বাংলাদেশে নদীসংক্রান্ত নীতিমালা

বাংলাদেশে নদীসংক্রান্ত নীতিমালা

আবিদা ফেরদৌসী স্বাতী

বাংলাদেশে মানুষের মতোই নদী প্রাণ প্রকৃতি অরক্ষিতই শুধু নয় দুর্বৃত্তদের দখল দূষণের শিকার। এই অবস্থার কার্যকর  সমাধানে শাসকদের আগ্রহ দেখা যায় না কেননা এরা তাদেরই অংশ। তবে সংবিধান ও নানা আইনী বিধি বিধানে কিছু প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার ও বিধিনিষেধ আছে যার বেশিরভাগই অকার্যকর তার অসম্পূর্ণতা বা অস্বচ্ছতার কারণে কিংবা প্রয়োগ না করার কারণে। এই লেখায় বাংলাদেশের নদী সংক্রান্ত নীতিমালার কিছু দিক আলোচনা করা হয়েছে।  

একটি দেশের সার্বিক উন্নতির সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ জলাভূমি বা নদ-নদী গভীরভাবে জড়িত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সভ্যতা নিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, তা কোনো নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ৩১০টি নদী নিয়ে এই নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫ কোটি মানুষ যাতায়াতের জন্য এবং প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ খাদ্যের জন্য নদীর ওপর নির্ভরশীল। ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে দেশের বড় বড় অর্থনৈতিক তৎপরতার প্রধান অবলম্বন হলো নদী। অর্থনৈতিক উন্নতির এবং অস্তিত্বের অন্যতম অবলম্বন হওয়া সত্ত্বেও দেশের সিংহভাগ নদ-নদীর অবস্থা শোচনীয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ১৭৫টি নদীর অবস্থা বিপন্ন এবং প্রায় ৬৫টি নদী মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে৷ এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ নদীর গভীরতা খুব কম।

অর্থনৈতিক উন্নতির এবং অস্তিত্বের অন্যতম অবলম্বন হওয়া সত্ত্বেও দেশের সিংহভাগ নদ-নদীর অবস্থা শোচনীয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ১৭৫টি নদীর অবস্থা বিপন্ন এবং প্রায় ৬৫টি নদী মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে৷

দেশের প্রায় প্রতিটি শিল্পকারখানা নদীর পাশে অবস্থিত এবং এসব কারখানার ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। যার ফলে এসব নদী বর্তমানে সাধারণ ব্যবহারের কাজেও অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু নদী থেকে ভয়ানক দুর্গন্ধ বের হয়। বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা‒দেশের ক্ষতিগ্রস্ত নদ-নদীসমূহের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। ওয়ার্ল্ড ফিশ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে, সে নদীর মাছের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। পদ্মা ও ইছামতীতে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়ার পরিমাণ অনেক বেশি। এ ছাড়াও আয়রন, ক্রোমিয়াম, জিংক রাসায়নিক পদার্থের অতিরিক্ত উপস্থিতি নদীগুলোকে বিষাক্ত করে তুলেছে। নদীসমূহের সর্বোচ্চ ক্ষতিসাধনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল, পাল্প, পেপার, চামড়া, কেমিক্যাল, ওষুধ, খাদ্য উৎপাদনকারী, সিমেন্ট, চামড়া ইত্যাদি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। অব্যবস্থাপনা এবং সুরক্ষার অভাবে দেশের নদীসমূহ ধীরে ধীরে মৃত ও ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ছে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ অসুখ পানিবাহিত এবং ১/৩ ভাগ মানুষ এ ধরনের রোগের ফলে মারা যাচ্ছে। নদী সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশের আইনসমূহ ও ব্যবস্থাপনার অস্তিত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে, সে নদীর মাছের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। পদ্মা ও ইছামতীতে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়ার পরিমাণ অনেক বেশি। এ ছাড়াও আয়রন, ক্রোমিয়াম, জিংক রাসায়নিক পদার্থের অতিরিক্ত উপস্থিতি নদীগুলোকে বিষাক্ত করে তুলেছে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদ-নদী রক্ষণাবেক্ষণ ও নদীভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৫০ দশকে পাকিস্তানে  Water and Power Development Board Authority (WAPDA) গঠন করা হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে পূর্ব বাংলার অংশটি Bangladesh Water and Power Development Board Authority নামকরণ করা হয়। পানি আইন ২০১৩ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (WARPO) দায়িত্বে আছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার কাজে সবার উপরে অবস্থান করছে। এর কাজে সহায়তার জন্য গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরবর্তী সময়ে আরও সরকারি এজেন্সি গঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশের পানির সুরক্ষা সম্পর্কে সংবিধানে সরাসরি কিছু বলা না-থাকলেও ১৮(ক) অনুচ্ছেদে এ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে: ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’ পানিসম্পদ পরিকল্পনা আইন ১৯৯২-এর ধারা ৭-এ পানিসম্পদ রক্ষার মহাপরিকল্পনা, বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ, সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা মূল্যায়ন ও পরামর্শ এবং এ-বিষয়ক সেমিনার আয়োজনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্জ্য নিষ্কাশনের বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (২০১০-এ সংশোধিত)-এ কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ধারা ১২-তে বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ‘পরিবেশগত ছাড়পত্র’ ছাড়া কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা বা প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় (MoWR) জাতীয় পানি নীতি (১৯৯৯) প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কাজে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে। এসব সংস্থার উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে ভূগর্ভস্থ পানির উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও পানির সুষম সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ নীতিতে শিল্পকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনের বিষয়েও বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিমালায় নদীতে রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাকে ‘Critical water management issue’ বলে আখ্যায়িত করেছে। বর্জ্য নিষ্কাশনের বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (২০১০-এ সংশোধিত)-এ কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ধারা ১২-তে বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ‘পরিবেশগত ছাড়পত্র’ ছাড়া কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা বা প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। ‘পরিবেশগত ছাড়পত্র’ গ্রহণের নির্দেশনা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিমালা ১৯৯৭-এর বিধি ৭-এ বলা হয়েছে৷ এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে সবুজ, কমলা ক, কমলা খ এবং লাল‒এই চার ভাগে দূষণের এবং সম্ভাব্য দূষণের মাত্রা অনুযায়ী ভাগ করে ‘পরিবেশগত ছাড়পত্র’ গ্রহণের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নীতিমালার বিধি ৫ অনুযায়ী, ‘দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কামূলক ব্যক্তি উক্ত কারণের প্রতিকারের জন্য মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করতে পারবেন।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ধারা ৪(ক) অনুযায়ী কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, ব্যবস্থাপনা ও এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবেন। মহাপরিচালকের নির্দেশনা অমান্যকারী উল্লিখিত আইনের ধারা ১৫ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় ক্ষেত্রে দণ্ডনীয় হবে।

নীতিমালার বিধি ৫ অনুযায়ী, ‘দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কামূলক ব্যক্তি উক্ত কারণের প্রতিকারের জন্য মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করতে পারবেন।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ধারা ৪(ক) অনুযায়ী কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, ব্যবস্থাপনা ও এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবেন।

দেশের পানিসম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। এর একটি অন্যতম প্রকল্প হচ্ছে ‘তিস্তা সেচ প্রকল্প’, যার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি আইন ২০১৩ পানি সম্পদের সমন্বিত উন্নয়ন ও সুরক্ষার কথা বলে প্রণীত হয়েছে। এর মাধ্যমে ওয়ারপোকে জাতীয় পানিসম্পদ পরিষদের নির্বাহী কমিটির সচিবালয় হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উক্ত আইনের ধারা ১০-এ নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ আইনের পঞ্চম অধ্যায়ে পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং পানিসম্পদের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পানির সংকটাপন্ন এলাকার ব্যবস্থাপনা, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনার বিধিনিষেধ, জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতকরণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বাঁধের সুরক্ষা, পানি অঞ্চলের বিভক্তিকরণ, জলাধার সংরক্ষণ, পানির দূষণ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। ষষ্ঠ অধ্যায়ে বিধি অমান্যকারীর দণ্ড ও বিচারের বিধিমালা দেওয়া হয়েছে।

ফ্যাক্টরি আইন ১৯৬৫-এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য নিষ্কাশনের বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (HRPB) ২০১০ সালে হাইকোর্টে বুড়িগঙ্গা নদী বাঁচানোর জন্য একটি আইনি নোটিশ প্রদান করে। ২০১১ সালের ১ জুন হাইকোর্ট রায় ঘোষণা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

বাংলাদেশে নদীর সুরক্ষা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা থাকার পরও দেখা যায়, অধিকাংশ নদীই অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। দেশে অনেক নদী হারিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। নদীর ওপর নির্ভরশীল কর্মজীবী মানুষের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে এবং নদী দূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির অন্যতম কারণ হলো, সংশ্লিষ্ট আইন দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মুষ্টিমেয় মালিক পরিবেশ সংরক্ষণমূলক আইন ভঙ্গ করে পরিবেশের অশেষ ক্ষতি সাধন করেও আইনি জটিলতার ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আসে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুষ্টিমেয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থার সুযোগে আইনের আওতার বাইরে থেকে যায়।

দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মুষ্টিমেয় মালিক পরিবেশ সংরক্ষণমূলক আইন ভঙ্গ করে পরিবেশের অশেষ ক্ষতি সাধন করেও আইনি জটিলতার ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আসে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুষ্টিমেয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থার সুযোগে আইনের আওতার বাইরে থেকে যায়।

এ ছাড়াও লক্ষ করা যায় যে, নদী সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনার বেশ কিছু গৃহীত সিদ্ধান্ত দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চাহিদা বা প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ফারাক্কা বাঁধের বিষয়টি। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি ও তার পরবর্তী কার্যক্রমের ফলে দেশের অগণিত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও একটি উদাহরণ- বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি সোনাদিয়া দ্বীপে বিশেষ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ৪ হাজার ৯১৬ হেক্টর এলাকাকে Ecologically Critical Area হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ২০০৩ সালে হাইকোর্টে পিটিশন দায়ের করে। এর লক্ষ্য ছিল, সোনাদিয়া দ্বীপের মানুষকে প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা এবং চর রক্ষণাবেক্ষণ। কিন্তু পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় তা প্রত্যাহার করে এই কারণ দেখিয়ে যে, দ্বীপটি ইতোমধ্যে রিজার্ভ করা এবং উন্নয়নের জন্য গাইডলাইন দেওয়া রয়েছে। অর্থাৎ, এ ধরনের আইনি অস্বচ্ছতা ও জটিলতায় পড়ে অনেক বিষয়ই অমীমাংসিত থেকে যায়। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও নীতিমালায় মূলত শিল্পকারখানার দূষণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে জলাভূমির ধরন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা না করেই। এ আইনের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর, ওয়ারপো এবং অন্যান্য এজেন্সির সঙ্গে যোগসূত্রবিষয়ক কোনো নীতিমালা দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও নীতিমালায় মূলত শিল্পকারখানার দূষণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে জলাভূমির ধরন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা না করেই। এ আইনের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর, ওয়ারপো এবং অন্যান্য এজেন্সির সঙ্গে যোগসূত্রবিষয়ক কোনো নীতিমালা দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশের প্রায় সব নদী এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির ফলে দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। ফলে দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জিডিপির প্রায় ৩.৬১ শতাংশ অবদান মৎস্য চাষ থেকে এবং দেশের প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ মৎস্য চাষের সঙ্গে জড়িত। প্রায় ৭ লাখ নৌযান নিয়মিত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করে চলেছে। নৌপথে যাত্রী পরিবহনের পরিমাণ দেশের মোট যাত্রী পরিবহনের এক চতুর্থাংশ। তাই নদীর সঠিক এবং যোগ্য নীতিমালা নির্ধারণ করে সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন খুবই জরুরি। বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ পানির অভাবে দিনের পর দিন পার করছে। আমাদের দেশেও ইতোমধ্যে কিছু কিছু অঞ্চলে পানির অভাব দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে দুর্যোগের সম্মুখীন হওয়া থেকে বাঁচতে হলে দেশের নদীর যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও এর বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। সেইসাথে নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার সামঞ্জস্যের বিষয়টি লক্ষ্য রাখা জরুরি।

আবিদা ফেরদৌসী স্বাতী: শিক্ষার্থী, আইন ও বিচার বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  

তথ্যসূত্র

১। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সমীক্ষা, ২০১০

২।  Hasan, Rizwana Syeda, “Protection of river to save agricultural economy, life-livelihood and environment: Role of state and citizens”, The Daily Star, (অক্টোবর ২২, ২০২০)

৩।  Zahur, A.B.M.S. “Our Dying River”, The Daily Star (এপ্রিল ১০, ২০১০).

৪। মাহমুদ, ইফতেখার, “২৯ নদীর দূষণ বিপজ্জনক স্তরে”, (মার্চ ২২, ২০১৯), প্রথম আলো, ২৯ নদীর দূষণ বিপজ্জনক স্তরে

৫। Md. Arifuzzaman, Mohammad Abdul Hannan, Md. Redwanur Rahman , Md. Atiqur Rahman, Journal of Sociology and Anthropology. 2019, 3(1), 15-24

৬। Ahmed, Tasmiah Nuhiya, ‘Protecting Rivers with Law Enforcement”, The Daily New Age, (Feb 21, 2020)

৭। Hasan, Rizwana Syeda, “Protection of river to save agricultural economy, life-livelihood and environment: Role of state and citizens”, The Daily Star, (অক্টোবর ২২, ২০২০)

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •