প্রচলিত (উদারনৈতিক) পুঁজিবাদী দুনিয়ার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের চালচিত্র
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন
সিনেমা সম্পর্কিত তথ্য:
পিপলি থেকে সরাসরি/পিপলি লাইভ/PEEPLI [Live] (২০১০) ।
প্রযোজনা সংস্থাগুলি: ইউটিভি মোশন পিকচার্স, একজন আমির খান প্রযোজনা।
অভিনয় শিল্পী: ওমকার দাস মানিকপুরী, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, রঘুবীর যাদব, মালাইকা শেনয়, শালিনী ভাতসা, ফারুক জাফর।
পরিচালক / চিত্রনাট্যকার: আনুশা রিজভী।
সহ-পরিচালক এবং অভিনেতা নির্বাচক: মাহমুদ ফারুকী।
দৈর্ঘ্যঃ ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট।
প্রযোজক: আমির খান, কিরণ রাও।
নির্বাহী নির্মাতা: বি. শ্রিনিবাস রাওফি।
চিত্রায়ন: শঙ্কর রমন।
প্রযোজনা নকশাকর: সুমন রায় মহাপাত্র।
সংগীত: ম্যাথিয়াস ডুপলেসী।
গীতিকার: ভারত মহাসাগর।
পোশাক নকশাকর: ম্যাক্সিমা বসু।
সম্পাদক: হেমন্তী সরকার।
পিপলিতে আপনাকে স্বাগতম
মধ্যবয়স্ক দুইভাই তাদের শেষ সম্পদ চাষের জমি ব্যাংকের ঋণের জালে পড়ে হারাতে যাচ্ছেন। কিন্তু জমি চলে গেলে জীবন চলবে কি করে? তাদের মতো অতি গরিব মানুষের কোনো উপায় নেই জীবন চালানোর এই সামান্য জমি চলে গেলে। ফলে তাদের যাত্রা শুরু হয় নানান জায়গায় ধর্না দেয়ার, টাকার জন্য; যে টাকা পেলে ব্যাংকের দেনা শোধ করে জমি বাঁচাবেন, জমির সাথে সাথে বেঁচে যাবেন দুই ভাই, ছোট ভাইয়ের বউসহ বাচ্চারা এবং তাদের বৃদ্ধ মা। তাদের এই যাত্রায় তারা দেখা করতে যান গ্রামের পাতি নেতার বাড়িতে। সেখানে পাতি নেতারা, উঠানে বসে হইহই রইরই করে যাচ্ছেন এবং খাচ্ছেন গরম গরম সিদ্ধ ডিম। ছোট ভাই নাত্থা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে লোভনীয়তম জিনিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, এমনভাবে দেখছেন গরম সিদ্ধ ডিম। আর তারা দাঁড়িয়েই আছেন তাদের বসতে দেয়া হয়নি কারণ তারা বসার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি বা সহজ হিসেবে তাদের টাকা পয়সা নেই তাই তাদের বসার যোগ্যতাও নেই। পিপলির প্রকৃতিও রুক্ষ, যেন অর্থনৈতিক জোর বেশি যার পিপলি তার।
এই খিলখিল করে বগল বাজাতে থাকা এক নেতা খিলখিল করতে করতে সমাধান হিসেবে বড় ভাই বুধিয়াকে বলেন, আত্মহত্যা করে নিতে। তাহলে সরকার তাদের লক্ষ টাকা দেবে আর যার ফলে তাদের জমিও বেঁচে যাবে। আর কোনো কথা না বলে তার চেয়েও বড় নেতার ফোন পেয়ে তটস্থ হয়ে পড়ে নেতা ও চামচারা। নাত্থা ও বুধিয়া ফিরতে থাকেন তাদের বাড়ির দিকে। পথে তারা তাদের বন্ধুদের সাথে বসে কল্কিতে গাঁজা টানেন, পরে বাড়ি ফেরার পথে একজনের মারা যাওয়ার খবর পান। বাড়িতে ফিরে বউ ও মাকে জানান তাদের কোনো ভালো খবর নেই, তাদের সাধারণ প্রতিদিনের জীবন চলতে থাকে। এরপরে একসময় খেতের আইলে বসে বসে বিড়ি টানতে টানতে বড়ভাই বুধিয়া নাত্থাকে জানায় সে আত্মহত্যা করে নেবে কারণ এছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু নাত্থা জানায় সে নিজেই আত্মহত্যা করবে বড়ভাই বুধিয়ার মারা যাওয়ার কোনো দরকার নেই। তারা দুজনে বসে নাত্থার আত্মহত্যার কথা পাকাপাকি করে নেয়।
এরপরে গ্রামের ইংরেজি না জানা ও গরিব এক সাংবাদিকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় শহরের ইংরেজি জানা বড়লোক সাংবাদিকের নজরে পড়ে এই খবর এবং নানান সব হিসেবের ফলে এই খবর সেই অভিজাত ইংরেজি সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। আর তার পরেই মধ্যবিত্ত টেনেটুনে ইংরেজি বলতে পারা সংবাদ মাধ্যম হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেকোনোভাবে হোক তাদেরকেও এই সংবাদ প্রচার করতে হবে। এরপরেই সংবাদের নামে তাদের আবর্জনা প্রচার শুরু হয়ে যায়, রাজনৈতিক নেতাদের আগমন, সরকার বাহাদুরের নানান বাগাড়ম্বর চলতে থাকে। নাত্থার আত্মহত্যার পক্ষ বিপক্ষ দল ও মত তৈরি হয় কিন্তু কেউ তাদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেনা, গ্রামে জমে ওঠে মেলা, সার্কাস। সবাই সবার মতো করে সুবিধাভোগী হওয়ার চেষ্টা করে। পিপলির সবকিছুই দর্শকের কাছে ভালো লাগতে থাকে আর খবরের কাগজগুলো সব ভুলে পিপলির উপরে মেতে ওঠে এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলি পিপলি গ্রামের সব কিছুই সরাসরি প্রচার শুরু করে। এমনকি মানুষের মল/গু/বিষ্ঠা ও এর ত্যাগের দৃশ্যও সরাসরি প্রচার পেয়ে যায়, এসবই হচ্ছে খবর প্রচারের নামে! শুরু হয়ে যায় পিপলি লাইভ।
আত্মহত্যার হিসাব নিকাশ/ ভারতে কৃষকদের আত্মহত্যা/ প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষ যেভাবে কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে এবং তাকে আত্মহত্যা করতে হচ্ছে
প্রচলিত হিসাবমতে শুধু ২০১৭-১৮ সালে ভারতে গড়ে প্রতিদিন ১০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বা করতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও ভারতের কৃষকদের আত্মহত্যার সঠিক পরিসংখ্যান এরচেয়েও বেশি ভয়াবহ বলে মনে করেন নানান জন। কারণ কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকার নানা উপায়ে এসব তথ্য চেপে যায় এবং তথ্য বিকৃত করে। ১৯৯০ সালের দিকে যখন মুক্ত পুঁজিবাজারের টানে অথবা চাপে ভারত তার বাজার উন্মুক্ত করে দেয় পশ্চিমা বিনিয়োগের জন্য, তখন এসব প্রাণপ্রকৃতি বিরোধী বিনিয়োগে অসম্ভব বেশি লাভের জন্য দরকার ছিল অসম্ভব বেশি সস্তা শ্রমের। আর এর যোগান দেয়া হয় কৃষিতে নিয়োজিত মানুষদের নানান লোভ দেখিয়ে। সেই সাথে কৃষিতে নানাবিধ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি এবং কৃত্রিম আরো অনেক অসুবিধা ও বাধা তৈরি করে কৃষককে ঋণসহ নানাবিধ বেড়াজালে আটকিয়ে ফেলে। এসবের ফলে কৃষকের সামনে আত্মহত্যা করা ছাড়া যে উপায় বেঁচে থাকে তা হল ঘরবাড়ি ছেড়ে সারা জীবনের জন্য শহরে চলে যাওয়া/পালিয়ে যাওয়া, অস্বাস্থ্যকর বস্তিতে বাস করতে বাধ্য হওয়া এবং অবশেষে সস্তা শ্রমিক গেলার জন্য হা করে থাকা শিল্প দানবের খাবারে পরিণত হওয়া। যার ফলে তার হয়তো সামনে আবার আত্মহত্যা করার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, আত্মহত্যা করতে বাধ্য হতে হবে অথবা সামান্য মজুরিতে অতি পরিশ্রমের ফলে পুষ্টিহীনতায় এবং অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশের ফলে অসময়ে বিনা চিকিৎসায় অথবা ভুল চিকিৎসায় মারা যেতে হবে বা কোনো কাঠামোগত শিকার হয়ে পঙ্গু হতে হবে বা পরিকল্পিত কিন্তু অস্বীকৃত উপায়ে তাকে মেরে ফেলা হবে/খুন করা হবে।
কারণ এতো বড় পৃথিবীতে তার জন্য পালানোরও আর কোনো জায়গা নেই। জঙ্গল, পাহাড়, নদী, খোলা জায়গা এখন “রিসোর্ট” “সংরক্ষিত বনাঞ্চল” “অভয়ারণ্য” “সাফারি পার্ক/পার্ক” “টুরিস্ট স্পট” ইত্যাদি নানান নামে আর ঢংয়ে মূলত পুঁজিপতিদের হাতের ব্যবসার উপকরণ! প্রাণ ও প্রকৃতি বিদ্বেষী, মুনাফা ও জিডিপি নির্ভর দর্শনের সোজাকথা প্রাণ ও পরিবেশ বাঁচুক বা ধ্বংস হোক, মুনাফার ও জিডিপির বৃদ্ধি হতেই হবে।
কারণ এতো বড় পৃথিবীতে তার জন্য পালানোরও আর কোনো জায়গা নেই। জঙ্গল, পাহাড়, নদী, খোলা জায়গা এখন “রিসোর্ট” “সংরক্ষিত বনাঞ্চল” “অভয়ারণ্য” “সাফারি পার্ক/পার্ক” “টুরিস্ট স্পট” ইত্যাদি নানান নামে আর ঢংয়ে মূলত পুঁজিপতিদের হাতের ব্যবসার উপকরণ! প্রাণ ও প্রকৃতি বিদ্বেষী, মুনাফা ও জিডিপি নির্ভর দর্শনের সোজাকথা প্রাণ ও পরিবেশ বাঁচুক বা ধ্বংস হোক, মুনাফার ও জিডিপির বৃদ্ধি হতেই হবে। এবং এই পুরোটা সময়জুড়ে শিল্পী, সাংবাদিকেরা, লেখকেরা সব জেনেও ব্যস্ত থাকবেন একটা তথাকথিত নিরপেক্ষ/সম্পূর্ণ চিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য। যেখানে ব্যাপারটা সাদাকালোর মতো অতিসরল হবেনা, দেখানো হবে দোষ সবারই ছিল, সবাইতো ভালোমন্দ মিশিয়ে মানুষ। বা বলা হবে- ব্যাপারটা এতো সরল বা সহজ নয়, শ্রমিকের/কৃষকের আত্মহত্যার/মৃত্যুর/খুনের আরো অনেক কারণ ছিল! কিন্তু মূল কারণটা তারা কখনোই সামনে আনবেননা যে, কেন এই কৃষকের আত্মহত্যা করার মতো অবস্থায় এসে ঠেকতে হল? কেন তার নিজের জমি নেই, কেন সে সময় মতো সার, পানি, বীজ পায়নি? কেন সে সময়মত ফসল তুলে আনতে পারেনি, কেন সে ন্যায্য দামে ফসল বিক্রি করতে পারেনি? কেন তার পারিবারিক সমস্যা তৈরি হল? কেন কৃষক ও তার পরিবার পরিজন অপুষ্টিতে ভুগছে? কেন তারা সঠিক চিকিৎসা পায়না? কেন বছরের পর বছর অতি বৃষ্টি হয়, কেন বারবার ফিরে আসে প্রলয়ঙ্করী বন্যা, ঝড়? কেন দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে, কেন বদলে যাচ্ছে পরিবেশ, কেন খরায় ভুগছি আমরা? কেন দিনের পর দিন কৃষি জমি দখল করে বানানো হচ্ছে শিল্পাঞ্চল? এসবের ফলে লাভবান হচ্ছে কয়জন এবং পরিবেশের কতটা ক্ষতি হচ্ছে? তথাকথিত শিল্পী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদেরা এসব প্রশ্নকে “বামপন্থি প্রচারনা” “অতিরঞ্জন” “অপ্রয়োজনীয়” “উন্নয়ন বিরোধী” ও আরো নানানসব তকমা দিয়ে বাতিল করে দেবেন। অথবা যেকোনো উপায়ে এসব প্রশ্নকে/প্রশ্নকারীকে থামিয়ে দেবেন অথবা তার বেঁচে থাকা ও কাজ করাকে বাধাগ্রস্থ করবেন, তাকে নানানভাবে হেয় ও অপদস্থ করবেন আর প্রয়োজন হলে নীরব করে দেবেন, চিরজীবনের জন্য।
মূল কারণটা তারা কখনোই সামনে আনবেননা যে, কেন এই কৃষকের আত্মহত্যা করার মতো অবস্থায় এসে ঠেকতে হল? কেন তার নিজের জমি নেই, কেন সে সময় মতো সার, পানি, বীজ পায়নি? কেন সে সময়মত ফসল তুলে আনতে পারেনি, কেন সে ন্যায্য দামে ফসল বিক্রি করতে পারেনি? কেন তার পারিবারিক সমস্যা তৈরি হল? কেন কৃষক ও তার পরিবার পরিজন অপুষ্টিতে ভুগছে? কেন তারা সঠিক চিকিৎসা পায়না?
পিপলি সরাসরির নির্মাণ ও অন্যান্য
পিপলি (লাইভ বা সরাসরি) সিনেমার চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে নির্মাণ, চরিত্র নির্বাচন, পোশাক, শব্দ নকশা, সঙ্গীত সব ক্ষেত্রেই নির্মাতা আনুশা রিজভির দক্ষতা এবং গভীর ভাবনার প্রকাশ লক্ষণীয়। সারা সিনেমায় কঠিন একটা বিষয় (এক্ষেত্রে কৃষকের আত্মহত্যা) নিয়ে কাজ করলেও এ বিষয় নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, আমলা এবং গ্রামের অতিগরিব ও প্রান্তিক মানুষ কাউকেই বিদ্রুপাত্মক আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকেননি। সমাজের উপরের সুশীল অংশ, সুবিধাভোগীগোষ্ঠীসহ এ সময়ের সবার ভিতরেই কাজ করছে এক ধরণের নিরাপত্তাহীনতা, চরিত্রগুলোর ভিতরে এর প্রকাশ দেখা গেছে যদিও ব্যাপারটা খোলাসা করেননি। আর তিনি নিজে সাংবাদিক ছিলেন বলে হয়তো জানেন, অনেক আগেই পতন ঘটেছে রাষ্ট্রের এই অন্যতম স্তম্ভটির। সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমগুলি এখন অধিকাংশ সময়েই ব্যস্ত থাকেন/থাকে নিজেদের সুবিধা ও ভোগ বৃদ্ধির চেষ্টায় আর সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান লক্ষ্য এখন পরিণত হয়েছে মুনাফা এবং মুনাফা আর রাজনৈতিক জনপ্রিয় মতবাদগুলিকে তোষণ করা। ভাবনাহীন সংবাদ পরিবেশন এবং যাকে নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে তার বা তাদেরকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে তাদের সম্পদের উপর বিবেচনা করে। কোথাও কারো যেমন এই পচনশীলতা নিয়ে দায় নেই, সেই দায় পালনের দায় সাংবাদিকেরাও পালন করতে আগ্রহী নন। পিপলি (সরাসরি) সিনেমা আমাদের সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে যে চিত্র পরিবেশন করে, সেটা শুধু সিনেমাতে নয় বাস্তবেও একইরকম। আর পিপলি (সরাসরি) সিনেমার রাজনীতিবিদ, পুলিশ ও আমলারা সাংবাদিকদের চেয়ে মোটেও কম খারাপ নয়, ঠিক যেমন তারা বাস্তবেও দুর্নীতিপরায়ণ, অলস, গতানুগতিক ও ভাবনাহীন তেমন এই চলচ্চিত্রেও তারা সেভাবেই এসেছেন কোনো ব্যাতিক্রম ছাড়াই।
সিনেমার শব্দ নকশা ও প্রেক্ষাপট সঙ্গীত যথার্থ। একটা দৃশ্যে দেখা যায় নাত্থা গ্রামের রাস্তা দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে দুলকি চালে এগিয়ে যাচ্ছে, ঘোড়ার চলার ছন্দে ছন্দে তার শরীরও দুলছে, কয়েক মুহূর্ত পরেই দেখা যায় সে আসলে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে একটা সাধারণ ঘরের খড়ের উপরে আর স্বপ্ন দেখছে এবং তার চেয়ে ক্ষমতাবান একজন তার গা ধাক্কা দিয়ে তাকে ডাকছে আর তার গা ধাক্কানোর তালে তালে তখনো শোনা যাচ্ছে ঘোড়ার দুলকি চালের শব্দ। বা এর আগের দৃশ্যে যেখানে শহরের ইংরেজি জানা, ইংরেজি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক গ্রামের অচৌকস ইংরেজি না জানা কম ক্ষমতাবান সাংবাদিককে বোঝাচ্ছিলেন আবেগ, খবর আর জনপ্রিয়তা পাওয়া খবরের গুরুত্ব। এসময়ে পিছনে বাজতে থাকা কণ্ঠ ও তারের বাদ্যযন্ত্রের বাজনা এবং গ্রামের ইংরেজি না জানা সাংবাদিকের বিষাদময় বাস্তবতাকে হজম করার চেষ্টার বিষণ্ণতার সাথে ভালো সঙ্গ দান করে এই প্রেক্ষাপট সঙ্গিতাশংটি।
আর ইন্ডিয়ান ওশানের করা গান চমৎকার, তবে অনেকদিন মনে রাখার মতো গান করেছেন নাগিন তানভীর, তার গাওয়া আদিবাসি ঢঙয়ের গান “চোলা মাতি কে রাম” ভোলা সহজ নয়। এ সিনেমাতে থিয়েটার থেকে আসা শিল্পী ওমকার দাস মানিকপুরীর অভিনয়, প্রকাশভঙ্গি অসাধারণ। কারণ অনেক সময় তার চরিত্রের কোনো সংলাপ ছিলনা, পুরোটাই তার করতে হয়েছে শরীর ও মুখের অভিব্যাক্তি দিয়ে আর নাত্থার মায়ের চরিত্রে সম্ভবত কোনো বিকল্প ছিলনা, চরিত্রায়নে অনেক সময়েই তিনি পথের পাঁচালীর (১৯৫৫) চুনীবালা দেবীকে (১৮৭৫-১৯৫৫) মনে করিয়ে দিয়েছেন। পিপলি (সরাসরি) সিনেমার চলচ্চিত্রায়নে শঙ্কর রমন চিরায়ত ঢঙয়ের একটা সমসাময়িক উপস্থাপনা নির্মাণ করেছেন যা গল্পের সাথে মানিয়েছে। সকল মিলিয়ে বলা যায় আনুশা রিজভি তার প্রথম সিনেমাতেই কারিগরি ও অন্যান্য শিল্পগত দিক উভয় দিকেই সম্পূর্ণ মনোযোগ ও দক্ষতা দেখিয়েছেন।
পিপলি (সরাসরি) সিনেমা ও চলচ্চিত্রকার আনুশা রিজভিকে নিয়ে আরো কিছু অ/প্রয়োজনীয় আলাপ
সিনেমা সম্পর্কিত নয় কিন্তু নির্মাতা সম্পর্কিত আরো কিছু তথ্য। যার ফলে আলাপ করা যায় শিল্প ও শিল্পী আলাদা কিনা অথবা শিল্পীর কোনো অবস্থান দিয়ে তার শিল্পকে বিচার করা ঠিক কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি (মনে করে দেখুন নারীদের প্রতি স্বর্গীয় জনাব পাবলো পিকাসোর বিরূপ আচরণের কারণে অনেকেই ডাক দিয়েছেন তার শিল্পকে বর্জন করার জন্য) ।
১। পিপলি (সরাসরি) (২০১০) উত্তর আমেরিকার সানডান্স চলচিত্র উৎসবে দেখানো প্রথম ভারতীয় সিনেমা, এ সিনেমার প্রযোজক ভারতীয় হিন্দি সিনেমার নায়ক আমির খান ও চলচ্চিত্রকার কিরণ রাও, তাদের সাথে সৃজনশীল বিরোধিতার ফলে আনুশা রিজভি একসময় চলচ্চিত্রটি থেকে নিজেকে ও তার জীবনসঙ্গী মাহমুদ ফারুকীকে সরিয়ে নেন। ফারুকী এ সিনেমার সহ-পরিচালক এবং অভিনেতা নির্বাচক এবং তিনি নিজে একজন লেখক এবং গল্পকার।
২। এ সিনেমার অন্যতম সৃজনশীল অংশীদার মাহমুদ ফারুকী ২০১৬ সালে ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ৭ বছরের সাজা লাভ করেন কিন্তু পরে উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং ছাড়া পান।
৩। মাহমুদ ফারুকীর এই ধর্ষণ মামলা এবং সাজা আর পরে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া এসব কিছু নিয়েই একটা দ্বিধা বিভক্তি তৈরি হয় শিল্পী মহলে, কেউ মনে করেন এটা একটা ভুল বোঝাবুঝির ফল আবার কারো মতে ফারুকী দোষী।
৪। আনুশা রিজভি প্রথমে মাহমুদ ফারুকীকে দোষী ধরে নিয়েছিলেন এবং অভিযোগকারীকে সমবেদনা জানিয়ে এবং তার পাশে থাকার অভিপ্রায় জানিয়ে মেইল করেন কিন্তু তিনি পরে তার এ অবস্থান থেকে সরে আসেন, যা বিতর্ক তৈরি করে।
৫। ভারতের হিন্দি মূলধারার সিনেমাতে পিপলি (সরাসরি) (২০১০) একটা তাৎপর্যময় সংযোজন এবং ঠিকঠাক প্রযোজনা ও পরিবেশনার ফলে এই সিনেমা যেমন প্রচুর দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে তেমনি আয় করেছে যথেষ্ট পরিমাণের অর্থ।
৭। এ সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজকেরা কেউ কিন্তু ভারতের কৃষকদের আত্মহত্যার ব্যাপারে সরব নন কিম্বা তারা এই গরিব জনতার অংশও নন। তারা সমাজের উঁচু তলার সুবিধাভোগী অংশ কিন্তু তারাই মূলধারাতেই বানিয়েছেন এই সমাজকে বিদ্রুপ করা সিনেমা (যেখানে হিন্দি সিনেমা বিখ্যাত তার গান-বাজনা আর পৃথিবীর সাথে অসম্পর্কিত সব গল্প সিনেমাতে দেখানোর জন্য।)। তাই এসব নিয়েও হয়তো আলাপ তোলা যায়।
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন: চলচ্চিত্রকার, চলচ্চিত্র সমালোচক।
ইমেইল: raiparasadardi@gmail.com
দোহাইঃ
https://en.wikipedia.org/wiki/Peepli_Live
https://www.youtube.com/watch?v=ht0-gqvFor0
Farmers’ suicides in India
https://en.wikipedia.org/wiki/Farmers%27_suicides_in_India
A satirical gem from India, it’s the anti-Slumdog Millionaire. By Cath Clarke
https://www.theguardian.com/film/2010/sep/23/peepli-live-review
A Sendup of India Politics and News
https://www.nytimes.com/2010/08/13/movies/13peepli.html
https://www.screendaily.com/reviews/peepli-live/5009990.article
https://www.hollywoodreporter.com/review/peepli-live-film-review-29215
https://en.wikipedia.org/wiki/Anusha_Rizvi
https://en.wikipedia.org/wiki/Mahmood_Farooqui
https://en.wikipedia.org/wiki/Pather_Panchali
https://en.wikipedia.org/wiki/Chunibala_Devi
Mahmood Farooqui: India filmmaker sentenced over rape |4 August 2016
https://www.bbc.com/news/world-asia-india-36972654
Healing myself: A woman recounts her struggles after a court acquitted the man she accused of rape
US scholar Christine Marrewa Karwoski on her case against theatre personality Mahmood Farooqui and her life since he was exonerated by the Delhi High Court.
Apr 26, 2018 · 12:30 pm | INTERVIEW By Urvashi Butalia
Anusha Rizvi on Mahmood Farooqui’s Acquittal and Rape Allegations| Subhash K Jha | 22 Jan 2018
https://www.thequint.com/entertainment/anusha-rizvi-on-mahmood-farooqui-acquittal
Mahmood Farooqui And His Acquittal In Rape Case | Opinion by Suranya Aiyar.
https://www.ndtv.com/opinion/mahmood-farooqui-and-his-acquittal-in-rape-case-1803070
“She Later Said I Love You”: Top Court Confirms “Peepli Live” Maker’s Acquittal
Mahmood Farooqui was booked in 2015 on the rape complaint filed by a research scholar from a US-based university. He was acquitted in September last year.