হাশেম ফুড কারখানায় নিহত/নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনদের সঙ্গে কয়েকদিন

হাশেম ফুড কারখানায় নিহত/নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনদের সঙ্গে কয়েকদিন

শহীদুল ইসলাম সবুজ

গত ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ছয়তলা ভবনে আগুন লেগে মারা যান কমপক্ষে ৫৪ জন শ্রমিক। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকদের পক্ষ থেকে একটি ১৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গত ৩১ জুলাই কঠোর লকডাউন চলাকালীন নিহত এবং নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে নাগরিক তদন্ত কমিটির সদস্য এই লেখক ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় যান। সেখানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সাতটি পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। এছাড়াও তিনি কথা বলেন আগুন থেকে বেঁচে ফেরা কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। এই লেখায় তিনি সেই আলাপের সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে ধরেছেন। নিহত শ্রমিকদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে scorchedlivesathashemfoods.com এ, লেখায় ব্যবহৃত ছবিগুলো এই ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

হাসনাইন

প্রথমেই কথা হয় হাসনাইন নামের ১২ বছরের কম বয়সি এক নিখোঁজ শিশু শ্রমিকের স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে। হাসনাইন স্থানীয় কবি মোজাম্মেল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার জন্মনিবন্ধন ও স্কুলে ভর্তির রেজিস্টার থেকে জানা যায়, হাশেম ফুডে অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজের দিন তার বয়স হয়েছিল ১১ বছর ৩ মাস ২৩ দিন। তার পরিবারের সন্ধান মেলে স্থানীয় মিনাবাজারের রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে ওর কথা জিজ্ঞেস করতেই। সেখানে উপস্থিত হাসনাইনের স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল মালেক জানান, হাসনাইন তার স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। হাসনাইন তার স্কুলের ছাত্র ছিল, এর কোনো প্রমাণ আছে কিনা, জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বন্ধ স্কুলের তালা খুলে সেখানে নিয়ে যান। হাসনাইনের ভর্তি রেজিস্টারসহ তারা স্কুলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে হাসনাইনের অংশগ্রহণের স্মৃতি রোমন্থন করেন।

ভর্তি রেজিস্টারের পাতা ওলটাতে ওলটাতে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলেন:‘এই স্কুলের প্রতিটি ছাত্র আমার সন্তানের মতো।’ তার সঙ্গে উপস্থিত প্রায় সবার চোখেই তখন কান্না। হাসনাইন স্কুল ছেড়ে কাজে যাবে সেটা জানতেন কিনা–এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ। আমরা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে তা জমা নিতাম শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। রমজানের ইদের পরও প্রায় মাসখানেক পার হয়ে গেলেও দেখি হাসনাইন আর অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে আসে না। ওদের বাড়িতে খবর নিয়ে জানতে পারি, মোতালেব নামের এক কন্ট্রাকটর হাসনাইনকে নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায় কাজের জন্য নিয়ে গেছে। হাসনাইন ছিল স্কুলের সবার প্রিয় মুখ।’

ভর্তি রেজিস্টারের পাতা ওলটাতে ওলটাতে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলেন:‘এই স্কুলের প্রতিটি ছাত্র আমার সন্তানের মতো।’ তার সঙ্গে উপস্থিত প্রায় সবার চোখেই তখন কান্না। হাসনাইন স্কুল ছেড়ে কাজে যাবে সেটা জানতেন কিনা–এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ। আমরা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে তা জমা নিতাম শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। রমজানের ইদের পরও প্রায় মাসখানেক পার হয়ে গেলেও দেখি হাসনাইন আর অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে আসে না। ওদের বাড়িতে খবর নিয়ে জানতে পারি, মোতালেব নামের এক কন্ট্রাকটর হাসনাইনকে নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায় কাজের জন্য নিয়ে গেছে।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘মোতালেব এই এলাকার আরও অনেক শিশুকে নারায়ণগঞ্জের ওই কারখানায় নিয়ে যায়। এজন্য এলাকার লোকজন একবার তাকে মারধরও করেছিল। স্কুল-মাদ্রাসার শিশুদের ফুসলিয়ে মোতালেব রূপগঞ্জের ওই কারখানায় নিয়ে যেত। শিশুদের কাজে লাগিয়ে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সে প্রতিমাসে এক-দেড় হাজার টাকা নিয়ে নেয়। আমার স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী ওই কারখানার শ্রমিক ছিল। তারা জানিয়েছে, ওই কারখানায় প্রায় প্রতি মাসেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটত। এরকম একটি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানায় মোতালেব শ্রমিকদের নিয়ে যেত টাকার লোভে। হাসনাইনের পরিবার খুবই দরিদ্র। বাবা অসুস্থ থাকায় পরিবারের আর কেউ উপার্জনক্ষম ছিল না। সে কারণেই হয়তো সে স্কুলে না-জানিয়ে চাকরিতে চলে যায়।’ তার এই অপমৃত্যুর জন্য যারা দায়ী এবং যাদের অবহেলার কারণে হাসনাইনের মতো শিশুদের আগুনে পুড়ে মরতে হয়, তাদের বিচার দাবি করেন এই শিক্ষক। অর্থ দিয়ে এই ক্ষতিপূরণ করা যাবেনা, একটা জীবন ফিরে পাওয়া যাবে না। তারপরও এই শিশুটি বেঁচে থাকলে বড় হয়ে যত দিন সে কাজ করতে পারত, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারত সেই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ তার পাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

প্রধান শিক্ষকসহ অন্যদের সঙ্গে কথা শেষে হাসনাইনদের বাড়িতে গেলে কথা হয় তার বড় বোন সাথি আকতারের সঙ্গে। তিনি জানান, মা-বাবা দুজনেই অসুস্থ এবং তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। বাবা হাসপাতালে ভর্তি।তার নাকের অপারেশন হয়েছে। হাসনাইনের মায়ের নাম: নাজমা বেগম, বাবার নাম: ফজলুর রহমান, গ্রামের নাম: দক্ষিণ আমিনাবাদ, ডাকঘর: দক্ষিণ শিবা, মিনাবাজার, থানা: চরফ্যাশন।

এত কমবয়সি ছোট ভাই কাজে গেল কীভাবে, জানতে চাইলে সাথি বলেন,“বাবা অসুস্থ, কাজ করতে পারেন না।অভাবের সংসার। ভিটেবাড়িটুকু ছাড়া আর কোনো চাষের জমি নেই আমাদের। তাই দেখে হাসনাইন প্রতিমুহূর্তে ছটফট করত–কীভাবে পরিবারকে সহযোগিতা করবে। বলত, ‘আমি আমাদের পরিবারের অভাব দূর করবই।’ স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ, একারণেও তাকে ছটফট করতে দেখেছি। সে প্রতিদিন বাড়ি থেকে একটু দূরে তার স্কুলের সামনে যেত। সেখানেই কন্ট্রাকটর মোতালেবের সঙ্গে হাসনাইনের দেখা হয়েছিল। একদিন ঘরে এসে হাসনাইন বলছিল,‘স্কুল যেহেতু বন্ধ, আমি চাকরিতে চলে যাব। স্কুল খুললে তারপর আবার এসে পড়াশোনা শুরু করব।’ পরিবারের সবাই তাকে কাজে যেতে নিষেধ করেছিল। পরিবারের কাউকে না-জানিয়েই সে মোতালেবের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের কারখানায় চলে যায়। পরে হাশেম ফুডে কর্মরত চাচাতো ভাই রাকিবের মাধ্যমে জানতে পারি, সে মোতালেবের সঙ্গে হাশেম ফুড কারখানায় গিয়ে কাজে যোগ দিয়েছে। রমজানের ইদের আনুমানিক ১০ দিন পর সে হাশেম ফুডে চাকরিতে যোগদান করে।”

হাসনাইন কাজ করত হাশেম ফুড কারখানার চতুর্থ তলায় লাচ্ছা সেকশনে। থাকত হাশেম ফুড কারখানা লাগোয়া কোয়ার্টারে। আগুন লাগার পর হাসনাইনের সঙ্গে তাদের পরিবারের কারো কথা হয়নি। ওইদিন দুপুরে কথা হয়েছিল চাচাতো ভাই রাকিবের সঙ্গে ফোনে। মা-বাবা ও বোনের সঙ্গেও কথা হয়েছিল সেসময়। ইদে বাড়ি এসে জীবনের প্রথম বেতন মায়ের হাতে তুলে দেবে বলে জানিয়েছিল হাসনাইন, একথা বলতে গিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন সাথি আকতার! বলেন,‘আমার একমাত্র ভাই। পরিবার ও এলাকার সবার আদরের হাসনাইনের সব স্বপ্ন পুড়িয়ে ছাই করে দিল হাশেমফুড কারখানা। পরিবারের অভাব দূর করা, মায়ের হাতে জীবনের প্রথম বেতনের টাকা তুলে দেওয়া–সব স্বপ্নই ছাই হয়ে গেল ভাইটির। আমার ভাইটার লাশও কি আমরা দেখতে পাব না?’ সাথির কান্নায় সেখানে উপস্থিত গ্রামের সবার চোখেই তখন অঝোর ধারা। নিখোঁজ হওয়ার পর কারখানায় তার পাওনা বেতন পেয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় অবস্থানরত মা-বাবাই বলতে পারবেন, পেয়েছেন কিনা। হাসনাইনের চাচাতো ভাই রাকিবও ওই অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ রয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা দিয়েছেন মা-বাবা দুজনেই।

বলেন,‘আমার একমাত্র ভাই। পরিবার ও এলাকার সবার আদরের হাসনাইনের সব স্বপ্ন পুড়িয়ে ছাই করে দিল হাশেমফুড কারখানা। পরিবারের অভাব দূর করা, মায়ের হাতে জীবনের প্রথম বেতনের টাকা তুলে দেওয়া–সব স্বপ্নই ছাই হয়ে গেল ভাইটির। আমার ভাইটার লাশও কি আমরা দেখতে পাব না?’

আদরের একমাত্র ছোট ভাইয়ের অকালমৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের সবার বিচার চেয়েছেন বোন সাথি আকতার। পাশাপাশি তাদের পরিবারের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।

রাকিব হোসেন

 অপর নিখোঁজ শ্রমিক ২২/২৩ বছরের রাকিব হোসেন। হাসনাইনের আপন চাচাতো ভাই। হাসনাইন হাশেম ফুডে চাকরিতে যোগদানের আগেই রাকিবের সঙ্গে দেখা করে। রাকিবও ছোট ভাইটিকে তার কাছেই রেখেছিলেন। গ্রামের একই বাড়িতে বসবাস তাদের। একই বাড়ির দুই ছেলে হাশেম ফুডে নিহত/নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় গ্রামজুড়েই শোকের ছায়া।

পাকা রাস্তা থেকে রাকিবদের বাড়িতে ৭/৮ মিনিটের পথে যেতে আরও ৩/৪টি বাড়ির উঠান পেরোতে হয়। পুরো পথটুকুই প্রায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা। রাকিব-হাসনাইনদের বাড়িতে ঢাকা থেকে সাংবাদিকরা এসেছেন, একথা শুনেই বৃষ্টি-কাদা উপেক্ষা করে পাকা রাস্তার মোড়ে, প্রতিটি বাড়ির উঠানে গ্রামের মানুষজন জমা হয়েছিলেন। সবার চোখেমুখেই স্বজন হারানোর বেদনা। অনেকেই বলছিলেন,‘আমাগো গেরামের দুইডা পোলারে পুইড়া মারল, হের কোনো বিচার অইব না?’ একটি বাড়ির উঠানে দাঁড়ানো প্রায় ৮০ বছরের এক নারী চোখের জল মুছতে মুছতে বলছিলেন,‘হাসান(হাসনাইন) এই উঠানের ওপর দিয়াই প্রতিদিন স্কুলে যাইত। আর কোনোদিন হে(সে) এ পথে হাঁটবে না!’

রাকিবের মায়ের নাম: শাহনাজ বেগম, বাবা: কবির হোসেন মাঝি, গ্রাম: আব্দুল্লাহপুর, ৬ নম্বর ওয়ার্ড। গ্রামটিকে আমিনাবাদ নামে চেনেন অনেকে। ডাকঘর: দক্ষিণ শিবা, মিনাবাজার, উপজেলা: চরফ্যাশন, জেলা: ভোলা।রাকিবরা দুই ভাই এক বোন। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। রাকিব দুই বছর ধরে হাশেম ফুডে চাকরি করতেন। থাকতেন কারখানা লাগোয়া টিনশেডের হোস্টেলে। রাকিবের বেতন ছিল ১৩ হাজার টাকা। হাশেম ফুডের আগেও রাকিব চট্টগ্রামের একটি কারখানায় চাকরি করেছেন ৭/৮ বছর। আগুন লাগার পর পরিবারের কারো সঙ্গেই কথা হয়নি রাকিবের। ডিউটির সময় ফোন হোস্টেলে রেখে যেতে হতো বলে জানান মা শাহনাজ বেগম। ওই দিন বেলা ১টার সময় সর্বশেষ মা-বাবার সঙ্গে রাকিবের ফোনে কথা হয়েছিল। ফোনে রাকিব জানিয়েছিলেন, ঈদের এক সপ্তাহ আগেই তাদের ছুটি হয়ে যাবে এবং তিনি বাড়িতে ফিরতে পারবেন।

রাকিবের মা শাহনাজ বেগম বুক চাপড়াচ্ছিলেন আর কান্নায় বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। বলছিলেন,‘বাবা, হাশেম ফুডের আগুন যে আমার বুকে এখনো জ্বলছে! যতদিন বাঁইচা থাকব, এ আগুন জ্বলতে থাকবে! আমার সোনার টুকরা ছেলে, কত উঁচা-লম্বা আছিল! আমার পরিবারের অভাব দূর করতে গিয়া পুইড়া মরল আমার মানিক! ও আল্লাহ, তুমি আমার মানিকরে আমারে একবার দেখবার সুযোগও কেন দিলা না!’ বাড়িভর্তি মানুষ সবাই তখন কাঁদছিলেন রাকিবের মায়ের সঙ্গে।

রাকিবের মা শাহনাজ বেগম বুক চাপড়াচ্ছিলেন আর কান্নায় বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। বলছিলেন,‘বাবা, হাশেম ফুডের আগুন যে আমার বুকে এখনো জ্বলছে! যতদিন বাঁইচা থাকব, এ আগুন জ্বলতে থাকবে! আমার সোনার টুকরা ছেলে, কত উঁচা-লম্বা আছিল! আমার পরিবারের অভাব দূর করতে গিয়া পুইড়া মরল আমার মানিক!

ভিটেবাড়ি ছাড়া চাষের আর কোনো জমি নেই রাকিবের পরিবারের। মা-বোন চাকরি করতেন গাজীপুরের মাওনার টিপুর বাড়িতে, আকন্দ টেক্সটাইলে। বাবা রিকশা চালাতেন। কিন্তু গলায় ক্যানসার হওয়ায় এখন আর রিকশা চালাতে পারেন না। ওষুধ ছাড়া একদিনও চলেনা বাবা কবির হোসেনের। দেড় বছর আগে রাকিবের মায়েরও একটি বড় অপারেশন হয়েছিল। মা-বোন হাশেম ফুডে অগ্নিকাণ্ডে রাকিব নিখোঁজ হওয়ার পর গাজীপুরের চাকরি ছেড়ে তার সন্ধানে রূপগঞ্জে চলে যান। সেখান থেকেই গ্রামে চলে আসেন। তাদের আর গাজীপুরের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া হয়নি।

শাহনাজ বেগম জানান, কন্ট্রাকটর মোতালেব মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে এ অঞ্চলের শ্রমিকদের সেই কারখানায় পাঠাতেন। শ্রমিকদের মাসিক বেতনও কন্ট্রাকটর মালিকদের কাছ থেকে গ্রহণ করতেন। বেতনের মাত্র ৩/৪ হাজার টাকা কন্ট্রাকটর প্রতিমাসে শ্রমিকদের হাতে দিতেন। পুরো বেতনের টাকা পরিশোধ করে দিলে শ্রমিকরা অন্য কোথাও কাজে চলে যেতে পারেন–এই ভয়ে মোতালেব পুরো বেতনের টাকা শ্রমিকদের দিতেন না। আল আমিন নামের অপর এক কন্ট্রাকটর, যার বাড়িও চরফ্যাশনে, ঈদের দু-তিনদিন আগে রাকিবের মাসিক বেতনের ৯ হাজার ৫০০ টাকাসহ এ অঞ্চলের নিখোঁজ শ্রমিকদের সর্বশেষ পাওনা যার যার বাড়ি এসে দিয়ে গেছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের প্রতিটি পরিবারই মালিকপক্ষ থেকে অনুদানের দুই লাখ টাকার চেক পেয়েছে বলে জানান তারা। ডিএনএ টেস্টের জন্য রক্তের নমুনা দিয়েছেন রাকিবের বাবা কবির হোসেন মাঝি।

নোমান মাতবর

রূপগঞ্জের হাশেম ফুডে অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ আরেক যুবকের নাম নোমান মাতবর। যার বয়স ছিল ১৯ বছর। জন্মসনদ অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১৫/০১/২০০৩। তিনি ছিলেন তিন বোনের একমাত্র ভাই। মা: ফিরোজা বেগম, বাবা: মান্নান মাতবর, গ্রাম: এওয়াজপুর, ৪ নম্বর ওয়ার্ড, ডাকঘর: কাশেমগঞ্জ, থানা: শশীভূষণ, উপজেলা: চরফ্যাশন। নোমান অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। ২০১৮ সালে নোমান হাশেম ফুডে চাকরিতে যোগদান করেন। কাজ করতেন পঞ্চম তলায় লাচ্ছা  সেকশনে। থাকতেন হাশেম ফুডের কারখানা লাগোয়া টিনশেডের কোয়ার্টারে। আগুন লাগার পর পরিবারের কারো সঙ্গেই তার আর কথা হয়নি। ওইদিন দুপুর ১২টার দিকে মামাতো ভাই হজরত আলীর সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়। মা-বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল আগুন লাগার আগের দিন সকালে।

সহকর্মী আল-আমিন প্রথম শিফটে কাজ শেষ করে কোয়ার্টারে চলে গিয়েছিলেন। আগুন লাগার খবর শুনে তিনি দ্রুত কারখানার সামনে চলে আসেন এবং নোমানকে খুঁজতে থাকেন। তিনি বারবার নোমানের ফোন নম্বরে কল দিচ্ছিলেন; কিন্তু কেউ রিসিভ করছিল না। রাত ৮টা পর্যন্ত নোমানের ফোনে রিং বেজেছিল বলে জানান তিনি।

কারখানায় নোমানের বেতন ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। কন্ট্রাকটর মোতালেবের মাধ্যমে নোমান ওই কারখানায় কাজে যোগদান করেন। এত শ্রমিক কারখানায় সরবরাহ করে কন্ট্রাকটরের কী লাভ হতো?–এই প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত সহকর্মী ও মামা আল-আমিন বলেন, কারখানায় ২০ জন শ্রমিক ৩০ বস্তা ময়দার কাজ করলে শ্রমিকদের হাতে যেত ২০ বস্তার মজুরি। বাকি ১০ বস্তার মজুরি চলে যেত কন্ট্রাকটরের পকেটে। তিনি আরও জানান, কন্ট্রাকটর মোতালেব নোমানের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকা আর নোমানকে ফেরত দেননি।

কারখানায় ২০ জন শ্রমিক ৩০ বস্তা ময়দার কাজ করলে শ্রমিকদের হাতে যেত ২০ বস্তার মজুরি। বাকি ১০ বস্তার মজুরি চলে যেত কন্ট্রাকটরের পকেটে।

নোমানদের পরিবারে উপার্জন করার মতো আর কেউ নেই। নদীভাঙনে পরিবারটির ভিটেমাটি, চাষের জমি সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে নোমানের নানার দেওয়া ভিটেটাই তাদের সম্বল। নোমানের মা-বাবা দুজনেই অসুস্থ। মায়ের চোখে ছানিপড়া, চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। মা ফিরোজা বেগম বিলাপ করতে করতে বলছিলেন,‘তোমরা আমার আদরের কলিজার টুকরা ছেলেটারে একবার শুধু দেখবার ব্যবস্থা কইরা দাও।’ কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ওই কারখানায় প্রায়ই আগুন লাগার কথা জানাতেন তার ছেলে। পনেরো-ষোলো দিন আগেও একবার আগুন লাগার কথা জানিয়েছিলেন নোমান। তারপরও কেন ছেলেকে ওই কারখানায় কাজে যেতে নিষেধ করলেন না, এজন্য নিজেকে অপরাধী করে বিলাপ করতে থাকেন ফিরোজা বেগম।

ওই কারখানায় প্রায়ই আগুন লাগার কথা জানাতেন তার ছেলে। পনেরো-ষোলো দিন আগেও একবার আগুন লাগার কথা জানিয়েছিলেন নোমান। তারপরও কেন ছেলেকে ওই কারখানায় কাজে যেতে নিষেধ করলেন না, এজন্য নিজেকে অপরাধী করে বিলাপ করতে থাকেন ফিরোজা বেগম।

আল-আমিন কন্ট্রাকটরের মাধ্যমে নোমানের কারখানার পাওনা বকেয়া ১৫ হাজার টাকা তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ফিরোজা বেগম। হাশেমফুডের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে ফার্মগেটের কার্যালয় থেকে। চেক দেওয়ার সময় একটি কাগজে স্বাক্ষর রেখেছে তারা। সেই কাগজে কী লেখা ছিল, তা তারা জানেন না।

ছেলেকে খুঁজে পাওয়ার জন্য ডিএনএ টেস্টে রক্তের নমুনা দিয়েছেন বাবা মান্নান মাতবর। মা-বাবা দুজনেই তাদের আদরের সন্তান নোমানকে যারা হত্যা করেছে, যাদের কারণে নোমান অকালে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের বিচার দাবি করেছেন। নোমানের বাবা বলেন,‘তারা আমাকে দুই লাখ টাকার চেক দিয়েছে। আমি তো টাকা চাই না, আমি আমার সন্তান চাই। দুই লাখ টাকায় আমার সন্তানের জীবন কিনতে চায় তারা। আমি তাদের দুই কোটি টাকা দিলেও তাদের জীবন তারা আমাকে দেবে? ছেলে হারিয়ে আমার পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। তারপরও আমার ছেলে যতদিন বেঁচে থাকত, আমাদের কামাই-রোজগার করে খাওয়াত–সেই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আমাদের দিতে হবে।’

মোহাম্মদ রাকিব

চরফ্যাশনের আরেক যুবক মোহাম্মদ রাকিব। যার বয়স ১৮ বছর। তিন ভাই এক বোনের সবার আদরের ছোট ভাই। রাকিবের মায়ের নাম: মোসাম্মৎ সাজেদা বেগম, বাবা: তাজুদ্দিন দেওয়ান, গ্রাম: হামিদপুর, ডাকঘর: কেরামতগঞ্জ, থানা: নতুন সুলিজ, উপজেলা: চরফ্যাশন। রাকিব হামিদপুর হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৯ সালের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ভালো ফল করতে পারেননি। তাই তার মন ছিল ভীষণ খারাপ। একদিকে পরীক্ষার ফল খারাপ, আরেকদিকে পরিবারের অভাব-অনটন তাকে কাজে যেতে বাধ্য করেছিল। ২০২০ সালের শুরুর দিকেই তিনি মোতালেব কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে রূপগঞ্জের হাশেম ফুডে চাকরিতে চলে যান। তার বেতন ধরা হয়েছিল সাড়ে আট হাজার টাকা। কাজ করতেন চতুর্থ তলায় লাচ্ছা সেকশনে। থাকতেন হাশেম ফুড কারখানার ভেতরের কোয়ার্টারে।

আগুন লাগার পরবর্তী সময়ে পরিবারের কারো সঙ্গেই রাকিবের কথা হয়নি। আগের দিন সকালে কথা হয়েছিল মায়ের সঙ্গে। তখন মাকে জানিয়েছিলেন, ঈদের এক সপ্তাহ আগেই তাদের ছুটি হয়ে যাবে এবং তিনি মায়ের কাছে ফিরবেন। কিন্তু ছেলেতো ফেরেইনি, তার লাশটা ফেরত পাবেন কিনা, সেই আশঙ্কায় মা যতক্ষণ জেগে থাকেন, ততক্ষণই কাঁদতে থাকেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক মায়ের মুখ থেকে কান্না ছাড়া দু-তিন লাইনের বেশি কথা বের হয়নি। গত কয় মাসেও রাকিবের লাশ ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত হয়নি।

রাকিবের বাবা ও বড় ভাই সাইফুল পেশায় জেলে। মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষেই তাদের বাড়ি। মেঘনা নদীর কিনারে বেড়িবাঁধের সঙ্গে নতুন সুলিজ ঘাট। ঘাটে রং-বেরঙের নিশান ওড়ানো অনেক মাছ ধরার ট্রলার। ঘাট থেকে ৫-৭ মিনিট হাঁটলেই তাদের বাড়ি। কিন্তু বর্ষার সময় এই পথটুকু হাঁটু কাদায় ভরে থাকে। এতটুকু পথ যেতেই ১২-১৪ মিনিট লেগে যায়। আদরের ছোট ভাইটি হাশেম ফুডের আগুনে নিখোঁজ হওয়ার পর দুই ভাই পালা করে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকায় লাশ খুঁজে ফিরছেন। আগুন লাগার সময় পরিবারের সদস্যরা তাকে বহুবার ফোন করেছিলেন; কিন্তু কেউ ফোন ধরেনি। রাত ৯টা পর্যন্ত তার ফোনে রিং বেজেছিল বলে জানান তারা।

গত রমজানের ইদের পর রাকিব আর ওই কারখানায় কাজে যেতে চাইছিলেন না। কিন্তু ঈদের সাত দিন পর মোতালেব কন্ট্রাকটর সাড়ে সাত হাজার টাকা থেকে এক হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে আট হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে রাকিবকে রূপগঞ্জের হাশেম ফুডে নিয়ে যান।

গত রমজানের ইদের পর রাকিব আর ওই কারখানায় কাজে যেতে চাইছিলেন না। কিন্তু ঈদের সাত দিন পর মোতালেব কন্ট্রাকটর সাড়ে সাত হাজার টাকা থেকে এক হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে আট হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে রাকিবকে রূপগঞ্জের হাশেম ফুডে নিয়ে যান।

রাকিবের ভাই শামীম জানান, আগুনলাগার ১৫ দিন আগে রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার সারা শরীরে এলার্জি উঠেছিল। ওষুধ খাওয়ার জন্য কন্ট্রাক্টর মোতালেবের কাছে টাকা চাইলে তিনি টাকা দেননি। অথচ তখনও মোতালেবের কাছে রাকিবের অনেক টাকা পাওনা ছিল। বাড়ি থেকে পাঁচশ টাকা পাঠানোর পর রাকিব ওষুধ কিনে খান। কন্ট্রাক্টরের সরবরাহ করা সব শ্রমিকের মজুরি তার কাছেই থাকত। সবার মজুরিই বাকি পড়ে আছে তার কাছে।

রাকিবের বড় ভাই সাইফুল নদীতে মাছ শিকার করেন। মেজো ভাই শামীম চরফ্যাশনের একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী। লাশ শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের জন্য রক্তের নমুনা দিয়েছেন মেজো ভাই শামীম। কোরবানির ইদের দু-তিনদিন আগে আল-আমিন কন্ট্রাক্টর কারখানায় রাকিবের পাওনা ৯ হাজার ৫০০ টাকা বাড়িতে এসে দিয়ে গেছেন। হাশেম ফুড কর্তৃপক্ষ তাদের ফার্মগেটের কার্যালয় থেকে দুই লাখ টাকার চেক দিয়েছে। চেক দেওয়ার সময় তারা একটি কাগজে স্বাক্ষর রেখেছে। কাগজে কী লেখা ছিল, তা জানেন না কেউ।

রাকিবের মা-বাবাসহ স্বজনরা তাদের সন্তানের অকালমৃত্যুর জন্য দায়ীদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন। মা সাজেদা বেগম বলেন,‘আমার সন্তান আমি হয়তো আর কোনোদিন জীবিত ফেরত পাব না। কিন্তু তার লাশটা যেন আমরা ফেরত পাই, মাটি দিতে পারি, সে ব্যবস্থা করেন, বাবা। আমি আমার আদরের সন্তানের কবরটা আমার চোখের কাছেই দেখতে চাই।’

মো. মহিউদ্দিন

মো. মহিউদ্দিন নামে আরও এক শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন চরফ্যাশনের। তার মায়ের নাম: মোসাম্মৎ ফয়জুন্নেসা, বাবা: মৃত গোলাম হোসেন মাঝি, গ্রাম: আসলামপুর, ৪ নম্বর ওয়ার্ড,ডাকঘর: ভূঁইয়ারহাট, উপজেলা: চরফ্যাশন, জেলা: ভোলা।
মা ও পাঁচ ভাই, তিন বোনের পরিবার তাদের। বোনদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর এবং ভাইদের আলাদা বসবাসের কারণে বর্তমানে তাদের পাঁচ সদস্যের পরিবার। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন মহিউদ্দিন। রোজার ইদের কিছুদিন পর হাশেম ফুডে চাকরিতে যোগদান করেন। তার আগে চট্টগ্রামের বনফুলে বারো-তেরো বছর চাকরি করেছেন। ইদের পর বনফুলের চাকরিতে ফেরার কথা ছিল মহিউদ্দিনের। কিন্তু মোতালেব কন্ট্রাক্টরের প্ররোচনায় এবং বেশি বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে হাশেম ফুডের চাকরিতে যোগদান করেন। কাজ করতেন হাশেম ফুডের চতুর্থ তলার লাচ্চা সেকশনে। থাকতেন হাশেমফুড কারখানা লাগোয়া টিনশেডের কোয়ার্টারে। তার বেতন ধরা হয়েছিল ১২ হাজার টাকা।

আগুন লাগার সময় পরিবারের কারো সঙ্গেই মহিউদ্দিনের কথা হয়নি। ওইদিন দুপুরে কথা হয়েছিল বড় ভাই রফিকের সঙ্গে। ৬ তারিখে আরেক বড় ভাই সালাউদ্দিনকে ফোনে বলেছিলেন,‘ভাই, ঈদের অনেক আগেই বৃহস্পতিবার আমাদের কাজ শেষ এবং ছুটি, শুক্রবার আমার বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করবা।’ বড় ভাই বলেছিলেন, গাড়ি না চললেও ভোলাগামী মালবাহী জাহাজে তুলে দেবেন তাকে। ছেলের সঙ্গে শেষ কথাটাও বলতে না-পারার কারণেই মায়ের কান্না আর থামছেই না। আলনায় সযত্নে গুছিয়ে রাখা মহিউদ্দিনের শার্ট, প্যান্ট, কাপড়-চোপড় বের করেন, তার ঘ্রাণ নেন, আর সারাদিন বিলাপ করেন। কেঁদে কেঁদে বলছেন, ‘তোমরা আমার ছেলের লাশটা অন্তত আমাকে ফেরত দাও।আমি আমার কাছেই দাফন করে অন্তত কবরটা যেন দেখতে পারি।’ মহিউদ্দিনের লাশ গত কয় মাসেও শনাক্ত হয়নি। ভাইয়েরা এখনো পালা করে নারায়ণগঞ্জের হাশেম ফুড ও ঢাকা মেডিকেলে মহিউদ্দিনের লাশ খুঁজে ফিরছেন।

ছেলের সঙ্গে শেষ কথাটাও বলতে না-পারার কারণেই মায়ের কান্না আর থামছেই না। আলনায় সযত্নে গুছিয়ে রাখা মহিউদ্দিনের শার্ট, প্যান্ট, কাপড়-চোপড় বের করেন, তার ঘ্রাণ নেন, আর সারাদিন বিলাপ করেন।

মহিউদ্দিনের পিঠাপিঠি বড় ভাই চাকরি করেন। বড় তিন ভাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বসবাস করেন। তারা মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মেজো ভাই রফিক নদীতে মাছ ধরার অপরাধে ছয় বছর জেল খেটে এখন মুক্ত। জমিজমাসংক্রান্ত ঝামেলায় তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়াহয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। তার কারামুক্তির জন্য পরিবারকে ছয় লাখ টাকা ঋণ করতে হয়েছে। পুরো পরিবার এখন ঋণে জর্জরিত। বাবা গোলাম হোসেন মাঝি ব্লাড ক্যানসারের রোগী ছিলেন। ছয় বছর আগে তিনি মারা যান। ভাই সালাউদ্দিন জানান, তাদের তিন একর চাষের জমি ছিল। এমপি জ্যাকবের ভাই সম্পূর্ণ জমি দখল করে সেখানে তাদের বাবার নামে গুচ্ছগ্রাম করেছেন। তারা গরিব বলে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি।

হাশেম ফুডে মহিউদ্দিনের এখন কোনো বকেয়া পাওনা নেই। আল-আমিন কন্ট্রাকটর পাওনা বেতন বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেছেন। হাশেম ফুডের ফার্মগেটের অফিস থেকে দুই লাখ টাকার চেক দিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর রেখেছে। কাগজে কী লেখা ছিল, তারা পড়ে দেখতে পারেননি। ডিএনএ টেস্টের জন্য দুই ভাই ও এক বোন রক্তের নমুনা দিয়েছেন। মা ও ভাইয়েরা মহিউদ্দিনের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচার দাবি করেছেন। ভাই সালাউদ্দিন বলেন, ‘টাকা দিয়ে জীবনের মূল্য নিরূপণ করা যায় না। তার মৃত্যুতে আমাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়।’

মোহাম্মদ শামীম হোসেন

মোহাম্মদ শামীম হোসেন নামে ১৮ বছরের আরও এক যুবক হাশেম ফুডের অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ আছেন। তার বাড়িও চরফ্যাশনে। শামীমের মায়ের নাম: বিবি সুলতানা, বাবা: হাফেজ ফখরুল ইসলাম, গ্রাম: হরিশ নৌলা, ৮ নম্বর ওয়ার্ড, ডাকঘর: মাঝের চর, ইউনিয়ন: অধ্যক্ষ নজরুল নগর, থানা: দক্ষিণ আইচা, উপজেলা: চরফ্যাশন, জেলা: ভোলা।
বাবা হাফেজ ফখরুল ইসলাম জানান, গত রোজার ঈদের কিছুদিন পর শামীম হাশেম ফুডে যোগ দেন। হাশেমফুড কারখানা সংলগ্ন টিনশেডের কোয়ার্টারে থাকতেন শামীম। বেতন ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। বেতনের এই টাকা আল-আমিন কন্ট্রাক্টর কিছুদিন আগে বাড়িতে পৌঁছে দেন। হাশেমফুডের আগে চট্টগ্রামের বনফুলে ছয় বছর চাকরি করেছেন শামীম। তখন বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা। কন্ট্রাক্টর মোতালেব বাড়তি বেতন দেওয়ার কথা বলে শামীমকে হাশেম ফুডে নিয়ে যান। কথা বলতে বলতেই ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন শামীমের বাবা হাফেজ ফখরুল ইসলাম। ছেলের জন্মনিবন্ধনের কাগজ, ছবি ইত্যাদি বারবার উলটেপালটে দেখছেন, কাঁদছেন আর বলছেন, ‘আমার শামীমের লাশ খুঁজে পেতে আমার আর কি কাগজপত্র লাগবে আমারে বলেন। হাশেমফুড আর মোতালেব কন্ট্রাক্টর আমার বুকের ধনকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিছে। আমি আমার সন্তানের লাশটা হলেও পেতে চাই! আমি যেন তার কবর জিয়ারত করে মরতে পারি, সেই ব্যবস্থা করে দেন।’ তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। পরিবারের আর কেউ উপার্জনক্ষম নেই। নিজেদের চাষের কোনো জমি নেই। শ্বশুরের দেওয়া ভিটেবাড়িই তাদের একমাত্র সম্বল। লাশ শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের জন্য রক্তের নমুনা দিয়েছেন বাবা ফখরুল ইসলাম। হাশেমফুডের ফার্মগেটের অফিস থেকে দুই লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে তার হাতে এবং একটি কাগজে স্বাক্ষর রাখা হয়েছে।

হাফেজ ফখরুল ইসলাম তার একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচার চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো অর্থের বিনিময়ে আমি আমার সন্তানের জীবন ফিরে পাব না। তারপরও আমার সন্তান বেঁচে থাকলে যতদিন আয়-রোজগার করত, যত পরিমাণ আয়-রোজগার করত, তার সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

শাকিল

চরফ্যাশনের নিখোঁজ আরেক যুবকের নাম শাকিল। যার লাশ কোনোদিন শনাক্ত হবে না! বয়স ছিল ২৩ বছর। শাকিলের রক্তের সম্পর্কের কেউ-ই আর বেঁচে নেই। বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই মারা গেছেন। লাশ শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের জন্য রক্তের নমুনা দেওয়ারও কেউ নেই! শাকিলের খালা এবং তার ছেলেমেয়ে আছে। কিন্তু তারা শাকিলের লাশ খুঁজে পেতে কোনো ভূমিকা রাখছেন না। মা: মৃত. বিনু বেগম, বাবা: মৃত মো. হাফিজ, গ্রাম: ওসমানগঞ্জ, ডাকঘর: লতিফ মিয়ার হাট, থানা: চরফ্যাশন, জেলা: ভোলা।

শাকিলের স্ত্রী সীমা আক্তারের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আনোয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেই শাকিলের সম্পর্কে জানা গেল। শাকিল তিন মাস চাকরি করেছেন হাশেম ফুডে। তার আগে চাকরি করতেন চট্টগ্রামের বনফুলে। কন্ট্রাক্টর মোতালেব বেশি বেতন দেওয়ার কথা বলে তাকে হাশেম ফুডে নিয়ে যান। হাশেমফুডের চতুর্থ তলায় লাচ্ছা সেকশনে কাজ করতেন শাকিল। থাকতেন হাশেমফুড কারখানা সংলগ্ন কোয়ার্টারে। নিখোঁজ হওয়ার ছয় মাস আগে সীমা আক্তারকে বিয়ে করেন শাকিল। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার আগে কারখানার কাজের চাপে বিয়ের দিনই তাকে ফিরে যেতে হয়েছিল কর্মস্থলে। শাকিল নিখোঁজ হওয়ার মধ্য দিয়ে মেহেদির রং মুছতে-না-মুছতেই স্ত্রী সীমা আক্তার শাকিলকে হারালেন! অগ্নিকাণ্ডে শাকিল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সীমা নির্বাক হয়ে আছেন। খাওয়া-গোসল সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেছে তার। কারো সঙ্গে কথা বলছেন না। সারাদিন চোখের জল ঝরছে তার।

স্ত্রীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার আগে কারখানার কাজের চাপে বিয়ের দিনই তাকে ফিরে যেতে হয়েছিল কর্মস্থলে। শাকিল নিখোঁজ হওয়ার মধ্য দিয়ে মেহেদির রং মুছতে-না-মুছতেই স্ত্রী সীমা আক্তার শাকিলকে হারালেন! অগ্নিকাণ্ডে শাকিল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সীমা নির্বাক হয়ে আছেন। খাওয়া-গোসল সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেছে তার। কারো সঙ্গে কথা বলছেন না। সারাদিন চোখের জল ঝরছে তার।

কারখানায় যে পাওনা ছিল, তা কন্ট্রাক্টর আল-আমিন সীমার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আনোয়ার ইসলামের হাতে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি জানান, হাশেম ফুডের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকার চেক ‘এস আর’ পদবির মহিউদ্দিন নামের কারখানার এক লোক তার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

—-

নিখোঁজ ব্যক্তিদের বাইরেও হাশেম ফুডে কাজ করতেন এরকম বেশ কিছু শ্রমিকের সঙ্গে আমার কথা হয়। এদের মধ্যে তিনজনের সঙ্গে আলাপচারিতার সারসংক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো:

মোহাম্মদ ফয়সাল, বয়স ২১ বছর। আগুন লাগার সময় ফয়সাল চতুর্থ তলায় লাচ্ছা সেকশনে কাজ করছিলেন। প্রায় চার বছর ধরে তিনি হাশেম ফুডে চাকরি করছেন। এর আগেও চট্টগ্রামের বনফুলে তিন বছর চাকরি করেছেন। মোতালেব কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে তিনি হাশেম ফুডে চাকরিতে যোগদান করেন। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে তারা বুঝতে পারেন, তাদের কারখানার নিচের দিকে আগুন লেগেছে। বুঝতে পেরে তারা প্রাণে বাঁচার জন্য ছোটাছুটি শুরু করেন। প্রথমেই সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে নামতে চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রচণ্ড ধোঁয়া এবং গরমে কিছুই চোখে দেখছিলেন নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না। নিচেও নামতে পারছিলেন না। তাই প্রাণ বাঁচাতে আবার স্টোরের সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে ওঠেন। স্টোরের এই সিঁড়িটির ছাদের গেটের তালা সবসময় বন্ধ থাকলেও ওই সময় খোলা ছিল। ছাদে উঠে দেখেন তার আরও অনেক সহকর্মী সেখানে জীবন বাঁচানোর জন্য সাহায্য চাইছেন, ছোটাছুটি করছেন, কান্নাকাটি করছেন। কেউ কেউ স্যান্ডেলে নিজের নাম লিখে নিচে ফেলছেন। এভাবেই দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় পর তারা দেখতে পান, ফায়ার সার্ভিসের একটি মেশিনের সাহায্যে ছাদের কিনারে রশি পাঠানো হয়েছে। সেই রশি বেয়ে তিনি কারখানার পাশের একতলা টিনশেড বিল্ডিংয়ের ছাদে নামেন। সেখান থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামেন। নামতে গিয়ে তার হাত-পা ছিলে গিয়েছিল। তবে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়নি। নেমেই তিনি অন্যদের সঙ্গে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন এবং সহকর্মীদের খুঁজতে থাকেন। ভাবতে থাকেন কখন এই সর্বনাশা আগুন নিভবে এবং তার সহকর্মীরা বেরিয়ে আসবেন। তিনি সারারাতই কারখানার সামনে ছিলেন। আগুন লাগার সময় চতুর্থ তলায় ২০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন বলে জানান ফয়সাল। এই ২০ জনের মধ্যে ১৪ জনই মারা গেছেন এবং মাত্র ছয়জন বেঁচে আছেন বলে জানান তিনি। বিকেল ৫টায় একটি শিফটের ছুটি হওয়ার কারণেই চতুর্থ তলায় ওই সময় শ্রমিক কম ছিল বলে জানান তিনি।

মো. আল-আমিন। বয়স ১৭ বছর। মায়ের নাম: পিয়ারা বেগম, বাবা: মো. শাহ আলম, গ্রাম: আব্দুল্লাহপুর, ডাকঘর: দক্ষিণ শিবা, মিনাবাজার, ৭ নম্বর ওয়ার্ড, থানা: চরফ্যাশন।

আল-আমিন মিনাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। স্কুল বন্ধ তাই কাজে গিয়েছিল সে। স্কুল খুললেই আবার পড়াশোনা শুরু করবে বলে জানায় আল-আমিন। কাজ করত হাশেম ফুডের চতুর্থ তলায় লাচ্ছা সেকশনে। এক বছর কাজ করেছে সেখানে। থাকত হাশেমফুড কারখানার লাগোয়া কোয়ার্টারে। তার বেতন ধরা হয়েছিল নয় হাজার টাকা। আগুন লাগার দিন পর্যন্ত কারখানায় তার সাত হাজার টাকা বকেয়া ছিল। সেই টাকা এখনো পায়নি।

আল-আমিন মিনাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। স্কুল বন্ধ তাই কাজে গিয়েছিল সে। স্কুল খুললেই আবার পড়াশোনা শুরু করবে বলে জানায় আল-আমিন।

কোয়ার্টারে নিয়মিত ৪০ জন থাকত। মাঝে মাঝে কম বা বেশিও থাকত। আল-আমিন ওইদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রথম শিফটে কাজ করে কোয়ার্টারে বিশ্রাম নিচ্ছিল। বিকেল সাড়ে ৫টার সময় প্রথম আগুন দেখে তার সহকর্মী রাজিব চিৎকার দিয়ে নিচের গেটে চলে যান। রাজিবের সঙ্গে বাকি সবাই কারখানার সামনে গিয়ে খুঁজতে থাকেন সহকর্মীদের। আল-আমিন জানায়, তারা সবাই চেষ্টা করে আগুন নেভানোর। নিচতলায় যারা কাজ করতেন, তাদের কাউকেই সে চিনত না। নিচতলার গেটে দারোয়ান ছিল কিনা, তা ঠিক খেয়াল নেই তার। দারোয়ান থাকলেও তাকে চেনেনা সে। তারা কারখানার সামনে গিয়ে দেখে আগুন দ্বিতীয় তলায় জ্বলছে এবং তৃতীয় তলার দিকে উঠছে। সিঁড়ির নিচের গেট সাধারণত খোলা থাকত বলে জানায় আল-আমিন। তবে ছাদের গেট সবসময় তালা মারা থাকত। কারখানায় দুটি সিঁড়ি। দুটিরই মুখ ভেতরের দিকে। তারা দুই শিফটে কাজ করত। তাদের প্রথম শিফট শুরু হতো দুপুর ২টায়। দ্বিতীয় শিফট রাত ২টায়। উভয় শিফটেই ৪০০-৫০০ শ্রমিক কাজ করতেন। চরফ্যাশনের আল-আমিন নামের কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে হাশেম ফুডে কাজে যোগদান করে সে।

প্রথম শিফটে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করে বেঁচে যাওয়া আর এক শ্রমিকের নামও আল-আমিন। মায়ের নাম: জোসনা বেগম, বাবা: মোহাম্মদ লিটন, গ্রাম: এওয়াজপুর, ডাকঘর: কাশেমগঞ্জ, থানা: শশীভূষণ, উপজেলা: চরফ্যাশন। তার বয়স ১৮ বছর। তিনি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কাজ করতেন হাশেম ফুডের চতুর্থ তলায় লাচ্ছা সেকশনে। থাকতেন কারখানা লাগোয়া টিনশেডের কোয়ার্টারে। তার বেতন ধরা হয়েছিল ১১হাজার টাকা।

তিনি জানান, কন্ট্রাক্টরের সরবরাহ করা কোনো শ্রমিকেরই পরিচয়পত্র বা নিয়োগপত্র ছিলনা। শ্রমিকদের বেতন জমা হতো কন্ট্রাক্টরেরকাছে। কন্ট্রাক্টর প্রতিমাসে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতেন। কন্ট্রাক্টর মনে করতেন, একবারে সম্পূর্ণ বেতন পরিশোধ করে দিলে শ্রমিকরা কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে পারেন। তাই সম্পূর্ণ বেতন কখনোই পরিশোধ করা হতোনা। দু-তিন মাস পরপর শ্রমিকরা টাকা চাইলে কিছু টাকা দেওয়া হতো। মোতালেব কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমেই আল-আমিন হাশেম ফুডের চাকরিতে যোগদান করেন। আনুমানিক দুপুর ৫টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন লাগার কথা শুনেই আল-আমিন কোয়ার্টার থেকে কারখানার সামনে গিয়ে দেখেন আগুন জ্বলছে। তিনিও অন্যদের সঙ্গে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন এবং সহকর্মীদের খুঁজতে থাকেন। নিচতলার গেটে কখনোই দারোয়ান দেখেননি বলে জানান আল-আমিন। এমনকি নিচতলায় যারা কাজ করতেন, তাদের কাউকেই তিনি চেনেন না বলে জানান।

শহীদুল ইসলাম সবুজ: রাজনৈতিক সংগঠক

ইমেইল: sabuj.shahidul933@gmail.com

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •