ফেসবুক, মেটাভার্স ও নজরদারি পুঁজিবাদের তাড়না

ফেসবুক, মেটাভার্স ও নজরদারি পুঁজিবাদের তাড়না

কল্লোল মোস্তফা

সম্প্রতি মার্ক জুকারবার্গ তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নাম ‘ফেসবুক’ থেকে ‘মেটা’য় রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় তিনি তার কোম্পানির ‘নতুন অধ্যায়’ শুরুর কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে খোদ ইন্টারনেটেরও এক ‘নতুন অধ্যায়’ সূচনার ঘোষণা দেন। জুকারবার্গের মতে, আজকের ‘মোবাইল ইন্টারনেট’ রূপান্তরিত হয়ে ‘এমবডিড’ বা ‘শরীরী ইন্টারনেটে’ পরিণত হবে, মানুষ যে ইন্টারনেটের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকবে না, তা থেকে সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এই জগত বিশ্লেষণ করেই বর্তমান লেখা।

মার্ক জুকারবার্গের বক্তব্য অনুযায়ী, ইন্টারনেটের এই নতুন জগতের নাম হবে মেটাভার্স, যেখানে মানুষ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, অগমেন্টেড রিয়েলিটি ডিভাইসসহ বিভিন্ন যন্ত্রসামগ্রীর সাহায্যে প্রবেশ করে একেবারে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এখন থেকে ফেসবুক বা মেটার প্রধান কাজ হবে এই মেটাভার্সকে বাস্তবায়িত করা এবং ‘মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে, কমিউনিটি গঠন করতে এবং ব্যবসা বাড়ানো’। মেটাভার্সের প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে ‘উপস্থিতির অনুভব’—যেন মনে হয় কোনো ব্যক্তির ঠিক পাশেই আছি বা কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় সরাসরি উপস্থিত আছি। মানুষ যা কিছু কল্পনা করতে পারে, তার প্রায় সবকিছুই মেটাভার্সে করা সম্ভব হবে—বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়া, কাজ, খেলা, শিক্ষা, কেনাকাটা, সৃষ্টি—সেই সঙ্গে আরও অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন, যা আজকের দিনে কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব বলে আমরা ভাবতেই পারি না।

জুকারবার্গ তার ‘কানেক্ট ২০২১’ বক্তৃতায় মেটাভার্স ধারণাটির ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে: মেটাভার্সের মাধ্যমে আমি যখন আমার পিতামাতার কাছে আমার শিশুদের কোনো ভিডিও পাঠাব, তখন তাদের মনে হবে তারা যেন ওই মুহূর্তে আমাদের সঙ্গেই আছেন, কোনো ছোট জানালা দিয়ে কেবল উঁকি দিচ্ছেন না। বন্ধুদের সঙ্গে গেম খেলার সময় মনে হবে সেই গেমের জগতের ভেতরে আছি, কম্পিউটারের মধ্যে নয়। অফিসের মিটিং করার সময় মনে হবে, সবাই মিলে একই মিটিং রুমে আছি। একে অপরের চোখে চোখ রেখে কথা বলছি। সবাই একই জায়গা ভাগাভাগি করে আছি। মনে হবে না যে একটা স্ক্রিনের মধ্যে কয়েকটা মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। শরীরী ইন্টারনেট বলতে আমরা এটাই বোঝাতে চাচ্ছি। স্ক্রিন বা পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার বদলে সরাসরি অভিজ্ঞতার ভেতর প্রবেশ করা। প্রোফাইল পিকচারের জায়গা দখল করবে অ্যাভাটার; মানুষের স্থিরচিত্রের বদলে এগুলো হবে মানুষ, মানুষের অভিব্যক্তি কিংবা অঙ্গভঙ্গির ত্রিমাত্রিক প্রতিনিধি। আর এর মাধ্যমে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া হবে আরও অনেক অর্থময়, যা আজকের দিনের ইন্টারেনেটের মাধ্যমে ভাবাই যায় না। মানুষ তার অ্যাভাটারের জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য কিনে পরিধান করতে পারবে। মেটাভার্সে বিভিন্ন সৃজনশীল ব্যক্তি বস্তুগত ও ডিজিটাল উভয় ধরনের পণ্য, সেবা ও অভিজ্ঞতা বিক্রয় করতে পারবে।

মেটাভার্সের মাধ্যমে আমি যখন আমার পিতামাতার কাছে আমার শিশুদের কোনো ভিডিও পাঠাব, তখন তাদের মনে হবে তারা যেন ওই মুহূর্তে আমাদের সঙ্গেই আছেন, কোনো ছোট জানালা দিয়ে কেবল উঁকি দিচ্ছেন না। বন্ধুদের সঙ্গে গেম খেলার সময় মনে হবে সেই গেমের জগতের ভেতরে আছি, কম্পিউটারের মধ্যে নয়। অফিসের মিটিং করার সময় মনে হবে, সবাই মিলে একই মিটিং রুমে আছি। একে অপরের চোখে চোখ রেখে কথা বলছি। সবাই একই জায়গা ভাগাভাগি করে আছি।

এখন এই কথাগুলো শুনে যদি মনে হয় সরাসরি কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি থেকে তুলে আনা হয়েছে, তাহলে সেটা ভুল হবে না। কারণ, ঘটনা ঠিক তা-ই। মেটাভার্স কথাটা প্রথম ব্যবহার করেন নিল স্টেফানসন তার ১৯৯২ সালে প্রকাশিত ডিসটোপিয়ান উপন্যাস ‘স্নো ক্র্যাশ’-এ। এই উপন্যাসের নায়ক ‘হিরো প্রোটাগনিস্ট’ মূলত একজন হ্যাকার হলেও তিনি মাফিয়া গোষ্ঠীর হয়ে পিৎজা সরবরাহের কাজ করেন এবং বাস্তবতা থেকে প্রায়ই ‘মেটাভার্সে’ ডুব দিয়ে থাকেন। মার্ক জুকারবার্গের মেটাভার্সের সঙ্গে বোঝাপড়ার আগে নিল স্টেফানসনের মেটাভার্স থেকে একটু ঘুরে আসা যাক।

মেটাভার্স কথাটা প্রথম ব্যবহার করেন নিল স্টেফানসন তার ১৯৯২ সালে প্রকাশিত ডিসটোপিয়ান উপন্যাস ‘স্নো ক্র্যাশ’-এ। এই উপন্যাসের নায়ক ‘হিরো প্রোটাগনিস্ট’ মূলত একজন হ্যাকার হলেও তিনি মাফিয়া গোষ্ঠীর হয়ে পিৎজা সরবরাহের কাজ করেন এবং বাস্তবতা থেকে প্রায়ই ‘মেটাভার্সে’ ডুব দিয়ে থাকেন।

নিল স্টেফানসনের মেটাভার্স

নিল স্টেফানসনের মেটাভার্স একটি কম্পিউটারসৃষ্ট কল্পিত জগৎ, যেখানে ব্যবহারকারীরা বিশেষ ধরনের চশমা, ইয়ারফোনসহ বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসের সাহায্যে প্রবেশ করেন। মেটাভার্সে সবসময়ই রাত থাকে আর রাস্তাঘাট থাকে ঝলমলে আলোকোজ্জ্বল, যেন অর্থনীতি ও পদার্থবিদ্যার সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত এক ‘লাস ভেগাস’। মেটাভার্সের রাস্তায় বহু মানুষ দেখা যায়; কিন্তু তারা আসল মানুষ নয়, নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে কম্পিউটারে আঁকা ‘চলমান চিত্র’। এই মানুষগুলো আসলে ‘অ্যাভাটার’ নামের কতগুলো সফটওয়্যার। অন্যভাবে বললে এগুলো হলো কতগুলো ‘অডিওভিজুয়াল শরীর’, যা ব্যবহার করে মেটাভার্সে একজন আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

মেটাভার্সের রাস্তায় বহু মানুষ দেখা যায়; কিন্তু তারা আসল মানুষ নয়, নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে কম্পিউটারে আঁকা ‘চলমান চিত্র’। এই মানুষগুলো আসলে ‘অ্যাভাটার’ নামের কতগুলো সফটওয়্যার। অন্যভাবে বললে এগুলো হলো কতগুলো ‘অডিওভিজুয়াল শরীর’

আপনি দেখতে কুৎসিত হলেও আপনার অ্যাভাটার হতে পারে সুন্দর। আপনি হয়তো মাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন; কিন্তু আপনার অ্যাভাটার সেজেগুজে সুসজ্জিত থাকতে পারে। মেটাভার্সে আপনি গরিলা কিংবা ড্রাগন, যেকোনো কিছুর রূপ ধারণ করতে পারেন, যদি আপনার সফটওয়্যার প্রোগ্রাম লেখার দক্ষতা থাকে কিংবা আপনার কাছে বিভিন্ন করপোরেশনের তৈরি অ্যাভাটার ক্রয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ডিজিটাল মুদ্রা থাকে।

বাস্তবের যেকোনো জায়গার মতো মেটাভার্সেও রাস্তাঘাট তৈরি করতে হয়। ডেভেলপাররা প্রধান রাস্তার সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ফিডার রোড তৈরি করতে পারেন। তারা ভবন, পার্ক, সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই, এমন বহু কিছু তৈরি করতে পারেন; যেমন, মাথার ওপরে ভাসতে থাকা আলোকসজ্জা, এমন পাড়া-মহল্লা যেখানে স্থানকালের নিয়ম প্রযোজ্য নয় এবং যেখানে মানুষ একজন আরেকজনকে শিকার করে হত্যা করতে পারে। পার্থক্য হলো, এই রাস্তা বা স্থানগুলোকে বাস্তবে তৈরি করা হয় না, স্রেফ কম্পিউটার কোডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু গ্রাফিকস প্রটোকল মেনে তৈরি করা হয়। এগুলো বিভিন্ন সফটওয়্যারেরই অংশ, যার সঙ্গে মানুষ ‘বিশ্বজোড়া ফাইবার অপটিকস নেটওয়ার্কের’ মাধ্যমে সংযুক্ত হতে পারে। তবে এই জিনিসগুলো স্থাপন করার জন্য ডেভেলপারদের মেটাভার্সের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ‘গ্লোবাল মাল্টিমিডিয়া প্রটোকল গ্রুপ’-এর অনুমোদন নিতে হয়, রাস্তায় জায়গা ক্রয় করতে হয়, পারমিট সংগ্রহ করতে হয়, ইন্সপেক্টরদের ঘুষ দিতে হয় ইত্যাদি। সংগৃহীত অর্থ ‘গ্লোবাল মাল্টিমিডিয়া প্রটোকল গ্রুপ’-এর ট্রাস্ট ফান্ডে জমা হয়, যে অর্থ আবার মেটাভার্সের রাস্তাঘাটের অস্তিত্ব যেসব যন্ত্রসামগ্রীর ওপর নির্ভরশীল, সেগুলো তৈরি ও কেনার কাজে ব্যয় করা হয়।

মেটাভার্সের যেকোনো জায়গায় ইচ্ছেমতো হাজির হওয়া যায় না। শুধু মেটাভার্সে নিজস্ব বাড়ি থাকলেই সেখানে যখন খুশি হাজির হওয়া এবং যখন খুশি সেখান থেকে বাস্তবতায় ফিরে যাওয়া যায়। তবে নিজের বাড়ি না-থাকলেও মেটাভার্সের বিভিন্ন পোর্টে হাজির হওয়া সম্ভব। মেটাভার্সের পোর্টগুলো অনেকটা বাস্তব দুনিয়ার এয়ারপোর্টের মতো কাজ করে। পোর্টে উপস্থিত হওয়ার পর সেখান থেকে বিভিন্ন রাস্তা ধরে মেটাভার্সের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যায়। আর আপনার যদি মেটাভার্সের রিয়েল এস্টেট কেনার মতো ডিজিটাল মুদ্রা থাকে, যদি ডিজিটাল স্থাপনা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা কিংবা আর্থিক সামর্থ্য থাকে, তাহলে মেটাভার্সে আপনি আপনার নিজস্ব বাড়ি, অফিস, দোকান, ক্লাবসহ নানা কিছু তৈরি করতে পারবেন। আর লোকজন যখন আপনার নিজস্ব স্থাপনায় ঘুরতে আসবে, তখন বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেসব মানুষ সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন, তাদের কথা শুনতে ও রেকর্ড করতে পারবেন এবং তৃতীয় পক্ষের কাছে অর্থের বিনিময়ে সেসব তথ্য বিক্রিও করতে পারবেন।

আপনার যদি মেটাভার্সের রিয়েল এস্টেট কেনার মতো ডিজিটাল মুদ্রা থাকে, যদি ডিজিটাল স্থাপনা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা কিংবা আর্থিক সামর্থ্য থাকে, তাহলে মেটাভার্সে আপনি আপনার নিজস্ব বাড়ি, অফিস, দোকান, ক্লাবসহ নানা কিছু তৈরি করতে পারবেন। আর লোকজন যখন আপনার নিজস্ব স্থাপনায় ঘুরতে আসবে, তখন বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেসব মানুষ সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন, তাদের কথা শুনতে ও রেকর্ড করতে পারবেন এবং তৃতীয় পক্ষের কাছে অর্থের বিনিময়ে সেসব তথ্য বিক্রিও করতে পারবেন।

‘স্নো ক্র্যাশ’ উপন্যাসটির পিৎজা সরবরাহকারী নায়ক হিরো প্রোটাগনিস্ট নিজেও একজন হ্যাকার। তিনি বাস্তব জগতে করপোরেট কোম্পানির মালিকানাধীন কোনো এক ‘ফ্র্যাঞ্চাইজ বস্তির’ ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট ঘরে বসবাস করলেও মেটাভার্সে রয়েছে তার বিশাল বাড়ি। চলুন দেখা যাক, হিরো তার মেটাভার্সের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ব্ল্যাক সান’-এ আসা লোকদের তথ্য নিয়ে কী করে:

“হিরো ‘বিগবোর্ড’ শব্দটি উচ্চারণ করলেন। এটা তার নিজের লেখা একটা সফটওয়্যার, যা সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স করপোরেশনের হয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজে লাগে। এটি ব্ল্যাক সান-এর অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বের করে আনে এবং তার মুখের সামনে ম্যাপ আকারে সেখানে কারা কারা আছে এবং কার সঙ্গে কে কী বিষয়ে কথা বলছে, তার একটা সারসংক্ষেপ তুলে ধরে। হিরোর এই ডেটাগুলো দেখার অনুমোদন নেই; কিন্তু হিরো এখানে স্রেফ যোগাযোগ স্থাপন করতে আসা কোনো মামুলি পাবলিক নন। হিরো একজন হ্যাকার। তিনি চাইলেই সিস্টেমের মধ্য থেকে তথ্য বের করে নিতে পারেন।”

অন্য আরেকবার দেখা যায়:

‘তিনি আবারও বিগবোর্ডকে ডেকে আনেন, সেই জাদুর মানচিত্রে নিজের অবস্থান জেনে নিয়ে তার পাশে বসে কথা বলা চিত্রনাট্য রচয়িতার নাম খুঁজে বের করেন। পরবর্তী কোনো সময়ে তিনি চাইলে চিত্রনাট্য রচয়িতা কোন চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করছেন, সেটা খুঁজে বের করতে পারবেন এবং এভাবে বাজুকা প্রেমিক যেই পরিচালকের কথা চিত্রনাট্য রচয়িতা আলোচনা করছিলেন, তার নামও জানতে পারবেন। যেহেতু নিজ কম্পিউটারে বসেই এই কথোপকথন শুনেছেন, তাই তার একটা রেকর্ডিংও তার কাছে রেখে দিয়েছেন। পরে তিনি এটাকে প্রসেস করে বক্তার কণ্ঠ গোপন করে সিআইসির লাইব্রেরিতে আপলোড করে দিতে পারবেন। কাজ খুঁজছেন এমন অনেক চিত্রনাট্যকার তখন অর্থের বিনিময়ে লাইব্রেরি থেকে এই অডিও ডাউনলোড করে শুনতে পারবেন, পরিচালকের রুচি ও পছন্দ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী চিত্রনাট্য লিখে উক্ত পরিচালকের কাছে পাঠাতে পারবেন।’

সম্ভবত মেটাভার্সের এই অন্ধকার দিকটির কারণেই মার্ক জুকারবার্গ চান মেটাভার্স ধারণাটি যে নিল স্টেফানসনের ‘স্নো ক্র্যাশ’ নামক এক ডিসটোপিয়ান উপন্যাস থেকে এসেছে, সেটা যেন আমরা মনে না রাখি! দ্য ভার্জের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল মেটাভার্স ধারণাটির ডিসটোপিয়ান উৎস ও প্রেক্ষিত নিয়ে তার কোনো উদ্বেগ আছে কি না, তখন তিনি বলেন:

‘এটা স্পষ্ট যে, বইটির মধ্যে যে পরিস্থিতির বর্ণনা রয়েছে, তা বেশ নেতিবাচক। কিন্তু আমি মনে করি না, এ রকমটাই হতে হবে। আমি আরও মনে করি, এ ধরনের প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর ভিন্ন অর্থ ও প্রেক্ষিত তৈরি হয়। আমি খুবই অবাক হব, যদি আজ থেকে পাঁচ বছর পরও স্নো ক্র্যাশ উপন্যাস থেকে আসার ব্যাপারটিই কারও কাছে মেটাভার্সের মুখ্য পরিচয় হিসেবে থেকে যায়। মানুষের কাছে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হবে এর বিভিন্ন ব্যবহার ও উপযোগিতা।’

বাস্তবে মেটাভার্সকে মানুষ কী অর্থে মনে রাখবে—জুকারবার্গের দাবিকৃত ‘বিভিন্ন ব্যবহার ও উপযোগিতা’ দিয়ে নাকি নিল স্টেফানসনের স্নো ক্র্যাশ উপন্যাসে বর্ণিত ডিসটোপিয়ান অভিজ্ঞতা দিয়ে, তা বোঝার জন্য চলুন ফেসবুক বা মেটার বর্তমান ব্যাবসায়িক মডেলটি আরেকটু খতিয়ে দেখা যাক।

নজরদারি পুঁজিবাদ ও তার কাঁচামাল আহরণের তাড়না

 ‘নজরদারি পুঁজিবাদ মূলগতভাবেই পরজীবী। কার্ল মার্কস বলেছিলেন, পুঁজিবাদ এমন এক ভ্যাম্পায়ার, যা শ্রম শোষণ করে বাঁচে। নজরদারি পুঁজিবাদ মার্কসের বলা পুঁজিবাদের সেই প্রতিচ্ছবির কথাই মনে করিয়ে দেয়। পার্থক্য হলো, নজরদারি পুঁজিবাদ বাঁচে প্রত্যেক মানুষের প্রত্যেক অভিজ্ঞতা শোষণ করে।’

—সোশানা জুবফ

সোশানা জুবফ তার বই ‘`দ্য এজ অব সার্ভেইলেন্স ক্যাপিটালিজম’-এ দেখিয়েছেন, নজরদারি পুঁজিবাদ মানব অভিজ্ঞতাকে বিনা মূল্যে কাঁচামাল হিসেবে আহরণ করে ‘বিহেভিয়ারাল ডেটা’ বা আচরণ-উপাত্তে পরিণত করে। এসব আচরণ-উপাত্তের কিছু অংশ পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট সেবার মানোন্নয়নে ব্যবহৃত হয়; কিন্তু একটা বড় অংশকেই ‘বিহেভিয়ারাল সারপ্লাস’ বা আচরণ-উদ্বৃত্ত হিসেবে ‘প্রেডিকশন প্রোডাক্ট’ বা ভবিষ্যৎ অনুমানকারী পণ্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়। এসব পণ্যের কাজ হলো ব্যবহারকারীরা কখন কী ধরনের আচরণ করবে, তা অনুমান করা। এসব ভবিষ্যৎ অনুমানকারী পণ্যগুলো পরবর্তী সময়ে বিপুল মুনাফার বিনিময়ে ‘বিহেভিয়ারাল ফিউচার মার্কেট’-এ বিক্রয় করা হয়। আর এই ভবিষ্যৎ অনুমানকারী পণ্য কেনাবেচার বাজারের তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে নজরদারি পুঁজিবাদীদের ওপর আরও বেশি করে আমাদের কণ্ঠ, আমাদের ব্যক্তিত্ব, আবেগ ইত্যাদিকে প্রতিনিয়ত আরও বেশি করে আহরণ করার চাপ তৈরি হয়।

সোশানা জুবফ তার বই ‘`দ্য এজ অব সার্ভেইলেন্স ক্যাপিটালিজম’-এ দেখিয়েছেন, নজরদারি পুঁজিবাদ মানব অভিজ্ঞতাকে বিনা মূল্যে কাঁচামাল হিসেবে আহরণ করে ‘বিহেভিয়ারাল ডেটা’ বা আচরণ-উপাত্তে পরিণত করে। এসব আচরণ-উপাত্তের কিছু অংশ পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট সেবার মানোন্নয়নে ব্যবহৃত হয়; কিন্তু একটা বড় অংশকেই ‘বিহেভিয়ারাল সারপ্লাস’ বা আচরণ-উদ্বৃত্ত হিসেবে ‘প্রেডিকশন প্রোডাক্ট’ বা ভবিষ্যৎ অনুমানকারী পণ্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়।

আচরণ-উদ্বৃত্ত আহরণের এই অসীম ক্ষুধার কারণেই গুগলের মতো করপোরেশন স্রেফ একটি সার্চ ইঞ্জিন থেকে বিকশিত হতে হতে ‘ইন্টারনেট জগতের সবকিছু সরবরাহকারী’ কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। মানুষের বিভিন্ন ধরনের আচরণ-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য গুগলের যেসব পণ্য ও সেবা রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কাজ ও উৎপাদনশীলতার জন্য গুগল ডকস, গুগল শিটস, গুগল স্লাইডস; ই-মেইল (জিমেইল); সময় ব্যবস্থাপনা (গুগল ক্যালেন্ডার); ক্লাউড স্টোরেজ (গুগল ড্রাইভ); ইনস্ট্যান্ট মেসেজ ও ভিডিও চ্যাটের জন্য গুগল ডুও, গুগল চ্যাট ও গুগল মিট; অনুবাদের জন্য গুগল ট্রান্সলেটর; ম্যাপ ও নেভিগেশনের জন্য গুগল ম্যাপ, ওয়েইজ, গুগল আর্থ ও স্ট্রিট ভিউ, পডকাস্টের জন্য গুগল পডকাস্ট; ভিডিও শেয়ারিংয়ের জন্য ইউটিউব; ব্লগ লেখার জন্য ব্লগারডটকম, নোট নেওয়ার জন্য গুগল কিপ ও জ্যামবোর্ড; ফটো শেয়ার ও সম্পাদনার জন্য গুগল ফটোস; মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম (অ্যান্ড্রয়েড), ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার জন্য গুগল ক্রোম ইত্যাদি। এই বিচিত্র ধরনের সেবাগুলো ‘বিনা মূল্যে’ ব্যবহার করতে দেওয়ার বিনিময়ে গুগল বহু ধরনের আচরণ-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে লোকেশন বা অবস্থান, যোগাযোগের ধরন, আচরণের ভঙ্গি বা মনোভাব, আগ্রহ, পছন্দ, আবেগ, কেনাকাটা ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য। গুগলের মতো করপোরেশনগুলোর পণ্য ও সেবা বহু রকমের হতে পারে; কিন্তু উদ্দেশ্য সবসময় একটাই—বিহেভিয়ারাল সারপ্লাস বা আচরণ-উদ্বৃত্ত সংগ্রহ।

সোশানা জুবফ যেমন দেখিয়েছেন, এই ভবিষ্যৎ অনুমানমূলক পণ্যে কেনাবেচার বাজারে সফলতার জন্য নজরদারি পুঁজিবাদীদের প্রতিনিয়ত আচরণ-উদ্বৃত্ত আহরণের নতুন নতুন রাস্তা অনুসন্ধান করতে হয়। যেসব উপায় থেকে সফলতা আসার সম্ভাবনা থাকে, সেগুলোকে আরও বিকশিত করা হয়, প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গুগলের ই-মেইল সেবাদানকারী পণ্য জিমেইল ও স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের কথা বলা যেতে পারে।১০ গুগল যখন স্মার্টফোনের জন্য অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপ করে তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, স্মার্টফোন বিক্রিতে অ্যাপলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা দিতেই বোধহয় এই অপারেটিং সিস্টেমের মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু গুগলের ভেতরের খবর সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা জানতেন আসল উদ্দেশ্য ছিল এই অপারেটিং সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে আরও বেশি করে আচরণ-উদ্বৃত্ত আহরণ। আর এ কারণেই গুগল স্মার্টফোন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে বিনা মূল্যে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারের লাইসেন্স প্রদান করে, যেন এই অপারেটিং সিস্টেম কাজে লাগিয়ে আরও বেশিসংখ্যক ব্যবহারকারীকে গুগল সার্চসহ সব ধরনের গুগল সেবা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা যায়। সোশানা জুবফের ভাষায়: ‘মোবাইলের মাধ্যমে সর্বব্যাপী একটি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেন এর মাধ্যমে উদ্বৃত্ত আহরণের প্রচলিত উপায়গুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা যায় এবং জিও লোকেশন বা মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমের মতো নতুন নতুন উদ্বৃত্ত আহরণের রাস্তা উন্মোচন করা যায়, যা বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে ভীষণ আকর্ষণীয়।’১১ গুগল এসব ‘আচরণ-উদ্বৃত্ত’ বিশ্লেষণ করে আপনি কখন কোন ধরনের পণ্য কিনতে আগ্রহী হতে পারেন, তা অনুমান করতে এবং সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন আপনার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম। এই বিজ্ঞাপন দেখে ব্যবহারকারীরা যে আচরণ করেন, সেই আচরণকেও আবার আচরণ-উদ্বৃত্ত হিসেবে ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ অনুমানের পণ্যকে আরও নিখুঁত করার কাজে ব্যবহার করা হয়।১২

মানুষের প্রত্যেক অভিজ্ঞতার প্রত্যেক দিকনিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা:

নজরদারি পুঁজিবাদের নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন এবং নজরদারিভিত্তিক মুনাফা আহরণে গুগলের সফলতা অর্জনের কারণে আচরণ-উদ্বৃত্ত আহরণের ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার জন্ম হয়। আর এই ক্ষেত্রে গুগলের প্রথম এবং প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ফেসবুক।১৩ যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ফেসবুকের আয়ের প্রায় পুরোটাই আসে বিজ্ঞাপন থেকে। বিজ্ঞাপন থেকে এই আয় আসে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। বিজ্ঞাপনদাতারা সরাসরি কিংবা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী এজেন্সির মাধ্যমে ফেসবুককে বিজ্ঞাপন বাবদ অর্থ প্রদান করে‒বিজ্ঞাপন দেখে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর আচরণের (যেমন ক্লিক) ওপর ভিত্তি করে।১৪

যেহেতু ফেসবুকের বিজ্ঞাপনী আয় নির্ভর করে বিজ্ঞাপন দেখে ইউজার বা ব্যবহারকারীরা কী ধরনের আচরণ করে তার ওপর, তাই ফেসবুক যথেচ্ছভাবে সবাইকে সব বিজ্ঞাপন দেখায় না; ফেসবুক সেসব দলের ব্যক্তিদের কাছেই কোনো নির্দিষ্ট ধরনের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে, যেগুলো দেখে এই গ্রুপের ব্যবহারকারীদের ক্লিক করা বা সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ কারণেই মার্ক জুকারবার্গ নিজেও স্বীকার করেছেন, ফেসবুকের জন্য জরুরি হলো, ‘ব্যবহারকারীদের ইন্টারেস্ট বা আগ্রহ সম্পর্কে জানা।’ ফলে ফেসবুক ব্যবহারকারী কোন ধরনের পেজ পছন্দ করেন, কী কী বিষয়ের ওপর ক্লিক করেন, শেয়ার করেন ইত্যাদির ভিত্তিতে তাদের কতগুলো ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। যেমন, যারা বাগান করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য একটা ক্যাটাগরি এবং তারপর বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে সেই ক্যাটাগরির মানুষের কাছে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য অর্থ আদায় করা হয়। নির্দিষ্ট গ্রুপের মানুষের কাছে নির্দিষ্ট পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়ার চর্চাটি ইন্টারনেটে বহু আগে থেকে থাকলেও অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টার্গেট করা কাজটি আগের চেয়ে অনেক বেশি নিখুঁতভাবে করা সম্ভব।’১৫

প্রতিনিয়ত আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে আরও বেশি নিখুঁত করে টার্গেট করার জন্য ফেসবুকের প্রয়োজন ব্যবহারকারীকে ফেসবুকে যত বেশিক্ষণ সম্ভব ধরে রাখা, যেন ব্যবহারকারী আরও বেশি করে নিজের আবেগ, অনুভূতি, তথ্য ইত্যাদি শেয়ার করেন, যা থেকে তার সম্পর্কে আরও ভালোভাবে অনুমান করা যেতে পারে। এভাবে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ‘বিহেভিয়ারাল সারপ্লাস’ বা আচরণ-উদ্বৃত্ত সংগ্রহের জন্য ফেসবুক সচেতনভাবে নানান উপায় অবলম্বন করে থাকে। জিমি বার্টলেট যেমন তার ‘পিপল ভার্সেস টেক’ পুস্তকে দেখিয়েছেন: ‘যেহেতু [অনুমানের কাজে] সামান্য একটু উন্নতিতে বিপুল পরিমাণ বাড়তি মুনাফা অর্জিত হতে পারে, তাই কোনো কিছুই ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয় না। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীদের ওপর হাজার হাজার পরীক্ষা চালায়—ব্যাকগ্রাউন্ড, রং, ছবি, ফন্ট, শব্দ ইত্যাদি নানাভাবে পরিবর্তন করা হতে থাকে, যেন ব্যবহারকারী আরও বেশি করে ব্যবহার করেন এবং আরও বেশি করে ক্লিক করেন। ফেসবুকের হোমপেজ এ কারণেই এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন লাইক, শেয়ার, বন্ধু, পোস্ট, কার্যকলাপ, নতুন মেসেজ ইত্যাদির সংখ্যা ভালোভাবে দৃশ্যমান থাকে (আর সবসময়ই জরুরি লাল রঙে!)। অটো প্লে, সীমাহীন স্ক্রল করা এবং বিপরীত কালানুক্রমিক টাইমলাইন ইত্যাদি সবকিছুই তৈরি করা হয়েছে আপনার মনোযোগ ধরে রাখার জন্য…। একইভাবে ২০০৯ সালে যখন ‘লাইক’ বাটনটি চালু করা হয়, তখনও সেটা করা হয়েছিল ‘লাইক স্টাডিজ’-এর ওপর ভিত্তি করে (হ্যাঁ, এ ধরনের গবেষণা আসলেই আছে)। লাইক স্টাডিজ থেকে দেখা যায়, কোন বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পছন্দসই হওয়া। ফেসবুকের প্রথম প্রেসিডেন্ট শিন পার্কার সম্প্রতি লাইক বাটনকে ‘সমাজ-অনুমোদিত ফিডব্যাক লুপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার ভাষায়: ‘এটা হলো এমন একটি বিষয়, যা আমার মতো হ্যাকারদের কাছ থেকেই আসার কথা। কারণ, আমরা জানি মানব চরিত্রের দুর্বলতার সুযোগ কীভাবে নিতে হয়।’ তিনি বলেছেন, ‘মার্ক জুকারবার্গসহ তিনি এবং অন্য আরও কয়েকজন এ বিষয়টা সম্পর্কে ভালোভাবেই জানতেন এবং আমরা এটা যেভাবেই হোক বাস্তবায়ন করেছি।’১৬

ফেসবুকের হোমপেজ এ কারণেই এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন লাইক, শেয়ার, বন্ধু, পোস্ট, কার্যকলাপ, নতুন মেসেজ ইত্যাদির সংখ্যা ভালোভাবে দৃশ্যমান থাকে (আর সবসময়ই জরুরি লাল রঙে!)। অটো প্লে, সীমাহীন স্ক্রল করা এবং বিপরীত কালানুক্রমিক টাইমলাইন ইত্যাদি সবকিছুই তৈরি করা হয়েছে আপনার মনোযোগ ধরে রাখার জন্য…। একইভাবে ২০০৯ সালে যখন ‘লাইক’ বাটনটি চালু করা হয়, তখনও সেটা করা হয়েছিল ‘লাইক স্টাডিজ’-এর ওপর ভিত্তি করে

সোশানা জুবফ ওলন্দাজ গবেষক আরনল্ড রোজেন্ডালের গবেষণার বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, কীভাবে ফেসবুক বন্ধুদের পরস্পরের মধ্যে আবেগ-অনুভূতি আরও ভালোভাবে প্রকাশের সুবিধা করে দেওয়ার নামে চালু করা ‘লাইক’ বাটন আসলে আরও বেশি করে উদ্বৃত্ত শিকারের উদ্দেশ্য থেকেই বানানো হয়েছে:

‘এই বাটনটির মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়, যা ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে কুকিজ ইনস্টল করার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে আচরণ-উদ্বৃত্ত সংগ্রহ ও সরবরাহ করতে থাকে…। রোজেন্ডাল দেখতে পান, এই বাটনটির মাধ্যমে এমনকি ফেসবুক ব্যবহার করেন না এমন ব্যক্তিদেরও অনলাইনে ট্র্যাক করা সম্ভব হচ্ছে এবং তিনি উপসংহার টানেন—এর মাধ্যমে ফেসবুকের পক্ষে সব ওয়েব ব্যবহারকারীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা, তাদের ওপর নজরদারি করা সম্ভব।’১৭

কাজেই ফেসবুক বা গুগলের মতো নজরদারি পুঁজিনির্ভর করপোরেশন যখনই কোনো নতুন পণ্য, সেবা বা ফিচার চালু করে, তা ব্যবহারকারীদের জন্য যত উপকারী ও সুবিধাজনকই হোক না কেন (বস্তুত ব্যবহারকারীদের উপকারে না আসতে পারলে আচরণ-উদ্বৃত্ত সংগ্রহ করা যাবে না), এটা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে, এর আসল উদ্দেশ্য হলো আরও বেশি করে আচরণ-উদ্বৃত্ত সংগ্রহ এবং সেটা কাজে লাগিয়ে আরও বেশি করে মুনাফা অর্জন। ফেসবুকের সর্বশেষ উদ্যোগ ‘মেটাভার্স’-এর বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার। মার্ক জুকারবার্গ তার কানেক্ট ২০২১ বক্তৃতায় বলেছেন, ‘স্ক্রিন বা পর্দার মাধ্যমে মানবীয় অভিব্যক্তি ও সংযোগের পুরোটা ধরা পড়ে না।’ কিন্তু মেটাভার্সে মানুষের ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি অ্যাভাটার মানুষের অভিব্যক্তি ও আচরণের আরও বিস্তারিত উৎস হিসেবে কাজ করবে।১৮

মেটাভার্সের মাধ্যমে আচরণ-উদ্বৃত্ত আহরণের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কারণ, মানুষের জীবনের এমন সব দিক মেটাভার্সের আওতার মধ্যে আসবে, যেসব থেকে এর আগে উদ্বৃত্ত আহরণের কোনো সুযোগ ছিল না। মানুষ যখন অফলাইনে ব্যাবসা-বাণিজ্য বা অফিস-আদালতের কাজে ব্যস্ত থাকে, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, ভ্রমণ বা খেলাধুলায় মগ্ন থাকে, তখন তারা সাধারণত ফেসবুক ব্যবহার করে না, এমনকি যদি ওইসব কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুক ব্যবহার করেও, তবু ওই কাজগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে করে না। ফলে অফলাইন জগতে মানুষের এসব কার্যক্রম সম্পর্কে ফেসবুকের কাছে সুনির্দিষ্ট ডেটা পয়েন্ট থাকে না। এখন মেটাভার্সের মাধ্যমে এই কাজগুলোকেও যদি অফলাইন থেকে অনলাইনে আনা যায়, যদি ফেসবুক বা মেটার তৈরি বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাটফর্ম, টুলস ও অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে মানুষকে এই কাজগুলো করতে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে মানুষের জীবনের ওইসব দিক, যেগুলো এখন পর্যন্ত শুধু অফলাইনে সীমাবদ্ধ, সেগুলোও নজরদারি পুঁজিবাদের আচরণ-উদ্বৃত্ত আহরণের আওতায় চলে আসবে! এ কারণেই কেউ যদি ‘স্নো ক্র্যাশ’ উপন্যাসে বর্ণিত মেটাভার্সে হিরো প্রোটাগনিস্ট কর্তৃক ব্ল্যাক সান সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করে অর্থের বিনিময়ে সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স করপোরেশনের কাছে সরবরাহের সঙ্গে ফেসবুক বা মেটার মেটাভার্স নিয়ে পরিকল্পনার অস্বস্তিকর মিল খুঁজে পান, তাহলে তাকে মোটেই দোষ দেওয়া যাবে না। একইভাবে স্নো ক্র্যাশের মেটাভার্সের সমস্ত অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণকারী গ্লোবাল মাল্টিমিডিয়া প্রটোকল গ্রুপের কার্যকলাপের সঙ্গে ফেসবুক বা মেটার ইন্টারনেটের দ্বিতীয় অধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণকারী হয়ে ওঠার বাসনার মিল দেখতে পান সেটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।

কেউ যদি ‘স্নো ক্র্যাশ’ উপন্যাসে বর্ণিত মেটাভার্সে হিরো প্রোটাগনিস্ট কর্তৃক ব্ল্যাক সান সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করে অর্থের বিনিময়ে সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স করপোরেশনের কাছে সরবরাহের সঙ্গে ফেসবুক বা মেটার মেটাভার্স নিয়ে পরিকল্পনার অস্বস্তিকর মিল খুঁজে পান, তাহলে তাকে মোটেই দোষ দেওয়া যাবে না।

উপসংহার:

মাছের কাছে পানি যেমন, তেমনিভাবে আমাদের সমগ্র অস্তিত্ব ঘিরে ফেলতে চায় মেটা, যেন তার উপস্থিতি খুব স্বাভাবিক মনে হয়। আপনার মেটাকে বেছে নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না; বরং মেটা এমন একটা জায়গায় পরিণত হবে, যেখানে আপনি নানান পণ্য ও সেবা থেকে আপনার পছন্দেরটি বেছে নেবেন। অন্যভাবে বললে, মেটা এমন কোনো কোম্পানি হবে না, যা স্টেডিয়ামে কোনো খেলা স্পনসর করবে; বরং মেটা হবে সেই স্টেডিয়াম, যেখানে সমস্ত খেলা অনুষ্ঠিত হবে। পরিকল্পনাটা এমন যে, মেটা বিভিন্ন ধরনের পরস্পর সম্পর্কযুক্ত পণ্য ও সেবার ইকোসিস্টেম বা বাস্তুসংস্থানের দায়িত্বে থাকা একটি হোল্ডিং কোম্পানিতে পরিণত হবে। এসব পণ্য ও সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে হাইব্রিড একটি দুনিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, যেখানকার প্রতিটি পয়েন্ট থেকে মুনাফা আহরণ করা যাবে। —জেমস মুলডুন১৯

মেটাভার্স নিয়ে মার্ক জুকারবার্গের যে পরিকল্পনা, তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা হয়ে উঠবে মেটা করপোরেশনের জন্য আচরণ-উদ্বৃত্ত আহরণের এমন এক উৎস, গভীরতা ও ব্যাপ্তিতে যার ধারেকাছে আর কোনো কিছুর কোনো দৃষ্টান্ত নেই। আর আচরণ-উদ্বৃত্ত আহরণের বিস্তৃতি ও তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নজরদারি পুঁজিবাদসৃষ্ট বিদ্যমান সমস্যাগুলো বিবর্ধিত হওয়ার পাশাপাশি আরও নতুন ধরনের সমস্যারও উদ্ভব ঘটবে। আরও উদ্বৃত্তের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ অনুমান করার পণ্য আরও বেশি তৈরি হবে, যেগুলো ব্যবহার করে আরও বেশি পারসোনালাইজেশন বা নিজস্বকরণ করে আরও বেশি উদ্বৃত্ত আহরণ করা সম্ভব হবে, যা উদ্বৃত্ত আহরণ-পারসোনালাইজেশনের এই চক্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আর এই প্রক্রিয়াটিকে বিজ্ঞাপন বাণিজ্য ছাড়াও রাজনৈতিক কাজেও এখনকার চেয়ে আরও বেশি করে ব্যবহার করা যাবে। ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কাজে লাগিয়ে একেকজনকে একেক ধরনের পারসোনালাইজড প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রচলিত হয়ে গেছে। এ পদ্ধতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ভোটারদের আহরিত তথ্য (বিগ ডেটা) বিশ্লেষণ করে তাদের বিভিন্ন ধরনের ‘বাকেট’ বা ‘ইউনিভার্সে’ বিভক্ত করা হয় এবং সেই অনুযায়ী হাইপার-পারসোনালাইজড প্রতিশ্রুতি প্রদান করে আকৃষ্ট করা হয়। ইতঃপূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্প শিবির এবং ব্রিটেনে ব্রেক্সিট নির্বাচনে ব্রেক্সিটবিরোধী শিবির বেশ সফলতার সঙ্গে এই পদ্ধতিটি কাজে লাগিয়েছে।২০ মেটাভার্সের মাধ্যমে আহরিত আচরণ-উদ্বৃত্ত কাজে লাগিয়ে এ বিষয়টিকে এমন বিস্তৃতভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে, যার ফলাফল কী হবে, তা অনুমান করা মুশকিল। বিজনেস ইনসাইডার যেমন অনুমান করছে:

‘মার্ক জুকারবার্গের মেটাভার্স আমাদের চেনাজানা দুনিয়ায় ফাটল ধরিয়ে দিতে পারে। এর মাধ্যমে মানুষ হয়তো পছন্দ করে না এমন বিষয় তার রিয়েলিটি বা জগৎ থেকে ব্লক করে দেবে (রিয়েলিটি ব্লক), যার ফলে সমাজে বিদ্যমান মেরুকরণ আরও তীব্র হয়ে উঠবে।’

কারণ, বিদ্যমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাবসার যে মডেলটির মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষ পারসোনালাইজড নিউজ ফিড ও টার্গেট করা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে, সেই মডেলটি মেটাভার্সের সর্বব্যাপী ভার্চুয়াল দুনিয়ার বরাতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যেখানে তৃতীয় পক্ষ হয়তো নির্ধারণ করে দেবে, আমরা আমাদের ঘরে, রাস্তায় ও কর্মক্ষেত্রে কী দেখব। ফলে মিথ্যা তথ্য শনাক্ত করা আগের চেয়ে আরও কঠিন হয়ে উঠবে এবং ভার্চুয়াল দুনিয়ার আগের চেয়ে আরও সংকীর্ণ ইকো-চেম্বারের কারণে মানুষে মানুষে বিভক্তি ও মেরুকরণ আরও তীব্র হবে:

“ভবিষ্যতের মেটাভার্সে দুজন মানুষ একই রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও তাদের চোখে থাকা অগমেন্টেড রিয়েলিটি গ্লাসের কারণে তারা হয়তো দুজন দুই রকম দৃশ্য দেখবে।

রক্ষণশীল মনোভাবের হওয়ার কারণে একজন হয়তো তার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে বিরোধাত্মক অনেক কিছু, যেমন: ফার্টিলিটি ক্লিনিককে ‘রিয়েলিটি ব্লক’ করে দেবেন। অন্যদিকে উদারনৈতিক অপর ব্যক্তিটি হয়তো বন্দুকের দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেও তার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন না।

আবার কেউ হয়তো কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে জানতে পারবেন, তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষটির পরিচয় সম্পর্কে। যেহেতু ফেসবুক বা মেটার কাছে মানুষের সব তৎপরতার তথ্যই থাকবে। হয়তো দেখা যাবে, পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষটির মাথার ওপর ভার্চুয়াল অক্ষরে লেখা থাকবে—‘রিপাবলিকান’।

এসবের ফলাফল হবে এ রকম যে, মানুষগুলো একই রাস্তা দেখছে বলে মনে করলেও আসলে তারা তা দেখবে না, তারা বাস্তব দুনিয়ার ওপর আচ্ছাদন হিসেবে তৈরি ভার্চুয়াল দুনিয়ার দুটো ভিন্ন বাস্তবতায় হাজির থাকবে।”২১

সোশানা জুবফ মনে করেন, গুগল, ফেসবুকসহ নজরদারি পুঁজিবাদী করপোরেশনগুলোর শুরুর দিককার তৎপরতাগুলোকে প্রতিরোধ করা যায়নি। কারণ, এদের ব্যাবসায়িক তৎপরতা ও কর্মপদ্ধতিগুলো এতটাই অভিনব ও বিস্ময়কর ছিল যে, সে সময় এর প্রকৃত তাৎপর্য বোঝা যায়নি। আমাদের প্রয়োজন মেটানোর বিনিময়েই নজরদারি পুঁজিবাদ আমাদের লুণ্ঠন করেছে—‘ঠিক যে মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজনগুলো মিটেছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের জীবনকে মুনাফা আহরণের উদ্দেশ্যে আচরণ-উপাত্তের জন্য লুট করা হয়েছে।’২২ এখন যেহেতু নজরদারি পুঁজিবাদের কার্যক্রম, তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও মানবসমাজের ওপর তার সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে নানা রকম সচেতনতা তৈরি হয়েছে, তাই মেটাভার্সের মতো উদ্বৃত্ত আহরণের নতুন কৌশল বাস্তবায়নের আগেই নজরদারি পুঁজিবাদ কর্তৃক মানব অভিজ্ঞতাকে আচরণ-উপাত্তে পরিণত করা ও সেগুলো কাজে লাগিয়ে মানুষের আচরণ প্রভাবিত করার সমস্ত তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। অনির্বাচিত ও অপ্রতিনিধিত্বশীল কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিহীন কর্তৃত্ব বাস্তব দুনিয়ার মানুষের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ভার্চুয়াল দুনিয়ার জন্যও তা একইভাবে ভয়ংকর, বিশেষ করে বাস্তব ও ভার্চুয়াল যখন একাকার হয়ে যায়, তখন তা আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। বাস্তব দুনিয়ার কর্তৃত্ববাদী শাসনের মতো ডিজিটাল দুনিয়ায় করপোরেট কর্তৃত্ববাদকেও তাইপ্রতিরোধের জন্য যথাযথ আইনি কাঠামো থেকে শুরু করে জনসচেতনতা ও গণনজরদারির ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

কল্লোল মোস্তফা: প্রকৌশলী, লেখক। ইমেইল: kallol_mustafa@yahoo.com

তথ্যসূত্র:

১। Introducing Meta: A Social Technology Company, about.fb.com, October 28, 2021 

২। Founder’s Letter, Mark Zuckerberg, 2021, October 28, 2021; 

৩। Meta (Facebook) Connect 2021 Metaverse Event Transcript, Mark Zuckerberg, Oct 28, 2021; 

৪। Mark Zuckerberg’s “Metaverse” Is a Dystopian Nightmare, Ryan Zickgraf, Jacobinmag, 25 Sep 2021

৫। নিল স্টেফানসন, অধ্যায় ৭, স্নো ক্র্যাশ

৬। নিল স্টেফানসন, অধ্যায় ৮, স্নো ক্র্যাশ

৭। Mark Zuckerberg On Why Facebook Is Rebranding To Meta, By Alex Heath, the verge, Oct 28, 2021

৮। The Age of Surveillance Capitalism by Shoshana Zuboff, Profile Books Ltd, ২০১৯, লন্ডন, পৃষ্ঠা: ৯

৯। পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা: ৮

১০। পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা: ১২৯

১১। পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা: ১৩৩-১৩৪

১২। পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা: ১৫৪

১৩। পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা: ১৫৮-১৬২

১৪। Facebook, Form 10-k for the fiscal year ended December 31, 2020 

১৫। Mark Zuckerberg, ‘Understanding Facebook’s Business Model’, January 24, 2019

১৬। Jamie Bartlet, The People vs Tech, Ebury Press, ২০১৮, লন্ডন, পৃষ্ঠা: ১৫-১৮

১৭। The Age of Surveillance Capitalism by Shoshana Zuboff, Profile Books Ltd, ২০১৯, লন্ডন, পৃষ্ঠা: ১৫৯

১৮। Mark Zuckerberg, Meta (Facebook) Connect 2021 Metaverse Event Transcript, Oct 28, 2021

১৯। James Muldoon, Facebook Is Now Meta. And It Wants to Monetize Your Whole, Existence, Jacobinmag, 28 Oct 2021 

২০। Jamie Bartlet, The People vs Tech, Ebury Press, ২০১৮, লন্ডন, পৃষ্ঠা: ৭২-৮৯

২১। Mark Zuckerberg’s metaverse could fracture the world as we know it — letting people ‘reality block’ things they disagree with and making polarization even worse, দ্যা বিজনেস ইনসাইডার, ২০ নভেম্বর ২০২১; 

২২। The Age of Surveillance Capitalism by Shoshana Zuboff, Profile Books Ltd, ২০১৯, লন্ডন, পৃষ্ঠা: ৫৩, ৩৪১

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •