সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৬ অক্টোবর ২০২১- ২৬ জানুয়ারি ২০২২)
অর্থনীতি
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭.২ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে বলা হয়েছে: আইএমএফ
২৩ অক্টোবর ২০২১, দ্যা বিজনেস ট্রিবিউন অনলাইন বাংলা
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিকে অবমূল্যায়ন করে, রিজার্ভ-বহির্ভূত সম্পদ অন্তর্ভুক্ত করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২১ সালের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সুরক্ষা মূল্যায়নের একটি খসড়া প্রতিবেদনে আইএমএফ বিদেশি সম্পদের ভুল শ্রেণিবিভাগ চিহ্নিত করেছে। এই ভুল শ্রেণিকরণের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক রিজার্ভের আকার বড় হয়েছে।
আইএমএফের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার কথা বলা হয়েছিল, তা আসলে ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে বলা হয়েছে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, প্রকৃতপক্ষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হবে ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বলেছে যে, রিজার্ভের একটি অংশ অর্থায়ন, রেসিডেন্ট ব্যাংকগুলোতে আমানত, নন-ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ডে বিনিয়োগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক বোর্ড ও এর বিনিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
তবু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব রিজার্ভ-বহির্ভূত সম্পদকে বৈদেশিক রিজার্ভের পারফর্ম্যান্স ও ঝুঁকি বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত করে চলেছে।
আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে এরকম অতিরঞ্জন করলে রিজার্ভের পরিমাণ সম্পর্কে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়।’ প্রতিবেদনে আরও হয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষতা এবং আইটি সক্ষমতা দুটোই সীমিত পর্যায়ের।
ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ল লিটারে ১৫ টাকা
০৩ নভেম্বর ২১, সমকাল
ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটারে ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। বুধবার রাত ১২টার পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। এ ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তীসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের মূল্য ছিল প্রতি লিটারে ১২৪.৪১ টাকা বা ১০১.৫৬ রুপি। অথচ বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ৬৫ টাকা অর্থাৎ লিটার প্রতি ৫৯.৪১ টাকা কম। তাই লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
কাল সকাল থেকে বাস-ট্রাক বন্ধের ঘোষণা
০৪ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন এই খাতের মালিক-শ্রমিকেরা। তাঁরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যমান ভাড়ায় চালিয়ে পোষাতে পারছেন না। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিলেও আগামীকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এসব পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
বাড়ল জ্বালানির দাম
দুঃসময়ে জীবনযাত্রায় আরও চাপ
০৫ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরই বাসভাড়া বাড়িয়ে দিলেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাসমালিকেরা। এ রুটে সাধারণ বাসের ভাড়া ছিল জনপ্রতি ৩৬ টাকা, যা ১৪ টাকা বাড়িয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ৫০ টাকা করা হয়েছে।
সরকার গত বুধবার দিবাগত রাতে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেয়। বৃদ্ধির হার ২৩ শতাংশ। ওদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাসমালিকেরা ভাড়া বাড়িয়েছেন ৩৯ শতাংশ।
যাত্রীরা গতকাল সকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাস কাউন্টারে গিয়ে ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডায় জড়ান। তবে কাউন্টারের কর্মীরা বলছিলেন, ভাড়া না বাড়িয়ে তাঁদের কিছু করার নেই। সব বাস কোম্পানিই যেহেতু ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে, সেহেতু যাত্রীদেরও কিছু করার ছিল না।
অসহায় যাত্রীদের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী লোকমান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে, কিন্তু বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তাহলে পরিবহনমালিকেরা কীভাবে ইচ্ছেমতো জনপ্রতি ১৪ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করেন?
এদিকে সরকারিভাবে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ থাকবে বলে এ খাতের মালিক-শ্রমিকেরা জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। জেলা পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে। মালিকেরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যমান ভাড়ায় যানবাহন চালিয়ে পোষানো যাচ্ছে না।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, জ্বালানি তেল হলো একটি ‘কৌশলগত পণ্য’। তেলের দাম বাড়লে তা সরাসরি মানুষের যাতায়াত খরচ বাড়িয়ে দেয়। পরোক্ষভাবে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও সব পণ্যের পরিবহন ব্যয় বাড়ে। যার প্রভাব পড়ে পণ্যের দামে। ফলে আগামী দিনগুলোতে সব ধরনের পণ্যের দাম কিছু কিছু বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শুধু ডিজেল নয়, গত বুধবার মধ্যরাতে বাড়ানো হয়েছে কেরোসিনের দামও, প্রতি লিটারে ১৫ টাকা।
গতকাল বাড়ানো হয় ফার্নেস অয়েলের দাম, লিটারে ৩ টাকা। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বেড়ে যাবে। সরকার ভর্তুকি না দিলে বাড়বে বিদ্যুতের দামও। এদিকে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দামও গতকাল বেড়েছে। ১২ কেজির সিলিন্ডারে বেড়েছে ৫৪ টাকা।
জ্বালানির দাম এমন সময় বাড়ল, যখন বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, মুরগির মাংস, সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে। গতকালই বেসরকারি সংস্থা পিপিআরসি ও বিআইজিডি জরিপের তথ্য তুলে ধরে জানায়, দেশে করোনাকালে নতুন দরিদ্র হয়েছে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ।
পরিবহন ধর্মঘট
ভাড়া বাড়াতে মানুষকে জিম্মি
০৬ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে চলাচলকারী বেশির ভাগ বাস সিএনজিচালিত। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বা এসি বাসের ভাড়া কত হবে, তা মালিকেরাই ঠিক করেন। আর পণ্যবাহী যানবাহনের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। ঠিক হয় দর–কষাকষির মাধ্যমে।
প্রশ্ন উঠেছে, ডিজেলের বাড়তি দামের কারণে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে চলা ধর্মঘটের মধ্যে দুই প্রধান শহরে সিএনজিচালিত বাস বন্ধ কেন? এসি বাস এবং পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিকেরাই-বা কেন ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন?
জ্বালানি মন্ত্রণালয় গত বুধবার রাতে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে। এরপর গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে অঘোষিত ধর্মঘট পালন শুরু করেন বাস, ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকেরা। এতে সারা দেশে মানুষকে গতকাল শুক্রবার ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের। তাই দুর্ভোগ কবে শেষ হবে, তা–ও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এমন অবস্থায় সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিবহন মালিকেরা ভাড়া বাড়াতে মানুষকে জিম্মি করেছেন। সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাসভাড়া নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এ নিয়ে বৈঠক ডেকেছে আগামীকাল রোববার, ডিজেলের দাম বাড়ানোর তিন দিন পর। এর মধ্যেই ধর্মঘট শুরু করে দিয়েছেন মালিকেরা। পরিবহন খাত সূত্রের দাবি, সরকার ভাড়া পুননি৴র্ধারণ করবে, এটা সবাই জানেন। তারপরও ধর্মঘট ডাকা হয়েছে ভাড়া বাড়ানোর বৈঠকে দর–কষাকষিতে এগিয়ে থাকার জন্য। যাতে বাড়ানোর হার মালিকদের ইচ্ছা অনুযায়ী হয়।
চাকরি না পাওয়ার হতাশায় যুবকের আত্মহত্যা
০৬ নভেম্বর ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন
চাকরি না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে রাজধানীর সবুজবাগে এক যুবক আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই যুবকের নাম রাজীব চক্রবর্তী । তার পরিবার বলছে, অটোমোবাইলে ডিপ্লোমা করে বেকার ছিল সে। একটি টিউশনি করছিল। করোনাকালে সেটাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাকরি চেষ্টা করছিল। চাকরি না পেয়ে হতাশায় সে আত্মহত্যা করতে পারে। শুক্রবার (৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সবুজবাগ থানার উপ-পরিদর্শক এসআই আবির দেবনাথ বলেন, বেকার থাকায় হতাশা ও দুশ্চিন্তায় নিজের ওপর অভিমান করে নিজের রুমে ফ্যানের সঙ্গে দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করে রাজীব। মৃতদেহ উদ্ধার করে শনিবার (৬ নভেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি।
মৃতের বড় ভাই রাজেশ চক্রবর্তী জানান, রাত সাড়ে দশটার দিকে তাকে খাবার খেতে ডাকতে গেলে রুমের দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় সে গলায় ফাঁস দিয়েছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে।
ডিজেল–কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি
বোরোতে কৃষকের খরচ বাড়বে ৭৫৭ কোটি টাকা
০৭ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
দেশের বেশির ভাগ এলাকায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজও চলছে সমানতালে। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের জমিতে সেচ দেওয়া শুরু হবে। এ সেচ দেওয়ার যন্ত্রের প্রধান জ্বালানি ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ১৫ টাকা। এতে করে এবারের বোরো মৌসুমে কৃষকের সেচ বাবদ বাড়তি খরচ হবে ৭৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এ হিসাব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। অন্যদিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, বিঘাপ্রতি সেচের জন্য বাড়তি ৩০০ টাকা খরচ জোগানোর পাশাপাশি ধান বিক্রিতে প্রায় ৩ শতাংশ মুনাফা কমবে কৃষকের।
কৃষিবিষয়ক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে, কৃষকের ধানের উৎপাদন খরচ প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সার ও কীটনাশকের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কৃষিশ্রমিকের মজুরিও বাড়ছে। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ বছরে বাড়ছে এক থেকে দুই টাকা করে। সরকারি হিসাবে, গত মৌসুমে বোরো ধানের কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ১ হাজার ৮০ টাকা। এবার সেচের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপ তৈরি করবে।
তৃতীয় দিনের পরিবহন ধর্মঘট: পথে ভোগান্তি, বাজারে আগুন
৭ নভেম্বর, ২০২১, কালের কন্ঠ
জ্বালানি তেল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ার প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘট চলছে। সড়কে চলছে না কোনো বেসরকারি বাস। তবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, লেগুনা চলাচল করছে। তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
আজ রবিবার সকাল থেকেই রাস্তায় যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে কিছু বিআরটিসির বাস চলাচল করেছে। বেসরকারি বাস না চলায় সড়কের আর যাত্রীদের দখল নেয় রিকশা, সিএনজি, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল। অ্যাপের বদলে বেশির ভাগ মোটরসাইকেল খ্যাপে চলছে। ধর্মঘটের কারণে অটোরিকশা, রিকশা, লেগুনায় নেওয়া হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায়ই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভ্যান, কাভার্ডভ্যানে চড়েও যাচ্ছেন কর্মস্থল ও গন্তব্যে।
সড়কে পরিবহন সংকটে যাত্রীর চাপ গিয়ে পড়েছে ট্রেনের ঘাড়ে। ট্রেনে ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ না থাকলেও বেড়েছে যাত্রীর চাপ। যদিও করোনার শুরুতে বন্ধ হওয়া ট্রেনের ‘স্ট্যান্ডিং’ টিকিট বিক্রি এখনো চালু হয়নি। তবুও আন্ত নগরের অবস্থা তুলনামূলক কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীর চাপে বেসামাল কমিউটার ট্রেন।
এদিকে, খরচ বৃদ্ধি ও ঝুঁকির অজুহাতে পণ্য পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পণ্যের বাজারে। বিশেষ করে সবজির সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় দাম বেড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। প্রতিটি নিত্যপণ্য কিনতে ক্রেতাকে বাড়তি ৫ থেকে ১০ টাকা গুণতে হচ্ছে।
ভাড়া বাড়ল ২৭ শতাংশ, পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
০৭ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
দেশে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাসের ভাড়া গড়ে ২৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভাড়া নির্ধারণী কমিটি। একইভাবে মহানগর এলাকার বাসভাড়া ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা এবং মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা থেকে ৮ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আজ রোববার বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বসেন সরকারের কর্মকর্তারা। সেখানে ভাড়া বাড়ানো নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে এসব বিষয়ে মতৈক্য হয়।
প্রস্তাব অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাস-মিনিবাসে কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সা ভাড়া আদায় করা হবে। বর্তমানে ভাড়া ১ টাকা ৪২ পয়সা। মহানগর এলাকায় বাসে যাত্রীপ্রতি কিলোমিটারে আদায় করা হবে ২ টাকা ১৫ পয়সা। আর মিনিবাসে আদায় করা হবে ২ টাকা ৫ পয়সা। বর্তমানে বড় বাসে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসে নেওয়া হয় ১ টাকা ৬০ পয়সা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বললেন
রাত পোহালেই আয় বাড়ছে, আমরা অজান্তেই বড়লোক হয়ে যাচ্ছি
০৭ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
করোনার কারণে দেশের সার্বিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমরা কিছুটা পিছিয়েছি, আমাদের লস (ক্ষতি) হয়েছে। কিন্তু আমরা পুষিয়ে নেব। তবে ইতিমধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয়ও বড়েছে। আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শনৈ শনৈ বৃদ্ধি পাচ্ছে, রাত পোহালেই আয় বাড়ছে বাংলাদেশের, আমরা টেরই পাচ্ছি না। আমরা অজান্তেই বড়লোক হয়ে যাচ্ছি।’
সুনামগঞ্জে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন। আজ রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই সভা হয়। এ সময় তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘তবে বড়লোকের বড়লোকি কিছু রোগও হয়, সেই রোগ থেকে যেন আমরা মুক্ত থাকি।
ডিজেলের দাম না বাড়িয়ে আর যেসব বিকল্প ছিল
০৮ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
সাত বছর টানা মুনাফা করেছে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তাদের তহবিলে বিপুল অর্থও জমা হয়েছিল। তবে সে অর্থ সরকার নিয়ে নিয়েছে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা মনে করছেন, টাকা সরকার না নিলে অন্তত ছয় মাস ডিজেল ও কেরোসিনের দাম না বাড়িয়েও চলা যেত।
সরকারের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকার বেশি। মুনাফা থেকে ভাগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বিপিসির তহবিল থেকে দুই দফায় ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বিপরীতে বিপিসিকে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে। ফলে পাঁচ মাসে ডিজেল বিক্রিতে ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা লোকসান হতেই গত বুধবার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো লিটারে ১৫ টাকা। এ কারণ দেখিয়ে রোববার দেশে বাসভাড়া ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।.. ..
দাম বাড়ানো নিয়ে জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলছেন, দাম না বাড়ালেও বছর শেষে বিপিসির লোকসান কিছুতেই আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি হতো না। এ পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়ে বা কর ছাড় দিয়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এড়ানোর সুযোগ ছিল।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিতে হলে মূল্য না বাড়িয়েও হয়তো আরও ছয় মাস বিপিসি চালিয়ে নিতে পারত। তিনি বলেন, মুনাফা করা বিপিসির লক্ষ্য নয়। কিন্তু ঘাটতি বাড়তে থাকলে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সরকারকে পরিস্থিতি জানানোর পর দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে, বিপিসি তা বাস্তবায়ন করছে।
অর্থনীতিবিদেরা জ্বালানিকে ‘কৌশলগত পণ্য’ হিসেবে গণ্য করেন। এর কারণ, সব পণ্য ও সেবার দামের ওপর প্রভাব পড়ে জ্বালানির দাম বাড়লে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে জ্বালানি তেলের ব্যবসা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সরকার প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখে, যাতে দেশের মানুষের ওপর চাপ না পড়ে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, জুনে প্রতি লিটার ডিজেলে ৩ টাকা লোকসান হয়েছে। অক্টোবরে লিটারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ১৩ টাকার মতো। এতেই লিটারপ্রতি দাম ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, সরকার আর ভর্তুকি দিতে রাজি নয়, বরং বিপিসিকে কীভাবে লাভে রাখা যায়, সেদিকেই নজর বেশি।
জ্বালানি তেলের দাম না বাড়াতে চাইলে সরকারের কাছে আরও একটি উপায় ছিল। সেটি হলো, কর কমিয়ে দেওয়া। বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, এখন ডিজেল আমদানিতে মোট করভার প্রায় ৩৪ শতাংশ। বিপিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এক লিটার ডিজেলে এখন কর ও ভ্যাট দাঁড়ায় ১৯ টাকার মতো।
বিপিসির কাছ থেকে কর বাবদ সরকার কত টাকা পায়, তা দেখা যায় সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে। হিসাব বলছে, ২০১৯–২০ অর্থবছরে বিপিসি সরকারের কোষাগারে ৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা ভ্যাট, ১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা আমদানি শুল্ক, ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা আয়কর এবং ৩০০ কোটি টাকা লভ্যাংশ জমা দিয়েছে। এ ছাড়া ওই অর্থবছর সরকার বিপিসির ৫ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত অর্থ নিয়ে নিয়েছে। সরকারি কোষাগারে গেছে মোট প্রায় ১৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।
সেখান থেকে এ বছর সংকটকালে কি ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়া যেত—এ প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, সেটাই হওয়া উচিত ছিল।
হিসাবের ধার ধারছে না, ভাড়া নিচ্ছে আরও বেশি
০৯ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
সকাল সাড়ে আটটা। রাজধানীর ফার্মগেটে বিকল্প পরিবহনের একটি বাসে উঠে বসলাম। গন্তব্য মিরপুর–১০। বসতেই পাশের এক যাত্রীকে বলতে শোনা গেল, ‘দুঃখের বিষয় হইল, তেলের দাম কমলে ভাড়া কমবে না।’
চালকের সহকারী (হেলপার) নূরে আলম এসে ভাড়া চাইলেন। বললাম, ‘মিরপুর ১০ নম্বর যাব। ভাড়া কত?’ তিনি বললেন, ‘২০ টাকা’। পাশেই জানালায় নতুন ভাড়ার একটি তালিকা সাঁটিয়ে দেওয়া আছে। সেখানে লেখা, ‘ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১২-এর দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত ২ টাকা ১৫ পয়সা হিসাবে ভাড়া ১৯ টাকা ৩৫ পয়সা।’ মিরপুর-১০ থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত দূরত্ব ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সেই হিসাবে ভাড়া হয় ১৫ টাকার কম। তাই ভাড়া ১৫ টাকা দিতে চাইলে চালকের সহকারী তা নিতে নারাজ। অনেক কথার পর ২০ টাকা নিয়েই ক্ষান্ত হন তিনি।
আমার ঠিক পাশের আসনে বসা ছিলেন আবদুস সালাম নামের পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। আমার একটু আগেই তিনি ভাড়া দিয়েছেন। তখন তিনি চালকের সহকারীকে প্রশ্ন করলেন, ‘ফার্মগেট থেকে আমি যাব আগারগাঁওয়ের তালতলা। তাহলে আমার কাছ থেকে ২০ টাকা রাখলেন কেন? বাকি টাকা ফেরত দেন।’ হেলপার বললেন, ‘২০ টাকাই ভাড়া। টাকা ফেরত হবে না।’ ফার্মগেট থেকে তালতলা চার কিলোমিটার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ টাকা ভাড়া হয়, সেখানে ২০ টাকা নেওয়া হলো।
এভাবে কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট থেকে মিরপুরগামী সব যাত্রীর কাছ থেকেই ২০ টাকা করে আদায় করছিলেন বিকল্প পরিবহনের এই সহকারী।
সরকার মহানগরে গণপরিবহন ভাড়া বাড়িয়ে কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। কিন্তু মালিকপক্ষ আরেকটি ভাড়া নির্ধারণ করে। সেটাকে তারা ‘ওভিল’ (ওয়ে বিল) বলে থাকে। একটি সুনির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা পরিবহন মালিকপক্ষের নিয়োগকৃত কর্মী বাস থামিয়ে যাত্রীর সংখ্যা লিখে রাখেন। সে অনুযায়ী তাঁরা ভাড়ার হিসাব করে থাকেন।
ভাড়া নিয়ে কয়েকজন যাত্রী উত্তেজিত হয়ে পড়লে চালকের সহকারী নূরে আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘মামা, আঙ্গরে কইয়া লাভ নাই। আমরা একজনের চাকরি করি। আঙ্গরে পারবেন দুই কথা কইতে। আমাগো কিছুই করার নাই। ওরা এইখানে যা লেখছে, ওরা (মালিকপক্ষ) রাত্রে আমার কাছ থেকে তাই নিব।’.. ..
কলকাতায় ডিজেলের দাম বেশি, বাস ভাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামের চেয়ে কম
০৮ নভেম্বর ২১, সমকাল
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় সোমবার ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১০৪ রুপি। সর্বশেষ বিনিময় মূল্যে (প্রতি রুপি ১.১৬ টাকা) রূপান্তর করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় তা দাঁড়ায় ১২০ টাকা। বাংলাদেশে ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পরে হয়েছে ৮০ টাকা।
পশ্চিমবঙ্গে ডিজেল কিনতে হলে গুনতে হয় এর চেয়েও লিটারে ৪০ টাকা বেশি। তবে ডিজেলের দাম বেশি হলেও পশ্চিমবঙ্গে বাস ভাড়া বাংলাদেশের চেয়েও কম।
পশ্চিমবঙ্গে সর্বশেষ বাস ভাড়া বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের জুন মাসে। সে সময় ভাড়া বাড়িয়ে সর্বনিম্ন বাস ভাড়া করা হয় ৭ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ টাকা ১০ পয়সা। এই ভাড়ায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যায়। এর পর ৪ থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া ৯ রুপি বা ৯ টাকা ২৫ পয়সা, ১২ থেকে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ১০ রুপি বা ১০ টাকা ৪১ পয়সা, ১৬ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১১ রুপি বা ১২ টাকা ৭২ পয়সা এবং ২০ থেকে ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত ১২ রুপি বা ১৩ টাকা ৮৮ পয়সা।
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ার জেরে গত রোববার বাংলাদেশে দূরপাল্লা ও নগর পরিবহনের বাস ভাড়া গড়ে ২৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কলকাতার তুলনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষকে বাস ভাড়া অনেক বেশি দিতে হচ্ছে। প্রায় তিন গুণ বেশি।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে নগর পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। কলকাতার তুলনায় এ ভাড়া প্রায় দুই টাকা বেশি। এর পর বর্ধিত মূল্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া দাঁড়ায় প্রতি কিলোমিটারে ২.১৫ টাকা হিসাবে ২৫ টাকা ৮০ পয়সা। কলকাতার তুলনায় ১৬ টাকা ৫৫ পয়সা বেশি। ১২ থেকে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া দাঁড়ায় ৩৪ টাকা ৪০ পয়সা। কলকাতার তুলনায় প্রায় ২৪ টাকা বেশি। ১৬ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া আসে ৪৩ টাকা, যা কলকাতার চেয়ে ৩০.২৮ টাকা বেশি। এ ছাড়া ২০ থেকে ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৫১.৬০ টাকা, কলকাতায় যা ১৩.৮৮ টাকা।.. ..
১৮০% নির্মাণব্যয় ওঠার পরও বাড়ছে টোলহার
১৮ নভেম্বর ২০২১, শেয়ার বিজ নিউজ
বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গত জুনে। গত ২ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। ১৬ নভেম্বর থেকে বর্ধিত টোলহার কার্যকরের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। যদিও হঠাৎই তা স্থগিত করে বিবিএ। তবে পুনরায় বর্ধিত টোলহার কার্যকর করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। আজ দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট (১৯ নভেম্বর) থেকে নতুন টোলহার কার্যকর করা হচ্ছে।
যানবাহনভেদে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলহার বাড়ানো হয়েছে ১০-২৫ শতাংশ। পাশাপাশি বিবিএ’র অধীন মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত মুক্তারপুর সেতুর টোলও আজ দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে বাড়ছে। এ সেতুটির টোলহার বাড়ছে যানবাহনভেদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ।
তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত এ সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ছয় হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নির্মাণ ব্যয়ের ১৮০ শতাংশ অর্থ টোল হিসেবে আদায় হয়ে গেছে। এর মধ্যে গত অর্থবছর সেতুটি থেকে টোল আদায় হয় ৬৫৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সেতুটিতে এটি টোল আদায়ের সর্বোচ্চ পরিমাণ। এর আগের (২০১৯-২০) অর্থবছর এ সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছিল ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতুটিতে টোল আদায় বেড়েছে ৯৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা প্রায় ১৭ শতাংশ।
বিপুল আমদানি-মজুত সত্ত্বেও চড়া চালের দাম
১৬ নভেম্বর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশে প্রচুর চাল আমদানি হয়েছে। সেই সঙ্গে কম আমদানি শুল্ক ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাসের পাশাপাশি সরকারি গুদামগুলোতে রেকর্ড মজুত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে চালের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী।
কৃষি বিপণন বিভাগের তথ্য অনুসারে, গত ১১ নভেম্বর বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকার মধ্যে। দেশের সিংহভাগ মানুষ এই চাল কেনেন। গত মে মাসে কেজি প্রতি মোটা চালের দাম ছিল ৪২ টাকা ৬৩ পয়সা। দেশের মানুষের কাছে প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত চালের এই ঊর্ধ্বমুখী দরের ভেতরেই আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত জুলাই থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৭ লাখ ৭৩ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল শূন্যের কোঠায়। আমদানিকৃত চালের মধ্যে সরকার এনেছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার টন। আর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার টন।
মাত্র ১২ বছরেই খেলাপি ঋণ ৫ গুণ বৃদ্ধির আরেক ‘সাফল্য’
২৪ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
অনেক অনেক চেষ্টার পর অন্য রকম একটা মাইলফলক অর্জিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। পরের বছর থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ দেখে দিলে অন্য রকম সেই মাইলফলক থেকে পিছিয়ে পড়েছিল দেশের ব্যাংক খাত। অতিমারির প্রকোপ কমে যেতেই আবার স্বরূপে দেশের ব্যাংকিং খাত। আবার সেই অন্য রকম মাইলফলক। দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এখন এক লাখ কোটি টাকার ওপরে। হাতের কাছে ক্যালকুলেটর না থাকলে সহজ করে বলি, এই অর্থ দিয়ে অনায়াসে চারটি পদ্মা সেতু বানিয়ে ফেলা যেত।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আর এখন তা ১ লাখ ১৬৮ কোটি টাকা। একটা সময় ছিল যখন ব্যাংকে টাকা আমানত হিসেবে রাখলে মাত্র ছয় বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে যেত। কিন্তু আমানতকারীদের সেই রমরমা অবস্থা আর নেই। সে জায়গা দখল করে নিয়েছে ঋণখেলাপিরা। ফলে মাত্র ১২ বছরেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। আর যদি অবলোপন করা ঋণ ধরা হয়, তাহলে তা দেড় লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি চলে যাবে। এখন পর্যন্ত অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এটাকে গোপন খেলাপি ঋণ বলা যায়।.. ..
আসলে খেলাপি ঋণ কত
লুকানো খেলাপি ঋণ নিয়ে আইএমএফের মন্তব্য ছিল, ‘বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ তার তুলনায় অনেক বেশি। প্রকাশিত খেলাপি ঋণের তথ্য দেখলে মনে হবে তা খুব বেশি নয়। কিন্তু প্রকৃত পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০১৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণের হার মাত্র ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু আইএমএফ মনে করে, এর সঙ্গে যুক্ত করা উচিত আরও কয়েকটি বিষয়। যেমন আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে মোট ঋণের ৪ দশমিক ১ শতাংশকে খেলাপি ঋণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, যা অবশ্যই করা উচিত। আবার বিশেষ নির্দেশিত হিসাব বা স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট—এই নামেও রাখা আছে মোট ঋণের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থ। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে অনাপত্তি সার্টিফিকেট (এনওসি) দিয়ে রেখেছে। এ ধরনের ঋণের হার মোট ঋণের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সুতরাং প্রকৃত চিত্র বুঝতে এই তিন ধরনের খেলাপি ঋণ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’
সুতরাং এভাবে হিসাব করলে, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কেননা ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তখন পর্যন্ত ৬৭৫ জন ঋণগ্রহীতা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন। এতে ঋণখেলাপি হিসেবে তাঁদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) উল্লেখ করা হয় না। এ রকম ঋণের পরিমাণ এখন ৭৯ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। আবার বিভিন্ন সময়ে বিশেষ ব্যবস্থায়, সরকারি নির্দেশে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়। যেমন ২০১৫ সালে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণের পুনর্গঠন করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এ রকম বিশেষ নির্দেশিত হিসাবে থাকা ঋণের পরিমাণ ২৭ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিয়ে সে সময় পর্যন্ত আরও ২১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করে দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক। এভাবে হিসাব করলে দেশে তখন খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৪০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।.. …
পাঁচ প্রকল্পে গচ্চা ২৫ হাজার কোটি টাকা
সময় বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যয়ও
৩০ নভেম্বর ২১, সমকাল
চট্টগ্রামে জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে আলোর মুখ দেখছে না। মেয়াদ বাড়ছে প্রতিটি প্রকল্পে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রকল্প ব্যয়ও। সময়ক্ষেপণের মাশুল হিসেবে চট্টগ্রামে শুধু পাঁচটি প্রকল্পেই বাড়তি খরচ হচ্ছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে যথাযথভাবে সমীক্ষা না করা, অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া, চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া, তদারকির দুর্বলতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে।
মূলত যে পাঁচ প্রকল্পে গতিহীনতার ভূত সওয়ার হয়েছে, তার মধ্যে একটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প। এই প্রকল্পের সময় বেড়েছে পাঁচ দফা, ব্যয় বেড়েছে ৯ গুণ। এ ছাড়া ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পে পাঁচবার সময় বাড়ার কারণে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। চসিকের খাল খনন প্রকল্পে এ পর্যন্ত সময় বেড়েছে তিনবার, ব্যয় বেড়েছে চার গুণ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে একবার সময় বাড়ানোর কারণেই ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর মূল প্রকল্পের সময় বেড়েছে দু’বার, যার ফলে ব্যয় বাড়বে দ্বিগুণ।
আড়াইশ বাসের মালিক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ
০১ ডিসেম্বর, ২০২১, বণিক বার্তা
এনা পরিবহনের যাত্রা ১৯৮৪ সালে। মাত্র একটি বাস দিয়ে। ঢাকার মিরপুর-গুলিস্তান রুটে চলাচল করত বাসটি। বর্তমানে লোকাল রুট ছাড়িয়ে আন্তঃজেলা বাস চলাচলের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি হয়ে উঠেছে এনা পরিবহন। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় এখন আড়াইশর মতো বাস রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির স্বত্বাধিকারী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ।
এনা পরিবহনের ব্যবসা সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে গত সাত বছরে। ২০১৩ সালের আগেও এনা পরিবহনের ব্যবসা ছিল মূলত ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটকেন্দ্রিক। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, ওই সময় কোম্পানির বহরে বাসের সংখ্যা ছিল পঞ্চাশের আশপাশে। সে হিসেবে গত সাত বছরে এনা পরিবহনের ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে অন্তত চার-পাঁচ গুণ।
গত কয়েক বছরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের গণ্ডি পেরিয়ে এনা পরিবহনের ব্যবসা ছড়িয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, বিয়ানীবাজার, রংপুর, বুড়িমারী, পঞ্চগড়সহ দেশের দূরপাল্লার প্রায় সব রুটে। সাধারণ চেয়ার কোচ নিয়ে ব্যবসা শুরু করা কোম্পানির বহরে যুক্ত হয়েছে হুন্দাই, স্ক্যানিয়া, ভলভোর মতো অত্যাধুনিক সব বাস। বর্তমানে প্রতিদিনই ঢাকার মহাখালী টার্মিনালের বড় একটি অংশ থাকছে এনা পরিবহনের মালিকানাধীন বাসের দখলে।
এনা পরিবহনকে এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ পরিবহন কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হলেও বিষয়টি মানতে রাজি নন কোম্পানির মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে আমি পরিবহন ব্যবসায় আছি। ব্যবসার অভিজ্ঞতার কথা যদি বলি, তাহলে এ সময়টা খারাপ ছিল না। বর্তমানে আমার কোম্পানির আড়াইশর মতো বাস রয়েছে। এ রকম বহর নিয়ে আরো অনেক কোম্পানিই বর্তমানে ব্যবসা করছে। কাজেই এনা পরিবহনকে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পরিবহন কোম্পানি বলা যায় না।
তবে কোম্পানির বাসের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশিও হতে পারে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, সারা দেশে বর্তমানে যেসব রুটে এনা পরিবহনের বাস চলাচল করছে, সেসব রুটে নিয়মিত কার্যক্রম বজায় রাখতে হলে বহরে আরো বেশিসংখ্যক বাসের প্রয়োজন পড়ে।
গত সাত বছরে এনা পরিবহনের বাসের সংখ্যা যে গতিতে বেড়েছে, একই গতিতে খন্দকার এনায়েতুল্লাহর সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে পরিবহন খাত থেকে প্রতিদিন ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যদিও খন্দকার এনায়েতুল্লাহ শুরু থেকেই বলছেন, অভিযোগটি ষড়যন্ত্রমূলক।
মাত্র একটি বাস দিয়ে যাত্রা করা এনা পরিবহনের উত্থানের গল্পটি জানতে পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট ও প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলা হয়। তারা জানিয়েছেন, ১৯৮৪ সালে ঢাকার মিরপুর-গুলিস্তান রুটে যাত্রা করে এনা পরিবহন। খন্দকার এনায়েতুল্লাহর উত্থান ঘটে নব্বইয়ের দশকে। সে সময় তিনি প্রথমবারের মতো ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন। ওই সময় সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্কালীন মেয়র মির্জা আব্বাস। সংগঠনের প্রভাবে এনা পরিবহনের ব্যবসা বাড়ে। লোকাল রুট ছেড়ে আন্তঃজেলা বাস চলাচলে নাম লেখায় এনা পরিবহন। ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত ব্যবসাটি ছিল মূলত ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটকেন্দ্রিক।
এনায়েতুল্লাহর উত্থান সম্পর্কে দেশের শীর্ষ একটি পরিবহন কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে হরতাল-অবরোধসহ দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি মারাত্মক রকম অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এ অস্থিতিশীলতার মধ্যেও খন্দকার এনায়েতুল্লাহর নেতৃত্বে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেন পরিবহন নেতারা। অবরোধে বাস চালিয়ে ক্ষতির মুখেও পড়েন খন্দকার এনায়েতুল্লাহ। আগুনে পুড়ে যায় এনা পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাস। ক্ষমতাসীন দলের কয়েক নেতার সুনজরে আসেন তিনি। এরপর তাকে আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বর্তমানে খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব। সর্বশেষ গত ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সংগঠনটির কাউন্সিলে দুই বছরের জন্য একই পদে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। আর গত বছর পেয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ।
ফ্ল্যাটে উঠলেই ১০ হাজার টাকা, বস্তিবাসীর না
০৪ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
রাজধানীর মিরপুর সংলগ্ন বাউনিয়া বাঁধের পাশে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জায়গায় টিনশেড ঘর তুলে বসবাস করতেন খোদেজা বেগম। রিকশাচালক স্বামীর আয়ে তাদের সংসার চলত। খোদেজার মতো আরও অনেকেই সেখানে বাস করতেন। কেউ রিকশা চালান, কেউ ওয়ার্কশপে কাজ করেন। কেউবা গৃহকর্মী বা দর্জি দোকানের কর্মচারী। বছর চার-পাঁচ আগে বুলডোজার দিয়ে তাদের বস্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জানানো হয়, উচ্ছেদ হওয়াদের ওই জায়গাতেই ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়া হবে। বস্তিবাসীরা ফ্ল্যাটে থাকবেন। ভুক্তভোগীরা আশায় বুক বাঁধেন। বছর খানেক বাদেই সেখানে পাঁচটি ১৪ তলা ভবনের কাজও শুরু হয়। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করেন বস্তিবাসীরা। গত ৩ আগস্ট ৩০০ বস্তিবাসীকে সেখানে থাকার বরাদ্দপত্র দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। কিন্তু সেই ফ্ল্যাটে এখন তারা থাকতে চান না। এখন পর্যন্ত কেউ ফ্ল্যাটে ওঠেননি।
বরাদ্দপ্রাপ্তরা জানান, ফ্ল্যাটে থাকতে যে শর্ত দেওয়া হয়েছে তা মেনে তাদের পক্ষে থাকা সম্ভব না। মাসিক ভাড়া ধরা হয়েছে সাড়ে চার হাজার টাকা। ওঠার সময় দুই মাসের ভাড়া অগ্রিম দিতে হবে। এর সঙ্গে থাকবে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল। পাইপলাইনে কোনো গ্যাস দেওয়া হবে না। সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হবে। থাকবে নিরাপত্তাকর্মী, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কমন বিদ্যুৎ বিল। এর সঙ্গে আছে সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স ও ঢাকা ওয়াসার স্যুয়ারেজ বিল। সব মিলিয়ে তাদের খরচ হবে প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে এই টাকা জমা দিতে হবে। তবে মাসিক ভাড়া দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক ভিত্তিতে জমা দেওয়া যাবে। তবে সব মিলিয়ে মাসিক ১০ হাজার টাকা দিয়ে তাদের পক্ষে ওই ফ্ল্যাটে থাকা একেবারেই অসম্ভব।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন
ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে সব বাসেই
০৬ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
বাসে যে নির্ধারিত হারের চেয়ে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, তা এবার উঠে এল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে। মন্ত্রণালয় বলেছে, সব ধরনের জ্বালানিচালিত বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর না করা গেলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
ঢাকার অভ্যন্তরে ও দূরপাল্লার পথে বাড়তি ভাড়া নেওয়া, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) চালিত বাসকে ডিজেলচালিত দেখিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় এবং লঞ্চ ও পণ্য পরিবহন খাতে ভাড়া বেড়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে ১ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি সড়ক পরিবহন, শিল্প, বাণিজ্য ও নৌ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।.. ..
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের তৈরি করা পরিবহন খাতে ভাড়া বৃদ্ধিজনিত সৃষ্ট বিশৃঙ্খলাসংক্রান্ত এই বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার ভেতরে চলাচলকারী সিএনজিচালিত বাসগুলোতে ক্ষেত্রবিশেষে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণের বেশি নেওয়া হচ্ছে। যেমন গুলিস্তান থেকে বাড্ডার দূরত্ব সাত কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত ভাড়া দাঁড়ায় ১২ টাকা। অথচ এই পথে চলাচলকারী ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। মিরপুর ১২ নম্বর সেকশন থেকে গুলশান ১ নম্বর পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২৩ টাকা। সিএনজিচালিত বাসে আদায় করা হচ্ছে ৪০ টাকা।
সিএনজিচালিত বাসে বেশি ভাড়া নেওয়ার এমন আরও কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
ডিজেলচালিত বাসেও নির্ধারিত হারের চেয়ে বাড়তি নেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে। এতে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, মালিবাগ থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত সাড়ে ১৭ কিলোমিটার দূরত্বে ভাড়া হওয়ার কথা ৩৮ টাকা। কিন্তু এই পথে চলাচলকারী বলাকা পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে ৪৫ টাকা। প্রতিবেদনে এমন আরও কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।
দূরপাল্লার ৬টি রুটে নির্ধারিত ও বর্তমান ভাড়ার হার উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব রুটে যাত্রীপ্রতি ৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে।
ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণের পর সরকার গত ৭ নভেম্বর থেকে বাসভাড়া ২৬-২৮ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এরপর থেকেই বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করে আসছেন যাত্রীরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেও সেটাই উঠে এল।.. ..
সিএনজিচালিত বাস কত
সরকার এ দফায় সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া বাড়ায়নি। তবে বাসগুলো নিজেদের ডিজেলচালিত বলে দাবি করে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর গত ১০ নভেম্বর খন্দকার এনায়েত উল্যাহ দাবি করেন, তাঁদের প্রাথমিক হিসাবে ঢাকায় চলাচল করা ৬ হাজার বাসের মধ্যে ১৯৬টি সিএনজিচালিত।
সিএনজিচালিত বাসে আগের ভাড়া নেওয়া নিশ্চিত করতে বাস কোন জ্বালানিতে চলে তা স্টিকার লাগিয়ে উল্লেখ করার ব্যবস্থা হয়। তবে কত বাস সিএনজিতে চলে, সে হিসাব দিতে পারেনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সারা দেশে মোট ৭৮ হাজার বাসের মধ্যে ৪৬ হাজার ৮০০টি গ্যাসচালিত, যা মোট বাসের ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ ডিজেলচালিত। ঢাকার ভেতরে চলাচলকারী ১২ হাজার ৫২৬টি বাসের মধ্যে ৯৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১১ হাজার ৯০০ বাস সিএনজিচালিত। ঢাকার ভেতরে চলাচলকারী মাত্র ৬২৬টি বাস ডিজেলচালিত।
মালিককে মাসোহারা দিতে হয়
বাস থেকে চাঁদা ও মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। তবে এবার তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উঠে এল। এতে বলা হয়েছে, মালিক সমিতি, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়মিত মাসোহারা দিতে গিয়ে মালিকপক্ষকেও তার আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করতে হয়। পরিবহন খাতের এই দুরবস্থা শুধু ঢাকা মহানগরেই নয়, দেশের প্রায় সব মহানগর ও জেলায় রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মালিকদের দৈনিক জমার টাকা, রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে দেওয়া চাঁদা এবং চালক, কন্ট্রাক্টর ও সহকারীদের দৈনিক আয় তুলতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা দেখা যায়।
দেশের ১ শতাংশ ধনীর আয় ১৬.৩ শতাংশ
১০ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
২০২১ সালে দেশে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর আয় মোট জাতীয় আয়ের ৪৪ শতাংশ। একই সময় দেশের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর আয় ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে পিছিয়ে থাকা ৫০ শতাংশ মানুষের আয় ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ শীর্ষ আয়ের মানুষের সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষের আয়ের ব্যবধান যোজন যোজন।
আর শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর বেলায় দেখা যায়, ২০০৫ সালে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর আয়ের অনুপাত ছিল মোট জাতীয় আয়ের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২১ সালে যা নেমে এসেছে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশে। সম্পদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে এই শ্রেণির হাতে সম্পদ ছিল মোট জাতীয় সম্পদের ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১ সালে যা ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসে।
প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব সম্প্রতি বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদন ২০২২ প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে শীর্ষ ধনীদের সম্পদ ও আয়ের অনুপাত কিছুটা কমেছে। আবার একই সময়ে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে ছয় গুণের বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০০ সালে দেশের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর আয়ের অনুপাত ছিল মোট জাতীয় আয়ের ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৭ সালে তা ১৭ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়। তবে ২০২১ সালে যা নেমে আসে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশে।
সম্পদের ক্ষেত্রেও একই ধারা দেখা যায়। ২০০৫ সালে শীর্ষ ধনীদের আয়ের অনুপাত ছিল মোট জাতীয় আয়ের ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২১ সালে যা নেমে এসেছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে। অর্থাৎ মোট জাতীয় আয়ের সাপেক্ষে শীর্ষ ধনীদের আয় ও সম্পদের অনুপাত কিছুটা কমেছে।
আর শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর বেলায় দেখা যায়, ২০০৫ সালে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর আয়ের অনুপাত ছিল মোট জাতীয় আয়ের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২১ সালে যা নেমে এসেছে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশে। সম্পদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে এই শ্রেণির হাতে সম্পদ ছিল মোট জাতীয় সম্পদের ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১ সালে যা ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসে।
এই চিত্র দেখে মনে হতে পারে, দেশে অসমতার মাত্রা কিছুটা কমেছে। কিন্তু ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির আকার বেড়েছে ছয় গুণের কিছু বেশি। শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর সম্পদ ও আয়ের অনুপাত কিছুটা কমলেও জিডিপির বহর যে হারে বেড়েছে, তাতে এই শ্রেণির মানুষের সঙ্গে বাকিদের ব্যবধান আরও বেড়েছে। তবে এই ২০ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। অনেক মানুষের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে দেশে দৃষ্টিকটুভাবে বৈষম্য বেড়েছে
অন্যদিকে এই তথ্য-উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিশ্লেষকেরা। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, উন্নয়নশীল দেশের তথ্য-উপাত্ত নির্ভরযোগ্য নয়, বিশেষ করে সম্পদের উপাত্ত পাওয়া একরকম অসম্ভব। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথমত, উন্নয়নশীল দেশের ধনীদের সম্পদের একটি বড় অংশ থাকে বিদেশে। দ্বিতীয়ত, দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে যে সম্পদ কর দিতে হয়, সেই বিবরণী থেকে সম্পদের উপাত্ত সংগ্রহ করা হলে তার নির্ভরযোগ্যতা নেই বললেই চলে। মানুষ কর ফাঁকি দিতে সম্পদের প্রকৃত বিবরণী দেয় না।
চাল আমদানিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশ
১৩ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
চাল আমদানিতে এখন বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ওপরে আছে চীন। এরপরে রয়েছে ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া ও সৌদি আরব।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) চলতি মাসের ‘খাদ্যশস্য: বিশ্ববাজার ও বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২০-২০২১ বাণিজ্য বছরে বাংলাদেশ ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাণিজ্য বছর হিসাব করা হয় প্রতিবেদন প্রকাশের আগের ১২ মাস ধরে।
চাল উৎপাদনে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে স্বয়ংসম্পূর্ণ দাবি করে আসছে সরকার। তবে ইউএসডিএর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ এখন বড় আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। যদিও বাংলাদেশের আমদানি ধারাবাহিক নয়। মানে হলো, কোনো বছর উৎপাদন কম হলে বাংলাদেশ চাল আমদানি করে।
এর আগে ২০১৭ সালে দেশে হাওরে আগাম পানি চলে আসায় ফসলহানি ও বন্যার কারণে চাল উৎপাদন কম হয়েছিল। এতে শুল্ক তুলে নিয়ে বিপুল চাল আমদানি করতে হয় সরকারকে।
এদিকে ইউএসডিএর ডিসেম্বরের ‘বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদন’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২১-২০২২ সময়ে চাল উৎপাদন আগের পূর্বাভাসের তুলনায় সাড়ে ৭ লাখ টন কম হতে পারে। উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টন। এর আগে গত মাসে ইউএসডিএ বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, দেশে এ বছর আউস মৌসুমে ধানের আবাদ কম হয়েছে। চলতি বছর বর্ষাকাল দেরিতে শুরু হওয়া ও বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে আমন ধানের উৎপাদনও কিছুটা কম হয়েছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৪৮% ঋণগ্রস্ত
১৩ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
করোনার ধাক্কায় টিকে থাকতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪৮ শতাংশ পরিবারকে ঋণ নিতে হয়েছে। এসব পরিবার গড়ে ৫২ হাজার ৫৩৩ টাকা ঋণ নিয়েছে। এখন সেই ঋণের জালে চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত আটকে থাকতে হবে তাদের।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এক সম্মেলনের প্রথম দিনে গতকাল রোববারের একটি অধিবেশনের মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ইশতিয়াক বারি ‘বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অতিমারি মোকাবিলা ও খানা জরিপের ফলাফল’ তুলে ধরেন।
করোনার মধ্যে ৭৮ শতাংশ পরিবার আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। এর মানে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি পাঁচ পরিবারের চারটিই এমন সংকটে পড়েছে। তবে চর ও উপকূলীয় অঞ্চলে এই দুরবস্থা বেশি প্রকট।
সারা দেশের চর, হাওর, উপকূলীয় অঞ্চল এবং দলিত, আদিবাসীসহ পিছিয়ে পড়া ১ হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর এই জরিপ করা হয়। ঢাকায় মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘মহামারি থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশ: অভিজ্ঞতা অর্জন ও নীতি প্রণয়ন’ শীর্ষক দুই দিনের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়, করোনার মধ্যে ৭৮ শতাংশ পরিবার আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। এর মানে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি পাঁচ পরিবারের চারটিই এমন সংকটে পড়েছে। তবে চর ও উপকূলীয় অঞ্চলে এই দুরবস্থা বেশি প্রকট। পরিবারগুলোর গড়ে ১৯ শতাংশ আয় কমেছে। করোনার প্রথম দিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার কারণে ৭০ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন সদস্য কাজ হারিয়েছেন। অবশ্য পরে তাঁদের ৯৭ শতাংশ আবার কাজ ফিরে পেয়েছেন।
জরিপমতে, সংসারের খরচ চালাতে সঞ্চয় ভাঙতে হয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ পরিবারকে। গড়ে তারা ৩৪ হাজার ৪৬২ টাকার সঞ্চয় ভেঙেছে, যা তাদের পাঁচ মাসের সঞ্চয়ের সমান। আর যাদের সঞ্চয় নেই, তারা ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে। এ ধরনের পরিবারের উপার্জনকারীরা প্রায় সবাই অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মী।
এবার ব্যাংক মালিক হচ্ছেন সাকিব আল হাসান
১৫ ডিসেম্বর, ২০২১, বণিক বার্তা
ক্রিকেটের মাঠের মতোই দেশের করপোরেট জগতে অবস্থান শক্তিশালী করেছেন সাকিব আল হাসান। ব্রোকারেজ হাউজ ও স্বর্ণ আমদানি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের পর এবার দেশের ব্যাংক খাতে যুক্ত হচ্ছেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্তির অপেক্ষায় থাকা পিপলস ব্যাংকের দুটি পরিচালক পদের মালিকানা যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয়ের হাতে। সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি তার মা শিরিন আক্তারও ব্যাংকটির পরিচালক হচ্ছেন। এ-সংক্রান্ত নথিপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে পিপলস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
দেশের সব ব্যাংকের প্রতি মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। সে হিসেবে বর্তমানে দেশে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে হলে সমপরিমাণ অর্থই মূলধন হিসেবে জমা রাখতে হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে হলে প্রয়োজন হয় সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের। সে হিসেবে পিপলস ব্যাংকের প্রতিটি পরিচালক পদের জন্য সর্বনিম্ন ১০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিতে হবে সাকিব আল হাসানকে। তবে ব্যাংকটির মালিকানায় আসতে তিনি ২৫ কোটি টাকারও বেশি মূলধন জোগান দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পিপলস ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা এমএ কাশেমও বণিক বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পিপলস ব্যাংকের মালিকানায় সাকিব আল হাসান ও তার মা যুক্ত হচ্ছেন। এরই মধ্যে আমরা তাদের ফাইল বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছি। সাকিবের মতো একজন তারকাকে উদ্যোক্তা হিসেবে পাওয়া আমাদের জন্য গৌরবের। এখনই আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। পিপলস ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে আমরা চূড়ান্ত লাইসেন্স পাব।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় বেঙ্গল কমার্শিয়াল, সিটিজেনস ও পিপলস নামে নতুন তিনটি ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক চলতি বছরের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। আর চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়ার পর কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে সিটিজেনস ব্যাংক। কিন্তু লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) পাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পিপলস ব্যাংক এখনো লাইসেন্স নিতে পারেনি।
পিপলস ব্যাংক উদ্যোক্তাদের কয়েকজনের অর্থের উৎসে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিকে দেয়া এলওআই স্থগিত করা হয়েছিল। বিতর্কিত উদ্যোক্তাদের বাদ দিলে পিপলস ব্যাংকের এলওআইয়ের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূলধনের অর্থ জমা দিতে পারেনি ব্যাংকটি। শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এলওআইয়ের মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ হিসেবে চলতি মাসের মধ্যেই পিপলস ব্যাংক উদ্যোক্তাদের পরিশোধিত মূলধনের অর্থ জমা দিতে হবে। অন্যথায় ব্যাংকটির এলওআই বাতিল হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী এমএ কাশেম যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের এ বাসিন্দা ব্যাংকের লাইসেন্স চেয়ে আবেদনের পর থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ ও ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে তিনি প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন। শুরুতে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা হতে অনেকেই আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তাদের বেশির ভাগই ছিটকে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসান ও তার মা শিরিন আক্তার এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। চূড়ান্ত লাইসেন্স পেলে এটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে অদক্ষ অমনোযোগী ব্যাংক
১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, বণিক বার্তা
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার প্রবণতা দুই দশক ধরে ক্রমেই বেড়েছে। এ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলেও মামলাগুলো তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রেও ঔদাসীন্য রয়েছে ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংকের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীদের সম্মানীও দেয়া হয় আসামিপক্ষের চেয়ে কম। রয়েছে জনবল সংকট। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে না দেশের ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার এ অদক্ষতা দূর করার ক্ষেত্রে অমনোযোগিতার অভিযোগও রয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে দায়েরকৃত মামলার নিষ্পত্তি হতেও সময় লেগে যাচ্ছে দশকের পর দশক। যদিও অর্থঋণ আদালতে মামলাজট ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও চেয়েছেন অর্থঋণ আদালত।
ব্যাংকের খেলাপি ঋণের টাকা আদায় বেগবান করতে অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৩ সালে। সারা দেশের অর্থঋণ আদালতগুলোয় খেলাপি হয়ে পড়া ঋণের অর্থ আদায়ে অসংখ্য মামলাও চলমান। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতেই মামলা আটকে রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। কিন্তু সময়মতো শুনানিসহ এসব মামলার আদালত-সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় তত্পর নয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। উপরন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের পর দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকায় মামলাজট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
বিভিন্ন সময়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো মামলা পরিচালনায় অমনোযোগী হওয়ায় কয়েক দশক পেরিয়ে গেলেও ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া শেষ হয় না। ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ে মনোযোগী হলে মামলার গতি আরো বেড়ে ব্যাংকের দায় আদায় সম্ভব হতো। এ ব্যর্থতার কারণে ব্যাংকের পাশাপাশি দেশীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি সাধারণ আমানতকারীর টাকা খেলাপিদের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য গঠিত অর্থঋণ আদালতের উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থতার জন্য সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নোটিস পাঠানো ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন অর্থঋণ আদালত।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও নোটিসের জবাবে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিক্রিদার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবীদের যে সম্মানী দেয়, একই মামলার বিবাদীপক্ষ নিজ আইনজীবীদের সম্মানী দেয় তার চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি। এ কারণে সরকারি ব্যাংকের আইনজীবীরাও মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখিয়ে থাকে। ব্যাংকগুলোর মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় একসঙ্গে এত মামলা চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংক।
এছাড়া বিপুল পরিমাণ মামলা পরিচালনার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক প্যানেল আইনজীবী নেই ব্যাংকগুলোর। এতে করে অনেক সময় মামলার শুনানির সময় ঋণগ্রহীতা উপস্থিত থাকলেও ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন না, যার সুবিধা পায় ঋণখেলাপিরা।
পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে চিন্তায় থাকে ২২ শতাংশ পরিবার
৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, বণিক বার্তা
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের প্রধান মহানগরের খানাগুলোতে পর্যাপ্ত খাবারের সংকট রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩ শতাংশের বেশি মানুষ এখনো অনাহারে থাকে। অন্যদিকে এসব শহরে প্রায় ১৫ শতাংশের বেশি খানা প্রয়োজনের তুলনায় কম খান। আর পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় চিন্তায় থাকে প্রায় ২২ শতাংশ পরিবার। যদিও দেশের সব মহানগরে এ হার ২১ শতাংশের কাছাকাছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘নগর আর্থসামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত খাবার না থাকার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ পরিবার চিন্তিত ছিল। এ হার ঢাকা ও চট্টগ্রাম ব্যতীত অন্য শহরে ছিল ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ। যেখানে সব মহানগরে এ হার ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ পরিবার পছন্দের খাবার খেতে পারেনি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের শহরে এ হার ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। সব মহানগরে এ হার ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ খানার অপছন্দের খাবার খেতে হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের মহানগরে এ হার ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সব মহানগরে যা ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১৫ দশমিক ১৭ শতাংশ খানা প্রয়োজনের তুলনায় কম খেয়েছে। যেখানে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের মহানগরে এ হার ১৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। সব মহানগরে যার গড় হার ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
নগর আর্থসামাজিক অবস্থা নিরূপণে জরিপটি ২০১৯ সালের ৮ থেকে ২৬ ডিসেম্বর সময়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ জরিপে ঢাকা-চট্টগ্রাম নগর এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম ব্যতীত অন্য নগরকে দুটি প্রতিবেদনাধীন এলাকা ধরে নিম্ন আয়ের অংশকে প্রাধিকার দিয়ে তিনটি স্তর করা হয়ছে। এসব স্তরের মধ্যে উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন আয়ের ভিত্তিতে নির্বাচিত মোট ৮৬টি প্রাথমিক নমুনা এলাকা (পিএসইউ) থেকে ২ হাজার ১৫০টি নগরাঞ্চলের খানা হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোন খাবার ছিল না বা খাবার কেনার টাকা ছিল না এমন খানার পরিমাণ ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রায় ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ। দেশের সব মহানগরে এ হার ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ। খাবার না থাকায় রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ খানা। সব মহানগরে এ হার ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। জরিপকালে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মহানগরের পুরো দিন অনাহারে ছিল ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ খানা। অন্যদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের মহানগরে এ হার মাত্র ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সারা দেশের মহানগরের ২ দশমিক ৮০ শতাংশ পরিবার অনাহারে ছিল।
জিডিপির নতুন ভিত্তি বছর
পাল্টে গেল প্রবৃদ্ধির হিসাব-নিকাশ
৩১ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
প্রায় আড়াই বছর আগে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। প্রবৃদ্ধি আট অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোয় তখন অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু তিন বছর পর জিডিপি গণনার ভিত্তি বছর পরিবর্তন করায় সেই আট অঙ্কের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। নতুন হিসাবে ওই বছরের প্রবৃদ্ধি এখন দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশে। ফলে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়টি ‘অর্থহীন’ হয়ে গেছে।
জিডিপির নতুন ভিত্তি বছর ধরা হয়েছে ২০১৫-১৬। তাতে গত চার অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। তবে প্রবৃদ্ধি কমলেও বেড়েছে জিডিপির আকার। আর তাতেই মাথাপিছু আয় আগের চেয়ে বেড়েছে। বিবিএসের জাতীয় আয় শাখার এক শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ভিত্তি বছর ধরে জিডিপির হিসাবটি এখন চূড়ান্ত হিসাবেই ধরা হবে।
প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ২০২০ সালের ১৩ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এক দশক ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা এশিয়ার সব দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। আমাদের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি ছিল শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা।’
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জিডিপির ভিত্তি বছর বদলানোয় হিসাব বদলেছে, বাস্তবতা বদলায়নি। নতুন ভিত্তি বছরের মাধ্যমে জিডিপি গণনায় নতুন নতুন খাত যুক্ত হয়েছে। ফলে জিডিপির আকার ১৫-১৬ শতাংশ বেড়েছে। এতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। তিনি আরও বলেন, জিডিপির আকার বেড়ে যাওয়ায় মাথাপিছু আয় বেড়েছে। তবে আগে একজন রিকশাওয়ালা যা আয় করতেন, এখনো তা–ই আয় করেন।
পুরো বিষয়টি ইতিবাচক নাকি শুভংকরের ফাঁকি, তা বুঝতে হলে বিবিএসের ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, নতুন ভিত্তি বছরের জিডিপির হিসাবটি আরও পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করা উচিত। কিন্তু বিবিএসের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা মেলেনি।
চার বছরই প্রবৃদ্ধি কমেছে
দুটি ভিত্তি বছরের হিসাব মিলিয়ে দেখা গেছে, গত চার অর্থবছরেরই প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে কমে গেছে। ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছরের হিসাবে, ২০২০-২১ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। নতুন হিসাবে তা ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি কমে ৭ শতাংশের ঘরে নেমেছে। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ থেকে কমে ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ হয়েছে।
আবার চলতি মূল্যে জিডিপির আকার বেড়েছে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। নতুন হিসাবে গত অর্থবছর শেষে জিডিপির আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ কোটি টাকা। জিডিপির আকার বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। কারণ, দেশের সামগ্রিক আয় বাড়লেও জনসংখ্যা বাড়েনি। তাই মাথাপিছু আয় একলাফে বেড়ে গেছে। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু আয় ৩২৭ মার্কিন ডলার বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার হয়ে গেছে, আগের হিসাবে যা ছিল ২ হাজার ২২৭ ডলার। এভাবে আগের তিন বছরেও প্রতিবার মাথাপিছু আয় গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ ডলার বেড়েছে।
প্রদেয় কিস্তির ১৫% পরিশোধ করলেই খেলাপি হবে না
৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, বণিক বার্তা
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে আবারো ঋণ পরিশোধে কিছুটা ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে যেকোনো ঋণগ্রহীতা প্রদেয় কিস্তির ১৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করলেই খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পাবেন। যদিও এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, চলতি বছরে সিএসএমই খাত ছাড়া অন্য সব খাতের ঋণগ্রহীতাদের প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল দেশের ১৫টি বাণিজ্যিক সংগঠনের নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। বিকাল ৪টায় শুরু হওয়া ওই সভা চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও আবু ফরাহ মো. নাছের উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাতেই ঋণ পরিশোধে শিথিলতার কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ১৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করলেই ওই গ্রাহক খেলাপি হিসেবে গণ্য হবেন না। যেসব ঋণের প্রদেয় কিস্তির ১৫ শতাংশ আদায় হবে, সেগুলোর সুদ বা মুনাফা আয়ের খাতে স্থানান্তর করতে পারবে ব্যাংক। তবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বিপরীতে এর আগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২ শতাংশ অতিরিক্ত সাধারণ সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
বিপুল বিনিয়োগ করেও রেলের গৌরব ফেরেনি
০৪ জানুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা
দেশে মোট যাত্রী চলাচলে রেলের ভাগ মোটে ৮ শতাংশ। যদিও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এ হার ছিল ৩০ শতাংশ। গত পাঁচ দশকে উন্নয়ন যাত্রায় দেশ এগিয়ে গেলেও যাত্রী পরিবহনে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। একই সঙ্গে মোট পণ্য পরিবহনে রেলের অবদান ২৮ থেকে নেমে এসেছে ১৬ শতাংশে। বিপুল বিনিয়োগের পরও ফেরানো যাচ্ছে না রেলের হারানো গৌরব। উল্টো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ভুল নীতি ও উন্নয়ন সহযোগীদের কৌশলী ভূমিকা দেশের রেলওয়ে খাতকে ক্রমেই খাদের কিনারে ঠেলে নিয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও রেলের কর্তাব্যক্তিরা দাবি করছেন, খাতটির উন্নয়নে তাদের নেয়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ চিত্র বদলে যাবে।
১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত সময়টুকু বাদ দিয়ে স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত জাতীয় বাজেটে পরিবহন খাতে বরাদ্দের ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ পেয়েছে রেল খাত। বিশেষ করে ২০১১ সালে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের পর রেল খাতে বরাদ্দ বাড়তে শুরু করে। চলতি অর্থবছর রেলে বরাদ্দের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। পাঁচ বছর ধরে প্রায় এ হারে বরাদ্দ পেয়ে আসছে খাতটি। এসব টাকায় কেনা হয়েছে নতুন ইঞ্জিন-কোচ। বসানো হয়েছে নতুন লাইন। আধুনিকায়ন হয়েছে স্টেশন ও সিগন্যালিং ব্যবস্থার। কিন্তু যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে এসব উন্নয়নের ছাপ খুব একটা লাগেনি।
দেশে সারা বছরের মোট যাত্রী চলাচল হিসাব করতে ব্যবহার হয় প্যাসেঞ্জার কিলোমিটার (পিকেএম) একক। এক্ষেত্রে দূরত্বের পরিমাণ যা-ই হোক, একজন যাত্রী যেকোনো মাধ্যমে একবারে এক কিলোমিটারের বেশি পাড়ি দিলেই তা হিসাব করা হবে এক পিকেএম হিসেবে। জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (ইএসসিএপি) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে এমন যাত্রার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭০০ কোটি। এর ৩০ শতাংশ বা প্রায় ৫১০ কোটি পিকেএম ছিল রেলপথে। ২০১৯ সালে দেশে প্যাসেঞ্জার কিলোমিটার যাত্রীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৯ হাজার কোটি। এর মধ্যে রেলওয়ে পরিবহন করেছে প্রায় দেড় হাজার পিকেএম, যা যাত্রার মাত্র ৮ শতাংশ। যাত্রীর মতোই রেলওয়েতে কমেছে পণ্য পরিবহন। ১৯৭৫ সালে যেখানে দেশের মোট পরিবাহিত পণ্যের ২৮ শতাংশই পরিবহন হয়েছিল রেলপথে। ২০১৯ সালে তা নেমে এসেছে ১৬ শতাংশে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলে গত এক দশকে মোটা অংকের বিনিয়োগ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেসব বিনিয়োগ হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে ও প্রকল্পকেন্দ্রিক। ফলে এসব বিনিয়োগ যাত্রী ও পরিবহনে খুব একটা পরিবর্তন আনতে পারেনি। উল্টো অনেক সময়ই তা রূপ নিয়েছে মন্দ বিনিয়োগে। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রামের একটি বড় অংশ ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ডাবল লাইনে রূপান্তর করা হয়েছিল। যদিও লাইন আগের মতোই মিটার গেজ থেকে যায়। এ প্রকল্পের দুই অংশের বাস্তবায়ন শেষ হয় ২০১৫ ও ২০১৮ সালে। কয়েক বছর যেতে না যেতেই এখন রেলপথটি আবার ডুয়াল গেজ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া কোটি কোটি টাকা খরচ করে রেলের ইঞ্জিন কেনা হলেও অনেকগুলোরই মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বছরের পর বছর ব্যবহার না করেই নষ্ট করা হয়েছে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সরঞ্জাম। যেখানে সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েছে পর্যায়ক্রমে দেশের মিটার গেজ রেলপথ তুলে দেয়া হবে, সেখানে কেনা হচ্ছে সাড়ে ৪০০ মিটার গেজ ওয়াগন। রেলপথ নির্মাণ ও সংস্কার, স্টেশন ভবন আধুনিকায়ন, রোলিং স্টক সংগ্রহসহ বেশির ভাগ প্রকল্পেই এমন সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, গত এক দশকে রেলে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হলেও এখনো পুরনো ইঞ্জিন-কোচ, নড়বড়ে রেলপথ, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, লোকবল সংকট, যাত্রীসেবায় অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা সমস্যা রেলওয়েতে প্রকট।
বাংলাদেশে ট্রেন পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছে বিদেশী কোম্পানি
১৩ জানুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা
বাংলাদেশে ট্রেন পরিচালনার সুযোগ পেতে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যেকোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের রেলপথ ও রেল অবকাঠামো ব্যবহার করে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনা করতে পারবে তারা। বিদেশী কোম্পানি তাদের রোলিংস্টক চালাতে পারবে বাংলাদেশের রেলপথে। আংশিক বা পুরোপুরিভাবে করতে পারবে ‘ক্রস বর্ডার’ ও ‘ক্রস কান্ট্রি’ অপারেশন। বিদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য এমন সুযোগ রেখে ১৮৯০ সালের রেলপথ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
রেলপথ আইন হালনাগাদ ও যুগোপযোগী করার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিল করা রেলপথ আইন (সংশোধিত) ২০২১-এর খসড়ার ১৫৪ ধারায় বিদেশী কোম্পানিকে বাংলাদেশে ট্রেন পরিচালনার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে বিদেশী কোম্পানিকে বাংলাদেশের কোনো বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তিবদ্ধ হতে হবে।
দেশী-বিদেশী বেসরকারি কোম্পানিকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ট্রেন পরিচালনার সুযোগ দিতে রেলপথ আইনে সংশোধনীর এ উদ্যোগ নতুন হলেও দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ট্রেন পরিচালনা রেলওয়ের জন্য নতুন নয়। বর্তমানে বেশ কয়েকটি ট্রেন ইজারাদারদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ইজারার চুক্তি অনুযায়ী ট্র্যাক, সিগন্যাল, স্টেশন, কোচ, ইঞ্জিন, জ্বালানি, লোকোমাস্টার, পরিচালক, স্টাফ—সবই রেলওয়ের। ইজারাদারের দায়িত্ব শুধু ভাড়া আদায় করা। আইনের সংশোধনী পাস হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন পরিচালনায় দেশী-বিদেশী কোম্পানিকে যুক্ত করতে পারবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
অসহনীয় হয়ে উঠছে বাজার সবকিছু নাগালের বাইরে
১৪ জানুয়ারি ২২, সমকাল
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার বাড়তি খরচের চাপ থেকে মানুষ বের হতে পারছে না। বাজার অসহনীয় হয়ে উঠছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, ডিম, মাছ, মাংসের মতো পণ্যের দাম আগে থেকেই চড়া। এরপর ভরা মৌসুমেও শাকসবজির দাম নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। শুধু কাঁচাবাজারই কেন, পোশাক-পরিচ্ছদ, টয়লেট্রিজ ও গৃহস্থালি পণ্য, ওষুধপত্র, নির্মাণসামগ্রী, রান্নার গ্যাসসহ প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। মানুষের যাতায়াত খরচও বেড়েছে আগের তুলনায়। সামগ্রিকভাবে বাড়তি খরচের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই এখন চাহিদার তুলনায় কম বাজার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে পুষ্টি সমস্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।.. ..
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীতে প্রতি কেজি মোটা চাল মানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে এ ধরনের চালের দাম প্রায় আড়াই শতাংশ বেড়েছে। সরু চালের দাম এক বছরের ব্যবধানে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও মাঝারি মানের চালের দাম ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। এখন আমন ধানের মৌসুম। এ সময় চালের দাম কম থাকার কথা, অথচ বাজার পরিস্থিতি তা বলছে না। অন্যদিকে, আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত। আটা-ময়দা থেকে তৈরি বেকারি পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেল বর্তমানে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। প্রতি লিটার পাম অয়েলে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি। মানভেদে ডালের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত। পেঁয়াজ, শুকনো মরিচ, হলুদ, আদা, জিরা, গরম মসলা, লবণ সবগুলোরই দাম বেড়েছে। শীতের সবজির দাম অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি।.. ..
ডিটারজেন্ট, পেস্ট, সাবানসহ অন্যান্য টয়লেট্রিজের দামও গত বছরের চেয়ে বেশি। এদিকে করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও বেড়েছে লেখার কাগজের দাম। প্রতি দিস্তা লেখার কাগজ কোম্পানিভেদে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেচাকেনা হচ্ছে, যা আগের বছরের এ সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। এমএস রডের দাম ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সিমেন্ট, রং, টাইলস, বিভিন্ন ফিটিংসসহ অন্যান্য নির্মাণ উপকরণের দামও বেশি। বেড়েছে মোবাইল ফোনের দামও। এ ছাড়া রুম হিটার, গিজার, হেয়ার ড্রায়ার, ওয়াশিং মেশিনের মতো শীতকালে চাহিদা এমন অন্যান্য ইলেকট্রনিকস পণ্যের দামও আগের তুলনায় বেড়েছে।
এশিয়ায় সবচেয়ে ব্যয়বহুল হতে যাচ্ছে ঢাকার ‘এমআরটি-৬’
১৫ জানুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও বাংলাদেশের ঢাকায় প্রায় একই সময়ে শুরু হয় প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প। দুটি প্রকল্পেই অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। ২০১৯ সালের মার্চে জাকার্তার প্রথম মেট্রো ‘নর্থ-সাউথ’ চালু হলেও এখনো নির্মাণাধীন ঢাকার প্রথম মেট্রো ‘এমআরটি-৬’। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ঢাকার মেট্রোটি চালুর লক্ষ্য সরকারের। অর্থায়নকারী সংস্থা এক হওয়া সত্ত্বেও বড় পার্থক্য রয়েছে মেট্রো দুটির নির্মাণ ব্যয়ে। জাকার্তার নর্থ-সাউথ লাইনের চেয়ে ঢাকার এমআরটি-৬-এর নির্মাণ ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে আবার প্রায় ৫২ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনুমোদন হলে জাকার্তার চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি হবে ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয়। কিলোমিটারপ্রতি খরচ হবে প্রায় ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর এর মধ্য দিয়ে প্রথম মেট্রো নির্মাণের ক্ষেত্রে এশিয়ায় সবচেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে ঢাকার এমআরটি-৬।
ঢাকার প্রথম মেট্রো নির্মাণে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে প্রথম মেট্রো তৈরি হয় ভারতের দিল্লিতে। ঢাকা এমআরটি-৬-এর অর্ধেকেরও কম খরচে লাহোরে প্রথম মেট্রো তৈরি করেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে প্রথম মেট্রো তৈরি করেছে চীন। দেশটির সাংহাই শহরের প্রথম মেট্রোটির নির্মাণ ব্যয় ঢাকার এমআরটি-৬-এর নির্মাণ ব্যয়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। নির্মাণকাজ চলমান আছে এমন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরের ‘লাইন-২-এ’ ও হো চি মিন সিটির ‘এইচসিএমসি লাইন-১’র নির্মাণ ব্যয় ঢাকার এমআরটি-৬-এর তুলনায় অনেক কম।
প্রথমবার মেট্রো নির্মাণে এখন পর্যন্ত এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিঙ্গাপুরের নর্থ-সাউথ লাইন। লাইনটির প্রায় ছয় কিলোমিটারের প্রথম অংশটি তৈরি হয়েছিল ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে। সে সময় মেট্রোটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। তখন ১ সিঙ্গাপুর ডলারের বিপরীতে ডলারের মান ছিল দশমিক ৪৭। ২০১৯ সালে ১ সিঙ্গাপুর ডলারের বিপরীতে মার্কিন ডলারের মান বেড়ে দাঁড়ায় দশমিক ৭৪। ২০১৯ সালের ডলারের মান অনুযায়ী সিঙ্গাপুরে প্রথম মেট্রোটি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৯৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয় ১৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।
আর এখন পর্যন্ত নির্মাণ ব্যয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকার এমআরটি-৬। লাইনটি তৈরি হচ্ছে উত্তরা-মতিঝিলের মধ্যে। ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরে পাস হয় ঢাকার প্রথম মেট্রো নির্মাণ প্রকল্প। বাংলাদেশী টাকায় নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে টাকার বিপরীতে ডলারের মান অনুযায়ী এই ব্যয় ছিল ২৮০ কোটি ডলার। পরের ছয় বছরে টাকার বিপরীতে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে ডলারের মান। ২০১৯ সালের হিসাবে মেট্রোটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ৩০৯ কোটি ডলার। প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলারে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে লাইনটির কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বিমানের ৫০ বছর: যাত্রার পুরোটা পথই অমসৃণ
১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
২১টি আধুনিক উড়োজাহাজের শক্তিশালী বহর থাকার পরেও বিমান শুধু লোকসানই দিয়ে যাচ্ছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানান, এর পেছনে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব এবং নিম্নমানের যাত্রী সেবা দায়ী।
তারা আরও জানান, পূর্ব পরিকল্পনার অভাবে বহরের অনেক নতুন উড়োজাহাজ সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবহৃত হচ্ছে না এবং মানসম্পন্ন পূর্ণ সেবা দিতে পারছে না। ফলে আকাশে শান্তির নীড় শ্লোগানধারী বিমানের পৃথিবী বছরে পর বছর ছোট হয়েছে।
১৯৭২ সালে বিমান তার ডানা মেলার পর থেকে জাতীয় উড়োজাহাজ সংস্থাটি প্রায় প্রতি অর্থবছরেই লোকসান দিয়েছে।
বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিমান ২০২০-২১ (২০২০ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত) অর্থবছরে ১৩৩ কোটি টাকা লাভ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮১ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোকসান করেছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানান, বিভিন্ন সংস্থার কাছে বিমানের দেনার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও বিমান নতুন উড়োজাহাজের জন্য বছরে ২৫০ কোটি করে কিস্তি পরিশোধ করে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিমানের লাভকে প্রকৃতপক্ষে লাভ বলা যায় না, কারণ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে সংস্থাটির শত কোটি টাকার দেনা রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, বিমান তাদের আর্থিক নথি প্রকাশের ব্যাপারে স্বচ্ছ নয়।
বর্তমানে সংস্থাটি ১৯টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে আসা যাওয়া করে। বেশিরভাগ গন্তব্যই স্বল্প অথবা মধ্যম দূরত্বে। বিমানের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, আগে সংস্থাটি আরও কম উড়োজাহাজ নিয়েও পশ্চিমের নিউ ইয়র্ক থেকে শুরু করে পূর্বের টোকিওসহ ইউরোপের প্রধান শহরগুলোতে মোট ২৯টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতো।
২০০৬ সাল থেকে বিমান ধীরে ধীরে নিউ ইয়র্ক, ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, রোম, টোকিও, ব্রাসেলস, আমস্টারডাম ও লিবিয়াসহ ১০টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেয়। এর পেছনে মূল কারণ আর্থিক সমস্যা, আধুনিক বিমানের স্বল্পতা এবং কিছু গন্তব্যে পরিচালনায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান না হওয়া।
২০০৭ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ার পর বিমান তার বহরের সম্প্রসারণের জন্য ২০০৮ সাল থেকে প্রায় ১৯ হাজার ২০ কোটি টাকা খরচ করেছে।
ওয়াহিদুল জানান, প্রায় ৪২টি দেশের সঙ্গে উড্ডয়ন চুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিমান নতুন কোনো গন্তব্যে বা বন্ধ হয়ে যাওয়া গন্তব্যে আবারো ফ্লাইট চালু করতে পারেনি।
যদিও বিমানের একটি বড় বাজার আছে এবং অনেক যাত্রী এই সংস্থার ওপর ভরসা করেন, তবুও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনুন্নত সেবা, অব্যবস্থাপনা, অকার্যকর পরিকল্পনা ও বিপণন নীতিমালা এবং পেশাদার কর্মীর অভাবে তাদের বাজার ২০ শতাংশ কমে গেছে।
তিনি আরও জানান, গত ৫০ বছরেরও বেশি সময়ে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে বিমান ৫০ জন পেশাদার ব্যক্তিকেও সরাসরি নিয়োগ দিতে পারেনি। ‘বিশেষজ্ঞ ও পেশাদারদের অভাবে বিমান পতনের মুখে।
অভাবে পড়ে ১০ হাজার টাকায় মেয়েকে বিক্রি করে দিলেন বাবা
২২ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
নিজের জমিজমা নেই, তাই থাকেন অন্যের ঘরে। টুকটাক ঘটকালি আর এর-ওর কাছে চেয়েচিন্তে যা টাকা পান, তা দিয়েই কষ্টেসৃষ্টে চলে স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে সংসার। তাঁর ঘরে এসেছে নতুন অতিথি। কিন্তু তার মুখে খাবার তুলে দেবেন কীভাবে? অভাবের তাড়নায় ১৮ দিনের কন্যাশিশুকে বিক্রি করে দেন শহুরে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। মেয়েটাও ভালো থাকবে, বেশ কিছু নগদ টাকাও পাওয়া যাবে, এই ছিল আশা। তবে যে পরিমাণ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তা তিনি পাননি। এক প্রতারক চক্র তাঁদের সন্তান বিক্রির সিংহভাগ টাকা নিয়ে যায়। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনাটি পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার দুর্গাকাঠি গ্রামের। দরিদ্র ওই বাবার নাম পরিমল ব্যাপারী (৫৫)। গত বৃহস্পতিবার রাতে নেছারাবাদ থানা–পুলিশের একটি দল ওই দম্পতিকে খুঁজে বের করে ঢাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এরপর গতকাল শুক্রবার শিশুটিকে তাঁর মা–বাবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
ইতালি প্রবেশের পথে হাইপোথার্মিয়ায় ৭ বাংলাদেশীর মৃত্যু
২৫ জানুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা
ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ ইতালির ল্যাম্পেদুসা যাওয়ার পথে নৌকায় প্রাণ হারিয়েছেন সাত বাংলাদেশী অভিবাসী। ধারণা করা হচ্ছে তারা হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হ্রাস পাওয়ায় মারা গেছেন। ইতালীয় সংবাদমাধ্যমগুলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ল্যাম্পেদুসার মেয়র তোতো মার্তেলো। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।
আজ মঙ্গলবার ইতালীয় কোস্ট গার্ডের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, নিহত সাত জন বাংলাদেশী ছাড়া আরো ২৮০ জনকে বহনকারী একটি নৌকাকে ল্যাম্পেদুসা থেকে প্রায় ২৭ মাইল দক্ষিণে সারারাত ভাসতে দেখা যায়। এসময় ইতালীয় কোস্ট গার্ড ও বর্ডার পুলিশ ইউনিট বিপদে পড়া যাত্রীদের উদ্ধারে তৎপর হয়।
কোস্ট গার্ড জানায়, উদ্ধারকারীরা যখন নৌকার কাছে পৌছান ততক্ষণে তিনজন মারা গেছেন, হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান আরো চারজন। বেশিরভাগ অভিবাসী মিশর ও বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানায় কোস্ট গার্ড।
দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম
ব্যাংক নিয়োগের প্রশ্নফাঁসের তদন্তে বুয়েট শিক্ষকের নাম
১৯ নভেম্বর, ২০২১, নিউজবাংলা
বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসছে একের পর এক জড়িতদের নাম।
প্রশ্নপত্র প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট থাকা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে কর্মরত একাধিক জনের সম্পৃক্ততা মিলেছে।
এবার প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধরের বিরুদ্ধে।
নিখিল রঞ্জন বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ছাপাখানায় প্রশ্নপত্র ছাপা হওয়ার পর তিনি একটি বা দুটি সেট নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতেন। তবে এই প্রশ্নপত্র ব্যাগে নিয়ে কী করতেন, সেটি এখনও জানা যায়নি।
তিন চক্রের কবজায় সার
০৪ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
সরকার অনেক দিন ধরেই বলে আসছে, দেশে সারের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। কিন্তু বাস্তবে কৃষক সঠিক সময়ে যথামূল্যে তা পাচ্ছেন না। এখন যেমন রবি মৌসুম শুরু হয়েছে, সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে সারের জন্য হাহাকার। পাশাপাশি সামনে আসছে বোরো মৌসুম। তখন কী হবে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। কেন এমন হচ্ছে? সমকালের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তিনটি চক্রের অপতৎপরতায় দেশে সার নিয়ে এমন সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। আর এর ফল হিসেবে কৃষকরা সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না। যখন পাচ্ছেন, তখন তা কিনতে হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে। এতে কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ভর্তুকির সার নয়ছয় হওয়ায় সরকারও পড়ছে ক্ষতির মুখে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সার পরিবহন ঘিরে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এ চক্রটি নানা কৌশলে সার গুদামে নিয়ে যেতেই বিলম্ব করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাড়তি দামের পরিবেশ সৃষ্টি করে। এরপর রয়েছে দুর্নীতিবাজের চক্র। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ চক্রটি গুদাম থেকেই সার ‘হাওয়া’ করে দেয় এবং পাচার ও কালোবাজারিতে সহায়তা করে। তৃতীয় চক্রটি আমদানিকারকদের। কাগজে-কলমে অনেক প্রতিষ্ঠান সার আমদানিতে যুক্ত দেখা গেলেও, বাস্তবে এগুলোর মালিক অল্প কিছু ব্যবসায়ী। দেশে যেহেতু সারের বড় অংশই আমদানি করতে হয়, তাই এই ব্যবসায়ীরা সহজেই বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৪ লাখ ৪১ হাজার টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলো উৎপাদন করে ৮ লাখ ৭৭ হাজার টন। বাকি ১৬ লাখ টন আমদানি করা হয় বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেটসহ (ডিএপি) অন্যান্য সারের ক্ষেত্রেও চিত্র প্রায় একই রকম।
প্যান্ডোরা পেপার্সে ৮ বাংলাদেশির নাম
০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ঢাকা পোস্ট
বিশ্বের এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির দ্বিতীয় দফায় প্রকাশিত প্যান্ডোরা পেপার্সে অন্তত ৮ বাংলাদেশির নাম পাওয়া গেছে। সোমবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে ওয়াশিংটনভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) ফাঁসকৃত গোপনীয় আর্থিক দলিলপত্রে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
প্যান্ডোরা পেপার্সের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় আর্থিক দলিলপত্রে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত কোম্পানির মালিক ওই ৮ বাংলাদেশি।
আইসিআইজের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্যান্ডোরা পেপার্সের গোপনীয় আর্থিক দলিলপত্র বিশ্লেষণ করে দ্বিতীয় দফায় ১৫ হাজারেরও বেশি অফশোর কোম্পানি, ফাউন্ডেশন, ট্রাস্ট এবং অন্যান্য সংস্থার সুবিধাভোগী মালিকদের তথ্য প্রকাশ করছে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট।
পানামার আইনি সংস্থা অ্যালেমান, কর্ডেরো, গ্যালিন্ডো অ্যান্ড লি (অ্যালকোগাল) এবং ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের সদর দফতরে অবস্থিত ফিডেলিটি করপোরেট সার্ভিসেসের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে আইসিআইজে। বিশ্বের ১১৭টি দেশের দেড়শ গণমাধ্যমের ৬ শতাধিক সাংবাদিকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে আর্থিক এই কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হয়েছে প্যান্ডোরা পেপার্সে।
দ্বিতীয় দফার এই গোপনীয় নথিপত্র প্রকাশের মাধ্যমে আইসিআইজের অফশোর লিকস ডেটাবেসে এখন ৮ লাখের বেশি অফশোর কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। যা ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি তথ্য ফাঁসের ঘটনা থেকে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে আইসিআইজে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক এই কনসোর্টিয়ামের কাছে ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের মানুষ এবং কোম্পানির গোপন অর্থের হদিশ মিলেছে।
প্যান্ডোরা পেপার্সে যে ৮ বাংলাদেশির নাম পাওয়া গেছে তাদের সবারই অন্যান্য দেশের নাগরিকত্বও আছে। এসব দেশের মধ্যে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং আর্জেন্টিনা।
তবে এই তালিকায় ঠাঁই পাওয়া বাংলাদেশিদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনকি যে সাংবাদিকরা এই তথ্য ফাঁস করেছেন তারাও সেটি নিশ্চিত করতে পারেননি।
দ্বিতীয় দফায় প্রকাশিত প্যান্ডোরা পেপার্সের তালিকায় নিহাদ কবীর নামের এক বাংলাদেশি নারী ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ইন্দিরা রোডে তার একটি বাসা রয়েছে বলে নথিতে বলা হয়েছে। ক্যাপিটাল ফেয়ার হোল্ডিংস লিমিটেড নামে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে তার মালিকানাধীন একটি কোম্পানি রয়েছে। ২০০৮ সালের আগস্টে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অফশোর কোম্পানি হিসেবে এটি নিবন্ধিত হয়।
বহুল আলোচিত এই প্যান্ডোরা পেপার্স তালিকায় ইসলাম মঞ্জুরুল নামের আরেক বাংলাদেশি আছেন। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে ওরিয়েন্টাল এগ্রিকালচারাল কেমিক্যাল কোম্পানি নামে নিবন্ধিত একটি কোম্পানির মালিক তিনি। যুক্তরাজ্যে বসবাসের পরিচয়ের পাশাপাশি ঢাকার গুলশানের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন তিনি।
এছাড়াও অনিতা রানি ভৌমিক, সাকিনা মিরালি, মোহাম্মদ ভাই, ওয়াল্টার প্রহমাদ, ড্যানিয়েল আর্নেস্তো আয়ুবাতি ও সাইদুল হুদা চৌধুরী নামে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে; যারা বাংলাদেশি পরিচয় ব্যবহার করেছেন। তাদের মধ্যে সাইদুল হুদা, সাকিনা মিরালি এবং মোহাম্মদ ভাই গুলশানের ঠিকানা উল্লেখ করেছেন এবং অনিতা রানি ভৌমিক চকবাজারের ঠিকানা দিয়েছেন।
তাঁদের নাম বললে তো বাংলাদেশেই থাকতে পারব না: তাহসান
১১ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
‘যাঁদের নাম দেখে ইভ্যালিতে যুক্ত হয়েছিলাম, তাঁদের নাম বলতে পারব না। তাঁদের নাম বললে তো বাংলাদেশেই থাকতে পারব না।’ ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির এক গ্রাহকের করা মামলার বিষয়টি নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে এমনটাই বললেন জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনয়শিল্পী তাহসান খান।
মামলা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে থাকা সংগীতশিল্পী তাহসান খানের সঙ্গে শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটায় প্রথম আলোর কথা হয়। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির এক গ্রাহকের করা প্রতারণার মামলায় যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন অভিনয়শিল্পী তাহসান রহমান খান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও শবনম ফারিয়া। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান শুক্রবার সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন। রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় ৪ ডিসেম্বর প্রতারণার এই মামলাটি করেন ইভ্যালির গ্রাহক সাদ স্যাম রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। শুক্রবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাজ্জাদুর রহমান এ কথা বলেন।
কথায় কথায় তাহসান বললেন, ‘আমি শুনেছি ইভ্যালির ৪০ লাখ গ্রাহক, যে কোম্পানিতে আমি যুক্ত হওয়ার আগেই ৪০ লাখ মানুষ যুক্ত, যে কোম্পানির সঙ্গে দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান যুক্ত, দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত, সেখানে আমি শুভেচ্ছাদূত হয়ে মাত্র দুটি ফেসবুক লাইভ করেছি। আমি কিন্তু বিজ্ঞাপনও করিনি। আর আমি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করলে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের করতেই পারি। কারণ, তখন তো লিগ্যাল কোম্পানি। আমি আবারও বলছি, আমাকে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, আপনারা কেন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন না?
আমরা এই দুটি প্রতিষ্ঠানের স্পনসর হয়েছি। জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে আছি। আমি তো কোনো বিশেষজ্ঞ না যে বুঝে ফেলব, এই কোম্পানি ব্যাংক্রাপ্ট হবে। তারা আরও তিনটা নাম বলেছে, যা আমি আপানাকে বলতে পারব না, তাহলে হয়তো আমি বাংলাদেশেই থাকতে পারব না।’
বলতে নানা পারার কারণ কী জানতে চাইলে তাহসান বললেন, ‘বলতে পারব না। কারণ, তাঁরা এতটাই প্রভাবশালী যে তাঁদের নাম বলা সম্ভব নয়। তাঁদের অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মের নামও বলতে পারব না। যখন দেখছি এই কোম্পানি তাদের অ্যাডভার্টাইজিং ফার্ম, এই মানুষগুলো তাদের সঙ্গে আছেন, এই প্রতিষ্ঠানে তো আমার আস্থা পাওয়া স্বাভাবিক। যে মানুষগুলোর নাম বলে আমাকে জয়েন করানো হয়েছে, তাঁদের নাম বলা তো সম্ভব না। কারণ, তাঁরা অসম্ভব ক্ষমতাধর মানুষ।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
অর্থ সরানোর নতুন গন্তব্যের সন্ধানে বাংলাদেশীরা
২১ ডিসেম্বর, ২০২১, বণিক বার্তা
উন্নত জীবনের খোঁজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে অভিবাসী হচ্ছেন বাংলাদেশীরা। অর্থ ও সম্পদ পাচারের দুরভিসন্ধিসহ নানা কারণে আইনের নাগাল এড়ানোর তাগিদ থেকেও ঘটছে অনেক স্থায়ী অভিবাসনের ঘটনা। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের প্রথম পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত ১০ ডিসেম্বর দেশের এক প্রতিষ্ঠান ও সাত ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় হঠাৎ করেই বদলে গেছে আগের হিসাব। অনেকে আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয়ও বাংলাদেশী কারো অবৈধ সম্পদ থাকলে তা বাজেয়াপ্ত হতে পারে। এ অবস্থায় অর্থ সরানোর নতুন নিরাপদ গন্তব্য খুঁজতে শুরু করেছেন সম্পদ ব্যবস্থাপকরা।
একাধিক সূত্রের তথ্য বলছে, এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে চুলচেলা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এরই মধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে অর্থ সরিয়েছেন তারা বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। সামনে যাদের সরানোর পরিকল্পনা রয়েছে, বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারাও। তাদের আশঙ্কার সবচেয়ে বড় কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতা। আইনিসহ দ্বিপক্ষীয় বেশকিছু ইস্যুতে সমঝোতা চুক্তিও রয়েছে দেশগুলোর মধ্যে। যেমন কানাডায়ও মার্কিন যেকোনো আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জারি করা যেকোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা বা নিষেধাজ্ঞা সেখানেও কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্য দেশগুলোয়ও এসব কার্যকর হওয়ার অসংখ্য নজির রয়েছে।
শ্রমিক মালিকানার ৯ বস্ত্রকলে নয়ছয়
২৩ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
ক্রমাগত লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারীদের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেওয়া হয় ২০ বছর আগে। উদ্দেশ্য ছিল, শ্রমিকবান্ধব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লোকসান কাটানো। কিন্তু এ উদ্যোগ পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছে। মিলগুলোর কোনোটিই এখন আর উৎপাদনে নেই। এসব কারখানায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিলের মূল্যবান যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। জায়গা ভাড়া দিয়ে খাচ্ছেন শ্রমিক নেতারা। হস্তান্তরের সময় এসব কারখানার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১০২ কোটি টাকা। দীর্ঘমেয়াদি দায়, চলতি দায় এবং স্বল্পমেয়াদি ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। বছরে দুটি কিস্তিতে ১৫ বছরে দায় পরিশোধের শর্ত ছিল। ২০ বছরেও এ শর্ত পূরণ হয়নি। সব দায়দেনা এখনও সরকারের ঘাড়ে।
দায়িত্বে থাকা শ্রমিক নেতাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের কারণেই এ পরিণতি দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ শ্রমিকদের। তাদের ভাষ্য, সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকাকালে যেসব শ্রমিক নেতার কারণে বছরের পর বছর লোকসানের বোঝা টানতে টানতে একপর্যায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বস্ত্রকলগুলো বন্ধ হয়, তাদেরই নতুন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি) রাষ্ট্রায়ত্ত বস্ত্রকলগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা। জানতে চাইলে বিটিএমসির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মহাব্যবস্থাপক কাজী ফিরোজ হোসেন সমকালকে বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া বন্ধ ৯টি মিলের বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, বিটিএমসি তা কার্যকর করবে।
বন্ধ হওয়া মিলগুলোর চারটি টঙ্গীতে অবস্থিত। এগুলো হচ্ছে ফাইন কটন, মেঘনা টেক্সটাইল, অলিম্পিয়া টেক্সটাইল ও মন্নু টেক্সটাইল। এ ছাড়া ঢাকার পোস্তগোলার ঢাকা কটন, নারায়ণগঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ণ কটন, চট্টগ্রামের পাইলন ইন্ডাস্ট্রিজ, ন্যাশনাল কটন ও ক্যারিলিন সিল্ক্ক মিলস।
সম্প্রতি মেঘনা টেক্সটাইল মিলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শর্ত ভঙ্গ এবং নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও মিলের সম্পদ লোপাটের অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। মিলটির শেয়ারহোল্ডার শ্রমিকরা এ অভিযোগ করেছেন। এতে বলা হয়, শ্রমিক-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জাহিদ আল মামুন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলামসহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আরও কয়েকজন মিলের মূল্যবান যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু যন্ত্রপাতি তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে নিয়ে গেছেন। গাছপালা কেটে নিয়ে গেছেন। মিলের ভান্ডার বিভাগের মালপত্র লুটে নিয়ে এখন স্থানীয় এক টাইলস ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মিলের অন্যান্য বিভাগও ভাড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। শেয়ারধারী শ্রমিকদের শেয়ারের বিপরীতে কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ২০ বছরে কোনো হিসাবও দেওয়া হয়নি।
মিলটির কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের কাছ থেকে মিল বুঝে নেওয়ার সময় অনেক শ্রমিক শেয়ার কিনেছেন। শেয়ারের বিপরীতে কোনো মুনাফা দেওয়া হয়নি। সামান্য অজুহাতে শ্রমিকদের গায়ে হাত তোলা এবং চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। প্রধান উৎপাদন কার্যক্রম স্পিনিং ও উইভিং বন্ধ হলেও মিলটি এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। মাত্র ৯০ জন শ্রমিক নিয়ে ডায়িং বিভাগ কোনোরকমে চালু আছে।
ট্রেন ধোয়ামোছার যন্ত্র
‘গালগল্প’ শুনিয়ে কেনা, ব্যবহার নামকাওয়াস্তে
২৩ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
মাত্র ৮ থেকে ১০ মিনিটে ধোয়া যাবে ১৪ কোচের একটি ট্রেন। এখন যেখানে একেকটি ট্রেন ধোয়ার পেছনে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন, সেখানে মাত্র একজন যন্ত্রটি পরিচালনা করতে পারবেন। ফলে জনবলের পেছনে ব্যয় কমবে। আর ধোয়ার পরে চকচক করবে ট্রেন।
এসব গুণের কথা বলে রেলওয়ে ৩৬ কোটি টাকায় দুটি স্বয়ংক্রিয় ধৌতকরণ ব্যবস্থা বা ওয়াশিং প্ল্যান্ট কিনেছিল। একটি বসানো হয়েছিল কমলাপুর স্টেশনে, অন্যটি রাজশাহীতে। গত ৮ নভেম্বর এই প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। দেড় মাস না যেতেই দেখা যাচ্ছে, স্বয়ংক্রিয় ধৌতকরণ ব্যবস্থা তেমন একটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখে ও রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কমলাপুরের প্ল্যান্টটিতে এখন সারা দিনে দুই থেকে তিনটি ট্রেনের ৪০ থেকে ৫০টি কোচ ধোয়া হয়। বাকিগুলো পুরোনো পদ্ধতিতেই পরিষ্কার করেন শ্রমিকেরা। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র চালু হলে শ্রমিক কম লাগবে, জনবলের পেছনে ব্যয় কমবে—এই দাবিও যথাযথ নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রেলওয়ে আগের মতো সংখ্যায় শ্রমিক দিয়ে ট্রেন ধোয়ার কাজ করছে।
৬১৯ কোটি টাকার সরকারি সার গায়েব
৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৩১
মেসার্স নবাব অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি পরিবহন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৬১৯ কোটি টাকার সরকারি সার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক নবাব খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সার উৎপাদন ও আমদানিকারক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর মতিঝিল থানায় এ মামলা করেন বিসিআইসির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম বাণিজ্যিক) মো. সাইফুল আলম। নবাব খান মামলায় উচ্চ আদালত থেকে বৃহস্পতিবার জামিন পেয়েছেন। তবে চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন উচ্চ আদালত।
চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস বন্ধের দাবিতে কালি মেখে রনির পদযাত্রা
৪ জানুয়ারি, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন
চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ও ঘুষ বাণিজ্য বন্ধের দাবিতে মুখে কালি মেখে রংপুর শহরে একাই পদযাত্রা করেছেন এক চাকরিপ্রার্থী।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর লালবাগ থেকে পদযাত্রা শুরু করেন রেদওয়ান রনি। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে তিনি জাহাজ কোম্পানি মোড়, প্রেসক্লাব চত্বর হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘুরে আবারও লালবাগে গিয়ে পদযাত্রা শেষ করেন।
রেদওয়ান রনি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মিঠিপুর ইউনিয়নের একবারপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আব্দুল লতিফ মন্ডলের ছেলে।
রনি জানান, তিনি ২০১৭ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। পরিবারে তারা তিন বোন ও এক ভাই। বাবা স্থানীয় একটি এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। বড় বোনেদের বিয়ে হয়েছে। বাবা অবসরে যাওয়ার পর থেকে সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়েছে।
কিন্তু মাস্টার্স শেষ করে বিভিন্ন পদে পরীক্ষা দিলেও আজ পর্যন্ত তার চাকরি জোটেনি। চাকরি না পাওয়ার জন্য প্রশ্নফাঁস ও ঘুষ বাণিজ্যকে দায়ী মনে করছেন তিনি। এই হতাশা থেকে তিনি পদযাত্রা করেছেন।
অ্যাননটেক্সকে শাস্তির বদলে সুবিধা দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
০৫ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের আলোচিত গ্রাহক অ্যাননটেক্স গ্রুপের খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল বা নিয়মিত করার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে গ্রুপটির বেশির ভাগ ঋণ নিয়মিত হয়ে যাবে। ফলে গ্রুপটি এখন যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারবে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ বিশেষ বিবেচনায় এই অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এ-সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষর করেন। আর এই ঋণ পুনঃ তফসিলের অনুমোদন দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অত্যুৎসাহী দেখা যায়। যদিও আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই গ্রুপটির ঋণে বড় অনিয়ম বের করেছিল।
জানা গেছে, গতকাল গ্রুপটির ১৬টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ। গ্রুপটি এর আগে তাদের অন্য চার প্রতিষ্ঠানের ঋণে পুনর্গঠন সুবিধা নিয়েছে, তাতে ওই ঋণের বিপরীতে নতুন করে পুনঃ তফসিল করতে হবে না। তবে এসব ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।.. ..
গত ২০১০ থেকে ২০১৫ সালে উদারভাবে ঋণ বিতরণ করে জনতা ব্যাংক। তখন অ্যাননটেক্স গ্রুপের ২২ প্রতিষ্ঠানকে ৬ বছরে দেওয়া হয় ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা, যা এখন সুদাসলে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
তবে জনতা ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অ্যাননটেক্সকে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সুবিধা দিয়েছে, তার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সব জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের আলামতকেই অস্বীকার করা হয়েছে। এসব অপরাধের জন্য শাস্তির বদলে ওই গ্রাহক সুবিধা পাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা পুরো ব্যাংক খাতের জন্য খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে।
দুর্নীতিতে ডুবেছে অধিদপ্তর, দূষণে ধুঁকছে পরিবেশ
০৬ জানুয়ারি ২২, সমকাল
পরিবেশ দূষণের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে পরিবেশ অধিদপ্তর। দূষণ তৈরিকারী শিল্পকারখানাকে ঘুষের বিনিময়ে পরিবেশগত ছাড়পত্র দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে পরিবেশ দূষণ বেড়ে চলছে, পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের মৃত্যুঝুঁকি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর দুর্নীতি ও অনিয়মে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতির বড় ক্ষেত্র পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া ও নবায়ন।
গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশগত ছাড়পত্র পেতে ৬৬ শতাংশ শিল্পকারখানাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। শ্রেণিভেদে এই অর্থের পরিমাণ ৩৬ হাজার থেকে এক লাখ ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা স্থাপনের আইনি বিধান না থাকলেও ৭২ শতাংশ কারখানার অবস্থান আবাসিক এলাকায়। ক্ষমতার অব্যবহার ও ক্ষেত্রবিশেষে অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এটি করা হয়।
গতকাল বুধবার এক ওয়েবিনারে ‘পরিবেশ অধিদপ্তরে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো নেওয়াজুল মাওলা।
আর্থিক প্রতিবেদনে লোকসান দেখাবে না পদ্মা ব্যাংক
০৬ জানুয়ারি ২২, সমকাল
ফারমার্স থেকে রূপান্তরিত পদ্মা ব্যাংকে বর্তমানে ৯০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান পুঞ্জীভূত রয়েছে। বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে ব্যাংকটিকে এই লোকসান দেখাতে হবে না। লোকসানের বিপরীতে ‘ইনটেনজিবল অ্যাসেট’ বা অদৃশ্য সম্পদ সৃষ্টি করা হবে। আগামী ১০ বছরের মুনাফা থেকে যা সমন্বয় করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে ব্যাংকটিকে বিশেষ এ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিদেশি বিনিয়োগ না এলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ সুবিধা বাতিল হবে। এছাড়া লোকসান সমন্বয়ের সময়সীমা পর্যন্ত ১০ বছর ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ কোম্পানি ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানি পদ্মা ব্যাংকে ৭০ কোটি ডলার সমপরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর অর্ধেক বিনিয়োগ হবে মূলধন হিসেবে। বাকি অর্ধেক হবে বন্ড বা অন্য উপায়ে। এই বিনিয়োগ টানতে ব্যাংকটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন ‘স্বচ্ছ’ দেখাতে চায় পদ্মা ব্যাংক। এ কারণে আর্থিক প্রতিবেদনে যেন লোকসান দেখাতে না হয় সে জন্য বিশেষ ছাড় চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছিল পদ্মা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক এ আবেদনে সাড়া দিয়েছে। বেশ আগে রাষ্ট্রীয় মালিকানার কয়েকটি ব্যাংককে এমন সুবিধা দেওয়া হলেও বেসরকারি খাতের কোনো ব্যাংকে প্রথম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, কোনো ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে লোকসান থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আনা দুরূহ। পদ্মা ব্যাংক ৭০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আনার কথা বলেছে। বিনিয়োগ আনার স্বার্থে শর্তসাপেক্ষে ব্যাংকটির লোকসান সমন্বয়ে ১০ বছর সময় দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ না এলে সুবিধা বাতিল হবে। লোকসান সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ব্যাংকে বিনিয়োগ আনার বিষয়ে ডেলমর্গানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামির আসাফ গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে যান। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। বৈঠকে বিনিয়োগের অর্থ ফেরত নেওয়ার নিশ্চয়তা চান। এছাড়া বিনিয়োগ এনে দেওয়ার বিপরীতে প্রাপ্ত কমিশন দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থার অনুরোধ জানান। ডেলমর্গান বিনিয়োগ এনে দেওয়ার বিপরীতে ৩ শতাংশ হারে কমিশন চেয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কমিশনের অর্থ দ্রুত ছাড়ের ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে। তবে বিনিয়োগের অর্থ ফেরত নেওয়ার নিশ্চয়তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শতকোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ লাকীর নামে
৪ জানুয়ারি ২০২২, আমাদের সময়
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুযায়ী- ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ভুয়া বিলসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে তিনি শতকোটি টাকা লোপাট করেছেন। ৬০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন লাকী সিন্ডিকেটের ৮ কর্মকর্তা।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২ সদস্যের টিম করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা অর্থের একটি বড় অংশ পাচারের তথ্যও পেয়েছে দুদক।
ক্রেডিট কার্ড–কাণ্ডে ন্যাশনাল ব্যাংককে ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা
১৩ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
সিকদার পরিবারের সদস্যদের ১১টি ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে দেওয়া বৈদেশিক ঋণসুবিধার তথ্য গোপন করায় ন্যাশনাল ব্যাংককে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিটি কার্ডের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডকে (এনবিএল) পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে ব্যাংকটিকে জরিমানা গুনতে হবে ৫৫ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর ও চলতি মাসে কয়েক দফায় এসব জরিমানা করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ব্যাংককে এ ধরনের অপরাধের জন্য এত জরিমানা করা হয়নি। জরিমানাসংক্রান্ত প্রতিটি চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লিখেছে, ‘গ্রাহকের ঋণের তথ্য ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) ডেটাবেইসে রিপোর্ট না করার অভিযোগে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হলো। এ বিষয়ে আপনাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ এ বিষয়ে জানতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেনের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১১টি ক্রেডিট কার্ডে গত পাঁচ বছরে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৩০ হাজার ৫২৮ ডলার খরচ করা হয়, প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৬ টাকা ধরে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১১৭ কোটি টাকা।
যাঁদের ক্রেডিট কার্ডের জন্য জরিমানা করা হয়েছে, তাঁদের ১১ জনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই ১১ জনের মধ্যে সিকদার পরিবারের সদস্য ৯ জন ও বাকি ২ জন সিকদার গ্রুপের কর্মকর্তা। তাঁরা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিদেশে সীমাতিরিক্ত মার্কিন ডলার খরচ করেছেন, যা দেশের প্রচলিত আইনে বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের অপরাধ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১১টি ক্রেডিট কার্ডে গত পাঁচ বছরে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৩০ হাজার ৫২৮ ডলার খরচ করা হয়, প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৬ টাকা ধরে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১১৭ কোটি টাকা।.. ..
তবে দেশের বাইরে অতিরিক্ত ডলার খরচের জন্য কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
বদলি হতে নার্সরা দিচ্ছেন কমপক্ষে ২ লাখ টাকা
১৪ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
মো. জামাল উদ্দিনের সোনালী ব্যাংকের হিসাবে ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক লাখ টাকা জমা দেন একজন নার্সের নিকটাত্মীয়। ওই দিনই এই নার্সকে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলির আদেশ হয়। দুই দিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর একই জমাদানকারীর মাধ্যমে আরও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা পড়ে ওই একই হিসাবে।
নার্সরা নিজেদের পছন্দের জায়গায় সহজে বদলি হতে পারেন না। বদলির জন্য আবেদন করে দিনের পর দিন রাজধানীর মহাখালীর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে তদবির করতে হয়। সব সময় কাজ হয় না। কিন্তু টাকা দিলে দু-এক দিনের মধ্যেই বদলি নিশ্চিত। টাকার পরিমাণ দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বদলি হওয়ার জন্য নার্সরা টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। মধ্যস্থতাকারী বা দালালেরা নার্সদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। টাকা লেনদেন হওয়ার পর অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নার্সদের বদলি করছেন। চারজন নার্সের বদলির আদেশ, একজন মধ্যস্থতাকারীর দুটি ব্যাংকের হিসাব, নার্স ও মধ্যস্থতাকারীর আলাপের সূত্র থেকে এই দুর্নীতি ও অনিয়ম ধরা পড়েছে।
অডিটর পরীক্ষা: প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের পরও ফল প্রকাশ
২৩ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে দশজনকে গ্রেপ্তারের দুই দিন পর এ পদের এমসিকিউ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন এক হাজার ২০৭ জন। রোববার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের ডিফেন্স ফাইন্যান্স বিভাগের অডিটর পদে নিয়োগের লক্ষ্যে গত শুক্রবার এমসিকিউ পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২০৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
ধনীদের ‘গরিবের ঘর বিলাস’
২৪ জানুয়ারি ২২, সমকাল
উলিপুরে দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন সচ্ছল পরিবারের লোকজন। টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ী, খামার মালিক, চাকরিজীবী, পাকা বাড়ির মালিকের পাশাপাশি একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ঘর দেওয়া হয়েছে। এ কাজে ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদার জড়িত বলে অভিযোগ।
ঘর বরাদ্দ পেলেও সেখানে থাকছেন না ধনীরা। সেখানে গরু ও ছাগল রাখা হয়েছে। তালাবদ্ধ পড়ে আছে এ রকম আরও শতাধিক ঘর।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে দুই শতক খাসজমিতে বিধবা, ভিক্ষুক, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধীসহ আশ্রয়হীনদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার নদী ভাঙা আটটি ইউনিয়নে ১৫০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘর নির্মাণে এক লাখ ৭১ হাজার টাকাসহ মোট ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এরই মধ্যে নদী ভাঙা ইউনিয়ন থেতরাই-৯টি, ধামশ্রেণী ১২টি, হাতিয়া ২২টি, ধরনীবাড়ী ৭১টি, গুনাইগাছ ২২টি, বুড়াবুড়ি ১২টি ও দুর্গাপুরে দুটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে টাকা না দেওয়ায় ভূমিহীনদের অনেকেই ঘর পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দু নেফরা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ওই গ্রামের ব্যবসায়ী ও গরুর খামারি রেজা আহাম্মেদ ও তার মা রেজিয়া বেগম ঘর পেয়েছেন। এ ছাড়া ঘর পেয়েছেন এনামুল হকের স্ত্রী জামেনা খাতুন, ছেলে জামিউল হক, মা বাচ্চানী খাতুন। একই পরিবার থেকে ঘর পাওয়ার তালিকায় আরও আছেন মাহবুব আলম, তার স্ত্রী আরজিনা বেগম, ছেলে বাইজিদ মিয়া। ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজের চার কক্ষের পাকা বাড়ি আছে। এর পরও তার দুই ছেলে মেজবাইল আলম ও শাহজাহানকে ছয় লাখ টাকায় নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে পাকা ঘর। তবে তাদের ওই ঘরে মানুষ নয়, গরু ও ছাগল রাখা হয়েছে। ধনীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া এ রকম অনেক ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
শ্রমজীবি মানুষ
ব্যক্তিমালিকানাধীন পাট শিল্প
নিম্নতম মজুরি ৮০% বাড়িয়ে ৮০০০ টাকা করার সুপারিশ
২৮ অক্টোবর, ২০২১, বণিক বার্তা
ব্যক্তিমালিকানাধীন পাট শিল্পের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি কাঠামো সর্বশেষ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর তা আবারো পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৯ সালের জুনে। কভিডের অভিঘাতে এ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলেও অবশেষে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পাটকল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চলমান কাঠামোর চেয়ে ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে মাসে ৮ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড।
টানা ৮ দিন শ্রমভবনের সামনে শ্রমিকদের অবস্থান, সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে
০২ নভেম্বর ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন
স্টাইল ক্রাফট গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা টানা আট দিন ধরে শ্রমভবনের সামনে অবস্থান করছেন। একবেলা গণখাবার খেয়ে, পথে ঘুমিয়ে দিন পার করছেন পাওনা টাকা আদায়ের চেষ্টায়। তাদের দাবি, এখনও তেমন কোনও আশ্বাস তারা পাননি। আর শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, কী সমাধান হয় দেখি। আজকে কিছু টাকা দেওয়া হবে। সমাধান হবে।
শ্রমিক সংগঠনের দাবি, কারখানাটির ৪ হাজার ৩০০ শ্রমিক প্রায় ৮০ কোটি টাকা পাবেন মালিকপক্ষের কাছে। বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও টাকা না পেয়ে তারা শ্রমভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেছেন। মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) তাদের কর্মসূচি সপ্তম দিনে গড়িয়েছে।
পুরান ঢাকায় জুতা কারখানায় আগুন
ঘুমের মধ্যেই পুড়ে অঙ্গার ৫ শ্রমিক
০৬ নভেম্বর ২১, সমকাল
জুতার কারখানার কাটিং মাস্টার আবদুর রহমান রুবেলের শ্যালিকা চম্পার বিয়ে হয়েছে কিছুদিন আগে। সপ্তাহখানেক পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোবাইল ফোনে এ নিয়ে স্ত্রীর বড় ভাই মো. পলাশের সঙ্গে কথা বলেন রুবেল। ওই রাতেই তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদীতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজের চাপে আটকে যাওয়ায় শুক্রবার সকালে রওনা দেওয়ার কথা জানান তিনি। সেই সকাল আসার আগেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব! বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই কারখানায় লাগা আগুনে পুড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ মৃতদেহগুলো দেখে শনাক্ত করার কোনো উপায় নেই। তবে রুবেলের স্বজনরা দাবি করছেন, শারীরিক গড়ন দেখে তারা প্রিয়জনের লাশটি শনাক্ত করতে পেরেছেন।
পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের কামালবাগ এলাকার রুমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামের ওই কারখানায় ঘটনার সময় ঘুমিয়ে ছিলেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। একপর্যায়ে হয়তো তারা জেগে উঠেছিলেন, কিন্তু ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখা চারপাশ গ্রাস করে ফেলে। কারখানার লোহার ফটকটিও ছিল বন্ধ। ফলে দেরিতে হলেও ঘুম থেকে জেগে ওঠা ব্যক্তিরা আর বের হওয়ার সুযোগ পাননি। আগুন নেভানোর পর যখন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের উদ্ধার করেন, তখন পাঁচজনই পুড়ে অঙ্গার। উদ্ধার কর্মীরা বলেছেন, কারখানার দোতলা ভবনের নিচতলার ওপরের অংশে পাটাতন দিয়ে শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। সেসঙ্গে নিচতলায় রাসায়নিকের ড্রাম ও রাবার জাতীয় দ্রব্য মজুদ থাকায় আগুন দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ঘটনার পর থেকে কারখানার মালিক হাজী রফিক মিয়া পলাতক। এদিকে মৃতদেহ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ায় ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
পুড়ে অঙ্গার এক লাশের দাবিদার তিন পরিবার
০৬ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের কামালবাগে একটি জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত পাঁচজনের লাশ দেখে চেনার কোনো উপায় নেই। শুক্রবার দুপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (মিটফোর্ড) মর্গে লাশ দেখে কাউকেই শনাক্ত করতে পারেননি স্বজনেরা। তবে বিকেলে একটি লাশের দাবি করলেন তিনজনের স্বজন। আবার অন্য একটি লাশের দাবি করলেন দুজনের স্বজন। এমন পরিস্থিতিতে অপর তিনটি লাশের দাবি কেউ করেছিলেন না। এসব দেখে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হবে না বলে জানিয়ে দেয় পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কামালবাগে ‘রোমানা রাবার’ নামের একটি জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজন মারা যান। শুক্রবার দুপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার পাঁচ শ্রমিকের স্বজনেরা সেখানে অপেক্ষা করছেন। স্বজনদের দাবি অনুযায়ী, নিহত পাঁচজন হলেন বরিশালের আবদুর রহমান (৩৫), কিশোরগঞ্জের শামীম মিয়া (৩৪), মানিকগঞ্জের আমিনুর মিয়া (৩৫), কুমিল্লার মনির হোসেন (৩৪) এবং শেরপুরের কামরুল ইসলাম (২৩)। এ ঘটনায় আরও দুজন দগ্ধ হয়েছেন।
বিকেলে একটি লাশের আঙুলে আংটি দেখে সেটি তাঁর মামাতো ভাই কামরুলের বলে দাবি করেন দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। আবার ওই লাশের উঁচু দাঁত দেখে বিলকিস বেগম নামের এক নারী দাবি করেন, এটা তাঁর ভাই আমিনুরের লাশ। একটি লাশের ডান গাল ফোলা দেখে সেটিকে নিজের ভগ্নিপতি মনির হোসেনের বলে দাবি করেন মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যক্তি। পোশাক ও শরীরের গঠন দেখে এই লাশকেই আবদুর রহমান ও শামীমের বলে দাবি করেন স্বজনেরা। তবে তিনটি লাশের দাবিদার কেউ ছিলেন না।
তাজরীনে অগ্নিকাণ্ড
ছয় বছরে সাক্ষ্য দিলেন ৯ জন, বাকি এখনো ৯৫
২৪ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
ঢাকার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার বিচারকাজ ৯ বছরেও শেষ হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী কৌঁসুলি বলেন, সাক্ষীদের যথাসময়ে আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। কারণ, অভিযোগপত্রে থাকা ঠিকানায় সাক্ষীদের অনেকে থাকেন না। সব৴শেষ গত ১৩ জানুয়ারি একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে ১১১ জন পোশাকশ্রমিক পুড়ে মারা যান। আহত হন শতাধিক মানুষ। তাঁদের অনেকেই এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, আগুন লাগার পরপরই কারখানার তৃতীয় তলার ফটকে তালা মেরে দেওয়া হয়েছিল।
আদালত সূত্র জানায়, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরের বছর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি অভিযোগপত্র দেয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে ‘অপরাধজনক নরহত্যা’ ও ‘অবহেলার কারণে মৃত্যু’র অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আগুন লাগার পর শ্রমিকদের বের হতে না দিয়ে তাঁদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়।
মিরপুরে পোশাকশ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
২৪ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
রাজধানীর মিরপুরে সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন কারখানার পোশাকশ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে পোশাকশ্রমিকেরা মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বেতন বাড়ানোর দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায় বিক্ষোভরত শ্রমিকদের।
কারখানা থেকে বের হয়ে একপর্যায়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে শত শত পোশাকশ্রমিক জড়ো হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একদল শ্রমিক সেখানে থাকা একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেন। শ্রমিকেরা ২টি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করেন। তবে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভরত পোশাকশ্রমিকদের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
বকেয়া পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকদের লাঠি মিছিল
২৭ নভেম্বর ২১, সমকাল
খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলসহ পাঁচটি পাটকলের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং বন্ধ পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু ও আধুনিকায়নের দাবিতে গতকাল শুক্রবার লাঠি মিছিল করেছেন শ্রমিকরা। দৌলতপুর জুট মিল কারখানা কমিটির উদ্যোগে শুরু হওয়া মিছিলটি পিপলস গোল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাট ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, বিজেএমসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্টদের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই ২৫টি পাটকল লোকসানের মুখে পড়ে। এর দায়ভার বর্তেছে সাধারণ শ্রমিকদের ওপর। একদিকে সরকার লোকসানের জন্য শ্রমিকদের দায়ী করছে অন্যদিকে পাটকল বন্ধের ১৭ মাস পূর্ণ হলেও শ্রমিকদের পাওনা দেয়নি। তারা বলেন, পাটশিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত। সরকার দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীর স্বার্থে পাটকল ও পাটশিল্পকে ধ্বংস করে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট করার ব্যবস্থা করেছে।
সান্তাহারে প্লাস্টিক কারখানায় আগুন, ৫ শ্রমিকের মৃত্যু
১৪ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারের হবির মোড় এলাকায় প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লেগে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার পৌনে ২টার দিকে কারখানার ভেতর থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, বিএসআরআই নামের ওই কারখানায় সকাল থেকেই শ্রমিক ও কর্মচারীরা কাজ করছিলেন। দুপুর ১২টায় কারখানার ভেতরে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তে সমস্ত কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আদমদীঘি, বগুড়া, নওগাঁ, রানীনগর, আত্রাইসহ বিভিন্ন স্থানের ফায়ার সার্ভিসের ১২/১৩টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টার পর দুপুর ২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কারখানার ভেতর থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ৫ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করেন।
বকেয়ার দাবিতে থালাবাসন নিয়ে খুলনায় পাটকলশ্রমিকদের বিক্ষোভ
১৭ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে থালাবাসন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন খুলনার পাটকলশ্রমিকেরা। আজ শুক্রবার বিকেলে খুলনা নগরের খালিশপুর শিল্প এলাকায় ওই মিছিলের আয়োজন করে খালিশপুর-দৌলতপুর জুট মিল কারখানা কমিটি।
বিজেএমসির সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন মিলগুলোর শ্রমিকদের প্রাপ্য বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে ওই মিছিল হয়। মিছিল শেষে পিপলস গোলচত্বরে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কারখানা কমিটির সভাপতি মো. মনির হোসেন। সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্যসচিব এস এ রশীদ, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী, দৌলতপুর জুট মিল কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মোফাজ্জেল হোসেন, যশোর-খুলনা আঞ্চলিক বদলি কমিটির আহ্বায়ক মো. ইলিয়াস হোসেন, সদস্যসচিব আবদুর রাজ্জাক তালুকদার, শ্রমিকনেতা মো. নূরুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগর আহ্বায়ক আল আমিন শেখ প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মহামারি করোনার কারণে ২০২০ সালের ৩০ জুন পাটকল বন্ধের পর থেকে পাটকলশ্রমিকেরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কর্মহীন শ্রমিকেরা আজ দারুণভাবে অবহেলিত। দীর্ঘ ১৭ মাস মজুরি না পেয়ে শ্রমিকদের পেটে ভাত নেই। স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। ক্ষুধার যন্ত্রণায় বহু শ্রমিক অনৈতিক পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক-কৃষকসহ সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে। শ্রমিক-কৃষকেরা যাতে ধুঁকে ধুঁকে মরেন, সেই ব্যবস্থা করছে সরকার। অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পুনরায় রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করার দাবি জানান বক্তারা।
ব্যাটারিচালিত যানবাহনের লাইসেন্সের দাবিতে সমাবেশ
২০ ডিসেম্বর ২০, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করে ৫০ লাখ পরিবারের জীবন-জীবিকা রক্ষার দাবিতে সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছে রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরের অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে সড়ক অবরোধ করে সংগ্রাম পরিষদ এ সমাবেশ করে।
সমাবেশে সংগ্রাম পরিষদ ব্যাটারিচালিত যানবাহন উচ্ছেদ না করে সংগ্রাম কমিটির প্রস্তাবনা যুক্ত করে বিআরটিএ প্রস্তাবিত ‘থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২১’ দ্রুত চূড়ান্ত করার দাবি জানায়।
‘হামরা একবেলা খাই, দুবেলা উপাস থাকি’
২৩ দিন ধরে বন্ধ বৈকুন্ঠপুর চা-বাগান
৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
‘রইজ হামরা রাস্তায় বইসে ভিখ মাঙার মতো ভাইলতে থাকি কেউ চাইল-ডাইল লিয়ে আইসবেক ন নাই। আইলো তো ভালো। ওই দিন খাইতে পারি। নাইলে উপাস। হামরা একবেলা খাই আর দুবেলা উপাস থাকি।’
কথাগুলো বলছিলেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বৈকুন্ঠপুর চা-বাগানের শ্রমিক রূপন্তি রবিদাশ।
তার মতো ৪০৯ স্থায়ী চা-শ্রমিকসহ তাদের পরিবার করোনার দিনে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
গত ৮ ডিসেম্বর থেকে বৈকুন্ঠপুর চা-বাগান বন্ধ। আজ ২৩ দিন এই বাগানের চা-শ্রমিকের কাজ নেই, মজুরি নেই, খাবার নেই, চিকিৎসা নেই।
বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের আহবায়ক খাইরুন আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘খেটে খাওয়া মানুষ ভিক্ষা করতেও জানে না।’
বৈকুন্ঠপুর চা আন্দোলন কমিটির সভাপতি মনিব কর্মকার ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্থায়ী চা শ্রমিককে বাগান মালিকপক্ষ থেকে আবাসন সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও স্থায়ী চা শ্রমিক দিলীপ কেউটকে তা দেওয়া হয়নি। কালক্ষেপণ ও বাসস্থান সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে নিজের খাজনা দেওয়া ফসলি জমিতে বাড়ি বানাতে ম্যানেজার ও পঞ্চায়েত কমিটি থেকে মৌখিক অনুমতি নেন তিনি।’
‘কিন্তু, বাড়ি তোলার ১৫ দিনের মাথায় মালিকপক্ষ বাড়ি উচ্ছেদের নোটিশ দেয়,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘চা শ্রমিকরা দিলীপের পক্ষে কথা বললে ১২ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা এবং বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়।’
‘এর পাশাপাশি গত ১ মাস ধরে বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের কার্যক্রম ও শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়,’ যোগ করেন তিনি।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২০২১ সালে ৮৫৩ জনের মৃত্যু: জরিপ
৪ জানুয়ারি, ২০২২, দেশ রুপান্তর
সদ্য বিদায়ী ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৮৫৩ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ২৩৬ জন।
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ওশি) এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য পরিদর্শন প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছে।
ওশি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৭৯২ জন অনানুষ্ঠানিক খাতে আর ২৯৭ জন আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিলেন। আনুষ্ঠানিক খাতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭১, অনানুষ্ঠানিক খাতে ৬৮২।
প্রতিবেদন তৈরিতে সূত্র হিসেবে ১৫টি জাতীয় পত্রিকা ও ৭টি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর এবং সংস্থার কর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
ওশি ফাউন্ডেশনের বার্ষিক তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৮ হাজার ৬৫৯ জন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৭২১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে।
গত বছর উৎপাদন খাতের ১১৬ জন কর্মী নিহত হন। খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইস্পাত কারখানা, চাল ও কাগজকল, ইটের ভাঁটা ও চামড়া শিল্প এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। নির্মাণ শিল্প, কৃষি ও তৈরি পোশাক খাতে মারা গেছেন যথাক্রমে ১২৩, ৯৫ ও ২৭ জন।
বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর পেছনে মূল কারণ হিসেবে সংস্থাটি কর্মীদের অধিকার নিশ্চিতকরণে ব্যর্থতা, দুর্বল আইনি অবকাঠামো ও পরিদর্শন প্রক্রিয়া এবং দ্রুত বিচারের স্বল্পতাকে চিহ্নিত করেছে।
উচ্ছেদ বন্ধ ও পুনর্বাসন দাবিতে উত্তরায় হকারদের সড়ক অবরোধ
০৮ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
উচ্ছেদ বন্ধ ও স্থায়ী পুনর্বাসন দাবিতে রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন হকাররা। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে উত্তরার রবীন্দ্র সরণিতে জড়ো হয়ে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে দুপুরে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন।
রবীন্দ্র সরণিতে জড়ো হওয়ার পর হকাররা উত্তরার রাজলক্ষ্মী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকায় ঢাকা-১৮ আসনের সাংসদ হাবিব হাসানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।এ সময় উচ্ছেদ বন্ধ ও স্থায়ী পুনর্বাসন দাবিতে বিক্ষোভ ও স্লোগান দিতে দেখা যায় তাঁদের। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন তাঁরা।
করোনায় হোটেল ও পরিবহন শ্রমিকদের আয় কমেছে ৮১%
১৪ জানুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা
করোনা মহামারীতে ঢাকার বাস ও লেগুনার শ্রমিক, সস্তা হোটেল ও রেস্তোরাঁ কর্মী এবং খুচরা দোকান শ্রমিকদের আয় ৮১ শতাংশ কমেছে। আলাদাভাবে এ হার পরিবহন শ্রমিকদের ৯৬ শতাংশ, খাবার হোটেল কর্মীদের ৮৩ এবং খুচরা দোকান শ্রমিকদের ৬১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
‘ঢাকার খাবার হোটেল, নির্মাণ শ্রমিক ও বাস-লেগুনার শ্রমিকদের ওপর লকডাউনের প্রভাব নিরূপণ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস্) এ গবেষণা করে। গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয় গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে। এর কার্যক্রম শেষ হয় ডিসেম্বরে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, মহামারীতে এ তিন খাতে চাকরি হারিয়েছেন ৮৭ শতাংশ শ্রমিক। চাকরি হারানোদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ চাকরি পেলেও ৭ শতাংশ এখনো বেকার। তবে এ সময় শ্রমিকদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছিল ২১৫ শতাংশ। তবে কার্যদিবস কমে গিয়েছিল ৭৩ শতাংশ, যার সবচেয়ে বেশি পরিবহন খাতে ৯২ শতাংশ। যেখানে করোনার আগে গড় মাসিক আয় ছিল একজন শ্রমিকের ১৩ হাজার ৫৭৮ টাকা, সেটি কমে গিয়ে ২ হাজার ৫২৪ টাকায় দাঁড়ায়। একই সঙ্গে লকডাউনের পর এ আয় ১২ হাজার ৫২৯ টাকা দাঁড়ায়। ফলে লকডাউন-পরবর্তী রিকভারিতে কাজের চাপ বাড়লেও আয় ঘাটতি থেকে যায় ৮ শতাংশ।
এসব শ্রমিকের পরিবারের আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। অনেকেই স্থায়ী সম্পত্তি বিক্রি করে পরিবারের খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। পক্ষান্তরে এসব শ্রমিক কম মূল্যের খাদ্য ও নগদ টাকা সহায়তা পেয়েছেন। সেটিও ১ শতাংশের নিচে। এসব শ্রমিকের ৩৬ শতাংশ করোনা টিকা নিয়েছেন এবং ৬৪ শতাংশ এখনো টিকা নেননি।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও করোনা পরিস্থিতি
পোলট্রি মুরগির মাংস
ক্ষতিকর পাঁচ ধাতুর উচ্চমাত্রার উপস্থিতি বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
১৪ নভেম্বর, ২০২১, বণিক বার্তা
দেশে প্রোটিনের চাহিদা পূরণের বড় একটি উৎস পোলট্রি মুরগির মাংস। মূলত বাণিজ্যিকভাবে খামারে চাষ করা মুরগিই পোলট্রি মুরগি হিসেবে পরিচিত। এগুলো ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় সাধারণ মানুষের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। আশঙ্কার কথা হলো দেশে এসব মুরগির মাংসে পাঁচটি ভারী ধাতুর উচ্চমাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পানি, দূষিত পরিবেশ ও নিম্নমানের পোলট্রি ফিডের কারণে মুরগির শরীরে এসব ধাতু প্রবেশ করছে, যা খাওয়ার ফলে তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
প্রবাবিলিটিস হেলথ রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট অব টক্সিক মেটালস ইন চিকেনস ফ্রম দ্য লারজেস্ট প্রডাকশন এরিয়া অব ঢাকা, বাংলাদেশ শীর্ষক গবেষণাটি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন গবেষক। এতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
গবেষণায় মুরগির মাংসের নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি এগুলোর পানীয় জল ও খাবার পরীক্ষা করা হয়। মাংস, পানি ও মুরগিকে দেয়া খাদ্যে লৌহ, তামা, দস্তা, আর্সেনিক, নিকেল, ক্রোমিয়াম, স্ট্রোনিসিয়াম, পারদ ও সিসার উপস্থিতি আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে দেখা যায় মাটি, পানি, খাবার ও অন্যান্য উৎস থেকে মুরগির শরীরে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, মুরগির মাংসে আর্সেনিক, নিকেল, ক্রোমিয়াম, পারদ ও সিসার মতো ভারী ধাতু ক্ষতিকর মাত্রায় উপস্থিত। মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১০৪ গুণ আর্সেনিক, ৫ দশমিক ৫৮ গুণ নিকেল, ৩ গুণ ক্রোমিয়াম, ২ দশমিক ৮ গুণ পারদ ও ৪ দশমিক ৬ গুণ সিসা পাওয়া যায়। বিষয়টি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগের বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
যেসব খামার থেকে মুরগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলোর পোলট্রি ফিডের নমুনায়ও ক্ষতিকর মাত্রায় আর্সেনিক, নিকেল, পারদ ও সিসা পাওয়া গেছে। একইভাবে মুরগির পানীয় জলেও দূষণ পেয়েছে গবেষক দল। পানিতে অন্যান্য দূষণের পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকও পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য ব্যয়ে হিমশিম খাচ্ছে দেশের মানুষ
২২ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
সরকারের নিজস্ব গবেষণা বলছে, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির নিজের পকেটের ব্যয় বেড়েই চলেছে। এখন যে ব্যয় হয়, তার প্রায় ৬৯ শতাংশ ব্যক্তি নিজে বহন করেন। এই ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে প্রতিবছর ৮৬ লাখের বেশি মানুষের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ১৬ শতাংশ খানা স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকে। অর্থাৎ তিন কোটির বেশি মানুষ প্রয়োজন হলেও চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যান না।
দেশের স্বাস্থ্য তথা চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে এই গবেষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে দুটি প্রবন্ধ গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে বাংলাদেশে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে উচ্চ মাত্রায় ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বা ‘আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার’। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে বাংলাদেশ বহুদূর পিছিয়ে রয়েছে।.. …
ব্যক্তির ওপর চাপ বাড়ছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ নিশ্চিত করতে হলে ব্যক্তির ওপর স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা ব্যয়ের চাপ কমাতে হবে। এই চাপ কমাতে ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট ২০১২-৩২ সাল মেয়াদি একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ক্রমান্বয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমিয়ে আনা হবে এবং ২০৩২ সালে ব্যক্তির ব্যয় কমে হবে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৩২ শতাংশ। যখন ওই কৌশলপত্র করা হয়েছিল, তখন ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল ৬৪ শতাংশ।
ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় না কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং উল্টোটা ঘটছে। ২০১৫ সালে ব্যক্তির ব্যয় ৬৪ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ হয়েছে।
এই ঊর্ধ্বগতি থেমে থাকেনি। সর্বশেষ ২০২০ সালে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় দেখা যায়, ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় আরও কিছুটা বেড়েছে। গতকালের অনুষ্ঠানে বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতের মোট ব্যয়ের ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যক্তি নিজেই বহন করেন।.. ..
নারী পুলিশ না থাকায় যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুকে ভর্তি নিল না ঢামেক!
২১ নভেম্বর, ২০২১, দেশ রুপান্তর
নারী পুলিশ উপস্থিত ছিল না বলে যৌন নির্যাতনে রক্তক্ষরণ হওয়া ৩বছরের শিশুকে ভর্তি নেয়নি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। নিরুপায় হয়ে সন্ধ্যার পর অসুস্থ মেয়েকে কোলে নিয়েই হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে গেছেন শিশুটির শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবা।
জানা যায়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় তিন বছরের এক মেয়ে শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। রবিবার দুপুরে চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বজনরা।
আফ্রিকা থেকে এসে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল, অ্যাড্রেস করতে পারছি না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
৩০ নভেম্বর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) ওমিক্রন যেসব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা লোকজনের ব্যাপারে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
সম্প্রতি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছেন, তারা যেভাবে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বাড়িতে চলে গেলেন এ রকম যদি ওসব দেশ থেকে আরও লোকজন আসে তাহলে কি তারা সরাসরি বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন নাকি আপনারা ব্যবস্থা নেবেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওরা তো আগে চলে গেছে বাড়িতে। আমরা তো ওমিক্রন সম্বন্ধে জানলামই ৭ দিন হলো। সব কিছু বলার আগেই তো ওখানে চলে গেছে। এর মধ্যেও আমরা ডিজি হেলথকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। তারা ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। ন্যাশনাল টেকনিক্যাল কমিটিও পরামর্শ দিয়েছে।
খরচ কম আস্থা বেশি অসুখ হলেই বিদেশ
০৩ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
ভারতে ২০০৯ সালে চিকিৎসা নিতে অন্য দেশ থেকে যত মানুষ গেছেন, তার মধ্যে বাংলাদেশির হার ছিল ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তখন ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ চিকিৎসা পর্যটক (মেডিকেল ট্যুরিস্ট) নিয়ে তালিকার শীর্ষে ছিল মালদ্বীপ। এর পরের বছরগুলোতে ক্রমাগত বাংলাদেশির হার বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ছোট্ট দেশ মালদ্বীপের। ১০ বছর পর ২০১৯ সালে ভারতে মেডিকেল ট্যুরিস্টদের মধ্যে বাংলাদেশির হার দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ, বিপরীতে মালদ্বীপের হার নেমে আসে মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশে। এ তথ্য ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপেও দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে লাখো মানুষ চিকিৎসা নিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যায়। পর্যটক হিসেবে বিদেশগামীদের একটা বড় অংশের উদ্দেশ্য থাকে উন্নত চিকিৎসা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদেশগামী বাংলাদেশির ৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ ভারতে প্রধান গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এর পরের স্থানে রয়েছে সৌদি আরব- ৮ দশমিক ১২ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
চিকিৎসা খাত-সংশ্নিষ্টরা জানান, বিদেশে চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা বেশি। খরচও হয় তুলনামূলক কম। তাই ভালো চিকিৎসার আশায় মানুষের বিদেশে যাওয়া বাড়ছে। সৌদি আরবে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পরিমাণ খুবই কম। চিকিৎসা নিতে উচ্চবিত্তরা প্রধানত সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে যায়। মধ্যবিত্তরা যায় ভারতে। তবে গত বছর আগস্ট থেকে তুরস্ক ও দুবাইয়ে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ছে। দেশ দুটিতে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত বাংলাদেশি চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা যায়, বিদেশে পর্যটক হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি সাড়ে ২৯ শতাংশ চিকিৎসা বাবদ ব্যয় করেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের বাইরে এই ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে বহির্গামী পর্যটনে মোট ব্যয় ছিল ৩৩ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।
‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট-২০২০’ নামে এ জরিপের ফল গত সোমবার বিবিএসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তথ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণ, বাংলাদেশ থেকে বহির্গমন ও দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ- এই তিন খাতের চিত্র জরিপে তুলে আনা হয়েছে। গত বছরের মার্চে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
টাকা দিতে দেরি হওয়ায় পেটে টিউমার রেখেই সেলাই
১২ ডিসেম্বর ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন
অন্তঃসত্ত্বা নারীর সিজারিয়ান অপারেশনের সময় পেটে একটি টিউমার দেখতে পান চিকিৎসক। একসঙ্গে সেই টিউমারটি অপসারণের জন্য চিকিৎসক আরও তিন হাজার টাকা দাবি করেন রোগীর স্বজনদের কাছে। এতে রাজি হলেও টাকা দিতে দেরি করায় পেটে টিউমারটি রেখেই সেলাই করে দেন ওই চিকিৎসক।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোরে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বেসরকারি হেলথ কেয়ার হাসপাতালে এই অমানবিক ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীর নাম আফরোজা আক্তার। তিনি সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গী গ্রামের নাঈম ইসলামের স্ত্রী। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হন ওই নারী। প্রসব বেদনা উঠলে রাত ২টার দিকে তাকে নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে।
অপারেশন করতে আনা হয় ডা. খায়রুল হাসান এবং অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক ডা. আশিককে। গর্ভবতী ওই নারীকে ৪৫ মিনিট পর্যবেক্ষণের পর অপারেশন শুরু করা হয়। একটি সুস্থ কন্যাশিশু হয় তার। অপারেশন শেষে ওই নারীর পেটে একটি টিউমার দেখতে পান ওই চিকিৎসক। তিন হাজার টাকা দিলে তিনি অপারেশন করে টিউমার অপসারণ করবেন বলে রোগীর স্বজনদের জানান।
অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. খায়রুল হাসান বলেন, ‘একটি অপারেশন করতে গিয়ে আরেকটি অপারেশন প্রয়োজন পড়লে এর জন্য বাড়তি তিন হাজার টাকা ফি দাবি করেছি। টাকা চাওয়াটা তো আমার ভুল হয়নি। আবার দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর আবার অজ্ঞান করা লাগতে পারে। অথবা অন্য কোনও সমস্যা হতে পারে। এমন ভাবনা থেকেই আমি আর টিউমারের অপারেশনটি করিনি। অপারেশনটি পরে করলেও চলবে।’
গোপনে টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণের হিড়িক
১৩ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
দেশে গত শনিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৮৬ জন। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ৬৯১ জন। সরকার ১২ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ হিসাবে এক ডোজ করে ৫১ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং ৩৩ দশমিক ৪০ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ করে টিকা পেয়েছেন। এর বাইরেও বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন। টিকাদান কার্যক্রমে কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না। এমনকি টিকাদানে জনসাধারণকে আগ্রহী করে তুলতে তেমন প্রচার-প্রচারণাও নেই। এর মধ্যেই টিকা নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। টিকার দুই ডোজ গ্রহণকারীদের অনেকেই বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। এ সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাব নেই। ওমিক্রন সংক্রমণের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর গোপনে বুস্টার ডোজ গ্রহণের হিড়িক পড়েছে। অনৈতিকভাবে অনেকেই টিকার তৃতীয় ডোজ নিলেও রেকর্ডপত্রে এর উল্লেখ পর্যন্ত নেই।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার একটি সরকারি হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে তার অফিস কক্ষে টিকার বুস্টার ডোজ নিয়ে কথা হচ্ছিল এ প্রতিবেদকের। তার ভাষ্য, সরকারিভাবে দেশে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরু হতে আরও দেরি আছে। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যারা সরাসরি রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত, তাদের বুস্টার ডোজ এখনই দরকার। গবেষণায় এসেছে, দুই ডোজ টিকার কার্যকারিতা ছয় মাস কিংবা তার কিছু বেশি সময় পর্যন্ত থাকে। এরপর কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকে। তখন করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেকে অবহিত করলেও তাতে সাড়া মেলেনি। এরপর মূলত অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই বুস্টার বা তৃতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন।
তার প্রতিষ্ঠানে কতজন বুস্টার ডোজ নিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই পরিচালক বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। কারণ টিকাকার্ডে বুস্টার ডোজের টিকা যুক্ত হবে না। কিংবা সরকারি পরিসংখ্যানেও আসবে না। তাহলে ওই টিকার হিসাব কীভাবে হবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, বিতরণকালে ১০ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং এটা কাগজে দেখানোও যায়। ফলে বুস্টার ডোজের সংখ্যাকে নষ্ট টিকার সংখ্যা হিসাবে দেখানো যায়। এ কারণে কতসংখ্যক বুস্টার ডোজ প্রদান হয়েছে, তা জানা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি।
দেশে প্রতি ৪ জনে একজন মানসিক রোগে ভুগছেন
১৪ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
দেশে প্রতি চারজনে একজন কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন। এ হার প্রতি বছরই বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৯২ শতাংশই চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ফর মেন্টাল হেলথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দেশে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু-কিশোর কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন। বেকারত্ব, হতাশা, অস্থিরতা, ব্যক্তিজীবনের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, নানামুখী চাপ, অপ্রাপ্তি, লোভ ও বিচারহীনতা তরুণদের মানসিক রোগীতে পরিণত করছে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে বছরে গড়ে ১০ হাজার জনেরও বেশি আত্মহত্যা করে। গুরুতর মানসিক রোগীদের মধ্যে ৪২ শতাংশই কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক রোগে ভুগছেন। করোনাকালে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। করোনার প্রথম বছরেই সারাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী অনেক।
বিশাল মজুত পড়ে আছে তবু টিকাদানে গতি নেই
১৯ জানুয়ারি ২২, সমকাল
চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে দেশের ৬৩ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার; কিন্তু গত শনিবার পর্যন্ত টিকার আওতায় আনা গেছে ৫১ শতাংশ মানুষকে। টিকাদানের যে গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে চলতি মাসের অবশিষ্ট সময়ে আরও ১২ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে না। সুতরাং টিকাদানে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না- এটি নিশ্চিত করে বলা যায়। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে বর্তমানে প্রায় ৯ কোটি ডোজ টিকা মজুত আছে।
প্রসঙ্গত, প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে আট লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। যদিও দুই দিনে ৮০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের। অথচ উচ্চ সংক্রমণের এই সময়ে টিকাদানে গতি বাড়ানোর বদলে স্বাস্থ্য বিভাগ হাঁটছে উল্টোপথে।
এ ঘটনার সমালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুততম সময়ে মানুষকে টিকার আওতায় আনা প্রয়োজন। প্রতিদিন গড়ে ৪০ লাখ মানুষ টিকার আওতায় এলে মাসে প্রায় ১০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব। সরকারকে দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার জন্য দায়ী। টিকাদান নিয়ে প্রচার কম। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগ্রহও কম। তাদের সচেতন করে তোলার কার্যক্রম নেওয়ার ক্ষেত্রেও ঘাটতি রয়েছে। একই সঙ্গে শহরাঞ্চলের শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের একটি বড় অংশও টিকা গ্রহণের বাইরে রয়েছে।
গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের অধিকার
বাউলশিল্পী রিতা দেওয়ানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
২৫ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় বাউলশিল্পী রিতা দেওয়ানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। আগামী ২৭ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ঠিক করেছেন আদালত।.. ..
মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, পালাগানের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বাউলশিল্পী রিতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নালিশি মামলা করেন আইনজীবী ইমরুল হাসান। মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত শেষে আসামি রিতা দেওয়ানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক শেখ মো. মিজানুর রহমান।
‘নৌকার বিরোধীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া যাবে না’
৩১ অক্টোবর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
নাটোর সদর উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের ভোটার ছাড়া অন্য ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ।
শনিবার সন্ধ্যায় নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুমকি দেন। তার বক্তব্যের ভিডিও দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসে পৌঁছেছে।
বক্তব্যে বিরোধীদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা ১১ তারিখে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ষড়যন্ত্র করবে। যাতে করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, জননেত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তাই এদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া যাবে না।’
‘যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, যারা ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল তাদের আর ভোট দেওয়ার অধিকার নাই বাংলার মাটিতে। বাংলার মাটিতে ভোট দিবে যারা ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে ছিল,’ বলেন তিনি।
ইউপি নির্বাচন
প্রাণহীন ভোটেও এত প্রাণহানি
০৫ নভেম্বর ২১, সমকাল
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন কেন্দ্র করে বাড়ছে হামলা, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা। অনেক জায়গায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। পাল্টাপাল্টি প্রার্থী ও সমর্থকদের বাড়িঘরে দেওয়া হচ্ছে আগুন। নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে বিভিন্ন স্থানে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এর আগেও গত ২৮ অক্টোবর নরসিংদীতে ইউপি নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় তিনজন নিহত হন।
আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো বড় দল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে না আসায় এবারের ইউপি নির্বাচনকে ‘প্রাণহীন’ নির্বাচনই বলা চলে। যদিও এমন নির্বাচনেই ঝরে যাচ্ছে বহু প্রাণ।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রেষারেষি থেকেই সহিংসতার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচন ঘিরে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আরও রক্তপাতের আশঙ্কা করছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কোনো কোনো এলাকায় প্রথম ধাপের নির্বাচনের জের ধরেও সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, নির্বাচন ঘিরে খুনোখুনি এবং সহিংসতায় গত মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন। আহতের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি।
দ্বিতীয় ধাপের ইউপি ভোট: ৮১ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান
১০ নভেম্বর ২০২১, জাগো নিউজ
দেশের দশম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর)। এই ধাপে ৮৩৬টি ইউপিতে নির্বাচন হবে। অবশ্য এই দফার ভোটে ৮১টি ইউনিয়নেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়ে গেছে। বিজয়ী সবাই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।
এর আগে প্রথম ধাপে ৩৬৯ ইউপির মধ্যে ৬৯ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়ে যায়। ফলে প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে ১৫০ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হলেন। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ বর্তমান সরকারের অধীনে সব নির্বাচন বর্জন করায় বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় মৃত্যুর মিছিল
১১ নভেম্বর, ২০২১, চ্যানেল আই অনলাইন
দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশের ৮৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। দেশের ৬৩টি জেলার ১১৫ উপজেলার এসব ইউনিয়নে ভোট চলে। নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতার আশঙ্কায় ১৪টি জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রথম ধাপের তুলনায় দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সহিংসতার সংখ্যা, মাত্রা ও তীব্রতা- সবই উল্লেখ করার মতো বেশি।
নরসিংদী, কুমিল্লা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। নানা মাত্রায় ভোট কারচুপির খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ সঙ্কটজনক। প্রথম ধাপ ও আজকের দ্বিতীয় ধাপ ধরে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে ২৭ জন মারা গেছেন। সময়ের হেরফেরে মৃত্যু আরও বাড়তে পারে।
ইউপি নির্বাচন
২৪ মৃত্যুর পরও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান নেই
১৪ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পাঁচজন নিহতের পর দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চলাকালেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু ভোটের আগে অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ কোনো অভিযান চালানো হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচন কমিশন বা স্থানীয় প্রশাসন কেউ এ বিষয়ে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ভোটের দিনেও যেসব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে, সেগুলো উদ্ধারে পুলিশের দৃশ্যত কোনো তৎপরতা নেই।
দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন ঘিরে ১২ জেলায় সংঘাত, সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে ২৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নরসিংদী, মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও কক্সবাজার—এই পাঁচ জেলায় গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। বাকি আটজন মারা গেছেন প্রতিপক্ষের পিটুনি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে। যেসব এলাকায় গুলির ঘটনা ঘটেছে, সেসব স্থানে দেশীয় কিছু অস্ত্র উদ্ধার হলেও কোনো আগ্নেয়াস্ত্র পায়নি পুলিশ। সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচন কর্মকর্তারাও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাতে পুলিশকে কোনো তাগিদ দেননি।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন
১৩১ ইউপিতে নৌকা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই নেই
১৫ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ১৩১টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এসব ইউনিয়নের নির্বাচনে মূলত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। অন্তত চারটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জামানত রক্ষা করার মতো ভোটও পাননি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ১৩১টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা ভোটের ফলে দ্বিতীয় স্থানেও ছিলেন না। এই ইউপিগুলো দেশের ৪৩টি জেলায়। এর মধ্যে বড় অংশই রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে। দ্বিতীয় ধাপে উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা সদরের ১৩টি ইউপিতে ভোট হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে মাত্র ৩টিতে। নৌকার প্রার্থী দ্বিতীয় হয়েছেন ২ ইউপিতে। বাকি ৮টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। এসব ইউপিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, দ্বিতীয় স্থানেও ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
‘নির্বাচন বর্জন করে ঘরে থাকুন, না হলে রক্তের খেলা বন্ধ হবে না’
২০ নভেম্বর ২১, সমকাল
কুষ্টিয়ায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা যুবলীগ সভাপতি রবিউল ইসলামের বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাবেক এমপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরীর ছেলে ইমরান চৌধুরী কলিন্সের বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী জামিরুল ইসলাম বাবুর পক্ষে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে কলিন্স স্বতন্ত্র এক প্রার্থীকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ১৬ নভেম্বর রাতে রিফাইতপুর ইউনিয়নের বিনতিপাড়া গ্রামে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী জামিরুলের পক্ষে বক্তব্য দেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই ভিডিওতে ইমরান চৌধুরী কলিন্স বিএনপি নেতার ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মন্টি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে শোনা গেছে, ‘ভাই এখনও সময় আছে, আমরা কিন্তু এখনও আমাদের রুদ্ররূপ শুরু করিনি ভাই। এখনও সময় আছে, আপনার মান সম্মান নিয়ে ঘরে উঠুন। আমরা যদি রুদ্রমূর্তি ধারণ করি, এটা হবে আপনাদের জন্য খারাপ, আমাদের জন্যও খারাপ। আমরা আমাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কত কিছু করতে পারি, সে হয়তো আপনার ধারণা নেই। নৌকা পেয়েছে আমাদের জামিরুল ইসলাম বাবু ভাই।’
কলিন্স তার কয়েক মিনিটের বক্তব্যে আরও বলেন, ‘জামিরুল ইসলাম বাবু টোকেন চৌধুরীর প্রার্থী, রেজাউল হক চৌধুরীর প্রার্থী, মাহবুবউল আলম হানিফ সাহেবের প্রার্থী। তাই তাকে বিজয়ী করার জন্য আমাদের যা যা করার দরকার তাই করবো।’
এক যুগে সভা-সমাবেশে দাঁড়াতে দেয়নি সরকার
-এক যুগে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে ৯৪৬ বার
-আ.লীগ সভা করেছে ১৮৫টি, বিএনপি ৮৪টি
-প্রতিবাদী গান, নাটকের স্ক্রিপ্ট দেখছে পুলিশ
২৫ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
সরকারের জাতীয় জরুরি সেবা ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল করা যাবে। এ জন্য শুধু মহানগরীতে পুলিশ কমিশনার আর জেলাপর্যায়ে পুলিশ সুপারের কাছে একটা আবেদন করতে হবে। অনুমতি পেলে দু-চার দিন পর্যন্ত পুলিশ নিরাপত্তা দেবে।
বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠনগুলো বলছে, ওয়েবসাইটে সভা-সমাবেশের অনুমতি যত সহজে পাওয়া যাবে বলে বলা হচ্ছে, আসলে তা নয়। সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়ার অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু গত এক যুগে সভা-সমাবেশে বিরোধীদের সরকার দাঁড়াতেই দেয়নি। সভা-সমাবেশের অনুমতি পেলেও কৌশলে তা পণ্ড করেছে। হয় সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী, নইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সমমনা সংগঠনগুলোর সভা-সমাবেশ করার অভিজ্ঞতা ভালো ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
দেশে সভা-সমাবেশের অধিকার কতটা, তা পর্যবেক্ষণ করে থাকে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার প্রয়োগ কতবার এবং কোনো প্রেক্ষাপটে হয়েছে, তা দিয়ে এ অধিকার সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আসকের হিসাবে, গত এক যুগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে ৯৪৫ বার।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, মোটাদাগে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মাঠে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে বিরোধ ঠেকাতে এ ধারার প্রয়োগ করা হতো। পরে ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে এ ধারার প্রয়োগ দেখা গেছে। এ ধারার বলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে পারেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে গত এক যুগে সভা-সমাবেশের কতগুলো আবেদন জমা পড়ে এবং কতগুলো প্রত্যাখ্যাত হয়, তার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে সবশেষ গত বছরের ২ ডিসেম্বর অনুমতি ছাড়া ঢাকা মহানগরীতে যেকোনো ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ডিএমপি। অনুমতি ছাড়া কেউ সভা-সমাবেশ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। পুলিশের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তর সমালোচনাও হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর জন্য দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দায়ী। তাঁরা ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার কথাও বলছেন।.. ..
গত এক যুগে কারা সভা-সমাবেশ করেছে
গত এক যুগে সভা-সমাবেশ করেছে কিংবা করার চেষ্টা করেছে—এমন রাজনৈতিক দলগুলো হলো আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ভোটের হিসাবে তৃতীয় স্থানে থাকা চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রথম সমাবেশ করে ‘ল্যাম্পপোস্ট’ নামের একটি সংগঠন। পরে কয়েক বছর মাঠে সক্রিয় ছিল তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ আরও বেশ কয়েকটি নাগরিক সংগঠন।
এ ছাড়া গত এক যুগে তিন থেকে চারটি স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ হয়েছে ঢাকায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চ টানা তিন মাস সমাবেশ করে। এ মঞ্চের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম শাপলা চত্বরে একই বছর ৫ মে সমাবেশ ডাকে, যা পরে সহিংসতায় গড়ায়। ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চের মঞ্চও উঠিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর বাইরে ২০১৫ সালে অতিরিক্ত ভ্যাট বাতিলের দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘নো ভ্যাট’ আন্দোলন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং ওই একই বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ছিল উল্লেখ করার মতো ঘটনা। এ আন্দোলনগুলোর সূত্রপাত হয় প্রতিবাদী সমাবেশ থেকে।
রাজনৈতিক দলগুলো এই এক যুগে কতগুলো সভা–সমাবেশ করেছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সভা–সমাবেশের তুলনামূলক একটি চিত্র পাওয়া যায়। ঢাকায় গত এক যুগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের ১৮৫টি সমাবেশের খবর, অন্যদিকে বিএনপি-জামাত জোটের ৮৪টি সমাবেশের খবর ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি সরকার উৎখাত ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাতের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে একযোগে ১০০টি ওয়ার্ডে এবং পরের বছর জামায়াত-বিএনপির ডাকা হরতালের প্রতিবাদে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ ২২টি জায়গায় সমাবেশ হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সভা-সমাবেশ করেছে বেশি।.. ..
খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস হয়েছে: মেডিকেল বোর্ড
২৮ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তাঁর পরিপাকতন্ত্রে তিনবার রক্তক্ষরণ হয়েছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায়। মেডিকেল বোর্ড দ্রুত খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করে বলেছে, তাঁর এই চিকিৎসা শুধু বিশ্বের তিনটি দেশেই সম্ভব। এখনই চিকিৎসা দিতে না পারলে খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘লাইফ থ্রেটেনিং’।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার পরিস্থিতি তুলে ধরেন ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস হয়েছে। তাঁর এ পর্যন্ত তিন দফায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। তৃতীয়বার রক্তক্ষরণ অনেক বেশি ছিল। লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে।
এটি টিপস (টিআইপিএস—ট্রানজুগুলার ইন্ট্রাহিপারটিপ পোর্টো সিস্টেমিকশন) পদ্ধতিতে করা হয়, যে প্রযুক্তি শুধু যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রেই সম্ভব। দ্রুত এই সঞ্চালন নালি করা না গেলে খালেদা জিয়ার লিভারে রক্তক্ষরণঝুঁকি এক সপ্তাহে ৫০ ভাগ বাড়বে, পরবর্তী ৬ সপ্তাহে সেই ঝুঁকি বাড়বে ৭০ শতাংশ।
ইউপি নির্বাচনের তৃতীয় ধাপ
সহিংস ভোটে ৯ মৃত্যু
২৯ নভেম্বর ২১, সমকাল
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোটে প্রাণঘাতী সহিংসতা, হামলা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট দেওয়ার মতো অঘটন ঘটেছে। গতকালের নির্বাচনী সংঘাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নরসিংদীর রায়পুরায় নিহত হয়েছেন তিনজন। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে মারা গেছেন বিজিবির এক নায়েক। মুন্সীগঞ্জ সদরে দু’জন ও লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। প্রতিপক্ষের হামলায় খুলনার তেরখাদায় এক আওয়ামী লীগ কর্মী এবং যশোরের শার্শায় আরও একজনের প্রাণ গেছে। এদিন গুলিবর্ষণ, ককটেল হামলাসহ সহিংসতায় অন্তত দেড়শ জন আহত হয়েছেন। তবে ভোট উৎসবের বদলে এমন সহিংস নির্বাচনকেও ‘মডেল’ দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন।
অর্ধেকের বেশিতেই আ’লীগের হার
৩০ নভেম্বর ২১, সমকাল
নৌকা পেলেই জয় নিশ্চিত- এ ধারণা ধাক্কা খেয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে। গত সাত বছরে জাতীয় সংসদ থেকে স্থানীয় সরকার- সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একচেটিয়া জয় পেলেও গত রোববার ভোট হওয়া অর্ধেকের বেশি ইউনিয়নে হেরেছেন নৌকার প্রার্থীরা। তৃতীয় ধাপের ৮৯২ ইউনিয়নের ৪৬৬টিতে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা; জিতেছে ৪২৬ ইউনিয়নে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা মূলত দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপি নেতাদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোট পেলেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বহু স্থানে নৌকার প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যেসব ইউনিয়নে বছর তিনেক আগে সংসদ নির্বাচনে নৌকা ৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, এবার সেখানে ১০ শতাংশেরও কম পেয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেই জয় নিশ্চিত- এ ধারণায় নৌকা পেতে কাড়াকাড়ি ছিল ভোটের মাঠে। প্রতি ইউনিয়নে গড়ে পাঁচ থেকে ছয়জন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
সরকারের সমালোচনা নয়, সারাক্ষণ প্রশংসা করতে হবে: আনু মুহাম্মদ
১০ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের কড়া সমালোচনা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এই সরকারের অবস্থানটা হচ্ছে, কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করা যাবে না, সারাক্ষণ প্রশংসা ও বন্দনা করতে হবে। এখন আমরা যে শাসনের মধ্যে আছি, সেটিও জেনারেল শাসনের মতোই। সামরিক শাসন হলেও এখনকার চেয়ে আলাদা কিছু হতো না।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দেখতে পাচ্ছি। এর মধ্যে উচ্ছ্বাস অনেক বেশি, দেশের অর্জনের ব্যাপারে পর্যালোচনা কম। বর্তমান সরকার কাজ করছে এক রকম, বলছে তার বিপরীত। বর্তমান সরকারের অবস্থানটা হচ্ছে, কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করা যাবে না, সারাক্ষণ প্রশংসা ও বন্দনা করতে হবে। আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবীও ওভাবেই অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। মনে হয় যে আমাদের লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশকে হীরক রাজার দেশের যন্তর-মন্তর ঘর থেকে বের করা হয়েছে৷ একই মুখস্থ বন্দনা ছাড়া তাঁদের আর কোনো কথাবার্তা নেই।
রাতের বেলা সসম্মান দেশ থেকে পালালেন
অশালীন মন্তব্যের পর পদত্যাগে বাধ্য হওয়া প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বিদেশে ‘পালিয়ে যেতে’ দেওয়ার সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ। মুরাদের নাম উল্লেখ না করেই তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার একজন সদস্য, যিনি যৌনসন্ত্রাস-সহিংসতার একেবারে মূর্ত রূপ, তিনি সরকারের অনুমতি পেয়ে সবার চোখের সামনে দিয়ে রাতের বেলা নিরাপদে ও সসম্মান দেশ থেকে পালালেন। ফেসবুকে সরকার সম্পর্কে সামান্য সমালোচনা করলে লেখক-শিল্পী-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। অন্যদিকে ওই লোক (মুরাদ হাসান) ভয়ংকর রকম সন্ত্রাসী কথাবার্তা বলে, বহুজনের জীবন অতীষ্ঠ করেও মহানন্দে পার পেয়ে চলে গেলেন। মৃত্যুদণ্ডের আসামি মাফ পেয়ে যাচ্ছে, সাংবাদিককে পিটিয়ে আমলা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাচ্ছে—এটিই হচ্ছে এখনকার শাসনব্যবস্থা। এখানে মোহমুক্ত পর্যালোচনা সম্ভব নয়। দায়িত্বশীল সরকার থাকলে সে-ই একে উৎসাহিত করত।
স্বাস্থ্য খাতে নৈরাজ্য ও শিক্ষা খাতে বাণিজ্য
দেশের ৫০ ভাগ লোক প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত হয়েছেন, এমন কথা স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে দুটি জিনিস পাই। একটি নৈরাজ্য, অন্যটি বাণিজ্য। আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে বৈষম্যহীন শিক্ষার প্রতিশ্রুতি থাকলেও গত পাঁচ দশকে শিক্ষায় বৈষম্য বেড়েছে। সরকার শিক্ষাকে ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো এমন দেশ পৃথিবীতে খুব কম পাওয়া যাবে, যেখানে শিক্ষার মধ্যে এত ভয়ংকর রকম বৈষম্য, এত ব্যাপক বাণিজ্যিক তৎপরতা। গড় আয়ের তুলনায় এত ব্যয়বহুল শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহনও পৃথিবীর খুব কম দেশে পাওয়া যাবে। এরপরও সরকারের কী করে উচ্ছ্বাস আসে? পুরো উল্টো যাত্রা করে বলা হচ্ছে যে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করছি।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের আগে অনেক অনিয়ম
১১ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গত ১১ নভেম্বর ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একজন প্রার্থী ছাড়া বাকি ৪৮ জনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার দেখানো হয়। পরে জানা যায়, সবার সই জাল করে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে; যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকারীরা। ভয়াবহ জালিয়াতির এ অভিযোগ তদন্তও করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সত্যতা পাওয়ায় স্থগিত করা হয় ভোট।
এবারের ইউপি ভোটে সংসদ সদস্য (এমপি), উপজেলা চেয়ারম্যানসহ প্রভাবশালীদের পছন্দের প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী করতে এমন নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি সংসদের বৈঠকেও প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু অভিযোগ করেছেন, তার দলের প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা চাপ দিচ্ছেন।
এখন পর্যন্ত চার ধাপের ভোটে তিন হাজার ৪০টি ইউপিতে ২৯৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। প্রথম ধাপে ৩৬৪টি ইউপিতে ৭১ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩টির মধ্যে ৭৭, তৃতীয় ধাপে ১০০১টির মধ্যে ১০০ এবং চতুর্থ ধাপে ৮৪২টির মধ্যে ৪৮ চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট ছাড়াই জয়লাভ করেছেন। বিনা ভোটে জয়ী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি, আর্থিক প্রলোভনসহ রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা হয় না। এর কারণ সম্পর্কে একাধিক প্রার্থী বলেছেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার এমন চিত্র তারা মেনে নিয়েছেন। অভিযোগ দিলে প্রতিকার পাওয়া যাবে- এমন কোনো সম্ভাবনা তারা দেখছেন না।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
ভোটের ফলে আরও পিছিয়েছে নৌকা
২৮ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে এসে ‘বিদ্রোহী’ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে আরও কোণঠাসা হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। চতুর্থ ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীদের প্রায় অর্ধেকই হেরেছেন। এর মধ্যে ১৬২টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নৌকার প্রার্থীরা মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই ছিলেন না।
স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জন করেছে রাজনীতির মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ বিএনপি। তারপরও প্রতিটি ধাপেই নৌকার জয়ের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। বেশ কিছু ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসা দূরের কথা, জামানত রক্ষা করার মতো ভোটও পাননি নৌকার প্রার্থীরা। কয়েকটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরা ১০০ ভোটেরও কম পেয়েছেন।.. ..
চতুর্থ ধাপে গত রোববার দেশের ৮৩৬টি ইউনিয়নে ভোট হয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় গতকাল সোমবার ৭৯৬টি ইউনিয়নের ফলাফলের তথ্য দিয়েছে। তাতে দেখা যায়, ৩৯৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৩৯০টিতে। বাকি ইউনিয়নে অন্য দলের প্রার্থীরা জিতেছেন।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ১৯৭ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। তাঁরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন বিএনপির ৭৫ জন নেতা।
চতুর্থ ধাপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর ছাড়াও রাজবাড়ী, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ধরাশায়ী হয়েছেন।
চতুর্থ ধাপের ভোটে ২৭টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিল না। সে হিসাবে এই ধাপে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ৫১ দশমিক ৪৯ শতাংশ ইউপিতে। জয়ের এই হার এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চার ধাপের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে প্রথম ধাপে দুই দফায় এ বছরের এপ্রিল ও জুন মাসে ৩৬৫টি ইউপিতে ভোট হয়েছিল। প্রথম ধাপের ভোটে ৭৬ শতাংশ ইউপিতে জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপে ক্ষমতাসীনেরা জয় পেয়েছিলেন প্রায় ৫৯ শতাংশ ইউপিতে। গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ৫৪ শতাংশ ইউপিতে জয় পেয়েছিলেন ক্ষমতাসীনেরা।
এর আগে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের জয়ের হার এবারের তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের চেয়ে ভালো ছিল। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। অবশ্য সে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ছিল। ২০১৬ সালে ছয় ধাপে মোট ৪ হাজার ১০৪টি ইউপিতে ভোট হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২ হাজার ৬৫২টি, অর্থাৎ প্রায় ৬৫ শতাংশ ইউপিতে জয় পেয়েছিল।
ঘাঁটিতেও নৌকার ভরাডুবি
২৮ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
সারাদেশে নির্বাচনের ফল খারাপ হলেও কিছু জেলায় সব সময়ই ভালো করে এসেছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এসব এলাকায় দলটি কখনও বিফল হয়নি। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এমন জেলাগুলোতেও এবারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে হেরেছেন। এমনকি নৌকা প্রতীক নিয়ে ফরিদপুরে পাঁচজন প্রার্থী জামানতই বাঁচাতে পারেননি। দিনাজপুরের ২১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে অন্তত নৌকার ছয় প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। শেরপুরের শ্রীবরদীতে ৯ ইউপির মধ্যে সাতটিতে এবং কিশোরগঞ্জে ২২টির মধ্যে ১৩টিতে হেরেছে নৌকা।
দেশের অতীত নির্বাচনের ফল বিশ্নেষণে দেখা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্য যে কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা এসব জেলায় একচেটিয়া বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে চেয়ারম্যান পদে এসব জেলায় ভোটের ফল ক্ষমতাসীনদের জন্য মোটেই সুখকর নয়। তৃতীয় ধাপের মতো চতুর্থ ধাপের ভোটেও সারাদেশে নৌকা প্রার্থীরা অর্ধেকের বেশি পদে হেরে বসে আছেন।
২৬ ডিসেম্বর রোববার সারাদেশের ৫৮টি জেলার ১১৮টি উপজেলার ৮৩৬টি ইউপিতে ভোট নেওয়া হয়। এই ধাপে ভোটের আগেই একক প্রার্থী হিসেবে ৪৮ ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা ভোটে জয় নিশ্চিত করেন। ফলে রোববার ৭৯০ ইউপির চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়। ৭৯০টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন তিন হাজার ৮১৪ জন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী।
অন্য ধাপের মতো রোববারেও ভোটের দিন ব্যাপক সহিংসতা ও অনিয়মের ঘটনা ঘটে। যদিও ভোট শেষে ইসি সচিব হুমায়ূন কবির খোন্দকার বলেছেন, ‘সারাদেশে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে।’
১৫ লাখ টাকার চেক দিয়েও দলের মনোনয়ন না পাওয়ার অভিযোগ
০৮ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম–৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদের নামে ১৫ লাখ টাকার চেক নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এক যুবলীগ নেতা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ অভিযোগ করেন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ–আইনবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলিও। ফেসবুকের এ স্ট্যাটাস নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
টিএসসিতে কাওয়ালির আসরে হামলা, অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে
১২ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে কাওয়ালি গানের আসর বসিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী। এই অনুষ্ঠানে হামলা করে মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর এবং আয়োজক ও শিল্পীদের মারধর করেছেন আরেক দল শিক্ষার্থী।
এই হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন আয়োজকেরা। তবে ছাত্রলীগ বলেছে, শরিয়াহ ও তরিকা অনুযায়ী কাওয়ালি সহি কি না, নারীরা আসতে পারবেন কি না—এ ধরনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আয়োজকদের মধ্যে বিভেদ ছিল। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে টিএসসিতে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে টিএসসির সঞ্জীব চত্বরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। কাওয়ালি ব্যান্ড ‘সিলসিলা’ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। রাত নয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলার কথা থাকলেও হামলার পর পণ্ড হয়ে গেছে।
নোটিশ দিয়ে ১০০ টাকার বিনিময়ে ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ দেখার নির্দেশ
১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ ১০০ টাকা দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের একটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১লা জানুয়ারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের সইসহ একটি নির্দেশনা নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ‘ব্যবস্থাপনা বিভাগের সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের জানানো যাচ্ছে যে, গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে অধ্যক্ষ মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র “চিরঞ্জীব মুজিব” বগুড়ার মধুবন প্রেক্ষাগৃহে ১০০ টাকার বিনিময়ে চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য তাদের স্ব স্ব শিক্ষাবর্ষের শ্রেণি, রোল, নাম ও সেশন উল্লেখপূর্বক তালিকা প্রস্তুত করে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মো. আজহার আলীর নিকট আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
চাকরির আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটার অভিযোগ
১৬ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
সব ধরনের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বাড়ানোসহ চার দফা দাবিতে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের ডাকা সমাবেশে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, লাঠিপেটায় ৮-১০ জন আহত হয়েছেন এবং অন্তত ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।
সচিবালয়ের পিয়ন পর্যন্ত আমাদের দাম দেয় না, ক্ষোভ সাংসদ নাজিমের
১৭ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
‘এমপি হিসেবে একজন সচিবের কাছে গেলে তাঁরা যেভাবে শ্রদ্ধা করবেন, সেই শ্রদ্ধাবোধ নাই। পিয়ন পর্যন্ত আমাদের দাম দেয় না। স্যারডা না বইলা পারে না। আমলাতন্ত্রের হাতে আমরা জিম্মি হয়ে গেছি।’
জাতীয় সংসদে আজ সোমবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় এ কথা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ময়মনসিংহ-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ। বেলা ১১টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের এ অধিবেশন শুরু হয়।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
দোয়া মাহফিলেও পুলিশের হানা, আটক বিএনপির নেতাকর্মী
৩১ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো
রাজধানীর নাখালপাড়া এলাকায় নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসা থেকে দলটির একাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির নেতারা বলছেন, সুমনের মা দীর্ঘদিন অসুস্থ্ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখান নেতাকর্মীদের আটক করেছে পুলিশ।
তবে পুলিশের দাবি, গোপন বৈঠক থেকে তাদের আটক করে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নিখোঁজ সুমনের ছোট বোন সানজিদা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আমার অসুস্থ মাকে দেখতে এসেছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বাসায় দোয়া মাহফিল চলছিল। হঠাৎ পুলিশ আমাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে অন্তত ২০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে। এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক আমাদের বাসায় ছিলেন।
রংপুরে পুলিশের পিটুনিতে মৃত্যুর খবরে থানা ঘেরাও, ভাঙচুর
০১ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে পুলিশের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হারাগাছের নতুন বাজার বছি বানিয়ার তেপতি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম তাজুল ইসলাম (৫৫)। তিনি উপজেলার হারাগাছ নয়াটারী দালালহাট গ্রামের মৃত শওকত আলীর ছেলে।
তাজুল ইসলামের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হারাগাছ মেট্রোপলিটন থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাসের সেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। রাত সাড়ে নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হারাগাছ থানার সামনে শত শত মানুষ অবস্থান নিয়েছেন। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সাজেদুলের মায়ের মন্তব্য
পুলিশ যা করল, তা ‘লজ্জাজনক’
০২ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
দিনদুপুরে বাসার দরজা ভেঙে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মধ্যে পুলিশের মারমুখী আচরণে হতভম্ব নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল হকের পরিবার। তারা বলছে, কখনো কারও বাসায় এ রকম কিছু ঘটতে পারে, তা চিন্তারও বাইরে।
সাজেদুলের অসুস্থ মা হাজেরা খাতুন বললেন, গত ৫০ বছরে তাঁদের বাসায় ড. কামাল হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেশের গণ্যমান্য অনেকেই এসেছেন। সাজেদুলের বাবাও রাজনীতি করতেন। তিনি এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন। কিন্তু গত রোববার বাসায় ঢুকে পুলিশ যা করল, তা লজ্জাজনক।
নিখোঁজ সাজেদুল ঢাকা উত্তর সিটির ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাসা রাজধানীর তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগে। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন তিনি। তাঁর মা সত্তরোর্ধ্ব হাজেরা খাতুন গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর আহ্বায়ক। বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার হওয়া ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মিলে এই সংগঠন গড়ে তুলেছে।
‘আমরা চারজন আর এক হতে পারলাম না’
০৭ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
৯ বছর আগের এক রাতে মারুফা ইসলামের ফোনটা বেজে উঠেছিল হঠাৎ। ছোট্ট একটা বার্তা—তাঁর স্বামী মফিজুল ইসলাম (রাশেদ) গ্রেপ্তার। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই স্বামীর খোঁজে পথে নেমেছিলেন মারুফা।
গুম হয়ে থাকা সেই স্বামীর সন্ধান আর পেলেন না মারুফা ইসলাম। গত বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্বজনেরা প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার বেলা ১১টার দিকে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে লালমাটিয়ায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন মারুফা। রাস্তা পার হচ্ছিলেন তিনি। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে গেলে পেছন থেকে এসে একটা বাস চাপা দেয়। একজন সাংবাদিক গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁকে। ঘণ্টা দুয়েক বেঁচে ছিলেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়।
মারুফার এই মৃত্যু কাঁদিয়েছে তাঁর সহযোদ্ধাদের। তাঁদের আশঙ্কা হয়তো প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার আগে এভাবেই দুনিয়া ছাড়তে হবে তাঁদের। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারুফার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাই ছুটে গিয়েছিলেন ভুক্তভোগী আর মানবাধিকারকর্মীরা।
আফরোজা বলেন, ‘যে নারী কখনো মুদির দোকানে যাননি, স্বামীর খোঁজে তিনি পথে পথে ঘুরেছেন। মায়ের ডাকের সব অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। স্বামী গুম, ছেলে দুটো মানুষ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ভাবতেন সব সময়। কোনো দিন এক বেলা, কখনো আধপেটা খেয়ে দিন পার করেছেন।’
মারুফা ইসলামের বড় ছেলে সাইদুল ইসলাম ও ছোট ছেলে রামিমুল ইসলাম এখন চাঁদপুরে। সেখানেই দাফন হয়েছে তাঁর। ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল রাত থেকে তাঁর বাবার খোঁজে মায়ের যে যুদ্ধের শুরু, তার সমাপ্তি কী করে ঘটল প্রথম আলোকে তাই বলছিলেন সাইদুল।
মফিজুল ইসলাম ছিলেন ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তিনি যখন গুম হন, তখন সাইদুল অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, ছোট ভাই রামিমুল ইসলামের বয়স আড়াই বছর। মফিজুল ঝুট কাপড়ের ব্যবসা করতেন। প্রতিদিনের মতো সেদিনও বেলা ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হন।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারুফাকে ফোন করেন বাবার বন্ধুরা। তাঁরা জানান, একদল লোক ডিবি পরিচয়ে মফিজুলকে তুলে নিয়ে গেছে। তাদের পকেটে ওয়াকিটকি আর পরনে ডিবির জ্যাকেট। অনেক ধস্তাধস্তির পর মফিজুলকে একটা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে গেছে তারা।
রাত পেরোতে না পেরোতেই স্বামীর খোঁজে নামেন মারুফা ইসলাম। এক ছেলেকে কোলে আর আরেক ছেলের হাত ধরে পরদিন তিনি দারুস সালাম থানা, শাহ আলী থানা, মিরপুর মডেল থানা ও পল্লবী থানায় যান। থানা জানায়, ওই নামে তারা কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।
এসএসসির পর সাইদুলকে কাজে দিয়ে দেন মারুফা। ১৭ বছরের ছেলে সংসারের হাল ধরে, পড়ালেখাও চালিয়ে যায়। আর মারুফার পথের সঙ্গী হয় তাঁর ছোট ছেলে রামিমুল।
থানা–পুলিশের পরামর্শে এবার মারুফা যান মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) কার্যালয়ে। সেখান থেকেও জানানো হয় এই নামে গ্রেপ্তার নেই কেউ। দারুস সালাম থানায় পরে একটি সাধারণ ডায়েরি করতে পেরেছিলেন মারুফা।
পরদিন মারুফার গন্তব্য ছিল ঢাকার সব হাসপাতাল। প্রতিটি হাসপাতালের লাশঘরে একটি একটি করে মৃতদেহ খুঁজে পার হয় আরও একটি দিন। এরপর তিনি যান আদালত পাড়ায়।
সাইদুল বলছিলেন, যদি গ্রেপ্তারের পর স্বামীকে আদালতে তোলা হয়, এই আশায় কতবার যে মিরপুর থেকে পুরান ঢাকার আদালতে তাঁর মা গেছেন, দুই হাতে গুনেও তিনি শেষ করতে পারবেন না।
ছোটাছুটির একপর্যায়ে মারুফা বুঝতে পারেন, ঘরে জমানো টাকা ফুরিয়ে আসছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, মফিজুলের বন্ধু, কখনো বাবার বাড়ি থেকে চেয়েচিন্তে চলতে হচ্ছিল। একদিন মিরপুরের বাসা থেকে তাঁরা সাভারের হেমায়েতপুরের একটা কম ভাড়ার বাসায় উঠে যান। খোঁজ তবু ফুরায় না মারুফার। দুষ্ট লোকেরাও নানা সময় তাঁকে ফোন করে ধোঁকা দিয়েছে। যখন যেখানে দেখা গেছে বলে খবর পেয়েছেন, তখনই ছুটেছেন তিনি।
এসএসসির পর সাইদুলকে কাজে দিয়ে দেন মারুফা। ১৭ বছরের ছেলে সংসারের হাল ধরে, পড়ালেখাও চালিয়ে যায়। আর মারুফার পথের সঙ্গী হয় তাঁর ছোট ছেলে রামিমুল।
গুম নিয়ে যখনই কেউ পথে দাঁড়িয়েছে মফিজুলের ছবি বা প্ল্যাকার্ড হাতে ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এখন রামিমুলকে নিয়েই চিন্তা সাইদুলের। রামিমুলকে মা কোল ছাড়া করতে চাইতেন না। বাবার স্মৃতি নেই তার, মায়ের হাতে খেত, ঘুমাতোও মায়ের সঙ্গেই। মৃতদেহে হাত বুলিয়ে দেখেও রামিমুলের বিশ্বাস হয়নি মা আর নেই।
সাইদুল বলছিলেন, ‘আম্মুর বিশ্বাস ছিল আব্বু ফিরবে। অনেক দিন ধরে গুম হয়ে আছেন, এমন কেউ ফিরে এসেছেন শুনলেই আম্মু আমাদের খবর দিত। এখন আব্বু ফিরলেও আম্মুকে আর পাব না। আমরা চারজন আর এক হতে পারলাম না।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড
০৯ নভেম্বর ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন
পৃথক দুটি ধারায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এরমধ্যে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের দায়ে ৪ বছর এবং মানি লন্ডারিংয়ের আরেক ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এস কে সিনহার ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামি খালাস
১১ নভেম্বর ২১, সমকাল
রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলায় আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম কামরুন্নাহারের আদালত এ রায় ষোষণা করেন। খালাসপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, রেইনট্রি হোটেলে শিক্ষার্থী ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। উভয়পক্ষের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক ঘটেছে। ধর্ষণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি বলে তাদের খালাস দেওয়া হলো।.. ..
ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে আদালতের পরামর্শ
১১ নভেম্বর ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন
রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘এরপর থেকে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর যদি কেউ মামলা করতে যায়, তা না নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের আদালত এ রায় দেন। আসামিদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারক তাদের খালাস দেন।
কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর ‘নির্যাতনের’ সুনির্দিষ্ট ‘প্রমাণ পায়নি’ পিবিআই
১৭ নভেম্বর, ২০২১, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে শারীরিক নির্যাতনের কোনো ‘সুনির্দিষ্ট প্রমাণ’ পায়নি পুলিশের তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিশোরের করা অভিযোগের তদন্ত করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আদালতে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছেন।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল।
গত ১৭ অক্টোবর তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে পারেন ১৭ নভেম্বর। প্রতিবেদনের বিষয়ে আগামী ২৪ নভেম্বর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, সাদা পোশাকে অজ্ঞাতনামা ১৬-১৭ জনের বিরুদ্ধে ‘শারীরিক নির্যাতন’ এর অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।
গত ২০ মার্চ কিশোরের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা হলেন- নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমী, অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ফখরুল আমিন খান ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. হাফিজ সর্দার। তারা কিশোরের শরীরে নির্যাতনের প্রমাণ পাননি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ‘নির্যাতনের’ অভিযোগ তুলে গত ১০ মার্চ কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজ্ঞাত সদস্যদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।
সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা
২৪ নভেম্বর ২১, সমকাল
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তা যে কোন সময় বিশৃঙ্খলায় রূপ নিতে পারে। রাজপথের পরিস্থিতি নাজুক হতে পারে বলে পুলিশ মনে করছে। সে কারণেই এই সতর্ক থাকার প্রস্তুতি।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক রয়েছে। এমনকি পুলিশের দায়িত্বশীল যেসকল কর্মকর্তা ছুটিতে ছিলেন, তাদের সেই ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দ্রুত নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক নির্যাতন
কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসিকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি
২৭ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিককে সাজা দেওয়া ও ‘নির্যাতনের’ ঘটনায় শাস্তি পাওয়া কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এর ভিত্তিতে ২৩ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কুড়িগ্রামে বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে ধরে এনে সাজা দেওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে দুই বছর বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করে লঘু দণ্ডের শাস্তি দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। লঘু দণ্ডের শাস্তি বাতিল করে অভিযোগের দায় থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ শাস্তির আদেশ দেওয়া হয়েছিল গত ১০ আগস্টে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে। সেই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে গত ২৩ নভেম্বর আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই প্রজ্ঞাপনে সুলতানা পারভীনের শাস্তি বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যা: দুই আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত
৩০ নভেম্বর ২১, সমকাল
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যা মামলার দুই আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সংরাইশ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, মামলার ৩ নম্বর আসামি সুজানগর এলাকার রফিক মিয়ার ছেলে সাব্বির হোসেন (২৮) ও ৫ নম্বর আসামি সংরাইশ এলাকার কাকন মিয়ার ছেলে সাজন (৩২)। কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই পরিমল দাশ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভোলায় বন্দুকযুদ্ধে দুই জলদস্যু নিহত
০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ইত্তেফাক
ভোলার চরফ্যাশনে র্যাবের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে দুই জলদস্যু নিহত হয়েছে। তবে নিহতদের নাম ও পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
রবিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
কক্সবাজারে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২
০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ইত্তেফাক
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুইজন নিহত হয়েছেন। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) ভোরে উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সিপিসি কমান্ডার মেজর শেখ ইউসুফ আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
‘আমাদের প্রিয়জনকে ফিরিয়ে দিন’
১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে তাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ৮ বছর আগে যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের শিশু সন্তানরাও ছিল। হাতে বাবার ছবি নিয়ে তারা সুবিচার দাবি করেন।
মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গতকাল মানববন্ধন আয়োজন করে গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’।
রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীসহ অনেকেই নিখোঁজ হওয়ার পর বছর পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আজও তাদের খোঁজ দিতে পারেনি।
গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে মানববন্ধনে যোগ দেন দেশের অন্যান্য নাগরিকরাও।
গুলশান ছাত্রদলের সাবেক নেতা সাইফুর রহমানের বাবা শফিকুর রহমান অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে তার ছেলেকে তুলে নেওয়া হয়।
তিনি জানান, এ ঘটনায় তিনি স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে আজ পর্যন্তও তার ছেলের খোঁজ পাননি।
শফিকুর বলেন, তিনি তার ছেলের খোঁজ পেতে সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন। জীবিত না থাকলেও তার ছেলেকে কোথায় দাফন করা হয়েছে অন্তত সেই খবরটুকু তারা চান, যাতে তার বিদেহী আত্মার জন্য মাগফেরাত কামনা করতে পারেন।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আমার ছেলে রাজনীতি করত। এটাই কি তার অপরাধ?’
অপর ভুক্তভোগী মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা সালেহা বেগম জানান, ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি তার ছেলেকে তুলে নেওয়া হয়।
তিনি জানান, এ ঘটনায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরকেও সাহায্য করতে অনুরোধ করেছেন।
সাতক্ষীরায় হাজতখানায় আসামির মৃত্যু
ডিসেম্বর ১২, ২০২১, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি অনলাইন
সাতক্ষীরায় গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে মাদক মামলার আসামি বাবলু সরদার (৫৬) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তবে পুলিশের দাবি তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মৃত বাবুল সরদারের স্বজনেরা জানিয়েছেন, শনিবার সকালে এক নারী আকস্মিক তাদের বাড়িতে ঢুকে ঘরে কিছু রাখেন। এরপর ওই নারী বাইরে থাকা অবস্থায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ঘরে তল্লাশি চালায়। ৩৫ হাজার টাকা ও ৫০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধারের কথা বলে বাবুল সরদারকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে পুলিশের দাবি, গোপন খবরের ভিত্তিতে বাবুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদকসহ আটক করা হয় তাকে। বাবলু সরদারের বাড়ি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামে। তার বাবা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা জুড়ন সরদার।
গতকাল শনিবার রাতের কোনো এক সময় বাবলু সরদার সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনসের মধ্যে অবস্থিত ডিবি পুলিশের হাজতখানায় মারা যান।
এ ঘটনায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শেখ সোহেল ও কনস্টেবল শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রনির ২ বছরের সাজা মওকুফ
১২ ডিসেম্বর ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন
ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে প্রবেশ ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে দেওয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুই বছরের কারাদণ্ড মওকুফের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ফারজানা আকতারের আদালত এ আদেশ দেন।
চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. নাছির উদ্দীন বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। আদালত শুনানি শেষে দুই বছরের সাজা মওকুফ করে দিয়েছেন।
নুরুল আজিম রনির আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হারুনুর রশিদ ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রনিকে জেলে পাঠান। পরে আমরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিলের মাধ্যমে জামিন আবেদন করি। তখন আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া আপিল নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতে পাঠান। আপিল শুনানি শেষে আজ আদালত আমাদের আপিল মঞ্জুর করেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে নুরুল আজিম রনিকে খালাস দেন বিচারক।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৭ মে হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলার সময় একটি কেন্দ্রের পাশ থেকে অস্ত্র, গুলি ও ব্যালট পেপারে ব্যবহৃত একটি সিলসহ রনিকে আটক করে বিজিবি। ভ্রাম্যমাণ আদালত ভোটকেন্দ্রে অবৈধ প্রবেশ ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে ইউপি নির্বাচন আইনে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন।
সার্জেন্টের বাবা পা-হারা
২ সপ্তাহ ঝুলিয়ে রেখে আসামির নাম ছাড়া মামলা
১৭ ডিসেম্বর ২০২১, আজকের পত্রিকা
অবশেষে পুলিশের নারী সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের মামলাটি নিয়েছে পুলিশ। তবে এজাহারে কোনো আসামির নাম ছাড়াই। গাড়িচাপায় মহুয়ার বাবার পা হারানোর ঘটনার দুই সপ্তাহ পর অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে রাজধানীর বনানী থানায়।
বনানী থানার ওসি নূরে আযম মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী পুলিশের সার্জেন্ট মহুয়া হাজং গত রাতে আজকের পত্রিকাকে জানান, মামলার তিনি তখনো কিছু জানেন না। থানা থেকে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি।
তবে এর আগে মামলার বাদী মহুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেছিলেন, অভিযোগে আসামির নাম দেওয়ায় মামলাটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। একপর্যায়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে আবেদন করতে বলা হয়। তাই নতুন করে ৯ ডিসেম্বর এভাবে আবেদন করেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মো. আসাদুজ্জামান রাতে আজকের পত্রিকাকে জানান, অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন ছিল, তদন্ত করে মামলা নেওয়া হয়েছে। বাদীর অভিযোগে কোনো অভিযুক্তের নাম ছিল না বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার্জেন্ট মহুয়ার আত্মীয় বলেন, ‘এত তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হলো। এতেই বোঝা যাচ্ছে এ বিচার আমরা কখনো পাব না। শুধু গণমাধ্যমের চাপের কারণে মামলা হয়েছে। দুর্ঘটনার তদন্ত বা বিচার করার জন্য নয়।’
গত মঙ্গলবার থেকেই গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলতে নিষেধ করা হয় সার্জেন্ট মহুয়াকে। হাসপাতালের মধ্যেই বসানো হয় পুলিশি পাহারা। এসবের সঙ্গে আছে বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের নানামুখী চাপ। এতে ন্যায়বিচারের আশা অনেকটাই ছেড়ে দিয়ে বাবা মনোরঞ্জন হাজংয়ের চিকিৎসায় মনোযোগ দিয়েছেন মহুয়া। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপাতত বাবার চিকিৎসার দিকেই মনোযোগ দিয়েছি। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো না। এখনো আইসিইউতেই রাখা হয়েছে।’ মনোরঞ্জন হাজংয়ের স্ত্রী বলেন, ‘ডান পা কেটে ফেলার পর বাম পা-টাও কেটে ফেলার প্রস্তুতি চলছে।’
২ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি সড়কে দ্রুতগতির একটি বিএমডব্লিউ গাড়ির চাপায় আহত হন বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জন হাজং। এক বিচারপতির ছেলে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। আহত মনোরঞ্জনকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁর এক পা কেটে ফেলেন। সেখানে ৯ দিন চিকিৎসার পর অবস্থা আরও খারাপ হলে শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ন্যায়বিচার চেয়ে পুলিশের হ্যাশট্যাগ
১৮ ডিসেম্বর ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন
‘জাস্টিস ফর মহুয়া। জাস্টিস ফর ফাদার।’ ফেসবুকে ন্যায়বিচার চেয়ে এমন হ্যাশট্যাগ দিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যরা। পোস্টের সঙ্গে দেখা যাবে মহুয়া হাজং ও তার বাবার একটি ছবি। তাদের কেউ মহুয়ার সহকর্মী, কেউ সমব্যথী। মহুয়ার জন্য ন্যায়বিচার চাওয়ার পোস্টের মন্তব্যে অনেক সাধারণ মানুষকেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত সনেট শিকদার নামে একজন পুলিশ সার্জেন্ট তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার শক্তিটুকু আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাল্লাহ। আমি আমার অবস্থানটা পরিষ্কার করলাম। একজন সহকর্মী, একজন ভাই হিসেবে আমি মহুয়ার পাশে আছি। একজন সন্তান হিসেবে আমি একজন পিতার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিচার চাই। থানায় কেন মামলা নেওয়া হলো না তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাও চাই।’
১৫ ডিসেম্বর দেওয়া তার এই স্ট্যাটাস একাধিকবার শেয়ার হয়েছে এবং অনেকেই মন্তব্য করেছেন। জুয়েল মাহমুদ নামে একজন কনস্টেবল মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা নিজেরাই নিজেদের কাছে খুব অসহায়।’
হোসেইন আবিদ নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ক্ষমতার বিপরীতে একজন পুলিশের পরিবারের সঙ্গে এমন হলে সেখানে জনগণের অবস্থা ডাল-ভাত, এটা সবার জানা কথা।’
তিনি আরও লেখেন, ‘ভিআইপি পরিবারের সালমান খানগুলো দুষ্ট পানি খেয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে যাবে। আর আমরা বিচার চাই বলে জোর আওয়াজ তুলবো, ততক্ষণে বেগম পাড়ার উদ্দেশ্যে ফ্লাইট ছেড়ে যাবে।’
মাসুম বিল্লাহ নামে অপর একজন সার্জেন্ট সনেটের দেওয়া স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছেন, ‘একজন পুলিশ সদস্য নিজেই বিচারের দাবিতে পুলিশের দরজায় ঘুরবে, তা কী করে হয়!’
সাবাব এম আলী নামে একজন লিখেছেন, ‘ন্যায়বিচারের একটা প্লেট জাদুঘরে সাজিয়ে রাখার দিন এসে গেছে। কারণ এটা বিলুপ্তপ্রায়।’ মো. আতিকুর রহমান লিখেছেন, ‘সাধারণ জনগণ হিসেবে আমিও পাশে আছি।’ সার্জেন্ট সনেট শিকদারের স্ট্যাটাসে একমত পোষণ করে মন্তব্য করেছেন সার্জেন্ট তানজিলা পিয়াস।
বাংলাদেশের যে অঞ্চলে গরু, বাছুর, মহিষের জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক
১৯ ডিসেম্বর ২০২১, বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলে কোন বাসিন্দা যদি গরু, মহিষ বা বাছুর পালতে চান তাহলে তাকে সেইসব পশুর নিবন্ধন করতে হয়।
এমনকি এসব পশু বাচ্চা জন্ম দিলে কিংবা পশু বিক্রি করলেও তথ্য হালনাগাদ করতে হয়। এবং এই নিয়ম বাধ্যতামূলক।
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং গোদাগাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিজিবি ক্যাম্প এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে গিয়ে পশুর মালিকদের নিবন্ধন ও হালনাগাদের এই কাজটি করতে হয়।
দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ
নিবন্ধনের এই কাজটি সম্পন্ন করতে পশুর মালিকদের একাধিক জায়গায় যেতে হয়। অনেক নথিপত্রের কাজও রয়েছে। এসব কারণে গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত মানুষের জন্য বিশেষ করে যারা দূরবর্তী অঞ্চলে থাকেন তাদের ব্যাপক দুভোর্গ পোহাতে হয়।
দুই মাস আগেও নিবন্ধন করতে পশু মালিকদের মাইলের পর মাইল হেঁটে গরু-মহিষ চড়িয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে এরপর বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে হতো।
এ নিয়ে গ্রামের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমার ছ’টা গরু। হাট থেকে কয়টা কিনেছি। আমার ভাই কয়টা দিয়ে গেল। আবার একমাস আগে একটা গাভী বাচ্চা দিয়েছে। এজন্য চারবার আসা যাওয়া করছি। একবার এই অফিসে ওই অফিসে। আমাদের তো কাজ আছে। আমার দেশে আমার গরু রাখতে এতো ঝামেলা কেন বুঝিনি।”
কেন এই নিবন্ধন
মূলত সীমান্ত দিয়ে গরু-মহিষের অবৈধ চোরাচালান ঠেকাতে বিশেষ করে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আনা প্রতিরোধে এমন পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের সাহেবনগর বিওবি ক্যাম্পের সহকারী ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ আলী আব্বাস।
কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে পর্যটককে ধর্ষণ
২৩ ডিসেম্বর ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
স্বামী-সন্তানকে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ঢাকার এক গৃহবধূ।
সংঘবদ্ধ একটি চক্র শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে ওই নারীকে তুলে নিয়ে তার স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে ও হত্যার হুমকি দিয়ে কয়েক দফা ধর্ষণ করে।
পরে খবর পেয়ে বুধবার রাত দেড়টার দিকে জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয় বলে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাইরুল ইসলাম জানান।
তিনি বলেছেন, ওই হোটেলের ম্যানজোরকে তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব।
২৫ বছর বয়সী ওই নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। স্বামী আর আট মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে বুধবার তিনি কক্সবাজারে এসেছিলেন বেড়াতে।
বিএনপির সমাবেশ
হবিগঞ্জে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আহত শতাধিক
২২ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
হবিগঞ্জে আজ বুধবার বেলা আড়াইটায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে ১৫ জন পুলিশসহ শতাধিক নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের কারণে আজ বিকেলে জেলা বিএনপির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
পরে কেন্দ্র থেকে আসা বিএনপির নেতারা জেলা বিএনপি নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র জি কে গউছের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সন্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সমাবেশের আগেই পুলিশ উসকানি দিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। সমাবেশস্থলে নেতা–কর্মীদের বাধা দিতে গিয়ে হবিগঞ্জ শহরে অঘোষিত কারফিউ জারি করে। জেলা সদরে প্রবেশপথে পুলিশ নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালায় এবং গুলি ছোড়ে। এতে বিএনপির প্রায় ৩০০ নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। মূলত পূর্বনির্ধারিত বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করার জন্য পুলিশ এ ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।
প্রতিপক্ষ দমনে গুমের অভিযোগ
২৫ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নিশানা করতে গুমকে অব্যাহতভাবে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে। গুমের এসব অভিযোগের বিষয়ে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং তাঁদের ও সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ভিত্তিতে ওই পর্যালোচনার কাজ সম্পন্ন করে ওয়ার্কিং গ্রুপ।
গুমবিষয়ক জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রুপের ১২৫তম অধিবেশন শেষে তৈরি করা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গুম পরিস্থিতি নিয়ে এসব কথা বলা হয়েছে।.. ..
ওয়ার্কিং গ্রুপের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকার বা রাজনৈতিক বিরোধিতার বিরুদ্ধে যেকোনো সমালোচনা প্রতিরোধে গুমকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সে অনুযায়ী, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গুমসহ ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে যায়।
ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বছর তিনটি অধিবেশনে বিভিন্ন দেশে সংঘটিত নতুন-পুরোনো গুমের ঘটনা এবং এ–সংক্রান্ত পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করেছে। এর বাইরে সাধারণ অন্যান্য অভিযোগও পর্যালোচনা করেছে তারা। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং তাঁদের ও সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ভিত্তিতে ওই পর্যালোচনার কাজ সম্পন্ন করে ওয়ার্কিং গ্রুপ।
৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২২ মে থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে গুমের ১৩টি অভিযোগকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের একটি ঘটনা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জরুরি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত ৬ জুলাই র্যাবের হাতে মো. মাহমুদ হাসান ওরফে মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবির অপহরণের প্রসঙ্গটি সরকারকে জানানো হয়েছে।
তবে ঢাকায় গত ১৬ জুলাই র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ‘আধ্যাত্মিক নেতা’ মাহমুদুল হাসান গুনবিকে আগের রাতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি সংসদ ভবনে হামলা পরিকল্পনার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলার আসামি বলে তখন জানানো হয়েছিল।
গুমের শিকার হওয়া থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষাসংক্রান্ত ঘোষণার (ডিক্লারেশন অন দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স) লঙ্ঘন এবং এ ঘোষণা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পেয়েছে ওয়ার্কিং গ্রুপ।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে অভিযোগ জানিয়েছে এবং ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বিষয়ে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল। এ বিষয়ে ২০১৩ সালের ১২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো জবাব দেওয়া হয়নি, যা আরও বেশি অস্বস্তির। ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, মনে রাখা দরকার, যত অভিযোগ পাওয়া গেছে, এর সবই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব সংস্থা ও বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা অন্য ভিন্নমতাবলম্বীদের নিশানা করার জন্য বারবার ও অব্যাহতভাবে গুমকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের গুমসংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুম করেছে। সূত্রগুলো এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে বাংলাদেশ পুলিশের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সক্রিয়ভাবে জড়িত।
ওয়ার্কিং গ্রুপের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকার বা রাজনৈতিক বিরোধিতার বিরুদ্ধে যেকোনো সমালোচনা প্রতিরোধে গুমকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সে অনুযায়ী, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গুমসহ ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে যায়।
বিরোধী লোকজনের ওপর উল্লিখিত দমনমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গুম করার জন্য কীভাবে নজরদারি (শারীরিক নজরদারি; সেই সঙ্গে টেলিফোনে আড়ি পাতা; আন্তর্জাতিক মোবাইল গ্রাহক পরিচয়-শনাক্তকরণ, অবস্থানভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেম সফটওয়্যার ও ওয়াই–ফাই ইন্টারসেপ্টরের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম ট্র্যাকিং) চালানো হয়, তা জানিয়েছে সূত্রগুলো। নজরদারির কৌশলগুলো করোনা মহামারির সময় বেড়েছে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের নিশানা করা হয়, যারা কোভিড-১৯ মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনামুখর হয়েছে।
সন্তান বাঁচাতে দেহব্যবসা সেখানেও সন্ত্রাসীদের থাবা
২৬ ডিসেম্বর ২০২১, মানবজমিন
কক্সবাজারে স্বামী-সন্তান জিম্মি করে ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ওই নারী। গত শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজিনের আদালতকে দেয়া জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, ৮ মাস বয়সী অসুস্থ বাচ্চার চিকিৎসায় অর্থ জোগাড় করতে স্বামীসহ গত তিন মাস ধরে কক্সবাজারে আছেন তারা। ৮ মাস বয়সী শিশুর হার্টে ছিদ্র রয়েছে। তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। যেকোনো মূল্যে সন্তান বাঁচাতে টাকা জোগাড় করায় ছিল তার উদ্দেশ্য। এরই মধ্যে সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করে বসেন। একবার বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছেন। পরে আবার চাঁদা চাইতে গেলে স্বামীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বাকবিতণ্ডা হয়।
এর সূত্র ধরে তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।
ফিরে দেখা-২০২১: বিচারবহির্ভূত হত্যা ৬৭, কারাগারে মৃত্যু ৭৮, গুম ৬
২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সম্প্রতি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন অভিযোগকে একেবারে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ সরকার।
যদিও মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, কেবল ২০২১ সালেই দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা পাওয়া গেছে ৬৭টি। এ ছাড়া, কারা হেফাজতে ৭৮ আসামির মৃত্যু এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ৬ জনের গুম হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু
আসক’র হিসেবে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা পাওয়া গেছে ৬৭টি। অভিযোগ আছে, র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), নৌপুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
প্রথম সারির কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে আসক। সে হিসেবে দেশে প্রতি মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৬টিরও বেশি।
আসক’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, এ সময়ের মধ্যে র্যাব ২৫টি, পুলিশ ১৯টি, ডিবি পুলিশ ৬টি, নৌপুলিশ ১টি এবং বিজিবি ১৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই বাহিনী গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ২৩টি এবং গ্রেপ্তারের পর ‘ক্রসফায়ারে’ ২টি হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ২টি, গ্রেপ্তারের আগে ‘নির্যাতনে’ ১টি ও গ্রেপ্তারের পর ‘নির্যাতনে’ ৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
এ ছাড়া, গ্রেপ্তারের আগে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১২ জন নিহত এবং পুলিশি হেফাজতে ‘হার্ট অ্যাটাকে’ ১ জনের মৃত্যুর অভিযোগ আছে। ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ৩টি, গ্রেপ্তারের পর ‘ক্রসফায়ারে’ ১টি হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং গ্রেপ্তারের পর এই বাহিনীর ‘নির্যাতনে’ ২ জনের মৃত্যু হয়।
পাশাপাশি, গ্রেপ্তারের আগে নৌপুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১ জন নিহতের অভিযোগ আছে। বিজিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ১২টি হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং গ্রেপ্তারের আগে এই বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪ জন নিহত হন।
এসব হত্যাকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ১৩ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বলে জানায় আসক।
আসক’র মাস-ভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারিতে গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ২টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। অভিযোগ আছে, ১টি ঘটায় র্যাব এবং অপরটি বিজিবি। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ১ জন।
ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। অভিযোগ আছে, ৪টি ঘটায় র্যাব এবং ৩টি বিজিবি। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ৬ জন।
মার্চে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ৫টি। অভিযোগ আছে, র্যাব গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ১টি হত্যাকাণ্ড ঘটায়। বিজিবি গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ২টি হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং গ্রেপ্তারের আগে এই বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১ জন নিহত হন। এ ছাড়া, গ্রেপ্তারের আগে আনসারের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১ জন নিহতের অভিযোগ রয়েছে।
এপ্রিলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ১০টি। অভিযোগ আছে, ৮টি ঘটায় পুলিশ (গ্রেপ্তারের আগে ‘নির্যাতনে ১টি ও গ্রেপ্তারের আগে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৭টি), র্যাব গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ১টি হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ‘নির্যাতনে’ ১ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা ১ জন।
মে মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ৬টি। র্যাবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ১টি এবং ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে ৫টি (গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ৩টি, গ্রেপ্তারের পর ‘ক্রসফায়ারে’ ১টি এবং গ্রেপ্তারের পর ‘নির্যাতনে’ ১টি) হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে।
জুনে গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যাকাণ্ড ঘটে ২টি। অভিযোগ আছে, ১টি ঘটায় র্যাব এবং অপরটি পুলিশ।
জুলাইয়ে গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যাকাণ্ড ঘটে ৬টি। অভিযোগ আছে, ৫টি ঘটায় র্যাব এবং অপরটি বিজিবি। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ২ জন।
আগস্টে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ৬টি। অভিযোগ আছে, ৫টি ঘটায় র্যাব (গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ৩টি ও গ্রেপ্তারের পর ‘ক্রসফায়ারে’ ২টি)। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেপ্তারের আগে এই বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ১ জন। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ১ জন।
সেপ্টেম্বরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ৪টি। র্যাবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ১টি এবং বিজিবির বিরুদ্ধে ২টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে। এ ছাড়া, পুলিশি হেফাজতে ‘হার্ট অ্যাটাকে’ ১ জনের মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।
অক্টোবরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ৭টি। র্যাবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ১টি এবং বিজিবির বিরুদ্ধে ১টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে। এ ছাড়া, পুলিশি হেফাজতে ‘হার্ট অ্যাটাকে’ ৫ জনের মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।
নভেম্বরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ১২টি। র্যাবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ৬টি এবং বিজিবির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আগে ‘ক্রসফায়ারে’ ১টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে। এ ছাড়া, গ্রেপ্তারের পর পুলিশি ‘নির্যাতনে’ ২ জনের মৃত্যু এবং গ্রেপ্তারের আগে বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩ জন নিহতের অভিযোগ রয়েছে। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ২ জন।
কারা হেফাজতে মৃত্যু
আসক’র হিসেবে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কারা হেফাজতে ৭৮ আসামির মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে বিচারাধীন ৫২ হাজতি এবং দণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ কয়েদি রয়েছেন।
এদের মধ্যে ঢাকায় ৩৯ জন (২৬ হাজতি, ১৩ কয়েদি), চট্টগ্রামে ১৪ জন (১১ হাজতি, ৩ কয়েদি), রাজশাহীতে ৬ জন (৪ হাজতি, ২ কয়েদি), খুলনায় ৩ জন (১ হাজতি, ২ কয়েদি), বরিশালে ৩ হাজতি, সিলেটে ৫ জন (৩ হাজতি, ২ কয়েদি), রংপুরে ১ কয়েদি এবং ময়মনসিংহে ৭ জন (৪ হাজতি, ৩ কয়েদি) মারা যান।
গুম
আসক জানায়, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ৬ জনের গুম হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আসক’র বিবরণীতে জানানো হয়, তাদের মধ্যে ১ জন চাকরিজীবী, ২ জন ব্যবসায়ী, ২ জন শিক্ষার্থী (মাদ্রাসার ১ জন) এবং ১ জন ইমাম রয়েছেন।
উল্লেখ্য, আসক’র হিসেবে, ২০২০ সালে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ছিল ২২২টি। এ ছাড়া, কারা হেফাজতে ৭৫ আসামির মৃত্যু হয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ৬ জনের গুম হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
করোনায়ও অপহরণ গুম থেমে থাকেনি
০১ জানুয়ারি ২২, সমকাল
করোনা মহামারিকালে নানা সংকটের মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধসহ বিভিন্ন বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন-মৃত্যু হয়েছে। বিদায়ী বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ-গুমের ঘটনা থেমে থাকেনি। ২০২১ সালের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৮০ জন। কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৫১ জন। কথিত বন্দুকযুদ্ধের সমর্থনে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে আসক জানায়, তাদের বক্তব্য প্রকারান্তরে বিচারবহির্ভূত হত্যা বা ক্রসফায়ারকেই উৎসাহিত করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিদায়ী বছরে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনে ছয়, হার্ট অ্যাটাকে এক ও গ্রেপ্তারের আগে শারীরিক নির্যাতনে একজন নিহত হয়েছেন। দেশের কারাগারগুলোয় অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন ৮১ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২৯ ও হাজতি ৫২ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে ছয়জনকে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এখনও এক নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়া সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩২১ নারী। যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন ১২৮ নারী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ৭৭ জন পুরুষ। উত্ত্যক্তের ঘটনায় আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৪০ জন; যার মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা যান ৩৭২ জন, আত্মহত্যা করেন ১৪২ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১০ নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যার শিকার হন ৭২ নারী, আত্মহত্যা করেছেন ১৩ জন। ২০২১ সালে সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে ১২ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে আসক জানায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ মোট ৯৩২টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘাতে ১৫৭ নিহত ও ১০ হাজার ৮৩৩ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পৌর ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে ৮৩টি ঘটনায় ১৩ নিহত ও ৭৮৮ জন আহত হয়েছেন। ১৪৪ ধারা জারির ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ২০ বার। বিদায়ী বছরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ছিল। দুর্গাপূজা চলাকালীন কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পূজামণ্ডপে ও মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িঘর এবং দোকানপাটে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও মারধরের ঘটনা ঘটে। নোয়াখালীতে একজনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ আসে।
শিশু অধিকার বিষয়ে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে ৫৯৬ শিশু নিহত হয়েছে।
টঙ্গীতে এক ব্যক্তির মৃত্যু, নির্যাতনের অভিযোগ র্যাবের বিরুদ্ধে
০২ জানুয়ারি ২২, সমকাল
টঙ্গীতে মাদকবিরোধী অভিযানে আসাদুল ইসলাম আসাদ (৪৬) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, অভিযানের সময় র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নির্যাতনে তিনি গুরুতর আহত হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে র্যাব বলছে, তাদের সঙ্গে ওই ব্যক্তির ধস্তাধস্তি হয়েছে। এ সময় দুই র্যাব সদস্যসহ ওই ব্যক্তি আহত হন। পরে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিলে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ছেলে নিহাদ বলেন, দুপুর ২টার দিকে প্রথমে সাদা পোশাক পরে র্যাবের পরিচয় দিয়ে বাসায় আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। পরে আরও কয়েকজন র্যাবের পোশাকে ঢুকে। বাসায় ঢুকেই মাদকের ব্যাপারে জানতে চান তারা। এরপর আমার বাবাকে মারধর করতে থাকে। বাবাকে যখন মারধর করা হচ্ছিল তখন আমাকে পাশের রুমে আটকে রাখা হয়।
তিনি বলেন, র্যাব সদস্যরা আমাকে মেরে ফেলবে এমন হুমকি দিয়ে বাবার কাছ থেকে তথ্য জানতে চায়। কিন্তু আমার বাবা বরাবরই মাদকের সঙ্গে জড়িত না বলে র্যাব সদস্যদের জানায়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে অচেতন অবস্থায় বাবাকে র্যাবের গাড়িতে উঠিয়ে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু হাসপাতালে আনার পথেই বাবা মারা গেছেন।
ডাক্তারি প্রতিবেদনে লাপাত্তা ধর্ষণ
০৩ জানুয়ারি ২২, সমকাল
.. .. সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে নিরীহ, হতদরিদ্র নারী ও শিশুরা ধর্ষণের শিকার হলেও অনেকের ক্ষেত্রে ফরেনসিক প্রতিবেদনে আলামতের প্রমাণ পাওয়া যায় না। গত ছয় মাসে জেলার ১১টি থানায় ৪৬টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। তদন্ত শেষে এর মধ্যে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল হয়েছে ২২টিতে। আর তদন্তাধীন ২১টি মামলা। বাকি তিনটি অভিযোগের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
গত ছয় মাসে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করতে আসেন ৬২ নারী ও শিশু। তাদের মধ্যে জুলাইয়ে ৯, আগস্টে ১০, সেপ্টেম্বরে ১৯, অক্টোবরে ৬, নভেম্বরে ৮ ও ডিসেম্বরে ১০ জন ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার তাহমিনা ইয়াছমিন চৌধুরী। তবে একটিরও ফরেনসিক প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীদের শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।
গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনদের বাসায় যাচ্ছে পুলিশ, সাদা কাগজে সই দিতে চাপের অভিযোগ
১৩ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। বাসায় বাসায় গিয়ে জেরা করা, থানায় ডেকে পাঠানো এবং ক্ষেত্রবিশেষে সাদা কাগজে সই নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের মঞ্চ ‘মায়ের ডাক’ এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র পৃথক বিবৃতি দিয়েছে।
ভুক্তভোগী এমন পাঁচটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। এসব পরিবারের একটি বাসাবোর আহাম্মদনগরে থাকে। এ পরিবারের ছেলে সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুব হাসান ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ।
মাহবুবের ছোট ভাই শাকিল খান প্রথম আলোকে বলেন, ১০ জানুয়ারি সবুজবাগ থানা থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি সব কাগজপত্রসহ থানায় যাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা ফের তাঁর সঙ্গে বাসায় আসেন। তাঁদের বাবা আবদুল জলিল খান ছেলে গুম হওয়ার পর সাধারণ ডায়েরি করায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা জরুরি বলে জানায় পুলিশ।
বাসায় গিয়ে পুলিশ সদস্যরা একটি বিবৃতিতে তাঁদের ৭৫ বছর বয়সী বাবার কাছ থেকে জোর করে সই নেওয়ার চেষ্টা করেন। আবদুল জলিল সই দিতে অস্বীকৃতি জানালে সাত–আটজন পুলিশ সদস্য তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে হুমকি দেন। তিনি বারবার বলতে থাকেন, পুলিশের দেওয়া কাগজে সই করবেন না, নিজে লিখে পুলিশকে দেবেন। অবশেষে রাত ১১টার কিছু পরে পুলিশ তাঁদের বাসা থেকে চলে যায়।
‘গায়েবি’ মামলায় অধ্যাপক তাজমেরী কারাগারে
১৫ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তাজমেরী এস এ ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।
অধ্যাপক তাজমেরীর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানান, চার বছর আগের ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার একটি নাশকতার মামলায় অভিযোগপত্রে আসামি হওয়ার পর অধ্যাপক তাজমেরী আদালতে হাজিরা দেননি। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
অবশ্য তাজমেরীর পরিবার বলছে, ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উত্তরা এলাকায় মারামারি ও বিস্ফোরক নিয়ে গাড়িতে হামলার চেষ্টার অভিযোগে তাজমেরীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলাটি গায়েবি মামলা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। কয়েকটি সংগঠনও গতকাল বিবৃতি দিয়ে তাঁর মুক্তি দাবি করেছে।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের কান্না
আমাদের চোখের পানি নিয়ে উপহাস করেন এমপি-মন্ত্রীরা
১৫ জানুয়ারি ২২, সমকাল
কেউ নিখোঁজ হয়েছেন সাত বছর আগে, কেউ তারও আগে। তাদের স্বজনরা এখনও জানেন না রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাওয়া ওই প্রিয়জন বেঁচে আছেন কিনা, কখনও ফিরে আসবেন কিনা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নতুন করে তাদেরকে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য থেকে। তারা বলেন, আমরা প্রতিমুহূর্তে মরে যাচ্ছি। আমরা জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছি। আমাদের মুখে কখনও হাসি আসে না। আমাদেরকে আর মানসিক নির্যাতন করবেন না।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত এক সভায় গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এসব কথা বলেন। তাদের বক্তব্যে আর চোখের পানিতে পুরো সেমিনার ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। অনেককেই এসময়ে চোখ মুছতে দেখা যায়। গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবারগুলোর প্রতি শুরু হওয়া হয়রানির প্রতিবাদে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্ত্রীরা বলেন, ‘আমাদের ঘরে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। আমাদের বাচ্চারা জিজ্ঞেস করে, সবার তো বাবা আছে, আমাদের বাবা নেই কেন। আমরা উত্তর দিতে পারি না। আমাদের স্বামীকে মেরে ফেললে তার মরদেহটা দেন, আমরা মাটি দেব। আমরা একটু মিলাদ পড়াতে চাই। আর বেঁচে থাকলে সেই তথ্যটা আমাদের দেন, তারা কোথায় আছেন। আমাদের চোখের পানি নিয়ে এমপি-মন্ত্রীরা উপহাস করেন, হাসে। তারা বলেন, আমাদের স্বামীরা বিয়ে করে অন্য কোথাও চলে গেছেন। দেশে নাকি গুম নেই।’
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য প্রচারের দায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড
২০ জানুয়ারি, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য প্রচারের দায়ে রাশেদ তালুকদার (৩৪) নামে এক ব্যক্তিকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আশ সামস জগলুল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বিচারক বলেন, রাশেদ এর মধ্যে যে সময়টুকু জেল হেফাজতে ছিলেন তা তার কারাদণ্ডের সময় থেকে বাদ দেওয়া হবে।
২০১৬ সালের ২৩ জুন রাশেদ তালুকদার তার ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর ও অবমাননাকর বক্তব্য প্রচার করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
‘আওয়ামী’ শব্দের অর্থ বিকৃত করে ফেসবুকে পোস্ট, তরুণের ১০ বছরের কারাদণ্ড
২৪ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
আওয়ামী লীগের ‘আওয়ামী’ শব্দের অর্থ বিকৃত করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজশাহীর একটি আদালত। এক আওয়ামী লীগ নেতার করা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার এই মামলার রায়ে একই সঙ্গে ওই যুবককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এ রায় ঘোষণা করেছেন। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ইসমত আরা বেগম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত তরুণের নাম আবদুল মুকিত ওরফে রাজু (২৬)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর গ্রামের রিয়াজুল ইসলামের ছেলে। ২০১৭ সালে মামলাটি করেছিলেন হরিপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান। মুকিত হরিপুর ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি বলে দাবি সাইদুর রহমানের।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ২৭ মে আবদুল মুকিত তাঁর ফেসবুক আইডিতে আওয়ামী লীগকে ব্যঙ্গ করে বাবা ও ছেলের কথোপকথনের ঢঙে একটি কৌতুক পোস্ট করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী শব্দটি আইয়াম শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ অন্ধকার, কুসংস্কার আর লীগ অর্থ দল। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ মানে অন্ধকারের দল। সেখানে ইসলাম ও আওয়ামী শব্দটি নিয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থানে এনে উসকানি দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
শিক্ষা, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি
বাণিজ্যিক রূপ নিচ্ছে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া
১২ নভেম্বর ২০২১, শেয়ার বিজ নিউজ
শিক্ষার্থীদের যাতায়াতসহ নানা ভোগান্তি অবসানের প্রত্যাশা নিয়ে প্রথমবারের মতো দেশের ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলেও একের পর এক আলোচনা-সমালোচনায় জর্জর পুরো প্রক্রিয়া।
সর্বশেষ পরীক্ষা-পরবর্তী প্রতিটি ইউনিট আবেদন ফি ৬০০ থেকে শুরু করে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা নিয়ে আবার ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষা-পরবর্তী গুচ্ছভুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি ইউনিটে আবেদন ফি বাবদ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এ আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, যেখানে প্রতিটি ইউনিটে শুধু আবেদন ফি বাবদ ৬০০ টাকার জন্য বলা হয়েছে। যদিও ভর্তি আয়োজক কমিটি শুরুতে এরকম ফি নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি।
এর আগে স্বাভাবিক নিয়মে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় ৫০০ থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা নেয়া হতো এবং পরীক্ষা-পরবর্তী ইউনিটে আবেদনের জন্য কোনো খরচ হতো না। শিক্ষার্থীরা এ ‘ফি’কে তাদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন।
পাশাপাশি এ ‘ফি’কে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে কয়েক দিন ধরে তা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন।
বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে চেয়ে ‘ধর্ষণের হুমকি’ পাওয়ার অভিযোগে ঢাকায় ছাত্রী বিক্ষোভ
২১ নভেম্বর ২০২১, বিবিসি বাংলা
বাসে অর্ধেক ভাড়া দেয়ার দাবি করে ‘ধর্ষণের হুমকি’ পাওয়ার অভিযোগে রবিবার বিক্ষোভ দেখিয়েছে একদল ছাত্রী।
গত দুদিন ধরেই ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাসে অর্ধেক ভাড়া দেবার দাবিতে খণ্ড খণ্ড আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি তেলের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে বাস ভাড়া বাড়ানোর পর শিক্ষার্থীরা অর্ধেক ভাড়া দেবার দাবিটি সামনে আনেন।
একসময় গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেবার প্রচলন থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর সেই রীতি অনুসরণ করতে চাইছেন না বেশিরভাগ গণপরিবহন মালিকেরা।
সকালে ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের একদল শিক্ষার্থী নানা প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে সংলগ্ন বকশিবাজারের সড়কে নেমে এসে অবরোধ সৃষ্টি করে।
তাদের অভিযোগ, ওই কলেজের এক শিক্ষার্থী বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে চাইলে ওই বাসের একজন শ্রমিক (হেল্পার) তাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়।
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
২৩ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন জারি করার দাবিতে ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের ডাকা আন্দোলনে হামলা হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ এই হামলা চালিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে দুই দফায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়৷
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলার আগে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের বিরুদ্ধে রাস্তার পাশে থাকা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে তর্ক বাধান৷ কথা-কাটাকাটির মধ্যেই লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়৷ কিছু শিক্ষার্থী এই হামলার শিকার হন৷
নটর ডেম কলেজছাত্রের মৃত্যু
গাড়িটি চালাচ্ছিলেন এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী
২৫ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে আরামবাগের নটর ডেম কলেজের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ওই কলেজেরই দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈম হাসান (১৭)। তবে অন্য দিনগুলোর মতো সে কলেজে পৌঁছাতে পারেনি, ক্লাসে বসতে পারেনি। গুলিস্তানে রাস্তা পার হওয়ার সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় মৃত্যু হয় তার।
গতকাল বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, হল মার্কেট মোড়ে বায়তুল মোকাররমগামী দক্ষিণ সিটির একটি ময়লার গাড়ি (কমপেক্টর) মোড় ঘুরে নাঈমকে প্রথমে ধাক্কা দেয়। এতে সে পড়ে যায়। এরপর গাড়িটি না থেমে তাকে চাপা দেয়।
গুরুতর আহত নাঈমকে পুলিশ ও পথচারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নাঈমের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার সহপাঠীরা গুলিস্তান মোড়ে এসে জড়ো হয়। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যায় নগর ভবনে। পরে আবার গুলিস্তান মোড়ে গিয়ে তারা সড়ক অবরোধ করে। বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীর মৃত্যুর ঘটনার ন্যায়বিচার, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করাসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরে।
এদিকে সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ময়লার গাড়িটি করপোরেশনের নিয়োগ করা কোনো ভারী যানবাহনের চালক চালাচ্ছিলেন না। এটি চালাচ্ছিলেন হারুন অর রশিদ, যিনি একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ঘটনার পর পুলিশ রাসেল নামের একজনকে আটক করেছে, যিনি একজন শ্রমিক। রাসেল সিটি করপোরেশনের স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত কর্মী নন। হারুন অর রশিদ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন।
দক্ষিণ সিটির পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ সিটিতে ভারী যানবাহন আছে ৩১৭টি। বিপরীতে তাঁদের চালক আছেন ৮৬ জন। আটক রাসেল খানকে তিনি চেনেন না। শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন বলে শুনেছেন। গাড়িটির চালক হারুন অর রশিদ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
নিরাপদ সড়কের পুরনো দাবিতে আবারও রাজধানীর রাস্তায় শিক্ষার্থীরা
২৫ নভেম্বর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন
নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গাড়ির ধাক্কায় নিহতের ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও রাস্তায় নেমেছেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, হলিক্রস কলেজসহ অন্তত ১০টি কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ সহ নানা স্লোগান দেন।
সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী ইরাত আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের জন্য রাস্তায় নেমেছিলাম। তখন কর্তৃপক্ষ নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু দুই বছরেরও বেশি সময়ে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। গতকাল, আরেকজন শিক্ষার্থী মারা গেছেন।’
তিনি জানতে চান, ‘নিরাপদ সড়কের জন্য শিক্ষার্থীরা আর কতদিন রক্ত দেবে?’
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে হলি ক্রস কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিদিন সড়কে মেধাবী শিক্ষার্থীসহ অনেকে জীবন হারাচ্ছেন। কিন্তু, মনে হচ্ছে যে এ সব দুর্ঘটনায় কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন নন। আমরা এসব বন্ধ করতে আবারও রাস্তায় নেমেছি।’
বন্ধুদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী কাওসার আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একের পর এক শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর আমরা নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থাকতে পারি না। আমরা বিচার চাই বলেই এখানে এসেছি। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই।’
নিরাপদ সড়ক ও নাঈম হাসান নিহতের ঘটনার জড়িতদের বিচারের দাবিতে সকাল ১১টার দিকে রাস্তায় নামেন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নটরডেম কলেজের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি শাপলা চত্ত্বরে গিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করে। পরে শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনাস্থল গুলিস্তানের যান। এ সময় তারা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কাছে নর্দ্দায় বাসচাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। সেসময় সারাদেশে ক্লাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
তার আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ২ শিক্ষার্থী নিহত হন। তাদের সহপাঠীরা বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামেন। এরপর, অন্যান্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দিলে সেই আন্দোলন দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে কঠোর শাস্তির বিধানসংবলিত একটি আইন সংসদে পাস হয়। এরপর প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সেই আইনটি এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
বইপত্র ছেড়ে ওরা কোথায়
২৭ নভেম্বর ২১, সমকাল
ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার দক্ষিণ শিবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অনন্যা। এবার তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে আর পরীক্ষার কেন্দ্রে দেখা যায়নি। চর নাজিমুদ্দিন গ্রামের রাবেয়াও ছিল এসএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু চরফ্যাসন টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরও পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। যেমন হয়নি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগরাকুড়া গ্রামের শিক্ষার্থী মুক্তির। এরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসী হলেও এই একটি ক্ষেত্রে তাদের জীবন একই সুতোয় গাঁথা। করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এদের অনেককেই বাল্যবিয়ের শিকার হতে হয়েছে। সেই সঙ্গে চুকে গেছে লেখাপড়ার পাট। কাউকে কাউকে সংসারের অভাব-অনটন ঘোচাতে কাজে ঢুকে পড়তে হয়েছে। এভাবেই ইতি ঘটেছে তাদের সম্ভাবনাময় শিক্ষাজীবনের।
অনন্যা, রাবেয়া আর মুক্তির মতো হাজারো শিক্ষার্থীর এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। দেখা গেছে, সারাদেশের ৭৮ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী নিবন্ধন করার পরও এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ১৪ নভেম্বর শুরু হয়ে ২৩ নভেম্বর শেষ হয়েছে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার কন্ট্রোল রুমের পাঠানো তথ্য অনুসারে, এবার সারাদেশের মোট ৭৮ হাজার ৬২৭ পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিল।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
ছাত্রীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ তরুণ আটক
২৯ নভেম্বর ২১, সমকাল
নিরাপদ সড়ক ও হাফ পাসের দাবিতে চলা আন্দোলনে কারও উস্কানি বা ইন্ধন আছে কিনা, তা জানতে এক ছাত্রীকে থানায় ডেকে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার বাসা থেকে ওই ছাত্রীকে ডেকে নেয় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। একই সময়ে তার বাবাকেও থানায় নেওয়া হয়।
অবশ্য সন্ধ্যার পর তাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
ওই ছাত্রী হলি ক্রস স্কুলের নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে তাকে বেশ সক্রিয় দেখা গেছে। সর্বশেষ গত শনিবার সে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করে বক্তব্য পাঠ করছিল। গতকালও তাকে ধানমন্ডি এলাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সক্রিয় দেখা যায়।
যদিও পুলিশ বলছে, কিছু তথ্য নিতে ওই ছাত্রীকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়। সে বয়সে শিশু হওয়ায় সঙ্গে তার বাবাকেও নেওয়া হয়। ছাত্রীর কাছ থেকে কিছু তথ্য যাচাই করে তার বাবাসহ তাকে সসম্মানে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ সমকালকে বলেন, শিক্ষার্থীদেরআন্দোলনে হাফিজুর নামের এক তরুণ খাবার ও পানি বিলি করে আসছে। রোববার ধানমন্ডি এলাকায় ওই তরুণ ছাত্রীর কাছে টাকা পাঠাতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বরও চায়, যা কর্মসূচিতে থাকা গোয়েন্দাদের চোখ এড়ায়নি। তাই শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কেউ খাবার দিয়ে বা অর্থ দিয়ে উস্কানি দিচ্ছে কিনা, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ভিন্ন দিকে নিচ্ছে কিনা, ছাত্রীর কাছ থেকে সে তথ্য নেওয়া হয়েছে।
দুই বাসের প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থী নিহত, বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন–ভাঙচুর
২৯ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
রাজধানীতে দুই বাসের প্রতিযোগিতায় আবার প্রাণ হারাল এক শিক্ষার্থী। রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসের ধাক্কায় নিহত মাইনুদ্দীন ইসলাম নামের এ শিক্ষার্থী ভগ্নিপতির সঙ্গে বাসায় ফিরছিলেন। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রামপুরা টিভি রোডের পলাশবাগ এলাকায় সোনালী ব্যাংকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর আরও আটটি বাসে আগুন দেয় তারা। এ ছাড়া ভাঙচুর করে তিনটি বাস। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল।
রামপুরায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, যাচাই হচ্ছে যানবাহনের লাইসেন্স
৩০ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
রাজধানীর রামপুরায় বাসচাপায় এসএসসির ফলপ্রত্যাশী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও সড়ক আটকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকালে বি এ এফ শাহীন কলেজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ ও একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থী সেখানে মানববন্ধন করেন।
এ সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এর মধ্যে কয়েকটিতে লেখা ছিল, ‘আমার বাবা কাঁদছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে’, ‘ছাত্রজনতা ঐক্য গড়, নিরাপদ সড়কের দাবি তোল’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘অ্যাম আই নেক্সট’, ‘রাতের আঁধারে শিক্ষার্থী মরে, প্রশাসন ঘুম পাড়ে’।
দুর্জয় নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার চাওয়া ছাড়াও গণপরিবহনে হাফ পাস নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
কাল থেকে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া কার্যকর, ঢাকার বাইরে নয়
৩০ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
গণপরিবহনে হাফ পাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হলো। কাল বুধবার থেকে বেসরকারি মালিকানাধীন গণপরিবহন বাসে অর্ধেক ভাড়ায় চলতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ এ ঘোষণা দেন।
রাজধানীর পরীবাগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র দেখিয়ে সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়ায় বাসে চলাচল করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। সাপ্তাহিক ছুটি, সরকারি ছুটি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মৌসুমি ছুটির সময় অর্ধেক ভাড়া দিতে পারবেন না শিক্ষার্থীরা।
সরকারবিরোধী স্লোগানে আন্দোলনকারীদের পেটাতে বললেন রাবির সহকারী প্রক্টর
০১, ডিসেম্বর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
সরকারবিরোধী স্লোগান প্ল্যাকার্ডে লেখায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিল বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আজ বুধবার ছাত্র ফেডারেশনের ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে লাশের মিছিল’ কর্মসূচি ছিল। পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমবেত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা জোহা চত্বরে বক্তব্য দেওয়ার পর সহকারী প্রক্টর মোখলেছুর রহমান সেখানে গিয়ে কর্মসূচিতে বাধা দেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা স্লোগান নিয়ে তিনি হুমকি দেন। এক পর্যায়ে তিনি সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতাকে বলেন, ‘তোমরা কী করো, কী করো তোমরা, শোয়ায়ে দিবা একেবারে’।
এরপর বেলা ১২টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলনকে প্রক্টরের অফিসে ডেকে নেওয়া হয়।
ছাত্র ফেডারেশনের রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক জিন্নাত আরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কর্মসূচি পণ্ড হবার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর কয়েকজনকে লক্ষ্য করে আমাদেরকে মারতে বলেন।
অভিযোগে ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর মোখলেছুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিজয়ের মাসে সরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর কথাবার্তা মেনে নেওয়া যায় না। এ কারণে আমরা তাদের হাত থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তিমূলক প্ল্যাকার্ড নিয়ে নিই এবং দ্রুত কর্মসূচি শেষ করে স্থান ত্যাগ করতে বলি। এ সময় তাদের কয়েকজন আমাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়।
আন্দোলনকারীদের পেটাতে ছাত্রলীগের নেতাকে নির্দেশ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলিনি। দেশের সরকারকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য ছড়ালে তো সবারই প্রতিবাদ করা উচিত।’
ছাত্রলীগ ‘অবরুদ্ধ করে রাখার পর’ বাসায় ফিরে কুয়েট হল প্রাধ্যক্ষের মৃত্যু
১ ডিসেম্বর, ২০২১, দেশ রুপান্তর
ছাত্রলীগ নেতারা অবরুদ্ধ করে রাখার পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তিনি কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন।
এ ঘটনায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আরিফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার ওই শিক্ষকের নিজ কক্ষে ছাত্রলীগ নেতাদের একটি দল ঢোকা ও বের হওয়ার ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যায়, ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ২০-২২ জনের একদল শিক্ষার্থী শিক্ষক সেলিম হোসেনকে ক্যাম্পাসে গতিরোধ করেন এবং পরবর্তীতে তারা শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করেন।
সিসিটিভির ফুটেজ অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং দুপুর ১টা ২৯ মিনিটে বের হয়ে যায়। প্রায় ৪৫ মিনিট তারা শিক্ষক সেলিম হোসেনের কক্ষে অবস্থান করে।
কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, মূলত লালন শাহ হলের নতুন ডাইনিং ম্যানেজার নিযুক্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ওই অংশটি প্রভাব খাঁটিয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট সেলিম হোসেনকে মানসিকভাবে নাজেহাল করে। সেখানেই তিনি মাইনর স্ট্রোক করেন। পরবর্তীতে বাসায় যাওয়ার পর বাথরুমে পড়ে যান। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে কুয়েট মেডিকেল সেন্টার ও পরবর্তীতে নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
আবরার হত্যা মামলা: ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন
০৮ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ২৫ আসামির মধ্যে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক। বাকি ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন তিনি।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবু আব্দুল্লাহ জানান, বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তাদের আদালতের এজলাসে আনা হয়। বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ২০ মিনিটের মধ্যে মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশারফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মুজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুল ইসলাম (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মাহমুদুল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এ এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ) । এরা সবাই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামসুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)। এদের নাম এজাহারে ছিল না।
বুয়েট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে, সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই ১৭তম ব্যাচ), আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ)। এদের মধ্যে অমিত ও মুন্নার নাম হত্যা মামলা এজাহারে উল্লেখ ছিল না।
রাজধানীতে নিরাপদ সড়ক চেয়ে সাইকেল র্যালি
০৯ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবার রাজধানীর রামপুরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সাইকেল র্যালি করেছে। সাইকেলে নানা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে তারা এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করে।
ঢাকার রামপুরার একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে গতকাল বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে এই র্যালি শুরু হয়। মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ এবং কমলাপুর মোড় হয়ে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নটর ডেম কলেজের সামনে গিয়ে র্যালিটি শেষ হয়।
র্যালি শেষ করে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেয়, আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ১১ দফা দাবিসংবলিত লিফলেট বিতরণ করবে তারা। এর উদ্দেশ্য নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায় করা।
৫ শর্তে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন
১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ইত্তেফাক
দেশের সব মহানগরে বেসরকারি বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। রবিবার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ধারা ৩৪ (২) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে মোট ৫টি শর্ত দেওয়া হয়েছে।
যে ৫টি শর্তে হাফ ভাড়া কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে- সেগুলো হলো- এ ভাড়া বিদ্যমান ভাড়ার ৫০ শতাংশ কম হবে, শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ছবিযুক্ত হালনাগাদ বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রদর্শন করতে হবে, সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বেসরকারি বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা এ হাফ ভাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির দিনে এ হাফ ভাড়া প্রযোজ্য হবে না এবং দূরপাল্লার বাসে হাফ ভাড়া কার্যকর হবে না।
পুলিশের লাঠিচার্জে মুক্ত শাবি উপাচার্য, আহত কয়েক শিক্ষার্থী
১৬ জানুয়ারি ২২, সমকাল
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উদ্ধার করেছে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নির্দিষ্ট সংখ্যা এবং নাম জানা যায়নি।
রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তালা ভেঙে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উপাচার্যকে উদ্ধার করে তার বাসভবনে পৌঁছে দেয় পুলিশ সদস্যরা। আহত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল এবং জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা
আন্দোলনের পেছনে সাড়ে চার বছরের ক্ষোভ
২০ জানুয়ারি ২২, সমকাল
দায়িত্ব পালনকালে সাড়ে চার বছর ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ যে স্বেচ্ছাচারিতা, একগুঁয়েমি ও বেপরোয়া আচরণ করেছেন; তা-ই শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে অনিবার্য করে তুলেছে। এ রকমই বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, সর্বশেষ বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় নজিরবিহীনভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অ্যাকশনের ফলে এতদিনের জমাট ক্ষোভ বিস্ম্ফোরিত হয়ে এক দফার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে উপাচার্যের একটি অডিও ক্লিপ, যাতে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে ‘অশালীন মন্তব্য’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসার সুবাদে উপাচার্যের এক ধরনের অহমিকাও রয়েছে।
ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতাও ফেসবুকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের আচরণ নিয়ে সমালোচনা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলেন বলেও দাবি করেছেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতা। অবশ্য বর্তমান সরকারের আমলেও তিনি আওয়ামী লীগপন্থি নীল দল থেকে দু’দফা ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ২০১২-১৩ সালে বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে ফরিদ উদ্দিনের নাম আসার বিষয়টি নতুন করে উঠে এসেছে। তার বিরুদ্ধে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নতুন নিয়োগে আঞ্চলিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
ভিসির পদত্যাগ দাবি: আমরণ অনশনে শাবি শিক্ষার্থীরা
১৯ জানুয়ারি ২২, সমকাল
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন।
এ সময় স্বেচ্ছায় ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। এদের মধ্যে ৯ জন ছাত্রী ও ১৫ জন ছাত্র।
স্কুল–কলেজ দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকবে
২১ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
করোনা সংক্রমণ রোধে আগামী দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২১ জানুয়ারি থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে।
এদিকে আজ শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী দুই সপ্তাহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুই সপ্তাহ পর করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি বুঝে আবার নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
যারা সরকারের ভৃত্য গোলামে পরিণত হতে পারে, তারাই আজ ভিসি পদের যোগ্য: আনু মুহাম্মদ
২১ জানুয়ারি, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে কথা বলছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
যারা সরকারের ভৃত্য গোলামে পরিণত হতে পারে তারাই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদ ভিসি হওয়ার যোগ্যতা রাখে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় তিনি সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায়- যারা সরকারের ভৃত্য গোলামে পরিণত হতে পারে তারাই আজ ভিসি পদের জন্য যোগ্য হয়ে থাকে। যার উদাহরণ আজকের শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটমান পরিস্থিতি এবং তথাকথিত উপাচার্যের শিক্ষার্থীদের প্রতি আচরণ।’
‘সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন কাউকে নিয়োগ দেন যে বিনা প্রশ্নে সরকার যা করে সেটাকে মেনে নেবে। উল্টো শিক্ষার্থীরা কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না, এমনকি শিক্ষকরাও কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ধরনের উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছেন যারা সরকারের স্বার্থে কাজ করবে তাদের,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি জ্ঞানচর্চা প্রশ্ন উত্থাপনের দিকে যায়, যদি সৃজনশীলতার দিকে যায়, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার দিকে যায় তাহলে সেই জ্ঞান চর্চা করা যাবে না। তখন ক্যাম্পাসে ভয়ের শক্তি তৈরি করতে হবে। তা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটা করা হয়, আরেকটি করা হয় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে। এ দুই শক্তি যাতে অবাধে কাজ করতে পারে, সেটার মূল পৃষ্ঠপোষকতা এবং সমর্থন দেয় সরকার। সুতরাং সরকার চায় এমন উপাচার্য যে সরকারের কথায় উঠবে এবং বসবে। শুধু তাই না। তার নিজের মধ্যে লোভ থাকবে, মেরুদণ্ডহীন থাকবে। এরকম একটা বোধ শক্তি থাকবে, যে বোধ শক্তি দিয়ে তার নিজস্ব কোনো ব্যক্তিত্ব থাকবে না। এ ধরনের ব্যক্তিত্ব হবে উপাচার্য।’
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণের দাবি ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে অংশ নেন শিক্ষক, আইনজীবী ও সাংবাদিকরা। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো এই সমাবেশের আয়োজন করে।
ফরিদ উদ্দিনের জন্য পদত্যাগে ‘ইচ্ছুক’ অন্য উপাচার্যরাও
২৩ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটির ভার্চ্যুয়াল এক সভায় ফরিদ উদ্দিন আহমেদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, শাবিপ্রবিতে যে ঘটনাপ্রবাহ, তাতে যদি উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে তাঁরাও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।
দেশের অন্তত ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ওই বৈঠকে যোগ দেন। বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫০টি। ওই বৈঠকে শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।
শাবি ভিসির বাসভবন ঘেরাও করেছেন শিক্ষার্থীরা
২৩ জানুয়ারি, ২০২২, মানবজমিন
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদের বাসভবন ঘেরাও করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে ৪ টার দিকে শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন- আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া ভিসির বাসভবনের ভেতরে আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি শুরু করার পর শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- পরিস্থিতি যেভাবে এগুচ্ছে, এতে আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে আরো কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে। তারা বলেন- ভিসির বাসভবনে কেবল পুলিশ ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবে না।
শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতীকী অনশন
২৪ জানুয়ারি ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবির) ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনেশন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অনশন চলছে প্রায় ১০৭ ঘণ্টা। তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে প্রতীকী অনশন করছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ অনশন করেন শিক্ষকরা। তারা জানান, বেলা ৩টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।.. ..
প্রতীকী অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে আছেন ঢাবি অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোসাহিদা সুলতানা রিতু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমুদ্দীন খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কাজী মারুফ, ইংরেজী বিভাগের তাসনীম সিরাজ মাহবুব, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ফাহরিনা দূর্রাত, ম্যানাজমেন্ট বিভাগের তাহমিনা খানম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলি শেহরীন ইসলাম, ইংরেজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, সাইদ ফেরদৌস, মীর্জা তসলিমা, রেহনুমা আহমেদ প্রমুখ।
শিক্ষামন্ত্রীকে এবার হেলিকপ্টারে সিলেটে যাওয়ার আহ্বান আনু মুহাম্মদের
২৪ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হেলিকপ্টারে সেখানে যেতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির প্রতি আহ্বান জানালেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছেন। আমরা যে সময়ে রাজধানীর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যানজটের কারণে যেতে পারব না, মন্ত্রীর সুযোগ রয়েছে তার চেয়ে কম সময়ে প্রয়োজনে হেলিকপ্টারে করে সিলেটে যাওয়ার।’
আজ সোমবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে কর্মসূচিটি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শাহজালালের উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে অন্যান্য উপাচার্য পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদি বিষয়টি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে সেটি আমাদের জন্য ভালো খবর। সরকারের উচিত হবে, উপাচার্যেরা পদত্যাগ করার পরপর একটি তদন্ত কমিটি করা। তদন্তের মাধ্যমে তাঁরা কী করেছেন, তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা এসেছি শিক্ষকসমাজকে বড় কলঙ্ক থেকে বাঁচাতে। ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় সিলেটে যে ঘটনা ঘটেছে, তা এখন গোটা শিক্ষকসমাজের সম্মান রক্ষায় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। এর মূল কারণ, কীভাবে উপাচার্য নিয়োগ হচ্ছে, তা আমরা সবাই জানি।’ তিনি বলেন, যাঁরা সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখাতে পারবেন, তাঁদের যোগ্যতা তত বেশি। সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রসংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া এখন উপাচার্যের কাজ।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এসব উপাচার্যের পড়াশোনা, পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা, গবেষণা—কোনো কিছুতে সময় নেই। কিন্তু সারা দিন বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে গিয়ে ঘোরাঘুরি করতে করতে যখন মেরুদণ্ড বিলুপ্ত হয়, তারপর তাঁরা উপাচার্য হচ্ছেন। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, দেশে ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন দুই শতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন।
আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সিলেটে সাধারণ ছাত্রীদের যৌক্তিক আন্দোলন ছিল, তাঁরা হলে ভালো খাবার পাচ্ছেন না। বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে প্রশাসনের খুশি হওয়া উচিত ছিল যে শিক্ষার্থীরা এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের পুলিশ দ্বারা নির্যাতন করেছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে ঘেরাও সাধারণ বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক তিনি। তাঁর কাছেই তো দাবি জানানো হবে। কিন্তু তাঁদের নির্যাতন করা মানায় না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘নতজানু হওয়ার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সিলেটের শিক্ষার্থীরা স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠেছেন। তাঁদের পেছনে মানুষের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। আমাদের প্রয়োজন রয়েছে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামিনা লুৎফা বলেন, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত। তিনি এই পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তানজিম উদ্দিন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের জোবাইদা নাসরিন, অর্থনীতি বিভাগের রুশাদ ফরিদি, ইংরেজি বিভাগের তাসনীম সিরাজ মাহবুব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কাজলী সেহরীন প্রমুখ। অনশন কর্মসূচিতে আলোচনা অংশের সঞ্চালনা করেন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা।
শাবিপ্রবি: আন্দোলনকারীদের মোবাইল ব্যাংকিং ও মেডিকেল সাপোর্ট বন্ধ
২৫ জানুয়ারি ২৫, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সবকটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকে কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
একই সঙ্গে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে যে মেডিকেল টিম উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছিলেন, তারাও সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
অর্থ সহায়তা: শাবিপ্রবি’র সাবেক ৫ শিক্ষার্থীকে সিলেট পুলিশের কাছে হস্তান্তর
২৫ জানুয়ারি, ২০২২, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক ৫ শিক্ষার্থীকে সিলেট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ মঙ্গলবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আটকৃকতরা এখন রাস্তায় আছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
এর আগে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পরিবার ও বন্ধুদের অভিযোগ, শাবিপ্রবি’র আন্দোলনে কিছু অর্থ সহায়তা করায় তাদেরকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডি’র এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অনেক সময় পুলিশের অন্যান্য ইউনিটগুলো সিআইডির সহায়তা চেয়ে থাকে।’
‘এটা আসলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযান। সিআইডি কেবল তাদের সহায়তা করেছে’, যোগ করেন তিনি।
গতরাতে শাবিপ্রবি’র সাবেক ২ শিক্ষার্থীকে আটকের অভিযোগ উঠে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিরুদ্ধে।
তারা হলেন- শাবিপ্রবি’র আর্কিটেকচার বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রেজা নূর মুঈন ও সিএসই বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান।
গতরাতে শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী শাহ রাজী সিদ্দিক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি আর হাবিবুর রহমান গত প্রায় আড়াই বছর ধরে একসঙ্গে থাকি। তাকে সিআইডির লোকেরা গতরাতে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে তুলে নিয়ে গেছে।’
‘সাবেক ছাত্র হিসেবে সে মাত্র ১০০০ টাকা আন্দোলনকারীদের ডোনেট করেছিল,” যোগ করেন তিনি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার্থীরা কী খাচ্ছেন, নজর নেই কারও
২৬ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
এক কেজি ওজনের একটি মুরগি (ব্রয়লার) রান্না করার সময় সর্বোচ্চ কত টুকরা করা সম্ভব? যে কারও কল্পনাশক্তিও হার মানবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটি আবাসিক হলের ক্যানটিনে খেতে বসলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের একজন বাবুর্চি তথ্য দিয়েছেন, সাধারণত এক কেজি ওজনের মুরগিকে ২৫ টুকরা পর্যন্ত করেন তাঁরা। আর মাছের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, যত বেশি টুকরা করা যায়।
হলগুলোর ক্যানটিন ও ক্যাফেটেরিয়ার ডাল যেন ‘হলুদ পানি’। ভাত হয় মোটা চালের, সেটিও বাজারের সবচেয়ে নিম্নমানের। দুপুরে এক বেলা খাবারের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন-ক্যাফেটেরিয়ায় একজন শিক্ষার্থীর ন্যূনতম খরচ ৩৫-৪০ টাকা। ভাত (ভরপেট) ১০ টাকা, মুরগির মাংস ৩০ টাকা, মাছ ২৫ টাকা, রান্না করা ডিম ২০-২২ টাকা। কেউ সবজি খেতে চাইলে আরও ৫ টাকা খরচ হবে। ক্যানটিনে ‘অভিজাত’ খাবার গরুর মাংস। ছোট্ট দুই টুকরা মাংসের সঙ্গে এক টুকরা আলু, দাম ৪৫ টাকা।
দুপুরের খাবারের পেছনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের সর্বনিম্ন ৩০-৩৫ টাকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ টাকা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০-৪০ টাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০-৩৫ টাকা এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ টাকা। ঢাকাসহ এই ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খাবারের পেছনে কোনো ভর্তুকি নেই। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের দাবি, ‘বাজেট কম’।
২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচন হলেও ক্যানটিন-ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ নিয়ে ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও কোনো তৎপরতা ছিল না। ডাকসুতে কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদকের একটি পদ রয়েছে। এই পদে নির্বাচিত হওয়া ছাত্রলীগের নেত্রী লিপি আক্তার এখন উচ্চশিক্ষা নিতে লন্ডনে। ফোনে যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যানটিনের ইজারা থেকে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
অনশন ভাঙলেন শাবি শিক্ষার্থীরা
২৬ জানুয়ারি ২০২২, বাংলা ট্রিবিউন
অবশেষে অনশন ভেঙেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে ১০টা ২১ মিনিটে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা। শাবিপ্রবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে ক্যাম্পাসে অনশন চলছিল।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হক। তারা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার আহ্বান জানান। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা সকালে ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড. ইয়াসিমনের হাতে পানি পান করে একযোগে অনশন ভাঙবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক শাবির পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর মুক্তির আশ্বাস দেন ড. জাফর ইকবাল।
উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘আজ উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা বাসায় এসেছিল। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তোমরা যা চাইছ, যে দাবি তোমাদের সেটা পূরণ হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা দেরি করিনি, সরাসরি এখানে চলে এসেছি। আমরা তোমাদের অনশন না ভাঙিয়ে যাবো না। তোমরা পুরো দেশ কাঁপিয়ে দিয়েছ।’
দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি
চট্টগ্রামে দেড়শ’ কোটি টাকার ফ্লাইওভারের দুটি পিলারে ফাটল
২৬ অক্টোবর, ২০২১, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা
চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের দুটি পিলারে ফাটল দেখা যাওয়ায় নতুন চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (২৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ এ সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে র্যাম্পের দুই পাশে ট্রাফিক পুলিশের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, পিলার দুটিতে ফাটলের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় দুই কাউন্সিলর ও চান্দগাঁও থানার ওসি। একই সঙ্গে পিলারের নিচ দিয়ে অস্থায়ী দোকানপাট ও বিভিন্ন যানবাহনও সরিয়ে নেয় তারা। সিএমপির পক্ষ থেকে ব্যারিকেডের পাশাপাশি দু’জন ট্রাফিক সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ
২৭ অক্টোবর ২০২১, একাত্তর টিভি অনলাইন
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার পাঁচ নম্বর ঘাটে ভিড়তে গিয়ে একপাশ কাত হয়ে ডুবে গেছে ফেরি আমানত শাহ। এতে পণ্যবাহী ট্রাক ও ছোট গাড়িসহ ১৯টি যানবাহন নদীতে পড়ে গেছে। জানা গেছে ফেরিটির মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়েছে এক বছর আগে।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ফেরিডুবির ঘটনাটি ঘটে। খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সকাল ৯টা ৫৪ মিনিট নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। সেইসাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বিআইডব্লিউটিসি’র উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা।
সকাল ৯ টায় দৌলদুয়া ফেরিঘাট থেকে ছেড়ে আসে ফরিটি।
উল্লেখ্য ১৯৮০ সালে ডেনমার্ক থেকে কেনা ফেরিটির মেয়াদ উর্ত্তীণ হয় ১ বছর আগে। জাহাজ চলাচল আইন অনুযায়ী ৪০ বছর পার হলেই তা চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে যায়। কিন্তু আইনের কোন তোয়াক্কা না করেই যাত্রী ও পণ্য পারাপার করা হচ্ছিল। শুধু মেয়াদউত্তীণ নয় বেশিভাগ ফেরিরই নেই হালনাগদ সনদপত্র।
বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৩ মৃত্যু: ৮ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
২৮ অক্টোবর ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৩ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৬ নভেম্বর চান্দগাঁও থানার তৎকালীন এসআই আবুল কালাম আজাদ ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর কেটে গেছে আট বছর। আজও শেষ হয়নি মামলার বিচার কার্যক্রম। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় এখনও ঝুলে আছে বিচারিক কাজ।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফখরুদ্দিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলাটি এখন আর আমরা দেখছি না। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর প্রথম লকডাউনের সময়ের মামলাটি চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচার নিষ্পত্তির জন্য বদলি করা হয়।’
এবার উত্তর সিটির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেল কবির খানের
২৫ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
মাত্র একদিনের ব্যবধান। রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় আবার এক প্রাণ ঝরল। আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের উল্টোদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় প্রাণ হারালেন আহসান কবির খান। কবির খান দৈনিক সংবাদের কম্পিউটার বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি প্রথম আলোর সাবেক কর্মীও।
গতকাল বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির ময়লার গাড়ির চাপায় মৃত্যু হয় নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের। এ ঘটনায় কাল থেকে আজ পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছে নগরজুড়ে।
গাড়ির স্টিয়ারিং কাদের হাতে
ক্লিনার সুইপার মালী মশককর্মী ও বহিরাগতরা চালায় বর্জ্যবাহী ট্রাক কম্প্যাক্টর
২৬ নভেম্বর ২১, সমকাল
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নিজস্ব যানবাহন আছে ৬০৯টি। চালক আছে মাত্র ১৭৩ জন। তাহলে বাকি গাড়িগুলো চালায় কারা? বহিরাগত, মশককর্মী, মালী, ক্লিনার, সুইপার, এমএলএসএস পদধারী বা বহিরাগত চালকরাই এসব গাড়ির চালক। এদের না আছে ভারী যান চালানোর লাইসেন্স, না আছে হালকা যান চালানোর লাইসেন্স, না আছে কোনো প্রশিক্ষণ। নামকাওয়াস্তে স্টিয়ারিং ধরা শিখেই তারা ডাম্প ট্রাক, কম্প্যাক্টর বা পে-লোডারের মতো ভারী যানবাহনের চালক বনে গেছে। তাদের দিয়েই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর চালানো হচ্ছে অসংখ্য ভারী যানবাহন।
গত বুধবার গুলিস্তানে নটর ডেম কলেজের এক মেধাবী শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয় এ ধরনের এক চালকের গাড়িচাপায়। ওই গাড়ির চালক হারুন অর রশিদ ছিলেন ডিএসসিসির একজন মাস্টাররোলের ক্লিনার। তার হাতেই ছিল ওই গাড়ির স্টিয়ারিং। গতকাল বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারেও ঘটে এমন আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি বর্জ্যবাহী গাড়ির নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান সংবাদকর্মী আহসান কবির খান। ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ নামের একজন বহিরাগত চালক। তিনি সিটি করপোরেশনের মাস্টাররোলের কোনো কর্মচারীও নন।
গতকাল দিনভর খোঁজ নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনের পরিবহন শাখার সীমাহীন অব্যবস্থাপনা, অসঙ্গতি, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা- এক কথায় নৈরাজ্যকর অবস্থার চিত্র পাওয়া গেছে। বছরের পর বছর এই নৈরাজ্য বিরাজমান।.. ..
আড়াই লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি চালানোর কাজ নেন সেই পরিচ্ছন্নতাকর্মী
২৬ নভেম্বর ২১, সমকাল
আড়াই লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি চালানোর কাজ নেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হারুন মিয়া। প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি এই গাড়ি চালাতেন। এ ছাড়া প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকার তেলও চুরি করতেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। তবে তার কাছ থেকে কে এই টাকা নিয়েছেন সে বিষয়ে সূত্রটি কিছু বলতে রাজি হয়নি। তিনি বলেছেন, সঠিক তদন্ত হলে সব বেরিয়ে আসবে।
এর আগে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি খোয়ানোর পর রাসেল মিয়াকে ময়লাবাহী গাড়ি চালানোর সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে দুই পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. হারুন মিয়া ও মো. আব্দুর রাজ্জাককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা
জমার টাকা ওঠাতেই বেপরোয়া চালকেরা
২৮ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
দিন শেষে মালিককে দুই হাজার টাকা জমা হিসেবে দিতেই হবে। এরপর জ্বালানি বাবদ ব্যয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। টোল, চাঁদা, পথের খরচ ও ‘ঘুষ’ আরও মোট দেড় হাজার টাকা। এই সাত হাজার টাকার ব্যবস্থা করার পর যা থাকে, তা ভাগাভাগি করে নেন চালক ও তাঁর সহকারী।
কালিয়াকৈরের চন্দ্রা থেকে ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ঠিকানা পরিবহনের চালক সিরাজুল ইসলাম এ হিসাব দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দিনে তিনটি ট্রিপ (যাওয়া-আসা) দিতে পারলে তিনি হাজারখানেক ও সহকারী ছয় শর মতো টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেন। এ জন্য বাস চালাতে হয় ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত।
চালক সিরাজুল আরও বলেন, মালিকের জমা ওঠাতেই প্রতিযোগিতা করে বাস চালাতে হয়। পথের অনেক খরচ আছে। এ ছাড়া তাঁদের উপায় নেই। বাসে বাসে প্রতিযোগিতা, একটিকে অপরটির ধাক্কা ও ঘষা দেওয়ার কারণও এটি।
সিরাজুলের মতো ১৫ জন চালক ও ১০ জন চালকের সহকারীর (হেলপার) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেপরোয়া বাস চালানোর বড় কারণ মালিকের জমা ওঠানোর তাগিদ, মাদকাসক্তি এবং অদক্ষতা ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে না জানা। দুর্ঘটনা ঘটার পর পার পেয়ে যাওয়ায় চালকদের অনেকে কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেন না। এ বাইরে চালকেরা পথচারীর অসতর্কতা, রাস্তার পাশে দোকানপাট গড়ে ওঠা এবং রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলচালকদের হুটহাট লেন পরিবর্তনকে দুর্ঘটনার কারণ বলে উল্লেখ করেন।
এবার দেখা যাক এসব বিষয়ে আইনে কী বলা আছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইনের ১৩ ধারা অনুযায়ী, চালককে নিয়োগপত্র দিয়ে বাস চালাতে হবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে মালিক সমিতি ঘোষণা দেয়, পরদিন থেকে চুক্তিতে বাস চালানো হবে না। যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি। চালকদের মাদকাসক্তি পরীক্ষার বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। চালকেরাই বলছেন, ঘুষ দিলে দক্ষতা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। এক চালক নিজেই স্বীকার করেন, তিনি ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে লাইসেন্স পেয়েছেন।
বাস চালানো ও চালকদের এই বিষয়গুলো আবার সামনে এসেছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। গত বুধবার ঢাকার নটর ডেম কলেজের এক ছাত্রের মৃত্যুর পর কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর আগে ২০১৮ সালে তাঁরা ৯ দিন ঢাকার রাস্তায় আন্দোলন করেছিলেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গঠিত কমিটি ৩০টি নির্দেশনা জারি করে। যদিও তার বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয়নি। নতুন সড়ক আইন হয়েছে। কিন্তু সেই আইন বাস্তবায়নেও অনেক ঘাটতি। আইনটির বিধিমালা এখনো তৈরি করতে পারেনি সরকার। বাসের প্রতিযোগিতা বন্ধে একটি রুটে একটি কোম্পানির অধীনে বাস চালানোর উদ্যোগও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
এদিকে চালকেরা যেসব অভিযোগ করেছেন, তা কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই মেনে নিয়েছেন মালিকদের সংগঠন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। গতকাল শনিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাসচালকদের অভিযোগ অনেকাংশে ঠিক। দৈনিক জমার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কারণে চালকেরা দীর্ঘ সময় ধরে এবং বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। কেউ কেউ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালান। এতে দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কে চাঁদাবাজি ও হয়রানির অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘মালিক সমিতি থেকে দিনে মাত্র ৩০ টাকা নেওয়া হয়। বাকি টাকা কারা নেয়, তা আপনারাও জানেন।’
দক্ষিণে মারা গেল পরদিন উত্তরে, কারণটা কী?
০১ ডিসেম্বর ১, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
রাজধানীতে সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িচাপায় ২ জন নিহতের ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সেসময় প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডিতে নির্মাণাধীন জয়ীতা টাওয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্র মারা গেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি এই রহস্য বুঝলাম না, দক্ষিণে মারা গেল এর পরের দিন উত্তরে মারা গেল কেন! এর কারণটা কী? এই কারণটা এবং এর জন্য কারা দায়ী খুঁজে বের করতে হবে। যখন ময়লার গাড়ি যাচ্ছিল তখন তার সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে যাবে কেন, সেটাও দেখতে হবে। গাড়ি যে চালাচ্ছিল, এই গাড়ি চালানোর মতো দক্ষতা তার আছে কি না সেটাও বিবেচনা করতে হবে। উভয় দিকে দায়িত্বশীলতা কার কতটুকু আছে সেটা আমাদের দেখতে হবে।.. ..
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটা কথা সবার জন্য বলতে চাই—রাস্তাঘাটে চলার সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। যেখান-সেখান থেকে রাস্তা পার হতে গেলে দুর্ঘটনা হবেই। একটা চলমান গাড়ি চট করে ব্রেক করতে পারে না, ব্রেক কষতে সময় লাগে। রাস্তা পারাপারের জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে। হঠাৎ করে দৌড় দেবে তারপর অ্যাকসিডেন্ট হবে আর অ্যাকসিডেন্ট হলেই রাস্তায় লোক নেমে গাড়ি ভাঙা, গাড়িতে আগুন দেওয়া-পোড়ানো এটা কী ধরনের কথা!.. ..
নগরজুড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার মৃত্যুফাঁদ
চট্টগ্রামে খাল-নালায় একের পর এক মৃত্যু
০৯ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সড়ক। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। আবর্জনা জমে খালটি ভরাট হয়ে আছে। গজিয়ে উঠেছে ঘাসও। তার ওপর খেলছে ছয় শিশু। খালটির পাড়ে নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী। বৃষ্টি হলেই খালটি হয়ে ওঠে খরস্রোতা। আবর্জনার ফাঁক গলে কেউ তলিয়ে গেলে উঠে আসারও কোনো সুযোগ নেই। অথচ তিন দিন আগে নগরের ষোলশহর চশমা খালে এমন আবর্জনার নিচে তলিয়ে গেছে ১২ বছরের শিশু কামাল উদ্দিন। শুধু এই খালটিই নয়, নগরে এমন সাড়ে পাঁচ হাজার মৃত্যুফাঁদ রয়েছে। যেখানে যে কেউ অসতর্ক অবস্থায় পড়ে আহত কিংবা নিহত হতে পারেন। গতকাল বুধবার নগরের অন্তত ২০টি স্থানে খাল-নালা সরেজমিন ঘুরে খোলা নালা ও অরক্ষিত খালের এমন চিত্র চোখে পড়েছে। শুধু দুটি দুর্ঘটনাস্থলে খাল ও নালার পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখা গেছে।
একের পর এক দুর্ঘটনার জন্য উন্মুক্ত খাল-নালা ও জমে থাকা আবর্জনাকে দায়ী করেছে ফায়ার সার্ভিস। সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, উন্মুক্ত খাল-নালায় স্ল্যাব বসানোর কাজ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হবে।
সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা রয়েছে এক হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় রয়েছে ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৭টি স্থানে। এসব পয়েন্ট চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি এসব খাল-নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ছয় বছরে মারা গেছেন ৯ জন। এর মধ্যে দু’জনের খোঁজ মেলেনি। আহত হয়েছেন অনেকে। এত মৃত্যুর পরও নির্বিকার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও সিডিএ।
ঝালকাঠিতে লঞ্চে আগুন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪০
২৪ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামে একটি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শেবাচিম পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বেলা সাড়ে ১২টায় সমকালকে জানান, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিশু সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন শিশু মারজিয়া (৮) নামে এক শিশু মারা গেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী ওই লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। ফায়ার সার্ভিস ও কোস্ট গার্ডের দুজন সদস্য জানান, সুগন্ধা নদী থেকে তারা ৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন, যারা গত রাতে প্রাণে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
দগ্ধ যাত্রীদের ৭৫ জন বরিশালের শেবাচিম হাসপাতালে, ১৫ জন ঝালকাঠি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে মধ্যরাতে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কী ঘটেছিলো
২৪ ডিসেম্বর ২০২১, বিবিসি বাংলা
ঢাকার সদরঘাট থেকে শত শত যাত্রী নিয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া অভিযান-১০ নামের লঞ্চটির যাত্রীরা বলছেন, লঞ্চটি বরিশাল ঘাট ধরে বরগুনা যাওয়ার পথে রাত দু’টার দিকে আগুন ধরে যায়।
এ সময় আর্তনাদ, হৈ-চৈ আর চিৎকারে অবর্ণনীয় এক পরিবেশ তৈরি হয় নদীতে থাকা লঞ্চটিতে এবং আগুন থেকে প্রাণ বাঁচাতে নারী, পুরুষ ও শিশুরা নদীতে ঝাঁপ দিতে থাকেন যাদের অনেকে এখনো নিখোঁজ আছেন।
এক পর্যায়ে ঝালকাঠির দিয়াকূল গ্রামে তীরে লঞ্চটি ভেড়ানো হলেও দ্রুত নামতে গিয়ে আটকে পড়া যাত্রীদের অনেকে আহত হন। কেউ কেউ শিশু সন্তান হারিয়ে এখনো খুঁজে পাননি।
একজন যাত্রী বলছেন, যখন মাঝরাতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে তখন একদিকে আগুন আর অন্যদিকে পানি – এ ছাড়া আর তো কোনো উপায় ছিলো না।
যাত্রীরা কয়েকজন জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই ইঞ্জিনের দিক থেকে মাঝে মধ্যেই জোরে শব্দ হচ্ছিলো আর প্রচণ্ড কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিলো।
“আমরা অনেকেই বুঝতে পারছিলাম যে কোনো একটা ঝামেলা হচ্ছে। লঞ্চের ফ্লোরগুলোও গরম হয়ে উঠছিলো। ইঞ্জিনে প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিলো আর ব্যাপক কালো ধোঁয়া দেখছিলাম। স্টাফরা বলছিলো সমস্যা হবেনা,” বলছিলেন লঞ্চের তিন তলার একটি কেবিনে থাকা যাত্রী জহিরুল।
জহিরুল আগুন লাগার পর নদীতে লাফ দেন এবং প্রায় এক ঘণ্টা ভাসার পর তীরে আসতে সক্ষম হন। আগুনে তার দুই পা পুড়ে গেছে।
হাসপাতাল থেকে ফোনে বিবিসির সাথে কথা বলেছেন তিনি।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর এক ইঞ্জিনে চলছিলো লঞ্চটি। পরে চাঁদপুর ছাড়ার পর দ্বিতীয় ইঞ্জিনটি চালু করা হয়।
“এরপর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ ব্যাপক চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায়। দরজা খুলে দেখি আগুন দেখা যাচ্ছে। স্টাফরা তখনো বলো ধৈর্য্য ধরেন। কিন্তু আগুনের উত্তাপ সইতে না পেরে দিলাম নদীতে ঝাঁপ”।
লঞ্চটি প্রায় ১ ঘণ্টা অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চলতে থাকে: নৌপুলিশ
২৪ ডিসেম্বর ২৪, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৩৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নৌপুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বরিশাল জোন) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘গতরাত প্রায় সাড়ে ৩টার দিকে লঞ্চটি যখন নলছিটি ক্রস করে তখন এর ইঞ্জিনে আগুন লাগে। কিন্তু লঞ্চটি নলছিটিতে স্টপেজ দেয়নি, ঝালকাঠিতেও স্টপেজ দেয়নি। লঞ্চটি প্রায় ১ ঘণ্টা অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চলতে থাকে।’
‘পরবর্তীতে ইঞ্জিনের আগুন সম্ভবত তেলের ট্যাঙ্কিতে লাগে এবং বিকট শব্দে লঞ্চটি ঘটনাস্থলে এসে থেমে যায়’, যোগ করেন তিনি।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চালক বা ইঞ্জিনের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের গাফিলতির কারণেই যে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা আমরা এ মুহূর্তে নিশ্চিত। বিস্তারিত তদন্তের পর বলতে পারব।’
ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, লঞ্চটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল, চলছিল বেপরোয়া গতিতে
২৪ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
ঢাকার সদরঘাট থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় এমভি অভিযান-১০ নামে লঞ্চটি যখন বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা করে, তখন থেকেই এর গতি ছিল বেপরোয়া। ইঞ্জিনে ত্রুটি থাকায় চারজন টেকনিশিয়ান ত্রুটি মেরামতে কাজ করছিলেন। এ জন্য পুরো গতিতে দুটি ইঞ্জিন চালিয়ে ট্রায়াল দেওয়া হচ্ছিল। আর এতেই মূলত ইঞ্জিনের অতিরিক্ত তাপে আগুন ধরে যায়। আগুন লেগে যাওয়ার পর নেভানোর কোনো চেষ্টা না করে লঞ্চটির শ্রমিক-কর্মচারী ও মালিক লঞ্চ থেকে সটকে পড়েন। লঞ্চের বেঁচে ফেরা কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য মিলেছে।
বরগুনার ব্যবসায়ী মো. সগির হোসেন হাওলাদার অভিযান-১০ নামে ওই লঞ্চের তিনতলার কেবিনের যাত্রী ছিলেন। তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। লঞ্চটি অর্ধেকের বেশি পুড়ে যাওয়ার পর প্রচণ্ড উত্তাপ আর ধোঁয়ায় দম আটকে যাওয়ায় ঘুম ভেঙে যায় তাঁর। এরপর বাইরে নেমে দেখেন, চারদিকে আগুন। তিনি লঞ্চের পাশের ত্রিপলের রশি বেয়ে দ্রুত দোতলায় নামেন। সেখানে অনেক নারী, শিশুকে অজ্ঞান ও দগ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। একটি ফ্যামিলি কেবিনে দুই শিশু ও এক নারীর দগ্ধ নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। সগির হোসেন কী করবেন, ভেবে দিশেহারা। তিনি নদীতে ঝাঁপ দেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করেন।
সগির হোসেন বলেন, লঞ্চটির ঢাকার ঘাট ছাড়ার পর তিনি ইঞ্জিনকক্ষের কাছে গিয়েছিলেন। তখন ইঞ্জিনের বেপরোয়া গতি তুলতে চারজন টেকনিশিয়ানকে দেখতে পান। এ সময় তিনি তাঁর মুঠোফোনে ইঞ্জিনের ছবিও তোলেন।
কয়েকজন যাত্রী বলেন, লঞ্চটির ইঞ্জিনের ত্রুটি থাকায় চারজন ইঞ্জিন মেরামতকারী টেকনিশিয়ান লঞ্চটির ইঞ্জিনকক্ষে ছিলেন। তাঁরাই মূলত পুরো গতিতে লঞ্চটি চালাচ্ছিলেন। ইঞ্জিনে গ্যাস হওয়ায় বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই ইঞ্জিন প্রচণ্ড গরম হচ্ছিল। ইঞ্জিনের ত্রুটি খুঁজে পেতে পুরো গতিতে দুটি ইঞ্জিনই চালাচ্ছিলেন তাঁরা। বেপরোয়া গতির কারণে লঞ্চটি কাঁপছিল।
সগির হোসেন বলেন, লঞ্চটিতে অগ্নিনির্বাপকের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আর আগুন লাগার পরপরই মালিক ও স্টাফরা যাত্রীদের রেখে লঞ্চ থেকে সটকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী বরগুনার আরেক যাত্রী জাহিদুল ইসলাম বলেন, রাত পৌনে একটায় বরিশাল নৌবন্দর ত্যাগ করার পর লঞ্চটির পুরো ডেক উত্তপ্ত হয়ে যায়। শীত থাকায় চারপাশ ত্রিপল দিয়ে আটকানো ছিল। রাত আড়াইটার দিকে লঞ্চটি ঝালকাঠি স্টেশন থেকে দেউরী এলাকায় আসতেই আগুন লাগে। কিছু দূরে এলে ইঞ্জিনকক্ষে আগুন ধরে যায়। এরপর আগুন পুরো লঞ্চের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। লঞ্চের ২০ ব্যারেল ডিজেল, নিচতলায় দুটি মোটরসাইকেল এবং রান্নার জন্য রাখা কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। একই সঙ্গে ভিআইপি কেবিনের এসির কম্প্রেসারগুলোও একে একে বিস্ফোরিত হয়।
নিখোঁজ কতজন জানেন না কেউ, দিশেহারা স্বজনরা
২৪ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তার সঠিক হিসেব এখনও কেউ দিতে পারছেন না। দুর্ঘটনার পর শুক্রবার সকাল থেকে সুগন্ধা তীরের দিয়াকুল গ্রামে, ঝালকাঠী সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে আসতে থাকেন নিখোঁজদের স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয় সুগন্ধা তীর এবং হাসপাতালের পরিবেশ।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় সমকালকে বলেন, নিখোঁজ যাত্রীদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা আমরা এখনও বলতে পারছি না। ফায়ার সার্ভিস এবং কোস্টগার্ডের একাধিক টিম সুগন্ধা নদীতে নিখোঁজদের সন্ধানে রয়েছে। এছাড়া বরগুনায় কন্ট্রোল রুম খুলে শহরে মাইকিং করা হয়েছে নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহের জন্য। প্র্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাণপন চেষ্টা চালানো হচ্ছে নিখোঁজদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানতে।
অনুমতি না নিয়েই বদলে ফেলা হয় লঞ্চের ইঞ্জিন
২৫ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে যেভাবে আগুন লাগতে পারে, তা নিয়ে কথা বলেছেন লঞ্চটির মালিক ও কর্মীরা। ইঞ্জিনকক্ষে অগ্নিকাণ্ড থেকে এমন বড় ঘটনা ঘটতে পারে বলে কয়েকজন লঞ্চকর্মী মনে করছেন। লঞ্চটির মালিক বলছেন, গত অক্টোবর মাসে ইঞ্জিন বদলানো হয়েছিল। তবে সে জন্য নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হয় এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটি। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঝালকাঠি শহরের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় তিনতলা লঞ্চটিতে হঠাৎ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুতই আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে যায়। শীতের রাতে লঞ্চের বেশির ভাগ যাত্রী তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৮ জন। শতাধিক যাত্রী দগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হতাহত যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, লঞ্চে এত বড় অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ইঞ্জিনকক্ষে অগ্নিকাণ্ড একটি কারণ হতে পারে। ইঞ্জিনকক্ষে কাজ করেন—এমন কয়েকজন লঞ্চকর্মী জানান, লঞ্চের ইঞ্জিনকক্ষে ছোটখাটো আগুন লাগা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এমন ঘটনা ঘটে। বেশির ভাগ সময় লঞ্চের কর্মীরা তা নিভিয়েও ফেলেন। কিন্তু লঞ্চের ইঞ্জিন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিনে অত্যধিক তাপমাত্রা উৎপন্ন হয়ে থাকতে পারে। সেখান থেকেই আগুন লাগতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর লঞ্চটিকে তীরে ভেড়াতে ৪৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই লঞ্চটিকে তীরে ভেড়ানো সম্ভব হলে প্রাণহানি এড়ানো যেত বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন লঞ্চমালিক বলেন, বেশির ভাগ লঞ্চে রিকন্ডিশন্ড বা পুরোনো ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। এগুলো মূলত সমুদ্রগামী জাহাজের জেনারেটর ইঞ্জিন। ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিলে ও তা না সারাতে পারলে প্রচুর তাপমাত্রা উৎপন্ন হয়।
এ ব্যাপারে অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ প্রথম আলোকে বলেন, আগের ইঞ্জিন দুটিতে ত্রুটি থাকায় গত অক্টোবর মাসে ইঞ্জিন বদলানো হয়। ডকইয়ার্ডে উঠিয়ে ৭২০ অশ্বক্ষমতার দুটি ইঞ্জিন লাগানো হয়।
এভাবে ইঞ্জিন লাগানো যায় কি না, জানতে চাইলে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘লঞ্চের কাঠামোগত পরিবর্তন বা ইঞ্জিন পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন পরিবর্তনের আগে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি।’
এ ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ।
এমভি অভিযান-১০–এর ফিটনেস সনদে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এতে ২০টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ছিল। মালিক হামজালাল শেখ বলেন, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এসব কোনো কাজে আসেনি।
ফিটনেস সনদ অনুযায়ী, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি ২০১৯ সালে নির্মাণ করা হয়। এটির দৈর্ঘ্য ৬৪ মিটার ও গভীরতা ২ দশমিক ৮০ মিটার। বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তরে লঞ্চটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ০১-২৩৩৯।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর লঞ্চটিকে তীরে ভেড়াতে ৪৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই লঞ্চটিকে তীরে ভেড়ানো সম্ভব হলে প্রাণহানি এড়ানো যেত বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আগুনে পোড়া লঞ্চটির ৪১ যাত্রী এখনো নিখোঁজ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি অনলাইন
ঝালকাঠিতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় আরো ৪১ জন নিখোঁজ বলে দাবি করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাদের উদ্ধারে দ্বিতীয় দিনের মতো আবার অভিযানে নেমেছে ফায়ার সার্ভিস।
নিখোঁজদের সন্ধানে স্বজনেরা ভিড় করছেন ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তীরে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে আছে এলাকার পরিবেশ। কাল সকাল থেকেই নদীতীরে ছোটাছুটি করছেন অনেকে।
এদিকে এখনো উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়র সার্ভিসের কর্মীরা। সকালে দুর্ঘটনাস্থল দিয়ারপুরসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চলমান রয়েছে।
এদিকে ঝালকাটিতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ ৪৬ জন বর্তমানে ভর্তি আছেন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । এসব রোগীদের সুচিকিৎসা দিতে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৭ চিকিৎসক বর্তমানে কাজ করছেন এই হাসপাতালে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৩ টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে আগুনের ঘটনা ঘটে।
অভিযান–১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড
লঞ্চে ত্রুটি পেয়েছে তদন্ত কমিটি
২৬ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের কারণ কী, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকেই আগুন লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, লঞ্চের ইঞ্জিনেও ত্রুটি ছিল। তদন্ত দলের সদস্যরা গতকাল শনিবার ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতীরে নোঙর করে রাখা পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরিদর্শন করেছেন।
তদন্ত দলের প্রধান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. তোফায়েল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইঞ্জিনে কিছু ত্রুটি পেয়েছি।’
এ ছাড়া কাগজে-কলমে লঞ্চটি যে মাস্টারের (চালক) চালানোর কথা ছিল, তিনি চালাচ্ছিলেন না বলেও জানা গেছে। লঞ্চে মাস্টার নিয়োগের বিষয়টি নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে অবহিত করতে হয়।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মাহবুব রশিদ গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অভিযান-১০ লঞ্চের চারজন মাস্টার ও ড্রাইভারের মধ্যে তিনজনের নিয়োগের বিষয়টি মালিক অধিদপ্তরকে জানাননি। লঞ্চটির সার্ভে সনদে প্রধান মাস্টার হিসেবে যাঁর নাম আছে, তাঁর পরিবর্তে অন্য এক মাস্টার লঞ্চটি চালাচ্ছিলেন। এটি নিয়মের ব্যত্যয়। লঞ্চমালিক মাস্টার ও ড্রাইভার পাল্টাতে পারেন। তবে সেটি করতে হবে নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে জানিয়ে।
এদিকে তদন্ত দল জানতে পেরেছে, আগুন লাগার সময় লঞ্চটির প্রধান দরজা বন্ধ ছিল। যে কারণে জ্বলন্ত অবস্থায় লঞ্চটি নদীতীরের কাছে নোঙর করলেও যাত্রীরা প্রধান দরজা থেকে বের হতে পারছিলেন না। যে যেভাবে পেরেছেন, জানালা দিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৩৮ যাত্রী নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮৫ জন। নিখোঁজ রয়েছেন ৫১ জন।
অগ্নিনির্বাপণ সম্পর্কে জানেন না লঞ্চকর্মীরা
আগুন লাগলে তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে বিষয়ে লঞ্চের কর্মীদের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র থাকলেও তা কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেটিও জানেন না লঞ্চের কর্মীরা। ফলে চলন্ত অবস্থায় লঞ্চে আগুন লাগলে হয় পানিতে ঝাঁপ দিতে হবে, নয়তো উদ্ধারকারীদের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকার সদরঘাট স্টেশনের কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চের কর্মীদের অগ্নিনির্বাপণযন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেই। এমনকি লঞ্চ ডুবে গেলে যাত্রীরা কীভাবে জীবন রক্ষাকারী বয়া (পানিতে ভেসে থাকার সরঞ্জাম) ব্যবহার করবেন, সে সম্পর্কেও তাঁরা ভালোভাবে জানেন না। আর বেশির ভাগ লঞ্চের মধ্যে বয়া এত শক্ত করে বাঁধা থাকে যে এগুলো প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করার মতো অবস্থা থাকে না।
বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে ২২১টির মতো যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৮৫টি লঞ্চ ঢাকা থেকে ছাড়ে।
সদরঘাট টার্মিনালে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএর কর্মচারীদের জন্য অগ্নিমহড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর মালিকেরা আবেদন না করলে লঞ্চের কর্মীদের জন্য অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ বা মহড়ার ব্যবস্থা ফায়ার সার্ভিস করে না। গত দুই বছরের মধ্যে শুধু ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলা এমভি মানামী লঞ্চে একবার অগ্নিমহড়া করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়।
নৌ অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধের মূল দায়িত্ব ঢাকার শ্যামপুরের বিআইডব্লিউটিএর ঘাটে অবস্থিত ‘রিভার ফায়ার স্টেশন’–এর। বিশেষ এ ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা মালেক মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড যাতে না ঘটে, সে জন্য তাঁরা সচেতনতামূলক প্রচার চালালেও কোনো মহড়া বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন না।
অভিযান লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের সঙ্গেই ছিল রান্নাঘর। নিয়ম না মেনে সেখানে রান্নাঘর স্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে সুন্দরবন-১১ লঞ্চের চালক আবদুস সালাম মৃধা বলেন, বড় লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে রান্নাঘরের দূরত্ব বেশি থাকলেও ছোট আকৃতির লঞ্চগুলোতে রান্নাঘর একদম লাগানো থাকে। রান্নার কাজে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
নৌপরিবহন অধিদপ্তর সূত্র বলছে, অভিযান–১০ লঞ্চের মালিক অনুমতি না নিয়ে লঞ্চের ইঞ্জিন বদলেছেন। আগে এ লঞ্চে ৫৫০ হর্স পাওয়ারের দুটি ইঞ্জিন থাকলেও তা পাল্টে ৭২০ হর্স পাওয়ারের দুটি ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে। নতুন ইঞ্জিন লাগানোর পর লঞ্চটির দ্বিতীয় যাত্রা শুক্রবার। এটিকে ‘ট্রায়াল ট্রিপ’ (পরীক্ষামূলক যাত্রা) বলা যায়।
তবে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল ছাড়ার আগে বিআইডব্লিউটিএ যে ‘চেক লিস্ট’ তৈরি করেছিল তাতে বলা হয়েছিল, লঞ্চে কোনো ত্রুটি নেই। চেক লিস্ট অনুযায়ী, লঞ্চের যাত্রী ধারণক্ষমতা ৭৫০ জন, যা রাতে ৪২০ জন। তবে লঞ্চ ছাড়ার আগে যাত্রীসংখ্যা ৩১০ জন উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে যাত্রী ছিল অনেক বেশি। লঞ্চে ১২৫টি বয়া এবং ২০টি অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র থাকার কথা। তবে আগুন লাগার পর অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।
পরীক্ষামূলক ইঞ্জিনে চলছিল ‘অভিযান-১০’
২৬ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
চলন্ত ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে স্মরণকালের ভয়াবহ আগুনে জানমালের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির পর বেরিয়ে আসছে নৌযানটির হরেক অব্যবস্থাপনার ছবি। গত বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধার মাঝনদীতে পুরো লঞ্চটি অঙ্গার হয়ে যাওয়ায় অগ্নিনিরাপত্তায় বড় গাফিলতিরই প্রমাণ দিচ্ছে। নদীতে চলমান যানে আগুন লাগলে এর ভয়াবহতা কতটা বিভীষিকাময় হতে পারে, তা ৩৮ জনের প্রাণক্ষয়ের মাধ্যমে জানান দেওয়া গেছে।
নানা অব্যবস্থাপনা আর আগুনের সূত্রপাতের সময়ে লঞ্চটির কর্মীদের যে অবহেলা আর অসহযোগিতা ছিল, তা উঠে এসেছে যাত্রীদের বয়ানেই। ওই ঘটনায় কাজ করা তদন্ত কমিটি গতকাল শনিবার পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরিদর্শন করেও পেয়েছে অব্যবস্থাপনা আর অবহেলার নানা আলামত।
আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত সাত সদস্যের কমিটি গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। ওই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র বলছে, ইঞ্জিন কক্ষের ত্রুটি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে তাদের কাছে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, যা শুরুতেই লঞ্চের কর্মীরা নেভাতে পারলে এতো বড় ক্ষতি হতো না বলে মনে করছেন তারা। এক্ষেত্রে বড় ধরনের অবহেলা ছিল লঞ্চের কর্মীদের।
সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যে ইঞ্জিন কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে থাকা ইঞ্জিন রি-কন্ডিশন (পুরোনো) ছিল। ত্রুটি থাকায় আগের ইঞ্জিন উঠিয়ে সেখানে গত অক্টোবরে নতুন করে দুটি ইঞ্জিন লাগানো হয়। তবে ইঞ্জিনগুলো ভালোভাবে কাজ না করায় চলছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এর মধ্যেই ঘটে যায় যাত্রীবাহী নৌযানে ইতিহাসের ভীতিকর অগ্নিকাণ্ড। যদিও নতুন করে ইঞ্জিন লাগানোর বিষয়টি নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে জানানোর নিয়ম থাকলেও লঞ্চের মালিক সেই পথে হাঁটেননি। অধিদপ্তরের পরিদর্শকরাও বিষয়টি জানতে পারেননি।
লঞ্চগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ঘাটতি, নেই আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণও
২৭ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
ঝালকাঠিতে যাত্রীবাহী লঞ্চ অভিযান–১০–এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, দেশের লঞ্চগুলোতে অগ্নিনির্বাপণের অবস্থা খুবই নাজুক। যদিও সার্ভে সনদের শর্তে বলা আছে, লঞ্চের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা থাকা বাঞ্চনীয়। কিন্তু বাস্তবে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে যাত্রী পরিবহনকারী লঞ্চগুলোতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বা ফায়ার ইস্টিংগুইশার নেই। লঞ্চকর্মীদের জন্য নেই আগুন নেভানোর কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। লঞ্চের ছাদে লাইফবোট থাকার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চে তা নেই।
দেশে প্রতিবছর নৌযান দুর্ঘটনায় বহু প্রাণহানি ঘটে, যার বেশির ভাগই নৌযানডুবির ঘটনা। তবে এবার এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নৌ দুর্ঘটনা নতুন রূপ পেল। এত দিন নৌপথে যাত্রীদের নিরাপত্তায় শুধু বয়া ও লাইফজ্যাকেটের বিষয়টি গুরুত্ব পেলেও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতির বিষয়টি এক রকম উপেক্ষিতই ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সুন্দরবন লঞ্চের মালিক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর লঞ্চগুলোকে সার্ভে সনদ নিতে হয়। এসব সরঞ্জাম না থাকলে সনদ দেওয়া হয় না। তবে কিছু কিছু লঞ্চে এ ক্ষেত্রে গাফিলতি থাকতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নিখোঁজ অন্তত ৫১ জন।
অভিযোগ আছে, এমভি অভিযান–১০ লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ছিল না। ফলে লঞ্চটির শ্রমিক-কর্মচারীরা আগুন নেভানোর কোনো চেষ্টা না করেই লঞ্চ থেকে সটকে পড়েন। আগুন নেভানোর জন্য তাঁদের ছিল না কোনো প্রশিক্ষণও। যে কারণে প্রাণহানি ও দগ্ধের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঢাকা-বরগুনা নৌপথে চলাচল করে এমভি ফারহান-৮, শাহরুখ-২, পূবালী-১, রাজহংস-৮, অভিযান-১০ ও রাজারহাট বি—এই ছয়টি লঞ্চ। আমতলী-ঢাকা নৌপথে চলে সুন্দরবন-৭, ইয়াদ-১ ও তরঙ্গ-৭। ৪০০-এর ওপরে ধারণক্ষমতার এই ৯ লঞ্চের কোনোটিতেই নেই শর্ত অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম। একইভাবে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো বিলাসবহুল হলেও এসব লঞ্চেও রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামের ঘাটতি। এসব লঞ্চের ধারণক্ষমতা ৮০০-এর ওপরে।
গত শনিবার দুপুরে বরগুনা নৌবন্দরে নোঙর করা এমভি শাহরুখ-২ ও ফারহান-৮ লঞ্চে গিয়ে দেখা যায়, এমভি ফারহানে ১৮টি বালতি এবং ইঞ্জিনকক্ষ, কেবিনের করিডর ও মাস্টার কক্ষে বিই শ্রেণির ১৩টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আছে। তবে এমভি শাহরুখ-২ লঞ্চটিতে ১৮টি বালতি এবং ইঞ্জিনকক্ষ ও ক্যানটিনে পাঁচটি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দেখা গেলেও অন্যান্য স্থানে কোনো অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম নেই। তবে দুটি লঞ্চেই পাম্প আছে। লঞ্চটির পরিদর্শক এনায়েত হোসেন বলেন, ‘ইঞ্জিনকক্ষ ও ক্যানটিন ছাড়া অন্য কোথাও অগ্নিনির্বাণ যন্ত্র থাকতে হবে—এমন বিধান নেই কাগজপত্রে।’
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২০০১ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৪০০ থেকে ৮০০ যাত্রী ধারণক্ষমতার লঞ্চে ২০ ঘনমিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ফায়ার পাম্প থাকতে হবে এবং পাম্পটি স্বতন্ত্রভাবে চলার সুবিধা থাকতে হবে। পাম্প থেকে ১৫ মিটারের দুটি হোস পাইপ দিয়ে যাতে লঞ্চের ডেকে ওয়াটার জেট নিক্ষেপ করা যায়, সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। একইভাবে ইঞ্জিনকক্ষে দুটি হাইড্রান্ট, ৯ লিটার ধারণক্ষমতার বিই শ্রেণির ৮টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র এবং যন্ত্রপাতি রাখার স্থানে আরও ৪টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকতে হবে।
এ ছাড়া কেবিনের করিডর দৈর্ঘ্যে ৩০ মিটারের কম হলে একটি করে, ৩০ মিটারের বেশি হলে দুটি করে, সার্বিকভাবে প্রতি ১০০ বর্গমিটারে একটি করে, প্রত্যেক নাবিকের কক্ষে একটি করে এবং কিচেনে দুটি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকতে হবে। ডেকের আবাসনে ৯ লিটার ধারণক্ষমতার এবি শ্রেণির অন্যূন ১০টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকা বাঞ্চনীয়। ৫০ লিটার ধারণক্ষমতার বালুভর্তি ২টি বাক্স, ৪টি অগ্নিকুঠার, ৯ লিটার ধারণক্ষমতার ১২টি বালতি ও রশি থাকতে হবে। তবে ৮০০–এর বেশি যাত্রীবহনকারী লঞ্চগুলোর জন্য এই সরঞ্জাম আরও বেশি রাখতে বলা হয়েছে।
কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে এসব সরঞ্জাম যথাযথভাবে নেই। ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী পারাবাত-১১ ও পারাবাত–১৮ লঞ্চ দুটিতে গিয়ে দেখা যায়, ইঞ্জিনকক্ষে কয়েকটি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও বাইরে নেই। কয়েকটি বালতি ছাড়া এই লঞ্চে অগ্নিনির্বাপণের আর কোনো ব্যবস্থাই নেই। তবে সুরভী-৯, সুন্দরবন–১০, কীর্তনখোলা-১০, অ্যাডভেঞ্চার-১ ও মানামী—এই লঞ্চগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনা শর্ত অনুযায়ী রয়েছে।
সুগন্ধা ট্র্যাজেডি
তিন ‘বড় ভুলের’ কথা স্বীকার লঞ্চ মালিকের
২৮ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
তিনটি ‘বড় ভুলের’ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুনে পুড়ে যাওয়া ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ। সেগুলো হলো অনুমোদন ছাড়াই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন, মাত্রাতিরিক্ত গতিতে চালানোর নির্দেশনা এবং আগুন লাগার কথা জানার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।
গতকাল সোমবার সকালে কেরানীগঞ্জ থেকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর লঞ্চ মালিকের মুখ থেকে এসব স্বীকারোক্তি বেরিয়ে আসে। যদিও তদন্ত সংশ্নিষ্টরা বলছেন, একে ভুল বলা যায় না। এটা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন হামজালাল। লঞ্চে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ১৯৮৮ সাল থেকে দীর্ঘদিন জাপানে ছিলেন। তিনি ২০০০ সালে দেশে এসে একটি লঞ্চ কেনেন। এখন তার মালিকানায় রয়েছে তিনটি লঞ্চ। ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চটির চার মালিক থাকলেও মূল মালিকানা এবং ব্যবস্থাপনা ও নজরদারি করতেন হামজালাল।
মঈন আরও জানান, অতিরিক্ত যাত্রীচাহিদা তৈরি করতে লঞ্চটিতে গত নভেম্বরে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। যাতে অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। বিলম্বে ছেড়ে গন্তব্যে আগে পৌঁছানো গেলে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা বেশি পাওয়া যায়। এ লক্ষ্যে গত নভেম্বরে ওই লঞ্চে ৬৮০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন বদলিয়ে ৭২০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন লাগানো হয়। কোনো নামি প্রতিষ্ঠান থেকে এই ইঞ্জিন পাল্টানো হয়নি। একজন সাধারণ মিস্ত্রি বা ফিটারের সহযোগিতায় ইঞ্জিন বদল করা হয়েছে। আগের ইঞ্জিনটি চীনের তৈরি। বর্তমানে জাপানের তৈরি রিকন্ডিশন ও ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। লঞ্চের ইঞ্জিন পাল্টানোর বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে কারিগরি পরিদর্শন ও অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া করা হয়নি লঞ্চের পরীক্ষামূলক চলাচল। এ ছাড়া কর্মরত তিন কর্মচারীর (মাস্টার ও চালক) লঞ্চ চালানোর অনুমোদন ছিল না।
মালিকদের অপকৌশলে জিম্মি লঞ্চযাত্রীরা
২৯ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
ঢাকা থেকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পথে চলার অনুমতি বা রুট পারমিট নেওয়া আছে নয়টি লঞ্চের। মানে হলো, প্রতিদিন ঢাকা থেকে ভান্ডারিয়ার উদ্দেশে অন্তত চারটি লঞ্চ ছেড়ে যাবে। আর ভান্ডারিয়া থেকে চারটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে। কিন্তু ছেড়ে যায় আসলে দুটি করে লঞ্চ।
মালিকদের এই কৌশলের নাম ‘রোটেশন’ প্রথা বা পালা করে চলাচল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বহুদিন ধরে রোটেশন কৌশল চলছে। এই কৌশলের উদ্দেশ্য তিনটি: ১. যে লঞ্চটি চলবে, সেটিতে গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া। ২. প্রতিযোগিতার বদলে অনেকটা একচেটিয়া ব্যবসা নিশ্চিত করে বেশি ভাড়া আদায় এবং ৩. মুনাফার হার বাড়ানো।
শুধু রোটেশন নয়, নতুন লঞ্চ নামানোর ক্ষেত্রেও মালিকেরা বাধা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নতুন কোনো মালিকের পক্ষে নির্দিষ্ট রুটে লঞ্চ নামানো কঠিন। কারণ, মালিকেরা চান না, প্রতিযোগিতা তৈরি হোক।
এর ভুক্তভোগী সাধারণ যাত্রীরা। তাঁরা বলছেন, লঞ্চমালিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার অভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। গাদাগাদি করে ওঠানোয় যাত্রীসেবার মান খারাপ হয়। লঞ্চ চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, মালিকদের এই রোটেশন প্রথা ও লঞ্চে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তাদের অজানা নয়। তাঁরা বরং জেনেশুনে সুযোগটি দেন। এর বদলে আর্থিক সুবিধা নেন।
নিধিরাম সর্দার ‘অগ্নিঘাতক’
২৯ ডিসেম্বর ২১, সমকাল ‘
নদীতে অগ্নি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নৌ ফায়ার স্টেশনের সবচেয়ে শক্তিশালী জাহাজের নাম ‘অগ্নিঘাতক’। বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এ জাহাজটির স্থায়ী ঠিকানা নগরীর পরিত্যক্ত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতীরে। সেখান থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ‘অগ্নিঘাতক’ রাত ৩টা ২০ মিনিটে রওনা হয়ে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অর্থাৎ ১৭ কিলোমিটার দূরের ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে অগ্নিঘাতকের সময় লেগেছে ১২ ঘণ্টা। নৌ ফায়ার স্টেশনের আরও দ্রুতগামী যান স্পিডবোটটি একই সময়ে রওনা হয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৬টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে। রাতের কুয়াশা ভেদ করে নৌযান দুটির চলার সক্ষমতা না থাকায় এ অবস্থা হয় বলে জানা গেছে।
গুলিস্তানে বাসচাপায় নিহত ২, পুলিশ চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ
৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
রাজধানীর গুলিস্তানে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের বিপরীত পাশে শ্রাবণ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির একটি বাসের চাপায় ২ জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, বাসটি চালাচ্ছিল পুলিশের একজন এএসআই।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে বাসটি আটক করে পল্টন থানায় নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার আবুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
শ্রাবণ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির বাসের চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টররা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শ্রাবণ পরিবহনের গুলিস্তান-মদনপুর রুটের বাসটি গুলিস্তান এলাকায় পৌঁছানোর পর এএসআই এমাদুল বাসটিকে আটক করেন।’
‘এরপর তিনি যাত্রীদের নামিয়ে নিজেই বাসটি চালিয়ে আহাদ পুলিশ বক্সের কাছে আনার চেষ্টা করেন। কয়েকশ গজ চালিয়ে যাওয়ার পর বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি রিকশা ও সড়ক বিভাজকে ধাক্কা দেয়। এতে একজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন,’ তারা বলেন।
অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড
গতি বাড়াতে লঞ্চে বসানো ইঞ্জিনটি ছিল পুরোনো
০৪ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ইঞ্জিন কক্ষ থেকেই—এটি নিশ্চিত হয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তর গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি। কমিটি বলছে, ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল এবং অনুমতি না নিয়ে লঞ্চটির ইঞ্জিন বদল করা হয়েছিল। নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে না জানিয়ে অন্য একটি জাহাজের ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিল লঞ্চটিতে।
দুটি তদন্ত কমিটির পৃথক দুটি সূত্র বলছে, লঞ্চের গতি বাড়াতে অনুমোদন ছাড়া বেশি ক্ষমতার ইঞ্জিন লাগানো হলেও তা পুরোনো ছিল। এই ইঞ্জিনের কার্যকারিতা যেভাবে যাচাই করার কথা, লঞ্চমালিক সেটি করেননি। এ ছাড়া ইঞ্জিন লাগানোর পর নিয়ম অনুযায়ী নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে যেভাবে পরীক্ষামূলক যাত্রা হওয়ার কথা, সেটিও হয়নি।
অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক-চালকদের দায়ী করে মন্ত্রণালয়ের কমিটির প্রতিবেদন
০৪ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় লঞ্চটির চারজন মালিক, মাস্টার ও চালকদের দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কমিটি।
সদরঘাটে কর্মরত নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা রয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে কমিটির আহ্বায়ক ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. তোফায়েল ইসলাম মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন। প্রতিবেদনে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে ২৫ দফা সুপারিশ ও করণীয় উল্লেখ রয়েছে।
কম লঞ্চ চালিয়ে বেশি মুনাফা অর্জনের ‘রোটেশন’ প্রথা বন্ধের সুপারিশ করেছে কমিটি। মালিকদের এ কৌশলের কারণে প্রয়োজনের তুলনায় কম লঞ্চ থাকে। এ সুযোগে লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হয়। এতে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি চাঁদপুর ঘাট অতিক্রম করার পর ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়। ইঞ্জিনের ত্রুটি সারতে ব্যর্থ হওয়ায় লঞ্চটি আর না চালিয়ে নিরাপদ কোনো ঘাটে আগেই ভেড়ানো উচিত ছিল। অনেক যাত্রী লঞ্চটি ভেড়ানোর অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু মাস্টার ও ইঞ্জিনচালক এ বিষয়ে কর্ণপাত না করে ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চটি চালাতে থাকেন।
লঞ্চে লাগা আগুন নেভানোর কোনো চেষ্টা করা হয়নি বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, আগুন লাগার পর লঞ্চটির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় আনুমানিক ১৫ মিনিট চলার পর ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চর বাটারাকান্দা গ্রামে নদীর পাড়ে লঞ্চটি ভেড়ে। এখানেই লঞ্চের প্রথম শ্রেণির ইঞ্জিনচালক মাসুম বিল্লাহ, দ্বিতীয় শ্রেণির ইঞ্জিন ড্রাইভার আবুল কালাম ও কর্মরত গ্রিজাররা (ইঞ্জিনকক্ষের সহকারী) পালিয়ে যান। নোঙর করা বা লঞ্চটি বাঁধার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও সে চেষ্টা করা হয়নি।
লঞ্চটি প্রথম যেখানে ভিড়েছিল, সেখানে নোঙর না করায় বা বেঁধে না রাখায় জোয়ারের কারণে সেটি আবার মাঝনদীতে চলে যায়। লঞ্চটি পুড়তে পুড়তে প্রায় ৪০ মিনিট পর নদীর অপর পাড়ের দিয়াকুল গ্রামে ভেড়ে। এই সময়ে অনেক যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হন। অনেকে নদীতে লাফ দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হলে, লঞ্চটি চর বাটারাকান্দায় ভেড়ানোর স্থানে বাঁধলে বা নোঙর করলে হয়তো আগুনের তীব্রতা এত বৃদ্ধি পেত না। এত যাত্রীর প্রাণহানি ঘটত না।
আগুনের সূত্রপাত লঞ্চের ইঞ্জিন থেকেই হয়েছে উল্লেখ করে মালিকদের দায় নির্ধারণ করে কমিটি বলছে, নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী লঞ্চটির দুটি ইঞ্জিনের মোট ক্ষমতা ছিল ১ হাজার ১০০ অশ্বক্ষমতার (বিএইচপি)। কিন্তু মালিকেরা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে সনদের শর্ত ভেঙে অন্য জাহাজের পুরোনো ৩ হাজার ৩৬ বিএইচপির ইঞ্জিন সংযোজন করেন। পরিবর্তিত ইঞ্জিন লঞ্চটির জন্য উপযুক্ত কি না, তা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো হয়নি।
অভ্যন্তরীণ জাহাজ বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো নৌযানে ১ হাজার ২০ কিলোওয়াট বা ১ হাজার ৫০১ দশমিক ৯২ বিএইচপির চেয়ে বেশি ক্ষমতার ইঞ্জিন সংযোজন করলে লঞ্চে ইনল্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ার (আইএমই) নিযুক্ত করতে হয়। কিন্তু লঞ্চটিতে এই পদের কেউ ছিলেন না।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ডকইয়ার্ডে লঞ্চটিতে পুরোনো ইঞ্জিন সংযোজন করার কারণে ডকইয়ার্ডের মালিককেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের চরম অবহেলা
প্রতিবেদনে কমিটি বলছে, প্রায় তিন মাস বসে থাকার পর লঞ্চটি আবার চালু হয়। এ সময় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারক ও পরিদর্শক এবং বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শকেরা কেউই ভালোভাবে লঞ্চটি পরীক্ষা করেননি।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মাহবুবুর রশিদ লঞ্চটির ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়ে খোঁজ রাখেননি। তিনি লঞ্চটি পরিদর্শন করে চলাচলের জন্য অনুমতি দিতে সুপারিশ করেছিলেন। জাহাজ জরিপকারক তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন।
লঞ্চটি প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর ঢাকা-বরগুনা রুটে ১৯ ডিসেম্বর প্রথম যাত্রা করে। ২৩ ডিসেম্বর করে দ্বিতীয় যাত্রা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদরঘাটে নিয়োজিত নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯ ও ২৩ ডিসেম্বর লঞ্চটি পরিদর্শন করেননি।
২৩ ডিসেম্বর হাবিবুর রহমান অন্য একটি তদন্তকাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে তদন্ত কমিটির কাছে দাবি করেন। কিন্তু দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।
সদরঘাটে কর্মস্থল হওয়া সত্ত্বেও হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর লঞ্চটি পুনরায় চালু হওয়ার সময় পরিদর্শন বা কোনো অনুসন্ধান না করে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে চরম অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছে কমিটি।
লঞ্চটির যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর পর পুনরায় সার্ভিসে আসার বিষয়টি অবগত হওয়া সত্ত্বেও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারককে বিষয়টি না জানিয়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ধলেশ্বরীতে লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ৮
০৫ জানুয়ারি ২২, সমকাল
ঘন কুয়াশায় ধলেশ্বরী নদীতে ঢাকাগামী একটি লঞ্চের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে গেছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারে থাকা ৪০ যাত্রীর মধ্যে ৩২ জন তীরে উঠতে পারলেও একই পরিবারের চারজনসহ ৮ ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের গোপালনগর ঘাট থেকে ফতুল্লার পশ্চিম ধর্মগঞ্জ ঘাটে আসার পথে মাঝ নদীতে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
গাবতলীতে ভোট গণনার সময় হামলা, বিজিবির গুলিতে চারজন নিহত
০৫ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
বগুড়ার গাবতলীতে ভোট গণনার সময় হামলার ঘটনায় বিজিবির গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের কালাইহাটা গ্রামের কুলসুম বেগম (৩৫), খোরশেদ আলী (৭০), আবদুর রশিদ (৪৮) ও আলমগীর (৪০)।
বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউপির কালাইহাটা উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এই হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটে। ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী ইউনুছ আলী ফকিরের সমর্থকেরা পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবির ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি সদস্যরা কয়েক দফা গুলি ছুড়েছে। এতে চারজন নিহত হয়েছেন।
‘গরিব বলে আমাদের স্বজনদের উদ্ধারে সব শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে না’
০৮ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
টানা চতুর্থ দিনেও উদ্ধার হয়নি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ট্রলারের কোনো যাত্রী। নিখোঁজ যাত্রীদের ফিরে পেতে ধলেশ্বরীর তীরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অপেক্ষমাণ স্বজনেরা।
উদ্ধার কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি স্বজনেরা বলেন, অপেক্ষা করতে গিয়ে প্রিয়জন হারানোর বেদনা নরক যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলে। এ সময় বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী ধলেশ্বরী নদীর দুই তীরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন ও স্লোগান দেন। যেকোনো মূল্যে জীবিত অথবা মৃত স্বজনদের খুঁজে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
রাজপথে মাঝরাতের বাহাদুরি
১২ জানুয়ারি ২০২২, আজকের পত্রিকা
গভীর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে বিকট শব্দে বেপরোয়া গতিতে স্বল্প দূরত্বে গাড়ি চলে। সাপ্তাহিক ছুটির আমেজ এলেই এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় গুলশান ও বিমানবন্দর সড়কে। বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ ও রেঞ্জরোভারের মতো নামী ব্র্যান্ডের দামি গাড়ি নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামেন রাজধানীর বিত্তশালী ব্যক্তিদের সন্তানেরা। স্বল্প দূরত্বের এই প্রতিযোগিতার নাম ‘ড্র্যাগ রেস’ (DRAG RACE)। এসব প্রতিযোগিতায় যেমন হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটে, তেমনি স্থানীয় বাসিন্দারাও প্রচণ্ড বিরক্ত। কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কেউই এতে গা করেন না। কারণ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তানদের আটকে রাখার ক্ষমতা তাঁদের নেই।
খোদ ট্রাফিক পুলিশের হিসাবে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে গুলশান-বনানী ও বিমানবন্দর সড়কে এই প্রতিযোগিতার কারণে ৩১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অর্ধশত মানুষ। কিন্তু একটি ঘটনায়ও থানা-পুলিশ সরাসরি কোনো মামলা নেয়নি। তারা মামলা করেছে মোটরযান আইনে, তবে সে সংখ্যাও কম নয়। এ সময়ে মোটরযান আইনে ১৭৩টি গাড়ির জরিমানা করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে উল্টো আপসের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে পুলিশ।
শিল্পকারখানার মান যাচাই কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়
১৪ জানুয়ারি ২২, সমকাল
সারাদেশের পাঁচ হাজার শিল্পকারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করে নিরাপত্তা মান যাচাইয়ের সরকারি কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। গত ডিসেম্বরের মধ্যেই এই পরিদর্শন শেষ করার কথা ছিল। লক্ষ্য ছিল এই সময়সীমায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর অঞ্চলের মোট এক হাজার ৯০০ কারখানা পরিদর্শন করা হবে। কিন্তু ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিদর্শন করা হয়েছে মাত্র ৮৭৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। যা পরিদর্শনের আওতায় থাকা কারখানার মাত্র ৪০ শতাংশ।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পরিদর্শন কার্যক্রম আরও নাজুক। মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের আওতায় এসেছে। তিন হাজার ১০০ কারখানার মধ্যে মাত্র ১০৯টি পরিদর্শন হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে ‘কর্মক্ষেত্রে অগ্নিদুর্ঘটনা ও শ্রমিক নিরাপত্তা :নিরসনের উদ্যোগ কোথায়?’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
ট্রাফিক অব্যবস্থাপনায় ঝুঁকিতে নৌপথ
১৪ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
শীতে অধিক কুয়াশা, নাব্যতা-সংকট ও ডুবোচরের কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান। সে ঝুঁকি আরও বাড়ে যখন নৌপথে সংকেতবাতি, বয়া ও মার্কার না থাকে। বরিশাল বিভাগের ৩১টি নৌপথের মধ্যে ২২টিতে পানির গভীরতা কমে গেছে। তার ওপর সংকেতবাতি ও বয়া না থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
লঞ্চের মাস্টার-চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, আমতলী, ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জসহ বিভিন্ন নৌপথে বেশ কয়েকটি স্থানে ডুবোচর রয়েছে। আবার ২২টি স্থানে আছে নাব্যতা-সংকট। শীতে তা তীব্র আকার ধারণ করে। আবার অনেক স্থানে বয়া থাকলেও তাতে সংকেতবাতি জ্বলে না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, ঢাকার সদরঘাট থেকে ৪৪টি নৌপথে প্রতিদিন ২২১টির মতো লঞ্চ চলাচলের অনুমতি থাকলেও প্রতিদিন গড়ে চলাচল করে ৮৫টি। এসব নৌপথের ৩১টিই বরিশাল বিভাগের; এর মধ্যে ২২টিতেই পানির গভীরতা কমে গেছে। এই বিভাগে নৌপথ রয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ কিলোমিটার।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশালের হিজলা থেকে বাবুগঞ্জ খাঁড়ির মুখ এলাকাটিও ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানেও বয়া-বাতি নেই। ওই এলাকার নলবুনিয়ায় বয়া থাকলেও সংকেতবাতি না থাকায় এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝালকাঠি থেকে বরগুনা চ্যানেলে ঢোকার পথে চল্লিশ কাউনিয়ার বাঁ পাড়ে চরের মাথায় মার্কার, সংকেতবাতি কিছুই নেই। এই পথে হদুয়ার ডান পাড়ে চরের মাথায়ও কোনো সংকেতবাতি নেই। এ ছাড়া নিয়ামতি ঘাটের ডানে-বাঁয়ে মার্কা, সংকেতবাতি নেই। আবার নিয়ামতি থেকে বরগুনার বেতাগী পর্যন্ত বিষখালী নদীতে কোনো মার্কার, সংকেতবাতি নেই। একই অবস্থা ঢাকা-ভোলা নৌপথের। ভোলার ইলিশার জনতা বাজার এলাকায় সংকেতবাতি নেই। একইভাবে সাদেকপুর পন্টুনের কাছে বাতি নেই। ডান পাশের টেকে বাতি নেই, শ্রীপুরের আগে মাচকাজীর পাড়েও কোনো সংকেতবাতি নেই।
পর্যাপ্ত সংকেতবাতি, বয়া ও মার্কার না থাকায় প্রায়ই ঘটছে নৌ দুর্ঘটনা। ২০২১ সালের ১২ আগস্ট রাত তিনটার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ঝালকাঠি থেকে বরগুনা চ্যানেলে ঢোকার পথে চল্লিশ কাউনিয়ার বাঁ পাড়ের ডুবোচরে আটকে যায়। একই স্থানে পূবালী-১ ডুবোচরে আটকে গিয়েছিল। ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে বরিশাল নদীবন্দরের সামান্য দূরে চর কাউয়া এলাকায় বরগুনা থেকে ঢাকাগামী এমভি শাহরুখ-২-এর সঙ্গে সংঘর্ষে কীর্তনখোলা নদীতে ডুবে যায় ১ হাজার ২০০ বস্তা ক্লিংকারবোঝাই কার্গো এমভি হাজি দুদু মিয়া।
দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ গেল কিশোরের
২০ জানুয়ারী ২০, ২০২২, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
দুই বাসের রেষারেষিতে রাজধানীতে আবারও প্রাণ ঝরলো একজনের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মগবাজার মোড়ে আজমেরী গ্লোরি পরিবহনের দুটি বাসের চাপায় মারা যায় রাকিব নামে ১২ বছরের এক কিশোর। দুর্ঘটনার পরপরই গাড়ি থেকে পালিয়ে যায় চালক ও তার সহকারী। তবে তাদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত রাকিব মগবাজারের পেয়ারাবাগে মা-বাবার সঙ্গে থাকত। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গাছুয়া পাড়ায়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাকিব দ্বিতীয় ছিল।
রাকিবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান হারুন নামের এক পথচারী। তিনি জানান, মগবাজার মোড় আজমেরী গ্লোরি পরিবহনের দুটি বাসের পাল্লা চলছিল। এ সময় দুই বাসের মাঝে পড়ে গুরুতর আহত হয় রাকিব। উদ্ধার করে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজধানীর মগবাজারের রেলগেট এলাকার ছোট্ট ঘরে ভাইয়ের অপেক্ষায় বসে আছে ছোট বোন ফারজানা। তবে জীবিত নয়, ভাইয়ের মরদেহই আসছে বাসায় তা জেনে গেছে এরইমধ্যে।
প্রতিদিনের মতো চিপস আর মাস্ক নিয়ে ফুটপাতে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতে বের হয়েছিলো ১২ বছরের রাকিব। দুপুরে মায়ের কাছে খাবার চেয়ে না পেয়ে খালি পেটেই কাজে বের হয়েছিল সে। কিন্তু টাকা নিয়ে ফেরা হলো না তার, চিপসগুলো পড়ে থাকলো রাস্তায়ই।
সড়কে এক বছরে মৃত্যু বেড়েছে ৩০%
২২ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে গত এক যুগে জাতীয় বাজেটে ধারাবাহিকভাবে বরাদ্দ বেড়েছে। এই সময়ে নতুন সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি পুরোনো সড়কও চওড়া হয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সড়ক আইনও পাস করেছে সরকার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সড়কে মৃত্যু না কমে আরও বেড়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও সরকারি হিসাবেই গত এক বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
অথচ করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বছর কয়েক ধাপে দেশে মোট ৮৫ দিন গণপরিবহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ ছিল। এরপরও পুলিশের হিসাবে ২০২০ সালের তুলনায় দেশে ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু এক হাজারের বেশি বেড়েছে।.. ..
সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলার হিসাব থেকে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানির তথ্য সংরক্ষণ করে পুলিশ। তাদের তথ্য অনুসারে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮৮ জনের। এর আগের বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৯১৮ জন। এক বছরের ব্যবধানে মৃত্যু বেড়েছে ২৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পুলিশের হিসাবে, ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৬৩৫ জন। আর ২০১৯ সালে দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ১৩৮ জনের মৃত্যু হয়।
অবশ্য পুলিশের হিসাবের সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠনগুলোর তথ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। ২০২০ সালে মারা যান ৫ হাজার ৪৩১ জন।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যাঁরা প্রাণ হারান, তাঁদের মধ্যে ৬৭ শতাংশই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্ষম (১৫-৬৪ বছর বয়সী)। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসাবে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং এর প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।.. ..
মোটরসাইকেল লাগামহীন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫০ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৫১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সংগঠনটির তথ্য অনুসারে, গত তিন বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬২২ জন। এর মধ্যে গত বছরই মারা গেছেন ২ হাজার ২১৪ জন। ২০২০ সালে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪৬৩ জন। ২০১৯ সালে ৯৪৫ জন।
সরকারি সংস্থা বিআরটিএর হিসাবে, গত ১০ বছরে দেশে প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ মোটরসাইকেল বেড়েছে। ২০১১ সালে দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাত লাখ। ২০২১ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখের কিছু বেশি।
২০২১ সালে দৈনিক সড়কে ঝরেছে ২১ প্রাণ
২৩ জানুয়ারি, ২০২২, বণিক বার্তা
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বছর দেশে ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরেও সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে ২০২০ সালের তুলনায় বেড়েছে দুর্ঘটনা সংখ্যাও। পরিসংখ্যান বলছে, গতবছর সড়কে দৈনিক ২১ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২১ প্রকাশ করেন।
মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান,২০২১ সালে ৫ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮০৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৩৯ জন। এর আগের বছর ৪ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৬৮৬ জন। আর আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৬০০ জন।
প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি জানান, ২০২১ সালে সড়ক পথের পাশাপাশি রেলপথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন নিহত, আহত ১৩৪ জন। নৌ-পথে ১৮২টি দুর্ঘটনায় ৩১১জন নিহত, আহত ৫৭৮ জন এবং ৫৪৪ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল, নৌ-পথে মোট ৬ হাজার ২১৩টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫১৬ জন নিহত ও ৯ হাজার ৭৫১ জন আহত হয়েছেন।
পরিবেশ
মালিকদের চাপে ‘লাল’ থেকে ‘কমলা’য় জাহাজ ভাঙা শিল্প, লাগবে না ইআইএ
১৪ নভেম্বর, ২০২১, ডেইলিস্টার বাংলা অনলাইন
মারাত্মক পরিবেশ দূষণকারী জাহাজ ভাঙা শিল্পের মালিকদের চাপে অবশেষে নতি স্বীকার করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই)। চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙা শিল্প এখন আর সর্বোচ্চ দূষণকারী ‘লাল’ শ্রেণির নয়। বরং তুলনামূলক কম দূষণকারী ‘কমলা’ শ্রেণির শিল্প। শ্রেণি পরিবর্তনের ফলে এখন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড স্থাপনের আগে পরিবেশগত সমীক্ষা বা ইআইএ করার প্রয়োজন হবে না।
একটি জাহাজ তার শেষ জীবনে নিজেই একটি বর্জ্যে পরিণত হয়। জাহাজে অ্যাসবেসটস, ভারি ধাতু, খনিজ তেল, জাহাজের তলা ও ব্যালাস্ট ওয়াটার, পলিসাইক্লিক অ্যারোমাটি হাইড্রোকার্বন, পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল, স্লাজ অয়েল ও অর্গানোটিনসহ বেশ কিছু বিপজ্জনক পদার্থ থাকে। এ সব পদার্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে তা পরিবেশ এবং মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
গত ১০ অক্টোবর ডিওইর এক সভায় জাহাজ ভাঙা শিল্পের শ্রেণি কমলা (খ) তে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ডিওইর মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিনের সই করা এ সিদ্ধান্তের কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসে পৌঁছেছে।
তবে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
লাল শ্রেণিভুক্ত শিল্পের ক্ষেত্রে পরিবেশগত নির্দেশনা মেনে চলার সর্বোচ্চ বাধ্যবাধকতা থাকে। শিল্প এলাকার মাটি, পানি, বাতাস ও মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর শিল্প স্থাপনের প্রভাব সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা করে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট বা ইআইএ) করতে হয়।
সুন্দরবনে কয়লাবোঝাই কার্গোডুবি, নিখোঁজ ৫
১৬ নভেম্বর, ২০২১, ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা
সুন্দরবনের হারবাড়িয়া এলাকায় “এম ভি ফারদিন ১” নামে একটি কার্গো (লাইটার) জাহাজ কয়লাসহ পশুর নদীতে ডুবে গেছে। এ ঘটনায় এখনও ৫ ন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সকাল পৌনে ১১টা পর্যন্ত তাদের সন্ধান মেলেনি। এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৯ নম্বর এলাকায় কার্গোটি ডুবে যায়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ও সচিব (ভারপ্রাপ্ত) শেখ ফখরউদ্দীন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হারবাড়িয়ায় ৯ নম্বরে ডুবির সময় কার্গোটিতে ৭ জন লোক ছিলেন। ২ জন তীরে উঠলেও মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১ টা পর্যন্ত ৫ জনের সন্ধান মেলেনি।”
ড্যাপের খসড়া নিয়ে আপত্তি উঠে এল
২১ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
ঢাকা মহানগর এলাকায় বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫) খসড়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনীতিবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, ড্যাপের খসড়ায় জলাভূমি ভরাট করে স্থাপনা তৈরি, নদীর পাড়ে কারখানা করা এবং দখলদারদের বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
খসড়া ড্যাপ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত জাতীয় সেমিনারে এসব আপত্তি তোলা হয়। সেমিনারের আয়োজন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়া আইভী বলেন, ‘ড্যাপে দেখানো হয়েছে, শীতলক্ষ্যার চারপাশে ভারী ও মাঝারি ধরনের কারখানা করার কথা। আমি এখানে সকলের সামনে অনুরোধ করছি, এটা যেন কোনো অবস্থাতেই না হয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে নদীর চারপাশে কেবল শীতলক্ষ্যাই নয়, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু কোনো নদীর পাশেই ভারী স্থাপনা করতে দেওয়া সমীচীন হবে না।’
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের ওপর দায়িত্ব থাকা উচিত। অবশ্যই রাজউকের সঙ্গে পরামর্শ করেই তারা কাজটা করবে।
ড্যাপের চূড়ান্ত খসড়ায় নিজেদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো দেখতে পায়নি বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ক্যান্টনমেন্ট, পিলখানা, এয়ারপোর্ট — এসব জায়গা ঢাকার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত হলেও সিটি করপোরেশন, রাজউক এবং সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়েরই অধিকার প্রায় নেই। এই ব্যাপারে ড্যাপ কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে? সত্যিকার অর্থেই ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে চাইলে তাদেরও আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।
ড্যাপের দুর্বলতা তুলে ধরে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, প্লাবন ভূমির অযাচিত শ্রেণি বিন্যাস বলবৎ রাখা হয়েছে। এতে করে প্লাবন ভূমিকে মূল জলস্রোত ও সাধারণ জলস্রোত করে ভাগ করা হয়েছে। ২৬ শতাংশ জলস্রোতের মধ্যে মূল জলস্রোত থেকে গেল মাত্র ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, আর ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ সাধারণ জলস্রোতে চলে গেল। অনেকেই জানেন না, সাধারণ জলস্রোত মানে সেখানে নির্মাণ করা যাবে। এসব বিষয়গুলো নিরসন করেই ড্যাপ চূড়ান্ত করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের শঙ্কা, অনেক দখলদারদের বৈধতা দেওয়ার পরেই ড্যাপের যাত্রা শুরু হচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরছে দেশ বিপন্ন প্রাণ-প্রকৃতি
২১ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
কোথাও রাস্তার ধারে পড়ে আছে প্লাস্টিকের বোতল, কোথাও নর্দমায় ভাসছে। বাজারও সয়লাব পলিথিনে। আইন থাকলেও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। উল্টো দিন দিন বাড়ছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার। এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রয়েছে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ঘাটতি। ফলে স্থলে পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য নষ্ট করছে মাটির গঠন; আর খাল-নালা-নদীতে ফেলা প্লাস্টিক যাচ্ছে সাগর পর্যন্ত, যা পানিকে বিষিয়ে তুলছে। মাছের পেটেও যাচ্ছে। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ ও প্রকৃতি।
গতকাল সোমবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ২০২০ সালে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহারের ভয়াবহ চিত্র। রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘টুওয়ার্ডস এ মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর সাসটেইনেবল প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে দেখা যায়, গ্রামের চেয়ে শহরে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বেশি। বাংলাদেশের নগর অঞ্চলগুলোতে বার্ষিক মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ২০০৫ সালে ছিল তিন কেজি। ২০২০ সালে তা তিন গুণ বেড়ে হয়েছে ৯ কেজি। ঢাকা শহরে এই পরিমাণ ২৪ কেজি। ২০০৫ সালে ঢাকায় মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল ৯ কেজি ২০০ গ্রাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা সংকট প্লাস্টিক দূষণকে আরও খারাপ করেছে। মাস্ক, গ্লাভসসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীতে প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে। এসব বর্জ্য আলাদা করা হচ্ছে না। ২০২০ সালে কৃষি, ইলেকট্রনিকস, পরিবহন, আসবাব, ভবন নির্মাণ, গৃহস্থালি, চিকিৎসা, টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন খাতে ১৪,০৯,০০০ টন প্লাস্টিকের ব্যবহার হয়েছে। ঢাকায় দৈনিক ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৈনিক ৩২৩ টন পলিথিনের বর্জ্য যোগ হয়। ২০২০ সালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দৈনিক মাথাপিছু বর্জ্য উৎপাদন ছিল ০.৬১ কিলোগ্রাম। জনসংখ্যা অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীতে দৈনিক ছয় হাজার ১৬৮ টন বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশই প্লাস্টিক বর্জ্য।
দেশের পৌরসভাগুলোতে দৈনিক ৬৪৬ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়, এর মধ্যে ১০ শতাংশ প্লাস্টিক। সংগৃহীত ৪৮ শতাংশ ল্যান্ডফিল, ৩৭ শতাংশ পুনর্ব্যবহূত হয়, ১২ শতাংশ খাল ও নদীতে শেষ হয় এবং ৩ শতাংশ সিটি করপোরেশনের ড্রেনে চলে চয়ে যাচ্ছে।
ট্যানারি সরলেও দূষণ কমেনি বুড়িগঙ্গায়
২০ জানুয়ারি ২২, সমকাল
রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভার ধরে যাত্রা শুরুর পর শ্যামপুরের কাছাকাছি গেলেই নাকে আসে উৎকট গন্ধ। সামনেই ধলেশ্বর গুদারা ঘাট। বুড়িগঙ্গার কাছাকাছি যতই যাওয়া হয়, দুর্গন্ধও বাড়তে থাকে। ঘাটে গিয়ে দেখা যায় ভয়াবহ অবস্থা। নদীর বুকে সরাসরি এসে পড়ছে শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য মিশ্রিত রঙিন পানি। নদীর পানির যতটুকু চোখে পড়ে, মিশমিশে লালচে। নদীর দু’পাশেও আবর্জনার স্তূপ।
সেখানেই কথা হয় স্থানীয় ডিঙি নৌকার মাঝি আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হাজারীবাগের ট্যানারি সরকার উঠায়া নিছে।
ডায়িং কবে উঠায়া নিব? ফাল্কগ্দুন-চইত মাস আইতে দ্যান, পানি আঠার মতো হইয়া যাইব।’ এরপর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টা ঘুরে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গার কেরানীগঞ্জ ও শ্যামপুর অংশে তিনটি পয়েন্টে ওয়াশিং ও ডায়িং কারখানার রঙিন বর্জ্য সরাসরি পড়ছে নদীতে। কেরানীগঞ্জের অংশে কথা
হয় ৭০ বছরের বৃদ্ধ জেলে আব্দুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডায়িং বুড়িগঙ্গা শ্যাষ করে দিল। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা লাল-নীল বিষাক্ত পানি পড়তেই আছে নদীতে।’
বুড়িগঙ্গায় মাত্রাতিরিক্ত দূষণ কমাতে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারের হেমায়েতপুরে সরিয়ে নেওয়া হয় ২০১৭ সালের এপ্রিলে। তবে দূষণ থেকে রক্ষা পায়নি নদী। ট্যানারির জায়গা নিয়েছে এখন দু’পাশে থাকা শতাধিক ওয়াশিং ও ডায়িং কারখানা।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের গবেষকরা জানিয়েছেন, কেরানীগঞ্জের শতাধিক ওয়াশিং কারখানা থেকে দৈনিক অন্তত ১৮ লাখ লিটারের বেশি বিষাক্ত তরল বর্জ্য মিশছে বুড়িগঙ্গায়। শ্যামপুর শিল্প এলাকার শতাধিক প্রিন্টিং, নিট, ডায়িং কারখানা থেকে প্রতিদিন বের হয় ৩০ হাজার ঘনমিটারেরও বেশি অপরিশোধিত তরল বর্জ্য, যা নদীতে যাচ্ছে সরাসরি। প্রতিষ্ঠানটির এক নিরীক্ষায় বলা হয়েছে, হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরীর বর্জ্যও ধলেশ্বরী হয়ে ফের বুড়িগঙ্গায় মিশছে। এ ছাড়া কয়েক ডজন অতি-ক্ষুদ্র পর্যায়ের কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান এখনও হাজারীবাগে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
বুড়িগঙ্গা দূষণের এ চিত্রের সত্যতা মিলেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুম লীয় দূষণ কেন্দ্র (ক্যাপস) ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামের গবেষণায়ও। শ্যামপুরে বুড়িগঙ্গার পানি গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ষার আগে, বর্ষা এবং বর্ষার পর পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা।
ফলাফলে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গায় পানির অম্লত্বের (পিএইচ) মান বর্ষার আগে-পরে থাকে ৭ দশমিক ৬ থেকে ৮ দশমিক ৫, যা ক্ষারীয়ধর্মী। ডায়িং শিল্পের তরল বর্জ্যের কারণে নদীর পানির পিএইচ এমন। পানিতে অদ্রবণীয় ক্ষুদ্র কঠিন পদার্থ (টোটাল সাসপেন্ডেবল সলিডস, টিএসএস) পাওয়া গেছে ১০৮, ৫৭ ও ১৯৫, অথচ পানিতে এর আদর্শ মান ১০। পানিতে অ্যামোনিয়া ২ থেকে ৪ দশমিক ৮ পর্যন্ত ছিল, যার আদর্শ মান শূন্য দশমিক ৫। তিনটি ভিন্ন ঋতুতে শ্যামপুরের পানিতে তেল ও গ্রিজের পরিমাণ ১ দশমিক ৯ থেকে ৫ দশমিক ৬ পর্যন্ত। অথচ এটি শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ থাকার কথা।
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
২১ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
নির্মল চন্দ্র দাস সর্দিতে ভুগছেন প্রায় তিন মাস ধরে। রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট রাস্তার কাঞ্চন ব্রিজ অংশে যানবাহনের চাকা মেরামত করেন তিনি। ১২ কিলোমিটারের মতো দীর্ঘ নির্মাণাধীন সড়কটি যেন ধুলার রাজ্য।
চলতি মাসের মাঝামাঝি কোনো এক বিকেলে ধুলায় মাখামাখি অবস্থায় নির্মলের সঙ্গে দেখা হয়। কথার ফাঁকে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এই ধুলাবালুর মধ্যে কাজকর্ম কইরা ঠান্ডা-সর্দি লাইগ্যা গ্যাছেগা। গরিব মানুষ; চলনতো লাগব পয়-পুলাপাইন লইয়া। এই কারণে ধুলাবালুর মধ্যেই থাহি। ’
নির্মলের মতো অনেক রাজধানীবাসীরই এখন ধুলায় মাখামাখি অবস্থা। ঢাকার বায়ুদূষণে ধুলার অবদান প্রায় ৭৭ শতাংশ বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ২০০৩ সালে এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম। সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে বায়ুদূষণে ধুলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গাড়ি ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া। বর্তমানে বাতাসে ধুলা আগের চেয়ে পরিমাণে বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আগে এত মেগা প্রজেক্ট (বৃহৎ প্রকল্প) ও গাড়ি ছিল না। পাশাপাশি ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাশয় ভরাট হওয়ায় ধুলার নতুন উৎস জন্মেছে। ’
এদিকে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষে। রাত ১০টা ৭ মিনিটেও ঢাকার অবস্থান একই ছিল। তবে সারা দিন এ অবস্থানে কিছুটা হেরফের হয়। বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘আইকিউ এয়ার’ থেকে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ
সিদ্ধান্তহীনতায় অব্যবহৃত থাকছে ভোলার গ্যাস
১২ নভেম্বর, ২০২১, বণিক বার্তা
ভোলায় গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার হয় ১৯৯৫ সালে। এরপর সময় পেরিয়েছে আড়াই দশকেরও বেশি। এখনো এখান থেকে উত্তোলিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা যায়নি। স্থানীয় পর্যায়েও এখানকার বিপুল পরিমাণ মজুদের সদ্ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দেশে চলমান জ্বালানি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এখন বড় এ মজুদ অব্যবহৃত থেকে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
মূলত সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ভোলার গ্যাসের মজুদ কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ জ্বালানি-সংশ্লিষ্টদের। তাদের ভাষ্যমতে, ভোলার গ্যাস কাজে লাগানো সম্ভব হলে দেশে চলমান জ্বালানি সংকট অনেকটাই প্রশমন করা সম্ভব হতো।
দ্বীপ জেলা ভোলায় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে তা কাজে লাগাতে নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। পাইপলাইন নির্মাণের মাধ্যমে খুলনা ও বরিশালের সঙ্গে ভোলার গ্যাস সংযোগ দেয়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছরেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। অন্যদিকে মজুদ ফুরিয়ে আসছে অন্যান্য স্থানে আবিষ্কৃত গ্যাসেরও। এ অবস্থায় পাইপলাইনের বিকল্প হিসেবে ভোলার গ্যাস এলএনজিতে (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) রূপান্তর করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে জ্বালানি বিভাগ।
রাষ্ট্রায়ত্ত কনডেনসেট রিফাইনারি সরকারি সিদ্ধান্তেই বেকার!
০৭ ডিসেম্বর ২১, সমকাল
দীর্ঘ ছয় মাস ধরে ‘বেকার’ হয়ে রয়েছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ন্যাচারাল গ্যাস কনডেনসেট প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট। রহস্যজনক কারণে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে কনডেনসেট ইআরএলে ন্যাচারাল কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। ইআরএলে কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হলেও বেসরকারি দুটি রিফাইনারিতে সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, একটি গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে ইআরএলে ন্যাচারাল কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। এতে মানসম্মত তেল পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া ন্যাচারাল কনডেনসেট থেকে অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের মতো মূল্যবান জ্বালানি তেল পাওয়া যায়। ইআরএল প্লান্টে ন্যাচারাল কনডেনসেট পরিশোধনের ফলে উন্নতমানের জ্বালানি তেল মেলে। আবার পরিশোধন খাতে বাড়তি আয়ও আসে। এখন সেটাও বন্ধ রয়েছে।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমান সমকালকে বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের মূল কাজ হচ্ছে ক্রুড অয়েল (পরিশোধিত তেল) পরিশোধন করা। তবে একটা সময় আমরা বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে ন্যাচারাল কনডেনসেট পরিশোধনের মাধ্যমে ফিনিশ প্রোডাক্ট হিসেবে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে আসছিলাম। এ জন্য ইআরএলের একটি প্লান্টকে মডিফায়েড করে কনডেনসেট উৎপাদনযোগ্য করে তোলা হয়। প্রায় ছয় মাস ধরে কনডেনসেট না পাওয়ায় প্লান্টটি বন্ধ রয়েছে। কনডেনসেট পেতে আমরা সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি।
বিপিসি ও ইআরএলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইআরএলে কনডেনসেট পরিশোধনের ফলে যে মানের তেল পাওয়া যায় বেসরকারি পরিশোধনাগারে সে মানের তেল পাওয়া যায় না। ইআরএলে কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে ক্রেতাদের উন্নতমানের তেল পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় আত্মঘাতী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দেশে বেসরকারি পর্যায়ে ১৩টি ন্যাচারাল গ্যাস কনডেনসেট প্লান্ট রয়েছে। এর মধ্যে গুণগতমানের তেল উৎপাদন করতে না পারায় সরকার ১১টি প্লান্টে কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। কেবল পেট্রোম্যাক্স ও সুপার পেট্রো কেমিক্যালসকে কনডেনসেট সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সিলেট গ্যাসক্ষেত্রে একটি ছোটখাটো প্লান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তে তাতেও অবশ্য অল্প পরিমাণে কনডেনসেট সরবরাহ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, শুরুতে আরএলকে মাসে ৫ হাজার টন (৪৩ হাজার ৬৭৬ ব্যারেল) করে কনডেনসেট বরাদ্দ ছিল। এ হিসেবে দৈনিক বরাদ্দ ছিল ১৪৫৫ ব্যারেল। পরে তা কমতে থাকে। বিপরীতে বেসরকারি প্লান্টে বরাদ্দ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মাসিক বরাদ্দ মাত্র ১৫ হাজার ব্যারেলে নেমে আসে। গত ২৫ এপ্রিল থেকে তা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিপরীতে বেসরকারি দুটি প্লান্টে সক্ষমতার চেয়েও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
এক বছরে আইপিপিকে ২৮ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে বিপিডিবি
১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, বণিক বার্তা
নিজস্ব উৎপাদনের পাশাপাশি ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারসহ (আইপিপি) বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতি বছর বিদ্যুৎ ক্রয় করে থাকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এ ক্রয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে আইপিপির ওপরেই বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ খাতের একক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ গত অর্থবছরেও (২০২০-২১) আইপিপিগুলোকে ২৮ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি অর্থ পরিশোধ করেছে বিপিডিবি, যা বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ সংস্থাটির মোট ব্যয়ের ৫৬ শতাংশ। বিদ্যুৎ ক্রয় ও ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে আইপিপিগুলোকে এ অর্থ পরিশোধ করেছে বিপিডিবি।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সক্ষমতার বিচারে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারি খাতের অবদান থাকার কথা বেশি। যদিও এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে। বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ বিদ্যুৎ বিভাগের সবচেয়ে বেশি অর্থ চলে যাচ্ছে আইপিপি খাতে। বিভিন্ন উৎসের মধ্যে আইপিপি থেকে সংগৃহীত বিদ্যুতের দামই সবচেয়ে বেশি। এতে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় ও ভর্তুকি—দুটোই বাড়ছে। তার পরও আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ ব্যয় বেশ ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে চলেছে।
বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সংস্থাটি বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ ৪৯ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এর মধ্যে আইপিপি থেকে কেনা হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ ব্যয়কৃত অর্থের ৫৬ শতাংশেরও বেশি ব্যয় হয়েছে আইপিপিগুলোর পেছনে। আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) এর পরিমাণ ছিল অর্ধেকেরও কম। ওই সময় আইপিপি থেকে বিপিডিবি বিদ্যুৎ কিনেছিল ১৭ হাজার ৫১৯ কোটি টাকার।
এ সময় আইপিপি থেকে বিদ্যুতের গড় ক্রয়মূল্যও বেড়েছে। গত অর্থবছরে বিপিডিপির নিজস্ব উৎপাদনকৃত প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ছিল ৪ টাকা ৪৬ পয়সা। আইপিপি থেকে কেনা বিদ্যুতের কিলোওয়াটপ্রতি দাম ছিল ৮ টাকা ২ পয়সা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৭ টাকা করে। সে হিসেবে সময় আইপিপির সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গড় দাম বেড়েছে কিলোওয়াটে ১ টাকা ২ পয়সা করে।
বঙ্গোপসাগরে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের সন্ধান
০৬ জানুয়ারি ২২, সমকাল
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় মিথেন গ্যাসের (গ্যাস হাইড্রেট) সন্ধান পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, গ্যাসপ্রাপ্তির পাশাপাশি জেনেটিক সম্পদের গবেষণায় বঙ্গোপসাগরে বিপুল বাণিজ্যের সম্ভাবনা থাকা ২২০ প্রজাতির শৈবাল ও ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া গেছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (সমুদ্রসীমা অনু বিভাগ) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ খুরশেদ আলম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গবেষণায় বঙ্গোপসাগরে গ্যাস হাইড্রেট পাওয়া গেছে। এটি মূলত উচ্চচাপ ও নিম্ন তাপমাত্রায় গঠিত জমাট বরফ আকৃতির এক ধরনের কঠিন পদার্থ। এগুলো স্তূপ আকারে থাকা বালুর ছিদ্রের ভেতরে ছড়ানো স্ম্ফটিক আকারে কিংবা কাদার তলানিতে ক্ষুদ্র পিণ্ড, শিট বা রেখা আকারে থাকে। এই গ্যাস হাইড্রেট থেকে মিথেন গ্যাস পাওয়া সম্ভব। গবেষণায় দেখা যায়, মহীসোপানের প্রান্তসীমায় ৩০০ মিটারের বেশি গভীর সমুদ্রের তলদেশে গ্যাস হাইড্রেট পানি ও মাটির চাপে মিথেন বা স্ম্ফটিক রূপে পাওয়া যায়। সাধারণত এই গ্যাস হাইড্রেট ৫০০ মিটার গভীরতায় স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। স্থিতিশীল গ্যাস হাইড্রেটসমৃদ্ধ এ অঞ্চল সমুদ্রের তলদেশ থেকে নিচে প্রায় ১০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, গবেষণায় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার ভেতরে ২২০ প্রজাতির শৈবাল (সি উইড), ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস, পাঁচ প্রজাতির লবস্টার এবং ছয় প্রজাতির কাঁকড়া চিহ্নিত হয়েছে। গবেষণায় নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু সমুদ্র শৈবাল ব্যবহারের মাধ্যমে পাঁচটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
গ্যাস-বিদ্যুতে ভুল নীতির বোঝা
২০ জানুয়ারি ২২, সমকাল
ডিজেল ও কেরোসিনের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে বড় আঘাত হানে। এর মধ্যেই আবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের পরামর্শে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করেছে। কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) প্রস্তাব জমাও দিয়েছে।
বলা হচ্ছে, ‘ভর্তুকির চাপ’ সামলাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের ভুল নীতি আর সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। জনগণকে সেই ভর্তুকির বোঝা টানতে হচ্ছে বছরের পর বছর।
গ্যাস খাতের পরিকল্পনায় অন্তত তিনটি বড় ভুলের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথমত, আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুপাতে কোনো দেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি না করে স্পট মার্কেট থেকে বেশি বেশি গ্যাস কেনা। দ্বিতীয়ত, দেশে গ্যাস অনুসন্ধান প্রায় বন্ধ রাখা এবং তৃতীয়ত, ব্যবসা একক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে চলতে দেওয়া।
বিদ্যুতের ক্ষেত্রে অন্তত দুটি ভুল নীতির কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা- প্রথমত, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি উৎপাদন সামর্থ্য দেখিয়ে বসে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে খরচ (ক্যাপাসিটি চার্জ) দেওয়া এবং অপচয়ের বিপুল সুযোগ তৈরি করা ও জিইয়ে রাখা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং নীতিনির্ধারকদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ব্যয় বাড়ছে। এতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে রাষ্ট্রের।
যদিও গ্যাস ও বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই লাভজনক। তারা প্রতিবছর সরকারি কোষাগারে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা দিচ্ছে। উদ্বৃত্ত অর্থ, ট্যাক্স-ভ্যাট ও বিভিন্ন ফি হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাত থেকে আয় করেছে সরকার। সরকারি কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশও দিয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাসও বাড়ছে প্রতিবছর।
খাত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দূর না করে, বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা না নিয়ে দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ মূলত সরকারের ব্যর্থতার দায় জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়ার নামান্তর। তিন মাস আগে ডিজেলের দাম বেড়েছে। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে। পরিবহন, কৃষি, শিল্প থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবনের প্রতিটি খাতের ব্যয় বাড়বে।
পররাষ্ট্র বিষয়ক
সীমান্তে পড়ে আছে দুই বাংলাদেশির লাশ
০৪ নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় ভারত সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের পতাকা বৈঠক অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।
তবে এ বিষয়ে ডোনা সীমান্ত এলাকায় অবস্থানরত ১৯ বিজিবির অধিনায়কসহ দায়িত্বশীল কেউ সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু বলছেন না। লাশ দুটি বর্তমানে সীমান্তের ১৩৩১ নম্বর মেইন পিলারের পাশে একটি নালার পাশে পড়ে রয়েছে।
বেনজীর, র্যাবের ডিজিসহ ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
১০ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রয়েছেন। তিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। বেনজীর আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞার আওতায়ও পড়েছেন তিনি।
এ ছাড়া র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ততার জন্য এ দুজনের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ বিএনপি
১১ ডিসেম্বর ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের একটি বক্তব্যের বিষয়ে দলীয় অবস্থান জানিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশ সরকারকে নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে ‘ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত’ হয়েছে দলটি।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির অবস্থান’ শীর্ষক শিরোনামে পাঠানো বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “বাংলাদেশে নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রদূত কর্তৃক সম্প্রতি সামাজিক গণমাধ্যমে প্রদত্ত ভিডিও বক্তব্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির গোচরীভূত হয়েছে। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ সরকার সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ও মন্তব্যে গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর মতো আমরাও ক্ষুব্ধ এবং বিস্মিত।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের প্রাণ আর ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতার মূল চেতনা হল গণতন্ত্র, সাম্য, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার। জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন ক্ষমতাসীন গণবিরোধী এই অবৈধ সরকার গোটা দেশবাসীকে এই সকল অধিকারগুলো থেকে লাগাতারভাবে যখন বঞ্চিত করে চলছে, বাংলাদেশের জনগণ যখন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারে সোচ্চার, বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মহল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো যখন লাগাতারভাবে এই সরকারকে হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়ে চলছে, ঠিক তখনই গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পক্ষে দেওয়া এই বাস্তবতা বিবর্জিত বক্তব্য দেশের মানুষকে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও আহত করেছে।’
অভিজিৎ হত্যাকারীদের তথ্য চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা
২০ ডিসেম্বর ২০, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা
ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের তথ্য চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি সার্ভিসের রিওয়ার্ডস ফর জাস্টিস প্রোগ্রাম (আরএফজে) আজ সোমবার এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রায় ৪৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশকে দেওয়া সামরিক অনুদান ব্যয়ের তথ্য চায় যুক্তরাষ্ট্র
২৩ ডিসেম্বর ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন
যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর সামরিক অনুদান হিসেবে বাংলাদেশকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে থাকে। কিন্তু এই অর্থ কোন বাহিনী পায় এবং কীভাবে ব্যয় হয়, সে সম্পর্কে তাদেরকে কোনও তথ্য দেওয়া হয় না। এখন যুক্তরাষ্ট্র জানতে চাচ্ছে— তাদের দেওয়া অনুদানের অর্থ কোন বাহিনী পাচ্ছে এবং তারা কীভাবে ব্যয় করছে। এ বিষয়ে একটি চুক্তি সইও করতে চায় মার্কিন সরকার। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ওই দেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।.. ..
কেন এই চুক্তি
যুক্তরাষ্ট্রে ‘লিহে’ (Leahy) নামে একটি পুরনো আইন আছে। এর মাধ্যমে অন্য একটি দেশের কোনও নিরাপত্তা সংস্থা বা বাহিনী যদি নির্যাতন, আইনবহির্ভূত হত্যা, গুম ও ধর্ষণজনিত কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে ওই সংস্থাকে কোনও অনুদান দিতে পারে না মার্কিন সরকার।
সম্প্রতি ওই আইনে একটি সংশোধনী আনা হয়েছে এবং অনুদানপ্রাপ্ত দেশগুলোর কোন সংস্থা অনুদানের অর্থ পাচ্ছে, সেটি জানার জন্য চুক্তি করার বিষয়ে একটি ধারা সংযোজিত হয়েছে। এর ফলে মার্কিন সামরিক অনুদানপ্রাপ্ত দেশগুলোর সঙ্গে এই চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি।
এক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে— এমন কোনও সংস্থা বা বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের ওই অনুদান পাবে না।
বাংলাদেশ কী সহযোগিতা পায়
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৪০ কোটি (প্রায় ৭.৫ কোটি ডলার) টাকা অনুদান পেয়েছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে রয়েছে ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং এবং আন্তর্জাতিক মিলিটারি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। ওই ৬৪০ কোটি টাকার একটি বড় অংশ বঙ্গোপসাগরে মার্কিনিদের যে উদ্যোগ রয়েছে, সেটি শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি ‘হ্যামিলটন কাটারস’ নৌজাহাজ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে থাকে এবং বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ৫০টি ‘মাল্টি রোল আর্মাড পারসোনেল ক্যারিয়ার’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৫ থেকে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা (সাড়ে চার কোটি ডলার) ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি ২০১২ সালে ১৮ কোটি ডলার ব্যয়ে চারটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ।
১১ মাসে ভারতীয় সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশি নিহত
২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন
চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলি ও নির্যাতনে ১৫ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জনকে গুলি ও একজনকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১১ মাসে সবচেয়ে বেশি নিহত ও আহতের ঘটনা ঘটেছে রংপুর বিভাগে। বিভাগটিতে বিএসএফের গুলিতে ৮ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ৮ জন।
একই সময়ে সিলেট বিভাগে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩ জন। খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মোট ২ জন নিহত হয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগে গুলি ও বিএসএফের শারীরিক নির্যাতনে ২ জন নিহত হয়েছেন।
আসকের গত ৭ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালে ভারতীয় সীমান্তে সর্বোচ্চ ৪৮ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৩ বাংলাদেশি ভারতীয় সীমান্তে নিহত হয়েছেন।
সব মিলিয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত মোট নিহত হয়েছেন ২২১ জন। আর এ সময়ের মধ্যে আহত হয়েছেন ২৪৪ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার সমাধান চায় র্যাব
০২ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমস্যার সমাধান চায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব বলছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত ছিল। তারা চায় সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বহাল থাকুক।
প্রতিষ্ঠান হিসেবে গোটা বাহিনী, বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালকসহ সাতজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রায় দুই সপ্তাহ পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন। তাঁরা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও রাজস্ব দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাহিনীর ভেতর অস্বস্তি আছে। এই নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা নিয়ে যে যা–ই বলুক, র্যাব চায় সরকার এই অচলাবস্থার একটা সমাধান খুঁজে বের করুক। একটি প্রশিক্ষণ চালুর ব্যাপারে র্যাব যুক্তরাষ্ট্রকে শিগগিরই চিঠি দেবে বলেও জানা গেছে।
এদিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে লেখা চিঠিতে আব্দুল মোমেন এ অনুরোধ জানান বলে আজ রোববার বলা হয়েছে।
সরকারের পক্ষে লবিস্ট কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে
১০ জানুয়ারি ২০২২, প্রথম আলো
মার্কিন প্রশাসন, নীতিনির্ধারক, মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে একাধিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছে। এদের মধ্যে অন্তত আট বছর ধরে কাজ করছে ওয়াশিংটনভিত্তিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআর। প্রতিষ্ঠানটি গত বছরেও র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগসহ নানা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাখ্যা প্রচার করেছে। গত ডিসেম্বরে মার্কিন বিচার বিভাগে জমা হওয়া নথি পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর সরকার ও সরকারি দলের কেউ কেউ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনেও সরকারবিরোধীদের লবিস্ট কাজ করেছে, এমন একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে।
সর্বশেষ ৫ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার পেছনে একটি ‘পিআর এজেন্সি’ কাজ করেছে বলে মনে করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিটি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও ‘লবিস্ট’ নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করে। কিন্তু মার্কিন বিচার দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে একাধিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক চুক্তির আওতায় বিভিন্ন দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষায় প্রচার ও সমর্থন আদায়ের কাজটি করে থাকে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ দেশটির রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারক মহলে প্রতিষ্ঠানগুলো যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে।
মার্কিন আইন ফরেন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের (ফারা) আওতায় লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ছয় মাসে তাদের কার্যক্রমের বিবরণ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দপ্তরে জমা দিতে হয়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা কোনো চাঁদা দিয়ে থাকলে তার বিবরণ জমা দিতে হয়। এসব বিবরণ বিচার দপ্তর নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকে।
সরকারের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান
বিজিআর গত বছর বাংলাদেশের জন্য মূলত মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ও গণমাধ্যমের কাছে সরকারের ব্যাখ্যা তুলে ধরার কাজটি করেছে। বিজিআরের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে দেখা যায়, গত বছর তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ত্রৈমাসিক ৮০ হাজার ডলার করে পেয়েছে, বছরের যার পরিমাণ ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার (আনুমানিক ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা)।
এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে তিন লাখ ডলার ফি দেওয়ার শর্তে নিয়োগ করেছে বলে খবর বেরিয়েছিল (কালের কণ্ঠ, ২৮ জুলাই ২০১৯)। মূলত বিজিআর ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের জন্য কাজ করে আসছে। (লবিংয়ে কেউ কম যান না, প্রথম আলো, ২৭ নভেম্বর ২০১৮)।
বিজিআর ছাড়াও গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডল্যান্ডার গ্রুপের সঙ্গে এক মাসের জন্য একটি চুক্তি করেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম। এ চুক্তির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক আয়োজন ও সফর বিনিময়। এক মাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার পেয়েছে ফ্রিডল্যান্ডার। এ ছাড়া কোনওয়াগো কনসালটিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ২৬ জুলাই থেকে ২৬ আগস্ট—এই এক মাসের জন্য আরেকটি চুক্তি করে। ৩৫ হাজার ডলার অগ্রিম দেওয়ার শর্তে চুক্তিটি হয়, যাতে সই করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কোনওয়াগোর সেবার মধ্যে সুনির্দিষ্ট করা ছিল মার্কিন সিনেট এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করা। উল্লেখ্য, অলাভজনক ও অরাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিইআইর বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান।
বিবিধ
এক গাছে পাঁচবার ধান!
২০ নভেম্বর ২১, সমকাল
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রাম। কৃষিনির্ভর এ গ্রামের দিগন্তজোড়া মাঠে এখন ধানক্ষেত। শিশির ভেজা বাতাসে দুলছে সোনালি ফসল। এই গ্রামেরই দুই বিঘা জমি ঘিরে টান টান উত্তেজনা। কারণ এই জমির ধান সাধারণ নয়, এই ধান ভিন্ন প্রকৃতির। বিস্ময়জাগানো পাকা এ ফসল কাটা হবে আর কয়েকদিন পর। তখন নিভৃত কানিহাটি গ্রাম থেকে সৃষ্টি হবে নতুন এক ইতিহাস। একবার রোপণে এ ধানের গাছে বছরজুড়ে পাঁচবার ফলন এসেছে।
ধানের এ নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ধান গবেষক ও জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী। তিনি সমকালকে জানান, বোরো হিসেবে বছরের প্রথমে লাগানো এ ধান ১১০ দিন পর পেকেছে। ওই গাছেই পর্যায়ক্রমে ৪৫ দিন পরপর একবার বোরো, দু’বার আউশ এবং দু’বার আমন ধান পেকেছে।
এক গাছে পাঁচ ফলনের এমন ঘটনা পৃথিবীতে বিরল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আবেদ চৌধুরী আছেন তার উদ্ভাবন আরও এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায়। তিনি ওই গাছেই ছয়বার ফসল তোলার গবেষণা চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি নতুন জাতের ধানটি সারাদেশেই চাষাবাদ সম্ভব কিনা তা যাচাই করবেন। এজন্য বিভিন্ন জেলায় এ ধানের পরীক্ষামূলক চাষ করবেন।
আবেদ চৌধুরীর ভাষ্য, কম সময়ে পাকা এই ধানের উৎপাদন বেশি, খরচও কম। তবে প্রথম ফলনের চেয়ে পরের ফলনগুলোতে উৎপাদন কিছুটা কম। কিন্তু পাঁচবারের ফলন মিলিয়ে উৎপাদন প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।.. ..