে হাড় ও মাংসপেশির ব্যথাসহ এসব সমস্যার সৃষ্টি করছে।
শ্বসনতন্ত্র ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগে গ্রামাঞ্চলে মৃত্যু বেশি
০৭ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশে মৃতদের মধ্যে শতকরা চারজন অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। শ্বাসনালির দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত এ রোগে মৃত্যুর সঠিক কারণ পরিপূর্ণভাবে জানা যায়নি। মানুষের শ্বাসনালি ধুলাবালির সংস্পর্শে আসার কারণে শ্বাসকষ্টের উদ্রেক হওয়াকে অ্যাজমা বলা হয়। অসংক্রামক এ রোগের কারণে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে মৃত্যু বেশি হয়। শুধু অ্যাজমা নয়, নিউমোনিয়া, ফুসফুসের সংক্রমণসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি—এমন তথ্য উঠে এসেছে সরকারি পরিসংখ্যানে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত অপরিকল্পিতভাবে গ্রামাঞ্চলকে শহরাঞ্চলের দিকে ঠেলে দেয়া, তৃণমূলের চিকিৎসা অবকাঠামোর দুর্বলতা, চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসমতা ও অবহেলার কারণে গ্রামাঞ্চলে শ্বসনতন্ত্র ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগে মৃত্যু বেশি।
প্রতি বছর বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগসহ নানা কারণে শহর ও গ্রামের মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূলত মৃত্যুর কারণ হিসেবে ১৫ রোগে বার্ষিক স্থূল মৃত্যুহার প্রকাশ করে। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস ২০২০’ বলছে, দেশে প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ৫ দশমিক ১ জনের মৃত্যু হয় ওই ১৫টি কারণে। তবে এর মধ্যে শহরের চেয়ে গ্রামে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। বছরে প্রতি হাজারের মধ্যে ৫ দশমিক ২ জন গ্রামাঞ্চলের আর ৪ দশমিক ৯ জন শহরাঞ্চলের বাসিন্দা।
বিবিএস বলছে, হার্ট অ্যাটাক, হূদরোগ, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, শ্বসনতন্ত্রের রোগ, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, লিভার ক্যান্সার, কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, সাধারণ সর্দি-জ্বর, ডায়াবেটিস, ব্লাড ক্যান্সার, পক্ষাঘাত, সড়ক দুর্ঘটনা ও অন্যান্য কারণে প্রতি হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ৫ দশমিক ১ জনের মৃত্যু হয়। তবে এসব কারণে শহরের চেয়ে গ্রামে মৃত্যু হয় বেশি। শতাংশের হিসাবে শ্বাসরোগে শতকরা নয়জনের বেশি মারা যান গ্রামের বাসিন্দা। আর শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে এ রোগে মৃত্যু হয় আটজনের। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে অ্যাজমায় পাঁচজন গ্রামের বাসিন্দার মৃত্যু হয়। আর শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে তিনজন এ রোগের কারণে মারা যান। সংক্রামক রোগ নিউমোনিয়ায় গ্রামাঞ্চলে প্রতি ১০০ জনে পাঁচজনের বেশি ব্যক্তির মৃত্যু হলেও শহরে এ রোগে চারজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া লিভার ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, সাধারণ জ্বর, ব্লাড ক্যান্সারে গ্রামের মানুষের মৃত্যুর হার বেশি।
স্বাস্থ্য জনবলে পিছিয়ে বাংলাদেশ
২৩ মে ২০২২, প্রথম আলো
এক হাজার মানুষের জন্য চারজনের বেশি চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ থাকা দরকার। বাংলাদেশে আছে একজনের সামান্য বেশি। স্বাস্থ্য খাতের নানা সূচক নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করা বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য জনবল নিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০২২ নামের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্যসেবার জনবলে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এই জনবলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সবার ওপর রয়েছে মালদ্বীপ।
গতকাল রোববার জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরে ৭৫তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনের এক দিন আগে স্বাস্থ্য খাতের পরিসংখ্যান নিয়ে এই বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মূলত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অবকাঠামো বা আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকাই যথেষ্ট নয়। সেগুলো কার্যকরভাবে চালু রাখার জন্য পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনবল থাকা জরুরি। এসডিজি অর্জনের জন্য তৈরি করা জনবল কৌশলপত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, এক হাজার মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য ৪ দশমিক ৪৫ জন চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ দরকার। বাংলাদেশে এক হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক আছেন শূন্য দশমিক ৬৭ জন। আর এক হাজার মানুষের জন্য নার্স ও মিডওয়াইফ আছেন শূন্য দশমিক ৪৯ জন। এক হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ আছেন ১ দশমিক ১৬ জন। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের চেয়ে ৭৪ শতাংশ চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ কম আছে।
সরেজমিন: গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
ব্যবস্থাপত্র নিয়ে অব্যবস্থাপনা
১২ জুন ২২, সমকাল
দশ কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঝুমা আক্তার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পা ফেললেন যখন, তখন সকাল সোয়া ৮টা। কোলে পাঁচ বছরের জমিয়াতুল। তিন দিন হয়ে গেল মেয়ের কানে অসহ্য ব্যথা। বাড়ি থেকে হাসপাতালে আসার দীর্ঘ পথের ক্লান্তি মা-মেয়ের চোখে-মুখে। এসেই দেখেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীতে ঠাসা; তবে নেই কর্মচারী, নেই চিকিৎসক। সকাল ১০টার দিকে নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত দুই ঘণ্টা পর খুলল রোগীর টোকেন কাউন্টারের দরজা। তিন টাকার টোকেন ঝুমার কাছ থেকে নেওয়া হলো পাঁচ টাকা। এরপর আবার অপেক্ষার খেলা! চিকিৎসক তো আর আসেনই না। দুই ঘণ্টা পর সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেল ঝুমার। পরে বাইরে প্রাইভেট চিকিৎসক ও ওষুধ মিলিয়ে হাজার টাকা খরচা করে বাড়ির পথে হাঁটলেন মা-মেয়ে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবার এমন দুর্দশার ছবি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকদের রোগীর সেবা দেওয়ার কথা। গতকাল শনিবার ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় অব্যবস্থাপনার নানা কীর্তি। সকাল ৮টায় হাসপাতালে থাকার নিয়ম হলেও চিকিৎসক আসেন অনেক দেরিতে। কর্মচারীদের কাজকর্মও হেয়ালি। তাঁরা আসেন হেলেদুলে সকাল ১০টার পর। চিকিৎসক-কর্মচারী দেরিতে হাসপাতালে ঢুকলেও কর্মস্থল দ্রুত ছাড়ার ব্যাপারে তাঁদের আছে ‘সুখ্যাতি’! চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ বিতরণেও রয়েছে নানা অনিয়ম।
গৌরীপুরের এক পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১৬ সালে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও কাজ চলছে একই জনবল দিয়ে।
গতকাল দু’জন কনসালট্যান্ট চিকিৎসক, আটজন মেডিকেল অফিসার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী দেখেন। একজন টেকনোলজিস্ট ও একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারও মাঝেমধ্যে রোগীকে ওষুধ লিখে দিচ্ছিলেন। ফিল্ম না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে সেবা বন্ধ। তাই ওই কক্ষের তালাও খোলা হয়নি। শুধু প্যাথলজির কিছু পরীক্ষা হয়। দুপুর ১টা বাজতেই চিকিৎসকরা বাড়িমুখো হতে শুরু করেন। তবে চলে যাওয়ার আগে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ভুল করছিলেন না কোনো চিকিৎসক।
রোদ, বৃষ্টি, ময়লায় ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে তারা
১ জুলাই ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইনা বাংলা
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত পটুয়াখালীর বাসিন্দা রোজিনা আক্তার (৩০)। কেমোথেরাপির কারণে মাথায় চুল নেই। বিষণ্ণ চেহারা। রোজিনার সাতটি কেমো দেয়া শেষ হয়েছে। আরও কয়েকটি কেমোথেরাপি দেওয়ার পর তার সার্জারি করা হবে। তারপর দেয়া হবে রেডিওথেরাপি।
রোজিনা থাকছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এনআইসিআরএইচ) পাশে একটি খালি জায়গায় ময়লার স্তূপে। এখানে পাটি বিছিয়ে ও মশারি টানিয়ে বসবাস করছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোজিনার মতো আরও দরিদ্র ক্যান্সার রোগীরা।
বসবাসের অযোগ্য এই জায়গাটিকে একটু বসবাসযোগ্য করার জন্য একটি পাটি ও মশারি টানিয়ে বসবাস করেন রোজিনা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে রোজিনা বলেন, ‘একেকটা কেমোথেরাপিতে ১২-১৪ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। মানুষের কাছে হাত পেতে সেই সাহায্য এনে চিকিৎসা চলছে। রিকশাচালক ভাই মাঝে মাঝে চিকিৎসার খরচ দেয়। বাড়ি যাওয়া-আসায় খরচ হয় ২ হাজার টাকা। সে টাকা নাই, তাই এখানেই থাকি।’
এভাবেই বছরের পর বছর ধরে লড়ছেন ঢাকার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দরিদ্র রোগীরা। তবু এই মানুষগুলোর কোনো দুঃখ নেই, অভিযোগ নেই; বরং হাসপাতালের কাছাকাছি থাকার একটা জায়গা পেয়ে তারা বেশ খুশিই।
দিনের বেলায় তারা চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ের জন্য ভিক্ষা করতে বের হন, আর রাতে এসে ঘুমান মশারি টানিয়ে, পাটি বিছিয়ে।
৭ বা ২১ দিনের বিরতিতে তাদের কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। কিন্তু ৭ বা ২১ দিন পরপরই গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার দুই-তিন হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া তাদের নেই। আবার ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়া করে থাকার সামর্থ্যও তাদের নেই।
৬ মাস ধরে ওই খোলা জায়গায় বসবাস করছেন রোজিনা। বাড়ি যাওয়া-আসার খরচ জোগাড় করতে পারেন না বলে এখানেই থাকেন। তাতে অন্তত হঠাৎ শরীর খারাপ হলে ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসা নিতে পারেন বলে জানালেন।
ক্যান্সারের কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেয়ার সময় রোজিনা আক্তারের মতো ক্যান্সার রোগীরা ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। তারপর তাদের জায়গা হয় এই ময়লার স্তূপের পাশে। এই রোগীদের তাই ক্যান্সারের পাশাপাশি রোদ, বৃষ্টি, মশার সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে।
‘নোংরা জায়গা হোক, তা-ও আমরা ভালো আছি। চিকিৎসা তো করতে পারছি। যেহেতু আমাদের পয়সা নেই, উপায় নাই। আমরা গরিব মানুষ; টাকা নাই, পয়সা নাই, বাসা ভাড়া করতে পারি না,’ স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা রংপুরের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন টিবিএসকে।
রংপুরের কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ঢাকায় তিন বছর ধরে ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী হামিদা বেগমের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে সিরাজুল ইসলামের।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রংপুর মেডিকেলে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি দেয়া হয় না। রংপুরে যদি ক্যান্সারের চিকিৎসা হতো, তাহলে আমাদের হয়রানি ও খরচ কিছুটা কমতো।’
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের হেমাটোলজি স্পেশালিষ্ট গুলজার হোসেন টিবিএসকে বলেন, ‘৫০০ বেডের ক্যান্সার হাসপাতালে প্রতিদিন ৫০০ রোগী ভর্তি থাকে। বেডের অতিরিক্ত কোনো রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় না।
‘প্রতিদিন আউটডোরে ১,০০০ রোগী চিকিৎসা নেয়। তার মধ্যে থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগী ভর্তি করা হয়। কিন্তু ভর্তি রোগীর চাহিদা থাকে অনেক বেশি।’
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ রোগীকে কেমোথেরাপি ও ৪০০ রোগীকে রেডিওথেরাপি দেয়া হয় এখানে। হাসপাতালে শয্যা সংকটের কারণে সব রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে স্থিতিশীল রোগীকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়। রোগীরা তারপর নিজ দায়িত্বে যেকোনো জায়গায় থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যান।
গ্লোবোক্যান ২০২০-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় ১ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি ক্যান্সার কেন্দ্র দরকার। সেই হিসাবে বাংলাদেশে ক্যান্সার কেন্দ্রের প্রয়োজন ১৬০টি। কিন্তু এর বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ক্যান্সার কেন্দ্র রয়েছে ২০টিরও কম। এসব ক্যান্সার কেন্দ্রও আবার রাজধানীকেন্দ্রিক।
শুধু হাসপাতাল সংকট নয়, ক্যান্সার চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ও জনবলের সংকটও আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, সারা দেশের জন্য রেডিওথেরাপি মেশিন দরকার ৩০০টি। কিন্তু দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৭টি মেশিন আছে। অধিকাংশ মেশিনই কারিগরি ত্রুটির ফলে বছরের অধিকাংশ সময় অচল থাকে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিট এবং হাসপাতালে রেডিওথেরাপির সিরিয়ালের জন্য তিন থেকে চার মাস অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন রোগীরা।
পরিবেশ
খাল বানিয়ে খনন, অস্তিত্ব সংকটে ধানসিঁড়ি নদী
৩০ এপ্রিল, ২০২২, বণিক বার্তা
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে—এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ এক সময়ের প্রমত্তা ধানসিঁড়ি নদীর তীরে ভিন্ন রূপে বারবার ফিরে আসার সংকল্প করেছিলেন। কিন্তু সেই ধানসিঁড়িটিকে আজ মরা খালে রূপান্তর করা হয়েছে। বারবার এ নদী খননের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। তবু ফিরে পায়নি এ নদী তার যৌবনের খরস্রোতা রূপ। সম্প্রতি ঝালকাঠির এ ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়ি নদী পুনঃখননে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
১৯১০ সালের সিএস নকশা অনুযায়ী, ৩৬০ দাগে রাজাপুরের বাঘরী অংশে এ নদীর মোহনার প্রশস্ততা ছিল ৫৬৭ ফুট। তখন এ নদীতে বড় বড় জাহাজ চলত। ধানসিঁড়ির মোহনায় তখন ছিল দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে বড় বন্দর। এখানে কলকাতা থেকে সরাসরি জাহাজ এসে ভিড়ত। এর পর ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সরকারের জরিপে ১নং দাগে ধানসিঁড়ি নদীর মোহনার প্রশস্ততা পাওয়া যায় ২০০ ফুট। এ জরিপের নকশা ২০২২ সালে এখনো চলমান। অথচ ২০০ ফুট প্রশস্ত এ নদীর বর্তমানে অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
লামায় পাহাড়ে রাবার কোম্পানির আগুনে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস
৩০ এপ্রিল, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
বান্দরবানে লামা উপজেলায় পাহাড়ি জুমের বাগানে আগুনে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনে প্রায় একশ একর জুমের বাগানের সঙ্গে ওই এলাকায় পাখি, মৌমাছি, বিড়াল গোত্রের প্রাণী লতাবাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পুড়ে মারা গেছে। পাহাড়ি ঝিরির কাঁকড়া ও মাছ মরে পানি দূষিত হয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল জুমের বাগানে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে একটি রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জমি দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের জুমের বাগানে আগুন দিয়েছে। আগুনে জুমের ধান, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন বাগান পুড়ে গেছে। রাবার কোম্পানিটির দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
লাংকম পাড়ার স্থানীয় ইনচং ম্রো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন ‘লামা রাবার কোম্পানির আগুনে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আগুন থেকে পাহাড়ের পশু-পাখিরাও রক্ষা পায়নি। আগুনে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে।’
মনিকা তঞ্চংগ্যা নামে স্থানীয় আরেকজন বলেন, ‘ঝিরির অসংখ্য মাছ এবং কাঁকড়া মারা গেছে। জলজ প্রাণী পচে পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে।’
রেংয়েন ম্রো পাড়ার কারবারির রেংয়েন ম্রো বলেন, ‘আগুনে আমাদের কষ্টের জুমের বাগান পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। পাড়ার শ্মশানও আগুন থেকে রক্ষা পায়নি। আমাদেরকে উচ্ছেদের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আগুন দিয়েছে।’
পাহাড়ি লতাপাতা খেয়েই দিন পার করছেন তারা
০৪ মে, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
‘কোম্পানির আগুন আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। যে জুম বাগানের ওপর আমাদের অস্তিত্ব নির্ভরশীল ছিল, সেগুলো তারা নিমিষেই পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। গত কয়েদিন ধরে পাহাড়ি লতাপাতা খেয়েই জীবনধারণ করছি।’
অত্যন্ত বেদনাভরা কণ্ঠে এগারো দিন বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন তুমরাও ম্রো।
শুধু তুমরাও নন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দেওয়া আগুনে বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া এবং রেংয়ান ম্রো পাড়ার প্রায় ৪০টি পরিবার খাদ্য এবং খাবার পানির তীব্র সংকটে আছে বলে জানিয়েছেন পাড়াবাসীরা।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ পাড়াবাসীর ঘরে কোনো খাবার নেই। জঙ্গলের লতাপাতা সেদ্ধ করে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
হাকমতি ত্রিপুরা নামে লাংকম ম্রো পাড়ার প্রায় ৫৫ বছরের এক বৃদ্ধা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঘরে চাল নেই। জঙ্গলের লতাপাতা খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি। জানি না কয়দিন এভাবে চলতে পারব।’
গ্যাস, কালো ধোঁয়ায় ১৭ একরের ধান ক্ষতিগ্রস্ত
১১ মে ২০২২, প্রথম আলো
পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ঢাকার ধামরাইয়ের বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটার একাংশ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা করে। কিন্তু এরপরও ভাটাগুলোর কার্যক্রম চলছে। সম্প্রতি এসব ইটভাটার বেশ কয়েকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় ধানগাছ পুড়ে গেছে। ধান চিটায় পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ধামরাই উপজেলার মধুডাঙ্গা এলাকার মেসার্স মদিনা ব্রিকস, খান, নূর, রাহাত ও মক্কা-মদিনা ব্রিকসের পাশের জমিগুলোর ধানগাছের পাতা পুড়ে গেছে। খেতের অধিকাংশ ধান চিটা হয়েছে। মক্কা-মদিনা ব্রিকসের পাশে জমি থেকে ধান কেটে ফাঁকা স্থানে রেখে মাড়াই করছেন কৃষকেরা।
কৃষকদের অভিযোগ, ইটভাটাগুলোর চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ার তাপে ধানের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে।
কর্ণফুলীর প্রশস্ততা কমে অর্ধেক
২৩ মে ২০২২, আজকের পত্রিকা
আজ থেকে ২০ বছর আগে কর্ণফুলী নদীর অভয় মিত্র ঘাটে যেখানে নৌকা ভিড়ত, এখন সেখানে নদীর কোনো চিহ্নই নেই। পুরোনো যাত্রীছাউনি পেরিয়ে অনেক দূর যাওয়ার পর এখন যেখান থেকে নৌকায় উঠতে হয়, সেই জায়গাটা মাঝনদী ছিল দুই দশক আগে।
শুধু অভয় মিত্র ঘাট নয়, নদী ভরাটে একই হাল হয়েছে সদরঘাট, ফিরিঙ্গিবাজার ফেরিঘাট, বাংলাবাজারঘাটসহ কর্ণফুলীর প্রায় প্রতিটি খেয়াঘাটে। নদীর দক্ষিণ তীরেও একই চিত্র। ২১ বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যিক দিক থেকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী কর্ণফুলীর প্রশস্ততা অর্ধেকের বেশি কমেছে।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন সংগঠনের ব্যানারে পরিচালিত এক জরিপের তথ্য বলছে, ২০০০ সালে যেখানে কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ ছিল ৯৩০ মিটার, সেখানে ২১ বছর পর ২০২২ সালে প্রস্থ কমে দাঁড়িয়েছে ৪১০ মিটারে। অর্থাৎ দুই দশকে ৫২০ মিটার প্রস্থ কমেছে কর্ণফুলীর। এর পাশাপাশি দখল-দূষণের কারণে নদীর গভীরতা কমে বিভিন্ন পয়েন্টে তৈরি হয়েছে চর।
বায়ুদূষণে ৭ বছর আয়ু কমছে বাংলাদেশে: গবেষণা
১৫ জুন ২০২২, জাগোনিউজ
দীর্ঘমেয়াদী বায়ুদূষণে বৈশ্বিক গড় আয়ুষ্কাল দুই বছরের বেশি কমিয়ে দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশের জন্য এর পরিমাণ প্রায় সাত বছর, যা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ, বায়ুদূষণ না থাকলে এ দেশের মানুষ প্রায় সাত বছর বেশি বাঁচতে পারতেন। গত মঙ্গলবার (১৪ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (ইপিআইসি) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে ধূমপান, এইচআইভি/এইডস বা সন্ত্রাসের তুলনায় মানুষের আয়ুষ্কাল বেশি কমাচ্ছে বায়ুদূষণ। বিশ্বের ৯৭ শতাংশের বেশি মানুষ বর্তমানে এমন এলাকায় বসবাস করেন, যেখানে বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি।
পরিবেশ সুরক্ষা সূচক
১৫ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ
১৫ জুন ২০২২, প্রথম আলো
পরিবেশ সুরক্ষায় কিছুটা উন্নতির পর বাংলাদেশের অবস্থান আবারও নিচের দিকে চলে গেছে। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত বিশ্ব পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম। এর আগে ২০২০ সালে তালিকায় ১৬২তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।
তালিকায় এই অবস্থান বলে দিচ্ছে, পরিবেশের স্বাস্থ্য, প্রতিবেশব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের অল-ওয়েদার সড়ক সমাধানের বদলে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে
১৫ জুন ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা
কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের তিনটি উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে নির্মিত হয়েছিল ২৯.৭৩ কিলোমিটারের দীর্ঘ একটি সড়ক, কিন্তু ওই অঞ্চলে সুবিধা দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তাটি। অকাল বন্যা দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার বাসিন্দারা বলছেন, ৮৭৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬-২০২০ সালের মধ্যে নির্মিত এই সড়কের কারণে ঢলের পানি হাওর থেকে দ্রুত নদীতে নামতে পারছে না। সড়কের দু’পাশে সবুজ ধানক্ষেত বর্ষায় পানিতে থৈ থৈ করে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে সুলতানপুর গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক বছরই মার্চ এপ্রিলে ঢল নামে। আগে ঢল এলেও পানি দ্রুত নেমে যেতো। “এখন পানি আটকে থাকে কয়েকদিন। এতে পানিতে ধান পচে যায়।”
এ বছরও এপ্রিলে অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল বোরো ধান। এতে ক্ষতির পরিমান হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এবারের অকাল বন্যার পর থেকেই আলোচনায় আসে এই সড়ক। স্থানীয় মানুষ, বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে মন্ত্রীসভায় আলোচনা হয়েছে হাওরের জন্যে ভয়ের কারণ হয়ে ওঠা কিশোরগঞ্জের এই সড়ক নিয়ে। হাওরের বন্যায় এই সড়কের কোন প্রভাব রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছে মন্ত্রীসভা। একইসঙ্গে হাওর এলাকায় আর কোন সড়ক নির্মাণ না করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওার আগে যথাযথ পরিবেশগত সমীক্ষা না চালানো এর অন্যতম কারণ।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ও পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান এই সড়ক নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণের আগে যথাযথ পরিবেশগত সমীক্ষা চালানো হয়নি।
তিনি বলেন, “হাওরের বৈশিষ্ট্য হলো জলের অবাধ প্রবাহ। আমি প্রস্তাব করেছিলাম, সড়ক যদি নির্মাণ করতেই হয় তাহলে যেন ৩০ কিলোমিটার এই সড়কের অন্তত ৩০ ভাগ জায়গা উঁচু সেতু বা উড়াল সড়ক আকারে বানিয়ে পানি প্রবাহের সুযোগ রাখা হয়। এ বিষয়ে তখন একটি লিখিত প্রস্তাাবও আমি দিয়েছিলাম। এছাড়া এই সড়কের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো হলো, এটি একা দাঁড়িয়ে থাকা এক সড়ক, এই সড়ক ব্যাপক অর্থে কোনো সংযোগ তৈরি করছে না।”
সাক্ষাতকারে খালেকুজ্জামান বলেন, “সড়কটি নির্মাণের মাত্র দুই বছর হয়েছে। আরও সময় গেলে, বড় বড় বন্যার তোড় দেখা দিলে এই সড়কের পরিবেশগত প্রভাব আরও স্পষ্টভাবে ধরা পড়বে।”
সংরক্ষিত বনে বাফুফের ফুটবল প্রশিক্ষণ একাডেমি
১৬ জুলাই, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
কক্সবাজারের জঙ্গল খুনিয়াপালং সংরক্ষিত বনে একটি আবাসিক প্রশিক্ষণ একাডেমি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সরকার ইতোমধ্যে সংরক্ষিত বনের ২০ একর জায়গা ডি-রিজার্ভ করে বাফুফেকে বরাদ্দ দিয়েছে।
একাডেমি স্থাপনে কাটা পড়বে কক্সবাজারের রামু উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এই বনের প্রায় ৩০ হাজার ছোট বড় গাছ। এই বন আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণের জোট আইইউসিএনর তালিকাভুক্ত মহাবিপদাপন্ন এশিয়ান হাতির আবাসভূমি। এছাড়া এ বনে হরিণ, বন্যশুকর, বানরসহ অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও পাখি রয়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরওয়ার আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ডি-রিজার্ভের গেজেট নোটিফিকেশনের পর গত ৪ জুলাই তারা বাফুফেকে বনভূমি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি এর বেশি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বন্যা
সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে
১৭ জুন ২০২২, প্রথম আলো
সিলেট বিভাগের বন্যা দেশের আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। উজান থেকে আসা ঢলে এই বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। বাকি তিন জেলার শহরের কিছু উঁচু স্থান, পাহাড়ি এলাকা এবং ভবন ছাড়া সবখানে এখন পানি। আগামী দুই দিনে এই পানি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ১৯৯৮ সালের জুন মাসে সিলেট বিভাগে অনেকটা এমন বন্যা হয়েছিল। কিন্তু এর পর বেশির ভাগ বন্যা মূলত হাওর ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৯ সালে সুনামগঞ্জ ও সিলেট শহরে দুই তিন দিনের জন্য হঠাৎ বন্যা হয়। কিন্তু পুরো সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হওয়ার মতো বন্যা হয়নি।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া প্রথম আলোকে বলেন, দেশের একটি বিভাগের প্রায় ৮০ শতাংশ ডুবে যাওয়ার মতো বন্যা এর আগে বাংলাদেশে হয়নি। সিলেটে এর আগে যত বন্যা হয়েছে, তা মূলত হাওর এলাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার গ্রাম, শহর ও উঁচু এলাকাও পানির নিচে চলে গেছে। আর সোমবারের আগে এই পানি নামার সম্ভাবনা কম। কারণ, উজানে আগামী দুই দিন অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূ-উপগ্রহভিত্তিক সংস্থা ইসিএমডব্লিইউর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামীকাল বাংলাদেশের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে। এর আগে গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে; যা ১২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি। আর গত তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই অল্প কয়েক দিনে এত বৃষ্টির রেকর্ডও গত ১০০ বছরে নেই।
বাংলাদেশের নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেট বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, গোয়াইনসহ বেশির ভাগ নদ-নদীতে পলি পড়ে অনেক এলাকা ভরাট হয়ে গেছে। নদ-নদীর বুক উঁচু হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানির ঢল ধরে রাখতে পারছে না। ফলে পানি উপচে দ্রুত বসতি ও শহর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। হাওর এলাকায় কৃষিকাজসহ নানা তৎপরতার কারণে পানি ধারণের ক্ষমতা কমে গেছে। যে কারণে বন্যার পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে।
সিলেটে বন্যার ‘কারণ’ নদীর নাব্যতা–সংকট আর হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধ
১৮ জুন ২০২২, প্রথম আলো
সিলেটে গত কয়েক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্যা চলছে। ষাট থেকে সত্তরোর্ধ্ব অনেকে বলছেন, তাঁরা বন্যার এত পানি এর আগে দেখেননি। কী কারণে এমন ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হলো, এর ব্যাখ্যায় বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ সংগঠকেরা বলছেন, সিলেটের প্রতিটি নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়েছে। হাওরে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ, রাস্তা ও স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে। নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা। মূলত, ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির জন্য মোটাদাগে এসব কারণই প্রধানত দায়ী।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ও নদ-নদী নিয়ে কাজ করছেন, এমন দুজনের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে বন্যা থেকে রেহাই পেতে সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদী খনন করা জরুরি। এ ছাড়া সিলেট নগরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছড়াগুলো (প্রাকৃতিক) দখলমুক্ত করে খনন করে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ নিশ্চিত করা দরকার।
দীর্ঘদিন ধরেই সিলেটের পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করছেন আবদুল হাই আল হাদি। তিনি সারি নদ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি। তিনি বলেন, ভূতাত্ত্বিকভাবে সিলেট একটি বৈচিত্র্যময় এলাকা। পাহাড়-টিলায় জনপদটি যেমন সমৃদ্ধ; তেমনি এখানে নদী, নালা, খাল, বিল, হাওর-বাঁওড়ের কোনো কমতি নেই। তবে নদীগুলোর সব কটিরই উৎপত্তি হয়েছে ভারতে। সুরমা নদী ছাড়া বাকি নদীগুলোর অধিকাংশ এসেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল জায়গা ভারতের মেঘালয় থেকে। তাই মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের কারণে যে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়, এর সবই চলে আসে সিলেটে।
আবদুল হাই আল হাদি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি বালু-মাটি-পলি জমতে জমতে নদ-নদীগুলো প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজের কারণে নদীগুলো ক্রমে সংকোচন ও ভরাট হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে নদীশাসনের নামে নদী-বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড। যত্রতত্র স্লুইসগেট ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণেও নদীর প্রবাহপথ আরও বেশি সংকুচিত হয়েছে। এতে এবার অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি জমে বন্যার সৃষ্টি করেছে। এ রকম পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য সিলেটের নদ-নদীগুলোর নাব্যতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নদী দখলমুক্ত করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাত হলে যেন পানির বাড়তি চাপ ধারণ করতে পারে, এ জন্য বিল-ঝিল, হাওর-বাঁওড় ও জলাধার খনন করতে হবে।
সিলেট বিভাগের বন্যার্তদের জন্য ২৬ হাজার খাবার প্যাকেট বরাদ্দ
১৭ জুন ২০২২, প্রথম আলো
সিলেট বিভাগের বন্যার্তদের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে ২৬ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনিসহ যে খাদ্যসামগ্রী রয়েছে, তা পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের এক সপ্তাহ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য এই সহায়তার পাশাপাশি টাকা ও চালও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটের অনুকূলে ২০০ মেট্রিক টন চাল, ৩০ লাখ টাকা এবং ৮ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জের জন্য ৩০ লাখ টাকা এবং ৮ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট, নেত্রকোনার জন্য ১০০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ৩ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যায় আক্রান্ত এলাকার জন্যও খাদ্যসহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং এক হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট, রংপুর ও নীলফামারীর জন্য ৩ হাজার করে শুকনা এবং অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সিলেটে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে নৌকা সঙ্কট
১৮ জুন, ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
প্রবল বৃষ্টিতে উজানের ঢলে সিলেটে একের পর এক এলাকা তলিয়ে বানভাসি মানুষের সংখ্যা বাড়লেও তাদের উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মুজিবুর রহমান শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অনেক মানুষ পানিবন্দি, কিন্তু নৌকার অভাবে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে পারছে না।
“বন্যায় অনাহারে থাকা লোকজন এখন কেবল প্রাণে বাঁচতে চান। কিন্তু একটি নৌকা মেলানো তাদের কাছে এখন সোনার হরিণ।”
চলতি মৌসুমে এটা সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যা। ভারতের মেঘালয় ও আসামে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে এবার পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা করা হচ্ছে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের হিসাবে, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৩৫ লাখের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
“আমরা চেষ্টা করছি তাদের উদ্ধার করে এনে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রাখতে,” বলেন
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।
তবে উদ্ধারে নৌকা সঙ্কট নিয়ে জেলা প্রশাসকের কথার প্রতিফলন পাওয়া যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার আলিরগাঁও এলাকার আজিজ মিয়ার কথায়।
তার ভাষ্যে, উপজেলার প্রায় শতভাগ মানুষ পানিবন্দি। কেউ ত্রাণ চায় না, প্রাণে বাঁচতে চায়। কিন্তু তাদের উদ্ধারের জন্য নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না।
আজিজ বলছেন, এমন ভয়ানক দুর্যোগ তিনি গত কয়েক দশকে দেখেননি।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী
১৮ জুন ২০২২, প্রথম আলো
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া দুধকুমারসহ ১৪টি নদ–নদীর পানি বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ২৫টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে প্রায় শতাধিক চর।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নাঞ্চল ও নদ-নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী চরাঞ্চলের মানুষ। অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাচানে আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছে। বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নিজেদের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য–সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এসব চরাঞ্চলের অনেকেই তাঁদের গবাদিপশু নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সিলেটে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা
১৮ জুন ২০২২, মানবজমিন
ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেট। নগরীর অর্ধেক এলাকার মানুষ পানিবন্দি। জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, সিলেট সদর ও বিশ্বনাথের ৯০ ভাগ এলাকা পানির নিচে। আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাই হচ্ছে না। উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে লোকজন। বেশির ভাগ এলাকার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এখনো লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। উদ্ধারে নামানো হয়েছে সেনা, বিজিবি, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী। হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার কাজ চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বন্যার পানি আঘাত হেনেছে সিলেটের পাইকারি আড়ত কালীঘাট, কাজিরবাজার, সুবহানীঘাটসহ কয়েকটি এলাকায়। তলিয়ে গেছে নিত্যপণ্যের আড়ত।
কোথাও বুক সমান, কোথাও কোমর সমান পানিতে নিমজ্জিত এলাকা। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলতে পারছেন না। এতে করে সিলেটে খাদ্য সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ সহ কয়েকজন কাউন্সিলর জানিয়েছেন- আশ্রয় কেন্দ্র ও বন্যার্তদের মধ্যে খাবার দিতে পন্য পাওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে শুকনো খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দোকানপাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেটের কালিঘাটের চাউল বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ জানিয়েছেন- তাদের সব দোকানপাট পানির নিচে। এখন পণ্য বাঁচানোর তাদের প্রধান কাজ। বিক্রি করার সুযোগ নেই।
এদিকে- বন্যার কারণে সিলেট নগরীর বেশির ভাগ এলাকার দোকানপাট বন্ধ। নগরের জিন্দাবাজার, আম্বরখানা সহ কয়েকটি এলাকায় দোকানপাট খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে লোকজন পণ্য সঙ্কটে পড়েছেন। বেশি দামও দিয়েও অনেকেই পন্য পাচ্ছেন না। এদিকে- খাদ্য সঙ্কট থাকার কারণে ত্রাণ তৎপরতাও তেমন ভাবে চালানো হচ্ছে না।
সিলেট-সুনামগঞ্জের পর নেত্রকোণাও ডুবছে
১৮ জুন, ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট-সুনামগঞ্জের পর হাওরের আরেক জেলা নেত্রকোণাও ডুবছে; ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে জেলার আরও তিনটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।
উজানের পানি এসে যে হাওরে জমা হয়; সেই বিস্তীর্ণ হাওরের অন্যতম জেলা নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী প্রধান নদ-নদীর পানি এরই মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
চলতি বন্যায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা সুনামগঞ্জের পাশের এ জেলায় শুক্রবার ভোর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকে। কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলা বেশ কিছু জায়গা শুক্রবার ডুবে যায়। এতে কোথাও কোথাও সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
শুক্রবার জেলায় সারাদিনই থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা দুই থেকে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। শনিবার সকাল নাগাদ নতুন করে বানের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে জেলার সদর, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলা।
সরেজমিন সিলেট নগর
বাড়িতে থাকার উপায় নেই, আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্যসংকট
১৯ জুন ২০২২, প্রথম আলো
সিলেট শহরের শাহজালাল উপশহর এলাকার জে ব্লকের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান। নৌকায় করে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপশহর মোড়ে আসেন তিনি। বৃষ্টিতে এর মধ্যে সবাই ভিজে গেছেন। নৌকায় থাকা তিনটি ব্যাগ নামাতে নামাতে তিনি বললেন, ‘যে অবস্থা দেখছি, আর বাসায় থাকতে পারলাম না। বাধ্য হয়ে বাসার সবাইকে নিয়ে বের হয়েছি। গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবলে চলে যাব।’
বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেট নগরের প্রায় সব এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত নগরের নতুন ২৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে এসব এলাকায় হাঁটুসমান পানি দেখা দিয়েছে। আগে থেকে প্লাবিত এলাকাগুলোতে পানি উঠেছে কোমর থেকে গলাসমান।
এমন অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন নগরের বাসিন্দারা। যাঁদের গ্রামের বাড়ি অন্য জেলায়, তাঁরা সেখানে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আশ্রয় খুঁজছেন আত্মীয়স্বজন আর পরিচিতজনদের বাড়িতে। বহুতল ভবনের নিচতলার বাসিন্দারা উঠে যাচ্ছেন দোতলা, তিনতলায়। আর যাঁরা কোথাও যাওয়ার জায়গা পাচ্ছেন না, তাঁরা ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। কিন্তু সরকারি সহায়তা না পৌঁছায় আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা ভুগছেন খাদ্যসংকটে। নিজেদের জমানো সঞ্চয় আর মানুষের সহায়তাই এখন তাঁদের ভরসা।
সিলেট শহরের শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, নাইওরপুল, মিরাবাজার, টিলাগড়, শেখঘাট, তালতলা, মাছুদীঘির পাড়, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, দাড়িয়াপাড়া এলাকার সড়কে এবং বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে।
পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে সিলেট নগরের মিরাবাজার এলাকার কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন যুবক সৈয়দ এমরান। গতকাল বেলা ১১টার দিকে হোটেলের কয়েকটি খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে তাঁকে আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে দেখা যায়। এমরান বলেন, রাতে সবাই শুকনা খাবার খেয়েছেন। সকালে কেউ কিছু খাননি। এ জন্য একসঙ্গে সকালের নাশতা এবং দুপুরের খাবার হিসেবে ভাত নিয়ে এসেছেন। ভ্যান চালিয়ে ২০০ টাকা জোগাড় করেছিলেন, তা দিয়েই খাবারগুলো এনেছেন।
এমরান তা-ও পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু খাবার জোগাড় করতে পেরেছেন। একই আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে দুই দিন ধরে আশ্রয় নেওয়া মনসুর আলী (৭০) পড়েছেন আরও সংকটে। তিনি বলছিলেন, ‘দুই দিন ধরি বিল্ডিংঅ কোনোরকম আছি। ঘরে সব মালসামানা (মালামাল) পানির তলে। টাকাপয়সা যা রুজি করছি, ই কয় দিনে সব শ্যাষ। আশ্রয় পাইলেও খানি (খাবার) পাইরাম না। মানুষের কাছ তনে খুঁজিয়া চলরাম (চলছি)।’
নগরের যতরপুর এলাকার মুকিত মিয়ার কলোনিতে বসবাস মনসুর মিয়ার। তিন ছেলেসহ পরিবারের পাঁচজন মিলে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। রিকশা মেরামতের কাজ করা মনসুর আলী জানান, তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জে। বাড়িতে শুধু ভিটেমাটি আছে, আর কিছু নেই। এ জন্য জীবিকার তাগিদে প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সিলেটে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রটিতে উঠেছেন। কিন্তু খাবারের সংকটে পরিবার-পরিজন নিয়ে রয়েছেন বিপাকে।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সিলেট নগরে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। শনিবার সকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রের হিসাব রাখা সম্ভব হয়নি। যে যেদিকে পারছেন, ছুটছেন। বাসিন্দারা যেখানে উঁচু জায়গা পাচ্ছেন, সেখানে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে নগরের বেশ কয়েকটি ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করায় অনেকে দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছেন। সরকারের ত্রাণসহায়তা এখনো এসব আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছায়নি।
কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মাজেদা বেগমের (৬০) বাসা নগরের যতরপুর এলাকার মজিদ মিয়ার কলোনিতে। ঘরের সাত সদস্য নিয়ে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। ছেলে ভ্যান চালিয়ে আয়রোজগার করতেন। কিন্তু এখন বৃষ্টির মধ্যে ভ্যান চালাতে পারছেন না। মাজেদা বলেন, ছেলে আগে যা আয়রোজগার করেছেন, সেগুলো সব খরচ হয়ে গেছে। বৃষ্টি থামলে কেউ যদি কোনো সহযোগিতা নিয়ে আসেন, সে আশায় রয়েছেন তিনি।
বন্যাদুর্গত এলাকায় নেই বেশিরভাগ মন্ত্রী-এমপি
২০ জুন ২২, সমকাল
.. .. সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পরও উপদ্রুত এলাকার বেশিরভাগ মন্ত্রী-এমপি এখন পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ কারণে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ কেবলই বাড়ছে। তাঁদের অনেকেই দুঃসময়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে সংসদীয় আসন সংখ্যা ১১টি। এর মধ্যে সিলেটে ছয়টি, সুনামগঞ্জে পাঁচটি। এই ১১ আসনের মধ্যে ৯ জন আওয়ামী লীগের; জাতীয় পার্টি ও গণফোরামের একজন করে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে বন্যা শুরু হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি জয়া সেনগুপ্তাকে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় দেখা যায়নি। তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এম এ মান্নান করোনা আক্রান্ত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাননি। তিনি গত শনিবার সরকারি সফরে ভারত গেছেন। আজ সোমবার তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেছেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আজকালের মধ্যেই তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ আগামীকাল মঙ্গলবার তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং সিলেট-৪ আসনের এমপি ইমরান আহমদ এরই মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। তিনি গত শনিবার বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে ঢাকায় ফিরে এসেছেন। তাঁর আবারও বন্যাকবলিত এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
সিলেটের ছয় এমপির মধ্যে একমাত্র সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হাবিবুর রহমান বন্যা শুরুর পর থেকেই নিরবচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে আসছেন।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন শুক্রবার থেকে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন। বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধারের পাশাপাশি তাঁদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করছেন। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান মেজবা গতকাল রোববার থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক গত বৃহস্পতিবার থেকেই তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি গতকাল ঢাকায় এসেছেন। আজ আবার ফিরে যাবেন সুনামগঞ্জে।
সিলেট-২ আসনে গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খান বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুক্রবার থেকে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছেন।
আশ্রয়কেন্দ্রেও বাঁচার লড়াই
২০ জুন ২২, সমকাল
জলযুদ্ধে থেকেও একটু বৃষ্টি ঝরলেই যেন তৃপ্তি পান ৪০ পেরোনো মাফিয়া বেগম। ওই বৃষ্টির ফোঁটাই যে এখন মাফিয়াদের তেষ্টা মেটানোর রসদ। বিশুদ্ধ পানি মানে ওই মেঘ থেকে জল। এই পানিই তাঁদের নামিয়েছে বন্যার সঙ্গে লড়াইয়ে; বৃষ্টির জলই আবার দেখাচ্ছে বেঁচে থাকার পথ।
পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মা মাফিয়া। সিলেট নগরীর তেররতন এলাকায় রিকশাচালক স্বামী শিপন মিয়া ও সন্তানদের নিয়ে এক যুগ ধরে আছেন এই এলাকায়। সবার মতো বন্যার এমন রুদ্র রূপ আগে দেখেননি মাফিয়াও। তাঁর একচালা টিনের ঘরের ওপর দিয়ে বইছে ভীতি ছড়ানো বানের জলধারা। টানাপোড়েনের সংসারে গৃহস্থালির সামান্য যা কিছু ছিল, তা-ও ভেসে গেছে পানির তোড়ে। হাতের কাছে পাওয়া দু’খানা প্লাস্টিকের থালা আর দু’খানা পাতিল- তার কাছে হয়ে উঠেছে ‘অন্ধের যষ্টি’। মাফিয়ার ৯ জনের পরিবার এখন ঠাঁই নিয়েছে নগরীর উপশহর এলাকার উমরশাহ তেররতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে। নিচতলায় কয়েকটি টেবিল জড়ো করে কোনোমতে মাথা গোঁজার চেষ্টা। সেখানেও পানির থৈ থৈ সুর। আশ্রয়কেন্দ্রে নেই পর্যাপ্ত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা। মশারও আছে যন্ত্রণা।
সবকিছু হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে বসে তীব্র ক্ষুধার যাতনা আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা যখন শুরু করলেন, তখন মাফিয়ার দু’চোখের আঙিনায় বেদনার জল। তিনি বলছিলেন, ‘চার দিন ধরে দিনে মাত্র একবেলা চিড়া-মুড়ি খেয়ে বেঁচে আছি। বৃষ্টির ফোঁটা ধরেছি থালায়, সেটাই খাচ্ছি। সন্ধ্যা হলেই আঁধার নামে। প্রথম দিন মোম ছিল, এখন আর নেই। ছোট ছোট এত বাচ্চা নিয়ে অন্ধকারে রাত কাটাই। বাচ্চারা ভাতের জন্য চিৎকার করে কাঁদে। বুক ফেটে যায়! কীভাবে ওদের মুখে ভাত দেব! এখন পর্যন্ত কেউ এক থালা খিচুড়িও দেয়নি।’
খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট
২০ জুন ২০২২, প্রথম আলো
সিলেট বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো বন্যার পানির নিচে। সেখানকার জনপদ যেন একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। যোগাযোগব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দী। অনেক স্থানে খাওয়ার পানি ও খাদ্য পৌঁছায়নি। গতকাল দুপুরে কোম্পানীগঞ্জের থানাবাজার এলাকায়ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার চার দিন পার হলো। এখনো বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে এলেও সড়কপথ পানিতে তলিয়ে আছে। বিভাগীয় শহর সিলেট থেকে শুরু করে জেলা শহর সুনামগঞ্জ এখনো সারা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন।
এমন পরিস্থিতিতে বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের নিরাপদ আশ্রয় পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার ও সুপেয় পানির সংকট দূর করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। হাসপাতাল, ব্যাংকসহ বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় সেবা বন্ধ আছে। সিলেট শহর ছাড়া প্রায় এলাকাতেই মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক নেই, বন্ধ ইন্টারনেট সেবাও। তবে গতকাল রোববার সুনামগঞ্জ শহরের উঁচু দালানের ছাদ থেকে অনেকে ইন্টারনেট সংযোগ পেয়েছেন। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
এদিকে চার দিন পর গতকাল সকালে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সূর্যের দেখা মেলে। সিলেটে দিনভর এক-দুবার বৃষ্টি হলেও থেমেছে ভারী বৃষ্টি। এ অবস্থায় দুই শহরের পানি কিছুটা কমে এলেও উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। তবে নদ-নদী দিয়ে ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল আসা অব্যাহত থাকায় শঙ্কা কাটেনি মানুষের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য বলছে, সিলেটের সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জ ছাড়াও নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, শেরপুর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া গতকাল পর্যন্ত বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে। এই ১৫ জেলার ৭৩টি উপজেলায় কমবেশি বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গতকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে ডুবে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
খাবারের কষ্টে মানুষ
মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি লেই (আটা বা ময়দা জ্বাল দিয়ে বানানো খাবার) খেত দেড় বছরের শিশু রুনা আক্তার। তিন দিন ধরে সে খাবারও ঠিকমতো পাচ্ছে না শিশুটি। সে পরিবারের সঙ্গে সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে আছে। বুকের দুধে পেট ভরছে না তার, ক্ষুধায় সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে রুনা।
শুধু রুনা নয়, আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া অন্য শিশুদেরও একই অবস্থা। আশ্রয়কেন্দ্রে যে খাবার দেওয়া হয়, তা বড়দের উপযোগী। শিশুদের উপযোগী কোনো খাবার না থাকায় তাদের কষ্ট হচ্ছে। খাবারের জন্য শিশুরা কান্নাকাটি করছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম আহমদ। তিনি জানান, চার দিন আগে তাঁরা ৪০০ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠেছেন। মাত্র একবেলা চিড়া, মুড়ি ও গুড় পেয়েছেন। এখন খাবার ও সুপেয় পানির অভাবে তাঁরা ভুগছেন। এ ছাড়া তিন তলাবিশিষ্ট এ আশ্রয়কেন্দ্রের ১২টি কক্ষে তাঁরা ৪০০ মানুষ গাদাগাদি করে থাকছেন। কারও ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না। ঘুম ও খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। আশ্রয় পেয়েও যেন তাঁরা এখন আশ্রয়হীন।
জেলা প্রশাসন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সিলেট জেলায় ৪৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া গবাদিপশু ঠাঁই নিয়েছে ৩১ হাজার। এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ চলছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় জলযানের সংকটে বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া অনেক মানুষ আসতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়কের পাশেই গৌরীনগর গ্রাম। বন্যার পানিতে এ গ্রামও তলিয়ে গেছে। তবে গ্রামের সামনে দিয়ে যাওয়া মহাসড়কের অনেকটা অংশ উঁচু থাকায় সেখানে বন্যার পানি ওঠেনি। এ অবস্থায় গ্রামের চল্লিশোর্ধ্ব মো. শাহজাহান সড়কে থাকা একটি ট্রাকে মা, স্ত্রী, মেয়ে ও ভাইকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ট্রাকে ত্রিপল টানিয়েছেন। এরপর তিন দিন ধরে তাঁরা এখানেই আছেন। এই কটি দিন কেবল শুকনো খাবার খেয়েই কাটিয়েছেন তাঁরা। কোনো ত্রাণ পাননি।
সুনামগঞ্জ শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন (৭২) বলেন, অনেকে তিনতলা, চারতলা ভবন শহরের মানুষদের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। বাড়িঘরে আটকা পড়া মানুষদের স্থানীয় অনেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসব ভবনে ঠাঁই দিয়েছেন। যাঁদের খাওয়ানোর সামর্থ্য আছে, তাঁরা আশ্রয়গ্রহণকারীদের খাওয়াচ্ছেনও। তবে খাবার শেষ হয়ে এসেছে। দ্রুত পানি না কমলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আরও বাড়বে।
গতকাল রাত সোয়া আটটায় কথা হয় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বন্যা শুরুর পরপরই মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তাঁরা। এতে প্রশাসনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছুটা হিমশিম খেয়েছে। তবে যোগাযোগ এখন বেড়েছে। তাই দুই জেলার সব বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। খাবার ও সুপেয় পানির হাহাকার দ্রুতই দূর হবে।
পানিতে আটকে পড়া মানুষ দুর্ভোগে
সুনামগঞ্জ শহরে কোথাও দাঁড়ানোর মাটি নেই। পানি কিছুটা কমে এলেও এখনো চার থেকে ছয় ফুট পানিতে তলিয়ে আছে শহর। দোকানপাট, অফিস-আদালত, সব জায়গায় পানি আর পানি। নৌকা ছাড়া যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। স্কুল-কলেজ, মসজিদ, অফিস-আদালত, বাড়ির ছাদ, উঁচু সেতুসহ শহরের বহুতল ভবনগুলোতে হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। কোনো কোনো স্থানে এক ঘরে ২০ থেকে ৩০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
সুনামগঞ্জের মোহাম্মদপুর এলাকার একটি ভবনের মালিক সালাউদ্দিন মাহবুব বলেন, ‘আশ্রয় হারিয়ে অনেকে এসেছেন। এভাবে বিপদ হঠাৎ করে আসবে, এটা তো কল্পনায়ও ছিল না। মানুষ তো আগাম বুঝতে পারেনি। কয়েক ঘণ্টায় এমন গজব নামবে, কেউ ভাবতেই পারেনি। একেক ভবনে প্রচুর মানুষ থাকায় ঘুমহীন কাটাচ্ছেন অনেকে। খাবার আর বিশুদ্ধ পানির সংকট তো আছেই।’
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পানিবন্দী হয়ে আটকে আছেন। বাসার মালামাল সরাতে গিয়ে চার দিন আগে বৃষ্টির পানিতে ভেজার কারণে প্রচণ্ড জ্বর উঠেছিল। হাসপাতাল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চিকিৎসকও দেখাতে পারেননি। ওষুধের দোকানও খোলা নেই।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ প্রথম আলোকে বলেন, আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী কাজ করছে। গত শনিবার পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুই জেলার অন্তত দুই হাজার আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করেছেন।
ভেসে গেছ সব, ২-৩ দিন কিছুই খাননি তারা
২০ জুন, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
সিলেটে চারদিকে এখন শুধু ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তনাদ। কোনো গাড়ি বা নতুন কোনো মানুষকে দেখলেই ছুটে আসছেন বন্যার্তরা। সবার চোখে-মুখে ক্ষুধার ছাপ।
অনেকেই আছেন ২-৩ দিন ধরে অনাহারে। কেউবা একমুঠো শুকনো খাবার খেয়ে কোনোমতে দিন পার করছেন।
আজ সোমবার সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর বাজারে দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদকের সঙ্গে বেশ কয়েকজন বানভাসি মানুষের কথা হয়।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কুদ্দুস মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঘরে কোনো খাবার নেই। ২ দিন ধরে কিছু খেতে পারিনি। আমাদের এদিকে সরকারি কোনো ত্রাণ আসেনি। অনেক কষ্টে আছি। দেখার কেউ নেই।’
স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘আমার বাড়ি দাড়িয়ার পাড়। ধান চাল সবকিছু পানিতে ভেসে গেছে। গত ৩ দিন ধরে কিছু খেতে পারিনি। কেউ আমাদের খাবার দেয়নি।’
পানিপ্রবাহ বন্ধ হলে রাস্তা কেটে বেইলি ব্রিজ বসানোর নির্দেশ
১৯ জুন ২০২২, যুগান্তর
চলতি মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যা হচ্ছে দেশে। একদিনের পানির ঢলেই ডুবে গেছে সিলেট-সুনামগঞ্জ। একদিনে বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ আগে দেখেনি সিলেটবাসী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল চেরাপুঞ্জিতে ২৭ বছরের রেকর্ড বৃষ্টিই সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার অন্যতম কারণ।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নদীর নাব্যতা–সংকট, হাওড়ে অপরিকল্পিত রাস্তা, বাঁধ ও স্লুইচগেট নির্মাণের কারণে বন্যার পানি দ্রুত নামছে না। পানিপ্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠে কিশোরগঞ্জের হাওড় অঞ্চলে নির্মিত অলওয়েদার সড়কের কারণেই কি পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?
এ প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য আসেনি যে, এই রাস্তা কেটে না দিলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। কোথাও কোনো রাস্তার কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ হলে সেটা কেটে দিয়ে বেইলি ব্রিজ বসাতে বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সেই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে সিলেটের মেয়র আমাকে জানিয়েছেন যে, শহরের ভেতরে কিছু রাস্তা কেটে দেয়া লাগতে পারে। কাটার জন্য আমি অভয় দিয়েছি, পরবর্তী সময়ে মেরামতের জন্য আমরা বরাদ্দ দেব।’
রোববার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক রোববার কয়েকটি রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানালেন মন্ত্রী। এতে করে সুফল পাচ্ছেন বানভাসি মানুষেরা। পানি সরে যেতে শুরু করেছে সেখানে।
মন্ত্রী বলেন, ‘বন্যাকবলিত এলাকায় কিছু রাস্তা কাটার প্রয়োজন পড়েছে। সিলেটের মেয়র সেটা জানিয়েছেন। এতে বন্যার পানি সহজে নেমে যাচ্ছে। কোথাও প্রয়োজন হলে আরও রাস্তা কেটে ফেলা হবে।’
মসজিদের জেনারেটর দিয়ে তোলা পানিই ভরসা সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দাদের
২০ জুন ২০২২, প্রথম আলো
সুনামগঞ্জ শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এখনো হাঁটুপানি। এর মধ্যেই নারী, পুরুষ ও শিশুদের দীর্ঘ লাইন। সবার হাতে কলসি, বালতি, বোতল। তাঁরা এসেছেন খাওয়ার পানি সংগ্রহের জন্য। কয়েকজন যুবক পানির মধ্যেই সারিতে থাকা লোকজনকে পানি দিচ্ছেন। পার্শ্ববর্তী আলীপাড়া, বলাকাপাড়া ও বনানীপাড়া এলাকা থেকেও পানি নিতে এসেছেন লোকজন।
আজ সোমবার দুপুরে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। শুধু মোহাম্মদপুর নয়, পৌর এলাকার বলাকাপাড়া, আরপিননগর, তেঘরিয়া, ষোলঘরসহ বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ থেকে পানি দেওয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমছে। তবে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সংকট আছে সর্বত্র। বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত অনেকেই বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে পান করেছেন। এখন বৃষ্টি কম। এতে সুপেয় পানির সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এখনো শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
এখন পানি কমায় এবং পানিতে ময়লা থাকায় খাওয়ার পানি মিলছে না। এমন অবস্থায় শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মসজিদে মসজিদে জেনারেটরে পানি তুলে বিতরণ করা হচ্ছে। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং স্থানীয় তরুণ যুবকদের উদ্যোগে এটি করা হচ্ছে।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্যার্তদের বিশুদ্ধ পানি না দিয়েই ফিরল গাড়ি
২১ জুন ২০২২, প্রথম আলো
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সদর উপজেলায় বন্যার্তদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে গিয়েছিল ভ্রাম্যমাণ পানির গাড়ি। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দেখা দেয় বিপত্তি। ফলে পানি সরবরাহ না করেই ফিরে আসতে হয়েছে গাড়িটিকে।
সিলেট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ওই গাড়ি সোমবার দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে পৌঁছায়। সেখানে যাওয়ার পর গাড়ির চালক ও অপারেটর আবদুস সালাম পানি বিশুদ্ধ করার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করার চেষ্টা করেন। তবে পানি ওঠানোর পাম্প কাজ করছিল না।
গাড়িটি রাখা হয়েছিল উপজেলা সদর বাজারের সামনের রাস্তায়। সেখানে আবদুস সালামের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ‘পাম্পে পানি আসছে না। স্থানীয় মেকানিক দিয়ে মেরামতের চেষ্টা করছি। ঠিক হলে পানি দেওয়া সম্ভব হবে।’
পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধারে ৪৫টি জলযান কেনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
২১ জুন ২০২২, প্রথম আলো
বন্যায় পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার কাজে ব্যবহারের জন্য ৪৫টি জলযান কেনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
সিলেট, সুনামগঞ্জের মতো দেশের বন্যাকবলিত অন্য জেলায় বন্যার্তদের সহযোগিতায় সেনাবাহিনী নামানো হবে বলেও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামে পাহাড়ের নিচে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন, তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকের সিদ্ধান্তের এসব তথ্য প্রথম আলোকে জানান ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি বলেন, বন্যায় মানুষদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী ১৫টি জেমিনি বোট (বড় নৌকা অল্প পানিতে চলে) এবং ৩০টি উদ্ধার জলযান কেনার নির্দেশ দিয়েছেন।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যায় পানিবন্দী হয়ে থাকা মানুষদের উদ্ধার করতে না পারার বড় কারণ ছিল জলযান সংকট। বন্যার কারণে অনেক নৌকার মালিক ভাড়া কয়েকগুণ বাড়িয়েছেন। ভাড়া বেশির কারণে বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধার করা যায়নি। সামাজিক সংগঠন ও আত্মীয়-স্বজনেররা নৌকা নিয়ে যেতে পারেনি।
ত্রাণের জন্য বন্যার্তদের আকুতি
২১ জুন ২০২২, প্রথম আলো
সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার পাঁচ দিন কেটে গেছে। ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। অনেক রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমে গেছে। গত কয়েক দিন যেখানে নৌকার অভাবে কেউ যেতে পারেননি, এখন সড়ক যোগাযোগের কিছুটা উন্নতি হওয়ায় সেখানে যাওয়া যাচ্ছে। এরপরও কিছু কিছু জায়গায় বানভাসি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন।
তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান সর্বত্র ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ ভয়াবহ বন্যা দেখা দেওয়ায় শুরুর দু-একটা দিন জলযানের সংকটে ত্রাণ পৌঁছাতে সমস্যা হয়েছিল। এখন সে সমস্যা কেটে গেছে। ত্রাণের কোনো সংকট নেই। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনও বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন।.. ..
আশ্রয়কেন্দ্রের চিত্র
গতকাল দুপুরে সিলেটের বিশ্বনাথের লামাকাজী ইউনিয়নের দিঘলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ২৭ জনের সঙ্গে কথা হয়। প্রত্যেকেই অভিযোগ করেন, গত বুধবার বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে দুই-তিন দিনের ব্যবধানে ৮০টি পরিবার এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের লোকসংখ্যা প্রায় ৪০০। বন্যা শুরু হওয়ার পরদিন গত বৃহস্পতিবার প্রতিটি পরিবার ১০ কেজি করে চাল পেয়েছিল। গত রোববার রাতে প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ছিল এক বাটি আখনি। এ ছাড়া আর কিছুই তারা পায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দিঘলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনের নিচতলা পানিতে থই থই। দোতলা ও তিনতলায় আশ্রয়কেন্দ্র। এই দোতলা আর পাশে থাকা আরেকটি একতলা ভবনের মোট ১০টি কক্ষে আশ্রয় গ্রহণকারীরা গাদাগাদি করে থাকছেন। বারান্দায়ও আছে বেশ কয়েকটি পরিবার। বেঞ্চ-টেবিল একত্র করে কিংবা মেঝেতে কেবল বিছানা–চাদর ও পুরোনো পত্রিকা বিছিয়ে তারা থাকছে। তবে অতিরিক্ত মানুষ গাদাগাদি করে থাকায় অনেকে পালা করে ঘুমাচ্ছেন।
তবে ঘুমের চেয়ে খাবারের সমস্যা বেশি ভোগাচ্ছে জানিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা খোজারপাড়া গ্রামের সায়েক মিয়া (৪৩) বললেন, ‘ঘরের মালসামানা (জিনিসপত্র) ফালাইয়া জান লইয়া কুনুমতে আইছি। আমার পরিবারে চাইরজন মানুষ। ১০ কেজি চাউল ছাড়া আর কুনতাই পাইছি না। চাইয়া-মাইগা ঋণ কইরা চলরাম। ক্ষুধায় পেরেশান আমরা।’
এদিকে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন গ্রামে ত্রাণের জন্য মানুষকে আকুতি জানাতে দেখা গেছে। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিঙ্গুরা গ্রামের পারভীন আক্তার বলেন, প্রয়োজন সত্ত্বেও তাঁর পরিবার কোনো ত্রাণ পায়নি। সিলেটের বিশ্বনাথের দিঘলী দত্তপুর গ্রামের জীবন মিয়া (২০) জানান, ঘরে পানি উঠে পড়ায় টানা তিন দিন তাঁরা সিঁড়িতেই কাটিয়েছেন। প্রয়োজন সত্ত্বেও পাননি কোনো ত্রাণ।
হেলিকপ্টার থেকে ফেলা ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত বিপ্লব মারা গেছেন
২১ জুন, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হেলিকপ্টার থেকে ফেলা ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ তরফদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় সিলেটের জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মৃত বিপ্লব মিয়া উপজেলার উজান তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
গতকাল বিকালে বন্যা কবলিত তাহিরপুরে হেলিকপ্টার থেকে বিমানবাহিনীর ত্রাণ বিতরণের সময় শিশুসহ ১০ জন আহত হন। উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠে এ ঘটনাটি ঘটে।
তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, ‘হেলিকপ্টার থেকে দেওয়া ত্রাণ সামগ্রী সবাই একসঙ্গে ধরতে গেলে ১০-১২ জন আহত হন।’
বন্যার ক্ষতির হিসাবে শুরুতেই গরমিল
২২ জুন ২২, সমকাল
সিলেট ও উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বন্যাদুর্গত মানুষ পার করছেন কঠিন সময়। সিলেট অঞ্চলে নামতে শুরু করলেও উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বাড়ছে পানি। প্রতিদিন বাড়ছে প্লাবিত এলাকার পরিধি। এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার থেকে গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক দুর্যোগ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাদের ওই প্রতিবেদনে সারাদেশে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে গরমিল।
সরকারিভাবে এখন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয়নি এখনও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির হিসাবের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। সরকারি হিসাবে গরমিল থাকলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। সংশ্নিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে নির্ভুল চূড়ান্ত হিসাব তৈরি করা দরকার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও সম্পদের বিবরণও থাকতে পারে।
প্রতিবেদনে বন্যায় আক্রান্ত জেলা বলা হয়েছে ১৩টি। এসব জেলার ক্ষতিগ্রস্ত স্থান, পরিবার ও লোকসংখ্যার তথ্যও দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তের তালিকায় নাম নেই এমন জেলায়ও দেওয়া হয়েছে বরাদ্দ। আবার তালিকায় থাকা জেলাও পায়নি ত্রাণ। এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সরকারি হিসাবের রয়েছে ফারাক। জেলা প্রশাসনের হিসাবের সঙ্গেও দেখা গেছে তথ্যের অমিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩১ লাখ ৪৭ হাজার ৬১২ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের নাম রয়েছে। এ ছাড়া শেরপুর, মৌলভীবাজার, জামালপুর, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও ফেনীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পরিবার ও লোকসংখ্যা ছাড়া সম্পদের ক্ষতি ও মৃত্যুর সংখ্যা দেওয়া হয়নি প্রতিবেদনে। ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও রংপুরের নাম নেই। অথচ এ তিন জেলায় সাত হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় নাম থাকলেও বরাদ্দ পায়নি সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, লালমনিরহাট, ফেনী ও বগুড়া জেলা।
১৩ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩১ লাখ ৪৭ হাজার ৬১২ বলা হলেও শুধু সিলেট অঞ্চলেই ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছিল।
৬ দিনেও যেখানে খাদ্য সহায়তা পৌঁছায়নি
২১ জুন, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
বন্যা শুরুর পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সিলেটের ছাতকের উত্তর খুরমা এলাকার একলিমনগর গ্রাম। ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও সেখানে কোনো সহায়তা পৌঁছেনি।
গতকাল সোমবার রাতে পানি পেরিয়ে কিছু দূরে মোবাইলে চার্জ দিতে গিয়ে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা স্রোতে ভেসে গেছেন বলে জানালেন গ্রামের আরেক বাসিন্দা শামীম আহম্মেদ।
শামীম বন্যার শুরুতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন গোবিন্দগঞ্জের শহীদপুর এলাকায় আত্মীয়র বাসায়।
আজ দুপুর আড়াইটার দিকে শহীদপুরে স্থাপিত সেনাবাহিনীর সমন্বয় কেন্দ্রে রিপোর্ট করেন তিনি। এরপর সেনাবাহিনীর একটি দল তাকে নিয়ে স্পিডবোটে কিছু ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে রওনা দেয় ওই গ্রামের দিকে।
জনপ্রতি সরকারি বরাদ্দ ৬ টাকা ৫৫ পয়সা, চাল আধা কেজিরও কম
২২ জুন, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার কাউহানি গ্রাম থেকে কল করেন কায়েস আহমেদ। বন্যায় বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে গতকালই এখানকার মোবাইল নেটওয়ার্ক পুরোপুরি সচল হয়েছে। সৌরবিদ্যুতে মোবাইল ফোনেও চার্জ দিতে পেরেছেন কায়েস।
কায়েস জানান, গত এপ্রিলের বন্যায় তার গ্রামের মানুষ অল্প কিছু আধপাকা ধান ঘরে তুলতে পেরেছিলেন। এবার নষ্ট হয়েছে পুরোটাই। গ্রামের ২০০ পরিবার গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ও অপেক্ষাকৃত উঁচু বাড়িগুলোতে একসঙ্গে তীব্র কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু ৭ দিনেও এই গ্রামে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।
কাউহানি গ্রামটির অবস্থান সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার মধ্যবর্তী জায়গায়। কায়েস বলেন, ‘নেটওয়ার্ক পাওয়ার পর ফেসবুকে দেখলাম অনেকে মধ্যনগর বা তাহিরপুরে ত্রাণ দিচ্ছেন। সবাই এসে উপজেলা সদরের আশেপাশের গ্রামগুলোতেই ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ ভাটিতে যে শত শত মানুষ খেয়ে না খেয়ে আছে তার খবর কেউ রাখছে না।’
গতকাল সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের যাত্রাপথেও একই রকম পরিস্থিতি দেখেছেন দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদক। বন্যায় আটকে পড়া সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার উত্তর খুরমা ইউনিয়নের একলিমনগর গ্রামের বাসিন্দারাও সোমবার পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি। এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার সেনা সদস্যরা সেখানে ত্রাণ নিয়ে যান।
একইরকম অবস্থা সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত প্রায় প্রতিটি এলাকায়।
এসব জায়গায় ত্রাণের জন্য হাহাকার এই পর্যায়ে পৌছেছে যে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় সরাসরি ত্রাণ দিতে না পের বিমানবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে ‘এয়ারড্রপ’ পদ্ধতিতে ত্রাণ বিতরণ করে। সোমবার সেই ত্রাণ নিতে গিয়ে গুরুতর আহত হন অন্তত ১০ জন। এরমধ্যে বিপ্লব মিয়া নামে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত ৪ জেলার জেলা প্রশাসনের ভাষ্য, তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণের মজুত আছে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে দূরবর্তী গ্রামগুলোতে ত্রাণ নিয়ে যেতে এখনো সমস্যা হচ্ছে।
তবে বন্যার্তদের জন্য সরকারি বরাদ্দের যে হিসাব প্রশাসন দিয়েছে তাতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণের পরিমাণ খুবই নগণ্য।
সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, সিলেট জেলার ১৩ উপজেলার সবগুলো, সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার সবগুলো, মৌলভীবাজারের ৭টি ও হবিগঞ্জের ৬টি উপজেলা এখন বন্যাকবলিত।
এসব এলাকার আনুমানিক ৪৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের ভেতর ৪ লাখ ৪ হাজার মানুষ ১ হাজার ৪৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া লক্ষাধিক মানুষ নিজের ঘর ছেড়ে অন্যের ঘরে, সড়কের ওপরে ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন।
সরকারি হিসাবে সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য এখন পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, ১ হাজার ৯৫২ টন চাল ও প্রায় ৩০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার।
এই তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বন্যাকবলিত ৪৪ লাখ মানুষের বিপরীতে জনপ্রতি বরাদ্দ দঁড়ায় ৬ টাকা ৫৫ পয়সা ও ৪৪০ গ্রাম চাল।
আর যদি এ বরাদ্দ কেবল সরকার নিয়ন্ত্রিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা মানুষের সহযোগিতায় দেওয়া হয়, তাহলে প্রত্যেককে ৪ কেজি ৮৮০ গ্রাম চাল ও ৭৩ টাকা ৭৫ পয়সা করে দেওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের ভাষ্য, ‘ত্রাণ পর্যাপ্ত আছে। প্রয়োজনে আরও আসবে। ত্রাণের কোন ঘাটতি নেই। কেবল সরকারি ত্রাণ নয়, বেসরকারি পর্যায় থেকেও বিপুল পরিমাণে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি বন্যাকবলিত প্রতিটি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌছে দিতে।’
মোশাররফ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বন্যাকবলিত সিলেট অঞ্চল পরিদর্শন করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা আক্রান্ত প্রতিটি উপজেলার জন্য ৫ লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ২০ লাখ টাকা তার নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়েছেন।
তবে প্রশাসন যখন ত্রাণ সহায়তার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরতার কথা বলছেন, তখন ত্রাণের জন্য হাহাকার আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
কাগজে-কলমে ত্রাণ বিতরণ, বাস্তবে নেই
২৩ জুন ২০২২, প্রথম আলো
বন্যায় সরকারি হিসাবেই জামালপুরে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। এক সপ্তাহ ধরে পাঁচটি উপজেলার ১৫৫টি গ্রাম বন্যাকবলিত। অথচ এখনো বেশির ভাগ গ্রামে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। বন্যার্তদের অনেকে খেয়ে না–খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
বানভাসিদের অভিযোগ, বেশির ভাগ গ্রামে তারা গত সাত দিনের মধ্যে কোনো জনপ্রতিনিধি বা সরকারি লোকজনকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে দেখেনি। কিন্তু জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, প্রতিদিনই বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
তবে সরেজমিনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইসলামপুর উপজেলায় এমন কোনো চিত্র পাওয়া যায়নি। অবশ্য দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বন্যার্তদের অনেকে ত্রাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সিলেটে ত্রাণে সমন্বয়হীনতা, উত্তরাঞ্চলে নেই নজর
২৩ জুন ২২, সমকাল
সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত চার জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত ৫০ লাখ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এ চার জেলার জন্য এখন পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা, ৩ হাজার ২০ টন চাল ও ৫৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার। ত্রাণের এই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বন্যাকবলিত ৫০ লাখ মানুষের বিপরীতে জনপ্রতি বরাদ্দ দাঁড়ায় ৬ টাকা ৬২ পয়সা ও ৬০৪ গ্রাম চাল।
তবে সরকারি এ বরাদ্দের বাইরেও অনেক ব্যক্তি ও সংগঠন সিলেট অঞ্চলের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই ত্রাণ বিতরণে নেই সমন্বয়। অঞ্চলভিত্তিক বানভাসি মানুষের তালিকা হয়নি এখনও। যে যাঁর মতো ত্রাণ বিলিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ত্রাণ পাচ্ছেন একাধিকবার, আবার কারও হাতে একবারের জন্যও ওঠেনি খাদ্য সহায়তার প্যাকেট।
স্থানীয়রা বলছেন, বানভাসি মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে সেগুলো সংগ্রহ করে বিতরণের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাটাই এখন জরুরি। সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এখনও পানির নিচে শত শত ঘরবাড়ি। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন দুর্গত মানুষ। প্রত্যন্ত গ্রামে যাঁরা অবস্থান করছেন, তাঁদের অনেকের কাছে এখনও পৌঁছেনি ত্রাণ। শহর ও বাজারের কাছাকাছি এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ গেলেও দূর-দূরান্তের লোকজন রয়েছে বেশি কষ্টে। অনেক এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় ত্রাণবাহী যান এসব এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না। ব্যক্তিগত, স্বেচ্ছাসেবী অধিকাংশ সংগঠন সড়কের কাছাকাছি এলাকায় দুর্গত লোকজনকে ত্রাণ বিতরণ করে চলে যাচ্ছেন।.. ..
বৈষম্যের শিকার উত্তরের জনপদ :দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার থেকে গতকাল বুধবার দৈনিক দুর্যোগ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও রংপুর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছয় জেলায় গতকাল পর্যন্ত ৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪৮ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা কুড়িগ্রাম। এখানে ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৮ মানুষ। এসব জেলায় ত্রাণ বিতরণে বৈষম্যের চিত্র উঠে এসেছে খোদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে।
কুড়িগ্রামে এ পর্যন্ত ৩৩৮ টন চাল, ১৬ লাখ ৫ হাজার টাকা এবং ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে মন্ত্রণালয়। লালমনিরহাটে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬২০ জন ক্ষতিগ্রস্তের জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ৪৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ২৮৩ টন চাল।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের যে সংখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক নয়। শুধু কুড়িগ্রামেই ৫১২টি চর আছে। সব চর এখন পানির নিচে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ পাঁচ লাখের বেশি।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ গতকাল দুপুরে ফোনে আক্ষেপ করে বলেন, উত্তরের জনপদ পানিতে ভাসছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এখানকার মানুষের জীবন-সংগ্রামও ভিন্ন। আশপাশে সবাই দরিদ্র। পুরো জনপদের পথে পথে এখন ক্ষুধার জ্বালা। অথচ সরকারের ত্রাণ সহায়তায় এসব এলাকা চরম বৈষম্যের শিকার। এখন পর্যন্ত এখানে কাউকে এক প্যাকেট ত্রাণ দিতে দেখিনি। সবাই সিলেটের দিকে ত্রাণ নিয়ে ছুটছে।
তুহিন ওয়াদুদ আরও বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় দেশের জেলাগুলোকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে ত্রাণ বিতরণ করছে। কীসের ভিত্তিতে এই শ্রেণিবিন্যাস করেছে, তা বোধগম্য নয়। জেলাভিত্তিক গরিব মানুষের সংখ্যা হিসাব না করেই শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। শুধু এ বন্যা নয়, অতীতের সব দুর্যোগেই কুড়িগ্রামের জন্য বরাদ্দ কম থাকে। গত ৯ মাসে তিনবার বন্যার শিকার হয়ে সেখানকার মানুষ এখন নিঃস্ব। তাঁদের আর ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খোলা নেই। দুর্গত মানুষের জন্য সরকারকে স্থায়ী সমাধানের দিকে যেতে হবে।
দেশে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৮
২৩ জুন, ২০২২, ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা
দেশে বন্যায় আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট বিভাগে ২৫ জন এবং রংপুর বিভাগে একজন মারা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বন্যা বিষয়ক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ১৭ মে থেকে ২২ জুন পর্যন্ত মোট ৪২ জনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এ নিয়ে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বন্যার কারণে সারাদেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৪৮ জন। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৯৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৭ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়।
মৃতদের মধ্যে সিলেট জেলায় ১৬ জন, সুনামগঞ্জে ২৬ জন, হবিগঞ্জে একজন, মৌলভীবাজারে ৩ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন, নেত্রকোনায় ৫ জন, জামালপুরে ৫ জন, শেরপুরে ৩ জন, কুড়িগ্রামে ৩ জন এবং লালমনিরহাটে একজন রয়েছে।
তিন দশকে হাওর ভরাট হয়েছে সাড়ে ৮৬ শতাংশ, বাড়ছে বন্যার ভয়াবহতা
২৪ জুন ২০২২, প্রথম আলো
দেশের হাওর অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৮৬ শতাংশই গত ৩২ বছরে ভরাট হয়ে গেছে। এতে হাওরে বৃষ্টির পানিধারণের ক্ষমতা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ফলে এবার সিলেটসহ আশপাশে বন্যার ভয়াবহতা দেখা গেছে।
বৃষ্টি হলে হাওর এলাকা অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে। এ ছাড়া হাওরের সঙ্গে নদ-নদীর সংযোগ থাকার কারণে প্রাকৃতিকভাবে হাওরের পানি নদীতে চলে যায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের দুই শিক্ষার্থী ও ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) করা এক যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বুয়েটের দুই গবেষক হলেন সদ্য পাস করা ইনজামামুল হক ও মারিয়া মেহরিন।
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আইপিডি। এতে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি হাওর ভরাট হয়েছে ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল নাগাদ। হাওরের বাকি অংশটুকু রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশের হাওর এলাকার ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন–সংক্রান্ত এ গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে হাওরের মোট আয়তন ছিল প্রায় ৩ হাজার ৩৪ বর্গকিলোমিটার। ২০২০ সালে তা কমে হয়েছে প্রায় ৪০৬ বর্গকিলোমিটার। সে হিসাবে হাওর কমেছে প্রায় ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৮২, শুরু হয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ
২৫ জুন ২০২২, প্রথম আলো
বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে বন্যাজনিত মৃত্যু বাড়ছে। সর্বশেষ এক দিনে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে তিন বিভাগে বন্যার কারণে এ পর্যন্ত ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, ১৭ মে থেকে আজ ২৫ জুন পর্যন্ত সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর জেলায় ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে সিলেট বিভাগে। এই বিভাগে মারা গেছে ৫১ জন। ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছে ২৭ জন। রংপুর বিভাগে ৪ জন।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু সুনামগঞ্জ জেলায়। এই জেলায় মারা গেছে ২৬ জন। এরপর বেশি মারা গেছে সিলেট জেলায়। সিলেট জেলায় মারা গেছে ১৮ জন। এসব জেলায় বেশি মৃত্যু হচ্ছে পানিতে ডুবে ও বজ্রপাতে।
এই বিভাগগুলোতে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ডায়রিয়াজনিত কোনো মৃত্যু না হলেও আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ।
বন্যায় আরও বিপাকে তাঁরা
২৭ জুন ২০২২, প্রথম আলো
কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর উপজেলায় বন্যার পানি এসেছে দুই সপ্তাহ হতে চলল। তবে অবস্থা খারাপ হয় সপ্তাহখানেক আগে। ঘরে কোমরসমান পানি ওঠায় বাড়ি ছাড়তে হয় মনোয়ারা বেগমকে। আশ্রয় নেন এক প্রতিবেশীর উঁচু বাড়িতে। মনোয়ারা বললেন, ‘যহন দার (তীব্র স্রোত) ছুইটা আহে, তহন পাশে অন্য মাইনষের বাইত্তে (বাড়িতে) চইলা যাই। হেয়ানেই থাহি।’
মনোয়ারার বাড়ি কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুরে। গ্রামটি ব্রহ্মপুত্র নদের চরে। গত শনিবার বিকেলে বাড়িতে ফেরেন মনোয়ারা। তখন বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে ঠিকই, তবে ঘর-উঠানে থকথকে কাদা।
২০ বছর আগে স্বামী কাজের সন্ধানে গিয়ে আর ফেরেননি। মেয়ে আমিনা, পঙ্গু মেয়েজামাই আলাউদ্দিন ও নাতি আতিককে নিয়ে মনোয়ারার সংসার। এর-ওর বাড়িতে কাজ করেন। মাটি কাটার কাজও করেন। তবে বন্যার কারণে কোনো কাজ নেই। মনোয়ারা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘কাজকাম নাই। ক্যামনে দিন যাব?’
এ পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ পাননি অভিযোগ করে মনোয়ারা জানান, শুক্রবার একটি এনজিও থেকে ২ কেজি চিড়া, ১ কেজি মুড়ি ও ৫০০ গ্রাম চিনি দিয়েছে। প্রতিবেশীর কাছ থেকে ৫ কেজি চাল ধার নিয়েছেন।
মনোয়ারার মতো চর রাজীবপুরের সদর, কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের অন্তত ৩২ হাজার বাসিন্দা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারও ঘর ভেঙে গেছে, কারও ফসল নষ্ট হয়েছে। কাজ বন্ধ থাকায় হাতে টাকা নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, চর রাজীবপুরে দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস। দারিদ্র্যের হার ৭৯ দশমিক ৮। উপজেলাটির জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। অন্তত ৩০টি চর আছে এ উপজেলায়। এসব চরের বাসিন্দাদের বেশির ভাগ হতদরিদ্র।
রাজীবপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, রাজীবপুরে প্রতিবছর বন্যার সময় কয়েক হাজার পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে উদ্বাস্তু হয়। এমনও দেখা যায়, কারও ২০০-৩০০ বিঘা জমি ছিল, এখন বসবাসের জায়গাটুকুও নেই।
উপজেলার ৩২ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে উল্লেখ করে চর রাজীবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) আজিজুর রহমান বলেন, গতকাল পর্যন্ত ত্রাণসামগ্রী পেয়েছে ৫৩০টি পরিবার।
একটি পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৫ জন করে ধরলে বন্যাকবলিত পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪০০। এ হিসাবে ৮ শতাংশ পরিবার ত্রাণ পেয়েছে। ত্রাণ অপ্রতুল থাকার কথা স্বীকার করেন ইউএনও অমিত চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসককে চাহিদাপত্র দিয়েছেন।
বিভিন্ন চর ঘুরে অপর্যাপ্ত ত্রাণ নিয়ে বানভাসি মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেল। দুর্নীতির অভিযোগও করেন কেউ কেউ। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক আমিনুর রহমান বলেন, যেখানকার প্রায় সব মানুষ গরিব, সেখানে ত্রাণ নিয়ে বৈষম্য কেন?
সিলেটে ভয়াবহ বন্যার বড় কারণ হাওর দখল
২৮ জুন ২২, সমকাল
প্লাবন ভূমি, নদী অববাহিকা ও হাওর অঞ্চল দখল হওয়ায় বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে বলে এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। রাতের আলোর উজ্জ্বলতা বিশ্নেষণ করে অভিনব এ গবেষণাটি করেছেন দেশ-বিদেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
গত দুই দশকে নাসার স্যাটেলাইটে ধারণ করা বাংলাদেশ অংশের রাতের ছবি বিশ্নেষণ করে গবেষকরা বলছেন, নদনদীর দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৯২ শতাংশ বনভূমি, ৬ শতাংশ তৃণভূমি ও ২৮ শতাংশ অনুর্বর ভূমি কমেছে। এ ছাড়া নদনদীর অববাহিকা, প্লাবন ভূমি ও হাওর অঞ্চলের ১২ শতাংশ এলাকায় নগরায়ণ ও কলকারখানা গড়ে উঠেছে। দেশে নদী অববাহিকায় ১৫ লাখ মানুষ বেড়েছে। বন্যার বেশি ঝুঁকিতেও রয়েছে তারা।
দেশের সাতটি শহরের রাতের আলোর উজ্জ্বলতা বিশ্নেষণ করা হয়। শহরগুলো হলো- ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, যশোর ও খুলনা। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর রাতের উজ্জ্বলতা সবচেয়ে বেড়েছে সিলেটে। গত দুই দশকে প্রায় ৬৫ শতাংশ আলোর উজ্জ্বলতা বেড়েছে।
বরাদ্দ জনপ্রতি ১৮ টাকা, দেড় কেজি চাল
৫ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
জুনের মাঝামাঝি শুরু হওয়া বন্যায় নেত্রকোনা জেলায় সাড়ে ৫ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ অপ্রতুল। জনপ্রতি সাড়ে ১৮ টাকা আর দেড় কেজির কিছুটা কম চাল বিতরণ করা হয়েছে। সেই ত্রাণও ক্ষতিগ্রস্ত সবাই পাননি৷ সরকারি ত্রাণের পরিমাণ ও বিতরণ নিয়ে বানভাসি মানুষ ক্ষুব্ধ।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ জুন রাত থেকে জেলায় আকস্মিক বন্যা শুরু হয়। বন্যায় ১০টি উপজেলায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
গত কয়েক দিনে নেত্রকোনার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো তলিয়ে আছে বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। এ কারণে অনেক পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারেনি। মদন, খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, আটপাড়া ও কলমাকান্দা উপজেলার নিচু এলাকায় বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে বন্যার পানি আছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার শুরু থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৭৯৮ মেট্রিক টন চাল, ১ কোটি ৩ লাখ টাকা এবং ৭ হাজার ১৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। নগদ অর্থসহায়তা ৫৩ লাখ টাকা। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া ৫০ লাখ টাকা রয়েছে৷
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নেত্রকোনা জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকে সাড়ে ১৮ টাকা এবং ১ কেজি ৪৩৬ গ্রাম চাল পেয়েছেন৷ বানভাসি মানুষেরা বলছেন, বন্যা পরিস্থিতির ২০ দিনে সরকারের এই বরাদ্দ একেবারেই অপর্যাপ্ত। পাঁচ-ছয়জনের একটি পরিবারের জন্য দুই-তিন দিনের খাবারও দেওয়া হয়নি। আর চাল ছাড়া অন্য কোনো খাদ্যসামগ্রী না দেওয়ায় তাঁরা কষ্টে আছেন৷
কলমাকান্দা উপজেলার বাহাদুরকান্দা গ্রামের বাসিন্দা জুলেখা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরে কোমরপানি উঠছিল। আয়রোজগার নাই৷ এখন পর্যন্ত কেউ কোনো সাহায্য দেয় নাই৷ একবার খোঁজও নেয় নাই৷ চেয়ে-চিন্তে চলতেছি।’
বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ
গ্যাসের ৮২% মজুদ নিয়েও বিনিয়োগের অভাবে দেশী কোম্পানির জোগান বাড়ছে না
০৭ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় গ্যাসের মজুদ রয়েছে সাড়ে ৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে পাঁচটি কোম্পানি। এর মধ্যে স্থানীয় কোম্পানি তিনটি। দুটি কোম্পানি বিদেশী। দেশের মোট মজুদকৃত গ্যাসের ৮২ শতাংশেরও বেশি রয়েছে স্থানীয় কোম্পানি তিনটির আওতাধীন গ্যাসক্ষেত্রগুলোয়। যদিও জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের দৈনিক স্থানীয় সরবরাহের মাত্র ৩৭ শতাংশ দিতে পারছে কোম্পানি তিনটি।
দেশে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত তিনটি কোম্পানিই পেট্রোবাংলার অধীন। এগুলো হলো বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। এর মধ্যে বাপেক্স গ্যাস উত্তোলনের পাশাপাশি অনুসন্ধানের কাজও চালিয়ে থাকে। কোম্পানি তিনটির অধীন গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা ১৬টি। গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় গ্যাসের মোট মজুদ রয়েছে ৭ টিসিএফের মতো, যা মোট মজুদের ৮২ শতাংশেরও বেশি।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, গত মাসের শেষে দেশে দৈনিক গ্যাস উত্তোলন ছিল ২ হাজার ৩০৭ দশমিক ১ মিলিয়ন ঘনফুট (এমসিএফ)। এর মধ্যে পেট্রোবাংলার অধীন দেশী কোম্পানিগুলো উত্তোলন করেছে ৮৫৪ দশমিক ৭ এমসিএফ, যা দৈনিক মোট স্থানীয় গ্যাস সরবরাহের মাত্র ৩৭ শতাংশ।
গ্যাস মজুদের সিংহভাগের দখল থাকলেও সরবরাহের ক্ষেত্রে পিছিয়ে দেশী কোম্পানিগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশী কোম্পানিগুলোর আওতাধীন গ্যাসক্ষেত্রে স্থাপিত কূপগুলো অনেকদিনের পুরনো। এগুলোর সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। কূপগুলোর সংস্কারের পাশাপাশি উত্তোলন ও সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগও পাচ্ছে না কোম্পানিগুলো। এতে বিদেশী কোম্পানিগুলোর সরবরাহে তেমন একটা তারতম্য না এলেও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা ও সরবরাহ দুটোই কমেছে।
আদানির বিদ্যুতে কতটুকু লাভ
০৭ মে ২২, সমকাল
ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক, না অধিক ব্যয়ের ফাঁদে জড়িয়ে পড়বে- তা নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলে বিতর্ক চলছে। ঝাড়খন্ডে গ্রুপের প্রায় সম্পন্ন ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হতে পারে। ২৫ বছরের মেয়াদে এই বিদ্যুৎ কিনতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জই ৯৬ হাজার কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জ হচ্ছে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সময়ে গ্রিডে পর্যাপ্ত শক্তি নিশ্চিত রাখার জন্য দেয় মাশুল।
অসম চুক্তি, অযাচিত ব্যয়, বেশি দাম এবং সমঝোতায় অদক্ষতার কারণে এই বিদ্যুৎ কেনা বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন খাত সংশ্নিষ্টরা। তারা বলছেন, লোকসানের ভারে জর্জরিত বিদ্যুৎ খাতকে আরও ধরাশায়ী করে দেবে আদানির ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ। আদানির বিদ্যুতের দাম দেশীয় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বা ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের চেয়ে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
মজুদ গ্যাসে আর আট বছর চলবে
১৫ মে, ২০২২, কালেরকন্ঠ
দেশের ২৮টি গ্যাসক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ আছে মাত্র ১০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। দেশে গ্যাসের বার্ষিক চাহিদা প্রায় এক টিসিএফ। যেকোনো কূপ থেকে মজুদকৃত গ্যাসের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ উত্তোলন করা যায়। এ হিসাবে দেশে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস আছে প্রায় আট টিসিএফ।
এই মজুদ দিয়ে মাত্র আট বছর চলা যাবে।
ভূতাত্ত্বিক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক বছরের মধ্যে দেশে যদি বড় কোনো গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া না যায়, তাহলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র, সার কারখানা, তৈরি পোশাক শিল্পসহ গ্যাসভিত্তিক শিল্প খাতের উৎপাদনশীলতা ও প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন সরকারকে বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজি দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে হবে।
দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা যে হারে বাড়ছে, গত দুই দশকে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সেভাবে হয়নি।
বিদ্যুৎ খাত অস্বচ্ছ, অদক্ষ
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই
২২ মে, ২০২২, প্রথম আলো
জ্বালানি খাতে ‘অব্যবস্থাপনা’র দায়ভার অর্থনীতি ও মানুষের ওপর চাপানো ঠিক হবে না বলে মনে করে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। সংগঠনটি বলেছে, করোনা এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। এফবিসিসিআই চায় সরকার ভর্তুকি দিয়ে ও দক্ষতা বাড়িয়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বর্তমান অবস্থায় রাখুক।
গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল শনিবার এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতের সর্বত্র অদক্ষতা, যথেচ্ছ অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে আমূল সংস্কার দরকার।
রাজধানীর মতিঝিলে নিজেদের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এফবিসিসিআই। এতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বস্ত্র কারখানার মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ, আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন খাতের সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। কমিশন গঠিত কারিগরি কমিটি বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এর আগে গত মার্চে গ্যাসের দাম ভোক্তা পর্যায়ে গড়ে ২০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।
গণশুনানিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর তীব্র বিরোধিতা করে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো। এবার এফবিসিসিআই অন্য সংগঠনের নেতাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরল।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি এই সরকারের আমলে অর্থনৈতিক সাফল্য, বর্তমান প্রেক্ষাপট, জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি তুলে ধরেন। পাশাপাশি কয়েকটি সুপারিশ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। খাদ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এমন একসময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এখন গ্যাস–বিদ্যুতের দাম বাড়ালে জনজীবনে অসন্তোষ দেখা দেবে।
সকালে এফবিসিসিআইয়ের এই সংবাদ সম্মেলনের পর সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। তারা যদি বাড়াতে চায়, দাম তাহলে বাড়বে। আর যদি না চায়, তাহলে বাড়বে না। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। আমাদের মূল্য সমন্বয়ের দিকে যেতেই হবে। সরকার কত দিন ভর্তুকি দিয়ে চালাবে। এভাবে ভর্তুকি দিয়ে চলতে পারে না। সরকার ভর্তুকি দেবে, আবার জনগণকেই ভর্তুকির চাপ বহন করতে হবে।’
‘ভুল পরিকল্পনা’
সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি কমানোর ক্ষেত্রে নানা যুক্তি তুলে ধরা হলেও ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনা ও ভুল পরিকল্পনার কথা বলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতির লিখিত বক্তব্যে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বলা হয়, অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রায় হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকার পরও জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি চালানো হচ্ছে। একে ভুল পরিকল্পনা বলে অভিহিত
করে বলা হয়, ভুল পরিকল্পনার জন্য ক্ষতি শিল্প খাত বহন করতে পারে না।
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে দাম বেড়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। শুধু বেশি চাহিদার সময় (পিক আওয়ার) ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলতে পারে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, ভাড়াভিত্তিক বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর একসময় প্রয়োজন ছিল। এখন আর তা দরকার নেই। এগুলো বন্ধ করা উচিত। অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও রাখার দরকার নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি বিদ্যুৎ খাতের চারটি পদ্ধতিগত সমস্যা তুলে ধরেন। ১. চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা অনেক বেশি। ২. অনেক তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কম দক্ষতার। ৩. কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে দেরি এবং ৪. তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহব্যবস্থার ভুল পরিকল্পনা।
সরকারের সংস্থা পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্যসহ)। বিপরীতে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট (গত ১৬ এপ্রিল)। চুক্তি এমন যে বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে উৎপাদন না করলেও ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) দিতে হয়। গত এক দশকে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়ায়।
এ ছাড়া বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত মার্চে এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলেছে, সরকারি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র আনতে না পারায় বেসরকারি খাতের স্বল্প মেয়াদের ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মেয়াদ শেষেও চালু রাখতে হয়েছে। ৯২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এমন ১২টি স্বল্পমেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনো চালু আছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ানোয় পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে। খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের অবমূল্যায়ন হয়েছে। এ অবস্থায় শিল্পপণ্যের দাম বাড়াতে না পারলে কারখানা বন্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর আবশ্যকতা নেই। তবে বিভিন্ন গ্রাহক খাতে গ্যাসের দাম যৌক্তিকীকরণ জরুরি।
জসিম উদ্দিন ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাওয়া ও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা তুলে ধরে এখন বিদ্যুৎ–গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি করেন। তিনি করোনা ও ইউক্রেন সংকট প্রশমিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন।
চাহিদার দ্বিগুণ সক্ষমতা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ আমদানি আরো বাড়ছে
৩১ মে, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সক্ষমতার বিপরীতে বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে অর্ধেক। চাহিদা না থাকায় বসিয়ে রাখতে হচ্ছে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এগুলোর জন্য বিপুল অংকের অর্থ গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি)। এমন পরিস্থিতিতেও ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাড়ানো হচ্ছে।
চাহিদা না থাকার পরও নতুন নতুন উৎস থেকে বিদ্যুৎ আমদানি খাতটিকে ভারসাম্যহীন করে তুলবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা না গেলে বিদ্যুৎ খাতে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হবে। ভর্তুকি বাড়িয়েও এ অবস্থা সামাল দেয়া যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে পিডিবি আর্থিক চাপ সামাল দেয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।
দেশে বর্তমানে ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে। সম্প্রতি আসামে নদী সম্মেলন চলাকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, দেশটি থেকে আমদানির পাইপলাইনে রয়েছে আরো অন্তত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সমঝোতা স্মারকের বিষয়টি নিয়েও জোর আলোচনা চলছে। আগামী নভেম্বর নাগাদ নেপালের সঙ্গে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে।
হেলায় তৈরি গ্যাস সংকট সামলাতে বাড়ছে দাম
০৫ জুন ২২, সমকাল
কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রসেস প্লান্টও রয়েছে। শুধু কয়েক কিলোমিটার পাইপলাইন বসালেই দৈনিক প্রায় ১০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস পাওয়া যাবে। কিন্তু রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রের ৯ নম্বর কূপের এই পাইপলাইনটুকু স্থাপনের কাজ পাঁচ বছর ধরে ঝুলে আছে।
রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রটি সিলেট গ্যাসফিল্ড কোম্পানির। একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্র। সেখানে পানি আসায় ২ ও ৩ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায় যথাক্রমে ২০২০ ও ২০২১ সালে। বন্ধ হওয়ার আগে কূপ দুটি থেকে দৈনিক প্রায় ৩০ এমএমসিএফ গ্যাস মিলত। এমনভাবে বন্ধ কূপ সংস্কার করলে (ওয়ার্কওভার) আবার গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো সময়ক্ষেপণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকশ গজ ব্যবধানে অবস্থিত কূপ দুটির জন্য দুটি পৃথক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দু’জন প্রকল্প পরিচালক। এতে সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হবে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্নিষ্টরা। ওয়ার্কওভার হলে এ দুই কূপ থেকে দৈনিক ৩০ এমএমসিএফ থেকে ৫০ এমএমসিএফ গ্যাস মিলতে পারে, যার বাজারমূল্য ৯ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা।
দীর্ঘমেয়াদি অনুসন্ধান কার্যক্রমে স্থবিরতার পাশাপাশি এ ধরনের ছোট পদক্ষেপগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন না করায় দেশের গ্যাস উৎপাদন কমে গেছে। এ ছাড়া চালু কূপগুলোর উৎপাদন ধরে রাখার উদ্যোগও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে বেড়েছে গ্যাসের ঘাটতি। সেই ঘাটতি মেটানো হচ্ছে আমদানি করা এলএনজি দিয়ে। দিতে হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি। আগামী অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি লাগবে এই খাতে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বারবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
গ্যাসের দাম বেড়ে দুই চুলা ১০৮০ টাকা, এক চুলা ৯৯০
০৫ জুন ২২, সমকাল
আবাসিক খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়িয়ে মাসে এক চুলার বিল ৯৯০ টাকা করা হয়েছে। আর দুই চুলা করা হয়েছে এক হাজার ৮০ টাকা। এতদিন দুই চুলার বিল ছিল ৯৭৫ টাকা। আর এক চুলার বিল ৯২৫ টাকা। অর্থাৎ গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে গ্যাসের মাসিক বিল দুই চুলার ক্ষেত্রে এক হাজার ৮০ টাকা ও এক চুলার ক্ষেত্রে ৯৯০ টাকা করার সুপারিশ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি।
গ্যাসের গড় মূল্যহার প্রতি ঘনমিটার ৯ দশমিক ৭০ টাকা থেকে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রতি ঘনমিটার ১১ দশমিক ৯১ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিল জুন মাস থেকেই প্রযোজ্য ও কার্যকর হবে।
‘বিদ্যুৎ আসেনি, তবুও ভারতের আদানি গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে ১২১৯ কোটি টাকা’
০৮ জুন, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
যে কাজের আর্থিক মূল্য নেই, সেটি অপচয়—মার্কিন শিল্পপতি হেনরি ফোর্ডের এই উক্তির সবচেয়ে ভালো উদাহরণ যেন ভারতের আদানি গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চুক্তির বর্তমান অবস্থা।
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় নেওয়া উদ্যোগে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড প্রদেশের গোড্ডা জেলায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে, যার বেশিরভাগটাই বাংলাদেশে রপ্তানি হবে।
বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আগস্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে। তবে, এর সঞ্চালন লাইনটি এখনো প্রস্তুত নয় এবং ডিসেম্বরের আগে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। ফলে বিদ্যুৎ পাওয়ার আগেই ওই কেন্দ্রের ভাড়া গোনা শুরু হবে।
‘আদানি গোড্ডা কোল পাওয়ার প্ল্যান্ট: অ্যান অ্যাকিলিস হিল অব দ্য পাওয়ার সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ মাসের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) হবে ১৪১ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার (১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা)।
২০১৭ সালে সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি আদানি গৌতম প্রতিষ্ঠিত আদানি গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টের ইউনিটপ্রতি ক্যাপাসিটি চার্জ ৩ টাকা ২৬ পয়সা। তবে, বাংলাদেশে একই ধরনের প্ল্যান্টের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ ২ টাকা ৮৩ পয়সা।
চুক্তি অনুযায়ী, আদানি পাওয়ার ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২৫ বছরের জন্য ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
মহামারির কারণে আদানি গ্রুপের কাজ শুরুর সময় অন্তত ৬ মাস পিছিয়েছে। আগামী আগস্টে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ দুটি প্রতিষ্ঠানের করা ওই গবেষণা।
চুক্তি অনুযায়ী, আদানি পাওয়ার গোড্ডা থেকে ইন্টারকানেকশন পয়েন্ট পর্যন্ত ১০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করবে।
এই পয়েন্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের রোহনপুর সাবস্টেশন পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের জন্য ২২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
তবে, পিজিসিবি বলছে, বিদ্যুৎ আমদানির জন্য অবকাঠামো প্রস্তুত করতে আরও সময় প্রয়োজন। তা প্রস্তুত করতে অন্তত ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে।
সঞ্চালন লাইনের প্রকল্প পরিচালক মো. মিজানুর রহমান সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সরঞ্জাম না আসায় সাবস্টেশনটি এখনো নির্মাণ করা যায়নি। আমরা আগামী বছরের প্রথম দিকে প্রায় ৮০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ আমদানি করতে সক্ষম হবো।’
তবে তিনি দাবি করেন, ভারত অংশের সঞ্চালন লাইনও প্রস্তুত হয়নি।
বিদ্যুৎ আমদানি না করেও ৪ মাসের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে, প্রতিবেদনের এমন তথ্যের বিষয়টি নিশ্চিত নন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ তো শেষ। মনে হয় না, এটি (ক্যাপাসিটি চার্জ) দিতে হবে।’
‘কিন্তু এই বিদ্যুৎকেন্দ্র যদি আমরা নিজেরাই তৈরি করে বিদ্যুৎ না নিতাম, তাহলেও আমাদের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হতো’, বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ নেই, কোনো পেমেন্টও নেই’ সরকারের এই নীতি বড় আকারের স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদকদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
‘আমরা যদি এই নীতি অনুসরণ করি, তাহলে কেউই প্ল্যান্ট তৈরি করতে রাজি হবে না। যেহেতু আদানি বিনিয়োগ করবে, সেহেতু ন্যূনতম একটা পেমেন্ট তো তাদেরকে করতে হবে। আমাদের জন্য তারা প্ল্যান্ট বানাচ্ছে। যদি আমরা বিদ্যুৎ না নেই, তাহলে তো তারা সমস্যায় পড়বে’, যোগ করেন তিনি।
গোড্ডা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বিপিডিবি তার স্বাভাবিক ‘মেরিট অর্ডার ডিসপ্যাচ’ পদ্ধতি অনুসরণ না করে ‘প্রায়োরিটি-বেসড ডিসপ্যাচ’ পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
‘মেরিট অর্ডার ডিসপ্যাচ’ পদ্ধতিতে অল্প টাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কেন্দ্রগুলোকে আগে উৎপাদনের সুযোগ দেওয়া হয়।
কিন্তু ‘প্রায়োরিটি-বেসড ডিসপ্যাচ’ পদ্ধতিতে আমদানিকৃত বিদ্যুতের ক্ষেত্রে প্রথমে দেশীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে নিষ্ক্রিয় রাখা হবে। এমনকি যদি তারা কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তবু প্রাধান্য পাবে আমদানি।
বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এক্সটারনাল ডেবট ও ভারত-ভিত্তিক গ্রোথওয়াচ এই যৌথ গবেষণাটি করে। এতে বলা হয়, আদানি গোড্ডার বিদ্যুৎ আমদানিকৃত অন্যান্য বিদ্যুতের চেয়ে ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ, আমদানিকৃত কয়লা বিদ্যুতের চেয়ে ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ ও দেশীয় কয়লা বিদ্যুতের চেয়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি ব্যয়বহুল হবে।
সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, চুক্তির ২৫ বছরের মেয়াদকালের মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে আদানি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ দিতে হবে বাংলাদেশকে, যা ৩টি পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য যথেষ্ট।
পরিস্থিতি নেতিবাচক হলে, বিপিডিবিকে বার্ষিক ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ৪২৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার (৩ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা) ও প্ল্যান্টের ২৫ বছরের মেয়াদকালে ১১ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ৮ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা) দিতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ৩ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার (ডলারপ্রতি ৯২ টাকা হিসাবে, ৩৫ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা), ঢাকা মেট্রোরেলে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা) ও কর্ণফুলী নদীর টানেল নির্মাণে ব্যয় ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা)।
পরিস্থিতি যদি ইতিবাচকও হয়, আদানি গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বার্ষিক ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ৩৩১ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার (২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা) দিতে হবে বাংলাদেশকে। সেটা ২৫ বছরে গিয়ে দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারে (৮৪ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পে আদানি পাওয়ারের বিনিয়োগ উঠে আসতে সর্বোচ্চ ৬ বছর ও সর্বনিম্ন ৪ বছর ৬ মাস সময় লাগবে।
২৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ লাগবে এক লাখ আট হাজার কোটি টাকা
০৮ জুন ২০২২, শেয়ার বিজ
ভারতের আদানি গ্রুপের গড্ডা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। এ সময়ে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে গুনতে হবে এক লাখ আট হাজার ৩৬১ কোটি টাকা (১১.০১ বিলিয়ন ডলার)। এ অর্থ দিয়ে কমপক্ষে তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। ‘আদানি গড্ডা কোল পাওয়ার প্ল্যান্ট: অ্যান অ্যাকিলিস হিল অব দ্য পাওয়ার সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা-বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) ও ভারতীয় গ্রোথওয়াচ যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করেছে, যা গতকাল প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ও
বিডব্লিউজিইডি’র সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, আদানিকে ২৫ বছরে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হবে তার পরিমাণ কর্ণফুলী টানেলের মোট বাজেটের ৯ গুণ এবং ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের চারগুণেরও বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি গ্রুপ প্রতি বছর কমপক্ষে তিন হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা (৪২.৩৩ কোটি ডলার) ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে নিয়ে যাবে, যা বাংলাদেশের জনগণের উপকার না করে বরং আদানি গ্রুপকে আরও ধনী হওয়ার সুযোগ করে দেবে।
প্রকল্পটির হালনাগাদকৃত অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আগামী আগস্টে আদানির কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করবে। যদিও সঞ্চালন লাইন না হওয়ায় এখনই কেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। আগামী ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে এক ইউনিট বিদ্যুৎ না কিনেও এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে বাংলাদেশকে।
প্রতিবেদনের প্রাক্কলন অনুযায়ী, আদানি পাওয়ারের এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমদানিকৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে বর্তমানে কমপক্ষে ৯ টাকা ৯ পয়সা, যা বর্তমানে আমদানিকৃত বিদ্যুতের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি এবং ভারতের সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় ১৯৬ শতাংশ বেশি।
এ ছাড়া আদানি গ্রুপের গড্ডা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের দাম প্রতি বছর কমপক্ষে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে বাড়বে। এতে ২০৪৭ সালে আদানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬ টাকা ৪১ পয়সা। যদিও দেশে ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুতের দাম প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে কমছে।
বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্রীয় দায়-দেনা ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা
১১ জুন, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট। ২০৪১ সালের মধ্যে তা ৬০ হাজার মেগাওয়াটে তোলার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এজন্য স্থানীয় ও বিদেশী বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ খাত পরিচালনা করতে গিয়ে সরকারি কোম্পানিগুলোর দায়-দেনাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে খাতটিতে মোট দায়-দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বিদ্যুৎ খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন কোম্পানিকে এখন এসব দায়-দেনার ভার বহন করতে হচ্ছে। বিদ্যুতের ক্রয়-বিক্রয় মূল্যের অসামঞ্জস্য ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার চার্জ পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। দিনে দিনে ঋণের বোঝা বাড়ছে সংস্থাটির। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সামঞ্জস্যের অভাব বিতরণ কোম্পানিগুলোর আর্থিক ক্ষতি বাড়াচ্ছে। সরকারের কাছ থেকে নেয়া ঋণের ওপর ভর করতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বিদ্যুৎ খাতের কার্যকর পরিকল্পনার অভাবই খাতটিকে দিনে দিনে আরো দায়গ্রস্ত করে তুলছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
দেশের বিদ্যুৎ খাতে মোট দায়-দেনার বৃহদাংশই তৈরি হয়েছে বিদেশী ঋণে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে। সরকারের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দেনার পরিমাণ এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য গৃহীত বিদেশী ঋণের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ খাতে রাষ্ট্রীয় মোট দায়-দেনার পরিমাণ ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি বকেয়া পরিশোধ বাকি রয়েছে ৭৮ হাজার ৯১ কোটি টাকা। ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার দায় তৈরি হয়েছে বিদেশী ঋণে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে।
দেশে বিদ্যুৎ খাতের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায়। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সিংহভাগ অর্থায়ন করেছে রাশিয়া। প্রকল্পে দেশটির দেয়া ঋণের পরিমাণ ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৭ সাল নাগাদ। বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই এ ধরনের কেন্দ্র উৎপাদন এলে তা সার্বিকভাবে গোটা খাতেই আর্থিক দুরবস্থা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশী বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থার কাছ থেকে নেয়া ঋণের ভিত্তিতে বর্তমানে দেশে ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতার ভিত্তিতে। মোট ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে এ প্রকল্পে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিয়েছে ১৫ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট এরই মধ্যে উৎপাদনে এসেছে। যদিও এখনই পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে যেতে পারছে না বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
সমান সক্ষমতার আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে বাগেরহাটের রামপালে। এজন্য ভারতের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিয়েছে ১০ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। বিদেশী ঋণে পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ও নরিনকো। এ প্রকল্পে চীনা ঋণ ৭ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) শাহজিবাজার, শ্রীপুর, বিবিয়ানা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এসব প্রকল্পে সংস্থাটির দেনা তৈরি রয়েছে ৩ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। এছাড়া আশুগঞ্জ পাওয়ারে দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২ হাজার ১০৮ কোটি টাকা, ঘোড়াশালে দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২ হাজার ৯১৭ কোটি ও নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট, কড্ডা, সৈয়দপুর, খুলনা ও ময়মনসিংহে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিদেশী ঋণ রয়েছে ৪ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো এসব ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সে দায়-দেনা মেটাতে হবে সরকারকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করছে সরকার। এগুলোর আর্থিক সুফল পাওয়া না গেলে সার্বিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক ভারসাম্য আনা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। খাতটিতে এখন চাহিদার তুলনায় সক্ষমতায় বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে না। এতে করে সরকারও খাতটিতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারছে না।
বর্তমানে রূপপুর বাদে অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকারের নেয়া ঋণের মোট স্থিতি ৪৯ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর অর্থায়নকালে গ্যারান্টার হিসেবে মুনাফার নিশ্চয়তা দিয়েছে সরকার। যদিও প্রকল্পগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়: রাত আটটার পর দোকানপাট বন্ধ রাখতে কঠোর হচ্ছে সরকার
১৭ জুন ২০২২, প্রথম আলো
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সারা দেশে রাত আটটার পর দোকান, শপিং মল, মার্কেট ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার বিষয়টি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে শ্রম আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শ্রম ও কর্মসংস্থানসচিবকে চিঠি দিয়েছে।
জানতে চাইলে চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে শ্রমসচিব মো. এহছানে এলাহী প্রথম আলোকে বলেন, রাত আটটার পর দোকানপাট বন্ধ রাখার বিষয়টি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে আগামী রোববার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য আদানির বিদ্যুৎলাইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মুর্শিদাবাদে
০৪ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য পরিকাঠামো বানাচ্ছে দেশটির অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহকারী আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সংস্থা আদানি পাওয়ার। এরা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কায় পরিকাঠামো বানাচ্ছে। সেখানকার কর্মী ও অফিসারের গত শনিবার বড় বাধার মুখে পড়েন। গতকাল রোববারও ওই অঞ্চলে উত্তেজনা রয়েছে।
গ্রামের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইন নেওয়া যাবে না বলে দাবি করে ফারাক্কার বেনিয়াগ্রাম ও ইমামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীরা কাজ বন্ধ করে দেন। বিক্ষোভকারীরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। ফলে তাঁরা কাজ করতে দেবেন না। বিক্ষোভের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে।
দিনে ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন উত্তরাঞ্চল, অতিষ্ঠ জনজীবন, ক্ষতিগ্রস্ত কলকারখানা
০৪ জুলাই, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে গত ২ থেকে ৩ দিন ধরে শুরু হয়েছে তীব্র লোড শেডিং। এতে করে ভ্যাবসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে সেবামূলক কর্মকাণ্ড এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন।
বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার এক স্কুল শিক্ষক শরিফা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে, ‘গত ২ থেকে ৩ দিন ধরে লোড শেডিং খুব বেশি হচ্ছে। বিদ্যুৎ এসে এক ঘণ্টা থেকে আবার চলে যাচ্ছে। এতে করে রান্না থেকে ঘর-গৃহস্থালীর কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। দিনে ও রাতে ৭-৯ বার করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ভ্যাবসা গরমে পরিবারের সবাইকে নিয়ে অস্থির হয়ে যাচ্ছি।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চা বিক্রেতা বাবু মিয়া বলেন, ‘আমার চায়ের দোকানটা ছোট এবং বেশ গরম। ঘন ঘন বিদ্যুৎ থাকছে না বলে লোকজন কম বসছেন আমার দোকানে। ফলে বেচা-বিক্রিও কম হচ্ছে।’
জয়পুরহাট সদরের শিক্ষক নাছরিন সুলতানা শাপলা বলেন, ‘দিনে-রাতে সমানতালে লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে রাতে গরমে ঘুমাতে পারছি না। ৩ থেকে ৪ দিন হলো এমন হচ্ছে। রাতে ছোট বাচ্চাদের পাখার বাতাস দিয়ে ঘুম পারাতে হচ্ছে।’
বগুড়া ২৫০ শয্যার মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক বলেন, ‘ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারে অনেক সময় অর্ধেক অপারেশন করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে এবং চিকিৎসকদের জেনারেটরের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার কিছু কিছু মেশিন জেনারেটর দিয়ে চালানোও সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এক্স-রে এবং প্যাথোলোজি ডিপার্টমেন্ট ও ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না।
জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় বিপিসি
১৪ জুলাই, ২০২২, প্রথম আলো
জ্বালানি তেল আমদানি করতে ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। তেল সরবরাহকারী বিদেশি সংস্থার পাওনা পরিশোধ হচ্ছে না নিয়মিত। তারা পাওনা পরিশোধে চাপ প্রয়োগ করছে। ব্যাংক বলছে, ডলার নেই তাদের কাছে। এতে জ্বালানি তেল আমদানি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। দফায় দফায় চিঠি দিয়েও সমাধান পাচ্ছে না তারা।
পরিস্থিতি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) ৫ জুলাই একটি চিঠি দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এতে বলা হয়, ‘প্রয়োজনীয় পরিমাণ ডলারের সংস্থানসহ চাহিদা অনুযায়ী এলসি (ঋণপত্র) খোলা সম্ভব না হলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে মর্মে বিপিসি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।’
‘বিষয়টি অতীব জরুরি’ উল্লেখ করে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলায় সৃষ্ট জটিলতা ও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রাসংকটের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশের চাহিদার প্রায় শতভাগ জ্বালানি তেল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলারের সংস্থান ও ঋণপত্র খোলার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে ইতিমধ্যে একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রতি মাসে ১৬ থেকে ১৭টি আমদানি ঋণপত্র খুলতে হয়। ঋণপত্রগুলো সাধারণত সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও ইস্টার্ণ ব্যাংকে খোলা হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে প্রায়ই অপারগতা প্রকাশ করছে। বিপিসি এটি একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। এ ছাড়া ঋণপত্র খুললেও তেল সরবরাহকারীর মূল্য পরিশোধে দেরি হচ্ছে। একাধিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে করে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামও ক্রমে বাড়ছে।
বিপিসি সূত্র বলছে, গত এপ্রিলের শুরু থেকেই ঋণপত্র খোলা ও তেলের দাম পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হলে কিছু ডলার ছাড় করা হয়। এরপর আবার ব্যাংকগুলো অস্বীকৃতি জানাতে থাকলে গত ১৭ মে ও ২৩ জুন দুই দফায় জ্বালানি বিভাগে চিঠি পাঠায় বিপিসি।
দেশে ৩৫ থেকে ৪০ দিনের জ্বালানি তেল মজুত করতে পারে বিপিসি। ঋণপত্র খোলা না গেলে নতুন করে জ্বালানি তেলের ক্রয়াদেশ দেওয়া যাবে না। এতে করে তেল আমদানি কমে যাবে। আর তাহলে সামনে সরবরাহ–সংকট তৈরি হতে পারে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৩৪ শতাংশ জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভর করে। আর পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশের বেশি নির্ভর করে জ্বালানি তেলের ওপর।
রাজধানীতেও ফিরেছে লোডশেডিং
০৫ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ার পর লোডশেডিং মোটামুটি বিদায় নিয়েছিল। শহরে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট হতো না বললেই চলে। এখন সেই লোডশেডিং আবার ফিরেছে। রাজধানীতেও দুই দিন ধরে দিনে কয়েকবার করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকারী কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সরকার লোডশেডিং করছে বাধ্য হয়ে। সরবরাহ–সংকট থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারে দাম চড়া, তাই খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে আপাতত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে না সরকার।
দেশে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তার একটি বড় অংশ ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। শিল্পকারখানায়ও বিপুল পরিমাণ গ্যাস লাগে। লাইনে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানায়ও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
সব মিলিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি। ঢাকার খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রিজওয়ান তালুকদার গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এলাকায় সারা দিনে পাঁচবার লোডশেডিং হয়েছে। প্রতিবার ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না। তিনি বলেন, ‘এক যুগ আগে দিনে ৮–১০ ঘণ্টা লোডশেডিং আমি দেখেছি। তবে এরপর ধীরে ধীরে লোডশেডিং বিদায় নিয়েছে। দুই দিন ধরে যা হচ্ছে, তা সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি।’
গ্যাস সরবরাহ কমেছে
বাংলাদেশ তেল–গ্যাস–খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৭০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা যেত। এর মধ্যে দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত হয় ২২০ থেকে ২৩০ কোটি ঘনফুট। বাকি ৭০ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট আমদানি করা হয়। দুই দিন ধরে সরবরাহ করা হচ্ছে দিনে ২৭৫ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট।
বিদেশ থেকে জাহাজে তরল অবস্থায় গ্যাস আমদানি শুরু হয় ২০১৮ সালে। তখন অনেকেই এর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বেড়ে গেলে সংকট তৈরি হবে। এখন বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম ব্যাপক চড়া। ফলে আমদানিতে ব্যয় অনেক বেশি পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০২০ সালে যে গ্যাস প্রতি ইউনিট ৪ মার্কিন ডলারে নেমে গিয়েছিল, তা এখন বেড়ে ৩৮ ডলার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ কেনা হয়েছিল ২৫ ডলারে। এতে নতুন করে গ্যাস কিনতে বিপুল বাড়তি ব্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। এমন অবস্থায় কিছু দিন ধরেই ধাপে ধাপে কমানো হচ্ছিল গ্যাসের সরবরাহ। এলএনজি কেনা না হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই আপাতত।
অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতাই জ্বালানি–সংকটের বড় কারণ
০৭ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতাই দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকটের বড় কারণ। প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহে সমস্যা এবং এর মূল্য বৃদ্ধির কারণেই বিশ্বব্যাপী এখন জ্বালানিসংকট দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটকে বিশেষজ্ঞরা সত্তরের দশকের বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে সে সময়ে সংকটের মূল কারণ ছিল জ্বালানি তেলের কম সরবরাহ। আর এবারের সংকটের কারণ প্রাকৃতিক গ্যাসের অস্বাবাভিক মূল্য বৃদ্ধি।
তবে বাংলাদেশের তেল নেই, কিন্তু গ্যাস আছে। কিন্তু সেই গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগ না দিয়ে সরকার দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমদানির ওপরই নির্ভরশীল থেকেছে। জ্বালানি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অনির্ভরযোগ্য পণ্য। এর দর একই রকম থাকবে, তা কখনোই দেখা যায়নি। কিন্তু সরকার থেকে গেছে ঝুঁকিপূর্ণ আমদানির ভরসাতেই। ফলে যখন বিশ্বব্যাপী গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে, তখন আর কম দামে এলএনজি পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের অভিজ্ঞতা নিতে হচ্ছে সারা দেশের মানুষকে, ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। মূলত গত এক যুগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার যতটা মনোযোগ দিয়েছে, এর কাঁচামাল সরবরাহের দিকে তেমন নজরই দেয়নি।
কেন এত আমদানি প্রীতি
২০১১ সালে ফরাসি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান স্ল্যামবার্জার এক সমীক্ষা চালিয়ে বলেছিল, বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে কিছু সংস্কার ও পরিবর্তন আনলে তিন বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ কোটি (৫০০ মিলিয়ন) ঘনফুট গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানো সম্ভব। সরকার নিজ উদ্যোগে স্ল্যামবার্জারকে দিয়ে এই সমীক্ষা চালালেও সংস্কারের পথে আর যায়নি।
আবার বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিজয় করেছে ২০১২ সালে ও ভারতের সঙ্গে ২০১৪ সালে। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ মিয়ানমারের কাছ থেকে বাংলাদেশ পায় ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার এবং ২০১৪ সালের ৮ জুলাই ভারতের কাছ থেকে পায় ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার। সেখানেও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ। অথচ মিয়ানমার ঠিকই সেখানে গ্যাস পেয়েছে।
গ্যাস উত্তোলনের কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই হঠাৎ ২০১৫ সালে সরকারের পক্ষ থেকে বলা শুরু হয় যে গ্যাসের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। যে গ্যাস আছে, তা দিয়ে আর ১৫ বছর চলবে। ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর এক সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীও বলেছিলেন, সামনে কঠিন দিন আসছে। ১৫ বছর পর দেশের গ্যাস একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যাবে।
এভাবে আতঙ্ক ছড়ানোর মধ্যেই সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কথা জোরেশোরে বলতে শুরু করেছিল। তখনই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, গ্যাস দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার তথ্য প্রচার করার কারণ হচ্ছে উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করা। শেষ পর্যন্ত তা–ই করা হয়েছে। এভাবেই জ্বালানি খাতকে প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর করা হয়, যা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তখন এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও সরকার কর্ণপাত করেনি।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে আলোকসজ্জায় নিষেধাজ্ঞা
০৭ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সারা দেশে আলোকসজ্জায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। কোনো ধরনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে কোনো স্থাপনায় আলোকসজ্জা না করার নির্দেশ দিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সারাদেশে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, শপিংমল, দোকানপাট, অফিস ও বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জা না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
লোডশেডিংয়ে আমনের আবাদ বিঘ্নিত
২১ জুলাই, ২০২২, প্রথম আলো
একদিকে বৃষ্টির অভাব, অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে সংকটের মুখে পড়েছে এবারের আমন ধানের আবাদ। উত্তরাঞ্চলে এ সময়ের মধ্যে সিংহভাগ জমিতে আমনের চারা লাগানো সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু খেতে পানির অভাবে অধিকাংশ জমিতে আমনের চারা লাগানো যাচ্ছে না। কৃষকেরা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটরদের কাছে ধরনা দিয়েও পানি পাচ্ছেন না। দিনের অধিকাংশ সময় লোডশেডিংয়ের কারণে বৈদ্যুতিক সেচপাম্প বন্ধ রাখতে হচ্ছে অপারেটরদের।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার ৮০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টি না থাকায় এবার আমন রোপণ বিলম্বিত হচ্ছে। এবার জুলাই মাসে একটু-আধটু বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু মাটিতে দাঁড়ানোর মতো বৃষ্টি হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত গত রোববার রাজশাহী জেলার সমন্বয় কমিটির সভায় বিএমডিএর সব গভীর নলকূপ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. একরামুল হক জানান, গত মঙ্গলবার তাঁর ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। এর বিপরীতে পেয়েছেন ৩৫ মেগাওয়াট। ফলে বাধ্য হয়ে ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ১২ ঘণ্টাই লোডশেডিং দিতে হয়েছে।
সম্ভাব্য বিপুল পরিমাণ অনাবিষ্কৃত গ্যাসের যথাযথ অনুসন্ধান হয়নি
১৭ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশে গ্যাসের মজুদ নিয়ে ২০১০ সালে একটি সমীক্ষা চালায় মার্কিন প্রতিষ্ঠান গুস্তাভসন অ্যাসোসিয়েটস। তাদের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ, দেশে এমন অনাবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় গ্যাস সম্পদের সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ৩৮ টিসিএফের কিছু বেশি। ৫০ শতাংশ সম্ভাবনার গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় সম্ভাব্য মজুদ প্রায় ৬৩ দশমিক ১৯ টিসিএফ। ওই সমীক্ষার পর সময় পেরিয়েছে এক দশকেরও বেশি। এখন পর্যন্ত গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদের এসব ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জ্বালানি বিভাগের অধীন হাইড্রোকার্বন ইউনিট (এইচসিইউ) ও নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেট (এনপিডি) যৌথভাবে এ সমীক্ষার জন্য গুস্তাভসন অ্যাসোসিয়েটসকে নিয়োগ দিয়েছিল। অনুসন্ধানে পাওয়া এসব তথ্য ২০১১ সালে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হয়। তবে সরকার এ তথ্য গ্রহণ করেনি। আবার পেট্রোবাংলার নিজের হাতে তহবিল থাকলেও অনুসন্ধানের মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্যাসের মজুদ সম্ভাব্যতা নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বের করে আনায় কোনো বিনিয়োগ করেনি। এমনকি গ্যাসকে কেন্দ্র করে দেশের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা সাজানো হলেও স্থানীয় উৎস থেকে উত্তোলন ও সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যায়। প্রাধান্য পায় আমদানিনির্ভরতা। এ আমদানিনির্ভরতাই এখন দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে নাজুক অবস্থানে টেনে এনেছে বলে বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
কোনো গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস সম্পদ মজুদের ৯০ শতাংশ সম্ভাব্যতা নিশ্চিত হওয়ার পরই সেখানে গ্যাসকূপ খননের উদ্যোগ নেয়া যায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিদেশী কোম্পানিগুলোও এসব এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী হয়। যদিও সম্ভাব্য এসব গ্যাসক্ষেত্রে এমন কোনো উদ্যোগ পরে দেখা যায়নি। আবার আর্থিক সক্ষমতা থাকলেও পেট্রোবাংলার সাবসিডিয়ারি ও রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানিকেও (বাপেক্স) ৫০ ও ৯০ শতাংশ সম্ভাবনার গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় অনুসন্ধানে নামানো হয়নি। যদিও এজন্য গড়ে তোলা গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের (জিডিএফ) বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস পড়ে থেকেছে বছরের পর বছর।
অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে দেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত!
১৯ জুলাই ২০২২, শেয়ারবিজ নিউজ
জ্বালানি সংকট নিয়ে কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী থাকার জন্য বড় অঙ্কের লোকসান ছাড়াও ডলার সংকটে জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য কৃচ্ছ সাধন নীতির কথা বলা হচ্ছিল। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস-তেল সরবরাহ কমিয়ে লোডশেডিং শুরু করা হয়। তাতেও জ্বালানি সংকট নিরসনে খুব একটা সুবিধা হয়নি।
এদিকে উচ্চ মূল্যের তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কম দামে বিক্রি করায় এ খাতেও লোকসানের বোঝা ভারী হচ্ছে। পাশাপাশি বেড়ে গেছে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা। সরকার ভর্তুকি বন্ধ করে দিয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। এতে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পথের সম্মুখীন বাংলাদেশ।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও আশু করণীয় নির্ধারণে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টদের। এতে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ছাড়াও সপ্তাহে এক দিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখাসহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি তেলের ব্যবহার কমাতে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
পিডিবির তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত ডিজেলচালিত সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু ছিল। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ছয়টি ও একটি সরকারি। বেসরকারি ছয়টি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার মেগাওয়াট। আর সরকারি কেন্দ্রটির সক্ষমতা ২২৫ মেগাওয়াট। গতকালের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ থেকে বন্ধ হচ্ছে এক হাজার ২২৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে, বাড়বে লোডশেডিং।.. ..
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে কয়লায় ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, গ্যাসে ৫০ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ফার্নেস অয়েলে ২৮ শতাংশ ও ডিজেলে ছয় শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। তবে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে গড় উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। এসব কেন্দ্রে শুধু জ্বালানি ব্যয়ই পড়ে ১৮-২০ টাকা।
যদিও ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখলে শুধু জ্বালানি তেল সাশ্রয় হবে, তবে ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সরকার। পিডিবি জানায়, বেসরকারি খাতের ছয়টি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বছরে প্রায় এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখলেও ক্যাপাসিটি চার্জ ঠিকই পরিশোধ করতে হবে। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়বে অনেক বেশি।
এদিকে জ্বালানি তেলে দাম বাড়তে থাকায় বিদ্যুৎ খাতে ক্রমাগত ভর্তুকি বেড়েই চলেছে। ২০২০-২১ অর্থবছর এ খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। তবে ২০২১-২২ অর্থবছর জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসেই ভর্তুকি দেয়া হয় ১২ হাজার কোটি টাকা। এরপর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেয়া বন্ধ রাখে সরকার। এতে সংকটে পড়ে পিডিবি। নগদ তহবিল সংকটে গত মার্চ থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পরিশোধ করতে পারছে না সংস্থাটি। এতে দেড় বিলিয়ন ডলার (১৪ হাজার কোটি টাকা) বিল বকেয়া পড়ে গেছে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোয়।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল দ্রুত পরিশোধের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি পিডিবিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপ্পা)। সংগঠনটি জানায়, ৬০ শতাংশ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ফেব্রুয়ারির বিল পেয়েছে। আর মার্চ থেকে কোনো কেন্দ্রই বিল পায়নি। তবে সে সময় ডলারের দর ছিল ৮৫ টাকা। এখন তা বেড়ে প্রায় ৯৪ টাকা হয়ে গেছে। এ নিয়ে জটিলতা বাড়ছে।
যদিও বিদ্যুৎ খাতের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র। পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য মাসে প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে, এক বছর আগেও যা ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বেড়েছে ২০ শতাংশ। ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে আজ জাতীয় সংসদ ভবনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
পিডিবির হিসাবমতে, বিদায়ী অর্থবছর পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর এ বোঝা বইতে গিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছর পিডিবির লোকসান ছাড়িয়ে যাবে ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান ছিল ১১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছর পিডিবির লোকসান বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
এদিকে বিদ্যুতের পাশাপাশি জ্বালানি খাতেও সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেলের মজুত ক্রমেই কমে যাচ্ছে। বর্তমানে জ্বালানি তেলের মজুত কমে ৪০ দিনের নিচে নেমে গেছে। সাধারণত বিপিসি ৪০-৪৫ দিনের মজুত রাখে। তবে সংকট কাটাতে সহজ কোনো পথ পাচ্ছে না বিপিসি। জ্বালানি আমদানি করতে গিয়েও বিপাকে পড়েছে সংস্থাটি। ডলার সংকটে এলসি খুলতে পারছে না বিপিসি। এতে জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।
বিপিসির তথ্যমতে, সারাদেশে যে ডিজেল ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে ১০ শতাংশ যায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বাকি ৯০ শতাংশ পরিবহনসহ অন্যান্য খাতে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিদ্যুতের ১০ শতাংশ ও অন্যন্য খাত থেকে আরও ১০ শতাংশÑমোট এই ২০ শতাংশ ডিজেল সাশ্রয় করতে পারলে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা আমরা সেভ করতে পারব, এটা অনেক বড় বিষয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত আমরা না নিলে সারা বছর এই ১০ শতাংশ ডিজেলের যে দাম দিই, সেই মূল্য তো আমরা বিদ্যুৎ থেকে পাব না। ডিজেল থেকে যে বিদ্যুৎ হয়, তা ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মতো পড়ে প্রতি ইউনিট। আর বিদ্যুৎ বিক্রি করছি গড়ে প্রায় সাত টাকায়।’ ডিজেল আমদানি কমালে ভর্তুকির খরচও কমবে হবে বলে মন্তব্য করেন নসরুল হামিদ।
যদিও জ্বালানি তেলে বড় ধরনের লোকসান গুনছে বিপিসি। সংস্থাটির তথ্যমতে, বর্তমানে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলে লোকসান হয় ১৫ টাকা, অকটেনে ৩৭ ও ডিজেলে ৫৭ টাকা। বর্তমানে এ তিন ধরনের জ্বালানি তেলের বিক্রয়মূল্য যথাক্রমে ৭৪ টাকা, ৮৯ টাকা ও ৮০ টাকা। আর তাই কম দামে তেল বেঁচে বিপিসি দৈনিক লোকসান গুনছে ১০০ কোটি টাকার বেশি।
সরকারি ১৩ ভবনে এসি বিলাস
১৯ জুলাই, ২০২২, দেশ রুপান্তর
সরকার যখন বিদ্যুৎসংকট মোকাবিলায় রেশনিং পদ্ধতি চালু করেছে তখন উল্টোপথে হাঁটছে সরকারের একাধিক দপ্তর। কমপক্ষে সরকারি ১৩টি ভবনে সেন্ট্রাল এসি বা কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র বসানো হয়েছে। এসব ভবনে একজন অফিস করলেও শত শত টনের এসি চলে। ১৩ ভবনের ৬টিতে মোট ৯ হাজার ২০০ টন এসি ব্যবহৃত হচ্ছে।
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় জাতীয় রাজস্ব ভবনে ২ হাজার ৫০০ টন, পান্থপথের পানি ভবনে ২ হাজার ৪০০ টন, সচিবালয়ের ভেতরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভবনে ১ হাজার ৫০০ টন, পুলিশ সদর দপ্তরে (এনেক্স ভবন) ১ হাজার ২০০ টন, বিজ্ঞান জাদুঘরে ১ হাজার টন, জাতীয় আর্কাইভ ভবনে ৬০০ টন এসি ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া পর্যটন ভবন, বিডা ভবন, আইসিটি ভবন, নির্বাচন কমিশন ভবন, জাতীয় সংসদ, বিটিআরসি ভবন, সিপিটিউ ভবনে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র রয়েছে। এসব ভবনের বেশিরভাগে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিলার এয়ারকুলার বা ওয়াটার কুলার রয়েছে। চিলার কুলার বসাতে হলে কমপক্ষে ১০০ থেকে ১৫০ টন দিয়ে শুরু করতে হয়। দুয়েকটিতে আছে ভিআরএফ সিস্টেম। এ পদ্ধতির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কমপক্ষে ১৮ টন দিয়ে শুরু করতে হয়।
শর্তের বেড়াজালে থাকছে রেন্টাল
১৯ জুলাই ২২, সমকাল
স্বল্প মেয়াদের কথা বলে পেরিয়ে গেছে যুগ। তবু বন্ধ হচ্ছে না কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। নানা শর্ত আর যুক্তি দাঁড় করিয়ে বারবার বাড়ানো হচ্ছে এসব প্রকল্পের মেয়াদ। তবে এসব যুক্তি-শর্তকে নিয়মবহির্ভূত এবং অবৈধ বলছেন সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও চারটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ শর্তে মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এতে কোনো ক্যাপাসিটি পেমেন্ট (রেন্টাল ভাড়া) দিতে হবে না বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের। তবে প্রস্তাব বিশ্নেষণ করে খাত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবচেয়ে সমালোচিত ক্যাপাসিটি পেমেন্টকে এবার ভিন্ন নামে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে পরিবর্তনশীল মেরামত ও পরিচালন ব্যয় (ভেরিয়েবল ওঅ্যান্ডএম) আগের চেয়ে ৬০-৭০ গুণ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবে মেয়াদ বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়িয়ে ধরাসহ নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
তাঁরা বলছেন, বলা হচ্ছে বিদ্যুৎ না কিনলে কোনো টাকা দিতে হবে না। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা সবাই প্রভাবশালী। তাঁরা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) প্রভাবিত করে বিদ্যুৎ ব্যবসা চালু রাখবেন। এ ছাড়া চাহিদা না থাকায় বর্তমানে কমপক্ষে তিন হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকছে। এ বছরের শেষ নাগাদ তিন বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হচ্ছে। তাই তেলভিত্তিক ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা অযৌক্তিক।
মেয়াদ বাড়ার তালিকায় থাকা চার রেন্টাল কেন্দ্র হচ্ছে- পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারার কেরানীগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের চট্টগ্রাম জুলদায় ১০০ মেগাওয়াট, নর্দান পাওয়ারের রাজশাহী কাটাখালী ৫০ মেগাওয়াট এবং সিনহা পাওয়ারের চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা ৫০ মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েলভিত্তিক পাঁচ বছরমেয়াদি এই চার রেন্টাল কেন্দ্র ২০১০ সালে উৎপাদনে আসে। এরপর তাদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়, যা চলতি বছর শেষ হয়েছে। উদ্যোক্তারা পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলেও ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ শর্তে এগুলোর মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হচ্ছে।
প্রথম দিনেই রুটিন ভেঙে লোডশেডিং
২০ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
জ্বালানি সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের রুটিন (সময়সূচি) মানতে পারেনি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় রুটিনের (সূচি) বাইরেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ছিল সরকারের পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের প্রথম দিন। এ দিন ঢাকায় কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ঘণ্টা, আর ঢাকার বাইরে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে।
দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তাঁরা বলেছেন, রাজধানীর দুটি বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকো গতকাল দিনে সর্বোচ্চ ৩০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ ঘাটতি পেয়েছে। কোনো এলাকায় এক ঘণ্টা দিলেও অন্য এলাকায় একটু বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে তাদের। ফিডার (একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতাধীন এলাকা) ধরে লোডশেডিংয়ের রুটিন করা হলেও তা মানতে পারছে না ডিপিডিসি ও ডেসকো।
নয় মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ১৬ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা
২০ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। তবে ব্যবহার হয় মাত্র সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। অতিরিক্ত সক্ষমতা বসিয়ে রাখতে হয়। আর এ সক্ষমতা বসিয়ে রাখা হলেও এর বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ বা সক্ষমতার ব্যয় হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ গুনতে হচ্ছে সরকারকে। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম নয় মাসেই (জুলাই-মার্চ) বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য সক্ষমতা ব্যয় বাবদ সরকারকে গুনতে হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে গতকাল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে।
বৈশ্বিক জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সারা দেশে এখন এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চলছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ঘোষণা দিয়ে রাত ৮টার পর শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও। এমন এক পরিস্থিতিতে গতকাল জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক আয়োজন করা হয়।
সেখানে উপস্থাপিত বিপিডিবির প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে দেশের ৬১টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি) থেকে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে সক্ষমতা ব্যয় হিসেবে গুনতে হয়েছে ১১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডকে। কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এ নয় মাসে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডকে সক্ষমতা ব্যয় বাবদ ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বিপিডিবি।
বেসরকারি অন্য বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাংলা ট্র্যাক পাওয়ার ইউনিট-১ লিমিটেডকে ২৬৭ কোটি টাকা, এপিআর এনার্জিকে ৪০১ কোটি, দেশ এনার্জি চাঁদপুর পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে ২০১ কোটি, মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডকে ২১১ কোটি, নতুন বিদ্যুৎ (বাংলাদেশ) লিমিটেডকে ২৩৩ কোটি, প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জি লিমিটেডকে ২৬৪ কোটি, সেম্বকর্প এনডব্লিউপিসি লিমিটেডকে ৪৪৬ কোটি, সামিট বিবিয়ানা-২ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে ২৫১ কোটি, সামিট গাজীপুর-২ পাওয়ার লিমিটেডকে ২৬৪ কোটি, সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডকে ৩৪০ কোটি ও ইউনাইটেড আনোয়ারাকে ৩০৩ কোটি টাকা সক্ষমতা ব্যয় বাবদ পরিশোধ করেছে বিপিডিবি।
বিদ্যুৎ ছাড়াই ৩ বছরে সরকারের গচ্চা ৫৪ হাজার কোটি টাকা
২০ জুলাই ২২, সমকাল
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা না থাকা ও জ্বালানি সংকটে উৎপাদন সক্ষমতার একটি বড় অংশ অলস পড়ে থাকে। এ সময় না কিনলেও বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করে আসছে সরকারি সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এভাবেই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গত তিন বছর বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের পকেটে গেছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো পিডিবির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। বাড়তি সক্ষমতা সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ সক্ষমতা অব্যবহূত থাকছে। উৎপাদন ক্ষমতা অনুসারে বিদ্যুৎ নিতে না পারায় দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রাকে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের অর্থ দিতে হচ্ছে পিডিবিকে। চলতি বছরের মধ্যে আরও তিনটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদের রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মেয়াদ বারবার বাড়ানো হচ্ছে। ফলে সামনে ক্যাপাসিটি মাশুল আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা। যদিও এখন সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যয় সাশ্রয়ে রেশনিং শুরু করেছে।
শহরের চেয়ে গ্রামে লোডশেডিং বেশি
২১ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
আগের দিনের চেয়ে গতকাল বুধবার উৎপাদন কিছুটা বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রাবণের বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমায় কিছুটা স্বস্তি এসেছে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুতের চাহিদা কমায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা আগের দিনের চেয়ে কমেছে। তবে চাহিদার তুলনায় কম সরবরাহ পাওয়ায় গ্রাম এলাকাগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।
বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের একটি হলো পরিকল্পিত এক ঘণ্টার লোডশেডিং। গতকাল দ্বিতীয় দিনেও লোডশেডিংয়ের রুটিন (সময়সূচি) মানা যায়নি ঢাকার বাইরে।
দিনের বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্য পরের দিন প্রকাশ করে পিডিবি। গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে ১১ হাজার ৭৪২ মেগাওয়াট। গতকাল পিডিবির দিনে সর্বোচ্চ চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। আর উৎপাদন ১২ হাজার ৫১ মেগাওয়াট। ২ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট ঘাটতি হতে পারে। এ ঘাটতি পূরণে গড়ে দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করা দরকার পড়ে বলে জানিয়েছেন পিডিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ৯৭৬ মেগাওয়াট সাশ্রয় হয়। বৃষ্টি নামায় চাহিদা পূর্বাভাসের চেয়ে কমেছে। তাই লোডশেডিং কমানো গেছে।
সারা দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ করে ছয়টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডিপিডিসি ও ডেসকো।
গতকাল দুপুরে ঢাকায় দুই ঘণ্টার মতো বৃষ্টি হয়েছে।
এতে তাপমাত্রা কমায় বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কমেছে। তাই রুটিন মেনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিয়েছে ডিপিডিসি ও ডেসকো। গতকাল দিনে সর্বোচ্চ ১১০ মেগাওয়াট ঘাটতি পেয়েছে ডিপিডিসি। আগের দিন ঘাটতি ছিল ১৫০ মেগাওয়াট। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, রুটিন মেনেই লোডশেডিং করা গেছে।
তবে ডেসকো এলাকায় আগের দিন ১৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকলেও গতকাল এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৯৩ মেগাওয়াটে। দিনে তাদের সাধারণত ১ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও বিকেলের পর থেকে এটি ৯০০ মেগাওয়াটে নেমে আসে। ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলী সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির কারণে চাহিদা কিছুটা কমেছে। বিকেল থেকে তাই আর লোডশেডিং করা হয়নি।
ঢাকাসহ সব শহরের বাইরে দেশের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আরইবি। মোট বিদ্যুতের প্রায় ৫৫ শতাংশই সংস্থাটি বিতরণ করে। সোয়া চার কোটি বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে সোয়া তিন কোটির বেশি গ্রাহক আছে সংস্থাটির অধীনে। সারা দেশে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণের কাজটি করে আরইবি।
গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯১৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে আরইবি। এ সময় তাদের ৮ হাজার ৩৯৬ মেগাওয়াট চাহিদা উঠলেও সরবরাহ পেয়েছে ৬ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট। গতকাল দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত ঘাটতি পেয়েছে আরইবি। তবে বিকেলের পর থেকে তাদের ঘাটতি কমে আসে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে আরইবির ঘাটতি ছিল প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি বেশি হওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো তাদের প্রচার করা রুটিন মেনে লোডশেডিং দিতে পারছে না।
ক্যাপাসিটি চার্জে যুক্ত হচ্ছে এলএনজিনির্ভর তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র
২৩ জুলাই, ২০২২, বণিক বার্তা
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদন না হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে শুধু সক্ষমতার জন্য নির্দিষ্ট হারে অর্থ (ক্যাপাসিটি চার্জ) পরিশোধ করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। শুধু বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে গিয়েই প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি)। বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে সামিট, ইউনিক ও রিলায়েন্সের ১ হাজার ৯০০ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার এলএনজিভিত্তিক আরো তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র তিনটি নির্মাণ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে। সামিট পাওয়ার, ইউনিক গ্রুপ ও ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপ পৃথকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণ করছে। এরই মধ্যে চলতি বছরের আগস্টে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। বাকি একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আগামী বছরের মার্চ নাগাদ শুরুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ। সরবরাহ কমেছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়ও। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে যাওয়া নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত হওয়ার পর গ্যাসের অভাবে চালু করতে না পারলেও বসে থাকা অবস্থায়ই এগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে বিপিডিবিকে।
শিল্প-কৃষিতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন
২৩ জুলাই ২২, সমকাল
চলমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার এক গুচ্ছ সাশ্রয়ী নীতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিদ্যুতের চাহিদা আয়ত্তে রাখতে অঞ্চলভেদে দৈনিক এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও লোডশেডিং ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিল্পকারখানার মালিকরা। রপ্তানি ছাড়াও অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের জোগান দেয় এমন ছোট-বড় ও মাঝারি শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের মতো রপ্তানিমুখী শিল্পে উৎপাদন হ্রাসে চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে, বিশেষত রিজার্ভে যার প্রভাব পড়তে পারে।
লোডশেডিংয়ের অভিঘাতে টান পড়েছে সেচ ব্যবস্থাপনায়। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। সামনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সার সংকটের। প্রান্তিকে জেনারেটর নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় খামারেই মারা পড়ছে মুরগি।
উদ্যোক্তারা বলছেন, গত দু’দিনে অনেক এলাকায় লোডশেডিংয়ের শিডিউল মানা হয়নি। ঘোষিত সময়ের আগে-পরে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে। নিজস্ব জেনারেটর না থাকায় ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) মানের বেশিরভাগ কারখানায় পূর্ণ কর্মঘণ্টা উৎপাদন হয়নি। অন্যদিকে মাঝারি ও বড় কারখানাগুলো ডিজেল পুড়িয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে উৎপাদন ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি
‘ভিক্ষা নিয়ে চলা’ ওয়াসায় ১৯ কোটি টাকার বোনাস
২৬ জুন ২০২২, প্রথম আলো
গ্রাহক পর্যায়ে পানির দাম আরেক দফা বাড়ানোর পক্ষে বলতে গিয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান দাবি করেছিলেন, সংস্থাটি সরকারের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে চলে। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাড়ে তিনটি করে মূল বেতন ‘পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড’ হিসেবে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এতে ব্যয় হবে ১৯ কোটি টাকা।
সরকারের ভর্তুকিতে চলা ঢাকা ওয়াসার নিয়মিত বেতন-ভাতার বাইরে এমন বোনাস ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বছরও সংস্থাটি সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চারটি মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বিশেষ পুরস্কার হিসেবে দিয়েছিল।
ঢাকা ওয়াসার নথি অনুযায়ী, ২৭ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৯১তম সভায় পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড (উৎসাহ বোনাস) দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। করোনা মহামারি–পরবর্তী ২০২০-২১ অর্থবছরের পারফরম্যান্সের জন্য ঢাকা ওয়াসার স্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক ও প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের তিনটি মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বোনাস দেওয়া হবে। আর গত ২৫ জানুয়ারি ২৮৬তম সভায় কর্মীদের একটি মূল বেতনের অর্ধেক ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) পারফরম্যান্স বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এবার বাড়ছে পানির দাম
০৭ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধগতির মধ্যেই এবার বাড়ছে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম। আজ বৃহস্পতিবার সংস্থাটির বোর্ড সভায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে অন্তত ১৫ বার বাড়ানো হলো পানির দাম।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের এপ্রিলে ও ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মিলে মোট দুই দফা পানির দাম বাড়ানো হয়। এ দুই দফায় আবাসিকে প্রতি ১ হাজার লিটারে পানির দাম বেড়েছিল ৩ টাকা ৬১ পয়সা (৩১ শতাংশ)। বাণিজ্যিকে বেড়েছিল ৪ টাকা ৯৬ পয়সা (১৩ শতাংশ)।
শিক্ষা
ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফির বোঝা শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ১০০০ টাকা আবেদন ফি। গতবার ছিল ৬৫০ টাকা।
জাহাঙ্গীরনগরে আবেদন ফি ৯০০ টাকা। গতবার ছিল ৬০০ টাকা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ফি ৮৫০ টাকা। গতবার ছিল ৬৫০ টাকা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি ১১০০ টাকা, গতবারও একই ছিল।
১১ মে ২০২২, প্রথম আলো
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ওপর ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফির বোঝা কমছে না। বরং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও (২০২১-২২) আবেদন ফি আগের চেয়ে ২০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আগেই বাড়িয়েছিল, এবারও সেটি বহাল রাখছে।
প্রায় এক মাস আগে (৭ এপ্রিল) উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির এক সভায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ফি আনুপাতিক হারে কমিয়ে ‘যৌক্তিক’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখন ঠিক হয়েছিল, ফি কমিয়ে যৌক্তিক করলে আগে যেভাবে ভর্তি ফি বাবদ আয়ের ৪০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে জমা দিতে হতো, সেটি দিতে হবে না।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবার আবেদন ফি বাড়িয়েছে। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় না কমিয়ে আগের ফি বহাল রেখেছে। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি বাড়ানোর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউজিসির একজন সদস্য।
৪ বছরে আবেদন ফি থেকে আয় বেড়েছে তিন গুণ
১৩ মে ২০২২, প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করেছেন ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৪৮ জন। আবেদন ফি ছিল এক হাজার টাকা। সেই হিসাবে ফি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৯ কোটি ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছে। ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষে এই সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ১৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। সেই হিসাবেচার বছরের ব্যবধানে ফি সংগ্রহ বেড়েছে তিনগুণের বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এবার প্রতি আবেদনে অনলাইন সার্ভিস চার্জ ও ব্যাংক পেমেন্ট সার্ভিস চার্জ বাবদ ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা খরচ বাদ যাবে। ফলে ফি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রকৃত সংগ্রহ ২৭ কোটি ৭৭ লাখ ১৭ হাজার ৮৬২ টাকা।
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা ৬ হাজার ৩৫টি। এর বিপরীতে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৪৮ জন আবেদন করেছেন। অর্থাৎ প্রতি আসনের জন্য এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৮ জন। ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৩ জুন থেকে।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা। ১০০ টাকা বাড়িয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ফি নির্ধারণ করা হয় ৪৫০ টাকা। এর পরের শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে আবেদন ফি করা হয় ৬৫০ টাকা। সর্বশেষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ফি এক লাফে ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ১০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, প্রথমবারের মতো লিখিত অংশ থাকায় ফি ‘সামান্য’ বাড়ানো হয়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০০ টাকা বাড়ানোর কারণ ছিল—প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার অতিরিক্ত খরচ। এবার এক লাফে ৩৫০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে গত বছরের ফিতে খরচ সংকুলান না হওয়ার কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।
বিগত তিন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৮ কোটি ১৭ লাখ ৫৩ হাজার, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৪১ হাজার এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২১ কোটি ৮ লাখ ২১ হাজার টাকা সংগ্রহ করে।
ভর্তি থেকে আয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা
১৭ জুন ২০২২, প্রথম আলো
২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি খাত থেকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো আয় করবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। আয়ের বড় একটি অংশ আসবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। সরকারি কলেজের চেয়ে বেসরকারিতে ভর্তি ব্যয় ১২০ গুণ বেশি। বেসরকারি কলেজের উন্নয়নের কথা বলে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এ বিপুল পরিমাণ টাকা নেওয়া হচ্ছে।.. ..
বিজ্ঞাপনে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে রাজধানীর ডেলটা মেডিকেল কলেজ থেকে বলা হয়, ভর্তি ফি ১৮ লাখ টাকা, প্রতি মাসের বেতন ৮ হাজার টাকা করে। গাজীপুরের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত সহকারী প্রথম আলোকে বলেন, আসনপ্রতি ভর্তি ফি ১৮ লাখ টাকা, প্রতি মাসের বেতন ৮ হাজার টাকা। ভর্তি ফি কে ঠিক করেছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে একাধিক কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। একই কথা বলেছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে বেসরকারি মেডিকলে কলেজের ভর্তি ফিসহ অন্যান্য ফি ঠিক করে দিয়েছিল। ওই বছর ১৫ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছিল, একজন শিক্ষার্থীর মোট ফি ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, ইন্টার্নি ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং টিউশন ফি ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। থাকা–খাওয়ার খরচ এ হিসাবের বাইরে।
তবে ভর্তি বাবদ কে কত টাকা নিচ্ছে, তার হিসাব কেউ রাখে না। এ ব্যাপারে কোনো নজরদারিও নেই। গতকাল চট্টগ্রামের একটি মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বলেন, গত শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সময় তাঁরা একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ হাজার টাকা প্রথম দুই মাসের বেতন। ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ইন্টার্ন ফি। এর বাইরে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতিবছর ৫০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে।
সে তুলনায় সরকারি মেডিকেল কলেজে ব্যয় অনেক কম। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি সাড়ে পনেরো হাজার টাকা। তাতে দেখা যাচ্ছে, সরকারি কলেজের চেয়ে বেসরকারিতে ভর্তি ব্যয় ১২০ গুণ বেশি।.. ..
উন্নয়নের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এখনো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উন্নয়নের জন্য এই ফি নিয়ে চলেছে। তবে এই টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যয় হয় কি না, তা দেখার ব্যবস্থা সরকারের নেই।
শিক্ষক হেনস্তায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সারাদেশে
২৮ জুন ২২, সমকাল
নড়াইলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজ শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় দেখা দিয়েছে উত্তেজনা; চলছে প্রতিবাদ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গতকাল সোমবার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শান্তিসভা করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার ইমাম এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্টজনকে নিয়ে এই সভা হয়।
এদিকে, শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানিয়ে এতে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় নড়াইলের জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করা হয় সমাবেশ থেকে। এই শিক্ষককে হেনস্তার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)। এক বিবৃতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় আ.লীগ নেতাকে অব্যাহতি
শিক্ষককে আটকে রেখে খোঁজা হচ্ছিল জুতার মালা
০২ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করার ঘটনায় বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওই কলেজের শিক্ষক আকতার হোসেনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আকতার হোসেন কলেজটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অধ্যক্ষকে অপদস্থ করার আগমুহূর্তে আকতার হোসেনের পাশে থাকা এক ব্যক্তি ‘জুতার মালা’ কোথায় জানতে চান। এ সময় আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এই মালা, মালাডা কই…?’ অন্য এক ব্যক্তি বলছিলেন, ‘এই শাহীনূর ভাই, মালাডা কোহানে?’ তখন অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে কলেজ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এই মালা, মালাডা কই’ বলা কণ্ঠটি আকতার হোসেনের। অবশ্য আকতার হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ওটা তাঁর কণ্ঠ নয়, অপর এক আওয়ামী লীগ নেতার কণ্ঠ।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ঘটনার সময় লাল টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা মধ্যবয়সী আকতার হোসেনের প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত গোটানো ছিল। পা ছিল খালি। ঘটনার আগমুহূর্তে কলেজ ভবনের কলাপসিবল গেটের সামনে তাঁকে হ্যান্ডমাইক নিয়ে উত্তেজিত ছাত্র-জনতার সামনে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এরপর কলেজের অধ্যক্ষ ও একাদশ শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীকে হেলমেট পরিয়ে বের করে আনার কথা বলেন কেউ কেউ। তখন আকতার হোসেন বলছিলেন, ‘কিচ্ছু দরকার নেই, কিচ্ছু হবে না।’
পুরো ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা নড়াইলের সভাপতি ও নড়াইল আবদুল হাই সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মলয় কুমার নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলেজের ভেতরে অধ্যক্ষবিরোধী শক্তি, যাঁরা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের ইন্ধনে অধ্যক্ষকে অপদস্থ করা হয়েছে বলে জোরালোভাবে কথা উঠেছে।’
গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের অধিকার
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১০ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ
০৪ মে ২২, সমকাল
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে এক বছরের ব্যবধানে আরও পেছাল বাংলাদেশ। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের (আরএসএফ) এবারের প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে দশ ধাপ অবনমন ঘটেছে বাংলাদেশের।
ইউনেস্কোর উদ্যোগে ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত হয়। ২০২২ সালের এই দিবস ধরে তথ্য প্রবাহ অবাধ করার লক্ষ্যে কাজ করে আসা আরএসএফ এই বছরের সূচক মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত সূচকে দেখা যায়, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম (স্কোর ৩৬ দশমিক ৬৩)। সূচকের চূড়ায় রয়েছে নরওয়ে। এ ছাড়া চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে একজন সাংবাদিক নিহত এবং তিনজন কারাবন্দি রয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী কাজ করা প্যারিসভিত্তিক স্বাধীন এই সংগঠনটির ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২তম, স্কোর ছিল ৫০ দশমিক ২৯। তার আগের বছর অবস্থান ছিল ১৫১তম।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নিচে আছে কেবল মিয়ানমার। দেশটি ১৭৬তম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের উপরে থাকা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত ১৫০, পাকিস্তান ১৫৭, শ্রীলঙ্কা ১৪৬, আফগানিস্তান ১৫৬, নেপাল ৭৬, মালদ্বীপ ৮৭ ও ভুটান ৩৩ তম স্থানে রয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটানের অবস্থান শীর্ষে।
ডিজিটাল জগৎ ‘নিয়ন্ত্রণে’ কঠোর সরকার
০৯ মে ২০২২, প্রথম আলো
ধরুন, বাজারে আগুন। খেপে গিয়ে আপনি ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম মেসেঞ্জারে দুই ছত্র লিখে পাঠালেন বন্ধুকে। বন্ধুটিও আপনার মতো ভুক্তভোগী। হতাশ হয়ে তিনি আপনার বক্তব্যসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করলেন একটি ব্যঙ্গাত্মক মিম। তাতে সরকারের কারও ছবি যুক্ত করে লেখা, ‘অনাহারে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ।’ মানুষের জমে থাকা এসব ক্ষোভ নিয়ে কাহিনিকার লিখলেন চিত্রনাট্য। সেটি প্রচারিত হলো অনলাইনভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম ওটিটিতে।
আপনি, আপনার বন্ধু, চিত্রনাট্যকার এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম—সবাই ঝুঁকিতে পড়তে পারে। কারণ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো আছেই, এর সঙ্গে আরও তিনটি আইন, প্রবিধান ও নীতিমালা যুক্ত হতে যাচ্ছে। কোনো না কোনো আইন অথবা প্রবিধানে আপনি মামলার মুখে পড়তে পারেন।
খসড়া এসব আইন ও প্রবিধানে এমন সব বিধান যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, যাতে বন্ধুর সঙ্গে অনলাইনে আপনার গোপন আলাপ প্রকাশ করতে বাধ্য থাকবে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি বিদেশ থেকে কেউ যদি আপনাকে আইন-প্রবিধানে নিষিদ্ধ কোনো বার্তা পাঠায়, তাহলে আপনাকে শনাক্ত করে দিতে বাধ্য থাকবে প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রস্তাবিত এই আইন, প্রবিধান ও নীতিমালা তিনটি হলো তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের তৈরি উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২ (ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট); বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তৈরি ‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস’ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান ও পরিচালনা নীতিমালা, ২০২১। এই তিন আইন, প্রবিধান ও নীতিমালা অংশীজনদের মতামত নেওয়ার পর চূড়ান্ত করা হবে। অবশ্য খসড়া নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
এসব খসড়া বিধিবিধানে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা জনশৃঙ্খলা রক্ষার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্টকারী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকারক, দেশীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধবিরোধী কোনো কনটেন্ট বা আধেয় প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সমস্যা হলো, এসব বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই অস্পষ্টতাই মানুষকে হয়রানির মুখে ফেলতে পারে। খসড়া আইন, প্রবিধান ও নীতিমালা কার্যকর হলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, বাক স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার যে অধিকার, তা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমনটা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রে। সব মিলিয়ে সরকার ডিজিটাল জগৎ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপের দিকেই যাচ্ছে।
মোটা দাগে প্রস্তাবিত আইন ও প্রবিধানে যা বলা আছে তা হলো, ইন্টারনেটভিত্তিক যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে এখন বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে ডেটা সেন্টার বা উপাত্ত ভান্ডার স্থাপন করতে হবে। ডিজিটাল দুনিয়ায় মানুষের প্রকাশ্য বিচরণ এবং হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারসহ ব্যক্তিগত যোগাযোগমাধ্যমে নজর রাখা যাবে। সরকার চাওয়া মাত্রই তথ্য সরবরাহ করতে হবে। আইনে জেল-জরিমানার বিধান থাকছে। সংক্ষুব্ধ হলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ কম।
৭৯% সাংবাদিকের মতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা: সিজিএস
১০ মে ২২, সমকাল
বাংলাদেশের শতকরা ৭৯ ভাগ সাংবাদিক মনে করেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করছে।
করোনার সময়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ-সিজিএসের জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় সিজিএস।
আ.লীগ প্রার্থী মুজিবুল
‘বাটন টিপে দিতে কেন্দ্রে আমার লোক থাকবে’
৩০ মে ২০২২, প্রথম আলো
ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের বাটন টিপতে না পারলে টিপে দেওয়ার জন্য নিজের লোক রাখবেন বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী। তিনি আরও বলেছেন, ইভিএম না থাকলে রাতেই সব ভোট নিয়ে ফেলতেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী নির্বাচনী সভায় এমন বক্তব্য দিয়েছেন। গত শনিবার দেওয়া এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
প্রায় ৪১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মুজিবুল হক চৌধুরী চট্টগ্রামের ভাষায় ভোটারদের উদ্দেশে হ্যান্ডমাইকে বলেন, ‘তো এখানে ইভিএম একটা করেছে সরকার। তো কী করতাম। একটু কষ্ট করে গিয়ে আঙুলে চাপ দিয়ে ভোট দিতে হবে। চাপ দিতে না পারলে চাপ দেওয়ার জন্য সেখানে আমি মানুষ রাখব। তো আমাকে একটু দোয়া করবেন সকলে।’
নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের হুঙ্কার আওয়ামী লীগ প্রার্থীর
‘আঙুল তোমার, টিপ দেবো আমি’
০৩ জুন, ২০২২, ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা
আবারও প্রকাশ্যে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের হুঙ্কার দিয়ে বসেছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী। তার দাবি, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি তাদের মতামতের ওপর নির্ভর করে। এমনকি, একজনের আঙ্গুলের ভোট আরেকজন দেওয়াই আসল সুষ্ঠু ভোট বলেও দাবি করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি সিকদারপাড়ার এক আঙিনায় নির্বাচনী সমাবেশে তিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে প্রথম আলো।
চাম্বাল ইউনিয়নের বাংলাবাজার ১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারে তার দেওয়া এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ৫৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মুজিবুল হক চৌধুরীকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলতে দেখা যায়, “এখানে সুষ্ঠু করি আমরা, অসুষ্ঠু করিও আমরা। আমরা বললে সুষ্ঠু, না বললে অসুষ্ঠু। যেদিকে যায় সেদিকে।”
পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “পৌরসভার ভোটের সময় আমাকে এক বিএনপি নেতা ফোন দিয়েছিল। সে বলল, ও ভাই আমাকে গালিগালাজ করছে। আমি বললাম, কী জন্য কথা বলছও বাবাজি। বাদ দাও। সে বলে, কেন সুষ্ঠু ভোট হবে বলেছে। আমি তাকে বললাম, সুষ্ঠু ভোট হবে তোমাকে কি লিখিত দিয়েছে সরকার? কেন ইভিএমে ভোট হবে। আমি বললাম, ইভিএম মানে কি জানো? তোমার আঙুল আমি টিপ দেব। ওটা হলো সুষ্ঠু ভোট।”
নির্বাচনে সবার ভোটদানের বিষয়টি অপ্রয়োজনীয় দাবি করে মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, “মুসলমানের কাজ হলো একজন নামাজ পড়বে, পেছনে পাঁচ হাজার নামাজ পড়বে। এত মানুষের ভোট দেওয়ার দরকারও নেই।”
সাইবার ক্রাইম: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় ফেসবুক মন্তব্যের জেরে জাবি শিক্ষার্থীর ৭ বছরের কারাদণ্ড
৬ জুন ২০২২, বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করার অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে।
সোমবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এই দণ্ড দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম।
দণ্ড পাওয়া শিক্ষার্থী শামসুল আলম বাবু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্র। ২০১৫ সালে ওই ঘটনার পর যে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার বিচারে সোমবার রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।
তবেই রায়ের প্রশ্নে বিবাদি পক্ষের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”একটি ফেসবুক আইডিতে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী নিয়ে লেখা একটি পোস্টে তিনি খুবই আপত্তিজনক বাজে কমেন্ট করেছিলেন। সেটা ভাইরাল হওয়ার পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে রিয়্যাক্ট হয়। ওই ছেলেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আটকে রেখেছিল। পরে ভিসির অনুরোধ এক ছাত্র মামলা করে। সেই মামলায় আজ তার সাজা হয়েছে।”
নাগরিক অধিকারকর্মী মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি
০৯ জুন ২০২২, প্রথম আলো
নাগরিক অধিকারকর্মী মিজানুর রহমানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর জুরাইন থেকে মিজানুর রহমানকে আটক করা হয়। প্রথমে তাঁকে শ্যামপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে।
ডিবির ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আশরাফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জুরাইনে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিজানুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন তাঁরা।
মিজানুর রহমান প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘থানায় আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। পরে ডিবি কার্যালয়ে এনে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেখানে আমার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করা হয়নি। আমার কাছে যা জানতে চেয়েছে, আমি যতটুকু জানি তা কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে দেওয়া আমার বক্তব্য উসকানিমূলক বলে মনে করছেন ডিবির কর্মকর্তারা। আমার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। আমি তাঁদের বলেছি, ঘটনার দেড় ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে আমি যা জেনেছিলাম, সেটাই বলেছি।’
তবে মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রথমে লুকোচুরি করে শ্যামপুর থানা-পুলিশ ও ডিবি। দুপুরে জুরাইন এলাকার একটি মার্কেটের সামনে থেকে মিজানুরকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রী। মিজানুরের এক বন্ধুও একই কথা বলেন।
মিজানুর বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। গত মঙ্গলবার জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টসহ পুলিশের তিন সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। উল্টো দিক থেকে আসা মোটরসাইকেল আরোহী এক দম্পতিকে সিগন্যালে আটকানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
মিজানুরের স্ত্রী শামীম হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা ১১টার দিকে তাঁর স্বামী একটা কাজে বাইরে বের হন। কিছুক্ষণ পর তিনি বাসায় ফোন করে জানান, ইউনিফর্ম পরা পুলিশ তাঁকে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তিনি জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজা মার্কেটের সামনে ছিলেন বলে জানান। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি আর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
শামীম হাশেমের ভাষ্যমতে, জুরাইনে পুলিশের ওপর জনতার চড়াও হওয়ার ঘটনা নিয়ে মিজানুর সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তাঁর আশঙ্কা, এ কারণেই হয়তো মিজানুরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। তবে পুলিশের ওপর হামলার সময় মিজানুর ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
মিজানুরের বন্ধু মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ স্থানীয় একটি মার্কেটের সামনে থেকে মিজানুরকে ধরে শ্যামপুর থানায় নিয়ে যায়। আটকের সময় তিনি নিজেই আমাকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। পরে আমি থানায় ছুটে যাই। তবে পুলিশ মিজানুরের সঙ্গে আমাকে দেখা করতে দেয়নি।’
মিজানুরকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম। পরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি। মিজানুরকে ডিবি আটক করেছে।’
তবে মিজানুরকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার আশরাফ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। তবে এই তালিকায় মিজানুর নামের কেউ নেই।’
হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলায় মোটরসাইকেলের চালক সোহাগ-উল ইসলাম রনি, তাঁর স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশান ভূঁইয়া, শ্যালক ইয়াসির আরাফাত ভূঁইয়ার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় রনিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন শ্যামপুর থানার ওসি।
মামলার বিষয়ে গতকাল বুধবার ফেসবুকে দুটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন মিজানুর। একটিতে তিনি লেখেন, দুটি ঘটনা ঘটবে বলা যায়। এক. মামলা–বাণিজ্য। দুই. মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ–বাণিজ্য। এমন একটি রাষ্ট্রে বাস করছি যেখানে এ ঘটনার নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু তদন্ত চাইব, সে অবস্থাও নেই।
নারায়ণগঞ্জে পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব ছড়ানোয় যুবক গ্রেপ্তার
০৯ জুন ২০২২, ঢাকা পোস্ট
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে গুজব ছড়ানোর দায়ে নাঈম খান নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। বুধবার (০৮ জুন) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাবিবনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নাঈম খান ওই এলাকার সুলপিনা গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। এ সময় একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
রূপগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এ এফ এম সায়েদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আইডিয়াল নাঈম নামে একটি আইডি থেকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে বলে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। স্ট্যাটাসটিতে প্রধানমন্ত্রী, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির ছবিসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
‘অধিকার’–এর নিবন্ধন নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জাতিসংঘের
১০ জুন ২০২২, প্রথম আলো
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ‘অধিকার’–এর নিবন্ধন নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারসংক্রান্ত হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। আজ শুক্রবার সংস্থার জেনেভা কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। সংস্থার মুখপাত্র রাবিনা সামদাসানি এ বিবৃতি পাঠান।
৫ জুন এনজিওবিষয়ক ব্যুরো অধিকারের নিবন্ধন নবায়নের আবেদন নামঞ্জুর করে। নিবন্ধন নবায়ন নিয়ে অধিকারের একটি রিটের বিষয়ে হাইকোর্টের রুলের ওপর এখন শুনানি চলছে। এর মধ্যেই সংগঠনটির আবেদন নামঞ্জুর করে এনজিও ব্যুরো।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন
২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে নজর প্রার্থীদের
১৩ জুন ২০২২, প্রথম আলো
দলহারা বিএনপির দুই নেতার সঙ্গে মেয়র পদে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য শক্ত লড়াই এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটি বিশেষ দিক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই ভোটের গুরুত্ব অনেক। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষমতার হিসাব-নিকাশের বাইরেও এই ভোটের গুরুত্ব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে আরও বেশি কিছু। আর তা হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের ২ হাজার ৩৮ কোটি টাকার অন্তত ২০টি বড় প্রকল্প।
কুমিল্লার একাধিক রাজনীতিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, এবার যিনি সিটি করপোরেশনের মেয়র হবেন, তিনি সিটির অবকাঠামোগত মৌলিক উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাবেন। ফলে এ নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরেও মোটা অঙ্কের ওই মেগা প্রকল্পগুলোর দিকেও জনপ্রতিনিধিদের একটা বিশেষ দৃষ্টি থাকছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১২টি প্রকল্প আছে। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে আধুনিক নগর ভবন নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থাপনা ‘সেবক কলোনি’ তৈরি, দখলমুক্ত করে পুরোনো গোমতীসহ ডিসি পুকুর ও রাজবাড়ী পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়নকাজ, ৩০৫ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ, ২০৪ কিলোমিটার নতুন আরসিসি ড্রেন নির্মাণ, ১৩ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার নতুন ফুটপাত নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণ করে মোস্তফাপুরে ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন এবং চকবাজার বাস টার্মিনালের উন্নয়ন, কবরস্থান ও শ্মশানের উন্নয়ন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।
ফেসবুকে কবিতা লিখে সরকারি চাকরি হারালেন কবি রহমান হেনরী
১৫ জুন ২০২২, জাগো নিউজ
সরকারপ্রধানকে নিয়ে ফেসবুকে ‘অশোভন’ কবিতা লিখে চাকরি হারালেন ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সাইদুর রহমান। তিনি ‘রহমান হেনরী’ নামে কবিতা লেখেন।
সোমবার (১৩ জুন) তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সাইদুর রহমান সর্বশেষ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে ওএসডি করা হয়।
চাকরি থেকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাইদুর রহমান ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা ৪৬ মিনিটে তার ফেসবুক আইডি ‘রহমান হেনরী’ থেকে ‘রহমান হেনরী’ ছদ্মনামে একটি কুরুচিপূর্ণ, অশোভন ও আপত্তিকর কবিতা প্রকাশ করেন। এটি একদিকে একজন সরকারি কর্মচারীর পক্ষে অশোভন ও অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ এবং অন্যদিকে এতে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর তাকে কৈফিয়ত তলব করা হয় এবং একই সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত শুনানি চান কি না, তা জানতে চাওয়া হয়।
অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর আলোকে তিনি লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আবেদন করেন। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয। লিখিত জবাব ও ব্যক্তিগত শুনানির বক্তব্য সন্তোষজনক না হওয়ায় বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, তদন্তে সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’-এর ৪ (৩)(ঘ) অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের গুরুদণ্ড আরোপের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর তাকে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেই নোটিশের জবাবও সন্তোষজনক হয়নি। একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও তিনি সরকারপ্রধানকে ইঙ্গিত করে যে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কবিতা প্রকাশ করেছেন, তা তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
পরে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাইদুর রহমানকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
কেন্দ্রে ঘোষিত ফলাফল পাল্টে গেল রাতে, নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও
১৬ জুন ২০২২, প্রথম আলো
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুটি ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থীর কেন্দ্রে ঘোষিত ফলাফল রাতে পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, টাকা নিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফলাফল পাল্টে দিয়ে পরাজিতদের বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। এর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ হয়েছে।
গতকাল বুধবার কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সব কটি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হয়। ভোট গ্রহণ শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার সাহেবাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার। ২ নম্বর ওয়ার্ডে কেন্দ্রে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী ৫৮ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন আপেল প্রতীকের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম। কিন্তু প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গভীর রাতে ফলাফল পাল্টে দেন। মোরগ প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে উপজেলা নির্বাচন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ফলাফল পাল্টে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রে যে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটা যোগ-বিয়োগে ভুল হয়েছিল তাই তখন আমিনুলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। পরে রাতে নির্বাচন অফিসে এসে পুনরায় যোগ দেওয়ার পর ভুলটা ধরা পড়েছে। পরে সঠিক ফলাফল দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে ‘চরমপন্থী প্রচার’ ঠেকাতে স্থানীয় বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ফেসবুকের
২৭ জুন, ২০২২, দেশ রুপান্তর
বাংলাদেশে ‘চরমপন্থী চিন্তাধারার’ কনটেন্ট শনাক্ত ও প্রচার মোকাবিলায় বাংলাদেশি ‘বিশেষজ্ঞদের’নিয়োগ দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক।
সোমবার দুপুরে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা আয়োজিত ‘ফাইটিং টেররিজম অ্যান্ড অর্গানাইজড হেট অ্যান্ড মেটাস অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় মেটার নীতিমালা এবং কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন করা বিষয়বস্তুর (কনটেন্ট) বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরা হয়।
ওয়েবিনারে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মেটার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ডেঞ্জারাস অর্গানাইজেশন বিভাগের প্রধান নওয়াব ওসমান জানান, বাংলাদেশে ফেসবুকের মাধ্যমে চরমপন্থী চিন্তাধারার প্রচার মোকাবেলায় বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং বাজার বোঝেন – এমন বাংলাদেশি ‘বিশেষজ্ঞদের’নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রশংসা করে দেওয়া পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয়। রাজনৈতিক পোস্টের জন্যও এখন ফেসবুকের নীতিমালা রয়েছে। সন্ত্রাসী কনটেন্টের ধরন বদলে গেছে। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া উন্নত করেছি। এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ফেসবুকে সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে তিনটি কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো হলো সার্চ রিডাইরেক্ট, কারেজ প্রজেক্ট ও রিজিলেন্সি ইনিশিয়েটিভ।’
ফেইসবুকে ধর্ম নিয়ে মন্তব্য: স্কুল শিক্ষকের ৮ বছরের কারাদণ্ড
৫ জুলাই ২০২২, ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
চট্টগ্রামের বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবীর সোমবার পাঁচ বছর আগের এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত দেবব্রত দাশ দেবু নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চৌমুহনি উচ্চ বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্মের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। হাতিয়া উপজেলাতেই তার বাড়ি।
রায়ে আট বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে তাকে। ওই টাকা দিতে না পারলে তাকে আরও ছয় মাসের কারা ভোগ করতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শিক্ষক দেবব্রত দাশ দেবু রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন। সাজা ঘোষণার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
“ওই স্কুল শিক্ষক দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত তাকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।”
প্রথমে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ, পরে জামিন দীপ্ত টিভির মালিকের
১৮ জুলাই ২২, সমকাল
ছয় বছর আগের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের এক মামলায় জামিন পেয়েছেন কাজী ফার্মস গ্রুপ ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী জাহেদুল হাসান। তবে এই মামলায় একই দিন সকালে তাকেসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের এক আদালত।
সোমবার চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জহিরুল কবিরের আদালত এ আদেশ দেন। তবে জাহেদুল হাসানের সঙ্গে কারাগারে পাঠানো অপর তিন আসামির জামিন আবেদন বিষয়ে শুনানি হবে মঙ্গলবার।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন দীপ্ত টিভির এমডি কাজী জাহেদুল হাসান, কাজী গ্রুপের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান, চিফ অপারেটিং অফিসার কাজী উরফি আহমেদ ও আনিসুর রহমান। শুনানি শেষে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। কিন্তু কিছুক্ষণ পর স্পেশাল পিটিশনের ওপর শুনানি করে কাজী জাহেদুল হাসানকে জামিন দেওয়া হয়।.. ..
আদালত সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ১৬ ও ২২ মার্চ দীপ্ত টিভিতে তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও তার ছেলে মুজিবর রহমানকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়। ওই সংবাদে তাদের সম্মানহানি হওয়ার অভিযোগ তুলে একই বছরের ৫ এপ্রিল তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানায় একটি মামলা হয়। নুরুল ইসলামের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সানোয়ারা গ্রুপের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি দায়ের করেন।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
১০ বছরের দণ্ড নিয়ে দেশ ছেড়েছেন হাজি সেলিম
০২ মে ২০২২, প্রথম আলো
দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ড নিয়ে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের সাংসদ হাজি সেলিম। গত শনিবার বিকেলে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক যান। হাজি সেলিমের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আজ সোমবার প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
হাজি সেলিম দেশে ফিরলেন
০৫ মে ২০২২, প্রথম আলো
দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংসদ হাজি সেলিম দেশে ফিরেছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি থাই এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
মিরপুর থেকে যুবক নিখোঁজ, পরিবারের সন্দেহ ‘কালো মাইক্রোবাস’
০৭ মে ২০২২, ঢাকা পোস্ট
রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বরের বসতি হাউজিংয়ের বাসা থেকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষার্থী ইফাজ আহমেদ চৌধুরী গত ১১ এপ্রিল বের হন। এরপর তিনি প্রথমে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে অবস্থিত একটি প্রাণী হাসপাতালের ভেতর ৩০ মিনিট থাকেন। সেখান থেকে মিরপুর-২ নম্বরের সনি সিনেমা হলের সামনে যান। তারপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ ইফাজের সন্ধান চায় তার পরিবার।
একে একে ২৭ দিন পার হলেও নিখোঁজ ইফাজের সন্ধান এখনও পায়নি পরিবার। পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তার অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ তাকে উদ্ধারে তদন্ত করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হকিস্টিক, রড, চাপাতি নিয়ে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
২৪ মে ২০২২, প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। হকিস্টিক, রড, চাপাতি ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রদল জানিয়েছে।
হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মানসুরা আলমসহ অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে ছাত্রদল জানিয়েছে। ছাত্রলীগ বলছে, এ হামলা ‘প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ’। দেশি অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করায় তাঁদের প্রতিহত করেছে ছাত্রলীগ।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ ঘটনা ঘটে৷ আহত ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদের এক বক্তব্যের পর গত রোববার সন্ধ্যায় টিএসসি এলাকায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা–কর্মীর ওপর ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হামলা করেন৷ ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও সাইফ মাহমুদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল৷ সেখানে যাওয়ার পথেই তাদের ওপর হামলা হয়।
হামলা করেছে ছাত্রলীগ, মামলার আসামি ছাত্রদল-বিএনপি নেতাকর্মী
২৮ মে, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও দেশের অন্যান্য জায়গায় দলীয় কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করতে গিয়ে মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সশস্ত্র নেতা-কর্মীদের হাতে বারবার হামলার শিকার হয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
ছাত্রলীগ লাঠি, লোহার রড এবং চাপাতি নিয়ে ছাত্রদলের ওপর হামলা করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একশরও বেশি আহত হন। যাদের বেশিরভাগই ছাত্রদল কর্মী।
অস্ত্রসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হলেও সরকারপন্থী এই ছাত্র সংগঠনের কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।
অতিরিক্ত আইজিপির বাসায় লাশ
মৌসুমীর মায়ের অশ্রু শুকিয়ে গেছে, দৃষ্টিতে নৈরাশ্য
০৩ জুন ২২, সমকাল
তিন বছর ধরে মেয়ে মৌসুমীর (১১) মুখখানা দেখতে পান না মাজেদা বেগম। শুনতে পান না ‘মা ডাক’। যখন দেখলেন, তখন প্রিয় সন্তানের দেহে আর প্রাণ নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তার বাড়িতে শত শত নারী-পুরুষের ভিড়। মৌসুমীর লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যখন এসে পৌঁছাল তখন রাত সাড়ে আটটা। অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনে জমায়েত হলো শত শত মানুষ। মেয়েহারা মাজেদার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। এ সময় উপস্থিত জনতা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবি জানায়।
এরপর লাশ দাফন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সামাজিক কবরস্থানে লাশ দাফনে বাধা দেয়। তারা লাশ পাঠিয়ে দিতে চায় যার মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজে গিয়েছিল মৌসুমী, সেই পুলিশের এসআই মাসুদ রানার বাড়িতে। লাশ দাফনে রাত ১০টা পর্যন্ত গ্রামবাসী এবং জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে প্রথম দফার আলোচনা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। এরপর ফের আলোচনায় বসেন সমাজপতি এবং জনপ্রতিনিধিরা। আলোচনা চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সিদ্ধান্ত আসে স্থানীয় কবরস্থানেই দাফন করা হবে মৌসুমীকে। রাত ১টার দিকে শেষ হয় দাফনকাজ।
রাজধানীর রমনায় পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) আবু হাসান মুহাম্মদ তারিকের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত মৌসুমী আক্তার। গত বুধবার বাসা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মৌসুমীর বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ঘাটাইল সদর ইউনিয়নের বাইচাইল গ্রামে। মায়ের অভিযোগ, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকায় গণপরিবহনে যৌন হয়রানি
অযাচিত স্পর্শ-ধাক্কা-বাজে মন্তব্যের শিকার ৪৭ শতাংশ নারী
০৩ জুন ২০২২, প্রথম আলো
গণপরিবহনে চলাচল করা কিশোরী, তরুণী ও নারীদের ৬৩ শতাংশ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হন। যৌন হয়রানির শিকার এই নারীদের প্রায় অর্ধেকসংখ্যক (৪৫ শতাংশ) পরবর্তী সময় মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
‘ঢাকা শহরে গণপরিবহনে হয়রানি: কিশোরী এবং তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব’ শিরোনামের এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এসব যৌন হয়রানির মধ্যে রয়েছে গণপরিবহনে ওঠা-নামার সময় চালকের সহকারীর অযাচিত স্পর্শ, বাসে জায়গা থাকার পরও যাত্রীদের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, বাজেভাবে স্পর্শ করা, ধাক্কা দেওয়া, বাজে মন্তব্য। জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ নারী ঝামেলা এড়াতে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেননি।
যৌন নিপীড়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। গণপরিবহনের চালক ও চালকের সহকারীর হাতেও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন অনেকে। নিপীড়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা বেশি।
আজ শুক্রবার ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই জরিপ প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে আঁচল ফাউন্ডেশন জানায়, জরিপ প্রতিবেদনে রাজধানী ঢাকার বাস, ট্রেন, লেগুনা, রাইড শেয়ারিং ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আজিমপুর, মিরপুর, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি , বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী নারী ও কিছুসংখ্যক গৃহবধূর ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।
শিক্ষক হত্যা: অভিযুক্ত শিক্ষার্থী কিশোর গ্যাং সদস্য, স্কুল কমিটির সভাপতির নাতি
২৮ জুন, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
আশুলিয়ায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমারকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী হজরত আলীর নাতি (ভাগ্নের ছেলে)।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী এলাকার কিশোরদের নিয়ে একটি ‘কিশোর গ্যাং’ পরিচালনা করে। মেয়েদের উত্যক্ত করার অভিযোগে কলেজে একাধিকবার তার বিচারও হয়েছে।
গত ২৫ জুন দুপুরে সাভারের আশুলিয়ায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার ছাত্রীদের আন্তঃশ্রেণি ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিদ্যালয়ের পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের শিক্ষক এবং শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি উৎপল কুমার সরকার (৩৭)। সে সময় ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী অতর্কিত একটি স্টাম্প দিয়ে উৎপল কুমার সরকারের ওপর হামলা করেন। স্টাম্প দিয়ে উপর্যুপরি উৎপল কুমারের পেট ও মাথায় আঘাত করে তাকে রক্তাক্ত করে। এরপর সেখান থেকে চলে যায়।
এরপর সেই স্টাম্প হাতে কলেজের পেছনের মাঠে ঘুরলেও কেউ তাকে আটক করতে যায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজধানীতে ইউআইইউর শিক্ষার্থী নিখোঁজ, জিডি
০৩ জুলাই, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াহিদ হাসান (২১) শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন।
এ ঘটনায় আজ রোববার মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন নিখোঁজ শিক্ষার্থীর বড় ভাই নাহিদ হাসান।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল সকাল ১০টায় ক্লাসের কথা বলে আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ের বাসা থেকে বের হন ওয়াহিদ। তার দুপুর ১২টায় ক্লাস ছিল। সাধারণত সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাসায় ফেরে। কখনো কখনো দেরি হলে সে ফোন করে জানায়।’
‘অজ্ঞাত ব্যক্তিরা’ আমিন হিলালীকে তুলে নিয়ে বক্তব্য রেকর্ড করে, আঙুলের ছাপ নেয়: পরিবার
৪ জুলাই ৪, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ৩০৪ কোটি টাকা পাচার মামলার আসামি আমিন মো. হিলালীকে গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরা থেকে ‘অজ্ঞাত ব্যক্তিরা’ তুলে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছে পরিবার।
পরে তার করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং সই ও আঙুলের ছাপ নেওয়ার পরে এনএসইউর মামলা সম্পর্কে তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়।
আমিন হিলালীর ভাই রফিকুল ইসলাম হিলালী আজ সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে এসব কথা বলেন।
আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী নিখোঁজের পর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করেন এবং গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করেন।
পরে রোববার দিবাগত রাতেই তার খোঁজ পায় পরিবার।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়া সাবেক র্যাব কর্মকর্তাকে হিসাব গুটিয়ে নিতে প্রাইম ব্যাংকের চিঠি
০৬ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়া র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে হিসাব গুটিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের বেসরকারি প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড।
যুক্তরাষ্ট্রসহ আর্থিক খাতের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এই অনুরোধ করা হয়েছে বলে জাহাঙ্গীর আলমকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছে প্রাইম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গত ফেব্রুয়ারিতে জাহাঙ্গীর আলম প্রাইম ব্যাংকে তাঁর চলতি হিসাব ও এটিএম কার্ড সচল আছে কি না, তা প্রাইম ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান। তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত মাসে এই চিঠি পাঠায়।
ফেসবুকে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ, নড়াইলে হিন্দু মন্দির-বাড়িতে আগুন
১৬ জুলাই, ২০২২, ঢাকা ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা
ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে নড়াইলের লোহাগড়ায় মন্দিরসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়ি ও দোকানে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকার বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া বাবাকেও আটক করেছে পুলিশ।
লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নারাণ চন্দ্র পাল জানান, শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকেল চারটার দিকে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এরপর দিঘলিয়া বাজারে ও সাহাপাড়ায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।
তিনি বলেন, “উত্তেজিত জনতাকে প্রশাসনের প্রতি আস্থা রেখে শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কেউ বিতর্কিত পোস্ট দিলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে, এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
স্থানীয়রা জানান, আকাশ সাহা নামে এক কলেজ ছাত্রের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দিঘলিয়ায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার বিকেলে এলাকাবাসী আকাশকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করে। পরে উত্তেজিত জনতা দিঘলিয়া বাজারের নিত্য দুলাল সাহা, অনুপ সাহা, অশোক সাহা, সনজিদ সাহার মুদি দোকান এবং গোবিন্দ কুণ্ডু ও গৌতম কুণ্ডুর মিষ্টির দোকান ভাঙচুর করে। এছাড়া সাহাপাড়ার গৌরসাহা, চায়না রানী সাহা, বিপ্লব সাহার বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তারা নাড়ু গোপালের বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এরপর উত্তেজিত জনতা রাত ৯টার দিকে আখড়াবাড়ী সার্বজনীন পূজামণ্ডপে আগুন ধরিয়ে দেয়।
যাতায়াত ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনা
ঈদের ছুটিতে সড়কে ঝরল ৬৫ প্রাণ
০৬ মে ২০২২, প্রথম আলো
বিধিনিষেধের ঘেরাটোপে কেটেছে বিগত দুই বছরের ঈদগুলো। এবার করোনার সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তাই ঈদ উদ্যাপনে ছিল না কোনো ধরনের বিধিনিষেধ। যাঁর যাঁর মতো সবাই আনন্দে মেতেছেন। নির্বিঘ্ন ঈদ উদ্যাপনের মধ্যে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনাও। ঈদ উপলক্ষে পাঁচ দিনের ছোটাছুটির মধ্যে সড়কে প্রাণ গেছে অন্তত ৬৫ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। গত পাঁচ দিনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন।
ঈদযাত্রার চেয়ে এবার ঈদে বেড়াতে বেরিয়ে সড়কে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ঈদের পরের দিন—বুধবার। ওই দিন দুর্ঘটনায় সারা দেশে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই উঠতি বয়সী কিশোর ও তরুণ। আর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টা পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বেশি মৃত্যু ঈদের পরের দিন
ঈদের ছুটি শুরু হয় ১ মে থেকে। অন্যবারের চেয়ে স্বস্তি ছিল এবারের ঈদযাত্রায়। মহাসড়কগুলোতে তেমন কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। ছুটি শুরুর দিন সড়কে তেমন প্রাণ ঝরেনি। ছুটির প্রথম দুই দিনে অর্থাৎ গত রোববার ও সোমবার সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন করে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই দুই দিনের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে বাগেরহাটের ফকিরহাটে রোববার সকাল পৌনে নয়টার দিকে। যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। আহত হন ১৫ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বাস ও ট্রাকের দুই চালক এবং ১০ মাস বয়সী এক শিশু ছিল।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এক লাফে ১৩ জনে দাঁড়ায় ঈদের দিন—মঙ্গলবার। এদিন দেশজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ওই দিন গাজীপুরে মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজনের প্রাণ যায়। বিকেল চারটার দিকে কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর উড়ালসড়কের পূর্ব পাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বাস এবং এখান থেকে সাত কিলোমিটার দূরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে তাঁরা নিহত হন। এর মধ্যে দুজন নারী ছিলেন।
ঈদের পরের দিন বুধবার বেড়ে যায় মানুষের বেড়ানো আর ছোটাছুটি। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ে সড়কে প্রাণহানিও। সড়কগুলোতে ওই দিন ২৩ জন নিহত হন। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে স্বামী–স্ত্রীসহ পাঁচজন নিহত হন।
অর্ধেক মৃত্যু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়
ঈদ উদ্যাপনের মধ্যে এখন পর্যন্ত যেসব মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মৃত্যুই ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। সড়কে পাঁচ দিনে নিহত ৬৫ জনের মধ্যে ৩১ জনই ছিলেন মোটরসাইকেলের চালক বা আরোহী। অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৪৮ শতাংশই ছিলেন হয় মোটরসাইকেলের চালক, নয়তো আরোহী। মোটরসাইকেলের এসব দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে টাঙ্গাইল, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, বরিশাল, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুরসহ দেশের আরও কয়েকটি জেলায়।
ঈদের ছুটিতে দুর্ঘটনা
চার দিনেই আট শর বেশি রোগী পঙ্গু হাসপাতালে
০৭ মে ২০২২, প্রথম আলো
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঈদের আগের দিন সোমবার থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চার দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আট শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। এর একটি বড় অংশ বয়সে তরুণ, যাঁরা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। মূলত ঈদের সময় সড়ক ফাঁকা থাকে। ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচলে দুর্ঘটনা বাড়ে।
পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে এখানে দিনে গড়ে ২০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তাঁদের একটি অংশ থাকেন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। তবে এবার ঈদের আগের দিন (সোমবার) থেকে শুরু করে পরবর্তী তিন দিন প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী এসেছেন গড়ে ২০০ জনের বেশি। ঈদের পরদিন বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আড়াই শতাধিক রোগী এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জনের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।
১০ দিনে বাইক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৭, অর্ধেকেরও বেশি অপ্রাপ্তবয়স্ক
০৬ মে ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
ঈদযাত্রা ও ঈদ উদযাপনের গত ১০ দিনে সারাদেশে ৯৭ জন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫১ জনই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। অর্থাৎ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৫৭ শতাংশের বয়স ছিল ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত সারাদেশে ১৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন মোট ২৪৯ জন। নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন ৯৭ জন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। নিহত ৫১ জনের বয়স ছিল ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৫৭ শতাংশ ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এতো বেশি নিহতের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ঈদযাত্রায় গণপরিবহনের বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়েছে। তাই দুর্ঘটনাও বেশি হয়েছে।
ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৬
১২ মে ২০২২, প্রথম আলো
দেশে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে যাত্রাপথে ১৪ দিনে ২৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত দেড় হাজার মানুষ। নিহত যাত্রীদের মধ্যে ৩৮ জন নারী ও ৫১ শিশু রয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত সংঘটিত হয় এসব দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। রোড সেফটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫৬ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহত মানুষের ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ৫৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন, অর্থাৎ ১৩ শতাংশ।
এ সময় ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে এবং দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন তিনজন।
মিরপুরে মেট্রোরেল লাইনের ব্লকের ইট পড়ে পথচারী নিহত
৩০ মে ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা
মিরপুর-১১-তে নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের নির্মাণ সাইটে ব্লকের ইট মাথায় পড়ে একজন পথচারী নিহত হয়েছেন।
সোমবার দুপুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচজন পথচারী আহতও হয়েছেন।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, নিহত পথচারীর নাম মাহবুবুর তালুকদার (৪৯)।
পারভেজ ইসলাম বলেন, ‘মেট্রোরেলের ২০৩ নম্বর পিলার-সংলগ্ন মেট্রোরেলের উপরের দেওয়াল ভেঙে ব্লকের ইট নিচে পড়ে মাহবুবুর তালুকদারের মৃত্যু হয়েছে।
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১
০৫ জুন ২০২২, প্রথম আলো
সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোয় ভয়াবহ বিস্ফোরণে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হয়েছেন।
সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম প্রথম আলোকে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে অনেকে চলে গেছেন। ৭০ জন চিকিৎসাধীন। আর ৪ জন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিকদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রয়েছেন।
কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ
মালিকপক্ষ আসেনি, কী কেমিক্যাল জানতে পারছে না উদ্ধারকারীরা
০৫ জুন ২০২২, প্রথম আলো
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে গতকাল শনিবার রাতে। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত ডিপোর মালিক বা কোনো কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেননি।
মালিকপক্ষের কেউ না থাকায় কনটেইনার ডিপোতে কী ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে, তা জানতে পারছে না ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। ফায়ার সার্ভিস বলছে, এ কারণে তারা উদ্ধার তৎপরতায় বেকায়দায় পড়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কনটেইনার ডিপোটির মালিকপক্ষের কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি। এখানে কী ধরনের কেমিক্যাল আছে, তা বলা যাচ্ছে না। পানি দিয়ে সব কেমিক্যালের আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে। এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৬ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মাইন উদ্দিন।
পরমাণু কমিশনের ৩ কর্মকর্তা নিহত: ধাক্কা দেওয়া বাসটির ছিল না ফিটনেস-রোড পারমিট
৫ জুন, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ঢাকার সাভারের বলিয়ারপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পরমাণু শক্তি কমিশনের ৩ বিজ্ঞানীসহ ৪ জন নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত সেইফ লাইন পরিবহনের বাসটির রোড পারমিট ও ফিটনেস ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
সাভার হাইওয়ে পুলিশের কাছ থেকে বাসটির নম্বর নিয়ে সাভার বিআরটিএ অফিসে যোগাযোগ করা হলে এমন তথ্যই পাওয়া যায়।
বিপজ্জনক পণ্য তদারকিতে ঘাটতি থাকছেই
০৭ জুন ২০২২, প্রথম আলো
কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিকের মতো বিপজ্জনক পণ্য আলাদাভাবে সংরক্ষণ করার কথা। আবার প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে এসব পণ্যের ব্যবস্থাপনার বাধ্যবাধকতা আছে। আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী, ২০০৪ সাল থেকে এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না।
এ পরিস্থিতিতে প্রায় পাঁচ বছর আগে কনভেনশন অনুযায়ী বিধিবিধানগুলো মানা হচ্ছে কি না, তা তদারকির জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করেছিল আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা। সেই কর্তৃপক্ষও গঠন করা হয়নি।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর এই বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ ৪১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক।
তবে শুধু বিএম ডিপোই নয়, চট্টগ্রামের বেসরকারি আরও ১৮টি ডিপো এবং বন্দরগুলোতে বিপজ্জনক পণ্য সুরক্ষা মেনে ওঠানো–নামানো, পরিবহন ও সংরক্ষণের যথাযথ তদারকি হচ্ছে না। দ্রুত তদারকি কর্তৃপক্ষ গঠন করা না হলে সামনে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন এ খাতের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা।
বিস্ফোরণের প্রভাব
বাতাসে পানিতে গ্যাস শরীরে প্রতিক্রিয়া
০৭ জুন ২২, সমকাল
সীতাকুণ্ড কাঁপানো বিস্ফোরণের আওয়াজ গেছে আশপাশের সবার কানে। তবে বিস্ফোরণের মূল ঘাতক রাসায়নিক হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নীরবে পরিবেশের বিপদ ডেকে আনছে, তা চোখে ধরা দিচ্ছে না কারোর। সেটা খুব বড় মাত্রায় না হলেও প্রচ্ছন্ন একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে মানবশরীরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসায়নিক বিস্ফোরণের কারণে সীতাকুণ্ডের আকাশে ছড়িয়ে গেছে অ্যাসিডিক গ্যাস। এটি মিশেছে পানিতেও। দূষিত এই পানি বঙ্গোপসাগর ও খালে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য বাঁধ দিয়েছে সেনাবাহিনী। তবে বাতাস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আছে কার?
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বিস্ফোরণের পর বাতাসে ছড়িয়ে পড়া অ্যাসিডিক গ্যাস ছড়াচ্ছে সীতাকুণ্ডের আনাচে-কানাচে। তীব্র তাপদাহ সৃষ্টি করেছে গ্যাসটি। এই অ্যাসিড বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় কমেছে অক্সিজেনের মাত্রা। ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, শরীর ও চোখে চুলকানি দেখা দিয়েছে। পরিবেশবিদ ও গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, দূষিত পানি অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে গেলে জীবন-মৃত্যুর সংকট সৃষ্টি হতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তর এরই মধ্যে পানির নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাকাজ শুরু করেছে।
হাটহাজারীতে স্মার্ট গ্রুপের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারখানা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ
০৭ জুন ২০২২, প্রথম আলো
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে স্মার্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আল–রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেডের হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড তৈরির কারখানা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের বিক্ষোভের মুখে সোমবার সন্ধ্যার পর কারখানার ফটক বন্ধ করে সেখান থেকে এই রাসায়নিক আনা–নেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
সীতাকুণ্ডে যে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ৪১ জন প্রাণ হারিয়েছেন, সেই ডিপোর মালিকানায় রয়েছে স্মার্ট গ্রুপ। সেখানে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কনটেইনারে বিকট শব্দে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। আল–রাজী কেমিক্যালের হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড উৎপাদনের কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হাটহাজারীর দক্ষিণ পাহাড়তলীর ঠান্ডাছড়ি এলাকায়।
কারখানাটি বন্ধ করতে ২০০–৩০০ স্থানীয় বাসিন্দা সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক দফায় বিক্ষোভ করেন। কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে সেটা বন্ধা করার দাবিতে স্লোগান দেন তাঁরা।
বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার–অক্সাইডের কনটেইনার বিস্ফোরণে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। এখানে যেহেতু এই রাসায়নিক উৎপাদন করা হয়, তাতে এটা সীতাকুণ্ডের ডিপো থেকেও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
চমেকে আহতদের দেখতে যাওয়া জোনায়েদ সাকির উপর ছাত্রলীগের হামলা
৭ জুন ২০২২, মানবজমিন
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের দেখতে এসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী। এতে তিনিসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় জোনায়েদ সাকির মুখ থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। হামলার পর হাসপাতালেই তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এর আগে জরুরি বিভাগের গেটে জোনায়েদ সাকি সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেন।
হামলার শিকার সাকিসহ অন্যান্যদের নগরের একটি বেসরকারি একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা তারা। জোনায়েদ সাকি গণমাধ্যকে বলেন, সকালে কয়েকজন নেতাকর্মী মিলে আমরা সীতাকুণ্ডে গিয়েছিলাম। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের দেখেছি। এরপর আমরা গাড়িতে উঠতে যাবো এমন সময় হামলা শিকার হই। তারা ইট দিয়ে হামলা করেছে।
আগুনে মানুষ মরে শাস্তি হয় না
০৮ জুন ২২, সমকাল
আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়ায়, কিন্তু সেই ঘটনায় মামলা হলে তদন্ত চলে ধীরগতিতে। এসব আগুনে শত শত মানুষ মরলেও আইনি মারপ্যাঁচে মামলা হয় দুর্বল। শেষ পর্যন্ত আর অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। এর আগে মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম হিমঘর থেকে বের করে আদালত পর্যন্ত নেওয়া গেলেও সাক্ষীর অভাবে বিচার কার্যক্রমেও থাকে শম্বুকগতি।
গত ১২ বছরে দেশে বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, কোনোটিতেই শাস্তি পায়নি অভিযুক্তরা। যদিও বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে ওইসব আগুনে গাফিলতির বিষয়টি বেরিয়ে আসে। পুরান ঢাকার নিমতলী, চকবাজারের চুড়িহাট্টা, আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনস, নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুড ফ্যাক্টরি এবং রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ার- এই পাঁচটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সেসব মামলার কার্যক্রম বিশ্নেষণ করে এমন তথ্য মিলেছে। যদিও কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেই অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে বলে তথ্য নেই।.. ..
আগুনের ঘটনায় দায়ের করা কয়েকটি মামলার বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর যেসব মামলা হয়, সেক্ষেত্রে সাক্ষী পাওয়া যায় না। ভবনের অবকাঠামোগত ত্রুটি, রাসায়নিকের অবৈধ গুদাম বা অবহেলায় বৈদ্যুতিক গোলযোগের ঘটনায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহত হলে রাজউক, বিস্ম্ফোরক অধিদপ্তর এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা তা আদালতে সাক্ষী দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে এসব সংস্থারও দায় থেকে যায়। এজন্য তাদেরও সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যায় না। তা ছাড়া নিহতের কোনো স্বজন আদালতে সাক্ষ্য দিলেও ভবন মালিক বা অভিযুক্তের অবহেলা প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর অনেকটা লোক দেখানো মামলা হয়। তদন্ত কার্যক্রম চলাকালেই অনেক ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ ক্ষতিগ্রস্তদের কিছুটা ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তাও অভিযুক্তের দোষ প্রমাণে গভীরে যান না। শুধু আইনি কাঠামো ঠিক রাখতে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দেন। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাকে সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলো সহায়তাও করে না। যেসব বড় ঘটনায় মামলা হয়, সেখানে আসামি রাখা হয় অজ্ঞাতনামাদের। ঘটনার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে অভিযুক্ত করা হয় না। কোনো কোনো ঘটনায় দুই-একজনের নাম থাকলেও মামলার বিবরণ এমনভাবে লেখা হয়, তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করা সম্ভব হয় না।
আলোচিত আগুনের মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা :খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালের নিমতলীতে লাগা আগুনে ১২৪ জন প্রাণ হারালেও ওই ঘটনাতে কোনো মামলাই হয়নি। শুধু বংশাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর হয়। ওই জিডিরও তদন্ত হয়নি। ১২ বছর পর এসে ওই জিডির তথ্যও ভুলে গেছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
অবশ্য ওই সময়ে বংশাল থানায় দায়িত্ব পালনকারী একজনক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ বা এরজন্য দায়ী কারা তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মামলা হয়নি। বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলা হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা হয়নি।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশন্সের কারখানায় আগুনে ১১৭ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, তাঁর স্ত্রীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরের বছর পুলিশ চার্জশিট দিলেও গত ৮ বছরে বিচার কাজ শেষ হয়নি। ওই মামলায় ১০৪ জন সাক্ষী থাকলেও মাত্র ৯ থেকে ১০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্য সাক্ষীদের এখন আর খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। চুড়িহাট্টায় ৭১ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের মামলায় পুলিশ আদালতে চার্জশিট দিলেও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।
এদিকে গত বছরের ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় আগুনে ৫১ শ্রমিকের নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে। গত ১১ মাসেও তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়নি।
এ ছাড়াও ২০১৯ সালের মার্চে বনানীতে এফআর টাওয়ারের আগুনে ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় দায়ের মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ। তবে তিন বছর পার হলেও আদালতে চার্জশিট দেয়নি সংস্থাটি। ওই মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান সমকালকে বলেন, তাঁরা মামলার তদন্ত কাজ শেষ করেছেন। কিন্তু ভবনটির অবকাঠামোগত নানা বিষয়ে রাজউকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য দরকার। এসব কারিগরি তথ্য চার্জশিটে উল্লেখ করতে হবে। সেই তথ্য পেতে রাজউকে চিঠি দিলেও কোনো সাড়া মিলছে না। এজন্য তাঁরা আদালতে তা জমা দিতে পারছেন না।
তদারকি সংস্থা নির্বিকার
০৮ জুন ২২, সমকাল
সমুদ্র পথে দেশে রপ্তানি পণ্যের শতভাগ শুল্ক্কায়ন হয় বেসরকারি ১৯টি কনটেইনার ডিপোতে। ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যেরও শুল্ক্কায়ন করে এসব ডিপো। এসব পণ্যের মধ্যে যেমন রয়েছে তুলা, তেমনি রয়েছে বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থও। আছে দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখা তৈরি পোশাকও। চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প হিসেবে এই ১৯টি ডিপোকে নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে লাইসেন্স দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ডিপো থেকে রপ্তানি পণ্য যাতে দ্রুত বন্দরে যায়, সে বিষয়টিতে নজর রাখে বন্দর কর্তৃপক্ষ। স্পর্শকাতর এসব স্থাপনায় নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে কলকারখানা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। এ ছাড়া বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ নিরাপদে সংরক্ষণ ও পরিবহন মনিটরিংয়ের দায়িত্ব রয়েছে নৌ মন্ত্রণালয়ের। রয়েছে আইন, বিধিমালা; কিন্তু কখনোই যথাযথ দায়িত্ব পালন করে না এসব সংস্থা। মাঝে মাঝে রুটিন ওয়ার্ক করেই দায় সারছে সব তদারকি সংস্থা।
কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল তোড়জোড় শুরু হয় তাদের। পরে আবার তারা চলে যান ‘শীতঘুমে’। তাদের এমন নির্বিকার ভূমিকায় শিল্পকারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠানে বাড়ছে দুর্ঘটনা। বাড়ে লাশের সংখ্যাও।
সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড: কম্বোডিয়ায় অগ্নিকাণ্ডের পরও সতর্ক হয়নি আল-রাজি কেমিক্যাল
১২ জুন ১২, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
গত মে মাসে কম্বোডিয়াগামী একটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয়েছিল চট্টগ্রামের আল-রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সকে।
তাদের পাঠানো হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের চালানে অননুমোদিত প্লাস্টিকের জেরি ক্যান (ছোট কনটেইনার) ব্যবহার করার কারণেই আগুন লেগেছে জানিয়ে গত মে মাসের শেষের দিকে সতর্কও করা হয়। কিন্তু তা আমলে না নিয়ে একই জেরি ক্যানে ৩৩ কনটেইনারে প্রায় ৪০০ টন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড আনা হয় সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে। এসব কনটেইনার বিস্ফোরণ থেকেই ৪ জুন ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কোনো দাহ্য পদার্থ নয়। তবে এটি আগুনের তীব্রতা বাড়াতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
আগুন এই হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি জেরি ক্যানগুলোর সংস্পর্শে আসায় সেখানে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে, যা আগুনের তীব্রতা অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। ফলাফল, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩ দিন সময় লেগে যায় এবং অন্তত ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়।
এই দুর্ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল আল-রাজির। কারণ এর আগে গত মে মাসে একইভাবে কনটেইনারে আগুন লাগার ঘটনায় মার্কস (কম্বোডিয়া) লিমিটেড এর একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পরিবহন ও সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক নিয়ম মানার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
ডিপোর মালিকেরা নিয়ম মানেননি
১৩ জুন ২০২২, প্রথম আলো
বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় যে নীতিমালা বা নিয়ম রয়েছে, তা মানা হতো না চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে। যে কারণে রাসায়নিকের কনটেইনারের পাশে রাখা হতো পোশাকসহ অন্য পণ্যের কনটেইনার। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া সব শর্তও ডিপো কর্তৃপক্ষ পূরণ করেনি। অন্যদিকে ডিপো কর্তৃপক্ষ যে নীতিমালা মানছে না, সেই তদারকিও সরকারি সংস্থাগুলো ঠিকমতো করেনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দুটি নীতিমালায় থাকা বিভিন্ন শর্ত মানার পর কনটেইনার ডিপো পরিচালনার লাইসেন্স দেওয়া হয়। দুটি নীতিমালাতেই বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থার ‘আইএমডিজি কোড’ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মূলত বিপজ্জনক পণ্য থেকে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অর্থাৎ সুরক্ষা নিশ্চিত করার পদক্ষেপের কথা বলা আছে এই কোডে।
আর নিরাপত্তার জন্য আইএসপিএস কোড (জাহাজ ও বন্দর স্থাপনার নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম) বাস্তবায়নও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার জন্য এই দুটি কোড ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, অগ্নি ও দুর্যোগবিমা, ডিপো থেকে বন্দরে পণ্য পরিবহনের বিমা বাধ্যতামূলক। শ্রম আইনও মানা বাধ্যতামূলক। ডিপোটি সব ধরনের ছাড়পত্র পেয়েছে।
তবে ছাড়পত্রের শর্ত পূরণ করার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে ডিপো কর্তৃপক্ষ তা মানেনি। আগুন-বিস্ফোরণের পর সরকার গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটির প্রাথমিক অনুসন্ধান, দুর্ঘটনার আগে লাইসেন্স প্রদানকারী সংস্থার পরিদর্শন প্রতিবেদন ও প্রথম আলোর অনুসন্ধানে ডিপো পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্তত ১০ ধরনের ঘাটতি থাকার তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
বিএম কনটেইনার ডিপো
দুর্ঘটনার দিন টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছিলেন শ্রমিকরা
০৯ জুন, ২০২২, বণিক বার্তা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোয় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের পর এটি পরিচালনা-সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য উঠে আসছে। ডিপোয় রাসায়নিকভর্তি কনটেইনার রাখার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল কিনা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন ছিল এসব প্রশ্ন তো উঠছেই। এবার সেখানে শ্রমিকদের কখনো কখনো টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করানো হতো বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। সেখানে শ্রমিকদের প্রতিটি পালার সময়সীমা ছিল ১২ ঘণ্টা। দুর্ঘটনার দিনও শ্রমিকরা টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক শ্রমিক বণিক বার্তাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শ্রমিকরা জানান, বিএম কনটেইনার ডিপোয় শ্রমিকদের ১২ ঘণ্টা হিসেবে কাজ করতে হতো। তবে যেদিন শিফট বা পালা পরিবর্তন হতো, সেদিন টানা ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হতো। দুর্ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ রোববার শিফট পরিবর্তনজনিত কারণে শনিবার একটানা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন শ্রমিকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারী যানবাহন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত পরিবহন শ্রমিকদের এভাবে টানা দায়িত্ব পালন করা ঝুঁকিপূর্ণ।
২০টি কনটেইনার ডিপো
ঝুঁকি আছে, ঘাটতিও অনেক
১৫ জুন ২০২২, প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া বিভিন্ন পণ্যের ব্যবস্থাপনার (কনটেইনারে পণ্যবোঝাই) মূল কাজটি হয় বেসরকারি ২০টি ডিপোতে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে সীতাকুণ্ড এলাকার মধ্যে এসব ডিপোর অবস্থান। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের পর অন্য ডিপোগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এর মধ্যে ১০টি কনটেইনার ডিপোর ভেতরে নিজস্ব ডিজেল পাম্প থাকার তথ্য প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার স্থাপনায় ডিজেল পাম্প থাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
অন্যদিকে কমবেশি সব ডিপোতেই অগ্নিনির্বাপণ–ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। এসব ডিপোর কোনো কোনোটি শর্ত পূরণ না করায় তাদের লাইসেন্স নবায়নের বিষয়টি আটকে আছে। এ ছাড়া বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও প্রতিটি ডিপোতেই কমবেশি ঘাটতি রয়েছে। কাস্টমস, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি ও ডিপো সূত্র এসব বিষয় প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ডিপোতে নিজস্ব ব্যবহারের জন্য ডিজেল পাম্প বসাতে হলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অনাপত্তিপত্র প্রয়োজন। বিপিসি সূত্র বলছে, বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেড, গোল্ডেন কনটেইনার লিমিটেড, মেসার্স এছাক ব্রাদার্স লিমিটেড, পোর্টলিংক লজিস্টিকস সেন্টার লিমিটেড, এসএপিএল (পূর্ব ও পশ্চিম ইউনিট), ওশান কনটেইনার লিমিটেড, কেডিএস লজিস্টিকস লিমিটেড, ইনকনট্রেড লিমিটেড, ইস্পাহানি সামিট অ্যালায়েন্স টার্মিনাল লিমিটেড ও নেমসান কনটেইনার ডিপো লিমিটেড—এই ১০টি ডিপোতে ডিজেল পাম্প রয়েছে। তবে এসব ডিপোর কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিয়ে ডিজেল পাম্প বসানো হয়েছে। বিপিসির কাছে অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বিষয়টি তাঁদের জানা নেই।
বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণেই বিস্ফোরণ
০৪ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
রাসায়নিকসহ বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাসায়নিকসহ বিপজ্জনক পণ্যের কনটেইনার এবং পোশাকসহ অন্য রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার ডিপোতে একসঙ্গে রাখা হতো। বিপজ্জনক পণ্য আলাদা রাখা হলে এত মানুষ হতাহত হতো না। আবার ধোঁয়া বের হওয়ার সময়ই ওই কনটেইনারটি নিরাপদে সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেত না।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিপোতে যত্রতত্র ম্যাচবক্স পড়ে ছিল। নিরাপত্তা ও সুরক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দায়দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। আবার ডিপোতে আগুন নির্বাপণের সরঞ্জাম ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম) থাকলেও ফায়ার হাইড্রেন্ট (আগুন নেভাতে পানি সরবরাহের লাইন) ছিল না। আগুন নিয়ন্ত্রণরের জন্য ডিপোতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবল ছিল না। প্রশিক্ষিত জনবল থাকলে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারত।
গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের কাছে ২৪ পৃষ্ঠার (সংযুক্তি ছাড়া) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪ জুন রাত সাড়ে আটটার দিকে বিএম ডিপোর ভেতরে ওয়ান শিপিং লাইনের একটি কনটেইনারে প্রথমে ধোঁয়া দেখা যায়। ডিপোর ছাউনির (রপ্তানি পণ্য রাখার স্থান) ১৪ নম্বর দরজার সামনে চার নম্বর সারিতে ওই কনটেইনার ছিল। প্রথমে ধোঁয়া দেখা গেলেও আগুন ধরেনি। আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর এবং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয় রাত সাড়ে নয়টার দিকে। তদন্ত কমিটির তথ্য বলছে, ডিপোতে রাসায়নিকের কনটেইনার থাকার বিষয়টি ‘সঠিকভাবে’ ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়নি।
তবে কী কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত কমিটি। সম্ভাব্য তিনটি কারণের কথা বলেছে তারা। এই তিনটি হলো—কনটেইনারের ধোঁয়া থেকে, শ্রমিক–কর্মচারীদের সিগারেটের আগুন থেকে বা অন্তর্ঘাতমূলক কোনো ঘটনা এটি।
বিস্ফোরণের ১০০টি কনটেইনার ছিন্ন–বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাকে নাশকতা বা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ বলে সন্দেহ করছে তদন্ত কমিটি। তারা প্রতিবেদনে বলেছে, হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রজ্জ্বলিত হয় না। আগুনের সংস্পর্শ ছাড়া এটিতে আগুন ধরে না। তবে ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আগুন ধরতে পারে।
দুর্ঘটনার পরদিন চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ব্যবস্থাপক মো. কুদরত ই খুদাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কার্যপরিধি ছিল দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা, দুর্ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ প্রণয়ন।
উল্লেখ্য, গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে আগুন থেকে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ৪৯ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন দুই শতাধিক। বিস্ফোরণের ডিপোর একাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ একটি করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া ডিপো কর্তৃপক্ষও তদন্ত কমিটি করে। চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়া অন্য কোনো তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
দায়দায়িত্ব
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার সময় ডিপোতে আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের (বিএম ডিপোর দুই অংশীদারের মালিকাধানীন প্রতিষ্ঠান) হাইড্রোজেন পার–অক্সাইডবাহী ৩৭টি কনটেইনার ছিল। রপ্তানির জন্য রাখা এসব কনটেইনার ডিপোতে রাখা হয়েছিল। ডিপো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পরও ১২টি কনটেইনার অক্ষত রয়েছে।
তদন্ত প্রতি্বেদনে আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সকেও দায়ী করা হয়েছে। আল রাজী কেমিক্যাল স্মার্ট গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। বিএম ডিপোর মালিকানায় রয়েছে স্মার্ট গ্রুপও। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইড্রোজেন পার–অক্সাইডের চালানগুলোর রপ্তানি নিয়ে জটিলতা ছিল। দুর্ঘটনার আগেই ২ জুন এসব কনটেইনার ডিপো থেকে কারখানায় ফেরত নেওয়ার কথা ছিল। সেটি তারা করেনি।
আবার হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড যেসব জারে রাখা হয়েছিল, সেগুলোর আন্তর্জাতিক মান সনদ (ইউএন সার্টিফায়েড) ছিল না। আন্তর্জাতিক মান সনদধারী জারে হাইড্রোজেন পার–অক্সাইডের মতো বিপজ্জনক পণ্য পরিবহন বাধ্যতামূলক হলেও আল রাজী কেমিক্যাল তা করেনি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি দায়দায়িত্ব এড়াতে পারে না বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চার সুপারিশ
তদন্ত প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে মোটাদাগে চার ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা প্রণয়ন। যেসব ডিপোর সক্ষমতা থাকবে, শুধু সেগুলোকে বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিপজ্জনক পণ্য নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার জন্য সব ডিপোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করার কথা বলেছে তদন্ত কমিটি। সব ডিপোকে ধূমপান নিষিদ্ধ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে তা যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য বলা হয়েছে। প্রতিটি ডিপোকে নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারি যেসব সংস্থা যুক্ত, তারা (বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দর) যাতে তথ্য জানতে পারে, সে ধরনের ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সীতাকুণ্ডের ঘটনাটি নাশকতা বা অন্তর্ঘাতমূলক কোনো কাজ কি না, তা আরও খতিয়ে দেখারও সুপারিশ করেছে কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
প্রাণহানির দায় বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষসহ ২৫ সংস্থার
০৭ জুলাই ২২, সমকাল
চট্টগ্রামে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুল প্রাণহানির ঘটনায় বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের দায় পেয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার গঠিত তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ২৫ তদারকি সংস্থারও গাফিলতি পেয়েছে তারা। দায়িত্বশীলরা তাঁদের কাজে মনোযোগী না থাকায় অসংখ্য মানুষের প্রাণ গেছে। ২৪ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন সারমর্ম টেনেছে তদন্ত কমিটি। ১৯ পৃষ্ঠার এই তদন্ত প্রতিবেদনের পাতায় পাতায় আছে বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বহীনতার চিত্র। রাসায়নিক পণ্য হ্যান্ডেল করা একটি কনটেইনার ডিপোতে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কথা ছিল, তার ছিটেফোঁটাও ছিল না বলে মন্তব্য করেছে তদন্ত কমিটি। এমনকি ডিপোতে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও পায়নি তারা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর ও পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দিয়েছে। কিন্তু মালিকপক্ষ ও তদারকি সংস্থার গাফিলতি নিয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের এই কমিটি।
ঈদযাত্রায় ৭ বছরে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা-মৃত্যু, সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেলে
১৯ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো
এবারের ঈদযাত্রায় গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সড়ক-মহাসড়কে ৩১৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৯৮ জন ও আহত হয়েছেন ৭৭৪ জন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেলে। এতে ১১৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৩১ জন।
২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এতে দেখা যায়, ২০১৬–তে সড়ক দুর্ঘটনা হয় ১৯৩টি, নিহত হন ১৪৩ জন । ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ২০০ থেকে ২৫০–এর ঘরে ছিল। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ২০০ থেকে ৩০০–এর কোঠায়। তবে এ বছর ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে ৩১৯টি দাঁড়ায় এবং নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৩৯৮ জনে পৌঁছায়।
পররাষ্ট্র বিষয়ক
ছয় বাংলাদেশির মরদেহ আজও পড়ে আছে ভারতে
৩০ মে ২২, সমকাল
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত ছয় বাংলাদেশির লাশ এখনও ফেরত পাননি স্বজনরা। দিন পেরিয়ে মাস, এর পর বছর গড়াতে শুরু করলেও মরদেহগুলো আনা হচ্ছে না। তবে আশা ছাড়েননি স্বজনরা। প্রিয়জনকে দেশের মাটিতে সমাহিত করতে চান তাঁরা। তাই লাশ ফেরতের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলায় বিএসএফের গুলিতে গত বছরের জুন থেকে নভেম্বরের মধ্যে নিহত ওই বাংলাদেশিদের লাশ ভারতের বিভিন্ন হিমঘরে পড়ে রয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে পাটগ্রাম সীমান্তে তিনজন, কালীগঞ্জ সীমান্তে দু’জন ও আদিতমারী সীমান্তে একজনের মৃত্যু হয়। ভারত লাশ ফেরত দিচ্ছে না, নাকি বিজিবি লাশ গ্রহণে তৎপরতা চালাচ্ছে না, তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন আদিতমারীতে নিহত সাদ্দাম, ইদ্রিস আলী, আসাদুজ্জামান ভাসানী ও পাটগ্রামের ইউনুস আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের দুরবস্থা। এতদিনেও লাশ ফেরত না পেয়ে তাঁরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। আদৌ ফেরত পাবেন কিনা- সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁদের মনে।
হতভাগ্য ৬ জনকে নিয়ে গত বছরের ২১ নভেম্বর ‘ওপারে লাশ এপারে কান্না’ শিরোনামে সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা ব্যাপক আলোচনায় আসে।
তাদের লাশ ফেরতের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিবির রংপুর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইয়াসির জাহান হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে এ ধরনের তথ্য নেই। স্বজনদের কেউ সংশ্নিষ্ট থানা বা তাঁদের কাছে অভিযোগ জানায়নি। লাশ ফেরতের দাবি করে স্বজনদের সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির কথা তাকে জানানো হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে থানায় খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রাশিয়ার তেল, গম কিনতে ভারতের কাছে ‘বুদ্ধি’ চায় বাংলাদেশ
৩০ মে ২০২২, প্রথম আলো
রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গম কীভাবে কেনা যায়, তা নিয়ে ভারতের কাছে ‘বুদ্ধি’ চেয়েছে বাংলাদেশ।
আজ সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান।
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে নদীবিষয়ক এক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর তিনি দেশে ফিরেছেন। ওই সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে।
কঠোর সুর সত্ত্বেও বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায়
০১ জুন, ২০২২, বণিক বার্তা
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সুর সত্ত্বেও দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখন নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই দেশের প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক সংযোগ এখন ১২ বিলিয়ন (১ হাজার ২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়েছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এ মুহূর্তে একক গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের শীর্ষ রফতানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) উৎস হিসেবেও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে। রেমিট্যান্সের উৎস হিসেবেও দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। গত পাঁচ বছরে দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণে।
রফতানি, এফডিআই ও রেমিট্যান্স বিবেচনায় দেশের অর্থনীতিতে সফটপাওয়ার (বাণিজ্যিক, বুদ্ধিবৃত্তিক বা সাংস্কৃতিকভাবে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা) সবচেয়ে বেশি এখন যুক্তরাষ্ট্রেরই। ২০১৬ সালেও বাংলাদেশ থেকে ৫৯১ কোটি ১ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইউএস সেনসাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৩০ কোটি ৩৬ লাখ ডলারে। এ হিসেবে পাঁচ বছরে দেশটির বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটির বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি বাবদ ব্যয়ের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।
বাংলাদেশে এফডিআইয়ের সবচেয়ে বড় উৎস এখন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সাল শেষে দেশের মোট এফডিআইয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান ছিল ২০ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এফডিআইয়ের স্টকের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৩২ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগগুলো এসেছে জ্বালানি তেল ও গ্যাস, ব্যাংক ও বীমা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে। দেশের মোট গ্যাস চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি পূরণ করছে মার্কিন জায়ান্ট শেভরন। নিজেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদেশী বিনিয়োগকারী হিসেবে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সীমান্তে গুলিতে নিহত সবাই অপরাধী: বিএসএফ মহাপরিচালক
২১ জুলাই ২২, সমকাল
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত সব বাংলাদেশি অপরাধী বলে মন্তব্য করেছেন বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পঙ্কজ কুমার সিং। তার ভাষায়, নিহত ব্যক্তিদের সবাই মাদক কারবারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আর প্রতিটি গুলির ঘটনাই রাতে ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পিলখানাস্থ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বিএসএফ মহাপরিচালক।
‘সীমান্তে হত্যার শিকার ব্যক্তিদের কিসের ভিত্তিতে অপরাধী বলছেন। তাদের শরীরের ওপরের অংশে গুলি লাগার পরও কেন এটা টার্গেটেড কিলিং নয়’? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘জুডিশিয়াল সিস্টেমে কোনো অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা কাউকে অপরাধী বলতে পারি না। আমরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলি, কলকাতা পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান প্রদান করি । দুই দেশের সীমান্তে চোরাকারবারে জড়িত মাফিয়ারা।’
বিবিধ
৬ মাসে ১৮ সিনেমা মুক্তি, লগ্নি ফেরাতে পারেনি একটিও
২৬ জুন, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
চলতি বছরের জুন মাস শেষের দিকে। অর্থাৎ, এ বছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে এবং এই ৬ মাসে এখন পর্যন্ত সিনেমাহলে ১৮টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু, একটি সিনেমাও এখন পর্যন্ত সিনেমাহল থেকে লগ্নি করা অর্থ তুলতে পারেনি। যদিও সিনেমার আয় এখন শুধু সিনেমাহল কেন্দ্রিক নেই। এর বাইরে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, টিভি সত্ত্ব বিক্রি, ডিজিটাল রাইটস, স্পন্সর, দেশের বাইরে মুক্তি থেকে আয়ের সুযোগ আছে। তবে, এসব সিনেমা অন্যমাধ্যম নিলেই তবে সেখান থেকে আয় করতে পারবে।
গত ৬ মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো হলো- ছিটমহল, তোর মাঝেই আমার প্রেম, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২, মাফিয়া, মুখোশ, শিমু, গুণিন, লকডাউন লাভ স্টোরি, জাল ছেঁড়ার সময়, গলুই, শান, বিদ্রোহী, বড্ড ভালোবাসি, পাপ-পুণ্য, আগামীকাল, বিক্ষোভ, অমানুষ এবং তালাশ।
চরম দুর্ভোগ, ভাড়া দ্বিগুন-তিনগুন
৯ জুলাই, ২০২২, প্রথম আলো
যানজট, যানবাহনের অভাব, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, দ্বিগুণ–তিন গুণ ভাড়া—এই ছিল গতকাল শুক্রবার ঈদযাত্রার চিত্র। গত ঈদুল ফিতরে গ্রামে যেতে মানুষ তুলনামূলক কম ভোগান্তিতে পড়েছিলেন। কিন্তু এবার দুর্ভোগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
দুর্ভোগের শুরুটা হয়েছিল বাসা থেকে বেরিয়েই। বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে যেতে বাস ও অটোরিকশা পেতে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এরপর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় বাস–ট্রেন নেই। নির্ধারিত সময়ে যেসব বাস ছেড়ে যাওয়ার কথা, তা ছাড়ে দুই থেকে সাত ঘণ্টা দেরিতে। ট্রেন ছাড়ার সময়সূচিতে নেমে আসে বিপর্যয়।
এত সব দুর্ভোগ পেরিয়ে বাসে উঠে বসার পর ঢাকা থেকে বের হতেই পড়তে হয় তীব্র যানজটে। মহাসড়কেও ছিল একই ধরনের ভোগান্তি। আবার যাঁদের অগ্রিম টিকিট কাটা ছিল না, তাঁরা পড়েন যানবাহনের সংকটে। হাজার হাজার মানুষ বাস না পেয়ে ট্রাক বা পিকআপের মতো পণ্যবাহী যানবাহনে রওনা দেন বাড়ির পথে। কেউ কেউ হেঁটে সামনে এগোতে শুরু করেন, যদি কোনো যানবাহন পাওয়া যায়—সেই আশায়।
বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন অথবা লঞ্চঘাটে যেতে এবং দূরপাল্লার পরিবহনে ভাড়া দিতে হয়েছে অত্যধিক বেশি। যেমন সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বরিশালের বাসের (৪০ আসন) নির্ধারিত ভাড়া ৪৫৪ টাকা। কিন্তু গতকাল এই রুটে ভাড়া নেওয়া হয়েছে এক হাজার টাকা। কেউ কেউ ঢাকা থেকে রংপুর যেতে ট্রাকে জনপ্রতি ভাড়া দিয়েছেন এক হাজার টাকা।
এবারের ঈদযাত্রায় কয়েক দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিকের মতোই ছিল। গতকাল কেন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি হয়, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও যাত্রীরা। তাঁরা বলছেন, এবারের ঈদের ছুটি গতবারের তুলনায় সংক্ষিপ্ত। কার্যত ছুটি শুরু হয়েছে গতকাল। সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এদিন ভোর থেকে বাড়ির পথে রওনা দেওয়া শুরু করেন। একইভাবে বেশির ভাগ পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা গ্রামের পথ ধরেন। এতে মহাসড়কে যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়।
এই পরিস্থিতি গত ঈদুল ফিতরে হয়নি। কারণ, তখন ছুটি ছিল প্রায় ৯ দিন। মানুষ ভাগে ভাগে বাড়ি যেতে পেরেছেন।
‘মোটরসাইকেল বন্ধের সুযোগে গণপরিবহনে ভাড়া ডাকাতি চলছে’
০৮ জুলাই, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে গণপরিবহন সংকটকে পুঁজি করে সড়ক, রেল, নৌ-পথে ভাড়া ডাকাতি ও ইচ্ছেমতো যাত্রী হয়রানি চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
আজ শুক্রবার দেওয়া বিবৃতিতে সংগঠনটি চলমান পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে ভাড়া নৈরাজ্য ও পথে যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর সিটি সার্ভিসের বাসের ভাড়া কোনো কোনো পথে ৫ থেকে ৬ গুণ পর্যন্ত বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। উত্তরা থেকে সায়দাবাদে ৫০ টাকার বাস ভাড়া ৩০০ টাকা নিতে দেখা গেছে। শ্যামলী থেকে গুলিস্তানে ৩০ টাকার বাস ভাড়া ২০০ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। ধানমন্ডি থেকে সদরঘাট ২৫ টাকার বাস ভাড়া ২০০ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। টার্মিনাল কেন্দ্রিক নয়, এমন পথে যাত্রীপ্রতি ওঠা-নামা ভাড়া কোনো কোনো বাসে ৫০ টাকা, আবার কোনো কোনো বাসে ১০০ টাকা আদায়ের নৈরাজ্য এখনো চলছে।
ঈদযাত্রা
সড়কে-রেলে মহাদুর্ভোগ
০৯ জুলাই ২২, সমকাল
ঢাকার আগারগাঁও থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরের দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। গতকাল শুক্রবার ভোর ৪টায় কুমিল্লার মুরাদনগরের উদ্দেশে রওনা করে এই পথ পার হতে ছয় ঘণ্টা লেগেছে তৌফিকুল ইসলামের। আট কিলোমিটার দীর্ঘ হানিফ ফ্লাইওভারে লাগে তিন ঘণ্টা। শ্যাওড়াপাড়া থেকে ৩০০ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে তিনি সায়েদাবাদ যান।
প্রায় অভিন্ন অভিজ্ঞতা ট্রেনের যাত্রী আশিকুল ইসলামের। রায়েরবাগ থেকে ৪০০ টাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কমলাপুর গিয়ে তিন ঘণ্টা বসে ছিলেন নীলসাগর এক্সপ্রেসের অপেক্ষায়। ৭টার নীলসাগর যখন সকাল ১০টায় ছাড়ে, তখন ট্রেনটিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ছাদেই অবস্থান নেন হাজারো যাত্রী। যাত্রী ছিল শৌচাগারেও। ভিড়ের চাপে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে বগির স্প্রিং বসে যাওয়ায় ট্রেনটি যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে আটকে ছিল প্রায় চার ঘণ্টা।
আশিকুল ও তৌফিকুলের মতো লাখ লাখ মানুষের আনন্দের ঈদযাত্রা মাটি হয়েছে যানজট, বাড়তি ভাড়া, পরিবহন সংকট ও ভিড়ের কারণে। গাবতলী টার্মিনাল থেকে আরিচাঘাটের বাস ভাড়া ১৫০ টাকা হলেও, নেওয়া হয় ৬০০ টাকা। বাস সংকটে উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা ট্রাকে জনপ্রতি ৫০০ টাকায় বগুড়ায় গেছেন।
সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হলেও সরকারি ভাষ্যে যানজটের ভয়াবহতা নেই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের ঈদে ছুটি কম হওয়ায় একই সময় লাখ লাখ মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন।
টিকিট না পেয়ে বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেন আটকে যাত্রীদের বিক্ষোভ
২০ জুলাই, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে আটকে রেখেছেন যাত্রীরা। ছবি: সংগৃহীত
টিকিট না পাওয়ার অভিযোগে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে নীলফামারীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে আটকে রেখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য যাত্রীরা।
আজ বুধবার সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট থেকে ট্রেনটিকে আটকে রাখা হয় বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ঢাকা বিভাগ) খায়রুল কবির।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীসহ যাত্রীরা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। ফলে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি এখনো আটকে আছে। এ কারণে নারায়ণগঞ্জ ব্যতীত ঢাকা থেকে সারাদেশ কোনো ট্রেন যেতে পারছে না। তবে সারাদেশ থেকে ঢাকায় ট্রেন আসতে পারছে।’