রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: দীর্ঘ, ঝামেলাপূর্ণ, ব্যয়বহুল ও বিপজ্জনক

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

একটি অতি পুরাতন ভাবনার দীর্ঘ, ঝামেলাপূর্ণ, ব্যয়বহুল ও বিপজ্জনক জীবন এবং পরকাল

এম ভি রামানা ও জিয়া মিয়া

লেখাটি সর্বজনকথার জন্য পদার্থবিজ্ঞানী এম ভি রামানা ও জিয়া মিয়া লিখিত ‘The Rooppur Nuclear Power Plant: The Long, Troubled, Costly and Dangerous Life and After-Life of a Very Old Idea’-এর বাংলা অনুবাদ। এম ভি রামানা একজন পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স (এসপিজিএ)-এর ডিজআরমামেন্ট, গ্লোবাল অ্যান্ড হিউম্যান সিকিউরিটির অধ্যাপক এবং সিমন্স চেয়ার। তিনি লিউ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল ইস্যুজ-এর পরিচালক এবং ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান রিসার্চের সেন্টার ফর ইন্ডিয়া অ্যান্ড সাউথ এশিয়া রিসার্চ (সিআইএসএআর)-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (২০২০-২০২১)। জিয়া মিয়া একজন পদার্থবিজ্ঞানী এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম অন সায়েন্স অ্যান্ড গ্লোবাল সিকিউরিটির সহপরিচালক। তিনি পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি ইন সাউথ এশিয়া বিষয়ক প্রোগ্রামের প্রকল্পও পরিচালনা করেন। এ ছাড়া তিনি সায়েন্স অ্যান্ড গ্লোবাল সিকিউরিটির সহসম্পাদক এবং ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ফিসাইল সামগ্রীর (আইপিএফএম) সহসভাপতি। লেখাটি অনুবাদ করেছেন কল্লোল মোস্তফা।

বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয়ে রাশিয়ার নকশায় নির্মীয়মাণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা থেমে থেমে চলছে ছয় দশক ধরে। পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে ষাট বছরের এই প্রচেষ্টার মধ্যে পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে একই সময়ে যা জানা গিয়েছে, সে বিষয়ে অজ্ঞতার ছাপ রয়েছে। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে আরও সময় লাগবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ষাট বছর ধরে পরিচালনা করার কথা রয়েছে। উচ্চ নির্মাণব্যয়ের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আগামী কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশি ভোক্তাদের উচ্চতর বিদ্যুৎ বিলে অবদান রাখবে। অথচ একই পরিমাণ বিদ্যুৎ অনেক সস্তা এবং আরও দ্রুত পাওয়া যেত। এর চেয়ে বাজে ব্যাপার হলো, এই ষাট বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের মানুষের ওপর একটি পারমাণবিক দুর্ঘটনার আশঙ্কার ছায়া ফেলে যাবে, যে কারণে মানুষগুলো ক্রমাগত উদ্বেগের সঙ্গে বসবাস করতে বাধ্য হবেন বা স্রেফ ভুলে থাকার চেষ্টা করবেন। এমনকি যদি কোনো দুর্ঘটনা না-ও ঘটে, রূপপুর থেকে উৎপাদিত পারমাণবিক বর্জ্য হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এবং প্রকৃতিকে তেজস্ক্রিয় দূষণের ঝুঁকির মধ্যে রাখবে। পারমাণবিক শক্তিচালিত দেশ হওয়ার অর্থ এটাই।

উচ্চ নির্মাণব্যয়ের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আগামী কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশি ভোক্তাদের উচ্চতর বিদ্যুৎ বিলে অবদান রাখবে। অথচ একই পরিমাণ বিদ্যুৎ অনেক সস্তা এবং আরও দ্রুত পাওয়া যেত। এর চেয়ে বাজে ব্যাপার হলো, এই ষাট বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের মানুষের ওপর একটি পারমাণবিক দুর্ঘটনার আশঙ্কার ছায়া ফেলে যাবে, যে কারণে মানুষগুলো ক্রমাগত উদ্বেগের সঙ্গে বসবাস করতে বাধ্য হবেন বা স্রেফ ভুলে থাকার চেষ্টা করবেন। এমনকি যদি কোনো দুর্ঘটনা না-ও ঘটে, রূপপুর থেকে উৎপাদিত পারমাণবিক বর্জ্য হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এবং প্রকৃতিকে তেজস্ক্রিয় দূষণের ঝুঁকির মধ্যে রাখবে।

 

শীতল যুদ্ধের পরমাণু কীভাবে ওয়াশিংটন থেকে রূপপুরে গেল

বেশিরভাগ দেশেই পারমাণবিক চুল্লির জন্ম প্রথমে পরিকল্পনা নথিতে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটেছে। তবে পার্থক্য হলো, ধারণাটির জন্ম স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্মের আগেই। রূপপুর পারমাণবিক চুল্লির উৎপত্তি হয় পাকিস্তান ও শীতল যুদ্ধের রাজনীতি এবং একটি কল্পিত ভবিষ্যতের অভিজাত স্বপ্নের মধ্যে।

পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানে পারমাণবিক শক্তির কার্যকারিতা নিয়ে প্রথম গবেষণাটি করেন ১৯৫৫ সালে ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির মরিস ডি কিলব্রিজ। গবেষণাটি করা হয়েছিল ইউএস ন্যাশনাল প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশনের জন্য–পারমাণবিক শক্তির উৎপাদনশীল ব্যবহারের প্রকল্পের অংশ হিসেবে। গবেষণার সময় কিলব্রিজ ছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দলটি (HAG) পাকিস্তান সরকারের প্ল্যানিং বোর্ডের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করত, তার একজন সদস্য এবং পাকিস্তানের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লেখক।

পাকিস্তান সরকার একটি পরমাণু শক্তি গবেষণা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করছে–পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রী খান আবদুল কাইয়ুম খানের এ ঘোষণার এক বছর পর কিলব্রিজের গবেষণাটি করা হয়। এই ঘোষণাটি পাকিস্তান কর্তৃক পরমাণু শক্তিকে আলিঙ্গন করার সূচনা ঘটায়, যার ফলাফল সুদূরপ্রসারী ও দুর্ভাগ্যজনক। এই পদক্ষেপটি শীতল যুদ্ধেরই একটি অংশ ছিল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যেদিন ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, সেদিনই এ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং দুটি খবর একসঙ্গেই প্রচার করা হয়েছিল। এই ঘোষণাটি আইজেনহাওয়ারের পরমাণু শান্তি কর্মসূচির জন্য পাকিস্তানের সমর্থনের নাটকীয় প্রমাণ হিসেবে কাজ করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে উন্নয়নশীল বিশ্বে পশ্চিমের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি।

কিলব্রিজের গবেষণায় বলা হয়, ‘পূর্ব বা পশ্চিম পাকিস্তানে বড় আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি অর্থনৈতিক বিবেচনায় যথাযথ মনে হয় না।’ সাবধানতার সঙ্গে যুক্তি দিয়ে তৈরি এই প্রতিবেদন এবং তার সমালোচনামূলক উপসংহারকে স্রেফ উপেক্ষা করা হয়েছিল। আমেরিকানদের লেখা প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, যার আওতা ছিল ১৯৫৫-১৯৬০ সাল, পাকিস্তানকে পারমাণবিক ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল–পরমাণু তত দিনে উন্নয়ন, অগ্রগতি, ভবিষ্যৎ এবং ভূ-রাজনৈতিক জোটের চিহ্ন। এর মধ্যদিয়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশন তার উদ্দেশ্য, বাজেট এবং ক্ষমতা অর্জন করে। পশ্চিম বা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কাছে কেউই জানতে চায়নি তারা আসলে কী চায়। সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার তা পরিকল্পনাকারীরা নিজেরাই নিয়েছেন।

পাকিস্তানের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ঘোষণা করা হয়:

‘আমাদের সমাজের বর্তমান পর্যায়ে পরিকল্পনা করার অর্থ হলো সমাজকে প্রযুক্তিগতভাবে পশ্চাৎপদ এবং সামন্ততান্ত্রিক পর্যায় থেকে পারমাণবিক যুগের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত আধুনিক প্রযুক্তির যুগে সচেতনভাবে পরিচালিত করার জন্য পরিকল্পিত নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন।’ এই পরিকল্পনায় আহ্বান জানানো হয়: ‘একটি উপযুক্ত গবেষণা চুল্লি … যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থাপন করার। গবেষণা চুল্লি স্থাপন করতে হবে দুটি–একটি পশ্চিম পাকিস্তানে এবং অন্যটি পূর্ব পাকিস্তানে’। পরিকল্পনা দলিলে পশ্চিম পাকিস্তানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি ছিল স্পষ্ট।

১৯৫৮ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সংক্রান্ত জাতিসংঘের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাকিস্তান ঘোষণা করেছিল, দেশটি পশ্চিম পাকিস্তানে একটি ছোট গবেষণা চুল্লি এবং পূর্ব পাকিস্তানে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুল্লি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। ১৯৬৩ সালের মধ্যে পাকিস্তানে দুটি পারমাণবিক চুল্লি কেনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (যার আওতা ছিল ১৯৬৫-১৯৭০) নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়, যেখানে দুটি চুল্লি স্থাপনের কথা বলা ছিল–৫০ মেগাওয়াটের একটি চুল্লি স্থাপিত হবে ‘পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে’ এবং অন্যটি হবে ১৩২ মেগাওয়াটের যা ‘করাচি ও এর শহরতলির’ জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। কোনো আপাত কারণ ছাড়াই এ পরিকল্পনার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে এবং পরবর্তী বছরের মে মাসের মধ্যে ঘোষণা করা হয়:

‘পূর্ব পাকিস্তানে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (৭০ মেগাওয়াট) স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে; কেন্দ্রটি যেখানে স্থাপিত হবে, সেখানকার মাটির তলদেশ এবং উপরিভাগের সাধারণ জরিপের জন্য একটি চুক্তি করা হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (১৩২ মেগাওয়াট) স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।’

১৯৬৫ সালে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায়, পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রটি স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে ঢাকা থেকে ১৫০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে রূপপুরে। ১৯৬৫ সালের মে মাসে পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশন করাচিতে চুল্লি নির্মাণের জন্য কানাডীয় জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। যেহেতু পরিকল্পনাটিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পরিকল্পিত চুল্লির তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানের চুল্লিতে প্রায় ১০ গুণ ব্যয় করার কথা বলা হয়েছিল, তাই রূপপুরকে আরও অপেক্ষা করতে হয়।

 নতুন স্বপ্নে স্বাগতম, যা পুরাতন স্বপ্নেরই অনুরূপ

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে পরিণত হওয়ায় অনেক কিছুই বদলে যায়। কিন্তু পারমাণিবক স্বপ্ন ম্লান হয়নি। খুব দ্রুতই পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (BAEC)। তখন থেকে পরবর্তী বাংলাদেশি সরকারগুলো বাংলাদেশের জ্বালানি সংকটের একটি আধুনিক প্রযুক্তিগত সমাধান হিসেবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে জাতীয় অর্জন ও সাফল্যের চিহ্ন এবং রাষ্ট্রীয় শক্তির প্রমাণ হিসেবে মনে করছে। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরকে ‘জাতির স্বপ্ন’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ২০১৫ সালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন: ‘এখন আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে এমন সব অভিজাত দেশের ক্লাবে প্রবেশের পথে।’১০ পাকিস্তানের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার স্রষ্টারা নিশ্চয়ই এই ব্যাপারটা বুঝতে পারতেন এবং অনুমোদন করতেন। নামই শুধু বদলেছে।

বাংলাদেশসহ অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের পারমাণবিক জাতীয়তার অভিজাত স্বপ্নকে নেপথ্যে থেকে সমর্থন ও উৎসাহ প্রদান করে চলেছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। গঠনতন্ত্রে এই সংস্থাটিকে ‘বিশ্বজুড়ে শান্তি, স্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধির জন্য পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারকে ত্বরান্বিত এবং সম্প্রসারিত করার’ আহ্বান জানানো হয়েছে। আইএইএ ১৯৭৪-৭৫ সালে একটি পরিকল্পনা সমীক্ষা চালিয়েছিল এবং ১৯৯৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে আনুমানিক ১২০০-৩০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কথা বলেছিল, যা হবে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতার ৪৭ শতাংশ।১১ এই পরিকল্পনা তখন বাস্তবায়িত হয়নি; কিন্তু এটি রূপপুরে পারমাণবিক প্রকল্প স্থাপনে এগিয়ে যাওয়া জায়েজ করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। আইএইএ-এর প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ নিয়ে কে প্রশ্ন তুলতে পারে বলুন?

এ ছাড়াও পারমাণবিক স্বপ্নে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুল্লি বিক্রেতা কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলো, যারা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিক্রয় থেকে লাভের আশা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স ও চীন কয়েক দশক ধরে তাদের পরমাণু শিল্পের চুল্লি বিক্রির প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্স ১৯৮০ সালে ‘পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের’ জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।১২ দেশটি ১৯৮০-এর দশকে ১২৫ এবং ৩০০ মেগাওয়াট চুল্লি বিক্রির প্রস্তাব দেয়।১৩ শেষ পর্যন্ত রাশিয়াই অন্য সব দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের কাছে চুল্লি বিক্রি করতে সক্ষম হয়।

২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে, দেশটি রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে দুটি ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষর করবে। তারপর থেকে চুল্লির খরচ বাড়ছে এবং চুল্লি চালু হওয়ার তারিখ বিলম্বিত হচ্ছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রস্তুতিপর্বের আনুষ্ঠানিক শুরুর জন্য একটি অনুষ্ঠান করা হয়।১৫ তখন আশা করা হয়েছিল, ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ শুরু হবে। অনুষ্ঠানে তখন নির্মাণব্যয় বাড়িয়ে বলা হয়েছিল যে, প্রতিটি ইউনিটের খরচ হবে ১.৫ থেকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে।১৬ ২০১৪ সালের এপ্রিলে খরচের প্রাক্কলন তিন গুণ বেড়ে যায়, যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, খরচ হতে পারে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।১৭ অর্থমন্ত্রীর ২০১৫ সালের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২২ সালের মধ্যে দুটি চুল্লি চালু করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে আরও দুটি চুল্লি স্থাপনের জন্য১৮ সম্ভাব্য ৮টি স্থানের তালিকা করা হয়েছে; রূপপুরের মতো এটিও আমদানি করা হবে।১৯

মে ২০১৬-তে যখন চূড়ান্ত দরকষাকষি শেষ হয় তখন দেখা যায়, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণব্যয় দাঁড়িয়েছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে রাশিয়া ঋণ দেবে ১১.৩৮৫ বিলিয়ন ডলার।২০ এভাবে রাশিয়া মোট অর্থের ৯০ শতাংশ ঋণ হিসেবে প্রদান করবে, যার সুদের হার নির্ধারণ হবে লাইবর রেটের সঙ্গে আরও ১.৭৫ শতাংশ যোগ করে। বাংলাদেশকে ২৮ বছরের মধ্যে এই ঋণ শোধ করতে হবে, আর ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হবে ১০ বছর। অন্য কথায়, রাশিয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা পাবে, যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে কর এবং বিদ্যুতের অতিরিক্ত মূল্যের মাধ্যমেই সংগ্রহ করা হবে।

রাশিয়া মোট অর্থের ৯০ শতাংশ ঋণ হিসেবে প্রদান করবে, যার সুদের হার নির্ধারণ হবে লাইবর রেটের সঙ্গে আরও ১.৭৫ শতাংশ যোগ করে। বাংলাদেশকে ২৮ বছরের মধ্যে এই ঋণ শোধ করতে হবে, আর ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হবে ১০ বছর। অন্য কথায়, রাশিয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা পাবে, যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে কর এবং বিদ্যুতের অতিরিক্ত মূল্যের মাধ্যমেই সংগ্রহ করা হবে।

রাশিয়া চুল্লিগুলো পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহের জন্যও বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।২১ প্রকল্প থেকে নির্গত সমস্ত জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেওয়ার জন্যও রাশিয়াকে অর্থ প্রদান করতে হবে।২২ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও রাশিয়া এরকম চুক্তি করেছে, যা থেকে তার বাড়তি আয় হয়।২৩ পারমাণবিক চুল্লির নকশা তৈরি, জ্বালানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে লাভ করা যেন রাশিয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, তাই মে ২০২০ সালে, জেএসসি এলেরন নামে একটি রুশ কোম্পানি রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত নিরাপত্তাব্যবস্থা সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিউক্লিয়ার সিকিউরিটি অ্যান্ড ফিজিক্যাল প্রোটেকশন সিস্টেম সেল (এনএসপিসি)-এর সঙ্গে ২৮৭.৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে।২৪ পুরো বিষয়ে বাজারের যুক্তিটি বেশ শ্বাসরুদ্ধকর–বাংলাদেশ পারমাণবিক বিপদ সৃষ্টির জন্য রাশিয়াকে অর্থ প্রদানের উদ্দেশ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণ নেবে এবং তারপর এই বিপদগুলো মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য রাশিয়াকে আরও অর্থ প্রদান করবে।

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে একমাত্র রাশিয়াই অর্থ উপার্জন করবে তা নয়; ভারতের গ্লোবাল সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি পার্টনারশিপ রূপপুর প্রকল্প ‘বাস্তবায়নের জন্য প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ সেবা প্রদান’ করবে।২৫ ভারতীয় কোম্পানি লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করছে, যার বেশিরভাগ অর্থই এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া থেকে আসছে; কিন্তু অর্থায়নের অনুমোদন পেতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পে বিলম্ব হতে পারে।২৬

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের খরচ আসলে কত হবে? পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও ব্যয়কে শুরুতে কমিয়ে দেখানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। নির্মাণব্যয় বৃদ্ধিসংক্রান্ত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮০টি পরমাণু প্রকল্পের মধ্যে ১৭৫টির চূড়ান্ত খরচ প্রাথমিক হিসাবকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল গড়ে ১১৭ শতাংশ হারে এবং এগুলো নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রাথমিক হিসাবের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি।২৭ সুতরাং, রূপপুরের চূড়ান্ত খরচ ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে আরও বেশি হতে পারে। প্রকৃত খরচ তখনই জানা যাবে, যখন প্রকল্পটি শেষ হবে।

চুল্লির নির্মাণব্যয় ছাড়াও আরও অনেক খরচ আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জ্বালানি সংগ্রহ বা চুল্লি পরিচালনার খরচের কথা। এগুলো প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুরূপ। কিন্তু পারমাণবিক চুল্লি যেদিক থেকে আলাদা তা হলো, চুল্লি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শেষ হওয়ার পরও বড় ধরনের খরচ করতে হয়।

প্রথমটি হলো ডিকমিশনিং, যার মধ্যে রয়েছে চুল্লি থেকে জ্বালানি সরানো এবং চুল্লির যন্ত্রসামগ্রী খুলে সরিয়ে নেওয়া। সেই সঙ্গে রয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য অপসারণের অনিশ্চিত প্রক্রিয়া (এ নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে)। ডিকমিশনিংয়ের কাজটি ‘কারিগরিভাবে জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং অর্থায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়’।২৮ যেহেতু রিঅ্যাকটর ডিকমিশনিংয়ের অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত, তাই এর জন্য কত খরচ হবে, তার কোনো নির্ভরযোগ্য অনুমান করা মুশকিল। ফলে প্রত্যাশার চেয়ে খরচ অনেক বেশি হয়। রূপপুরের ক্ষেত্রে কমপক্ষে কয়েক বিলিয়ন ডলার বাড়তি খরচ হতে পারে, আর এই অনুমানটি করা হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপন্ন সমস্ত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য মোকাবিলার সমস্যা যোগ না করেই।

অনন্ত এক স্বপ্নে আটকে পড়া, যা আসলে দুঃস্বপ্ন

রূপপুর-১ ও ২-এর নির্মাণকাজ শুরু হয় যথাক্রমে ২০১৭ সালের নভেম্বর এবং ২০১৮ সালের জুলাই মাসে।২৯ ২০২০ সালের নভেম্বরে ইউনিট-১-এর প্রেশার ভেসেল এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে রিঅ্যাকটর কোরের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশ রূপপুরে সরবরাহ করা হয়।৩০ বর্তমান সময়সূচি অনুসারে ইউনিট-১-এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম ২০২৩ সালে এবং ইউনিট-২-এর কার্যক্রম ২০২৪ সালে শুরু হবে বলে প্রত্যাশিত।৩১ বলা হচ্ছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রত্যাশিত কর্মক্ষম আয়ুষ্কাল ষাট বছর। অন্ততপক্ষে এই ষাট বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণকে এই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে যে, যেকোনো দিন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি একটি বিপজ্জনক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে, যার ফলে বায়োস্ফেয়ার বা জৈবমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে শত শত কিলোমিটারজুড়ে মানুষ এবং ভূমি দূষিত করতে পারে। সেক্ষেত্রে কে কোথায় কতটুকু তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হবে, তা নির্ভর করবে বাতাসের দিক এবং বৃষ্টিপাতের ওপর।

এই বিশ্ব ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল এবং ২০১১ সালে ফুকুশিমার মতো ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে, সেইসঙ্গে দেখেছে এমন আরও অনেকগুলো দুর্ঘটনা, যেগুলো এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। সুতরাং, পারমাণবিক শক্তিকে দুর্ঘটনার আশঙ্কার সঙ্গে যুক্ত করার উপযুক্ত কারণ রয়েছে। বিভিন্ন দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বহু দশক ধরে ব্যর্থতার অনেক নজির রয়েছে।৩২ আসলে অভিজ্ঞতা বলছে, আমাদের পারমাণবিক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা উচিত।

প্রয়াত চার্লস পেরো ছিলেন এমন একজন সমাজবিজ্ঞানী, যিনি সারা জীবন বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা অধ্যয়ন করে কাটিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন, কোনো কিছুই নিখুঁত নয় এবং শিল্প খাতে সবসময়ই নকশা, উপাদান বা পদ্ধতির ব্যর্থতা থাকবে।’৩৩ এটি সাধারণ জ্ঞান—আমরা প্রত্যেকেই যেকোনো সময়ে ব্যর্থতার সাক্ষী হতে পারি আর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এর ব্যতিক্রম নয়।

শুধু যে একক কোনো ফেইলিওর বা ব্যর্থতা থেকে দুর্ঘটনা ঘটে তা নয়, এমন ঘটনাও ঘটে–যখন একই সময়ে একাধিক নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে যায়, যা এমনকি পারমাণবিক চুল্লিগুলোর ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। ফুকুশিমায় ঠিক এমনটিই ঘটেছিল, যেখানে সুনামির কারণে একাধিক নিরাপত্তাব্যবস্থা একসঙ্গে অকার্যকর হয়ে যায়। এটাকে অনেক সময় বলা হয় কমন-কজ ফেইলিওর বা সাধারণ একটি কারণ থেকে উদ্ভূত বহুবিধ ব্যর্থতা। উপরন্তু একটি নিরাপত্তা উপাদানের ব্যর্থতা অন্য আরও অনেক নিরাপত্তা উপাদানের ব্যর্থতার সূচনা ঘটাতে পারে। ১৯৭৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর পেরো যেমন বলেছিলেন, পারমাণবিক চুল্লির একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এই সম্ভাবনাগুলো কল্পনা করা কঠিন: তাদের ইন্টারঅ্যাকটিভ বা পরস্পরের ওপর ক্রিয়াশীলতার কারণে সৃষ্ট জটিলতা।৩৪

পারমাণবিক দুর্ঘটনা বোঝার জন্য প্রযুক্তির এই ‘সাধারণ দুর্ঘটনা’ দৃষ্টিভঙ্গির তিনটি প্রভাবের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, জটিলতার কারণে, একটি চুল্লি পরিচালনার সময় যে ভৌত পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা কখনোই সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় না এবং চুল্লির নকশাকার বা পরিচালকদের বোঝাপড়াটা সবসময়ই আংশিক থাকে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু সিস্টেমের উপাদান এবং ঘটনাগুলো অপ্রত্যাশিত উপায়ে পরস্পরের সঙ্গে ক্রিয়া করতে পারে, তাই সম্ভাব্য সমস্ত ব্যর্থতার ধরন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়। অতএব, এ ধরনের ব্যর্থতার হাত থেকে নিরাপদ থাকার জন্য চুল্লির নকশা করা বা ব্যর্থতা মোকাবিলার জন্য যথাযথ সুরক্ষার আগাম ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয় না। আর এ থেকেই আসে তৃতীয় প্রভাব: বিপর্যয়কর দুর্ঘটনার আশঙ্কার সংখ্যাসূচক অনুমান অবিশ্বস্ত।৩৫ এর মানে হলো, বিশেষজ্ঞরা যখন দাবি করেন যে, রিঅ্যাকটর মেল্টডাউন বা চুল্লি গলে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতি এক কোটিতে মাত্র এক, তখন এ-জাতীয় হাস্যকর দাবিকে স্রেফ উপেক্ষা করতে হবে।

পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে যে মূল প্রশ্নটি উত্থাপন করা উচিত তা হলো, কাগজে-কলমে এটি নিরাপদ কি না, তা নয়; এটি বাস্তব জগতে নিরাপদ হবে কি না–যখন এটি বাস্তব ও নিখুঁত নয় এরকম বিভিন্ন মানুষ দ্বারা পরিচালিত হবে এবং যখন নানা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন ধরনের অগ্রাধিকার থাকে, যার মধ্যে রয়েছে–ব্যয় হ্রাস, মুনাফা অর্জন এবং নিয়মকানুন মেনে চলা। এই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে যদি বাস্তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিরাপদ থাকবে কি না–এই প্রশ্নটি করা হয়, তখন এটি স্পষ্ট হয়ে যায়, উত্তরটি নেতিবাচক।

১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল চেরনোবিলের পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর যা ঘটেছিল, তা থেকে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির একটি ভালো ধারণা পাওয়া যায়। এই দুর্ঘটনার ফলে অনেক ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ, বিশেষ করে আয়োডিন এবং সিজিয়াম রেডিওনিউক্লাইড ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ এবং উত্তর গোলার্ধের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনার সবচেয়ে স্পষ্ট স্বাস্থ্যগত প্রতিক্রিয়া ছিল–তেজস্ক্রিয় দূষণের শিকার এলাকায় বেড়ে ওঠা শিশুদের থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া, যার জন্য দায়ী ছিল অত্যন্ত কম হাফ-লাইফ বা অর্ধজীবনের (আট দিন) তেজস্ক্রিয় আয়োডিন-১২১। ২০০০ সালে জাতিসংঘের সায়েন্টিফিক কমিটি অন দি ইফেক্টস অব অ্যাটমিক রেডিয়েশন (UNSCEAR) জানায়, ‘গত ১৪ বছরে তেজস্ক্রিয়তায় দূষিত এলাকায় থাইরয়েড ক্যানসারের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল।’ সংস্থাটির আরও পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘শৈশবে যারা তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়েছিল, বিশেষত উঁচুমাত্রার তেজস্ক্রিয়তার শিকার তিনটি দেশের শিশুরা, তাদের মধ্যে থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা আমাদের ইতঃপূর্বে অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে তৈরি হিসাবের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি… যদি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে আরও বেশিসংখ্যক মানুষ থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা যায়, বিশেষ করে যারা অল্প বয়সে তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়েছিলেন।’৩৬ এবং সত্যিই, তারা আক্রান্ত হয়েছেন। ২০১৮ সাল নাগাদ, শুধু বেলারুশ ও ইউক্রেন এবং রুশ ফেডারেশনের চারটি দূষিত অঞ্চলের ক্ষেত্রে UNSCEAR ১৯৯১-২০১৫ সালের মধ্যে ১৯ হাজার বাড়তি থাইরয়েড ক্যানসারের কথা জানিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় চার গুণ।৩৭ ‘ইতিহাসে একক কোনো ঘটনার ফলে সৃষ্ট নির্দিষ্ট একটি ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা এটাই সর্বোচ্চ।’৩৮

২০১৮ সাল নাগাদ, শুধু বেলারুশ ও ইউক্রেন এবং রুশ ফেডারেশনের চারটি দূষিত অঞ্চলের ক্ষেত্রে UNSCEAR ১৯৯১-২০১৫ সালের মধ্যে ১৯ হাজার বাড়তি থাইরয়েড ক্যানসারের কথা জানিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় চার গুণ।

এই পারমাণবিক দুর্ঘটনার প্রধান দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ছিল তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম-১৩৭ (Cs-137)-এর মাধ্যমে ভূমিদূষণ। সিজিয়াম-১৩৭ থেকে গামা রশ্মি নির্গত হয় এবং এর হাফ-লাইফ ৩০ বছর। আর এ কারণেই একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তরিত করতে হয় এবং বড় বড় এলাকা ক্রমাগত দূষিত হতে থাকে ও কয়েক দশক পরও অগম্য থেকে যায়। এর ফলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালে ইউক্রেন তার ক্ষতির অনুমান করেছিল আনুমানিক ২৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ছিল ‘পরোক্ষ ক্ষতি (বিদ্যুৎ প্রকৌশল, শিল্প, কৃষি, বন, জল এবং মৎস্য শিল্প প্রভৃতিতে কোনো উৎপাদন না হওয়া)’।৩৯

পারমাণবিক দুর্ঘটনা বৈশ্বিক বিষয়। চেরনোবিল বিপর্যয় থেকে সারা বিশ্বে আনুমানিক সম্মিলিত বিকিরণ ডোজ-এর পরিমাণ ছয় লাখ ব্যক্তি-সিভার্ট (Sv)।৪০ ইউএস ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের বায়োলজিক্যাল ইফেক্টস অব আয়নাইজিং রেডিয়েশন রিপোর্ট অনুসারে, প্রতি সিভার্ট তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে ০.০৫৭টি ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।৪১ অতএব, উল্লিখিত সম্মিলিত বিকিরণ ডোজ একটা দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে। এরকম আরও হিসাব রয়েছে, যেখানে চেরনোবিল দুর্ঘটনা থেকে আরও অনেক বেশি মৃত্যুর আশঙ্কা করা হয়।৪২

চিরকালের পারমাণবিক

পারমাণবিক চুল্লি পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সুপরিচিত দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হলো, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য উৎপাদন। এটি পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের একটি অনিবার্য পরিণতি; চুল্লিতে শক্তি জোগান দেয় যে পারমাণবিক বিক্রিয়া তা থেকে ফিশান প্রোডাক্টও তৈরি হয়। ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়ামের নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে শক্তি উৎপাদনের সময় তেজস্ক্রিয় আইসোটোপও তৈরি হয়, এগুলোকেই বলা হয় ফিশান প্রোডাক্ট। আরেকটি তেজস্ক্রিয় উপাদান, প্লুটোনিয়ামও তৈরি হয় যখন নিউট্রন শোষণ ও তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম ভারী উপাদানে রূপান্তরিত হয়। পারমাণবিক জ্বালানি শৃঙ্খলের বিভিন্ন ধাপে অন্যান্য আরও বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই তেজস্ক্রিয় পদার্থের মধ্যে কয়েকটির হাফ-লাইফ বা অর্ধজীবন অনেক দীর্ঘ, যা কিছু ক্ষেত্রে লাখ লাখ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং সেই দীর্ঘ সময়ের জন্য এগুলো তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটাতে থাকে।

যেহেতু তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, এমনকি নিম্ন মাত্রায়ও স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক, কাজেই এসব বর্জ্যের সংস্পর্শ মানুষ এবং অন্যান্য জীবের জন্য ক্ষতিকর হবে যত দিন এসব বর্জ্যে তেজস্ক্রিয় থাকবে।

১৯৫০-এর দশক থেকে পারমাণবিক শক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য গভীর ভূগর্ভস্থ ভূতাত্ত্বিক সংরক্ষণাগার বা রেপোজিটরি নির্মাণের পক্ষে মত দিয়ে আসছে। কিন্তু কোনো দেশই এখন পর্যন্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য এ ধরনের কোনো সংরক্ষণাগার তৈরি করেনি। ধারণাগতভাবে, একটি ভূতাত্ত্বিক সংরক্ষণাগার মূলত একটি গভীর গর্ত, যেখানে পারমাণবিক বর্জ্যে ভরা বিশেষ পাত্র মূলত চিরকালের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। ভূতাত্ত্বিক সংরক্ষণাগারে দীর্ঘস্থায়ী রেডিও আইসোটোপগুলো দীর্ঘ সময় ধরে রাখা হলে কী কী ঘটতে পারে, সে বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

পারমাণবিক জ্বালানি শৃঙ্খলের বিভিন্ন ধাপে অন্যান্য আরও বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই তেজস্ক্রিয় পদার্থের মধ্যে কয়েকটির হাফ-লাইফ বা অর্ধজীবন অনেক দীর্ঘ, যা কিছু ক্ষেত্রে লাখ লাখ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং সেই দীর্ঘ সময়ের জন্য এগুলো তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটাতে থাকে। যেহেতু তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, এমনকি নিম্ন মাত্রায়ও স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক, কাজেই এসব বর্জ্যের সংস্পর্শ মানুষ এবং অন্যান্য জীবের জন্য ক্ষতিকর হবে যত দিন এসব বর্জ্যে তেজস্ক্রিয় থাকবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি কমিশন এবং এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ডে পরবর্তী এক লাখ কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ লাখ বছর ধরে এসব তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের রিপোজিটরি বা সংরক্ষণাগারের কারণে মানুষ কী পরিমাণ বিকিরণের শিকার হতে পারে, তার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। রিপোজিটরির কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চুরি এবং নাশকতাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। জরুরি অবস্থা বা দুর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য অবশ্যই কার্যকর পরিকল্পনা থাকতে হবে।

ভূতাত্ত্বিক নিষ্কাশনের মৌলিক সমস্যা হলো, এসব বর্জ্য কয়েক হাজার বছর ধরে তেজস্ক্রিয় থাকে। তাই বর্জ্য সংরক্ষণের যেকোনো পাত্র বা আধার সম্ভবত সেই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ক্ষয় হয়ে যাবে। তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো যে বায়োস্ফিয়ার বা জীবমণ্ডলে ছড়িয়ে যাবে এবং ভূগর্ভস্থ পানির উৎসকে দূষিত করবে, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, যেটা জানা নেই তা হলো, এই ঘটনাটি ঘটবে কখন।

কোনো ভূগর্ভস্থ রিপোজিটরিতে থাকা তেজস্ক্রিয় বর্জ্য কত দ্রুত মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে ফিরে আসবে, তা নির্ভর করে ভূতাত্ত্বিক মিডিয়া (যেমন: গ্রানাইট, আগ্নেয়গিরির টাফ বা কাদামাটি) এবং যে ধরনের মোড়কে বর্জ্যগুলো সংরক্ষণ করা থাকবে, তার উভয়ের ওপর।৪৪ আশা করা হয়, যদি এই বাছাই করার কাজটি ঠিকঠাক মতো করা হয় (সীমিত জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে আজ আমরা সবচেয়ে ভালো যা জানি তার ভিত্তিতে) এবং রিপোজিটরির নকশা ও এটি স্থাপন করার কাজ সঠিকভাবে করা হয় (কোনো ধরনের পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছাড়াই যতটা সম্ভব), তাহলে পারমাণবিক বর্জ্যকে ততটা সময় ধরে মানুষের সংস্পর্শমুক্ত রাখা যেতে পারে যেন বেশিরভাগ তেজস্ক্রিয় পদার্থ বিকিরিত হতে হতে স্থিতিশীল পদার্থে পরিণত হয়। অবশ্য তারপরও কিছু অবশিষ্টাংশ বিকিরিত হতে পারে।

‘প্রধানত দুটি উপায়ে’ মানুষ এই বর্জ্য থেকে নির্গত বিকিরণের সংস্পর্শে আসতে পারে, যা হলো: ‘১) মানবসৃষ্ট ছোট, ঘনীভূত নিঃসরণ (রিপোজিটরির মধ্যে বা কাছাকাছি কোনো স্থানে কূপ খনন থেকে) যার ফলে গুটিকয়েক ব্যক্তি বড় আকারের তেজস্ক্রিয় বিকিরণে আক্রান্ত হতে পারেন; অথবা ২) রিপোজিটরি থেকে তেজস্ক্রিয়তা ধীরে ধীরে ভূগর্ভস্থ পানিতে (এবং পরিশেষে পানীয় জল বা খাদ্য সরবরাহে) ছড়িয়ে পড়া, যার ফলে জনসংখ্যার একটি বড় অংশে খুব ছোট মাত্রার (ব্যাকগ্রাউন্ড বা বিদ্যমান বিকিরণের তুলনায়) বিকিরণে আক্রান্ত হওয়া’।৪৫ এই দুটোর মধ্যে যেকোনো একটি কাজ করা অনেক বড় নৈতিক দায়। প্রশ্ন হলো, এই বোঝা চাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কার এবং কীভাবে তাদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করা যাবে। কারণ, ভবিষ্যতে যখন ক্ষতির ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে, তত দিনে তো সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা গায়েব হয়ে যাবেন।

পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা একটি বিশাল উদ্যোগের ব্যাপার যে, কাজে বহু ধরনের ঝুঁকি এবং অজানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের একটা অংশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি ভূতাত্ত্বিক সংরক্ষণাগার স্থাপনের জন্য ৪০ বছর (১৯৭০-২০১০) ধরে চেষ্টা করেছে; কিন্তু কোনো সাফল্য আসেনি। বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে নেভাদার একটি দূরবর্তী এলাকা, ইউকা মাউন্টেন অঞ্চলকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে বর্জ্য সংরক্ষণাগার তৈরির কারিগরি যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য করা গবেষণার পেছনে মার্কিন সরকার প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। কিন্তু সমালোচকরা আশ্বস্ত হননি এবং নেভাদার জনগণও আপত্তি জানান: তারা পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণাগারের পাশে চিরকাল থাকতে রাজি হননি। ভূগর্ভের যে স্থানটিতে পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণ করা হবে বলে স্থির করা হয়েছিল, সেখানে বৃষ্টির পানি চুইয়ে প্রবেশ করা এবং সে স্থানটিতে গত ১ লাখ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল বলে তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। অবশেষে ওবামা প্রশাসন প্রকল্পটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।৪৬

বিদ্যমান পরীক্ষামূলক ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগারবিষয়ক সীমিত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, এখান থেকে এমন সব সমস্যার জন্ম হয়, যার ব্যবস্থাপনা অসম্ভব। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সংবলিত একটি রিপোজিটরির সঙ্গে যে ধরনের জটিল বিষয় এবং দীর্ঘ সময় যুক্ত, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, কোনো-না-কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা ত্রুটি ঘটতেই পারে।

একটি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সংরক্ষণাগার নিয়ে গবেষণা করার জন্য জার্মানি আসসে (Asse) অঞ্চলে একটি পুরোনো লবণের খনি বেছে নেয় এবং ১৯৬০-এর দশকে এখানে মধ্যবর্তী এবং নিম্নস্তরের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সংরক্ষণ করা শুরু করে। এই স্থানটি বেছে নেওয়ার কারণ হলো, ধরে নেওয়া হয়েছিল–লবণ তেজস্ক্রিয় বর্জ্যকে পানির সংস্পর্শে আসতে বাধা দেবে। ফলে ভূপৃষ্ঠের তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে মানুষ, উদ্ভিদ এবং প্রাণীর ক্ষতি ঠেকানো যাবে। এই প্রকল্পের সমালোচক এবং স্থানীয় এনজিওগুলো সতর্ক করেছিল যে, স্থানটি বন্যায় ডুবে যেতে পারে, ঘটেও ছিল ঠিক তাই। সেখানে যেসব বর্জ্য সংরক্ষণ করা হয়েছিল, সেগুলো আবার অনেক খরচ করে উত্তোলন করতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে ভুলটা ছিল, বর্জ্য সংরক্ষণস্থল সম্পর্কে জানা, বোঝা ও নকশায়। পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানেরও ব্যর্থতা ছিল। দেখা যায়, বর্জ্য সংরক্ষণাগার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি এক দশক ধরে বন্যা সমস্যা আড়াল করে রেখেছিল। গণমাধ্যম শেষ পর্যন্ত সত্য উদ্ঘাটন করে। জার্মানির ফেডারেল অফিস ফর রেডিয়েশন প্রটেকশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ২০১৬ সালে স্বীকার করেছিলেন, ‘আজকের দিনে কেউ এই খনিটিকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাখার স্থান হিসেবে বেছে নেবে না।’৪৭

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য স্থাপিত ওয়েস্ট আইসোলেশন প্ল্যান্টে (WIPP) ২০১৪ সালে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের একটি ড্রাম বিস্ফোরিত হয় এবং অল্প পরিমাণে প্লুটোনিয়াম এবং আমেরিকিয়াম (americium) ছড়িয়ে পড়ে, যা তাদের সংরক্ষণস্থল থেকে ভূপৃষ্ঠের দিকে ৬৫০ মিটার উপরে উঠে যায়।৪৮ এটি ছিল মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দুর্ঘটনার মধ্যে একটি। এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থের ড্রামে তরল শোষণের জন্য খনিজ পদার্থের বদলে জৈব পদার্থের তৈরি ‘কিটি লিটার’ অ্যাবজরবেন্ট বা শোষণকারী ব্যবহার করার একটি সরল ও আপাতদৃষ্টিতে ছোট সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ।৪৯ প্রস্তাবিত রিপোজিটরির নিরাপত্তাব্যবস্থা মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে করা একটি স্বাধীন বিশ্লেষণ থেকে WIPP দুর্ঘটনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষাটি পাওয়া যায় তা হলো, ‘সহস্রাব্দ ধরে এই ধরনের বর্জ্য নিষ্কাশনব্যবস্থার সম্ভাব্য ব্যর্থতার পূর্বাভাস দেওয়া কতটা কঠিন’।৫০

পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত কিছু সমস্যা নিয়ে হয়তো বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ, রাশিয়া রূপপুর থেকে স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা পারমাণবিক জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেওয়ার দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।৫১ কিন্তু আসলে ঠিক কী ঘটবে, তা নির্ভর করছে রাশিয়ার সঙ্গে করা চুক্তিতে কী কী বিষয় ও শর্ত রয়েছে তার ওপর। যেহেতু এই চুক্তিটি প্রকাশিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই একজন সাধারণ নাগরিকের পক্ষে নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়–এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে। এমনকি সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তিও কিন্তু ভেঙে যেতে পারে, আর এই চুক্তিটিকে তো কম করে হলেও ষাট বছর ধরে টিকে থাকতে হবে। ষাট বছর আগে রাশিয়া ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ, আর বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। কেউ কি জানেন, আগামী ষাট বছরে কী ঘটবে?

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে, যার কোনো উত্তর নেই। রাশিয়া কি স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল ছাড়াও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলাকালীন উৎপন্ন হওয়া অন্য সব ধরনের পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেবে, যার মধ্যে রয়েছে এখন থেকে কয়েক দশক পর চুল্লির ডিকমিশনিং, যন্ত্রপাতি খুলে নেওয়া এবং ধ্বংস করার সময় উৎপন্ন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য?

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে, যার কোনো উত্তর নেই। রাশিয়া কি স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল ছাড়াও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলাকালীন উৎপন্ন হওয়া অন্য সব ধরনের পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেবে, যার মধ্যে রয়েছে এখন থেকে কয়েক দশক পর চুল্লির ডিকমিশনিং, যন্ত্রপাতি খুলে নেওয়া এবং ধ্বংস করার সময় উৎপন্ন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য?

পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচিতে জড়িত সময়রেখা এত দীর্ঘ যে, তা বিভিন্ন সরকার ও সরকারি সংস্থাগুলোর মেয়াদ, দেশ ও সভ্যতার আয়ুষ্কালের থেকেও দীর্ঘ, যা এমনকি মানবজাতির বয়সের চেয়েও বেশি। এত লম্বা সময়ের জন্য কোনো পরিকল্পনা করা আসলে সম্ভব নয়। আজকের পারমাণবিক পরিচালকরা জানেন, এটি অন্য কারও সমস্যা হবে। তাদের পারমাণবিক স্বপ্নের খেসারত দেবেন অন্যরা। পারমাণবিক শক্তিকে কেন্দ্র করে আজকের পছন্দ ভবিষ্যতের অনেক প্রজন্মের জন্য সমস্যা তৈরি করছে এবং তাদের পছন্দকে সীমিত করছে। তাই কার্যত পারমাণবিক শিল্প ভবিষ্যতের উপনিবেশীকরণ করছে।

তথ্যসূত্র:

১) Maurice D. Kilbridge, “Personal Communication,” April 1, 1998; Maurice D. Kilbridge, The Prospect for Nuclear Power in Pakistan (Washington, D. C.: National Planning Association, 1958).

২) Kilbridge, The Prospect for Nuclear Power in Pakistan, 55.

৩) National Planning Board, “The First Five Year Plan 1955-1960” (Karachi: Government of Pakistan, 1957), 1–

৪) National Planning Board, 577.

৫ ) United Nations, Proceedings of the Second United Nations International Conference on the Peaceful Uses of Atomic Energy, vol. 8 (Geneva, Switzerland: United Nations, 1958), 579.

৬) Planning Commission, “Guidelines for the Third Five Year Plan 1965-1970” (Government of Pakistan, 1963), 81.

৭) Planning Commission, “Mid-Plan Review -Evaluation of Progress During the First Three Years of the Second Five Year Plan” (Government of Pakistan, 1964), 47.

৮) R. J Graham and J. E. S Stevens, “Experience with CANDU Reactors Outside of Canada,” AECL 4901 (Atomic Energy of Canada Limited, 1974), 3.

৯) Sheikh Hasina, “PM Sheikh Hasina Inaugurates Rooppur Power Plant,” Awami League, October 2, 2013, http://www.albd.org/index.php/updates/news/281-pm-sheikh-hasina-inaugurates-rooppur-power-plant.

১০) Aminur Rahman Rasel, “Bangladesh Signs Rooppur Deal with Russia,” Dhaka Tribune, December 25, 2015, http://www.dhakatribune.com/bangladesh/2015/dec/25/bangladesh-signs-rooppur-deal-russia.

১১) Georg Woite, “The Potential Role of Nuclear Power in Developing Countries,” IAEA Bulletin 17, no. 3 (1975): 21–32.

১২) “Political Relation,” Embassy of Bangladesh Paris, 2021, http://bangladoot-paris.org/index.php/bangladesh-france-relations/political-relation.html.

১৩) Tim Keeley, “With 300 MW Design Nearly Ready, France Pushes Small Reactors Line,” Nucleonics Week, March 5, 1981.

১৪) Bloomberg, “Bangladesh to Sign Deal With Russia to Build Nuclear Power Plant”, 2 November 2011.

১৫) BBC, “Bangladesh nuclear power plant work begins”, 2 October 2013.

১৬) Bangladesh Awami League, “PM Sheikh Hasina inaugurates Rooppur Power Plant”, see http://www.albd.org/index.php/en/updates/news/281-pm-sheikh-hasina-inaugurates-rooppur-power-plant, accessed 25 March 2015.

১৭) The Independent (of Bangladesh), “Roopur N-plant cost to double”, 7 April 2014, see http://www.theindependentbd.com/index.php?option=com_content&view=article&id=210774:roopur-n-plant-cost-to-double&catid=129:frontpage&Itemid=121, accessed 25 March 2015.

১৮) The Daily Star, “No new in energy”, 5 June 2015, see http://www.thedailystar.net/backpage/no-new-energy-92401, accessed 7 June 2015.

১৯) Aminur Rahman Rasel, “Govt Shortlists Eight Sites for Second Nuclear Power Plant,” Dhaka Tribune, September 20, 2016, http://www.dhakatribune.com/bangladesh/2016/09/20/govt-shortlists-eight-sites-second-nuclear-power-plant/.

২০) NEI, “Russia initials credit agreement with Bangladesh for Rooppur NPP”, 30 May 2016, see http://www.neimagazine.com/news/newsrussia-initials-credit-agreement-with-bangladesh-for-rooppur-npp-4907672/, accessed 2 June 2016.

২১) Energy Bangla, “Nuclear Fuel Supply Deal signed with Russia for RNPP”, 31 January 2019, see http://energybangla.com/nuclear-fuel-supply-deal-signed-with-russia-for-rnpp/, accessed 1 May 2021.

২২) Aminur Rahman Rasel, “Russia to Take Back Radioactive Waste of Rooppur Power Plant,” Dhaka Tribune, March 18, 2017, http://www.dhakatribune.com/bangladesh/power-energy/2017/03/18/dhaka-moscow-approve-spent-nuclear-fuel-draft-deal/.

২৩) M. V. Ramana and Zia Mian, “Scrambling to Sell a Nuclear Middle East,” Bulletin of the Atomic Scientists 72, no. 1 (2016): 39–43, https://doi.org/10.1080/00963402.2016.1124659.

২৪) The Financial Express, “Rooppur nuke plant: $287.49m deal signed for physical protection system”, 29 May 2020, see https://thefinancialexpress.com.bd/national/rooppur-nuke-plant-28749m-deal-signed-for-physical-protection-system-1590767660, accessed 1 May 2021.

২৫) Shamsuddoza Sajen, “All You Need to Know about Rooppur Nuclear Power Programme,” The Daily Star, October 16, 2017, https://online.thedailystar.net/supplements/rooppur-nuclear-power-programme/all-you-need-know-about-rooppur-nuclear-power-programme.

২৬) Eyamin Sajid, “India’s L&T to Build Transmission Lines for Rooppur Plant,” The Business Standard, January 30, 2021, http://www.tbsnews.net/bangladesh/indias-lt-build-transmission-lines-rooppur-plant-194038; UNB, “Delays in Rooppur Power Transmission Project Likely,” Dhaka Tribune, October 23, 2020, sec. Nation, https://www.dhakatribune.com/bangladesh/nation/2020/10/23/delays-in-rooppur-power-transmission-project-likely.

২৭) Benjamin K. Sovacool, Alex Gilbert, and Daniel Nugent, “Risk, Innovation, Electricity Infrastructure and Construction Cost Overruns: Testing Six Hypotheses,” Energy 74 (September 1, 2014): 906–17, https://doi.org/10.1016/j.energy.2014.07.070.

২৮) Mycle Schneider and Antony Froggatt, “The World Nuclear Industry Status Report 2020” (Paris: Mycle Schneider Consulting, September 2020), 220, https://www.worldnuclearreport.org/.

২৯) Rosatom, “First Concrete Poured at the Constructed Rooppur NPP Site (Bangladesh),” November 30, 2017, http://www.rusatom-overseas.com/media/news/first-concrete-poured-at-the-site-constructed-npp-rooppur-bangladesh.html; Rosatom, “Main Construction of the 2nd Unit of Rooppur NPP Begins with the ‘ First Concrete’ Ceremony,” July 14, 2018, http://rosatom.ru/en/press-centre/news/main-construction-of-the-2nd-unit-of-rooppur-npp-begins-with-the-first-concrete-ceremony/.

৩০) NEI, “Russia ships reactor internals for Rooppur 1”, 21 January 2021, see https://www.neimagazine.com/news/newsrussia-ships-reactor-internals-for-rooppur-1-8466401/, accessed 1 May 2021.

৩১) Ahmed Humayun Kabir Topu, “40pc of Rooppur Nuke Power Plant Project Completed,” The Daily Star, July 26, 2021, https://www.thedailystar.net/news/bangladesh/news/40pc-rooppur-nuke-power-plant-project-completed-2137021.

৩২) NEA, “Nuclear Power Plant Operating Experiences from the IAEA/NEA Incident Reporting System: 2002-2005” (Paris: Nuclear Energy Agency, OECD, 2006); Georgui Kastchiev et al., “Residual Risk: An Account of Events in Nuclear Power Plants Since the Chernobyl Accident in 1986” (Brussels: The Greens/European Free Alliance, 2007); Ashwin Kumar and M. V. Ramana, “Nuclear Safety in India: Theoretical Perspectives and Empirical Evidence,” OUCIP Journal of International Studies 1, no. 1 (December 2013): 49–72.

৩৩) Charles Perrow, “Fukushima and the Inevitability of Accidents,” Bulletin of the Atomic Scientists 67, no. 6 (January 12, 2011): 44.

৩৪) Charles Perrow, Normal Accidents: Living with High Risk Technologies (New York: Basic Books, 1984).

৩৫) M. V. Ramana, “No Escape from Accidents,” in Costs, Risks, and Myths of Nuclear Power: NGO World-Wide Study on the Implications of the Catastrophe at the Fukushima Dai-Ichi Nuclear Power Station, ed. Ray Acheson (New York: Reaching Critical Will, 2011), 26–29, http://www.reachingcriticalwill.org/resources/publications-and-research/publications/103-costs-risks-and-myths-of-nuclear-power; M. V. Ramana, “Beyond Our Imagination: Fukushima and the Problem of Assessing Risk,” Bulletin of the Atomic Scientists, April 19, 2011, https://thebulletin.org/2011/04/beyond-our-imagination-fukushima-and-the-problem-of-assessing-risk/; Suvrat Raju, “Estimating the Frequency of Nuclear Accidents,” Science & Global Security 24, no. 1 (2016): 37–62.

৩৬) UNSCEAR, Sources and Effects of Ionizing Radiation: UNSCEAR 2000 Report to the General Assembly, with Scientific Annexes (New York: United Nations Scientific Committee on the Effects of Atomic Radiation, United Nations, 2000), 15.

৩৭) UNSCEAR, Evaluation of Data on Thyroid Cancer in Regions Affected by the Chernobyl Accident (New York: United Nations Scientific Committee on the Effects of Atomic Radiation, United Nations, 2018), 8, https://www.unscear.org/docs/publications/2017/Chernobyl_WP_2017.pdf.

৩৮) Dillwyn Williams, “Lessons from Chernobyl,” British Medical Journal 323 (2001): 643–44.

৩৯) All-Ukrainian Scientific Research Institute for Civil Defense of population and territories and from technogenic and natural emergences, “Twenty-Five Years after Chornobyl Accident: Safety for the Future, National Report of Ukraine” (Kiev: Ministry of Ukraine of Emergencies, 2011), 174, http://www.wechselmann.se/files/2013/03/chernobyl_ukraine_report.pdf.

৪০) UNSCEAR, Sources and Effects of Ionizing Radiation: UNSCEAR 1993 Report to the General Assembly, with Scientific Annexes (New York: United Nations Scientific Committee on the Effects of Atomic Radiation, United Nations, 1993).

৪১) National Research Council, Health Risks from Exposure to Low Levels of Ionizing Radiation : BEIR VII, Phase 2 (Washington, D.C.: National Academies Press, 2006), http://www.loc.gov/catdir/toc/ecip066/2006000279.html.

৪২) Kate Brown, Manual for Survival: A Chernobyl Guide to the Future (New York: W.W. Norton & Company, 2019).

৪৩) M. V. Ramana, “Technical and Social Problems of Nuclear Waste,” Wiley Interdisciplinary Reviews: Energy and Environment 7, no. 4 (August 2018): e289, https://doi.org/10.1002/wene.289; M. V. Ramana, “An Enduring Problem: Radioactive Waste From Nuclear Energy,” Proceedings of the IEEE 105, no. 3 (March 2017): 415–18, https://doi.org/10.1109/JPROC.2017.2661518.

৪৪) Rodney C. Ewing, “Geological Disposal,” in Managing Spent Fuel from Nuclear Power Reactors: Experience and Lessons from Around the World, ed. Harold Feiveson et al. (Princeton: International Panel on Fissile Materials, 2011), 130–38, http://www.fissilematerials.org/blog/2011/09/managing_spent_fuel_from_.html.

৪৫) OTA, “Managing the Nation’s Commercial High-Level Radioactive Waste” (Office of Technology Assessment (U.S. Congress), 1985), 74, http://inis.iaea.org/Search/search.aspx?orig_q=RN:17065843.

৪৬) Beate Kallenbach-Herbert, “Germany,” in Managing Spent Fuel from Nuclear Power Reactors: Experience and Lessons from Around the World, ed. Harold Feiveson et al. (Princeton: International Panel on Fissile Materials, 2011), 43–51, http://www.fissilematerials.org/blog/2011/09/managing_spent_fuel_from_.html.

৪৭) Why Germany is digging up its nuclear waste, https://euobserver.com/beyond-brussels/132085

৪৮) Editorial, “An Accident Waiting to Happen,” Nature 509, no. 7500 (May 13, 2014): 259–259, https://doi.org/10.1038/509259a.

৪৯) Ralph Vartabedian, “Nuclear Accident in New Mexico Ranks among the Costliest in U.S. History,” LA Times, August 22, 2016, http://www.latimes.com/nation/la-na-new-mexico-nuclear-dump-20160819-snap-story.html.

৫০) Cameron L. Tracy, Megan K. Dustin, and Rodney C. Ewing, “Reassess New Mexico’s Nuclear-Waste Repository,” Nature 529, no. 7585 (January 14, 2016): 149–51.

৫১) Senior Correspondent, “Necessary Safety Measures Taken for Nuclear Power Plant, Says Hasina,” Bdnews24.Com, July 14, 2018, https://bdnews24.com/bangladesh/2018/07/14/necessary-safety-measures-taken-for-nuclear-power-plant-says-prime-minister.

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •