কুমিল্লা থেকে পীরগঞ্জ: সাম্প্রদায়িক হামলার সময়চিত্র

কুমিল্লা থেকে পীরগঞ্জ: সাম্প্রদায়িক হামলার সময়চিত্র

সূত্র: ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা, ২১ অক্টোবর, ২০২১

গত ১৩ অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক হিন্দু মন্দির, ঘরবাড়ী, গ্রামে আক্রমণ ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশের অগোছালো তৎপরতায় প্রাণহানি ঘটেছে মানুষের, উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কারা এই হামলা চালিয়েছে, দেশ বিদেশের কারা এর ইন্ধনদাতা/পৃষ্ঠপোষক তা নিয়ে নানা বক্তব্য আছে। গত এক দশকে বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক হামলার অপরাধীদের সনাক্ত ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এখানে ১৩ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন হামলা ও সরেজমিন অনুসন্ধান নিয়ে সংবাদপত্রের বিভিন্ন খবর/প্রতিবেদনের মূল অংশ প্রকাশ করা হলো।

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়া নিয়ে শহরে উত্তেজনা, মণ্ডপে হামলা

১৩ অক্টোবর ২০২১, বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরের একটি পূজামণ্ডপ থেকে কোরআন পাওয়ার পর বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার পূজা উদযাপন কমিটির সম্পাদক নির্মল পাল।

তিনি বলেন শহরের নানুয়ারদীঘি এলাকার একটি পূজামণ্ডপের প্রতিমায় কোরআন রাখার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ গিয়ে তা সরিয়ে নেয়। কিন্তু এর পর পরই একদল ব্যক্তি বেশ কিছু পূজামণ্ডপে হামলার চেষ্টা চালায়।

“পূজা বানচালের জন্য পরিকল্পিতভাবে কোরআন রেখে এ ঘটনা ঘটিয়ে তারাই এখন শহরজুড়ে পূজাবিরোধী বিক্ষোভ করছে। কয়েকটি মণ্ডপে হামলার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু পুলিশের বাধায় ভেতরে ঢুকতে না পারলেও গেইট বা সামনের স্থাপনা ভাংচুর করেছে,” বলছিলেন তিনি।

জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তারা এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।

“আমরা টহল দিচ্ছি। আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। কয়টি মণ্ডপে হামলার চেষ্টা হয়েছে এ মূহুর্তে বলতে পারছি না। পরিস্থিতি ঠিক হলে আমরা বিস্তারিত জানাবো,” বেলা চারটার দিকে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বিবিসিকে বলেছেন বেলা এগারটার দিকে হঠাৎ কোরআন অবমাননা হয়েছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে শহর জুড়ে।

তিনি বলেন দশটার পর নানুয়ারদীঘির মণ্ডপে কোরআন নজরে পড়লে দ্রুত পুলিশকে জানানো হয় এবং পুলিশ তখনি এসে কোরআনটি সরিয়ে নেয়। “কিন্তু খবরটি খুব দ্রুত ছড়ানো হয় এবং কয়েকটি মাদ্রাসার লোকজন ছাড়াও স্থানীয় অনেকে প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে সেখান থেকে মণ্ডপ গুলোতে হামলা করা শুরু হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়”। তিনি বলেন কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গেলেও সেগুলো কোথায় হয়েছে তা বোঝা যায়নি। এদিকে ঘটনার পরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোরআন অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে ব্যাপক প্রচার শুরু হয় এবং অনেকে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনেকে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেন। প্রসঙ্গত, বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায় এখন তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করছে।

কুমিল্লার পর চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, প্রাণহানি

১৪ অক্টোবর ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কুমিল্লার ঘটনার পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর হয়েছে। হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে, জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা, মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।

সংঘর্ষের পর হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিনজনের লাশ আসার কথা জানিয়েছেন কর্তব্যরত এক চিকিৎসক। তবে সংঘর্ষে কারও নিহত হওয়ার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। বুধবার সকালে কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুর নাগাদ কুমিল্লায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেও পাশের জেলা চাঁদপুরে সন্ধ্যার পর মন্দিরে হামলা হয় বলে হাজীগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রুহিদাস বণিক জানিয়েছেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ৮টার পর উপজেলার মনিনাগ এলাকা থেকে একটি মিছিল এসে মন্দিরে (লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া) হামলা চালায়।” বাজারের ওই মন্দির ছাড়াও আরও কয়েকটি স্থানে মন্দিরে হামলা হয়েছে বলেও জানান রুহিদাস। হামলাকারীদের পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় পুলিশ গুলি ছোড়ে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

হাজীগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ বলেন, “আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” এর মধ্যেই রাত ৮টার দিকে হতাহত কয়েকজনকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুলতান মাহমুদ বলেন, “তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। মৃতদেহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।” ওই তিনজন হলেন- হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল এলাকার আল আমিন রাজু (১৮), রান্ধুনিমুড়ার ইয়াসিন হোসেন হৃদয় (১৪) ও হাজীগঞ্জ বিজনেস পার্কের শ্রমিক বাবলু (২৮)। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এসএম শোয়েব আহমেদ চিশতী বলেন, “৮-১০ জন গুরুতর আহত অবস্থায় এসেছে। তাদের কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড (জেলা হাসপাতালে) করা হয়েছে।” তিনজনের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগে মারা গেছে নাকি পরে, সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি চিকিৎসকরা।

সংঘর্ষে নিহতের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে না পারলেও ১৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাজীগঞ্জের ওসি হারুন। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, “মৃত্যুর কথা শুনেছি। তবে কয়জন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও।” কতটি মন্দির আক্রান্ত হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তা-ও এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।”

পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি

সহিংস পরিস্থিতিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

একই সঙ্গে বুধবার রাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানিয়েছেন। হাজীগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ রাতে বলেন, “হাজীগঞ্জ বাজারের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পূজার নিরাপত্তায় ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন

১৪ অক্টোবর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

হিন্দু ধর্মাম্বলীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার নিরাপত্তা রক্ষায় ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশব্যাপী বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুর্গা পূজার নিরাপত্তা রক্ষায় দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে।’ ‘এখন পর্যন্ত কুমিল্লা, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জসহ ২২ জেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।

ভারত: বাংলাদেশের হিন্দুদের রক্ষার জন্য নরেন্দ্র মোদীকে পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানালেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা

১৪ অক্টোবর ২০২১, বিবিসি বাংলা

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভায় বিরোধীদলীয় প্রধান ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের হামলা থেকে ‘সনাতনী জনগণ‌’কে রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে। বৃহস্পতিবার মি. মোদীর কাছে লেখা এক চিঠিতে মি. অধিকারী বলছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় এখন চরম দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। তার ভাষায়, ভ্যান্ডাল বা ‘ধংসোন্মাদ’রা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করে প্রতিমা মণ্ডপ এবং মন্দিরে আক্রমণ চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। এসব কারণে বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য এবারের দুর্গা পূজার আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে বলে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন।

নোয়াখালীতে পূজামণ্ডপে দফায় দফায় হামলা-ভাংচুর, ১৪৪ ধারা

১৫ অক্টোবর ২০২১,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বিজয়া দশমীর দিনে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে কয়েকটি পূজামণ্ডপ এবং হিন্দুদের বাড়িঘরে দফায় দফায় হামলা-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। পুলিশ জানিয়েছে, হামলা-ভাংচুরের সময় এক ব্যক্তি ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে’ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৮ জন।

ফাঁকা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে পুলিশ পরে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে বলে বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ ইমরান জানান। শুক্রবার জুমার নামাজের পর মণ্ডপগুলোতে যখন বিসর্জনের প্রস্তুতি চলছে, তখনই হামলার শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন পূজামণ্ডপে দফায় দফায় হামলা-ভাংচুর চলে। শাহ ইমরান বলেন, “এ সময় চৌমুহনী কলেজ রোডের বিজয়া পূজামণ্ডপে অগ্নিসংযোগ ও হিন্দুদের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।  যতন সাহা নামে ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি সে সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।” যতন সাহা কুমিল্লার তিতাস উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মনোরঞ্জন সাহার ছেলে। তিনি পূজা উপলক্ষে চৌমুহনীতে এক আত্মীয়র বাড়িতে এসেছিলেন।

বেগমগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস জানান, পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম, বেগমগঞ্জ থানার ওসি কামরুজ্জামান শিকদার, পরিদর্শক রুহুল আমিনসহ আহত ১৮ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সদর হাসপাতালের আরএমও সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে তাদের হাসপতালে আনা হয়েছে। যতন সাহাকে তাদের হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয় বলে জানান চিকিৎসক আজিম। তবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। জেলার ডিসি খোরশেদ আলম বলেন, “পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে চৌমুহনীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কাল সকাল-সন্ধ্যা চৌমুহনী বাজারে সেখানে১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।”

কুমিল্লায় পুলিশ সময়মতো আসেনি, অভিযোগ মন্দির কমিটির

১৫ অক্টোবর ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নানুয়া দীঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে হামলা হয় বুধবার সকালে। এরপর বেলা ১১টার দিকে হামলা হয় শহরের চাঁন্দমনি কালী মন্দিরে। ওই মন্দির কমিটির নেতারা বলছেন, বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তিন দফায় মন্দিরে হামলা হলেও ফোন করে দীর্ঘ সময় পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশের সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছে শহরের আরও দুটি মন্দির কমিটিও। বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মন্দিরগুলো পরিদর্শনে এসেছিলেন জা্তীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক। কালীগাছ তলা মন্দির প্রাঙ্গণে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব মন্দিরেই একই অভিযোগ যে পুলিশ আসেনি। মন্দিরের ভক্তরা বলছেন, সকাল থেকে যখন একের পর এক হামলা হচ্ছে, তখন তারা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ আসেনি। “চাঁন্দমনি কালী মন্দিরে মই দিয়ে টপকে ভেতরে ঢুকে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে চার ঘণ্টায়ও পুলিশ আসেনি।”

তবে মন্দিরে পুলিশের না যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।

বৃহস্পতিবার বিকালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপারকে প্রশ্ন করা হয় পূজা ও মন্দির কমিটিগুলোর অভিযোগের বিষয়ে। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “মণ্ডপগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। আনসাররাও টহলে ছিল।” কুরআনের অবমাননার কথিত অভিযোগে বুধবার সকালে প্রথমে হামলা হয় কুমিল্লা শহরের মধ্যস্থলের নানুয়া দীঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে। এরপর অন্য আরও মণ্ডপেও হামলা হয়। কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিবু প্রসাদ দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার কুমিল্লায় মোট আটটি মন্দিরে হামলা চালানো হয়। এই ঘটনার জের ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও মন্দিরেও হামলা হয়।

চার ঘণ্টায় ৩ দফা হামলা

নানুয়া দীঘি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে শহরের চকবাজার এলাকায় (কাপুড়িয়াপট্টি) শত বছরের পুরনো চাঁন্দমনি রক্ষাকালী মন্দির। সেখানে সকাল ১১টার সময় প্রথম হামলা হয়েছিল। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারাধন চক্রবর্তী বলেন, “প্রথম দফায় হামলার চেষ্টা হয়। তবে ফটক টপকে তারা ঢুকতে পারেনি। সাড়ে ১২টার দিকে আরেকবার হামলার চেষ্টা করে তারা। কিছুক্ষণ ঢিলাঢিলি করে চলে যায়। এরপর বেলা ৩টার দিকে তারা মই, হাতুড়ি, পেট্রোল নিয়ে চুড়ান্ত হামলা চালিয়ে সব ভেঙেচুড়ে, পুড়িয়ে চলে যায়।”

হারাধন চক্রবর্তী বলেন, “আমি সদর থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) সঙ্গে কথা বলেছি প্রথম দফা হামলা চেষ্টার পর ১১টার দিকে। তিনি বললেন, ‘ফোর্স পাঠাবেন’। তবে সেই ফোর্স আসেনি।” এরপর বেলা আড়াইটার দিকে আবারও পুলিশের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন হারাধন, তবে তাতেও ফল হয়নি বলে তার অভিযোগ। হারাধন চক্রবর্তী বলেন, “৩টার পর ফটকে মই লাগিয়ে হামলাকারীরা মন্দিরে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়ে নির্বিঘ্নে বের হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মন্দিরে আসেন। পুলিশ সুপার কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও আনসার সদস্যকে এখানে পাহারায় রেখে যান।” কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে চাঁন্দমনি মন্দিরের দুরত্ব এক কিলোমিটারের কম। আধা কিলোমিটার দূরেই চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। পুলিশ লাইনও খুব বেশি দূরে নয়।

চাঁন্দমনি মন্দির কমিটির সদস্য বিপ্লব ধর বলেন, হামলার পর মন্দির কমিটির নেতারা পুলিশ ও স্থানীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও শুধু ‘পুলিশ আসছে’ এই আশার বাণীই শুনেছেন তারা।

“শেষে যখন হামলাকারীরা মই নিয়ে আসল, তখন আমি নিজে ৯৯৯ এ ফোন করি। একজন মহিলা ফোন ধরল। আমি কইলাম, ম্যাডাম আমাগো বাঁচান। তিনি বললেন, ‘চিন্তা কইরেন না ব্যবস্থা নিতেছি’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব ভাইঙা-চুইড়া হ্যাতেরা চইলা গেল। কাউরে না পারলাম চিনতে, না পারলাম একজনরে ধইরা-বাইন্দা রাখতে।”

শহরের সালাহউদ্দীন রোডে কালীগাছতলা মন্দির কমিটির সহ সভাপতি সজল কুমার চন্দ বলেন, বেলা আড়াইটার দিকে তাদের মন্দিরে হামলা হয়। এর আগে থেকে তিনি নিজে কয়েক দফা পুলিশের সাহায্য চেয়ে ফোন করেছেন। কিন্তু কেউই আসেনি। পাড়ার তরুণরা একত্রিত হয়ে মন্দির রক্ষায় এগিয়ে এসেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, হামলাকারীরা মন্দির প্রাঙ্গণ ও আশপাশের বসতবাড়িতে হামলা চালালেও তালা মেরে রক্ষা পায় মূল মন্দির ও প্রতিমা। মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা শিল্পী চক্রবর্তী বলেন, “পাড়ার ছেলেরা সবাই মিলে প্রতিরোধ করেছে বলে রক্ষা।”

কালীগাছতলা মন্দির কমিটির তরুণ সদস্য রানা চক্রবর্তী, বাপ্পী দাস জানান, তারা যখন একত্রিত হয়ে হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, তখন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একরামুল হোসেন বাবুও তাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনিও বারবার পুলিশকে কল করছিলেন। তবে পুলিশ এসেছে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর।

কাউন্সিলর একরামুল হোসেন বলেন, তিনি হামলাকারীদের ঠেকাতে তার কর্মীদের নিয়ে ছিলেন। এসময় সহায়তা চেয়ে তিনি প্রথমে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিট পুলিশের ইনচার্জকে ফোন করেন। এরপর ফোন করেন কান্দিরপাড় ফাঁড়ির ইনচার্জকে। তারা দুজনই কোতয়ালি থানার ওসিকে ফোন করতে বলেন। তবে ওসিকে তিনি পাননি। একরামুল হোসেন বলেন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় হামলাকারীদের ইটের আঘাত লাগে তার কোমরে। কোমর ব্যথায় এখন শয্যাশায়ী তিনি। এদিকে মন্দিরে হামলার অভিযোগে যে মামলাগুলো হয়েছে, তার একটিতে কাউন্সিলরে একরামুলকেও আসামি করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে একরামুল বলেন, “একজন ফোন করে মামলার কথা জানিয়ে পালাতে বলেছে। তবে আমি এখন বিছানা থেকেই উঠতে পারছি না।”

১২ ঘণ্টা বন্ধ ছিল থ্রিজি-ফোরজি ইন্টারনেট সেবা

১৫ অক্টোবর ২১, সমকাল

সারাদেশে শুক্রবার ১২ ঘণ্টা উচ্চগতির থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। এ সময় গ্রাহকরা ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। বিঘ্নিত হয়েছে অ্যাপভিত্তিক বিভিন্ন সেবা। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো দাবি করেছে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশেই নেট সেবা বন্ধ ছিল। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়েছে।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সূত্রে জানা গেছে, বিটিআরসির নির্দেশনা অনুসারে শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। বিটিআরসির নির্দেশেই ১২ ঘণ্টা পর বিকেল ৫টায় ঢাকায় সেবা চালু করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ইন্টারনেট সেবা চালু হয়।শুক্রবার সকালে বিভিন্ন ফোন অপারেটর ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের ফোনে বার্তা পাঠিয়ে ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি অবগত করে। গ্রামীণফোনের এক বার্তায় বলা হয়, বন্ধ ফোরজি ও থ্রিজি সেবা ফিরিয়ে আনতে কোম্পানিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য গ্রামীণফোন দুঃখ প্রকাশ করে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাপভিত্তিক বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট না থাকায় তাদের সেবা বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়ে গ্রাহকদের বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক করে। বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহকদের বার্তা পাঠিয়ে জানায়, ফোরজি ও থ্রিজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বিঘ্নিত হতে পারে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপ্রচারকে দায়ী করছেন অনেকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার থেকেই দেশের ছয় জেলায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল।

চৌমুহনীতে পুকুর থেকে মরদেহ উদ্ধার

১৬, অক্টোবর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌর এলাকায় পুকুর থেকে প্রান্ত চন্দ্র দাশ নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে ইসকন মন্দিরের পুকুরে ওই যুবকের মরদেহ ভেসে উঠে।

নোয়াখালী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিনয় কিশোর রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গতকাল হামলায় প্রান্ত দাশ নিহত হয়েছেন। একই দাবি করেছেন নোয়াখালী পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কিশোর চন্দ্র মজুমদার। তিনি জানান, প্রান্ত দাশের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সাহাপুর এলাকায়। তিনি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সদস্য। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল বেগমগঞ্জ) মো. শাহ ইমরান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ পুকুর থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি মন্দিরের দর্শনার্থী ছিলেন।’ পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে বেগমগঞ্জের কলেজ রোড ও ডিবি রোড এলাকায় মিছিল করেন একদল মানুষ। তারা মিছিল থেকে ভাঙচুর চালান। হামলায় যতন কুমার সাহা (৪২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া, বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান শিকদারসহ মোট ১৮ জন আহত হয়েছেন।

তিন দিনে ৭০ পূজামণ্ডপে হামলা: ঐক্য পরিষদ

১৬ অক্টোবর ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

দুর্গাপূজায় দেশের বিভিন্ন স্থানে তিন দিনে ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য তুলে ধরে জানান, এসবের বাইরে ৩০টি বাড়ি এবং ৫০টি দোকানেও ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। তিনি বলেন, “এর মধ্যে ১৩ অক্টোবর হাজীগঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ণজি আখরায় আক্রমণ চলাকালে মানিক সাহা নামে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। “১৫ অক্টোবর নোয়াখালীতে বিজয় পূজামণ্ডপের সদস্য যতন সাহাকে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। ইসকন মন্দিরের প্রভু মলয় কৃষ্ণ দাসের মাথায় আঘাত করে তাকে নির্মমভাবে খুন করেছে।” এছাড়া তিনি শনিবার সকালে ইসকন মন্দিরের সামনের পুকুরে আরও এক ভক্তের লাশ ভেসে উঠার কথাও জানান, যার নাম পার্থ দাস বলে ইসকন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

তবে যতন সাহার ‘হৃদরোগে’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে নোয়াখালী পুলিশের ভাষ্য। পার্থর মৃত্যু হামলায় হয়েছে কিনা তা তারা নিশ্চিত করতে পারেনি। আর মলয় কৃষ্ণর মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে কোনো তথ্যই মেলেনি। হাজীগঞ্জে মানিক সাহার নিহত হওয়ার বিষয়েও চাঁদপুর পুলিশের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব হামলার ঘটনায় আরও কমপক্ষে ৭০ জন আহত হয়েছেন বলে রানা দাশগুপ্ত জানান। সাম্প্রদায়িক হামলার এসব ঘটনার মধ্যে এক হিন্দু কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছেন বলে শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ বলছেন ঘটনা চাঁদপুরের, কেউ নোয়াখালীর কথা বলছেন। তবে এই খবরের সত্যতা মেলেনি। এবিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, “ধর্ষণের কোনো খবর আমাদের জানা নেই।”

কুমিল্লায় ১৭ ও চাঁদপুরে ১৬ মণ্ডপে হামলা

রানা দাশগুপ্ত জানান, ১৩ অক্টোবর অষ্টমীর দিন কুমিল্লার নানুয়ার দিঘীর উত্তর পাড় দর্পন সংঘের অস্থায়ী মণ্ডপে এবং চানমনি কালী বাড়ির বিগ্রহ ও মণ্ডপে অগ্নিসংযোগসহ ১৭টি মণ্ডপে তোরণ ভেঙে দেওয়া হয়।

১৩ অক্টোবর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে যেসব মন্দিরে হামলা হয় সেগুলো হলো- ত্রিনয়নী সংঘের পূজামণ্ডপ, লহ্মীনারায়ণজী আখড়া, রামকৃষ্ণ মিশন, জমিদারবাড়ি দুর্গা মন্দির, শ্মশান কালী মন্দির, নবদুর্গা সংঘ পূজামণ্ডপ, দশভূজা সংঘ পূজা মণ্ডপ, সোনাইমুড়ি গ্রামের পূজামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ শহর পূজামণ্ডপ, রামপুর লোকনাথ মন্দির, ভদ্রকালী মন্দির, ত্রিশুল সংঘ পূজামণ্ডপ, রামপুর বলক্ষার বাজার পূজামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ রাধাগোবিন্দ মন্দির, বাজারগাঁও মুকুন্দ সাহার বাড়ির দুর্গা মন্দির, হাটিলা গঙ্গানগর দুর্গা মন্দির।

কুমিল্লার কাপড়িয়াপট্টি শ্রী শ্রী চান্দমনি রক্ষাকালী মন্দিরে হামলায় মূল ফটক তছতছ হয়ে যায়। ছবি: মাহমুদ জামান অভিকুমিল্লার কাপড়িয়াপট্টি শ্রী শ্রী চান্দমনি রক্ষাকালী মন্দিরে হামলায় মূল ফটক তছতছ হয়ে যায়। ছবি: মাহমুদ জামান অভিএছড়া হাতিয়ায় ৭টি মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।  সেগুলো হলো- শংকর মার্কেটের আশুতোষ ডাক্তার বাড়ির পূজামণ্ডপ, জগন্নাথ মহাপ্রভুর সেবাশ্রম পূজা মন্দির, রাধাগোবিন্দ সেবাশ্রম পূজা মন্দির, শ্রী লোকনাথ মন্দির পূজামণ্ডপ, তপোবন আশ্রম পূজা মন্দির, গুরুচাঁদ সত্যবামা পূজা মন্দির, হাতিয়া পৌরসভা কালী মন্দির এবং তার কাছাকাছি ৪-৫টি ঘরও ভাঙচুর করা হয়।

অষ্টমীর দিনে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি সীতারাম ঠাকুর সেবাশ্রম, গাজীপুরের কাশিমপুর সুবল দাশের মন্দির ও কাশিমপুর বাজার কালী মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। একই দিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, হবিগঞ্জের বাহুবল, সিলেটের জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজার ও ভোলার নবীপুরে বেশ কয়েকটি মন্দির, পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

হামলার সময় ঘরবাড়ি-দোকান লুট

অষ্টমীর দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ও নাপোড়া গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়। শেখেরখীলের মোহাম্মদ সাবের আহমেদ, গণ্ডামারার মোহাম্মদ রিদোয়ান ও নাপোড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম এসব হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে রানা দাশগুপ্ত অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “সেদিন শেখেরখীল সার্বজনীন মন্দির ধ্বংস করা হয়। হরি মন্দিরের সামনের সড়কে হিন্দুদের ২০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। শেখেরখীল সার্বজনীন মহাশ্মশানের সীমানা প্রাচীর ও মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। নাপোড়ায় সার্বজনীন কালীবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” নাপোড়া বাজার থেকে কালীমন্দির পর্যন্ত সড়কে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় বলেও লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়।

হামলায় শেখেরখীলে সুকুমার দাস, সমীর দেব, দুলাল দেব, জুয়েল শীল ও লিটন দেব এবং নাপোড়ায় জহর লাল দেব, রতন শিকদার, আশুতোষ দেব, অনুপম দেব, জগদীশ পাল ও বোটন দেব আহত হন বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। 

বাঁশখালীর পশ্চিম চাম্বল বাংলাবাজার করুণাময়ী কালীবাড়ির সার্বজনীন পূজা কমিটির দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করে মন্দিরের তৈজসপত্র লুট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এসময় প্রদীপ দাস, রঞ্জিত দাস, সবিতা বালা আহত হন।

এছাড়া শীলকূপে দাস পাড়া সার্বজনীন দুর্গা মণ্ডপ, কৈবল্য যুব সংঘ পূজামণ্ডপ ও শীলপাড়া পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় বলে তথ্য দেওয়া হয়। ১৩ অক্টোবর রাতে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শীলখালীর দুটি পূজামণ্ডপে প্রতিমা এবং স্থানীয় হরিমন্দিরে লুটপাট ও ভাঙচুরের পাশাপাশি ১৬টি বসতঘরও লুট করা হয়। এছাড়া মগনামা ইউনিয়নের ১২টি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে একটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্থানীয় সরস্বতী মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। পেকুয়া সদর, বারবাকিয়া ইউনিয়ন এবং চকরিয়ায় ৫টি মণ্ডপ ও স্থানীয় লোকনাথ মন্দিরে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

কর্ণফুলীতে দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে হামলা

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৪ অক্টোবর বান্দরবানের লামা উপজেলার লামাবাজারে কেন্দ্রীয় হরিমন্দিরে দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলা চালিয়ে মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। এই হামলায় ৫০ জন আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর ১০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ৮ জন ‍ডুলহাজারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান রানা দাশগুপ্ত। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী থানার জুলধা জেলেপাড়া পূজামণ্ডপে স্থানীয় জয়বাংলা ক্লাব থেকে এসে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া স্থানীয় দুই ভাই জয়নাল ও মনিরের নেতৃত্বে এই হামলা হয়।

“স্থানীয় ওসি দুলাল মাহমুদ হামলা হতে পারে এমন খবর আগে থেকে জানা স্বত্ত্বেও হামলা প্রতিরোধে কোনো রূপ ব্যবস্থা নেয়নি।”

৯ বছরে হিন্দুদের উপর ‘৩৬৭৯ হামলা’

১৮ অক্টোর, ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় পূজামণ্ডপে হামলা ভাংচুরের মধ্যে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, গত নয় বছরে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাটি প্রতিবছরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি প্রতিবেদন দেয়। ২০১৩ সাল থেকে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর হামলার ঘটনাগুলোও তারা প্রতিবেদনে আলাদাভাবে দিয়ে আসছে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আসক নয় বছরে হিন্দুদের উপর সাড়ে ৩ হাজারের বেশি হামলার তথ্য দিলেও প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি বলে দাবি করেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার একটি মণ্ডপে কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ও স্থাপনা ভাংচুর হয়। তার জের ধরে তিন দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে বলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ হিসাব দেয়।

আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট বছর নয় মাসে হিন্দুদের উপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৯টি বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এই সময়ে হিন্দুদের ৪৪২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮টি। এসব হামলায় আহত হয়েছে ৮৬২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। নিহত হয়েছে ১১ জন। এর বাইরেও ২০১৪ সালে দুজন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হন। শ্লীলতাহানি করা হয় আরও চারজনের। এছাড়া ২০১৬, ২০১৭ ও ২০২০ সালে ১০টি হিন্দু পরিবারকে জমি ও বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দখলের অভিযোগ ওঠে।

আসকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত নয় বছরে হিন্দুদের উপর সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে ২০১৪ সালে। ওই বছরের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। এর পরবর্তী সহিংসতার শিকার হন হিন্দুরা। ৭৬১টি হিন্দু বাড়ি-ঘর, ১৯৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ২৪৭টি মন্দির-মণ্ডপে হামলা হয় ওই বছর। তখন নিহত হন একজন।

সবচেয়ে কম হামলা হয়েছে ২০২০ সালে। মহামারীর মধ্যে গত বছর ১১টি বাড়ি ও ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার তথ্য রয়েছে আসকের প্রতিবেদনে। তবে মন্দিরে হামলা হয়েছে ৬৭টি।

পীরগঞ্জে হামলায় পুড়ল ২০ বাড়িঘর

১৮ অক্টোবর, ২০২১, নিউজবাংলা টুয়েন্টিফোরডটকম

ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বাটের হাট নামক এলাকায় রোববার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

হামলাকারীরা ১৫ থেকে ২০টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (ডি) সার্কেল কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক হিন্দু যুবক ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর কমেন্ট দিয়েছেন- এমন অভিযোগের পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আমরা ওই যুবকের বাড়িটি প্রটেক্ট করতে পারলেও বেশ কিছু দূরে ১৫-২০টি বাড়িঘরে আগুন দেয় উত্তেজিতরা।

যখন বাড়িতে আগুন দেয়, বাচ্চা নিয়ে জমিতে লুকিয়ে ছিলাম’

১৮ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা বিকেল রায়। গতকাল রোববার রাতের সহিংসতার ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, যখন বাড়িঘরে আগুন দিতে শুরু করে হামলাকারীরা, তখন তিনি শিশুসন্তানকে নিয়ে পাশের খেতে লুকিয়ে ছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘যখন বাড়িতে আগুন দেয়, তখন আমি বাচ্চা নিয়ে জমিতে লুকিয়ে ছিলাম। বাড়ির সব টাকাপয়সা নিয়ে গেছে। বাচ্চাটার খাওয়ার কিছু নাই।’

গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মন্দির ও বসতবাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর থেকে বাসিন্দারা আতঙ্কে সময় পার করছেন। কিরোন রানি নামের এক নারী কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘এই দ্যাশোত থাকার চাইতে মরি যাওয়াই ভালো। ভোরে আসি দেখি, কিচ্চু নাই। সোনা দানাসহ সব নিসে।’ নয়নী রাণী বলেন, সামনে মেয়ের বিয়ে। বিয়ের জন্য কিছু জিনিস কেনা হয়েছিল। শাড়ি-গয়না সব শেষ হয়ে গেছে। ঘরে থাকা ১ লাখ টাকাও লুট হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবগুলো ঘরবাড়িতে গতকাল রাতের হামলা, ভাঙচুর আর আগুন লাগানোর চিহ্ন। এর মধ্যে আগুনে একেবারে পুড়ে গেছে ১৫টি পরিবারের ২১টি বাড়ির সবকিছু। সব মিলিয়ে গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলাকারীরা গরু–ছাগল নিয়ে গেছে।

গ্রামজুড়ে টহল দিচ্ছেন পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, হামলাকারীদের কোনো ছাড় নেই। তারা হানাদার বাহিনীর মতো বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

কুমিল্লায় ঘৃণা থেকে শুরু হওয়া সহিংসতার সময়চিত্র

১৮ অক্টোবর ১৮, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

শারদীর দুর্গোৎসবের অষ্টমীর দিন ১৩ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে ৩০ বছর বয়সী একরাম হোসেন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড় পূজা মণ্ডপে কথিত কোরআন ‘অবমাননা’র বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে মণ্ডপে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাদা পোশাকে উপস্থিত হন। সেখানে তিনি একা গিয়েছিলেন।

পরে ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে ফয়েজ আহমেদ নামের এক ব্যক্তি মণ্ডপ থেকে ফেসবুক লাইভে এসে কথিত অবমাননার প্রতিবাদের জন্য লোকজনকে জেগে ওঠার আহ্বান জানান। তার ৫৬ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভে তিনি ওসি আনোয়ারুল আজিমকেও দেখিয়েছিলেন। দ্রুত যুবকদের কয়েকটি দল এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়। তারা ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করতে শুরু করে। ৮টার ভেতর লোকজন মণ্ডপে আসতে থাকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেখানে শ’খানেক মানুষের ভিড় জমে যায়। এর মধ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমরান বাচ্চু ভিড় ঠেকাতে মণ্ডপের চারপাশে বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে ফেলেন।

এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান ও জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদ ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে পুলিশের ৪০ থেকে ৫০ জন সদস্যসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বাড়ি মণ্ডপ থেকে ৩০০ গজ দূরে হলেও তিনি সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য তাকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অনুরোধ করেছিল। কর্মকর্তারা তাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু ১০টার আগে তিনি সেখানে যাননি।

ডিসি, এসপি, কাউন্সিলর বাচ্চু, সৈয়দ আহমেদ সোহেল নামের একজন প্যানেল মেয়র এবং স্থানীয় মসজিদের কয়েকজন ইমাম পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু লাল জার্সি পরিহিত ৬ থেকে ৭ জন যুবকের একটি দল তাদের সঙ্গে মারাত্মক তর্কে জড়িয়ে পড়ে।

দলটি সেই মুহূর্তে পূজা বন্ধের দাবি জানাতে থাকে। প্রতিমাগুলো টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলতে চায়। মণ্ডপের শামিয়ানা টেনে নামাতে চায়। তারা স্লোগান দিতে থাকে: ‘বন্ধ বন্ধ, পূজা বন্ধ’, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’।

এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার জন্য উপস্থিত জনতাকে উস্কানি দেওয়ার পাশাপাশি ১১টার দিকে যুবকের দল মণ্ডপে পাথর ছুড়তে শুরু করে। এর মধ্যে মণ্ডপের দুই পাশে লোকজন বেড়ে যায়। সাড়ে ১১টার দিকে তারা মণ্ডপে ভাংচুর শুরু করে।

পরিস্থিতি সামলাতে এর কয়েক মিনিটের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ডাকা হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালায়। এতে জনাপঞ্চাশেক লোক আহত হয়। সে সময় ডিসি, এসপি ও মেয়র কাছের একটা বাড়িতে আশ্রয় নেন। পুলিশ ও জনতার মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ফেসবুক লাইভে আসা ফয়েজ ও পুলিশকে প্রথম ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করা একরাম- দুই জনকেই সেদিন সকালে আটক করা হয়। তারা এখন কারাগারে আছেন।

এদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে শহরতলির অন্তত ১০টি এলাকা থেকে আসা মিছিল কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত পূবালী চত্বরে সমবেত হয়। মিছিলকারীরা শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ১৪টি পূজামণ্ডপের পাশাপাশি কালিঘাট তলা, চানময়ী কালিবাড়ি ও আনন্দময়ী মন্দিরে ভাঙচুর চালায়। উপরে যে ঘটনাক্রম হাজির করা হয়েছে তার জন্য দ্য ডেইলি স্টার অন্তত ৫০ জন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেছে। দেখা হয়েছে ডজনখানেকের বেশি ভিডিও ক্লিপ। কিছু ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, মিছিলগুলোর নেতৃত্বে থাকা লোকজনের মধ্যে বেশিরভাগ কিশোর বয়সী। চোখে পড়ে, ভয়ানক সব স্লোগান দিতে দিতে তারা মন্দির ও মণ্ডপ ভাঙচুর করছে।

কুমিল্লা শহর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, ১১টা থেকে শুরু হয়ে সহিংসতা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। এ বছর শহরে মোট পূজা মণ্ডপ ছিল ৯১টি।

হামলাকারীরা কারা?

যেখান থেকে সহিংসতার শুরু, সেই নানুয়া দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, হামলাকারীরা বহিরাগত। যাদের বেশিরভাগ কিশোর বয়সী। তারা এসেছিল শহরতলীর মুরাদপুর, তেলিয়াঘোনা, কাশারিপট্টি, শুভপুর, টিক্কাচর এলাকাগুলো থেকে। নানুয়া দীঘির পাড়ের নিকটবর্তী মজুমদার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা আমানত মজুমদার (৯০) ডেইলি স্টারকে জানান, স্থানীয়রা হামলাকারীদের আটকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি।

‘কারণ তারা বন্যার মতো এসেছিল। আমাদের পাড়ায় হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু এটা কখনোই আমাদের জন্য কোনো সমস্যা তৈরি করেনি। আমরা ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছি। আমার পুরো জীবনে কুমিল্লায় এমন কোনো ঘটনা ঘটতে দেখিনি,’ বলেন এই বৃদ্ধ।

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা ইসলাম আহমেদের মতে, ইসলামের কথিত অবমাননা একজন হিন্দু করতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘এটাকে (কথিত কোরআন অবমাননার অভিযোগ) পূর্ব পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। হয়তো সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য কিছু লোক এটা করেছে।’ ১৯৯০ সালে থেকে নানুয়া দীঘির উত্তর পাড় মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পূজার তৃতীয় দিন অষ্টমীর সকালে কী ঘটেছিল তা জানতে মণ্ডপ থেকে কয়েক গজ দূরে একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলেছে ডেইলি স্টার।

ওই তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৭টায় আমি ডিউটিতে আসি। এখানে এসে আমি দুই জন নারী ও দুই জন যুবককে দেখতে পাই। দুই যুবকের মধ্যে একজন কোতোয়ালি থানার ওসিকে ফোন করলে তিনি ২০ মিনিটের মধ্যে চলে আসেন। যেহেতু বাইরের লোকজনকে মণ্ডপের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য পর্দা দেওয়া ছিল, তাই ভেতরে ঠিক কী হচ্ছিল, তা আমি দেখতে পাইনি।’ তার কাছ থেকে জানা যায়, ৭টার পর সেখানে বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, একরাম হোসেন নামের যে ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেছিলেন তিনি ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের একটা এলাকায় বাস করেন। আর ফয়েজ আহমেদ ছিলেন প্রবাসী। এক বছর আগে তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। এখন কুমিল্লা শহরে তার কাপড় ও মোবাইলের সরঞ্জামের দুইটি দোকান আছে।

একরামের মা সেলিনা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া করে গত ১২ অক্টোবর সে বাড়ি ছাড়ে। ১৩ অক্টোবর আমরা জানতে পারি যে, তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।’ মণ্ডপের তত্ত্বাবধায়ক জানান, পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাত আড়াইটার দিকে তিনি মণ্ডপ ত্যাগ করেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি ফোনে জানতে পারেন যে, কেউ গণেশের প্রতিমার নিচে পবিত্র কোরআন রেখেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পূজা কমিটির ঊর্ধ্বতনদের জানাই। মণ্ডপে পৌঁছে ওসিকে দুই যুবকের সঙ্গে কথা বলতে দেখি। দ্রুতই দীঘির পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ে ভিড় জমে যায়। ‘এলাকার হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন ও সম্প্রীতির পরিপ্রেক্ষিতে মণ্ডপে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়নি। আমরা কখনোই ভাবিনি যে অতিরিক্ত নিরাপত্তার দরকার হবে। কিছু লোক এর সুযোগ নিয়েছে।’

মেয়র দেরিতে এসেছিলেন

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত ৮টায় ঘুম থেকে উঠি। সকাল ৭টায় ওসির একটা কল আমি রিসিভ করতে পারিনি।’ তিনি জানান, ৮টায় কল ব্যাক করলে ওসি তাকে ঘটনাস্থলে যেতে অনুরোধ করেন।

মেয়র বলেন, ‘আমি বললাম আমার আসতে দেড় ঘণ্টা লাগবে। এর মধ্যে পূজা কমিটির কয়েকজন আমার বাড়িতে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। আমি তাদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করি। আমি সেখানে পৌঁছাই সাড়ে ৯টার দিকে। সেখানে তখন এক থেকে দেড় শ লোক ছিল। আমি তাদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানাই। ডিসি ও এসপির উপস্থিতিতে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ব্যর্থ হই।

‘এক পর্যায়ে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করলে আমি সিটি করপোরেশন থেকে ৪০ জন কর্মী ডেকে মণ্ডপের ভেতরের বাকি জিনিসপত্র সরিয়ে নেই। সেখানে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। যদিও আমি পূজা কমিটিকে কিছু ক্যামেরা বসাতে বলেছিলাম।’ তার বাড়ি মণ্ডপের এত কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও তিনি এত দেরিতে কেন আসলেন- জানতে চাইলে মেয়র পরিষ্কার কোনো জবাব দিতে পারেননি। ‘ঘুম থেকে উঠে আমি গোসল করেছি, কাপড় পরেছি। তারপর বাড়ির বাইরে বেরিয়েছি। সব মিলিয়ে সময় লেগেছে।’

পুলিশি অ্যাকশনে বিলম্ব

কোতোয়ালি থানার ওসি সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে একাই ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এসপি পৌঁছান প্রায় ১০টার দিকে। হামলা শুরু হয় ১১টায়। এর মধ্যে উত্তেজিত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তারা সংগঠিত হতে থাকে। হামলার পর র‌্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের জন্য ৪ ঘণ্টা সময় কেন লাগলো- জানতে চাইলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তাদের যথেষ্ট লোকবল ছিল। এরপর তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি।

কোতোয়ালি থানার ওসি আনোয়ারুল আজিম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অন্যদের আগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একরাম ও ফয়েজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা কেন অত আগে সেখানে গিয়েছিল এবং ফেসবুক লাইভের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি।’ মণ্ডপের ভেতর থেকে লাইভ করার সময় বাধা দিলেন না কেন- জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘তথ্য নেন, কিন্তু কোনো প্রশ্ন করবেন না।’

হামলার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা করা হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য, একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং বাকি দুটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে। পুলিশ জানায়, ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত তারা মোট ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

Timeline: Attacks on Hindus since October 13

19 october 2021 Dahaka Tribune

Religious fanatics have been on a prowl after an allegation of defaming the Quran in Comilla spread across the country like wildfire

October 13

In Comilla, a mob protests against alleged defamation of the Quran at a Puja pavilion and vandalizes several temples in the town.

In Chittagong, a mob attacks the Durga Puja venues at the Bura Kali Mandir in Banshkhali upazila and several temples in Hathazari.

In Cox’s Bazar, a puja mandap in Kachharaimura Sheelpara is attacked and Hindu households vandalized in Mognama.

In Chandpur, a mob attacks the Durga Puja venue at the Lakshmi Narayan Akhra temple in Hajiganj upazila, leading to several deaths.

In Lakshmipur, a group of miscreants attack two temples at Ramgati and Ramganj upazilas at night.

In Noakhali, a puja mandap at Hatia upazila is vandalized by a group of unidentified men at 9pm.

October 14

In Khulna, RAB recovered 18 crude bombs from the main gate of Rupsa Maha Shashan, which also houses a Kali temple.

In Gazipur, a group of men armed with sticks vandalize idols at Radha Gobinda Temple at Kashimpur in the evening. Two more temples are attacked at Paschim Para and Pal Para.

In Bandarban’s Lama upazila, a mob attacks the upazila’s Central Hari Mandir in the morning, leading to a clash with the police. Around 50 people, including the Lama police OC, sustained injuries.

October 15

In Chittagong, Durga Puja venue in Anderkilla area comes under attack by a mob after the Juma prayers.

In Noakhali, a man is killed when a mob attacks Hindu houses in Noakhali’s Begumganj upazila.

In Barisal, three Hindu temples are vandalized by an angry mob at Gournadi upazila in the night, following the arrest of a man allegedly for defaming the Quran on Facebook.

October 16

In Munshiganj, a mob vandalizes six idols at a Kali temple in Sirajdikhan upazila in the early hours.

In Feni, two temples and Hindu houses are vandalized and looted by a mob; at least 40 people, including OC Nizam Uddin of Feni Model police station, are injured in a clash between police and demonstrators.

In Noakhali, police recover the body of a Hindu man in a pond next to a temple at Begumganj Upazila’s Chaumuhani on Saturday, likely taking the death toll from Friday’s attack to two in the district.

October 17

In Rangpur, a mob loots and sets afire Hindu homes at a village in Rangpur’s Pirganj upazila in the night over a post on the social media that allegedly dishonoured Islam.

In Tangail, police detain a man over the vandalism of two temples at Sadar upazila of the district.

গুজব ছড়ানো ভিডিওটি কলকাতা থেকে দেওয়া হয়েছে

১৯ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো

রাজধানীর পল্লবীতে সংঘটিত সাহিনুদ্দিন হত্যার ভিডিও ফুটেজকে সম্প্রতি নোয়াখালীর যতন সাহার হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ক্লিপ দাবি করে তা ফেসবুকে আপলোড করার সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে র‍্যাব। র‍্যাব বলেছে, ভারতের দুটি আইডি থেকে সাহিনুদ্দিন হত্যার ভিডিও ক্লিপটি নোয়াখালীর যতন সাহার বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

গত ১৬ মে বিকেলে পল্লবীর সিরামিকস ফটকের কাছে দুর্বৃত্তরা শিশুপুত্রের সামনে তারা বাবা সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। আজ দুপুরে সেই ভিডিও ক্লিপটি নোয়াখালীর যতন সাহার বলে ফেসবুকে আপলোড করে গুজব ছড়ানো হয়।

আজ সন্ধ্যায় র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র‍্যাব জানতে পেরেছে, সাহিনুদ্দিন হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ক্লিপটি ভারতের কলকাতা থেকে দেবদৃতা ভৌমিক নামের একজন প্রথম ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেন। আর দেবদাস মণ্ডল কলকাতা থেকেই ওই ভিডিওটি টুইটারে আপলোড করে গুজব ছড়িয়ে দেন। কর্নেল কে এম আজাদ জানান, ওই গুজব ছড়ানোর ঘটনায় বাংলাদেশভিত্তিক কুশীলবদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

সরেজমিন: চাঁদপুর

ফেসবুকে ‘আন্দোলনের’ ডাক, এরপর মিছিল–হামলা

২০ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো

কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে ১৩ অক্টোবর বিকেলে ফেসবুকে ঘোষণা দেওয়া হয়, সন্ধ্যায় হাজীগঞ্জ বিশ্বরোড থেকে ‘আন্দোলন’ হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মুসলিম ভাইদের জড়ো হওয়ার অনুরোধ জানানো হয় এতে। এরপর সেখানে জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করে একদল কিশোর–তরুণ। একপর্যায়ে বড় হতে থাকে মিছিলের আকার। পরে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা হৃদয় হাসান ওরফে জাহিদ (২০) ওই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তিনি হাজীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের কর্মী। তাঁর মা শাহিদা বেগম ২০১৪–২০১৯ মেয়াদে হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর ছিলেন। আওয়ামী লীগের সমর্থনে তিনি নির্বাচনে জিতেছেন। পুলিশ জানায়, হামলার ঘটনায় হৃদয় হাসানের বাবা দিলওয়ার হোসেন (৪২) ও ভাই জুবায়ের হোসেনকে (১৮) গত সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাজীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইউনুস মিয়ার করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, ঘটনার পর থেকে হৃদয় পলাতক।

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হৃদয় হাসানের স্ট্যাটাসের পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সাড়ে আটটার মধ্যে সেখানে ১৫ থেকে ২২ বছর বয়সী একদল কিশোর–তরুণ জড়ো হয়। যাদের বেশির ভাগই স্থানীয়ভাবে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে পরিচিত। রাত আটটার দিকে তারা মিছিল শুরু করে। হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার প্রধান সড়ক ধরে মিছিলটি শ্রীশ্রী রাজালক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়ার সামনে দিয়ে দুই দফা চক্কর দেয়। ওই সময় সেখানকার পূজামণ্ডপে প্রায় দেড় হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী উপস্থিত ছিলেন। মিছিল শুরুর সময় পুলিশ সদস্যরা পূজামণ্ডপের সামনে অবস্থান নেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ধীরে ধীরে মিছিলে লোক বাড়তে থাকে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও স্থানীয় কিছু উৎসাহী মানুষ এতে যোগ দেন। হাজীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা কিশোর–তরুণেরাও মিছিলে যোগ দেওয়া শুরু করে। একপর্যায়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দুই হাজারে। পূজামণ্ডপের সামনে গিয়ে হঠাৎ মিছিল থেকে ইট ছোড়া শুরু করে কিছু কিশোর-তরুণ। স্থানীয় কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ তাদের থামানোর চেষ্টা করেও পারেননি।

সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় দিলীপ কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, হামলার সময় উৎসবের মেজাজে থাকা পূজামণ্ডপে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, মিছিল বড় হতে দেখে হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ সেখানকার ছয়টি পূজামণ্ডপে অবস্থান নেয়। কেন্দ্রীয় মণ্ডপের সামনে ছিল মিছিলের সবচেয়ে বড় অংশ। আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে একযোগে ছয়টি মণ্ডপে হামলা চালানো হয়। পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা করে মিছিলকারীদের থামানোর চেষ্টা করে। এরপর ১০৯টি রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান চারজন। তাঁদের বয়স ২৩ বছরের মধ্যে। সেদিনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরেকজন গতকাল মারা গেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া কিশোর ও তরুণেরা পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের অনুসারী। হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব–উল–আলমও প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে মেহেদী হাসানের অনুসারীও ছিলেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে তিনি নিশ্চিত নন। তিনি আরও বলেন, তাঁরা হামলা ঠেকানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পৌর ছাত্রলীগের কমিটির কেউ হামলায় ও মিছিলে অংশ নিলে তার দায়দায়িত্ব আমি নেব। আমি একটু দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করায় অনেকে আমার বিরুদ্ধে ঈর্ষাণ্বিত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খোকন বলির অনুসারী ও পরিবারের সদস্যরা হামলায় অংশ নিয়েছেন, সেই প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আমরা উল্টো হামলা থামানোর চেষ্টা করেছি।’

‘আন্দোলনের’ ডাক দেওয়া হৃদয় হাসান ছাত্রলীগের কর্মী কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মেহেদী হাসান বলেন, ছাত্রলীগ অনেক বড় সংগঠন। হৃদয় ছাত্রলীগের কর্মী কি না, তা তিনি জানেন না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, খোকন বলির পরিবারের একাধিক সদস্য ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা হামলায় অংশ নিয়েছিলেন বলে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ আছে। তাঁরা বর্তমানে পলাতক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে খোকন বলির মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

হাজীগঞ্জ থানা সূত্র জানায়, হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে তিনটি। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আটজনের বয়স ২৩ বছরের মধ্যে। পাঁচজনের বয়স ৩০–এর মধ্যে। অন্যরা ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী।

পুলিশের হাজীগঞ্জ সার্কেলের এএসপি ও হামলার ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠন করা তদন্ত কমিটির সদস্য সোহেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে পূজামণ্ডপে হামলাকারীর কিছু ভিডিও ফুটেজ এসেছে। আমরা সেটা দেখে দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে যাঁরা হামলার উসকানি দিয়েছেন, তাঁদেরও আমরা চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করছি।’

‘জামায়াত–হেফাজত কর্মী চিহ্নিত’

হাজীগঞ্জের ঘটনা তদন্তে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৫ অক্টোবর গঠিত হওয়া কমিটি হামলার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জামায়াতের রোকন ও বেশ কয়েকজন হেফাজত কর্মীকে চিহ্নিত করেছে।

জানা গেছে, কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তবে তদন্ত শেষ করতে আরও কিছু সময় চেয়েছে কমিটি। বেশ কিছু নতুন সূত্র পাওয়ায় ও আরও কিছু তথ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছে না।

চট্টগ্রামে মণ্ডপের তোরণ ভাঙচুর

৬ মাস ধরে কারাগারে থাকা বিএনপির তিনজনও আসামি

২০ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো

হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার মামলায় ছয় মাস ধরে তাঁরা তিনজন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার সরকারহাট এলাকায় একটি পূজামণ্ডপের তোরণ ভাঙচুরের মামলায়ও পুলিশ তাঁদের আসামি করেছে।

তিন আসামি হলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি সৈয়দ ইকবাল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য আকরাম উদ্দিন ওরফে পাভেল ও বিএনপির কর্মী জোনায়েদ মেহেদী। তিনজনেরই বাড়ি হাটহাজারীতে।

সরেজমিন: নোয়াখালী

পুলিশের অবহেলাকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা

২০ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো

নোয়াখালীর সবচেয়ে বড় ব্যবসাকেন্দ্র চৌমুহনীতে অবস্থিত শ্রীশ্রী রাধামাধব জিউর মন্দির। গত শুক্রবার দুপুরের পর শত শত মানুষ মন্দিরের ফটক ভেঙে ঢুকে নির্বিচারে ভাঙচুর চালায়। এই বিভীষিকাময় ঘটনার সাক্ষী মন্দিরের ব্যবস্থাপক সত্তরোর্ধ্ব অনন্ত কুমার ভৌমিক। ঘটনার চার দিন পরও তাঁর চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।

অনন্ত কুমার ভৌমিক প্রথম আলোকে জানান, আক্রমণকারীরা ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাটও চালায়। তারা মন্দিরে ভক্তদের দেওয়া টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকার তো নিয়েছেই, পানি তোলার মোটর পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। ওই দিন রাধামাধব জিউর মন্দিরসহ চৌমুহনীতে ১২টি মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট ও বাসাবাড়িতেও। মারা গেছেন দুজন। বেগমগঞ্জ থানার ওসি, চার পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অর্ধশতাধিক।

পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনকে দুষছেন এখানকার ভুক্তভোগী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁরা বলছেন, কুমিল্লার ঘটনার জেরে চাঁদপুরে চারজন নিহত হলো। স্বাভাবিকভাবেই শুক্রবার দুর্গাপূজার শেষ দিন বা বিসর্জনের দিন সর্বত্র বাড়তি প্রস্তুতি রাখার কথা। কিন্তু নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে সেটা ছিল না। দীর্ঘ সময় ধরে হামলা হলেও মন্দির ও মণ্ডপগুলোতে পুলিশ আসে অনেক পরে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে কেবল দুজন করে পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। দুপুর ১২টার মধ্যেই বেশির ভাগ মণ্ডপের বিসর্জন শেষ হওয়ার পরপরই অনেক মণ্ডপ ও মন্দির থেকে পুলিশ সদস্যরা চলে যান।

পাশের জেলা কুমিল্লার একটি হিন্দু মন্দিরে পূজার সময় মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের অবমাননা করা হয়েছে—এমন অভিযোগের জেরে এই হামলা হয়। টানা তিন-চার ঘণ্টা হামলা চলে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্র জানায়, এই বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়ে আগের দিন চৌমুহনী চৌরাস্তার দক্ষিণে এখলাসপুরে মাইকিং করা হয়েছিল। চৌরাস্তার পশ্চিমে বাংলাবাজারে পোস্টার সাঁটানো হয়েছিল। জুমার নামাজ শেষে এসব এলাকা ও আশপাশের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে চৌরাস্তায় জড়ো হয়। সেটি চৌমুহনীর দিকে এগোয়। অন্যদিকে চৌমুহনী থেকেও খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয়। পুলিশের মূল নজর ছিল প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র চৌমুহনীর ডিবি রোডের দিকে। এখানে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ডিবি রোডের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের বিভিন্ন গলি–সড়কে ছড়িয়ে গিয়ে নির্বিচার হামলা চালায় মন্দির ও মণ্ডপগুলোতে। হামলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ছিল কিশোর ও যুবক।

হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে যে অভিযোগ করছেন, তা সত্য। আমি নিজেও এর প্রত্যক্ষদর্শী।

এ বি এম জাফরুল্যাহ, সভাপতি বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ

গতকাল মঙ্গলবার রাধামাধব জিউর মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাচের টুকরা। পড়ে আছে ভাঙা প্রণামির বাক্স, বিগ্রহের মূর্তি, কোনো জানালার কাচ অক্ষত নেই। এই মন্দিরটি ডিবি রোড থেকে দক্ষিণে মাত্র ৩০০ গজের মধ্যে। হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে মন্দিরের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) অনন্ত কুমার ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তিনি আগে কখনো দেখেননি। হামলা হয় বিকেলে, আর পুলিশ আসে রাতে।

এই মন্দিরের পরিচালনা কমিটির সদস্য নির্মল দাস বলেন, হামলার সময় তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ফোন করেছেন। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কেউ আসেনি। তারা এসেছে ধ্বংসযজ্ঞ শেষে।

রাধামাধব জিউর মন্দির থেকে কিছু দূর এগোলে রামচন্দ্র দেবের সমাধিক্ষেত্র (আশ্রম)। দুপুর ১২টায় এখানে বিসর্জন শেষ হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এখানকার একজন সেবক প্রথম আলোকে বলেন, বিসর্জন শেষেই পুলিশ চলে যায়। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল, ‘আপনারা সেইফে থাকেন, আমরা চলে যাচ্ছি।’

আশ্রমটিতে দুটি গাড়ি ও সামনের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে হামলাকারীরা। এই আশ্রমের ব্যবস্থাপকদের একজন মানিক লাল চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, আক্রমণকারীরা ছিল কয়েক শ। তারা প্রথমে সিসিটিভির ক্যামেরা ভাঙচুর করে। এ সময় তিনি (মানিক লাল) ও অন্য একজন বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন। এটি বিকেলের ঘটনা। আর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে হামলার অনেক পর, রাত আটটার দিকে।

এখানকার পুরোহিত বিপ্লব চক্রবর্তীও হামলায় আহত হন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হামলার সময় কমিটির সদস্যরা পুলিশকে ফোন দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

গণিপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে অনেক বছর ধরে। এখানে কখনো হামলা হবে, তা কেউ ভাবতে পারেনি। এই বিদ্যালয়ের দেয়ালে এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে। এখানেও হামলাকারীরা প্রথমে সিসিটিভির ক্যামেরা ভাঙচুর করে।

এখানকার ইসকন মন্দিরে হামলা হয় দুই দফায়। মন্দিরের অধ্যক্ষ রসপ্রিয় দাস অধিকারী বলেন, বেলা তিনটার দিকে এখানে প্রথম হামলা হয়। তখন তাঁর কক্ষে একজন সাংবাদিক ছিলেন। ওই সাংবাদিক পুলিশের অনেক কর্মকর্তা, হটলাইনে ফোন দেন। সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ এসে দু–চার মিনিট থেকে চলে যায়। এরপর দ্বিতীয় দফায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এখন অবশ্য সব মন্দিরের সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারা রয়েছে। হামলার দিন পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার যে অভিযোগ, তা নিয়ে গতকাল লোকনাথ মন্দিরে নোয়াখালীর জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলামের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, অভিযোগ ঠিক নয়। যখনই যেখান থেকে খবর পেয়েছে, পুলিশ ছুটে গেছে। হয়তো সংখ্যায় কম ছিল। পুলিশের মূল নজর ছিল প্রধান সড়কে, যেখানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তিনি দাবি করেন, মন্দির ও মণ্ডপগুলোতে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দুজন করে পুলিশ ছিল।

পুলিশ সুপার যখন এ কথা বলছিলেন, তখন পাশ থেকেই লোকনাথ মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক কুলভূষণ কুড়ি বলে ওঠেন, ‘আমাদের এখান থেকে তো বিসর্জনের পরপরই পুলিশ চলে গেছে। পুলিশ ছিল না। পুলিশ, প্রশাসন হেল্প করেনি।’ এরপর পুলিশ সুপার বলেন, মণ্ডপে পাঁচটা পর্যন্ত থাকার লিখিত নির্দেশনা দেওয়া ছিল। কেন এ রকম হলো, সেটা তদন্ত করে দেখবেন।

সরেজমিন: কুমিল্লা

দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ

২০ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো

ঘটনার পর থেকেই চারটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রথমত অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন কে বা কারা নিয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন কোন ব্যক্তি। তৃতীয়ত, ঘটনাটি ফেসবুকে প্রথম লাইভ (প্রচার) কে করেছিলেন। চতুর্থত, সাম্প্রদায়িক উসকানি ও হামলার পেছনে সংগঠিত কোনো শক্তি কাজ করেছে কি না। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর জানা গেছে। প্রথম ও চতুর্থ প্রশ্নের উত্তর জানার কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে অস্থায়ীভাবে করা একটি পূজামণ্ডপ থেকেই ঘটনার শুরু। এই পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে কুমিল্লা শহরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দেয়। এর জের ছড়িয়ে পড়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ফেনী এবং রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। মন্দির-মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুরের পাশাপাশি আক্রমণের শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পীরগঞ্জে পুড়িয়ে দেওয়া হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি।

যেদিন সকালে (১৩ অক্টোবর) ঘটনার সূত্রপাত, তার আগের দিন রাত দুইটা পর্যন্ত নানুয়া দীঘির পাড়ের ওই অস্থায়ী মণ্ডপে পূজা অর্চনা চলে। পুলিশ সূত্র জানায়, ১৩ অক্টোবর সকাল সাতটার দিকে একরাম হোসেন নামের স্থানীয় এক যুবক ৯৯৯ জরুরি সেবায় ফোন দিয়ে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ থাকার তথ্য জানান। এতে বোঝা যায়, পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা হয়েছে ১২ অক্টোবর দিবাগত রাত ২টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে।

এখন পর্যন্ত পুলিশের তদন্ত বলছে, পবিত্র কোরআন শরিফ মণ্ডপে যে ব্যক্তি নিয়ে যান, তাঁর বয়স ৩৫–এর কাছাকাছি। কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘি এলাকাতেই তাঁর বাড়ি। সন্দেহভাজন এই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ রাখছে। তবে এখনো তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

ওই ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের? এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, গ্রেপ্তারের আগে ওই ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় তাঁরা প্রকাশ করতে চাইছেন না।

কীভাবে ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, আশপাশের বাড়ির সিসি ক্যামেরা এবং বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তাঁরা ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছেন। তবে এখন তাঁর অবস্থান কোথায়, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাঁকে না ধরা পর্যন্ত ঘটনার পেছনের কারণ জানা সম্ভব নয়।

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘মূল অভিযুক্ত বারবার তার অবস্থান পরিবর্তন করছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাকে আমরা ধরে ফেলতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস।’

পুলিশ সূত্র জানায়, কুমিল্লার মণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার বিষয়টি জানিয়ে জরুরি সেবায় ফোন করেছিলেন একরাম হোসেন নামের স্থানীয় এক যুবক। পুলিশ সূত্র বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে একরামকে। তিনি ঘটনাচক্রে সেখানে ছিলেন বলেই এখন পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে। জরুরি সেবায় একরাম হোসেনের ফোন পেয়ে সাদাপোশাকেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনওয়ারুল আজিম। সেখানে গিয়ে তিনি পবিত্র কোরআন শরিফ উদ্ধার করেন। উপস্থিত মানুষের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ওই সময় মোহাম্মদ ফয়েজ নামের এক ব্যক্তি ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ করতে থাকেন। তিনি লাইভে পবিত্র কোরআন অবমাননার কথা উল্লেখ করে মানুষকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্ররোচনা দেন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে মানুষ জমায়েত হতে থাকে। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। ফয়েজের লাইভ করার উদ্দেশ্য নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় লোকজন।

তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে বিষয়টি ফেসবুকে লাইভ করেছেন বলে ফয়েজ পুলিশকে জানিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে অন্য কারও যোগাযোগ ছিল কি না, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে গতকাল দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্র ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফয়েজ দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির আগে আগে দেশে আসেন। কুমিল্লার কান্দিরপাড় খন্দকার হক ম্যানশনে মোবাইল ফোনের দোকান দিয়েছেন এখন। থাকেন নানুয়া দীঘির পাড়ের উত্তর-পূর্ব দিকে দিগাম্বরী তলায়।

ফয়েজের সঙ্গে ব্যবসা করা খন্দকার মার্কেটের এক দোকানি বলেন, ফয়েজের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়টি কখনো শোনা যায়নি।

সম্প্রীতির গল্প ছাপিয়ে উত্তেজনা

প্রায় পৌনে ছয় শ বছরের পুরোনো নানুয়া দীঘির আশপাশে দীর্ঘকাল থেকেই হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বসবাস। দিন দিন সেখানে মুসলমানদের বসতি বেড়েছে। তবে এখনো দীঘির আশপাশের বাসিন্দাদের ৪০ শতাংশ হিন্দুধর্মাবলম্বী।

নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির প্রয়াত নেতা আকবর হোসেনের বাড়ি। ওই বাড়ির সামনেই অস্থায়ী পূজামণ্ডপটির অবস্থান ছিল। দীঘির দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হকের বাড়ি। এলাকাটি একসময় কুমিল্লা শহরের অভিজাত এলাকা ছিল।

ঘটনার পর থেকে স্থানীয় মানুষের মনে নানা প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রীতির শহরে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল, তা এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না স্থানীয় লোকজন। কুমিল্লার স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, অতীতে দেশে যেসব সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে, এর মূল ভূমিকায় ধর্মীয় কোনো গোষ্ঠীকে দেখা গেছে। এবার নেতৃত্বে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীকে দেখা যায়নি।

নানুয়া দীঘির পাড়ের বিক্ষোভ ও মন্দিরে হামলাকারীদের প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। পোশাক-আশাকও সাধারণ।

পুলিশের সূত্র বলছে, মণ্ডপ থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ উদ্ধার এবং ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ করার পরই কম বয়সী ছেলেরা জমায়েত হতে থাকে। তবে শুরুতে জমায়েত হওয়াদের বেশির ভাগের দাবি ছিল, নানুয়া দীঘির পাড়ে পূজামণ্ডপ বন্ধ করে দিতে হবে। দু-একজন মণ্ডপ ভেঙে ফেলার দাবি তুললে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে।

নানুয়া দীঘির পাড়ের কাছেই থাকেন কুমিল্লার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহসানুল কবীর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এমন অশান্তি গত ৫০ বছরে দেখেননি। সেদিন বিক্ষোভ করতে আসা লোকজনের বেশির ভাগই ছিল বয়সে তরুণ, অচেনা। তাদের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী, বোঝা যাচ্ছিল না। একেকজন একেক দাবি করছিল। তাদের শান্ত করতে আশপাশের মসজিদের মাইকে আহ্বান জানানো হয়। এরপরও কীভাবে যেন তা পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা

পুলিশ সূত্র বলছে, নানুয়া দীঘির পাড়ে দিনভর উত্তেজনায় একসঙ্গে ৫০০ মানুষের বেশি উপস্থিত ছিল না। শহরের বিভিন্ন স্থানে যেসব মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে, তাতে বেশি মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। তাদের ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যাপ্ত কঠোর অবস্থান নেয়নি। নানুয়া দীঘির পাড়ে ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৩০০-৪০০ মানুষ বিক্ষোভ করছিল। এ সময় সিটি মেয়র, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত হয়ে মাইকে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। একদিকে বিক্ষোভ, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অবস্থান—এরপরও সেখানে পুলিশের সংখ্যা কম ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

দুর্বল প্রতিরক্ষার সুযোগে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হন। সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপসহ শক্তি প্রয়োগ শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, প্রথমেই পর্যাপ্ত পুলিশ এনে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারত। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, পুলিশ প্রথমে শক্তি প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো। প্রাণহানি এড়াতেই পুলিশ প্রথমে কঠোর হয়নি।

গত সোমবার এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ওই দিন ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। কারও যাতে প্রাণহানি না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার অধীনে দুর্গাপূজায় ৭৪টি মণ্ডপ ছিল। এর প্রায় সবই কোনো না কোনো মন্দিরে। নানুয়া দীঘির পাড়ের মণ্ডপটি কোনো মন্দিরকেন্দ্রিক নয়। এটি অস্থায়ী মণ্ডপ এবং দুর্গাপূজার সময়ই এই মণ্ডপ স্থাপন করা হয়। মণ্ডপটিতে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাও ছিল না।

স্থানীয় লোকজন জানান, ২০০১ সালে তৎকালীন মন্ত্রী আকবর হোসেন তাঁর বাড়ির সামনে নানুয়া দীঘির পাড়ে প্রথম পূজামণ্ডপ স্থাপনের বিষয়ে উৎসাহ দেন। তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু সুধীর চন্দ্র রায় কর্মকার পূজার আয়োজনের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে প্রতিবছরই সেখানে দুর্গাপূজার সময় মণ্ডপ স্থাপিত হতো। সুধীর মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবারই এই পূজামণ্ডপের দায়িত্বে আছে।

কুমিল্লা মহানগর পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শিবপ্রসাদ রায় প্রথম আলোকে বলেন, স্থায়ী মন্দির না হওয়ায় ওই মণ্ডপ রাত দুইটার পর অরক্ষিত থাকত। এ সুযোগই নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর দাবি, কুমিল্লার ঘটনাটি জাতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ। স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দারা এগিয়ে না এলে সেদিন আরও বড় ক্ষতি হতে পারত।

মণ্ডপে কোরআন রাখায় প্রধান সন্দেহভাজন যুবক ইকবাল

২০ অক্টোবর, ২০২১, নিউজবাংলা টুয়েন্টিফোরডটকম

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য এবং নিজস্ব অনুসন্ধানে নিউজবাংলা নিশ্চিত হয়েছে, মণ্ডপে কোরআন রেখে গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাওয়া ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন। ৩০ বছর বয়সী ইকবাল কুমিল্লা নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। তাকে খুঁজছে পুলিশ।

কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে ইকবাল হোসেন নামের এক যুবককে। এই ইকবালকে গ্রেপ্তারে গত কয়েক দিন ধরে চলছে জোর অভিযান। ইকবালের সহযোগী হিসেবে অন্তত চারজন এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, ইকবাল গ্রেপ্তার হলেই এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। ওই মণ্ডপের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় নগরীর আরও বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।

পূজার আয়োজক, এলাকাবাসী, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার আগের রাত আড়াইটা পর্যন্ত মন্দিরে পূজাসংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছিল। এরপর বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুজন নারী ভক্ত মণ্ডপে এসে হনুমানের মূর্তিতে প্রথম কোরআন শরিফটি দেখতে পান।

রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে কোনো একসময়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি কোরআন শরিফটি রেখে যান মণ্ডপে। এ সময় হনুমানের হাতের গদাটি সরিয়ে নেন তিনি। গদা হাতে তার চলে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে ওই এলাকারই কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়। এ ধরনেরই একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে দেখা যায়, কোরআন শরিফটি রাখার পর হনুমানের মূর্তির গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন প্রধান অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে সময়টি রাত তখন সোয়া ৩টার মতো।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য এবং নিজস্ব অনুসন্ধানে নিউজবাংলা নিশ্চিত হয়েছে, গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন। ৩০ বছর বয়সী ইকবাল কুমিল্লা নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। নূর আলম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।

পরিবারও চায় ইকবালের শাস্তি

ইকবালের মা আমেনা বেগম নিউজবাংলাকে জানান, তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ইকবাল সবার বড়।

তিনি জানান, ইকবাল ১৫ বছর বয়স থেকেই নেশা করা শুরু করেন। ১০ বছর আগে তিনি জেলার বরুড়া উপজেলায় বিয়ে করেন। ওই ঘরে তার এক ছেলে রয়েছে। পাঁচ বছর আগে ইকবালের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।

তারপর ইকবাল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার এলাকার কাদৈর গ্রামে আরেকটি বিয়ে করেন। এই সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আমেনা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইকবাল নেশা করে পরিবারের সদস্যদের ওপর অত্যাচার করত। বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটেও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াত।’

ইকবাল মাজারে মাজারে থাকতে ভালোবাসতেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেত। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিল।’ পঞ্চম শ্রেণি পাস ইকবালের সঙ্গে ১০ বছর আগে বন্ধুদের মারামারি হয়। এ সময় তারা ইকবালকে পেটে ছুরিকাঘাত করেন। তখন ইকবাল অপ্রকৃতিস্থ আচরণ শুরু করেন বলে দাবি করে তার পরিবার। আমেনা বেগম জানান, তিনি স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন ইকবাল পূজামণ্ডপ থেকে হনুমানের গদা সরিয়ে সেখানে কোরআন শরিফ রেখেছেন। আমেনা বলেন, ‘ইকবাল কারও প্ররোচনায় এমন কাজ করতে পারে। তার বোধবুদ্ধি খুব একটা নেই। ছেলে সত্যিই যদি অন্যায় করে, তাহলে যেন তার শাস্তি হয়।’

ইকবালের ছোট ভাই রায়হান নিউজবাংলাকে জানান, ইকবালকে খুঁজতে পুলিশকে তারাও সহায়তা করছেন।

১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে ইকবালকে চিনি। সে রঙের কাজ করত। মাঝে মাঝে নির্মাণকাজের সহযোগী হিসেবেও কাজ করত। ইকবাল ইয়াবা সেবন করায় প্রায়ই তাকে নিয়ে অনেক দেনদরবার করতে হতো।’ ইকবালের কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীও বিরক্ত বলে জানান তিনি। সোহেল বলেন, ‘আমার দৃঢ়বিশ্বাস ইকবালের মানসিক অসুস্থতাকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ কাজটি করেছে।’

কোরআন রাখার পর যেভাবে ছড়ানো হয় উত্তেজনা

তদন্তসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, মণ্ডপে কোরআন রাখায় যে চক্রটি জড়িত, ইকবাল তাদের একজন। তিনি কোরআন রাখার পর ভোরে আরেক অভিযুক্ত ইকরাম হোসেন (৩০) ঘটনাস্থল থেকে ৯৯৯-এ কল করেন। তারপর ওসি আনওয়ারুল আজিম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি কোরআন শরিফটি উদ্ধারের পাশাপাশি ইকরামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যান।

নগরীর বজ্রপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন চিনু রানী দাশ। নানুয়ার দিঘির পূর্ব পাড়ের একটি বাসায় তিনি গৃহকর্মীর কাজ করেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মণ্ডপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখতে পান দুই নারী মণ্ডপে কোরআন শরিফ দেখে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন।

চিনু রানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ সময় এক ছেলে ছুটে এসে চিৎকার করে বলে, হনুমানের পায়ের কাছে কোরআন, কেউ এখানে থাকবেন না। আর যে কোরআন এখান থেকে সরিয়ে নেবে, তার হাত কেটে ফেলা হবে।’

এ কথা শুনে ভয় পেয়ে যান চিনু। তিনি বলেন, ‘আমি একটু সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখছিলাম। ছেলেটা কাকে যেন ফোন দিয়ে কোরআনের বিষয়টা জানায়। এর কিছুক্ষণ পর সিএনজি দিয়ে একজন লোক আসে। সে এসে কোরআন শরিফটিকে বুকের মধ্যে নেয়।’ সিএনজি অটোরিকশায় আসা ওই ব্যক্তিই হলেন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনওয়ারুল আজিম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে একটা সিএনজিতে করে দ্রুত মণ্ডপে আসি।’

পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইকরামও রাতে নেশা করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, ওই রাতে ৩ পিস ইয়াবা সেবন করেন। পরে মণ্ডপের পাশে অবস্থান নেন। মণ্ডপে কোরআন রাখেন ইকবাল। আর ইকরামের দায়িত্ব ছিল ভোরে বিষয়টি পুলিশকে জানানোর। সে অনুযায়ী তিনি ৯৯৯-এ ফোন করেন।

ওসি আনওয়ারুল আজিম মণ্ডপ থেকে কোরআন উদ্ধারের সময় সেটি ফেসবুকে লাইভ করেন ফয়েজ নামের এক যুবক। সেই লাইভের পরেই উত্তেজিত মানুষ জড়ো হন ঘটনাস্থলে, শুরু হয় সহিংসতা। এই ফয়েজকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে জানান, তাদের ধারণা, দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপ থেকে যে কোরআন শরিফটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি আনা হয় পাশের একটি মাজার থেকে।

নানুয়ার দিঘির পাশেই শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারটির অবস্থান, মণ্ডপ থেকে হেঁটে যেতে সময় লাগে ২ থেকে ৩ মিনিট। দারোগাবাড়ী মাজার নামে কুমিল্লাবাসীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিতি রয়েছে মাজারটির। এর বারান্দায় দর্শনার্থীদের তিলাওয়াতের জন্য রাখা থাকে বেশ কয়েকটি কোরআন শরিফ। রাত-দিন যেকোনো সময় যে কেউ এখানে এসে তিলাওয়াত করতে পারেন।

দারোগাবাড়ী মাজারের মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন এমন তিনজনকে ঘটনার পর থেকে দেখা যাচ্ছে না। তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একজনের নাম হুমায়ুন কবীর (২৫), আরেকজনের বিষয়ে নিউজবাংলা তথ্য পেলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

দারোগাবাড়ী মাজারের খাদেম আহামুদ্দুন্নাবী মাসুক নিউজবাংলাকে জানান, হুমায়ুন মাজারে এসে নামাজ আদায় করতেন। তার বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার দেওরা এলাকায়। ঘটনার পরদিনই তাকে পুলিশ নিয়ে যায়। এ ছাড়া মাজারে আরও দুই-একজন নামাজ আদায় করতেন। তাদের এখন আর দেখা যাচ্ছে না।

কুমিল্লা জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাজারে নিয়মিত যাওয়া ওই তিন যুবকই মণ্ডপে কোরআন রাখার পরিকল্পনায় জড়িত। তাদের মধ্যে দুজনকে আমরা আটক করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেক তথ্য দিয়েছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজেও ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি।

‘তবে তৃতীয় যুবক ইকবালকে আটক করতে পারলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারণ তিনিই সরাসরি মণ্ডপে কোরআন রেখেছিলেন। তাকে ধরতে আমাদের অভিযান চলছে।’

Hajiganj mayhem began with Facebook post like previous incidents of communal violence

20 Oct , 2021, Daily Star

Like previous incidents of communal violence unleashed on minority communities, a post making the rounds on Facebook was what triggered the October 13 attacks in Chandpur’s Hajiganj upazila during Durga Puja celebrations.

The post claimed that the Holy Quran was demeaned at a puja mandap in Cumilla earlier in that day. The rumour spread, making the situation in Hajiganj tense.

Minutes before Esha prayers, a group of youths from ward-11 of Hajiganj municipality gathered in Bishwa Road intersection area and brought out a procession protesting the reported incident.

The youths marched straight to Hajiganj Boro Masjid, around a kilometre from the intersection, around 8:00pm. At that time, people were streaming out of the mosque after performing their prayers. Soon, several hundred people, including many of the devotees, joined the procession, led by the youths.

The procession then went back to the intersection, took a U-turn and headed back to the mosque. As it was passing near a mandap at century-old Lakshmi Narayan Akhra — around 200 yards from the intersection — the youths started throwing brickbats at its gate.

More people joined the attackers and the group turned into a mob. The attack continued for several minutes. Several Muslim devotees from the mosque tried to stop the mob, but in vain.

Around the same time, brickbats flew in at the mandap over the tarpaulin from its eastern and northern sides. Hindu devotees inside cowered in fear. Some of them were hurt.

The mandap had a CCTV camera but a gate erected right in front of it blocked the view.

Police swung into action within 10 minutes. Initially, they fired teargas canisters and shots in the air to drive the mob away. But the mob did not budge and started throwing bricks at the law enforcers, who took position at the mandap gate. At least 15 policemen were injured.

At one stage, police fired bullets to disperse the attackers. Three people were killed. Two other injured died later — one of them at Dhaka Medical College yesterday.

The Daily Star has pieced together the sequence of events in Hajiganj after talking to several dozen locals, including members of the temple management committee, political leaders, police, and watching video clips of the incident.

“The attacks were definitely pre-planned,” Sohel Mahmud, additional superintendent of police (Hajiganj circle), told this newspaper.

“It is because the zealots did not stop after swooping on that mandap. They attacked 13 more mandaps in Hajiganj upazila till 1:00am.”

The extent of the subsequent attacks was not as severe as the one on Lakshmi Narayan Akhra, he said, adding that there were 28 puja mandaps in the upazila in total.

Around 9:20pm that night, zealots also hurled brickbats at the Hajiganj Police Station. Most members of the police station were guarding the mandaps at that time.

Three cases were filed against around 2,000 people in connections with the incidents, said Harun-or-Rashad, officer-in-charge of Hajiganj Police Station. Police have arrested 15 people so far, he said.

The communal attacks in Cox’s Bazar’s Ramu in 2012, Pabna’s Santhia in 2013 and Brahmanbaria’s Nasirnagar in 2016 had followed a similar pattern. Mobs launched the attacks after being incited on social media.

Communal attacks have been carried out against Hindus in at least 13 districts since the Cumilla incident on October 13.

THE FACEBOOK POST

A post claiming that the Holy Quran was demeaned in Cumilla was uploaded from a Facebook ID under the name of Ariyan Sajjad. Several others were tagged in that post.

According to information available on the Facebook profile, Sajjad is a member of Hajiganj municipality Chhatra League. The pro-Awami League organisation, however, said it had nothing to do with Sajjad.

Mehdi Hasan Rabby, general secretary of the BCL unit, said Sajjad did not belong to the organisation. “He misused the name of BCL,” Rabby said.

He also said he took Sajjad and another youth named Hridoy Hassan Zahid to the Hajiganj circle’s additional superintendent of police hours before the attacks on the ASP’s instruction.

Police reprimanded the two and let them go, he said.

Asked, ASP Sohel Mahmud acknowledged the matter.

“We monitored the two youths’ Facebook activities and found that Sajjad uploaded the post and the other youth liked it,” he said.

“But we let them go because they were underage and they deleted the posts in front of us. We also found similar posts uploaded by others on the social media platform,” he said.

The Daily Star could not independently verify who was the first to upload the post.

Sajjad and Hriody were not found in Hajiganj. One of their friends claimed they were in police custody. This claim could not be verified.

THE PROCESSION

According to locals and police sources, most of the youths who led the procession were residents of ward-11 on the outskirts of Hajiganj upazila.

The area is dominated by BNP-Jamaat supporters, they said.

Locals claimed that they saw BNP men in the procession that night.

Police remain tight-lipped about the attackers, but said they have arrested some and were trying to arrest all those involved in the mayhem.

Three of the five killed in Thursday’s clash were from Randhunimora village, which falls under the ward.

The deceased were identified as Ridoy, 14, Al Amin, 18, and Shamim, 18.

Ridoy’s father Fazlul Haque said, “I saw my son scrolling through the news feed of his Facebook account. He was lying on his bed after saying his Maghrib prayers. Around 7:00pm, one of his friends came and took him to join a procession in Bishwa Road intersection.

“I asked him to stop but he said he would come back soon.”

Later that night, Fazlul, who was a former expatriate in Kuwait, learned that Ridoy was shot in the head. “I blame nothing but my fate for all of this,” he said.

দেশের যেখানে যেখানে হামলা হয়েছে

২১ অক্টোবর, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে গত ১৩ অক্টোবর পবিত্র কোরআন ‘অবমাননা’র অভিযোগে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে।

১৩ অক্টোবর কুড়িগ্রাম, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজারে হামলা হয়। ১৩, ১৪ ও ১৫ অক্টোবর হামলা হয় নোয়াখালীতে। এ ছাড়া, ১৪ অক্টোবর বান্দরবান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে, ১৫ অক্টোবর সিলেটে, ১৬ অক্টোবর ফেনী এবং ১৭ অক্টোবর রংপুরের পীরগঞ্জের জেলে পল্লীতে হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়।

সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার বগুড়া সদর উপজেলার একটি মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে প্রতিমা।

বগুড়ার মন্দিরে লক্ষ্মী প্রতিমা ভাঙচুর

২১ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো

বগুড়া শহরতলির সাবগ্রাম ইউনিয়নের নাথপাড়া এলাকায় সর্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গামন্দিরে লক্ষ্মী প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটার পর কোনো একসময়ে এ ঘটনা ঘটে। ভোরে পূজা উদ্‌যাপন কমিটির লোকজন মন্দিরে গেলে লক্ষ্মী প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়টি জানাজানি হয়।.. ..

মন্দির কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই দুর্গামন্দিরে গত মঙ্গলবার থেকে লক্ষ্মীপূজা শুরু হয়। বুধবার রাতে ভরা পূর্ণিমা ছিল। পূর্ণিমার পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জনের কথা ছিল। গতকাল রাত নয়টা পর্যন্ত মন্দিরে লক্ষ্মীপূজার আনুষ্ঠানিকতা ছিল। রাত একটা পর্যন্ত সেখানে মন্দির কমিটি ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ ভক্তরা অবস্থান করেন। রাত একটার পর যে যাঁর মতো বাড়ি চলে যান। সেখানে কোনো পাহারাদার ছিলেন না। সকালে পূজা উদ্‌যাপন কমিটির লোকজন মন্দিরে গিয়ে লক্ষ্মী প্রতিমা ভাঙচুরের দৃশ্য দেখতে পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দেন। পরে পুলিশ ও পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের স্থানীয় নেতারা ঘটনাস্থলে যান।.. ..

কুমিল্লার সেই ইকবাল কক্সবাজারে গ্রেপ্তার: পুলিশ

২১ অক্টোবর ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার ঘটনায় আলোচিত যুবক ইকবাল হোসেনকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম (ক্রাইম অ্যান্ড অ্যাডমিন)। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইকবাল নামে ওই যুবককে আমরা সৈকত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি।” সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ঘোরাঘুরির সময় গ্রেপ্তার করা হয় এই যুবককে।

“কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। দলটি কক্সবাজার পৌঁছালে এই যুবককে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে,” বলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। কুমিল্লা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার সকাল নাগাদ তারা ইকবালকে হাতে পাবেন বলে আশা করছেন।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহ‌মেদ বলেন, কক্সবাজারে ইকবাল হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এটা প্রধান সন্দেহভাজন ইকবাল কি না, তা যাছাই করে দেখবেন তারা। ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদে কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ে পূজামণ্ডপে কুরআন রেখে সাম্প্রদায়িক উসকানি সৃষ্টির পেছনের ঘটনা জানা যাবে বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশ কর্মকর্তারা। ইকবালের (৩৫) বাড়ি কুমিল্লা শহরেরই সুজানগরের খানকা মাজার এলাকায়। ওই এলাকার নূর মোহাম্মদ আলমের ছেলে ইকবাল পেশায় রঙমিস্ত্রি।.. ..

পীরগঞ্জে নারীদের বিক্ষোভ

‘দোষ করছে একজনে, ধরবেন আরেকজনকে সেইটা কোন কথা!’

২২ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো

রংপুরের পীরগঞ্জের খেদমতপুর গ্রামের গৃহিণী নুরজাহান বেগম। ঘরে বিদেশি গরু থাকায় আতঙ্কে রাত কাটছে তাঁর। কারণ, গ্রেপ্তারের আতঙ্কে চার দিন ধরে পুরুষেরা গ্রামছাড়া। পুলিশের ধরপাকড়ের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার দুপুরে এলাকায় অন্যান্য নারীর সঙ্গে তাই বিক্ষোভে এসেছিলেন নুরজাহানও।

এ সময় পুলিশকে উদ্দেশ করে নুরজাহান বলেন, ‘অনেকগুলা মোটরসাইকেলোত চড়ি বাইরের লোক আসিয়া হিন্দু গ্রামোত আগুন নাগাইছে। এ্যালা দোষ হওচে (এখন দোষ হচ্ছে) হামার গ্রামের মানুষের। চার দিন থাকি বিদেশি গরু ও ছাওয়া নিয়া একলায় বাড়িত আছি। খুব ভয় হয় রাইতে কেউ যদি ক্ষতি করে। সারা রাইত জাগি থাকি। দোষ করছে একজনে, ধরবেন আরেকজনকে সেইটা কোন কথা!’ ক্ষুব্ধ নুরজাহান একপর্যায়ে বলেন, ‘হামরা আলছি হামাকও ধরি নিয়া যাও।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাপ–দাদার আম্বল থাকি হামরা হিন্দু–মুসলমান একসঙ্গে আছি। কখনো কিছু লাগে নাই। হামরা ভালো না খারাপ সেটা হিন্দুপাড়ার মানুষ সবাই জানে।’

পীরগঞ্জে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রামনাথপুর ইউনিয়নের হিন্দুপল্লির অদূরে বটেরহাট জামে মসজিদের পাশে আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ করেন নুরজাহানের মতো পাঁচ শতাধিক নারী। খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন পুলিশ সদস্যরা। তবে পুলিশ দেখে নারীরা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তখন তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) একরামুল হক।.. …

কোরআন অবমাননার কথা স্বীকার, ঘটনার নেপথ্যে কে বলছেন না ইকবাল

২৩ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো

পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনার সাত দিন পর পুলিশ জানায়, যে ব্যক্তি কাজটি করেছেন, তাঁকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। নাম ইকবাল হোসেন। তিনি কুমিল্লা শহরেরই বাসিন্দা, তবে ‘ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত’। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, জিজ্ঞাসাবাদেও কোরআন অবমাননার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইকবাল। তবে কেন এই কাজ তিনি করতে গেলেন, তাঁকে দিয়ে এ কাজ কারা করিয়েছেন, ঘটনার নেপথ্যের ব্যক্তিরা কারা—এসব প্রশ্নের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

পুলিশ সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছেন। কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর দিচ্ছেন না।

ইকবালকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে আনা হয়। সেখানে তাঁকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা এবং প্রতিমা থেকে গদা সরানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইকবাল।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ইকবালের কাছে কয়েকটি বিষয়ে জানতে চেয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে কিছু বিষয় তিনি স্বীকার করেছেন। কিছু প্রশ্নের জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ইকবালের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ যাঁদের ঘনিষ্ঠতা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, তাঁদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার শুরুটা কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে অস্থায়ীভাবে করা একটি পূজামণ্ডপ থেকে। ১৩ অক্টোবর সকালে এই পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে কুমিল্লা শহরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দেয় এবং চারটি মন্দির ও সাতটি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনার জের ছড়িয়ে পড়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ফেনী, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। মন্দির-মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুরের পাশাপাশি আক্রমণের শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পীরগঞ্জে পুড়িয়ে দেওয়া হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি।.. …

পীরগঞ্জে সহিংসতার ‘হোতা’ সৈকত ছাত্রলীগ নেতা

২৩ অক্টোবর, ২০২১, নিউজবাংলা টুয়েন্টিফোরডটকম

সৈকত রংপুরের কারমাইকেল কলেজের দর্শন বিভাগের যে কমিটিতে ছিলেন, সেটি ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট অনুমোদন দেন কারমাইকেল কলেজ শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান সিজার ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমেদ। এ-সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পেয়েছে নিউজবাংলা। সাইদুজ্জামান সিজারও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লিতে সহিংসতার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে র‍্যাব যাকে আটকের কথা জানিয়েছে, সেই মো. সৈকত মণ্ডল ছাত্রলীগ নেতা বলে নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা।

তিনি রংপুরের কারমাইকেল কলেজে সংগঠনটির দর্শন বিভাগের কমিটির ১ নম্বর সহসভাপতি। তবে পীরগঞ্জ সহিংসতার পর তাকে অব্যাহতি দেয়ার কথা জানায় কলেজ ছাত্রলীগ। সৈকত দর্শন বিভাগের যে কমিটিতে ছিলেন, সেটি ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট অনুমোদন দেন কারমাইকেল কলেজ শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান সিজার ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমেদ। এ-সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পেয়েছে নিউজবাংলা।

সাইদুজ্জামান সিজারও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সৈকত মণ্ডল দর্শন বিভাগের কমিটিতে ছিলেন। ফেসবুকে কমেন্ট করার কারণে রোববার তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লিতে হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সৈকত মণ্ডলই এ ঘটনার হোতা। শুক্রবার রাতে টঙ্গী থেকে সৈকত ও তার সহযোগী রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অরাজকতা তৈরি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার এবং মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করেন বলে জানিয়েছেন। গ্রেপ্তার সৈকত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে উত্তেজিত করে তোলেন। এ ছাড়া তিনি ওই হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন।’

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, সৈকতের বাবা রাশেদুল ইসলাম রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় না থাকলেও দাদা আবুল হোসেন মণ্ডল রামনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং তার চাচা রেজাউল করিম রামনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ইউনিটের সভাপতি।.. ..

পূজামণ্ডপ, মন্দিরে হামলা

১৬ জেলায় প্রায় ২৪ হাজার আসামি

২৫ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো

কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে সম্প্রতি দেশের ১৬ জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার ঘটনায় দায়ের করা ৮৫টি মামলায় ২৩ হাজার ৯১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী রয়েছেন। আবার রাজনৈতিক পরিচয় নেই, এমন অনেককে এসব মামলায় আসামি ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে প্রায় ২৪ হাজার আসামির বেশির ভাগই অজ্ঞাতনামা বলে মামলার এজাহার পর্যালোচনায় দেখা গেছে। প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

আসামিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা–কর্মীও আছেন

চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও ফেনীতে দায়ের করা মামলাগুলোতে আসামির নামের তালিকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী আছেন। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীই বেশি। আবার গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যেও বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী রয়েছেন। রংপুরে গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে ছাত্রলীগের এক নেতা রয়েছেন।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় জামায়াত নেতা ও সাবেক শিবির সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আব্বাসিকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা তিনি স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, হাজীগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা নেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ৫ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিনসহ ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের সবাই এখন জেলহাজতে আছেন।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হামলা-ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় চৌমুহনী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাকেও হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম ওরফে সুমনসহ দলের ১০-১২ জন নেতা-কর্মীকে।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, নোয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা তাঁর অনুগত স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে হামলায় ইন্ধন দেন বলে স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি রয়েছে।

মামলার আসামি জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চৌমুহনীতে হামলা-ভাঙচুরের আগের দিন (১৪ অক্টোবর) আদালতে হাজিরা দিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেই থেকে তিনি ঢাকায় আছেন। পরে জানতে পারেন, ১৫ অক্টোবর চৌমুহনীতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় তাঁকেও আসামি করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পর ক্ষমতাসীন দলের ইন্ধনে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে একের পর এক মামলা দিচ্ছে। এতে মন্দিরে হামলাকারী প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে চলে যাচ্ছে। আর বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

রংপুরের পীরগঞ্জে মাঝিপাড়া গ্রামের বড়করিমপুর এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ছাত্রলীগের এক নেতা ও মসজিদের একজন মুয়াজ্জিন রয়েছেন। গতকাল রোববার তাঁরা দুজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে পীরগঞ্জে সহিংস ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। ছাত্রলীগ নেতা সৈকত মণ্ডল কারমাইকেল কলেজের দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত। অন্যদিকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার রবিউল ইসলাম রামনাথপুর ইউনিয়নের বটেরহাট জামে মসজিদের ইমাম।

পীরগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, পীরগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক তিনটি মামলা এবং একটি অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় এখন পর্যন্ত ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় পূজামণ্ডপে হামলা ও তোরণ ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক সাতটি মামলায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির জাফর সাদেক, বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম চৌধুরীসহ বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরের জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপে তোরণ ভাঙচুরের মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন যুব ছাত্র অধিকার পরিষদের ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, তাঁরা পরিকল্পনা ও হামলাকারী। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে।

সাধারণ মানুষ, প্রতিবন্ধীও আসামি

ফেনীতে চারটি মামলায় ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে একজন যুবদল, অপরজন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। বাকি ১৬ জন হলেন ফেনী পৌরসভার মধ্যম রামপুর গ্রামের আহনাফ তৌসিফ মাহমুদ লাবিব (২২), ফেনী সদর উপজেলার দক্ষিণ লেমুয়া গ্রামের মেহেদী হাসান মুন্না (২২), পৌরসভার মাস্টারপাড়ার আবদুল মান্নান (৪৬), ফেনী সদর উপজেলার পূর্ব মোটবী গ্রামের এনামুল হক রাকিব (২০), ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দক্ষিণ ডেমরা এলাকার মো. মিরাজ (৩৩), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার আমান সরকার বাজার এলাকার ফয়সল আহম্মেদ আল আমিন (১৯), ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের আবদুস সামাদ জুনায়েদ (১৯), লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মাওলানা পাড়ার মো. সোহেল (২৬), ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন (৩২), সাইফুল ইসলাম (৩৮), বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের মো. রোমন শেখ (১৬), তৌহিদুল ইসলাম জিদান (১৯), নোয়াখালীর সেনবাগের আবদুল্লাহ আল মিয়াজী (১৯), ফেনী পৌরসভার শান্তি কোম্পানি রোডের আজিম শরিফ (২৮) ও হাজারী রোডের ছাইদুল ইসলাম (২৯)।

জানতে চাইলে ফেনী সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন বলেন, তদন্ত চলছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার আসামিদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন। তবে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার আসামিদের কারও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা পরিচয় জানা যায়নি।

তবে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন দাবি করেন, তাঁদের দলের অঙ্গসংগঠন ফেনী পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছয়েদুল ইসলাম ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আজিম শরিফকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ফলে অন্য নেতা-কর্মীরাও আতঙ্কে রয়েছেন। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন। এ জেলায় চার মামলায় ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ১৮ জন।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ধুরিয়াইল শ্রীশ্রী কাজীরপাড় সর্বজনীন মন্দিরে হামলার অভিযোগে এক প্রতিবন্ধীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে ওই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতিমা ভাঙচুর করে দৌড়ে পালিয়ে গেছেন—এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধী ওই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহীন (৫৬)। তাঁর বাড়ি গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ধুরিয়াইল গ্রামে। তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য। বিএনপির নেতা হওয়ায় বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদককে দিয়ে মামলা করিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে আওয়ামী লীগের ওই নেতা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জন্মগতভাবে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আমার বাঁ পা খাটো। আমি ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। অথচ আমার বিরুদ্ধে ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও ৩ লাখ টাকার মালামাল লুট করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এমনকি মামলার এজাহারে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আমি দৌড়ে পালিয়েছি—এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে হয়রানি করতে আমাকে ওই মামলার আসামি করা হয়েছে।’

উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি দুলু রায় ও সাধারণ সম্পাদক মানিক মুখার্জী বলেন, একজন প্রতিবন্ধীকে মন্দিরে হামলার অভিযোগে করা মামলায় জড়ানো অমানবিক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে বিতর্কিত করার শামিল। তাঁকে মানবিক কারণে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।

গৌরনদী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হক বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে প্রতিবন্ধীকে নির্দোষ পাওয়া গেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিলেট নগরের হাওলাদারপাড়া এলাকার দুটি পূজামণ্ডপে ১৫ অক্টোবর দুপুরে হামলার ঘটনায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছিল সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় ১৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে এজাহারভুক্ত ১২ আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে শনিবার পর্যন্ত এ মামলায় নতুন কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গ্রেপ্তারকৃত ১২ জনের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পুলিশ পায়নি বলে জানিয়েছেন জালালাবাদ থানার ওসি নাজমুল হুদা খান।

কুমিল্লা নগরের নানুয়া দীঘির পাড় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে ১৩ অক্টোবর নগরের বিভিন্ন এলাকাসহ সদর দক্ষিণ, দেবীদ্বার ও দাউদকান্দি উপজেলার মন্দির ও পূজামণ্ডপে অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও ফেসবুকে উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়ানোর অভিযোগে নয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের জামায়াতের সমর্থিত তিন কাউন্সিলরসহ এজাহারনামীয় আসামি ৯২ জন ও অজ্ঞাতনামা ৭০০ জন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৬ জন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনওয়ারুল আজিম বলেন, কোনো রাজনৈতিক নেতাকে এখন পর্যন্ত এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়নি।

তবে কুমিল্লা নগরের ঠাকুরপাড়া কালীতলা এলাকার রক্ষাময়ী কালীমন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর, আগুন লাগানো ও মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ মামলায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম কিবরিয়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেন এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একরাম হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। তবে তাঁরা কেউ গ্রেপ্তার হননি।

মামলা ও গ্রেপ্তার বেশি দুই স্থানে

নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম—এ দুই স্থানে মামলা সবচেয়ে বেশি। মামলার বিপরীতে আসামির সংখ্যাও এ দুই স্থানেই সবচেয়ে বেশি। নোয়াখালীতে ২৪ মামলায় ৭ হাজার ৯৬১ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬২ জনকে। আর চট্টগ্রামে ৭ মামলায় আসামি ৩ হাজার ৮৫০ জন। এর মধ্যে ২০১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ১৩ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন মন্দির, পূজামণ্ডপ, দোকানপাট, বাড়িঘরে হামলা–ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় গত শুক্রবার পর্যন্ত বেগমগঞ্জে ১০টি, হাতিয়ায় ১০টি এবং চাটখিল, সোনাইমুড়ী, সেনবাগ ও কবিরহাট থানায় একটি করে মামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় পূজামণ্ডপে হামলা ও তোরণ ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৫০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •