সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৭ জানুয়ারি- ২৭ এপ্রিল ২০২২)

সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৭ জানুয়ারি- ২৭ এপ্রিল ২০২২)

অর্থনীতি

ভোজ্যতেলের দাম আবারো বেড়েছে

০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা

ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আরেক দফা বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ায় ফের দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া পাঁচ লিটারে ৩৫ টাকা এবং পাম অয়েলে ১৫ টাকা বাড়ছে। আজ থেকেই এ দাম কার্যকর হবে।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা নির্ধারিত হয়। বোতলজাত সয়াবিনের ৫ লিটারের দাম ৭৬০ ও পাম অয়েলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১১৮ টাকা। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮ টাকা বেড়ে ১৬৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বেড়ে ১৪৩ টাকা, বোতলজাত সয়াবিনের ৫ লিটারের দাম ৩৫ টাকা বেড়ে ৭৯৫ ও পাম অয়েলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বেড়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিদেশে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান

৮টি করছে কারখানা, ৯টি কার্যালয়

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

বাংলাদেশের ১৭টি গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ১৭ গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একাধিক দেশে বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের ৮টি প্রতিষ্ঠান বিদেশে কারখানা স্থাপন, কারখানা অধিগ্রহণ ও যৌথ বিনিয়োগ করেছে।

বাকি অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বিদেশে অর্থ বিনিয়োগ করছে পণ্য বাজারজাত ও অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে লিয়াজোঁ কার্যালয় খোলার জন্য। কারণ, অনেক দেশে পণ্য বিক্রি করতে ওই দেশে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশেষ করে ওষুধ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর।

তাই এ দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে তারা সবাই যে বিদেশে কারখানা করছে তেমন নয়। রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত এ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে রপ্তানিকারক দেশগুলোতে নানা কাজে বিদেশে অর্থ খরচ করতে হয়। তাই অনেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশে কারখানা করার পাশাপাশি লিয়াজোঁ কার্যালয় খুলছে।

টিকার জন্য এখন পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

এ বছরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সবাইকে বুস্টার ডোজসহ করোনার টিকা দেওয়া শেষ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ জন্য পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থাও আছে।

আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিকার জন্য এখন পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে।

লোকসানি পাটকল চালু না করার পরামর্শ সংসদীয় কমিটির

০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা

লোকসানে থাকা পাটকল চালু না করার পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটি বলেছে, এসব পাটকল চালু করে সরকারের অর্থ অপচয়ের যৌক্তিকতা নেই।

গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। বৈঠকে বস্ত্র ও পাট প্রকল্প এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী, ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, এবি তাজুল ইসলাম, আহসান আদেলুর রহমান, ওয়াসিকা আয়শা খান ও খাদিজাতুল আনোয়ার অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি আব্দুস শহীদ সাংবাদিকদের বলেন, তিনটি জুট মিল উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার সেই মিলগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। নতুন করে সরকারিভাবে পাটকল চালু হবে কি হবে না এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন এসেছে। আমরা বলেছি, এগুলো চালু হবে কিনা সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, যেগুলো লাভজনক নয় তা চালু করে সরকারের অর্থ অপচয় করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

গরিবের বাজারটিতে এখন আর ১০ টাকায় তেল নেই

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

ঢাকার বিজয় সরণি থেকে তেজগাঁওয়ের দিকে যেতে উড়ালসড়কের নিচে বাজারটি। রেললাইনের পাশে গড়ে উঠেছে বলে নাম রেলওয়ে মার্কেট কাঁচাবাজার।

বাজারটির ক্রেতারা মূলত নিম্ন আয়ের। কেউ রিকশাচালক, কেউ দোকানের কর্মী, কেউ তেজগাঁও শিল্প এলাকার কারখানার শ্রমিক। তাই স্থানীয়ভাবে বাজারটি পরিচিত গরিবের বাজার বলে। এই বাজারের ক্রেতাদের ফর্দে সাধারণত আধা কেজি বা এক কেজি চাল, ১০ টাকার ভোজ্যতেল, ১০ টাকার ডাল, ৫ টাকার পেঁয়াজ—এসবই থাকে। ক্রেতার সামর্থ্য বুঝে দোকানিরা ছোট ছোট পুঁটলিতে সেই অনুযায়ী তেল, ডাল মোড়কজাত করে রাখেন।

রেলওয়ে বাজারের দোকানিরা তেলের ন্যূনতম পরিমাণের দাম ১০ টাকা থেকে ২০ টাকায় উন্নীত করার আগে অনেক দিন অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁরা আশায় ছিলেন, দাম কমবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দাম কমছে না; বরং বাড়ছে।

মাস দুই-তিন হলো এই বাজারে ন্যূনতম দামে বড় একটি পরিবর্তন এসে গেছে। এখন আর ১০ টাকায় সয়াবিন তেল বিক্রি হয় না। নিতে হয় কমপক্ষে ২০ টাকার। পরিমাণ বেড়েছে, তা নয়; বেড়েছে দাম।

তেজগাঁওয়ের একটি কারখানার শ্রমিক সুহেলী আক্তার মঙ্গলবার দুপুরের খাবারের বিরতির ফাঁকে গিয়েছিলেন রেলওয়ে মার্কেট কাঁচাবাজারে। উদ্দেশ্য, রাতের রান্নার জন্য কিছু কিনে রাখা। রাতে ফিরতে ফিরতে সাড়ে ৯টা বেজে যায়। তখন বাজার করে রান্নার সময় থাকে না। রাতে তাড়াতাড়ি না ঘুমালে সকালে ৮টার মধ্যে আবার কারখানায় যাওয়া যায় না।

তাড়াহুড়ার মধ্যে সুহেলী ১৬০ টাকার বাজার করলেন। সবজি ৩০ টাকার—১০ টাকার শিম, ১০ টাকার মুলা ও ১০ টাকার টমেটো। চাল কিনলেন দুই কেজি, দাম ১০০ টাকা। মোটা দানার মসুর কিনলেন এক পুঁটলি, পরিমাণ ১০০ গ্রাম, দাম ১০ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেল কিনলেন ২০ টাকা দিয়ে।

দেশে গত দুই বছরে অনেকটা লাফিয়ে লাফিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভোজ্যতেল ছাড়িয়ে গেছে সবকিছুকেই। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০১৯ সালে খোলা সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল প্রতি লিটার ৮৮ টাকা। সেই দাম ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। গত সোমবারই কোম্পানিগুলো খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করেছে।

তেল কেনার সময়ই সুহেলীর সঙ্গে দেখা। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে ১০ টাকা দিয়া যে তেল পাওয়া যাইত, সে তেল এহন ২০ টাকা দিয়া কেনা লাগছে।’

শুধু তেলের দাম নয়, সুহেলী বাজার পরিস্থিতিও তুলে ধরলেন। বললেন, ‘দুই বেলা খাওনে যা যা লাগে, সবকিছুরই দাম বেশি। করোনার চেয়েও এহন আরও বেশি কষ্টে আছি।

দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশিরা

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বিজনেস ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা

কোভিড মহামারির ১৮ মাসে দুবাইতে রিয়েল-এস্টেট এবং আবাসনে বিনিয়োগের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকরা। যদিও দুবাই বিলাসবহুল শপিংমল, অতি-আধুনিক স্থাপত্য এবং প্রাণবন্ত নৈশকালীন আমোদ-প্রমোদের শহর হিসেবেই পরিচিত। এদেশের নাগরিকদের বিনিয়োগের তথ্য দুবাইয়ের সরকারি নথি এবং সেই সূত্রে প্রকাশিত স্থানীয় সংবাদপত্রের র‍্যাঙ্কিং- এর বরাতেই জানা গেছে।

বিনিয়োগের পরিমাণ ১২৩ মিলিয়ন দিরহাম বা প্রায় ২৮৮ কোটি টাকা। কিন্তু পারস্য উপসাগরীয় ধনাঢ্যদের শহরে এই অর্থ আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর সিংহভাগই পাচার করা- কালোটাকা।

তাদের মতে, কালোটাকার উপর প্রকাশিত এ র‍্যাঙ্কিং বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রতীক: যেমন মহামারির অভিঘাতের মধ্যেও বাংলাদেশের অনেক ব্যক্তির হাতে ছিল বিপুল টাকা- যা তারা বাংলাদেশে রাখা নিরাপদ মনে করেননি। তাই দুবাইয়ে সেকেন্ড হোম থাকলে বিতর্কিত অতীত ফেলে সেখানে নিরাপদ নতুন বিলাসী জীবন শুরু করা যাবে। দুবাইয়ের বিদেশি বিনিয়োগ গোপনীয় রাখার নীতি এবং সহজ আবাসনের সুবিধাও তাদের চিন্তাভাবনার সাথে মিলে যায়। ফলে দুবাই তাদের সম্ভাব্য গন্তব্যের সাথে মিলে গেছে ।

দুবাইয়ের বাংলাদেশি কমিউনিটি সূত্র জানিয়েছে এসব ক্রেতারা হলেন- বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলা।

প্রায় একই ধরনের কারণে এবং কালোটাকা সুরক্ষার আইনি ঢাল- কানাডার টরন্টোতে কুখ্যাত “বেগম পাড়া”র জন্ম দিয়েছে- যা কিনা অনেক বাংলাদেশি নাগরিক এবং তাদের পরিবারের পাচারকৃত অর্থের নিরাপদ আবাস। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গত বছর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, তিনি বেগমপাড়ায় সম্পত্তি থাকার ২৮টি ঘটনার তালিকা পেয়েছেন। এরপর হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এসব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিতে বলে।

কানাডা সরকারের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে ৩ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি সেদেশে বসবাসের অনুমতি পেয়েছে। যেখানে ২০০৬-২০২০ সালে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছে ৪৫ হাজার বাংলাদেশি। 

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাইকোর্ট, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার বেশ কিছু উদ্যোগ কানাডায় কালোটাকা ও অস্বচ্ছ বিনিয়োগকে কঠিন করেছে। অন্যদিকে, যারা নিজেদের আর্থিক বিবরণ গোপন রাখতে চান দুবাইয়ের সহজ আবাসন নীতি এমন ধনীদের আকর্ষণ করেছে।

দুবাই ভূমি বিভাগের তথ্য উল্লেখ করে, দুবাইয়ের দুটি সংবাদপত্র – ইংরেজি ভাষার টেলার রিপোর্ট এবং আরবি ভাষার ইমারাত আল ইউম – সম্প্রতি একই শিরোনাম দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সোজাসাপ্টা শিরোনামটির বাংলা করলে দাঁড়ায়- ‘বাংলাদেশের ধনী ব্যক্তিরা দুবাইয়ে ১২৩ মিলিয়ন দিরহাম মূল্যের রিয়েল এস্টেট কিনেছে’।

ধনী দেশ বলে পরিচিত নেদারল্যান্ডের নাগরিকরাও এক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের কাছে হার মেনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তারা কিনেছেন ১১৭.৬৭ মিলিয়ন দিরহামের সম্পত্তি। ১১১.২৫ মিলিয়ন দিরহামের বিনিয়োগ করে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিকরা।

এছাড়া, চীনের নাগরিকরা ১০৭.৯ এবং জার্মানির নাগরিকরা ১০৫ মিলিয়ন দিরহামের সম্পত্তি কিনে যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছেন।

গ্যাসের দাম আড়াই গুণ, বিদ্যুৎ দ্বিগুণ তবু বাড়ানোর চেষ্টা

১০ ফেব্রুয়ারি ২২, সমকাল

পানি ছাড়া জীবন চলে না। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খাল-বিল-নদীর দেশে দাম চড়ছে পানির। দফায় দফায় বাড়ছে অন্য তিনটি পণ্যের দামও। ধীরে ধীরে এসব যেন চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অতি প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম গত ১২ বছরে বেড়েছে দুই থেকে আড়াই গুণ। দুর্বিষহ জীবনে পড়েছেন শ্রমিক, কৃষক, চাকরিজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। বিনোদন, চিকিৎসা, লেখাপড়া এমনকি খাওয়ার খরচ কমিয়ে তারা চাপ সামলাচ্ছেন। সব দিকে কাটছাঁট করে শুধু প্রাণটুকু বাঁচিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন দিন। নতুন করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা যেন তাদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চাকরিতে বদলি হওয়ায় সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর থেকে মগবাজারে বাসা নিয়েছেন বজলুর রহমান। নতুন বাসায় লাইনের গ্যাস নেই। তাই এলপিজি ব্যবহার করেন তিনি। মাসে ১২ কেজির দুই সিলিন্ডার গ্যাস লাগে। জানুয়ারি মাসে দুই সিলিন্ডার কিনতে তার খরচ হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। যদিও সরকার নির্ধারিত দাম ছিল দুই হাজার ৩৫৬ টাকা (প্রতি সিলিন্ডার ১১৭৮ টাকা)। চলতি মাসেই সিলিন্ডারপ্রতি ৬২ টাকা দাম বাড়িয়েছে সরকার। দোকানে দাম আরও বেশি রাখছে। শুধু রান্নার গ্যাসেই গত মাসের চেয়ে তার ১৫০ টাকা বেশি খরচ হবে।

বজলুর রহমান বলেন, সব জিনিসের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর বেতন বাড়েনি। প্রতি মাসে এখন ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দামও বাড়বে। এভাবে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলে জীবন চলবে কী করে?

শুধু এলপিজি নয়, গত ১১ বছরে প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে সরকারি গ্যাসের দাম। ২০০৯ সালে দুই চুলার গ্যাসের মাসিক বিল ছিল ৪০০ টাকা। পাঁচ দফায় বেড়ে তা হয়েছে ৯৭৫ টাকা। বৃদ্ধির হার ১৪৩.৭৫ শতাংশ। চলতি মাসে নতুন করে দুই চুলার গ্যাসের বিল ২১০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। ২০০৯ সালে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের খুচরা দাম ছিল চার টাকা ৩৪ পয়সা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা ৯৬ পয়সা, বেড়েছে ১২৯ শতাংশ। চলতি মাসে এই দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করেছে পেট্রোবাংলা।

বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সরকার আরও এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। গত ১১ বছরে সরকার ১০ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে দাম বেড়েছে ৯০ শতাংশ। ২০১০ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় খুচরা মূল্য ছিল তিন টাকা ৭৬ পয়সা। সর্বশেষ ২০২০ সালের মার্চে তা বাড়িয়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা করা হয়। এখন আরেক দফা দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) একটি যৌথ জরিপে সম্প্রতি জানানো হয়, দেশে করোনাকালে তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।

ভোগ ও বিনিয়োগের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন

১০ ফেব্রুয়ারি ২২, সমকাল

গেল অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির চূড়ান্ত এবং সাময়িক হিসাবের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান রয়েছে। এই ব্যবধানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জিডিপির বড় প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে রপ্তানি খাতের অবদানের কথা বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি এবং রপ্তানির পার্থক্য সাময়িক হিসাবের চেয়ে চূড়ান্ত হিসাবে অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়ে যাওয়া রপ্তানি দিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এত বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। ভোগ এবং বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। কিন্তু কভিডের মধ্যে হঠাৎ এত বড় পরিবর্তন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে (২০২০-২১) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এর আগে গত নভেম্বরে প্রকাশিত সাময়িক হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সাধারণত কোনো অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তথ্য এবং পরবর্তী ৩ মাসের অনুমানের ভিত্তিতে সাময়িক হিসাব করা হয়। চূড়ান্ত হিসাবে সাময়িক হিসাবের সঙ্গে কিছুটা ব্যবধান থাকে। কিন্তু এত ব্যবধান সাধারণত থাকে না। অন্যদিকে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে করোনা সংক্রমণ বেড়েছিল। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছিল।

সোয়া কিলোমিটারে খরচ বাড়ছে ৭৫০০ কোটি টাকা

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

মেট্রোরেলের লাইনটি উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত হওয়ার কথা। সেটাকে সরকার এখন মতিঝিলের পরিবর্তে কমলাপুর পর্যন্ত নিয়ে শেষ করতে চায়। এ জন্য বাড়তি ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করতে হবে। কাজটির জন্য খরচ হবে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়াতে চায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের জন্য বাড়তি সোয়া কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করতে গেলে দুটি সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় ছয় একর জমি তাদের অধিগ্রহণ করতে হবে। এ জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের জন্য ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা খরচ পড়বে। বাকি টাকা খরচ হবে অবকাঠামো নির্মাণে। এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

জীবনযাত্রার ব্যয়

গরিব সংকটে, মধ্যবিত্ত দুর্দশায়

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

ঢাকার কারওয়ান বাজারে গত রোববার ভরদুপুরে রুটি-কলা খাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। দুপুরে ভাত না খেয়ে রুটি-কলা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন সাধারণ রেস্তোরাঁগুলোতে এক বেলা সবজি, ডাল ও ভাত খেতেও ৮০ টাকা লেগে যায়। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তিনি দুপুরে রুটি-কলা খেয়ে কাটানো শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে সাইফুল সংসারে ব্যয় বাড়ার খতিয়ান তুলে ধরেন। বলেন, গত জানুয়ারি মাসে তাঁর বাসাভাড়া ৫০০ টাকা বেড়েছে। সন্তানের স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য দিনে রিকশাভাড়া লাগত ২০ টাকা করে ৪০ টাকা। এখন লাগে ৬০ টাকা। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ সব পণ্যের দামই বাড়তি। অফিসে যাওয়া-আসা করতেও বাসভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। কিন্তু তাঁর আয় দুই বছর আগে যা ছিল, এখনো তা-ই আছে। সংসার চালাতে এখন প্রতি মাসেই ধারকর্জ করে চলতে হচ্ছে।

সাইফুল ইসলামের মতো সাধারণ মানুষের সংসারে ব্যয়ের বড় খাত চারটি—খাদ্য ও ঘরকন্নার উপকরণ কেনা, বাসাভাড়া ও সেবার বিল, সন্তানদের পড়াশোনা এবং পরিবহন। দেশে এই চারটি খাতেই একসঙ্গে পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম অবস্থা মানুষের।

বাজারে এখন চালের দাম চড়া। সাম্প্রতিককালে ডাল, তেল ও চিনির দাম বেড়েছে ব্যাপকভাবে। বেড়েছে সাবান, টুথপেস্ট, প্রসাধন, টিস্যুসহ সংসারে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ভাড়া এক লাফে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। করোনার কারণে গত বছর না বাড়ালেও এ বছর বাড়ির মালিকেরা বাসাভাড়া বাড়িয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজের বেতন ও খাতা-কলমের দামও বাড়তি।

সাইফুল ইসলাম নিজেই যেহেতু খাদ্যপণ্য সরবরাহের কাজ করেন, সেহেতু জানেন বাজারের পরিস্থিতি কী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সীমিত আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে। ধনীদের কথা আলাদা।

কতটা বেড়েছে দাম

আওয়ামী লীগ সরকার এই মেয়াদে দায়িত্ব নিয়েছিল ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং

করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওই দিনের বাজারদরের তালিকা ও গত বৃহস্পতিবারের তালিকা ধরে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোটা চালের দাম ১৫, মোটা দানার মসুর ডাল ৭৭, খোলা সয়াবিন তেল ৫৪, চিনি ৪৯ ও আটার দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে।

শুধু ভোজ্যতেলের কথা ধরা যাক। মধ্যম আয়ের পাঁচজনের একটি পরিবারে গড়পড়তা ৫ লিটার সয়াবিন তেল লাগে। টিসিবির হিসাবে, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৪৬৫ থেকে ৫১০ টাকা, এখন তা ৭৪০ থেকে ৭৮০ টাকা। মানে হলো, শুধু সয়াবিন তেল কিনতে একটি পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ৫৬ শতাংশ।

কাঁচাবাজারে মাছ, মাংস ও সবজির দাম নিয়মিত ওঠানামা করে। তবে বিগত এক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, ফার্মে উৎপাদিত মুরগির দাম বছরজুড়েই বেশি থাকছে। যেমন ব্রয়লার মুরগির দাম এখন বছরের বেশির ভাগ সময় প্রতি কেজি ১৫০ টাকার বেশি থাকে। করোনার আগেও এই দর ১৩০ টাকার আশপাশে থাকত। বিক্রেতাদের দাবি, মুরগির বাচ্চা, খাবারের দাম ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই আর আগের দামে ফেরার আশা কম।

সীমিত আয়ের পরিবার কালেভদ্রে এখন গরুর মাংস কিনতে পারে। টিসিবি বলছে, এখন বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। তিন বছর আগে এই সময়ে ছিল ৫০০ টাকার নিচে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ১৮টি সবজির দাম বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ২০২০ সালে সবজির দাম গড়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালের হিসাবটি তারা এখনো তৈরি করেনি। ক্যাবের কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ বাজার ঘুরে নিয়মিত দামের তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর ভরা শীত মৌসুমে সবজির দাম যতটা কমে, এ বছর ততটা কমেনি।

শুধু মুদিদোকান ও কাঁচাবাজারের খাদ্যপণ্য নয়, বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দামও। ঢাকার ফার্মগেটের তেজকুনিপাড়া এলাকার আওলাদ হোসেন মার্কেটের মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি মুদিদোকানের মালিক সালাম ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, চার মাস আগেও একটি কাপড়কাচা সাবানের দাম ছিল ১৮ টাকা। এখন দাম ২২ টাকা। মাঝারি আকারের সুগন্ধি সাবানের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। ৪৫ টাকায় আধা কেজি গুঁড়া সাবান পাওয়া যেত। এখন তা ৫২ টাকা। দাঁত মাজার পেস্টের মাঝারি প্যাকের দাম ৩ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা হয়েছে। বেড়েছে টিস্যুর দামও।

শিক্ষা উপকরণের দাম কতটা বেড়েছে, তা তুলে ধরেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয়সংলগ্ন ‘কলেজ পরিবেশলাইব্রেরি’ নামের একটি দোকানের বিক্রেতা আজিজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি খাতার দাম ২০ থেকে বেড়ে এখন ২৫ টাকা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেনসিলের দাম। ১০ টাকার একটি পেনসিলের দাম ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।

যাঁদের বাড়িতে সরকারি কোম্পানির গ্যাসলাইন নেই, তাঁরা বিপাকে আছেন সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালের শুরুতে যে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস সিলিন্ডার (১২ কেজি) ৮০০-৮২০ টাকা ছিল, তা এখন ১ হাজার ২৪০ টাকা।

চালের দাম কমাতে পারছে না সরকার

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

সরকারের হাতে চাল ও গমের মজুত এখন সর্বোচ্চ। পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টন। সর্বশেষ দুই মৌসুমে ধান আবাদ বড় কোনো দুর্যোগে পড়েনি, বরং উৎপাদন বেড়েছে। সরকার আমদানির সুযোগ দিয়েছে। বিশ্ববাজারেও দাম কম। তারপরও দেশে চালের দাম কমছে না।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে মোটা চালের গড় দাম ছিল কেজি ৪০ টাকারও কিছু কম। ২০২০ সালে তা বেড়ে ৪৮ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০২১ সাল জুড়েই দাম চড়া ছিল।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৪৪-৫০ টাকা। অবশ্য বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটামুটি ভালো মানের মোটা চাল কিনতে ৪৮-৫০ টাকা লাগছে।

মধ্যম আয়ের পরিবারে জনপ্রিয় মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল। এই চাল কিনতে কেজিতে ব্যয় করতে হচ্ছে ৬৪ থেকে ৭২ টাকা। মাঝারি বিআর-২৮ ও সমজাতীয় চাল কেনা যাচ্ছে মানভেদে কেজি

৫২ থেকে ৫৮ টাকায়।

চালের দাম নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ও চিন্তিত। তারা এক সপ্তাহ ধরে বড় চালকল ও চাল ব্যবসায়ীর কাছে মজুতের হিসাব চাইছে। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক সভায় চাল আমদানির হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমদানির নথিপত্র তৈরি আছে।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কৌশলের সুফল পাওয়া যায়নি। কারণ, সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় বস্তুনিষ্ঠ তথ্য-উপাত্ত নেই। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে দেশের আটজন শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী এবং চারজন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা দাম কমানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য চালের বাজার পরিস্থিতি বুঝে সঠিক পদক্ষেপ না নিতে পারাকে দায়ী করছেন।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকও স্বীকার করেন, সত্যিকার অর্থে দেশে চালের প্রকৃত উৎপাদন ও ভোগ নিয়ে তথ্যের ঘাটতি আছে। তাঁর মতে, দেশে প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে। চাল ব্যবহারের নতুন নতুন খাত তৈরি হচ্ছে। মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, দেশের মানুষের আয় বেড়ে যাওয়ায় মাঝারি ও সরু চাল কেনা বেড়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী সরু চালের উৎপাদন হয়তো বাড়ছে না। এ কারণে বাজার একটু বাড়তি। তবে বোরো ধান উঠলে দাম কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

‘ডাইল আর আলুই ভরসা’

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

‘ইনকাম কম, খরচ বেশি, জিনিসের দামও বাড়ছে। পরিবার চালাইতে হিমশিম খাইতাছি। মাছ-মাংস এখন স্বপ্ন, ডাইল আর আলুই ভরসা। ট্যাকার চিন্তায় ডেইলি চোখে আন্ধাইর দেখি।’ কথাগুলো নগরের শাহি ঈদগাহ এলাকার রিকশাচালক চল্লিশোর্ধ্ব আলাউদ্দিনের। তাঁর মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। পাঁচ বছর ধরে সিলেট শহরে রিকশা চালাচ্ছেন। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে তাঁর গড় আয় হয় ৪০০ টাকা। তা দিয়েই চলে তাঁর সাত সদস্যের সংসার।

আলাউদ্দিন জানান, অসুস্থ বাবা, স্ত্রী আর চার ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। প্রতি মাসে গড়ে তিনি ১২ হাজার টাকা আয় করেন। বাবার চিকিৎসা, দুই সন্তানের লেখাপড়া, বাসাভাড়া থেকে শুরু করে পরিবারের যাবতীয় খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। একদিকে তাঁর স্বল্প আয়, অন্যদিকে কয়েক মাসের ব্যবধানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। তাই পরিবার চালাতে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১২ জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই দ্রব্যমূল্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে জ্বালানি গ্যাস, সয়াবিন তেল, চাল, ডাল, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকের সংসারে অভাব লেগেই আছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

টিকে থাকাই এখন কঠিন

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে কাবু হয়ে গেছে সব পেশার মানুষ। আয় কমে যাওয়া এবং ধারদেনায় জীবনযাপনে টানাপোড়েন চলছে। এই টানাপোড়েনের মধ্যে নিত্যপণ্যের মূল্য ধাপে ধাপে বেড়ে চলায় সংসার চালাতে গিয়ে দিশেহারা অবস্থা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর। বরিশাল নগরের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের প্রভাবে তাঁদের দুর্দশার কথা জানা গেছে।

নিজাম উদ্দীন নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের অসহায়ত্বের কেউ খোঁজ রাখে না। এমনিতেই করোনার কারণে অনেক ধারদেনা হয়েছি। এখন যেভাবে বাজারে সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সে অনুযায়ী বেতন এক টাকাও বাড়েনি। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ এবং বাজারমূল্যের চাপ সামলাতে এখন হিমশিম খাচ্ছি।’

রিকশাচালক আবুল কালামের কাছেও এমন হতাশার কথা শোনা গেল। আবুল কালাম বলেন, ‘ঘরে খাওনদার পাঁচজন। দৈনিক ৪০০ টাকা ইনকাম কইরর‌্যা বাজারে গেলে চাহিদা অনুযায়ী বাজার-সওদা নিতে পারি না।’

বরিশাল নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাসখানেক ধরে সব নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েই চলেছে। চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ছাড়াও সবজি, মাছ, মাংস, মুরগিসহ সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। মাসখানেকের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ১০ টাকা। ফলে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের।

মাস চলে না ৫০ হাজারেও

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, দেশ রুপান্তর

মাসিক বেতন ৫০ হাজার টাকা। এ টাকার মধ্যে ১৬ হাজার টাকা বাসা ভাড়া। পানির বিল ৫০০, গ্যাস ৯৭৫, ডিশ বিল ৪০০, বুয়ার বেতন ২০০০, পত্রিকা বিল ১৫০, ইন্টারনেট ৭০০, বিদ্যুৎ গড়ে ৮০০, ময়লা ফেলার জন্য ১২৫, মাসিক ডিপিএস কিস্তি ১ হাজার, মায়ের ওষুধ ৮৫০, তিন সন্তানের লেখাপড়া বাবদ ৮ হাজার, অফিস যাতায়াত বাবদ ৩ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৩৪ হাজার ৫০০ টাকার মতো খরচ। বাকি টাকা দিয়ে সারা মাসের চাল, ডাল, তেল, নুন, আটা, সবজি, মাছ মাংস কিনতে হয়।

আয় ও খরচের এই ফর্দটি মো. মোসলেম উদ্দিনের। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি বীমা কোম্পানির এই চাকুরে পরিবার নিয়ে থাকেন হাজারীবাগে। স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে ও মাকে নিয়ে তার সংসার। দুই মেয়ের বড়জন একটি কলেজে, বাকি দুই ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়ে। তিন কামরার বাসার এক কামরায় তিনি ও তার স্ত্রী, এক কামরায় মা, অন্য কামরায় দুই মেয়ে আর ছেলেটি থাকে ড্রয়িংরুমে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা মোসলেম উদ্দিন স্বপ্ন দেখেছিলেন একটা সাধারণ মধ্যবিত্ত জীবনের। সেই অতি সাধারণ জীবনই এখন আর চলছে না তার। মোসলেম উদ্দিন গত ছয় মাস হয় বড় বিপাকে পড়েছেন। কারণ প্রতিমাসেই বাড়ছে পণ্যের দাম।

মোসলেম উদ্দিনের বাজার-সদাই করার কাহিনীটি এমন, অধিকাংশ দিন অফিস থেকে বের হয়ে কারওয়ানবাজারের ফুটপাত থেকে কম দামে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ও সবজি কেনেন। কারওয়ানবাজারে রাতে ট্রাকবোঝাই এসব পণ্য আসার সময় কিছু লোক এটা-সেটা চুরি করে রেখে দেয়। আবার অনেকে ফেলে দেওয়া পচা সবজির স্তূপ থেকে কিছু বেছে রাখে। পরে এসব সবজি কম দামে বিক্রি করে। মোসলেম উদ্দিন অনেক সময় যান মাছের বাজারে। উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা করে মাছ না কিনেই খামারের ব্রয়লার মুরগি কিনে বাড়ি ফেরেন। সেই ব্রয়লারের দামও এখন বেড়ে গেছে।

শুধু মোসলেম উদ্দিন নন, গত ছয় মাসে দ্রব্যমূল্য এত বেড়েছে যে, তা অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তারও আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর মহামারীর প্রভাবে অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খায়। বহু মানুষ চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হন। চাকরি বা ব্যবসা থাকলেও বহু মানুষের আয় কমে গেছে।

বাজারে আগুন, বিক্রি কম : গতকাল শুক্রবার রাজধানীর হাতিরপুল, ঝিগাতলা, মোহাম্মদপুর এলাকার ১০টি মুদি দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় দোকানে বিক্রিও কমে গেছে।

ওই তিন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরিবের মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙ্গাশের দামেও আগুন। বড় আকারের পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা কেজি দরে। মাঝারিগুলো বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকায়। চাষের কই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩০০-৩২০ টাকায়। যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ২২০-২৫০ টাকায়। তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা। এ ছাড়া প্রতিকেজি বড় চিংড়ি ১১০০-১২০০, রুই ৩৫০-৪০০, কাতলা ৩০০-৩৫০, কোরাল ৬০০, নলা ২৬০, কালবাউশ ৪০০ এবং ট্যাংরা ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শীতের মৌসুমে সবজির দাম সাধারণত কম থাকে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম।  গতকাল রাজধানীর চারটি বাজারে গড় দাম ছিল প্রতিটি মাঝারি আকারের ফুলকপি ৩৫-৪০ ও বাঁধাকপি ৩০-৩৫ টাকা। শিম প্রতিকেজি ৬০, করলা ৭০, শসা ৬০, বেগুন ৭০, পেঁপে ৩০, গাজর ৪০, টমেটো ৩০-৪০, মুলা ৪০, আলু ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহে ৯৬-১০০ টাকায় এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম পাওয়া যেত। গতকাল বিক্রি হচ্ছিল ১১০ টাকা দরে।

বাজার চিত্রের সঙ্গে সরকারি তথ্যের মিল নেই : গত বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জানুয়ারিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ; তার আগের মাস নভেম্বরে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ গত জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে বা পণ্যের দাম কমেছে। খাদ্যসহ ভোগ্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে বিবিএসের এই তথ্যে সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। যেখানে খাদ্যপণ্য চাল, তেল, ডাল থেকে শুরু করে টিস্যু ও কাপড় কাচার সাবানের দাম পর্যন্ত বেড়েছে। সেখানে সরকারি জরিপ সংস্থা বলছে দাম কমেছে।

খরচ কমিয়েও টিকতে না পেরে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে : দেশের জনপ্রিয় একটি বেসরকারি টিভির একজন বিশেষ প্রতিনিধি বেতন পাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা। নাম না প্রকাশ করে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, গত বছরে সবকিছুর দাম বেড়ে গেলে তারা মানসম্মত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। খরচ কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা তখন করেছিলেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, খরচ কমিয়েও ঢাকায় টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। বাচ্চা ও স্ত্রীকে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি।

এই সংবাদকর্মী আরও বলেন, মিরপুরে প্রায় ৮০ লাখ লোক বাস করে, যার বড় অংশ নিম্ন আয়ের। বাসা ভাড়া কম বলে মিরপুরে থাকেন তিনি। সম্প্রতি তার পরিচিত কয়েকজন তাদের পরিবারকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারা তাদের আয়ে সংসার চালাতে পারছেন না।

ছাঁটাই হচ্ছে, কমছে বেতন : ঢাকার ধানমন্ডির দুটি পার্লার ও একটি জিমের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পার্লার দুটি থেকে চারজন কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। বাকিদের বেতন কমানো হয়েছে। আর জিম থেকে একজন কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। কারণ জানিয়ে জিমের মালিক ছাঁটাই হওয়া কর্মীকে বলেছেন, জিমে আগের মতো লোক আসছে না। সে কারণে আয় কমে গেছে। আয় কমে যাওয়ায় তাকে রাখা যাচ্ছে না।

টিসিবির ট্রাকের পেছনে ছুটছে মানুষ : গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) কার্যালয়ের সামনে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রির ট্রাক ঘিরে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। শুধু ডিআরইউ নয়, রাজধানীর পল্টন, ঝিগাতলা, কারওয়ানবাজার ঘুরে টিসিবির ট্রাকের সামনে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

ঝিগাতলায় টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে ভোর থেকে লোকজনকে অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে। ট্রাক আসতেই হুড়োহুড়ি লেগে যায়। পণ্য বিক্রি শেষ হয়েছে বেলা ১১টার মধ্যে। টিসিবির ট্রাক ঘিরে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ার চিত্র গত কয়েক দিন ধরেই গণমাধ্যমে আসছে। বেশকিছু ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, মানুষ পণ্য কেনার জন্য ট্রাকের পেছনে দৌড়াচ্ছে। ছুটন্ত এসব লোকজনের মধ্যে নারী, পুরুষ, যুবকসহ নানা বয়সীদের দেখা গেছে। আগে শুধু দরিদ্র মানুষদের টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে দেখা যেত, এখন মধ্যবিত্তরাও যোগ দিয়েছে সেই কাতারে।

ভোগ্যপণ্যের চাহিদায় গরমিল

হিসাবের বাইরে থাকছে দেড় কোটি মানুষ

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, যুগান্তর

.. .. দেশে সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছে ২০১১ সালে। ওই সময়ে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ১৭ লাখ। এরপর আর কোনো আদমশুমারি হয়নি। প্রচলিত নিয়মে পাঁচ বছর পরপর এ শুমারি হওয়ার কথা। তবে চলতি বছর ডিজিটাল পদ্ধতিতে একটি আদমশুমারি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন শুমারি না হওয়ায় ২০১১ সালের শুমারির ভিত্তিতে ২০১৬ সালের জনসংখ্যার প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ কোটি ৬২ লাখ। ওই শুমারি অনুযায়ী প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে। এ হিসাবে ২০১৭ সালে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮৫ লাখ, ২০১৮ সালে ১৭ কোটি ৮ লাখ, ২০১৯ সালে ১৭ কোটি ৩১ লাখ, ২০২০ সালে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ, ২০২১ সালে ১৭ কোটি ৭৯ লাখ এবং ২০২২ সালে জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৮ কোটি ৩ লাখ। এর সঙ্গে আরও আছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বেসরকারি হিসাবে তাদের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। সরকারি হিসাবে ১১ লাখ। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মনে করে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কমপক্ষে ২০ কোটি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি হিসাবেই যেহেতু জনসংখ্যা ১৮ কোটি তাই ভোগ্যপণ্যের চাহিদার হিসাব করতে হবে এর ভিত্তিতে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে পণ্যের চাহিদা নিরূপণ করা হচ্ছে সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যা ধরে। এখানেই ভোগ্যপণ্যের চাহিদার বাইরে থাকছে দেড় কোটির বেশি মানুষ। ফলে উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থায় উদ্বৃত্ত পণ্য থাকলেও বাস্তবে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। জনসংখ্যার তুলনায় চাহিদায় বরং ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এতে চাহিদার সংকট হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।.. ..

দেশে শিশুদের তীব্রতম অপুষ্টির প্রকোপ বাড়ছে

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা

তীব্রতম অপুষ্টিতে (সিভিয়ার অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশন বা এসএএম) ভুগছে দেশের অনেক শিশু। বিশেষ করে গত এক বছরে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির এ তীব্রতম মাত্রার প্রকোপ বেড়েছে অনেক বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে এতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যাও। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা নিতে আসা তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ৭২ শতাংশেরও বেশি।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে অপুষ্টি দূর করতে সরকারি-বেসরকারি নানা পদক্ষেপ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যদিও এখনো তীব্রতম অপুষ্টি বা এসএএমে ভুগছে দেশের অনেক শিশু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কভিডের প্রাদুর্ভাবে সাধারণ মানুষের অনেকেই কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। আয় কমেছে অনেকের। প্রয়োজনীয় পুষ্টির বিষয়টিতে আপস করতে বাধ্য হয়েছেন তাদের সবাই। এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে তীব্রতম অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশের হাসপাতালগুলোয় তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ভর্তি হয়েছে আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ২০২১ সালে এসএএমে ভোগা শিশু ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ৩১৩ জন। যেখানে আগের বছর ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫৭০।

তিন বেলা খাবার জোগাতে পারেন না হরিলাল, চলে গেছে স্ত্রী-সন্তান

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন

ষাটোর্ধ্ব হরিলাল রবিদাস মুচির কাজ করেন। তবে গ্রামগঞ্জে আজকাল তেমন কাজ না পাওয়ায় নিদারুণ অভাব-অনটনে দিন কাটছে তার। তিন বেলা খাবার জোগাতে ব্যর্থ হরিলাল। কয়েক মাস ধরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। এ অবস্থায় তাকে ছেড়ে চলে গেছে স্ত্রী ও ছেলে।

সরেজমিন দেখা যায়, নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও মেরামত করতে পারছেন না হরিলাল। ঘরের বেড়া, চাল সবই জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি ভূমিহীন। থাকেন সরকারি জমিতে।

হরিলালের দাবি, রোজগারের অভাবে গৃহ আর খাদ্যকষ্টে দিনযাপন করলেও সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কোনও সুবিধা তিনি পাননি। জোটেনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরও। এ অবস্থায় কোনোমতে বেঁচে আছেন তিনি।

হরিলাল রবিদাস কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। ওই ইউনিয়নের হাতিয়া মেলার গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ওয়াপদা বাঁধের পাশে সরকারি জমিতে ঘর তুলে বসবাস করেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে তার গ্রামের নাম ‘বাঁধ’ উল্লেখ রয়েছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শাহবাগে ‘ঝংকার সমাবেশ’

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শূন্য থালা  হাতে ‘ঝংকার সমাবেশ’ করেছে পিপলস অ্যাকটিভিট কোয়ালিশন (প্যাক)। স্টিলের শূন্য থালায় চামচের আঘাতে শব্দ তৈরি করে এই কর্মসূচির আয়োজকেরা বলেছেন, এই আওয়াজের মাধ্যমে তাঁরা সরকারকে শোনাতে চান যে দেশ ‘দুর্ভিক্ষের দিকে যাচ্ছে’।

আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে এই কর্মসূচি হয়। কর্মসূচি থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের কড়া সমালোচনা করা হয়৷ ‘খাবার দে, নয়তো গদি ছাড়’ বলে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন প্যাকের সদস্যরা।

বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের ব্যক্তিদের ‘মিথ্যুক’ বলে আখ্যা দেন প্যাকের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শাসকেরা কখনোই জনগণের কথা ভাবেনি। জনগণকে নিয়ে সরকারের কোনো চিন্তা নেই। দেশের গরিব মানুষের পক্ষে আজ মাছ-মাংস খাওয়া সম্ভব নয়; এমনকি তাঁরা যে সবজি খেতেন, দাম বাড়ায় তা–ও এখন খেতে পারছেন না। এই হলো আজকে দেশের অবস্থা। পানি, বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস—সবকিছুর দাম গত এক বছরে বেড়েছে। এর মূল কারণ দুটি—এক. তেলের দাম বাড়ানো এবং দুই. পরিবহনে চাঁদাবাজি।

উঠতি ধনীদের চাপে অভিজাত ক্লাব

০২ মার্চ, ২০২২, বণিক বার্তা

 নতুন করে সদস্যপদ দেয়া বন্ধ রেখেছে রাজধানীর দুই অভিজাত ক্লাব ‘ঢাকা’ ও ‘গুলশান’ ক্লাব। যদিও ক্লাব দুটির সদস্যপদ দেশের ধনীদের কাছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত সম্পদ। বিদ্যমান সদস্যদের কারো মৃত্যু হলে কিংবা স্বেচ্ছায় ক্লাবের সদস্যপদ বিক্রি করতে চাইলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ধনীরা। কোটি টাকাও ছাড়িয়েছে ক্লাব দুটির সদস্যপদের দাম। অনেকে কোটি টাকা দিয়েও পাচ্ছেন না ক্লাব দুটির সদস্যপদ।

রাজধানীর নতুন-পুরনো অন্যান্য ক্লাবেও এখন সদস্যপদ পেতে বিপুল অংকের বিনিয়োগ নিয়ে নামতে হচ্ছে ধনীদের। রাজধানীর বনানী ও উত্তরা ক্লাবের সদস্যপদের দাম উঠেছে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকায়। সদস্যপদের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হচ্ছে ক্লাবের সদস্য ফি। মাত্র এক বছর আগে উদ্বোধন হওয়া ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্যপদ পেতেও ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে। বোট ক্লাবের চেয়েও বেশি দর উঠেছে পূর্বাচল ক্লাবের। নতুন গড়ে ওঠা এলাকা পূর্বাচলভিত্তিক এ ক্লাবের সদস্যপদ এখন ৪০ লাখ টাকায় ঠেকেছে।

রাজধানী ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, চট্টগ্রাম ক্লাব ও কুমিল্লা ক্লাবের সদস্যপদ পেতেও গুনতে হচ্ছে ৩০ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে কুমিল্লা ক্লাবের সদস্যপদ বিক্রি হচ্ছে ৫০ লাখ টাকায়। দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরের অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদের দামও বাড়ছে তরতর করে। এ অবস্থায় দেশের অভিজাত ক্লাবগুলোর সদস্যপদ কেনার বিষয়টি এখন উচ্চমুনাফার বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে দাম আরো বাড়তে পারে এ আশায় ধনীদের কেউ কেউ নতুন ক্লাবগুলোর পাঁচ-সাতটি করেও সদস্যপদ কিনে রাখছেন। উঠতি ধনীরা পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি কর্মচারীদের নামেও ক্লাবের সদস্যপদ নিয়ে রাখছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।.. …

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে দেশে অতিধনীর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ব্যাংকের অর্থ লোপাট কিংবা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠছে বিশেষ একটি শ্রেণী। নব্য ধনীদের বড় অংশ অভিজাত ক্লাবের সদস্য হয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চাইছে। ধনীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অভিজাত ক্লাবের সংখ্যা ও সদস্যপদের দাম।

কুষ্টিয়ার রেনউইক যজ্ঞেশ্বর

লাভের প্রতিষ্ঠানটি এখন লোকসানে

০৬ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

টানা ১৫ বছর লাভ করেছে। কিন্তু তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান গুনছে। করোনার ধাক্কা ও ছয়টি চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যন্ত্রাংশ তৈরির ফরমাশ অর্ধেক কমে গেছে। এতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের চিনিকলের যন্ত্রাংশ তৈরি ও মেরামতের একমাত্র কারখানা রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি এই কোম্পানিটির কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ জন্য তাঁরা কিছু সুপারিশও করেছেন।

কুষ্টিয়ার কমলাপুর এলাকায় গড়াই নদঘেঁষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। ১৪০ বছরের পুরোনো এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের চিনিকলগুলোর যন্ত্রাংশ তৈরি ও মেরামত করে। ১৮৮১ সালে স্কটল্যান্ডের ডব্লিউ বি রেনউইক নাটোরের লক্ষ্মণহাটিতে আখমাড়াইকলের যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য রেনউইক অ্যান্ড কোম্পানি নামে কারখানা স্থাপন করেন। পরে সেই কারখানা কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। আর ১৮৯৬ সালে কুষ্টিয়ার বড় বাজার এলাকায় যজ্ঞেশ্বর নামে এক বাঙালি যজ্ঞেশ্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নামে একই ধরনের আরেকটি কারখানা গড়ে তোলেন। ১৯৪৫ ও ১৯৬২ সালে দুবার হাতবদলের পর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত দুটি প্রতিষ্ঠানই ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত হয়েছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে দুটি মিলই জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৭৫ সালে মিল দুটি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের হাতে ন্যস্ত হয়। আর ১৯৭৯ সালে দুটি মিল একীভূত হয়ে প্রায় ৪০ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠে রেনউইক, যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় দেশের চিনিকলের সব যন্ত্রাংশ আমদানি করা হতো। তাই চিনিকলের যন্ত্রাংশের আমদানির বিকল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেনউইককে গড়ে তোলা হয়। কিন্তু দুই বছর আগে দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ৬টি বন্ধ হয়ে গেলে কোম্পানিটির ব্যবসা হুমকিতে পড়ে। কর্মকর্তারা জানান, একসময় সারা বছরই রেনউইক কারখানা জমজমাট ছিল। সারা মাস কাজ চলত। এখন কাজ আগের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। তাতে আয়ও কমেছে রেনউইকের।

সরকারের ঋণ এখন জিডিপির ৪২.৫%

০৯ মার্চ, ২০২২, বণিক বার্তা

দ্রুত বাড়ছে দেশের জিডিপির আকার। তার চেয়েও দ্রুতগতিতে বড় হচ্ছে সরকারের ঋণ। দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও জিডিপির অনুপাতে সরকারের ঋণ ছিল ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে গত অর্থবছরে (২০২০-২১) এ অনুপাত উন্নীত হয়েছে ৪১ দশমিক ৪ শতাংশে। চলতি অর্থবছরে তা আরো বেড়ে সাড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির পূর্বাভাস বলছে, আগামী অর্থবছরে (২০২২-২৩) তা আরো বেড়ে দাঁড়াবে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশে।

তবে সরকারের ঘাটতি বাজেটের দ্রুত প্রবৃদ্ধির বিষয়টিতে ইঙ্গিত করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে সরকারের ঋণের হার আইএমএফের পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে ব্যয় নির্বাহে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বাড়িয়েছে সরকার। আর কভিডসহ নানা কারণে বিদেশী উৎস থেকেও সরকারের ঋণ গ্রহণের হার বেড়েছে। এ অবস্থায় ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে জিডিপি ও সরকারের ঋণের অনুপাত ৪৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে।

আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময় হার ৮৬ টাকা করে ধরলে বাংলাদেশী মুদ্রায় সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকায়। বিপুল এ ঋণের ৫৮ শতাংশই এসেছে দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে। বাকিটুকু এসেছে বিদেশী উৎস থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে বহুজাতিক বিভিন্ন সংস্থাসহ বিদেশী উৎস থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ বিলিয়ন ডলারে। বিদেশী উৎস থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দেশের জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশে।

রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতাই সরকারের ঋণ-জিডিপি অনুপাত বড় হওয়ার প্রধানতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতার কারণে সরকারের ঘাটতি বাজেটের আকার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ঘাটতি বাজেটের আকার যত বড় হবে সরকারের ঋণও তত বাড়বে। এ মুহূর্তে বাজেটের অন্যতম বড় ব্যয়ের খাত হয়ে উঠেছে ঋণের সুদ পরিশোধ। বিদ্যমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে। দিনশেষে জনগণকেই সরকারের এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

দীর্ঘ হচ্ছে অভাবী মানুষের লাইন

১০ মার্চ, ২০২২, বাংলাদেশ প্রতিদিন

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে স্বল্পমূল্যে মানসম্মত পণ্য কিনতে দীর্ঘ হচ্ছে মানুষের লাইন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ভোর থেকে মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন পণ্য কিনতে। সকাল ১০টায় পণ্য বিক্রি শুরু করে বেলা আড়াইটা বাজলেও শেষ হয় না মানুষের লাইন।

নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে টিসিবির লাইনে। অধিকাংশ মানুষ টিসিবি থেকে কিনছেন সয়াবিন তেল ও পিঁয়াজ। চাল, ডাল, তেল, চিনি, পিঁয়াজসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের বাজার চড়া। রাজধানীর ১৫০টি স্পটে ট্রাকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এ দফায় বিক্রয় কার্যক্রম ৬ মার্চ শুরু হয়ে ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে। পরে ২৭ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ফের পণ্য বিক্রি করা হবে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন বিক্রি হবে টিসিবির পণ্য। রাজধানীর বাঁশতলায় টিসিবির পণ্য কিনেত সকাল ৭টায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন খাদিজা বেগম (৫৫)। সকাল ১০টায় বিক্রি শুরু হলেও ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন মানুষ। দুপুর ১২টা বাজলেও সিরিয়াল আসে নি খাদিজা বেগমের। রোদে-গরমে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। আশপাশের লোকজন পানি খাইয়ে, বাতাস দিয়ে শুশ্রƒষা করেন তাঁর।

টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা দিনে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন তেল ও ৩০ টাকা দরে আড়াই কেজি পিঁয়াজ কিনতে পারবেন। দেশব্যাপী ৪০০-৪৫০ জন ডিলারের ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে এ বিক্রি কার্যক্রম চলবে।

রাজধানীতে টিসিবির বিভিন্ন পয়েন্টে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে আসা অনেকেই ফিরছেন খালি হাতে।

সঞ্চয় ভুলে ধারে চলছে সংসার

১০ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকার এক বস্তিতে ছোট্ট একটি টিনের ঘুপচিঘরে স্বামী ও তিন মেয়ে নিয়ে থাকেন গৃহকর্মী সোনিয়া আক্তার। তাঁর এক মেয়ে এবার বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। বাসায় বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে সোনিয়ার আয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। আর তাঁর স্বামী রিকশা চালিয়ে মাসে আয় করেন আট হাজার টাকার মতো।

সোনিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গত জানুয়ারিতে তাঁর ঘরভাড়া ৪০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার টাকা। আর নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় পাঁচজনের খাওয়াদাওয়ার খরচ ১০ হাজার টাকায়ও কুলায় না।

কাজের ফাঁকে গত মঙ্গলবার দুপুরে খাবার খেতে বাসায় ফিরেছিলেন সোনিয়া আক্তার। তখন প্রথম আলোর প্রতিবেদকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। বললেন, হঠাৎ করে সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। প্রায়ই তাঁকে মানুষজনের কাছ থেকে ধারদেনা করতে হয়। তিনি আরও বলেন, টিসিবির পণ্য কিনতে পারলে কিছুটা সাশ্রয় হয়। কিন্তু সে জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করেন, তাই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো সময় তাঁর নেই।

এটা গেল একজন দরিদ্র মানুষের কথা। এবার দেখা যাক মধ্যম আয়ের মানুষের সংসার কেমন চলছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করেন মালিবাগের মাহিন উদ্দিন। তাঁর মাসিক বেতন লাখ টাকার কাছাকাছি। পাঁচ সদস্যের পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আলাপকালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, করোনার কারণে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর বাসাভাড়া বাড়ানো হয়নি। তবে গত জানুয়ারিতে ভাড়া আড়াই হাজার টাকা বাড়িয়েছেন বাড়ির মালিক। করোনার আগে খাওয়াদাওয়ার পেছনে মাসে খরচ ছিল ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ থেকে ৩৮ হাজার টাকা।

মাহিন জানান, তাঁর বেতন গত জানুয়ারিতে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা বেড়েছে। তাঁর দাবি, বেতন যতটা বেড়েছে, তার তুলনায় খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই মাসে মাসে যে সঞ্চয় করতেন, সেটি বাদ দিতে হয়েছে।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলছে, সেটি জানতে প্রথম আলোর তিনজন প্রতিবেদক গত মঙ্গলবার রাজধানীর কয়েকটি এলাকার দুজন সরকারি কর্মচারী (১৭তম গ্রেডের), তিনজন বেসরকারি চাকরিজীবী, তিনজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দুজন গৃহকর্মী, দুজন কারখানার শ্রমিক, একজন বাড়ির কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) ও একজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলেন। এই ১৪ জনের মধ্যে আটজনই জানিয়েছেন, এখন তাঁদের মোটামুটি প্রতি মাসেই ধার করে সংসার চালাতে হয়। আর চারজন জানিয়েছেন তাঁরা কিছু সঞ্চয় করেন, তবে তা আগের চেয়ে কম।

সাধারণ মানুষের খরচের বড় চারটি খাতের সব কটিতেই ব্যয় বেড়েছে। খাত চারটি হলো খাদ্য ও ঘরের নানা উপকরণ কেনা, বাসাভাড়া ও সেবার বিল, সন্তানদের পড়াশোনা এবং পরিবহন খরচ। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগের মাস অর্থাৎ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির চেয়ে গত মাস ফেব্রুয়ারিতে চাল, তেল, ডাল, মুরগি, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম বা এলপি গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৮ থেকে ৮২ শতাংশ পর্যন্ত। ডিজেলের দাম বাড়ায় বাস ও লঞ্চভাড়া একলাফে বেড়েছে ২৭ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।

টিসিবির ট্রাকের পেছনে ভিড়

সকালে লাইনে, বিকেলে খালি হাতে ফেরা

১০ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা—টিসিবির ট্রাকের পেছনে এই সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে সংসার চালানো ইরুন্নেসা। আশা, যদি কম দামে তেল-ডাল কেনা যায়। তবে পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকাটাই বৃথা গেছে। ইরুন্নেসার পালা আসার আগেই টিসিবির ট্রাকের পণ্য ফুরিয়ে গেছে।

শুধু ইরুন্নেসা নয়, শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যেতে হয়েছে আরও প্রায় ২০ জনকে, যাঁরা শেষ পর্যন্ত লাইনে ছিলেন। এর বাইরে পণ্য পাওয়ার আশা না দেখে কেউ কেউ মাঝপথেই ফিরে গেছেন।

এই ঘটনা ঘটেছে গতকাল বুধবার ঢাকার মোহাম্মদপুরের টাউন হল মোড়ে।.. ..

দেশের বাজারে সম্প্রতি নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় টিসিবির ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে। অবশ্য সে তুলনায় পণ্য বরাদ্দ কম থাকে। দিনে একটি ট্রাকে যে পরিমাণ পণ্য দেওয়া হয় তা দিয়ে ২৫০ জন ক্রেতার চাহিদা মেটানো যায়।

মোহাম্মদপুরের টাউন হল মোড়ে টিসিবির ট্রাকের কাছে গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, নারী ও পুরুষের আলাদা লাইনে ৩০০ জনের মতো মানুষ দাঁড়িয়ে। লাইনের পেছনে নতুন নতুন ক্রেতা যোগ দিচ্ছেন। তাতে সংখ্যা আরও বাড়ছে। আবার কেউ কেউ বেশি ভিড় দেখে চলেও যাচ্ছেন। কিন্তু অনেকেই তীব্র রোদের মধ্যে যত কষ্টই হোক, লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেকেই বয়স্ক। কারও কারও সঙ্গে ছিল শিশুসন্তান।

অসম্ভব প্রকল্পের সম্ভাব্যতার পেছনে কোটি কোটি টাকা

১০ মার্চ ২২, সমকাল

বাস্তবায়নযোগ্য নয় জেনেও প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার নামে শত শত কোটি টাকা অপচয় চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে অসম্ভব, পাশাপাশি বিদেশি ঋণ কিংবা বিনিয়োগেরও নিশ্চয়তা নেই, তবু লাখ লাখ কোটি টাকার প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে। পরে টাকার অভাবে সেইসব প্রকল্পের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। কিংবা স্থগিত হওয়ায় সমীক্ষার পুরো টাকাই জলে গেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্প হলে সমীক্ষা চালানো বাধ্যতামূলক। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের এ নিয়মের সুযোগ নিচ্ছে সরকারেরই সংস্থাগুলো। যদিও সংশ্নিষ্টদের ভাষ্য, সমীক্ষা না করলে কীভাবে জানা যেত যে প্রকল্প বাস্তবায়নযোগ্য নয়? যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়, কোন প্রকল্প বাস্তবায়নযোগ্য আর কোনটি নয়। অবাস্তব ও অপ্রয়োজনীয় জেনেও সমীক্ষা করা দুর্নীতি।.. ..

সমীক্ষার নামে অপচয় :রেলওয়েতে বগি ইঞ্জিনের সংকট। বলা হয়, নতুন কেনার টাকা নেই। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয় ৯৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে দ্রুতগতির বা ‘বুলেট ট্রেন’ লাইন নির্মাণ করতে চেয়েছিল। এর সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় ১১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পরে অর্থায়ন না পেয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের তালিকা থেকে বাদ যায়।

শুধু রেলে নয়, সড়কেও ভাববিলাসী সমীক্ষা করে প্রকল্প বাতিল হয়েছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত উড়াল পথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় ২০১১ সালে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৯৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় সমীক্ষা করা হয়। এতে বলা হয়, পুরোটা উড়াল হলে ৬৭ হাজার কোটি টাকা লাগবে। বিদেশি অর্থায়ন না পাওয়া প্রকল্পটি বাতিল হলেও ঋণের টাকা শোধ করতে হবে।

ঢাকার যানজট নিরসনে ২০১৫ সালে মন্ত্রিসভা সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) নামে মহাপরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, তাতে বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের সুপারিশ রয়েছে। কিন্তু সেখানে বৃত্তাকার রেলপথ বলে কিছু নেই।

তার পরও ঢাকা ঘিরে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের ‘কল্পনা’ তৈরি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ৭১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে প্রায় ৮১ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে ২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের প্রাথমিক আগ্রহ দেখিয়ে গত নভেম্বরে বৈঠক করলেও এরপর আর অগ্রগতি নেই। প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা রেলের পরিচালক আবিদুর রহমান জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা বলেছে, তারা অর্থায়ন করলে আবার নতুন সমীক্ষা করবে।

ঢাকার পাতালে ২৬০ কিলোমিটার রেলপথ (সাবওয়ে) নির্মাণে প্রায় ৩২২ কোটি টাকায় সমীক্ষা করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। ২০১৮ সালে স্পেনের প্রতিষ্ঠান টেকনিকা ওয়াই প্রয়েক্টস এসএর (টিপসা) নেতৃত্বে জাপানের পাডেকো, বিসিএল অ্যাসোসিয়েটস, কেএসসি এবং বেটস যৌথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ পায়। সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাথমিক নকশা প্রণয়নে প্রথমে ২১৯ কোটি টাকার চুক্তি হয়। পরে ব্যয় বেড়ে হয় ৩২২ কোটি টাকা।

সমীক্ষা অনুযায়ী, আট লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা লাগবে সাবওয়ে নির্মাণে! শিগগির সমীক্ষাটি চূড়ান্ত হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদেশি ঋণ বা বিনিয়োগ প্রস্তাব পায়নি বিবিএ। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এই ৩২২ কোটি টাকাও অপচয়ের খাতাতেই যাচ্ছে। সাবওয়ে নির্মাণের সুপারিশও আরএসটিপিতে ছিল না। আরটিপি অনুযায়ী প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬১ কিলোমিটার পাতালসহ ১৩০ কিলোমিটার মেট্রোরেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। তার পরেও পাতাল রেল করতে চায় বিবিএ।

চার ঘণ্টা অপেক্ষা, তবু ফিরতে হলো খালি হাতে

১৩ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে সকাল নয়টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ মোড়ে টিসিবির ট্রাকের সামনে নারীদের লাইনে এসে দাঁড়ান ষাটোর্ধ্ব হাসনা বেগম। ততক্ষণে তাঁর সামনে পণ্য হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় অন্তত ৯০ জন। বেলা গড়িয়ে যখন একটা, তখনো ট্রাকের নাগাল পাননি হাসনা। এই সময়ে লাইনে থাকা নারীদের মধ্যে বলাবলি হচ্ছিল তেলের বোতল শেষ হয়ে গেছে। তবু হাসনা বেগম আশায় ছিলেন, ডাল-চিনি-পেঁয়াজ নিয়ে তো বাসায় ফিরতে পারবেন। তবে গতকাল শনিবার তপ্ত রোদে সাড়ে চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাঁকে।

দয়াগঞ্জ মোড় থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে মিরপুরের রূপনগরের চিত্রও ছিল অনেকটা এমনই। এখানেও তেলের চাহিদা বেশি থাকায় তা আগেই শেষ হয়ে যায়। এই এলাকার ‘ট’ ব্লক বস্তির পাশে টিসিবির ট্রাকের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অন্তত ৮৩ জন নারী ও পুরুষ কাঙ্ক্ষিত পণ্য নিয়ে ঘরে যেতে পারেননি।

রাস্তায় কেনে পুলিশ, লাইন ছাড়াই নেন কাউন্সিলরের লোক

১৩ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

টিসিবির তেজগাঁওয়ের গুদাম থেকে পণ্য নিয়ে সরাসরি মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের নির্ধারিত স্থানে চলে আসার কথা ছিল ট্রাকটির। কিন্তু পথে বিজয় সরণি মোড়ে পুলিশ ট্রাক থামিয়ে চার বোতল (আট লিটার) সয়াবিন তেল বিক্রি করতে বাধ্য করে টিসিবির পরিবেশকের কর্মীদের। এরপর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি শুরুর পর এক কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে পরিবেশকের কাছে ফোন আসে। এর কিছুক্ষণ পর তিনজন লোক এসে লাইনে না দাঁড়িয়েই ছয় লিটার তেল কিনে নিয়ে যান।

এসব অভিযোগ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার পরিবেশক মেসার্স লোপা ট্রেডার্সের মালিক আবু সাঈদের। গতকাল শনিবার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু আমার ট্রাক না, বিজয় সরণি মোড় হয়ে আজকে (গতকাল) যত ডিলারের ট্রাক গেছে, সব ট্রাক থেকে তেল রেখে দিয়েছে পুলিশ।’

পুলিশের গাড়িতে পণ্য ওঠানোর ছবি তোলায় হেনস্তা

১৩ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

সরকারি সংস্থা টিসিবির কম দামের নিত্যপণ্য পুলিশ নিয়ে নেওয়ার ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক ফয়জুল্লাহ। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার হাতিরঝিলের পাগলা মাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ওই এলাকায় টিসিবির ট্রাকে সাধারণ মানুষের জন্য কম দামে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছিল। এ সময় নারী ও পুরুষের দুটি আলাদা লাইনে ২০০ জনের বেশি মানুষ অপেক্ষমাণ ছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে করে টিসিবি কম দামে যে নিত্যপণ্য বিক্রি করছে, তার অংশ হিসেবেই এই কার্যক্রম চলছিল।.. ..

লাইন না মেনে এক পাশ দিয়ে টিসিবির পণ্য পুলিশের গাড়িতে ওঠানোর বিষয়টির ভিডিও চিত্র ধারণ করতে গেলে এগিয়ে আসেন হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোর প্রতিবেদকের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠতে বলেন। প্রতিবেদক মুঠোফোন দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে হেনস্তা করা হয় এবং থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

গরিবের চালের চাহিদা বাড়ছে, জোগান কমছে

১৪ মার্চ ২২, সমকাল

বাজারে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি ও করোনা মহামারিতে গরিবের সংখ্যা বাড়লেও স্কুল ফিডিং, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও গার্মেন্টস শ্রমিক এবং টিআর (টেস্ট রিলিফ) খাতে খাদ্যশস্য বিতরণ বন্ধ রয়েছে। দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি), দুস্থদের খাদ্য সহায়তা (ভিজিএফ), মুক্তিযোদ্ধা, কাবিখা ও জিআর (খয়রাতি সাহায্য) খাতে নামমাত্র খাদ্যশস্য বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে সব গরিব মানুষ ওএমএসের (খোলাবাজারে বিক্রি) ট্রাকের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

এদিকে অর্থবছর শেষ হওয়ার পাঁচ মাস আগেই ওএমএসের বরাদ্দ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন ওএমএসের চাল-আটা না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন মানুষ। এর মধ্যে শুধু দেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় ওএমএস চালু রয়েছে। অন্যান্য খাতে খাদ্যশস্য বিতরণ বন্ধ ও কমে গেলেও উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ওএমএস চালু নেই। এ অবস্থায় আসন্ন রমজানে নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন সংশ্নিষ্টরা। এ জন্য ওএমএসের বরাদ্দ বাড়াতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ডিও (আধা-সরকারি পত্র) দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত ১০ মার্চের তথ্য অনুযায়ী সরকারি গুদামে চাল মজুত আছে ১৬ লাখ ১২ হাজার ও গম দুই লাখ ২৩ হাজার টন।

বাড়তি আয় নিঃশেষ বাড়তি দামে

১৫ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

দেশে ২০০৯-১০ অর্থবছরে মোটা চালের দাম ছিল গড়ে কেজিপ্রতি ২৬ টাকার কম। বাড়তে বাড়তে ২০২০-২১ অর্থবছরে একই চালের দাম ৫২ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তার মানে হলো, চালের দাম এই সময়ে দ্বিগুণ হয়েছে। একইভাবে ভোজ্যতেল, চিনিসহ নিত্যপণ্য এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, একই সময়ে শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। তবে এই বাড়তি আয় অনেকটা নিঃশেষ হয়ে গেছে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার বাড়তি ব্যয়ে।

বিবিএস বলছে, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত মজুরি হার সূচক (কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের ৪৪ পেশা ধরে হিসাব) বেড়েছে প্রায় ৮১ শতাংশ। বিপরীতে মূল্যসূচক বেড়েছে ৮৪ শতাংশ। ক্যাবের হিসাবে ঢাকায় ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ৯৫ শতাংশ। আর জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৯২ শতাংশ।.. ..

বিগত এক দশকে জীবনযাত্রার মান কতটুকু বেড়েছে, জানতে চাইলে ঢাকার শেওড়াপাড়ার একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক দম্পতি রিয়াজুল ইসলাম ও রেহানা আক্তার বলেন, আগেও সাভারে একটি টিনের ছাউনির বাড়িতে এক কক্ষ ভাড়া নিতে থাকতেন। এখনো তা–ই। সপ্তাহে ছয় দিন এবং ছুটির দিনেও আধবেলা কাজ করেও কোনোরকমে খেয়েপরে বেঁচে আছেন।

বাড়েনি প্রকৃত নিম্নতম মজুরি

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ‘বৈশ্বিক মজুরি প্রতিবেদন: ২০২০-২০২১’ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশভেদে নিম্নতম মজুরি ছিল ৪৮ ডলার (পিপিপি) থেকে ২ হাজার ১৬৬ ডলার। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল বাংলাদেশে (৪৮ ডলার)। আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে নিম্নতম মজুরি আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে।

আইএলও আরও জানিয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২২ দেশে প্রকৃত নিম্নতম মজুরি বেড়েছে। কমেছে ৮টি দেশে। সবচেয়ে বেশি হারে প্রকৃত নিম্নতম মজুরি বেড়েছে ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়ায়। আটটি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে প্রকৃত নিম্নতম মজুরি কমেছে বাংলাদেশ (বছরে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ) ও শ্রীলঙ্কায়।.. ..

দুই দশকে রফতানি

পোশাকবহির্ভূত পণ্যের হিস্যা ২৪ থেকে কমে ১৮ শতাংশে

১৬ মার্চ, ২০২২, বণিক বার্তা

গত অর্থবছর ৩৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এ রফতানির ৮১ শতাংশের বেশি পোশাক পণ্য। রফতানিতে পোশাক পণ্যের ওপর এখনো বড় নির্ভরতা রয়ে গেছে। দুই দশকের ব্যবধানে মোট রফতানিতে পোশাকের হিস্যা ৭৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে পোশাক পণ্যবহির্ভূত বা নন-আরএমজি পণ্যের হিস্যা ২৪ দশমিক ৮৪ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০০-০১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় ৪৮৬ কোটি ৫ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পোশাক পণ্য। মোট রফতানিতে পোশাকের অংশ ছিল ৭৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। একই সময়ে নন-আরএমজি পণ্য রফতানি ২০০০-০১ অর্থবছরে ছিল ১৬০ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। মোট রফতানিতে অংশ ছিল ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে পোশাক রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার ডলারের। মোট রফতানিতে হিস্যা ছিল ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। নন-আরএমজি পণ্যের রফতানির অর্থমূল্য গত অর্থবছরে ছিল ৭৩০ কোটি ডলার। মোট রফতানিতে এর অংশ দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

জীবন-সংসার এখন ‘গলার কাঁটা’

১৭ মার্চ ২২, সমকাল

শীর্ণ শরীরে চামড়ায় ভাঁজ। পরনে হালকা সবুজ রঙের ফিনফিনে শাড়ি। চৈত্রের তেজি দুপুরে কপাল ভিজে করছে চিকচিক। লাল সুতি ওড়না দিয়ে মুখের ঘাম মুছছিলেন বারবার। পাঁচ কেজি মোটা চালের আশায় সাতসকালেই ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) ট্রাকের সামনে হাজির। পাক্কা চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ক্লান্ত ৭০ বছরের মেহের নিগার।গতকাল বুধবার পল্লবীর ৬ নম্বর

সেকশনে মেহেরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- চাল নিতে লাইনে দাঁড়ানোর মতো বাসায় আর কেউ কি নেই। তার উত্তর, ‘পোলা একটি ইশকুলে দারোয়ানগিরি করে। পোলার বউ মেলা দিন অসুস্থ। দুই নাতিও ছোট। লাইনে দাঁড়ানোর জন্য আর কে আইবে। এখন যে অবস্থা, সংসার আর চলে না। সকালে সবাই পানিভাত লবণ দিয়া কছলাইয়্যা খাইছি। রাতে ২০ টাকার ইছা মাছ কিনে ভাউত্যা শাক দিয়ে রান্না হয়। অনেক দিন ধরেই হাক-পাতা খেয়ে আছি। পাঁচ কেজি চাল বাজারে কিনতে ৩০০ টাকার মতো লাগে। ট্রাক থেকে কিনলে ১৫০ টাকার মতো বেঁচে যায়। গরিবের জন্য এটা কম কীসে। গায়ে জোর থাকলে আমিও কাজ করতাম। সেই জোর তো আর নাই।’

কষ্টের কথা বলতে বলতে গড়িয়ে পড়ে মেহেরের চোখের জল। ওএমএসের ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে মেহেরের মতো আরও কয়েকটি পরিবারের জীবনযুদ্ধের গল্প শোনা গেল। তারা এসেছেন মোটা চাল ও আটা কিনতে। গতকাল ওই ট্রাক থেকে সুলভমূল্যে এ দুটি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছিল। ট্রাকের লোকজনের কাছ থেকে কেউ কেউ আবার খবর নিয়ে গেলেন সয়াবিন তেল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনিসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে কখন আসবে টিসিবির ট্রাক।

বাজারে সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ওএমএসের ট্রাকের সামনে দীর্ঘ হচ্ছে সারি। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। করোনা অনেকের জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কাজ হারিয়ে কেউ কেউ এখনও বেকার। অনেকের আবার কমেছে আয়। তবে করোনা পরিস্থিতি একটু ভালোর দিকে থাকলেও মানুষের জীবনব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি এখনও।

জীবন-জীবিকা নিয়ে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের বস্তিবাসী ও গ্রামবাসীর আয় যথাক্রমে ১৮ ও ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে বর্তমানে শহরে বস্তিবাসীর ৭৭ শতাংশ পরিবার দরিদ্র। শহরের খরচ চালাতে না পেরে গ্রামে বা তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল শহরে চলে যাওয়া ১০ শতাংশ বস্তিবাসী এখনও পুরোনো বাসস্থানে ফিরে আসেনি।

টিসিবির লাইন দীর্ঘ হচ্ছে, বড় হচ্ছে কোটিপতির তালিকাও

১৭ মার্চ ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন

একদিকে টিসিবির ট্রাকের পেছনে কম দামে পণ্য কেনার মানুষ বাড়ছে। অর্থাৎ মানুষ গরিব হওয়ার কারণে টিসিবির লাইন বড় হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যাও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৮০৮৬টি। এখন ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার বেশি আমানতকারী হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১ হাজার ৯৭৬টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী এসব জানা গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট কোটিপতি অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাবধারী বেড়েছে ৮০৮৬টি। অবশ্য গত তিন মাসে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে এক হাজার ৭৩৭ জন। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৩৯টি। আর গত জুন শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৯৯ হাজার ৯১৮ জন।

টিসিবির পণ্য বিক্রি

কার্ড পেয়ে সন্তোষ অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ

২১ মার্চ ২০২২, আজকের পত্রিকা

ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সারা দেশে টিসিবির পণ্য বিক্রির প্রথম দিন ছিল গতকাল। প্রথম দিনে কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রিতে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ক্রেতাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। অনেক এলাকায় কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগও পাওয়া গেছে। কার্ড দেখিয়ে যাঁরা পণ্য পেয়েছেন, তাঁরা খুশি হলেও কার্ড না পেয়ে পণ্য কিনতে না পেরে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরেছেন বাকিরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে যাঁরা সরকারি ভাতা পেয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে নিম্ন আয়ের আরও ৫৭ লাখ মানুষকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এই কার্ড দিয়ে পবিত্র রমজান উপলক্ষে প্রতিটি পরিবার প্রতি লিটার ১১০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দরে দুই কেজি মসুর ডাল এবং ৫০ টাকা দরে দুই কেজি ছোলা কিনতে পারবেন।.. ..

ধনীদের হাতে কার্ড: মৌলভীবাজারে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নে অনেক সচ্ছল পরিবারের সদস্যদের এই কার্ডের মাধ্যমে পণ্য কিনতে দেখা গেছে। বর্ষিজোড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজের ও স্ত্রীর নামে দুটি কার্ড নিয়ে পণ্য কিনতে আসেন। সচ্ছল হয়েও কার্ড নেওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান তাঁর কার্ড বাতিল করে পণ্য আটকে দেন।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামপুর গ্রামের আনোয়ারা বলেন, ‘আপনাদের চোখের সামনে মেম্বারদের পরিচিত বড়লোকেরা কার্ড দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমরা গরিবদের কেউ চেনে না।’

এ প্রসঙ্গে চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতার উদ্দীন বলেন, দ্রুত কার্ড বিতরণ করতে গিয়ে দুয়েক জায়গায় একটু সমস্যা করেছেন মেম্বাররা। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা হবে।

ভোটের হিসাবে কার্ড: ময়মনসিংহ শহরের হামিদ উদ্দিন রোডের বাসিন্দা আব্দুল জলিল নিজে ও স্ত্রীর নামে টিসিবির কার্ড পেয়েছেন। কার্ড দুটি নিয়ে পণ্য কিনতে এসেছিলেন তাঁদের ছেলে প্রান্ত। প্রান্ত বলেন, ‘আমরা কাউন্সিলরের আত্মীয়, তাই দুটি কার্ড পেয়েছি। সব সময় তাঁকেই আমরা ভোট দিই।’

একই এলাকার আব্দুর রহমান পরিবারের চারজনের কার্ডে একাই পণ্য কিনে দারুণ খুশি। তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর আত্মীয় হয় বলেই আমি, আমার স্ত্রী, বোন ও ভাগনে কার্ড পেয়েছি।’

ভিড়, বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা: ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে কম দামে টিসিবির পণ্য কিনতে কার্ড না পেয়েও অনেক মানুষ ভিড় করেন। ফলে হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ডিলারদের কারণেও অনেক জায়গায় অব্যবস্থাপনা ছিল, ফলে কার্ড নিয়ে পণ্য কিনতে এসে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

কুড়িগ্রাম পৌরসভায় সকাল ১০টা থেকে পণ্য বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও তা দেরিতে শুরু হয়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বিরক্তি প্রকাশ করেন অনেকে। এক জায়গা থেকে হাজারেরও বেশি সুবিধাভোগীর কাছে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করায় অনেক ভিড় হয়।

মধ্যরাতে টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষ

২৫ মার্চ ২২, সমকাল

ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন সোয়া ১২টা। দিনভর যানজটের পর ক্লান্ত সড়ক তখন ফাঁকা। কিন্তু মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যাান্ডে বিআরটিসি ডিপোর সামনের সড়কে একটি ট্রাক ঘিরে শতাধিক মানুষের জটলা। জীর্ণ মলিন পোশাক তাদের দারিদ্রের বয়ান দিচ্ছে। ছুটির আগের রাতে ভদ্রপল্লীর বাসিন্দারা যখন ঘুমের প্রস্তুতিতে, তখন এত মানুষ কেন ট্রাকের পেছনে ভিড় করছেন? তল্লাশ করতে উঁকি দিয়ে জানা গেল, তারা কম দামে টিসিবির তেল, চিনি, ডাল কিনতে দিনভর হাড় খাটুনির পর ঘুম ফেলে ভিড় করেছেন ট্রাকের জন্য।

সালেহা বেগমের বয়স পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। থাকেন মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে। কী করেন, জানতে চাইলে উত্তর দিলেন, ‘শরমের কথা কী কমু? বাসাবাড়িতে কাম করি’। স্বামী অসুস্থা। সালেহার আয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আসছে রমজান। রোজা তো রাখতে হবে। কিন্তু ছোলা, খেজুর, চিনি, তেলের যা দাম, তাতে পাগল দশা! তাই টিসিবির সস্তার মালই ভরসা। সারাদিন ট্রাকের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ট্রাক আসেনি। দিন গড়িয়ে যখন এল, তখন সন্ধ্যাে ৭টা। পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ৮৯০ টাকায় দুই লিটার তেল, পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি করে চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুর কিনেছেন। বাজারে কিনতে ১৪০০ টাকা লাগত। ৫১০ টাকা সাশ্রয়ের জন্য এতটা সময় লাইলে দাঁড়িয়ে কাটান সালেহা।

তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখনও শতাধিক মানুষের লাইন ছিল ট্রাকের পেছনে।

উন্নয়ন না দেখলে চোখের ডাক্তারের কাছে যান: প্রধানমন্ত্রী

২৭ মার্চ ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন

সরকারের উন্নয়ন যারা দেখে না তাদের চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেকে আছে দেশে কোনও উন্নতি দেখে না। তাদের চোখে কোনও উন্নয়নই নাকি দেশে হয়নি। তাদের যদি চোখ খারাপ থাকে আমার কিছু বলার নেই। এখন বলতে হয়, আমরা তো একটি আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। যারা বক্তৃতা দেয় উন্নয়ন হয় না, চোখে দেখে না, আমার মনে হয় তাদের চোখ একটু পরীক্ষা করা দরকার। তাহলে হয়তো দেখতে পারে উন্নয়ন হয়েছে কিনা?

রবিবার (২৭ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।.. ..

ঢাকায় পাতাল রেল: প্রকল্প নিয়ে স্বপ্নেই খরচ ৩২১ কোটি টাকা!

৩১ মার্চ, ২০২২, কালের কণ্ঠ

ঢাকা মহানগরে স্বপ্নের পাতাল রেল (সাবওয়ে) নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ২০৫০ সালে ঢাকায় মাটির নিচ দিয়ে রেল চলাচল করবে। এতে মোট ১১টি রুট থাকবে। তবে প্রাথমিকভাবে ২০৩০ সালে চারটি রুট চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

চার রুট নির্মাণে ব্যয় হবে দেশের চলতি অর্থবছরের মোট বাজেটের অর্ধেকের বেশি। তবে স্বপ্নের প্রকল্প নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে ৩২১ কোটি টাকা।

সরকার এখন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। চলতি বছরের জুনে সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাথমিক নকশার কাজ শেষ হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১৭ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে পরামর্শক খাতে।

পড়াশোনার খরচ মেটাতে রিকশা চালাতে গিয়ে প্রাণ গেল স্কুলছাত্রের

০২ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

স্কুল আর পড়াশোনার ফাঁকে বাবার রিকশা চালাত স্কুলছাত্র সাব্বির বিশ্বাস (১৫)। রিকশা চালিয়ে দুই-একশ টাকা আয় হতো তার। সেটা দিয়েই চলত তার পড়াশোনা। কিন্তু সেই রিকশাই তার জীবনে কাল হলো। আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার উত্তর দয়ারামপুর এলাকার একটি খেত থেকে সাব্বিরের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত সাব্বির সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের আছিরুদ্দিন মুন্সিরডাঙ্গী এলাকার আলমগীর বিশ্বাসের ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। সদরের পদ্মারচর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে।

নির্মাণ শেষের আগেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে সড়ক মহাসড়কের পরিকল্পনা

০২ এপ্রিল, ২০২২, বণিক বার্তা

২০৩৪ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ৫৭ হাজার গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে নির্মিত হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এখনই সড়কটিতে চলাচল করা গাড়ির সংখ্যা মাঝেমধ্যে ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গাড়ির সংখ্যা ধারণক্ষমতার বেশি হলেই দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই রাটিংয়ের (দেবে যাওয়া) সমস্যায় ভুগছে সড়কটি।

প্রতি বছর ৬ শতাংশ হারে গাড়ির সংখ্যা বাড়বে, এমন হিসাব করে নির্মাণ করা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক। ২০১৬ সালে মহাসড়ক চালুর পর থেকেই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে ১০ শতাংশের বেশি হারে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, মাঝেমধ্যেই এখন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বেশি গাড়ি চলছে সড়কটিতে। আবার ২০ বছরের জন্য যে পরিমাণ লোড বহনের উপযোগী করে মহাসড়কটি তৈরি করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি লোড মাত্র চার বছরেই বহন করা হয়ে গেছে। ফলে সড়কটি যানজটপ্রবণ তো হয়েছেই, টেকসইও হয়নি। এখন সড়কটির সংস্কারে ৭৯৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক তৈরির আগে যেসব পরিকল্পনা করা দরকার, বাংলাদেশে সেগুলো যথাযথভাবে করা হচ্ছে না। সমীক্ষা করা হলেও যেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেগুলোর কোনো মানদণ্ড নেই। অনেক ক্ষেত্রে এমনও হচ্ছে যারা সমীক্ষা করছেন, তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য মাঠপর্যায়ের কাজটা ঠিকমতো করছেন না। আবার সমীক্ষার সঙ্গে বাস্তবতারও অনেক সময়ই সংযোগ ঘটছে না। কারণ সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের পর সেগুলোয় চলাচল করছে অনিবন্ধিত নানা ধরনের যান, যেগুলো সমীক্ষায় বিবেচনায় নেয়া হয় না। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে দেশের অনেক সড়ক-মহাসড়ক।

বিশেষ গোষ্ঠীকে ৪৮৭৭ কোটি টাকার সুদ মাফ করল ব্যাংক

০৪ এপ্রিল ২০২২, আজকের পত্রিকা

করোনায় ঋণ পরিশোধে শিথিলতার মধ্যেও বিশেষ গোষ্ঠীকে ঋণের সুদ মওকুফ সুবিধা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। দেশের ৬১টি ব্যাংক শুধু ২০২১ সালেই এভাবে ঋণের সুদ মওকুফ করেছে ৪ হাজার ৮৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর ঋণ মওকুফের তালিকায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক পরিমাণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলো করোনা শুরুর বছরে ২০২০ সালে ঋণের সুদ মওকুফ করেছে ৪ হাজার ৯২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আর করোনা সংক্রমণের আগে ২০১৯ সালে মওকুফ করা সুদের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৩৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে ২ হাজার ২৩৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা ও ২০১৭ সালে ১ হাজার ৯০০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।.. ..

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিদায়ী বছরে ব্যাংকগুলো সুদ মওকুফ করেছে ৪ হাজার ৮৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মওকুফ করা সুদের পরিমাণ ৩ হাজার ৩৭০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ১২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ৩৫০ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৩৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আর ২০২০ সালে ৪ হাজার ৯২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার মওকুফ করা সুদের মধ্যে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২ হাজার ৯৮৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৭০৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ২১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বিদেশি ব্যাংকগুলোর ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

নিট বার্ষিক বিদেশী ঋণ গ্রহণ

২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৪৯১০ কোটি টাকা এখন প্রায় ১ লাখ কোটি

০৫ এপ্রিল, ২০২২, বণিক বার্তা

গত এক দশকে দেশে অনেক বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ বিদেশী ঋণ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বেড়েছে এ ঋণ পরিশোধে ব্যয়কৃত অর্থের পরিমাণও। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বার্ষিক নিট বিদেশী ঋণ গ্রহণের (গৃহীত ঋণ থেকে পরিশোধ বাদ দিয়ে) পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেটে বার্ষিক নিট বিদেশী ঋণ গ্রহণের প্রাক্কলন রয়েছে ৯৭ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার। গত অর্থবছরেও এর পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৪১০ কোটি।

বিদেশী ঋণ ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় মেগা প্রকল্পগুলোয়। দেশে এখন এমন অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পগুলো হাতে নেয়ায় প্রতি বছরই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বিদেশী ঋণের পরিমাণও। বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় ও দাতা সংস্থার ঋণ, সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট ও লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় এসব ঋণ বাড়ছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নিট বিদেশী ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮-অর্থবছরে নেয়া হয় ২৫ হাজার ৬২০ কোটি ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এর পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এ সময়ের ঋণ পরিশোধে ব্যয়কৃত অর্থের পরিমাণও বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকায়।

নিট বিদেশী ঋণের এ বড় উল্লম্ফনকে দেশের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, ঋণ মাত্রা ছাড়ালে চাপ পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময়হারের ওপর। বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ চাহিদা বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদাও। বিপুল পরিমাণ বিদেশী ঋণের সুদসহ আসল পরিশোধ করতে গিয়ে ভবিষ্যতে এ চাহিদা মারাত্মক চাপে রূপ নেয়ার ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে।

আর্থিক অনটনে থাকা কুয়েট ছাত্রের আত্মহত্যা

৪ এপ্রিল, ২০২২, দেশ রুপান্তর

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অন্তু রায় (২১) আত্মহত্যা করেছেন।

সোমবার সকালে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে তিনি আত্মহত্যা করেন। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অন্তু খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তবে তার পরিবারে আর্থিক অনটন ছিল। পাশাপাশি কুয়েটের ড. এম এ রশিদ হলেও তার অনেক টাকা বকেয়া হয়ে গিয়েছিল। গত রবিবার অন্তু তার পরিবারের কাছে টাকা চায়। এসময় তার মা তাকে তিন হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এরপর সোমবার সকালে তার বাবা দেবব্রত রায় ও তার মা মাঠে যান কাজ করতে। তার ছোট বোন সকাল ১১টার দিকে প্রাইভেট পড়া থেকে এসে ঘরের মধ্যে অন্তুর লাশ ঝুলতে দেখে।

‘পুলিশের জরিমানার টাকা দিতে না পেরে আত্মহত্যা’ রিকশাচালকের

৬ এপ্রিল, ২০২২, নিউজবাংলা টুয়েন্টিফোর

ঢাকার সাভার হাইওয়ে পুলিশকে জরিমানার টাকা দিয়ে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম রিকশা ছাড়াতে না পেরে এক যুবকের আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে।

তবে পুলিশের দাবি, ওই যুবকের রিকশা হাইওয়ে থানা পুলিশ নেয়নি। রিকশাটি চুরি হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ও তার রিকশাটি হারিয়ে যাওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে তাদের ধারণা।

উপজেলার জালেশ্বর এলাকার ভাড়া বাসার কক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ।

আ.লীগ আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকলে উপজেলায়ও যানজট হবে: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

০৬ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

ঢাকায় যানজট প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। তাই সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়েছে। আওয়ামী লীগ আরেক মেয়াদে ক্ষমতায় এলে উপজেলা পর্যায়েও যানজট হবে। আজ বুধবার সংসদে রাজধানীর যানজট নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের সমালোচনার জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এ কথা বলেন।

এর আগে  জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০২২–এর ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, ঢাকা আজকে নিশ্চল নগরীতে পরিণত হয়েছে। টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, কিন্তু ঢাকা শহরের একটা ভয়াবহ দুরবস্থা। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, মশার উপদ্রব, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকা শুধু নয়, গোটা বাংলাদেশ একটি অবাসযোগ্য দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে।

বাবার কাছে স্কুলে ভর্তির ২০০ টাকা চেয়েছিল, না পেয়ে ফাঁস নিল অনিমা

০৭ এপ্রিল ২০২২, ঢাকা পোস্ট

শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে বাসা থেকে স্কুলে ভর্তির টাকা না দেওয়ায় অভিমান করে অনিমা সুরাইয়া (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। বুধবার (০৬ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

অনিমা গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের কুলচুরি পাতারচর গ্রামের আলমগীর হোসেন মোল্লার মেয়ে। সে চর মাইজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা একজন দিনমজুর।

আমদানি দায় পরিশোধে চাপে পড়ছে ব্যাংক

০৮ এপ্রিল, ২০২২, বণিক বার্তা

বছরখানেক আগেও দেশের আমদানি ব্যয় ছিল মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে প্রতি মাসে আমদানি ব্যয় প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। আমদানির এ ব্যয় দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতিতেও নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। রেকর্ড ঘাটতি তৈরি হয়েছে সরকারের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও। বৈদেশিক বাণিজ্যের এ সংকট প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে দেশের ব্যাংক খাতে। চাহিদামতো ডলার সংগ্রহ করতে না পেরে ঋণপত্রের (এলসি) দায় পরিশোধে চাপে পড়তে হচ্ছে ব্যাংককে।

এলসির দায় পরিশোধে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংক। ডলার সংকটে পড়ে সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খোলাই বন্ধ করে দিয়েছে। একাধিক এলসির দায় যথাসময়ে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এ নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির সঙ্গে বিপিসি ও জ্বালানি তেল বিক্রেতা বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করেছে। বিপিসি, পেট্রোবাংলাসহ সরকারি প্রধান আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর এলসির দায় পরিশোধে চাপে পড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ও রূপালী ব্যাংকও। প্রতিদিনই ডলারের জন্য এ ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখতে গতকালও রিজার্ভ থেকে ৬ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রায় ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলার বিক্রি করতে হয়েছে। তার পরও চাহিদার তুলনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোগান দেয়া ডলার খুবই কম বলে অভিযোগ ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই ’২১-ফেব্রুয়ারি ’২২) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। একই সময়ে দেশ থেকে ৩ হাজার ২০৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাবদ গত আট মাসে দেশে ৪ হাজার ৫৫১ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে। বিপরীতে একই সময়ে ৫ হাজার ৪৩৭ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ।

বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ব্যয়ে তৈরি হওয়া এ অসামঞ্জস্যতার কারণে ফেব্রুয়ারি শেষে সরকারের চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে উল্টো ৮২ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল চলতি হিসাবে। চলতি হিসাবের বড় ঘাটতি রাষ্ট্রের ব্যালান্স অব পেমেন্টকেও (বিওপি) নেতিবাচক ধারায় নামিয়ে এনেছে। গত ফেব্রুয়ারি শেষে বিওপির ঘাটতির পরিমাণ ২০৫ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।

পাইকারি থেকে খুচরায় দামের পার্থক্য কেজিতে ২২ থেকে ৩৭ টাকা

১৩ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

কারওয়ান বাজার থেকে সবজি কিনে রিকশাভ্যানে করে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে নিতে একজন খুচরা বিক্রেতার খরচ পড়ে কমবেশি ২৫০–৩০০ টাকা। এর বাইরে আড়ত থেকে সবজি ভ্যানে তোলা পর্যন্ত আরও চার জায়গায় টাকা দিতে হয় একজন খুচরা বিক্রেতাকে।

কারওয়ান বাজার থেকে প্রতিদিন পাইকারি দরে সবজি কেনা ২৫ জন খুচরা ব্যবসায়ীর সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেছেন, আড়ত থেকে কেনা সবজি যিনি বহন করেন (মিন্তি) পরিমাণভেদে তাঁকে দিতে হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। ভ্যানে তোলার আগে পণ্য এক জায়গায় জড়ো করা হয়। সেই পণ্য যাতে চুরি না হয়, সেই তদারকির কাজটি যিনি করেন (ফুট হিসেবে পরিচিত), তাঁকে দিতে হয় ১০০ টাকা। পণ্যভেদে আড়তমালিককে কমিশন দিতে হয় শতকরা ৫-১০ টাকা (যত টাকার পণ্য কেনা হয় তার ওপর এই হিসাব)। এরপর কারওয়ান বাজার ছেড়ে নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়ার পথে বাজার কমিটি নিয়োজিত ব্যক্তিকে (লাইনম্যান) চাঁদা দিতে হয় রিকশা হলে ১০ টাকা আর রিকশাভ্যান হলে ২০ টাকা। এ ছাড়া সবজি পরিবহন করা রিকশা বা ভ্যান যদি ব্যাটারিচালিত হয় (অবৈধ অটো), তাহলে কারওয়ান বাজার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত লাইনম্যানকে দিতে হয় আরও ২০ টাকা।

সব মিলিয়ে কারওয়ান বাজার থেকে টাউন হল পর্যন্ত সবজি পরিবহনে ব্যয় হয় প্রায় ১ হাজার ৬৫০ টাকা। একটি ভ্যানে ৩০০ কেজি সবজি তোলা হয়। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি সবজি পরিবহনে খুচরা বিক্রেতার খরচ পড়ে প্রায় সাড়ে ৫ টাকা। তবে টাউন হল বাজারে খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি সবজি ২২–৩৭ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গতকাল ভোরে মানভেদে কারওয়ান বাজারের আড়তে প্রতি কেজি বেগুন (লম্বা) বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। সেই বেগুন টাউন হল বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা বেশি দামে। এই প্রতিবেদক দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখেন ৫০ টাকায় কেনা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। একইভাবে ৭০ টাকায় কেনা বেগুন বিক্রি হচ্ছিল ১০০ টাকায়।

খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে প্রতি কেজিতে দাম বাড়ে প্রায় ১০ টাকা। তাঁরা প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ১০ টাকা লাভ করার চেষ্টা করেন। তবে খুচরা বিক্রেতাদের দেওয়া খরচের হিসাব বাদেই তাঁরা লাভ করছেন প্রতি কেজিতে অন্তত ২০ টাকা। আড়ত থেকে টাউন হল পর্যন্ত সবজি নিয়ে আসার পেছনে সব ব্যয় যোগ করার পরও বেশি লাভ নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনজন সবজি বিক্রেতা বলেন, সময় বুঝে ব্যবসা করতে হয়। বছরের সব সময় এক রকম যায় না।

ঋণ নেন ৫ হাজার, সুদ দেন ২ লাখের বেশি, এরপরও মহাজন বেচে দিলেন দম্পতির নবজাতক

১৭ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

৫ হাজার টাকার ঋণের জন্য প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা সুদ গুনতে হবে। ঋণ শোধ না হলে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে সেই টাকা। অর্থাৎ মাসিক ৮০ শতাংশ সুদহারে ঋণ নিতে হবে। সময়মতো টাকা পরিশোধ করতে না পারলে সুদসহ পুরো টাকার জন্য প্রতি মাসে আবার ৮০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এমন শর্তে দুই বছর আগে লাকি বেগম নামের এক নারীর কাছে থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন রানী আক্তারের স্বামী নির্মাণশ্রমিক হান্নান চৌকিদার। আর তাতেই সুদের জালে আটকা পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন রানী ও হান্নান।

রানী আক্তারের অভিযোগ, দুই বছর আগে লাকির কাছ থেকে স্বামীর নেওয়া মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ঋণের সুদ হিসাবে এ পর্যন্ত ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। তারপরও আরও ১ লাখ ৩ হাজার টাকা পাওনা বলে দাবি করছেন লাকি। টাকা শোধ করতে না পারায় ১ বছর আগে জন্ম নেওয়া তাঁর একদিন বয়সী নবজাতককে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ঋণ শোধ না হলে মারধরের ভয়ে রানীকে রেখে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়েছেন তাঁর স্বামী।

এমন ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীগঞ্জ পিডব্লিউডি কলোনিতে। স্থানীয়দের অভিযোগ মানুষের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে অন্তত পাঁচ বছর ধরে এ ধরনের সুদের কারবার চালাচ্ছে একটি পরিবার। তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. আজাদ ও হজরত আলী নামের দুজন চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী। আর তাতেই সর্বস্বান্ত হয়েছে কলোনির নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ।

বন্ধ পাটকল ইজারা নিতে চায় ভারতীয় দুই প্রতিষ্ঠান

২০ এপ্রিল, ২০২২, বণিক বার্তা

বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৭টি জুট মিল ইজারার মাধ্যমে সচলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে দুটি চালু হয়েছে। চালু হওয়ার পথে আরো দুটি। বাকি ১৩টি মিল ইজারায় নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ১৮টি দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দুটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

আগ্রহী দুই ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের একটি হলো প্যাসিফিক জুট লিমিটেড। আরেকটি মোহন জুট লিমিটেড। দুটি প্রতিষ্ঠানই আলাদাভাবে প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস, ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিটেড, খালিশপুর জুট মিলস লিমিটেড, দৌলতপুর জুট মিলস লিমিটেড, স্টার জুট মিলস লিমিটেড, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও কার্পেটিং জুট মিলস লিমিটেড—এ সাত কারখানা ইজারা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

কারখানা সাতটির মধ্যে ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিটেড, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও কার্পেটিং জুট মিলস লিমিটেড ইজারা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দুবাইভিত্তিক এশিয়াটিক ট্রেডিং এলএলসিও। প্রতিষ্ঠানটির কলকাতায়ও কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া হংকং ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশী অংশীদারের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের ভিত্তিতে কয়েকটি কারখানা ইজারায় নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।

২০২০ সালের ৩০ জুন গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার মাধ্যমে ১৭টি চালুর ঘোষণাও দেয়া হয়। এরই মধ্যে দুটি জুট মিল ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের হাতে ইজারা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড ২০ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে ব্যক্তি খাতের ইউনিটেক্স গ্রুপ। নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস ইজারা নিয়েছে বে গ্রুপ। আরো দুটি পাটকল ইজারায় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বাকি ১৩টি ইজারা নিতে আগ্রহী ১৮ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় দেশী বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানেরও নাম রয়েছে।

গুল আহম্মদ কার্পেটিং জুট মিলস, এমএম জুট মিলস ও আরআর জুট মিলস ইজারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইস্পাত খাতের জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড। ইজারা নিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় জোবায়দা করিম জুট মিলস ও করিম জুট স্পিনার্স ছাড়া দেশের পাট খাতের বিদ্যমান আর কোনো কোম্পানির নাম নেই।

পদ্মা সেতুতে বাসের টোল ২৪০০ টাকা, ট্রাকে ২৮০০

২১ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত সহজ হবে, সময়ও কমবে। তবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম এই সেতু পার হতে লাগবে বড় অঙ্কের টোল। সেতু বিভাগের নির্ধারণ করা টোলের হার অনুসারে, বর্তমানে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হতে যে টাকা লাগে, সেতু পার হতে এর চেয়ে গড়ে দেড় গুণ বেশি টাকা খরচ করতে হবে। আর দ্বিতীয় দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলের সঙ্গে তুলনা করলে তা হবে প্রায় দ্বিগুণ। পদ্মা সেতুতে প্রস্তাবিত টোলহার কার্যকর হলে বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং মাঝারি ট্রাকে লাগবে ২ হাজার ৮০০ টাকা।

বর্তমানে পদ্মা নদী পার হতে ফেরিতে যানবাহনভেদে ভাড়া দিতে হয় ৭০ থেকে ৩ হাজার ৯৪০ টাকা। প্রস্তাব অনুসারে পদ্মা সেতুতে যানবাহনভেদে টোল দিতে হবে ১০০ থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে কার ও জিপের টোল ৭৫০ টাকা (ফেরিতে ৫০০ টাকা), বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা (ফেরিতে ১ হাজার ৫৮০ টাকা), মাঝারি ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ টাকা (ফেরিতে ১ হাজার ৮৫০ টাকা)।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা অনুসারে, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ঠিকাদারের। এর মধ্যে সেতু চালু হবে ধরে নিয়ে টোল আদায়কারী ও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগ করেছে সেতু বিভাগ। এই কাজ পেয়েছে কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। এর মধ্যে এমবিইসি বর্তমানে মূল সেতু নির্মাণকাজ এবং কেইসি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য এই দুটি প্রতিষ্ঠান টোল আদায়, সেতু ও সেতুর দুই প্রান্তে যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি চালু এবং সেতু ও নদীশাসনের কাজ রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এর জন্য পাঁচ বছরে তাদের দিতে হবে ৬৯৩ কোটি টাকা।

চাল কিনবে বলে শাক বেচতে বের হয়েছে ছোট্ট আরিয়ান

২১ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

গেল কদিনে ইফতারে মাকে পানি ছাড়া আর কিছুই খেতে দেখেনি ছোট আরিয়ান রহমান আলভির। ঘরে একমুঠো চালও নেই। স্কুল থেকে ফিরে তাই দুপুরে আর কিছু খাওয়া হয়নি। মা বলেছিলেন, ‘গোসল করে আয়। শহরে বড় ইফতার আছে। ওইখানে যাবনে।’ তবে কেন যেন মায়ের সে আশ্বাসে মন ভরেনি পাঁচ বছরের আরিয়ান রহমানের। তাই মাকে না জানিয়ে একাই শহরে চলে আসে সে।

‘মায়ের জন্য চাল কিনবে বলে’ গ্রাম থেকে আসার সময় এক বস্তা শাক কুড়িয়ে এনেছে আরিয়ান। এই শাক বিক্রি করে চাল কিনতে চায় সে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বাগেরহাট শহরের শালতলা এলাকার শহীদ মিনার সড়কে দেখা হয় তার সঙ্গে। পাশেই চলছিল বৈশাখী মেলা। সেখানে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে শিশুদের নাগরদোলায় চক্কর খেতে দেখেছে আরিয়ান।

কথায় কথায় আরিয়ান জানায়, শহরে রাস্তার পাশে শাক বিক্রি হয়, তা সে আগে দেখেছে। তাই গ্রামের একটি খালের পাশ থেকে শাক তুলে বিক্রির জন্য শহরে এসেছে। এক রাস্তার মোড়ে বসেও ছিল কিছুক্ষণ, তবে বিক্রি না হওয়ায় হেঁটে হেঁটে ঘুরতে থাকে রাস্তায়। এভাবে বিক্রিও হয়, তবে ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে।

দুই আঁটি শাক আর বিক্রির ৮০ টাকা নিয়ে আরিয়ান হাঁটছিল শহরের শালতলা এলাকার রাস্তা দিয়ে। সেখানে একটা গেট ঘিরে বেশ জটলা দেখে উঁকি দেয় সে। ভেতর চলছিল মেলা। মানুষে ঠাসা সেখানকার খেলনা ও খাবার দোকান থেকে আরিয়ানও কেনাকাটা করেছে, তবে মায়ের জন্য। একটি দোকান থেকে সে কিনেছে একটি চামচ আর প্লাস্টিকের কৌটা। তাতেই শেষ তার শাক বিক্রির ৮০ টাকা।

ততক্ষণে সাড়ে আটটা বেজে গেছে। কিন্তু চালই কেনা হয়নি। তাই মেলার মাঠ থেকে বেরিয়ে শাক বিক্রির জন্য আবারও রাস্তায় যায় আরিয়ান। তখনই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় তার। তার বাবার বাড়ি রংপুরে। বাগেরহাটে সে থাকে মা আমেনা আক্তারের সঙ্গে। বাগেরহাট সদর উপজেলার ভাটশালা গ্রামে নানার জায়গায় থাকে তারা।

‘এত নাকি উন্নয়ন অইল, আমার উন্নয়ন কই’

২০ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

গতকাল মঙ্গলবার রাত একটা। ব্যস্ত শহরের কোলাহল কমেছে। ঈদের আগে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা রাখা বিপণিবিতানগুলোও একে একে বন্ধ হচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ ফিরে গেছেন যাঁর যাঁর গন্তব্যে। যাঁরা এখনো ফেরেননি, তাঁদের হাঁটাচলায় তাড়াহুড়োর ছাপ।

বাড়ি ফেরা সেসব মানুষের চেয়ে শহর বানুর (৫৫) ব্যস্ততা যেন আরও একটু বেশি। শহরের প্রধান সড়কের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়া প্রায় প্রতিটি মানুষের কাছে দৌড়ে যান তিনি। হাতে থাকা একগুচ্ছ বেলি ফুলের মালা পথচারীদের সামনে এমনভাবে এগিয়ে ধরেন যেন ফুলের ঘ্রাণ তাদের নাক পর্যন্ত পৌঁছায়। একরকম পথ আগলে ধরেই পথচারীদের অনুরোধ করেন বৃদ্ধা, ‘একটা ফুল লইয়া যাও।’

গতকাল মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে শহর বানুর সঙ্গে দেখা। এক তরুণের পথ আগলে অনেকটা আদেশের সুরেই বলছিলেন বেশি রাত করে বাড়ি ফিরলে ঘরে থাকা স্ত্রীর জন্য যেন অবশ্যই ফুল নিয়ে যান তিনি! বৃদ্ধার এমন কথায় হাসতে হাসতেই তরুণ উত্তর দেন, ‘চাচি, অভাবের ঘরে ফুলের চেয়ে ভাতের কদর বেশি।’ তরুণের কাছে ফুলের কদরও কম মনে হলো না। ২০ টাকায় দুটি মালা কিনে চোখ বন্ধ করে ঘ্রাণ নেন একবার। তারপর হাঁটা দেন নিজের গন্তব্যে।

শহর বানুর সঙ্গে কথা বলতে গেলে পাত্তা দেন না। এড়িয়ে যান। বিরক্তি নিয়ে নানা কথা বলেন। এখনো নয়টা মালা অবিক্রীত। সেগুলো বিক্রি না হলে বাড়ি ফেরা যাবে না। শহরের মানুষ দিন দিন কৃপণ হয়ে যাচ্ছে। কেউ আর এখন ফুল কিনতে চায় না। এমন নানা কথা। ফুল না কেনার কারণ জানতে চাইলে এবার কিছুটা আগ্রহ নিয়েই কথা বলেন বৃদ্ধা। ‘কেমনে কিনব? পকেটে টেকা থাকতে অইব না? জিনিসপত্রের যা দাম। খাওন কিনব না ফুল কিনব?’ এমন সব প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে এবার এই প্রতিবেদকের সামনেই ফুলের গুচ্ছ এগিয়ে ধরেন। ‘নেও, ফুল কেনো।’

কথা জমে বৃদ্ধার সঙ্গে। নাম জানা হয়। জানা হয়, ৪৭ বছরের শহর জীবনের গল্প।

ভোলার চরফ্যাশনে জন্ম। বাবা নাম রেখেছিলেন শহর বানু। বড় বোন ফুল বানু। সাত বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর এক বছর পর নারায়ণগঞ্জ শহরে আসেন। শহরের বড় ঘরে আয়ার কাজ করা ফুল বানু ছোট্ট শহর বানুকেও গৃহকর্মীর কাজে লাগিয়ে দেন। বৃদ্ধার ভাষায়, ‘বড় ঘরে ছোট মনের মানুষ’দের নির্যাতনে তিনি কাজ ছাড়েন। কাজ নেন কুমুদিনী পাট বেলিং প্রেসে। জীবনের দীর্ঘ সময় সেখানেই কাজ করেছেন অনিয়মিত শ্রমিক হিসেবে। এর মধ্যে বিয়ে হয় মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিমে। স্বামী পাটখড়ির ঘর বানানোর শ্রমিক। কিন্তু জায়গার অভাবে নিজের একটা ঘর হয়নি কখনো। দুই সন্তান রেখে মারা যান ১৯৯৮ সালে।

নারায়ণগঞ্জ শহর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর পাট বেলিং প্রেসে কাজ ছেড়ে সড়ক নির্মাণ শ্রমিকের কাজ শুরু করেন শহর বানু। প্রায় ১০ বছর কাজ করেন। কোভিড মহামারির সময় হঠাৎ একদিন কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে জানতে পারেন, মেরুদণ্ডে টিউমার হয়েছে। তখনই কাজ ছাড়তে বাধ্য হন।

বৃদ্ধা জানান, টিউমারের কারণে কুঁজো হতে পারেন না, চেয়ার ছাড়া ঠিকঠাক বসতেও পারেন না। চেয়ারে বসে করার মতো কাজ খুঁজে পাননি। অস্ত্রোপচার করারও টাকা নেই। দীর্ঘদিন ঘরে বসে থেকে কয়েক মাস আগে ভিক্ষা করতে বের হন। ভিক্ষার কথা বলতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন। বলেন, ‘আজীবন কাম কইরা খাইছি। ’৯৮–এর বন্নায় যখন উনি মারা গেল, বাচ্চা দুইডা ছোট। হেই সময়ও ভিক্ষা করি নাই। হেই আমিই মানুষের সামনে হাত পাতি। মানুষ কত কথা কয়। জিগায় কাম কইরা খাই না কেন। লজ্জায় চোখ বাইয়া পানি পড়ে। কাউরে কইতেও পারি না।’

লজ্জায় হাত পাততে না পেরে শহরে ফুল বিক্রি করেন শহর বানু। প্রতিদিন গড়ে আড়াই শ টাকা আয় হয়। তাতেই খেয়ে-পরে থাকেন। বৃদ্ধার দুই ছেলে। বিয়ে করেছেন, সংসার হয়েছে। ছেলেরা দেখে না? এমন প্রশ্নে বৃদ্ধা মাথা নাড়েন, ‘না’। ‘নিজেরাই চলতে পারে না। আমারে দেখব কী?’

এবার বৃদ্ধা চলে যেতে চান। ‘৪৭ বছরের শহর জীবনে কী দেখলেন?’—জানতে চাইলে বিরক্তি আর আক্ষেপ মেশানো কণ্ঠে শহর বানু উত্তর দেন। ‘কত কিছুই না দেখলাম। গ্রাম শহর অইল, আপথে পথ অইল, অমানুষ মানুষ অইল, আন্ধার শহরে আলো আইল, এত নাকি উন্নয়ন অইল। খালি আমার উন্নয়ন অইল না। আমার উন্নয়ন কই?’

‘দশ বছর হলো স্ত্রীকে একটা শাড়ি কিনে দিতে পারিনি’

২২ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

দিনাজপুর রেলস্টেশনের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে আছে প্যাডেলচালিত কয়েকটি রিকশা। এর মধ্যে একটির সিটে বসে পায়ের ওপর পা তুলে অনেকটা আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছেন রিকশাচালক ওয়াকিল আহমেদ। মুখে খোঁচা দাঁড়ি, গায়ের চামড়া ঢিলে হয়ে লেপ্টে গেছে। মাঝেমধ্যে হেঁটে যাওয়া মানুষ দেখলে পা নামিয়ে গন্তব্যের কথা জিজ্ঞেস করছেন। উত্তর না পেয়ে চোখ ঘুরিয়ে লম্বা দৃষ্টি রাখছেন সড়কে হেঁটে আসা মানুষগুলোর দিকে। নিজের বয়সের ব্যাপারে নিশ্চিত নন ওয়াকিল। তাঁর ধারণা, বয়স ৬৫-৭০ হবে। হাত–পায়ে ফুলে ওঠা শিরাগুলো জানান দিচ্ছে প্যাডেল মারার বয়সের কথা। ঠোঁটের কোনায় তবু উঁকি মারছে একচিলতে হাসির রেখা।

‘চাচা কী খবর? আছেন কেমন?’ বলতেই উত্তর, ‘হারা ফির কেমন থাকমো। খেয়া না খেয়া চলি যাছে দিন।’ ঈদে কী কিনেছেন, এমন প্রশ্ন শুনতেই যেন আকাশ থেকে পড়লেন ওয়াকিল। ঈদের বাজার! ‘সংসারের খরচ করির পারোছি না, আরও ঈদ।’ পাশেই বসে পড়লাম। ষাটোর্ধ্ব ওয়াকিল বলতে শুরু করলেন, ‘গত দশ বছরের বেশি সময় পার হই গেইসে তোমহার চাচিক একখান শাড়ি কিনি দিবার পারো নাই। প্রতিবারই নিয়ত করোছি কিন্তু নিয়ততো পুরা হচে নাই।’

ওয়াকিল আহমেদের বাড়ি দিনাজপুর শহরের চাতরা পাড়া এলাকায়। নিজের জমি নেই। সরকারি জমিতে টিন দিয়ে ঘর করে বসবাস করছেন। স্ত্রী নাসিমা বেগম শহরের বড় মাঠসংলগ্ন রাস্তার পাশে ইট ভাঙার কাজ করেন। ওয়াকিল-নাসিমা দম্পতির চার ছেলেমেয়ে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে বিবাহিত, কাজ করেন সেলুনে। মেজ ছেলে ট্রাক্টরের লেবার আর ছোট ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

কত দিন থেকে রিকশা চালাচ্ছেন তা বলতে না পারলেও অনেক ছোট থেকেই রিকশা চালাচ্ছেন এমনটিই জানান। একটা সময় রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৩০০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত আয় করেছেন। বর্তমানে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা আয়। ওয়াকিল জানান, মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে। প্যাডেল রিকশায় কেউ উঠতে চায় না। তা ছাড়া ইজিবাইকের ভিড়ে শহরে রিকশা চালানো কঠিন। রিকশার কাছে আসে কিন্তু শরীরের দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়।

শ্রমজীবি মানুষ

গাজীপুরে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে আহত ৩০

২৯ জানুয়ারি ২০২২, যুগান্তর

গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। শনিবার সকালে গাছা থানার কুনিয়া তারগাছ এলাকায় লিজ অ্যাপারেলসের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, শ্রমিকরা শনিবার সকালে কাজে যোগদান করতে এসে কারখানার গেটে ৬২ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্তসহ লে-অফ ঘোষণার নোটিশ দেখতে পান। এ সময় কারখানার চারপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। পাওনা পরিশোধ ও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কারখানা বন্ধের এই ঘোষণায় শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। পুলিশ অবরোধ ভাঙতে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

একপর্যায়ে পুলিশের রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের মুখে শ্রমিকরা টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং মহাসড়ক থেকে সরে গিয়ে বিভিন্ন শাখা রোডে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকায় হুপলোম, তারগাছ এলাকায় মুনলাইট ও অনন্ত গার্মেন্ট কারখানায়ও ভাঙচুর চালায়।

লিজ অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিক সালাহ উদ্দিন জানান, গত ২৬ জানুয়ারি কারখানার চার তলায় আইরন সেকশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনের সূত্রপাত হওয়া মাত্রই কারখানার সাইরেন বেজে উঠলে শ্রমিকরা দৌড়ে নিচে নেমে আসেন। এ সময় তারা দেখতে পান চারতলায় শ্রমিকরা আটকা পড়েছেন। সেসময় তারা সেখানে গিয়ে চার তলার শ্রমিকদেরকে নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া চারতলা থেকে শ্রমিকদের নামিয়ে আনায় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সঙ্গে চরম খারাপ আচরণ করেন। এ ঘটনায় শ্রমিকরা প্রতিবাদ করায় সম্পূর্ণ অযৌক্তিভাবে ৬২ জন শ্রমিককে বরখাস্তসহ কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়।

কারখানাটির অপর শ্রমিক বিল্লাল হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষ অহেতুক অজুহাতে পরিকল্পিতভাবে আগে থেকেই কারখানায় পুলিশের উপস্থিতি ঘটিয়ে লে-অফ ঘোষণা করেছে এবং বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের অন্তত ২৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তিন দিন আগের যে ঘটনার অজুহাতে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক দাবি করে তিনি।

আশুলিয়ায় জুতার কারখানায় আগুন, নিহত ৩

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় একটি জুতা তৈরির কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিন শ্রমিক নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২ জন।

ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, বুধবার বিকালে টঙ্গাবাড়ি বঙ্গবন্ধু রোডে ‘ইউনি ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার লিমিটেড-২’ নামের এই কারখানায় আগুন লাগে।

ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন নেভার পর কারখানার ভেতরে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন জহিরুল।  

নিহতদের মধ্যে একজন পুরুষ ও দুই জন নারী রয়েছেন।

নিহত দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার এসআই সুদীপ কুমার গোপ।

তারা হলেন টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার মালতী পাড়া গ্রামের ইমরাত হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৫) এবং খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার খড়িয়া গ্রামের হামিদ মিয়ার স্ত্রী শাহানারা বেগম (৪৫)।

অনুমোদনই ছিল না সেই কারখানার

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা

সাভারের আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ি এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ইউনিওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার নামক জুতার কারখানাটির অনুমোদন ছিল না। এমনকি কারখানাটিতে শিশুশ্রমিকদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করানো হতো। গতকাল বুধবার রাতে পুড়ে যাওয়া কারখানা পরিদর্শন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, কোনো অনুমোদন ছাড়াই শিশুশ্রমিকদের দিয়ে কারখানাটিতে কাজ করানো হতো। আগুন লাগার পর খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, কারখানাটির কোনো অনুমোদন নেই। এ ছাড়াও কারখানাটির ভেতরে ছিল না কোন অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নিহত তিনজনের মধ্যে দুইজন নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার মালতী পাড়া গ্রামের ইমরাত হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৫)। তিনি চার মাস ধরে এ জুতার কারখানায় কাজ করছিলেন। আর খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার খড়িয়া গ্রামের হামিদ মিয়ার স্ত্রী শাহানারা বেগম (৪৫)। তিনি দুই মাস ধরে কারখানাটিতে কাজ করছিলেন। নিহত বাকি একজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।

রানা প্লাজায় প্রাণ গিয়েছিল মেয়ের, এবার আগুনে মরলেন মা

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে যে ১ হাজার ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল, তাদের একজন ছিল ১৩ বছরের কিশোরী সাথী আক্তার। ঝালমুড়ি বিক্রেতা মো. আবদুল হামিদ ও জুতার কারখানার কর্মী শাহানারা বেগম মেয়ে হারানোর শোক নিয়ে জীবন কাটাচ্ছিলেন। গতকাল বুধবার আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী এলাকার ইউনিওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার লিমিটেডের জুতা বানানোর কারখানায় (শফিক এন্টারপ্রাইজে) লাগা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান শাহানারা। কর্মস্থলের দুর্ঘটনায় প্রথমে মেয়ে এবং পরে স্ত্রীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হামিদ।

হামিদ বলেন, দুপুরে কারখানার খাবারের বিরতিতে বাসায় যান শাহানারা। স্বামীর বানানো ফুচকা খেয়ে বরই নিয়ে কারখানায় চলে যান। সন্ধ্যায় হামিদ স্ত্রীর কারখানার সামনে গিয়ে দেখেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়। কারখানার টয়লেট থেকে উদ্ধার করা হয় শাহানারা বেগমের দগ্ধ লাশ।

এ দুর্ঘটনায় টাঙ্গাইল সদরের ইমারত হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া (১২) ও এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ব্যক্তির পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

হামিদ বলেন, ১০–১১ বছর আগে খুলনার পাইকগাছা থেকে সাভারে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তখন ঝালমুড়ি বিক্রি করে তিনি সংসার চালাতেন। এক থেকে দেড় বছর পর মেয়ে সাথী আক্তার কাজ নেয় রানা প্লাজায়। এরপর মেয়ের লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয় হামিদকে। ঢাকায় আর আসবেন না—এমন সিদ্ধান্ত ছিল তাঁদের। তবে বছরখানেক আগে হামিদের সঙ্গে অভিমান করে আশুলিয়ায় ভাইয়ের বাসায় চলে আসেন স্ত্রী শাহানারা বেগম। কিছুদিন পর হামিদও চলে আসেন। ঝালমুড়ি বিক্রেতা হামিদ স্ত্রীকে কোথাও কাজ করতে দিতে চাননি। শাহানারার জেদের কাছে হার মানেন তিনি। মাত্র দুই মাস হলো শাহানারার কাজ যোগ দিয়েছেন। স্বামী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন শাহানারা।

শিল্পের শহরে শ্রমিকের দুর্বিষহ জীবন

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

জোছনা খাতুনের বিয়ের বয়স যখন ৮ বছর, তখন হঠাৎ করেই তাঁর স্বামী মারা যান। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির মৃত্যুর পর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে হঠাৎ বিপর্যয়ে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় আবারও বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু জোছনা খাতুন তিন সন্তানকে আঁকড়ে ধরে বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়ার পণ করেন। তাই সিরাজগঞ্জের নিজ বাড়ি থেকে চলে আসেন গাজীপুরের জয়দেবপুরে। ওঠেন এক ভাড়া বাসায়। এক যুগ আগে শুরু হওয়া সেই জীবনসংগ্রামে এখনো লড়ে যাচ্ছেন জোছনা।

জীবিকার প্রয়োজনে গাজীপুরে এসে কাজ নেন এক পোশাক কারখানায়। কিন্তু একটি দুর্ঘটনার পর আর কাজে যাওয়া হয়নি তাঁর। গাজীপুরের জয়দেবপুরের লক্ষ্মীপুরা এলাকায় এক রুমের একটি খুপরিতে ভাড়া থাকেন জোছনা খাতুন। মাসে ভাড়া তিন হাজার টাকা। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে কাজ করেন স্টাইলক্রাফট নামের একটি পোশাক কারখানায়। মজুরি পান ১৪ হাজার টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামছাড়া খরচে ছেলের মজুরি দিয়ে তিনজনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে।

১৯ ফেব্রুয়ারি জোছনার সঙ্গে কথোপকথনের একপর্যায়ে গরুর মাংসের কেজি কত জানতে চাইলে একগাল হেসে তিনি বলেন, ‘জানি না। শুধু এতটুকু মনে আছে, সর্বশেষ গত কোরবানির ঈদে ছেলে দুই কেজি মাংস কিনে এনেছিল। তারপর আর পাতে পড়েনি। করোনার কারণে আর্থিক সংকটে পড়ায় ১০ মাসের বাসা ভাড়া বাকি পড়েছে। সামনে ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা।’ এ অবস্থায় জীবনসংগ্রামের বর্ণনা দিতে গিয়ে জোছনার শেষ বাক্যটি ছিল, ‘ওপরে আল্লাহ, নিচে আমি, সামনে অজানা ভবিষ্যৎ’।

জোছনা খাতুনের মতো কয়েক লাখ শ্রমিক তাঁদের পরিবার নিয়ে আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে এসেছেন শিল্পের শহর গাজীপুরে। সরেজমিনে কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি পেশার শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে স্বপ্ন নিয়ে শিল্পের শহরে তাঁরা ছুটে এসেছেন, তা স্বপ্নই রয়ে গেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, কোনোমতে খেয়ে–পরে দিন কাটছে তাঁদের। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে বছর পেরিয়ে যায়।

একসময় কৃষিপ্রধান জেলা হিসেবে পরিচিতি ছিল গাজীপুরের। দিন দিন ঢাকার পাশের জেলাটি রূপ পেয়েছে শিল্পের জেলা হিসেবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, কর্মসংস্থানে শীর্ষে থাকা দেশের পাঁচটি জেলার মধ্যে গাজীপুরের অবস্থান দ্বিতীয়। ঢাকার (৩৬ শতাংশ) পরেই মোট কর্মসংস্থানের ১৭ শতাংশ হয়েছে গাজীপুরে। গাজীপুর শিল্প–পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় ছোট–বড় পাঁচ হাজার কারখানা রয়েছে। যেখানে কয়েক লাখ শ্রমিক কাজ করেন। শুধু পোশাক কারখানাই নয়, ওষুধ, আসবাবসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমিক কাজ করেন সেখানে। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরে ২৫ লাখ মানুষের বসবাস। যদিও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পাঁচ উপজেলা মিলে গাজীপুরের জনসংখ্যা এখন ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

জীবনের একটু স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যাঁরা গাজীপুরে এসেছেন, তাঁরা কেমন আছেন? কেমনে কাটছে এ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন পেশার শ্রমিকের দিনকাল? তা জানতে ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বেশ কয়েকটি পেশার শ্রমিকের।

তাঁদেরই একজন শহীদ মিয়া। বাড়ি ময়মনসিংহে। এক দশক আগে পরিবার নিয়ে আসেন গাজীপুরের শিববাড়ীতে। নিজে অটোরিকশা চালান। স্ত্রী বিলকিস আক্তার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে ১০ ফুট বাই ১৫ ফুটের একটি ছোট্ট রুমে ভাড়ায় থাকেন। এক রুমের মাসে ভাড়া ৩ হাজার ২০০ টাকা। স্বামী-স্ত্রী দুজনে খাটে ঘুমান। আর সন্তানেরা ঘুমান মেঝেতে। শহীদ মিয়া বলেন, ‘বাড়িতে মা–বাবা দুজনই অসুস্থ। তাঁদের চিকিৎসার জন্য মাসে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে হয়। টানাটানির সংসার। দুই রুমের বাসা ভাড়া নেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা নেই। স্বামী-স্ত্রী মিলে যা আয় করি, তা চলে যায় বাসাভাড়া, বাজার খরচ ও বাড়িতে মা–বাবার চিকিৎসা খরচে। মাস শেষে সঞ্চয় করার কিছু থাকে না।’

বিভিন্ন সামাজিক সূচকে গাজীপুর যে অনেক পিছিয়ে, তা সরকারি জরিপেও উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার চেয়ে গাজীপুরে শিশুশ্রম বেশি। ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুশ্রম গাজীপুরে ১০ শতাংশ। ঢাকায় সেখানে ৬ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হারও গাজীপুরে বেশি। এ জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার হার ৭৮ শতাংশ। ঢাকায় এ হার ৮৫ শতাংশ। গাজীপুরে মাধ্যমিক স্তরের পড়ালেখা শেষ করার হার ৫৫ শতাংশ, ঢাকায় যা ৬১ শতাংশ। গাজীপুরে সাক্ষরতার হার ৮০ শতাংশ। বিবিএসের তথ্য বলছে, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার ক্ষেত্রেও গাজীপুর অনেক পিছিয়ে। জেলার মাত্র ৪৮ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে।

ঢাকার পাশের জেলা হলেও গাজীপুরে নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের হারও ঢাকার তুলনায় কম। ঢাকায় নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৩৬ শতাংশ, গাজীপুরে তা ১৭ শতাংশ। গাজীপুরের ২৪ শতাংশ নারী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হন, ঢাকায় এ হার ২০ শতাংশ।

তবে সরকারি তথ্য বলছে, গাজীপুরে হতদরিদ্রের সংখ্যা কম। সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস ও যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, এ জেলার মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

স্থানীয় শ্রমিকনেতারা বলছেন, গাজীপুরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা কম, এটা ঠিক। কারণ, এখানে কাজের সুযোগ বেশি। কিন্তু কাজ থাকলেও জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে না। অর্থাভাবে বেশির ভাগ শ্রমিক পরিবার–সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারেন না। তাঁরা শুধু খেয়ে–পরে বেঁচে আছেন। ফলে শিল্পের জেলায় তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শ্রমিকনেতারা অভিযোগ করেন, অনেক কারখানা শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি দেয় না।

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে জর্ডান থেকে ফিরলেন সাথী, শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন

১৮ মার্চ ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন

জর্ডান ফেরত এক মানসিক ভারসাম্যহীন ও পঙ্গু নারী হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুর ১টায়। সঙ্গে কাগজপত্র না থাকায় এবং তিনি কথা বলতে না পারায় কিছুটা বেকায়দায় পড়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে সাথী আক্তার নামে ওই নারীর চোখে মুখে ছিল অসহায়ত্বের চাপ। একপর্যায়ে জাজিরা এয়ারওয়েজের এয়ারপোর্ট ম্যানেজার ওই নারীর পরিবারকে খুঁজে পেতে ব্র্যাকের সহায়তা চান। এরপর তাকে নিরাপদ অভিবাসনের জন্য বিমানবন্দর থেকে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার আশকোনাতে নেওয়া হয়।

সংসারে হাসি ফোটাতে বিদেশে গিয়ে ফিরছেন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে

১৮ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

কাউকে দেখলেই তার দিকে তেড়ে যাচ্ছেন সোমা আক্তার। বলছেন, ‘তুই খারাপ, তুই আমার মোবাইল চুরি করছোস, খাবার দিস নাই, তোরে পুলিশে দিমু।’ থুতু দেওয়ার ভয়ও দেখাচ্ছেন। সোমার স্বামী হারুন-অর রশিদ তাঁর কাছে গেলেই দু-চারটা চড়থাপ্পড় মারছেন। পাশ থেকে সোমার বৃদ্ধ মা তাঁর নাকে মেয়ের দেওয়া খামচির দাগ দেখিয়ে বলেন, ‘সারাক্ষণ জানের ভয়ে থাকতে হয়, নিজের পেটের মাইয়্যা, ফালাইয়্যা তো দিতে পারি না।’

 এই সোমা সম্প্রতি ফিরেছেন সৌদি আরব থেকে। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন নারী শ্রমিক হিসেবে। ৬ এপ্রিল দুপুরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সোমা কিছুক্ষণ উদাসভাবে হাসপাতালের বিছানায় বসে ছিলেন, একটু পরেই বিছানা থেকে নেমে হাঁটা দিচ্ছিলেন। আর খেপে গেলে গালাগালি ও স্বামীকে মারধর করছিলেন। সোমার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২ এপ্রিল সৌদি আরব থেকে ফেরত আসেন সোমা। এরপর থেকে আপন মনেই কথা বলছেন অথবা হাসছেন।

সোমা আক্তারের স্বামী হারুন–অর রশিদ রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি কাপড় কিনে তা বিক্রি করেন। ভেবেছিলেন স্ত্রী টাকা পাঠালে কাপড়ের ব্যবসাটা একটু বড় করবেন। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে শুধু বললেন, ‘স্ত্রীকে বিদেশ পাঠিয়ে লাভের লাভ কিছুই হইলো না। উল্টো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে তাঁর অবস্থা শোচনীয়।’ গত বছরের মে মাসে সোমা বৈধ শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন।

হারুন–অর রশিদ জানান, দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অল্প বয়সে। ছেলের বয়স ১৪ বছর, আর ছোট মেয়ের বয়স মাত্র ৭ বছর। প্রায় এক লাখ টাকা ঋণ ছিল, এখনো ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার বাকি আছে।

সোমা আক্তার এর আগে লেবাননে ১৬ মাস এবং জর্ডানে ১২ মাস থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন। এবার ফিরলেন এক বছরের মাথায়। আগে যে টাকা পাঠিয়েছেন বা এবার যাওয়ার পর প্রথম দিকে যে টাকা পাঠিয়েছেন, তা দেশে থাকা স্বামী-সন্তানদের নিজেদের খাওয়াসহ সংসারের নানা খরচে ব্যয় হয়ে গেছে। সঞ্চয় বলতে কিছু করা হয়নি।

১৬ হাজার টাকা বেতনে এবার গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন সোমা। দুবার মালিক পরিবর্তন হয়েছে। আগেও টেলিফোনে জানিয়েছিলেন, তাঁকে মারধর করা হয় আর বেশির ভাগ সময় মাথায় মারেন মালিক।

রানা প্লাজা ধস

মামলার বিচার ৯ বছরে সামান্যই এগিয়েছে

২৪ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

৯ বছর আগে এই দিনে ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৫ জন শ্রমিক মারা যান। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। মামলার ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এত বছর পরেও নিম্ন আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মামলার কাগজপত্র ও রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মামলার তদন্তে সময় গেছে দুই বছর। ছয়জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি না পাওয়ায় দুই বছর ঝুলে ছিল এই মামলা। সে সময় জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল, যাঁরা বড় অপরাধ করেননি, তাঁদের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি দিতে পারবে না তারা। শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আর আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হতে (অভিযোগ গঠন) সময় লেগেছে আরও এক বছর। আর বিচার শুরুর আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সাত আসামি উচ্চ আদালতে গেলে তাঁদের পক্ষে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ আসে। ওই স্থগিতাদেশের কারণে পাঁচ বছর ধরে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে সম্প্রতি ছয়জনের পক্ষে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে সাক্ষ্য গ্রহণ। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালতে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।.. ..

রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৫ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও ১ হাজার ১৬৯ জন। এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যু চিহ্নিত হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে। এই তিন মামলার কোনোটিরই বিচার শেষ হয়নি।

আশুলিয়ায় ঈদের ছুটি বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

২৪ এপ্রিল, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সাভারের আশুলিয়ায় উৎসব বোনাস ও ঈদের ছুটি বাড়িয়ে ১০ দিন করার দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, ইটপাটকেল ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছ।

শ্রমিকদের দাবি, এ ঘটনায় ১০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশ দাবি করেছে, শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে ৪-৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকার একটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা এই বিক্ষোভ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর পুলিশি হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান। দুপুর দেড়টার দিকে যানচলাচল স্বাভাবিক হলেও কারখানাটির সামনে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ৭ দিনের ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। রমজান মাসে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়েছে। বোনাস দিলেও বেসিক বেতনের অর্ধেক দিয়েছে। এটা কোনো কারখানা করে না। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষকে ১০ দিন ছুটি ও মূল বেতনের সমপরিমাণ বোনাসের দাবি জানানো হলে তারা টালবাহানা শুরু করে।

শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তারা ন্যায্য বোনাস ও ১০ দিনের ছুটির দাবিতে রাস্তায় নামলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হয়েছেন।

মিরপুর ও উত্তরায় পোশাকশ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

২৫ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় আজ সোমবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা।

ঈদের আগে বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে পোশাকশ্রমিকেরা সড়কে অবস্থান নেন বলে জানা যায়। পোশাকশ্রমিকদের অবরোধের কারণে সড়কে যানজট তৈরি হয়।

আজ দুপুরের দিকে মিরপুর পল্লবী এলাকার ১১ নম্বর সড়কে অবস্থান নেন কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকেরা।

উত্তরার জসীমউদ্‌দীন-আজমপুর এলাকার সড়কে অবস্থান নেন ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেড নামের দুটি গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা। উত্তরার দুটি গার্মেন্টসের মালিক একই ব্যক্তি।

দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

মন্ত্রী–ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতির জাল

২৭ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

চাঁদপুরে সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছে প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারের কাছ থেকে ৩৫৯ কোটি টাকা বাড়তি নেওয়ার এ কারসাজিতে জড়িত ব্যক্তিরা শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। এর মধ্যে তাঁর নিকটাত্মীয়ও রয়েছেন। তাঁরা ভূমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক অনুমোদনের আগেই চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে জায়গা ঠিক করে নিজেদের নামে দলিল করিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে সেসব জমিই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন করে এবং জেলা প্রশাসনকে অধিগ্রহণের জন্য বলে।

গত নভেম্বরে জেলা প্রশাসনের এ–সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয় গত বছরের ৬ এপ্রিল। এরপর মাঠপর্যায়ে জমির অস্বাভাবিক মূল্য দেখে জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১৩ সদস্যের কমিটি করে দেয়। সেই কমিটি নির্ধারিত মৌজার জমি বেচাকেনার দলিল পর্যালোচনা করে ১৩৯টি দলিল পায় ‘অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যে’ (২০ গুণ বেশি দামে) রেজিস্ট্রি করা। এসব দলিল হয়েছে ২০২০ সালের ১৮ মে থেকে ২০২১ সালের ১৫ মের মধ্যে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়–সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরুর পর। ওই জমির দাগ নম্বরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমির দাগ নম্বরের মিল রয়েছে। আবার ওই সব দাগের বাইরে একই মৌজায় একই সময়ে সম্পাদিত ৪০টির বেশি জমি কেনাবেচার দলিল পাওয়া গেছে, যার মূল্য সরকারি মৌজা দরের কাছাকাছি। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের জন্য যে জায়গাটি ঠিক করা হয়েছে, কেবল ওই সব দাগের জমির দলিলে অস্বাভাবিক দাম দেখানো হয়েছে।

সরেজমিনে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় লোকজন থেকে এসব জমি নেওয়া হয়েছে অনেকটা জোর করে। এ ক্ষেত্রে কাউকে নামমাত্র দাম দেওয়া হয়েছে। কাউকে আবার জমি অধিগ্রহণের টাকা হাতে পেলে জমির দাম পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কেবল কৃষিজমির মালিকদের কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। এই কাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান। তিনি চাঁদপুরে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

মাথার ওপর ভেঙে পড়ল ‘দুর্যোগ সহনীয় ঘর’, বৃদ্ধার মৃত্যু

২৯ জানুয়ারি ২০২২, আজকের পত্রিকা

প্রকল্পের নাম গৃহহীনের জন্য ‘দুর্যোগ সহনীয় ঘর’। অথচ কোনো দুর্যোগ ছাড়াই নির্মাণের মাত্র তিন বছরের মাথায় ভেঙে পড়ল বৃদ্ধার মাথায়। ‘স্বপ্নের ঘরে’ চাপা পড়ে প্রাণ হারালেন বৃদ্ধা।

ঘটনাটি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা’র মাদারীটুলা মহল্লার। আজ শনিবার সন্ধ্যায় ‘দুর্যোগ সহনীয় ঘরের’ পিলার ভেঙে পড়ে ৮৯ বছরের বৃদ্ধা শিরাপজান বিবির মাথায়। তিনি মাদারীটুলা মহল্লার মৃত নেয়ামত উল্লাহর স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, নেয়ামত উল্লাহর ছেলে শরিফ উল্লাহর সামান্য জায়গা থাকলেও ঘর ছিল না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে টিআর/কাবিখা কর্মসূচির আওতায় ‘দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বানিয়াচং উপজেলায় বেশকিছু ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। একেকটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ২৫ হাজার ঘর নির্মাণ করা হয়।

এ রকমই একটি ঘর দেওয়া হয়েছিল মাদারীটুলা গ্রামের নেয়ামত উল্লাহর ছেলে মো. শরীফ উল্লাহকে। শরীফ উল্লাহ স্ত্রী-সন্তান ও মা শিরাপজান বিবিকে নিয়ে বসবাস করতেন।

শেষ বয়সে একটি পাকা ঘর পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিলেন শিরাপজান বিবি। কিন্তু কে জানত স্বপ্নের সেই ঘরে চাপা পড়ে প্রাণ যাবে তাঁর!

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

শুরুতেই নিয়োগে বড় ধরনের অনিয়ম

৩১ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি চালুর আগেই বড় ধরনের অনিয়মে জড়িয়েছে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদিত পদের বাইরে অতিরিক্ত ১০৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অস্থায়ীভাবে দেওয়া এসব নিয়োগে উপাচার্যের আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সাংসদের স্বজনেরা রয়েছেন। এমনকি উচ্চশিক্ষার অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইউজিসির কর্মকর্তাদের সুপারিশেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদে বেআইনিভাবে আটজনকে ডিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে ইউজিসির তদন্তেই। ইউজিসির তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে (অ্যাডহক) যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মেয়াদ আর না বাড়ানো, অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়ার পরও নীতিমালা লঙ্ঘন করে যাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা এবং পদোন্নতির পর পাওয়া অতিরিক্ত বেতন-ভাতার অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়া।

অখ্যাত কোম্পানি দুই বছরেই দেশের অন্যতম শীর্ষ ঠিকাদার

০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা

নওগাঁর ঠিকাদার মোহাম্মদ আমিনুল হক। ঠিকাদারি ব্যবসায় যুুক্ত রয়েছেন দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। তবে আলোচনায় এসেছেন গত চার বছরে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের একের পর এক কাজ পেয়ে বনে গিয়েছেন সংস্থাটির অন্যতম শীর্ষ ঠিকাদার। গত দুই বছরে আমিনুল হকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড ১ হাজার ৬৭৯টি কার্যাদেশ পেয়েছে, যা এ সময়ে সওজ থেকে হওয়া মোট কার্যাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ। এসব কাজের বেশির ভাগই আবার মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে অন্য ঠিকাদার। অভিযোগ রয়েছে, নির্দিষ্ট কমিশন নিয়ে ছোট ঠিকাদারদের মধ্যে কাজ বিক্রি করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। রয়েছে লাইসেন্স ভাড়া দেয়ার অভিযোগও। যদিও প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আমিনুল বলছেন, বিক্রি নয়, পরিচিত নানাজনের অনুরোধ ফেলতে না পারায় কাজগুলো তাদের দিয়েছেন তিনি।

বণিক বার্তার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, গত চার বছরে আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেডের নামে পাওয়া বেশির ভাগ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন অন্য ঠিকাদাররা। বিশেষত বিভিন্ন জেলার স্থানীয় ঠিকাদাররাই মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন। বগুড়া-জয়পুরহাট মহাসড়ক, মোকামতলা-জয়পুরহাট মহাসড়ক, ঢাকা-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের বগুড়া সড়ক বিভাগের অংশ, কাহালু থানা সংযোগ সড়ক, বগুড়া-ক্ষেতলাল মহাসড়ক ও কাহালু-আদমদীঘি মহাসড়ক—বগুড়া সড়ক বিভাগ থেকে গত বছর এ ছয়টি সড়ক উন্নয়নের কাজ পায় আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড। তবে মাঠ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি কেবল বগুড়া-জয়পুরহাট মহাসড়কের উন্নয়নকাজ নিজে করেছে। বাকি কাজগুলো করেছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। দেশের ৫৮টি সড়ক বিভাগে আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেডের পাওয়া বেশির ভাগ কাজই এভাবে অন্য ঠিকাদাররা করেছেন এবং এখনো করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ঠিকাদারদের কাছে নির্দিষ্ট হারে কমিশন নিয়ে কাজ বিক্রি করেছেন আমিনুল হক। যদিও আইনে এভাবে কাজ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী একজন ঠিকাদার তার লাইসেন্সের বিপরীতে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাওয়া কাজের কোনো নির্দিষ্ট অংশ বাস্তবায়নের জন্য সহঠিকাদার নিযুক্ত করতে পারেন, পুরো কাজের জন্য পারেন না। আইনের লঙ্ঘন হলেও এভাবে ‘কাজ বিক্রি’ এখন সওজ অধিদপ্তরে ওপেন সিক্রেট। কাজ বিক্রির পাশাপাশি আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেডের লাইসেন্স ভাড়া নিয়েও বিভিন্ন দরপত্র প্রক্রিয়ায় ছোট ঠিকাদাররা অংশ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সিকদারদের বাগানবাড়ির জন্য ভিটেছাড়া তাঁরা

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

সুমিত্রা রানী দের বয়স ৬৫। রোগশোকে জীর্ণ সুমিত্রাকে এ বয়সে বসতভিটা ছাড়তে হয়েছে। ভাইয়ের তিন এতিম মেয়েকে নিয়ে চার বছর ধরে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের পরিত্যক্ত রান্নাঘরে। প্রভাবশালী সিকদার পরিবারের শখের বাগানবাড়ি করতে তাঁদের ভিটেছাড়া করা হয়েছে বলে অভিযোগ সুমিত্রা রানী পরিবারের।

দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের ছেলে রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদারদের এ বাগানবাড়ির অবস্থান শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক এলাকায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর গ্রামে। তিনি সেখানে জেডএইচ সিকদার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় ও মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেছেন। এর আধা কিলোমিটার দূরত্বে নড়িয়ার ডিঙ্গামানিক ও ভেদরগঞ্জের কার্তিকপুর গ্রামে অন্তত ৩০ একর জমির ওপর ২০০৯ সালে বাগানবাড়ি গড়ে তোলার কাজ শুরু করে সিকদার পরিবার।

স্থানীয় লোকজন বলেছেন, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে জমি কিনে তা সীমানাপ্রাচীর দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। এরপর ভেতরে বাগানবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করতে থাকেন। দুটি পুকুর, পুকুরের মধ্যে চারতলা দৃষ্টিনন্দন ভবন, ভবনের ছাদে হেলিপ্যাড, হরিণের খামার, দুটি পুকুরের সংযোগস্থলে সেতু ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা লাগানো হয়। এর মধ্যেই সুমিত্রা রানীর পৈতৃক ৪১ শতক জমি রয়েছে।

ভুয়া রপ্তানি, প্রণোদনা আত্মসাৎ

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মামুন এন্টারপ্রাইজ গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৫৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানির বিপরীতে তারা সরকারের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকার নগদ সহায়তাও নিয়েছে। কিন্তু এখন কাস্টমসের তদন্তে দেখা যাচ্ছে, আসলে কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে তারা সরকারের নগদ সহায়তার টাকা আত্মসাৎ করেছে।

মামুন এন্টারপ্রাইজের রপ্তানির নথিপত্রে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ঢাকার ফকিরাপুলের ইনার সার্কুলার রোডের শতাব্দী সেন্টার। গত বুধবার ভবনটিতে গিয়ে মামুন এন্টারপ্রাইজ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। শতাব্দী সেন্টারে ১৫ বছর ধরে নিরাপত্তাপ্রহরী হিসেবে কাজ করা আবদুল হাই প্রথম আলোকে বলেন, এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান সেখানে কখনো ছিল না।

রপ্তানিকারক সমিতির সদস্য তালিকায় মামুন এন্টারপ্রাইজের মালিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে মো. ইলিয়াছ মামুন মিয়াজী। তাঁর একটি মুঠোফোন নম্বরও তালিকায় রয়েছে। তবে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামুন এন্টারপ্রাইজের এই ‘জালিয়াতি’ ধরা পড়ার পর এ রকম আরও ‘ভুয়া’ রপ্তানির ঘটনা ঘটেছে কি না, তার খোঁজে নামে চট্টগ্রাম কাস্টমস। তদন্তে এখন পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে যে শুধু কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য খাতে বিগত পাঁচ বছরে ৮০০টি চালানে এমন ভুয়া রপ্তানির ঘটনা ঘটেছে। এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা আরও ৪১টি প্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক সন্দেহজনক রপ্তানি পণ্যের চালান নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্ত শেষে জানা যাবে আসলে কত টাকার রপ্তানি ভুয়া ছিল, তার বিপরীতে কত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মুড়ি, মসলা, আলু, তৈলবীজসহ কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যেই এই জালিয়াতি হচ্ছে। জালিয়াতি শনাক্ত হওয়া চালানগুলোর বেশির ভাগের গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া। শতাধিক চালান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একেকটিতে গড়ে ৫০ হাজার ডলারের পণ্য থাকে (৫৩ লাখ টাকা)। ২০ শতাংশ হারে এর বিপরীতে নগদ সহায়তা দাঁড়ায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। ৮০০ চালানের বিপরীতে নগদ সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৮ কোটি টাকা।

সচ্ছলেরা পেলেন খাসজমি

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

দরিদ্র ও ভূমিহীনদের বদলে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় সচ্ছল ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা খাসজমি বন্দোবস্ত পেয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন দোতলা পাকা বাড়ির মালিকও। কিন্তু অন্যের জমিতে ছাপরা তুলে বাস করেন, এমন হতদরিদ্র নারী আবেদন করেও সরকারি জমি পাননি।

কাউখালীতে খাসজমি বন্দোবস্ত পাওয়া ১৩৭ জনের নামের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়ী ২০ জন, সচ্ছল ব্যক্তি ২৫ জন, প্রবাসী তিনজন, চাকরিজীবী ও তাঁদের স্ত্রী ৫ জনসহ মোট ৫৩ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাঁরা ভূমিহীন নন, বরং অনেকেই এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জমি ও সম্পদের মালিক বলে পরিচিত। ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসক খাসজমি বন্দোবস্তের তালিকাটি অনুমোদন দিয়েছেন। বিষয়টি সম্প্রতি জানাজানি হয়।

ছেলে, মেয়ে, শ্যালক ও ভাতিজাকে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

নতুন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শহীদুর রহমান খানের অনিয়ম আর স্বজনপ্রীতির চিত্র উঠে এল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে। এতে দেখা যায়, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিজের ছেলে, মেয়ে, শ্যালক–শ্যালিকার ছেলে ও ভাতিজাকে নিয়োগ দিয়েছেন। স্ত্রীকেও অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে প্রক্রিয়া শেষ করার আগেই তা আটকে যায়।

সব মিলিয়ে উপাচার্য নিজের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের মধ্যে নয়জনকে নিয়োগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। ইউজিসির তদন্তে স্বজনপ্রীতি ছাড়া শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের প্রমাণও উঠে এসেছে।

কৃষিজমি হুকুমদখল, জীবিকা হারানোর শঙ্কা কৃষকের

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবনের কূলঘেঁষা ইউনিয়ন বাণীশান্তা। পশুর নদের পারের এই ইউনিয়নের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষিকাজ। তাঁদের সেই জীবিকা এখন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। মোংলা বন্দর চ্যানেলের অধিক গভীরতার জন্য পশুর নদ খনন করে মাটি ও বালু ফেলতে তাঁদের চাষযোগ্য জমি হুকুমদখল করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন্দরের প্রয়োজনে দীর্ঘদিন বালু, মাটি ফেলে রাখায় তাঁদের জমি উর্বরতা হারাবে। সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ হয়তো মিলবে, তবে ফসল উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হতে হবে তাঁদের। একসময় উদ্বাস্তু হয়ে ভিটেবাড়ি ছাড়তে হবে।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আলোচিত কর্মকর্তা শরীফ চাকরিচ্যুত

১৭ ফেব্রুয়ারি ২২, সমকাল

চট্টগ্রামে একের পর এক দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতিবাজদের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়া আলোচিত দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলির পর এবার তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

বুধবার দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তার চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া হয়েছে।

ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির তদন্তে নেমে বিপদে তিনি

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

কক্সবাজারে সরকারের তিন লাখ কোটি টাকার ৭২টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের শুরুতেই ভূমি অধিগ্রহণে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার সহায়তায় দুর্নীতির এ জাল বিস্তারের তথ্য পাওয়া গেছে।

কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কিছু কর্মকর্তার নামও এ চক্রে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন তিনটি প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেন। এতে আমলা, রাজনীতিকসহ ১৫৫ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিনটি তদন্ত প্রতিবেদনে তিনটি প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে মোট ৭৮ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে তছরুপ হয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা।

তিনটি প্রকল্পের ওই দুর্নীতির প্রতিবেদন গত ৩০ জুন দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। দুদক থেকে ওই তদন্তের পর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এত দিনেও। উল্টো ওই তিনটি তদন্ত বাতিল করে পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ দুর্নীতির তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে প্রথমে বদলি এবং পরে গত বুধবার চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি তাঁকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে ১৯টি অভিযোগ দিয়েছেন।

মহেশখালীতে উন্নয়ন প্রকল্প

গরিবের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা মিলেমিশে ভাগাভাগি

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপে একটি ভাসমান তেলের ডিপো ও তেল রাখার স্থাপনা নির্মাণের জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) নামে একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের জন্য ১৯১ একর পাহাড়ি বনভূমি অধিগ্রহণ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। তিন বছরের জন্য হুকুমদখলে নেওয়া হয় ১৪৪ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। ওই জমির মালিক ও ভোগদখলকারীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকার মোট ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ভূমিমালিকদের অনেকে এ টাকা পাননি। একটি চক্র ভুয়া মালিক বানিয়ে এ টাকার বড় একটি অংশ তছরুপ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনের তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। গত ৩০ জুন দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন শরীফ উদ্দিন। ওই প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার-২ আসনের (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, প্রকল্প এলাকা কালারমারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান (শরীফ) এবং তাঁর আত্মীয়স্বজনসহ মোট ৯৬ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে। তাঁরা গরিব ভূমিমালিকদের ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শতভাগ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দুদক থেকে ওই প্রতিবেদন বিষয়ে গত জানুয়ারিতে আরও বিস্তারিতভাবে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। নতুন একজনকে তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গরিবের ঘরে নেতার মুরগির খামার

২০ ফেব্রুয়ারি ২২, সমকাল

গুচ্ছগ্রামে অন্যের নামে বরাদ্দ দেওয়া ঘরে মুরগির খামার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা। গুচ্ছগ্রামের সাতটি ঘর দখল করেছেন। এখন কবরস্থান দখলের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অভিযুক্ত আইয়ুব আলী চিরিরবন্দর উপজেলার ৫ নম্বর আবদুলপুর ইউনিয়নের আন্ধারমুহা ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবে তার দাবি, অভিযোগকারীরা নানা অপরাধে জড়িত। তাদের অপকর্মে বাধা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আইয়ুব আলী মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের পাঁচটি বাড়ি নিজের ও সন্তানদের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। বাড়ি বরাদ্দের নামে ৫০টি পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। গুচ্ছগ্রামের গাছ কেটে বিক্রি করেছেন তিনি। গত রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন আন্ধারমুহা গুচ্ছগ্রামের সদস্যরা। একই দিন উপজেলা কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন তারা।

সাড়ে ১৩ টাকার সবজি ৩৮ টাকা হয় হাতবদল আর চাঁদাবাজিতে

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

দেশের কৃষকেরা যে বাঁধাকপি গড়ে সাড়ে ১৩ টাকা দরে বিক্রি করেন, সেই বাঁধাকপিটি ঢাকায় এসে খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৩৮ টাকায়। এই দর কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হওয়া দামের প্রায় তিন গুণ।

শুধু বাঁধাকপি নয়, এভাবে বেগুন, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও কাঁচা মরিচ কৃষক পর্যায়ের দামের দুই থেকে তিন গুণ দরে বিক্রি হয় ঢাকার বাজারে। এর কারণ মধ্যস্বত্বভোগী, পরিবহন খরচ ও পুলিশের চাঁদাবাজি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের করা এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। গত ১ থেকে ৩ জানুয়ারি ঢাকার কারওয়ান বাজার, বগুড়া, যশোর, রাজশাহী ও মেহেরপুর জেলার কৃষক, ফড়িয়া, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এটি গত সপ্তাহে কৃষি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়।

সবজির বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এবার তা সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনেই উঠে এল।.. ..

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা রাজশাহী ব্যবসায়ীদের তথ্যানুযায়ী, জেলাটির বানেশ্বর বাজার থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজার পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে ট্রাকভাড়া ১৭ হাজার টাকা। তবে রাজশাহীর আমচত্বর, বেলপুকুরিয়া, নাটোর বাইপাস, এলেঙ্গা বাইপাস, টাঙ্গাইল বাইপাস, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় দেড় হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। যশোর থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ট্রাকভাড়া ২৪ হাজার টাকা। এই পথেও কয়েক জায়গায় চাঁদা দিতে হয়।

প্রতিবেদনে ‘রাস্তা খরচ’ খাতে পুলিশের চাঁদার কথা বলা হয়েছে।

‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান তিনি

০২ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

.. .. চাঁদপুর জেলার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জনস্বার্থে নৌপথ সচল করার কথা বলে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু তুলছেন সেলিম খান। বর্তমানে ছোট ও বড় প্রতিটি ড্রেজার দিয়ে দিনে ২০ থেকে ৪০ হাজার ঘনফুট বালু ও মাটি তোলা হচ্ছে। প্রতিটি ড্রেজারে ২০ হাজার ঘনফুট তোলা হলে ২০০ ড্রেজারে দিনে বালু উঠছে ৪০ লাখ ঘনফুট। মাসে তোলা হচ্ছে ১২ কোটি আর বছরে ১৪৪ কোটি ঘনফুট বালু।

ড্রেজার ও বালুর ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে তোলা বালু বর্তমানে প্রতি ঘনফুট বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন টাকা। আড়াই টাকা হিসাবে দুই নদী থেকে দিনে এক কোটি টাকার বালু বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে মাসে বালু বিক্রি হচ্ছে ৩০ কোটি টাকার। বছরে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬০ কোটিতে। ২০১৫ সাল থেকে এই টাকার একটি কানাকড়িও সরকারের ঘরে যাচ্ছে না। গত আট বছরে কমবেশি ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা সেলিম খানের পকেটে ঢুকেছে।.. ..

সেলিম খান যে পদ্ধতিতে বালু তুলছেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে তা নিষিদ্ধ। এই আইন বলছে, নদীতীর ভেঙে যেতে পারে এবং মৎস্য ও জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদ বিনষ্ট হলে বা হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সেখান থেকে বালু ও মাটি তোলা নিষিদ্ধ।

কে এই সেলিম খান

গত এক দশকের বেশি সময় ধরে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান। বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ৯ জন সদস্যসহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তিনি।

ওই ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সেলিমের পারিবারিক অবস্থাও তেমন সচ্ছল ছিল না। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে জেলা বিএনপির প্রভাবশালীদের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন তিনি। এর আগে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সখ্য তৈরি করেন সেলিম খান। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে বালু তোলার একচ্ছত্র সম্রাট বনে যান সেলিম। উল্লেখ্য, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি চাঁদপুর–৩ (সদর–হাইমচর) আসনের সাংসদ।.. ..

ভুয়া বিল–ভাউচারে পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম

০৭ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

দুপুরে ভাত খেতে বসেছে ৭১টি শিশু। আয়োজন আলু–মুরগির মাংসের তরকারি, সঙ্গে পাতলা ডাল। কয়েকটি শিশুর প্লেটে চোখ রেখে দেখা গেল, বড় বড় আলুর টুকরোর পাশে মাথা উঁচু করে আছে মুরগির পা। এই পা সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। একজন শিশু নিচু স্বরে বলল, ‘আপা-ভাইয়ারা প্লেটে খাবার তুলে দেন।’

এই শিশুরা রাজধানীর কমলাপুরের পথশিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রের বাসিন্দা। ২৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেল।

রাজধানীতে আরেকটি পথশিশু পুনর্বাসনকেন্দ্র রয়েছে কারওয়ান বাজারে। দুটি কেন্দ্রের খাবারের অবস্থাই কমবেশি একই রকম।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১৬ সাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্র দুটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে কর্তৃপক্ষ নিজেরা রান্না করে শিশুদের খাওয়ায়। মাস শেষে বিল জমা দেওয়া হয় দুটি ডালভাতের হোটেলের নামে। কিন্তু নির্ধারিত ঠিকানায় গিয়ে একটি হোটেলও পাওয়া যায়নি। হোটেল দুটির মালিকও বিলের বিষয়ে জানেন না।.. ..

দুটি কেন্দ্রের জন্যই চাল–ডালসহ বিভিন্ন পণ্য যাত্রাবাড়ীর সজীব এন্টারপ্রাইজ থেকে কেনা হয়। মাছ, মাংস সবজি কেনা হয় কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ী থেকে। দুই কেন্দ্রেই মাসে খাবারের জন্য গড়ে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে খাদ্যদ্রব্য খাতে বরাদ্দ আছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অন্যান্য মনিহারি পণ্য বাবদ বরাদ্দ আছে ১০ লাখ টাকা।

দুটি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও পথশিশুদের জন্য ৯টি আউটরিচ স্কুলে ২৭০ জনের পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। এদের টিফিনের জন্য বরাদ্দ জনপ্রতি ৪০ টাকা।.. ..

যে দুটি হোটেলের নামে বিল-ভাউচার করা হচ্ছে, তার একটি চাঁদপুর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। ক্যাশ মেমোতে কারওয়ান বাজারের ঠিকানা দেওয়া। ৬ থেকে ৭ বছর আগে জায়গা পরিবর্তন করে গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় স্থানান্তরিত হয়েছে এটি। ক্যাশ মেমোতে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে ফোন করলে মালিক মো. আসলাম জানালেন, তিনি সরকারের এ কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু জানেন না। তাঁর ভাত-তরকারির হোটেলটিও বেশ ছোট।

অন্য আরেকটি হোটেলের নাম উত্তর যাত্রাবাড়ীর ভোজনবিলাস হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। হোটেলের মালিকের ছেলে মো. ফয়সাল খান জানালেন, বিল-ভাউচারের বিষয়ে তিনি বা তাঁর বাবা কিছু জানেন না। বললেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করলেই সত্যটা বুঝতে পারবেন।.. ..

সার তোলায় অনিয়ম, ঠকছেন চাষি

০৭ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

ডিলারদের জন্য বরাদ্দ করা ভর্তুকির সার সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে আমদানিকারকদের কাছ থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তুলে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁদের হাত থেকে সেই সার চলে যাচ্ছে অননুমোদিত খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। এর ফলে ভর্তুকির সার কৃষকদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কোনো তদারকি নেই বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন।

সরকারের নীতিমালায় রয়েছে, ডিলারদের অনুকূলে বরাদ্দ করা সার ডিলার নিজে উত্তোলন করবেন অথবা তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্য থেকে একজনকে উত্তোলনের ক্ষমতা দেবেন। ডিলার মনোনীত প্রতিনিধির ছবি প্রত্যয়ন করে লিখিতভাবে এ ক্ষমতা দেবেন।

দেশের সবচেয়ে বড় সার বিপণনকেন্দ্র যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায়। এখান থেকে দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় সার যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নওয়াপাড়ায় দুই শতাধিক ক্ষুদ্র সার ব্যবসায়ী রয়েছেন। বেশির ভাগ ডিলার নওয়াপাড়ায় না এসে তাঁদের মাধ্যমে কাগজে-কলমে সার উত্তোলন দেখান। এরপর ডিলাররা বরাদ্দের অধিকাংশ সার আমদানিকারক ও

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দেন। তাঁরা নিজ নিজ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে সারের ভুয়া আগমনী বার্তা (অ্যারাইভাল রিপোর্ট) সংগ্রহ করছেন। এভাবে আমদানিকারক, ডিলার, বিক্রয় প্রতিনিধি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে সার যাচ্ছে কৃষকের কাছে।

নওয়াপাড়ার ক্ষুদ্র সার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হায়দার আলী মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ডিলারদের কাছ থেকে সার কিনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন। এসব দেখার কেউ নেই।

অর্থ পাচার মামলায় সাবেক মন্ত্রীর ভাই গ্রেফতার

০৯ মার্চ, ২০২২, বণিক বার্তা

২ হাজার কোটি টাকা পাচার মামলায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই। ঢাকা থেকে গ্রেফতারের পর গতকাল তাকে ফরিদপুরের আদালতে সোপর্দ করা হয়।

বাবরের গ্রেফতারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গতকাল ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা পুলিশ। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অতিরিক্ত পুলিশ (প্রশাসন ও অপরাধ) জামাল পাশা। তিনি বলেন, অর্থ পাচারের একটি মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর। তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ঢাকায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে সোমবার মধ্যরাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মধুপুরে ইকোট্যুরিজমের নামে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জমি দখলের অভিযোগ

১০ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের কৃষিজমিতে জোর করে লেক খনন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ছাত্র ও যুব সংগঠনের একটি জোট।

আদিবাসী ছাত্র-যুব সংগঠনসমূহ নামের এই জোটের ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। জোট বলেছে, বন বিভাগ ইকোট্যুরিজম উন্নয়নের নামে এ কাজ করছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি চিরান। তিনি বলেন, সম্প্রতি বন বিভাগ বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ‘সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুড’ বা সুফল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তা ছাড়া ‘মধুপুর জাতীয় উদ্যানের ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’র আওতায় বন বিভাগ স্থানীয় মানুষের ভূমিতে সীমানাপ্রাচীরসহ আরবোরেটাম বাগান, দ্বিতল গেস্টহাউস, ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করছে। মধুপুরের ১১ নম্বর শোলাকুড়ি ইউনিয়নের পীরগাছা মৌজার আমতলীর নিচু জমিতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে তিন ফসলি জমিতে বন বিভাগ কৃত্রিম লেক খনন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এসব কর্মকাণ্ড ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের জীবনজীবিকার ওপর মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে ও ব্যাহত করবে তাদের কৃষিকেন্দ্রিক অর্থনীতি। এ ছাড়া এতে প্রস্তাবিত লেকের পাশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবসহ মধুপুর বনের অবশিষ্ট প্রাকৃতিক বনে স্থায়ী প্রভাব পড়বে।

শাহজালাল সার কারখানায় কেনাকাটা

নাট-বল্টুর কেজি কোটি টাকা

২০ মার্চ ২০২২, আজকের পত্রিকা

কারখানার জন্য নাট-বল্টু আনা হয়েছে আমেরিকা থেকে। সেই নাট-বল্টু আবার সরবরাহ করেছে মালয়েশিয়ান কোম্পানি। দাম কত জানেন? লোহা বা স্টিলের এক কেজি নাটের দাম ১ কোটি টাকা। বল্টুর দাম তার অর্ধেক, প্রতি কেজি ৫০ লাখ টাকা। কেনাকাটার এই মচ্ছব হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিলেটের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (এসএফসিএল)।

এই তালিকায় আরও আছে এক্সপেন্ডার হুইল। রাবার ও লোহায় তৈরি ছোট আকারের এই ঘূর্ণমান চাকার কেজি পড়েছে ১ কোটি টাকার বেশি। আধা কেজি ওজনের একটি লোহার স্প্রিংয়ের দাম ১৬ লাখ টাকা। এ রকম অস্বাভাবিক দাম দিতে গিয়ে ২৪৩ কেজি ওজনের এই চালানের খরচ পড়েছে সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস নেওয়া হয়।

ভাইবোন, শ্যালকের সঙ্গে গৃহকর্মীকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিয়েছেন ভিসি

২০ মার্চ ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শ্যালক, দুই ভাই, স্ত্রীর ফুফাতো ভাইসহ বেশ কয়েকজন স্বজনকে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় এসব নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত সভার কোনও রেজল্যুশন করা হয়নি।

এমপি হয়েই হঠাৎ ধনী

২৩ মার্চ ২০২২, সমকাল

২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বরের হিসাবে তার বার্ষিক আয় ছিল পৌনে তিন লাখ টাকা। সম্পদ ছিল ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার। ব্যাংকে ঋণ ছিল প্রায় ১৩ লাখ টাকা। পাঁচ বছরের মধ্যেই যেন জাদুর চেরাগে বদলে যায় তার সবকিছু। আয় বাড়ে ১৪ গুণের বেশি। সাত বছরে বেড়েছে প্রায় ১৯ গুণ। পাঁচ বছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা বেড়ে যায় সাড়ে ১২ গুণ। সাত বছরে তা ১৭ গুণ। সঙ্গে যুক্ত হয় অর্ধকোটি টাকা দামের গাড়ি, ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট ও প্লট। ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বরের এ হিসাবে সব ঋণও হয়ে যায় তার পরিশোধ।

ধনসম্পদে হঠাৎ ফুলে-ফেঁপে ওঠা এই ব্যক্তির নাম আয়েন উদ্দিন। তিনি রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের মনোনীত এবং এখন তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। হিসাবের তথ্যগুলো তার নিজেরই দেওয়া। এর দুই বছরের মধ্যে তার আয় বাড়ে আরও দেড় গুণ। সম্পদ বাড়ে আরও সাড়ে চার গুণ। এর বাইরেও বিপুল সম্পদ রয়েছে তার। পাশাপাশি স্ত্রীও হয়েছেন বিপুল বিত্তের অধিকারী।

টিসিবির কার্ড বিতরণ

বিনা মূল্যের কার্ডে টাকা আদায়

২৩ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নে টিসিবির পণ্যের কার্ড দেওয়ার সময় ২০০-২৫০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যরা (মেম্বার) অবৈধভাবে নিম্ন আয়ের লোকজনের কাছ থেকে ওই টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামে দুই হাজার লিটার তেলসহ টিসিবির পণ্য জব্দ

২৩ মার্চ, ২০২২, কালের কন্ঠ

চট্টগ্রাম নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং কাঁচাবাজার এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার এক ডিলারের গুদামে অভিযান চালিয়ে দুই হাজার লিটার ভোজ্য তেলসহ টিসিবির নির্ধারিত তিনটি ভোগ্যপণ্য জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব ওই ডিলারসহ ১১ জনকে আটক করেছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, চড়া দামে বিক্রি করতে টিসিবির পণ্য মজুদ করছে একটি চক্র। পণ্য মজুদের এমন তথ্য পেয়ে গত সোমবার রাত থেকে অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

ধান বাঁচানোর পানি না পেয়ে কৃষকের বিষপান

২৪ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দুই কৃষক বিষপান করেছেন। এর মধ্যে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। অপরজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। কৃষক দুজন সম্পর্কে চাচাতো ভাই। তাঁদের পরিবারের দাবি, ১০–১২ দিন অপেক্ষার পরও ধানের জমিতে পানি নিতে না পারার ক্ষোভ থেকে তাঁরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

 তবে জমিতে পানি না পেয়ে তাঁদের বিষপানের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদের ভাষ্য, তাঁরা দুই কৃষকের বিষপানের কথা শুনেছেন। পানির অভাবে তাঁদের জমির ধান মারা যায়নি। সেই শোকে তাঁরা বিষপান করেছেন—এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এখন পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে অপারেটরের কোনো অনিয়ম থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁদপুরে খাসজমিতে ‘টিপুনগর’

২৫ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

বিপুল পরিমাণ খাসজমি নিজের কবজায় নিয়ে তৈরি করেছেন মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার ও সবজিবাগান। কেবল সরকারি জমির ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেননি, ওই এলাকার নাম বদলে রেখেছেন নিজের নামে।

এই ব্যক্তির নাম জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ওরফে টিপু। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বড় ভাই তিনি।

শিক্ষামন্ত্রীর সংসদীয় আসন চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর)। জাওয়াদুর রহিম সরকারি যে জায়গা কবজায় নিয়ে ঘের-খামার করেছেন, সেটি হাইমচর উপজেলার ৪ নম্বর নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরে পড়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, এই খাসজমি প্রতি শতাংশ দলিল করা হয়েছে মাত্র ৪৬৫ টাকা দরে। মোট ৪৮ দশমিক ৫২ একর (৪ হাজার ৮৫২ শতাংশ) জমি জাওয়াদুর ও তাঁর সহযোগীদের নামে দলিল করে নেওয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারীরাও পাচ্ছেন টিসিবির পণ্য!

২৪ মার্চ ২২, সমকাল

রমজান উপলক্ষে যশোরের মনিরামপুরের খেদাপাড়া ইউনিয়নে কার্ডধারীদের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয় গত বুধবার। তবে ওই ইউপিতে এক হাজার ৩৫৩ কার্ডধারীর মধ্যে ১৭০ জন কোনো পণ্য পাননি। কারণ, তারা কার্ডই পেয়েছেন পরদিন বৃহস্পতিবার।

এছাড়া কুলটিয়া ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের বদলে সচ্ছলদেরও কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ঘেরের মালিক, সরকারি কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা। উপজেলার দুই ইউপিতে টিসিবির পণ্য বিতরণে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

রাজারবাগ দরবার শরিফ: জমি ৩১ জেলায়, গাড়ি ৫৬টি

২৫ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

ঢাকার রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর নামে পরিচিত দিল্লুর রহমানের মালিকানায় দেশের ৩১ জেলায় প্রায় ৫৫ বিঘা জমির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সম্প্রতি হাইকোর্টে জমা দেওয়া দুদকের একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। রাজারবাগ দরবার শরিফ ও দিল্লুর রহমানের সম্পদ-দায় বিষয়ে তদন্ত করতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুদককে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দিয়েছে দুদক।

দুদকের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বান্দরবানের লামায় ৩০০ একর রাবারবাগান ৪০ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন দিল্লুর রহমান। এ ছাড়া তাঁর মালিকানায় ৫৬টি গাড়ি আছে।

ভোজ্যতেলে কারসাজি: রিফাইনারি ও ঢাকার পাইকার জড়িত

২৮ মার্চ ২০২২, যুগান্তর

রিফাইনারির গেটে গোপনে সয়াবিনের মূল্য বাড়ানো হয়। প্রচুর মজুত থাকার পরও দেশে তৈরি করা হয় কৃত্রিম সংকট। সরবরাহের ক্ষেত্রে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) এবং সাপ্লাই অর্ডারে (এসও) বাধার সৃষ্টি করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি থেকেই এসব করে আসছে রিফাইনারিগুলো। এর সঙ্গে পরে যুক্ত হয় পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের কিছু পাইকার। সরকারকে বেকায়দায় ফেলা এবং ক্রেতার পকেট কেটে বেশি মুনাফার জন্য রিফাইনারি ও পাইকারদের চক্রটি পরিকল্পিতভাবে কাজটি করে। মূলত এদের কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গত সপ্তাহে তারা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।

এফবিসিসিআইয়ের সভা

চাঁদাবাজি কমলে দামও কমবে

০৩ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

সড়ক-মহাসড়কে পুলিশ ও কাঁচাবাজারে প্রভাবশালীদের ‘গুপ্ত’ চাঁদাবাজিকে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, সড়ক ও মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি হচ্ছে। বিষয়টি অনেকটা সরকারিভাবে টোল সংগ্রহের মতো হয়ে গেছে। চাঁদাবাজি কমলে নিত্যপণ্যের দামও কমবে।

নিত্যপণ্যের মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় গতকাল শনিবার এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) ঢাকার মতিঝিলে নিজেদের কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করে।

চাঁদা আদায় এখন মাসিক চুক্তিতে, দেওয়া হয় কার্ড

০৭ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া বাজার থেকে সবজির ট্রাকে উঠে বসলাম গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায়। ঢাকায় পৌঁছালাম গতকাল বুধবার সকাল ছয়টায়। প্রায় আড়াই শ কিলোমিটারের এই যাত্রায় সবজির ট্রাকটিকে কোথাও পুলিশ থামায়নি। একটি টাকাও নেয়নি। অথচ সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা নেওয়ার জোরালো অভিযোগ শোনা যায়।

ট্রাকটির চালক জানালেন, সড়কে নয়, এখন চাঁদা নেওয়া হয় মাসিক চুক্তিতে। দুই হাজার টাকা পরিশোধ করলে একটি কার্ড পাওয়া যায়। সেই কার্ড দেখালেই পুলিশ ট্রাক ছেড়ে দেয়। কার্ড না থাকলে গাড়ির নথিপত্র ঠিক থাকলেও অনেক সময় হয়রানির মুখে পড়তে হয়। চাঁদার কার্ডটিও দেখিয়েছেন এই চালক। তিনি বলেছেন, সারা দেশে ৩১০টি জায়গায় (স্পট) এই কার্ড দেখালে কাজ হয়। অবশ্য তারপরও চা পানের কথা বলে পুলিশের কোনো কোনো সদস্য মাঝেমধ্যে কিছু টাকা নেন।.. ..

চালক বললেন, মেসার্স সাতক্ষীরা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিই মূলত পুলিশের মধ্যস্থতাকারী। তারা পুলিশের সঙ্গে চুক্তি করে মাসিক এই কার্ডের ব্যবস্থা করে। কোন কোন জায়গায় এই কার্ড দেখালে পুলিশ কোনো ঝামেলা করবে না, তার তালিকা বের করে দেখান চালক। সেখানে দেখা যায়, সারা দেশে ৩১০টি জায়গার নাম রয়েছে। জায়গা বলতে মূলত পুলিশের থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ বক্স ও মোড়ের নাম।

ট্রাকটির চালকের দাবি, পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য ট্রাকের মালিকেরা কেন্দ্রীয়ভাবে চাঁদা হিসেবে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে দেন। পরিশোধ করা হয় মুঠোফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে। প্রতিটি ট্রাকের বিপরীতে টাকা দিতে হয়। টাকা জমা হলেই নতুন কার্ড চলে আসে। প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যেই এই চাঁদার টাকা জমা দিতে হয়। কার্ডে যোগাযোগের নম্বরটি প্রতি মাসেই বদলে যায়। ফলে কেউ যদি চাঁদা না দেন, তারপর পুলিশের হাতে পড়েন, তাহলে আর যোগাযোগ করতে পারেন না। কারণ, তাঁর কাছে থাকা কার্ডের পুরোনো নম্বর বন্ধ হয়ে যায়।

মধুপুর বনে লেক খননের কাজ প্রতিহত করার ঘোষণা গারোদের

২৫ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গারোদের জমিতে লেক খনন প্রকল্পের কাজ প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার ‘সম্মিলিত আদিবাসী জনতা’র ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতারা এ ঘোষণা দেন। তাঁরা বন বিভাগের লেক খনন প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান।.. ..

সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই দোখলা চৌরাস্তা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশও সেখানে অবস্থান নেয়। সমাবেশ চলাকালে মধুপুর থেকে উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শতাধিক নেতা-কর্মী মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। তাঁরা ওই এলাকায় কয়েক দফা মহড়াও দেন।

প্রসঙ্গত, বনাঞ্চলের দোখলা ও চুনিয়া গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় আমতলী বাইদ নামক স্থানে ৪৫ বিঘা জমি আছে। এ জমি ১৩ জন গারো জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বংশপরম্পরায় চাষাবাদ করছেন। ওই বাইদ এলাকার চার একর জমির মধ্যে লেক খননের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। কিন্তু ওই জমির মালিকেরা সেখানে লেক খনন করতে সম্মত হননি। এ নিয়ে বন বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জমির মালিকদের কয়েক দফা বৈঠকও হয়।

গত শুক্রবার বন বিভাগের দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মীরা ওই জমিতে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ, উন্নয়নমূলক কাজ চলমান, আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ’। এই সাইনবোর্ড দেখার পর স্থানীয় গারো জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। গত শনিবার রাতে কে বা কারা ওই সাইনবোর্ডটি ভেঙে ফেলে। এ ঘটনায় বন বিভাগের দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে রোববার বিকেলে মধুপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে কয়েকজন আন্দোলনকারীকে অভিযুক্ত করা হয়।

পরিবেশ

ছয় বছরে ৩৮ দিন ভালো বায়ু পেয়েছে রাজধানীবাসী

২৭ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন সময় ভালো বায়ু গ্রহণ করতে পেরেছে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ সময়। এর মধ্যে ৫১০ দিন চলনসই মানের বায়ু, ৫৭৭ দিন সংবেদনশীল, ৪৪৩ দিন অস্বাস্থ্যকর, ৩৮৫ দিন খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩৭ দিন দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করে।

 তথ্যগুলো রাজধানীর বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় উঠে এসেছে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মজুমদার। কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল এই পাঁচ বছরের থেকেও ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৭ শতাংশ। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সূচক ২১৯.৫৯ এসে দাঁড়িয়েছে, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর।

সেতু নির্মাণের আগেই বাঁধ দিয়ে ‘নদী হত্যা’

৩০ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

নদীর ওপর নির্মিত পুরোনো সেতুটি ভেঙে নির্মাণ করা হবে নতুন সেতু। লোকজন ও যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর কাছেই নদীতে বাঁধ দিয়ে বানানো হচ্ছে অস্থায়ী রাস্তা। বাঁধ নির্মাণের জন্য নদীতে কাঠের গুঁড়ি ও বাঁশ পোঁতা হয়ে গেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে নদী দিয়ে ভবদহ অঞ্চলে পানিনিষ্কাশন।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়ন ও মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের সীমানাঘেঁষে টেকা নদীতে এমন অস্থায়ী রাস্তা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অবশ্য অভিযোগ ওঠার পর বাঁধ ও অস্থায়ী রাস্তা তৈরির কাজ আপাতত বন্ধ আছে। নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

মনিরামপুরের এলজিইডি সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় টেকা নদীর ওপর পুরোনো সেতুটি ভেঙে সেই জায়গায় নতুন একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ৭ কোটি ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০৭ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি পেয়েছে যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড শামীম চাকলাদার (জেভি)। গত বছরের ১৩ অক্টোবর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নদীটির পূর্ব পাশে অভয়নগরের বারান্দী গ্রাম এবং পশ্চিম পাশে মনিরামপুরের পাঁচাকড়ি গ্রাম। নদীর ওপরের টেকা সেতুটি জরাজীর্ণ। সেতু থেকে প্রায় ২৫০ ফুট উত্তরে নদীর মধ্যে আড়াআড়িভাবে কাঠের গুঁড়ি ও বাঁশ পুঁতে দুই স্তরের স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। কাঠের গুঁড়ি ও বাঁশের দুই স্তরের স্থাপনা পেরেক ও লোহার চিকন তার দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। স্থাপনাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ ফুট। দুই পাশে ওই স্থাপনা লোহার মোটা তার দিয়ে বাঁধা হয়েছে। মাঝখানে প্রায় ২০ ফুট জায়গা ফাঁকা। সেই ফাঁকা জায়গায় বালু ফেলে ভরাট করে অস্থায়ী রাস্তা নির্মাণ করা হবে। অবশ্য তার আগেই নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

দেশের লবণে প্লাস্টিকের উদ্বেগজনক উপস্থিতি

০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা

লবণ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কয়েক বছর ধরেই দেশে বছরে ১৬-১৯ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়। যার সিংহভাগই আসে সমুদ্র উপকূলের জমি থেকে। তবে বাংলাদেশে উৎপাদিত লবণে পাওয়া গেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, এ লবণের প্রতি কেজিতে গড়ে প্রায় ২ হাজার ৬৭৬টি মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। সেখানে বলা হয়, দেশের মানুষ যে হারে লবণ গ্রহণ করে তাতে প্রতি বছর একজন মানুষ গড়ে প্রায় ১৩ হাজার ৮৮টি মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে। ফলে এ বিপুল পরিমাণ লবণের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

‘প্রোলিফারেশন অব মাইক্রোপ্লাস্টিক ইন কমার্শিয়াল সি সল্টস ফ্রম দি ওয়ার্ল্ড লংগেস সি বিচ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। এ গবেষণায় দেশে বাণিজ্যিকভাবে বিপণন হয় এমন ১৩টি ব্র্যান্ডের লবণের বিভিন্ন পরিমাণ নিয়ে পরীক্ষাগারে যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ১০টি হলো দেশের স্বনামধন্য কোম্পানির ও তিনটি স্থানীয় পর্যায়ের রিফাইনারির। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণা শেষে দেখা যায়, দেশের উৎপাদিত লবণে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি এত বেশি যে, বাছাইকৃত দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দেশ বাংলাদেশ। গড়ে প্রতি কেজি লবণে ২ হাজার ৬৭৬ মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেলেও বেশকিছু লবণে এর চেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে।

কৃষকের গলার কাঁটা ২১৭ স্লুইসগেট

১২ মার্চ ২২, সমকাল

শুস্ক মৌসুমে নদী ও খালের পানি কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য চালু হয় ‘বাংলাদেশ ইরিগেশন প্রজেক্ট’ (বিআইপি) প্রকল্প। কিন্তু এটি কাজে না আসায় ঝালকাঠিতে ব্যাপক সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার দুটি উপজেলায় এ প্রকল্পের মোট ২১৭টি স্লুইসগেট অকেজো। আশির দশকে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও এখন তা দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। স্লুইসগেটগুলো এখন কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসবে বাধা পেয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ কমে যাচ্ছে। ফলে পলি জমে খালগুলো সরু হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।

কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক টাকা খরচ করে বিকল্প উপায়ে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে তাদের। স্লুইসগেটগুলো অকেজো থাকায় জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ঝালকাঠি সদরে সুগন্ধা ও বাসন্ডা নদীর মাধ্যমে ছোট ছোট খালে পানি প্রবাহিত হয়। স্লুইসগেটগুলো অকেজো থাকায় পানি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। খালে পলি জমায় নাব্য হারিয়ে যাচ্ছে। দেখা গেছে, এসব গেটের অধিকাংশের দরজা ভাঙা ও রেগুলেটর নেই। প্রয়োজনের সময় গেট খোলা বা বন্ধ করা যায় না। পানি সরানোর দরকার হলেও তা সরে না।

বিশ্বে ‘সবচেয়ে দূষিত’ বাংলাদেশের বাতাস

২২ মার্চ ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বিশ্বের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুমানের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে একটি দেশও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে পারেনি; আর দূষণের মাত্রার বিচারে সবার উপরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

কোথায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ভাসমান ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) পরিমাণ কত মাইক্রোগ্রাম (পিএম২.৫), তার ভিত্তিতে এই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সুইস সংস্থা আইকিউ এয়ার, যারা বায়ুদূষণ এবং বায়ু পরিশোধন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে।

শালবনে নানা সময় আগুন ধরায় ‘দুষ্কৃতকারীরা’, কারণ জানে না বন বিভাগ

২২ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

গাজীপুরে ভাওয়াল গড়ের শালবনে নানা সময় লাগা আগুনের জন্য ‘মাদকসেবী’ ও ‘দুষ্কৃতকারীদের’ দায়ী করেছেন রাজেন্দ্রপুর বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামান মোল্লা। তবে তারা কেন এমনটা করে, তার কারণ তিনি জানেন না বলে জানালেন। তবে স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা মনে করেন, বন দখলের জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর দোষীদের শনাক্ত করতে এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিতে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। ফলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর-কাপাসিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে নয়নপুর এলাকার বনে গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে আগুন লাগে। রাত দুইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় আগুন নেভানোর ব্যাপারে বন বিভাগের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

বিশ্বে শব্দ দূষণে শীর্ষে ঢাকা, ৪র্থ রাজশাহী: জাতিসংঘ

২৭ মার্চ, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

শব্দ দূষনে বিশ্বের শীর্ষ শহর এখন ঢাকা। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনএপি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২: নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, শব্দ দূষণের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান প্রথম।

দ্বিতীয় স্থানে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদ এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ।

তালিকার শীর্ষ ৫ শহরের মধ্যে রাজশাহী চতুর্থ এবং ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি পঞ্চম।

বায়ুদূষণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

০২ এপ্রিল, ২০২২, বণিক বার্তা

জাপানি অর্থায়নে বিশ্বের সাতটি দেশে নির্মাণ হচ্ছে ১৯টি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর অন্যতম কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে নির্মীয়মাণ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহূত হবে। এতে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশের দূষণও কম হবে বলা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাপানের অর্থায়নে নির্মীয়মাণল বা চালু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্বন নির্গমনের হার হবে অন্যতম শীর্ষ। এক্ষেত্রে শুধু ভিয়েতনামের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের চেয়ে।

আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন পিসের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বের সাতটি দেশে জাপানের অর্থায়নে মোট ১৯টি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে কয়লা পোড়ানোর ফলে দূষণকারী গ্যাস ও বস্তুকণা থেকে যেসব পদার্থ নির্গত হবে সে তালিকায় বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক প্রকল্পটি তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

মূলত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হলে মোটা দাগে তিন ধরনের দূষণ তৈরি হয়। এর মধ্যে নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড ও ডাস্ট বা ধূলিকণা, যা অন্য দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে মাতারবাড়ীতে অনেক বেশি থাকবে বলে আভাস দেয়া হয়েছে।

হাওরে কৃষকের হাহাকার

প্রথম আলো, ৮ এপ্রিল, ২০২২

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা শহরের পূর্ব দিকে বয়ে গেছে বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের প্রিয় নদী কালনী। এই নদীতীরেই আবদুল করিমের বাড়ি। পাহাড়ি ঢলের পানিতে গত বুধবার কালনী কানায় কানায় ভরা ছিল। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মানুষ ঘুম থেকে জেগে দেখে, নদীর পানি কমে গেছে দুই থেকে তিন ফুট। এত পানি গেল কোথায়? বাতাসের আগে খবর ছড়িয়ে পড়ে, এলাকার চাপতির হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। নদীর পানি ঢুকেছে হাওরের পেটে। তলিয়ে গেছে হাওরের সব বোরো ধান।

এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক গতকাল সুনামগঞ্জে হাওর পরিদর্শনে আসেন। তিনি ধর্মপাশার ভেঙে যাওয়া চন্দ্রসোনার থাল হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, হাওরে বাঁধ নির্মাণে কারও অনিয়ম বা গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল দুপুরে দিরাইয়ের চাপতির হাওরের তাজপুর ও কচুয়া গ্রামের পাশে গিয়ে দেখা যায়, হাওরে ঢলের পানি থই থই করছে। চৈত্রের কাঠফাটা রোদে মানুষ কাঁচা ধান কাটছেন। ছোট ছোট নৌকার করে সেগুলো আনছেন পাড়ে। নারী-শিশুরা সেই কাঁচা ধান তুলছে বাড়িতে। কচুয়া গ্রামের বাড়িঘর থেকে পা ফেললেই হাওর শুরু। হাওর থেকে ফেরা সঞ্জয় দাস (৬৩) ক্লান্ত শরীরে উঠানের এক কোণে একটি গাছের ছায়ায় বসেছিলেন। এই ধান কী করবেন জানতে চাইলে গামছা দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে সঞ্জয় বলেন, ‘হাওর ডুবায় আমরা তো নিঃস্ব অইগিলাম, আর তো আর কোনতা রইল না। ধান নাই, খড়ও নাই। এখন ঘরের গরুর কিতা অই? এর লাগি কাঁচা ধান কাইট্যা আনছি। এসব তো মানুষে খাওয়ার উপযুক্ত অইছে না।’

চাপতির হাওরে দিরাই উপজেলার জগদল, করিমপুর ও তাড়ল ইউনিয়নের ৪৬টি গ্রামের মানুষের ফসলি জমি রয়েছে। আর সপ্তাহখানেক সময় পেলেই মানুষ ধান কাটা শুরু করতে পারতেন। কিন্তু এখন সেই ধান চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে।

কচুয়া গ্রামের মাঝহাটিতে হাওরপারের খলায় মনমরা হয়ে বসে ছিলেন আবুল হোসেন (৫০)। তাঁর বাড়ির পাশের গ্রাম তাজপুরে। জমি চাষ করার সুবিধার্থে কার্তিক মাসে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসে এখানে টিন দিয়ে অস্থায়ী একটি ঘর করে থাকছেন। ফসল নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এখন হাওরের দিকে তাকিয়ে কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।

আবুল হোসেন জানান, হাওরে চুক্তিতে অন্যের ১২ একর জমি আবাদ করেছিলেন। তাঁর পাঁচ ছেলেকে নিয়ে কাজ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ধারদেনা করে আনা এই টাকা ফসল তোলার পর শোধ করার কথা। কান্নার দমকে কথা আটকে আসে এই কৃষকের। বলেন, ‘এখন খাইতাম কিলা? কিলা একটা বছর চলতাম, এই চিন্তায় আছি।’

হাওরপারেই কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন চণ্ডীপুর গ্রামের কৃষক আফাজ মিয়া (৪০)। তাঁর সব ক্ষোভ বাঁধ নিয়ে। জানালেন, বাঁধের কাজ সময়মতো হলে এভাবে এই হাওর ডুবত না। বাঁধের কাজের মান, তদারকিতে ঘাটতি ছিল। কেউই খোঁজ নেয়নি। আফাজ মিয়া বলেন, ‘বাঁধ দিছে আওয়ামী লীগের লোকজন, এর লাগি কেউ কোনো কথা খইতে সাহস পাইছে না।’

এক সপ্তাহ ধরে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢল নামছে। এতে অস্বাভাবিকভাবে সুনামগঞ্জ জেলার নদ-নদী ও হাওরের পানি বাড়ছে। ঝুঁকিতে পড়েছে জেলার সব হাওরের ফসল। একে পর পর এক হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। মানুষজন দিনরাত বাঁধে অবস্থান করে স্বেচ্ছাশ্রামে কাজ করছেন। গত শনিবার প্রথমে বাঁধ ভেঙে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটে চাপতির হাওরে।

হাওরে আর সড়ক নয়, মন্ত্রিসভায় নির্দেশনা

১৮ এপ্রিল ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

পানির প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য হাওর এলাকায় নতুন করে আর কোনো সড়ক নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার দপ্তরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান।

বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে এসে তিনি বলেন, “আজ ক্লিয়ার ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, হাওর এলাকাতে কোনো রকমের রাস্তাঘাট এখন থেকে আর করা যাবে না। এখন থেকে এলিভেটেড করতে হবে, যদি কিছু হয়; যাতে করে পানি চলাচলে বাধা না আসে।

কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওরের বুকে ইটনা থেকে মিঠামইন হয়ে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক চালু হয় ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর। হাওরের বিশাল জলরাশির মাঝখানে সড়কটি এখন আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে হাওরবাসীর চলাচলও সহজ হয়েছে।

কিন্তু এ সড়কের কারণে বর্ষায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এখন ওই সড়কে সেতুর সংখ্যা বাড়িয়ে পানি প্রবাহ বাড়ানো যায় কি না, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, “পারটিকুলারলি এটা দেখতে বলা হয়েছে, সিলেটের (অঞ্চল) পানিটা মূলত নামে অষ্টগ্রামের দিক দিয়ে। এখানে যে রাস্তাটা করা হয়েছে মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম, সেটাতে কোনো এফেক্ট হল কি না- এটাও দেখতে বলা হয়েছে।”

বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল সুনামগঞ্জের আরেকটি হাওরের ধান

১৮ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে আরও একটি হাওরের জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। রোববার রাতে উপজেলার জগদল ইউনিয়নের হুরামন্দিরা হাওরের বাঁধটি ভেঙে যায়।

ওই হাওরে পার্শ্ববর্তী বাড়ইল ও টংগর গ্রামের কৃষকদের জমি রয়েছে। স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, হুরামন্দিরা হাওরে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিল। প্রায় অর্ধেক ধান কেটে ঘরে তোলা হয়েছে। বাকি অর্ধেক ধান বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, হুরামন্দিরা হাওরে এক হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৮০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। ঢলের পানিতে ক্ষতি হয়েছে ২০০ হেক্টর জমির ধানের।

হাওরে শতকোটি টাকার বোরোর ক্ষতি

১৯ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জে একের পর এক বাঁধ ভেঙে ও উপচে হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ রোববার রাতে দিরাই উপজেলায় বাঁধ ভেঙে হুরামন্দিরা হাওরে পানি ঢোকে। এর আগে ওই দিন বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। হবিগঞ্জের কয়েকটি হাওরেও ঢলের পানিতে ফসলহানি হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় হাওরগুলোর আধা পাকা ধানই কেটে নিচ্ছেন কৃষকেরা।

এটা কৃষি বিভাগের মনগড়া হিসাব। হাওর থেকে গরুকে খাওয়ানোর কিছু ধান ছাড়া আর কোনো ধানই কাটা যায়নি। সব ধান কাঁচা ছিল

চণ্ডীপুর গ্রামের কৃষক আবুল খয়ের

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি বিভাগ গতকাল সোমবার বলেছে, জেলায় এ পর্যন্ত ছোট–বড় ১৭টি হাওর ও বিলের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৫১০ হেক্টর। অন্যদিকে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, গত দুই দিনে উজানের পানি কালনী ও মেঘনা নদী হয়ে উপজেলার হাওরগুলোতে ঢুকেছে। এতে লাখাই সদর, বামৈ ও বুল্লা ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ হেক্টরের ধান তলিয়ে গেছে।

কৃষি বিভাগের হিসাবে, ১ হেক্টর জমিতে ধান হয় ৬ মেট্রিক টন। ১ কেজি ধানের দাম ২৭ টাকা ধরে ৬ মেট্রিক টন (৬ হাজার কেজি) ধানের দাম হয় ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সে অনুযায়ী সুনামগঞ্জে ৮৯ কোটি ২৬ লাখ ২০ হাজার টাকার ধানের ক্ষতি হয়েছে। হবিগঞ্জে ৫০০ হেক্টর ধরলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৯৭ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার টাকার বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে।

তবে এ হিসাব মানতে নারাজ স্থানীয় কৃষক ও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা। তাঁরা বলছেন, গতকাল পর্যন্ত হাওরে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো বিভিন্ন হাওরে পানি ঢুকছে। তাই ক্ষতি আরও বাড়বে।

নদী-প্যারাবনের মালিক ১৫৭ প্রভাবশালী

১৯ এপ্রিল ২২, সমকাল

ছোট ছোট প্লট, ছোট ছোট ঘর। চোখ আটকে যাবে সবুজের ভেতর লাল ইটের দেয়ালে। প্লটের সামনে ঝুলছে কারও কারও সাইনবোর্ড। পুরোনো চেনা ছবি এখন আর নেই। দখলবাজদের দাপটে এখন এপাশে বাঁকখালী নদী, অন্যপাশে প্যারাবন। ৬০০ হেক্টর প্যারাবনে দখলদারদের থাবা। বনের ভেতরে শুকিয়ে যাওয়া নদীর সাত কিলোমিটারজুড়ে পোলট্রি খামার, দোকানপাট, চাল-ময়দার মিল আর ঘরবাড়ি। দখলদারদের কেউ কেউ নদী-প্যারাবনের জমি নিজের বলে চালিয়ে বেচাকেনা চালাচ্ছেন দেদার। ইচ্ছা হলেই কেনা যায় নদী ও বনের বুকে প্লট। প্রতি প্লটের দাম পড়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ। সরকারি জমি বেচে দিয়ে কোটি কোটি টাকা পকেটে পুরে ফুলেফেঁপে উঠছে দখলবাজরা।

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর আরও ৯ কিলোমিটার গভীরে চলছে দখলের আয়োজন। নদী আর বনে দিন দিন বাড়ছে দখলি স্থাপনা। দখলবাজদের তালিকায় উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতা, পৌর মেয়রসহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির নামও। খোদ পৌর কর্তৃপক্ষ আবর্জনার ভাগাড় বানিয়েছে নদীকে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা এবং হাইকোর্টের নির্দেশনায়ও ঠেকানো যাচ্ছে না নদী ও বনের মরণ। দখলবাজদের চোখ রাঙানিতে যেন বাকরুদ্ধ বাঁকখালী, নির্বাক প্যারাবন।

হাওর ডুবছে দুর্নীতিতে

১৯ এপ্রিল ২২, সমকাল

সম্প্রতি হাওরাঞ্চলের বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল। ফসল রক্ষায় টানা ১৫ দিন পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেছে প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও হাওরপাড়ের কৃষকরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কপাল পুড়েছে কৃষকদের। অভিযোগ রয়েছে- হাওর অঞ্চলের বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। আর এতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক প্রভাবশালীরা জড়িত রয়েছেন। ফলে বাঁধ সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকার অপচয় ও লুটপাট হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের একাধিক মন্ত্রী হাওর এলাকা পরির্দশন করেছেন। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক গত শনিবার এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এর আগে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম হাওর এলাকা পরিদর্শনে যান। তাদের সামনে এলাকাবাসী বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি চিত্র তুলে ধরেছেন। মন্ত্রীরা অনিয়মের কথা প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করবেন বলে স্থানীয় কৃষকদের আশ্বস্ত করেছেন। অন্যদিকে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সরেজমিন কাজ করছে। চলতি সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা হতে পারে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বর্ধিত গুরমার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে দুই হাজার হেক্টর জমির ধান। সেখানে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। রোববার সকাল থেকে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর-সংলগ্ন কান্দা উপচে পানি হাওরে প্রবেশ করে। পরে বিকেলে হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় ছোট-বড় কয়েকটি হাওরের পাকা ও আধাপাকা ধান। এ ছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে আরও কয়েকটি হাওরের বাঁধ।

ওয়াসার নথিও বলছে, পানির তীব্র সংকট, দুর্গন্ধযুক্ত

২০ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা কিছুদিন ধরে পানিসংকটের কথা জানাচ্ছেন। ঢাকা ওয়াসার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ, এমন অভিযোগ করছেন গ্রাহকেরা। এবার ঢাকা ওয়াসার নথিতেও পানিসংকট ও দুর্গন্ধের বিষয়টি উঠে এসেছে। ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, রাজস্ব জোন-৪ (মিরপুর-আগারগাঁও) অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানিসংকট চলছে। পানি এলেও তা দুর্গন্ধযুক্ত।

 ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব জোন-৪-এর রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সামছুল ইসলাম খান পানির সংকট রয়েছে, এমন এলাকার একটি তালিকা করে চিঠি দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলীকে। ১১ এপ্রিল দেওয়া চিঠির কপি অফিসে গ্রহণ করেছে ১৩ এপ্রিল। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে।

রমজান মাসে পানির এমন কষ্ট মানা যায় না। ওয়াসা অফিসে জানালেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। বাড়ির ভাড়াটেরা বাসা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন।

উত্তর পীরেরবাগ এলাকার বাসিন্দা সিরাজ-উদ-দৌলা

চিঠিতে বলা হয়, রাজস্ব জোন-৪-এর আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকেরা তীব্র পানির সংকটে ভুগছেন। দৈনন্দিন কাজকর্ম সারতে তাঁদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রাহকেরা রাজস্ব পরিদর্শক বা বিলিং সহকারীদের কাছে প্রতিনিয়ত পানিসংকটের অভিযোগ করছেন। চিঠিতে রাজস্ব আদায়ের কাজ গতিশীল রাখার স্বার্থে এলাকাগুলোর পানিসংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।

ওয়াসার চিঠির তথ্য অনুযায়ী, মিরপুর-আগারগাঁও অঞ্চলের যেসব এলাকায় পানিসংকট ও দুর্গন্ধ রয়েছে সেগুলো হলো দারুস সালাম, বড় বাড়ি রোড, মসজিদ রোড, কল্যাণপুর প্রাইমারি স্কুল রোড, কমিশনার রোড, উত্তর পীরেরবাগ বালুর মাঠ, মাদ্রাসা গলি, পশ্চিম মণিপুর ১ নম্বর বাসা থেকে ৭০ নম্বর বাসা, গাউছিয়া মসজিদ থেকে ৬০ ফিট সড়ক, পূর্ব মণিপুর, কাঁঠালতলা, পশ্চিম শেওড়াপাড়ার অংশবিশেষ, মিরপুর ১ নম্বরের এইচ ব্লকের ১ নম্বর রোডের ৪ থেকে ৮ নম্বর বাসা, এইচ ব্লকের ২ থেকে ১০ নম্বর রোড ও ১৫ থেকে ১৮ নম্বর রোড এবং মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ব্লক ট।

মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারীকে আটকে রেখে দেয়াল তুলছে পুলিশ

২৪ এপ্রিল ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকা কলাবাগানের তেঁতুল তলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারীদের নেতা সৈয়দা রত্না ও তার তরুণ ছেলেকে থানায় আটকে রেখে ওই মাঠে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে পুলিশ।

সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর কর্মী রত্নার নেতৃত্বে স্থানীয় একদল ওই মাঠটি রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। তবে পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই স্থানটি কলাবাগান থানার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও রত্না বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিলেন।

আবাসিক এলাকায় শিশুদের জন্য ওই মাঠটি রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন রত্না। পুলিশ এর আগে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয়দের বিশেষ করে নারীদের বিরোধিতার মুখে পড়ে। এরপর ওই মাঠ ঘিরে পুলিশ কাঁটাতারের বেড়া দিলেও রত্না তার বিরোধিতা করে যাচ্ছিলেন।

কলাবাগানের তেঁতুল তলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনের নেতৃত্বধানকারী সৈয়দা রত্না শাহবাগে এক কর্মসূচিতে।কলাবাগানের তেঁতুল তলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনের নেতৃত্বধানকারী সৈয়দা রত্না শাহবাগে এক কর্মসূচিতে।রোববার সকালে পুলিশ সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করলে রত্না তার ছেলে প্রিয়াংশুকে নিয়ে সেখানে যান। এরপর পুলিশ তাদের ধরে থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, থানা ভবনের জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসক অনুমতি দেওয়ার পর তারা কাজ শুরু করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় শেষে সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে জেলা প্রশাসককের মাধ্যমে এই স্থানটি থানা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ডিএমপির নিউ মার্কেট জোনের সরকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই জায়গাটি সকাল নিয়ম মেনে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। সৈয়দা রত্না সরকারি কাজে বাধা দেওয়া চেষ্টা করছে। তাকে আপাতত আটক করা হয়েছে।”

দৃষ্টিনন্দন অলওয়েদার সড়ক এখন হাওড়াঞ্চলের দুঃখ

২৩ এপ্রিল ২০২২, যুগান্তর

কিশোরগঞ্জের হাওড়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন অলওয়েদার সড়ক এখন এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের দুঃখ-কষ্টের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুমানগঞ্জে সাম্প্রতিক অকাল বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির জন্যও এ সড়কটিকে দায়ী করছেন হাওড়বাসী। তারা বলছেন, সড়কটি স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে উজানে (সুনামগঞ্জ) বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে কিশোরগঞ্জেও বন্যা ও ফসলহানির আশঙ্কা করছেন তারা। ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওড়ে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে অলওয়েদার সড়কের আধা মাইল পরপর সেতু নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলার মধ্যে সারা বছর চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে হাওড়ের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৭৪ দশমিক ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করে। ২০২০ সালের অক্টোবরে সড়কটি উদ্বোধন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এবং ভুক্তভোগী কৃষক জানায়, উপযুক্ত সংস্কার এবং খনন কাজের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে হাওড়াঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলো নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। তার ওপর অলওয়েদার সড়ক নতুন করে উন্মুক্ত পানি প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে এ জেলার উজানে অবস্থিত জেলাগুলো থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে পারছে না। ফলে ওইসব জেলার নিুাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। একইসঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলের ফসল ও ফসল রক্ষা বাঁধও। পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংগঠক জানান, বর্ষাকালে হাওড়াঞ্চলের বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত নিম্নাঞ্চল হয়ে ওঠে অবাধ পানি প্রবাহের উৎস। তখন নদীপথ এবং নিম্নাঞ্চলের পানি সরবরাহ পথ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখন সকল প্রকার নৌযানও বাধাহীনভাবে ইচ্ছামতো দিগ্বিদিক চলাচল করতে পারত। এটিই ছিল এ হাওড়াঞ্চলের শত বছরের ঐতিহ্য। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে সড়কপথ নির্মাণে সেই স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে ভাটিকন্যাখ্যাত এ হাওড়াঞ্চলের জীববৈচিত্র্যেও।

ঢাকার ৪১টি ওয়ার্ডে মাঠই নেই

২৭ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠে ‘উন্নয়নকাজ’ চলতে থাকায় প্রায় আট মাস ধরে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা। এই মাঠে এলাকার প্রবীণ লোকেরা সকালে-বিকেলে ব্যায়াম ও হাঁটাচলা করতেন। সেটিও এখন বন্ধ। এই মাঠের একাংশে পাঁচতলা বিপণিবিতান নির্মাণ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাঠটি উন্মুক্ত করা হচ্ছে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ধূপখোলা মাঠের ‘পরিণতি’ বরণ না করলেও খেলা হচ্ছে না উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শ্যামলী ক্লাব মাঠে। এখানে প্রায় এক মাস ধরে তাঁত ও বস্ত্রমেলা চলছে। মূলত ক্লাবের প্রশিক্ষণার্থী শিশু-কিশোরেরাই মাঠটি ব্যবহার করত। স্থানীয় লোকজন সকাল-বিকেলে হাঁটাচলার সুযোগ পেতেন। এখন সবই বন্ধ রয়েছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ওয়ার্ড রয়েছে ১২৯টি। এর মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। এই তথ্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। খেলার জন্য কোনো ধরনের মাঠ নেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০টি ওয়ার্ডে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩১টি ওয়ার্ড খেলার মাঠ শূন্য। অন্য ওয়ার্ডগুলোতে খেলার মাঠ থাকলেও সব মাঠ আবার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। কিছু মাঠ বেসরকারি ক্লাবের দখলে, কিছু মাঠ বন্ধ আছে উন্নয়নকাজ ও মেলার নামে। রাজধানীজুড়ে খেলার মাঠের সংকটের মধ্যেই কলাবাগান এলাকার তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণ করতে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে পুলিশ। এ নিয়ে স্থানীয় মানুষের আন্দোলন এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের তীব্র আপত্তির পরও পুলিশ তাদের অবস্থান থেকে এখনো সরে আসেনি।

নগর-পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, একটি আধুনিক শহরে প্রতি আধা বর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। সে হিসাবে ঢাকার দুই সিটিতে মাঠ দরকার অন্তত ৬১০টি। কিন্তু ঢাকার দুই সিটিতে খেলার মাঠ রয়েছে ২৫৬টি। এসব মাঠের আয়তন ২০৯ দশমিক ১২ একর। সাধারণত ওয়ার্ড পর্যায়ে একটি খেলার মাঠের আয়তন এক থেকে তিন একর পর্যন্ত হয়। কিন্তু ঢাকার দুই সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে অন্তত ২০টি মাঠ রয়েছে, যেগুলোর আয়তন এক একরের কম।

নগর-পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, আয়তন বাদ দিয়ে জনসংখ্যা বিবেচনায় নিলে ঢাকায় আরও বেশিসংখ্যক খেলার মাঠ প্রয়োজন। রাজধানীর জন্য করা ড্যাপের খসড়ায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে ১২ হাজার ৫০০ মানুষের জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ বাস করে। সে হিসাবে ঢাকায় মাঠ দরকার ১ হাজার ৪৬৬টি।.. ..

বেদখল মাঠ এখনো উদ্ধার হয়নি

ঢাকায় খেলার মাঠগুলোর বেশির ভাগই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওতাধীন। কিছু মাঠ আছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার আওতায়। নগর-পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ঢাকা শহরের খেলার মাঠ নিয়ে ২০১৯ সালে একটি গবেষণা করেছিল। ‘ঢাকা শহরে বিদ্যমান খেলার মাঠের ঘাটতি ও চাহিদা পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওই গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডে (দুই সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ড ছাড়া) সরকারি-বেসরকারি মিলে ২৩৫টি খেলার মাঠ আছে। এর বাইরে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬ ওয়ার্ডে ২১টি খেলার মাঠ রয়েছে।

বিআইপির গবেষণায় আসা ২৩৫টি মাঠের মধ্যে ১৪১টি রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিকানায়, কলোনির মাঠ আছে ২৪টি, ঈদগাহ মাঠ আছে ১২টি। ১৬টি সরকারি মাঠ বিভিন্নভাবে দখল হয়ে গেছে। এর বাইরে মাত্র ৪২টি মাঠ আছে, যেগুলো সবাই ব্যবহার করতে পারে।

বিআইপির গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় বিভিন্নভাবে দখল হয়ে যাওয়া খেলার মাঠের তালিকায় এক নম্বরে ছিল উত্তর সিটির আওতাধীন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামলী ক্লাব মাঠ। গতকাল মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে মাঠে মেলা চলছে, খেলাধুলা বন্ধ। ঈদ উপলক্ষে মাসব্যাপী এই মেলার আয়োজন করেছে শ্যামলী ক্লাব। মাঠটিও এই ক্লাবের দখলে।.. ..

মাঠের জায়গায় মার্কেট

বিআইপির উন্মুক্ত মাঠের তালিকায় ছিল পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠ। মাঠটির আয়তন ৭ দশমিক ৪৭ একর। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এখানে তিনটি খেলার মাঠ একসঙ্গে যুক্ত ছিল। মাঠের চারপাশে ছিল ৩৯৪টি দোকান। মাঠের একাংশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও আরেক অংশ ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব ব্যবহার করত, অন্য অংশ সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। ছোট-বড় মিলে প্রতিদিন কয়েক শ মানুষ খেলাধুলা করত। উন্নয়নের অংশ হিসেবে মাঠের চারপাশের দোকানগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসব দোকান নতুন করে বরাদ্দের জন্য মাঠের জায়গায় (পশ্চিমাংশে) পাঁচ তলা একটি মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। দোকান ছাড়াও এখানে হাঁটার রাস্তা, বসার ব্যবস্থা, গাড়ি রাখার জায়গা, রেস্তোরাঁ ও শিশুদের বিনোদনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।.. ..

প্রতি ওয়ার্ডে চাই অন্তত একটি মাঠ

রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড (বাড্ডা এলাকা), ২৩ নম্বর (খিলগাঁও-মালিবাগ এলাকা), ২৫ নম্বর (নাখালপাড়া), ৩০ নম্বর (ঢাকা উদ্যান এলাকা), ৩৫ নম্বর (বড় মগবাজার এলাকা), ৩৭ নম্বর (মধ্য বাড্ডা এলাকা), ৩৮ নম্বর (উত্তর বাড্ডা এলাকা), ৩৯ নম্বর (নুরেরচালা এলাকা), ৪১ নম্বর (মেরুলখোলা এলাকা) ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে (ফায়দাবাদ এলাকা) খেলার কোনো মাঠ নেই।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড (গোড়ান এলাকা), ৩ নম্বর (মেরাদিয়া এলাকা), ১৬ নম্বর (কাঁঠালবাগান এলাকা), ২২ নম্বর (গণকটুলী এলাকা), ২৫ নম্বর (লালবাগ এলাকা), ২৮ নম্বর (চকবাজার এলাকা), ৩২ ও ৩৫ নম্বর (বংশাল এলাকা), ৩৪ নম্বর (নবাবপুর এলাকা), ৩৬ নম্বর (শাঁখারীবাজার এলাকা), ৩৭ নম্বর (বাংলা বাজার এলাকা), ৪১ নম্বর (ওয়ারী এলাকা), ৪৬ নম্বর (মিল ব্যারাক অ্যান্ড পুলিশ লাইনস এলাকা), ৪৮ নম্বর (সায়েদাবাদ এলাকা), ৫০ নম্বর (পশ্চিম যাত্রাবাড়ী), ৫১ নম্বর (দোলাইরপাড় এলাকা), ৫২ নম্বর (মুরাদপুর এলাকা), ৫৩ নম্বর (পূর্ব জুরাইন এলাকা), ৫৪ নম্বর (পশ্চিম জুরাইন এলাকা), ৫৫ নম্বর (ঝাউচর এলাকা), ৫৬ নম্বর (ইসলামনগর এলাকা), ৬০ নম্বর (ইসলামবাগ এলাকা), ৬১ নম্বর (দনিয়া এলাকা), ৬২ নম্বর (কুতুবখালী এলাকা), ৬৪ নম্বর (মল্লিকপাড়া এলাকা), ৬৭ নম্বর (সারুলিয়া এলাকা), ৭১, ৭২ ও ৭৩ নম্বর (নন্দীপাড়া, দক্ষিণগাঁও এলাকা) এবং ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে (ফকিরখালি, নন্দীপাড়া ও ত্রিমোহিনী এলাকা) কোনো খেলার মাঠ নেই বলে ড্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে।

নগর-পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি করে খেলার মাঠ থাকা দরকার। খেলার মাঠ খেলা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা যাবে না। মেলা কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য খেলার মাঠ বরাদ্দ দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। মাঠ যাতে ভাসমান বাজার, ট্রাক বা রিকশাস্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার না করা হয়, সে ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে।

পানি

রাজশাহী ওয়াসা

আজ থেকে তিন গুণ দামে পানি পান করতে হবে

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে রাজশাহী নগরে আগের মূল্যের পানির দাম তিন গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি প্রচার করা হয়। সেই সিদ্ধান্ত আজ মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

রাজশাহী ওয়াসার ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির মূল্য আবাসিকে ৬ দশমিক ৮১ এবং বাণিজ্যিকে ১৩ দশমিক ৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে পাইপের ব্যাস ও ভবনের তলার ভিত্তিতেও নতুন মূল্য নির্ধারণের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে নগরবাসী বলছেন, ওয়াসার পানি সব সময় ঠিকমতো পাওয়া যায় না। ফলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর করোনা পরিস্থিতিতে পানির দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন নগরবাসী।

পানির দাম আরও বাড়াতে চায় ওয়াসা

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

করোনা মহামারির মধ্যে আবারও পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এ দফায় সংস্থাটি পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার বিশেষ বোর্ড সভায় গতকাল সোমবার দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব তোলা হয়। এখন বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য যাবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে রাজধানীবাসীকে বেশি দামে কিনতে হবে পানি।

ঢাকা ওয়াসা গত দুই বছরে দুবার আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৩ বছরে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ১৪ বার। যদিও পানির মান নিয়ে মানুষের অভিযোগের কোনো সুরাহা হয়নি।

লাভের ৮৯২ কোটি টাকা জমা সত্ত্বেও পানির দাম বাড়াচ্ছে ওয়াসা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

.. .. ওয়াসার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে এটি হবে গত ৩ বছরের মধ্যে তৃতীয় এবং গত ১৩ বছরে ১৬তম দাম বাড়ানোর ঘটনা। এই পুরো সময় জুড়ে রাজধানীর ২ কোটি বাসিন্দার বেশিরভাগের জন্য নিরাপদ পানির প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে ওয়াসা।

ওয়াসা আবাসিক ব্যবহারে প্রতি ইউনিটে (১ হাজার লিটার) ২১ টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৫৫ টাকা দাম বাড়াতে চাইছে, যা যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ ও ৩১ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি।

ওয়াসার বার্ষিক প্রতিবেদনগুলো যাচাই করলে মনে হয় বাড়ানোর উদ্যোগ বাস্তবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

অডিটকৃত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ওয়াসা ৪৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা লাভ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি।

২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সংস্থাটি ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা লাভ করেছিল। অর্থাৎ, ৫ বছরের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি পানির দাম বাড়ানোর পেছনে কোনো যুক্তি দেখি না, কারণ প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েক বছর ধরে লাভ করছে এবং তাদের হাতে প্রচুর সঞ্চিত মুনাফা আছে।’

সঞ্চিত মুনাফা হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মুনাফার একটি অংশ, যেটি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য জমিয়ে রাখা হয়, বিশেষ করে বিনিয়োগের জন্য। ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষে ঢাকা ওয়াসার সঞ্চিত মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৯২ কোটি।

ওয়াসার অদক্ষতায় পানির দাম বাড়ে

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

দিনে ঢাকা ওয়াসা যত পানি উৎপাদন করে, তার ২০ ভাগ গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছায় না। এই বিষয়টি কাগজে-কলমে ওয়াসায় ‘সিস্টেম লস’ (কারিগরি অপচয়) হিসেবে পরিচিত। শুধু এ অপচয় কমাতে পারলেই বছর বছর ওয়াসাকে পানির দাম বাড়াতে হতো না।

বর্তমানে ঢাকায় পানির দৈনিক চাহিদা কমবেশি ২৫০ কোটি লিটার। এর বিপরীতে ঢাকা ওয়াসা দৈনিক ২৬০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করার দাবি করে। ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, সিস্টেম লস ২০ শতাংশ বাদ দিলে প্রতিদিন ৫২ কোটি লিটার পানি গ্রাহক পর্যন্ত যায় না। গ্রাহক পান ২০৮ কোটি লিটার। ফলে পানির ঘাটতি থাকছে।

ঢাকা ওয়াসা গত অর্থবছরে পানির বিল আদায় করেছে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা। সে হিসাবে ২০ শতাংশ সিস্টেম লসের আর্থিক পরিমাণ ২৪০ কোটি টাকার বেশি। এখন ওয়াসা ২০ শতাংশ পানির দাম বাড়াতে চাইছে আগামী ১ জুলাই থেকে। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা নাগরিক সংগঠন এবং নগরবিদেরা বলছেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাংশের বেশি সিস্টেম লস অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার বড় প্রমাণ। ওয়াসা নিজেদের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের দায় জনগণের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। সংস্থাটি সিস্টেম লসের যে কথা বলছে, তার অধিকাংশ আসলে ‘চুরি’। ওয়াসার অসাধু কর্মকর্তা–কর্মচারীরা পানির অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে টাকা নেয়। এসব বন্ধ করা দরকার।

ভূগর্ভ খালি করছে ওয়াসা

২২ মার্চ ২২, সমকাল

‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’- এমন উদ্দীপক স্লোগানে ২০১০ সালে সংস্থাটি নিয়েছিল নয়া এক কর্মসূচি, লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা ৭০ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা। উৎপাদিত ৩০ শতাংশ পানির জোগান আসার কথা ছিল গভীর নলকূপ থেকে। বাকি ৭০ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ উৎসের পানি (সারফেস ওয়াটার) শোধন করে সরবরাহের ওয়াদা করা হয়েছিল। দীর্ঘ ১২ বছরেও তারা কথা রাখতে পারেনি। ঢাকা ওয়াসা হাঁটছে উল্টো পথেই। একের পর এক গভীর নলকূপ বসিয়ে বাড়িয়েছে ভূগর্ভস্থ থেকে পানির উৎপাদন। ফলে রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর তিন মিটার করে নিচে নামছে। এতে ভূগর্ভে তৈরি হচ্ছে বিশাল শূন্যতা। এ কারণে আকস্মিক দেবে যেতে পারে ঢাকা নগর। অসংখ্য বহুতল ভবন ও জনবহুল হওয়ায় ঢাকা নগরের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি মারাত্মক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা ওয়াসার ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার উৎপাদিত পানির ৭১ শতাংশ আসছে গভীর নলকূপ থেকে। বাকি ২৯ শতাংশ আসছে ভূ-উপরিস্থ থেকে।

বরেন্দ্রর সেচের পানি নিয়ে বাণিজ্য

২৯ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

সেচের পানি না পেয়ে গত জানুয়ারিতে ক্ষোভে, দুঃখে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন রাজশাহীর তানোরের এক কৃষক। তার ঠিক তিন মাসের মাথায় পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে দুই সাঁওতাল কৃষক বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন বলে পরিবার জানিয়েছে। যত অভিযোগ, তার সবই বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়োগ দেওয়া গভীর নলকূপের অপারেটরের বিরুদ্ধে।

কৃষকেরা বলছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি অপারেটরদের কবজায়। তাঁদের হাতে এখন বরেন্দ্রর প্রায় চার লাখ কৃষক জিম্মি। এ অঞ্চলের কৃষকের সেচের পানি নিয়ে অপারেটররা রীতিমতো বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ আছে। এসব অপারেটরের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মী, সমর্থক বলে জানা গেছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা সেচের জন্য গভীর নলকূপ বসিয়ে দেয়। গভীর নলকূপ চালানোর জন্য অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। শুরুর দিকে অপারেটররা কৃষকের কাছ থেকে সেচ চার্জ আদায়ের জন্য কুপন প্রথা চালু করেন। ২০০৫ সাল থেকে কৃষকদের ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ খরচ বাবদ কৃষকের কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টা পানির জন্য ১২৫ টাকা করে কেটে নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে নেওয়া হয় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

তানোর পৌরসভার মেয়র ইমরুল হকের অধীনে আছে তিনটি গভীর নলকূপ। জানতে চাইলে মেয়র বলেন, কার্ড ব্যবহার করা কৃষকের জন্যই ঝামেলার। নিজেরা এসে কার্ড ঢুকিয়ে পানি নিতে হয়। সিরিয়াল পেতে দুই–তিন দিনও আসতে হয়। তার চেয়ে চুক্তি করে নিলেই কৃষকের উপকার হয়।

তানোরের কিছু স্থানে এক বিঘা জমিতে সেচের জন্য কৃষকের কাছ থেকে এক মৌসুমে ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করার অভিযোগ আছে। গোদাগাড়ীতে সেচের জন্য পানি বেশি লাগে। তাই সেখানে কার্ডের মাধ্যমে পানি নিতে হয় কৃষকদের। সে কার্ডও নিজেরটা ব্যবহারের সুযোগ পান না কৃষকেরা। অপারেটরের কার্ড থেকে পানি নিতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু মৌসুম শেষে বিঘাপ্রতি পাঁচ থেকে সাত কেজি করে ধান অপারেটররা আদায় করেন।

গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের অধিকার

‘পত্রিকা অফিস জ্বালিয়ে দেব, গুলি করব’

১২ ফেব্রুয়ারি ২২, সমকাল

নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকা কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলে মহড়া শেষে নগরের চাষাঢ়া প্রেসিডেন্ট রোডের ‘দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ’ কার্যালয়ে এই হামলা চালায়। এ সময় কার্যালয়ে থাকা বেশ ক’জন সাংবাদিক ও কর্মীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলা এই হামলার পর হামলাকারীরা অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। অফিসের সিসি ক্যামেরার ডিভিআর ডিভাইস ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

অফিসে থাকা দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জের প্রতিবেদক আরিফ হোসাইন কনক বলেন, ‘দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে মোটরসাইকেলে চেপে শতাধিক লোক অফিসের নিচে আসে। পরে তারা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠে। অফিসে ঢুকেই আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। গত শুক্রবার দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রধান সংবাদ ‘যা ছিল খসড়া চার্জশিটে’ সংবাদটি কেন প্রকাশ করা হয়েছে, তারা তা জানতে চায়। তারা বলতে থাকে, ‘তোরা আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে নিউজ করস। কালকের মধ্যে পেপারে এর জন্য ক্ষমা না চাইলে পত্রিকা অফিস জ্বালিয়ে দেব ও সম্পাদককে গুলি করে মেরে ফেলব।’

অডিও ফাঁস

‘ইনোসেন্ট কনভারসেশনকে’ পুঁজি বানানোর চেষ্টা হচ্ছে: আইনমন্ত্রী

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, একটি ‘নির্দোষ কথোপকথনকে’ (ইনোসেন্ট কনভারসেশন) পুঁজি বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

আজ রোববার সচিবালয়ে বার কাউন্সিলের নেতাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাওয়া ২০ কোটি টাকা প্রণোদনার চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনের অডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে আনিসুল হক এই জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘যাঁরা এই অডিও নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করছেন, তাঁরা এতই দেউলিয়া যে একটা “ইনোসেন্ট কনভারসেশনকে” তাঁরা এখন তাঁদের পুঁজি বানানোর চেষ্টা করছেন। তার মানে হচ্ছে, তাঁদের কাছে কোনো হাতিয়ার নেই। আমার মনে হয়, এটা অবশ্যই তদন্ত করা হবে এবং এটাকে গুরুত্ব দেওয়া আমার মনে হয় সঠিক হবে না।’

আইনমন্ত্রী ও উপদেষ্টার ফোনালাপের তদন্ত দাবি বিএনপির

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একটি ফোনালাপের বিষয়ে তদন্ত চেয়েছে বিএনপি। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটি মনে করে, ফোনালাপটিকে ‘নির্দোষ ফোনালাপ’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আজ বুধবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিখিত বক্তব্যে এই দাবি তুলে ধরেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফোনালাপটির সত্যতা যেহেতু আইনমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, সেহেতু এই ফোনালাপের বিষয়গুলোর অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা এবং ফোনালাপের আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত, জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরা এবং জবাবদিহি অত্যন্ত জরুরি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আইনমন্ত্রী ও উপদেষ্টার ফোনালাপে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, সরকারের আইটিবিষয়ক একজন উপদেষ্টার নাম উচ্চারণ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, উচ্চ আদালতের দুজন বিচারপতির নাম উল্লেখ এবং এর প্রভাব। তৃতীয়ত, সচিবালয়ে প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যকলাপে অনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বিস্তার। এ বিষয়গুলো পর্যালোচনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা এবং হস্তক্ষেপের সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়।

বিটিআরসির প্রবিধান

ফেসবুক-ইউটিউবে বিধিনিষেধ আসছে

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইন্টারনেটে ভিডিও শেয়ারিং মাধ্যম ইউটিউব ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মতো মাধ্যমগুলোর ক্ষেত্রে নতুন একটি প্রবিধান তৈরি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এই প্রবিধান তৈরি হলে এসব মাধ্যমের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আসতে পারে।

বিটিআরসি প্রবিধানটির খসড়া তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোকে বাংলাদেশে কর্মী নিয়োগ করতে হবে, সশরীর যোগাযোগের ঠিকানা থাকতে হবে, অভিযোগ নেওয়া ও নির্দিষ্ট সময়ে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। আদালত ও বিটিআরসি নির্দেশ দিলে নির্দিষ্ট কনটেন্ট বা আধেয় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে।

‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’র মহাপরিচালক ‘জরুরি’ পরিস্থিতিতে যদি মনে করেন কোনো আধেয় মানুষকে দেখতে দেওয়া উচিত নয়, তাহলে তা শুনানি ছাড়াই তা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া যাবে—এ বিষয়ও রয়েছে খসড়ায়।

বর্তমানে ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো মাধ্যমগুলো থেকে কোনো আধেয় সরাতে তাদের ওপরই নির্ভর করতে হয় বিটিআরসিকে। দেখা যায়, বিটিআরসির নির্দেশনার পরও অনেক সময় সংশ্লিষ্ট মাধ্যম আধেয় সরায় না। সরানোর বিষয়টি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট মাধ্যমের নিজস্ব নীতিমালার ওপর।

‘প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা’ করায় সিপিবির মানববন্ধন পণ্ড করে দিলেন আ.লীগ নেতারা

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত একটি মানববন্ধন মাঝপথে পণ্ড হয়ে গেছে। সরকার ও সরকারপ্রধানের সমালোচনা করার অভিযোগ তুলে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা মানববন্ধনটি পণ্ড করে দেন।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঝিনাইগাতী বাজারের জিরো পয়েন্ট এলাকায় সিপিবি, ঝিনাইগাতী উপজেলা শাখার উদ্যোগে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। আওয়ামী নেতাদের প্রতিবাদের ভিডিওটি গতকাল রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনার সৃষ্টি হয়।

ইসি গঠনে এবারও ছোট দলের বড় ‘সাফল্য’

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

এবারও নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগের নাম ছিল সরকারঘেঁষা ছোট ছোট কয়েকটি দলের তালিকায়। এর মধ্যে তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ–বিএসডি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) অন্যতম। প্রথম চারটি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক। বাকি দুটি দল সরকারঘেঁষা হিসেবে পরিচিত।.. ..

এবার পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তিপর্যায়েও কেউ কেউ নাম প্রস্তাব করেছেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীও অনুসন্ধান কমিটির কাছে কিছু নাম দিয়েছিলেন। পরে তিনি সেই নামগুলো সাংবাদিকদের জানান। এর মধ্যে নবনিযুক্ত সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নামও ছিল।.. ..

এর আগে ২০১৭ সালে গঠিত ইসিতেও সরকারঘেঁষা ছোট ছোট দলের প্রস্তাব বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। তখনো আলোচনায় এসেছিল যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছোট দলগুলোকে দিয়ে পছন্দের ব্যক্তিদের নামের প্রস্তাব করিয়েছিল। সে জন্য সিইসিসহ বিভিন্ন কমিশনারের নাম একাধিক শরিক দলের তালিকায় ছিল। এবারও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শরিকদের সঙ্গে নাম দেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল বলে জোটের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ এ কৌশলে সাড়া দেয়নি। তবে অন্য ছোট শরিক দলগুলো নিজেদের পছন্দের নামের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন পক্ষ থেকে দেওয়া কিছু নামও দেয়।.. ..

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, তরীকত ফেডারেশন ১০ জনের নাম জমা দিয়েছিল। এর মধ্যে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও একজন কমিশনারের নাম ছিল। ২০১৭ সালে গঠিত ইসিতে সিইসি ও অন্য দুই কমিশনারের নাম তরীকত ফেডারেশনের তালিকায় ছিল। তখন এ কথা দলের নেতারা গর্ব করেই প্রচার করতেন। তরীকত ফেডারেশন ১৪–দলীয় জোটের শরিক।

অবশ্য তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রথম আলোকে বলেন, ১০টি নামের মধ্যে ইসিতে নিয়োগ পাওয়া দুজনের নাম থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাঁর দাবি, এ বিষয়ে সরকারি দলের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগসাজশ নেই।

প্রতিবার এভাবে তরীকতের তালিকা থেকে ইসিতে নিয়োগ পাওয়াটা আধ্যাত্মিক চিন্তার ফসল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, ‘রাজনৈতিক জ্ঞান লাগে।’

২০১৪ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১৭ (সেনানিবাস-গুলশান) আসন থেকে সাংসদ হয়ে আলোচনার জন্ম দেন এস এম আবুল কালাম আজাদ। ভোটের আগে তিনি বিএনএফ নামে একটি দল গঠন করেন এবং ত্বরিত নিবন্ধনও পেয়ে যান। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তাঁর সখ্য থাকার আলোচনা আছে। তিনি এবার অনুসন্ধান কমিটিতে ১০ জনের নামের তালিকা দিয়েছিলেন, তাতে সিইসিসহ নতুন ইসির কয়েকজনের নাম ছিল বলে জানা গেছে।

টিসিবি নিয়ে সরকার-বিরোধীদের কটূক্তি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, দেশ রুপান্তর

টিসিবির ট্রাকের সঙ্গে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে ‘কটূক্তির’ অভিযোগে রংপুরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মামলা করেছেন।

রবিবার রাতে উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও পৌর কাউন্সিলর ফারুক হোসেন বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় আইনজীবী ওয়ালিউর রহমান দোলনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।

আইনজীবী ওয়ালিউর রহমান ঢাকা জজ কোর্টের একজন আইনজীবী ও বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তপুর এলাকার আব্দুল্লাহর ছেলে। তিনি ১৯৯৯-২০০১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। 

বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, আসামি ঢাকায় থাকেন বলে তার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, দোলন তার ফেসবুক ওয়ালে টিসিবির ট্রাকের পেছনে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে সাধারণ জনগণের ভিড় ও দৌড়ানোর প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী, তার পরিবার, মন্ত্রী, আমলাসহ বিরোধী দলের নেতাদের জড়িয়ে আপত্তিকর মন্তব্যসহ পোস্ট দেন।

সাংবাদিক কনক সারোয়ারের বোন রাকার জামিন

১৪ মার্চ, ২০২২, মানবজমিন অনলাইন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাংবাদিক ড. কনক সারোয়ারের বোন নুসরাত শাহরিন রাকাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার শুনানি শেষে তার জামিন বিষয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি এস মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।.. …

গত ৪ঠা অক্টোবর রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি এবং মাদক আইনে আরেকটি মামলা করে র‌্যাব। গত ৬ই অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় রাকার ৩ দিন এবং মাদক মামলায় ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ১২ই অক্টোবর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

হুমকি দিয়ে ‘পাওয়ার’ দেখালেন পিএইচপির এমডি ইকবাল— ২৩ মিনিটের কলরেকর্ড, ৭৯ এসএমএস

চট্টগ্রাম প্রতিদিন, ১৪ মার্চ ২০২২

চট্টগ্রামে পাহাড়ের টিলা কেটে বাঁধ দিয়ে পাহাড়ি প্রাকৃতিক ছড়া বন্ধ করে দেওয়ার পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্লোট গ্লাসের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এই মামলার খবর প্রকাশ করার পর পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইকবাল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক আয়ান শর্মাকে টানা দুই দিন ফোন করে অশালীন ভাষায় হুমকি দেন। এ সময় তিনি সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ছাড়াও বহুবার রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের নাম ব্যবহার করে সরাসরি তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া তিনি একই ধরনের হুমকি দিয়ে অন্তত ৭৯টি এসএমএস বা ক্ষুদে বার্তা পাঠান তার মোবাইল নম্বর থেকে।

ইকবাল হোসেন পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সম্প্রতি একুশে পদকপ্রাপ্ত মিজানুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে। তিনি আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার অনারারি কনসালও।

গত ৪ মার্চ চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘চট্টগ্রামে পাহাড়ের টিলা কেটে সর্বনাশা বাঁধ, ইকবালসহ পিএইচপির তিনজন মামলার জালে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়ের করা মামলার বরাত দিয়ে সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাহাড়ের টিলা কেটে বাঁধ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ি খাল বা ছড়ার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে পিএইচপি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস তৈরি করে কৃত্রিম জলাধার— যা দিয়ে তাদের আমের বাগানে পানি দেওয়া হচ্ছিল। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনের ছড়া ব্যবহার করতে না পেরে এলাকাবাসী পড়ে গেছে চরম ভোগান্তিতে। মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে খালের ওপর বাঁধ দিয়ে সেই পানি নিজেদের কাজে ব্যবহার করার এমন ঘটনা জেনে পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিন অনুসন্ধানে যায়। এরপর ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত মুচলেকা দেওয়ার পরও সেই বাঁধ না সরানোয় শেষ পর্যন্ত পিএইচপির তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড পাহাড়ে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানার পূর্ব পাশে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের নির্দেশে এমন কাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে থানায় দেওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযোগে বলা হয়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানায় দায়ের করা মামলায় পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, কারখানার আমবাগান প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. আলফাতুন ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অভিজিৎ চক্রবর্তীকে আসামি করা হয়।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনে খবরটি প্রকাশের পর ৮ মার্চ দিবাগত রাত ২টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নিজের মোবাইল নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন করেন পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। এ সময় তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক আয়ান শর্মার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করে অশ্রাব্য ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় হুমকি দিয়ে যান ক্রমাগত। শুরুতেই তিনি ক্ষিপ্ত ভাষায় জানতে চান, চট্টগ্রাম প্রতিদিনে কেন নিউজটা প্রকাশ করা হয়েছে?

এর পরপরই পিএইচপি গ্রুপের এমডি ইকবাল হোসেন অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ হুমকি দিতে থাকেন। এ সময় তিনি একাধিকবার গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন— ‘ছাগলের বাচ্চা তিন মিনিট লাগবে না তােরে তুলে নিয়ে আসতে।’

চট্টগ্রাম প্রতিদিন প্রকাশকের ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে ইকবাল হোসেন সাম্প্রদায়িক বিষোদগারও করেন এই বলে— ‘আমি মুসলমাইন্না, তুই এদেশে থাকতে পারবি না, কচু কাটা করবো তােমাকে শুয়ােরের বাচ্চা।’ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘যে অ্যামবেসিই ধরো, তুমি মনে হয় আমার কানেকশন জান না…।’

এর একপর্যায়ে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা মামলা দায়ের করে জেল খাটানো ছাড়াও আর্থিকভাবে হয়রানি করারও হুমকি দেন। মোবাইল ফোনে রাতভর হুমকি-ধমকি-গালিগালাজের পর চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক আয়ান শর্মা তার মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে পিএইচপির এমডি ইকবাল হোসেন এরপর ক্রমাগত এসএমএস বা ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে থাকেন। পরবর্তী কয়েক ঘন্টায় তিনি মোট ৭৯টি এসএমএস পাঠান— যার সবকটিতেই ছিল মিথ্যা মামলায় জড়ানো ও প্রাণে মারার হুমকি।

এ সময় তিনি পিএইচপি গ্রুপের মালিকানা ও পরিচালনায় থাকা এটিএন বাংলা ও আমাদের সময়সহ ৪-৫টি টিভি ও পত্রিকায় চট্টগ্রাম প্রতিদিন প্রকাশকের নামে মিথ্যা খবর প্রকাশেরও হুমকি দেন।

এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইকবাল হোসেনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন আয়ান শর্মা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

শিশু-কিশোরেরাও মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না

০২ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হচ্ছে শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধেও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটূক্তি ছড়ানো, ধর্ম অবমাননা, এমনকি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে জুয়া খেলার অভিযোগেও অল্প বয়সীদের বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয়েছে। ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী কমপক্ষে ২০ শিশু-কিশোরের বিরুদ্ধে ১২ জেলায় ১৮টি মামলার কথা জানা গেছে।

দেশের সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ হিসাব দিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দৃক। এসব মামলার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। মামলাগুলো করেছেন সরকারদলীয় লোকজন, পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তিরা। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে এই শিশু–কিশোরদের পাঁচ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ লাখ থেকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।.. ..

কটূক্তির অভিযোগে মামলা

ফেসবুকে ‘কটূক্তি করা পোস্ট’ শেয়ার করায় জামালপুর, ময়মনসিংহ, রংপুরের পীরগঞ্জ ও পীরগাছা এবং নারায়ণগঞ্জে ছয় শিশু–কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের অভিভাবকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলছেন, শিশুরা না বুঝে পোস্ট শেয়ার করে। ভুল বুঝতে পেরে পোস্ট প্রত্যাহার করে ক্ষমাও চায়।

একটি শিশুর বাড়ি রংপুরের পীরগাছায়। গত বছরের অক্টোবরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার চাচা বলেন, অনলাইন ক্লাসের জন্য তাঁর ভাইপো স্মার্টফোন ব্যবহার করছিল। হঠাৎ একদিন বাসায় পুলিশ এসে তার খোঁজ করে। পুলিশ জানায়, সে মুঠোফোনে বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করেছে। পুলিশকে দেখে ছেলেটি ভয়ে কাঁদতে শুরু করে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ১৭ দিন পর জামিনে মুক্তি পেলেও এখনো আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। মামলার বাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় ময়মনসিংহের এক স্কুলছাত্রকে আসামি করা হয়। সে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে একটি পোস্ট দিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর ক্ষমা চেয়ে সেটি সরিয়েও ফেলে। তার স্বজনেরা জানান, ঘটনার দিন বিকেলে সে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ক্ষমা চায়। এরই মধ্যে পুলিশ আসে বাড়িতে। তার মুঠোফোন দিতে বলে। রাতে ওই কিশোরকে থানায় দিয়ে আসেন স্বজনেরা। ১৫ দিন পর জামিনে মুক্তি পায়। এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে সে। ভয়ে সে লেখাপড়া করতে পারছে না বলে জানান স্বজনেরা।

নবম শ্রেণির এক ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা হয় জামালপুরে। বাবা ছেলেকে বাঁচাতে বলেন, গৃহশিক্ষক ছেলের আইডি থেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। ওই গৃহশিক্ষক জানান, ছাত্রের সঙ্গে তাঁকেও কারাগারে যেতে হয়। ওই ছাত্রের পক্ষে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে এসেছিল আরেক ছাত্র। সে–ও গ্রেপ্তার হয়। তিনজন আড়াই মাস জেলে ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জের এক মামলায় আসামি করা হয় চুয়াডাঙ্গার এক কিশোরকে (১৫)। হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর এক ব্যক্তির দেওয়া পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করেছিল সে। কটূক্তির অভিযোগে কিশোরটিসহ তিনজনের নামে মামলা হয়।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দুই কিশোরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে সাতটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ছয়জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই শিশু–কিশোরেরা নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছে, পরিবারও একঘরে হয়ে আছে। ক্ষমা চেয়েও আইনি ঝামেলা এড়াতে পারেনি পরিবার।

গ্রেপ্তার দুই কিশোরীর বাড়ি বগুড়ার শেরপুর ও দিনাজপুরে। তাদের একজন মাদ্রাসাছাত্রী। সে ২০২০ সালের নভেম্বরে ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেছিল। পুলিশ জানায়, মেয়েটি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চলে গিয়েছিল। স্থানীয় লোকজন তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। রাতেই কালিয়াকৈর থেকে তাকে ধরে আনা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে মামলা হয়। শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তন্ময় কুমার বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে, মামলার বিচারকাজ চলছে।

দিনাজপুরের কিশোরী দেড় বছর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ছিল। সম্প্রতি জামিন পেয়েছে। আদালতে দোষ স্বীকার করে অনুতপ্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে সে। তার বাবা প্রথম আলোকে বলেন, মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। মেয়ে সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছে, খুব একটা কথাবার্তা বলছে না। গত বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, দিতে পারেনি। লোকজন কী চোখে দেখবে, লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে পরিবার।.. ..

বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শিক্ষক আটক

০৫ এপ্রিল ২০২২, একাত্তর টিভি অনলাইন

মুন্সীগঞ্জে বিজ্ঞান ক্লাস চলাকালে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে এক স্কুল শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।

গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে জেলা সদরের বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

পরে এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী বাদি হয়ে ইসলাম ধর্মের ওপর আঘাত করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ এনে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

আটক স্কুল শিক্ষকের নাম হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। তিনি বিদ্যালয়টিতে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয় পড়ান।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গতকাল সোমবর (৪ এপ্রিল) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে তা নাকচ হয়।

হিজাব বিতর্ক: নওগাঁর ঘটনাটিও ছিল বানোয়াট, মেলেনি প্রমাণ

১২ এপ্রিল, ২০২২, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা

নওগাঁর মহাদেবপুরে দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হামলার ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। “স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য গুজব ছড়িয়ে” শিক্ষিকা আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষকে উসকে দেয় বলে উঠে এসেছে কমিটির তদন্তে। এর আগে, ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ‘‘হিজাব পরায়’’ শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ে ভাঙচুর চালায় একদল স্থানীয়।

সোমবার (১১ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে মহাদেবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মালেকের নেতৃত্বাধীন কমিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউএনও মিজানুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে হিজাব পরায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। তদন্তে কমিটির কাছে মনে হয়েছে, স্কুল পোশাকের কারণেই গত ৬ এপ্রিল বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল ও শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম শিক্ষার্থীদের প্রহার করেন। স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষিকা আমোদিনী পালকে ফাঁসানোর জন্য ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা এই গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।”

উনিশ দিন কারাভোগের পর জামিন পেলেন বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল

১০ এপ্রিল ২০২২, বিবিসি বাংলা

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে একটি মামলায় উনিশ দিন কারাভোগের পর মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

রবিবার সকালে মুন্সীগঞ্জের আদালত তাকে জামিন দেয়ার পর বিকাল পৌনে পাঁচটায় তিনি কারাগার থেকে মু্ক্তি পান।

কারাগার থেকে মুক্তির পর হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তিনি নিরাপত্তা চান। তবে শুধু তার বেলায় নয়, বাংলাদেশের আর কোন শিক্ষকের ক্ষেত্রে, কোন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও যেন এমন ঘটনা না ঘটে।

দুই দফা জামিন আবেদন নাকচ করার পর রবিবার দুপুরে সংক্ষিপ্ত শুনানির পর পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। বিকালে জামিনের আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

গতকালই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে আটকের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছিল।

হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির দাবীতে সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও ঢাকা ও বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের নেটওয়ার্ক একটি বিবৃতিতে তার মু্ক্তি চেয়ে বলেছিল, হৃদয় মণ্ডলের মতো একজন শিক্ষককে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা প্রয়োজন, সেখানে রাষ্ট্র তাকে বন্দী করে রেখেছে।

বাগেরহাটে হিন্দু পরিবারে হামলার নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা

১২ এপ্রিল, ২০২২, নিউজ বাংলা

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে হিন্দু পরিবারের বসতবাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় স্থানীয় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য। স্থানীয় যুবলীগ ও জামায়াত নেতার নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফেসবুকে ইসলাম ও মহানবীকে (সা.) অবমাননা করে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে সোমবার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের আমরবুনিয়া গ্রামে এক হিন্দু যুবকের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। বিতর্কিত পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ওই যুবক কৌশিক বিশ্বাস পুলিশ হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ফেসবুকে একটি পুরোনো পোস্টকে কেন্দ্র করে এই হামলা হয়। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। হামলাকারী ও পোস্টাদাতা যুবকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ক্ষমা চাওয়ার পরেও হামলা

আমরবুনিয়া গ্রামে মোট ১১০ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে হিন্দু পরিবার আছে ৫৪টি। গ্রামের কৃষক রমনী বিশ্বাসের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে কৌশিক বিশ্বাস সবার বড়।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম মঙ্গলবার দুপুরে নিউজবাংলাকে বলেন, কৌশিক তিন বছর ধরে ভারতে আছেন। তিনি সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। এক সপ্তাহ আগে ভারত থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন কৌশিক। ভারতে থাকার সময় তিনি তার ফেসবুক আইডিতে বিতর্কিত পোস্টটি দেন।

ওই পোস্ট নিয়ে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে স্থানীয় জিউধরা বাজারে একটি সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে কৌশিক বিশ্বাস ও তার বাবা রমনী বিশ্বাস ক্ষমা চান। এ ধরনের কাজ আর করবেন না এবং তিনি (কৌশিক) কিছুদিন এলাকায় থাকবেন না বলেও অঙ্গীকার করেন।

তবে আমরবুনিয়া মসজিদের সেক্রেটারি জামায়াত সমর্থক নুরজামাল হাওলাদার, যুবলীগ সমর্থক পশ্চিম আমরবুনিয়া গ্রামের উজ্জ্বল খান এর বিরোধিতা করেন।

এলাকাবাসী জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে কয়েকজন লোক মোটরসাইকেলে করে কৌশিকের বাড়িতে গিয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করেন। তখন স্থানীয় ইউপি সদস্য মালেক ফরাজি তাদের ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন। কৌশিক ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঘেরে আত্মগোপন করেন।

এরপর মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশ কৌশিককে হেফাজতে নেয়। তবে রাত ১০টার দিকে নুরজামাল হাওলাদার ও উজ্জ্বল খানের নেতৃত্বে ২৫০ থেকে ৩০০ লোক হঠাৎ মিছিল বের করে। ওই মিছিল থেকে কৌশিক বিশ্বাসের বাড়িঘর ভাঙচুর ও খড়ের গাদায় আগুন দেয়া হয়। এ ছাড়া বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পারিবারিক মন্দিরে হামলা চালানো হয়।.. ..

প্রাথমিকের শিক্ষকদের সোশ্যাল মিডিয়া নজরদারিতে কমিটি

১১ এপ্রিল, ২০২২, মানবজমিন

শিক্ষকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্মকাণ্ড নজরদারি করতে পৃথক চারটি কমিটি গঠন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এসব কমিটি শিক্ষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সোশ্যাল মিডিয়ার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি করবে। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটির সদস্যরা কাজ করবে। অধিদপ্তরের এক অফিস আদেশে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৮ সদস্যবিশিষ্ট ‘সোশ্যাল মিডিয়া তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপন’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাছে প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের চারটি কমিটি প্রতিবেদন ও সুপারিশ পাঠাবে। কমিটি চাইলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। অফিস আদেশে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা-২০১৯’ অনুসরণ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং করবে।

ফেসবুকে মতপ্রকাশের জন্য দুই বছরে ৪০০ মামলা

২৪ এপ্রিল, ২০২২, প্রথম আলো

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শুধু মতপ্রকাশের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রায় ৪০০ মামলা হয়েছে দুই বছরে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৬ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ফেসবুককেন্দ্রিক মামলা হয়েছে ৫৬৮টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ১৭৫ জনকে। এসব মামলার মধ্যে ৩৯৯টি হয়েছে মতপ্রকাশের জন্য। এ ছাড়া হয়রানির অভিযোগে ৫১টি, আর্থিক জালিয়াতির ২৯টি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ৮৫টি মামলা হয়েছে। বাকি চারটির কারণ অজানা।

গতকাল শনিবার ‘অন্তহীন দুঃস্বপ্ন-বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮’ শীর্ষক সিজিএস আয়োজিত এক ওয়েবিনারে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজের নেতৃত্বে একটি দল ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৬ মাসে দায়ের হওয়া ৮৯০টি মামলার তথ্য নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

ওয়েবিনারে গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তাতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের হার ক্রমে বাড়ছে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রথম ১৫ মাসে ৪২৬ মামলায় ৯১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ সময় আটক হন ২৭৩ জন। মাসে গড়ে অভিযোগ আনা হয়েছে ৬০ দশমিক ৮৬ জনের বিরুদ্ধে, আটক হন ১৮ জন। পরবর্তী ৯ মাসে ৪৬৪ মামলায় ১ হাজার ৩৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এসব মামলায় আটক হন ৬০৯ জন। মাসে গড়ে অভিযোগ আনা হয়েছে ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে, আটক হয়েছেন ৬৭ জন, মামলা হয় ৫১টির বেশি। এই সময় প্রধানমন্ত্রীর অবমাননার অভিযোগে ৯৮টি, মন্ত্রীদের অবমাননার অভিযোগে ৫১টি এবং রাজনৈতিক নেতাদের অবমাননার অভিযোগে ৭৫টি মামলা হয়েছে। অভিযোগকারীদের বড় অংশ রাজনীতিবিদ। আবার ভুক্তভোগীদের মধ্যেও রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের সংখ্যা বেশি।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

 ঢাবির হলে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে ‘গেস্টরুমে’ নির্যাতনের অভিযোগ

২৭ জানুয়ারি ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলে এক শিক্ষার্থীকে কথিত ‘গেস্টরুম’ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১০টায় এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতনে এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আখতার হোসেন নামে ওই শিক্ষার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে তুলনামূলক নতুন শিক্ষার্থীদের ‘আচার-আচরণ শেখানো’র নামে গেস্টরুমে ডেকে নানান বিষয়ে ‘বিচার-আচার’ করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ উঠেছে, ওই শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণে এমনই একটি ‘গেস্টরুম আয়োজনে’ নির্দিষ্ট সময়ে না আসায় তাকে ডেকে এনে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গণরুমে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি জ্ঞান হারান। এ বিষয়ে আখতার হল প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

রাকাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান ১৫ মানবাধিকার সংস্থার

২৮ জানুয়ারি, ২০২২, দেশ রুপান্তর

বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি সাংবাদিক কনক সরোয়ারের বোন নুসরাত শাহরীন রাকাকে মুক্তি দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিক অধিকার সংস্থা সিপিজে সহ ১৫ মানবাধিকার সংস্থা।

বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিনের কাছে গতকাল (২৭ জানুয়ারি) পাঠানো এক চিঠির মাধ্যমে এই আহবান জানায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো। চিঠিটি আইনমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়।

চিঠিতে মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাকার জামিন মুঞ্জুর এবং রাকার আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট আদালতের সঙ্গে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ১৫টি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার সংস্থা। যাতে রাকা জেল থেকে অবিলম্বে মুক্তি পায়।

চিঠিতে বলা হয়, আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি যে, কনক সারওয়ারকে তার সাংবাদিকতার কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত অযৌক্তিক অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে তার বিচারিক হয়রানি বন্ধ করুন। উপরন্তু আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি, যদি এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সংশোধন করা না হয়।

আমরা বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পেয়েছি যে, কর্তৃপক্ষ রাকাকে তার ভাইয়ের ইউটিউব চ্যানেল কনক সারওয়ার নিউজ-এ সারওয়ারের বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনার প্রতিশোধ হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে। রাকার ওপর নিপীড়ন ইঙ্গিত দেয় যে, কর্তৃপক্ষ সমালোচনামূলক রিপোর্টিং বন্ধ করার জন্য কঠোর উপায় অবলম্বন করবে, তা বাংলাদেশে হোক বা বিদেশে। আর মত প্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের উপর তীব্র আক্রমণ তো চলছেই।

৫ অক্টোবর, ২০২১-এ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন সদস্যরা উত্তরায় রাকার বাড়িতে অভিযান চালায় এবং তাকে তার তিন নাবালক ছেলে সহ ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে নিয়ে যায়।

রাকার তিন ছেলেকে প্রায় ৩০ ঘন্টা পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরিবার অভিযোগ করে যে, রাকাকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকে রাখা হয়। এই সময় তারা তাকে বারবার সারওয়ার সম্পর্কে প্রশ্ন করে এবং কেন তার ভাই বাংলাদেশ সরকারের বিরোধিতা করছে তা জিজ্ঞেস করে।

প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনের যাবজ্জীবন, খালাস ৭

৩১ জানুয়ারি ২২, সমকাল

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়ে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ (৪৮) ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর (৩১) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

সোমবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এই রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায়ে ৬ জনের যাবজ্জীবন ও ৭ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

রায়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্তরা হলেন, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত (৩০), ওসি প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা (৩০), কনস্টেবল সাগর দেব, বাহারছড়ার শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন (২২), মো. নিজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ আইয়াজ (৪৫)।

আদালত রায়ে বেকসুর খালাস দিয়েছেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. লিটন মিয়া (৩০), কনস্টেবল ছাফানুর করিম (২৫), মো. কামাল হোসাইন আজাদ (২৭), মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান আলী (৪৭), কনস্টেবল মো. রাজীব হোসেন (২৩) ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে (২০)।

পাউরুটি কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন: দুই মাদ্রাসা শিক্ষকের পড়তে হবে জাতির পিতার বই

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, দেশ রুপান্তর

জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকীতে কেকের বদলে পাউরুটি কেটে ফেইসবুকে লাইভ করার ঘটনায় ‘অবমাননার’ অভিযোগে রাজশাহীর দুই মাদ্রাসা শিক্ষককে কারাদণ্ডের বদলে শাস্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর তিনটি বই পড়ার আদেশ দিয়েছে আদালত।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ মামলায় তাদের প্রবেশন মঞ্জুর করে মঙ্গলবার এ রায় দেন রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান।

দণ্ডিত দুজন হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোহা. আব্দুস সালাম এবং একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক গোলাম কবির।

ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার অপর নয় আসামিকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।

‘ভাতের বিনিময়ে’ পড়াতে চাই-

বগুড়ার সেই যুবককে খুঁজছে পুলিশ

০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, মানবজমিন

দুবেলা ‘ভাতের বিনিময়ে’ পড়াতে চাই, সম্প্রতি এমন শিরোনামের একটি বিজ্ঞাপনের ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়। আসলে তিনি এমন পরিস্থিতির মধ্যে আছেন কিনা। তার সাহায্য প্রয়োজন কিনা তা খুঁজে দেখতে কাজ করছে পুলিশ। যদিও বিজ্ঞাপনদাতা মোহাম্মদ আলমগীর কবিরের বিজ্ঞাপনের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই তার দেয়া মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে সমাজের বিভিন্ন বিত্তবান ব্যক্তিরা তাকে সাহায্য করতে চেয়েছেন। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই ঘটনার পর তাকে নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন বিতর্ক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সদর সার্কেলের এডিশনাল এসপি মো. সরাফাত ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, বিজ্ঞাপনটি দেখার পরপরই আমরা তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়ার শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে বিষয়টিকে মানবিক মনে করে তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তার মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে ১ সেনা কর্মকর্তা ও ৩ সন্ত্রাসী নিহত

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

বান্দরবানের রুমায় গতকাল বুধবার রাতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে অস্ত্রধারীদের বন্দুকযুদ্ধে উভয় পক্ষের চারজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান। বাকি তিনজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। এ সময় একটি সাবমেশিনগান ও গুলি উদ্ধার করা হয়। আহত সৈনিক ফিরোজকে চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে আজ বৃহস্পতিবার সকালে সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

একরামের মেয়েদের দেয়াললিখন

‘ভূতকে ভয় লাগে না, মানুষকে ভয় লাগে’

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার পানির ফোয়ারার পুব দিকে লামার বাজার সড়ক দিয়ে ১০০ গজ এগোলেই বাঁ পাশে প্রায় জরাজীর্ণ একটি দোতলা বাড়ি। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ভাঙাচোরা দরজা, জানালার কাচ ভাঙা। দেয়ালের রং বিবর্ণ। বাড়িটির দোতলার বসার ঘরের চার দেয়ালে মার্কার কলমে লেখা, ‘মানুষ মানুষকে গুলি করে মারে।’ ‘নির্দোষ মানুষ কেন মরে?’ ‘ভূতকে ভয় লাগে না, মানুষকে ভয় লাগে।’ ‘আব্বু তুমি কোথায়?’ ‘তুমি কি আর জীবিত ফিরে আসবা না।’ ‘আমাদের আব্বু হত্যার কি কোনো বিচার পাব না?’ ‘আব্বু তুমি কেন নাই।’ ‘আব্বু তুমি কখন আসবা। প্লিজ চলে আস।’

কথাগুলো লিখেছে গতবার এসএসসি পাস করা তাহিয়াত হক ও তার ছোট বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী নাহিয়ান হক। গত সাড়ে তিন বছরেও এসব লেখার কোনো জবাব পায়নি দুই বোন।

২০১৮ সালের ২৬ মে রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত’ হন তাহিয়াত ও নাহিয়ানের বাবা একরামুল হক। ঘটনার সময় তিনি টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। ১২ বছর ছিলেন টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। ‘হত্যাকাণ্ড’টি ঘটার সময় মেয়েদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন শোনা যায় ফোনে থেকে যাওয়া রেকর্ডে। একরামের প্যান্টের পকেটে থাকা ফোনে মেয়ে ফোন করলে চাপ পড়ে রিসিভ হয়ে যায়। একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগমের মুঠোফোনে রেকর্ড হয়ে যায় গুলির শব্দ, শোরগোল। এই অডিও ভাইরাল হলে ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে।

থানায় স্বামীকে নির্যাতন, স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

রাজবাড়ী সদর থানায় পুলিশের কাছ থেকে ধর্ষণের হুমকি পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এক নারী।

নারীর অভিযোগ, সদর থানায় আটকে রেখে তাঁর স্বামীকে নির্যাতন করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের আইজিপিস কমপ্লেইন সেলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগকারী নারীর নাম তাপসী রাবেয়া। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী সদরের বানিবহ ইউনিয়নে। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

তাপসীর স্বামী মেহেদী হাসান। তিনিও রাজধানীর একই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

এত ‘বন্দুকযুদ্ধে’র পরও মাদক ব্যবসা কমেনি

■ কক্সবাজারে সাড়ে তিন বছরে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ২৯৯ জন। আত্মসমর্পণ করেন ১২৩ জন।

■ পাঁচ বছরে ইয়াবা উদ্ধার ৭ কোটি ৮৫ লাখ।

■ নতুন যুক্ত হয়েছে আইস, ১১ মাসে উদ্ধার ২৬১ কোটি টাকার।

■ আত্মসমর্পণ করা সব মাদক কারবারি জামিনে। চারজন হয়েছেন জনপ্রতিনিধি।

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

চার বছর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশব্যাপী মাদকবিরোধী যে বিশেষ অভিযান শুরু করেছিল, তার কেন্দ্রে ছিল কক্সবাজার। ওই বিশেষ অভিযান শুরুর পর এই জেলায় গত সাড়ে তিন বছরে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ২৯৯ জন। আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন ১২৩ জন মাদক কারবারি। তারপরও জেলাটিতে মাদকের ব্যবসা থামেনি, বরং ইয়াবার পাশাপাশি এখন আরও ভয়ংকর মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথেরও প্রধান প্রবেশপথ হয়ে উঠেছে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এই জেলা। সেখান থেকে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।

সারা দেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয় ২০১৮ সালের ৪ মে। অভিযানের স্লোগান ছিল ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’। এই অভিযানের সময় একের পর এক সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার বিষয়টি দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল কক্সবাজারে।

সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার মাদক উদ্ধারের যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কক্সবাজার হয়ে দেশে ইয়াবা চোরাচালান কমেনি। উল্টো বছর বছর বেড়েছে। যেমন বিশেষ অভিযান শুরুর আগের বছর ২০১৭ সালে কক্সবাজারে প্রায় ৮৬ লাখ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার হয়েছিল। ২০১৮ সালে উদ্ধার করা হয় ১ কোটি ২৮ লাখ ইয়াবা বড়ি। এরপর থেকে প্রতিবছর এই সংখ্যা শুধু বেড়েছে। সর্বশেষ গত বছর উদ্ধার হয় আড়াই কোটির বেশি ইয়াবা।

কক্সবাজারের মাদক কারবারে গত বছর থেকে ইয়াবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইস। ২০২১ সালের ৩ মার্চ থেকে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ মাসে ৩২টি চালানে ২৬১ কোটি টাকার আইস উদ্ধার হয়। একই সময়ে মাদক কারবারি গ্রেপ্তার ও মামলার সংখ্যাও বেড়েছে। ২০১৭ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয় ১০ হাজার ৪৭৮টি। গ্রেপ্তার হন ১৪ হাজার ১৭৩ জন।

অপরাধে পুলিশের ৫০০ সোর্স

৭ মার্চ, ২০২২, দেশ রুপান্তর

পুলিশের অন্তত ৫০০ সোর্স অপরাধে জড়িত, যাদের অনেকেরই বিরুদ্ধে হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজি, হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, এই দাগি সোর্সদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ আসছে। এর ভিত্তিতে তাদের পরিচয়সহ একটি তালিকা করে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সব মহানগর পুলিশের কমিশনার ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) কাছে চিঠি পাঠিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর সোর্সদের লাগাম টানতে বলেছে। পুুলিশের যারা সোর্স ব্যবহার করেন, তারা যেন তাদের আমলনামা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেন। অনেক সোর্স আছেন তারা নিয়মিত অর্থ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ এসেছে। নির্দিষ্ট অঙ্কের সোর্সমানিও বণ্টন করা হচ্ছে না। ফলে সোর্সরা অপরাধে ঝুঁকছেন।

স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা, ধষর্ণকারীর নাম লেখা জোড়া চিরকুট

১১ মার্চ, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

আজ শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে মেলান্দহ থানা পুলিশ। আত্মহত্যার আগে তার হাতে লেখা দুটি চিরকুটও উদ্ধার করে পুলিশ।

চিরকুটে ওই শিক্ষার্থী তামিম আহমেদ স্বপন খান (২৫) নামের এক উত্ত্যক্তকারীর নাম উল্লেখ করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ওই কিশোরীকে স্বপন ও তার সঙ্গীরা উত্যক্ত করত।গতকাল বৃহস্পতিবার স্কুলে যাওয়ার পথে স্বপন তাকে তুলে নিয়ে একটি বাড়িতে ধর্ষণ করে। ওই রাতেই কিশোরী ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড: পুলিশ-ডিবি প্রথম, দ্বিতীয় র‌্যাব

১২ মার্চ ২২, সমকাল

২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই তিন বছরে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ৫৯১ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে প্রথমে রয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের নাম। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শনিবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘নির্বিচার প্রাণনাশ? বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

এতে বলা হয়, ছয় ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশের গুলিতেও নিহত হয়েছেন মানুষ। আট জেলা বাদে গোটা বাংলাদেশেই সরকারি ভাষ্যমতে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়েছে।

সম্প্রতি চালানো এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানানো হয় ওয়েবিনারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সিজিএসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সিজিএসের কয়েকজন গবেষক এ গবেষণায় অংশ নেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ গবেষণায় পাওয়া তথ্য ওয়েবিনারে প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২০১৯-২০২১ পর্যন্ত তিন বছরের তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালনা করা হলেও এতে স্বাধীনতার পর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঘটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পর্যালোচনা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বন্দুকযুদ্ধের ক্ষেত্রে পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের সংশ্লিষ্টতা আছে ২৩৫টি ঘটনায় এবং র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতা আছে ১৫৬টি ঘটনায়।

দীঘিনালায় আটকের পর ইউপিডিএফ নেতার মৃত্যু

১৫ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ, প্রসীত খীসা) এক নেতা মারা গেছেন। ওই ব্যক্তির নাম মিলন চাকমা (৪৭)। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম নবায়ন চাকমা।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বাঁশঢালা এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে আটক করে। এ সময় তিনি অসুস্থ বোধ করলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

মিলন চাকমা উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নের কেয়াংঘাট এলাকার আনন্দ চাকমার ছেলে ও ইউপিডিএফের উপজেলা সংগঠকের দায়িত্বে ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. রাশেদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর মিলন চাকমা চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

ইউপিডিএফ (প্রসীত খীসা) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরন চাকমার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়েছে, অমানুষিক নির্যাতনেই মিলন চাকমার মৃত্যু হয়েছে।

তনু হত্যা মামলা

সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনাই সংগ্রহ করা হয়নি

২০ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন তিনজনের নাম বলেছিল পরিবার। ওই তিনজন বাদে অন্তত ৫০ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে গত ছয় বছরে শতাধিক মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তারা। ফলাফল শূন্য।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে পাওয়ার হাউস এলাকায় কালভার্টের পাশের ঝোপ থেকে সোহাগী জাহানের লাশ উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনার আজ রোববার ছয় বছর হচ্ছে। মরদেহ উদ্ধারের পর তাঁর পরিধেয় থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা তখন জানিয়েছিল, পরীক্ষায় কমপক্ষে তিনজনের ডিএনএর উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাঁদের শনাক্ত করতে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া প্রয়োজন। সে কাজই হয়নি বলে জানা গেছে পুলিশ সূত্রে।.. ..

সোহাগী জাহানের মা আনোয়ারা বেগম এখনো মনে করেন, তাঁর মেয়েকে হত্যার ঘটনায় সার্জেন্ট জাহিদ ও তাঁর স্ত্রীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। সৈনিক জাহিদ ও তাজুল সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন (২০ মার্চ ২০১৬) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে প্রথমে সোহাগী জাহান কুমিল্লা সেনানিবাসে সৈনিক জাহিদ এবং পরে সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যান। পরে তাঁর লাশ উদ্ধার হয়।

‘খুব ভালো ছেলে’ বলে ঢাবির সেই ছাত্রকে ছেড়ে দিল ডিবি

২৮ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

রাজধানীর আজিমপুরের একটি ভাড়া বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে।

রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে রোববার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রকে তাঁর বাবা ও নিজ বিভাগের চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেন ডিবি কর্মকর্তারা। এ সময় ডিবি কর্মকর্তারা ওই ছাত্রকে ‘ভালো ছেলে’ বলে আখ্যা দেন।

 শনিবার রাত ১২টার দিকে আজিমপুরের ভাড়া বাসা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের (চতুর্থ বর্ষ) শিক্ষার্থী আশিকুর রহমানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁর সন্ধান ও মুক্তি দাবি করে বাবা, শিক্ষক, সহপাঠী ও অন্য শিক্ষার্থীরা রোববার বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেন। সেখানে বলা হয়, আশিকুরকে তুলে নিলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন অস্বীকার করছে।

ডিবি পরিচয়ে ডলার প্রতারণার অভিযোগে সেনা সদস্যসহ গ্রেপ্তার ৬

০২ এপ্রিল, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

অনলাইনে কম দামে ডলার বিক্রির কথা বলে ফ্রিল্যান্সার ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে ফাঁদ পাততো চক্রটি। পরে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়া হতো এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। সন্দেহ এড়াতে চক্রটি সঙ্গে রাখতো ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ ও একটি নীল গাড়ি।

নগরীর ২ থানায় পরপর এমন ২টি ঘটনায় মামলা হওয়ার পর গত ২৬ মার্চ ওই প্রতারণা চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) হালিশহর থানা পুলিশ।

ওই চক্রে এক সেনা সদস্য ও চাকরিচ্যুত এক নৌবাহিনীর সদস্যও রয়েছেন। হালিশহর থানার মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—মো. পলাশ হোসেন (৩০), মো. বায়েজিদ ইকরাম (২৭), মো. আশরাফুল আলম (৩৩), মো. বুলবুল আহমেদ (৩২) এবং আলমগীর হোসেন (৩২)। এ ছাড়াও চক্রের আরেক সদস্য মো. শাহারুল ইসলাম (৩৪) পলাতক রয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আলমগীর হোসেন সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল এবং ইকরাম নৌবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। আদালত থেকে প্রাপ্ত নথি থেকে জানা যায়, সেনা সদস্য আলমগীর একটি গোয়েন্দা শাখার চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত।

লালমনিরহাটে আটকের পর পুলিশের নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ

১৫ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় পুলিশের নির্যাতনে রবিউল ইসলাম খান (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রাত থেকে দফায় দফায় লালমনিরহাট-পাটগ্রাম-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে অন্তত চার পুলিশ সদস্যকে আহত করেছেন তাঁরা।

নিহত ওই যুবকের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গতকাল রাতে গ্রেপ্তারের পর রবিউল ইসলামকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন পুলিশের সদস্যরা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। নিহত যুবকের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাংবাদিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত

১৭ এপ্রিল ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন

কুমিল্লায় সাংবাদিক মহিউদ্দিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. রাজু র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কুমিল্লার গোলাবাড়ি সীমান্তে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

র‍্যাব-১১-এর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত রাজুর লাশ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। রাতে গোলাবাড়ি সীমান্তে র‍্যাবের সঙ্গে  বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে রাজু।

নিহত রাজু (৩৫) কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে।

ইলিয়াস আলী গুম

নেত্র নিউজের দাবি নাকচ র‌্যাবের

২১ এপ্রিল ২০২২, মানবজমিন

বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ১০ বছর পূর্তির সময়ে নতুন এক তথ্য হাজির করেছে নেত্র নিউজ। সুইডেন ভিত্তিক এই অনলাইন মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে ইলিয়াস আলীকে তুলে নেয়ার সঙ্গে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবকে দায়ী করা হয়েছে। নেত্র নিউজের এই তথ্য প্রকাশের পর এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাও বলেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়েছিল এটা নিশ্চিত। ঘটনার পর ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারে সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এটি লোক দেখানো ছিল বলেও তিনি মনে করেন।

নেত্র নিউজের প্রতিবেদনের বিষয়ে র‌্যাব’র তরফে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি। নেত্র নিউজের খবরে বলা হয়, আলোচিত এই গুমের ঘটনায় খোদ র‍্যাব’র গোয়েন্দা শাখা বা ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের সম্পৃক্ততা পেয়েছিল সংস্থাটিরই আরেকটি শাখা: র‍্যাব-১। অপহরণের স্থানটি তাদের আওতাধীন হওয়ায় গুম হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ঘটনাটির তদন্তে নামে র‍্যাব-১। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মানবজমিন এর পক্ষ থেকে যোগযোগ করা হলে র‌্যাব’র লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিউজে তাদের দেয়া অধিকাংশ তথ্যই ভিত্তিহীন মনে হয়েছে।

তারা নিজেদের মতো করে তথ্য উপস্থাপন করেছেন।  নিখোঁজ এই নেতার পরিবারকে র‌্যাব’র পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা শুরু থেকেই করা হয়েছে। এখনো যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করবে র‌্যাব।

নিউজে বলা হয়, গোপন একটি নথিতে র‍্যাব-১ কর্মকর্তারা তাদের তদন্তের বিস্তারিত বর্ণনা করেন। তদন্তে এই গুমের সঙ্গে র‍্যাব-এ কর্মরত সামরিক বাহিনী থেকে ডেপুটেশনে আসা কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। সমপ্রতি গোপন এই নথিটি নেত্র নিউজের কাছে একজন সামরিক কর্মকর্তা ফাঁস করেছেন বলে দাবি করে নেত্র নিউজ।

এ বিষয়ে র‌্যাব’র মুখপাত্র আল মঈন বলেন, নিউজে তারা নিজেদের মতো করে তথ্য দেখিয়েছেন। যখন ইলিয়াস আলীকে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তাকে আমরা খোঁজ করেছি। 

নেত্র নিউজের খবর অনুযায়ী র‍্যাব-১ তদন্তকারীরা গোপন নথিতে লিখেছেন, ইলিয়াস আলীর অপহরণের ঘটনাটি সূক্ষভাবে পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় এটি একটি সুপরিকল্পিত অভিযান যা র‍্যাব’র গোয়েন্দা শাখা কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে অপহরণের সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিতি ছিল এমন তিনটি সন্দেহজনক মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে র‍্যাব-১ তদন্ত শুরু করে। এই তিনটি নম্বরের কল ডেটা রেকর্ড বা সিডিআর বিশ্লেষণ করে আরও পাঁচটি নম্বরের সন্ধান পাওয়া যায়। এই আটটি নম্বরই ছিল সিটিসেল-এর। তখন সিডিএমএ মোবাইল অপারেটর হিসেবে সিটিসেল-এর নম্বরে আড়িপাতার সক্ষমতা না থাকায় তদন্তকারীরা শুরু থেকেই সিটিসেলকে মাথায় রেখেছিলেন। সিটিসেলের মোট আটটি নম্বরই ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে উত্তরার দেশ টেলিকম নামে একটি দোকান থেকে কেনা হয়েছিল।

১৭ই এপ্রিল রাত ১১ টার পর সবগুলো নম্বর চালু করা হয়। ১৮ই এপ্রিল রাত ১ টার মধ্যেই সবগুলো নম্বর বন্ধ করে ফেলা হয়। অর্থাৎ, ইলিয়াস আলীকে অপহরণের আগে-পরের মাত্র ৩ ঘণ্টা এই নম্বরগুলো সক্রিয় ছিল। আটটি নম্বরের ব্যবহারকারীরা শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যেই কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে র‌্যাব’র এই কর্মকর্তা বলেন, প্রকাশিত নিউজে কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করা, মেসেজ দেখানো এগুলো আসলে ভিত্তিহীন। আমাদের জানা মতে এ রকম কিছু নেই।

নেত্র নিউজের খবরে বলা হয়, অপহরণের অভিযানে তিনটি দল কাজ করছিল। একটি দল ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালককে অপহরণের জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এই দলের ব্যবহৃত চারটি নম্বর এয়ারপোর্ট ও জোয়ার সাহারা এলাকায় চালু করা হয়। আরেকটি দল হোটেল রূপসী বাংলা বা শেরাটন থেকে ইলিয়াস আলীকে অনুসরণ করছিল এবং অপহরণকারী টিমকে ইলিয়াস আলীর গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত করছিল। তৃতীয় আরেকটি দল ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার বা এনএমসি থেকে অপহরণকারী টিমকে সার্বক্ষণিক মোবাইল মনিটরিং সুবিধা প্রদান করছিল।

এসবের পরই তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন যে, এই অপহরণের সঙ্গে সরকারি কোনো সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে তখনও তারা নিশ্চিত ছিলেন না ঠিক কারা এই অপহরণ করেছিলেন। র‌্যাব-১ নথিতে লিখে, ২০১২ সালে বাংলাদেশে একই সঙ্গে গোয়েন্দা কাজ পরিচালনা, গ্রেপ্তার ও এনএমসি’র সহায়তা পাওয়ার ক্ষমতা ছিল শুধুমাত্র র‍্যাব ও ডিবি পুলিশের। তদন্তকারীরা তিন নম্বর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে খোঁজেন অপহরণের সময় এনএমসিতে কে বা কারা অবস্থান করছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই ঘটনার সঙ্গে র‍্যাব’র ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের জড়িত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলে এ সংক্রান্ত নথিপত্রও পাওয়ার দাবি করে এই অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

নেত্র নিউজের এই তথ্য সম্পর্কে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, এ বিষয়ে নিখোঁজ এই বিএনপি নেতার স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর গণমাধ্যমকে বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন, র‌্যাব তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তার স্বামীকে খুঁজেছে। চেষ্টা করেছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের মন্তব্যের প্রভাবে তিনি হয়তো বলে থাকতে পারেন। তিনি যখনই এসেছেন তাকে সবসময়ই র‌্যাব’র পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হয়েছে। নেত্র নিউজের খবরে বলা হয়, ঘটনার সময় র‍্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের দুই কর্মকর্তা এনএমসিতে ছিলেন। তাদের একজন ১৭ই এপ্রিল রাত ১০টা ৫০ মিনিটে এনএমসিতে যান এবং রাত ১১টা ১২ মিনিটে সেখান থেকে বের হয়ে যান। আরেকজন ১৮ই এপ্রিল রাত ১টা ৪০ মিনিটে এনএমসিতে যান এবং রাত ৩টা ৫ মিনিটে সেখান থেকে বের হয়ে যান।

সে সময় র‍্যাব’র ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে কর্মরত দুই কর্মকর্তার এনএমসিতে অবস্থান থেকে ধারণা করা যায় যে, তারা ইলিয়াস আলীকে অপহরণের “অভিযানে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। যদিও তারা ইলিয়াস আলীর অপহরণের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগটি অস্বীকার করেন।

ইলিয়াস আলীকে অপহরণের মাত্র কয়েকদিন আগেই সিলেটের ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমেদ দিনার ও জুনেদ আহমদকে গুম করে উত্তরায় অবস্থিত র‍্যাব’র টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন বা টিএফআই সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। টিএফআই সেলে দিনার ও জুনেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই ইলিয়াস আলীকে অপহরণের পরিকল্পনাটি সাজানো হয়। র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, অনলাইন পোর্টালটি তাদের যে ভিডিও দেখিয়েছেন এবং এখানে যে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো একদম ভিত্তিহীন। তারা হয়তো যোগ-বিয়োগ করে এ ধরনের নিউজ করেছেন। এখানে ইনফরমেটিভ হিসেবে কিছু পাওয়া যায়নি। এগুলো ডিজিএফআই সদর দপ্তরে অবস্থিত ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি) এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) সবাই জানে।

অভিযোগের বিষয়ে সে সময়কার র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংগের প্রধান বর্তমানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান নেত্র নিউজকে বলেছেন, কেউ একজন ভুয়া ও বানোয়াট তথ্য দিয়েছে। গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। বরং, তাদের দেয়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্য ও স্ত্রীকে নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে। তিনি আরও জানান, আমি দুনিয়ার কোথাও নিজ চোখে ইলিয়াস আলীকে দেখিনি। অতএব, বিমানে তার উপর নজরদারি করার প্রশ্নই আসে না। এ র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন মানবজমিনকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কাউকে খুঁজে পাওয়া না গেলে ভিকটিম পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। যিনি হারিয়ে গেছেন তাকে খুঁজে বের করতে যা যা প্রয়োজন সেটা কিন্তু আমরা করছি। একই ভাবে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী যেভাবে সন্দেহ পোষণ করেছেন এবং যখন যেটা বলেছেন র‌্যাব কিন্তু তাকে সেভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন পর্যন্ত যদি এরকম কোনো তথ্য পাওয়া যায় বা আসে এবং পরিবার থেকে বলা হয় আমরা কিন্তু সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

সুইডেন-ভিত্তিক অনলাইন পোর্টালে হওয়া নিউজের বিষয়ে র‌্যাব কোনো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব’র এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সাধারণত তথ্য, পররাষ্ট্র অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে থাকে। এগুলো তারা কানেকটেড করে নিউজ করেছেন। তারা যেভাবে যোগ-বিয়োগ করে নিউজ করেছে এভাবে করার কিছু নেই। এই পোর্টালটি নিয়মিত কিছু না কিছু প্রকাশ করে যাচ্ছে। তাদের করা এই নিউজটি যদি তারা দেশের ভেতরে থেকে প্রকাশ করতেন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত। বিদেশে বসে এ ধরনের নিউজ করলে অনেক ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কিছু করার থাকে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেক্ষাপটগুলো তুলে ধরে জবাব দেয়া হয়।

চার অস্ত্রধারী শনাক্ত, তাঁরা ছাত্রলীগের

২৪ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

নিউমার্কেট এলাকায় গত মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত দুজনকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। দুজনই ঢাকা কলেজের ছাত্র। থাকেন কলেজের উত্তর ছাত্রাবাসে। একজনের নাম কাইয়ুম, অন্যজনের নাম বলতে চায়নি পুলিশ। দুজনেই ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির একজন নেতার অনুসারী। সংঘর্ষের ঘটনায় সংগ্রহ করা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া ধারালো অস্ত্র হাতে গত মঙ্গলবার রাস্তায় যাঁদের দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে আরও দুজনকে শনাক্ত করা গেছে। তাঁরাও ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

‘নবজাতককে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল দিলেন’ চাঁদপুরের মা

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

চাঁদপুরে বেসরকারি হাসপাতালে ‍সিজারিয়ান ডেলিভারির বিল পরিশোধ করতে ‘নবজাতক সন্তান’কে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বলে এক মা জানিয়েছেন।

জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার বারোআনি গ্রামের তামান্না বেগম জানান, গত ২৬ জানুয়ারি উপজেলার পালস-এইড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন তিনি।

পরে সেখানে তার ছেলেসন্তানের জন্ম হয়।

তামান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বামী টাকা জোগাড় করতে না পেরে মোবাইল ফোন বন্ধ করে উধাও হয়ে যায়। পরে আমার খালা তার জিনিসপত্র বন্দক রেখে পাঁচ হাজার টাকায় আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে আমি সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হই।”

তামান্না বলেন, “সিজারের পরপরই টাকা চাওয়া হয় আমাদের কাছে। আমি গরিব মানুষ। টাকা দিব কোথা থেকে? আরেকজন আমাকে বিনা মূল্যে রক্ত দিলেও হাসপাতাল রক্তের বিল নিয়েছে দুই হাজার টাকা। অপারেশনের খরচ, ওষুধপথ্য ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।

“কারও কথায় আমি সন্তান দেইনি। তবে যখন হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে এবং নিজের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছিলাম না তখনই সন্তান বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই।“

এতে তিনি হাসপাতালের একজনের সহযোগিতা নিয়েছেন বলে জানান।

একদিকে সংকট, অন্যদিকে বেকার ২৫ হাজার মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট

২৮ জানুয়ারি ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র বলছে, আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে। তাদের বড় একটা অংশই বাসায় ডাকছেন স্যাম্পল কালেকশনের জন্য। কিন্তু তার জন্য যে পরিমাণ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট দরকার, তার অনেক কম জনবল দিয়ে হোম স্যাম্পল সংগ্রহ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জনবল কম হওয়ার কারণে তাদের একেকজনকে দ্বিগুণ, কখনও তারও বেশি কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও দিনের কাজ দিনে শেষ করা যাচ্ছে না। নমুনা সংগ্রহের জন্য অনেক বাসাতেই তারা নির্ধারিত দিনে যেতে পারছেন না। অথচ দেশে এখন প্রায় ২৫ হাজারের মতো মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট বেকার বসে আছেন। তাদের কাজে লাগাতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। গত দুই বছরের মহামারিতে প্রতিবার যখন সংক্রমণের ঢেউ আসে তখন সেটা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এমনিতেই সংকট রয়েছে, সেইসঙ্গে প্রতিটি ল্যাবে একাধিক টেকনোলজিস্ট করোনাতে আক্রান্ত হয়ে যখন আইসোলেশনে যায় তখন সেই সংকটের তীব্রতা হয় ভয়ংকর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে পাঁচ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট থাকতে হবে। সে হিসাবে দেশে এখন প্রয়োজন ১ লাখের বেশি টেকনোলজিস্ট। কিন্তু বাংলাদেশ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে টেকনোলজিস্টের পদ রয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৯২০টি, কর্মরত আছেন ৫ হাজার ১৬৫ জন। এরমধ্যে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি) পদ ২ হাজার ১৮২টি। আর কাজ করছেন ১ হাজার ৪১৭ জন।

দুই দশকেই শেষ দশ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের আয়ু

২৬ মার্চ, ২০২২, বণিক বার্তা

সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের আখড়াখোলা কমিউনিটি ক্লিনিক। ২০০১ সালে স্বল্প খরচে নির্মিত ক্লিনিকটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ। ভারি বৃষ্টিতে ছাদ থেকে চুইয়ে পানি পড়ে। এতে তলিয়ে যায় পুরো মেঝে। দুই কক্ষ, এক বারান্দা ও দুটি শৌচাগারবিশিষ্ট ভবনের দেয়াল থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। ভেঙে গেছে দরজা ও জানালা। শুধু এ ক্লিনিকই নয়, দেশে ১০ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকের আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে। জরুরি হয়ে পড়েছে পুনর্নির্মাণ। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ড এরই মধ্যে সাত-আট হাজার ক্লিনিক পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারকে সুপারিশ করেছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪ হাজার ১৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। শুরুর দুই বছরে ১০ হাজার ৭২৩টি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয় স্বল্প ব্যয়ে। এসব ক্লিনিকের আয়ুষ্কাল প্রায় শেষ। এর মধ্যে সাত-আট হাজার ক্লিনিক পুনর্নির্মাণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি দামে টিকা

১১ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশ বেশি দামে করোনার টিকা কিনেছে। বাংলাদেশ প্রতি ডোজ টিকা কিনেছে দেড় হাজার টাকার বেশি দামে। টিকাদান কর্মকাণ্ড পরিচালনার ব্যয়ও অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে বেশি। গত ১০ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আয়োজিত দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে কোভিড–১৯ টিকার অর্থায়নবিষয়ক এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে পূর্ণ দুই ডোজকে একটি ইউনিট বিবেচনায় নিয়ে টিকার দামের হিসাব দেওয়া হয়। সফল ও টেকসইভাবে করোনার টিকা দেওয়ার ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের ধারণা দিতে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।.. ..

কত দামে টিকা

দেশে টিকাদান শুরুর ৯ মাস পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আয়োজিত ওই ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আটটি দেশের টিকা কেনার ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরা হয়।.. ..

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের প্রতি ডোজ টিকা কেনার হিসাব উপস্থাপন করা হয়। তাতে দেখা যায়, সবচেয়ে কম দামে টিকা কিনেছে নেপাল। দেশটি প্রতি ডোজ করোনার টিকা কিনেছে বাংলাদেশি ৩৬২ টাকা দামে। বাংলাদেশের পর সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়ে টিকা কিনেছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি প্রতি ডোজ টিকা কিনেছে ১ হাজার ৫৫৯ টাকা করে। ভারত প্রতি ডোজ কিনেছে ৪৩৯ টাকা দামে।

বাংলাদেশ উপহার, অনুদান, ভাগাভাগির মাধ্যমে কেনা এবং সরাসরি কেনা—এ চার উপায়ে টিকা পেয়েছে। গত শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ২৯ কোটি ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ডোজ টিকা এসেছে।

৯ কোটি ২০ লাখ ৬ হাজার টিকা বাংলাদেশ সরাসরি চীন ও ভারত থেকে কিনেছে। সরাসরি কেনার বাইরে স্বাস্থ্য বিভাগ আরও ৮ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ডোজ টিকা কিনেছে ব্যয় ভাগাভাগির মাধ্যমে। এতে ভর্তুকি দিয়েছে করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণবিষয়ক বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ টিকা কেনা হয়েছে চীন থেকে। টিকা কেনায় সহায়তা করে ইউনিসেফ। সরাসরি ও কোভ্যাক্সের মাধ্যমে মোট ১৭ কোটি ৯১ লাখ ৯৩ হাজার ডোজ টিকা কেনা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই সভায় ভাগাভাগি ও সরাসরি কেনা টিকার দামের আলাদা হিসাব দেওয়া হয়নি।.. ..

ক্যান্সার আক্রান্তদের ৮০ শতাংশই দরিদ্র প্রান্তিক

১২ এপ্রিল, ২০২২, বণিক বার্তা

স্বাস্থ্য খাতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি। গ্রামীণ ও নগর দরিদ্রদের মধ্যে রোগটির প্রকোপ বাড়ছে দ্রুতগতিতে। এজন্য দায়ী করা হচ্ছে ক্রমবর্ধমান দূষণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবকে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) পরিসংখ্যানেও দেখা গিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির শনাক্তকৃত ক্যান্সার রোগীদের ৮০ শতাংশই স্বাক্ষরজ্ঞানহীন ও স্বল্পশিক্ষিত।

কৃষিতে স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব চর্চা থেকে বিরত থাকছেন কৃষক। বাড়ছে ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রয়োগ। নগর দরিদ্রদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বাড়াচ্ছে ক্রমবর্ধমান দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। এসব কিছুর জন্যই দায়ী করা হচ্ছে শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবকে। গ্রাম ও নগরাঞ্চলের এ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্যরাই এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পথেও এখন সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে শিক্ষার অভাবকে।

এনআইসিআরএইচের ২০০৫-১৭ সাল পর্যন্ত শনাক্তকৃত ক্যান্সার রোগীদের তিন-চতুর্থাংশই দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, এ হার এখন প্রায় ৮৪ শতাংশ। ২০০৫ সালেও তা ছিল ৭২ দশমিক ২ শতাংশ।

দেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের বড় একটি অংশ গ্রামীণ দরিদ্র কৃষক। যথোপযুক্ত শিক্ষা না থাকায় সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) ও গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (জিএপি) সম্পর্কে কোনো ধারণাও নেই তাদের। তাদের মধ্যে কীটনাশকসহ কৃষি রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের প্রবণতা অনেক বেশি। আবার এসবের প্রয়োগ হচ্ছে কোনো ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা উপকরণ ছাড়াই। দেহে প্রবেশ করছে রাসায়নিক ও কীটনাশকের মারাত্মক ও ক্ষতিকর সূক্ষ্ম উপাদান। হয়ে উঠছে মরণব্যাধির কারণ। একই সঙ্গে কমিয়ে দিচ্ছে দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও।

২০১৭ সালে এনআইসিআরএইচে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয় ১৪ হাজার ৪৪ জন। তাদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ কৃষক। ২০১৫ সালে হাসপাতালটিতে শনাক্তকৃতদের মধ্যে কৃষক ৩০ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৬ সালে এ হার ছিল ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ।

টিকার খরচে ২৩ হাজার কোটি টাকার ফারাক!

১৩ এপ্রিল ২২, সমকাল

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ২২ শতাংশ রোগী অনিয়ম-দুর্নীতির মুখে পড়েন। সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের কাছে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৪০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালে সেবা সম্পর্কিত তথ্য না দেওয়া, দুর্ব্যবহার ও সেবা গ্রহণে প্ররোচিত করার মতো অনিয়মের অভিযোগও মিলেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন :অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে গত মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত ওই গবেষণায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪৪ জেলার করোনা সেবাগ্রহীতাদের টেলিফোন জরিপ এবং ৪৩ জেলার ১০৫ কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতাদের অভিজ্ঞতা শোনা হয়।

এদিকে, করোনার টিকা কেনা ও বিতরণে খরচের ক্ষেত্রে সরকারি ও টিআইবির হিসাবে দেখা দিয়েছে গরমিল। টাকার হিসাবে এই ফারাক প্রায় ২৩ হাজার কোটি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত মার্চে বলেছিলেন, টিকা কেনা ও বিতরণে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে টিআইবির গবেষণা বলছে, এই খরচ সর্বোচ্চ ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি নয়।

অনুদানের টিকার আর্থিক মূল্য নির্ধারণ কোন যুক্তিতে: টিআইবি

২৬ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

বিনা মূল্যে পাওয়া টিকার আর্থিক মূল্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোন যুক্তিতে নির্ধারণ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ অনুদানের টিকা পেয়েছে। অনুদানে পাওয়া টিকার আর্থিক মূল্য কীভাবে কোন যুক্তিতে ঠিক করা হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। টিআইবি আশা করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টিকা ক্রয় ও বিতরণ বাবদ খরচের হিসাব আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে।

 টিকা কেনাকাটা নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টিআইবির বাগ্‌যুদ্ধ চলছে। ঘটনার সূত্রপাত ১২ এপ্রিল। ওই দিন ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছিল, কোভিড-১৯–এর টিকা কিনতে সরকার ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচের কথা বলেছে। কিন্তু টিআইবির হিসাব বলছে, যে পরিমাণ টিকা কেনা হয়েছে, তাতে খরচ হওয়ার কথা ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মানে ২২ হাজার কোটি টাকার ফারাক রয়েছে।

টিআইবির জরিপের জবাব দিতে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন ডাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকা কেনায় খরচ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। আর যে সাড়ে ৯ কোটি ডোজ টিকা আমরা ফ্রি পেয়েছি, সেটার আর্থিক মূল্য আমরা ২০ হাজার কোটি টাকা ধরেছি। এ টাকা আমাদের খরচ হয়নি। আমরা শুধু খরচটা ধরে যোগ করেছি। এমন নয় যে আমাদের ৪০ হাজার কোটি টাকাই খরচ হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই যুক্তির জবাবে আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আগে বলেছিলেন, টিকা কেনা বাবদ সরকারের মোট ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু টিআইবির গবেষণার ফলাফল প্রকাশের পর মন্ত্রী টিকার খরচ ২০ হাজার কোটি টাকার কথা বলেছেন, যা একদিকে তাঁর আগের ঘোষণার সংশোধন, অন্যদিকে টিআইবির বিশ্লেষণকেই যথার্থতা প্রমাণ করে।

টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী টিকা কেনা বাবদ খরচ হওয়ার কথা ১৩ হাজার থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে, যা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষিত ৪০ হাজার কোটির অর্ধেকের কম। টিকা ক্রয় ও বিতরণ বাবদ খরচের হিসাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও বিস্তারিত তুলে ধরবে বলে আশা করে টিআইবি।

বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ

বাংলাদেশে সরাসরি কয়লা রপ্তানি করতে চায় কোল ইনডিয়া

০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কয়লা উত্তোলন ও পরিশোধনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি কোল ইনডিয়া লিমিটেড বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরাসরি কয়লা রপ্তানির পরিকল্পনা করছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহু দশক ধরে কেবল অভ্যন্তরীণ বাজারে কয়লা সরবরাহ করে আসা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি কোল ইনডিয়া একটি খসড়া নীতিমালা ভারতের কয়লা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানেও কয়লা রপ্তানির পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।

ওই খসড়া নীতিমালা দেখার কথা জানিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে ওই প্রস্তাব করা হয়েছে ভারত সরকারের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির কথা উল্লেখ করে, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে টেক্কা দিতে ওই নীতি এগিয়ে নিচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

২০২০ সালের অক্টোবরে কর্পোরেট কৌশল নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে ওই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। কোল ইনডিয়ার চেয়ারম্যান চলতি সপ্তাহে রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বিপিডিবির সবচেয়ে বড় বোঝা এখন পায়রা

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি) থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ গত অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ব্যয় বেড়েছে ৫৮ শতাংশ। সংস্থাটির এ ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের। গত অর্থবছরে এখান থেকে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ৬০ পয়সা করে কিনেছে বিপিডিবি। আগের অর্থবছরে এ ব্যয় ছিল প্রতি কিলোওয়াট ৬ টাকা ৩০ পয়সা করে। সে হিসেবে গত অর্থবছরে পায়রা থেকে বিদ্যুৎ কেনায় বিপিডিবির কিলোওয়াটপ্রতি ব্যয় বেড়েছে আগের অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ৩৬ শতাংশ।

দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতার পরিমাণ ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতাই বেশি। যদিও গত অর্থবছরে আইপিপি থেকেই বেশি বিদ্যুৎ ক্রয় করেছে বিপিডিবি। এর প্রভাবে সংস্থাটির পরিচালন ক্ষতি গত অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণে। বড় এ ক্ষতি পোষাতে গিয়ে গত অর্থবছরে শুধু বিপিডিবির পেছনেই সরকারের দেয়া ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়ায় রেকর্ড ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়।

জ্বালানিবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) এক পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেছে, আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ বিপিডিবির খরচ গত অর্থবছরেই প্রথমবারের মতো সংস্থাটির মোট পরিচালন ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশিতে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে প্রধানতম ভূমিকাটি ছিল পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের। পায়রা থেকে শুধু বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য বাবদই বিপিডিবির ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৩৬ শতাংশ। এর সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা বাবদ দেয়া অর্থসহ অন্যান্য ব্যয় যুক্ত হয়ে সংস্থাটিকে আর্থিকভাবে আরো নাজুক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে।

বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশকে আর্থিকভাবে বিপদে ফেলা হচ্ছে: রেহমান সোবহান

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো অনলাইন

চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশকে আর্থিকভাবে বিপদে ফেলা হচ্ছে বলে মনে করেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে; যাদের হাতে জ্বালানি খাত ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে।

রেহমান সোবহান আরও বলেন, এই গোষ্ঠী অতি মুনাফার জন্য দেশের পরিবেশ ও জলবায়ুর ক্ষতি করে হলেও অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এ গোষ্ঠীর হাত থেকে দেশের সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করা।

আজ শনিবার ‘জ্বালানি, জলবায়ু ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক দুই দিনের এক সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন।

ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে ইউনিটপ্রতি খরচ ৭৫ শতাংশ বেশি পড়বে

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের তিরুনেলভেলি জেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে দেশটির বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কুদানকুলাম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট এরই মধ্যে উৎপাদনে গিয়েছে। নির্মাণাধীন রয়েছে আরো চারটি। প্রতিটির এক হাজার মেগাওয়াট করে বর্তমানে চালু ইউনিটগুলোর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দুই হাজার মেগাওয়াট। বাকিগুলোর কাজ শেষ হলে মোট সক্ষমতা দাঁড়াবে ছয় হাজার মেগাওয়াটে। বর্তমানে এর তৃতীয় ও চতুর্থ ইউনিটের কাজ চলছে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের ভিত্তিতে এটি নির্মাণ করছে রুশ প্রতিষ্ঠান রোসাটমের শতভাগ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট।

এ রোসাটমই পাবনার রূপপুরে নির্মাণ করছে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সবকিছু ঠিক থাকলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের আগামী বছরেই উৎপাদনে যাওয়ার কথা। বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির নির্মাণ ও উৎপাদনসংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেখিয়েছেন বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের বোর্নমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক। আন্তর্জাতিক জার্নাল স্প্রিঙ্গারে সম্প্রতি তাদের এ বিশ্লেষণ এস্টিমেটিং দি ইকোনমিক কস্ট অব সিটিং আপ আ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট অ্যাট রূপপুর ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রেরই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এক। যদিও বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় উৎপাদন ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩৬ সেন্ট করে, যেখানে কুদানকুলামে নির্মাণাধীন তৃতীয় ও চতুর্থ ইউনিটের ক্ষেত্রে তা প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৩৬ সেন্ট করে। সে হিসেবে রূপপুরে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে কুদানকুলামের চেয়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ বেশি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদকাল ও গড় উৎপাদন হিসাব করে ইউনিটপ্রতি এ উৎপাদন ব্যয় (লেভেলাইজড কস্ট অব এনার্জি বা এলসিওই) বের করা হয়েছে।

পাহাড়সম ঋণ ভর্তুকিতে রূপান্তরের প্রস্তাব বিপিডিবির

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এ পর্যন্ত মোট লোকসানের পরিমাণ সাড়ে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি। সংস্থাটিকে এর পুরোটাই ভর্তুকি বা ঋণ হিসেবে দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে শুধু ২০০৬-০৭ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই বিপিডিবিকে ঋণ হিসেবে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি দিয়েছে সরকার। পাহাড়সম এ ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না সংস্থাটি। আবার এ ঋণের কারণেই বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারছে না বিপিডিবি। বিপাকে পড়ে এ ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। এ নিয়ে অর্থ বিভাগের কাছে কয়েক দফায় চিঠিও দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ বিষয়ে বিপিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বহুজাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে গেলেই সংস্থাটির বিপুল পরিমাণ ঋণের বিষয়টি বড় ধরনের ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ঋণগ্রস্ত বিবেচনায় বিপিডিবির সঙ্গে যেকোনো চুক্তির প্রস্তাব থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে জ্বালানি খাতের আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো। ব্যাহত হচ্ছে বিপিডিবির অর্থনৈতিক অগ্রগতি। এ অবস্থায় ঋণের অর্থকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের কোনো বিকল্প দেখতে পাচ্ছে না সংস্থাটি। যদিও এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ বলছে, ঋণের টাকা ভর্তুকিতে রূপান্তরের কোনো সুযোগ নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বসে এ বিষয়ে সমাধান বের করতে পারে।

টালমাটাল জ্বালানি বাজার, হাত গুটিয়ে বিপিসি

১১ মার্চ ২২, সমকাল

করোনার আঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজার বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে। সব ধরনের জ্বালানিপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তেলের দাম রেকর্ড ভাঙার দিকে এগোচ্ছে। বাড়ছে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দরও। এতে বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর জ্বালানি ব্যবহারকারী দেশগুলো চরম সংকটে পড়েছে। দাম বাড়ায় সরকারের ভর্তুকি বাড়ছে। অন্যদিকে বাড়ছে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়।

পরিস্থিতি সামলাতে জ্বালানি আমদানিকারক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে না। শুধু লাভ-লোকসানের হিসাব কষে এবং সেই তথ্য ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েই দিন পার করছে সংস্থাটি। দামের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায়ও বিপিসি পণ্য আমদানি পূর্বপরিকল্পনামতোই চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ মজুত বৃদ্ধি, সাশ্রয়ী বাজার খোঁজার উদ্যোগ নিলেও সংকট মোকাবিলায় বিপিসি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। অন্যদিকে এলএনজি আমদানিতে বুঝেশুনে এগোতে চাইছে পেট্রোবাংলা।

.. ..  অস্থির বাজার পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ তেলের মজুত বাড়াচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এ সুযোগ কম। বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের মজুত ক্ষমতা ১৩ লাখ আট হাজার টন। অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৪০ দিনের চাহিদার সমপরিমাণ মজুত থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মজুত থাকে ডিজেল; ছয় লাখ টনের মতো। অপরিশোধিত তেল সংরক্ষণের সুবিধা কম, মাত্র দুই লাখ ২৫ হাজার টন। আবার পরিশোধন ক্ষমতাও কম। বছরে ১৫ লাখ টনের বেশি পরিশোধন করার সক্ষমতা নেই বিপিসির। ফলে চাহিদার বড় অংশই পরিশোধিত তেল আমদানি করতে হয়, যার দামও বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির শোধন ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি প্রকল্প এক দশক ধরে ঝুলে আছে। তেল সরবরাহের সিস্টেমলস কমানোর বিষয়ে বিপিসির সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের। ইউক্রেন-রাশিয়ার মতো আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় তেমন কর্মপরিকল্পনাও নেই সংস্থাটির। তারা শুধু দৈনিক লোকসান হিসাব করছে, আর বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে আমদানি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

কয়লার মূল্য ২০০ বছরে সর্বোচ্চ, টনপ্রতি ৪৫০ ডলার ছাড়িয়েছে

১৩ মার্চ, ২০২২, বণিক বার্তা

আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের জুনেও কয়লার মূল্য ছিল টনপ্রতি ১০০ ডলারের নিচে। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে গতকাল তা দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪৬২ ডলারে। আন্তর্জাতিক কয়লা বাণিজ্যের দুই শতকের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ। তবে পণ্যটির বাজারদরের ঊর্ধ্বমুখিতা এখানেই থামবে না বলে আশঙ্কা করছে অসলোভিত্তিক জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রাইস্ট্যাড এনার্জি। সংস্থাটি মনে করছে, চলতি বছরেই কয়লার টনপ্রতি মূল্য ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।.. ..

জ্বালানি পণ্যটির নজিরবিহীন এ ঊর্ধ্বগতি এখন দেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। দেশের বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন উৎপাদনে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। জ্বালানি পণ্যটির এ ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সময়মতো চালু করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশে বর্তমানে ৭ হাজার ৯৭ মেগাওয়াট সক্ষমতার সাতটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এর মধ্যে রামপালসহ তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চলতি বছরেই উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। আগামী বছর উৎপাদনে আসবে দুটি। বাকিগুলোও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্রেই জ্বালানি হিসেবে আমদানীকৃত কয়লা ব্যবহার করার কথা রয়েছে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতার প্রমাণ দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা

২১ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) শুনানিতে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে পেট্রোবাংলাকে। এসব প্রশ্নের যথাযথ তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। উল্টো তাদের প্রস্তাবিত খরচের হিসাবে গরমিল পেয়েছে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।.. ..

পেট্রোবাংলা প্রতি ইউনিট (ঘনমিটার) গ্যাসের দাম ১৫ টাকা ৩০ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, পেট্রোবাংলার খরচ হয় ১২ টাকা ৪৭ পয়সা। অন্যদিকে ক্যাব দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মত দিয়েছে। কারণ, সর্বশেষ ২০২০ সালে প্রতি ইউনিটে পেট্রোবাংলার খরচ ১২ টাকা ৬০ পয়সা ধরে একবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। গ্রাহকের কাছ থেকে গড়ে ৯ টাকা ৩৬ পয়সা নেওয়া হলেও বাকিটা জ্বালানি সুরক্ষা তহবিল ও সরকারি কোষাগার থেকে ভর্তুকি হিসেবে পেট্রোবাংলাকে দেওয়া হয়।

কারিগরি কমিটি বলছে, এর আগে গ্যাসে দাম বাড়ানোর সময় দিনে গড়ে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস আমদানির হিসাব করা হয়েছিল। প্রকৃত অর্থে পেট্রোবাংলা দিনে ২৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম আমদানি করেছে। এতে আড়াই হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় করেছে পেট্রোবাংলা।

উৎপাদনে নেই নজর, আমদানিতেই জোর

২৪ মার্চ ২২, সমকাল

বাসাবাড়ি কিংবা শিল্প খাত, গ্যাসের জন্য গ্রাহকদের হাপিত্যেশ নিত্যদিনের। এখন গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট, বিপরীতে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে মিলছে ২৩০ কোটি ঘনফুট। প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে ১৪০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের অভাব মেটানো হচ্ছে আমদানি করা এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) দিয়ে। এই এলএনজি আনতে সরকারের বছরে গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরই এই খাতে ভর্তুকি লাগবে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আবার দেশীয় ক্ষেত্রগুলোতে প্রতিদিন কমছে উৎপাদন। এক বছরেই দেশের গ্যাসক্ষেত্রে দিনে উৎপাদন কমেছে ৪০ কোটি ঘনফুট। তার পরও গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের নেই তেমন নজর। এলএনজি আমদানিতেই যেন সব তোড়জোড়।

এদিকে দিন দিন উৎপাদন কমলেও বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা বেড়ে হবে ৪৪০ কোটি ঘনফুট। নতুন গ্যাসক্ষেত্র উৎপাদনে না এলে নিজস্ব উৎপাদন নামবে ১৮০ কোটি ঘনফুটে। ঘাটতি ২৬০ কোটি ঘনফুটের চাহিদা মেটাতে তখন এলএনজি ছাড়া বিকল্প থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর সরকারকে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে তারা গ্যাসের অপচয় ও চুরি রোধের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখার কথা বলেছেন। তারা বলছেন, দৈনিক ৫ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়াতে পারলে ৬ লাখ ৫০ হাজার ডলারের গ্যাস আমদানি ঠেকানো সম্ভব। এতে বছরে দুই হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

বিপুল অংকের রাজস্ব চলে যাচ্ছে আইপিপিতে

৩০ মার্চ, ২০২২, বণিক বার্তা

প্রতি মাসে ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারগুলোর (আইপিপি) কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ গড়ে ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের জন্য আইপিপির ভর্তুকি বাবদ অর্থ বিভাগে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি চাহিদা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে অর্থ বিভাগ এখন পর্যন্ত সে অর্থ ছাড় করতে পারেনি। বিদ্যুৎ ও অর্থ বিভাগের আশঙ্কা, চলতি অর্থবছরে আইপিপি বাবদ ভর্তুকির প্রয়োজন পড়বে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বর্তমান ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকলে এ ভর্তুকির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। এ বিপুল অংকের রাজস্ব ব্যয় করতে গিয়ে ভয়াবহ দুশ্চিন্তায় পড়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়া চিঠিতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের ভর্তুকি হিসেবে চাওয়া অর্থের মোট পরিমাণ ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু আইপিপিগুলোকেই পরিশোধের জন্য চাহিদা দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকার।

৩ কোম্পানির ২ বছরে বাড়তি বিল আদায় ১৬৯ কোটি টাকা!

২৯ মার্চ ২০২২, শেয়ার বিজ

দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের দায়িত্ব পেট্রোবাংলার। বিভিন্ন গ্যাস ক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করে জিটিসিএলের (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড) মাধ্যমে তা যায় বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর কাছে। তারা সে গ্যাস সরবরাহ করে গ্রাহকদের। এতে বিতরণ লাইনের সমস্যা থাকলে গ্যাস কিছুটা অপচয় (সিস্টেম লস) হওয়ার কথা। তাই স্বাভাবিকভাবেই কেনার চেয়ে গ্যাস বিক্রির পরিমাণ কম হওয়ার কথা। যদিও বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। কেনার চেয়ে বেশি গ্যাস বিক্রি করেছে বিতরণকারী তিন কোম্পানি।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওপর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি তাদের বিশ্লেষণে এ তথ্য তুলে ধরে। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় বলে মনে করছে কমিশন। আর সিস্টেম গেইনের নামের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে মনে করছে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

বিইআরসির কারিগরি কমিটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে গ্যাস বিতরণে শীর্ষে রয়েছে তিতাস। এরপর রয়েছে জালালাবাদ ও কর্ণফুলী। পরের তিনটি অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে বাখরাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল ও সুন্দরবন। এর মধ্যে সিস্টেম লসে রয়েছে তিতাস, জালালাবাদ ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি। আর সিস্টেম গেইনে রয়েছে বাখরাবাদ, কর্ণফুলী ও সুন্দরবন। অর্থাৎ ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে কেনার চেয়ে বেশি গ্যাস বিক্রি করেছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এর পরিমাণ প্রায় ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ঘনমিটার। এর মাধ্যমে তিন বিতরণকারী কোম্পানি দুই বছরে জনগণের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় করেছে ১৬৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র

অতিরিক্ত গ্যাস তুলতে গিয়ে বিপর্যয়

০৫ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

গ্যাস-সংকটে বাসায় ইফতার বা সাহ্‌রির খাবার রান্নার সুযোগ পাচ্ছে না অনেক মানুষ। উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্পকারখানায়। ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। গ্যাসের এ সংকট আরও কয়েক দিন থাকতে পারে। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে সক্ষমতার অতিরিক্ত উৎপাদন করতে গিয়ে এমন বিপর্যয় তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস উৎপাদনক্ষেত্র মৌলভীবাজারের বিবিয়ানা। দিনে এখানে উৎপাদনক্ষমতা ১২০ কোটি ঘনফুট। গত শনিবারও এখান থেকে তোলা হয় ১২৭ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস। ওই দিন মধ্যরাতের পর গ্যাস প্রক্রিয়াকরণের দুটি ইউনিটে বালু উঠে আসে। বালুর উৎস শনাক্ত করতে না পারায় রোববার ছয়টি কূপের উৎপাদন বন্ধ করা হয়। এতে ৪২ কোটি ঘনফুট উৎপাদন কমায় গ্যাসের সরবরাহ–সংকট দেখা দেয় বিদ্যুৎ, শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে।

তরল গ্যাসে গরল হিসাব

১০ এপ্রিল ২২, সমকাল

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মোহরাকাটার বাসিন্দা শরিফা বেগম। প্রতিদিনের মতো গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরেও মাথায় একবোঝা লাকড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ৫২ বছর বয়সী এই নারী। এই লাকড়ি দিয়ে চলবে ভাত-তরকারি রান্না। আবহমানকাল ধরে এভাবেই চলছে মোহরাকাটার সাগরপাড়ের নারীদের জীবন। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে হঠাৎ একদিন তাতে নতুন আশার ঢেউ আছড়ে পড়ে- তাদের আঙিনায় চলে আসছে গ্যাস। রান্না সারা যাবে গ্যাসের চুলায়। বাড়ির কাছেই সাগরে বসানো হচ্ছে ‘ভাসমান এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল’।

এটাই দেশের প্রথম ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল। ২০১৭ সালে প্রকল্প শুরু হয়, তখন দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ছিল ৩৫০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু উৎপাদন হতো ২৭০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি পূরণে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয় এই টার্মিনাল নির্মাণের। বিদেশ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস তরল আকারে কিনে জাহাজে করে এনে টার্মিনালে ঢালা হবে; সেখানে তরলটাকে ফের গ্যাস বানিয়ে জাতীয় গ্রিডে নিয়ে কলকারখানা-বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে বিনা টেন্ডারেই দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদেশি কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘এক্সিলারেট এনার্জি’কে। চুক্তি হয় এ রকম- সব খরচ বহন করে তারাই টার্মিনালটি বানিয়ে যন্ত্রপাতি বসিয়ে দেবে; আর সরকার জনগণের টাকায় বিদেশ থেকে এলএনজি কিনবে, জাহাজ ভাড়া করে দেশে আনবে, তারপর ভাসমান টার্মিনালে পৌঁছে দেবে এবং সেখানে গ্যাসে রূপান্তর হলে জাতীয় গ্রিডে নিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে দেশের ভেতরে সরবরাহ করবে। আর এক্সিলারেট এনার্জি তাদের কাজটুকুর জন্য মাসে মাসে নির্দিষ্ট হারে মাশুল পাবে। সঙ্গে তারা পাবে ভ্যাট-ট্যাক্স-আয়করে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ও ছাড়। তবে সমকালের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই ভাসমান টার্মিনালের ‘ডুবে ডুবে জল খাওয়া’র এক চেপে রাখা কাহিনি। টার্মিনালের কর্তারা ওখানে গ্যাসের আড়ালে আয়োজন করেছেন দেশের অর্থ লুট করে বিদেশে পাচারের এক জটিল-যজ্ঞ। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই উন্নয়ন প্রকল্পে দেশের স্বার্থবিরোধী অন্তত দুটি কারসাজি স্পষ্ট ধরা পড়েছে অনুসন্ধানে। এক. টার্মিনালের যন্ত্রপাতি আমদানির নামে অর্থ পাচার। দুই কোটি ৬৫ লাখ ডলারের মালপত্র কেনার এলসি করা হলেও এসেছে এক কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ডলারের; বাকি এক কোটি ১৯ লাখ ডলার বা ১০৩ কোটি টাকার হদিস মেলেনি। দুই. বিদেশি কোম্পানিটির বিনিয়োগ আনা হয়েছে শেয়ারহোল্ডার ঋণ হিসেবে নজিরবিহীন উচ্চহারের সুদে।

গ্রামে গড়ে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না

১১ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। কিন্তু জ্বালানিসংকটে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না এই সক্ষমতা। গ্যাস না পেয়ে চালানো হচ্ছে চড়া দামের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে শহরের মানুষ দিনরাত বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আর দিনে গড়ে চার ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে ভুগছে গ্রামের মানুষ। ঢাকা শহরের আশপাশের এলাকায়ও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে দিনে চার-পাঁচবার।

বিদ্যুৎ সঞ্চালন, উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানির তথ্য এবং কয়েকটি এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যুৎ খাতে এমন পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি ভুগছেন দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহকেরা। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকঠাক পাচ্ছে না বলেই এটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ সংস্থাটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা।

দেশে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মোট ছয়টি কোম্পানি। ৪ কোটি ২২ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক আরইবির। দিনে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫৮ শতাংশ ব্যবহার করে তারা। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতি থাকছে ৫০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত। এর ফলে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

নেত্রকোনার সদর উপজেলার লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা পারভীন সুলতানা বলেন, দিনে সাত–আটবারও বিদ্যুৎ যায়। আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা আর আসে না। সাহ্‌রি-ইফতারের সময়ও হুট করে অন্ধকারের মধ্যে পড়তে হয়। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার কৃষক নন্দন সরকার বলেন, গ্রামে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসে। ঘণ্টা দুয়েক থাকে, তারপর চলে যায়। রাতে পাঁচ ঘণ্টা পরও আসে কোনো দিন।

আরইবির বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির প্রতিবেদন বলছে, সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও টাঙ্গাইল জেলায়। এসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় কম এবং জাতীয় গ্রিড থেকেও প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। একই কারণে রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটের অনেক এলাকাতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকায় চট্টগ্রাম, বরিশালে তুলনামূলক কম হচ্ছে লোডশেডিং।

ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জের গ্রাহক মাহফুজ রশিদ বলেন, দিনে চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুৎ যায়। কখনো ২০ মিনিট, কখনো ১ ঘণ্টা পর আসে। আর সাভারের শোভা জান্নাত বলেন, দিনে কমপক্ষে চার ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের মধ্যে থাকতে হয়।

৭ এপ্রিল রাতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ওই দিনও ৬৭৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরইবির এক কর্মকর্তা। আর সর্বশেষ শনিবার লোডশেডিং করতে হয়েছে ৫১১ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ ৮৫৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে ৪ এপ্রিল।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস সরবরাহের স্বল্পতা থাকায় পুরো উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তেলচালিত কেন্দ্র চালিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্যাসের সরবরাহ সামনে বাড়লে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

ঢাকায় ধানমন্ডির তৃষা সামিরা ও কল্যাণপুর এলাকার ফারজানা নীলা অভিযোগ করেছেন, মাঝে মাঝে ১৫ মিনিট করে বিদ্যুৎ থাকছে না।

ঢাকায় দুটি কোম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। একটি হলো ডিপিডিসি, আরেকটি ডেসকো। এ দুই সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, ডিপিডিসির দিনে সর্বোচ্চ চাহিদা ১ হাজার ৬৭২ মেগাওয়াট আর ডেসকোর ৯৫২ মেগাওয়াট। এর পুরোটাই সরবরাহ করতে পেরেছেন তাঁরা। ঢাকার কোথাও কোনো লোডশেডিং নেই।

গ্রাহকের অভিযোগের বিষয়ে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলী প্রথম আলোকে বলেন, অনুমোদিত লোডের বেশি ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। তাই গ্রাহকের উচিত, প্রয়োজনে লোডের অনুমোদন বাড়িয়ে নেওয়া। আর ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক আবদুর রউফ খান বলেন, কারিগরি কারণে বিদ্যুৎবিভ্রাট হতে পারে, দ্রুত সময়ে আবার তা ঠিক করা হয়।

তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আরইবির এলাকায় সাভার ও নারায়ণগঞ্জের কারখানায় প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে দুই ঘণ্টার বেশি। ডিজেল কিনে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। ময়মনসিংহের পি এ নিট কম্পোজিট মিলে ৭ এপ্রিল লোডশেডিং ছিল ৬ ঘণ্টা ২৭ মিনিট। আগের দিন এটি ছিল ৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। একই এলাকার নরটেক্স টেক্সটাইল মিলে ৪ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনে মোট সাড়ে ২৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।

কারখানায় ১৫ দিন ৪ ঘণ্টা করে গ্যাস ব্যবহার বন্ধ

১২ এপ্রিল, ২০২২, দেশ রুপান্তর

গ্যাস সংকট মোকাবিলায় এবার শিল্পে গ্যাস রেশনিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিদিন চার ঘণ্টা শিল্প-কারখানায় গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। আজ মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী ১৫ দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শিল্প গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার বন্ধ থাকবে বলে গতকাল সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানিয়েছে।

শিল্প শ্রেণির সব গ্রাহককে প্রতিদিন ওই সময় গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোকেও বিষয়টি তদারকি করতে বলেছে পেট্রোবাংলা।

রোজার মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে এর আগে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা, অর্থাৎ প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা সব সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঈদুল ফিতর পর্যন্ত ওই নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।

কাঠের চুলায় ফিরছে স্বল্প আয়ের মানুষ

১৬ এপ্রিল, ২০২২, বণিক বার্তা

বিশ্ববাজারে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়ছে। দেশে এলপিজির বাজার স্থিতিশীল রাখতে এর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সে অনুযায়ী এখন ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম মূসকসহ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩৯ টাকা। সাধারণত চার সদস্যের একটি পরিবারে একটি সিলিন্ডার এক মাসও যায় না। বাড়তি খরচের ভয়ে এখন গ্যাসের বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে রাজধানীর স্বল্প আয়ের মানুষ। তাই আবারো ফিরছে কাঠের চুলার ব্যবহার।

গত বছরের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম বেঁধে দেয় বিইআরসি। ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি কেজি এলপিজি মূসকসহ ৮১ টাকা ৩০ পয়সা ধরে এ দাম নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে তখন ১২ কেজি এলপিজির দাম ছিল ৯৭৫ টাকা। এরপর প্রায় প্রতি মাসেই পণ্যটির মূল্য সমন্বয় করেছে কমিশন। শুরুতে বেশ কয়েকবার পণ্যটির দাম কমলেও কভিড মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের মতো এলপিজির দামও অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যায়। সর্বশেষ গত রোববার প্রতি কেজি এলপিজির দাম ১১৬ টাকা ৮৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১৯ টাকা ৯৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে একটি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম মূসকসহ পড়ছে ১ হাজার ৪৩৯ টাকা। গত ৩ মার্চও এর দাম ছিল ১ হাজার ৩৯১ টাকা।

সিলিন্ডারের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে এলপিজির ব্যবহার।

রাজধানীর উত্তরখান, দক্ষিণখান, পূর্বাঞ্চল, ডেমরা, নাছিরনগর, চিটাগং রোড, শনির আখড়া, জুরাইন, ঢাকা উদ্যান, মিরপুর, কড়াইল এবং রাজধানীর পার্শ্ববর্তী হাসনাবাদ, তেঘরিয়া, কোন্ডা, বিবিরবাজার, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, গাজীপুরের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই জানিয়েছেন গ্যাসের ব্যবহার কমে যাওয়ার কথা। এসব এলাকার এলপিজি বিক্রেতারা জানান, ছয় মাস ধরেই এলপিজির ব্যবহার তুলনামূলক কমছে। কিন্তু গত কয়েকদিন তা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।

তেঘরিয়ার খুচরা এলপিজি বিক্রেতা রাশেদ তালুকদার বণিক বার্তাকে বলেন, প্রায় তিন মাস ধরেই সিলিন্ডার বিক্রি কমে গেছে। এখন সচ্ছল অনেক পরিবারও সিলিন্ডার ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বাড়তি দামের কথা বলছেন। অনেকের পক্ষেই প্রায় দেড় হাজার টাকা দিয়ে সিলিন্ডার কেনা সম্ভব নয়। তাই তারা কাঠের চুলা ব্যবহার শুরু করেছেন।

গ্যাস ব্যবহার ৫০০ টাকার, বিল ৯৭৫

১৯ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

ঢাকার মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের বাসিন্দা শায়লা বীথি ও হাউজিং সোসাইটি এলাকার বাসিন্দা কামরুন্নেছা। দুজনের বাসায়ই তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। মাসে শায়লার ব্যয় গড়ে ৫০০ টাকার কম। আর কামরুন্নেছাকে প্রতি মাসে বিল দিতে হয় ৯৭৫ টাকা।

একই এলাকায় একই কোম্পানির গ্যাস বিলের এমন পার্থক্যের কারণ জানা গেল এই দুজনের কাছ থেকে। শায়লা বীথি বলেন, তাঁর বাসায় গ্যাসের প্রিপেইড মিটার আছে। চার সদস্যের পরিবারে এক হাজার টাকা রিচার্জ করলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা যায়।

কামরুন্নেছার বাসায় প্রিপেইড মিটার নেই। তাঁরও চার সদস্যের পরিবার। বিল দিতে হয় সরকার নির্ধারিত হারে। তিনি জানান, মাঝেমধ্যে গ্যাস–সংকটে রান্না করা যায় না। তবু প্রতি মাসে তাঁকে ৯৭৫ টাকা বিল দিতে হয়। রান্নার জন্য মাঝেমধ্যে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডারও কিনতে হয়। এতে খরচ আরও বেড়ে যায়।

রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি তিতাস। তাদের আবাসিক গ্রাহক ২৮ লাখ ৫৬ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রিপেইড মিটার আছে মাত্র ৩ লাখ ২০ হাজারের। আর বাকিরা সবাই মাসে মাসে নির্ধারিত হারে বিল পরিশোধ করেন।

যাঁদের বাসায় প্রিপেইড মিটার নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে বিল নির্ধারণে গ্যাসের ব্যবহার ধরা হয় অনুমানের ভিত্তিতে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সর্বশেষ ২০১৯ সালে দাম বাড়ানোর সময় মিটারহীন গ্রাহকের ক্ষেত্রে দুই চুলায় গ্যাসের মাসিক গড় ব্যবহার ধরেছে ৭৭ ঘনমিটার। তিতাসের প্রিপেইড মিটারধারী গ্রাহকদের বিগত চার মাসের বিল বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাঁরা প্রতি মাসে গড়ে ৩৪ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেছেন, যার দাম ৪২৮ টাকা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, কিছুটা অসচেতন হলেও সাধারণ মিটারহীন গ্রাহকেরা মাসে গড়ে ৫০০ টাকার বেশি গ্যাস ব্যবহার করেন না। কিন্তু তাঁদের বিল দিতে হয় প্রায় দ্বিগুণ।

কয়লার উচ্চমূল্যে স্থানীয় উত্তোলন নিয়ে ভাবছে সরকার

২৩ এপ্রিল, ২০২২, বণিক বার্তা

বিশ্ববাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে কয়লার। দামও বেড়ে চলেছে লাগামহীনভাবে। এ অবস্থায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে দেশে বিদ্যমান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিয়ে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ মুহূর্তে স্থানীয় কয়লা নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার। স্থানীয় খনিগুলোর মজুদ কয়লার উত্তোলনযোগ্যতা নিয়ে চালানো হচ্ছে সমীক্ষা। ফলাফল ইতিবাচক হলে চাহিদা পূরণের জন্য দেশে উত্তোলিত কয়লার ওপর নির্ভরতা বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি টন কয়লার মূল্য ওঠানামা করছে ৩৩০ ডলারের আশপাশে। যেখানে গত বছরের জুনেও পণ্যটির টনপ্রতি মূল্য ছিল ৯৭ ডলার। গত মাসে তা উঠেছিল রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪৬২ ডলারে। বর্তমানে সেখান থেকে কিছুটা কমলেও কয়লার মূল্য এখনো স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বলে বাজার-বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। বিশ্ববাজারের এমন পরিস্থিতি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। শিগগিরই পণ্যটির মূল্য পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন না বাজার-বিশ্লেষকরা। বরং তা আরো কয়েক বছর ঊর্ধ্বমুখী থাকার পূর্বাভাস রয়েছে।

এ অবস্থায় কয়লা নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার। জোর দেয়া হচ্ছে স্থানীয় উত্তোলন বাড়ানোর ওপর। বিষয়টি নিশ্চিত করে জ্বালানি বিভাগ-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, বৈশ্বিক জ্বালানির বাজারদর পর্যবেক্ষণ করছে জ্বালানি বিভাগ। একই সঙ্গে যেসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনক্ষম হচ্ছে সেগুলোর জন্য বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। বিশেষ করে স্থানীয় কয়লা নিয়ে নতুন করে পর্যবেক্ষণ চলছে। এসব পর্যবেক্ষণে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেলেও দ্রুতই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

যাতায়াত ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনা

রাবি হলের সামনে ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থী নিহত, ৫ ট্রাকে আগুন

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ইত্তেফাক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে ট্রাকচাপায় মাহবুব হাবিব হিমেল নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লিয়াকত আলী দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রক্টর জানান, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য কয়েকটি ট্রাক কাজ করছে। এর মধ্যে একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে হিমেল মারা যান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের  চতুর্থ বর্ষের (২০১৭-২০১৮) শিক্ষার্থী। এছাড়া তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র।’

দক্ষ চালক তৈরির অবকাঠামো নেই দেশে

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো

.. .. দেশে বিআরটিএর অনুমোদিত ১৪০টির মতো চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সম্ভাব্য চালকদের কী শেখাচ্ছে, কোথায় শেখাচ্ছে, এর কোনো তদারকি নেই বিআরটিএর।

ফলে লাইসেন্স প্রার্থীদের অনেকেই পরীক্ষা এড়ানোর জন্য দালাল ধরেন। আর যাঁরা পরীক্ষায় অংশ নেন, তাঁরা লিখিত পরীক্ষার উত্তর দেন শুনে শুনে। যানবাহন চালিয়ে দেখানোর পর্যাপ্ত জায়গা বিআরটিএর নেই। এমন একটা পরিস্থিতিতে যেনতেনভাবেই শেষ হয় গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষাপর্ব।

ফলে অনেক সময় বৈধ লাইসেন্সধারী চালক পুরোপুরি দক্ষতা অর্জন করতে পারেন না। আবার অনেক চালকের যানবাহন চালানোর দক্ষতা থাকলেও বৈধ লাইসেন্স নেই। তবে সব ধরনের চালকের মধ্যেই সড়ক ব্যবহারসংক্রান্ত আইন, সাইন-সিগন্যাল সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত।

পরীক্ষা হয় যেনতেন

.. .. অনুসন্ধান বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষাস্থলে বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত থাকেন না। কেউ কেউ অধীন ব্যক্তিদের পাঠিয়ে দায় সারেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের লাইসেন্স দিতে হলে সব সদস্যের সই প্রয়োজন। প্রতিনিধি দিয়ে তা সম্ভব নয়। এ জন্য বিআরটিএর অফিস সহকারীরা উত্তীর্ণ তালিকা সই করিয়ে আনতে কর্তাদের কার্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ করেন। সদস্যদের সম্মানীর বাইরে তালিকা অনুমোদন করার জন্য বাড়তি অর্থ চাওয়ারও অভিযোগ পাওয়া যায়।

সম্প্রতি বিআরটিএর একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বোর্ডের যেসব সদস্য নিজে আসেন কিংবা প্রতিনিধি পাঠান, তাঁদের একটা কক্ষে বসিয়ে চা-নাশতা খাওয়ানো হয়। এই ফাঁকে বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শকেরা লাইসেন্স প্রার্থীদের একসঙ্গে এক কক্ষে নিয়ে লিখিত পরীক্ষা নেন। মোটরযানের কারিগরি দিক ছাড়াও সড়ক ব্যবহারের নানা আইন-নির্দেশনা সম্পর্কে প্রশ্ন থাকে। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই এসব প্রশ্নের উত্তর জানেন না। সময় বাঁচানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘ওই প্রশ্নের উত্তর অমুক’ এমন বলে চিৎকার করে সবাইকে জানিয়ে দেন। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষার যে প্রশ্নপত্র, সেটাও হালনাগাদ হয় না। একই প্রশ্ন ঘুরেফিরে বছরের পর বছর চলছে।

ব্যবহারিক পরীক্ষার অবকাঠামো নেই

মোটরযানচালকদের দক্ষতা যাচাইয়ে আন্তর্জাতিক কিছু মানদণ্ড আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যবহারিক পরীক্ষায় যানবাহন চালানোর সক্ষমতা দেখা। এর জন্য ড্রাইভিং ট্র্যাক, র‍্যাম্প, ড্রাইভিং সিমুলেটর, কম্পিউটারাইজড হলরুম জরুরি। নতুন চালকদের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত প্রশিক্ষণ ও সেমিনার কক্ষও প্রয়োজন।

বাংলাদেশে এর কোনোটিই নেই। সারা দেশে জেলা ও মহানগর মিলে বিআরটিএর কার্যালয় আছে ৬৯টি। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে কার্যালয় আছে ৫টি। এগুলোতে স্বল্প পরিসরে চালকদের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এত বেশি যে তাঁদের দাঁড়ানোরও জায়গা থাকে না। ফলে সবার চালানো দেখে পরীক্ষা নেওয়া হয় খুবই কম।

বাকি ৬৪টি কার্যালয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কোনায় এক-দুই কক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব কক্ষে শুধু দালিলিক কার্যক্রম চালানো হয়। যথাযথ পরীক্ষা নিয়ে চালকের লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগই নেই। কখনো কখনো স্থানীয় স্কুলের মাঠ বা খোলা জায়গাকে পরীক্ষা নেওয়ার অস্থায়ী স্থান হিসেবে দেখানো হয়। তবে এসব স্থানে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনা চোখে পড়ে না।

এমনকি চালকেরা যে যানবাহনে করে পরীক্ষা দেবেন, সেটি নিজের হবে নাকি ভাড়া করা হবে—এই বিষয়েও বিআরটিএর কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে চালকেরা পরীক্ষা দিতে এসে বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে থেকে গাড়ি বা মোটরসাইকেল ভাড়া করেন। এ জন্য একধরনের ব্যবসাও গড়ে উঠেছে। অনেকে বাস, ট্রাক কিংবা লরির মালিকের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেবেন, এমন সুযোগও নেই। কারণ, বিআরটিএর পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে এদের ব্যবহারিক পরীক্ষা সেভাবে হয় না।

লোকবল সংকট

সড়ক পরিবহন আইনে বিআরটিএর ১৬টি কার্যাবলির উল্লেখ রয়েছে। এর জন্য জনবলের প্রস্তাব করা হয়েছিল ৩ হাজার ৫৮৭ জনের। কিন্তু সরকারের অনুমোদন আছে ৮২৩ জনের। বাস্তবে আছে এর চেয়েও কম। চালকের লাইসেন্স দেওয়ার পরীক্ষা এবং এ–সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরির কাজটি করে থাকেন মোটরযান পরিদর্শকেরা। এ পদে সারা দেশে লোকবল আছে ১২৫ জন।

ঢাকায় বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ের অধীনে সপ্তাহে দুই দিন চালকের পরীক্ষা নেওয়া হয়, জোয়ারসাহারায় বিআরটিসি ডিপোতে। প্রতিদিন পরীক্ষার্থী অংশ নেন ৬০০ থেকে ৯০০ জন। ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ে মাসে এক-দুবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেখানেও ১৫০-২০০ পরীক্ষার্থী অংশ নেন।

আইন অনুযায়ী, প্রথমে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় ৫-৬টি করে সড়কের সাইন-সংকেত বিষয়ে প্রশ্ন করার নিয়ম। অন্তত তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে উত্তীর্ণ ধরা হয়। এরপর মাঠে গিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেখাতে হয়। এই তিন পর্বের পরীক্ষার জন্য কম করে হলেও ৩০ মিনিট দরকার। এ ক্ষেত্রে ৬০০ পরীক্ষার্থীর পেছনে ৩০০ ঘণ্টা দরকার। ধরে নেওয়া হচ্ছে একাধিক মোটরযান পরিদর্শক ভাগ করে পরীক্ষা নেন। এ ক্ষেত্রে চারজন পরিদর্শক থাকলেও একেকজনের ভাগে ১৫০ জন পরীক্ষার্থী পড়ে। এতেও প্রত্যেকের ৭৫ ঘণ্টা দরকার। বাস্তবে এর কোনোটাই হয় না।

পরীক্ষার্থীদের অনেকে সশরীর উপস্থিত হন না। না এসেই দালালের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছেন। আবার এলেও পাঁচ-দশ মিনিটের বেশি কাউকেই সময় দেওয়া হয় না।

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি

‘আমরা কি কেবলই মরমু, বারবার মরমু’

২১ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

‘গত বছর শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চ ডুইব্বা ছেলের বউ আর নাতনিরে হারাইছিলাম। এবার আবার ভাতিজার বউ আরিফা ও দেড় বছরের নাতি সাফায়েতরে হারাইলাম। আমরা কি কেবলই মরমু! বারবার মরমু! আমাগো বাঁচাইতে কি কারও কিছুই করার নাই? কেউ নাই আমাগো দেহার? বিচার হইব না খুনিগো?’

আজ সোমবার সকালে আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রমজানবেগ এলাকার মিনু বেগম। গতকাল রোববার দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর মাহমুদনগর কলাবাগান এলাকায় রূপসী-৯ নামের কার্গোর ধাক্কায় এমএল আশরাফউদ্দিন নামের লঞ্চডুবির ঘটনায় মারা যাওয়া আরিফা বেগমের চাচিশাশুড়ি তিনি।

এর আগে গত বছরের ৪ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে এমএল সাবিত আল হাসান লঞ্চ দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু বেগমের পুত্রবধূ বীথি বেগম। ওই লঞ্চ মদনগঞ্জ এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছাকাছি এসএকে এল-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে গিয়েছিল। এতে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যাঁদের অধিকাংশের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ।

স্কুল বাস সব গেল কই?

২২ মার্চ ২০২২, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার পর রাজধানীর যানজট অসহনীয় পর্যায়ে বেড়ে গিয়েছে। আর এর প্রধান কারণ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি। এর বড় একটি অংশ রাস্তায় চলাচল করছে স্কুলের শিশুদের আনা নেওয়ার কাজে।

রাজধানীর যানজট নিরসনে ও স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য এক যুগেরও বেশি সময় আগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় বোর্ড (ডিটিসিবি) স্কুল বাস সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ২০০৯ সালের ২০ আগস্ট নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত আদতে কোনো কাজে আসেনি।

সিদ্ধান্তের আলোকে ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রাথমিকভাবে ১৪টি বিআরটিসি বাস নিয়ে এ সার্ভিস চালু হয়। পরবর্তীতে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বিআরটিসির আরও বেশ কয়েকটি বাসে স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিবহনের করার কথা থাকলেও উল্টো কয়েক মাসের মধ্যেই চালু হওয়া স্কুল বাস সার্ভিসটিও বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে, স্কুল বাস চালু অথবা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কিংবা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছুই জানে না মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

ঢাকা যেন নিশ্চল মহানগর

০৫ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো

ঢাকার মতিঝিলে একটি ব্যবসায়িক সংগঠনের কার্যালয়ে চাকরি করেন আবুল হাসান ফজলে রাব্বি। বাসা মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে। তিনি জানান, বাসে সকাল সাতটায় মিরপুর থেকে রওনা দিলে মতিঝিল পৌঁছাতে এখন আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লাগে। ফিরতেও মোটামুটি আড়াই ঘণ্টা।

গুগল ম্যাপ বলছে, মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন থেকে মতিঝিলের দূরত্ব ১২ কিলোমিটারের মতো। এ পথটুকুতে যাতায়াতে দৈনিক ফজলে রাব্বিকে পাঁচ ঘণ্টা কাটাতে হচ্ছে রাস্তায়। তা–ও লক্কড়ঝক্কড় বাসে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন চাকরিতে যোগ দিই, তখন ৪০ থেকে ৫০ মিনিটেই অফিসে চলে যেতে পারতাম। এখন তিন গুণ সময় লাগছে।’

ফজলে রাব্বির এ দাবি মিলে যায় বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসাবের সঙ্গে। তারা বলছে, ২০০৭ সালে ঢাকার সড়কে যানবাহনের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। অর্থাৎ দেড় দশকে ঢাকায় যানবাহন চলাচলের গড় গতি কমে গেছে ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটারের মতো। সব মিলিয়ে ঢাকার সড়ক দিন দিন নিশ্চল হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

কেন এ অবস্থা

সরকারি সংস্থার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে যানজটের বড় কয়েকটি কারণ জানা যায়। সেগুলো হলো: ১. ঢাকার মানুষের যাতায়াতের সবচেয়ে বড় ভরসা বাস-মিনিবাস। বাস চলাচলে শৃঙ্খলা আনার ওপর জোর না দেওয়া। ২. ইচ্ছেমতো যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়া। ৩. ঢাকায় বিভিন্ন গতির ১৮ ধরনের বাহনের চলাচল, যা শৃঙ্খলা আনার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে। ৪. বড় বড় প্রকল্প নিয়ে সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারা। ৫. ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানভিত্তিক ও আধুনিক পদ্ধতির অভাব এবং ৬. সরকারি কার্যালয় ও সেবা, বেসরকারি খাতের মানসম্মত সেবা বিকেন্দ্রীকরণ করতে না পারা।

২০০৫ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) অনুমোদন করে সরকার। এর বাস্তবায়ন সময়সীমা ধরা হয় ২০২৫ সাল পর্যন্ত। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার ২০১৪ সালের সমীক্ষা বলছে, ঢাকায় দরকারি যাতায়াত বা কাজে যাওয়ার জন্য ৬০ শতাংশ মানুষ গণপরিবহন ব্যবহার করে। আর গণপরিবহন ব্যবহারকারীদের ৬৭ শতাংশ ব্যবহার করে বাস-মিনিবাস।

২০১১ থেকে ২০২১ সময়ে রাজধানীতে মোটরসাইকেল বেড়েছে প্রায় আট গুণ। সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ লাখে। একই সময়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বর্তমানে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৮০৯টি, যা ২০১০ সালে ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার।

২০০৫ সালের কৌশলগত পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষায় ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব, যাত্রীদের যানবাহন ব্যবহারের প্রবণতা ও যানজট বিবেচনায় নিয়ে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি বা বিশেষ পদ্ধতিতে বাস পরিচালনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এটা করা গেলে এক বাসের সঙ্গে অন্য বাসের প্রতিযোগিতা থাকত না। কিন্তু ১৭ বছরেও বাসের ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থা চালু হয়েছে শুধু একটি রুটে।

ঢাকায় গত এক দশকে বাস-মিনিবাসের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল বেড়েছে অনেক বেশি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, ২০১১ থেকে ২০২১ সময়ে রাজধানীতে মোটরসাইকেল বেড়েছে প্রায় আট গুণ। সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ লাখে। একই সময়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বর্তমানে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৮০৯টি, যা ২০১০ সালে ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার।

একই সময়ে ডাবল ও সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। এ যানবাহনগুলোকে যাত্রী পরিবহনকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। কিন্তু ঢাকায় তা যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হয়।

দেখা যাক বাস কতটা বেড়েছে। বিআরটিএর হিসাবে, ২০১০ সালে ঢাকায় বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৩১৩। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৪৮৪টিতে। অর্থাৎ বাসও দ্বিগুণ হয়েছে। খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত এক দশকে চীন ও ভারত থেকে বেশ কিছু নিম্নমানের বাস এসেছে। এর মধ্যে সিএনজিচালিত বাসগুলো কয়েক বছরের মধ্যেই অকেজো হয়ে গেছে, যা আসলে সড়কে নেই। আর ঢাকা থেকে নিবন্ধন নেওয়া অনেক বাস দূরপাল্লার পথে চলাচল করে। এখন ঢাকা ও এর আশপাশে চলাচল করে বড়জোর ১০ হাজারের মতো বাস।

ঢাকায় সাড়ে ২০ হাজারের মতো সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। যদিও রাজধানী ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরের চাহিদার সঙ্গে তা অপ্রতুল বলে মনে করা হয়।

বড় প্রকল্পে জোর, সময়ক্ষেপণ

রাজধানীর কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের পাঁচটি লাইন, দুটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট রুট (বিআরটি), তিনটি রিং রোড, আটটি রেডিয়াল রোড, ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে, ২১টি পরিবহন হাব, ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথের আধুনিকায়ন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা, বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং পথচারী অগ্রাধিকার কৌশল ঠিক করার কথা বলা হয়েছে।

সরকার শুরুতে উড়ালসড়ক ও মেট্রোরেলে বেশি জোর দিয়েছে। কিন্তু কোনো প্রকল্পই সময়মতো বাস্তবায়িত হয়নি। এর ফলে ব্যয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। সড়ক পরিবহন, স্থানীয় সরকার ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত এক দশকে ঢাকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা খরচ করে উড়ালসড়ক নির্মাণ করেছে। দুই হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে হাতিরঝিল উন্নয়ন করা হয়েছে। ট্রাফিকবাতি কেনা, ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে ২০০ কোটি টাকা খরচ করেও তা কাজে লাগছে না।

ঢাকায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পথে মেট্রোরেল, বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত উড়ালসড়ক, জয়দেবপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাসের বিশেষ লেন নির্মাণ, পূর্বাচলে সড়ক ও ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন—এসব প্রকল্প চলমান আছে। এগুলোর পেছনে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছে আরও এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের বিভিন্ন সড়ক ও উড়ালসড়ক প্রকল্প। পাঁচটি মেট্রোরেল ও সাবওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনাও সরকারের আছে।

কিন্তু ঢাকায় বাস বাড়ানো, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা, ঢাকা ঘিরে রিং রোড নির্মাণ, ঢাকার ভেতরে সড়ক সম্প্রসারণ—এসব বিষয় অগ্রাধিকার পায়নি।

পররাষ্ট্র বিষয়ক

অবাস্তব প্রকল্প নিয়ে আরেকবার ভাবুন: মোমেনকে জয়শঙ্কর

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বিজনেস ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা

বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয় এমন অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণে ঋণ নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ভাবতে হবে। এনিয়ে উদ্বেগ না থাকলে অটেকসই অবকাঠামোই তৈরি হবে।

চীন যেভাবে আর্থিক সহায়তা দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটগুলো তেমনটা দিতে পারবে কিনা- বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এমন প্রশ্নের জবাবে কড়া সুরে একথা বলেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

গত শনিবার জার্মানির মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের আলোচনা চলাকালে মোমেন ও জয়শঙ্করের মধ্যে এসব কথা হয়।

খাদ্যনিরাপত্তায় ভারতের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা বেড়েছে

০৩ মার্চ, ২০২২, বণিক বার্তা

গত কয়েক দশকে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বড় অগ্রগতি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যদিও প্রতি বছরই দেশে খাদ্যশস্যের আমদানি বাড়ছে। খাদ্যশস্যের মধ্যে এতদিন মূলত চালই আমদানি করা হতো। পণ্যটি প্রধানত ভারত থেকেই আমদানি করা হয় বেশি। এখন গম আমদানিরও সিংহভাগ আসছে ভারত থেকে। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ হলো রাষ্ট্রীয় সংস্থার খাদ্যশস্যের সাফল্য এখনো বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারি-বেসরকারি তথ্য বলছে, বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা এখন অনেকটাই ভারতের ওপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছর ভারত থেকে ৩৪১ কোটি টাকার কিছু বেশি মূল্যের চাল আমদানি হয়েছিল দেশে। সেখান থেকে প্রায় ২৪ গুণ বেড়ে গত অর্থবছরে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৫৪১ কোটি ৭০ লাখ টাকার। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই চাল আমদানিতে রেকর্ড পরিমাণ এলসি খোলার বিষয়টি এরই মধ্যে আলোচনায়ও এসেছে।

শুধু চাল নয়, একই চিত্র দেখা যাচ্ছে গমের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশ এখন ভারতে উৎপাদিত গমের শীর্ষ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। ভারতীয় বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের (ভারতে অর্থবছরের হিসাবায়ন হয় এপ্রিল-মার্চ সময়সীমায়) প্রথম নয় মাসে (এপ্রিল-ডিসেম্বর) দেশটি থেকে গম রফতানি হয়েছে ১৪৩ কোটি ২৮ লাখ ডলারের। এর মধ্যে ৮৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের গম এসেছে বাংলাদেশে। সে হিসেবে এ নয় মাসে ভারতের মোট গম রফতানির ৫৮ শতাংশেরও বেশি এসেছে বাংলাদেশে।

ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ আমদানির পরও দেশের খাদ্যপণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে প্রধান খাদ্যশস্য চালের বাজারে এখনো বেশ অস্থিরতা রয়েছে। এমন অবস্থায় প্রয়োজনে আরো চাল আমদানি করা হবে বলে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। ব্যবসায়ীরা পণ্যটি আমদানির জন্য একের পর এক এলসি খোলার আবেদন করে চলেছেন।.. ..

রুশ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা

রূপপুরের অর্থ লেনদেনে মানা

০৪ মার্চ ২০২২, প্রথম আলো

রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংকের ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে অর্থ লেনদেন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার যে ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক এই প্রকল্পের অর্থ লেনদেন করে, সেই রুশ ব্যাংকটি তাদের সঙ্গে আপাতত লেনদেন থেকে বিরত থাকতে বলেছে বাংলাদেশকে। কারণ রাশিয়ার ওই ব্যাংক বৈশ্বিক অর্থ লেনদেনের মাধ্যম সুইফটের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে।

রাশিয়ার ব্যাংকটির নাম ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (ভিইবি)। তারা কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুইফট ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি বার্তা পাঠায়। ওই বার্তায় লেনদেন না করার জন্য বলা হয়। ব্যাংকটি এ-ও বলেছে, বাংলাদেশ যদি রূপপুর প্রকল্পের অর্থ বিলম্বে পাঠায়, তাহলেও কোনো বিলম্ব ফি দিতে হবে না।

বাংলাদেশে ক্ষেপণাস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র: সত্যাসত্য নিশ্চিত করেননি চীনা দূত

১৩ মার্চ ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাংলাদেশে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই না করে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, খবরটি তার যাচাই করতে হবে।

রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, চীন নিজ দেশের বাইরে বাংলাদেশ কিংবা অন্য কোনো দেশেই সামরিক স্থাপনা বা ঘাঁটি নির্মাণ করবে না।

“যদি বাংলাদেশ সরকার অনুরোধ করে মেরামত কারখানার মতো কিছু করার, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। আমি এ বিষয়ে প্রকাশিত খবরটি নিশ্চিত করতে পারছি না। আমাকে এটা যাচাই করতে হবে।”

বাংলাদেশে চীন একটি ক্ষেপণাস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ হাব নির্মাণ করতে যাচ্ছে বলে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাপানি সংবাদমাধ্যম নিকেই এশিয়া।

তাতে বলা হয়, “২০১১ সালে চীনের সরবরাহ করা ভূমি থেকে আকাশে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি হাব নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। আর তাতে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে ভারত।”

এই স্থাপনা নির্মাণে চীনা কোম্পানি ভ্যানগার্ড সহযোগী হিসাবে থাকছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা ও বেইজিংয়ের তরফে এই বিষয়ক চুক্তির বিষয় ঘোষণা করেনি। তবে দুই পক্ষ এ বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের রুশ রাষ্ট্রদূতের খোলা চিঠি

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ

১৪ মার্চ, ২০২২, বণিক বার্তা

ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ করেছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মানতিতস্কি। বাংলাদেশে নিযুক্ত এ উচ্চপদস্থ রুশ কর্মকর্তা বলেছেন, এ দেশের গণমাধ্যম-সম্প্রচারমাধ্যমগুলো পশ্চিমাদের মতোই ‘রাশিয়া-বিরোধী প্রচারণা’ শুরু করেছে।

রাশিয়ার প্রতি ঘৃণা, পক্ষপাত ও কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে প্রতিবেদনগুলো করা হচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যম-সম্প্রচারমাধ্যমের প্রতি একটি খোলা চিঠি লিখেছেন আলেকজান্ডার ভি মানতিতস্কি। বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার দূতাবাসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।

চিঠিতে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি ইউক্রেন ইস্যুতে গত কয়েকদিনের পশ্চিমা সংবাদ সংস্থার বিভিন্ন প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছি। একই সঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকার কিছু বিশ্লেষণও আমার কাছে আছে। এসব লেখা মূলত রাশিয়াবিরোধী প্রোপাগান্ডা। অনেক সময় এসব লেখার মাধ্যমে এমন কিছু প্রচার করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ পক্ষপাতমূলক। এসব লেখা পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যম থেকে স্পষ্টতই রুশো-ফোবিক হিস্টিরিয়া’র দিকে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশী কয়েকটি পত্রিকা ও সম্প্রচারমাধ্যম বিস্তৃতভাবে সেরকম কিছুই করছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে আকসা ও জিসোমিয়া চুক্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র

২১ মার্চ ২০২২, যুগান্তর

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আকসা ও জিসোমিয়া নামের দুটি চুক্তি সই করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আকসার (অ্যাকুজিশান অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট) অধীনে মার্কিন বাহিনী খাদ্য, জ্বালানি, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি বিনিময় হয়ে থাকে। জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট) চুক্তির অধীনে হয় সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের বিনিময়। অপরদিকে, র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ সময় র‌্যাবের মানবাধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপের একটি নথি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অষ্টম অংশীদারি সংলাপে এই নথি হস্তান্তর হয়। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি সংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।

সুলভে সমরাস্ত্র দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

০৮ এপ্রিল ২২, সমকাল

বাংলাদেশের কাছে সুলভ মূল্যে সমরাস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রয়োজনে এ জন্য ঋণ সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছে বিশ্ব সমরাস্ত্র বাজারের শীর্ষতম দেশটি। জবাবে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে পরবর্তী সময়ে আরও আলোচনা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সহযোগিতার অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্নিষ্ট একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে প্রশান্ত-ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’তে (আইপিএস) অংশগ্রহণের জন্যও বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর জবাবেও বাংলাদেশ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে এবং আইপিএস যেন কোনো প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করার জন্য ব্যবহূত না হয়, সে বিষয়ে ঢাকার আগের অবস্থান আবারও ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিপীড়ন-দুর্নীতির দায়মুক্তি পাচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র

১৩ এপ্রিল ২২, সমকাল

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিপীড়ন ও দুর্নীতিকে ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেওয়ার তথ্য রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্নীতি, নিপীড়ন ও হত্যার ঘটনাগুলোর তদন্ত এবং বিচারে বাংলাদেশ সরকার অল্প কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। 

২০২১ সালের বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে এসব তথ্য উঠে আসে। মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

বাংলাদেশের ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়,  বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী দেশটিতে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে  এবং এখানে অধিকাংশ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ওপর ন্যস্ত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ। যদিও  বিরোধীদের পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ নানা অনিয়মের কারণে ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক বাহিনী, প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনী জাতীয় প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত থাকে। তবে তারা কিছু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে। আর সামরিক বাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সক্রিয় নিয়ন্ত্রণে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অসংখ্য নিপীড়নের ঘটনা ঘটিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত যেসব গ্রহণযোগ্য খবর রয়েছে সেগুলো হলো- বেআইনি হত্যাসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড; জোরপূর্বক গুম; সরকারের পক্ষে সরকার বা তার সংস্থার দ্বারা নাগরিকদের ওপর নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ; কারাগারে রূঢ় এবং জীবন নাশের হুমকিজনক পরিবেশ; নিবর্তনমূলক গ্রেপ্তার বা আটক; রাজনৈতিক গ্রেপ্তার; অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তির ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ; বিচারবিভাগের স্বাধীনতার জন্য বাধা; ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বেআইনি হস্তক্ষেপ; কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উঠলে তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেওয়া; বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, যার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি করা; ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ; শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সমিতির স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে সংগঠন, তহবিল বা বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজ সংগঠনের ওপর বিধিনিষেধমূলক আইন, স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিক সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ এবং ভয়াবহ ধরনের শিশুশ্রমের উপস্থিতি।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ

২৬ এপ্রিল ২২, সমকাল

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের সহযোগিতা চাওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, ভারত বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উত্থাপন করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

ড. মোমেন বলেন, ভারত বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উত্থাপন করবে। যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ লাখ ভারতীয় বসবাস করে, তারা খুবই শক্তিশালী। তারাও সরকারকে বলেছে, এটি হয়েছে শুধু ভারত আমাদের বন্ধু বলে।

বিবিধ

‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান, প্রজ্ঞাপন জারি

০২ মার্চ ২০২২, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

এখন থেকে জাতীয় স্লোগান হবে ‘জয় বাংলা’।

হাই কোর্টের আদেশ বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ সকল জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করিবেন।“

পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয়োজনেও স্লোগানটি ব্যবহার হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশ সমাপ্তির পর এবং সভা-সেমিনারে বক্তব্যের শেষে শিক্ষকগণ ও ছাত্রছাত্রীবৃন্দ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করিবেন।”

দুই বছর আগে হাই কোর্টের এক রায়ে জাতীয় দিবস, সরকারি অনুষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চারণের উপর জোর দিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনার আলোকে ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

আইনজীবী বশির আহমেদের করা এক রিট মামলার নিষ্পত্তি করে ২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত দেয় হাই কোর্ট।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ থেকে আসা সেই রায়ে বলা হয়, “আমরা ঘোষণা করছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। সকল জাতীয় দিবসগুলোতে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ এবং রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে যেন জয়বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

“সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পর ছাত্র-শিক্ষকগণ যেন জয়বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।”

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলে, জয় বাংলা জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। জয় বাংলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান এবং জয় বাংলা ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

“আবেদনকারী সংবিধানের ৩ ও ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন। কিন্তু এটা এই আদালতের এখতিয়ারবর্হিভূত। কারণ কোনো আইন প্রণয়ন এবং সংবিধান সংশোধন করার একমাত্র অধিকার জাতীয় সংসদের।”

তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ রুলের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছে উল্লেখ করে রায়ে আদালত বলে, আইনসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করায় একমত পোষণ করেছেন।

মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের মধ্যে

১৮ মার্চ, ২০২২, বণিক বার্তা

দেশে মোট মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশের বয়সই ৩৫ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে তরুণদের মাদক গ্রহণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। মাদকসেবীদের ওপর পরিচালিত মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। কর্মক্ষম বয়সীরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ায় দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মাদকাসক্তদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলেও মত তাদের।

সারা দেশের মাদকসেবীদের ওপর ডিএনসির পরিচালিত বয়সভিত্তিক জরিপের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে মোট মাদকাসক্তদের মধ্যে ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ বছরের নিচের এ বয়সীদের শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এর পরের ধাপে অর্থাৎ ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদকসেবীদের হার ১৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদক সেবনের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা গেছে। ১৭ দশমিক ২৬ শতাংশ মাদকসেবীর বয়স ২৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। আর ৩১ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদকাসক্তির হার ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। ৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদকসেবীর হার ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ৪১ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদকসেবীর হার ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ মাদকসেবীর বয়স ৪৬ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। আর ২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ মাদকসেবীর বয়স ৫০ বছরের ওপরে।

শিক্ষা, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি

‘তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৩৪ শতাংশ পড়তে পারে, ১৮ শতাংশ গুণতে পারে’

৩০ মার্চ ৩০, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বাংলাদেশে তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিশুদের মাত্র ৩৪ শতাংশের পড়তে পারে। এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৮ শতাংশের গুণতে পারার প্রাথমিক দক্ষতা আছে। এক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অবস্থা আরও খারাপ।

আজ বুবধার ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ‘শিশুরা কি সত্যিই শিখছে?’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে ৩২টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে মহামারির আগে ও দুই বছর পর স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও শিখন ঘাটতির কথা তুলে ধরা হয়েছে।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •