নিজস্বতার অভয় আলো

নিজস্বতার অভয় আলো

রজনী রাওজা

১. নারী

চম্পকনগরীতে এখন জনশুমারির ধুম। এ রাজ্যের রানি এক নতুন পরিচয় জুড়ে দিয়েছেন নারী ও পুরুষের সঙ্গে। বেহুলা জানেন – পাড়া প্রতিবেশিরা কি বলবেন আজ। কারণ বেহুলা বৃহন্নলা। না মানব না মানবী।

ছোটবেলা থেকে নিজেকে একজন নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন বলেই ভেবেছিলেন বেহুলা, যা এই সময়ের চম্পকনগরে প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া এই পরিচয় বদলের প্রক্রিয়া বড় কঠিন। কিন্তু রানির পেয়াদারা যখন দ্বারে এসে দাঁড়ালেন, নিজের অতীত পরিচয় পুরুষের বদলে রানির দেওয়া তৃতীয় অভিধা ‘হিজড়া’ শব্দটি বেছে নিতে পারলেন বেহুলা।

এ ব্যাপারে পরিবারের অন্য সবাই কি বলবেন তা তিনি জানেন না। হয়তো চুপ করে থাকবেন কিন্তু সমাজের চারপাশের মানুষের কথা ভাবতেই এক প্রাচীন অজানা লোকলজ্জা ভর করে বেহুলার উপর।

আর বৃহন্নলাই বা কে? সে তো প্রকৃতির আদি এক রূপ। লোকালয়ে তার বর্তমান নাম হিজড়া।

২. প্রকৃতি

চম্পকনগর থেকে বেহুলার দেবলোকে পৌঁছানোর এখনো তিন মাস বাকি। এই সময় নিজের পরিচয় নিয়ে সামনে এতো পথ দেখে কিছুটা ক্লান্ত বোধ করেন বেহুলা।

এদিকে টেটন নগরে এখন উৎসবের বন্যা। বেহুলা শুনেছেন এ নগরের লোকেরা নাকি কতকিছু জানেন। তারা কি কোনো পথ বাতলে দিতে পারবেন বেহুলাকে তার আত্ম পরিচয় নিয়ে?এ ভাবনা চঞ্চল করে বেহুলাকে কিন্তু লখিন্দরের মৃতদেহ রেখে নগরে যাবেনই কী করে তিনি? মৃতদেহ নগরে নিয়ে গেলে যদি কোনো বিপদ হয়!

মৃতদেহই বা কোথায়? এতো শুকিয়ে যাওয়া একগুচ্ছ হাঁড়, তাদের কোন গহ্বরে লুকিয়ে আছে লখিন্দরের প্রাণ!

‘হায় লখিন্দর, হায় লখিন্দর’ বলে বিলাপ করে কাঁদতে ইচ্ছে করে বেহুলার।

তারপর – হাড়গুলো একটি কাপড়ে এবং সিঁদুর কৌটা আঁচলে বেঁধে – বর্ণিল এক সাপের পিঠে চড়ে ল্যাম্পের আলোয় নগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন বেহুলা। তার দু পায়ে তখন সাদা ভাঁটফুল।

৩. দিদিভাই

নগরে পৌঁছেই বেহুলা দেখা করতে যান তার পরিচিত এক পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে। সেখানে সে দেখতে পান তার মতোই আরো তিন বৃহন্নলা নারী। তাদের মাথায় লম্বা চুল, দুজনের পরনে শাড়ি আর একজনের সালোয়ার কামিজ। তাদের সঙ্গে বেহুলাকে দেখে সম্পাদকের খটকা লাগে। তিনি প্রশ্ন করেন-

স্তন নেই, মুখে দাড়ি গোঁফ, আপনি একজন নারী?

বেহুলা অবাক হোন না, দৃঢ়স্বরে বলেন- হ্যাঁ? কোনো অসুবিধা?

কপালের সিঁদুরের দিকে চোখ রেখে মুচকি হেসে সম্পাদক জিজ্ঞেস করেন-

আপনাকে কী বলে সম্বোধন করবো? দিদি নাকি বৌদি?

বেহুলা অবিচলিত কণ্ঠে বলেন- দিদিভাই।।

৪. দ্বৈত

সম্পাদক তার মতোই অন্য তিন বৃহন্নলা নারীর মধ্যে শাড়ি পরিহিতা এক তারকাকে তার কক্ষে ডেকে পাঠান। বেহুলার সঙ্গে আর তার কথা বলার সময় হয় না।

উত্তর না পেয়ে বেহুলা আরো কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করেন। দ্বিতীয়বার সামনে যেতেই সম্পাদক তাকে দাদা বলে সম্বোধন করেন। বেহুলা সিদ্ধান্ত নেন তিনি এই অপমানের প্রতিবাদ করবেন। তার প্রতি এই আচরণের নিন্দা জানিয়ে বেহুলা একটি চিঠি রাখেন সম্পাদকের টেবিলে।

সম্পাদক রেগে তার আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। তিনি কড়া সুরে বেহুলাকে আদেশ করেন তৎক্ষনাৎ এই পত্র প্রত্যাখানের জন্য।

রাজী হওয়া ছাড়া বেহুলার সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না।

বেহুলা অনুধাবন করেন- এই পৃথিবীতে এখন প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয়ের খেলা। মানুষ মানে এখানে নারী, পুরুষ আর হিজড়া। তিনি হয়তো তৃতীয় অভিধা হিজড়াটিই বেছে নিয়েছেন, কারণ ছকে বাঁধা পুরুষ জীবন থেকে মুক্তি, তার কাছে এক পরম পাওয়া। অথবা – দাদা, দিদি কিংবা দিদিভাই – আদতে তিনি সবই- অভিন্ন এবং এক।

বেহুলা অনুধাবন করেন- এই পৃথিবীতে এখন প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয়ের খেলা। মানুষ মানে এখানে নারী, পুরুষ আর হিজড়া। তিনি হয়তো তৃতীয় অভিধা হিজড়াটিই বেছে নিয়েছেন, কারণ ছকে বাঁধা পুরুষ জীবন থেকে মুক্তি, তার কাছে এক পরম পাওয়া।

৫. পুরুষ

আমি বেহুলা। বিবাহের প্রথম রজনীতে দেবী মনসার চক্রান্তে আমার স্বামী লখিন্দর প্রাণ হারান এক কালনাগের দংশনে। চম্পকনগরবাসী এক হয়ে সিদ্ধান্ত নেন, কলাগাছের ভেলায় লখিন্দরের লাশ ভাসিয়ে দেয়া হবে গাঙ্গুর নদীতে। কপালে সিঁদুর আর হাতে শঙ্খপলা নিয়ে আমি সেই ভেলায় লখিন্দরের সহযাত্রী হবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। গ্রামবাসী ভয় দেখালেন, কিন্তু আমার সিদ্ধান্তে বাধা দিলেন না। তারপর লখিন্দরের মৃতদেহ ভেলায় নিয়ে দেবলোকের উদ্দেশ্যে আমার যাত্রা শুরু হয়।

বিবাহের আগে লখিন্দরের জনক চান্দ সদাগর এবং তার আত্মীয় স্বজন আমার জনক সাহে সদাগর এবং জননী সুমিত্রার সঙ্গে উজানী নগরে দেখা করতে আসেন। প্রথমে তাদের সঙ্গে দেখা করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন আমার জনক জননী। তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন – আমি একজন পুরুষ। তারা প্রশ্ন করেন আমার শরীর, দাড়ি-গোঁফ এবং শাড়ির আড়ালে লুকিয়ে থাকা পুরুষাঙ্গটি নিয়ে।

অবশেষে আমার মৌনতা, কষ্ট আর অসহায়ত্বের কাছে তারা হার মানেন। পাত্রপক্ষ সম্মত হবেন না ভেবে তারা রাজী হোন অতিথিদের সঙ্গে দেখা করবার জন্য। আমাকে আদেশ করেন – যেন নারী রূপে সকলের সামনে উপস্থিত হই আমি।

মুখে দাড়ি গোঁফসহ এক থালা পান নিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে এসে দাঁড়ান বেহুলা। গায় অদ্ভুত সুন্দর এক গান। তারা মুগ্ধ হোন বেহুলার নারীত্বে।

৬. অবমানব

প্রথম জীবনে স্বর্গে আমার নাম ছিল উষা। লখিন্দরের নাম ছিল অনিরুদ্ধ। স্বর্গে দেবীর সম্মান লাভের অভিপ্রায়ে, আমাদের দ্বিতীয় জীবন দান করেন মা মনসা।

সাহে সদাগর ও সুমিত্রার ঘরে যখন জন্মগ্রহণ করেন দেবী উষা, দৈববাণী শুনে তার নাম রাখা হয় বেহুলা। কিন্তু তার পুরুষ শরীর নিয়ে শংকায় ছিলেন জনক জননী।

তিরিশ বছর বয়সে বেহুলা নিজেকে আবিষ্কার করেন একজন বৃহন্নলা হিসেবে। এই পরিচয়ের স্বীকৃতির প্রশ্ন একসময় তাকে উদ্বিগ্ন করে। সেইসঙ্গে সমাজের চারপাশে তিনি দেখতে পান এই স্বীকৃতি নিয়ে অদ্ভুত এক খেলা।

তার বালিকা বেলা, শাড়িপরা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়। প্রতিবেশিরা তাকে হিজড়া বলে প্রায়ই সম্বোধন করতেন, বলতেন সে অস্বাভাবিক। কিন্তু বেহুলা বুঝতেন না এই নারী, পুরুষ আর হিজড়া মানে কী, কিংবা কী এই অস্বাভাবিক আর স্বাভাবিকের পার্থক্য।

সে প্রাচীন, আত্মবিশ্বাসী এবং সৎ। তার শক্তি ভালোবাসা আর লুপ্তপ্রায় এক ভাষা। তাছাড়া নৃত্য ও সঙ্গীতের জ্ঞান।

৭. অদ্বৈত

সম্পাদকের অফিস থেকে বের হয়ে বেহুলা যাত্রা শুরু করেন নন্দীপুরের এক নীতি নির্ধারকের অভিজাত বাসবভনের উদ্দেশ্যে। তিনি শুনেছেন তিনি উদার এবং বেহুলার মতো আরো অনেক নারীকে অন্তর্ভুক্ত করছেন সমাজ ও রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

এই মূহুর্তে বেহুলার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো লখিন্দরের লাশ। বেহুলা জানেন না এই লাশ নিয়ে তিনি কী বলবেন নীতি নির্ধারককে। তিনি প্রশ্ন করতে পারেন- কেন বেহুলা এই হাড়গুলো নিবোর্ধের মতো বয়ে বেড়াচ্ছেন সম্পাদকের অফিস থেকে তার নন্দীপুরের বাসভবনে। নদীর তীরে কেন তিনি রেখে আসলেন না এই জঞ্জাল? কেন পায়ের ভাঁটফুল তিনি দান করছেন না – অন্য যুবক কিংবা তার মতো জীবিত কোনো লখিন্দরকে?

বেহুলার মনে পড়ে গাঙ্গুর নদীর বুকে এক বৃষ্টিমুখর ঝড়ের রাতের কথা। ভেজা জবজবে কাপড়ে লখিন্দরের গলিত লাশ নিয়ে বেহুলা তখন অন্তহীন পথে। সেই রাতে বেহুলা লাশটি নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারতেন উত্তাল নদীর গভীর রহস্যলোকে। দেবপুরে পৌঁছার আগেই হয়তো কোনো এক নামহীন নদী বা সমুদ্রের তলদেশে হাঁড় হয়ে পড়ে থাকতেন বেহুলা লখিন্দর।

অথচ আজ এই একগুচ্ছ হাঁড়ের মধ্যেই বেহুলা অনুভব করেন লখিন্দরের প্রাণ!

যাত্রাপথে স্বপ্নে তার সামনে এসে দাঁড়ান অনিরুদ্ধ। বেহুলার ভ্রম হয়- এ কে?অনিরুদ্ধ নাকি লখিন্দর?

তার স্মৃতিতে ভেসে উঠে লখিন্দরের সঙ্গে তার বিবাহ-পূর্ব প্রণয় ও সাক্ষাতের কথা।

এক আদিম কামচেতনা জেগে উঠে বেহুলার শরীরে। সাপের বিষের মতোই তা অসহ্য ব্যথার মতো ছড়িয়ে পড়ে পা থেকে মাথায়- তীব্র এক সুখ পুড়িয়ে কাঠ করে দিয়ে যায় বেহুলার তৃষ্ণার্ত শরীরকে।

কল্পলোকে তিনি বুঝতে পারেন না – কে অনিরুদ্ধ আর কে লখিন্দর। কখনো তাদের ভিন্ন মনে হয়, কখনো এক। তাদের এই অদ্বৈত বন্ধন যেন এক অবিনশ্বর প্রেম।

এভাবেই অভিন্ন সব প্রেমিক স্বত্ত্বার উপস্থিত হয় বেহুলার হৃদয়ে। দৈহিক গঠনে তারা ভিন্ন, কিন্তু আদতে এক।

৮. অস্তিত্ব

নন্দীপুরের সেই নীতি নির্ধারকের বাসভবনে সেদিন বিশাল এক সভা। সেখানে নানান রাজ্যের নানান অতিথি। তাদের সাজসজ্জা আধুনিক, নিয়ম কানুন বড়ই অদ্ভুত। শুভ্র বাহন ছাড়া সে প্রসাদে প্রবেশ নিষিদ্ধ, বাগানে পাতা লাল গালিচায় হাঁটতে হলে পায়ে থাকতে হবে নকশাকাটা জুতো। সভার প্রায় সকলের হাতেই মদভর্তি পেয়ালা। লাল সিঁদুর আর ভাঁটফুলের বেহুলা সেখানে বড় বেমানান।

প্রসাদের শূন্য এক কক্ষে লখিন্দরের হাড়গুলো রেখে তিনি নীতি নির্ধারকের সাক্ষাৎ লাভের উদ্দেশ্যে সেই সভার মাঝখানে এসে দাঁড়ালেন। নীতি বিশেষজ্ঞ তখন মাতাল। তিনি বেহুলার রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, অতি উৎসাহে তার দিকে বাড়িয়ে দিলেন মদভর্তি আরেক পেয়ালা।

বেহুলা না করলেন না। পেয়ালায় চুমুক দিয়ে জগৎটাকে বড় শূণ্য মনে হয় তার। মায়াবী পৃথিবীর স্বপ্ন কাটিয়ে নীতি নির্ধারককে যখন তিনি বলতে গেলেন তার আগমনের হেতু, তিনি বুঝেও না বোঝার ভান করলেন। তিনি বেহুলাকে বলতে লাগলেন তার ব্যক্তিগত কক্ষে বিদ্যমান সব সম্ভোগের কথা। সে সম্ভোগে তিনি একাই অধিপতি, তা টিকিয়ে রাখার কৌশল- পরিচয়, অস্তিত্ব, দুর্বলতা এসব নিয়ে খেলা। এই খেলার নিত্যতাই সকলের কাছে কাম্য, শিকারের মনস্তত্বে কার কি আসে যায়?

কোলাহল এড়িয়ে প্রাসাদের শূণ্য কক্ষে ফিরে আসলেন বেহুলা। সম্ভোগের শেষ রেখা তখনও তার নেশাতুর চোখে। লখিন্দরের লাশ বুকে নিয়ে তার অনুভব হয়- সাময়িক কোলাহল গলে যাওয়া একটা পচা লাশের মতো কখনো মানুষের বন্ধু হয় না।

৯. স্বরূপ

বেহুলা ফিরে আসেন গাঙ্গুর নদীর তীরে ফেলে যাওয়া ভেলাটির কাছে। জলে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে বিস্মিত হোন তিনি। কপালে লাল সিঁদুর, ছড়িয়ে পড়া টিপ আর দাঁড়ি গোফে ঢাকা মুখটি বড়ো মনোহর লাগে তার। অর্থহীন মনে হয় নগর, সব কোলাহল। জলের ঝাপটা মেরে এক মুহুর্তে তিনি মুছে ফেলতে চান নগরে প্রাপ্ত প্রতিশ্রুতি আর অপমান সমুদয়।

নিজেকে এমন গভীর ভালো আগে কখনো লাগেনি বেহুলার। নগরের মানচিত্র আর কৃত্রিম মুখগুলো যখন ধীরে ধীরে মুছে যায় তার স্মৃতি থেকে, গাঙ্গুর নদীর পাড় জীবন্ত হয়ে উঠে পরম বন্ধুর মতো। স্নিগ্ধ হাওয়া, উড়ে যাওয়া কাক, শঙ্খচিল আর শালিক তার সঙ্গে কথা বলেন। মীনগণ দেবীর মতো তাকে আগলে রাখেন শান্ত নদীর বুকে। ফুলের মধু খেয়ে তার দিন কাটে, ল্যাম্পের স্বল্প আলোয় কেটে যায় রাত। এক অসীম অঙ্গীকার তাকে ক্রমাগত নিয়ে যায় নিজস্বতার অভয় আলোতে।

নদীর জলে বেহুলা টের পায় লখিন্দরের প্রাণ। মায়াবলে যুবক লখিন্দর সামনে এসে দাঁড়ায় বেহুলার। তার শরীর কোনো এক অচেনা স্পর্শে জেগে উঠে। জলের অভ্যন্তরে সে শরীর দুটো বিষে নীল হয়ে যায়।

১০. নর্তকী

তিন মাস পর। লখিন্দরের শুকিয়ে যাওয়া একগুচ্ছ হাড় নিয়ে মহাদেবের রত্নখচিত সিংহাসনের সামনে এসে দাঁড়ান বেহুলা। তার একপাশে তখন জগৎ গৌরী মা, অন্য পাশে থরে থরে দাঁড়িয়ে আছেন সহস্র দেবতা। চারপাশে তরুলতা ঢেকে আছে সোনার পত্রপল্লবে।

ভূতগণের সঙ্গে বসে তখন কীর্তন উপভোগ করছেন শিব। সাত পাঁচ না ভেবে মৃদঙ্গের তালে তাল মিলিয়ে কীর্তন গাইতে থাকেন বেহুলা।

অনেক বছর পর বেহুলার কন্ঠ শুনে মহাদেবের মনে পড়ে যায় উষাদেবীর কথা। কিন্তু আসরে এক কোণে বসে থাকা বেহুলার দিকে তাকিয়ে তিনি চমকে উঠেন। এ কোন উষা? কোথায় তার পূর্ণিমার চাঁদের মতো রূপ, চিকন সুরেলা কন্ঠ আর সরোবরের ন্যায় স্তনদ্বয়! এ কি অদ্ভুত বৃহন্নলা নারীবেশ তার?

অতঃপর বৃক্ষপত্রে সেজে গন্ধম গাছের নীচে দাঁড়িয়ে অভূতপূর্ব এক নৃত্য পরিবেশন করেন বেহুলা। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই নৃত্য প্রত্যক্ষ করেন শিব। মুগ্ধচোখে তার সামনে দাঁড়ান স্বর্গাধিরাজ।

তার দুটি শর্ত-

নারী জীবন পাবেন বেহুলা অথবা লখিন্দরের প্রাণ।

দ্বিতীয়টি বেছে নেন বেহুলা। লখিন্দর জেগে উঠেন। হাতে হাত রাখেন বেহুলার।

দুজন একত্রে ফিরে আসেন চম্পকনগরে। স্বর্গে দেবতার আসন প্রতিষ্ঠিত হয় দেবী মনসার।

রজনী রাওজা: একজন শিল্পী, গবেষক, লেখক এবং কিউরেটর। ব্যক্তিজীবনে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। তিনি তেহাই নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করেন, যেখানে বিভিন্ন শিল্প আঙ্গিকের (চলচ্চিত্র, গবেষনা, শিল্পকলা, সাহিত্য, কিউরেশন, পারফরম্যান্স আর্ট, নৃত্য এবং সঙ্গীত) একধরণের নিরীক্ষামূলক সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সামনে নিয়ে আসেন শরীর ও পরিচয়ের রাজনীতি।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •