সংবাদপত্রের পাতা থেকে (২৫ এপ্রিল- ২৬ জুলাই ২০২১)

অর্থনীতি

করোনায় বড় প্রতিষ্ঠানের ভালো ব্যবসা

২৫ মে ২০২১, প্রথম আলো

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত এক বছরে চলাচলে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। চলাচল সীমিত হওয়ায় পারস্পরিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে মোবাইল ফোন বা মুঠোফোন। ফোনে কথা বলা যেমন বেড়েছে, তেমনি ইন্টারনেটের ব্যবহারও বেড়েছে। চলাচলে বাধা থাকায় করোনাকালে ‘ভিডিও কলও’ জনপ্রিয় হয়েছে। আবার শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুমের বদলে মোবাইলে বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাস করেছেন।

এসব কারণে করোনাকালে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বেড়েছে। ফলে মুঠোফোন অপারেটরদের কাছ থেকে ভ্যাট, সম্পূরক শুল্কসহ নানা ধরনের শুল্ক-করও আগের চেয়ে বেশি পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক—দেশের এই চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) তালিকাভুক্ত। এ চার অপারেটর থেকে চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৭ হাজার ৮৬ কোটি টাকা ভ্যাট পাওয়া গেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা বা ২৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে ভ্যাট পাওয়া গিয়েছিল ৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা ভ্যাট দিয়েছে গ্রামীণফোন।

শুধু মোবাইল ফোন নয়; করোনাকালে দেশের বড় বড় খাতের বড় কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। ভালো ব্যবসা করে এসব কোম্পানি সরকারি কোষাগারে আগের বছরের চেয়ে শুল্ক-করও বেশি দিয়েছে। করোনার বছরে ভালো ব্যবসা করা বড় খাতগুলোর মধ্যে আছে সিগারেট, মোবাইল ফোন, ওষুধ, সিমেন্ট, ব্যাংক ও আর্থিক খাত, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য এবং পানীয় খাত। ভ্যাট আদায়ের তথ্য বলছে, এসব খাতের বড় বড় কোম্পানি আগের চেয়ে বেশি ব্যবসা করে বেশি ভ্যাট দিয়েছে সরকারকে।

সয়াবিন তেলের দামে রেকর্ড, লিটারে বাড়ল ১২ টাকা

২৭ মে ২১, সমকাল

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড গড়েছে সয়াবিন তেল। প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম এক সঙ্গে ১২ টাকা বেড়েছে। এই দর বৃদ্ধির ফলে এখন প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে ১৫৩ টাকা গুনতে হবে।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনষ্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

গত মাসে ৫ টাকা দর বৃদ্ধির পর আবার ৩ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। তখন প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৪১ টাকা মূল্য ঠিক করা হয়। এই দর এক লাফে ১২ টাকা বেড়ে প্রতিলিটার ১৫৩ টাকা হয়েছে।

ব্যয় বাড়ল ৩৬০০ কোটি টাকা

০১ জুন ২০২১, প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ থেকে মেঘনা নদীর পানি শোধন করে রাজধানীতে সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসা কাজ শুরু করে ২০১৩ সালের অক্টোবরে। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সাত বছরে মাত্র ৩৯ ভাগ কাজ করেছে ওয়াসা। এ অবস্থায় আড়াই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সঙ্গে প্রকল্পের খরচ বাড়ানো হয় ২ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। এখন আরও আড়াই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ওয়াসা।

ঢাকা ওয়াসার প্রকল্পভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলমান ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টিই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। এই প্রকল্পগুলোর অনুমোদিত খরচের বাইরে আরও ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। আট প্রকল্পের চারটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। চারটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটি প্রকল্পের একটি ২০২৩, অন্যটি ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এগুলোর একটির কাজ ২৩ ভাগ এবং আরেকটির মাত্র ৭ ভাগ হয়েছে। এই ১০ প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৬ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা।

‘আমার ঘরে খাবারের কষ্ট’ আইটি ফ্রিল্যান্সারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

১ জুন, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

রাজশাহীতে নিজ বাড়িতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় এক আইটি ফ্রিল্যান্সারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত মো. আনোয়ারুল ইসলাম টুটুল (৩৫) সোনার বাংলা ড্রিম আইটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী শহরের শেখপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বোয়ালিয়া থানার উপপরিদর্শক মো. গোলাম মোস্তফা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার রাতে টুটুল ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘গত ৩ মাস থেকে আমার ঘরে খাবার এর কষ্ট, আমার বউ অনেক কষ্টে খাবার যোগাড় করতেছে…আর থাকতে পারলাম না চলে যাচ্ছি।’ দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে তিনি ঋণে জর্জরিত হওয়ার বর্ণনা দেন। তিনি লেখেন, ‘আমি বেঁচে থাকলে আরও ঋণ বেড়ে যাবে তাই চলে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নাই। যদি সম্ভব হয় আমার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ের থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিবেন আপনারা।’

বৈশ্বিক ব্র্যান্ডিংয়ে সিএনএনআইসির সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি

২ জুন, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বাংলাদেশের সাফল্যকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল কমার্শিয়ালের (সিএনএনআইসি) সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব চুক্তি করেছে সরকার।

বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) সঙ্গে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে।আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) সঙ্গে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এই সমঝোতা চুক্তির আওতায় সিএনএন নেটওয়ার্কে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের বিভিন্ন রপ্তানি খাতের প্রচার করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার মডেলে বেসরকারি খাতের অর্থায়নে ক্যাম্পেইনটি পরিচালিত হবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষে বিএফটিআইকে এই সামগ্রিক ডিজিটাল ক্যাম্পেইন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত স্টিয়ারিং কমিটির সরাসরি তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পেইনটি পরিচালনায় বিএফটিআই কাজ করবে সিএনএনের স্থানীয় প্রতিনিধি স্পেলবাউন্ড কমিউনিকেশনস লিমিটেড। ক্যাম্পেইনে সিএনএন টিভি বিজ্ঞাপন, বিস্পোক সম্পাদকীয়, প্রোমো অডিও ভিজ্যুয়াল, ভিগনেটস এবং একটি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ থিম উইক তৈরি ও সম্পাদনা করা হবে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের পাঁচটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতের পাশাপাশি নির্বাচিত শিল্পের অধীনস্থ ১০টি শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং করবে সিএনএন।

সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা গেল কোথায়

০৭ জুন ২১, সমকাল

মাত্র ৪৪ মিলিমিটার মাঝারি বৃষ্টি ঝরেছে গতকাল রোববার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। আর তাতেই হাঁটু থেকে কোমরপানিতে তলিয়ে গেছে নগরের অধিকাংশ এলাকা। অথচ এ নগরের জলাবদ্ধতা দূর করতে ১১ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারি তিনটি সংস্থা। সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব প্রকল্পে গত তিন বছরে ব্যয়ও করেছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু মেলেনি সুফল।

পাঁচ বছরে প্রমাণ মিলেছে অর্থ পাচারের ১০২৪ ঘটনা

০৮ জুন ২০২১, প্রথম আলো

বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনা তদন্ত করে গত পাঁচ অর্থবছরে ১ হাজার ২৪টি ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর মধ্যে অর্ধেক ঘটনায় দেশের বাইরে অর্থ পাচারের প্রমাণ মিলেছে। অর্থ পাচারসংক্রান্ত আইনে দেশের মধ্যেও অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে।

দেশে ও দেশের বাইরে অর্থ পাচারের ঘটনা তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বিএফআইইউ। সংস্থাটি যেসব ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে, তার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। যেসব সংস্থার কাছে এসব প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও এসব ঘটনায় কোনো সংস্থা খুব বেশি ব্যবস্থা নেয়নি।.. …

বিএফআইইউর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৮টি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২১টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৭৭টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫২টি ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১৬টি অর্থ পাচারের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। এর বাইরে উল্লিখিত পাঁচ অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার চাহিদার ভিত্তিতে ২ হাজার ২৯০টি ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্টদের সরবরাহ করে বিএফআইইউ।

নতুন দরিদ্রের এই হিসাব আমি স্বীকার করি না: অর্থমন্ত্রী

৯ জুন, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান দেশের নতুন দরিদ্রের যে হিসাব দিয়েছে তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নতুন দরিদ্রের এই হিসাব আমি স্বীকার করি না। যাদের কাছে তালিকা আছে দুই কোটি বা এক কোটি বা ১০ জন, এই তথ্য তারা কোথায় পেয়েছেন তা জানা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কাজটি করার জন্য আমাদের ইন হাউজ প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন- বিবিএস, বিআইডিএস। এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে যতদিন তথ্য না পাবো, ততদিন অন্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য গ্রহণ করতে পারি না।’

বৈদেশিক কর্মসংস্থানে বড় ধাক্কা

১০ জুন ২০২১, প্রথম আলো

দিনে ২ হাজারের বেশি। মাসে অন্তত ৬০ হাজার। দুমাস আগেও কাজ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার চিত্র ছিল এমন। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বদলে গেছে পরিস্থিতি। বিধিনিষেধের চাপে কমে গেছে বৃহত্তম শ্রমবাজার সৌদি আরবে যাওয়া। অন্য সব শ্রমবাজার কার্যত বন্ধ। এতে গত মাসের ৩১ দিনে বিদেশে গেছেন মাত্র ১৪ হাজার ২০০ কর্মী।

জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) দুজন কর্মকর্তা ও বিদেশে কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত তিনজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। তাঁরা বলছেন, বড় শ্রমবাজারের মধ্যে আরব আমিরাত, ওমান, জর্ডান, সিঙ্গাপুর বন্ধ হয়ে আছে। হাতে ছিল সৌদি আরব। উড়োজাহাজ সেবা নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতায় এ বাজার নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা। ভিসা করেও যেতে পারছেন না কয়েক হাজার কর্মী।

বিএমইটির কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারির প্রভাবে গত বছর বিদেশে কর্মী পাঠানো কমে যায় ৬৯ শতাংশ। গত ডিসেম্বর থেকে টানা চার মাস বাড়ার পর দুই মাস ধরে আবার কমছে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা।

টিসিবির পণ্য

১৭৮ টাকা কমে পেতে দুই কিলোমিটার হাঁটা

১১ জুন ২০২১, প্রথম আলো

নিলুফা আক্তার পুরান ঢাকার লালবাগের খাজিদেওয়ান এলাকার বাসিন্দা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে পাওয়া যায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সংলগ্ন পলাশী বাজারে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের পেছনে। তিনি দুই লিটার সয়াবিন তেল এবং দুই কেজি করে চিনি ও ডাল কেনেন।

নিলুফা বলেন, টিসিবির ট্রাক থেকে এই পরিমাণ পণ্য কিনতে তাঁর ৪২০ টাকা লেগেছে। বাজারে দাম অনেক বেশি।

বাজারে সয়াবিন তেল, চিনি ও ডালের যে দাম, তার সঙ্গে টিসিবির পণ্যের দরের তুলনা করে দেখা নিলুফার সাশ্রয় হয়েছে ১৭৮ টাকা। তবে তাঁকে এ জন্য নিজের বাসা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে পলাশী আসতে হয়েছে। টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে প্রায় এক ঘণ্টা।.. …

বাজারে দাম যখন অনেক চড়া, তখন নিলুফার মতো সীমিত আয়ের মানুষের ভিড় বেড়েছে টিসিবির ট্রাকের পেছনে। করোনাকালে আয় কমে যাওয়া মধ্যম আয়ের মানুষেরাও লাইনে দাঁড়াতে আর সংকোচ বোধ করছেন না।.. …

ঢাকায় টিসিবির ৮২ জন পরিবেশক রয়েছে। গতকাল ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পণ্য নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যাচ্ছে। ট্রাক আসার আগেই মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন। পলাশী ছাড়াও জাতীয় প্রেসক্লাব, ফুলবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে, সূত্রাপুর থানা ও শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায় টিসিবির ট্রাকের পেছনে সাধারণ মানুষের দীর্ঘ লাইন।… …

বেসরকারি খাতের চাকরির বাজারে ধস, নিয়োগ স্থবির

১১ জুন ২০২১, জাগো নিউজ

করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে বেসরকারি খাতের চাকরির বাজারে ধস নেমেছে। বিশেষ কিছু পদের বাইরে প্রায় সব ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৭০ শতাংশ জনবল নিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জনবল নিয়োগে সহায়তাকারী সংস্থাগুলো। মহামারি কিছুটা কমে গেলে ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করলেও পরিস্থিতি আবার অবনতির দিকে যাওয়ায় তা থমকে গেছে বলে জানিয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রার্থীর দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিডিজবসডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছরের মার্চ-এপ্রিল করোনা মহামারির প্রথম ঢেউ শুরু হওয়ার পর বেসরকারি খাতে ৬০ থকে ৭০ শতাংশ জনবল নিয়োগ কমে যায়। পাঁচ থেকে ছয় মাস এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হতে থাকে। বর্তমানে সেটি আবার আগের মতো শুরু হচ্ছে।’

অলজবসডটকমের মার্কেটিং ম্যানেজার প্রদীপ কুমার চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি ও বেসরকারি খাতের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বর্তমানে সরকারি জনবল নিয়োগ শুরু হয়েছে। বেসরকারি খাতের নিয়োগ এখনো প্রায় ৭০ শতাংশ বন্ধ রয়েছে।’

ভূমধ্যসাগর থেকে ১৬৪ বাংলাদেশিকে উদ্ধার

১৩ জুন ২১, সমকাল

 ভূমধ্যসাগর থেকে ৪৩৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে লিবিয়ার কোস্টগার্ড। এদের মধ্যে ১৬৪ জন বাংলাদেশি রয়েছেন।

ঋণ নিয়ে খোঁজ নেই ১৪ কোম্পানির

১৫ জুন ২১, সমকাল

নব্বইয়ের দশকে খুলনার বিসিক শিল্পনগরীতে ১০ কাঠার দুটি প্লট (বি-৫৯ ও ৬০) নিয়ে বিবিধ পণ্যের কারখানা স্থাপন করে বারী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ জন্য বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়। কিন্তু ঋণ নিয়েই বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায় ২০০০ সালের ২২ জুন বারী ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সেই মামলা এখনও চলছে। ২১ বছর ধরে বন্ধ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

শুধু বারী ইন্ডাস্ট্রিজ নয়, শিল্পনগরীর প্লট দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খোঁজ নেই ১৪টি কোম্পানির। শিল্পনগরীর বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫৪টি প্লট তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর ঋণ নিয়েছে তারা। কিছুদিন কারখানাও চলেছে। এরপর সবকিছু বন্ধ।

ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য আদালতে মামলা চলায় বিসিক কর্তৃপক্ষ, সেই প্লট বাতিলও করতে পারছে না। তাই বছরের পর বছর অব্যবহূত পড়ে আছে ৫৪টি প্লট। এসব প্লটে থাকা ১৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখন পাঁচটির যন্ত্রাংশ বিক্রি করে কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ ১৪ প্রতিষ্ঠান।

লকডাউনেও জমজমাট আবাসন ব্যবসা

বেশির ভাগ ক্রেতা সরকারি চাকরিজীবী

১৭ জুন, ২০২১, বণিক বার্তা

কভিডে মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহামারী প্রতিরোধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জারি করা হয়েছে লকডাউন। তবে এর মধ্যেও দেশের প্রপার্টি মার্কেট বা আবাসন খাতে জমজমাট ভাব বজায় রয়েছে। আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাদের বেশির ভাগই সরকারি চাকরিজীবী। তাদের মধ্যে চাহিদা বাড়ার কারণেই মহামারীকালেও খাতটি ভালো ব্যবসা করছে।.. ..

সরকারি চাকুরেদের ৭০-৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। আবাসন খাতের কোম্পানিগুলোর দাবি, জমি ও ফ্ল্যাটের ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এ সুবিধা বড় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া গত বছর ঘোষিত করবহির্ভূত আয় বিনিয়োগের অনুমোদনও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ সুযোগ ঘোষণার পর আবাসন খাতে করমুক্ত বিনিয়োগ এসেছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া গৃহঋণে ৯ শতাংশ সুদ, জমি হস্তান্তরে করহার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা এবং স্ট্যাম্প ডিউটি ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে দেড় শতাংশ করার মতো পদক্ষেপগুলোও খাতটির সম্প্রসারণে ভূমিকা রেখেছে।

মৃত্যুদণ্ডের আসামিদের বেশিরভাগই দরিদ্র

১৮ জুন ২১, সমকাল

দেশে গত দুই দশকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে বেশিরভাগই দরিদ্র, স্বল্পশিক্ষিত ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির মানুষ। এ সময়ে প্রাণদণ্ড পাওয়া বন্দিদের মধ্যে ৭২ শতাংশ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। আর ৫৩ শতাংশ অপরাধ সংঘটনের সময় স্বল্প বেতনে চাকরি করতেন বা বেকার ছিলেন। বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৩৯ আসামির মামলা নিয়ে করা গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও ডেথ পেনাল্টি প্রকল্পের সহযোগিতায় এ গবেষণা পরিচলানা করা হয়। দেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আর্থসামাজিক বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধানে ‘মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় বসবাস’ শীর্ষক এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পানির দাম ও এমডির বেতন

১৮ জুন ২০২১, প্রথম আলো

ঢাকা ওয়াসার পানিসংকট নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংস্থার অন্যান্য সেবা নিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ। কিন্তু তারপরও গত ১৩ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বেতনও।

সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে এক লাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয়েছে পৌনে ২ লাখ টাকা। এই বৃদ্ধির পর ওয়াসার এমডি হিসেবে তাঁর মাসিক বেতন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। এ হিসাবে গত ১২ বছরে তাকসিম এ খানের মাসিক বেতন বেড়েছে ৪২১ শতাংশ। এদিকে তাকসিমের পরে যাঁরা ওয়াসার এমডি হবেন, তাঁরা যেন এই পরিমাণ বেতন না পান, সেটিও নিশ্চিত করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

পাঁচ বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ প্রত্যাবাসন করেছে ৬ প্রতিষ্ঠান

২১ জুন, ২০২১, বণিক বার্তা

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসা করছে চার বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও এয়ারটেল। বৈশ্বিক টেক জায়ান্ট ফেসবুক ও গুগলেরও পদচারণা বাড়ছে এক দশক ধরে। এ ছয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসার বিপরীতে দেশের বাইরে গত সাড়ে পাঁচ বছরে প্রায় ১৯২ কোটি ডলার প্রত্যাবাসন করেছে, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি (ডলারপ্রতি ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা হিসাবে)। এর মধ্যে গ্রামীণফোন এককভাবে প্রত্যাবাসন করেছে ১১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।

দেশে সাড়ে ৬ কোটি মানুষ দরিদ্র

২৩ জুন, ২০২১, দেশ রুপান্তর

দারিদ্র্য নিরূপণের নতুন এক সূচকে দেশের সাড়ে ছয় কোটি মানুষ দরিদ্র বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের সূচকে (এমপিআই) দেশে এ পরিমাণ দরিদ্র রয়েছে বলে সরকারি সংস্থা পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দরিদ্র্যের শিকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে দেশে ২০২১ সালে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৩ লাখে। এ হিসাবে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের সংখ্যা ৬ কোটি ৫১ লাখে।

ভূমধ্যসাগরে ভাসমান অবস্থায় ২৬৪ বাংলাদেশি উদ্ধার

২৫ জুন ২০২১, প্রথম আলো

ভূমধ্যসাগর থেকে ২৬৪ জন বাংলাদেশিকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে মিসরের ৩ নাগরিককে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ভূমধ্যসাগর থেকে ২৬৪ জন বাংলাদেশি ও ৩ জন মিসরীয় অর্থাৎ ২৬৭ জনকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড।

তহবিল ব্যয় কমলেও ক্ষুদ্রঋণের সুদহার কমেনি

২৮ জুন, ২০২১, বণিক বার্তা

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফআই) সংগৃহীত তহবিলের প্রায় ২০ শতাংশই আসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২-১৪ শতাংশ সুদহারে তাদের নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। সরকার ২০২০ সালের এপ্রিলে সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়ার পর থেকে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে ৮-৯ শতাংশ হারে তহবিল সংগ্রহ করতে পারছে। যদিও গ্রাহকের কাছ থেকে এনজিওগুলো এখনো ২৪ শতাংশ হারেই সুদ আদায় করছে।

এমএফআই প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সংগ্রহের আরেকটি উৎস গ্রাহকের সঞ্চয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে গ্রাহকের সঞ্চয় ছিল প্রায় ৫৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা, যা মোট তহবিলের প্রায় ৪৩ শতাংশ। গ্রাহকের এ অর্থের সুদ দিতে হয় মাত্র ৬ শতাংশ। অর্থাৎ স্বল্প সুদে গ্রাহকের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করলেও তা উচ্চহারে অন্য গ্রাহককে ঋণ হিসেবে দিচ্ছে এনজিওগুলো।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদহার কমে যাওয়ায় ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সংগ্রহের খরচ চলতি অর্থবছর অনেকটাই কমে এসেছে। অন্যদিকে গ্রাহকের সঞ্চয়সহ অন্যান্য উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহের খরচ প্রকৃতপক্ষে কম থাকার পরও তার সুবিধা থেকে বঞ্চিত সাধারণ গ্রাহক। গ্রাহকদের কাছ থেকে ক্ষুদ্রঋণের সুদহার কাগজে-কলমে ২৪ শতাংশ ধরা হলেও লুক্কায়িত ব্যয় যুক্ত করলে তা ৩০ শতাংশের নিচে নয়। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকঋণে সুদহার কমানোর সুফল পৌঁছাচ্ছে না।

ঘরের জিনিস বিক্রি করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

জুন ৩০, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

পিকআপ ভ্যানে বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত মালামাল নিয়ে পদ্মা পার হয়েছেন মানুষ। ৩০ জুন ২০২১। ছবি: স্টার

কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে। ঘোষণা আসার পর ঢাকার ভাড়া বাসা ছেড়ে গ্রামের পথে রওনা হয়েছেন অনেক মানুষ। তাদের বেশিরভাগই চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসায় লোকসান গুনেছেন। এখন আর এই জাদুর শহরে তাদের কোনো কাজ নেই৷

আজ বুধবার সকাল ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক পিকআপ ভ্যানে বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত মালামাল নিয়ে পদ্মা পার হয়েছেন মানুষ। তাদের বেশিরভাগই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে এসেছেন।

ঘরমুখী এই মানুষের কাছে বাসা ভাড়া ও বাসার মালামাল পরিবহনের গাড়ি ভাড়াও নেই। বাধ্য হয়ে ঘরের আসবাবপত্র, ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিক্রি করে ভাড়ার টাকা জোগাড় করেছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার গ্রামে গিয়ে বাবা, মা কিংবা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়া পরিশোধ করবেন।

পদ্মা পার হতে আসা মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঢাকার লালবাগ শহীদনগর এলাকায় একটি গাড়ির গ্যারেজে কাজ করতাম। স্ত্রী, তিন বছরের ছেলে আর দুই ছোট ভাইকে নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব শেষ হয়ে গেল।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্যারেজে বেশি গাড়ি মেরামতের জন্য আসে না। যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় আয় নেই বললেই চলে। তাই ঢাকার বাসা ছেড়ে দিয়ে ফরিদপুরে নিজ বাড়িতে চলে যাচ্ছি। ছয় হাজার টাকা দিয়ে পিকআপ ভাড়া করেছি। বাড়ি গিয়ে বাবার কাছ থেকে নিয়ে ভাড়াটা দিতে হবে। তিন সপ্তাহ ধরে আয় নেই। বাসার মালিক ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল, খাবারের টাকাও ছিল না। তাই ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’

মো. আলামিন হোসেন (২৬) হাতের চুরি তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। দুই সপ্তাহ আগে তার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কার্মহীন হয়ে পড়ায় ঢাকায় থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে আলামিনের। করোনায় বিভিন্ন সময়ে কারখানা বন্ধ থাকায় দুই লাখ টাকা ঋণও নিতে হয়েছে তাকে। সবদিক চিন্তা করে মালামাল পিকআপে নিয়ে গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর চলে যাচ্ছেন তিনি।

আলামিন বলেন, ‘একটি খাট, সিলিং ফ্যান ও আলমারি বিক্রি করেছি। এর সঙ্গে আরও কিছু যোগ করে গাড়ি ভাড়া করেছি।’

পরিসংখ্যানের সক্ষমতা ও মান আরো নিচে নেমেছে

৩ জুলাই , ২০২১, বণিক বার্তা

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চাল উৎপাদন নিয়ে দুই ধরনের হিসাব দিয়েছিল সরকারের দুই সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। সংস্থা দুটির হিসাবের গরমিলের কারণে অর্থবছরটিতে সঠিক সময়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগও করেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। সে সময় দেশের সরকারি সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যানের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। একই প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংকও। সংস্থাটির পরিসংখ্যান সক্ষমতা ও মান পরিমাপক স্ট্যাটিস্টিকাল ক্যাপাসিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের স্কোর এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বনিম্নে।

স্ট্যাটিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের গত বছরের স্কোর এসেছে ৬০। এখন পর্যন্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতায় এটিই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর। আগের দুই বছরে এটি স্থির ছিল ৬২ দশমিক ২২-এ। সূচকটির ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, দেশের তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল ২০১৪ সালে। সে সময়ে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে প্রায় ৮০ পয়েন্ট স্কোর অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত অর্ধযুগে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানগত দুর্বলতা তীব্রতর হয়েছে।

লকডাউনে কাজ বন্ধ, সন্তানদের খাবার দিতে না পেরে বাবার আত্মহত্যা

০৫ জুলাই ২০২১, ঢাকা পোস্ট

অভাবের কারণে পরিবারে কলহ চলে আসছিল। লকডাউনে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে পারিবারিক কলহ আরও বেড়ে যায়। সেই কলহের জের ধরেই মুন্সিগঞ্জ সদরে দ্বীন ইসলাম (২৫) নামে এক দিনমজুর ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (৪ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে সদর উপজেলার পশ্চিম মুক্তারপুর এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

দ্বীন ইসলাম বরিশাল জেলার কাউনিয়া এলাকার গৌতমের ছেলে। তিনি মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে মুক্তারপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

মধ্যবিত্তরাই এখন টিসিবির পণ্যের প্রধান ক্রেতা

৭ জুলাই, ২০২১, বণিক বার্তা

বৈশ্বিক মহামারী করোনার অভিঘাত বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে দেশের অর্থনীতিতে। কর্মসংস্থান হারিয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। আয় কমেছে অনেকের। বেড়েছে নতুন দারিদ্র্যের সংখ্যাও। বিপরীতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। এমন পরিস্থিতিতে সুলভে নিত্যপণ্যের জন্য নিম্নবিত্ত মানুষের স্বস্তির ঠিকানা হয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে টিসিবির পণ্যের ক্রেতার আসনেও পরিবর্তন আসছে। সুলভ পণ্যের এখন প্রধান ক্রেতা হয়ে উঠেছেন মধ্যবিত্তরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যবিত্তের আধিপত্যের কারণে চোখের পলকেই খালি হয়ে যাচ্ছে টিসিবির ট্রাক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে বেশির ভাগ ক্রেতাকে। এ অবস্থায় দাবি উঠছে টিসিবির পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর।

নগদ টাকা সাদা হয়েছে ১৭,০০০ কোটি

০৭ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের পর বিদায়ী অর্থবছরেই সবচেয়ে বেশি মানুষ কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিলেন। বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ১২ হাজার করদাতা কালোটাকা সাদা করেছেন। প্রায় সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ টাকা সাদা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি। ব্যাংক বা নগদে রাখা এই বিপুল পরিমাণ টাকা সাদা করেছেন প্রায় সাত হাজার করদাতা। বাকি টাকা জমি-ফ্ল্যাট, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাময়িক হিসাবে এই তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে একাধিকবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও তা তেমন একটা কাজে লাগেনি। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ৩২ হাজার ৫৫৮ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছিলেন। তখন অবশ্য সাড়ে তিন হাজারের বেশি কালোটাকা সাদা হয়েছিল।

বিদায়ী অর্থবছরের মতো এত ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ খুব একটা দেওয়া হয়নি। মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এলাকা ও আয়তনভেদে নির্ধারিত কর দিয়ে জমি-ফ্ল্যাটেও টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশেই চালের দাম এখন সর্বোচ্চ

১৪ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

দেশে বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। সরকারি গুদামে মজুত বেড়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দাম কমতির দিকে। কিন্তু দেশে বাজারের চিত্র তার উল্টো।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই রাজধানীর বাজারে মোটা চালের দাম আবার কেজিতে ৫০ টাকা ছুঁয়েছে। খুচরা দোকানে গতকাল মঙ্গলবার মোটা চাল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, যা এক সপ্তাহে দুই টাকা বেড়েছে। গত বছরের এ সময়ের চেয়ে দর ১৩ শতাংশ বেশি।

উদ্বেগজনক দিক হলো, প্রতিবছর বোরো মৌসুমে দেশে চালের দাম অনেকটাই কমে যায়। কারণ, এ মৌসুমে মোট চালের ৫৫ শতাংশের বেশি উৎপাদিত হয়। এবার দাম তেমন একটা কমেনি, বরং মৌসুম শেষ না হতেই বাড়ছে।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাংলাদেশেই এখন চালের দাম সর্বোচ্চ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এএফও) সর্বশেষ প্রতিবেদন এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সব দেশে চালের দাম কমেছে। ফলে বাংলাদেশ মোটা চাল আমদানি করলে প্রতি কেজি দাম পড়বে ৩৩ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাজারদরের চেয়ে অনেক কম।

‘কিছু খাওন দিবাইন’

১৬ জুলাই ২১, সমকাল

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘শোনো বন্ধু শোনো, প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা/ইটের পাঁজরে, লোহার খাঁচায় দারুণ মর্মব্যথা’- কালজয়ী এই গানের বাস্তব রূপ দেখা গেল ঢাকা শহরের অভিজাত হেয়ার রোডে।

হেয়ার রোডে দেশের বড় বড় মন্ত্রীদের অট্টালিকা, সে অট্টালিকা ঘেরা দেয়ালের ওপাশে ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারি।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের গেট থেকে মন্ত্রীপাড়ার ‘আশিয়ানা’ গেট পর্যন্ত মন্ত্রীদের বাড়ির বাউন্ডারি ওয়াল ঘেঁষে ফুটপাতে কর্মহীন, হতদরিদ্র, ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় জমেছে। তারা খাদ্য চায়। করোনাভাইরাসের মরণ কামড়ে দেশের নাজুক পরিস্থিতিতে তাদের জীবন লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। তারা সবাই অত্যন্ত নীচু পর্যায়ের হলেও কোনো না কোনো কাজে যুক্ত ছিলেন। সব কাজ এখন বন্ধ। কবে সেসব চালু হবে, আবার কবে কাজে ফেরা যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

লকডাউন তুলে নিলেও সহসা তারা কাজে যোগ দিতে পারবে না, দৈন্যতাও দূর হবে না। তাদের কাজের জায়গাগুলো আবার চালু হতে বেশ সময় লাগবে। তারা আসন্ন ঈদুল আজহা পর্যন্ত এই ফুটপাতেই থাকবেন বলে জানালেন।

সমকালের এই প্রতিনিধি গত বুধবার মন্ত্রীদের বাড়ি সংলগ্ন ওই ফুটপাতে বয়স্ক সমলার কাছে যেতেই তিনি ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, ‘কিছু খাওন দিবাইন, আইজ কিছু পাই নাই, এখনও কিছু খাই নাই।’ তখন বেলা ৩টার বেশি বাজে। প্রতিদিন কেউ না কেউ কিছু না কিছু খেতে দেয়। গতকাল তারা আসেনি। সেখানে সমলার মতো সবাই উপোস। পেটে কোন দানাপানি পড়েনি। কেউ কিছু খেতে দেবে- তারও নিশ্চয়তা নেই।… ….

খারাপ রেল অবকাঠামোয় এশিয়ার পাঁচ দেশের অন্যতম বাংলাদেশ

১৭ জুলাই , ২০২১, বণিক বার্তা

তিন হাজার কিলোমিটারের রেল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের। পুরনো রেলপথ আর রেলসেতুতে ট্রেনের লাইনচ্যুতি বাংলাদেশ রেলওয়ের নিত্য ঘটনা। সিগন্যাল ব্যবস্থা যেমন দুর্বল, তেমনি দুর্বল স্টেশনের অবকাঠামো। বুড়িয়ে গিয়েছে সিংহভাগ ইঞ্জিন। নতুন নতুন কোচ এলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো দ্রুত চলে যাচ্ছে ভঙ্গুর দশায়। সময় মেনে না চলা, টিকিট পেতে হয়রানি, কর্মীদের অদক্ষতার মতো বিষয়গুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে যাত্রীসেবার মানে। পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাও দুর্বল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রেল অবকাঠামোর মান রয়ে গিয়েছে বৈশ্বিক সূচকের তলানিতে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) তথ্য বলছে, এশিয়ায় খারাপ রেল অকাঠামো রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।

কোন দেশের রেল অবকাঠামো কেমন, সূচক আকারে তা নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে ডব্লিউইএফ। সূচকটি তৈরিতে রেল যোগাযোগ রয়েছে এমন দেশগুলোকে ১ থেকে ৭-এর মধ্যে ‘স্কোরিং’ করেছে সংস্থাটি। রেল অবকাঠামো সবচেয়ে অনুন্নত হলে ১ আর সবচেয়ে ভালো হলে ৭ পর্যন্ত স্কোর দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে এ সূচকে বাংলাদেশের রেল অবকাঠামোর স্কোর ৩ দশমিক ১। আর ১০১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬১ নম্বরে।

এশিয়া মহাদেশে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ রেলপথ রয়েছে আর মাত্র তিনটি দেশে। থাইল্যান্ডের অবস্থান সূচকের ৭৫ নম্বরে। জর্ডান ও ফিলিপাইন রয়েছে যথাক্রমে ৮০ ও ৮৬ নম্বরে। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বাংলাদেশের। ডব্লিউটিএফের ‘কোয়ালিটি অব রেলরোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ সূচকে ভারতের অবস্থান ২৮তম। ৪৭ ও ৪৮ নম্বরে রয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তান ও শ্রীলংকা।

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ১৭ বাংলাদেশির মৃত্যু

২২ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে অন্তত ১৭ জন বাংলাদেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট গতকাল বুধবার জানায়, লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড ভূমধ্যসাগর থেকে ৩৮০ জনের বেশি অভিবাসীকে জীবিত উদ্ধার করেছে।

দখল, দুর্নীতি ও অনিয়ম

ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়োগ ‘মানবিক’ কারণে, বললেন বিদায়ী উপাচার্য

০৮ মে ২০২১, প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান তাঁর মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে যে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেটিকে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূত বলেছে।

কিন্তু তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্যের পর বিদায়ী উপাচার্য দাবি করেছেন, তিনি যে নিয়োগ দিয়েছেন সেটি যৌক্তিক এবং তাদের চাকরি না টেকার কোনো কারণ নেই। আর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন ‘আমি এই নিয়োগ মানবিক কারণে দিয়েছি।’

আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরেজমিনে গেছে। কমিটির কাছে দেওয়া বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন আবদুস সোবহান।

আগে থেকেই অনিয়মের কারণে অভিযুক্ত অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ৬ মে তাঁর মেয়াদের শেষ দিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৪১ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে অনিয়মের নজির সৃষ্টি করে পুলিশি পাহারায় উপাচার্যের বাসভবন ছাড়েন। এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

‘পাড়া ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলা হবে’

১৫ মে, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ায় বসবাসরত ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ওই এলাকা ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আবুল খায়ের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে।

কাঞ্চন কুমার ত্রিপুরা নামে ওই পাড়ার এক বাসিন্দা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার আনসার বাহিনীর সদস্যসহ আবুল খায়ের গ্রুপের প্রায় ৫০ জন এসে আমাদেরকে পাড়া ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে যান। পাড়া ছেড়ে না গেলে আমাদেরকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।’

‘৫০ জনের মধ্যে প্রায় ২০ জন আনসার বাহিনীর লোক ছিলেন। তারা আমাদের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি করার হুমকি দিয়েছিলেন’, বলেন কাঞ্চন।

১০ বছরে পাচার ১৪ হাজার কোটি!

২৪ মে, ২০২১, কালের কণ্ঠ

বিটুমিন আমদানির চোরাবালিতে রিজার্ভ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। অঙ্কটি ঠিক কত, সেটি নিখুঁতভাবে বলা মুশকিল। তবে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে গত এক দশকে দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা। বিটুমিন আমদানির পরিমাণ, এর গুণগত মান এবং আন্তর্জাতিক বাজারদর বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থপাচারের প্রকৃত অঙ্কটি আরো বড় হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে তিন লাখ ১৯ হাজার ৬৬১ টন বিটুমিন আমদানি করেছে ৪২টি প্রতিষ্ঠান। ৩৪৬টি চালানে আনা বিটুমিনগুলোর অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু দেখানো হয়েছে প্রায় এক হাজার ১১০ কোটি টাকা। বাল্ক এবং ড্রামে আমদানি করা এসব বিটুমিন কাস্টমস থেকে খালাস করা হয় ৬০ থেকে ৭০ গ্রেড ঘোষণা দিয়ে। কিন্তু এগুলোর মান নিয়ে তৈরি হয় সন্দেহ। সত্যিকার অর্থে ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের বিটুমিন দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হলে তা খুবই টেকসই হওয়ার কথা, যা বাস্তবে দেখা যায় না। তাই সড়কসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও এসব বিটুমিনের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

কয়েকজন আমদানিকারকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা অবলীলায় এগুলোকে উন্নত গ্রেড বলে দাবি করেন। কিন্তু কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে বের হয় আসল রহস্য। আমদানি করা বিটুমিনগুলো আসলে উন্নত মানের নয়। ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় এসব বিটুমিনের কোনো কোনোটির গ্রেড পাওয়া গেছে ১০২, কোনোটি ৯৫, আবার কোনোটি ৯৮। বিটুমিন বিশেষজ্ঞরা এগুলোকে আলকাতরার চেয়েও নিম্নমানের বলে দাবি করছেন। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারাও বলছেন, আমদানি করা বিটুমিনের কোনো মানই নেই। বিএসটিআই, বুয়েট ও বিপিসির কোনো অনুমোদন ছাড়াই এগুলো খালাস হয়ে হরহামেশা ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে রাস্তা কোনোভাবেই টেকসই হচ্ছে না। অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিবিদ ও এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এসব বিটুমিনকে ৬০ থেকে ৭০ গ্রেড ঘোষণা দেওয়া একটি পরিকল্পিত কৌশলমাত্র। আসলে পুরো ঘটনাটি বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রাপাচারের একটি ফাঁদ।

আন্তর্জাতিক বাজারদর যাচাই করে দেখা গেছে, ৮০ থেকে ১০০ গ্রেড মানের বিটুমিনের বাজারমূল্য ১৫০ থেকে ১৮০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। গড়ে ১৬০ ডলার বা ১৩ হাজার ৬০০ টাকা দর বিবেচনায় ৯ মাসে আমদানি করা বিটুমিনের প্রকৃত মূল্য দাঁড়ায় ৪৩৪ কোটি ৭৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। অথচ ৯ মাসে আমদানিকারকরা বিদেশে পাঠিয়েছেন প্রায় এক হাজার ৫২২ কোটি টাকা।

এনবিআরের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে খালাস করা বিটুমিনের টনপ্রতি মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে গড়ে ৫৬০ ডলার বা ৪৭ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি টন বিটুমিনের বিপরীতে বিদেশে পাঠানো হয় বাড়তি ৩৪ হাজার টাকা। ফলে বিটুমিনের প্রকৃত মূল্যের বাইরে বাড়তি প্রায় এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতিবছর গড়ে চার লাখ ২০ হাজার টন বিটুমিন আমদানি করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ হিসাবে প্রকৃত মূল্যের বাইরে প্রতিবছর বিদেশে পাচার হচ্ছে অন্তত এক হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা ১০ বছরে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ২৮০ কোটিতে।

স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন এমপি শিমুল

২৯ মে ২১, সমকাল

কানাডার টরন্টো থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের নিরিবিলি শহর স্কারবোরো। শহরটির হেয়ারউড সড়কের ৭৩ নম্বর বাড়িটির মালিক একজন বাংলাদেশি নাগরিক। নাম শামীমা সুলতানা জান্নাতী। গত বছরের শুরুর দিকে প্রায় দুই মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার খরচ করে ডুপ্লেক্স ওই বাড়িটি কেনেন তিনি। বাংলাদেশি পাসপোর্ট অনুযায়ী তার পেশা ‘গৃহবধূ’ হলেও শামীমা কোনো সাধারণ নারী নন, নাটোরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী।

মৌলভীবাজারে খাসিয়া-গারোদের সহস্রাধিক পান গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ

১ জুন, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ছোটলেখা চা বাগানের আগার পান পুঞ্জির সহস্রাধিক উৎপাদনশীল পান গাছ দুর্বৃত্তরা কেটে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় আগার পান পুঞ্জি প্রধান সুখমন আমসে সোমবার বড়লেখা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

এ পানের আয়েই জীবিকা নির্বাহ করে আগার পান পুঞ্জির ৪৮টি খাসিয়া-গারো পরিবার। দুর্বৃত্তের এমন নির্মমতায় তাদের পথে বসার উপক্রম।

খাসিপুঞ্জিতে চলছে বিতাড়নের খেলা

০৩ জুন ২১, সমকাল

খাসিপুঞ্জিতে পানজুম কেটে দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে মৌলভীবাজারের বড়লেখার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা চা বাগানে খাসিয়াদের আগারপুঞ্জিতে ২০০ পান গাছ কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে একই চা বাগানের নালিখাইপুঞ্জিতে তাদের জুম এবং বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সবার কাছে খাসিয়া বলে পরিচিত হলেও এই আদিবাসীরা নিজেদের খাসি বলে পরিচয় দেন। চা বাগানের জমি বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে পুঞ্জি (নির্ধারিত এলাকা) বানিয়ে পান চাষ করেন তারা। ২০১৫ বা ২০১৯ সালেই প্রথম নয়, এই চা বাগানের অন্য পুঞ্জিগুলোতেও তাদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে বারবার।

পান চাষ লাভজনক হওয়ায় সেখানকার খাসি পানচাষিদের সরিয়ে সেই চাষের জমি দখল নিতে চাচ্ছে স্থানীয় বাঙালিদের কেউ কেউ। বিভিন্ন সময় পুঞ্জিগুলোর জুম থেকে পান-সুপারি চুরি তো আছেই, কয়েক দিন পরপর ঘটছে দরিদ্র চাষিদের পানগাছ কেটে উচ্ছেদ করার খেলা। এসবের কোনো কোনোটি প্রকাশ পেলেও বেশিরভাগ থেকে যায় আড়ালে। গরিব চাষিরা নির্যাতিত হওয়ার ভয়ে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেও ভয় পান। সর্বশেষ গত শনিবার আগারপুঞ্জির হাজারের বেশি পানগাছ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগের দিন শুক্রবার বনখলাপুঞ্জির বেশ কয়েকটি পানের জুম দখল করে নেয় স্থানীয় বাঙালিরা।

চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে সরকারি কর্মচারীরা

১১ জুন, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

অপেক্ষাকৃত ভালো বেতন ও সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরেও সরকারি চাকরিজীবীদের একটা ‘বড় অংশ’ আচরণবিধি ভঙ্গ করে নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ সংক্রান্ত একটা চিঠিতে দুদক জানিয়েছে, এসব সরকারি চাকরিজীবীরা হয় ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন, নয়তো নিজের নামে অথবা পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। এভাবে ‘বিপুল’ সম্পদের মালিক হয়েছেন তারা।

গত ২৯ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে দুদক জানায়, চাকরিজীবীরা আয়কর রিটার্নে তাদের সম্পদ ও তার উৎস সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ করলেও সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেননি। ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী এই অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক।

লাইসেন্সের জন্য ঘুরছেন ১৫ লাখ মানুষ

১২ জুন ২০২১, প্রথম আলো

মো. আশির মোল্লা যাবেন সৌদি আরব। তাঁর দরকার পেশাদার মোটরযান চালকের লাইসেন্স। লাইসেন্সের জন্য তিনি মিরপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-তে পরীক্ষা দেন ২০১৯ সালের এপ্রিলে। এরপর স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স পেতে সরকারি ফি জমা দেন। এক মাসের মধ্যে আঙুলের ছাপ ও ছবি তোলার কাজ শেষ হয়। বিআরটিএ তাঁকে একটি রসিদ দেয়। তাতে লাল সিলে লাইসেন্স সরবরাহের তারিখ লেখা ১৪ নভেম্বর ২০১৯। নির্ধারিত দিনে বিআরটিএতে গেলে রসিদে আরেকটি সিল পড়ে। এবার লাইসেন্স দেওয়ার তারিখ ২০২০ সালের ২৩ এপ্রিল। ওই তারিখে গেলে আরেকটি সিল পড়ে। তাতে লেখা ৫ জানুয়ারি ২০২১। এবার গিয়েও লাইসেন্স পাননি আশির। তাঁর রসিদে পুনরায় লাল সিল পড়ে। নতুন তারিখ আগামী ১৩ ডিসেম্বর। পৌনে তিন বছর পরও লাইসেন্স পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন আশির মোল্লা।

কেন এই সমস্যা? তথ্যানুসন্ধানে জানা গেল, ঠিকাদার নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা এবং দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে আশির মোল্লার মতো ১৫ লাখ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন বিআরটিএর কাছে। তাঁদের বেশির ভাগ দেড় থেকে আড়াই বছর ধরে বিআরটিএতে ঘুরছেন।… ….

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ সূত্র বলছে, চালকের লাইসেন্স দেওয়ার এই সংকটের পেছনে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ পাওয়ার প্রতিযোগিতা এবং এর ফলে দরপত্র বাতিল করার ঘটনা দায়ী। এই দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টানাটানিতে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দপ্তরও। এর ফলে ঠিকাদার নিয়োগে সময়ক্ষেপণ হয়।

বর্তমানে চালকের লাইসেন্স প্রিন্টের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি। চলতি মাসের ২২ তারিখ তাদের সঙ্গে বিআরটিএর চুক্তি শেষ হচ্ছে। টাইগার আইটির প্রকল্প পরিচালক এ বি এম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে প্রায় সব কার্ড দেওয়া হয়ে গেছে। এখন বিআরটিএ যে কটি লাইসেন্স প্রিন্ট দিতে বলে, আমরা সে কটি প্রিন্ট করে দিই। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই।’

নতুন ‘চক্রের’ হাতে মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ

১২ জুন ২০২১, প্রথম আলো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গত ডিসেম্বরে রাজধানী গুলিস্তান এলাকার বড় দুটি মার্কেটের নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদ করে। পর্যায়ক্রমে এ রকম অন্য সব মার্কেটেও উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘোষণার পাঁচ মাসেও সেই অভিযান শুরু হয়নি। এরই মধ্যে উচ্ছেদ হওয়া মার্কেট দুটির নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে নতুন দুটি চক্রের হাতে। এর মধ্যে একটি মার্কেটের অবরাদ্দকৃত দোকান অবৈধভাবে ভাড়া দিচ্ছে চক্রটি। আর অন্য মার্কেটিতে উচ্ছেদ হওয়া দোকানগুলো নতুন করে নির্মাণ করে অর্থের বিনিময়ে দোকানি তোলা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের জন্য গরু বিক্রি, জমি বন্ধক রেখে টাকা

১২ জুন, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেতে চেয়ারম্যান ও প্রকল্প কর্মকর্তাকে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বান্দরবানের থানচি উপজেলার বেশ কয়েকটি পরিবার।

অন্যদিকে প্রকল্প কর্মকর্তা বলছেন, সরকারের বরাদ্দ দেওয়া অর্থে ঘর নির্মাণ করা যাচ্ছে না, তাই চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করেই কারো কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। থানচি উপজেলার ক্রংক্ষ্যং পাড়ার ষাটোর্ধ্ব মং সানু মারমা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের জন্য নিজের পালিত গরু বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। মং সানু বলেন, বলা হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা জমা দিলেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি পাকা বাড়ি তৈরি করে দেয়া হবে। ঘরের আশায় আমি বলিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া অং মারমা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামকে গরু বিক্রি করে ইট বালু সরবরাহকারী মামুনের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি।’

তবে কষ্ট করে টাকা দিলেও যেখানে ঘর দেওয়া হবে বলা হয়েছিল সেখানে না দিয়ে দুর্গম এলাকায় অসম্পূর্ণ ঘর দেওয়া হয়েছে বলে জানান মং সানু।

একটি সার্জিক্যাল মাস্কের দাম ৩৫৬ টাকা

২৩ জুন ২০২১, প্রথম আলো

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া একটি প্রকল্পের আওতায় অস্বাভাবিক দামে সার্জিক্যাল মাস্ক কিনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমনকি এন-৯৫ মাস্কের চেয়েও বেশি দামে কেনা হয়েছে এসব মাস্ক। গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির কাছে দেওয়া হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওই প্রকল্পের আওতায় গড়ে প্রতিটি সার্জিক্যাল মাস্কের দাম পড়েছে ৩৫৬ টাকা ৯৬ পয়সা। একই প্রকল্পে প্রতিটি এন-৯৫ মাস্কের দাম পড়েছে ২৯৩ টাকা।

এসব মাস্ক কেনা হয়েছে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পের আওতায়। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে এপ্রিলে সরকার জরুরি ভিত্তিতে এই প্রকল্পটি নিয়েছিল।

নিম্নমানের নির্মাণকাজে ফুলে ওঠে, দেবে যায় মহাসড়ক

২৭ জুন, ২০২১, বণিক বার্তা

.. … কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফুলে-ফেঁপে এবড়ো-খেবড়ো হয়ে যায় যশোর-খুলনা মহাসড়ক। কারণ তদন্তে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির বেজকোর্স নির্মাণে প্রয়োজনীয় মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি। বর্তমানে নির্মাণাধীন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও এখন একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর আগে চালু হওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও অনেক স্থানে দেখা যায় রাস্তা হয় ফুলে উঠেছে, নয়তো দেবে গিয়েছে। এসব মহাসড়কের প্রতিটিতেই নিম্নমানের নির্মাণকাজের অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে নির্মাণে ব্যবহূত উপকরণের মান নিয়েও।

দেশের মহাসড়কগুলো এখন ‘ফুলে ওঠা’ বা ‘দেবে যাওয়ার’ বিষয়টি এখন সাধারণ এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা সড়ক থেকে জাতীয় সড়ক—সবখানেই একই সমস্যা। প্রকৌশলীদের ভাষায় এ সমস্যাকে বলা হয় ‘রাটিং’। সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের দাবি, সড়ক-মহাসড়কে রাটিং দেখা দিচ্ছে ‘ওভারলোডিংয়ের’ কারণে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা ত্রুটি দেখছেন সড়কের নির্মাণ পদ্ধতিতেই। নির্মাণযন্ত্রের দুর্বলতা ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণেই এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

কুয়াকাটায় নির্মাণকাজ শেষের আগেই ধসে পড়ল সেতু

২৭ জুন ২০২১, প্রথম আলো

দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভার দোভাষীপাড়া এলাকায় নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই একটি সেতু ধসে পড়েছে। আজ রোববার সকালে  নির্মাণাধীন সেতুর দুটি গার্ডার ধসে পড়ে। ঠিকাদার সঠিকভাবে কাজ না করায়  সেতুটি ধসে পড়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নকশায় ত্রুটি থাকার কারণে এটি ধসে পড়েছে বলে দাবি করেছেন।

শ্রমজীবি মানুষ

শিশুশ্রমমুক্ত আট খাত কেবল কাগজ–কলমে

০১ মে ২০২১, প্রথম আলো

আবু বকরের বয়স আট বছর। সে কাজ করে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে একটি জুতার কারখানায়। কাজে আসে সকাল আটটায়, আর বাসায় ফেরে রাত নয়টায়। প্রতিদিন এভাবে কাজ করে সপ্তাহ শেষে সে বেতন পায় মাত্র চার হাজার টাকা। মঙ্গলবার দুপুরে কামরাঙ্গীরচরের হুজুরপাড়ায় ওই জুতা কারখানায় গিয়ে আবু বকরের মতো আরও ১০ শিশুকে পাওয়া গেল, যাদের বয়স গড়ে ৯ থেকে ১২ বছর। যারা প্রতিদিন একই সময় পর্যন্ত কাজ করে।

কেবল এই কারখানাটিতেই নয়, কামরাঙ্গীরচর, চকবাজার, বংশালসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় অনেক ছোট ছোট জুতার কারখানা রয়েছে। সেসব কারখানায় দুই শর বেশি শিশুশ্রমিক কাজ করে আসছে। এক বছর জুতার কারখানায় কাজ করা ছোট্ট শিশু আরিফুল ইসলাম জানাল, তারা চার ভাই, এক বোন। থাকে কামরাঙ্গীরচরের একটি বস্তিতে। বাবা রিকশা চালান। মাস শেষে যে টাকা বেতন পায়, বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয়।

কামরাঙ্গীরচরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এলাকায় অনেক ছোট ছোট জুতার কারখানা রয়েছে। দরিদ্র পরিবারের অনেক শিশু এসব কারখানায় কাজ করে। জুতার কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে এসব শিশুকে যুক্ত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেবল জুতার কারখানায় নয়, সাভারের হেমায়েতপুরের ট্যানারির মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও শতাধিক শিশু-কিশোর যুক্ত রয়েছে।

অথচ পাদুকাশিল্প, ট্যানারি, রেশম, সিরামিক, গ্লাস, জাহাজ প্রক্রিয়াজাতকরণ, চিংড়ি এবং রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করেছে সরকার। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ছয়টি খাতকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করা হয়। কাগজে-কলমে এসব খাতকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে শিশুরা প্রতিনিয়ত এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে।… …

বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে কারখানায় নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। আবার ১৪ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সীদের সরকারঘোষিত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তাদের কেবল হালকা কাজে যুক্ত করা যাবে।

বিড়ি-সিগারেট তৈরির কারখানাসহ ৩৮টি খাতকে শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় রয়েছে অ্যালুমিনিয়ামজাত দ্রব্যাদি তৈরি, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, ব্যাটারি রি–চার্জিং, বিড়ি ও সিগারেট তৈরি, লেদ মেশিন, কাচের সামগ্রী তৈরি, লবণ তৈরি, প্লাস্টিক সামগ্রী, সাবান তৈরি।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ২১ কোটি ২০ লাখ। বাংলাদেশে আছে ৩২ লাখ। এর মধ্যে ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। আর ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি কাজ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে।

এই প্রতিবেদন বলছে, শিশুশ্রমিকদের অর্ধেকের বেশি কাজ করে কৃষি খাতে (৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ)। এ ছাড়া ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ সেবা খাতে এবং শিল্পে কাজ করছে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু।

২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণা করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, শিশুশ্রমের বড় কারণ দারিদ্র্য। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা মূলত শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছে। তাই ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমিকমুক্ত বাংলাদেশ হবে বলে তাঁরা মনে করেন না।

ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা শাবনাজ জাহেরীন বলেন, বাংলাদেশে কাজ করছে ১২ লাখের বেশি শিশুশ্রমিক। তাদের সেখান থেকে বের করে আনার জন্য যে ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার, সেটা নেওয়া হয়নি।

অন্ধকারে কর্মহীন শ্রমিকরা

১ মে, ২০২১, দেশ রুপান্তর

ঢাকার অভিজাত এলাকা বনানীর কোল ঘেঁষে কড়াইল বস্তি। ঘিঞ্জি এই বস্তিতে এক লাখেরও বেশি খেটে খাওয়া মানুষের বাস। এখানে পরিবার নিয়ে থাকেন বাসের সহকারী আলমাস হোসেন (৪৫)। প্রায় এক মাস বেকার বসে আছেন তিনি। আলমাসের স্ত্রী আকলিমা বেগম মহাখালীর তিনটি ব্যাচেলর বাসায় রান্না করতেন। মাসিক আয় ছিল ৬ হাজার টাকা। করোনা শুরুর পর দুটিই বন্ধ হয়ে যায়। আয়ও নেমে এসেছে তিন ভাগের এক ভাগে। এই অবস্থায় তিন শিশুসন্তানসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারটি এখন দু’মুঠো খাবারের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করছে।

মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকার হোটেলকর্মী আতাউর রহমানের সংসারে ছয় সদস্য। হাঁপানি-শ্বাসকষ্টে কাজ করার সামর্থ্য প্রায় হারিয়েছেন। তার স্ত্রী গৃহকর্মী। ঘরে বিয়ের উপযুক্ত তিনটি মেয়ে। একজন পোশাক কারখানার কর্মী। মা-মেয়ের আয়ে কোনোরকম জীবিকা নির্বাহ করছে পরিবারটি।

মহামারী করোনাভাইরাস দেশের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর কতটা গভীর প্রভাব ফেলেছে তার উদাহরণ এই দুটি পরিবার। কর্মহারা কোটি কোটি মানুষ, উচ্চ বেকারত্ব, কর্মসংকোচন, দরিদ্রের হার বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট এবং নিম্ন মজুরিসহ নানা কারণে গত এক বছরে শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা বেড়েছে কয়েক গুণ।… …. করোনা ও পুঁজিবাদের যৌথ আগ্রাসনে বাংলাদেশের সাড়ে পাঁচ কোটি খেটে খাওয়া মানুষের জীবন ডুবেছে অন্ধকারে। শ্রমিকরা আগের তুলনায় ১৭ শতাংশ খাবারের খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছেন। একই সঙ্গে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

উচ্চ বেকারত্বে দারিদ্র্য বাড়ছে লাফিয়ে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী তখন দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে অনুমিত হিসাবে তা নেমে আসে সাড়ে ২০ শতাংশে। গেল বছর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) তাদের এক গবেষণায় বলেছিলÑ করোনার কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, মানুষের আয় কমেছে। ফলে দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৩৫ শতাংশ। তবে বছরের শেষ নাগাদ আরেক গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক গবেষণায় দেখা যায়, করোনায় দেশের দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। আর সম্প্রতি প্রকাশিত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (বিআইজিডি) এক গবেষণা বলছে, করোনাভাইরাসের এক বছরে দেশে নতুন করে দরিদ্র মানুষ বেড়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ।

শ্রমিকের ঋণ আর সম্পদ বেড়েছে ধনীদের

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের শ্রম খাতের সবচেয়ে বড় উৎস বৈদেশিক শ্রমবাজার। করোনার ধাক্কায় প্রায় সাড়ে তিন লাখের বেশি শ্রমিক শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হন। এর মধ্যে অনেকে ফিরে গেলেও বেশিরভাগই আটকে পড়েন। এসব শ্রমিক নতুন করে ঋণের জালে জর্জরিত হয়েছেন। দেশীয় শ্রম খাতের আরেক বড় উৎস তৈরি পোশাক শিল্পেও তিন লাখ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)। শ্রমঘন গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার এলাকায় কাজের জন্য শিল্পকারখানাগুলোর সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া দেশের আরেক বড় রপ্তানিমুখী শিল্প চামড়া খাতেও কয়েক হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হন। বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন শ্রমিকরা।

এরই মধ্যে গত বছর সরকারি এক ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ হয়ে যায়। এসব কারখানায় প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। আর অস্থায়ী বা বদলি মিলে এ সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। হঠাৎ বন্ধের সিদ্ধান্তে পাটকল ঘিরে লাখো মানুষের জীবিকায় অনিশ্চয়তা নেমে আসে। সংস্কার করে পাটকলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে দিনের পর দিন আন্দোলন করেন শ্রমিকরা। তবে সরকার সে দাবি আমলে নেয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কারখানা বন্ধের পরিবর্তে সরকার শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে চাইলেও আজো অনেকে সে অর্থ পাননি। ফলে এই খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে।

এর কিছুদিন পর রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি চিনিকলও বন্ধ করে দেয় সরকার। সরকারি হিসাবে এসব চিনিকলে ২ হাজার ৮৮৪ জন শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমানে তাদের পাঁচ মাসের মজুরি বকেয়া রয়েছে। বেতনের অভাবে শ্রমিক পরিবারগুলো চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হয়েছে বলে জানা গেছে। শ্রম খাত ও দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির যখন এই অবস্থা তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গত বছরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনা সংকট চলাকালে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশে কোটিপতি বেড়েছে ৪ হাজার ৮৬৫ জন।

বছ‌রের পর বছর ঝু‌লে থা‌কে শ্রমি‌কের মামলা

০১ মে ২০২১, প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের রাজনগর টি এস্টেট লিমিটেডের শ্রমিক দীপ চান। চাকরিচ্যুতির পর পুনর্বহাল চেয়ে শ্রম আদালতে মামলা করেন ২০১২ সালে। সেই মামলা এখনো ঝুলে আছে। সিলেট-চট্টগ্রাম আসা-যাওয়ায় ক্লান্ত তিনি। দীপ চান বলেন, ‘এখন আর চট্টগ্রাম আসি না। বিচারের আশাও করি না।’

কক্সবাজার বাস শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মচারী মো. আলীও আট বছর আগে পাওনা আদায়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই মামলারও সুরাহা হয়নি এখনো।

দীপ চান ও আলীর মতো হাজারো শ্রমিকের মামলার বিচার ঝুলে আছে বছরের পর বছর। অথচ সর্বোচ্চ ১৫০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে।.. ..

চট্টগ্রামের দুটি শ্রম আদালতে এখন ২ হাজার ৫৪৭টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে প্রথম শ্রম আদালতে মামলা রয়েছে ১ হাজার ৮৫৮টি এবং দ্বিতীয় শ্রম আদালতে ৬৮৯টি। এর মধ্যে ১ হাজারের বেশি মামলা রয়েছে, যেগুলো ছয় থেকে আট বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। দুটি আদালতে এক বছরে (গত বছরের মে থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত) নিষ্পত্তি হয়েছে ২২৭টি। এর আগের বছর নিষ্পত্তি হয়েছিল ৩৫০টি। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলা নিষ্পত্তিতে এবার সময় লাগছে বলে জানান শ্রমিক ও আইনজীবীরা।

বাঁশখালীতে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

০৫ মে ২০২১, প্রথম আলো

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত সোমবার রাতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হলেও মঙ্গলবার বাঁশখালী আদালতে হাজির করা হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি হলেন মো. জাফর ও সৈয়দ নুর। দুজনকে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

দুজনই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশের গণ্ডামারার বাসিন্দা। এর মধ্যে মো. জাফর বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মো. জাফর ও সৈয়দ নুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকা থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া ১০ কোটি টাকার মালামাল থেকে প্রায় ২৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

দেশে প্রতিদিনের খরচ মেটানোর আয় নেই ৮৬ শতাংশ শ্রমিকের: সিপিডি

০৫ মে ২১, সমকাল

দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিদিনের খরচ মেটানোর আয় নেই ৮৬ শতাংশ শ্রমিকের। এছাড়া কর্মজীবীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ কভিডের আগের চেয়ে কষ্টকর অবস্থায় আছে। আয় কমে যাওয়ার কারণে ব্যয়ের সঙ্গে আপস করে চলছে ৭৮ শতাংশ পরিবার। এসব পরিবারকে বেঁচে থাকার মতো খাদ্য এবং জরুরি শিশু খাদ্যের সঙ্গেও আপস করতে হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার এক সংলাপে এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ‘কভিডকালে আয় ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি: কীভাবে মানুষ টিকে আছে?’ শীর্ষক এ খানা জরিপ পরিচালনায় সহযোগিতা করেছে অক্সফাম ইন বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

শ্রমজীবীদের জন্য গণবণ্টন ব্যবস্থা চালু চায় বাম জোট

০৭ মে ২১, সমকাল

করোনাকালে শ্রমজীবীদের জন্য গণবণ্টন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। নেতারা বলেছেন, করোনার অভিঘাতে দেশের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে পারছে না। আয় কমে যাওয়ায় তারা খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন। সেই সময় চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের দিশেহারা অবস্থা। এ অবস্থা মোকাবিলায় নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি গণতদারকি কমিটি করে বাজার মনিটরিং, গণবণ্টন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন।

চাকরি হারিয়ে দিনমজুর হয়েছেন ২০% পোশাকশ্রমিক

০৮ মে ২০২১, প্রথম আলো

করোনার প্রথম ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যেসব পোশাকশ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। কারখানা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের মাত্র ১৫ শতাংশ কোনো না কোনো কাজ পেয়েছেন।

চাকরি হারানো শ্রমিকদের মধ্যে যাঁরা নিজেদের কারখানায় কাজ ফিরে পাননি, তাঁদের ২০ শতাংশ দিনমজুরের কাজ করেন। ২০ শতাংশের মতো শ্রমিক কাজ করছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। আরও ২০ শতাংশ শ্রমিক পোশাক খাতের বাইরে বিভিন্ন কারখানায় কাজ নিয়েছেন। নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করেছেন, এমন শ্রমিক প্রায় ২৭ শতাংশ। মাত্র ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক তৈরি পোশাক খাতেই কাজ ফিরে পেয়েছেন। বাকি কয়েক শতাংশ অন্যান্য খাতে গেছেন।

আজ শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও সজাগ কোয়ালিশনের যৌথভাবে আয়োজিত ‘করোনায় তৈরি পোশাক খাতের করপোরেট জবাবদিহিতা’ শীর্ষক এক সংলাপে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে মূল প্রবন্ধটি তৈরি করা হয়। এতে আরও বলা হয়, নতুন কাজে শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। আগে যেখানে শ্রমিকেরা মাসে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করতেন, সেখানে চাকরি হারানোর পর নতুন কাজে তাঁরা এখন মাসে গড়ে সাত হাজার টাকা আয় করেন। তা ছাড়া চাকরি হারানোর সময়ে অনেকেই তাঁদের পাওনা পাননি।

খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের ইফতার কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা

৮ মে, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের ইফতার কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। আজ শনিবার বিকেলে খালিশপুরের প্লাটিনাম জুট মিলের সামনের রাস্তায় ইফতারের আয়োজন করেছিল শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ। পুলিশ তাদের স্থানীয় কলোনির মাঠে ইফতার করতে বাধ্য করে।

শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগেই বকেয়া পাওনার দাবিতে গত ১ মে থেকে তারা আন্দোলন করছেন। আজ তারা রাজপথে ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। বিকেলে পুলিশ এসে তাদের রাজপথের ইফতার কর্মসূচিতে বাধা দেয়। ইফতারের আগে শ্রমিকদের ধাক্কাধাক্কি করে মিলের মাঠে যেতে বাধ্য করে।

টঙ্গীতে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১৫

১০ মে, ২০২১, ইত্তেফাক

টঙ্গীর মেইলগেট এলাকায় অবস্থিত হামিম গ্রুপের একটি গার্মেন্টসে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। আজ সোমবার (১০ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় তিন দিনের পরিবর্তে ১০ দিনের ঈদের ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ১৫ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এএসপিসহ পাঁচজন ও অন্তত ৩৫ শ্রমিক আহত হন।

জানা যায়, প্রতিদিনের মতো শ্রমিকরা আজ সকালে তাদের কর্মস্থলে এসে যোগদান করেন। পরে মালিক পক্ষ থেকে তিনদিনের ছুটি ঘোষণা করতেই শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে গার্মেন্টস থেকে বাহির হয়ে ১০ দিনের ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে বেলা ১২টায় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়।

বেতন হয়নি ৫৭১ কারখানায় ৬৫১টিতে বোনাস

১২ মে, ২০২১, বণিক বার্তা

ঈদের আগে বরাবরই বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করে দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকার কারখানাগুলোয়। এবারো ব্যতিক্রম ঘটেনি। চলাচলের ওপর সরকারের দেয়া বিধিনিষেধের মধ্যে কর্মীদের ছুটির বিষয়টি নিয়ে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে শিল্প এলাকাগুলোয়। তবে দু-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়া বড় কোনো অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে। ছয় শিল্প এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে, গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত বেতন পরিশোধ হয়নি ৫৭১টি কারখানায়। আর ৬৫১টি কারখানায় শ্রমিকদের বোনাস অপরিশোধিত রয়েছে।

ঈদ নেই বস্তিতে

১৪ মে, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

প্রতি বছরেই ঈদের আনন্দ কমবেশি ভাগাভাগি করে নিতে পারলেও এ বছর ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে রাজধানীর বস্তিবাসীর।

সরকারি বা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় ঈদের আনন্দ নেই ঢাকার অধিকাংশ বস্তিবাসীর। গত বছর করোনার মধ্যে ঈদে তাদের অনেকে ত্রাণ ও বিভিন্ন সহযোগিতা পেয়েছেন। তবে, এবারের ঈদে বেশিরভাগই কোনো প্রকার ত্রাণ বা সহযোগিতা পাননি।

ঢাকার মিরপুরের পাঁচটি বড় বস্তি, ভাষানটেক বস্তি, মহাখালীর সাততলা বস্তি, কড়াইল বস্তিসহ আরও কয়েকটি বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে একই চিত্র পাওয়া গেছে।

মিরপুর ১৪’র আবুলের বস্তিতে প্রায় ২০০ পরিবারের বসবাস। এই বস্তির একজন বাসিন্দা আবুল (৬০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৩৫ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারকে আড়াই হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের বস্তির ২০০ পরিবারের কেউই এই টাকা পায়নি। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া হলেও কারও কাছেই এক পয়সাও আসেনি।’

‘গতরাতে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক আছে এমন ৩০টি পরিবারকে একটি বেসরকারি সংগঠন নাম প্রকাশ না করে কিছু সাহায্য দিয়ে গেছে। এ ছাড়া আর কেউ কোনো ধরনের সাহায্য পায়নি’, বলেন তিনি।… …

মজুরি বৃদ্ধির দাবি হরিজনদের

২৫ মে ২১, সমকাল

ঘর নির্মাণ, পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা এবং মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পৌরসভার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা সবাই শহরতলির হরিজনপল্লির বাসিন্দা। পৌর শহরে ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে পরিস্কার-পরিছন্নতার কাজ করেন তারা।

সোমবার সকালে পৌরসভার সামনে হরিজন সম্প্র্রদায়ের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ঘণ্টাখানেক পৌরসভায় অবস্থান নেওয়ার পর তারা পৌরসভার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে হাতে ঝাড়ু নিয়ে সেল্গাগান দিতে দিতে পৌরসভা ত্যাগ করেন।

হরিজনপল্লির সর্দার রঞ্জন হরিজন বলেন, আমরা শহরের সব ময়লা-আর্বজনা পরিস্কার করি। কিন্তু আমরাই থাকি সবচেয়ে খারাপ পরিবেশে। পৌরসভা থেকে আমরা যে মজুরি পাই, তা খুবই কম। এই মজুরি দিয়ে আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর। পৌরসভার কাছে টয়লেট, পানির ব্যবস্থা, ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য আমরা বারবার বলে এলেও তারা এগুলো গুরুত্বই দিচ্ছে না। এদিকে উপজেলার ইউএনও স্যার আমাদের জন্য পানির ব্যবস্থা ও টয়লেট তৈরির কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করলেও পৌরসভা এই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা নিজেরাও কাজ করবে না, অন্যকেও করতে দেবে না। এ কারণে আমরা আজ ঘটিবাটি নিয়ে পৌরসভায় একত্রিত হয়েছি। আমাদের দাবি না মানলে আমরা কাল থেকে কাজ করা বন্ধ করে দেব।

আবার ফিরতে হলো কাজে

১২ জুন ২০২১, প্রথম আলো

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) ৩৩ হাজার শিশু শ্রমিকের ওপর জরিপ করে জানিয়েছে, কাজ ছেড়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, এমন আড়াই হাজার শিশু করোনাকালে পরিবারকে সহায়তা করতে আবার কাজে ফিরে গেছে। আগের চেয়ে কম পারিশ্রমিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪০০ শিশু। নতুন করে ৭ হাজার ৮০০ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হয়েছে। এমজেএফ ‘শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষা কর্মসূচি (পিডব্লিউসি)’– এর আওতায় গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ওই জরিপটি পরিচালনা করে। এমজেএফের ১১টি অংশীদারি সংগঠন ওই কর্মসূচির আওতায় তালিকাভুক্ত শিশুদের ওপর ঢাকা (কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ), কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর ও খুলনায় জরিপটি পরিচালনা করে।

শ্রমিক বিক্ষোভে কাঁদানে গ্যাস, ছত্রভঙ্গ শ্রমিকের মৃত্যু

১৩ জুন, ২০২১, নিউজ বাংলা টুয়েন্টিফোর ডট কম

সাভারে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসে ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড়াতে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কায় নারী পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান।

মৃত শ্রমিকের নাম জেসমিন আক্তার। তিনি ইপিজেডের গোল্ড টেক্স কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন।

করোনা গৃহকর্মীর কষ্টের কাল

১৬ জুন ২০২১, প্রথম আলো

করোনাকালে গৃহশ্রমিকদের পেশা হারানোর চিত্র উঠে এসেছে বেসরকারি সংগঠন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ জরিপে। গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তিন দফায় করোনাকালে আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর জরিপ করে সংস্থাটি দুটি। গবেষণার প্রথম দফায় দেখা যায়, ঢাকা এবং অন্যান্য শহরের ৫৭ শতাংশের বেশি নারী গৃহকর্মী বেকার হয়েছেন। কাজ হারানো এসব নারীর মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ বিকল্প পেশায় নিযুক্ত হতে পেরেছেন।

প্রতিষ্ঠানটি দুটির চলতি বছরের এপ্রিল মাসের জরিপে দেখা যায়, গত বছর করোনা শুরুর পর গৃহকর্মীদের আয় করোনার আগের তুলনায় ৬১ ভাগ কমে গিয়েছিল। চলতি বছর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এই আয় এখনো করোনার আগের তুলনায় ১২ শতাংশ কম। গবেষণার তথ্য বলছে, কাজ হারানো গৃহশ্রমিকদের মধ্যে এখনো বেকার ৩৫ শতাংশ। ৪৬ ভাগ তাঁদের পুরোনো পেশায় ফিরে যেতে পেরেছেন। ছোট ব্যবসা, কারখানার শ্রমিক, কৃষিসহ নানা পেশায় যুক্ত হতে পেরেছেন ১৯ শতাংশ গৃহকর্মী। এ ক্ষেত্রে রিকশাচালকদের বেকারত্বের হার ৫৬ শতাংশ।

করোনাকালে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। গৃহশ্রম এই খাতের মধ্যেই পড়ে। মোট শ্রমশক্তির ৮৬ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। বাংলাদেশে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা কত, সরকারি কোনো দপ্তরে সে তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজসহ (বিলস) পাঁচ প্রতিষ্ঠানের গবেষণা দলিল ‘গৃহশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ২০২০’–এ বলা হয়েছে, এই সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।

ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত

২১ জুন, ২০২১, কালের কন্ঠ

যেসব রিকশা ও ভ্যান আগে প্যাডেল দিয়ে চলত কিন্তু বর্তমানে ইঞ্জিন লাগিয়ে চালানো হচ্ছে, সেগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ইজি বাইকও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, যা ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি চলতে পারবে না। চালক-হেল্পারদের নিয়োগপত্র দিতে হবে।

গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রামীণফোনের ১৫৯ কর্মী একসঙ্গে ছাঁটাই

২২ জুন, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

একসঙ্গে ১৫৯ জন কর্মীকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটরটি বলছে, তাদেরকে স্বেচ্ছা অবসর স্কিমের (ভিআরএস) আওতায় অবসর নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সে সুযোগ নেননি।

এর আগে, ২০২০ সালে স্বেচ্ছা অবসর স্কিম (ভিআরএস) নেওয়ার আহ্বান জানালে এই স্কিমের আওতায় গ্রামীণফোনের প্রায় একশ কর্মী চাকরি ছাড়েন। এ বছরের ৩ জুন আবারও এই স্কিমে চাকরি ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৭ জুনের মধ্যে তারা স্কিম নিতে চায় কিনা সেটি গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়। প্রায় একশ কর্মী এবারও স্বেচ্ছা অবসরের আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

সাইরেনের অপেক্ষায় খুলনার পাটকল শ্রমিকরা

০১ জুলাই ২০২১, ঢাকা পোস্ট

বাজে না সাইরেন, নেই তাঁতের ঠক ঠক শব্দ। চারদিক শুনশান। লোকজনের আনাগোনা নেই। নেই কাজ শেষে বাড়ি ফেরার তোড়জোড়। বসবাসের স্থানটিও এখন ধ্বংসস্তুপ। এভাবেই কেটে গেল একটি বছর। এখনো বাজেনি সাইরেন। ভাগ্য ফেরেনি পাটকল চালুর আশায় বুক বেঁধে থাকা শ্রমিকদের।

বেকারত্ব আর মানসিক অশান্তিতে দুর্বিষহ জীবন কাটছে অনেক শ্রমিকের। আর কতদিন, কবে বাজবে পাটকলের সাইরেন, এমন প্রশ্ন শ্রমিকদের। অনেকে পেশা বদলে ভাগ্য ঘোরানোর চেষ্টা করলেও অদৃশ্য ভাইরাস করোনার কারণে বেকার বসে থাকতে হচ্ছে। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে অনেকের পরিবার। অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে মানুষের সহযোগিতার।

তবুও আশা ছাড়েননি পাটকলের এসব শ্রমিকরা। শুনশান পাটকলগুলোতে আবারও বাজবে সাইরেন, সেই অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। 

২০২০ সালের ১ জুলাই খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টিসহ দেশের ২৫টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাটকলগুলোর উৎপাদন বন্ধের পর লিজের মাধ্যমে আবারও চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল বিজেএমসি। কিন্তু লিজের মাধ্যমে পাটকলগুলো আবার কবে চালু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন শ্রমিকরা।

এ অবস্থায় খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চল ছেড়ে অনেক পরিবার বিভিন্ন জেলায় গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে মিলের যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত থাকায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর শ্রমিকদের বসবাসের মিল কলোনিগুলো এখন শুনশান মরুভূমি। ঘর-বাড়ি ভেঙে ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছে। গাছগুলোতে ফল ধরে রয়েছে, তবে যারা গাছ লাগিয়েছিল খাবার জন্য আজ তারা সেখানে নেই। সরেজমিনে গিয়ে প্লাটিনাম জুট মিল এবং ক্রিসেন্ট জুট মিল কলোনিতে মিলল এমন দৃশ্যে।

পাটকল শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, মিল কলোনিতে ছোট থেকে বড় হয়েছি। আজ সেই কলোনির অবস্থা দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারি না। মিল চালু হবে সেই আশায় এখনো রয়েছি।

প্লাটিনাম জুট মিল কলোনি গেটের নিরাপত্তাকর্মী মো. রফিক মিয়া বলেন, কলোনিতে প্রতিদিনই দু-একজন ঘুরতে আসেন। তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান দেখতে আসেন। অনেকে এসে চোখের পানিও ফেলেন।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক মাহফুজ হোসেন বলেন, মিলে এখন শুধুই হাহাকার। তবে আমরা কয়েকজন এখানে রয়েছি। কারণ মিল কর্তৃপক্ষ বলেছিল ঘর ছাড়লে টাকা নিতে পারব। কিন্তু আমি এখনো পাওনা টাকা নিইনি। এখানে জন্ম, এখানেই শৈশব, কৈশোর কেটেছে। এখানেই বিয়ে করেছি। এখন ছেলেও ইন্টারে লেখাপড়া করছে। স্মৃতি বিজড়িত এই জায়গা ছেড়ে যেতে চাই না। সবাই গেলেও আমি যাব না। এখানেই মরতে চাই।

প্লাটিনাম জুট মিল কলোনির ২নং গেট এলাকার ভরাটপুকুর নামক স্থানে বসবাস করেন মিলের স্থায়ী শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন (৫৫)। তিনি এখন শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। পরিশ্রমের কোনো কাজ করতে পারেন না। অভাবের সংসার টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে নেমেছেন তার স্ত্রী রেখা বেগম। পরের বাড়িতে কাজ করে যে আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চালান তিনি। 

জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্লাটিনাম জুট মিলে অবসায়নের পর পাওনা ছিল ৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ টাকা নগদ পেয়েছেন, বাকি টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে পারছেন না। লকডাউনের কারণে গাড়ি বন্ধ। ছেলে ও জামাই গাড়িও চালাতে পারছে না। এক মেয়ে বদলি শ্রমিক ছিল। সেও টাকা পায়নি। এখন আমার আর চলার মতো অবস্থা নেই। ওষুধ কিনতে পারছি না, ঘরও ঠিক করতে পারছি না। সরকার বলেছিল ৬ মাসের মধ্যে মিল আবার পিপিপি এর মাধ্যমে চালাব। আজ পর্যন্ত কোনো খবর নেই। এখন আমরা কী করে খাব? আমাদের একটা পথ আপনারা করে দেবেন। শ্বাসের সমস্যার কারণে কাজ করতে পারি না। আমার স্ত্রী এক জায়গায় কাজ করে, সেই টাকা দিয়ে চলছি।

তার স্ত্রী রেখা বেগম বলেন, কখনো চিন্তাও করিনি কারও বাড়িতে কাজ করতে হবে। কিন্তু এখন পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। অনেক কষ্টে দিন কাটছে। মেয়ে জোসনা প্লাটিনাম জুট মিলের বদলি শ্রমিক ছিল। কিন্তু মিল বন্ধের এক বছর পার হলেও বদলি শ্রমিকদের ভাগ্যে একটি টাকাও জোটেনি।

তিনি বলেন, কোনো টাকা পায়নি সে। রোজার ঈদে ছেলে-মেয়েদের সেমাই পর্যন্ত কিনে খাওয়াতে পারিনি। সামনে কোরবানির ঈদ। আমরা প্রত্যাশা করছি ঈদের আগে বদলি শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ করে দেবে। একইসঙ্গে মিল চালু করে আমাদের কাজের সুযোগ করে দেবে সরকার।

একই মিলের স্থায়ী শ্রমিক হাফিজুর রহমান বলেন, আমি এখন বেকার, কোনো কাজ নেই। মাঝে মধ্যেই মিলের সামনে আসি। আশায় আছি কবে মিল চালু হবে। যে টাকা পেয়েছিলাম সেটা দিয়ে গরুর বাছুর কিনেছিলাম। কিন্তু গরুর দেখভাল করতে পারি না। এ কারণে বিক্রি করে দিয়েছি। সেই টাকা ভেঙে ভেঙে সংসার চালাচ্ছি। এখন আমাদের যদি আবার কাজ দিত তাহলে আমরা স্বাভাবিক জীবনটা আবার ফিরে পেতাম।

শুধু জাহাঙ্গীর, জোসনা আর হাফিজুর নয়, তাদের মতো দুর্ভোগে রয়েছেন বন্ধ হয়ে যাওয়া খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের প্রায় ৪১ হাজার শ্রমিক পরিবার।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার আলীম, ক্রিসেন্ট, ইস্টার্ন, প্লাটিনাম ও স্টার এবং যশোরের কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলে স্থায়ী শ্রমিক ছিল ১৪ হাজার ৯৮৭ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৪ জন তাদের পাওনা নগদ প্রায় ৪৩ কোটি টাকা এখনও পায়নি। এছাড়া ৯ হাজার ৪৮১ জন শ্রমিক তাদের পাওনা প্রায় ৪৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এখনও পায়নি। শ্রমিকদের অর্ধেক টাকা নগদ এবং অর্ধেক টাকা সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিল বিজেএমসি। এছাড়া এ ৭টি পাটকলের ২১ হাজার ৩৫১ জন বদলি শ্রমিকের পাওনার পরিমাণ ১১৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কিন্তু বদলি শ্রমিকদের কেউ এখনও কোনো টাকা পায়নি। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত খালিশপুর জুট মিলের ৪ হাজার ৪৭৪ জন ও দৌলতপুর জুট মিলের ৩৫০ জন শ্রমিক দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতেন। মিল বন্ধ হওয়ার কারণে তারাও কোনো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না।

শ্রমিক অধিকার: সবচেয়ে খারাপ ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

৫ জুলাই , ২০২১, মানবজমিন

শ্রমিকের অধিকার বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছে বৈশ্বিক শ্রম অধিকার বিষয়ক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি)। সম্প্রতি প্রকাশিত অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাভিত্তিক সংগঠনটির বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে এ তালিকায় রাখা হয়েছে।

‘আইটিইউসি গ্লোবাল রাইটস ইনডেক্স ২০২১’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বিশ্বের মোট ১৪৯ টি দেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ছাড়া শীর্ষ ১০ খারাপ দেশের তালিকায় রয়েছে বেলারুশ, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, মিসর, হন্ডুরাস, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও জিমাবুয়ে।

বকেয়া বেতন দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ

০২ জুলাই ২১, সমকাল

রূপগঞ্জে এক মাসের বকেয়া বেতন ও চার মাসের ওভারটাইমের দাবিতে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড নামে এক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকরা মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশে ৮ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড কারখানায় জুস, ক্যান্ডি, বিস্কুট, লাচ্ছা সেমাইসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি হয়। এ কারখানাটিতে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গত দুই মাস ধরে ওভারটাইমের টাকা, বকেয়া বেতন ও বেতন বাড়ানোর জন্য কারখানার শ্রমিকরা বেশ কিছুদিন ধরে মালিকপক্ষকে বলে আসছিলেন। শ্রমিকদের ওভারটাইমের টাকা, বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যাপারে মালিকপক্ষ টালবাহানা করে আসছিল। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ না করে ওভারটাইমের টাকা, এক মাসের বকেয়া বেতন ও বেতন বাড়ানোর দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। খবর পেয়ে কাঁচপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

রূপগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৫২

নিচের সিঁড়িতে আগুন জ্বলছিল, ছাদের সিঁড়ি ছিল তালাবদ্ধ

৯ জুলাই, ২০২১, কালেরকন্ঠ অনলাইন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কারখানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫২ জনের লাশ। এর মধ্যে কারখানার চতুর্থ তলা থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে ৪৯টি মরদেহ।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, চতুর্থ তলাটি ছিল তালাবদ্ধ। যে কারণে সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। আগুনে কেড়ে নিয়েছে তাদের প্রাণ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর আগুন লাগে রূপগঞ্জের ওই কারখানায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে শুক্রবার সকাল থেকেই কারখানাটিতে তল্লাশি চালাতে থাকে ফায়ার সার্ভিস। আর এ সময় চতুর্থ তলা থেকে ৪৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাস্থলে কর্মরত ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছয় তলা কারখানাটির ছাদে ওঠার জন্য দুইটি সিঁড়ি রয়েছে। চতুর্থ তলা থেকে ছাদে যাওয়ার যে সিঁড়িটি, সেটি ছিল তালাবন্ধ ছিল। চতুর্থ তলা থেকে নামার সিঁড়ি খোলা থাকলেও নিচের ভয়াবহ আগুনের কারণে সেই সিঁড়ি দিয়ে নামার কোনো সুযোগ ছিল না। ওই সিঁড়ি দিয়ে নামার অর্থ আগুনে ঝাঁপ দেওয়া।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, এ অবস্থায় শ্রমিকরা নিচে নামতে পারেননি। অন্যদিকে ওপরে ওঠার সিঁড়ি তালাবন্ধ থাকায় শ্রমিকরা ছাদেও যেতে পারেননি। আগুনের লেলিহান শিখার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে তাদের। ছাদে ওঠার সিঁড়িটা খোলা থাকলে হয়তো তারা ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারতেন। সেক্ষেত্রে ছাদ থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়তো সম্ভব হতো।

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশিষ বর্ধন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গাড়িতে মই লাগিয়ে কিন্তু ছাদ থেকে ২৫ জনকে উদ্ধার করেছি। অন্য শ্রমিকরাও ছাদে ওঠার সুযোগ পেলে আমরা তাদের ছাদ থেকে নামিয়ে আনতে পারতাম। কিন্তু চতুর্থ তলার শ্রমিকেরা সেই সুযোগটিই পাননি।

সব তলার কলাপসিবল গেটে তালা থাকায় বেড়েছে মৃত্যু

০৯ জুলাই ২০২১, সমকাল

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সজীব গ্রুপের সেজান জুসের ছয়তলা ভবনটির পেছনে সিঁড়ি থাকলেও প্রতিটি তলার সিঁড়ির সামনে কলাপসিবল গেটে নেট দিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগানো ছিল। এ জন্য নিচতলায় আগুনের ঘটনা ঘটলেও শ্রমিকরা কোনও তলা থেকে বের হতে পারেননি। পঞ্চম ও ষষ্ঠতলার তালা ভেঙে ২৫ শ্রমিক ছাদে উঠতে পারলেও দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার শ্রমিকরা আর বের হতে পারেননি। এ কারণে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এছাড়া কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল নাজুক।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটির ছাদে ওঠার আগে সিঁড়ি নেট দিয়ে বন্ধ ছিল। নেট থাকায় ছাদে উঠতে পারেনি শ্রমিকরা। এ কারণে আগুনে মৃত্যু বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

তালাবদ্ধ কারখানায় পুড়ে অঙ্গার

রূপগঞ্জে প্রাণ গেল ৫২ জনের

১০ জুলাই ২১, সমকাল

.. …হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনে অন্তত ৫২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হন অর্ধশতাধিক। গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ভবনটির প্রথম থেকে ষষ্ঠতলা পর্যন্ত তল্লাশি করে ৪৯ জনের মরদেহ পান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। উদ্ধার অধিকাংশের লাশ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। নারী-পুরুষের পার্থক্যও বোঝা যাচ্ছে না। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগার পরপরই প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে পড়ে তিন শ্রমিক নিহত হন। তখনও বোঝা যায়নি লাশের সারি এত দীর্ঘ হবে।… ….

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন ঘটনাস্থলে সমকালকে বলেন, ছয়তলা ভবনের ছাদে ওঠার জন্য দুটি সিঁড়ি রয়েছে, যার একটির ছাদের দরজা বন্ধ ছিল। অন্য সিঁড়ি দিয়ে ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন কিছু কর্মী। সেখান থেকে ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরাও যদি ছাদে উঠতে পারতেন, তাদেরও বাঁচানো যেত। চতুর্থ তলা থেকে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি তালাবদ্ধ ছিল। আর নিচের দিকে সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে ছিল আগুন। তারা নিচে নামতে পারেননি, আবার সিঁড়ির দরজায় তালা থাকায় ছাদেও উঠতে পারেননি।

সব লাশ পড়ে ছিল এক কক্ষে

১১ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

হঠাৎ আগুন লাগলে তাৎক্ষণিকভাবে কর্মীদের সতর্ক করতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় কোনো ফায়ার অ্যালার্মের (অগ্নিসংকেত) ব্যবস্থা ছিল না। ছয়তলা বিশাল কারখানা ভবনের কোনো তলাতেই স্মোক ডিটেক্টর (ধোঁয়া শনাক্তের যন্ত্র) রাখা হয়নি। এমনকি কারখানা ভবন থেকে বেরিয়ে আসার জরুরি বহির্গমন পথও (সিঁড়ি) ছিল না।

কারখানার কয়েকজন ব্যবস্থাপক আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর কর্মীদের চতুর্থ তলার উত্তর-পশ্চিম পাশের একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই কক্ষে চকলেট তৈরির কাজ হতো। শুক্রবার দুপুরে সেই কক্ষ থেকেই ৪৯ জন শ্রমিকের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যে ব্যবস্থাপকেরা ওই পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁরাও নিখোঁজ। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরাও মারা গেছেন।

অনিয়মে ভরা ভবন

১১ জুলাই ২১, সমকাল

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের যে ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে, সেটিতে জরুরি নির্গমনের কোনো সিঁড়ি ছিল না। আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি তো ছিলই না, সামান্য অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারও নেই। আগুন লাগলে সংকেত দেওয়ার ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ নেই। ভবনের আয়তন অনুযায়ী সিঁড়ি থাকার কথা অন্তত চারটি। কিন্তু ছিল দুটি; তারও একটি অকার্যকর। তার ওপর ছাদসহ প্রতিটি তলার দরজায় ছিল তালা। আগুন বা কোনো ধরনের দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষার জন্য যা প্রয়োজন, তার কোনো কিছুই ছিল না ভবনটিতে। দুর্ঘটনাস্থল দেখে বিশেষজ্ঞরা বিস্মিত। বলছেন, এমন ঘটনা কল্পনাতীত।

হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হলেন হাসেম ফুডের আহত শ্রমিকেরা

১৪ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত সাত শ্রমিক হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। আজ বুধবার বেলা দুইটার দিকে তাঁরা স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল ছাড়েন। মালিকপক্ষের সহযোগিতা না পাওয়ায় চিকিৎসা শেষ না করে ইচ্ছের বিরুদ্ধেই তাঁদের হাসপাতাল ছাড়তে হয়েছে বলে শ্রমিকেরা অভিযোগ করেছেন। তবে হাসেম ফুড লিমিটেড কর্তৃপক্ষ চিকিৎসায় অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পঙ্গু ভিক্ষুকদের ৮৩% সড়ক দুর্ঘটনার শিকার

১৫ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

দেশে দুর্ঘটনাজনিত কারণে পঙ্গু হয়ে যারা ভিক্ষাবৃত্তি করছেন তাদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৫৩ শতাংশ ভিক্ষুক সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়েছেন। ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ অন্যান্য কারণে পঙ্গু হয়েছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এই তথ্য জানিয়েছে।

সংগঠনটির এক গবেষণা বলছে, পঙ্গু ভিক্ষুকদের ৩২ দশমিক ৬৯ শতাংশ মোটরযানের (বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক্টর, ট্রলি) শ্রমিক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, চান্দের গাড়ি, টমটম, অটোরিকশা, অটোভ্যান, প্যাডেল রিকশা, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি) চালানোর সময় দুর্ঘটনায় পড়েছেন। মোটরসাইকেলের যাত্রী হিসেবে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন ৪২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ পথচারী হিসেবে রাস্তায় চলাচলের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৬৩ জন পঙ্গু ভিক্ষুকের ওপর সাক্ষাৎকার ভিত্তিক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার ১৯টি স্থানসহ ধামরাই, সাভার আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ (আরিচা ও পাটুরিয়া ফেরিঘাট) রাজবাড়ি (গোয়ালন্দ ফেরিঘাট) যশোর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে এই জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয়েছে।

রূপগঞ্জে কারখানায় আগুন: হাসেম ও দুই ছেলের জামিন

১৯ জুলাই,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ওই কারখানার মালিক মো. আবুল হাসেম ও তার দুই ছেলের জামিন হয়েছে।

সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমান তাদের জামিন মঞ্জুর করেন বলে এই আদালতের পিপি মনিরুজ্জামান বুলবুল জানান।

হাসেম ছাড়া জামিনপ্রাপ্ত অপর দুজন হলেন তার ছেলে হাসিব বিনতে হাসেম ও তারেক ইব্রাহিম।

তবে মামলার আরও তিন আসামির জামিন নাকচ করেছে আদালত।

এর আগে হাসেমের আরও দুই ছেলের জামিন হয়েছিল। এই দুজনসহ মোট পাঁচ জনের জামিন হলো।

সব শ্রমিক বেতন-বোনাস পাননি

২০ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

প্রতিবার ঈদেই গুটিকয়েক পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বেতন বা বোনাস পান না। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। ঈদের আগে গতকাল সোমবার শেষ কর্মদিবসেও কয়েকটি কারখানা শ্রমিকের বেতন বা বোনাস দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে করোনার এই দুর্যোগের মধ্যেও কিছু শ্রমিককে নিরানন্দ ঈদ কাটাতে হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক পোশাক কারখানায় গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত বেতন ও ভাতা পরিশোধ করেছে। তবে গাজীপুরের স্টাইলক্রাফট কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। বেশ কিছুদিন ধরেই কারখানাটির শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। অন্যদিকে মিরপুরের ফ্রেবটেক্স নামের একটি কারখানার শ্রমিকেরা বেতন-বোনাস পাননি। কারখানাটির মালিকপক্ষের কোনো খোঁজ না মিলছে না। তাই কারখানাটির শ্রমিকেরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।

আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়টি তদারকি করে শিল্প পুলিশ। তাদের হিসাবে, এই ছয় অঞ্চলে পোশাক ও বস্ত্রসহ মোট কারখানা আছে ৭ হাজার ৮২৪টি। তবে গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত ৪৪৭ কারখানা গত জুন মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। আর বোনাস দেয়নি ৮৫১ কারখানা। তার মানে ৯৪ শতাংশ কারখানা গত মাসের বেতন এবং ৮৯ শতাংশ কারখানা বোনাস পরিশোধ করেছে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও করোনা পরিস্থিতি

টিকার বিকল্প উৎস না রাখা ভুল ছিল

২৯ এপ্রিল ২০২১, প্রথম আলো

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সময়ে জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, মহামারির ইতি টানতে বিশ্বের দরকার নতুন টিকা। নতুন টিকার গবেষণা শুরু হতে বেশি সময় লাগেনি। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, সেরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী, শীর্ষস্থানীয় ওষুধপ্রতিষ্ঠান যুক্ত হয় টিকা উদ্ভাবনে। ইতিহাসের দ্রুততম সময়ে টিকা উদ্ভাবনের খবর আসতে থাকে গণমাধ্যমে। একই সঙ্গে এই বার্তা বিশ্বব্যাপী রটে যায় যে টিকা হবে সোনার হরিণ। প্রয়োজন হলেও সব মানুষ, সব দেশ এই টিকা পাবে না।

সরকারের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ টিকা নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় শুরু থেকে ভুল করেছে। টিকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি বা অনুসরণ করার মতো সক্ষমতা নেই। উদ্ভাবন প্রক্রিয়ার গবেষণায় যুক্ত থাকলে টিকা নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য ঠিক হতো, টিকা প্রাপ্তির সুযোগ বাড়ত। টিকা গবেষণায় যুক্ত হওয়া থেকে বাংলাদেশ নিজেকে শুরু থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। চীন, ভারত এমনকি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত টিকার পরীক্ষার সিদ্ধান্ত মাসের পর মাস আটকে রেখেছে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি খারাপ ঘটনার উদাহরণ হয়ে থাকবে। অন্যদিকে টিকা গবেষণায় যে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ ছিল, তা থেকেও আপাতত বঞ্চিত হয়ে থাকলেন দেশের বিজ্ঞানীরা।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, বাংলাদেশ টিকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কূটনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কোন টিকা কার্যকর, কোন টিকা নিরাপদ, কোন টিকা পর্যাপ্ত—এই তথ্যে নির্ভর না করে বাংলাদেশ বন্ধুর ওপর নির্ভর করতে চেয়েছে। টিকা উৎপাদন নিয়ে, টিকার কাঁচামাল নিয়ে কত ধরনের বাণিজ্য দ্বন্দ্ব হতে পারে, হতে যাচ্ছে তা বুঝেও উঠতে পারেননি কর্মকর্তারা। বিপুল চাহিদার তুলনায় সারা বিশ্বে সরবরাহ সীমিত—এই পরিস্থিতিতে একক উৎসের ওপর নির্ভর করেছে বাংলাদেশ। ভারত থেকে টিকা কেনা এবং কোভ্যাক্স থেকে সংগ্রহ করা—এই ছিল টিকার উৎস। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিকল্প উৎসের কার্যকর সন্ধান করা হয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

করোনার প্রতি টিকায় বেক্সিমকোর মুনাফা ৭৭ টাকা

 ০২ মে ২০২১, প্রথম আলো

ভারত থেকে করোনার টিকা এনে প্রতি টিকায় প্রায় ৭৭ টাকা মুনাফা করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। সব খরচ বাদ দেওয়ার পর টিকাপ্রতি এ মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা বাংলাদেশে আমদানির জন্য চুক্তিবদ্ধ একমাত্র প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা। বাংলাদেশ সরকার, সেরাম ইনস্টিটিউট ও কোম্পানিটির মধ্যে সম্পাদিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় এ টিকা আমদানি করা হচ্ছে।

ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, বেক্সিমকো ফার্মা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ করোনার টিকা আনবে। এ তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ টিকা এনেছে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এ টিকা বেক্সিমকো ফার্মা বাংলাদেশ সরকারকে সরবরাহ করেছে। ছয় মাসের মধ্যে তিন কোটি ডোজ টিকা আনার কথা থাকলেও বর্তমানে ভারত থেকে করোনার টিকা আসা বন্ধ রয়েছে। ভারত সরকার টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় আপাতত দেশে সেরামের কোনো টিকা আসছে না।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মা তাদের চলতি বছরে প্রথম তিন মাস, তথা জানুয়ারি-মার্চ মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।.. …

ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কোম্পানিটি সরকারকে ৫০ লাখ করোনার টিকা সরবরাহ করে ৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। সব খরচ বাদ দেওয়ার পর এ মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। তাতে প্রতি টিকায় মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৬ টাকা ৭৪ পয়সা বা প্রায় ৭৭ টাকা।

দেশে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত

০৮ মে ২১, সমকাল

দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় একটি ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভারতীয় ধরনের চার জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে।

শনিবার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর) এ তথ্য জানিয়েছে

গাড়ির জন্য ছুটছে কিশোর ছেলে, সড়কে বসে অসুস্থ মায়ের কান্না

১২ মে ২০২১, প্রথম আলো

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে মদনপুর মোড় পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারজুড়ে হাজারো ঘরমুখী মানুষের ভিড়। সড়কে পরিবহন–সংকট। এরই মধ্যে চলাচল করা বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। ধাক্কাধাক্কি করে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে কোনো রকমে জায়গা করে নিচ্ছে পরিবহনগুলোতে। যারা ভেতরে জায়গা পাচ্ছে না, তারা ঝুলে থেকে কোনো রকমে গন্তব্যে রওনা হচ্ছে।

এমন সময় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শিমরাইল এলাকায় সড়কের পাশে ফেলে রাখা একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে বসে কাঁদছিলেন আমেনা বেগম (৪৩)। তিনিও ঘরমুখী মানুষের একজন। তবে ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরছেন না, টাকার অভাবে হার্ট আর কিডনি রোগের চিকিৎসা শেষ না করেই হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে যাচ্ছেন চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে। সঙ্গে একমাত্র ছেলে জাহিদুল ইসলাম (১৭)।

সকাল ৯টা থেকে এদিক–সেদিক ছোটাছুটি করে মায়ের জন্য একটি পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারেনি কিশোর জাহিদ। বৈশাখের উত্তাপ মাথায় অসুস্থ শরীর নিয়ে সড়কে বসে আছেন মা, ব্যস্ত সড়কে ছোটাছুটি করছে কিশোর ছেলে। মাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার একটা ব্যবস্থা যদি হয়।… ….

বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জাহিদ ও আমেনার মতো হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে স্বাভাবিকের চেয়ে ছয় থেকে সাত গুণ ভাড়ায় ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাসে গন্তব্যে রওনা হয়েছে। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে রওনা হয়েছে মালবাহী লরি ও কাভার্ড ভ্যানে। জনপ্রতি দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেলগুলোতে অনেকেই গন্তব্যে রওনা হয়েছে।

অন্যান্য দিনের তুলনায় বুধবার যাত্রীর চাপ বেশি ছিল। সে তুলনায় পরিবহন ছিল হাতেগোনা। চট্টগ্রাম ও সিলেট সড়কে চলা বাসগুলো এলাকা ভেদে জনপ্রতি ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ এবং মাইক্রোবাসগুলো ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া নিয়েছে।

ফেরার পথেও দুর্ভোগের শেষ নেই

১৭ মে ২১, সমকাল

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যেভাবে মানুষ ঢাকা ছেড়েছিল, ছুটি শেষ হতে না হতে একইভাবে রাজধানীমুখী তারা। গ্রামে যাওয়া মানুষ ঈদ উদযাপনের প্রশান্তি নিয়ে রাজধানীমুখী এখন। শত যন্ত্রণা ও ভোগান্তি সহ্য করে তারা ফিরে আসছে রাজধানীতে নিজেদের কর্মস্থলে থিতু হতে।

গতকাল রোববার ফেরিঘাট ও মহাসড়কে ছিল রাজধানীমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের চিত্র ছিল হতাশাজনক। দূরপাল্লার বাস বন্ধ। যাত্রীরা তাই ফিরছে ভেঙে ভেঙে; এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়ে কয়েক দফা যানবাহন পরিবর্তন করে।

গতকাল মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় ছিল উপচেপড়া। গাদাগাদি করে সবাই ফেরিতে উঠেছে। একই চিত্র ছিল পাবনার কাজীরহাট ফেরিঘাটে। এসব ঘাট থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ-স্পিডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে ট্রলার, ছোট লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করেছে।

কোয়ারেন্টিনে ধর্ষণের শিকার তরুণীর আত্মহত্যার চেষ্টা

১৯ মে ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন

খুলনা পিটিআই কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ধর্ষণের শিকার ভারতফেরত সেই তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে (১৮ মে) তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করলে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকা অন্যান্য নারী এবং নারী পুলিশ সদস্যরা তাকে রক্ষা করেন। খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ডাক্তারি পরীক্ষার পর মঙ্গলবার বিকালে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি থেকে ওই তরুণীকে খুলনা পিটিআই কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই তরুণী সেখান থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানালে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ না হওয়ায় কেউ তাতে রাজি হননি। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

দেশে ভারতীয় ধরনের সামাজিক সংক্রমণ

৩০ মে ২০২১, প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের সামাজিক সংক্রমণ ঘটে গেছে। সীমান্তের একটি জেলায় সামাজিক সংক্রমণ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

গতকাল শনিবার আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এমন কিছু মানুষ নতুন স্ট্রেইনে (ভারতীয় ধরন) আক্রান্ত হয়েছেন, যাঁদের ভারত ভ্রমণের ইতিহাস নেই। এটা নতুন স্ট্রেইনের সামাজিক সংক্রমণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণের খবর এমন সময় প্রকাশ পেল, যখন ভারতের সীমান্তের বেশ কয়েকটি জেলায় সংক্রমণ বাড়তির দিকে জানিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ খবর দিচ্ছে। একই সঙ্গে সারা দেশে গত এক সপ্তাহে শনাক্ত হওয়া রোগী বেড়েছে ২২ শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক পরামর্শক মুজাহেরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে দিতে পারেনি বলে সামাজিক সংক্রমণ ঘটে গেছে। তারা প্রায় দেড় বছর সময়ে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ে (আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা) সক্ষমতা বাড়াতে পারেনি। মানুষজনকে তারা উদ্বুদ্ধও করতে পারেনি। তাই পরিস্থিতি আবারও খারাপ দিকে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়ছে রোগী, অক্সিজেনের সংকটও

৩০ মে ২০২১, প্রথম আলো

ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে হাসপাতালের শয্যা ও অক্সিজেনের সংকট।

অক্সিজেন প্রয়োজন এমন অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পেয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। আবার অনেকে চলে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নাটোর সদর হাসপাতালে।

দেশে করোনার নতুন হটস্পট হয়ে ওঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে। জেলা সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী রোববার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের জেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৬০০–এর মতো শনাক্ত হয়েছে গত ঈদের পর থেকে। ঈদের আগে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৪ শতাংশ, সেখানে কয়েক দিনের মধ্যে বাড়তে বাড়তে ২৬ মে ৫৫ শতাংশ এবং তারপর ৬২ শতাংশে উঠেছিল। তবে পরে একটু কমেছে। 

কোন পর্যায়ে বঙ্গভ্যাক্সের অনুমোদন

৩ জুন, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন

চার মাসের বেশি সময় আগে আবেদন করলেও এখনো সরকারের কাছ থেকে করোনার টিকা বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পায়নি দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড।

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ওষুধ কোম্পানিটি এক চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) কাছে দেশে উৎপাদিত টিকাটি মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানায়।

তবে, কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাননি তারা। ট্রায়ালের অনুমোদন পেলে তারা এতদিনে টিকা উৎপাদন শুরুর কাছাকাছি পর্যায়ে চলে যেতে পারতেন।

করোনার টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

গ্লোব বায়োটেকের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশনসের প্রধান ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কেন এমন দেরি হচ্ছে আমরা তা জানি না। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিএমআরসি আমাদের কাছে কিছু ডকুমেন্ট চায়। ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা এগুলো জমা দিই। কিন্তু, এরপর থেকে আর কোনো অগ্রগতি নেই।’

সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ভারতীয় ধরন, অজানা একটি ধরনও শনাক্ত

০৪ জুন ২০২১, প্রথম আলো

দেশে সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে (ধরন) বলে সরকারের একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে। ভারতীয় ধরন হিসেবে পরিচিত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রমাণও পাওয়া গেছে ওই গবেষণায়। পাশাপাশি দেশে অজানা একটি ভ্যারিয়েন্টও শনাক্ত হয়েছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডিএসএইচআই) করোনভাইরাসের ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছে। সেখান থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

করোনা মোকাবিলায় সরকারি ব্যয়ে দুর্নীতি চলছেই: টিআইবি

০৮ জুন ২১, সমকাল

বিভিন্ন হাসপাতালের কোভিড মোকাবিলায় বরাদ্দ ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। করোনা মহামারির গত চার মাসে ৫টি হাসপাতালের ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগ ও কোয়ারেন্টাইন বাবদ ৫ কোটি টাকার দুর্নীতি তথ্য মিলেছে। মঙ্গলবার ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সভাপতি হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন। সংস্থাটির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে।

টিআইবির গবেষণা বলছে, বিভিন্ন হাসপাতালের কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বরাদ্দ ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত: ৫টি হাসপাতালে ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগ ও কোয়ারেন্টাইন বাবদ ৬২ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ৫ কোটি টাকা দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। যার মধ্যে রয়েছে, ক্রয় বিধি লঙ্ঘন করে এক লাখ কিট ক্রয়; দর প্রস্তাব মূল্যায়ন, আনুষ্ঠানিক দর-কষাকষি, কার্য সম্পাদন চুক্তি, কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘন ও অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে ক্রয়াদেশ দেওয়া।

কোভিড-১৯ টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় বিধি অনুসরণ করা হয়নি বলে মনে টিআইবি। কারণ হিসেবে টিআইবির ব্যাখ্যায় বলা হয়, টিকা ক্রয় পরিকল্পনা ও চুক্তি সম্পাদন নোটিশ সিপিটিউ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি এবং একটি উৎস থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে দর-কষাকষির নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা, নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় প্রণোদনা বিতরণে যথাযথ উদ্যোগের ঘাটতিসহ সমন্বয়হীনতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমেও সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশকে ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। আইনের লঙ্ঘন করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টিকা আমদানির মাধ্যমে জনগণের টাকা হতে তৃতীয় পক্ষের লাভবান হওয়া সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কৌশলগত ঘাটতি, ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রভাব ও রাজনৈতিক বিবেচনায় টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে একক উৎসের ওপর নির্ভর করার কারণে চলমান টিকা কার্যক্রমে আকস্মিক স্থবিরতা নেমে এসেছে।

হাসপাতালে ঠাঁই নেই

১০ জুন ২১, সমকাল

ঢাকার বাইরে জেলায় জেলায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার। কোনো কোনো জেলায় শনাক্তের হার রীতিমতো অশনিসংকেত দিচ্ছে। হাসপাতালে হাসপাতালে করোনা রোগীতে ঠাঁই নেই অবস্থা। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা পাতা হয়েছে। রোগীর চাপে শয্যা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পরও সংকট থাকছেই।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত ২৩২ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিল ২৭৭ জন। যাদের অবস্থা বেশি খারাপ, তাদের রাখা হয়েছে আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের তালিকায়। তুলনামূলক যারা ভালো, তাদের বারান্দায় বেড দিয়ে রাখা হয়েছে সিলিন্ডার অক্সিজেনে। রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গতকাল দুপুরে চালু করেছে এক নম্বর ওয়ার্ডের ৩৬টি নতুন বেড। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালেও দুই দফা শয্যা বাড়ানো হয়েছে, তার পরও রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে মৃত্যু অতীতের সব সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এক দিনেই মারা গেছেন ৯ জন। এখানে ১০০ শয্যার বিপরীতে রোগী ছিলেন ১৩০ জন। সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও চারজন মারা গেছেন। বাগেরহাটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬৮ জনের। এই সময়ে মারা গেছেন চারজন। সংক্রমণের হার ৪৪ শতাংশ। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে এক দিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনাকালে ১৫ মাসে ১৫১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা!

১২ জুন, ২০২১, কালের কণ্ঠ

… … দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ১৫ মাসে অন্তত ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ৭৩ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী, ২৭ জন কলেজ শিক্ষার্থী ও ২৯ জন মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের বেশির ভাগের বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। গত বছরের ১৮ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকে গত ৪ জুন পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে আগামী দিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও আর ফেরা হবে না তাদের।… ….

তরুণদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন। সংগঠনটির দাবি করোনাকালে আত্মহত্যার প্রবণতা প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। মোট আত্মহত্যার মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী এবং ৪৩ শতাংশ পুরুষ।

গোদাগাড়ীতে এত নতুন কবর

১৮ জুন ২০২১, প্রথম আলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী কবরস্থানে এত নতুন কবর, দেখলে মনে হতে পারে গণকবর। তত্ত্বাবধায়কের ভাষায়, ১৮ বছরের চাকরিজীবনে তিনি এত নতুন কবর দেখেননি। এর দেড় কিলোমিটার দূরে গোদাগাড়ী কেন্দ্রীয় কবরস্থান। সেখানেও নতুন কবরের একই চিত্র।

মহিশালবাড়ী কবরস্থানে দেড় মাসে কবর হয়েছে ৪০টি। আর অন্যটিতে এক মাসেই হয়েছে ৩৮টি। কবরস্থান কমিটির ভাষ্য অনুযায়ী, ৪০ জনের মধ্যে ২১ জন আর ৩৮ জনের মধ্যে ২৪ জনই করোনা বা করোনা উপসর্গে মারা গেছেন। বেশির ভাগ আক্রান্ত মানুষকেই হাসপাতালে নেওয়ার সময় পাওয়া যায়নি। আবার হাসপাতালে মারা গেলেও মৃত্যুর পরে করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। তাই সরকারি তালিকায় এঁদের নাম ওঠেনি। এদিকে করোনায় মৃত্যু হয়েছে জানাজানি হলে জানাজায় লোকজন হবে না বা বাসায় মানুষ আসবে না—এই ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। সরকারি হিসাবে গোদাগাড়ীতে এ পর্যন্ত ১৫ জনের করোনায় মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার আয়তন ৪৭২ দশমিক ১৩ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ১৪ দশমিক ২৭ বর্গকিলোমিটার নিয়ে পৌসরভা। পৌরসভার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পৌর এলাকার জনসংখ্যা ৪২ হাজার ২৪১ জন। শুধু পৌর এলাকার মানুষ মারা গেলেই এ দুটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। ১ থেকে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ধেক এলাকার মানুষের জন্য মহিশালবাড়ী কবরস্থান। বাকি এলাকার জন্য গোদাগাড়ী কেন্দ্রীয় কবরস্থান।

কোভিড: এখনও অর্ধেকের বেশি জেলায় নেই আইসিইউ

১৯ জুন ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

.. .. কোভিড মহামারীর মধ্যে এক বছর কেটে গেলেও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলো কোভিড চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠেনি। জেলার হাসপাতালগুলোতে ‘পর্যাপ্ত’ শয্যার ব্যবস্থা করার কথা বলা হলেও আইসিইউ সুবিধা খুবই অপ্রতুল।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৭টিতেই কোভিড চিকিৎসার জন্য আইসিইউ নেই। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৫টি, চট্টগ্রামের ৮টি, রংপুরের ৬টি, সিলেটের ২টি, বরিশালের ৪টি, খুলনার ৪টি, রাজশাহীর ৬টি ও ময়মনসিংহের ২টি জেলা রয়েছে। সারা দেশে মোট আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ২৪২০টি। এর মধ্যে ১২১৮টি ঢাকা মহানগরে এবং ৫৯টি চট্টগ্রাম মহানগরে। বাকি ১১৪৩টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে ২৫টি জেলায়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদে বিভিন্ন জেলায় ‘হাই ফ্লো নেইজল ক্যানুলা’ সম্বলিত আইসিইউ সমতুল্য শয্যা আছে ১৬০৩টি।  ১১টি জেলায় সেরকম শয্যাও নেই।

করোনার হটস্পট রাজশাহী মেডিকেল

১৯ জুন, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) করোনা ওয়ার্ডের দৃশ্য। ছবি: আনোয়ার আলী/স্টার

করোনার পাশাপাশি অন্যান্য রোগীদের একই ছাদের নিচে চিকিৎসার দ্বৈত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন করোনা সংক্রমণের অন্যতম হটস্পটে পরিণত হয়েছে।

হাসপাতালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত গত ১১ দিনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কমপক্ষে ২৫১ জন রোগীকে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে করোনা ইউনিটে স্থানান্তরিত করেছে।

এই রোগীদের অন্যান্য রোগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে, হাসপাতালে আসার পরে তারা করোনায় সংক্রমিত হয়ে পড়েন। এ কারণে তাদের করোনা ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। করোনা ইউনিটে কোভিড-১৯-এর সন্দেহভাজনদেরও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১১ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৩ জন রোগীকে করোনা ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয় এবং বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ৩৮ জনকে স্থানান্তরিত করা হয়।

এবার ঢাকার বাইরে মৃত্যু দ্রুত বাড়ছে

২১ জুন ২০২১, প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশে আবারও মৃত্যু বাড়ছে। এর চেয়েও আশঙ্কার কথা হচ্ছে, প্রায় দেড় বছরের মধ্যে এখনই মৃত্যু দ্রুত বাড়ছে এবং ঢাকার বাইরে মৃত্যু বৃদ্ধির হারও বেশি। বিশেষ করে খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৩৫ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে খুলনা বিভাগে। একই সময়ে রাজশাহী বিভাগে মৃত্যু বৃদ্ধির হার ৬৭ শতাংশ, যা ঢাকা বা চট্টগ্রামের তুলনায় অনেক বেশি।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, ঢাকা বা চট্টগ্রামের তুলনায় দেশের অন্যান্য বিভাগে স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা পর্যাপ্ত নয়। করোনায় আক্রান্ত রোগীর অবস্থা জটিল হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে কতটা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

রাজশাহীতে দরিদ্রদের মধ্যে করোনা বাড়ছে

২১ জুন ২০২১, প্রথম আলো

আইসিইউতে আছেন সেলিনা খাতুন (৩৫)। তাঁর বোন বলছেন, এই চিকিৎসার খরচ বহন করার সামর্থ্য তাঁদের আর নেই। চিকিৎসককে পীড়াপীড়ি করছেন, তাঁদের ছুটি দিয়ে দিতে। রোগী নিয়ে বাড়ি চলে যেতে চান তাঁরা। চিকিৎসক বললেন, রোগীর মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে নিলেই তিনি মারা যাবেন। কে খুলবেন সেই মাস্ক? সেলিনার ছেলে সাব্বিরকে মায়ের মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে নিতে বলা হয়। কাঁদতে কাঁদতে ছেলে বলেন, ‘আমি মায়ের মুখের মাস্ক খুলতে পারব না।’ শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেলিনার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। চার দিন ধরে এভাবেই সেলিনার চিকিৎসা চলছে।… …

সেলিনার মতো দরিদ্র অনেক করোনা রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওষুধপত্রসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কিনে দিনের পর দিন চিকিৎসা চালানোর সামর্থ্য এসব পরিবারের নেই। অথচ করোনার শুরুর দিকে গ্রামের মানুষকে বলতে শোনা গেছে, এটা ধনীদের অসুখ। যাঁরা এসিতে থাকেন, তাঁদের অসুখ। তাঁরা মাস্ক পরে থাকুন। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারটি তাই আমলে নেননি তেমন। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা ধনী–গরিব মানে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে যা কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রোগী গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র মানুষ।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, জুন মাসের শুরু থেকে তাঁরা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ গ্রামের সাধারণ রোগী আইসিইউতে পাচ্ছেন; যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হবেন, এমনটা ভাবতেও পারেননি। তিনি বলেন, আইসিইউ ফ্রি। কিন্তু করোনায় শরীর প্রচণ্ড দুর্বল করে দিয়ে যায়, সে সময় অতিরিক্ত পুষ্টির দরকার। অক্সিজেন থাকার কারণে মুখে খেতে পারে না। তখন দামি স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হয়। কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। কিছু পরীক্ষাও হাসপাতালে হয়। তবে দামি পরীক্ষাগুলো বাইরে করাতে হয়। এই খরচ জোগাড় করতেই দরিদ্র রোগীদের স্বজনেরা হিমশিম খাচ্ছেন।

প্রতি হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে বেড একটিরও কম

২১ জুন ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন

দেশের প্রতি হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে গড়ে একটিরও কম শয্যা রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য শয্যা সংখ্যা প্রায় ০.৩২টি। বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য শয্যা সংখ্যা প্রায় ০.৬৪টি। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা রয়েছে মাত্র ০.৯৬টি।

সোমবার (২১ জুন) দুপুরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ‘বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান জরিপ ২০১৯’ এর ফলাফলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপটির প্রকল্প পরিচালক আবদুল খালেক সাংবাদিকদের সামনে জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবার নাজুক পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে বিবিএসের এই জরিপ প্রতিবেদনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতি ১ হাজার মানুষের বিপরীতে সাড়ে ৩টি শয্যা থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা অনেক কম।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি একজন চিকিৎসকের (ডেন্টাল সার্জন বাদে) বিপরীতে মাত্র ০.৮৫ জন নার্স রয়েছেন। ডেন্টাল সার্জনদের অন্তর্ভুক্ত করলে প্রতি একজন চিকিৎসকের বিপরীতে নার্সের সংখ্যা দাঁড়ায় ০.৮৩ জন। প্রতি ৩.৪৭টি শয্যার জন্য একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকায় ৭১ ও চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি

২২ জুন ২০২১, প্রথম আলো

রাজধানী ঢাকায় ৭১ শতাংশ ও চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এ তথ্য জানিয়েছে। আইসিডিডিআরবি এক গবেষণার পর এ তথ্য জানাল। ৩ হাজার ২২০ জনের মধ্যে পাঁচ মাসের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার আইসিডিডিআরবি এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

টিকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রবাসীরা

২৩ জুন ২১, সমকাল

করোনার টিকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন চট্টগ্রামের প্রবাসী শ্রমিকরা। টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিতের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার নগরীর আগ্রাবাদে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন তারা। পরে তিন দফা দাবিতে কার্যালয়ের কর্মকর্তার হাতে স্মারকলিপি দেন প্রবাসীরা।

দাবিগুলো হলো- সুরক্ষা অ্যাপ চালু করে প্রবাসীদের নিবন্ধনের আওতায় আনা, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে পাসপোর্ট ও বৈধ ভিসার ভিত্তিতে নিবন্ধন এবং জরুরি ভিত্তিতে দুই ডোজ টিকা দেওয়া নিশ্চিত করা।

চলছে মানুষ ভুগে ভুগে

২৫ জুন ২১, সমকাল

রাজধানী ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা যে ব্যর্থ হয়েছে, গাবতলী সেতুর দুই প্রান্তের হাজারো মানুষের ভিড়ই তার সাক্ষী। সেতুতে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও হেঁটে এপাড় থেকে ওপাড় যাচ্ছে ভিড়। সেতু পেরিয়ে প্রাইভেট কার বা পিকআপে চড়ে যে যেভাবে পারছেন গন্তব্যে যাচ্ছেন। দূরদূরান্তের জেলা থেকে একই পন্থায় ঢাকায় আসছেন হাজারো মানুষ।

গতকাল বৃহস্পতিবার গাবতলী সেতু এলাকার দুই পাড়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়। বেলা দেড়টার দিকে সেতু পেরিয়ে দেখা গেল, যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি প্রাইভেট কার। হাঁকডাক করে হেমায়েতপুরের যাত্রী খুঁজছেন চালক আজিজুল ইসলাম। যাত্রীপ্রতি ১০০ টাকা নিচ্ছেন মাত্র আট কিলোমিটার পথের জন্য। গাড়ির পেছনের সিটে চারজন এবং সামনে একজন করে যাত্রী তুলছেন। কয়েক গজ সামনেই যাত্রীর অপেক্ষায় ছিল নীল রঙের একটি পিকআপ। জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়ায় নবীনগরের যাত্রী তুলছে। মোটরসাইকেলগুলো জনপ্রতি ২৫০ টাকা ভাড়ায় নবীনগর, আশুলিয়ার যাত্রী খুঁজছে। স্বাভাবিক সময়ে এ পথে বাস ভাড়া ৪০ টাকা। বিভিন্ন জেলা থেকে বাসে চন্দ্রা, গোড়াই, পাটুরিয়ায় পর্যন্ত এসে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় আসছে মানুষ। আগের দু’দিন কড়াকড়ি থাকলেও এখন পুলিশের বাধা ছাড়াই আসছেন তারা। যাত্রীরা বলছেন, ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টায় জন চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়নি। শুধু শুধু তাদের ভুগতে হচ্ছে যান সংকট ও উচ্চ ভাড়ায়।

গণপরিবহন সংকটে কাজে যেতে ভোগান্তি, শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

২৮ জুন ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন

সাভারে গণপরিবহন সংকট ও বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তুলে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সোমবার (২৮ জুন) সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিওকলোনি এলাকায় বিভিন্ন কারখানায় কাজে যাওয়ার জন্য উপস্থিত শ্রমিকরা এই অবরোধ করেন।

স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, প্রতিদিনর মতো সোমবার সকালেও নিজ নিজ কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার জন্য শ্রমিকরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিওকলোনি এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। তবে কারখানায় যাওয়ার সময় পরিবহন সংকটে পড়েন তারা। এছাড়াও অল্প কিছু সংখ্যক যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া বেশি চাওয়া হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ করার জন্য বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় যানজট।

রিলিফ বিতরণে আমলারা, সংসদে এমপিদের ক্ষোভ

২৮ জুন ২১, সমকাল

করোনাকালে সরকারি ত্রাণ বিতরণে রাজনীতিবীদদের এড়িয়ে আমলাদের দায়িত্ব দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘এতে একটা রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব, সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায়।’

সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। … …

সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আজকে দেশে কোনো রাজনীতি নেই। আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ যথার্থ বলেছেন। আওয়ামী লীগের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে, কারণ কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতির নামে এখন পালাগানের অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যার সময় বায়দুল কাদের সাহেবের একদিকে পালা গান, একটু পরেই টেলিভিশনে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব আরেকটা পালা গান।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা ঘরে বসে টেলিভিশনে পালাগানের রাজনীতি দেখি। এই পালাগান চলতেছে দশ বছর। দেশ রাজনীতিশূন্য। কোথাও রাজনীতি নেই। প্রত্যেকটা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন। আর এমপিরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে। তারপর বলে ডিসি সাব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সাথে। এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা।’

খুলনায় শয্যার পর অক্সিজেন–সংকট

২৮ জুন ২০২১, প্রথম আলো

দেশে করোনার নতুন ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে খুলনা। প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের দেরিতে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। তখন তাঁদের চিকিৎসা দেওয়ার আর বেশি সময় হাতে থাকছে না। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে শয্যাসংকটের পাশাপাশি অক্সিজেনের সংকটও দেখা দিচ্ছে। এ সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।

বিভাগীয় শহর খুলনায় এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে তিনটি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। খুলনার আশপাশের জেলাসহ বিভাগের প্রায় সব জেলার রোগীই এসব হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অক্সিজেনের প্রয়োজন, এমন অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পেয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। গতকাল ৩টি হাসপাতালের ৩০০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি ছিলেন ৩১৬ জন।

করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ১৩০ শয্যার মধ্যে ৭৭টি শয্যায় কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে। বাকিগুলোয় সিলিন্ডারে কাজ চলে। অক্সিজেনের সরবরাহ এখনো ঠিক আছে। তবে প্রচুর রোগীর চাপ আছে। ফ্লো মিটার পাওয়া গেছে, আপাতত ওই সংকট নেই। আরও একটা অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালুর অপেক্ষায় আছে। চালু হলে অক্সিজেনের কোনো রকম সংকট হবে না।

খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট প্রকট। ১০০ শয্যার ওই হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি নেই। শয্যা খালি না থাকা ও অক্সিজেন সংকটের কারণে অনেকের ভর্তি নিতে পারছে না গাজী মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।

অক্সিজেন সংকট নিয়ে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মালিক গাজী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের এখানে ভর্তি রোগীদেরই ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে আবার অনেকে ফোন দিচ্ছেন, অথচ অক্সিজেন সংকটের কারণে ভর্তি নিতে পারছেন না তাঁরা। সামনে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকছে। স্পেকট্রা তাঁদের অক্সিজেন সরবরাহ করে। তারা মাঝেমধ্যে অক্সিজেন আনতে অনেকটা দেরি করে ফেলছে। তাঁদের প্রায় ১৫০টি সিলিন্ডার। একটা সময় পর সেগুলোর চাপ কমে আসে। তখন অক্সিজেন পৌঁছাতে দেরি হলে সে সময় অনেক ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা মেডিক্যালে অক্সিজেন সংকটে ৭ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

৩০ জুন ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন

সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংকটে সাত রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় পর এই বিপর্যয়ে তারা মারা যান একাধিক রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে। এদিকে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে সাত জনের মারা যাওয়ার কথা জানা যায়। তারা হলেন– আইসিইউ ইউনিটে করোনা পজিটিভ রোগী কালিগঞ্জের ভাড়াশিমলা এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে আকরাম হোসেন খান (৬৩), সিসিইউ ইউনিটে শহরের ইটাগাছা এলাকার মফিজুল ইসলামের স্ত্রী খাইরুন নেছা (৪০), শহরের কুকরালী আমতলা এলাকার মনিরুজ্জামানের স্ত্রী করোনা আক্রান্ত নাজমা খাতুন, শ্যামনগরের সোনাখালি এলাকার কাশেম গাজীর ছেলে আশরাফ হোসেন, সাধারণ ওয়ার্ডে শ্রীউলা ইউনিয়নের বক্সার গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম পারভেজ (৫৪), কালিগঞ্জের জগন্নাথপুর এলাকার সৈয়দ আলি পাড়ের ছেলে আবু জাফর মো. শফিউল আলম তুহিন, আশাশুনির নৈকাটি এলাকর বেনু গাজির ছেলে আব্দুল হামিদ (৭৫)।

বগুড়ায় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংকট: ১৩ ঘণ্টায় মৃত্যু ৭ সংকটাপন্ন ১০

০২ জুলাই ২১, সমকাল

হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা নামে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহকারী সরঞ্জাম সংকটের কারণে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী উচ্চমাত্রার অক্সিজেন না পাওয়ায় ওই হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অন্তত ১০ জনের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০০ শয্যার ওই হাসপাতালে শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২২৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। যাদের অধিকাংশেরই উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালটিতে বর্তমানে মাত্র দু’টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থাকায় দু’জনের অতিরিক্ত আর কোনো রোগীকে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন (রক্তে ঘনীভুত অক্সিজেনের মাত্রা) ৮৭ এর নিচে তাদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

বগুড়ার ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে ২০২০ সালের মার্চের শেষ দিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়। তখন সেখানে সিলিন্ডার দিয়ে করোনা রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হতো। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়লে একই বছরের জুনের শেষ দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত ৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়। পরবর্তীতে শজিমেক হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩টি (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) আইসিইউসহ ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সেখানেও রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় চলতি বছরের এপ্রিলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা হয়।

অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্রের তথ্যে বড় অসংগতি

০৩ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাত আটটা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় সাতজন করোনা রোগী মারা গেছেন। এসব রোগী তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তাঁদের স্বজনদের অভিযোগ, অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্র হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা–সংকটে এসব রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

বগুড়ায় করোনা রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের ফারাক রয়েছে। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা রয়েছে ১ হাজার ৬৭০টি। তবে গতকাল দেশের আটটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালভিত্তিক হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, বাস্তবে ততগুলো ক্যানুলা নেই।

শুধু হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা নয়, কোনো কোনো হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের সংকটও দেখা দিচ্ছে। গত বুধবার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

নড়াইলে ২০০টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৈনিক করোনাসংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতালভিত্তিক হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সংখ্যা দেওয়া হয়। অধিদপ্তরের হিসাবে, নড়াইল জেলা সদর হাসপাতাল ও করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে ২০০টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা রয়েছে। বাস্তবে হাসপাতালে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা রয়েছে মাত্র দুটি। সেই দুটি যন্ত্রও সচল নয়। ফলে নড়াইল জেলায় জটিল করোনা রোগীদের উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহ করা যায় না।

নড়াইলে ২০০টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা থাকার তথ্য শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শফিক তমাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই সপ্তাহে দুটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা পাওয়া গেছে। ক্যানুলা দুটি জেলা সদর হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে। আর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুস শুকুর প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার দুটি ক্যানুলা পাওয়া গেছে। এখনো তা চালু হয়নি।

নওগাঁ সদর হাসপাতালে সক্রিয় কোনো হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সেখানে তিনটি আছে। নাটোর সদর হাসপাতাল এবং সিরাজগঞ্জের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে কোনো নাজাল ক্যানুলা নেই। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে এই দুই হাসপাতালেই একটি করে আছে।

জয়পুরহাট সদর হাসপাতালে দুটি নাজাল ক্যানুলার কথা বলা হলেও বাস্তবে একটিও নেই। এসব জেলার গুরুতর রোগীরা রাজশাহী বা বগুড়ায় চলে যান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যানুলা আছে ২৪টি। তবে গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৬টি ক্যানুলা থাকার কথা জানিয়েছে।

গত বুধবার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। ওই হাসপাতালের নাজাল ক্যানুলার তথ্যেও গরমিল আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সেখানে ৩৮টি ক্যানুলা সক্রিয় আছে। অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সেখানে সক্রিয় হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা আছে ৩০টি।

৫২% হাসপাতালে আইসিইউ নেই

০৪ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

সাত দিন ধরে দেশে প্রতিদিন করোনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর সাড়ে ৭৭ শতাংশই হয়েছে আইসিইউ সুবিধা কম থাকা সাত বিভাগে। আর সাড়ে ২২ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে।

দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ১০০টি হাসপাতালের মধ্যে ৫২টিতেই আইসিইউ সুবিধা নেই। এর মধ্যে ৩৫টি হাসপাতালই জেলা সদর হাসপাতাল। মোট আইসিইউর প্রায় ৭৫ শতাংশই ঢাকা বিভাগে, ২৫ শতাংশ বাকি সাত বিভাগে। জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা থাকলে মৃত্যু কমানো সম্ভব হতো বলে মনে করেন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকেরা।

গত বছরের ২ জুন একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রতিটি হাসপাতালে ভেন্টিলেটর স্থাপন এবং উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা বাড়াতে বলেন তিনি। এ জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার নির্দেশও দেন। ১৩ মাসেও জেলা পর্যায়ে আইসিইউ ইউনিট তৈরি না হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতি ও পরিকল্পনার ঘাটতিকে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

টেস্টিং সুবিধায় বৈষম্য: ১২৮টি আরটি-পিসিআর মেশিনের ৮৯টি ঢাকায়

৫ জুলাই, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

জনসংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে প্রতি লাখে চার হাজারের একটু বেশি। অথচ, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতি লাখে পরীক্ষা হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি, নেপালে ১১ হাজারের বেশি এবং শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১৯ হাজার। ওয়ার্ল্ডওমিটারস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, লাখপ্রতি করোনার নমুনা পরীক্ষায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৪।

অন্যদিকে, দ্য ডেইলি স্টারের রিপোর্টার জায়মা ইসলামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে টেস্টিং সুবিধার চরম বৈষম্যের বিষয়টি। দেশের মোট ১২৮টি আরটি-পিসিআর মেশিনের মধ্যে ৮৯টি ঢাকায় এবং বাকি সাত বিভাগে আছে মাত্র ৩৯টি।

শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি ১৩ জেলায়

পর্যবেক্ষণের বাইরে ৯৩ শতাংশ সক্রিয় রোগী

৫ জুলাই, ২০২১, বণিক বার্তা

খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার পশ্চিম টুটপাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব জহর আলীর করোনা শনাক্ত হন সাতদিন আগে। এরপর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে ভর্তির জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চেষ্টা চালান ছেলে জাহিদুল। চারদিন ঘুরেও শয্যা সংকটের কারণে বাবাকে ভর্তি করতে পারেননি তিনি। পরে এক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার এনে জহর আলীর চিকিৎসা শুরু হয়।

গত সপ্তাহে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত ১৩০টি সাধারণ শয্যার বিপরীতে আড়াই শতাধিক রোগী ভর্তি ছিলেন। ফলে জহর আলীর মতো অনেকেই ভর্তি হতে না পেরে ফিরে গেছেন। এখনো একই অবস্থা হাসপাতালটির।

বিভাগের উচ্চসংক্রমণের জেলা কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১৯০টি শয্যার বিপরীতে গতকাল আড়াই শতাধিক রোগী ভর্তি ছিলেন। শুধু গতকালই নয়। সপ্তাহজুড়ে জেলার হাসপাতালটিতে শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। জেলাটিতে সর্বশেষ সংক্রমণ শনাক্তের হার ৪১ শতাংশের বেশি।

শুধু খুলনা বা কুষ্টিয়া নয়, দেশের এক-চতুর্থাংশ জেলায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনার জন্য নির্ধারিত শয্যার বিপরীতে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। দেড় মাস ধরে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সংকট দেখা দিয়েছে। শয্যা না পেয়েও ভর্তি হওয়ায় সংকটাপন্ন রোগীদের জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত লোকবলের সংকটও প্রকট হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

যেমন গত শুক্রবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় বগুড়ার করোনা বিশেষায়িত সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সাতজন কভিড পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ হাসপাতালটিতে নির্ধারিত ২০০ শয্যার বিপরীতে ২৫০-এর বেশি রোগী ভর্তি ছিলেন। সংকটাপন্নদের অনেকেই শয্যা পাননি। হাসপাতালটিতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা হলেও সব শয্যায় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সংযুক্ত করা হয়নি। আইসিইউ ইউনিটেরও সব শয্যায় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা নেই। এর বাইরে ভর্তি আড়াই শতাধিক রোগীকে রি-ব্রিদার মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে। জেলার আরেক করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি। রোগী বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী হারে এ সংকট আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি ১৩১টি হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দেশের ১৩ জেলায় করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার চেয়ে ৩৩ শতাংশ রোগী বেশি ভর্তি হয়েছেন। জেলাগুলো হলো কুমিল্লা, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, খুলনা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, মেহেরপুর ও পিরোজপুর। তবে দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে শয্যার ৪৬ শতাংশ খালি রয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, বিভাগে চিকিৎসা সংকট আরো বাড়তে পারে। শয্যার তুলনায় রোগী বাড়লে জরুরি সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা শয্যার বিপরীতে জরুরি সেবার সুবিধা যুক্ত থাকে। এমন অবস্থায় সংকটাপন্ন রোগী বাড়লে সবাইকে সমান চিকিৎসা দেয়া যায় না। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতাল থেকে কোনো রোগীকেই ফিরিয়ে দেয়া হয় না। যেভাবেই হোক তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। তবে শয্যার তুলনায় রোগী দ্বিগুণ থাকলে জরুরি অক্সিজেনসহ অন্যান্য সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

সংকটের কথা বিবেচনা করে এসব জেলার নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোয় শয্যা সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে তাতেও সংকট মোকাবেলা করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বণিক বার্তাকে বলেন, এ হাসপাতালে ১৩০টি শয্যায় করোনা রোগীদের সংকুলান না হওয়ায় আরো প্রায় ১০০ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। তবে তাতেও চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের সবাইকে শয্যা দেয়া যাবে না বলে মনে করছেন হাসপাতালটির কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা ওইসব হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। তবে শয্যা বাড়ালেই হবে না, লোকবলও বাড়াতে হবে। আমরা চিন্তা করছি, এখন মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ থাকায় এসবের প্রভাষকদের চিকিৎসাসেবায় অন্তর্ভুক্ত করব। শিগগিরই একটা নির্দেশনা আমরা জারি করে দেব। একই সঙ্গে যেসব অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা কিনেছিলাম, তা বিতরণ করা শেষ। আরো কেনার চেষ্টা চলছে।

দেশে বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজার ২০ জন। এর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ সরাসরি চিকিৎসা পাচ্ছেন, যারা মূলত সংকটাপন্ন। বাকি ৯৩ শতাংশ বাড়িতে অবস্থান করছেন। তারা কোথায় ও কীভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তা সরকারি নজরদারিতে নেই। তবে পাঁচ হাজার রোগী সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিরা মূলত বিদেশফেরত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নজরদারির বাইরে থাকা এসব রোগী বাহক হিসেবে কাজ করছেন। যথাযথভাবে আইসোলেশন না মানা, সঠিক চিকিৎসার আওতায় না আসাসহ নানা কারণে তারা সংক্রমণ বাড়াচ্ছেন।

রোগী বাড়ছে, অক্সিজেন নিয়ে শঙ্কা

০৫ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় অক্সিজেনের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। এখন পর্যন্ত অক্সিজেনের সংকট না থাকলেও ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়ে গেছে। আরও রোগী বাড়তে থাকলে অক্সিজেন সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনার জন্য আপত্কালীন একটি জরুরি পরিকল্পনা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

এরই মধ্যে হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা ও বগুড়ায়। অক্সিজেন সরবরাহের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, অক্সিজেনের মজুত থাকলেও তা সরবরাহে দক্ষ ব্যবস্থাপনা জরুরি। বর্তমানে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য ট্যাংকারের অভাব আছে। অধিকাংশ হাসপাতালে সেন্ট্রাল পাইপলাইনে স্বাভাবিক সক্ষমতার চেয়ে এখন বাড়তি অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হলে সময়মতো অক্সিজেন পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ আছে। দক্ষ জনশক্তিরও ঘাটতি আছে।

সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই ১৭ জেলায়

অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, একজন রোগীর মিনিটে ১৫ লিটারের মতো অক্সিজেন দরকার পড়লে তা সিলিন্ডার থেকে সরবরাহ করা যায়। আবার সিলিন্ডার না থাকলে বিকল্প হিসেবে এ চাহিদা পূরণ করতে পারে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। এটি বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে রোগীকে সরবরাহ করে। আর মিনিটে ৩০ লিটারের মতো অক্সিজেন লাগলে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা ব্যবহার করা হয়। এটির জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন পাইপলাইন দরকার হয়। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র চালাতেও দরকার সেন্ট্রাল অক্সিজেন পাইপলাইন।

গত বছর করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলে প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। মাঝে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় কাজের গতিও কমে। বর্তমানে দেশের ১৭টি জেলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই বলে নিশ্চিত করেছেন প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধিরা। এসব এলাকায় প্ল্যান্ট বসানোর কাজ করছে ইউনিসেফ।

ইউনিসেফের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মোট ৩০টি হাসপাতালে প্ল্যান্ট বসানোর কাজ করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে পাঁচটির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এর মধ্যে দুটি চালু হয়েছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি পেলে বাকি তিনটি এ সপ্তাহে চালু হবে। আর ১১টির কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাকি ১৪টির পাইপলাইন বসানোর কাজ হয়েছে। ভারত থেকে ট্যাংক এলেই তা স্থাপনের কাজ শেষ হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের কার্যাদেশ দিতে এক বছর দেরি না করলে অনেক আগেই কাজ শেষ হতো। এখন যেসব এলাকায় রোগী বাড়ছে, সেখানে আগে কাজ শেষ করছেন তাঁরা।

রোগী বাড়ছে, অক্সিজেন নিয়ে শঙ্কা

চাহিদা বাড়ছে হু হু করে

প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে খুলনা বিভাগে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিনে চাহিদা ছিল ৩৫ থেকে ৪০টি সিলিন্ডার। এখন প্রায় ৩৫০টি সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া অক্সিজেন ট্যাংক নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু করোনা রোগীদের জন্য ব্যবহৃত ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র কাজী আবু রাশেদ জানান, ৬ হাজার লিটারের ট্যাংক আছে। এখন প্রতি সপ্তাহে একবার ভরতে হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে দুই মাসে একবার ভরতে হতো।

চুয়াডাঙ্গায় দিনে চাহিদা ছিল ১০০ থেকে ২০০ লিটার অক্সিজেন। এখন এটি দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার লিটারে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কুদরত-ই-খোদা বলেন, দিনে দেড় হাজার লিটারের চাহিদা ছিল। এখন যাচ্ছে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার লিটার।

ফরিদপুরে দেড় হাজার থেকে বেড়ে দিনের চাহিদা এখন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার লিটার।

সর্বোচ্চ সরবরাহ হচ্ছে এখনই

করোনার সংক্রমণের আগে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অক্সিজেনের চাহিদা ছিল দিনে ১০০ থেকে ১২০ টন। ওই সময় আমদানির প্রয়োজন হতো না। দিনে এখন সারা দেশে অক্সিজেনের চাহিদা ২০০ থেকে ২২০ টন। এর আগে গত এপ্রিলের শুরুতে এমন চাহিদা ছিল। ওই সময় ১০০ টন আসত পাশের দেশ ভারত থেকে। বাকিটা দেশেই উৎপাদিত হয়েছে।

২১ এপ্রিলের পর ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। রোগী কমে আসায় সংকট তৈরি হয়নি। এখন রোগী বাড়তে শুরু করায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিল্পে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ রেখে পুরোটাই স্বাস্থ্য খাতে দেওয়া হচ্ছে এখন। কিছু আমদানিও শুরু হয়েছে ভারত থেকে।

দেশে বর্তমানে মূলত তিনটি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য খাতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এর মধ্যে লিন্ডে বাংলাদেশ দিনে ১০০ থেকে ১২০ টন পর্যন্ত সরবরাহ করছে। দেশে তাদের নিজস্ব উৎপাদনক্ষমতা ৯০ টনের মতো। বাকিটা ভারতে তাদের নিজস্ব কারখানা থেকে এনে সরবরাহ করছে। প্রয়োজনে আবুল খায়ের গ্রুপের কাছ থেকেও কিনছে তারা।

স্পেকট্রা অক্সিজেনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সর্বোচ্চ চাহিদার সময় দিনে ৫০ টনের বেশিও সরবরাহ করেছেন তাঁরা। নিজেরা উৎপাদনের পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি ও চট্টগ্রামের দুই শিল্প গ্রুপের কাছ থেকে কিনে সরবরাহ করেন তাঁরা।

দিনে ৪০ টনের মতো অক্সিজেন সরবরাহ করছে ইসলাম অক্সিজেন কোম্পানি। বেসরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করে তারা। ইসলাম অক্সিজেন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাইন বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে। রোগী বাড়লে কী হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।

অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, দেশের প্রথম সারির একটি বেসরকারি হাসপাতালে দিনে গড়ে সাড়ে তিন টন অক্সিজেন লাগে। তাই দেশে উৎপাদন বাড়ানো দরকার। তিনটি প্রতিষ্ঠান চরম চাপের মধ্যে কাজ করছে। কোনো একটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেই ঘাটতি তৈরি হতে পারে।

হাসপাতালে ৫০ শতাংশের বেশি রোগী গ্রামের

৬ জুলাই, ২০২১, দেশ রুপান্তর

গ্রামের মানুষের অসচেতনতার কারণে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারা দেশে হাসপাতালগুলোয় যত করোনার রোগী, তার ৫০ শতাংশের বেশি গ্রাম থেকে আসা। তারা এমন সময়ে আসছেন, যখন পরিস্থিতি খুব জটিল এবং চিকিৎসা দিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না। গ্রামের মানুষের কারণে মৃত্যু বাড়ছে।

অপ্রতুল চিকিৎসাসেবায় করোনা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে খুলনায়

৬ জুলাই, ২০২১, বণিক বার্তা

খুলনা বিভাগে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। শনাক্ত ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে। গতকাল একদিনেই বিভাগটিতে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ছয়দিনে মৃত্যু হয়েছে দুই শতাধিক কভিড রোগীর। নতুন করে ১ হাজার ৪৭০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী হওয়ায় বিভাগটিতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটও। এ দুইয়ে মিলে বিভাগটিতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।.. …

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা বিভাগে উপজেলা পর্যায়ে ১ হাজার ৩২৭টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। তবে এর বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৪৩১ জন। সে হিসাবে ৬৭ দশমিক ৫ ভাগ চিকিৎসকের পদই পূরণ করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় চাইলেও যথাযথ সেবা দিতে পারছে না হাসপাতালগুলো।

সারা দেশের মতো এ বিভাগেও জটিল করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহূত অন্যতম প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ও আইসিইউ শয্যার সংকট রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, খুলনা বিভাগে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা মাত্র ২৬টি।… ….

৩৩৩ সমাচার: ১৯ লাখ ফোন কল, সহায়তা ৫৯ হাজার

৬ জুলাই ৬, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে খাবার ও ত্রাণ সহায়তার জন্য গত ১১ দিনে ১৯ লাখেরও বেশি কল এসেছে জাতীয় তথ্য সেবার ‘৩৩৩’ নম্বরে। এদের মধ্যে ৫৯ হাজার ১৬৪টি পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের সূত্রে এ কথা জানা গেছে।

চলমান বিধিনিষেধে দরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের সহায়তা দিতে জরুরি হটলাইন ‘৩৩৩’ (সরকারি তথ্য ও সেবা) নম্বরটি কাজে লাগাচ্ছে সরকার। এটুআই কর্মসূচির অধীনে চলা এই হটলাইনের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে এসব সহায়তা দিচ্ছে।

এটুআই প্রকল্পের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মিডিয়া আউচরিচ কনসালট্যান্ট আদনান ফয়সল আজ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ২৫ জুন থেকে গতকাল ৫ জুলাই পর্যন্ত ৩৩৩ নম্বরে খাদ্য সহায়তা চেয়ে মোট ১৯ লাখ ৯ হাজার ২১৪টি কল আসে। কল সেন্টারের এজেন্টরা প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪৯ জনকে বাছাই করেন। পরে অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এর মধ্য থেকে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৬০ জন সাহায্যপ্রার্থীর তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কাছে পাঠানো হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘২৫ জুন থেকে গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত ইউএনওদের কাছে পাঠানো তালিকা থেকে মোট ৫৯ হাজার ১৬৪টি পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’

নিয়ম জালে আটকে আছে বুয়েট উদ্ভাবিত অক্সিজেট

৬ জুলাই, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়মের জটিলতা ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহযোগিতার কারণে অনুমোদন পাচ্ছে না করোনাকালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উদ্ভাবিত জীবনরক্ষাকারী যন্ত্র অক্সিজেট।

অক্সিজেট সিপ্যাপ যন্ত্রটি কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগ ছাড়াই সাধারণ ওয়ার্ডে মিনিটে ৬০-৬৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে। একটি সম্পূর্ণ অক্সিজেট ব্যবস্থা স্থাপন করতে খরচ হবে ২০-২৫ হাজার টাকা। যা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। অন্যদিকে একটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সর্বনিম্ন খরচ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।

দুই ধাপে ট্রায়াল চালিয়ে যথেষ্ট সফলতাও পাওয়া গেছে অক্সিজেটের।

অক্সিজেটের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে থাকা বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে ঔষধ প্রশাসনের অধিদপ্তরের সঙ্গে মৌখিকভাবে অক্সিজেট বিষয়ে যোগাযোগ করি। তাদের নিয়ম অনুযায়ী কোনো মেডিকেল যন্ত্রের অনুমোদনের জন্যে ফ্যাক্টরি ব্যবস্থা আছে এরকম উৎপাদনকারী কোম্পানি দ্বারা তা তৈরি হতে হবে বলে জানানো হয়। তারা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি কোনো মেডিকেল যন্ত্রের অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ৪০ জনের মধ্যে ট্রায়াল চালানোর কথা বলে। ৪০ জনের মধ্যে ট্রায়াল চালালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদন দিতে পারবে কি না, এমন প্রশ্ন করলে তারা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে আবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কথা জানায়। পরে ওষুধ প্রশাসনে সঙ্গে আবারও মৌখিকভাবে যোগাযোগ করা হলে তারা আগের সিদ্ধান্তই জানিয়ে দেয়।’

অক্সিজেন ঘাটতি, বাড়ানো যাচ্ছে না আইসিইউ বেড

০৭ জুলাই ২১, সমকাল

সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় আইসিইউ শয্যার সংকট রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করছে অক্সিজেন সরবরাহের অপ্রতুলতা। এখানকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে সীমিত আইসিইউ ব্যবস্থার মধ্যে বিকল্প হতে পারত বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক। কিন্তু অক্সিজেন সরবরাহ কম থাকায় সুযোগ থাকার পরও আইসিইউ শয্যা সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না বলে দাবি সংশ্নিষ্টদের।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে আরেকটি করোনা ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায়। প্রায় তিন কোটি টাকায় নতুন অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের জন্য তিন মাসেও বরাদ্দ পায়নি এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি।

করোনা ওয়ার্ডে জায়গা নেই, গাছতলায় রোগী

০৭ জুলাই ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন

যশোরে প্রতিদিন করোনা রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শয্যা তো দূরের কথা, হাসপাতালের কোথাও রোগী রাখার জায়গা নেই। এ অবস্থায় বারান্দা ছাপিয়ে হাসপাতালের সামনে গাছতলায় ও রাস্তার ধারে ইজিবাইকের মধ্যে রোগীদের অক্সিজেন নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) যশোর জেনারেল হাসপাতালের সামনে দেখা যায়, রিনা খাতুন (৫৫) নামে এক করোনা রোগীকে নিয়ে গাছতলায় বসে আছেন তার স্বজনরা। তাদের বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বারবাগ গ্রামে।.. …

শুধু রিনা খাতুন নয়, তার মতো অনেকে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু জায়গা না থাকায় এমন বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এদিকে রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিকেলে হাসপাতালের বাইরে ইজিবাইকে আরেক রোগীকে অক্সিজেন নিতে দেখা যায়।

গ্রামে গ্রামে জ্বর, মৃত্যু বাড়ছেই

৭ জুলাই ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার একতারপুর গ্রামের সনু বিশ্বাস মারা যান গত ২৮ জুন রাতে। এর পাঁচদিন পর ৩ জুলাই একই উপসর্গ নিয়ে মারা যান তার ভাইয়ের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম এবং মেয়ে রাবেয়া। মৃত্যুর এই মিছিল এখানেই শেষ নয়, পরদিন ৪ জুলাই মারা যান সনুর আরেক ভাই আব্দার হোসেন।

ভারতের সীমান্তবর্তী এই উপজেলার রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রধান নির্বাহী আব্দুর রহমান এসব তথ্য জানিয়ে বললেন, “মারা যাওয়া ওই চারজনেরই সর্দি-জ্বরের মত উপসর্গ ছিল।“

তার ভাষ্যমতে, মহেশপুরের গ্রামগুলোতে ঘরে ঘরে মানুষ জ্বরে ভুগছেন। বাড়িতে বসেই সাধারণ জ্বরের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। শুধু শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন।

তাদের প্রতিষ্ঠানের হিসাবে কোভিডের উপসর্গ নিয়ে মহেশপুরে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবে উপজেলায় কোভিড শনাক্ত হওয়া আরও ১০ জন মারা গেছেন।

আব্দুর রহমান বলেন, “এই এলাকার অনেক মানুষই গত দুই মাসে ভারত থেকে ফিরেছেন। তাদের অনেকের পরীক্ষায় কোভিড ধরাও পড়ে। এরপর থেকে গ্রামগুলোতে জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়।“

ঝিনাইদহে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাতজন মারা গেছেন। এসময় উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও চারজনের। এছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৬ জন। জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বুধবার এসব তথ্য জানান।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের বেশিরভাগই এখন গ্রামের মানুষ।

গ্রেপ্তার হওয়া বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ

০৭ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

বরিশালের আবুল হোসেন ঢাকার নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে ভ্যানগাড়িতে করে চা-বিস্কুট বিক্রি করে সংসার চালিয়ে আসছেন। তবে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে গত বৃহস্পতিবার থেকে দোকানটি বন্ধ রেখেছিলেন। তবে গত সোমবার দিবাগত রাতে আবুল হোসেনের দোকানের মালামাল চুরি হয়। খবর শুনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি দোকানের সামনে আসেন। তখন নিউমার্কেট এলাকা থেকে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। রাতে থানাহাজতে ছিলেন। আজ বুধবার আবুল হোসেনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠায় পুলিশ। ডিএমপি অধ্যাদেশে করা মামলায় ১০০ টাকা জরিমানা দিয়ে আজ বেলা দুইটায় ছাড়া পান তিনি।

ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আবুল হোসেন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘সরকারি বিধিনিষেধ মেনে আমি দোকান বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু আমার দোকানে চুরি হওয়ার খবর শুনে নিউমার্কেটে যাই। আমার মুখে মাস্ক ছিল। কিন্তু পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। এক দিন জেলও খাটলাম। ১০০ টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছি।’

কেবল চা বিক্রেতা আবুল হোসেন নয়, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগে আজ ঢাকার সিএমএম আদালতে ৫৫৫ জনকে হাজির করা হয়। তাঁদের প্রত্যেকে ১০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।……

আজ ঢাকার সিএমএম আদালতে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, কঠোর বিধিনিষেধ না মেনে রাস্তাঘাটে আসা এবং দোকানপাট খোলার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ। জরিমানা দিয়ে হাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর হাজতখানার সামনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ২০ জনের কথা হয়। তাঁদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ।

‘টাকা না দেওয়ায়’ ছেলেকে আটকাল পুলিশ, অক্সিজেন না পেয়ে বাবার মৃত্যু

৮ জুলাই, ২০২১, দেশ রুপান্তর

সাতক্ষীরায় অসুস্থ বৃদ্ধ বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার আনতে যাওয়ার পথে শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে পুলিশ ছেলেকে দু’ঘণ্টা আটকে রাখে। এ সময়ে অক্সিজেনের অভাবে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করে বিভাগীয় তদন্ত করছে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ।

করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ওই বৃদ্ধের নাম মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।

দৈনিক মৃত্যুহারে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ

১৩ জুলাই, ২০২১, ডেইলিস্টার বাংলা অনলাইন

বিগত কয়েক সপ্তাহে দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক মৃত্যুহারের দিক দিয়ে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে চার নম্বরে।

টেস্টিং সুবিধায় বৈষম্য: ১২৮টি আরটি-পিসিআর মেশিনের ৮৯টি ঢাকায়

৫ জুলাই, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

জনসংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে প্রতি লাখে চার হাজারের একটু বেশি। অথচ, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতি লাখে পরীক্ষা হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি, নেপালে ১১ হাজারের বেশি এবং শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১৯ হাজার। ওয়ার্ল্ডওমিটারস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, লাখপ্রতি করোনার নমুনা পরীক্ষায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৪।

অন্যদিকে, দ্য ডেইলি স্টারের রিপোর্টার জায়মা ইসলামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে টেস্টিং সুবিধার চরম বৈষম্যের বিষয়টি। দেশের মোট ১২৮টি আরটি-পিসিআর মেশিনের মধ্যে ৮৯টি ঢাকায় এবং বাকি সাত বিভাগে আছে মাত্র ৩৯টি।

শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি ১৩ জেলায়

পর্যবেক্ষণের বাইরে ৯৩ শতাংশ সক্রিয় রোগী

৫ জুলাই, ২০২১, বণিক বার্তা

খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার পশ্চিম টুটপাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব জহর আলীর করোনা শনাক্ত হন সাতদিন আগে। এরপর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে ভর্তির জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চেষ্টা চালান ছেলে জাহিদুল। চারদিন ঘুরেও শয্যা সংকটের কারণে বাবাকে ভর্তি করতে পারেননি তিনি। পরে এক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার এনে জহর আলীর চিকিৎসা শুরু হয়।

গত সপ্তাহে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত ১৩০টি সাধারণ শয্যার বিপরীতে আড়াই শতাধিক রোগী ভর্তি ছিলেন। ফলে জহর আলীর মতো অনেকেই ভর্তি হতে না পেরে ফিরে গেছেন। এখনো একই অবস্থা হাসপাতালটির।

বিভাগের উচ্চসংক্রমণের জেলা কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১৯০টি শয্যার বিপরীতে গতকাল আড়াই শতাধিক রোগী ভর্তি ছিলেন। শুধু গতকালই নয়। সপ্তাহজুড়ে জেলার হাসপাতালটিতে শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। জেলাটিতে সর্বশেষ সংক্রমণ শনাক্তের হার ৪১ শতাংশের বেশি।

শুধু খুলনা বা কুষ্টিয়া নয়, দেশের এক-চতুর্থাংশ জেলায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনার জন্য নির্ধারিত শয্যার বিপরীতে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। দেড় মাস ধরে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সংকট দেখা দিয়েছে। শয্যা না পেয়েও ভর্তি হওয়ায় সংকটাপন্ন রোগীদের জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত লোকবলের সংকটও প্রকট হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

যেমন গত শুক্রবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় বগুড়ার করোনা বিশেষায়িত সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সাতজন কভিড পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ হাসপাতালটিতে নির্ধারিত ২০০ শয্যার বিপরীতে ২৫০-এর বেশি রোগী ভর্তি ছিলেন। সংকটাপন্নদের অনেকেই শয্যা পাননি। হাসপাতালটিতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা হলেও সব শয্যায় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সংযুক্ত করা হয়নি। আইসিইউ ইউনিটেরও সব শয্যায় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা নেই। এর বাইরে ভর্তি আড়াই শতাধিক রোগীকে রি-ব্রিদার মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে। জেলার আরেক করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি। রোগী বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী হারে এ সংকট আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি ১৩১টি হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দেশের ১৩ জেলায় করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার চেয়ে ৩৩ শতাংশ রোগী বেশি ভর্তি হয়েছেন। জেলাগুলো হলো কুমিল্লা, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, খুলনা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, মেহেরপুর ও পিরোজপুর। তবে দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে শয্যার ৪৬ শতাংশ খালি রয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, বিভাগে চিকিৎসা সংকট আরো বাড়তে পারে। শয্যার তুলনায় রোগী বাড়লে জরুরি সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা শয্যার বিপরীতে জরুরি সেবার সুবিধা যুক্ত থাকে। এমন অবস্থায় সংকটাপন্ন রোগী বাড়লে সবাইকে সমান চিকিৎসা দেয়া যায় না। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতাল থেকে কোনো রোগীকেই ফিরিয়ে দেয়া হয় না। যেভাবেই হোক তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। তবে শয্যার তুলনায় রোগী দ্বিগুণ থাকলে জরুরি অক্সিজেনসহ অন্যান্য সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

সংকটের কথা বিবেচনা করে এসব জেলার নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোয় শয্যা সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে তাতেও সংকট মোকাবেলা করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বণিক বার্তাকে বলেন, এ হাসপাতালে ১৩০টি শয্যায় করোনা রোগীদের সংকুলান না হওয়ায় আরো প্রায় ১০০ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। তবে তাতেও চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের সবাইকে শয্যা দেয়া যাবে না বলে মনে করছেন হাসপাতালটির কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা ওইসব হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। তবে শয্যা বাড়ালেই হবে না, লোকবলও বাড়াতে হবে। আমরা চিন্তা করছি, এখন মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ থাকায় এসবের প্রভাষকদের চিকিৎসাসেবায় অন্তর্ভুক্ত করব। শিগগিরই একটা নির্দেশনা আমরা জারি করে দেব। একই সঙ্গে যেসব অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা কিনেছিলাম, তা বিতরণ করা শেষ। আরো কেনার চেষ্টা চলছে।

দেশে বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজার ২০ জন। এর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ সরাসরি চিকিৎসা পাচ্ছেন, যারা মূলত সংকটাপন্ন। বাকি ৯৩ শতাংশ বাড়িতে অবস্থান করছেন। তারা কোথায় ও কীভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তা সরকারি নজরদারিতে নেই। তবে পাঁচ হাজার রোগী সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিরা মূলত বিদেশফেরত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নজরদারির বাইরে থাকা এসব রোগী বাহক হিসেবে কাজ করছেন। যথাযথভাবে আইসোলেশন না মানা, সঠিক চিকিৎসার আওতায় না আসাসহ নানা কারণে তারা সংক্রমণ বাড়াচ্ছেন।

রোগী বাড়ছে, অক্সিজেন নিয়ে শঙ্কা

০৫ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় অক্সিজেনের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। এখন পর্যন্ত অক্সিজেনের সংকট না থাকলেও ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়ে গেছে। আরও রোগী বাড়তে থাকলে অক্সিজেন সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনার জন্য আপত্কালীন একটি জরুরি পরিকল্পনা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

এরই মধ্যে হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা ও বগুড়ায়। অক্সিজেন সরবরাহের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, অক্সিজেনের মজুত থাকলেও তা সরবরাহে দক্ষ ব্যবস্থাপনা জরুরি। বর্তমানে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য ট্যাংকারের অভাব আছে। অধিকাংশ হাসপাতালে সেন্ট্রাল পাইপলাইনে স্বাভাবিক সক্ষমতার চেয়ে এখন বাড়তি অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হলে সময়মতো অক্সিজেন পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ আছে। দক্ষ জনশক্তিরও ঘাটতি আছে।

সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই ১৭ জেলায়

অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, একজন রোগীর মিনিটে ১৫ লিটারের মতো অক্সিজেন দরকার পড়লে তা সিলিন্ডার থেকে সরবরাহ করা যায়। আবার সিলিন্ডার না থাকলে বিকল্প হিসেবে এ চাহিদা পূরণ করতে পারে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। এটি বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে রোগীকে সরবরাহ করে। আর মিনিটে ৩০ লিটারের মতো অক্সিজেন লাগলে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা ব্যবহার করা হয়। এটির জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন পাইপলাইন দরকার হয়। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র চালাতেও দরকার সেন্ট্রাল অক্সিজেন পাইপলাইন।

গত বছর করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলে প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। মাঝে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় কাজের গতিও কমে। বর্তমানে দেশের ১৭টি জেলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই বলে নিশ্চিত করেছেন প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধিরা। এসব এলাকায় প্ল্যান্ট বসানোর কাজ করছে ইউনিসেফ।

ইউনিসেফের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মোট ৩০টি হাসপাতালে প্ল্যান্ট বসানোর কাজ করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে পাঁচটির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এর মধ্যে দুটি চালু হয়েছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি পেলে বাকি তিনটি এ সপ্তাহে চালু হবে। আর ১১টির কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাকি ১৪টির পাইপলাইন বসানোর কাজ হয়েছে। ভারত থেকে ট্যাংক এলেই তা স্থাপনের কাজ শেষ হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের কার্যাদেশ দিতে এক বছর দেরি না করলে অনেক আগেই কাজ শেষ হতো। এখন যেসব এলাকায় রোগী বাড়ছে, সেখানে আগে কাজ শেষ করছেন তাঁরা।

রোগী বাড়ছে, অক্সিজেন নিয়ে শঙ্কা

চাহিদা বাড়ছে হু হু করে

প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে খুলনা বিভাগে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিনে চাহিদা ছিল ৩৫ থেকে ৪০টি সিলিন্ডার। এখন প্রায় ৩৫০টি সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া অক্সিজেন ট্যাংক নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু করোনা রোগীদের জন্য ব্যবহৃত ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র কাজী আবু রাশেদ জানান, ৬ হাজার লিটারের ট্যাংক আছে। এখন প্রতি সপ্তাহে একবার ভরতে হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে দুই মাসে একবার ভরতে হতো।

চুয়াডাঙ্গায় দিনে চাহিদা ছিল ১০০ থেকে ২০০ লিটার অক্সিজেন। এখন এটি দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার লিটারে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কুদরত-ই-খোদা বলেন, দিনে দেড় হাজার লিটারের চাহিদা ছিল। এখন যাচ্ছে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার লিটার।

ফরিদপুরে দেড় হাজার থেকে বেড়ে দিনের চাহিদা এখন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার লিটার।

সর্বোচ্চ সরবরাহ হচ্ছে এখনই

করোনার সংক্রমণের আগে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অক্সিজেনের চাহিদা ছিল দিনে ১০০ থেকে ১২০ টন। ওই সময় আমদানির প্রয়োজন হতো না। দিনে এখন সারা দেশে অক্সিজেনের চাহিদা ২০০ থেকে ২২০ টন। এর আগে গত এপ্রিলের শুরুতে এমন চাহিদা ছিল। ওই সময় ১০০ টন আসত পাশের দেশ ভারত থেকে। বাকিটা দেশেই উৎপাদিত হয়েছে।

২১ এপ্রিলের পর ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। রোগী কমে আসায় সংকট তৈরি হয়নি। এখন রোগী বাড়তে শুরু করায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিল্পে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ রেখে পুরোটাই স্বাস্থ্য খাতে দেওয়া হচ্ছে এখন। কিছু আমদানিও শুরু হয়েছে ভারত থেকে।

দেশে বর্তমানে মূলত তিনটি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য খাতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এর মধ্যে লিন্ডে বাংলাদেশ দিনে ১০০ থেকে ১২০ টন পর্যন্ত সরবরাহ করছে। দেশে তাদের নিজস্ব উৎপাদনক্ষমতা ৯০ টনের মতো। বাকিটা ভারতে তাদের নিজস্ব কারখানা থেকে এনে সরবরাহ করছে। প্রয়োজনে আবুল খায়ের গ্রুপের কাছ থেকেও কিনছে তারা।

স্পেকট্রা অক্সিজেনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সর্বোচ্চ চাহিদার সময় দিনে ৫০ টনের বেশিও সরবরাহ করেছেন তাঁরা। নিজেরা উৎপাদনের পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি ও চট্টগ্রামের দুই শিল্প গ্রুপের কাছ থেকে কিনে সরবরাহ করেন তাঁরা।

দিনে ৪০ টনের মতো অক্সিজেন সরবরাহ করছে ইসলাম অক্সিজেন কোম্পানি। বেসরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করে তারা। ইসলাম অক্সিজেন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাইন বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে। রোগী বাড়লে কী হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।

অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, দেশের প্রথম সারির একটি বেসরকারি হাসপাতালে দিনে গড়ে সাড়ে তিন টন অক্সিজেন লাগে। তাই দেশে উৎপাদন বাড়ানো দরকার। তিনটি প্রতিষ্ঠান চরম চাপের মধ্যে কাজ করছে। কোনো একটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেই ঘাটতি তৈরি হতে পারে।

আইসিইউর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে মৃত্যু

১৬ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে আটটি। গতকাল বৃহস্পতিবার আইসিইউর জন্য অপেক্ষাধীন ছিলেন ৯৫ জন সংকটাপন্ন রোগী।

এ তালিকা থেকে সাতজনের নাম ও মুঠোফোন নম্বর নিয়ে ফোন করে জানা যায়, অন্তত পাঁচজন আইসিইউর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বিগত তিন–চার দিনের মধ্যে।

মারা যাওয়া ব্যক্তিদের একজন জেলার শ্যামনগর উপজেলার হাফিজা বেগম (৬০)। তাঁর ছেলে ইউনুস আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মা মারা গেছেন। আইসিইউতে একটা শয্যার জন্য কতজনের কাছে গেছি। কিন্তু মায়ের জন্য একটা শয্যা জোগাড় করতে পারিনি।’

চিকিৎসকেরাও মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরাও বলছেন, আইসিইউ বাড়ানো দরকার। সাতক্ষীরা মেডিকেলের আইসিইউর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সাইফুল্লাহ বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দেখা যায়, রোগীর জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ দরকার। তবে শয্যা খালি নেই। রোগী একপর্যায়ে মারা যান। তিনি আরও বলেন, আইসিইউতে শয্যা বাড়ানো দরকার। সঙ্গে দরকার বাড়তি চিকিৎসক।

এ রকম আইসিইউর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অনেক জেলা হাসপাতালেই আইসিইউ সুবিধা নেই। সেখান থেকে সংকটাপন্ন রোগীকে দূরের জেলায় নিতে হচ্ছে। কিন্তু আইসিইউর নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা আছে, সেখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। চিকিৎসকেরা রোগীকে আইসিইউতে নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। স্বজনেরা আইসিইউর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। কাকুতিমিনতি করছেন, কাজ হচ্ছে না। কারণ, শয্যা খালি নেই। তারপর আসছে মৃত্যুর খবর।

সাতক্ষীরা ছাড়াও দেশের ১০টি জেলার হাসপাতালের চিকিৎসাসুবিধা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গতকাল দেখা গেছে, সংকট শুধু আইসিইউতে নয়, অনেক হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। ফলে চালানো যাচ্ছে না হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা। প্রায় সব হাসপাতালেই রয়েছে চিকিৎসক–সংকট। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। রোগীদের অভিযোগ, রাতে তেমন কোনো সেবা পাওয়া যায় না। রাতে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

উপসর্গে মৃত্যুও হঠাৎ বেড়েছে

১৭ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়ায় ষাটোর্ধ্ব জবেদ আলী মোড়লকে ৮ জুলাই রাতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান স্বজনেরা। সেখানেই ১২ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে মোট চার দিন ছিলেন তিনি। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তাঁর করোনার পরীক্ষা করা হয়নি।

জবেদ আলীর মৃত্যুর দুদিন পর করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের মহিউদ্দিন (৬৫)। তিনি মারা যান ১৫ জুলাই সন্ধ্যায়। তাঁর ছেলে মনিরুল ইসলাম বলেন, বাবার করোনা পরীক্ষা হয়নি।

করোনার উপসর্গ নিয়ে জবেদ আলী ও মহিউদ্দিনের মতো সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত সাত দিনে মারা গেছেন ৪৫ জন। এই হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মানস মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে রোগীর বুকের সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, ৩০ শতাংশ ফুসফুস আক্রান্ত। ফুসফুস আক্রান্ত হলে অনেক সময় করোনা পরীক্ষা করা হয় না।

উপসর্গ আছে, কিন্তু পরীক্ষা হয়নি—এমন কোনো রোগী মারা যাওয়ার পর করোনায় মৃতদের সরকারি তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয় কি না, জানতে চাইলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মানস মণ্ডল বলেন, যাঁদের উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের করোনা চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। চিকিৎসা পাওয়াই মূল কথা।

করোনাভাইরাসের (কোভিড–১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া রোগীদের পাশাপাশি দেশে দুই সপ্তাহ ধরে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বাড়ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, করোনা সন্দেহভাজন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ফলাফল আসার আগেই মৃত্যু হচ্ছে।

আবার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসার পর মৃত্যু হলেও কিছু ক্ষেত্রে ওই রোগীর নমুনা সংগ্রহ না করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। বিশেষ করে যেসব রোগী হাসপাতালে আসার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছেন, তাঁদের নমুনা নেওয়া হয় না বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পর কারও করোনা শনাক্ত হলে তা সরকারি হিসাবে দেখানো হয় কি না, সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

প্ল্যান্টে অক্সিজেন সরবরাহ নেই, চিকিৎসা ব্যাহত

১৬ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

জেলার প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল। এখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু প্ল্যান্টের মূল ট্যাংকে তরল অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়নি। সরবরাহ পাইপে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগানো হয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে শ্বাসকষ্টের রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রায় পৌনে চার কোটি টাকার প্ল্যান্টের মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে আসা মুমূর্ষু রোগীদের রংপুর ও বগুড়ায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।

ঢাকার বাইরে হাসপাতালে রোগীর চাপ, আইসিইউ–সংকট

২৫ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় করোনার সংক্রমণ আগে থেকেই বাড়ছিল। এর মধ্যে ঈদুল আজহার ছুটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে গেছে। ফলে জেলায় জেলায় করোনা রোগী আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

উদ্বেগের দিক হলো, জেলা হাসপাতালগুলো নানা সংকটে জর্জরিত। অনেক হাসপাতালেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই। কোনো কোনো হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে, তবে তা খালি পাওয়া দুষ্কর। উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থারও ঘাটতি আছে। কোনো কোনো হাসপাতালে এখন রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসকসহ জনবলের ঘাটতি পূরণের উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় ঢাকার বাইরে সংক্রমণ আরও বাড়লে জেলা হাসপাতালে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদেরা যেমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তেমনি উদ্বিগ্ন মাঠপর্যায়ের চিকিৎসকেরাও।

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে জানি না। এখনই রোগীদের শয্যা দিতে পারছি না।’ তিনি বলেন, এই হাসপাতালে আরও চিকিৎসক দরকার। তিনজন চিকিৎসক এক পালায় ৩০০ রোগীর কীভাবে সেবা দিতে পারেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শের-ই বাংলা মেডিকেলে সাময়িকভাবে চিকিৎসক পাঠানোর পরামর্শ দেন।.. …

বরিশাল ছাড়াও চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, রংপুর ও নরসিংদীর জেলা হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইসিইউ শয্যার সংকট প্রকট। পাশাপাশি কোথাও কোথাও সাধারণ শয্যা পূর্ণ হয়ে গেছে। কোথাও অল্প কিছু শয্যা খালি আছে। চিকিৎসকেরা আগামী কয়েক সপ্তাহের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, জেলা পর্যায়ে মানুষের সংখ্যা এখন আগের তুলনায় বেশি। এবার ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে যাওয়া মানুষেরা বেশির ভাগই ফিরতে পারেননি অথবা ফেরেননি। মোবাইল অপারেটরদের তথ্য ধরে বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা থেকে যাওয়া ৫২ লাখ মানুষ গ্রামে রয়ে গেছেন।

ভারতের চেয়ে দেশে মৃত্যুর হার বেশি

২৬ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর হার বাড়ছে। এখন মৃত্যুর হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়। প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনায় দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত মার্চ থেকে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এর আগে ১ মার্চ পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। মার্চের পর মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে।

এখন পর্যন্ত করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভারতে। মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বৈশ্বিক তালিকায় ভারতের অবস্থান তৃতীয়। দেশটিতে চার লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। দক্ষিণ এশিয়ায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। মৃত্যুর হারের দিক থেকে এই অঞ্চলে তৃতীয় বাংলাদেশ।

করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ ২৪৭ মৃত্যু, ১৫১৯২ শনাক্ত

২৬ জুলাই, ২০২১, দেশ রুপান্তর

করোনাভাইরাসে একদিনে সর্বোচ্চ ২৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় এ রোগে নতুন করে আক্রান্ত হেয়েছে সর্বোচ্চ ১৫১৯২ জন। ৫১ হাজার নমুন পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।

এর আগে, গত ১৯ জুলাই দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছিল, ১১ জুলাই ২৩০ জন ও রোববার করোনায় ২২৮ জন মারা যায়। এ পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৯ হাজার ৫২১ জন মারা গেছে।

দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি

রাসায়নিকের গুদাম ১৯২৪টি, ৯৮ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ

৩০ এপ্রিল ২০২১, প্রথম আলো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় জরিপ চালিয়ে রাসায়নিকের ১ হাজার ৯২৪টি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পেয়েছে করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। রাসায়নিক রাখা এসব স্থাপনা বা গুদামের সবই কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উঠে এসেছে জরিপে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ সিটি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, বিস্ফোরক পরিদপ্তর এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা মিলে এই জরিপ করেন। দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা জানান, তালিকা তৈরি শেষ করে মার্চের প্রথম সপ্তাহেই তা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কাছে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাসায়নিক গুদাম ও এর ঝুঁকির বিষয়টি সবারই জানা। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে ২৩ এপ্রিল পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজি মুসা ম্যানশন নামের একটি ভবনে রাসায়নিকের গুদামে আগুন লেগে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়। গত বুধবার রাতে মারা যান আশিকুজ্জামান নামের এক তরুণ। তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহানও হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

মাদারীপুরে স্পিডবোটের সঙ্গে বাল্কহেডের সংঘর্ষ, ২৬ লাশ উদ্ধার

০৩ মে ২১,  সমকাল

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় পদ্মা নদীতে একটি বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে স্পিডবোটটি ডুবে গেছে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।সোমবার সকাল ৭টার দিকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

স্পিডবোট দুর্ঘটনা: কারও পরনে ছিল না লাইফ জ্যাকেট

৪ মে ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

স্পিডবোটে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরার নিয়ম থাকলেও মাদারীপুরে শিবচরে দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জনের কারও পরনে তা ছিল না। সোমবার বিকালে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরের সময় ‌মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশ‌নের উপ প‌রিচালক তোফা‌জ্জেল হো‌সেন এই তথ্য জানিয়েছেন।

লকডাউনে নৌচলাচল বন্ধের মধ্যে পদ্মা পরাপারে এই স্পিডবোটটি চলছিল, আর যাত্রীও নিয়েছিল গাদাগাদি করে।এই অনিয়ম চোখে না পড়া জন্য নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ ও নৌপুলিশ পরস্পরকে দোষ দিচ্ছে। উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয়রা জানায়, পদ্মার ওপারে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে আসা স্পিডবোটটি সকাল ৭টার দিকে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী (পুরাতন ফেরিঘাট) ঘাটের কাছে নদীর পাড়ে নোঙ্গর করে রাখা একটি বাল্কহেডের (বালুবাহী নৌযান) পেছনে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

এতে সব যাত্রী পদ্মায় ডুবে যায়। পাঁচজনকে স্থানীয়রা জীবিত উদ্ধার করে। পরে নৌপুলিশ, সেনাসদস্য, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে শিশুসহ ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তোফা‌জ্জেল বলেন, “উদ্ধারকৃত ২৬ লা‌শের প্রতিটির মাথায়ই মারাত্মক জখমের দাগ দেখা গেছে। লাশ হস্তান্তরকালেও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এছাড়া কোনো লাশের শরীরেই লাইফ জ্যাকেট ছিল না।

প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স, বয়স—স্পিডবোট চালাতে কিছুই লাগে না

০৫ মে ২০২১, প্রথম আলো

দীর্ঘদিন ধরেই মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে স্পিডবোট চালান হালিপ মিয়া (২৬)। মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো প্রশিক্ষণ পাইনি। তবে অভিজ্ঞ চালকের সঙ্গে চার-পাঁচ দিন থাকলেই বোট চালানো শেখা যায়।’ তবে ‘ফুল লোড’ নিয়ে বোট চালাতে হলে খুব সর্তক হতে হয় জানিয়ে এই চালক বললেন, এখানে অনেক চালক, সবাই তো আর সর্তক নন। কারও কারও বয়স কম, ইচ্ছেমতো চালায়।

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে লঞ্চ ও ফেরির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রী বহন করে প্রায় আড়াই শ স্পিডবোট। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চলাচলরত এসব স্পিডবোটের চালকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এমনকি চালকদের বড় একটি অংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক। অবৈধ স্পিডবোট, অদক্ষ চালকের কারণে এই নৌপথে ঘটছে দুর্ঘটনা। নৌযানগুলোতে লাইফ জ্যাকেটের মতো সুরক্ষাব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও বেশি।

এদিকে এই নৌপথে চলাচলরত ৫০টির মতো স্পিডবোট বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক লাইসেন্স নিয়েছে। যে কটির লাইসেন্স আছে, তারও আবার নবায়ন নেই। ফলে চলাচলরত স্পিডবোটগুলোর সব কটি অবৈধ।

ফেরি থেকে নামতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে নিহত ৫

১২ মে ২১, সমকাল

মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে ফেরি থেকে নামতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে পাঁচজন নিহত হয়েছে।

বুধবার দুপুরে পৃথক ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ২৫ জন।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন জানান, মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে চলাচলকারী ফেরি এনায়েতপুরী থেকে নামতে গিয়ে বেলা ২টার দিকে পদদলিত হয়ে দুই নারীসহ চারজন মারা যান। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে শাহ পরান ফেরিতে পদদলিত হয়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়।

ফের আগুনে পুড়ল সাততলা বস্তির বহু ঘর

৭ জুন ২০২১,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ছয় মাসের ব্যবধানে ফের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে।

সোমবার রাত সোয়া ৪টার দিকে আগুন লাগার পর প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের দেড় ডজন ইউনিট।

সবশেষ গতবছর ২৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ভয়াবহ আগুনে এই বস্তির প্রায় আড়াই শতাধিক ঘর পুড়ে গিয়েছিল।

২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬ সালেও আগুনে পুড়েছিল সাততলা বস্তি।

মগবাজারে বিস্ফোরণে নিহত ৭, আহত অর্ধশতাধিক

২৭ জুন ২১, সমকাল

 রাজধানীর মগবাজারে একটি ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণে সাত জন নিহত হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আহত ও দগ্ধ হয়েছেন অর্ধশতাধিক। তাদের মধ্যে ২৯ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ১০ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

বাকিদের মগবাজারের আশপাশে কয়েকটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের বেশির ভাগই পথচারী বলে জানা গেছে।

সহস্রাধিক কারখানা অগ্নিঝুঁকিতে

১১ জুলাই, ২০২১, দেশ রুপান্তর

ঢাকাসহ সারা দেশে ঝুঁকিতে আছে সহস্রাধিক কলকারখানা। সেখানে নেই কোনো ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত সিঁড়ি। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ওইসব কারখানাতে নেই কোনো নজরদারি। তবে দেশের কোথাও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। একের পর এক গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। হইচই চলে কয়েক সপ্তাহ। এরপর থেমে যায় সবকিছু। কারখানার অনেক মালিক ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ও নেতা হওয়ায় তারা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গতকাল ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদন দিয়ে অবহিত করেছে- অগ্নিঝুঁকিতে থাকা সহস্রাধিক কারখানার মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার এলাকায় বেশি। এখনই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

নারায়ণগঞ্জে আগুনে হতাহতের ঘটনায় নাগরিক তদন্ত কমিটি গঠন

১৪ জুলাই ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ লি. কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনায় ১৯ সদস্যের সমন্বয়ে একটি নাগরিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার (১৪ জুলাই) কমিটি গঠনের বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

তিনি বলেন, ‘গত ১৩ জুলাই দেশের সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াকে এবং ঢাকা লেবার কোর্ট ও নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইলকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। নাগরিক তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসাবে আছেন— অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ডা. মো. হারুন-রশিদ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মী সি আর আবরার, অধ্যাপক গওহার নঈম ওয়ারা, অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, গবেষক ও সাংবাদিক প্রিসিলা রাজ ও মাহা মির্জা, শিল্পী ও সংগঠক বীথি ঘোষ, সাংবাদিক ও কলামিস্ট ফারুক ওয়াসিফ, বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি গোলাম মুর্শেদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার লিমা, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ এবং গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিন।

তদন্ত কমিটির সবার সম্মতিতে ভবিষ্যৎ কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেযোগ্য হলো—অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কারণসমূহ অনুসন্ধান; নিহত-আহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান এবং নিরূপণযোগ্য জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ। সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডের পূর্বে কারখানা ভবনের অনুমোদন নিরিক্ষণ। কাঠামোগত ত্রুটি বিচ্যুতি, কারখানার কর্ম পরিবেশ, শ্রম আইনসহ অপরাপর আইনের প্রতিপালন করা হয়েছিল কিনা; বিশেষ করে শ্রমিকদের নিয়োগ, কর্মদিবস বা কর্মঘণ্টা ও যথাযথ মজুরি প্রদান করা হতো কিনা তা দেখা।

এছাড়াও কারাখানার মালিকপক্ষের দায়-দায়িত্ব, গাফিলতি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের ব্যক্তিবর্গ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছিল কিনা, সেই সম্পৃক্ত তথ্যের সঠিক এবং গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণ করাও তদন্ত কমিটির কর্মকাণ্ডের উল্লেখযোগ্য বিষয়। যাতে করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিতকরণ এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ও বিচারিক শাস্তি প্রদানের সুপারিশ, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ, ন্যায় বিচার, একইসঙ্গে ভবিষ্যতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নিরোধসহ কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিরোধ সংক্রান্ত সুপারিশ করা যায় এবং শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।

নাগরিকদের আলোচনায় তদন্ত কমিটি উপরিউক্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনায় যথাযথ সরকারি-বেসরকারির উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গ-প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা চাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যাতে করে তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও গ্রহণযোগ্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারে।

হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা থেকে অগ্নিকাণ্ড, আইসিইউ অচল

১৫ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

অগ্নিকাণ্ডের ফলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) অকেজো হয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। তবে অগ্নিকাণ্ডে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। আইসিইউ রোগীদের সাধারণ ওয়ার্ডে নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শিশুমৃত্যুর বড় কারণ এখনো নজরের বাইরে

২৫ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ জেলায় চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২২ দিনে পানিতে ডুবে ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের সবার বয়স আট বছরের নিচে। তবে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। সুনামগঞ্জেও তা-ই। কিন্তু গত ২২ দিনে এই জেলায় নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর তেমন তথ্য নেই।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে সাড়ে ১৪ হাজার শিশু মারা যায়। এদের বয়স ১ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। এই বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ এখন পানিতে ডুবে মারা যাওয়া।

দেশে শিশুমৃত্যু রোধে বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা প্রচেষ্টা নিয়েছে এবং তাতে সুফলও মিলেছে। কিন্তু পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে সরকারি প্রচেষ্টা খুব কম। স্বাস্থ্য খাতের নীতি দলিলে এই মৃত্যু রোধের বিষয়ে গুরুত্বও কম।

গণতন্ত্র মতপ্রকাশের অধিকার

সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে থানায় নেওয়া হলো সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে

১৭ মে ২০২১, প্রথম আলো

পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় সচিবালয়ে আটকে রেখে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে।

রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাঁকে সেখানে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ভবনে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। পরে বিকেলে সাংবাদিকেরা সচিবালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন।

গাংনীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

২২ মে ২০২১, প্রথম আলো

মেহেরপুরের গাংনীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় সাংবাদিক আল আমিন হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার ভোরে গাংনী পৌর শহরের বাঁশবাড়িয়া গ্রামে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আল আমিন হোসেন বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিজনেস বাংলাদেশ পত্রিকার মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।

জামিন পেলেন সাংবাদিক রোজিনা

২৩ মে ২০২১, প্রথম আলো

জামিন পেলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। দণ্ডবিধি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদন বিষয়ে আজ রোববার শুনানি হয়। পাঁচ হাজার  টাকা মুচলেকা এবং পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে তিনি জামিন পান।

বাঁশখালীর কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে পোস্ট, প্রকৌশলী কারাগারে

২৯ মে ২০২১, প্রথম আলো

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এক প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার গন্ডামারা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় শুক্রবার রাতে উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গন্ডামারায় নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে পোস্ট করলেও তিনি কী লিখেছিলেন, তা পুলিশ জানায়নি।

গত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য মেডেল পাচ্ছে পুলিশ

১২ জুন ২৯২১, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা

গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন, কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের পদক দিচ্ছে সরকার। শনিবার এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। সেখানে বলা হয়, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশকে এই পদক ও রিবন দেওয়া হবে।

পদক তিনটির নাম হল-

সংসদীয় নির্বাচন ডিসেম্বর, ২০০৮

সংসদীয় নির্বাচন জানুয়ারি, ২০১৪

সংসদীয় নির্বাচন ডিসেম্বর, ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

১১ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিক তানভীর হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে সদর থানায় এক মামলার খোঁজখবর নিতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন।

তানভীর হাসান দৈনিক ইত্তেফাক ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজেরও জেলা প্রতিনিধি। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম তাঁর গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাদিরুল আজিজ বাদী হয়ে সাংবাদিক তানভীর হাসান, নিউজবাংলা ২৪ ডট কমের প্রতিনিধি রহিম শুভ্র ও বাংলাদেশ প্রতিদিন–এর জেলা প্রতিনিধি আবদুল লতিফের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় তানভীরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৫ জুলাই জাগো নিউজে ঠাকুরগাঁও হাসপাতালের করোনা ইউনিটের খাবারের মান নিয়ে ‘দিনে বরাদ্দ ৩০০ হলেও করোনা রোগীদের খাবার দেওয়া হচ্ছে ৭০ টাকার!’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে আরও কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

পেগাসাসের তালিকায় বাংলাদেশ, মন্ত্রী যা বললেন

১৯ জুলাই, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ইসরায়েলে তৈরি হ্যাকিং সফটঅয়্যার পেগাসাস যে ৪৫টি দেশে ছড়ানোর তথ্য এসেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের নামও রয়েছে।

তবে বাংলাদেশে কোনো ধরনের ‘অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি’ মন্তব্য করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, সরকার এ বিষয়ে ‘সতর্ক রয়েছে’।

বাংলাদেশ এ ধরনের কোন সফটঅয়্যার কিনেছে কিনা জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, “এ রকম সফটঅয়্যার কেনার কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টা ভালভাবে বলতে পারবে।”

এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্য জানার কোনো চেষ্টা এখন পর্যন্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম করেনি।

বলা হচ্ছে, কোনো বেসরকারি কোম্পানির তৈরি করা সবচেয়ে শক্তিশালী স্পাইওয়্যার হল এই পেগাসাস। ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপ এই নজরদারি সফটওয়্যার তৈরি করেছে এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে তা বিক্রি করেছে।

এই হ্যাকিং সফটঅয়্যার ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের ‘কর্তৃত্ববাদী’ সরকার মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনীতিকদের ফোনে নজরদারি চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানসহ ১৬টি সংবাদপত্র হ্যাকিংয়ের এই ঘটনা ফাঁস করার পর এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

‘লকডাউনের গুজব’ ছড়ানোর মামলায় ডিবি হেফাজতে থাকা রিমান্ডের আসামির মৃত্যু

 ০১ মে ২০২১, যুগান্তর

ফরিদপুরের সালথায় গত ৫ এপ্রিল তাণ্ডবের ঘটনায় ফরিদপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রিমান্ডে থাকাকালীন অবস্থায় আবুল হোসেন (৫০) নামের এক আসামির মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার সকাল ৬টায় ডিবি পুলিশের একটি দল ওই আসামিকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ষোষণা করেন।

আবুল হোসেন মোল্যা সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালীয়া গ্রামের মৃত ইমানউদ্দিন মোল্যার ছেলে। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা।

কারাবন্দী অবস্থায় চিকিৎসাধীন হেফাজত নেতার মৃত্যু

২০ মে ২০২১, প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সহসভাপতি ও খেলাফত মজলিসের উপজেলার সভাপতি মাওলানা ইকবাল হোসেনের (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের পাহারায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি মারা যান।

ছেলের সামনে বাবা খুন: আসামি মানিক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

২১ মে ২১, সমকাল

রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সন্তানের সামনে বাবাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি মানিক র‍্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।

শুক্রবার ভোরে ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় র‌্যাব-৪ গ্রেপ্তারে অভিযানে গেলে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় মানিক। সে এ মামলার ৫ নম্বর আসামি।

‘গুমের’ সব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি চার সংগঠনের

২৭ মে ২০২১, প্রথম আলো

বাংলাদেশে ‘গুমের’ প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের পাশাপাশি ‘গুম হওয়া’ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশি–বিদেশি চারটি মানবাধিকার সংগঠন।

গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষে এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ারেন্স (এএফএডি), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ) এবং দেশীয় সংগঠন মায়ের ডাক ও অধিকার এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবছর মে মাসের শেষ সপ্তাহকে বিশ্বজুড়ে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়।

‘বাবা কি বেঁচে আছেন, না থাকলে কবর কোথায়’

২৮ মে ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন

নিখোঁজের পর কেটেছে দীর্ঘ সময়। এতদিনে কোথায় আছেন তারা, আদৌ তারা জীবিত আছেন, নাকি না ফেরার দেশে চলে গেছেন, নিখোঁজ স্বজনকে ফিরে পাওয়ার দোয়া করবেন, নাকি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করবেন- এমন অসংখ্য প্রশ্নের জবাব খুঁজতে রাজপথে মানববন্ধন করেছে শিশুরা। শুক্রবার (২৮ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত মায়ের ডাকের অনুষ্ঠানে হাজির শিশুদের চোখে-মুখে ছিল এমন হাজারো প্রশ্ন।

আয়োজনে উপস্থিত শিশুরা নিজ নিজ হারানো স্বজনদের ছবি বুকে ধরে কেঁদেছেন, প্রশ্ন রেখেছেন। তাদের কান্নায় বেদনার্ত পরিবেশ তৈরি হয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাজপথে। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও মৌখিক আবেদন জানিয়েছেন স্বজনদের খুঁজে দিতে।

নাখালপাড়া থেকে নিখোঁজ কাওসার হোসেনের কন্যা রামিয়া আক্তার মিম অংশ নেন কর্মসূচিতে। সে বলে, এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। আমার বয়স যখন তিন বছর, তখন বাবা নিখোঁজ হন। তিনি কোথায় আছেন জানি না। বেঁচে থাকলেও কি তাকে ফিরে পাবো? আর যদি বেঁচে না থাকে তাহলে তার কবর কোথায়? কেন বাবা নিখোঁজ হলো। অন্যদের মতো আমারও তো বাবার সঙ্গে থাকতে, স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাবার খোঁজ কবে পাবো? বাবার কথা মনে হলেই কান্না পায়। সবার বাবার দিকে তাকিয়ে থাকি…. (বলেই অঝোরে কেঁদে ওঠে এই শিশু)।… …

ছাত্রনেতা গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাঘাইছড়িতে অর্ধদিবস অবরোধ

১৬ জুন ২০২১, প্রথম আলো

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সড়ক ও নৌপথে অর্ধদিবস অবরোধ পালন করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়ে চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের মাচালং বাজারে সাজেক থানার পিসিপির সভাপতি রূপায়ণ চাকমাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে। পরে তাঁকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সমর বিজয় চাকমা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাজেক থানা শাখার সদস্য কালো চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাঘাইছড়ি উপজেলায় সড়ক ও নৌপথে অবরোধ ঘোষণা করা হয়।

নিখোঁজের পর ফিরে আসারা কিছুই বলেন না

১৯ জুন ২০২১, প্রথম আলো

কেউ বাসা থেকে বা অফিস থেকে বেরিয়েছিলেন। কেউ বাসাতেই স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিলেন। কখনো সাদাপোশাকে, কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁদের তুলে নিয়ে গেছে। পরে কারও কারও লাশ পাওয়া গেছে, কেউবা ফিরে এসেছেন। অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়ে গেছেন।

‘নিখোঁজ’ এসব ব্যক্তির নাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস কমিশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গুম হওয়া মানুষের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। এই তালিকায় সাবেক সাংসদ, রাজনীতিক নেতা ও কর্মীদের পাশাপাশি সম্প্রতি যুক্ত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুস্তক প্রকাশক, ব্যবসায়ী, ধর্মীয় বক্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তা।

 ইসলামী বক্তা আবু ত্ব হা মোহাম্মদ আদনান তাঁর তিন সঙ্গীসহ নিখোঁজ হয়েছিলেন গত ১০ জুন। গত ১৮ জুন তাদের পাওয়া যায় নিজ নিজ বাড়িতে। পুলিশের দাবি আবু ত্ব–হা দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। আর তাঁর সঙ্গে থাকা বাকি তিনজনকে তিনি রাজি করান আত্মগোপনে থাকার সময় বিষয়টি কাউকে না জানানোর। এ সময় ওই তিনজনও নিজ নিজ বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।

 নিখোঁজের পর ফিরে আসলেও নিজ থেকে চার জনের কেউই কী ঘটেছিল এখন পর্যন্ত সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি।

একই অবস্থা সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ক্ষেত্রেও। ৫৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত বছরের ৩ মে যশোরের বেনাপোলে ভারত সীমান্তের কাছে পাওয়া যায় শফিকুলকে। উদ্ধারের এক বছর পর গত ৩ মে একস ওয়েবিনারে সাংবাদিক শফিকুল বলেন, ‘আমার এখনও এটি বলার সাহস নেই যে আমাকে কি জোর করে গুম করা হয়েছিল, নাকি আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে আমি আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম। কিন্তু, কখনোই ভাবিনি যে আমাকে গুম করা হবে।’ ‘কীভাবে আমি ও আমার পরিবার সেই নিষ্ঠুর সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি— তা বলা সম্ভব না।’ তিনি বলেন, কখনো পরিচিতজনদের মাঝে ফিরতে পারবো, তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারব এটা ভাবিনি।

অপহরণ, গুম বা নিখোঁজ হন চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার জানান, গত বছর নভেম্বরের ঘটনা এটা। তিনি ওই ওয়েবিনার বলেন, কীভাবে তাকে সারাক্ষণ প্রাণভয়ে থাকতে হতো এবং এক পর্যায়ে তিনি তার চট্টগ্রামের বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হন।’

ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেছিলেন, ‘এ মুহূর্তে সরোয়ারের জন্য সাংবাদিকতা করার চেয়ে বেঁচে থাকাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুয়ায়ী গত ১৩ বছরে (২০২০ সালের আগষ্ট পর্যন্ত) ৬০৪ জনের মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে৷ ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন কোনো না কোনোভাবে ফিরে এসেছেন৷ অন্যরা কোথায় আছেন, কেমন আছেন তার কোনো তথ্য নাই পরিবারের কাছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও কোনো তথ্য দিতে পারছে না৷

সাম্প্রতিক আবু ত্ব–হার মতো ‘রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ’ বা ‘অপহরণের’ পর গত ১৩ বছরে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন অনেকেই। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে কিছু অভিন্ন ছক বা মিল লক্ষ করা যায়। অপহৃত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশকে অপহরণের পর ‘উদ্‌ভ্রান্ত’ অবস্থায় কোনো সড়কে পাওয়া যায়। কিন্তু ফিরে আসার পর অনেকে কোনো কথা মনে করতে পারেন না। বাকিরা ফিরে এসে মুখে কুলুপ আঁটেন। আবার অনেকে বাসায় ফিরে আসেন। তাঁরাও পরে আর কোনো কথা বলেন না।

সাবেক কূটনীতিক মারফ জামান নিখোঁজ হন বছর তিনেক আগে। ফিরে আসার পর তিনিও এ নিয়ে কিছু বলেননি। কারা তুলে নিয়েছেন, কেন নিয়েছেন কিছুই বলেননি তিনি।

রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বা অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা কখনো কখনো গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফিরে আসার পর নিখোঁজ ব্যক্তিরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বলেছেন, চোখ বেঁধে তাঁদের মাইক্রোবাসে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এর বাইরে তাঁরা কেউ আর বিস্তারিত কিছু বলেননি।

ফিরলেন ধর্মীয় বক্তা ত্ব-হা, চাকরি হারালেন বন্ধু সিয়াম

২০ জুন ২০২১, প্রথম আলো

ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান গাইবান্ধায় যে বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন বলে খবর বেরিয়েছে, সেই বন্ধুই নাকি বিষয়টি জানতেন না। সিয়াম ইবনে শরীফ নামের ওই বন্ধু চাকরির সুবাদে থাকেন রংপুর নগরে। তিনি বলছেন, ত্ব-হার সন্ধান চেয়ে রংপুরে দুটি মানববন্ধনে অংশও নিয়েছিলেন তিনি। এখন ত্ব-হার ঘটনায় চাকরি হারাতে হয়েছে সিয়ামকে।

সিয়াম রংপুরে একটি মুঠোফোন সেট কোম্পানিতে কর্মকর্তা হিসেবে মাত্র তিন মাস আগে যোগ দেন। আজ রোববার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি চাকরি হারানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।.. …

আবু ত্ব-হা আদনান সপরিবার রংপুর শহরে থাকেন। ১০ জুন রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরদিন তাঁর মা আজেদা বেগম রংপুর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

আজেদা বেগম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁর ছেলে অনলাইনে আরবি পড়ানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুতবা দিতেন। ১০ জুন বিকেল চারটার দিকে ভাড়া করা একটি গাড়িতে রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই সঙ্গী আবদুল মুহিত ও ফিরোজ আলম। গাড়িচালক হিসেবে ছিলেন আমিরউদ্দিন। রাত ২টা ৩৬ মিনিটে ত্ব-হাকে তাঁর স্ত্রী ফোন দেন। তখন বলেন, তিনি এখন ঢাকার গাবতলীতে আছেন। মুঠোফোনের চার্জ প্রায় শেষ। এরপর থেকে ত্ব-হাসহ চারজনের মুঠোফোন নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার আট দিন পর শুক্রবার চারজনকেই নিজ নিজ বাড়িতে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে হেফাজতে নির্যাতন

জাতিসংঘের প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ১০ মানবাধিকার সংস্থার

২৬ জুন ২০২১, প্রথম আলো

বাংলাদেশ সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ‘নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণের’ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১০টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।

জাতিসংঘ ঘোষিত নির্যাতিত ব্যক্তিদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবসে শনিবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলো। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গ্রেপ্তার এবং সন্দেহভাজন লোকজনের ওপর নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণ করছে।

বিবৃতিতে বন্দীদের ওপর যেসব নির্যাতন করা হয়, তার একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে। সেসবের মধ্যে রয়েছে লোহার রড, বেল্ট ও লাঠি দিয়ে পেটানো; কান ও যৌনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক, নাক-মুখ ঢেকে পানি ঢালা (ওয়াটার বোর্ডিং), সিলিংয়ে ঝুলিয়ে পেটানো, পায়ে গুলি করা, কানের কাছে জোরে শব্দ করা বা গান বাজানো, মৃত্যু কার্যকরের নাটক সাজানো এবং নগ্ন করে রাখার মতো ঘটনা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে শত শত মানুষ গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।

ফিরে আসা ব্যক্তিরা নির্যাতনের যে বিবরণ দেন, তা কল্পনাতীত: আসক

২৬ জুন ২০২১, প্রথম আলো

দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ‘নির্যাতন’ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে এখান থেকে শুধু মানবাধিকার বা এনজিও ঘরানার কাজ দিয়ে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান।

জাতিসংঘ ঘোষিত নির্যাতিত ব্যক্তিদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবসে শনিবার ‘বাংলাদেশে নির্যাতনের পরিস্থিতি, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে প্রতিবন্ধকতাসমূহ’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন নূর খান।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, সাম্প্রতিক কালে পুরান ঢাকার একজন আইনজীবীকে উঠিয়ে নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে খুলনায় ছাত্রদল নেতাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এ নির্যাতনের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে একজন রাজনৈতিক কর্মী নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁকে ট্রাকচাপা দিয়ে মারা হয়েছে বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। অথচ এসব হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রের তরফ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গুম হওয়ার পর দু–একজন গোপনীয়ভাবে মানবাধিকারকর্মীর কাছে যে বয়ানগুলো দিয়েছেন, তা কল্পনা করা যায় না, কী ধরনের নির্যাতনের শিকার তাঁরা হয়েছেন।

দেশে একটা বিভীষিকাময় অবস্থা চলছে বলে মন্তব্য করেন নূর খান। তিনি বলেন, তুলে নিয়ে নির্যাতন করবে, মারবে, ধরবে। আর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বলতে হবে, নিজে থেকে পালিয়েছিলাম। এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হলে শুধু স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিলেও খুব বেশি এগোনো যাবে না। বাংলাদেশের নাগরিক রাজনৈতিক অধিকারের জায়গায় যে ধরনের ব্যত্যয় ঘটছে, এখান থেকে শুধু মানবাধিকার বা এনজিও প্যাটার্নের কাজ দিয়ে মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন একটা অবস্থায় আমরা পৌঁছেছি যে স্বাভাবিক অঙ্কের হিসাবে আর চলবে না।

২৫ দিন ধরে নিখোঁজ তিন তরুণ, স্বজনদের কান্না

২৭ জুন ২০২১, প্রথম আলো

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের পরিচয় দিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকা থেকে তিনজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। ২৫ দিন আগে (২ জুন) তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে তাঁরা নিখোঁজ। নিখোঁজ তিনজন হলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের পাঁচরুখী গ্রামের বাসিন্দা মো. নোমান, মো. নাছিম ও বগুড়ার শহিদুল ইসলাম।

নিখোঁজ নোমান পেশায় ব্যবসায়ী। নাছিম মাদ্রাসাছাত্র এবং শহিদুল আড়াইহাজার এলাকার একটি মসজিদের ইমাম।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে আজ রোববার দুপুরে এসব তথ্য জানান ভুক্তভোগী তিনজনের পরিবারের সদস্যরা।

র‌্যাবের সঙ্গে ‘গোলাগুলিতে’ আশু আলী বাহিনীর প্রধান নিহত

১৭ জুলাই ২১, সমকাল

কক্সবাজার শহরে র‌্যাবের সঙ্গে ‘গোলাগুলিতে’  আশু আলী বাহিনীর প্রধান আশু আলী (২৫) নিহত হয়েছেন।

শনিবার ভোরে শহরের দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী বড়বিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর উপ-অধিনায়ক তানভীর হাসান।

ঘাটে হাটে চাঁদাবাজি

১৭ জুলাই ২১, সমকাল

মোহাম্মদপুরের বছিলায় গরুবোঝাই একটি ট্রাক আসতেই আটকে দিলেন ১০-১২ জন যুবক। তাদের প্রত্যেকের হাতে লাঠিসোটা। বেশ কয়েকজন ‘মোহাম্মদপুর বছিলা ইজারাদার’ লেখা হলুদ পোশাক পরা। তারা ট্রাক আটকে চাঁদা দাবি করেন। তবে তাদের ভাষায় এটি চাঁদা নয় ‘ঈদের বকশিশ’। ট্রাকচালককে ওই যুবকেরা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘বকশিশ দেওয়া ছাড়া ট্রাক যেতে পারবে না।’ গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকের ঘটনা এটি।

সেখানে এভাবে কিছুক্ষণ পর পরই আসছিল ট্রাক। এসব ট্রাকেও লাঠিসোটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন ‘হাটের দায়িত্বে থাকা’ যুবকরা। ফলে কয়েকটি ট্রাক মূল সড়কে দাঁড়িয়ে থাকায় তৈরি হয় যানজট। এ সময় ওই যুবকদের সঙ্গে ট্রাকচালক ও গরু ব্যবসায়ীদের বাগবিতণ্ডা করতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে থাকা এক পথচারী পাশের ব্যক্তিকে বলেন, ‘কোরবানির হাটে প্রবেশের আগেই এমন চাঁদাবাজি দুঃখজনক।’ তবে এ সময় আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।… ….

বছিলার মতোই রাজধানীর আরও বেশ কয়েকটি স্থানে এমন অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম দেখা গেছে। পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কঠোর নির্দেশনার পরেও কোরবানির পশু বহনকারী ট্রাকে চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যাপারিরা। কোরবানির পশুবাহী যানবাহন যাতে চাঁদাবাজি বা হয়রানি ছাড়াই নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গত ১৪ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

থানা পুলিশ, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ এবং স্থানীয় মাস্তানদের চাঁদা দিয়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গরুর ট্রাকগুলোকে রাজধানীর হাটগুলোতে ঢুকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। শুধু রাজধানী নয়, বিভিন্ন জেলায় কোরবানির পশুর হাটে চাঁদাবাজির খবর পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে ফেনী শহরের সদর হাসপাতাল-সংলগ্ন গরুর হাটে শাহজালাল নামে এক ব্যাপারিকে চাঁদা না দেওয়ায় গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।

মুনিয়ার মৃত্যু: বসুন্ধরা এমডিকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন

২২ জুলাই ২১, সমকাল

কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের সংশ্লিষ্টতা পায়নি পুলিশ। মামলাটিতে আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে গুলশান থানা পুলিশ।

বিদ্যুৎ-জ্বালানী-খনিজসম্পদ

বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যার নিন্দা জানিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতকে চিঠি

৩০ এপ্রিল ২০২১, প্রথম আলো

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশে নিয়োজিত চীনা রাষ্ট্রদূতকে চিঠি পাঠিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় একদল লেখক–অধ্যাপক, অধিকারকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নেতা।

আজ শুক্রবার লেখা ওই চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, ঘটনার দিন পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়ে সাতজনকে হত্যা এবং অজ্ঞাতসংখ্যক শ্রমিককে আহত করে। পুলিশের গুলিবর্ষণ, হত্যা এবং শ্রমিকদের ওপর সহিংসতা ফৌজদারি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের চেয়ে কম নয়। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে স্থানীয় পুলিশ এই ঘটনায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

 হত্যাকাণ্ড, সহিংসতা এবং এ ঘটনায় চীনা দূতাবাসের নীরবতার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে চিঠিতে। চারটি দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এসব দাবি হলো হতাহত শ্রমিকদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা; শ্রমিকদের হত্যা, জখম ও হয়রানির ঘটনায় দায়ী চীনা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের চীনের আইন অনুযায়ী বিচার করা; আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং এই প্রকল্পে জড়িত কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে যৌথ উদ্যোগে চুক্তি প্রকাশ করা।

 ১৭ এপ্রিল বাঁশখালীর গন্ডামারায় নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ ১২ জন এখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রোজায় কর্মঘণ্টা কমানোসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকেরা।

রামপালে সবুজ কমছে বাড়ছে ধূসর এলাকা

১ মে, ২০২১, বণিক বার্তা

সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা রামপাল। দেশের অন্যতম বৃহৎ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে এখানেই। এজন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে আঠারোশ একর জমি। সুন্দরবনের ওপর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই আশঙ্কা রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়ার আগেই এখানকার পরিবেশ বিরূপ হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এজন্য এলাকাটিতে গত কয়েক বছরের ব্যাপক মাত্রার শিল্পায়নকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ঘিরে শিল্প-কারখানা আর অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। এজন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরেই জমি ভরাট হয়েছে প্রায় সতেরোশ একর। এছাড়া ফসলি জমি, খাল, পুকুর, জলাশয় ভরাটের কর্মযজ্ঞ এখনো জোরেশোরেই চলছে। ফলে সবুজের আচ্ছাদিত এলাকা থেকে ক্রমেই ধূসর হয়ে উঠছে রামপাল। গুগলের ভূস্থানিক ছবি বিশ্লেষণ করে নেদারল্যান্ডসের ওয়েগেইনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক দেখিয়েছেন, মাত্র সাত বছরের মধ্যে রামপালের প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমি বালি দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ২০১২ সালে যেসব এলাকা ছিল সবুজে আচ্ছাদিত, ২০১৯ সালে সেগুলো পরিণত হয়েছে বালিপূর্ণ ধূসর ভূমিতে।

বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সংঘর্ষ: ভাষাগত দূরত্বও কারণ পেল তদন্ত কমিটি

২৩ মে ২০২১. বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সংঘর্ষের জন্য চীনা প্রকৌশলীদের সঙ্গে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভাষাগত দূরত্বও কারণ হিসেবে খুঁজে পেয়েছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। তাই দেশি শ্রমিকদের সঙ্গে চীনা প্রকৌশলী ও অন্যান্যদের দূরত্ব কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

এছাড়া নির্ধারিত সময়ে বেতন না পাওয়া, বহিরাগতদের প্রভাবও শ্রমিক অসন্তোষের কারণ হিসেবে দেখিয়েছে এই তদন্ত কমিটি।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপ ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। গত ১৬ এপ্রিল সেখানে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচ শ্রমিক মারা যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরও দুজন।

সংঘর্ষের কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে প্রধান করে আরেকটি তদন্ত কমিটি করে।

পুলিশের তদন্ত কমিটি গত ১৯ মে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।

অন্য কারণগুলো হল- মাসের ১০ তারিখের মধ্যে বেতন না পাওয়া, শ্রমিকদের বাসস্থান ও স্যানিটেশন সমস্যা, রোজায় কর্মঘণ্টা হ্রাসের দাবি, নামাজের ছুটির দাবি, কিছু কিছু কারণে চীনা প্রকৌশলীদের খারাপ আচরণ ও শ্রমিক সরবরাহে বহিরাগতদের প্রভাব।

রোজার সময় ১০ ঘণ্টার পরিবর্তে আট ঘন্টা কাজ করে সম্পূর্ণ বেতন, শুক্রবার জুমার নামাজ পর্যন্ত আধাবেলা কাজ করার দাবি জানিয়েছিল শ্রমিকরা।

নামাজের সময়ে শ্রমিকরা নামাজ পড়তে যাওয়ায় বেতন কাটার ঘটনা ঘটেছে। যা ধর্মীয় অনুভূতি হিসেবে আন্দোলন ‘বেগবান’ করেছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

ডিআইজি জাকির বলেন, “জনশ্রুতি আছে এক চীনা প্রকৌশলী বাংলাদেশি এক শ্রমিককে লাথি দিয়েছিল, যা সংঘর্ষ সৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছিল। কিন্তু তদন্ত কমিটির সেটার কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি।”

তদন্ত কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার নেছার উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত করতে গিয়ে আমরা যেটা দেখেছি শ্রমিকদের দাবি দাওয়া উপস্থাপনের মতো কোনো লোক নেই। যে কারণে শ্রমিকদের বিভিন্ন বিষয়গুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়নি।”

মূল্যায়ন প্রতিবেদন: বিশ্বের অন্যতম পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠান হবে বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র

১৫ জুন ২০২১, বেনারনিউজ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান ও এস আলম গ্রুপের যৌথ মালিকানায় নির্মাণাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশ্বের অন্যতম পরিবেশ দূষণকারী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর একটি হবে বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেছে তিনটি পরিবেশবাদী সংগঠনের মূল্যায়ন।

সংগঠনগুলো জানায়, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নে (ইআইএ) ভুল ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দেবার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাত্ত বাদ দেওয়া হয়েছে, যা গুরুতর আইনি প্রশ্নের জন্ম দেয়।

সংগঠনগুলোর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং চীনে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র যে মাত্রায় দূষণ অনুমোদন করা হয়, তার তুলনায় পাঁচ থেকে ১০ গুন বেশি দূষণকে অনুমোদন করা হয়েছে এসএস পাওয়ার প্লান্টের ইআইএ প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ইআইএ প্রতিবেদনে বায়ু দূষণের ফলে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাবের বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত পারদ দূষণের ফলে স্বাস্থ্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে।

“বাতাসের মান নির্ধারণের জন্য যে পদ্ধতি (এয়ার কোয়ালিটি মডেলিং) অবলম্বন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুল। এর ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সম্ভাব্য দূষণের মাত্রা কয়েকগুণ কমে গেছে। সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে যে ফল পাওয়া যেত, তা কয়েকগুণ বেশি নির্গমনের পূর্বাভাস দিত,” প্রতিবেদনে বলা হয়।

ইআইএ-তে যেসব নির্গমন উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে তা অসঙ্গতিপূর্ণ এবং পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নে সর্বোচ্চ নির্গমনের উপাত্ত ব্যবহার না করে গড় নির্গমনের উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে বলেও ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

“বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্গমন প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। এর ফলে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে পরিমাণ সালফার ডাই অক্সাইড নির্গত হবে, তা চীনে আইনিভাবে অনুমোদিত নির্গমন হারের পাঁচ গুণ বেশি। আর নাইট্রাস অক্সাইডের নির্গমনের ক্ষেত্রে ওই হার চীনে অনুমোদিত হারের চেয়ে ১০ গুণ বেশি,” বলা হয় প্রতিবেদনে। .. …

এসএস পাওয়ার প্লান্টের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন (ইআইএ) বিশ্লেষণ করে মঙ্গলবার এমন তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে দেশি এবং আন্তর্জাতিক তিনটি পরিবেশবাদী সংগঠন। সংগঠনগুলো হচ্ছে; ফিনল্যান্ডভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাবিষয়ক কর্মজোট।

কয়লাভিত্তিক ১০ বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল

২৭ জুন ২১, সমকাল

কয়লাভিত্তিক ১০টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। রোববার দুপুরে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। বাতিল হওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৮ হাজার ৭১১ মেগাওয়াট।

বাতিলের তালিকায় থাকা এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে- পটুয়াখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, উত্তরবঙ্গ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সুপার থারমাল পাওয়ার প্লান্ট, মাওয়া ৫২২ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা ২৮২ পটুয়াখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, উত্তরবঙ্গ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সুপার থারমাল পাওয়ার প্লান্ট, মাওয়া ৫২২ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা ২৮২ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রাম ২৮২ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, খুলনা ৫৬৫ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেষখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেষখালী (২) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও সিপিজিসিবিএল-সুমিতোমো ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।

বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান ধরে রাখতে মানতে হবে শর্ত

২৮ জুন ২০২১, প্রথম আলো

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখতে হবে। সেখানে আর কোনো ভারী শিল্পকারখানার অনুমোদন দেওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলোর প্রভাব মূল্যায়ন করতে একটি সমীক্ষা (এসইএ) করতে হবে। এরপর সেখানে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে ও কোন ধরনের স্থাপনা করা যাবে না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

১৬ জুন জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ‘রিয়েকটিভ মনিটরিং মিশনের’ এক প্রতিবেদনে এমন সব শর্ত দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব শর্ত বাংলাদেশ কতটুকু পালন করল, তার ওপর নির্ভর করবে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান থাকবে কি না। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান দেয় ইউনেসকো।

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে এই রিয়েকটিভ মনিটরিং মিশন সুন্দরবন ঘুরে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ও নানা নথি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদন গত মার্চে বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়। সরকার এর ওপর বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতসহ জবাব দেয়। এরপর ইউনেসকো সেটি মূল্যায়ন করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।… …

পরিবেশ

বড় নদীর দূষণ পৌঁছে গিয়েছে প্রায় সব নদীতে

২৯ এপ্রিল, ২০২১, বণিক বার্তা

ঢাকার হাজারীবাগ, তেজগাঁও ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরার নদী রক্ষা বাঁধ ঘিরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের প্রায় সাত হাজার কারখানা। এসব শিল্প-কারখানার শিল্পবর্জ্য সরাসরি পড়ছে বুড়িগঙ্গা নদীতে। বুড়িগঙ্গা থেকে এ শিল্পবর্জ্য গিয়ে মিশছে তুরাগ, টঙ্গী খাল, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীতে। এর বাইরে রাজধানীর গৃহস্থালি বর্জ্যেরও গন্তব্য হচ্ছে বুড়িগঙ্গা। কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়াই এসব বর্জ্য এসে নদীটিতে মিশছে। সেখান থেকে তা আবার বিভিন্ন মাত্রায় ছড়াচ্ছে আশপাশের অন্যান্য নদীতে।

একইভাবে দূষিত হচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রধান নদী কর্ণফুলীও। আর এ দূষণ বিভিন্ন মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী হালদা, বাকখালী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, নাফ, কাসালং ও চিংড়ি নদ-নদীতে। কর্ণফুলীর দূষণ ছড়িয়েছে বঙ্গোপসাগরেও। করতোয়া, তিস্তা, আত্রাই, পদ্মাসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান-অপ্রধান নদ-নদীগুলোর স্বাস্থ্যও খুব একটা ভালো নয়। নানা মাত্রার দূষণের হাত থেকে রেহাই পায়নি এসব নদীর কোনোটিই।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন নদীর পানিতে ১১ ধরনের ক্ষতিকর ধাতুর দেখা মিলেছে। ‘আরবান রিভার পলিউশন ইন বাংলাদেশ ডিউরিং লাস্ট ফরটি ইয়ারস: পটেনশিয়াল পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রিস্ক, প্রেজেন্ট পলিসি অ্যান্ড ফিউচার প্রসপেক্টস টুওয়ার্ডস স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক ওই গবেষণায় গত ৪০ বছরে দেশের বিভিন্ন নদীর দূষণের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।

সুন্দরবনে দুই দশকে ২৩ বার আগুন

০৪ মে ২০২১, প্রথম আলো

সুন্দরবনে গতকাল সোমবার আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে গত প্রায় দুই দশকে ২৩ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগের ২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ‘৭১ একর’ বনভূমির নানা গাছ, গুল্ম-লতা পুড়ে গেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন সময়ে বন বিভাগের গঠিত তদন্ত দল নাশকতা, অসচেতনতা, অবহেলায় ফেলে দেওয়া বিড়ি বা সিগারেটের আগুনকে দায়ী করেছে।

বনকে সুরক্ষা দিতে বন ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, বন-সংলগ্ন মরে যাওয়া নদ-নদী খনন এবং সীমান্ত এলাকায় বেড়া ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটিগুলো। তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি উল্লেখ করে বন বিভাগ, স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা বনজ সম্পদ সুরক্ষিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

‘স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ করতে সোহরাওয়ার্দীর গাছ কাটা হয়েছে: মন্ত্রণালয়

৫ মে, ২০২১, দেশ রুপান্তর

‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনে কিছু গাছ কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মন্ত্রণালয় জানায়, কিছু গাছ কাটা হলেও প্রায় এক হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ছে ফসল, পচছে আম

২৫ মে ২০২১, জাগো নিউজ

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের ইটভাটাগুলোর জন্য নিঃস্ব হয়েছেন পাঁচ শতাধিক কৃষক। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধানসহ বিভিন্ন ফসল পুড়ে গেছে। পরিপক্ব হওয়ার আগেই পচে ঝরে পড়ছে বাগানের আম। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন ফলও পচে ঝরে পড়ছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তিন শতাধিক কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) স্মারকলিপি দেন। ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। ইটভাটার কারণে আম ও ফসলের ক্ষতির বিষয়টি মানতে নারাজ ভাটার মালিকরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ৯ নম্বর হামিদপুরের একটি ইউনিয়নেই ১৯টি ইটভাটা। যার বেশিরভাগই অবৈধ। দক্ষিণ পলাশবাড়ী ও বাঁশপুকুর মৌজার ছয়টি ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ওই এলাকার ধান পুড়ে গেছে এবং বাড়ির চারপাশের আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য গাছের পাতা কুঁকড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া ফলগুলো ঝরে পড়ছে। ৫০টি বাগানের আমের নিচের অংশ পচে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। বাগানের আমগুলো বর্তমানে বিক্রির অনুপযোগী।

ধুলাউদাল গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আজিজুর রহমান, মোজহারুল আলম, আবিদা খাতুন ও আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘১৩ ও ১৫ মে ভোরে হামিদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী ও বাঁশপুকুর মৌজার এআরবি ব্রিকস, একে ব্রিকস, সোহাগী ব্রিকস, অর্ণব ব্রিকস, একতা ব্রিকস ও জহুরা ব্রিকসের বিষাক্ত ধোঁয়া পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুই মৌজার ২০০ একর ধান ও ১০০ একর জমির ৫০টি আম, বাঁশ ও লিচু বাগান, কলা, নারিকেল, পেয়ারা, জলপাই, বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের মাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে এলাকার প্রায় ২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

ল্যান্ডফিল্ডের দূষিত বর্জ্যে ধুঁকছে ২৪ গ্রামের মানুষ

২৮ মে ২১, সমকাল

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ল্যান্ডফিল্ডের (ভাগাড়) দূষিত বর্জ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে নগরীর তিন-চার কিলোমিটারের অন্তত ২৪টি গ্রামের বাসিন্দারা। এমনিতেই দুর্গন্ধ, তার ওপর আবর্জনা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে পড়েছে সেখানকার পরিবেশ। বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকার লোকজনের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।

জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা, পরিবেশ দূষণ রোধে এসব আবর্জনা সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পুনর্ব্যবহার এবং নিস্কাশনের সমন্বিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকটি ঝুলে আছে বছরের পর বছর। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও সমাধানে নেওয়া হয়নি কার্যকর উদ্যোগ।

সেন্ট মার্টিন এখন প্রবাল লুটেরাদের স্বর্গ

২৮ মে, ২০২১, ডেইলিস্টার অনলাইন বাংলা

এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই নিষেধাজ্ঞা এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে আরোপ করা বিধিনিষেধের ফলে দ্বীপটিতে প্রশাসনের নজরদারি কমে গেছে। স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি ও তাদের সহযোগীদের জন্য বিষয়টি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

অন্তত তিন জন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দ্বীপটি থেকে প্রবাল উত্তোলন করে ভাঙছেন এবং কোনো রাখঢাক ছাড়াই সেগুলো হোটেল বা আবকাঠামো নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করে রমরমা ব্যবসা করছেন। দ্বীপে ক্রমবর্ধমান আবাসন চাহিদাকে পুঁজি করে এ দুর্বৃত্তরা সেখানে বেআইনিভাবে একতরফা নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যদিও সেন্ট মার্টিনে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা নিষিদ্ধ।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার এ দ্বীপটিকে ১৯৯৯ সালে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই এ নিষেধাজ্ঞা বলবত আছে।তা সত্ত্বেও, দুর্বৃত্তদের সংঘবদ্ধ চক্রটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর চালান নিয়ে আসে এবং একইসঙ্গে দ্বীপ থেকে প্রবাল উত্তোলন করে। প্রবাল উত্তোলন এবং তা ভাঙতে তারা প্রায় ১৫০ জন দ্বীপবাসী শ্রমিককে ব্যবহার করে। প্রতি বর্গফুট ভাঙা প্রবাল তারা শ্রমিকদের থেকে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে কিনে নেয়। পরে এগুলো হোটেল মালিকদের কাছে প্রতি বর্গফুট ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

দুর্যোগে বাঁধ ভাঙে, মেরামত করেন ক্ষতিগ্রস্তরাই

২৯ মে ২১, সমকাল

ভোরের আলো ফোটার আগেই একদল লোক ঝুড়ি, কোদাল ও বাঁশ নিয়ে বাঁধ মেরামতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। পরে সেখানে দলে দলে লোকজন এসে যোগ দেন। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই নিজেদের ভালো থাকার তাগিদে কাজে এসেছেন সবাই। সেখানে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নারী ও শিশুরা কাজে সহযোগিতা করেছেন।

শুক্রবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের আওতাধীন খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের পবনা এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতি দুর্যোগের পর ভাঙা বাঁধ মেরামতে স্থানীয় মানুষকেই এভাবে দায়িত্ব নিতে দেখা যায়। এটা এ অঞ্চলের মানুষের নিয়মিত কাজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার এবং দুর্যোগের পর বাঁধের ভাঙন ঠিক করার ব্যাপারে পাউবো উদাসীনতা দেখায় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

নোনাপানিতে ডুবে আছে সব, সংকট খাওয়ার পানির

৩১ মে ২০২১, প্রথম আলো

.. …খাওয়ার পানির সংকটে আছেন কয়রা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২৬ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। খাবার সংকটেও রয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে বাগালী ও পাশের মহারাজপুর ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম রয়েছে। ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ওই গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। এখনো ওই সব গ্রামের মধ্য দিয়ে নিয়মিত জোয়ারভাটা আসা-যাওয়া করছে। পাঁচ দিন ধরে এভাবেই চলছে। অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধ ও উঁচু স্থানে। যাঁরা ঘরে থাকছেন, তাঁরা জোয়ার-ভাটার সময় মিলিয়ে রান্না করছেন।

সোমবার বাগালী ও মহারাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি এলাকাই ডুবে আছে নোনাপানিতে। কালচে হয়ে গেছে পানি। এখানে–সেখানে মরে আছে মাছ। প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছে তা দিয়ে। পানির তোড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে সড়ক। ইটের রাস্তাগুলোর ইট উঠে গেছে। পিচের রাস্তায় তৈরি হয়েছে বড় বড় ক্ষত। বিভিন্ন এলাকায় পানি আটকে রাখতে সড়কের ওপর রাখা হয়েছে মাটি ও বালুর বস্তা।

কয়েকটি গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই দুই ইউনিয়নের মানুষ কোনো খাদ্যসহায়তা পায়নি। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। খাওয়ার পানির পাশাপাশি সংকট তৈরি হয়েছে শৌচাগার নিয়েও।

কয়রায় জনগণের তাড়া খেয়ে ট্রলার নিয়ে পালালেন সাংসদ

০১ জুন ২০২১, প্রথম আলো

আজ সকাল থেকেই কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামতে করছিলেন কয়েক শ মানুষ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি ট্রলার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সাংসদ মো. আক্তারুজ্জামান। বাঁধে কাজ করা উত্তেজিত জনতা সাংসদকে দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কাঁদা ছুড়ে মারতে থাকেন ট্রলারের দিকে। বাধ্য হয়ে সেখান থেকে ট্রলার নিয়ে চলে যান সাংসদ। পরে অবশ্য ফিরেও এসেছেন।

তবে সাংসদ মো. আক্তারুজ্জামান দাবি করেছেন, তাঁকে বহনকারী ট্রলারে কাঁদা ছুড়ে মারা হয়নি। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষ চান টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর ভাঙনে তাঁরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভাঙন এলাকায় কাজ করছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে গেলে তাঁকে (সাংসদ) দেখে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁদের ওই দাবি যৌক্তিক। বারবার বাঁধ ভাঙে আর বারবার স্বেচ্ছাশ্রমে তাঁদের কাজ করতে হয়। এ কারণে সাংসদের ওপর তাঁদের ক্ষোভও বেশি। পরে ওই এলাকায় নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধের কাজ করা হয়েছে।

খীরু নদীর পানি এতই কালো, দেখলে মনে হয় পোড়া মবিল!

১১ জুন, ২০২১, কালের কণ্ঠ

‘খীরু নদীর পানি এতই কালো, দেখলে মনে হয় পোড়া মবিল। একসময় দুপুরের তপ্ত রোদে খীরু নদীর পাড়ে গাছের নিচে বসলে বাতাসে শরীর জুড়িয়ে ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। আর এখন নদীর পাড়ে বসা তো দূরের কথা, নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে গেলেও দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে, বমি হওয়ার উপক্রম হয়। অথচ ছোটকালে এই নদীর পানিতে কত ডুব দিয়েছি, সাঁতার কেটেছি, মাছ ধরেছি তার হিসাব নেই। এখন এই নদীর পানি দেখলে ভয় লাগে।’ এভাবেই স্মৃতি হাতড়ে একবুক হতাশা নিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকার খীরু নদীর অতীত ও বর্তমানের তুলনামূলক চিত্র বর্ণনা করছিলেন ওই নদীর পারে বাস করা ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের জামিরাপাড়া গ্রামের মো. আনিছুর রহমান বাদল নামের একজন শিক্ষক।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকায় আশির দশক থেকে ভালুকা এলাকায় গড়ে উঠছে অসংখ্য টেক্সটাইল, সোয়েটার, ডায়িং, স্পিনিং, ফিশফিড, ফার্মাসিউটিক্যালস্সহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশ ও বিশেষ করে হবিরবাড়ি, জামিরদিয়া, পাড়াগাঁও, বাশিল, কাশর, ধমাশুর, মামারিশপুর, ভরাডোবা, নিশিন্দাসহ বিভিন্ন এলাকা বর্তমানে স্থানীয়ভাবে শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে অনেক আগেই। ভালুকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে ডায়িং মিলের শিল্পবর্জ্য বিভিন্নভাবে ফেলা হচ্ছে স্থানীয় নদী-খাল ও বিলে। যা লাউতির খাল, বিলাইজুড়ি ও বেইত্যাহাগুন খাল হয়ে এসে গড়িয়ে পড়ছে ভালুকা উপজেলার বুক চিরে বয়ে চলা খীরু নদীতে।

স্থানীয়রা জানান, একসময় খীরু নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা কাপড়চোপড়, বাসনপত্র ধোয়াসহ গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করত এই নদীর পানি। বোরো ধানসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদও হয় ওই নদীর পানিতে সেচ দিয়ে। কিন্তু ভালুকা এলাকার বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শিল্পবর্জ্য মিশে এলাকার নদী, খাল ও জলাশয়ের পানি বর্তমানে বিবর্ণ ও কালচে রং ধারণ করে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফসলের জমিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে ওই পানি। দুর্গন্ধযুক্ত ওই পানি গায়ে লেগে মানুষের শরীর চুলকায়, নানা  চর্মরোগ ও ঘা হয়। দূষিত ওই পানির কারণে বিলুপ্তি ঘটছে একসময়ের খীরু নদীর সুস্বাদু মাছ। তা ছাড়া ভরাট হয়ে নদীটি ইতিমধ্যে তার নাব্যতা হারিয়েছে। তারা খননের মাধ্যমে নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি করেন।

‘আর কোন দাবি নাই, ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই’: প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে সংসদে এমপি

১৬ জুন, ২০২১, দেশ রুপান্তর

উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা। বুধবার সংসদ অধিবেশনে উপকূলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তৃতার একপর্যায়ে গলায় দাবিসম্বলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলান তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের পর নিজের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে জনগণের রোষানলে পড়তে হয়েছিল তাকে। শুধু তাই নয়, উপকূলের অনেক সংসদ সদস্যকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এলাকাবাসী ত্রাণ চান না তারা স্থায়ী বেড়িবাঁধ চান।

পানি ও স্যানিটেশন

উন্নতিতে শ্লথ বাংলাদেশ

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২১, প্রথম আলো

পানি ও স্যানিটেশন খাতের উন্নতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত পাঁচ বছরে এ দুই খাতে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের মতো দেশগুলো। অথচ এ দুই ক্ষেত্রে আগে বাংলাদেশের অগ্রগতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব খাতে এখন শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইউনিসেফের তৈরি ‘জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম—জেএমপি প্রতিবেদন ২০২১’-এ এ চিত্র উঠে এসেছে।… ….

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ মৌলিক স্যানিটেশনের সুবিধা পেত ২০১৫ সালে। ৫ বছর পর এসে তা দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশে। গত ৫ বছরে এ খাতে পাকিস্তান, নেপাল ও ভারত—এই তিন দেশের অগ্রগতি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। ৫ বছর আগে পাকিস্তানের ৫৯ শতাংশ মানুষ এ সেবার মধ্যে ছিল। ৫ বছর পর তা দাঁড়ায় ৬৮ শতাংশে। নেপালে ১৮ শতাংশ বেড়ে মৌলিক স্যানিটেশনের কভারেজ দাঁড়িয়েছে ৭৭ ভাগে। ভারতে মৌলিক স্যানিটেশন ৫ বছর আগের চেয়ে ১৪ ভাগ বেড়ে ৭১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান। দেশটির জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ মৌলিক স্যানিটেশন-সুবিধা পাচ্ছে।

জেএমপি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের ২২ শতাংশ মানুষ এখনো অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করে। স্বাস্থ্যের উন্নয়নে একে একটি বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে এ হার যথাক্রমে ২, ৩ ও ১৪ শতাংশ।

নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ গত ৫ বছরে উল্লেখ করার মতো তেমন উন্নতি করেনি। বাংলাদেশে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবহারের হার ৩৯ শতাংশ। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো এগিয়েছে জোর কদমে। ভারত ৫ বছরে ৩৬ থেকে ৪৬ শতাংশে পৌঁছেছে। নেপালের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবহারের সুযোগ পায়।

সুপেয় পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে। এ হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।

কিন্তু মলের জীবাণু, আর্সেনিক ও অন্যান্য দূষণমুক্ত নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও পাইপের মাধ্যমে সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ হওয়া পানিকে বেশি নিরাপদ এবং শহরের নাগরিক সুবিধার অংশ বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ পাইপের পানি পায়, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। এ ক্ষেত্রে নেপালের অগ্রগতি বাংলাদেশের চেয়ে তিন গুণ, ৫০ শতাংশ। ভারতে এ হার ৪৪ আর পাকিস্তানের ২৬ শতাংশ। ২২ শতাংশ নিয়ে আফগানিস্তানের বর্তমান হারও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের গ্রামের মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ সরবরাহের পানি পায়। শহরে এ হার ৩৬ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপালের গ্রামাঞ্চলে সরবরাহের পানি প্রাপ্তির হার সবচেয়ে বেশি। দেশটির ৪৯ শতাংশ মানুষ সরবরাহের আওতায় আছে। ভারতের গ্রামে এ হার ৩২ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৫ শতাংশ।

পররাষ্ট্র বিষয়ক

কোয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে: চীনের রাষ্ট্রদূত

১০ মে ২০২১, প্রথম আলো

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত জোট কোয়াডকে চীনবিরোধী একটি ছোট গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে বেইজিং। তাই চীন মনে করে, এতে যেকোনোভাবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে।

আজ সোমবার সকালে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময়ের সময় এ মন্তব্য করেন।

গত মাসের শেষ সপ্তাহে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি ঢাকা সফর করেন। এ সময় কোয়াড, আইপিএস বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছিল চীন।

চীনের অনুরোধের জবাবে বাংলাদেশ কী বলেছে জানতে চাইলে চীনের রাষ্ট্রদূত প্রশ্নটির উত্তর এড়িয়ে গেছেন।

বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ইসরায়েলের গণমাধ্যমে খবর

২৪ মে ২০২১, প্রথম আলো

বাংলাদেশের নতুন ই–পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ অংশটি বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে দেশে আলোচনা–সমালোচনা চলছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ইসরায়েলের গণমাধ্যমেও বিষয়টি এসেছে। এ বিষয়ে রোববার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের পত্রিকা দ্য জেরুজালেম পোস্ট। তাতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ইসরায়েলের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গিলাদ কোহেন।’

দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। শুরু থেকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের পুরোনো পাসপোর্টে ‘‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ একসেপ্ট ইসরায়েল’’ লেখা থাকত। ছয় মাস আগে বাংলাদেশের নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করার পর ‘‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ একসেপ্ট ইসরায়েল’’ থেকে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ অংশটি বাদ দেওয়া গেছে। এ বিষয়টিই মূলত আলোচনায় এসেছে।

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

২৯ জুন ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন

পাটগ্রাম সীমান্তে কোচবিহার-১৪০ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের চুয়াঙারখাতা ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যদের গুলিতে রিফাত হোসেন নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শমসেরনগর কানিরবাড়ী সীমান্তের ৮৬২ নম্বর মেইনপিলার এলাকার সংলী নদীর লাভলুর ব্রিজের কাছ থেকে রিফাতের লাশ উদ্ধার করে  নিয়ে গেছে বিএসএফ ও মাথাভাঙা থানা পুলিশ।

বিবিধ

কওমি মাদ্রাসা রাজনীতিমুক্ত রাখার ঘোষণা

২৫ এপ্রিল ২০২১, বাংলা ট্রিবিউন

কওমি মাদ্রাসারা ছাত্র ও শিক্ষকরা প্রচলিত সর্বপ্রকার রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবে- এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারিভাবে স্বীকৃত কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। রবিবার (২৫ এপ্রিল) যাত্রাবাড়ীতে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসায় স্থায়ী কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় ৬টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

১। কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে একমাত্র আল-হাইআতুল উলয়া। আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন কোন বোর্ড কিংবা কোন সংগঠন বা ব্যক্তি আল-হাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্ত ব্যতীত পৃথকভাবে কওমি মাদ্রাসা বিষয়ক কোনও সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ বা উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে না।

২। কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা প্রচলিত সর্বপ্রকার রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবে।

৩। আল-হাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য এবং কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তদারকির জন্য আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন ৫ বোর্ডের ৫ (পাঁচ) জন, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া থেকে ৫ জন এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত ৫ (পাঁচ) জন সমন্বয়ে সর্বমোট ১৫ জনের একটি ‘বাস্তবায়ন সাব-কমিটি’ গঠিত হবে।

৪। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসার যেসব নিরীহ ছাত্র, শিক্ষক, আলেম এবং মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিদের গ্রেফতার করা হয়েছে; সরকারের নিকট তাদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়।

৫। ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে হিফজ ও মক্তব বিভাগ খুলে দেওয়ার জন্য এবং রমজানের পর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জন্য সরকারের কাছে বিশেষভাবে আবেদন করা হয়।

৬। আল-হাইআতুল উলয়ার সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করার জন্য ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সদস্যরা হলেন: মুফতি রুহুল আমীন, মুফতি মোহাম্মদ আলী ও মুফতি জসীমুদ্দীন।

সায়েম সোবহান আনভীরকে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের শুভেচ্ছা

২ জুন ২০২১, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঐতিহ্যবাহী ও দেশসেরা ক্রীড়া সংগঠন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)।  বুধবার দুপুরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন ক্র্যাব নেতারা।

মতবিনিময় সভায় ক্র্যাবের সহ-সভাপতি নিত্য গোপাল তুতুর নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ, যুগ্ম সম্পাদক হাসান-উজ-জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার আরিফ, দপ্তর সম্পাদক ইসমাঈল হুসাইন ইমু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রুদ্র মিজান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুদ্র রাসেল, কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম সাত্তার রনি, এস এম মিন্টু হোসেন, কাজী জামশেদ নাজিম উপস্থিত ছিলেন।

পাউরুটিতে ক্ষতিকর উপাদান

০৭ জুন ২০২১, প্রথম আলো

.. ..দীর্ঘদিন ধরে দেশের অনেক পাউরুটি ও বেকারি পণ্যে কাঁচামাল হিসেবে আটার সঙ্গে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান ট্রান্সফ্যাট, কৃত্রিম রং ও মিষ্টিজাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য সোডিয়াম সাইক্লোমেট ব্যবহৃত হচ্ছে। গত মাসে একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়কীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হওয়া পাউরুটির বড় অংশে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর আরেক উপাদান পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষকের উদ্যোগে করা ওই গবেষণায় রাজধানীসহ দেশের চারটি জেলা থেকে ২১টি পাউরুটির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এক কেজি পাউরুটিতে ৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু ৬৭ শতাংশ পাউরুটির নমুনায় ওই মানমাত্রার চেয়ে বেশি পটাশিয়াম ব্রোমেট পাওয়া গেছে। পাউরুটি ফোলাতে ও বিভিন্ন আকৃতি দিতে এই রাসায়নিক উপাদানটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বের বেশির ভাগ উন্নত দেশে খাবারে এই উপাদানটির ব্যবহার নিষিদ্ধ।

দেশে ষাটোর্ধ্ব প্রতি ১২ জনে একজন ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত: সমীক্ষা

১ জুলাই, ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাংলাদেশে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রতি ১২ জনে একজন ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

ডিনেমশিয়া এমন এক সিনড্রোম যেটি হলে মানুষের স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং প্রতিদিনের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষমতা কমে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, পৃথিবীতে ৫ কোটি মানুষের ডিমেনশিয়া রয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় বাস করেন।

২০১৯ সালে আইসিডিডিআর,বি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স বাংলাদেশে সাতটি বিভাগে একটি সমীক্ষা চালায়।

শহর ও গ্রামাঞ্চলের ষাটোর্ধ্ব ২ হাজার ৭৯৬ জনের উপর চালানো এই সমীক্ষার ফল বুধবার এক ওয়েবিনারে তুলে ধরা হয়।

Social Share
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •