কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার কর্মপরিকল্পনা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলন

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার কর্মপরিকল্পনা

গত ২৪ আগস্ট ২০২১ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া ও তার জন্য বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব পেশের জন্য এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এই সম্মেলন সঞ্চালনা করেন গীতি আরা নাসরীন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মূল বক্তব্য পাঠ করেন মাইদুল ইসলাম (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)। আলোচনা করেন: আনু মুহাম্মদ (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), কামরুল হাসান মামুন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়), আরাফাত রহমান (বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ), কাজী মারুফুল ইসলাম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), নাসির উদ্দিন (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন: মানস চৌধুরী, রবিউল আলম, ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা, তপন মাহমুদ লিমন, বখতিয়ার আহমেদ, মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সামিনা লুৎফা, রুশাদ ফরিদী ও সৌভিক রেজা। এখানে উপস্থাপিত লিখিত বক্তব্য প্রকাশ করা হলো। উল্লেখ্য যে, এই সংগঠন এর আগে অনলাইন শিক্ষা যথাযথ পরিচালনার জন্য বিস্তৃত প্রস্তাব দিয়েছিল।

গত ১ জুলাই ২০২০ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত একটি প্রেস কনফারেন্সে আমরা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একটি সুষ্ঠু অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করেছিলাম। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের অনলাইন শিক্ষা প্রক্রিয়ার সামর্থ্যের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে এসব প্রতিবন্ধকতা উত্তরণের নানা উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, দেশের ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে রচিত এ বক্তব্য থেকে কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থায়, বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তবে এক বছর ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা হতাশ হয়েছি। কারণ, আমাদের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে, যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ফেলা হয়েছে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে, যা নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। অনলাইন লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করে নিজস্ব সামর্থ্য বৃদ্ধি না করে গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে এবং কনফারেন্সিং অ্যাপ জুমে একধরনের জোড়াতালি দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।

বুয়েট বা দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ শিক্ষার্থীর ডিভাইস পাওয়া নিশ্চিত করতে পারলেও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েরই অনেক শিক্ষার্থী নেটওয়ার্ক দুর্বলতা, ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, ডিভাইস না-থাকা প্রভৃতি কারণে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যথাযথভাবে অংশ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষা অনলাইনে চলে যাওয়ায় দুর্বল নেটওয়ার্ক এলাকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ঢাকা বা বড় শহরে এসে গাদাগাদি করে নিজস্ব অর্থায়নে থাকার ব্যবস্থা করে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।এটি একদিকে যেমন তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে, তেমনি তাদের ওপর অন্যায় অর্থনৈতিক বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।

অথচ গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন এবং ইউজিসি পরিস্থিতির উন্নতি করার মতো যথেষ্ট সময় পেয়েছিল বলে আমরা মনে করি। এ সময় কাজে লাগিয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও আবাসিক হলের পরিবেশের উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের কোভিড টেস্ট করা ও টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোমেশন, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলা, মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে দর-কষাকষি করে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেত, যা অর্জন করতে দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হয়েছে। তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশের ইন্টারনেটের স্পিড বা গতি বিশ্বের সর্বনিম্ন অবস্থানের দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে উপস্থিতির বদলে এই ধীরগতির অনলাইন ব্যবস্থাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খোলার ব্যপারে তাদের সদিচ্ছার অভাব আমাদের হতাশ করেছে।

গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন এবং ইউজিসি পরিস্থিতির উন্নতি করার মতো যথেষ্ট সময় পেয়েছিল বলে আমরা মনে করি। এ সময় কাজে লাগিয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও আবাসিক হলের পরিবেশের উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের কোভিড টেস্ট করা ও টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোমেশন, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলা, মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে দর-কষাকষি করে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেত, যা অর্জন করতে দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হয়েছে। তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশের ইন্টারনেটের স্পিড বা গতি বিশ্বের সর্বনিম্ন অবস্থানের দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়।

উচ্চশিক্ষায় এ ধরনের বিরূপ আর হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে আরও দুঃসংবাদ হলো, করোনার প্রকোপ শিগগির কমে যাচ্ছে না। তবে সরকারি নির্দেশে এর মধ্যেই আগস্টের ১১ তারিখ থেকে লকডাউন উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সড়ক, রেল ও নৌপথে সব ধরনের গণপরিবহণ চলাচল করতে পারছে। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৯ আগস্ট থেকে পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, তার দিন-তারিখ এখনো ঘোষিত হয়নি। সবশেষ খবরে জানা যাচ্ছে, সরকার সেপ্টেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই সবার আগে খুলে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস তাদের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে নিয়েছে, যা আশার সঞ্চার করে।

উল্লেখ্য যে, সারা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই (অনেক দেশে সংক্রমণের হার আমাদের থেকে বেশি থাকা অবস্থায়ও) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানাভাবে খোলা ছিল। ইতালি, ইংল্যান্ড কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছিল, তখনও এসব দেশ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়নি। যেখানে লকডাউন বা রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেসব জায়গায় শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। যদিও অনলাইন ক্লাস তখনও চালু ছিল। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও কখনো দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখা হয়নি। যেখানে সংক্রমণ বেশি খারাপ, সেখানে স্কুল সাময়িক বন্ধ রেখেছে। ইউনেসকোর গবেষণায় দেখা গেছে যে, অল্পকিছু (১৯টি) দেশ বছর জুড়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে, বাংলাদেশ তাদের একটি। এই দেশগুলোর মধ্যে প্রায় কোনোটিই উন্নত দেশ নয় এবং কোনোটিরই করোনা পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল না যে, দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। বছর জুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোটি কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সশরীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পাঠ গ্রহণের সুযোগ পাওয়ার জন্য সংক্রমণশূন্যে নামা বা সবার টিকা নিশ্চিত করার জন্য আর অপেক্ষা করা যায় না। কারণ, সংক্রমণের প্রধান চালিকা শক্তিগুলোর মধ্যে এধরনের শিক্ষায়তন আছে বলে কোনো তথ্য-প্রমাণ এখনো আমাদের গোচরে আসেনি।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশে শিক্ষায়তন খুলে না-দেওয়ার মনোভাবটি পাবলিক শিক্ষাকে দুর্বল বা অনুপযুক্ত দেখানোর অভিপ্রায় থেকে আসতে পারে। এই মনোভাবটি নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নতুন কিছু নয়। তবে করোনা উপলক্ষ্যে এ ধরনের মানসিকতা একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

তাছাড়া অক্সফোর্ডের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, টিকাদানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেক পেছনে পড়ে আছে–দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও সবার নিচে। কাজেই টিকা শেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবলে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও মননের ওপর যে চাপ তৈরি হবে, তা সামাল দেওয়ার কোনো নিদান আমাদের হাতে যে নেই, সেটা মনে রাখা দরকার। তবে আমাদের দেশেও করোনার প্রকোপের প্রায় পুরো সময় অনেক কওমি মাদ্রাসা খোলা ছিল। সেখান থেকেই সংক্রমণ বেশি হয়েছে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্তও আমাদের হাতে নেই।

কাজেই আমরা মনে করি, সবকিছু খুলে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে শিক্ষার প্রতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি অন্যায় করছি।

তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কীভাবে চালু করা যায়, তার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা জারি রাখতে হবে এবং সেটা দৃশ্যমান হতে হবে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবসমূহ নিম্নরূপ:

১। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেটি না করলে প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতীকী ক্লাস নেওয়া শুরু করবেন।

২। অবিলম্বে (১ সেপ্টেম্বর থেকে) বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে ফেরার সুযোগ করে দিতে হবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথম থেকেই পূর্ণ কার্যক্রম শুরু করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাই আবাসিক হলে প্রথমে শুধু অনার্স এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা, যারা তাদের শিক্ষাজীবনের শেষের দিকে রয়েছে, তাদের ওঠার অনুমতি থাকবে। আবাসিক হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না-করে কোনোভাবে এসব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু করা যাবে না। এসব ছাত্র-ছাত্রীর পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী ব্যাচগুলোর ধাপে ধাপে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। প্রাথমিক ধাপে যেসব শিক্ষার্থী হলে থাকবে আর যারা বাসা থেকে আসবে, তাদের পরীক্ষা আলাদা রুমে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৩। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ না করলেই নয়, আমাদের ছাত্রাবাসগুলোর আবাসিক ব্যবস্থা খুবই খারাপ। হলগুলোয় গণরুম থাকে। পরিবেশের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। এগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন আবাসিক হলে গণরুম নামক কোনো ব্যবস্থা থাকতে না পারে, তার সমাধানে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ছাত্রাবাসগুলোয় যাতে শুধু শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে অবস্থান করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া হলগুলোয়ও প্রাথমিক চিকিৎসা এবং শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে কাজ করে পুরোদমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আবাসিক হলের অবস্থা আর আগের মতো থাকতে পারে না। করোনার এই দুর্যোগ পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি সুযোগ এনে দিয়েছে আবাসিক হলগুলো ঢেলে সাজানোর। তাই আবাসিক ব্যবস্থাকে উন্নত করার পরিকল্পনা প্রশাসন এবং সরকারকে এখনই ভাবতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আবাসিক হল ব্যবস্থাপনা পরিপূর্ণভাবে শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে, ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে নয়।

৪। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোয় শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেস্ট এবং টিকাদানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে হলে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীরা কোভিড টেস্ট এবং টিকাগ্রহণে অগ্রাধিকার পায়। ক্যাম্পাসে ব্যবস্থা করা গেলে সবচেয়ে ভালো হয়, তাতে শিক্ষার্থীরা ভিড় এড়িয়ে টিকা নিতে পারবে।

৫। ক্যাম্পাসগুলোয় অবস্থিত মেডিকেল সেন্টারগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইসোলেশনের ব্যবস্থা, অসুস্থ হলে শিক্ষার্থীদের দেখাশোনার ব্যবস্থা উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে জেলা বা বিভাগীয় সদর হাসপাতালের আইসিইউ শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের প্রয়োজনে বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৬। পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদানের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তবে এখানেও করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ৫০ শতাংশ অনলাইন এবং ৫০ শতাংশ অফ লাইন ক্লাস চালু করা যেতে পারে। ৫০ শতাংশ অফ লাইন ক্লাসের মধ্যে ব্যবহারিক ক্লাস এবং অন্যান্য কার্যক্রম যেগুলো অনলাইনে করা কঠিন, সেসব থাকতে পারে।

৭। এছাড়া অনলাইন ক্লাসেও হাইব্রিড পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসতে পারবে, তারা সশরীরে অনসাইট ক্লাস করবে। যারা পারবে না, তারা অনলাইন ক্লাসে অংশ নেবে। ক্লাসে এসে কেউ অসুস্থ হলে সে অনলাইনে চলে যাবে। কিন্তু যারা ক্লাসে এসেছে, তাদের এবং শিক্ষকের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করার ভালো ব্যবস্থা তৈরি রাখতে হবে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে আবার পুরো অনলাইনে যাওয়া যেতে পারে।তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার যেন হাইব্রিড পদ্ধতিতে ফিরে আসা যায় তার প্রস্তুতি রাখতে হবে।

৮। শিক্ষকদের অনলাইন টিচিং লার্নিং ম্যানেজমেন্টের সিস্টেম তৈরি করার জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা কমিটি গঠন করে এর কাজ শুরু করতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯। এখন প্রচুর মানুষ (শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়) আছেন, যারা আগে কখনো মানসিক সমস্যায় ভোগেননি। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে উপর্যুপরি লকডাউনের চাপে সামাজিক সম্পর্কের শিথিলতা, সামাজিক মেলামেশা বন্ধ থাকা, পরিবারের সদস্যের মৃত্যু বা অসুস্থতা, নিজের অসুস্থতা বা ভয় প্রভৃতি নিয়ে বেশিরভাগ মানুষই দারুণ মানসিক চাপে আছেন। অনেকেই অ্যাংজাইটি বা ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন গুরুতর মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

১০। অনলাইনে সুষ্ঠুভাবে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সার্ভিসের বিশেষ প্যাকেজ চালু করতে হবে।

১১। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার সেফটি নেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •