প্রস্তাব/সুপারিশ
‘বৈদ্যুতিক মটরযান নিবন্ধন নীতিমালা’ প্রসঙ্গে
ওয়ালিদ আশরাফ
দেশে ছোট ছোট বৈদ্যুতিক যান সংখ্যা অনেক বেড়েছে। রিকশা ভ্যানও বৈদ্যুতিক ব্যবহার শুরু করায় এগুলোর গতি বেড়েছে আবার এতে চালকদের শারীরিক চাপও কমেছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। দেশে ইজিবাইকের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। এসব বাহনের যন্ত্রপাতির অনেককিছুই বৈধপথে আমদানি হলেও সরকার মাঝে মধ্যেই এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত করতে গিয়ে জোরজুলুমের আশ্রয় নিচ্ছে। বহু দরিদ্র চালক/ উদ্যোক্তা এর কারণে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই লেখায় এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাব/সুপারিশ প্রকাশ করতে আগ্রহী।
বিশ্বে বৈদ্যুতিক মটরযান আজ প্রযুক্তির সমৃদ্ধির একটি বৈপ্লবিক বিকাশ স্তরের দোরগোড়ায়। বাংলাদেশে এই বাহন উৎপাদন ও আমদানি শুরু হয়েছে ২০০৪ সাল থেকেই। বিআরটিএ প্রথমে এই সকল যানবাহনের নিবন্ধন স্থানীয় সরকারের উপর ছেড়ে দেয়। ২০০৯-১০ সালে দেশের অনেকগুলো সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার অধীনে বহু ইজি বাইক “অযান্ত্রিক যানবাহন” হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে গেছে।১ সরকার আবার মহাসড়কে ও জাতীয় সড়কে ইজিবাইক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ৮ অক্টোবর ২০১২ সালে।২ পরবর্তীতে বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক মটরযান মহামান্য আদালতের রায়ের আদেশে নিষিদ্ধ হয়ে আছে [০৩/০৮/২০১৫ তারিখের নির্দেশনা (তথ্যসূত্র-১) অনুযায়ী ]। সম্প্রতি সরকার কঠোর প্রায়োগিক পদক্ষেপ নিয়েছে এই সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মে।৩ পুলিশ বৈদ্যুতিক মটরযান ভাঙচুর করেছে, বাজেয়াপ্ত করেছে। একজন গবেষণা শিক্ষার্থী হিসেবে সমাজকল্যাণ বিষয়ক পাঠ অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তির উপর আইনের শাসন প্রয়োগ করার পাশাপাশি পরিস্থিতির সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পদের সুসংরক্ষণ এবং হস্তান্তরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপূর্ণ আচরণের অংশ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আচরণবিধি আজকের আলোচ্য বিষয় না হলেও নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি ধ্বংসাত্মক আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। কেননা বাস্তবতা হল, দেশের অলিতে-গলিতে, পথে-ঘাটে বৈদ্যুতিক যানবাহন নিরলস চলে বেড়াচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে। সেবায় এ বাহন জনগণের যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ ও সম্ভাবনা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।৪ জনগণের আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে তোলা সম্ভব এই প্রযুক্তির সঠিক প্রায়োগিকতায়। স্থানীয় সরকারের সহায়তায় সহজেই যানগুলোকে চিহ্নিত করে, মালিকদের সাথে আলাপ করে, আমদানিকারকদের, উৎপাদকদের ও সুবিধাভোগীদের সম্পৃক্ত করে মীমাংসা করা সহজ ছিল। সরকার ও বেসরকারি সংস্থা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তাই আজ চেষ্টা করছি যানবাহন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার একটি কৌশল কাঠামো তুলে ধরতে যেন একদিকে, মহামান্য আদালত বিবেচনার ক্ষেত্রে নাগরিক আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে কিছু জানতে পারেন, পাশাপাশি যেন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্পৃক্ততায় একটি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ যানবাহন নিবন্ধন কৌশল প্রয়োগ করা সম্ভব হয়।৫ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পরিবহণ ব্যবস্থা হিসেবে ‘বৈদ্যুতিক যানকে’ বিবেচনা করাটা বিচক্ষণতা হবে। যার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, একটি ‘বৈদ্যুতিক যানবাহন নিবন্ধন নীতিমালা’ গড়তে শুরু করা জরুরি। সম্প্রতি বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা একটি নীতিমালা তৈরি করতে কাজ করছে। আমি শুধু কিছু বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাথে তাল মেলাতে পরবর্তিতে ‘আকাশযান’ বা ‘উড়ুক্কু’ নিবন্ধনের কথাও ভাবতে হয় কিনা জানিনা! আপাতত আগে জরুরি ভিত্তিতে বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলোর মালিকদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। স্থানীয় সরকারের সম্পৃক্ততা ও আয়ের সুযোগ করে দিলে, তাদের সম্পৃক্ততা স্বাচ্ছন্দপূর্ণ হবে বলে প্রত্যাশা করি। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সম্পৃক্ত করে আলোচনা আয়োজন করতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা বাংলাদেশের জন্য অতিব জরুরি। কেননা বিপুল সংখ্যক পথচারী হুমকির মাঝে থাকে এই যানবাহনগুলোর আঘাতে পঙ্গু হয়ে যাবার। আমি দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদেরকেও এগুলো চালাতে দেখেছি। আমার আশঙ্কা হল, যে পরিমাণ জনগণ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়, তার তিনগুণ আহত ও বিবিধ বিকলাঙ্গতা বরণ করে। কিন্তু যেখানে মৃত্যু ঘটেনা তার একদশমাংশ কেইসও রেকর্ড হয় না।৬,৭ ২০১৪ সালে ব্র্যাক (BRAC) পরিচালিত একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ড ও বাজার পার্শ্ববর্তী সড়কগুলোতেই শতকরা প্রায় ৭৯% দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে শতকরা ৪১% ক্ষেত্রে পথচারীরা মৃত্যুবরণ করে। এরপরেই রয়েছে ছোট চার চাকার গাড়ি (১৯%), দ্বিচক্রযান ও ত্রিচক্রযান (১৬%) এবং বাইসাইকেল (৩%) মিলে ৩৮% ক্ষেত্রে মৃত্যুপথে পতিত হয়। অর্থাৎ পথচারী ও ছোট যানবাহন ৭৯% ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী হয়।৮ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ২০২০ সালের আগস্টে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায় যে শতকরা ৯.৭৭% প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনায় এসব ইজিবাইক সম্পৃক্ত ছিল।৯ অবৈধ ও নিবন্ধনহীন যানবাহন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে মামলা করা সম্ভব হচ্ছে না অনেক ভুক্তভোগীর পক্ষে। সড়কে সকল যানবাহনই দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে, তবে নিবন্ধনের বাইরে থাকায় এসকল বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলো ও কৃষিপরিবহণ যানগুলো, আইনের আওতার বাইরে রয়েছে। বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে যারা পথচারী ও ছোট পরিবহণের যাত্রী তারা। প্রয়োজন সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, সেটা নিয়ে পরে বলব। আজকে আগে বৈদ্যুতিক যানবাহন-এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা তুলে ধরি।
জরুরি ভিত্তিতে বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলোর মালিকদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। স্থানীয় সরকারের সম্পৃক্ততা ও আয়ের সুযোগ করে দিলে, তাদের সম্পৃক্ততা স্বাচ্ছন্দপূর্ণ হবে বলে প্রত্যাশা করি। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সম্পৃক্ত করে আলোচনা আয়োজন করতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা বাংলাদেশের জন্য অতিব জরুরি।
সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানেও এই সংক্রান্ত নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে।১০ সেখানে সরকার বিনামূল্যে বৈদ্যুতিক যানবাহন নিবন্ধন করছে। আমি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিনামূল্যের পরিবর্তে স্বল্পমূল্যে কিন্তু বিশেষায়িত সমাজকল্যাণ কৌশলে নিবন্ধন করার কথা বলতে চাই। অর্থাৎ প্রদত্ত অর্থের বিনিময়ে তারা কিছু অতিরিক্ত সহায়তাও পাবে। যেন সকলে একটি শৃঙ্খলায় আবদ্ধ হয় এবং লেন-দেনের খতিয়ান থেকে কার্যকরণের প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যার সহায়তায় সংস্লিষ্ট সকল পক্ষ উপকৃত হবে, দুর্নীতি করার সুযোগ কমে যাবে। প্রযুক্তির বিকাশের ধারায় বৈদ্যুতিক যানবাহন মানববিকাশে এক নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। যুগের বিকাশের প্রবাহমান ধারায় আমাদেরও তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত হবে বলে মনে করছি। তাই আমাদের নীতিমালায় কিছু বিশেষ দিকনির্দেশনা তুলে ধরতে চাইছি।
সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানেও এই সংক্রান্ত নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে।১০ সেখানে সরকার বিনামূল্যে বৈদ্যুতিক যানবাহন নিবন্ধন করছে।
প্রথমেই উল্লেখ করতে চাই, প্রয়োজন ও সম্ভাবনার কথা। বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রকৃতি বান্ধব, সহজ প্রযুক্তির ও অপেক্ষাকৃত অনেক সাশ্রয়ী হওয়ায় বর্তমান সময়ের বড় বড় গাড়ি ও মোটরসাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আজ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক বাস-ট্রাক, গাড়ি ও মোটর সাইকেল নির্মাণ করছে।১১ বাংলাদেশেও এমন অনেক নতুন প্রযুক্তির হাইব্রিড গাড়ি আমদানি হচ্ছে। বিআরটিএ হতে নিবন্ধন নিয়ে এসব গাড়ি বৈধভাবে চলছে। আবার জনগণের স্বাচ্ছন্দের কারণে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবেই অন্য অনেক দেশের মতো আমাদের বাংলাদেশেও পথে-প্রান্তরে ও গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুৎচালিত দ্বিচক্রযান ও ত্রিচক্রযানে ছেয়ে গেছে।১২ গ্রামে-গঞ্জে নিম্ন আয়ের মানুষ যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণের কাজে স্বল্প মূল্যের এসব বাহনের সেবা থেকে উপকৃত হচ্ছে। তাই মহামান্য আদালতও নিশ্চয়ই অবিলম্বে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে গণ-হতাশাকে দূর করতে সচেষ্ট হবেন। আমি একটি মীমাংসার পরিকল্পনা তুলে ধরে সেবা দিতে চেষ্টা করছি। যদি এর কিছু সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কাউকে এতটুকু তৃপ্ত করতে পারে, তবেই কৃতার্থ হব।
বৈদ্যুতিক যানবাহন নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্রকৌশলগত অবকাঠামোকে নির্দিষ্টকরণ জটিল প্রক্রিয়া। কেননা সহজেই এর শক্তিমাত্রাকে চালক অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন করে তুলতে পারেন। আবার এগুলোর বাহন হিসেবে ক্ষমতা পূর্ববর্তী তেলের ইঞ্জিন বিশিষ্ট যানবাহনগুলোর থেকে কোনো অংশে কম নয়। অনেক ক্ষেত্রে বেশি। পথচারী ও অন্য পরিবহণের সাথে এই যানগুলোও সমান মাত্রায় দুর্ঘটনা ঘটাতে সক্ষম। ইতোমধ্যে দেশের কয়েক জায়গায় অতিরিক্ত ‘অটো’ হয়ে যাওয়ায় এবং বিশৃঙ্খলার জন্য এই সব ‘অটো’ চালকদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।১৩ লাভজনক হওয়ায় একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী এর সাথে সংশ্লিষ্ট পেশায় বিনিয়োগ করে, কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করে নিয়েছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতির কথা পর্যালোচনা করে জনগণের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে, এই প্রযুক্তিকে স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি ন্যায়সঙ্গত ভাড়ারও একটি নিয়ম তৈরি করা উচিত বলে অনুধাবন করছি। আমার পরামর্শ হবে ৪ জন যাত্রী অথবা ৪০০ কেজি পণ্যসহ প্রতি দুই কিমি দূরত্বের জন্য ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ বাস্তবসম্মত হবে। এই সকল সম্ভাব্য বিপদসংকুলতার কথাও মাননীয় আদালতের দৃষ্টিতে তুলে ধরতে চাই। তাই নিম্নে কিছু কথা তুলে ধরতে চাই,
১. বিদ্যুৎচালিত বাস, ট্রাক ও গাড়িগুলো অবশ্যই বিআরটিএ এর মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। এগুলোর চালকদের লাইসেন্স বাধ্যতামূলকভাবে অন্য ইঞ্জিন চালিত যানের মতই হতে হবে। গাড়ির ফিটনেস ও রোডপারমিট একই ভাবে হতে হবে। তবে পরিবেশ বান্ধব যান হওয়ায়, এই প্রযুক্তির বিকাশকে উৎসাহিত করার স্বার্থে কিছু প্রণোদনামূলক ছাড় দেয়া উচিত। (যদিও আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, তারপরও আমি আমার অভিযাত্রিক অভিজ্ঞতা থেকে এবং আমার পর্যবেক্ষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনেক প্রকৌশলগত বিষয়ে মন্তব্য করেছি। এসকল বিষয়ে অবশ্যই প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ মতামত জরুরি।) আমার মনে হয় আট কিলোওয়াট শক্তির একটি চার চাকার বৈদ্যুতিক গাড়িকে ১৫০০ সিসির তেলের ইঞ্জিন বিশিষ্ট গাড়ির সমান বা কাছাকাছি সক্ষমতার গাড়ি হিসেবে ভাবা ন্যায়সঙ্গত নয়। বর্তমান বাজারে হোন্ডা ভেজেল (হাইব্রিড) গাড়িটির কথা বিবেচনা করলে দেখা যায়, গাড়িটি (১৩০+২৯) ১৪৯ অশ্বশক্তি সম্পন্ন যা প্রায় ১১২ কিলোওয়াট বৈদ্যুতিক শক্তির সমান। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমতল ভূমিরূপে চলাচলের জন্য দেশে নির্মিত অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতার কার্যকর গাড়ির জন্য অবশ্যই নিবন্ধন ও সড়ক কর নির্ধারণের শ্রেণিভেদ ও ছাড় দেয়া (সম্ভব হলে করমুক্ত) দেশের শিল্প বিকাশে সহায়ক হবে।
বিদ্যুৎচালিত বাস, ট্রাক ও গাড়িগুলো অবশ্যই বিআরটিএ এর মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। এগুলোর চালকদের লাইসেন্স বাধ্যতামূলকভাবে অন্য ইঞ্জিন চালিত যানের মতই হতে হবে। গাড়ির ফিটনেস ও রোডপারমিট একই ভাবে হতে হবে। তবে পরিবেশ বান্ধব যান হওয়ায়, এই প্রযুক্তির বিকাশকে উৎসাহিত করার স্বার্থে কিছু প্রণোদনামূলক ছাড় দেয়া উচিত।
২. বিদ্যুৎ চালিত ত্রিচক্রযানগুলোর ক্ষেত্রেও নিবন্ধন বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের অধীনে হওয়া জরুরি। চালকদের জন্য ত্রিচক্রযান চালনা লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হতে হবে। কিন্তু বাহনগুলোর রেজিস্ট্রেশন ও রোড পারমিট করার ক্ষেত্রে, আগে বাহনগুলোর অবস্থান নিশ্চিত করার স্বার্থে সেগুলোর মালিকানার এলাকার স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির অফিস হতে নির্দিষ্ট কর জমা দিয়ে ‘আঞ্চলিক নিবন্ধন সনদ এবং স্থানীয় নম্বর প্লেট’ সংগ্রহ করে তা রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা করতে হবে। তারপর বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তাদেরকে নিবন্ধনের জন্য গ্রহণ করবে। পরিবেশবান্ধব পরিবহণ হওয়ায় অবশ্যই এই যানবাহনগুলোকে ছাড় দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে ১,৫০০ টাকা ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিকে ১,০০০ টাকা কর দিয়ে নিবন্ধন সনদ, স্থানীয় সবুজ নম্বর প্লেট ও এক বছরের জন্য রোড পারমিট সংগ্রহ করার সুযোগ করে দিতে হবে। বাংলাদেশে চলাচলকারী বৈদ্যুতিক ত্রিচক্রযানগুলো সাধারণত ১ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে, যার সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩৫ কিমি/ঘণ্টা। প্রযুক্তিগত কৌশলে এই সীমা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে এর গতি ২৫ কিমি/ঘন্টায় সীমাবদ্ধ করা ঠিক হবে বলে মনে করছি। স্থানীয় সরকার প্রদত্ত সকল নিবন্ধন সনদে সকল বৈদ্যুতিক মটরযানের মৌলিক মটর নম্বর, কন্ট্রোলার নম্বর ও ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নং উল্লেখ করতে হবে। পরবর্তিতে কোনো অংশ পরিবর্তন করলে তা স্থানীয় সরকারের অফিসে ১০০ টাকা কর দিয়ে সনদ সংশোধন করে নিতে পারার ব্যবস্থা করতে হবে। ত্রিচক্রযানগুলোর নিবন্ধনের জন্য ‘ডিফারেন্সিয়াল’ প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই প্রযুক্তি যানের ‘ঘুরতে গিয়ে- উল্টে যাওয়া’ রোধ করে। এক্ষেত্রে এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বৈদ্যুতিক ত্রিচক্রযান ছাড়াও সকল ইঞ্জিন চালিত ত্রিচক্রযানের ক্ষেত্রেও স্থানীয় নম্বর প্লেট থাকা জরুরি। এতে বৈদ্যুতিক ত্রিচক্রযানগুলোকে প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক চলাচলের নিয়ন্ত্রণ অরোপ করা যাবে। তাই সকল যান্ত্রিক শক্তি চালিত ত্রিচক্রযানের জন্য একই নীতি থাকা যৌক্তিক হবে। নিবন্ধন নিশ্চিত হলে তাদের উপর শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে ‘সিএনজি/পেট্রল চালিত ৪ স্ট্রোক থ্রি-হুইলার সার্ভিস নীতিমালা, ২০০৭’ কে সংশোধন করে অনুসরণ করা যায়।
৩. ছোট রিক্সা ও ভ্যানগুলো, যারা পণ্য পরিবহণের কাজ করে এবং যারা ইতিমধ্যেই বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছে, তাদেরকে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির মাধ্যমে বাৎসরিক ৫০০ টাকা কর এর বিনিময়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা লাইসেন্স প্লেট দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে নিশ্চিত করতে হবে যে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ভ্যান মালিককে চেনেন। আর অবশ্যই সড়কে যান্ত্রিক ভ্যান চালনার নির্দেশিকা পাঠ ও পরীক্ষার পর তিনি তাকে নিরাপদ চালক হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। মালিকের ও যানটির ছবি সমেত নিবন্ধন সনদ প্রদান করবেন। স্থানীয় সরকার প্রদত্ত সকল নিবন্ধন সনদে সকল বৈদ্যুতিক মটরযানের মৌলিক মটর নম্বর, কন্ট্রোলার নম্বর ও ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নং উল্লেখ করতে হবে। পরবর্তিতেও কোনো অংশ পরিবর্তন করলে তা স্থানীয় সরকারের অফিসে ৫০ টাকা কর দিয়ে সনদ সংশোধন করে নিতে পারার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে চলাচলকারী বৈদ্যুতিক ত্রিচক্রযানগুলো সাধারণত ৫০০-৭৫০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে১৪, যার সর্বোচ্চ গতিসীমা ২৫ কিমি/ঘণ্টা। প্রযুক্তিগত কৌশলে এই সীমা নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব। অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে এর গতি ১৫ কিমি/ঘন্টায় সীমাবদ্ধ করা ঠিক হবে বলে মনে করছি । এক্ষেত্রেও ডিফারেন্সিয়াল প্রযুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪. বৈদ্যুতিক দ্বিচক্রযানগুলো ইতিমধ্যেই নানা ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপের বাহন হয়ে দেখা দিচ্ছে। এদের উপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি করা কষ্টসাধ্য হবে। তবে ২৫০ ওয়াট এর কম ক্ষমতার বাইসাইকেল সদৃশ বাহনকে করমুক্ত যান্ত্রিক বাহন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলে তা জনগণের জন্য সন্মানজনক হবে।১৫ তবে তার অধিক ক্ষমতার যে কোনো ভিন্ন আকৃতিগত দ্বিচক্রযানের জন্যও নিবন্ধন ও চালকের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা জরুরি। তবে যে কেউ যদি নিজ আগ্রহে ও নিরাপত্তার বিবেচনায় কম বৈদ্যুতিক ক্ষমতার সাইকেলকেও রেজিস্ট্রেশন করতে চায় সেক্ষেত্রে, স্থানীয় সরকার কার্যালয় থেকে বাৎসরিক ২০০ টাকা কর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সনদ ও ছোট নম্বর প্লেট সংগ্রহ করতে পারবে। তবে ২৫০ ওয়াটের বেশি ক্ষমতার দ্বিচক্রযানের জন্য বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের থেকে ‘মটরযান আইন ১৯৯১’ অনুসারে বিবেচিত হবে। ২৫০ ওয়াট বা এর কম শক্তির দ্বিচক্রযানটি যদি দুই আসন বিশিষ্ট হয় সেক্ষেত্রে বাৎসরিক ৫০০ টাকা কর ধার্য করা ন্যায়সঙ্গত হবে বলে প্রত্যাশা করি।
এই নব-বিকাশের স্বার্থে উপরিল্লিখিত বিষয়গুলোর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি ব্যাটারি শিল্পের বিকাশের বিষয়েও কিছু সিদ্ধান্তগ্রহণ জরুরি। যার একটি দিক হলো ব্যাটারি শিল্প বিকাশে সহায়তা করা এবং অপর দিকটি হলো ব্যাটারির ধ্বংসকরণ (ডিসপোজাল) পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে করা। এজন্য চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙা শিল্পের সাথে সমন্বয় করে ব্যাটারি ধ্বংসকরণ (ডিসপোজাল) নিয়ন্ত্রণ করা যায়।১৬ এ বিষয়েও অবশ্যই বিশেষজ্ঞ মতামত জরুরি। তাই এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে প্রকৌশলী জনাব দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘পূণর্ব্যবহার (রিসাইকেল) এর কথা ভাবতে হবে। ব্যাটারিসমূহের বৈচিত্র্য বিবেচনা করে সকল ধরনের ধাতব ও অধাতব উপকরণগুলো পৃথক করে সেগুলো পুনরায় ব্যবহার করার মত কারখানা গড়ে তোলা যায়। একই সাথে গবেষণাকেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে বলে মনে করি।’
বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলো আমাদের দেশের ভেতরেই রয়েছে এবং চলছে। জনগণ এর ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছে। আবার এগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলার কারণে নানাবিধ হুমকিও রয়েছে। তাই অতিসত্বর এগুলোকে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা গেলে বিনিয়োগকারি, ভোক্তা, চালক, কারিগর ও গবেষকগণ বিশেষ উপকৃত হবে। নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে উপরিল্লিখিত প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিলে তা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সকলকেই সন্তুষ্টির সাথে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে বলে আশা করি। ইতোমধ্যেই যে বিপুল পরিমাণ যানবাহন দেশজুড়ে চলছে তাতে প্রাথমিকভাবে একটু কম খরচেই যানবাহনগুলো নিবন্ধন করে নিলে রাষ্ট্রের বিপুল রাজস্ব আয়ের সুযোগও তৈরি হবে। ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রে গবেষণা ও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করলে দেশ আরও বেশি উপকৃত হবে। কেননা বর্তমানে যে যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে এসব বাহন তৈরি হচ্ছে তার অধিকাংশ চীন থেকে আমদানিকৃত। এসব যন্ত্র দেশে তৈরি করা হলে, বৃহৎ সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে। পরিশেষে এটাও উল্লেখ করতে চাই যে, বৈদ্যুতিক যানবাহন যেমন প্রকৃতিবান্ধব তেমনি এর সহায়তায় প্রায় বিনামূল্যে গণপরিবহণ পরিচালনা করা সম্ভব। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর যেন চাপ না পড়ে সেজন্য এই বাহনগুলোর গ্যারেজ সমূহে বাধ্যতামূলকভাবে ফ্রি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ছোট ছোট বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র১৭ স্থাপনের ব্যবস্থা করতে স্থানীয় সরকারকে নির্দেশনা দিতে হবে। প্রতি ১৬ টি গাড়ির জন্য ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি অল্টারনেটিভ কারেন্ট জেনারেটর (ফ্রি বিদ্যুৎ) তৈরিকরণ নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অন্য যে কোনো পদ্ধতির একদশমাংশেরও কম। আবার এতে করে দেশজুড়ে সর্বত্র স্বল্পমূল্যে বৈদ্যুতিক যানবাহন চার্জিং পয়েন্ট ও গ্যারেজ গড়ে উঠবে। জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার ছাড়াই, স্বনির্ভরতা তৈরি হবে। দেশজুড়ে অনেকেই এখন এই জেনারেটর তৈরি করছে। বাণিজ্যিক ভাবেও অল্প সময়ের ভেতর মানবজাতি এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বৈদ্যুতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করবে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তা পরিবেশ বান্ধবও হবে।
তাই সকল দিক বিবেচনা করে মহামান্য আদালত যদি একটি দিকনির্দেশনা তৈরি করে দেন তাতে দেশের সকল নাগরিক উপকৃত হবে। যদিও শুধু এটাই সড়ককে নিরাপদ করতে সক্ষম হবে না- সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ, সরকারি গণপরিবহণের সংখ্যা বৃদ্ধি, পথচারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, চালকদের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বাড়ানো এবং দুর্নীতি মুক্ত তত্ত্বাবধান আবশ্যক।
ওয়ালিদ আশরাফ: লেখক, সমাজকর্মী। ইমেইল: walidashraf@yahoo.com
তথ্যসূত্র:
১.http://newagebd.net/73985/city-corps-allow-easy-bikes-to-continue-despite-brta-refusal/
https://www.newagebd.net/article/119174/easy-bikes-keep-running-on-dhaka-roads
http://www.sachalayatan.com/dhruboalam/55836
২: https://www.thefinancialexpress.com.bd/national/illegal-easy-bikes-battery-run-rickshaws-to-face-action-1580222238%3famp=true
৩: https://www.thedailystar.net/news-detail-187825
https://m.bdnews24.com/en/detail/business/275641
৪:https://www.ccsenet.org/journal/index.php/ijbm/article/view/0/39472
৫: ‘Stratigy followed for community based social action’- kickett, McCauley, & Stringer, 1986, p.5
৬: https://www.banglajol.info/index.php/JBCPS/article/download/38178/25958
৭: https://www.researchgate.net/profile/S-M-Mahmud/publication/345504194_Road_Accident_Trends_in_Bangladesh_A_Comprehensive_Study/links/5fa811ea299bf10f732ff488/Road-Accident-Trends-in-Bangladesh-A-Comprehensive-Study.pdf?origin=publication_detail
https://www.thedailystar.net/frontpage/bangladesh-road-accidents-in-2019-stats-by-nirapad-sarak-chai-1849588%3famp
৮: https://brac.net/images/reports/Research%20report_Road%20Safety%20in%20Bangladesh-Ground%20Realities%20and%20Action%20Imperatives.pdf
৯: ভারত: https://www.hindustantimes.com/india-news/no-road-tax-registration-fee-on-electric-vehicles-in-telangana-from-today-101612357508046-amp.html
পাকিস্তান: https://invest.gov.pk/sites/default/files/2020-07/EV%2023HCV%20130620%20PDF.pdf.pdf
১০: Please see “Toyota”, “Honda” a “Tesla” electric or hybrid motor cars for example.
ইলেকট্রিক স্কুটার কিনতে চান? TVS iQube শীঘ্রই দেশজুড়ে এক হাজার ডিলারশিপে উপলব্ধ হবে
১১: https://www.thedailystar.net/backpage/news/electric-vehicles-guideline-talks-start-after-2-year-pause-2028977%3famp
https://www.thedailystar.net/news-detail-187825
https://bdnews24.com/amp/en/detail/business/275641
১২: https://www.jugantor.com/todays-paper/news/357339/কিশোরগঞ্জে-ছুরিকাঘাতে-অটো-চালকের-মৃত্যু
https://www.dainiksomoybarta.com/কিশোরগঞ্জে-মোটর-সাইকেলের/
১৩: http://www.boracrickshaw.com/60v-1000w-datai-motor-3-wheel-motorbike-popular-in-bangladesh/
https://www.thedailystar.net/news-detail-187825%3famp
১৪: https://www.israelinsurancelaw.com/supreme-court-determined-electric-bicycles-not-motor-vehicle/
১৫: দৈনিক নয়াদিগন্ত – ১০/১২/২০১৯, শেষের পাতা “জাহাজ ভাঙা শিল্পে কেন্দ্রীয় ডিসপোজাল নির্মাণের উদ্যোগ।”
১৬: https://www.power-and-beyond.com/what-is-alternating-current-a-907931/
https://www.allaboutcircuits.com/textbook/alternating-current/chpt-1/what-is-alternating-current-ac/
https://m.youtube.com/watch?v=TXN-LhtM2YI
https://m.youtube.com/watch?v=-8pFrTMxewk