সম্পাদকীয় ভূমিকা

সম্পাদকীয় ভূমিকা

বিশ্বের সাম্প্রতিক দুটো ঘটনা আমাদের বিশেষ মনোযোগ দাবি করে। এর একটি হলো ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ও ন্যাটো প্রশ্ন এবং আরেকটি হলো শ্রীলংকার ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট। এই দুটো বিষয়েই এই সংখ্যায় লেখা প্রকাশিত হলো।

ইউক্রেন নিয়ে দুটো লেখা যাচ্ছে। একটিতে সেখানে রুশ হামলা বিষয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অন্য লেখায় মনোযোগ দেয়া হয়েছে আরব ইসরাইল যুদ্ধ কেন্দ্র করে সত্তরের দশকে সৃষ্ট জ্বালানি সংকটের সঙ্গে বর্তমান সময়ে সৃষ্ট সংকটের ভিন্নতা এবং  পরাশক্তিগুলোর স্বার্থের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিশ্লেষণে। এরকম পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য কী বার্তা দেয় সেদিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এই লেখায়।

শ্রীলংকা নিয়েও দুটো লেখা যাচ্ছে। এই দেশ যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে তার পেছনে একটি বড় কারণ সার্বভৌম বন্ড ভিত্তিক ঋণ নির্ভরতা বৃদ্ধি এবং পরিশোধ ক্ষমতা হ্রাস। বাংলাদেশকেও এই পথে নেবার চেষ্টা আছে বহুদিন। এই পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্ব বিবেচনা করে ‘সার্বভৌম বন্ড’ বিষয়টির ব্যাখ্যা করে ২০১২ সালে প্রকাশিত একটি লেখা এখানে পুন:প্রকাশ করা হচ্ছে। অন্য লেখায় তথ্য উপাত্তসহ বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সংকটের উৎস সন্ধান করে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ সনাক্ত করা হয়েছে।

পুঁজি ও মুনাফামুখি উন্নয়ন দর্শন বাংলাদেশের শক্তির জায়গা দেখতে সক্ষম বা ইচ্ছুক নয়। এদেশে যেমন আছে অসাধারণ প্রাণবৈচিত্র তেমনি আছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র। কৃষি প্রতিবেশবিজ্ঞান নিয়ে লেখায় বৈচিত্র ও লোকজ্ঞানের কথা আলোচনার পাশাপাশি বিপদের উৎসের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

গবেষক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, পরিবেশবাদীদের পাশাপাশি শিল্পীরাও সুন্দরবন আন্দোলনকে ঘিরে তাদের চিন্তা ও সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন নানাভাবে। এখন পর্যন্ত সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনকে ঘিরে এই সময়কালে রচিত প্রায় ৪১ (একচল্লিশ)টি গানের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব গানের অন্তর্নিহিত বার্তা ও শক্তি অনুসন্ধান করে রচিত একটি লেখাও থাকছে এই সংখ্যায়।

আনন্দের খবর যে, বাংলাদেশে ম্রো ভাষার প্রথম ব্যাকরণ তৈরি হয়েছে। এই চেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়ে নিজস্বতার সন্ধান ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কিছু সতর্কবার্তা নিয়ে একটি লেখা এই সংখ্যায় প্রকাশিত হলো।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এই পুরো অঞ্চলে ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে রেশন ব্যবস্থা চালু হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও এই ব্যবস্থা অব্যাহত ছিলো। বিশ্বব্যাংক ও ইউএসআইডির সুপারিশ অনুযায়ী দুর্নীতি, অপচয় ইত্যাদি অজুহাত তুলে ৭০ দশকের শেষ থেকে এই ব্যবস্থা তুলে দেয়া শুরু হয়। অথচ ভারতে একটি শক্তিশালী রেশন ব্যবস্থা এখনও কাজ করছে। কীভাবে তারা এটি অব্যাহত রাখতে পারছে সেটাই বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে একটি প্রবন্ধে। বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা এটি অনলাইনে আগাম প্রকাশ করেছিলাম। এখন এটি মুদ্রণ সংখ্যাতেও প্রকাশ করা হলো।    

ঔপনিবেশিক শাসনকালে পুঁজির ক্রমবর্ধমান দাপটে যুক্তরাষ্ট্রে যখন আদি আমেরিকানসহ মানুষ প্রাণ প্রকৃতি ছিন্নভিন্ন হচ্ছিলো তখন আরও অনেককিছুর সাথে নদীগুলোও দূষণ অব্যবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। অনেক পরে নাগরিকদের চাপ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নাগরিকদের পাশাপাশি নদীসহ প্রকৃতি সুরক্ষার জন্যও বহুরকম আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি নদীর মৃতপ্রায় অবস্থা থেকে জীবনপ্রাপ্তির অভিজ্ঞতা পরীক্ষা করা হয়েছে একটি লেখায়। সেইসাথে বাংলাদেশের নদী সংক্রান্ত নীতিমালার কিছু দিক নিয়ে আরেকটি আলোচনা প্রকাশ করা হলো।

বাংলাদেশে গত কিছুদিনে টিপ, হিজাব, ক্লাশে বিজ্ঞান পাঠ, বাংলা নববর্ষ উদযাপন নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে, অসহিষ্ণুতাও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। ক্লাশে পাঠদানের অপরাধে শিক্ষককে পুলিশ আটকও করেছে। প্রকৃতপক্ষে নারীর পোশাক, সজ্জা ও উৎসব নিয়ে বিতর্ক বহুদিকে ছড়িয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা সামনে আরও মতামত ও বিশ্লেষণ  প্রকাশ করবো। এই সংখ্যায় প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় বোরকা নিয়ে একটি পুরনো লেখা পুন:প্রকাশ করা হচ্ছে।

ভারতের প্রাচীন ইতিহাস ব্যাখ্যায় একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব দামোদর ধর্মানন্দ কোসাম্বী (ডি.ডি.কোসাম্বী)। তাঁর একটি লেখার অনুবাদ আমরা প্রকাশ করলাম।  চলচ্চিত্র পর্যালোচনা এবং ধারাবাহিক লেখা ‘২২ পরিবারের অতীত ও বর্তমান-৪’, ‘সিপি গ্যাং-এর ‘বেশ্যা’ ব্যানার-১০’ যথারীতি প্রকাশিত হলো।  এছাড়া অনলাইন সংস্করণে আরও পাওয়া যাবে গত কয়েক মাসের বিশেষ সংবাদ সংকলন।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, যানজট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, দখল ও দূষণে প্রাণপ্রকৃতি বিনাশ, শ্রেণী-জাতি-ধর্ম-লিঙ্গীয় বৈষম্য নিপীড়ন, নিরাপত্তাহীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের রাষ্ট্রীয় ধারাবাহিক আয়োজনের মধ্যেও এদেশের মানুষ টিকে থাকার এবং প্রতিবাদ প্রতিরোধের চেষ্টায় জীবিত আছেন। সবাইকে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই।

আনু মুহাম্মদ

২৮ এপ্রিল ২০২২

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •